Tuesday, August 12, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1600



তন্ময়ের তনু পর্ব-৩০ এবং শেষ পর্ব

0

#তন্ময়ের_তনু
#পর্ব_৩০_শেষ
#Jechi_Jahan

আমি অভি ভাইয়ার মেয়েকে না নিয়ে সামনে হাঁটা ধরলাম।তন্ময় আমাকে পেছন থেকে অনেক বার ডেকেছে কিন্তু আমি তাকাইনি।তখন বাচ্চা টিকে নিয়ে গিয়ে মনে হয়েছিলো যে আমার কারণে তো আমার নিজের বাচ্চাটা মারা গেছে।এখন যদি আমার কারণে অভি ভাইয়ার মেয়ের কোনো ক্ষতি হয় তাই আমি ওকে আর কোলে নিইনি।

তন্ময়-তুমি হাসপাতালের বাইরে কেনো এসেছো?
(বাইরে এসে)

আমি-আমার কেমন কেমন লাগছিলো তাই চলে এলাম।(মিথ্যা বললাম)

তন্ময়-তনু কি হয়েছে তোমার??

আমি-কি হবে??

তন্ময়-তুমিও কি আমার মত কষ্ট পাচ্ছো?

আমি-কষ্ট কেনো পাবো??

তন্ময়-এই যে সবকিছু ঠিক থাকলে আমাদের বাচ্চাটাও কিছুদিন পর পৃথিবীর আলো দেখতো।

আমি-এতো বাচ্চা বাচ্চা করছেন কেনো?(মাথা নিচু করে)

তন্ময়-কষ্ট হয় তাই.

আমি-(চুপ করে আছি)

তন্ময়-আচ্ছা তুমি পিচ্চিকে নিলেনা কেনো??

আমি-এমনে,,,

তন্ময়-এমনে এমনে ওকে নাওনি?

আমি-হুম,

তন্ময়-তনু সত্যি টা বলো

আমি-আমার শরীল খারাপ করছিলো তাই নিতে চাইনি যদি ভালো মন্দ কিছু হয়ে যায় তাই।

তন্ময়-ওহ তাই বলো।

আমি-হুম,,

তন্ময়-চলো এখন ভেতরে চলো।

আমি-তন্ময় আমার শরীলটা খারাপ করছে আমি এখন যেতে পারবোনা।

তন্ময়-ওকে চলো।

আমি-কোথায়??

তন্ময়-আরে মা আমার ক্যান্টিনে।

আমি-ওহ।

আমি আর তন্ময় ক্যান্টিনে বসে আছি।তন্ময় দু টো কফি আর সিঙ্গারা অর্ডার করেছিলো।আমি শুধু কফিটা খেয়ে বসে আছি।আর তন্ময় বসে বসে সিঙ্গারাও খাচ্ছে আর কফিও গিলছে।ওনার এমন শান্ত মুখের দিকে আমি তাকিয়ে আছি।

তন্ময়-কি??(সিঙ্গারা খেতে খেতে)

আমি-কিছু না।

তন্ময়-আমার দিকে নজর দিচ্ছো।

আমি-কি???

তন্ময়-হ্যাঁ,,,,সামনে একটা হ্যান্ডসাম ছেলে বসে থাকলে তো নজর দিবেই।

আমি-ফালতু কথা কম বলবেন।

তন্ময়-সত্যিই তো বললাম।

আমি-আমি আপনার স্ত্রী তন্ময় আমি নজর না দিলে কে দিবে শুনি।

তন্ময়-ওই,,,অতীত এ গেলে কিন্তু তুমি আমার বউ হতে না।

আমি-তো,,,(বলতে গিয়ে থেমে গেলাম,,আসলে তো অতীত এ গেলে উনি আমার দুলাভাই হতো আর আমি ওনার শালী)

তন্ময়-তনু,,,

আমি-হুম…

তন্ময়-আমি জাস্ট ফান করেছি তোমার সাথে প্লিজ সিরিয়াসলি নিওনা।

আমি-হুম।

তন্ময়-নাও সিঙ্গারা খাও।

আমি-না আমি খাবো না।

তন্ময়-শুনেছিলাম সিঙ্গারা তোমার প্রিয় তাই,,,

আমি-প্রিয় হলেও খেতে ইচ্ছে করছে না।

তন্ময়-ওকে তো হাসপাতালে চলো।

আমি-চলুন।

তন্ময় আর আমি হাসপাতালে ভাবীর কেবিনে ডুকে দেখি সবাই ওখানে বসে আছে।মেয়েটা ভাবীর কোলে শুয়ে আছে।সবাই এখন বাবুর নাম রাখার জন্য নাম চয়েস করছে।

অভি-তন্ময়,,,,আমার মেয়ের জন্য একটা নাম চয়েস করে দে না।

তন্ময়-আমি কি চয়েস করবো।

অভি-নিজের সময় তো আগেই চয়েস করেছিলি।

তন্ময়-আমি তো করেছি তুমি কেনো করলেনা।

অভি-আমি কি সময় পেয়েছি নাকি।

তন্ময়-নাম চয়েস করতে সময়ও লাগে।

অভি-চয়েস করে দিবি,,

তন্ময়-আমি পারবোনা।(মুচকি হেসে)

জেনি-ভাইয়া আমি চয়েস করেছিলাম।কিন্তু অভি ভাইয়া আমার নাম গুলোকে পাত্তাও দেয়নি।

তন্ময়-তুই কি নাম চয়েস করেছিস??

জেনি-কলি,মেহেক,রিহা,তমা…….

অভি-হয়েছে থাম থাম।

তন্ময়-কেনো কি হয়েছে??

অভি-এগুলো কোনো নাম।

তন্ময়-ভালোতো এগুলা থেকে একটা চয়েস কর।

অভি-না তুই পছন্দ করলে কর।

তন্ময়-ওকে ভেবে দেখি।

নিহা-ভাইয়া,,,(দরজার সামনে দাঁড়িয়ে)

অভি-আরে নিহা যে,,,আব্বু-আম্মু কই???

নিহা-ওরা আসছে কিন্তু আমি আমার প্রিন্সেসকে আগে আগে দেখার জন্য আগেই চলে এসেছি।

নিসা-নে কোলে নে।(নিহাকে ধরিয়ে)

নিহা-পুরো দুলাভাইর মতো।(বাবুকে কোলে নিয়ে)

অভি-দেখতে হবেনা মেয়েটা কার।

এসব নিয়ে অনেকক্ষণ হাসাহাসি হলো।ভাবীর মা আর বাবাও এলো।আমরা ওনাদের সাথে কিছু ক্ষণ বললাম।হঠাৎ নিহা বলে উঠে..

নিহা-আচ্ছা,,,বাবুর নাম কি রাখবে?

অভি-ওহ,,,তন্ময় চয়েস করেছিস???

নিহা-তন্ময়কে চয়েস করতে বলেছো ভালো করেছ।ও তো নাম রাখার মধ্যে ফাস্ট কিন্তু ভাগ্য খারাপ নামগুলো কাজে লাগলোনা।

নিসা-নিহা,,,(চোখ রাঙিয়ে)

তন্ময়-নিহা ঠিক বলেছে আমি চয়েস করল ওই নামগুলো কাজেই লাগবেনা।তারচেয়ে তুই এক কাজ কর তুই তনু কে চয়েস করতে বল।(নিহার দিকে তাকিয়ে বাঁকা হেসে)

নিহা-তনু কেনো চয়েস করবে।

অভি-যে কেওই করুক সমস্যা নেই।

নিহা-তাই বলে তনু,,,

অভি-তনু একটা নাম বলো।

আমি-আমি কি নাম চয়েস করবো??

তন্ময়-তুমি পারবে নাম চয়েস করো।

আমি বাবুটার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে চোখে বন্ধ করে ভাবতে লাগলাম কি নাম রাখা যায়।হঠাৎ আমার মাথায় একটা নাম এলো।

আমি-আনিশা,,,

তন্ময়-আনিশা???নট বেট,,তোর কেমন লেগেছে ভাইয়া??

অভি-ভালো বাট নিসা তোমার কেমন লেগেছে??

নিসা-আমাদের নামের সাথে মিলেছে দেখছি।

অভি-হুম।

তন্ময়-তোমার কেমন লেগেছে নিহা??

নিহা-নিজের বাচ্চার তো রেখেও রাখতে পারলেনা তাই শুধু অন্যের বাচ্চারই রাখতে পারলে।

তন্ময়-পেরেছি বলে রেখেছি।

আমরা সবাই বাড়ীতে চলে এলাম।এবার ভাবীর মা-বাবা আর নিহাও এসেছে।আমি এখন পর্যন্ত আনিশাকে কোলে নিইনি।এই কয়দিনে তন্ময় বেশ কয়েকবার আমার কোলে আনিশাকে দিতে চেয়ে ছিলো আমি ওকে না নিয়ে শুধু ইগনোর করতাম।কিন্তু আজ আনিশার আকিকা থাকায় সকালে আমরা আমি,জেনি,নিহা ভাবীর কাছেই ছিলাম।

নিসা-তনু আমি তো তোমায় একবারও আনিশাকে কোলে নিতে দেখলাম না।

আমি-ভাবী আসলে…..

নিসা-এত কাজ করো যে কোলে নেওয়ার সময়ও পাওনা।নাও এখন কোলে নাও(আমার সামনে আনিশাকে ধরে)

আমি-(আমার তো সদিন থেকে বাচ্চাদের নিতেই ভয় লাগে।এখন ভাবীকে কিভাবে বারণ করি)না ভাবী আমি পরে আনিশাকে কোলে নিব।

নিসা-কোলে নেওয়ার সময়ই পাওনা।

আমি-আমি পরে আনিশাকে কোলে নিবো।

নিহা-আপু তুই পরে কোলে নিতে দিস না।

নিসা-নিহা কি বলছিস এসব?(রেগে)

নিহা-রাগ দেখিয়ে লাভ নেই,,,যে নিজের বাচ্চাকে সামলাতে পারেনি সে তোর বাচ্চাকে কি সামলাবে তাই পরে হলেও দিসনা।

জেনি-নিহা তুমি কিন্তু ভাবীকে অপমান করছো।

নিহা-জেনি আমি কাওকে অপমান করছিনা শুধু সত্যি টা বলছি।

নিসা-কি এমন সত্যি বলেছিস তুই যে আমার মেয়ের ভালো হয়ে গেলল।তুই এখানে আসার পর থেকেই আমি ভয় ভয় আছি।যে কি না কি করে ফেলিস কি না কি বলে ফেলিস।শুন তুই আজ আমার মেয়ের আকিকায় থাকবিনা চলে যাবি।

আমি-ভাবী এসব কি বলছো???

নিসা-তুমি চুপ থাকো তনু।ও অনেক বেশি বেড়ে গেছে।তোমায় পছন্দ করে না বলে কি যা নয় তাই বলবে।(রেগে)

আমি-থাক বাদ দাওনা।

জেনি-হ্যাঁ ভাবী,,, এখন ছাড়ো এসব।

নিসা-ওকে বারণ করে দাও এসব করতে।

জেনি-ভাবী তুমি রুমে যাও।

আমি-হুম।

আমি রুমে এসে খাটে বসে পরলাম।আজ আমার চোখের পানি যেনো বাঁধ মানছে না।আমি কান্না করতেই আছি।আজ নিহার কথা গুলো সত্যি হলেও আমার শুনতে খুব খারাপ লেগেছিলো।
আমি কান্না করার সময় বুঝতে পারি কেও রুমে এসেছে তাই তারাতারি চোখের পানি মুচে ফেলি।

তন্ময়-তনু,,

আমি-হুম।

তন্ময়-আজ আকিকায় কি পরবে??

আমি-শাড়ী পরবো হয়তো এখনো ঠিক করিনি।

তন্ময়-শাড়ী পরোনা এটা পরো।(আমার হাতে একটা ব্যাগ ধরিয়ে)

আমি-কি আছে এতে??

তন্ময়-খুলে দেখো।

আমি বাক্সটা খুলে দেখি লেমন কালারের একটা লং ড্রেস।ড্রেস টা খুব ঘেরওয়ালা কিন্তু বেশি ডিজাইন নেই শুধু শুধু ছোট ছোট স্টোন বসানো।

তন্ময়-কেমন লেগেছে??

আমি-সুন্দর।

তন্ময়-এটা পরে মেচিং মেকআপ করবে,ডিজাইন করে খোপা করবে,গোল্ডেন কালারের লং কানের দুল পরবে,আর হাতে ব্রেসলেট পরবে।ব্যাস!!!

আমি-আপনিই রেডি করে দিয়েন।

এটা শুনে তন্ময় আমার দিকে তাকিয়ে কিছুক্ষণ হাসলো।হঠাৎ উনি আমার দিকে গভীর ভাবে তাকিয়ে আমার গালে হাত দেয়।

আমি-কি হয়েছে??

তন্ময়-কেনো কেঁদেছো তুমি?

আমি-ক কই??(ঘাবড়ে গিয়ে)

তন্ময়-কি কি বলেছে আমাকে বলো তনু।

আমি-আরে আমি কাঁদিনি।

তন্ময়-তোমার চোখ লাল হয়ে আছে আর তুমি বলছো তুমি কাঁদোনি।

আমি-আরে এমনি চোখে কি একটা পরেছিলো।

তন্ময়-বাচ্চা নিয়ে আবার কেও কথা বলেছে।

আমি এবার নিজেকে সামলাতে পারাম না তন্ময় কে জরিয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করলাম।তন্ময় স্বাভাবিক হয়ে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।

আমি-তন্ময়,,,আমি মা হওয়ার যোগ্য না তাইনা??(কেঁদে)

তন্ময়-চুপ,,(ধমক দিয়ে)মা হওয়ার যোগ্য না মানে টা কি???তুমি মা হবে আর সঠিক সময়েই হবে।

আমি-আমি আমার সন্তানকে মেরে ফেলেছি তন্ময়।

তন্ময়-আর একবার এ কথা বললে আমি কিন্তু ভুলে যাবো তুমি আমার স্ত্রী।

আমি-আমি তো সত্যিটাই বললাম…..

তন্ময়-কোনো সত্যি বলোনি তুমি,,,,এখন বলো তোমাকে কে কি বলেছে??

আমি এবার তন্ময়কে হাসপাতাল আর এখন এর ঘটনাটা বললাম।তন্ময় এসব শুনে আমার দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে আছে।

তন্ময়-এই কারণে তুমি আনিশাকে নাওনি।(রেগে)

আমি-আমার যেটা মনে হয়েছিলো…..

তন্ময়-মাথা মনে হয়েছিলো তোমার।তুমি আনিশা কে কোলে নিলেই আনিশার ক্ষতি হবে তাইনা।ওয়েট!!!(বলে চলে গেলো)

তন্ময় চলে গেলে আমি আবার খাটে বসে পরি।কিছুক্ষণ পর তন্ময় আবার রুমে আসে কিন্তু উনি একা আসেনা আনিশাকেও নিয়ে আসে।উনি এসে এই হুট করে আমার কোলে আনিশাকে দিাকে দিয়ে দেয়।এমন হওয়ায় আমি চমকে উঠি।

তন্ময়-তোমার কোলে দিয়েছি তো,,,আনিশা কি কাঁদছে আনিশার কি কোনো ক্ষতি হয়েছে??

আমি-তন্ময় ওকে নিন।

তন্ময়-আনিশা কে দিয়ে গেছি ওর খেয়াল রাখবে আর নিজেকে নরমাল করবে।(বলে চলে গেলো)

তন্ময় চলে গেলে আমি আনিশার দিকে তাকাই।আনিশা আমার হাতটা ধরে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।আনিশা কে এখন এতো কাছ থেকে দেখে ওকে নিয়ে এখন আর আমার কোন ভয় হচ্ছেনা।

***দুপুরে***

আমি রেডি হচ্ছিলাম কারণ লোকজন আসা শুরু করেছে।আমি ঠিক সেই ভাবে রেডি হচ্ছি যেভাবে তন্ময় আমাকে রেডি হতে বলেছিলো।আমি রেডি হয়ে যেই রুম থেকে বের হলাম ঠিক তখনই আমি ইমনের সামনে পরে গেলাম।ইমন আমাকে দেখে পুরো হা করে তাকিয়ে আছে।

আমি-কি???

ইমন-(নিশ্চুপ)

আমি-ইমন??[জোরে)

ইমন-(ধ্যান ভাঙ্গে)কোথায় যাচ্ছো??

আমি-কোথায় যাবো।

ইমন-এভাবে রেডি হলে যে।

আমি-পাগল হয়ে গেছো বাড়ীতে আকিকা অনুষ্ঠান আর আমি রেডি হবো না।

ইমন-ওহ সরি সরি,,,কি যে বলছি।

আমি-তুমি ঠিক আছো??

ইমন-হুম,,,তনু।

আমি-বলো।

ইমন-আমরা কি এখন বন্ধু হয়ে থাকতে পারিনা।

আমি-তুমি চাইলে অবশ্যই পারবো।

ইমন-মানে???

আমি-মানে তুনি যদি আমাকে বন্ধুর মতো ভাবো তাহলে আমরা বন্ধু হয়ে থাকতে পারি।

ইমন-আমি তোমাকে বন্ধুই ভাবি।

আমি-আমি তাহলে নিচে যাই।(বলে চলে এলাম)

ইমন-(আমি আসলে নিজেই তোমাকে আমার থেকে দূরে করে দিয়েছি তনু।আমি যদি তখন তোমার মর্মটা বুঝতাম তাহলে আজ তুমি আমার হতে।কিন্তু আমার ভুলের জন্য তুমি আমার পাশে নেই।যাই হোক,,,আজ থেকে তুমি আমার বন্ধু)

আমি নিচে এসে কিছু কাজ করছিলাম।কাজ করছিলাম বলতে ফল খাটছিলাম।হঠাৎ জেনি আমার সামনে এসে দাঁড়ায়।

আমি-কি জেনি??

জেনি-তোমাকে ভাইয়া ডাকছে।

আমি-অভি ভাইয়া আবার কেন ডাকলো,,,আচ্ছা আমি গিয়ে দেখে আসি।(বলে যেতে লাগলাম)

জেনি-ও ম্যাডাম,,

আমি-কি??

জেনি-অভি ভাইয়া ডাকছে না।

আমি-তাহলে???

জেনি-তন্ময় ভাইয়া ডাকছে।

আমি-কিন্তু আমি তো কাজ করছি।

জেনি-সেটা আমি করে নিবো তুমি যাও।

আমি-না জেনি আমিই করছি,,তুমি তোমার ভাইয়াকে বলো ভাবি কাজ করছে।

জেনি-ভাইয়া কিন্তু রাগ করবে।

আমি-কিছু হবেনা।

জেনি-অভি ভাইয়া ডাকলে তো দৌঁড়ে চলে যেতে।

আমি-এটা তোমার ভাইয়াকে বলোনা।আর তাছাড়া অভি ভাইয়া তো গুরুজন।

আকিকার অনুষ্ঠান শেষ হতে হতে প্রায় বিকাল হয়ে গেছে।তন্ময় আমার পাশে পাশেই ছিল কিন্তু তেমন কথা বলেনি।অনুষ্ঠানে অনেকে আমার কথাও জিজ্ঞেস করেছে।যে কিভাবে মিসক্যারেজ হলো,কয় মাসের সময় মিসক্যারেজ হল ইত্যাদি।
কিন্তু এসবে তেমন কেও পাত্তা দিলোনা।আমরা রাতে সবাই বসে কিছুক্ষণ গল্প করে যে যার রুমে ঘুমাতে চলে গেলাম।

আমি-আজকে অনেক ভালো লেগেছে তাইনা?

তন্ময়-হুম,,,(ফোন টিপতে টিপতে)

আমি-আসলেই আজ আমার খুব খুশি খুশি লাগছে।(তন্ময়ের পাশে বসে)

তন্ময়-তনু,,

আমি-হুম।

তন্ময়-তুমি কত সহজ সরল।

আমি-এমন কেনো মনো হলো??

তন্ময়-চালাক ও আছো।

আমি-কি বলছেন এসব???

তন্ময়-আমি ডাকলে আসোনা অথচ ভাইয়া ডাকলে দৌড়ে চলে যাও।

আমি-আসলে আমি তো তখন কাজ করছিলা,,,,,

তন্ময়-কাজ করছিলে,,,,(মুচকি হেসে)

আমি-সরি,,,,

তন্ময়-সরি বললেই সবকিছুর ক্ষমা হয়না।(আমার দিকে এগিয়ে)

আমি-এগোচ্ছেন কেনো???(পিছাতে পিছাতে)

তন্ময়-তুমি পিছচ্ছো কেনো??(আমাকে খপ করে ধরে)

আমি-আপনি কি এখন আমায় শাস্তি দিবেন???

তন্ময়-উু হু আদর করবো।

আমি-কি??(অবাক হয়ে)

তন্ময়-হুম(বলে আমাক ধরে শুইয়ে দিলো)

“”বেশ কিছুদিন পর””

আজকে সকাল থেকে আমি অপেক্ষা করছি শুধু সবার থেকে শুভ বিবাহ বার্ষিকী টা শুনার জন্য।কালকে রাত ১২ টার পরে তন্ময় আমাকে উইস করেছিলো।কিন্তু অবাক করা বিষয় হচ্ছে সবাই কথা বলছে,হাসছে শুধু উইস করা ছাড়া।

সাবিয়া-কি হয়েছে তনু???

আমি-ক কই???(রান্না করতে করতে)

সাবিয়া-আজ তুমি রান্না করো না।

আমি-কেনো???

সাবিয়া-আমি রান্না করবো তাই,,,

আমি-তুমি কেনো রান্না করবে মা???

সাবিয়া-আজ করি কিছু হবে না।

আমি-আচ্ছা।(বলে চলে এাম)

আনি রুমে এসে দেখি তন্ময় কি একটা করছে।আর যেটা করছে সেটা বার বার লুকানোর চেষ্টা করছে।আমি আস্তে আস্তে গিয়ে হুট করে ওনার পাশে বসে যাই আর এতে উনি বেশ ঘাবড়ে যায়।

তন্ময়-উফ,,,তুমি একবার ডাকবে না।

আমি-কি করছেন??

তন্ময়-কিছু না।

আমি-তন্ময় আমি মাত্র দেখলাম আপনি কিছু একটা লুকিয়েছেন।

তন্ময়-ওকে,,,চোখ বন্ধ করো।

আমি-কেনো??

তন্ময়-আরে বন্ধ করোনা।

আমি-আচ্ছা।(বলে চোখ বন্ধ করলাম)

কিছুক্ষণ পর””””

তন্ময়-এবার খুলো।

আমি চোখ খুলার সাথে সাথে অবাক হয়ে যাই।কারণ তন্ময় আমার সামনে বিভিন্ন রংয়ের চুরি,
শাড়ী আর ৫ জোড়া নুপুর রেখেছে।

আমি-এগুলা কি???

তন্ময়-তোমার বিবাহ বার্ষিকীর উপহার।

আমি-এতকিছু???

তন্ময়-এগুলা কি তোমার চিনা চিনা লাগছেনা।

আমি-না,,,

তন্ময়-তোমাকে নিয়ে প্রথম যেদিন ঘুরতে গিয়ে ছিলাম তখন তুমি এই জিনিস গুলো পছন্দ করে ছিলে বাট ভয়ে আমাকে বলোনি।

আমি-আপনি কি করে জানলেন??

তন্ময়-কারণ আমি তো তোমার সাথে ছিলাম।

আমি-আপনি আমার মনের কথা বুঝেছিলেন???

তন্ময়-বুঝেছি বলেই তো কিনে রেখেছিলাম যাতে বিশেষ কোনো দিনে দিতে পারি।

আমি-love You Tonmoy….(জরিয়ে ধরে)

তন্ময়-Love you too…

আমি-আজকে আমায় ঘুরাতে নিবেন??

তন্ময়-কখন যেতে চাও???

আমি-আপনি যখন নিয়ে যাবেন।

তন্ময়-তাহলে কিছুক্ষণ পরই রওনা দিই।

আমি-ওকে,,,,

বিকালের একটু আগে আমি আর তন্ময় ঘুরতে বের হই।তন্ময় আমাকে আজ অনেক জায়গায় ঘুরিয়েছে।আমরা ঘুরাঘুরি করে সন্ধ্যার সময় বাড়ীতে ফিরলাম।কিন্তু বাড়ীতে ডুকে আমরা অবাক হয়ে গেলাম।কারণ বাড়ীটা পুরো অন্ধকার হয়ে আছে আর এতে আমি ভয় পেয়ে যাই।

তন্ময়-মা,,,কোথায় তোমরা???জেনি,ভাইয়া,,,

আমি-ওরা কি বাড়ীতে নেই???

তন্ময়-বাড়ীতে না থাকলে দরজা খোলা থাকতো নাকি।

আমরা কিছুক্ষণ ওদেরকে ডাকাডাকি করার পর হঠাৎ ঘরের সব লাইট জ্বলে উঠে সাথে রংবেরং এর লাইটও জ্বলে।সামনে তাকিয়ে দেখি সবাই একরা কেক নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।এসব দেখে আমি আর তন্ময় তো জাস্ট অবাক।

সবাই-Happy Anniversary tonmoy & tonu.

আমি-😱😱😱

তন্ময়-😳😳😳

অভি-কিরে এভাবে তাকিয়ে আছিস কেনো?

তন্ময়-তোমরা এসবও করো।

অভি-তো কি মনে হয়।

তন্ময়-Thank you…(জরিয়ে ধরে)

জেনি-ভাবী কেমন লাগলো সারপ্রাইজ??

আমি -তোমরা এমন করবে আমি ভাবিও নি।

নিসা-তো কি ভেবেছিলে যে আমরা ভুলে গেছি।

আমি-ধন্যবাদ।

সবাই আমাদের উইস করে কেকের সামনে দাঁড় করিয়ে দিলো।আর আমরাও হাসিমুখে যেই কেক কাটতে যাবো ইমন ওমনি বলে উঠে।

ইমন-ওয়েট ওয়েট,,,

তন্ময়-কি??

ইমন-এই কেকটা কাটা মানে তোমাদের নতুন জীবনের শুরু।সো কেকটা কাটার আগে কিছু একটা প্রমিস করো।যেমনঃ-আমরা দুজন সারা জীবন একসাথে থাকবো মানে তনুর তন্ময় আর #তন্ময়ের_তনু হয়ে থাকবো আর কারোর না।

এবার আমি আর তন্ময় একে অপরের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলাম।আর নতুন জীবনের জন্য প্রার্থনা করে কেকটা কাটলাম।

–সমাপ্ত–

তন্ময়ের তনু পর্ব-২৮+২৯

0

#তন্ময়ের_তনু
#পর্ব_২৮
#Jechi_Jahan

তন্ময়ের কথায় আমি ছাদ থেকে আসার কিছুক্ষণ পর শাড়ী পরছিলাম।হঠাৎ তন্ময় এসে আমাকে পেছন থেকে জরিয়ে ধরে।ওনার এমন হুট করে জরিয়ে ধরায় আমি অবাক হয়ে যাই।কিন্তু তার চেয়েও বেশি অবাক হই ওনার কান্না করা দেখে।

আমি-কি হয়েছে তন্ময়??(ওনার দিকে ফিরে)

তন্ময়-(আবার আমাকে জরিয়ে ধরে)

আমি-কাঁদছেন কেনো??

তন্ময়-আমাকে ক্ষমা করে দাও তনু।

আমি-কেনো কি হয়েছে???

তন্ময়-আমি তোমার সাথে এই কয়েকদিন খুব খারাপ ব্যবহার করে ফেলেছি।(কান্না করে)

আমি-সেটার জন্য কাঁদছেন??

তন্ময়-আই এমন সরি।

আমি-আপনি তখন রাগের মাথায় এমন করেছেন তাই এখন আর কাঁদতে হবেনা।(ওনার চোখের পানি মুচে)আমি আপনাকে সবসময় হাসি খুশি দেখতে চাই।

তন্ময়-সরি।(বলে আবার জরিয়ে ধরে)

(কি হলো এটা???তন্ময়ের হঠাৎ এতো পরিবর্তন?ইমন কি এমন বলল যে তন্ময় এতো ভালো হয়ে গেছে।চলুন তো ফ্লাসব্যাকটা ঘুরে আসি)

/\ফ্লাসব্যাক/\

তন্ময়-কি বলবে ইমন??

ইমন-তুমি কি জানো তনুর আগে রিলেশন ছিল??

তন্ময়-(কিছুক্ষণ থেমে)হুম জানি।

ইমন-তনু বলেছে??

তন্ময়-হুম,,,আচ্ছা তুমি কিভাবে জানলে যে তনুর আগে রিলেশন ছিল???

ইমন-জানতে চাও কিভাবে জানলাম??

তন্ময়-বলো।

ইমন-কারণ ওর সেই লাভারটা আমিই ছিলাম।

তন্ময়-কি??(অবাক হয়ে)

ইমন-হুম,,,

তন্ময়-মিথ্যা কেনো বলছো???

ইমন-আমি মিথ্যা বলছিনা।আমি সত্যিই তনুর এক্স বয়ফ্রেন্ড ইমন।

তন্ময়-তাহলে তোমাদের মাঝে এখনো,,,,

ইমন-ভাইয়া প্লিজ ভুল বুঝোনা।

তন্ময়-তো??

ইমন-তনু এখন শুধু আমায় ঘৃণা করে।

তন্ময়-তুমি তনুর এক্স বয়ফ্রেন্ড।

ইমন-ও আমাকে ওর এক্স হিসেবেও নিজের মনে রাখেনি।কারণ আমি ওর সাথে খুব অন্যায় করে ফেলেছি।

তন্ময়-কি করেছে তুমি ওর সাথে??

এরপর ইমন সব সত্যি তন্ময়কে বলে দিলো ওর তনুকে ঠকানো,তন্ময়কে তনুর বিরুদ্ধে মেচেজ করা থেকে সব সত্যি বলে দিলো।

তন্ময়-ইমন তুই এতো খারাপ।

ইমন-আসলেই আমি অনেক খারাপ।তনুর কাছে তো হয়তো আনি খারাপ ও না।খারাপ থেকেও খারাপ।কিন্তু তুমি ওর কাছে খারাপ হয়োনা।

তন্ময়-মানে???

ইমন-তনুর সাথে আমার রিলেশন চলা কালীন ও আমার কাছে একটা কুইন ছিলো।যাকে তখন আমি নিজের দোষে হারিয়ে ফেলেছি।কিন্তু এখন ওই কুইন টা তোমার।তোমাকে তনুর কিং হয়ে ওকে ভালোবাসতে হবে।পারবে তো???

তন্ময়-আমি তনুকে তোমার থেকেও বেশি ভালো বাসি ইমন।

ইমন-তা তো ভাসতেই হবে কারণ তনু ভালোবাসা পাওয়ার মতো একটা মেয়ে ঘৃণা পাওয়ার নয়।

তন্ময়-তুমি ওকে ভালোবাসতে ইমন???

ইমন-খুব ভালোবাসতাম কিন্তু খনিকের ভালো বাসাটা হয়তো টিকতে চায়নি।ভাইয়া আমি নিজের দোষে তনুকে পেয়েও হারিয়ে ফেলেছি।তুমি ওকে পেয়েছো কিন্তু হারিয়োনা প্লিজ।

তন্ময়-তোমার কেনো মনে হয় আমি তনুকে হারিয়ে ফেলেবো।

ইমন-তিন বছর আগে যেটা আমি করেছি সেটা এখন তুমিও করছো।তাই বলছি তুমি ওকে হারিয়ো না প্লিজ।

তন্ময়-আমি তনুকে হারাতে পারবোনা ইমন।

ইমন-তাহলে আমার মতো করো না।

তন্ময়-আমি তনুকে হারাতে দিবো না।(বলে দৌড়ে নিচে চলে গেলো)

প্রেজেন্টঃ-

আমি এখন বাবার জন্য চা বানাচ্ছি।চা আসলে আমাকে বানাতে বলেনি বলেছিলো মা কে।কিন্তু এখন যেহেতু আমি কাজ করতে পারবো তাই মা কে বারণ করে আমিই চা টা বানাচ্ছি।চা বানানোর সময় শুধু তন্ময়ের কথা মনে পরছিলো।তখন তন্ময় আমাকে জরিয়ে ধরে অনেকবার সরি বলে। কিন্তু হঠাৎ এমন কেনো করলো সেটাই আমি বুঝতে পারছি না।চা বানানো হয়ে গেলে চা টা নিয়ে আমি বাবার কাছে চলে গেলাম।

আমি-বাবা তোমার চা।(চা টা দিয়ে)

তন্ময়ের বাবা-চা তুই এনেছিস??(চা টা নিয়ে)

আমি-হুম!!

তন্ময়ের বাবা-তোর মা কই??(চায়ে চুমুক দিয়ে)

আমি-মা আছে তো।

তন্ময়ের বাবা-চা টা পুরা তোর বানানো চায়ের মত হয়েছে।(মুচকি হেসে)

আমি-আমই তো বানিয়েছি।

তন্ময়ের বাবা-কি তোকে এখন কাজ করতে দিয়েছে??(রেগে)

আমি-আরে বাবা কেও করতে দেয়নি আমি নিজে এই করেছি।(বাবার পাশে বসে)

তন্ময়ের বাবা-অনেক দিন পর শাড়ী পরেছিস।

আমি-হুম।(বাবার কাঁধে মাথা রেখে)

তন্ময়ের বাবা-কি হয়েছে???

আমি-কত বড় ঘটনা ঘটে গেলো তাও এত স্বাভা বিক কিভাবে রয়েছো??

তন্ময়ের বাবা-মাঝে মাঝে একটু স্বাভাবিক থাকতে হয়।

আমি-হুম(নিঃশব্দে কাঁদছি)

তন্ময়ের বাবা-কাঁদছিস কেনো??

আমি-তন্ময় খুব খুশি ছিলো।(কেঁদে)

তন্ময়ের বাবা-তো???

আমি-কি??(বাবার দিকে তাকিয়ে)

তন্ময়ের বাবা-যে চলে গেছে সে আর ফিরে আসবেনা।দেখবি তন্ময় এটা মাথায় রেখে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে যাবে।

আমি-হুম”!!

তন্ময়ের বাবা-তুই কিছুদিন তোর বাড়ী থেকে ঘুরে আয় তাহলে তুই স্বাভাবিক হয়ে উঠবি।

আমি-ঠিক আছে।

তন্ময়ের বাবা-তুই চাইলে আজকেই চলে যা।

আমি-না কালকে চলে যাবো।

তন্ময়ের বাবা-ঠিক আছে।

আমি-আচ্ছা আমি এখন আসি।

রাতে আমরা সবাই ডিনার করে যে যার রুমে চলে এলাম।আমিও আমাদের রুমে এসেছি কিন্তু কিছু ক্ষণের জন্য।আমি রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে শাড়ীটা খুলে একটা কালো কামিজ আর কালো প্লাজো পরে নিলাম।রুমে এসে দেখি তন্ময় খাটে শুয়ে আছে আমার দিকে মুখ করে।আমি আয়নার সামনে বসে চুলে একটা বেনি করে নিলাম।মুখ ধোয়ায় মুখ থেকে বিন্দু বিন্দু পানি পরছে যা তনু কে আরো সুন্দর করে তুলছে।আমি উঠে তন্ময়ের দিকে তাকিয়ে রুমে থেকে বের হয়ে গেলাম।

জেনি-ভাবী তুমি এতো দেরি করলে কেনো??

আমি-সরি আসলে শাড়ী চেঞ্জ করে জামা পরেছি তো তাই লেট হয়ে গেলো।

জেনি-রোজই তো জামা পরো আজ আর নতুন কি??

আমি-সবসময় তো আর পেটে ব্যাথা করতো না।

জেনি-(কিছুক্ষণ চুপ থেকে)ওকে ঘুমাও।

আমি-হুম!!

জেনি-ভাবী,,,

আমি-বলো??(বালিশ ঠিক করতে করতে)

জেনি-বিয়ে হলে মেয়েদের অনেক কষ্ট তাইনা??

আমি-কই না তো।

জেনি-মিথ্যা বলো না তো।

আমি-কার কাছে কেমন লাগে সেটা আমি জানি না বাট বিয়ের পর আমি কোনো কষ্ট পাইনি।

জেনি-তুমি তো আরো বেশি কষ্ট পেয়েছো।

আমি-এটা তোমার ভুল ধারণা।

জেনি-ওকে ঘুমাও।

আমি-হুম।(বলে শুয়ে গেলাম)

শোয়ার বেশ কিছুক্ষণ পর আমার ফোনে একটা মেচেজ আছে।আমি প্রথমে পাত্তা না দিলেও পর পর তিনটা মেচেজ একসাথে আসায় আমি ফোন টা অন করে দেখি তন্ময়ের মেচেজ।

তন্ময়-ওই এখনো আসছো না কেনো???
কোথায় আছো তুমি??
কথা বলছো না কেনো??

ওনার মেচেজ দেখে আমার পাগল হওয়ার দেরি।

আমি-আপনি জানেন না আমি কোথায়??

তন্ময়-আমি কি করে জানবো তুমি কোথায়??

আমি-আমি জেনির রুমে।

তন্ময়-তনু আজকে আমি তোমাকে এতোবার সরি বললাম তুমি তাও জেনির রুমে ঘুমাচ্ছো।

আমি-আমি কি জানতাম নাকি যে আমাকে আজকে আপনার সাথে ঘুমাতে হবে।

তন্ময়-যাই হোক তুমি এখন রুমে আসো।

আমি-আসবোনা।

তন্ময়-কি বললে??

আমি-আরে জেনি আছে তো।

তন্ময়-কিছু হবে না তুমি আসো।

আমি-তন্ময় প্লিজ।

তন্ময়-তুমি যদি এখন এখানে না আসো তাহলে কিন্তু আমি ওখানে চলে আসবো।

আমি-ওকে আসছি।

দূর ওনার মেচেজ এর রিপ্লাই দেয়া উচিত ছিলো না।এবার আমাকে ওখানে যেতে হবে।আমি আস্তে আস্তে জেনির দিকে তাকালাম।দেখলাম জেনি ঘুমিয়ে গেছে তাই আমি আস্তে আস্তে নেমে গিয়ে দরজা খুলে বেরিয়ে গেলাম।আমাদের রুম এর সামনে দাঁড়িয়ে আছি কিন্তু ভেতরে যেতে ভয় করছে।হঠাৎ দরজাটা অটোমেটিক খুলে গেলো।

তন্ময়-এতো দেরি হলো কেনো???

আমি-কই???

তন্ময়-আজ কেনো গিয়েছো??

আমি-আমি ভেবেছি আজও আমি থাকলে আপনি রাগ করবেন তাই আর কি।

তন্ময়-ওসব নিয়ে তো সরি বলেছিলাম।

আমি-সরি””””(মাথা নিচু করে)

তন্ময়-ওকে আসো।

আমি-হুম।(ভেতরে এসে)

তন্ময়-কালো রংয়ে তোমাকে খুব সুন্দর লাগে।

আমি-(নিজের দিকে তাকিয়ে)আপনারই বউ।

তন্ময়-আর আমার ভাই ইমনের এক্স।

আমি-কি???

তন্ময়-আমি সব জানি।

আমি-ইয়ে তন্ময়,,,

তন্ময়-আমি প্রথম প্রথম তোমাকে কত কিছুর জন্যই না ভুল বুঝেছিলাম।কিন্তু তুমি ছিলে পুরো নির্দোষ।

আমি-(মাথা নিচু করে আছি)

তন্ময়-চলো ঘুমাতে আসো।

আমি-হুম।

আমি খাটে উঠে যেই বালিশে শুতে যাবো তন্ময় ওমনি আমায় নিজের বুকের মধ্যে জরিয়ে ধরে। ওনার এমন কান্ডে আমি ওতটা অবাক হইনা বরং ভালোই লাগে।ওনার বুকে এভাবে থাকতে থাকতে একপর্যায়ে আমি ঘুমিয়ে যাই।

সকালে—

তন্ময় ঘুম থেকে উঠে তনুকে কোথাও দেখলোনা। ও পুরো বাড়ী খুঁজেও তনুকে কোথায় পেলোনা।পরে মাকে জিজ্ঞেস করলে বলে তনু ওর বাবার বাড়ী গেছে।ব্যাস তন্ময়ের রাগ বেড়ে গেলো তনুর উপর।একে তো গেল গেল তার উপর আবার না বলে গেল।তন্ময় রাগে নাস্তা না করেই বাড়ী থেকে বের হয়ে গেলো।

-চলবে

#তন্ময়ের_তনু
#পর্ব_২৯
#Jechi_Jahan

আমি আম্মুর কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছি।আম্মু আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে আর গল্প শুনাচ্ছে।আমি এগুলোই চাইতাম মায়ের থেকে মা যেনো আমাকে আপুর মতো ভালোবাসে।আজ বাড়িতে আসার সাথে সাথে মা আমাকে জরিয়ে ধরে কান্না করে দেয়।আর আমার কাছে ক্ষমা আমাকে ছোট থেকে অবহেলা করার জন্য।আমি ও মাকে পেয়ে খুশিতে কান্না করে দিই।

আমি-আচ্ছা আম্মু,,,

রাজিয়া-কি???

আমি-আমি যখন তোমার পেটে ছিলাম তখন তোমার কেমন অনুভব হতো???

রাজিয়া-তুই পেটে থাকতে আমি খুব খুশি ছিলাম।বলতে গেলে খুশির শেষ ছিলোনা।আমি সবসময় চাইতাম আমার একটা ফুটফুটে মেয়ে হোক।আর দেখ আল্লাহ আমাকে একটা না দু দুটো ফুটফুটে মেয়ে দিয়েছে।আমি খুবই খুশি ছিলাম।

আমি-হুম!!

রাজিয়া-হ্যাঁ রে তুই যে এসেছিস তন্ময় কেও নিয়ে আসতে পারলি না??

আমি-আমি এসেছি খুশি হওনি???(কিভাবে আনবো বলো তোমাদের জামাই তখন ঘুমাচ্ছিল।দেখে মনে হলো যেনো ১০ বছর পরে ঘুমিয়েছে। পুরো হা করে ঘুমাচ্ছিলো তাই তো আমি আসার সময় জাগিয়ে বলিনি যে এখানে আসছি।)

রাজিয়া-যাহ খুশি হয়েছি না কি হয়েছি।এমনে জামাই সহ আসলে ভালো হতো।

আমি-হুম।(আসার সময় বলিনি এখন একটা ফোন করেও বলছিনা।উনি ঘুম থেকে উঠে যদি শুনে যে ওনাকে না জানিয়ে আমি এখানে এসেছি তাহলে তো খুব রেগে যাবে।বেশ তো বেলা হয়ে গেল এখন নিশ্চয়ই উঠে গেছে)

রাজিয়া-কিরে কি ভাবছিস???

আমি-আমি বাড়ীতে একটা ফোন দিয়ে আসি।(বলে মায়ের কোল থেকে উঠে গেলাম)

রাজিয়া-যা কল করে আয়।

আমি রুমে এসে ওনাকে কল করি কিন্তু উনি কল রিসিভ করে না।আমি বারবার কল করলাম কিন্তু উনি কল রিসিভই করেনি।আমি ভাবলাম এখনো ঘুমাচ্ছে তাই জেনিকে কল দিলাম।

জেনি-ভাবী আসসালামু আলাইকুম।

আমি-ওয়ালাইকুম আসসালাম।

জেনি-যেতে না যেতেই মিস করা শুরু করে দিলে।

আমি-তা আর বলতে।

জেনি-কি বলবে বলো??

আমি-তোমার ভাইয়া কই???

জেনি-ও তাহলে আমাদের মিস করছো না।

আমি-যাহ বলো না।

জেনি-ভাইয়া তো সকালে উঠেই বাইরে চলে গেছে তাও নাস্তা না করে।

আমি-অফিসে গেছে??

জেনি-আরে বিয়ের পর থেকে তো ভাইয়া অফিসে এই যায়নি।

আমি-তাহলে কোথায় গেছে??

জেনি-আমি জানিনা।

আমি-আমি ফোন দিয়েছিলসম কিন্তু ধরেনি।

জেনি-ওহ,,,আচ্ছা তুমি কি যাওয়ার সময় ভাইয়া কে বলে যাওনি??

আমি-নাহ,,

জেনি-কেনো???

আমি-উনি তখন ঘুমাচ্ছিলেন তাই আর জাগিয়ে বলতে ইচ্ছে করেনি।

জেনি-জানো সকালে কি হয়েছে।

আমি-কি হয়েছে???

জেনি-ভাইয়া সকালে ঘুম থেকে উঠে তোমাকে যে খোঁজা।আমি ইচ্ছে করেই চুপ ছিলাম।পরে মা বলে দিয়েছে তুমি বাড়িতে গেছো।আর এটা শুনার কিছুক্ষণ পরই ভাইয়া বাসা থেকে বের হয়ে যায়।বলো তো কাহিনিটা কি???

আমি-জানিনা।

জেনি-আচ্ছা রাখি,,,বাই।

আমি বুঝতে পারছি না যে এতে রাগ করার কি আছে।আমি কি এখানে আসতে পারিনা।উনি যে এমন রিয়েক্ট করছে।আমি রুমে চুপচাপ বসে আছি।কিছুক্ষণ পর পর আম্মু,আব্বু এসে কথা বলে যায়।আপু এখন বাসায় নেই আদিল ভাইয়ার সাথে বাইরে গেছে।আপু থাকলে হয়তো আমার একটু বেশি ভালো লাগতো।

আম্মু-তনু!!!

আমি-মা আমি কিছু খাবোনা।

আম্মু-আরে সেটা না।

আমি-তাহলে??

আম্মু-তন্ময় এসেছে।

আমি-কি??

আম্মু-হুম তোর জন্য অপেক্ষা করছে।

আমি-তো???

আম্মু-তো নিচে চল।

আমি-না আমি যাবো না।

আম্মু-বিয়ে হয়ে গেছে এখনো বোধ বুদ্ধি হয়নি।

আমি-আম্মু তুমি যাওনা।

আম্মু-আমি তো গেছি কিন্তু ও তো তোর জন্য অপেক্ষা করছে।

আমি-তুমি ওনাকে রুমে পাঠিয়ে দাও।

আম্মু-এটা কেমন দেখায় না।

আমি-যেমন দেখাক যাও তো।

আমি মাকে পাঠিয়ে একটা টেনশনে পরে গেলাম।উনি হয়তো আজ আমাকে কাঁচা গিলে ফেলবে।জেনির কথায় যতদূর বুঝলাম উনি আমার উপর রাগ করেই বাসা থেকে বের হয়ে গেছে।আমি কি করবো কিছু বুঝতে পারছিনা।তন্ময় আসার আগে আমি দৌড়ে বারান্দায় চলে যাই আর দরজা বন্ধ করে দিই।কিছুক্ষণ পর খেয়াল করি কেও আমার রুমে ডুকেছে নিশ্চয়ই তন্ময় হবে।

তন্ময়-তনু ম্যাডাম!!!

আমি-(শোকে পাগল হয়ে গেলো নাকি)

তন্ময়-ম্যাডাম আপনি কই??(ভেঙ্গিয়ে)

আমি-(কি বলছে এসব)

তন্ময়-ম্যাডাম আমি আপনার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি।

আমি-(চুপ করে আছি)

তন্ময়-ম্যাডাম আমি জানি আপনি বারান্দায়।

আমি-(ওহ শীট)

তন্ময়-আসলে দোষটা আমার আমি আপনাকে বেশি প্রশ্রয় দিয়ে দিয়েছি।আমি যদি এখন আমার আগের রুপে থাকতাম তাহলে আপনাকে নিজে বের হতে হতোনা।আমি নিজে দরজা ভেঙ্গে আপনাকে বারান্দা থেকে বের করতাম।

আমি-কি হয়েছে??(ভয়ে দরজা খুলে)

তন্ময়-বাহ বাহ এতো ভয় পাও।

আমি-তা আর বলতে।

তন্ময়-না জানিয়ে আসার সনয় এসব মনে ছিলনা

আমি-আপনি ঘুমাচ্ছিলেন তাই,,,,,,,,

তন্ময়-ঘুমাচ্ছিলাম মাই ফুট,,,,একে তো এখানে এসে এক ভুল করেছে আবার জানিয়ে ও এসেছো বলো তো শাস্তি টা কি হবে??

আমি-এতে রাগ করার কি আছে।(ওনার গালে হাত দিয়ে।আসলে এখন এগুলা করার মুড আমার মোটেও নেই।তবুও ওনার হাত থেকে বাঁচার জন্য আমাকে এমন করতে হচ্ছে)

তন্ময়-রাগ করার কি আছে মানে।(হাত সরিয়ে)

আমি-মানে আমাকে তো আপনার বাবা আসতে বলেছে এখানে তাই আমি এসেছি।

তন্ময়-বাবা না হয় এখানে আসতে বলেছে কিন্তু আমাকে কি না জানিয়ে আসতে বলেছে।

আমি-কেনো এসেছি বলেছি তো মাত্র।

তন্ময়-জানো আজ আমার করে মনে হয়েছিলো।

আমি-কি মনে হয়েছিল???

তন্ময়-মনে হয়েছিলে তুমি আমার উপর রাগ করে চলে এসেছো।হয়তো আমার সরিটা একসেপ্ট করোনি তাই চলে এসেছো।

আমি-দূর কিসব বলেন।

তন্ময়-এমন আমার সাথে আর কোনোদিন করবেনা।

আমি-ওকে।

তন্ময়-এসব তোমার মুখের কথা,,,(রেগে)

আমি-তো কি বলবো??

তন্ময়-তুমি না আমাকে ভালোই বাসো না।

আমি-কি বললেন আপনি??(রেগে)

তন্ময়-ওই কাকে রাগ দেখাচ্ছো তুমি??

আমি-আপনি এটা বলতে পারলেন।

তন্ময়-স্যেটা সত্যি সেটাই তো বললাম।

আমি-এই সামান্য বিষয়ের এটা বলতে পারলেন।

তন্ময়-এই সামান্য বিষয়ের জন্য তোমাকে শাস্তি পেতে হবে.(আমার কাছে এসে)

আমি-আপনি,,,

অনু-তনু,,(দরজায় নক করে)

আমি-কে???(ভয়ে)

অনু-আমার কন্ঠ ভুলে গেছিস??

আমি-ওহ আপু,,,(গিয়ে দরজা খুলে)সরি,,,

অনু-কিছু হবেনা।

আমি-কখন এলে তুমি??

অনু-এইতো মাত্র এলাম।

আমি-আদিল ভাইয়া এসেছে??

অনু-প্রথমে আসবেনা বলেছে বাট পরে যখন বলকাম তুই এসেছিস তখন আসবে বলেছে।

আমি-ওহ,,,ভালো।

অনু-তন্ময় এসেছে নাকি??

আমি-হুম রুমে।

অনু-আদিল যখন এসেছে আদিলের কাছে পাঠিয়ে দে।

আমি আর আপু রুমে বসে বসে গল্প করতে লাগ লাম।আর তন্ময়ের সাথে আদিল ভাইয়াকে বাইরে পাঠিয়ে দিলাম।

———

অভি-মা এগুলা তো তন্ময় কিনেছিলো।(তন্ময়ের কিনা খেলনা গুলো দেখে দেখে)

সাবিয়া-হ্যাঁ ও ওর ছেলে মেয়ের জন্য কিনেছিলো। কিন্তু তারা তো আসেনি তাই তোকে দিতে বলেছে।কারণ তুই ও তো সামনে বাবা হবি।আর তোর ছেলে-মেয়ের জন্যও খেলনা কিনতে হবে তাই।

অভি-তন্ময় ও পারে বটে বাচ্চা আসার আগে এত খেলনা কিনে ফেললো না জানি বাচ্চা আসার পর কত কি কিনে ফেলতো।

সাবিয়া-কিন্তু তারা তো আসলো না।

অভি-মা আমার সন্তান তন্ময়েরও সন্তান,তন্ময়ের সন্তান আমারও সন্তান এটা সবসময় মনে রেখো।

সাবিয়া-সেদিন ডক্টর যখন তন্ময় কে বললো যে বাচ্চাটা আর বেঁচে নেই তখন তন্ময় তোর বাবাকে জরিয়ে ধরে খুব কেঁদেছিলো।

অভি-সেদিন ওরা দুজনই খুব বড় একটা শক পেয়েছিলো।তন্ময় খুব খুশি ছিলো বাবা হবে জেনে।কিন্তু মা এতে কি তনুর দোষ ছিলো???

সাবিয়া-আমি জানিনা তবে ওরা এখন অকেন চিন্তিত এই বিষয় নিয়ে।কিন্তু এখন ওদের আগের মতো কিভাবে যে নরমাল করি।

অভি-আচ্ছা মা সাড়ে তিন মাস পরে নিসার ডেলিভারি ডেট আর তার কিছু দিন পরই তন্ময় তনুর বিবাহ বার্ষিকী তাইনা???

সাবিয়া-হ্যাঁ???

অভি-এতোকিছুর মধ্যে ওরা হয়তো ওদের বিবাহ বার্ষিকী টা ভুলে যাবে।

সাবিয়া-মানে???

অভি-আমরা ওদেরকে সারপ্রাইজ দিবো।

সাবিনা-তাহলে কি ওরা স্বাভাবিক হবে?

অভি-আলবাদ হবে।

বিকালে****

আমি,আপু আর আদিল,তন্ময় একসাথ পাশা পাশি আমাদের ছাদে এসে দাঁড়িয়ে আছি।আসলে আমরা একে অপরের সাথে গল্প করছিলাম।হঠাৎ আদিল ভাইয়া আমার দিকে প্রশ্ন জুরে দেয়।

আদিল-তনু তুমি এখন ঠিক আছো তো??

আমি-আমার আবার কি হয়েছে???

আদিল-আরে তোমার বেবি মিসক্যারেজ হয়ে গেছিলো না তাই বললাম।

আমি-(কিছুক্ষণ চুপ থেকে)হুম এখন ঠিক আছি।

আদিল-আসলে বেবিই এমন,,,যে সবাই একসাথে হাসায় ও আবার সবাইকে একসাথে কাঁদায় ও।

অনু-কাঁদায় কিভাবে??

আদিল-যেভাবে তনু আর তন্ময় কেঁদেছে সেভাবে কাঁদায়।

তন্ময়-ওসব কথা তুলোনা আদিল।

আদিল-আমি ওসব কথা তুলছিনা বাট কিছু কথা বলছি মন দিয়ে শুনো।

তন্ময়-কি বলো,,

আদিল-যখন কেও হঠাৎ করে শুনে যে সে মা ও বাবা হতে চলেছে তখন সেই মুহুর্ত টাই অন্য রকম।তাইনা তনু??

আমি-হুম।

আদিল-তখন তারা এতো খুশি হয় যে বাচ্চা আসার আগেই তার জন্য সব ব্যবস্থা করে ফেলে।
কিন্তু একবারও এটা ভাবেনা যে যার জন্য এসব করছি সে কি আদো আসবে।আর যখন শুনেপ বেবি মারা গেছে বা মিসক্যারেজ হয়ে গেছে তখন শুধু তারা নিজেদের দোষ দিতে থাকে।তারা ভাবে তাদের অবহেলার কারণে তাদের বাচ্চা মরেছে।তোমরা ও নিশ্চই এমন ভেবেছিলে তাইনা।

তন্ময় এবার আমাকে কিছু না বলে টেনে রুমে নিয়ে যায় আর দরজা বন্ধ করে দেয়।

তন্ময়-আদিল যা বলেছে তা কি সত্যি তনু??(করুণ চোখে)

আমি-কি সত্যি??

তন্ময়-আমাদের সন্তানের মৃত্যুর জন্য আমরা দায়ি নই।

আমি-জানিনা।(বলে চলে এলাম)

সাড়ে তিন মাস পরঃ-

আমরা সবাই হাসপাতালে বসে আছি।আজ নিসা ভাবীর ডেলিভারি হচ্ছে।আমরা প্রায় অনেকক্ষণ ধরে অপেক্ষা করে আছি।বেশ কিছুক্ষণ পর ডক্টর একটা মেয়ে শিশুকে নিয়ে কেবিন থেকে বের হল।

ডক্টর-অভিনন্দন মিঃ অভি আপনি একটা কন্যা সন্তানের বাবা হয়েছেন।(বাচ্চাকে কোলে দিয়ে)

অভি ভাইয়ার বাচ্চাকে একে একে সবাই কোলে নিচ্ছে।আমি অবাক হয়ে তন্ময়ের দিকে তাকিয়ে আছি।উনি আজকে অনেক খুশি হয়তো অভি ভাইয়ার জায়গায় নিজেকে কল্পনা করছে।তন্ময় যখন অভি ভাইয়ার মেয়েকে কোলে নিয়ে দুশটামি করছিলো তখন আমার নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছিলো।কারণ আজ আমার জন্য তন্ময়ও এই মুহুর্ত টা থেকে মুক্ত।তন্ময় হঠাৎ আমার সামনে এসে বাচ্চাকে আমার সামনে ধরে।

তন্ময়-তনু ওকে কোলে নাও।

আমি যেই খুশিমনে বাচ্চা টিকে নিতে যাবো ওমনি আমার মাথায় একটা কথা আসে যার জন্য আমি হাতটা সাথে সাথেই সরিয়ে নিই।

-চলবে

তন্ময়ের তনু পর্ব-২৬+২৭

0

#তন্ময়ের_তনু
#পর্ব_২৬
#Jechi_Jahan

আমি এখন হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছি কিন্তু কেও আমার পাশে নেই।কেও এসে এটাও বলছে না আমার বেবি ঠিক আছে কিনা।আমাকে গাড়ী তে উঠানোর পর থেকে আমার আর কিছু মনে নেই।তখন আমি পরে যাওয়ার পর আমার খুব ব্লিডিং শুরু হয়ে যায়।তখন তন্ময় আমাকে কোলে করে গাড়িতে এনে শুইয়ে দিতেই আমি অজ্ঞান হয়ে যায়।আর এখন কিছুক্ষন মাত্র হলো আমার জ্ঞান ফিরেছে।

নার্স-আরে আপনি উঠে গেছেন??

আমি-হুম!!

নার্স-এখন কেমন লাগছে আপনার???

আমি-ভালো।

নার্স-আপনি প্রেগন্যান্ট ছিলেন???

আমি-হুম!!!

নার্স-ওহ,,(দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে)

আমি-আচ্ছা আমার পরিবারের লোকজন কই??

নার্স-ওনারা বাইরে আছে।

আমি-আমার কাছে এখন আসতে পারবে???

নার্স-হুম,,,আপনি বসুন আমি পাঠাচ্ছি।(বলে চলে গেলো)

আমি-আচ্ছা,,,,

তন্ময়-তনু,,,(তনুর কাছে বসে)

আমি-আপনি আমার পাশে ছিলেন না কেনো???

তন্ময়-বাইরে কিছু কাজ ছিলো তাই আসিনি।

আমি-ওহ,,,আচ্ছা তন্ময়।

তন্ময়-হুম বলো।

আমি-আমাদের বেবি ঠিক আছে তো???

তন্ময়-নিশ্চুপ,,,

আমি-কিছু বলছেন না কেনো???

তন্ময়-তুমি বসো আমি আসছি।(বলে চলে গেল)

আমি-(এমন করে চলে গেলেন কেনো উনি)

সাবিয়া-তনু!!(দরজার সামনে এসে)

আমি-মা ভেতরে আসো।

সাবিয়া-এখন কেমন আছো??(তনুর পাশে বসে)

আমি-ঠিক আছি।

সাবিয়া-হঠাৎ করে এমন হবে ভাবতে পারিনি।

আমি-মা একটা কথা জিজ্ঞেস করি??

সাবিয়া-করো!!

আমি-মা আমার বাচ্চাটা বেঁচে আছে তো?

সাবিয়া-(তনুর কথা শুনে চোখে পানি জমে গেল)
তুমি তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নাও।ডাক্তার বলেছে তোমাকে আজ বাড়ি নিতে পারবো।

আমি-কিন্তু….

সাবিয়া-আমি আসি।(বলে চলে গেলো)

এরপর আমার কেবিনে আর কেও আসেনি।এক জন নার্স এসে আমার ড্রেস চেঞ্জ করে দিল।চেঞ্জ করার সময় আমার পেটে খুব ব্যাথা হচ্ছিল।এতে আমার মনে একটা ভয় জেগে যায়।কারণ আমি যখন নিচে পরি তখন আমার পেটটা সোজা ফ্লোর এর সাথে লাগে।এমন হলে তো বাচ্চা বেঁচে থাকার কথা না।আরো তো সামান্য কারণেও নাকি বাচ্চা মিসক্যারেজ হয়ে যায় আর আমার তো জটিল।

তন্ময়-তনু!!(তনুর সামনে এসে)

আমি-হু হুম!!

তন্ময়-তুমি রেডি,,,তো চলো।

আমি-তন্ময় আমার পেটে খুব ব্যাথা করছে।

তন্ময়-আচ্ছা চলো আমি ফার্মেসি থেকে পেইন কিলার কিনে দিবো।

আমি-হুম।

তন্ময়-চলো।(বলে আমাকে ধরে নিতে লাগলো)

আমাকে নিয়ে তন্ময় বাড়িতে ফিরলে সোজা রুমে চলে যায় আমাকেও নেয় না।ওনার এই কাজে আমি অবাক হলেও বাকিরা অবাক হয়নি।আমার আবার ভয় হচ্ছে যে বাচ্চা টা ঠিক আছে তো।তা ছাড়া কেও তো আমাকে কিছু বলছেও না।

জেনি-ভাবী তুমি রুমে যাও।

আমি-হুম যাবো!!!

জেনি-তোমার শরীল খারাপ মাত্র হাসপাতাল থেকে এসেছো তাই রুমে গিয়ে রেস্ট নাও।

সাবিয়া-হ্যাঁ তনু রুমে যাও আমি তোমার জন্য কিছু খাবার নিয়ে আসি।

আমি-আচ্ছা মা!!!

আমি রুমে এসে দেখি তন্ময় খাটে বসে আছে।তাই আমিও গিয়ে ওনার পাশে বসি।আমি বসলে উনি আমার দিকে একবার তাকিয়ে আবার সামনের দিকে তাকিয়ে যায়।

আমি-তন্ময়!!

তন্ময়-বলো শুনছি।

আমি-এভাবে বসে আছেন কেনো??

তন্ময়-এমনি।

আমি-আপনি আমার উপর রাগ করে আছেন?

তন্ময়-আমি রাগ করার কে??

আমি-তন্ময় আমি সরি।আমি মানছি আমার আপনার কথা শুনে নিচে যাওয়া উচিত ছিলোনা।কিন্তু এতো দিন একটা রুমে বসে থাকতে থাকতে আমার ভালো লাগছিলো না তাই আমি…

তন্ময়-তাই তুমি আমার বাচ্চাটা মেরে দিলে।(রেগে)

আমি-কি??(বসা থেকে দাঁড়িয়ে গেলাম)

তন্ময়-আরে অবাক হচ্ছো কেন এটাই চেয়েছিলে না তুমি যে আমার বাচ্চাটা মরে যাক।

আমি-তন্ময় আপনি এসব কি বলছেন??(কেঁদে)

তন্ময়-কি বলছি বুঝতে পারছো না??দাঁড়াও তোমাকে বুঝিয়ে বলছি,,,আজ তোমার জেদের কারণে আমাদের বাচ্চা মারা গেছে।

আমি-মিথ্যে কেনো বলছেন আপনি আমাদের বাচ্চা তো ঠিক আছে।(কেঁদে)

তন্ময়-আমি তোমার সাথে এখন মিথ্যা বলবো??(রেগে চিৎকার করে)

আমি-তন্ময় সত্যিই কি আমাদের বাচ্চা আর নেই??(তন্ময়ের কাছে গিয়ে ওনার দুই বাহু ধরে)

তন্ময়-যখন পরেছিলে তখনই বাচ্চা মারা গেছে।পেয়েছো তোমার উত্তর।(রাগে চোখে পানি জমে গেলো)

আমি-আমার বাচ্চাটা আর নেই।আমি আমার বাচ্চার খুনি।(বলতে বলতে মেঝেতে বসে গেলাম)

সাবিয়া-তন্ময়!!!

তন্ময়-মায়ের দিকে তাকিয়েও কিছু বলেনা।

সাবিয়া-তনু ওভাবে বসে আছে কেনো???(মেঝেতে বসা তনুর দিকে তাকিয়ে)

আমি-আমার বাচ্চাটা আর নেই মা।

সাবিয়া-তনু শান্ত হও তুমি এভাবে ভেঙ্গে পরলে কিভাবে হবে।দেখো প্রথম প্রথম এরকম অনেক জনের হয় তাই তুমি এত চিন্তা করো না।

তন্ময়-প্রথম প্রথম ওর এমন হতো না মা যদি ও আমার কথা শুনে চলতো।ওর কারণে শুধুমাত্র ওর কারণে আমার সন্তান পৃথিবীর আলো দেখতে পারেনি।(রেগে)

সাবিয়া-তন্ময় চুপ কর,,,,পাগল হয়ে গেছিস?(রেগে)

তন্ময়-হ্যাঁ মা আমি পাগল হয়ে গেছি।(কেঁদে)

সাবিয়া-তন্ময় ছেলেদের কাঁদতে হয়না কেনো কাঁদছিস তুই???

তন্ময়-সন্তান মারা গেলে সব বাবাই কাঁদে।

সাবিয়া-তন্ময় এটা একটা এক্সিডেন্ট।আজ ফ্লোর পরিষ্কার করা হয়েছিলো পানি দিয়ে।তাহলে ফ্লোর তো বেজা থাকবেই।আর দুঃভাগ্য বশত তনুই ফ্লোরে পা দিয়ে দেয় তো,,,,

তন্ময়-রুম থেকে না বেরলে এমন কিছুই হতোনা।

সাবিয়া-তন্ময় তুই আবার,,,,

আমি-মা উনি তো ভুল কিছু বলেনি।

সাবিয়া-তনু,,,

আমি-আজ আমার জন্যই আমার সন্তান টা নেই।আমি চাইলে ওনার কথা শুনতে পারতাম কিন্তু আমি তো ওনার কথাই শুনিনি।আমি আসলেই আমার সন্তানের খুনি।

আমি এসব বলে রুম থেকে বের হয়ে গেলাম।রুম থেকে বের হয়ে সোজা ছাদে চলে এলাম।সন্ধ্যার সময় হালকা হালকা আলো থাকায় জায়গাটা মন্দ লাগছে না।আমি অনেকক্ষণ ছাদের রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে চোখের পানির বিসর্জন দিচ্ছি।হঠাৎ খেয়াল করি আমার পাশে কেও দাঁড়িয়ে আছে।

আমি-ইমন যাও এখান থেকে।(কেঁদে কেঁদে)

ইমন-তুনি কিভাবে বুঝলে আমিই এসেছি???

আমি-ইমন আমার ভালো লাগছেনা তুমি যাবে এখান থেকে।(চিৎকার করে)

ইমন-তনু আমি তোমার মনের অবস্থা টা বুঝছি।কিন্তু এভাবে থাকলে তো তোমার শরীল খারাপ করবে।শীত কালে এভাবে চাদর ছাড়া ছাদে দাঁড়িয়ে আছো ঠান্ডা লেগে যাবে তো।

আমি-তুমি আবার কবে থেকে আমার ব্যাপারে ভাবতে শুরু করলে।লাগবেনা আমার তোমার এসব ন্যাকামি কেয়ারিং। (রেগে)

ইমন-তনু তোমার আমার উপর রাগ করারটা স্বাভাবিক কিন্তু এখন তুমি একটু নিজের ব্যাপারে ভাবো।এভাবে ভেঙ্গে পরলে চলেনা।

আমি-একদম সিমপ্যাথি দেখাতে আসবে না।তুমি আমার থেকে যত দূরে থাকবে আমি ততই ভালো থাকবো।

ইমন-তনু এমন কেনো করছো??

আমি-কারণ তুমি আমার সংসার ভাঙ্গতে চেয়ে ছিলে।নিজে তো আমার সাথে সংসার করতে পারোনি।আর যেই শুনেছো আমার বিয়ে হয়েছে ওমনি আমার সংসার ভাঙ্গতেও চলে এলে।

ইমন-তনু আমি ভুল করেছি কিন্তু সেটার শাস্তি ও পাচ্ছি।কিন্তু এখন তোমাকে নিজের প্রান্তন না নিজের একজন বন্ধু ভেবে বলছি।প্লিজ এভাবে ভেঙ্গে পরোনা।

আমি-এসব নিজের বউকে গিয়ে বলো আমাকে বলতে এসোনা।যাও এখান থেকে,,,(কেঁদে)

ইমন-ওকে আমি চলে যাচ্ছি কিন্তু তুমিও ছাদে থেকো না।প্লিজ তুমিও যাও।

আমি-ইমন তোমায় আমাকে নিয়ে ভাবতে হবেনা।
তুমি যাও এখান থেকে।(চিৎকার করে

আমার চিৎকারে ইমন ছাদ থেকে চলে গেলো।কিন্তু আমি ছাদে দাঁড়িয়ে সেই কান্না করে যাচ্ছি।
প্রায় অনেকক্ষণ ছাদে থেকে আমি রুমে চলে আসি।রুমে এসে তন্ময়কে আর দেখলাম না।কিন্তু রুমটা এখন কেমন খালি খালি লাগছে।যেনো কিছু জিনিস সরিয়ে ফেলা হয়েছে।খানিকক্ষণ পরে মনে পরলো যে আমার বাচ্চার জন্য কিনে রাখা খেলনা আর পুতুল গুলো নেই।আমি এসব দেখে আবার কান্নায় ভেঙ্গে পরি।

সাবিয়া-শুনছো??

তন্ময়ের বাবা-হুম বলো।

সাবিয়া-তন্ময় কে একটু বোঝাও না।

তন্ময়ের বাবা-কেনো কি হয়েছে???

সাবিয়া-বাচ্চার জন্য তন্ময় তনুকে দায় করছে।

তন্ময়ের বাবা-এখন বোঝাতে গেলে বিষয়টা অন্য দিকে চলে যাবে।২-৩ দিন যাক তারপর আমি ওকে বুঝাবো।

সাবিয়া-ওকে ভালোভাবে বুঝিয়ো।

তন্ময়ের বাবা-যে তুমি চিন্তা করোনা।

তন্ময়-বাবা আসবো।

তন্ময়ের বাবা-আরে আয় আয়।

তন্ময়-আমার মায়ের সাথে কিছু কথা ছিলো।

সাবিয়া-কি বল।

তন্ময়-আমার সাথে বাইরে চলো।

সাবিয়া-আচ্ছা চল।(বলে তন্ময় কে নিয়ে বাইরে চলে গেলো)

তন্ময়-এবার শুনো।

সাবিয়া-হুম বল।

তন্ময়-জেনির রুমে একটা বড় বাক্স আছে।ওই বাক্সটা তুমি ভাইয়াকে দিয়ে দিয়ো।

সাবিয়া-কি???

তন্ময়-আমি জেনির রুমে একটা বাক্স রেখেছি ওই বাক্সটা তুমি ভাইয়াকে দিয়ে দিয়ো।

সাবিয়া-তুই নিজে দিয়ে দে।

তন্ময়-বাক্স টা আমি ধরবো না।

সাবিয়া-কি আছে বাক্সে??

তন্ময়-তুমি নিজে দেখে নিও।(বলে চলে গেলো)

তন্ময় ওর মায়ের কাছ থেকে সোজা রুমে চলে গেলো।রুমে গিয়ে দেখলো তনু নিচে বসে খাটের উপর মাথা রেখে কাঁদছে।তন্ময়ের এখন তনুকে জাস্ট অসহ্য লাগছে।ওর কাছে তনুর চোখের পানি গুলোও কেমন যেনো তুচ্ছ হয়ে গেছে।

তন্ময়-জেনি.(চিৎকার করে)

আমি-তন্ময়,,,(লাফিয়ে উঠে)

তন্ময়-জেনি,(আরো জোরে চিৎকার করে)

জেনি-কি হয়েছে ভাইয়া??(হাঁপাতে হাঁপাতে)

তন্ময়-তনু আজ থেকে রাতে তোর সাথে থাকবে।

জেনি-কেনো ভাইয়া?

তন্ময়-যেটা বলেছি সেটা শুন।

জেনি-আমি রাখবোনা।

তন্ময়-তুই না রাখলে আমি চলে যাবো।

জেনি-রাগ করছো কেনো??

তন্ময়-তুই রাখবি কি রাখবি না???

জেনি-ভাবীর এখন তোমার কাছে থাকা দরকার।

তন্ময়-সেটা আমি বুঝে নিবো।

জেনি-কিন্তু….

আমি-জেনি আমি তোমার সাথেই থাকবো।

জেনি-ওকে।

আমি আর দেরি না করে ওই রুম থেকে জেনির সাথে জেনির রুমে চলে গেলাম।জেনির রুমে গিয়ে আমি আমাদের বেবির জন্য কিনে রাখা খেলনার বাক্সটা দেখলাম।এই বাক্স করেই তন্ময় খেলনা আর পুতুল এনেছিলো আমাদের বাচ্চার জন্য।কিন্তু এটা এখানে কি করছে।

আমি-জেনি!!!

জেনি -হুম ভাবী।

আমি -এই বাক্সটা তোমার রুমে কিভাবে???

জেনি-ভাইয়া তোমাদের রুম থেকে আনিয়েছে।

আমি-ওহ!!!

জেনি-কেনো ভাবী!!!

আমি-নাহ এমনি।

জেনি-ভাবী ভাইয়া এখন তোমার উপর রাগ করে আছে তো তাই তোমার সাথে এমন করছে।দেখবে যখন রাগ ভেঙ্গে যাবে তখন আগের মতো হয়ে যাবে।তোমার সাথে ভালো ভাবেই থাকবে।

আমি-হুম।

রাতে আমি কিছু না খেয়ে ঘুমাতে গেলাম।কিন্তু কিছুতেই ঘুম হচ্ছিল না।হঠাৎ মধ্যরাতে কেও দরজায় নক করে।জেনি বেঘোর ঘুমে থাকায় ও টের পায়নি।আমি গিয়ে দরজা খুলতেই কেও আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে লাগলো।

-চলবে

#তন্ময়ের_তনু
#পর্ব_২৭
#Jechi_Jahan

দরজা খোলার সাথে সাথে তন্ময় আমাকে টেনে নিচে নিয়ে যেতে লাগলো।আমি শুধু ওনার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি।উনি আমাকে নীচে এনে খাবারের টেবিলে বসিয়ে দিলো।

তন্ময়-আমার বাচ্চার খেয়াল রাখোনি তাই বলে নিজের খেয়াল ও রাখবে না।

আমি-মানে???

তন্ময়-রাতে খাওনি কেনো??

আমি-(ভয়ে মাথা নিচু করে আছি)

তন্ময়-কিছু জিজ্ঞেস করছি।

আমি-খিদে ছিলোনা।

তন্ময়-খিদে ছিলোনা মাই ফুট।(রেগে)

আমি-এমন করছেন কেনো??

তন্ময়-চুপ”””একটা কথাও বলবেনা।আমি এখন তোমাকে খাবার এনে দিবো।তুমি এখনই আমার সামনে সব খাবার শেষ করবে।

আমি-আমার সত্যি খেতে ইচ্ছে করছে না।

তন্ময়-চুপ।

তন্ময় রান্নাঘরে গিয়ে আমার জন্য খাবার বাড়তে লাগলো।আমিও গিয়ে ওনার পাশে দাঁড়ালাম।উনি আমাকে দেখে তেমন পাত্তা দিলেন না।সবকিছু একদম বেশি বেশি করে নিয়েছে।আমাকে খেতে দিলে আমি ওনার ভয়ে খেতে শুরু করি।

তন্ময়-এভাবে খাচ্ছো কেনো???

আমি-কই???

তন্ময়-টেবিলে গিয়ে খাও।

আমি-না এখানেই ঠিক আছে।

তন্ময়-একবার পানি,একবার ভাত এভাবে খাচ্ছো কেনো???

আমি-গিলতে কষ্ট হচ্ছে। (খেতে খেতে)

তন্ময়-ভালো লাগছে না???

আমি-না।

তন্ময়-ওকে তাহলে রেখে দাও।

আমি-আচ্ছা।

আমি খাবারটা রেখে হাত ধুয়ে নিলাম।শেষে রান্না ঘর থেকে যখন বেরবো তখন তন্ময় আমায় ডেকে থামিয়ে দেয়।

তন্ময়-কই যাও?

আমি-রুমে।

তন্ময়-আমি যেতে বলেছি।

আমি-না(মাথা নিচু করে)

তন্ময়-তাহলে???

আমি-সরি!!

তন্ময়-দাঁড়িয়ে থাকো।

আমাকে বকাবকি করে তন্ময় চুলা জ্বালালো।আমি শুধু ওনার চুলা জ্বালানোর কারণটা ভাবছি।আমাকে অবাক করে উনি প্যানে আমার জন্য বাড়া খাবার গুলো দিয়ে দিলেন।খাবারে শুধু ভাত,গরুর মাংস আর চাইনিজ সবজি ছিলো।উনি সেসব একসাথে ভেজে আমাকে খেতে দিল।

আমি-আবার??

তন্ময়-আগে ভালো লাগেনি এখন ভালো লাগবে।

আমি-আমি এতগুলো খাবোনা।

তন্ময়-তনু দুপুর থেকে তুমি খাওনি।

আমি-তো???

তন্ময়-তোমার বেখেয়ালির কারণে নিজের সন্তান কে হারিয়েছি কিন্তু তোমাকে হারাতে পারবোনা।(বলে চলে গেলো)

আমি-(উনি হয়তো ঠিকই বলেছেন আমার সন্তানের মৃত্যুর জন্য আমি নিজেই দায়ী।আমি যেনো একটা অপয়া যেখানে যাই সেখানেই সবকিছু ধ্বংস করে ফেলি।আমার জন্য বাবা মাকে ডিভোর্স দিতে চেয়েছিলো,আর আজ আমার জন্য আমার সন্তানের মৃত্যু হলো।আমি আর না ভেবে খাবারটা শেষ করে রুমে চলে গেলাম)

((সকালে))

সকালে যখন ঘুম ভাঙ্গে তখন নিজেকে তন্ময়ের রুমে আবিষ্কার করি।নিজেকে তন্ময়ের রুমে দেখে খানিকটা অবাক হই সাথে ভয়ও পাই।আমাকে এই রুমে দেখলে তন্ময় হয়তো রেগে যাবে।আমি ভয় ভয়ে খাট থেকে নেমে এদিক-ওদিক তাকাচ্ছি আর সামনে যাচ্ছি।সামনে যেতে যেতে হঠাৎ তন্ময়ের সাথে একটা ধাক্কা খাই।

তন্ময়-ওয়াট???

আমি-সরি সরি!!(মাথা নিচু করে)

তন্ময়-তুমি এখানে???

আমি-(ভয়ে চুপ করে আছি)

তন্ময়-আমার রুম থেকে এমন চোরের মতো বের হচ্ছো কেনো তুমি??

আমি-এই না না আমি কিছু চুরি করিনি।

তন্ময়-আমাদের বেবি মিসক্যারেজ না হলেও তুমি বোধহয় ওকে সামলাতে পারতে না।

আমি-এটা কেনো মনে হলো???

তন্ময়-কারণ তুনি নিজেই তো একটা বাচ্চা সাথে আরেকটা বাচ্চা কিভাবে সামলাতে।

আমি-এতোই বাচ্চা মনে হয়??

তন্ময়-রাতে তুমি আমার রুমে কেনো এসেছো??

আমি-আমি এসেছি???

তন্ময়-তুমিই তো এসেছো।

আমি-সরি সরি।(বলে ভয়ে ওনার সামনে থেকে জেনির কাছে চলে এলাম)

জেনি-আরে ভাবী!!

আমি-জেনি আমি রাতে ওনার কাছে গিয়ে
ছিলাম???

জেনি-না তো।

আমি-তাহলে আমি ওনার রুমে কিভাবে গেলাম।

জেনি-ভাইয়াই তোমাকে সকালে নিয়ে গেছে।

আমি-কেনো???

জেনি-কারণ আমি বলেছিলাম।

আমি-তুমি কেনো বললে।

জেনি-আসলে আজ আমার একটা ফ্রেন্ড এসে ছিলো আমার কাছে।

আমি-তাতে কি হয়েছে??

জেনি-ও রুমে এসে তোমাকে দেখলে কি না কি বলতো যার জন্য আমি…

আমি- ওহ বুঝেছি।

জেনি-নাস্তা করেছো তুমি???

আমি-না।

জেনি-আজ অনেক দেরিতে উঠেছো।

আমি-হুম,,,টেরই পাইনি।

জেনি-যাও ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করতে যাও।

আমি-একেবারে শাওয়ার নিয়ে নিই।

জেনি-ঠিক আছে।

আমি এবার আমাদের রুমে ভয়ে ভয়ে আসলাম।
রুমে এসে দেখি তন্ময় নেই।আমি আলামারি থেকে আমার একটা সবুজ রঙের কামিজ নিয়ে ওয়াশরুমে যেতে যাই।কিন্তু ওয়াশরুমের দরজা ভেতর থেকে বন্ধ।আমি ভাবলাম কে হতে পারে ভেতরে।পরক্ষণে মনে পরলো তন্ময়ের কথা তাই আমি তাড়াহুড়ো করে রুম থেকে বের হয়ে যাই।

আমি-আউ,,,,(পেটে হাত দিয়ে)

অভি-তনু কি হয়েছে??(তন্ময়ের কাছে আসতে গিয়ে তনুর সাথে দেখা হলো।তনু কেমন অসুস্থ বোধ করছে তাই ওকে ধরলাম)

আমি-পেটে ব্যাথা করছে।

অভি-তন্ময় তোমাকে মেডিসিন দেয়নি।

আমি-দিবে বলেছিলো হয়তো ভুলে গেছে।

অভি-তন্ময় ও না দিন দিন একটা পাগল হচ্ছে।ও কি জানেনা বেবি মিসক্যারেজ হলে মাঝে মাঝে পেটে ব্যাথা হয়।

আমি-থাক ভাইয়া ভুলে গেছে হয়তো।

তন্ময়-কি হয়েছে???(পেছন থেকে)

অভি-কি হয়নি সেটা বল।(রেগে)

তন্ময়-আর কিছু কি হওয়ার বাকি আছে।

অভি-তুই ওই টপিকটা মাথা থেকে ঝাড়।

তন্ময়-কি হয়েছে সেটা বলো।

অভি-তনু কে মেডিসিন দিসনি কেনো??ওর তো পেটে ব্যাথা করছে।

তন্ময়-আমি রাতে জেনির রুমে রেখে এসেছিলাম ও কি দেখেনি???

আমি-আমি খেয়াল করিনি।

তন্ময়-এখন গিয়ে খেয়ে নিও।

আমি-আচ্ছা।(বলে চলে যেতে লাগলাম)

তন্ময়-জামা কাপড় নিয়ে কই যাচ্ছো??

আমি-জেনির রুমে শাওয়ার নিতে।

তন্ময়-এই রুমে কি হয়েছে??

আমি-এখানে তো আপনি ছিলেন।

তন্ময়-আমি কি এখন বের হইনি।

আমি-(মাথা নিচু করে আছি)

তন্ময়-যাও।(রেগে)

আমিও ওনার কথায় আমাদের রুমে গিয়েই শাওয়ার টা নিই।গোসল করে যখন আয়নার সামনে চুল শুকাতে লাগলাম।আয়নার দিকে তাকিয়ে আমার মন খারাপ হয়ে গেলো।এই দুই মাসে আমি যখনই আয়নার সামনে দাঁড়াতাম। তন্ময় তখনই পেছন থেকে আমার পেটে হাত দিয়ে রাখতো আর বেবির সাথে কথা বলতো।এখন তো আর বেবি টা নেই তাই তন্ময়ও নেই।যদি আর একটা মাস আমি অপেক্ষা করতাম তাহলে হয়তো আমার বেবিটা বেঁচে থাকতো।ডক্টর তো বলেছিলো এই তিন মাসে পেটে হালকা আগাত লাগলেও বেবি মিসক্যারেজ হয়ে যাবে।

খাবার টেবিলে—

সাবিয়া-তন্ময় তনু কই??

তন্ময়-শাওয়ার নিতে গেছিলো।

সাবিয়া-একবার গিয়ে ডেকে আসতে পারলি না। নিজে একা এসে নাস্তা করতে বসে গেছে।

তন্ময়-তো এখন কি নাস্তা করতাম না।

সাবিয়া-তোর কথা তো বাদই দিলাম।অভি তোকে ও বলি হারি তুইও মেয়েটাকে ডাকতে পারলি না।

অভি-মা শাওয়ার নিচ্ছিলো তাই…

আমি-কি হয়েছে ভাইয়া???(পেছন থেকে)

অভি-ওই তো এসে গেছে।

সাবিয়া-এতো দেরি করলি কেনো???

আমি-চুল শুকাচ্ছিলাম।

তন্ময়-(ও আজকে শাড়ী ছেড়ে কামিজ কেনো পরলো??ও কি জানেনা আমার ওকে শাড়ীতেই ভালো লাগে)কতক্ষণ ধরে শাওয়ার নিয়েছো??

আমি-বেশি সময় লাগেনি।

সাবিয়া-আচ্ছা এখন খেতে বস।

আমি-হুম।

+++++++++++++

অনু-মা কিছু খাওনা।

রাজিয়া-আমার ছোট মেয়েটার এই অবস্থা আর আমি এখানে বসে বসে খাবো।(কান্না করে)

অনু-এতই যখন দরদ তাহলে ছোট বেলা থেকে এমন করছে কেনো???

রাজিয়া-আমি তখন ভুল ছিলাম আমার মেয়ের তো কোনো দোসই ছিলোনা।তবুও আমি ওকে দোষ দিলাম।(কান্না করে)

অনু-আচ্ছা এখন কিছু খেয়ে নাও।

রাজিয়া-মেয়েটা তো আমার উপর অনেক অভিমান করে আছে তাইনা??

অনু-না মা তনু তোমার উপর কোমো অভিমান করে নেই।ও তো শুধু তোমার অপেক্ষায় থাকতো।

রাজিয়া-ওকে আজকে এখানে নিয়ে আসবি।

অনু-ওর উপর এত বড় একটা ধকল গেছে ওর মন মানসিকতা ও এখন মনে হয় ভালো লেই।কিছু দিন গিয়ে পর গিয়ে নিয়ে আসবো।

তনুর বাবা-লাগবেনা তনুকে আনা।

অনু-কেনো বাবা???

তনুর বাবা-তনু এখান থেকে ওখানেই বেশি ভালো থাকবে।এখানে আসলে ও হয়তো দুঃখে কষ্ট আরো ভেঙ্গে পরবে।

অনু-তুমি এসব কি বলছো??

তনুর বাবা-তো আর কি বলবো।তুই বল এই সময় এ মেয়েরা বেশির ভাগ কার কাছে থাকে,,,তার মায়ের কাছে।কিন্তু আমার তনুর ভাগ্য এতই খারাপ যে তার মা থেকেও নেই।

অনু-বাবা এমন করে বলোনা।

তনুর বাবা-তো কেমন করে বলবো অনু।তনু তো কম চেষ্টা করেনি তোর মায়ের কাছে যাওয়ার।কিন্তু তোর মা কি করেছে ওকে দূরে ঠেলে দিয়েছে।আমার করা দোষের জন্য ওকে দায়ী করেছে ওকে কষ্ট দিয়েছে।

রাজিয়া-শুনো না,,,

তনুর বাবা-তোমার কি মাথায় এতোটুকু বোধবুদ্ধি নেই।সেদিন আমি তোমাকে অপমান করেছি,
আমি তোমাকে থাপ্পড় মেরেছি,আমি তোমাকে ডিভোর্স দিবো বলেছি।কিন্তু তুমি এসবের জন্য আমার ছোট মেয়েটাকে কষ্ট দিলে।

অনু-বাবা এসব কি বলছো প্লিজ থামো।

তনুর বাবা-তোর মা আজ বুঝবে কাওকে কষ্ট দিলে সেই কষ্ট তার কাছেও ফিরে আসবে।
(বলে চলে গেলো)

এই চার-পাঁচ দিন আমি জেনির রুমেই থাকছি।আমার আর তন্ময়ের সেই আগের জুটিটা আর নেই।আগে আমরা একসাথে কত হাসতাম কিন্তু এখন কথা বললেও মুখে সেই হাসিটা নেই।এই কয়দিনে তন্ময় আমার সাথে না হাসলেও আমার খেয়াল রাখতে ভুলেনি।আজ বিকালে আমি ছাদে দাঁড়িয়ে আমার বেবির কথা ভাবছিলাম।হঠাৎ তন্ময় আমার পাশে এসে দাঁড়িয়ে থাকে।ওনাকে দেখে আমি যেই ওখান থেকে চলে আসতে যাই উনি ওমনি আমার হাত ধরে ফেলে।

তন্ময়-আমার থেকে এতো পালাই পালাই করছো কেনো???

আমি-কই???

তন্ময়-আর এখন শাড়ী না পরে কামিজ কেনো পরো???

আমি-ভালো লাগেনা তাই।

তন্ময়-তোমার ভালো লাগুক আর না লাগুক তুমি শাড়ী পরবে।কারণ তোমার শাড়ী পরা আমি পছন্দ করি।বুঝেছো???

আমি-বুঝেছি কিন্তু??

তন্ময়-যাও এখন গিয়ে পরে আসো।

আমি-এখনই???

তন্ময়-যাও।

আমি ছাদ থেকে নামার সময় ইমনকে ছাদে উঠতে দেখি।ইমনকে দেখে এখন আমার কোনো কিছুই ফিল হয়না।না আগের মতো কষ্ট,ভালো বাসা,ঘৃণা কিছুই না।আমি ওর না তাকিয়ে ওর পাশ কাটিয়ে নিচে চলে যাই।

ইমন-ভাইয়া!!

তন্ময়-আরে ইমন আয়।

ইমন-কি করছো??

তন্ময়-কিছুনা এমনে দাঁড়িয়ে আছি।

ইমন-তুমি তনুর সাথে এমন করো কেনো??

তন্ময়-কি করলাম???

ইমন-ওর বেবি মিসক্যারেজ হওয়ার পর থেকে তুমি ওর সাথে ভালোভাবে কথা বলোনা।ওকে নিজের রুমে থাকতে দাওনা।শুধু একটা জিনিস বাদে,,,সেটা হলো ওর খেয়াল রাখতে ভুলোনা।

তন্ময়-আমি এমন কেনো করি জানতে চাস???

ইমন-হুম!!!

তন্ময়-কারণ ওকে দেখলে আমার কষ্ট হয়।কি তনু ছিলো আর কি তনু হয়ে গেলো।ওর মুখে কোনো হাসি নেই,আনন্দ নেই।ওকে এমন দেখলে আমার খুব কষ্ট হয়ে।তাই এমন করি,,,

ইমন-এমন করে তো তুমি ওকে আরো বেশি কষ্ট দিয়ে দিচ্ছো।

তন্ময়-এমন না যে শুধু কষ্ট হয় ওকে দেখলে আমার অপরাধ বোধ ও হয়।

ইমন-কেমন অপরাধ বোধ??

তন্ময়-সেদিন দোষটা তনুর ছিলোনা,,,,দোষটা আমার ছিলো।আমি সেদিন ওর হাতটা ধরতে পারিনি।যদি সেদিন আমি ওর হাতটা ধরতাম তাহলে আজ আমার বাচ্ছাও বেঁচে থাকতো আর তনুর সেই হাসি খুশি মুখটাও দেখতে পারতাম।
(কেঁদে কেঁদে)

ইমন-এতে তোমাদের কারোর দোষ নেই ভাইয়া।এটা শুধু মাত্র একটা এক্সিডেন্ট।

তন্ময়-এক্সিডেন্ট হলেও আমি পারতাম তো।(কেঁদে কেঁদে)

ইমন-তুমি আজ আমাকে অনেক সত্যি বলেছো।আজ আমিও তোমাকে কিছু সত্যি কথা বলতে চাই।

তন্ময়-কি সত্যি???(স্বাভাবিক হয়ে)

-চলবে।

তন্ময়ের তনু পর্ব-২৪+২৫

0

#তন্ময়ের_তনু
#পর্ব_২৪
#Jechi_Jahan

আমি বাড়ীর দিকে রওনা দিচ্ছি। আজ আমার এত খুশি লাগছে যে বলে বুঝাতে পারবোনা।বাড়ীতে পৌঁছে আমি সোজা রুমে চলে গেলাম।রুমে গিয়ে দেখলাম তন্ময় চিন্তিত মুখে বিছানার উপর পা ঝুলিয়ে বসে আছে।আমি ওনার সামনে যাওয়ার সাথেই উনি উঠে আমাকে জরিয়ে ধরে।

তন্ময়-তুমি আমাকে জ্বালাচ্ছো তনু।(রেগে)

আমি-মানে???

তন্ময়-কালকে নাহয় তারাহুরোর জন্য জানিয়ে যেতে পারলেনা যে তুমি বাইরে যাচ্ছো।কিন্তু আজ কে কি হলো যে তুমি জানাতে পারলেনা?

আমি-সরি!!(মাথা নিচু করে)

তন্ময়-তোমার এমন বেখেয়ালি কাজের জন্য তোমাকে থাপ্পড় মারা উচিত।

আমি-বললাম তো সরি।

তন্ময়-আচ্ছা ছাড়ো,,,,কোথায় গিয়েছিলে???

আমি-গিয়েছিলাম কোথাও একটা।

তন্ময়-বলবে???(রেগে)

আমি-বলছিলাম কি খাটটা বেশি ছোট না।

তন্ময়-ছোট হলেও তুমি আর আমিই তো।আর কথা ঘুরানোর চেষ্টা করছো কেনো???

আমি-তন্ময়””(তন্ময়ের গলা জরিয়ে ধরে)

তন্ময়-কি???

আমি-খাটটা আসলেই ছোট।

তন্ময়-আমরা দুজনই তো সমস্যা নেই।

আমি-যদি আরেকজন আসে???

তন্ময়-আরেকজন আবার কে আস…..

উনি আর কিছু বলতে পারলেন না চুপ হয়ে গেলেন।হয়তো ভাবছেন এ কথার মানে কি।হঠাৎ তন্ময় চোখ দুটো পুরো রসগোল্লার মতো করে ফেললো।উনি এখন কি ভেবেছেন আমি জানিনা বাট যেটাই ভেবেছেন তাতে উনি বেশ অবাক
হয়েছেন এটা আমি বুঝতে পারছি।

আমি-তন্ময় কি হলো???

তন্ময়-এটা সত্যি???

আমি-কি সত্যি???

তন্ময়-এইযে আমার তানবি আর তৌহিদ আসবে।

আমি-আপনিই বলুন।(চোখ দুটো ছোট করে)

তন্ময় আবার আমাকে জরিয়ে ধরলো আর গালে অনবরত চুমু দিতে লাগলো।উনি এবার আমাকে ছেড়ে আমার পেটের কাছে বসে পেটে হাত দেয়।

তন্ময়-আমার বেবি বুঝি এখানে???

আমি-তন্ময় আপনি বাবা হবেন।

তন্ময়-চলো সবাইকে গিয়ে বলি।

আমি-এখনই???

তন্ময়-আরে চলো তো।(বলে নিচে নিয়ে গেলো)

অভি-ওই এভাবে আসছিস কেনো তুই??

তন্ময়-বাকিরা কই??

জেনি-বাকিরা বলতে???

তন্ময়-মা বাবা আর জেঠা জেঠি।

ইভা-ওনারা তো নিজেদের রুমে।

তন্ময়-জেনি গিয়ে ডেকে আন।

জেনি-কেনো??

তন্ময়-প্লিজ ডেকে আননা।

জেনি-হুম।(বলে সবাইকে ডেকে আনে)

রহমান-কিরে সবাইকে ডাকলি??

তন্ময়-আগে বসো তারপর বলছি।

জেঠি-বল কি বলবি???

তন্ময়-বাবা আমি বাবা হতে চলেছি।

রহমান-কি???

তন্ময়-হ্যাঁ বাবা তনু আজকে বলেছে।

সাবিয়া-এটা সত্যি???(তনুর কাছে গিয়ে)

আমি-আজকে রিপোর্টে দেখেছি।

অভি-আরেহ দুই ভাই একসাথে বাবা হবো।

এই বিষয় নিয়ে সবাই খুব খুশি হলো।কিন্তু একটা মানুষ খুশি হতে পারলো না আর সে হলো ইমন।ও এটা বিশ্বাসই করতে পারছে না যে ওর তনয়া অন্য কারো সন্তানের মা হতে চলেছে।এই টপিক নিয়ে সবাই অনেকক্ষণ ধরে কথা বললো।

রহমান-তন্ময়!!!

তন্ময়-হুম বাবা।

রহমান-তোদের বিয়ের পর তনু শুরু একবার ওর বাড়িতে গিয়েছিলো এরপর আর কোনোদিন যায়নি।তো তোরা আজ তনুর বাড়ীতে গিয়ে এই খুশির খবর দিয়ে আয় এখন তো অনুও আছে।

আমি-সত্যি ওখানে যাবো বাবা???

তন্ময়-আমি নিয়ে যাবো বাবা।

সাবিয়া-তাহলে তোরা এখনই চলে যা।

আমি-আমি এখনি রেডি হয়ে আসি।(বলে দৌড়ে সিড়ি দিয়ে উঠে চলে যাচ্ছিলাম।হঠাৎ তন্ময়ের ডাকে আমি থেকে যাই)

তন্ময়-পাগল হয়ে গেছো তুমি???

আমি-কেনো???

তন্ময়-এই অবস্থায় দৌঁড়াচ্ছো তুমি???(রেগে)

সাবিয়া-এই সময় সাবধানে চলাফেরা করতে তনু।নিসাকে দেখছোনা???

আমি-হুম মা।

সাবিয়া-তন্ময় তুই ওকে উপরে নিয়ে যা।

তন্ময়-হুম নিয়ে যাচ্ছি।

তন্ময় আমাকে নিয়ে রুমে আসলে আমি চেঞ্জ করতে ওয়াশরুমে চলে যাই।আমি চেঞ্জ করে এসে দেখি তন্ময়ও চেঞ্জ করে ফেলেছে।হয়তো রুমেই চেঞ্জ করে ফেলেছে।আমরা দুজন রেডি হয়ে এবার আমার বাড়িতে চলে আসলাম।

আবদুল-আরে তনু???

আমি-আসসালামু আলাইকুম আব্বু।

তন্ময়-আসসালামু আলাইকুম বাবা।

আবদুল-ওয়ালাইকুম আসসালাম।(অবাক হয়ে)

আমি-কি হয়েছে এভাবে তাকিয়ে আছো কেনো আব্বু???আমাদের দেখে খুশি হওনি???

আবদুল-এতদিন পর আসবি ভাবতে পারিনি।

তন্ময়-এতদিন পর এসেছি তো এসেছি একটা খুশির সংবাদ ও নিয়ে এসেছি।(মুচকি হেসে)

আবদুল-কি সংবাদ???

আমি-আব্বু ওসব পরে শুনবে আগে বলো আম্মু আর আপু কোথায়??

আবদুল-তোর আপুর রুমে আছে তারা।

আমি আর দেরি না করে হেঁটে হেঁটে আপুর রুমে চলে গেলাম।রুমের সামনে গিয়ে দেখলাম আপু আর আম্মু বসে বসে কথা বলছে।আমি ভেতরে না গিয়ে ওখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ওদের কথা বলা দেখছিলাম।ওদের দেখে আমার চোখে পানি জমে গেলো কারণ মা তো কখনো আমার সাথে কথা তো দূরে থাক বসতেও চাইতো না।

অনু-তনু!!!

আমি-হু হুম,,(আপুর ডাকে ধ্যান ভাঙ্গে)

অনু-তুই কখন এলি??

আমি-মাত্রই এসেছি।

অনু-তো ওখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেনো এখানে আয়???(উঠে আমাকে ভেতরে নিয়ে)

আমি-আসসালামু আলাইকুম আম্মু,,

আম্মু-ওয়ালাইকুম আসসালাম(অন্য দিকে ফিরে)

আমি-কেমন আছো তুমি???(খাটে বসে)

আম্মু-যেমনই থাকি তোকে ভাবতে হবেনা।

অনু-মা কি শুরু করেছো বলোতো।

আম্মু-যা করছি ঠিকই করছি।

অনু-তনুর সাথে হয়তো তন্ময় ও এসেছে যাও ওদের গিয়ে চা-নাস্তা দাও।আর আমাদের জন্য শুধু চা টা পাঠিয়ে দাও।

আম্মু-তোরা বস আমি আনছি।

অনু-কিরে কেমন আছিস???

আমি-ভালো।(মাথা নিচু করে)

অনু-তন্ময় এসেছে তোর সাথে???

আমি-হুম এসেছে।আচ্ছা আদিল ভাইয়া কই???

অনু-ও ওর বাড়িতে গেছে।

আমি-তোমাকে এখানে রেখে???

অনু-বলেছে মায়ের কাছে কিছুদিন থেকে যাও।

আমি-ওহহ ভালো।

অনু-তুই মন খারাপ কেনো করছিস??তুই তো জানিসই যে মা তোর সাথে একটু এমন করেই।

আমি-কিন্তু কেনো করে???

অনু-বলতে বারণ আছে।

আমি-কেনো বারণ আছে আপু আমি কি ছোট বেলায় কোনো ভুল করেছি যার জন্য এমন হচ্ছে।

অনু-অত কিছু বলতে পারবোনা।

আমি-আপু তুমি অন্তত এমন করো না।

অনু-ওসব ছাড়তো,,,আচ্ছা হঠাৎ এখানে কিভাবে আসা হলো বল।

আমি-এমনে এসেছি।

অনু-না কারণ ছাড়া তো তন্ময় তোকে আনবে না।

আমি-একটা নিউজ দিতে এসেছিলো।

অনু-কি নিউজ???

আমি-আছে একটা পরে বলবো।

অনু-মজা কেনো করছিস বল না।

আমি-তুমি খুব তাড়াতাড়ি খালামণি হবে।

অনু-যাহ মজা করছিস তাই না।

আমি-আমি সত্যি বলছি আজকে রিপোর্ট এসেছে

অনু-তারমানে তুই মা হবি।

আমি-হুম!!(মুচকি হেসে)

অনু-তন্ময় খুশি তো???

আমি-এ কথা বলার পর উনি আমার সাথে যা যা করেছে তা বললে তুমি হাসি থামাতে পারবেনা।

অনু-কেনো কি করেছে???

এরপর আমি আপুকে তন্ময়ের কথা বলতে লাগলাম।যখন ও বাবা হবে শুনেছিলো তার পরের ঘটনা গুলো।এসব বলার সময় হঠাৎ মা চা নিয়ে রুমে আসে।চা টা আমার দিকে এগিয়ে দেয় আর আমিও চা নিয়ে বসে থাকি।খেয়াল করে দেখি মা আমার দিকে অনেকক্ষণ ধরে তাকিয়ে রয়েছে এটা অবশ্য আপুও খেয়াল করে।

অনু-আম্মু কি হয়েছে??

আম্মু-হু হুম কিছু কি বলেছিস??

অনু-তুমি তনুর দিকে এভাবে তাকিয়ে আছো কেনো???(মুচকি হেসে)

আম্মু-কই তাকিয়ে আছি???

অনু-আচ্ছা কোনো খবর শুনেছো কি???

আম্মু-হুম নিচে মাত্র শুনে আসলাম।

অনু-খুশি হয়েছো???

আম্মু-খুশি না হওয়ার কি আছে।(আমার দিকে তাকিয়ে)

অনু-খুশি হলেই ভালো।

আমি-আপু আমি না কিছুক্ষণ পর চলে যাবো।তুমি আমার সাথে একটু ছাদে চলোনা অনেকদিন হয়েছে ছাদে যাইনি।

অনু-কিছুক্ষণ পরই চলে যাবি।

আমি-হুম!!!এখানে থাকলে মা মন রাগ করবে।

অনু-আম্মু তো রাগ করবেই তোর থাকা তো পছন্দ করেনা তাই।(আম্মুর দিকে তাকিয়ে)

আমি-আরে আমি আম্মুর কথা বলিনি তন্ময়ের মায়ের কথা বলেছি।

অনু-ওহ বুঝেছি তোর ওই মা রাগ করবে।

আমি-চলোনা ছাদে যাই।

অনু-চল!!!(বলে আমাকে সহ ছাদে নিয়ে গেলো)

——-

ইমন-না না তনু এটা করতে পারেনা।ও কিভাবে তন্ময়ের সাথে সংসার করছে।তন্ময়কে আমি যা দেখিয়েছি আর যা বুঝিয়েছি তাতে তো তন্ময়ের তনুকে মেনে নেওয়ার কথা না।(নিজের রুমে দাঁড়িয়ে একা একা নিজেকেই এসব বলছে)

জেনি-ইমন ভাইয়া???

ইমন-জেনি তুমি এখানে???

জেনি-কি এমন করেছিলে যে ভাইয়া ভাবীকে মেনে নিতো না???

ইমন-কি কি বলছো এসব??

জেনি-আমি যাওয়ার সময় সব শুনেছি ভাইয়া।

ইমন-কি কি শুনেছো তুমি যে এসব বলছো।

জেনি-এই যে তুমিই ভাবীর এক্স।

ইমন-তোমার ভাবীর এক্সও আছে।

জেনি-ভাবী আমায় তোমার ব্যাপারে সব বলেছে।

ইমন-আজে বাজে কথা বলবেনা জেনি যাও এখান থেকে।

জেনি-আমি সব রেকর্ড ও করেছি ভাইয়া।(মোবাইল দেখিয়ে)তাই সব সত্যি বলে দাও।

ইমন-কি সত্যি জানতে চাইছো তুমি??

জেনি-ভাইয়া প্লিজ নাটক করোনা।আমি কি জানতে চাইছি এটা তুমি ভালো করেই জানো।

ইমন-তাহলে তুমি বুঝে গেছো যে আমিই তনুর সেই ব্যর্থ প্রেমিক যে তিন বছর আগে তনুকে নিজের না করে পালিয়ে গিয়েছিলো।

জেনি-কেনো ছেড়ে চলে গিয়েছিলে ভাইয়া???

ইমন-কারণ আমি নিরুপায় ছিলাম।

জেনি-কেনো???

ইমন-আমি তনুকে ভালোবাসলেও কেনো জানিনা ওকে আমার নিজের লেভেলের মনে হতো না।

জেনি-মানে???

ইমন-ওকে কতই না ভালোবেসে ছিলাম বাট পর মুহূর্তে ওকে আমার অসহ্য মনে হতো যার জন্য ওকে ছেড়ে আমি চলে আসি।

জেনি-ভাবীকে তো একবারও জানাওনি।

ইমন-হুম একবারও জানাইনি উল্টো যখন ও জানতে চাইতো তখন আমি ওকে বলতাম না।

জেনি-কখনো মিসও করোনি তাইনা???

ইমন-প্রথম এক বছর ওকে ভুলে শান্তিতে ছিলাম।কিন্তু পরে পরে ওর কথা খুব মনে পরতো।যখন বুঝতে পারি আমি ভুল করেছি ঠিক তখনই বাবা ইভার সঙ্গে আমার বিয়ের কথা বলে।আমি ইভা কে বিয়ে করেও তনুকে ভুলতে পারিনি।

জেনি-একদম ডং করোনা তুমি যদি সত্যিই ভাবী কে ভালোবাসতে তাহলে ইভার সাথে সুখে সংসার করতে না।

ইমন-আমি জাস্ট তনুকে ভুলতে চেয়েছিলাম।বাট ও আমার একটা জিদ ছিলো।যে জিদটা ওকে অন্য কারোর হতে দিতে চাইতো না।

জেনি-মানে???

ইমন-আমার বিয়ের পর আমি আমার এক জুনিয়রকে তনুর সব খবর দিতে বলি।বলতে পারো ওই জুনিয়র ছেলেটা তনুর গার্ড ছিলো।তনুও ওই ছেলেটাকে চিনতো।তো যেদিন তন্ময় আর অনুর বিয়ে হবে সেদিন তনু কেনো জানি অনুর গয়না খুলে দিচ্ছিলো।আর এটা ওই ছেলেটা ভিডিও করে আমায় পাঠিয়ে ছিলো।

জেনি-তারপর???

ইমন-যখন জানা হয় অনু পালিয়ে যাওয়ায় কারণে তনুর সাথে তন্ময়ের বিয়ে হয়েছে তখন আমি নিজেকে ঠিক রাখতে পারিনি।যতই হোক আমি তনুকে অন্য কারো হতে দিতাম না।তাই আমি তন্ময় কে আমার একটা নতুন নাম্বার থেকে তনুর ওই ভিডিও টা পাঠাই।

জেনি-কোন ভিডিও???

ইমন-যখন তনু অনুর গয়না খুলছিল সেই ভিডিও

জেনি-ওই ভিডিও পাঠিয়ে কি করলে??

ইমন-ওই ভিডিও পাঠিয়ে আমি মেচেজে লিখে ছিলাম “তনু তোমাকে বিয়ে করার জন্য অনুকে পালিয়ে যেতে সাহায্য করছে” আর তন্ময় ও ওটা বিশ্বাস ও করে ফেলে।

জেনি-ছিহ নিজে তো ভালোবাসতে পারলে না উল্টো আমার ভাই টাকেও ভালোবাসতে দিলে না।তুমি আসলে ঠিকই বলেছো ভাবী তোমার জিদ ছিলো ভালোবাসা ছিলো না।

ইমন-যখন কাউকে সত্যিকারে ভালোবাসবে তখন বুঝতে পারবে আমি এমনটা কেন করেছিলাম।(বলে চলে যেতে লাগে)

জেনি-আমি সব ভাইয়া আর ভাবীকে বলে দিবো।

ইমন-বলার আরো অনেক সময় আছে কিন্তু এখন যদি তুমি বলতে চাও তাহলে আমি বলবো বলার জন্য এটা সঠিক সনয় নয়(বলে চলে গেল)

———-

আমি-তন্ময় ছাড়ুন কি করছেন??

তন্ময়-কেনো কি হয়েছে???

আমি-ছাদে যে কেউ চলে আসতে পারে আর আপনি আমাকে এভাবে পেছন থেকে জরিয়ে ধরলেন।(ওনাকে সরানোর চেষ্টা করে)

তন্ময়-আচ্ছা তনু আমার কোলে কি তৌহিদ আসবে নাকি তানবি আসবে???

আমি-সেটা আমি কিভাবে বলবো মাত্র তো তিন সপ্তাহ হয়েছে এখনই বুঝা যাবে নাকি।

তন্ময়-মা রা তো বুঝে।

আমি-আমি তো বুঝতে পারছি না।

তন্ময়-তুমি একটা বোকা।

আমি-তন্ময় বাবা…..

তন্ময়-বাবা কই কই??(আমাকে তাড়াতাড়ি ছেড়ে এদিক ওদিক তাকিয়ে)

আমি-এখন যদি সত্যি থাকতো??

তন্ময়-তোমাকে তো.(এগিয়ে আসতে নিয়ে)

আবদুল-তন্ময়!

তন্ময়-হুম বাবা।(পেছনে ফিরে)

আবদুল-তোমাকে তোমার মা ডাকছে।

তন্ময়-হুম বাবা যাচ্ছি।(বলে চলে গেলো)

আবদুল-তুই এখানে কি করছিস মা??

আমি-কিছুনা বাবা এমনে দাঁড়িয়ে আছি।

আবদুল-জানিস তোর মা খুব খুশি তুই মা হবি জেনে।

আমি-আমার তো মনে হয়না।

আবদুল-সত্যি খুব হয়েছে।

আমি-আচ্ছা বাবা মা আমার সাথে এমন করে কেনো???

আবদুল-জানিনা।

আমি-বাবা তুমি অন্তত সত্যিটা বলো।

আবদুল-তোর এই মায়ের ভালোবাসা না পাওয়ার জন্য একমাত্র দায়ী আমি।

আমি-কেনো বাবা???

আবদুল-যেহেতু তুই ও মা হতে চলেছিস তো তোকে আজ সত্যিটা বলেই দি।

আমি-কি সত্যি???

আবদুল-জানিস তোর মা ছোটবেলায় তোকে খুব ভালোবাসতো।কিন্তু এখন ভালোবাসলেও সেটা প্রকাশ করে না শুধুমাত্র আমার কারণে।

আমি-কি করেছিলে তুমি???

এরপর বাবা আমাকে যা যা বললো তা শুনে আমার নিজেকে দোষী মনে হচ্ছে।

-চলবে

#তন্ময়ের_তনু
#পর্ব_২৫
#Jechi_Jahan

আমি বাবার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি।আজ আমার নিজের দোষের জন্যই হয়তো মা এর ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত হলাম।

আব্বু-কি ভাবছিস???

আমি-এমন কেনো করলে তুমি???

আব্বু-তুই আমার কলিজা ছিলি সেদিন যদি তোর কিছু হয়ে যেতো তখন আমি কি করতাম।।

আমি-তাই বলে মাকে ডিভোর্স দিতে চাইছিলে?

আব্বু-তুই বল তোর মা যদি তোর প্রতি খেয়াল রাখতো তাহলে কি সেদিন তোর ওই এক্সিডেন্টটা হতো।

আমি-এটা তো ঠিক ছিলোনা।

আব্বু-বাদ দে!!!যা অনুর কাছে যা।

আমাকে আব্বু আপুর রুমে দিয়ে চলে গেলো।আপু আদিল ভাইয়ার সাথে কথা বলছিলো তাই আমি কিছু না বলে বসে ছিলাম।

অনু-সরি রে একটু কথা বলছিলাম।

আমি-হুম!!!

অনু-মা আবার কিছু বলেছে??

আমি-না।

অনু-তাহলে মন খারাপ কেনো তোর???

অামি-আপু আমি সত্যিটা জেনে গেছি।

অনু-কে বলেছে তোকে???

আমি-বাবা!!!

অনু-তাহলে বুঝেছিস দোষটা কার???

আমি-আমারই তো।

অনু-তনু তুই ক্লাস থ্রিতে পড়া একটা মেয়ে ছিলি তখন এতে তোর দোষ কিভাবে থাকতে পারে।

আমি-আমার জন্যই তো….

অনু-শুন তোকে স্কুল থেকে আম্মু বাড়ীতে আনার সময় তোর এক্সিডেন্ট হয়। কিন্তু তোর এক্সিডেন্টে না তোর দোষ ছিলো আর না মায়ের।কিন্তু বাবা ভেবেছে মায়ের অসাবধানতার জন্য তোর এক্সিডেন্ট হয়েছে।

আমি-বাবা তো মাকে ডিভোর্স ও দিতে চেয়েছিল।

অনু-বাবা তোকে খুব ভালোবাসতো তাই রাগের মাথায় মাকে থাপ্পড় মারে আর শেষে ডিভোর্সের কথা বলে।তাই মা এসবের জন্য তোকে দায় করে।

আমি-আমি কি আর মাকে পাবোনা?(কান্না করে)

অনু-জানিস আজ মা অনেক খুশি হয়েছে তোর মা হওয়ার খবর শুনে।

আপুর কথাটা শুনে আমি মুচকি হাসলাম।হঠাৎ আমার ফোনে একটা মেচেজ আসে।মেচেজটা দেখে আমি খুব ঘাবড়ে যাই।

আমি-আপু আমি এখন চলে যাবো।

অনু-কি এখনই চলে যাবি??

আমি-হুম আপু আমি আর থাকতে পারবোনা।(বলে রুম থেকে বের হয়ে তন্ময়ের কাছে গেলাম)

তন্ময়-আবার জোরে জোরে হাঁটছো??(রেগে)

আমি-সরি!!!আমি বাড়ী যাবো।

তন্ময়-কি???

আমি-আমাকে এক্ষুনি বাড়ী নিয়ে চলুন।

তন্ময়-আর কিছুক্ষণ থাকো।

আমি-না তন্ময় আমি আর থাকতে পারবোনা।

তন্ময়-তনু তোমার কি শরীল খারাপ করছে?

আমি-না আমি ঠিক আছি।তন্ময় প্লিজ চলুন।

আমার একপ্রকার জোর করাতে তন্ময় আমায় বাড়ীতে আনতে রাজী হয়।আমরা আব্বু আর আম্মুর থেকে বিদায় নিয়ে বাড়িতে চলে আসি।আমি বাড়ীতে এসে কোনোদিক না তাকিয়ে সোজা
জেনির রুমে চলে যাই।রুমে গিয়ে দেখলাম জেনি চিন্তিত হয়ে ফোনের দিকে তাকিয়ে আছে।

আমি-জেনি!!!

জেনি-ভাবী তুমি এসেছো???(আমার কাছে এসে)

আমি-তখন মেচেজে এভাবে আসতে বললে তো আমি আসবোই।”ভাবী তুমি তাড়াতাড়ি বাড়ীতে আসো নাহলে আমি বিপদে পড়ে যাবো আর এই বিপদ থেকে তুমিই বাঁচাতে পারবে”।এভাবে বলতে তো যে কেওই চলে আসবে।

জেনি-সরি!!!তোমাকে কিছু কথা জিজ্ঞেস করি।

আমি-করো!!!

জেনি-ইমন ভাইয়াকে তুমি আগে থেকে চিনো???

আমি-(জেনি কি সত্যি টা জেনে গেছে)

জেনি-ভাবী আমি সব জানি।

আমি-কে বলেছে তোমাকে???

জেনি-ইমন ভাইয়া নিজে।

আমি-কি কি বলেছে???

জেনি-আমি বলবোনা তুমি শুনো।

এটা বলে জেনি ওর ফোন থেকে ইমনের কথা গুলোর রেকর্ড শুনাতে লাগলো তনুকে।তনু সব শুনে রাগে চোখ থেকে পানি বের হয়ে যায়।

আমি-ও এমন করবে আমি কল্পনাও করিনি।

জেনি-ভাবী তুমি ইমন ভাইয়া থেকে দূরে থেকো।

আমি-ও কি আমার ক্ষতি করবে???

জেনি-ভাইয়া তোমাকে এখনো ভালোবাসে তাই তোমার উপর খুব দূর্বল।তুমি যদি ভাইয়ার থেকে দূরে দূরে থাকো তাহলে ভালো হবে।

আমি-আচ্ছা!!(বলে দুজন কিছুক্ষণ চুপ ছিলাম)

জেনি-চলো আজ কিছু রান্না করি।

আমি-কি রান্না করবে???

জেনি-তেহারি খেতে ইচ্ছে করছে।

আমি-তাহলে চলো তেহারি রান্না করি।

জেনি-ওয়েট!!

আমি-কি??

জেনি-তোমার মনে হয় তোমাকে এই অবস্থায় কেও রান্না করতে দিবে।

আমি-কেও জানবে না চলো।

আমি আর জেনি রান্নাঘরে এসে তেহারির জন্য সব জিনিস রেডি করে রাখলাম।যখন আমরা তেহারি রান্না করতে শুরু করলাম তখন ভাবী রান্না করে আসে।রান্না ঘরে এসে আমাদেরকে দেখে ভাবী অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে।

আমি-ভাবী তুমি এখানে,,,,কিছু লাগবে??

নিসা-না!!!কিন্তু তুমি কখন এলে???

আমি-বেশ কিছুক্ষণ আগে।

নিসা-আমাকে তো কেও বলেও নি।

জেনি-তেমন কেও জানেওনা তাই বলেনি।

নিসা-তা ঠিক আছে কিন্তু তুমি রান্না ঘরে???

আমি-তেহারি রান্না করছি।

নিসা-আসতে না আসতেই রান্না ঘরে বাহ।

জেনি-আমি জানতাম এমন হবে।

নিসা-তো রান্না করতে দিচ্ছো কেনো??

জেনি-ভাবী বলেছিলো কিছু হবেনা।

নিসা-তনু আমি তন্ময়কে বলবো???

আমি-ভাবী কিছু হবেনা।

নিসা-তনু রিপোর্টে বলেছে তোমাকে তিন মাস রেস্টে থাকতে হবে কারণ তুমি অনেক দুর্বল।আর তুমি এখন রান্না করছো।

আমি-আজকেই লাস্ট।

নিসা-আমার কিছু বলার নেই।(বলে চলে গেলো)

জেনি-ভাবী আসলেই তুমি রুমে যাও।

আমি-জেনি এবার তুমিও।

জেনি-না ভাবী আমার কথাটা শুনো।

আমি-ওকে আমি রান্না করব না শুধু হেল্প করব।

জেনি-তোমাকে সেটাও করতে হবেনা তুমি যাও।

আমি-জেনি প্লিজ।

জেনি এবার কিছু না বলে রান্না করতে শুরু করল আর আমি ওর রান্না দেখছি।রান্না প্রায় শেষের দিকে আসলে আমি সালাদের জন্য শশা কাটতে লাগলাম।শশা কাটতে গিয়ে ভুলবশত আমার হাতটা একটু কেটে যায়।জেনি এবার রেগে আমার হাতে ব্যান্ডেজ করে রুমে পাঠিয়ে দিলো।
আমি রুমে এসে তন্ময়কে কোথাও দেখালাম না।আমি বারান্দায় এসে দেখি উনি দাঁড়িয়ে আছে।

আমি-তন্ময়!!!

তন্ময়-কি??(গম্ভীর হয়ে)

আমি-কি হয়েছে আপনার???

তন্ময়-কি হবে??(গম্ভীর হয়ে)

আমি-না মনে হচ্ছে যেনো রেগে আছেন?

তন্ময়-আমি রেগে থাকলেও তোমার কি?(রেগে)

আমি-আপনি কি আমার উপর রেগে আছেন?

তন্ময়-তোমার উপর কেনো রেগে থাকবো।

আমি-আপনি এমন করছেন কেন আমার সাথে?

তন্ময়-কেমন করছি???(রেগে আমার দুই বাহু শক্ত করে চেপে ধরে)

আমি-আহ!!!তন্ময় লাগছে।

তন্ময়-এখন তোমার লাগছে যখন দৌড়াও,হাত কাটো,রান্না করো তখন লাগেনা।(রেগে)

আমি-আপনি এই সামান্য ব্যাপারটার জন্য….

তন্ময়-হ্যাঁ আমি এই সামান্য ব্যাপার টার জন্য এমন করছি।কারণ আমার আমাদের সন্তানের জন্য চিন্তা হয়।কিন্তু তোমার আমাদের সন্তানের জন্য একটুও চিন্তা হয় না।

আমি-তন্ময় আপনি এসব…

তন্ময়-আসলে আমার কি মনে হয় জানো যে তুমি আমাদের সম্পর্ক টাকে এখনো মেনে নিতে পারোনি।তাই আমার আমাদের সন্তানের খেয়াল রাখছোনা কারণ তুমি তো আমাকেই মানোনি আমার সন্তানকে কি মানবে।

আমি-আপনি আমাকে এটা বলতে পারলেন।আর তাছাড়া এমন ছোট খাটো কাজে তো বেবির কিছু হয়না তন্ময়।

তন্ময়-যদি তোমার কিছু হয়ে যায় ডক্টর বলেছেনা তিন মাস রেস্টে থাকতে।কিন্তু তুমি কি রেস্টে থাকছো??তনু আমি শুধু আমাদের সন্তানের চিন্তা করছিনা আমি তোমারও চিন্তা করছি।কিন্তু আমার মনে এটা বুঝার মতো সেই বুদ্ধিটা এখনো তোমার হয়নি।(বলে চলে গেলো)

তন্ময়ের কথা গুলো তেতো হলেও সত্যি ছিলো।একজন বাবা অবশ্যই চাইবেনা তার সন্তান আর স্ত্রীর কোনো ক্ষতি হোক।এটা আমি এখন বুঝতে পেরেছি বলে তন্ময়ের কথাগুলোয় আমার আর কষ্ট হচ্ছে না।কিন্তু তন্ময় যে সেই বাড়ী থেকে বের হলো আর ফিরলো না।রাতে আমি ওনার জন্য অপেক্ষা করতে করতে ঘুমিয়ে গেলাম।হঠাৎ ঘুম এর মধ্যে মনে হলো কেও আমার পেটে মাথা রেখে শুয়ে আছে।এমন হওয়ায় আমার খুব ভয় হতে লাগলো।একে তো তন্ময় নেই তার উপর কে না কে আমার পেটের উপর মাথা দিয়ে শুয়ে আছে।আমি অনেক ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করলাম।

আমি-ক কে??(চোখ বন্ধ করেই)

তন্ময়-তুমি জেগে আছো??

আমি-তন্ময়!!(উঠে বসে)

তন্ময়-হুম আমি!!

আমি-আপনি কোথায় গিয়েছিলেন??(তন্ময়কে জরিয়ে ধরে)

তন্ময়-তোমাকে ছেড়ে কোথাও যাবো??

আমি-আমি কত অপেক্ষা করেছি আপনার জন্য।

তন্ময়-সরি!!!

আমি-আপনি কেনো সরি বলছেন,,,,আমার সরি বলা দরকার,,,আমি সরি তন্ময়।আমার নিজের প্রতি খেয়াল রাখা উচিত ছিলো।

তন্ময়-না আমার সরি বলা দরকার।তোমাকে এমন করতে দেখে আমার রাগ উঠে যায়।আর রাগের মাথায় তোমাকে আমি কি না কি বলে ফেলেছি বুঝতে পারিনি।সরি(জরিয়ে ধরে)

আমি-আমি কালকে থেকে রেস্টে থাকবো।

তন্ময়-প্রমিস….(হাত দিয়ে)

আমি-প্রমিস,,,(উনার হাতে হাত রেখে)

এভাবে দিন যেতে লাগলো আমার প্রেগন্যান্সির।তন্ময় সমসময় আমার খেয়াল রাখতো।বেড থেকে উঠতে দিতো না আর আমি উঠতাম না।আজ আমার প্রেগন্যান্সির সাড়ে ৩ মাস পার হয়েছে।এই সাড়ে দুই মাসে আমার খাওয়া দাওয়া সব রুমেই হয়েছে।মা আর জেনি রুমে এসে আমার সাথে গল্প করে যেতো।আমি এই রুমে থাকতে থাকতে পুরো বোর হয়ে গেছি।

আমি-তন্ময়”””

তন্ময়-বলো।(ফোন টিপতে টিপতে)

আমি-আমাকে একটু বাইরে নিবেন।

তন্ময়-কি??

আমি-আসলে অনেক দিন তো বের হইনি তাই।

তন্ময়-তো এখন তুমি বের হতে চাচ্ছো???

আমি-তিন মাস তো হয়েও গেছে।

তন্ময়-ওকে যেও।

আমি-তো চলুন।

তন্ময়-বলতে না বলতেই….

আমি-প্রথমে ছাদে যাবো।

তন্ময়-ওকে।

আমি আর তন্ময় ছাদে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছি।
তন্ময় আমার পেটে হাত দিয়ে আমার সাথে গল্প করছে।আমাদের গল্পের মাঝে হঠাৎ ইমন আর নিহা আসে।ওরা আমাদের দেখে খানিকটা অবাক হয়।ইমন তো আগ বাড়িয়ে বলেই ফেলে।

ইমন-বাহ বাহ আমি তো ভেবেছি বেবি হওয়ার আগে আর রুম থেকে বেরই হতে পারবেনা।

নিহা-আহ চুপ থাকো,,,তা ভাইয়া আজ হঠাৎ ভাবীকে ছাদে আনলেন।

তন্ময়-নাছোড় বান্দা বলেছে তাই।

নিহা-হুম।

ইমন-আচ্ছা নিহা চলো ওদের মাঝে আর আমরা না আসি।(তনুর দিকে তাকিয়ে)

নিহা-হুম চলো।(বলপ ইমন সহ চলে গেলো)

তন্ময়-তনু!!!

আমি-হুম!!!

তন্ময়-আমি অধীর অপেক্ষায় আছি আমার বেবির কিক শুনার জন্য।

আমি-তাই!!!

তন্ময়-হুম।

আমি-চলুন নিচে যাই।

তন্ময়-ছাদে এসেছো তো নিচেও চলো।

আমি আর তন্ময় ছাদ থেকে নেমে যাই।নিচে যাওয়ার জন্য সিড়ির কাছে এসে আমি যেই পা বাড়াই ওমনি আমার পা পিছলে যায় আর আমি গড়িয়ে নিচে পরে যাই।তন্ময় আমাকে নীচে পরার আগেই ধরতে চেয়েছিলো কিন্তু ওনার ধরার আগেই আমি নিচে পরে যাই।আমার পেটটা সোজা গিয়ে মেঝের সাথে লেগেছে।আমি মেঝেতে শুয়া অবস্থায় পেটে হাত দিয়ে দিলাম।

-চলবে

তন্ময়ের তনু পর্ব-২২+২৩

0

#তন্ময়ের_তনু
#পর্ব_২২
#Jechi_Jahan

আমি তন্ময়ের দিকে ভয়ে তাকিয়ে আছি।কিন্তু তন্ময় আমার দিকে স্বাভাবিক ভাবেই তাকিয়ে আছে।তন্ময় আমার দিকে আস্তে আস্তে আগাতে লাগলো।ওনাকে এভাবে আমার দিকে এগিয়ে আসতে দেখে আমি ভয়ে হাত দিয়ে মুখটা ঢেকে ফেলি।তন্ময় আমার সামনে এসে দাঁড়িয়ে আছে।কিছুক্ষণ পর উনি আমার হাতটা সরিয়ে ফেলে।

তন্ময়-এতো ভয় পাচ্ছো আমাকে?(বাঁকা হেসে)

আমি-(ভয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে আছি)

তন্ময়-হাই অনু!!(অনুর দিকে তাকিয়ে)

অনু-(কিছু না বলে তন্ময়ের দিকে তাকিয়ে আছি)

তন্ময়-আরে কিছু তো বলো।

অনু-(নিশ্চুপ)

তন্ময়-তোমরা কেওই কিছু বলছোনা আচ্ছা তুমি বলো।(আদিলের পাশে দাঁড়িয়ে)কেমন আছো?

আদিল-হুম ভালো।

তন্ময়-তা তো থাকবেই।(অনুর দিকে তাকিয়ে)

আদিল-দেখুন মিস্টার তন্ময় আমি বুঝতে পারছি আপনার মনের অবস্থাটা….

তন্ময়-কি বুঝেছেন?(আদিলের সামনে দাঁড়িয়ে)

আদিল-এই যে আপনি অনুকে….

তন্ময়-এই যে আমি অনুকে একসময় ভালোবাস তাম আর ওকে বিয়ে করতে চাইতাম।কিন্তু হঠাৎ এমন কি হলো যে আমি ওকে দেখে কোনো রিয়ে-ক্ট করছিনা????

আমি-তন্ময়…..

তন্ময়-তুমি চুপ করো তনু।

আদিল-দেখুন এখানে তনুর কোনো দোষ নেই।ও আমাদের ব্যাপারে কিছুই জানতো না।

তন্ময়-না জানলে তোমাদের সাথে কি ও সাদে লুকিয়ে কথা বলে।

আদিল-তুমি জানলে কেমন রিয়েক্ট করবে তাই।

তন্ময়-আমাকে সত্যি বললে আমি কোনো রিয়েক্ট করিনা কিন্তু মিথ্যা বললে খুনও করি।

অনু-তন্ময় আমি তোমাকে সবটা বলছি।

আমি-আপু???

অনু-তোমার সাথে বিয়ে ঠিক হওয়ার আগে থেকে আমি আদিলকে ভালোবাসতাম।যেহেতু বাবাকে ভয় পেতাম তাই সাহস করে কিছু বলতেও পারিনি।কিন্তু আদিল এটা শুনে অনেক কান্না করে আর সুইসাইট করারও চেষ্টা করে তাই অবশেষে সিদ্ধান্ত নিই বিয়ের দিনই আমি আদিলের সাথে পালাবো।আমি পালানোর পরে শুনি তনুর সাথে তোমার বিয়ে হয়েছে।আমি জানতাম যে তুমি আমায় ভালোবাসো তাই ভয় পেতাম যেনো আমার কারণে আমার বোন কে না কষ্ট দাও।

তন্ময়-অনু তুমি কি জানো তুমি বিয়ের দিন পালিয়ে যাওয়ায় আমার ঠিক কতটা লাভ হয়েছে।

অনু-মানে???

তন্ময়-এইযে তনুর মতো একটা বউ পেলাম।(তনুর কাছে গিয়ে ওর কাঁধ জড়িয়ে ধরে)

আদিল-এটা কি সত্যি???(অবাক হয়ে)

তন্ময়-অনু জানো!!!তোমার কথা মতো আমি প্রথম প্রথম তনুকে কষ্ট দিয়েছিলাম বাট বলেনা ভালোবাসা হয়েই যায় আমারও হয়েছে।

অনু-তন্ময় থ্যাংকিউ।(তন্ময়ের হাত ধরে)

আদিল-ওই লজ্জা করেনা ছোট বোনের স্বামীর হাত ধরছো।

অনু-যাহ ফাজিল।(আদিলকে ধাক্কা মেরে)

আমি-আপু”””

অনু-হুম???

আমি-যেমন তন্ময়কে সব সত্যি বললে তেমন পরিবারের সবাইকেও বলোনা যাতে তোমাদেরকে মেনে নেয়।আর তাছাড়া আদিল ভাইয়া তো খারাপ না যে তাকে মেনে নেবে না।বরংছো তন্ময় এর থেকে দ্বিগুন ভালো।

তন্ময়-(রেগে তনুর দিকে তাকিয়ে আছে)

অনু-তা সম্ভব না রে কেও মেনে নেবেনা।

তন্ময়-আমি মানাবো।

আদিল-মানে???

তন্ময়-না জানলেও চলবে।

জন্মদিনের পার্টি শেষে তন্ময় সবাইকে একসাথে সবাইকে বসিয়ে আপু আর আদিল ভাইয়ার কথা বলে।আপু আর আদিল ভাইয়াকে বাড়ীর ভেতর জোর করে আনা হয়।ওরা ভয়ে একপাশে জড়ো সড়ো হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

আবদুল-তুই যে আমার মেয়ে এটা আমার ভাবতে ও ঘৃণা লাগে।(অনুর দিকে তাকিয়ে)

আমি-বাবা……

আবদুল-তুই চুপ থাক তনয়া।সেদিন শুধুমাত্র অনয়ার কারণে আমি তোর উপর এতো জোর খাটিয়ে ছিলাম।এর কারণে তোকে সেদিন বিয়ে করতে হয়েছে।(রেগে)

রাজিয়া-তুমি চুপ করবে।

আবদুল-তুমি আবার মাঝখান থেকে কেনো কথা বলছো।(রেগে)

সাবিয়া-আহা বেয়াই এমন করছেন কেনো??

রাজিয়া-আদরের মেয়ের জন্য তো এমন করবেই।

আবদুল-আমরা বাবা-মেয়ে কথা বলছি তুমি এসবে একদম নাক গলাবে না।

রাজিয়া-সেদিনও নাক গলাইনি বলে এই মেয়ের জন্য(তনুর উপর আঙুল ঠেকিয়ে)তোমার আর আমার সম্পর্ক ভাঙ্গতে যাচ্ছিলো।

আবদুল-ওই কথা এখানে একদম তুলবেনা রাজিয়া।

রহমান-বেয়ান সম্পর্ক ভাঙ্গতে যাচ্ছিলো মানে???

অনু-কিছুনা কাকু।(ভয়ে তাড়াতাড়ি বলে দিলো)

রহমান-কি???

তন্ময়-তোমরা চুপ করবে(রেগে)

সবাই-(চুপ)

তন্ময়-যা হয়েছে তা হয়ে গেছে এটা নিয়ে এত কথা কিসের আমি বুঝিনা।অনু আর আদিল একজন আরেকজনকে ভালোবাসতো তাই বিয়ে করে ফেলেছে।কিন্তু তোমরা সেটা মানার বদলে….
(বলতে গিয়ে থেমে গেলো)

এভাবে আরো অনেক কিছু বুঝিয়ে তন্ময় সবাই কে মানতে বাধ্য করলো।এ বিষয় নিয়ে কথা শেষ হলে আমরা যে যার রুমে চলে যাই।আজ আম্মু, আব্বু,আপু আর আদিল ভাইয়া এখানে থাকবে।
আমি চুলে খোপা করে জামার চেইনটা অল্প খোলা রেখে খাটের উপর বসে আছি।শীতকাল হলেও আজ কেনো জানি আমার কাছে গরম লাগছে।হঠাৎ আমার পিঠে কারো শীতল হাতের স্পর্শ পেলাম।স্পর্শ টা চিনলেও এখন কিছু না বলেই বসে আছি।আসলে আমার মাথায় এখন একটা জিনিসই ঘুরপাক খাচ্ছে যেটা হচ্ছে “এ মেয়ের কারণে তোমার আর আমার সম্পর্ক ভাঙ্গতে গিয়েছিলো”

তন্ময়-কি ভাবছো?(পিঠে হাত রেখেই)

আমি-তন্ময় আমার ঠান্ডা লাগছে।

তন্ময়-তাই!!(বলে গলায় মুখ গুঁজে দিলো)

আমি-উপ ছাড়ুন না।(দস্তাদস্তি করে)

তন্ময়-আমার বউ আমি যা ইচ্ছে করবো।

আমি-আমি ফ্রেশ হয়ে আসি।

তন্ময়-সকালে একেবারে ফ্রেশ হইয়ো।(আমাকে টেনে ওনার কোলে বসিয়ে)

আমি-ড্রেসটা চেঞ্জ করবো শুধু মেকআপ আমি তুলে ফেলেছি এখন ছাড়ুন।

তন্ময়-তাই তো ছাড়তে চাইছিনা।

আমি-আপনি…

তন্ময়-তখন কি বলেছিলে আমার থেকে আদিল দ্বিগুণ বেশি ভালো।

আমি-আপনি ওটা নিয়ে পরে আছেন?

তন্ময়-এতে আমার ইগো হার্ট হয়েছিল।

আমি-তো আমি কি করবো?(বিরক্ত হয়ে)

তন্ময়-তুমি আমার ইগো শান্ত করবে।

আমি-কিভাবে???

তন্ময়-এভাবে(বলে আমায় বিছানায় শুইয়ে দেয়)

-(সকালে)-

তন্ময়-বাবা,,,,,বাবা,,,(সিড়ি দিয়ে নামতে নামতে)

রহমান-কি???(সোফা থেকে দাঁড়িয়ে)

তন্ময়-আগে সবাইকে ডাকো।

সাবিয়া-সবাই আছে।

তন্ময়-আব্বু আর আম্মু কই?

অনু-বাবা আর মা সকালে চলে গেছে।

তন্ময়-ওহ।

জেনি-কি বলবি বল।

তন্ময়-বাবা আজকে বাড়ীতে ইমন আসবে।

আমি-ইমন??(চাপা কষ্ট অনুভব হলো)

অভি-ইমন বাংলাদেশ এসেছে।

জেনি-তাহলে নিশ্চয়ই বউকে নিয়ে এসেছে।

রহমান-তন্ময়ের আগে ইমন বিয়ে করেছে বলে তন্ময়ের তো সেই এক রাগ হয়েছিলো মনে আছে।

নিসা-হ্যাঁ বাবা তন্ময়ের চেহারা দেখার মতো ছিল।

আমি-ইমন কে??(তন্ময়ের পাশে গিয়ে)

তন্ময়-আমার ঝেঠাতো ভাই তবে আমার থেকে বয়সে ৪-৫ বছরের ছোট।

আমি-আচ্ছা তো বিয়ের দিন আসেনি কেনো?

তন্ময়-ইমন আমার আগে বিয়ে করেছে আর বিয়ের পর পরই ওরা লন্ডন চলে গেছে।যার ফলে ও আমার বিয়েতে আসতে পারেনি।

আমি-ওহহ।

সাবিয়া-তোর জেঠা আর জেঠিরা আসবে???

তন্ময়-হুম ওরাও আসবে।

রহমান-তাহলে আজ ওদের জন্য সবকিছু স্পেশাল করবে।কি বলো তনু???

আমি-হুম বাবা।

আমি,ভাবী আর আপু একসাথে রান্না করছি।আপুকে আমাদের সাথে রান্না করার জন্য ভাবীই বলেছে।এখন আপুকে ওরা আত্মীয় হিসেবে মেনে নিয়েছে।কি অদ্ভুত ব্যাপার,আপু এ বাড়ীর বউ হওয়ার কথা ছিলো কিন্তু এখন আত্নীয় হিসেবেই আমাদের সাথে দাঁড়িয়ে আছে।ভাবীর ফোন আসায় ভাবী রান্নাঘর থেকে চলে যায়।

অনু-তনু!!!

আমি-হুম,,,

অনু-তুই কি ইমনকে এখনো ভুলতে পারিসনি।

আমি-কিভাবে ভুলবো বলোতো।

অনু-এই কি বলছিস তুই এসব???(তনুকে ওর দিকে ফিরিয়ে)

আমি-এভাবে কেনো রিয়েক্ট করছো বলো তো?
তুমি কি ভাবছো যে ইমন আমার সামনে আসলে আমি ওর কাছে দৌঁড়ে চলে যাবো।আপু আমি ওর কাছে আর কোনোদিন যাবোনা কোনদিন না।

অনু-তন্ময় যখন ওর জেঠাতো ভাই ইমনের কথা বলছিলো তখন আমি তোকে দেখেছি।তুই কষ্ট পাচ্ছিলি ওই নামটা শুনে।

আমি-ওর কথা আর তুলোনা আপু।আমি আর ওর ব্যাপারে ভাবতে চাইনা।

অনু-ঠিক আছে তুলবোনা।

তন্ময়-তনু,,,তনু,,,(রান্নাঘরে ডুকতে ডুকতে)

আমি-হুম””””

তন্ময়-আমার সাথে চলো।(বলে হাত ধরে রুমে নিয়ে এলো)

আমি-আপনি কি পাগল আপুর সামনে এভাবে নিয়ে এলেন।

তন্ময়-তোমার প্রান্তনের নামও ইমন।

আমি-(আমি মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছি)

তন্ময়-আমি তোমাদের সব কথা শুনেছি।

আমি-তন্ম….(হুট করে জরিয়ে ধরলো)

তন্ময়-আমি জানি তুমি এখন আমাকেই ভালোবাসো।

আমি-তন্ময়!!!

তন্ময়-বলো!!!

আমি-একবার ভালোবেসে থোকা খেয়ে গেছি এবার থোকা খাবো না তো???

তন্ময়-বিশ্বাস রাখতে পারো।

আমি-ঠিক আছে এখন ছাড়ুন রান্না করতে হবে।

তন্ময়-না ছাড়বো না।

আমি-তন্ময় ছাড়ুন।(ওনাকে জোর করে ছাড়িয়ে রুম থেকে চলে এলাম)

আমরা রান্না শেষ করে গোসল করতে চলে গেলাম।আমি গোসল করে একটা বাদামি রংয়ের শাড়ী পরলাম।রুমে এসে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুলের পানি ঝারতে লাগলাম।আয়নায় খেয়াল করে দেখি তন্ময় আমার দিকে তাকিয়ে আছে।

আমি-কিছু কি লাগবে??(ওনার দিকে ফিরে)

তন্ময়-হুম!!!

আমি-কি???

তন্ময়-একটা বাচ্চা।

আমি-তন্ময়!!!(রেগে)

তন্ময়-বারে এতো ডং করছো কেনো??

আমি-হঠাৎ কি হলো যে এটা বলছেন।

তন্ময়-বলবোনা।

আমি-প্লিজ বলুন না।

তন্ময়-ওকে বলছি আমার পাশে বসো।

আমি-হুম বলুন।(ওনার পাশে বসে)

তন্ময়-জানো অভি ভাইয়া তো বাবা হবে।

আমি-কি???দূর আপনি মিথ্যা বলছেন।

তন্ময়-এটা কেনো মনে হলো।

আমি-এমন হলে আমি জানতাম না।

তন্ময়-মনে আছে রান্না ঘরে ভাবীর কল এসেছিল।

আমি-হুম তো???

তন্ময়-তখনই এই খবরটা জানা যায়।

আমি-তাই বলে আমাকে জানাবে না।

তন্ময়-তোমায় জানাবে বলেছিলো কিন্তু আমি বলেছি আমি বলবো তাই এখন বললাম।

আমি-ওহ তো নিচে চলুন।

তন্ময়-রেডি হবা না??

আমি-আমি রেডিই আছি জাস্ট চুলগুলো শুখালে হবে।

তন্ময়-ও তো চলো।

আমি আর তন্ময় এবার নিচে গেলাম।নিচে গিয়ে সবার সাথে গল্প করতে লাগলাম।হঠাৎ দরজা দিয়ে কেউ ভেতরে আসতে লাগলো।আমরা সবাই দাঁড়িয়ে ওদের দিকে তাকিয়ে আছি।শেষে একটা ছেলে বাড়ীর ভেতর ডুকে কিন্তু ছেলেটাকে দেখার সাথে সাথে আমার চোখে পানি জমে যায়।

-চলবে।

#তন্ময়ের_তনু
#পর্ব_২৩
#Jechi_Jahan

আমি ইমনের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি।আর ইমনও আমার দিকে স্বাভাবিক ভাবেই তাকিয়ে আছে।কিন্তু আমি ইমনের দিকে অবাক হয়েই তাকিয়ে আছি।হঠাৎ তন্ময় গিয়ে ইমনকে জরিয়ে ধরে আর ইমনও তন্ময়কে জরিয়ে ধরে।

তন্ময়-কেমন আছিস ইমন??

ইমন-ভালো ভাইয়া।

তন্ময়-ভালো থাকবিই তো আমার বিয়ে যে করেছি।ভালো তো থাকতেই হবে।

ইমন-তুমি এখনও ওটা নিয়ে পরে আছো।

তন্ময়-আচ্ছা ছাড়!!!ইভা কেমন আছো???(ইমনের বউ)

ইভা-হুম ভাইয়া আমিও ভালো আছি।

জেঠা-ওই আমাদের চোখে পরছে না।

তন্ময়-আরে জেঠা তোমাকে ভুলতে পারি।

জেঠা-তো এতক্ষণ এটা কি হচ্ছিল???

তন্ময়-আচ্ছা ভেতরে আসো।

আমি ওদের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে চোখে পানি জমে গেলো।আসলে আমি এতক্ষণ ইমনের বউয়ের দিকে তাকিয়ে ছিলাম।ইমনের বউ খুব সুন্দর তাই হয়তো ইমন আমাকে ছেড়ে ওকে বিয়ে করতে পেরেছে।আমি সুন্দর হলেও হয়তো ইভার মতো সুন্দর ছিলাম না।এসব ভেবে চোখে জমে থাকা পানিটা বের হয়ে গেলো।এসবের মাঝে হঠাৎ আপু আমার পাশে এসে দাঁড়ায়।

অনু-তনু ইমন এখানে কি করছে???

আমি-(কিছু না বলে কাঁদতে আছি)

অনু-তনু এবার তুই কাঁদছিস কেনো???

আমি-এটা কি স্বাভাবিক নয়।(কেঁদে কেঁদে)

অনু-না স্বাভাবিক নয় তুই আজকে কি বলেছিস সেটা এখনই ভুলে গেছিস।

আমি-আপু তোমার কি মনে হয় আমি এখন কেন কাঁদছি???(কেঁদে কেঁদে)

অনু-ইমনকে না পাওয়ার জন্য।

আমি-না!!!(কেঁদে)

অনু-তাহলে???

আমি-ওকে দেখে ওকে ঠকানো টা মনে পরে গেলো।(কেঁদে কেঁদে)

অনু-বোন আমার এখন তুই কান্না থামা কেউ দেখে ফেললে খুব খারাপ একটা অবস্থায় পরতে হবে।

আমি-আপু!!!

অনু-কি??

তন্ময় ওর জেঠা-জেঠির সাথে কথা বলতে বলতে যখন তনুর দিকে তাকায় তখন দেখে তনু কাঁদছে।
তন্ময় এবার তাড়াতাড়ি তনুর দিকে পা বাড়ায়।

আমি-আমি তন্ময়কে ছেড়ে ইমনের কাছে কোনো দিনও যাবোনা।(কান্না থামিয়ে)

অনু-হুম….

তন্ময়-তনু তুমি কাঁদছো কেনো??

আমি-শরীলটা খারাপ লাগছে।(থতমত খেয়ে)

তন্ময়-তো তুমি আগে বলোনি কেনো???

আমি-বাড়িতে মেহমান আসবে এখন আমার শরীরের কথা বললে তো সবাই আমাকে নিয়েই পরে থাকতেন।

তন্ময়-অনু তোমার বোন এসব কি বলে হ্যাঁ(রেগে)

অনু-ও তো আমাকেও এখন বলেছে।

তন্ময়-বুঝে গেছি,,,তনু চলো রেস্ট নিবে।

আমি-পাগল নাকি ওনারা এসেছে এখন….

তন্ময়-কিছু হবেনা তুমি চলো।

জেঠি-কিরে তন্ময় বউয়ের সাথে পরিচয় করাবিনা?

আমি-আসসালামু আলাইকুম।(তন্ময়কে ছেড়ে জেঠির কাছে এসে পা ধরে সালাম করলাম)

জেঠি-ওয়ালাইকুম আসসালাম।

তন্ময়-(আল্লাহ জেঠি যেনো অনুর কথা না বলে)

আমি-আসসালামু আলাইকুম জেঠা!!

জেঠা-ওয়ালাইকুম আসসালাম।

আমি-কেমন আছেন আপনারা??

জেঠা-আমরা ভালো আছি।

জেঠি-তোমার নাম কি মা????

ইমন-তনয়া জাহান।

জেঠি-তুই কি করে জানলি???

ইমন-ভাইয়ার থেকে।

জেঠি-আমাদের কখনো বললো না আর তোকে বলে দিলো।

আমি-বলেছে হয়তো।

জেঠি-এ আমার ছেলে আর ওর বউ।(ইমন আর ইভাকে দেখিয়ে)

আমি-হুম(এই ছেলেকে তো খুব ভালো করে চিনি)

জেঠি-পরিচিত হও।

আমি-আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া।(ইমনকে)

ইমন-ওয়ালাইকুম আসসালাম।(অবাক হয়ে)

আমি-আসসালামু আলাইকুম আপু।(ইভাকে)

ইভা-ওয়ালাইকু আসসালাম।

তন্ময়-মা তনুর নাকি শরীর খারাপ লাগছে।

আমি-না মা।

সাবিয়া-ওমা তো গিয়ে রেস্ট নে।

আমি-না মা আমি ঠিক আছি।

রহমান-নারে তুই আজ অনেক কাজ করেছিস তাই হয়তো শরীর খারাপ লাগছে।যা মা গিয়ে একটু রেস্ট নে।

আমি-আচ্ছা।

তন্ময় আমাকে ধরে রুমে নিয়ে গেলো আর আমাকে বিছানায় শুইয়ে দিলো।আমায় বিছানায় শুইয়ে তন্ময় আমার হাত ধরে পাশে বসে থাকে।

তন্ময়-তনু!!

আমি-হুম”””

তন্ময়-সত্যি করে বলো তো কেনো কাঁদছিলে??

আমি-কি???(শোয়া থেকে উঠে গেলাম)

তন্ময়-এতো অবাক হচ্ছো কেনো????

আমি-অবাক হওয়ারই তো কথা।

তন্ময়-কেনো কাঁদছিলে???

আমি-কোনটা শুনতে চান সত্যিটা নাকি মিথ্যাটা?

তন্ময়-যেটা তুমি বলতে চাও।

আমি-তখন ইমনের নাম শুনে ওর ঠকানোটা মনে পরে গেছিলো তাই কাঁদছিলাম।(সরি তন্ময় এখন ও পুরো সত্যিটা আপনাকে বলতে পারলাম না)

তন্ময়-তনু।(হুট করে আমাকে জরিয়ে ধরলো)

আমি-কি হয়েছে তন্ময়???(পিঠে হাত দিয়ে)

তন্ময়-তুমি কি ইমনকে কোনোদিন ভুলতে পারবে না।ওর কথা শুনলেই আমার কষ্ট হয় খুব কষ্ট হয়।প্লিজ ওকে ভুলে যাওনা।

আমি-তন্ময়!!!

তন্ময়-প্লিজ আমার জন্য ওকে ভুলে যাও।আমি তোমাকে কোনোদিক থেকে কমতি রাখবোনা।এত ভালোবাসবো যে ওকে আর মনে পরবে না।প্লিজ ওকে মন থেকে ভুলে যাও।

আমি-তন্ময় আমি ওকে ভুলে যাবো।

তন্ময়-আমার কসম দিয়ে বলো।

আমি-তন্ময়(ওনার থেকে দূরে গিয়ে)

তন্ময়-কি হয়েছে পারবেনা।

আমি-আমি আমার কসম দিচ্ছি আমি ওকে ভুলে যাবো।

তন্ময়-Thank you.(বলে আবার জরিয়ে ধরলো)

((খাবার টেবিলে))

জেঠা-বাহ আজকে কতদিন পর এমন খাওয়ার খাচ্ছি।বিদেশে তো এসব খারাবের চিটে পুটেও নেই।আজ মনে মতোই খাচ্ছি।

জেঠি-তোমার শুধু খাওয়া আর খাওয়া।

জেঠা-আরে বাঙালি খাবারের তো তলনাই হয়না।

জেঠি-রান্না খুব ভালো হয়ে কে বানিয়েছে?

নিসা-তনু বানিয়েছে।

জেঠা-বাহ তনু তুমি তো খুব ভালো রান্না করো।

আমি-তোমার ভালো লেগেছে?

জেঠা-খুব ভালো।

ইমন-(তনু আসলেই অনেক সংসারি হয়ে গেছে।নাহলে আগে দইবড়া ছাড়া আর কিছুই পারতো না।আর এখন সব রান্নাই পারে)

জেনি-আচ্ছ ভাবী আরেকটা জিনিসও বানিয়েছে।

সাবিয়া-কি???

জেনি-দইবড়া!!!

ইমন-(দইবড়া???)

আমি-ও আমি তো দিতেই ভুলে গেছি।(আগে এই দইবড়াটা আমি শুধু ইমনের জন্যই বানাতাম আর আজ এই দইবড়াটা তন্ময়ের জন্য বানিয়েছি।

জেনি-ওয়েট,,,ওয়েট,,,ওয়েট,,,এই দইবড়াটা প্রথমে ভাইয়াকেই খেতে হবে।

তন্ময়-আমি কেনো প্রথমে খাবো।

জেনি-কারণ এটা স্পেশালই তোর জন্য বানানো।

জেঠা-ওমা এটা কেমন কথা।

অভি-ওই দে দে।

আমি আর জেনি সবাইকে দইবড়া দিতে লাগলাম কিন্তু আমি ইমনের সামনে পরে গেলাম।আমি যেই ইমনকে দইবড়াটা দিতে যাবো ইমন ওমনি আমাকে হাত দিয়ে থামিয়ে দেয়।

ইমন-আমি দইবড়া পছন্দ করিনা।

আমি-ঠিক আছে।(বলে চলে এলাম)

তন্ময়-তনু এটা কি হলো???

আমি-কি হয়েছে???

ইমন-(আমি বললাম আর ও চলে গেলো।ও তো জানে ওর বানানো দইবড়া আমার কতোটা পছন্দের।)

তন্ময়-ইমন তোমাকে বলেছে খাবেনা তাই বলে তুমি একটু জোরও করবেনা।

আমি-ওনার পছন্দ না হলে আমি কিভাবে জোর করতে পারি।

তন্ময়-ওকে জোর করতে হবেনা ওকে দাও ও খাবে।

আমি-হুম!ইভা এটা ভাইয়াকে দাও,(ইভাকে দিয়ে)

ইভা-নাও!!

ইমন-হুম।(বাটিতা নিয়ে)

সবার খাওয়া-দাওয়া শেষ হলে যে যার রুমে চলে যায়।শুধু বাবা মা রা নিচে বসে কথা বলছে।

ইভা-ইমন কি হয়েছে তোমার???

ইমন-কি হবে???

ইভা-এখানে আসার পর থেকে তুমি কেমন মনমরা হয়ে আছো।

ইমন-কই???

ইভা-একটুও হাসোনি তুমি।

ইমন-হাসবো??

ইভা-হুম!!!

ইমন-এই নাই।(দাঁত দেখিয়ে হেসে দিলো)

ইভা-হা হা হা

# এদিকে #

তন্ময়-বলো তো আমার কথা ঠিক কিনা???

আমি-হ্যাঁ ঠিক!!!কিন্তু এখন কেনো এসব প্ল্যান?

তন্ময়-কেনো এখন প্ল্যান করতে পারবোনা।

আমি-এগুলা তো তখন করে যখন তারা মা-বাবা হবে বা হতে চলেছে।

তন্ময়-তো আমি বাবা হওয়ার আগে বাচ্চার নাম ঠিক করতে পারবোনা?

আমি-না!!!

তন্ময়-দেখো আমি আবার বলছি আমার মেয়ে হলে নাম তানবি রাখবো আর ছেলে হলে তৌহিদ রাখবো।

আমি-আপনি তো কিছুক্ষণ আগেও এটা বলে ছেন যে ছেলে হলে তৌহিদ আর মেয়ে হলে তানবি নাম রাখবো।

তন্ময়-হুম আমার প্ল্যানিং দেখেছো।

আমি-হুম।

রাতে জেনি বায়না ধরে সবাই মিলে একটা খেলা খেলবে তাই সবাইকে নিয়ে ওর রুমে চলে গেলো।

অভি-পিচ্ছি এটা কোনো কথা???

জেনি-কি???

অভি-এখন আমাদের খেলার বয়ষ আছে?

জেনি-আরে দাঁড়াও তো।

ইমন-আচ্ছা জেনি খেলবে টা কি???

তন্ময়-হুম খেলতে নিয়ে এলি কিন্তু খেলবি কি??

জেনি-ট্রুথ এন্ড ডেয়ার!!!

নিসা-ওয়াও তাহলে তো মজা হবে।

আদিল-তো খেলা শুরু করো।

জেনি আমাদের সবার মাঝখানে একটা কাঁচের বোতল রেখে ঘুরিয়ে দেয়।কাঁচের বোতলটা প্রথম এ আদিল আর অভি ভাইয়ার দিকে যায়।সামনের মুখ আদিল ভাইয়ের দিকে আর পেছন এর দিক অভি ভাইয়ার দিকে।যার মানে আদিল ভাইয়া যা বলবে তা অভি ভাইয়াকে করতে হবে।

আদিল-কি নিবে অভি ভাইয়া ট্রুথ না ডেয়ার??

অভি-ডেয়ার।

আদিল-যা বলবো তা করবে তো??

অভি-আরে বলেই দেখো না।

আদিল-আমাকে ৫ হাজার টাকা দাও।

অভি-কি???

আদিল-হ্যাঁ দাও।

অভি-এটা কিন্তু কথা ছিলোনা।

আদিল-এটাই কথা ছিলো দাও দেখি।

অভি ভাইয়া বাধ্য হয়েই বিকাশ থেকে আদিল ভাইয়াকে ৫ হাজার টাকা পাঠিয়ে দেয়।এই নিয়ে আমরা কিছুক্ষণ হাসাহাসি করি।জেনি আবার বোতলটা ঘুরিয়ে দেয়।আর এবার বোতল গিয়ে থামে ভাবী আর তন্ময়ের দিকে।মানে ভাবী প্রশ্ন করবে তন্ময়কে আর তন্ময় তার উত্তর দিবে।

নিসা-ট্রুথ না ডেয়ার???

তন্ময়-ভাইয়ার মতো আমি ফাঁসতে চাইনা তাই আমি ট্রুথ নিবো।

নিসা-আমি এখন তোমাকে যেটা জিজ্ঞেস করবো সেটা কিন্তু খুব গুরুত্বপূর্ণ।

তন্ময়-বলো।

নিসা-বিয়ের দিন অনু পালিয়ে গিয়ে কি কোনো ভুল করেছিলো???

ভাবীর অদ্ভুত প্রশ্নে আমরা সবাই চুপ হয়ে যাই।

তন্ময়-(কিছুক্ষণ চুপ থেকে) না!!!

নিসা-কেনো??

তন্ময়-ও না পালালে আমি তনুকে পেতাম না।

নিসা-আমি এই উত্তরই আশা করেছিলাম।

তন্ময়-হুম।(আমাকে পেছন থেকে জরিয়ে ধরে)

জেনি আবার বোতলটা ঘুরিয়ে দেয়।আর এবার বোতলটা আমার আর ইভার দিকে থামে।ইভা আমাকে যা বলবে আমি তা করবো।

ইভা-ট্রুথ নাকি ডেয়ার???

আমি-ট্রুথ!!!

ইভা-এমন কাও কে কি ভালোবেসেছো যাকে কখনো ছাড়তে চাওনি বা চাওনা।

আমি-হুম বেসেছি!!!আমি যাকে ভালোবেসেছি সে খুব ভাগ্যবান কারণ তাকে আমি ভালোবেসে ছিলাম।তাকে কখনো ছাড়তে চাইনা।আর সব চেয়ে বড় কথা সে এখন আমার সামনে।(বলে সোজা ইমনের দিকে তাকিয়ে তন্ময় এর দিকে তাকালাম আর মুচকি হাসলাম)

ইভা-পেয়ে গেছি উত্তর।

ইমন-(জানি তুমি আমাদের দুজনকেই বলেছো)

১৭ দিন পরঃ-

এই ১৭ দিনে আমি ইমনকে যত পেরেছি তত ইগনোর করেছি।এই কয়দিনে তন্ময় যখনই আমার হাত ধরে বা জরিয়ে ধরে ঠিক তখনই ইমন আমাদের সামনে চলে আসে।তবে এই কয়েকদিন ধরে আমার শরীর টা খুব খারাপ লাগছে।সারাক্ষণ ঘুম আসে,মাথা ঘুরে,বমি আসে আরো খারাপ লাগে শরীল।আমি এসব কাওকে বলিনি।শরীরের এমন অবস্থা দেখে আমি কালকে ডক্টর দেখিয়ে গিয়েছিলাম।ডক্টর কিছু টেস্ট করেছে যার রিপোর্ট আমি আজ নিতে এসেছি।

আমি-আসসালামু আলাইকুম ডক্টর।

ডক্টর-ওয়ালাইকুম আসসালাম,কেমন আছো??

আমি-আছি মোটামুটি।

ডক্টর-রিপোর্ট নিয়ে এসেছো।

আমি-কি এসেছে রিপোর্টে ডক্টর?

ডক্টর-আমি যেটা ভেবেছিলাম।

আমি-কি ভেবেছিলেন আপনি???

এরপর ডক্টর আমাকে যেটা বলে তা শুনে আমি অবাক হয়ে যাই।

-চলবে

তন্ময়ের তনু পর্ব-২০+২১

0

#তন্ময়ের_তনু
#পর্ব_২০
#Jechi_Jahan

তন্ময় আমাকে এই প্রশ্ন করার পর আমি কি বলব তার আগেই তো শকড হয়ে দাঁড়িয়ে আছি।আবিদ আমাকে এভাবে ফাঁসিয়ে দিবে ভাবতে পারিনি।

তন্ময়-কে ও???(রেগে চিৎকার করে)

আমি-ও ও আমার….

তন্ময়-তোতলাচ্ছো কেনো?(রেগে)

আমি-ক ক কই?

তন্ময়-তনু বলো এই ছেলেটা কে???

আবিদ-আমি বলছি।

তন্ময়-আমি তোমাকে জিজ্ঞেস করেছি?(রেগে)

আমি-ত ত তুই বলনা আ আবিদ।

আবিদ-না বলে আর থাকতে পারি।আমি তনয়ার ব্রেস্ট ফ্রেন্ড আবিদ রহমান।আমি এতোক্ষণ এই কথাগুলো আপনাদের সাথে ফান করে বলেছি।

তন্ময়-কি???

আবিদ-তনু!!!ভাইয়ার মনে হয় কানে সমস্যা।

তন্ময়-না তেমন না আসলে রাগ উঠে গেছিলো।

আবিদ-এটাই স্বাভাবিক।কিরে তনু???

আমি-তুই একটা বেক্কল।(বলে চলে এলাম)

তন্ময়-What”!!

আবিদ-আরে এসব ছাড়ুন না।

তন্ময়-হুম।

আমি ওখান থেকে এসে জেনির কাছে গেলাম।

আমি-জেনি!!!

জেনি-হুম ভাবী।

আমি-তুমি আবিদকে কোথায় পেলে???

জেনি-পেলাম কোথাও একটা।

আমি-জেনি সত্যিটা বলো।

জেনি-তোমার ফোন থেকে।

আমি-আমার ফোন থেকে???

জেনি-কালকে সকালে তোমার ফোনের চবি দেখ ছিলাম আমি।চবি দেখতে দেখতে আবিদের চবি সামনে চলে আসে।আবিদের চবির নিচে লেখা ছিলো মাই ব্রেস্ট ফ্রেন্ড।

আমি-ওহ যোগাযোগ করলে কখন???

জেনি-কালকে রাতে।

আমি-নাম্বার কোথায় পেলে???

জেনি-রাতে ডিনারের পর আমি তোমার ফোনের কন্ট্রাক্ট নাম্বারগুলো চেক করে আবিদের নাম্বার টা নিই।কারণ তখন আমার মনে হয়েছিলো আমাকে আবিদই সাহায্যে করতে পারে।

আমি-কেমন সাহায্য??

জেনি-বলবো তো।

আমি-সেসব ঠিক আছে কিন্তু আবিদকে এখানে আনার মানে কি???

জেনি-কালকে তোমার স্বামী নিহাকে কেনো এনেছে জানো???

আমি-এখানে থাকার জন্য।

জেনি-আরে গাঁদা তোমাকে জেলাস ফিল করা নোর জন্য।

আমি-আমি কেনো জেলাস হবো উনি কি নিহার সাথে গা ডলাডলি করছে নাকি।

জেনি-করছেনা বাট তোমাকে দেখানোর জন্য আর জেলাস ফিল করানোর জন্য হলেও গা ডলাডলি করে ঘুরে বেরাবে।

আমি-তো এতে আবিদ কিভাবে এলো?

জেনি-কারণ আবিদের সাথে তুমি ফ্রী।ওর সাথে তুমি ঘুরবে,কথা বলবে,গল্প করবে আর এসব দেখে ভাইয়া জ্বলবে।

আমি-তুমি তো দিন দিন ফাজিল হচ্ছো।

জেনি-বারে যার জন্য করি চুরি সে বলে চোর।

আমি-আচ্ছা কিসের সাহায্যে বলো।

জেনি-কালকে ভাইয়া তোমকে এক প্রকার কষ্ট দিয়েছে।এখন যদি তুমি আবিদের সাথে মিশে মিশে ভাইয়াকে জেলাস ফিল করাও তাহলে ভাইয়ার ও কালকের মতো সেম কষ্ট হবে।আর এই কষ্ট টা দিতেই তো আমাদের আবিদের সাহায্য লাগবে বুঝেছে।

আমি-এখন ছাড়ো এসব নাস্তা করতে আসো।

আমরা সবাই নাস্তা করে সোফায় বসে আড্ডা দিচ্ছি।এই আড্ডায় আমি আর আবিদ একসাথে বসেছি।বসেছি বললে ভুল হবে জেনিই বসিয়েছে। যা দেখে তন্ময় রেগে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।তন্ময় আর জেনি একসাথে বসেছে আসলে ওনাকেও জেনিই জোর করে বসিয়েছে।আজ আমাদের কাজ নেই কারণ তন্ময় বলেছে খাবার বাইরে থেকে অর্ডার করে নিবে।

আবিদ-আচ্ছা আমরা একটা খেলা খেলি।

নিসা-কেমন খেলা???

আবিদ- Truth to Dare….

জেনি-ওয়াও নট বেড।

আবিদ-ওকে তো সোফার কুসন দিয়েই শুধু করি।

আবিদ নিজের ফোনে একটা গান চালিয়ে দেয় আর কুসনটা একজন থেকে আরেকজনকে দেয়।
গান শেষ হলে কুসন অভি ভাইয়ার কাছে যায়।

আবিদ-ওহো ভাইয়া!!!ট্রুথ নাকি ডেয়ার????

অভি-উমমম ট্রুথ।

আবিদ-ওকে তো প্রশ্ন করা হোক।

জেনি-ওয়েট আমি করবো আমি করবো।(জোরে)

আবিদ-ওকে করো।

জেনি-তুই তোর এক্সকে কল করা বন্ধ করেছিস?

অভি-হ্যাঁ।(তাড়াতাড়ি বলে ফেলে)

নিসা-হ্যাঁ???

অভি-না,হ্যাঁ,না ওই আমার তো এক্সই নেই।

জেনি-🤣🤣🤣

অভি-পেন্তী একটা।

এবার আবার গান শুরু করা হয়।এবার গান শেষ হলে কুসনটা আমার কাছে এসে থামে।এবার সবাই আমার দিকে তাকিয়ে আছে।

আবিদ-ট্রুথ নাকি ডেয়ার???

আমি-হুমমমম ডেয়ার।

আবিদ-বাহ বাহ সাহসটা এখনো রেখেছিস???

আমি-নাটক না করে বল।

নিহা-আমি বলি?

আমি-বলো।

নিহা-আমাদের জন্য কফি বানিয়ে আনো।

আমি-এটা কোনো ডেয়ার হলো।

নিহা-আরো কঠিন দিবো??(মুচকি হেসে)

আমি-না যাচ্ছি।(বলে উঠে রান্না ঘরে গেলাম)

নিহা-(তনুকে দেখলে আমার শুধু হিংসা হয় তাই চোখের সামনে থেকে দূরে পাঠিয়ে দিলাম)

আবিদ-ওকে তো খেলা শুরু করি।

অভি-হুম।

আমি কফি বানিয়ে এনে দেখি তন্ময় বাদে একে একে সবার কাছে দান যায় আর সবাই শুধু ট্রুথ চয়েস করিছিলো।অবশেষে তন্ময় ও দান পায় কিন্তু উনি ডেয়ার চয়েস করেন।

আবিদ-তনু তোর স্বামীর পকেট মারমো আজকে।

আমি-কি???

আবিদ-ওকে তো দুলাভাই এর টা আমি চয়েস করবো।অন্য কেও এতে ভাগ দিওনা।

তন্ময়-ওকে বলো কি করতে হবে।

আবিদ-বেশি কিছু না আমাদের কিছুক্ষণ পর একটু ঘুরাতে নিয়ে যাবে আর একেবারে বিকালে নিয়ে আসবে।

তন্ময়-এটা কোনো ব্যাপার নাকি।

জেনি-সব খরচ তোকেই দিতে হবে।

তন্ময়-কি???

আমরা-🤣🤣🤣🤣🤣

তন্ময়-আমার একটা শর্ত আছে।

আবিদ-আবার শর্ত ও???ওকে বলো।

তন্ময়-আমি বাইক এ যাবো।

আবিদ-ওয়াও আমার বাইক আছে আমিও যাব।

অভি-তো আমি???আমার তো বাইক নেই।

তন্ময়-তোমরা গাড়ীতেই যেয়ো।

অভি-হুম।

তন্ময়-ওকে তো এখন রেডি হয়ে আসো।

অভি-হুম যাচ্ছি।

তন্ময়-আর তনু তুমি আমার সাথে আসো।

আমি-হুম চলুন।(বলে রুমে গেলাম)

জেনি-আবিদ ভাইয়া।

আবিদ-হুম জেনি।

জেনি-প্ল্যান মনে আছে তো?

আবিদ-হুম আছে আমাকে শুধু তনুর আশেপাশে ঘেঁষতে হবো এটাই তো।

জেনি-হুম!!!কালকে ভাইয়া ভাবীকে জেলাস ফিল করানোর জন্য নিহাকে এনেছিলো আর আমি ভাইয়াকে জেলাস ফিল করানোর জন্য তোমাকে এনেছি।

আবিদ-বুদ্ধি আছে।

————————————

আমি-তন্ময় প্লিজ।

তন্ময়-না।(শার্ট পরতে পরতে)

আমি-আমি জামা পরবোনা।

তন্ময়-এই জামাটাই পরবা।(একটা আকাশি কুর্তি এগিয়ে দিয়ে)

আমি-দূর!!(জামাটা নিয়ে পরে এলাম)

আমি আর তন্ময় রেডি হয়ে নিচে আসি।নিচে এসে দেখি আবিদও আকাশি কালারের শার্ট আর শার্টের উপর একটা ক্রীম কালারের ব্লেজার পরা।
আমিও কুর্তির সাথে ক্রীম কালারের হিসাব পরে ছিলাম বলতেই আমাদের ড্রেসআপ পুরো সেম।

আবিদ-আরেহ বাস কি মিল দেখ।

আমি-সত্যি তো।(মুচকি হেসে)

তন্ময়-মনে হচ্ছে Together for each others।(শক্ত কন্ঠে)

আবিদ-আরে নাহ ওটা আপনার আর তনুর জন্য।

তন্ময়-বাকিরা এখনো আসেনি তাইনা।

আবিদ-হুম এখনো আসেনি।

তন্ময়-তনু আমার জন্য একটু পানি আনো তো।

আমি-আনছি।(বলে রান্না ঘরে গেলাম)

তন্ময়-আবিদ তুমি গিয়ে বাইকটা বের করো।

আবিদ-ওকে ভাইয়া।

আমি তন্ময়ের জন্য পানি এনে ওনার হাতে ধরিয়ে দিই।তন্ময় পানিটা নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে আর আমিও তাকিয়ে আছি।হঠাৎ তন্ময় আমার মুখের উপর পানিটা মেরে দেয়।যার ফলে আমার মুখ সহ হিজাব আর জামা ভিজে গেছে।

আমি-তন্ময়!!!

তন্ময়-ওহ শিট ড্রেসটা তো ভিজে গেছে।

আমি-কি???(রেগে)

তন্ময়-চলো চলো চেঞ্জ করবে(বলে রুমে আনল)

আমি-এমন কেনো করলেন।

তন্ময়-আমার সাথে মেচিং করে পরো।(আলমারি থেকে আমার সব শাড়ী বের করে)

আমি-আমি কি এটা বলছি???

তন্ময়-তোমার জানার দরকার নেই।

আমি-উপপপ।

তন্ময়-(অনেক খুঁজে একটা কালো রংয়ের জর্জেট শাড়ী পেলো যেটা তনু কোনোদিন পরেনি)নাও এটা পরে আসো।

আমি-এগুলা আবার গুছিয়ে রাখুন।

তন্ময়-সেটা আমি করছি তুমি যাও।

আমি ওয়াশরুমে এসে চেঞ্জ করে আগের জামাটা নিয়ে বেরিয়ে গেলাম আর আগের জামাটা বারান্দায় শুকাতে দিয়ে রুমে এলাম।আমি মুখটা টিস্যু দিয়ে মুছে শাড়ীর সাথে মেচিং করে ঠোঁটে গাড় লাল লিপস্টিক দিলাম আর কালো রংয়ের হিজাব পরে নিলাম।আমি রেডি হয়ে যেই বেরো তে যাবো তন্ময় আমায় টেনে রুমে নিয়ে যায়।

তন্ময়-দাঁড়াও।

আমি-আর কি??

তন্ময়-ওয়েট!!(বলে আমার হাতের চুড়িগুুলো যেগুলা মা দিয়েছি—খুলে আমার দুই হাতে সাদা পাথরের অনেকগুলো চুড়ি পরিয়ে দেয়)

আমি-এগুলো???

তন্ময়-এখন পারফেক্ট চলো।

আমি আর তন্ময়ের একই রংয়ের ড্রেসআপ।তন্ময় সাদা শার্টের উপর কালো ব্লেজার পরেছে তাই আমাকেও কালো শাড়ী পরতে বলেছে।

জেনি-এতো দেরি করলে কেনো?

আমি-সরি।

আবিদ-এই তুই এদিকে আয় তো।(আমাকে টেনে অন্য দিকে নিয়ে)

আমি-কি হয়েছে সবার সামনে এভাবে নিয়ে….

আবিদ-তুই তো পুরা চেঞ্জ।

আমি-কেনো কি হয়েছে???

আবিদ-একটু আগে কি ছিলি আর এখন কি??

আমি-সেসব পরে বলবো এখন চল।

আমি এবার তন্ময়ের কাছে এসে দেখি উনি আমার দিকে রেগে তাকিয়ে আছে।আমি বুঝলাম না এতে রেগে যাওয়ার কি আছে।

জেনি-আচ্ছা বড় ভাইয়া,বর ভাবী আর নিহা গাড়ী তে যাবে আর আমরা বাইকে যাবো ওকে।

তন্ময়-না!!!

জেনি-তো???

তন্ময়-আমি আর নিহা একি বাইক এ যাবো আর আবিদ আর তুই একি বাইকে যাবি।তনু কোথায় যাবে আমি জানি।নিহা আমার বাইকে উঠো।

নিহা-ওকে(হাসিমুখে বাইকে উঠল)

আমি-(তন্ময়ের এই কথায় আমি খুব কষ্ট পাই)

জেনি-(এতো মেঘ না চাইতেই জল)ওকে তো ভাবী তুমি আবিদের বাইকেই উঠো আমি গাড়ীতে করে যাচ্ছি।

আমি-হুম।(বলে আবিদের পেছনে বসলাম)

তন্ময়-(এই জেনিটা তো একটা ফাজিল)

আবিদ-তনু আমাকে পেছন থেকে ধর নাহলে বাইক স্টার্ট দেওয়ার সময় পরে যাবি।

জেনি-হ্যাঁ ভাবী ধরে বসো নাহলে পরে যাবা।(তন্ময়ের দিকে তাকিয়ে)

আমি-ওকে(বলে যেই আবিদকে ধরতে যাবো ওমনি তন্ময় আমাকে টেনে বাইক থেকে নামিয়ে দেয়)আউচ!!!

তন্ময়-তুমি আমার সাথেই চলো।

জেনি-মাত্র না বারণ করলি।(মুচকি হেসে)

তন্ময়-তুই চুপ থাক।

নিহা-তাহলে আমি???

জেনি-গাড়ীতেই বসো।

এবার আমরা একসাথে বাইকে করে রওনা দিলাম।প্রায় অনেক জায়গায় ঘুরেছি কিন্তু একটা জায়গায় ঘুরতে গিয়ে আমার ভয় করতে শুরু করলো।কারণ ওখানে আমি আমার চেনাপরিচিত
দুজন ব্যক্তিকে দেখলাম।আমার ভয় করছে এ নিয়ে যে তন্ময় যদি এদের দেখল তাহলে খুব খারাপ কিছু হয়ে যাবে।

-চলবে

#তন্ময়ের_তনু
#পর্ব_২১
#Jechi_Jahan

আমার ঠিক সামনে আপু আর আদিল ভাইয়া দাঁড়িয়ে হাওয়াই মিঠাই খাচ্ছে।আমি ওদের দিকে এক নজরে তাকিয়েই আছি।আমি আর কিছু না ভেবে আস্তে আস্তে হেঁটে ওদের কাছে যাই।

অনু-তনু??(তনুকে জরিয়ে ধরে)

আমি-হুম আমি।(আপুকে ছাড়িয়ে)

অনু-তুই এখানে কি করছিস???

আমি-সবাই মিলে ঘুরতে এসেছি।

আদিল-শালী দেখি আমাকে ভুলেই গেছে।

আমি-আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া।

আদিল-ওয়ালাইকুম আসসালাম।

আমি-কেমন আছেন?

আদিল-এইতো ভালো।

আমি-আপু তোমরা এখান থেকে চলে যাও।

অনু-কেনো???

আমি-তন্ময়ের পরিবারের লোকেরা এখানে আছে তোমাদের এখানে দেখলে কেলেংকারী হবে।

আদিল-অনু চলে যাক আমি থাকি।

অনু-কি বললে???

আদিল-তনু তোমার বোন কানে কম শুনে???

আমি-এমা না না।

অনু-তনু জানিস এ না একটা ফাজিল।

আমি-আচ্ছা আপু আমি যাই সবাই আমাকে না দেখলে খুজতে খুজতে এখানে চলে আসবে।

অনু-আচ্ছা যা আমরাও চলে যাচ্ছি(জরিয়ে ধরে)

আমি-ওকে বাই।

৯ দিন পরঃ-

আমি আজ সকাল থেকে খেয়াল করছি সবাই কেমন আমার থেকে দুরত্ব বজায় রাখছে।কেও আমাকে কোনো কাজ করতে দিচ্ছে না।আমি কিছু জিজ্ঞেস করলে তার উত্তর ইশারায় দিয়।আমি বুঝতে পারছিনা যে কেনো এমন করছে।

আমি-তন্ময়!!!

তন্ময়-কি???(ইশারায়)

আমি-সবাই আমার সাথে এমন করছেন কেনো?

তন্ময়-কি করলাম???(ইশারায়)

আমি-কেও আমার সাথে কথা বলছেন না দুরত্ব বজায় রাখছেন।কেনো বলতে পারেন??.

তন্ময়-আমি জানিনা।(ইশারায় বলে চলে গেলো )

তন্ময় আজ কোথায় গেছে জানিনা।উনি চলে যাওয়ার পর আরো খারাপ লাগতে শুরু করলো।একে তো কেও কথা বলছেনা তার উপর রুমে একা একা বসে আছি।দুপুর থেকে সেই রাত পর্যন্ত কেও আমার সাথে কথা বলেনি।বলতে গেলে আমার আজকের দিনটাই পুরো ফাউল।

তন্ময়-ওই দুপুরে খাওনি কেনো???

আমি-আপনি কথা বলেছেন???(অবাক হয়ে)

তন্ময়-ওই আমি এটা জিজ্ঞেস করেছি।

আমি-খিদে ছিলোনা।

তন্ময়-এখনও খিদে নেই???(রেগে)

আমি-নেই বলেই তো খাচ্ছি না।

তন্ময়-এখন খেতে চলো।

আমি-এসেই জ্বালাতে শুরু করেছেন???

তন্ময়-রাতে আরো জ্বালানো বাকি আছে।যাও!!!

আমি-তন্ময় রোজ রোজ……(আমাকে থামিয়ে)

তন্ময়-যাও!!!

আমি-যাচ্ছি।

আমি খেতে বসে দেখলাম আজ আমার পছন্দের সবজি পোলাও আর গরুর মাংস রান্না করা
হয়েছে।আমি তাই আর কোনো কথা না বলে খেতে শুরু করলাম।খেয়াল করলাম খাওয়ার সময় ও তন্ময় ছাড়া কেও কথা বললো না।আমি খেয়ে সোজা রুমে চলে গেলাম আর তন্ময়ের আসার অপেক্ষা করতে লাগলাম।কিন্তু তন্ময় আসেই না ওয়েট করতে করতে ১১ঃ৫০ হয়ে যায়।আমি এবার ওনাকে ডাকার জন্য নিচে গেলাম।কিন্তু উনি ওখানে নেই শুধু উনি না বাড়ির কেওই নেই।আমি একে একে সবার রুম খুঁজে দেখলাম কিন্তু কেও কোথাও নেই।আর কোনো জায়গা না পেয়ে অবশেষে ছাদে চলে গেলাম।
আমি ছাদে যাওয়ার সাথে ছাদে রংবেরং এর আলো জ্বলে উঠলো আর সবাই বলতে লাগলো।

সবাই-Happy Birthday Tonu…..

আমি-😱😱😱

তন্ময়-শুভ জন্মদিন তনয়া(এগিয়ে এসে)

আমি-(খুশিতে কেঁদে দিলাম)

জেনি-একি ভাবী তুমি কাঁদছো কেনো???

আমি-তোমরা সকাল থেকে এমন করলে কেনো?
জানো আমি কতটা কষ্ট পেয়েছি।(কান্না করে)

সাবিয়া-খুশি পেতে হলে একটু কষ্ট সহ্য করতে হয় বুঝেছিস।

অভি-আরে এটা তো দেখছি ইমোশনাল পার্টি হয়ে যাচ্ছে।আসো কেক কাটো।

নিসা-হুম মা আসুন কেক কেটে ফেলি।(বলে মাকে নিয়ে কেকের সামনে চলে গেলো)

তন্ময়-তনু চলো।(আমাকে নিতে যেয়ে)

আমি-তন্ময়!!!(ওনাকে থামিয়ে)

তন্ময়-হুম!!!

আমি-থ্যাংকিউ।

তন্ময়-(কিছু না বলে আমাকে জরিয়ে ধরে)

অভি-ওই ওসব পরে হবে এখন কেক কাট।

আমি-চলুন!!!

তন্ময়-হুম চলো।

আমি গিয়ে কেকটা কাটলাম আর কেকের ফ্রাস্ট বাইক তন্ময়কে দিলাম তন্ময়ও আমাকে খাইয়ে দিলো।আমি একে একে সবাইকে খাইয়ে দিলাম
আর সবাই আমাকে খাইয়ে দিলো।কেক কাটার পর তন্মস বাদে সবাই আমাকে একটা করে গ্রিফ্ট দিয়ে গেলো আর আমরা রুমে চলে আসি।

আমি-সবাই তো গ্রিপ্ট দিলো আপনারটা কই??

তন্ময়-আমি এসব আলগা পিরিত দেখাইনা।

আমি-কি????

তন্ময়-জোক।(বলে শুয়ে পরলো)

আমি-তন্ময়!!!

তন্ময়-হুম!!!

আমি-কিছু না।

তন্ময়-কি বলতে চাইছিলে বলো।(আমাকে ওনার কাছে টেনে নিয়ে)

আমি-আপনার আপসোস হয় তাইনা।

তন্ময়-কেনো???

আমি-এই যে আপুর সাথে বিয়ে না হয়ে আমার সাথে বিয়ে হওয়ায়।

তন্ময়-আগে হতো কিন্তু এখন প্রাউড ফিল হয়।

আমি-কেনো???

তন্ময়-এই যে তোমার সাথে বিয়ে হয়েছে বলে।

আমি-আচ্ছা ছাড়ুন।(ওনার থেকে সরে এসে)

তন্ময়-তনু তোমাকে একটা কথা বলতে চাই।

আমি-বলুন???

তন্ময়-তোমার আর আমার বিয়ে হওয়ার বেশ কয়েক মিনিট আগে আমার ফোনে একটা মেচেজ আসে।মেচেজ টাতে একটা ভিডিও ছিল জানো সেই ভিডিও তে কি ছিলো।

আমি-কি ছিলো???

তন্ময়-ভিডিও তে ছিলো তুমি অনুকে বিয়ের দিন পালাতে সাহায্য করছিলে।অনুর গয়না খুলে দিচ্ছিলে শাড়ী খুলে দিচ্ছিলে।আর লাষ্টে আরেক টা মেচেজ আসে।

আমি-কি মেচেজ আসে???

তন্ময়-“তনয়া তোমাকে বিয়ে করার জন্য অনুকে বিয়ের দিন পালাতে সাহায্য করছে।তনয়া অনুকে জোর করে বিয়ের দিন পালাতে রাজি করিয়েছে”

আমি-আপনি বিশ্বাস করেছিলেন???

তন্ময়-করেছিলাম আর এখনও করি।

আমি-(ওনার কথা শুনে চোখে পানি জমে গেলো)

তন্ময়-এখন যদি তুমি কান্না করো তাহলে কিন্তু আমি থাপ্পড় মারবো তনু।

আমি-(ওনার কথায় চোখের পানি মুচলাম)

তন্ময়-তনু!!!

আমি-হুম!!!

তন্ময়-আই লাভ ইউ।

আমি-(নিচের দিকে তাকিয়ে তাছিল্যে হাসি)

তন্ময়-এটা আমি #তন্ময়ের_তনু ভেবেই বলেছি তন্ময়ের অনু ভেবে নয়।

((বিকালে))

পুরো বাড়ীটা আজকে সাজানো হচ্ছে আমার জন্মদিন উপলক্ষে।তন্ময় নাকি আমার জন্মদিন পালন করবে তাই এতো বড়ো করে আয়োজন।আমার পছন্দ মতোই ঘরটা সাজানো হচ্ছে নীল,সাদা আর গোলাপি বেলুন দিয়ে ঘরটা সাজানো হচ্ছে।আজও এনারা আমায় কোনো কাজ করতে দেয়নি সব কাজ নিজেরা করেছে।
সকালে আপু আমাকে ফোন দিয়ে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানায়।আমি তখন আপুকে অনেক জোরাজোরি করে এখানে আসতে রাজি করি
য়েছি।আজকে সন্ধ্যায় এখানে আসবে।

তন্ময়-পছন্দ হয়েছে?(আমার পাশে দাঁড়িয়ে)

আমি-এখনো তো সাজানোই হয়নি।

তন্ময়-তাই???(মুচকি হেসে)

আমি-হুম।((মুচকি হেসে)

তন্ময়-তনু!!!

আমি-আপনাকে বলেছিনা আমকে তনু বলে ডাকবেন না।

তন্ময়-আমার ইচ্ছে আমি যা ডাকি।

আমি-হুম!!!

তন্ময়-আজ আমি যা বলবো আমার সব কথা শুনবে।

আমি-ওকে।

সন্ধ্যায় তন্ময় আমাকে গোলাপি রংয়ের একটা গ্রাউন পরিয়ে সাজিয়ে দিলো।আর তন্ময় সাদা শার্টের উপর নীল কোর্ট আর নীল প্যান্ট পরেছে।আমরা দুজন একসাথে নিচে নেমে এলাম।নিচে এসে বাড়ীতে অনেক মেহমান এসেছে আমার আত্মীয় স্বজনরা তন্ময়ের আত্মীয় স্বজনরা।

সাবিয়া-এতো দেরি করলি কেনো।বাহ তনুকে তো আজ খুব সুন্দর লাগছে।(আমার গাল টেনে)

আমি-তোমাকে ও তো সুন্দর লাগছে।

তন্ময়-আর আমাকে???

আমি-লাগছে মোটামুটি।

তন্ময়-মোটামুটি???

সাবিয়া-আচ্ছা ছাড় তো এসব।সবাই চলে এসেছে
তাড়াতাড়ি কেক কাটতে আয়।

আমি-হুম।

আমি কেক কেটে প্রথমে তন্ময়কে খাওয়ালাম উনিও আমাকে খাইয়ে দিলো।এবার সবাই আমায় খাইয়ে দিলো।যখন সবাই আমার কাছে এসে আমাকে গ্রিফ্ট দিবে তখন তন্ময় বলে।

তন্ময়-আজকে তনুর জন্মদিনের প্রথম উপহার ওকে আমি দিবো।

সবাই-ওকে ওকে দাও।

তন্ময় এবার আমার সামনে দাঁড়িয়ে পকেট থেকে একটা আংটি বাক্স বের করে আমার হাতে পরিয়ে দিলো।ওনার এই কান্ড দেখে আমি খুশিতে কান্না করে দিই।

তন্ময়-দূর!!!(উঠে দাঁড়িয়ে)এর এই একটাই কাজ সারাক্ষণ শুধু কান্না করা।

আমি-এটা খুশির কান্না।(চোখের পানি মুচে)

অনুষ্ঠান প্রায় শেষের দিকে কিন্তু আপুরা এখনো এলোনা।আমি শুধু দরজার দিকে বার বার তাকাচ্ছি কিন্তু ওরা আসেনা।হঠাৎ আমার ফোন টা বেজে ওঠে আমি তাকিয়ে দেখি আপু।

আমি-আপু তোমরা কই???

অনু-আমরা এসেছি।

আমি-কই এসেছো??(আশেপাশে তাকিয়ে)

অনু-আমরা বাইরে তুই বাইরে আয়।

আমি-আচ্ছা।(বলে বাইরে গেলাম)

অনু-তনু!!!

আমি-এখানে কেনো??বাড়ির ভেতরে চলো।

অনু-না না সমস্যা হবে।

আদিল-ওসব ছাড়ো তো অনু আর তনুকে ঢ় উইস করো।হ্যাপি বার্থডে তনু।

আমি-ধন্যবাদ ভাইয়া।

অনু-হ্যাপি বার্থডে তনু।(তনুকে জড়িয়ে ধরে)

আমি-ধন্যবাদ।

আমরা ওখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ কথা বলতে লাগলাম।হঠাৎ কেও একজন আমাকে পেছন থেকে ডেকে ওঠে।আমি তার গলা চিনে ভয়ে চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে ফেলি।

-চলবে।

তন্ময়ের তনু পর্ব-১৮+১৯

0

#তন্ময়ের_তনু
#পর্ব_১৮
#Jechi_Jahan

তন্ময় আমার দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে।এই তাকিয়ে থাকায় না আছে কোনো রাগ আর না আছে কোনো কষ্ট শুধু আছে অবাক হওয়া😜😜

আমি-শুনতে পাননি আমি কি ইংলিস এ বলেছি?

তন্ময়-আমি বারান্দায় কেনো শুবো?

আমি-যেমন আমি শুতাম তেমন আপনিও….

তন্ময়-ওই তুমি কয়দিনই বা বারান্দায় শুয়েছো?

আমি-যতদিনই শুয়েছি আমার কষ্ট হয়েছিল?

তন্ময়-তনু আমার ঠান্ডা লেগে যাবে।

আমি-I don’t care.(বলে শুয়ে গেলাম)

তন্ময়-আমাকে নকল করছো তাইনা?

আমি-যা আপনি ভাবেন।এখন যান”””

তন্ময়-এসব বুদ্ধি তোমার মাথায় কে ডুকিয়েছে আমি খুব ভালো করে জানি।জেনির সাথে বুদ্ধি করে আমাকে হেনস্তা করছো তাইনা দেখবে আমি কি করি।(খাট থেকে উঠে বারান্দায় যেতে যেতে)

আমি-(এই রে ধরা খেয়ে গেলাম)আচ্ছা তন্ময় আপনি রাগ করছেন না কেনো?মানে আপনি বারান্দায় শুবেন না বলে আমার সাথে ঝগড়া করলেও তো পারতেন।

তন্ময়-তুমি জানো যে আমি এখন কিছুই বলবোনা তোমাকে।তাইতো এতো কনফিডেন্স নিয়ে আমায় বারান্দায় শুতে বলেছো।(বারান্দা থেকে)

আমি-ওকে গুড নাইট।(উনার জন্য কষ্ট হচ্ছে)

তন্ময়-হুম গুড নাইট।(বাহ বাহ কি ঠান্ডা এখানে কম্বল নিলাম তাও এতো ঠান্ডা লাগছে।আচ্ছা তনু তো কম্বল,চাদর কিছুই আনতো না এখানে ঘুমা নোর সময় ওর ও নিশ্চয়ই এমন ঠান্ডা লাগতো)

আমি রাতে একটুও ঘুমাতে পারিনি উনার চিন্তায়।শাস্তি দিচ্ছি ঠিকই কিন্তু মনে একটুও শান্তি নেই।আমি রাতে না ঘুমানোর কারণে মধ্যেরাতে একটু ঘুম আসে তাই ঘুমিয়ে পরি।ভোরে এলার্মের শব্দে আমার ঘুমটা ভেঙে যায় আর আমি উঠে যাই।

আমি-আজকে সকালেই তো বাসে উঠতে হবে মনে হয়।ওনাকেও তো জাগাতে হবে তাড়াতাড়ি। আচ্ছা আমি আগে নামাজ টা পরে নিই তারপর ওনাকে জাগাবো।(বলে ওয়াশরুমে গিয়ে ওযু করে নামাজটা পরে নিলাম আর ওনার কাছে গিয়ে ওনাকে জাগাতে লাগলাম)

আমি-তন্ময় উঠুন সকাল হয়ে গেছে।

তন্ময়-নিশ্চুপ।

আমি-কি হলো তন্ময় উঠুন না।

তন্ময়-নিশ্চুপ।

আমি-তন্ময় দেরি হয়ে যাবে তো।

তন্ময়-নিশ্চুপ।

আমি এবার আর না পেরে ওনার হাত ধরে টেনে তুলতে লাগলেই খেয়াল করে দেখি ওনার হাত গরম হয়ে আছে।আমি এবার কিছু একটা চিন্তা করে ওনাকে ধরে রুমে এনে বিছানায় শুইয়ে দিলাম।ওনার গা জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে।আমি ওনার গায়ে মোটা দুইটা কম্বল জরিয়ে দিলাম।তাড়াতাড়ি একটা বাটিতে পানি আর একটা রুমাল এনে ওনার মাথায় অনবরত জলপট্টি দিতে লাগলাম।

সকালে—–

বাড়ীর সবাই তন্ময়ের জন্য চিন্তা করছে হঠাৎ এভাবে জ্বর বাঁধানো টা কেও মোটেও স্বাভাবিক ভাবে নিচ্ছে না।তন্ময়ের জ্বরের কারণে আমি বাবা কে বলেছি হানিমুনে যাওয়ার সব ব্যবস্থা যেনো এখন বন্ধ করে দেয়।কারণ তন্ময় এর এমন অবস্থায় আমি ওনাকে নিয়ে হানিমুনে যাবোনা।

রহমান-ওই গাধা!!!জ্বর বাঁধালি কিভাবে?

তন্ময়-জানিনা.(একটু স্বাভাবিক হয়েছে)

সাবিয়া-ঠান্ডা লাগিয়েছিস কিভাবে?

তন্ময়-রাতে শাওয়ার নিয়েছিলাম তাই হয়তো….

রহমান-কালকে রাতে শাওয়ার নিতে কে বলেছে তোকে গাধা তাও আবার শীত কালে?

তন্ময়-ভালো লাগছেনা যাও তো।

সাবিয়া-আচ্ছা এসব কথা পরে বলো এখন চলো।(বলে রহমানকে নিয়ে চলে গেলো)

আমি-সরি।(মাথা নিচু করে)

তন্ময়- It’s ok(তনুর দিকে না তাকিয়ে)

আমি-সরি বললাম তো।(মাথা নিচু করে)

তন্ময়-আমিও তো বলেছি ঠিক আছে।(রেগে)

আমি ওনার কথা শুনে পুরো বুঝতে পেরেছি যে উনি আমার উপর খুব রেগে আছে।এবার আমার ভয় হতে লাগলো যে উনি যদি আমার সাথে আর কথা না বলে।কারণ আর যাই হোক আমি ওনার রাগ টা চিনি।আমি এবার আর কিছু না ভেবে হুট করে ওনাকে জরিয়ে ধরে কান্না করে দিই।

তন্ময়-কি হয়েছে তনু???(অবাক হয়ে)

আমি-আপনি আমাকে ক্ষমা করে দিন প্লিজ।আমি বুঝতে পারিনি যে বারান্দায় শোয়ার কারণে আপনার জ্বর উঠে যাবে।(কান্না করে)

তন্ময়-হুম এখন ছাড়ো।

আমি-আমি জানি আপনি আমার উপর রেগে আছেন প্লিজ ক্ষমা করে দিন না।(কান্না করে)

তন্ময়-তনু তুমি এটা বুঝতে পেরেছো যে আমি রাগ করে আছি কিন্তু কেনো রাগ করে আছি সেটা জিজ্ঞেস করবেনা?(তনুকে জরিয়ে ধরে)

আমি-আমি বারান্দায় শুতে বলেছি তাই।

তন্ময়-না!!!!

আমি-তাহলে???(ওনাকে ছেড়ে)

তন্ময়-বাবাকে হানিমুনে যাওয়ার সব ব্যবস্থা বন্ধ করতে বলেছো তাই আমি তোমার উপর রেগে আছি।(তনুর খোপা করা চুলটা খুলে দিয়ে)

আমি-আপনার এই অবস্থায় কিভাবে যেতাম?

তন্ময়-আমার শরীল আমি বুঝতাম তুমি কেনো বারণ করেছো???(রেগে)

আমি-…………………(নিশ্চুপ)

তন্ময়-চ্যালেন্জ এ জেতার জন্য করেছো তাইনা।

আমি-তন্ময়””””(অবাক হয়ে)

তন্ময়-তনু তুমি আজ আমাকে অনেক বড় কষ্ট দিয়ে দিলে আর এর শাস্তি তুমি পাবে।(বলে উনি আস্তে আস্তে ওয়াশরুমে চলে গেলো)

(((নাস্তার টেবিলে)))

রহমান-তন্ময় তুমি দিন দিন জেদি হচ্ছো।

তন্ময়-যেমন?(ফোন টিপতে টিপতে)

রহমান-এই যে তনু তোমার জন্য উপরে নাস্তা নিয়ে গেলো কিন্তু তুমি উপরে না নাস্তা খেয়ে নিচে চলে এলে তাও এই শরীলে।

তন্ময়-এখন তো আমি অফিসেও যাবো দেখি কে কি করতে পারে।(খেতে খেতে)

সাবিয়া-কি তুই এই শরীলে অফিসে যাবি।

তন্ময়-ভাইয়া আর আমি একসাথেই বের হবো।

অভি-কিন্তু বাবা তো তোর অফিসে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছিলো বিয়ের পর থেকে।

তন্ময়-আজ থেকে খোলা।

রহমান-আমি যে সিদ্ধান্ত নিয়েছি সেটাই যেনো পালন হয় তন্ময়।

তন্ময়-ওকে তাহলে আজ আমি অফিসে যাবোনা।

অভি-হুম!!!

তন্ময়-এমনে বাইরে যাবো।(বলে বাইকের চাবি নিয়ে চলে গেলো)

সাবিয়া-তন্ময় এই শরীলে যাস না।

রহমান-বাদ দাও খেতে বসো।

একে একে সবাই খেয়ে উঠে গেলে আমি আর নিসা ভাবী একসাথে খেতে বসি।

নিসা-তনু!!!

আমি-হুম ভাবি।

নিসা-তোমার সাথে কি তন্ময়ের ঝগড়া হয়েছে?

আমি-না তো ভাবী।

নিসা-তনু তুমি আমার সাথে সেয়ার করতে পারো।

আমি-একটু হয়েছে।

নিসা-কি নিয়ে???

আমি-(ভাবীকে কালকে রাতের ঘটনাটা বললাম)

নিসা-এই বাজে বুদ্ধি তোমায় কে দিলো তনু???

আমি-জেনি!!!

নিসা-জেনি আধা পাগল তুমি তো পুরো পাগল।

আমি-কেনো???

নিসা-ও বললো আর তুমিও করে নিলে।

আমি-(মাথা নিচু করে রইলাম)

নিসা-আচ্ছা আগে খেয়ে নাও পরে এই বিষয়ে কথা বলবো।ওদিকে দুপুরের রান্নার ও ব্যবস্থা করতে হবে।

আমি-হুম।

আমি আর ভাবী নাস্তা করে দুপুরের রান্নার জন্য
সবকিছু ঠিক করে একটু রেস্ট নিতে চলে যাই।
একটু বিশ্রাম নিয়ে আমরা দুজনেই দুপুরের রান্না টা সেরে গোসল করতে চলে যাই।দুপুরের খাবার এর সময় তন্ময় ছাড়া সবাই ছিলো।আমি একটা বাহানা দিয়ে খাবোনা বলে ওনার জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম কিন্তু উনি আসেন না।

***সন্ধ্যায়***

তন্ময়-তুমি ওর রুমটা ঘোছাও নি কেনো???

আমি-জেনি তো গুছিয়েছে।

তন্ময়-জেনি কেনো গোছাবে আমি তো তোমাকে গোছাতে বলেছি নাকি?

আমি-আমার শরীল টা খারাপ তাই জেনি আমায় রুমটা গোছাতে দেয়নি।

তন্ময়-জ্বর আমার শরীল খারাপ তোমার???

আমি-আপনি এমন করছেন কেনো?

তন্ময়-কেমন করছি???(আমার কাছে এসে)

আমি চোখে পানি জমে আসছিলো আর একটু হলে হয়তো চোখ থেকে পানিটা পরেও যাবে।আমি তাড়াতাড়ি ওনার সামনে থেকে ফিরে গেলাম।আমার পিঠটা ওনার দিকে ফেরানো।

তন্ময়-পিঠ দেখাচ্ছো আমাকে?

আমি-না।(বলে খোপাটা খুলে দিলাম)

তন্ময়-সকালে বলেছি না শাস্তি পাবে।

আমি-এটা কোনো শাস্তি নাকি।

তন্ময়-সিরিয়াসলি???

আমি-তন্ময় আমার শরীল টা খুব খারাপ।সো প্লিজ আমাকে বিরক্ত করবেন না।

তন্ময়-হুম।(বলে চলে গেলো)

জেনি-ভাইয়া!!!(তন্ময়কে নিচে নামতে দেখে)

তন্ময়-হুম!!!

জেনি-তুই এটা কোনো কাজ করলি?

তন্ময়-কি করলাম???

জেনি-জানিস ভাবী তোর জন্য দুপুর থেকে না খেয়ে আছে।খালি পেটে থাকার কারণে আর চিন্তার কারণে বিকালে অঙ্গানও হয়ে গেছিলো। আর তুই সন্ধ্যায় কিনা এমন একটা কাজ করলি।

তন্ময়-আমি বলিনি ওকে খালি পেটে থাকতে।

জেনি-এমন কেনো তুই?

তন্ময়-ও আমার কথার কোনো গুরুত্বই দেয়না।

জেনি-মানে???

তন্ময়-কিছুনা।

জেনি এবার আর দেরি না করে তনুর কাছে গেল।

জেনি-ভাবী!!!

আমি-হুম জেনি।

জেনি-তোমার সাথে কিছু কথা ছিলো।

আমি-হুম বলোনা।

জেনি-ভাইয়া তোমার উপর কেনো রেগে আছে?

আমি-“””””””

জেনি-কি হলো ভাবী বলো।

আমি-বাবাকে হানিমুনে যাবোনা বলেছি তাই।

জেনি-ওহ।

আমি-আচ্ছা এতে রাগ করার কি আছে?

জেনি-ভাইয়া অনেক আশা নিয়ে হানিমুনে যাওয়ার প্ল্যান করেছিলো।আর এখন না যাওয়াতে নিশ্চয়ই কষ্ট পেয়েছে তাই তোমার সাথে এমন করছে কারণ তুমিই বারণ করেছো।

আমি-কিছুক্ষণ আগে এটা কাকে আনলো।

জেনি-তোমার সতীন।

(((ফ্ল্যাসব্যাক)))

বিকালে আমি আর ভাবী সবার জন্য চা আর নাস্তা বানাতে লাগলাম।চা-নাস্তা বানানোর সময় হঠাৎ আমার মাথাটা ঘুরে উঠে আর আমি পরে যেতে নিই কিন্তু ভাবী ধরে ফেলে।ভাবী ধরতে

ধরতে আমি অঙ্গানই হয়ে যাই।যখন চোখ খুলি তখন সন্ধ্যা হয়ে যায়।আমি চোখ খুলে মাকে আমার পাশে দেখতে পাই।

আমি-মা!!!

সাবিয়া-হুম হুম?(তাড়াহুড়ো করে)

আমি-উনি এসেছেন???

সাবিয়া-না এখনো আসেনি কিন্তু কিছুক্ষণ পর ঠিক চলে আসবে।

আমি-মা আমি নিচে যাবো।

সাবিয়া-তোর না শরীল খারাপ।

আমি-কিছু হবেনা চলো না প্লিজ।

তন্ময়-ওকে চলো।

আমি আর মা একসাথে নিচে নামতে নামতে গল্প করছি।অবশেষে নিচে নেমে দরজার পাশে থাকা তন্মশকে দেখে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি।তার চেয়ে বেশি অবাক হই তন্ময় পাশে তন্ময়ের হাত ধরে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটার দিকে।

-চলবে

#তন্ময়ের_তনু
#পর্ব_১৯
#Jechi_Jahan

আমি তন্ময়ের হাত ধরে দাঁড়িয়ে থাকা নিহার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি।আর নিহা আমার দিকে তাকিয়ে একটা বিশ্ব জয়ের হাসি দিলো।আমি তন্ময়ের দিকে তাকিয়ে আছি।

নিসা-নিহা???

তন্ময়-হ্যাঁ ভাবি নিহা।সকালে যখন বের হয়েছি তখনই ওকে দেখেছি।দেখা হওয়ার পর দুজনে অনেক ঘুরাফেরা করে লাঞ্চও করেছি।

নিসা-ওহ।(আমার দিকে তাকিয়ে, কারণ আমি তো ওনার জন্য অপেক্ষা করে করে আর খাইনি)

জেনি-সেসব ঠিক আছে কিন্তু নিহা এখানে।

নিহা-কেনো আমি কি এখানে আসতে পারিনা।

আমি-জেনি তেমন কিছু বলতে চায়নি।

নিহা-আমি তোমাকে জিজ্ঞেস করেছি।

জেনি-নিহা তুমি ভাইয়ার হাত কেনো ধরেছো?

নিহা-কেনো কি হয়েছে?

জেনি-কেনো কি হয়েছে মানে?তুমি যে ভাবীর সামনে ভাইয়ার হাত ধরে আছো ভাবী মাইন্ড করছে না।কেনো ধরেছো তুমি ভাইয়ার হাত?

তন্ময়-এদিক দিয়ে আসার সময় একটু অন্ধকার ছিলো আর নিহা সেই অন্ধকারে ভয়ের চোটে আমার হাতটা যে সেই ধরে আর ছাড়েনি।

জেনি-তাহলে এখন হাতটা ছাড়তে বলো।

তন্ময়- নিহা হাতটা ছাড়ো।

নিহা-হুম!!!(বলে তন্ময়ের হাত ছেড়ে দেয়)

নিসা-আচ্ছা তন্ময় তুমি নিহাকে হঠাৎ এখানে নিয়ে এলে???

তন্ময়-ও কিছু দিন এখানে থাকবে।

জেনি-এখানে থাকবে এটা নিহা বলেছে??

তন্ময়-না আমি বলেছি।

জেনি-কেনো???

তন্ময়-সামনে একটা সারপ্রাইজ আছে তাই।

নিসা-কি সারপ্রাইজ???

তন্ময়-বললে সারপ্রাইজ থাকবে না।

জেনি-তুমি কি এমন বললে নিহাকে যে ও এখানে আসতে রাজি হয়ে গেলো।ও তো বলেছিলো ও এখানে আর আসবেনা।

তন্ময়-আমি বলেছি তোমার সাথে যখন দেখা হয়ে গেছে তো আমার সাথে বাড়িতে চলো।

নিহা-তন্ময় বলাতে আমি রাজি হয়েছি।

জেনি-তন্ময় কি??? ভাইয়া বলো।

সাবিয়া-থামবি তোরা?(রেগে)

আমি-মা!!!(মায়ের এমন হঠাৎ করে ধমক দেওয়া তে আমি ভয় মায়ের হাত চেপে ধরি)

সাবিয়া-কিছু হয়নি তনু?(আমাকে শান্তনা দিয়ে) এই কি শুরু করেছিস তোরা নিহা মাত্র এলো কোথায় ওকে একটু ঘরে ডুকতে দিবি তা না উল্টো প্রশ্নের উপর প্রশ্ন করছিস।

তন্ময়-এটা একটু জেনিকে বুঝাও।

সাবিয়া-নিসা নিহার জন্য নাস্তা নিয়ে আসো।

নিসা-হুম মা।(বলে চলে গেলো)

সাবিয়া-আর কেও নিহার থাকার জন্য একটা রুম ঠিক করে দাও।

তন্ময়-নিহার রুম তনু গোছাবে।

আমি-আমিই কেনো???

তন্ময়-কারণ তুমি রুম ভালো গোছাও।(বলে চলে গেলো)

জেনি-ভাবী আমি গুছিয়ে নিবো তুমি রুমে যাও।

আমি-কিন্তু তোমার ভাইয়া তো আমাকে গোছাতে বলেছে।

জেনি-তোমার শরীল খারাপ তুমি গিয়ে রেস্ট নাও।ভাইয়াকে বুঝানোর দায়িত্ব আমার।

আমি-হুম!!!

তনু চলে যাওয়ার পর জেনি গিয়ে নিহার রুমটা গোছাতে লাগল।নিহার রুম গোছানোর সময় তন্ময় ওখানে আসে আর জেনিকে রুম গোছাতে দেখে একটু স্বাভাবিক ভাবেই জিজ্ঞেস করে।

তন্ময়-নিহার রুম তুই কেনো গোছাচ্ছিস???

জেনি-না গুছিয়ে কি করবো?

তন্ময়-আমি তো তনুকে গোছাতে বলেছি।

জেনি-আমিই ভাবীকে গোছাতে বারণ করেছি।

তন্ময় এবার কিছু না বলে তনুর কাছে চলে যায়।
(বাকিটা সবার জানা)

(((প্রেজেন্ট)))

সবাই এখন একসাথে বসে ডিনার করছে।আজ আমিও সবার সাথে বসেছি।আসলে মা জোর করে সবার সাথে বসিয়েছে যেহেতু দুপুরে খাইনি।

নিহা-আন্টি খাবারটা কে রান্না করেছে???

সাবিয়া-কেনো ভালো হয়নি???

নিহা-না খুব ভালো হয়েছে আসলে তোমাদের কারোর হাতের রান্না তো এমন না তাই।

তন্ময়-তনুর রান্না এমনি খুব ভালো।(খেতে খেতে)

নিহা-এটা তনু রান্না করেছে??(অবাক হয়ে)

জেনি-হুম তনু ভাবীই রান্না করেছে।(বাঁকা হেসে)

তন্ময়-তনুর রান্না বেস্ট।(মুচকি হেসে)

আমি শুধু এদের দুজনের কথা শুনছি।কেমন বাঁকা হেসে কথা গুলো বলছে।আমার এসব ভাবনার মধ্যে হঠাৎ নিহা টেবিল ছেড়ে উঠে চলে যায়।অথচ কেও কোনো রিয়েক্টই করলো না।

রহমান-তন্ময়!!!

তন্ময়-হুম বাবা???

রহমান-তোর তো সকালে জ্বর ছিলো এখন কেমন আছিস??

তন্ময়-আগে থেকে ঠিক আছি।

রহমান-হ্যাঁ রে তনু তোর শরীল কেমন এখন???

আমি-বাবা আমার আবার কি হলো??

রহমান-তোর না বিকালে শরীল খারাপ হয়েছিল।

আমি-ওহ আমিও ঠিক আছি।

জেনি-দুজন একসাথেই অসুস্থ হলে বাহ বাহ।

আমরা জেনির কথায় পাত্তা না দিয়ে খাওয়ার শেষ করে রুমে চলে এলাম।আমি রুমে এসে শাড়িটা খুলে একটা গোলাপি রংয়ের কামিজ পরেছি।আমি খাটে শুয়ে আছি আর তন্ময় ফোনে কি একটা খুব মনোযোগ দিয়ে দেখছে।এবার তন্ময় উঠে বারান্দায় যেতে লাগলে আমি বলি।

আমি-কোথায় যাচ্ছেন?

তন্ময়-দেখতে পারছোনা।

আমি-যাবেন না প্লিজ।

তন্ময়-তোমার তো শখ ছিলো।

আমি-কালকের জন্য আমি সরি আর আজকের জন্যও আমি সরি।প্লিজ বারান্দায় যাবেন না।

তন্ময়-তুমি এমন কেনো???(খাটে বসে)

আমি-কেমন???

তন্ময়-এখানে কি তোমার কোনো দোষ আছে যে তুমি সরি বলছো?

আমি-আমার জন্যই তো।

তন্ময়-তুমি আমার চিন্তা করেই হানিমুনে যাওয়ার ব্যবস্থা করতে বারণ করেছো এটা আমি জানি।আমি জাস্ট তোমাকে টেস্ট করছিলাম।

আমি-কি টেস্ট???

তন্ময়-এই যে তোমার মাঝে কোনো জেলাসি নেই কোনো চেষ্টা নেই।

আমি-এটা কেনো মনে হয়েছে আপনার??

তন্ময়-এই যে সকালে তোমায় বকার পর তুমি একটু চেষ্টাও করলেনা আমার সাথে কথা বলার।

আমি-সেই সুযোগ তো আপনি দেননি।

তন্ময়-সুযোগ করে নিতে হয় যেমন আমি এখন করবো।(তনুর কোমড় ধরে কাছে টেনে)

আমি-ম মানে??

তন্ময়-তোতলাচ্ছো???

আমি-ক কই নাতো?

তন্ময়-আচ্ছা নিহা যখন আমার হাত ধরে দাঁড়িয়ে ছিলো তখন তোমার কি কিছু ফিল হয়েছিলো?

আমি-কি ফিল হবে???

তন্ময়-কোনো ফিলিংস আসেনি?

আমি-না।

তন্ময়-(আমি অবাক হয়ে তনুর দিকে তাকিয়ে আছি।ওর জায়গায় অন্য কোনো মেয়ে হলে হয়ত হিংসে থাকতে পারতোনা।আমি তো ইচ্ছে করেই নিহার হাতটা ছাড়াইনি যাতে তনু একটু জেলাস ফিল করে কিন্তু তনু তো….)শাস্তির জন্য প্রস্তুত?

আমি-কিসের শাস্তি???

তন্ময়-সকালে বলেছি না।(বলে আমার আরো কাছে এসে ঘাড়ে একটা কিস করে দিলো।ওনার এমন করাতে আমি একটু কেঁপে উঠি।এমন তো না যে উনি আমায় প্রথম বার ছুয়েছে।উনি এবার আস্তে আস্তে আমার ঠোঁটের কাছে এসে আমার ঠোঁট জোড়া ওনার আয়ত্তে করে নেয়।আমি বাধা দেওয়ার জন্য হাতটা বাড়ালে উনি সাথে সাথে আমার হাতটা বিছানার সাথে চেপে ধরে)

(((সকালে)))

আমি মনমরা হয়ে সকালের নাস্তা বানাচ্ছি তন্ময় এখনো ঘুমাচ্ছে।আমি মনমরা হয়ে নাস্তা বানাচ্ছি কারণ আমি আজ দেরি করে ঘুম থেকে উঠায় নাস্তা বানাতে দেরি হচ্ছে।সব হচ্ছে তন্ময়ের জন্য।

—তনয়া।(দরজার সামনে দাঁড়িয়ে)

আমি-কে?(দরজার সামনে এসে)

—কে লাইক সিরিয়াসলি???

আমি-আবিদ???

আবিদ-হুম।(তনুর ব্রেস্ট ফ্রেন্ড আবিদ রহমান।স্কুল লাইফ থেকেই তনুর সাথে বেশ ভালো বন্ধুত্ব)

আমি-তুই এখানে কিভাবে আসলি??

জেনি-আমি এনেছি।(তনুকে পেছনে থেকে ধরে)

আমি-তুমি কিভাবে আনলে???

জেনি-সেসব পরে বলবো আগে ওনাকে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দাও।

আমি আবিদকে তন্ময় বাদে একে একে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিই।আবিদ ও সবার সাথে ভালোভাবে কথা বলে নিজের পরিচয় দেয়।আমি আবিদকে রেখে তন্ময়কে জাগাতে আসি।

আমি-তন্ময় উঠুন।

তন্ময়-উুহু।

আমি-কেনো?

তন্ময়-রাতে ঘুমাতে পারিনি।

আমি-আপনি ঘুমাতে পারেননি নাকি আমাকে ঘুমাতে দেননি।

তন্ময়-উঠছি।

আমি-আপনাকে এখনই উঠতে হবে।(বলে টেনে তুলে ওয়াশরুমে পাঠিয়ে দিই আর অপেক্ষা করতে থাকি।কিছুক্ষণ পর তন্ময় ফ্রেশ হয়ে আমার সামনে এসে আমাকে জরিয়ে ধরে)

তন্ময়-গুড মরনিং।

আমি-গুড মরনিং না ছাই।(ওনাকে সরিয়ে)

তন্ময়-কেনো কি হয়েছে???

আমি-এতো লেট করে কেও উঠে?

তন্ময়-আমি তো লেট করে উঠিনা কালকের…..

আমি-চুপ!!!চলুন।

তন্ময়-কোথায়??

আমি-নিচে।

তন্ময়-কেনো???

আমি-একজনের সাথে পরিচয় করিয়ে দিবো।

তন্ময়-কার সাথে???

আমি-আমার বন্ধ……..

আবিদ-তনু!!!

আমি-(পেছনে ফিরে দেখি আবিদ)এসেছিস….

আবিদ-তুমি একবারও আমার কথা ভাবলে না।আমার ছেড়ে তন্ময়কে বিয়ে করে নিলে।আমি না হয় চলে গেছিলাম কিন্তু তুমি কি আমার জন্য অপেক্ষা করতে পারলে না।

আমি-কি???(অবাক হয়ে)

তন্ময়-কে ও।(রেগে আমার হাত শক্ত করে ধরে ওনার দিকে ফিরিয়ে)

-চলবে

তন্ময়ের তনু পর্ব-১৬+১৭

0

#তন্ময়ের_তনু
#পর্ব_১৬
#Jechi_Jahan

তন্ময় রুম থেকে চলে যাওয়ার পর আমি জেনির দিকে রাগি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি।জেনি আমার তাকানো দেখে মাথা শুধু এদিক ওদিক ঘুরায়।

নিসা-জেনি তুমি দিন দিন ফাজিল হচ্ছো।

জেনি-আরে আমি কি জানতাম নাকি যে ভাইয়া এতো রিয়েক্ট করবে।(ভয়ে)

অভি-তুই জানতি এই জন্যই তো আমাদেরকে এতোক্ষণ বারান্দায় লুকিয়ে থাকতে বলেছিস।

আমি-কি!!!(অবাক হয়ে)জেনি তুমি আমার সাথে এমন করতে পারলা।

জেনি-তোমার বর যে এমন করবে আমি জানতাম
নাকি।

অভি-আরে তুই জানতিস এই জন্যই তো এমন করলি ফাজিল।

নিসা-এই তুমি শুধু এমন করেছিস এমন করেছিস বলছো।কি করেছে ও?

অভি-জানো লাঞ্চের পরে ও আমাকে আর তন্ময় কে এই রুমে আনে।

নিসা-তারপর?

অভি-তারপর বলে কি যেনো একটা সারপ্রাইজ আছে আমাদের বারান্দায় লুকিয়ে থাকতে।

আমি-ভাইয়া জেনি বললো আর তোমরাও…..

অভি-আরে না তনু আমি তো লুকাতে চাইনি।তোমার ওই গুরুধর স্বামীই বলছিলো যে কি সারপ্রাইজ আমি দেখতে চাই।তাইতো বাধ্য হয়ে আমিও বারান্দায় দাঁড়িয়ে ছিলাম।

আমি-জেনি তুমিও না।(মনমরা হয়ে)

জেনি-সরি ভাবী।

তন্ময়-তনু….(রুম থেকে জোরে চিৎকার করে)

আমি-এই মরেছে(বলে দৌঁড়ে চলে যাই)

অভি-তোর জন্য এমন হচ্ছে।(জেনিকে মেরে)

জেনি-চুপ থাক আমি ভাবছি আরেকটা জিনিস।

নিসা-কি???

জেনি-ভাবীর এক্স এর কথা আমরা আরো আগে একবার তুলেছিলাম আর সেদিনও ভাইয়া শুনে ছিলো কিন্তু সেদিন এমন রিয়েক্ট করেনি।

অভি-তাহলে তুই বলতে চাস….

জেনি-ভাইয়ার মনে এতো জেলাস কোথায় থেকে এলোরে?

নিসা-জ্বলেপুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে।

জেনি-হা হা হা

অভি-এই চুপ কর।(ধমক দিয়ে)

***ওদিকে***

তন্ময়-কয়েকটা জামা আর কয়েকটা শাড়ী গুছাই নাও।

আমি-কেনো?

তন্ময়-যেটা বলেছি সেটা করো।

আমি-বাড়ী থেকে বের করে দিবেন????

তন্ময়-(রাগী চোখে তাকিয়ে আছে)

আমি-প্লিজ বলুন না কেনো গোছাবো।

তন্ময়-(কিছু না বলে চলে গেলো)

ওনার চলে যাওয়া দেখে আমার খুব রাগ হতে লাগছে।রাগের কারণে যেই ফোনটা আছাড়। মারতে যাবো ওমনি দেখি ফোনে কল এসেছে।

আমি-হ্যাঁ আপু বলো।

অনু-কেমন আছিস??

আমি-এইতো ভালো।তুমি?

অনু-আমিও আছি।

আমি-এভাবে বলছো কেনো?

অনু-এমনে একা একা ভালো লাগছে না।

আমি-আপু তুমি চলে আসো না।

অনু-দূর কি বলিস আদিল কে ছেড়ে আসবো?

আমি-ভাইয়া কে সহ নিয়ে আসো।বাড়িতে এসে সবাইকে বুঝিয়ে বললে সবাই তোমাদের ঠিকই মেনে নেবে।প্লিজ চলে আসো!!!

অনু-বলতে সহজ করতে কঠিন।

আমি-দূর!!!

অনু-এই তুই কাওকে বলিস নিতো যে তুই এতদিন আমাদের বাসায় ছিলি।

আমি-না বলিনি।

অনু-তন্ময় তোকে এখন ভালোবাসে তাই না?

আমি-ভালোবাসা না ছাই।

অনু-মানে?

আমি-আরে আমি জানিই না উনি আমাকে ভালো বাসে কিনা।হয়তো উনি নিজেও জানেনা।

অনু-ওওও!!!

আমি-তবে উনি তোমাকে খুব ভালোবাসত আপু।

অনু-ছাড়তো।

আমি-আপু তন্ময় আসছে রাখি।

অনু-ওকে সাবধানে থাকিস।

আমি-হুম তুমিও।(বলে ফোন কেটে দিলাম)

তন্ময়-কার সাথে কথা বলছিলে?

আমি-কারোর সাথে না।

তন্ময়-মিথ্যা কেনো বলো।

আমি-কথা বললেও আপনাকে কেনো বলবো।আমি কি আপনার গালফ্রেন্ড লাগি।

তন্ময়-বউ লাগো।

আমি-মানেন সেটা?(গম্ভীর হয়ে)

তন্ময়-আগে মানতাম না কিন্তু এখন ঠিকই মানি।

আমি-হুহ ডং।(বলে খাটে গিয়ে বসে পরলাম)

তন্ময়-তোমার তো চুল ভেজা।

আমি-তো??(পাত্তা না দিয়ে)

তন্ময় কিছু না বলে বারান্দা থেকে একটা টোয়ালে নিয়ে আমার পেছনে বসে।আর মাথার গোমটা সরিয়ে চুলগুলো মুচতে শুরু করে।কিছুক্ষণ মুচার পর উনি আমাকে একটা আজব প্রশ্ন করে।

তন্ময়-তনু।

আমি-হুম।

তন্ময়-আমার আর অনুর বিয়ের দিন তুমি কি কোনো ভাবে অনুকে বাড়ী থেকে পালাতে সাহায্য করেছিলে?(চুল মুচতে মুচতে)

আমি-কি?(ওনার দিকে ফিরে)

তন্ময়-বলো??

আমি-এটা কেমন প্রশ্ন?(উঠে দাঁড়িয়ে)

তন্ময়-তুমি জাস্ট উত্তর টা দাও।

আমি-কোন বোন চাইবে তার বড় বোন বিয়ের দিন বাড়ি থেকে পালিয়ে যাক।

তন্ময়-তুমি সাহায্য করোনি।

আমি-আমি উল্টো আপুকে পুরো বাড়ী খুঁজেছি কিন্তু কোথাও পাইনি।

তন্ময়-তনু তুমি আমাকে সত্যিটা বলো।এখন তুমি আমায় সত্যি টা বললে কোনো সমস্যাই হবেনা কারণ আমি তোমাকে স্ত্রী হিসেবে মেনে নিয়েছি।

আমি-আপনি এসব কেমন কথা বলছেন?

তন্ময়-দেখো তনু আমি জানি তুমি অনুকে বিয়ের দিন পালিয়ে যেতে সাহায্য করছিলে যাতে আমায় বিয়ে করতে পারো।

আমি-পাগল হয়ে গেছেন আপনি?না জেনে না বুঝে কি একটা মিথ্যা দায় আমার উপর চাপিয়ে দিলেন।(কান্না করে)

তন্ময়-তনু তুমি সত্যি কিছু করোনি?(অবাক হয়ে)

আমি-এবার বুঝেছি!!!আপনি এতোদিন আমার সম্পর্কে এসব ভেবে বিয়ের দিন থেকেই এমন করেছিলেন তাইনা?(কান্না করে)

তন্ময়-তুমি আসলেই কিছু….

আমি-তন্ময় আপনি আমার সম্পর্কে এটা কেমনে ভাবলেন?(কান্না করে)

তন্ময়-সরি তনু!!!

আমি-আপনি এমন কেনো???প্রথমে কষ্ট দেন তারপর সরি বলেন।সরি বললেই কি সব সমাধান হয়ে যায়।এখন আবার বলবেন এটা আপনি ভুল করে বলে ফেলেছেন।(কান্না করে)

তন্ময়-তুমি যেটা ভাবছো ঠিক সেটাই।

আমি-কি???

তন্ময়-হুম!!!এখন কান্না থামাও।(আমার কাছে এসে আমার চোখের পানি মুচে জরিয়ে ধরে)

আমি-আপনি শুধু আমাকে কষ্ট দেন।

তন্ময়-কিছুক্ষন আগে তুমি আমাকে কষ্ট দিয়ে ছিলে তাই আমিও তোমাকে কষ্ট দিলাম।(মিথ্যা বলে কথাটা কাটিয়ে তো নিলাম।কিন্তু তনু যা বলছে তা তো আমার সত্যি মনে হচ্ছে।তাহলে ওই মেচেজটা আর ভিডিও টাকি মিথ্যে)

আমি-আপনাকে কষ্ট দিলাম???

তন্ময়-তখন যে তোমার এক্স এর কথা বললে।

আমি-এতে আপনার কষ্ট পাওয়ার কি আছে?

তন্ময়-তুমি আমার স্ত্রী তোমার মুখে অন্য একটা ছেলের কথা শুনলে আমার কষ্ট হবেনা।

আমি-এতো ডং কিভাবে পারেন?

তন্ময়-বিকালে একটু রেডি হয়ে থেকো তোমাকে নিয়ে ঘুরতে যাবো।(আমাকে ছেড়ে)

আমি-পারবোনা।(অন্য দিকে ফিরে)

তন্ময়-ঠিক আছে দেখা যাবে।

***সন্ধ্যায়***

আমি আর তন্ময় মাত্র বাড়িতে আসলাম।তন্ময় আজ আমাকে নিয়ে নদীর পারে ঘুরতে গিয়েছে।ওখানে উনি আমায় সাথে যা নয় তা করেছে আমার গায়ে নদীর পানি মেরেছে,সাত প্লেট পুচকা খাইয়েছে আরো কত কি।আমি একটু বিরক্ত ও ছিলাম বাট ভালোও লেগেছে।উনি সিদ্ধান্ত নিয়ে ছিলেন একেবারে ডিনার করে তারপর আসবে।কিন্তু আমি আমার শরীর খারাপের বাহানা দিয়ে তাড়াতাড়িই বাড়ি ফিরে আসি।

সাবিয়া-কিরে এতো তাড়াতাড়ি চলে এলি?

তন্ময়-ম্যাডামের শরীর খারাপ লাগছিলো।

সাবিয়া-ওমা কি হয়েছে?(আমার কাছে এসে)

আমি-না মা একটু মাথা ঘুরছিলো আর কিছু না।

সাবিয়া-মাথা ঘুরছিলো???

আমি-হুম!!!!

সাবিয়া-খুশির সংবাদ নাকি।(কানে কানে)

আমি-দূর মা কি বলো।

সাবিয়া-আমি দুশটামি করছিলাম।

তন্ময়-মা ভেতরে আসতে দাও।

সাবিয়া-হুম আয়।(তন্ময়কে সাইড দিয়ে)

তন্ময়-ওকে ফ্রেশ হয়ে এসে তারপর তোমার সাথে কথা বলতে বলো দেশের অবস্থা ভালো না।(উপরে উঠতে উঠতে)

আমি-(এমন হলে নিলেন কেনো)

সাবিয়া-আচ্ছা যা।

আমি-আচ্ছা ফ্রেশ হয়ে আসি।

সাবিয়া-এই দাড়া একটু দেখি তোকে।

আমি-কি দেখবা???

সাবিয়া-তোকে তো জামায় বেশ সুন্দর লাগে।

আমি-তাই??

সাবিয়া-কালকে থেকে ওখানে জামা ই পরিস।

আমি-ওখানে???

সাবিয়া-ডং করিস নাতো যা।(আমাকে পাঠিয়ে)

আমি রুমে এসে দেখি তন্ময় আমার জন্য মাত্র কিনে আনা জামাগুলো গোছাচ্ছে সাথে নিজেরও কিছু শার্ট-প্যান্ট গোছাচ্ছে।আমি ওনাকে পাত্তা না দিয়ে শাড়ী নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলাম।ফ্রেশ হয়ে আমি রুমে এসে আয়নার সামনে দাঁড়াই।এখন আমি একটা কালো রংয়ের জামদানী শাড়ি পরেছি।আমি এবার আয়নার সামনে দাঁড়াই।

তন্ময়-তোমার পেট দেখাচ্ছো আমাকে?

আমি-কি??(ওনার দিকে ফিরে)

তন্ময়-সমস্যা নেই আমি আরো আগেও দেখেছি।

আমি-এই কি বলেন এসব?(ওনার কাছে এসে)

তন্ময়-কি???

আমি-মাত্র কি বললেন।(রেগে)

তন্ময়-কি বললাম।(আমাকে টেনে)

আমি-বিকালে আমার সাথে যা করেছেন তারপর থেকে আপনার সাথে কথা বলতেই ইচ্ছে করছেনা তবুও জিজ্ঞেস করছি।কেনো বললেন এই কথা?

তন্ময়-কোন কথা??

আমি-এই যে আমি আপনাকে পেট দেখাচ্ছি।

তন্ময় এবার আমাকে কিছু না বলে আমার শাড়ির আঁচলের নিচ দিয়ে আমার পেটে হাত দিয়ে দেয়।

আমি-তন্ময় কি করছেন?(হাত সরিয়ে)

তন্ময়-কিছুনা।

আমি-আপনি বলবেন কি না?

তন্ময়-এই শাড়ীতে তোমার পেট দেখা যাচ্ছিলো তাই আমি ওই কথা বলেছি।

আমি-এটা ভালোভাবে বলা যেতো না।

তন্ময়-না আমি একটু ত্যাড়াব্যাকা করেই বলি আর কাজ করি বিকালে তো নমুনা দেখেছো।

আমি-দূর!!!

আমি তন্ময়কে ছেড়ে বাবার রুমে চলে আসলাম।

আমি-বাবা!!!

রহমান-আরে তনু আয় আয়।

আমি-হুম.(বাবার পাশে বসে)

রহমান-মন খারাপ???

আমি-না।

রাহমান-তাহলে???

আমি-এমনি বোরিং লাগছে।

রহমান-এটা কেমন কথা?তন্ময় তোকে বাইরে থেকে ঘুরিয়ে আনলো আর তোর কিনা এখন বোরিং লাগছে।আবার ঘুরতে চাস বুঝি?

আমি-না এমনে ভালো লাগছেনা।

রহমান-যা ওখানে ভালো লাগবে।

আমি-আচ্ছা মা ও কিছুক্ষণ আগে ওখানে বলল আর তুমিও এখন ওখানে বলছো ব্যাপার টা কি?

রহমান-তুই এখনো জানিসই না।

আমি-কি জানবো?

রহমান-এই যে তোরা কালকে হানিমুনে যাচ্ছিস।

আমি-কি???(অবাক হয়ে)

-চলবে

#তন্ময়ের_তনু
#পর্ব_১৭
#Jechi_Jahan

আমি বাবার রুম থেকে বের হয়ে আমাদের রুমের দিকে আগাতে লাগলাম।আমি যেই রুমে ঢুকতে যাবো ওমনি তন্ময় রুম থেকে বের হয়ে এলো।

আমি-এগুলা কি শুরু করেছেন আপনি???

তন্ময়-কি করলাম?

আমি-কিছুই জানেন না নাকি না জানার বান করে আছেন?

তন্ময়-সোজাসুজি বলনা কি বলতে চাও।

আমি-হানিমুনে যাওয়ার প্ল্যান আপনি করেছেন??

তন্ময়-ওহ এটা।

আমি-ব্যাপারটা এতো ইজিলি নিচ্ছেন??

তন্ময়-দুইটা জায়গা সিলেক্ট করেছি আমি।

আমি-আমি কি এটা জিজ্ঞেস করেছি?

তন্ময়-(কিছু না বলে রুমে চলে গেলেন)

আমি-আমি কিছু জিজ্ঞেস করেছি(রুমে এসে)

তন্ময়-এই যে জায়গা দুইটা কি কি??

আমি-না।

তন্ময়-কক্সবাজার না হয় সাজেক যাবো।

আমি-তন্ময়!!!!(রেগে)

তন্ময়-ওকে বলছি।

আমি-হুম!!!

তন্ময়-এই যে তুমি বাড়িতে থেকে দেখছি আমার প্রতি কোনো গুরুত্বই দেখাচ্ছো ন তাই সিদ্ধান্ত নিলাম হানিমুনে যাবো।

আমি-আজব এখানে হানিমুন কোথা থেকে এল?

তন্ময়-বাইরে কোথাও গেলে হয়তো তোমার আমার প্রতি গুরুত্ব তা বাড়বে।

আমি-এই কথা!!!আচ্ছা আমি যদি না যাই?

তন্ময়-বিকালের মতো দেখা যাবে।(বলে বারান্দায় চলে গেলো)

আর আমি বিকালের কথা শুনে ভয় পেয়ে যাই।

ফ্লাসব্যাকঃ-

তন্ময়-ওকে দেখা যাবে।

আমি-হুম দেখা যাবে।(বলে আমি সোজা খাটে গিয়ে শুয়ে পরলাম।আমার শোয়ার কিছুক্ষণ পর তন্ময় ও আমার পাশে এসে শুয়ে পরে।আমি এখন একটু ঘুমানোর চেষ্টা করছি বাট তন্ময় আমাকে ঘুমাতে দিচ্ছে না তাও গান গেয়ে)

তন্ময়-তোরে পাগলের মতো করে সাজিয়ে,ছাগল এর মতো করে নাচাবো,তুই মে মে….মে মে করলে
কাঁঠালের পাতা ছিড়ে খাওয়াবো।(সুর টেনে)

আমি-কি হচ্ছে এগুলা?(ওনার দিকে তাকিয়ে)

তন্ময়-কি হচ্ছে?(না জানার ভান করে)

আমি-তন্ময় আমি খুব ক্লান্ত তাই একটু ঘুমাতে চাই।সো প্লিজ কোনো আওয়াজ করবেন না।

তন্ময়-তো ঘুমাও তোমাকে আটকিয়েছে কে?

আমি-প্লিজ!!!

তন্ময়-ওকে ওকে ঘুমাও।

আমি এবার ঘুমানোর প্রস্তুতি নিলাম আর ঘুমিয়ে ও গেলাম।কিন্তু ঘুমানোর বেশ কিছুক্ষণ পর আমি খেয়াল করি যেনো কেও আমার শাড়ী টা খুলে ফেলছে।আমি সাথে সাথে চোখ টা খুলে ফেলি।

আমি-তন্ময়!!!!(অবাক হয়ে)

তন্ময়-বলেছিলাম না দেখা যাবে।

আমি-শাড়ী কেনো খুলছেন?(শাড়ীর আঁচল ধরে)

তন্ময়-এখনো খুলিনি।

আমি-কিন্তু খুলতে তো চাচ্ছেন।

তন্ময়-ওকে খুলবোনা তাও একটা শর্তে।

আমি-কি শর্ত??

তন্ময়-রেডি হয়ে আমার সাথে বাইরে চলো।

আমি-আমি এসব শর্ত তর্ত মানিনা।

তন্ময়-ওকে তো খুলে ফেলি।(শাড়ী টেনে)

আমি-না প্লিজ।

কিন্তু কে শুনে কার কথা উনি সেই জোর করে শাড়ীটা খুলে আমায় ওয়াশরুমে পাঠিয়ে দেয় আর সাথে দরজা টাও বন্ধ করে দেয়।

আমি-তন্ময় বেশি হয়ে যাচ্ছে কিন্তু।

তন্ময়-মোটেও বেশি কিছু করিনি।

আমি-দরজা খুলুন।

তন্ময়-তুমি সত্যি আমার সামনে এভাবে থাকবে।

আমি-আমার শাড়ী টা দিন।

তন্ময়-ওখানে জামা রাখা আছে ওগুলা পরে বের হও।(দরজার কাছে এসে)

আমি-আমি পরবোনা।

তন্ময়-ওকে তো এভাবেই থাকো।

আমি-আমি কোথাও ঘুরতে যাবোনা।

তন্ময়-ওকে থাকো ওখানে।

আমি-তন্ময়!!!

তন্ময়-চিৎকার করে লাভ নেই।

আমি এবার কোনো উপায় না পেয়ে ওয়াশরুমে থাকা জামাটা পরে নিলাম আর তন্ময়কে বলে বের হয়ে এলাম।উনি এবার নিজে আমাকে সাজিয়ে রেডি করে বাইরে নিয়ে ঘুরতে যায়।

***প্রেজেন্ট***

আমি এতোক্ষণ এসব ভাবছিলাম কিন্তু হঠাৎ রুমে জেনি আসায় আমি বাস্তবে ফিরে আসি।

আমি-জেনি কিছু বলবে?

জেনি-হুম এগুলা দিতে এসেছি।(চাদর দেখিয়ে)

আমি-চাদর কেনো?

জেনি-তোমরা যেখানে হানিমুনে যাচ্ছো ওখানে নিশ্চয়ই এখন ঠান্ডা পরবে।যেহেতু এখন এখানে একটু ঠান্ডা পরছে তাই চাদর গুলো নিও।

আমি-আচ্ছা।(চাদরগুলো নিয়ে)

জেনি-ভাইয়া কই?

আমি-বারান্দায়।

জেনি-জানো তো ভাবী একটা ছেলে তার বউয়ের লাভ স্টোরি শুনে এত বড় ছ্যাকা খেয়েছে যে সে এখন তার বউকে নিয়ে হানিমুনে যাচ্ছে।

তন্ময়-তুই যেমন তোর ভাবনাচিন্তাও তেমন।
(রুমে এসে)

জেনি-সত্যি কথা একটু তেঁতোই হয়।

তন্ময়-পেঁচাল বাদ দিয়ে এখন যা এখান থেকে।

জেনি-ভাবী তুমিও আমার সাথে চলো না।

আমি-ওকে চলো।

তন্ময়-তুই তনুকে কেনো নিচ্ছিস?(আমার হাত ধরে)

জেনি-কেনো নিতে পারিনা।

তন্ময়-ওকে নিয়ে তুই কি করিস সেটা আমি খুব ভালো করে জানি সব আমাকে জ্বালানোর ধান্দা।

জেনি-তুই কেনো জ্বলবি তুই তো ভাবীকে পছন্দই করিস না তাই না।

তন্ময়-সেটা আমার ব্যাপার তুই যা।

জেনি-আরে ভাবীকে এখন আমার দরকার আছে।

তন্ময়-কেনো স্টোরি শুনবি?(রেগে)

জেনি-ওকে সরি যেতে দে প্লিজ।

তন্ময়-না তোর বিশ্বাস নেই।

আমি-কি করছো তোমরা?

তন্ময়-তুমি চুপ করো।(হাত জোরে চেপে ধরে)

জেনি-ওকে ভাইয়া আমি আর কখনো ভাবীর কাছ থেকে ভাবীর লাভ স্টোরি শুনবো না।

তন্ময়-না তুই যা এখন।

আমি-এমন করছেন কেন….

তন্ময়-বেশি বুঝো তুমি?(রেগে)

জেনি-ভাইয়া প্লিজ প্লিজ প্লিজ।

তন্ময়-ওকে কিন্তু কি বলেছিস মনে আছে তো।

জেনি-হুম মনে আছে।ওকে ভাবী চলো।

আমি-হুম(বলে রুম থেকে বের হয়ে গেলাম)

জেনি-তোমার বর না একটা জিনিস।

আমি-কি জিনিস?

জেনি-তুমি দেখি কিছুই বুঝো না।

আমি-কি বুঝবো?

জেনি-বাদ দাও,বসো!!!(রুমে এসে)

আমি-তা আমাকে কিসের জন্য দরকার?(বসে)

জেনি-কালকে তো তোমরা হানিমুনে যাচ্ছো তাই আনি তোমার জন্য কিছু ড্রেস সিলেক্ট করেছি।

আমি-আমি তো ড্রেস নিয়েছি।

জেনি-আরে এগুলা সেই ড্রেস না।

আমি-তো কি ড্রেস?

জেনি-স্পেশাল।

আমি-ওহ!!

জেনি-ভাবী এদিকে আসো একটা কথা বলি।

আমি এবার জেনির দিকে এগিয়ে গেলে ও আমার কানে কানে একটা কথা বলে সেটা শুনে আমি চোখ বড় বড় করে ওর দিকে তাকিয়ে থাকি

সাবিয়া-আচ্ছা তন্ময় হঠাৎ হানিমুনের কথা কেনো তুললো?

রহমান-জানিনা।

সাবিয়া-তোমাকে বললো আর তুমি জানোনা।

রহমান-আমি সত্যি জানিনা।

সাবিয়া-কিছু আন্দাজ করোনি?

রহমান-আরে আজকে দুপুরে তন্ময় হঠাৎ করে এসে আমায় হানিমুনের কথা বলবে এটা কি আমি কল্পনা করেছি।

সাবিয়া-তো কি বললো তোমাকে?

রহমান-বলেছে ওর বন্ধুদের যখন নতুন বিয়ে হয়েছে তখন তারা নাকি মাস পেরোতেই হানিমুনে চলে গেছে।এখন ও তো নতুন বিয়ে করেছে তাহলে ও কেনো হানিমুনে যাবেনা।

সাবিয়া-তখন তুমি কি বললে?

রহমান-আমি বললাম ঠিক আছে সব ব্যবস্থা করবো শুধু কোথায় যাবি সেরা বল।

সাবিয়া-কোথায় যাবে?

রহমান-সাজেক যাবে বলছিলো তখন আমি বললাম সাজেক তো গিয়েছিস তার চেয়ে ভালো কক্সবাজার যা কারণ ওখানে তো যাসনি।

সাবিয়া-কেমন ছেলে তোমাকে হানিমুনের কথা বলছে?

রহমান-তোমার ছেলে তখন রেগে ছিলো দেখেই বুঝা গেছে।আর তুমি তো জানো তোমার ছেলে রেগে গেলে আর কোনোকিছুর ধার ধারে না।

সাবিয়া-ওহ।

আমি-জেনি!!!(পিঠে একটা বারি দিয়ে)

জেনি-বলোনা।

আমি-ভাবীকে কেও এসব জিজ্ঞেস করে।

জেনি-ভাবী উল্টো ভাবে দেখলে কিন্তু তুমি আমার ভাবী হতেনা বোন হতে।

আমি-হুম তা তো ঠিক কিন্তু।

জেনি-বোন হিসেবে বলোনা ভাইয়া আর তোমার মাঝে কি কিছু হয়েছে?

আমি-জেনি!!(বলে মাথা নিচু করে ফেলি)

জেনি-ওকে বুঝেছি হয়েছে তাহলে।

আমি-তো??(ওর দিকে তাকিয়ে)

জেনি-তুমি না একটা গাঁদা।

আমি-কেনো??

জেনি-আর আমি হলে আমার বরকে প্রতুথম এক বছর আঙুলের উপর নাচাতাম সুযোগ না দিয়ে কিন্তু তুমি তো তোমার বরকে সুযোগ দিয়ে দিলে।

আমি-আমি সু্যোগ দিইনি।

জেনি-হুম তাই তো এতো ভয় পাও ভাইয়াকে।

আমি-তোমার ভাইয়া কি ভয় পাওয়ার মতো মানুষ নয় তুমি নিজেও তো ভয় পাও।

জেনি-ওকে এসব রাখো এখন,শুনো!!!

আমি-কি?

জেনি-আজ থেকেই না আজ রাত থেকেই তুমি ভাইয়াকে তোমার আঙুলের উপর নাচাবে।মানে এতোদিন ভাইয়া তোমার উপর জোর খাটাতো এখন তুমি ভাইয়ার উপর জোর খাঠাবে ওকে।

আমি-আমার দ্বারা এসব সম্ভব নয়।

জেনি-ভাবী ভাইয়া কিন্তু তোমাকে ভালোবাসে তাই তোমার সাথে এমন করে।আর তুমি এখন ভাইয়ার সাথে যাই করো না কেনো ভাইয়া কিছুই বলবেনা।

আমি-এটা আমিও একবার বলেছিলাম ওনাকে বাট আমি না ওনাকে দেখলেই কেমন একটা লাগে মানে ভয়+লজ্জা এমন কিছু।

জেনি-তাহলে তো হয়েই গেলো আজ থেকেই তুমি তোমার কাজ শুরু করে দাও।আর একদম ভয় পাবেনা ওকে কারণ ভাইয়া কিছুই করবেনা।

আমি-ওকে!!!আচ্ছা আমাকে একটা কথা বলো তো তুমি তো ওনার বোন তুমি কেনো ওনার সাথে এমন করার জন্য বলছো?

জেনি-তোমার স্বামী আমাকে খুব জ্বালিয়েছে তাই তোমার মাধ্যমে প্রতিশোধ নিবো আরকি।আর এটার মাধ্যমে দুইটা লাভ হবে।
১.তোমার ভাইয়ার প্রতি ভয় কাটবে।
২.আমার প্রতিশোধ নেওয়া হবে।
আর এটাকে বলে এক তিরে দুই পাখি মারা।

আমি-এমন করায় সত্যি আমার ভয় কাটবে?

জেনি-হুম সাথে ভালোবাসাও বাড়বে।

আমি-যাহ!!!

রাতে সবাই একসাথে ডিনার করে যে যার রুমে ঘুমাতে চলে গেলো।আমি ভাবীকে রুমে পাঠিয়ে খাবারগুলো ফ্রিজে রেখে রান্নাঘরের বাকি কাজ গুলো সেরে রুমে চলে আসলাম।

তন্ময়-এত দেরি করে কেনো এলে?

আমি-আমি কাজ করি আপনার মত বসে থাকিনা

তন্ময়-আরে আমি তো আর অফিসে যাইনা তাই তোমার মনে হয় আমি সারাক্ষণ বসে থাকি।

আমি-হুম!!

তন্ময়-কালকে তাড়াতাড়ি উঠতে হবে ওকে।

আমি-হুম!

তন্ময়-কি হুম হুম করছো বলো হ্যাঁ উঠবো।

আমি-এটা বলি আর ওটা বলি উত্তর কিন্তু একি টা।(এটা বলেই আমি ওয়াশরুমে চলে যাই)

তন্ময়-এর আবার কি হলো?

আমি-আল্লাহ আল্লাহ তুমি আমাকে এইটা কি সাহস দিলা?আর একটু থাকলে আমার জান বেড হয়ে যেতো।(আমি এবার আর দেরি না করে
তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে রুমে চলে এলাম।রুমে এসে দেখি তন্ময় আমার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।ওনার এই তাকানো দেখে ভয় হয় আমার)

আমি-কি???

তন্ময়-কি???

আমি-আরে কি???

তন্ময়-আরে আমিও তো বলছি কি?

আমি-এভাবে তাকিয়ে আছেন কেনো?

তন্ময়-না কিছুনা ঘুমাতে আসো।

আমি-কেনো তাকিয়ে ছিলেন?(খাটে বসে)

তন্ময়-না কিছু না এমনে।

আমি-(উনি নিশ্চয়ই অবাক হয়েছেন তাই কিছু বলতেও পারছেনা।জেনির প্ল্যান কাজ করেছে দেখছি এখন আমি আপনাকে মজা দেখাবো)
তন্ময় শুনন না।

তন্ময়-হুম(আমার দিকে তাকিয়ে)

আমি-আজ আপনি বারান্দায় শুবেন।(শক্ত কন্ঠে)

তন্ময়-What???(অবাক হয়ে)

-চলবে

তন্ময়ের তনু পর্ব-১৪+১৫

0

#তন্ময়ের_তনু
#পর্ব_১৪
#Jechi_Jahan

আমি ওয়াশরুমে এসে মুখে শুধু অনবরত পানি দিচ্ছি।জানিনা কেনো এখন আমার খুব কান্না পাচ্ছে।তন্ময় আমাকে আবার আপু মনে করে হয় তো এমন করেছে।আমি চোখের পানি মুচে মুখটা ধুয়ে মুচে রুমে চলে আসি।

তন্ময়-কি হয়েছে তনু?

আমি-কই কিছু না।(নিচের দিকে তাকিয়ে)

তন্ময়-তাহলে এভাবে দৌড়ে চলে গেলে যে?

আমি-মুখটা খুব জ্বলছিলো তাই ধুতে গেছি।

তন্ময়-তনু আমি সরি।

আমি-আবারো কেনো?(খাটে গিয়ে বসে)

তন্ময়-আমার তোমার পারমিশন নেওয়া উচিত ছিলো।কিন্তু আমি সেটা করিনি তাই আমি সরি।

আমি-না সমস্যা নেই।

এবার আমরা দুজনে কিছুক্ষণ নিরবতায় ছিলাম।কিন্তু তন্ময় হঠাৎ করে আমাকে শক্ত করে জরিয়ে ধরে কান্না করে দেয়।ওনার এই কাজে আমি প্রায় অবাক হয়ে যাই তবু একহাত ওনার কাঁধে রাখি।

আমি-তন্ময় কি হয়েছে কাঁদছেন কেনো?

তন্ময়-,,,,,,,,,(কান্না করতেই আছে)

আমি-তন্ময় প্লিজ বলুন।

তন্ময়-তুমি ওইদিন না গেলেও পারতে তনু।আমি তোমাকে কত জায়গায় খুঁজেছি এটা শুধু আমি জানি।তুমি চলে যাওয়ার পর আমি যে কেমন চিন্তায় ছিলাম সেটা তুমি জানোনা।তনু প্লিজ আর কোনোদিন এমন করোনা আমার কসম করোনা।
(কান্না করতে করতে)

আমি-তন্ময়!!!(আমার থেকে ছাড়িয়ে)

তন্ময়-তনু প্লিজ এমন করোনা।(কান্না করে)

আমি-(ওনাকে দেখে আমার চোখ থেকে পানি পরতে লাগলো।এমনে কিছুক্ষণ আগে কান্না করলাম এখন ওনাকে দেখে আবার।আমিও এবার ওনাকে জরিয়ে ধরে কান্না করেই বলি) আমি আর কখনো যাবোনা আপনায় বাড়ি থেকে।

তন্ময়-প্লিজ যেয়ো না।

আমি-না যাবোনা।

তন্ময় এবার আমাকে ছেড়ে দিয়ে আমাকে দেখে।

আমি-কেমন বাচ্চাদের মতো কান্না করছেন।(শাড়ির আঁচল দিয়ে ওনার চোখের পানি মুচে)

তন্ময় আমাকে কিছু না বলে আমাকে টেনে ওনার সাথে মিশিয়ে নেয়।আমি ভাবলাম আবার কান্না করবে কিনা।কিন্তু আমার ভাবনাকে ভুল প্রমাণ করে উনি আমার কপালে একটা চুমু দিয়ে দেয়। তন্ময়ের এই কাজে আমি অবাক হলেও কিছু বললাম না।উনি এবার আস্তে আস্তে আমার গালে আর গলায় একটা চুমু দেয়।এবার তন্ময় যেই আমার ঠোঁটের কাছে আসতে গেলো আমি ওমনি মুখটা ওদিকে ফিরিয়ে ফেলি।কিন্তু তন্ময় যেনো আজ আমাকে চায়ই চায় আর উনি আজ আমায় পেয়েছেন ও একেবারে নিজের করে।

>>সকালে<< আমি ঘুম থেকে উঠে দেখি আমি তন্ময়ের বুকের উপর শুয়ে আছি।হঠাৎ কালকে রাতের কথা মনে করে আমি কেমন লজ্জা পেয়ে যাই।আমি ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি রোজকার সময়েই উঠেছি। আমি এবার গোসল করে একটা সবুজ রংয়ের সুতি শাড়ী পরে নিলাম।রুমে এসে আমি কাজা ফজর নামাজ টা আদায় করে নিচে চলে গেলাম। নিচে গিয়ে সবার জন্য নাস্তা বানাতে লাগলাম। সাবিয়া-তনু তুমি নাস্তা বানাচ্ছো?(রান্নাঘরে এসে) আমি-রোজই তো বানাতাম। সাবিয়া-ওহ হ্যাঁ,দাও আমি একটু সাহায্য করি। আমি-না মা আজ আমিই করি। সাবিয়া-আচ্ছা যাও তন্ময়কে চা দিয়ে আসো। আমি-কিন্তু মা উনি তো চা নিচে এসে খান। সাবিয়া-না আজকে রুমেই দিয়ে আয়। আমি-চা তো এখনো.... সাবিয়া-আমি দিচ্ছি। মা এবার আমাকে তন্ময়ের জন্য এক কাপ চা ধরিয়ে দিয়ে উপরে পাঠিয়ে দিলো।আমি রুমে এসে দেখি তন্ময় রুমে নেই।আমি চা টা রেখে ওনাকে ওয়াশরুমে আর বারান্দায় খুঁজে নিলাম কিন্তু উনি সেখানেও নেই।আমি এবার খাটে বসে আমাদের মোবাইলের দিকে নজর দিলাম।আমি দেখলাম খাটের উপরে থাকা মোবাইলটা আমার না তন্ময়ের।আমি এবার রুম থেকে দৌঁড়ে বের হয়ে এলাম আর ছাদে চলে গেলাম। আমি-তন্ময়!!!! তন্ময়-হুম!!!(আমার দিকে ফিরে) আমি-আপনি এখানে কি করছেন? তন্ময়-কিছুনা এমনে এসেছি। আমি-আমার ফোন আপনার কাছে? তন্ময়-কেনো থাকতে পারেনা? আমি-না তা কেনো হবে। তন্ময়-তনু তুমি কিভাবে জানলে আমি এখানে? আমি-মনে হলো তাই আসলাম। তন্ময়-তনু কালকে রাতের জন্য সরি। আমি-মানে? তন্ময়-আমি কাল ওসবের জন্য সরি বলছি। আমি-আপনি কি সবকিছুই ভুল করে করেন? তন্ময়-আরে না না তোমার পারমিশন নেওয়া উচিত ছিল তাই আমি সরি বললাম। আমি-হুম!!!নাস্তা করতে আসুন।(বলে যেইনা আমি আসতে যাবো ওমনি তন্ময় আমার হাত ধরে ফেলে আর ওনার কাছে নিয়ে যায়)কি??? তন্ময়-তনু আমরা কি এই সম্পর্কটা কে একটা সুযোগ দিতে পারি?(করুণ চোখে তাকিয়ে) আমি-কিভাবে??? তন্ময়-ভাইয়া আর ভাবীর মতো একটা জুটি হয়ে। আমি-হবেনা তো। তন্ময়-কেনো তনু? আমি-ওনাদের সম্পর্কে বিশ্বাস টা খুব বেশি যেটা আমাদের সম্পর্কে নেই।(অন্য দিকে তাকিয়ে) তন্ময়-তুমি এখনো ওইটা তেই পরে আছো?(সিয়ামের ঘটনা) আমি-না পরে থাকার মতো তো কোন বিষয় নয়। তন্ময়-ওটার জন্য আমি তোমার কাছে অনেকবার ক্ষমা চেয়েছি আর তুমি ক্ষমা করেও ছিলে। আমি-হুম করেছি!!!কিন্তু এখন আপনাকে তত ক্ষণ অপেক্ষা করতে হবে যতক্ষণ না আমি এই সম্পর্ক টাকে আরেকটা সুযোগ দিচ্ছি। তন্ময়-এমন হলে কাল রাতে আমাকে আটকালে না কেনো?(আমায় শক্ত করে ধরে) আমি-গাঁদা।(ওনাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে) তন্ময়-কি??? আমি-নাস্তা করতে আসুন (বলে নিচে চলে আসি) বাবা-তনু। আমি-বাবা।(বাবাকে গিয়ে জরিয়ে ধরে) বাবা-এমনটা না করলেও পারতি। আমি-সরি বাবা। বাবা-আচ্ছা ওসব ছাড়।(আমাকে ছেড়ে) আমি-ওকে। বাবা-কোথায় ছিলি এতোদিন? আমি-(বাবার কথায় ঢোক গিলতে লাগলাম) তন্ময়-হ্যাঁ আমিও জিজ্ঞেস করতে ভুলে গেছি কোথায় ছিলে তুমি এতোদিন?(নামতে নামতে( রহমান-আরে ওসব রাখ তো এখন।তোর শ্বশুর এসেছে সালাম কর। তন্ময়-আসসালামু আলাইকুম বাবা। বাবা-ওয়ালাইকুম আসসালাম।কেমন আছো? তন্ময়-আলহামদুলিল্লাহ ভালো!আপনি বাবা? বাবা-আমি ও আজ থেকে ভালো। আমি-বাবা।(রহমান সাহেবের পাশে গিয়ে) রহমান-কি??? আমি-আমাকে বাঁচানোর জন্য Thanks..... রহমান-কালকে যদি তুই আমাকে এসব না বলতি তাহলে আজ আমি তোকে বাঁচাতে পারতাম না। আমি-হুম। সাবিয়া-কি বিড়বিড় করছো দুজনে। রহমান-না না কিছু না। সাবিয়া-তনু তোমার বাবাকে নাস্তার টেবিলে নিয়ে যাও। আমি-হুম বাবা চলো। আমি আর মা নাস্তার টেবিলে সবাইকে নাস্তা দিচ্ছি।আজ নাস্তা একটু ভিন্ন বানালাম লাচ্চা পরোটা,সবজি,চিকেন স্টু আর জুস। বাবা-বেয়াইন আমার তনুকে একটু রান্না করা শিখাবেন তো এটা আমার অনুরোধ। সাবিয়া-কেনো? বাবা-আমার মেয়েটা রান্না জানেনা তাই। সাবিয়া-কে বলেছে জানেনা আজকের নাস্তাগুলো ও তো তনুই বানিয়েছে। বাবা-কি বলেন সত্যি? জেনি-হুম আঙ্কেল ভাবীই সব রান্না করে এখন। বাবা-হুম। সবার নাস্তা খাওয়া শেষ হলে সোফার রুমে গিয়ে বসে।আর আমি সবার জন্য ওখানে চা নিয়ে যাই। সোফায় বসা সবাইকেই আমি চা টা দিলাম।শুধু তন্ময়কে পাশ কাটিয়ে জেনিকে দিলাম। তন্ময়-আমাকে দাও। আমি-আপনার টা রুমে দিয়ে এসেছি না। তন্ময়-আমি তো রুমেই যায়নি।ছাদ থেকে সোজা এখানে চলে এলাম। আমি-নিন।(চা টা এগিয়ে দিয়ে) সাবিয়া-তনু যাও উপরে থাকা চা টা নিয়ে আসো। আমি এবার মায়ের কথায় উপরে গিয়ে চা টা নিয়ে আসারর সময় খেয়াল হলো।আপু আর আদিল ভাইয়ার ফোন নাম্বার তো তন্ময়ের ফোনে সেভ করা।আমি এবার সাথে সাথে তন্ময়ের ফোন থেকে ওদের দুজনের নাম্বার নিয়ে আমার ফোনে সেভ করে নিই আর তন্ময়ের ফোন থেকে ডিলেট করে দিই (নিচে তন্ময়ের থেকেই ফোন নিয়ে নিছি লাম)।আমি এবার নিচে আসি আর নিচে আসার সাথে জেনি আমার কাছে দৌঁড়ে আসে। আমি-কি জেনি এভাবে দৌড়ে আসছে কেনো? জেনি-তোমার নামে পার্সেল এসেছে। আমি-আমার নামে পার্সেল এসেছে? জেনি-হুম ভাবী,ওই যে বড় কার্টন টা। আমি-এটা??(কার্টন এর কাছে গিয়ে) রহমান-হ্যাঁ মাত্র দিয়ে গেলো। তন্ময়-খুলে দেখবে??? আমি-দেখিই না কে পাঠালো। তন্ময়-ওকে আমি খুলে দিচ্ছি। তন্ময় কার্টনটা খুলতে শুরু করলো।কার্টন টা বেশ বড় তাই খুলতে একটু অসুবিধা হচ্ছে।অবশেষে তন্ময় কার্টন টা খুলে আমার দিকে ফিরালো।আমি কার্টনের ভেতরে তাকিয়ে অবাক হয়ে যাই। -চলবে #তন্ময়ের_তনু #পর্ব_১৫ #Jechi_Jahan পার্সেলের বাক্স টা খোলার সাথে সাথেই আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকি।বাক্সে আমার অনেক গুলো জামা কাপড় আর জুয়েলারি যেগুলো আমি এই ১৫ দিন পরেছিলাম।এগুলা আদিল ভাইয়া কিনে দিয়েছিল ওখানে।হঠাৎ বাক্সের ভেতরে একটা জিনিস আমার চোখে পরে জিনিস টা চিঠি।তখন তন্ময় বলে--- তন্ময়-এগুলা কি? আমি-জামা-কাপড় আর জুয়েলারি।(ভয়ে ভয়ে) তন্ময়-সেটা আমিও দেখতে পারছি কিন্তু এগুলো পাঠালো কে??? আমি-জানিনা।(ভয়ে গলা শুকিয়ে যাচ্ছে) তন্ময়-তোমার নামে এসেছে এগুলা। আমি-জানিনা তো। তন্ময়-Ok!!!! I see..... তন্ময় এবার যেই বাক্সে হাত দিতে যাবে আমি ওমনি বাক্স থেকে চিঠিটা নিয়ে রুমের দিকে দৌড় দিই।আমার এই কাজে উপস্থিত সবাই অবাক। আমি রুমে এসে দরজাটা বন্ধ করে দিই। আমি-এই ড্রেসগুলো কে পাঠাল আমাকে?এগুলা তো আপুর বাসায় ছিলো ওখান থেকে আমায় কে পাঠাতে পারে?না আগে চিঠিটা পরে দেখি। প্রিয় তনু,, আমি জানি তুই এখন তন্ময়ের বাড়ীতে আছিস।হয়তো ভাবছিস আমি কিভাবে জানলাম।সেদিন তোকে না পেয়ে আমি তন্ময়ের ফোনে কল করে ছিলাম।সেদিন কল টা রিসিভ ও হয় বাট তুই কথা বলিস না কথা বলে তন্ময়।আর যতই হোক তন্ময় এর গলা আমি চিনি।সেদিন আর বুঝতে বাকি রইলো না যে তন্ময় তোকে নিয়ে গেছে।এখন যখন তুই ই চলে গেলি তখন এগুলা রেখে গেলি কেনো।তাই আমি এগুলা তোকে কুরিয়ার করে পাঠিয়ে দিলাম।আমি তো হয়তো আর যেতে পারবো না তাই এগুলা আমার দেওয়া উপহার বা আমার স্মৃতি হিসাবে রেখে দিস। ইতি তোর বদমেজাজি বোন অনু,,,,,, চিঠিটা পরে আমি যেনো এক ধরনের বোকা বনে গেলাম।এসেছি তাই বলে এগুলা পাঠিয়ে দিবে এটা কেমন কথা।আমি তো আর আগের মতো সিঙ্গেল নেই যে এসব কুর্তি,গ্রাউন,টপস ইত্যাদি পরে ঘুরবো আমি তো এখন মেরিড। তন্ময়-তনু।(জোরে দরজা ধাক্কিয়ে) আমি-কি কি।(চমকে উঠে) তন্ময়-দরজা খুলো।(রেগে) আমি-কে কেনো? তন্ময়-বাক্স থেকে কি এনেছো আমি দেখবো। আমি-কিছু আনি নি। তন্ময়-আগে দরজা খুলো। আমি-সত্যি কিছু আনি নি। তন্ময়-আমি দরজা খুলতে বলেছি। আমি-আল্লাহ আমি এখন কি করব?তন্ময় যদি চিঠি টা পড়ে পেলে তাহলে তো আমার কপালে শনি আছে।এখন আমি কি করি?আইডিয়া!!! তন্ময়-তনু দরজা খুলো। আমি-কি???(দরজা খুলে) তন্ময়-কি করছিলে? আমি-কি কিছুন না। তন্ময়-তোতলাচ্ছো কেনো?(সন্দেহজনক চোখে) আমি-ক ক কই? তন্ময়-বাক্স থেকে কি এনেছিলে? আমি-এটা???(কানের দুল দেখিয়ে) তন্ময়-মিথ্যা বলোনা। আমি-আমার বয়ে গেছে। তন্ময়-ফাইজলামি করো? আমি-আমি ফাইজলামি করতে পারিনা। তন্ময়-কানের দুল সহ বাকি জুয়েলারি নিচে বাক্সে আছে।আর শুধু এই দুলটাই তোমার চোখে পরল যেটা কিনা জুয়েলারি বাক্সের বাইরে ছিলো। হাউ ফানি!!! আমি-আমি সত্যি বলছি।দেখুন সুন্দর না?(কানের দুল দুটো দেখিয়ে) তন্ময়-একদম বাজে। আমি-কি???(মনমরা হয়ে) তন্ময়-বাট তোমাকে সুন্দর লাগছে। আমি-তাই?? তন্ময়-হুম!!!এবার সত্যি টা বলো। আমি-কোন সত্যি???(অন্যদিকে ফিরে) তন্ময়-বুঝেছি এভাবে বলবে না রাতে তোমাকে দেখে নেবো।(বলে নিচে চলে গেলো) আমি-(উনি যাওয়ার সাথে সাথে)উপপ খুব বাঁচা বেঁচে গেছি।ভাগ্যিস তখন কানের দুলের আইডিয়া টা এসেছিলো।যাই বাবা নিচে যাই। বাবা-এই এখান থেকে কি নিয়ে চলে গেলি?(আমি নিচে নামার সাথে সাথে এই প্রশ্ন) তন্ময়-Earring..... বাবা-কানের দুল(অবাক হয়ে)কিন্তু কেনো? আমি-খাওয়ার জন্য। আমার এই কথায় জেনি ফিক করে হেসে দেয়। বাবা-মানে? আমি-আরে পরার জন্য বাবা। নিসা-তনু। আমি-হুম ভাবি। নিসা-এই পার্সেল টা কে দিলো বা কেনো দিলো কিছু কি জানো তুমি? আমি-(অনেকক্ষণ ভেবে)আমি ওর্ডার করেছি। তন্ময়-ফাজিল!!!(অন্যদিকে ফিরে) আমি-কি???? তন্ময়-মিথ্যা কেনো বলো হ্যাঁ। আমি-কি মিথ্যা বললাম? তন্ময়-এগুলা একটাও নতুন জামা না শুধু ৪-৫টা জামা বাদে। অভি-তুই কিভাবে জানলি? তন্ময়-দেখলেই বুঝা যায়। আমি-আপনি কচু দেখেন এগুলা আমি নতুনই অর্ডার দিছি। রহমান-আরে তন্ময় তনু এগুলা ওনলাইন থেকে ওর্ডার দিছে।আর তুই তো জানিস অনলাইনে কত কিছু ভুলভাল দিয়ে দেয়।হয়তো তনুর ওর্ডারেও ভুল কিছু দিয়ে দিয়েছে।এটা ব্যাপার নাকি!!!! অভি-হুম তন্ময় হতেও পারে!!! তন্ময়-আচ্ছা ওসব বাদ দাও একটা কথা বলতো। আমি-কি??? তন্ময়-এতোদিন কই ছিলা??? আমি-হুম???? বাবা-হুম বলতো এতোদিন কই ছিলি? আমি-ছিলাম কোথাও একটা!!(জোর করে হেসে) তন্ময়-তো কোথাও টা কোথায়?(সামনে এসে) আমি-কো কো কোথায় মানে হোটেলে। তন্ময়-হোটেলে?টাকা কোথায় পেলে? আমি-ওটাও কোথাও একটা পেয়েছি। তন্ময়-তনু!!!(রেগে) রহমান-তোর বিকাশ থেকে নিয়েছে হয়তো। আমি-হ্যাঁ হ্যাঁ বিকাশ থেকে নিয়েছি। তন্ময়-আমার বিকাশ পিন কোথায় পেলো? রহমান-কোথায় পেলি??? আমি-(বাবা বিকাশের কথা কেন বললে) তন্ময়-তনু আমি আর কোনো মিথ্যা শুনতে চাইনা তুমি এখন যেটা বলবে সেটা যেনো সত্যি হয়। আমি-(কিছুক্ষণ পর)আমি আমার একটা আংটি বিক্রি করেছি আর ওখান থেকেই টাকা পেয়েছি। তন্ময়-তাহলে এটাই সত্য কথা তাহলে এতোক্ষণ মিথ্যা বলছিলে কেনো? তুমি জানোনা আমি মিথ্যা পছন্দ করিনা।(রেগে) আমি-আ আমি ভয় পে পেয়ে গেছিলাম।(নিচের দিকে তাকিয়ে) তন্ময়-ভয় পেয়ে গেছিলা তাইনা।এতোই যখন ভয় পাও ১৫ দিন বাইরে ছিলে কিভাবে।আবার বলতে এসেছে ভয় পেয়ে গেছিলাম।(বলে চলে গেল) আর আমি মনে মনে বেঁচে ফেরার হাঁফ ছাড়ছি। ***দুপুরে*** আমি দুপুরে গোসল করে সবে ওয়াশ রুম থেকে শাড়ির আঁচল গায়ে দিতে দিতে বের হলাম।বের হয়ে খাটের উপর শুয়ে থাকা তন্ময়কে দেখে আমার হাত থেকে শাড়ির আঁচলটা অটোমেটিক পরে যায়।আমি তাড়াতাড়ি করে শাড়ীর আঁচলটা তুলে গায়ে জড়িয়ে নিই।আমাকে এমন করতে দেখে তন্ময় বিরক্ত হয়ে মুখটা ওদিকে ফিরিয়ে নেয় মোবাইল টিপতে টিপতে বলে। তন্ময়-এমন ডং করছো যেনো প্রথম দেখছি।(মোবাইলটা টিপতে টিপতে) আমি-(উনি এখনো কালকে রাতের ঘটনাটা নিয়ে পরে আছে)বেশ করেছি এমন করেছি(বলে দৌড়ে রুম থেকে চলে যেতে লাগলে তন্ময় উঠে আমায় পেছন থেকে শক্ত করে জরিয়ে ধরে) তন্ময়-কই পালাচ্ছো? আমি-দেখুন কালকে যা হয়েছে সব আমাদের অজান্তে হয়েছে।সো ওটা নিয়ে বেশি ভাববেন না। (ওনার থেকে ছুটার চেষ্টা করে) তন্ময়-তনু আমি একটা জিনিস জানি। আমি-কি জানেন? তন্ময়-তোমার একটা সিকরেট বিষয়। আমি-কি সিকরেট?(ওই ব্যাপারে যেনো না হয়) তন্ময়-এই যে তোমার.... আমি-এই যে আমার.......? তন্ময়-এই যে তোমার সুরসুরি আছে।(বলার সাথে সাথে আমাকে সুরসুরি দিতে লাগলো) আমি-(এমন করায় আমি বোকা বনে যাই)তন্ময় ছাড়ুন আমাকে(বলে একটা ধাক্কা দিই আর এক ধাক্কার সাথেই উনি বিছানায় গিয়ে পড়লেন) তন্ময়-তুমি আমাকে ধাক্কা দিলে। আমি-বেশ করেছি(বলে নিচে এলাম) সাবিয়া-কি ব্যাপার তনু আবার গোসল করলে? আমি-রান্না করার সময় গায়ে মসলা পরে গিয়ে.... সাবিয়া-বুঝেছি বুঝেছি!!!আসো টেবিলে খাবার গুলো নিয়ে যাই। আমি-হুম।(খাবার গুলো টেবিলে এনে) সাবিয়া-তনু আজ তুমিও বসে যাও। আমি-না মা আপনারা আগে খেয়ে নিয়েন। সাবিয়া-পাগলি.(মাথায় হাত বুলিয়ে) আমি-মা!!!! সাবিয়া-হুম। আমি-আপনি আমার আপুকে তন্ময়ের জন্য খুব বেশি পছন্দ করেছিলেন তাইনা? সাবিয়া-তা তো করেছিলাম..... তন্ময়-মা খেতে দাও(হুট করে এসে) সাবিয়া-তনু ওকে খাবার টা দাও আমি বাকিদের ডেকে আনছি।(বলে উপরে চলে গেলো) আমি-ঠিক আছে। আমি এবার তন্ময়কে খাবার বেড়ে দিতে লাগলাম কিন্তু আমি একটা জিনিস খেয়াল করে দেখলাম তন্ময় আমার দিকে কেমন করে তাকিয়ে আছে। আমি-এভাবে তাকিয়ে আছেন কেনো? তন্ময়-সব শুনেছি আমি?? আমি-কি শুনেছেন??? তন্ময়-এই যে মা আপনি আমার আপুকে তন্ময়ের জন্য খুব বেশি পছন্দ করেছিলেন তাইনা এইটা। (মুখ ভেঙ্গিয়ে কথাটা বললো) আমি-মিথ্যা কি বললাম? তন্ময়-আমার স্ত্রী হয়ে থাকতে যদি তোমার কোনো অসুবিধা হয় আমাকে বলে দিও। আমি-বলে দিলে কি হবে? তন্ময়-কিছুই হবেনা সেই আমার স্ত্রী হয়েই থাকতে হবে।(বলে মন দিয়ে খেতে শুরু করলো।ওনার খাওয়া শুরু হতেই একে একে সবাই এসে খেতে বসে।প্রথমে তন্ময় আর জেনি খেয়ে উঠে যায় আর তারপর অভি ভাইয়া।আমি আর ভাবি সবার শেষে খেয়ে জেনির রুমে চলে যাই ) আমি-জেনি।(রুমের সামনে দাঁড়িয়ে) জেনি-ওহ এসেছো আসো আসো। নিসা-কি হয়েছে এতো খুশি? জেনি-আরে কিছুনা। আমি-কিছু তো একটা আছে বলো বলো। জেনি-তোমার সাথে অনেকদিন পর গল্প করবো তাই আমি এত খুশি হয়েছে। আমি-ও তা কি গল্প করবে? জেনি-তোমার তিন বছর আগের এক্স এর। নিসা-জেনি এসব কি বলো না বলো। জেনি-না ভাবী বলো প্লিজ। আমি-আর কি বলবো ওই দিন তো সবই বললাম সাথে তোমার ভাইয়ার সামনে ধরাও খেলাম। জেনি-আরে আজ কিছু হবেনা। আমি-ওকে বলো কি জানতে চাও? জেনি-তোমাদের রিলেশন চলাকালীন কি কিছু হয়েছে? নিসা-জেনি এসব কি?? আমি-মানে? জেনি-আরে ফাস্ট কিস। আমি-আরে না না আমাদের রিলেশন এ এমন কিছুই ছিলো না। জেনি-ওকে তাহলে অন্য কিছু তো থাকতে পারে? আমি-শুধু হাত ধরা ছিলো. জেনি-এমনও হয়। আমি-আমাদের ভালোবাসা টা এমন ছিলো না জেনি যে শরীল দিয়ে ভালোবাসা প্রমাণ করতে হবে।আমাদের ভালোবাসা টা খুব পবিত্র ছিলো। নিসা-এতোই পবিত্র হলে চলে গেলো কেনো? আমি-সেটা তো আমারও কথা ভাবী যে চলে গেল কেনো।আজ পর্যন্ত এটাও বুঝতে পারিনি যে দোষটা কি ছিলো যার কারণে এভাবে চলে গেল। জেনি-ভাবী এটা নিয়ে তুমি মন খারাপ করো না। নিসা-এই তুমি কাঁদছো নাকি? আমি-না ভাবী কাঁদছি না ভাবছি। জেনি-কি ভাবছো। আমি-যেখানে আমার ভালোবাসা টা আমাকে না মেনে চলে সেখানে তন্ময় আমাকে সারাজীবনের জন্য কিভাবে মানবে? জেনি-ভাবী। তন্ময়-Stop this nonsense..... আমি-তন্ময়।(পেছনে ঘুরে) তন্ময়-জেনি তোর ভাবীকে বলে দে যে তার তিন বছর আগের এক্স এর কথা যেনো এবাড়িতে আর না উঠে।সাথে এটাও বলে দে যে তার এক্স আর আমাকে একসাথে মিলিয়ে আমার উপর যেনো আর কোনোদিন সন্দেহ না করে।(বলে রুম থেকে চলে গেলো।কিন্তু এদিকে তন্ময়কে দেখে আমি ভয় একবারে চুপসে যাই) -চলবে

তন্ময়ের তনু পর্ব-১২+১৩

0

#তন্ময়ের_তনু
#পর্ব_১২
#Jechi_Jahan

তন্ময় ওখানে বসে কান্না করতে লাগলো।তন্ময়কে এমন করতে দেখে তন্ময়ের বাবার খুব কষ্ট হচ্ছে। তাই তিনি ছেলেকে জরিয়ে ধরে শান্তনা দেয়।

রহমান-তন্ময় শান্ত হও এমন ভেঙ্গে পরলে চলবে না।তুমি যদি ভেঙ্গে পরো তাহলে আমাদের কে সামলাবে।(তন্ময়ের মাথায় হাত বুলিয়ে)

তন্ময়-বাবা সব আমার জন্য হয়েছে।তুমি ঠিকই বলেছো আমার তনুকে বিশ্বাস করা উচিত ছিল।

রহমান-আরে দূর ওসব তো কথার কথা।তাছাড়া তনু তোকে ছেড়ে কোথায় যাবে।ও তোর তনু না তনু কি তন্ময়কে ছাড়া থাকতে পারে?

তন্ময়-পেরেছে তো।(কান্না করে)

রহমান-অভি তন্ময় কে নিয়ে যা আমি আসছি।

অভি এবার তন্ময় কে ধরে বাড়ীতে নিয়ে যায়।আর রহমান সিয়ামের কাছে গিয়ে বসে।

রহমান-তুমি এটা ভালো করলে না সিয়াম।

সিয়াম-আম সরি আঙ্কেল।

রহমান-এই সরিটার কোনো দাম নেই।কারণ এই ভুলটা তুমি জেনেশুনে করেছো।তোমার এই খারাপ কাজটার জন্য দুটো মানুষ কষ্ট পাচ্ছে।

রাকিব-আঙ্কেল আমার প্রথমেই সন্দেহ হয়েছিল।
কিন্তু ওর কথায় আমি আমার সন্দেহ টাকে দূরে ঠেলে ওকে বিশ্বাস করি।কিন্তু এটা যে সত্যি….

রহমান-থাক ওকে আর কিছু বলোনা।এমনেতে মার খেয়ে অবস্থা খারাপ হয়ে আছে।ওকে যত তাড়াতাড়ি পারো ডাক্তারের কাছে নিয়ে যায়।(বলে রহমান বাড়ী থেকে বের হয়ে গেলে)

আমি,আপু আর আদিল ভাইয়া একটা রেস্টুরেন্ট এ বসে কফি খাচ্ছি।(সবাই হয়তো ভাবছেন এটা কি হলো?কিছুক্ষণ পরে জানবেন)আপু মানে অনু আপু আর আদিল ভাইয়া মানে আমার আপুর স্বামী।সেদিন গাড়ীতে এনাদের সাথেই দেখা হয়।

# ফ্লাসব্যাক #

আমি গাড়ীতে বসে থাকা আপুর দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে আর আপুও আমাকে দেখে অবাক হয়ে যায়।আমি আপুকে দেখে কান্না করে দিই।সাথে সাথে আপু গাড়ী থেকে বের হয়ে আমাকে জরিয়ে ধরে আর আমার কান্না থামায়।

অনু-তনু তুই এখানে কি করছিস?

আমি-ওসব ছাড়ো আগে তুমি আমাকে বলো তুমি এখানে কি করছো?(আপুর হাত ধরে)

অনু-তনু আমি আদিলকে খুব ভালোবাসি আর ও আমাকে খুব ভালোবাসে।আমি বাবার কথা ফেলতে পারছিলাম না তাই তন্ময়কে বিয়ে করতে রাজি হয়েছিলাম।কিন্তু আমি আদিলকে ছাড়াও থাকতে পারছিলাম না।এজন্য আমি ঠিক করি আমি বিয়ের দিন পালিয়ে যা আর সেটাই করি।

আমি-বাবাকে বললে বাবা মেনে নিতো আপু।

অনু-জানতাম কিন্তু আমি পারছিলাম না।

আমাদের কথায় আদিল গাড়ী থেকে বের হয়।

আমি-তাই বলে এমন ভাবে।

অনু-তুই বল তুই এখানে কি করছিস?

আমি এবার আপুকে আমার আর তন্ময়ের বিয়ের কথা সাথে চারদিন আগে ঘটে যাওয়া সব ঘটনা গুলো খুলে বললাম।

অনু-কি!!!!তুই কি পাগল হয়ে গেছিস?

আমি-আমি পারছিলাম না আপু।তুমিতো জানো
আমি অবহেলা আর অপমান সহ্য করতে পারি।না।কিন্তু এই তিনদিন ওনারা আমার সাথে ঠিক এগুলাই লরে তাই আমি চলে এসেছি।

অনু-এটা তুই কি সিদ্ধান্ত নিলি?

আদিল-আচ্ছা অনু ও যখন যেতে চাইছেনা তবে জোর করা ঠিক হবেনা।তুমি এক কাজ করো তনু কে আমাদের সাথে আমাদের বাড়ীতে নিয়ে আস।

অনু-কিরে যাবি আমার সাথে।

আমি-(মাথাটা নিচু করে ফেলি)

অনু-তাহলে তুই যাবি চলে গাড়িতে উঠ।

আমি-হুম।

অনু-এই তোর হাতে এগুলা কি?

আমি-টাকা।

অনু-বাসা থেকে এনেছিস?

আমি-না একটা আংটি বিক্রি করে।

আপু-(আমার হাত দুটো ধরে দেখে বললো)তুই ওই আংটি টা বিক্রি করে দিলি?

আমি-হুম।

অনু-কোন দোকান আমাকে এক্ষুনি বল।টাকা গুলো দিয়ে আংটি টা ফেরত নিয়ে আসবো।

আমি-আপু তার দরকার নেই।

অনু-চুপ থাক চল।

আপু আমাকে নিয়ে ওই দোকানে যায় আর আংটি টা ফেরত নিয়ে চলে আসে।সেদিন আমি আমার বদমেজাজি বোন টাকেই আমার পাশে পেয়েছিলাম।সেদিন থেকে এই ১৫ দিন পর্যন্ত আমি আমার বোনের কাছেই ছিলাম।আর তন্ময়ের ফোনটা আপুর কথায় বন্ধ করে রেখে ছিলাম এই ১৫ টা দিন।

“”””প্রেজেন্ট””””

অনু-তনু তোর আমার কাছে কেমন লাগছে?

আমি-ভালোই।

অনু-আমি জানি তুই ওদের খুব মিস করছিস।

আমি-বাদ দাওনা।

আদিল-আচ্ছা তনু আমাকে আর অনুকে একটা জায়গায় যেতে হবে।তুমি কি এখানে একা থাকতে পারবে?মানে আমরা আসা পর্যন্ত আর কি।

অনু-আরে কি বলো একা কিভাবে?

আদিল-আচ্ছা শুনো তুমি এখানকার সবকিছু আজকে ঘুরে দেখো।যেহেতু বাসা ছিলো তাহলে কোনো সমস্যাও হবেনা।আর কোনো সমস্যা হলে ও আমাকে বা অনুকে ফোন দিয়ে দিও।

আমি-আমার কাছে তো ফোন নেই।

আদিল-তন্ময়ের টা আছে না?

অনু-ওটা এখন অন করবে?

আদিল-ওন করলে কিছু হবেনা।তনু ওন করো।

আমি-আচ্ছা(আমি ব্যাগ থেকে ফোনটা বের করে ওন করি।আর ওন করার সাথে সাথেই দেখি অনেক গুলো ফোন কল যা বাড়ীর লোকেরা করেছে।এগুলা দেখে আমার খুব কষ্ট লাগে)

অনু-দেখেছিস কত গুলো ফোন করেছে?

আদিল-আচ্ছা আমাদের নাম্বার টা নাও।

আমি-দিন।(ওনাদের নাম্বারটা সেভ করে নিলাম)

আদিল-আচ্ছা আমরা আসি।

আমি এবার এখানকার সব জায়গা ঘুরে দেখতে লাগলাম।এখন একটা পার্কে এসে বসে আছি।আমার হঠাৎ মনে হলো তন্ময়ের ফেসবুকটা চালালে কেমন হয়।যেই কথা সেই কাজ আমি ওনার আইডিতে ডুকে অবাক হয়ে গেলাম।

***ওদিকে***

অভি দৌড়ে তন্ময়ের রুমে গেলো আর রুমে এসে দেখলো তন্ময় নেই।ওয়াশরুম থেকে পানি পরার আওয়াজ আসছিলো তাই অপেক্ষা করতে লাগে।

তন্ময়-ভাইয়া!!!(ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে)

অভি-তনু তোর ফোনটা অন করেছে।

তন্ময়-তা তাই????(অবাক চোখে)

অভি-হুম ও ফোন ওন করেছে।আর এই সুযোগে আমি তোর ফোনের লোকেশন ট্রেগ করেছি।

তন্ময়-ভাইয়া আমার বিশ্বাস হচ্ছেনা।

অভি-চল আমরা দুজন ওকে আনতে যাই।

তন্ময়-না ভাইয়া তনুকে আমিই আনতে যাবো।

আমি তন্ময়ের প্রোফাইলের ছবিটা দেখে অবাক হয়ে যাই কারণ প্রোফাইলে আমাদের দুজনের ছবি দেওয়া আছে।আমি কল্পনা ও করিনি যে উনি আমার পিক ওনার ফোনে রাখবেন।এবার আমি ওনার ফোনের ছবি গুলো দেখতে লাগলাম।ওখানেও আমার অনেক চবি আছ।বেশিরভাগই ছবি এমন যেনো উনি চুরি করে ওগুলো তুলেছে।

একটা পিচ্চি-আন্টি তুমি কি করো।

আমি-কে তুমি?(বাচ্চাটার দিকে তাকিয়ে)

পিচ্চি-আমি রুহি।

আমি-এখানে একা কি করছো?

রুহি-আমি এখানে রোজ খেলতে আসি পাশে বাসা তো তাই।তোমাকে কোনোদিন দেখিনা তুমি কি নতুন এসেছো এখানে?

আমি-হুম!!!

রুহি-এখন তুমি কি করছো?

আমি-চবি দেখছি।

রুহি-ওকে তুমি থাকো আমি যাই টা টা।

আমি-টা টা।

***সন্ধ্যায়***

আমি অন্যান্য জায়গা ঘুরে বাড়ী যাওয়ার জন্য রাস্তা দিয়ে হাঁটছিলাম।আমার সামনে আরো একটা ছেলে হাঁটছে।এর হাঁটার স্টাইল দেখে আমার খুব বিরক্ত লাগছে।এত আস্তে আস্তে হাঁটে
কেও।আমি বিরক্ত হয়ে ছেলেটাকে পাশ কাটিয়ে চলে যাওয়ার সময় ছেলেটা আমার হাত ধরে ফেলে।আমি বিরক্ত হয়ে ছেলেটার দিকে তাকিয়ে একটা বড়সড় ধাক্কা খাই।এ যে তন্ময় উনি এখানে কি করছে।ওনাকে দেখে আমার মুখ হা হয়ে যায়।

তন্ময়-আমি জানি আজ আমায় অনেক হ্যান্ডসাম লাগছে।তাই তো এভাবে তাকিয়ে আছো।(হেসে)

আমি-(হ্যান্ডসাম না ছাই এই কয়দিনে চেহারা টা কেমন হয়ে গেছে দাঁড়ি মোচ বেড়ে গেছে)

তন্ময়-আমায় দেখা হলে এবার বাড়ী যাওয়া যাক

আমি ওনাকে কিছু না বলে হঠাৎ করেই ওনার হাত থেকে আমার হাতটা ছাড়িয়ে দৌড় দিই।কিন্তু ওনার সাথে আমি পেরে উঠিনা উনি আমাকে সেই ধরেই ফেলে।এবার আমি কান্না করে দিই।

তন্ময়-এই ১৫ দিন কোথায় ছিলে?

আমি-কান্না করছিই।

তন্ময়-আমি কিছু জিজ্ঞেস করেছি।

আমি-আমি ওখানে যাবোনা।(কান্না করে)

তন্ময়-কেনো যাবেনা?

আমি-কেনো যাবো সেটা বলবেন।(কান্না করে)

তন্ময়-বাদ দাও চলো।(আমার হাত ধরে)

আমি-তন্ময় আমার হাতটা ছাড়েন।

তন্ময়-ছাড়বোনা চলো।

আমি-আপনি যদি এখন আমার হাত না ছাড়েন আমি কিন্তু চিৎকার করে লোক জোড়ো করবো।

তন্ময়-কি??আচ্ছা কেনো যাবেনা বলো।

আমি-আপনি সহ বাসার প্রত্যেকটা মানুষ আমায় ভুল বুঝছেন আমাকে অপমান করছেন। আর কত?আমি বাড়ীতে যাবোনা ব্যাস।(কান্না করে)

তন্ময়-তনু বাচ্চামো করোনা চলো।

আমি-আমি যাবোনা।(কান্না করে)

এবার উনি আমার কোনো কথা না শুনে আমাকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে।উনি হয়তো বুঝতে পেরেছেন যে আমি রাস্তার মাঝে চিৎকার করবোনা।উনি একপ্রকার আমাকে জোর করেই বাড়ীতে নিয়ে গেলেন।বাড়ির দরজা খুলার সাথে সাথে সবাই আমাকে দেখে অবাক হয়ে যায়।

-চলবে

#তন্ময়ের_তনু
#পর্ব_১৩
#Jechi_Jahan

আমি বাড়ীতে ঢোকার সাথে সাথে আমার গালে দুইটা থাপ্পড় পরে।আর থাপ্পড়গুলো মারলো আমার শ্বাশুড়ি সাবিয়া।উনি থাপ্পড় মেরে আবার আমাকে জরিয়ে ধরে কান্না করছে।অনেকদিন পর মা কে পেয়েছি ভেবে আমিও জরিয়ে ধরে কান্না করে দিই।

সাবিয়া-তুমি কি ভেবেছিলে তুমি চলে যাওয়ার পর আমরা খুব কষ্টে ছিলাম।আমরা মোটেও কষ্টে ছিলাম না আমরা খুব ভালো ছিলাম।

আমি-(আমি আবার মাকে জরিয়ে ধরি)

সাবিয়া-আর কোনোদিন এমন করোনা তনু।আমরা কোনো ভুল করলে আমাদের বলবে।আমরা এখন থেকে তোমার সব কথা শুনবো।

আমি-মা আমাকে ক্ষমা করে দাও।

সাবিয়া-নারে তুই আমাদের ক্ষমা করে দে।

একে একে সবাই এসে আমার কাছে ক্ষমা চায়।

রহমান-তনু আমার সাথে একটু আয় তো।

আমি-হুম(বলে বাবার সাথে রুমে চলে এলাম)

রহমান-তুই এটা কোনো কাজ করলি?

আমি-কি কাজ???(না জানার ভান করে)

রহমান-আমার ইচ্ছে করছে তোকে মেরে ফেলি।

আমি-হুম হুম বাইরে তো দুইটা খেয়ে এলাম এখন তুমিও শুরু করো। (বলে মুখটা ওদিকে ঘুরিয়ে)

রহমান-আচ্ছা যা রুমে যা।

আমি-কোন রুমে???

রহমান-কি???

আমি-আমি তন্ময়ের রুমে থাকবো না।

রহমান-কেনো?

আমি-জানিনা!!!কিন্তু আমি ওই রুমে থাকবোনা।

রহমান-আচ্ছা এখন যা পরে দেখা যাবে।

আমি-আচ্ছা।(বলে আমি আমার রুমে গেলাম।রুমে গিয়ে দেখলাম তন্ময় কপালে হাত দিয়ে খাট এর উপর বসে আছে।আমি ওকে পাত্তা না দিয়ে আলমারি থেকে আমার একটা শাড়ী নিয়ে ওয়াশরুমের গিয়ে ফ্রেশ হয়ে এলাম)

তন্ময়-তনু!!!

আমি-(ওনার কথা না শুনে চলে যাচ্ছিলাম)

তন্ময়-তোমাকে ডেকেছি না।(আমার হাত ধরে)

আমি-কি???

তন্ময়-সরি!!

আমি-কেনো???

তন্ময়-তোমাকে জোর করে আনার জন্য।

আমি-সরি মাই ফুট।(বলে চলে এলাম)

“””খাওয়ার টেবিলে”””

আজ সব খাওয়ার আমার পছন্দের বানানো হয়েছে তাই আমি খুশি মনেই খেতে বসেছি।আজ মা আমাকে নিজে হাতে খাবার সার্ভ করে দিচ্ছে।

আমি-মা আপনি এবার রাখুন বাকি আমি নিব।

সাবিয়া-না আজ আমিই দিই।

রহমান-আচ্ছা তো আমাদেরও দাও।

আমি-হুম মা বাবাদেরকে দিন আমি পরে নিবো।

সাবিয়া-আচ্ছা তুই খা।

মা এবার বাবাদের খাবার সার্ভ করতে চলে গেল আর আমিও খাওয়া শুরু করলাম।হঠাৎ আমার পাশের চেয়ারে তন্ময় কোথাথেকে এসে বসে যায়।
ওনাকে দেখে আমি ভয় পেয়ে যাই সাথে অবাকও হই কারণ উনি এতোদিনে একদিনও আমার পাশে বসে খায়নি।আমি ওনার দিকে এক নজরেই তাকিয়ে আছি।উনি নিজের খাবার নিজে নিচ্ছে।
আমি আরো অবাক হলাম ওনার খাবার নেওয়া দেখে উনি আজ বেশি খাবার নিচ্ছে যা উনি অন্য দিন নিতেন না।এবার আমি ওনার দিক থেকে নজর সরিয়ে খাবার খেতে লাগলাম।

তন্ময়-মা আজ খাবারগুলো খুব মজা হয়েছে।
(আমার দিকে তাকিয়ে)

সাবিয়া-অনেকদিন খাসনি তো তাই এমন লাগছে।

তন্ময়-হুম!!!

আমি-মা অনেকদিন খায়নি মানে???

রহমান-ও কিছু না তুই খানা।

আমি-আমার খাওয়া শেষ।

জেনি-মা মিষ্টি কিছু বানিয়েছো?

সাবিয়া-হুম তনুর পছন্দের পায়েস।

তন্ময়-ওয়াও তাহলে আমাকে প্রথমে দাও।

সাবিয়া-বস দিচ্ছি।

মা ওনাকে এক বাটি পায়েস দিলো আর উনি ওটা খেতে শুরু করলো।খেতে খেতে উনি এক চামচ পায়েস আমার মুখের সামনে ধরে।ওনার এমন করাতে আমি অবাক হয়ে যাই আর সবাই মুচকি মুচকি হাসছে।আর উনিও চামচ টা ধরে আছে মানে আছেই।এবার আমি যেই পায়েসটা খেতে যাবো উনি ওমনি আমার সামনে থেকে চামচটা ঘুরিয়ে নিজে খেয়ে নিলো।আমি তো হতবাক।

অভি-ভাই এটা কোনো কাজ করলি।(হেসে)

তন্ময়-তো আর কি করতাম।(খেতে খেতে)

জেনি-কি করতা মানে খাওয়াতে।

তন্ময়-অনেকক্ষণ চামচ ধরে রেখেছি কিন্তু খায়না তাই আমি নিজেই খেয়ে নিলাম।

সাবিয়া-তনু তোকে পায়েস দিই।

আমি-না মা আমি পায়েস খাবোনা।

তন্ময়-এই সরি সরি।

আমি-কেনো?

তন্ময়-আমি এমন করায় তুমি খাচ্ছো না তাই।।

আমি-না আমার এমনিই খেতে ইচ্ছে করছে না।

সাবিয়া-আচ্ছা তুই সকালে খেয়ে নিস।

আমি-হুম।(বলে চলে এলাম)

জেনি-ভাবী!!!(অবাক হয়ে)

আমি-কি কি?(চমকে উঠে)

জেনি-তুমি আমার রুমে?

আমি-ওহ আমি আজ তোমার সাথে থাকব।

জেনি-ভাইয়া জানে?

আমি-ওনাকে বলার প্রয়োজন আছে নাকি।

জেনি-তাও ঠিক বদমেজাজি একটা।

আমি-আচ্ছা জেনি মা তন্ময়কে তখন কি বলল?

জেনি-কি বলল?

আমি-এই যে অনেকদিন পর খসনি তো তাই এ…

জেনি-বুঝেছি।(তনুকে থামিয়ে)

আমি-কি???

জেনি-আসলে তুমি চলে যাওয়ার পর ভাইয়া খাওয়াদাওয়া প্রায় বন্ধ করে দেয় তাই।ভাবী তুমি চলে যাওয়ার পর ভাইয়া তোমাকে কত জায়গায় খুঁজেছে তুমি জানোনা।ভাইয়া ওই দিন নিজের ফোন খুঁজছিলো কিন্তু সেটা পায়নি।অবশেষে ভেবে দেখে যে ফোনটা তুমিই নিয়েছো তাই আমরা সবাই ওই নাম্বারে ফোন দিই।বাট তুমি ফোন বন্ধ করে রেখেছিলে।

আমি-আমার বাবাকে বলেছো এসব???

জেনি-প্রথমে বলেনি বাট পরে বলেছে জানো এটা শুনে তোমার কত চিন্তায় পড়ে গেছিলো।

আমি-আজকে এসেছি এটা বলেছো?

জেনি-হুম কালকে আসবে তোমাকে দেখতে।

আমি-হুম।(নিচের দিকে তাকিয়ে)

জেনি-ভাবী তুমি এতোদিন কোথায় ছিলে?

আমি-ওটা জিজ্ঞেস করোনা প্লিজ।

জেনি-ওকে আমি না হয় জিজ্ঞেস করলাম না বাট কালকে সবাই জিজ্ঞেস করলে কি বলবে।

আমি-তা কালকে দেখা যাবে এখন ঘুমাও।(বলে বিছানায় শুয়ে গেলাম)

(বেশ কিছুক্ষণ পর)

তন্ময়-জেনি!!!(দরজা ধাক্কিয়ে)

আমি-জেনি তোমার ভাইয়া এসেছে।(ভয়ে)

জেনি-তো এমন করছো কেনো?

আমি-শুনো আমি এখন ঘুমানোর নাটক করবো।আর তুমিও এমন নাটক করবে যাতে তোমার ভাইয়া না বুঝে যে আমি নাটক করছি।(বলে বিছানায় শুয়ে চোখটা বন্ধ করে ফেললাম)

জেনি-ওকে।

তন্ময়-তনু।(জোরে দরজা ধাক্কিয়ে)

জেনি-কি???(দরজা খুলে)

তন্ময়-তনু এখানে আমাকে বললি না কেনো?

জেনি-এতে বলার কি আছে ভাবী ননদের সাথে থাকতেই পারে সিম্পল।

তন্ময়-ওকে উঠতে বল।

জেনি-ঘুমিয়ে গেছে।

তন্ময়-নাটক কম করবি বুঝতে পেরেছিস।

জেনি-বললাম তো ঘুমিয়ে গেছে যা দেখে আয়।

তন্ময়-তনু।(আমার কাছে এসে)

আমি-,,,,,,,,,,,,

তন্ময়-তনু!!!!

আমি-,,,,,,

তন্ময়-তনু!!!(আমার হাত ধরে টেনে বসিয়ে)

আমি-কি???

তন্ময়-রুমে চলো।

আমি-না আমি যাবোনা।

তন্ময়-নাটক করা হচ্ছে তাই না।চলো!!!

আমি-আজকে এখানে থাকবো ব্যাস।

তন্ময় এবার আমার কোনো কথা না শুনে আমায় টেনে টেনে আমাদের রুমে নিয়ে আসে।

তন্ময়-আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি আর আমি ফ্রেশ হয়ে এসে যেনো দেখে তুমি রুমেই আছো।(বলে ওয়াশরুমে চলে গেলো)

উনি ওয়াশরুমে যাওয়ার পর আমি রোজ দিনের মতো বালিশের দেয়াল বানিয়ে শুয়ে গেলাম।

তন্ময়-এগুলা কি?(ফ্রেশ হয়ে এসে)

আমি-কি??(ওনার দিকে তাকিয়ে)

তন্ময়-বালিশের দেয়াল কেনো?

আমি-রোজ তো দিই।

তন্ময়-আজ লাগবেনা।

আমি-কেনো?

তন্ময়-বেশি কথা বলো তুমি।(বলে বালিশ দুটো নিয়ে বিছানা থেকে নিয়ে নেয়)

আমি-দেয়াল ছাড়া থাকবো।

তন্ময়-দেয়াল ছাড়া সারাজীবনই থাকবো।

আমি-এ্যা?

তন্ময়-হ্যাঁ।

তন্ময় এবার কিছু না বলে লাইট টা ওপ করে আমার পাশে শুয়ে পরে।ওনাকে শুতে দেখে আমি ও চোখ বন্ধ করলাম।হঠাৎ আমি চোখ গুলো বড় বড় করে ফেলি কারণ তন্ময় আমাকে শক্ত করে জরিয়ে ধরেছে।উনি এমন করবে আমি ভাবতেও পারিনি।এবার উনি আমার দিকে তাকায় কেমন নেশাগ্রস্ত দৃষ্টিতে।উনি আস্তে আস্তে আমার ঠোঁটে এর কাছে আসতে লাগলো।ওনাকে এভাবে আস তে দেখে আমি ঠোঁটে হাত দিয়ে দিই।কিন্তু উনি এবার আমার হাত টা সরাতে আসছে।এবার কিছু না ভেবে ওনাকে একটা ধাক্কা দিই।

আমি-তন্ময়!!!!

তন্ময়-কি???(অবাক হয়ে)

আমি-আপনি কি করছেন?

তন্ময়-কি করলাম?

আমি-আমি ওয়াশরুমে যাচ্ছি।(বলে দৌড়ে ওয়াশ রুমে চলে এলাম আর বেসিনের সামনে দাঁড়িয়ে মুখে অনবরত পানি দিতে লাগলাম)

-চলবে