Sunday, July 6, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1868



অন্ধকার পল্লী Part:৫

0

#অন্ধকার_পল্লী
Part:৫
#Tabassum_Riana

সকালে ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে এলো অবনী।সকাল থেকে অাফিন বারবার কল দিয়ে যাচ্ছে।তাই অগত্যা উঠতে হলো ওকে।আফিনের কল রিসিভ করে বারান্দায় এসে দাঁড়ালো।সকালে উঠে বারান্দায় গাছ গুলোকে দেখতো এতোটা মায়াময়ী লাগে বলার মতো না।বৃষ্টির ফোঁটা ফোঁটা পানি গাছের ছোট্ট পাতা গুলোয় জমে আছে।
হ্যালো!!!!!অপর পাশ থেকে নেশা ধরানো কন্ঠে বলে উঠলো আফিন।আফিনের কন্ঠ শুনে কেমন যেন একটা ঘোরে পৌছে গেলো অবনী।নিস্তব্ধতা গ্রাস করেছে ওকে ভীষন ভাবে।ঘনঘন নিশ্বাস নিচ্ছে অবনী আর নিশ্বাস গুলো আফিনের বুকের গভীরে গিয়ে লাগছে।কারোর নিশ্বাস এতোটা মাতালতায় ভরপুর হতে পারে আজ বুঝতে পারলো আফিন।দুজনেই চুপ হয়ে গেছে।নিজেকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতেই আফিন বলল কিছুক্ষনের মাঝেই আপনার বাসার নিচে আসবো।রেডি হয়ে যান।আফিনের কথায় ঘোর কাঁটলো অবনীর।জি!!!!!কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে প্রশ্ন করে উঠে অবনী।বললাম রেডি হয়ে নাও ইন হাফ এন্ড আওয়ার।আমি আসতেছি তোমার বাসার নিচে।ওকে।অবনী বলে উঠে।আফিন কিছু না বলে ফোন কেঁটে দিলো।,,,,,,,,,,,,,,
অবনী ফোন সামনে এনে নম্বরের দিকে তাকিয়ে আছে।ওনার সাথে কথা বলার মুহূর্ত টা সেকেন্ডেই শেষ হয়ে গেলো।ইচ্ছে হচ্ছিলো কথার মাঝেই ডুবে থাকতে।কেন এমন হলো?বুঝতে পারছেনা অবনী।লোকটা যেন ওকে কাছে টানছে।কথা গুলো ভাবতে ভাবতেই কাপড় নিয়ে ফ্রেশ হতে চলে যায় অবনী।চুলের খোপা খুলে লম্বা চুল গুলোকে পিঠের ওপর ছেড়ে দিলো অবনী।ঝড়নার প্রত্যেক ফোঁটা পানি ওর শরীরকে শিহরিত করছে।ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে এসে চুলগুলো সাদা তোয়ালে দিয়ে পেঁচিয়ে নিলো।আকাশী রংয়ের একটি স্যালোয়ার কামিজে নিজেকে অাবৃত করলো অবনী।সাদা ছোট্ট পাথরের টিপ অবনীকে একদম সাদা পরীতে পরিনত করেছে।চুল গুলো কে আঁচড়িয়ে ব্যাগ কাঁধে নিতেই ফোনে মেসেজের টোন বেজে উঠলো।অবনী ফোন অন করে সামনে ধরলো।
আফিনের মেসেজ”I’m waiting ”
আর অপেক্ষা না করে নিচে নেমে এলো।অবনী।গাড়িতে হ্যালান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আফিন।সাদা শার্টের হাতা কুনুই পর্যন্ত ফোল্ড করা।সাথে ব্লু ডেনিম প্যান্ট সেই মায়াবী চোখ জোড়া আর মুখে মন ভোলানো মিষ্টি হাসি ফুঁটে উঠেছে আফিনের।উফ কি যে হ্যান্ডসাম লাগছে লোকটাকে বলার মতোনা।সাদা পরী লাগছে আজ আফিনের জলপরীকে।অবনী আফিনের কাছে এসে দাঁড়াতেই আফিন গাড়ির গেট খুলে দিলো।অবনী ঢুকে পড়লো গাড়িতে।আফিন ও বসে পড়লো ড্রাইভিং সিটে।গাড়ি চলতে শুরু করলো।কলেজে পৌছে দিয়ে আফিন অফিসে চলে এলো।
অন্তরা আর অবনী পাশাপাশি বসে আছে।অবনী তোকে কিছু জিজ্ঞেস করার ছিলো।কিছুদিন ধরে বলবো ভাবছিলাম কিন্তু হয়ে উঠেনি।কথা গুলো বলে একটু থামলো অন্তরা।কি বলবি বল?টেবিলের ওপর হাত রেখে সেখানে মাথা এলিয়ে বলে উঠলো অবনী।ঐ লোকটার সাথে তোর কিছু চলছে?অন্তরা বলে উঠলো।
মানে?কোন লোকটা?কার কথা বলছিস অন্তরা? মাথা উঠিয়ে প্রশ্ন করলো অবনী।যার সাথে বাসায় যাচ্ছিস, যে তোকে আজ নিয়ে এলো সেই লোকটা।মুচকি হাসলো অন্তরা।আ আরে না কিছুনা অন্তরা।সে তো জাস্ট ড্রপ করে দিচ্ছে।আর কিছু না।কথাটা বলেই মলিন হাসলো অবনী।সে যদি এতোই অপরিচিত হতো তাহলে এভাবে তোকে নিয়ে যেতোনা বা নিয়ে আসতো ও না।বা তুইও ওনার সাথে এভাবে ইজিলি যেতে পারতিনা।নিশ্চয়ই কিছু আছে।ওনার প্রতি কোন গভীর বিশ্বাস কাজ করছে তোর মাঝে।একনাগাড়ে বলল অন্তরা।সে নিজেই হয়ত তৈরি করে নিয়েছে। বিড়বিড় করে বলল অবনী।কি বললি?অন্তরা শুনতে না পেয়ে আরেকটু কাছে এগিয়ে প্রশ্ন করলো।টেবিল ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো অবনী।কিছুনা!! বলেই বেরিয়ে গেলো অবনী।অন্তরা অবনীর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থেকে উঠে অবনীর পিছু নিলো।
আকাশ ডাকছে।কিছুক্ষনের মাঝেই ধূসর বর্ন ধারন করলো আকাশ।ঝিরিঝিরি বৃষ্টি পড়তে শুরু করেছে।ছাতাটা আনা হয়নি অবনীর।ভালোই হলো ভিজা যাবে বৃষ্টিতে।মুখ তুলে বৃষ্টির পানির মজা নিচ্ছে অবনী।অাফিন সেই একই জায়গায় এসে গাড়ি থামালো।খুব বৃষ্টি হচ্ছে।গাড়ির জানালা দিয়ে অবনীকে দেখার চেষ্টা করলো আফিন।কিছুক্ষনের জন্য থমকে গেলো অাফিন।সত্যিকারের জলপরী দেখতে পাচ্ছে আফিন।আফিনের গাড়ি দেখতে পেয়ে অবনী ছুটে এলো আফিনের কাছে।আফিন ঘোরের মাঝেই গেট খুলে দিলো।অবনী ঢুকে বসলো।অবনীর ঠোঁট বেয়ে পানি পড়ছে।চুল গুলো গালে লেপ্টে আছে।ঠোঁটের পানি গুলোর ওপর ভীষন হিংসে হচ্ছে আফিনের।অবনী আফিমের দিকে তাকালো।লোকটা ওর দিকে এক নজরে তাকিয়ে আছে।কেমন যেন একটা মাতালতা কাজ করছে আফিনের মাঝে।অবনীর একটু কাছে এগিয়ে এলো আফিন।অবনীর বুক ধুকপুক করছে।আফিন আরেকটু কাছে এগিয়ে আসতেই অবনী চোখ বুজে নিলো।
অবনীর ঠোঁট বেয়ে গড়িয়ে পড়া পানি ওর থুতনিতে আসতেই আফিন অবনীর থুতনিতে ঠোঁট ছোঁয়ালো। পানি গুলোকে শুষে নিতে শুরু করলো অাফিন।আফিনের কোটের হাতা খামচে ধরে আছে অবনী।আফিন একটু সরে এসে অবনীর দিকে তাকালো।অবনী একটু তাকালো।নড়ার শক্তি পাচ্ছেনা কেউই।অবনীর থেকে চোখ সরিয়ে নিয়ে সরে এলো আফিন।অবনী ও সোজা হয়ে বসলো।কি হচ্ছিলো কেউই বুঝতে পারছিলোনা।অবনী মাথা নিচু করে বসে সময় টাকে ভাবছিলো।স্টিয়ারিংয়ের ওপর হাত রাখলো আফিন।আ’ম সরি!!কি হয়ে গেছিলো বুঝতে পারিনি।বলে উঠলো আফিন।অবনী কিছুই বলতে পারলোনা।মাথা নিচু করে বসে আছে।দুজনের মাঝে আর কথা হয়নি।অবনীর গলির সামনে আসতেই নেমে গেলো অবনী।বৃষ্টি ও থেমে গেছে।আফিনের দিকে এক নজর তাকালো অবনী।হয়ত কিছু শোনার অপেক্ষায় ছিলো।
আফিন কিছু না বলে চলে গেলো আফিন।কিছুটা মন খারাপ হয়ে গেলো অবনীর।ধীরে ধীরে বাসার দিকে এগোলো অবনী।
চলবে

অন্ধকার পল্লী Part:৪

0

#অন্ধকার_পল্লী
Part:৪
#Tabassum_Riana

,,,,,,,,,,,,,,,,,,,অবনীর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে আফিন।বাসার গলি ভালো না?তারমানে নিশ্চয়ই কোন সমস্যা হয়।এই মেয়ে জীবন ও মুখ খুলবেনা যা করার আমাকেই করতে হবে।কথা গুলো ভাবতে ভাবতে ফোন বের করলো আফিন।একটা নম্বরে কল দিয়ে ফোন কানে ধরলো।হ্যালো স্যার!!!!!!অপর পাশ থেকে আফিনের বডিগার্ড বলে উঠলো।ইয়েস।লিসেন যে মেয়েটাকে আনতে যাই তোমরা ওর গলিতে পাহাড়া দিবে এবং আপডেট আমাকে জানাতে থাকবে।ওকে।কথা গুলো বলে ফোন কেঁটে দিলো আফিন।পকেটে ফোন ঢুকিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিলো আফিন।বাসায় ঢুকতেই মামুন কে দেখতে পেলো।ওর দলের আরো দুজন বসে আছে রহমত সাহেবের সামনে।বাহির থেকেই অবনী রহমত সাহেবের গালাগালি শুনতে পায়।বুঝতে পারছিলো না অবনী বাবার এমন গালাগালির কারন।এখন ঘরে ঢুকেই বুঝতে পারলো অবনী।মা অবনীকে ইশারা করে দ্রুত রুমে যেতে বলছিলো কিন্তু মামুন আর ওর লোকদের দেখে অবনীর পা আটকে গেছে।হাঁটতে পারছেনা।শরীর ঘেমে একাকার হয়ে যাচ্ছে অবনীর।
,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,অবনীকে দেখে মামুন উঠে ওর দিকে এগোতে লাগলো।অবনী তখনই দ্রুত হেঁটে ওর রুমের দিকে এগোলো।বারবার পিছে তাকাচ্ছিলো অবনী মামুন ওর পিছনে আসছে কিনা সেটা দেখার জন্য।অবনী কই যাচ্ছো সোনা?তোমাকে দেখার জন্যই তো এসেছি!!!প্লিজ কাছে আসো আদর দেই।উমমাহ!!!অবনীর দিকে তাকিয়ে বলছিলো মামুন আর আজে বাজে শব্দ ও করছিলো জানোয়ারটা।রহমত সাহেব আর সহ্য করতে পারলেননা।আমার মেয়েকে যদি আর কিছু বলেছিস তোকে,,,,,,,,,, তেড়ে এসে মামুন কে মারতে গেলেন।রহমত সাহেবের হাত ধরলেন মামুন।গায়ে হাত তোলার চেষ্টা করবিনা।তোর মেয়ে এখনো ভালো আছে।যদি আমার গায়ে একটা ও টোকা লাগেনারে?তাহলে মনে কর তোর পরী মেয়ে দুটোই শেষ।বলে উঠলো মামুন।রহমত সাহেব হাত নামিয়ে নিলেন।মেয়ে দুটো যে ওনার জানের টুকরা।অনেক বেশি ভালোবাসে মেয়ে দুটোকে।
,,,,,,,,,,,,,,,, রুমে এসে খাটে বসে কাঁদতে লাগলো অবনী।এসব আর কতোদিন সহ্য করতে হবে?এতো দিন বাহিরে জ্বালাতো এখন ঘরে চলে এসেছে তারপর তো ওরা,,,,,,, না না কি ভাবছি এসব আমি?কিছু করতে পারবেনা ওরা।কাঁদতে কাঁদতে কথা গুলো ভাবছিলো অবনী।হঠাৎ আফসানা রুমে আসায় চোখ মুছে নিলো অবনী।মামুন আর ওর লোকেরা চলে যেতেই রহমত সাহেব মাথায় হাত দিয়ে সোফায় ধপ করে বসে পড়লেন।আমেনা বেগম রহমত সাহেবের পাশে বসে স্বামীর কাঁধে হাত রাখলেন।দেখো ওনারা অনেক খারাপ মেয়েটাকে কখন কি করে বসে?এভাবে আর কতোদিন চলবে?তাই বলছিলাম যে বিয়ে দিয়ে দাও।আমেনা বেগম বলে উঠলো।বিয়ের কথা শুনে রহমত সাহেব স্ত্রীর দিকে তাকালেন।চোখের নিচে ভিজে আছে।আমার অবনী পড়াশুনা কমপ্লিট করবে।ওই শুয়োরের বাচ্চারা কি করবে দেখবো তো?কঠিন গলায় বললেন রহমত সাহেব।তারপর উঠে রুমের দিকে পা বাড়ালেন।আমেনা বেগম গজরগজর করতে করতে স্বামীর পিছু নিলেন।আপু মামুনরা বাসায় কি করছিলো?অবনীর দিকে তাকিয়ে কিছুটা চিন্তিত মুখে জিজ্ঞেস করলো আফসানা।জানিনা রে। কি চায় ওরা?কেন এমন করছে?আর কতোদিন সহ্য করবো এগুলা?বিড় বিড় করে বলতে লাগলো অবনী।বোনের পাশে বসে পড়লো অাফসানা।আপু ওরা তোকে বিরক্ত করে না তো?প্রশ্ন করে উঠলো অাফসানা।আফসানা আমি ফ্রেশ হতে যাচ্ছি,এসব কথা বলার একদমই সময় নেই আমার।আফসানার পাশ থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বলতে লাগলো অবনী।
,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,সবসসময় এ প্রশ্ন করলে এমন করিস কেন আপু?আফসানা বলে উঠলো।আফসানা প্লিজ চুপ থাক!!!বলেই বাথরুমে ঢুকে পড়লো অবনী।
খাটে আধশোয়া হয়ে ল্যাপটপে কাজ করছিলো অাফিন।”আমাদের বাসার গলিটা ভালো না”হঠাৎ অবনীর কথাটা মনে পড়তেই আফিন আর কাজে মন দিতে পারলোনা।ফোন হাতে নিয়ে বডিগার্ড কে কল দিলো অাফিন।
,,,,,,,,,,,,,,,,,,, হ্যালো স্যার।বলে উঠলো বডিগার্ড।
,,,,,,,,,,,,,, কই তোমরা?জিজ্ঞেস করলো অাফিন।
,,,,,,,,,,,,,স্যার ম্যাডামের বাসার গলির সামনে।বলেই হালকা কাশলো বডিগার্ড।
,,,,,,,,,,,,,,, কোন খবর পেলে?ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন করলো অাফিন।
,,,,,,,,,,,,,,,,,,,না স্যার তেমন কিছু পাইনি।তবে কিছু বখাইটটা পোলা অবনীর বাসার ভিতর থেকে বাহির হলো।
,,,,,,,,,,,,,,,,,,,আশেপাশে থেকে খবর নেয় ওরা কে?আর অবনীর বাসায় কেন গেলো?আমি ইনফরমেশন চাই ওদের সম্বন্ধে রাইট নাও।কঠিন গলায় বলে ফোন কেঁটে খাটের ওপর জোরে ফোনটাকে রাখলো অাফিন।
ল্যাপটপ অফ করে বসে বডিগার্ডের কলের ওয়েট করতে থাকলো অাফিন।কেমন একটা অদ্ভুত অস্থিরতা কাজ করছে আফিনের ভিতর।কিছুক্ষন বারান্দায় হেঁটে রুমে এলো আফিন।ফোনে কল পেয়ে ফোনের কাছে দৌড়ে গেলো আফিন।বডিগার্ড কল করেছে।
পরদিন আফিনের গাড়ি দেখতে পেয়ে অবনী গাড়িতে এসে বসে। আফিন সামনে তাকিয়ে আছে।গায়ে ধূসর কালারের কোট সাথে ব্ল্যাক ডেনিম প্যান্ট,চোখে সানগ্লাস পুরাই হিরো।লোকটা আজ পাশে তাকাচ্ছেনা কেন?কেউ একজন পাশে বসলে মানুষ অন্তত একবার দেখবে তার পাশে ভূত বসে আছে নাকি মানুষ?অবনী ভিতরে এসে বসতেই আফিন গাড়ি স্টার্ট দিলো।অবনী আড়চোখে আফিনকে দেখছে।আজ এমন করছে কেন এই লোকটা?কথা ও বলছেনা।কিছুটা বিরক্ত হয়ে অপরদিকে ফিরে বসে থাকে অবনী।কেন জানি খুব হাসি পাচ্ছে ওর।বাসার গলির সামনে আসতেই থামান থামান!!!বলে উঠলো অবনী।গাড়ি থামালো আফিন।গাড়ি থেকে বের হতেই আফিনের ডাকে থেমে গেলো অবনী।
,,,,,,,,,,,,,,,,,,, এই যে শুনুন।বলে উঠলো আফিন।
জি!!!!বলে উঠলো অবনী।কাল থেকে আপনাকে কলেজে নিয়ে যাবো আমি।সামনে তাকিয়ে বলল অাফিন।ক কেন?কিছুটা অবাক হয়ে প্রশ্ন করলো অবনী।যা বলেছি শুনো।কাল থেকে আমার অপেক্ষা করবে।বুঝলে?দাঁতে দাঁত চেপে বলল অাফিন।অবনী কে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে আফিন গাড়ি চালিয়ে চলে গেলো।আশপাশ তাকিয়ে অবনী হাঁটতে লাগলো।ওর পিছন কালো।ইউনিফরম পরা ৭জন লোক হেঁটে যাচ্ছে।এদের আগে কখনো দেখেনি অবনী।কেমন যেন ভয় ভয় করছে অবনীর।দ্রুত হেঁটে বাসার ভিতর ঢুকে পড়লো অবনী।
চলবে

অন্ধকার পল্লী Part:৩

0

#অন্ধকার_পল্লী
Part:৩
#Tabassum_Riana

,,,,,,,,,,,,থামান!!!থামান!!অবনীর কথায় ঘোর কাঁটে আফিনের।চোখের কোনা দিয়ে পাশে বসা অবনীকে দেখে নিলো আফিন।গাড়ি থামিয়ে আশপাশ দেখে নিলো অাফিন।দোতলা পুরোনো একটি বিল্ডিং।তবে বিল্ডিংটা লতানো গাছ দ্বারা ঢাকা।এর আগের দিন তো অন্য কোন জায়গায় নেমেছিলো মেয়েটা।আজ এ কোন জায়গায় থামলো বুঝতে পারছেনা আফিন।অবনী গাড়ি থেকে নেমে সামনে চলে যেতেই কি মনে করে আফিনের দিকে দৌড়ে এলো।জানালার কাঁচ নামালো আফিন।অবনী কি জানি বলার চেষ্টা করছিলো এতক্ষন বুঝতে পারছিলো না আফিন।এখন শুনতে পেলো অবনীর কথা।জানিনা কি বলে ধন্যবাদ দেবো? সেদিন ও সাহায্য করলেন আজ ও করেছেন।ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করতে চাইনা।বলে আর এক মুহূর্ত ও অপেক্ষা না করে সামনে হেঁটে চলে গেলো অবনী।অবনীর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে আফিন।ওর কন্ঠস্বর এতো মধুর কানে লেগে থাকার মতো।শুধু শুনতেই মন চায়।সেদিনকার ছেলে গুলো পথ আগলে দাঁড়ায় রহমত সাহেবের।এলাকার ছ্যাঁচড়া বখাটের দল এরা।আজ এলি?সাহস তো কম না তোদের।সরে দাঁড়া,নাহলে পুলিশে কমপ্লেন করবো।রাগী গলায় বলতে থাকে রহমত সাহেব।
,,,,,,,,,,আরে ইন্সপেক্টর ঘরে এমন রসগোল্লা রাখলে শরীরের ঝাঁঝ তো বাড়বেই।তোর মাল মেয়েটা তো দিনে দিনে স্বপ্ন দোষের কারন হচ্ছে।দিবি তোর মেয়েটাকে একরাতের জন্য?বখাটে মামুন বলে উঠলো।ছেলেটা ওর গ্যাংগের লিডার।চেহারা দেখলেই বুঝা যায় হিরোইনচি।আমার মেয়ের দিকে এভাবে তাকিয়েছিস তো চোখ উপড়ে ফেলবো শালা হারামির দল।চেঁচিয়ে উঠলো রহমত সাহেব। তাহলে তোর মেয়েকে বের হতে দিস কেন?ঘরবন্দী করে রাখ।তাহলে আর আমাদের সমস্যা হবেনা।বলেই হেসে উঠলো ছেলে গুলো।আমার মেয়ে ঘরে বসে থাকবেনা আর তোরা ও কিছু করতে পারবিনা। আঙ্গুল তুলে ওদের শাঁসিয়ে ঘরের দিকে পা বাঁড়ালেন রহমত সাহেব।টিউশন থেকে মাত্রই ঘরে ফিরেছে অবনী।খোলা চুলগুলো কে খোপায় গুঁজে দিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো অবনী।ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে এসে ডাইনিং টেবিলের দিকে এগিয়ে গেলো। অবনীকে দেখে রহমত সাহেব নড়েচড়ে সোজা হয়ে বসলেন। অবনী!!!রাস্তায় তোর কোন সমস্যা হয়না তো?হালকা কেঁশে বলে উঠলেন রহমত সাহেব।না বাবা কিন্তু কেন?প্লেটে ভাত বাঁড়তে বাঁড়তে বলে উঠলো অবনী।না এমনিতেই।রহমত সাহেব মেয়েকে চিন্তায় না ফেলার জন্য বলে উঠলেন।তাও বলছিলাম কি একটু সাবধানে থাকিস মা?একগাল ভাত মুখে নিয়ে বললেন রহমত সাহেব।
রাতে আফসানা অার অবনী শুয়ে আছে পাশাপাশি। বোনের দিকে একনজর তাকিয়ে অবনী বলে উঠলো বাবার কি কিছু হয়েছে?বাবা মাকে কথা বলতে শুনেছিলাম বিকেলে।মামুন, রাফাত আরো কয়েকজন আছেনা আমাদের এলাকায়?ওরা না কি বাবাকে খুব খারাপ কথা বলেছে।আফসানা একনাগাড়ে বলে দিলো।খারাপ কথা!!!কি খারাপ কথা?ভ্রু কুঁচকালো অবনী।অবনীর সম্পর্কে বলা প্রত্যেকটি কথা অাফসানা অবনীকে জানালো।আরে ওরা কিছুই করতে পারবেনা।বাবা মা শুধু শুধুই ভাবছে।নারে আপু শুনেছি পতিতা পল্লীর সাথে ওদের যোগসাজশ আছে।আফসানা বলে উঠলো।ওহ তাই নাকি?কিছুটা চিন্তিত হয়ে বলল অবনী।হ্যারে আপু।রাফসানা কিছুটা চিন্তিত মুখে বলে উঠলো।আচ্ছা থাক এখন এসব বাদ দেয়।ঘুম আসছে।অবনী বালিশে মাথা রেখে বলে উঠলো।পরদিন কলেজ থেকে বেরিয়ে সেই আগের জায়গায় এসে দাঁড়ালো অবনী।কত গাড়ি চলে গেলো তবু ও কারো অপেক্ষা যেন ওকে থামিয়ে রেখেছে।প্রায় ত্রিশ মিনিট পর আফিনের দেখা মেলেনি।অবনী হতাশ হয়ে বাসে উঠে যায়।আফিনকে না চাইতে ও আশা করেছিলো অবনী।
অফিস থেকে বের হতে খুব বেশি দেরি হয়ে গেছে আজ।আফিন তো অধীর আগ্রহে ওর জল পরীর দেখা পাবার আশায় বসেছিলো।অফিস থেকে বেরিয়ে গাড়ি নিয়ে সে আগের জায়গায় চলে আসে আফিন।জানালা খুলে সে আগের জায়গায় তাকালো যেখানে অবনীকে দেখেছিলো আগে।কিন্তু আজ নেই।হয়ত আসতে দেরি হচ্ছে।ভাবতে থাকে অাফিন।গাড়ি থেকে বেরিয়ে গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়ায় আফিন।এভাবে অনেকসময় পার হয়ে গেলো,কিন্তু অবনী আসলো না।আফিনের খুব বেশি রাগ হচ্ছে অজানা মেয়েটার প্রতি।গাড়িতে বসে আশেপাশে অনেক খুঁজলো অবনীকে কিন্তু পেলো না।অবশেষে গাড়ি নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হলো আফিন।অবনী জানালার সামনে বসে আছে।আজ কি সে এসেছিলো?ওর জন্য অপেক্ষা করেছিলো?নাহ কেন করবে?ও কে হয় লোকটার?আর লোকটাই বা কেন ওর জন্য অপেক্ষা করবে?ও কেন ভাবছে লোকটাকে নিয়ে? মাত্র দুদিন দেখেছে,তেমন কথা ও হয়নি।বারান্দায় বসে কফিতে চুমুক দিচ্ছে আফিন।অজানা মেয়েটাকে দেখার নেশা দিনে দিনে বেড়ে চলছে ওর।কেন এমন হচ্ছে?এই নেশা কোনভাবেই কাঁটানো সম্ভব না।পরদিন প্রায় পনের মিনিট আগেই সেই একই জায়গায় পৌছে যায় আফিন।গ্লাস খুলতেই জলপরীকে দেখতে পেলো আফিন।মেয়েটা ওর দিকেই এগিয়ে আসছে।কিছুসময়ের মাঝেই অবনী আফিনের গাড়িতে উঠে বসলো।কাল অপেক্ষা করেন নি যে?সামনে তাকিয়েই প্রশ্ন করে উঠলো অাফিন।
কথা শুনে আফিনের দিকে অবাক চোখে তাকায় অবনী।ন না মানে অপেক্ষা করেছিলাম কিন্তু আপনি আসেননি।আর দেরি ও হচ্ছিলো।আমাদের বাসার গলিটা ভালো না।একনাগাড়ে বলে উঠলো অবনী।
কেউ জ্বালিয়েছে আপনাকে আপনাদের গলিতে?আচমকা প্রশ্ন করে উঠে আফিন।উহুম। মাথা নাড়ায় অবনী।অাফিন আড়চোখে অবনীর দিকে তাকায়।কলাপাতা রংয়ের জামাটায় এতো অপরুপ লাগছে মেয়েটাকে।কপালে কালো টিপ, চোখে কাজল আর ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক।এতো মায়াবী লাগছে মেয়েটাকে।এই মায়া কেঁটে উঠা সম্ভব না।ইসস একটু ছুঁয়ে দিতে পারলে……..ছি!!!! ছি!!!!!কি ভাবছি এসব?ভাবতে থাকে আফিন।অবনীর দিকে আড়চোখে আবার তাকিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিলো আফিন।গাড়ি চলছে। অবনী আড়চোখে আফিনকে দেখছে।সাদা শার্ট কালো ডেনিম প্যান্ট,চোখে সানগ্লাস।শার্টের হাতটা কুনুই পর্যন্ত উঠানো।হিরো হিরো ভাব লোকটার মাঝে।ভেবেই অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে হাসে অবনী।বাসার সামনে আসতেই অবনী চেঁচিয়ে উঠলো থামান থামান।আফিন গাড়ি থামালো।আপনার নম্বর দিন কিছু টা অন্যমনষ্ক ভাবে বলে উঠলো আফিন।
আফিনের কথা শুনে হকচকিয়ে উঠলো অবনী।জ জি?তোতলিয়ে উঠলো অবনী। জি।আফিন বলে উঠলো।কিন্তু কে কেন?অবাক হয়ে প্রশ্ন করলো অবনী।আপনি আর একা আসবেন না।আমার জন্য অপেক্ষা করবেন।আমি আসবো।সেজন্যই নম্বর চাইছি যেন আমার দেরি হলে আপনাকে জানাতে পারি।দাঁতে দাঁত চেপে বলল আফিন।
আরে না না এতো কষ্ট করতে হবেনা আপনাকে।আমি চলে আসতে পারবো।কিছুটা ভয় পেয়ে বলে উঠলো অবনী।অবনীর দিকে কিছুটা ভ্রু কুঁচকে তাকালো আফিন।দিচ্ছেন কি দিচ্ছেন না?অবনী চুপ করে আছে।Yes or no?কিছুটা রাগী গলায় বলল আফিন।দিচ্ছি।লিখেনিন।বলে উঠলো অবনী।আফিন ফোন বের করে অবনীর নম্বর টি কন্টাক্ট লিস্টে জলপরী নামে সেভ করে নিলো।অবনী আর অপেক্ষা না করে বেরিয়ে দৌড়ে গেটের ভিতরে ঢুকে গেলো।
চলবে

অন্ধকার পল্লী Part:২

0

#অন্ধকার_পল্লী
Part:২
#Tabassum_Riana

,,,,,,,,,,,,,,,,সকাল থেকেই মাথাটা বড় ব্যাথা করছে অবনীর।অবশ্য বাসের ঝাঁকুনি অসহ্য গরমের কারনেই এমন হচ্ছে।ক্লাশে বসে মন দিতে পারছেনা অবনী।পাশে বেস্টফ্রেন্ড অন্তরা সে কখন থেকে বক বক করেই যাচ্ছে।অবনী জানিস তো তোর রাফসান ভাই কেমন?ওর সাথে দেখা করতে গেলে ফোন টা পর্যন্ত টাচ করতে দেয়না। সরি রে আমি তোর ফোন ধরতে পারিনি রাগ করিসনা।আর কখনো হবেনা।একনাগাড়ে বলতে থাকে অন্তরা।আরেনা রাগ করিনি।আসলে এতো বৃষ্টি হচ্ছিলো তাই কল দিচ্ছিলাম আরকি। যাই হোক মাথাটা পেইন করছে।চল কফি খেয়ে আসি।বলে উঠে সামনে এগোয় অবনী।
,,,,,,,,,,,,,,,,,,,কফিতে চুমুক দিতে দিতে কোথাও যেন হারিয়ে গেছে আফিন।আনমনেই কি যেন ভাবতে থাকে।বৃষ্টি পড়ছে।আফিন রাস্তা দিয়ে একাএকা হেঁটে চলছে।হঠাৎ কাউকে দেখে থেমে যায়।সামনে জলপরী দাঁড়িয়ে আছে স্নিগ্ধ হাসি দিয়ে।সেই হাসি বড় রহস্যময়।সব উলটপালট করে দিচ্ছে আফিনের ভিতরের।আফিন মেয়েটার কাছে একপা একপা করে এগুচ্ছে।কিন্তু জলপরীকে ধরতে পারছেনা।যতোই এগুচ্ছে জলপরী ততোই পিছুচ্ছে।একসময় অন্ধকারে মিলিয়ে গেলো জলপরী।আফিন কফির মগ টেবিলের ওপর রেখে মাথার পিছনে দুহাত রেখে বসে আছে।কি করবে এখন?এখন কাজে মনযোগ দেয়াই ভালো।ভাবতে থাকে আফিন। ল্যাপটপে খুটখাট শুরু করে দেয় আবার।
,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,অবনী ঐদিন কি করে বাসায় গেছিলি?অন্তরার কথায় ঘোর কাঁটে অবনীর।না মানে একজন লিফট দিয়েছিলো।আমতাআমতা করে বলতে থাকে অবনী।হি ছিল অর সি ছিলো? অন্তরা হেসে বলে উঠে।কেন কি করবি হি অর সি দিয়ে।যেই ছিলো সে হেল্প তো করেছে।আচ্ছা অবনী বলনা সে কি হ্যান্ডসাম ছিলো।অবনীর কাঁধে হাত রেখে বলতে থাকে অন্তরা।জ জানি না।বাদ দে তো।এসব কথা শুনতে ভালো লাগছেনা।কথা টা বলে উঠে যেতে থাকে অবনী।অন্তরা দৌড়ে ওর পিছু নিতে থাকে।
*নতুন নতুন রোমান্টিক গল্প পেতে ভিজিট করুন আমাদের ফেসবুক পেজ: “নিঃস্বার্থ ভালোবাসা”*

,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,শুনি মেয়েটাকে বিয়ে দিবে কবে?তোমার তো অবসর হয়ে গেছে।মেয়েটার ও তো বিয়ের বয়স হয়েছে।এভাবে রাস্তায় একা একা চলাফেরা করে।সেটা তো ভালো দেখা যায়না। তাই বলছি ভালো একটা ছেলে দেখে মেয়েটার বিয়ে দিয়ে দাও।দিন কাল ভালো না।কখন কি হয়ে যায়।গড়গড় করে বলতে থাকলেন আমেনা বেগম।কি শুরু করেছো কি?এখনো সেকেলে রয়ে গেলে?উলটপালট বকছো কেন?কিছু হবেনা মেয়ের।ও কি একাই রাস্তায় থাকে নাকি।ওর বয়সী অনেক মেয়েই একা চলাফেরা করে।বলে চোখে চশমা জড়িয়ে সংবাদপত্রে মন দিলেন রহমত সাহেব।মেয়ের চিন্তা হচ্ছিলো বলেই বলছিলাম।মন খারাপ করেই বলে উঠলেন আমেনা বেগম।
,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,রুহী আজ ও দাঁড়িয়ে আছে বাসস্টপে।সামনে দিয়ে অনেক বাস ট্যাক্সি চলে যাচ্ছে তবে কোনটাকেই থামানোর জন্য মন সায় দিচ্ছিলো না ওর।কিসের আশায় কে জানে?অন্তরা অবনীর কাছে এসে দাঁড়ালো। কিরে যাবিনা?চল।অন্তরা অবনীর হাত ধরে বলে উঠে।আমি যেতে পারবো তুই চলে যা।রাফসান ভাই অপেক্ষা করছে তোর।সত্যি যেতে পারবি তো?অন্তরা বলে উঠলো।অবনী মাথা ঝাঁকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।অন্তরা রাফসানের সাথে চলে গেলো।
আফিন গাড়ি ড্রাইভ করে আগের জায়গার ঠিক কাছাকাছি এসে পড়েছে।শেষ ফুঁ দিয়ে সিগারেট জানালা দিয়ে ফেলে দিলো আফিন।জায়গাটার কাছে এসে গাড়ি সামনে চালিয়ে যেতে থাকলো আফিন।
,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,দুপুর দুটো বাজে রহমত সাহেব ঘরে ঢুকলেন রাগে গজগজ করতে করতে।শালার বাচ্চা শালারে ইচ্ছা করতেছিলো পুঁতে ফেলি। চাকরীটা থাকলে আজ রিমান্ডে দিতাম।কতবড় সাহস এত বড় কথা বলে।এদের দলকে শাস্তি দেয়া উচিৎ।নষ্ট পল্লির নষ্টা পোলাপান।রাগে গজগজ করে বলতে থাকে রহমত সাহেব। কি হয়েছেটা কি?ওভাবে চিৎকার করছো কেন শুনি?আমেনা বেগম শাড়ীর আঁচলে কপালের ঘাম মুছতে মুছতে এসে বলতে লাগলেন।
,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,অবনী শেষমেষ ট্যাক্সি টাকে ডাকতে লাগলো।এই ট্যাক্সি যাবেন?জি আফা।২০০টাকা ভাড়া দিতে হইব ট্যাক্সিওয়ালা বলে উঠে।১০০টাকা ভাড়া এখান থেকে অবনী বলতে লাগলো।আইলে আহেন না আইলে নাই।বলে ট্যাক্সিওয়ালা চলে যেতে লাগলো।অবনী অসহায় হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।কি করবে এখন?ঠিক তখনই গাড়ি এসে থামে অবনীর সামনে।গাড়ির দরজা আপনাআপনি খুলে গেলো ওর সামনে।অবনী মাথা নিচু করে দেখার চেষ্টা করলো।সেই আগের লোকটাই।অবনী আবার দাঁড়িয়ে গেলো।তারপর কি যেন ভেবে গাড়িতে চেপে বসলো।
,,,,,,,,,,,,,,আফিন লুকিং গ্লাসে অবনীকে আড় চোখে দেখছে।কি আছে এই মেয়ের মধ্যে যা এক দেখাতেই এমন হারিয়ে ফেলেছে নিজেকে আফিন।অবনীর চোখে চোখ পড়তেই চোখ সরিয়ে নিলো অাফিন।গাড়ি চলতে লাগলো অজানার পথ ধরে।
চলবে

অন্ধকার পল্লী Part:1

0

#অন্ধকার_পল্লী
Part:1
#Tabassum_Riana

ঝিরঝির বৃষ্টি পড়ছে।রাস্তাটা পানিতে ডুবে যাওয়ার অবস্থা।ছাতা হাতে অবনী দাঁড়িয়ে আছে।আজ বাস রিক্সা কিছুই পাচ্ছেনা ও।তাই অগত্যা হাঁটতে শুরু করলো।বাড়ি বেশ দূরে। হেঁটে যাওয়া সম্ভব নয় তাহলে কি করবে এখন ও?হঠাৎ একটা গাড়ি দেখতে পেলো।গাড়িটা ওর দিকেই আসছে।কিছুনা ভেবে হাত নাড়তে লাগলো অবনী।গাড়িটা থামেনি বেশ দূরে চলে গেলো।কি করবে ও?ঠিক তখনই গাড়িটা আবার পিছে এলো। ওর কাছে এসেই থামলো।গাড়ীর দরজাটা কে জানি খুলে দিলো।কিছু না ভেবেই অবনী ঢুকে পড়লো।একজন ভদ্রলোক।চোখে সানগ্লাস,ব্লাক শার্ট আর ব্লু জিন্স প্যান্ট।অবনীর দিকে একটি রুমাল ধরলো লোকটা।অবনী কিছু না ভেবে রুমাল টা নিয়ে ওর হাত মুখ মুছতে লাগলো।
কই যাবেন আপনি?লোকটা বলে উঠলো।অবনী লোকটার দিকে একনজর তাকিয়ে বলল শ্যাওলা পাড়া।ওহ।লোকটা কিছু না বলে গাড়িতে স্টার্ট দিলো।গাড়ি চলতে লাগলো।অবনী জানালা দিয়ে বাহিরের দৃশ্য দেখছে।বৃষ্টিতে বড়ই সুন্দর দেখাচ্ছে।হাত বের করে বৃষ্টির পানির ফোঁটা গুলো স্পর্শ করছে অবনী।
আফিন পাশে বসা অপরিচিতার দিকে এক নজর তাকালো।মেয়েটার মাঝে কি যেন একটা আছে,মনোমুগ্ধকর একটা জিনিস।বৃষ্টির পানি মুখে পড়তেই চোখ বন্ধ করে হাসা,হাত বাহির করে বৃষ্টি স্পর্শ করা সত্যিই অদ্ভুত এক মোহ কাজ করছে অাফিনের মাঝে।হাত ঢুকান অন্য গাড়ি আসলে এ্যাক্সিডেন্ট হতে পারে।অাফিন সামনে তাকিয়ে বলে উঠলো।অবনী অাফিনের দিকে মুখ ঘুরিয়ে তাকালো।তারপর হাত ঢুকিয়ে নিয়ে বৃষ্টি দেখায় মনযোগ দিলো।রাস্তা যেন শেষই হচ্ছেনা।অজানার পথে চলছে গাড়িটা।ঘন্টা খানিক পর অবনীর বাসার সামনে গাড়ি এসে থামলো।অবনী বেরিয়ে গিয়ে সামনে চলে গেলো।অাফিন ভ্রু কুঁচকে অবনীর যাওয়ার দিকে চেয়ে আছে।কেমন মেয়ে একটা বার থ্যাংকস ও দিলো না।

অবনী পিছনে ফিরে এলো।গাড়ির জানালায় নক পড়ায় জানালা খুলে দিলো অাফিন।ইয়েস অাফিন বলে উঠলো।থ্যাংকস সাহায্য করেছেন তাই।মুচকি হেসে বলল অবনী।ওয়েলকাম। জানালা লাগাতে লাগাতে বলল আফিন।গাড়ি স্টার্ট দিয়ে বেরিয়ে গেলো।অবনী ঘরে ঢুকে পড়লো।অবনী মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান।বাবা রিটায়ার্ড পুলিশ অফিসার,মা গৃহিনী আর ছোট বোন আফসানা ক্লাশ নাইনে উঠলো সবে।অবনী একটা পাবলিক ভার্সিটিতে অনার্স প্রথম বর্ষে পড়ছে।দুটো টিউশনি ও করছে কারন বাসার খরচ চালাতে হয়।অামেনা বেগম অবনীর দিকে এগিয়ে এলো। কিরে মা পুরো ভিজে গেছিস?আরে মা ছাতাটা মাঝখান দিয়ে ফুঁটো হয়ে গেছে।ছাতা বন্ধ করে বলে উঠলো অবনী।
ওহ, যাহ গোসল সেরে নেয়।নাহলে ঠান্ডা লেগে যাবে।একনাগাড়ে বলে উঠলেন আমেনা বেগম।জি মা। রুমের দিকে এগোতে এগোতে বলল অবনী।
ড্রাইভ করছে আর পাশের সিটে তাকাচ্ছে অাফিন।পাশে তো মেয়েটি বসে ছিলো।
অাফিন বিশিষ্ট ব্যাবসায়ী প্রয়াত শফিক খানের একমাত্র সন্তান।বর্তমানে ব্যাবসায়ের সকল দায়িত্ব অাফিন সামলাচ্ছে।বেশ লম্বা ফর্সা আফিন।দেখতে হিরোদের হার মানাবে।কোন কিছুরই অভাব নেই ওর জীবনে শুঊু আছে মায়ের অভাব,মায়ের ভালোবাসার অভাব।বাড়ির সামনে গাড়ি থামালো আফিন।একজন লোক এসে দরজা খুলে দিলো।
স্যার ফ্রেশ হয়ে নিন।আপনার খাবার গরম করতে বলছি।কাজের লোকটা বলে উঠলো।
হুম।আফিন ভিতরে চলে গেলো।
অবনী খাবার খেতে বসেছে সামনে বাবা বসে আছে।ভ্রু কুঁচকে রহমত সাহেব মেয়ের দিকে তাকিয়ে আছেন।একটু কেঁশে বলতে শুরু করলেন রহমত সাহেব পড়াশুনার আর কতোবছর বাকি?
৩বছর বাবা মাথা নিচু করে বলল অবনী।
হুম।তোর একটা ছবি দিস ভালো দেখে।রহমত সাহেব মুরগীর হাড়ে কামড় দিয়ে বললেন।
কেন বাবা।অবাক চোখে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো অবনী।
চলবে

Adorable Love পর্ব : ১৪ শেষ পর্ব

0

#Adorable_Love ?
পর্ব : ১৪
লেখা : ঊর্মি ধর
.
.
.
পুরো বাড়ি গতকাল থেকেই এলাহীভাবে সাজানো হচ্ছে। কাছের আত্মীয় স্বজনেরা সকাল সকালই চলে এসেছে আমানদের বাড়ি। আর তাদের সবার এক অভিযোগ শুনতে হয়েছে রাজিয়া বেগমকে যে কেনো তার একমাত্র ছেলের বিয়েতে বলা হলো না তাদের। এভাবে চুপিচুপি বিয়ে সেরে শেষকালে ডাকা!? অতঃপর রাজিয়া বেগম নানা রকম বুঝ দিয়ে কাটিয়েছেন ব্যপারখানা। আর যাই হোক, সবাইকে তো আর তার ছেলের সব উদ্ভট সিদ্ধান্তের কথা বলা যায়না। এখন সব মেতে আছে নতুন বউ নিয়ে। সকলেই বউ এর মুখ দেখে কিছুনা কিছু দিয়ে দোয়া করছেন। আর সবার মুখেই ঈশিকার আচার-আচরণ, রুপের বাহবা! আর প্রশংসা করবে না ই বা কেনো? সকলের পা ছুঁয়ে সালাম করা, যেই পারছে টানাটানি করে নিজের কাছে ঠেসে ধরে বসিয়ে গল্প শুরু করছে। ঈশিকা সেগুলো আদর্শ শ্রোতার মতো শুনছে। আর হাসি মুখে উত্তর দিচ্ছে৷ তাই প্রশংসা না করে যায় কোথায়?
সবার মুখে ছেলের বউয়ের প্রশংসা শুনে রাজিয়া বেগমও মনে মনে খানিকটা গর্ব বোধ করলেন।

এদিকে সবার সাথে কথা বললেও ঈশিকার মন পরে আছে অন্য দিকে৷ লম্বু শয়তানটাকে আজকাল কারণে অকারণে বেশিই মিস করছে সে। আজকে আমানকে বিজনেস ক্লায়েন্ট হ্যান্ডেলের জন্য চিটাগং যেতে হয়েছে সকালেই। খুব জরুরি হওয়ায় রাজিয়া বেগম যেতে দিয়েছে নইলে আজকের দিনে কখনই যেতে দিতেন না। তবে সাথে সে কড়া হুকুম জারি করেছে যেনো সন্ধ্যার আগেই বাড়ি ফেরে।

এরপর দুপুর গড়িয়ে বিকেলের দিকে মেকাপ আর্টিস্টরা চলে আসলো। রাজিয়া বেগম তাদের ঈশিকার ঘরে পাঠিয়ে দিয়ে তিনি চলে গেলেন নিজে তৈরি হতে। কারণ একটু পরেই সকল গেস্ট আসা শুরু করবে৷ ঈশিকার রেডি হতে হতে সন্ধ্যা প্রায়। পিচ এন্ড গোল্ডেন কম্বিনেশন এর লেহেঙ্গার সাথে গ্রিন এন্ড গোল্ডেন স্টোনের জুয়েলারি।সাথে ভারী সাজ। পুরোই পুতুল পুতুল লাগছে ঈশিকাকে। অবশ্য এই সবকিছুই আমানের পছন্দ অনুযায়ী কেনা হয়েছে। এরমধ্যেই রাজিয়া বেগম আসলেন রুমে। ঈশিকাকে দেখে ঈশিকার বা হাতের কোণে আঙ্গুলে হাল্কা কামড় দিয়ে বললেন,
—-” মাশাল্লাহ! কি মিষ্টি লাগছে আমার মেয়েকে! কারো যেনো নজর না লাগে।”
ঈশিকা উত্তরে হাসলো। তার মা ও সাজলে এই কাজ করতেন নজর কাটানোর জন্য৷ রাজিয়া বেগম বললেন,
—-” চল, নিচে চল।”
ঈশিকা বাধা দিয়ে বললো,
—-” কিন্তু, উনি তো এখনো আসেন নি।”
রাজিয়া বেগম হেসে বললেন,
—-” আমান এসে যাবে কিছুক্ষনের মধ্যেই। কল করেছিলো তোর শ্বশুর।”

ঈশিকা মাথা নেড়ে নিচে চলে এলো। ঈশিকা সিড়ি থেকে নামা শুরু করে স্টেজে বসা পর্যন্ত ক্যামেরাম্যানরা কোনো পোজ ছাড়াই এলোপাথাড়ি ছবি তুলছে। কিছুক্ষণ সময় পরই দেখলো ঈশিকার মা, বাবা, ভাই সবাই এসে গেছে। তারা আসতেই ঈশিকা উঠে আগে আফসানা চৌধুরীকে জড়িয়ে ধরলেন। তিনিও যতই আগে বিয়ে বিয়ে করুক না কেন, এখন মেয়েকে ছাড়া থাকার কষ্টটা খুব বুঝতে পারেন তিনি। এরপর ঈশিকা ইয়ানকে জড়িয়ে ধরে আদর করলো। তারপর ইফতেখার চৌধুরীর হাত ধরে বললো,
—-” জানো, তোমাদের কত মিস করছিলাম আমি? খুব মনে পরছিলো তোমাদের কথা।”
ইফতেখার চৌধুরী হেসে বললেন,
—-” তাই নাকি? কিন্তু আমরা তো তোকে একদমই মিস করিনি। কি ইয়ান, তাইতো?”
ইয়ানও ইফতেখার চৌধুরীর কথায় সায় দিল। ঈশিকা অভিমানী কন্ঠে বললো,
—-” বাবা…!”
ইফতেখার চৌধুরী হেসে মেয়েকে বুকে জড়িয়ে ধরলো।

সিংগেল ফটোসেশান করার সময় ঈশিকা দেখলো রিমি আর নোভা চলে এসেছে। ঈশিকা ওদের কাছে এগিয়ে যেতেই নোভা রিমিকে উদ্দেশ্য করে ঈশিকাকে বললো,
—-” আসতেই চাইছিলো না। জোর করে নিয়ে এসেছি।”
রিমি রাগ মেশানো গলায় বললো,
—-” আসব কেনো? ও কি আমাদের আপন ভাবে নাকি? আপন ভাবলে চুপিচুপি এভাবে আমাদের না জানিয়ে বিয়ে করতে পারত!?”
ঈশিকা একবার নোভার দিকে তাকিয়ে ফের হেসে রিমির হাত ধরে বললো,
—-” সরি দোস্ত! দেখ আমিতো ফোন করে বললামই হুট করেই বিয়েটা হয়ে গেছে। কোনো প্ল্যান ছিল না। না হলে তোদের বলতাম না বল?”
রিমির একই ভাবমূর্তি দেখে ঈশিকা আবার বললো,
—-” তুমি কি চাও? যে এই ভরা আসরে নতুন বউ এভাবে সেজেগুজে কান ধরে উঠবস করুক?”
ঈশিকার এই কথায় রিমি হেসে ফেললো। তারপর ঈশিকাকে জড়িয়ে ধরলো। ঈশিকা দুষ্টু হেসে রিমিকে বললো,
—-” তা তোমার তোসু বাবু কোথায়? আসবে না?”
রিমি হেসে দিয়ে বললো,
—-“আসছে ওরা…ওইতো এসে গেছে।”
ঈশিকা পাশ ফিরে দেখলো তৌসিফ সাথে শোয়েব ও এসে গেছে। ঈশিকা ভেবেছিলো শোয়েব আসবে না। কিন্তু শোয়েব কে দেখে বেশ স্বাভাবিক ই মনে হলো। তৌসিফ এসে কথা বলার পর শোয়েব এগিয়ে আসলো ঈশিকার কাছে। এসে হেসে বললো,
—–” কংগ্রাচুলেশন দোস্ত! সত্যি তোর বিয়ের নিউজটা পেয়ে খুব সারপ্রাইজড হয়ে গেছিলাম! ভেবেছিলাম মজা করছিস। কিন্তু এখন দেখলাম নাহ, সত্যি!
ঈশিকা মুখে জোরপূর্বক হাসি ফুটিয়ে বললো,
—–” থ্যাংক ইউ! আসলে হুট করেই….”
—-” হেই…শোয়েব?”
ঈশিকার কথা শেষ হবার আগেই কেউ একজন কথাটা বলে উঠলো। ঈশিকা পেছন ফিরে দেখলো আমান দাঁড়িয়ে। হোয়াইট ব্লেজার, ব্ল্যাক শার্ট, হোয়াইট প্ল্যান্ট সাথে ওই ধারলো চেহারা! সবমিলিয়ে মাথা ঝিম করা লুক! ঈশিকা এক দফা ক্রাশ খেয়ে নিলো। কিন্তু আমান কখন বাড়ি কখন এলো! আমান এগিয়ে এসে হেসে বললো,
—-” এসেছো তাহলে। আমি কিন্তু ঈশুকে বারবার বলে দিয়েছি অবশ্যই যেনো তোমাকে ইনভাইট করে। হাজার হলেও ওর কাছের বন্ধু তুমি।”
শোয়েব আমানের কথায় জোরপূর্বক মৃদু হাসলো। তারপর আমানকে দেখে একে একে সবাই এগিয়ে আসলো। সবার সাথে কথা বলে এরপর আবারো শুরু হলো ওদের কাপল ফটোসেশান। নানারকম পোজে ছবি তুলছে। ক্লোজ ভাবে দাঁড়ানোর সময় আমান ঈশিকার কানেকানে ফিসফিসিয়ে বললো,
—-” আমাকে মেরে ফেলার প্ল্যান করেছো নাকি? এভাবে সব সময় মার্ডার করা কি ঠিক?”
ঈশিকা আমানের কথায় লজ্জায় নতজানু হয়ে বললো,
—-” বেশ করেছি। মারবও আমি, বাঁচাবোও আমি।”
আমান ঈশিকার কথায় হেসে দিল।

ওদের ভাবভঙ্গি দেখে শোয়েবের কাছে সব পরিষ্কার। সেদিনের আমানের বলা অধিকারের কথা তার কাছে আজ স্পষ্ট। ঈশিকা সত্যি আমানকে ভালবাসে। আর তার এক তরফা ভালবাসা ওদের ভালবাসার কাছে নিতান্তই তুচ্ছ! হ্যাঁ, আমানকে ঈশিকার পাশে দেখে তার রাগ হিয়েছিল ঠিকি। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে ঈশিকা আমানকে পেয়েই খুব খুশি। আর ভালবাসার মানুষ যাতে সারাজীবন সুখী থাকে সেটাই চাইবে সে। আমান আড়চোখে দেখছিল শোয়েব ওদের দিকেই তাকিয়ে আছে। শোয়েবের দিক থেকে চোখ সরিয়ে মুচকি হাসি দিল আমান।

অনুষ্ঠান পর্ব শেষ হলে যার যার মতো বিদায় নিলো। কিন্তু ঈশিকা জেদ ধরলো মা বাবা ভাইকে আজ যেতে দেবে না। এ বাড়িতেই আজ থাকতে হবে। তারা না মানলে প্রায় কান্না করার উপক্রম। রাজিয়া বেগম, আরমান আহমেদ এবং আমানও সাথে জোর করলেন থাকার জন্য। শেষমেশ বাধ্য হয়েই তারা রয়ে গেলেন।

রাতে ফ্রেস হয়ে খেয়েদেয়ে এসেই বিছানায় ধপ করে শুয়ে পরলো ঈশিকা। ভীষন ক্লান্ত লাগায় একটু পরেই ঘুমিয়ে পরলো। আমান শ্বশুর আর বাবার সাথে জম্পেশ আড্ডা দিয়ে ঘরে এসে দেখলো ঈশিকা শুয়ে পরেছে৷ আমান বিছানায় গিয়ে জড়িয়ে ধরে ঈশিকাকে ডাকলে দেখলো কোনো হেলদোল নেই। আমান বিড়বিড় করে বললো, ” হায়রে খোদা! কোথায় ভেবেছি এখন রোমান্স করবে তা না! এখন নাক ডেকে তিনি ঘুমাচ্ছে।” তারপর চিন্তা করলো আজকের সারাদিনের ক্লান্তিতে ঘুম আসাটাই স্বাভাবিক। আমান ঈশিকাকে টেনে সোজা করে নিজের দিকে ফিরিয়ে কপালে চুমু দিয়ে বুকে জড়িয়ে শুয়ে পরলো।
.
.
_________________________________________________
এভাবেই কেটে যাচ্ছে দিন। ঈশিকার ভয় ছিল যে বিয়ের পর হয়ত শোয়েবের সাথে ফ্রেন্ডশিপটা কমপ্লিকেটেড হবে। বা সে কখনও সহজ হতে পারবে না। কিন্তু শোয়েব এখন তার সাথে স্বাভাবিক আচরণ করে। তাই ঈশিকাও আগের মতোই শোয়েবের সাথে স্বাভাবিক ভাবে মিশে। অবশ্য এ নিয়ে আমানেরও এখন রেস্ট্রিকশন নেই খুব একটা।

আগে আমান ঈশিকাকে দিনে সহস্রবার কল করে খোঁজ নিত, খেয়াল রাখতো। এখন হয়েছে কাহিনি উলটো৷ আমান যতক্ষন বাইরে থাকে ঈশিকাই বার বার কল করে তাকে। আর আমান একেকবার দুষ্টুমি করে বলে, ” বাহ বাহ! তুমি তো বিয়ের পর দেখছি আমার প্রেমে পরে গেছো! এত্তো কেয়ার! হুম…আ’ম ইম্প্রেজড!” এই কথায় ঈশিকা লজ্জা পেলেও কপট রাগ দেখায়। আর আমান হাসে।

শ্বাশুড়ির সাথে কিচ্ছুক্ষন আড্ডা দিয়ে সন্ধ্যায় ঘরে চলে আসে ঈশিকা। এসেই কাউচে শুয়ে পরে। গেম খেলার জন্য ফোন অন করতেই স্ক্রিনে ভেসে ওঠে সেই যে আমানের সাথে তোলা প্রথম সেল্ফি টা। ছবিটা দেখেই হেসে ওঠে সে। সেদিন থেকে কিছুদিন পরই হঠাৎ একদিন ভার্সিটি থেকে আসার সময় আমান তার গাড়ি নিয়ে এসে তার সামনে ব্রেক করে। নোভা আর ও কথা বলতে বলতে আসছিলো। আচমকা ঘটনায় চমকে যায় দুজনেই। তারপর আমান নেমে আসে গাড়ি থেকে। প্রথমে ঈশিকার একটু চেনা চেনা লাগলেও পরে ঠিকি চিনতে পারে আমানকে। আমানকে দেখে সে হাই হ্যালো বলার চিন্তা করলেও তার আগেই আমান তার সামনে এসে বলে, “উইল ইউ ম্যারি মি?”
এহন কথায় পুরো হকচকিয়ে যায় সে। এভাবে অল্প চেনা জানা একটা মেয়েকে সোজাসুজি বিয়ের প্রস্তাব দেওয়াটা ভীষন অদ্ভুত লাগে তার কাছে। প্রেমের হলেও মানা যায়। তাই বলে বিয়ে? তখন তার কাছে আমানকে একপ্রকার ফালতুই মনে হয়েছিল। তারপর রাগের বসে নানা রকম কথা শুনিয়ে দেয় আমানকে। কিন্তু তারপর ও ঘুরে ফিরে সেই একই কাহিনি। শেষমেশ বিরক্ত হয়ে শোয়েবের হেল্প নিয়ে সেইদিন আমানের সামনে বয়ফ্রেন্ড এর নাটক করায়। কিন্তু তবুও আমান তার বাবাকে দিয়ে ওদের বাড়ি বিয়ের প্রস্তাব দেয়৷ আর ঈশিকা রাগে জেদে না করে দেয়। কিন্তু ঘটনাচক্রে আমানের রাগ আর ভালোবাসার কাছে হেরে গিয়ে সারাজীবন এর জন্য এক পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে পরে সে। পুরোনো এসব কথা ভেবেই হেসে উঠলো ঈশিকা।

রাত নয়টায় আমান বাড়িতে আসে। রুমে এসেই দেখে কাউচে ঘুমিয়ে আছে ঈশিকা। ফ্রেস হয়ে এসে নিচে চলে যায় আমান। তারপর খাবার নিয়ে এসে ঈশিকাকে ডাকে।
—-” ঈশু… ওঠো খাবে। কি হলো ওঠো? এই ঈশু….ওঠো না লক্ষীটা…ঈশু…!
—–” উমম…খাব না।”
আমান এবার ধমকের সুরে বললো,
—–” আবার খাবার নিয়ে বাহানা? মাইর চিনো? দ্রুত ওঠো।” ঈশিকা পিটপিট করে চোখ খুলে ভাল করে তাকিয়ে দেখে আমান। ওমনি লাফ দিয়ে উঠে বসে।
—-” আপনি? কখন এলেন? ”
—-” অনেক্ষন আগে। মা খাওয়ার জন্য ডেকে গেছিলো ওঠনি কেন? পৌনে দশটা বাজে।”
ঈশিকা আমতা আমতা করে বললো,
—-” আসলে…আপনি আসলে খাব তাই ভেবে… আর কখন যে ঘুমিয়ে গেছিলাম! তাই…
—–” এরপর থেকে লেট করবেনা। খেয়ে নিবে নিজের মতো।”

ঈশিকা চুপ করে বসে রইল৷ মুখে একথা বললেও আমান মনে মনে বেশ খুশি হলো। তারপর ঈশিকাকে খাইয়ে নিজেও খেয়ে নিলো। খাওয়া শেষে প্লেট নিচে রেখে রুমে এসে দেখলো ঈশিকা ড্রেসিংটেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে নাক ধরে কিছু করছে। আমান ঈশিকার পেছনে গিয়ে দাঁড়িয়ে বললো,
—–” কি দেখছো?”
ঈশিকা আমানের দিকে ঘুরে বললো,
—-” নাক টানছি…”
—-” কিহ?”
—-” হুম। দেখুন, কেমন বোচা…আপনার নাকের মতো এতো চোখা না। তাই টেনে চোখা করার চেষ্টা করছি।”
আমান কিছুক্ষন ভ্রু কুচকে তাকিয়ে থেকে শব্দ করে হাসি শুরু করলো। ঈশিকা বিরক্ত হয়ে বললো,
—–” হাসির কি হলো এখানে? ধুর! আপনি একটা আসলেই খারাপ লোক। যান সরুন তো।” বলেই বিছানায় যেতে নিল। ওমনি আমান দুই হাত দিয়ে ঈশিকার পেট আঁকড়ে ধরে আটকে দিল। হাসতে হাসতে বললো,
—-” আরে রাগ করেনা বাবুটা। আচ্ছা আর হাসবো না। আর তোমাকে নাক চোখা করতে কে বলেছে? তুমি এই বোচা নাকেই কিউটের বক্স বুঝেছো?”
ঈশিকা কিছু না বলে গাল ফুলিয়ে রইলো। আমান আবার বললো,
—-” অবশ্য একটা উপায় আছে। সেটা করলে কাজ হলেও হতে পারে।”
ঈশিকা ভ্রু কুচকে বললো,
—-” কি?”
—-” আমার নাকের সাথে নাক ঘষো। সাথে একটু একটু চুমু। দেখবে তিরতির করে বাড়ছে নাক।”
হটাৎ ই ঈশিকার মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি এলো। হেসে দুই হাত দিয়ে আমানের গলা জড়িয়ে ধরে বললো,
—-” ও তাই? আচ্ছা করি তাহলে।” বলেই মুখ এগিয়ে নিয়ে আমানের নাকে নাক লাগালো। তারপর হঠাৎ করেই নাকের ডগায় কচ করে কামড় বসিয়ে দিলো। আমান “আহ” চিৎকার দিয়ে ঈশিকাকে ছেড়ে হাত দিয়ে নাক ধরলো।
ঈশিকার অনেক দিনের ইচ্ছা ছিলো ওই নাকে কামড় বসানোর। আজ পূরন হয়েও গেলো। হাসতে হাসতে বললো,
—–” সবসময় ধান্দাবাজি করলে এমনি হবে।” বলেই যেই বিছানায় যেতে নেবে অমনি আমান ঈশিকাকে চেপে ধরে ৷ তারপর বললো,
—–” খুব কামড়ানোর শখ না? আজকে তোমার শখ মেটাবো আমি। দেখি তোমাকে কে বাঁচায়।”
ঈশিকা ভয়ে ভয়ে বললো,
—–” আপনিও কি কামড়াবেন জোম্বিদের মতো?”
আমান উত্তর না দিয়ে ঈশিকাকে ধরে বিছানায় ধপ করে শুইয়ে দিয়ে বললো,
—-” উহু! আদর করবো।”
বলেই গলায় মুখ ডুবিয়ে দিলো। আমানের খোচাখোচা দাঁড়ির খোচায় ঈশিকার সুড়সুড়ি লাগছে আবার বিঁধছেও। ঈশিকা ছটফট করতে করতে বললো,
—-” আরে…ছাড়ুন…দাঁড়ির খোচা লাগছে তো। উফ! আপনি আসলেই একটা পঁচা লোক! আমার ঘুম পেয়েছে ঘুমাবো আমি। ছাড়ুন..” বলেই আমনকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতে লাগলো।

এবার ছটফটানিতে আমান ঈশিকাকে ছেড়ে দিল৷ তারপর বললো,
—-” আচ্ছা ঘুমাও।”
একটু থেমে আবার বললো,
—-” আর শোন, প্রথম বিয়ের দিন আমাকে বলেছিলে না তুমি? তোমার ভার্সিটির অনেকেই তোমাকে আমাকে নিয়ে জেলাস ফিল করে? তাদের নাম বলো তো। ডিটেইল আমি বের করে নেবো।”
ঈশিকা ভ্রু কুচকে বললো,
—–” কেন?”
—-” কেন আবার? বউ তো ঘরে পাত্তা দেয় না। অন্তত যারা আমাকে ভালোবাসে, যাদের কাছে আমার ভ্যালু আছে। তাদের কাছেই যাওয়া উচিৎ তাইনা?”

ঈশিকা সেদিন ভয়ে কি দিয়ে কি আবল তাবল বলেছিল নিজেও জানে না। কিন্তু কথায় যেনো ঈশিকার মাথায় আগুন ধরে গেলো। কিছুক্ষন ফোস ফোস করে হুট করেই আমানের ওপর চড়ে বসলো।
তারপর আমানের গলা চেপে ধরে বললো,
—-” একদম খুন করে ফেলবো। আমি ছাড়া অন্য কারো কথা ভাবলে।”
আমান পুরো বিস্ফরিত চোখে তাকিয়ে আছে ঈশিকার এমন রুপ দেখে। পরক্ষনেই আমান ইশিকাকে নিচে ফেলে দিয়ে দুহাত চেপে ধরে উঠে বললো,
—-” কেন? আমিতো পঁচা, খারাপ লোক। আবার আদর চাইলে কামড় দেবে, ঘুম আসবে। আর এখন একথা শুনে মেরে ফেলবে মানে কি?”
ঈশিকা কিছুক্ষন আমানের দিকে তাকিয়ে থেকে হুট করে আমানের ঠোঁটে চুমু খেলো। আমান কিছুক্ষন অবাক চোখে তাকিয়ে থেকে পরে হেসে মাথা নাড়িয়ে বললো,
—–” এতোদিনেও কিছুই শিখলে না৷ এভাবে চুমু খায়?”
—-” আমি আপনার মতো নির্লজ্জ নাকি? যে শ্বাস আটকে ধরে মেরে ফে…..

তার আগেই আমান ঈশিকার ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দিলো গভীর ভাবে। বেশকিছুক্ষন পর ছেড়ে দিয়ে চিৎ হয়ে শুয়ে দু জনেই হাঁপাতে লাগলো। তারপর আমান ঈশিকার দিকে তাকিয়ে বললো,
—-“ঈশু?”
—-” হুম?”
—-” ভালোবাসি! বাসোনা?”
ঈশিকা আমানের উঠে এগিয়ে গিয়ে আমানের বুকে মাথা রেখে জাপটে ধরে বললো,
—-” উঁহু! বড্ড বেশিই ভালোবাসি!”
আমান হেসে দুইহাতের আজলে ঈশিকার গাল ধরে কপালে গভীর চুমু এঁকে শক্ত বুকে আঁকড়ে ধরলো।

__________সমাপ্ত__________

Adorable Love পর্ব : ১৩

0

#Adorable_Love ?
পর্ব : ১৩
লেখা : ঊর্মি ধর
.
.
.
সকালে ঘুম ভাঙতেই ঈশিকা নিজেকে আমানের বুকে আবিষ্কার করলো। আমান একদম ঈশিকাকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছে। ঈশিকা আমানের মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষন। খুটিয়ে খুটিয়ে দেখতে লাগলো আমানকে। উফ! এই ছেলে দেখতে এত্তো মাশাল্লাহ কেন!! এরপর তার চোখ গেলো আমানের সেই নাকের ডগায় তিল টার দিকে৷ ঈশিকার ইচ্ছে হচ্ছিলো দাঁত দিয়ে কট করে তিলটার ওপর কামড় বসিয়ে দিতে৷ সেদিন যেমন তার ঠোঁটের হাল করেছিলো শয়তান টা। এরপর এই চোখা নাকটা কামড় খেয়ে লাল হয়ে ফুলে কলাগাছ হয়ে যাবে। উফ! দেখতে যা লাগবে না! পুরোই লাল টমেটো!

এসব ভেবেই ঈশিকা একটু শব্দ করে হেসে উঠলো। ঈশিকার হাসিতে আমান কিছুটা নড়ে আধখোলা চোখে আদুরে কন্ঠে বললো,
—–” উম…গুড মর্নিং মাই লেডি! কাল রাতে ভালোমতো ঘুম হয়নি তোমাকে আদর করতে গিয়ে৷ এখন প্লিজ জ্বালাতন করোনা৷ একটু ঘুমাতে দাও৷”
বলেই আবার চোখ বুজলো আমান। আমানের কথা শুনে ঈশিকা কাল রাতের কথা মনে পরতেই লজ্জা পেয়ে যায়। তারপর বললো,
—-” আচ্ছা ঘুমান। আমাকে ছাড়ুন আমি উঠবো।”
আমান চোখ খুলে ভ্রু কুচকে বললো,
—-” কেনো? উঠতে হবে না এখন। আর একটু ঘুমাও।” বলেই ঈশিকাকে আরো জড়িয়ে চেপে ধরলো আমান।
বাড়ির নতুন বউ এভাবে পরে পরে বেলা অবধি ঘুমাবে? কেমন দেখায়! আর তাছাড়া এখন আর ঘুম ও আসছে না তার। এমন ভাবে আমান চেপে ধরে আছে যে মোচড়ামুচড়ি করেও ছাড়াতে পারছে না। শেষমেশ উপায় না পেয়ে আমানের বুকে জোরসে কামড় বসিয়ে দিলো ঈশিকা। ওমনি আমান ঈশিকাকে ছেড়ে দিয়ে “আহ!” করে উঠে বসলো। সেই সুযোগে ঈশিকা উঠে পরলো বিছানা থেকে আর হাসতে লাগলো। আমান করুন মুখ করে বললো,
—-” ঈশু! কামড় এর বদলে মর্নিং কিস দিয়ে আদর করলেও তো পারতে? উফ!”
—-” এ্যাঁ! শখ কতো? খালি ধান্দাবাজি। বেশ করেছি৷ আরো দেবো। খুব আদর খাওয়ার ইচ্ছা না? তো এটাই আমার আদরের করার স্টাইল।”

বলতে বলতে ঈশিকা দেখলো এবার উলটে আমান ওর দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে মুখ টিপে হাসছে। ঈশিকা ভ্রু কুচকে বললো,
—-” এভাবে তাকিয়ে আছেন কেনো? আর হাসছেন কেনো?”
—-” দেখছি। তোমাকে শাড়ি ছাড়া এইভাবেও কিন্তু মারাত্মক লাগে!” বলেই চোখ মারলো আমান।
—-” কি অবস্থা?” বলেই ঈশিকা নিজের দিকে তাকিয়ে হা হয়ে গেলো! শুধু পেটিকোট আর ব্লাউজ পরনে তার। শাড়ি কোথায়?! আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো শাড়ি বিছানার কোনায় পরে আছে। এরপর আমানের দিকে তাকাতেই আমান দুষ্টু হাসি নিয়ে ভ্রু নাচিয়ে বললো,
—-” কি বলেছিলাম না? শাড়ি আর থাকবে না গায়ে।”

ঈশিকা তাড়াতাড়ি শাড়িখানা উঠিয়ে বুকে নিয়ে বাথরুমের দিকে ছুট লাগালো। আমান ঈশিকার কাণ্ড দেখে শব্দ করে হেসে আবার বিছানায় ধপ করে উপুড় হয়ে শুয়ে পরলো।

এবার ঈশিকা বাথরুমে গিয়ে পরলো আরেক ঝামেলায়৷ জামা কাপড় তো কিছুই নিয়ে ঢুকেনি। ফ্রেস হয়ে পরবে কি? ঈশিকা আবার বাথরুমের দরজা খুলে বেরিয়ে এলো। দেখলো আমান আবার ঘুমিয়ে গেছে। এবার ট্রলি খুলেও চিন্তায় পরে গেলো ঈশিকা। কি পরবে? জামা নাকি শাড়ি? বেশিক্ষন শাড়ি পরে থাকলে যে ভীষন আনকম্ফোর্ট ফিল হয়৷ আবার মা ও তো পই পই করে বলে দিয়েছে পরে যা পরার পরবে৷ প্রথম কয়েকদিন যেনো শাড়িই পরে থাকে । অতঃপর মেরজেন্টা রঙা একটা শাড়ি নিয়ে আবার বাথরুমে ঢুকলো।

আগে অনুষ্ঠান গুলোতে মাঝে মাঝে শাড়ি পরার কারণে ঈশিকার একটু আধটু আইডিয়া আছে শাড়ি পরার ব্যাপারে। তাই পরতে গিয়ে বেশি বেগ পেতে হলো না। তবে খুব একটা ভরসাও রাখতে পারছে না। মনে হচ্ছে এই হাটতে গিয়ে পেঁচিয়ে পরে যাবে নয়তো টুপ করে খুলে যাবে। এরপর চুল মুছে ড্রায়ার দিয়ে শুকিয়ে নিলো। তারপর হাতে ক’গোছা চিকন চুড়ি, আর গলায় একটা হাফ নেকলেস পরলো। তারপর চোখে কাজল দিলো আর শেষে কপালে একটা ছোট লাল টিপ পরলো। এরপর আয়নায় নিজেকে দেখেই এক দফা চমকে উঠলো। চেহারার জৌলুশটাই পালটে গেছে। ঈশিকা এক গাল হেসে সব গুছিয়ে রেখে পেছনে ঘুরতেই দেখলো আমান দাঁড়িয়ে আছে। আমানকে দেখে ঈশিকা বললো,
—-” ঘুম হয়ে গেলো?”
আমান এগিয়ে এসে ঈশিকার কোমড় জড়িয়ে ধরে বললো,
—-” ঘরে বউ থাকলে ঘুম, নাওয়া খাওয়ার কি আর ঠিক থাকে নাকি? সব হারাম এখন আমার!”
উত্তরে ঈশিকা “ঢং” বলে অন্য দিকে ফিরে মুখ ভেংচি দিলো।
আমান হেসে ঈশিকাকে একবার আগাগোড়া দেখে নিয়ে অবাক হয়ে বললো,
—-” ওয়াও! তুমি একা শাড়ি পরেছো? ইশ! ভেবেছিলাম ফিল্মের মতো তুমি শাড়ি পরতে পারবে না সেই সুযোগে আমি পরিয়ে দেবো…তা আর হলো না!”
ঈশিকা ভাব নিয়ে বললো,
—-” হুহ! বলেছি না? এই ঈশিকা পারে না এমন কোনো কাজ নেই।”
আমান অবাক হওয়ার ভান করে বললো,
—-” ওহ হ্যাঁ তাইতো! ভুলেই গেছিলাম আমি। আপনি তো সুপার ওম্যান! তা আমার যে এখন একটু এনার্জি দরকার?”

আমানের কথায় ঈশিকা পিটপিট করে তাকালো। আমান মুচকি হেসে ঈশিকাকে আরো গভীরভাবে জড়িয়ে ধরে ঈশিকার ঠোঁটের দিকে আগাতেই ঈশিকা বাধা দিয়ে বললো,
—-” এই এখন একদম এইসব না! যান আগে ফ্রেস হয়ে আসুন।” বলে ঠেলে বাথরুমের দিকে পাঠিয়ে দিলো। আমান যেতে যেতে বললো,
—-” ঠিকাছে। পরে বুঝে নেবো সুদে আসলে।”
ঈশিকা হেসে বিড়বিড় করে বললো, ” অসভ্য লোক একটা!”
.
.
_________________________________________________
ঈশিকা ডাইনিং এ গিয়ে দেখলো আরমান আহমেদ বসে পেপার পড়ছেন। আরমান আহমেদ ঈশিকাকে দেখেই হেসে বললো,
—-” গুড মর্নিং ডিয়ার!”
ঈশিকা হেসে বললো,
—-” মর্নিং! মা কোথায় বাবা? ”
—-” সে তার জায়গায়…মানে কিচেনে। তুমি একা এলে? আমান এখনো ওঠেনি? ”
—-” উঠেছে। ফ্রেস হচ্ছে।”
—-” আচ্ছা ঠিকাছে। বসে পরো তুমি। ব্রেকফাস্ট মনে হয় এতোক্ষনে রেডি হয়ে গেছে। ”
—-” না সবাই আসুক। এখন একটু কিচেনে যাই?”
আরমান আহমেদ হেসে বললো,
—-” আচ্ছা যাও।”

ঈশিকা কিচেনের দিকে গেলো। দেখলো রাজিয়া বেগম নিজেই ব্রেকফাস্ট বানাচ্ছে। ঈশিকাকে দেখেই বললো,
—-” আরে! উঠে গেছিস আম্মু? আমি এখনি ডাকতে পাঠাতাম তোদের।”
ঈশিকা আমতা আমতা করে বললো,
—–” আমি কি কিছু সাহায্য করবো তোমায়?”
রাজিয়া বেগম হেসে ঈশিকার কাধ ধরে বললো,
—–” কিছুই করতে হবে না। আমি আছিনা? আর যদি খুব মন চায় করতে। তাহলে পরে করবি, এখন না।”
ঈশিকা মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিলো। রাজিয়া বেগম বললো,
—-” আমান উঠেছে?”
—-” হ্যাঁ। ফ্রেস হচ্ছে। ”
—-” আচ্ছা। শাড়ি পরেছিস? আমিতো ভেবেছি একা পরতেই পারবি না।”
ঈশিকা একথা শুনে বলে উঠলো,
—-” হ্যাঁ। কিন্তু মনে হচ্ছে এই খুলে যাবে। আনইজি লাগছে। ”
রাজিয়া বেগম ঈশিকার কথায় হাসলো। বললো,
—-” আর শাড়ি পরতে হবে না। আগে যেভাবে চলতি এখনেও সেভাবেই চলবি। কেউ কিছুই বলবে না।”
ঈশিকা মনে মনে বললো, ” যাক বাবা! বাঁচা গেলো।”

ব্রেকফাস্ট এর সময় রাজিয়া বেগম ঘোষনার মতো করে সবাইকে জানালেন তিনি ঠিক করেছে আগামী শুক্রবার বাড়িতে অনুষ্ঠান হবে বৌভাত উপলক্ষে। বিয়েটা ছেলের কথায় আনাড়ি ভাবে হয়েছে কিছু বলেনি। এখন যা হবে সব তার মর্জিতে। এখানে তিনি কোনো কথাই শুনবেন না কারো। শেষমেশ তার সিদ্ধান্তই অটল রইলো। আজ সোমবার মানে হাতে আর চারদিন বাকি। তিনি আরমান আহমেদকে আগে সবাইকে ইনভাইটেশন এর দায়িত্ব দিয়ে দিলেন। বাকি কাজ তিনি নিজেই তদারকি করে করবেন।
__________________________________________________
সন্ধ্যা সাতটায় অফিস থেকে ফিরলে আমান। যদিও আজকে যাবার ইচ্ছা ছিলো না। তারপরও জরুরি দরকারে যেতে হয়েছে। এসেই দেখলো দুই বউ শাশুড়ীতে মিলে ড্রয়িংরুমে বসে জমিয়ে আড্ডা দিচ্ছে। আমান কিছু না বলেই ঘরে চলে গেলো। ফ্রেস হয়ে বের হতেই দেখলো ঈশিকা বিছানায় বসে মোবাইল চাপছে। ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে চুলে ব্রাশ চালাতে চালাতে আমান বললো,
—–” আড্ডা শেষ?”
—–” হুম। আম্মু ডাকছে। খাবেন চলুন।”
মোবাইলের দিকেই তাকিয়ে বললো ঈশিকা।
ওমনি আমান এসে হুট করে ঈশিকার হাত থেকে মোবাইল নিয়ে নিলো। ঈশিকা আতঙ্কভাবে বললো,
—-” উফ! লাস্ট লেভেল ছিলো গেম টার। দিলেন তো বারোটা বাজিয়ে ধুর!
—-” বর রেখে গেম খেলা? এটা রীতিমতো অন্যায়।”
ঈশিকা কিছু বলে ভেংচি কাটলো। আমান বললো,
—-” উফ ঈশু! তোমার ভেংচিতেও আমি ফ্লাট হয়ে যাই।”
ঈশিকা একথা শুনে খিলখিলিয়ে হেসে ফেললো।
তারপর বললো,
—–” হয়েছে। এখন চলুন। আমার খিদে পেয়েছে।”
—–” খিদে পেয়েছে? আগে বলবে তো। আরে আমারো তো পেয়েছে। সারাদিনে একটাও খাওয়া হয়নি।”

বলেই ঈশিকার দিকে ঝুকে গেলো আমান। ঈশিকা আমানের কথা না বুঝতে পেরে ভ্রু কুচকে তাকালো। তারপর আচমকা তার ঠোঁটের ওপর আক্রমণ! পাক্কা ৬ মিনিট পর ছাড়লো আমান। তারপর ভ্রু নাচিয়ে বললো,
—-” কি? খিদে মিটেছে? আমার কিন্তু অর্ধেক ও মিটলো না। আর একটু খাই কি বলো? ”
ঈশিকা আমানকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে কটমটিয়ে বললো,
—-” আপনি…আপনি একটা যাচ্ছেতাই!” বলেই তাড়াতাড়ি ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো নিচে। আমান হোহো করে হেসে উঠলো।

খাওয়া দাওয়ার পর রাতে আমান আধশোয়া হয়ে ল্যাপটপ নিয়ে ঈশিকার কোলে রেখে কাউচে বসে কাজ করছিলো আর ঈশিকা আমানের বুকে হেলান দিয়ে আধশোয়া হয়ে গেম খেলছিলো।
ল্যাপটপ এ চোখ রেখেই হঠাৎ আমান বললো,
—–” রিসিপশন এর দিন তোমার বন্ধুদের ইনভাইট করবে।”
ঈশিকা ফোন থেকে চোখ সরিয়ে মাথা উঁচিয়ে আমানের দিকে তাকিয়ে বললো,
—-” করবো?”
—-” হুম তাই তো বললাম করবে। এন্ড অবিয়াসলি শোয়েবকে কে তো অবশ্যই আসতে বলবে।”
ঈশিকা সন্দেহের চোখে বললো,
—-” কেনো?”
—-” কেনো মানে? তোমার বন্ধু না? আর তাছাড়াও সেদিন ও তোমার প্রতি আমার কিসের অধিকার জানতে চেয়েছিলো না? সেটা সেদিন নিজের চোখেই দেখে নিবে৷”
ঈশিকা আমানের বুকে থেকে উঠে সোজা হয়ে বসে বললো,
—–” আমার না….সব জানার পর থেকে ওকে খুব ভয় লাগে। কথা বলতেও ইচ্ছা হয়না একদম।”
আমান কিছুক্ষন ঈশিকার দিকে তাকিয়ে থেকে ল্যাপটপ সরিয়ে ঈশিকাকে টেনে বুকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো,
—-” আমিতো আছি পাগলি! চিন্তা কি?”

ঈশিকাও আমানকে জড়িয়ে ধরলো। এই মুহুর্তে ঈশিকার মনে হচ্ছে আমানের বুকটাই তার কাছে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখের এবং নিরাপদ স্থান।
.
.
.
চলবে…
® ঊর্মি ধর

Adorable Love পর্ব : ১২

0

#Adorable_Love ?
পর্ব : ১২
লেখা : ঊর্মি ধর
.
.
.
সেদিনের পর থেকে যে কি হলো আমানের…না চাইতেও ঈশিকার চিন্তা মাথায় ঘুরপাক খেতো। অফিসের হাজার ব্যস্ততা থেকে শুরু করে রাতে ক্লান্ত হয়ে ঘুমাতে যাওয়া পর্যন্ত শুধু ঈশিকার ওই হাসি মাখা মিষ্টি মুখখানা শুধু চক্ষুপটে ভেসে উঠতো। আর ওই বাচ্চাদের মতো কথাগুলো মনে পরতেই আনমনেই হেসে উঠতো। একদিন আমানের পি.এ. জাহিদ একটা প্রোজেক্ট নিয়ে ডিসকাসের সময় হঠাৎ ঈশিকার কথা মনে পরতেই আমান আনমনে শব্দ করে হেসে ওঠে। তাই দেখে জাহিদ ভ্রু কুচকে সন্দেহের দৃষ্টিতে হাসির কারণ জিজ্ঞেস করলে আমান থতমত খেয়ে “কিছুনা” বলে কাটিয়ে দেয়। কিন্তু জাহিদের মনে খটকা লাগে। কারণ সে জানে আমান কাজের সময় খুবই দায়িত্বশীল ।তার এমন কাজের ক্ষেত্রে অন্যমনষ্কতা কখনই দেখেনি সে। তবে কিছুদিন যাবতই সে ব্যাপারটা খেয়াল করছিলো। এর মানে অন্যকিছু মনে হলে তাই সেদিন ভয়ে ভয়ে বলেই ফেলে,
—-” স্যার…মানে…আপনি কি প্রেমে পরেছেন?”
আমান কথাটা শুনে চমকে উঠে। কিছুক্ষন জাহিদের দিকে তাকিয়ে থেকে পরে ধমকের সুরে বলে,
—-” হোয়াট! এগুলো কি ধরনের কথাবার্তা? তোমাকে এসব ফালতু কথা বলতে রাখা হয়েছে নাকি অফিসের কাজে? ”
জাহিদ ধমক খেয়ে চুপ করে গেলেও তারপর থেকে আমান বিষয়টা গভীরভাবে ভাবে। তার মতো ব্যাক্তিত্বের একজন সামান্য একদিনের পরিচয়ের একটা মেয়ের প্রেমে কখনই পরবে না। এগুলো নিছকই অবান্তর চিন্তা। এরপর ঠিক করে আর কখনই ঈশিকাকে নিয়ে ভাববে না। এইসব ভাবনা থেকে মুক্তির জন্য দু তিন দিনের জন্য বেরিয়ে পরতো দূরে প্রকৃতির কাছে। কিন্তু ওইযে মন? ঘুরে ফিরে সেই এক রাস্তায় ই চলে যেতো৷ ক্ষনিকের একাকিত্বতা যেনো ঈশিকার চিন্তা তার মন ব্রেইন সর্বত্রতে যেনো আরো বেশি করে জেঁকে ধরছিলো।

তখন আমান রিয়েলাইজ হ্যাঁ সে সত্যি ঈশিকার প্রেমে পরে গেছে৷ খুব মারাত্মক ভাবে পরে গেছে৷ তারপর জাহিদকে ঈশিকার সব ইনফরমেশন জোগার করতে বলে। জাহিদ বিজ্ঞদের মতো বলে,
—-” স্যার আমি বলেছিলাম না আপনি প্রেমে পরেছেন। আমিতো প্রথমেই বুঝেছিলাম। আফটার অল এক্সপেরিএন্স এর একটা ব্যাপার আছে না? ”
আমান সন্দেহের চোখে তাকিয়ে বলে,
—-” রিয়েলি জাহিদ? কয় ডজন প্রেম করেছো তুমি? যে প্রেম বিষয়ে এতো অভিজ্ঞতা? ”
জাহিদ থতমত খেয়ে বলে,
—-” কি বলেন স্যার! আমার তো ওই একটাই বাবু থুক্কু একটাই প্রেমিকা ছিলো যেটা এখন বউ। আর সেই আগের অভিজ্ঞতা থেকেই বুঝেছিলাম।”
আমান হাসলো। তারপর জাহিদকে বললো,
—-” তো এখন কি করি বলতো? মানে তোমার অভিজ্ঞতা কি বলে? এখন আমার কি করা উচিৎ?”
জাহিদ ঝড়ের গতিতে বলে,
—-” কি করা উচিৎ মানে? অবশ্যই তাকে প্রোপজ করা উচিৎ। যদিও মেয়েরা প্রথমেই রাজি হয় না। একটু আধটু ভাউ খায় মানে আমারটা যেমন খেতো আরকি। সেটা একটু ভেজাল আছে। তবে হাল ছাড়লে চলবে না। প্রথমবার না হোক দ্বিতীয় বার না হোক তৃতীয় বার তো হবেই হবে। আর প্রোপোজ এর ক্ষেত্রে আমি বলবো “আই লাভ ইউ” না বলে ডিরেক্ট ” উইল ইউ ম্যারি মি” বলে দেবেন। আর আপনার ব্যাপারে আমি নিশ্চিত! আপনাকে দেখলে ঈশিকা ম্যাডাম রাজি হবেই হবে।”

আমান জাহিদের সব কথা মন দিয়ে শুনে বলে,
—-” বাপরে! এতো বহু ঝামেলা! আর ডিরেক্ট বিয়ের কথা বলবো!?”
—-” হ্যাঁ… এতে মেয়েরা ইম্প্রেস হয় বেশি। তবে… যদি তার লাইফে অলরেডি অন্য কেউ থাকে তাহলে মুশকিল!”
আমান একথা শুনেই ব্যস্ত ভঙ্গিতে বলে,
—-” সেই জন্যই আমার ওর সব ডিটেইল চাই৷ ফাস্ট!”

এরপর জাহিদ ঈশিকার সব ডিটেইল জোগাড় করে এনে আমানকে দেয়। এবং নিশ্চিত হয় আগে পিছে কেউ। তখনি ঠিক করে ঈশিকাকে তার চাই ই চাই। তাই সেদিন নিজে ঈশিকাকে ডিরেক্ট বিয়ের প্রোপোজাল ও দিয়ে ফেলে। তবে ওইযে? জাহিদের কথাই ঠিক হলো। মেয়েরা এসব বিষয়ে একটু ভাউ খায় বৈকি। তবে আমানও ছেড়ে দেওয়ার পাত্র না। আর সাথে যদি থাকে জাহিদের মতো প্রেম বিজ্ঞানী! তাহলে তো কথাই নেই। তার ডিরেকশন মতোই দ্বিতীয় বার চেষ্টা করতে গিয়ে ফলস্বরূপ ঈশিকা শোয়েবকে দিয়ে মিথ্যে প্রেমের নাটক করায়। কিন্তু শেষ রক্ষা আর হলোনা। সেই আমানের বুকেই আসতে হলো তাকে সারাজীবনের জন্য।

এসব মনে পরতেই ঈশিকাকে বুকে জড়িয়ে রেখে হেসে ওঠে আমান। মনে মনে বলে, ” আমি আমার অস্তিত্বের খোঁজ পেয়ে গেছি ঈশু! কখনই হারাতে দেবো না তোমায়।”

__________________________________________________
কিছুক্ষন পর আমানরা চলে আসে বাড়িতে। ততক্ষনে ঈশিকার জ্ঞান ও ফিরে এসেছে৷ ঈশিকা গাড়ি থেকে নামলেই আমান ঈশিকাকে কোলে তুলে নেয়৷ আমানের বন্ধু তাই দেখে মুখে সিটি দেয়। আর আরমান আহমেদ হেসে বলে,
—-” সাব্বাশ! এই না হলে বাপ কা ব্যাটা।”
আমান হেসে দেয়। ঈশিকাও লজ্জা পেয়ে মুচকি হাসে। রাজিয়া বেগম গাড়ির আওয়াজ পেয়েই দরজায় এসে দাঁড়ায়। আমান ঈশিকাকে দরজার সামনে নামিয়ে দিলে তিনি বউ বরণ করে ঘরে তোলে। রাজিয়া বেগমের বেজায় খুশি! একমাত্র ছেলের বউ বলে কথা! তিনি মনে মনে যেমনটা চেয়েছিলেন ঠিক তেমনটাই। মুখের বাচ্চা আদল টা এখনো যায়নি। যেনো ছোটমোটো একটা পুতুল! ঈশিকার থুতনিতে হাত রেখে তিনি বললেন,
—-” মাশাল্লাহ! কি মিষ্টি মুখ গো! একদম আমার মনের মতো। ছেলের আমার পছন্দ আছে।”
ঈশিকা লজ্জা পেয়ে হাসলো।
রাজিয়া বেগম তো আদেশের সুরে বলেই দিলেন,
—-” আমাকে কিন্তু আপনি আজ্ঞে করা যাবে না বলে দিলাম। আর আমিও কিন্তু মাঝে মাঝে তুই করে বলতে পারি। কি আপত্তি আছে?”
ঈশিকা হেসে তার হাত ধরে আস্তে করে বললো,
—-” তুমি আমাকে তুই করেই ডেকো আম্মু।”
ছেলের বউয়ের কথায় ভারী সন্তুষ্ট হলেন রাজিয়া বেগম। সবকিছু দেখে আমানও স্বস্তি পেলো। সব ভালোয় ভালোয় মিটে গেছে! তারপর আরমান আহমেদ তাড়া দিয়ে সবাইকে ফ্রেস হতে বললেন।

সন্ধ্যায় জাহিদ এলো আমানদের বাড়ি। সারাদিন তার অসুস্থ মাকে নিয়ে হাসপাতালে ছোটাছুটি করছে তাই তার প্রাণ প্রিয় আমান স্যারের বিয়েতে উপস্থিত থাকতে পারেনি। সেই নিয়ে তার আক্ষেপের শেষ নেই। তবে প্রথমবার বিয়ের সময় তো ছিলোই সেই ভেবেই মনকে সান্ত্বনা দিলো। এখন সুযোগ পেয়েই চলে এসেছে আমান স্যার কে অভিনন্দন জানাতে। স্যারের প্রেমের ঘটনা উদঘাটন থেকে শুরু করে সব রকমের প্রেমের বিষয়ে পরামর্শ সে দিয়েছে। তার অবদানও কি কম নাকি? আর এখন সেই স্যার দুই দুইবার বিয়ে করে বসে আছে! অথচ কেউ টের পেলো না!

রাজিয়া বেগম ছেলের বউয়ের জন্য বানিয়ে রাখা ভরি ভরি গয়না দিয়ে ঈশিকাকে দোয়া করলেন। সবশেষে তার শাশুড়ীর বংশ পরম্পরায় দেওয়া পদ্ম ফুলের নকশা করা স্বর্ণের চুলের কাঁটা দিতে গিয়ে দেখলো মেয়ের চুল তো ছোট। ঘাড় অবধি করে কাটা। এ চুলে তো খোপাই উঠবে না। কাঁটা গুজবে কোথায়! তবুও হাসি মুখে হাতে দিয়ে ঈশিকাকে বললেন,
—-” আর কিন্তু চুল কাটা যাবে না বলে দিলাম। বড় চুল মানেই লক্ষীমন্ত। ঘরের বউয়ের মাথায় একটু আধটু বড় চুল না থাকলে চলে?”

ঈশিকা হাসি মুখে রাজিয়া বেগমের কথায় মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিলো। বড় চুল সামলাতে অনেক বেগ পেতে হয় এজন্যই চুল ছোট করে রাখা। এরপর রাতে খাওয়া দাওয়া শেষে আমান তার বন্ধুকে জোর করেই নিজে বাড়ি পৌঁছে দিতে গেলো। তার গাড়িতে সমস্যা থাকায় আমানদের গাড়িতেই এসেছিলো সে। এর মধ্যে রাজিয়া বেগম ঈশিকাকে নিজ হাতে সাজিয়ে আমানের ঘরে পাঠালেন। ঈশিকা ঘরে গিয়ে পুরো অবাক! বিয়েটা সাদামাটা হলেও ঘরটা খুব সুন্দর ভাবেই সাজানো হয়েছে ফুল দিয়ে।

রাজিয়া বেগম ই এতোসব করেছে। ঘটা করে বিয়ে হয়নি তো কি হয়েছে? ছেলের কথাই সব নাকি? হোক লজ্জার ব্যাপার। তাও সে ছেলের বাসর নিজে ডিরেকশন দিয়ে সাজাবে। ফুল আনিয়ে সার্ভেন্ট দিয়ে গোটা ঘরটা সাজিয়েছে তিনি। সাথে জাহিদও মহানন্দে হাত লাগিয়েছে। হাজার হোক তার আমান স্যারের ফুলসজ্জার খাট বলে কথা!

কিছু সময় পর আমান ঘরে ঢুকলো। দেখলো ঘরের খাট ফুল দিয়ে সাজানো। বুঝলো এ তার মায়েরই কাজ। ঈশিকা বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়িয়ে গাছে ফোঁটা মাতাল করা ঘ্রাণ ছরানো ফুলগুলো ছুঁয়ে দেখছিলো। আমান ঈশিকাকে ঘরে না পেয়ে দেখলো বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছে৷ কাছে গিয়ে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো। ঈশিকা প্রথমে চমকে গেলেও চেনা পারফিউম এর গন্ধে ঠিকি চিনতে পারলো মানুষটাকে। আমান ফিসফিয়ে বললো,
—-” এখানে কি করছো? চলো ঘরে চলো।”
—-” ফুলগুলো দেখছিলাম। এগুলো কি আপনি লাগিয়েছেন?
—-” না…মা লাগিয়েছে। মা ই যত্ন করে। আমি এসব গাছের যত্ন নিতে পারিনা৷”
একটু থেমে আবার বললো,
—-” অবশ্য এখন তো গাছের মালকিন এসেই গেছে। আর চিন্তা কি? সেই ই করবে।”
আমানের কথায় ঈশিকা পেছন ঘুরে তাকালো। তারপর ভ্রু কুচকে বললো,
—-” মানে?”
—-” মানে তুমি এখন থেকে এগুলোর যত্ন নেবে।”
—-” এ্যাঁহ! নিজে কিছু করবে না আমাকে দিয়ে করাবে।”
আমান হাসলো। বললো,
—-” কে বললো কিছু করবো না? করবো তো…বাসর!” চোখ টিপে।
আমানের কথায় ঈশিকা পিটপিট করে তাকালো আমান ঈশিকাকে একবার আগাগোড়া দেখে আবার বললো,
—-” উফ! আবারো শাড়ি! শাড়িতে তোমাকে যা লাগে না? এখন লাগছে পুরোই নতুন গিন্নি!”
ঈশিকা করুন মুখ করে বললো,
—–” কিন্তু আমার অস্বস্তি লাগে। কেমন পেঁচিয়ে যায়। আচ্ছা এগুলো পালটে শুলে হবে?”
—-” পাল্টানোর আর দরকার নেই তো।”
—-” কেনো?”
আমান দুষ্টু হেসে বললো,
—-” কেনো মানে কি? আজকে তো এমনিও শাড়ি গায়ে থাকবে না। বাসর রাত না?”
ঈশিকা দুম করে আমানের বুকে কিল দিয়ে বললো,
—-” পঁচা লোক! খালি পঁচা পঁচা কথা। যান তো…”
বলেই সরে আসতে নিলে আমান পেছন থেকে হাত ধরে ফেলে। তারপর একটানে বুকের কাছে এনে মাথা নিচু করে ঈশিকার কানে মাতাল কন্ঠে বললো,
—-” পালিয়ে আজ যাবে কোথায় সুন্দরী? আজ আর কোনো কথাই শুনবো না। কোনো বাধাই মানবো না।”

ঈশিকার বুক দুরুদুরু করছে। নিশ্বাসে ঝড় বইছে দৃষ্টি নিচে রাখলেও চোখের পাতা কাঁপছে। আমানের গরম নিশ্বাস গালে গলায় পরায় শরীরের লোম কাঁটা দিয়ে উঠছে৷ আমান ঈশিকার লজ্জা পাওয়া দেখে হেসে গলায় আলতো করে ঠোঁট ছোঁয়ালো। ঈশিকা বিদ্যুৎ এর গতিতে কেঁপে উঠে। আমান মুচকি হেসে ঈশিকাকে হুট করেই পাজা কোলে তুলে নেয়। ঈশিকা লজ্জা পেয়ে আমানের বুকে মুখ লুকায়। আমান হেসে আমানের বুকে মুখ লুকায়। তারপর আমান ধিরে ধিরে ফুলে সজ্জিত বিছানার দিকে এগিয়ে যায়।
.
.
.
চলবে…
® ঊর্মি ধর

Adorable Love পর্ব : ১১

0

#Adorable_Love ?
পর্ব : ১১
লেখা : ঊর্মি ধর
.
.
.
মেয়ের চোখ মুখ দেখে আফসানা চৌধুরী অবাক ই হলেন। দেখে বোঝাই যাচ্ছিলো হয়তো কেঁদেছে। তিনি কিছু জিজ্ঞেস করতেই ঈশিকা কোনোরকমে কাটিয়ে ঘরে গেল। শাওয়ার নিয়ে বের হলে আফসানা চৌধুরী ঈশিকার ঘরে এসে বললো,
—-” কিরে..রাতে খাবিনা?”
—-” না খেয়েই তো এসেছি। বাবা এসেছে?” চুল মুছতে মুছতে বললো ঈশিকা।
—-” হ্যাঁ ফিরেছে। খেতে বসেই আমাকে তোকে ডাকতে পাঠালো। আর তোর কি হয়েছে বল তো? ”
ঈশিকা আফসানা চৌধুরীর কথার উত্তর না দিয়ে ঈশিকা বললো,
—-” মা…এই বিয়েতে আমি রাজি। তুমি বাবাকে বলে দিও।”
আফসানা চৌধুরী মেয়ের কথা ঠাহর করতে না পেরে ঈশিকার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলো। তারপর চোখ মুখ উজ্জ্বল করে বললো,
—-” সত্যি? তুই ভেবে বলছিস তো?”
—-” হ্যাঁ।”
আফসানা চৌধুরী খুশিতে ডগমগ হয়ে বললো,
—-” যাক! এতোদিনে সুবুদ্ধি হলো মেয়ের। দাঁড়া…এক্ষুনি তোর বাবাকে বলছি।” বলেই আফসানা চৌধুরী চলে গেলেন। ঈশিকা শব্দ করে একটা শ্বাস ফেললো। তারপর চোখ গেলো বিছানায় ফোনের দিকে। কেও কল করছে। সাইলেন্ট থাকায় এতক্ষন খেয়াল করেনি। এগিয়ে গিয়ে হাতে নিতেই নিতেই কেটে গেলো৷ দেখলো আগে রিমি কয়েকবার ফোন করেছে। এখন নোভা করেছিলো। তখনি আবারো নোভা কল করলো। ঈশিকা কল রিসিভড করতেই নোভা অস্থির গলায় বললো,
—-” এই তুই কিরে? না বলে চলে গেলি কেনো? কত খুজেছি তোকে জানিস? পরে শোয়েব বললো তুই নাকি আমান ভাইয়ার সাথে চলে গেছিস। আমাকে একবার বলে গেলে….”
ঈশিকা নোভার কথার তোয়াক্কা না করে ওর কথার মাঝেই পালটা প্রশ্ন করলো,
—-” শোয়েব যে আমাকে পছন্দ করে…এটা তোরা বা তুই আগে কোনোদিন বুঝেছিলি?”
নোভা ঈশিকার কথায় চুপ করে গেল। তারপর বললো,
—-” কি হয়েছে বলতো?”
—-” হয়েছে অনেক কিছুই। আপাতত যা বললাম তার উত্তর দে।”
নোভা এরপর ইতস্তত হয়ে বললো,
—-” আসলে… যেদিন তোকে বলেছিলাম শোয়েব কে দিয়ে আমান ভাইয়ার সামনে ওই বয়ফ্রেন্ডের নাটক করতে। সেদিনই ওর তোকে বলা কথাগুলো শুনে আমার কাছে কিছুটা সন্দেহ হয়েছিলো। যে শোয়েব মেইবি তোকে পছন্দ করে। কিন্তু আজকে তোর প্রশ্ন শুনে পুরোপুরি নিশ্চিত হলাম।”
তারপর কিছুক্ষন থেমে নোভা আবার বললো,
—-” বাই এনি চান্স! এটা কি ভাইয়া বুঝতে পেরেছে? আর সেটা নিয়েই কোনো ঝামেলা হয়েছে তোদের মধ্যে? শোয়েব কেও দেখলাম তোর কথা জিজ্ঞেস করায় কোনোমতে কাটিয়ে চলে গেল।”
ঈশিকা বললো,
—-” আমান না বললে হয়তো ব্যাপারটা আমি বুঝতাম ই না কোনোদিন। আচ্ছা রাখছি রে। ভীষণ টায়ার্ড লাগছে।”

নোভাও আর কিছু বললো না। ঈশিকা ফোন রাখতেই ইফতেখার চৌধুরী ঈশিকার ঘরে এলেন।
—-” এখনো ঘুমাসনি মা?”
—-” না বাবা। এখনি ঘুমাবো। তুমি দাঁড়িয়ে কেনো বসো না।
ইফতেখার চৌধুরী মেয়ের পাশে বসলেন। তারপর বললেন,
—-” তুই কি বিয়ের সিদ্ধান্তটা ভেবে চিন্তেই নিয়েছিস? দেখ আমি কিন্তু তোর ইচ্ছার বিরুদ্ধে আজ অবধি কোনো কিছু চাপিয়ে দেই নি। তবে আমান ছেলেটা সত্যি ভালো। আমি খোঁজ নিয়ে দেখেছি। তারপরও তোর মা বা অন্য কারো কথা ভেবে যদি তুই রাজি হয়ে থাকিস তাহলে বল আমাকে। তোর ইচ্ছার বিরুদ্ধে কিছুই হবে না। আমি আছি তোর পাশে।”
ঈশিকা বাবার হাত ধরে আশ্বস্ত করে বললো,
—-” না বাবা…আমি সব কিছু ভেবেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি৷ আর তাছাড়াও তোমারা তো আমার কখনও খারাপ চাইবে না। আর আজ না হয় কাল তো বিয়ে করতেই হত। সবমিলিয়ে আমি ভেবেই রাজি হয়েছি।
ইফতেখার চৌধুরী প্রফুল্ল হাসলেন। তারপর বললেন,
—-” তাহলে আমি কালই কথা বলবো ওদের সাথে।”
ঈশিকা আর কিছু বললো না।
.
.
__________________________________________________
পরদিন ডিনার এর সময় আরমান আহমেদকে রাজিয়া বেগমকে জানালেন যে মেয়ে বিয়েতে রাজি হয়েছে। আমান সব শুনছিলো কিন্তু কিছু বলছিলো না। চুপচাপ খাচ্ছিলো। রাজিয়া বেগম একবার ছেলের দিকে তাকিয়ে আরমান আহমেদকে এভাবে হঠাৎ রাজি হওয়ার কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন,
—–” পড়াশোনার দিক চিন্তা করে প্রথমে না করেছিলো। তাছাড়াও মেয়ের বয়স অল্প। এইসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়াটা তার পক্ষে কিছুটা কঠিন বৈকি।”

রাজিয়া বেগম একথা শুনে সন্তুষ্ট হলেন কিছুটা। তাছাড়াও মেয়েতো দেখতে শুনতে খারাপ না। যদিও ছবি দেখেছে তিনি। তবে চুলটা বেশ ছোট। তাই এবার আর কিছু বললেন না তিনি। ভেবেছিলো এই চক্করে হয়তো তার ছেলে চিরকুমারই রয়ে যাবে। কিন্তু সেই ভয় আর নেই। আরমান আহমেদ ছেলেকে জিজ্ঞেস করলেন,
—–” সব তো ঠিক এখন। তাহলে কবে বিয়েটা করতে চাচ্ছো?
আমান স্বাভাবিক ভাবেই বললো,
—-” আমি বেশি দেরি করতে চাচ্ছিনা। ২/৩ দিনের মধ্যেই সব সেরে ফেলতে চাই।”
—-” এতো অল্প সময় এতো আয়োজন! ঠিকাছে হয়ে যাবে। এখন তুমি যেটা ভালো মনে করো।”
—-” এতো আয়োজন মানে? বাবা…আমি গ্র‍্যান্ডভাবে কোনো কিছু করতে চাচ্ছিনা। জাস্ট দুই পরিবারের উপস্থিতিতে সিম্পলভাবে বিয়েটা করতে চাই। এর বেশি কিছু না।”
রাজিয়া বেগম অবাক হয়ে বললেন,
—-” মানে? আমার একমাত্র ছেলের বিয়ে তা কিনা হবে ঘরোয়াভাবে? এটা কেমন কথা!”
—-” মা প্লিজ! আমি এই মুহুর্তে এতো কিছু করতে চাচ্ছিনা। দরকার হলে পরে রিসেপশন করা যাবে। তাই প্লিজ জোর করোনা। আই এম ডান।” বলেই উঠে চলে গেল আমান।
রাজিয়া বেগম আরমান আহমেদকে কিছু বলতে নিলে তিনি বললেন,
—-” ছেলে বড় হয়েছে। এসব বিষয়ে ওকেই সিদ্ধান্ত নিতে দাও। আর তাছাড়াও বিয়ে তো হচ্ছেই। হয় পরে একসময় অনুষ্ঠান করা যাবে। আপত্তি কোথায়? ”

রাজিয়া বেগম মনে মনে ভাবলেন, ” এটা কোনো কথা হলো? কোথায় একমাত্র ছেলের বিয়েতে আত্বীয় স্বজন, লোকজন সবাইকে ঘটা করে জানাবেন, খাওয়াবেন তা না!
ছেলের এরুপ পাগলামো সিদ্ধান্তে এবার চরম বিরক্ত হলেন তিনি।
.
.
______________________________________________
ওদিকে আফসানা চৌধুরীও সব শুনে বেশ অসন্তুষ্ট হলেন। একটামাত্র মেয়ের বিয়েতে। তার কত শখ আহ্লাদ ছিলো তার কিছুই হবে না। ইফতেখার চৌধুরীও মনে মনে কিছুটা অসন্তুষ্ট হলেও প্রকাশ করলেন না। উলটে আরো স্ত্রীকে বুঝিয়ে শুনিয়ে শান্ত করলেন। ঈশিকাও এই সিদ্ধান্তে আর বাধ সাধলো না। কিই বা আর বলবে? এখানে নিজের বিয়ের কথা নিজে এভাবে বললে শশুর বাড়ির লোক কি না কি ভাব্বে। আর আমান যেহেতু বলেছে তাহলে ভেবে চিন্তেই ঠিক করেছে সব।
.
.
বিয়ে দিন ঠিক হলো দু’দিন পর। ঈশিকাদের বাড়িতে ঘরোয়াভাবেই বিয়ের আয়োজন করা হলো। ঈশিকা শুধু নোভাকে বলেছিলো তাছাড়া আর কাউকে জানায়নি। সবাই জানলে নিশ্চয়ই শোয়েবও জানতো। আর এতো কিছু জানার পর শোয়েবকে বিয়ের কথাটা জানানো তার কাছে ঠিক মনে হয়নি। কে জানে আবার যদি কোনো ঝামেলা করে। আমান যদিও বলেছিলো তারপরও ঈশিকা জানায়নি।

লাল জামদানী শাড়ি হালকা কিছু গয়না পরিয়ে সাজিয়ে ঈশিকাকে বসার ঘরে নিয়ে এলো নোভা। শুধু আরমান আহমেদ, আমান আর তার এক বন্ধু উপস্থিত আছে বিয়েতে। ঈশিকাকে দেখে আমানের তো প্রায় মাথা ঘুরে যাবার উপক্রম! লাল শাড়িতে কি সুন্দর লাগছে মেয়েটাকে। পুরো নতুন বউ। ঈশিকাও আড়চোখে আমানকে দেখলো। ফর্সা শরীরে মেরুন পাঞ্জাবিতে অসাধারণ লাগছে দেখতে তাকে। এই ছেলে যা পরে তাই ক্রাশ! ঈশিকার আমানের দিকে চোখে চোখ পরতেই আমান দুই আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করে দারুণ লাগছে বোঝালো। ঈশিকা লজ্জা পেয়ে হাসলো।

বিয়ের কার্য সম্পুর্ন হয়ে গেলে খাওয়া দাওয়ার পালা শেষে এবার বিদায় এর পালা।
ইফতেখার চৌধুরী ছলছল চোখে আরমান আহমেদ এর হাত ধরে বললেন,
—–” ভাই…মেয়েটা আমার বড় আদরের। ছোট থেকেই তুলোয় মুড়ে রাখার মতো করে রেখেছি। কখনও একটা ফুলের টোকাও দেইনি। এখন মেয়েটাকে আপনাদের হাতে তুলে দিলাম। ওকে নিজের মেয়ের মতো করেই দেখবেন।”
আরমান আহমেদ তার হাতের ওপর হাত রেখে আস্বস্ত করে বললেন,
—–” আপনার মেয়ে এখন আমার বাড়ির বউ না বরং আমারও মেয়ে। আপনি চিন্তা করবেন না। আমাদের কাছে সুখেই থাকবে সে।”

আফসানা চৌধুরীও মেয়েকে ধরে সমানে কেঁদেই যাচ্ছে। আগে যতই মুখে বিয়ে বিয়ে করুক। এখন বুঝতে পারছে নিজের মেয়েকে পরের ঘরে পাঠানোর কষ্টটা৷ ওদিকে ইয়ানও কাঁদছে। তার একটা মাত্র বোন। কত খুনসুটি, দুষ্টুমি মাখা সময় কাটিয়েছে তার সাথে। ইয়ান আর মাকে ধরে ঈশিকাও কাঁদছে। কাঁদতে কাঁদতে একেবারে হেচকি উঠে গেছে। বুকটা ভীষন পুড়ছে আপন মানুষগুলোকে ছেড়ে যেতে।

ইফতেখার চৌধুরী আমানের কাছে গিয়ে ধরা গলায় বললেন,
—-” আমার মেয়েটাকে কখনও কষ্ট দিও না বাবা।” বলেই হুহু করে দিলেন। আমান ইফতেখার চৌধুরীকে কোনোমতে শান্ত করলেন। এবার ঈশিকা বাবাকে জাপটে ধরে হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলো।

এরপর আমানরা বিদায় নিয়ে ঈশিকাকে একপ্রকার ধরাধরি করে আমান কোলে করে নিয়ে গাড়িতে বসালো। এরমধ্যেই ঈশিকা কান্নার তোড়ে কখন যে অজ্ঞান হয়ে গেছে নিজেও জানে না।
.
.
.
চলবে…
® ঊর্মি ধর

Adorable Love পর্ব : ০৯ + ১০

0

#Adorable_Love ?
পর্ব : ০৯ + ১০
লেখা : ঊর্মি ধর
.
.
.
কলিংবেলের আওয়াজ শুনে দরজা খুললেন আফসানা চৌধুরী। খুলেই দেখলেন নোভা বেশ শাড়ি পরে সেজেগুজে দাঁড়িয়ে আছে। নোভা হাসি মুখে বললো,
—-” আন্টি…ঈশি কোথায়?”
—-” সে তো ঘরে…তা তুমি এতো সেজেগুজে যে? কোথাও কোনো প্রোগ্রাম আছে নাকি? ”
—-” হ্যাঁ… কেনো ঈশি বলেনি? আজকে তো রিমির বার্থডে।”
—-” না তো…আচ্ছা ভেতরে এসো।”
নোভা ভেতরে ঢুকেই বললো,
—–” ও ফোন ধরছে না কেনো আন্টি? কতোবার ফোন দিলাম!”
—–” তাই নাকি? কিজানি…মেয়ের কি হলো! সেই পরশু ভার্সিটি থেকে আসলেই দেখলাম মনমরা। কাল রাতেও না খেয়ে শুয়ে পরলো। আমি, ওর বাবা কতো ডাকলাম উঠলো না। আবার দুপুরেও দেই মেই করে খেয়ে সেই যে ঘরে বসে আছে। যাও তো মা…দেখো তো কি হলো মেয়ের। আমি জিজ্ঞেস করলে তো কিছুই বললো না।”

নোভা আর কিছু না বলে ঈশিকার ঘরের দিকে চলে গেলো। গিয়ে দেখলো ঈশিকা জানালার গ্রিলে দুই হাত রেখে বাইরের দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
—-” ঈশি…ঈশিই..”
নোভার ডাকে চমকে পেছনে তাকালো ঈশিকা।
—-” কিরে..?এখনো রেডি হসনি কেনো?” ঈশিকার দিকে এগিয়ে যেতে যেতে বললো নোভা।
—-” কেনো?” মলিন গলায় বললো ঈশিকা।
—-” কেনো মানে! আজকে রিমির বার্থডে ভুলে গেছিস? আমি, তৌসিফ, শোয়েব কতোবার ফোন দিয়েছি তোকে দেখেছিস? ধরলি না কেনো? আজকে তোর খবর করবে রিমি দেখিস। কিরে? বসে পরলি কেনো? ওঠ…রেডি হ।”
—-” না গেলে হয়না?” নোভার দিকে তাকিয়ে করুন চোখে বললো ঈশিকা।
—-” মানে কি? দেখ এমনি কালকে রাতে তুই রিমিকে কল করে উইশ করসনি। আবার এখনো পর্যন্ত ফেসবুকে একটা টাইমলাইন ও করিসনি বলে ক্ষেপে আছে তোর ওপর। তাই রাগে আর নিজে থেকে কল করেনি তোকে। এখন তুই না গেলে কিন্তু ওর রাগ ভাঙানো খুব কঠিন হয়ে যাবে।”
ঈশিকা শব্দ করে একটা কাঁপা শ্বাস ফেলে বললো,
—-” ভালো লাগছে না দোস্ত! তুই যা। আমি রিমিকে পরে বুঝিয়ে বলবো।” বলেই নিচের দিকে তাকালো ঈশিকা।
—-” ঈশি? কি হয়েছে তোর? এতো ডেস্পারেট লাগছে কেনো? বল কি হয়েছে?” ঈশিকার পাশে বিছানায় বসে বললো নোভা। ঈশিকা নোভার দিকে তাকিয়ে ভেজা কন্ঠে বললো,
—-” দুবাই গেছে সে বিজনেসের জন্য৷ পরশু থেকে এখন অবধি একটা কল ও করেনি। একটা বার ও আমার খোঁজ নেয় নি।”
—-” মানে? কার কথা বলছিস?”
—-” আমান…” ক্ষীন কন্ঠে বললো ঈশিকা।
নোভা কিছুক্ষণ ঈশিকার দিকে তাকিয়ে থেকে মুখে হাসি এনে বললো,
—-” আরে…হতেই পারে কাজের ব্যস্ততার জন্য করে উঠতে পারেনি। তো তুই কল কর। কল করে খুব ঝেড়ে দে।”
ঈশিকা অভিমানী কন্ঠে বললো,
—-” কেনো? আমি কেনো করবো? তার কি হয়েছে? এমনি তো রাত দিন সমানে কল করে মাথা খারাপ করিয়ে দেয়। এখন বিদেশ গিয়ে কি এমন কাজ করছে সে? যে একবেলা ফোন করার সময় ও তার কাছে নেই। ”
নোভা ঈশিকার কথা শুনে ফিচেল হাসি দিয়ে বললো,
—-” বাব্বা! কি অভিমান! কি প্রেম! আচ্ছা না করলি। কিন্তু তুই ই তো বললি ভাইয়া বিজনেসের জন্য দেশের বাইরে গেছে। দেখ এতবড় বিজনেস কিন্তু ভাইয়া একাই সবটা সামলায়। তাই হয়তো কাজের চাপে সময় হয়নি খোঁজ নেওয়ার। এমনি তো কত কেয়ার করে তর বল? ”
ঈশিকাকে চুপ থাকতে দেখে নোভা ঈশিকার হাত ধরে বললো,
—-” দেখ একা ঘরে বসে থাকলে এখন আরো মন খারাপ হবে। ভাইয়া আসলেই খুব করে বকে দিস। দরকার হলে ধরে মারিস। তাও আর বসে না থেকে এখন চল। ওখানে গেলে সবার সাথে দেখা হলে মন ভালো হয়ে যাবে।”
ঈশিকা কিছু বলতে যাবে তার আগেই নোভা বাধা দিয়ে বললো,
—-” কোনো কথা না…যদি এখন না করিস তাহলে ভাব্বো বর পেয়ে এখন বন্ধুদের কোনো ভ্যালু নেই তোমার কাছে।” মুখ গোমড়া করে বললো নোভা। ঈশিকা নোভার হাতে থাপ্পর দিয়ে বললো,
—-” ফাজিল! পারিস তো খালি ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করতে না?”
নোভা দাঁত কেলিয়ে হেসে বললো,
—-” হুম পারিতো! এখন কথা না বারিয়ে তাড়াতাড়ি রেডি হ।”
—-” কিন্তু রিমির জন্য তো কোনো গিফট কেনা হয়নি!” চিন্তিত হয়ে বললো ঈশিকা।
—-” আমিও তো এখনো কিনি নি। যাওয়ার সময় একাবারে কিনে নিয়ে যাবো। তো কোন শাড়ি পরছিস?”
—-” শাড়ি পরতেই হবে?” করুন মুখ করে বললো ঈশিকা।
—-” ইয়েস! আমি পরেছি সো তোমারও পরতে হবে। এখন কথা কম বলে তৈরি হও। সন্ধ্যা হতে কিন্তু বেশি দেরি নেই। নে নে ওঠ!” তাড়া দিয়ে বললো নোভা।

ঈশিকা কিছুটা অনিচ্ছা থাকা সত্বেও তৈরি হলো। আর মনে মনে ভাবলো, ” শয়তান টাকে তো আর ধরে মারা যাবে না। সেই সাহস বা ক্ষমতা কোনোটাই নেই তার। তবে এর থেকেও মোক্ষম কাজ সে করবে৷ সামনে আসলে একটা কথাও বলবে না সে। উহ! বিয়ে করে এখন সব পাট চুকে গেছে না? আসুক কথা বলতে…খুব রাগ দেখাবে খুউব!
.
.
__________________________________________________
ঈশিকাদের রিমিদের বাসায় যেতে যেতে সন্ধ্যা লেগে গেলো প্রায়। গিয়ে দেখলো শহরের কিছু বেশ নামি দামি বিজনেসম্যানরা ইনভাইটেড আছে সেখানে। কারণ রিমির বাবাও সেই তালিকারই একজন।

রিমির রাগ ভাঙাতে হাজারবার সরি বলে কান পর্যন্ত ধরতে হলো ঈশিকার৷ শোয়েব আর তৌসিফ ওদের আগেই চলে গিয়েছিলো। ঈশিকা যাওয়ার পর থেকে শোয়েবের দৃষ্টি শুধু ঈশিকার দিকেই ছিলো। এই দিয়ে দুইবার ঈশিকাকে শাড়িতে দেখলো সে। এর আগে দেখেছিলো ভার্সিটির একটা অনুষ্ঠানে। আজ লাল আর কালো কম্বিনেশন এর জর্জেট শাড়িতে ঈশিকাকে ভীষন সুন্দর লাগছে। এই মেয়েকে যতবারই দেখে ততবারই অদ্ভুত মায়ায় পরে যায় সে।

বন্ধুদের সাথে দেখা হয়ে কথা বলে ঈশিকার মন খারাপটা একদম চলে গেছে৷ নোভা ঈশিকাকে নিয়ে সেল্ফি তুলছিলো এমন সময় শোয়েব এগিয়ে আসলো ঈশিকার কাছে।
—-” ঈশি?”
শোয়েবের দিকে ঘুরে তাকিয়ে ঈশিকা বললো,
—-” হ্যাঁ? কিছু বলবি?”
—-” তোকে আজকে অনেক সুন্দর লাগছে শাড়িতে।”
ঈশিকা হেসে বললো,
—-” থ্যাংক ইউ দোস্ত!”
শোয়েব হেসে বললো,
—-” শুধু থ্যাংকস এ কাজ হবে না।”
—-” তো আর কি? প্লিজ এখন এটা বলিস না যে একটু প্রশংসা করার জন্য আবার ট্রিট চাই তোর।” বলেই হাসলো ঈশিকা।
শোয়েব হেসে বললো,
—-” না ট্রিট চাই না। একটা ছোট্ট গিফট চাই। তবে কথা দিতে হবে যা চাইবো তাই দিবি।”
ঈশিকা কিছু ভেবে বললো,
—-” উম…আচ্ছা। বল কি চাই?”
—-” এখন না। সবকিছুরই উপযুক্ত সময় আছে। সময় হলে চেয়ে নেবো আমি।” মৃদু হেসে বললো শোয়েব। ঈশিকা শোয়েবের কথার আগা মাথা কিছুই বুঝলো না। কনফিউজড মুখে তাকিয়ে থাকতে দেখে শোয়েব হেসে দিয়ে বললো,
—-” আরে এমন কিছু চাইবো না যা দিতে তোর ফকির হওয়া লাগে। সো প্যারা নিস না।”
শোয়েবের কথা শুনে হেসে ফেললো ঈশিকা। তারপর হঠাৎ ঈশিকা শুনতে পায় চিরচেনা একজনের গলার আওয়াজ৷ বা সাইডে তাকিয়ে তার চোখ আটকে যায় মানুষটার ওপর। ঈশিকা অস্ফুটস্বরে বললো,
—-” আমান!”
আমানও এতোক্ষন আড়চোখে ঈশিকাকেই দেখছিলো আর রিমির বাবার সাথে ড্রিংক হাতে দাঁড়িয়ে আলাপচারিতায় ব্যস্ত ছিলো। ঈশিকা তাকাতেই আমান কথার মাঝেই তার দিকে তাকিয়ে একটা বাঁকা হাসি দিলো। ঠিক তখনই নোভা আমানকে দেখে ঈশিকার দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে আস্তে করে বললো,
—-” ভাইয়া এখানে কিভাবে? তুই না বললি দেশের বাইরে?”

ঈশিকা নোভার কথার কোনো উত্তর না দিয়ে রিমিকে ডাক দিলো। রিমি বাকি সবার সাথে ছবি তোলায় ব্যস্ত ছিলো। ঈশিকার ডাকে এগিয়ে আসলে ঈশিকা আমানকে উদ্দেশ্য করে জিজ্ঞেস করলো,
—-” উনি এখানে কেনো? তুই ইনভাইট করেছিস?”
রিমি ঈশিকার দৃষ্টি অনুসরণ করে বললো,
—-” কে?”
তখন নোভা ফোড়ন কেটে বললো,
—-” আরে…আমান ভাইয়া মানে আমান আহমেদ।”
রিমি আমানের দিকে তাকিয়ে তারপর বললো,
—-” আরে উনিই তো সেই না? যার সাথে তুই সেল্ফি তুলেছিলি বাজি ধরে? কিন্তু আমিতো করিনি…হয়তো বাবা করেছে। বিজনেস ক্লায়েন্ট হবে হয়তো। কেনো?”
ইশিকা রিমির দিকে তাকিয়ে বললো,
—-” না কিছুনা…এমনি।”
ঈশিকা আর আমানের দিকে তাকালো না। নোভা বলেছিলো একবার আমানের সাথে কথা বলতে কিন্তু সে ” প্রয়োজন নেই” বলে মুখ ঘুরিয়ে নিলো। এখন সে আমানকে ইগনোর করবে। উচিত শিক্ষা দেবে তাকে কথা না বলে। শোয়েব এতোক্ষন ওদের কথা চুপচাপ শুনছিলো কিছু বলছিলো না। কিন্তু আমানকে দেখেই ওর মুখের হাসি উড়ে গেলো।
.
.
চলবে…
® ঊর্মি ধর

#Adorable_Love ?
পর্ব : ১০
লেখা : ঊর্মি ধর
.
.
.
কিছুক্ষন পর খাওয়া দাওয়ার পালা শেষ হলো। এরমধ্যে যদিও নোভা গিয়ে আমানের সাথে কথা বলেছিলো। কিন্তু তখনও ঈশিকা আমানের সাথে কথা তো দূর পুরোদমে ইগনোর করছিলো। আমানও কিছু বলছিলো না শুধু ঈশিকার হাবভাব দেখছিলো মিটিমিটি হাসছিলো। কারণ সে খুব বুঝতে পারছিলো ঈশিকা ভীষন রাগ করেছে আর রাগের কারণ টাও তার কাছে স্পষ্ট। এরপর রিমি কেক কেটে সবাইকে খাইয়ে দিলো। তারপর ঈশিকাকে খাইয়ে দুষ্টুমি করে গালে মাখিয়ে দিতে গেলে ভুলবশত ঈশিকার শাড়িতে খানিকটা কেক পরে যায়। সেটা পরিষ্কার করতে ঈশিকা ওয়াশরুমের দিকে চলে যায়।

শাড়িতে লেগে থাকা কেক পরিষ্কার করে টিস্যু দিয়ে মুছতে মুছতে আসতে নিলে হঠাৎ কারো সাথে ধাক্কা লেগে যায় ঈশিকার। মাথা নিচু করে হাটার কারণে দেখতে পায়নি সামনের ব্যাক্তিকে। চকিতে ধাক্কা লাগা ব্যক্তিটির দিকে তাকালো ঈশিকা। দেখলো আর কেউ না আমান দাঁড়িয়ে তার সামনে। একদম খুব কাছে। মৃদু হাসি মুখ করে পকেটে হাত দিয়ে সটান হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ঈশিকা অল্প সময় আমানের দিকে তাকিয়ে থেকে ফের মুখ কঠিন করে মাথা নিচু করে পাশ কাটিয়ে চলে যেতে নিলে আমান পেছন থেকে তার হাত ধরে ফেলে। ঈশিকা ভেবেছিলো কথা বলবে না আমানের সাথে। কিন্তু হাত মোচড়ামুচড়ি করলেও আমান হাত ছাড়ছিলো না। শেষ মেশ বাধ্য হয়েই পেছনে না তাকিয়েই ঈশিকা বললো,
—–” হাত ছাড়ুন…”
আমান অমনি হাত ধরে হেচকা টান দিয়ে ঈশিকাকে আবার নিজের কাছে নিয়ে এলো। কোমড় জড়িয়ে ধরলো ঈশিকার। ঈশিকা আমানের দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে ফের চোখ সরিয়ে নিলো। আমান হেসে বললো,
—-” রাগ করেছো আমার ওপর?”
ঈশিকা আমানের কথায় সরু চোখে তার দিকে বললো,
—-” রাগ? রাগ করবো কেনো? আমি কারো ওপর রাগ করিনি। আর কি এমন করেছেন যে রাগ করবো? তাছাড়া আমি আপনার কিছু হই নাকি যে আপনার ওপর রাগ করার রাইট থাকবে আমার।”
আমান ফের হেসে ঈশিকার কোমড় ছেড়ে দিয়ে গালে দুই হাত দিয়ে বললো,
—-” সরি সুইটহার্ট… তোমার ফ্রেন্ডের বার্থডের ইনভাইটেশন আমি সেদিনি পেয়েছিলাম। তাই দ্রুত কাজ সেরে আজ বিকেলেই দেশে চলে এসেছি । জাস্ট তোমাকে সারপ্রাইজ দিতেই এ দু’দিন যোগাযোগ করিনি। আর তাছাড়াও তোমাকেও একটু আমাকে মিস করার ফিলিংস টা বোঝালাম। যেমন আমি বুঝি প্রতিনিয়ত।”
ঈশিকা মনে মনে বললো, “হুহ! খুব মহান করেছে। একেবারে উদ্ধার করেছে আমাকে।” কিন্তু মুখে অভিমানী কন্ঠে বললো,
—-” আমি কারো কাছে কোনো প্রকার এক্সকিউজ শুনতে চাইনি। আর যে যা খুশি করুক। তাতে আমার কি? আমি কাউকে মিস টিস করিনি একদম।”
আমান এবার ঈশিকার গাল ছেড়ে শব্দ করে হেসে ফেললো। তারপর বললো,
—-” তাই? তবে আমি একটা জিনিস খুব মিস করেছি। আর
আমার এখন এটা চাই ই চাই।”
বলেই আমান ঈশিকার ঠোঁটের দিকে মুখ এগিয়ে নিয়ে যেতে লাগলো। ঈশিকা বড়বড় চোখ করে আমানের দিকে তাকিয়ে আছে। ঠোঁট ছুইছুই ঠিক তখনই কেউ একজন ওয়াশরুমের দরজা খুলে বাইরে বেরিয়ে এলো। ঈশিকা আর আমান চমকে গেলো। তারপর ঈশিকা তড়িঘড়ি করে চলে আসলো সেখান থেকে।

ঈশিকা আসতেই শোয়েব বললো,
—-” ঈশি তোর সাথে কিছু কথা ছিলো।”
—-” হ্যাঁ বল।”
—-” এখানে না। বাইরে চল একটু।”
ঈশিকা ভ্রু কুচকে বললো,
—-” এখানে কি সমস্যা? এখানেই বল।”
—-” এখানে অনেক আওয়াজ প্লিজ বাইরে চল।”
ঈশিকা এদিক ওদিক তাকিয়ে আমানকে না দেখে বললো,
—-” ঠিক আছে চল।”

বাইরে গিয়ে গার্ডেন এ হাটতে হাটতে ঈশিকা বললো,
—-” বল কি বলবি?”
শোয়েব আমতা আমতা করে বললো,
—-” না মানে…কিভাবে যে বলি…ভয় লাগছে।”
ঈশিকা হাটা থামিয়ে অবাক হয়ে বললো,
—–” আমাকে কিছু বলতে তোর ভয় লাগছে? লাইক সিরিয়াসলি!”
—–” না মানে…কোনোদিন তো কাউকে বলিনি তো। এই প্রথম তাই আর কি…”
ঈশিকা ভ্রু কুচকে হেসে বললো,
—-” তাই নাকি? আচ্ছা এখন একটু সাহস করে বলে ফেল।”
শোয়েব আচমকা ঈশিকার ডান হাতটা দুই হাত দিয়ে ধরে ফেললো। ঈশিকা এতে খুবই অবাক হয়ে গেলো। তারপর শোয়েব ঈশিকার চোখের দিকে তাকিয়ে বললো,
—-” আমি তোর কাছে সেসময় বলেছিলাম না সময় হলে আমি আমার গিফট চেয়ে নেবো? আমার মনে হয় এর থেকে উপযুক্ত সময় আর হতে পারে না। ”
তারপর একটা দম নিয়ে শোয়েব বললো,
—-” ঈশি…আমি তোকে….

—-” ঈশিকা…
শোয়েবের কথায় বাধা দিয়ে কেউ একজন ঈশিকাকে ডেকে উঠলো। ঈশিকা আর শোয়েব দুজনেই পাশ ফিরে তাকালো। দেখলো আমান দাঁড়িয়ে আছে। হাত শক্ত মুঠো করে। তখনও শোয়েব ঈশিকার হাত ধরে ছিলো। আমান বড় বড় পা ফেলে এগিয়ে এলো ঈশিকার দিকে। ঈশিকা তো আমানের চেহারা দেখে ভয়ে প্রায় শেষ। এদিকে শোয়েবও হাত ছাড়ছিলোনা। আমানই এসে শোয়েবকে কঠিন গলায় বললো,
—-” ওর হাতটা ছাড়ো।”
আমানকে দেখে শোয়েব ঈশিকার হাতটা আরো শক্ত করে ধরে জোর গলায় বললো,
—–” কেনো? আপনার কি প্রবলেম তাতে?”
আমান এবার রাগে শোয়েবের হাত ধরে ঈশিকার হাত টা এক ঝটকায় ছাড়িয়ে নিলো। তারপর ঈশিকার হাত ধরে শোয়েবের দিকে কঠিন ভাবে তাকিয়ে তর্জনী উঁচু করে বললো,
—-” ফারদার…আমি যেনো তোমাকে ঈশিকার আশে পাশে না দেখি। নইলে আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না। মাইন্ড ইট!”
শোয়েবও জোর গলায় বললো,
—–” কি করবেন আপনি আমার? আর ঈশিকা আপনার কে যে এতো অধিকার দেখাচ্ছেন? ও তো বলেইছে ও আপনাকে ভালোবাসে না। ওর হাত ছাড়ুন।”
আমান এবার হেসে দিয়ে বললো,
—–” এই আমান আহমেদ তোমার ঠিক কি কি করতে পারে তা তোমার ধারনার বাহিরে। আর ও আমাকে ভালোবাসে কি বাসেনা সেটা আমি খুব ভালো করেই জানি। আর কি বলছিলে? কিসের অধিকার? সেটা ওর কাছ থেকেই শুনে নিয়ো যে ওর ওপর আমার কিসের অধিকার।”
বলেই ঈশিকার হাত ধরে গাড়ির দিকে নিয়ে গেলো আমান। শোয়েব অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে ওদের চলে যাওয়ার দিকে। আর ভাবছে কোন অধিকারের জোরে আমান এই কথাগুলো বলে গেলো। তবে কি ঈশিকাও আমানকে ভালোবাসে!”

আমান শক্ত করে ধরায় ঈশিকা হাতে ব্যাথা পাচ্ছে সাথে আমানের রাগের পরিমাণও বুঝতে পারছে। তাই কিছু বলারও সাহস পাচ্ছে না।
ঈশিকা কিছু একটা বলতে যাবে তখনই গাড়ির ডোর খুলে আমান ঈশিকাকে ধাক্কা দিয়ে বসিয়ে দিলো। তারপর ড্রাইভিং সিটে বসে ফুল স্পিডে গাড়ি স্টার্ট দিলো। একবারো ঈশিকার দিকে তাকাচ্ছে আমান। শক্ত চোখ মুখে সামনে তাকিয়ে ড্রাইভ করছে। ঈশিকা কিছুক্ষণ পর কিছুটা সাহস করেই বলে ফেললো,
—–” আপনি এতো রাগ করছেন কেনো? বিশ্বাস করুন সেদিন ও আমার কথায় আপনাকে মিথ্যে বলেছিলো। সত্যি ও শুধু আমার বন্ধু। এর বেশি কিছুই না।”

আমান এবার হঠাৎ জোরে ব্রেক করে গাড়ি থামালো। তারপর ঈশিকাকে এক টানে নিজের কাছে এনে ঠোঁটে ঠোঁট মিলিয়ে দিলো। ঈশিকা এবারও কিছু বলার সাহস পেলো না। কিছুক্ষন পর হুট করেই আমান ঈশিকাকে ছেড়ে দূরে সরিয়ে দিলো। তারপর চোখ বন্ধ করে সিটে মাথা এলিয়ে দিলো। আমানের এমন ব্যাবহারে ঈশিকার চোখে জল এসে গেলো।

কিছু সময় পর সিটে মাথা এলানো অবস্থাতেই আমান শান্ত গলায় বললো,
—-” আজকেই বাড়িতে গিয়ে তোমার বাবাকে বলবে আমাকে তুমি বিয়ে করতে চাও।”
ঈশিকা আমানের দিকে তাকালো। আমান আবার বললো,
—–” আমি চাই শরীয়ত মতে দুই পরিবারের উপস্থিতি এবং সম্মতিতে আমাদের বিয়েটা হোক।”
ঈশিকা এবারো কিছু বললো না। আমান চোখ খুলে ঈশিকার দিকে তাকিয়ে বললো,
—-” সেদিন তুমি যতই মিথ্যে কাহিনি সাজিয়ে আমার সামনে বলো না কেনো। সেদিন আমি শোয়েবের চোখে তোমার জন্য ওর সত্যি কারের ভালোবাসা দেখেছিলাম৷ তোমাকে যখন ও আমার সামনে ভালোবাসার কথা গুলো বলছিলো তখনই ওর মুখ, কথার ধরন দেখে বুঝেছিলাম ওগুলো ওর মনের কথা। তোমার প্রতি ওর ট্রু ফিলিংস।”
ঈশিকা অবাক হয়ে বললো,
—-” কি বলছেন এগুলো আপনি! ও তো শুধুই আমার বন্ধু। তার বেশি কিছুই না। ওকে কোনোদিনও আমি সেভাবে দেখিনি।”
—-” তুমি না দেখলেও ও দেখেছে। আর তুমি বোকা বলে বুঝতে পারো নি। যা আমি সেদিনি বুঝেছিলাম। আর আজকেও তখন ও তোমাকে সরাসরি ওর মনের কথা গুলো বলতে চেয়েছিলো।”

তারপর ঈশিকার গালে এক হাত রেখে আমান আবার বললো,
—-” তোমাকে আমি হারাতে চাই না ঈশু। কোনোভাবেই না। এমন হলে মরে যাবো আমি সত্যি মরে যাবো।”
ঈশিকা এবার কান্না কন্ঠে আমানের মুখে হাত দিয়ে বললো,
—-” এমন কথা বলবেন না প্লিজ! আমি সত্যি বুঝতে পারিনি শোয়েব আমার সম্পর্কে এমন কিছু ভাবে। তাহলে আমি অনেক আগেই ওর সাথে কথা বলে ক্লিয়ার হয়ে যেতাম।”

আমান এবার ঈশিকার হাতের তালুতে চুমু খেয়ে এক টানে ঈশিকাকে বুকে জড়িয়ে ধরলো। কেউ আর কিছু বললো না। এভাবে চুপচাপ থেকে বেশকিছুক্ষন পর ঈশিকাকে ছেড়ে দিয়ে ড্রাইভ করে ঈশিকাদের বাড়ির সামনে নামিয়ে দিয়ে গেলো ঈশিকাকে।
.
.
.
চলবে…
® ঊর্মি ধর