Wednesday, July 9, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1853



শুকনো ঘাস ফুল part: 7

0

#শুকনো_ঘাস_ফুল?
#natasa_islam_muntaha
#part::7

??
?

আহিবা সবটা দেখে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে রান্না ঘরে চলে যায় সকালের নাস্তা বানাতে …

আহাদ এর ইচ্ছা না থাকার সত্যেও সবার সাথে গল্প করে রুমে গিয়ে রেডী হয়ে নেয় অফিসে যাওয়ার জন্য .

আহাদ:আজ মনে এতো কু ডাকছে কেন মনে হচ্ছে খারাপ কিছু হবে …নাহ এগুলো কি ভাবছি এমন কিছুই হবে না এগুলো.আমার মনের ভুল.ধারনা ছারা আর কিছুই না

বলে রেডী হয়ে নিচে আসে দেখে ওর কাকা কাকি আর দাদী সাথে রাফিও নিচে রেডী হয়ে বসে আছে

আহাদ:আরে কোথাও যাচ্ছো
কাকা:হুম নতুন বউ দেখলাম অথচ তাকে কিছু দেওয়া হলো না তাই সবাই মিলে একটু মার্কেটে যাচ্চি আম্মাকেও নিয়ে যাই ..
আহাদ:এর কি দরকার ছিল
দাদী:তুই চুপ থাক …বেশী বুঝিস না …চল আমরা বার হই
কাকা:হুম ,,

তারা বাসা থেকে বের হতেই আাহাদ যেন হাফ ছেরে বাচে তারপর নিজেও গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে পরে অফিসের উদ্দেশ্য

রাফি:ওহ সিট বাবা আমি তো আমার একটা কার্ড বাড়িয়েই ফেলে এসেছি
দাদী:কি যে করিস না …এখন বাসায় যাবি
রাফি:কি করবো বলো ,,,,বাবা তুমি গাড়ি নিয়ে মার্কেটে চলে যাও আমি বাসায় যাচ্ছি
দাদী:যা তবে তারাতারি আসিস

?
রাফি গাড়ি থেকে বের হয়েই একটা সয়তানি হাসি দিয়ে একটা টেক্সি ভারা করে বাসায় চলে যায় ..আহিবা আর সুমি ঘর ঘুছাচ্ছিল হঠাৎ কলিং বেল বেজে ওঠে

আহিবা :সুমি একটু দরজাটা খুলে দেখ না কে এসেছে
সুমি: আইচ্ছা

দরজা খুলতেই রাফি হুরমুর করে বাসায় ডোকে আহিবা রাফিকে এভাবে আসতে দেখে অনেকটাই ভয় পেয়ে যায় তবুও নিজেকে সামলে নেয় …

আহিবা:ভাইয়া আপনি একা আসলেন দাদী কাকা কাকি তারা কোথায়
রাফি আহিবার দিকে আগাতে আগাত:তারা আসেনি মার্কেটে গিয়েছে
আহিবা:একি আপনি এদিকে এভাবে আগাচ্ছেন কেন
রাফি:একটু পরেই বুঝবে

?
রাফি আহিবাকে ধরার জন্য হাত বারায় আহিবা দৌড়ে নিজের রুমে চলে যায় কিন্তু দরজা আটকাতে নিবে তার আগেঔ রাফি গিয়ে দরজা ধাক্কা দিয়ে রুমের ভিতরে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দেয় সুমি গিয়ে দরজা টাকাটাকি শুরু করে কিন্তু লাভ হয়না …সুমি দৌড়ে ফোনের কাছে চলে যায় আর আহাদ এর নাম্বার ডায়াল করে

আহিবা : রাফি ভাইয়া প্লিজ ছেরে দিন
রাফি :আহা কি করে ছারি বলো তো চলো তোমায় আজ আহাদ এর থেকে ও বেশী ভালোবাসবো
আহিবা:প্লিজ ছেরে দেন ভাইয়া প্লিজ ……..

আহিবা হাত জোর করছে আর কাদছে রাফি গিয়ে আহিবার শাড়িতে টান দেয় ..আহিবাও টানা টানি শুরু করে আহিবার ব্লাউজের হাতা ছিরে যায় রাফি এক সময় দস্তা দস্তি করতে করতে খাটে ফেলে দেয় আহিবাকে আহিবা বার বার হাত জোর করছে আর কান্না করছে …রাফি যেন এতে পৈচাশিক আনন্দ পাচ্ছে রাফি ঝাপিয়ে পরে আহিবার উপর আহিবা রাফির সাথে পেরে উঠতে পারে না আহিবা হাতের কাছে কাচের গ্লাস পায় ঐটা দিয়েই রাফির মাথায় বারি মারে …এর মধ্যে দরজায় কারো ধাক্কানোর আওয়াজ শুনে আহিবা দৌড়ে উঠে গবিয়ে দরজা খোলে …..দরজার ওপাশের মানুষটা আর কেউ নয় সয়ং আহাদ …সুমি ফোন দেওয়ার সাথে সাথে আহাদ অফিসে না গিয়ে মাঝ পথেই গাড়ি ঘুড়িয়ে নিয়ে বাসায় চলে আসে আর এসেই দেখে এই অবস্থা …আহিবা সোজা গিয়ে আহাদের বুকে ঝাপিয়ে পরে কেদে দেয় খুব জোরে আহাদ ও আহিবাকে জড়িয়ে ধরে নিজের অজান্তেই ..আহাদ এর চোখ রাগে লাল হয়ে আছে কপালের রগ গুলোও ফুলে গেছে

রাফি নিজের কপালে হাত দিয়ে আহাদকে দেখে ভরকে যায় ….

রাফি:ব্রো দেখো তোমার বউ কি করছিল ….আমি বাসায় এসেছি কার্ড নিতে অথচ সে কিনা আমার …..

আর কিছু বলতে পারলো না তার আগেই আহাদ রাফির নাক বরাবর ঘুসি মারে নাক দিয়ে গল গল করে রক্ত বার হয় …আহাদ ডাক্তারকে ফোন করে রাফিকে hospital এ পাঠিয়ে দেয় আহিবা সেই তখন থেকে কেদে যাচ্ছে …

আহাদ:আহিবা I’m sorry তোমায় এভাবে রেখে যাওয়া আমার উচিত হয়নি …সরি ..আহিবা প্লিজ কান্না থামাও …আহিবা চুপ কান্না থামাও কিছু হয়নি আহিবা চুপ
আহিবা হিচকি দিতে দিতে :আমি সত্যিই খারাপ হয়ে গেলাম আপনি না আসলে হয়তো আজ আমার গায়ে একজন রেপ একজন ধর্শিতার দাগ পরে যেতো ?

আহিবার এমন কথায় আহাদ এর বুকে যেন তীর এর মতো লাগে

আহাদ:কে বলতো তুমি যতো ফালতু চিন্তা ভাবনা করছো এমন কিছুই হতো না আহিবা ?.তুমি আমার ওয়াইফ তোমার সম্মান হানি আমি কি করে হতে দেই ….

আহিবা চুপ করে বসে আছে সে কিছুই বলছে না

আহাদ:আহিবা আর শাড়ি পরতে হবে না তুমি এমনি থ্রী পিজ পরো আর যাও ফ্রেস হয়ে এসো আমি আজ আর অফিসে যাবো না ..ম্যানেজারকে ফোন করে বলে দিচ্ছি …তুমি ফ্রেস হয়ে আমায় এক কাপ ব্লাক কফি দিও তো আহাদ সোজা গিয়ে খাটে সুয়ে পরে …..

আহিবা আস্তে করে উঠে ফ্রেস হতে চলে যায় ফ্রেস হয়ে এসে নিজেকে সাভাবিক করে নেয় ..আহাদ কে কফি দিয়ে কাজে লেগে পরে আবার …

হঠাৎ আহাদ এর ফোন বেজে ওঠে আহাদ এর ভালো লাগছিল না …তাই আর ফোন এর দিকে তাকিয়েও দেখে নি কে ফোন দিছে ….আহাদ ফোনটা সুইচ অফ করে ফেলে রাখে ….

??

এনি ঐ সময় দৌড়ে বাড়ি থেকে চলে আসে একদম মেইন রোডে আর তখনই একটা গাড়ির সাথে এনির এক্সিডেন্ট হয় ….গাড়িটা একটা মাঝ বয়সি ছেলে চালাচ্ছিল ..?সে এনিকে নিয়ে তারাতারি হাসপাতালে চলে যায় আর সেখান থেকেই ছেলেটা আহাদ এর নাম্বার পেরে তাকে ফোন দেয় কিন্তু আহাদ না দেখেই ফোনটা অফ করে দেয় …ছেলেটা তাই বর ফোন দেয়নি আহাদ এর কাছে …ডাক্তার ট্রিটমেন্ড করতে থাকে …প্রায় দু ঘন্টা পরে এনির হুস আসে …ডাক্তার তাকে যানায় …ছেলেটা এনির সাথে দেখা করতে ভিতরে যায়

ছেলেটা:কেমন লাগছে আপনার
এনি:জ্বি ভালো
ছেলেটা:আপনার বাড়ি কে কে আছে আমায় তাদের নাম্বার দিন আমি তাদের সাথে যোগাযোগ করে আপনাকে তাদের হাতে তুলে দেই
এনি (একদম শান্ত দৃষ্টিতে ):আমার কেউ নেই আমি একা
ছেলেটা:একা
এনি:হুম বিয়ে হয়েছিল কিন্তু স্বামীর সাথে বুনি বনা নেই তাই বাড়ি থেকে চলে এসেছিলাম
ছেলেটা:ওহ আর আপনার মা
এনি :সে মারা গিয়েছে (হ্যা যেদিন এনি বাসা থেকে পালিয়েছিল ঐ দিন রাতেই এনির মা ব্রেন স্টোক করে মারা যান যেটা এনি ওদের বাসায় গিয়ে জানতে পারে ..আর এনির বাবা আগেই মারা যায় )
ছেলেটা:আপনি থাকেন কোথায়
এনি:মামার বাসায় থাকতাম কিন্তু সেখানে আর যাবো না এখন যে দিক দু চোখ যায় সেদিক চলে যাবো
ছেলেটা:তার দরকার নেই আপনি আমার সাথে আমার বাসায় যাবেন আমার মা ও একটা মানুষ তার সাথে না হয় আপনি ও থাকলেন
এনি:তা কি করে হয়
ছেলেটা :সব হয় …এই দেখলেন আপনার নামটাই যানা হলো না
এনি :ওহ আমার নাম …নুরায়রা ইসলাম এনি আপনার
ছেলেটা:নাইম ইসলাম রাহুল
এনি:ওহ
ছেলেটা :আপনি আমার থেকে ছোট এই জন্য তুমিই বলি যদি কোনো সমস্যা না থাকে ?
এনি:নাহ সমস্যা নেই আপনি বলেন
রাহুল:আচ্ছা চলো তোমায় রিলিস করে দিয়েছে …তোমায় একদৃ মায়ের কাছে নিয়ে যাবো
এনি:ওকে চলুন
এনি রাহুল বর নার্সের সাহায্যে রাহুলের বাসায় চলে যায়

হয়তো এখানে সে ভালো থাকবে বহাদ কে ভুলতে পারবে এই আশায় ডিভোর্শটাও খুব তারাতারিই দিয়ে দেবে এনি এটাই তার পরিকল্পনা …বাকিটা এনি বুঝে উঠতে পারছেনা সে কি আদো আহাদকে ভালোবেসেছিল নাকি সবটাই আবেগে ঘেরা

??

আবেগ দিয়ে হয়না ঘর
কজন বুঝে এর কদর
ভালোবাসি বল্লেই হয়না ভালোবাসা
না চাইলে ও হয়ে যায় কাছে আশা
বন্ধি করে রাখা পাখি
যখন যায় মুক্ত বাতাসে ছল ছল করে ওঠে তার ঐ আখি
আবেগে নাকি ভালোবাসায়
তার কাছে ছুটে যাওয়ার কারন বোঝা বড্ড দায়
আফসোস সময় তাকে বুঝতে না দেয়
সময় হাড়িয়ে সব টুকু বুঝিয়ে দেয়
এটাই জীবন
জীবনের ঘোর মিলন

[কবিতায় জেবিন ]

বিকালে সবাই বাসায় আসলে রাফিও আসে …রাফি তার বাবা মাকে বুঝ দেয় আশার সময় গাড়ি এক্সসিডেন্ট হয়েছে তার এই জন্য এমন হয়েছে কিন্তু মনে মনে ঠিকই সে প্রতিশোধ এর আগুন জ্বালিয়ে রেখেছে ….অন্যদিকে আহাদ ফোন অন করেই আননোন নম্বার থেকে ফোন বশায় সেটার প্রতি অতো মাথা ঘামায় না ….ফ্রেস হয়ে চলে যায় সাবার মধ্যে রাফিকে দেখেই রাগ উঠে যায় তবুও নিজেকে সামলে নেয় …আহাদ

দাদী:আহাদ নত বউকে ডাক দে তো
আহাদ:হুম বসো আমি ডেকে আনছি
আহাদ উঠে গিয়ে আহিবাকে ডেকে আনে
আহিবা:দাদী ডাকছিলে
দাদী:দেখি তোর হাতটা দে তো
আহিবা হাত এগিয়ে দিতেই ওর দাদী আহিবার হাতে এক জোরা বালা পরিয়ে দেয় আর একজোরা ছোট বাচ্চাদের বালা ওর হাতে ধরিয়ে দেয়
আহিবা:দাদী এগুলো কি দরকার ছিল…আর আমায় নয় দিলা কিন্তু এই ছোট বালা জোড়া
দাদী:তুই এবো বোকা কেন রে নাতবউ ..বড় জোরা তোর জন্য আর সেইম ডিজেনের তোর মেয়ের জন্য নিয়ে এলাম
আহিবা বিষম খেয়ে :আমার মেয়ের জন্য
আহাদ:দাদী কি বলছো
কাকা:আরে মা কি করছো
দাদী:চুপ থাক তো আর শোন নাতবউ তোর যখন মেয়ে হবে তখন যদি আমি বেচে না থাকি এর জন্য আগেই দিয়ে দিলাম মা আর মেয়ের বালা এক রকমের থাকবে
আহাদ ওর দাদীর কথায় বড় সর বেষম খায় (ওহ এই দাদী এতো.কথা বলে.কি করে (মমে.মনে ))
আহিবা প্রচন্ড রকমের লজ্জা পেয়ে ওখান থেকে কেটে পরে ?
দাদী:নাতবউ লজ্জা পেয়ে চলে গেল হাহাহা দাদুভাই তুমিও যাবে নাকি
আহাদ:আহ দাদী তুমিও না
কাকি:কি রে আহাদ বউকে প্রথম দেখলাম শাড়ি পরতে আর এখন শাড়ি কি উঠিয়ে রেখে দিয়েছে নাকি
আহাদ:কাকি ও বাসায় শাড়িই পরে সব সময় ….এখন পরতে মানা করছি আমিই …প্রচন্ড গরম এতে শাড়ি পরা ঝামেলা হয়ে যায়
কাকি:তাই বলে
দাদী:আহা বউমা আহাদ তো ঠিকই বলেছে এই টুকু মেয়ে শাড়ি পরার দরকার কি …থ্রীপিজই পরুক ..তাছারা ও তো দেখি সব সময়ই মাথায় কাপড় দিয়ে চলে তার জন্য শাড়ির থেকে জামাই ভালো….বুঝলি দাদুভাই বউ পেয়েছিস কপাল করে
রাফি(পেয়েছে ঠিকই কিন্তু বেশী দিন এই সুখ টিকতে দিবো না [মনে মনে ])
আহাদ প্রতি উওরে কিছু বলে না শুধু একটা শুকনো হাসি দেয় …

তারপর সবাই মিলে গল্প করে একেবারে রাতের খাবার খেয়ে সুতে চলে যায় যে যার রুমে .?.আহিবা নিচে বিছানা করার জন্য সব ঠিক করে তখন আহাদ বাধা দেয়
আহাদ:তোমায় নিচে শুতে হবে না তারপর সকালে দাদী এসে ডাক দিবে আমার আবার তোমায় কোলে নিয়ে বিছানায় দিতে হবে

চলবে….,,,,,,

শুকনো ঘাস ফুল part: 6

1

#শুকনো_ঘাস_ফুল?
#natasa_islam_muntaha
#part::6

??
?

আহাদ আহিবার কান্ড দেখে হেসে দেয় তবে আহিবাকে বুঝতে দেয় না …

তখন ওখানে রাফি আসে

রাফি:আরে ব্রো বউয়ের কাছেই থাকবা নাকি …আর হায় পুচকে কি করছো
আহাদ:রাফি সে তোর ভাবি হয় সম্মান দিয়ে কথা বল
রাফি:বাট ব্রো সে আমার থেকে ছোট …
আহাদ:সে যাই হোক ওকে তুই ভাবি বলে ডাকবি ব্যাস
রাফি :ওকে [হুম ভাবি বলতে বয়েই গেছে ইসস কি ফিগার একটা রাত না পেলেই নয় …আমার তো রাতের ঘুম হারাম করে দিলো উফফ ইচ্চা করে এখনই (মনে মনে)]

আহাদ ভালোই বুঝতে পারছে রাফি মুখে যতোই বলুক ওর চোখে লালসা ভরা

আহাদ:রাফি সামনে চল
রাফি:হুম চলো

আহাদ রাফিকে নিয়ে সামনে চলে যায়

সুমি:আফা ঐ ব্যাডায় এতো লুচ্চা কেন
আহিবা:কে
সুমি:আরে ঐ যে ছোট সাহেবের লগে আইলো .ব্যাডার খালি চোখটা শকুনের মতো ঘোরে
আহিবা:আমিও খেয়াল করছি রে
সুমি:তয় আম্মে কিছু কন না কেন
আহিবা:আমি কি বলবো বল…তারা এই বাড়ির অতিথী যে
সুমি:হয় তাও ঠিক ..

আহিবা রান্না শেষ করে সুমিকে নিয়ে খাবার টেবিলে সব রেডী করে নেয় এত্তোক্ষন রান্না করতে গিয়ে আহিবা ভিজে গেছে ঘামে শাড়ির কিছু অংশ ঘামে গায়ের সাথে মিশে গেছে আহিবা সামনে দাদীর কাছে যায়

দাদী:কি রে নাত বউ তুই তো একদম ভিজে গেছিস আহারে
আহিবা:দাদী রান্নাঘরে ছিলাম তো এই জন্য তা তোমরা কি এখনই খাবে না পরে
রাফি:আমার তো খুদা লাগছে (ইসস আর কিছুক্ষন এভাবে দেখতে পারলে ইসসস কি যে.লাগছে না .)
আহিবা:দাদী তুমিও কি এখন খাবে
চাচা:সবাই এক সাথেই খাই
আহিবা:চলো সবাইকে খাবার দিয়ে নেই
আহাদ:আগে গিয়ে ফ্রেস হয়ে নাও ঘামিয়ে গেছো
আহিবা:কিন্তু
আহাদ:আমি যেতে বলেছি ৫ মিনিট পরে খেলে কিছু হবে না তখন এক বারে সবাই খাবো
দাদী:হুম তাই ভালো
আহিবা:আচ্ছা

আহিবা রুমে চলে যায় ফ্রেস হতে ..কিছুক্ষন পর ফ্রেস হয়ে অন্য একটা শাড়ি পরে নিচে আসে সবাইকে খাওয়ার জন্য টেবিলে নিয়ে যায় দাদী তার পরে আহাদ বসে আর তার পাশেই রাফি বসে পরে তারপর একটা চেয়ার খালি রেখে আহাদ এর চাচা চাচি …রাফি এর জন্য ওখানে বসেছে যাতে আহিবা বসলে ওর পাশে বসতে হয় আর রাফি যাতে তাকে কারন অকারনে স্পর্স করতে পারে ….
আহিবা সবাই কে দিয়ে খাওয়াচ্ছে

রাফি:ভাবি তুমিও বসো
আহিবা:নাহ থাক আপনারা খেয়ে নিন আমি পরে খাবো
চাচা:বউমা বসো না

আহিবা কি করবে বুঝে পাচ্ছে না …চাচার উপরেও কিছু বলতে পারছে না আবার রাফির পাশেও বসতে পারছে না ..

আহাদ:কাকাই ও পরে সুমিকে নিয়ে বসবে না হলে সুমি আধ খাওয়াই উঠে যাবে
কাকিয়া:আহ থাক না ও ওর সময় মতো বসবে

?????

আহিবা যেন হাপ ছেরে বাচলো আহিবার প্রচন্ড রকমের একটা ধন্যবাদ জানাতে ইচ্ছা করছে আহাদ কে তার জন্য বার বার বেচে যাচ্ছে | রাফিকে আহিবার একদমই ভালো লাগছে না | সবার খাওয়া শেষ হলে আহিবা আর সুমিও খেয়ে নেয় ওদের দাদী তারাতরি ঘুমায় দেখে তাকে তার রুমে দিয়ে আসে ..ওর চাচা চাচিকেও তাদের রুম দেখিয়ে দেয় আর রাফি সে আহাদ আর এনি যে রুমে থাকতো ঐ রুমে থাকবে …আহিবা আর আহাদ পরেছে ভালো ঝামেলায় তাদের যে এক রুমে থাকতে হবে বাসায় এক্সটা রুম থাকলেও সেখানে থাকতে পারবে না তাহলে সবাই সন্দেহ করবে …রুমে তো চলে এসেছে দুজন …এখন আহাদ এক পাশে আর আহিবা এক পাশে দারিয়ে আছে

আহাদ আর আহিবা একসাথেই বলে ওঠে:আপনি খাটে শোন আমি নিচে শুচ্ছি

আহাদ আহিবা দুজনেই আবার চুপ হয়ে যায়

আহাদ আহিবা:আমি নিচে আবার চুপ
আহিবা:আমি নিচে শুচ্ছি আপনি খাটে ঘুমান
আহাদ:নাহ থাক
আহিবা:সমস্যা নেই কোনো বলেই ……..

বিছানা ঠিক করতে থাকে …বিছানা ঠিক করে খাটের পাশেই ..তারপর কয়েল জ্বালিয়ে শুয়ে পরে আহিবা আহাদ ও গিয়ে খাটে শুয়ে পরে

আহাদ লাইট অফ করে ড্রিম লাইট অন করে দিয়ে শুয়ে পরে রুমের জানালা খোলা আকাশে চাদটা আজ পরিপূর্ন ভাবে বিরাজমান আর তার আলো এসে পরছে আহিবার গায়ে …..আহাদ জানালা টা লাগিয়ে দিতে গিয়েও দিলো.না চুপ করে এসে সুয়ে পরলো খাটের পাশে চোখ যেতেই দেখে আহিবা পুরা ঘুম হয়তো সারা দিন অনেক কষ্ট করে ক্লান্ত সে …আহাদ এর চোখ যায় আহিবার মুখের উপর যেখানে চাদের আলোটা পরেছে আহাদ আস্তে করে রুমের ড্রিম লাইট টা অফ করে দেয় …তার রুমটা চাদের আলোয় আলোকিত হচ্ছে

আহাদ:কখনও এমন করে দেখা হয়নি কিন্তু তোমার মুখটাও যে সম্পূর্ন মায়ায় ঘেরা ছিহহহহ আহাদ কি করছিস এগুলো.তুই …ছিহহহহ ….তের এনিকে ফোন দেয়া উচিত

আহাদ ফোনটা নিয়ে এনির নাম্বার ডায়াল করে তাকে ফোন দেয় কিন্তু বার বারই ফোনটা সুইস্ট অফ বলছে

এক সময় বিরক্ত হয়ে ফোনটা পাশে ফেলে রেখেই ঘুমিয়ে পরে …

??

রাফি তার চোখে ঘুম নেই সে পাগল হয়ে আছে আহিবাকে পাওয়ার জন্য

রাফি:নাহ আমার চোখের ঘুম সব কেরে নিয়েছে এই মেয়ে নাহ একে তো আমার চাই চাই…দেখেতো মনে হয় না…. আহাদ আর আহিবার মধ্যে কোনো কিছু আছে ….ইসসস ওকে আমার চাই চাই আর সেটা কালই …যে কোরে হোক যেমন করে হোক …..আপোশে আসবে নয়তো জোর করে হলেও চাই ……

??

পরের দিন সকালে …

আহিবা নামাজ পরে আবার একটু সুয়েই ঘুমিয়ে পরে …ওদের রুমের দরজায় …এসে ওর দাদী নক করে

দাদী:দাদুভাই নাতবউ উঠেছিস তোর

আহাদ এক লাফ দিয়ে উঠে বসে

আহাদ:হ্যা দাদী
দাদী:দরজা খোল তো
আহাদ:এই রে এখন কি করি আহিবা তো ঘুমে দাদী যদি এটা দেখে তাইলে সর্বোনাশ ..কি করি ..? হুম পেয়েছি …

আহাদ আহিবাকে কোলে করে খাটের উপরে সুইয়ে দেয় আর খাটের পাশে যে বিছানকরেছে রাতে ওটা কোনো ভাবে গোছ করে লুকিয়ে রাখে নিজের চুল গুলোও ঠিক করে গিয়ে দৌড়ে দরজা খোলে

আহাদ:দাদী আশো
দাদী:কি রে নাতবউ উঠে নি
আহাদ:নামায পরে আবার সুয়েছে তাই ঘুমিয়ে গেছে আমি উঠিয়ে দিচ্চি
দাদী:থাক তুই ফ্রেস হ গিয়ে আমি ওকে উঠাচ্ছি
আহাদ:ওকে

আহাদ একটা টাওয়াল নিয়ে ফ্রেস হতে চলে যায় দাদী গিয়ে আহিবার পাশে বসে আহিবার মাথায় হাত দিয়ে আস্তে আস্তে ঘুম থেকে তোলে

দাদীর মুখে দুষ্টু হাসি দিয়ে বলে

দাদী:কি রে এখন ঘুমাচ্চিস রাতে বুঝি ঘুমাতে দেয়নি

আহিবা এমন কথায় হা হয়ে যায় নিজেকে সামলে নি :আরে দাদী তেমন কিছু না একটু চোখ লেগে এসেছিল
দাদী:বুঝি বুঝি আমাদের ও তো বিয়ে হয়েছিল …
আহিবা :দাদী
দাদী:থাক লজ্জা পেতে হবে না আমি তো আগেই বুঝেছি …তা একটা বালিসে বুঝি দুজন ঘুমাস বলেই চোখ মারে

আহিবা হামাব মতো একবার দাদীর দিকে আর একবার বালিশের দিকে তাকায়

আহিবা(আরে আমি নিচে ছিলাম তাহলে উপরে উনি উঠিয়েছেন…বলিশটা উঠাতে ভুলে গেছেন আল্লাহ কি লজ্জা টাই না দিচ্চে এই দাদী ছিহহহ )

দাদী :হয়েছে হয়েছে নতুন বিয়ে স্বামীর তো সোহাগ এখন বেশীই পাবা

আহাদ ও ওয়াশ রুম থেকে বার হয় ওর দাদীর কথা শুনে নিজেই হা হয়ে গেছে

আহাদ:দাদী
দাদী:আরে তোর হয়ে গেছে ..যা যা নাতবউ তুই ও গিয়ে গোসল করে আয় ….বেলা তো কম হলো না

আহিবা এখনও হাবার মতো করে তাকিয়ে আছে আর ভাবছে বলে কি এই দাদী

দাদী:কি রে যা…

?
আহিবাকে একটা শাড়ি নিয়ে এক প্রকার জোর করেই গোসলে পাঠিয়ে দেয় …আহাদ ও হা করে ওর দাদীর কাজ কারবার দেখছে

দাদী:নিচে চল
আহাদ:হুম চলো

আহাদ ওর দাদীকে নিয়ে নিচে চলে যায় আহিবা বাধ্য হয়ে গোসল করে একটা কালো কাপড় গোল্ডেন পার এর …সেটা পরে বার হয় …আয়নার সামনে গিয়ে চোখে কাজল দিচ্ছিলো ..রাফি মাএ ঘুম থেকে উঠে নিচে যাওয়ার জন্য পা বারায় তখনই চোখ যায় আহিবার ভেজা চুলের দিকে সেন থেকে টপ টপ.করে পানি পরছে যা আহিবার কোমরের শাড়ি অনেকটাই ভিজিয়ে দিয়েছে ..আহাদ রুমের সামনে এসে রাফিকে দেখে মেজাজ বিগরে যায় রাফিকে কিছু না বলে রুমে গিয়ে ঠাসস করে দরজা লাগিয়ে দেয় …আহিবার হাতের চিরুনীটাও পরে যায়

আহাদ:দরজা লাগিয়ে কাজ করা যায় না …
আহিবা:আসলে চুল আচরাচ্ছিলাম তো তাই ..

আহাদ আহিবার দিকে তাকিয়ে হা …কালো শাড়িতে যেন এই শ্যমলা বর্নের মেয়েটার রুপ বাড়িয়ে দিয়েছে হাজার গুনে সাথে হাটুর নিচ অবদি ভেজা চুল গুলো …আহাদ অনেক কষ্টে নিজের চোখকে সামলে নেয় ..

আহিবা চুল ঠিক করে চোখে কাজল ঠিক করে নিচে যায় আর তার সাথে.সাথে আহাদ ও …..

??

আহাদ আর আহিবা এক সাথে সিরি নিয়ে নিচে নামছিল হঠাৎ ওদের চোখ যায় সদর দরজার দিকে যেখানে ছল ছল চোখে এনি দারিয়ে ছিল

এনি :আহাদ আমি এক দিন না থাকায়ই …নাহ আমি আর ফিরবো না আর না

(আসলে এনি এসেছিল আহাদ এর সাথে কথা বলতে সে কি করবে জানতে…আর এসেই দেখে আহাদ আর আহিবা এক সাথে সিরি দিয়ে নামছে সাথে আহিবার ভেজা চুল )

আহাদ একবার আহিবার দিকে আর একবার এনির দিকে তাকায় এনির কাছে যাওয়ার জন্য পা বারায় আহাদ কিন্তু এনি ওখান থেকে দৌড়ে চলে যায় আহাদ যেতে নিলে তার কাকা এসে সামনে পরে ..আহাদকে টেনে নিয়ে সোফায় বসিয়ে দেয় আর তাদের সাথে গল্প করতে বলে ….আহিবা সবটা দেখে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে রান্না ঘরে চলে যায় সকালের নাস্তা বানাতে …

চলবে,,,,,,,,,,

শুকনো ঘাস ফুল part:4+5

0

#শুকনো_ঘাস_ফুল?
#natasa_islam_muntaha
#part::4+5

??
?

এনি:হুম এটা আগেই করা উচিত ছিল আহাদ শুধু আমার সে শুধু আমায় ভালোবাসে ,,,,,,তুই কিচ্ছু না
আহিবা এখনও ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছে ..এনি কিছু না বলে নিজের রুমে চলে যায়

আহিবা খাটের উপর ধপ করে বসে পরে ,,,পাশে থাকা ফোনটা বেজে ওঠে প্রথম একবার বেজে সেটা অফ হয়ে যায় আবার পুনরায় বাজতে শুরু করে এক গাদা বিরক্ত নিয়ে আহিবা ফোন এর দিকে তাকায় তার মা ফোন দিয়েছে তাকে

আহিবা ফোনটা রিসিভ করে কানের কাছে নেয়

আহিবা :মা
মা:কি রে কি করছিলি
আহিবা:কিছু না আচ্ছা মা কোনো মেয়ে যদি বিয়ের পরই তার বাবার বাড়ি চলে আশে আর সেখানে যদি তার ছোট বোনরা থাকে তাহলে এলাকার মানুষ ঐ মেয়েটাকে কেমন চোখে দেখে ,,নিশ্চই ভালো ভাবে দেখে না কারন তখন সে অপয়া হয়ে যায় তখন ,,,কেমন মেয়ে সেই প্রশ্ন উঠায় সমাজ ,,তাইনা আর সেই পরিবারটা যদি নিত্যান্তই মধ্যবিত্ত হয় তবে ,,পরিবারের মানুষ গুলোকেও তার জন্য কষ্ট পেতে হয় মেয়েটা সম্পূর্ন তাদের কাছে বোঝা হয়ে দারায়,,ঠিক বল্লাম না মা
মা:তা ঠিক আছে কিন্তু কেন মা এমন কথা বলছিস তুই কি কষ্টে আছিস জামাই কি কিছু বলছে
আহিবা: আরে না না সে কিছু বলে নি আমাদের পাশের বাসায় একজন এর মেয়ে বিয়ের পর বাসায় চলে এসেছে তো তাই
মা:কেমন মেয়ে যে স্বামীর সংসার করতে পারে না .

আহিবা কিছু না বলে একটু চাপা হাসি হাসলো

আর কিছু কথা বলে মায়ের কাছ থেকে বিদায় নেয় সে

?
এটা হচ্ছে আমাদের সমাজ ব্যবস্থা ,,যেখানে বিয়ের পর স্বামীর বাড়ি যা কিছুই হোক না কেন ,,মেয়েটা যদি বাবার বাড়ি চলে আসে তবে সমাজ তাকে কোন ঠাসা করে দেয় ,,একটা বার ও ভাবে না কেন হলো এমন কেন ঐ মেয়েটা স্বামী বাড়ি থেকে চলে এলে ,,,সবাই তো এটা বলে মেয়েটা অপয়া ,অশুভ ,তার মুখ দেখে কোনো কাজে গেলেও নাকি সেটা সঠিক ভাবে সম্পন্ন হয় না ,তার মুখ দেখলে নাকি সারাটাদিনই খারাপ কাটে ,,আবার এখানে আহিবা আর এনি দুই বোন কিন্তু তারা ফুপাতো ,,এমন অনেক জায়গাতেই আছে এক সংসারে আপন দুই বোন সেটা হতে পারলে এটা পারবে না কেন ,,আমি ছোট আমি জানি আমার ঙ্গান ও সীমিত ,,তাও জানি …আচ্ছা যাক এটা কথা না ,,,আসল কথা হলো একটা মেয়ের নামের আগে ডিভর্সী আনা কি এতো টাই সহজ ..আচ্ছা কজন মানুষ আছে যারা তাদের সাথে ভালো ব্যাবহার করে ,,এর থেকে হাজার কষ্ট পেয়েও স্বামীর বাড়ি পরে থাকলেও শান্তি আছে কেন জানেন সমাজ এর মানুষ আপনাকে অন্তত্য অবয়া অলক্ষি অপবাদ দিবে না ,,শারীরিক কষ্ট আর মানষিক কষ্ট অনেক কঠিন শরীরিক কষ্ট একটু হলেও সওয়া যায় কিন্তু মানষিক কষ্ট মানুষকে শেষ করে দেয়
?

আহিবা উঠে রান্না ঘরে চলে যায়

আহিবা:সুমি আপু কোথায় ?
সুমি:আম্মে হের কথা মোর ধারে কেন জিঙান ঐ তো একটা সয়তান এর সঙ্গি গেছে যানি কোম্মে নাচতে নাচতে কি জানি ,
আহিবা:তুই এমন কেন বলিস সে তো তোর ম্যাডাম হয়
সুমি:আম্মে কি মোরে ও আম্মের নাহান পাগল পাইছেন মুই ছোট হইতে পারি কিন্তু আম্মের নাহান না
আহিবা:কেন আমি কি করলাম
সুমি:আম্মে আম্মের জামাইরে হেরে বিয়া কইরা আনতে দিলেন কেন ….ঐ বেডিও বা কেন আইলো এই বাড়ি
আহিবা:আহ সুমি ছোট আছো তাই থাকো
সুমি :হয় হয় সত্যি কথা কইছি তো কেই লাইগাই রাগ লাগে মুই হইলে জামাইরে ঠ্যাগ বাইঙ্গা ঘটে হালাইয়া লাগলে পঙ্গু পালতাম তবুও হেরে ২য় বিয়া করতে দিতাম না .
আহিবা:যা গিয়ে নিজের কাজ করতো আমায় রান্না শেষ করতে দে

সুমি ভেগছি কেটে চলে যায় আহিবা ভাবে সুমি বেশী হয়ে ১১ কি ১২ বছরের একটা মেয়ে অথচ তার কত চিন্তা জামাই নিয়া …যদিও এক সময় তার ও ছিল কিন্তু এখন আর নেই যাক সে কথা ভেবে আর কষ্ট পেতে চায় না সে,,,
এর মধ্যে সুমি হাতে ফোন নিয়ে আসে

সুমি:আফা বড় ম্যাডামে ফোন দিছে (আহিবার শাশুরী )

আহিবা তারাতারি করে ফোনটা হাতে নে সালাম দিয়ে কথা বলা শুরু করে

আহিবা:আম্মু আপনারা ভালো আছেন আর আপু কেমন আছে
শাশুরী:——-
আহিবা:আম্মু তাহলে আপনাদের আসতে হবে না …আর চিন্তা করবেন না আমি সামলে নিবে সংসারটা তো এখন আমারই তাই না ,
শাশুরী:———
আহিবা:মা দোয়া করুন ,,আর আপুর দিকে খেয়াল রাখবেন আপনার ছেলে অফিসে এখনও আসে নি বাসায় আমি বাসায় এলে ফোন দিতে বলবো
শাশুরী:——–
আহিবা:আচ্ছা আম্মু আল্লাহ হাফেজ

আহিবা:সুমি ফোনটা নিয়ে রাখ তো

,,এর মধ্যে দরজার বেল বাজতেই আহিবা ওড়নায় হাত মুছতে মুছতে গিয়ে দরজা খুলে দেয় …দেখে এনি দারিয়ে আছে তবে তার মুখ রাগে লাল হয়ে আছে আহাদ ও তার সাথেই আছে আহিবা সাইট দিতেই এনি গট গট করে নিজের রুমে চলে যায় আহাদ এসে সোফায় বসে নিজের জুতা খোলে আর সুমির কাছে পানি চায় আহিবা সেটা এনে দেয় সুমি কাজ করছিল এর জন্য

আহিবা:আপনননাকে একককটা কককথথথা বলললার ছছছিললল
আহাদ:কি বলবা ,,যাতে তোমায় নিয়েও আমি বাহিড়ে যাই নিয়ে ঘুড়ি শোনে এটা স্বপ্নেই দেখো বাস্তব হবে না কখনও আর আমি সুমির কাছে পানি চেয়েছি তুমি দিছো কেন ,,বউ সাজতে এসেছো তাই না
আহিবা:নননা ননননা আসসসললে
আহাদ:চুপ যাও সামনে থেকে

আহিবা আহাদ এর কথায় কেপে ওঠে তাই আর কথা না বাড়িয়ে রান্না ঘরের দিকে চলে যায়
আহাদ ও নিজের রুমে যায়
রুমে যেতেই

এনি:তুমি ওকে ডিভোর্শ দিচ্ছো কবে
আহাদ:এতো তারাতরি উকিল ডিভোর্সের জন্য কোনো এপলাই এক্সসেপ্ট করবে না আন্তত এক মাস লাগবে তার পর আরো ৩ মাস মোট চার নাস পর ডিভোর্স হবে
এনি আহাদ কে জড়িয়ে :আমার ভয় করছে যদি ও তোমায় আমার থেকে কেরে নেয়
আহাদ:হুহ বল্লেই হলো আমি তোমাকে ভালোবাসি ওকে না
এনি :হু জানি কিন্তু তবুও ভয় করে
আহাদ :আরে বাদ দাও তো আর তো ৪ মাস ওটা দেখতে দেখতে চলে যাবে
এনি:হুম

আহিবা রান্না শেষ করে টেবিল সাজিয়ে গোছল করতে চলে যায় সুমিকে বলে তাদোর ডেকে খাবার দিতে

সুমিও তাই করে

আহিবা গোসল শেষ করে নামায পরতে দারায় এর মধ্যে এনি একবার তাকে কিসের জন্য জানি ডাক দেয় কিন্তু এটা আহিবার অজানা কারন সে নামায পরছিল আহাদ এসে আহিবার রুমের সামনে থমকে যায় আহাদ এর মুখ আপনা আপনিই হা হয়ে যায় তার এই কয়দিনকে কখনই আহিবার দিকে ঠিক করে তাকানো হয়নি আহিবা সুন্দরী না হলেও উজ্জল শ্যামলা বর্নের একটা মেয়ে সাওয়ার নিয়েই নামাজে বসার জন্য মুখটা খুব সচ্চ দেখাচ্ছে প্রচুর গরম হয়তো তারাহুরার জন্য রুমের ফ্যান চালিয়ে নামাযে দারানোর কথা হয়তো মনে ছিল তা আহিবার নাকে ঠোটেঁর নিচে কপালে ঘাম স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে যা আহাদকে টানছে খুব করে টানছে আহাদ আস্তে করে গিয়ে রুমের ফ্যানটা চালু করে দেয় ,,আহিবা সালাম ফিরিয়েই আহাদ দেখপ হকচকিয়ে ওঠে

আহিবা ;আপপনি কককিছছছু বললববেন
আহাদ:না মানে হ্যা আর তুমি আমার সাথে কথা বলতে গেলে এমন তোতলা মানুষপর মতো তুতলিয়ে কথা বলো কেন আমি কি বাঘ নাকি ভাল্লুক
আহিবা:আসসলে তেমমন ককিছু না
আহাদ:next time যদি দেখি আর তুতলিয়েছো তাইলে ঠাঠিয়ে গালের চামড়া হাতে দিয়ে দিবো
আহিবা :এ্যা ?
আহাদ:এ্যা না হ্যা মাথায় ঠুকিয়ে নাও

আহাদে কিছু না বলে উল্টো দিকে ফিরে মুচকি হাসি দিয়ে রুমে চলে যায় যেটা আহিবার চোখ এড়ায় না

আহিবা :আপনি বাঘ ভাল্লুক না তার থেকেও অনেক ভয়ংকর আর আপনার থেকেও মারাত্নক ভয়ংকার আপনার ঐ ঠোটেঁ হাসি যেটা যে কাউকে মেরে দিতে পারে মনে মনে বলে তারপর আবার নিজেকেই নিজে বকে

আহিবা :ছিহ কি সব বলছিস সে তোর না ,না তোর ছিল ,,আর না থাক ,,, ,না না কি বলছি এটা সে আমার থাকবে তাকে আমি হাড়াতে চাই না সে আমার থাকবে …একার না থাক তবুও তার নামের সাথে তো আমার নামের অস্তিত্ব আছে এটাই অনেক এটা ভেবেই সারা জীবন পার করে দিতে পারবো

তারপর আর কথা না বাড়িয়ে নামাযের মোনাজাত শেষ করে উঠে সুমিকে নিয়ে খেয়ে নেয়

খাওয়া শেষ করে সব কিছু ঘুছিয়ে রুমে চলে আসে আর এসেই দেখে আহাদ আগেই রুমে বসে ছিল
আহিবা:আআপনি কিছু বলবেন
আহাদ:কেন রুম কি তোমার নাকি
আহিবা,:না মানে
আহাদ:চুপ করো ,আমি একটা কথা বলার জন্যই এখানে এসেছি নহলে এই রুমে আশার প্রয়জন ছিল না
আহিবা:জানি
আহাদ:ভালো আসলে আমি আজ উকিল এর কাছে গিয়েছিল আমাদের ডিভোর্শের জন্য
আহিবার বুকের ভিতর কেপে ওঠে পায়ের নিচ থেকে তার মাটি সরে যায়
আহিবা:মাননে কার ডিভোর্শ
আহাদ:তোমার আর আমারটা
আহিবার চোখ গড়িয়ে টুপ টুপ কটে পানি পরতে থাকে …
আহিবা:এটা না করলেই নয়
আহাদ:মানে কি বলতে চাও
আহিবা:আমি তো আপনার কাছে কোনো অধিকার চাইনি তবে কেন ,,,,,

চলবে,,,,,,

[আশা করি আজ যতেষ্ট খোলশা করতে পেরেছি আহিবাকে কেন সরাচ্ছি না ]

#শুকনো_ঘাস_ফুল?
#natasa_islam_muntaha
#part::5

??
?
আহিবা:আমি তো আপনার কাছে কোনো অধিকার চাইনি তবে কেন ডিভোর্চ দিতে চাইছেন ,,,আপনি কি চান বলুন আপনার আর আমার সম্পর্ক বাবা জানুক ,,আমার বাবা হার্ডের রুগী হয়তো এটা জানলে সে আর বাচবেই না ,,আপনার বাড়িতে আমি তো বউ এর অধিকার চাইনি শুধু থাকতে চেয়েছি ..আমি তো আপনার আর আপুর কোনো কিছুতেই নাক গলাই না …তবে কেন …

আহাদ চুপ করে আহিবার কথা শুনছে এখানে তো আহিবার কোনো ভুল নেই সে তো সব কিছুই পরিস্থিতীর চাপেই করেছে

?

আহিবা:আমি চলে যাই এখান থেকে তখন আপনি আমার পরিবার আপনার পরিবারকে পারবেন তো সামাল দিতে ..কারন আমি এখন হাজার চাইলেও সবার সাথে মিলতে পারবো না কারন আমার নামের আগেই ডিভের্শি যোগ হয়ে যাবে ..প্রতিটা পদে পদে অপমান হতে হবে বাবা মা কে আর বোনকে বিয়ে দিতে গেলে সবাই আগে বলবে তার বড় বোন একজন ডিভোর্শি …সে সব সময় আমায় দোষ দিবে না …এক কাজ করতে পারতাম যদি না এতে আল্লাহ অখুশি হতেন তবে আত্তহত্যা করা যেতো কিন্তু এটা যে ঘোর পাপ ..এটাতে আমি না পাবো জানাজা আর না পাবো পরোকালে শান্তি …বিয়ের পরে স্বামীর বাড়িই একটা মেয়ের জন্য সব থেকে মুল্যবান …স্বামীর আদেশ মূল্যবান আমি তো মেনেছি সব আদেশ মেনেছি তবে আপনাদের এতো সমস্যা কেন ,,বিয়ের রাতে একটা মেয়ে হাজার স্বপ্ন তার চোখে বুনে রাখে সেই সব কিছু বলি দিয়ে আপনার বলা সেই দিন দ্বিতীয় বিয়ের কথা কই তাও তো আমি মেনে নিয়েছি …একটা বার ও প্রতিবাদ করি নি আমি …একটা বার ও না এমন কি বিয়ে করে বউ নিয়ে এসেছেন তার জন্য যা যা দরকার সব করেছি তবুও কি এখানে থাকার অনুমতিটা আমার নেই ..কেন বলতে পারেন ….স্তযি বলতে এখানে যেমন ই থাকি না কেন আমি নিশ্চিন্ত আছি বাহিরে গেলে শিয়াল কুকুরের মতো মানুষ নামে নর পিচাশ গুলো ছিরে খাবে নয়তো শকুনি নজর দিয়ে গিলে খাবে …

আহিবা আহাদ এর সামনে বসে তার পা ধরে কেদে দেয় ?আহিবা:দয়া করে এতো বড় সাস্তি দিবেন না আমি কখনই আপনার কাজে স্ত্রীর অধিকার নিয়ে যাবো না

আহাদ আস্তে করে আহিবার সামনে বসে পরে

আহাদ:পা ছারো আহিবা …তোমার কোথাও যেতে হবে না এখানেই থাকবে তুমি কাজের মানুষ হতে হবে না তুমি তোমার নিজের পরিচয় থাকবে ..আমাদের মধ্যে কি আছে না আছে সেটা না হয় আমরাই জানলাম …তবুও তোমার বাহিরে যেতে হবে না …আমি চাইনা কেউ তোমার দিকে কোনো শকুনী নজর দিক …সেটা কখনই আমার ভালো লাগবে না

বলেই আহাদ রুম থেকে বেরিয়ে যায়

আহিবার কানে শুধু আহাদ এর বলা শেষ কথা টুকু বাজতে থাকে আহিবার যানো এতেও শান্তি হুম পরম শান্তি

আহাদ রুমে যেতেই এনি বিছানায় বসে ছিল ..সেখান থেকে উঠে এসে আহাদ এর কাছে যায় ?

এনি:আহাদ আহিবাকে বলছো ডিভোর্শের কথা
আহাদ:হুম
এনি:কি বল্লো ও চলে যাবে ,,,না গেলেও ওকে এখানে রাখবে না তুমি দূরে পাঠিয়ে দিবে
আহাদ:সে কোথাও যাচ্ছে না
এনি:মানে
আহাদ:তুমিও এই বাড়ির বউ আর আহিবা ও তবে ও যাবে কেন আর কোনো ডিভোর্শ ও হচ্ছে না আহিবা তার অধিকার নিয়েই এই বাড়িতে থাকবে হ্য়া একজন স্তৃরীর মর্যাদা শে পাবে না ঠিকই
এনি:কি বলতে চাও ওর সাথে তোমার ডিভোর্শ হবে না তবে আমি সারা জীবন ওর নিচে পরে থাকবো ছোট বউ হয়ে সবাই আমায় এর জন্য সারা জীবন খোটা দিবে না ..তবে বিয়ে করলে কেন মরে যেতাম আমি
আহাদ:বিয়ে করতে তুমি বাধ্য করেছিলে কে বলেছিল সুইাাইড করতে যেতে …আর আহিবা যদি তোমার ছোট হয়ে সব মানতে পারে তবে তুমি পারবে না কেন
এনি : আমি মানতে পারবো না পারবো না ওর সাথে এক ঘরের নিচে সংসার করতে কিছুতেই পারবো না ?
আহাদ: কি বলতে চাও
এনি : ওকে বাড়ি থেকে তুমি বার করবে নাকি আমি ?
আহাদ; কি যাতা বলছো পাগল হয়ে গেছো তুমি
এনি : হ্যা হ্যা পাগল হয়ে গেছি ওকে আমি রাখতে দিবো না এখনই ওকে বার করবো

?

এনি এক প্রকার দৌড়েই আহিবার রুমে যায় আহিবা এখনও সেখানেই বসে আছে এনি গিয়ে হঠাৎ টেনে আহিবাকে তুলো টানতে টানতে রুমের সামনে নিয়ে আসে

আহিবা: আপু কি করছো ছারো আমার লাগছে
এনি : তুই এই বাড়ি থাকবিনা এখনই বার হয়ে যাবি
আহিবা: কি যাতা বলছো ছরো আমায়
আহাদ: এনি ওকে ছারো ছারতে বলছি আমি
এনি আহিবাকে ছেরে দেয়
এনি: এই তুই ওকে কি করেছিস এতো দরদ কেন হ্যা …

.বোনের বলিস আবার আমার সংসার ভাগার জন্য উঠে পরে লেগেছিস কেন …বলেই আহিবার গালে চর মারতে যায় কিন্তু তার আগেই আহাদ এনির হাত ধরে ফেলে ?

আহাদ: কি করছো কি ?
এনি : তুমি আমার হাত ধরলে আহাদ
আহাদ: হ্যা ধরলাম তুমি ওকে মারতে চাচ্ছো কেন
এনি : আহাদ এই কয়দিন কি এমন করলো যার জন্য তুমি ওর হয়ে কথা বলছো
আহাদ: কেন কি করবে আহিবা ?
এনি : আমার কাছে কি মনে হচ্ছে যানো তোমায় বিয়ে করাই আমার ভুল ছিল ?
আহাদ:এনি তুমি
এনি:হ্যা ঠিক বলেছি আমি ভুল করেছি মস্ত ভুল নাহ এই ভুল আমার শুধরাতে হবে …
আহাদ: মানে
এনি : থাকবো না আমি চলে যাবো
আহাদ: কি যাতা বলছো কি
এনি : ঠিকই বলছি

বলেই হন হন করে নিজের রুমে চলে যায় আহাদ রুমে না গিয়ে ড্রইং রুমের সোফায় গিয়ে বসে পরে এতো অশান্তি তার ভালো লাগছে না সুখের আশায়ই তো সে এনিকে বিয়ে করে এনেছিল কিন্তু এটা কি হলো সম্পূর্ন উল্টো

আহিবা তার রুমের দরজার সামনে বসে আছে কি করা,উচিত তা তার জানা নেই?

এর মধ্যেন এনি ব্যাগ নিয়ে নিচে নামে ?

আহাদ: কোথায় যাচ্ছো ব্যাগ নিয়ে
এনি : চলে যাবো তা নয়তো কি
আহাদ: কিন্তু কেন
এনি: এক ঘরে এই ভাবে সতিন নিয়ে আমি সংসার করতে পারবো না

বলেই হন হন করে বেড়িয়ে যায় আহাদ তার পিছু পিছু যেতে কিন্তু তার আগেই আহাদ এর দাদী কাকা কাকি আর তাদের ছেলে এসে ওদের বাড়ি ডোকে আহাদ চাইলেও আর বার হতে পারে না এনিকেও আটকাতে পারে না ,,,,

এনি গেটের কাছে গিয়ে আবার পিছন ফিরে তাকায় দেখে আহাদ আশে কি না কিন্তু না আহাদ আসে না

?

এনি : আহাদ তুমি পর হয়ে গেছো ভালোবাস না তুমি আর আমায় হয়তো আমি তোমার কাছে ভালো লাগা ছিলাম ,,তোমার মনে হয়তো কোথাও আহিবা আছে ,,,থাকো তুমি তাকে নি আমি আমার পথে বেচে থাকি বলেই গেট দিয়ে বাহিরে চলে যায়

আহাদ:দাদী তুমি আসবে জানাবে না তবে আমি গাড়ি পাঠিয়ে দিতাম
দাদী:আরে দাদুভাই নতুন বিয়ে করেছো তাই বউ দেখতে চলে এবার এবার কিন্তু আমি নাতবউ এর কাছে অনেক দিন থাকবো
আহাদ ;আচ্ছা থেকো কাকা ..কাকি রাফি (চাচাতো ভাই আাহাদ এর থেকে ১ বছরের ছোট )বসো তোমরা

কাকা:আরে বসছি তুই বউমাকে ডেকে নিয়ে আয়
কাকি:বউমা তার সামনে ডেকো না এই দিনের মেয়ে রাগ করতে পারে (মুখ বেকিয়ে)?
দাদী:আহ বউমা আহাদ নাত বউ কোথায় রে ওকে নিয়ে আয় তো
আহাদ:হুম ,যাচ্ছি

আহাদ আহিবার রএমে যাওয়ার আহে সুমিকে বলে যায় সরবত নাস্তা রেডী করতে সবার সাথে হাসি মুখে কথা বল্লে রাফিকে আহাদের একদম পছদ না তবুও সেটা বাহিয়ে আর প্রকাশ করলো না সে ..লম্বা পায়ে আহিবার রুমের দিকে এগোয় দেখে আহিবা রুমের সামনেই বসে আসে

আহাদ:আহিবা রুমে চলো
আহিবা:আপু কোথায়
বহাদ:জানি না বাসায় গেছে সেটা পরে হবে …বাড়ি থেকে কাকা কাকি রাফি ওহ সরি তুমি ওকে চিনবে না ও আমার কাকাতো ভাই আর তাদের সাথে দাদী এসেছে তুমি ফ্রেস হয়ে রেডী হয়ে নিচে আসো তারা ওয়েট করছে
আহিবা :আচ্ছা.আপনি যান আমি আসছি

আহাদ আর অপেক্ষা না করে নিচে চলে যায় আর আহিবা ফ্রেস হতে ফ্রেস হয়ে শাড়ি পরে চুল গুলো হেয়ার ডেয়ার দিয়ে শুকিয়ে খোপা করে নেয় চোখে হালকা কজল দিয়ে রেডী হয়ে নিচে যায় গিয়ে সবাইকে সালাম করে ..নাস্তা সরবত খেতে দেয় রাফিকে সরবত দিতে নিলে রাফি ইচ্ছা করে আহিবার হাতের উপর হাত দেয় যেটা দেখে আহাদ তেলে বেগুনে জ্বলে ওঠে তবুও নিজেকে সামলে নেয় চুপ করে থাকে ,,আহিবা গিয়ে দাদীর কাছে বসে ..

দাদী আহিবার থুতনিতে হাত দিয়ে :বাহ নাত বউকে কিন্তু আমার খুব পছন্দ হয়েছে …কি রে তোকে নাতবউ বল্লাম দেখে কষ্ট পেলি নাকি
আহিবা:দাদী কি যে বলো না ..তুমি আমায় নাতবউ বলবে না তো কে বলবে বলো তো …
দাদী:হুম ঠিক কথা
আহিবা:আপনারা কথা বলুন আমি রান্নার দিকটা দেখে আসি

আহিবা যখন ওখান থেকে চলে যাচ্ছিল রাফি খুব খারাপ ভাবে আহিবার দিকে তাকিয়ে ছিল ….আহাদ তার রাগ বার বার কন্টোল করে রাখছে

আহাদ:তোমরা বসে আমি একটু দেখে আসি কি রান্না হচ্ছে
রাফি:ভাই এতো বউ পাগল আর তা হবেই না কেন বউ তো খুব সুদর
আহাদ:ঠিক বলেছিস …আমার বউ তো তাই (দাতে দাত চেপে)
কাকা:আহ রাফি ও তো কাজেই যাচ্ছে

আহাদ আর কথা না বাড়িয়ে রান্না ঘরের দিকে পা বাড়ায় আহিবা কোমরে কাপড় গুজে কাজ করছে আর এর জন্য আহিবার বেশ খানিকটা কোমড়ের দিকের অংশ বিদ্যমান ..

আহাদ আপেল আর একটা ছুরি হাতে নিয়ে আপেল
কাটতে কাটতে

আহাদ :কোমর দেখিয়ে কাজ করার কি আছে ?

আহিবা আহাদ হঠাৎ পিছন থেকে কথা বলায় ভয়ে হাত থেকে খুন্তি পরে যায় তারাতারি করে আহাদ এর দিকে তাকায়

আহাদ:এতো ভয় পাওয়ার কি আছে
আহিবা:না হঠাৎ করে কথা বলে উঠলেন তো তাই
আহাদ:হুম কোমর বার করছো কেন …
আহিবা তারাতরি করে কোমরে গোজা আচল ছেরে দেয় ?
আহাদ:আর যদি কখনও দেখি তো ..

?

আপেল টা ছুরি দিয়ে এমন ভাবে কাটে যেন দেখে মনে হয় গরু জাবাই করছে আহিবা আপেল টার দিকে আর একবার আহাদ এর দিকে তাকিয়ে শুকনো টোক গিয়ে আহিবা মনে মনে আপেল টাকে নিজের মুন্ডো মানে মাথাটা ভাবতাছে আর মনে মনে ভাবছে সে যদি এমন ভুল করে তবে আহাদ তার ও গলা কেটে দেবে আহিবা আর ওদিক না তাকিয়ে তারাতারি খুন্তি উঠিয়ে উল্টো দিক ফিরে রান্না করতে থাকে

আহাদ আহিবার কান্ড দেখে হেসে দেয় তবে আহিবাকে বুঝতে দেয় না …

চলবে,,,,,,,,,,

শুকনো ঘাস ফুল part:2+3

0

#শুকনো_ঘাস_ফুল?
#natasa_islam_muntaha
#part::2+3

??
?

আহিবা না চাইতেও বার বার তার চোখ জোরা ভিজে উঠছে ,,,কি আর করার তার যে কিছুই করার নেই বিয়ের দিন রাতেই যে সে তার স্বামীকে ২য় বিয়ে করার পার্মিশন টা দিয়ে দিয়েছে ,,,এতে তার স্বামীরই বা দোষ কোথায় ,,,

আহিবা রুমে চলে আশে আর বার হয় না সারাদিন এ ..রাতে একবার বেড়িয়ে দেখে নিয়েছে সবাই খেয়েছে কি না ,,,গভীর রাতে চারিদিকে ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক আর ঝোনাকির ঝাক এ মো মো পরিবেশ ..আহিবা বিছারা ছেরে উঠে বারান্দার দরজায় হেলান দিয়ে বসে পরে মাথাটা ঠেকিয়ে দেয় দরজায় ,,মেঘ হীন চাদ হীন তারা হীন নীল আকাশ টার দিকে

?
আহিবা:আমি একা উহু তোমরাও সবাই একা ,,,কারো সাথে কোনো সঙ্গি নেই ,,সবাই নিসংঙ্গ ,যানো আমার জীবনটা এমন ছিল না কত্তো সুন্দর ছিল অডেল সব কিছু না থাকলেও কোনো কিছুর অভাব ছিল না ,,,সারাদিন কত হৈচৈ এর মধ্যে থাকতাম কিন্তু আজ,,,,,,আজ আমি করো বাড়ির বউ সব কিছুতেই আমার সাম্যতা বজায় রেখে চলতে হবে ,,না চাইলেও মুখে হাসির রেখা ফুটিয়ে তুলতে হবে ,,, কারন ,,,উহু আমার তো জানা নেই তোমাদের কি কারো জানা আছে ,,,,আমি এতোটাই হত ভাগী নিজের স্বামীকে অন্যের ঘরে দিয়ে আসি অন্যকে বুকে নিয়ে সুতে দেখি ,,,আমি অন্যের ক্যানো বলছি সেতো আমার বোন ,,,আমি তাকে এমন কথা কেন বলছি ,,,কেন এগুলো সজ্য করতে পারছি না আমি কেন এতো কষ্ট হচ্ছে ,,বুকের ভিগরে দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে ,,,আহিবা একটা কবিতা মনে পরছে শুনবে
?
অন্ধকার রাত আবছায় আলো
মনটা তবুও মেঘে ডাকা আকাশ কালো
লক্ষিপেচা ঐ গাছের ডালে
মনে কেন প্রেমের হাওয়া দোলে
চোখ দুটো বড্ড বেহায়া ক্ষনে
ছুটে যায় শুধু তার পানে
যতোই করি বারন
শোনে না কোনো কারন
মাথাটা চায় বার বার তার গেসতে কাধ
কিন্তু এটা যে ঘোর অপরাধ
(কবিতায় জেবিন )

আহিবা চোখ বন্ধ করে তার সাথে কিছু দিন আগে ঘটে যাওয়া কথা গুলো ভাবতে থাকে

একসময় চোখ থেকে পানি পরতে পরতে হাড়িয়ে যায় ঘুমের দেশে

?

আজই মাএ এস এস সি পরিক্ষা শেষ হয়েছে …বাড়িতে নাচতে নাচতে আসে এসেই এনিকে নিয়ে ঘুড়তে থাকে

এনি:আরে করছিস কি ছার
আহিবা:হুস বুড়া মানুষ এর মতো কথা বলো কেন …আপু আজ বিকালে আমরা অনেক ঘুরবো
এনি:আচ্ছা আচ্ছা এখন যা ফ্রেস হয়ে নে
আহিবা :ওকে
এনি:এই শোন
আহিবা:হা বলো
এনি:আজ বিকালে একটা মানুষের সাথে তোর পরিচয় করিয়ে দিবো
আহিবা: কারে সাথে ?
এনি:গেলেই দেখবি আনে
আহিবা:ওক্কে বনু লাভ লু
এনি:হাহাহা লাভ লু থু ??

আহিবা রুমে গিয়ে ফ্রেস হয়ে দুপুর এর খাবার খেয়ে এনির সাথে গল্প করে পার করে দেয় বিকাল হতেই এনি আর আহিবা রেডী হয়ে বেড়িয়ে পরে তাদের উদ্দেশ্যের সেই স্থান এর দিকে

আহিবা:আমি আজ হেটে যাবো
এনি:কিন্তু
আহিবা:প্লিজ যাই না
এনি:আচ্চা বাবা চল
আহিবা:☺

ওরা একটা কফিশপে বসে আছে

আহিবা:এখন ও আসে না কেন ,,,এভাবে বসে থাকা যায়
এনি:ওয়েট কর না এসে যাবে আরে ঐ তো ও হচ্ছে আহাদ খান আমার জীবন

আহিবা তাকিয়েই দেখে একটা ছেলে ডার্ক রেড সার্ট কালো ব্লেজার কালো প্যান্ট চোখে লাল সানগ্লাস হাতে একটা কালো বেল্টের ঘড়ি …ছেলেটা এসেই এনির পাশে বসে পরে

আহাদ:হায় তুমি
আহিবা:আমি আহিবা
এনি:আমার মামাতো বোন যেটার কথা তোমায় বলতাম
আহাদ:ওহ হো আমার প্রেম করার মধ্যে প্রেম এর কথা কম আহিবার কথা বেশি
এনি:আরে কি যে বলো না
আহাদ :এই বসো আমি কফি ওডার্র দিয়ে আসছি
এনি:হুম
আহাদ যেতেই
আহিবা:বনু একটা কথা বলি
এনি:হুম
আহিবা:আমি না সেইইইইইই লেভেলের ক্রাস খাইছি রে তুই প্রেম করার আগে একে আমি কেন দেখলাম না তাইলে তো আমিই পটাই সোজা কাজি অফিসে গিয়া পটা পট দুইটা সাইন দিয়া বিয়ের রেজিস্ট্রি করে নিতাম
এনি:ওরেহহহহ হাহাহাহা
এর মধ্যেই আহাদ চলে আসে
আহাদ:কি কথা হচ্ছিল হুম
এনি:ও বলে কি জানো
আহিবা:আপপপপু
এনি:ও বলে তারপর সব টা বলে দেয় আহাদ কে আর আহিবার তো ইচ্ছা করছে মাটির সাথে মিলে যেতে কেমন বদ বোন তার সবটা বলে দিলো
আহাদ:হাসতে হাসতে ,,,,,আমার কিন্তু কোনো সমস্যা নেই দুটো বউ রাখতে
এনি:এই তুমিও না

সেইদিন মতো ওরা সেখান থেকেই বিদায় নেয় …আর অল্প কিছুক্ষন থেকে …পরের দিন ও ঠিক তেমনি ওরা আবার ঘুরতে যায় ..আহাদ ও আসে তবে তাকে আজ খুব বেশি খুশি খুশি লাগছে ..এনি আজ একটা সবুজ আর হালকা সাদা রং এর সাড়ি পরেছে যদিও সেটা আহাদ এর জোড়াজুড়িতে …এনি একা সাড়ি পরে যেতে ইচ্চা করছিল না তাই আহিবাকেও জোড় করে সাড়ি পড়ায় আহিবা ফুল সাদা একটা সাড়ি পরে সাড়িটার পারেও মোটা সাদা সুতার কাজ করা …আচলে হালকা সবুজ রং এর সুতার কাজ …

দুজনে রেডি হয়ে চলে যায় নদীর পড়ে আহাদ আজ আগেই এসেছে তার গায়ে সাদা একটা পান্জাবি সাথে হালকা সবুজ রং এর সুতার কাজ করা

এনি আর আহিবাকে আসতে দেখে আহাদ উঠে তাদের কাছে যায় ….আহাদ এর হাতে এক গুচ্ছো গোলাপ ফুল তবে সব সাদা গোলাপ ?

আহাদ ওদের সামনে এসেই এনিকে প্রপোজ করে আহিবার কেন জানি কষ্ট হচ্ছিল খুব

এনি ও প্রতিবারের মতো আহাদকে accept করে নেয়
তার পর নদীর পাড়ের একটা বসার জায়গায় গিয়ে বসে পরে

এনি:কি ব্যাপার মিস্টার আজ এতো খুশি কেন
আহাদ:তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে
এনি:আমার জন্য কি ছারপ্রাইজ
আহাদ :এখন বলবো বাসায় গেলেই জানতে পারবে
এনি :হুহ
আহিবা:আপু আমি চরে গিয়ে হাটি
এনি:যা তবে সাবধান তুই কিন্তু সাতার জানিস না
আহিবা:চিন্তা করো না তো
এনি:হুম

?

আহিবা নদীর পারে হাটতে থাকে হঠাৎ নদী দিয়ে একটা বড় লন্চ যাওয়াও নদীতে প্রচুর ঢেউ ওঠে আহিবা হাটতে হাটতে অনেকটাই ভিতরে চলে গিয়েছিল আর এতো বড় ঢেউ এর জন্য নিজেকে ঠিক রাখতে না পেরে পানিতে পরে যায়

আহিবা:আপপপপু (বলে জোরে চিৎকার করে)

আশে পাশের মানুষ সব জরো হয়ে গেছে আহাদ আর এনি ও দৌড়ে যায়

এনি:আহাদ কিছু করো আমার বোন (বলেই হুহু করে কেদে দেয় )

আহাদ কি করবে কিছু ভেবে না পেয়ে নিজেই ঝাপ দিয়ে পানিতে পড়ে তার পর আহিবাকে নিয়ে উপরে উঠে আসে …আহিবা ঙ্গান হাড়িয়ে ফেলেছে

এনি:আহিবা বলে ওকে নাড়াতে থাকে
কিন্তু কিছু তেই কোনো কাজ হচ্ছে না …
আহাদ:এনি সরো ওর পেটে চাপ দিয়ে পানি বার করতে হবে অনেক পানি খেয়ে ফেলেছে
এনি :হুম

আহাদ একটা বাজে পরিস্থিতীতে পরে গিয়েছে কি করে আহিবার পেটে হাত দিবে এটা নিয়ে

আহাদ:এনি তোমার হাতটা দাও
এনি:কেন
আহাদ:আহ দাও না

আহার এনির হাতটা আহিবার পেটের উপর রেখে তার পর নিজের হাত দিয়ে এনির হাতের মাধ্যমে পেটে চাপ দেয় অনেক পানিও বার হয় তবুও ওর ঙ্গান ফিরে না
এনি তো সেই কখন থেকে কেদেই যাচ্ছে

আহাদ:এনি কেদো না তো সর ওকে গাড়িতে নিয়ে যাই চলো
এনি আগে আগে গিয়ে গাড়ির দরজা খোলে
এনি :আহাদ ওকে সোয়াও আমি ব্যাগ দুটো নিয়ে আসি
আহাদ:আচ্ছা

?
আহিবাকে সোয়াতে গিয়ে আহাদ এর হাত নিচে পরে যায় আহিবা কিছুটা জোরেই সিটের উপর পরে যায় আর আহাদ ও আহিবার উপর এতো টাই ঝুকে পরে যে আহিবার ঠোঁট ছুয়ে যায় আহিবা এতো জোরে পরার জন্য ঙ্গান হালকা হালকা আসে আর তখনই এমন হয় আহিবা পুরে শক খেয়ে নরা চড়ার ক্ষমতা হাড়িয়ে ফেলেছে আাহাদ তারাতারি করে উঠে যায় কিন্তু আহিবার গলার লকেট টার সাথে আহাদ এর পান্জাবির বুতাম খুব ভালো ভাবে এতে যায় এক সময় জোরে টান দিতে গিয়ে সেটা ছিরেই যায় ..আহাদ ভাবলো পরে দিয়ে দিবনে সাড়িয়ে ..
এর মধ্যেই এনি চলে আশে

এনি এসে আহিবার পাশে বসে আহিবার মাথাটা নিজের কোলে নিয়ে আস্তে আস্তে আহিবাকে ডাকতে থাকে ..
এনি :আহি এই আহি কথা বল বোন কথা বল
আহিবা এনির ডাকে হালকা নরে ওঠে
এনি:আহি তুই ঠিক আছিস
আহিবা পিট পিট করে চোখ খুলে তাকায়
আহাদ:ঙ্গান ফিরেছে (গাড়ি ড্রাইভ করতে করতে )
এনি:হুম
আহাদ:ওহ
আহিবা আস্তে করে উঠে বসে এনি ওকে ধরেই বসে
এনি:আহাদ আমাদোর বাসার সামনে নামিয়ে দাও
আহাদ:হুম চলো
এনি আর আহিবা বাড়ির সামনে আসতেই দেখে পুরো বাড়ি সাজানো হচ্ছে প্রায় শেষ পর্যায় সাজানো পুরে বিয়ে বাড়ি বিয়ে বাড়ি মনে হচ্ছে
আহিবা:আপু এটা কি আমাদের বাড়ি তাহলে সাজাচ্ছে কেন কারো বিয়ে নাকি ..তুমি বা আমি তো এখন কেউ বিয়ে করছি না তবে কি দাদু আবার বিয়ে টিয়ে করবে নাকি

আহাদ আহিবার এমন কথায় হেসে দেয় জোরেই আহিবা খানিকটা লজ্জা পেয়ে যায়

আহাদ:like seriously তোমার দাদু এই বয়সে বিয়ে করবে ?
এনি:ওর মাথা মনে হয় পানিতে পরে পুরাই গেছে নাম গাড়ি দিয়ে চলে বাসায় গিয়ে দেখি কি হচ্ছে
আহিবা:হুম চলো

এনি আর আহিবা আহাদকে বিদায় দিয়ে বাড়ির ভিতরে চলে যায় বাড়ির ভিতরে যেতেই মিসেস রুজি (এনির মা )

মিসেস রুজি:আরে আহিবা ভিজলি কি করে
আহিবা:আমি একটা নতুন বাড়ি করেছে ওটার নিজ দিয়ে আসছিলাম তখন উপর থেকে একটা বাচ্ছা একটা ভরা বলতি পানি ডেলে দিছে (মাফ করো ফুপু মিথ্যা বল্লাম না হয়ে চিন্তা করবে )
এনি:হুম

মিসেস রুজি :আচ্ছা বুঝলাম এনি তুই ওকে ওর রুমে নিয়ে যা আর এই নে এই হলুটা ওট গালে লাগিয়ে হালকা গোসল করে বার হতে বল পার্লারের মহিলা রা সেই কখন থেকে বসে আছে ওকে সাজাবে বলে

আহিবা আর এনি এক সাথে:মানে
মিসেস রুজি ?:তোদের এতো বুঝতে হবে না তারাতরি যা
এনি আর আহিবা বকা খেয়ে রুমে যায় আহিবা হলুদ লাগাবে না তবুও জোর করে এনি ওর গায়ে হলুদ লাগিে দেয় আর জোরাজুড়ির ফরে এনিও হলুদ এর মাখামাখি হয়ে যায় দুজনই তারপর গোসল করে বার হায় …ওরা দুজন গল্প করছিল এর মধ্যেই আহিবার মা হুরমুর করে দুজন মহিলা নিয়ে রুমে আসে সাথে একটা পিতলের থালায় সাদা একটা ল্যাহেঙ্গা অনেক ভাড়ি ভারি কয়কটা গয়না

আহিবা:এগুলো কি মা আর কার জন্য
মা:এগুলো তোর আর আপনারা একে রেডী করিয়ে তারাতরি নিয়ে আসুন এনি ওর সাথে থাক মা একটু পরেঔ বর চলে আসবে
আহিবা;বর মানে
মা:আজ তোর বিয়ে রে মা ,,,তোর বাবার এক বন্ধুর ছেলের সাথে ছেলেটা বেশ ভালো দেখতে তোর বাবাও তাদের কথা দিয়ে দিয়েছে এই বাড়ির মান সম্মান সব তোর হাতে,,,,না করিস না বাবা মা যা চায় সন্তানের ভালোর জন্যই রে মা রেডী হয়ে নে বলে তিনি কাপরের আচলে চোখ মুছতে মুছতে রুম থেকে বেড়িয়ে যায় আহিবা পাথরের মতো বসে আসে
এনি:আহি

বলতে দেরী আর ওকে জড়িয়ে কাদতে দেরী না ..আহিবা হুহু করে কেদে ওঠে ুনির চোখের কোনাও ভিজে ওঠে তবে সেটা আহিবা দেখার আগেই মুছে নেয়

এনি:আহিবা বোন তৈরী হয়ে নে তারা যে চলে আসবে দেখবি খুব ভালো থাকবি তুই আর মামা মামি কখনই তোর খারাপ চায় না …
এনি (মহিলা দুজনকে উদ্দেশ্য করে): ওকে সাজানোর ব্যাবস্থা করুন
?
মহিলা দুজন ও লেগে পরে তাদের কাজ করতে প্রায় ২ ঘন্টা পরে তারা আহিবাকে কনে সাজিয়ে প্রস্তুত করে পুরো সাদা কনে …বিয়েতে তো লাল কাপড়ে মোড়ানো থাকে কোনো আর আহিবা সাদা ল্যাহেঙ্গা সাদা জুইলারী সাদা ওড়না সাদা টিপ শুধু মাএ ঠোটেঁই হালকা গোলাপি লিপস্টিক ..

এনি এসে আহিবার মুখটা হালকা উচু করে :বাহ খুব সুন্দর লাহছে তো জানিস আহাদ ও নাকি ঠিক এমন সাজিয়ে তার ঘরে আমায় নিবে নব বধু রুপ

আহিবা একটা শুকনো হাসি দেয় …..

কিছু সময় পরই বাহির দিয়ে তিব্র ধন্নি ভেসে বসে বাচ্চাদের :বর এসেছে বর এসেছে

আহিবার বুকটা কেপে ওঠে …

আর তখনই এনি দৌড়ে বাহিরে যায় আর ভেজা চোখ নিয়ে আসে আহিবার সামনে আহিবার দিকে তাকিয়েই নিজের মুখ চেপে দৌড়ে নিজের রুমে চলে যায় ,,,,,,আহিবা এনির রুমের দিকে যাবে তার আগেই ওকে কিছু পারার মেয়েরা এসে পরে নেওয়ার জন্য
?

চলবে,,,,,, ,

???

#শুকনো_ঘাস_ফুল?
#natasa_islam_muntaha
#part::3

??
?

কিছু সময় পরই বাহির দিয়ে তিব্র ধন্নি ভেসে বসে বাচ্চাদের :বর এসেছে বর এসেছে

এনি :তুই বস আমি গিয়ে তোর বরটাকে দেখে আসি বুঝলি
?
বলেই এনি উঠে বর দেখতে চলে যায় গেট এর সামনে যেতেই সাজানো একটা বিয়ের গাড়ি বাড়ির ভিতরে ডুকতে দেখে এনি ভালো ভাবে গাড়ির দিকে তাকাতেই তার আত্তা কেপে ওঠে কারন গাড়িতে আর অন্য কেউ না আর প্রিয় আহাদ এনির চোখ দিয়ে টপ টপ করে পানি পরতে থাকে আহাদকে এনির মা আর আহিবার আম্মু বরন করে নিচ্ছে আহাদ এনির দিকে তাকিয়ে থাকে আহাদ এর চোখ ছল ছল তবে সে কাদছে না ছেলেদের যে কাদতে নেই ..এনি আর সজ্য করতে না পেরে দৌড়ে বাসার ভিতরে চলে যায় এনির রুমের আগে আহিবার রুম হওয়ায় এনি আহিবার রুমের সামনে দাড়িয়ে আহিবার দিকে তার ভেজা চোখ নিয়ে আহিবার দিকে তাকিয়েই নিজের মুখ চেপে দৌড়ে নিজের রুমে চলে যায় ,,,,,,আহিবা এনির রুমের দিকে যাবে তার আগেই ওকে কিছু পারার মেয়েরা এসে পরে নেওয়ার জন্য আহিবা চাইলেও আর যেতে পারে না এনির কাছে ওকে নিয়ে বসিয়ে দেওয়া হয় আহাদ এর পাশে আহিবা এক বারো পাশে তাকিয়ে তার হবু বরকে দেখেনি …বিয়ে সম্পন্ন হয়ে যায় ..আহিবাকে যখন যা করতে বলা হয়েছে সে তখন তাই করছে এখন বিদায়ের পালা সবাই কাদছে কিন্তু আহিবা কোনো কিছু বলছে না হয়তো তাদের প্রতি অভিমান এর জন্য …

?
.আহিবার আম্মু ওকে ধরে প্রচুর কাদে ,,তারপর আহিবাকে গাড়িতে উঠিয়ে বিদায় দেওয়া হয় ,,,কিছু সময় এর মধ্যে ঐ বাড়িতেও চলে আসে আহিবার এসব কিছুই ভালো লাগছে না তাই চুপ করে আছে ,,,,বিয়ে বাড়ির নিয়মের অভাব থাকে না ঠিক তেমনি আহিবার ও নিয়ম পালন করতে করতে অবস্থা খারাপ এখন আয়নার মুখ দেখার পালা …আহিবা আর আহাদকে আয়নায় একে অপরের মুখ দেখতে বলা হয়েছে আহিবা আয়নায় তাকিয়ে আতঙ্কে ওঠে সাথে সাথে ওর সামনে বসে থাকা মানুষটার দিকে তাকায়

?
আহিবা হালকা ভাবে নলে ওঠে :আপনি

আহাদ কোনো কথা বলছে না সে চুপ করে আছে
আহিবা কিছুই বুঝতে পারছে না ,,,সব নিয়ম শেষ করে তাকে নিয়ে বসানো হয় বাসর ঘরে ..

আহিবা: কি হচ্ছে এগুলা আহাদ ভাই কি করে ,,

?
,এর মধ্যেই আহাদ রুমে ডোকে দরজা লক করেই এসে আহিবার দুই বাহু চেপে ধরে

আহাদ: এটাই চেয়েছিলে তুমি তাই না ( চিৎকার করে )
আহিবা : মমমাননে
আহাদ: কিচ্ছু বুঝতে পারছো না তাই না ,,,তোমার জন্য আমি আমার এনিকে হাড়ালাম শুধু তোমার জন্য নাহ আমি তাকে হাড়াতে দিবো না আমি তাকে ভালোবাসি তুমি জীবনেও আমার থেকে নিজের স্বামীর অধিকার পাবে না কখনই না

আহিবা বার বার ব্যাথায় কুকিয়ে উঠছে তবুও এটা আহাদের গায়েও লাগছে না

আহিবা: আমমমি কককি কককররেছি
আহাদ: কিছু করিস নি তাই নাহহহহহহ ( জোরেচিৎকার দিয়ে খাটের পাশে থাকা ল্যাম লাইট টা ধরে ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে দেয় সাথে সাথে সেটা ভেগে গুড়িয়ে যায়..আহিবা কেপে ওঠে )
আহাদ: আমি এই বিয়ে মানি না তুই বুঝেছিস মানি না আমি এনিকেই বিয়ে করবো তাকে নিয়েই সংসার করবো তোকে নিয়ে না

আহাদ এর মুখে বিয়ের কথা শুনতেই আহিবার চোখ থেকে জল গড়িয়ে পরে ,,,

আহিবা আস্তে করে খাট দিয়ে নেমে এক সাইডে গিয়ে দারায়

আহিবা:আপপপনি ঘুমমমমিয়ে পপপরুন…আমি এই খানেই আছি …
আহাদ:তুই স (আহাদের কথা থামিয়ে দিয়ে )
আহিবা:চিননন্তা করররবেন আমমি কোনননো সসসুজগ নিবববো না আআর কউউকে বললবো ও না আপপনি ঘুমমমিয়ে পরররুন

আহাদ কিছু না বলে চুপ চাপ সুয়ে পরে

আহিবা আস্তে করে আহাদ এর রুমের বারান্দায় চলে যায় …আহিবা আকাশের দিকে তাকিয়ে
আহিবা:এমন কেন করলে আমি তো চাইনি এমন ,,,কতো সাজানো স্বপ্ন ছিল বাসর নিয়ে কিন্তু কি হলো …আমি আজ এতো বড় হতভাগীনি যে কিনা বাসর ঘরেই স্বামীর মুখ দিয়ে দ্বিতীয় বিয়ে করার কথা শুনতে হচ্ছে ,,,কি কপাল আমার ..

আহিবার মনে পরে যায় সেই দিনের কথা যেদিন আহাদ এর বাবা মা ওদের বাড়ি গিয়েছিল এনিকে দেখতে ,,,কিন্তু আহাদ এর মা পছন্দ করে ফেলে আহিবাকে সেটা সে সবার সামনেই বলে দেয় আহিবাও সবার সামনে না করে দেয় এতে তিনি কষ্ট ও পান তবুও কোথা দিয়ে কি হলো বুঝতে পারছে না হঠাৎ রুম থেকে ফোনের ম্যাসেস টিউন বেজে ওঠে আহিবা গিয়ে ম্যাসেসটা অন করে ম্যসেস টা এনি তাকে দিয়েছে
?
“আহিবা তুই বিয়েটা ভাগতে পারলিনা ,,,আমি কখনও তোর খারাপ লাগে এমন কিছু বলি নি কিন্তু বজ বলছি কখনও সুখী হতে পারবি না ”

আহিবা ম্যসেস টা দেখে দীর্ঘশ্বাস ফেলে

আহিবা:অবশেষে তুমিও ভুল বুঝলে ,,আমায় ,,,কিন্তু সেদিন তো তুমিই আমায় ওখানে বসিয়ে ছিলে তাদের

????
হঠাৎ আহিবার ঘুম ভেগে যায় চারিদিকে পাখির কিচির মিচির ডাক ফজরের আজান দিচ্ছে আহিবা তাই আার না সুয়ে উঠে পরে ফজরের নামায আদায় করে নেয় সে সব সময় নামায পরলেও ফজরের নামায তার পরাই হতো না এই ঘুমের জন্য আর আজ,,,নিজেই নিজের কাজে হেসে দেয় …

নামায সেরে সুমিকে গিয়ে ডেকে তোলে ,,,তারপর গিয়ে নাস্তা বানাতে শুরু করে …নাস্তা বানাতে গিয়ে ভুল করে তেলে জোরে রুটি দিয়ে ফেলে যার জন্য হাতে ছিটে ওঠে আহিবা আহ বলে দূরে সরে যায় আহাদ নিচে এসেছিল পানি নিতে আহিবার এমন আওয়াজে আহাদ দৌড়ে যায় গিয়ে দেখে আহিবা হাত নিয়ে লাফাচ্ছে আর ফু দিচ্ছে

আহাদ:হাত দাও এই দিকে
আহিবা সে তার মতো ফু দিয়েই যাচ্ছে
আহাদ বুঝতে পারে আহিবা তার কথা শুনবে না তাই আহিবার হাত ধরে টেনে বেসিন এর কাছে নিয়ে গিয়ে পানি ছেরে দেয়
আহাদ:সুমি ফ্রিজ থেকে ঠন্ডা পানির বোতলটা দে তো
সুমি বোতল এনে :নেন ছোট সাহেব

আহাদ বোতলটা নিয়ে সেখান থেকে ঠান্ডা পানি আহিবার হাতে দিয়ে দেয় ..হঠাৎ করেই আহিবার চুলের খোপা খুলে চুল গুলো আহিবার মুখে ছরিয়ে পরে আহাদ সেটা হাত দিয়ে সরিয়ে দেয় আহাদ আহিবার দিকে বেশ খানিকটা ঝুকেঔ হাতে পানি দিচ্ছিল কিন্তু এনি

?

এনি দূর থেকে দাড়িয়ে সব দেখছিল আর আহাদ আহিবার দিকে এতো ঝুকে যাওয়াতে এনি আহিবা আর আহাদকে নিয়ে ভুল ভাবে তাই রেগে মেগে নিজের রুমে চলে যায়

আহাদ: যাও হাতটা মুছে আমার রুমে এসো আমি ওষুধ লাগিয়ে দিচ্ছি
আহিবা:ততততার দদরকারর নেইই
আহাদ:চুপ আসতে বলেছি আসবা না হলে

আহাদ আর কিছু না বলে রুমে চলে যায়

?
আহিবা ও হাত মুছে চুপচাপ আহাদ এর রুমের দিকে যায় আর গিয়েই দেখে এনি আহাদের গলা জড়িয়ে ধরে আছে আর আহাদ তার কোমড় একজন একজনকে ভালোবাসার পরশ দিতে ব্যস্ত আহিবা এক মূহুর্ত না দাড়িয়ে ওড়না নিজের মুখে চেপে রুমে চলে আসে ..এনি এটা ঠিকই দেখেছে আহিবার মুখে ওড়না চেপে দৌড়ানো …তার কষ্ট লাগলেও শান্তি

এনি:তুই স্বামীর ভাগ দিতে পারিশ কিন্তু আমি না ,,,আমি কখনই তার ভাগ তোকে দিতে পারবো না (মনে মনে )

আহিবা দৌড়ে এসেই খাটের উপর সুয়ে মুখে বালিস চেপে কেদে দেয়
আহিবা:আমি তো তাকে ভালোবাসি না তবে কেন আমি কষ্ট পাচ্ছি কেন ,,,কেন ,,,,,?

আহাদ খেয়ে অফিসে যেতেই এনি আসে আহিবার রুমে আহিবা রুম ঘোচাচ্ছিল …এনি আহাদ এর কাছে সুনছে আহিবার হাত পুড়েছে কিন্তু এখন তার এতে মাথা ব্যাথা নেই কোনো

এনি:আহিবা
আহিবা:আরে আপু বসো কিছু বলবে
এনি:তুই আর আহাদ এর সামনে যাবি না ওর …সামনে যানি তোকে না দেখি বুঝেছিস
আহিবা :আপু কি বলছো আমি খখন তার সামনে গেলাম
এনি:এই তুই থাম আমার সব জানা আছে তুই যাবি না ,,,,তোকে যানি কখনও না দেখি ও আমার স্বামী আমার স্বামীর ভাগ আমি কাউকে দিবো না
আহিবা (শান্ত সরে)”আপু ভুলে যেওনা সে কওন্তু আমারও কবুল বলে বিয়ে করা স্বামী
কথাটা বলতে দেরী কিন্তু এনির চর মারতে দেরী না
আহিবা গালে হাত দিয়ে ছল ছল চোখে
আহিবা:আপু তুমি
এনি:হুম এটা আগেই করা উচিত ছিল আহাদ শুধু বমার সে শুধু আমায় ভালোবাসে ,,,,,,তুই কিচ্ছু না

??
স্বামী এমন একটা জিনিস যার ভাগ কেউ দিতে রাজি না …আহিবা না দিতে চাইলেও তার স্বামীই তার থাকতো না …আর এনি সে তার স্বামীর ভাগ কারো সাথে করবে না দেখে নিজের প্রিয় বোনের গায়েও হাত দিতে তার বাধলো না কারন সে স্বামীর ভাগ দিবে না ,,, ,

চলবে,,,,,,,,

শুকনো ঘাস ফুল part:1

0

#,শুকনো_ঘাস_ফুল?
#natasa_islam_muntaha
#part:1

আহিবার বিয়ে হয়েছে সবে মাএ আজ দুই দিন আর আজই তাকে বরন করে নিতে হচ্ছে নিজের স্বামীর দ্বিতীয় পক্ষের বউ এনি কে ,,,,,,,

?কিনা,,,কপাল তার

আহিবা হাসি মুখে তার স্বামী মি.আহাদ খানকে আর এনি কে বরন করে নিচ্ছে ,,সদ্য বিবাহিত এক দম্পত্তি তারা ,,আহিবার ভিতরে সামান্য আফসোস টুকুও নেই ,,মনে হয় সে আগেই জানতো এমন কিছু হবে

আহিবা : আপনা ভিতরে বসুন …সুমি ( কাজের মেয়ে ) তাদের কে মিষ্টি মুখ করাও আমি একটু রুমটা ঠিক করে সাজিয়ে দেই
সুমি মুখটা হালকা বেকিয়ে : আইছা আফা

আহিবা চলে যায় সদ্য বিয়ে করা নব দমপ্তির বাসর ঘর সাজাতে ,,,খুব সুন্দর ভাবে সাজায় একদম তার মনের মতো করে সাজানো শেষ হতেই এনিকে নিয়ে এসে খাটের মধ্যে বসিয়ে দেয় …তারপর রুম থেকে চলে যায় …

?

?পরের দিন সকালে ,,,,,?
? ?
?

আহিবা আর সুমি টেবিলে খাবার গোচাচ্ছিল তখন আহাদ আর এনি সিরি বেয়ে নিচে নামছে …

আহিবার চোখ যায় এনির সদ্য গোসল করা ভেজা চুল গুলোর উপর না চাইতেও একটা দীর্ঘশ্বাস পরে যায় সে যে বাঙালী নারী তার কাছে সব কিছুর ভাগ থাকলেও স্বামীর ভাগ দেওয়া সব থেকে কঠিন ,,

আহাদ আর এনি এসে টেবিলে বসে সুমি আর আহিবা তাদের খাবার বেড়ে দিচ্ছে ..চুপচাপ করে

এনি : আহিবা তুইও বসনা
আহিবা : আপু থাকনা তুই খা
আহাদ 🙁 হালকা ঝাড়ির সুরে ) আহিবা তাকে সম্মান দিয়ে কথা বলো
আহিবা : আআসসলে এতো দিনন এএর অভ্যাাস তো
এনি : আহ থাক না
আহাদ: আল্লাদ দিও না
এনি : হুম

আহিবা ওখান থেকে চলে যায় রান্না ঘরের দিকে ,,,,
সেখানে গিয়ে সব কিছু ঘুছিয়ে তার রুমের দিকে পা বাড়ায় ,,সকালে খেয়েছে কিনা সেটা জিঙ্গাস করার মানুষটাও নেই ,,,

আহিবা সবে মাএ এস এস সি পরিক্ষা দিয়েছে পরিক্ষার ২ দিন পরই আহাদ এর সাথে তার বিয়ে হয় আর তার ঠিক আজ দিন নিয়ে তিনদিন যদিও তার স্বামী তো তাকে বিয়ে করার দুদিন এর মধ্যেই তারই বোনকে ….

?থাকনা কিছু কথা
পুরনো ডাইরীর ঐ ধুলো মাখা পৃষ্টাটার মধ্যে আঠা
খুজবে না কেউ সেই কথা
ভালো না মন্দ সমৃদ্ধ মনের সেই নদীর ভাটা
ভাগ্যটা বড্ড হাসায়
দড়ি হীন শুন্য ভ্যালায়
তবুও আশার আলো দেখতে চায় মন
কখন আশে সেই অন্তিম ক্ষন,,,
[ কবিতায় জেবিন ]?

আহিবা তার রুমের ঐ ছোট জানলাটার কাছে গিয়ে দারায় জানালাটা খুলে দিবে বলে জানালা ঠাকা দিলেই ক্যাচ ক্যাচ করে খুলে যায় বৃষ্টির পানি পরে জানালার গোড়ায় জং ধরে গিয়েছে আর তার জন্যই এমন শব্দ ,,,
আহিবা তার শান্ত দৃষ্টি নিয়ে বাহিরে একটা আমলকি গাছের উপর থামায় সেখানে তিনটা কালো পাখি বসে আছে একটা যে বাচ্চা তা দেখেই বোঝা যাচ্ছে আহিবা নিজের স্বপ্ন গুলোর কথা ভেবে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ,,,

আহিবা: স্বপ্ন গুলো তোমার জন্য না ভুলে যাও নিজের স্বপ্নকে ,,,,,,তাদের হাড়িয়ে যেতে দাও তবেই তুমি ভালো থাকবে ,,,

সুমি:আফা আইজগো কি রানদা করুম
আহিবা:বিয়ে বাড়িতে যা যা রান্না করে …আর তারা মনে হয় আজ দুপুর এ খেয়েই আসবে ,,,এখন রান্নার এতো জের না দিলেও হবে ,,তুই বরং হালকা কিছু রান্না কর
সুমি:আইচ্ছা আফা ,,,আম্মে সকালে খাইছেন মুই দেখি খাওন যেমন বাইড়া থুইছি হেমনই আছে
আহিবা:আমি খাবো না তুই যা আমি আসছি
সুমি:আইছা

বলে রুম থেকে চলে যায় …আহিবা দীর্ঘশ্বাস ফেলে খোলা চুলগুলো হাত খোপা করতে করতে রান্না ঘরের ূিকে পা বারায় যতোই হোক সে এখন এক বাড়ির বউ না চাইলেও এই বাড়িটা তাকে সামলে রাখতে হবে …..

আহিবা রান্না ঘরে গিয়ে সুমিকে পাঠিয়ে দেয় নব দম্পত্তির রুম ঘোছাতে ,,,তার যেতে ইচ্ছা করছে না …হঠাৎ আহিবার ফোনটা ভেসে ওঠে সেখানে স্পষ্ট মা লেখাটা দেখে আহিবার বুকের ভিতরটা ছ্যাত করে ওঠে ,,আহিবা ফোনটা রিসিভ করতেই তার মা

মা:কেমন আছিস মা
আহিবা:হু ভালো
মা:কি রে রাগ করে আছিস
আহিবা:নাহ
মা:মা দেখবি আহাদ খুব ভালো…তুইও খুব ভালো ভাবে মানিয়ে নিতে পারবি তা তোর শশুর শাশুড়ী কই
আহিবা :(তাচ্ছিল্য হাসি দিয়ে )ঠিক বলেছো মা আর বাবা না তারা তো পরশুই জাপানে চলে গেছে নাইমা আপু নাকি হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পরেছে তাই আসবে হয়তো কয়দিন পর
মা:ওহ ,,ওহ তোকে তো বলতেই ভুলে গেছি এনি নাকি বাড়ি দিয়ে পালিয়ে গেছে কোনো ছেলের সাথে ,,,কি মেয়ে ,,,কার না কার কপাল পুড়ছে আল্লাহই জানে শুনেছি ছেলেটার নাকি আগে বিয়ে আছে ,,,আহাড়ে বেচারী বউটা না জানি এখন কি করছে ,,আর কেমনই বা বউ নিজের স্বামীকে আটকে রাখতে পারে না ,এটা তো কোনো সংসার করার জগ্যই না ছিহ ছিহ শোন

আহিবার এই কথা গুলো একদম ভালো লাগছে না তাই

আহিবা:মা পরে কথা বলো এখন ফোন রাখছি ,,,,

বলেই ঠাস করে ফোনটা কেটে দেয় তার মা কি বলে বা না বলে সেটা শোনার জন্য ওয়েট না করেই ,,,,

আহিবা:কথাটা তিতা হলেও সত্যি আমার যগ্যতা নেই স্বামীর সংসার করার ,,,,,,,রাহুল ভাই ঠিকই বলতো আমার কপালে স্বামী থাকলেও স্বামীর সংসার করার কপাল জীবনেও হবে না ,,রাহুল ভাই তোমার অভিশাপ টা আজ পাইটু পাই মিলে গেছে দেখেছো ,,,এমন অভিশাপ না দিয়ে বলতে মরে যেতে তাওতো ভালো হতো ,,,সবাই বলে কবুলের জোর আসলেই কি কবুল এর জোর আছে …?
বুঝতে পারছি না ,,

তরকারি হালকা পোড়ার গন্ধে আহিবার হুস আসে তারাতারি করে তরকারিটা নামিয়ে রাখে ,,,

তারপর গোসল করতে চলে যায় …

গোসল করে আজ একটা হালকা সবুজ রং এর থ্রিপিজ পরেছে সাড়ি পরতে ইচ্ছা করছে না ..আয়নার সামনে গিয়ে নিজেকে ভালো করে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছে আহিবা নিজেকে তার মধ্যে ঠিক কি খুত আছে নাহ সে হাফিয়ে উঠেছে ..এর মধ্যেই আহাদ রুমে আসে ,,,,,,,

আহাদ:এনির মাথা বলেই অপ্রস্তুত হয়ে পরে

সাথে আহিবাও কারন তার গায়ের ওড়নাটা খাটের কোনায় রাখা আহিবা কোনো রকমের দৌড়ে গিয়ে ওড়নাটা টেনে এনে গায়ে জড়ায়

আহিবা কিছুটা দূরে দাড়িয়ে

আহিবা:ববববললুনন ককি বববললততে আসসিললেন
আহাদ:আসলে সুমি কি জানি কাজ করছে এনির মাথা ব্যাথা করছে একটা লেমন জুস করে দিতে পারবে

আহিবা হালকা কেপে ওঠে আহাদ এর মুখে তুমি ডাকটা শুনে

আহিবা : আআচ্ছা আমি দিচ্ছি আপনি আপুর কাছে যান
আহাদ আর এক মুহূর্ত না দারিয়ে চলে যায় আহিবার রুম দিয়ে

আহিবা নিজের মাথায় নিজে চাপর দিয়ে : এখন থেকে আর কখনও ওড়না কোতবাও খুলে রাখবি না নিজে নিজে ইচ্ছা মতো বলতে থাকে তার পর লেমন
জুস বানিয়ে,,,,,

এনির রুমের দিকে আগায় দরজা খোলাই ছিল তাই ডুকে যায় আর গিয়েই দেখে এনিকে বুকে নিয়ে কপালে চুপু খাচ্ছে আর হাতের আগুল গুলো নিয়ে দুজনে ফাজলামি করছে আহিবা এসেছে সেটা ওরা দুজন কেউই দেখে নি আহিবা তারাতারি রুম থেকে বেড়িয়ে যায় জুস হাতে নিয়েই তারপর ডাক ছারে সুমির নাম ধরে

আহিবা: সুমি
সুমি : যে আফা
আহিবা; কি করছিস
সুমি : এই তো থালবারটি গুলা ধুমো হেইয়া নিয়া ভিজাইছি
আহিবা: আচ্ছা ওটা আমি করছি এই নিয়ে গিয়ে তোর ছোট সাহেবের রুমে দিয়ায়
সুমি : আইচ্ছা দেন মোরে
সুমি গ্লাস নিয়ে কিছুদূর যেতেই আহিবা আবার ডাক দেয়
আহিবা: সুমি ?
সুমি ( থেমে আহিবার দিকে তাকিয়ে ): যে
আহিবা: ঘরে ঠোকার আগে জিঙ্গাস করে নিস

সুমি একটু সময় আহিবার দিকে তাকিয়ে কিছু না বলেই আহাদ এর রুমের দিকে পা বারায় ,,,,

আহিবা না চাইতেও বার বার তার চোখ জোরা ভিজে উঠছে ,,,

চলবে,,,,

কনফিউশন পর্ব ৪৭+৪৮(শেষ)

1

কনফিউশন
লেখকঃ মৌরি মরিয়ম
পর্ব ৪৭+৪৮(শেষ)

আরশি ঘর থেকে বেরিয়ে ড্রয়িং রুমে গিয়ে দাঁড়ালো। সাহিল এতক্ষণ টিভি দেখছিল। বন্ধ করে ঘরে যাচ্ছিল ঠিক সেই সময় আরশিকে দেখতে পেল। সাহিল বলল,
“কীরে এত রাত হয়ে গেছে এখনো ঘুমাসনি যে?”
“ভাইয়া বিয়ের জন্য আমি রাজি। তুমি ওদের সাথে কথা বলো।”
“এত তাড়াতাড়ি ভাবা হয়ে গেল?”
“হ্যাঁ। তুমি বিয়ের ব্যবস্থা করো।”
“আচ্ছা তুই দাঁড়া আমি আনন্দের বায়োডাটা আর ছবিটা নিয়ে আসি।”
“লাগবে না। তোমার পছন্দের উপর ভরসা আছে।”
আরশি এ কথা বলে ঘরে চলে গেল। সাহিল ঘরে গিয়ে দেখে রশ্নি ঘুমিয়ে পড়েছে। ডেকে ওঠাতেই বলল,
“সাহিল এতরাতে আবার ডাকছো কেন?”
“আরশি বিয়েতে রাজী হয়েছে।”
রশ্নি চমকে বলল,
“কীভাবে?”
“জানিনা। হুট করে এসে বলল বিয়ের ব্যবস্থা করতে। ওর তো মুখ দেখে মনের অবস্থা বোঝার উপায় নেই। কাল সকাল সকাল কথা বলোতো ওর সাথে। কোনো সমস্যা হলো কিনা। সন্ধ্যা পর্যন্ত তো রাজীই হচ্ছিল না৷ হঠাৎ কী হলো?”
“আচ্ছা কথা বলব। এখন তুমি ঘুমোও।”

কাব্য শুয়ে শুয়ে কথা বলছিল। আরশি ফোন রাখতেই ধড়মড়িয়ে উঠে বসে বলল,
“শিট!”
রাজীব ঠিক সেই সময়েই কাব্যকে ডিনারের জন্য ডাকতে ঘরে ঢুকছিল। ওকে এই অবস্থায় দেখে বলল,
“কী হয়েছে তোর?”
রাজীব কাব্যর পাশের ঘরে থাকে। কাব্য ওকে দেখে বলল,
“সর্বনাশ হতে হতে একটুর জন্য বেঁচে গেছি। এবার তুই আরেকটু বাঁচা। টিকিট ক্যান্সেল করতে হবে।”
“টিকিটের জন্য না পাগল হয়ে গেলি? দিন গুনছিলি কবে ঢাকা যাবি। এখন আবার ক্যান্সেল কেন?”
“১৫ দিন পরের টিকিট দিয়ে এখন আর আমার কাজ হবে না। এক্ষুণি ঢাকা যেতে হবে।”
“পাগল হয়েছিস! এক্ষুণি কিভাবে যাবি? এটা কি তোর ঢাকা টু কক্সবাজার যে বললাম আর গাড়ি নিয়ে চলে গেলাম! কী হয়েছে সেটা বল।”
কাব্য আরশির সাথে হওয়া পুরো কনভার্সেশনের কথা রাজীবকে বলল। রাজীব অবাক হয়ে বলল,
“যাহ দিল তো তোর সারপ্রাইজের বারোটা বাজিয়ে!”
“সারপ্রাইজের বারোটা বাজেনি৷ এখন আমি টিকিট ক্যান্সেল করে এনিহাও কালকের ফ্লাইট ধরব।”
“কালকের ফ্লাইটে সিট কি তোর শ্বশুর বুক করে রেখেছে?”
“আরে তোদের এয়ারলাইন্সে দেখ না। কেউ না কেউ নিশ্চয়ই টিকিট ক্যান্সেল করবে!”
“আমি দেখছি। তবে না পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি।”
“আচ্ছা আগে তুই টিকিট ক্যান্সেলের ব্যবস্থা করে দে। আমি দেখি এর আগে কোন টিকিট পাই কিনা। কোনো না কোনো এয়ারলাইন্সে তো ডেফিনিটলি পাব।”
“আচ্ছা।”
রাজীব নিজের ঘরে গিয়ে ল্যাপটপ নিয়ে এলো। কাব্যও তার ল্যাপটপ খুলে টিকিট খুঁজতে লাগলো। কাব্যর টিকিট ক্যান্সেল করে রাজীব বলল,
“হয়ে গেছে। তুই পেলি কিছু?”
“কাতার এয়ারলাইন্সে ১১ আর টার্কিশ এয়ারলাইন্সে ৯ দিন পর আছে। এর আগে কোথাও কিছু নেই।”
“কী করবি তাহলে?”
“কী করব আর? টার্কিশ এয়ারে ৯ দিন পরেই যাব। আর এখন আরশিকে ফোন করে প্রোপোজ করব তারপর সাহিল ভাইয়ার সাথে কথা বলব। মাকে তো আগেই বলেছি গিয়েই বিয়ে করব। প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে।”
“তাহলে সারপ্রাইজ দিবিনা? মাত্র ৯ দিনই তো। অপেক্ষা কর। দেখতে দেখতে কেটে যাবে।”
“মেয়েটা কোনোদিন কারো কাছে সারপ্রাইজ পায়নি৷ কিন্তু আমাকে অনেকবার সারপ্রাইজ দিয়েছে৷ তাই ভেবেছিলাম এবার আমি সারপ্রাইজ দিয়ে ওর হাসিটা দেখব। তুই চিন্তা কর ও জানে আমি ৪/৫ মাস পর যাব। অথচ ১৫ দিন পরেই ওর সামনে যেতাম। ৫ বছর পর আমাকে দেখে ও খুব নার্ভাস হয়ে যেত। আমি চুপ করে থাকতাম। ও হয়তো প্রথম কথাটা বলতো কাব্য কেমন আছো? আর আমি উত্তরে বলতাম, তোমাকে অনেক ভালোবাসি। ওর এক্সপ্রেশন টা কেমন হতো ভেবে দেখ।”
“দারুন হবে। তুই আর ৯ টা দিন অপেক্ষা কর ভাই।”
“ইম্পসিবল। আরশি অনেক কষ্ট পেয়েছে। কাল পরশুর মধ্যে কোনো না কোনো ফ্লাইট পেয়ে যাব ভেবেছিলাম। তাই একটু আগে ওসব বলেছি। যেহেতু ৯ দিন পর যাব, যেতে যেতে ১০ দিন পর হয়ে যাবে। সেহেতু এখনই সব বলে দেব। ১০ দিন ধরে ওকে কষ্ট দিতে পারব না।”
“আরে ব্যাটা এখন যে কষ্ট দিবি তা তো তোর সারপ্রাইজ পেয়ে এক নিমিষেই ভুলে যাবে।”
“আরশি কষ্টে কষ্টেই পুরোটা জীবন কাটিয়েছে।আমি এত কষ্ট দিতে পারব না ওকে। সারপ্রাইজের চেয়ে ওর সুখটা বেশি ইম্পরট্যান্ট।”
“কিন্তু এত কষ্ট পাওয়ার কী আছে? ভালোবাসিস না এমন কিছু তো বলিসনি।”
“ভালবাসি সেটাও স্বীকার করিনি। বিয়ের কথা ভাবিনি বলেছি।”
“শোন বুদ্ধি দেই। তুই ওকে ফোন করে বল ৭ দিন টাইম দিতে। ভেবে জানাবি।”
“অসম্ভব। আরশি আমাকে কনফিউজড ভাববে।”
“তাইলে সারপ্রাইজ প্ল্যান বাদ?”
“হ্যাঁ। ভবিষ্যতে বহুত সারপ্রাইজ দেয়া যাবে।”
“তাইলে আর কি! দে প্রোপোজ করে।”
কাব্য হেসে বলল,
“যা ব্যাটা নিজের ঘরে যা। তোর সামনে প্রপোজ করব নাকি?”

রাজীব হাসতে হাসতে নিজের ঘরে চলে গেল। কাব্য আরশিকে ফোন করল। কিন্তু আরশির ফোন বন্ধ। একটু ভয় পেয়ে গেল কাব্য। অনলাইনে ঢুকলো মেসেজ দেয়ার জন্য। কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার হচ্ছে আরশির ফেসবুক আইডি ডিএকটিভেট। হোয়াটসঅ্যাপ, ভাইভার একাউন্টও পাচ্ছে না। মেইল করতে গিয়ে দেখে মেইল একাউন্টও আর এক্সিস্ট করছে না। এবার টেনশনে মাথা খারাপ হয়ে গেল কাব্যর। রাজীবের ঘরে গিয়ে বলল,
“রাজীব শেষ আমি।”
“কেন?”
“আরশির ফোন অফ। সোস্যাল মিডিয়াতেও কোনো একাউন্ট খুঁজে পাচ্ছি না।”
“এইটুকু সময়ের মধ্যে এতকিছু?”
কাব্যর প্রেশার বেড়ে গেছে। ঘাড়ের রগ টানছে। ঘাড়ে হাত দিয়ে সারা ঘরময় পায়চারি করতে করতে ভাবছে কী করা যায়। রাজীব চুপচাপ দেখছে ওকে। কাব্য একসময় বলল,
“দোস্ত এখন তো বাংলাদেশ সময় রাত ১ টা। এটা কাউকে ফোন করার জন্য অনেক বেশি রাত?”
রাজীব জানতে চাইলো,
“কাকে ফোন করবি?”
“সাহিল ভাইয়াকে। ফোন করে আরশিকে চাইব। ওকে প্রোপোজ করে তারপর সাহিল ভাইয়ার সাথে বিয়ের কথা বলব।”
“হ্যাঁ এটা করতে পারিস।”
কাব্য সাহিলের নাম্বারে কল করল। কিন্তু তার নাম্বারও বন্ধ। কাব্য বলল,
“এটা কিভাবে সম্ভব? আরশি নিশ্চয়ই ওর ভাইয়াকেও ফোন অফ করতে বলেনি?”
“ভাইয়ার সাথে তোর লাস্ট ফোনে কথা হয়েছে কবে?”
“বাংলাদেশে থাকতে।”
“এতদিনে নাম্বার চেঞ্জ করতে পারে।”
“হায় খোদা মাফ করো!”
“ভাইয়ার ফেসবুকে মেসেজ দে।”
“আমি সাহিল ভাইয়ার সাথে এড নাই। আইডিও চিনি না। দাঁড়া অনন্ত ভাইয়ার কাছ থেকে নেই।”
কাব্য অনন্তকে ফোন করল। অনন্ত ঘুমিয়ে পড়েছিল। এত রাতে ফোন পেয়ে অবাক হলো,
“কী ব্যাপার? এত রাতে তুই ফোন করেছিস! কোনো সমস্যা?”
“না ভাইয়া। সাহিল ভাইয়ার ফোন নাম্বার টা দরকার ছিল।”
“আচ্ছা মেসেজ করে দিচ্ছি।”
“ওকে ভাইয়া। আর সরি তোকে এত রাতে জাগালাম। একটু আর্জেন্ট দরকার ছিল।”
“ঠিকাছে।”
সাথে সাথেই অনন্ত সাহিলের নাম্বার মেসেজ করে দিল কাব্যকে। কাব্য ডায়াল করে দেখে আগের নাম্বারটাই দিয়েছে যেটা ওর নিজের কাছেই আছ এবং এখন বন্ধ। কাব্য আবার ফোন করল অনন্তকে। অনন্ত বলল,
“তোর ভাবি এবার আমার ফোন ভেঙে ফেলবে। বারবার ফোন না করে একবারে সব বল।”
“সরি ভাইয়া। নাম্বারটা বন্ধ।”
“কী বলিস?”
“আর কোনো নাম্বার আছে?”
“না।”
“তোমার সাথে লাস্ট কথা হয়েছে কবে?”
“সেতো অনেকদিন।”
“নাম্বার চেঞ্জ করতে পারে। রশ্নি ভাবির নাম্বার আছে?”
“না ওর বউয়ের নাম্বার দিয়ে আমি কী করব?”
“সাহিল ভাইয়ার ফেসবুক আইডি?”
“সাহিল ফেসবুক চালায় না।”
“রশ্নি ভাবি চালায়?”
“কাব্য পরের বউয়ের খবর আমার কাছে নাই।”
“আচ্ছা তোমাকে বিরক্ত করার জন্য সরি।”
“ঠিকাছে রাখ এখন।”

কাব্য ছটফট করতে লাগলো। টেনশনে চুল টানছে সে। রাজীব বলল,
“এত টেনশন নিস না।”
“আরশির একটা কাজিন ছিল তিরা। আমার সাথে ভাল বন্ধুত্ব ছিল। কিন্তু বিয়েশাদি করে একদম শেষ হয়ে গিয়েছে। বিয়ের পরেও কিছুদিন যোগাযোগ ছিল এরপর কোথায় যেন হারিয়ে গেল। ওর সাথে যোগাযোগ থাকলেই আরশিকে পাওয়া যেত।”
“এখন আর আফসোস করিস না। ৯ দিনে এমন কিছু পাল্টে যাবে না।”
“আরশি এতদিন ধরে কষ্ট পাবে এটা আমি সহ্য করব না। তুই দেখ কাল কোন ফ্লাইটের টিকিট ক্যান্সেল হয়েছে কিনা। প্লিজ ভাই প্লিজ।”
“একটু আগেই তো দেখলাম।”
“আবার দেখ।”
“আচ্ছা দেখতেছি তুই ঠান্ডা হয়ে বস।”
রাজীব খুঁজে দেখলো কোনো ফ্লাইট ক্যান্সেল হয়নি। কাব্য এবার দুহাতে মাথা ধরে ফ্লোরে বসে পড়লো। রাজীব বলল,
“তুই এত টেনশন নিচ্ছিস কেন? আরশি কি সুইসাইড টুইসাইড…”
পুরো কথা বলল না, থেমে গেল রাজীব। কাব্য আত্মবিশ্বাসের সাথে বলল,
“আরে নাহ আরশি ওসব করবে না। অনেক শক্ত মেয়ে। ও কষ্ট পাচ্ছে তাই অস্থির লাগছে। আমি ভুল করেছি, তখনই ওকে সব বলে দেয়া উচিত ছিল।”
“নিজের উপর দোষ নিস না। তুই কি জানতি আরশি এইটুকু সময়ের মধ্যে এত কাহিনী করে ফেলবে?”
“লং ডিস্টেন্স রিলেশনশিপ একটা অভিশাপ রাজীব। এই ৫ বছরে কত মিস আন্ডারস্ট্যান্ডিং হয়েছে। আরশি রাগও করেছে কিন্তু এরকম কখনো করেনি। অবশ্য আমিও তো কখনো ভালোবাসা অস্বীকার করিনি।”
রাজীব কাব্যর কাধে হাত রেখে বলল,
“অনেক বেশি ভাবছিস। শান্ত হ। ৯ দিন চোখের পলকে কেটে যাবে।”
“চোখের পলকে কাটবে না। ৯ দিন কাটতে ৯ দিনই লাগবে। পিএইচডি করতে আসাই ভুল ছিল আমার।”
“তুই তো বলেছিলি আরশির যোগ্য হওয়ার জন্যই পিএইচডি করতে এসেছিস। ভুল কিভাবে হলো?”
“জানিনা মাথা কাজ করছে না এখন আমার।”

সকালবেলা রাজীব কাব্যর ঘরে গিয়ে দেখে কাব্য সিগারেট খাচ্ছে। রাজীব অবাক হয়ে বলল,
“কী করলি তুই এটা? ৩ তা বছর কাটিয়ে দিলি সিগারেট না ছুঁয়ে। আর এখন?”
কাব্য তাকাতেই রাজীব দেখল ও কিছুটা কাঁপছে। চুলগুলো এলোমেলো হয়ে আছে। চোখ লাল টকটকে। রাজীব বলল,
“সারারাত ঘুমাস নাই? পাগলের মত দেখাচ্ছে তোকে।”
“মরে যাচ্ছি। একটা রাত কাটাতে পারলাম না ৯ দিন কীভাবে যাবে আমার?”
“আমি আবার দেখছি কোনো ফ্লাইট ক্যান্সেল হয়েছে কিনা।”
“প্লিজ দেখ।”
রাজীব তার ঘরে গেল। কাব্য গেল পিছুপিছু। রাজীব চেক করে বলল,
“দোস্ত একটা ফ্লাইট ক্যান্সেল হয়েছে একটু আগে। একটুর জন্য তোর কাজে লাগলো না।”
“কেন?”
“ফ্লাইটটা স্টকহোম থেকে কলম্বো।”
“ফ্লাইট কবে?”
“পরশু রাতে।”
“পরশু রাতে রওনা দিলে পরদিন বিকেলে পৌঁছাব, পরশুর পরদিন বিকেলে কলম্বো টু ঢাকা কোনো ফ্লাইটের টিকিট পাস নাকি দেখ।”
“তুই শ্রীলঙ্কা হয়ে যাবি?”
“সমস্যা কী? শ্রীলঙ্কায় তো অন এরাইভাল ভিসা।”
“এত ঘুরবি? গথেনবার্গ থেকে স্টোকহোম। স্টকহোম থেকে কলম্বো। আবার কলম্বো থেকে ঢাকা।”
“গথেনবার্গ থেকে ট্রেন ধরলে স্টকহোম ৩ ঘন্টার রাস্তা। আর কমম্বো থেকে ঢাকা ফ্লাইটে ৩ ঘন্টা। ঘোরা হলেও ৬/৭ দিন আগে যেতে পারব।”
রাজীব চেক করে বলল,
“কলম্বো টু ঢাকা বিকেলে নেই তবে রাতে আছে।”
“তাহলে কেটে ফেল।”
“যদি ফ্লাইট ডিলে করে?”
“ডিলে করলে বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত নিশ্চয়ই করবে না? দোয়া কর এমন কিছু যেন না হয়। আর তাড়াতাড়ি টিকিট টা কাট। নাহলে এটাও মিস করব।”
রাজীব টিকিট কাটতে গিয়ে বলল,
“শিট! স্টকহোম টু কলম্বো সিট টা তো বিজনেস ক্লাস!”
“কেটে ফেল।”
রাজীব অবাক হয়ে বলল,
“বিজনেস ক্লাসে যাবি? তিনগুণ খরচ।”
“তুই টাকার কথা ভাবছিস? এদিকে আমি মরে যাচ্ছি।”

কাব্যর স্টকহোম টু কলম্বো ফ্লাইট ডিলে করেনি। কিন্তু অঘটন ঘটলো কলম্বো টু ঢাকা ফ্লাইটটিতে। ফ্লাইটটি আবহাওয়া জনিত কারণে পিছিয়ে গিয়েছে। পরদিন সকালে যাবে। এবার কাব্য একেবারেই ধৈর্য্যহারা হয়ে গেল। অসহ্য লাগছে তার!

চলবে…

কনফিউশন
লেখকঃ মৌরি মরিয়ম
পর্ব ৪৮ (শেষপর্ব)

আরশিকে লাল বেনারসি শাড়ি পরানো হয়েছে। পার্লার থেকে লোক এনে সাজানো হয়েছে। আরশি আজ কিছুতেই নিষেধ করেনি। খুব কাছের কিছু আত্মীয়স্বজন নিয়ে আকদের ব্যবস্থা করা হয়েছে। কাজিন ও বাচ্চাকাচ্চারা আরশিকে ঘিরে রেখেছে। তিরা হা করে চেয়ে থেকে একসময় বলল,
“আরু তোকে আজকে যা সুন্দর লাগছে! উফফফ আমারই মনে হচ্ছে টুক করে গিলে খেয়ে ফেলি। হা হা হা।”
কাজিনরা সবাই তিরার কথায় হাসল কিন্তু আরশি ভাবলেশহীন মুখে বসে রইলো। রশ্নি ঘরে ঢুকে বলল,
“সবাই একটু ঘরটা খালি করো। আরশিকে সাজানোর জন্য এই ঘরটাই সবচেয়ে এলোমেলো হয়ে আছে, গোছাতে হবে। সময় নেই একদম।”
সবাই বেরিয়ে গেল। কিন্তু আমরিন আর তিরার মেয়ে যোহা এখনো বসে আছে। দুজন আরশির দুইপাশে। রশ্নি ওদের দিকে তাকিয়ে বলল,
“মা তোমরাও এসো। আমার ঘরে গিয়ে খেলো।”
আমরিন বলল,
“আমি ফুপ্পির কাছে থাকতে চাই।”
যোহাও আমরিনের দেখাদেখি বলল,
“আমি খালামনির কাছে থাকতে চাই।”
“ঘরটা গোছানো হলে আবার এসো। এখন যাও প্লিজ।”
আমরিন ও যোহা বের হয়ে যেতেই রশ্নি বলল,
“তিরা তোকে কি আলাদা করে বলতে হবে?”
তিরা রশ্নির কাছে গিয়ে বলল,
“ভাবি, ও ভাবি আরুর কাছে আরেকটু থাকতে দাওনা। আমি এই ঘর একদম পরিপাটি করে গুছিয়ে দেব।”
রশ্নি হেসে বলল,
“তুই গোছাবি ঘর?”
“এহ পাত্তা দিচ্ছ না যে? আমি এখন সব কাজ সুন্দর করে করতে পারি।”
“ঠিকাছে দেখি কেমন পারিস। আধা ঘন্টা সময় দিলাম। ছেলেপক্ষ কিন্তু আধা ঘন্টার মধ্যে এসে পড়বে।”
“আরে বাবা আধা ঘন্টা লাগবেও না।”
রশ্নি তিরাকে ঘর গোছানোর দায়িত্ব দিয়ে চলে গেল। তিরা সব গোছাতে গোছাতেই হাজার রকমের কথা বলে যাচ্ছে। কোনোটাই আরশির কর্ণপাত হচ্ছে না। সব গোছানো শেষ করতে না করতেই ছেলেপক্ষ চলে এলো। তিরা দৌড়ে গেল বর দেখার জন্য। বর দেখে এসে আরশিকে বলল,
“আরু তোর বরকে দেখে আমার মাথা ঘুরে গেছে। যদি আমি আগের তিরা হতাম ঠিক ক্রাশ খেয়ে ফেলতাম। এত্ত হ্যান্ডসাম। গায়ের রঙ একটু শ্যামলা কিন্তু হার্টবিট থেমে যাওয়ার মত জোশ দেখতে।”
আরশি হঠাৎ করেই বলল,
“তিরা আমি কাব্যকে ভালোবাসি।”
তিরা এ কথা শুনে এত অবাক হলো যে ওর চোখদুটো কোটর থেকে বেরিয়ে আসতে চাইলো। তারপর বিস্ময় কেটে গেলে হেসে বলল,
“সত্যি? তাহলে এই বিয়ে করছিস কেন? কাব্য আরো বেশি জোশ। কালো হইছে তো কী হইছে?”
“কারণ কাব্য আমাকে ভালোবাসেনা।”
“তুই বলেছিলি কাব্যকে?”
কাব্যর সাথে সম্পর্কের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সবটা সংক্ষেপে তিরাকে বলল আরশি। সব শুনে তিরা বলল,
“আমার বিশ্বাস হচ্ছে না কাব্য এরকম।”
আরশি আর কিছু বলার সুযোগ পেল না। রশ্নি ইভেন্টের লোকজনকে বাসর ঘর সাজানোর জন্য আরশির ঘরে নিয়ে এলো। আরশি ফুল এবং তাদেরকে দেখে শান্ত গলায় বলল,
“একটা ফুল যদি কেউ আমার ঘরে লাগায় তাহলে পুরো ঘর জ্বালিয়ে দেব।”
রশ্নি অবাক হয়ে কিছুক্ষণ চেয়ে থেকে লোকজন নিয়ে বেরিয়ে গেল।

এই ভয়াবহ রাতটা কাটতে চাচ্ছে না কাব্যর। যেখানে তার এমন সময় ঢাকায় থাকার কথা সেখানে সে এখনো বসে আছে কলম্বোতে। অসহ্য লাগছে সবকিছু। ব্লাড প্রেশার বেড়ে ঘাড়ের রগ ছিড়ে যাওয়ার উপক্রম।

আরশির বারান্দায় দুটো গদি বসানো নিচু চেয়ার পাতা আছে। সেখানে পাশাপাশি বসে আছে আনন্দ-আরশি। কিছুক্ষণ আগেই তাদের বিয়ে পড়ানো হয়েছে। আনন্দই প্রথমে কথা শুরু করল,
“তুমি বিয়ের আগে কথা বলতে চাচ্ছিলে না কেন?”
আরশি আনন্দের দিকে না তাকিয়ে যেভাবে বসে ছিল সেভাবে বসে থেকেই বলল,
“কথা বলে তারপর বিয়ে ভেঙে গেলে কথা বলাটাই বৃথা যেত৷ তারচেয়ে বিয়ের পরে কথা বলাই ভাল।”
এ কথায় আনন্দ হেসে ফেলল। বলল,
“এটা অবশ্য ঠিকই বলেছ। তবে আমি শুনেছি বিয়ের আগে তুমি আমার ছবিও দেখোনি। এমনটা তো আসলে এ যুগে হয়না তাইনা?”
আরশি এবার মেঝের দিকে তাকিয়ে বলল,
“একবার ছবি দেখেই কি একটা মানুষকে বোঝা যায়? শুধু ছবি দেখার কথাই বা বলছি কেন? অনেক বছর একসাথে পথচলার পরেও মানুষকে বোঝা যায় না।”
“এখন তো বিয়ে হয়ে গেছে। এখন দেখো। একবার তাকাও আমার দিকে। আমাকেও একটু দেখার সুযোগ দাও। তোমার ছবি দেখার পর থেকে অতৃপ্ত এই চোখ দুটো অপেক্ষা করছিল আজকের দিনটির জন্য।”
আরশি মাথা ঘুরিয়ে তাকালো আনন্দের দিকে। সরাসরি চোখের দিকে তাকালো। এবং অদ্ভুতভাবে আবিষ্কার করল কাব্যর চোখের দিকে তাকালে যে অস্থিরতা কাজ করতো, লজ্জা লাগতো, দম আটকে আসতো; সেসবের কিছুই হচ্ছেনা এখন। অথচ আনন্দও একটা পুরুষ এবং তার স্বামী। কেন একটা মিথ্যে মানুষের জন্য তার এত অনুভূতি হয়েছিল?
“পছন্দ হয়েছে?”
আরশির চোখ ফিরিয়ে নিয়ে বলল,
“কারো সাথে থাকার জন্য তার বাহ্যিক রূপটা জরুরি নয় আমার কাছে।”
“তাহলে কী জরুরি তোমার কাছে?”
আরশি আনন্দের চোখের দিকে তাকিয়ে বলল,
“ভালোবাসা।”
আনন্দ মুচকি হেসে বলল,
“মাথায় রাখলাম।”
এরপর আনন্দ হাত ধরতে যেতেই আরশি হাতটা সরিয়ে নিল। আনন্দের দিকে তাকিয়ে বলল,
“আমাকে কিছুদিন সময় দিন প্লিজ? এভাবে হুট করেই বিয়ে হয়ে গেল! আমরা একেবারেই অপরিচিত। আমার সময় দরকার।”
আনন্দ হাতটা ফিরিয়ে নিয়ে হাসিমুখে বলল,
“কোনো সমস্যা নেই। তোমার যত সময় দরকার তুমি নিতে পারো। আসলে আমি বিয়ের ব্যাপারে অতটা আগ্রহী ছিলাম না। কিন্তু সামনে আমার ছোট ভাইয়ের বিয়ে। বড়মা আবার আমাকে বিয়ে না দিয়ে ওকে দেবেনা। সেজন্য আমাদের একটু তাড়া ছিল৷ কিন্তু এত না। সাহিল ভাইয়া এখনই চাইল বিধায় এখনই বিয়ে করতে হলো। একটু চেনা জানার সময় পেলে আসলেই ভাল হতো।”
আরশি প্রসঙ্গ পালটালো,
“আপনি কোথায় থাকেন?”
“ব্যবসার জন্য যখন যেখানে প্রয়োজন। তুমি কি ঢাকায় থাকতে চাও?”
“আমি ইন্টার্নশিপ শেষ না হওয়া পর্যন্ত ঢাকাতেই থাকতে চাই। এরপর আপনার ইচ্ছে।”
“ইন্টার্নশিপ পর্যন্ত তাহলে ঢাকায় একটা বাসা নিই। কিন্তু এরপর আমারা আমার ফ্যামিলির সাথেই থাকতে চাই। এটা অনুরোধ তোমার কাছে।”
“অনুরোধ করতে হবে না, আমার কোনো আপত্তি নেই। তবে ঢাকায় বাসা নেয়ার দরকার নেই। ইন্টার্নশিপের একয়দিন আমি এখানেই থাকতে পারব।”
“কিন্তু এখানে আমি কী করে থাকব?”
“কেন আপনার বাসা যদি আমার বাসা হতে পারে। তাহলে আমার বাসা আপনার বাসা হতে পারবে না কেন?”
আনন্দ হেসে বলল,
“তবুও পুরুষ মানুষের পক্ষে এভাবে কন্টিনিউয়াসলি শ্বশুরবাড়িতে থাকা যায় না। মাঝেমাঝে আসতে পারি।”
“তাহলে এই কয় মাস এভাবেই ম্যানেজ করে নিন।”
“ঠিকাছে।”
“আমার প্রচন্ড ক্লান্ত লাগছে। অনুমতি দিলে আমি ঘুমুতে যেতে চাই।”
আনন্দ হাসিমুখে বলল,
“শিওর।”
আরশি চলে যাওয়ার পর আনন্দ একা একাই হাসলো। মুগ্ধ হয়ে ভাবতে লাগলো, মেয়েটি খুব অদ্ভুত, সব মেয়েদের থেকে আলাদা। প্রতিটি কথায় অন্যরকম একটা জোর, যুক্তি এবং আত্মবিশ্বাস। ছবি দেখে যেমন ভোলাভালা মনে হয়েছিল, একদম সেরকম না। বরং প্রচন্ড বুদ্ধিমতী। কি সুন্দর করে সে কি চায় প্রথমেই টেকনিক্যালি বুঝিয়ে দিল। শুধুমাত্র সাহিল ভাইয়ার বোন এবং যথেষ্ট সুন্দরী বলেই বিয়েতে রাজী হয়েছিল। এরকম কাউকে পেয়ে যাবে ভাবতেই পারেনি। এরকম কাউকে পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার!

আরশি কাপড় পাল্টে ফ্রেশ হয়ে যখন শুতে যাবে তখন সিগারেটের গন্ধ পেয়ে বারান্দায় তাকালো। জানালা দিয়ে দেখতে পেল আনন্দ সিগারেট খাচ্ছে। বলল,
“আপনি সিগারেট খান?”
আনন্দও মাথা ঘুরিয়ে বারান্দায় তাকালো। বলল,
“হ্যাঁ। কোনো সমস্যা?”
“গন্ধটা সহ্য হয়না।”
“সরি তোমার সামনে তাহলে আর খাবো না। এটা শেষ করি?”
“করুন। গুড নাইট।”
“গুড নাইট।”

সকালবেলা আরশি শ্বশুরবাড়ি যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছিল। একটা সালোয়ার কামিজ পরে তৈরি হতেই শাশুড়ি বলল,
“একি মা এভাবে যাবে?”
আরশি বলল,
“হ্যাঁ।”
“কষ্ট করে বিয়ের শাড়ি আর গয়নাগুলো পরো মা। সাথে হালকা সাজগোজ করো। আমাদের অনেক বড় ফ্যামিলি তো। ভাসুর, দেবর, ননদ একই বিল্ডিং এর বিভিন্ন ফ্লোরে সবাই থাকি। সবাই অপেক্ষা করছে তোমাকে দেখার জন্য। বোঝোই তো মফস্বলের মানুষজন একটু অন্যরকম হয়৷”
“কিন্তু শাড়ি পড়ে এতটা পথ জার্নি করব কীভাবে?”
“আমরা ফ্লাইটে যাচ্ছি। মাত্র এক ঘন্টার তো ব্যাপার। একটু কষ্ট করো মা।”
“ঠিকাছে।”
তিরা আরশিকে শাড়ি পরিয়ে সাজিয়ে দিল। আরশি পাথরের মত বসে রইলো। সাজগোজ শেষ হতেই শ্বশুরবাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হলো।

এয়ারপোর্ট থেকে কাব্য সোজা আরশিদের বাড়িতে এলো। মেইন গেট খোলাই ছিল যা কখনো খোলা থাকেনা। বাগানে অনেক লোকজন দেখা যাচ্ছে। ভেতরে ঢুকে সোজা দোতলায় চলে গেল সে। বেল বাজাতেই তিরা এসে দরজা খুললো। তিরা কাব্যকে দেখে অবাক হয়ে চেয়ে রইলো। কাব্য অস্থির গলায় বলল,
“তিরা আরশিকে একটু ডেকে দাওনা। বলো আমি এসেছি।”
আত্মীয়স্বজনে বাসা ভরে আছে। তাই তিরা কাব্যকে টেনে ছাদে নিয়ে গেল। তারপর বলল,
“কেন এসেছ? ৬ বছর অপেক্ষা করিয়ে বলেই তো দিয়েছ ভালোবাসোনা।”
“তুমি জানো সব?”
“গতকাল সন্ধ্যায় আরশি সব বলেছে।”
“লিসেন আরশি জানে আমি ৪/৫ মাস পর আসব। কিন্তু আমার ফ্লাইট ছিল ১৫ দিন পরে। এসে ওকে সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিলাম। এতদিন ওকে ভালোবাসার কথা বলিনি কারণ সামনাসামনি বলতে চেয়েছিলাম। ও হঠাৎ বিয়ের কথা বলায় ঘাবড়ে গিয়ে ওসব বলেছি। ভেবেছিলাম পরদিনের কোনো ফ্লাইটে টিকিট ম্যানেজ করে চলে আসব। কিন্তু টিকিট না পাওয়ায় সাথে সাথেই ওকে কল করেছি সব বলে দেয়ার জন্য। কিন্তু এটুকু সময়ের মধ্যেই ও ফোন টোন বন্ধ করে অস্থির করে ফেলেছে। যাই হোক, ওকে একটু ডেকে দাও প্লিজ।”
“অনেক বড় সর্বনাশ করে ফেলেছ কাব্য। গতকাল রাতে আরশির বিয়ে হয়ে গেছে। একটু আগে শ্বশুরবাড়ি চলে গেছে।”
কাব্য বিস্ময়ে বাকরুদ্ধ হয়ে গেল। চুপচাপ দাঁড়িয়ে তাকিয়ে রইলো তিরার দিকে। কাব্য বলল,
“তিনদিনের মধ্যে বিয়ে করে নিলো?”
“তুমি যা বলেছ তাতে এছাড়া আর কী করতো ও? অনেক বড় ভুল করে ফেলেছো কাব্য। সারপ্রাইজ দিতে গিয়ে আমার বোনটাকে সারাজীবনের কান্না উপহার দিয়েছ তুমি।”
তিরা আরো অনেককিছুই বলছিল। কোনো কথাই কানে যাচ্ছিল না কাব্যর। আরশি এই সামান্য কারণে তিনদিনের মধ্যে বিয়ে করে ফেলবে এটা অসম্ভব। এটা কিছুতেই বিশ্বাস করেনা সে। বলল,
“সাহিল ভাইয়াকে ডেকে দাও।”
“সাহিল ভাইয়া আর রশ্নি ভাবি আরশিকে এয়ারপোর্টে দিতে গেছে।”
“সাহিল ভাইয়ার ফোন নাম্বার দাও তাহলে।”
“এখন আর ঝামেলা করোনা কাব্য। বিয়ে তো হয়েই গেছে।”
কাব্য একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সোজা নীচে চলে গেল। এরপর সামনের চায়ের দোকানে গেল। সে নিশ্চয়ই কিছু জানবে। দোকানদার কাব্যকে দেখেই বলল,
“আরে ভাই আপনে এতদিন পর কইত্থে আইলেন? বিদেশ না গেছিলেন?”
“চলে এসেছি।”
“ও আরশি আফার বিয়া খাইতে আইছিলেন?”
চমকে গেল কাব্য। তার মানে তিরা সত্যি কথাই বলেছে? বলল,
“আরশির সত্যিই বিয়ে হয়ে গেছে, তুমি ঠিক জানো?”
“হ ভাই। কাইলকা রাইতে বিয়া হইল তো। ভাই চা দিমু?”
“না আরেকদিন।”

কাব্য ফুটপাত ধরে উদ্দেশ্যহীন ভাবে হাঁটছে, চোখে পানি। বুকের ভেতর সবটা ভেঙেচুরে যাচ্ছে। নিঃশ্বাস আটকে আসছে। তার বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে যে আরশি বিয়ে করে ফেলেছে। মাত্র ৩ দিনের মধ্যে একটা মানুষের বিয়ে কী করে হয়? যে মেয়েটি অনেক বড় কিছু হয়ে গেলেও রাগ করেনা সেই মেয়েটি এইটুকু কথায় রাগ করলো! কথাটা কতটুকু সত্য কতটুকু মিথ্যা যাচাই করার প্রয়োজন মনে করল না? এইটুকু বিশ্বাস আরশির নেই ওর উপর? এই চিনলো আরশি ওকে?
হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ কাব্যর সেই স্বপ্নটার কথা মনে পড়ে গেল। লাল শাড়ি পরা আরশির হাত ধরে বনের মধ্যে হাঁটছিল। হঠাৎ সে গর্তে পড়ে গেল। এই তাহলে সেই গর্ত? মৃত্যুগর্ত! লাল শাড়ি পরে আরশি চলে গেল অন্যকারো জীবনে আর সে পড়ে রইল এই মৃত্যুগর্তে। কাব্য হাঁটছে তো হাঁটছেই৷ তার দুটিচোখ থেকে অঝর ধারায় অশ্রু বইছে। এই মেয়েটিকে ছাড়া সে বাঁঁচবে কীভাবে?
মাকে সারপ্রাইজ দেয়ার জন্য কাব্য বাসায়ও জানায়নি যে দেশে আসছে। মা নিশ্চয়ই ফোন করেছিলেন। অনলাইনেও তো ঢোকেনি এতদিন। কোনো খবর না পেয়ে নিশ্চয়ই চিন্তা করছেন। এবার কক্সবাজারের ফ্লাইট ধরলো কাব্য। ফ্লাইটে একটু পর পরই সে কাঁদছিল। কখনো আবার সিগারেটের প্যাকেট হাতে ধরে পাগলের মত একা একাই বিড়বিড় করছিল। একবার ফিসিফিস করে বলল,
“কীরে তুই তো খুব খুশি হয়েছিস তাইনা? শেষ মেশ তোর সতীন চলে গেল, তোরই জিত হলো। অথচ দেখ গত তিনটা বছর তোকে ছুঁইনি যাকে ছোঁব বলে সে জানতেও পারল না তোকে যে তার জন্য একেবারেই ছেড়ে দিয়েছিলাম! মা যে শাড়ি গয়নাগুলো কিনেছিল আমাদের বউয়ের জন্য সেগুলোর কী হবে বলতো? তুই তো আর সেগুলো পরতে পারবিনা।”
এ কথা বলে আবার কাব্য একা একাই হাসছিল।

কাব্য বাসার কলিং বেল বাজিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। শাহনাজ বেগম পাশ দিয়েই যাচ্ছিলেন। তিনিই এসে দরজা খুললেন। কাব্যকে দেখেই তিনি খুশিতে কাব্যর নাম ধরে চিৎকার করে কেঁদে ফেললেন। কাব্য মাকে জড়িয়ে ধরে বলল,
“মা আমার লক্ষী মা। কেমন আছো?”
“তোর কোনো খবর না পেয়ে চিন্তায় আমি শেষ। ফ্লাইটে ছিলি তাইনা?”
“হ্যাঁ মা।”
মাকে এতক্ষণ জড়িয়ে ধরেই কথা বলছিল কাব্য। এবার ছাড়তেই আরশিকে ড্রয়িং রুমে বসা দেখতে পেল বউবেশে। এবার কাব্যর পুরো দুনিয়া ঘুরতে লাগলো। এবাড়িতে একমাত্র সে ছাড়া বিবাহযোগ্য আছে বড়ভাই। আরশির কি বাই এনি চান্স বড়ভাইয়ের সাথে বিয়ে হয়েছে?
অন্যদিকে আরশিরও পা টলছে। মাথা ঘুরছে। আনন্দর বড়মাকে কাব্য মা বলছে শুনেই আরশি বুঝে গিয়েছে কাব্য আনন্দর চাচাতো ভাই। ছোটবেলায় আনন্দর মা মারা যায়। তারপর বাবাও। শাহনাজ বেগম নিজের ছেলের মত আগলে বড় করেছেন আনন্দকে। এই ফ্যামিলির সাথেই একসাথে থাকার কথা বলছিল আনন্দ। কাব্যর চোখের সামনে কী করে থাকবে সে? কাব্যর ফ্যামিলির অনন্তকে ছাড়া আর কাউকে চেনেনা আরশি। অথচ গতকাল অনন্তকে বিয়েতে দেখে আরশি ভেবেছে সাহিলের অন্য বন্ধুদের মত বন্ধু হিসেবে সে এসেছে। একবারো এটা মাথায় আসেনি অনন্তর ফ্যামিলির কারো সাথেও তার বিয়ে হতে পারে।
কাব্যকে দেখে এগিয়ে এলো আনন্দ। কাব্য বলল,
“আমাকে রেখেই বিয়ে করে ফেললি বড়ভাই?”
আনন্দ কাব্যকে জড়িয়ে ধরে বলল,
“আমার দোষ না ভাই। আমরা সবাই তোর সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেছি। তোর ফোন আনরিচেবল ছিল। হোয়াটসঅ্যাপ করেছি, মেইল করেছি। এখন বুঝছি তুই হয়তো তখন ফ্লাইটে ছিলি। বড়চাচ্চু, বড়মা আর সাহিল ভাইয়ার গরজে এরকম হুট করেই বিয়ে হয়ে গেল। এমনকি গতকাল সকালেও শিওর ছিলাম না কালই বিয়ে হচ্ছে।”
কাব্যও জড়িয়ে ধরল। ছাড়তেই আনন্দ বলল,
“মন খারাপ করিস না। বিয়ে মিস করলেও রিসিপশন তো বাকী। আমার টেকনাফের রিসোর্টে গ্রান্ড রিসিপশন হবে। অনেক মজা করব আমরা।”
আনন্দ কাব্যকে নিয়ে ড্রয়িং রুমে যেতে যেতে বলল, “চল ভাবির সাথে পরিচয় করিয়ে দেই।”
কাব্য হেসে বলল,
“আরশিকে আমি চিনি বড়ভাই। সাহিল ভাইয়ার বোন। পাঁচ বছর আগে ঢাকায় ওদের বাসাতেই এক বছর ছিলাম।”
আনন্দ বলল,
“তাই নাকি?”
শাহনাজ বললেন,
“হ্যাঁ তাইতো, আমি একদম ভুলেই গিয়েছিলাম।”
আরশি কাব্যর দিকে তাকিয়ে শক্ত মুখে বলল,
“কেমন আছেন ভাইয়া?”
কাব্য হেসে বলল,
“আমাকে ভাইয়া বলতে হবেনা আরশি। আমি তোমার ভাসুর নই, দেবর। এনিওয়ে কংগ্রাচুলেশনস।”
“থ্যাংকস।”
শাহনাজ কাব্যকে বললেন,
“বাবা তোকে অনেক অসুস্থ দেখাচ্ছে। ফ্রেশ হয়ে কিছু মুখে দিয়ে একটা ঘুম দে।”
“হ্যাঁ মা যাচ্ছি।”
“ওহ আরেকটা কথা।”
“বলো মা।”
“তুই বিয়ের প্রস্তুতি নিতে বলায় তোর বউয়ের জন্য যেসব শাড়ি গয়না কিনেছিলাম তাড়াহুড়োয় বিয়ের আয়োজন করতে গিয়ে ওগুলোই আরশিকে দিয়ে দিয়েছি। কিছুদিনের মধ্যেই তোর জন্য আবার কিনে ফেলব।”
কাব্য হেসে বলল,
“খুব ভাল করেছ মা। জিনিসগুলো ভালো কাজে লেগেছে। ওসব আমার আর লাগবে না। ব্রেকাপ হয়ে গেছে।”
“মানে! এতদিন পর একি বলছিস তুই?”
অবাক হলেন শাহনাজ বেগম। আনন্দও অবাক হয়ে বলল,
“যে মেয়ের জন্য সুইডেন যাওয়ার আগের দিন মাঝরাতে দেয়াল টপকে যেতে পারিস তুই তার সাথে ব্রেকাপ হয় কী করে?”
কাব্য হেসে কপালে আঙুলের দাগ টেনে বলল,
“এখানে লেখা থাকলে সব হয়। বাদ দে এসব।”
কাব্য নিজের ঘরের দিকে যেতেই আরশি শাহনাজকে বলল,
“বড়মা আর কোনো আত্মীয় কি এখন আসবে? নাহলে আমি শাওয়ার নিতে যেতাম।”
“না মা তুমি যাও। সবাই তো দেখা করে গেছে। এখন আর কেউ আসলে যেমন থাকবে তেমনই দেখা করবে।”
আরশি ঘরে গিয়ে সোজা বাথরুমে ঢুকে শাওয়ার ছেড়ে দাঁড়িয়ে হাউমাউ করে কেঁদে ফেলল।

নিজের ঘরের সামনে গিয়ে কাব্যর অনন্তর সাথে দেখা হয়ে গেল। কাব্যকে দেখে জড়িয়ে ধরে অনন্ত বলল,
“আরে তুই! হোয়াট আ সারপ্রাইজ! কেমন আছিস?”
“ভাল ভাইয়া। তুই কেমন আছিস?”
“ভাল। আচ্ছা সাহিলের নাম্বার পরশু রাতে মেসেজ করে দিয়েছিলাম, পেয়েছিস তো?”
“পরশু রাতে আমি ফ্লাইটে ছিলাম। তুই না বললি সাহিল ভাইয়ার নাম্বার তোর কাছে নেই?”
“আরে ও কিছুদিন আগে নাম্বার চেঞ্জ করেছিল, নতুন নাম্বারটা মেসেজে দিয়েছিল। সেভ করা হয়নি। ভুলে গিয়েছিলাম।”
“আমাকে জ্যান্তই কবর দিয়ে ফেলেছিস। কেয়ারলেস কোথাকার।”
কাব্যর কথার আগামাথা কিছুই বুঝলো না অনন্ত। কাব্য ঘরে ঢুকে দরজা লাগিয়ে ব্যাগটা ছুঁড়ে ফেলে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়াল। দুহাত নিজের কোমরে রেখে বড় একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। আরশিকে লাল শাড়ি পরা দেখাতে খুব ইচ্ছে হতো কাব্যর। আরশি রঙ সহ্য করতে পারেনা বলে কখনো সেই ইচ্ছের কথা বলার সাহসও হয়নি। আজ লাল শাড়ি, লাল লিপস্টিকে একদম বউ সাজে দেখল। আল্লাহ কত সুন্দর করে তার ইচ্ছে পূরণ করল। অস্থিরভাবে পায়চারি করতে লাগলো কাব্য। চোখের জল কোনোভাবেই বাঁধ মানছে না।

মানুষের জীবন বড় অদ্ভুত গতিতে চলে। এর গতিপথ কখন কোনদিকে মোড় নেবে কেউ জানেনা। কারো ছোট একটি ভুল, কিছু মিথ্যে কিংবা কারো একটুখানি রাগ হতে পারে দুটি মানুষের হাজারও দীর্ঘশ্বাস ও চোখের জলের কারণ!

সমাপ্ত!

কনফিউশন পর্ব ৪৫+৪৬

0

কনফিউশন
লেখকঃ মৌরি মরিয়ম
পর্ব ৪৫+৪৬

তিরা বিছানায় বসে আছে। তার পাশেই বসে আছে যাদিদ। তিরার হাত দুটো দুহাতে ধরে সে নরম গলায় বলল,
“এমন কেন করলে তিরা?”
তিরা চুপ। যাদিদ তিরার আরো কাছে গিয়ে তাকে বুকে টেনে নিল। তারপর মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,
“অনেক কষ্ট দিয়ে ফেলেছি?”
যাদিদের বুকে মাথা রাখতেই তার হার্টবিট শুনতে পেল তিরা। সাথে সাথেই অস্থির লাগা শুরু হলো। এবার সে কাঁদতে শুরু করল। যাদিদ বলল,
“আমাকে আর কখনো মিথ্যে বলোনা তিরা। একটা মিথ্যের জন্য ৭ টা মাস চলে গেল আমাদের জীবন থেকে। তাও এত গুরুত্বপূর্ণ ৭ টা মাস।”
তিরার কান্না আরো বেড়ে গেল। যাদিদ তিরার মুখটা দু’হাতে ধরে চোখে চোখ রেখে বলল,
“আমি তোমাকে অনেক বেশি ভালোবেসে ফেলেছি তিরা তাই মাফ করে দিয়েছি, নাহলে হয়তো আমাদের আর কখনো দেখা হতো না।”
তিরা অবাক হয়ে তাকিয়ে ভাবতে লাগলো, যেখানে এতদিন দূরে থাকার জন্য এবং খোঁজখবর না নেয়ার জন্য যাদিদের মাফ চাওয়া উচিৎ ছিল সেখানে সেই কিনা মাফ করে দয়ার কথা বলছে! এ কার পাল্লায় পড়েছে সে!

যাদিদ গভীর রাতে ঘুম ভেঙে দেখল তিরা পাশে নেই। আতঙ্কিত হয়ে বাথরুমে যেয়ে দেখল সেখানে নেই। এরপর বারান্দায় যেতেই দেখতে পেল তিরা হাফ রেলিং দেয়া গ্রিলের কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। যাদিদ তিরার কাছে গিয়ে বলল,
“কী হয়েছে? এখানে কি করছো?”
তিরা বলল,
“কিছু না। ভাল্লাগছে না তাই এখানে এসে দাঁড়িয়েছি।”
“হয়েছে এতরাতে এখানে দাঁড়াতে হবে না। ঘরে এসো।”
তিরা চুপচাপ ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়ল। যাদিদ পাশে শুয়ে হাত বাড়িয়ে দিল কারণ তিরা যাদিদের হাতের উপর শুতে খুব পছন্দ করে। তিরা যাদিদের কাছে এসে তার হাতের উপর মাথা রাখলো। অন্যহাতে যাদিদ তিরার চুলে হাত বুলিয়ে বলল,
“তুমি ছেলে চেয়েছিলে নাকি মেয়ে?”
“ছেলে।”
যাদিদ হেসে বলল,
“আমি কিন্তু মেয়ে হওয়াতেই বেশি খুশি।”
তিরা একটু হাসার চেষ্টা করল। তিরা এখন আর হাসে না, তেমন কথাও বলে না। কিছু জিজ্ঞেস করলে যন্ত্রের মত জবাব দেয়। যাদিদ জিজ্ঞেস করল,
“রাগ করে আছো আমার উপর?”
“না।”
“তাহলে এমন করছ কেন?”
“কেমন?”
“এইযে মনে হচ্ছে আমি তোমার পর কেউ। আমার কাছে আসছ না, কথা বলছ না, হাসছো না।”
“আমার হাসি পায় না।”
যাদিদ কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো তিরার দিকে। তারপর হঠাৎ তার ঠোঁটে চুমু খেল। তিরা ভীষণ লজ্জা পেল। যাদিদ হেসে বলল,
“তার মানে তুমি ঠিক আছো।”
তিরা বলল,
“মানে?”
“এইযে চুমু খেতেই লজ্জা পেলে। মানে অনুভূতি এখনো সচল।”
এবার তিরা হেসে ফেলল। যাদিদ বলল,
“দেখেছো হাসিও পাচ্ছে এখন।”
তিরা যাদিদের আরো কাছে এসে তাকে জড়িয়ে ধরলো। তিরার উঁচু পেট যাদিদের গায়ে লাগতেই তার এক অদ্ভুত অনুভূতি হলো। তিরা স্বাভাবিক হয়েছে দেখে মনটাও হালকা হলো। যাদিদ তিরার পেটে হাত বুলিয়ে বলল,
“রাগ করে থেকো না তিরা। তাতে নিজেরাই বঞ্চিত হব। গত ৭ মাস কাটতে না চাইলেও, ছুটির এই এক মাস দেখতে দেখতেই কেটে যাবে।”
তিরা অভিমানী সুরে বলল,
“নিজে তো ঠিকই এতদিন রাগ করে থেকেছ।”
“রাগ করে থাকলেও তুমিহীন থাকতে পারিনি একটি দিনও।”
তিরা মুখে ভেংচি কাটলো। যাদিদ বলল,
“সত্যি বলছি। প্রতিদিন প্রতিমুহূর্তে তোমাকেই ভেবেছি শুধু। তোমার কনফেস করা চিঠিটা পড়েই আমি তোমাকে মাফ করে দিয়েছিলাম। ওটা আমি ছিঁড়ে ফেলি যাতে আর কারো হাতে না পড়ে। কিন্তু বাকি চিঠিগুলো যত্ন করে রেখে দিয়েছি, বারবার পড়তাম। প্রতিদিন তোমার ছবি দেখতাম।”
তিরা অবাক হয়ে বলল,
“এত আগেই মাফ করে দিয়েছ? তাহলে আমার সাথে যোগাযোগ করতে না কেন?”
“তোমাকে কষ্ট দেয়ার জন্য। এটা বোঝানোর জন্য যে আমার সাথে মিথ্যে বললে কী হতে পারে!”
“আমাকে কষ্ট দিতে গিয়ে নিজেকে এভাবে কষ্ট দিলে কীভাবে?”
“আমি তোমাকে যতটুকু কষ্ট দিতে পারব তারচেয়ে অনেক গুণ বেশি কষ্ট দিতে পারব নিজেকে। বরং নিজেকে যতটা কষ্ট দিতে পারব, তোমাকে ততটা পারব না।”
“ভাল্লাগছে, খুব ভাল্লাগছে।”
যাদিদ ভ্রু কুঁচকে বলল,
“হঠাৎ?”
“এতদিন ভাবতাম আমি তোমাকে যতটা ভালোবাসি তুমি আমাকে ততটা বাসোনা। এখন বুঝতে পারছি তুমিও আসলে আমাকে আমার মত করেই ভালোবাসো।”
যাদিদ হাসলো। তারপর একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
“রাগ যতটা প্রকাশ করতে পারি ভালোবাসা ততটা পারি না।”
“সামনে থাকলে পারো, দূরে থাকলে পারো না।”
“হতে পারে। তুমিই ভালো বলতে পারবে।”
তিরা বলল,
“একটা কথা বলি?”
“বলো?”
“শুধু কি একটা মিথ্যের জন্যই এত রাগ? নাকি অন্যকিছু?”
যাদিদ তিরার চোখের দিকে তাকিয়ে বলল,
“ওর গালে চুমু খাচ্ছিলে সেই ছবিটা দেখে সম্ভাবত আমার মাথার তার একটা ছিঁড়ে গিয়েছিল।”
তিরা চোখ নামিয়ে নিল। যাদিদ বলল,
“আর কিছু চিঠি পড়ে আমি এই দুনিয়াতে ছিলাম না। আমার সাথে অন্তরঙ্গ হয়ে তোমার যে অনুভূতি, সেইম অনুভূতি অন্যদের বেলাতেও। আবার সেটা তুমি তাকে ঠিক সেভাবেই লিখেছিলে যেভাবে আমাকে লিখেছিলে। মানতেই পারছিলাম না।”
তিরা ভয়ে ভয়ে বলল,
“অন্তরঙ্গ বলছো কেন? এতকিছু হয়নি। জড়িয়ে ধরা আর চুমু খাওয়া পর্যন্তই। এসবের তো একই অনুভূতি হবে তাইনা? মানুষ দুজন হলেই কি অনুভূতিও দুইরকম হবে নাকি?”
যাদিদ খিটখিটে করে উঠলো,
“আমি কী করে বলব? আমি তো তুমি ছাড়া কাউকে ছুঁয়েও দেখিনি। এক্স গার্লফ্রেন্ডকে জড়িয়ে ধরা চুমু খাওয়া তো দূরে থাক কোনোদিন হাত ধরারও সুযোগ পাইনি।”
“সুযোগ পেলে তো তুমিও এসব করতে তাইনা?”
যাদিদ চোখ বড় বড় করে তাকালো। তিরা ভয় পেয়ে প্রসঙ্গ পালটাল,
“আমি তাহলে প্রাউড ফিল করতেই পারি, তোমার জীবনের সবকিছুতে আমিই প্রথম।”
যাদিদ বলল,
“প্রথম হতে পেরেছ বলে এত আনন্দিত হওয়ার কিছু নেই। শেষও যে তুমিই হবে তার কি গ্যারান্টি?”
তিরা হঠাৎ মুখ কালো করে ফেলল। যাদিদ সাথে সাথে হেসে তিরাকে জড়িয়ে ধরলো। তারপর চোখে চোখ রেখে বলল,
“তুমিই প্রথম, তুমিই শেষ, তুমিই একমাত্র।”
“তুমিও কিন্তু কিছুক্ষেত্রে আমার প্রথম এবং শেষ।”
“কোনক্ষেত্রে?”
“প্রথম ভালোবাসা এবং শেষ ক্রাশ।”
যাদিদ হেসে বলল,
“তোমার সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে বিয়ে করেছিলাম। তখনো জানতাম না কখনো এত ভালোবাসতে বাধ্য হব এই আমি।”
তিরার এবার চোখে পানি এসে গেল।

চলবে…

কনফিউশন
লেখকঃ মৌরি মরিয়ম
পর্ব ৪৬

পাঁচ বছর পর

সারারাত হাসপাতালে নাইট ডিউটির পর সকালবেলা যখন আরশি বাসায় ফিরল, আমরিন দৌড়ে এলো। আরশি বসে পড়ে তাকে জড়িয়ে ধরলো। আমরিন বলল,
“ফুপ্পি, চলো আমরা একসাথে খেলি।”
“স্কুলে যাওনি কেন?”
“আমার স্কুল তো আজ বন্ধ।”
“তাই! আচ্ছা মা আমরা বিকেলে খেলব। সারারাত কাজ করেছি যে, ফুপ্পির এখন খুব ঘুম পাচ্ছে।”
আমরিন হেসে বলল,
“ঠিকাছে তুমি আগে ঘুমিয়ে নাও।”
আরশি ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করতে বসলে রশ্নি মুখোমুখি এসে বসলো। কিছুক্ষণ এই কথা সেই কথা বলতে বলতে একসময় বলল,
“আরশি সাহিলকে আর বোঝাতে পারছি না।”
“কী বিষয়ে ভাবি?”
“তোর বিয়ের বিষয়ে। দুদিন পরপর একেকটা সম্মন্ধ আসে, অমনি সাহিল তোর বিয়ের ব্যাপারে পাগল হয়ে যায়। এতদিন পড়াশোনার কথা বলে আটকিয়েছি। এখন তো ইন্টার্নশিপ করছিস এখন কী বোঝাব? তার উপর রিসেন্টলি নাকি মনের মত এক ছেলে পেয়েছে।”
আরশিকে চিন্তিত দেখাল। সে বলল,
“বলো যে আমার আরেকটু সময় লাগবে।”
“সেটা তো আমি নিজ থেকেই বলেছি। সাহিল কারণ জানতে চাইছে। যদি তোর পছন্দের কেউ থাকে তার সাথে কথা বলতে চায় নাহলে এই ছেলের সাথে কথা আগাবে।”
“ভাবি তুমি তো জানো সব। আমাকে বাঁচাও।”
“আমি জানি কিন্তু আমি বুঝিনা এটা কেমন সম্পর্ক যেখানে কেউ কাউকে ভালোবাসার কথা বলবে না? এভাবে ঝুলে আছিস কোন সাহসে বোন? পরে দেখা যাবে ছেলেটা তোকে ভালোই বাসেনা। তখন কত কষ্ট পাবি বুঝতে পারছিস?”
আরশি হেসে বলল,
“ভাবি ও আমাকে অনেক ভালোবাসে। তুমি কোনো চিন্তা করোনা। শুধু আর কিছুদিন অপেক্ষা করো। আমার ধারণা ও একেবারে বিয়ের কথা বলতে চায়। তাই ভালোবাসার কথা বলছে না। আর না বললেও সব ভাবেই বুঝিয়েছে সে আমাকে।”
“আর যদি তোর বোঝায় কোনো ভুল থাকে?”
“কোনো ভুল নেই বিশ্বাস করো।”
“আরশি আমার কথা শোন তুই নিজেই ভালোবাসার কথা বল। তখন তো একটা এন্সার পাবি তাইনা?”
“আমি বলতে পারব না ভাবি। পারলে এই ৬ বছরে অবশ্যই বলে দিতাম।”
“তাহলে তোর ভাইয়াকে বোঝা। আমার পক্ষে ওকে এখন আর বোঝানো সম্ভব হচ্ছে না। গতকাল রাতে যখন বিয়ের প্রস্তাবের কথা বলল আমি বোঝাতে গেলাম আর ও রীতিমতো রেগে গেল।”
“আচ্ছা ভাবি তুমি এত প্রেশার নিও না। আমি আজ ভাইয়ার সাথে কথা বলব।”

সন্ধ্যাবেলা আরশি সাহিলের সাথে কথা বলতে বসলো। সাহিল বলল,
“বিয়ে করতে না চাওয়ার কারণ কী?”
“বিয়ে করতে চাইনা ব্যাপারটা এমন না ভাইয়া। তবে এখন চাচ্ছিনা ভাইয়া।”
“আরশি, সব কিছুর একটা পারফেক্ট সময় থাকে। তোর বয়স এখন ২৪/২৫, ইন্টার্নশিপ করছিস। বিয়ের জন্য একেবারেই উপযুক্ত সময়। বাবা মা থাকলে আমি হয়তো এত চিন্তা করতাম না। অবশ্য বাবা মা থাকলে এতদিনে তোর বিয়ে হয়ে যেত। তারা যেহেতু নেই সব দায়িত্ব কিন্তু আমার।”
আরশি চুপ। সাহিল আবার বলল,
“যদি পছন্দের কেউ থাকে তাহলে আমাকে বল। ছেলে যেমনই হোক তুই যদি মনে করিস ভাল থাকবি আমাদের আপত্তি থাকবে না।”
“কেউ নেই ভাইয়া।”
“তাহলে বিয়ের জন্য আপত্তি কেন? আমার খুব পছন্দের একটা ছেলের জন্য মেয়ে দেখা হচ্ছে। তোর পছন্দের কেউ না থাকলে আমি চাই ওর সাথেই তোর বিয়ে হোক। ছেলে তোর মত কোয়ালিফায়েড না। এমবিএ করেছে এখন ব্যবসা করছে। কিন্তু মানুষ হিসেবে সে সেরা।”
“ভাইয়া জোর করোনা। আমাকে একটু সময় দাও। আমি বিয়ের জন্য প্রিপেয়ার না।”
“জোরের তো প্রশ্নই ওঠেনা। তুই আমার একমাত্র বোন। আজীবন সুখে থাকবি এছাড়া কিছু চাইনা। আগে যত প্রপোজাল এসেছে তুই মানা করে দিয়েছিস সবাইকে ফিরিয়ে দিয়েছি। কিন্তু এই ছেলেটা আমার খুব পছন্দের। তোকে ওর সাথে বিয়ে দিতে পারলে আমি নিশ্চিতে থাকতে পারব।”
আরশি এখন আর কথা খুঁজে পাচ্ছেনা। অযৌক্তিক কথা বলে লাভ নেই তাই বলল,
“আমাকে ভাবতে দাও।”
“ঠিকাছে ভেবে আমাকে জানা। ছেলের ছবি আর বায়োডাটা নিয়ে যা।”
সাহিল ব্যাগ খুলে খাম বের করতেই আরশি বলল,
“লাগবে না। আমাকে একটু নিজেকে নিয়ে ভাবতে দাও ভাইয়া।”
আরশি চলে যেতেই রশ্নি এসে ঘরে ঢুকলো। সাহিল প্রচন্ড বিরক্ত হয়ে আছে। আরশি এত সেনসিটিভ যে ওকে কোনো বিষয়ে চাপাচাপি করা যায় না। রাগারাগি করা যায় না। অথচ দিনকাল যা খারাপ পড়েছে এ বয়সী মেয়েকে বিয়ে না দিতে পারলেও শান্তি নেই। সাহিল হঠাৎ রশ্নিকে ধমকে বলল,
“কেমন ভাবি হয়েছো যে ননদের মনের কথা বের করতে পারো না?”
রশ্নি এবার রেগে গেল,
“সাহিল কন্ট্রোল ইওরসেল্ফ। আরশি কেমন তুমি তা জানো। ও কাউকে কিছু বলেনা।”
“তোমাকে তো সব বলে বলেই জানতাম।”
“হ্যাঁ বলে। তবে আমার জানামতে ওর পছন্দের কেউ নেই। আর থাকলে হয়তো সময় হলে নিজেই বলবে। সময় দাও।”
“সময় দিতে দিতে সব ভালো প্রস্তাবগুলো হাতছাড়া হয়ে গেছে। এবার আনন্দরও যদি বিয়ে হয়ে যায়?”
রশ্নি চমকে তাকালো সাহিলের দিকে। হেসে বলল,
“আনন্দ! তুমি কি গতকাল থেকে আনন্দর কথা বলছো?”
“হ্যাঁ। কোনোকিছু তো শুনতে চাও না। আরশির বিয়ের কথা বললেই নাখোশ হও।”
“আরশিকে বিয়ের কথা বললে সে নাখোশ হয়। তাই আমিও হই। আমি আরশির মনের বিরুদ্ধে কিছু চাইনা।”
“তা আমিও চাইনা। কিন্তু একবার ভেবে দেখো আনন্দের আরশির বিয়ে হলে কেমন হবে।”
রশ্নি হেসে বলল,
“খুব সুখী হবে আরশি।”

অনেকক্ষণ পর্যন্ত বারান্দায় পায়চারি করতে লাগলো আরশি। সাথে আবোলতাবোল ভাবনাতো ছিলই। অবশেষে সিদ্ধান্ত নিয়েই নিল আজ কাব্যর সাথে এ ব্যাপারে কথা বলতেই হবে। আর কোনো উপায় নেই। রাতে কাব্য ফোন করল। আরশির কন্ঠ শুনেই বুঝে গেল কিছু একটা গোলমাল আছে। বলল,
“কী হয়েছে আরশি? এনি প্রব্লেম?”
“হ্যাঁ অনেক বড় প্রব্লেম।”
“কী?”
“তুমি আসছো কবে?”
“এইতো আর ৪/৫ মাস।”
“কিন্তু তোমার তো পড়াশোনা শেষ। এখনই চলে আসছো না কেন?”
“কিছু ঝামেলা আছে আরশি। মিটিয়েই চলে আসব। তোমার সমস্যার কথা বলো। কী হয়েছে?”
“ভাইয়া আমার বিয়ের জন্য ছেলে দেখছে।”
“স্বাভাবিক। বোন বড় হল সব ভাইয়েরই দায়িত্ব এটা।”
“অনেকদিন থেকেই ভাইয়া বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছে। একেকটা প্রোপোজাল আসে আর আমি সময় চাই ভাইয়াও সময় দেয়। কিন্তু এবার মানছে না।”
কাব্য চুপ। আরশি ইতস্তত করতে করতে বলেই ফেলল,
“আমি বরং ভাইয়াকে বলি তোমার সাথে কথা বলতে?”
“আমার সাথে কেন?”
এবার আরশির রাগ হচ্ছে। কাব্য কেন সব জেনেশুনেও ওকে দিয়ে এসব বলাতে চাচ্ছে? ঠিকাছে এখন সময় খারাপ নাহয় সে বলুক। বিয়ের পর এসবের মজা বোঝাবে কাব্যকে। আরশি চোখ বন্ধ করে ঢোক গিলে বলল,
“আমাদের বিয়ের ব্যাপারে।”
কাব্য চুপ। আরশি কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে বলল,
“হ্যালো কাব্য?”
“শুনছি।”
“কী করব?”
“আরশি আমি আসলে আমাদের বিয়ের ব্যাপারে কখনো কিছু ভাবিনি।”
আরশি অবাক হয়ে বলল,
“মানে?”
“মানে বললামই তো।”
“তাহলে এতদিন? এটা কী ছিল কাব্য? পরিনতিহীন একটা সম্পর্ক?”
“আরশি সম্ভাবত তুমি আমাকে ভুল বুঝছো। আমরা কি বিয়ে করার মতো কোনো সম্পর্কে আছি?”
এ কথা শুনে আরশির চোখে জল এসে গেল। সে নিজেকে সামলে বলল,
“আমাদের মধ্যে তাহলে কী সম্পর্ক?”
“সব সম্পর্কের নাম হয়না।”
“বি সিরিয়াস কাব্য। তুমি আমাকে ভালোবাসো না?”
“আমি তোমাকে পছন্দ করি।”
“তারমানে ভালোবাসোনা। কাব্য আমাকে শাড়ি পরা দেখে, লিপস্টিক পরা দেখে যেসব বলেছিলে সেসব কী ছিল তাহলে?”
“তোমার সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে প্রসংশা করেছি। করতে পারি না?”
“চলে যাওয়ার দিন অত রিস্ক নিয়ে কেন এসেছিলে আমার সাথে দেখা করতে?”
“তোমাকে দেখতে ইচ্ছে করছিল তাই।”
“কেন আমার কপালে চুমু দিয়েছিলে?”
“কপালে দিয়েছি। এটা তো যে কেউ যে কাউকে দিতে পারে।”
আরশি অবাক হয়ে বলল,
“সত্যি?”
“আরশি আমি তো অনেক সুযোগ পেয়েছি কখনো কি তোমার সাথে অসভ্যতা করেছি? ”
“উঁহু।”
“আরশি আর ইউ ক্রাইং?”
“নাহ। এত তুচ্ছ কারণে আরশি কাঁদে না।”

চলবে..

কনফিউশন পর্ব ৪৩+৪৪

0

কনফিউশন
লেখকঃ মৌরি মরিয়ম
পর্ব ৪৩+৪৪

তিরার এই বেহাল অবস্থাতেও আরশি তার কাছে যেতে পারছিল না পরীক্ষার জন্য। পরীক্ষা শেষ হতেই চলে গেল। নিজের চোখে তিরার এই অবস্থা দেখে আরশি আর সহ্য করতে পারল না। সাথে সাথেই কল করল যাদিদকে। এর আগে যাদিদের সাথে কখনো ফোনে কথা বলার প্রয়োজন পড়েনি। তাই যাদিদ আরশির নাম্বারটাও চেনে না। ফোন ধরে কিছুটা চমকে গেল সে যখন আরশি নিজের পরিচয় দিল। যাদিদ আরশির ফোন একেবারেই আশা করেনি।
“ভাইয়া আমার আপনার সাথে কিছু কথা ছিল।”
“বলো।”
“আমি আপনাকে অনুরোধ করছি ভাইয়া তিরাকে এভাবে কষ্ট দেবেন না। এই কষ্ট ওর সহ্যক্ষমতার বাইরে।”
“আরশি আমি আমার ব্যক্তিগত ব্যাপারে কথা বলার অধিকার আমার মাকেও দেইনা।”
এ কথার পর আর কিছু বলা কোনো সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের পক্ষে বলা সম্ভব না। আরশিও পারল না। খুব রাগ হলো তার। তিরাকে বলল,
“তুই এই একগুঁয়ে লোকটাকে ডিভোর্স দিয়ে দে।”
তিরা অবাক হয়ে বলল,
“কী বলছিস তুই? এসব কথা মুখেও আনবিনা।”
“কেন? যে তিরা খুব ছোট ছোট কারণে দুনিয়ার পাগল প্রেমিকদের ছেড়েছে সে এতকিছু হয়ে যাওয়ার পরেও একটা একগুঁয়ে দায়িত্বজ্ঞানহীন লোককে ছাড়তে পারবে না?”
“প্রেমিক আর স্বামী এক না। তুই বুঝবিনা।”
“আল্লাহ যেন কখনো আমাকে এসব না বোঝায়। তবে তোর জায়গায় থাকলে আমি অবশ্যই ডিভোর্স দিতাম। এবং আরো অনেক আগে।”
“ভালোবাসলে পারতি না। এত সোজা না।”
“ভালোবাসা আত্মসম্মানের থেকে বড় না তিরা।”
“যাদিদের বাচ্চা আমার পেটে আরশি।”
“যে বাবা বাচ্চার প্রতি এমন অন্যায় করতে পারে সেই বাবাকে কোনো দরকার নেই এই বাচ্চার। ওকে তুই নিজেই মানুষ করবি।”
“আমি পারব না।”
“তাহলে কী করতে চাস তুই?”
“আমি এ বাড়িতেই থাকব। বাবা মা আমার অনেক খেয়াল রাখে। আমি তাদের সাথেই থাকব। এই ঘরে যাদিদের সাথে অনেক স্মৃতি, প্রত্যেকটা কোণায় কোণায় যাদিদের স্পর্শ। এই ঘরেই থাকব। এখানেই বাচ্চা জন্মাবে, এখানেই বড় হবে। কতদিন ফিরবে না যাদিদ? কতমাস? কতবছর? যেদিনই হোক একদিন তো ফিরবে? অবশ্যই ফিরবে। না ফিরলে ডিভোর্স দিয়ে দিত।”
আর কিছুই বলল না আরশি। পুরো ছুটি তিরার সাথে কাটিয়ে ঢাকায় ফিরে গেল।

এভাবেই কেটে গেল আরো কয়েক মাস। তিরা ও বাচ্চা মোটামুটি সুস্থ্যই আছে। প্রেগন্যান্সির ৭ মাস চলছে। একদিন হঠাৎ করেই রেহানা আলমের মাথায় একটা বুদ্ধি এলো। সে লুকিয়ে তিরার কিছু ভিডিও করলো। যাতে তিরা কিছু টের না পায়। খুব সাধারন ভিডিও। এই যেমন তিরা খাচ্ছে, ঘুমাচ্ছে, পেট ধরে হাঁটছে এইসব। তারপর তা পাঠিয়ে দিল যাদিদকে। ভিডিওগুলো দেখে যাদিদের মধ্যে কী যেন হয়ে গেল। অস্থির লাগছে তার, খুব অস্থির। তিরা অনেক মোটা হয়ে গেছে, তার চোখের নিচে কালি পড়েছে, বিদ্ধস্ত চেহারা। সেই চোখ ধাঁধানো সৌন্দর্যের কিছুই অবশিষ্ট নেই। যাদিদ বারবার ভিডিওগুলো প্লে করে তিরার পেট দেখছিল। অস্থির ভাবে পায়চারি করছিল। ইচ্ছে করছে এক্ষুণি তিরার কাছে ছুটে যেতে। কিন্তু এই মুহুর্তে ছুটি মিলবে কি? ছুটি তার পাওনা আছে তবে হুট করেই ছুটি পাবে না জানে সে! অস্থিরতায় হাত পা কাঁপতে লাগলো!

ছেলেকে ভিডিও পাঠিয়ে রেহানা বেশ নিশ্চিন্তে ছিলেন। একরকম ধরেই নিয়েছিলেন যাদিদ যেভাবেই হোক আসবে। কিন্তু পুরো একটি সপ্তাহ পার হয়ে গেলেও যখন সে আসলো না তখন রেহানার মন খারাপ হয়ে গেল। এখন মনে হচ্ছে এই ছেলেকে এত তাড়াতাড়ি বিয়ে করানোই ভুল হয়েছে। ছেলে বয়সে এবং হাতে-পায়ে বড় হয়েছে কিন্তু বিয়ের উপযুক্ত হয়নি। যাদিদ এখনই বিয়ে করতে চাইছিল না, সেই শখ করে বিয়ে দিয়ে সর্বনাশ ডেকে এনেছেন!

তিরা সকালবেলা দাঁত ব্রাশ করে বাথরুম থেকে বের হয়ে চমকে গেল। যাদিদ দাঁড়িয়ে আছে তার সামনে। ভাবলেশহীন মুখে তাকিয়ে আছে তার দিকে। তিরা কয়েক সেকেন্ড যেতেই আবার বাথরুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিল। যাদিদ ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইল, এটা কী হলো!

চলবে…

কনফিউশন
লেখকঃ মৌরি মরিয়ম
পর্ব ৪৪

তিরা বাথরুমের দরজা লাগিয়ে কাঁদতে শুরু করেছে। থরথর করে কাঁপছে সে। ওদিকে যাদিদ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর দরজায় টোকা দিল,
“তিরা.. বেরিয়ে এসো।”
তিরা কোনো জবাব দিল না। যাদিদ আরো কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর বাথরুমের লকের চাবি খুঁজতে লাগলো। চাবি খুঁজে না পেয়ে যাদিদ আবার দরজায় টোকা দিয়ে বলল,
“দরজা খোলো তিরা, নাহয় দরজা ভেঙে ফেলব।”
এবারো তিরা দরজা খুলল না। কোনো জবাবও দিল না। এবার যাদিদ রাগে ফেটে পড়ল। দরজায় ধাক্কা দিয়ে দরজা ভাঙার চেষ্টা করতে লাগলো। শব্দ শুনে রেহানা চলে এলেন। ছেলেকে এই অবস্থায় দেখে বললেন,
“তোর কি মাথা খারাপ হয়েছে যাদিদ? একে তো এতদিন ধরে ওকে কষ্ট দিলি তার উপর এখন আবার জেদ দেখাচ্ছিস! ওর যখন ইচ্ছা বের হবে।”
“মা তিরা অনেকক্ষণ ধরে বাথরুমে। এতবার ডেকেছি কোনো সাড়া দেয়নি। যদি আগেরবারের মত অজ্ঞান হয়ে যায়? ফর গড সেক তোমার কাছে চাবি থাকলে দাও, নাহয় আমি দরজা ভেঙে ফেলব।”
এ কথা শুনে রেহানারও চিন্তা হতে লাগলো। সে বলল,
“এ ঘরের সব চাবি তো আমি তিরাকে বুঝিয়ে দিয়েছি। আমার কাছে নেই।”
রেহানা চাবি খুঁজতে লাগলেন। ওদিকে যাদিদ আবার দরজায় ধাক্কা দিতে লাগলো। দরজা যখন কিছুটা আলগা হলো তখন ভেতরে একটা শব্দ হলো। যাদিদ রেহানা সবাই শব্দ শুনে চমকে গেল। যাদিদ আরো জোরে ধাক্কা দিলো। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই দরজা ভেঙে গেল। যাদিদ দেখল তিরা বাথরুমের জানালার গ্রিলের সাথে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে ঝুলে আছে। যেহেতু ওদের বাথরুমের উচ্চতা ঘরের মতই ১০ ফুট উঁচু তাই এটা সম্ভব হয়েছে। তিরা বালতি উল্টো করে তার উপর উঠে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে বালতিটা লাথি মেরে ফেলে দিয়েছে। যাদিদ দৌড়ে গিয়ে তিরাকে কোলে নিয়ে গলা থেকে ওড়না খুলে তাকে ঘরে এনে বিছানায় বসালো।
রেহানা চিৎকার করে বললেন,
“এ কি করছিলি মা। কেন করছিলি?”
তিরা কিছুক্ষণ কাশলো। তার চোখে পানি। যাদিদ হঠাৎ করেই প্রচন্ড এক চড় বসালো তিরার গালে। রাগান্বিত স্বরে বলল,
“মরার এত শখ? এতদিন মরতে পারলি না? আজকে আমাকে দেখে মরতে ইচ্ছে করল?”
তিরা এবার শব্দ করে কাঁদতে লাগলো। রেহানা ছেলেকে ধমকে বলল,
“যাদিদ তোর সাহস তো কম না!”
যাদিদ মায়ের দিকে ফিরে বলল,
“মা প্লিজ তুমি তোমার ঘরে যাও। আমাদেরকে কথা বলতে দাও।”
রেহানা কি করবেন বুঝতে পারছিলেন না। ছেলেকে এত রাগান্বিত অবস্থায় তিরার কাছে একা রেখে যেতে সাহস হচ্ছেনা। কিন্তু যাদিদ এমনভাবে বলছে এখানে থাকাও সম্ভব না। যাদিদ আবার বলল,
“মা প্লিজ।”
রেহানা ঘর থেকে বের হতেই যাদিদ দরজা লাগিয়ে দিল। রেহানার এত ভয় করছিল যে তিনি দরজার পাশেই দাঁড়িয়ে রইলেন। যাদিদ তিরার সামনে দাঁড়িয়ে বলল,
“কী সমস্যা তোমার?”
তিরা কাঁদছে, কোনো কথা বলছে না। যাদিদ এবার আরো রেগে গিয়ে বলল,
“আমাকে দেখেই মরতে ইচ্ছে হলো! তা তোমার সমস্যা যদি আমি হই তাহলে পাগলের মত দিনরাত ফোন করতে কেন আমাকে? এত চিঠি লিখতে কেন? কেন বারবার আসতে বলতে?”
রাগে সারা শরীর কাঁপছে যাদিদের। তিরা চোখ মুছে উঠে গেল তার সামনে থেকে। দরজা খুলে ডাইনিং এ গিয়ে নাস্তা করতে বসলো। রেহানা তিরার কাছে গিয়ে বলল,
“মা আর কিছু দেব?”
“আপেলের জুস খাব মা।”
“এক্ষুণি বানিয়ে দিচ্ছি।”
যাদিদ দরজায় দাঁড়িয়ে এতক্ষণ সবকিছু দেখছিল। এবার ঘরে গিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে দুহাতে মাথা ধরে বসে রইলো। তিরা নাস্তা খেয়ে রান্নাঘরে এসে ঢুকলো। এটা ওটা করার বাহানায় রান্নাঘরেই রইলো। রেহানা বললেন,
“ঘরে যাও তিরা। যাদিদ অপেক্ষা করছে।”
“আমি ওর সামনে যেতে পারব না মা।”
“কেন?”
“ও রেগে আছে। আর আমিও কোনো কথা খুঁজে পাচ্ছি না।”
“ও এতদিন যেমন অপরাধ করেছে। আজ তুমিও একটা ভয়ঙ্কর অপরাধ করেছ। ওর রেগে যাওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু তুমি ঘরে যাও কিছু হবে না। ও এতদিন পর এসেছে তোমার দূরে থাকা ঠিক হবে না।”
তিরা ঘরে গেল। তিরাকে ঘরে ঢুকতে দেখে সাথে সাথেই যাদিদ কাপড় পালটে ঘর থেকে বের হয়ে গেল।

যাদিদ ড্রয়িং রুমে চুপচাপ বসে আছে। রেহানা এসে পাশে বসতেই যাদিদ বলল,
“বাবা কোথায় মা?”
“তুই আসার একটু আগেই অফিসে গেল।”
“এত তাড়াতাড়ি অফিস?”
“আজ একটু আগে বেরিয়েছে। হয়তো অফিসের আগে কোনো কাজ আছে।”
“বাবা কি সব জানে মা?”
“কোন সব?”
“তিরা ওর পাস্ট সম্পর্কে তোমাকে যা বলেছে সেসব।”
“না তোর বাবাকে এসব কেন বলতে যাব?”
“মা তুমি কি জানো তুমি খুব ভালো একটা মানুষ?”
রেহানা হেসে বললেন,
“তিরার কাছে যা।”
“নাহ আমার মনে হয় এখন ওর সামনে না যাওয়াই ভাল। মাথা অনেক গরম হয়ে আছে। শেষে রাগের মাথায় এমন কিছু বলে ফেলব বা করে ফেলব যেটা আরো খারাপ হবে।”
রেহানা ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,
“কিছুই হবে না। তুই ঘরে যা, একবার ওর পেটের দিকে তাকা। চিন্তা কর সেখানে কে আছে। ফুটফুটে একটা মেয়ের মুখ দেখতে পাবি। দেখবি মাথা ঠান্ডা হয়ে গেছে।”
যাদিদ চমকে গিয়ে বলল,
“মেয়ে হবে?”
রেহানা হেসে বলল,
“হ্যাঁ।”
যাদিদ চুপ। তবে ভেতরে ভেতরে একটা অস্থিরতা হচ্ছে। রেহানা বললেন,
“এতকিছু করেও তোকে আনতে পারলাম না। আর তিরার পেট দেখাতেই চলে এলি। নিজের সন্তান এমনই হয়।”
যাদিদ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
“শুধু এজন্য আসিনি।”
“তাহলে?”
“তিরার এই বিদ্ধস্ত অবস্থা দেখে মায়া লাগছিল। এতদিনের রাগ যে কোথায় গেল!”
রেহানা হাসলো। যাদিদ বলল,
“মা আমি কি চলে যাব?”
“এ আবার কেমন কথা? চলে চাবি কেন? কয়দিনের ছুটি?”
“এক মাসের ছুটি নিয়ে এসেছিলাম।”
“দারুণ! এক মাসের ছুটি! শুনলে তিরা পাগল হয়ে যাবে খুশিতে।”
“তিরা আমাকে দেখেই যা করল তা তো দেখলেই। আমি চোখের সামনে থাকলে যদি আবারও কোনো অঘটন ঘটিয়ে ফেলে?”
“তিরা কেন এমন কাজ করতে যাচ্ছিল আমি জানিনা। কিন্তু ৭ টা মাস বাচ্চা পেটে নিয়ে স্বামীর উপেক্ষা সহ্য করা অনেক কঠিন কাজ বাবা। একটু রাগ একটু অভিমান তো ওর হতেই পারে।”
“তাই বলে মরতে যাবে? আমি এসেছি, আমার সাথে ঝগড়া করতো। রাগ করে কথা না বলত। কিংবা অন্যকোনো ভাবে রাগ দেখাতো। মরতে কেন গেল? মরে গেলে ওর এই রাগ-অভিমানের কী দাম থাকতো?”
“ঘরে যা বাবা। তিরার সাথে কথা বল। সব মিটে যাবে দেখিস। তোকে অনেক বেশি ভালোবাসে মেয়েটা। আমি নিজের চোখে দেখেছি।”

চলবে…

কনফিউশন পর্ব ৪১+৪২

0

কনফিউশন
লেখকঃ মৌরি মরিয়ম
পর্ব ৪১+৪২

দুশ্চিন্তায় অস্থিরতায় সারারাত ঘুমাতে পারেনি তিরা। সকালে রিপোর্ট পজেটিভ পেয়ে খুশিতে আত্মহারা হয়ে গেল। এবার আর যাদিদ রাগ করে থাকবে কীভাবে? এত বড় সমস্যার এত সহজ সমাধান হতে পারে তা সে কল্পনাও করেনি।
অনেকবার ফোন করার পরেও যাদিদ ফোন ধরলো না। উপায় না দেখে তিরা মেসেজ দিল, “একটা সুখবর দেব। আজকে অন্তত একবার কথা বলো।” কিন্তু পুরো একটি দিন পার হয়ে যাওয়ার পরেও যাদিদের কোনো রিপ্লাই পাওয়া গেল না। অবশেষে তিরা বাধ্য হয়েই খবরটা মেসেজে দিলো। লিখলো, “আমি প্রেগন্যান্ট যাদিদ। তুমি বাবা হচ্ছো। তোমার বাচ্চা আমার পেটে। তোমার সন্তানের মাকে মাফ করে দেবে না তুমি?”
যাদিদ মেসেজটা দেখে কিছুক্ষণ অবাক হয়ে চেয়ে রইলো। তার মনে হলো এটা তিরার কোনো চালাকি নয়তো? সাথে সাথে ফোন করল মাকে,
“মা সময় পেলে আজ তিরাকে নিয়ে একটু ডাক্তারের কাছে যেয়ো তো।”
“ওমা আজ সকালেই তো ডাক্তারের কাছ থেকে এলাম। মা বাচ্চা দুজনেই সুস্থ আছে আলহামদুলিল্লাহ। এখন আবার যেতে হবে কেন? তিরা তো আমাকে কোনো অসুবিধার কথা বলল না।”
যাদিদ অবাক হয়ে বললো,
“ওহ ডাক্তারের কাছে গিয়েছিলে! বাচ্চার কথা শুনে আমি ভাবলাম তিরা আন্দাজেই বলছে কিনা।”
“না টেস্ট করিয়েছি। তিরা তো খুশিতে পাগলের মত করছে। কংগ্রাচুলেশনস বাবা।”
“থ্যাংক ইউ মা। তিরার খেয়াল রেখো।”
“অনশ্যই, তুই কোনো চিন্তা করিস না।”

খবরটা শুনে যাদিদের খুশি লাগছে, অন্যরকম এক অনুভূতি হচ্ছে কিন্তু সে তিরার সাথে কথা বললো না। যেরকম চলছিল সেরকমই চলতে লাগলো। তিরা এই ঘটনায় যারপরনাই অবাক হলো। প্রতিদিনই অসংখ্য ফোন ও মেসেজ দিতে লাগলো। কোনোটারই কোনো ফিডব্যাক নেই। তিরার খুশি কোথায় হারিয়ে গেল! আবার আগের মত হয়ে গেল। ঘুমাতে পারে না, ঠিকমতো খেতে পারে না! দুঃসহনীয় এক জীবন পার করতে লাগলো!

কয়েক মাস পর যাদিদ একটা চিঠি পেল। তিরার নাম দেখেই অস্থির হয়ে খুলল যাদিদ। তিরা লিখেছে..

যাদিদ,
জানিনা একটা মিথ্যে অত বড় পাপ কিনা যত বড় শাস্তি তুমি আমাকে দিচ্ছো। নাকি আমার অতীত তোমার কাছে তুলে ধরায় আমি আরো খারাপ হয়ে গেছি? তোমার বাচ্চা আমার পেটে যাদিদ। আমার কথা না ভাবো, বাচ্চার কথা একবার ভাবো। বাবার উদাসীনতায় মায়ের পেটের ভেতর বেড়ে উঠছে ও। কতবড় হতভাগ্য সন্তান ও! ওর কী দোষ যাদিদ? পাপ তো আমি করেছি তাইনা? শাস্তিও আমার একার পাওয়া উচিৎ। ওকে কেন শাস্তি দিচ্ছো? কেন ওর কোনো খোঁজখবর নাও না তুমি? কেন একবার জানতে চাও না ও কতবড় হয়েছে? ও ছেলে নাকি মেয়ে? কেন ওকে নিয়ে ওর বাবা মায়ের মধ্যে একটা কথাও হবে না? নাকি আমার মত ওর প্রতিও তোমার কোনো আগ্রহ নেই?
-তিরা

পড়ার পর চিঠিটাতে একটা চুমু দিল যাদিদ। তারপর ভাঁজ করে টেবিলের ড্রয়ারে রেখে দিল।

যথারীতি চিঠির কোনো উত্তর পেলো না তিরা। হতাশায় ডুবে গেল আবার। এবার তিরা যাদিদকে ফোন করাও ছেড়ে দিল। দুনিয়ার কারো কাছে ওর আর কিছু চাওয়ার নেই।

চলবে..

কনফিউশন
লেখকঃ মৌরি মরিয়ম
পর্ব ৪২

আরশি রশ্নির থেকে একটা শাড়ি নিয়ে পরলো। তারপর ছবি তুলে পাঠালো কাব্যকে। কাব্য অনলাইনে নেই। সে জানে কাব্য সন্ধ্যাবেলা বাসায় ফিরে তারপর অনলাইনে আসবে। ওদের যখন সন্ধ্যা এখানে তখন রাত। রাত পর্যন্তই শাড়ি পরে রইলো আরশি। আজ যদি কাব্য ভিডিও কলে যেতে বলে সে নিশ্চয়ই যাবে। ছবি দেখে কাব্য মাথা ঘুরানোর স্টিকার দিল। আরশি হেসে ফেলল। কাব্য সাথে সাথেই ফোন করল। আরশি ফোন ধরতেই কাব্য ওপাশ থেকে বলল,
“আজ সত্যি মাথা ঘুরে পড়ে গেছি।”
আরশি দুষ্টুমি করে বলল,
“মাথা ফাটেনি তো আবার?”
“মাথা না বুক ফেটে চৌচির হয়ে যাচ্ছে।”
আরশি খিলখিলিয়ে হাসলো। কাব্য বলল,
“তোমার সাহস কিন্তু অনেক বেড়ে গিয়েছে আরশি।”
“তাতে কি তোমার সমস্যা হচ্ছে? সাহস আবার কমিয়ে ফেলব?”
“আল্লাহ এমন না করুক। শুধু ভাবছি এই সাহসটুকু যদি আমি দেশে থাকতে হতো তোমার।”
“তাহলে কী হতো?”
“অনেক কিছুই হতে পারতো।”
“যেমন?”
“যেমন তখন তুমি এক ইঞ্চি সাহস দেখিয়েছো তো আমি দুই ইঞ্চি। আর এখন তুমি কিলোমিটারে সাহস দেখাচ্ছ অথচ আমি কিছুই করতে পারছি না, শুধু চেয়ে চেয়ে দেখছি। ”
এ কথা শুনে আরশি আবারো খিলখিল করে হেসে উঠলো৷

রেহানা আলম বেশকিছু দিন ধরেই খেয়াল করছেন যে তিরা মনমরা হয়ে আছে। মুখ দেখে মনে হয় কান্নাকাটিও করে। তবে কাঁদতে দেখেনি কখনো। এতদিন ভেবেছে যাদিদ দূরে আছে বলে হয়তো মন খারাপ। কিন্তু আজ তিরার ঘরে ঢুকতেই দেখলো সে কাঁদছে। এভাবে কাঁদতে দেখে একটু খটকা লাগলো। কাছে গিয়ে বললেন,
“তিরা কী ব্যাপার কাঁদছো কেন?”
তিরা চোখ মুছে বলল,
“ভালো লাগছে না মা।”
রেহানা তিরার পাশে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,
“কী হয়েছে?”
“কিছু না।”
“যাদিদের সাথে ঝগড়া হয়েছে?”
“না।”
“অনেকদিন ধরেই তোমার এই অবস্থা দেখছি। ভেবেছি আগের মত যাদিদের বিরহে কষ্টে আছো। কিন্তু এখন তো মনে হচ্ছে ঘটনা অন্যকিছু। কী হয়েছে আমাকে খুলে বলো। এই সময় এভাবে মনমরা হয়ে থাকা কান্নাকাটি করা বাচ্চার অনেক বড় ক্ষতি করতে পারে। এমন কী মিসক্যারেজও হতে পারে।”
তিরা শাশুড়ির দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আবার চোখ ফিরিয়ে নিল। কিছু বলল না। রেহানা আবার বললেন,
“তিরা আমি খুব ভাল করে জানি যাদিদ ছাড়া অন্য কোনো কারণ নেই তোমার এমন কান্নার। কী করেছে সে বলো আমাকে।”
“যাদিদ কিছু করেনি মা। আমিই অপরাধ করেছি তাই সে মুখ ফিরিয়ে আছে।”
রেহানা ভ্রু কুঁচকে বললেন,
“কি বলছো! কী অপরাধ করেছো?”
তিরা বুঝতে পারলো না শাশুড়িকে এসব বলা ঠিক হবে কিনা। বললে যদি সেও মুখ ফিরিয়ে নেয়? নিলেই বা আসল মানুষটাই যেখানে মুখ ফিরিয়ে আছে সেখানে আর কীসের পরোয়া! অবশেষে তিরা শাশুড়িকে সবকিছু বলে দিল। সব শুনে শাশুড়ি বললেন,
“হায় আল্লাহ! এই সামান্য কারণে যাদিদ এমন করবে? ৪ মাস ধরে তোমাদের মধ্যে কোনো যোগাযোগ নেই আর সেটা তুমি আজ আমাকে বলছো! আরো আগে জানানো উচিত ছিল। আমি আজই যাদিদের সাথে কথা বলব।”
তিরা শাশুড়িকে জড়িয়ে ধরে আবার কেঁদে ফেলল। এবার সে একটু ভরসা পাচ্ছে।

যাদিদকে ফোন করে পাওয়া গেল না৷ পরে যখন যাদিদ নিজেই কলব্যাক করল তখন রেহানা বললেন,
“তুই আমার ছেলে ভাবতেও অবাক লাগছে যাদিদ!”
যাদিদ অবাক হয়ে বলল,
“কী করলাম আমি?”
“তিরার সাথে এমন কেন করছিস? স্ত্রীর প্রেগন্যাসির সময় কোনো স্বামী এমন করতে পারে আমি জানতাম না। বাচ্চা মেয়েটা নাহয় একটা মিথ্যে বলে ফেলেছে। তাতে কী এমন ক্ষতি হয়েছে? অতীতে যাই থাকুক তা বর্তমানে নেই। বর্তমান নিয়ে থাকতে হবে যাদিদ। অতীত মূল্যহীন!”
“মা এটা তিরা আর আমার ব্যক্তিগত ব্যাপার। আমি এ বিষয়ে তোমার সাথে কথা বলতে চাই না।”
“তোর সাহস হয় কী করে আমাকে এমন কথা বলার? এটা এখন আর শুধু তোদের ব্যক্তিগত ব্যাপার নেই৷ এর সাথে আমার নাতি-নাতনী জড়িত। বাচ্চার কিছু হয়ে গেলে?”
“মা আমি তোমার ভালর জন্য বলছি। এ বিষয়ে যদি আমার সাথে কথা বলতে থাকো তাহলে আমার মুখ দিয়ে এমন কঠিন কথা বের হবে যা তুমি সহ্য করতে পারবে না।”
“জানি বাবা তুমি কেমন কঠিন কথা বলতে পারো তা আমার অজানা নয়। আমি তোমার কঠিন কথা শুনতে রাজী আছি। কিন্তু তিরাকে মাফ করে দাও। পেটের বাচ্চার ক্ষতি হয়ে যেতে পারে।”
“ক্ষতি হলে হবে। বাচ্চার নসিবে যদি মায়ের পেটেই মরে যাওয়া থাকে তাহলে তুমি আমি কেউ ফেরাতে পারব না।”
রেহানা ধমকে বললেন,
“যাদিদ কী বলছিস তুই! নিজের বাচ্চা সম্পর্কে এভাবে কেউ বলতে পারে? আল্লাহ মাফ করো।”
“আগেই মানা করেছিলাম আমার সাথে এ বিষয়ে কথা বলো না।”
যাদিদ ফোন কেটে দিল। রেহানার চোখে জল এলো। মনে পড়ে গেল যাদিদ যখন পেটে ছিল তখন তাকে নিয়ে তার বাবার কত উল্লাস ছিল! প্রতিদিন অনাগত বাচ্চাকে নিয়ে কতরকম জল্পনা কল্পনা। অথচ সেই মানুষের ছেলে কোত্থেকে এমন পাথর হলো?

চলবে…

কনফিউশন পর্ব ৩৯-৪০

0

কনফিউশন
লেখকঃ মৌরি মরিয়ম
পর্ব ৩৯-৪০

রাত অনেক। ঘুম আসছ না আরশির। কাল খুব ভোরে কাব্যর ফ্লাইট। এয়ারপোর্টে গিয়ে যে একবার দেখা করবে সেই সময় থাকবে না। ভালো লাগছে না কিছুই। কাব্যকে ফোন করবে বলে ফোনটা হাতে নিতেই কাব্য নিজেই ফোন করলো। বুক কেঁপে উঠলো আরশির। ফোন ধরতেই কাব্য বলল,
“কী খবর আরশি? ঘুমিয়ে পড়েছিলে?”
“নাহ তিরার সাথে কথা বলছিলাম অনেকক্ষণ ধরে।”
“কী অবস্থা এখন ওর?”
“ভাল না। এখনো ভাইয়ার দিক থেকে কোনো খবর আসেনি। চিঠিটা পেয়েছে কিনা তাও জানেনা তিরা।”
“হুম।”
“এমন অদ্ভুত মানুষ আমি জীবনে দেখিনি।”
“মানুষ এর থেকেও অদ্ভুত হয় আরশি।”
“আচ্ছা তিরা যে একটা গাধা এটা তো আমাদের থেকেও ভাল জানার কথা তার। সে কেন ছোট্ট একটা ভুল মাফ করে দিতে পারবে না?”
“যাদিদ হয়তো তিরাকে শাস্তি দিচ্ছে যাতে ভবিষ্যতে এমন আর না হয়। কিংবা সে হয়তো নিজেকে সামলানোর জন্য সময় নিচ্ছে। কথা বললে হয়তো খারাপ ব্যবহার করে ফেলবে।”
“যেকোনো কিছু কি আলোচনা করে সমাধান করা যায় না কাব্য?”
“ব্যাপারটা সবসময় একরকম না আরশি। যখন ছোটোখাটো ভুলবোঝাবুঝি হয় তখন ইন্সট্যান্ট আলোচনা করে সমাধান সম্ভব। কিন্তু আমরা মানুষেরা মাঝেমাঝে খুব বেশি রেগে যাই। তখন আমরা আর নিজেদের কন্ট্রোলে থাকতে পারিনা। তখন আলোচনা না করাই ভাল। সময় নিয়ে মাথা ঠান্ডা করে আলোচনা করাটাই তখন শ্রেয়।”
“একটা মিথ্যে বলায় এত রাগ!”
“শুধু এজন্য না। আমি নিশ্চিত ছবি দেখে আর চিঠি পড়েই ওর মাথাটা গেছে।”
“যাদিদের জায়গায় তুমি থাকলে কী করতে?”
“আমার কথা বাদ দাও।”
“কেন? বাদ দেব কেন? আমি জানতে চাই।”
কাব্য হেসে বলল,
“আমি যাদিদের মত অত ইমোশনাল না।”
“যাদিদ ইমোশনাল? যাদিদ একটা পাথর।”
“উহু। সে ইমোশনাল। তবে প্রকাশ করতে জানেনা।”
“কিজানি! আচ্ছা তুমি কিন্তু বললে না তুমি হলে কী করতে?”
“কিছুই করতাম না। ধরো আমি এখন যদি জানতে পারি তোমার কেউ ছিল, তার সাথে গভীর সম্পর্ক ছিল। সেই সম্পর্ক যদি ফিজিক্যাল পর্যন্তও গড়ায় এবং সেটা তুমি আমার কাছে গোপণ করো। তাতে আমার কিছু যায় আসেনা। কারণ ওটা তোমার অতীত এবং ব্যক্তিগত ব্যাপার। একজন মানুষ তার ব্যক্তিগত ব্যাপার গোপণ রাখতেই পারে।”
“তাহলে তুমি কেন আমাকে আগেই তোমার সব অতীত বলেছিলে?”
কাব্য হেসে বলল,
“কারণ তোমরা মেয়ে তো। একটুতেই সেন্টি খেয়ে যাও। পরে বিপদে পড়ার চেয়ে আগেভাগে ক্লিয়ার থাকা ভাল।”
“এমনওতো হতে পারে তুমি কারো সাথে ফিজিক্যালি ইনভলব ছিলে বলে আমারটা মেনে নিতে পারবে। যাদিদের তার এক্সের সাথে এরকম কিছু ছিলনা। তাই সে তিরার টা মেনে নিতে পারছে না।”
“আমি যখন তনিকার ভয়াবহ পাস্ট জানতে পারি তাও অন্য কারো মাধ্যমে তখন আমি এমন ছেলে ছিলাম যে জীবনে কোনো মেয়েকে ভালোবাসেনি, টাচ করা তো বহুদূরের কথা। আমি ছবি আর চিঠির থেকেও ভয়াবহ কিছু দেখেছিলাম। তখনও আমার মেন্টালিটি সেইম ছিল। আমি তনিকাকে সাপোর্ট দিয়েছিলাম কারণ ও প্রচন্ড ভয়ে ছিল।”
“আমার কখনো কেউ ছিল না।”
কাব্য হাসলো। আরশি বলল,
“কিন্তু আমি তনিকার কথা শুনে কষ্ট পেয়েছিলাম।”
“তাই?”
আরশি ইতস্তত করে বলল,
“আমার কেন যেন মনে হতো তোমার নিশ্চয়ই গার্লফ্রেন্ড ছিল। তাই সেটা স্বাভাবিকভাবেই নিয়েছিলাম। কিন্তু ফিজিক্যালি ইনভলব ছিলে এটা শুনে কষ্ট পেয়েছিলাম।”
“সরি আরশি।”
আরশি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। কাব্য বলল,
“থাক মন খারাপ করোনা। এসব কখনো ফুরিয়ে যায় না।”
কাব্য হেসে ফেলল। আরশি লজ্জা পেয়ে বলল,
“তুমি একটা অসভ্য ছেলে৷”
আরশি ফোন কেটে মুখ ঢেকে হাসতে লাগলো। কাব্য আবার ফোন দিল। আরশি ধরলো না। এরপর কাব্য একটা মেসেজ দিল, “ফোন ধরো, ইটস ইম্পরট্যান্ট।” এবার ফোন ধরলো আরশি। কাব্য বলল,
“আজ চাঁদ দেখেছো?”
“না।”
“বারান্দায় যাও, দেখো।”
আরশি বারান্দায় গিয়ে আকাশে তাকালো। বলল,
“বাহ আজকের চাঁদটা তো খুব সুন্দর।”
“চাঁদ দেখা শেষ হলে রাস্তার দিকেও একটু তাকিও।”
আরশি রাস্তায় তাকিয়ে দেখে কাব্য দাঁড়িয়ে হাত নাড়ছে, অন্যহাতে ফোন। আরশি চমকে বলল,
“তুমি?”
“চলে যাওয়ার আগে আরেকবার দেখা হবেনা মানতে পারছিলাম না।”
“তুমি সত্যি এসেছো কাব্য?”
“দেখছো তো।”
“থ্যাংকস কাব্য। খুব দেখতে ইচ্ছে করছিল তোমাকে।”
“কই বলোনি তো।”
“সম্ভব না ভেবে বলিনি।”
“একবার বলেই দেখতে।”
আরশি হাসলো। তারপর বলল,
“আচ্ছা তুমি এতক্ষণ এখানে দাঁড়িয়ে আমার সাথে কথা বলছিলে?”
“না পথে ছিলাম।”
“এতক্ষণ বলোনি কেন?”
“বললে কি আর সারপ্রাইজ থাকতো?”
আরশি আবার হাসলো। কাব্য বলল,
“এখন ঝটপট নীচে আসো।”
“এত রাতে কীভাবে সম্ভব!”
“জানিনা সম্ভব করো।”
“এত রাতে গেট খুললে সবাই আওয়াজ পাবে।”
“গেট খুলতে হবে না। দেয়াল টপকে আসব।”
“এত উঁচু দেয়াল কীভাবে টপকাবে?”
“ওসব আমি ম্যানেজ করে নেব। তুমি শুধু উপরটা ম্যানেজ করে নীচে নামো।”
“বাদ দাও কাব্য। দেখা তো হলোই।”
“না তোমাকে আসতেই হবে। ভয় পাচ্ছ কেন নীচতলা তো ভাড়া হয়নি, কেউ দেখার চান্স নেই।”
“দেখলে আমার কিছু যায় আসেনা। আর আমি আসতেও পারব। ভয় তোমাকে নিয়ে। ব্যাথা পাও যদি।”
“কিচ্ছু হবেনা।”

আরশি কাব্য দাঁড়িয়ে আছে মুখোমুখি। আরশির একটু নার্ভাস লাগছে। অনেকদিন পর দেখা হওয়ায় ইচ্ছে করছে কাব্যকে মন ভরে দেখতে। কিন্তু পারছে না কারণ কাব্য তাকিয়ে আছে। ওদিকে কাব্য আরশিকে দেখতে দেখতে সব কথা গুলিয়ে ফেলেছে। একসময় আরশির হাত ধরে বলল,
“খুব মিস করছিলাম এতদিন।”
“আমিও।”
“পাঁচ বছর কি খুব বেশি সময় আরশি?”
“নাহ।”
“আমার পিএইচডি করতে যাওয়ার সিদ্ধান্তটা কি ভুল ছিল?”
“আরে না। পাগলের মত কথা বলছো কেন?”
“জানিনা আজকে ভেতরটা ফাঁকা ফাঁকা লাগছে।”
“সব ঠিক হয়ে যাবে কাব্য। ধৈর্য্য ধরো। এখন একদম শেষ মুহুর্ত তো, সবাইকে ছেড়ে যাচ্ছ বলে কষ্ট হচ্ছে।”
কাব্য একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
“কেমন একটা ভয়ও কাজ করছে।”
আরশি আর কিছু বলল না। ভয় তার নিজেরও করছে। পাঁচ বছর অনেক সময়। দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে রইলো অনেকক্ষণ। তারপর আরশি চোখ সরাতেই কাব্য বলল,
“তাকাও।”
আরশি আবার তাকালো। কাব্য আরশির চোখে তাকিয়ে বলল,
“তোমাকে মিস করব। তোমার হাতের চা, তোমার এই স্বচ্ছ চোখের চাহনি, তোমার হাসি, তোমার গায়ের মিষ্টি ঘ্রাণ সবকিছু মিস করব!”
“আমিও মিস করব তোমার হাতের প্যানকেক, তোমার বুকসেল্ফ আর তোমার গায়ের সিগারেটের গন্ধ!”
“আমিও মিস করব আমাকে দূরে রাখার জন্য তোমার সেই আঙ্কেল ডাকা।”
“আমিও মিস করব আমার কাছে আসার জন্য সিগারেট খাওয়া কমিয়ে মায়ের অজুহাত দেয়া।”
কাব্য ধরা খেয়ে হেসে বলল,
“শিট! ওকে ব্যাপার না। আমিও মিস করব ভাবি বাসায় থাকা স্বত্তেও অন্ধকার রাতে আমার কাছে থাকার জন্য তোমার মিথ্যে বলা।”
আরশি এবার লজ্জায় মুখ ঢেকে ফেলল। কাব্য হাসছিল, আরশি হঠাৎ কাব্যর গাল টিপে ধরে বলল,
“এটা টের পেয়েছো কেন তুমি? অসভ্য ছেলে।”
কাব্য মাথা নাচিয়ে দুষ্টু হেসে বলল,
“আরও অনেককিছু টের পেয়েছি।”
আরশি মাটির দিকে তাকিয়ে হাসছিল। কাব্য বলল,
“আরেকটা জিনিস খুব মিস করব আরশি।”
আরশি তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল,
“কী?”
“এইযে আমি কাছে এলে তোমার এই নার্ভাস হয়ে যাওয়া।”
আরশি চোখ নামিয়ে হাসলো। তখনই কাব্যর ফোন ভাইব্রেট করলো। ফোন বের করে বলল,
“আরশি বড় ভাই ফোন করছে। আমাকে যেতে হবে। আমি কাউকে কিছু জানিয়ে আসিনি।”
“আচ্ছা যাও।”
“ভালো থেকো। সাবধানে থেকো। আর এভাবেই হাসিখুশি থাকবে। আমি পাঁচ বছর পর এসে এই হাসি যেন অব্যাহত দেখি।”
আরশি হেসে বলল,
“তুমি যেমনটা চাইবে।”
কাব্য আচমকা আরশির কপালে একটা চুমু দিলো। শুধু তাই নয়, অনেকক্ষণ ঠোঁট চেপে রাখলো ওই কপালে। আরশির চোখ বন্ধ হয়ে গেল৷ হঠাৎ সেই চোখ ভরে গেল জলে। কাব্য আর তাকালো না। যেভাবে দেয়াল টপকে এসেছিল, সেভাবেই চলে গেল। তাকালে দেখতে পেতো, আরশি সেখানেই মাটিতে বসে পড়েছে। কপালে হাত দিয়ে কাব্যর ঠোঁটের স্পর্শটুকু ধরে রাখতে চাচ্ছিল।

চলবে..

কনফিউশন
লেখকঃ মৌরি মরিয়ম
পর্ব ৪০

কাব্য চলে যাওয়ার পর আরশির প্রচন্ড আফসোস হচ্ছিল কেন সে একবার কব্যকে জড়িয়ে ধরল না। কাব্য যখন তার কপালে চুমু দিল তখনই তো তার কাব্যর বুকে ঝাপিয়ে পড়া উচিৎ ছিল! হায় কেন সে এটা করলো না? এইযে বুকটা খালি খালি লাগছে, এই শূন্যতা নিয়ে সে পাঁচটা বছর কী করে থাকবে!

তিরা ফোনের পর ফোন করে যায়, যাদিদ ধরে না। কখনো দেখে কখনো দেখে না। সে তার সিদ্ধান্তে অটল, তিরার সাথে কোনোভাবেই সে কথা বলবেনা যতদিন তার রাগ না কমে। আর তিরার নাম্বারটাও সে ব্লক করে না। সে চায় তিরা ফোন করুক, তিরা কত ফোন করতে পারে সেও দেখবে। প্রথম প্রথম তিরা খুব মেসেজ পাঠাতো। এখন আর তেমন মেসেজ পাঠায় না। ফোন করাও নিশ্চয়ই একসময় থামিয়ে দেবে। দিক, সবকিছু থেমে যাক। ওদিকে তিরা দেখে যাদিদ তার বাবা মা কে নিয়মিত ফোন করে, খোঁজখবর নেয়। তার কথা কি একবারো জিজ্ঞেস করে? নাকি তার কথা ভাবাই ছেড়ে দিয়েছে।

মাসখানেক পরে আরশির জন্য একটা পার্সেল এল। পার্সেল খুলে দেখে একটা লিপস্টিক। সাথে কাব্যর চিঠি। তাকে কেন লিপস্টিক পাঠালো, তাও এতদূর থেকে তা বুঝতে পারছে না। কিছুটা অবাক হয়েই চিঠিটি খোলে সে।

আরশি,
এই লিপস্টিকটা তোমার জন্য কিনেছি, হুট করেই। এটা জার্মান লিপস্টিক, খুব ভাল। তোমাকে কখনো বলা হয়নি লিপস্টিক আমার খুব পছন্দ। জানি তুমি লিপস্টিক পরো না। তোমাকে কখনো লিপস্টিক পরা দেখিওনি। তবুও দেখেই মনে হলো এটা তোমার ওই অমূল্য ঠোঁটের জন্যই তৈরি। তোমার ঠোঁট পর্যন্ত যেতে না পরলেও তোমার কাছে থাকলেই ধন্য হবে এই লিপস্টিক এবং নগন্য কাব্য।

চিঠি পড়ে আরশি লজ্জায় মুখ ঢেকে বসে রইলো কিছুক্ষণ। তারপর আয়নার সামনে গিয়ে লিপস্টিক টা পরলো। কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে যেহেতু আরশি কখনোই লিপস্টিক পরেনি সেহেতু ঠিকভাবে পরতে পারল না। ঠোঁটের বাইরে লেগে গেল। তাই মুছে ফেলল। কিন্তু পুরোপুরি উঠলো না। সে অনেকবার তিরাকে দেখেছে তেল বা লোশন লাগিয়ে লিপস্টিক উঠাতে। সেভাবেই পুরোপুরি উঠিয়ে রশ্নির কাছে গেল। রশ্নি টিভি দেখছিল। আরশিকে দেখেই বলল,
“আয় আরশি।”
“ভাবি একটা কাজ দেব তোমাকে। একদম আমাকে লজ্জা দেবেনা আগেই বলে নিচ্ছি। তুমি ছাড়া কিন্তু আর কেউ নেই আমার যার কাছে যাব।”
“আরে শুধুশুধু লজ্জা দেব কেন? বল কী করতে হবে।”
আরশি লিপস্টিকটা বের করল। বলল,
“এটা আমার ঠোঁটে পরিয়ে দাও।”
রশ্নি মুচকি হাসছিল। আরশি মাথানিচু করে ছিল৷ রশ্নি বলল,
“ওই ছেলেটা দিয়েছে বুঝি?”
“হ্যাঁ।”
“এটা পরে বের হবি এখন?”
“নাহ পাগল তুমি। ছবি পাঠাব।”
“আচ্ছা।”
রশ্নি আরশিকে লিপস্টিকটা পরিয়ে দিয়ে বলল,
“মাশাআল্লাহ আমার বোনটাকে কত্ত সুন্দর লাগছে!”
আরশি হাসলো। তারপর নিজের ঘরে চলে গেল। ঘরে ঢুকে দরজা লাগিয়ে সেল্ফি তুলল আরশি। তারপর কাব্যকে পাঠিয়ে দিল। কাব্য অনলাইনেই ছিল। ছবি দেখে মাথা ঘুরে পরে যাওয়ার স্টিকার দিল। স্টিকার দেখে আরশি কিছুতেই হাসি থামাতে পারছিল না। দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে আরশির এই প্রাণখোলা হাসি শুনে রশ্নির ভেতরটা জুড়িয়ে গেল। ছেলেটা যেই হোক নিশ্চিত জাদু জানে! ওদিকে কাব্যর মাথা ঘোরানো শেষ হলে বলল,
“একবার ভিডিও কলে আসবে?”
“না।”
“এক মিনিটের জন্য? না থাক ৩০ সেকেন্ডের জন্য।”
“প্লিজ কাব্য আমি পারব না। যতটুকু সম্ভব না তার বেশি করেছি।”
“আচ্ছা আচ্ছা তোমার অস্বস্তি হবে এমন কিছু আমি চাইনা। এক্সপেকটেশন থেকেও অনেক বেশি পেয়েছি।”

রেহানা আলম বেশ কয়েকদিন ধরেই তিরাকে খেয়াল করছেন। মেয়েটার মধ্যে বেশ পরিবর্তন এসেছে। অবশেষে একদিন জিজ্ঞেস করেই বসলেন,
“মা তুমি কি প্রেগন্যান্ট?”
তিরা চমকে উঠলো। বলল,
“মানে? কী বলছেন মা? এটা কেন বললেন?”
“তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে তুমি প্রেগন্যান্ট।”
তিরা নিজের পেটে হাত দিয়ে বলল,
“কই আমার পেট তো সমান আর আমি বমিও করিনি।”
এবার রেহানা হেসে ফেললেন। বললেন,
“ওরে পাগল শুধু কি বমি করলেই প্রেগন্যান্ট বোঝায়?”
তিরা এবার সত্যিই চমকে উঠলো। যদি সত্যিই সে প্রেগন্যান্ট হয় তাহলে তো যাদিদ আর রাগ করে থাকতে পারবে না! তিরা উত্তেজিত হয়ে শাশুড়ির হাত ধরে বলল,
“মা প্লিজ আমাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে চলুন। আমার এক্ষুণি জানতে হবে। মা প্লিজ।”
রেহানা তিরার পাগলামি দেখে হাসতে লাগলেন। বললেন,
“আচ্ছা তৈরি হয়ে নাও। টেস্ট করতে দিয়ে আসি।”

টেস্ট দেয়ার পর তিরা বলল,
“মা রিপোর্ট কখন দেবে?”
“কাল সকালে?”
“না আমার এখন চাই। আমার যাদিদকে জানাতে হবে।”
রেহানা হেসে বললেন,
“আরে পাগল নাকি মেয়ে, এখন রিপোর্ট কীভাবে দেবে? কাল সকালেই নিতে হবে। কিছু করার নেই।”
“মা প্লিজ হেল্প করুন। আমার এখন রিপোর্ট চাই, যেকোনো মূল্যে।”
রেহানা এবার দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন,
“হায় খোদা! এ কোন পাগলের পাল্লায় পড়লাম! আচ্ছা চলো একটা টেস্ট কিট কিনে দেই। তবে এটায় কিন্তু সবসময় সঠিক রেজাল্ট আসেনা। তাই নেগেটিভ পজেটিভ যাই হোক এখনই যাদিদকে জানাবে না।”
“ঠিকাছে জানাব না। নিজের মন তো শান্ত হবে!”

টেস্ট কিট দিয়ে টেস্ট করে তিরা জানতে পারল সে প্রেগন্যান্ট। খুশিতে আত্মহারা হয়ে সে শাশুড়ির দুই গালে কয়েকটা চুমু দিয়ে দিল। তিরার পাগলামি দেখে রেহানার হাসতে হাসতে দম আটকে যাবার জোগাড়!

চলবে..