Sunday, July 6, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1867



অন্ধকার পল্লী Part:১৫

0

#অন্ধকার_পল্লী
Part:১৫
#Tabassum_Riana

,
,
,
রক্তাক্ত অবস্থায় বসে আছে তারেক মিনহাজ।তার চোখজোড়া ভয়ে ছেয়ে গেছে।ঠোঁটের কোনা বেয়ে ফোঁটা ফোঁটা রক্ত গড়িয়ে পড়ছে।গাল দুটো লাল হয়ে আছে।ইউনিফর্ম এর কলারের আর হাতার অংশটুকু ছিড়ে গেছে।ভয়ে ঢোক গিলো দুবার। আমি করিয়েছি ওকে কিডন্যাপ আমি করিয়েছি।কাঁপা কাঁপা গলায় বলল তাডেক মিনহাজ।সাথে সাথে তার বুকে জোরে লাথি এসে পড়লো।তারেক মিনহাজ নিচে পড়ে গেলেন।আফিন তারেকের সামনে এসে দাঁড়ালো।শুয়োরের বাচ্চা তোদের জনগনের কল্যানে যোগ দেওয়া হয়েছে। আর তোরা এসব করে বেড়াস?নিজের মা বোনের সাথে এমন করতে পারবি?চিৎকার করে বলল আফিন।তারেকের শার্টের কলার ধরে আরো দুতিনটে ঘুষি লাগালো আফিন ওর মুখে।
,
,
,
তোদের জন্য একটা মেয়ে কতোটা নির্যাতিত হচ্ছে।নিজেদের কিভাবে পুলিশ বলিস? তোদের মতো অমানুষদের জন্য মেয়েরা স্বাধীন জীবন যাপন করতে পারেনা।কেন করলি এসব?অবনী কি দোষ করেছিলো?চিৎকার করে বলতে লাগলো আফিন আর সেই সাথে ঘুষি মারলো তারেক মিনহাজ কে।
,
,
,
,
কয়েকঘন্টা আগে
বডিগার্ড দের কাছে ছুটে এসেছে আফিন।ওদের কারোর হাত ভাঙ্গা আর কারোর পা ভাঙ্গা।আফিনকে দেখে তারা ভয়ে চুপসে গেলো।স্যরি স্যার ম্যামকে বাঁচাতে পারলামনা।বলে উঠলো বডিগার্ডরা।সরি বলতে হবেনা, শুধু বল কি হয়েছিলো আমার অবনী কই?প্রশ্ন করলো আফিন।ঐদিনের পুরো কাহিমী আফিনকে খুলে বলল বডিগার্ড রা।আফিন যেন নিজের ওপর নিয়ন্ত্রন হারিয়ে ফেলেছে।ওদের পাশের একটা চেয়ারে বসে পড়লো আফিন।স্যার আমরা খবর পেয়েছিলাম এখানে শুধু বখাটেরা না অন্য একজনের হাত ও আছে।বলে উঠলো বডিগার্ডরা।
অশ্রু ভরা রক্তবর্ন চোখজোড়া দিয়ে তাকালো আফিন।কে সে?রাগী গলায় জিজ্ঞেস করলো আফিন
,
,
,
,,,,,,,,,,,,,,,,স্যার সে তারেক মিনহাজ পুলিশ সুপার।
,
,
,
,
হাত মুঠ করে আফিন।চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়।নিজেদের খেয়াল রাখবি।বলে আর একমিনিট ও দাঁড়ায় না।বাহিরে বের হয়ে আসে।হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে ফোন বের করে একটা নম্বরে কল দেয় আফিন।
,,,,,,,,,,,,,,,হ্যালো স্যার!!!আসিফ (আফিনের পিএ)
,,,,,,,,,,,,,,একটা কাজ করতে হবে।রাগী গলায় বলল আফিন।
,,,,,,,,,,,,,,,,,জি স্যার কি কাজ?
,,,,,,,,,,,,,,,,,তারেক মিনহাজ।পুলিশ সুপার সে।তাকে নিয়ে আমার বনানীর পোড়া বাড়িতে চলে আয়।গম্ভীর গলায় বলল আফিন।
,,,,,,,,,,,,,,,প প পোড়া বাড়ি!!!!কে ক কেন স্যার?পোড়া বাড়ির কথা খানিকটা ভয় পেয়ে গেলো আসিফ।
,,,,,,,,,,,,,,Don’t Question me.Its urgent.Do that quickly. I need him right now.(চিৎকার করে বলল আফিন।
,,,,,,,,,,,,,ok sir.
,
,
,
,
ফোন কেঁটে পকেটে রাখলো আফিন।
গাড়ি নিয়ে রওনা হলো পোড়া বাড়ির উদ্দেশ্যে।পোড়া বাড়ির সামনে আসতেই আসিফের গাড়ি দেখতে পেলো আফিন।ঠোঁটের কোনায় হিংস্রতা ফুঁটে উঠলো আফিনের।পোড়া বাড়ির ভিতরে ঢুকতেই আসিফ সামনে এলো আফিনের।
,,,,,,,,,,, স্যার এনেছি।বলে উঠলো আসিফ।
হুম।আসিফের কথায় পাত্তা না দিয়ে তারেকের সামনে এসে দাঁড়ায় আফিন।প্যান্টের বেল্ট খুলে খানিকটা হাতে পেচিয়ে নিলো আফিন।আমাকে তুলে আনিয়েছেন কেন?জানেন কে আমি?পুলিশ সুপার।এক্ষুনি তোকে এ্যারেস্ট করাতে পারি।চিনিস আমাকে?এক্ষুনি ছেড়ে দে।চেঁচাতে লাগলো তারেক মিনহাজ।
অবনী কই?তারেক মিনহাজের সামনে টেবিলে জোরে হাত রেখে বলল আফিন।
,,,,,,,,,,,,,,,কে অবনী?চিনিনা তাকে।ছেড়ে দে আমাকে।একজন পুলিশের সাথে দুর্ব্যাবহার করার পরিনাম ভয়াবহ হয়।বলে উঠলো তারেক।
,,,,,,,,,,আমি ভদ্রভাবে কথা বলছি এখনো।জলদি বল অবনী কে কই রেখেছিস?চিৎকার করে বলল আফিন।
,,,,,,,,,,,,আরে সেই কতক্ষণ ধরে অবনী অবনী লাগিয়ে রেখেছিস। আমি কি করে জানবো তোর অবনী কই?চেঁচিয়ে উঠলো তারেক।
,,,,,,,,,,,,,আর সহ্য হলো না আফিনের বেধড়ম মারতে লাগলো তারেককে বেল্ট দিয়ে।
,
,
,
ব্যাথায় চিৎকার করছে তারেক।জানটা যেন কেউ টেনে ছিড়ে নিচ্ছে।আফিনের প্রত্যেকটা আঘাতে বাবা গো মাগো বলে চিৎকার করছে তারেক মিনহাজ।
,
,
,
,
ভবিষ্যৎ মার থেকে নিজেকে বাঁচাতে তারেক মিনহাজ সত্য টা বলে দিলো।অবনীকে কই রেখেছিস তোরা?রাগী গলায় বলল আফিন।
স্যার জানিনা।বলে উঠলো তারেক।আফিন আবার মারতে আসলে তারেক বলল স্যার জানিনা সত্যি।ওদের কাউকে কল দিয়ে জান কই ওরা।বলে উঠলো আফিন।তারেক মামুনের নম্বরে কল দিলো।
স্যার নম্বর তো বন্ধ।বলে উঠলো তারেক।এতো সতো বুঝিনা আমি।কল দিয়ে জানা আমাকে। চিৎকার করে বলল আফিন।তারেক একে একে সবার নম্বরে কল দিলো।শেষমেষ নাহিদ কল উঠালো।
,,,,,,,,,বস তোরে কল করতে মানা করছিলো না?অপর পাশ থেকে বলল নাহিদ।
,,,,,,,,,,,,,,,,হ করছিলো তো।আমি একখান কামে কল দিছিলাম।
,,,,,,,,,,,,,,,,কি কাম?ভ্রু কুঁচকালো নাহিদ।
,,,,,,,,,,, নতুন দুইডা মাইয়া পাইছি।বসের পছন্দ হইবো।তোরা কই জানলে পাঠাইতে পারতাম।বলে আফিনের দিয়ে ভয়ার্ত চোখে তাকালো তারেক।
,,,,,,,,,কাউরে কইয়া দেস নাই তো?কিছুটা সন্দেহ নিয়ে বলল নাহিদ।
,,,,,,,,,,,,,আরে না না কারে কমু?
,,,,,,,,,,,,,,,,আমরা আছি গাজীপুরের পতিতা পল্লী।বলেই হালকা কাশলো নাহিদ।
,,,,,,,,,,,,,,,,,,,নাম কি পতিতা পল্লীর?তারেকের মুখে পতিতা পল্লীর নাম শুনে মুখ শুকিয়ে গেলো আফিনের।ওর জলপরীর কতোটা নির্যাতন হচ্ছে ভাবতেই বুক ফেঁটে যাচ্ছে আফিনের।
,,,,,,,,,,,,,,অন্ধকার পল্লী।বলে উঠলো নাহিদ।
,
,
,
,
তারেকের হাত থেকে ফোন নিলো আফিন।কই আমার অবনী?প্রশ্ন করলো আফিন।
গাজীপুরের অন্ধকার পল্লী পতিতাপল্লীতে।বলে উঠলো তারেক।আসিফ!!!! চিৎকার করে উঠলো আফিন।
জি স্যার!!!আফিনের পাশে এসে দাঁড়ালো আসিফ।ওকে তোর সাথে রাখ।যেন কোন চালাকি করতে না পারে।দাঁতে দাঁত চেপে বলল আফিন।ওকে স্যার বলে উঠলো আসিফ।
আফিন তৎখনাৎ বেরিয়ে পড়লো অন্ধকার পল্লীর উদ্দেশ্যে।
চলবে

অন্ধকার পল্লী Part:১৪

0

#অন্ধকার_পল্লী
Part:১৪
#Tabassum_Riana

,
,
,
,
প্লেন বাংলাদেশ এয়ারপোর্টে ল্যান্ড করলো।আফিন প্লেন থেকে নেমে আসে।আজ প্রথমেই অবনীর বাসায় যাবে ও।এ কয়দিন থেকে মনটা বড় অস্থির হয়ে আছে জলপরীকে একনজর দেখার জন্য।থানা থেকে মাত্রই ঘরে এসে পৌছালো রহমত সাহেব।রুমাল দিয়ে কপাল মুছার নামে চোখ জোড়াও মুছে নিলো।আমেনা বেগম ভীষন অসুস্থ হয়ে পড়েছে।আফসানা মায়ের মাথার কাছে এসে বসে আছে।মা কিছু তো খাও।এমন কেন করছো?আপু ফিরে আসবে তুমি দেইখো।কান্না জড়িত কন্ঠে মায়ের চুলে হাত বুলাতে বুলাতে বলল আফসানা।
,,,,,,,,,,,,,,আমার অবনীরে আইনা দে।আল্লাহর কসম লাগছে মাইয়াডারে আইনা দে কেউ।বলেই কাঁদতে লাগলেন আমেনা বেগম।আফসানা নিজেকে সামলাতে পারছেনা।বড় বোনটাকে ভীষন মিস করছে ও।কই আছে বোনটা কে জানে?হঠাৎ দরজা খোলার শব্দে চোখ মুছে পিছনে ফিরলো আফসানা।রহমত সাহেব দরজার সামনে এসে দাঁড়িয়ে আছেন।আফসানা বাবার কাছে এসে দাঁড়ালো।বাবা পুলিশ আপুকে পেয়েছে?কোথায় আপু?বলোনা বাবা।আফসানা বলতে থাকলো।
ঐ তারেক মিনহাজের বিরুদ্ধে কম্পলেইন লেটার লিখে পাঠাইছি কমিশনারের কাছে।আমার অবনীর নামে যা তা বলে।বেডার সাহস কম না।আমার মাইয়া স্বর্নের টুকরা আছিলো।কে জানি কই আছে মাইয়াডা?কথা গুলো বলে হঠাৎ মাথা ঘুরে পড়ে গেলেন রহমত সাহেব।
বাবা!!! আফসানা চিৎকার করে রহমত সাহেবের পাশে বসে পড়লো।রহমত সাহেবের ফোন থেকে আমীন কে
কল দিলো আফসানা ডাক্তারকে নিয়ে আসার জন্য।
খাওয়ার পানি এনে রহমত সাহেবের মুখে ছিটালো আফসানা।রহমত সাহেব পিটপিট করে তাকালেন।আফসানা বাবার হাত ধরে খাটে এনে মায়ের পাশে শুইয়ে দিলো।বাবা শুয়ে থাকো,তোমার জন্য পানি আনছি।বলেই আফসানা পাকঘরের দিকে পা বাড়ালো।
,
,
,
,
রহমত সাহেবকে পানি দিয়ে চেয়ারে বসলো অাফসানা।হঠাৎ কলিংবেলের শব্দে দরজার কাছে দৌড়ে গেলো অাফসানা।ডাক্তার এসেছে ভেবে দরজা খুলে দিলো অবনী।আফিন তড়িঘড়ি করপ ভিতরে ঢুকে পড়লো।অবনী কই?জোরে বলল আফিন।আফিনের চেহারা দেখে অাফসানার বুঝতে দেরি হলো না এই কয়টা দিন কতোটা অস্থিরতার মধ্য দিয়ে কাঁটিয়েছে আফিন।আপনি বসুন সোফা দেখিয়ে বলল আফসানা।
,,,,,,,,,,,,,,,,,,,আমি বসবোনা। বলো অবনী কই?ওর ফোন বন্ধ কেন?একনাগাড়ে জিজ্ঞেস করতে থাকলো আফিন।
আফিনকে ধরে সোফায় বসালো অাফসানা।অবনীর গায়েব হওয়া থেকে রহমত সাহেবের থানায় চক্কর কাঁটা সবই আফিনকে বলল আফসানা।আফিনের মাথা কাজ করছেনা।অবনী নেই ভাবতেই পারছেনা আফিন।বুকে চিনচিনে ব্যাথা অনূভব করছে আফিনের।
,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,আঙ্কেল আন্টি কেমন আছে?আস্তে করে প্রশ্ন করলো আফিন।
,,,,,,,,,,,,,,,মা ভালো নেই।বাবা থানা থেকে এসেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছেন।আমাদের দারোয়ান কে কল দিলাম।ডাক্তার এনে দেয়ার জন্য।বলে উঠলো আফসানা।আফিন সোফা ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে রহমত সাহেবের রুমের দিকে এগোলো।মোটা কালো মহিলাটার কাছে এসে দাঁড়ালো মামুন।আমি যেই মেয়েটাকে এনেছি।ওকে এখন যেন কেউ স্পর্শ না করে।দুদিন পর যাকে ইচ্ছা পাঠাবেন ওর কাছে।বলে উঠলো মামুন।অবনী সেন্সলেস অবস্থায় পড়ে আছে ফ্লোরে।শরীরের প্রতিটি অংশ যন্ত্রনায় ভরে আছে।এ কয়টাদিন ওকে পশুর মতো অত্যাচার করেছে।চোখ বন্ধ করতেই মা বাবা আফসানা আর যাকে মনের অজান্তেই ভালোবেসে ফেলেছে সেই আফিনের চেহারা ভেসে উঠছে।প্রত্যেকটা সময় মৃত্যুর রাস্তা থেকে ফিরে এসেছে অবনী।মনে মনে শুধু আফিনকে ডেকেছে অবনী।আফিন ওকে মনে নিতে পারবেনা।আর কখনো কাছে ও টানবেনা।যে মেয়েটা দিনের পর দিন এভাবে অত্যাচারিত হয়েছে সে কারোর ভালোবাসার যোগ্য না।
,
,
,
,
রহমত সাহেব পাশে তাকিয়ে আফিনকে দেখতে পেলেন।আমেনা বেগম বিছানার সাথে লেগে গেছেন।আফিন রুমে ঢুকতেই মাথা তুলে আফিনকে দেখেই ভেজা চোখ জোড়া আবার ও ভিজে গেলো আমেনা বেগমের।হুহু করে কেঁদে উঠলেন ওনি।আফিন খাটের পাশে এসে বসলো।রহমত সাহেব আফিনের হাত চেপে ধরলো।আমার মাইয়াডারে ফিরাইয়া আইনা দেও বাবা।কাঁদতে কাঁদতে বলছিলো রহমত সাহেব।আফিনের চোখ জোড়া ভিজে এলো।
আফিন কিছু বলতে যাবে তখনই ওর ফোনে ভাইবারে মেসেজের রিংটোন বেজে উঠে।আফিন ফোন বের করে মেসেজ চেক করে দেখলো আননোন নম্বর থেকে ভিডিও মেসেজ পাঠালো কে যেন।
ভিডিও অন করতেই আফিনের মাথা খারাপ হয়ে যাওয়ার যোগাড়।অবনীকে অত্যাচারের ভিডিও পাঠিয়েছে কে যেন।ভিডিওর ভলিউম বাড়াতেই কে যেন বলছিলো “মিঃ আফিন খান তোমার পেয়ারে অবনীকে দেখো।কতোটা কষ্ট পাচ্ছে ও?;বাঁচাবানা ওকে?এখন ও ছুই নাই ওকে আমরা।তোকে আটচল্লিশ ঘন্টার সময় দিলাম।এ সময়ের মধ্যে অবনীকে খুঁজে নে।আটচল্লিশ ঘন্টার মধ্যে না এলে ওকে নিয়ে আমরা আনন্দ করবো তারপর বেঁচে দিবো চড়া দামে।কথা গুলো বলে ওদের মধ্যে একজন অবনীর পিঠে চাবুক দিয়ে বাড়ি মারলো।অবনী চিৎকার করে কাঁদছে।অবনীরচিৎকার শুনে রহমত সাহেব আর আমেনা বেগমের অবস্থা আরো খারাপ হয়ে গেলো।চিৎকার করে কাঁদতে লাগলেন ওনারা।এরই মধ্যে আমীন ডাক্তার নিয়ে এসেছে।আফিন ড্রইং রুমে এসে বসলো।বডিগার্ডরা কোথায় ছিলো?ওদের উপস্থিতিতে অবনীকে কি করে নিয়ে গেলো?ভাবতে ভাবতে ড্রাইভার কে কল দিলো আফিন।
,,,,,,,,,,,,,,হ্যালো স্যার।অপর পাশ থেকে বলে উঠলো ড্রাইভার।
,,,,,,,,,,,,,,,,বডিগার্ডরা কই?প্রশ্ন করলো আফিন।
,,,,,,,,,,,,,,,স্যার ওনারা হাসপাতালে ভর্তি।যেদিন অবনী ম্যাম গায়েব হইলো ঐদিনই কে জানি বডিগার্ডদের মাইরা রাস্তায় ফালায় রাখছিলো।
,
,
,
,
কান থেকে ফোন সরালো আফিন।চোখ লাল হয়ে গেছে ওর।রক্তবর্ণ চোখ জোড়া দিয়ে আগুনের ফুলকি উঠছে ওর।ডাক্তারের বিল মিটিয়ে বেরিয়ে গেলো আফিন।ভাইবারে যে নম্বর থেকে ভিডি ও এসেছিলো সে নম্বরটি বন্ধ।কই খুঁজবে আফিন এখন ওর জলপরীকে।তবে এই তারেক মিনহাজের খবর নিতে হবে।ফোন বের করে আফিন তার একজন লোককে তারেক মিনহাজের সব ডিটেইলস ওকে দেয়ার জন্য।আফিন হাসপাতালে ছুটে গেলো ওর বডিগার্ড দের কাছে।এখন যেকোন তথ্য ওর জন্য ইম্পরট্যান্ট,,,,,,,
চলবে

অন্ধকার পল্লী Part:১৩

0

#অন্ধকার_পল্লী
Part:১৩
#Tabassum_Riana

,
,
,
,
আফিনের সামনে বসে আছে অবনী।ভীষন কাঁদছে অবনী।ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে অবনী।চোখ মুখ লাল হয়ে আছে ওর।কিছু বলার চেষ্টা করছিলো অবনী কিন্তু কান্নার জন্য পারছেনা না বলা কথা গুলো বলতে পারছেনা অবনী।আফিনের চোখ জোড়া ভরে এসেছে।ওর জলপরী কেন কাঁদছে?হঠাৎ অবনী কাঁদতে কাঁদতে আফিনের সামনেই পিছিয়ে যেতে থাকে।আফিন উঠে অবনীকে ধরার চেষ্টা করতে থাকে।অবনী ধরা দিচ্ছেনা।অবনী!!!!অবনী!!!!!!অবনী!!!চিৎকার করে ডাকতে থাকে আফিন।কিন্তু অবনী একসময় ধোয়ায় মিলিয়ে গেলো।শোয়া থেকে ধড়ফড় করে উঠে বসে আফিন।চোখ জোড়া বেয়ে টপটপ করে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে।এসব কি ছিলো?কি দেখলো ও এসব?ওর জলপরী কোনো বিপদে পড়েনি তো?ভাবতেই মাথা গরম হয়ে যাওয়ার জোগাড়।বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো আফিন।বারান্দায় এসে দাঁড়িয়ে সিগারেট ধরিয়ে সামনের বিল্ডিং গুলো দেখছে আফিন।রহমত সাহেব ঘরে এলেন তাড়াহুড়ো করে।আমেনা বেগমের কল পেয়ে এসেছেন।স্ত্রীর কান্নায় বুক ধড়ফড় করে উঠেছে ওনার।ফোনে কিছু বলতে পারেননি আমেনা বেগম শুধু বলেছিলেন জলদি ঘরে এসো।রহমত সাহেব ঘরে ঢুকে রুমে এসে আফসানা আর আমেনা বেগমকে দেখতে পেলেন।দুজনেই কাঁদছে। সন্ধ্যা হয়ে এসেছে অবনীর কোন খবর নেই।কই গেলো মেয়েটা?ফোন ও বন্ধ বলেই কাঁদতে লাগলেন আমেনা বেগম।
,
,
,
,
অবনীকে ফ্লোরে ছুড়ে মারা হলো।জামার হাতা দুটো ছিড়ে আছে।মুখের কোনা বেয়ে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে।চোখ খুলতে পারছেনা অবনী।কিছু মানুষের বিকট হাসি শুনতে পাচ্ছে ও।খুব কষ্টে চোখ খুলল অবনী।সামনে মামুন আর ওর লোকেরা দাঁড়িয়ে ওকে লোলুপদৃষ্টিতে দেখছে আর হাসছে।আ আ আমি এ…….খা নে কে ক কেন?দূর্বল গলায় বলল অবনী।তোর কারনে মার খেয়েছি আমি।এ অপমান এতো সহজে ভুলবো মনে করেছিস?তোর লাভার তো তোকে ছেড়ে চলে গেছে।এখন দেখবো কে বাঁচায় তোকে?বলেই হাসতে লাগলো ওরা।মামুন এসে অবনীর হাতের ওপর জোরে পাড়া দিয়ে ধরলো আর এসব আরেকজন ভিডিও করছে।শাকিল নামের ছেলেটা ভিডিও করতে করতে বলছিলো জানিস এ ভিডিও কার কাছে যাবে?শাকিলের কথায় মাথা তুলে তাকায় অবনী।ওর হাতে ওর জোরে পাড়া দিয়ে দাঁড়ায় মামুন তোর জানের কাছে যাবে,তোর আফিনের কাছে যাবে।বলে সবাই একসাথে হেসে উঠে।না না প্লিজ ওনাকে পাঠাবেননা কাঁদতে কাঁদতে বলে অবনী।কেন তোর পেয়ারে আফিন কষ্টপাবে বলে?মামুন আরো জোরে অবনীর হাতে পাড়া দিয়ে বলে উঠে।ওদের মধ্যে কে যেন অবনীর মুখের মধ্যে গরম পানি ছুড়ে মারে।অবনীর মুখে যেন আগুন লাগিয়ে দেয়া হলো।চিৎকার করে উঠে অবনী।ওরা বেরিয়ে যায়। অবনী আধমরা অবস্থায় সেভাবে পড়ে থাকে।
,
,
,
,
রহমত সাহেব পুলিশ সুপারটির দিকে
অবাক চোখে চেয়ে আছেন।এরা কি মানুষ?২৪ঘন্টা হওয়ার আগে নাকি কোন জিডি লেখবো না।কি হলো রহমত মেয়া বেরিয়ে যান।আপনার মেয়ের কিছু হয়নি। দেখেন নিজের আশিকের সাথে কোন আবাসিক হোটেলে মজা করছে পান চিবোতে চিবোতে বললে পুলিশ সুপার তারেক মিনহাজ।জিডি লেখবেননা ভালো কথা আমার মেয়েকে নিয়ে এসব কথা বলার অধিকার কাউকে দেইনি।দাঁতে দাঁত চেপে বললেন রহমত সাহেব।এহ চোরের মার বড় কথা!! মেয়েকে তো ঠিকমতো সামলাতে পারেননা আবার শাসাচ্ছেন আমাদের?রহমত সাহেবের দিকে রাগী গলায় বললেন তারেক মিনহাজ।কমিশনার কে বলবো আমি কথা টা বলে উঠে বেরিয়ে গেলেন রহমত সাহেব।বাহিরে এসে গেট ধরে কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেন তিনি।দারোয়ান এসে ধরলেন রহমত সাহেবকে।স্যার কাঁদবেননা বলে উঠলো দারোয়ান। আমার মেয়েকে নিয়ে কি কি আবোলতাবোল বলছিলো কাঁদতে কাঁদতে বললেন রহমত সাহেব।সকাল থেকেই অবনীর নম্বরে কল দিয়ে দিয়ে পাগল হচ্ছে আফিন।ফোন বন্ধ রেখেছে কেন এই মেয়ে?মাথাটা খারাপ হয়ে যাচ্ছে আফিনের।শব ধ্বংস করতে পারলে ভালো লাগতো ওর।অফিসের কাজে ও ঠিক মতো মন বসাতে পারলোনা আফিন।কোন এক অজানা ভয় ওর ভিতরটাকে কুরেকুরে খাচ্ছে।কারোর চোখে ঘুম নেই বাসার।কান্নার রোল পড়ে গেছে রহমত সাহেবের বাসায়।ঘুম নিদ্রা খাবার নেই কারোর।মা থেকে থেকে কেঁদে উঠছে মেয়ের জন্য।বাবা কিছুক্ষন পর পর দরজার দিকে তাকাচ্ছে আর অবনীর নম্বরে কল দিয়ে যাচ্ছে।কিন্তু ফোন বন্ধ আসছে।
,
,
,
,
অবনীকে কিছু খেতে দেয়নি ওরা।শুধু টর্চার করে গেছে ওকে।ওর সামনে খাবার এনে মুখের সামনে ফেলে দেয়া।পানি মুখের সামনে এনে ফেলে দেয়া এবং ওকে জোর করে নিচ থেকে খাবার উঠিয়ে খেতে বাধ্য করা হচ্ছিলো।অবনী ক্ষুধার জ্বালায় খাবার গুলো খাচ্ছিলো আর বখাটে গুলো ওর পিঠে বেল্ট দিয়ে মারছিলো।কাঁদছিলো অবনী গুমরে গুমরে।ওর মুখ থেকে খাবার গুলো পড়ে যাচ্ছিলো।খাবার শেষে ওরা অবনীর পায়ে সিগারেটের ছেকা দিয়েছে।চিৎকার করে কাঁদছিলো অবনী।এভাবে দুইদিন কেঁটে গেলো।রহমত সাহেব আর আমেনা বেগম মেয়েকে পেতে জানপ্রান লাগিয়ে দিচ্ছিলো কিন্তু কোন ভাবেই অবনীর খোঁজ পেলোনা।
আফিন ও অবনীকে কন্টাক্ট করার অনেক চেষ্টা করেছে কিনৃতু পারেনি।তাহলে কি সত্যিই জলপরীকে হারিয়ে ফেলল আফিন?
চলবে

অন্ধকার পল্লী Part:১২

0

#অন্ধকার_পল্লী
Part:১২
#Tabassum_Riana
,
,
,
,
অবনীকে পৌছে দিয়ে কিছুক্ষন পর রহমত সাহেবের বাসায় লাগেজ ব্যাগ সমেত চলে এলো।রহমত সাহেব বেশ যত্ন আত্তি করলেন আফিনের একদম নিজের ছেলের মতো।রাতের খাবার খেতে বসেছে সবাই।খাবার টেবিলে অবনীর পাশে বসে পড়লো আফিন।খাবারের মাঝেই অবনীর বাম হাত ধরে ফেলল আফিন।অবনী কাশতে শুরু করলো।মেয়ের কাশি দেখে রহমত সাহেব মাথা তুলে তাকালেন।কিরে মা?পানি খেয়ে নেয়।অবনী চেয়ে ও পানি খেতে পারছেনা।মাথা ঝাঁকিয়ে অবনী বলল আমি ঠিক আছি।আফিন অবনীর হাত ছেড়ে দিলো।অবনী আফিনের দিকে একনজর তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নিলো।একগ্লাস পানি ঢকঢক করে খেয়ে নিলো।আফিন রহমত সাহেবের সাথে কথা বলার ফাঁকে অবনীর পায়ের ওপর পা রাখলো।অবনী বিষম খেলো।আফসানা অবনীর দিকে অবাক চোখে তাকালো।আফসানার দিকে তাকিয়ে অবনী খাওয়ায় মন দিলো।আফিনের পা অবনীর পায়ে স্লাইড করছে।খাবার সেড়ে আফিন বের হওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।তবে চোখ দুটো অবনীকেই খুঁজছে।খাটের ওপর বসে আছে অবনী।ওর ব্রেইন কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে।কেমন অদ্ভুত এক ঘোরের মধ্যে আছে অবনী।কিছুক্ষন পর পর আফসানা আর মা এটা ওটা বলে যাচ্ছে কিন্তু ওর কানে কিছুই যাচ্ছেনা।ঘন্টা খানিক পর আফসানা অবনীর সামনে এসে দাঁড়ালো।আপি আফিন ভাইয়া চলে যাচ্ছে বলে উঠলো আফসানা।আফসানার কথা শুনে অবনী উঠে দৌড়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।আফিন যে রুমটায় ছিলো সেদিকে এগুতেই কে যেন অবনীর হাত টেনে একটা খালি রুমে নিয়ে এলো।অবনী বড় চোখ করে আফিনের দিকে চেয়ে আছে।কি হলো আমাকে এনে নিজেই হারিয়ে গেলে?গম্ভীর গলায় বলল আফিন।না মানে এমনি একটু ব্যাস্ত ছিলাম।মাথা নিচু করে বলল অবনী।হুম!! বড় একটি নিশ্বাস নিয়ে বলল আফিন।শুনো আমার বডিগার্ডরা প্রতিনিয়ত তোমার সাথে থাকবে।কেউ তোমার কোন ক্ষতি করতে পারবেনা।অবনীর দুগালে হাত রেখে বলল আফিন।অবনীর চোখ জোড়া ভিজে গেছে।আফিন সত্যিই চলে যাবে?ভাবতেই বুকের এককোনে চিনচিনে ব্যাথা হচ্ছে অবনীর।আর তোমার সাথে ভিডিও কলে কথা হবে সবসময়।ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া করবে এবং আঙ্কেল আন্টির খেয়াল রাখবে।ওকে?একনাগাড়ে কথা গুলো বলল আফিন।অবনী আফিনের কাঁধে মাথা রাখলো।চোখ জোড়া বেয়ে অনবরত অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে অবনীর।
,
,
,
,
অবনীর মুখ তুলে ধরে আফিন দুহাতে।অবনীর চোখ জোড়া মুছে দিয়ে ওর কপালে ঠোঁট বুলিয়ে বেরিয়ে গেলো আফিন।এয়ারপোর্টে যাওয়ার সময় ঠিকহলো রহমত সাহেব যাবেন আফিনের সাথে।আফসানা আর মায়ের সাথে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে গেলো আফিন।অবনী সিড়ি পর্যন্ত দৌড়ে এলো আফিনের পিছু পিছু।অশ্রু আর বাঁধা মানলো না অবনীর।আফিন চোখের আড়াল হতেই কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো অবনী।এভাবে বেশ কয়েকদিন চলে গেলো।অবনী ঘর থেকে দুইদিন বের হয়নি।কারন আফিন তো এখন আর নেই ওকে নিয়ে যাওয়ার জন্য।অবশ্য এ কয়দিন ভিডিও কলে কথা হয়েছে।আফিন কথা বললে ও অবনী কথা বলতে পারতোনা।গলাভেঙ্গে আসতে চাইতো ওর।চোখজোড়া ভিজে আসতে চাইতো।তিনদিন পর আজ বের হলো অবনী।বাহিরে বের হতেই মনে হলো মুক্ত বাতাস ওর হৃদয়টাকে ছুঁয়ে দিয়েছে।একটু আগাতেই আফিনের বডিগার্ডরা অবনীর সামনে এসে দাঁড়ালো। ম্যাম আপনাকে নিয়ে যেতে বলেছে যতোদিন পর্যন্ত স্যার না আসে।লোকটা মাথা নিচু করে বলে উঠলো।ঠিক আছে চলুন। বলে উঠলো অবনী।বডিগার্ডদের সাথে কলেজে চলে এলো অবনী।অবনীকে কলেজে দেখে অন্তরা দৌড়ে এলো।এতোদিন আসিস নাই কেন?প্রশ্ন করলো অন্তরা।
এমনিই ভালো লাগছিলো না।কিছুটা মন খারাপ করে বলল অবনী।কিছু কি হয়েছে অবনী?প্রশ্ন করে উঠলো অন্তরা।
ওনি চলে গেছে।ভাঙ্গা গলায় বলল অবনী।
কই গেলো? প্রশ্ন করে উঠে অন্তরা।
আমেরিকা পাঁচদিনের জন্য।নাক টানতে টানতে বলল অবনী।
বাহ!! বাহ!!পাঁচদিনের অনুপস্থিতি ও সহ্য হচ্ছে না।দুষ্টামি করে বলল অন্তরা।
কথা বলতে বলতে ক্লাশে চলে গেলো অবনী আর অন্তরা।
,
,
,
,
অফিসে বসে ওয়ালপেপারে জলপরীর ছবিটা বারবার দেখছে আফিন।কবে আবার দেখা পাবে এই জলপরীর?আফিনের যে আর ভালো লাগছেনা জলপরীকে ছাড়া।প্রত্যেকটা ঘন্টাকে বছরের মতো মনে হচ্ছে ওর।ভাইবারে ঢুকে অবনীকে অনলাইন পেয়ে মুখে হাসি ফুঁটে উঠলো আফিনের।কল করার কিছুক্ষন পর রিসিভ হলো।ক্লাশে লেকচারের শব্দ পাচ্ছে আফিন।
হ্যালো!!!!অপরপাশ থেকে ফিসফিস করে বলে উঠলো অবনী।
ক্লাশে অনলাইন হয়ে আছো কেন?বলে উঠলো আফিন।
নেট অফ করতে মনে নেই।ফিসফিস করে বলল অবনী।
মিস ইউ।নেশা ধরানো কন্ঠে বলে উঠলো আফিন।
গলা ধরে আসতে চায় অবনীর।কোনমতো নিজেকে সামলে নিলো অবনী।কে ক কেমন আছেন?ফিসফিসিয়ে বলল অবনী।
ভালো।ক্লাশ করো,রাতে কথা হবে।বলে উঠলো আফিন।
অবনী ফোন কেঁটে ব্যাগে ঢুকিয়ে নিলো মোবাইলটাকে।
অন্তরা অবনীর দিকে দুষ্টমির হাসি দিয়ে ক্লাশে মনযোগ দিলো।
ক্লাশ শেষে বেরিয়ে পড়লো অবনী আর অন্তরা।রাফসান এসে অন্তরাকে নিয়ে গেলো।অবনী বাসের জন্য অপেক্ষা করছে।
,
,
,
,
রাতে আফিন খাটে বসে ভাইবারে অবনীর আইডি চেক করলো।এসময় অনলাইন থাকে অবনী।কিন্তু আজ অবনীকে অনলাইন পেলোনা আফিন।বড় একটা নিশ্বাস নিলো আফিন।ফোনের কন্টাক্ট লিস্টে গিয়ে অবনীর নম্বরে কল দিলো আফিন।ফোন বন্ধ দেখাচ্ছে।আফিনের বুক যেন ধুক করে উঠলো।পরক্ষনেই আফিনের মনে হলো হয়ত ফোনে চার্জ নেই।ল্যাপটপের ওয়ালপেপারে অবনীর কালো শাড়ী পরা ছবিটাকে দেখে সারারাত কাঁটিয়ে দিলো অাফিন।
কয়েক ঘন্টা আগে
বাসের জন্য দাঁড়িয়ে আছে অবনী।হঠাৎ সামনে একটা মাইক্রোবাস এসে চোখের পলকে অবনীর মুখে রুমাল চেপে উঠিয়ে নিয়ে চলে গেলো।চিৎকার করার ও সুযোগ পেলোনা অবনী।
চলবে

অন্ধকার পল্লী Part:১১

0

#অন্ধকার_পল্লী
Part:১১
#Tabassum_Riana

,
,
,
,
ম্যাচ জ্বালিয়ে মোমবাতি গুলো ধরালো আফিন।অন্ধকার রুমে মোমবাতি গুলো বাতাসের তালে তালে হেলে দুলে নৃত্য করছে।পুরো পরিবেশ টা রোমাঞ্চকর হয়ে উঠেছে।মোমবাতির আলোটাই আফিনে পাওয়া না পাওয়ার কথা গুলো বলে দিচ্ছে।টেবিলে খাবার গুলো সার্ভ করে গিটারটাকে স্ট্যান্ডে দাঁড় করিয়ে রেখে দিলো আফিন।আজ ওর জলপরীর জন্য কিছু স্পেশাল রেডি করে রেখেছে আফিন।হঠাৎ জানালা ভেদ করে দমকা বাতাসে মোমবাতি গুলো নিভে যাওয়ার যোগাড়।আফিন দৌড়ে পর্দা সরিয়ে জানালা গুলো আটকাতে শুরু করলো।জানালা বন্ধ শেষে আফিন ডাইনিং টেবিলের দিকে এগোতেই ওর চোখ আটকে গেলো।পৃথিবী থমকে গেলো আফিনের।হার্টবিট দ্রুত গতিতে চলছে আফিনের।আফিনকে এভাবে থেমে যেতে দেখে মোমবাতি গুলো থেকে হাত সরালো অবনী।আরে দাঁড়িয়ে আছেন যে?মুচকি হেসে বলল অবনী। এবার ঘোর কাঁটলো আফিনের।মোমবাতির আলোয় অবনীর নাকের সাদা পাথরের নাকফুলটা জ্বলজ্বল করছে।কি এক অপরুপ দৃশ্য তা বর্ননা করার ভাষা আফিনের জানা নেই।কালো গাউন,চুল গুলোকে পিঠের মাঝে এলোমেলো করে ছড়িয়ে রাখা।চোখে একটু কাজল,ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক।সব মিলিয়ে অপরুপ লাগছে অবনীকে। পলকহীন ভাবে দেখে নিলো আফিন তার জলপরীকে।একটু একটু করে অবনীর দিকে এগুতে শুরু করলো আফিন।অবনী সোজা মুর্তির মতো দাঁড়িয়ে আছে।আফিন এসে অবনীর জামার কলারের ওপর থেকে কানের দুলটা হাতে নিলো।অবনী অাফিনকে দেখে যাচ্ছে।আজ যে অবনী চোখ সরাতে পারছেনা অাফিন থেকে।কালো কোট, লাল টাই উফ অসাধারন লাগছে আফিনকে।আফিন মুচকি হেসে অবনীর কানে কানের দুলটা পরিয়ে দিলো।
,
,
,
,
অাফিন সরে আসতেই অবনী একটু নড়ে উঠে ওর কান ধরে দেখলো।কানের দুলটা পাচ্ছিলো না জামা টা পরার পর।কিন্তু আফিন কোথায় পেলো বুঝতে পারছেনা অবনী।অাফিন অবনীর হাত ধরে চেয়ারে বসিয়ে দিলো।অাফিন অবনীর সামনের চেয়ারে বসে খাবারের ডিশের ওপর থেকে ঢাকনা সরালো।চাইনিজ খাবার গুলো থেকে ধোঁয়া উঠছে।অবাক চোখে সব কিছু দেখছিলো অবনী।এতসব কখন করলেন?প্রশ্ন করে উঠলো অবনী।যখন রুমে বসে আমাকে ভাবছিলে তখন।বলে নেশা যুক্ত হাসি দিলো আফিন।অবনী লজ্জায় মাথা নিচু করে মুচকি হাসছে।বাসায় যতো পারো হাসো।এখানে জড়িয়ে ধরে চুমো দিলে ও কেউ দেখবেনা।কথা গুলো বলে খাওয়ায় মন দিলো আফিন।আফিনের কথা শুনে হালকা কেশে উঠলো অবনী।কি বলে এই লোক?মাঝে মাঝে আফিনের কথা শুনে অবাক হবে নাকি লজ্জা পাবে কনফিউজড হয়ে যায় অবনী।খেতে খেতে অবনীর দিকে তাকায় আফিন।কি হলো এভাবে লজ্জা পেতে থাকবা নাকি খাবাও?বলে উঠলো আফিন।আফিনের কথায় পুরো একটা মোমো মুখে ঢুকিয়ে দিলো অবনী।আফিন থ হয়ে তাকিয়ে আছে অবনীর কান্ডকারখানায়।অ
বনী মোমোটিকে ধীরে ধীরে কামড়ে খেয়ে নিলো।এবার আফিন হেসে দিলো।গড়াগড়ি খাচ্ছে আফিন হাসতে হাসতে।অবনী অসহায় ভঙ্গিতে আফিনের হাসি দেখছে।আফিন এবার থামলো অবনীর দিকে তাকিয়ে।গ্লাসে কিছু ড্রিংক ঢালতে লাগলো আফিন দুজনের জন্য।আ আমি এগুলো খাইনা।আস্তে করে বলল অবনী।এগুলো লো এলকোহলিক।খেতে পারবে।অবনীর দিকে একটা গ্লাস এগিয়ে দিয়ে বলল আফিন।অবনী গ্লাসটা হাতে নিয়ে একটু চুৃমুক দিয়ে চোখ মুখ কুঁচকে ফেলল।আফিন হেসে অবনীর দিকে তাকিয়ে আছে।কেমন? অবনীকে প্রশ্ন করলো আফিন।
,
,
,
,
মুখ খানিকে স্বাভাবিক করে নিলো অবনী।খারাপ না,আঙ্গুরের জুসের মতো লাগলো।বলে উঠলো অবনী।হুম বলে টেবিলের ওপর রাখা অবনীর হাতের ওপর হাত রাখলো আফিন।অবনী আফিনের দিকে তাকালো।চোখ জোড়া জ্বলজ্বল করছে ওর।অবনীর হাত উঠিয়ে সেখানে আফিন আলতো করে ঠোঁট ছুঁয়াতেই অবনী হাত সরিয়ে নিলো।বুক ধুকপুক করছে ওর।আফিন চেয়ার ছেড়ে উঠে গিয়ে গিটারটা নিয়ে অবনীর সামনের ছোট্ট টুলটায় বসলো।অবনী আফিনকে দেখছে মুগ্ধ চোখে।আফিন গিটার বাজিয়ে গান ধরলো।
Muskurane ki wajah tum ho
Gungunane ki wajah tum ho
Jiya jaaye na, jaaye na, jaaye na..
O re piya re..
Jiya jaaye na, jaaye na, jaaye na..
O re piya re..
O re lamhe tu kahin mat jaa
Ho sake toh umr bhar tham jaa
Jiya jaaye na, jaaye na, jaaye naa..
O re piya re..
Jiya jaaye na, jaaye na, jaaye naa..
O re piya re.. piyaa re..
Dhoop aaye toh, chhaanv tum laana
Khwahishon ki baarishon mein
Bheeg sang jaana
অবনীর মুখে মলিন হাসি ফুটে উঠেছে কিন্তু চোখজোড়া জলে ভরে গেছে।আফিন অবনীর গালে হাত রাখলো।আমার জলপরী,কেন এতো মায়া লাগাস তুই?তোর মায়া জালে জড়িয়ে পড়েছিরে।বলতে লাগলো আফিন।অবনী আফিনের হাতের তালুতে গাল রেখে কাঁদতে লাগলো ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে।অবনীকে দাঁড় করিয়ে আফিন ওর গালে ঠোঁট রেখে চোখের পানি গুলোকে শুষে নিলো।আফিনের কোটের কলার খামচে ধরে চোখ খিচে বন্ধ করে আছে অবনী।অবনীর গাল থেকে সরে এলো আফিন।অবনী এখনো আফিনের কোটের কলার ছাড়েনি।আরো জোরে আফিনকে ধরে রেখেছে অবনী।অাফিনের কেমন যেন অবনীর নেশায় ডুবে যাচ্ছে আফিন।আজকের দিনটা হয়ত আর কখনো ফিরে আসবেনা।অবনীকে এভাবে আবার পাবেনা হয়ত,হয়ত কোন এক অতল সাগরে ওর জলপরীকে হারিয়ে ফেলবে আফিন।আজকের দিনটা দুজনের জীবনে স্মরনীয় হয়ে থাকুক।কথা গুলে ভেবে অবনীর ঠোঁট জোড়ায় আলতো করে চুমু দিলো আফিন।আরো দুএকবার আলতো করে অবনীর ঠোঁটজোড়ায় উষ্ণ পরশ দিয়ে অবনীর ঠোঁটজোড়ায় ঠোঁট ডুবিয়ে দিলো আফিন।শুষে নিতে থাকলো অবনীর রসালো ঠোঁটজোড়াকে।অবনী ও আজ আফিনের উষ্ণ ভালোবাসায় সাড়া দিচ্ছে।
,
,
,
,
অবনীর কলেজের সামনে এসে থামলো আফিনের গাড়ি।চোখ মুখ লাল হয়ে আছে অবনীর।মাথা নিচু করে আছে অবনী।আফিনের চোখের দিকে তাকাতে পারছেনা অবনী।আফিনের ব্যাপারে দূর্বল হয়ে পড়েছে অবনী।কলেজে যাও বলে উঠলো আফিন।আফিনের দিকে একনজর তাকিয়ে গাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়লো অবনী।সামনে ফিরে চোখ মুছে নিয়ে দৌড়ে কলেজ গেটে ঢুকে পড়লো অবনী।অবনীর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিলো আফিন।অন্তরার সামনে বসে আছে অবনী।অবনীর দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে অন্তরা।অবনীকে দেখেই বুঝাগেছে সারারাত কান্না করেছে ও।সারারাত কান্না করেছিস মনে হচ্ছে?বলে উঠলো অন্তরা।জানি না কেন তার অনুপস্থিতি সহ্য করতে পারছিনা,কেন তার সাথেই থাকতে চাই শুধু?আমার না প্রত্যেকটা সময় নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসতে চায় তাকে ছাড়া।কাঁদতে কাঁদতে বলছিলো অবনী।কে সে? অবনীর হাতে হাত রেখে বলল অন্তরা।অন্তরা সব বলে দিলো অন্তরা।আফিনের সাথে ওর প্রথম দেখা হতে শুরু করে সব কিছু।ওনি তোকে ভালোবাসে?প্রশ্ন করে উঠলো অন্তরা।জানি না বলে মাথা নিচু করলো অবনী।ক্লাশ শেষে আফিন নিতে এলো অবনীকে।গাড়িতে বসে আছে অবনী।দুজনেই চুপচাপ,কারোর মুখে কোন কথা নেই।তোমাকে আজ তোমার বাসায় দিয়ে আসবো।আমার বাসায় প্যাকিং করতে হবে,একটু রেস্টের ও প্রয়োজন আছে বলে উঠলো আফিন অবনীর দিকে একনজর তাকিয়ে।আমি ও আপনার সাথে যাবো,আপনাকে প্যাকিংয়ে হেল্প করবো।প্লিজ না করবেননা।বলে উঠলো অবনী।অবনীকে না করতে পারলো না আফিন।বাসায় নিয়ে এলো অবনীকে।আফিন প্যাকিং করছে আর অবনী এটা ওটা এগিয়ে দিচ্ছে অাফিনকে।অবনীর ফোন বেজে উঠায় ফোন নিয়ে অন্যরুমে চলে এলো অবনী।
,
,
,
,
হ্যালো অবনী!!!!অপরপাশ থেকে বললেন রহমত সাহেব।
জি বাবা।বলে উঠলো অবনী।
কই তুই?কবে আসবি?জিজ্ঞেস করলেন রহমত সাহেব।
বাবা আজ বিকেলে চলে আসবো।মলিন মুখে বলল অবনী।
আজ তোর ফ্রেন্ড আফিন চলে যাবে।ওকে বাসায় চলে আসতে বল।এখানে খাওয়া দাওয়া করে একসাথে বেরিয়ে যাবে এয়ারপোর্টের জন্য।একনাগাড়ে কথা গুলো বললেন রহমত সাহেব।
জি বাবা,বলবো। বলে উঠলো অবনী।
কান থেকে ফোন সরিয়ে আফিনের কাছে এলো অবনী।বাবা বলছিলো আমাদের বাসায় যেতে।ঐখান থেকে এয়ারপোর্ট যাবেন।
অবনীর কথা শুনে হাসলো আফিন। ওকে বলে লাগেজের চেইন লাগালো আফিন।
চলবে

অন্ধকার পল্লী Part:১০

0

#অন্ধকার_পল্লী
Part:১০
#Tabassum_Riana

,
,
অবনী আফিনের বাসায় আছে একদিন হয়ে গেলো।পরদিন রাতে আফিনের ফ্লাইট। আফিন আর অবনী দোলনায় বসে ফুল গাছ গুলো দেখছে।দুজনের হাতে ধোঁয়া উঠা দু মগ কফি।দুজনের মুখে কোন কথা নেই।দুজনেই কোন এক গভীর চিন্তায় মগ্ন।আফিন কফি মগে চুমুক দিয়ে অবনীর দিকে তাকালো।জ্যোৎস্না আলো টা যেন আরো সুন্দর হয়ে উঠেছে অবনীর সংস্পর্শে।পিঠের এলোমেলো লম্বা চুল গুলো উড়ছে।রাতের স্নিগ্ধ আলোয় অবনী ভীষন মায়াবী লাগছে।এতো মায়া কই পায় মেয়েটা ভেবে পায়না আফিন।দোলানায় ওদের মাঝে অবনীর একটা হাত রাখা।আফিন খুব ধীরে অবনীর হাতের ওপর হাত রাখলো।গরম হাতের ছোয়া পেয়ে অবনী হাত জোড়ার দিকে তাকিয়ে আফিনের দিকে তাকালো।আফিন অবনী মায়ায় আবার নতুন করে জড়িয়ে যাচ্ছে।অবনীর হাতটা আরো শক্ত করে ধরলো আফিন।আকাশের তারার দিকে চেয়ে আফিন মুখ খুলল
কেন বাতাস হয়ে এসে,
আমায় স্পর্শ করে যাও?
কেন ভোরবেলায় সূর্যের আলো হয়ে,
আমার ঘুম ভাঙাও?
কোন মায়ায় কিসের টানে,
দেহমনের শিহরণ জাগাও?
আমারও তো তোমায় ছুঁতে ইচ্ছে করে,
তোমার মোহ ধরানো গন্ধে নেশাগ্রস্ত হতে ইচ্ছে করে, ইচ্ছে করে তোমার ঐ লাল টুকটুকে ঠোঁট জোড়ায় ডুবে যেতে!!
তোমায় যদি জিজ্ঞেস করি,
আমার হাতে হাত রেখে বন্ধুর পথে হাঁটবে?
শ্রাবনের শেষ বিকেলে………
অবনী আফিনের দিকে মুগ্ধ চোখে চেয়ে আছে।লোকটা ওকে আর কতো মাতাল করবে তার নেশায়?ভেবে পায়না অবনী।বাহ খুব ভালো কবিতা পারেন আপনি।আফিনের দিকে চেয়ে বলল অবনী।পছন্দ হয়েছে?হালকা হাসলো আফিন।মাথা ঝাঁকালো অবনী।আফিন অবনীর গালে আলতো করে আঙ্গুল ছুঁইয়ে দিলো।অবনী চোখ বুজে আফিনের ছোঁয়া উপভোগ করছে।আফিন অবনীর দিকে একটু এগিয়ে এসে অবনীর গালে নাক ঠেঁকালো।অাফিনের গরম নিশ্বাস গুলো অবনীর হৃদয়কে গভীর ভাবে স্পর্শ করছে।সখী তোর নেশায় মাতাল আমি।আমার হৃদয়ের গহীনে শুধু যে তোরই বসবাস।আমায় আগলে নেয় তোর হৃদয়ের মাঝে।নেশা ধরানো কন্ঠে কথা গুলো বলে অবনীর গালে ঠোঁট ছোঁয়ালো আফিন।
,
,
,
,
আফিনের কথা গুলো অবনীর বুকে তীরের মতো বিঁধছে।অবনী আফিনের দিকে ফিরে তৎখনাৎ আফিনের বাহু ডোরে নিজেকে বন্দী করে নিলো।আফিন ও আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে তার জলপরীকে।বেশ কিছুক্ষন পর অবনী সরে এলো আফিন থেকে।অন্য দিকে মাথা ঘুরিয়ে নিয়ে চোখের পানি গুলো মুছে নিলো অবনী।আফিন কফি মগ দুটো হাতে তুলে নিলো।অবনীর দিকে একনজর তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নিলো।অবনীকে দেখতে পাচ্ছেনা ও।নিজের বুকটাও যে ফেঁটে চৌচির হচ্ছে।মেয়েটা চোখ মুছে ও কাঁদছে মুখ লুকিয়ে।নিজেকে শক্ত করলো আফিন।অবনী!!!রুমে গিয়ে শুয়ে পড়ো।অনেক রাত হয়েছে।বলে উঠলো আফিন।অবনী কি বলবে?কথা বলার শক্তিটা ও বেঁচে নেই ওর মাঝে।ইচ্ছে করছে মানুষটাকে পরপারে পাড়ি দিতে।মানুষটার মাঝে হারিয়ে যেতে।কিভাবে থাকবে মানুষটাকে ছাড়া?মানুষটা যে ওর প্রত্যেকটা নিশ্বাসের কারন হয়ে দাঁড়িয়েছে।হুহু করে কাঁদতে থাকে অবনী। আফিন টি টেবিলের ওপর মগ দুটো রেখে অবনীকে কোলে তুলে নিলো।অবনী দুহাতে মুখ ঢেকে রেখেছে।আফিন অবনীকে ওর বুকের সাথে জড়িয়ে নিয়ে ঘরের ভিতর ঢুকে গেলো।অবনীকে খাটে শুইয়ে দিয়ে ওর কপালে চুমো খেয়ে সরে আসতেই আফিনের গেন্জীর কলার টেনে ধরলো অবনী।প্লিজ যাবেননা!!!এখানে থাকুন।কাঁদতে কাঁদতে বলছিলো অবনী।অবনীর কান্নায় না করতে পারলো না আফিন।অবনীর পাশে শুয়ে পড়লো আফিন।অবনী আফিনের বুকে মাথা রেখে আফিনের হাত ধরে রাখলো।প্লিজ হাতটা ছাড়বেননা।চলে যাবেননা একা ফেলে।কাঁদতে কাঁদতে বলছিলো অবনী।আমি আছি অবনী ঘুমাও।অবনীকে বুকের সাথে জড়িয়ে নিয়ে বলল আফিন।
,
,
,
,
আফিনের বুকেই রাতটা পাড় করলো অবনী।পরদিন সকালে ঘুম ভেঙ্গে গেলো অবনীর।আফিনকে রুমে না পেয়ে উঠে দাঁড়িয়ে ওয়াশরুমের দিকে পা বাঁড়ালো অবনী।ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে এসে নিচে নেমে এলো অবনী।আফিন পাকঘরে পরোটার কাই করার চেষ্টা করছে।মিনিটে মিনিটে পানি ঢালছে ময়দায় আফিন।অবনী পাকঘরের কাছে এসে হালকা গলা পরিষ্কার করে নিলো।কি করতে চাচ্ছেন আপনি জানতে পারি?হাসি থামিয়ে প্রশ্ন করলো অবনী।পরোটা বানাচ্ছি দেখতে পাচ্ছোনা?আমার পরোটা খুব মজা হয়।খেলে আঙ্গুল চাঁটতে থাকবা।পরোটার কাই মাখাতে মাখাতে বলল আফিন।হুম তা তো দেখতেই পাচ্ছি।সরে আসুন।পাকঘরে ঢুকে আফিনকে বের করে বলল অবনী।আফিন পাকঘরের সামনে দাঁড়িয়ে অবনীকে দেখছে।দেখাতেই যেন তৃষ্ণা মিটছে না আফিনের।আলতো পায়ে অবনীর পাশে এসে দাঁড়ালো আফিন।অবনী আফিনের দিকে একটু হেসে পরোটা বানানোয় মন দিলো।আফিন বেশ খানিকটা নিচু হয়ে অবনীর গলায় মুখ গুঁজে দিলো।ঠোঁট ছোঁয়াতে লাগলো অবনীর গলায় কাঁধে।অবনীর হাত চলতে চাইছেনা।আফিনের একটা হাত অবনী ময়দা মাখানো হাতের ওপর এসে থামলো।অবনীর আঙ্গুলের মাঝে আঙ্গুল ঢুকিয়ে দিলো আফিন।পরোটা বা ব বানাত তে হব বে ত তো?কাঁপা গলায় বলল অবনী।আফিন সরে এসে অবনীর পাশে দাঁড়িয়ে থাকলো।অবনীর এতোক্ষন নিশ্বাস আটকে আসছিলো।এখন কিছুটা নিশ্বাস নিতে পারছে।আধ ঘন্টার মাঝে নাস্তা বানিয়ে নিলো অবনী।দুজনের জন্য অমলেট বানিয়ে খাবার গুলো টেবিলে রাখলো অবনী।নাস্তা সেড়ে আফিন ফোনে কথা বলায় ব্যাস্ত হয়ে পড়লো।অবনী রুমে চলে গেলো।দুপুরের খাবার সেড়ে আফিন অবনীর রুমের সামনে এসে দাঁড়ালো।
,
,
,
,
অবনী শুয়ে ছিলো।আফিনকে আসতে দেখে উঠে বসলো অবনী।আসুন মুচকি হেসে বলল অবনী।অাফিন রুমে ঢুকলো না।রেডি হয়ে নাও অবনী।বলে উঠলো আফিন।কেন?প্রশ্ন করলো অবনী।বের হবো তোমাকে নিয়ে। আমার ফ্লাইট কাল রাতে।আজকেরটা ক্যান্সেল।আফিনের কথায় সাড়া মুখ জুড়ে মনোমুগ্ধকর হাসি ফুঁটে উঠলো অবনীর।আফিন সরে এসে ওর রুমে চলে গেলো।অবনী শাড়ী নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো।কালো একটি কাতান শাড়ীতে নিজেকে জড়িয়ে নিলো অবনী।কপালে কালো ছোট্ট টিপ,চোখে কাজল,ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক লাগিয়ে নিলো অবনী।চুলগুলো কে পিঠের ওপর ছেড়ে দিয়ে বেরিয়ে এলো রুম থেকে।অবনীকে মুগ্ধ চোখে দেখছে আফিন।কালো শাড়ীটা এতোটা মানাবে ওর জলপরীকে কে জানতো?আফিনের পাশে এসে দাঁড়ালো অবনী।মুখে সে স্নিগ্ধ হাসিটা লেগেই আছে অবনীর।আফিন অবনীর দিকে একনজর তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নিয়ে বলল এভাবে হেসে আমায় পাগল করা ছাড়া কোন কাজ খুঁজে পাওনা?কখন রাস্তা ঘাটে জড়িয়ে ধরে কিস করে দেই পাগল হয়ে।পরে আমাকে বেশরম বলোনা।আর আমি কিন্তু সরি ও বলবো না বুঝো।একনাগাড়ে কথা গুলো বলে সামনে হাঁটতে লাগলো আফিন।মার্কেটে এলো আফিন অবনীকে নিয়ে।বেশ কিছু শাড়ী কিনে দিলো অবনীকে।আর আফসানার জন্য স্যালোয়ার কামিজ কিনে নিলো।অবনী তো কিছুতেই রাজিনা।কিন্তু আফিন ঘাড় ত্যাড়া। সে কিনে দিবেই।শপিং সেড়ে অবনীকে নিয়ে হালকা খাওয়া দাওয়া করে বাসার দিকে রওনা হলো আফিন।
,
,
,
,
অবনী বিছানায় বসে আফিনের সাথে গল্প করছিলো।১০টায় রুম থেকে বেরিয়ে গেছে আফিন।কোন সাড়া শব্দ নেই ওর।অবনী কিছুক্ষন অপেক্ষা করে খাট থেকে নেমে দরজার সামনে আসতেই একটা শপিং ব্যাগ পেলো নিচে।ব্যাগটায় কিছু লেখা আছে।ব্যাগটাকে হাতে তুলে নিলো।ব্যাগটায় লেখা”ভিতরে যা পাবে, তা পরে জলদি নিচে আসো।
চলবে

অন্ধকার পল্লী Part:৯

0

#অন্ধকার_পল্লী
Part:৯
#Tabassum_Riana
,
,
,
আপনার বাসাটা সত্যিই দারুন।ভীষন মনোমুগ্ধকর।আমার খুব ভালো লেগেছে।ফুল বাগানের পাশে হাঁটতে হাঁটতে কথা গুলো বলছিলো অবনী।আফিন মু্চকি হেসে অবনীকে দেখছে।এত মায়াবী লাগছে মেয়েটাকে। অবনীর কাছে এসে দাঁড়ালো আফিন।কারোর স্পর্শ পেয়ে থমকে গেলো অবনী।বুকটার এক কোনে কেমন যেন কেঁপে উঠলো।আফিন ধীরে অবনীর হাতের আঙ্গুল গুলো নিজের আঙ্গুলের ভাজে নিতে থাকলো।অবনী নড়তে পারছেনা।কেমন যেন অবশ লাগছে নিজেকে।হঠাৎ কারোর কথায় সম্বিৎ ফিরে পেলো অবনী।চলো!!! বলে উঠলো আফিন।অবনী আফিনের দিকে একনজর তাকিয়ে ঘরের দিকে পা বাঁড়ালো।ঘরের ভিতরটা ভীষন সুন্দর করে সাজানো।দামি আসবাব পত্র আছে পুরো ঘর জুড়ে।পুরোঘরে চোখ ঘুরিয়ে দেখছিলো অবনী।আফিন অবনীর পিছে দাড়িয়ে ওর কোমড় জড়িয়ে নিজের কাছে টেনে নিলো।অবনী কোন কথা বলতে পারছেনা।দ্রুত নিশ্বাস নিচ্ছে অবনী।আফিনের নিশ্বাস অবনীর কাঁধে পড়তেই কিছুটা কেঁপে উঠে আফিনের হাত খামচে ধরলো অবনী।অবনীর কাঁধের চুল গুলো সরিয়ে সেখানে আলতো করে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিলো আফিন।অবনী চোখ বুজে নিলো।নিজের সব ইমোশন কে সরিয়ে অবনী নিজেকে ছাড়ানোর আপ্রান চেষ্টা করছে।আফিন হঠাৎ থেমে গেলো অবনীর কথায়।প প্লিজ ছাড়ুন কাঁপা গলায় বলে উঠলো অবনী।
,
,
,
,
আ’ম সরি।বলে উঠলো আফিন।অবনীর দিকে আর তাকাতে পারলোনা ও।অবনীর হাত ধরে সিড়ির দিকে পা বাঁড়ালো আফিন।একটা রুমের সামনে অবনীকে নিয়ে দাঁড়ালো আফিন।এই দুইদিন এখানে থাকবে তুমি।অবনীর দিকে একনজর তাকিয়ে বলল আফিন।মাথা ঝাঁকালো অবনী।আফিন অবনীকে রেখে পাশের রুমে চলে গেলো।রুমটি বেশ গুছানো এবং বড়।অবনী রুমে ঢুকে পুরো রুমটাকে দেখে নিলো।ফ্রেশ হতে হবে কিন্তু সাথে কোন কাপড় নেই কি করবে অবনী এখন?কথা গুলো ভাবতে ভাবতে আলমারির সামনে এসে দাঁড়ালো অবনী।আলমারিটাকে ছুঁয়ে দেখে নিলো।কারুকাজ দেখে মনে হচ্ছে বেশ পুরোনো যুগের আলমারি এটা।আলমারির হাতল ধরে টেনে খুলতেই চোখ ছানাবড়া অবনীর। *নতুন নতুন রোমান্টিক গল্প পেতে ভিজিট করুন আমাদের ফেসবুক পেজ: “নিঃস্বার্থ ভালোবাসা”*
৫-৬টা শাড়ী ঝুলানো আছে আলমারিটায়।নতুন মনে হচ্ছে শাড়ী গুলোকে।সাত পাঁচ ভেবে নীল একটি শাড়ী নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়লো অবনী।ফোন বের করে দুজনের জন্য খাবারের অর্ডার দিলো আফিন।ঘরে তেমন বাজার করা নেই তাই খাবার কিনে আনতে হচ্ছে।খাট থেকে উঠে দরজার কাছে আসতেই থমকে গেলো আফিন।শাড়ীটা অবনীকে এতোটা মানাবে জানতোনা অাফিন।শাড়ীটা যেন অবনীর জন্যই তৈরি হয়েছে।অবনীকে নিয়ে আসার আগেই শাড়ী গুলো রেখে দিয়েছিলো আফিন।ভালোই করেছে।এক সুযোগে জলপরীটাকে শাড়ীতে দেখতে পাচ্ছে আফিন।আফিনের তাকানোয় খানিকটা লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করলো অবনী।আফিন অবনীকে এক নজর দেখে ওকে কোলে তুলে নিলো।
,
,
,
,
অবনীকে খাটে বসিয়ে ওর পাশে বসে পড়লো আফিন।এতো মায়াবতী কেন তুমি বলতে পারো?অবনীকে বলে উঠলো আফিন।হু!!!কিছুটা অবাক হয়ে বলে উঠলো অবনী।অাফিন অবনীর একদম কাছে চলে এলো।অবনী আফিনকে দেখেই যাচ্ছে।জানো শাড়ীতে তোমাকে একদম বৌ লাগে।অবনী মুগ্ধ দৃষ্টিতে আফিনকে দেখে যাচ্ছে।আফিন কিছু না বলে অবনীর ঠোঁটজোড়ায় আলতো করে একবার চুমো দিয়ে ঠোঁট জোড়া অবনীর ঠোঁট জোড়ায় ডুবিয়ে দিলো।অবনীর চোখ বড় হয়ে গেলো।আফিন চোখ বন্ধ করে অবনীর ঠেঁটের স্বাদ উপভোগ করছে।অবনীর গলায় হাত রাখলো আফিন।আফিনের শার্টের কলার খামচে ধরে আছে অবনী।অবনীর ঠোঁটজোড়া কাঁপছে কোনমতেই আফিনের ভালোবাসার জগতে সাড়া দিতে পারছেনা অবনী।বেশকিছুক্ষন পর আফিন অবনীর থেকে সরে ওর কপালের সাথে কপাল ঠেঁকালো আফিন।চোখ বন্দ করে নিশ্বাস নিচ্ছে আফিন।আর অবনী আফিনকে দেখছে অবাক চোখে।হঠাৎ ফোন বেজে উঠায় দুজনে সরে গেলো।আফিন অবনীর দিক থেকে চোখ সরিয়ে।নিয়ে ফোনে মনযোগ দিলো।পাঠাও থেকে কল এসেছে।লোকটা হয়ত খাবার নিয়ে এসেছে তাই কল দিচ্ছে।আফিন ফোন রিসিভ করে রুম থেকে বেরিয়ে নিচে চলে গেলো।অবনী আফিনের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো।সেই সময়টায় অবনী আফিনের মাঝে ডুবে গিয়েছিলো।আফিন চলে যয়ওয়ার পর অবনী মাথা ঘুরিয়ে চারপাশ দেখে নিলো।অবনী!!!নিচে আসো নিচ থেকে চেঁচিয়ে উঠলো
,
,
,
,
আফিনের ডাকে তড়িঘড়ি করে নিচে নেমে এলো অবনী।টেবিলের খাবারের প্যাকেট গুলো খুলে প্লেটে খাবার বাড়ছে আফিন।অবনীকে নিচে নেমে আসতে দেখে আফিন বলে উঠলো”দেখো আমার কাছ থেকে সরি এক্সপেক্ট করোনা।কারন সরি বলবো ও না আমি।মনে করোনা আমি ঘোরের মাঝেই তোমায় কিস করেছি।ইটস নট লাইক দ্যাট।আমি তোমার ঘ্রানে এতোটাই মাতাল ছিলাম যে নিজেকে আটকাতে পারিনি।সো আ’ম নট সরি।অবনীর কাছে এসে দাঁড়ালো আফিন Its the sweetest kiss ever.নেশা ধরানো কন্ঠে বলল আফিন।অবনী অবাক হয়ে আফিনকে দেখছে।খেতে বসো।অবনীর থেকে চোখ সরিয়ে বলে উঠলো আফিন।অবনী মুচকি হেসে চেয়ারে বসে পড়লো।আফিন ওর সামনের চেয়ারে বসলো।খাবারে চামচ নাড়ছে অবনী আর আফিনকে দেখছে।লোকটার নেশায় মাতাল প্রায় ও।খুব কাছে থাকতে ইচ্ছে হয় ওর আফিনের এবং তার মাঝেই ডুবে থাকতে চায় ও।লোকটাকি পারবে তার হৃদয়ের এক কোনে অবনীকে জায়গা করে দিতে?আফিন খেতে খেতে অবনীর দিকে তাকালো।অবনী না খেয়ে আফিনের দিকে চেয়ে আছে।কি হলো খাচ্ছোনা যে?বলে উঠলো আফিন।এই তো খাচ্ছি চামচে করে একটু রাইস মুখে নিয়ে বলে উঠলো অবনী।
(ফোনে টাচের প্রব্লেম হচ্ছে আজ।তাই যতটুকু সম্ভব হয়েছে দিয়েছি)
চলবে

অন্ধকার পল্লী Part:৮

0

#অন্ধকার_পল্লী
Part:৮
#Tabassum_Riana
,
, আফিন অবনীকে এক ঝলক দেখলো পর্দার ফাঁকে।ভেজা চুল বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে।লাল একটি স্যালোয়ার কামিজ পরে আছে অবনী।সাদা উড়না টা আকাশে উড়ছে।গোসলের পর যদি কাউকে এতো সুন্দর লাগে তাহলে সেটা শুধুই অবনী।ওর রুপের মোহনীয়তা বড়ই গভীর।আফসানা আছে নাহলে অবনীকে ছুঁয়ে দিতে পারতো আফিন।অবনী এসে আফসানাকে বলল ওনাকে নিয়ে খাওয়ার টেবিলে আয়।বলে আর দাঁড়ালো না অবনী চলে এলো সেখান থেকে।আফসানা আফিনের দিকে মুচকি হাসি দিয়ে বলল চলুন।আফিন আফসানার সাথে উঠে ডাইনিং টেবিলে এসে বসে পড়লো।রহমত সাহেব আফিনের পাশে এসে বসলো।আফিন কে ভীষন আদরে খাওয়ালেন রহমত সাহেব একদম নিজের ছেলের মতো।খাবার শেষে চা পান করে উঠে পড়লো আফিন।রহমত সাহেব কে বলে উঠলো আঙ্কেল আজ আসি।দুদিন পর আমার আমেরিকা যেতে হবে।
আমেরিকা যাবা।ভালো,তা কয়দিন থাকবা বাবা?প্রশ্ন করে উঠলেন রহমত সাহেব।পাঁচ দিন পর আঙ্কেল বলে উঠলো আফিন।
,
,
,
,
অবনী মাথা নিচু করে কথা গুলো শুনছিলো।দম বন্ধ হয়ে আসছিলো অবনীর।কেউ যেন ওর গলা চেপে ধরে রেখেছে।নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে ওর।আফিনের দিকে আর তাকাতে পারলোনা অবনী। আফিনের দিকে তাকালে অবনীর চোখের পানি বাঁধা মানবেনা।সবার থেকে বিদায় নিয়ে অবনীর দিকে তাকায় আফিন।আসি? বলে উঠলো আফিন।অবনী মাথা অন্যদিকে ঘুরিয়ে অন্য রুমে চলে গেলো।অবনীর যাওয়ার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে রহমত সাহেবের দিকে তাকালো আফিন। আঙ্কেল আসি?বলে উঠলো আফিন।জি বাবা আবার এসো।বলে উঠলেন রহমত সাহেব।আফিন বেরিয়ে গেলো।খাটে বসে আছে অবনী।কেন এমন লাগছে ওর?আফিনের চলে যাওয়াটা কেন ওকে এতো কষ্ট দিচ্ছে?ভালো মতো শ্বাস নিতে পারছেনা অবনী।মাথাটা ভার ভার লাগছে।খাটে শরীর এলিয়ে দিলো অবনী।
সন্ধ্যায় অবনী পড়তে বসেছে। ওর সামনে আফিন ভিডিও কলে ওকে দেখছে।ঘন্টাখানেক পর্যন্ত আফিন অবনীকে দেখছে আর কথা বলছে কিন্তু অবনী এ পর্যন্ত একটাবার ও আফিনের দিকে তাকায়নি।হালকা পাতলা কথার উত্তর দিয়ে গেছে।কিছুক্ষন এসব সহ্য করার পর আফিন ভ্রু কুঁচকে অবনীর দিকে তাকালো।কি প্রবলেম তোমার?ভারি গলায় প্রশ্ন করলো আফিন।বইয়ের দিকে তাকিয়ে অবনী বলতে লাগলো কোন প্রবলেম নেই।আমার সহ্যের সীমা অতিক্রম করছে অবনী।লুক এট মি!রাগী গলায় বলল আফিন।অবনী বইয়ের দিকেই তাকিয়ে আছে।অবনী লুক এট মি!!!।আজ আসার সময় ও কোন কথা বললা না?কেন?ধমক দিয়ে বলল আফিন।ভালো লাগছিলো না।মাথা ব্যাথা করছিলো।মাথা নিচু করে বলল অবনী।
,
,
,
,
,
আমার দিকে তাকাও।কি হয়েছে?তাকাচ্ছোনা কেন আমার দিকে?রাগী গলায়,প্রশ্ন করলো আফিন।এবার অবনী কেঁদেই দিলো।হুঁ হুঁ করে কাঁদতে লাগলো অবনী।অবনীর কান্না দেখে আফিনের মাথা খারাপ হবার যোগাড়।অবনী বলো কি হয়েছে?ঐ ছেলে গুলো কিছু করেনি তো?বলো অবনী?প্লিজ চুপ থেকোনা ড্যম ইট আমার মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে।জাস্ট সে হোয়াট হ্যাপেনড?আপনি আমেরিকায় যাবেন বলেননি কেন আমাকে?কাঁদতে কাঁদতে বলল অবনী।আফিন এবার চরম ঝটকা খেলো।ওর জন্য কাঁদছিলো অবনী?ভাবতেই মনটা ভরে গেলো আফিনের্।আরে মাত্র পাঁচদিনের জন্যইতো?চলে আসবো তো।বলে উঠলো আফিন।না গেলে হয় না?কেঁদে প্রশ্ন করলো অবনী।আমাকে ছাড়া এ কাজ টা হবেনা।বলে উঠলো আফিন।যে কয়দিন আছি তুমি আমার সাথে কাঁটাবা।দুদিন আছি আর মাত্র।এই দুটোদিন আমার সাথে থাকবা ওকে?অবনীকে বলল আফিন।চোখ মুছে নিলো অবনী।কান্নাজড়িত কন্ঠে বলল সত্যি?হুম!!! বলে উঠলো আফিন।মুচকি হেসে আফিনের দিকে তাকালো অবনী।খাবার টা কেমন হয়েছিলো?প্রশ্ন করলো অবনী।
মুরগীর কারিটা অসাম ছিলো।আর ইলিশের ঝাল কারিটা অসাধারন।ভর্তা ছিলো না একটা?গ্রিন কালার বলতে লাগলো আফিন।আফিনের গ্রীন ভর্তার কথা শুনে হেসে বলতে লাগলো অবনী।আরে পাগল ওটা সীম আর ইলিশ মাছের ভর্তা ছিলোওহ ইয়াপ সীম আর ইলিশ মাছ।বাট সব কিছুই জোস ছিলো।অবনীর দিকে তাকিয়ে নেশা ধরানো কন্ঠে বলতে লাগলো আফিন।আফিনের এই কন্ঠের পাগল অবনী।একটা শব্দই অবনীর শিউরে উঠার জন্য যথেষ্ট।
,
,
,
,
,
অবনী আর কিছু বলতে পারছেনা।নিষ্পলক ভাবে আফিনকে দেখছে অবনী।আফিন অবনীকে দেখছে মন ভরে।এই দেখার তো কোন শেষ নেই।এভাবে কিছুসময় চলে গেলো।হঠাৎ আফসানা অবনীর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লো।দেখে ফেলেছি হাসতে হাসতে চিৎকার করে বলল আফসানা। আফসানার কথায় ভয় পেয়ে গেলো অবনী।অবনীর গলা জড়িয়ে আফসানা হাসতে লাগলো।অাফিন ও হাসছে।অবনী অবাক চোখে আফসানা আর আফিনকে দেখছে।আফসানা এবার বলল দেখেছো জিজু আপির চেহারা দেখার মতো হয়েছে।বলেই হাসতে লাগলো আফসানা।এবার অবনীর ঘোর কাঁটলো।জ জিজু কে জিজু?অবাক হয়ে প্রশ্ন করলো অবনী।ঐ যে স্মার্ট ড্যাসিং ভাইয়াটা।বলে উঠলো আফসানা।চুপ থাক বেশি বুঝিস কোন জিজু টিজু না।বলে উঠলো অবনী।এভাবে হাসি রসের মাঝেই রাতটা কেঁটে গেলো অবনীদের।সকালে আফিনের কলে ঘুম ভাঙ্গলো অবনীর।ঘুমঘুম চোখে আফিনের কল রিসিভ করলো অবনী।হ্যালো!!!!!ঘুমন্ত গলায় বলল অবনী।
ঘুম এখন ও ভাঙ্গেনি?বলে উঠলো অাফিন।
উমম মাত্র উঠলাম।বসতে বসতে বলল অবনী।যাও ফ্রেশ হয়ে নাও।আমি আধঘন্টার মাঝেই আসছি।বলেই কল কেঁটে দিলো আফিন।খোপা করা চুল গুলো খুলে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়লো অবনী।
,
,
,
,
,
অবনীকে কলেজে দিয়ে অফিসে চলে গেলো আফিন।ক্লাশের পুরোটা সময় আফিনকে ভাবতে ভাবতেই কেঁটে গেলো অবনীর।আর আফিন তো কাজে মন বসাতে পারছিলোনা।অবনীর কান্নার দৃশ্য আফিনের চোখজোড়ার সামনে ভেসে উঠলো।আফিনের গাড়ি দেখতেই অবনী দৌড়ে এলো।আফিন দরজা খুলে দিতেই অবনী ঢুকে বসে পড়লো আফিনের পাশের সিটে।অাফিন দুটো বড় চকোলেট বক্স অবনীর দিকে এগিয়ে দিলো।একটা তোমার আরেকটা আফসানার।চকলেট দেখে কি বলবে ভেবে পাচ্ছেনা অবনী।আফিনের কোটের কলার ধরে নিজের কাছে টেনে আনলো অবনী।তার আফিনের গালে চুমো একেঁ দিয়ে সরে এলো অবনী।অন্যদিকে তাকিয়ে চোখ বড় করে রেখেছে অবনী।বুক ভীষন জোরে কাঁপছে।ভাবছিলাম আমেরিকায় পাঁচটাদিন কি করে কাঁটাবো?বাট এখন আর চিন্তে নেই এই চুমো টা দিয়ে কাঁটিয়ে দিবো।চুমু এতো মিষ্টি হয় জানতামনা।অবনীর দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলো আফিন।অবনী লজ্জায় লাল হয়ে যাচ্ছে।আফিন অবনীকে দেখলো। রোদের কারনেই হোক আর লজ্জায় হোক ফর্সা গাল দুটো লাল হয়ে এসেছে। আফিন মুখ বাড়িয়ে অবনীর গালে গলায় ঠোঁট বুলিয়ে সরে এলো।অবনী অবাক চোখে আফিনকে দেখছে।এবার সামনে তাকালো অবনী।আফিন মুচকি হেসে সামনে তাকিয়ে ড্রাইভ করতে লাগলো।অবনী খেয়াল করলো গাড়িটা অন্য একটা গলিতে ঢুকে পড়লো।আরে কই যাচ্ছেন আপনি?চেঁচিয়ে উঠলো অবনী।আফিন ফোন বের করে অবনীর দিকে ধরলো ড্রাইভিং এর মাঝেই।তোমার বাবাকে ফোন দাও।বলে উঠলো আফিন।কেন?অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো অবনী।ওনাকে বলো তুমি তোমার বেস্টফ্রেন্ডের বাসায় যাচ্ছো দুদিনের জন্য।বলে উঠলো আফিন।
,
,
,
,
না মা মানে?কাঁপা গলায় বলল অবনী।আমার সাথে দুদিন থাকার কথা আছে তোমার।গম্ভীর গলায় বলল অাফিন।আফিনের হাত থেকে ফোনটা নিয়ে রহমত সাহেবকে কল দিলো অবনী।
হ্যালো!!!অপর পাশ থেকে বললেন রহমত সাহেব।
হ্যা বাবা।আমি অবনী।
এটা কার নম্বর মা?বলে উঠলেন রহমত সাহেব।
বাবা এটা অন্তরার ভাইয়ের নম্বর।বলেই জিভ কাঁটলো অবনী।
হ্যা বুঝলাম।তা তুই কই অবনী?জিজ্ঞেস করলেন রহমত সাহেব।
বাবা অবনীর বাসায় দুদিন থাকতে বলছে।আমরা গ্রুপস্টাডি করবো।বলে আফিনের দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকালো অবনী।এতো মিথ্যা বাবার সাথে কখনোই বলেনি ও।আচ্ছা মা জলদি এসে পড়বি।বলে উঠলেন রহমত সাহেব।ওকে বলেই কল কাঁটলো অবনী।আফিনের গাড়িটা একটা বাংলোর সামনে থামলো।তবে নতুন একটি বাড়ি।পুরো গাছ দিয়ে ঘেরাও করা।বিভিন্ন ফুল গাছে ভরে আছে বাংলোর আশপাশ।এটা কার বাড়ি আফিনের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো অবনী।আমার ফার্ম হাউস এটা বলে একটু হাসলো আফিন।
চলবে

অন্ধকার পল্লী Part:৭

0

#অন্ধকার_পল্লী
Part:৭
#Tabassum_Riana

পরপর দুইদিন অবনী এসেছিলো আফিনকে দেখতে।আফিনের রান্না থেকে শুরু করে ওর শরীর মুছে দেয়া,নিজ হাতে খাইয়ে দেয়া সব করেছে অবনী।লোকটার মায়ায় পড়ে যাচ্ছে ও।লোকটার যত্ন নেয়া ওর কাছে দায়িত্ব থেকে আরো বেশি কিছু মনে হচ্ছে।আপনজন না হলে ও হৃদয়ের খুব কাছাকাছি থাকে সে অবনীর।আবার এমন কি রোজ রাতে ভিডিও কলে অবনী কে দেখেছে আফিন।আর অবনী পড়াশুনা করেছে।মাঝে মধ্যে আফিনের কথায় দুএকটা জবাব ও দিয়েছে।
দুইদিনের একটা লোকের জন্য এমন অনুভব হওয়াটা বেশ অদ্ভুত লাগে।কিন্তু অবনীর ক্ষেত্রে এমন টা হচ্ছে।না চাইতে ও আফিনকে নিজের হৃদয়ে জায়গা দিতে শুরু করেছে ও।তিনদিন এর দিন অবনী আফিনের বাসায় এলো।আজ একটু দূর্বল তারপর ও আগের থেকে ভালো আছে আফিন।আজ অবনীদের কলেজে অনুষ্ঠান ছিলো যার কারনে একটা মিষ্টি কালারের শাড়ী পরে এসেছে অবনী।আফিন রুমে বসে ল্যাপটপে কাজ করছিলো।নুপুরের শব্দে মাথা তুলে তাকায় আফিন।পরনে শাড়ী,খোলা চুল, হালকা সাজ হাতে কিছু চুড়ি,কপালে টিপ সত্যি এতোটা অসাধারন লাগবে ভাবনাতীত ছিলো আফিনের।কখনো পরী দেখেনি আফিন কিন্তু আজ বুঝতে পারলো পরী কেমন?পরী স্বয়ং যে ওর সামনেই দাঁড়িয়ে আছে।
চাঁদ ও আজ লজ্জা পাবে অবনীকে দেখে।অবনীর সৌন্দর্য লক্ষ চাঁদ তারা কে হারিয়ে দিয়েছে।
আফিনের এভাবে ওর দিকে এক নজর তাকানোয় খানিকটা লজ্জা পায় অবনী।মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে অবনী।আফিন উঠে দাঁড়িয়ে অবনীর দিকে এগোলো।অবনী পিছুচ্ছে আর আফিন ওর দিকে এগিয়ে আসছে।পিছাতে পিছাতে দেয়ালের সাথে লেগে গেলো অবনী।অাফিন অবনীর সামনে দাঁড়িয়ে দেয়ালে হাত রাখলো।পরীর মতো লাগছে আপনাকে।সেটাকি জানেন আপনি?আফিন মুচকি হেসে বলে উঠে।অবনী মাথা তুলে তাকায় আফিনের দিকে।অবনীর গাল নাক লাল হয়ে এসেছে।কাঁধের ওপর পড়ে থাকা চুল গুলোর ফাঁকে ফর্সা কাঁধ দৃশ্যমান অবনীর।অজানতেই দুহাতে অবনীর কোমড়ে হাত রাখলো আফিন।কিছুটা কেঁপে উঠলো অবনী।লোকটাকে সরাতে হবে কিন্তু কি করে?পারছেনা যে অবনী।অবনী কে একটু উঁচু করে ওর নাকে ঠোঁট ছোঁয়ালো আফিন।অবনীর চোখ জোড়া আকস্মিকতার উচ্চতায় পৌছে গেছে।নাকে আর গালে ঠোঁট ছুঁইয়ে অবনীর চুলে মুখ ডুবিয়ে ওর কাঁধে ঠোঁট ছোঁয়ালো অাফিন।অবনী সোজা দাঁড়িয়ে আছে।কি হচ্ছে এসব কি করছে এই লোক?।অবনীর হৃদকম্পন খুব দ্রুত গতিতে চলছে।
স্যার আপনার রান্না!!!!!! ওদের দেখে মেয়েটি থেমে গেলো।আফিন সরে এলো অবনী থেকে।
অবনী শাড়ী ঠিক করতে করতে বেরিয়ে গেলো।পাকঘরে এসে দাঁড়ালো অবনী।রান্নায় মন দিতে হবে ওর।ওসব ভাবলে চলবেনা।কোমড়ে আঁচল গুঁজে রান্বা করতে লাগলো অবনী।সিড়ি থেকে মুগ্ধতার সাথে অবনীকে দেখছে আফিন।একদম বৌ বৌ লাগছে মেয়েটাকে।নেক্সট উইক ও আমেরিকায় যাবে।পাঁচদিনের ট্রিপ থেকে এসে অবনীকে নিজের করে নিবে আফিন।বিয়ে করে নিবে অবনীকে।কথাটা ভেবে মুচকি হাসলো আফিন।নিজের রুমে চলে গেলো আফিন।অবনী রান্না সেরে খাবার নিয়ে আফিনের দিকে প্লেট ধরলো।অন্য সময় হলে খাইয়ে দিতো অবনী।প্লেট দেখে উপরে তাকালো আফিন।হা করে আছে আফিন এই মনে করে যে অবনী ওকে খাইয়ে দেবে।কি হলো প্লেট নিয়ে খেয়ে নিন খাবারটা।বলে উঠলো অবনী।না মানে খাইয়ে দেবেননা?প্রশ্ন করলো আফিন।না আপনি তো এখন সুস্থ আছেন।বলে উঠলো অবনী।অবনীর কথায় কিছুটা রাগ করে ওর হাত থেকে প্লেট নিয়ে অন্যদিকে রেখে দিলো আফিন ভাতের প্লেটটা।কি হলো?খাবেন না?রান্না ভালো লাগেনি?আবার রান্না করবো?এক নাগাড়ে প্রশ্ন করতে থাকে অবনী।নাহ আমি তো এখন সুস্থ খেতে হবে না আমার।অভিমানী কন্ঠে বলল আফিন।
ওহ এই কথা?প্লেটটা নিয়ে আফিনের সামনে এসে বসলো অবনী।নিন খাইয়ে দিচ্ছি।
আফিন অন্যদিকে ফিরে আছে।আরে বাবা খাইয়ে দিচ্ছি তো হা করুন।বলে উঠলো অবনী।অাফিন হালকা হেসে খাবারটা খেয়ে নিলো।বাবারে বাবা এতো রাগ আপনার?
কিছুটা মজার ছলে বলল অবনী।শুনো কাউকে আপনি করে বলিনা আমি।এতোদিন তোমাকে আপনি করে বলতে গিয়ে আমার নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছিলো।এখন থেকে তুমি করেই বলবো তোমাকে।কি মনে করো না করো I don’t care.গম্ভীর গলায় বলল অাফিন।এতক্ষন আফিনের কথা শুনে কিছুটা অবাক হলে ও এবার নিজেকে সামলে নিয়ে মুচকি হাসলো অবনী।আচ্ছা ঠিক আছে তুমি করেই বলবেন।এবার শেষ করে নিন ভাতটা।আফিনের মুখে আরেক লোকমা ভাত তুলে দিয়ে বলল অবনী।আচ্ছা এখানে প্রতিদিন আসো সমস্যা হয়না তোমার বাসায়?খেতে খেতে বলল আফিন।নাহ আমি ম্যানেজ করে নিয়েছি।বলে উঠলো অবনী।Oh thats good.বলে উঠলো আফিন।সন্ধ্যা নামার আগেই বেরিয়ে পড়লো অবনী।আজ রাতে ও ল্যাপটপের সামনে বসে অবনীকে দেখছে আফিন।অার অবনী পড়ছে মাথা নিচু করে।গুনগুন করে অবনীকে শুনিয়ে গান গাইতে লাগলো আফিন “যদি বৌ সাজো গো, আরো সুন্দর লাগবে গো।আফিনের গানে মাথা তুলে তাকায় অবনী।জি?কিছু বললেন?প্রশ্ন করলো অবনী।না পড়ো তুমি।বলল আফিন।অবনী চুপচাপ পড়তে লাগলো।আর আফিন একনজরে শুধু অবনীকেই দেখছে।চোখ ফেরানো দায় মেয়েটার থেকে।অবনী ও আড়চোখে আফিনকে দেখে আবার পড়ায় মনযোগ দিচ্ছে।এভাবে তিনদিন চলে গেলো।আফিন অবনীর বাসার গলির সামনে গাড়ি থামালো।অবনী বের হতেই আফিন অবনীর হাত ধরে টেনে ওর গালে চুমু একেঁ দিলো।
চোখ বড় করে ফেলল অবনী।অাফিন সরতেই অবনী বলল খুব সাহস হয়েছে আপনার?শেষমেষ রাস্তায় বলে জিভ কাঁটলো অবনী।
আফিন হেসে সামনে তাকালো। অবনী বেরিয়ে বাসার দিকে হাঁটা ধরলো।পিছনে ফিরে আফিনকে একবার দেখে নিলো অবনী।আফিন অবনীর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।বাসার একটু কাছে এগুতেই বখাটে মামুন অবনীর হাত টেনে ধরলো।সুন্দরী আজ তোমাকে নিয়ে যাবো চলো।এই রসোগোল্লা নষ্ট হবে যে নাহলে।আসো জানু।তোমাকে অাদর দিবো অনেক।অবনী ওর হাত ছাড়াতে চেষ্টা করছে।হঠাৎ মামুনের হাতে সজোরে লাথি বসিয়ে দিলো কেউ।মামুন অবনীর হাত ছেড়ে নিচে পড়ে গেছে।আফিন অবনীর কাঁধ জড়িয়ে ধরেছে।আফিনের গার্ডরা বখাটে গুলোকে এসে মারতে লাগলো।অবনীকে বাসার গেটে ঢুকিয়ে দিলো আফিন।বাসায় যাও।বলে উঠলো আফিন।অবনী অাফিনের হাত ধরলো।আপনি আসেন।বলে উঠলো অবনী।না অবনী।তুমি বাসায় যাও।বলে চলে যেতে লাগলো আফিন।অবনী আফিনের হাত টেনে ভিতরে ঢুকিয়ে নিলো।চলুন বলে অবনী আফিনকে নিয়ে বাসায় এলো।অবনী এটা কে মা?আফিন কে দেখে কিছুটা অবাক হয়ে প্রশ্ন করলেন আমেনা বেগম।মা ও আমার ফ্রেন্ড।রাস্তায় বখাটে গুলো বিরক্ত করছিলো ও বাঁচালো আমায়।বলে উঠলো অবনী।
ওহ।বলে উঠলেন আমেনা বেগম।বাবা বসো সোফায়।আফসানা যা ওনার জন্য পানি নিয়ে আয়।আমেনা বেগম বলে উঠলো।রহমত সাহেব ভিতর থেকে বেরিয়ে এলেন।কে বাবা তুমি?প্রশ্ন করে উঠলেন অবনীর বাবা।
বাবা রাস্তায় মামুন বিরক্ত করছিলো ও বাঁচালো আমায়।ওর নাম আফিন আমার বন্ধু।বলে উঠলো অবনী।ওহ বলে রহমত সাহেব আফিনের দিকে তাকালো।আমেনা যাও আফিন বাবার জন্য রান্না করো।বলে উঠলেন রহমত সাহেব।না আঙ্কেল আমার যেতে হবে।বলে উঠলো আফিন।না বাবা বসো।বললেন রহমত সাহেব।অবনী আর আমেনা বেগম রান্না করতে চলে গেলো।রহমত সাহেব বাহিরে গেলেন কোন এক কাজে।আফসানা আফিনের সামনে এসে দাঁড়ালো।আফিন আফসানার দিকে তাকিয়ে আবার নিচে তাকালো।আমি কিন্তু আপনাকে ঠিক চিনেছি।বলে উঠলো আফসানা।কি করে?প্রশ্ন করলো আফিন।আপনি আপুর সাথে ভিডিও কলে কথা বলেন সেটা আর কেউ না দেখলে ও আমি দেখেছি।বলেই হাসলো আফসানা।ওহ তাই?প্রশ্ন করলো আফিন।হুম।আপনি যদি চান আমি কথা গুলো বাবা মার থেকে গোপন রাখতে পারি।একটা শর্ত আছে।বলে উঠলো আফসানা।কি শর্ত ভ্রু কুঁচকালো আফিন।আমি জানি আপনি আপুকে লাভ করেন। সেদিক থেকে আমি আপনার শালী।তো কিছুতো গিফট করতেই হয় শালীর মুখ বন্ধ রাখতে।কি গিফট চায় আমার কিউট শালীটা?মায়া ভরা কন্ঠে প্রশ্ন করলো আফিন।আপু আমার সব চকোলেট খেয়ে ফেলে আপনি আমাকে অনেক গুলো।চকলেট গিফট করবেন।বলল আফসানা।তোমার আপুর চকোলেট পছন্দ?জিজ্ঞেস করলো আফিন।পছন্দ মানে?আপু চকোলেট পেলে বাবু হয়ে যায়।বলল আফসানা।
দুইদিন পর আমেরিকায় যাবো।তখন তোমাদের জন্য অনেক গুলো চকোলেট আনবো।বলল আফিন।অবনী থেমে গেলো আফিনের কথা শুনে।আমেরিকায় যাবেন ওনি?
চলবে

অন্ধকার পল্লী Part:৬

0

#অন্ধকার_পল্লী
Part:৬
#Tabassum_Riana

সেদিন রাতে আফিন,অবনী কেউই সেই মিষ্টি মুহূর্তটাকে ভুলতে পারছিলোনা।ভুলবেই বা কি করে তখন কেউই যে কারোর মাঝে ছিলোনা।আফিনের সেই দৃষ্টি অবনীর ভিতরটাকে যেন কাঁপিয়ে দিচ্ছিলো।বিছানার ওপরে থাকা ফোনটা হাতে নিলো অবনী।কন্টাক্ট লিস্টে গিয়ে আফিনের নম্বরটি একবার দেখে নিলো।হয়ত ভাবছিলো সে কল করবে।কিন্তু করেনি।ফোনটা আরেকটু ঘাঁটাঘাঁটি করে ঘুমিয়ে গেলো অবনী।
শরীরটা ভালো লাগছেনা আফিনের।ঘাড় মাথায় প্রচন্ড রকমের যন্ত্রনা হচ্ছে।একটা ডিসপ্রিন নিয়ে শুয়ে পড়লো আফিন।অবনীর অনেক কাছে চলে গিয়েছিলো আজ ও।মেয়েটা অজান্তেই ওর হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছে।মেয়েটা ভীষন ভাবে প্রভাবিত করছে আফিনকে।অবনীকে ভাবতে ভাবতে চোখে একরাশ ঘুম এসে ভর করে আফিনের।কিছু বিদঘুটে স্বপ্ন দেখতে থাকে আফিন।কেউ যেন ওকে টেনে হিচড়ে নিয়ে যাচ্ছে।ওর শরীর থেকে মাংস আলাদা করছে।ঘুমের মাঝেই আফিন অনূভব করতে পারে ওর শরীর কাঁপিয়ে জ্বর এসেছে।
সকালে অবনীর ঘুমভাঙ্গে ফোনে রিংটোনের শব্দে।ঘুমেরঘোরেই ফোন রিসিভ করে কানে ধরে অবনী।
অপর পাশ থেকে ঘুমঘুম গলায় আফিন বলে উঠলো আজ ড্রাইভার পাঠিয়েছি।সে তোমাকে নিয়ে আসবে আর নিয়ে যাবে।আমি আসবোনা।অবনীকে চুপ থাকতে দেখে আফিন বলে উঠলো জলদি রেডি হও।ড্রাইভার পৌছে যাবে।কথা গুলো বলে ফোন রেখে দিলো আফিন।অবনী কান থেকে ফোন সরিয়ে কিছু সময় স্তব্ধ হয়ে ছিলো।কালকের বিষয়টা নিয়ে হয়ত আপসেট আছেন ওনি।কিন্তু কাল যা হয়েছিলো সেটা তো দুজনেরই ঘোরের মাঝে হয়েছিলো।ওনার কোন দোষ নেই।তাহলে আসবেননা কেন?ওনার সাথে আসাটাই তো অভ্যাস হয়ে গেছে।ভালো ও লাগছেনা আজ কলেজে যেতে।সামনে পরীক্ষার কথা ভেবে অগত্যা উঠে পড়তে হলো অবনীকে।ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে নিলো অবনী।ফোনে আবার ও কল এলো তবে এখন একটি আননোন নম্বর থেকে।ফোন রিসিভ হতেই অপর পাশ থেকে ড্রাইভার বলে উঠলো আমি বাসার নিচে আছি।আফিন স্যার পাঠাইছে আমারে।আপনারে কলেজে নিবার লাইগা।আফিন নামটি শুনতে চিনতে পারেনি অবনী।কিন্তু কলেজে নেবার কথা বলতেই চিনতে দেরি হলোনা অবনীর।সেই পরিচিত মুখটাই আফিন।অবনী ফোন রেখে নিচে নেমে আসে।ড্রাইভার দরজা খুলে দিতেই অবনী গাড়িতে বসে পড়লো।আপনার স্যার আসেননি কেন?ড্রাইভার কে প্রশ্ন করলো অবনী।
স্যারের অনেক জ্বর।আজ অফিসে ও যায় নাই।বলে উঠলো ড্রাইভার।ওহ।কিছুটা মন খারাপ করলো অবনী।কলেজে পৌছে গেলো অবনী।আজ অন্তরার সাথে বেশি কথা বলে নি এমনকি হাসে ও নি।অজান্তেই মনটা ভীষন খারাপ ছিলো।অন্তরা অনেকবার জিজ্ঞেস করেছিলো কিন্তু জবাব ছিলো না অবনীর কাছে।আজ ঘরে ও মন ভালো লাগছে না অাফিনের।মেয়েটাকে দেখা ছাড়া কিছুই ভালো লাগেনা আফিনের।শূন্য শূন্য লাগে বুকখানি।একটু জলপরীর দেখা পেলে মন্দ হতোনা।মুখটা ও কেমন তেতো লাগছে।স্যুপ এনে দিয়েছিলো মেইড সার্ভেন্ট।এতো ঝাল ছিলো এক চামচের বেশি খেতেই পারলোনা অাফিন।
*নতুন নতুন রোমান্টিক গল্প পেতে ভিজিট করুন আমাদের ফেসবুক পেজ: “নিঃস্বার্থ ভালোবাসা”*
অবনী কে ড্রাইভার নিয়ে আসতে গেলো।গাড়িতে ঢুকে বসলো অবনী।আপনার স্যারের বাসায় নিয়ে চলুন আমায়।বলে উঠলো অবনী।জি।বলে গাড়ি চালাতে শুরু করলো ড্রাইভার।কিছুক্ষনের মাঝেই আফিনের বাড়িতে পৌছে যায় অবনী।বাড়ির গেটে ঢুকেই মাথা ঘুরে যাওয়ার যোগাড় অবনীর।বড় বাগানে ঘেরা,সুইমিংপুল, দোলনা দিয়ে সাজানো। বাগানের ফুলগুলো দেখতে দেখতেই বাসার ভিতরে ঢুকলো অবনী।প্রাসাদ থেকে কম নয় ওনার বাসা।বাসায় ঢুকতেই দুপাশে বড় দুটি সিংহের শোপিজ।চকচক করছে সেগুলো।ভিতরে আরো সুন্দর করে সাজানো।দামী দামী আসবাবপত্র ব্যাবহার করা হয়েছে পুরো ঘরে।লোকটা সৌখিন আছে।একটা মেয়ে এসে অবনীর সামনে দাঁড়ালো।আফিন স্যারের রুমটা কোন দিকে?মেয়েটিকে প্রশ্ন করলো অবনী।সিড়ি দিয়ে উঠে ডানপাশের রুমটা।বলল মেয়েটা।তবে আপনি কে ম্যাম? ঠিক চিনতে পারলাম না।মেয়েটি বলল।
আমি অবনী।স্যারকে দেখতে এসেছি।কিছু খেয়েছে স্যার?না বলে মেয়েটি অবনীর সামনে থেকে চলে গেলো।সিড়ির দিকে পা বাঁড়ালো অবনী।চোখের ওপর হাত রেখে শুয়ে ছিলো আফিন।সারারাত ঘুম হয়নি ওর।হঠাৎ নুপুরের মিষ্টি শব্দে চোখ থেকে হাত সরালো আফিন।নিজেকে বিশ্বাস করাতে পারছেনা।সত্যি কি এসেছে ওর জলপরী?হলুদ একটি স্যলোয়ার কামিজ পরে এসেছে অবনী।কানে ছোট্ট একজোড়া টপ।চোখে কাজল, ঠোঁটে হালকা গোলাপী লিপস্টিক। চুলগুলো এলো মেলো ভাবে পিঠে ছড়িয়ে আছে।সত্যি সুন্দর লাগছে অবনীকে।একদম পাগল করার মতো সুন্দর।আফিন শোয়া থেকে খাটে হেলান দিয়ে উঠে বসলো।অবনী আফিনের কাছে এলো।খান নাই কেন এখনো?প্রশ্ন করে উঠলো অবনী।আপনি কি করে জানলেন?আর এখানে কেন আপনি?আগে আমার প্রশ্নের উত্তর দিন।খাননি কেন?বলে উঠলো অবনী।স্যুপ টা এতো ঝাল ছিলো।বলার মতো না।বলল অাফিন।ওহ।অবনী আর অপেক্ষা না করে রুম থেকে বেরিয়ে নিচে নেমে গেলো।নিজ হাতে স্যুপ বানিয়ে নিলো আফিনের জন্য।আফিন অবাক চোখে অবনীকে দেখছে।মেয়েটা ওর জন্য সুপ বানিয়ে আনলো?অবনী আফিনের পাশে বসে চামচে একটু সুপ নিয়ে আফিনের দিকে ধরলো।
অবনীকে একনজরে দেখছে অাফিন।মেয়েটা বড় মায়াবী।এই মায়াভরা মুখটাই আফিনকে অবনীর দিকে টানে।খেয়েনিন অবনীর কথায় ঘোর ভাঙ্গে আফিনের।নিজেকে কিছুটা সামলিয়ে নিলো।চামচের সুপটুকু খেয়ে নিলো অাফিন।অবনী ওকে খাইয়ে দিচ্ছে ভাবতেই মনটা ভরে গেলো আফিনের।
সুপ খাইয়ে দিয়ে অবনী আফিনের কপালে হাত রাখলো।গা তো পুড়ে যাচ্ছে!!! চিন্তিত হয়ে বলল অবনী।আফিনের পাশ থেকে রুমাল নিয়ে ওয়াশ রুমে চলে গেলো অবনী।রুমাল ভিজিয়ে আফিনের পাশে এসে বসে পড়লো।আফিনের হাত পা মুখ মুছে দিতে থাকলো অবনী।জ্বর একটু কমে এসেছে।নিজ হাতে রান্না করে আফিন কে খাইয়ে সন্ধ্যায় অবনী বেরিয়ে পড়লো।রাতে মেয়েটাকে অনেকবার কল দিয়েছিলো অবনী আফিনের খবর জানতে।রাতে ও নাকি আফিনের গা পুড়ে যাচ্ছিলো জ্বরে।
(বাহিরে গেছিলাম অনেক টায়ার্ড লাগছে।)
চলবে