Tuesday, June 24, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1600



তন্ময়ের তনু পর্ব-০৮

0

#তন্ময়ের_তনু
#পর্ব_০৮
#Jechi_Jahan

তন্ময় আমাকে রুমে রেখে চলে যায় আর আমি এখনো আয়নার সামনে দাঁড়িয়েই আছি।আমি আসলে বুঝার চেষ্টা করছি যে তন্ময় কেনো আমার পিঠে টিকা দিলো।আমি এবার আয়নায় নিজের পিঠের দিকে তাকালাম।দেখলাম আজ আমার পিঠটা একটু বেশি দেখা যাচ্ছে।

আমি-ওহ!!! এই জন্য টিকা দিলো মুখে বললে কি হতো আজব।(রেগে)

তন্ময়-ওই!!!

আমি-ক কি?(তন্ময়ের দিকে তাকিয়ে)

তন্ময়-তুমি নাস্তা বানিয়েছো?

আমি-কেনো ভালো হয়নি?(ভয়ে)

তন্ময়-কেনো বানিয়েছো?(রেগে)

আমি-কি হয়েছে বলুন না।(ভয়ে)

তন্ময়-হাত কাটা অবস্থায় তুমি নাস্তা বানিয়েছো।

আমি-এই কথা?দূর!!!(খাটে গিয়ে বসে)

তন্ময়-ওই নিজের খেয়াল রাখতে পারোনা।এই হাত কাটা অবস্থায় নাস্তা বানাতে গেলে কোন আক্কেলে।(রেগে)

আমি-বানিয়েছি তে কি হয়েছে?

তন্ময়-তোমার হাতটা একটু কাটলে আমার কোন চিন্তা ছিলোনা।কিন্তু তোমার হাতটা বেশি কেটেছে আর এই হাত নিয়ে যে নাস্তা বানাতে গেছো।যদি তোমার হাতে ইনফেকশন হয় তখন কি করবে?

আমি-হলে হবে আপনার কি?(বিরক্ত হয়ে)

নিসা-তন্ময়ের অনেক কিছু।(দরজার কাছ থেকে)

আমি-ভাবি!!!(উঠে দাঁড়িয়ে)

নিসা-আরে বসো বসো।আচ্ছা তনু তোমার বুদ্ধি সুদ্ধি নেই।তন্ময় তো সত্যিই তো বলেছে এই হাত নিয়ে কেনো গেলে নাস্তা বানাতে।(ভেতরে এসে)

আমি-এবার তুমিও শুরু করো।(মাথা নিচু করে)

তন্ময়-দেখেছো ভাবী কেমন….

নিসা-থামো তো(তন্ময়কে থামিয়ে)আচ্ছা তনু তুমি মেহেদি লাগাতে পারো?

আমি-হুম পারি!!!

নিসা-ওকে তো চলো আজকে মেহেদি লাগাবো।

আমি-ওকে চলো।

তন্ময়-ও মেডাম কই???(তনুকে উদ্দেশ্য করে)

আমি-কি?

তন্ময়-হাত কাটা ভুলে গেছো।

নিসা-আরে কিছু হবেনা চলো আগে নাস্তা করবে।

আমি-চলো।(ভাবীর সাথে যেতে গিয়ে)

তন্ময়-ভাবী তুমি যাও তনুকে আমি নিয়ে আসছি।

নিসা-ওকে (বলে চলে গেলো)

তন্ময়-চলো(আমার হাত ধরে নিচে যেতে লাগল)

আমি-(আচ্ছা তন্ময় এমন করছে কেনো আমার জন্য।আগে তো আমাকে সহ্যই করতে পারতোনা)

তন্ময়-(দিন দিন আমি কেমন তনুর প্রতি উইক হয়ে যাচ্ছি।তনুকে ছাড়া কিছুই ভালো লাগেনা)

আমরা এবার নিচে গিয়ে নাস্তা করে নিলাম।জেনি দেখি দুই তিনটা মেহেদি নিয়ে ছাদে চলে গেলো। আর ভাবীও আমাদের নিয়ে ছাদের দিকে যেতে লাগছো।ছাদে দেখি রাকিব আর সিয়ামও আছে।

সিয়াম-আরে তনু ভাবী তুমিও মেহেদী লাগাবে?

আমি-হুম।

সিয়াম-তনু ভাবী তুমি মেহেদী লাগাতে পারো?

আমি-হুম ভাইয়া।

সিয়াম-তাহলে আমাকেও লাগিয়ে দিবেন?

তন্ময়-ছেলে হয়ে মেহেদি লাগাবে?

সিয়াম-ওই আর কি?

নিসা-আচ্ছা আমরা মেহেদি লাগানোর কথা কেন তুললাম কেও বলতে পারো?

তন্ময়-সময় নষ্ট করার জন্য।

নিসা-চুপ থাকো।

জেনি-আমি বলি!যেহেতু তনু ভাবী নতুন বউ তো ওনাকে কিন্তু নতুন বউয়ের মতো লাগেনা।কারণ ওনার হাতে তো মেহেদি নেই তাই।

আমি-এতোদিন পর তোমার মনে হলো যে আমায় এখন নতুন বউয়ের মতো লাগতে হবে?

জেনি-কথা বাদ দাও আসো মেহেদী লাগাই।

আমরা এবার মেহেদি লাগাতে শুরু করলাম।আমি প্রথমে সিয়ামকে লাগাতে লাগলাম।কিন্তু সিয়াম শুধু আমার শরীর ঘেঁষে বসায় আমি অল্প একটু লাগিয়ে সরে যাই।এবার জেনি আমার হাত এ লাগাতে শুরু করে।আমার হাতে মেহেদি লাগানো শেষ হলে তন্ময় আমাকে নিয়ে উঠে যায় আর ছাদের রেলিং এর কাছে নিয়ে যায়।

তন্ময়-বিকালে ঘুরতে যাবে?

আমি-(অবাক হয়ে তন্ময়ের দিকে তাকিয়ে আছি)

তন্ময়-কি?

আমি-কি?

তন্ময়-বিকালে ঘুরতে যাবে?(বিরক্ত হয়ে)

আমি-সবাই মিলে যাবো(বলে পেছনে ফিরলাম আর পেছনে ফিরে দেখলাম যে সিয়াম একনজরে আমার পিঠের দিকে তাকিয়ে আছে।আমার চুল খোঁপা করে রাখায় পিঠটা পুরো দেখা যাচ্ছে।)

তন্ময়-পেছনে ফিরে আছো কেনো?

আমি-আমার খোঁপাটা খুলে দিবেন?

তন্ময়-ঠেকা পরে নাই তো আমার।

আমি-প্লিজ।

তন্ময়-মেহেদি নষ্ট হয়ে যাবে।(ফোনটা বের করে)

আমি-আমার পিঠ দেখা যাচ্ছে।(মাথা নিচু করে)

এটা বলার সাথে সাথে তন্ময় খোঁপাটা খুলে দেয়।

বিকালে বাবা আর মা ছাড়া আমরা সবাই ঘুরতে আসি সাথে ভাবীর বোন নিহাও আসে।আমি খেয়াল করে দেখি যে নিহা আমার দিকে কেমন করে তাকিয়ে আছে যে মনে হয় আমি ওর শত্রু।

আমি-ভাবী!!!

নিসা-হ্যাঁ তনু?

আমি-নিহা এভাবে রয়েছে কেনো?কেমন গম্ভীর।

নিসা-ও কিছু না ওর একটু মন খারাপ।

আমি-ওহ!!!

আমরা যেখানে ঘুরতে এসেছি সেখানে একটা ফুচকার দোকান দেখেছি।আর আমি ফুচকা খুব পছন্দ করি তাই দৌড়ে তন্ময়ের কাছে চলে যাই।

আমি-তন্ময় আমি ফুচকা খাবো।

তন্ময়-…………..

আমি-কথা বলছেন না কেনো?

তন্ময়-কি বলবো?(রেগে)

আমি-আমি ফুচকা খাবো।

তন্ময়-ওকে চলো।(নিহাকে দেখে)

নিহা-(বেশ খুশি আছো দেখছি বিয়ে করে)তন্ময়!

তন্ময়-আমি তোমার বড় না আমাকে ভাইয়া না ডেকে কি সারাক্ষণ তন্ময় তন্ময় ডাকো।(রেগে)

নিহা-ওসব আমার ধারা হবেনা।

তন্ময়-তুমি….

আমি-(তন্ময়কে থামিয়ে)কি জন্য ডাকলে বলো?

নিহা-তোমাকে বলবোনা তন্ময় কে বলবো।

তন্ময়-তো বলো তাড়াতাড়ি।(রেগে)

নিহা-আমিও ফুচকা খাবো।

তন্ময়-আমাদের সাথে গেলেই তো হয়।

নিহা-এখনতো পারমিশন ও নিতে হবে।

তন্ময়-চলো।

তন্ময় আজ ইচ্ছে করে তনুর হাত ধরে হাঁটছে নিহাকে দেখানোর জন্য।আসলে নিহা তন্ময়কে খুব ভালোবাসতো কিন্তু তন্ময় নিহাকে তার বোন ভাবে।আর এই জন্য যখন নিহা তন্ময়কে প্রপোজ করে তখন তন্ময় একসেপ্ট করেনা।

আমি-মামা তিন প্লেট ফুচকা দেন আর একটা তে বেশি করে ঝাল দিবেন।

তন্ময়-৩ প্লেট না ২ প্লেট দেন আর একটা প্লেটে দুইজনের জন্য দিবেন।

আমি-কেনো???

তন্ময়-দেখোই না।(নিহার দিকে তাকিয়ে)

নিহা-(আদিক্ষেতা দেখে বাঁচি না)তনু!!!

আমি-হুম।

নিহা-তুমি আমাকে চিনো?

আমি-আপনি বড় ভাবীর বোন।

নিহা-হুম!!!

আমি-কেনো?

নিহা-না এমনি।

তন্ময়-তনু ফুচকা।(তনুর মুখে একটা দিয়ে)

আমি-এটা কি হলো?(ফুচকা খেতে খেতে)

তন্ময়-আজ আমি তোমাকে খাইয়ে দিবো।

আমি-কিন্তু কেন….(মুখে আরেকটা দিয়ে দিল)

তন্ময়-নিহা খাও।(তনুকে খাওয়াতে খাওয়াতে)

তন্ময় এবার আমাকে খাইয়ে দিতে দিতে নিজেও খাচ্ছে আর বার বার নিহার দিকে তাকাচ্ছে।আমরা ঘুরাঘুরি করে প্রায় সন্ধ্যার দিকে বাড়ী ফিরলাম।আর নিহা নিজের বাড়ীতে চলে গেলো।

সাবিয়া-জেনি!!!

জেনি-হুম মা!!!

সাবিয়া-আজ নিসাকে বল ডিনার বানাতে।

জেনি-আচ্ছা মা।(বলে রুম থেকে চলে গেলো)

রহমান-অবশেষে তুমি তনুকে মেনে নিলে।

সাবিয়া-কে বলেছে তোমাকে।

রহমান-আমি নিজের চোখে দেখছি।

সাবিয়া-হুম সবে মানে শুরু করলাম।

—ডিনারের পরে—

সবার খাওয়া হলে আমি,ভাবী আর মা সবকিছু গুছিয়ে রাখি।তখন হঠাৎ মা বলে উঠে।

সাবিয়া-তনু!!!

আমি-হুম মা।

সাবিয়া-তুমি দুপুরে কি একটা বানিয়েছিলে না।

আমি-মালাই???

নিসা-তুমি এই হাত নিয়ে….

আমি-কিছু হয়নি।কি বলছিলেন মা???

সাবিয়া-ওইটা তুমি তন্মকেয় দিয়ে আসো।

আমি-কেনো?

সাবিয়া-আরে সবাইকেই দিবে আগে ওকে দিয়ে…

আমি-আচ্ছা মা।

তন্ময়-তোমার হাত আবার কেটেছো?

আমি-না।(মালাইটা পেছনে লুকিয়ে রেখেছি)

তন্ময়-দেখি(আমার কাছে এসে হাতটা সামনে আনলো)মালাই???(জোরে)

আমি-কেনো আপনি পছন্দ করেন না।

তন্ময়-আরে এটা আমার ফেভারিট।(বলে আমার হাত থেকে কেড়ে নিয়ে খেতে শুরু করলো)

আমি-এটা আপনার ফেভারিট?

তন্ময়-হুম খেয়ে দেখোনা(আমাকে খাইয়ে দিয়ে)

আমি-এটা আমি বানিয়েছি।

তন্ময়-আচ্ছা রাকিব আর সিয়াম কে দিয়ে আস।

আমি ওনার কথা শুনে বোকা বনে গেলাম।কোনো প্রশংসা না কিছু না দূর বলে নিচে যাওয়ার সময় দেখি জেনি মালাই নিয়ে উপরে আসছে।

আমি-জেনি কই যাও?

জেনি-সিয়াম ভাইয়াকে এটা দিয়ে আসতে।

আমি-(ওই সিয়াম টাকে আমার একদম সুবিধার মনে হচ্ছে না।আসার পরে আমার সাথে যা যা করেছে এখন যদি জেনির সাথেও করে)জেনি তুমি এটা আমাকে দাও আমি দিয়ে আসছি।

জেনি-ওকে(বলে চলে গেলো।

আমি-ভাইয়া আসবো(সিয়ামের রুমের সামনে)

সিয়াম- আসো তোমার জন্য মানা আছে নাকি।

আমি-আপনার জন্য মালাই এনেছি।

সিয়াম-ওই টেবিল টায় রেখে দিন।

আমিও সিয়ামের কথায় ওর খাটের পাশে থাকা টেবিলে মালাইটা রেখে দিই।আর যখন পেছনে ঘুরি তখন দেখি সিয়াম দরজা বন্ধ করে দিয়েছে।

-চলবে

তন্ময়ের তনু পর্ব-০৭

0

#তন্ময়ের_তনু
#পর্ব_০৭
#Jechi_Jahan

আমি-আপনি!!!(অবাক হয়ে)

সিয়াম-সরি ভাবি আমি আসলে পা পিছলে পরে যাচ্ছিলাম তাই আপনাকে ধরে ফেলেছি।
(আমাকে ছেড়ে)

আমি-আপনি পা পিছলে পড়বেন কেন?এখানে তো পা পিছলে পরার মতো কিছুই নেই।

সিয়াম-জানিনা ভাবী,,,সরি!!!

আমি-আচ্ছা পরেরবার সাবধানে হাঁটবেন।

সিয়াম-আচ্ছা ভাবী আপনিও সাবধানে থাকবেন।আপনাকে দেখে মনে হচ্ছে অনেক কাজ করেন।কাজটা একটু কমিয়ে করবেন।(মুচকি হেসে)

আমি-ঠিক আছে আপনি থাকুন আমি যাই।(বলে নিজের রুমে চলে এসে খাটে বসে পরলাম)

তন্ময়-কি হয়েছে তনু?

আমি-(উনি যে রুমে ছিলো আমি খেয়াল করিনি)
আপনি আমাকে তনু কেনো ডাকেন???(রেগে)

তন্ময়-তোমার নামই তো তনু।(অবাক হয়ে)

আমি-আপনি আমাকে তনু ডাকবেন না।(রেগে)

তন্ময়-আমার বয়েই গেছে।(ভেংচি কেটে)

আমি-বয়ে গেলে বয়ে গেছে তবু তনু ডাকবেন না।
(রেগে)

তন্ময়-কেনো শুনি?(শোয়া থেকে উঠে বসে)

আমি-কারণ আমাকে তনু শুধু তারাই ডাকে যারা আমাকে ভালোবাসে।আর আপনি তো আমাকে সহ্যই করেন না তাই তনু ডাকবেন না।(রেগে)

তন্ময়-কেনো আমি কি তোমায় ভালোবাসি না?
(মুখ ফসকে বেরিয়ে গেলো)

আমি-না বাসেন না।(রেগে)

এগুলো বলে দুজনেই চুপ হয়ে গেলাম।আসলে কি বলেছি আমরা এতোক্ষণ খেয়ালই করিনি।

আমি-(দূর সিয়ামের রাগ যে কেনো এনার উপর তুললাম।আর কি যে বলে ফেললাম ছিহ…)

তন্ময়-(তনু বলছে বলছে তার উপর আমি এটা কি বললাম মুখ ফসকে।মাথাটা পুরো গেছে)

আমি-সরি””””””

তন্ময়-কেনো?

আমি-আমি এসব রাগের মাথায় বলেছি কিছু মনে করবেন না প্লিজ।(মাথা নিচু করে)

তন্ময়-ওহ!!!ওকে যাও মা হয়তো ডাকবে।

আমি আর দেরি না করে রুম থেকে বের হয়ে নীচে চলে এলাম।আর নিচে রান্নাঘরে মায়ের কাছে এলাম।দেখছি মা ছুরি দিয়ে সবজি কাটছে।আমি গিয়ে মায়ের থেকে ছুরি আর সবজিগুলো নিয়ে নিলাম আর কাটতে লাগলাম।

সাবিয়া-মাত্র না গেলে।(হাত ধুতে ধুতে)

আমি-ভালো লাগছিলো না তাই।(ভয়ে ভয়ে)

দেখলাম মা আমার দিকে কেমন করে তাকিয়ে আছে।মনে হয় আমার কথাটা বিশ্বাস করেনি।

সাবিয়া-তুমি যে রান্না জানতেনা আমাকে আগে বলোনি কেনো হম????

আমি-এখন জানি তো।

সাবিয়া-আমি এখনের কথা বলেছি?

আমি-শেখার জন্য বলিনি।(ভয়ে ভয়ে)

সাবিয়া-তুমি তো দেখি মিথ্যাও বলতে পারোনা।

আমি-ইয়ে মানে,,,,,আউচ(হাত কেটে গেছে)

সাবিয়া-এই এই কি হয়েছে দেখি?(আমার হাতটা ধরে ফু দিতে দিতে বললো)অনেকটা কেটে গেছে।

আমি-মা ঠিক আছে সমস্যা নেই।

সাবিয়া-কি সমস্যা নেই??চলো বেন্ডেজ করে দি।

আমি-মা আমি করে নিবো।

সাবিয়া-দাড়াও!!!তন্ময় কি রুমে?

আমি-হুম!!!!

সাবিয়া-ওর কাছে গিয়ে বলো হাত বেঁধে দিবে।

আমি-মা তার কি দরকার আছে।

সাবিয়া-এটা আমার আদেশ তনু।(কড়া কন্ঠে)

আমি এবার ভয়ে ভয়ে রুমে ওনার কাছে গেলাম।

অভি-নিসা বলছি যে তনু মেয়েটা ভালো তাইনা?

নিসা-হুম আসলেই মেয়েটা খুব ভালো।

অভি-আল্লাহ যা করে ভালের জন্যই করে তাইনা?

নিসা-মানে?

অভি-এই যে অনু মেয়েটা তো ভালো না তাই বিয়ে এর দিন পালিয়ে গিয়েছে।আর আমার গুরুধর ভাই তো অনুর প্রেমে পাগল।এখন চিন্তা করো অনু যদি বিয়ের পরে তন্ময়কে ছেড়ে পালিয়ে যেতো তাহলে কি তনু ওর লাইফে আসত।ভাগ্যিস
বিয়ের আগে পালিয়েছে তাই তো তনু এসেছে।

জেনি-ভাইয়া!!!(দরজার কাছে দাঁড়িয়ে)

অভি-আয় ডাইনি।

জেনি-ভাবী ভাইয়া এতোক্ষণ এগুলো কি বলল?

নিসা-আরে তোমার ভাই পাগল।

অভি-পাগল তাই না!!!আচ্ছা আমার শালীটাকে তন্ময়ের বিয়েতে দেখিনি কেনো?(মুচকি হেসে)

জেনি-হ্যাঁ তো ভাবী নিহা আসেনি কেনো?ও তো ভাইয়াকে খুব ভালোবাসে তাহলে এলোনা কেনো?

নিসা-কারণ আমি বারণ করেছিলাম।আরে জানো তো ও তন্ময়ের জন্য কত পাগল।না জানি বিয়েতে আসলে কি কান্ড পাকাতো।(বিরক্ত হয়ে)

অভি-জেনি এটা পাগলের প্রমাণ প্রমাণ বুঝেছিস।
(ফোন টিপতে টিপতে)

নিসা-অভি।(জেরে চিল্লিয়ে)

***ওদিকে***

তন্ময়-এতোক্ষণ হলো এসেছো কিছু বলছোও না কিছু করছোও না সেই দাঁড়িয়েই আছো।কিছু কি বলবে?(বিরক্ত হয়ে)

আমি-(ওনাকে দেখেই আমি ভয়ে দাঁড়িয়ে আছি আর হাতের কথা কি বলবো)না কিছু না।

তন্ময়-আরেকটা কথা!!আসার পর থেকে দেখছি হাতদুটো পেছনে লুকিয়ে রেখেছো।কি আছে হাতে যে পেছনে লুকিয়ে রেখেছো।(উঠে দাঁড়িয়ে)

আমি-(এইরে ধরা খেয়ে গেলাম)কিছু না।

তন্ময়-দেখি কি আছে হাতে?(আমার কাছে এসে হাত দুটো সামনে আনার চেষ্টা করে)

আমি-কিছু নেই তন্ময় ছাড়ুন।(ধস্তাধস্তি করে)

তন্ময়-একি তোমার তো হাত কেঁটে গেছে।(আমার হাতেটা নিজের হাতে নিয়ে)

আমি-…….(ভয়ে চুপ করে আছি)

তন্ময়-গাঁধি একটা!!!!হাতটা পুরো রক্তে লাল হয়ে গেছে আর উনি হাত লুকিয়ে রাখছে।(রেগে)

এবার উনি আর কিছু না বলে আমার হাতটা ফু দিয়ে দিয়ে ব্যান্ডেজ করছে।আর আমি ওনার দিকে এক নজরে তাকিয়ে আছি।

***খাবারের টেবিলে***

রাকিব-আন্টি খাবারটা খুব মজা হয়েছে।অনেক দিন পর খাচ্ছি এমন খাবার।কে বানিয়েছে?

সাবিয়া-তোমার বন্ধুর বউ।

রাকিব-তনু ভাবি???

নিসা-হুম!!!স্পেশালি তোমার জন্য।

রাকিব-ওয়াও!!!আজ নিজেকে নিয়ে কিছুক্ষণ গর্ভ করবো ভাবছি।

তন্ময়-রান্না করেছে আমার বউ আর গর্ভ করবি নিজেকে নিয়ে।এটা কেমন কথা?

রাকিব-বন্ধু খাবার গুলো আমার জন্য বানানো হয়েছে বুঝেছে।তোমরা তো শুধু দর্শক।

তন্ময়-ওহ তাই না???

রহমান-খাওয়ার সময় এতো কথা বলছো কেন?

বাবারা খেয়ে উঠলে এবার আমরা মেয়েরা খেতে বসি শুধু আমি বাদে।আমি সবাইকে সার্ভ করছি।

জেনি-ভাবী তুমি সার্ভ কেনো করছো বসো।

আমি-জেনি আমি না খাবো না।

নিসা-কেনো খাবেনা আসো বসো।

আমি-ভাবী আমার না খিদে নেই।

নিসা-খেলে খিদা চলে আসবে আসো।

আমি-না তোমরা খাওয়া।

সাবিয়া-কি শুরু করেছো তনু!এমনিতে হাত কেটে বসে আছো তার উপর খাবোনা বলছো।

আমি-মা আমার সত্যি খেতে ইচ্ছে করছেনা।

সাবিয়া-তন্ময় তুই দেখেও কিছু বলছিস না।

তন্ময়-ওর খেতে ইচ্ছে না করলে জোর করছো কেনো?(সোফায় বসেই)

সাবিয়া-তোর বাবাকে বলবো এটা?

তন্ময়-এই তনু খাচ্ছো না কেন?(সোফা থেকে দাঁড়িয়ে)

আমি-কি?

তন্ময়-শরীল দেখেছো পেন্সিলের মতো চিকন।ফু দিলেই তো উড়ে যাবা।

আমি-আচ্ছা ফু দেন আমি যদি না উড়ি তাহলে খাবোনা বলেদিলাম।

তন্ময়-মা একে জোর করে খাইয়ে দাও।

তন্ময়ের কথায় মা এবার আমাকে জোর করে খাইয়ে দিলো।তবে একটা জিনিস খেয়াল করি যে তন্ময় প্রথমে আমাকে খাওয়ার জন্য জোর করে নি।কিন্তু বাবার কথা বলতেই আমাকে খাওয়ার জন্য জোর করছে।নিশ্চয়ই বাবাকে ভয় পায়।
আমার খাওয়া শেষ হলে আমি রুমে চলে আসি।তখন হঠাৎ জেনি রুমে আসে।

আমি-জেনি কিছু লাগবে?

জেনি-তোমাকে লাগবে।

আমি-মানে???

জেনি-তোমাদের বাড়ীতে তোমার সাথে ছিলাম যে আমার খুব ভালো লেগেছে।বারান্দায় বসে গল্প করা,রাতে চুরি করে কফি খাওয়া আর বই পড়া সব তো তোমার সাথে তোমাদের বাড়ীতে করেছি।

আমি-আচ্ছা!!!

জেনি-তো আমি বলছি যে আমার সাথে আজকে থাকোনা।আমার খুব ভালো লাগবে।

আমি-ওকে!!!!

তন্ময়-কেও কোথাও যাবেনা।(রেগে)

জেনি-কেনো?

তন্ময়- যাবেনা মানে যাবেনা।

আমি-ও বলছে যখন থাকিনা।

তন্ময়-জেনি তুই যা এখান থেকে।

জেনি-ভাইয়া আমি….

ব্যাস ওকে আর বলতে না দিয়ে হাত ধরে রুম থেকে বের করে দরজা বন্ধ করে দিলো।

তন্ময়-খুব বাইরে থাকা হচ্ছে তাইনা।

আমি-আ আমিতো….

তন্ময়-যাও শোও গিয়ে(ধমক দিয়ে)

আমি এবার দৌড় দিয়ে খাটে গিয়ে শুয়ে গেলাম।

তন্ময়-(জানিনা কেনো তনুকে অন্য কোথাও যেতে দিতে মন চায়না।আচ্ছা অনু ও তো আমার থেকে দূরে চলে গেছে ওর জন্য আমার এমন লাগেনা কেনো)নেক্সট টাইম এই ভুল করোনা।

রাতে হঠাৎ আমার ঘুম ভেঙে যায় আর আমি দেখি তন্ময় আমাকে জরিয়ে ধরে ঘুমাচ্ছে।আর উনি যে এটা ঘুমের মধ্যে করেছে এটা আমি খুব ভালো করে বুঝতে পেরেছি বালিশের দেয়াল দেখে।মাঝখানে বালিশের দেয়াল তো দূরে থাক একটা বালিশও নেই।দুটো বালিশই দুই সাইডে পরে আছে।আমি ও আর কোনো হেলদুল না করে আবার একইভাবে ঘুমিয়ে গেলাম।

***সকালে***

আমার এখানে এসে একটা অভ্যাস হয়ে গেছে রোজ সকালে গোসল করা।আজও তার ব্যাতি ক্রম হয়নি।গোসল করে আমি নাস্তা বানাতে চলে গেলাম।নাস্তা বানিয়ে শেষ করে রুমে এসে দেখি উনি খাটে পায়ের উপর পা তুলে বসে বসে মোবাইল টিপছে।আমি আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে টিস্যু দিয়ে মুখের ঘাম মুছতে লাগলাম।হঠাৎ উনি আমার পাশে দাঁড়িয়ে আমার কাজলের কৌটো থেকে একটু কাজল নিয়ে আমার পিঠে তিলের মতো করে লাগিয়ে দেয়।আমি তো অবাক।

আমি-আপনি এটা কি করেছেন?

তন্ময়-তোমার এই সাদা পিঠ দেখানোর জন্যই কি এভাবে দাঁড়িয়ে আছো?(রেগে)

আমি-মানে?

তন্ময়-তোমার বুঝতে হবেনা।(বলে চলে গেলো)

-চলবে

তন্ময়ের তনু পর্ব-০৬

0

#তন্ময়ের_তনু
#পর্ব_০৬
#Jechi_Jahan

ওদের জোরাজোরিতে বলতে লাগলাম তখন দেখি জেনি হঠাৎ ভাইয়া বলে উঠল।আর এই কারণে আমি একটু ভয় পেয়ে যাই।

নিসা-তনু কিছু হয়নি বলো।জেনি(কি ইশারা করে)

আমি-ভাবী কি ইশারা করলে?

নিসা-চুপ থাকতে।

আমি-ভাবী তোমাদেরই বলছি কারোর সাথে সেয়ার করবে না তো।(অসহায় ভাবে)

নিসা-না তুমি বলো।

আমি-চার বছর আগে আমার কলেজের একটা ছেলে হুট করে এসে আমাকে প্রপোজ করে।আর আমি তখন এসবে ভয় পেতাম তাই রিজেক্ট করে দিই।কিন্তু ও আমার পিছু ছাড়েনা।রোজ কোনো না কোনো ভাবে আমাকে প্রপোজ করতো আর আমি শুধু রিজেক্ট করতাম।একদিন দেখি ও আমার সামনে একটা ছুরি নিয়ে দাঁড়ায়।

জেনি-কি😱কিন্তু কেনো?

আমি-হাতের রগ কাটবে বলে?

নিসা-তোমার??

আমি-না ওর।

জেনি-Continue….

আমি-ও সেদিন বলেছিলো আমি যদি ওকে রিজেক্ট করি তাহলে ও হাতের রগ কেটে ফেলবে।আর আমি ভয়ে একসেপ্ট করে ফেলি।

জেনি-এত ভিতু ছিলা তুমি?

আমি-হুম!!!তো একসেপ্ট করলেও আমি ওর গার্লফ্রেন্ড এর মতো ছিলামনা।আমি ওর থেকে দূরে দূরেই থাকতাম।আর এভাবে চলতে চলতে এক বছর কেটে যায়।আর আমার ভালোবাসার তিন বছরের শুরু হয়।আমি বুঝতে পারি যে আমি ও ওকে ভালোবেসে ফেলেছিলাম।

জেনি-ভাবী এখনও কি আছে?(মুচকি হেসে)

নিসা-জেনি একটু সোবোর করো।

জেনি- Continue Again…

আমি-আমাদের রিলেশন অন্য রিলেশন গুলোর থেকে আলাদা ছিলো।একদম ছায়ার মতো ছিলাম দুজন দুজনের জন্য।কিন্তু হঠাৎ একদিন ও হারিয়ে যায়।আমাকে ছেড়ে চলে যায়।

নিসা-মানে???

আমি-ও চলে যায় আমাকে ছেড়ে।আর আমি ভাবি আজ হোক কাল হোক ও আসবেই।কিন্তু আমার ধারণা ভুল ও আসেই না।পরে কলেজ থেকে জানতে পারি ও এতোদিন আমার সাথে থেকে টাইম পাস করেছে।কেনো জানিনা এ কথা আমার বিশ্বাস হলোনা।তাই ওকে অনেকগুলো ফোন দিই প্রথমে ধরতো না কিন্তু পরে ও আমার নাম্বার টাই ব্লক করে দেয়।(চোখের পানি মুচে)

জেনি-এখন ও কোথায় তুমি জানো ভাবী?

আমি-না আর জানতেও চাইনা।

নিসা-তুমি কি ওকে এখনো চাও?

আমি-আমি যদি এখন ওকে চাই ও তাহলে সেটা পুরো মনের হবেনা শুধু আবেগের হবে।

জেনি-ভাবী ভাইয়া!!!

আমি-তোমার ভাইয়া আমাকে এখনো মেনে নেয় নি তাই কারোর জন্যই কোনো ফিলিংস নেই।

নিসা-খুব সুন্দর!!! আচ্ছা তনু, মা তো মনে হয় একাই রান্না করছে একটু গিয়ে দেখে আসোনা মায়ের কিছু লাগবে কিনা।আমি আসছি…..

আমি-আচ্ছা(পেছনে ফিরে শকড)

অভি-হ্যাঁ তনু যাও মা একা আছে তো।(হেসে)

জেনি-তা ভাইয়া তোমরা কখন এলে?

অভি-নাটক করিসনা!!! তুই তো প্রথম দেখেছিস যে আমরা তোদের স্টোরি শুরু হওয়ার সাথে সাথে এসেছি।কিরে তন্ময় বল।(গুতা দিয়ে)

তন্ময়-(তনুর কথাগুলো শুনে জানিনা কেনো খুব কষ্ট হচ্ছিল।কষ্ট টা কিসের আমি নিজেও জানি না।তনুর ভালোবাসা হারানোর কষ্ট নাকি তনু অন্য কাওকে ভালোবাসে সেটার কষ্ট) নিশ্চুপ….

নিসা-কি তন্ময় কিছু তো বলো।(মুচকি হেসে)

তন্ময়-জেনি আমার জন্য এক কাফ কফি নিয়ে আয় তো।(বলে রুম থেকে চলে গেলো)

আমি-ভাবী এটা কোনো কাজ করলে?

নিসা-আরে দেখে আয় এখন শুধু আগুনের মতো জ্বলবে আর লুচির মতো ফুলবে।(হেসে হেসে)

আমি-তোমরাও না পারো বটে।দূর!!!!!

৮ দিন পরঃ-

এই ৮ দিনেও আমার আর তন্ময়ের সম্পর্কটা একই রকমই রয়েছে।কোনো পরিবর্তন নেই এই সম্পর্ক টাতে।আজ নাকি তন্ময়ের কোন বন্ধু একটা আসবে তাই আমাকে সবকিছু রান্না করতে বলেছে আমার শ্বাশুড়ি।এ কয়দিনে আমি প্রায় অনেক কিছুই রান্না করতে শিখেছি তাই রান্না
গুলো করতে সমস্যা হয়নি।আমি রান্না সহ বাকি
সব কাজ শেষ করে শাওয়ার নিতে রুমে গেলাম।শাওয়ার নিয়ে বাথরোব টা পরে বের হয়ে এলাম।রুমে এসে আমি একদম গুটিয়ে দাঁড়িয়ে আছি কারণ তন্ময় খাটে পা ঝুলিয়ে বসে আছে।

আমি-আ আপনি?(ভয়ে)

তন্ময়-তোমাকে এভাবে দেখার খুব শখ হচ্ছিল। তাই দৌড়ে রুমে চলে এসেছি।(বিরক্ত হয়ে)

আমি-কি??(অবাক হয়ে)

তন্ময়-আমার রুম আমি আসবো না?(রেগে)

আমি-ওহ!!!এখন একটু বাইরে যান না।

তন্ময়-না আমি যেতে পারবোনা।(শুয়ে পরে)

আমি-আমি শাড়ীটা পরবো।(মাথা নিচু করে)

তন্ময়-তো পরো মানা করেছে কে??

আমি-প্লিজ!!!

তন্ময়-ওয়েট!!!(বলে খাট থেকে উঠে আলমারির কাছে যায় আর একটা ব্যাগ আমার দিকে এগিয়ে দেয়)এটা খুলে দেখো।(বলে ফোনটা বের করলো)

আমি-শাড়ী এটাতো আমার না।(ব্যাগটা খুলে)

তন্ময়-ঢং করোনা ওদিন অনুর শাড়ীটাও তোমার ছিলোনা।এখন এটা পরে রেডি হয়ে আসো।

আমি-কে দিয়েছে এটা?

তন্ময়-তোমার ৩ বছর আগের প্রেমিক।(রেগে)

আমি-তন্ময়!!!!

তন্ময়-আমি দিয়েছি।

আমি-কেনো?

তন্ময়-মা বলেছিলো দিতে এই এতো কথা বলো কেন?যাও রেডি হয়ে আসো ওরা চলে আসছে।
(রেগে)

আমি এবার তন্ময়ের দেওয়া শাড়ীটা পরে রুমে আসি আর রেডি হতে থাকি।শাড়ীটা কালো আর হলুদ কালারের তাই আমাকে বেশ মানিয়েছে।আমি চোখে একটু কাজল আর ঠোঁটে হালকা করে লাল লিপস্টিক দিলাম।চুলের মাঝখানে সিতি করে দুইসাইডের চুল মাঝখানে কাকড়া দিয়ে আটকে দিলাম।আর বাকিগুলো খোলা রাখলাম যেহেতু এখনো ভেজা চুল।

আমি-কেমন লাগছে?(আবেগের ভসে)

তন্ময়-পুরো শাতচুন্নির মতো।(হেসে হেসে)

আমি-সরি!!!ভুলে জিজ্ঞেস করে ফেলেছি।

তন্ময়-আমার চয়েস যে এতো ভালো তা এই শাড়ী টা দেখে প্রথম জানলাম।শাড়িটা তোমাকে সুন্দর লাগছেনা অনু হলে খুব সুন্দর লাগতো।

আমি-(ওনার কথা শুনে মাথাটা নিচু করে ফেলি)

তন্ময়-অবশ্য তোমাকে খারাপ ও লাগছেনা।(এটা বলে উনি সাথে সাথে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো)

আমি কোনো গয়না পরলাম না কারণ আজ আমাকে গয়না ছাড়াই ভালো লাগছে।আমি আর দেরি না করে নীচে গিয়ে ভাবীদের সাথে কাজ করতে লাগলাম।হঠাৎ দেখি মা আমাকে দেখছে।

আমি-মা আপনার কিছু লাগবে?

সাবিয়া-(আজ এই মেয়েকে তো দেখি খুব সুন্দর লাগছে এই শাড়ীতে।একে বারে বাড়ীর পাক্কা গিন্নি লাগছে।সব তো ঠিক আছে কিন্তু গায়ে কোনো গয়না পরেনি কেনো?)হ্যাঁ আমার রুমে আসো।
(বলে নিজের রুমে চলে গেলো)

আমি-মা আসবো?(মায়ের রুমে গিয়ে)

সাবিয়া-হ্যাঁ আসো!!(আলমারিতে কি খুঁজে খুঁজে)

আমি-মা আপনি কি খুঁজছেন?আমাকে দিন আমি খুঁজে দিচ্ছি। (রুমে এসে)

সাবিয়া-তার দরকার নেই তুমি বসো।

আমি-দরকার হলে বলবেন।(খাটে বসে)

সাবিয়া-তোমাকে যে আমি গয়না দিয়েছি ওগুলা কি সাজিয়ে রাখার জন্য দিয়েছি।(কড়া কন্ঠে)

আমি-…..

সাবিয়া-দেখি চুল সরাও।(আমার পাশে এসে)

আমি-হুম।(চুল গুলো সরিয়ে)

আমি চুল গুলো সরিয়ে দিলে মা আমাকে একটা মোটা চেইন পরিয়ে দেয়।আর আমি অবাক হয়ে মায়ের দিকে তাকিয়ে থাকি।

আমি-মা এটা কি করছেন?(মায়ের হাত সরিয়ে)

সাবিয়া-চুপ থাকো তুমি আর একটাও কথা বলবে না।গয়না না পরে কেনো এসেছো নিচে।তোমাকে গয়না দিয়েছি কি আলমারিতে সাজিয়ে রাখার জন্য।এখন চুপচাপ বসে থাকবে।(কড়া কন্ঠে)

মা আমাকে বকতে বকতে গয়না পরাতে লাগলেন আর আমি চুপচাপ বসে আছি।মায়ের এমন বকে বকে গয়না পরানো দেখে আমার নিজের মায়ের কথা মনে পরে গেলো।ছোট বেলায় মাও আমাকে এভাবে বকে বকে স্কুলে যাওয়ার জন্য রেডি করা তো।এসব মনে পরায় আমি মাকে জরিয়ে ধরে ফুপিয়ে কান্না করে দিই।

সাবিয়া-কি হয়েছে কাঁদছো কেনো?

আমি-কিছুনা মা আমি আসি।(বলে চলে এলাম)

বেশকিছুক্ষণ পর তন্ময়ের বন্ধু রাকিব এলো সাথে একটা ছেলে এলো মনে হয় আরেকটা বন্ধু হবে।

তন্ময়-কেমন আছিস বন্ধু?(জরিয়ে ধরে)

রাকিব-রাকিব যেমন থাকে।(তন্ময়কে ছেড়ে)

তন্ময়-তুই আর বদলাবি না।এ কে?(ছেলেটাকে)

রাকিব-তোকে আমার এক কাজিন এর কথা বলেছি এই হচ্ছে সে।

তন্ময়-ও তুমিই তাহলে সিয়াম।

সিয়াম-হুম!!!কেমন আছেন?(জরিয়ে ধরে)

তন্ময়-ভালো।

এবার আমরা একে একে সবাই পরিচিত হলাম ওদের সাথে।আমি খেয়াল করলাম সিয়াম ছেলে টা আমার দিকে শুধু বার বার তাকায়।আর ওর তাকিয়ে থাকাও কেমন যেনো।তেমন কিছু বলিনি।
ওরা নাকি কিছুদিন থাকবে এখানে তাই ওদের জন্য আমি আর ভাবী রুম গুছাতে গেলাম।

রহমান-তন্ময় তুমি এটা কি করলে?

তন্ময়-কি করলাম বাবা।(ভয়ে)

রহমান-তুই তনুর মা বাবাকে মিথ্যা বলেছিস?

তন্ময়-(এই খবর টা বাবার কানে ৮ দিন পরে এল)
না তো আমি কেন মিথ্যা বলবো?

রহমান-আমার কাছে খবর এসেছে বুঝেছো।

তন্ময়-বাবা আমি কিছু বলিনি….

সাবিয়া-তোর কথা পরে বলিস।শুনো….

রহমান-কি???

সাবিয়া-তোমার ছেলে উন্নতি করেছে।(হেসে)

রহমান-মানে?

সাবিয়া-আজকে তনুকে দেখেছোনা একটা নতুন শাড়ী পরেছে।(তন্ময়ের দিকে তাকিয়ে)

রহমান-হ্যাঁ ওকে খুব সুন্দর লেগেছিল।

সাবিয়া-জানো ওই শাড়ীটা কে দিয়েছে।

রহমান-তুমি???

সাবিয়া-আরে না তন্ময়..

রহমান-সত্যি!!!!

তন্ময়-বাবা ওদেরকে রুমে পাঠাই কেমন।(বলে রুম থেকে বের হয়ে গেলো)

রহমান-সত্যি ও দিয়েছিলো?

সাবিয়া-না আমি বলেছি দিতে।

রহমান-ওহ।

তন্ময়-রাকিব যা তোরা রুমে যা।

রাকিব-কোন রুমে?

তন্ময়-উপরে ওই দুই রুমে একটা তোর একটা সিয়ামের।যা তাড়াতাড়ি যা।

সিয়াম-আচ্ছা ভাইয়া এতো ব্যস্ত হবেন না আমরা যাচ্ছি।(উপরে উঠে গেলো)

তন্ময়-তনু রুম গুছিয়েছে কিনা আমি দেখে আসি তুই ও যা। (বলে তন্ময়ও উপরে উঠে গেলো)

আমি পুরো রুমটা ভালো ভাবে গুছিয়ে নিলাম।আর দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বড় বড় নিশ্বাস নিতে লাগ-লাম।আসলে না থেমে কাজ করেছি তো তাই।আমি দাঁড়িয়েই ছিলাম কিন্তু হঠাৎ কেও একজন পেছন থেকে আমার কোমড় চেপে জরিয়ে ধরে।আমি ভয়ে তার দিকে তাকালে অবাক হয়ে যাই।

আমি-আপনি???

-চলবে

(গাইজ ছেলেটা কে হতে পারে বলে মনে হয়?)

তন্ময়ের তনু পর্ব-০৫

0

#তন্ময়ের_তনু
#পর্ব_০৫
#Jechi_Jahan

উনি আমাকে আই লাভ ইউ বলায় আমি যেনো নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছিনা।আমি ওনাকে এখন কি বলবো ঠিক বুঝতে পারছিনা।

তন্ময়-কেনো আমাকে ছেড়ে চলে গিয়েছিলে?

আমি-আ আমি কখন চ চলে গেলাম?

তন্ময়-চলে তো গিয়েই ছিলে আমাকে ছেড়ে।আর গেলে তো গেলে এমন দিনেই গেলে যেদিন কিনা আমাদের বিয়ে হওয়ার কথা ছিল।(জরিয়ে ধরেই)

আমি-এসব কি বলছেন আপনি?(ভয়ে)

তন্ময়-I really love you onu…..

আমি-(বুঝলাম উনি আমার জায়গায় আপুকে কল্পনা করছে।এ কথা মাথায় আসতেই আমি ওনাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলাম)

তন্ময়-(হঠাৎ আমাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়)
অনু তুমি………..তনু?

আমি-হ্যাঁ আমি!!!কি করছিলেন এটা?

তন্ময়-তুমি এখানে অনু কই???……….১ মিনিট!!!

আমি-কি?

তন্ময়-তুমি অনুর শাড়ী কেনো পড়েছো?

আমি-এটা আপুর শাড়ী???

তন্ময়-ওয়াও!!আবার নাটক শুরু করেছো তুমি?

আমি-আমি আবার কি করলাম?(মাথা নিচু করে)

তন্ময়-এই শাড়ীটা আমি অনুকে দিয়েছিলাম বিয়ে এর আগে।আর তুমি এখন সেটাও নিয়ে নিলে।
(রেগে)

আমি-এটা আমি কাল আমার আলমারিতে পেয়ে ছিলাম।এটাতে আপুর আমি জানতামনা।
(কান্না করে)

তন্ময়-আমার সাথে একদম মিথ্যা বলবেনা।এটা তুমি অনুর থেকে কেড়ে নিয়েছিলে তাইনা?যাতে ও এই শাড়ীটা না পরতে পারে।(রেগে)

আমি-আপনি এসব কি বলছেন?আমি এমন কেনো করবো?(কান্না করে)

তন্ময়-তুমি আর কি করার বাকি রেখেছো?(রেগে)

আমি-আমি কি এমন করেছি যে…….

তন্ময়-গেট আউট…

আমি-প্লিজ আমার কথাটা বিশ্বাস….

তন্ময়-আমার চোখের সামনে থেকে যাও।(রেগে)

আমি আর ওখানে এক মুহুর্ত না দাঁড়িয়ে দৌড়ে বেরিয়ে গেলাম আর ছাদে এসে দাঁড়িয়ে গেলাম।

আমি-আল্লাহ তুমি কেনো আমার আপনজন দের আমার থেকে কেড়ে নাও।সবাই আমার কঠিন সময়েই কেনো আমায় ছেড়ে চলে যায়।১২ বছর আগে মাকে দূরে করে দিলে যখন আমার মাকে বেশি প্রয়োজন ছিল।আর তিন বছর আগে…..না ওর কথা নাই বা বললাম কিন্তু এখন।এখন তো তুমি তন্ময়কে ও আমার থেকে কেড়ে নিচ্ছ যাকে কিনা এখন আমার খুব প্রয়োজন।(কান্না করে)

জেনি-ভাবী।(কাঁধে হাত রেখে)

আমি-জেনি।(জরিয়ে ধরে)

জেনি-ভাবী ভাইয়াআতোমাকে কি বলেছে আমাকে বলো দেখো আমি কি করি।

আমি এবার কান্না করতে করতে ওকে সবকিছু বলি যা কিছুক্ষণ আগে ঘটেছিলো।আর জেনি এসব শুনে শুধু রাগে ফুসছে।

জেনি-ভাইয়া এমন করবে আমি ভাবিওনি।

আমি-জেনি আমি আর পারছিনা।উনিতো আমায় সহ্যই করতে পারেনা।এমন একটা অবস্থায় আমি ওনার সামনে কি করে দাড়াবো।(কান্না করে)

জেনি-ভাবী তুমি আজ ভাইয়ার সামনেই যেয়োনা।

আমি-কিন্তু কেনো?

জেনি-যেটা বলছি সেটা করোনা।

আমি-তা ঠিক আছে কিন্তু বাড়িতে থাকলে আমি কোনো না কোনো ভাবে ওনার সামনে পরেই যাব।

জেনি-তাহলে চলো আজ বাইরেই কাটাই।

আমি-বাবাকে বলে আসি।

///ওদিকে///

তন্ময়-তনুকে দেখলেই আমার এমন লাগে কেন?
যেনো মনে হয় ও আমার সামনে আসলেই শুধু নাটক করে।আর দূরে গেলে মনে হয় ওর সব কথা সত্যি।কি যে হচ্ছে আমার সাথে।(রেগে)

জেনি-ভাবী তোমার স্কুটি বাইক আছে?

আমি-হুম আছে তো।

জেনি-আগে বলোনি তো।

আমি-জানতে চাওনি তো,আচ্ছা এখন কি পরি?

জেনি-এই লাল কুর্তিটা পরো।

আমি-এটা অনেক গেরওয়ালা পরবোনা।

জেনি-আহ পরোতো।

এবার আমি ড্রেসটা পরে জেনি সহ ড্রয়িংরুমে আসলাম।ড্রয়িংরুমে এসে দেখি বাবা তন্ময় বসে বসে চা খাচ্ছে আর গল্প করছে।

আমি-এই মরেছে।(ভয়ে)

জেনি-শুনো ভাবী তুমি আগে চলে যাও।পেছনে কেও ডাকলে তাকানোর দরকার নেই ওকে।

আমি-তোমার ভাইয়া যদি….

জেনি-কিছু হবেনা আমি আছিতো।যাও!!!

আমিও এবার জেনির কথায় স্কুটির চাবিটা নিয়ে বাবাদের সামনে দৌড়ে চলে আসতে লাগলাম।

বাবা-এই দাঁড়া।

কে শুনে কার কথা আমি বাবার কথার পাত্তা না দিয়ে সেই দৌড়ে বাড়ির বাইরে চলে এলাম।

তন্ময়-জেনি তুই কোথায় যাচ্ছিস?

জেনি-তোমাকে বলার প্রয়োজন মনে করছি না।

তন্ময়-কি???(রেগে)

জেনি-আঙ্কেল আসি।

বাবা-সাবধানে যেও।

জেনি-আচ্ছা।(বলে বের হয়ে গেলো)

আমি আর জেনি সেই যে বের হলাম একেবারে সন্ধ্যায় বাড়ী ফিরলাম।কত জায়গায় গেছি নিজেরা ও জানিনা।আমি আর আজ ওই রুমে যাইনি নিজের রুমে জেনির সাথে থেকে গেলাম।

+++সকালে+++

আমি টিপ টিপ পা ফেলে আপুর রুমে প্রবেশ করি আর গিয়ে দেখি উনি রুমে নেই।মনে হয় ওয়াশ-রুমে গেছে তাই তাড়াতাড়ি আলমারির সামনে গেলাম আর একটা শাড়ী নিয়ে পিছনে ঘুরলাম।পেছনে ঘুরতেই দেখি তন্ময় আমার দিকে চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে আছে।আমি কিছু একটা
বলতে যাবো তার আগে উনি আমাকে দেওয়াল এর সাথে জোরে চেপে ধরে আর বলে।

তন্ময়-শান্তি পেয়েছো?(রেগে)

আমি-আমি ব্যাথা পাচ্ছি।(কান্না করে)

তন্ময়-আমাকে একা রেখে শান্তি পেয়েছো?(রেগে)

আমি-মানে???

তন্ময়-ওহ তুমি কিছুই জানোনা তাইনা।

আমি-আপনি কি বলছেন আমি সত্যিই কিছু বুঝতে পারছিনা।

তন্ময়-আমি এখানে থাকলে খুব বোরিং ফিল করবো কারণ আমি এখানে নতুন।(ডং করে)আর এই সুযোগ টাকে কাজে লাগিয়ে তোমরা আমাকে এখানে একা রেখে চলে গিয়েছিলে তাইনা।

আমি-আমি শুধু আপনার থেকে দূরে থাকতে চেয়েছিলাম তাই এমন করেছি।

তন্ময়-কেনো দূরে কেনো?(আমাকে ছেড়ে)

আমি-কারণ আপনি আমায় সহ্য করেননা তাই।

তন্ময়-তাই!!!ওকে দূরে যাওয়া বের করছি।

আমি-হ্যাঁ???

তন্ময়-আমাকে বোর করেছো না দেখো কি করি।

আমি-কি করবেন?(ভয়ে)

তন্ময়-বলবোনা।(আমার মুখের সামনে মুখ এনে)

আমি-সরি(মাথা নিচু করে)

তন্ময়-সেটা তোমার আগে ভাবা উচিত ছিলো।

***রাতে***

আমার ঘুম আসছেনা তাই শুধু এদিক-ওদিক গড়াগড়ি করছি।আর তন্ময় ও শুয়ে শুয়ে ফোন ঘাঁটছে।আমি হতাশায় চোখটা একটু বন্ধ করতেই বাজি ফাটানোর আওয়াজ শুনি।আর সঙ্গে সঙ্গে আমি উঠে জানালার কাছে যাই আর আকাশের দিকে তাকিয়ে বাকিগুলো দেখতে চেষ্টা করি।কিন্তু স্পর্শ ভাবে দেখা যায়না ছাদে গেলে দেখা যাবে।কিন্তু আমি একা কিভাবে যাবে আমার তো ভয় করবে।হঠাৎ আমার তন্ময়ের কথা মনে এলো।

আমি-শুনছেন।(তন্ময়ের কাছে এসে)

তন্ময়-(ফোন টিপছেই)

আমি-প্লিজ শুনুন না।(অসহায় ভাবে)

তন্ময়-কি???(বিরক্ত ভাবে)

আমি-আমার একটা রিকুয়েষ্ট রাখবেন?

আমি-তোমার রিকুয়েষ্ট আমি রাখবো বলে কি করে মনে হয় তোমার।(রেগে)

আমি-(সঙ্গে সঙ্গে মাথাটা নিচু করে নিই)

তন্ময়-বলো।

আমি-আমার সাথে একটু ছাদে যাবেন??

তন্ময়-কেনো পেত্নীর সাথে ব্যাটমিনট্যান খেলবে?

আমি-না আকাশ দেখবো।(ফট করে বলে ফেলি)

তন্ময়-পারবোনা।(বলে আবার ফোনে চালাচ্ছে)

আমি-গেলে আপনি যা বলবেন আমি তা করবো।

তন্ময়-সত্যি!!!(ফোনটা ফেলে দাঁড়িয়ে)

আমি-হুম(শুকনো ঢোক গিলে)

তন্ময়-আগে চলো তারপর বলছি।

আমি ছাদে এসে আকাশে উড়ে যাওয়া ফানুস আর বাজি গুলো ভিডিও করছি ফোন দিয়ে।

তন্ময়-এটার জন্য ছাদে আসা?(বিরক্ত হয়ে)

আমি-যেখানে এইসব হচ্ছে আমি আর আপু তো সোজা ওখানেই চলে যেতাম এসব দেখতে।কিন্তু আজকে প্রথম ছাদে এসে এসব দেখছি।

তন্ময়-অনুও আসতো এখানে?

আমি-হুম।

তন্ময়-তোমার কথা রাখবেনা?

আমি-হুম বলুন কি চান?

তন্ময়-আমরা কালকে বাড়িতে যাবো।

আমি-কি??(অবাক হয়ে)

তন্ময়-তুমি তোমার কথা রাখো।(বলে চলে গেল)

!!!!বিকেলে!!!

উনি সকালে বাবা মাকে কাজের চাপ দেখিয়ে বাড়িতে আসার পারমিশন পায়।কিন্তু আমার বাবা বিকেলে ছাড়া আমাদের বাড়ী আসতে দিবেনা।তাই তন্ময় বিকেলেই আমাদেরকে বাড়ীতে নিয়ে আসে।আমরা আসছি এটা বাড়ির কেও জানেনা।

রহমান-তোমরা???

জেনি-বাবা ভাইয়া আমাদের নিয়ে চলে এসেছে শুধু কালকে একটু ঘুরতে গিয়েছি বলে।(রেগে)

রহমান-এটা সত্যি তন্ময়?

তন্ময়-না বাবা তনুই আসতে চেয়েছিলো।

রহমান-তনু তুমি?

আমি-হুম আব্বু।(মিথ্যা বললাম)

সাবিয়া-এসেছো ভালো করেছো এবাড়ির কিছু নিয়মকানুন তোমাকে জেনে নিতে হবে।আর তাই তোমার বাড়ীতে থাকাও জুরুরি ছিল।(শক্ত হয়ে)

আমি-হুম মা।

বাড়ীতে এসেই সবার জন্য চা আর হালকা নাস্তা বানালাম ইউটিউব দেখে।আর সবাই সেটা ভালো ও পেয়েছে।যেহেতু রাতে আলাদা রান্না করা হয় তাই সিদ্ধান্ত নিলাম আমিই রান্নাটা করি।চুলায় রান্না বসালাম এমন সময় আমার শ্বাশুড়ি আসে।

সাবিয়া-তুমি রান্না করছো আজকে?

আমি-হুম।

সাবিয়া-যতই হোক তুমি বাড়ীর নতুন বউ।তাই আজকে এসব করার দরকার নেই কালকে থেকে করো।এখন নিসা আর জেনির কাছে যাও।

আমি-আচ্ছা মা।

আমি এবার নিসা ভাবীর রুমে গিয়ে দেখি জেনি আর নিসা ভাবী বসে বসে গল্প করছে।আমাকে দেখার সাথে নিসা ভাবী উঠে দাঁড়িয়ে যায়।

নিসা-আসো আসো তোমারই অপেক্ষা করছিলাম
(খাটে বসিয়ে)

আমি-কেনো?

জেনি-সিকরেট জিনিস জানার জন্য।

আমি-মানে?

জেনি-মানে আমরা তোমার লাভস্টোরি জানবো।

আমি-কি?

জেনি-হুম ভাবী বলোনা বলোনা প্লিজ।

আমি-জেনি বাচ্চামো কেনো করছো?

নিসা-আরে বলোনা তনু।

আমি অনেকক্ষণ যুদ্ধ করেও ওদের বুঝাতে পারলাম না।এবার ওদের জোরাজোরিতে বলি।

আমি-ওকে।

জেনি-হুম।

আমি-বিয়ে আগে আমি একজনকে ভালোবাস তাম আর এখনো হয়তো ভালোবাসি।

নিসা-কবে থেকে?

আমি-তিন বছর আগে থেকে।

জেনি-ভাইয়া।😱😱😱

-চলবে

তন্ময়ের তনু পর্ব-০৪

0

#তন্ময়ের_তনু
#পর্ব_০৪
#Jechi_Jahan

আমি আর তন্ময় অবাক হয়ে একে অপরের দিক এ বার বার তাকাচ্ছি।কারণ আমরা যখন রুমে আসি তখন দেখি রুমে তন্ময়ের বড় ছবিটা নেই।কিন্তু সেই ছবির জায়গায় আমাদের দুজনের ছবি লাগানো যেই ছবি কিছুক্ষণ আগে তুললাম।

তন্ময়-তুমি লাগিয়েছো এটা?(রেগে)

আমি-না না আমি লাগাইনি।

তন্ময়-মিথ্যা বলোনা তনু?(রেগে)

আমি-আমি সত্যিই লাগাইনি বিশ্বাস করুন।আ আর আমিতো মাত্রই এলাম।

তন্ময়-তুমি ছাড়া এ কাজ আর কে করবে?

আমি-আমি কিভাবে করবো?আপনি নিজেই দেখুন না ছবিটা কিছুক্ষণ আগের তোলা।

তন্ময়-তুমি লাগাওনি সেটা মানলাম কিন্তু কাওকে না কাওকে দিয়ে নিশ্চয়ই লাগিয়েছো।তুমি কি ভেবেছো এসব দেখলে আমি গলে যাবো।মোটেও না এই তন্ময় যেটা বলে সেটা করে।

জেনি-গোড়ার ডিম করে।(তন্ময়ের পেছন থেকে)

তন্মম-তুই???

জেনি-হ্যাঁ আমি!!!বাড়ীতে আসতে না আসতেই যা শুরু করেছিস না এসে আর পারলাম না।

আমি-জেনি কেও কি এই ঘরে এসেছিলো?

জেনি-না তো আমি ছাড়া কেও আসেনি।

তন্ময়-দেখেছো!!!এটা নিশ্চয়ই তুমিই করেছো।

আমি-আমি সত্যি কিছু করিনি।

জেনি-কি করোনি তোমরা?

আমি-জেনি ছবিটা এখানে কে লাগিয়েছে??

জেনি-ওহ!!!তা পছন্দ হয়েছে?

তন্ময়-না মোটেও পছন্দ হয়নি।কে করেছে এটা?

জেনি-ওহ আসলে এই ছবিটা আমি আমার এক বন্ধুকে পাঠিয়েছিলাম এই ফ্যামের সমান বানিয়ে দেয়ার জন্য।তো পরে আমি ছবিটা এনে এখানে লাগিয়ে দিই তোমাদের সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য।

তন্ময়-এটা সারপ্রাইজ হলো।(রেগে)

জেনি-কেনো তোমার পছন্দ হয়নি?

তন্ময়-এখানে পছন্দ হওয়ার কোনো কিছু থাকলে তো পছন্দ হবে।এই মেয়েটার ছায়াও আমার পছন্দ না আর ছবিতে কি পছন্দ হবে।(রেগে)

জেনি-কিসব বলছো তুমি?(রেগে)

তন্ময়-বলছি!!!তনু যদি এখনই এই ছবিটা বাইরে না ফেলে আসে তাহলে এ রুমে ওর জায়গা নেই।

জেনি-ভাইয়া তুমি কিন্তু এবার একটু বেশি বেশি করছো।(জোরে চেঁচিয়ে)

তন্ময়-দেখেছিস এই মেয়েরা তোকেও আমার থেকে আলাদা করে দিচ্ছে।জেনি একে সামনে থেকে এক্ষুনি সরা। (রেগে)

জেনি-তোমাকে দেখে আমি অবাক হয়ে যাচ্ছি ভাইয়া।যে তুমি মেয়েদের সম্মান করতে সে তুমি কিনা আজ নিজের স্ত্রীকে সরাতে বলছো।ওকে আমিও বাবাকে এ কথা বলে আসছি।(বলে রুমে থেকে চলে যায়)

(আমি এতোক্ষণ চুপ করেছিলাম আর এদের কথা শুনছিলাম।কিন্তু কথাগুলো শুনার মতো ছিলোনা এক একটা কথা তীরের মতো।যেনো তীরটা এসে আমাকে ক্ষতবিক্ষত করে দিচ্ছে।কথা গুলো শুনে চোখের পানি থামছেই না)

তন্ময়-এখনো এখানেই দাঁড়িয়ে থাকবে?

ওনার কথায় আমি রুম থেকে বের হতে যাবো।

তন্ময়-বাইরে কোথায় যাচ্ছো?

আমি-আপনিই তো বলেছেন।(কান্না করে)

তন্ময়-রুমে আসতে বলেছি।

ওনার কথায় এবার আমি রুমে এলাম আর ফ্রেশ হতে চলে গেলাম।আমি ফ্রেশ হয়ে আসলে উনিও ফ্রেশ হতে চলে যায়।

রহমান-কি তোর ভাইয়া এমন করেছে?(রেগে)

জেনি-তো আর কি বলবো বাবা।

রহমান-তুই বস আমি এখনি ওর কিছু একটা….

জেনি-বাবা দাঁড়াও!!!!

রহমান-কি???

জেনি-ভাইয়াকে তুমি এভাবে বকে বকে বুঝিয়ো না।এতে হীতে বিপরীত হয়।

রহমান-মানে বুঝলাম না।

জেনি-আমরা এমন করাতে ভাইয়া ভাবে ভাবীর কারণেই আমরা ভাইয়ার সাথে এমন করি।আর ভাইয়া সেই ভাবীর উপরেই দোষ দেয়।

রহমান-তোর কথা বুঝেছি আমি।দেখ এবার আমি কি করি।(মুচকি হেসে)

(খাবার টেবিলে)

সবাই আজ একসাথেই খেতে বসেছে।জেনি ইচ্ছে করে আমাকে আর তন্ময়কে একসাথে বসিয়েছে।
সবাই যে যার মতো খাবার খাচ্ছে।হঠাৎ বাবা বলে

রহমান-তন্ময় কালকে তোমরা কোথায় যাবে?

তন্ময়-কালকে আমি অফিসে যাবো।

রহমান-আরে তুমি আর তনয়া।

তন্ময়-বললাম তো আমি কাল অফিসে যাবো।আর তনয়ার টা তনয়াকে জিজ্ঞেস করো।

রহমান-তনয়ার কোথাও যাওয়ার নেই।যাওয়ার হলে তোমাকে নিয়েই যাবে।

তন্ময়-মানে?

রহমান-কালকে তুমি,তয়না আর জেনি মিলে তয়নাদের বাড়িতে যাবে নিয়ম অনুসারে।

তন্ময়-আমি ওসব নিয়ম মানতে পারবোনা বাবা।

রহমান-তুমি মনে হয় আমার সকালের কথাটা ভুলে গেছো।চাইলে মনে করিয়ে দিতে পারি।

তন্ময়-কয়টায় রওনা দিবো?(নিচে তাকিয়ে)

রহমান-সকালে!!!

আমি রুমে বসে আমার আর ওনার জামাকাপড় গোছাচ্ছি আর উনি শুধু রুমে পায়চারি করছে।

তন্ময়-শুনো!!!

আমি-জ্বি।

তন্ময়-আমি তোমাদের বাড়ী থেকে রোজ সকালে অফিসে চলে যাবো।আর এই ব্যাপারটা যাতে বাবা না জানে।কি বললাম বুঝেছো।

আমি-হুম।

তন্ময়-হুম যাও।

আমি এবার জামাকাপড় গুছিয়ে বারান্দায় চলে যাই আর ঘুমিয়ে পরি।ওদিকে তন্ময় চোখজোড়া খোলা রেখে শুধু চিন্তা করে যে কিভাবে ওই বাড়ী তে যাবে।কারণ ওখানে গেলেতো অনয়ার স্মৃতি গুলো ওকে রোজ কাঁদাবে।

—-সকালে—-

আমি,জেনি আর তন্ময় আমরা একসাথে আমার বাড়ীতে এলাম।বাড়ীর গেটের সামনে দাঁড়িয়ে আছি কারণ কেও ভেতর থেকে এখনো আসেনি।
হঠাৎ দেখি আমার কাজিনরা সবাই আমাদের দিকে এগিয়ে আসে আর ভেতরে প্রবেশ করায়।

আবদুল-এসেছো তোমরা তাহলে?

আমি-হুম বাবা(জরিয়ে ধরে)

আবদুল-যা তোর মায়ের সাথে দেখা করে আয়।বউভাত এ যায়নি এখন গিয়ে দেখা কর।

আমি আর দেরি না করে তাড়াতাড়ি মায়ের রুমে যাই।আর মা আমাকে দেখে মুখটা ফিরিয়ে নেয়।

আমি-মা তুমি কেমন আছো?বউভাত এর দিন বাবা বলেছিলো তুমি নাকি অসুস্থ তাই বউভাত এ আসতে পারোনি।এখন কেমন আছো তুমি?
(মায়ের কাছে গিয়ে)

মা-মিথ্যা বলেছে তোর বাবা আমি ইচ্ছে করেই যাইনি তোর বউভাতে।যাতে তোর এই মুখ আমায় দেখতে না হয়।(রেগে আমার দিকে তাকিয়ে)

আমি-মা আমার বুঝার বয়স থেকে দেখে আসছি তুমি আমাকে একটুও পছন্দ করো না।আর এই প্রশ্নটা আমি তোমাকে বার বার জিজ্ঞেস করেছি। কিন্তু তুমি আমাকে কিছুই বলোনি।মা আজ আবার জিজ্ঞেস করবো।বলোনা কেন তুমি এমন করো কেনো আমায় পছন্দ করো না???

মা-তোর এই মুখটা আমার সামনে থেকে সরা।

আমি-মা বলোনা।

মা-তোকে যেতে বলেছি না।(রেগে)

আমি এবার মায়ের রুম থেকে কান্না করতে করতে চলে আসি।আর বাইরে এসে দেখি জেনি আর তন্ময় আমার বাবা আর কাজিনদের সাথে বসে বসে গল্প করছে।

সকাল থেকে আমার কাজিনদের সাথে অনেক গল্প করেছে তন্ময় আর জেনি।বিকালে ঘুরতেও বের হয়েছি আমরা আর সন্ধ্যায় ফিরে এসেছি।

জেনি-ভাবী এই রুমটা খুব সুন্দর।

আমি-হুম কারণ এটা আমার রুম।

জেনি-কি?তাহলে তোমরা কোন রুমে থাকছো?

আমি-আপুর রুমে।

জেনি-ওহ!!!

আমি-আচ্ছা জেনি তোমার জামাকাপড় গুলো দাও আলমারিতে রেখে দিই।লাকেজ থেকে কয় দিনই বা বের করে পরবে।

জেনি-আচ্ছা আমিও রাখি।

আমি আর জেনি দুজনে মিলে আলমারিতে জামা কাপড় গুলো রাখছিলাম।হঠাৎ জেনি জামাগুলো থেকে একটা শপিংব্যাগ বের করে।

জেনি-ভাবী এটা কি একদম নতুন।

আমি-আমিও তো জানিনা দেখে তো বের করে।

জেনি-ওয়াও শাড়ী।(ব্যাগ থেকে বের করে)

আমি-এই শাড়ীটা তো আমার না।

জেনি-যারই হোক বাট শাড়ীটা খুব সুন্দর।ভাবী তুমি কালকে এটা পরো প্লিজ।

আমি-তা ঠিক আছে কিন্তু কার না কার।

জেনি-ভাবী তুমি আমার কথা রাখবেনা।

আমি-আচ্ছা কালকে পরবো।

রাতে আমরা খাওয়া দাওয়া করে যে যার রুমে চলে গেলাম।আমি রুমে এসে পরলাম এক মহা ঝামেলায়।আপুর রুমে বারান্দা নেই আমার রুমে বারান্দা আছে।এখন বারান্দা না থাকলে আমি থাকবো কোথায় ফ্লোরে তো শুতেও পারবোনা।

তন্ময়-কি হলো ঘুমাতে আসো।

আমি-কই?এখানে তো বারান্দা নেই।

তন্ময়-তোমাকে আজ থেকে বারান্দায় বা ফ্লোরে শুতে হবেনা।শীত এসেছে তো ঠান্ডা লেগে যাবে।

আমি-তাহলে শুবো কই?

তন্ময়-খাটে।

আমি-কিন্তু…

তন্ময়-মাঝখানে বালিশের দেয়াল দিয়ো।

আমি-আচ্ছা

আমরা দুজন একসাথে শুয়ে গেলাম মাঝখানে দুটো বালিশ লম্বা করে দিয়ে।সকালে ঘুম থেকে উঠে আমি গোসল করে কালকের শাড়ীটা পরলাম যেটা কালকে আলমারিতে পেলাম।শাড়ীটা এস কালারের তাই মেচিং করে চুরি আর কানের দুল পরলাম।আমি নিচে গিয়ে সবার জন্য কালকের মতো নাস্তা বানালাম।আর বেশ কিছুক্ষণ পর রুমে এসে জানালার পর্দাটা সরিয়ে দিলাম।পর্দাটা সরিয়ে কিছুক্ষণ বাইরে তাকিয়ে ছিলাম।আমি এবার পেছনে ফিরে দেখি তন্ময় আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।

আমি-আপনি উঠে গেছেন যান ফ্রেশ হয়ে আসুন।

কিন্তু উনি আমার কথার পাত্তা না দিয়ে খাট থেকে উঠে যায়।আর আমার দিকে এগিয়ে এসে হঠাৎ করেই আমাকে শক্ত করে জরিয়ে ধরে।ওনার এমন জরিয়ে ধরাতে আমি যেনো জমে গেলাম।

আমি-ত তন্ময় আপনি এ এটা কি ক করছেন?

তন্ময়-I love you….

-চলবে

তন্ময়ের তনু পর্ব-০৩

0

#তন্ময়ের_তনু
#পর্ব_০৩
#Jechi_Jahan

উনি আমার উপর উঠায় যেনো আমার ধম বন্ধ হয়ে আসছিলো।আর ওনার ধমকে তো আমার জান যায় যায় অবস্থা।কিন্তু উনি কোনো হেলদুল না করে আমাকে পর্যবেক্ষণ করছে।

তন্ময়-দেখেছো একবার নিজেকে?

আমি-(ভয়ে কিছু বলতে পারছিনা)

তন্ময়-শুনে রাখো তনয়া!!!অনু মতো সাজলেই অনু হওয়া যায়না।তোমার কোনো যোগ্যতা নেই অনুর মতো হওয়ার।(রেগে)

আমি-(ওনার কথায় চোখ থেকে পানি পরে যায়)

তন্ময়-(দেখলাম তনু কাঁদছে তাই তনুর চোখের পানিটা মুচে দিই আর বলি)এই চোখের পানিটা অন্তত আমার সামনে পেলোনা তনু।কারণ এসবে আমি গলবোনা।(বলে আমায় ধাক্কা দিয়ে দেয়)

আমি-(ওনার ধাক্কায় আমি দূরে ছিটকে পরি)

তন্ময়-আমি না আসা পর্যন্ত কোথাও যাবেনা।
(বিছানা থেকে উঠতে উঠতে)

আমি-হুম।(উঠে বসে)

তন্ময় ওয়াসরুমে গিয়ে বেশ লম্বা একটা সাওয়ার নেয়।সাওয়ার নিয়ে চেঞ্জ করে ওয়াসরুম থেকে বের হয়ে যায়।বের হওয়ার পর দেখে তনু রুমে নেই।তনুকে না দেখে তন্ময়ের রাগ উঠে যায়।

তন্ময়-এই মেয়েটা আবার আমাকে বাবার কাছ থেকে বকা শুনাবে।উপরে আসার সময় বাবা বার বার করে বলেছিলো যাতে তনুকে সহ সাথে করে নিচে নিয়ে যাই।এখন আমি কি করবো?(রেগে)

অভি(তন্ময়ের বড় ভাই)-তন্ময় নিচে চল।

তন্ময়-ভাইয়া তনু কোথায়?

অভি-বাহ বউকে খুব চোখে হারাচ্ছিস দেখছি।

তন্ময়-ভাইয়া প্লিজ!!!বলবে তনু কই?

অভি-তনু গাড়ীতে বসে আছে আর তোর জন্য গাড়ীটা ছাড়ছে না।ভাই আমার তাড়াতাড়ি কর।

তন্ময়-আমি রেডি চলো।

আমি-(এতোক্ষণ গাড়িতে বসে আছি।আমার খুব ভয় করছে তন্ময়ের জন্য আমি যে ওনার কথা মানিনি না জানি কি শাস্তি হয়)জেনি”””””

জেনি-হুম ভাবী।(গাড়ির ভেতরে তাকিয়ে)

আমি-তুমি আমার পাশে বসোনা।

জেনি-ওকে.(তনুর পাশে গিয়ে বসে)

আমি-বাঁচালে তুমি।

জেনি-এখনও বাঁচালাম সকালেই তো বাঁচালাম।

আমি-সকালে তুমি না থাকলে যে কি হতো।(ভয়ে)

“””ফ্লাসব্যাক”””

আমি-জেনি এখন আমরা কি করবো?

জেনি-ভাবী আগে আগে দেখো হোতা হে কেয়া।

আমি-মানে???

জেনি-আমি নিজেও জানিনা।

আমি-প্লিজ জেনি এটা মজা করার সময় নয়।

জেনি-ওয়েট ওয়েট ভাবতে দাও।

আমি-কি ভেবেছো?

জেনি-মাত্র তো ভাবতে শুরু করলাম।

আমি-ওকে ওকে ভাবো।

জেনি-ভাবী পেয়ে গেছি।

আমি-কি???

জেনি-ইউটিউব!!!!

আমি-এখানে ইউটিউব কোথা থেকে আসলো?

জেনি-ভাবী তুমি একটা বেক্কল।আরে ইউটিউব থেকে দেখে দেখে আমরা রান্না করবো।

আমি-ওকে।

আমি এবার ইউটিউব থেকে দেখে দেখে খাবার গুলো বানালাম।যেহেতু নিয়ম অনুযায়ী আমাকে একা একাই খাবারগুলো বানাতে হবে।বেশ কিছুক্ষণ পর আমি খাবারগুলো বানিয়ে টেবিলে রেখে দিলাম।আসার সময় আমার শ্বাশুড়ি আমার হাতে এক কাপ চা ধরিয়ে দেন।

শাবিয়া-চা টা তন্ময় কে দিয়ে আসো।

আমি-আমিই দিয়ে আসবো?(ভয়ে)

শাবিয়া-শুধু দিয়ে আসবেনা তন্ময় কে সাথে করে তারপরেই নিচে আসবে।(কঠিন গলায়)

বাকিটা সবার জানা আছে……..

“”””প্রেজেন্ট””””

অভি-এই জেনি সর।(গাড়ীর কাছে এসে)

জেনি-কেনো?

অভি-গাঁদী তন্ময় বসবে ওখানে।

জেনি-ওহ ওকে!!!(বলে গাড়ী থেকে বের হলো)

তন্ময়-তুই এই গাড়ীতেই বস।(গাড়ীতে উঠে)

জেনি-ওকে(তন্ময়ের পাশে বসে)

গাড়ীটা চলতে শুরু করলো আর কিছুক্ষণ পর তার গন্তব্যে পৌঁছালো।আমরা গাড়ি থেকে বের হয়ে সেন্টার এর ভেতরে প্রবেশ করলাম।আমি যতদূর যাচ্ছি ততোদূর পর্যন্ত সবাই আমার দিকে কেমন করে তাকিয়ে আছে।এই তাকিয়ে থাকার মানে টা আমি বুঝতে পারলেও কিছু করার নেই।
আমাকে আর তন্ময়কে পাশাপাশি বসানো হয়।

রহমান-তনু তোমার কোনো সমস্যা হচ্ছে নাতো?

আমি-না বাবা!!!

তন্ময়-বিয়ে তো করেই ফেলেছে আর সামস্যা কি থাকবে?আর থাকলেও তার সবটা নাটক।

রহমান-তন্ময়(আস্তে)

তন্ময়-আমি কিছু মিথ্যা বলিনি।

রহমান-তুমি কি ভুলে যাচ্ছো কালকে কি হয়েছে।

আমি-(বাবার কথায় কালকের কথা মনে পরে)

\\\ফ্লাসব্যাক\\\

আজ আপুর বিয়ে বলে আমি খুব খুশি।সব কাজ আমি নিজেই করছি।আমি আপুর বিয়ে উপলক্ষে একটা একটা টিয়া কালারের গ্রাউন পরেছিলাম আর মেচিং করে সেজেছিলাম।আমি আর কিছু না করে দৌড়ে আপুর কাছে চলে গেলাম।

আমি-আপু(পেছন থেকে জরিয়ে ধরে)

অনু-উপপ ছাড়তো(তনুকে ছাড়িয়ে)

আমি-আজকেও এমন করবে।(অসহায়ভাবে)

অনু-ওই চুপ থাকতো।(ধমক দিয়ে)

আমি-হুম বকে নাও শ্বশুর বাড়ি গিয়ে এই তনু
কেই মিস করবে বলে দিলাম।

অনু-একদম কানের সামনে গ্যান গ্যান করবিনা তাহলে থাপ্পড় মারবো।(ধমক দিয়ে)

আমি-হুম বুঝলাম!!!একি??

অনু-কি?

আমি-তুমি গয়না খুলছো কেনো?

অনু-ওয়াসরুমে যাবো তাই।

আমি-ওয়াসরুমে যাবে বলে গয়না খুলবে?

অনু-বেশি কথা না বলে গয়না গুলো খুলতে একটু সাহায্য কর না।

আমি-ঠিক আছে।(গয়না খুলতে খুলতে)

অনু-গয়নাগুলো খুলে যা কিছুক্ষণ পরে আসিস।

আমি-তোমাকে স্টেজে নিয়ে যাবো।

অনু-বেশি কথা বলিস না যা।(রেগে)

আমিও আর কিছু না বলে রুম থেকে বের হয়ে গেলাম।আর বেশ কিছুক্ষণ পর বাবা আমাকে
ওনার কাছে ডাকলো আর বললো-

আবদুল-তনু যা অনয়াকে নিয়ে আয়।

আমি-এখনই???

আবদুল-হুম না হয় দেরি হয়ে যাবে তো।

আমি-আচ্ছা।

আমি আবার আপুর কাছে যাই আর এবার গিয়ে দেখি আপু রুমে নেই।আমি ভাবি ওয়াশরুমে তাই ভেতরে গিয়ে দেখি আপু ওয়াশরুমেও নেই।এবার আমি ভয়ে আপুকে পুরো বাড়ী খুজেনিলাম।কিন্তু আপুকে কোথাও পেলাম না।এবার আমার আর বুঝতে বাকি রইলো না যে আপু পালিয়েছে।আমি আর কিছু না ভেবে দৌড়ে বাবার কাছে চলে যাই।

রহমান-আরে তনু এতো হাঁপাচ্ছো কেন?

আমি-ইয়ে আব্বু….

আবদুল-কি হয়েছে তনু আর অনয়া কই?

আমি-আব্বু আপু…..

আবদুল-আপু কি??

আমি-আব্বু আপু তো পালিয়েছে।

আবদুল-কি??

আমি-হ্যাঁ আব্বু আমি আপুকে সব জায়গায় খুজেছি কিন্তু কোথাও পেলাম না।

রহমান-তনু তুমি সিওর তো।

আমি-আমি সত্যি বলছি আপু বাড়ীতে নেই।

এ কথাটা পরিবারের লোক ছাড়া আর বাইরের কেও জানতে পারেনি।এখন সবাই এক চিন্তায় আছে যে আপু পালালো কেনো।আর আরেক টেনশন হচ্ছে বরকে একা কিভাবে পাঠাবে।

আবদুল-আমাকে আপনি ক্ষমা করে দিন আমি বুঝতে পারিনি আমার মেয়ে যে এমন করবে।
(তন্ময়ের বাবার হাত ধরে কেঁদে কেঁদে)

রহমান-বেয়াই আপনি এমন করছেন কেনো?কিছু হয়নি বর কনে কে নিয়ে তবেই যাবে।(হেসে)

আবদুল-মানে???

রহমান-মানে হলো আমরা প্রথমে তন্ময়ের জন্য অনয়াকে পছন্দ করেছিলাম আর এখন তনয়াকে পছন্দ করছি।দেবেন আপনার মেয়েকে?

আঙ্কেল এর কথা শুনে আমি যেনো সেখানেই থমকে গেলাম।আমি আর যাই করি এই বিয়েটা করতে পারবোনা।আমি দৌড়ে বাবার কাছে যাই।

আবদুল-তনু যদি….

আমি-না আঙ্কেল আমি বিয়ে করতে পারবোনা।আপনি অন্য কাওকে দেখেন।আমাকে ক্ষমা করে দিন আমি পারবোনা।(আঙ্কেল এর হাত ধরে)

রহমান-তুমি আমার কথাটা রাখবে না।

বাবা আমার হাত ধরে টেনে আপুর রুমে নিয়ে যায়।রুমে আপু সবকিছু রেখে চলে গেছে লেহেঙ্গা
গয়না বাকি সবকিছু।বাবা আমাকে খাটে বসায়।

আবদুল-তনু তুই তো আমার জন্য সব করিস আজ এটা করতে পারবিনা?(কান্না করে)

আমি-বাবা এটা এতো সহজ নয়।(কান্না করে)

আবদুল-মারে তুই আমার কথাটা রাখ।

বাবা আমাকে আরো বিভিন্ন ভাবে বুঝাতে লাগল।কিন্তু আমি বিয়ে করবোনা বলেই জানিয়ে দিলাম।
কিন্তু বাবার জোরাজোরিতে সেই রাজি হলাম।

—-ওদিক—-

তন্ময়-না বাবা আমি তনুকে বিয়ে করবোনা।

রহমান-তনুর মধ্যে খারাপ কি আছে?

তন্ময়-না বাবা ওর মাঝে কোনোকিছুই খারাপ নেই কিন্তু আমি পারবোনা ওকে বিয়ে করতে।

রহমান-তনু অনুর থেকেও ভালো।

তন্ময়-আমি অনুকে পছন্দ করেছি আর অনুকেই বিয়ে করবো।তনুকে আমি বিয়ে করবোনা।

এবার তন্ময় ও ওর বাবার একপ্রকার জোরা জোরিতে বিয়েতে রাজি না হয়ে পারলোনা।

///প্রেজেন্ট///

আমি ওই ভাবনা থেকে বের হয়ে সামনের দিকে তাকিয়ে দেখলাম বাবা এসেছে।আমি বসা থেকে উঠে সোজা বাবার কাছে গিয়ে বাবাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিলাম।

আবদুল-না তনু কাঁদেনা।(চোখের পানি মুছে)

আমি-তুমি এতো দেরি করে কেনো এলে?

আবদুল-আমার ভুল হয়ে গেছে।সরি!!!!

আমি-চলো বাবা বসবে চলো তোমার সাথে অনেক কথা আছে।(বাবাকে নিতে গিয়ে)

আবদুল-দাড়া আগে সবার সাথে দেখা করে নিই।

বাবা ওদিকে সবার সাথে দেখা করতে গেলে।জেনি আমাকে টেনে তন্ময় এর সাথে দাঁড় করিয়ে দেয় আর চবি তুলতে থাকে।

জেনি-ভাইয়া ভাবীকে একটু ধর।

তন্ময়-তার দরকার নেই।

জেনি-গাঁদা।(এবার জেনি নিজে এসে আমাদের ঠিক করে দেয়।আর বাকি চবি গুলোতেও জেনিই আমাদের ঠিক করে আর চবি তুলে দেয়)

প্রায় সন্ধ্যার সময় বউভাত এর অনুষ্ঠান শেষ হয়।আমরা সবাই এক সাথে বাড়ী চলে আসি শুধু জেনি ছাড়া।কারণ ও আগেই বাড়ী চলে এসেছে।বাড়িতে এসে আমি আর তন্ময় একসাথেই রুমে গেলাম আর রুমে গিয়েই আমরা শকড হলাম।

-চলবে

তন্ময়ের তনু পর্ব-০২

0

#তন্ময়ের_তনু
#পর্ব_০২
#Jechi_Jahan

আমি রুম থেকে বের হয়েও দৌড়াচ্ছি।দৌড়াতে দৌড়াতে সামনে জেনির সাথে জোরে ধাক্কা খাই।

জেনি-ভাবী তুমি?উপপ

আমি-সরি সরি জেনি তোমার লাগেনি তো?

জেনি-না না আমি ঠিক আছি।তোমার???

আমি-আমিও ঠিক আছি।

জেনি-এরকম দৌড়াচ্ছিলে কেনো??

আমি-এমনি।

জেনি-এমনি?আচ্ছা যাই হোক আমি তোমাকেই ডাকতে এসেছিলাম ভাবী।

আমি-কেনো??

জেনি-আসলে আমাদের বাড়ীতে একটা নিয়ম আছে।আর নিয়মটা হলো বাড়ীর বউকে প্রথম দিনই রান্নাঘরে পাঠাতে হয়?

আমি-শুধু রান্না ঘরে যেতে হবে?

জেনি-আরে না!রান্নাও করতে হবে।

আমি-কি রান্না?(জোরে)

জেনি-আস্তে আস্তে এমন করছো কেনো?

আমি-জেনি আমি তো রান্না জানিনা।

জেনি-কি???আচ্ছা নাস্তা বানাতে জানো?

আমি-না!!!(অসহায় মুখ করে)

জেনি-তোমাকে এখন নাস্তা বানাতে হবে।

আমি-পারিনা তো।

জেনি-ওকে আমি ব্যবস্থা করছি তুমি চলো।

আমি-হুম।

এবার আমি আর জেনি একসাথে নিচে নামলাম।নিচে গিয়ে দেখি সবাই ওখানে বসে আছে আর চা খাচ্ছে।আমার দেখে আমার শ্বাশুড়ি কাছে আসে।

সাবিয়া-এতোক্ষনে এসেছো?

জেনি-মা মাত্র তো ৮ঃ১৬ হয়েছে এতোক্ষণ কই?

সাবিয়া-প্রথম দিন একটু তাড়াতাড়ি আসতে হয়?

আমি-দুঃখিত মা।

সাবিয়া-তোমাকে কেনো ডেকেছি জানো?

জেনি-আমি বলে দিয়েছি মা।

সাবিয়া-ভালো করেছিস যা ওকে নিয়ে।

এবার জেনি আমাকে রান্নাঘরে নিয়ে এলো।রান্না ঘর আলাদা একটা ঘরেতো কেও দেখতে পায়না।

আমি-জেনি এখন কি করবো?

জেনি-ভাবী আগে আগে দেখো হোতা হে কেয়া।

তনু ঘর থেকে চলে যাওয়ার পর তন্ময় উঠে ফ্রেশ হয়ে নেয়।আর রুমে পায়চারি করতে থাকে।বেশ কিছুক্ষণ তনু হাতে চা নিয়ে রুমে আসে।

তনু-আপনার চা।(মাথা নিচু করে)

তনু মাথা নিচু করে রাখায় তন্ময়ের রাগ উঠে যায়

তন্ময়-আমার দিকে তাকিয়ে বলো।(রেগে)

তনু-আপনার চা।(মাথা উঁচু করে জোরে বলল)

তন্ময়-কত নাটক করবে তুমি।(চা টা নিয়ে)

আমি-(এ কথা বলায় আমি ওনার দিকে তাকিয়ে ভাবতে লাগলাম।যে কি এমন করেছি আমি যার কারণে আমার সব কাজ ওনার নাটক মনে হয়)

তন্ময়-(তনুর তাকিয়ে থাকা মুখটার দিকে কিছু সময় চেয়ে ভাবতে লাগলাম।তনু কত সহজ সরল একটা মেয়ে আর ওর মনে কিনা এসব। ছিহহ)
তুমি এখোনে এখানেই দাঁড়িয়ে আছো?(রেগে)

আমি-মা আপনাকে আমার সাথে করে নিচে নিয়ে যেতে বলেছে।(ভয়ে মাথা নিচু করে)

তন্ময়-তার দরকার নেই তুমি যাও।

আমি-আপনাকে নিচে নিয়ে না গেলে সবাই বলবে আমি আপনার মায়ের কথা মানিনি।(ভয়ে)

তন্ময়-যে যা ভাবার ভাবুক I don’t care.যাও!!!

আমি-প্লিজ এমন করবেন না।

তন্ময়-যাও(রেগে)

আমি ওনার ধমকে আর কিছু না বলে চলে নিচে এলাম।নীচে এসে মায়ের অনেক প্রশ্ন আর ঝারি খেতে হলো।এবার সবাইকে টেবিলে বসিয়ে নাস্তা দিতে লাগলাম।আর নাস্তার মধ্যে আমি পরোটা, গরুর মাংস ভুনা,ওমলেট আর জুস বানালাম।
সবাই খেতে শুরু করলো।এর মাঝে তন্ময় ও এসে বসলো আর খেতে শুরু করলো।

রহমান(আমার শ্বশুর)-বাহ তনু তুমিতো খুব ভালো খাবার বানাও।

আমি-হুম(বলে জেনির দিকে তাকিয়ে হাসলাম)

জেনি-হুম বাবা।(খেতে খেতে আমার দিকে তাকিয়ে একটা চোখ টিপ মারলো)।

একে একে সবাই খেয়ে উঠে গেলো।এবার আমার শ্বাশুড়ি আমাকে বসিয়ে খাবার বেরে দিলো।

সাবিয়া-তাড়াতাড়ি খাবার শেষ করে নিসাকে নিয়ে আমার রুমে এসো।(বলে ওনার রুমে চলে গেল)

আমি-ভাবী আমাকে কেনো ডাকতে পারে বলো তো?(ভাবীর দিকে তাকিয়ে)

ভাবী-জানিনা আগে খাও।

তন্ময়-বাবা আমি বাইরে গেলাম।(যেতে যেতে)

রহমান-বাইরে মানে?(অবাক হয়ে)

তন্ময়-বাইরে মানে বাইরে।(থেমে গিয়ে)

রহমান-মাথার বুদ্ধি কি লোপ পেয়েছে?আজকে তোমার বউভাত আর তুমি বাইরে যাচ্ছো।(রেগে)

তন্ময়-যে বিয়ে টাই ঠিক ভাবে হয়নি সেখানে বউভাতটা কি করে ঠিক হবে বাবা?তাছাড়া এই বিয়েটা আমি মানিনা সো কোনো বউভাত হবেনা।

রহমান-খুব বড় হয়ে গেছো না নিজের সিদ্ধান্ত নিজে নিজেই নিচ্ছো।শুনে রাখো আজ যদি তুমি বাড়ির বাইরে এক পা রাখো তাহলে আর কোনো দিনও আমাকে বাবা বলে ডাকবেনা।(রেগে)

তন্ময়-বাবা….

রহমান-আর একটা কথাও না যাও রুমে যাও।

তন্ময় রেগে ওর রুমে চলে গেলো।এতোক্ষণ ধরে এদের বাবা-ছেলের কথা আমি শুনছিলাম।

নিসা-কি তনু তাড়াতাড়ি খাও।

আমি-আমার খাওয়া শেষ।

নিসা-কি শেষ মাত্র তো খেতে বসলে।

আমি-না না আমার খাওয়া সত্যিই শেষ।

নিসা-ঠিক আছে চলে মায়ের কাছে যাই।

আমি-হুম।

এবার আমি আর ভাবী মায়ের রুমে গেলাম।

নিসা-মা আসবো?

সাবিয়া-হ্যাঁ আসো।

নিসা-মা ডাকলেন আমাদের?(ভেতরে গিয়ে)

সাবিয়া-হুম!শুনো নিসা তোমার মনে আছে বিয়ের পরের দিন আমি তোমাকে গয়না দিয়েছিলাম।

নিসা-হুম মা!! কিন্তু কেনো?

সাবিয়া-হুম তো যেভাবেই হোক তনয়া ও এখন এবাড়ির বউ।তাই আমি ওর জন্য গয়না রেখেছি। এগুলো(গয়না দিয়ে)পরিয়েই বউভাতে পাঠাবে।

নিসা-আচ্ছা মা।

আমি-(এতোক্ষণ শুধু দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে এদের কথা শুনছিলা আর কান্ড দেখছিলাম)মা!!!

সাবিয়া-কি???

আমি-ইয়ে কিছু না।

সাবিয়া-রুমে যাও তোমাকে সাজাতে আসবে।

আমি-আচ্ছা।

***রুমে***

তন্ময়-আজ এসবের জন্য শুধুমাত্র তনু দায়।ওর জন্য আজ অনু আমার থেকে দুরে আমার বাবা আমার থেকে দুরে।শুধুমাত্র তনুরই জন্য।(রেগে)

জেনি-ভাইয়া!!!

তন্ময়-কি??(রেগে)

জেনি-এমন করছিস কেনো?

তন্ময়-কিসের জন্য এসেছিস সেটা বল।(রেগে)

জেনি-বাপরে বাপ!!!রুম থেকে যা।

তন্ময়-কেনো?

জেনি-নাচার জন্য গাঁদা!!ভাবীকে সাজাবো যা।

তন্ময়-সাজালে সাজাবি কিন্তু আমাকে কেন রুম থেকে বের হতে হবে?(রেগে)

জেনি-ভাবী কে কি তোমার সামনে সাজাবো?

তন্ময়-সাজালে সাজাবি কিন্তু আমি আমার রুম থেকে এক পাও বাইরে রাখবোনা।

জেনি-ভাবী চেঞ্জ কোথায়?

তন্ময়-ওয়াসরুম আছে।

জেনি-বুঝেছি বউকে দেখার খুব শখ তাইনা।

তন্ময়-জেনি!!!!!!

জেনি-কি?????

তন্ময়-ওকে যাচ্ছি।(রুম থেকে বের হয়ে গেলো)

আমাকে সেই কখন থেকে সাজানো হচ্ছে।কিন্তু আমার কোনো হেলদুল নেই।আমি সেই মূর্তির মত বসে আছি।অবশেষে আমাকে সাজানোর পর আমি নিজেকে একনজর আয়নায় দেখেনিলাম।গোলাপি লেহেঙ্গা,মেচিং মেকআপ আর মায়ের দেওয়া গয়না গুলো সব মিলিয়ে Perfect.

জেনি-ওয়া ভাবী তোমাকে কি যে সুন্দর লাগছে।

নিসা-আসলেই অনুর থেকে তোমাকেই বেশি মানি য়েছে তন্ময় এর সাথে।বুঝছো #তন্ময়ের_তনু।
(আমার গালটা টেনে)

আমি-(ভাবীর কথা শুনে আমি মাথা নিচু করে বলি)সত্যি মানিয়েছে ভাবী?

নিসা-সত্যি তোমাকেই মানিয়েছে।

জেনি-শুনো তুমি আমার ভাবী হিসেবে(আমার মুখটা তুলে)একি ভাবী তুমি কাঁদছো কেনো?

আমি-ভাবী আমার নিজেকে কেমন ছোট মনে হচ্ছে।(কান্না করে)

নিসা-এতে নিজেকে ছোট মনে হওয়ার কি আছে?

আমি-এইযে এখানে আজ আমার বোনের থাকার কথা ছিলো।কিন্তু আজ আমি এখানে বসে আছি। তোমরা কেওতো আমাকে চাওনি আমার বোনকে চেয়েছো।আমি সব শেষ করে দিলাম।(কান্না করে)

নিসা-চুপ একটা থাপ্পড় দিবো।কান্না থামাও।

তন্ময়-ভাবী!!!(দরজার সামনে দাঁড়িয়ে)

জেনি-ছোট ভাবী ভাইয়া!!! চোখের পানি মুচো।

নিসা-কি দেবরসাহেব?

তন্ময়-আমাকে চেঞ্জ করতে হবে।

জেনি-তো চেঞ্জ করো।(শয়তানি হাসি দিয়ে)

তন্ময়-জেনি কি বলিস না বলিস?

জেনি-না ওয়াসরুম তো আছে।

তন্ময়-তুই ও না।ভাবী প্লিজ!!!(অসহায়মুখে)

নিসা-জেনি থামো!!!আচ্ছা আমরা আসি।

আমি-ভাবী আমিও যাই তোমাদের সাথে?

জেনি-তুমি তোমার বরের সাথে এসো ওকে।বড় ভাবী চলো(বলেই রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। আর ওরা যাওয়ার পরই তন্ময় দরজা বন্ধ করে দিল।দরজা বন্ধ করতে দেখে আমি ভয় পেয়ে যাই)

তন্ময়-(আমি দরজা বন্ধ করে তনুর দিকে তাকা লাম একেবারে সেম ভাবে সেজেছে।ঠিক এইভাবে ই আমি অনুকেও সাজাতে বলেছিলাম ভাবীকে)

উনি আমার দিকে কেমন করে তাকিয়ে থাকে আর আমার কাছে আসতে থাকে। আসতে আসতে উনি আমায় পাশ কাটিয়ে ওয়াশরুমের দিকে যেতে চায়।ওনাকে যেতে দেখে আমি যেনো হাঁপ ছেড়ে বাঁচি।হঠাৎ উনি আমার সামনে এসে আমার কোমর চেপে ধরে আর আমাকে টেনে বিছানার উপর ফেলে দেয়।আমাকে ফেলে উনি নিজেও আমার উপর উঠে যায়।

আমি-ত ত তন্ময় আ আপনি কি করছেন?(ভয়ে)

তন্ময়-চুপ!!!!!!!

-চলবে

তন্ময়ের তনু পর্ব-০১

0

#তন্ময়ের_তনু
#পর্ব_০১
#Jechi_Jahan

আজ আমার বড় বোনের বিয়ে হওয়ার কথা ছিল কিন্তু হঠাৎ একটা খারাপ পরিস্থিতি তে পরে বিয়ে টা আমাকেই করতে হচ্ছে।আমি বিয়েটা করবো না বলে বার বার মানা করে দিয়েছি।কিন্তু আমার বাবার কথায় বিয়েতে আর না করে পারলাম না।
আমি জানিনা এই বিয়ের ভবিষ্যত কি।কিন্তু এটা জানি যে এই বিয়ের মাধ্যমে অনেক মানুষের মন ভেঙ্গে যাবে।আমাকে রেডি করিয়ে স্টেজে বসানো হলো।আর কাজী সাহেব বিয়ে পরাতে লাগলো।

(আমার নাম তনয়া জাহান সবাই ভালো বেসে তনু ডাকে।আমার বোনের নাম অনয়া জাহান ওকেও সবাই ভালোবেসে অনু ডাকে।আমরা শুধু দুইবোন ছাড়া আমাদের আর ভাই বোন নেই।আমার মা রাজিয়া জাহান জানিনা কেন আমাকে ভালোবাসে না তবে আপুকে খুব ভালোবাসে।আমার বাবা আবদুল আজিজ আমাকেই বেশি ভালোবাসে। এটার কারণ গল্পের মাঝেই জানতে পারবেন)

অবশেষে বিয়েটা হয়েই গেলো।আমার বিদায়ের সময় মা ঘরে দরজা বন্ধ করে বসে ছিল আমার সামনে না আসার জন্য।আমি মাকে অনেক ডেকে ছিলাম কিন্তু দরজা খুলেনি।যাওয়ার সময় বাবা কে জরিয়ে ধরে খুব কেঁদেছিলাম।গাড়িতে বসেও অনেক কেঁদেছি ভাবতে পারিনি যে আমার সাথে এমন হবে।গাড়িটা ওনাদের বাড়ীর সামনে থামে।
ভেতরে গেলে সবাই আমার দিকে কেমন করে তাকিয়ে থাকে আর কিসব কানাঘুষা করে।

রহমান(আমার শ্বশুর)-তনয়া বড়দের সালাম কর।

আমি-হুম।(ওনার ছেলের সাথে আমার বিয়ের প্রস্তাব টা নি তখন আমার শ্বশুরই দিয়েছিলেন।)

আমি একে একে সবাইকে সালাম করলাম কিন্তু আমার শ্বাশুড়ি সাবিয়া খাতুনকে সালাম করতে গেলেই উনি পা টা পিছিয়ে নেন জানিনা কেনো।

সাবিয়া-জেনি তোর ছোট ভাবীকে উপরে নিয়ে যা।

জেনি(আমার ননদ)-কিন্তু মা এখানে তো আরো নিয়মকানুন বাকি আছে উপরে কেনো নিবো?

নিসা(আমার বড় জা)-আরে ফ্রেশ করে আনবে আর কি।এই ভারী ভারী লেহেঙ্গা আর গয়না পরে কতক্ষণ থাকবে ক্লান্ত হয়ে যাবেনা।যাও যাও।

সানিয়া-নিয়মকানুনের দরকার নেই ওকে ফ্রেশ করিয়ে খেতে নিয়ে আসো।যে বাড়ির বউই ঠিক নেই সেখানে আবার নিয়মকানুন কি ঠিক থাকবে।

নিসা-আচ্ছা তনু চলো তোমার রুমে যাই।

আমাকে একটা রুমে আনা হলো। রুমটা দেখে মনে হয় ওনারই হবে কারণ ওনার একটা বড় চবি লাগানো আছে রুমে।আমাকে রুমে এনে খাটে বসানো হলো।খাটে বসার সাথে সাথে আমি কান্না করে দিই।নিসা আর জেনি আমার কাছে আসে।

নিসা-কি হয়েছে তনু কাঁদছো কেনো???

আমি-কান্না করতেই আছি।

জেনি- ছোট ভাবী কোনো কি সমস্যা হচ্ছে?

আমি-আমাকে ক্ষমা করে দাও তোমরা।(কান্না করতে করতে)

জেনি-কেনো কি হয়েছে?

আমি-আমি তোমাদের সবার মন ভেঙ্গে দিয়েছি।

নিসা-কি বলছো কি তুমি?

আমি-তোমরা তো এসব আমার জন্য করোনি করেছো আমার বোনের জন্য কিন্তু আমি এখন….

নিসা-চুপ!!!!কিসব উল্টাপল্টা কথা বলছো তুমি?

জেনি-ছোট ভাবী তুমি যা ভাবছো তেমন কিছুইনা।

আমি-বিশ্বাস করো আমি নিজেও কল্পনা করিনি যে আমি এবাড়ির বউ হয়ে যাবো।

নিসা-তনু তোমার কি কিছু চোখে পরেনা।দেখেছো তো কি একটা ঘটনা ঘটে গেলো।ওই ঘটনাটার জন্য সবাই চিন্তায় ছিল তাই এমন করছে।

জেনি-বড় ভাবী দেরি হয়ে যাচ্ছে তাড়াতাড়ি করো।

নিসা-হুম!!!জেনি তুমি তনুর এসব গয়নাগুলো খুলে দাও আর ওকে ফ্রেশ হতে পাঠিয়ে দাও।আমি শাড়ীটা আনি।(বলে চলে গেলো)

জেনি-ভাবী তুমি ওয়াসরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নাও আর লেহেঙ্গাটা খুলে এসো।

আমি-না!!!

জেনি-আরে ওখানে বাথরোব আছে ওটা পরে নিও তাহলেই হবে।আসলে শাড়ী পরাবো তো নাহলে সমস্যা হবে।

আমি জেনির কথামতো ফ্রেশ হয়ে লেহেঙ্গা টা খুলে নিলাম আর বাথরোবটা পরে নিলাম।আমার ইচ্ছে করছে শাওয়ার নিতে কিন্তু এখন সম্ভব না।
আমি বের হয়ে দেখি উনি আর জেনি দাঁড়িয়ে কথা বলছে।আমি ওনাকে দেখে কি করবো কিছু বুঝতে পারছিলাম না।হঠাৎ উনি আমার দিকে রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে হনহন করে চলে গেলো।

জেনি-ভাবী আসো।

আমি-হুম।

জেনি-এই নাও(একটা শাড়ী দিয়ে)এটা পরো।

আমি-আমি পরবো?

জেনি-হ্যাঁ তুমিই তো!!! আসলে কি বলোতো আমি না সুন্দর করে শাড়ী পরাতে পারিনা।

আমি-আমিও পারিনা।

জেনি-ওকে আমি বড় ভাবীকে ডাকছি।

বলে রুম থেকে বের হয়ে গেলো।আর কিছুক্ষণ পর বড় ভাবী সহ ভেতরে এসে আমাকে শাড়ী পড়াতে শুরু করলো।একটা নীল রংয়ের শাড়ী আমাকে সুন্দর ভাবে পরিয়ে দিলো।

নিসা-এই জেনি চুলগুলোও ঠিক করে দে।

জেনি-হুম ভাবী।(আমার চুল খুলে)

নিসা-মাসআল্লাহ তনু তোমার চুল তো খুব সুন্দর।

জেনি-হুম ভাবী আসলেই তোমার চুল সুন্দর।

আমি-তাই???(ওদের দিকে তাকিয়ে)

ওরা এবার দেরি না করে আমার মাথায় একটা বেনি করে দেয় আর মাথায় গোমটা দিয়ে দেয়।ওনারা আমাকে নিয়ে এবার খাবার টেবিলে নিয়ে গিয়ে বসালো আর ওরাও বসলো।খাবার টেবিলে বসে আমার উঠে যেতে ইচ্ছে করছিলো।

—আচ্ছা তোমার বোন যেমন তুমিও কি তেমন?

—দুজনেই কি টাকার জন্য বিয়ে করেছো?

—তোমরা কি আগে এসব করে বেড়াতে?

—কার থেকে পেলে এমন শিক্ষা?

এমন আরো অনেক কথা শুনতে হচ্ছে আমাকে। আমি কেনো জানি অপমান টা সহ্য করতে পারিনা আর এনারা এখন আমাকে অপমানই করছে।যারা এসব বলছে ওরা সবাই এ পরিবারের কেও না এমনে বাইরের আত্মীয়।ওদের এসব বলার মাঝে আমার শ্বশুর ধমক দিয়প ওদেরকে থামায়।

একটা ফুল ছড়ানো খাটে আমি বসে আছি।একটু আগের বলা কথাগুলো আমার মাথা এখনো ঘুরছে।আচ্ছা এতে আমাদের দোষ কোথায় চাপে পড়ে যেমন উনি বিয়েটা করেছে তেমনি আমিও করেছি।তাহলে এখানে আমাদের দোষ কোথায়?
এসব ভাবছিলাম হঠাৎ দরজা খোলার আওয়াজ এ আমার ধ্যান ভাঙ্গে তাকিয়ে দেখি উনি এসেছে।

(শুরু থেকেই শুধু উনি উনি করছি এবার আসি পরিচয়ে।এই উনিটা ছিলেন আমার হবু দুলাভাই আর এখন আমার স্বামী।উনার নাম হচ্ছে তন্ময় চৌধুরী।উনি একজন ব্যবসায়ী বাবার ব্যবসা করে।উনি খুব ফর্সা আর লম্বা মানে চকলেট বয়)

ওনাকে ভেতরে আসতে দেখে আমি খাট নেমে যাই আর ওনাকে সালাম করতে যাই।আমি যখন ওনার পা ধরে সালাম করতে যাবো উনি ওমনি পা টা পিছিয়ে নেন আর আমাকে বলেন।

তন্ময়-আর নাটক করতে হবেনা।(রেগে)

আমি-কি???

তন্ময়-এইযে সেই দুপুর থেকে যে নাটকটা করছো সেটা আর আমার সামনে করতে হবেনা।(রেগে)

আমি-দুপুর থেকে আমি নাটক করছি?

তন্ময়-তা নয়তো কি আসলেই করছো?তুমি এতো বড় একটা লোভী সেটা আমি কল্পনাও করিনি।
টাকার জন্য তুমি নিজের বোনের হবুস্বামীকে ছিহ.
(রেগে)

আমি-কি করেছি আমি আপনার সাথে?

তন্ময়-কি করোনি সেটা বলো।তুমি আমাকে বিয়ে কেনো করেছো?(রেগে)

আমি-দুপুরে কি হয়েছিল আপনি দেখেননি।

তন্ময়-তাও তুমি কেনো বিয়ে করেছো?(রেগে)

আমি-…………

তন্ময়-যাই হোক তুমি এখন আমার চোখের সামনে থেকে যাও।আমি যেনো সকালে উঠে তোমাকে এই রুমে না দেখি যাও।

আমি-কোথায় যাবো আমি?(কান্না করে)

তন্ময়-কোথায় যাবে আমি কি করে জানি। তবুও তুমি আমার চোখের সামনে থেকে যাবে এখন।

আমি-এখন বাইরে গেলে সবাই কি বলবে।

তন্ময়-ওকে বারান্দায় যাও তুমি।(রেগে)

আমি-ঠিক আছে।বলে বারান্দায় চলে গেলাম।

তন্ময়-(তনু যদি এমন না করতো তাহলে হয়তো আমি ওকে বন্ধু হিসেবে হলেও মেনে নিতাম।কিন্তু ওর জন্য তো আমার জীবন শেষ হয়ে গেলো)

আমি-(এতে ওনার কোনো দোষ নেই এটা ভাগ্য)

+++সকালে+++

সকালে তন্ময় ঘুম থেকে উঠে যেনো অবাক হয়ে যায়।কারণ ওর রুম যেনো কোনো হুরপরী বসে আছে।কমলা রংয়ের শাড়ী পরা,কমলা রংয়ের চুড়ি,বেজা লম্বা চুল খোলা রেখে আয়নার সামনে বসে আছে। তন্ময় এক দৃষ্টিতে সেই হুরপরীটার দিকে তাকিয়ে আছে ওর মনে হচ্ছে এটা অনু।

তনয়া-(আমি সকালে উঠে গোসল করে এখন রেডি হচ্ছিলাম নীচে যাওয়ার জন্য।হঠাৎ আমার নজর গেলো তন্ময় এর উপর।উনি আমার দিকে কেমন ঘোর লাগা দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে)কিছু লাগবে আপনার?

তন্ময়-হুম তোমাকে।(অজান্তেই)

আমি-হুম???

তন্ময়-(হঠাৎ তনুর প্রশ্নে আমি বাস্তবে ফিরলাম।এবার তনুর দিকে তাকিয়ে আমার নিজের উপর রাগ হতে লাগলো)তুমি এখানে কেনো?(রেগে)

আমি-মানে?

তন্ময়-মানে কি হ্যাঁ মানে কি?তোমাকে না বলেছি সকালে যেনো তোমার এই মুখ আমি না দেখি।

আমি-রাতে ঠিক আছে তাই বলে সকালেও?

তন্ময়-তুমি যাবে কি না?

আমি-আমি এখন যেতে পারবোনা।

তন্ময়-যাবেনা না।(খাট থেকে নামতে নিয়ে)

আমি-(ওনাকে নামতে দেখে আমি ভয় পেয়ে যাই)
যাচ্ছি যাচ্ছি(বলে দৌড়ে রুম থেকে বের হয়ে যাই)

তন্ময়-এতে দৌড়ানোর কি হলো?দূর সকাল সকাল ভয় দেখিয়ে দিলাম।(রেগে)

-চলবে

লাভ উইথ মাই বেটারহাফ পর্ব-১৬ এবং শেষ পর্ব

0

#লাভ_উইথ_মাই_বেটারহাফ
#সাদিয়া_খান(সুবাসিনী)
#পর্ব-১৬

রাকিবের সামনে হাত পা বাধা অবস্থায় পড়ে আছে তৃষ্ণা।
হাতের মেহেদী লেপ্টে গেছে অনেক আগেই। কপালের দিকটায় জখম হয়ে নীলচে কালো বর্ণ।
হাত- পা বাধা অবস্থায় পড়ে থাকা তৃষ্ণার মুখে গোঙানির শব্দ।
নিজ বাসায় বন্দী তৃষ্ণার মুখে এক গ্লাস পানি ছুড়ে মারলো রাকিব।
তাকে টেনে হিচড়ে উঠিয়ে চেয়ারে বসিয়ে কল দিলো আরশাদকে।

এত কোলাহলের কারণে আরশাদ ফোন রিসিভ করেনি।রঙ্গান এবং সে ব্যস্ত মেয়ের বাড়ির লোককে আপ্যায়ন করায়।
কোথাও তৃষ্ণাকে না দেখে তুষার এগিয়ে গিয়ে তৃষ্ণাকে খুঁজতে লাগলো।
আশেপাশে কিংবা পুরো বাসা খুঁজেও যখন তৃষ্ণাকে খুঁজে পেলো না তুষার তখন ছাদে ফিরে এসে বাবার হাত ধরে বলল,

“বাবা আমার বুকের মাঝে এমন ফাকা ফাকা লাগছে কেন?আমার কলিজা কই?”

“কী হয়েছে?”

“বাবা তৃষ্ণা কোথায়?”

মুহূর্তের মধ্যে বিয়ে বাড়ির পরিবেশ হটাৎ করেই নিশ্চুপ হয়ে গেল।আরশাদ ফোনে বার বার কল দিয়ে যাচ্ছে কিন্তু ফোন বন্ধ দেখাচ্ছে।
ঘরে ফিরে এসে দেখলো বিছানার নিচে ফোন বন্ধ হয়ে পরে আছে। ফোনের ডিসপ্লে ভেঙেছে, মনে হচ্ছে কেউ খুব জোরে পা দিয়ে আঘাত করেছে।
আরশাদের এক মুহূর্তের জন্য মনে হলো তৃষ্ণা বুঝি তার থেকে দূরে চলে যাবে বলে কোথাও চলে গিয়েছে।পর মুহূর্তে মনে হলো তৃষ্ণা এতটা দায়িত্ব জ্ঞানহীন মেয়ে নয়। নিজের ভাইয়ের বিয়ের দিন এমন কিছু করবে বা এমন সিদ্ধান্ত নিবে।

যেহেতু তৃষ্ণার ফোন এ বাড়িতেই বন্ধ হয়েছে তাই ট্রেস করেও লাভ হবে না।রঙ্গান আশেপাশের রাস্তার সিসি টিভি ফুটেজ দেখতে বেরিয়েছে। যখন সে বেরিয়ে যাচ্ছিলো তুষার তার হাত ধরে বলল,

“আমার মনে হচ্ছে কেউ আমার কলিজা আমার থেকে আলাদা করে নিয়েছে। আমি শ্বাস নিতে পারছি না।দেশের অবস্থা ভালো না। না জানি কেমন আছে রে আমার বোন। খুঁজে এনে দে। বিনিময়ে যা চাইবি দিবো।”

“তোর কলিজায় হাত দিয়েছে বলছিস?আমার তো সম্মানে। আরশাদের অস্তিত্বে। চিন্তা করিস না খুব দ্রুত ঘরের সম্মান ঘরে ফিরিয়ে আনবো।”

সিসিটিভি ফুটেজে তেমন কিছুই পাওয়া গেল না।তবে এটা নিশ্চিত তৃষ্ণা বাড়ির বাহিরে যায়নি।আরশাদ নিজের ফোন হাতে ব্যস্ত ছিল।হুট করেই তার ফোনে আবার কল এলো। ব্যস্ত থাকায় আরশাদ কেটে দিলে তার ফোনে আসে একটি এম এম এস।
যেখানে তৃষ্ণা চেয়ারে বাধা অবস্থায় এবং রাকিব অভব্য ভাষা ব্যবহার করে নানান ধরনের কথা বলছে।

রঙ্গান ফিরে এসে কিছু বলার পূর্বেই আরশাদ বলল,

“রাকিব আমার থেকে প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য… ”
“তোমার থেকে না।ওকে জেলে পাঠিয়েছিল তৃষ্ণা। তাই তৃষ্ণাকে অপহরণ করেছে। আমার উচিৎ ছিল যেদিন ও তৃষ কে এসিড মারার হুমকি দিয়েছিল সেদিন ওকে শাস্তি দেওয়ার। আবার বুঝতে পারলাম” আগুন এবং শত্রুর শেষ রাখতে নেই।তবে তৃষ্ণা এবাড়িতেই আছে। ওকে বাহিরে নিয়ে যায়নি।”

“কোথায়?”

“জানি না।তবে আমরা পুরো বাসা তল্লাশী করবো।বিশেষ করে বদ্ধ ঘরগুলো।”

সেই মুহূর্তে রাকিবের কল এলো।সে নিজ থেকে জানালো কোথায় আছে। সবাই যখন বাড়ির পিছনে পৌঁছেছে রাকিব পালানোর চেষ্টা করলো না।
সে শুধু হেসে বলল,

“আমি পালালেও আমাকে ঠিক ধরে নিবি তোরা।কিন্তু আমার কাজ আমি করে ফেলেছি।আরশাদ দেখ! দুই ঘন্টা তোর বউয়ের সাথে আমি একা।ভাবতে পারছিস?আমি কী কী করতে পারি?এখন।হয়তো পুলিশের অত্যাচারে আমি স্বীকারোক্তি দিবো আমি কিছুই করিনি শুধু মাথায় আঘাত লাগায় তোর বউ মরার মতোন পড়ে আছে কিন্তু তুই তো জানিস সত্যিটা কী?এমন মেয়ের সাথে সংসার করবি?”

রাকিব এরপর আর কোনো কথা বলতে পারেনি।রঙ্গানের থাপ্পড়ে সে কানে হাত দিয়ে বসে পড়লো।তুষার এগিয়ে গিয়ে ততক্ষণে তৃষ্ণার বাধন খুলে ফেলেছে।
কোনো ভাবেই বোনকে কোলে তুলে নিয়ে ছুটলো ঘরের দিকে।আরশাদ ঠাঁয় দাঁড়িয়ে রইল শূন্য ঘরটায়।

মানসিক ভাবে যে ধাক্কাটা লেগেছিল তৃষ্ণার কিংবা শারিরীক! সব’টা কাটিয়ে উঠতে বেশ সময় লেগেছে তৃষ্ণার। এই সময়টায় সবাই তাকে সাপোর্ট করেছে। সব’চে করেছে আরশাদ।
সেরাতে কী হয়েছিল কেউ জিজ্ঞেস করেনি।অভিশপ্ত সন্ধ্যের কথা কেউ তৃষ্ণাকে মনে করাতে চায় না।তবে তৃষ্ণা নিজ থেকে সবটা বলেছিল।আরশাদ বেরিয়ে যাওয়ার পর রাকিব ঘরে প্রবেশ করে। তার পরণেও কনে পক্ষের পোশাক ছিল।ওয়াশরুমে যাবে বলে তৃষ্ণার সাহায্য চায়।তাই তৃষ্ণা তার ঘরেরটা ব্যবহার করতে বলে।পিছন ফিরে ফোন হাতে নিচ্ছিলো তখন ড্রেসিং টেবিলের আয়নায় দেখে লোকটা তার দিকে ফুলদানি তুলেছে।পিছন ফিরে তাকাতেই বাড়িটা তার কপাল বরাবর আঘাত করে। এরপর তার আর কিছুই মনে নেই।

আরশাদ তার কৃতকর্মের জন্য তৃষ্ণার কাছে শেষ একটা বার সুযোগ চেয়েছে।
রাকিবের কাজে সে সন্দেহ তো দূর তৃষ্ণাকে জিজ্ঞেস অবধি করেনি।কারণ তার বিশ্বাস রাকিবের মতোন কাপুরষ এর কোথায় বার বার ভাঙার নয়। সে ভুল করেছিল তবে পাপ করবে না।

প্রতিটি মানুষ তৃষ্ণার কাছে অনুরোধ করেছে আরশাদকে একটা বার সুযোগ দেওয়ার। কারণ প্রতিটা সম্পর্ক একটা দ্বিতীয় সুযোগ প্রাপ্য।
তৃষ্ণা কিছু বলেনি। গত কয়েকদিনে তার সব কিছু কেমন ঝাপসা হয়ে উঠেছে।
সকল স্মৃতি আরশাদের চেষ্টায় পুনরায় উজ্জ্বল। মাঝেমধ্যে তৃষ্ণা নিজেকে জিজ্ঞেস করে,
“আরশাদকে মাফ করে দেওয়ার কারণ কী এটাই যে সে রাকিবকে বিশ্বাস করেনি?”
এমন হলে কী সে আরশাদের উপর অন্যায় করছে না?
রঙ্গানকে সব’টা বলার পর রঙ্গান বলেছিল
“না। একটি সম্পর্কে বিশ্বাস আয়নার মতোন।তুই তার প্রতি বিশ্বাস দেখিয়েছিস তাই আয়নাও তোকে বিশ্বাস করছে।একটা সুযোগ সবার প্রাপ্য।”

আরশাদ প্রেমিক স্বামী হওয়ার জন্য মাঝেমধ্যে এমন সব পাগলামো করে ফেলে তৃষ্ণা তাকে ভালো না বেসে পারে না।
দুঃস্বপ্নের মতোন ভুলে যেতে চায় সেই কয়েকটা দিন।
প্রতিদিন সকালে আরশাদ ঘুম থেকে উঠে তৃষ্ণার কপালে ঠোঁট স্পর্শ করিয়ে যখন বলে,

“আমার ভালোবাসা একঝাক বোলতার মতোন।আমি চাই এই এক ঝাক বোলতা তোমায় পুরোদিন আমার কথা ক্ষণে ক্ষণে মনে করিয়ে দিক।”

“বোলতা?আর কিছু পেলে না?এখন বুঝি আমার হাত দিয়ে মাছের আঁশটে গন্ধ আসে না?কম দামী জিনিস পরলে মানে লাগে না?”

“না। কারণ ক্ষয় যাওয়া ভালোবাসায় প্রেমের প্রলেপ দিচ্ছি।ভালোবাসতে বাসতে প্রেমটা উবে গিয়েছিল। ভুলে গিয়েছিলাম প্রেমিকের অনুভূতি।”

অনেকদিন পর আজ তৃষ্ণা কলেজে এসেছে।পুরো ব্যস্ততম দিন পার করে ফিরছিল আরশাদের সাথে।
বাহিরে তখন ঝুম বৃষ্টি। তাই সি এনজি নিয়ে ফিরছিল তারা।তৃষ্ণা পাশে বসতেই আরশাদ সেই চিরচেনা গন্ধ পেল।যে গন্ধটা কেবল তৃষ্ণার থেকেই পায় সে। তৃষ্ণার হাত নিজ হাতে আবদ্ধ করে মনে মনে বলল,

“ভাগ্যিস! সময় থাকতে ভুল বুঝতে পেরেছিল।নিয়তি তাকে আরেকবার সুযোগ দিয়েছে। না হলে কী হতো?আজকের এই মুহূর্ত কী কখনো স্মৃতির পাতায় জমা হতো?”

তৃষ্ণা তার দিকে তাকিয়ে চোখ ইশারায় জিজ্ঞেস করে কী ভাবছে?
আরশাদ তৃষ্ণার ডান হাতের উল্টো পাতায় আলতো চুমু দিয়ে বলল,
” নাউ আই ফিল ইন লাভ উইথ মাই বেটারহাফ।”

(সমাপ্ত)

কিছু কথাঃ ডিভোর্স কোনো সমস্যার সমাধান নয়। একটি সম্পর্কে উভয়কেই কিছু না কিছু ত্যাগ করতে হয়। ডিভোর্স এর পর যাকে বেছে নিবেন সে আপনাকে সুখী রাখবে এমন নাও হতে পারে। সম্পর্ককে একটা শেষ সুযোগ দিয়ে দেখুন।যদি সুযোগের পর মানুষটা না বদলায় তবে সিদ্ধান্ত নিন।

লাভ উইথ মাই বেটারহাফ পর্ব-১৫

0

#লাভ_উইথ_মাই_বেটারহাফ
#সাদিয়া_খান(সুবাসিনী)
#পর্বঃ১৫

“কী বললি?মেয়ের বয়স চল্লিশ?তুষারের সাথে ওই মেয়ের পরকীয়া? আরে ওটা মেয়ে না তো!ওইটা বুড়ি, তিন বাচ্চার মা সে আবার মেয়ে বা মহিলাও বলা চলে না সে আস্ত একটা বুড়ি। মেয়েরা কুড়িতেই বুড়ি হয় আর সে চল্লিশ?ঝুনা বুড়ি।
শেষ মেষে তুষার এক ঝুনা বুড়িকে?”

রঙ্গানের এমন কথায় বেশ বিরক্ত হলো তৃষ্ণা।কোথায় সে নিজের সমস্যা নিয়ে কথা বলছিল আর কই সে তুষারকে ক্ষেপানোর জন্য এসব বলছে।সামনেই একটু দূরে তুষার দাঁড়িয়ে ফোনে কথা বলছে, তাকে বিরক্ত করার উদ্দেশ্যে সে এসব বলছে।

“তুমি থাকো তো! আমি যাচ্ছি।”

এবার রঙ্গান বসে থাকা অবস্থায় তৃষ্ণার বেনুনী তার হাতে প্যাঁচিয়ে নিয়ে একদম তার পাশে বসালো তৃষ্ণাকে।
তৃষ্ণা রঙ্গানের গা ঘেঁষে বসে পড়েছে। তখন তৃষ্ণাকে আরেক দফা বিরক্ত করার উদ্দেশ্য রঙ্গান বলল,

“কী ব্যাপার? তুই কী আমার কোলে বসবি না কী?’

” চুল ছাড়ো। ব্যথা লাগছে।”

“লাগুক। এতে যদি তোর বিরিং কিছুটা কমে।”

“লোকে দেখলে কী বলবে?বাড়িতে এত মানুষ! আমি তোমার সাথে পরকীয়া করছি।”

“নাউজুবিল্লাহ্। মেয়ের অভাব পড়ছে কী?যে তোর মতো বুড়িকে বিয়ে করবো?”

“আমি বুড়ি?”

“চল্লিশ বছরের দামড়ি বুড়ি যদি নিজেকে তোর সমান বলে তোর সাথে নিজের কম্পেয়ার করে তবে তুই বুড়ি।”

“আমার কী দোষ? আমি বুঝি না সে নিজেও একজন প্রফেশনাল আমিও তাই। তাকে মানুষ কম চিনে, স্টুডেন্ট বলো কিংবা অন্যকেউ।তার পরিচিতি কম বলে কী সে আমাকে সব সময় এমন বলতে পারে?
হ্যাঁ বুঝলাম তার কাজের অভিজ্ঞতা বেশি কিন্তু আমার কাজের চাহিদা বেশি।
সে সবসময় আমার নামে এর কাছে ওর কাছে বদনাম করবে আবার আমি কিছু বললে সবাই আমাকে কথা শোনাবে, আমি কেন সহ্য করি না, এদিকে সেই অভব্য মহিলা যে নিজ থেকে আগে লাগতে আসে সেটা সবাই ভুলে যায় তখন।”

রঙ্গান তৃষ্ণার দিকে তাকিয়ে একটু উচ্চস্বরে হেসে দিয়েছে। এদিকে অন্যমনস্ক তৃষ্ণা হঠাৎ হাসির শব্দ শুনে কিছুটা ভড়কে গিয়ে তার হেঁচকি উঠে গেছে।

তার দিকে পানি এগিয়ে দিয়ে রঙ্গান বলল,

“সে তোর কলিগ মাত্র। পাত্তা দিস না।৩০ বছরের পর থেকে শরীরের হাড় ক্ষয় হতে শুরু করে মহিলার ব্রেণ ক্ষয় হওয়া শুরু করেছে।
আমি যাচ্ছি, প্রিন্সিপালের থেকে তোর ছুটি মঞ্জুর করে নিয়ে আসবো।কেমন?এবার বল কী খাওয়াবি?”

“আগে ছুটি।ছুটি মঞ্জুর করে দিয়েছিল তবে এই অভব্য মহিলা গিয়ে বলেছে আমি আগেও ছুটি নিয়েছি এখন ছুটি নেই কী করে?
না কোনো মেডিকেল ইস্যু না অন্য কোনো জরুরী কারণ।ভাইয়ের বিয়ের জন্য ছুটি?
হাফ ডে করেও তো বিয়ে এটেন্ড করা যায়৷”

“বলেছি তো,উনার ব্রেণ ক্ষয় হওয়া শুরু করেছে। চিন্তা করিস না।”

এবার তুষার এগিয়ে এসে বলল,
“কথা হয়েছে,ছুটি মঞ্জুর করে দিবে। একটা আবেদন করতে বলল এই আরকি।অফিশিয়াল ব্যাপার স্যাপার।”

“ব্যস হয়ে গেল।আর কী?”

“তবে বলো কী খাবে?”

তুষার এবং রঙ্গান একে অপরের দিকে তাকিয়ে দু জনেই এক সঙ্গে বলল,

“কড়া করে দুধ চা। সাথে চানাচুর মাখা।”

আরশাদ অফিসের কাজে ইদানীং খুব ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। মাঝের দুদিনের বিরতিতে অনেক কাজ জমেছে।
দ্রুত হাতে কাজ শেষ করছে সে। কিছুক্ষণ পর মিটিং শুরু হবে তার।
প্রথমে মা কে কল দিয়ে তার বাবার সাথে কথা বলে নিলো সে।
তৃষ্ণাকে কল দিতেই তৃষ্ণা রিসিভ করে বলল,।
“আমি গোসলে।”
“আসবো?”
“কোনো প্রয়োজন?”
“আপনাকে আমার সবসময় প্রয়োজন।”
“আমি গোসলে।”
“ফোন সাথে কেন?”
“মাত্র ভাই কল দিয়েছিল।তাই।”
“কী খাবে বলো!”
“কিছুই না।”
“বাজারে কিছুই না পাওয়া যায় না।”
“বিরক্তির একটা সীমা থাকে।”
“প্রিয়তমা, ভালোবাসা এবং বিরক্তির কোনো সীমা থাকে না।”

“আপনার মিটিং শুরু হবে। দশ মিনিটে। পানি খেয়ে নিবেন।চশমা পরে প্রেজেন্টেশন দিবেন।আর হ্যাঁ সব ভালোয় ভালোয় হবে।”

“দ্যাটস্ মাই লেডি। আচ্ছা রাখছি।”

“হুম।”

ফোন রেখে আরশাদ মিনিট দুই জিরিয়ে নিলো।চোখ বন্ধ করে।প্রতিবার যেকোনো গুরুত্বপূর্ণ কাজে নিজেকে জড়ানোর আগে সে তৃষ্ণার সাতে ফোনে কথা বলে নেয়৷ কারণ তৃষ্ণা তার জন্য সৌভাগ্য নিয়ে আসে সব সময়।মনটা ভালো থাকে, এদিকে কাজেও শান্তি। তবে মাঝের করা ভুলগুলো সে কী করে শুধরাবে?
সে চেষ্টা করছে তার ভুলগুলো শুধরে নিতে কিন্তু কোনো অনুতপ্ততা তার মনকে শান্তি দিচ্ছে না।
যাইহোক না কেন সে তৃষ্ণাকে ছাড়তে রাজি নয়। তার করা ভুলের শাস্তি সে যেকোনো কিছু মাথা পেতে নিবে শর্ত একটাই
তৃষ্ণা তাকে ছেড়ে যেতে পারবে না।”

রঙ্গান এবং তুষার কলেজ থেকে তৃষ্ণার ছুটি মঞ্জুর করে নিয়ে এসেছে। তুষার মনে হচ্ছে তার বিয়ে নিয়ে একটু বেশিই খুশি ।
নিজের বিয়ের কাজ সে নিজ হাতে করছে।
আর তার দাদী তাকে বার বার ধমকে বলতেছে,

“ও লো ছেরা শরম নাই?নিজের বিয়ার কাম নিজেই করতাছো?”

তুষার হেসে বলল,।
“দাদী আমার বুইড়া বেটি কাম করবো তাইলে কোনো ছেমড়ি?দাদী তুমি আরেকটু জোয়ান হইলা না কেন?তাহলে বিয়াটা আমি তোমারেই করতাম।”

“ও লো মুখ পোড়া। সাহস দেখছোনি?হাত পা বাইন্ধা বাইড়ামু কিন্তু।”

ছাদে হলুদের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেখানে উচ্চস্বরে গান বাজছে।
এমন গান কে বাজাচ্ছে তাকে দেখার খুব শখ হচ্ছে তৃষ্ণার। আপাতত সে পারছে না কারণ তার হাতে মেহেদী পরানো হয়েছে। তার শ্বশুরের কথায় সে দুহাত ভর্তি মেহেদী লাগিয়েছে। কারণ উনি বলেছে যে তৃষ্ণার মেহেদী রঙা হাতে না কী তৃষ্ণাকে পুতুল পুতুল লাগে।

আরশাদ ঘরে এসেছে। ক্লোজেট থেকে নিজের কাপড় বের করার সময় সে গুনগুনিয়ে গান গাইছে,

“পাশের বাড়ির চ্যাংরা পোলা প্রেম করিতে চায়
হিন্দি গানের তালে আমায় ডাকে ইশারায়।”

এই গানটাই বাজছে উপরে।আর তৃষ্ণার মেজাজ গরম হচ্ছে তার।
তৃষ্ণা আরশাদকে ধমকে বলল,

“এমন গান কে বাজাচ্ছে?”
“কে আবার তোমার ভাই।”
“বিয়ের খুশীতে ওর মাথাটা একদম গেছে।”
“বউ যে কী জিনিস! জানলে খুশী হতো না।দেখি হা করো।”
“কী এটা।”
“কিছুই না।”
“এটা খিচুড়ি।”
“হুম তোমার প্রিয়টা। নাও হা করো খাইয়ে দিচ্ছি।”
‘খাবো না।”
“তৃষ! খাবারের সাথে রাগ আমার পছন্দ না তুমি জানো।আমিও দুপুরে খাইনি।একসাথে খাবো বলে।”

তৃষ্ণা আরশাদের এই কণ্ঠস্বর খুব ভালো করে চিনে।আরশাদ যখন গুরুত্ব দিয়ে কোনো কথা বলে তখন তার কন্ঠস্বর এমন হয়।

খাওয়া শেষ করে আরশাদ তাকে পানি খাইয়ে মুখ মুছিয়ে দিলো। তৃষ্ণা উঠে দাঁড়িয়েছে, তার পরণে হলুদ শাড়ি। এর মানে হচ্ছে সে অনুষ্ঠানে যাওয়ার জন্য একদম তৈরী।
আরশাদ কিছু না বলে তৈরী হতে চলে যায়। ফিরে এসে তৃষ্ণার সামনাসামনি দাঁড়িয়ে বলল,

“আমি জানি না আমি কী করলে তুমি আমাকে মাফ করবে। তবে আমি চাই তুমি আমাকে মন থেকে মাফ করো।তবে এটা মনে রেখো তুমি যা শাস্তি দিবে আমি মেনে নিবো কিন্তু আমাদের ডিভোর্স হচ্ছে না।”

তৃষ্ণা আরশাদের কথায় দাম্ভিকতার হাসি হেসে বলল,

“আগামী বুধ বার আমাদের ডিভোর্স নিয়ে কোর্টে যাচ্ছি। আশা করি সেদিন আপনার ভুল ভেঙে যাবে।”

চলবে।