Saturday, July 5, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1870



প্রেমে পড়া বারণ পার্ট -১৫

0

#প্রেমে_পড়া_বারণ
# পার্ট -১৫
# Writer – Taslima Munni

আজ রবিবার। বাঙালি গেট টুগেদারে আমি আর রেহানও এসেছি। দেশের মানুষদের দেখে মন ভরে গেলো।।
সবাই খুব ফ্রেন্ডলি। এখানে থাকার সুবাদে অনেকেই আমার পরিচিত।
রেহান ওর পরিচিত, বন্ধুদের সাথে কথা বলছে।
আমিও সবার সাথে গল্পে মজে গেছি।
এর মধ্যে এক ভদ্রমহিলা এসে কথা জুড়ে দিলেন। আমার বাড়িতে কে কে আছে! আরও অনেক কিছু জিজ্ঞেস করলেন।
তারপর শুরু হলো উনার সংসারের গীত।ওরে বাবা! এই মহিলা কথা বলছে তো বলছেই।আমি শুধু মাথা নেড়ে,হা,না বলে সায় দিয়ে যাচ্ছি।।
আল্লাহ! কেউ এসে উদ্ধার করুক আমাকে!!

– কেমন আছো তুমি?
ফিরে দেখি আফরিন! আফরিন কখন এসেছে সেটা খেয়াল করিনি।
– আমি ভালো আছি। আপনি কেমন আছেন?
– আমিও ভালো আছি।
যে মহিলার সাথে কথা বলছিলাম,উনার কাছ থেকে উদ্ধার পেতে আফরিনের দিকে মনোযোগ দিলাম আর মহিলাও উনার পরিচিত অন্য একজনকে পেয়ে বেশ খুশি মনে চলে গেলেন।
– তুমি কি এখানে আরও কিছু দিন থাকবে?
– খুব বেশি দিন না।রেজাল্টের পরে চলে যাবো।
– তুমি দেখতে অনেক সুইট!
মৃদু হেসে বললাম – আপনি কিন্তু অনেক সুন্দর। আপনার এইজ কেউ দেখে অনুমান করতে পারবে না।
– তাই নাকি! হাহাহা…
ভালো বলেছো তো! তাহলে সারাজীবন এই এইজ লক হয়ে গেলে ভালো হতো, তাই না?
আফরিনের কথায় আমিও হাসলাম।
কিছু সময় চুপ করে থেকে আফরিন বললো
– তুমি কি আমাকে চিনো?
ওর প্রশ্নে একটু চমকে উঠলাম।
– হা,বেশ অনেক দিন আগেই তো পরিচয় হলো আপনার সাথে। তখন থেকেই তো চিনি।
– তার আগে কি চিনতে না?
– নামেই চিনতাম। কিন্তু সরাসরি তো পরিচয় ছিলো না, চিনতামও না।
– রেহান বলেছে, তাই না?
– হা।রেহান ছাড়া কোথা থেকে জানবো বলুন?
আফরিন মৃদু হাসলো।।
– তোমাকে আমার অনেক ভালো লেগেছে।
একটা কথা বললে কিছু মনে করবে নাতো?
– বলুন, কিছু মনে করবো কেন?
– এই যে আমি এখানে, রেহানও! এতে তোমার ভয় হচ্ছে না?
– কেন ভয় হবে?
– না মানে, অধিকাংশ মেয়েরাই স্বামীর এক্সকে সহ্য করতে পারে না। কোনো ভাবে যোগাযোগ হলে ভাবে – এই বুঝি স্বামী ছিনিয়ে নিলো!
হাহাহা…
আমি অবাক হয়ে দেখছি।কি সাবলীল ভাবে আফরিন কথাগুলো বলছে!
– সত্যি কথা বলবো? আমার প্রথমে একটু অস্বস্তি হয়েছিলো যেদিন আপনাকে আর রেহানকে এক সাথে রাস্তায় দেখি।
আর হওয়াটাই কি স্বাভাবিক নয়?

আফরিন একটু চমকে গেলো যখন শুনলো ওদের রাস্তায় দেখেছিলাম আমি।
– হুম। এখন হচ্ছে না?
– না।।
– কেন জানতে পারি?
– কারণ রেহানকে আমি চিনি। He is straightforward & loyal!
– Yeah! He is perfectly gentleman I’ve ever seen!

-জি।রেহানের মনে যা মুখেও তা,কখনো মিথ্যার আশ্রয় নেয় না।
– তুমি অনেক লাকি! রেহানকে পেয়েছো!
আমি মৃদু হাসলাম।
– আপনাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করতে পারি? যদি মাইন্ড না করেন..
– আমি জানি কি জিজ্ঞেস করবে!
– জানেন?
– হা। আমার ডিভোর্স হয়ে গেছে কেন! সেটাই তো?
একটু হেসে বললাম – আপনার ধারণাটা ভুল!
– ভুল?
– জি!
– তবে জিজ্ঞেস করো!!
– আপনি তো রেহানের হাত ধরে দেশেই চলে যেতে পারতেন। যাননি কেন?
আফরিন স্তব্ধ মুখে কিছুক্ষণ চেয়ে থাকলো আমার দিকে।।
– তুমি অনেক অদ্ভুত একটা মেয়ে! এটা জিজ্ঞেস করছো কেন যাইনি!?
– হা। এটাই জানার আগ্রহ হচ্ছে এখন।
– এখন হচ্ছে! মানে আগে ছিলো না।তো এখন আগ্রহ হবার কারণ টা কি শোনা যাবে?
– নিশ্চয়ই! আপনি অন্যদের মতো না। তাই এভাবে সাবলীলভাবে কথাগুলো বলতে পেরেছেন।

আফরিন একটু হেসে বললো
– আমি এই দেশ ছেড়ে যেতে চাইনা। তাই রেহানের হাত ধরতে পারিনি।
– সত্যিই কি তা-ই?
– সত্যিই তা-ই। অনেক ভাববে এই আরামের জীবন ছেড়ে যেতে চাইনা, তাই দেশে ফিরতে চাইনা। কিন্তু এই প্রথম তোমাকে সত্যি টা বলতে ইচ্ছে করছে। কারণ তুমিই বুঝতে পেরেছো।
– আমার ধারণা তাহলে ভুল না।এর পিছনে অন্য একটা কারণ নিশ্চয়ই আছে।
– আমার দাদু একজন দেশ বিরোধী ছিলেন। উনার জন্য আমরা লজ্জিত। সেই জন্যই বলতে পারো মুখ লুকিয়ে দেশের বাইরে পড়ে আছি।অবশ্য রেহান সেটা আজও জানে না।
আরও একটা কারণ আছে।
– কি?
আমার বোন! আমার একটাই বোন ছিলো আমার বড়।
– ছিলো মানে?
– মারা গেছে। ব্লাড ক্যান্সার হয়েছিলো। আমরা প্রায় সমবয়সী ছিলাম।দেড় বছরের ব্যবধান! সারাক্ষণ দুজনে একসাথে থাকতাম। একটা মুহূর্ত মনে হয় না আমরা আলাদা থাকতাম। অনেকে ভাবতো আমরা টুইন!!
ও যখন মৃত্যুশয্যায়,আমাকে বলেছিলো- আমার ভীষণ ভয় লাগছে। তুই হাতটা ছাড়িস না।
সেদিন ওকে রেখে জরুরি একটা কাজে বের হয়েছিলাম। আব্বু আম্মু ছিলো ওর কাছে।
মাত্র আধা ঘণ্টা! এসে দেখি সব শেষ!
ও চলে গেছে। আমি ওর পাশে থাকতে পারিনি। ও বলেছিলো – তুই আমার পাশে বসে থাক, তোকে দেখি।
মরে গেলে তো দেখতে পাবো না!
ওর শেষ সময়ে ধরা পড়ে। অনেক চিকিৎসা করিয়েও লাভ হয়নি।শেষ কটা দিন ওর ইচ্ছে অনুযায়ী বাসায়ই রাখা হয়।
বোন আমার মৃত্যুর দিন গুনেছে!!
আমি শুধু দেখেছি।
বলতো- আমি মরে গেলে একা কিভাবে থাকবো? তুই রোজ দেখতে যাবি তো?!

আফরিনের চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে!
আমার চোখ থেকে কখন পানি গড়িয়ে পড়ছে টের পাইনি।
– আমি ওকে রোজ দেখতে যাই।।
জানো, রেহান খুব ভালো ছেলে। কিন্তু আমার বোনের থেকে বেশি ভালো ওকে বাসতে পারিনি। হয়তো ভালোবাসা কি সেটাই আমি বুঝিনা।
কিন্তু এতো টুকু বুঝি, আমি মেহেরিনকে একা করে কোথাও যাবো না।মৃত্যুর আগে পর্যন্ত ওর কাছাকাছি থাকবো।
একটাই দোয়া করি সবসময়- মৃত্যুর পরে যেন ওর পাশেই আমার সমাধি হয়।

আমি আর আফরিন একটু দূরে বসেছিলাম।ভাগ্যিস কেউ আমাদের কাঁদতে দেখেনি।দেখলে একটা বিশ্রী অবস্থা হয়ে যেতো।

– আমার বিয়েটা আব্বু আম্মুর পছন্দে করেছিলাম।রেহানের সাথে এনগেজমেন্ট ভাঙার পরে উনারা খুব প্রেশার দিতে থাকেন।শেষ পর্যন্ত কিছু না ভেবেই বিয়েটা করি।
কিন্তু পরে আস্তে আস্তে বুঝতে পারি উচ্চ শিক্ষিত! প্রতিষ্ঠিত হলেও কিছু মানুষের মন-মানসিকতা অনেক সংকীর্ণ হয়!
নিত্যদিনের অশান্তি থেকে আমার স্বাধীন জীবন ই বেছে নিয়েছি।
– কি বলবো! কি বলা উচিত আমি বুঝতে পারছি না!
আফরিন আমার দিকে তাকিয়ে বলে
– কিচ্ছুটি বলার দরকার নেই। আজ অনেক হালকা লাগছে জানো! মনে হয় রেহানকে ঠকিয়েছি! কিন্তু আমি ভাগ্যে বিশ্বাস করি।।
রেহান তোমার হবে বলেই আমার হয়নি।

– অনেক দিন তো হয়ে গেছে। আপনি নতুন করে জীবন শুরু করছেন না কেন?
আফরিন মুচকি হেসে দূরে একটা লোককে দেখিয়ে বললো
– অই যে উনি! উনার সাথে আমি এনগেজড!ভালো মনের মানুষ।।
গতমাসেই রিং পড়িয়েছে।
আরও ৩-৪ মাস আগেই হবার কথা ছিলো কিন্তু একটা সমস্যার কারণে পিছিয়ে গেছে।
২-১ মাসের মধ্যেই বিয়ে টা হয়ে যাবে। এই লোকটা ভালো। অনেক টা সময় নিয়েছি সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য।
উনার সাথে লাইফ কাটানো যাবে।

– আপনি অনেক সুখী হবেন। দোয়া থাকবে সবসময়।
– তুমি অনেক ভালো মনের মানুষ। রেহান ই লাকি।তোমাকে পেয়েছে।

– আপনার সাথে কথা বলে আজ অনেক ভালো লাগছে।
– আমারও। কিন্তু একটা প্রমিজ করতে হবে যে!
– কিসের?
– মেহরিনের মৃত্যুর পরে এই প্রথম কারো সাথে মন খুলে কথা বললাম। কথা দাও এককথা গুলো আমাদের মাঝেই থাকবে।
একটু ভেবে বললাম
– ঠিক আছে কথা দিলাম।
– না চাইতেই কেমন বন্ধুত্ব হয়ে গেছে তোমার সাথে। একদিনের বন্ধুত্ব! আজীবন মনে থাকবে।
– একদিনের কেন হবে?
– একদিনের ই।কারণ এর পরে আর কখনো আমাদের দেখা হবে না। তাই।
– দেখা না হলে যোগাযোগ তো হতেই পারে ।
– না।
– কেন?
– তুমি এখনো বাচ্চা মেয়ে রয়ে গেছো।
আফরিন আলতো করে গালে ছুঁয়ে বললো।
কিছু মানুষ জীবনে দ্বিতীয় বার না ফিরে আসাই উত্তম।
সেটা আমার জন্যও, তোমার জন্যেও।
চলো ওদিকে যাই।অনেক সময় ধরে এখানে।
অবাক হয়ে দেখছি এই মেয়েটাকে!
এমন ও মানুষ হয়!
বাস্তববাদী!
– হুম চলেন।

রেহান দেখেছে আমি আফরিনের সাথে কথা বলে হেঁটে আসছি।

চলবে….

প্রেমে পড়া বারণ পার্ট – ১৪

0

#প্রেমে_পড়া_বারণ
# পার্ট – ১৪
# Taslima Munni

সারাদিন গিয়ে রাত হয়ে গেছে। কিন্তু রেহান এখনো ফিরছে না।
আমি এতো বার কল করলাম ফোন ও রিসিভ করছে না।
খুব টেনশন হচ্ছে।কোথায় গেলো রেহান!!
নিজের উপর খুব রাগ হচ্ছে। আমি বাড়াবাড়ি করে ফেলেছি।কিন্তু আমি কি করবো? মানসিক যন্ত্রণায় ভুগছি।
এতো ভয় পাচ্ছি কেন আমি?
আমার রেহানকে আমি ভালো করে চিনি।কিন্তু দুঃস্বপ্ন দেখেছি বলে মন খচখচ করছে।।

বেশ রাত হয়েছে। রেহান এখনো ফিরেনি। এখন সত্যিই অনেক বেশি টেনিশনে পড়ে গেছি। আদিল ভাইকে ফোন দিলাম আবার।।
আগেও ফোন দিয়েছিলাম। উনাদের সাথে নাকি সকালের পরে আর দেখা হয়নি।উনি ফোন দিয়েছেন। ফোন রিসিভ করেনি।
এখন আবারও উনাকে বললাম
– ভাই, রেহান তো এখনো ফিরেনি।
– তুমি চিন্তা করো না। আমি খোঁজ নিচ্ছি।

রেহানের ফোন সুইচড অফ বলছে। আমি আর বসে থাকতে পারছি না। সারাদিন অপেক্ষা করছি এই চলে আসবে, চলে আসবে ভেবে।
বাইরে অনেক ঠান্ডা। রাত বাড়ায় তাপমাত্রা দ্রুত কমে যাচ্ছে।
গায়ে গরম কাপড় চাপিয়ে আমি বের হয়ে আসলাম।।
বাসা থেকে বের হতেই দেখি রেহান চলে এসেছে।
– কোথায় ছিলে তুমি? ফোন ধরনি কেন? টেনশনে আমার অবস্থা খারাপ হয়ে গেছে।।
রেহান কোনো কথা না বলে রুমে ঢুকে গেল।
আমিও ওর পিছনে পিছনে গেলাম।
– কথা বলছো না কেন? কোথায় ছিলে সারাদিন?!
রেহান ওর জামা কাপড় বের করে নিচ্ছে।
আমি হাত থেকে এগুলো নিয়ে গেলাম।
– এগুলো দিয়ে কি করছো?
– দেখতেই তো পাচ্ছিস ।
– আমি বুঝতে পারছি না। তুমি এগুলো প্যাকিং করছো! কিন্তু কেন?
রেহান রুমে ঘুরে ওর সব জিনিসপত্র বেডে এনে রাখছে।।
আমার কথার উত্তর দেবার প্রয়োজন বোধ করছে না।

রেহান!
আমি সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে হাতের জিনিস গুলো নিয়ে যায়গায় রাখলাম।
– কি করছো তুমি?
– আমি কাল চলে যাচ্ছি। তোর একাডেমিক ঝামেলা শেষ হলে চলে আসিস।
আদিল টিকিট করে দিবে। ওকে বলে দিবো।
আমার মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়লো।
– রেহান, এগুলো কি বলছো!! তুমি চলে যাচ্ছো!! এসবের মানে কি??
– আর কিভাবে মানে বুঝাবো?
– বুঝাও…. আমি তোমার কথা বুঝতে পারছি না।
– হুমম।
রেহান ওর উষ্কোশুষ্ক চুলে হাত দিয়ে বললো
– আমি কালকেই ফিরে যাচ্ছি। তুই যাচ্ছিস না আমার সাথে।
আমার চোখে পানি চলে এসেছে।
ওকে জড়িয়ে ধরে বললাম
– এতো রাগ আমার উপর!! একেবারে একা ফেলে চলে যেতে চাইছো?
– আমি আসার আগে তুই একাই ছিলি।আমি চলে গেলেও সমস্যা হবে না।
– এটা কিন্তু কথা ছিলো না। তুমি আমাকে নিয়ে ফিরবে বলে এখানে পাঠিয়েছিলে।
– অনেক কিছুই তো কথা থাকে না,কিন্তু বাস্তবতার মুখোমুখি হলে নতুন করে চলে আসে।
– রেহান। সরি বাবু। আমি একটু বেশিই রিয়েক্ট করে ফেলেছি। প্লিজ… আর এমন হবে না।
– হুম।
রেহান হুম বলে চুপ করে আছে। ওর মনে কি চলছে বুঝতে পারছি না।
রেহান আমার ব্যবহারে কষ্ট পেয়েছে। ও কিছুই গোপন করেনি কখনো। তবুও আমি এভাবে রিয়েক্ট করেছি,এটা রেহানকে একটু বেশিই আঘাত করেছে।

সারাদিন নিশ্চয়ই কিছু খাওনি।মুখ কেমন শুকনো লাগছে। চলো…
ফ্রেশ হয়ে নাও, আমি খাবার দিচ্ছি।
– আমার খিদে নেই।
– সত্যি খিদে নেই?
– না, নেই।
– ঠিক আছে। খেতে হবে না।
– তুই খেয়েছিস?
– না। তোমার অপেক্ষায় ছিলাম।
– হুম। আচ্ছা যা.. আমি আসছি।
জানতাম না খেয়ে আছি শুনলে না করতে পারবে না।

আমি দ্রুত ডাইনিং এ খাবার দিলাম। রেহান নাম মাত্র খেলো।সব কিছু গুছিয়ে রুমে আসলাম। এসে দেখি রেহান সব রেডি করে ফেলেছে।
চোখ বন্ধ করে হেলান দিয়ে শুয়ে আছে।
আমি কাছে গিয়ে বসে একটা হাত রাখলাম ওর বুকে।
– এমন কেন তুমি? কেন এমন করছো!?
– আমি তো এমন ই! নতুন তো কিছু না।
– বললাম তো ভুল হয়েছে।
– তোর ভুল হয়নি।ঠিকই করেছিস। ভুল আমার হয়েছে, এখানে আসা উচিত হয়নি।
– এবার কিন্তু বাড়াবাড়ি করছো।কোথাও যাবে না তুমি। যেতে হলে আমাকে সাথে নিয়ে যাবা।
– আরও অনেক দিন লাগবে তোর । এতো দিন থাকা সম্ভব না।।
– তাহলে আমিও চলে যাবো। লাগবে না কোনো সার্টিফিকেট।
– এতো বুঝতে হবে না। সব কাজ শেষ হলে যাবি।
– না। তোমার সাথেই যাবো।
– বোকার মতো কথা বলিস না। বাই রোডে যাচ্ছি না যে, যাবো বললেই ব্যাগ গুছিয়ে গাড়িতে উঠে গেলাম! তোর টিকিট করা হয়নি।
– তাহলে তুমি দুইদিন পরে যাবে। এই টিকিট ক্যান্সেল করে দিয়ে,দুইটা টিকিট করো।এক সাথে যাবো।
– দেখ হিয়া… তুই থাকছিস আর আমি যাচ্ছি এটাই ফাইনাল।তুই সব শেষ করে তারপর আসবি। এটাই শেষ কথা। আর এটা তোকে শুনতে হবে।
– কেন? তোমার সব কথা আমাকে শুনতে হবে কেন?
আমার কথা শুনেছো তুমি??
– আমি বলেছি তাই শুনতে হবে। ঘুমাতে দে খুব ভোরে বের হবো। যা ঘুমা।

ঠিক আছে। ঘুমাও…
যাও তুমি… পরদিন আমিও চলে আসবো।
আমি বাচ্চাদের মতো ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কেঁদে ফেললাম।
থাকবো না এখানে..
কি একটু বলে ছিলাম… আর শাস্তি দিচ্ছো!
আমি বেরিয়ে আসলাম। বাইরে হালকা তুষারপাত হচ্ছে। ঠান্ডায় জমে যাবার অবস্থা।
শীতে কষ্ট হচ্ছে আমার। তারচেয়েও বেশি কষ্ট হচ্ছে রেহানের ব্যবহারে।
প্রায় পনেরো-বিশ পরে রেহান বেরিয়ে আসলো।
– হিয়া.. তুই কি করছিস এখানে?!!
ভেতরে আয়।
রেহান আমাকে ধরে ভেতরে নিতে চায়।
– যাবো না।এখানেই থাকবো।
কাঁদতে কাঁদতে বললাম।
– বাইরে কি অবস্থা! নির্ঘাত জ্বর বাঁধিয়ে বসবি!
– বাঁধুক।। তোমার কি?! তুমি তো একটু পরে চলে যাবে। যাও না।
– ভেতরে আসতে বলছি কিন্তু!
– যাবো না আমি! বললাম তো।
– যাবি না?
– না… তুমি যাও।
– যাচ্ছি!!
– ছাড়ো… ছাড়ো আমাকে.. উফফ… যাবো না আমি ভেতরে।এখানেই মরে যাবো।নামাও… নামাও বলছি।
– একদম চুপ!! নামাও.. নামাও…!!! তোর চেয়ে একটা বাচ্চা অনেক বেশি বুঝে!
‘ যাচ্ছি’ বলে রেহান আচমকা আমাকে তুলে নিয়েছে!
অনেক চেষ্টা করেও ছাড়াতে পারিনি।

সোজা বিছানায় নিয়ে এসে ভালো করে গরম কাপড় চাপিয়ে দিলো বেশি করে।
– দেখ… ঠান্ডায় হাত পা কি অবস্থা হয়েছে!.
রেহান দ্রুত অয়েল নিয়ে হাতে পায়ে মালিশ করে দিচ্ছে।
– এটা কেন করলি?! এখন যদি একটা অসুখ হয়ে যায়?
– হলে হবে। তুমি তো দেখবে না।
– চুপ।একটা কথাও বলবি না… বেশি পন্ডিত!
রাগে আমার আরও বেশি কান্না পাচ্ছে।

কি এমন বলেছিলাম তোমাকে?
আমার কষ্ট লাগলে সেটা বলতেও পারবো না?
– কে বললো বলতে পারবি না?আমি তোকে জিজ্ঞেস করিনি?তুই কি করলি?
– তোমাকে দেখলাম আফরিনের সাথে কথা বলছো! ও তোমার লাইফে ব্যাক করেছে আর তুমিও মেনে নিয়ে আমাকে পাঠিয়ে দিবার প্ল্যান করছিলে!
বলতে বলতে হেঁচকি উঠে গেলো।
– কিহ!!!???
রেহান আমার কথা শুনে মনে হয় আকাশ থেকে পড়লো!.
– কবে,কোথায়, কখন?!! কি বলছিস এসব!!
আগে একটু পানি খেয়ে নে…
রেহান এক গ্লাস পানি এনে খায়িয়ে দিলো।
– এবার বল..
– অই রুমে বসে ও তোমার কাঁধে মাথা রেখেছে আর তুমি হাত ধরে বসে ছিলে!
– হিয়া! তোর মাথা ঠিক আছে তো?
জ্বর টর এসে গেছে নাকি! দেখি..
কপালে হাত দিয়ে জ্বর দেখে।
ইতোমধ্যে বেশ জ্বর উঠে গেছে।।
– যা ভাবছিলাম! জ্বরের ঘোরে আবোল-তাবোল বকছিস!
– জ্বরের ঘোরে না।আমি ঠিক আছি।।
সেদিন স্বপ্নে দেখলাম। দেখার পর থেকে মন কেমন করছিলো।তোমাকে বলতেও পারছিলাম না। রেহান, আমাকে ছেড়ে যাবে না।
ওর হাতটা টেনে শক্ত করে আঁকড়ে ধরলাম।
– পাগলি মেয়ে… স্বপ্ন দেখে এমন করলি!!
হাহাহা….
– তুমি যাবে না,বলো?
– কই যাবো? আমার হিয়া মন পাখিরে রেখে কোথাও যাবো না।
তুই এখন একটু ঘুমা।অনেক জ্বর শরীরে।
– ঘুমালে তুমি চলে যাবে।
– কোথাও যাবো না। এইযে আমি তোর কাছে।
রেহান আরও কাছে এসে আমাকে আগলে রাখলো।

ঠান্ডায় গলা বসে গেছে তার উপর ভীষণ জ্বর নিয়ে দুদিন কাটলো।
এই দুদিন রাত-দিন রেহান আমার সেবা করলো। নিজের হাতে রান্না করে মুখে তুলে খায়িয়ে দিলো। ঔষধ খাওয়ালো।
দুদিন পরে অনেকটা সুস্থ বোধ করছি।

বিকেলে রেহান কফি এনে দিলো।চাদর মুড়ি দিয়ে বসে কফি খাচ্ছি।রেহানও পাশে বসে আছে।
– হিয়া..
– হুম?
– তুই স্বপ্ন দেখেছিস কেন জানিস?
– কেন?
– তোর মনে ভাবনা ছিলো, তাই।
– আমি তো এমন টা ভাবিনি।
– এমন টা ভাবিসনি হয়তো, কিন্তু তোর মনে আরফিনকে নিয়ে অস্বস্তি ছিলো।
– হয়তো ছিলো।।
আমি তোমার সাথে মিস বিহেইভ করেছি।সরি।
– ধুর। আমাদের মনে হয় এই টপিকে কথা বলার কিছু নেই।
– আছে।
– কি?
– আফরিনকে নিয়ে আমি তোমাকে কিছু বলবো না। কারণ আমার বিশ্বাস আছে তোমার উপর। কিন্তু একটা সত্যি কথা হলো তোমাদের একসাথে দেখলে আমার কেমন কেমন অশান্তি লাগে।
– হাহাহা… জেলাস?!
– হা জেলাস।
– শুন, এখন তোকে ছাড়া কারো কথা কল্পনায়ও আসে না।
আর একটা কথা কি জানিস?
– কি?
– আমার প্রতি বিশ্বাস হারাবি না কখনো। আর মনে যদি একটু খচখচ থাকে সেটা কিন্তু ধীরে ধীরে অনেক বড় হয়ে যায়। তাই যেকোনো কিছু খোলা মনে শেয়ার করবি।এতো দিন যেমন করেছিস। আর আফরিনের সাথে সেদিন অনেক কথাই হয়েছে। ওর ডিভোর্স হয়ে গেছে। কিন্তু তাই বলে এটা ভাবিস না যে আমার লাইফে ব্যাক করবে!
– ঠিক বলেছো! আমার চিন্তা ভাবনা সংকীর্ণ হয়ে গেছে।
– সংকীর্ণ না।তুই যেটা ভেবেছিস সেটা শংকা।
তুই ছাড়া আমার লাইফে আর কোনো দিন কেউ আসবে না। এই তোকে ছুঁয়ে কথা দিলাম।

চলবে….

প্রেমে পড়া বারণ পার্ট – ১৩

0

#প্রেমে_পড়া_বারণ
# পার্ট – ১৩
# Taslima Munni

এখন ওর প্রতি আমি কৃতজ্ঞ।
-কৃতজ্ঞ!!কিভাবে?
-কারন ও এমন টা করেছে বলেই আমি তোকে পেয়েছি।তাই।নাহলে ভুল মানুষকেই চাইতাম।

এবার আমি সত্যিই কেঁদে ফেললাম।।
ওকে আঁকড়ে ধরলাম।
-তুমি ওর সঙ্গে কথা বলবা না।বললে আমার কষ্ট লাগে।
– ধুর পাগলি। আফরিনের সাথে কথা বললে তুই যদি কষ্ট পাস, তাহলে আমি কথা বলবো না।
আর তাছাড়া ওর সঙ্গে তো আমার এতো বছর পরে দেখা।ভদ্রতার খাতিরেও কথা বলতে হয়েছে।
– হুমম।।
রেহান আমার চোখ মুছে দেয়।।
– এখন তাড়াতাড়ি ডাইনিং এ আয়। খুব খিদে পেয়েছে।

রেহান এখানে আসার পরে মনে হচ্ছে যে আমার বিয়ে হয়েছে। একটা সংসার আছে। দায়িত্ব আছে। বাসায় থাকতে এতো টা বুঝতে পারিনি।ফুপি বুঝতেও দেয়নি।
আমি যখন রান্না করি রেহান সবজি কেটে দেয়।কখনো ও স্পেশাল ডিস বানায় আর আমি এসিস্ট করি।
রেহান ভালো রান্না করতে পারে সেটা জানতাম না। ও যখন বাইরে ছিলো তখন থেকেই পারে। কিন্তু বাসায় কখনো করতে দেখিনি।

জৌলুসভরা টরন্টো শহরে আমাদের দিনগুলো কেটে যাচ্ছে।
জেরিন ভাবি, আদিল ভাই উনাদের ইনভাইট করলাম।উনাদের সাথে একটা দিন খুব আনন্দে কাটালাম। এর মধ্যে রেহানের কিছু বন্ধুদেরও ইনভাইট করেছিলো।
সব মিলিয়ে বেশ ভালো সময় কাটছে।
আম্মু,ফুপি তো চিন্তা করছেন কিভাবে থাকছি,কি খাচ্ছি। কত বুঝিয়েছি, বুঝেনা।প্রতিবেলায় খোঁজ নিতেন। রেহান আসার পরে উনারা একটু শান্ত হয়েছেন।
এখানে একটা মিনি বাংলাদেশ আছে।বাংলাদেশী মোটামুটি সব কিছুই পাওয়া যায়। বাঙালি খাবার,কাপড়, থেকে শুরু করে সব ধরনের সবজি এখানে পাওয়া যায়।

কানাডা শীতল দেশ। আমার বেশ ভালো লাগে। রেহানের কুল ঘেঁষে ঘুমাতে আরও বেশি ভালো লাগে।
বেশ বেলা হয়ে গেছে,কিন্তু উঠার কোনো তাড়া ছিলো না। ঘুম হালকা হবার পর আরও গুটিসুটি মেরে রেহানের কাছ ঘেঁষে গেছি।
তখনই দরজায় কেউ এসেছে। উঠতে ইচ্ছে করছে না। রেহান ভাবলো আমি ঘুমে।
ও নিজে গিয়েই দরজা খুললো।

বেশ অনেক সময় হয়ে গেছে, রেহান রুমে আসছে না।নিশ্চয়ই কোনো বব্ধু পেয়ে গল্পে মজে গেছে!!
আমি আরও অনেক সময় পরে রুম থেকে বের হয়ে দেখি আরফিন এসেছে! আমার উপস্থিতি তারা টের পায়নি।
আফরিন রেহান পাশে বসে ওর হাত ধরে কিছু একটা বলছে!
এটা দেখার পর আমার মনে হচ্ছে আমার কলিজ্বা চিড়ে ফালাফালা হয়ে যাচ্ছে।
ওদের কথাও আমার কানে এলো।
– রেহান আমি একটা ভুল করেছিলাম। কিন্তু আমি তোমাকে ভুলতে পারিনি। প্লিজ তুমি ফিরে এসো আমার লাইফে।প্লিজ।
– কি বলছো এসব তুমি!? আমি ম্যারিড আমার সংসার আছে! এটা কিভাবে সম্ভব!?
– সম্ভব। তুমি চাইলেই সম্ভব।
– কিভাবে?
– তুমি হিয়াকে ছেড়ে দাও।ওকে দেশে পাঠিয়ে দাও।
– কি সব বলছো!? এটা অসম্ভব। হিয়া শুনলে কতটা কষ্ট পাবে তোমার ধারণাও নেই।
– প্লিজ রেহান। আমার কথা শুনো।আমার দিকে তাকাও।
আফরিন রেহানের মুখ দু’হাতে ধরে ওর দিকে ফেরায়।
– আমরা একসাথে কত সুন্দর সময় কাটিয়েছি।এই শহরে কত স্মৃতি আছে আমাদের। তোমার মনে নেই?
ভুলে গেছো তুমি?
– না ভুলিনি। মনে আছে আমার। এটাও মনে আছে তুমি কি করেছিলে!
– সরি রেহান।
আমি ভুল করেছিলাম। পরে রিয়ালাইজ করতে পেরেছি আমি কত বড় ভুল করেছি।
আমি তোমাকে হারিয়ে বুঝতে পেরেছি।
– এখন এসব বলে কি হবে রিন?
– রেহান প্লিজ।তুমি জানো আমি সংসার করতে পারিনি। তোমাকে ছাড়া অন্য কারো সাথে সংসার করা সম্ভব হয়নি।
– দেখো আমার মা আছে,ফ্যামিলি আছে। এসব এখন চিন্তা করে লাভ নেই।

আফরিন কিছু ক্ষণ থমকে থেকে বললো
– তুমি আমাকে ভালোবাসো না?
– জানি না।
– আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বলো।
রেহান ওর চোখের দিকে তাকায়।।
– বলো।
– জানি না আমি। কেন এসেছো এখানে??
চলে যাও!!
– মিথ্যা বলতে পারবে না জানতাম। কিন্তু সত্যি টা স্বীকার করতে ভয় পাও তুমি?
আমাকে ভালোবাসো। এটাই সত্যি।
রেহান চুপ করে আছে।
রেহানের চুপ হয়ে থাকা যেন নীরব স্বীকারোক্তি।
আমার পায়ের নিচ থেকে যেন আস্তে আস্তে মাটি সরে যাচ্ছে। আমি এখানে দাঁড়িয়ে থাকা সম্ভব হচ্ছে না।

রেহান, তুমি যেখানে বলবে আমি যেখানেই থাকবো তোমার সঙ্গে।
– হুমম। কিন্তু কিভাবে কি করবো বুঝতে পারছি না। হিয়াকে…
– মাত্র কিছু দিন বাকি।তারপর ও চলে যাবে।তুমি থেকে যাও।ওকে একাই পাঠিয়ে দাও কিছু একটা বলে।।
তারপর যা হবার, সেটা পরে দেখা যাবে।
– হুমম।আচ্ছা। দেখা যাক।
– তোমাকে অনেক ভালোবাসি।আমি জানতাম তুমি আমাকে ফিরিয়ে দিবেনা
আফরিন রেহানের কাঁধে মাথা রাখে।
রেহান হয়তো ইতস্তত করছে, কিন্তু এক হাতে আফরিনের হাত ধরে আছে।
– আর কোনো দিন ছেড়ে যাবে না,বলো।
– প্রমিস রেহান। কখনোই ছেড়ে যাবো না।
ওরা নিবিড় ভাবে বসে আছে।
এই বাসায় আমিও আছি রেহান বোধহয় সেদিকে তোয়াক্কাই করছে না।
কি করবো এখন আমি? আমার পৃথিবীটা যেন থমকে গেলো।

আমার রেহানকে হারিয়ে ফেলেছি। এখন মনে হচ্ছে ও এইজন্যই আমাকে এখানে পাঠিয়েছে, যাতে ওর আসার পথ হয়।নাহলে ফুপি ওকে আসতে দিতো না।
আমার সংসারটা শেষ হয়ে যাচ্ছে। রেহান এটা করতে পারে না। ওকে না পেতাম সেটাই এক যন্ত্রণা, এটা নিয়ে বাঁচতে পারতাম।
কিন্তু রেহান এভাবে আমাকে ছেড়ে যাবার পরে আমি মনে হয় না আর বাঁচতে পারবো।
কেন করছো এমন। রেহান!!
এটা তুমি করতে পারো না।

আমার হাত পা অবশ হয়ে যাচ্ছে। আমি নিঃশ্বাস নিতে পারছিনা।চোখ ফেঁটে যাচ্ছে। তীব্র যন্ত্রণা হচ্ছে।
মনে হচ্ছে বুকের উপর ভারী একটা পাথর চাপা দিয়ে রেখেছে কেউ।
গলায় কেউ দু’হাতে চেপে ধরে আছে।
সমস্ত শরীর বেঁয়ে কি যেন একটা অদৃশ্য শক্তি আমাকে বেঁধে রেখেছে। আমি নড়তেও পারছিনা।

আমার সমস্ত শরীর ঘেমে একাকার।
এই মৌসুমে হাড় কাঁপানো শীতের মধ্যেও ঘেমে সমস্ত শরীর ভিজে গেছে।
রেহান আমার পাশে গভীর ঘুমে।আমি দুঃস্বপ্ন দেখেছি!!
এই স্বপ্ন দেখার পর মনে শান্তি পাচ্ছি না।
একটা অস্বস্তি হচ্ছে। রেহানকে বলছিও না।

এসবের মধ্যে আমার ফাইনাল টার্ম শেষ। কয়েকদিন অক্লান্ত পরিশ্রম করে থিসিস জমা দিলাম। রেহান পুরোটা সময় হেল্প করেছে। কখনো সাথে বসেই নেট সার্চ, কখনো বই ঘেটে ইনফরমেশন নোট করে দিয়েছে। কখনো নিজেই রান্নাটা করে ফেলেছে।
কিন্তু মাথা থেকে সেই স্বপ্ন সরছে না।এটা যেন পিছনে তাড়া করে বেড়াচ্ছে!
তার আরও একটা কারণ আছে। আফরিনের সংসারটা টিকেনি বেশি দিন।সেটা জেরিন ভাবির কাছেই শুনেছিলাম। আর এসব স্বপ্ন দেখে ভেতরের অশান্তি কেবল বাড়ছেই।

রেহান একদিন জিজ্ঞেস করলো
– তোর কি হয়েছে?
– কই কিছু হয়নি তো।।
– কিছু একটা হয়েছে। বেশ কিছু দিন থেকে খেয়াল করছি। তুই অন্যমনস্ক হয়ে থাকিস।
– কিছু হয়নি।
– আমি এখানে এসেছি বলে তোর ভালো লাগছে না, তাই না?
– ধুর, কি যে বলো না তুমি!!
– সত্যিই তো বলছি! এখানে আফরিন আছে আর আমিও এখানে এসেছি। দেখা হয়েছে, কথা হয়েছে! এটা তোর পছন্দ হচ্ছে না সেটা জানি।
– বাদ দাও এসব কথা।
– বাদ দিব কেন?
– এসব কিছুই না তাই। আর তোমার মাথায় কি সারাক্ষণ আফরিন ই ঘুরে? ওকে নিয়েই কথা বলতে হবে কেন! শুনি?
– তুই বলতে বাধ্য করছিস, তাই।তোর ব্যবহার বদলে গেছে এই কদিনে!.অন্য কোনো কারণ থাকলে বল।।
– কে আফরিন?? ও কি বিশেষ কেউ যাকে নিয়ে আমাকে ভাবতে হবে? আমি সেটা মনে করছি না। আর যদি তোমার মনে হয় সেখানে আমার কিছু বলার নেই।
– হিয়া..
মনে আছে না তুই একটু বেশিই রিয়েক্ট করছিস?
আমি কিছু না বলে পাশ ফিরে শুয়ে পড়লাম।।

রেহান দীর্ঘ সময় চুপচাপ বসে রইলো।
পরদিন সকালে জেরিন ভাবি, আদিল ভাই আরও একজন পরিচিত বাঙালি ভদ্র মহিলা আসলো।
সব বাঙালিরা মিলে গেট টুগেদার করবে সামনের রবিবার। উনারা সেটার নিমন্ত্রণ করতে এসেছেন।।
রেহান বললো
– আমি শিওর বলতে পারছি না। তবে চেষ্টা করবো।
– এটা একটা কথা বললি? কদিন পরেই চলে যাবি।আবার কখনো আসবি কিনা ঠিক নেই।আসলেও কবে আসবি!.
সবাই একসাথে অনেক ভালো লাগবে।বিদেশে দেশের মানুষজনই পরম আত্নীয়।
আমি বললাম – ভাই, আমরাও যাবো। চিন্তা করবেন না।
রেহান আর কিছু বললো না।
উনারা যাবার পরে রেহান ও বের হয়ে গেলো।

সারাদিন গিয়ে রাত হয়ে গেছে। কিন্তু রেহান এখনো ফিরছে না।
আমি এতো বার কল করলাম ফোন ও রিসিভ করছে না।
খুব টেনশন হচ্ছে।কোথায় গেলো রেহান!!

চলবে….

# সময় সল্পতায় দ্রুত লিখতে গিয়ে হয়তো কিছু ভুল ত্রুটি হয়েছে।। নিজগুণে ক্ষমা করবেন।।?

প্রেমে পড়া বারণ পার্ট- ১২

0

#প্রেমে_পড়া_বারণ
# পার্ট- ১২
# Taslima Munni

মন ভালো করার মেডিসিন কিন্তু আছে আমার কাছে।
– তাই বুঝি?
– হুমম। আছেই তো।
এখন দুদিন পরে তুই বাচ্চার মা হবি,আর কই এখন নিজেই বাচ্চামি করিস!!
বিষয়টা কেমন হবে জানিস?
– কেমন?
– এক বেবি আরেক বেবির মা!
– ধুর! তোমার যে কি কথা!!
– সত্যিই তো বলছি।
– হয়েছে হয়েছে আর সত্যি বলা লাগবে না আপনার।
– কেন কেন? লজ্জা পাচ্ছিস? দেখি দেখি… ভালো করে তাকা তো…
-উফফ! তুমি না…
– ওরে আমার লজ্জাবতী লতারে…
আমার মন ভালো হয়ে গেছে। রেহানের উপর রাগ করার প্রশ্নই আসেনা।
ফালতু একটা কারণে মন খারাপ করেছি ভাবতেই নিজের উপর রাগ হচ্ছে।

হিয়া শুন।
– হুম, বলো।
– আমি না একটা স্বপ্ন দেখেছি।
– কি স্বপ্ন?
– দেখলাম তুই একটা পরীর সাথে হেঁটে যাচ্ছিস।
জানিস পরীটা ভীষণ ভীষণ মিষ্টি দেখতে।
রেহানের কথা শুনে ভিতরে একটা অদ্ভুত শূন্যতা বোধ করছি।

কতদূরে থেকেও সারাক্ষণ একজন আরেকজনের ছোটখাটো প্রতিটি জিনিসের খেয়াল রাখছি।
রেহান সকালে ভার্সিটিতে কোন কাপড় পড়ে যাবে সেটা এখনো আমিই সিলেক্ট করে দেই।
সকালে ওর ঘুম ভাঙাই।
দূরে থাকলে নাকি দূরত্ব বাড়ে,কিন্তু আমরা যেন আরোও কাছে এসেছি।
দুজন দুজনকে নতুন করে আবিষ্কার করেছি।আর কাছে আসার আকাঙ্খা আরও তীব্র হয়েছে।
অবসরের সময় টুকু কি রাত,কি দিন! আমরা দূরে থেকেও কাছে থেকেছি।
এমনও সময় গেছে আমি কিচেনে কাজ করছি আর ও ফোনে!
ফোন সামনে রেখেই কাজ করতে হয়েছে!।
এর মধ্যে আমি নতুন এপার্টমেন্টে শিফট করেছি।
নতুন বাসা সাজিয়েছি।ওকে দেখিয়ে জিজ্ঞেস করতাম এটা কিভাবে করবো? ওটা ঠিক আছে কিনা!!

প্রবাসে দিনগুলো এভাবেই কেটে যাচ্ছে।।
দেখতে দেখতে ছয় মাস পেরিয়ে গেছে।
রেহানের ছুটি হয়ে গেছে। আগামী সপ্তাহে ও আসছে।
কতদিন পরে ওকে দেখবো।
এক সপ্তাহ! না এক বছর!!
সময় যেন কাটছেই না।তবুও দিন গিয়ে রাত আসে।
অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে রেহান আজ আসছে।
আমি এয়ারপোর্টে অপেক্ষা করছি।

রেহান দেখে এতোটাই খুশি হলাম যে প্রকাশের ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না।
রেহানকে দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরলাম।
একেবারে ওর বুকে মিশে গেছি।
– হিয়া মন পাখি।
কপালে একটা চুমু দিলো।
তারপর দুজন বাসায় ফিরলাম। রেহান আবার আমার কাছে। একাকিত্ব ঘুচে আমার স্বপ্নের দিনগুলো আবার ফিরে এলো।
একজোড়া চড়ুই পাখির সংসার।।

রেহানের বুকে লেপ্টে আছি। একদম ছাড়তে ইচ্ছে করছে না।
রেহানও এমন ভাবে আঁকড়ে রেখেছে।
– আজকে তোকে অনেক সুন্দর লাগছে।।
– ওও..
– ও কি?
– তারমানে আগে সুন্দর ছিলাম না!!
– আজকে সত্যিই অনেক বেশি সুন্দর লাগছো গো।
ইচ্ছে করছে…
– কি?
– বলবো না।
– বলো না।
– নাহ বলা যাবে না।
– ধুর! ভাল্লাগেনা!
– ইচ্ছে করছে একেবারে এইখানটায় ভরে রেখে দেই। যেন কেউ দেখতে না পারে।
বুকে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে বললো।
আমি চুপচাপ একটা চুমু দিয়ে দিলাম।
মুচকি হেসে ও আমাকে আরও গভীরভাবে আঁকড়ে ধরলো।
এতদিন দূরে থেকে আজ এতো কাছে!!
একটু পাগল পাগল লাগছে!!

একজোড়া চড়ুই পাখির দিনগুলো কিভাবে কেটে যাচ্ছে!!
একসঙ্গে কত যায়গায় ঘুরাঘুরি করলাম!
একদিন দুজন একসাথে বের হলাম।
আমাকে ভার্সিটিতে পৌঁছে দিয়ে ও বের হলো কিছু পুরনো বন্ধুর সাথে দেখা করবে বলে।
যথারীতি আমি বাসায় ফিরছিলাম।
কিন্তু হঠাৎ চোখে পড়লো রেহান আর আফরিন এক সাথে হেঁটে যাচ্ছে।।
এটাই চোখে পড়ার ছিলো!!
ভীষণ মন খারাপ হয়ে গেছে। কান্না পাচ্ছে আমার।
রেহান কেন ওর সাথেই দেখা করতে গেলো!
স্বামী তার পুরনো প্রেমিকার সাথে দেখা করছে! বিষয়টি অনেক যন্ত্রণার।
অনেক বেশিই পুড়ে।

রেহান বেশ দেরি করেই ফিরলো।
– হিয়া মন পাখি।
কি করছিস?
– কিছু না।।
– এই অসময়ে শুয়ে আছিস! শরীর ঠিক আছে তো?
– হুম। এতো দেরি করলে যে!
– আরে সবার সাথে এতো দিন পরে দেখা! চলে আসবো তখন আফরিন হাজির। তখনই দেরি হয়ে গেছে।
– ওহহহ.!
– এই দেখি তো। তাকা এদিকে।
আবার মন খারাপ হয়ে গেছে!?? শুন হিয়া আমি স্ট্রেইট কথা বলি তুই জানিস।
একটা কথা মাথায় ভালো করে ঢুকিয়ে নে।
আমার মনে যদি আফরিনের জন্য এখন কোনো ফিলিং থাকতো তবে ওর মুখই দেখতে চাইতাম না!
– কিছু নেই মনে ওর জন্য?
– ছিলো। কিন্তু এখন ওর প্রতি আমি কৃতজ্ঞ।
-কৃতজ্ঞ!!কিভাবে?
-কারন ও এমন টা করেছে বলেই আমি তোকে পেয়েছি।তাই।
নাহলে ভুল মানুষকেই চাইতাম।

এবার আমি সত্যিই কেঁদে ফেললাম।।
ওকে আঁকড়ে ধরলাম।

চলবে…

প্রেমে পড়া বারণ পার্ট- ১১

0

#প্রেমে_পড়া_বারণ
# পার্ট- ১১
# Taslima Munni

এইজন্য কাঁদছিস?!! বোকা মেয়ে।
রেহান বুকে জড়িয়ে ধরলো।
– তুই কেন ভাবছিস তোকে দূরে পাঠিয়ে দিতে চাই??
– তাহলে এটা করলা কেন?
– হুম। ঠিক আছে। তুই যদি যেতে না চাস তবে আমি জোর করবো না। তবে..
– তবে কি?
– আমার খুব ইচ্ছে ছিলো তুই ওখান থেকে পোস্ট গ্রাজুয়েশন করবি।পিএইচডি তো এমনি বললাম। সেটা তো বললেই হয়ে যাবে না।অনেক সময় লাগবে কমপক্ষে ৫-৬ বছর। আর এর আগে কত প্রসেস করতে হবে!! তোর ইচ্ছে হলে করতে পারবি পরে এখানে থেকেই।
কিন্তু এটাতে তো মাত্র এক বছরেরই ব্যাপার।
– এক বছর তোমার কাছে কম মনে হচ্ছে?
আমি কিভাবে থাকবো?
– থাক যেতে হবে না। এখন চুপটি করে ঘুমা।
আর শুন, তুই ছয়টা মাস যদি থাকতে পারতিস,তাহলে আমিও একটা লম্বা ছুটি পেতাম বাইরের যাবার জন্য।
– ছয় মাস!! আর বাকি ছয় মাস??!!
– আরে বুদ্ধু,আমিতো লম্বা ছুটি পাবো।তখন তোর কাছে যাবো আর তোকে নিয়ে তারপর ফিরবো।
– কিন্তু এতো দিন থাকতে পারবো না তো।
রেহানকে আরও শক্ত করে আঁকড়ে ধরলাম।
যাবো ভাবতেই ভেতরটা মুচড়ে উঠে।

পরদিন বিকালবেলা সবার সামনে রেহান কথাটা তুললো।
সবার আগে আপত্তি করলো আম্মু।
– বাইরে গিয়েই করতে হবে কেন? এখানে করলে সমস্যা কি?
ফুপি বললো – ছয় মাস হিয়া একা একা থাকবে কি করে?
আমার মনে হয় না যাওয়ার খুব প্রয়োজন।
রেহান আব্বুকে জিজ্ঞেস করলো। আব্বু বললেন
– এটা তোদেরকেই ঠিক করতে হবে। আমার আপত্তিও নেই আবার হিয়া বাইরে যাবে এখন! এটাতে খুব একটা সায় ও নেই।

আমি মনে মনে খুশি।সবাই আপত্তি করলে আমার যাওয়া টা আটকে যাবে।
কিন্তু শেষ পর্যন্ত আব্বু কিছু সময় চুপচাপ থেকে আম্মু আর ফুপিকে বললো
– রেহান যদি চায়, তবে আমাদের মনে হয় আপত্তি করা ঠিক হবে না।
শেষ পর্যন্ত আমার যাবার সিদ্ধান্ত হলো।
রেহান খুব আগ্রহের সাথে যাবার সব আয়োজন করলো।
সবাই আমার প্রয়োজনীয় সব কিছু আস্তে আস্তে গুছানো শুরু করলো।।
কিন্তু আমার হাত পা ভেঙে আসছে। একে তো সবাইকে ছেড়ে যাবো,তার উপর অচেনা একটা দেশে একা!
আমার একটুও ভালো লাগছে না।

যাবার দিন ঘনিয়ে এসেছে। আগামী পরশু ফ্লাইট।
আম্মু,ফুপু,দিয়া, মাহি আপু সবাই মিলে প্যাকিং করলো। মাহি আপু, রিয়াদ ভাইয়া এসেছে,আমি চলে যাচ্ছি বলে।
আমার কিচ্ছু ভালো লাগছে না।
খাবার গলা দিয়ে নামছে না। সবাই একসাথে ডিনারে বসেছি।কিন্তু আমি শুধু নাড়াচাড়া করেই যাচ্ছি।রেহানের দিকে তাকিয়ে দেখি ওর ও একই অবস্থা।
আমি আর থাকতে পারলাম না। উঠে রুমে চলে এলাম।

কিছুক্ষণ পর রেহান রুমে আসলো। এসে দেখে আমি বেডে গুটিসুটি মেরে আছি।ও কিছু না বলে আমার পাশে বসলো।
আমার পিঠে হাত রেখে বললো
– এভাবে যদি মন খারাপ করিস তাহলে তো…
– তোমার বুঝি একটুও কষ্ট হচ্ছে না?
রেহান কপালে চুমু খেয়ে তার বুকে জড়িয়ে রাখে।

ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। একটু ঘুমালে মনে হয় আরও কম সময় পাবো রেহানের সাথে।
কারো চোখেই ঘুম নেই।
ঘুমহীন একটা রাত কাটলো।
পরের দিন কিভাবে কেটে গেছে বুঝতেই পারিনি।
সময় মনে হচ্ছে দৌড়ে চলে গেলো।

আজ আমার ফ্লাইট। এয়ারপোর্টের জন্য বের হবো।
রেহান শক্ত করে আঁকড়ে ধরে আছে। সারামুখে চুমু খেতে খেতে বললো – তুই একদম মন খারাপ করবি না। দেখবি দেখতে দেখতে সময় চলে যাবে।
আর রোজ কতবার কথা বলি দেখিস।
আম্মু,ফুপি,দিয়া,আরিফ, মাহি আপু, রিয়াদ ভাইয়া সবার কাছ থেকে বিদায় নিলাম।
আম্মু,ফুপি তারা এমন কান্নাকাটি শুরু করলো যে আমিও কেঁদে ফেললাম।
আব্বুকে দেখতে পেলাম না।
খুঁজে দেখলাম আব্বু গাড়িতে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
কাছে যেতেই বুকে জড়িয়ে নিয়ে বললেন
– ভালো থাকিসরে মা।আর সবসময় ফোন করবি।
মাথায় একটা চুমু খেলেন।

সবাইকে ছেড়ে আমি উড়াল দিলাম সুদূর প্রবাসে।
জানি যখন আমার প্লেন এয়ারপোর্ট ছেড়েছে তখনও সবাই এখানে দাঁড়িয়েই ছিলো।
অজানা শূন্যতায় ভাসছি আমি।
ঠিক অজানা নয়।শূন্যতা টা কিসের তা আমি জানি।

ল্যান্ডিং এর পরে ইমিগ্রেশনের ঝামেলা শেষ করে বের হতে দুই তিন ঘন্টা দেরি হয়ে গেছে।
বের হবার পরই দুজন মানুষ এগিয়ে এলো আমার দিকে।
– হিয়া?
বাঙালি দেখেই বুঝতে পেরেছি।
– জি।কিন্তু আপনারা?
– ওয়েট।
আমার হাতে একটা ট্যাব ধরিয়ে দিলো।
– পৌঁছে গেছিস!
– হা।মাত্র বের হলাম।
রেহান ভিডিও কল দিয়েছে।
– আচ্ছা। ওরা আমার বন্ধু আদিল আর ওর ওয়াইফ জেরিন।
ওরা তোকে সব হেল্প করবে।
এখন গিয়ে রেস্ট নিয়ে পরে ফোন দিবি।
– আচ্ছা ঠিক আছে।
বাসায় সবাইকে বলে দিও।
– আচ্ছা। বলছি এক্ষুনি।
ফোন রেখে দিলো রেহান।

– আমি জেরিন।
– আদিল।
দুজনেই পরিচয় দিলো।
– খুব ভালো লাগছে আপনাদের পেয়ে। আমার তো ভয় করছিলো একা কিভাবে কি করবো!
– আপনি, আপনি করছো কেন?
আমি ভাই, আপনি আপনি করতে পারবো না। তুমি করেই বলবো।
জেরিন ভাবি বললো।

আমি হেসে বললাম – আমাকে তুমি করেই বলবেন।
– এখানে দাঁড়িয়েই সব কথা বলবে? আগে বাসায় চলো।
আদিল ভাই তাড়া দিলেন।
গাড়িতে উঠলাম।জেরিন ভাবি বললেন
– তোমার পাগল বর তো ফোন করে করে পাগল করে দিয়েছে।
তুমি ল্যান্ড করার আরও এক ঘন্টা আগে এসে বসে আছি।
আমি উনার কথা শুনে হাসছি।

এখানে আমার এডমিশন হয়ে গেছে।
একদম অন্যরকম পরিবেশে।
দিনগুলো কেটে যাচ্ছে। প্রতিদিনই কয়েকবার করে রেহান ফোন দিচ্ছে আর অন্যরা তো দিচ্ছেই।
জেরিন ভাবি আমাকে অন্য কোথাও যেতে দেননি।বাধ্য হয়ে উনাদের সাথেই থেকে গেলাম।
এতে অবশ্য আমার ভালোই হয়েছে। কারণ একা একা সময় কাটতো না।উনাদের সাথে ভালোই সময় যাচ্ছে।

বেশ কিছু দিন পরে ভাবি কিছু বাঙালি পরিবারকে ইনভাইট করলেন।
সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন।
এর মধ্যে একটা সুন্দরী মেয়ে আসলো। সবার সাথে খুব হেসে হেসে কথা বলছিলো।বুঝতে পারলাম সবার খুব পরিচিত।
মেয়েটা বেশ কয়েকবার আমার দিকে তাকিয়েছে।
ভালো করে খেয়াল করলাম মেয়েটা আমাকে ভালো করেই পর্যবেক্ষণ করছে। এতে আমি খানিকটা বিব্রত বোধ করছিলাম।
মেয়েটা আমার কাছে এসে বললো
– তুমি হিয়া?
– জি।
– তোমার কথা অনেক শুনেছি।ভালো লাগলো দেখা হওয়ায়।
– আমার কথা শুনেছেন কার কাছে?
– এখানে এতোদিন আছো আর এখানে নতুন কোনো বাঙালি এলে পরিচিত জনদের মুখেই শোনা যায়।
বলেই মেয়েটা মিষ্টি করে হাসলো।
– আমি আফরিন। সবাই ‘ রিন’ বলেই ডাকে।
নাম টা শুনেই বুকে ভেতর ধক করে উঠলো!
আফরিন খুব ভালো আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।
হয়তো আমার মুখের দিকে চেয়ে মনের কোনো পরিবর্তন আঁচ করতে চাইছে।
আমি মৃদু হেসে বললাম – খুব সুন্দর নাম আপনার।
– তোমার নামটাও অনেক সুন্দর।
– ধন্যবাদ। চলুন ওখানে বসি।
আফরিনকে নিয়ে সবার সাথে বসে গল্প করলাম।

আজ আমার মন ভালো নেই।
রেহান ফোন দিচ্ছে,কিন্তু আমি ফোন রিসিভ করতে ইচ্ছে করছে না।
তিনবারের মাথায় ফোন তুললাম।
– কিরে কি করছিস?
– কিছু না। শুয়ে আছি।
– শরীর খারাপ?
– নাতো। ভালো আছি। তুমি কি করছো?
– এতো সময় ধরে ফোন দিচ্ছি, ধরিসনি কেন? কি হয়েছে বল?
– আরে কিছু হয়নি। বুঝতে পারিনি রিং হচ্ছে যে।
একটা মিথ্যা বললাম রেহানকে।
রেহানের মুড অফ হয়ে গেছে বুঝতে পারলাম।
হঠাৎ মনে হলো কি করছি আমি!! আফরিন রেহানের অতীত! আফরিনের সাথে দেখা হয়েছে তাতে আমার মন খারাপ হতেই পারে, কিন্তু তাই বলে রেহানের উপর তার প্রভাব ফেলবো কেন?
রেহান তো অকপটে স্বীকার করে নেয় যা সত্যি।
এটা ভাবতেই নিজেরই খুব খারাপ লাগলো।

– কি হয়েছে তোর? আজ ভীষণ অন্যমনস্ক লাগছে!
– কিছু হয়নি গো।একটা কথা বলবো?
– বল।
– আজ আফরিনের সাথে দেখা হয়েছে।
– কোথায়?
– জেরিন ভাবি অনেককে ইনভাইট করেছিলো। আফরিন ও এসেছিলো।
– কথা বলেছিস?
– হুমম। ও নিজেকে থেকে এসেই কথা বললো। আমি তো চিনতাম না।
– হুম। বুঝেছি এইজন্যই মন খারাপ তোর।
আর ইচ্ছে করেই ফোন ধরিসনি।
আমি কিছু না বলে চুপ করে নীরব স্বীকারোক্তি দিলাম।
– তুই কি এখানো বাচ্চা আছিস? সত্যি টা তুই জানিস। তারপরও মন খারাপ কেন?এখন তুই ই আমার জীবনের সত্যি।
– এমনি।আমি তো মন খারাপ করতে চাইনি।হয়ে গেছে।
– বুঝলাম। মন ভালো করার মেডিসিন কিন্তু আছে আমার কাছে।
– তাই বুঝি?
– হুমম। আছেই তো।
এখন দুদিন পরে তুই বাচ্চার মা হবি,আর কই এখন নিজেই বাচ্চামি করিস!!
বিষয়টা কেমন হবে জানিস?
– কেমন?
– এক বেবি আরেক বেবির মা!

চলবে….

প্রেমে পড়া বারণ পার্ট- ১০

0

#প্রেমে_পড়া_বারণ
# পার্ট- ১০
# Writer: – Taslima Munni

এই মেয়ে, তুই কি কিছুই বুঝিস না? এতো বোকা কেন তুই?
উনার কথায় আমার মুখভার হয়ে গেছে।
– সারাটা দিন সবাইকে সময় দিচ্ছিস,আমার জন্য একটু সময় হয়নি তোর?
– আমি…..
– তুই কি?
আমি কি বলবো বুঝতে পারছি না। উনার চোখের মাদকতায় কথা হারিয়ে ফেলেছি।উনি আরও একটু কাছে এসে চুলের খোপা খুলে দিলেন।
আলতো করে চুলে হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন।

——-
” সমস্ত দিনের শেষে শিশিরের শব্দের মতন
সন্ধ্যা আসে; ডানার রৌদ্রের গন্ধ মুছে ফেলে চিল;
পৃথিবীর সব রঙ মুছে গেলে পাণ্ডুলিপি করে আয়োজন,
তখন গল্পের তরে জোনাকির রঙে ঝিলমিল।
সব পাখি ঘরে আসে — সব নদী; ফুরায় এ-জীবনের সব লেনদেন;
থাকে শুধু অন্ধকার, মুখোমুখি বসিবার বনলতা সেন।।”

—————————
মুগ্ধ হয়ে উনার আবৃত্তি শুনলাম।
– আমার হিয়া মন পাখি! তুই আমার সামনে বসে থাকবি।
– বাহবা!
– কি?
– কিছু না।।
মুচকি হেসে বললাম।
– ঘুমাবি না?
– হুমম।
– চল ঘুমাই।
আমি চুপচাপ শুয়ে আছি। উনি আধশোয়া হয়ে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন।
একবার ফিরে দেখি উনি তাকিয়ে আছেন।
বুকের ভেতর ধপ করে উঠলো।
তার দৃষ্টির মাদকতায় আমি ডুবে যাচ্ছি।
উনি দু-চোখের পাতায় যখন চুমু খেলেন, যেন আমার শরীরের শিয়ার উপশিরায় শিহরণ বয়ে গেছে।
নিঃশ্বাস ভারী হয়ে গেছে। ভীরু পাখির মতো তার বুকে মুখ লুকিয়েছি।
চাতক পাখি একফোঁটা বৃষ্টি পেয়ে যেমন উচ্ছ্বসিত, রেহানের বুকে আমিও এক ফোঁটা বৃষ্টি হয়ে নামলাম।
জানালা গলিয়ে এক ফালি চাঁদ সাক্ষী হয়ে রইলো।

অন্যরকম একটা সকাল। সকাল টা এতো সুন্দর হতে পারে আগে কখনো বুঝিনি।
ভোরের সূর্যোদয় জীবনে নতুন করে বাঁচার হাতছানি দিয়ে গেল।
রেহান আমার কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছে।
আমি ওর চুলে বিলি কেটে দিচ্ছি।
– এবার উঠেন।
– উঠবো না।
– তাহলে শুয়ে থাকেন, আমি গেলাম নিচে।
– একদম নড়বি না এখান থেকে। চুপচাপ বসে থাকবি।
– আপনার আর কি?!! কটা বাজে খেয়াল আছে।
– মাত্র ৭ টা।এতো সকালে নিচে যাওয়ার দরকার নেই। সবাই তো আছেই।
– হু,সেই জন্য… সবাই আছে বলেই যাবো।
আপনি থাকেন।
– তুই এখনো ‘আপনি’ ‘ আপনি’ করছিস কেন?
– তো? কি করবো?
– ‘তুমি ‘ করে বলবি।লোকে শুনলে কি বলবে? জামাইকে অই পুরনো দিনের মতো আপনি আপনি করছিস।
– লোকের কথায় আমার কি?
আমি ‘ আপনি’ করেই বলবো।এটাই কেন জানি অনেক বেশি আপন আপন লাগে।
আর যখন ইচ্ছে ‘ তুমি ‘ বলবো, যখন ইচ্ছে ‘ আপনি ‘!
– ধুর!
– ধুর না।সত্যি বলছি।তুমি করে বললে আনইজি লাগবে। আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে।।
– আচ্ছা ঠিক আছে।
– না, ঠিক নেই।।
– কি ঠিক নেই??!
– আপনি যে তুই তুই করে ডাকেন?
– যা… এখন থেকে আমিও আপনি করেই বলবো।।
– ধ্যাৎ!
– আচ্ছা, তুমি করে বলবো। ঠিক আছে?
– না।
– আবার কি না!?
– তুই করে বলবেন সবসময়।।
– হা।। তুই করে বলি আর যখন বাচ্চারা দেখবে ওদের আম্মুকে তুই করে বলি! তাও একজন টিচার হয়ে!! কি ভাববে বল?

চিন্তা করো! উনি বাচ্চা-কাচ্চার চিন্তাও করে ফেলেছেন!!
– আপনি আসলে একটা…
– একটা কি? শেষ কর কথাটা।।।
– বলছি, উঠে বসেন।
ঠেলে তুলে দিলাম।
– আপনি একটা নির্লজ্জ । লজ্জা শরম নাই।
ঘড়ির দিকে দেখেন।আর এক মিনিট ও আমি নাই।
বলেই আমি প্রায় দৌড়ে বেরিয়ে এলাম।
– এই হিয়া, শুন,শুন….
উনি ডাকছেন।আমি শুনে মিটিমিটি হাসছি।

– ভাইয়া তোকে ডাকছে তো।
রুম থেকে বেরিয়ে মাহি আপুর সাথে দেখা।
– কই? ডাকুক।
বলেই আমি মৃদু হেসে চলে আসছিলাম।
আপু খপ করে হাত ধরে বললো
– কি ব্যাপার?!! আজ একটু বেশিই খুশি খুশি লাগছে!!
– কেন? প্রতিদিন কি আমাকে কাঁদতে দেখো?
– তা দেখিনা।কিন্তু এতো টা খুশিও দেখিনি।
কিন্তু আজ তোর চোখে – মুখে,ঠোঁটে খুশির ঝিলিক, সেটা তো লুকাতে পারবিনা।
মাহি আপুর কথায় আমি আরও লজ্জা পেলাম।
এমন সময় ফুপি আমাদের দেখে ডাক দিলেন। আমিও হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম।

আজ মাহি আপু আর রিয়াদ ভাইয়া তারা চলে গেছে। একটু ফাঁকা ফাঁকা লাগছে।
কত আনন্দ করেছি একসাথে।
ছোট থেকে বড় হয়েছি।আপু কত দূর চলে গেলো!!

রেহান কতোটা ভালোবাসে সেটা প্রকাশ করতে পারেনি, হয়তো ওর অনুভূতি গুলো নিজে থেকে প্রকাশ করতে পারেনা।কিন্তু সেগুলো ওর পাগলামির মধ্যেই প্রকাশ পেয়ে যায়।

দুদিন পরে ফুপি নাস্তার টেবিলে বসে বললো – তোরা কদিনের জন্য ঘুরে আয়।
রেহান আমার দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছে।

আমরা ঘুরতে গেলাম।
আমার বরাবরই পাহাড় পছন্দ। প্রথমে সমুদ্র দেখলাম,তারপর পাহাড়ে । সব কিছু ছাপিয়ে রেহানের সাথে কাটানো সময় গুলো অনেক বেশি ভালো লাগার।
পাহাড়ে আমাদের সময় যেন আরও বেশি ভালো কাটছে। দুজন পাহাড়ি রাস্তায় হাত হেঁটেছি।।
সন্ধ্যায় দুজন পাশাপাশি বসে উপভোগ করেছি পাহাড়ি সন্ধ্যা।
রাতে খাবার পরে দুজনে বসে আছি।
আমি রেহানের কাঁধে মাথা এলিয়ে দিয়েছি।
ও গুনগুন করছে।
– গুনগুন না করে একটা গান শুনালে কি হয়?
– শুনবি? আচ্ছা তোকে আজ একটা পছন্দের গান শুনাই।
আমি বেশ আগ্রহ নিয়ে নড়েচড়ে বসলাম।

———————-

ঘুমহারা চোখে, ফিরে দেখি একবার।
ইচ্ছে করে তোমার, হাতে হাতটা মেলবার।

খুব মন খারাপের রাতে,
দূরের বাঁকা চাঁদটার সাথে,
আমার হাতটা যেন থাকে,
তোমার ছোট্ট হাতের পাশে।
তোমার ঘুম ভাঙ্গানোর রাতে,
যখন বড্ড একা লাগে,
আমার হাতটা যেন থাকে,
তোমার ছোট্ট হাতের পাশে।

তোমার দুচোখ ভরা মায়ায়,
আমার সকল বাহাদুরি।
তুমি শূন্য কোন দিনে,
আমি ভীষণ আনাড়ি।

খুব মন খারাপের রাতে,
দূরের বাঁকা চাঁদটার সাথে,
আমার হাতটা যেন থাকে,
তোমার ছোট্ট হাতের পাশে।
তোমার ঘুম ভাঙ্গানোর রাতে,
যখন বড্ড একা লাগে,
আমার হাতটা যেন থাকে,
তোমার ছোট্ট হাতের পাশে।

——————————

রেহান শক্ত করে আমার হাতটা ধরে আছে।
এই মুহূর্তে মনে হচ্ছে আমি নিজেকে সবচেয়ে সুখী বলে নির্দ্বিধায় দাবি করতে পারি।

– হিয়া…
– হুমম।
– হিয়া মন পাখি!
– হুমম… বলো।শুনছি তো।
– একটা রাত বারান্দায় বসে কাটাতে পারবি?
– এখানে?
– হুম। আজকে চাঁদের আলো কত সুন্দর দেখেছিস? এখানেই বসে থাকতে ইচ্ছে করছে তোর সাথে। থাকবি?
– হুম।
রেহান একহাতে আমাকে জড়িয়ে রেখেছে। আমিও বাধ্য মেয়ের মতো চুপটি করে ওর বুকে লেপ্টে আছি।
ওর হৃদস্পন্দন শুনছি।
অনেক রাত পর্যন্ত আমরা বসেছিলাম।

বাসায় ফেরার পরে আমি পাক্কা গৃহিণী হয়ে গেছি।রেহান সকালে উঠে ভার্সিটিতে চলে যায়।সকালে উঠে নাস্তা তৈরি করি।ওর কাপড় আয়রন করি।
ও চলে যাবার পরে ফুপিকে কিচেনে হেল্প করি। অবসরে আম্মুর কাছে যাই।
আর সবাই এতো কাছাকাছি থাকি যে কখনো মনে হয় না আমি শ্বশুর বাড়ি থাকি।ওর অপেক্ষা করি কখন ফিরবে।
বিকালে সবাই একসাথে বসে গল্প করি।
ও যখন কোনো কাজ করে, আমি বই পড়ি।এভাবেই সময় চলে যাচ্ছে।

কিছু দিন পরে আমার রেজাল্ট বের হলো। গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করলাম।
এরপর পোস্ট গ্রাজুয়েশনের জন্য ভর্তির এপ্লাই করলাম। ভর্তির আগে হটাৎ একটা ইমেইল পেলাম।।
পোস্ট গ্রাজুয়েশনের জন্য কানাডার একটা ভার্সিটিতে আমি সু্যোগ পেয়েছি।
কিন্তু আমিতো এপ্লাই ই করিনি।
এ কাজ রেহান ছাড়া কেউ করেনি।

রাতে রেহানকে এটা দেখিয়ে জিজ্ঞেস করলাম
– এসব কি?
– আরে! That’s great!! তোর চান্স হয়ে গেছে।
– সেটাই তো জিজ্ঞেস করছি।এসবের মানে কি?!! তুমি তো বলোনি এপ্লাই করেছো!!
– এভাবে বলছিস কেন? এখানে চান্স পাওয়া কতটা হার্ড জানিস? তোর তো লাক ভালো।
এটা থেকে মাস্টার্স ডিগ্রী নিতে পারলে তোর জন্য পিএইচডি করা আরও সহজ হবে।
– এসব গিয়ে তোমার স্টুডেন্টদের বুঝাও আমাকে বুঝাতে হবে না।
আমি সবাইকে ছেড়ে ওখানে গিয়ে পড়াশোনা করার প্রশ্নই আসে না। আর তোমার পিএইচডি?? তোমার ডিগ্রী আছে এটাই থাকুক আমার তো প্রয়োজন নেই।
– আশ্চর্য! আমার ডিগ্রী থাকা আর তোর থাকা এক কথা?
শোন, প্রত্যেকটা মানুষের রাইট আছে নিজের জন্য কিছু করা।
– তার মানে কি? আমি কিছু করতে চাইলে বাইরে গিয়েই পড়তে হবে? এখানে পড়ে কি কেউ হয়নি? সবাই বাইরে গিয়েই পড়ে?
– আচ্ছা, আচ্ছা ঠিক আছে।। মাথা ঠান্ডা কর।আমরা এটা নিয়ে পড়ে কথা বলবো।
কিছুদিন সময় আছে ভেবে চিন্তে সিদ্ধান্ত নেয়া যাবে।

রেহানের এমন কাজে আমি শুধু অবাকই হইনি, ভীষণ রাগও হচ্ছে।

রাতে আমি বেডে এসে পাশ ফিরে শুয়ে আছি।
রেহান কি কাজ করছিলো ল্যাপটপে।এর মধ্যে রেহান ও কোনো কথা বলেনি,আমিও চুপচাপ শুয়ে।
রেহানের দিকে না তাকিয়েও বুঝলাম ও বেডে এসেছে।
– কি হয়েছে? এতো চুপচাপ শুয়ে আছিস?
– কিছু না।
– কিছু তো একটা হয়েছে। কি হয়েছে বল।
– কিছুই হয়নি। কি বলবো?
– আমার দিকে ফিরে কথা বল।দেয়ালের সাথে কথা বলছিস নাকি?
এদিকে ফির।।
রেহান জোর করেই ওর দিকে ফেরালো।
– তুই বালিশ ভিজিয়ে ফেলেছিস! কি হয়েছে শুনি।বল।
– বললাম তো কিছু হয়নি।
– রাগ করেছিস?
– তুমি আমাকে দূরে পাঠিয়ে দিতে চাও?
– এইজন্য কাঁদছিস?!! বোকা মেয়ে।
রেহান বুকে জড়িয়ে ধরলো।
– তুই ভাবলি কি করে তোকে দূরে পাঠিয়ে দিতে চাই??
– তাহলে এটা করলা কেন?
– হুম। ঠিক আছে। তুই যদি যেতে না চাস তবে আমি জোর করবো না। তবে..
– তবে কি?

চলবে…..

প্রেমে পড়া বারন পার্ট -০৯

0

#প্রেমে_পড়া_বারন
# পার্ট – ৯
# Taslima Munni

আর একদিন যদি মুখ ফসকেও ‘ভাই’ বের হয় ,তবে দেখিস!
– কি করবেন?
– কি করবো?
রেহান ভাই আরেকটু কাছে এসে বললেন – দেখিস কি করি!

আমি উনার চোখের দিকে তাকিয়ে
-হুহ!
বলে ঘুরে আমার কাজ করতে লাগলাম।
– অই হুহ! কি?
রেহান ভাই টান দিয়ে উনার দিকে ফেরালেন।
– কিছু না। এমন করে বলছেন যেন আমি ইচ্ছে করেই করেছি।
– ইচ্ছে করে করিসনি ঠিক, কিন্তু নিজেকে বিরাট বড় মাপের বুদ্ধু প্রমাণ করেছিস।এখন যা, একটা কফি নিয়ে আয়।
এইলোকটার জন্য কফি করতে করতে আমার জীবন তেজপাতা হয়ে যাবে।

– বরের জন্য কফি! মিষ্টিটা একটু কম করে দিও ভাবি!
পিছনে তাকিয়ে দেখি রিয়াদ ভাইয়া আর মাহি আপু দাঁড়িয়ে।
– ভাইয়া,আপনি ভাবি ডাকছেন কেন??
– রেহান ভাইয়ের বউ বলে কথা! এই বাড়ির দশটা না, পাঁচটা না! একটাই মাত্র ভাবি!
তো কি ডাকবো?
– বুঝেছি।তো মিষ্টি কম দেবো কেন?
– মাহি,তুমি বোঝাও তোমার এই বোনকে। আমার দ্বারা হবে না বুঝে গেছি।
– কি বুঝাবে?
মাহি আপু আরও কাছে ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আমার কাঁধে হাত রেখে বলে
– আসলে হয়েছে কি হিয়া, বিয়ের পর নতুন নতুন সব কিছুই মধু মধু মনে হয়, তাই মিষ্টি কম দিলেও চলে।
এখন যদি করলার জুস নিয়েও ভাইয়াকে দিস, সেটা খেয়েও বলবে – সাধু! সাধু! তোমার হাতে জাদু আছে,এই হাতের ছোঁয়ায় সব কিছু অমৃত মনে হয়!!.
ফিল্মি স্টাইলে ডায়লগ দিয়ে যাচ্ছে মাহি আপু।
– ওওওও…. আচ্ছা! আচ্ছা! তাই বুঝি?!
তো রিয়াদ ভাইয়া তোমার হাতের কোন অখাদ্যকে অমৃত বলেছে শুনি?
– ওসব শুনতে নেই বেবি! ওটা সিক্রেট।
বলেই চোখে টিপ্পনী কাটলো।
– আরে আরে.. সিক্রেট ফাঁস হয়ে গেলে তোমার আপুর রন্ধন শিল্পের গুমর ফাঁস হয়ে যাবে কিনা!
– মানে?
– মানে, উনি আমাকে এক কাপ চা করে দিয়েছিলেন। অতি যত্নের ঠেলায় খুব সম্ভবত দু থেকে তিন চামচ দুধ,দু চামচ চিনি,আর আধা চামচ লবণ দিয়েছেন।
ও,হা, ডাক্তার সাহেবা স্বাস্থ্য সচেতন কিনা! তাই সাথে এলাচ,লবঙ্গ, আদাও দিয়েছেন।
বুঝতে পারছো কত সুস্বাদু হয়েছিলো!।
– তুমি আবার আমাকে খোটা দিচ্ছো? আমি কি জানতাম নাকি লিকার চায়ে আদা,লবঙ্গ এসব দেয়,দুধ চায়ে দেয় না!
জীবনেও আর কিছু করে খাওয়াবো না।

রিয়াদ ভাইয়া কথা শুনে আমি হাসতে হাসতে শেষ। আসলে মাহি আপু কখনো কিচেনে যায়নি। সব সময় পড়াশোনা নিয়েই ব্যস্ত থাকতো আর রান্নায় কখনো কোনো আগ্রহই ছিলো না। ফুপি অনেক বলেও কিছু হয়নি।
ওদের খুনসুটি আমার খুব ভালো লাগছে।
আমার কফি ইতোমধ্যে হয়ে গেছে।
রিয়াদ ভাইয়া আর মাহি আপু এটা নিয়েই পাল্টাপাল্টি যুক্তি দেখাচ্ছে। দিয়াও এসে যোগ দিলো।

আমি হাসতে হাসতে কফি নিয়ে চলে এলাম।
– এই নিন আপনার কফি।
– হুম।।
হাত বাড়িয়ে কফি নিলেন।
– এভাবে হাসছিস কেন?
– কি হয়েছে শুনবেন?
– বল, শুনি।
ওদের কথাগুলো বললাম। বলে আবার হাসি পেয়ে গেছে।
– ঠিকই তো বলেছে। মিষ্টি বউ থাকলে একস্ট্রা মিষ্টির দরকার নেই তো।।
উনার কথা শুনে আমার হাসি থেমে গেছে। উনি কি অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে আছেন।গভীর দৃষ্টিতে, এই দৃষ্টিতে কিছু একটা আছে!!

-নে,কফিতে একটা চুমুক দিয়ে দে।।
– কেন?
– মিষ্টি ঠিক আছে কিনা দেখে দিবি সবসময়।
– সেটাতো, এক চুমুক সবসময় ই খাই!
বলতে বলতে এক চুমুক দিলাম।
– জানি তো! কিন্তু আজকে হাসির জন্য ভুলে গেছিস।
এইরে! একটা ধরা খেলাম!!
– জানেন মানে?
-অইযে, আমার কফির কাপে আমার আগে একটা বিড়াল মুখ দেয়! সেটা জানি আমি।
– আমি বিড়াল?
উনি হাসতে হাসতে কফিতে চুমুক দিচ্ছেন।
– কারো উপকার করলে এমন ই,কথা শুনতে হয়! ঠিক আছে, আর দেবো না।
আমি মন খারাপ করে জানালার পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম।
কাঁধে গরম একটা বাতাস অনুভব করলাম।
না,ভুল হয়নি,এটা নিঃশ্বাসের।
রেহান ভাই আমার ঠিক পিছনে এসে আলতো করে জড়িয়ে ধরে কাঁধে মুখ রেখে বললেন –
এই বিড়ালটি যদি মুখ না দেয়, সেই কফি তো খাওয়া যায় না। তুই যে রোজ এমন করিস সেটা অনেক আগে থেকেই জানি। একদিন দেখছিলাম, তারপর কিছু দিন খেয়াল করে দেখেছি।
শুন…
আমাকে উনার দিকে ফেরালেন।
– কি?
– আমি কিন্তু জেনেশুনেই কফি খেতাম।
এবার আমার ঠোঁটের কোনে হাসি আসলো।
– তার মানে আপনিও প্রেমে পড়েছিলেন!!?
– নাতো! জানিস না প্রেমে পড়া বারন??
– কেন বারন?
– তোর প্রেমে পড়া বারন ছিলো। তোর প্রেমে পড়ার কোনো কারণ ছিলো না।
– তাই বুঝি?
– হুম। কেন জানিস?
– কেন?
– উত্তর টা প্রথম আমিও জানতাম না।
এখন জানি।
কারণ তুই আমার প্রতিদিনের অভ্যাস হয়ে গেছিস।যখন চাইতাম তোকে সামনে পেতাম। আমার প্রয়োজনের সবকিছু তো খেয়াল করতিস।কখনো মনে হয়নি তুই না থাকলে কি হবে!
তুই যখন আমার নিত্যদিনের অংশ হয়ে ছিলি,তাই তোর মাঝে মজে গেছি কখন নিজেই তো বুঝিনি।
বলেই কপালে একটা চুমু খেলেন।
আমার চোখ ভিজে গেছে।
আমি ভাবতাম এই মানুষটা আমার অনুভূতি বুঝে না।অথচ এই মানুষটাই আমার থেকে বেশি ভালোবেসে গেছে নিজের অজান্তেই।

-আপু…
দিয়া দরজার বাইরে থেকে ডাকলো।
রেহান ভাই সরে গিয়ে কফির মগ তুলে নিলো।
– ভেতরে আয়।
-তোকে আর ভাইয়াকে নিচে ডাকছে।

নিচে গিয়ে দেখি মাহি আপু, রিয়াদ ভাইয়া, আরিফ,দিয়া সবাই মিলে প্ল্যান করেছে ঘুরতে যাবে।
আব্বু,আম্মু,ফুপি তারা গেলেন না। আমরা অনেক বলার পরেও উনারা বাসায় থেকে গেলেন।

আমরা ১২টার দিকে বের হলাম। দুপুরের খাবারের পার্সেল নিয়ে সবাই লং ড্রাইভে শহরের বাইরে গেলাম।
যান্ত্রিক জীবনের বাইরে প্রকৃতির ছোঁয়ায় অন্যরকম ভালো লাগা কাজ করছে।
একটা নদীর তীরে এসে নৌকা করে ঘুরলাম অনেক সময়। বিকেলে শান্ত নদীর শীতল বাতাসে মন জুড়িয়ে গেছে।
মনে হয় অনন্তকাল যদি এভাবেই থাকতে পারতাম!!

দিয়া,আরিফ রেহান ভাইকে ধরলো একটা গান শুনাতে।
রেহান ভাই কিন্তু দারুণ গান করেন। সেই ছোট্ট বেলায় কত শুনেছি উনার গান! বাসায় প্রায়ই গাইতেন।
কিন্তু বাইরে থেকে ফেরার পরে আর গাইতে শুনিনি।
আজ সবাই ধরলো গাইতে।কিন্তু উনি রিয়াদ ভাইয়া থাকায় একটু ইতস্তত করছেন। মাহি আপু, রিয়াদ ভাইয়ার অনুরোধে শেষ পর্যন্ত একটা গান ধরলেন —
——————

ভালোবেসে সখী নিভৃতে যতনে
আমার নামটি লিখো– তোমার
মনের মন্দিরে।
আমার পরানে যে গান বাজিছে
তাহার তালটি শিখো– তোমার
চরণমঞ্জীরে।।

ধরিয়া রাখিয়ো সোহাগে আদরে
আমার মুখর পাখি– তোমার
প্রাসাদপ্রাঙ্গণ।।

মনে ক’রে সখী, বাঁধিয়া রাখিয়ো
আমার হাতের রাখী– তোমার
কনককঙ্কণে॥

আমার লতার একটি মুকুল
ভুলিয়া তুলিয়া রেখো– তোমার
অলকবন্ধনে।
আমার স্মরণ শুভ-সিন্দুরে
একটি বিন্দু এঁকো– তোমার
ললাটচন্দনে।

আমার মনের মোহের মাধুরী
মাখিয়া রাখিয়া দিয়ো– তোমার
অঙ্গসৌরভে।
আমার আকুল জীবনমরণ
টুটিয়া লুটিয়া নিয়ো– তোমার
অতুল গৌরবে।।

————–

গানটা শুনতে এতো ভালো লাগছিলো যে বলে বুঝাতে পারবো না। এই পরিবেশে যেন গানটা হৃদয় ছুঁয়ে গেছে।
আমাদের ফিরতে ফিরতে রাত হয়ে গেছে।
সারাটা দিন সত্যিই অনেক আনন্দ হয়েছে সবার সাথে।

রাতে সবাই যখন যে যার রুমে চলে গেছে। তখন আমিও রুমে এলাম।
মাহি আপু আর দিয়ার সাথে অনেক সময় গল্প করলাম।
রুমে এসে দেখি রেহান ভাই রুমে নেই।বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছে।
– এখানে কি করছেন?
– শুনে কি করবি?
– কেন?
– তোর শোনার সময় কই!! এতো তাড়াতাড়ি তোর গল্প করা শেষ হয়ে গেলো??
ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি- অনেক রাত হয়ে গেছে।
– এতটা বেজে গেছে! খেয়াল ই করিনি।
– হুম।
– রুমে আসবেন না?
– নাহ! এখানেই ভালো লাগছে।
আমিও গিয়ে বেলকনিতে দাঁড়ালাম।উনি চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছেন।
আমি বুঝতে পারছি না, কিন্তু মনে হয় রেগে আছেন কিছুটা।
আমিও চুপ করে আকাশ দেখছি।
কিছু সময় পরে উনি বললেন
– তুই এখানেই থাক।আমি গেলাম।
বলেই রুমে চলে গেলেন।
আজব! আমি দাঁড়িয়ে আছি আর উনি চলে গেলেন রুমে!

রুমে এসে আমিও বললাম – কি সমস্যা আপনার? আমাকে ফেলেই চলে আসলেন?
নাহয় একটু দেরি হয়েছে, তাতে কি হয়েছে শুনি?
উনি হঠাৎ উঠে এসে আমাকে দু’হাতে শক্ত করে ধরে
-এই মেয়ে, তুই কি কিছুই বুঝিস না? এতো বোকা কেন তুই?
উনার কথায় আমার মুখভার হয়ে গেছে।

চলবে….

প্রেমে পড়া বারন পার্ট -০৮

0

#প্রেমে_পড়া_বারন
# পার্ট – ৮
# Taslima Munni

রেহান ভাইয়ের সাথে কথা বলার পরে কখন যে ঘুমিয়ে পড়লাম!!
সকালে আম্মুর গলা শুনে ঘুম ভাঙলো।আম্মু এতো উচ্চস্বরে কেন কথা বলছে??.
ঘুম হালকা হতেই কানে আসলো
– বিয়ের দিনও কেউ এভাবে পড়ে পড়ে নিশ্চিন্তে ঘুমায়! এই জীবনে দেখিনি!! এবার যদি না উঠিস হিয়া!!
এই যা তো…. তোর আব্বুকে ডেকে আন..।
আম্মুর কথা শুনে মনে পড়লো – আজকে আমার বিয়ে!!

তড়িঘড়ি করে উঠে বসলাম। দেখি দিয়া আর আম্মু দাঁড়িয়ে। আম্মুর চোখেমুখে বিরক্তি।
– এবার উঠে উদ্ধার করেন আমাকে! বিয়ের দিনেও উনারে ১০ জনে ডেকে তুলতে পারে না।
আমি আশেপাশে ভালো করে তাকিয়ে বললাম – আম্মু, তোমরা তো দুইজন, বাকি আটজন কই?
আম্মু আমার দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে, রাগে বিড়বিড় করতে করতে চলে গেলো।
মাঝেমধ্যে আম্মু যখন রেগে যায় তখন আরেকটু রাগিয়ে দিতে আমার খুব মজা লাগে।
– তোর কপাল ভালো আজকে তোর বিয়ে। না হলে আম্মু যা রেগে আছেন!! কতক্ষণ ধরে ডেকে যাচ্ছে, তোর উঠার নাম নেই।
তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে নিচে আয়।
দিয়াও চলে গেলো।
আজ বিয়ে!!
মনে পড়তেই হাত পা যেন জমে আসছে!

বিয়ের করা এতো ঝামেলা!! ধুর, এই আধ মণের বিয়ের ড্রেস পড়ে সারাদিন সঙ সেজে বসে থাকা…. অনেক বিরক্ত লাগছে আমার। আমি কখন এই আজাব থেকে বের হবো !!!
প্রাণ টা হাঁসফাঁশ করছে।।
ঘরোয়া আয়োজন বললেও আমি তো দেখছি লোকজনের অভাব নেই!
এতো লোক কোথা থেকে আসলো!!

রেহান ভাই কিছু সময় পাশে বসে ছিলো, তারপর উঠে কার সাথে কথা বলায় ব্যস্ত।
দিয়া,মাহি আপু সবাই ব্যস্ত। এদিকে আমার অবস্থা খারাপ!! ওয়াশরুমে যাবো তার উপায় নেই।
কাউকে সামনে দেখতে না পেয়ে, এদিক সেদিক তাকিয়ে মাহি আপুকে দেখে, ইশারা করতেই কাছে আসলো।।
(রাইবাদিনী ননদিনী! পাইছি তোমারে,অনেক তো মজা করছিলা আমারে নিয়া!
এখন তোমারে একটু খাটিয়ে শোধ টা নিয়েই নিবো)
– কিছু লাগবে তোর?
– তোমরা সবাই কই থাকো? এই দিকে আমার দম বেরিয়ে আসছে। আর কত সময় এভাবে থাকতে হবে?
– কত সময় এভাবে থাকতে হবে! সেটা নিয়ে ভাবছিস? নাকি কখন কবুল বলবি তার জন্য তড় সইছে নাহ?
ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করলো মাহি আপু।
– উফফফ! তুমি সারাক্ষণ পারোও!
ওয়াশরুমে যাবো কিভাবে?
– ওহহহ! আচ্ছা আয় আমার সাথে।
– এই লেহেঙ্গা পড়ে হাঁটা যাচ্ছে না তো! এটাতো একটু ধরে রাখতে হবে।
– তাইতো!
অই,দিয়া….
– হে,কি হয়েছে? বলো।
– হিয়া ওয়াশরুমে যাবে, একটু হেল্প কর।
মাহি আপু আর দিয়া লেহেঙ্গা সামলাতে সামলাতে নিয়ে গেলো।
ওয়াশরুমের গ্লাসে নিজেকে ভালো করে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছি – উফফফ! কি সুইট লাগছে আমাকে!!
– অই হিয়া! ওয়াশরুমে ঢুকে ঘুমিয়ে পড়ছিস?
মাহি আপু তাড়া দিচ্ছে। ধুর!
নিজেকে বউ বউ দেখতে কত্ত সুন্দর লাগছে!! ইচ্ছে তো হচ্ছে নিজেকে একটা চুমু খেতে!!
হাতে একটা চুমু দিয়ে আলতো করে গালে ছুঁয়ে দিলাম।
আপুর তাড়ায় ওয়াশরুম থেকে বের হলাম।
– আপু,আমার কেমন যেন লাগছে!
– কেমন লাগছে?!!
– জানি না, হাত- পা জমে আসছে। মনে হয় অজ্ঞান হয়ে যাবো!
– লক্ষী বোন আমার,এতো টেনশন নিচ্ছিস কেন?
এই জন্য এমন হচ্ছে।
– দেখো, আমি ঘেমে যাচ্ছি!
– এসির মধ্যে থেকেও!
আয়, তুই বস এখানে। তোকে ঠান্ডা শরবত করে দিচ্ছি।ভালো লাগবে।
আপু আমাকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লো।
আমি মনে মনে হাসছি। খাটো খাটো!
খুব মজা করেছিলা দুজনে! বেকুব বানিয়ে ছেড়েছো!

বিয়ে পড়ানোর সময় কবুল বলতে গিয়ে আমার ভীষণ কান্না পাচ্ছিলো। আমি সেই নিজের বাড়িতে থাকবো।বাবা-মাকেও ছেড়ে দূরে যেতে হচ্ছে না।আমি যাকে মনে মনে চেয়েছিলাম, সে-ই মানুষই এসেছে আমার জীবনে। তাকেই আপন করে নিচ্ছি, তবুও কান্না পাচ্ছিলো।
বিয়ে জিনিস টা কেমন! কবুল বলার সাথে সাথে আরেক জন মানুষের জীবনের সাথে আজীবনের জন্য জড়িয়ে যাওয়া! কত দায়িত্ব গ্রহণ করা!
নিজের ব্যক্তিগত স্বাধীন জীবন কাউকে প্রবেশাধিকার দেয়া। কতকিছু মাথায় আসছে!!
বিয়ের পর্ব সমাধান হলো!
অবশেষে আমি উনাকে পেলাম।

রাতে মাহি আপু, দিয়া আমাকে রেহান ভাইয়ের রুমে দিয়ে, চলে গেলো।।
রুমটা খুব সুন্দর করে ফুল দিয়ে সাজানো।
এই রুমটা আমার অপরিচিত নয়।কতবার এসেছি এই রুমে। তবুও একটা অস্বস্তি হচ্ছে।
প্রায় আধাঘন্টা পরে রেহান ভাই রুমে আসলো।উনাকে দেখে বুকের ভেতর সেই হাতুড়ি পিটানোর শব্দ শুনতে পাচ্ছি।
হাত-পা ঝিমঝিম করছে।

রেহান ভাই আর আমি! একটা রুমে!!
আমরা স্বামী-স্ত্রী! ভাবতেই আমার… উনি কি বলবেন এখন?
আমি তো কথা খুঁজে পাচ্ছি না।
– এভাবে স্ট্যাচু হয়ে আছিস কেন? ঠিক আছিস তো?
উনার কথা শুনে বুকের উপর থেকে একটা পাথর সরে গেছে যেন।
– হুম ঠিক আছি।
রেহান ভাই আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি চোখ নামিয়ে নিলাম।
– তোকে আজ অনেক সুন্দর লাগছে।
উনার কথায় একটু লজ্জা পেলাম। চোখ নামিয়ে নিলাম।
– জামাইকে সালাম করতে হয়,সেটাও জানিস না?

এইরে… মাহি আপু কি কি যেন বলেছিলো!
হা! সালাম করতে বলেছিলো বোধহয়! ভুলেই গেছি।।
তড়িঘড়ি করে সালাম করতে উঠতে গিয়ে পড়েই যাচ্ছিলাম।
– আরে আস্ত,আস্তে!
টুপ করে সালাম করে নিলাম।
– আরে, আরে সালাম করতে হবে না।এমনি বললাম।। তুই এতো এ্যাভনরমাল বিহেভ করছিস কেন??
Take it easy!
তুই ফ্রেশ হয়ে আয়।একসাথে নামাজ পড়বো।

ফ্রেশ হয়ে দুজন একসাথে নামাজ আদায় করলাম। অন্যরকম একটা প্রশান্তিতে মন ভরে গেলো।
বেডের একপাশে বসে আছি। রেহান ভাইও এসে একটা বালিশে হেলান দিয়ে বসলেন।
– ওখানে বসে আছিস কেন? এখানে আয়।
আমিও বাধ্য মেয়ের মতো উনার পাশে গিয়ে বসলাম।
রেহান ভাই আমার হাতটা টেনে নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে নিলেন।
উনার স্পর্শে অদ্ভুত একটা অনুভূতি হচ্ছে আমার।
– ওইদিন আমার কথায় খুব কষ্ট পেয়েছিলি?
– হুম।
হালকা মাথা নেড়ে জবাব দিলাম।
– আমি নিজেই বুঝতে পারছিলাম না কি করবো।
সবাই কিভাবে রিয়েক্ট করবে। কিন্তু যে দিন ইশতিয়াককে দেখলাম তোর পিছনেই বেশি ঘুরঘুর করছে, আমার খুব রাগ হচ্ছিলো।
– আপনি জেলাস ছিলেন?
– হা ছিলাম। তোর পাশে অন্যকাউকে সহ্য করতে পারবো না, সেটা অনেক আগেই বুঝতে পেরেছি।কিন্তু..
– কিন্তু কি?
– বিবেক বাধা দিচ্ছিলো। মনে হচ্ছিলো আমার আর তোর মাঝে অনেক গ্যাপ। জেনেশুনে তোকে অসম একটা সম্পর্কে জড়াতে ইচ্ছে করছিলো না।
রেহান ভাইয়ের কথাগুলো শুনে আমিও স্বাভাবিক হয়ে গেলাম। ভয়,অস্বস্তি অনেক টা কেটে গেছে।
– ওহহহ…
এখন বুঝি বয়স কমে সমান হয়ে গেছে?
– তা কমেনি আবার!! ১০ বছর কমে গেছে!
-হুহ!!

অনেক রাত হয়ে গেছে গল্প করতে করতে।
রেহান ভাই বললো – সারাদিন তো অনেক ধকল গেলো। চল ঘুমাই।
– হুম।
আমিও সায় দিলাম।
আমি যখন বালিশটা ঠিক করে শুতে যাবো, তখন উনি বললেন
– সত্যিই ঘুমাবি?
এ কথা শুনে উনার দিকে ফিরে তাকিয়ে বললাম – হা। আপনিই তো বললেন!
– আচ্ছা ঠিক আছে ঘুমা।
আমি শুতে যাবো উনি হাতটা টেনে উনার বুকে টেনে নিলেন আমাকে!!
– ওখানে ঘুমাতে কে বললো তোকে!.
– তো, কোথায় ঘুমাবো?
– এখানে।
বলে আমাকে বুকে জড়িয়ে নিলেন।
– উফফ।এভাবে কেউ ধরে রাখলে আমি ঘুমাতে পারি না।
– এখন থেকে এভাবেই ঘুমাতে হবে!
বলেই কপালে একটা চুমু দিলেন!!
– কি, করছেন কি?
– আমার বউকে আমি দিলাম, তোর কি সমস্যা?
চুপচাপ ঘুমা।
বলেই চোখ বন্ধ করে নিলেন।।

উনার এতোটা কাছে আমি। উনার প্রতিটি হার্টবিট শুনতে পাচ্ছি। উনার নিঃশ্বাস ছুঁয়ে যাচ্ছে আমায়…

পরদিন সকালে আম্মু,ফুপি,মাহি আপু নাস্তা তৈরি করছে। আমিও গেলাম।
ডাইনিং এ আব্বু,রিয়াদ ভাইয়া,আরিফ,দিয়া বসে নাস্তা করছে।
– রেহান কই রে?
– রেহান ভাই তো ঘুমাচ্ছে।
আব্বুর কাশি শুনে গিয়ে তাড়াতাড়ি পানি দিলাম। ভীষম খেয়েছেন।
মাহি আপু রিয়াদ ভাইয়ার মুখে, রিয়াদ ভাই মাহি আপুর মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। আবার আম্মুর দিকেও তাকাচ্ছে।
দিয়া খিক করে হেসে মুখ হাত চেপে হাসি থামিয়ে দিলো।।
আমি বুঝতে পারলাম না কি হচ্ছে এখানে।
এদিকে রেহান ভাইও সিঁড়ি দিয়ে নেমে এসেছে।
– অইতো, রেহান ভাই এসে গেছে।
বলেই মাহি আপু মুখ টিপে হাসছে।

এতোক্ষনে বুঝলাম।।
আমি রেহান ভাই বলেছি বলেই আব্বু ভীষম খেয়ে গেছেন!

বিয়ে হলেও যেন কিছুই বদলায়নি এই বাড়ি আমার কাছে নতুন নয়।ছোট্ট বেলা থেকেই এই বাড়ির প্রতিটি কোনা আমার চেনা।
শুধু আমার নিজের রুমটা ছাড়তে হয়েছে!!

রুমে এসে দেখি রেহান ভাই বই পড়ছেন।
আমি যে আসলাম উনি তাকিয়েও দেখেননি।
আমি ড্রেসিং টেবিলের সামনে গুছিয়ে রাখছি।
গ্লাসে দেখলাম উনি আমার পেছনে এসে দাঁড়িয়েছেন।
ঘুরে দাঁড়িয়ে বললাম – কি?
– তোর মাথায় কি আছে?
মাথায় হাত দিয়ে বললাম- কই? কিছু নেই তো।
– এইজন্যই!!
– এজন্যই কি?
– তোর মাথায় যে কিচ্ছু নেই এই জন্যই…
– কি… বলবেন তো!!
– আমি তোর ভাই লাগি?
– অহহ!
– এতো দিনের অভ্যাস।
– এতো দিনের অভ্যাস!! সবার সামনে কি একটা লজ্জায় পড়তে হলো, তোর গাধামির জন্য!
– আমি কি ইচ্ছে করে বলেছি নাকি!!
– আর একদিন যদি মুখ ফসকেও বের হয়,তবে দেখিস!
– কি করবেন?
– কি করবো?
রেহান ভাই আরেকটু কাছে এসে বললেন – দেখিস কি করি!

চলবে….

প্রেমে পড়া বারন পার্ট -০৭

0

#প্রেমে_পড়া_বারন
# পার্ট -৭
# Taslima Munni
.

হাতে মেহেদী দিয়ে বসে আছি।আজ আমার হলুদ ছিলো। সব কিছু মনে হয় স্বপ্ন দেখছি।
আমি মনে হয় ঘোরের মাঝে আছি,নয়তো স্বপ্ন দেখছি। যদি তাই হয় তবে এই ঘোর না কাটুক,যদি স্বপ্ন হয় তবে এই স্বপ্ন ছেড়ে জাগতে চাই না।

রেহান ভাই যখন আব্বু আম্মুকে বিয়ের কথা বললো, সবাই খুব খুশি হয়েছে। আম্মু আর ফুপি মনে হয় সবচেয়ে বেশি খুশি হয়েছেন সেটা উনাদের আগ্রহ আর উৎসাহ দেখেই বোঝা যাচ্ছে।
পারে তো তখনই বিয়ে দিয়ে দেন!!
মাঝে দুদিন সময় গেলো। বিয়ের শপিং, সবকিছু এই দুইদিনে শেষ হলো।
বিয়ের আয়োজন অনেকটা ঘরোয়া ভাবেই করা হয়েছে। খুব কাছের আত্মীয়-স্বজন,বন্ধু-বান্ধবদের ইনভাইট করা হয়েছে।

(আপনাদের ও নিমন্ত্রণ রইলো বিয়ের!) ??

এই দুইদিনে রেহান ভাইয়ের সাথে দেখাও হয়নি।আমি রুম থেকেই বের হইনি,আর যখন মাহি আপু, দিয়া, রিয়াদ ভাইয়া সবাই আমাকে নিয়ে শপিং এ গেলো তখনও উনাকে দেখিনি। মনে মনে খুঁজেছি,কিন্তু পেলাম না! একটু মন খারাপ ছিলো।
আজ দুজনের হলুদ সন্ধ্যা এক সাথেই হলো। সবাই খুব আনন্দ করেছে।
উনাকেও খুব সুন্দর লাগছিলো। কিন্তু সবার সামনে লজ্জায় আর কথা বলতে পারিনি!
মাহি আপু আমার হাতে মেহেদী দিয়ে আমাকে রুমে দিয়ে গেছেন। ।

আমার ভাবনায় ছেদ পড়লো মাহি আপুর কথায়।
– মেহেদী শুকিয়ে গেছে?
– হা।
– তাহলে, আয় তুলে দিচ্ছি।তারপর ফ্রেশ হয়ে ঘুমিয়ে পড়।
– আচ্ছা।
– যদিও তোর ঘুম আসবে না জানি! কিন্তু আজ না ঘুমালে,কাল তো জাগতে পারবি না!
বলেই চোখে টিপ্পনী কাটলো!!
– ধুর! তোমার শুধু অসভ্যতা!
– হা,আমি বললেই অসভ্যতা! ঠিক আছে! দেখবোনে!

মাহি আপু চলে যাবার পরে ফ্রেশ হয়ে বিছানার এলাম।
কিন্তু কিছুতেই ঘুম আসছে না।
রেহান ভাই কি ঘুমাচ্ছেন? দুই দিনের মধ্যে একবারও কথা হয়নি।উনি ইচ্ছে করলেই একবার ফোন দিতে পারতেন, সেটাও দেয়নি।
আমি কি করে নির্লজ্জের মতো ফোন দেই?
তাই আমিও দেইনি।
এসব ভাবতে ভাবতে একটা ফোন আসলো। মোবাইল হাতে নিয়ে দেখি রেহান ভাই!!.
রিসিভ করে কি বলবো ভেবে পাচ্ছি না।মনে হচ্ছে বুকে কেউ হাতুড়ি দিয়ে পেটাচ্ছে!
– হ্যালো।
– ঘুমিয়ে পড়েছিলি?.
– না।
– কি করছিস?
– শুয়ে আছি।
– ঘুম আসছে না?
– আপনি ঘুমাননি?
– আমারও ঘুম আসছে না। আজকে তোকে অনেক সুন্দর লাগছিলো । বউ বউ।।
বলেই হাসলেন।
উনার কথা শুনে আমি মিটিমিটি হাসছি।
– জানিস, এমন হুট করে সবটা হয়ে যাবে সেটা ভাবিনি।।
– আমিও না!
– বেচারা ইশতিয়াক!!
তবে ওকে একটা ধন্যবাদ জানানো দরকার।
– কেন?.
– ওর জন্যই আজকে এসব হচ্ছে।
– হুম।
– আচ্ছা এখন ঘুমিয়ে পড়।কালকে তো সারাদিন অনেক প্রেশার যাবে।
– আচ্ছা।
– আর শুন।
– কি?
– বিয়ের সাজে চশমা টা পরিস না,প্লিজ!
– আমি চশমা ছাড়া…!!
– আচ্ছা ঠিক আছে পড়িস।এমনি বললাম।
আমার কি আর সেই কপাল!.
আমার তো বউ হবে এক কানি!!
– কিহ?
রাগে আমার.. ইচ্ছে করছে…
চশমা পড়ি বলে এই ভাইবোন গুলো কত নাম দিলো আমাকে! কানি! চার ব্যাটারি!!
আর আজ উনিও!.
– ভালো হয়েছে আমি কানি।কানি বিয়ে করতে কে বলেছে? করতে হবে না বিয়ে।
– আচ্ছা, আচ্ছা, সরি সরি আর বলবো না।। এখন রাখি।তুই ঘুমা।
– আচ্ছা ঠিক আছে।
রেহান ভাই ফোন রেখে দিলেন।।ভাবনার সাগরে ডুব দিয়ে আমিও ঘুমে তলিয়ে গেলাম।

চলবে….

প্রেমে পড়া বারন পার্ট -০৬

0

#প্রেমে_পড়া_বারন
# পার্ট – ৬
# Taslima Munni

বাসা ভর্তি মানুষ।
প্রথমে খেয়াল না করলেও পরে ভালো করে দেখলাম, রিয়াদ ভাইয়া দেখতে মাশা-আল্লাহ!! মাহি আপুর সাথে অনেক সুন্দর মানিয়েছে।উনার সাথে কথা বলেও ভালো লাগলো।অনেক মিশুক একজন মানুষ। শুধু উনি নন।উনার ফ্যামিলির সবাই অনেক মিশুক।
মাহি আপুর সাথে উনাদের ফ্যামিলিরও অনেক ভালো সম্পর্ক। মাহি আপুর প্রেমের বিয়ে!! ইন্টার্নশিপ শেষ করেই বাসায় ফিরে এসেছে মাহি আপু। রিয়াদ ভাইয়াও ডাক্তার হবেন ভেবেছিলাম। কিন্তু উনি একজন সরকারি কর্মকর্তা!
মাহি আপু এতদিন চট্টগ্রাম থেকে এতো দূর এগিয়েছে! আমরা টেরই পাইনি! অবশ্য রেহান ভাইকে নিজেই জানিয়েছে।

মাহি আপুকে কোথাও দেখতে না পেয়ে ফুপির বাসায় গেলাম। উনি হালকা সাজুগুজু করে রুম থেকে কেবল বের হবেন,তখনই আমি হাজির।
– কি? এভাবে কি দেখছিস?
– তোমাকে।।
– আমাকে জীবনে প্রথম দেখছিস? দেখ তবে, ভালো করে দেখ।
মাহি আপু একটা ভাব নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
– দেখে তো মনে হয়না, কোনো দিন ভাজা মাছ উল্টে খেতে পারো! তলে তলে এতো দূর।তুমি তো আসলে একটা মিচকে শয়তান!
ভেজা বিড়াল!
– যা ইচ্ছে বল,আজকে আর কিছু বলবো না।তবে তোর মুখটা দেখার মতো হয়েছিলো!! হাহাহা…..
– হাসবা না।তোমার হাসি দেখে গা জ্বলে যাচ্ছে আমার। এভাবে ভয় দেখালে!?আর নিলে তো নিলে রেহান ভাইয়ের নাম নিয়েই ধোঁকা দিলে!!
– তো! ভাইয়াকে তো আর বলিনি কিছু, দিয়া আর আমার প্ল্যান ছিলো। মামিকে কিছু বলতে দেইনি।আরিফ তো মাঝখান থেকে অর্ধেক কথা বলে আরও সহজ করে দিলো! শুধু বিয়ের শপিং বললো, কিন্তু কার বিয়ে সেটা তো বলেনি।তারপর ও আরও কিছু বলতো কিন্তু দিয়ার ইশারায় চুপ হয়ে গেছে।

– তোমরা তো মজা করেই খালাস!
আমি এখন রেহান ভাইয়ের সামনে যাবো কিভাবে?
– কিভাবে যাবি মানে? কিছু বলেছিস নাকি?
এই, তুই কি বলেছিস?
– তোমার আর শুনতে হবে না। তুমি যাও।উনারা অপেক্ষা করছে।
– হুম। যাচ্ছি যাচ্ছি।
কিন্তু…
– কিন্তু কি?
– কে যে কোথায় ডুবে মরে, সে খবর কি আমরা জানি না?
প্রেমের মরা জলে ডুবে না…..♪♪♪
ও প্রেম…. ♪♪♪

গান গাইতে গাইতে চলে গেলো!!
আমাকে কিছু বলার সুযোগ দিলো না।
কি বলে গেলো বুঝতে বাকি নেই আমার।

মাথা ধরে আছে। এতো মানুষের ভীড়ে যেতে ইচ্ছে করছে না। মাহি আপুর রুমেই শুয়ে আছি।।
কিছুক্ষণ পরে রেহান ভাই একটা ব্যাগ হাতে রুমে ঢুকলো।উনাকে দেখে আমি উঠে বসলাম। ব্যাগটা একপাশে রেখে বললেন -তুই একা এখানে কি করিস?
– আপনি ও আমার সাথে মিথ্যা বললেন?
– তুই ভালো করে জানিস আমি মিথ্যা বলি না।
– তাহলে ওইসময় কি বলেছিলেন?
– আমিতো তোর নাম বলিনি। যা বলেছি মাহির কথা বলেছি,মাহিকে হ্যাপি রাখবে। তবে হা,এটা ঠিক -তুই নিজের কথা বলেছিস দেখেও আমি শুধরে দেইনি।
– তাই, না?
– হুম।
– আর যে বললেন আমাকে বাড়ি থেকে তাড়াতাড়ি বিদায় করার জন্য বিয়ে ঠিক করা হয়েছে!?
– এটাও তো সত্যি। তবে একটু ঘুরিয়ে আরকি..
মাহি বড়,অকে বিদায় না করে, তোকে বিদায় করা যাবে না।
– অনেক চালাক আপনি!
– এটা অন্তত আমাকে বলিস না।আমি খুব সোজাসাপটা মানুষ!
রেহান ভাই চলে গেলেন।

বিয়াদ ভাইয়ার সাথে উনার ভাবি,ভাতিজি,বোন,কাজিন সাব্বির,উষা,মামা-মামি,মামাতো বোন আনজুম,উনার বন্ধু অনিক,ইশতিয়াক এসেছে। সারা বাড়ি গমগম করছে। বিয়ে বাড়ি বলে কথা!
সবার সাথে পরিচয় হয়ে গেছে। বিয়ে শপিং, ঘুরাঘুরি করে দিন পেরিয়ে যাচ্ছে। বিয়ের দিন এগিয়ে আসছে।
রিয়াদ ভাইয়া বন্ধ ইশতিয়াক ভাইয়া,আনজুম আপু, দিয়া, আরিফ, উষা একসাথে বিকালবেলায় বাগানে গল্প করছিলাম।
হঠাৎ রেহান ভাই এসে বললেন – হিয়া একটু আয় তো।
মাহি আপু, রিয়াদ ভাইয়া, ভাবি এসে উপস্থিত তখন।। আমাকে উঠতে দেখে ভাবি( রিয়াদ ভাইয়া ভাবি) বললেন – আরে.. আমরা আসলাম, আর তুমি কোথায় যাচ্ছো?
– ভাইয়া ডেকেছেন। আপনারা গল্প করুন। আমি আসছি।

রেহান ভাইকে উনার রুমে পেলাম।।
– ডেকেছেন কেন?
– বস।।
উনি উনার টেবিলে ল্যাপটপ নিয়ে বিজি।আমি বেডের একপাশে বসলাম।অনেক সময় বসে থাকার পরে বললাম
– আর কত সময় বসে থাকবো?
– তাড়া আছে তোর?
– তাড়া নেই, কিন্তু সবাই গল্প করছে….
– একটা কফি নিয়ে আয়।
উহহহ! আসছে মহারাজ! হুকুম করতে। মনে মনে বিড়বিড় করছি।
কফি এনে দিয়ে বললাম – আমি যাই এখন।
– অই, চিনি কি ঢেলে দিয়েছিস?
মুখে নেয়া যাচ্ছেনা!! বলেই..উঠে ফেলে দিলেন!!
-আরেকটা দিবি প্লিজ?? মাথা ধরে আছে।
আমি বোকার মতো চেয়ে আছি।রাগ উঠে গেছে। কি আর করার! আরেকটা কফি দিয়ে বললাম
– মিষ্টি ঠিক আছে। আমি খেয়ে দেখেছি।
– হুম।
কাজের ফাঁকে উনি উত্তর দিলেন – হুম!!
আগের টায় ও মিষ্টি ঠিকই ছিলো। কিন্তু উনার কাছে কেন জানি বেশি মনে হয়েছে।
– আর কিছু করতে হবে?
– না।।
– আচ্ছা। আমি গেলাম।
– শুন।
– জি..
– রিয়াদের সাথে মাহির বিয়ে হচ্ছে। উনারা আমাদের গেস্ট। কিন্তু রিয়াদের বন্ধুদের কাছ থেকে দূরে থাকবি।।
– কেন? কি হয়েছে?
– কিছু হয়েছে বলেছি? এতো গল্প করার কিছু নেই। বড় হয়েছিস।
– আচ্ছা।
– কি আচ্ছা?
– বড় হয়েছি।
– হুম।
মামিকে,মাকে হেল্প কর।এখন ওখানে যাবার দরকার নেই।
– আচ্ছা।

কেমন লাগে!!! সবাই গল্প করছে আর আমি বাসায় কিচেনে পড়ে আছি।
এতো ঝামেলার মধ্যে আম্মু আমাকে পেয়ে খুশি হলেন। উনার এসিস্ট্যান্ট এর কাজ করছি!!
রেহান ভাই কেন যেতে দিলেন না,বুঝতে পেরে মনে মনে হাসছি!
উনি জেলাস এটা বেশ বুঝতে পারছি।

দেখতে দেখতে মাহি আপুর বিয়ে হয়ে গেলো।শ্বশুর বাড়ি চলে গেছে। দিয়া,আরিফ সাথে গেলো।তিন-চার দিন পরে মাহি আপু রিয়াদ ভাইয়া তারা আসলো।
মাহি আপু এবার আর আমাকে ভয় দেখায়নি,কিন্তু তারচেয়ে ও ভয়ংকর সংবাদ দিলো!
ইশতিয়াক ভাইয়া মানে রিয়াদ ভাইয়ার বন্ধু নাকি বিয়ের প্রপোজাল পাঠিয়েছে। রিয়াদ ভাইয়ার খুব পছন্দ ইশতিয়াককে।
ইশতিয়াক ভাইয়া ব্যাংকার। ভালো ফ্যামিলি।
প্রপোজাল নিয়ে আব্বু আম্মু বেশ সিরিয়াস।
ফুপির ও পছন্দ হয়েছে।
এবার বুঝি আমার বাঁচার উপায় নেই।রেহান ভাই হয়তো কিছুটা আঁচ করতে পেরেছিলেন।
পরশু মাহি আপু চলে যাবে। আব্বু-আম্মু চিন্তা ভাবনা করছেন। সকালে সিদ্ধান্ত হবে। আব্বু আম্মু রাজি হলে মাহি আপু যাবে না,ইশতিয়াক ভাইয়ার ফ্যামিলির তারা দেখতে আসবে। খুব সম্ভবত এনগেজমেন্ট করিয়ে যাবে।
আমার ভেতর শুকিয়ে যাচ্ছে।
পরদিন সকালে আব্বু- আম্মু ফুপিকে নিয়ে কথা বলতে বসলো আব্বুর রুমে।
আমি ফুপির বাসায় গেলাম। গিয়ে দেখি রেহান ভাই বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছেন।
বেশ গম্ভীরভাবে।
আমাকে দেখেই ডাকলেন – হিয়া, আমার রুমে আয় তো।

এমনিতেই টেনশনে দম বেরিয়ে যাচ্ছে তার উপর উনার ডাক শুনে হার্টবিট বেড়ে হাত পা অবশ হয়ে যাচ্ছে!
রেহান ভাইয়ের রুমে যাবার পরে উনি দরজা টা লাগিয়ে দিলেন।
এবার মনে হয় আমি অজ্ঞানই হয়ে যাবো।
– তোর সাথে আমার কিছু জরুরি কথা আছে।
– বলুন।
মিনমিনিয়ে বললাম।
– আমি সোজা প্রশ্ন করবো সোজা উত্তর দিবি।
ঘাড় নাড়িয়ে সায় দিলাম।
– ইশতিয়াক বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছে, শুনেছিস নিশ্চয়ই।
– হুম।
– বিয়ে টা করবি?
– না।
কিছু সময় চুপ করে বাইরের দিকে তাকিয়ে থেকে, আমার কাছে এসে দুইহাতে আমার হাত শক্ত করে ধরে জিজ্ঞেস করলেন
– ভালোবাসিস? বিয়ে করবি আমাকে?

উনার মুখে এই কথা শুনে আমি মনে হয় কথা বলাই ভুলে গেছি।মুখ থেকে কিছু বের হচ্ছে না।
– কি হলো? জবাব দিচ্ছিস না কেন? দেখ এখন যদি চুপ করে থাকিস, তাহলে পরে আফসোস করে লাভ হবে না।
এবার কিন্তু কেউ মজা করছে না তোর সাথে!
– করবো।
– চল আমার সাথে।
– কোথায়?
রেহান ভাই কিছু না বলে আমাকে নিয়ে সোজা আব্বুর কাছে গেলো।
– মামা, মামি,মা তোমরা সবাই এখানে আছো।তোমাদের কিছু কথা বলতে চাই।
– কি কথা বল…
– মামা,আমি হিয়াকে বিয়ে করতে চাই।
তোমাদের কোনো আপত্তি আছে?

আমি রুমের ভেতরে ঢুকিনি, জোর করে দরজা বাইরে থেকে গেছি। উনার কথা শুনে আমার ভীষণ লজ্জা করছে।
কি নির্লজ্জের মতো সবার সামনে বলে দিলো!

আব্বু বললো – এটা তো খুব ভালো কথা, রেহান।
ফুপি বললো – আল্লাহ, আমার ছেলের সুমতি হয়েছে। বাবা আমি অনেক খুশি হয়েছি।
বাড়িতে হইচই লেগে গেছে!

চলবে….