Thursday, July 10, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1849



পতিতা মেয়ে part_1

0

#পতিতা_মেয়ে
#writter_Tannoy_Hasan
#part_1

একটা হ্যাচকা টান দিতেই মেয়েটার পুরো শাড়ী খুলে নিচে পড়ে গেল৷পরনে শুধু আর মাত্র দুইটা কাপড়৷মেয়েটা তখন কেমন দুই হাত দিয়ে মুখটা গুজে রেখেছে৷আর এমন বিবস্ত্র অবস্থায় মেয়েটাকে দেখে নিজের ভিতর কাম ভাবটা পুরো জেগে উঠেছে৷তাই আস্তে আস্তে ওর সামনে গেলাম৷ওর মুখ থেকে হাতটা সরাতেই দেখতে পেলাম,কেমন ভয়ার্ত চোখ জোড়া দুটি পানিতে ছলছল করছে৷গোলাপি রঙের ঠোট দুটি কেমন করে কাপছে৷মনের ভিতর তখন কামভাবটা আরও তীব্র হয়ে গেল৷মুহুর্তেই ওর ঠোট দুটি আমার দখলে নিয়ে নিলাম৷ও কেমন হাত দিয়ে বাধা দিতে গিয়ে পারল না৷
.
খাটের ওপর ওকে ধাক্কা মেরে ফেলে দিলাম৷খাটের ওপর শুয়েই মেয়েটা কেমন ভয়ে কাপতে শুরু করল৷সেদিকে আমার কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই৷কারন ২০হাজার টাকার বিনিময়ে ও আমার সাথে রাত কাটাতে এসেছে৷কি ভাবছেন টাকার কথা কেন বললাম?
ও আমার নিজের বউ না৷আর মেয়েটাকে একরাতের জন্য ভাড়া করে এনেছি৷পতিতা
হ্যা ও একটা পতিতা মেয়ে৷
.
গভীর রাতে যখন মদ খেয়ে সিগারেট টানতে টানতে মাতাল অবস্থায় হাটতে হাটতে বাসায়
ফিরছিলাম৷ঠিক তখনই অনুভব করতে লাগলাম কেউ আমাকে পিছন থেকে ফলো করছে৷পিছনে তাকাতেই দেখলাম একটা মেয়ে আমার পিছু নিচ্ছে৷মহিলা ছিনকারী না তো?আমার সাথে আবার তখন প্রায় লাখ টাকার ওপরে ছিল৷প্রতিদিনই হাজার হাজার টাকার নেশা করি আমি৷বড়লোক ঘরের নষ্ট ছেলে আমি৷বাবা মা কেউ নাই৷আছে বুকভরা কষ্ট আর কোটি কোটি টাকা৷যাই হোক মেয়েটার দিকে মাতাল অবস্থায়ই তাকালাম,দেখলাম মেয়েটা বোরকা পড়ে আছে৷তখন একটু অন্যরকম লাগতে শুরু করল৷
.
–এই মেয়ে,এভাবে পিচু নিচ্ছিস কেন?(মাতলা ভাবে)
,
–(চূপ)
.
–কি রে কথা বলছিস না কেন?
,
–(চূপ)
.
মেয়েটার এমন চূপ করে থাকার কারনে বিরক্ত নিয়ে চলে আসতে লাগলাম৷একটু পরই দেখলাম মেয়েটা আবারও আমার পিছু নিচ্ছে
.
–ওই মেয়ে,তোর সমস্যা কি বল তো?
.
–(কিছু বলতে গিয়ে থেমে গেল)
,
–কি বলবি বল,নয়ত আমার পিছু ছাড়
.
–আমাকে কিছু টাকা দিবেন?(নিচু স্বরে)
,
টাকা চাওয়ার কথা শুনে একটু অবাক লাগল৷
.
–তোকে টাকা দেব কেন আর কত টাকা দিব?
.
–জ্বি ১০হাজার দিলেই হবে
.
–তোকে এতগুলো টাকা কেন দিতে যাবো?আমার কি লাভ এতে?
.
কথাটা শুনে মেয়েটা একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলল৷আর তারপরই বলল
.
–বিনিময়ে আপনি আমাকে সারারাতের জন্য পাবেন(নিচু স্বরে)
.
—লাগবেনা তোকে,টাকা দিতে পারব না
,
বলেই হাটতে যাবো,ঠিক তখনই ও আমার পায়ে পড়ে গেল৷আর অনেক কান্না শুরু করে দিল
,
–প্লিজ আপনি না করবেন না৷টাকাটা আমার অনেক প্রয়োজন৷আর আমাকে দেখলে আপনি হয়ত না করবেন না,কারন আমার ভিতর রুপ,যৌবন সব আছে,প্লিজ আপনি না করবেন না,১০হাজার না দিলে,৫হাজারই দেন,টাকাটা আমার অনেক দরকার,প্লীজ(কান্না করতে করতে)
,
–তো দেখি তো তুই কেমন দেখতে
.
বলার পরই মেয়েটা বোরকার নিকাবটা খুলে ওর মুখটা বের করল৷
মূখটা খুলতেই আমি কেমন অবাক হয়ে গেলাম৷চেহারাটাতে এত পরিমান মায়া যে,যেটা লিখে প্রকাশ করতে পারব না৷পুর্নিমার চাঁদের চেয়েও সুন্দর৷এমন একটা মেয়ে কিভাবে ,নিজেকে টাকার বিনিময়ে এভাবে অন্যের হাতে তুলে দিচ্ছে?ভাবতেই অবাক লাগছে৷
যাই হোক মেয়েটাকে আমার হেব্বি লাইক হইছে৷তাই ১০ এর পরিবর্তে ২০হাজার টাকা দিবো বলেই মেয়েটাকে আমার বাসায় নিয়ে গেলাম৷আজ সারারাত ভোগ করব৷এমন একটা সুন্দরী মেয়েকে ভোগ করব ভাবতেই মনের ভিতর কেমন খুশিতে নাচতে লাগল৷মদের নেশার চাইতেও তখন এই মেয়েকে ভোগ করার নেশাটাই আমার বেশি জাগ্রত হলো৷
.
যাই হোক অযথা টাইম নষ্ট করা যাবে না৷এবার গল্পে আসা যাক,
.
মেয়েটাকে খাটের ওপর ফেলে দিয়েই ওর ওপরই শুয়ে পড়লাম৷ও বাধা দিতে গিয়েও পারল না৷শুধু চোখ দুটি বন্ধ করে রেখেছে৷আর ওর ঠোট দুটি তখনও এমনভাবেই কাপতে শুরু করল যে,যেটা লিখে প্রকাশ করতে পারব না৷ওর কাপা কাপা ঠোট দুটি আবারও নিজের দখলে নিয়ে নিলাম৷ও আবারও কেমন করে একবার আমার দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকালো৷তারপর আবারও চোখ দুটি বন্ধ করে ফেলল৷ওর নাকের গরম বাতাস আমার মুখের ওপর পড়ছে৷পাগল করে তুলছিল আমায় তখন৷ওই সময় ওর ঠোটের অপর আরও বেশি ঝড় বইতে লাগল৷ওর পুরো শরীরটা কেমন গলা কাটা মুরগীর মত ছটফট করতে লাগল৷
,
আর তখনই মেয়েটা নিজেকে কেমন আমার কাছ থেকে ছুটিয়ে নিল৷আর তখনই ও বিছানা থেকে উঠে রুমের এক কর্নারে চলে গেল৷আর তখন ওর চোখ দিয়ে কেমন অশ্রু ঝরতে লাগল৷ তারপরই আমাকে কাপা কাপা কন্ঠে মেয়েটা বলতে লাগল
.
–আ আমাকে কি একটু সময় দেওয়া যাবে,যদি আপনি দয়া করে আমাকে একটু সময় দিতেন(একদম ভয়ে কাতর হয়ে কাপা কাপা কন্ঠে)
.
মেয়েটার এমন আচরন দেখে আমি একদমই অবাক হয়ে যাই,কারন আজ পর্যন্ত অনেক পতিতাকে আমি ভোগ করেছি,কারও মুখেই এমন কথা শুনিনি৷তবে এই মেয়েটা যেন কেমন?
মনে হচ্ছে নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে ও নিজেকে আমার কাছে তুলে দিছে৷আর নয়ত আমি ওকে জোর করে তুলে এনে এগূলো করছি৷তারপরও ওর প্রতি আমার কোনো মায়া লাগল না,বরং রাগ হচ্ছিলো,আমার খুব ভালো একটা মূহুর্ত নষ্ট করে দিল৷তখনই
.
–এই পতিতা মেয়ে,এইদিকে আয়,তোদের মত পতিতাদের এত ছাড় দেবার সময় আমার নেই,১০ হাজার চেয়েছিস,২০হাজার নগদ দিছি,সো আমিও ওই রকমভাবেই কাজ চালাবো,এই দিকে তাড়াতাড়ি আয়,শালির পতিতা কোথাকার
.
যতবারই মেয়েটাকে পতিতা বলেছী ততবারই মেয়েটা কেমন শিউরে উঠেছে৷মনে হচ্ছে মেয়েটা প্রত্যেকবারই পতিতা নামক শব্দটা শুনে শকড খাচ্ছে৷
.
মেয়েটা গুটি গুটি পায়ে আস্তে আস্তে আবারও আমার দিকেই আসছে৷আর তখন ওর শরীরটা কেমন কাপতেই লাগল৷সুন্দর মুখ খানা একদমই লাল বর্ন ধারন করছে৷চোখের কাজল একদমই লেপ্টে গেছে৷আস্তে আস্তে ও বিছানায় শুয়ে পড়ল৷আর বলতে লাগল
,
–আপনি আপনার কাজ শুরু করে দেন!এমনিতেই আপনার অনেক টাইম আমি নষ্ট করে দিছি(বলেই মেয়েটা কেমন অসহায় চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে)
,
সেদিকে আমার কোনো ভ্রুক্ষেপই নেই৷আমার দরকার মেয়েটার শরীর৷এত সুন্দরী একটা মেয়েকে কোনোভাবেই হাত ছাড়া করা যাবেনা৷
.
আমাকে ওকে ভোগ করতেই হবে৷সুন্দরী মেয়েদের অহংকার অনেক বেশি৷তাই তাদেরকে সুযোগ পেলে আমি কখনই ছাড় দেই না৷এর একটা কারন ও আছে৷যাই হোক আমি সময় নষ্ট করব না৷
আমি আবারও বিছানায় গেলাম৷আর তখনই ওর ফোনটা বাজতে লাগল৷
আর ও তখন আমার দিকে কেমন করে তাকিয়ে আছে৷মনে হচ্ছে ফোনটা ওর অনেক জরুরি৷আর আমার ভয়ে সে ধরছে না৷
ফোনটা একের পর এক বাজতেই লাগল৷ও কেমন পাগলের মত দিশেহারা হয়ে গেল৷একবার ফোনের দিকে তাকাচ্ছে আরেকবার আমার দিকে৷
তখনই বললাম
,
–এই পতিতা মেয়ে,ফোন ধর,আর স্পিকার বাড়িয়ে দিবি,যদি তোর অন্য দলবল হয়,তাহলে কিন্তু তোকে এখানেই শেষ করে দিবো,ফোন ধরে লাউড দে
.
ও মাথাটা নাড়ানো৷আর ফোন ধরার অনুমতি দেবার পর মেয়েটা অনেক খুশি হল৷চোখে পানি থাকার পরও ঠোটের কোনে এক তরফা একটু হাশি ফুটল৷তখন মেয়েটাকে সত্যিই পরীদের চেয়েও হয়ত বেশিই সুন্দর লাগছিল৷
.
ফোন ধরতেই ওপাশ থেকে কান্নার আওয়াজ ভেসে আসছে
.
—মারে তুই কই গেছছ?আমি আর বাঁচমু না রে মা?ডাক্তার কইছে,আমারে বাঁচাইতে হইলে মেলা টেকা পইসা লাগব,আর আমাগো তো এত টেকা পইসা নাই,তুই তাড়াতাড়ি আয় মা,ডাক্তার আমারে হাসপাতাল থেইকা,টেকার লাইগা বাইরে বের কইরা দিছে,টেকা দিতে পারলে আমার চিকিৎসা করব৷নয়ত আর করব না(কান্নারত অবস্থায় ওপাশে একজন মহিলা)
.
–না মা ,তোমার কিচ্ছু হইবো না,আমি তোমারে বাঁচামু,তোমার কিচ্ছু হইতে আমি দিমূ না৷দরকার পড়লে নিজেরে শেষ করে দিমু৷তবুও আমার বেহেশতকে (মাকে) টাকার জন্য শেষ হতে দিমু না৷তুমী একটু সহ্য করো,আমি টাকা নিয়ে আসতেছি
,
–তুই কই রে মা,
.
–এইত একটু বাইরে আছি,আর আমি আসতেছি
.
— এত রাইতে তুই বাইরে কেন?ভালা মাইয়ারা তো এত রাইতে বাইরে থাকে না!আর তুই যদি খারাপ কীছু করছ তাইলে কিন্তু আমি এহনই নিজেরে শেষ কইরা দিমু
.
–না মা,আমি খারাপ কিছু করছী না৷আসলে শহরে একটা আংকেলে কাছে আসছি,উনি তোমার এই কথা শুনে অনেকগূলো টাকা দিছে৷আর টাকা গুলো নিয়েই আসতেছি৷আর অনেক দুরের রাস্তা তো,তাই আসতে অনেক দেড়ি হইতাছে৷আমি আসতেছি মা,তুমি আরেকটু অপেক্ষা করো
,
বলেই ফোনটা কেটে দিল৷আর কেমন করে কান্না করতে লাগল৷বার বারই ও চোখ মুছে নিজেকে ঠিক করে আমার কাছে বিলিয়ে দিতে চাচ্ছিল কিন্তু ওর চোখের পানি কোনো ভাবেই থামছে না৷
.
ওর এই কথাগুলো শুনে মুহুর্তেই আমি কোনো পাথরের মূর্তি হয়ে গেলাম৷এ আমি কি করছিলাম?
এমন একটা অসহায় মেয়েকে…………..
.
ছিঃ আবিদ ছিঃ,,,তুই এতটা খারাপ কিভাবে হইলি?তুই তো একটা সময় এমন ছিলি না৷তুই তো একটা সময় প্রত্যেকটা মেয়েকে অনেক সম্মান আর শ্রদ্ধা করতি,আর সেই আবিদ ,তুই কিভাবে মেয়েদের প্রতি এত নিচ হতে পারলি,ভাবতেই বুকটা ফেটে যাচ্ছে,ঘৃনায় নিজেকে শেষ করে দিতে ইচ্ছে করছে,
.
হঠাৎই মেয়েটা বলে উঠল
,
–আপনার টাইম নষ্ট হচ্ছে তো,প্লিজ আপনি আপনার কাজ শুরু করুন,আমি প্রস্তুত,
,
মেয়েটার দিকে তাকাতেই দেখলাম চোখ দুটো কেমন কালো কাজলে লেপ্টে আছে৷মুখখানায় কত মায়া জুড়ে আছে আর সেই মূখটা কিভাবে আমার দিকে কেমন অসহায় ভাবে তাকিয়ে আছে………………………
.
.
.চলবে…………….

শ্রাবণের মেঘ শেষ_পর্ব(২৮)

0

#শ্রাবণের_মেঘ?
#শেষ_পর্ব(২৮)
#Tabassum_Kotha

নীল তার নিজের আর কথার কাপড় গুছিয়ে কথার হাত ধরে নিচে নামতে শুরু করলো।

— নীল আমরা বাবাকে বোঝাতে পারি, আমাদের ভুলের জন্য ক্ষমা চাইতে পারি। বাবা আমাদের রাগের মাথায় যেতে বলেছেন, আমরা তো তার রাগ ভাঙাতে পারি!

— যদি রাগ ভাঙাতে পারতাম তাহলে কি চেষ্টা করতাম না বল! বাবা অনেক রাগি সেটা আমি আগেই জানতাম।

— শেষ চেষ্টা করেই দেখি না!

— জানি না!

নীল কথার হাত ধরে সিড়ি বেয়ে নেমে সদর দরজার ঠিক সামনে চলে এসেছে। পাশেই নয়নতারা বেগম বসে আহাজারি করছেন। তার একমাত্র ছেলে, তার কলিজার টুকরা তাকে ছেড়ে চলে যাচ্ছে। তায়েবা আর তানিয়া এতোক্ষণ তার বাবাকে বোঝাচ্ছিল নীল কে বাড়ি থেকে না তাড়াতে। কিন্তু নজরুল সাহেব তার নির্ণয় থেকে এক চুলও নড়ে নি।

.
কথা একবার নজরুল সাহেবের কাছে ক্ষমা চাইতে যাবে, কিন্তু নীল হাত টেনে আটকে ধরে কথাকে। চোখের ইশারায় সে বোঝায় কোনো লাভ হবে না।
আর কোনো উপায় না পেয়ে নীল আর কথা সদর দরজার দিয়ে বেরিয়ে যেতে থাকে।

তারা বাসা থেকে বেরিয়ে যাবে ঠিক সেই মুহূর্তে নজরুল সাহেব পিছন থেকে ডেকে উঠেন,
— নীল! আমি তোমাকে আমার বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে বলেছি। আমার বউমা আর দাদাভাই কে নিয়ে যাচ্ছো কেনো?

নজরুল সাহেবের কথায় নীল খানিকটা অবাক হয়ে কথার হাত ছেড়ে দেয়। নজরুল সাহেব বসা থেকে উঠে দাড়িয়ে আবার বলতে শুরু করেন,

— আমার বউমা আর দাদাভাই কোথাও যাবে না। আমার বংশের প্রথম নাতি নাতনি আসতে চলেছে। আর সে কি না তোমার সাথে সাথে রাস্তায় ঘুরবে! সে তো আমি হতে দিতে পারি না। এ বাড়ি থেকে তুমি একা যাবে।

নজরুল সাহেবের কথায় নীল হতবাক হয়ে দাড়িয়ে আছে। সে বুঝতে পারছে না সে কি করবে!

নয়নতারা বেগম স্বামীর কথা শুনে মনে হলো কান্নার বেগ আরও বাড়িয়ে দিলেন। কথার জন্য নজরুল সাহেবের এতো দরদ অথচ নিজের সন্তানকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিচ্ছেন!

.
কথা নীল এর হাতের মুঠোয় থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে ধীর পায়ে নজরুল সাহেবের সামনে এসে দাড়ালো।

— বাবা আপনার বউমা যে তার স্বামীকে ছাড়া এই বাড়িতে থাকতে পারবে না! ভুল যা করার আমরা দুজনে করেছি, শাস্তিও তো দুজনেরই পেতে হবে।

— আমি আমার নাতি নাতনির কষ্ট হতে দিতে পারবো না। তাই তোমরা এখানেই থাকবে। নীল যাবে।

— আপনার নাতি নাতনি তাদের বাবাকে ছাড়া কিভাবে থাকবে! আর আপনিই বা আপনার বড় ছেলেকে ছাড়া কিভাবে থাকবেন?

নজরুল সাহেব কিছুক্ষণ থম মেরে বসে রইলেন, হয়তো কিছু একটা চিন্তা করছেন।

— বাবা আমরা ভুল করেছি, আমাদের কি একবার ক্ষমা করা যায় না? আমাদের ক্ষমা করে দিন বাবা, নিজেদের থেকে দূর করবেন না আমাদের। সন্তান ভুল করলে বাবা মা তাকে সঠিক পথ দেখায়। নিজেদের থেকে দূরে সরিয়ে দিলে ভুল টা কিভাবে শুধরাবো আমরা? একটা সুযোগ দিন আমাদের বাবা। (কথাগুলো এক নাগাড়ে বলে কথা দম নিলো)

নীল এখনও লাগেজ হাতে আগের ভঙ্গিতেই মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে। নজরুল সাহেব কিছুক্ষণ বসে থেকে দাড়িয়ে নীল এর কাছে গেলেন। আশ্চর্যজনক ভাবে নীল কে জরিয়ে ধরলেন নজরুল সাহেব। বাবার এভাবে জরিয়ে ধরায় অনুশোচনায় নীল এর দুচোখ পানিতে ভরে যায়।

— আমাকে ক্ষমা করে দাও বাবা। একটা সুযোগ দেও নিজের ভুলগুলো শুধরানোর। নিজের থেকে দূর করো না বাবা। অন্য কোনো শাস্তি দাও। তোমাদের থেকে দূর হয়ে যে আমরা ভালো থাকতে পারবো না।

— আমি তোমাদের চাইলেও শাস্তি দিতে পারবো না নীল। শতো অন্যায় করলেও দিন শেষে তোমরা আমাদেরই সন্তান। যাও ঘরে যাও।

নজরুল সাহেব রূপা কে ডেকে লাগেজ নীল এর ঘরে পাঠিয়ে দিলেন। লাগেজের সব জিনিস গুছিয়ে রাখার জন্য। নয়নতারা বেগম ছেলেকে জরিয়ে ধরে হাউমাউ করে কান্না করা শুরু করে দিলেন।

— মা কাঁদছো কেনো? (নীল)

— আজকে মনে হয়েছিল আমার কলিজার টুকরা আমাকে ছেড়ে চলে যাবে। তোদের অনেক কষ্ট দিয়েছি নীল আমাকে মাফ করে দে বাবা। মুনতাহার মা কে কথা দিয়েছিলাম যে মুনতাহাকে তোর বউ বানাবো। এজন্যই এতোকিছু করেছিলাম তোকে আর কথাকে আলাদা করতে। কথা! আমাকে ক্ষমা করে দে মা। তোর সাথে অনেক অন্যায় করেছি। (হাত জোর করে নয়নতারা বেগম কথার দিকে এগিয়ে গেলেন)

কথা এগিয়ে গিয়ে নয়নতারা বেগমের হাত চেপে ধরলেন,
— ছিঃ মা এসব কি বলছেন। আপনি আমার মা, আপনি আমার কাছে ক্ষমা চাইবেন এটা তো হতে পারে না। আমার আপনাদের সবার কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত। আমার জন্যই নীল কে সবার কাছে মিথ্যা বলতে হয়েছে।

— না বউমা। তোমার কোনো দোষ নেই।

— ঠিক বলেছিস নয়ন। ছোটো মানুষ ওরা। না বুঝে যেই ভুলটা করেছে সেটা তো আর পাল্টানো যাবে না। তবে সব ভুলে নতুন করে সব শুরু করা যাবে। (তাহেরা বেগম)

.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
” নিতু তুমি কি আগে থেকে জানতে কথা আর নীল এর সম্পর্কের ব্যাপারে?” — কাব্য।

নিতু কিচেনে কাচের গ্লাস পরিষ্কার করছিল। কাব্য এর আকস্মিক প্রশ্নে তার হাত থেকে কাচের মেঝে তে পরে টুকরো টুকরো হয়ে ভেঙে যায়। খান বাড়িতে কাব্য এর রাগ দেখে ভীষণ ভয়ে আছে নিতু। এখন যদি সে কাব্য কে বলে দেয় সবকিছু সে জানতো তাহলে কাব্য কিভাবে রিয়েক্ট করবে কে জানে!

কাব্য কর্কশ কন্ঠে আবারও জিজ্ঞেস করে,
— উত্তর দিলে না যে! তুমি কি জানতে ওদের সম্পর্কের কথা?

নিতু আমতা আমতা করতে করতে না সূচক উত্তর দেয়। কিন্তু তার কপাল বেয়ে পরে যাওয়া চিকন ঘাম কাব্য এর চোখ এড়ায় নি।

— সত্যি করে বলো নিতু। তুমি সব জানতে তাই না! (নিতুর হাত ধরে হেঁচকা টান দিয়ে নিজের দিকে ঘুরিয়ে)

কাব্য এর ধমকে নিতু ভয়ে কুঁকড়ে গেছে। কম্পিত কন্ঠে সে বললো,
— আমি জানতাম কথা ভাইয়াকে ভালোবাসে কিন্তু তারা যে বিয়ে করেছে সেটা জানতাম না।

কাব্য নিতুর হাত টা ছেড়ে দিয়ে বললো,
— তোমরা প্রত্যেকে আমাদের ঠকিয়েছো। তুমি, তোমার ভাই এমনকি আমার নিজের বোনও।

— বিশ্বাস করুন আমি ওদের প্রেম বা বিয়ে সম্পর্কে কিছুই জানতাম না। শুধু জানতাম কথা ভাইয়াকে,,

— থামো। আর কিছু শুনতে চাই না। অনেক শুনেছি আর অনেক দেখেছি।

— আমার কথাটা তো শুনুন।

— আর কি শোনার বাকি আছে। তোমার ভাই আমার বন্ধুত্বকে ঠকিয়েছে। আর আমার আপন বোন, আমার রক্ত আমার সাথে বেইমানি করেছে। এতোকিছুর পর ওদের ক্ষমা করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।

— আপনি আমার কথাটা তো শুনুন। মাথাটা একটু ঠান্ডা করুন।

— আজকের পর থেকে কথা আর নীল এর সাথে তোমার কোনো ধরনের সম্পর্ক আমি মেনে নিতে পারবো না। আমি নিজেও ওদের সাথে কোনো সম্পর্ক রাখবো না। কথার জন্য আমাকে খান বাড়িতে সবার সামনে অপমান হতে হয়েছে। ও বাড়ির জামাই আমি। তবুও সবার কাছে আমাকে ছোট হতে হয়েছে।

— এসব কি বলছেন কাব্য! আমার ভাইয়া আর ভাবির সাথে সম্পর্ক রাখতে মানা করছেন?

— তুমি যদি ওদের সাথে কোনো সম্পর্ক রাখো তাহলে আমাকে ছেড়ে দাও। আমার সাথে সব সম্পর্ক শেষ করে দাও।

— কাব্য! আপনি কি বলছেন এসব। আপনি আমাকে আমার ভাই আর স্বামীর মধ্যে একজনকে বেছে নিতে বলছেন?

— হ্যাঁ। এ বিষয়ে আমি আর কোনো কথা বলতে চাই না।

কাব্য নিতুকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই সেখান থেকে চলে গেলো। নিতু কিচেনের মেঝেতে হাটু ভেঙে নিচে বসে কান্না শুরু করে দিলো।

.

কিশোর সাহেব আর কলি বেগম খান বাড়িতে এসেছেন অনেকক্ষণ হয়েছে। নজরুল সাহেব আর তাহেরা বেগমের সাথে কথা বলে তাদের রাগ অনেকটাই মাটি হয়ে গেছে। যদিও তারা এ বাড়ি ভীষণ রাগ আর কষ্ট নিয়ে এসেছিলেন কিন্তু এখন তারা তাদের অনাগত নাতি-নাতনি নিয়ে মজার আলাপে মত্ত হয়েছেন। কাব্যকে খান বাড়িতে যাওয়ার জন্য নজরুল সাহেব আর কিশোর সাহেব অনেক বার বললেও সে মানা করে দেয়। স্বামীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে সে যেতে পারে নি।

.
তানিয়া আর তায়েবা কথার ঘরে বসে আছে আর নয়নতারা বেগম নিজে হাতে কথাকে খাইয়ে দিচ্ছেন। সারাদিনের ধকলে কথার খাওয়াই হয় নি। কথার মুখে খাবার পুরে দিচ্ছেন আর রাগারাগি করছেন।

— তুই না খেয়ে কান্না করিস সারাদিন। এদিকে আমার দাদুভাইয়ের কিছু হলে দেখিস তোর কি করি।

— মা পেট ভরে গেছে আর খেতে পারবো না।

— চুপচাপ খা। আমার নাতি নাতনিকে কি রোগা বানাতে চাস নাকি?

নয়নতারা বেগম আরেক লোকমা ভাত কথার মুখে ঢুকিয়ে দিলেন।

.
.
.
.
.
.
.
” কথা তোর সাথে আমি আর কোনো কথাই বলবো না।”
ঘরে ঢুকতেই নীল রাগি গলায় কথাটা বললো।

কথা বিছানায় উপুর হয়ে মোবাইলে গেম খেলছিল। নীল এর কথায় অবাক হয়ে তার দিকে ফিরে তাকালো কথা।

— কথা বলবেন না কেনো এই কিউটি কথার সাথে?

— তুই আমাকে একবারও বলিস নি যে তুই প্রেগন্যান্ট আর আমি বাবা হতে চলেছি!

— আরেহ কিভাবে বলবো আমিও তো কালকেই সন্দেহ করেছিলাম। আর আজ শিউর হলাম।

— তো কালকেই তো বলতে পারতি।

— ভুলে গিয়েছিলাম।?

— কিহ! তুই বাবুর মা হতে চলেছিস আর সেটা তুই ভুলে গিয়েছিলি!

— হ্যাঁ তো!

— ছাগলি!

— আর আপনি ছাগলির ছাগল।

— সর সর সাইড দে।

— কেনো? কি হলো?

— আমি আমার বাবুর সাথে কথা বলবো।

— আরেহ মাথার তার ছিড়ে গেলো নাকি? বাবু তো মাত্র এক মাসের!

— তোর সমস্যা টা কি বলতো? আমার বাচ্চার সাথে আমি কথা বলবো!

নীল কথার শাড়ির আঁচল সরিয়ে পেট উন্মুক্ত করে কোমড় জরিয়ে ধরে তার বাবুর সাথে কথা বলা শুরু করে দিলো। কথা এদিকে হেসে কুটিকুটি হয়ে যাচ্ছে নীল এর কান্ড দেখে। বেশ কিছুক্ষণ নীল এভাবেই তার বাচ্চার সাথে কথা বললো। কথা বলা শেষে কথার দিকে মুখ ঘুরাতেই দেখে কথা ঘুমে বিভোর হয়ে গেছে।

নীল হালকা হেসে তার ঠোঁট দুটো দিয়ে কথার ঠোঁট চেপে ধরে। এক হাত দিয়ে কথার কোমড় চেপে ধরে নীল ঘুমন্ত কথাকে অনবরত চুমু খাচ্ছে। মিনিট তিনেক এভাবে থাকার পর কথার দম ফুরিয়ে গেলে তার ঘুম ভেঙে যায়। ঘুম ভাঙতেই সে নিজেকে নীল এর বাহুডোরে আবিষ্কার করে। আর নিজের ঠোঁট দুটো নীল এর ঠোঁটের দখলে।

কথা কিছুক্ষণ পর্যন্ত নিজেকে ছাড়ানোর ব্যর্থ চেষ্টা করে। তবুও নীল এর কোনো হেলদুল না দেখলে হাল ছেড়ে দেয়। নীল কে আষ্টেপৃষ্ঠে জরিয়ে ধরে নীল এর ভালোবাসায় সাড়া দেয়।

?

?

পরদিন সকালে কাব্য অফিসে যাওয়ার জন্য তৈরি হয়ে ঘর থেকে বেরুতেই নীল আর কথাকে ড্রয়িং রুমে বসে থাকতে দেখে। এতোক্ষণ স্বাভাবিক থাকলেও কথা আর নীল কে দেখে মুহূর্তেই কাব্য এর চোয়াল শক্ত হয়। কাব্য এর পিছন পিছন নিতু ঘর থেকে বেরিয়ে নীল আর কথাকে দেখে ঘাবড়ে যায়। কাল রাতে কাব্য এর বলা প্রতিটি কথা মনে পরলে ভয়ে গলা শুকিয়ে আসে নিতুর।

.
কাব্য অফিসের ব্যাগটা হাতে নিয়ে ঘর থেকে বের হতে গেলে কথা ছুটে এসে কাব্য কে জরিয়ে ধরে কান্না শুরু করে দেয়। কাব্য অনেক চেষ্টা করেও কথাকে ছাড়াতে না পেরে এক পর্যায়ে হাল ছেড়ে দেয়। কথাকে নিজের থেকে ছাড়ানোর চেষ্টা ছেড়ে দিয়ে কাব্য স্থির হয়ে দাড়িয়ে থাকে।

— প্লিজ ভাইয়া এভাবে রাগ করে থাকিস না। আমি তোর রাগ সহ্য করতে পারি না জানিস তো! ক্ষমা করে দে আমাদের। প্লিজ।

কথার কান্না সহ্য করতে না পেরে কাব্যও কথাকে জরিয়ে ধরে চোখের পানি ছেড়ে দেয়।

— চাইলেও তোর সাথে রাগ করে থাকতে পারি না কেনো বলতো! ভেবেছিলাম আর কখনও কথা বলবো না তোদের সাথে। কিন্তু ইমোশোনাল ব্ল্যাকমেইল খুব ভালোই করতে পারিস তুই!

— ভাইয়া তুই আমাদের ক্ষমা করেছিস তো?

— ক্ষমা না করলে কি আর কথা বলতাম? বাবুর বাবা তুই ওইখানে কি করছো? এখানে আসো তোমার চাঁদমুখ খানা একটু দেখি।

নীল গিয়ে কাব্যকে জরিয়ে ধরলো। দুই বেষ্টফ্রেন্ড তাদের মধ্যাকার সব সমস্যা হাসি ঠাট্টার মাধ্যমে শেষ করে নিলো।

নিতু কথাকে আড়ালে ডেকে নিয়ে কান মলা দিলো তাকে নীল আর কথার বিয়ের কথা না বলার জন্য।

— সরি রে পেত্নি। তোর ভাইয়ার দোষ সব। কাউকে বলতে দেয় নি আমাকে।

— হুহ পেত্নি।

— হুহ।

— আচ্ছা বলতো আমি বাবুর ফুপি আম্মু হবো নাকি মামি??

— ভাববার বিষয় তো?

কথা আর নিতু সারা দিন চিন্তা করেও এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পেলো না।









গোধূলী লগ্ন শুরু হয়েছে কিছুক্ষণ আগে। পশ্চিম আকাশে সূর্য হেলে পরেছে। কিছুক্ষণ আগে বৃষ্টি হওয়ার কারণে গাছপালা ভিজে পানি জমে আছে। সূর্যের আলো পরাতে পানির ফোঁটাগুলো মুক্তোর মতো জ্বলজ্বল করছে। নদীর পাড় বেয়ে আঁকাবাকা হয়ে চলে গেছে দীর্ঘ পথ। এক পাশে বড়বড় গাছপালার ছায়া লম্বা হয়ে পরেছে। রোদের আড়ালে মেঘেরা লুকোচুরি খেলছে।

সেই পথ ধরে হেটে যাচ্ছে নীল আর কথা। কিছুক্ষণ আগেই তারা কিশোর সাহেবের বাড়ি থেকে খান বাড়ির উদ্দেশ্যে বেরিয়েছে। কথা বায়না ধরাতেই পায়ে হেটে যাচ্ছে তারা। আজ সকালেই নীল কথার জন্য একটা নীল শাড়ি আর নীল কাচের চুড়ি এনে দিয়েছে। সেই শাড়িটাই কথা পরে আছে। সাথে কাচের চুড়ি আর দুচোখ ভর্তি কাজল। কথার খোঁপা থেকে কাটা টা খুলে দিলো নীল।

দমকা বাতাসে খোলা চুলগুলো উড়ছে কথার। কখনও বা মুখে আসছে। নীল মুগ্ধ নয়নে তার মায়াবতীকে দেখে যাচ্ছে। অবাক হয়ে চিন্তা করছে নীল, এই মায়াবতীকে সে পিচ্ছি বলতো, ছ্যাঁচড়া বলে টিজ করতো। সেই পিচ্ছি আজ তার অনাগত সন্তানের মা। তার মায়াবতী তার জীবন আজ। বাকি সব কথা বাদ দিলেও একটা কথা নীল জানে। মৃত্যুর পরেও সে তার কথাকে তার সাথে চায়। কথা শুধুই নীল এর। নীল থেকে কথাকে আলাদা করার মতো শক্তি একমাত্র মৃত্যু ছাড়া আর কারও নেই।

— ওভাবে কি দেখছেন? (কথা)
নীল এর ভাবনার সুঁতোয় টান পরে কথার ডাকে।

— আমার জীবনকে! (নীল)

— হিহিহি। কি যে বলেন না!

নীল কথার হাত ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে বললো,
— অনেক ভালোবাসি তোকে। আমার বাবুর আম্মু!

কথা নীল কে জরিয়ে ধরলো।
— আমিও আপনাকে অনেক ভালোবাসি যমরাজ।

— কিহ আমি যমরাজ?

— হ্যাঁ আমার যমরাজ!

ঠিক তখন আকাশে মেঘেরা গর্জন করে মুশুলধারে বৃষ্টি শুরু হলো। কথা জেদ করে বৃষ্টির মধ্যেই নীল এর হাতে হাত রেখে হাটা ধরলো।
নীল শক্ত করে কথার হাত ধরে রেখেছে। #শ্রাবণের_মেঘেরা তাদের দায়িত্ব পালন করে বর্ষণ ঘটাচ্ছে। আর দুটো ভালোবাসায় শিক্ত হৃদয় বৃষ্টিবিলাস করছে।
কথা গুণ গুণ করে গেয়ে চলেছে,



আমার সারাটা দিন, মেঘলা আকাশ, বৃষ্টি
– তোমাকে দিলাম
শুধু শ্রাবণ সন্ধ্যাটুকু
তোমার কাছে চেয়ে নিলাম।??

——————-
শ্রীকান্ত আচার্য


—– সমাপ্ত —–

শ্রাবণের মেঘ পর্ব_২৭

0

#শ্রাবণের_মেঘ?
#পর্ব_২৭
#Tabassum_Kotha

” চুপ করো তোমরা! সত্যি টা না জেনে কেউ আর কোনো কথা বলবে না।”
কথার প্রতি সবার অপবাদ মানতে না পেরে এক প্রকার গর্জে উঠে কথাটা বললো নীল।

— তুই এই চরিত্রহীন মেয়ের জন্য আমাদের সাথে গর্জে কথা বলছিস নীল! এই দিন দেখার জন্য বুঝি তোকে পেটে ধরেছিলাম? (নয়নতারা বেগম)

— কথা চরিত্রহীন নয় মা। কথা ঠিক ততোটাই পবিত্র যতোটা তোমার কাছে নিতু পবিত্র।

— নিতুর সাথে এই কলঙ্কীনির তুলনা দিস না নীল। অন্তত আর যাই হোক নিতু বিয়ের আগেই পরপুরুষের সাথে,, ছিঃ!

পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে মুনতাহা বলে উঠে,
— যেই মেয়ে তার গর্ভের সন্তানের পিতৃপরিচয় দিতে পারে না। সে কিভাবে পবিত্র হয় নীল!

— উইল ইউ জাষ্ট শাট আপ মুনতাহা? তোমাকে কিছুক্ষণ আগেই মানা করেছি আমার আর কথার থেকে দূরে থাকবা। তারপরেও বেহায়ার মতো এসে পরেছো নাক গলাতে। (নীল)

— মুনতাহাকে চুপ করাচ্ছিস কেনো? মুনতাহা তো ঠিকই বলেছে। কথার গর্ভের সন্তানের তো কোনো পিতৃপরিচয়ই নেই। (নয়নতারা বেগম)

— কথার গর্ভের সন্তানের পিতৃপরিচয় নেই কে বলেছে তোমাদের? সেই কখন থেকে আজেবাজে বকে যাচ্ছো! একটা বার আমাদের কথা শুনেছো নাকি শুনার চেষ্টা করেছো?

নজরুল সাহেব পাশে থেকে গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলেন,
— কি বলতে চাও তুমি স্পষ্ট করে বলো।

— বাবা, কথার গর্ভের সন্তান কোনো পাপের ফসল নয়। এই সন্তান আমাদের ভালোবাসার প্রতীক। কথা আমার সন্তানের মা হতে চলেছে।

.
নীল এর বলা কথায় মুহূর্তের জন্য পুরো ঘর নিস্তব্ধ হয়ে যায়। যদিও এই মুহূর্তে ঘরে পরিবারের প্রায় অনেকে উপস্থিত তবুও বাইরে থেকে মনে হবে ঘর একদম খালি। কারো মুখে কোনো কথা নেই। মাঝে মধ্যে কথার ফুপিয়ে উঠার শব্দ ভেসে আসছে কানে।

নীরবতা ভেঙে নয়নতারা বেগম বাজখাই গলায় চেচিয়ে উঠলেন,
— এতো অধঃপতন হয়েছে তোর নীল! এই খারাপ মেয়েটার জন্য তুই সব দোষ নিজের ঘাড়ে নিচ্ছিস! কথাকে যেনো কোনো কথা শুনতে না হয় তাই ওর পাপ কে তুই নিজের পরিচয় দিচ্ছিস।

— মা কি সব উল্টা পাল্টা বলছো? আর আমার সন্তানকে বারবার পাপ বলছো কেনো? ওর কোনো দোষ নেই। ও তো এখনও এই পৃথিবীতে আসেও নি। ও নিষ্পাপ। ভুল যা করার আমরা করেছি। শাস্তি পেতে হলে আমরা পাবো। আমাদের সন্তানকে কিছু বলতে পারবে না।

— দেখছেন আপনি? আপনার ছেলের মাথা খারাপ হয়ে গেছে। এই নষ্টা মেয়েটাকে বাঁচানোর জন্য সব দোষ নিজের ঘাড়ে নিয়ে নিচ্ছে।

— মা তুমি যদি আর একবারও কথাকে নষ্টা মেয়ে বলেছো তাহলে আমি ভুলে যাবো তুমি আমার মা!

— ছিঃ ছিঃ নীল। তুই আমার সাথে এই ব্যবহার করতে পারলি! এই দিন দেখার জন্য তোকে পেটে ধরেছিলাম আমি!

— আমাকে ক্ষমা করে দাও মা। কিন্তু তুমিই বলো, আমার সন্তানের জন্ম পরিচয় নিয়ে যেখানে প্রশ্ন উঠছে সেখানে আমি কিভাবে চুপ করে থাকি!

নজরুল সাহেব পাশের সোফায় বসে ছিলেন। নীল আর নয়নতারা বেগমের কথা কাটাকাটি ক্রমশ বাড়তে থাকলে তিনি উঠে দাড়ায়। নজরুল সাহেবের চোখ রাঙানিতে নয়নতারা বেগম চুপ হয়ে যায়।

— কি বলতে চাইছো সবটা স্পষ্ট করে বলো নীল! কথার সন্তানের বাবা কি সত্যি তুমি?

— জি বাবা। এই সন্তান আমার। আমিই ওর বাবা।

— তার মানে তোমাদের বিয়ের আগে থেকেই অবৈধ সম্পর্ক ছিল?

— না বাবা। কথা আর আমার সম্পর্ক অবৈধ ছিল না। আমাদের সম্পর্ক শতভাগ ধৈধ এবং হালাল ছিল।

— তুই আবার মিথ্যে বলছিস নীল এই মেয়েকে বাঁচানোর জন্য! (নয়নতারা বেগম)

— আম্মা ঠিক বলছে নীল। তুই কেনো কথার কুর্কমের ভার নিজের কাঁধে নিচ্ছিস? (কাব্য)

— কাব্য, আমার ভাবতেই অবাক লাগছে তুই কথার ভাই হয়ে কথাকে এভাবে বলতে পারলি কিভাবে? তোর নিজের বোনকে বিশ্বাস করতে পারলি না? তোর দ্বারা এটা আশা করি নি কাব্য। বাকি সবার কথা বাদ দিলেও তোর তো অন্তত কথা কে বিশ্বাস করা উচিত ছিল। (নীল)

— এতো কিছু হয়ে যাওয়ার পর বিশ্বাস কি করে করি? (কাব্য)

— ভাইয়া, আমি কোনো অন্যায় করি নি। আপনারা সবাই আমাকে যা ইচ্ছে তাই বলছেন বলুন। কিন্তু আমার অনাগত সন্তানের কোনো দোষ নেই। (কথা)

— চোরের মায়ের বড় গলা! একেতো কার না কার পাপ পেটে নিয়ে ঘুরছিস তার উপর বড় বড় কথা! (নয়নতারা বেগম)

— মা তুমি থামবে? কি বারবার পাপ পাপ বলছো? আমি যে বারবার বলছি এটা আমার সন্তান কানে যাচ্ছে না তোমার? আমি কথাকে আরো দুই মাস আগে বিয়ে করেছি। সেটা তোমাদের কাউকে না জানিয়ে। আর এই সন্তান আমার।

নীল এর মুখ থেকে বিয়ের কথা শুনে আরেক দফা বজ্রপাত হলো খান বাড়িতে। সবাই বাকরুদ্ধ দৃষ্টিতে কথা আর নীল এর মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। নীল এর মুখ থেকে বিয়ের কথা শুনে নয়নতারা বেগম নিশ্চিত হয়ে গেছেন যে কথার বাচ্চার বাবা নীল ই। কারণ নীল আর কথার মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক অনেক আগে থেকেই দেখেছে সে।

বাড়ির সবাই হতবাক হয়ে আছেন কিন্তু সবচেয়ে খারাপ অবস্থা নজরুল সাহেবের। কিছুদিন আগেই মেয়ে নিতুর কাছে থেকে এমনই একটা ঝটকা পেয়েছিলেন তিনি। পালিয়ে বিয়ে করে তার মান সম্মাণ ডুবিয়েছিল সে। বহুকষ্টে নিজেকে সামলে পুনরায় তার সম্মাণ আগের পর্যায়ে নিয়ে গেছেন। কিন্তু সেই একই কাজ এখন আর ছেলেও করে ফেললো! আর অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই নির্বাচন। নীল এর এই বোকামির কথা বাইরে জানাজানি হলে দ্বিতীয়বার চেয়ারম্যান পদে তাকে কেউ মেনে নেবে না।

.
নীরবতা কাটিয়ে নীল আবার বলতে শুরু করে,
— কথা আর আমি একে অপরকে আগে থেকেই ভালোবাসতাম। কিন্তু যখন কিশোর চাচা কথা আর আদনানের বিয়ে ঠিক করে দেন, তখন কথাকে হারানোর ভয় আমার মনে জেকে বসে। বেকার ছিলাম, কিশোর চাচা আমাকে পছন্দ করতেন না, সব মিলিয়ে সরাসরি বিয়ের প্রস্তাব দিতে ভয় পাচ্ছিলাম। তখন হুট করে মাথায় আসে পালিয়ে বিয়ে করবো। যেই ভাবা সেই কাজ, পালিয়ে বিয়ে করে নিলাম কথাকে। কিন্তু সেখানেও আমি দুর্বল পরে গেলাম, বিয়ে করা সত্ত্বেও কথাকে স্ত্রীর মর্যাদা দিয়ে বাড়ি আনতে পারি নি।
নিতু আর কাব্য এর বিয়ের পর যখন বাবাকে আমার আর কথার বিয়ের কথা বলতে গিয়েছিলাম, সেদিনও সাহস করে উঠতে পারি নি। আমার দুর্বলতার কারণেই আজ আমাদের এই পরিণতি। আমাদের ভুলের শাস্তিই আমাদের অনাগত সন্তানকে পেতে হচ্ছে। এই পৃথিবীতে আসার আগেই ওকে সবাই পাপের ফসল বলছে! কিন্তু ওর কোনো দোষ নেই। ভুলটা আমার। আমিই ভয় পেয়েছিলাম যে আমাদের বিয়ের কথা জানতে পারলে বাবা অনেক কষ্ট পাবেন।

.
হঠাত ঠাস্ করে শব্দ হলে সবাই ধড়ফরিয়ে সামনের দিকে তাকাতেই দেখে নীল গালে হাত দিয়ে মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে। আর নজরুল সাহেব অগ্নিদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন নীল এর দিকে। এইমাত্র তিনি নীল কে চড় মেরেছেন। নীল অন্যায় করেছে, এটা তার প্রাপ্য শাস্তি সে জানে,, তবুও তার দুচোখ টলমল করছে।

নজরুল সাহেব ক্রুদ্ধ কন্ঠে বললেন,
— সন্তানদের সুশিক্ষা দেওয়ার ব্যাপারে মা বাবা হিসেবে আমরা ব্যর্থ। প্রথমে নিতু আর তুমি। দুজনেই এক কাজ করেছো। একইভাবে দুজনে আমার মান সম্মাণ ডুবিয়েছো। নয়নতারা! এই সব দোষ তোমার। তুমি তোমার সন্তানদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারো নি।

— বাবা প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দাও। (নীল)

— ক্ষমা! তুমি আমার অহংকার ছিলে নীল। আর সেই তুমি কি না,, ছিঃ! আর এক মুহূর্তও আমি তোমাকে সহ্য করতে পারছি না। বেরিয়ে যাও তোমরা আমার বাড়ি থেকে!

.
নজরুল সাহেবের কথার উপর কথা বলার সাহস খান বাড়িতে কারো নেই। বউভাতের অনুষ্ঠান মাটি হয়ে গেছে অনেকক্ষণ আগে। কাব্য আর নিতু কথাকে তাদের সাথে না নিয়েই বাড়ি চলে গেছে। মেহমানদের খাইয়ে বুঝিয়ে শুঝিয়ে বিদায় করে দিয়েছেন নজরুল সাহেব। নয়নতারা বেগম ছেলেকে হারানোর কষ্টে বিল্লাপ করছেন আর কথাকে যা মুখে আসছে বলে যাচ্ছেন। তার ভাষ্যমতে নীল কে নজরুল সাহেব কথার জন্য বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছেন। যা কিছু হয়েছে সবকিছুর জন্য কথা দায়ী।

.
কাব্য আর নিতু একা বাড়ি ফিরলে কলি বেগম আর কিশোর সাহবে উদ্বিগ্ন হয়ে জানতে চায় তারা কোথায়! উত্তরে কাব্য খান বাড়িতে ঘটে যাওয়া প্রত্যেকটা ঘটনা কিশোর সাহেবকে খুলে বলে।

.
.
.

তাহেরা বেগম নজরুল সাহেবকে বোঝানোর চেষ্টা করে যাচ্ছেন অনবরত। কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছে না। তিনি তার স্বীদ্ধান্তে অটল। যতো যাই হয়ে যাক না কেনো নীল আর কথাকে আজ খান বাড়ি ছেড়ে যেতেই হবে।

চলবে..

শ্রাবণের মেঘ পর্ব_২৬

0

#শ্রাবণের_মেঘ?
#পর্ব_২৬
#Tabassum_Kotha

মেহমানে ভর্তি খান বাড়ি তবুও পিনপতন নীরবতা বিরাজ করছে। নজরুল সাহেব অন্দরমহলের এক কোণায় সোফায় বসে আছেন। চোখে মুখে চিন্তার ছাপ কিন্তু তবুও চোয়াল শক্ত করে চুপ করে আছেন। মেহমানদের মধ্যে অনেকেই কানাঘুসা শুরু করে দিয়েছেন। কানাঘুসার শব্দ নজরুল সাহেবের কানেও আসছে। কিন্তু এই মুহূর্তে মৌনতা অবলম্বন করাই বুদ্ধিমানের কাজ। নজরুল সাহেব সোফা ছেড়ে উঠে নিজের ঘরের দিকে অগ্রসর হলেন। ঘরে তাহেরা বেগম আর নয়নতারা বেগম আগে থেকেই উপস্থিত ছিলেন।

নয়নতারা বেগম এতোক্ষণ চুপ করে থাকলেও স্বামীকে দেখে বাজখাই গলায় চেচিয়ে উঠলেন,
— আমি আগেই বলেছিলাম ঐ মেয়েকে এ বাড়ির বউ করিয়েন না। কিন্তু আপনারা আমার একটা কথাও শুনেন নি। এখন দেখেন বংশের মুখে চুনকালি মেখে দিলো এই মেয়ে।

— আহা নয়ন শান্ত হ। এখনও তো সবকিছু প্রমাণ হয় নি। হতে পারে ডাক্তার ভুল বলেছে। (তাহেরা বেগম)

— আপা তুমি এখনও বলছো ডাক্তার ভুল বলেছে! ঐ মেয়ে না জানি কোথায় থেকে পেট বাঁধিয়ে নিয়ে এসে এখন আমার নীল এর ঘাড়ে চেপেছে। আমি আগেই বলেছিলাম মুনতাহা কে নীল এর বউ বানানোর কথা। মুনতাহা বাড়ির বউ হলে অন্তত আজ এই দিন দেখতে হতো না।

.
নয়নতারা বেগমের যুক্তির সামনে তাহেরা বেগমও চুপ হয়ে যায়।

.
.
কিছুক্ষণ আগে বউভাতের অনুষ্ঠানে বাড়ি ভর্তি মেহমানের সামনে কথা মাথা ঘুড়ে নিচে পরে যায়। তাড়াহুড়া করে নজরুল সাহেব ডাক্তার আনালে, ডাক্তার কথার চেকআপ করে জানায় কথা অনঃসত্ত্বা। যদিও কথার অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার ব্যাপার টা শুধু পরিবারের মানুষ জানে। কিন্তু বাড়ির থমথমে পরিবেশ দেখে মেহমানরা তাদের মন মতো কাহিনী রটতে শুরু করে দিয়েছে।

.
তাহেরা বেগম নিচে নেমে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছেন। মেহমানদের বুঝিয়ে শুনিয়ে খাবার খাওয়াতে পাঠিয়ে নীরব আর রাজীব কে দায়িত্ব দিলেন তদারকীর।



এদিকে কথা তার ঘরের দরজায় খিল এটে অঝোরে কেঁদে যাচ্ছে। যেই ভয়টা সে পাচ্ছিল সেটাই সত্যি হয়ে গেলো। কালই ভেবেছিল হয়তো সে মা হতে চলেছে। কিন্তু এই কথাটা যে এভাবে সবার সামনে বেরিয়ে আসবে সেটা কে জানতো। নীলও বাসায় নেই। কিছু কাজে গেছে। কখন ফিরবে কেউ জানে না। নীল পাশে থাকলে কথার নিজেকে এতোটা অসহায় মনে হতো না। নয়নতারা বেগম আর মুনতাহার গা জ্বালানো কথা বার্তা সহ্য করার শক্তি পেতো কথা, নীল তার পাশে থাকলে। কিন্তু নীল নেই, অবশ্য নীল এর দোষ দেওয়া যায় না। সে জানতো না যে কথা প্রেগন্যান্ট। নীল জানলে হয়তো পরিস্থিতি এতো বিগড়ে যেতো না!

” কথা দরজা টা খোল। প্লিজ দরজা টা খোল।”
বাইরে থেকে অনবরত দরজা ধাক্কাতে ধাক্কাতে কথা কে ডাকছে নিতু।

নিতুর কন্ঠ শুনে কথা তড়িঘড়ি করে দরজা খুলে দিয়ে নিতুকে ঝাপটে ধরে কান্না শুরু করে দিলো। নিতু কথাকে সামলানোর চেষ্টা করছে কিন্তু কথা থামছে না।

” নিজের পাপ পেটে নিয়ে ঘুরার আগে বুঝি মনে ছিল না যে এখন কান্না করছো?”
দরজার সামনে দাড়িয়ে মুনতাহা মুখে ব্যাঙ্গাত্মক হাসি নিয়ে কথাটা বললো।

— মুনতাহা আপু তুমি এসব কি বলছো? (নিতু)

— কেনো নিতু ডাক্তার যখন বললো কথা অনঃসত্ত্বা তখন তো তুই সামনেই ছিলি শুনিস নি বুঝি?

— শুনেছি। কিন্তু সেই সাথে এটাও শুনেছি যে ডাক্তার ল্যাবে নিয়ে টেষ্ট করতে বলেছে। তার ধারণা ভুলও হতে পারে।

— ওহ তাই নাকি। আচ্ছা তাহলে ওই প্রেগনেন্সি টেষ্ট কিট টা? ওটাও ভুল তাই না।

— এসব কিট অনেকসময় ভুল রিপোর্ট দেয়।

— আর কতোভাবে ডিফেন্ড করবি এই চরিত্রহীন মেয়ে টাকে? কালকে বিয়ে হয়েছে আর আজকেই ম্যাডাম প্রেগন্যান্ট। না জানি কার পাপ নীল এর ঘাড়ে চাপানোর ফন্দি এটেছে।

— মুনতাহা আপু তুমি চুপ করবা!

” ওকে চুপ করাচ্ছিস কেনো? মিথ্যা কিছু তো আর বলে নি মুনতাহা।”
পিছন থেকে নয়নতারা বেগম চেচিয়ে উঠলেন।

— মা তুমিও! তোমরা শুরু টা করেছো কি বলোতো? একবার কথার অবস্থা টা তো দেখো।

— তোর এতো বুঝতে হবে না। জামাই বাবাজি নিচে আছেন। তার কাছে যা। বেচারা নিজের বোনের কুকর্মের কথা শুনে কেমন আছে কে জানে!

নিতু কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেলো।

— এই মেয়ে! নিজের এই পাপী মুখ নিয়ে আমার ছেলের জীবন থেকে চলে যা। যেদিন থেকে আমার ছেলের দিকে নজর দিয়েছিস সেদিন থেকে তুফান শুরু হয়ে গেছে নীল এর জীবনে। কোন তাবিজ-কবজ করে আমার ছেলের মাথা খেয়েছিস কে জানে। সেসব কিছু মেনে নিলেও এখন অন্যের পাপ আমরা মানতে পারবো না। চলে যা আমার ছেলের জীবন থেকে।

নয়নতারা বেগমের কথায় কথার কান্নার বেগ আরও বেড়ে যায়। নয়নতারা বেগম কথার চোখের পানিকে নাটক ভেবে নাক ছিটকে সেখান থেকে চলে যায়।

— দেখো কথা তুমি বয়সে আমার কতো ছোটো কিন্তু তুমি যে একটা পাক্কা খেলোয়ার এটা আমি মেনে গেছি। (মুনতাহা)

— মানে?

— এইযে রূপের জাল বুনে ছেলেদের ফাঁসাও। এতোদিন ভাবতাম তুমি শুধু মিষ্টি মিষ্টি কথা বলে ছেলেদের হাত করো, যেমনটা নীল কে করেছো। কিন্তু এখন আমি বুঝতে পেরেছি তুমি তো শরীর দেখিয়ে ছেলেদের বশ করো। বাহ! বাহ! কতো ভালো বিদ্যা শিখেছো এতোটুকু বয়সেই।

— আপনার সামনে হাত জোর করে বলছি এসব বলবেন না। আমি ওমন মেয়ে নই।

— তুমি যে কেমন মেয়ে সেটা তো দেখতেই পাচ্ছি। বিয়ের আগেই পেট বাঁধিয়ে ফেলেছো, কিন্তু বাচ্চাটা কার তার তো কোনো ঠিকই নেই। আচ্ছা কথা এমন নয়তো যে এতো গুলো পুরুষের সাথে শারীরিক সম্পর্ক করেছো যে তোমার গর্ভে কার সন্তান সেটা তুমি নিজেই জানো না!

— প্লিজ থামুন।

— ওহ তাহলে এটাই আসল কথা! তা কয়টা পুরুষের সাথে ছিল তোমার শারীরিক সম্পর্ক? নীল কেও কি এভাবেই ফাঁসিয়েছো? বিয়ের আগে কতোবার শুয়েছো নীল এর সাথে?

— চুপ করুন দয়া করে।

— সরি চুপ করে থাকতে পারছি না। অনেক কিউরোসিটি হচ্ছে জানার। কয়জনের সাথে বেড শেয়ার করেছো? হিসেব আছে নাকি কয়জনের বিছানার খোরাক হয়েছো? নাকি হিসেবের বাইরে ছিল সব?

কথাটা বলার সাথে সাথে মুনতাহার গালে ঠাস করে একটা থাপ্পড় পরলো। থাপ্পড়ের বেগটা এতোটাই তীব্র ছিল যে মুনতাহা ছিটকে মেঝেতে পরে যায়।

.
এতোক্ষণ চোখ মুখ খিচে কান্না করছিল কথা। আচমকা থাপ্পড়ের শব্দে চোখ খুলে তাকাতেই দেখে নীল তার সামনে দাড়িয়ে। রাগে নীল এর মুখ রক্তবর্ণ ধারণ করে আছে। চোখ দিয়ে মনে হচ্ছে আগুন ঝরে পরছে। কথা নীল কে দেখে আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলো না। নীল এর বুকের উপর আঁছড়ে পরলো। নীল কে পেয়ে যেনো কথার কান্না আরও বেড়ে গেলো।

— মুনতাহা আমার হাতে খুন হতে না চাইলে বের হও আমার ঘর থেকে। নেক্সট্ টাইম কথার সাথে এভাবে কথা বললে তোমার জিভ আমি টেনে ছিড়ে ফেলবো। আমাদের ধারে কাছেও যেনো না দেখি আর তোমাকে। যাও। আই সেইড গেট আউট!

নীল এর ধমকে মুনতাহা ভয়ে কুঁকড়ে সেখান থেকে পালায়। মুনতাহা চলে গেলে নীল কথার মুখ তার দুহাতের আজলে তুলে ধরে।

— কি হয়েছে তুই কাঁদছিস কেনো? মুনতাহা তোকে এতো বাজে বাজে কথা বলছিল আর তুই কি না মুখ বন্ধ করে শুধু শুনে যাচ্ছিলি! একটা কথার উত্তরও কেনো দিস নি? তুই তো এতো দুর্বল ছিলি না। তাহলে আজ কেনো উত্তর দিতে পারলি না?

কথা কিছু বলার আগেই নয়নতারা বেগম পিছন থেকে বলে উঠেন,
— কিছু বলার মুখ থাকলে তো বলবে! যেই কুকর্ম করেছে তারপর আবার উত্তর দেবে কোন মুখে!

— এসব কি বলছো মা?

— যা বলছি ঠিক বলছি। একটা চরিত্রহীন মেয়ের কাছ থেকে কি উত্তর আশা করা যায় তুই বল।

— মা কথার সম্পর্কে আমি একটা বাজে কথা সহ্য করবো না।

— বাজে কথা না বাবা। তুই সত্যি টা জানিস না তাই ওকে দুধে ধোয়া তুলসীপাতা মনে করছিস। কিন্তু এই মেয়ে তো,, ছিঃ ছিঃ ছিঃ আমার তো মুখে আনতেই গা ঘিনঘিন করছে।

— কি এমন হয়েছে যার জন্য তোমরা সবাই কথার সাথে এমন ব্যবহার করছো?

নয়নতারা বেগমের পাশেই মুনতাহা দাড়িয়ে ছিল। হঠাত সে সামনে এসে বলতে শুরু করে,
— কথা মা হতে চলেছে নীল। না জানি কার পাপের ফসল পেটে নিয়ে তোমাকে ফাঁসিয়ে নিজের বাচ্চার বাবা বানাতে চেয়েছিল।

মুনতাহার কথায় যেনো নীল এর পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে গেলো। কথা মা হতে চলেছে! মুহূর্তের জন্য নীল থমকে গেছে। কথা প্রেগন্যান্ট!
নীল একবার কথার দিকে তাকালো কথাটার সত্যতা যাচাই করার জন্য।

নীল এর জিজ্ঞাসু দৃষ্টির অর্থ বুঝতে পেরে কথা ফুপাতে ফুপাতে ঘাড় উপর নিচ করে হ্যা সম্মতি দিলো যে সে সত্যি মা হতে চলেছে।

নীল এর যা বোঝার সে বুঝে গেছে। আর কিছু জানার প্রয়োজন নেই তার। নিঃসন্দেহে বাচ্চা টা তার। লুকিয়ে বিয়ে করার পর টানা এক মাস সে কথার সাথেই থেকেছে। কিন্তু আজ তার একটা ভুলের জন্য সবার সামনে কথাকে চরিত্রহীন উপাধি পেতে হলো! নীল এর এখন বোধ হচ্ছে যে, সেদিন নজরুল সাহেব কে বিয়ে করার কথা না বলে সে কতো বড় ভুল করেছে।

— শুনেছিস? শুনেছিস তুই তোর সতীসাদ্ধী বউ কি করেছে? ছিঃ ছিঃ ছিঃ এলাকার মানুষজন জানতে পারলে আমাদের পরিবারের কতো থু থু হবে ভাবতে পারছিস তুই নীল? নয়নতারা বেগম পুনরায় গর্জে উঠলেন কথার উপর।

নয়নতারা বেগম কে থামানোর উদ্দেশ্যে নজরুল সাহেব বলতে শুরু করলেন,
— নয়ন তুমি থামো। নীল! দেখো, ঘটনা টা এতো দ্রুত ঘটে গেছে যে কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না কি বলা উচিত বা করা উচিত।

.
নীল কিছু বলতে যাবে তার আগেই কাব্য হন্তদন্ত হয়ে ঘরের ভিতর ঢুকে পরলো। কাব্যকে দেখে কথার মনে একফোঁটা আশার আলো ফুঁঠে উঠলো। আর যে যাই বলুক তার ভাইয়া তাকে ভুল বুঝবে না কখনও। তার কাব্য ভাইয়া তার সব কথা শুনবে, বাকি সবার মতো তাকে অপবাদ দেবে না। কথা নীল কে ছেড়ে কাব্য এর সামনে এগিয়ে যেতেই কাব্য ঠাস্ করে কথার গালে একটা চড় বসিয়ে দেয়।

এমনিতেই শরীর দুর্বল তার ওপর চড় টা সহ্য করতে না পেরে কথা নিচে পরে যায়।

— কাব্য!! তোর সাহস কি করে হয় কথার গায়ে হাত তোলার! (নীল)

— নীল তুই এই ব্যাপারে প্লিজ আমার আর কথার মধ্যে আসবি না। আমাকে কথা বলতে দে!

কথা দুচোখের পানি মুছে নিজেকে সামলে উঠে দাড়ালো।
— ভাইয়া তুই আমাকে মারলি! একটা বারও আমাকে জিজ্ঞেস করলি না কি হয়েছে! বাকি সবার মতো তুইও আমাকে অবিশ্বাস করে অপবাদ দিয়ে দিলি!

— বিশ্বাস করার মতো আর কি বাকি আছে কথা? তুই অনঃসত্ত্বা তাও আবার বিয়ের আগে,, এর চেয়ে বড় প্রমাণ আর কি হতে পারে যে তুই একটা খারাপ মেয়ে!

— ভাইয়া!

— আজ তোকে বোন বলে পরিচয় দিতে আমার লজ্জা হচ্ছে। এই বাচ্চার কোনো পিতৃ পরিচয় আছে নাকি নেই? উত্তর দে!

কথা বাকরুদ্ধ হয়ে কাব্য এর দিকে তাকিয়ে আছে। কথা ভেবেছিল কাব্য তাকে সাপোর্ট করবে। কিন্তু না কাব্যও বাকি সবার মতোই বলছে! আজ কথার নিজের উপর ঘৃণা হচ্ছে। তার সন্তান জন্ম নেওয়ার আগেই সকলের চোখে তার পিতৃপরিচয় নিয়ে প্রশ্ন জেগেছে। মা হিসেবে সে কলঙ্ক। তার অনাগত সন্তানকে সবাই পাপের ফসল বলছে, আর সে মূর্তির মতো সব মুখ বুজে দেখে যাচ্ছে!

— এই মেয়ে আমার বাড়িতে আর থাকতে পারবে না। জামাই বাবাজি, তুমি তোমার বোনকে নিয়ে যাও। যার পাপ গর্ভে নিয়ে ঘুরছে, তার কাছেই দিয়ে দিও। আমার ছেলেকে মুক্তি দাও এখন। (নয়নতারা বেগম)

চলবে..

শ্রাবণের মেঘ পর্ব_২৫

0

#শ্রাবণের_মেঘ?
#পর্ব_২৫
#Tabassum_Kotha

??

বিউটিশিয়ানরা এসে কথাকে সাজিয়ে দিয়ে গেছে কিছুক্ষণ আগে। লাল বেনারসি শাড়ি সাথে ভারী গয়না আর মানানসই সাজ,, সব মিলিয়ে কথাকে এতোটা সুন্দর লাগছে যে আজ যেকোনো অপ্সরীও কথার সৌন্দর্যের সামনে হার মানতে বাঁধ্য।

নিতু কথার মাথায় লাল ভারী কাজ করা ওড়না টা পরিয়ে দিতে দিতে বললো,
— আজ তো নীল ভাইয়া পাগল হয়ে যাবে আমার ননদিনীকে দেখে।

পাশে বসে থাকা তুলি কথাকে হালকা চিমটি কেটে বললো,
— আহারে বেচারি কথা! বর বিয়ের দিনই পাগল হয়ে যাবে।

কথা ভ্রুঁ পাকিয়ে বলে,
— চুপ করবি তোরা? এমনিতেই শরীর ভালো না, তার ওপর তোরা এমন করছিস!

নিতু অনেক ঘাবড়ে গিয়ে কথাকে জিজ্ঞেস করলো,
— শরীর ভালো না মানে কি হয়েছে?

— সকাল থেকে বমি হচ্ছে মাথা ঘুরাচ্ছে। ভীষণ অস্থিরতাও বোধ হচ্ছে।

— গ্যাসট্রিক হলো নাকি আবার! (তুলি)

কথা আর নিতু নাক ছিটকে বললো,
— কি বলছিস! গ্যাস! (নিতু)

— আর নয়তো কি? কথা তো আর ম্যারিড না। তোর আমার মতো ম্যারিড হলে বুঝে নিতাম যে কথা মা হতে চলেছে। (তুলি)

— মা! হি হি হি! কি যে বলিস না তুলি। কথা কিভাবে প্রেগন্যান্ট হবে! নীল ভাইয়া তো ওকে আগে পাত্তাই দিতো না। এখন কিভাবে আমার ভাই টা পাগল হলো কে জানে!

নিতু আর তুলি নিজেদের মধ্যে মজা করছে আর হাসাহাসি করছে। কিন্তু এদিকে কথার মুখে মুহূর্তেই অন্ধকার নেমে এসেছে। ঘর পর্যাপ্ত পরিমাণে ঠান্ডা কিন্তু কথার কপাল বেয়ে চিকন ঘাম দিচ্ছে। চোখে মুখে দুশ্চিন্তা ফুঁটে উঠেছে।

কথা নিতু আর তুলির মাঝে থেকে উঠে ওয়াশরুমে চলে গেলো। ভীষণ দুশ্চিন্তা হচ্ছে তার। কাল থেকেই তার শরীর খারাপ। আর লক্ষণগুলোও অনেকটা ওরকমই।

.
” নিতু আর তুলি প্রেগনেন্সির কথাটা মজা করে বললেও বিষয়টা মোটেও মজার না। আমার পিরিয়ডও এই মাসে মিস গেছে। তবে কি আমি সত্যি মা হতে চলেছি! কিন্তু এটা কি করে সম্ভব! অসম্ভবেরও কিছু দেখছি না। জানি না কি হচ্ছে। একটু পর বিয়ে আর এখন কি না এই সন্দেহ ঢুকে গেলো মনে! যদি সন্দেহ টা সত্যি প্রমাণিত হয়! যদি সত্যি আমি প্রেগন্যান্ট হয়ে থাকি! আর যদি সবাই জানতে পেরে যায়!”

কথার ভাবনার সুঁতো ছিড়ে নিতুর ডাকে। নিতু ওয়াশরুমের দরজায় টোকা দিচ্ছে আর কথাকে ডাকছে।

— কথা! এতোক্ষণ ধরে কি করছিস ভিতরে? বেরিয়ে আয় বরযাত্রী এসে পরেছে।

— তুলি চল আমরা বাইরে যাই। বরযাত্রী এসে পরেছে। একটু আনন্দ করে আসি।

নিতু আর তুলি কথার ঘর থেকে বেরিয়ে গেলে কথা ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে আসে। খুব টেনশন হচ্ছে কথার। এতো সাধনার পর এসেছে আজকের দিনটা। এখন যদি সবাই জানতে পারে তার প্রেগন্যান্সির কথাটা! কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে।

.
.
.
.

খুব ধুমধামের সাথে নীল আর তার পরিবার বরযাত্রী নিয়ে এসেছে কথার দুয়ারে! কথার লাল বেনারসি শাড়ির সাথে ম্যাচ করে অফ হোয়াইট শেরোয়ানি পরেছে নীল। মারাত্মক হ্যান্ডসাম দেখাচ্ছে তাকে। হয়তো সব মেয়েরা আজ জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে যাবে। কেননা এই হ্যান্ডসাম ছেলেটা আজ কারো জামাই হতে চলেছে!

কিশোর সাহেব আর কলি বেগম হাসিমুখে নীল আর তার পরিবারকে বরণ করে নিলো। খুব ভালোভাবে চলছে বিয়ের কাজ। কিছুক্ষণের মধ্যেই কাজী সাহেব এসে হাজির হবেন। কথা তৈরি হয়েছে কি না সেটা দেখার জন্য কলি বেগম কথার কাছে চলে গেলেন।

কথার ঘরের দরজা ঠেলে কলি বেগম ঘরের ভিতর ঢুকতেই তিনি থমকে গেলেন।

বধু বেশে কথা তার বিছানার উপর বসে আছে। কথাকে এই রূপে দেখে কলি বেগমের যতোটা না খুশি হচ্ছে তার থেকেও দ্বিগুণ কষ্ট হচ্ছে ভেবে যে আজ কথা তাদের সবাই কে ছেড়ে চলে যাবে।

মেয়েদের নিয়তিও বড্ড অদ্ভুত। সমাজের ঠুনকো নিয়মের উপর ভিত্তি করে প্রতিটি মেয়েকে তার বাবা-মার বুক খালি করে অন্যের ঘরে যেতে হয়! জন্মের পর থেকে যে মেয়েকে এতোটা আগলে রেখে বড় করে বাবা-মা, কিন্তু মুহূর্তেই সেই কলিজার টুকরো মেয়েকে পর করে দিতে হয়!!

কলি বেগমের চোখ ইতোমধ্যে পানিতে টইটুম্বুর হয়ে গেছে। না চাইতেও আজকে এই খুশির দিনে তার চোখে পানি এসে পরেছে।

কথা দরজার সামনে কলি বেগমকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে ভিতরে ডাকে,
— আম্মু, ওখানে কি করছো? এখানে এসো।

কলি বেগম মেয়ের দৃষ্টির আড়ালে চোখের পানি মুছে ঘরের ভিতর প্রবেশ করে।
কথা চিন্তা করছে বমি হওয়ার কথাটা কলি বেগমকে জানাবে। কিন্তু পরক্ষণেই সে তার স্বীদ্ধান্ত পাল্টে নিলো। যেহেতু নীল আর তার বিয়ের কথাটা কেউ জানে না তাই এসব বলাও ঠিক হবে না। কথা তার শংঙ্কাটা নিজের মধ্যেই দাফন করে ফেললো।

.
নয়নতারা বেগম আর মুনতাহা বিয়ের অনুষ্ঠানে উপস্থিত আছেন বটে কিন্তু তারা যে বিয়েতে খুশি নয় সেটা তাদের মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে। নয়নতারা বেগম যদিও স্বামীকে দেখানোর জন্য মাঝে মধ্যে খুশি হওয়ার নাটক করছে কিন্তু মুনতাহা এখনও বিয়ে ভাঙার সুযোগ খুঁজছে।

.
তানিয়া আর তার স্বামী রাজীবও এসেছে বিয়েতে। রাজীব নীল এর সাথে বসে কিছু কথা বলছে, আর তানিয়া একটু দূরে একা বসে আছে। নিতু আর কাব্য দুজনেই একসাথে মেহমানদের দেখাশোনা করছে। কাব্য দের আত্মীয়রা যারা নিতুকে প্রথম বার দেখছে, সবাই মন খুলে কাব্য আর নিতুর সুখী জীবনের জন্য দোআ করছে।

দূর থেকে তানিয়া এই সবকিছু আঁড়চোখে দেখে যাচ্ছে। নিতু তার বোন, নিতুর সাথে তার কোনো শত্রুতা নেই। তবুও কেনো যেনো কাব্য এর এতো কাছে নিতুকে সে সহ্য করতে পারে না। তাদের দুজন কে একসাথে দেখলে তানিয়ার বুকের পা পাশের চিনচিনে ব্যথা টা বৃদ্ধি পায়। এই ব্যথার অস্তিত্ব প্রকাশ পেয়েছিল সেদিন, যেদিন কাব্য বিয়ে করেছিল। তানিয়া নিজেও অন্য কারো স্ত্রী, তবুও সে কাব্য কে অন্যকারো সাথে সহ্য করতে পারে না। ভীষণ কষ্ট হয় তার। বুকের বা পাশটা ক্ষত বিক্ষত হয়ে যায় প্রতিবার কাব্য আর নিতুকে একসাথে দেখে। আচ্ছা কাব্য এর ও কি এতোটাই কষ্ট হয় তানিয়াকে তার স্বামীর সাথে দেখলে!

.
কোনো ঝামেলা ছাড়াই কথা আর নীল এর বিয়ে খুব ভালোভাবে হয়ে যায়। দুই পরিবারের প্রায় সবাই বিয়েতে সম্মত ছিল। কবুল পর্ব শেষে বিদায়ের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করা হচ্ছে। কথার দুচোখ বেয়ে অঝোর ধারায় অশ্রু ঝরে যাচ্ছে। আজ সে তার পরিবার, তার অস্তিত্ব, তার বাবা-মা, ভাইয়াকে ছেড়ে একটা নতুন সংসারে নতুন মানুষের ভীরে যাচ্ছে। নতুন জীবন শুরু করার সুখের চেয়ে নিজের পরিবারকে ছেড়ে যাওয়ার কষ্ট টা অনেক বেশি বোধ করছে কথা।

অতঃপর বিদায় পর্বও শেষ হলো। বাহারি ফুল দিয়ে সাজানো নীল এর গাড়ি চলতে শুরু করে দিয়েছে। গাড়িতে বসে কথা ঝাপসা চোখে গাড়ির কাচ ভেদ করে তার বাবা-মা কে দেখার ব্যর্থ চেষ্টা করে যাচ্ছে। গাড়ির তীব্র গতির সামনে কথার বাবা-মা, ভাইয়া অনেক পিছিয়ে যায়। ধীরে ধীরে তারা অদৃশ্য হতে থাকে। আঠারো বছরের চেনা বাড়িটা, ছোট বেলায় থেকে খেলে বড় হওয়া গলি টা মুহূর্তেই অপরিচিত হয়ে যায়। ভালোবাসার মানুষটাকে পাওয়ার লোভে কথা তার নিজের মানুষগুলো থেকে কতো দূর হয়ে গেলো!



?

?


হাজারো ফুল দিয়ে অত্যন্ত সুন্দর করে সাজানো একটা ঘরে বসে আছে কথা। নীল এর ঘর এটা, আর এখন কথারও ঘর। ঘরটা এতো সুন্দর করে সাজানো হয়েছে যে দেখেই কথার মন ভরে গেছে। কাঠগোলাপ আর লাল গোলাপ দিয়ে সাজানো হয়েছে ঘরটা,, কারণ আজ যে কথা আর নীল এর বাসর রাত! এই সময়টার জন্য কতো অপেক্ষা করেছে কথা। কতোটা সাধনার ফল আজকের এই বিয়ে, এই সংসার কথার!

মাথার ঘোমটা টা আরেকটু টেনে ঠিক করে একটু নড়ে চড়ে বসলো কথা। বেড সাইড টেবিলে একটা কাচের গ্লাস রাখা, যেটা এক গ্লাস দুধে ভর্তি। পাশেই একটা পানির বোতল আর গ্লাস রাখা। কথা একটু এগিয়ে গিয়ে গ্লাসে খানিকটা পানি ঢেলে ঢকঢক করে গিলে ফেললো। তার শরীর ভালো লাগছে না। ভীষণ অস্থিরতা বোধ হচ্ছে। সেই সাথে বমিও পাচ্ছে। ভারী ভারী শাড়ি গয়নাগুলো আরো অস্বস্তি বাড়িয়ে দিচ্ছে।

অনেকক্ষণ চেষ্টা করেও যখন সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে গেলো তখন কথা উঠে পরলো। স্যুটকেস থেকে একটা লুজ টিশার্ট আর প্লাজো বের করে ওয়াশরুমে চলে গেলো সে।

.
.
বেশকিছুক্ষণ পর খট করে দরজা খুলে নীল ঘরের ভিতরে প্রবেশ করলো। ঘরের সব লাইট বন্ধ শুধু একটা মাত্র ডীম লাইট জ্বালানো, যার ফলে খুবই মৃদুভাবে ঘরের সবকিছু দেখা যাচ্ছে। নীল দরজা ভিতর থেকে আটকে সোজাসুজি আলমারির কাছে গিয়ে একটা টিশার্ট আর ট্রাওজার বের করে ওয়াশরুমে চলে গেলো। বেশ অনেকক্ষণ ধরে লম্বা একটা শাওয়ার নিলো সে। সারাদিনের ক্লান্তি একবারেই ধুয়ে ফেলে বেরিয়ে পরলো।

ঘরের ভিতর ঢুকে নীল এর একটা বিষয় খটকা লাগলো যে এখনও ঘরের সব বাতি বন্ধ। কথা এতোক্ষণ শান্তিমতো বসে থাকার মেয়ে নয়। নিজের শংঙ্কা দূর করতে ঘরের লাইট জ্বালালো নীল। লাইট জ্বালাতেই নীল এর চোখ ছানাবরা। কথা পুরো বিছানা জুরে এলোমেলো হয়ে ঘুমিয়ে আছে। প্লাজু হাটুর উপর পর্যন্ত উঠে আছে, পরনের টিশার্ট টা লং সাইজ হওয়াতে পেটের বেশ খানিকটা বেরিয়ে আছে। ভেজা চুলের পানিতে একটা বালিশ সম্পূর্ণ ভিজে আছে কিন্তু কথার কোনো নড়নচড়ন নেই। হে দিব্যি মনের সুখে নাকে তেল দিয়ে ঘুমিয়ে আছে। কথার অবস্থা দেখে আপন মনেই হেসে ফেললো নীল।

” কথা তুই আসলেই একটা পাগলী! আর এই পাগলীর পাগল আমি। কেনো আমাকে এতো মায়ায় জড়ালি বল তো! এই ছ্যাঁচড়া মেয়েটাকে আমি এতো ভালোবেসে ফেলেছি আমার নিজেরই বিশ্বাস হয় না মাঝে মাঝে।
অনেক কষ্ট দিয়েছি না তোকে! ওয়াদা করছি আমি থাকতে আর কোনো কষ্ট তোকে স্পর্শও করতে পারবে না। ভীষণ ভালোবাসি তোকে।”
নিজের মনেই কথাগুলো আওড়াতে থাকে নীল।

কিছুক্ষণ স্থির দৃষ্টিতে কথার ঘুমন্ত মুখটার দিকে তাকিয়ে থাকে সে। কথা ঘুমের ঘোরেই হালকা নড়ে উঠলে দৃষ্টি সরিয়ে নেয় নীল। ভেজা বালিশ টা সরিয়ে কথাকে বুকে জরিয়ে নিয়ে ঘুমিয়ে পরে নীল।

.
সকালের মিষ্টি রোদ চোখে পরাতে ঘুম ভেঙে যায় নীল এর। কথা এখনও নীল এর বুকের উপর ঘুমিয়ে আছে। সামনের চুলগুলো বরাবরের মতো চোখে এসে পরেছে। নীল মুচকি হেসে চুলগুলো সরিয়ে কথার কপালে একটা চুমু এঁকে দিয়ে আস্তে করে বিছানা ছেড়ে উঠে পরে।

.
.
.
.
.
.
.
.
.
পার্লার থেকে বিউটিশিয়ানরা এসে কথাকে সাজিয়ে দিয়ে গেছে। কিছুক্ষণ পরেই বউভাতের অনুষ্ঠান শুরু হয়ে যাবে। পুরো খান বাড়িতে হৈ হুল্লোর লেগে আছে। কাজের চাপে নয়নতারা বেগম আর তাহেরা বেগমের জীবন যায় যায় অবস্থা। যেই কারণেই বিয়েটা হোক, এখন কথা খান বাড়ির বড় বউ এজন্য সবকিছু নিখুঁত হতেই হবে। নজরুল সাহেবের কড়া আদেশ, পান থেকে চুন যেনো না খসে।

চলবে..

শ্রাবণের মেঘ পর্ব_২৪

0

#শ্রাবণের_মেঘ?
#পর্ব_২৪
#Tabassum_Kotha


Mehndi Hai Rachnewaali,
Haathon Mein Gehri Laali
Kahe Sakhiyaan, Ab Kaliyaan
Haathon Mein Khilnewaali Hain
Tere Mann Ko, Jeevan Ko
Nayi Khushiyaan Milnewaali Hai

কথাদের বাড়ির উঠোনে রাখা সাউন্ড বক্সে গানটা বাজছে। কয়েকটা বাচ্চা গানের তালে তালে নেচে যাচ্ছে।

দুপুর পেরিয়ে বিকেল শুরু হয়েছে। অনেকদিন একটানা বৃষ্টি থাকার পর আজ মেঘ ভাঙা রোদে ঝলমল করছে পুরো পৃথিবী। স্নিগ্ধ রোদের কিরণের সাথে পাল্লা দিয়ে আনন্দ এসে উঁকি দিচ্ছে কথার জানালা দিয়ে। এতোদিনের অপেক্ষার প্রহরের আজ সমাপ্তি ঘটতে চলেছে।

হলুদ শাড়ি আর কাঁচা ফুলের গয়না দিয়ে সাজানো হচ্ছে কথাকে। কোমড় পর্যন্ত ছড়ানো চুল গুলোকে তুলি খোঁপায় বেঁধে দিচ্ছে। নিতু নিজের হাতে কথাকে সাজিয়েছে। শাড়ি আর গয়না পরানো শেষ এখন শুধু হালকা মেকআপ করা বাকি আছে।

আতিকা বেগম কথার ঘরের দরজায় উঁকি দিয়ে দেখে গেলেন কথার সাজ কতোদূর বাকি। হলুদের অনুষ্ঠান দ্রুত শুরু করতে চান তিনি। এমনিতেই বৃষ্টি বাদলার দিন। কখন বৃষ্টি নামে কে জানে! তাই দ্রুত অনুষ্ঠান শেষ করতে পারলেই ভালো। ছেলের হলুদ লাগানো সম্পূর্ণই বাকি এখনও।

আতিকা বেগম কথার ঘর থেকে বেরিয়ে কলি বেগমের কাছে গেলেন।

— কলি! নিতুকে জলদি পাঠাও। নিতু গেলেই তো হলুদ শুরু হবে। বৃষ্টি শুরু হলে ঝামেলা হয়ে যাবে যে।

— সত্যি তো আপা। আমি তো ভেবেই দেখি নি কথাটা। আচ্ছা আমি নিতুকে পাঠিয়ে দিচ্ছি।

কলি বেগম রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে নিতুকে খান বাড়ির উদ্দেশ্যে পাঠিয়ে দিলেন। নিতু ওখানে যাওয়ার পরেই নীল এর হলুদ শুরু হবে। নীলকে হলুদ ছোঁয়ানোর পরেই তো কথার জন্য হলুদ পাঠাবে!

.
.
দেড় মাস আগে যেদিন নীল নজরুল সাহেব কে কথার ব্যাপারে বলেছিল, সেদিন নজরুল সাহেব নিজেই কিশোর রহমান কে রাজি করান নীল আর কথার বিয়ের জন্য। হয়তো সময়টা কিছুদিন আগের হলে কিশোর সাহেব কিছুতেই রাজি হতেন না। কিন্তু কাব্য তো আগেই খান পরিবারের সাথে আত্মীয়তা করে ফেলেছে। এখন শুধু শুধু নিজেদের সন্তানদের কষ্ট দেওয়ার কোনো মানে হয় না। কিশোর সাহেব আগেই জানতেন কথা আর নীল এর মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক আছে।

দুই পরিবারের প্রায় সবাই এই বিয়েতে রাজি হলেও নয়নতারা বেগম এখনও এই বিয়ে মেনে নিতে পারেন নি। যদিও স্বামীর স্বীদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তিনি যেতে পারেন নি বলেই সবার সামনে রাজি হওয়ার অভিনয় করে গেছে। এই বিয়েতে আরও দুইজন মানুষ বেশ নাখুশি। তারা হলো নীরব আর মুনতাহা। নীরব কথাকে পছন্দ করতো যার কারণে সে বিয়েতে তেমন একটা খুশি না। তবুও সে বাস্তবতা টা মেনে নেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত।

নীল আর কথার বিয়েতে সবচেয়ে বেশি সমস্যা যদি কারো থেকে থাকে তাহলে সে হলো মুনতাহা। তার এতো বছরের সাধনা নীল। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে সেই নীল এখন অন্যকারো হয়ে যাচ্ছে। মুনতাহা চাইলেও কিছু করতে পারছে না। শুধু একটু পর পর কথাকে প্রাণ খুলে অভিশাপ দিচ্ছে।

.
.
কাব্য আর নীরব নীল কে তৈরি করছে। যদিও ছেলেদের তৈরি হওয়ার মতো কিছুই থাকে না। তবুও হলুদ বলে কথা। একটু তো তৈরি হতেই হয়।

— শেষ পর্যন্ত তুইও গলায় দড়ি দিতে প্রস্তুত মামা! (কাব্য)

— তোর বোন কেই তো বিয়ে করছি। তুইই ভালো জানিস বিয়ের পর আমার কি হবে!

— জানি বলেই তো আফসোস হচ্ছে। দুনিয়াতে আর মেয়ে পেলি না।

— তোর বোন কি এতো ডেঞ্জারাস নাকি?

— আর নয়তো কি!

কাব্য আর নীল নিজেদের মধ্যে হাসি ঠাট্টা করছে। নীরব সেখানে চুপচাপ দাড়িয়ে আছে। কেনো যেনো তার কাছে এসব ঠাট্টা মস্করা বিষের মতো লাগছে। হয়তো কথা কে পাওয়ার যেই আকাঙ্ক্ষাটা ছিল সেটা পূর্ণ হয় নি বলেই এমন তিক্ততা ছেয়ে আছে তার মনে!

নিতুর জন্যই নীল এর হলুদ ছোঁয়ার অনুষ্ঠান থেমে ছিল। নিতু খান বাড়িতে পৌঁছালে খুব তোরজোরের সাথে অনুষ্ঠান শুরু হয়ে যায়।

.
হলুদ শাড়িতে মুড়িয়ে বসিয়ে রেখেছে সবাই কথাকে। কথার আশে পাশে সবাই আনন্দ করছে কিন্তু কথার ভীষণ অস্থিরতা বোধ হচ্ছে। চোখের সামনে কেমন ঘোলা ঘোলা লাগছে সব। এই দেড় মাস ফাইনাল পরীক্ষা ছিল তার। দিন রাত এক করে পড়াশোনা করেছে সে। সারাদিন রাত খাটুনিতে শরীরের উপর অনেক চাপ পরেছে। তাই হয়তো শরীর এতো দুর্বল হয়ে পরেছে। গরমও পরেছে অনেক। হয়তো এজন্যই এতো অস্থির লাগছে!

.
অনেক আনন্দ আর হৈ হুল্লোর এর মধ্য দিয়ে নীল এর হলুদ পর্ব শেষ হয়। নীল এর হলুদ শেষ হলে সবাই কথাকে হলুদ ছোঁয়াতে আসে। সবাই এলেও নীরব আর মুনতাহা আসে নি কিশোর রহমানের বাড়িতে কথাকে হলুদ ছোঁয়াতে।

?

কথার হলুদের অনুষ্ঠান শেষ হতে হতে অনেক রাত হয়ে যায়। কাব্য সব কাজ তদারকিতে থাকায় তার কাজ শেষ করে ঘরে ফিরতে প্রায় ১২ টা বেজে যায়। কাব্য ঘরের ভিতর প্রবেশ করে বেশ অবাক হয়। সে ভেবেছিল নিতু এতোক্ষণে ঘুমে বিভোর হয়ে গেছে। কিন্তু আশ্চর্যজনক হলেও নিতু এখনও ঘরেই ফিরে নি। কাব্য দরজার বাইরে বের হয় নিতু কোথায় দেখার জন্য। সচরাচর নিতু এতো রাত জাগতে পারে না। বাসর রাতেও বারোটা নাগাত ঘুমিয়ে পরেছিল।

কাব্য ঘরের বাইরে বেরিয়ে আশেপাশে তাকাতেই নিতুকে কিচেনে দেখতে পায়। নিতু এখনও কাজ করছে দেখতেই কাব্য এর মনে অন্যরকম এক অনুভূতি কাজ করে নিতুর প্রতি। পিচ্চি মেয়েটা হঠাত করেই বড় হয়ে গেছে, নিজের সব দায়িত্ব বুঝতে ও পালন করতে শিখে গেছে। কাব্য হালকা মুচকি হেসে ঘরে চলে যায়।

কিছুক্ষণ পর কাব্য ওয়াশরুম থেকে বের হতেই দেখে নিতু দুইটা কফি মগ হাতে দাড়িয়ে আছে। কাব্য আরও বেশি অবাক হয় কারণ এতোটুকু সময়ের মধ্যেই নিতু কাপড়ও পাল্টে নিয়েছে। বিকেলে পরা হলুদ শাড়িটা পাল্টে সে এখন একটু বেগুনী রঙের শাড়ি পরে আছে। নিতুর ফর্সা শরীরে রং টা বেশ সুন্দর মানিয়েছে। সেই সাথে খোলা চুলে একটু অন্যরকম সুন্দর লাগছে নিতুকে আজ। কাব্য মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে আছে নিতুর দিকে। বিয়ের প্রায় দুই মাস পর নিজের বউ এর প্রেমে পরতে ইচ্ছে করছে তার!

.
কাব্য ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে নিতুর দিকে। এভাবে তাকিয়ে থাকায় কাব্য এর কোনো সমস্যা না হলেও, তার স্থির দৃষ্টি নিতুকে বেশ অস্বস্তিতে ফেলছে। অনেকটা অপ্রস্তুত হয়ে নিতু গলা ঝাড়া দেয়।

হঠাত নিতুর গলা ঝাঁড়া দেওয়ার শব্দে ধ্যান ভাঙে কাব্য এর। এভাবে নিতুর দিকে সে তাকিয়েছিল টের পেতেই লজ্জায় পরে যায় কাব্য। কাব্য তার দৃষ্টি বাইরের দিকে ঘুরিয়ে নেয়। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে হাতে রাখা কফি মগ টা কাব্য এর দিকে এগিয়ে দেয় নিতু।

— নিন।

— এতো রাতে এতো কষ্ট করার কি দরকার ছিল!

— জানি আপনার আজ রাতে আর ঘুম হবে না। তাই আর কি!

— কিভাবে বুঝলি?

— হুহ জানি আমি। কথার কালকে বিয়ে হয়ে যাবে। দশটা পাঁচ টা না, একটা মাত্র বোন আপনার। কাল শ্বশুড় বাড়ি চলে যাবে। কষ্ট হওয়া স্বাভাবিক নয় কি!

কাব্য কিছু না বলে কফির মগে ঠোঁট ছুয়ালো। নিতু নিশ্বব্দে কাব্য এর দিকে তাকিয়ে আছে। এই দেড় মাসে কাব্য আর নিতুর মধ্যে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক না হলেও ভালো বন্ধুত্ব হয়েছে। কাব্য নিতুকে বুঝতে শুরু করেছে। নিতু মনে প্রাণে বিশ্বাস করে কাব্য খুব দ্রুত তাকে ভালোবেসে কাছে টেনে নেবে।

কাব্য কফি শেষ করে মগ হাতে নিয়ে নিতুর দিকে ঘুরতেই ঘরের ভিতরে রাখা তার মোবাইল টা বেজে উঠলো। ফোন রিসিভ করার জন্য কাব্য ঘরের ভিতর চলে যেতেই জোরে বজ্রপাত হয়ে ঝুম বৃষ্টি শুরু হয়ে গেলো। কাব্য ঘরের ভিতর দাড়িয়েই ফোনে কথা বলছে। ডেকোরেশনের লোকদের ফোন এসেছে, কিছু জরুরি প্রয়োজনে। নিতু এখনও ব্যালকোনিতেই দাড়িয়ে আছে আর বৃষ্টির পানিতে শরীর ভিজাচ্ছে। ব্যালকোনির ছাওনির বাইরে দাড়িয়ে থাকায় নিতু সম্পূর্ণ ভিজে গেছে।

নিতু দুচোখ বন্ধ অবস্থায় দুই বাহু প্রসারিত করে বৃষ্টির ফোঁটা গুলো উপভোগ করছিল। আচমকা পিছন থেকে কেউ জরিয়ে ধরলে চমকে উঠে সে। চট করে চোখ খুলে পিছন দিকে ঘুরতেই চোখ কপালে উঠে যায় নিতুর। কাব্য তাকে জরিয়ে ধরে আছে। বিয়ের পর এই প্রথম বার কাব্য নিজেকে থেকে নিতুর এতো কাছে এসেছে। নিতুর চোখ বড় বড় করে কাব্য এর দিকে তাকিয়ে আছে। হয়তো এখনও বিশ্বাস করতে পারছে না কাব্য নিতুর কোমড় জরিয়ে ধরে দাড়িয়ে আছে।

— আপনি এএভাবে আমাকে,,, (অনেকটা কাঁপতে কাঁপতে কথাটা বললো নিতু)

— হুশ!!! এতো কথা বলো কেনো তুমি!

কাব্য এর মুখ থেকে “তুমি” কথাটা শুনে আরেক দফা বিস্মিত হলো নিতু। নিতু পুনরায় কিছু বলতে যাবে তার আগেই কাব্য নিতুর ঠোঁট জোড়া নিজের ঠোঁট দিয়ে দখল করে নিলো। এবার নিতুর চোখ কোটর থেকে বেরিয়ে পরার উপক্রম। কাব্য যে এমন কিছু করবে এটা নিতুর কল্পনার বাইরে ছিল। নিতু নিজেকে ছাড়ানোর আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে। নিতুর ধস্তাধস্তিতে বিরক্ত হয়ে কাব্য আরও শক্ত করে নিতুকে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়।

বেশকিছুক্ষণ এভাবে থাকার পর কাব্য নিতুকে ছেড়ে দেয়। নিতু হতভম্ব হয়ে কাব্য এর দিকে তাকিয়ে আছে। কিভাবে কি হয়ে গেলো সব তার মাথার উপর দিয়ে গেলো!

নিতু কিছু বলতে যাবে তার আগেই কাব্য নিতুকে কোলে তুলে নিলো।

— কি করছেন? নিচে নামান আমাকে। আমার ভীষণ ভয় করছে!

— কিহ! কোলে তুললে ভয় করে?

— হ্যাঁ ভীষণ ভয় করে। নামান প্লিজ।

— চুপ। মুড টা নষ্ট করিস না। আজ তোর সব ভয় ভাঙিয়ে দেবো।

— না প্লিজ আমাকে ছেড়ে দিন। আমি আম্মুর কাছে যাবো! (একহাত দিয়ে চোখ কচলাতে কচলাতে কান্না করছে নিতু)

নিতুর কান্না দেখে বিস্ময়ে কাব্য এর চোখ বেরিয়ে আসার উপক্রম।

— কি বলছিস তুই!

— আমাকে ছেড়ে দিন।

— চুপ! একদম চুপ।

কাব্য এর ধমকে খানিকটা কেঁপে উঠে কান্না বন্ধ করে দিলো নিতু। কাব্য নিতু কোলে নিয়ে ঘরের দিকে হাটা ধরলো!



?

?


রাতের আঁধার তার দায়িত্ব শেষ করে চলে গেছে অনেকক্ষণ আগে। নতুন সকাল নতুন সব আশা আকাঙ্ক্ষা নিয়ে এক নতুন সূর্যের উদয় ঘটিয়েছে। সেই সাথে ব্যস্ততায় ভরিয়ে তুলেছে কিশোর রহমানের বাড়িকে। আজ তার একমাত্র মেয়ের বিয়ে বলে কথা। নিজের সামর্থ্যের সর্বোচ্চ করতে চায় সে।

দুপুরের পর দিয়ে বরযাত্রী চলে আসবে। হাজার টা কাজ পরে আছে। এদিকে কথাকে বউ রূপে সাজাতে হবে। প্রথমে নিতুকে সাজানোর দায়িত্ব দিলেও পরে নীল এর কথামতো বিউটিশিয়ান দিয়েই সাজানোর জন্য রাজী হয় কথা।

কিছুক্ষণের মধ্যেই বিউটিশিয়ানরা এসে পরবে কিন্তু কথা বিছানা ছেড়েই উঠতে পারছে না। ভীষণ শরীর খারাপ তার। সকাল থেকেই মাথা ঘুরাচ্ছে, সেই সাথে বমি। বমি করতে করতে অবস্থা এমন যে সে এখন বিছানার সাথে লেপ্টে আছে। শরীরে একবিন্দু শক্তি নেই নড়ার তার!

চলবে..

শ্রাবণের মেঘ পর্ব_২৩

0

#শ্রাবণের_মেঘ?
#পর্ব_২৩
#Tabassum_Kotha

ব্যালকোনিতে রাখা চেয়ারটায় থম মেরে বসে আছে কথা। গালে পানির শুকিয়ে যাওয়া রেশ স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। হয়তো এতোক্ষণ কান্না করছিল, কিন্তু এখন চোখের পানি শুকিয়ে গেছে। এখনও অঝোর ধারায় বৃষ্টি হচ্ছে। আকাশের এই মন ভাঙা কান্না কখন শেষ হবে কে জানে!

কথার ঘরের দরজায় টোকা পরছে, অপর পাশ থেকে কলি বেগম অনবরত কথাকে ডেকে যাচ্ছেন। কলি বেগমের ডাকে অনিচ্ছা সত্ত্বেও কথা উঠে দরজা খুলে দিলো।

— তোর হয়েছে টা কি বলবি? নিতুদের বাসা থেকে এসেই ঘরে খিল এটেছিস। আর বেরুস নি। খাবারও খেলি না।

— কিছু না। শরীর টা ভালো লাগছিল না। তাই একটু শুয়ে ছিলাম।

— দেখি দেখি জ্বর এলো নাকি আবার!

— না এমনিতেই মাথায় একটু ব্যথা।

— পরীক্ষার আগে কেউ বৃষ্টিতে ভিজে? এই নে খাবার। খেয়ে ঘুমিয়ে পর। ড্রয়ারে জ্বরের ঔষধ আছে। শরীর গরম করলে ঔষধটা নিজ দায়িত্বে খেয়ে নিস।

— হুম।

.
কলি বেগম চলে গেলে কথা খাবার টা টেবিলেই রেখে দেয়। নীল আর মুনতাহাকে একসাথে দেখে তার পেট ভরে গেছে। এখন খাবার না খেলেও চলবে।

কথা খাবার প্লেট রেখে ব্যালকোনির কাচ বন্ধ করতে যেতেই নীল ব্যালকোনি দিয়ে হুড়মুড়িয়ে রুমে ঢুকে পরে। নীল পুরো ভিজে গেছে। বোঝাই যাচ্ছে পুরো বৃষ্টি মাথায় নিয়েই এসেছে এখানে। নীল ভিতরে ঢুকে এলে কথা একটু পিছিয়ে দাড়ায়।

কথার চোখে মুখে অভিমান স্পষ্ট। তার ইচ্ছে করছে নীল এর বুকে নিজেকে লুটিয়ে দিয়ে কিছুক্ষণ কান্না করে অভিমানটা দূর করতে। কিন্তু কোনো একটা সংকোচবোধ তাকে জাকড়ে ধরে রেখেছে, তাই তো নিজের মনকে শক্ত করে সে নীল এর থেকে অনেক দূরে দাড়িয়ে আছে।

.
আচমকা নীল কথাকে শক্ত করে জরিয়ে ধরে তার সাথে মিশিয়ে নিলো। হঠাত করে জরিয়ে ধরাতে কথা ভ্যাবাচেকা খেয়ে যায়। এমন হুট করে নীল কথাকে নিজের বুকে নিয়ে নেবে সেটা হয়তো কথা বুঝে উঠতে পারে নি। কেনো যেনো কথার ভীষণ রাগ হচ্ছে। এতোটা কষ্ট দিয়ে এখন ভালোবাসা দেখাতে এসেছে, ব্যাপার টা কথা কিছুতেই হজম করতে পারছে না।

— প্লিজ ক্ষমা করে দে! আমি সবাই কে বলে দেবো বিয়ের কথা। আর বিশ্বাস কর মুনতাহা আর আমার মধ্যে কোনো সম্পর্ক নেই।

কথা চুপ করে আছে। নীল এর কথার ভালো মন্দ কিছু একটা উত্তর তার দেওয়া উচিত, কিন্তু সে নিজেকে মানাতে পারছে কিছুতেই।

কথাকে নিজের বুক থেকে তুলে আবারও জিজ্ঞেস করলো নীল,
— কিছু একটা বল! এভাবে চুপ করে থাকিস না। তুই এভাবে থাকলে বুকের ভিতর টা পুড়ে ছাই হয়ে যায়।

— চলে যান আপনি এখান থেকে।

— কথা এবার তুই বারাবারি করছিস। বিকেলেও আমার কথা না শুনেই ভুল বুঝে চলে এসেছিস। আর এখনও আমার কথা শুনতে চাস না।

— কি শুনবো আপনার কথা? আপনার বিশ্বাসঘাতকতার প্রমাণ আমি নিজে চোখে দেখে এসেছি। আর কিছু শোনার ইচ্ছে আমার নেই।

— আমার উপর কেনো তুই বিশ্বাস করতে পারছিস না? কেনো কথা? ভালোবাসার ভিত্তিই তো বিশ্বাস তাহলে কেনো তুই আমার উপর বিশ্বাস করতে পারছিস না?

— কেনো সবসময় আমাকেই ভালোবাসার, বিশ্বাসের প্রমাণ দিতে হবে? কেনো? আমিই কেনো প্রতিবার প্রমাণ দেবো? নীরবের সাথে আপনি আমাকে একবার দেখে কতোটা অপমান করেছিলেন মনে আছে? তখনও আমাকে আমার নির্দোষ হওয়ার প্রমাণ দিতে হয়েছে। আদনানের সাথে বিয়ে ঠিক হওয়ার পর আপনাকে বিয়ে করে আমার ভালোবাসার প্রমাণ দিতে হয়েছে। বলতে পারেন কেনো আমাকেই সবসময় প্রমাণ দিতে হয়?

কথার দুচোখ বেয়ে অশ্রুধারা বেয়ে পরছে। কথার চোখের পানি নীল এর বুকের বা পাশে তোলপাড় শুরু করে দিয়েছে। নীল কিছু না বলে কথার চোখের পানি মুছে দিয়ে কথাকে পুনরায় বুকে জরিয়ে নিলো। নীল এর বুকে মাথা রাখতেই কথা আগের থেকেও জোরে কান্নায় ভেঙে পরলো।

কথা কান্না করে যাচ্ছে আর নীল তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে পরম যত্নে। ধীরে ধীরে কথার কান্নার গতি কমে আসছে। এতোক্ষণ শুধু নীলই কথাকে জরিয়ে ধরেছিল। এখন কথাও নীলকে হাত দিয়ে শক্ত করে ধরে নেয়।

নীল কথার মুখটা তার দুহাতের আজলে নিয়ে তার কপালে ভালোবাসার পরশ এঁকে দেয়।

— আপনি ওই মুনতাহার সাথে আর কখনও কথা বলবেন না!

— আর কখনও কথা বলবো সত্যি!

— কথা দিন!

— আমার কথাকে ছুঁয়ে কথা দিলাম।

— আর কখনও আমাকে ছেড়ে যাবেন না।

— আরেহ পাগলী আমি কি তোকে ছেড়ে গিয়েছি নাকি!

— জানি না!

কথা পুনরায় নিজেকে নীল এর বুকের সাথে মিশিয়ে নিলো। নীলও পরম আবাশে কথাকে জরিয়ে ধরে ঘুমিয়ে পরলো!
.
.
.
?

?
.
.
.
” মুনতাহা আর নীল এর বিয়ের কথা টা পাকা করে ফেলা উচিত আমাদের।”
নজরুল সাহেবের সামনে চায়ের ট্রে টা রাখতে রাখতে নয়নতারা বেগম কথাটা বললো।

— আগে আমি নীল এর সাথে কথা বলে দেখি নেই। তারপর বিয়ের কথা পাকা করবো।

— নীল এর সাথে কথা বলতে হবে কেনো? আপনি আর আমি যা ঠিক করবো সেটা নীল হাসি মুখে মেনে নেবে।

— আমিও এটাই ভেবেছিলাম নিতুর বেলায়। কিন্তু সেটার পরিণতিটাও দেখা হয়ে গেছে আমার।

— নীল আমার কথার বাইরে আর কথাই বলবে না!

— যতো দিন যাচ্ছে নিজের সন্তানদের উপর থেকে বিশ্বাস উঠে যাচ্ছে। তাই দ্বিতীয়বার বদনামের ভাগী হতে চাই না। নীল এর সাথে কথা বলে নীল এর ইচ্ছাতেই বিয়ে হবে।

নজরুল সাহেবের সাথে যুক্তিতে হেরে গিয়ে চরম বিরক্তি নিয়ে সেখান থেকে চলে গেলেন নয়নতারা বেগম। এতো সহজে সে হেরে যাবে না। নীল ছোট থাকতে মুনতাহার মা কে সে কথা দিয়েছে মুনতাহা কে নীল এর বউ বানাবেন। এতো বছরের দেওয়া কথা নীল এর বাচ্চামোর সামনে ফিকে পরে যাবে এটাতো সে মানতে পারে না।

.
.
.
” বাবা আমি কথাকে বিয়ে করতে চাই।”
খান বাড়ির উঠোনে জিপ দাড় করিয়ে হন্তদন্ত হয়ে নজরুল সাহেবের কাছে ছুটে এসে কথাটা বললো নীল।

একটু আগে নয়নতারা বেগমের দিয়ে যাওয়া চায়ের কাপে এইমাত্র চুমুক বসিয়েছিলেন নজরুল সাহেব। ঠিক তখনই নীল এর মুখ থেকে এই ধরনের কথা শুনে মাথায় আকাশ ভেঙে পরলো তার। নজরুল সাহেব বেশ ঠান্ডা মস্তিষ্কের মানুষ হওয়াতে চিল্লা চিল্লি না করে খুব শান্তভাবে পুনরায় কাপে চুমুক বসালেন।

— বাবা, আমি তোমাকে কষ্ট দিতে চাই নি কিন্তু আমি কথাকে ভালোবাসি। আর কথাকে বিয়ে করতে চাই। সেটাও খুব দ্রুত।

— হুম। বুঝলাম। বসো। অনেকদিন হয় তোমার সাথে কথা হয় না।

— বাবা আমাকে ক্ষমা করে দাও। কিন্তু আমি নিরুপায়।

— নীল আমি বেশ সন্তুষ্ট যে তুমি এই কথাটা সবার আগে আমাকে জানিয়েছো। নিতুর মতো ভুলভাল কোনো কাজ করো নি।

নজরুল সাহেবের কথায় নীল বেশ অস্বস্তিতে পরে যায়। কারণ সে আরও আগেই কথাকে লুকিয়ে বিয়ে করেছে। এখন যদি সে এই কথাটা তার বাবা কে বলে তাহলে হয়তো তার বাবা ভুলভাল কোনো কাজ করে বসবেন।

হাতের কাপটা সামনের টেবিলে রাখা ট্রে তে রেখে নীল এর দিকে মুখ ঘুরিয়ে নজরুল সাহেব বলা শুরু করলেন,

— দেখো নীল বেশ কিছুদিন যাবত আমার শরীর টা খারাপ যাচ্ছে। নিতুর বিয়েটা জলদি করানোর একটাই কারণ ছিল, আমার কিছু হওয়ার আগে নিতুর ভবিষ্যত ঠিকঠাক করা। তুমি আর নীরব দুজনেই নিজের দায়িত্ব নিতে সক্ষম। আমার যাওয়ার নয়ন আর তাহেরার কোনো সমস্যা তোমরা হতে দেবে না এটা আমার বিশ্বাস। আর জীবন টা যেহেতু তোমাদের তাই তোমরা যাদের জীবনসঙ্গী হিসেবে চাও তাদের নিয়েই থাকো। আমাদের দায়িত্ব তোমাদের দোআ করে দেওয়া, সেটা পূরণ করে দেবো।

– এভাবে বলছো কেনো বাবা!

নজরুল সাহেব কিছু না বলে চায়ের কাপে ঠোঁট ছুয়ালেন। নীল মাথা নিচু করে আগের ভঙ্গিতেই বসে আছে। কেনো যেনো বিয়ে করে ফেলার কথা টা আর বলতে পারলো না নীল। হয়তো সে ভয় পাচ্ছে তার বাবা কে আরেকটা মানসিক ধাক্কা দিতে।
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.

দেড় মাস পর,

সকাল সকাল ভীষণ চ্যাচামেচি শুরু হয়েছে খান বাড়িতে। যে কেউ বাইরে থেকে দেখলে বলবে মাছের বাজার আজ খান বাড়িতে বসেছে। মানুষে থৈ থৈ করছে পুরো বাড়ি। সেই মানুষের ভীর ঠেলে হলুদ একটা শাড়ি কোনোমতে গায়ে পেচিয়ে উঠোন দিয়ে ছুটে চলছে রাইসা। রাইসার পিছন পিছন তায়েবা আর তানিয়াও ছুটে চলছে। রাইসা সকাল থেকে না খেয়ে পুরো বাড়ি ছুটছে মামার বিয়ে খাবে বলে।

— রাইসা মা খাবার টা খেয়ে নে। কতো বেলা হয়েছে! (তায়েবা)

— না মামুনি আমি মামাল বিয়ে কাবো!

— বিয়ে খেলে বুঝি খাবার খাওয়া যায় না পাকনি বুড়ি! (তানিয়া)

— খালামুনি আমি যদি খাবাল খেয়ে নেই তাহলে বিয়ে কিবাবে কাবো!

রাইসার আধো বুলির কথা শুনে তায়েবা আর তানিয়া ফিক করে হেসে দেয়।

তাহেরা বেগম আর নয়নতারা বেগম অন্দরমহলের সব কাজ সামাল দিচ্ছে। নজরুল সাহেব ডেকোরেশনের লোকদের সাথে চ্যাচামেচি শুরু করে দিয়েছেন। হলুদের অনুষ্ঠান বিকেলে শুরু হবে কিন্তু এখনও অর্ধেক কাজও শেষ হয় নি। বাইরের সব কাজের তদারকিতে নীরব ছিল। নীরব কিছু কাজে বাড়ির বাইরে গেলে এদিকে ডেকোরেশনের লোকজন কাজে চরম ঢিলামি দিয়েছে।

.
তাহেরা বেগম নিতু কে ডেকে একটা সাদা পাঞ্জাবী হাতে ধরিয়ে দিলো নীল কে দেওয়ার জন্য। পাঞ্জাবী টা হাতে নিয়ে নিতু শাড়ি উচু করে দৌড় দিলো নীল এর ঘরের দিকে।

— নীল ভাইয়া হলুদের সময় এটা পরিস।

— তুই এভাবে দৌড়াচ্ছিস কেনো?

— আমার ননদের বিয়ে কালকে তুই জানিস আমার কতো কাজ!

— ওরেহ। তোর কথায় মনে হচ্ছে দুনিয়ার সব কাজ তুই করছিস।

— আর নয়তো কি। জানিস কথাকে বউ সাজানোর, হলুদের সাজে সাজানোর দায়িত্ব পরেছে আমার।

— হ্যাঁ বুঝলাম।

— তোর এতো ঠান্ডা রিয়েকশন! যাক যা ইচ্ছা কর আমি যাচ্ছি।

— এই নিতু। তোর পরীক্ষা কেমন হয়েছিল রে?

পরীক্ষার কথা শুনে নিতুর হাসি মুখ খানা খানিকটা মলিন হয়ে গেলো। তবুও দাঁত গুলো বের করে জোরপূর্বক একটু হেসে বললো,
— পরীক্ষা! অনেক ভালো হয়েছে!

— সেটা তো রেজাল্ট এলেই বোঝা যাবে!

চলবে..

শ্রাবণের মেঘ পর্ব_২২

0

#শ্রাবণের_মেঘ?
#পর্ব_২২
#Tabassum_Kotha

” আপনার প্রতি আমার বিশ্বাসকে আপনি নিজ হাতে গলা টিপে হত্যা করেছেন।”
নীল এর হাত থেকে নিজেকে এক ঝটকায় সরিয়ে নিলো কথা।

” এভাবে বলিস না কথা। মুনতাহা আর আমার কোনো সম্পর্ক নেই। আর এতোদিন আমাদের বিয়ের কথাটা লুকিয়েছিলাম শুধু ঝামেলা যেনো না সে জন্য। কিন্তু তুই আমাকে একটু সময় দে আমি সবাইকে আমাদের বিয়ের কথা বলে দেবো।”

কথা নীল এর সব কথা উপেক্ষা করে দৌড়ে সেখান থেকে বেরিয়ে যায়। নিতুর কাপড়ের ব্যাগ টা না নিয়েই কথা খান বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। নীল কথার পিছন পিছন ছুট লাগালেও কথাকে ধরতে পারে না।

.
কথার মনের মতো আকাশেও আজ মেঘ জমে আছে। চারদিকে ঠান্ডা ঝড়ো বাতাস শুরু হয়ে গেছে। যেকোনো সময় আকাশের বুক চিড়ে জল রাশি নেমে এসে পৃথিবীকে ভিজিয়ে দিয়ে যাবে। খান বাড়ি থেকে বেরিয়ে রাস্তা দিয়ে পাগলের মতো ছুঁটে চলছে কথা। যেই ভালোবাসার জন্য সে এতোকিছু সহ্য করেছে, সেই ভালোবাসা তাকে এভাবে ঠকাবে! এটাতো সে কখনও কল্পনাও করে নি। নীল কে ভালোবেসেই দুইবছর সে সব অপমান অবহেলা সহ্য করেছে। সেই নীল তাকে এভাবে ঠকালো! ভাবতেই ভিতরটা দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে তার। কথার দুচোখে যেনো শ্রাবণের বর্ষণ হচ্ছে। কষ্টরা অশ্রুকণা হয়ে ঝরে পরছে তার চোখ বেয়ে। তার ভালোবাসা তো নিস্বার্থ ছিল,, তাহলে তার ভালোবাসা পরিণতি বিশ্বাসঘাতকতা কেনো হলো? তার ভালোবাসায় কি এমন কমতি ছিল!!

.
গুড়ুমগুড়ুম শব্দ করে, আকাশ কাপিয়ে বজ্রপাতের সাথে ঝুম বৃষ্টি আশেপাশের উত্তপ্ত পরিবেশকে ভিজিয়ে শান্ত করে দিচ্ছে। কিন্তু কথার মন কিছুতেই শান্ত হচ্ছে না। তার মনের সেই কষ্টের ঝড় টা আগের মতোই তীব্র গতিতে বয়ে যাচ্ছে। এই কষ্টের কি কোনো শেষ আছে? কথার জীবন কি এখানেই থমকে যাবে! নীল কে ছাড়া বেঁচে থাকা কথার পক্ষে সম্ভব নয়, আবার নীল এর ধোঁকা কেও মেনে নেওয়া তার পক্ষে সম্ভব নয়। কি করবে সে এখন, কিছুই ভেবে পাচ্ছে না। নিশ্বাস নেওয়াটাও কেমন কষ্টকর মনে হচ্ছে তার কাছে।

বৃষ্টির প্রতিটি ফোঁটা কথাকে ভিজিয়ে একাকার করে দিচ্ছে। আকাশে মেঘ জমে এমন অন্ধকার অবস্থা বিরাজ করছে যে বোঝার ক্ষমতা নেই সময় টা বিকেল নাকি সন্ধ্যা! কথা ভেজা অবস্থায় নদীর পাড় বেয়ে গন্তব্যহীন হেটে যাচ্ছে। আশে পাশের কোনো কিছুর দিকে তার নজর নেই। কি হচ্ছে কোনো হুশ নেই! বারবার চোখের সামনে নীল আর মুনতাহার একে অপরের বুকের উপর থাকার দৃশ্যটাই ভেসে উঠছে।

” কথা তুমি ভিজছো কেনো?”
পিছন থেকে নীরব কথার দিকে উৎসুক কিন্তু খানিকটা চিন্তিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। ছাতা হাতে দাড়িয়ে আছে সে।

নীরবের ডাকে কথার হুশ ফিরে আসে। নিজের দুঃখে এতো মুশগুল ছিল যে, সে যে বৃষ্টিতে ভিজছিল এটা তো সে খেয়ালই করে নি। কথা নীরবের দিকে একনজর তাকিয়েই বেশ অপ্রস্তুত হয়ে যায়। কেননা নীরব একদৃষ্টিতে কথার শরীরের দিকে তাকিয়ে আছে।

এতোক্ষণে কথার খেয়াল হলো যে সে একটা সাদা চুড়িদার পরে আছে যেটা বৃষ্টিতে ভেজার দরুণ তার শরীরের সাথে লেপ্টে আছে। নীরবের লালসা ভরা দৃষ্টি কথা ভালোই বুঝতে পারছে। কথার এখন আরও বেশি কান্না পাচ্ছে। এতোদিন নীল তাকে ব্যবহার করেছে আর এখন নীল এর ভাই তার দিকে কুনজর দিচ্ছে।

” চোখ উপরের দিকে তোলেন নীরব ভাইয়া। ছিঃ! আপনি এতো খারাপ আগে জানা ছিল না আমার। আর কখনও আপনি আমার সামনে আসবেন না।”

” আরেহ কথা শুনো তো! আই এম সরি আসলে এভাবে তাকানো আমার ঠিক হয় নি কিন্তু ট্রাষ্ট মি আমি খারাপ চোখে তাকাই নি।”

” আমি অবুঝ শিশু নই। এতোটুকু বোঝার বয়স আমার হয়েছে।”

কথা আর কিছু না বলে সেখান থেকে বাড়ির পথে হাটা ধরলো। নীরব পিছন থেকে অনেক বার ডাকলেও কথা আর সাড়া দেয় নি। এতোটা নিচু মনের মানুষের সামনে দাড়িয়ে থাকার মানে হয় না।

.
পরনের ওড়না টা শরীরে পেচিয়ে নেয় কথা। আমাদের সমাজে ভদ্রতার মুখোশ পরে অনেক নরপশু ঘুরে বেড়ায়। কখন এই মুখোশধারীদের ভিতরকার অমানুষ মাথাচাড়া দিয়ে উঠে কে জানে! এদের অমানুষী কাজকর্মের ফলও মেয়েদেরই দিতে হয়। কষ্টদায়ক হলেও এটাই সমাজের বাস্তবিক চিত্র। সমাজ ব্যবস্থা পরিবর্তন করা সহজ নয় তাই নিজেদের সচেতন থাকা উচিত।

?

?

দিন শেষে রাত এর আঁধারে ঢেকে গেছে ধরা। বিকেলে শুরু হওয়া বৃষ্টি এখনও আগের মতোই ঝরছে। হয়তো আজ আকাশেরও মন ভেঙেছে, তাই তো এতো অশ্রু বর্ষণ করছে।



তোমার হাতেই হোক রাত্রি রচনা
এ আমার স্বপ্ন সুখের ভাবনা
চেয়েছি পেতে যাকে,
চাইনা হারাতে তাকে
বৃষ্টি তোমাকে তাই ফিরে চাইলাম।

আমার সারাটা দিন, মেঘলা আকাশ, বৃষ্টি
– তোমাকে দিলাম
শুধু শ্রাবণ সন্ধ্যাটুকু
তোমার কাছে চেয়ে নিলাম।



” খুব সুন্দর গান করিস তো তুই!”
কাব্য এর হঠাত করা উক্তিতে চমকে পিছন ফিরে তাকায় নিতু।

ব্যালকোনিতে দাড়িয়ে বৃষ্টির পানি হাত দিয়ে ধরতে ধরতে গান টা গাইছিল নিতু। হঠাত কাব্য এসে পরাতে বেশ লজ্জার মুখে পরে যায় সে।

” ওই একটু আধটু আর কি! আপনি কখষ এলেন?”

” একটু আগেই। তোর গান টা শুনলাম। এমন বৃষ্টি ভেজা দিনে এই ধরনের গান এক অন্যরকম ভালোলাগার দোলা দেয় মনে।”

” আপনার ভালো লেগেছে আমার গাওয়া গান?”

” ভালো না লাগার কি আছে? আর তুই বারবার আপনি বলছিস কেনো? আগে তো তুমি করে বলতি!”

” আগে কি আপনি আমার স্বামী ছিলেন? এখন আপনি আমার স্বামী, তাই!”

” এসব ফরমালিটির কোনো প্রয়োজন নেই নিতু। যেই জিনিসটা আমি তোকে দিতে পারবো না সেটার জন্য তোকে ফোর্স করবো না। সো ডোন্ট ডু দিস!”

” আমি এসব করছি কারণ আমি আপনাকে ভালোবাসি। আপনার আমাকে এখনই ভালোবাসতে হবে এমন তো নয়। আপাতত আমার একার ভালোবাসা আমাদের দুজনের জন্য যথেষ্ট।”

” আমি দুঃখিত নিতু!”

” কেনো?”

” তোকে তোর স্ত্রী হওয়ার অধিকার দিতে পারছি না।”

” আমার কাছে না অনেক সময় আছে।”

” মানে? কিসের সময়?”

” আপনার ভালোবাসা পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করার সময়! আপনি জানেন, অপেক্ষা পৃথিবীর সবচেয়ে মধুর অনুভূতি! আর আপনার জন্য আমি মৃত্যুর আগ মুহূর্ত পর্যন্ত অনেক্ষা করতে প্রস্তুত আছি।”

কাব্য কিছুক্ষণ নিতুর দিকে তাকিয়ে থেকে ঘরে চলে গেলো। নিতু কাব্য যাওয়ার দিকে তাকিয়ে একটু ম্লান হেসে পুনরায় বৃষ্টির পানি নিয়ে খেলা শুরু করলো। সেই সাথে তার কন্ঠে গুনগুন করে উঠলো,
.
.
আমার সারাটা দিন, মেঘলা আকাশ, বৃষ্টি
– তোমাকে দিলাম
শুধু শ্রাবণ সন্ধ্যাটুকু
তোমার কাছে চেয়ে নিলাম!!!!

চলবে…

শ্রাবণের মেঘ পর্ব_২১

0

#শ্রাবণের_মেঘ?
#পর্ব_২১
#Tabassum_Kotha

” কথা এতোক্ষণ লাগলো তোর দরজা খুলতে! কি করছিলি এতোক্ষণ?”
কথা দরজা খুলে দিতেই কলি বেগম রাগী চোখে কথাটা বলেন।

— ওয়াশরুমে ছিলাম তাই দেরি হয়েছে দরজা খুলতে। আসলে গোসল টা সেরেই পড়তে বসতাম।

— তোর যে পরীক্ষা এতোটুকু গুরুত্ব কি আছে?

— এখনই পড়তে বসছি।

— শোন বিকেলে গিয়ে নিতুর কিছু কাপড় নিয়ে আসিস খান বাড়ি থেকে।

কলি বেগম চলে গেলে কথা দরজা বন্ধ করে একটা সস্তির নিশ্বাস নেয়।

একটু আগে কলি বেগম দরজায় টোকা দিলে খুব দ্রুত নীল কে উঠিয়ে ব্যালকোনি দিয়ে নিচে নামিয়ে দিয়ে দরজা খুলে দেয় কথা। দরজায় হেলান দেওয়া অবস্থা থেকে উঠে কথা ছুট লাগায় ব্যালকোনির দিকে, উদ্দেশ্য নীল কে একনজর দেখা। ব্যালকোনির কার্নিশে দাড়িয়ে কথা এদিকে ওদিকে তাকায় কিন্তু নীল কে আর দেখতে পায় না। হয়তো নীল চলে গেছে!

.
ঘুম থেকে উঠে বসে দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকাতেই চোখ কপালে উঠে যায় নিতুর। ঘড়িতে ৯:২৩ বেজে বসে আছে আর সে কি না এতো বেলা পর্যন্ত ঘুমিয়ে ছিল! লাফ দিয়ে বিছানা থেকে নেমে ওয়াশরুমে দৌড় লাগায় নিতু। তড়িঘড়ি করে ফ্রেশ হয়ে এসে কোনোরকম নিজেকে পরিপাটি করে রান্না ঘরের দিকে ছুটে যায়।

কলি বেগম আগেই সব রান্না একা শেষ করে ফেলেছেন। কাব্য আর কিশোর সাহেব সকালে নাস্তা করে নিজেদের কাজে চলে গেছেন। যেহেতু নিতু আর কাব্য এর বিয়ে টা পারিবারিক ভাবে হয় নি, তাই কোনো রীতি নীতিই পালন করা হয় নি। নিতু কলি বেগমের সাথে কাজ করতে গেলে কলি বেগম নিতু কে কথার ঘরে পাঠিয়ে দেয় পড়ার জন্য। কারণ নিতু আর কথা দুজনেই এবার এইচএসসি পরীক্ষার্থী।

” ননদিনী কি পড়তে বসেছেন নাকি?”
কথার ঘরের দরজার সামনে দাড়িয়ে কোমড়ে হাত দিয়ে কথাটা বললো নিতু।

— ভাবি জি! আসেন আসেন ননদিনীর ঘরে আসেন।

— তুই পড়ছিস! ইশ আমার কতো পড়া বাকি রে, এই বিয়ে বিয়ে করে পড়ায় মনোযোগই দিতে পারি নি এতোদিন!

— সে না হয় সব বুঝলাম। তা ভাবি জি, বাসর কেমন কাটলো! (চোখ মেরে)

— হাহ! আমার আর বাসর! হ্যাঁ রে কথা, আমার ভাই তো নিরামিষ আমি জানতাম। কিন্তু তোর ভাই আরও বড় নিরামিষ। জানিস কাল সারারাত আমাকে দিয়ে,,

— তোকে দিয়ে!!!

— যাহ পেত্নি দূর হ। তোর ভাই আমাকে দিয়ে তার পা টিপিয়েছেন।

— লে হালুয়া! এই ছিল তোর বাসর! হিহিহি। এপিক বাসর ছিল তোর। আমার ভাই পারেও বটে। হিহিহি।

— একদম দাঁত কেলাবি না বলে দিলাম।

— কেলাবো! কেলাবো! একশো বার কেলাবো!

— কেলা তুই দাঁত! আমিও দেখে নেবো তোর বাসর এ কি হয়! নীল ভাইয়াকে বলে যদি তোর বাসর এর বারোটা না বাজিয়েছি না তো আমার নাম নিতু না হুহ।

বাসর আর নীল এর কথা উঠতেই কথার হাসি মুখখানা নিমেষে মলিন হয়ে গেলো। কি ভাগ্য তার! বিয়ে তো তার হয়েছে, কিন্তু সেই বিয়ের কথা কেউ জানেই না!

— কিরে কি ভাবছিস?

— কিছু না। পড়া শুরু কর।

— হুম।

.
.
.
.
.

?

পড়ন্ত বিকেল। সূর্য পশ্চিমে হেলে পরেছে। খান বাড়ির গেইটের ভিতর ঢুকতেই কথার চোখে মুখে খুশির ঝলক ভেসে উঠে। সকাল থেকেই তার মন খারাপ ছিল। কাল রাতে আবেগের বশে নীল এর ভালোবাসায় সাড়া দিলেও এখন কথার মধ্যে অনেক অপরাধবোধ কাজ করছে। এভাবে লুকিয়ে বিয়ে করা আবার লুকিয়ে সংসার করা মোটেও ঠিক হচ্ছে না কথা আর নীল এর। আজ কথার খান বাড়িতে আসার পিছনের উদ্দেশ্য মূলত নীল এর সাথে এ ব্যাপারে খোলাখুলি কথা বলা। কথার পক্ষে আর মিথ্যে বলা সম্ভব হচ্ছে না। এভাবে পুরো পরিবারকে ঠকিয়ে তারা কখনই সুখী হতে পারবে না!

.
খান বাড়ির উঠোনে নীল এর জিপ দাড় করানো দেখেই কথার ঠোঁটে হাসির রেখা ফুঁটে উঠে। নীল বাড়িতেই আছে। নীল এর সাথে কথা বলাটা সহজ হয়ে যাবে।

কথা খান বাড়ির সদর দরজা দিয়ে ভিতরে ঢুকতেই সবার আগে নয়নতারা বেগমের মুখোমুখী হয়।

— তুই এখানে?

— খালাম্মা আমি নিতুর মানে ভাবির কিছু জিনিসপত্র নিতে এসেছি।

— যা ওর ঘর থেকে নিয়ে নে।

— জি।

কথার যাওয়ার দিকে একনজর তাকিয়ে থেকে নয়নতারা বেগম মুনতাহার ঘরের দিকে যায়।

মুনতাহা তার ঘরে বসে মোবাইলে কিছু একটা কাজ করছিল। নয়নতারা বেগম হন্তদন্ত হয়ে সেখানে পৌঁছে মুনতাহা কে নীল এর কাছে পাঠায়। যাথে করে কথা নীল এর সাথে একা দেখা করতে না পারে। নয়নতারা বেগম খুব ভালো করেই জানেন কথা আর নীল দুজন দুজনকে ভালোবাসে, এক কথায় যেটা কে বলে প্রেমের সম্পর্কে আছে। কিন্তু নয়নতারা বেগম নীল এর বউ হিসেবে মুনতাহাকেই আনবেন, সেটা যেকোনো মূল্যেই হোক।

.
কয়েকদিন যাবত নজরুল সাহেবের শরীর টা তেমন একটা ভালো যাচ্ছে না। তার ওপর কালকে নিতু আর কাব্য এর এমন একটা কাজে নজরুল সাহেবের বেশ বড়সড় একটা ধাক্কা লেগেছে। নিজের দুর্বলতা কাউকে দেখাতে চান না তিনি, কিন্তু শরীর যে আর মানছে না। ব্যবসার সব দায়িত্ব এখন ছেলেদের হাতে তুলে দিতে পারলেই সে মুক্ত। অবশ্য সে ইতোমধ্যে কিছুটা চিন্তামুক্ত আছেন। কেননা নীল এর হাতে ব্যবসার অনেকটা কাজ তুলে দিয়েছেন। নীল আগে থেকেই নজরুল সাহেবের কাজে সাহায্য করতো, যার কারণে তার কাজ আয়ত্ত করতে বেশি কষ্ট হচ্ছে না।

.
সকালে কথাদের বাড়ি থেকে আসার পর থেকে কাজ করছে নীল। বিছানায় আধশোয়া হয়ে ল্যাপটপে কাজ করছিল নীল তখন মুনতাহা নীল এর ঘরে প্রবেশ করে। প্রতিদিনের মতো আজকেও মুনতানা শিফনের একটা বেগুনি রঙের শাড়ি পরে আছে। মুনতাহা তার লম্বা খোঁপা করা চুল গুলো খোঁপা থেকে খুলে পিঠে ছড়িয়ে দিলো। এমনিতেই সুন্দর সে, তার উপর থেকে আজ তার সাজসজ্জাও বেশ আবেদনময়ী।

পিঠ থেকে চুল গুলো কাঁধের উপর টেনে এনে ঠোঁটে হাসি ফুঁটিয়ে তোলে মুনতাহা নীলের উদ্দশ্যে বললো,
— সারাদিন এভাবে একা বসে থাকো কেনো নীল? আমাকে একদমই সময় দাও না তুমি!

মুনতাহার কথায় বেশ অবাক হয়ে নীল উত্তর দেয়,
— তোমাকে আমার সময় দেওয়া টা কি খুব দরকার? বাসায় কি আর কেউ নেই?

— এভাবে বলছো কেনো? আমি কি তোমার কেউ নই?

— না আসলে আমি সেটা বলি নি। আমি কাজ করছিলাম। আর বাড়িতে অনেক মানুষ আছে তোমায় সময় দেওয়ার জন্য।

মুনতাহা কিছু বলতে যাবে তার আগেই নীল এর মোবাইলটা বেজে উঠলে নীল বিছানা ছেড়ে উঠে ব্যালকোনিতে চলে যায়। মুনতাহা উঠে দরজার কাছে চলে গেলেও কিছু একটা ভেবে আবার নীলের ঘরে ফিরে আসে। নীল ফোনে কথা শেষ করে ব্যালকোনি দিয়ে ঘরের ভিতর প্রবেশ করছিল, ঠিক তখনই মুনতাহা একপ্রকার দৌড়ে গিয়ে নীলের সাথে ধাক্কা খায়। আচমকা ধাক্কা লাগাতে নীল টাল সামলাতে না পেরে মুনতাহাকে নিয়েই পরে যায়। পাশে বিছানা থাকায় তারা দুজনেই বিছানার উপর পরে।

.
নিতুর কাপড় চোপড় গুছিয়ে রেখে কথা নীল এর ঘরের দিকে পা বাড়ায়। আজ নীল কে যেভাবেই হোক সে রাজি করাবে বাড়িতে সবাইকে তাদের বিয়ের কথা বলে দেওয়ার জন্য। এক হিসেবে এভাবে এসে সে নীল কে সারপ্রাইজও দিয়ে দেবে। হঠাত করে কথাকে দেখে নীল কিভাবে রিয়েক্ট করবে,, ভাবতে ভাবতে নীল এর ঘরে ঢুকে পরে কথা। যেহেতু ঘরের দরজা খোলাই ছিল সেহেতু নক করার প্রয়োজন মনে করে নি সে।

নীল এর ঘরের ভিতর ঢুকতেই কথার হাসি মুখটায় মুহূর্তেই অন্ধকার নেমে আসে। নীল কে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য এসেছিল সে এখানে। উল্টো তার জন্য এখানে এতোবড় সারপ্রাইজ অপেক্ষা করছে সেটা কে জানতো! কথা বাকরুদ্ধ হয়ে দাড়িয়ে আছে নীল এর দরজার সামনে আর তার ঠিক সামনে মুনতাহার বুকের উপর শুয়ে আছে নীল!

.
নীলকে মুনতাহার বুকের উপর দেখার আগে হয়তো অন্ধ হয়ে যাওয়া ভালো হতো আমার জন্য। নিজের স্বামীকে অন্যের বুকে সহ্য করার ক্ষমতা কোনো মেয়ে থাকে না। কথারও নেই সেই ক্ষমতা। কথার পায়ের নিচ থেকে ধীরে ধীরে মনে হচ্ছে মাটি সরে যাচ্ছে। দুচোখ দিয়ে অঝোর ধারায় পানি পরছে তার। এই দৃশ্য কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না সে।

নীল নিজেকে সামলে মুনতাহার উপর থেকে উঠতে গেলে মুনতাহা নীল এর হাত চেপে ধরে। মুনতাহার ব্যবহারে নীল বেশ অবাক হয়। এরকম অস্বস্তিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে তার উপর থেকে মুনতাহার এমন ব্যবহার! প্রচন্ড রাগ হচ্ছে নীল এর।

” হাত ছাড়ো মুনতাহা!”
রাগ নিয়ন্ত্রণ করে দাঁতে দাঁত চেপে মুনতাহাকে কথাটা বললো নীল।

নীল এর রাগী মুখ দেখে মুনতাহা অনেকটা ঘাবড়ে যায়। নীল নিজের হাত এক ঝটকায় ছাড়িয়ে নিয়ে উঠে দাড়ায়। নীল উঠে দাড়াতেই দরজার সামনে কথাকে দেখতে পায়। মুনতাহা বিছানা ছেড়ে উঠে শাড়ি ঠিক করতে করতে রুম থেকে বেরিয়ে যায়।

” কথা তুই যা ভাবছিস একদম তা নয়। আমি ঘরে ঢুকছিলাম তখন মুনতাহা এসে ধাক্কা লাগলো আর আমরা,,,”
নীল বলতে নিলেও নীলকে থামিয়ে দিয়ে কথা বলতে শুরু করে।

— আর কিছু শুনতে চাই না। ভাবাভাবির তো কোনো প্রশ্নই আসে না। যা দেখার নিজের চোখেই তো দেখে নিলাম।

— আমার কথাটা শোন প্লিজ।

— কি কথা শুনবো? এটাই তাহলে সত্যি! এতোদিন হয়ে গেছে বিয়ে করেছেন তারপরেও কাউকে বলেন নি! কারণ আপনি মুনতাহাকে বিয়ে করতে চেয়েছিলেন।

— কথা তুই ভুল বুঝছিস।

— আমি হয়তো এখনই সঠিক বুঝেছি। মুনতাহার রূপ আপনাকে বশ করে নিয়েছে এইতো! মুনতাহাকে বিয়ে করবেন, আর আমি? আমি কে আপনার? আমার পরিচয় কাউকে দিতে পারবেন না? কারণ সবার চোখে আপনার স্ত্রী হবে মুনতাহা। আর আমি? আমি কি আপনার রক্ষিতা হয়ে থাকবো?

— ছিঃ কথা! এসব কি বলছিস! আমাকে বোঝানোর সুযোগটা তো দে একবার।

— কি বোঝাবেন? বলুন কি বুঝাবেন আপনি আমাকে? কি মনে করেন নিজেকে আপনি? আর আমাকেই বা কি মনে করেন? আমাকে কি পুতুল মনে হয় আপনার? যখন যেভাবে ইচ্ছা সেভাবে খেলছেন। আমি যে রক্ত মাংসে গড়া মানুষ সেটা কি আপনি ভুলে গেছেন? আপনি কাউকে না জানিয়ে আমাকে বিয়ে করেছেন, আমি আপনার এক কথায় রাজী হয়েছিলাম। কারণ আমি আপনাকে ভালোবাসি। বিয়ে করার এতোদিন পরেও আপনি কাউকে জানান নি। আমি সেটাও মেনে নিয়েছি। কাল রাতে আমার এতো কাছে এসেছেন সেটাও মেনে নিয়েছি,, ভেবেছিলাম সবকিছু আপনার ভালোবাসা ছিল। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে সবটাই আমার ভুল ধারণা ছিল। সবটাই আপনার নাটক ছিল। আমাকে রক্ষিতা বানিয়ে রেখে মুনতাহাকে বউ বানাতে চান তো! কিন্তু সেই স্বপ্ন আপনার কখনও পূরণ হবে না। আপনি মুনতাহা কে ভালোবাসেন ভালো,, খুব ভালো। থাকেন মুনতাহাকে নিয়ে। আমিই আপনাদের মাঝ থেকে সরে যাবো।

কথার এমন পাগলের মতো বকা প্রলাপে নীল রেগে গিয়ে ঠাস্ করে একটা থাপ্পড় মেরে বসে কথার গালে। থাপ্পড়টা এতোটাই জোরে ছিল যে কথার ঠোঁট কেটে রক্ত বের হয়ে এসেছে। নীল কথাকে সোজা করে নীল এর দিকে ঘুরিয়ে কথার মুখ তার দুহাতের আজলে নিয়ে নেয়।

— আই এম সরি কথা। প্লিজ ক্ষমা করে দে আমাকে। আমি এভাবে তোর গায়ে হাত তুলতে চাই নি। কিন্তু তুই আমার কথাটা শোন। মুনতাহার সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। আমি শুধু তোকেই ভালোবাসি। নিজের থেকেও অনেক বেশি অনেক অনেক বেশি ভালোবাসি তোকে। বিশ্বাস কর!!

চলবে,,

শ্রাবণের মেঘ পর্ব_২০

0

#শ্রাবণের_মেঘ?
#পর্ব_২০
#Tabassum_Kotha

” কাকে পাগল করার জন্য শাড়ি পরেছিস হ্যাঁ?”
কথার ঘরের ব্যালকোনির কাচে হেলান দিয়ে কথাটা বললো নীল।

ঘরে দ্বিতীয় একজন ব্যক্তির উপস্থিতি আগেই টের পেয়েছিল কথা। সেই ব্যক্তিটি যে নীল এটাও আন্দাজ হয়েছিল কথার, তাই তো নীল কে সামনে দেখে খুব একটা অবাক সে হয় নি।

হাতের কাজল টা ড্রেসিং টেবিলে রেখে শাড়ির আঁচল টা কোমড়ে গুজে দিয়ে নীল এর দিকে ঘুরে দাড়ালো কথা।

কথাকে দেখে নীল মুখ হা হয়ে তাকিয়ে আছে। এই প্রথম নীল কথাকে এভাবে শাড়িতে দেখছে। তানিয়ার হলুদে দেখেছিল কিন্তু সেদিন রাগারাগিতেই সময় পার করেছে দুজন। সাজবিহীন কথাকে দেখে নীল এর মাথা ঘুরে যাওয়ার উপক্রম।
সদ্য গোসল করে আসার কারণে ভেজা চুল গুলো থেকে টপটপ করে পানি মেঝেতে পরছে।

শাড়ি কোমড়ে গুজে দেওয়ায় কথার ফর্সা পেটের অনেকটা বেরিয়ে আছে। যেটা নীল এর চোখ এড়ায় নি।

কেমন ঘোর লাগানো পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে চারপাশে। নীল এর চোখে নেশা ধরে যাচ্ছে কথার সৌন্দর্যের। তবুও নিজেকে শক্ত করে ধরে রেখেছে সে। কোনো একটা সংকোচ কাজ করছে নীল এর মনে যার কারণে নীল কথার দিকে আগাতে পারছে না।

নীল এর অবস্থা কথা ভালোভাবেই বুঝতে পারছে। বিয়ের এতোদিন হয়ে গেছে অথচ সুযোগ থাকা সত্ত্বেও নীল কথার কাছে আসে নি। নিশ্চয়ই নীল এর মনে কোনো সংকোচ কাজ করছে।

কথা নিজে থেকেই একটু এগিয়ে এসে নীলের শরীর ঘেসে দাড়ালো। কথা নীল এর এতো কাছাকাছি আসাতে নীল এর বেশ অস্বস্তি হচ্ছে।

কথার হাত ধরে কথাকে নিজের কাছে থেকে একটু দূরে সরিয়ে দিয়ে কাঁপাকাঁপা গলায় নীল বললো,
— আচ্ছা কথা অনেক রাত হয়েছে! তুই ঘুমা, আমি যাই। গুড নাইট।

নীল এর কথায় কথা ভ্রুঁ কুচকে বললো,
— যাই মানে কি!

— তোকে দেখতে এসেছিলাম। দেখা হয়ে গেছে তাই যাই আর কি!

— কোথাও যাচ্ছেন না আপনি। আমার সাথে আজ এখানেই থাকবেন।
কথাটা বলতেই কথা আবার নিজেকে নীল এর শরীরের সাথে চেপে ধরলো।

— ককথা! ততুই সসর আমার সামনে থেকে। এতো কাছে আসছিস কেনো?

— কেনো আমি তোমার কাছে এলে কি সমস্যা? আমি না তোমার বউ।

— তা তো সব ঠিক আছে কিন্তু তুই এতো পাতলা শাড়ি পরেছিস কেনো? (অনেকটা কাঁপতে কাঁপতে কথাটা বললো নীল)

নীল কে ছেড়ে দিয়ে নীল এর কলার চেপে ধরে বাজখাই গলায় চেচিয়ে উঠলো কথা,
— এই একই ধরনের শাড়ি যখন মুনতাহা পেত্নি পরে তখন তো দেখতে খুব মজা লাগে। আর এখন আমি পরেছি, তোমার ঘরের বউ পরেছে বলে ভালো লাগছে না! নিজের বউ ভালো লাগে না, আর অন্য মেয়েদের সাথে লুতুপুতু করিস! জানে মেরে ফেলবো তোকে আমি!

কথার এহেম কান্ডে নীল ভ্যাবাচেকা খেয়ে কথার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। যদিও এই মুহূর্তে কথার চোখে-মুখে অসীম রাগ ছাড়া আর কিছুই নেই।
তবুও এই পরিস্থিতিতে নীল এর চোখ কথার ঠোঁটে আটকে যাচ্ছে।

কথার লিপষ্টিক হীন গোলাপী ঠোঁট দুটোর দিকের কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে নীল আচমকা কথার ঠোঁট দুটো নিজের ঠোঁট দিয়ে চেপে ধরে।

ঝগড়া চলাকালীন এভাবে কিস করে বসবে নীল এটা কথার ধারণার বাইরে ছিল। কথা নিজেকে ছাড়ানো জন্য হাত পা ছোড়া শুরু করলে নীল এক হাতে কথার কোমড় আকড়ে ধরে, অপর হাত দিয়ে কথাকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে। তবুও কথা নিজেকে ছাড়ানোর জন্য ধস্তাধস্তি করতেই থাকে। ঝগড়ার মাঝে বাঁধা দেওয়াতে কথার আরও বেশি রাগ হয়, যার কারণে সে নীল কে নিজের কাছে থেকে সরানোর আপ্রাণ চেষ্টা করতে থাকে।
বেশকিছুক্ষণ নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হলে হাল ছেড়ে দেয় কথা। এখন তার রাগ অনেকটা কমে গেছে। এখন অবশ্য ভীষণ লজ্জা লাগছে কথার, কারণ নীল এর হাত কথার পিঠে বিচরণ করছে। কথা চোখ বন্ধ করে শুধু সেই মুহূর্ত টা উপভোগ করছে।

আরও কিছুক্ষণ পর নীল কথার ঠোঁট ছেড়ে দিয়ে কথাকে পাঁজাকোলে তুলে নিয়ে বিছানার দিকে অগ্রসর হয়। কথা এখনও লজ্জায় চোখ বন্ধ করে আছে।

কথাকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে নীল তার পরনের শার্ট টা খুলে বিছানার উল্টো দিকে ছুড়ে মারলো।
কথার নিশ্বাস খুব দ্রুত উঠানামা করছে, লজ্জায় সে নীল এর দিকে তাকাতে পারছে না। এখনও চোখ বন্ধ করেই আছে।

নীল নিজের সমস্ত ভর কথার উপর ছেড়ে দিয়ে কথার ঘাড়ে মুখ ডুবিয়ে দিলো। উন্মাদের মতো চুমু খাচ্ছে নীল কথার গলায়-ঘাড়ে, গালে। মাঝে মধ্যে দুয়েকটা কামড়ও দিচ্ছে। কথা শক্ত করে নীল কে আকড়ে ধরে আছে, দুটি মন ডুব দিচ্ছে ভালোবাসার সাগরে!

?

?

?

” নিতু আমার পা টা খুব ব্যথা করছে টিপে দে তো!”
ঘরে ঢুকতেই কাব্য এর এমন কথায় বেশ অবাক হয় নিতু।

একটু আগে কাব্য সিগারেট নিয়ে ব্যালকোনিতে চলে গেলে নিতুর বাসররাত এর স্বপ্নে পানি পরে যায়। একরাশ রাগ মনে নিয়ে নিতু কাব্য এর পিছন পিছন ব্যালকোনিতে যায়। সেখানে গিয়ে সে দেখে, কাব্য মনের সুখে স্মোক করছে আর ধোয়া আকাশের দিকে ছুড়ছে। কাব্য কে সরাসরি কিছু না বললেও মনে মনে একশো টা গালি দিয়ে ঘরের ভিতর চলে আসে সে।

” বিয়ের প্রথম রাত কোথায় বউ এর সাথে একটু রোমান্স করবে তা না, সে বাইরে গিয়ে ধোয়া উড়াচ্ছে। বলি কি আপনি কি বিবাহিত নাকি ব্যাচেলর? এতো সুন্দরী একটা বউ রেখে মানুষ সিগারেট হাতে নেয় কোন আক্কেলে!”

নিতু একা একা কিছুক্ষণ বকবক করে একটা শাড়ি হাতে নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়। ফ্রেশ হয়ে ঘরে ঢুকতেই কাব্য এই কথাটা বলে বিছানায় বসে পা বাড়িয়ে দেয় সামনে।

নিতুকে ওয়াশরুমের দরজার কাছেই দাড়িয়ে থাকতে দেখে কাব্য বলে,
— কি রে এখনও ওখানে দাড়িয়ে আছিস যে! আয় কাছে আয়! পা টা টিপে দে। ভীষণ ব্যথা করছে!

নিতু কাব্য এর কথা শুনে অবাকের শেষ সীমায় পৌঁছে বলে,
— কি বললেন? পা টিপে দেবো?

কাব্য খুব শান্ত অথচ দুষ্টুমী ভঙ্গীতে উত্তর দেয়,
— হ্যাঁ। জলদি আয়। তুই না আমার বউ! আমার খেদমত করবি না!

— তাই বলে কি বাসর রাতে পা টিপে দিতে হবে নাকি?

— তো আর কি করবো?

— না মানে আজকে আমাদের বিয়ের প্রথম রাত কোথায় আমরা একটু রোমান্স করবো!

— এটাও তো রোমান্সই সোনা। এইটা একটু ভিন্নধর্মী রোমান্স। স্বামীর সেবা করা পূণ্যের কাজ বাছা।

— তাই বলে আজকে রাতে! বলি কি কালকে আপনার পা টিপে দেই? আজ রাতে আমরা গল্প করি, একটু রোমান্স করি!

— এটাও এক ধরনের রোমান্স বললাম না! নে পা টিপ এখন।

নিতু নাক মুখ কুচকে কাব্য এর পা টিপতে শুরু করলো। কোথায় সে ভেবেছিল তারা দুজন রোমান্স করবে! আর এখানে কি না সে পা টিপে দিচ্ছে।

স্বামীর সেবা করা ভালো কিন্তু তাই বলে বাসররাত এ এই ধরনের সেবা করতে হবে কে জানতো!

.
নিতুর অবস্থা দেখে কাব্য এর ভীষণ হাসি পাচ্ছে। বেচারি কে আচ্ছা জব্দ করেছে সে। বাসর রাতে সারা রাত হাত-পা টেপাবে সে তার বউ কে দিয়ে। অবশ্য এই কাজ টা কাব্য কে ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করে বিয়ে করার শাস্তি ছিল। বউ এর গায়ে তো কাপুরুষরা হাত তোলে। কাব্য শাস্তি দেবে তবে সেটা হবে ইউনিক। এই ধরনের আরো অনেক শাস্তির স্টক আছে কাব্য এর কাছে, যা ধীরে ধীরে প্রয়োগ করবে সে।
.

নিতু আধা ঘন্টার মতো কাব্য এর পা টিপে দিয়ে কাব্য এর গায়ের উপরই ঘুমিয়ে পরেছে। আর কাব্য নিতুর দিকে তাকিয়ে আছে।
যদিও সে বিয়েটা নিজের ইচ্ছায় করে নি, তবুও নিতুর তো কোনো দোষ নেই। নিতুকে ভালো না বাসার কোনো কারণ তার কাছে নেই। তবুও সে তার মন কে বেঁধে রেখেছে শুধুমাত্র তানিয়ার জন্য। কিন্তু এটা তো নিতুর প্রতি অন্যায় হবে! মস্তিষ্ক কাজ করা বন্ধ করে দিচ্ছে কাব্য এর। কি করবে সে!
.
.
.
.
.
.
.
.
.
সূর্যের প্রথম কিরণের একাংশ ব্যালকোনির কাচ ভেদ করে কথার চোখে মুখে এসে পরছে।

চোখে সূর্যের আলো পরাতে ঘুম ভেঙে যায় আমার। উঠতে গিয়ে বুকের উপর ভারী কিছু অনুভব করতেই চোখ খুলে নীল কে নিজের বুকের উপর পেলাম। নীল কে দেখে কাল রাতের সব ঘটনা চোখের সামনে ভেসে উঠছে। ইশ! কাল রাতে আমরা দুজন একসাথে! ভাবতেই কেমন লজ্জা লাগছে আমার। কাল রাতে আমি সঠিক অর্থে নীল এর স্ত্রী হয়ে উঠেছি। ইশ!!

নীল কে আস্তে করে বুকের উপর থেকে সরিয়ে দিয়ে নিচে পরে থাকা শাড়িটা কোনো মতে শরীরে পেচিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলাম। আয়নায় নিজের দিকে তাকাতে পারছি না। ভীষণ লজ্জা করছে আমার। ধ্যাত্ কি জালায় পরলাম!

.
গোসল সেরে বেরিয়ে আয়নার সামনে দাড়িয়ে আছে কথা আর আয়নার ভিতর দিয়ে ঘুমন্ত নীল এর দিকে তাকিয়ে আছে। এখন নীল শুধু এই কথার,, আর কারো ক্ষমতা নেই নীল কে কথা এর থেকে আলাদা করার। নীল আর কথা সম্পূর্ণ রূপে দুজন দুজনার হয়ে গেছে

.
কথার ভাবনায় জগতে ছেদ ঘটে কলি বেগমের জোরে জোরে দরজা ধাক্কানোর শব্দে।
— কথা দরজা খুল। এতো বেলা হয়ে গেছে এখনও ঘুমাচ্ছিস! তোর না পরীক্ষা! উঠ। কথা, দরজা খুল।

হঠাত করে এভাবে কলি বেগমের এসে পরায় কথা ভ্যাবাচেকা খেয়ে যায় কি থেকে কি করবে। নীল কে কলি বেগম দেখে ফেললে সর্বনাশ হয়ে যাবে।

— কথা! আমার ডাক কি কানে যাচ্ছে না? উঠছিস না কেনো? কথা!

এদিকে কথা ভয়ে ঘেমে নেয়ে একাকার। দরজায় তার মা দাড়িয়ে আছে আর ঘরে নীল ঘুমিয়ে আছে। এখন কথা কি করবে? এখন নিশ্চিত একটা কেলেঙ্কারি বেঁধে যাবে!!

চলবে..