Saturday, July 5, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1869



Adorable Love পর্ব : ০৮

0

#Adorable_Love ?
পর্ব : ০৮
লেখা : ঊর্মি ধর
.
.
.
আজ ৬ দিন পর ঈশিকা ভার্সিটি যাচ্ছে। পা এর হাল এখন ভালোই ঠিক। এই ৬ দিনে আমান হাজারো ব্যস্ততার মাঝেও পালা করে কল করে যে কতবার খাবার মেডিসিন এর কথা মনে করিয়েছে, খোঁজ নিয়েছে তার ইয়োত্তা নেই। ঈশিকা বাসা থেকে বের হতে পারবেনা বলে তো দু’দিন রাতে আমান ঈশিকাদের বাড়ির নিচেই চলে এসেছে। বারান্দার দূরত্ব থেকে হলেও একটিবার দেখার জন্য তার ঈশুকে।

ঈশিকা ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে চুল আঁচড়াতে আঁচড়াতে এসব ভাবছে আর আনমনে হাসছে। ” ইশ! সেদিন রাতে ফোন অফ ছিলো বলে পরদিন কি বকাটাই না বকলো লম্বু শয়তানটা!”

তবে আমানের কেয়ার গুলোর সাথে সাথে এই বকাগুলোও আজকাল ঈশিকার কাছে অদ্ভুতভাবে অন্যরকম ভালোলাগে৷ শুনেছে প্রেমে পরলে নাকি করলাও মিষ্টি লাগে। আচ্ছা? সে কি আমানের প্রেমে পরে গেলো নাকি? ভালোবেসে ফেললো তাকে?” পরক্ষণেই আবার মনে পরলো, তার অজান্তেই কিভাবে বিয়ে করে বউ বানিয়ে ফেললো খোক্কশটা!

—“বউ!” ঈশিকা বিড়বিড় করে মুখে শব্দটা আওড়ালো। হ্যাঁ বউ! এখন সে আমানের বউ! কথাটা মনে আসলেই নিজের অজান্তেই ঠোঁটের হাসিটা চওড়া হয়ে উঠলো। আয়নায় তাকাতেই দেখলো ফর্সা গাল দুটো লাল হয়ে উঠেছে। সে লজ্জা পাচ্ছে!! আর লজ্জা পাচ্ছে ভেবেও আরো বেশি লজ্জা পাচ্ছে!!

বেরনোর আগে ঈশিকা ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখলো আজ আমান একটাও কল করেনি। এমনি তো ডেইলি সকাল বেলা কল করে ঘুম ভাঙায়। কিন্তু আজ এখনো অবধি কল করলো না যে!? ভেবেই ঈশিকার মন খারাপ হয়ে গেলো।
.
.
________________________________________________
ভার্সিটি যেতেই বন্ধুরা হই হই করে উঠলো ঈশিকাকে দেখে। তৌসিফ বলে উঠলো,
—-” হেই…ক্যাম্পাস কুইন। যাক! এলি তাহলে?”
রিমি বললো,
—-” তা তোর পায়ের অবস্থা কি এখন? ”
—-” এখন ভালো।” হাল্কা হেসে বললো ঈশিকা।
এরপর রিমি কিছু একটা বলতে নেবে তখনি শোয়েব আসলো। এসেই ব্যস্ত ভঙ্গিতে ঈশিকাকে জিজ্ঞেস করলো,
—-” ঈশি.. কেমন আছিস এখন? দেখি পা…”
—-” এখন ঠিক আছি। আর দেখার মতো অতো কিছু নেই। মেজর কোনো কিছু হয়নি আমার।” হেসে বললো ঈশিকা।
শোয়েব গম্ভীর গলায় বললো,
—-” একটু দেখে শুনে চলতে পারিস না? সেদিন নোভা বললো বাথরুমে পা পিছলে পরে বেড রেস্টে আছিস। জানিস কতোটা টেনশন হচ্ছিলো আমার?”
ঈশিকা শোয়েবের কথা শুনে হেসে ফেললো। শোয়েব কপট রাগ দেখিয়ে বললো,
—-” একদম হাসবি না। আর আমার নাম্বার কি তুই ব্লক করেছিস? কল যায়না কেনো?!”
কথাটা শুনে ঈশিকার হাসি মিলিয়ে গেলো। সে তো করেনি। পরক্ষণেই বুঝলো নিশ্চয়ই এটা আমানের কাজ। সেদিনই হয়তো শোয়েবের নাম্বারটা ব্লক করে দিয়েছিলো। তারপর ঈশিকা মুখ করুন করে বললো,
—-” কিজানি দোস্ত…হয়তো ভুলে চাপ লেগে ব্লক হয়ে গেছে। দারা আমি এক্ষুনি দেখছি।” বলেই ফোন বের করলো।
—-” হুম হবেই তো…থাক! আর লাগবে না।” অভিমানের সুরে বললো শোয়েব।
ঈশিকা অপরাধী কন্ঠে বললো,
—-” সরি দোস্ত! আমি ইচ্ছা করে করিনি বিশ্বাস কর। এই দেখ আনব্লক করে ফেলেছি। প্লিজ আর রাগ করিস না প্লিজ!”
শোয়েব ঈশিকার দিকে তাকিয়ে হেসে ফেললো। কি আছে এই মেয়েতে? যে রাগ করতে চাইলেও করতে পারেনা সে। যা পারে তা শুধুই….!
ভেবেই শোয়েব ছোট একটা নিশ্বাস ছাড়লো।
তখনি রিমি বলে উঠলো,
—-” এই শেষ হয়েছে তোদের রাগ অভিমানের পালা? এখন শোন, আগামী পরশু বাড়িতে গ্র‍্যান্ড পার্টি হচ্ছে আমার বার্থডে উপলক্ষে। সবাই চলে আসবি কিন্তু। আর তোরা পরবি শাড়ি এন্ড এটা মাস্ট।” নোভা আর ঈশিকাকে উদ্দেশ্য করে বললো রিমি।
ঈশিকা বললো,
—-“এই আমি কিন্তু পরছিনা। শাড়িতে আমি ভীষন আনকম্ফোর্ট ফিল করি।”
—-” নোউউ! কোনো কথা শুনছি না৷ পরতেই হবে। অ্যাট লিস্ট আমার জন্য পরবি প্লিজ! এই নোভা বলনা ওকে।” বললো রিমি।
—-” আরে একদিনি তো ঈশি। পরিস কি প্রবলেম?” ঈশিকার দিকে তাকিয়ে বললো নোভা।
—-” প্লিজ দোস্ত! একদিনই তো। আমার জন্য এইটুকু করতে পারবিনা বল?” ঈশিকার হাত ধরে বললো রিমি।
ঈশিকা হেসে বললো,
—-” আচ্ছা ঠিকাছে ঠিকাছে…পরবো। এখন আপাতত ক্লাসে চল। টাইম হয়ে গেছে।”
.
.
_______________________________________
ক্লাস শেষে তৌসিফ তার বাইকে রিমিকে নিয়ে চলে গেলো৷ তখনি শোয়েব বাইক নিয়ে এসে ঈশিকা আর নোভার সামনে দাঁড়ালো। ঈশিকাকে উদ্দেশ্য করে বললো,
—-” চল তোকে ড্রপ করে দেই।”
ঈশিকা একবার নোভার দিকে তাকালো। তারপর বললো,
—-” না রে লাগবে না।”
—-” কেনো? আমার বাইকে বসতে কি কেউ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে নাকি?” তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললো শোয়েব।
—-” কে নিষেধ করবে?” ভ্রু কুচকে বললো ঈশিকা।
—-” কে আবার? আমান আহমেদ!”
ঈশিকার ভ্রু সোজা হয়ে গেলো। কথাটা তো সত্যি! আমান তো বলেছেই শোয়েবের থেকে দূরে থাকতে। ঈশিকা কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না। ঈশিকাকে চুপ থাকতে দেখে শোয়েব মলিন হেসে বললো,
—-” বুঝেছি! আচ্ছা ঠিকাছে সাবধানে যাস।” বলেই বাইক স্টার্ট দিয়ে চলে গেলো। ঈশিকা কিছু বলার সুযোগ ও পেলো না।

শোয়েব চলে যেতেই নোভা বললো,
—-” ঈশি.. তুই কিন্তু এখনো সেদিনের ঘটনার কথা বললি না আমাকে? ভাগ্যিস সেদিন আমি ছাড়া ওরা কেউ ছিলোনা তখন। তাহলে তোর কত প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হতো বুঝতে পারছিস? এবার বল কি হয়েছিলো সেদিন?”

ঈশিকা হাটতে হাটতে নোভাকে সব খুলে বললো। সব শুনে নোভা অবাক হয়ে বললো,
—-” তার মানে তোদের বিয়ে হয়ে গেছে!! সিরিয়াসলি ঈশি! এতো বড় একটা কথা অথচ বাসার কাউকে জানাসনি কেনো?”
—-” কি বলতাম? উলটে সবাই আমাকেই ভুল বুঝতো। আর তাছাড়াও আমার মনে হয় আমানের জন্যও আমার মনে ফিলিংস তৈরি হয়েছে এই কদিনে। ওর কেয়ারগুলো আগে আমার পাগলামি মনে হলেও ইদানীং অন্য রকম একটা অনুভূতি দেয়।”
—-” হুম বুঝলাম…তো এখন কি করবি?”
ঈশিকা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,
—-” জানিনা!”
এরপর কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো,
—-” আচ্ছা বাদ দে এসব! এখন একটা রিকশা নে…কিরে কি হলো? দাঁড়িয়ে পরলি কেনো?”
ঈশিকা নোভার দৃষ্টি অনুসরণ করে তাকাতেই দেখলো আমান তার গাড়িতে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আমানকে দেখতেই ঈশিকার মুখের কোনে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠলো।
নোভা মুচকি হাসি দিয়ে বললো,
—-” তোমার পার্মানেন্ট ড্রাইভার এসে গেছে। এখন আর রিকশার দরকার নেই। যাও যাও।”
ঈশিকা আস্তে আস্তে এগিয়ে গেলো আমানের দিকে৷ পুরো ফর্মাল লুকে আছে আমান। কি হ্যান্ডসাম লাগছে দেখতে!
ঈশিকা সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই কিছু না বলে গাড়ির ডোর খুলে দিলো আমান। ঈশিকা একবার আমানের দিকে তাকিয়ে গাড়িতে ওঠে পরলো।

ঈশিকা ভাবলো এবার জিজ্ঞেস করবে কেনো আজকে সকালে একবারো ফোন করলো না সে। তখনি ড্রাইভ করতে করতে আমান বললো,
—-” আধ ঘন্টা পর আমার ফ্লাইট।”
ঈশিকা চকিতে তাকালো আমানের দিকে। অবাক হয়ে বললো,
—-” কোথায় যাচ্ছেন?”
—-” দুবাই। বিজনেসের কাজে। দু’দিনের জন্য।”
ঈশিকা আস্তে করে বললো,
—-” ওহ!”

নিমিষেই মনটা খারাপ হয়ে গেলো ঈশিকার। হঠাৎ ই গাড়ি থামালো আমান। তারপর ঈশিকাকে টেনে নিয়ে ঈশিকার ঠোঁটজোড়া নিজের ঠোঁটের দখলে নিয়ে নিলো। প্রথমে আচমকা ঘটনায় ঈশিকা ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলেও পরে বুঝতে পেরে শান্ত হয়ে গেলো। আজ কিছুই বললো না। সেও কেনো যেনো মানুষটার এই উষ্ণ ছোঁয়াটুকু বড্ড মিস করছিলো এ কদিন।

বেশ কিছুক্ষন পর ঈশিকা ছেড়ে দিয়ে কপালে কপাল ঠেকিয়ে আমান বললো,
—-” এই ৬ দিনের জমানো পাওনার হিসাব আর আগামী দু’দিনের অগ্রীম পাওনা হিসাব। বুঝে নিলাম।”

তারপর ঈশিকার গাল দুটো নিজের হাতের আজলে নিয়ে কপালে আস্তে করে চুমু খেলো। ঈশিকার চোখের দিকে তাকিয়ে বললো,
—-” খুব মিস করবো তোমাকে লক্ষীটা।”
ঈশিকা নিচের দিকে তাকিয়ে কাঁপাকাঁপা কন্ঠে ঠেকে ঠেকে বললো,
—-” আ..আমিও।”
কথাটা শুনেই আমান হেসে ফেললো। তারপর ঈশিকাকে ছেড়ে গাড়ি স্টার্ট দিয়ে একেবারে ঈশিকাদের বাড়ির মোরে এসে থামালো। তারপর
গাড়ি থেকে নেমে গেলো ঈশিকা। ফের ঘুরে তাকালো আমানের দিকে। কিছু একটা বলতে চেয়েও বলতে পারলো না। ফের সামনে তাকিয়ে জোরে জোরে পা ফেলে চলে গেলো বাড়ির দিকে। কেনো যেনো খুব কান্না পাচ্ছে।

আমান ঈশিকার যাওয়ার দিক কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে ফের একটা ছোট করে শ্বাস ফেলে গাড়ি ঘুরিয়ে এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে চলে গেলো।
.
.
.
চলবে…
® ঊর্মি ধর

Adorable Love পর্ব : ০৭

0

#Adorable_Love ?
পর্ব : ০৭
লেখা : ঊর্মি ধর
.
.
.
আমান ঈশিকাদের বাড়ির বেশ খানিকটা আগে গাড়ি থামালো। নোভাকে আসার পথে কল করে আগেই সেখানে আসতে বলে রেখেছিলো সে। দেখলো রাস্তার একটু আগে নোভা দাঁড়িয়ে ফোন চাপছে। ওরা যে এসেছে সেটা হয়তো খেয়াল করেনি। আমান ঈশিকার দিকে তাকাতেই বুকের ভেতরেটা মোচড় দিয়ে উঠলো তার। এখনি চলে যাবে মেয়েটা। আবার কবে একটু এতো কাছে পাবে কে জানে! এই কিছু সময়ের মধ্যেই মেয়েটার নেশা আরো তীব্রভাবে ঝেঁকে ধরেছে তাকে। নাহ! এবার তাড়াতাড়ি কিছু একটা ব্যাবস্থা করতে হবে। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ঈশিকাকে ডেকে ঘুম থেকে তুললো আমান। তারপর ঈশিকার ব্যাগ আর ফোনটা হাতে দিয়ে নরম গলায় বললো,
—-” নিয়মমাফিক খাবে। খাওয়ায় যেনো কোনো গাফিলতি না হয়। আর মনে করে মেডিসিন নেবে৷ পা পুরোপুরি ঠিক না হওয়া পর্যন্ত ভার্সিটি যাবার দরকার নেই। কল করলে কল ধরবে৷ ফোন বন্ধ রাখবে না।”

ঈশিকা বাধ্য মেয়ের মতো মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিলো৷ কিন্তু মুখে কিছু বললো না। তার ভেতরেও কেমন যেনো শূন্যতা অনুভব করছে। মনটা নিমিষেই খারাপ হয়ে যাচ্ছে। হঠাৎ ই আমান ঈশিকার হাত ধরে কিছুটা কাছে টেনে এনে কপালে গভীর ভাবে চুমু খেয়ে বললো,
—-” নিজের খেয়াল রেখো লক্ষীটা!”
ঈশিকা “হুম” বলে মাথা নিচু করে রইলো।

এরইমধ্যে হঠাৎ নোভা আমানের গাড়ি দেখতে পেয়ে এগিয়ে এলো। ঈশিকা সামনে তাকিয়ে নোভাকে দেখে আমানের দিকে প্রশ্নবিদ্ধ চোখে তাকালে আমান বললো,
—-” আমি আসতে বলেছি ওকে।”
ঈশিকা আর কিছু বললো না। গাড়ির ডোর খুলে নামলে নোভা কাছে এসে ধরলো। বললো,
—-” কিরে পায়ের কি অবস্থা?”
—-” আগের থেকে কিছুটা ভালো।”
তারপর আমানের দিকে তাকিয়ে বললো,
—-” আসছি…!”
আমান মৃদু হেসে মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিলো। ঈশিকা সামনে তাকিয়ে ফের পেছনে তাকিয়ে মলিন হেসে বললো,
—” ভালো থাকবেন।”
বলে আর দাড়ালো না। নোভার হাত ধরে আস্তে আস্তে এগিয়ে গেলো। আমানও ঈশিকার যাওয়ার দিক কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে ফস করে একটা শ্বাস ফেলে গাড়ি ঘুরিয়ে চলে গেলো। উফ! এতো কেনো কষ্ট হচ্ছে!!!

প্রথম কথাটা নোভাই শুরু করলো।
—-” ব্যাপারটা কি বলতো? আমান ভাইয়া কাল হুট করে এসে অমন করে নিয়ে গেলো তোকে। আবার কল করে আমাকে বললো আন্টিকে বলতে যে তুই আমার বাসায় থাকবি দুদিন। আবার আজকেই বললো তোদের বাড়ির কাছে আসতে তোর নাকি পায়ে চোট! মানে বুঝলাম না! কাহিনি কি?”

ঈশিকা থেমে গিয়ে নোভার দিকে তাকিয়ে বললো,
—-” পরে সব বলবো তোকে। আপাতত বাসায় এ ব্যাপারে কিছু বলিস না।”
—-” আচ্ছা ঠিকাছে। আর সে তো আমি এমনিতেও বলবো না। ভাইয়া আগেই নিষেধ করে দিয়েছে।”
ঈশিকা আর কিছু বললো না। ভেতরটা হঠাৎ ই গুমোট মেরে আছে!
.
.
.
ঈশিকা কলিংবেল চাপতেই কাজের মহিলা দরজা খুলে দিলো। ঘরে ঢুকতেই আফসানা চৌধুরী এগিয়ে এলেন। ঈশিকাকে দেখে হাল্কা রাগ মেশানো গলায় বললো,
—-” কি? বেড়ানো শেষ? তা আজকেই এলে কেনো? দু’দিন না থাকার কথা ছিলো?”
ঈশিকা উত্তর না দিয়ে নোভার হাত ধরে আস্তে আস্তে সোফায় বসতে নিলে আফসানা চৌধুরীর চোখ যায় পায়ের দিকে। ভ্রু কুচকে বললো,
—-” একিরে! পায়ের আঙ্গুলে ব্যান্ডেজ কিসের?”
ঈশিকা কি বলবে বুঝতে পারছে না। নোভাই কিছু একটা ভেবে আমতা আমতা করে বললো,
—-” আসলে আন্টি…বাথরুমে পা পিছলে পরে গেছিলো। তাই আঙ্গুলে একটু চোট পেয়েছে৷”
—-” একটু চোট পেলে ব্যান্ডেজ কেনো!? আর হ্যাঁ রে…তুই কি কোনো কালেও নিজের খেয়াল রাখতে শিখবি না? এতো বড় মেয়ে…”
—-” আন্টি থাক না…মেজর কিছুনা। আর ইচ্ছা করে তো আর পরেনি। এক্সিডেন্ট ছিলো মাত্র৷” বাধা দিয়ে বললো নোভা। আর ঈশিকা বকা শুনে মুখ হাড়ি বানিয়ে আছে৷ সব দোষ ওই লম্বু শয়তান টার।

আফসানা চৌধুরী আর কিছু বললো না। বিরক্তি নিয়ে নোভা কে বলে ঈশিকাকে ঘরে নিয়ে যেতে বললেন। এরমধেই ঈশিকার ভাই ইয়ান ফুটবল খেলে এসে মাটি পা নিয়ে ঘরে ঢুকলো। এবার আফসানা চৌধুরীর মেজাজ আরো খারাপ হয়ে গেলো। লেগে পরলো তার পিছনে। ঈশিকার ওপরের রাগ যেনো তার ওপর ঝারছে।
.
.
.
.
আমান বাড়ি ফিরলো সন্ধ্যার একটু আগে। আমানকে দেখে আরমান আহমেদ আর রাজিয়া বেগম অবাক ই হলেন। ছেলের তো দু’দিনের আগে বাড়ি মুখো হওয়ার কথা ছিলোনা। হঠাৎ আজকেই ফিরে এলো! আরমান আহমেদ কারণ জানতে চাইলে আমান অন্য বাহানা দেখিয়ে কাটিয়ে দিয়ে ওপরে চলে গেলো। রাজিয়া বেগমও আর বিশেষ কিছু বললেন না। খুব রাগ অভিমান জমে আছে ছেলের ওপর। বয়স আটাশ এর কোটায় অথচ খাম খেয়ালি পনা গেলো না। আগে তো বিয়ে থার কথা বললে কাটিয়ে যেতো আর এখন তো…! সব কিছুতেই নিজের মর্জির মালিক সে।
.
.
রাতে অফিস থেকে ফিরে ইফতেখার চৌধুরী মেয়ের পা এর খবর শুনে ছুটে এলেন মেয়ের ঘরে৷ মেয়েটা তার বড্ড আদরের৷ আরো চেহারাখানা তার মায়ের মতো হয়েছে কিনা? মেয়েটাকে দেখলেই মায়ের কথা মনে পরে যায়। কিন্তু এসে দেখলেন ঘুমিয়ে গেছে ঈশিকা। তিনি আর জাগালেন না তাকে। মেয়ের কপালে চুমু খেয়ে গায়ে চাদর টেনে বাতি নিভিয়ে দিয়ে চলে গেলেন।
.
.
আমানের ঘুম ভেঙে গেলো রাত এগারোটার দিক। ভীষন টায়ার্ড লাগায় এসেই ফ্রেস হয়ে খেয়ে শুয়ে পরেছিলো। তার আগে যদিও দুবার ঈশিকাকে কল করেছিলো কিন্তু ফোন বন্ধ তার৷ এতো পই পই করে বলে দিলো ফোন বন্ধ না রাখতে অথচ কে শোনে কার কথা? সে আর তার ঘুম একদিকে তো বাকি দুনিয়া আরেকদিকে। কে জানে পায়ের কি হাল? খেলো কিনা ঠিকমতো? নাকি না খেয়েই ঘুমিয়ে পরেছে। খাওয়া নিয়ে যে ঝামেলা করে বাচ্চাদের মতো!!

ঈশিকাকে একবার কল করার কথা ভেবেও করলো না আমান। এখন ফোন অন থাকলেও নিশ্চয়ই ঘুমিয়ে পরেছে। সেদিন রাতের কথা পরতেই হাসি পেয়ে গেলো আমানের। কেমন ভুতের ভয়ে বাচ্চাদের মতো গুটিশুটি মেরে তার বুকের সাথে সেটে শুয়ে ছিলো! আমান আনমনে হেসে পাশবালিশটা জড়িয়ে ধরেই বিড়বিড় করে বললো,

” সারাজীবনের জন্য এই বুকের পাজরের ভেতর রেখে দিতে চাই তোমায় ঈশু! বড্ড ভালোবাসি যে লক্ষীটা!”
.
.
.
চলবে…
® ঊর্মি ধর

Adorable Love পর্ব : ০৬

0

#Adorable_Love ?
পর্ব : ০৬
লেখা : ঊর্মি ধর
.
.
.
ঈশিকা কিচেন কেবিনেটের ওপর বসে পা দুলিয়ে দুলিয়ে আপেলে কামড় বসাচ্ছে। আর আমান ব্রেকফাস্ট বানাচ্ছে।সকাল থেকেই মেয়েটা আমানের পেছন পেছন ঘুরঘুর করছে। ঘরে একা রেখে আমান কিচেনে আসতে চাইলে জোর করেই কিচেনে এসেছে। অবশ্য কারণখানা আমান যদিও বুঝেছে কিন্তু কিছু বলছে না। কালকের ঘটনা শুনলে ভারি লজ্জা পাবে। হয়তো বিশ্বাস ই করবে না…উলটে হয়তো তাকেই মিথ্যাবাদী বানিয়ে দেবে। যে মেয়ে!!

ঈশিকা আপেল খেতে খেতে আড়চোখে আমানকে দেখছে।
আমান তা খেয়াল করে ডিম ভাজতে ভাজতে বললো,
—-” কি দেখছো হুম?”
—-” দেখছি না…ভাবছি।”
—-” কি?” ঈশিকার দিকে তাকিয়ে।
—-” এই যে…আপনি বিজনেসম্যান না হয়ে বাবুর্চি হলে আপনাকে বেশ মানাতো।” বলেই হুহু করে হেসে উঠলো ঈশিকা।

আমান হা হয়ে তাকিয়ে আছে ঈশিকার দিকে। কে বলবে এই মেয়ে কাল রাতে অমন খারাপ স্বপ্ন দেখে কেঁপে ঝুপে অস্থির হয়েছে। অথচ এখন দিব্যি বিচ্ছুপনা করছে। মাথার ভেতর খালি বিটলেমি বুদ্ধি গিরগির করে।

—-” ঈশু…শেফ বললেও শুনতে ভালো লাগতো। কিন্তু বাবুর্চি! কেমন শোনায়! আর তোমার ভাগ্য কতো ভালো একবার ভেবে দেখেছো? তোমার বর তোমাকে রেধে খাওয়াচ্ছে! যেটা সব মেয়েরই এক্সপেক্টেশন। ”
—-” হুহ! ভালো হয়েছে…আর আপনার সাথে যা মানাবে তাই তো বলবো নাকি?” বলেই আবার হাসতে লাগলো।

আমান ভেবেছিলো ঈশিকাকে আর ভয় দেখবো না। কিন্তু এর দস্যিপনা কমাতে হবে। খালি তাকে হেনস্তা করা? ভালোবাসে বলে কি গোটা মাথা বেচে দেবে নাকি? মনে মনে বললো দাঁড়াও দেখাচ্ছি মজা।

—-” কাল রাতে তো বেশ আয়েশ করে ঘুমাচ্ছিলে। খবর জানো কি? তারা কিন্তু এসেছিলো তোমাকে নিতে।” ভ্রু নাচিয়ে বললো আমান।
—-” কারা?” আপেল খেতে খেতে নির্বিকার ভঙ্গিতে বললো ঈশিকা।
—” ওইযে…যারা কথা না শুনলে ঘাড় মটকে দেয়।”

ইশিকার চাবানো বন্ধ হয়ে গেলো। ভয়ে ভয়ে বললো,
—-” এএইই…এতো মিথ্যা বলেন কেন আপনি? কই আমিতো দেখলাম না। ”
—-” আরে মিথ্যা বলবো কেনো? সত্যি এসেছিলো। চুপিচুপি দেখেছি আমি। আর তুমি দেখবে কিভাবে? যে হারে ঘুমাচ্ছিলে! তোমাকে খুব পছন্দ হয়েছে মনে হয়। কিন্তু আমাকে দেখে আর সাহস পায়নি নেওয়ার। আমাকে তো কাছে থাকতেই দিচ্ছিলে না।এবার দেখলেতো আমার জন্যই বেঁচে গেলে।”

ঈশিকা কিছু বলছে না। চোখ মুখ কুচকে বার বার ঢোক গিলছে। আর আমান বেশ মজা পাচ্ছে। আমান বললো,
—” কি হলো চুপ কেনো? ভয় পেলে নাকি?”
—-” আব আব..না তো আমি ভয় পাবো কেনো? এই ঈশিকা কাউকে ভয় পায় না বুঝেছেন?” ভাব নিয়ে।
—-” ওরেব্বাস! তাই নাকি? বেশ বেশ! তবে আমার কিন্তু একটু ভয় ই লাগছিলো। একেকটার যে চেহারা!!” বলে প্লেটে খাবার নিয়ে ঈশিকার মুখের সামনে ধরলো।

—-” কি হলো নাও।”
—-” আমার না এখানে একদম ভালোলাগছে না। বাড়ি যাবো। প্লিজ নিয়ে চলুন না।” কাঁদো কাঁদো মুখ করে বললো ঈশিকা।
—-” আচ্ছা কাল….
—-” আজকেই…প্রমিস আপনার সব কথা শুনবো। তাও আজকেই প্লিজ বাড়ি নিয়ে চলুন প্লিজ!”

ঈশিকার মুখখানা দেখে আমানের খুব মায়া হলো। বুঝলো এখানে ঈশিকা কম্ফোর্ট ফিল করছে না। হেসে বললো,
—-” আচ্ছা ঠিকাছে ঠিকাছে। আজকেই নিয়ে যাবো। এখন খাও।”
ঈশিকা মুখে হাসি টেনে খাবার মুখে নিলো। আমান তো শুধু ঈশিকাকে ওর সাথে ইজি হওয়ার জন্য এ দু’দিন এখানে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
তবে মেয়েটার ভয়ার্ত চেহারা দেখতে বেশ লাগে তার। কেমন চোখ বড় বড় করে ঢোক গেলে। দেখলেই চটকে খেয়ে ফেলতে মন চায়। তাইতো সে ভয় দেখিয়ে মজা পায়। তবে যদি জানে মিথ্যে মিথ্যে ভয় দেখিয়েছে তাহলে কি যে করবে!! নাকের ডগায় যে রাগ!!!
.
.
.
আমান ড্রাইভ করছে আর একটু পর পর ঈশিকাকে দেখছে। সিটে মাথা এলিয়ে ঘুমিয়ে আছে। আচ্ছা সব মেয়েকেই কি ঘুমন্ত অবস্থায় এতো মিষ্টি লাগে? এই যে এখন যেমন তার বাচ্চা বউটাকে লাগছে। হঠাৎ ই আমানের মনে পরে গেলো ঈশিকাকে প্রথম দেখার কথা। ডুব দিলো অতীতে….
.
.
.
.
সেদিন কোম্পানির এক নিউ ক্লায়েন্ট নাহিদ খানের ছেলের বিয়ের ইনভাইটেশন এ গিয়েছিলো সে। আরমান আহমেদ ছেলেকে বিজনেসের সব বুঝিয়ে দিয়ে সকল কার্য থেকে অবসর নিয়েছেন বিধায় আমানকেই একা হাতে সবটা সামলাতে হয়। সেখানে গিয়ে সবার সাথে কিছুক্ষন কথা বলার পর একটা ফোন কল আসলে ড্রিংক হাতে পুল সাইডের দিকে চলে যায় আমান। ফোনে কথা বলতে বলতে হঠাৎ ই চোখ চলে যায় বা দিকে। একটু দূরে একটা মেয়ে কয়েকটা পিচ্চিকে নিয়ে ফানুশ ওড়াচ্ছে। পরনে বেবি পিংক আর গোল্ডেন কম্বিনেশন এর লেহেঙ্গা। ছোট চুলগুলো মাঝখানে সিঁথী করে ছাড়া। সাথে মিষ্টি সাজ। মেয়েটা কিছু একটা বলে খিলখিলয়ে গা দুলিয়ে হাসছে আর পিচ্চিগুলোর হাত ধরিয়ে ফানুশগুলো এক এক করে ওড়াচ্ছে। হাসির সাথে তাল মিলিয়ে চুল গায়ের গয়না গুলোও দুলছে। আমান এক ধ্যান এ মেয়েটার দিকে তাকিয়ে আছে। মেয়েটার গতিবিধি কেনো যেনো খুব আকর্ষিত আর মুগ্ধ করছিলো তাকে। হঠাৎ ই ধ্যান ভাঙে ফোন কলের কারো কন্ঠের আওয়াজে। তারপর চোখ ফিরিয়ে অন্য দিক ঘুরে কথা সেরে কল কেটে আবার তাকাতে দেখে মেয়েটা সেখানে নেই। আশেপাশে তাকিয়েও খুঁজে পেলো না।

তারপর মৃদু হেসে চলে আসে গার্ডেন সাইডে। কিছুক্ষন পরে হঠাৎ এক মেয়েলি কন্ঠ বলে উঠলো….
—-“এক্সকিউজ মি!”
আমান ঘুরে তাকিয়ে দেখলো ফানুশ ওড়াচ্ছিল সেই মেয়েটা। এবার খুব কাছ থেকে মেয়েটাকে দেখতে পেলো আমান। ফর্সা গোলগাল চেহারার সাথে হাল্কা বোঁচা নাক, চকচকে চোখ জোড়ার সাথে মুখে মিষ্টি হাসি। চেহারায় বাচ্চা বাচ্চা ভাব। সারামুখে যেনো এক অদ্ভুদ স্নিগ্ধতা ছেয়ে আছে।

আমান স্বাভাবিক ভাবে বললো,
—-” ইয়েস?”
—-” ইফ ইউ ডোন্ট মাইড… আমি কি আপনার সাথে একটা সেল্ফি তুলতে পারি?” হাসি হাসি মুখ করে।
—-” আমার সাথে?”
মেয়েটা পেছনে ঘুরে সামনে তাকিয়ে বললো,
—-” অ্যাকচুয়েলি…এটা একটা হার জিতের ব্যাপার। তাই প্লিজ না করবেন না। জাস্ট একটা সেল্ফি হলেই চলবে।”
আমান ভ্রু কুচকে বললো,
—-” মানে? ঠিক বুঝলাম না।”
এবার মাথাটা নিচু করে ফিসফিস বললো,
—-” মানে হলো ওইযে আমার বন্ধুরা। ওরা আমার সাথে বাজি ধরেছে। যদি আপনার সাথে সেল্ফি তুলতে পারি তাহলে কালকে ওরা আমাকে ট্রিট দেবে। আর না পারলে ওই খাদক গুলোকে আমার টাকায় খাওয়াতে হবে।”

আমান দেখলো একটু দূরে কয়েকটা ছেলে মেয়ে দাঁড়িয়ে ওদের দিকে উৎসাহ নিয়ে তাকিয়ে আছে। মেয়েটা আবার বললো,
—-” তাই প্লিজ আমার টাকা গুলো রক্ষা করে দিন। প্লিজ!” অনুরোধের সুরে।

মেয়েটার বাচ্চামি কথার ভাব দেখে আমানের হাসি পেয়ে গেলো। কোনোমতে হাসি আটকিয়ে বললো,
—-” ওকে…নিন।”
মেয়েটা জয়ের হাসি হেসে সেল্ফি নিলো। তারপর বললো,
—-” থ্যাংক ইউ…বাই দ্য ওয়ে আমি ঈশিকা…ঈশিকা চৌধুরী।”
—-” আমান আহমেদ।”
—-” আপনি নাহিদ আংকেলের…..? ”
—-” বিজনেস ক্লায়েন্ট ।”
—-” ওহ আচ্ছা! আমি নোভা মানে নাহিদ আংকেলের ভাতিজির ফ্রেন্ড।”
—-” ওহ! নাইস টু মিট ইউ।” হাল্কা হেসে।
—-” সেইম হেয়ার…তো এখন আসি? সেল্ফিটা দেখাতে হবে ওদের।” খুশিতে টগবগিয়ে বললো ঈশিকা।
—-” শিওর..।”

ঈশিকা প্রায় ছুটে চলে গেলো। আমান ঈশিকার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়িয়ে আনমনে হাসলো।
.
.
.
চলবে…
® ঊর্মি ধর

Adorable Love পর্ব : ০৫

0

#Adorable_Love ?
পর্ব : ০৫
লেখা : ঊর্মি ধর
.
.
রাত প্রায় নয়টা। চাদর মুড়ি দিয়ে একদম গুটিশুটি মেরে শুয়ে আছে ঈশিকা। সেই যে সন্ধ্যার আগে ঘুমিয়েছে আর উঠার নাম নেই। ব্লান্ট কাট চুলগুলো মুখের ওপর এলোমেলো হয়ে পরে আছে। সামান্য কিছু চুল ঠোঁটের ভাজের এক পাশে গিয়ে মিশেছে। ফোলা ঠোঁট জোড়া লাল টকটকে হয়ে আছে।

আমান ট্রেতে করে খাবার নিয়ে এসে ঈশিকার পাশে বসে আছে। এক ধ্যান এ চেয়ে আছে ঈশিকার দিকে। ঘুমন্ত অবস্থায় কি নিষ্পাপ লাগছে মেয়েটাকে। এই এক মুখখানার দিকে তাকিয়ে বোধ হয় হাজার জনম পার করে দিতে পারে সে।

—-” ঈশু ওঠো…খেয়ে আবার ঘুমাও।”
—-” উম…”
—” কি উম? ওঠো….খাবার খেয়ে আবার মেডিসিন খেতে হবে। ঈশু…ওঠো না লক্ষীটা…”
—-” উফ! কি শুরু করেছেন আপনি? শান্তিতে কি একটু ঘুমাতেও দেবেন না নাকি? বিরক্তি নিয়ে উঠে বললো ঈশিকা।
—-” সন্ধ্যার আগে থেকে ঘুমিয়েই তো যাচ্ছো। আর কতো ঘুমাতে হয়? এবার খাবে এসো…”
—-” খাবোনা আমি…ঘুমাবো এখন। যান তো।” বলে যেই শুতে নেবে ওমনি আমান গম্ভীর সুরে বললো,
—-” বারবার এমন খাবার নিয়ে ঝামেলা করা আমার কিন্তু ভালো লাগছে না। এবার পিটানি কিন্তু একটাও মাটিতে পরবে না।”

ব্যস! কাজ হয়ে গেলো। এই ছেলের যে রাগ…কথা না শুনলে মেরে হাড়গোড় ভেঙ্গেও দিতে পারে। শেষমেশ নামের আগে “ল্যাংড়া” শব্দ জুড়ে যাবে! ঈশিকা চুপচাপ সোজা হয়ে বসলো। আমান মুখ টিপে হেসে ঈশিকাকে খাইয়ে দিতে লাগলো সাথে নিজেও খাচ্ছে।

—” আর খাবোনা।”
—” আর একটু?”
—” না প্লিজ!”
আমান আর জোড় করলো না। এরপর যেই ট্রে থেকে দুধের গ্লাস উঠিয়ে ঈশিকার দিকে তাকালো। ঈশিকা ওমনি দুই হাত দিয়ে নাক মুখ চেপে এপাশ ওপাশ মাথা নাড়িয়ে “না” ইশারা করলো। আমান শক্ত ভাবে বললো,
—-” একটা কথাও চলবে না। চুপচাপ পুরোটা খাবে।”
—” না প্লিজ! দুধের গন্ধ ভালো লাগে না আমার। বমি আসে।” মুখ চেপে ধরেই কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বললো ঈশিকা।
—” আসবে না। নাক চেপে ধরে এক চুমুক দেবে। নাও।” বলেই গ্লাস টা এগিয়ে দিলো।

সঙ্গে সঙ্গে মুখ চেপে ধরেই পিছিয়ে গেলো ঈশিকা।
—” হুম বুঝেছি…আবার কিসি থ্যারাপিটা দিতে হবে। তাতে অবশ্য আমারই ভালো। তবে এইবার আর এক ঘন্টার নিচে ছাড়ছিনা।” পৈচাশিক হাসি হেসে বললো আমান।

আমানের কথা শুনে ঈশিকার চোখ বড় বড় হয়ে গেলো। এক ঘন্টা! এতো দম আটকে মারার পায়তারা করছে এই ছেলে! এরপর যেই আমান এগিয়ে আসতে নিলো ওমনি মুখ থেকে হাত সরিয়ে দিয়ে তড়িঘড়ি করে বললো,
—-” না না…খাবো তো…দিন।”
—-” গুড গার্ল!” মুচকি হেসে।

ঈশিকা নাক চেপে ধরে কোনোমতে গ্লাস টা খালি করলো। সাথে মনে মনে আমানকে বকে তুলোধুনো করলো। তারপর আমান জল খাইয়ে একটা পেইন কিলার খাইয়ে দিলো। ঈশিকা আমানকে মুখ ভেংচি দিয়ে ধপ করে আবার চাদর মুড়ি দিয়ে শুয়ে পরলো। আমান হেসে ট্রে টা নিচে রাখতে চলে গেলো।

আমান ঘরে এসে যেই ঈশিকার পাশে শুয়ে ঈশিকাকে জড়িয়ে ধরলো। ওমনি ঈশিকা চোখ খুলে বিচলিত ভঙ্গিতে বললো,
—-” এই এই। আপনি এখানে শুচ্ছেন কেনো?”
—” তো কোথায় শুবো?” অবাক হয়ে।
—-” এতো বড় বাড়ি…একটাই ঘর নাকি? আমি একা ছাড়া ঘুমাতে পারি না। যান অন্য ঘরে গিয়ে ঘুমান।”
—-” এ্যাহ! বললেই হলো নাকি? এখন আর একা ঘুমানো যাবে না। অভ্যাস পাল্টাও। আর আজকে তো আমাদের বাসর রাত। বাসর রাতে কি বর বউ আলাদা থাকে নাকি?”
—” নিকুচি করেছে আপনার বাসর রাতের! আপনি যাবেন?
নাকি আমি উঠে চলে যাবো?” রেগে বললো ঈশিকা।

আমান কিছু একটা ভেবে তারপর দুম করে ঈশিকার কপালে চুমু খেয়ে বললো,
—” ওক্কে সুইটহার্ট! তোমার যেতে হবে না। আমিই যাচ্ছি। তুমি বরং একা ঘরে শুয়ে শান্তিতে ভুতের সাথে বাসর করো কেমন?” মিষ্টি হেসে।

এবার ঈশিকার সব ঘুম কর্পূরের মতো উবে গেলো। বড় বড় চোখ করে বললো,
—-“ভু ভু..ভুত!!”
—-” হুম। এই এলাকায় ভীষন উপদ্রব এদের। সবার বাড়ি বাড়ি প্রতি রাতে হানা দেয়। আর নতুন মানুষ পেলে তো কথাই নেই। সাথে করে নিয়ে যায় ওদের রাজ্যে। তারপর কাঁচা মাছ খাইয়ে ডামাডোল বাজিয়ে ঘুঙুর পরিয়ে নাচায়। আর কথা না শুনলেই ঘাড় মটকে দেয়।”

ঈশিকার ভয় পাওয়ার বস্তুরগুলোর তালিকার মধ্যে প্রথম বস্তুটি হলো এই ভুত। ছোটবেলায় জুজু বুড়ি, মামদো ভুত, মেছো ভুত, পেটকা ভুত সব ভুতেরই গল্প শোনাতো তার দাদী। এখন বড় হয়ে হরর ফিল্মগুলো দেখে ভয়টা দ্বিগুণ বেড়েছে।
মনে মনে বললো, “আল্লাহ! এই কোন জায়গায় আমাকে আনলো এই ছেলে! বাইরে মেয়েধরা তো ভেতরে ভুত!!! এবার নির্ঘাত সে মরে যাবে।”

—” ঠিকাছে…আমি যাচ্ছি তাহলে। হ্যাভ আ নাইস ড্রিম উইথ ভুতস!” বলে আমান উঠে যেতে নিলে ঈশিকা আতংকভাবে “নাআ” বলে আমানের টি শার্ট টেনে ধরে।
—” কি হলো? এই তো তাড়াতে চাইছিলে। আবার না কেনো? ” এক ভ্রু উঁচু করে।
—” না মানে বলছিলাম যে… এতো বড় বিছানা থাকতে অন্য ঘরে থাকার দরকার কি? এখানেই থাকুন না। আমার একটুও সমস্যা হবে না সত্যি।” মেকি হেসে।

আমানের ভ্রু উঁচিয়ে তাকিয়ে থাকা দেখে ঈশিকা এবার অনুরোধের গলায় বললো,
—” প্লিজ থাকুন না।”

যাক কাজ হয়েছে! আমান হেসে ঈশিকাকে জড়িয়ে ধরে গালে চুমু খেয়ে শুয়ে পরলো। ঈশিকাও একেবারে আমানের সাথে লেগে কাচুমাচু হয়ে শুয়ে রইলো।
বাসর না হোক… ভুতের ভয়ে জড়িয়ে ধরে তো আছে। নাই মামার থেকে কানা মামাই ঢের ভালো।
.
.
.
.
মাঝরাতে কারো ফুপিয়ে কান্নার আওয়াজে ঘুম ভেঙে যায় আমানের। দেখে ঈশিকা ওকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে আর কাঁপছে।

—-” ঈশু..এইইই ঈশু? কাঁদছো কেনো? এই কি হয়েছে লক্ষীটা!? খারাপ স্বপ্ন দেখেছো?”
কান্না কিছুতেই থামছে না। ঈশিকা জড়ানো গলায় বলে,
—-” ওওওরা আমমমাকে নিয়ে গেল্লো…আয়ামিইইই যাযাবো নাআআ….”
—-“কে নিয়ে যাবে? কিছু হবেনা…আমি আছি তো… এই মেয়ে স্বাভাবিক হও। ঈশু…ভয় পাচ্ছি কিন্তু আমি এবার।”
একেবারে হেচকি উঠে গেছে কান্নার তোড়ে। আমান দিশাহারা হয়ে বললো,
—” এই জল খাবে? আচ্ছা একটু ছাড়ো জল দিচ্ছি আমি।” বলে যেই ঈশিকাকে ছাড়াতে যাবে ওমনি “না…না” বলে কান্না দিগুণ করে আমানকে খামচে ধরলো ঈশিকা।
আমান উপায় না পেয়ে ঈশিকাকে বুকের মধ্যে চেপে ধরে মাথায় হাত বুলিয়ে শান্ত করার চেষ্টা করলো।

এভাবে অনেকক্ষন পর শান্ত হয়ে কান্নার তোড় কমলো। এখন আমানের টি শার্ট খামচে ধরে বুকের সাথে একেবারে লেগে ঘুমিয়ে আছে ঈশিকা।

আমান বুঝলো নিশ্চয়ই খারাপ কোনো স্বপ্ন দেখেছে মেয়েটা। এসব ভুত প্রেতের গল্প বলা ঠিক হয়নি। এমনি যে ভীতু…আবার না বললেও তো জেদ করে অন্য ঘরে চলে যেতো। তখন কেমন হতো ব্যাপারখানা? কই এখন সে বাসর করবে তা না। জড়িয়ে ধরে দুধের স্বাদ ঘোলে মেটাচ্ছে। মেয়েটাকে জান দিয়ে ভালোবাসে বলে জোড় করে কিছু করতে চায় না। অনেক কষ্টে সামলাচ্ছে নিজেকে সে।

আমান বিড়বিড় করে বললো, —-” খুব তাড়াতাড়িই তোমাকে আমার ঘরে নিয়ে যাবো ঈশু। তারপর আর কোনো তালবাহানাই শুনবো না। কোনো বাধাই মানবো না। এক্কেবারে পুরোপুরি নিজের করে নেবো।”
বলেই ঈশিকাকে শক্ত করে বুকের সাথে চেপে ধরে কপালের পাশে চুমু খেলো।
.
.
.
চলবে…
® ঊর্মি ধর

Adorable Love পর্ব : ০৪

0

#Adorable_Love ?
পর্ব : ০৪
লেখা : ঊর্মি ধর
.
.
ঈশিকা জানালার ধারে চেয়ার এ বসে পরন্ত বিকেল দেখতে ব্যস্ত। সাথে আছে মনে একরাশ এলোমেলো ভাবনা৷ জীবন সত্যি বৈচিত্রময়। কখন যে কোন চিত্র দেখিয়ে দেয় তার কোনো ঠিক ঠিকানা নেই। প্রথমে বিয়ের ব্যাপারটা মেনে নিতে কঠিন লাগলেও এখন সেরকম কিছু মনে হচ্ছেনা। অদ্ভুতভাবে বিয়েটা আর আমানকে নিয়ে ভাবতে ভালো লাগছে তার।

আমান ঈশিকাকে ঘুমানোর জন্য শুইয়ে দিয়ে বাগানে গেছিলো হাঁটতে। আসলে মূলত সিগারেট খেতে৷ ঘরে খেলে ঈশিকার সমস্যা হবে ভেবে বাইরে চলে আসে। সেখানে বাগানের মালির সাথে কথা বলে বেশ কিছুক্ষন পরে রুমে যায়। রুমে গিয়ে দেখে ঈশিকা জানালার পাশে বসে বাইরে তাকিয়ে আছে এক ধ্যান এ। আমান গিয়ে ঈশিকাকে পেছন থেকে নিচু হয়ে জড়িয়ে ধরে। ঈশিকা প্রথমে চমকে গেলেও বুঝতে পারে ব্যক্তিটি কে। আমান ঈশিকার কাধে থুতনি ঠেকিয়ে বলে,
—-” ঘুমাওনি? কি ভাবছো এতো?”
—-” কিছুনা।” মলিন গলায় বলে ঈশিকা।
—-” মন খারাপ?”
ঈশিকা উত্তর না দিয়ে কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো,
—-” আপনি তখন আমাকে রেসিস্ট বললেন কেনো?”

আমান বুঝলো…কথাটা ঈশিকার ইগোতে লেগেছে। মেয়েটা সব কথাই খুব সিরিয়াসলি নিয়ে নেয়। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে আমান বললো,
—” তো কি? রেসিস্ট হওয়া কি খারাপ কিছু নাকি? আমি তো মনে করি এতে এলিগেন্স এর ব্যাপার আছে।
—” কিন্তু আমি মোটেও এমন না। আমি কাউকে নিচু চোখে দেখি না। সবাইকেই সমান চোখে দেখি।” পেছন ঘুরে আমানের দিকে তাকিয়ে বললো ঈশিকা।
আমান হেসে বললো,
—” আচ্ছা বাবা ঠিকাছে। আমারই বুঝতে ভুল হয়েছে।তার জন্য আমি খুব খুব সরি!”

ঈশিকা কিছু না বলে অভিমানী মুখ করে অন্য দিকে মুখ ঘোরালো। আমান এবার হাত দিয়ে কান দুটো ধরে বললো,
—-“ঈশু…এইযে কান ধরে বললাম সরি। আর কখনো এমন বলবো না। এইবার আর মন খারাপ করে থেকোনা প্লিজ লক্ষী।”

আমানের কান ধরা দেখে ঈশিকার মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি এলো। মুখের ভাব স্বাভাবিক রেখে বললো,
—-” হুম সরি এক্সেপ্ট করতে পারি…তবে একটা শর্তে। ”
—” কি শর্ত বলো? যা বলবে তাই মঞ্জুর।”
—” কান ধরে পঞ্চাশ বার উঠবস করতে হবে।”
—-” কি!! পঞ্চাশবার!! বেশি হয়ে গেলো না? একটু কম করা যায়না? প্লিজ লক্ষীটা ..” করুন মুখ করে বললো আমান।
—-” উমম..আচ্ছা ঠিকাছে। উনপঞ্চাশ বার। এর একটুও কম হবে না। গুনবো কিন্তু আমি।” জোর গলায়।

আমান নিরুপায় হয়ে উঠবস করা শুরু করলো। এতবড় ছেলেকে এভাবে কান ধরে উঠবস করতে দেখে ঈশিকা আর হাসি আটকে রাখতে পারলো না। একবার গুনেই হা হা করে হাসতে লাগলো।
ঈশিকার হাসি দেখে আমানের মুখেও প্রশান্তির হাসি ফুটে উঠলো। যাক মন খারাপ কেটেছে।

এরপর আমান হুট করে এগিয়ে গিয়ে ঈশিকার গালে চুমু খেলো। এহেন আচমকা ঘটনায় চমকে গিয়ে ঈশিকার হাসি থেমে গেলো৷ ফের রাগের ভঙ্গিতে বললো,
—-” এই এই একদম চিটিং না। ধান্দাবাজ লোক। যান যান… আবার শুরু করুন।”

আমান কিছু না বলে আবারো হুট করে ঈশিকার ঠোঁটের উপর চুমু খেলো।
—” ইশ! ছিঃ আপনি সিগারেট খেয়েছেন? গন্ধ বেরিয়েছে। নেশাখোর লোক!” নাক মুখ কুচকে বললো ঈশিকা।

আমান অবাকের চুড়ান্ত পর্যায়। সামান্য একটা সিগারেটের জন্য এই মেয়ে তাকে ডিরেক্ট নেশাখোরের তকমা লাগিয়ে দিলো।

—” কি বললে! আমি নেশাখোর?!” অবাক হয়ে।
—” হ্যাঁ নেশাখোর। সিগারেট খান, মদ খান, গাঁজা খান। নেশাখোর লোক একটা।?
কিছুক্ষন পর আবার বললো,
—” দেখি সরুন… আমার ঘুম পেয়েছে ঘুমাবো৷” বলেই উঠে আস্তে আস্তে বিছানায় গেলো ঘুমোবার জন্য৷

আমান একেবারে আহাম্মক বনে গেছে। হা করে তাকিয়ে আছে ঈশিকার দিকে৷ সিগারেটটা সে মাঝেমাঝে খায় রেগুলার না৷ ড্রিংক ও কোনো বিশেষ কারণ ছাড়া করেনা৷ কিন্তু গাঁজা!!! এই মেয়ের দৌলতে আর কি কি শুনতে হয় আল্লাহ মালুম!!
.
.
_________________________________________________সন্ধ্যা বেলায় রাজিয়া বেগম চা এনে আরমান আহমেদ এর দিকে এগিয়ে দিয়ে জিজ্ঞেস করলেন,
—-” ছেলের খবর জানলে?”
—-” হুম। জাহিদ বললো সে নাকি ব্রেকে আছে। দু’দিন পর্যন্ত। বাড়ি আসবে না।” চা এর কাপে চুমুক দিয়ে বললো আরমান আহমেদ।
—” কোথায় গেছে?”
—” তা কিছু বলেনি।”
—-” তো ফোন বন্ধ রাখার কি প্রয়োজন? এই ছেলের মতি গতি আমি বুঝিনা বাপু। হুটহাটই এভাবে নিরুদ্দেশ হয়ে যাওয়ার মানে কি।”
কিছুক্ষন থেমে আবার বললেন,
—-” ওরা কি একেবারেই না করে দিয়েছে বিয়েতে?”
—-” ফ্যামিলির সবারই সম্মতি আছে। শুধু মেয়েটা রাজি না।”

রাজিয়া বেগম এর মনে ক্ষোভ জমলো। তার একমাত্র অমন গুনবান সুদর্শন ছেলের জন্য যেখানে কিনা অগণিত সুন্দরী পাত্রীর বাবারা লাইন ধরে দাঁড়িয়ে আছে। সেখানে এই মেয়ে কিনা তাকে প্রত্যাখ্যান করে!?

আবার ছেলের উপরেও রাগ হলো ভীষন। ওই মেয়ে ছাড়া নাকি সে বিয়ে করবে না। তা সাফ জানিয়ে দিয়েছে৷ কি এমন দেখেছে ওই মেয়েতে যে ওই মেয়েকেই বিয়ে করতে হবে?! এখন আবারও নিরুদ্দেশ হয়েছে৷ নেহাতই ছেলেটাকে প্রানের থেকেও বেশি ভালোবাসে৷ একেবারে যক্ষের ধন তার। তাই কিছু বলতে পারেনা৷

চাপা রাগ আর ক্ষোভ মেশানো একটা শ্বাস ছাড়লো রাজিয়া বেগম।
.
.
.
চলবে…
® ঊর্মি ধর

Adorable Love পর্ব : ০৩

0

#Adorable_Love ?
পর্ব : ০৩
লেখা : ঊর্মি ধর
.
.
.
ইফতেখার চৌধুরী বই নিয়ে বারান্দায় এসে বসলেন। আজ তিনি অফিস কার্য থেকে ছুটি নিয়েছেন। শরীর নাকি বিশেষ ঠিক লাগছে না। এমন সময় আফসানা চৌধুরী এসে ক্ষোভ মেশানো কন্ঠে বললেন,
—-” তোমার মেয়ে কি পন করে রেখেছে যে আমার কোনো কথাই সে শুনবে না?”
—-” কেনো কি করলো আবার সে?” বইয়ের পাতা ওল্টাতে ওল্টাতে প্রশ্ন করলেন ইফতেখার চৌধুরী।
—- ” ভার্সিটি থেকে সোজা বান্ধবীর বাসায় গেছে সে। দু’দিন নাকি সেখানেই থাকবে। অনুষ্ঠান নেই কারণ নেই…কোনো মানে আছে সেখানে থাকার? আবার নিজে কথা বলেনি বান্ধবীকে দিয়ে ফোন করিয়ে বলেছে।”
কিছুক্ষন থেমে আবার বলতে লাগলেন,
—-“কাল এতো করে বুঝালাম বিয়ের জন্য…কিছুতেই বুঝলোনা! কি খারাপ আছে ওই ছেলের? দেখতে একেবারে রাজপুত্র। উচ্চবিত্ত ভালো ফ্যামিলি। আর সেখানে তোমার মেয়ে “না” বলে বসে আছে। এখন নাকি বিয়ে করবে না। বলি মেয়ে যখন হয়েছে বিয়ে তো একদিন করতেই হবে নাকি? সেটা এখন হলে সমস্যাটা কি?”
ইফতেখার চৌধুরীর কোনো প্রত্যুত্তর না পেয়ে আফসানা চৌধুরী গলার স্বর উঁচু করে বললেন,
—-” তুমি কি শুনতে পাচ্ছো না আমি কি বলছি?”
—-” হ্যাঁ? কি বললে?” বই থেকে মুখ তুলে জিজ্ঞেস করলেন ইফতেখার চৌধুরী। আফসানা চৌধুরী কিছুক্ষণ দাঁত চেপে তাকিয়ে রইলো তার দিকে।

—“বাপ, ছেলে, মেয়ে সব হয়েছে এক ধাঁচের। আমার কথার কোনো দামই নেই এদের কাছে? এক কান দিয়ে শোনে তো আরেক কান দিয়ে বের করে দেয়। নয়তো শুনবেই না৷ থাকবো না আর এই সংসারে। চলে যাবো। তারপর দেখি কিভাবে চলে এদের।” রাগে বিলাপ বকতে বকতে চলে গেলেন আফসানা চৌধুরী।

ইফতেখার চৌধুরী কিছুক্ষণ তার যাওয়া দিকে তাকিয়ে থেকে এপাশ ওপাশ মাথা নাড়িয়ে ফের বইয়ে মুখ গুঁজলেন।
.
.
____________________________________________
ঈশিকা একবার খাবার মুখে নিচ্ছে তো বদলে দুই বার জল খাচ্ছে। সাথে ঠোঁট চেপে সমানে শোসাচ্ছে। ঠোঁটের কাঁটা জায়গাগুলোতে জ্বলছে চিনচিন করে। খাওয়া শেষে টেবিলে প্লেট রাখতে রাখতে আমান বললো,
—-” এতো শোসাচ্ছো কেনো ঈশু? খাবার তো বেশি ঝাল ছিলো না।”
—-” ঠোঁট জ্বলছে তো।” কান্না কান্না মুখ করে।
তখন আমানের মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি এলো। ফিচেল হাসি দিয়ে ভ্রু নাচিয়ে বললো,
—-” কেনো? কি হয়েছে ঠোঁটে আবার? কেউ কি আদর করেছে নাকি?”

এই মুহুর্তে ঈশিকার আমানের মাথা ফাটিয়ে দিতে ইচ্ছা করছে। কি অসভ্য ছেলে! নিজে আমার ঠোঁটের হাল বেহাল করে দিয়ে এখন আবার রসিকতা করা হচ্ছে? ঈশিকা নাক ফুলিয়ে দাঁত চেপে মনে মনে আমানকে ভয়ংকর কয়েকটা গাকি দিলো ।

আমান জলের গ্লাস আর ঔষধ এনে ঈশিকার সামনে এনে বললো,
—-” গালি দেওয়া হয়ে গেলে এটা মুখে নাও।”
—-” খাবো না।” মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে।
—-” ঈশু জেদ করোনা…না খেলে পায়ের ব্যাথা বাড়বে।”
—-” বাড়ুক…আপনার এতো দরদ দেখাতে হবে না।”
—-” বা রে…আমার বউ আমি দরদ দেখাবো না তো কে দেখাবে? পাড়ার লোক নাকি?”
—-” কে আপনার বউ?! শুনুন…আপনি যদি ভেবে থাকেন এসব করলে বললে আমি আপনাকে বিয়ে করতে রাজি হয়ে যাবো তাহলে ভুল ভাবছেন। আমি আপনাকে বিয়ে করছি না না না।” জোর গলায়।

আমান এবার হো হো শব্দ করে হেসে উঠলো। ঈশিকা অবাক হয়ে রেগে বললো,
—- ” আশ্চর্য! এভাবে দানবের মতো হাসছেন কেনো?”
—- ” হাসবো না তো কি করব? কতবার আমাকে বিয়ে করবে বলোতো ঈশু? বিয়ে তো একবার হয়েই গিয়েছে।”
—-” মানে!!”
—-” মানে হলো এই তখন তুমি যে পেপার এ সাইন করেছো সেটা বিয়ের রেজিস্ট্রি পেপার ছিলো। আর এখন থেকে তুমি আমার বউ। বাচ্চা বউ। বুঝেছো ঈশু মনি?” হেসে বললো আমান।

ঈশিকা যেনো বিষ্ময়ে একেবারে বোবা বনে গেছে। হা করে তাকিয়ে আছে আমানের দিকে।
—-” আরে হা করেছো তো আর একটু বড় হা করো না। ঔষধটা মুখে টুপ করে পুরে দেই।” দুষ্টু হাসি মুখে বললো আমান।
এবার যেনো ফেটে পরলো ইশিকা।
—-“মানে কি! কিসের বিয়ে? আপনি আমাকে ভয় দেখিয়ে জোর করে সাইন করিয়েছেন। পড়তে নিলে পড়তেও দেননি। আমি মানিনা এই বিয়ে৷”
—-” না মেনে উপায় নেই। আইন মোতাবেক এখন তুমি আমার স্ত্রী। আর তা কাগজে কলমে প্রমাণিত।
—-“কিসের আইন? আমি…আমি পুলিশের কাছে যাবো। বলবো আপনি আম…উম্মম…

—-” আপনি….আপনি আবার আমাকে…
—-” কি? কি আমি তোমাকে?” ঈশিকার দিকে ঝুকে।
—-” আপনি কথায় কথায় এতো ঠেসে ধরে চুমু খান কেনো আমাকে?” চেঁচিয়ে।
—-” নইলে তো তোমার মুখ বন্ধ হয়না। আর আমার বউ কে আমি চেপে ধরে চুমু খাই আর যাই করি তাতে তোমার কি? এগুলো হলো দুষ্টু মিষ্টি ভালোবাসার আদর বুঝলে?”

—” আর শোনো মিস উম না….মিসেস ঈশিকা…এটাই সত্যি যে তুমি এখন আমার স্ত্রী। আর তুমি তা না মানলেও কোনো সমস্যা নেই। আমার একার মানাই যথেষ্ট বলে আমি মনে করি। আর রইলো থানা পুলিশের কথা? সে তুমি যেতেই পারো…বরং গেলে এতে আমারই লাভ। আমিও বলবো এই মেয়ে আমার সাথে প্রেম করে আমাকে নিজের ইচ্ছায় বিয়ে করে এখন আমাকে অস্বীকার করছে। আর সাক্ষী হিসেবে জাহিদ (পি.এ.) আর বাহাদুর তো ছিলোই সাইন করার সময়। আমি যেভাবে বলবো সেভাবেই কিন্তু ওরা স্টেটমেন্ট দেবে । তোমার প্রমাণ ছাড়া কথা কিন্তু কেউ শুনবেও না বিশ্বাস ও করবে না। উলটে সারাজীবন আমার কাছে থাকতেই বাধ্য হবে। তাই এসব আজাইরা চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলো।”
—“এবার কথা বাদ দিয়ে চুপচাপ মেডিসিন টা খাও।” গম্ভীর ভাবে বললো আমান।

কান্না গলায় এসে দলা পাকিয়ে আটকে যাচ্ছে ঈশিকার৷ বলার মতো ভাষা মুখে নেই। কি ভয়ংকর ছেলে! তুলে এনে অজান্তে বিয়েও করে ফেললো। আবার এখন আবার বানিয়ে বানিয়ে মিথ্যা বলে সব দোষ তার ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়ার ভয় দেখাচ্ছে। অদ্ভুতভাবে সে ভয় ও পাচ্ছে কারণ তার কথা বিশ্বাস করানোর মতো যথার্থ প্রমাণ নেই তার কাছে। এখন সে নিরুপায়। পায়ের ব্যাথাটাও পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। তাই না পেরে মেডিসিন খেয়ে নিলো। আমান চোরা হেসে মনে মনে বললো, “ঔষধ কাজে দিয়েছে তাহলে।”

—-” গুড গার্ল!” বলে হেসে আমান এঁটো প্লেট নিচে রাখতে চলে গেলো। প্লেট রেখে এসে দেখলো ঈশিকা খুড়িয়ে খুড়িয়ে বাথরুমের দিকে যাচ্ছে।

—-” এই…এই কি করছো? পায়ে চাপ ফেলছো কেনো! আবার ব্লিডিং হবে তো।”
দৌড়ে এসে ঈশিকাকে ধরে।
—-” গোসল করব আমি। অসহ্য লাগছে।” বিরক্তি নিয়ে বললো ঈশিকা।
—-” একদম না…পায়ের ব্যান্ডেজ ভেজানো যাবে না। আর অবেলা হয়ে গেছে। এখন গোসল করলে ঠান্ডা লেগে যাবে। হাত মুখ ধুয়ে চেঞ্জ করো। দাঁড়াও…”

ঈশিকাকে কোলে তুলে বাথরুমে বসিয়ে কাবার্ড থেকে
নিজের একটা টি শার্ট আর একটা ট্রাউজার আনলো আমান। তারপর ঈশিকার হাত মুখ ধুয়িয়ে মুছিয়ে দিয়ে টি শার্ট আর ট্রাউজারটা এগিয়ে দিয়ে বললো,
—-” নাও…চেঞ্জ করো।”
—-” এগুলো কার?”
—-” কার আবার…আমার।”
—-” আমি আপনার জামা পরবো?” ভ্রু কুচকে।
—-” তাছাড়া কি পরবে? এখানে তোমার জামা পাবে কিভাবে? আর আমার জামা পরলে কি সমস্যা? রেসিস্ট নাকি তুমি!?” ভ্রু কুচকে বললো আমান।

ঈশিকা কিছুক্ষন আমানের দিকে করুন চোখে তাকিয়ে তারপর হাত থেকে টি শার্ট আর ট্রাউজারটা নিয়ে নরম গলায় বললো,
—-” বাইরে যান।”
—” কেনো? আমি তো এখন তোমার হাসবেন্ড ই। আমার সামনে চেঞ্জ করতে লজ্জা কিসের? ট্রাস্ট মি! আমি কিন্তু একটুও লজ্জা পাবো না।” দুষ্টু হেসে চোখ মেরে বললো আমান।

উত্তরে ঈশিকা আগুন চোখে তাকিয়ে কিছু বলতে নিলে আমান তড়িঘড়ি করে বললো,
—-” আচ্ছা আচ্ছা যাচ্ছি…।” বলে হাসতে হাসতে বেড়িয়ে এলো।
.
.
.
চলবে…
® ঊর্মি ধর

Adorable Love পর্ব : ০২

0

#Adorable_Love ?
পর্ব : ০২
লেখা : ঊর্মি ধর
.
.
.
পিটপিট করে চোখ মেললো
ঈশিকা। আধা চোখ মেলতেই আবার চোখ বন্ধ করে হাত দিয়ে মাথা চেপে ধরলো। একেবারে কারেন্টের মতো চিলিক দিয়ে উঠছে মাথার ভেতর। তারপর ধীরে সুস্থে উঠে বসলো বিছানায়। জ্ঞানে ফেরার পর কয়েক সেকেন্ডে সময় লাগে বুঝতে যে কোথায় আছে সে। সকালের ঘটনার কথা মনে পরতেই রাগে মাথা দপদপ করে ওঠে। আশেপাশে তাকিয়ে দেখে আমান কাউচে আধশোয়া অবস্থায় ঘুমিয়ে আছে। জোর করে তুলে এনে এখন শান্তির ঘুম ঘুমানো হচ্ছে? ঈশিকা দাঁত কিরমির করে বিড়বিড় করে আমানকে কয়েকটা গালি দিলো৷ তখনকার কথা মনে পরতেই আপনা আপনি ঠোঁটে হাত চলে গেলো ঈশিকার। দেখলো ফুলে ব্যাথা হয়ে আছে।
—–” ইশ! কি হাল করেছে আমার ঠোঁটের…ব্যাটা খোক্কস একটা।”

দরজার দিক চোখ যেতেই দেখলো দরজা ভেজানো। লাগানো নেই। একবার দরজার দিকে আবার আমানের দিকে তাকালো। এরপর যেই নেমে পালানোর জন্য দৌড় দিতে যাবে ওমনি পায়ের ব্যাথায় আহ! করে চিৎকার দিয়ে ফ্লোরে বসে পরলো।

শরীর ক্লান্ত লাগায় অর্ধেক কাজ কমপ্লিট করে কাউচেই ঘুমিয়ে পরেছিলো আমান। ঈশিকার গলার আওয়াজে ঘুম ভেঙে গেলো তার। পাশ ফিরে দেখলো ঈশিকা ফ্লোরে পা ধরে ফুপিয়ে কাঁদছে। তড়িঘড়ি করে উঠে গেলো ঈশিকার দিকে। একেবারে চোখ ফুলে নাক গাল লাল হয়ে আছে।
——” ঈশু….কি হয়েছে? পায়ে ব্যাথা পেয়েছো? কোথায় দেখি।”

আমান ঈশিকার হাত সরিয়ে দেখলো ডান পায়ের বৃদ্ধা আঙ্গুল এর নখ বেকায়দাভাবে বেশ খানিকটা ফেটে কোনা দিয়ে রক্ত পরছে।
—–” ওহ গড! এই অবস্থা হলো কিভাবে?”
ঈশিকা কান্না বন্ধ করে কটমটিয়ে তাকালো আমানের দিকে। ঝাঁঝালো কন্ঠে বললো,
—–” নিজে এই হাল করে এখন বলা হচ্ছে কিভাবে হলো?”
—–” মানে! আমি কি করলাম?”
—–” ওরকম অসুরের শক্তি নিয়ে যখন টেনে আনলেন। হোঁচট খেয়ে ইটের গুতোতেই তো এমন হয়েছে।” বলেই ফের পায়ে হাত দিয়ে ঠোঁট ফুলিয়ে ফুপিয়ে কাঁদতে লাগলো।

আমান একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ঈশিকাকে পাঁজা কোলে তুলে নিলো। আচমকা কোলে তোলায় হকচকিয়ে গেলো ঈশিকা। তারপর হাত পা ছুড়তে ছুড়তে বললো,
—–” নামান…নামান বলছি। একদম ধরবেন না আমাকে। পাজি লোক একটা।”
—–” আহ! ঈশু ছটফটানি বন্ধ করো…আবার…ঠিকাছে এই ফেলে দিলাম।” বলেই আমান ঈশিকাকে ফেলে দেওয়ার অ্যাক্টিং করলো।

ওমনি ঈশিকা আতঙ্ককিত গলায় “নাআ..!” বলে তাড়াতাড়ি করে আমানের গলা আঁকড়ে ধরলো দুই হাত দিয়ে। এটা দেখেই আমান মুচকি হাসি দিয়ে বিছানায় বসিয়ে দিলো ঈশিকাকে।
—-“চুপচাপ বসে থাকবে। নো পাকনামি।” আদেশের সুরে বললো আমান।
তারপর ফাস্ট এইড বক্স এনে দেখলো রক্ত পরা বন্ধ হয়েছে। পায়ে চাপ পরায় রক্ত বের হয়েছিলো। ক্ষত জায়গায় ডেটল পরতেই জ্বলে উঠলো পা। চাপা চিৎকার দিয়ে ঈশিকা পা সরিয়ে নিলেই আমান বললো,
—-” উম…ওয়াশ না করলে ইনফেকশন হয়ে যাবে তো। জ্বলছে? একটু সহ্য করো লক্ষী… দেখি…।” বলেই আবার ঈশিকার পা কাছে টেনে নিলো আমান।

ঈশিকা দাঁতে দাঁত চেপে মনে মনে বললো, “আমার নখ এর ইট হত্যা করিয়ে এখন আবার দরদ দেখানো হচ্ছে? বজ্জাত লোক কোথাকার। আহারে…আমার সাধের নখটা!”
—-” এতো বড় নখ রেখেছো কেনো পায়ে? ভুতের মতো। এতো বড় দেখেই তো হোঁচট খেলে।” ঈশিকার দিকে না তাকিয়ে ব্যান্ডেজ করতে করতে বললো আমান।

ব্যাটা শয়তান… নিজে রাগ দেখিয়ে টানা হেঁচড়া করে নখ ফাটিয়ে এখন আবার আমার দোষ দিচ্ছে?! আবার বলে কিনা ভুতের মতো নখ আমার?!
—-” কিহ! আমার ভুতের মতো নখ?”
—-” হ্যাঁ তো। একদম ভুতের…উম না না ভুত্নীর মতো নখ। আর এতো বড় নখ রাখবে না পায়ে। পরিমাণ মতো ছোট করে রাখবে। বা পায়ের টাও কেটে ফেলবে।”

আমানের কথা শুনে রাগে মাথার রগ ছিঁড়ে যাওয়ার উপক্রম হচ্ছে ঈশিকার। তার এতো শখের নখকে আবার বলে কিনা ভুত্নীর মতো? এতোবড় অপমান তার নখের!!

ব্যান্ডেজ করা হয়ে গেলে ঈশিকা গাল ফুলিয়ে বললো,
—-“আমি বাড়ি যাবো।”
—-” তুমি কি রাস্তার ফুটপাতে আছো নাকি? বাড়ির ভেতরেই তো আছো।” উঠে গিয়ে এইড বক্স টেবিলে রাখতে রাখতে বললো আমান।
—-” আমি আমার বাড়ি যাবো। মানে আমার বাবার বাড়ি।”
—-“হুম যাবে তো। তবে এখন না…।” কাছে এসে বসে বললো আমান।
—-” কেনো!!”
—-” কারণ তুমি এখন তোমার বেস্ট ফ্রেন্ড নোভাদের বাসায় আছো এবং আগামী দু’দিন সেখানেই থাকবে। এরকমই বলা হয়েছে তোমার বাড়িতে।”
—-” কে বলেছে এগুলো!!?”
—-” তোমার ফ্রেন্ড নোভাই বলেছে। মানে আমি বলিয়েছি।” বলে দাঁত বের করে হাসলো আমান।

ঈশিকা যেই কিছু বলতে যাবে ওমনি দরজায় টোকা পরলো।
—-” সাহাব…
কেয়ারটেকার বাহাদুর এর গলা। আমান বললো,
—-” ভেতরে এসো।”
—– ” সাহাব…ও খানা লিয়ে এচেছি।”
—-“হ্যাঁ…এখানে রেখে যাও।”

বাহাদুর খাবার আর জল দিয়ে চলে গেলো। আমান খাবার খুলে ঈশিকার মুখের সামনে ধরে বললো,
—-” নাও হা করো।”
—-“আমি খাবো না।”
—-“কেনো? আমার কিন্তু ভীষন খিদে পেয়েছে।”
—-” তো আপনি খান..কে না করেছে? আমার খিদে পায়নি।”
—-” দুপুর আড়াইটার কাছাকাছি বাজে। সকালে বাসা থেকে যে কিছু খেয়ে বের হয়নি তা নিশ্চিত। ওই টক জলের সাথে রাস্তার ধুলোবালি মেশানো ফুচকাই পেটে পরেছে শুধু। খিদে পায়না কিভাবে?”
—-” আগে বলুন আপনি কেনো মিথ্যা কথা বলালেন বাড়িতে। আর আমি এখানে থাকবো না। বাড়ি চলে যাবো।”
—-” আমিতো এখন নিয়ে যাবোনা…তো কিভাবে যাবে।”
—-” একাই যাবো।”
—-” এই পা নিয়ে? আর রাস্তা চেনো তুমি?”

ঈশিকা মনে মনে ভাবলো, আসলেই তো এই পা নিয়ে কিভাবে যাবে সে। আর তাছাড়া রাস্তাও তো চেনে না। আসার সময় গাড়ির থেকে বুঝেছে এটা শহরের থেকে দূরে। জনবসতি কম এলাকার। কিছুই তো চেনে না আশেপাশের।

তবু দোমে না গিয়ে ভাব নিয়ে বললো,
—-” চিনিনা তো কি হয়েছে? চিনে নেবো..এই ঈশিকা পারেনা এমন কোনো কাজ নেই বুঝলেন?”
—-” ওরেব্বাবা!! তাই নাকি? আচ্ছা ঠিকাছে যেয়ো। শুনেছি এই এলাকায় মেয়েধরা বের হয়েছে। ফর্সা সুন্দর মেয়ে দেখলেই নাকি মুখ চেপে ধরে বস্তার ভরে নিয়ে যায়। আমাকে তো তোমার ভালোলাগে না সহ্যও হয়না। আমার কাছে থাকতেও আপত্তি। বেশ হলো…তাদের কাছেই থেকো।”
—-” ক্ককি! ছেলেধরা?!!”
—-” আরে না…মেয়েধরা। শুধু মেয়েদের ধরে তো। ছোট চুলের সুন্দর সুন্দর বাচ্চা মেয়ে…একদম ঈশুর মতো।”

এসব শুনে বড় এক ঢোক গিললো ঈশিকা। ছোটবেলা থেকেই এই ছেলেধরাদের ভীষন ভয় পায় সে। তাইতো ছোটবেলায় একা একা বের হতো না বাড়ি থেকে। মা বলতো এরা ধরে নিয়ে নাকি চোখ কিডনি বের করে বেঁচে দেয়। আর এখানে তো একেবারে মেয়েধরা!

আমান ওর চোখ মুখ দেখে মিটিমিটি হাসছে আর মজা নিচ্ছে। বেশ ভয় পেয়েছে মেয়েটা। কিন্তু ঈশিকা ভয় প্রকাশ না করে জোর গলায় বললো,
—-” আপনি মিথ্যে বলছেন। আমাকে ভয় দেখানোর ধান্দা সব।”
—-” তাই নাকি? তোমার আমাকে দেখে মনে হচ্ছে আমি মজা করছি? বিশ্বাস না হলে কেয়ারটেকার বাহাদুরের কাছে শোনো। ও তো এখানকারই লোক…সব জানে। তাছাড়া টিভির নিউজেও তো এই ঘটনা রটেছিলো দেখো নি?” মুখ সিরিয়াস ভাব করে বললো আমান।

এবার বেশ ভালো মতোই ভয় পেলো ঈশিকা। মিডিয়াতে যেহেতু দেখানো হয়েছে তাহলে নিশ্চয়ই সত্যি ঘটনা।
—-” কি এখনো যাবার ইচ্ছা আছে নাকি একা একা?”
উত্তরে ঈশিকা অসহায় মুখ করে চুপ রইলো। ভেবেছিলো পালাবে কিন্তু এবার তো সে কোনোমতেই একা একা বেরুবার সাহস পাবেনা। আর এই ছেলে যেমন…হাজার বললেও দু’দিন এর আগে জিবনেও বাড়ি দিয়ে আসবে না।

—-” আচ্ছা থাক বলতে হবে না। বুঝেছি আমি। নাও হা করো। খেয়ে আবার মেডিসিন নিতে হবে। নইলে কিন্তু পা এর ব্যাথা কমবে না। আর খালি পেটে মেডিসিন নিয়ে কোনো লাভ নেই।”
—-” না কমলো…খাবো না আমি। বলেছি খিদে নেই আমার।”
—-” শিওর তো?”
—-” হু খুব শিওর।”
—- ” ওকে না খেলে…আমার খুব খিদে তো পেয়েছে বাবা! আমিই খাই।”

মুখে বললেও বেশ খিদে পেয়েছে তা ঈশিকা খুব ভালো করেই বুঝতে পারছে। কিন্তু সে আমানের আনা খাবার খাবেনা…কিছুতেই খাবেনা।

বেশ আয়েশ করে খাচ্ছে আমান। আর ঈশিকা হা করে তার খাওয়া দেখছে। আমানের খাওয়া দেখে ওর খিদে যেনো আরো বেড়ে গেলো। এবার খিদেয় প্রান যায় যায় অবস্থা। মনে মনে বললো,
“ইশ! কি নিষ্ঠুর লোকটা। এই নাকি তার ভালোবাসা? বলেছে খাবে না তো কি? জোর করে কি খাইয়ে দিতে পারতো না? এমনি তো সব কিছুতে জোর খাটাতে পারে খুব৷ ভালোবাসে না কচু! আসলেই ব্যাটা শয়তান। শয়তানের খারা জিলকি হুহ!”

—-” কি? কি দেখো? এবার কি খিদে পেয়েছে?” খাবার চিবাতে চিবাতে ঈশিকার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো আমান।
ঈশিকা চোখ নামিয়ে নরম গলায় আস্তে করে বললো,
—-“না।”
আমান মুচকি হেসে ফের ঈশিকার সামনে খাবার ধরলে ঈশিকা কিছু বলতে যাবে তার আগেই আমান গম্ভীর কন্ঠে বললো,
—-” কোনো কথা না।”

এবার আর ঈশিকা না করলো না। চুপচাপ খাবার মুখে নিলো।
আমান হেসে মনে মনে বললো,
“পাগলি একটা!”
.
.
.
চলবে…
® ঊর্মি ধর

Adorable Love পর্ব : ০১

0

#Adorable_Love ?
পর্ব : ০১
লেখা : ঊর্মি ধর
.
গাড়ির ডোর খুলে একপ্রকার টেনে হিচড়ে ঈশিকাকে নামালো আমান। চোখ মুখ শক্ত করে হিড়হিড় করে ঈশিকাকে টেনে বাগান বাড়ির ভেতর ঢুকলো। কাল থেকেই মেজাজ চড়ে আছে এই মেয়ের ওপর। তাই এই সকালেই অফিসের ইম্পর্ট্যান্ট মিটিং ক্যান্সেল করে ভার্সিটির সামনে থেকে একপ্রকার তুলে নিয়ে এসেছে তাকে।
রাগে তার ফর্সা মুখ একদম লাল হয়ে আছে। এতো রাগের কারণ যদিও কিছুটা আন্দাজ করতে পারছে ঈশিকা কিন্তু পুরোটা নিশ্চিত না। তাই কিছু বলার সাহস পাচ্ছে না। গাড়িতে ওঠার সময় নাকচ করলে এমন ভাবে তাকিয়েছে যেনো আস্তো কাঁচা চিবিয়ে খেয়ে ফেলবে। তাই চুপচাপ বাধ্য মেয়ের মতো গাড়িতে উঠে বসেছে। তারপরও কয়েকদফা চিল্লিয়ে জিজ্ঞেস করায় আমানের এক আত্মা কাঁপানো ধমকেই একদম চুপসে গেছে।

আমানের টানাহেঁচড়ায় ঈশিকা একবার হোচট খেলো কিন্তু সেদিকে খেয়াল নেই আমানের। বাড়ির ভেতরে ঢুকতেই ঈশিকা দেখলো আমানের পি.এ. সোফায় বসে আছে। আমানকে দেখে সে উঠে এগিয়ে এসে একটা কাগজ বাড়িয়ে দিয়ে বললো,
—– ” স্যার…পেপারটা।”
আমান ঈশিকার হাত ছেড়ে দিয়ে পেপারটা হাতে নিয়ে দেখে বললো,
—–“পেন টা দাও।”
এরপর আমান হাতের ওপরে নিয়ে পেপারে ঘচাঘচ সাইন করে ঈশিকার হাতে পেন টা গুজে দিয়ে পেপার টা সামনে ধরে শান্ত গলায় বললো,
—– ” সাইন করো।”
—– ” কিসের সাইন…কিসের পেপার এটা? আমি কোনো সাইন করব না।” ভয়ে ভয়ে বললো ঈশিকা।
আমান নিজের বা হাত পেপারসহ কোমড়ে ঠেকিয়ে ডান হাত দিয়ে মাথার চুল টেনে অন্য দিকে ঘুরে নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করলো। তারপর কঠিন গলায় বললো,
—– ” তুমি নিশ্চয়ই চাইবে না অন্য লোকের সামনে তোমার মান সম্মান যাক..হু?”

একথা শুনেই ঈশিকা আমানের পি.এর দিক তাকালো। এ ছেলের যে পরিমাণ রাগ একে দিয়ে বিশ্বাস নেই। কথা না শুনলে কখন যে নিজের পি.এর সামনেই কষিয়ে চড় থাপ্পড় মেরে দেবে গালে তার ঠিক নেই। তাহলে মান সম্মান নিয়ে টানাটানির মতো হবে ব্যাপারখানা ।

ঈশিকা হাত বাড়িয়ে পেপার টা নিলো। যেই একবার পেপারটা পড়তে যাবে ওমনি আমান এক ধমক দিয়ে বললো,
—– ” তোমাকে সাইন করতে বলেছি আমি পড়তে নয়।”
আমানের ধমকে ঈশিকা কেঁপে উঠে টেবিলের ওপর পেপারটা নামিয়ে ঘটাঘট সাইন করে দিলো। তারপর আমান পেপারটা হাতে নিয়ে পি.এ কে বললো,
—– ” ইউ মে গো নাউ। আর হ্যাঁ বাবা বা বাড়ির কেও তোমাকে কল করলে বলবে আমি দুই দিনের জন্য ব্রেকে আছি। কেউ যেনো না জানে আমি এখানে আছি। আমার ফোন বন্ধ থাকবে তাই কেউ যেনো আমার সাথে কনট্যাক্ট করার চেষ্টা না করে এই দু’দিন। গট ইট?”
—- ” ওকে স্যার বলে দেবো।” বলেই সে চলে গেলো।

আমান আবারো ঈশিকার হাতটা খপ করে ধরে সিড়ি বেয়ে ওপরের ঘরে এসে ঈশিকাকে বিছানায় ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলো। দরজা লাগিয়ে পেপারটা পাশের টেবিলে রেখে ঈশিকার দিকে এগিয়ে গেলো। রাগে তার চোখ ও লাল হয়ে আছে। লাল চোখ দেখে ঈশিকা মনে মনে ভাবলো, “গাঁজা টাজা খেয়েছে নাকি লোকটা? এমন নেশাখোরদের মতো দেখাচ্ছে কেনো? আচ্ছা এখানে এনেছে কেনো আমাকে? মেরে টেরে ফেলবে না তো!!” এসব ভেবে
হকচকিয়ে উঠে দাঁড়ালো ঈশিকা।

——” কিক্কি.কি হলো? আ..আম..মাকে এখানে এনেছেন কেনো আপনি? এ..একদম কাছে আসবেন না। খুব খারাপ হয়ে যাবে কিন্তু!” কাঁপাকাঁপা গলায় পেছাতে পেছাতে বললো ঈশিকা।
——” আচ্ছা? কি খারাপ করবে আমার? আর আমি আসবো না তো কে আসবে? তোমার ওই ফ্রেন্ড কি যেনো নাম…হ্যাঁ শোয়েব সে বুঝি? কই তার সাথে ঢলাঢলি করে ফুচকা খেতে তো এতো কাঁপাকাঁপি আসে না তোমার?
আর কোন সাহসে তুমি বিয়েতে না করেছো??” কাছে এসে দাঁতে দাঁত চেপে বললো আমান।

এইবার এবার বড় এক ঢোক গিললো ঈশিকা। সে যা আন্দাজ করছিলো সেটাই ঠিক। হ্যাঁ…আমান এর বাড়ি থেকে পাঠানো বিয়ের প্রস্তাবে সে সাফ মানা করে দিয়েছে। ঈশিকাকে চুপ থাকতে দেখে আমান ঈশিকার কাধ ঝাঁকিয়ে চেঁচিয়ে বললো,
—– ” কথা বলছো না কেনো? স্পিক আপ ড্যাম ইট!!

আমানের চেঁচানোতে কেঁপে উঠলো ঈশিকা। তারপর হরবরিয়ে বলতে শুরু করলো,
—– ” আমি আপনাকে বিয়ে করবো না। আপানার জন্য ভার্সিটির অনেকেই রীতিমতো হিংসে করে আমায়। সুযোগ পেলে ইনডিরেক্টলি পিঞ্চ করে নানা কথাও বলে। আর এই ছোট বয়সেই বাবা মা আমাকে বিয়ে দিতে চাইছে যেটা আমি একদমই মানতে পারছিনা। আর তাছাড়াও আপনি হলেন দ্য গ্রেট আমান আহমেদ। সব মেয়ের ক্রাশ বয়…সেখানে আমিতো আপনার কাছে কিচ্ছুনা। আমি আপনার একদম যোগ্য না বিশ্বাস ক….উম্মম…

আর বলতে পারলো না ঈশিকা। তার আগেই তার ঠোঁট আমানের ঠোঁটের দখলে। সে প্রথমে এহেন ঘটনায় হকচকিয়ে গেলেও পরে বুঝতে পেরে আমানের বুকে ইচ্ছামতো ঠেলা থাপ্পড় মারতে থাকলো। কিন্তু কিছুতেই তাকে সরাতে পারছে না। পারবে কি করে? কোথায় আমানের মতো সিক্স ফিট্ জিম ট্রেইন্ড বডিওয়ালা ছেলে আর কোথায় চুনো পুটির মতো ছোট্ট রোগা পাতলা সে।

কিন্তু একসময় ঈশিকার জোর এক ধাক্কায় তাল সামলাতে না পেরে আমান পিছিয়ে যায়। সেই সুযোগে ঈশিকা ছুটে দরজা খুলতে নেয়। এবার আর রাগটাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনা আমান। এক ঝটকায় ঈশিকার হাত ধরে কাছে এনে ধাক্কা দিয়ে বিছানায় ফেলে ফের ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দেয়। তবে এবার আর সেই আগের মতো ভালোবাসায় ভরা কোমলতার ছোঁয়া নেই। আছে জেদ রাগ থেকে জন্ম নেওয়া হিংস্রতা। বিছানায় দুই হাত চেপে ধরে ক্রমাগত দাঁত চালাচ্ছে ঈশিকার ঠোঁটের ওপর। আর হাত বন্ধ থাকায় ঈশিকা সমানে পা ছোটাছুটি করছে।

এরুপ ধস্তাধস্তির কিছুক্ষণ পরে হঠাৎ ই আমানের হুস ফিরলে খেয়াল করে ঈশিকা আগের মতো ছটফট করছে না শান্ত হয়ে গেছে। ঠোঁট ছেড়ে হাত আলগা করে তাকিয়ে দেখলো সেন্সলেস হয়ে গেছে ঈশিকা। এই মেয়ে অল্পেই এতো প্যানিকড হয়ে যায় যে একবারে অজ্ঞানে গিয়ে থামে।

তারপর কোলে তুলে ভালোভাবে বিছানায় শুইয়ে দিলো ঈশিকাকে। জলের ছেঁটা দিয়েও জ্ঞান ফিরলো না। শেষে চাদর টেনে দিলো গায়ে। ঈশিকার গালে হাত রেখে বললো,
——” কেনো এমন করো ঈশু? তুমি কি বোঝনা তোমাকে ছাড়া এক মুহুর্ত বেঁচে থাকা সম্ভব না আমার। সেখানে কিভাবে তোমাকে হারাতে পারবো আমি বলো? তুমি কি জানো তোমার এই অবহেলা আমার বুকে তীরের মতো বিঁধে। আমার ভালোবাসার পরিমাণ কি বোঝোনা তুমি? এতো কেনো অবুঝ তুমি ঈশু?”

একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে টেবিল থেকে পেপারটা নিয়ে কাবার্ডে রেখে ট্রাউজার আর টি শার্ট নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো আমান। শাওয়ার শেষে বাড়ির কেয়ারটেকার কে ডেকে গাড়ি থেকে ঈশিকার ব্যাগ আনালো। তারপর ঈশিকার ব্যাগ থেকে ফোন বের করে থেকে কল করলো ঈশিকার ফ্রেন্ড নোভা কে। নোভা ঈশিকার ফোন পেয়েই রিসিভড করে ব্যস্ত গলায় বললো,
—– ” হ্যালো ঈশি…কিরে কোথায় তুই? আর আমান ভাইয়া তোকে ওভাবে নিয়ে গেলো কেনো? তুই ঠিক আছিস তো?”
—– ” আমি আমান বলছি নোভা। ঈশিকা আমার কাছে আছে এবং আগামী পরশু পর্যন্ত আমার কাছেই থাকবে। তুমি জাস্ট একটু হেল্প করো।”
—— ” কি হেল্প ভাইয়া?”
—— ” তুমি ঈশিকার মা কে কল করে বলবে এ দু’দিন ও তোমার বাসায় থাকছে। আর কোনো প্রকার আপত্তি শুনলে তুমি জোর করবে।”
—– ” কিন্তু….
—– ” প্লিজ।”
—– ” আচ্ছা ঠিকাছে বলবো।”
—– ” থ্যাংক ইউ!” বলেই কল কেটে দিলো আমান।

পেছন ফিরে দেখলো নিস্তেজ হয়ে শুয়ে আছে ঈশিকা। কি নিষ্পাপ মুখখানা! আমান ঈশিকার পাশে বসে কপালে একটা গভীর চুমু খেলো। ঠোঁটের দিক তাকাতেই দেখলো রক্তলাল হয়ে দাঁতের ঘষায় আর কামড়ে ক্ষত বিক্ষত হয়ে ফুলে গেছে কোমল ঠোঁটটা। ঠোঁটে আঙ্গুল বুলিয়ে ফের আলতো একটা চুমু খেয়ে একটা লম্বা দীর্ঘশ্বাস ফেলে পা বাড়ালো কিচেনের দিকে। এখন এক কাপ কফির খুব প্রয়োজন।
.
.
____________________________________________
কফি হাতে ওপরে এসে দেখলো ঈশিকার এখনো জ্ঞান ফেরেনি। আমান তার পি.এ কে দিয়ে রেজিস্ট্রি পেপার এর সাথে ল্যাপটপ টাও আনিয়ে রেখেছিলো। হ্যাঁ রেজিস্ট্রি পেপার….তখন আমান ঈশিকাকে রেজিস্ট্রি পেপারে সাইন করিয়েছে। আজ থেকে অফিসিয়ালি তার স্ত্রী সে।

আমানের বাবা আরমান আহমেদ ঈশিকাদের বাড়ি গিয়ে ওর মা বাবাকে বিয়ের কথা বললে ঈশিকা বিয়েতে অমত জানায়। আর সেটা কাল রাতে শুনেই প্রচুর রাগে ছিলো আমান। তবে রাগটা নিয়ন্ত্রণে রেখেছিলো। ভেবেছিলো পরে সময় নিয়ে ঠান্ডা মাথায় বসে কথা বলে ঈশিকাকে বোঝাবে। সকালে অফিসে গেলে গার্ড এর দেওয়া ইনফরমেশনে জেনেছে ক্লাস বাংক করে সে দিব্যি বন্ধুদের সাথে ফুচকা খাওয়ার প্রতিযোগিতা করছে। কিন্তু যখনি শুনেছে সবার সাথে শোয়েব নামের ছেলেটাও আছে তখনি রাগটা নিয়ন্ত্রণের বাহিরে গিয়ে পুরোপুরি মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে। ওই ছেলেটাকে আমান একদম সহ্য করতে পারেনা। ঈশিকাকে বারবার বলেছে শোয়েব এর থেকে দূরে থাকতে তাও এই মেয়ে কথা শোনার না। তাই অফিসের ফরেনার ক্লায়েন্টের সাথে ইম্পর্ট্যান্ট মিটিং ক্যান্সেল করে রাগের বসে ডিরেক্ট ভার্সিটি থেকে তুলে নিয়ে এসে একেবারে রেজিস্ট্রি করে বিয়ে সেরে ফেলেছে । এবার এই মেয়ের আর তার থেকে পালানোর ফুরসতটুকু রাখেনি সে। তবে সেটা ঈশিকা এখনো জানে না। জানলে যে রিয়াকশন কি হবে আল্লাহ মালুম!!

আমান কফির কাপ আর ল্যাপটপ টা নিয়ে কাউচে আধশোয়া হয়ে অফিসের পেন্ডিং কাজগুলো কমপ্লিট করতে লাগলো।
.
.
.
চলবে…

প্রেমে পড়া বারণ পর্ব-১৭ (শেষপর্ব)

2

#প্রেমে_পড়া_বারণ
#পর্ব_১৭ (শেষপর্ব)
# Taslima Munni

রানওয়েতে দেখলাম বিমানগুলো বাঁকা হয়ে আছে।
একটু পরেই বুঝতে পারলাম বিমানগুলো বাঁকা হয়ে নেই।আমাদের বিমানটাই বাঁকা হয়ে আছে!!
ল্যান্ডিং এর চেষ্টা করছে কিন্তু ল্যান্ড করতে পারছে না।

কখনো নিচে নামছে কখনো উপরে উঠছে।আবারও একটা ঝাকি দিলো।
বুঝতে পারলাম পাইলট নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারছে না। কি হতে যাচ্ছে ভেবেই কলিজ্বা শুকিয়ে গেছে। রেহানের হাত আঁকড়ে ধরলাম।
– রেহান, কি হচ্ছে!?
– বুঝতে পারছি না।
মনে কতশত ভয় ভীড় করছে। মনে পড়লো কিছুদিন আগেই ত্রিভুবনের বিমান দুর্ঘটনার কথা।
কি হবে??!!!
আমরা কি ফিরতে পারবো না?
ইতোমধ্যে সব যাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছো।কেউ কেউ কান্নাকাটি শুরু করলো।
উফফ!!
কি হতে যাচ্ছে একমাত্র উপরওয়ালাই জানেন।
আমাদের সব স্বপ্ন কি এখানেই মিশে যাবে?
আব্বু,আম্মু,ফুপি,দিয়া,আরিফ, মাহি আপু!…..
কাউকে আর দেখতে পারবো না?!
ভাবতেই আমার কান্না পাচ্ছে। আমি ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলাম।
রেহান শক্ত করে ধরে রেখেছে।।
– হিয়া,ভয় পাস না।আমি আছি না তোর সাথে। কিছু হবে না, দেখিস।
আমাকে স্বান্তনা দেয়ার জন্য রেহান এগুলো বলছে। ও নিজেই জানে না কি হচ্ছে যাচ্ছে!!

দীর্ঘ তিনঘন্টা বিমানটি আকাশে ঘুরেছে।
তিন ঘন্টা পরে পাইলট অনেক কষ্টে ল্যান্ড করাতে সক্ষম হয়।ল্যান্ড করার সময় অত্যন্ত বিপদজনক ছিলো। সবাই কমবেশি আহত হয়েছে। কিন্তু সবাই বেঁচে গেছি এটাই সবচেয়ে বড় কথা।
ল্যান্ড করার সাথে সাথে বিমানের একটা অংশে আগুন ধরে গেছে।
দ্রুত যাত্রীদের নামানো হচ্ছে। ভাগ্যিস ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা প্রস্তুত ছিলো। বড় ধরনের ব্লাস্ট হবার আগেই আগুন নিভিয়ে ফেলতে সক্ষম হয়।

আমরা বেঁচে ফিরেছি।আনন্দেও কান্না আসে।সবাই কাঁদছে, বেঁচে ফেরার আনন্দে কাঁদছে। বাসার সবাই এখানে চলে এসেছে।
আমাদের পেয়ে হাউমাউ করে কান্না শুরু করে দিলো।।

অভিজ্ঞতাটা অনেক ভয়াবহ ছিলো।।
অনেক দিন পর্যন্ত ভুলতে পারিনি।

অনেক গুলো দিন কেটে গেছে।
আমি একটা কলেজে লেকচারার হিসেবে জয়েন করলাম।
এদিকে মাহি আপু বাসায় এসেছে।
কিছু দিন ধরে খেয়াল করছি মাহি আপুর মুড অফ হয়ে আছে।
একদিন জিজ্ঞেসই করে ফেললাম।
– আপু।
– আরে হিয়া,ভিতরে আয়।।
আপুর পাশে গিয়ে বসলাম।
– তোমার কি হয়েছে?
– কই? কিছু হয়নি তো!
– আমি খেয়াল করছি তোমার মন ভালো নেই। আমাকেও বলবে না?
আপু কিছু সময় চুপ করে থেকে বললো
– রিয়াদের সাথে আমার কিছু সমস্যা হয়েছে।
– কি হয়েছে?
– রিয়াদ চায় না আমি এখানে থাকি। আমার পোস্টিং এখানেই হয়েছে। কিন্তু ট্রান্সফার হয়ে যেতে কমপক্ষে একবছর লাগবে।
এসব নিয়েই।
– ওহহ…।
আপু, তুমি রিয়াদ ভাইয়ার সাথে বসে কথা বলো।সামনাসামনি কথা বলা জরুরী। ভাইকে বুঝিয়ে বলো। একটা বছরের ব্যাপার। ভাইয়া ঠিক বুঝবে।
– হুমম।
আপু মিষ্টি করে হাসলো। মাহি আপুকে গোমড়া মুখে মানায় না। আপুর হাসি মুখটা যেন সবসময় থাকে।

সময় যেন স্রোতের মতো বয়ে গেছে। সংসারের মায়াজালে জড়িয়ে পাঁচটা বছর কেটে গেছে।
মাঝে মধ্যে আফরিনের কথা মনে পড়ে।
আফরিন ভাগ্যে বিশ্বাস করে।
বলেছিলো – রেহান তোমার হবে বলেই আমার হয়নি।।
কথাটা কানে বাজে।

মাঝেমধ্যে মনে হয় রেহান বদলে গেছে। কিন্তু আসলেই কি বদলে গেছে?
না। রেহানের ভালোবাসা একটু কমেনি।
আরও বেড়েছে। আমাকে ছাড়া রেহান কতটা অসম্পূর্ণ সেটা আমি জানি।।
ব্যস্ততা বেড়েছে দুজনেরই।ভালোবাসা প্রকাশের ধরনটা হয়তো একটু বদলে গেছে। কিন্তু ভালোবাসা একবিন্দুও কমেনি।

রেহানের ভালোবাসায় আমার জীবন পূর্ণ হলেও আমাদের জীবনটা শূন্য পড়ে আছে।
নিজেকে অপরাধী মনে হয়।
রেহান কোনো দিন কিচ্ছু চায়নি আমার কাছে। শুধু একটা পরী চেয়েছিলো।
একটা ছোট্ট মিষ্টি পরী।যে ছোট ছোট পায়ে সারাবাড়িতে হেঁটে বেড়াবে। সারা বাড়ি মাতিয়ে রাখবে।।
কিন্তু পাঁচ বছর কেটে গেছে। আমাদের কোনো পরী আসেনি। অদ্ভুত শূন্যতায় আমার ভেতরটা খাঁ খাঁ করে।
রেহান মুখে কিছু না বললেও আমি বুঝি ওর ভেতরের শূন্যতা।

সবকিছু থেকেও যেন কিছুই নেই আমাদের।
কত ডাক্তার! কত কিছু করলাম। কিন্তু….
সেদিন আমার দুই-তিন জন কলিগ তাদের বাচ্চাদের নিয়ে কথা বলছিলেন।
আমি শুধু শুনছিলাম। আমি কার গল্প শুনাবো?
আমার অস্বস্তি হচ্ছিলো। বেরিয়ে আসলাম।
ফোনটা আমার টেবিলে ফেলে এসেছি।
হঠাৎ মনে হলো রেহানকে একটা ফোন দেই।আজ আর ক্লাস নিতে ইচ্ছে করছে না।
রেহানকে বলি এসে নিয়ে যেতে।দূরে কোথাও ঘুরে আসবো।

রুমে ঢুকতে গিয়ে শুনি
– যার সন্তান নেই সে কি করে বুঝবে সন্তানের মর্ম।
– হুম। দেখলেন না কেমন উঠে চলে গেলো!!
– এইজ ডিফারেন্স বেশি হলে এমনই হয়।
– আমরা বাচ্চাদের নিয়ে কথা বললে খেয়াল করে দেখবেন যেন জ্বলে পুড়ে মরে যায়! আসলে জেলাস! নিজের নেই তো।

আমার চোখ ভিজে গেছে। ওখান থেকে সরে আসতে চাইলাম, কিন্তু তার আগেই একজনের চোখে পড়ে গেলাম। আমাকে দেখে বিব্রত হয়ে গেলেন।
আমিও আর কিছু না ভেবেই রুমে ঢুকে আমার লকার লক করে ফোন আর ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে এলাম।

মানুষ এমন কেন হয়?!!
আমার শূন্যতা আমার কষ্ট ওরা দেখতে পায়??
মাহি আপুর দুই ছেলে- মেয়ে যখন আসে ফুপি ভীষণ খুশি হয়।মাঝেমধ্যে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে।
একদিন শুধু বলেছিলেন – আল্লাহ কবে মুখ তুলে চাইবেন!!

রাতে রেহান বেডে আসলো। আমি ওর আগেই চলে এসেছি। পাশ ফিরে শুয়ে আছি।
– আজ এতো আগেই বেডে? খাবাপ লাগছে?
রেহান মাথায় হাত রেখে বুঝতে পারে আমি কাঁদছি।।
– হিয়া… কি হয়েছে? কাঁদছিস কেন?
কি হয়েছে বল?
এবার আমার কান্নার যেন বাঁধ ভেঙে গেছে।।
রেহানের বুকে আমি অঝোরে কেঁদে যাচ্ছি।।
– হিয়া, মুখ তুল,তাকা আমার দিকে। বলবিনা কি হয়েছে?
– আমাদের একটা বাবু নেই কেন??কেন আসে না একটা পরী!?!!
রেহান আমার চোখ মুছে বললো
– কে কি বলেছে? বল।
– কেউ কিছু বলেনি।
– তুই মিথ্যা বলবি আমার কাছে? বল কি হয়েছে?
আমি কাঁদতে কাঁদতে রেহানকে বললাম।

– এই কলেজে তোকে থাকতে হবে না। দুইটা দিন অপেক্ষা কর।তোকে অন্য কলেজে ট্রান্সফার করাবো।
আর শুন,তুই কি বোকা?
আল্লাহ যখন চাইবেন তখন আমাদের বাবু আসবে। আল্লাহ যদি না চান আসবে না।
হয়তো দশ বছর পরেও দিতে পারেন। উনি যা করেন তা ভালো বুঝেই করেন।
এসব নিয়ে আর কোনো দিন মন খারাপ করবি না।। কথা দে।এখনই কথা দে।
– আচ্ছা করবো না।
– তোর পরী চাই?
– হুম।
পরম মমতায় বুকে আগলে নিলো রেহান।

পরদিন রেহান আমাকে এক যায়গায় নিয়ে গেলো।
একটা পুরনো জীর্ন ধরনের বাসা।
সেখানে এক বৃদ্ধা আমাদের ভেতর নিয়ে গেলেন।
– রেহান, আমরা এখানে কেন এসেছি?
-একটু অপেক্ষা কর।
অই বৃদ্ধা ভেতর থেকে কোলে করে একটা ফুটফুটে বাচ্চা নিয়ে এলো।
– মাগো, আমার মাইয়াডা বাঁঁচবো না।ওর জামাই ওরে ফালাইয়া বিয়া কইরা চইলা গেছে। একটা খোঁজ করে নাই। মাইয়া বাঁঁচবোনা ডাক্তার কইয়া দিছে।আমি বুড়া মানুষ। এই ৫ দিনের বাচ্চা পালমু কেমনে??
তুমি নিয়া যাও।
তোমার বাচ্চা আজকে থেইকা। ওরে বড় মানুষ কইরো।

আমার চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে। রেহানের দিকে তাকালাম। রেহান ইশারা করলো।
আমি ধীর পায়ে এগিয়ে গিয়ে কুলে তুলে নিলাম।
আমার পরী!!এটা আমাদের পরী!!
– রেহান!!
– তুই পরী চেয়েছিলিনা?
এটাই তোর পরী।

বুকে জড়িয়ে ধরলাম পরীকে….আমার বুকের শূন্য যায়গা টা পূর্ণ হয়ে গেছে।। রেহানের চোখেও পানি।
-এই আমার পরী, হিয় দেখ কিভাবে তাকিয়ে দেখছে আমাকে!!

———–The End———?

প্রেমে পড়া বারণ পার্ট – ১৬

0

#প্রেমে_পড়া_বারণ
# পার্ট – ১৬
# Writer – Taslima Munni

আফরিন আলতো করে গালে ছুঁয়ে বললো
– কিছু মানুষ জীবনে দ্বিতীয় বার না ফিরে আসাই উত্তম।
সেটা আমার জন্যও, তোমার জন্যেও।
চলো ওদিকে যাই।অনেক সময় ধরে এখানে।
অবাক হয়ে দেখছি এই মেয়েটাকে!
এমন ও মানুষ হয়!
বাস্তববাদী!
– হুম চলেন।

রেহান দেখেছে আমি আফরিনের সাথে কথা বলে হেঁটে আসছি।

এই দিনটা সত্যিই অন্যরকম কাটলো। ফেরার সময় আমরা সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে নিলাম। কেননা দেশে যাবার আগে সবার সাথে হয়তো দেখা করার সুযোগ পাবো না।
আসার সময় রেহান আমার হাতটা ধরে বেরিয়ে এলো।
এই ধরাটা অন্য রকম। এটা আমি অনুভব করতে পারছি। ।
হয়তো আফরিন এখানে থাকায় ইচ্ছে করেই এভাবে হাত ধরে রেখেছে!
কিন্তু এটা ওকে আমি বলতে পারবো না। প্রত্যেক মানুষের ব্যক্তিগত একটা জীবন আছে। আমি রেহানের স্ত্রী, অর্ধাঙ্গিনী। জানার অধিকার আছে আমার। কিন্তু এটাও আমার বোঝা উচিত সম্পর্কের মাঝে একটা স্পেস দেয়া দরকার। আফরিনের প্রতি তার অনুভূতিগুলো তো মিথ্যা ছিলো না।
আমার জন্য ওর অনুভূতি ও মিথ্যা নয়। যখন আমি ছিলাম না,আফরিন ছিলো। এটাই সত্যি।
এই সত্যি টা মেনে নিতে এতো দ্বিধা করবো কেন?
সত্য কঠিন। আর সবচেয়ে বড় সত্য হচ্ছে বাস্তবতা। বাস্তবতা হচ্ছে রেহান আমার পথের সাথী।

রেহান আমার হাতটা ধরে বেরিয়ে আসছে। আচ্ছা, আফরিন কি তাকিয়ে দেখছে?
যে হাত ধরে অনেক টা পথ হেঁটেছিলো, সেই হাত অন্য একটা হাত ধরে আছে!!

হয়তো আফরিন চেয়ে চেয়ে দেখছে, হয়তো দেখছে না!
আমি একবার পিছনে ফিরে তাকালেই উত্তর টা পেয়ে যেতাম।
কিন্তু কেন জানি তাকাতে ইচ্ছে করছে না ।।
কি লাভ সব প্রশ্নের উত্তর খুঁজে?
কিছু প্রশ্নের উত্তর অজানাই থাকুক। জানলে হয়তো মনের অসুখ করতে পারে!!

কি অদ্ভুত মানুষের জীবন। একদিকে তাকিয়ে দুঃখ দেখি, বিপরীত দিকে পুষি ঘৃণা! অথচ
মুদ্রার ওপিঠেও কিছু গল্প থাকে, কিছু দুঃখ থাকে। সেই দুঃখ আমার দেখতে পাইনা বলে আমাদের ছুঁয়ে যায় না।
কত ধরনের মানুষ আছে! কত রকম দুঃখ আছে। ভালোবাসার কত রং আছে!
অথচ আমরা কেবল প্রেমের মধ্যেই ভালোবাসা খুঁজি। ভালোবাসা ছড়িয়ে আছে প্রতিটি সম্পর্কের ভাজে ভাজে।
আফরিনকে দেখে অদ্ভুত একটা অনুভূতি হচ্ছে এখন আমার।
মনে হচ্ছে আমাদের চিন্তার জগৎ এখনো অনেক ছোট রয়ে গেছে!

আমার ভাবনায় ছেদ দিয়ে রেহান বললো
– Thanks!
-?? হঠাৎ! কিসের জন্য??
– আজকে তুই অনেক বড় মনের পরিচয় দিলি।।
– আমি!! কিভাবে?
– আফরিনের সাথে এভাবে নরমাললি বিহেইভ করবি আর এমন ভাবে ওকে গ্রহণ করেছিস! এখানে অনেকেই জানে ওর সাথে আমার একটা রিলেশন ছিলো। এসব জানার পরেও তোর ব্যবহারে আমি নিজেই অবাক হয়েছি।। তারাও খানিকটা হয়েছে।
– তাই বুঝি?
– হুম। তোর যায়গায় আমি হলে এটা বোধহয় পারতাম না।
আমি কিছু না বলে মৃদু হাসলাম।
– তো কি এতো গল্প করেছিস?
– তেমন কিছু না। ওর ফ্যামিলির কথা বলেছে ওর বোন কিভাবে মারা গেছে এসব-ই।
– হা।মেহেরিন।খুব লাজুক আর ভীতু টাইপের ছিলো মেয়েটা।
-হুম। শুনেছি আফরিনের কাছে।
– আর কি বললো?
– এনগেজমেন্ট হয়ে গেছে ওর।সামনেই বিয়ে করবে।
– বাহবা। একেবারে এতো গল্প!
– কেন? গল্প করা যায় না বুঝি?
– ঠিক তা না।
– তো কি?
– আফরিন সহজে কারো সাথে এতোটা ঘনিষ্ঠ হয় না। আর তোর সাথে অল্প সময়েই দেখছি কতকিছু শেয়ার করলো!.
– হুমম।
মেয়েটা ভারী মিশুক মনে হয়েছে।। হাসিখুশি।
– হা।এমনিতে বেশ হাসিখুশি।। মজার কথা কি জানিস। সেদিন যখন দেখা হয়েছিলো, তখন বলেছিলো ওর ডিভোর্স হয়ে গেছে। এনগেজমেন্ট হবার কথা। এসব আমার সাথে এতো বছর পরে দেখা হবার পরে এমন ভাবে বললো! আমিই আসলে বিব্রতবোধ করছিলাম প্রথমে।

রেহানও সাবলীলভাবে বলে যাচ্ছে কথাগুলো। কারণ ওর মনে কোনো দ্বিধা নেই।
আরও কথা যেগুলো হয়েছিলো সেগুলো বললাম না।কারণ কথা দিয়েছি আফরিনকে।।
রেহানকে যতটা স্পেস দিয়েছি,আজ নিজেরও একটু স্পেস দরকার। কিছু একান্ত ব্যক্তিগত অনুভূতি রাখার জন্য।।
যেটা কাউকে বলা যায় না। রেহানকেও না।।
এটা কেবলই নিজের। একান্ত নিজের।
আজ নিজের অনেক হালকা লাগছে। আবার কোথাও একটু চিনচিন ব্যথা করছে।
কেন করছে বুঝতে পারছি না।
বোঝার চেষ্টাও করছিনা।

কানাডায় শেষ কিছু দিন আমরা অনেক শপিং করলাম সবার জন্য।
বাড়ি ফেরার জন্য মন কেমন করছে।
সময় যেন কাটছে না।
পোস্ট গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট হয়ে গেছে। সবকিছু পেয়ে গেছি।
সময় চলে এলো। দেশে ফেরার।
আগামী পরশু আমরা ফিরে যাচ্ছি।

তোকে একটা কথা বলি?
– হা,বলো।
– তুই আবার মাইন্ড করবি নাতো?
আমি একটু সিরিয়াস হয়ে ওর কথায় মনোযোগ দিলাম। কি এমন কথা বলতে রেহান ইতস্তত করছে!!
– মাইন্ড করবো! কি এমন কথা যেটা শুনে আমি মাইন্ড করবো?!!
– মাইন্ড না করলেও কষ্ট পাবি। তাই বলতে চাইনি।কিন্তু তোর কাছে গোপন করা আমার পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না।
– কি হয়েছে বল?
– আমি চেয়েছিলাম আফরিন তোর মুখোমুখি হোক।
আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম
– চেয়েছিলে?? কিন্তু কেন?
– কারণ তোর মনে কোনো দ্বিধা, কোনো সংশয় যেন না থাকে।
তোর আমার সম্পর্ক টা আরও স্ট্রং হবার জন্য আফরিনের উপস্থিতি প্রয়োজন ছিলো।
– হুম। বুঝলাম।
এই চাওয়া টা কি আমাকে এখানে পাঠানোর আগে থেকে ছিলো?
– না। এখানে এসে আফরিনের সাথে দেখা হবার পরে মনে হয়েছে।
হিয়া, তুই আমার কাছে কি সেটা তোকে বুঝাতে পারবো না।
– আসলেই আফরিনের উপস্থিতি প্রয়োজন ছিলো।
নাহলে তোমার সাথে ঝগড়া করতাম কি নিয়ে? ঝগড়া করার কোনো সুযোগ তো রাখোনা।!

আমি মুখ টিপে হাসছি। আমিও বিশ্বাস করি আফরিন উপস্থিতির প্রয়োজন ছিলো।
– তা-ই? তোর ঝগড়া করতে মন চায়?
– জি। এখন থেকে ঠিক করেছি প্রতি দুই মাসে একবার ঝগড়া করবো।নাহলে একঘেয়ে লাগবে।
– তুই ঝগড়া করবি?
– হা করবোই তো। বউয়েরা তো জামাইয়ের সাথে ঝগড়া করবেই।
– এটা কি ল’ ?
– ল’ বলতে পারো মেরিড লাইফের!
– ঝগড়া করে দেখিস।আমিও ঝগড়া করে বাসা থেকে চলে যাবো।
– কোথায় যাবে?
– যাবার যায়গার অভাব নেই।
– কই যাবেন শুনি?
– শ্বশুর বাড়ি।।
– ওরে… উনার শ্বশুর বাড়ি চলে যাবেন!!
আমিও আমার শ্বশুর বাড়িতেই থাকবো।ঢুকতে দিবোনা আপনাকে।
– ঠিক আছে, ঠিক আছে। দেখা যাবে।

– অই,শুন।
– হুম, বলো।
– আরে, শুন না!!
– বলো না। শুনছিতো।
আমি রেহানের কোলে মাথা রেখে ফোন ঘাটছিলাম। রেহান হেলান দিয়ে শুয়ে আছে।
হঠাৎ কি বলার জন্য এমন ডাকছে!
– সবার জন্য এতো কিছু নিয়েছিস।
আমার জন্য এই দেশ থেকে কি নিয়ে যাবি?
– তোমার জন্য কিছু নেই নাই?!!
এত্তো গুলো শপিং যে করলাম তোমার জন্য!!
উঠে বসে চোখ বড় বড় করে জিজ্ঞেস করলাম।
– এগুলো কি চেয়েছি আমি?
– তো! কি চেয়েছেন? বলেন শুনি।
– বলা যাবে না।
– বলা যাবে না!!?
– না।
– আজব!! কেন বলা যাবে না?
– বললে তো আপনি বুঝবেন না!
– বুঝিয়ে বললেই তো বুঝবো, নাকি?.
– আসেন বুঝিয়ে দেই।
রেহান টান দিয়ে বুকে নিয়ে বললো
– অই যে স্বপ্নে দেখলাম একটা মিষ্টি, ছোট্ট পরীর সাথে হেঁটে যাচ্ছিলেন,সেই পরীটা আমার চাই।
রেহান কি বলেছে বুঝতে পেরে আমার শরীরে অদ্ভুত একটা শিহরণ বয়ে গেলো। লজ্জাও পেলাম।
ওর বুকে মুখ লুকিয়ে নিলাম।
– মুখ লুকিয়ে লাভ নেই।পরী আমার চাই।

আসলেই একটা পরী চাই।আমার মনের অদ্ভুত শূন্যতা দূর করতে একটা পরী চাই।রেহান ঠিক বলেছে।।
ওকে আরও নিবিড় ভাবে জড়িয়ে ধরেছি।

আজ আমাদের ফ্লাইট।
প্রবাস জীবনের ইতি টেনে দেশে ফিরছি।
এখানেই হয়তো আফরিনের অধ্যায়ের সমাপ্তি টেনে যাচ্ছি।
আমরা প্রায় পৌঁছে গেছি।
কিছুক্ষনের মধ্যেই ল্যান্ড করবে আমাদের বিমানটি।
আকাশের মেঘ।হালকা হালকা রানওয়ে দেখা যাচ্ছে।
বিমানটা একটা ঝাকি দিলো।
রানওয়েতে দেখলাম বিমানগুলো বাঁকা হয়ে আছে।
একটু পরেই বুঝতে পারলাম বিমানগুলো বাঁকা হয়ে নেই।আমাদের বিমানটাই বাঁকা হয়ে আছে!!
ল্যান্ডিং এর চেষ্টা করছে কিন্তু ল্যান্ড করতে পারছে না।

চলবে…..