Tuesday, August 12, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1599



তোমাতে আসক্ত পর্ব-১০+১১

0

#তোমাতে আসক্ত
#নাহিদা ইসলাম
#পর্ব ১০

এখন ভয় পাচ্ছিস কেনো। আমি যেভাবে বলবো তোকে ঐভাবে ই থাকতে হবে।

কথাটা বলে সাথে সাথে আমাকে ছেড়ে দিয়ে বেলকনিতে চলে গেলো। আমি ও আর কিছু বললাম না। রুমে থেকে বের হয়ে নিচে চলে আসলাম।

নিচে অনেক হাসাহাসি শব্দ শোনা যাচ্ছে, আমি নিচে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম,

–কী হইছে মিনতি এতো হাসতেছিস কেনো।

–সবাই মিলে সিলেটে ঘুরতো যাবো।

–সত্যি, তাহলে আমি ও যাবো।

–জ্বি নাহ্। আপনি অভ্র ভাইয়া যাচ্ছেন না ভাবি।

–মিনতি তুই এভাবে বলছিস কেনো, আর ভাবি ডাকা বন্ধ কর।

— তুই না একটু আগে বললি তোকে সম্মান দেওয়ার জন্য।

–এগুলো বাদ দিয়ে বল তো, কবে যাচ্ছি।

–কালকে সকালে সবাই মিলে যাবো শুধু তুই আর অভ্র ভাইয়া বাদে।

এবার আমি অভ্রের মার কাছে গিয়ে বললাম,

–আম্মু আমি তোমাদের সাথে যাবো।

–নাহ্। অভ্র আমাদের সাথে কোথাও ঘুরতে যায় না তাই তুমি বাসায় থেকে অভ্রের কী প্রয়োজন তা দেখবে।

–আম্মু উনারটা উনি একা ই করতে পারবে। আমি তোমাদের সাথে যাবো।

হাজার বলে ও লাভ হলো না,আমি ঘুরতে কতো ভালোবাসি কিন্তু এই অভ্র বজ্জাতটার জন্য আর যাওয়া হলো না। কান্না পাচ্ছে খুব।

আচ্ছা অভ্রকে গিয়ে রাজি করালে তো আমাকে ওরা সাথে নিয়ে ও যেতে পারে। তাই আর দেরি করলাম না দ্রুত রুমে গেলাম।
দেখলাম অভ্র ফোনো কিছু একটা করছে,গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে গিয়ে বললাম,

–বাসার সবাই সিলেট যাচ্ছে। আপনার জন্য আমাকে ওরা নিয়ে যেতে চাচ্ছে না তাই আপনি একটু বলে দেন, আমাকে নিয়ে যেতে।

–সবাই চেয়েছিলো তোমাকে নিয়ে যেতে।

–তারপর

–আমি নিষেধ করেছি,আমি যাবো না তো আমার বউ ও যাবে না।

–এই আপনি সব সময় আমার পাকা ধানে মই দিতে আসেন কেনো। অসহ্য। আপনার কী খেয়ে আর কোনো কাজ নেই নাকি।

আমি হাতের আঙ্গুল ঘুরিয়ে কথাগুলো বলছি অভ্র হঠাৎ আমার আঙ্গুটা মুখে নিয়ে আলতো করে একটু কামড় দিয়ে ছেড়ে দিলো।

আমি পাঁচ মিনিট ফ্রিজ হয়ে দাড়িয়ে ছিলাম।আর এই পাঁচ মিনিটে উনি আমার সামনে থেকে উধাও হয়ে গিয়েছে। অভ্রের ছোয়াতে আমি নিজের মধ্যে থাকি না। মানুষটাকে বুঝি না জোর করে বিয়ে করলো। এই ভালো এই খারাপ ঠিক হঠাৎ বৃষ্টির মতো।।
_____________________________

বিকেল বেলা বেলকুনিতে বসে আছি, বাহিরে বাগানের দিকে তাকিয়ে। বাহিরে গোলাপ গাছের গোলাপ ফুলগুলো সূর্যের হালকা আলোয় মনখুলে হাসছে মনে হচ্ছে। ফুলকে তো সবাই ভালোবাসে৷ আমি ও যদি ফুলের মতো হতে পারতাম তাহলে আমাকে ও সবাই ভালোবাসতো।

–ভাবি।

ডাকটা শুনে পিছনে ঘুরে দেখলাম, অনি।

–ভাবি তোমাকে কখন থেকে খুজতেছি।

–হে, বলো

–আমরা সবাই মিলে ট্রুথ অর ডেয়ার খেলবো। অভ্র ভাইয়াকে ও অনেক কষ্ট রাজি করিয়েছি খেলার জন্য, প্লিজ তুমি ও আসো।

–আচ্ছা চলো।

–তার আগে তোমাকে একটা কাজ করতে হবে।

–কী কাজ?

–আম্মু বলেছে তোমাকে আম্মুর সাথে দেখা করার জন্য।

আমি রুমের ভিতরে ডুকে দেখলাম অভ্রের অনেকগুলো কাজিন বসে আছে আর অভ্র লেপটাবে কাজ করছে। আমি সবার সাথে কথা বলে নিচে যেতে লাগলাম। আম্মুর রুমে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম,

–আম্মু ডেকেছো আমায়।

–হে, আমরা তো কালকে সকালে চলে যাবো।

–হুম।

–তুমি অভ্রের খেয়াল রেখো। আমি কাজের লোককে বলে দিয়েছি। ও সকালে রান্না করে দিয়ে চলে যাবে বাকি কাজগুলো তুমি করে নিয়ো।

–ঠিক আছে মা, আমি যদি আপনার ছেলেকে রাজি করাতে পারি।

–দেখো পারো কিনা আমি তো কখনো পড়লাম না আমার ছেলেকে সাথে করে কোথাও ঘুরতে নিয়ে যেতে। আমি কী কারো কথায় ই যায়নি

–হে মা আমি একবার চেষ্টা করে দেখি।

এটা বলে ই উপরে চলে গেলাম, দেখলাম সবাই আমার জন্য ওয়েট করতেছে। আমি যেতে ই অভ্র উঠে ওদের সাথে যোগ দিলো।

অভ্রের আর অনির মাঝখানে আমার জায়গা দিলো। চুপ করে বসলাম। সামনে একটা টেবিল রাখা হলো, টেবিলে উপর বোতল রাখা হলো,
ফাস্ট ঘুরানো পর ই অনির দিকে বোতলের মুখ পড়লো,

–অনি বলো ট্রুথ ওর ডেয়ার।

–ট্রুথ

–বলো কয়টা রিলেশন করেছো।

–একটা ও না ভাবি তোমার জামাই সব সময় আমার পিছনে লোক লাগিয়ে রাখতো আমি কখনো রিলেশন করতে পারিনি। এখন তো আমি বিবাহিত ই, জামাই বেচারা ও বিদেশ।

–খুবই দুঃখজনক অনি, এবার আবার খেলা শুরু করো।

এবার বোতলের মুখ অরুর দিকে পড়লো, অরু আয়ুশি অভ্রর কাজিনদের নাম।

–অরু ট্রুথ অর ডেয়ার।

–ট্রুথ

–তোমার ক্রাশের নাম কী।

–তোমার জামাই অভ্র ছিলো।

সবাই অরুর কথাশুনে হাসছে, অভ্র আমার দিকে তাকিয়ে বললো সবারটা তো আপনি দিচ্ছে মিহি। আপনার ট্রুথ অর ডেয়ার আমি দিবো।

–ওকে।

এবার বোতল ঘুরানোর পর অভ্রের দিকে আসলো,

–পেয়েছি এবার, ট্রুথ অর ডেয়ার। সবগুলো ভাই বোন তো ট্রুথ ই নিচেছে, আপনি কী আর ডেয়ার নিবেন।

–ওহ, তাই নাকি তাহলে আমি ডেয়ার ই নিলাম।

–আপনি এখন আম্মুকে গিয়ে বলবেন আমরা কালকে সিলেট যাচ্ছি সবার সাথে।

–নাহ্।

–সাহস থাকলে বলে আসেন। খেলার নিয়ম অনুযায়ী এটা আপনাকে করতে হবে।

–আমি আম্মুকে কখনো মিথ্যা বলি না।

–মিথ্যা বলতে বলছে কে। আমরা কালকে যাবো সিলেট।

আপনার খুব ইচ্ছে না যাওয়ার আচ্ছা ঠিক আছে আমরা যাবো।

অভ্র আস্তে আস্তে মিহির কানেকানে গিয়ে বললো, আপনার যে সবার সামনে কী হাল করি বুঝবা।

এবার বোতলের মুখটা মিহির সামনে এসে পড়লো,

অভ্র হাসি মুখে বললো,

–সবাই চুপ কর, মিহিকে আমি ডেয়ার দিবো।

আবার আমার কানের কাছে এসে বললো, সবার সামনে অভ্রকে কিস করার জন্য।
আমি অভ্রের দিকে বড় বড় চোখ দিয়ে তাকিয়ে আছি। কর করবো এখন…..

চলবে

#তোমাতে আসক্ত
#নাহিদা ইসলাম
#পর্ব ১১

সবাই আমার দিকে তাকিয়ে আছে। কী বলেছ সবাই জানার জন্য উৎসাহ নিয়ে তাকিয়ে আছে। আমি কিছু বলছিনা বলে অরু বললো,

–ভাবি কী ডেয়ার দিয়েছে আমাদের বলেন।

আমি অভ্রের দিকে তাকাতে ই দেখি অভ্র অন্য দিকে তাকিয়ে আছে এমন একটা ভাব করছে যেনো কিছু ই জানে না।

–যে ডেয়ার দিয়েছে, তাকে জিজ্ঞেস করো। কী বলেছে আমি শুনি নাই।

অভ্র মুখ অন্য দিকে করে ই বললো,

–মিহির ডেয়ার কমপ্লিট না করলে আমার ডেয়ার ও আমি কমপ্লিট করবো না।

অভ্রের ডেয়ার কমপ্লিট না করলে তো আমার আর সিলেট যাওয়া হলো না। আমি কোনো উপায় না পেয়ে অসহায় ভাব নিয়ে বসে আছি।

–ভাইয়া ভাবিকে আবার বল কী ডেয়ার ভাবি শোনে নাই।

–তোর ভাবি কানে কম শোনে…

এর মধ্যে ই আমি অভ্রের গালে কিসটা দিয়ে দিলাম। সবাই আমার দিকে রসগোল্লা মতো চোখ করে তাকিয়ে আছে।

–এটা কী ডেয়ার ছিলো ভাবি, নাকি ভাইয়াকে খুব সুন্দর লাগছে তাই দিলা।

অভ্র বললো,

–আরে তোর ভাই অনেক কিউট তো তাই দিয়ে দিলো এবার কমপ্লিট করেন ডেয়ার।

–এটা ই তো ডেয়ার ছিলো

–আপনি না ডেয়ার শোনেন নাই।

–ঐ টাইমে মিথ্যা বলেছিলাম।আপনি তো এটাই আমাকে ডেয়ার দিয়েছিলেন।

–ওদের সামনে লজ্জা পাচ্ছেন কেনো মিহি।

–লজ্জা কোথায় পেলাম, এটা ই ডেয়ার ছিলো।

–নাহ্ আমি বলেছিলাম,আমি আম্মুকে গিয়ে সিলেট যাবার কথা বলার পরের মিনিটে ই আপনি আম্মুকে বলবেন, আপনার শরীর ভালো না আপনি সিলেট যাবেন না।

–ভাইয়া এটা তুই ভাবির কানের কাছে গিয়ে বলেছিলি।

–হে

এটা বলে ই অভ্র মিহির হাত ধরে টান দিয়ে বললো,

–চলো দুইজন মিলে সংসার কইরা খাই,নাহ্ ডেয়ার কমপ্লিট করি।

মিহির মুখ দেখে বুঝা যাচ্ছে খুব রাগ হয়েছে। অভ্র তো মিহির এই মুখ দেখে বেশ মজা ই লাগছিলো। মায়ের রুমের সামনে গিয়ে অভ্র বললো,

–আমি যাচ্ছি ভিতরে, আপনি পরে এসেন

মিহি মুখানা বাকা করে অন্য দিকে তাকিয়ে থাকে কিছু বলে না।

অভ্র রুমে ডুকে দেখতে পেলো, অভ্রের মা কাপড়গুলো লাগেজে ডুকাচ্ছে।

–আম্মু কী করছো,,

–দেখছিস ই তো।

–আমি তোমাদের সাথে সিলেট যাবো।

অভ্রের মুখের দিকে একনজরে তাকিয়ে আছে।

–এ কাকে দেখছি আমি, তাহলে অবশেষে বউের কথায় ই রাখতে যাচ্ছিস।

–মানে

–মিহি তো বললো তোকে সিলেট যেতে রাজি করবে।

অভ্র মেকি হাসি দিয়ে রুম থেকে বের হয়ে যায়।

মিহি দাড়িয়ে দাড়িয়ে নিজেকে দোষ দিচ্ছে, নিজের কথার জালে ই বজ্জাতটা আমাকে ফাসিয়ে দিয়ে চলে গেলো। আমি ও দেখে নিবো, হনুমানটাকে।

—এই যে, বলে এসেছি এখন আপনি যান।

মিহি অভ্রে দিকে না তাকিয়ে ভেতরে ডুকে গেলো,

–আম্মু

–ওহ্ মিহি এসেছো মা।

–হে, আম্মু দেন আমি সব গুছিয়ে দিচ্ছি।

–না মা, আমি সব গুছিয়ে ফেলেছি।

–আমাকে একবার ডাকতে পারতেন আম্মু।

–লাগবে না মা। আমি জানি তুমি কোনো কাজ ই করতে পারো না। মিনতি বলেছে।

–আমি শিখে নিবো সব আম্মু।

–তা ঠিক আছে, অভ্রকে তো রাজি করিয়ে ফেলেছো দেখছি।

–হে আম্মু কিন্তু একটা প্রবলেম হয়েছে।

–কী প্রবলেম!

— আপনার ছেলের নাকি বমি বমি ভাব হচ্ছে, মাথা ব্যাথা শরির টা নাকি ঠিক নেই।

–এখন ই তো আমার সাথে কথা বলে গেলো তা এমন কখন থেকে হচ্ছে।

–এই তো একটু আগে থেকে, আমি বলছি ডক্টর দেখাতে। আমার কথা রাখার জন্য তোমাদের সাথে যেতে চায় তাই আমি নিষেধ করতে আসলাম।

–অভ্রকে বলে দিয়ো যেতে হবে না। পরে তোমরা দুজন এক সাথে যেও কেমন৷ অভ্র সুস্থ হলে।

–তা অবশ্য ই মা। এখন যাই দেখি আপনার ছেলে কী করে। একটু সেবা করে আসি।

দিলাম ডেয়ার কমপ্লিট করে, খুব মজা লাগতাছে সব দোষ অভ্র হনুমানের ঘাড়ে চাপিয়ে।

খাবার টেবিলে সবাই বসে রাতের খাবার খাচ্ছে। আর সবাই অনেক প্লান করছে, সিলেট গিয়ে কী করবে, আমি শুধু চেয়ে চেয়ে দেখছি।

–অভ্র মিহিকে আমাদের সাথে নিয়ে যাই।

–নাহ্ আমি কী একা থাকবো নাকি বাসায়।

এটা বলে ই হাত ধুয়ে উপরে চলে গেলো।

–আগে তো ভাইয়া একা ই থাকতো তাহলে এখন প্রবলেমটা কী। বেচারি মিহির যে অবস্থা মনে হচ্ছে কান্না ই করে দিবে।

–মা, আমার বোন কে ছাড়া আমার ও একা যেতে ভালো লাগছে না।

–অভ্র অসুস্থ না হয় সবার কথা ভেবে মিহিকে নিয়ে যেতাম।

–কী বলছেন মা, ভাইয়ার কী হলো।

–ওর নাকি বমি বমি ভাব হচ্ছে, সাথে মনে হয় মাথা ব্যাথা ও আছে।

মেয়েদের অসুখ ভাইয়ার কাছে কীভাবে গেলো।

অপুর এই কথা শোনে সবাই হাসা শুরু করে দিলো। মিহি এবার ভাবছে যদি কেউ আবার অভ্রকে বলে দেয় তাহলে মিহির অবস্থা খারাব বানিয়ে দিবে।

–স্বামীর সেবায় নিয়জিত থাকবেন ভাবি।

–মিহি যে দুষ্ট আর অসল মাথায় মনে হয় শয়তানের রাজপ্রাসাদ, দেখা যাবে মিহিকে ই অভ্র ভাইয়া সেবা করছে।

সবাই আবার হাসা শুরু করছে। মিহি মিনতির দিকে রাগি দৃষ্টিতে তাকায়।

–মিহি রাগ করেনা আম্মু খেয়ে নেয়। খাবার খেতে বসে এতো কথা বলতে হয় না। সবাই দ্রুত খাবার শেষ করো।

__________________________

সকালে অভ্রের ডাকার শব্দ ঘুম থেকে উঠলাম। উঠে দেখি ছয়টা বাজে। ঘুম ঘুম চোখ নিয়ে অভ্রকে বললাম,

–এতো সকালে ডাকছেন কেনো?

–সবাই চলে যাচ্ছে। আপনি নিচে যাবেন না।

আমি মনে ই ছিলো না সবাই যে চলে যাবে। পাঁচ মিনিটে ফ্রেশ হয়ে নিচে গেলাম। গিয়ে দেখলাম সবাই রেডি চলে যাচ্ছে।

আমাকে দেখে দাদিমা বললো,

–দেখে রাখিস আমার নাতিকে। কোনো কিছুর প্রয়োজন হলে টাইম মতো এগিয়ে দিস।

আমি মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালাম। অভ্র এসে আমার পাশে দাড়াতে ই দাদিমা আবার বলে উঠলো,

–অভ্র নিজের খেয়াল রাখিস, ঔষুধগুলো ঠিক মতো খাবি।

–কীসের ঔষুধ দামিমা।

–ঘুম থেকে উঠে, সব ভুলে গেলি নাকি অভ্র, তোর না মাথা ব্যাথা, বমি বমি ভাব।

অভ্র আমার দিকে ভ্রু কুঁচকিয়ে তাকিয়ে আছে, বুঝতে পেরেছে এই কাজটা আমার।

–দাদিমা ঠিক হয়ে গিয়েছে সব। চলো সাতটা বেজে যাচ্ছে ট্রেন ধরতে পারবে না পরে।

সবাই বিদায় নিয়ে চলে গেলো। সাথে অভ্র ও গেলো। অভ্র শুধু স্টেশন পর্যন্ত যাবে।

___________

আপামনি আমি কালকে আসতে পারবো না,
রাহেলা, মানে কাজে লোকের মুখে এই কথা শুনে উনার দিকে তাকিয়ে বসে আছি।

–কেনো আসতে পারবেন না,

–আমার ছেলেটার খুব অসুখ আপামনি।আজকে ই আসতে চাইনি শুধু রাগ করবেন বলে এসেছি।সারাদিনের রান্না করে দিয়ে গেলাম

কী আর বলার আছে। আমি যে রান্না করি তা কেউ খেতে পারে না। সব রকমের খাবার ইউটিউব দেখে রান্না করতে পারি শুধু আমি ছাড়া কেউ খেতে পারে না।
কালকে দিনটা তাহলে আমার রক্ষে নেই।

চলবে,

[গঠনমূলক কমেন্ট করুন, ভুলগুলো ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন ]

তোমাতে আসক্ত পর্ব-০৯

0

#তোমাতে আসক্ত
#নাহিদা ইসলাম
#পর্ব ৯

অভ্র আমার হাতের দিকে তাকিয়ে, অভ্রের হাতটা ছাড়িয়ে নেয়। আমি শুধু অভ্রের দিকে তাকিয়ে আছি। আমাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে অভ্র বললো,

–সামান্য একটু ভালো ব্যবহার করছি বলে মনে করবেন না আমি আপনাকে মেনে নিয়েছি। শুধু অন্যের বাড়িতে আছি তাই কিছু বলছি না।

–বাহ্ জিএফ এর কথা বলতে তো বেশ রেগে গেলেন

অভ্র আর কোনো কথা না বলে বাহিরে চলে গেলেন।আমি ও দরজা হালকা চাপিয়ে শুয়ে পড়লাম, যদি কিছুর প্রয়োজন পড়ে তাহলে এসে নিয়ে যেতে পারে।

বহিরে যেমন অন্ধকার, রুমের ভিতরে তেমন নিরবতা। মিহির খুব মন খারাপ হচ্ছে এতো করে একটা মানুষকে বলার পর ও কেনো এতো রাগ দেখিয়ে চলে গেলো। তাহলে কী অভ্রের সত্যি ই গার্লফ্রেন্ড আছে। যদি থাকতো ই তাহলে কেনো আমাকে ই বিয়ে করলো। ঐসব ভেবে কী আর আমার লাভ আছে, যেমন দিন যাচ্ছে, তেমন যেতে দেই। সময় মতো সব জানা যাবে। বলে ই শুয়ে পড়লো মিহি।

পাখির কিচিরমিচিরের শব্দ ঘুম ভাঙ্গলো মিহির। উঠে জানালা খুলে বাহিরে তাকাতে ই দেখলো, দেওয়াল ঘেঁষে দাড়িয়ে থাকা আম গাছটায় দোয়েল,শালিকের সংসারিক আলাপে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে তারা। খুব সুন্দর লাগছে, তাদের ভাষা বুঝতে পারলে হয়তো আরো ভালো লাগতো।

এসময় অভ্র রুমে প্রবেশ করলো,

–রেডি হয়ে নিন।

অভ্র কে দেখে মিহি কোনো কথা না বলে জানালা থেকে সরে দাড়ায়। ফ্রেশ হয়ে অভ্রের সাথে কোনো কথা না বলে ই নাস্তার টেবিলে চলে যায়।

–কী হলো মিহি অভ্রকে নিয়ে আসলি না।

—পারবো না।

–তুই এমন কেনো মিহি, জামাই এর দিকে একটু খেয়াল রাখতে পারিস না।

–উনি বাচ্চা না, যে আমার কোলে নিয়ে হাটতে হবে।

—আপনার কোলে উঠার বড্ড শখ আমার আমায় একটু কোলে নিন।

অভ্র টেবিলে বসতে বসতে বললো, মিহি হাসি মুখে উওর দিলো।

–এমন শখ পূরন করতে হলে এমন হাতির বাচ্চাকে কোলে নিয়ে সাথে সাথে কোমায় চলে যেতে হবে।

–হাতির বাচ্চা কাকে বললেন।

মিহি চোখ বড় বড় করে বলে, হায়রে আবার কী বলতে কী বলে ফেললাম।

–না, আম্মু বলছিলো একটা হাতির বাচ্চা পালবে তো আমি বললাম হাতির বাচ্চা কোলে নিলে আমি কোমায় চলে যাবো।

অভ্র এবার মিহির মার দিকে তাকায়। মিহির মা মুখ টিপে টিপে হাসি মেয়ের কথা শুনে।উনি রান্না ঘরে চলে গেলেন।

–কাকে যে হাতির বাচ্চা বলছেন তা তো বেশ ভালো ই বুঝেছি, বাসায় যাই তারপর বুঝাবো।

–কার সাথে পাঙ্গা নিবেন, বুঝে নিয়েন।

অভ্র মেকি হাসি দিয়ে খাবার মুখে দেয়।
মিহি খাবার শেষ করে রেডি হয়ে নেয়। অভ্র রেডি হয়ে গাড়িতে চলে যায় আগে ই। মিহি মা বাবার কাছ থেকে বিদায় নেয়। যেতে ইচ্ছে করছে না, বার বার কান্না পাচ্ছে তাও কান্না চেপে রেখে বাসা থেকে বের হয়ে যায়।

বাসা থেকে বের হয়ে কিছু দূর যেতে ই পিছন থেকে মিহির মা ডাক দেয়।

—মিহি দাড়া।

–হে মা কিছু বলবে।

–তোর বাবা, অভ্র সব সময় সামনে ছিলো তাই জিজ্ঞেস করতে পারিনি। তোর আর অভ্রের মধ্যে কী কোনো জামেলা হয়েছে। বিয়ের মাত্র চারদিন হলো কী বা জামেলা হবে এটা ও ভাবছি।

–না মা কিছু না।

–তাহলে অভ্রে জানি কেমন লাগছে।

–ঐসব কিছু না মা, যাই আমি,।শুধু এইটুকু করো আমি যদি তোমাদের কাছে ফিরে আসি তাহলে আমাকে ফিরিয়ে দিয়ো না।

কথাটা বলে ই গাড়িতে গিয়ে বসলাম।অভ্র আমার দিকে তাকিয়ে বললো,

–আমাকে কী আপনার ড্রাইভার মনে হয়। পিছনে বসেছেন কেনো।

–আমার ইচ্ছে আমি কোথায় বসবো।

–সামনে আসুন

—আসবো না।

–সমস্যা কী আপনার।

–আমার সাথে পাশাপাশি ঘুমাতে পারেন না। তো বসতে পারবেন কীভাবে। আমি আপনার স্পর্শে আসতে চাই না।

অভ্র আর কোনো কথা না বাড়িয়ে গাড়ি চালাচ্ছে। মিহি যেমন অল্পতে ই অনেক খুশি হয়,। ঠিক অল্পতে অনেক কষ্ট ও পায়। বাহিরের দিকে তাকিয়ে নিয়তির এই খেলার জন্য কান্না করছে মিহি। একদিনের মধ্যে নিজের জীবনের বিশাল পরিবর্তনট মনে নিয়ে ও কষ্টে থাকতে হচ্ছে। তাও মুখে হাসি ফুটিয়ে রাখার চেষ্টা করবো সর্বদা।

________________

বাসার ভিতরে ডুকে ই মিহি সবার সাথে কথা বলায় ব্যস্ত হয়ে গেলো। মিনতি, মিহির কাছে এসে জিজ্ঞেস করলো,

–মা, বাবা কেমন আছে মিহি। আর তুই না বলেছিস আসবি না।

–ভালো আছে। তা আমাকে মিহি বলে ডাকিস কেনো আমি তোর বড় জ্যা মনে রাখিস।

–তোকে আমি ভাবি ডাকবো।

–ভাবি ডাকবি কিনা তোর ব্যাপার, সম্মান দিবি বুঝলি।

মিনতি বড় বড় চোখ করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে উপরে দাদিমার রুমে গেলাম।

–কীরে তুই নাকি বলেছিস আসবি না, আমরা কী তোকে আদর কম করি।

–দাদিমা আমাকে দেখে ই এই কথা বলা শুরু করলে, আগে বলো কেমন আছো।

–ভালো, আমার নাতি তো বউকে চোখে হারায়।

–কোন নাতি।

–কোন নাতি আবার অভ্র

–তাই নাকি, তা কিভাবে বুঝলে বউকে চোখে হারায়।

— কালকে যখন শুনলো তুই আসিস নাই, সাথে সাথে চলে গেলো তোকে আনার জন্য। খুব ভালোবাসে তোকে মিহি।

অভ্রকে দাদির রুমে আসতে দেখে বললাম,

–হে দাদিমা তোমার নাতি যা রোমান্টিক, কী আর বলবো লজ্জা ই লাগে।

–মিহি কী বলছেন এসব।

–দাদিমাকে সত্যিটা বলছি।

উনি কোনো কথা না বলে আমার হাত ধরে টেনে রুমে নিয়ে আসলেন। আমি হ্যাচকা টান দিয়ে হাত সরিয়ে নিলাম। দ্রুতগতিতে আলমারি থেকে ড্রেস নিয়ে ওয়াশরুম চলে গেলাম।

ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে দেখলাম উনি আমার ফোনে কি একটা করছে। আমি দেখে ও না দেখার বান করে ড্রেসিংটেবিলের সামনে চুল ঠিক করতে লাগলাম। উনি আর চোখে আমাকে দেখছেন।এটা দেখে আমি অন্য দিকে ফিরে বসে পড়লাম।

আমাকে অন্য দিকে ফিরতে দেখে উনি আমার সামনে এসে বসেন। আমি এখান থেকে উঠে জানালার পাশে গিয়ে দাড়াই। আমাকে জানালার পাশে যেতে দেখে অভ্র আমার সামনে গিয়ে মুখ চেপে ধরে বলে

–আমাকে ভাব দেখাছিস, সকাল থেকে কোনো কথা জিজ্ঞেস করলে বাঁকা উওর দিচ্ছিস কেনো।

আমার মুখ ছেড়ে দিয়ে ধীরে ধীরে আমার অনেকটা কাছে চলে এসেছে। ভয়ে আমার
প্রাণ বেরিয়ে যাওয়ার অবস্থা….

চলবে

তোমাতে আসক্ত পর্ব-০৮

0

#তোমাতে আসক্ত
#নাহিদা ইসলাম
#পর্ব ৮

আমি আস্তে আস্তে করে রুম থেকে বাহিরে বের হতে চাইলে ই অভ্র আমার হাত ধরে ফেলে,

–কোথায় যাচ্ছেন আপনি।

–ক..কোথাও না।

–আন্টির কাছে কী বলেছেন।

–আম্মু আমি কী কিছু বলেছি তোমাকে বলো।

আম্মু আমার দিকে রাগি দৃষ্টিতে তাকাতে ই আমি ইশারায় বলি, “বলো না আম্মু ”

–এই মিহি তোর এসব কথা কী আমি শুনবো।
বাবা শোন মিহি বলেছে তোমার নাকি পেটে অসুখ হয়েছে

–যাক শেষ রক্ষে হলো না আর। আমি এবার আম্মুর সাথে রাগ দেখিয়ে রুমে চলে আসলাম।

–এই পাজি মেয়ে তুই চলে যাচ্ছিস কেনো, আর আমাকে মিথ্যে ই বললি কেনো।।

–আন্টি আমার কোনো সমস্যা হয়নি, আপনি আমাকে খাবারগুলো দিয়ে দিন আমি রুমে নিয়ে খেয়ে নিচ্ছি।

–তুমি দাড়াও বাবা আমি রুমে দিয়ে আসছি, মিহিকে বলো খেতে আমার সাথে রাগ করে আজকে আর খাবে না।

–মিহি অনেক দুষ্টুমি করে আন্টি।

–সবাই বলে মেয়েরা নাকি শান্ত হয়। আর এই মেয়ে আমার হাড় মাংশ সব জ্বালিয়ে খেয়েছে বাবা। ছোট বেলা থেকে ই অনেক দুষ্টুমি করে। মিহি অনেক দুষ্ট, অগোছালো আর আমার মিনতি অনেক পরিপাটি ও শান্ত স্বভাবের। আমার দুই মেয়ে হচ্ছে দুই মেরুর মানুষ।

খাবর গুলো সব গুছিয়ে টেবিলে রাখা ছিলো, ঐখান থেকে দু’টো প্লেটে খাবার সাজাতে সাজাতে কথাগুলো বললো মিহির মা। এতো খাবার,সবগুলো মিহির রুমে নিয়ে যাওয়া সম্ভব না। তাই অভ্র বললো প্লেটে সাজিয়ে দিতে।

মিহির মা প্লেটগুলো মিহির রুমে দিয়ে আসার পর, অভ্র রুমে ডুকলো, দেখলো মিহি আবার কাঁথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে আছে। অভ্র পাশে গিয়ে বললো,

–আন্টিকে কী বলবো, আমি কীসের জন্য ঐ টাইমে গোসল করেছিলাম।

মিহি কাঁথার ভেতর থেকে মুখ বের করে বললো,

–কী বলবেন।

–এই যে আপনি আমাকে জড়িয়ে ধরে ভিজিয়ে দিয়েছিলেন।

–ছিঃ আপনি এই কথা মা কে বলতে পারবেন। নির্লজ্জতা আপনার আকাশ ছুয়েছে।

–আপনি না উঠলে তো বলবো ই। আপনি যেহেতু আমার পেটে অসুখ এর কথা বলতে পেরেছেন আমি না হয় একটু নির্লজ্জ হবো ই এটা বলে।

–উঠে কী করবো আমি খাবো না।

–আপনাকে খেতে বললো কে। আমার সামনে শুধু বসে থাকবেন।

–(আমার ক্ষুধায় অবস্থা খারাপ কোথায় একটু বলবে, উঠো আমি খাইয়ে দিচ্ছি তা না আমাকে উনার সামনে বসে থাকতে বলে) মনে মনে কথাগুলো বলে উওর দিলাম পারবো না।

–না পারলে আন্টিকে গিয়ে বলে আসি আপনি আমাকে জড়িয়ে ধরেছিলেন ঐটাইমে তাই আমি ভিজে গিয়ে গোসল করেছি।

–সব সময় এমন করেন, উঠতেছি তো।

অভ্র আমার সামনে চেয়ার টেনে বসলো। এক প্লেট হাতে নিয়ে খাওয়া শুরু করলো।

–আপনি কী খাবেন নাকি

–নাহ্

–ওহ্ আচ্ছা, ক্ষুধা পেয়েছে আমার অনেক না খেলে ই ভালো। ঐ প্লেটের খাবার টা ও খেবো আমি।

আস্তো রাক্ষস একটা।এতো খাবার নাকি এভাবে নিজে একা খাবে। তাও তো মোটা হয় না বডি ফিটনেস তো ঠিক ই আছে, তা আবার জিরাফের মতো লম্বা আর লম্বা মানুষ নাকি খায় বেশি, কিন্তু মোটা হয়না এটা ই তো শুনেছি।

–আপনি কী কিছু বললেন।

–নাহ্ আমি আপনাকে কী বলবো বলেন।

অভ্রের খাওয়ার স্টাইল দেখে ক্ষুধা আরো বেড়ে গিয়েছে। ঐটাইমে তো না বলেছি এখন কী করবো।

উনি এক প্লেট এর খাবার শেষ করে আরে প্লেট হাতে নিলে। তার মানে আমার খাওয়া আজকে আর হবে না। উনি খাবার শেষ হলে ই আমি আম্মুর কাছে গিয়ে খেয়ে আসবো।

–একটা কথা কী জানেন মিহি।

–নাহ্ জানি না।

–এতো তেতে আছেন কেনো।

–এমনি, আপনার কী।

–আমার ই তো অনেক কিছু, আমি আসার সময় আন্টি বলেছি সব গুছিয়ে যেনো ঘুমিয়ে পড়ে। আমাদের আর কোনো কিছু প্রয়োজন হবে না।

–এবার তো আমার খাওয়া আর হবে না দেখছি এই হনুমানটার জন্য।

–একটু আগে আমার পেটে অসুখ না হলে ও কিন্তু এখন দেখছি আজকে আমার বাথরুমে ই থাকতে হবে আপনি আমার খাবারের দিকে যেভাবে চোখ দিচ্ছেন।

কথাটা বলে ই উনি আমার মুখের খাবার ধরলে,

–খাবারের সাথে রাগ করতে নেই।

আমি আর কোনো কিছু না ভেবে ই খাবার মুখে নিয়ে নেই। খাবার না খেলে আমার ই কষ্ট হবে এতো রাগ করার কিছু নেই।

–আমার নামে যে আন্টির কাছে বাজে কথা বলেছেন তার শাস্তি খাবার দিয়ে দিলাম।

উনি আমাকে খাওয়াতে খাওয়াতে কথাটা বললেন আমি কোনো উওর দিলাম না। খাওয়ানো শেষ হলে উনি প্লেটগুলো টেবিলের উপর এনে রাখে হাত ধুয়ে এসে বললেন।

–আমি গাড়িতে যাচ্ছি।

–তার দরকার হবে না। আমার সাথে বেড শেয়ার করলে প্রবলেম টা কী জানতে পারি।

–পড়ে যদি ছয় মাস পর আমাকে এসে সিনামার মতো বলেন, “আমার পেটে আপনার সন্তান”

–আপনার আমাকে এমন মনে হয়।

–জানি না তবে মানুষ চেনা বড় দায়।

–তাহলে এতো সন্দেহ নিয়ে বিয়ে করেছেন কেনো।

–সময় হলে সব জানতে পারবেন।

–আর কবে সময় হবে।

–বিয়ে হয়েছে মাত্র তিনদিন হলো। এতো তারা কীসের মিহি।

–আমার জায়গায় নিজেকে দাড় করিয়ে দেখেন কেমন লাগে।

— অতো কিছু জানি না। আপনি এইখানে শুয়ে পড়েন। আমার গাড়িতে ঘুমানোর অভাস আছে।

–আজকের রাতটা অন্তত এমন করবেন না। আমি যদি এখন অন্য রুমে ঘুমাতে যাই তাহলে আমার বাবা মা অন্য কিছু মনে করতে পারে। এই জন্য বলছি অন্য কোথাও যাওয়ার দরকার নেই। আমি চাই না আমার বাবা মার মাথায় অন্তত আমার ব্যাপারে কোনো প্রকার দুশ্চিন্তা হক।

–আমি গাড়িতে ঘুমালে বুঝবে না কেউ কিছু।

–এতো করে বলার পর ও আপনি আমার কতা শুনছেন না, কেনো। বলুন তো।

–আমি বেড শেয়ার করতে পারবো না।

–তাহলে কী ভেবে নিবো আপনার গার্লফ্রেন্ড নিষেধ করেছে

কোনো কথা না বলে অভ্র চলে যেতে চাইলে পিছন থেকে হাতটা ধরে ফেলি। অভ্র আমার হাতের দিকে তাকিয়ে….

চলবে,

তোমাতে আসক্ত পর্ব-০৭

0

#তোমাতে আসক্ত
#নাহিদা ইসলাম
#পর্ব ৭

অভ্রের এমন ভয়ার্ত মুখ খানা দেখে মিহি জ্ঞান হারানোর অবস্থা। মিহির চোখ দিয়ে পানি পড়ছে কিন্তু এতে অভ্রের কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই।

–ন্যাকা কান্না বন্ধ কর। তোর কী মনে হয় আমি তোকে ফোনটা এমনি দিয়েছি। ফোন দিয়েছি তোকে তুই কেমন তা দেখার জন্য।।।

— ক…ক..কি দেখেছেন।

–এমন সিস্টেম করে দিয়েছি তোর ফোনে কল আসার আগে, আমার ফোনে কল আসবে। সব কথা আমি শুনেছি। আর একদিন এইমুখে ঐ ছেলের নাম উচ্চারণ করলে তোর মুখে গুলি করে দিবো।

–কেনো আপনার এতো লাগে। বিয়ে করেছেন নামে, আমাকে আপনার রুমে পর্যন্ত থাকতে দেন নাই, ভালো করে মুখ দিয়ে একটা কথা ও বলে না। ছয় মাস পর তো ছেড়ে ই দিবেন আমার যা ইচ্ছা করবো আপনার কী??

–এই ছয় মাস, ছয় মাস কী ছয় সেকেন্ড ও আমার কথা ছাড়া এক পা ও নিচে ফেলবেন না মনে রাখবেন।

–পাড়বো না আপনার কথা শুনতে। কেনো বিয়ে করেছিন আমাকে। আমার জীবনটা নষ্ট করে দিয়েছেন।
কান্না করতে করতে মিহি কথাগুলো বললো।

–আরো করবো। ফোন নিলাম না কারো সাথে কথা বলার আগে এটা ভেবে নিয়েন আমি সব শুনছি।

মিহি মাথা নিচু করে বসে আছে, উঠছে ও না, আবার প্লাজু আর ট্রি-শার্ট পড়েছে। বাচ্চাদের মতো চুলগুলো দুইপাশ দিয়ে জুটি করে রেখেছে। অভ্র এবার মিহির দিকে ভালো করে তাকালে পুরো বাচ্চাদের মতো দেখাচ্ছে। গুটিসুটি মেরে বসে আছে একটু খানি জায়গাতে।

–রেডি হয়ে নিন।

–যাবো না।

–জানতাম তাই তো আপনার কথাগুলো ফোনে রেকর্ড করে রেখেছি, যাই আঙ্কেল কে শুনিয়ে আসি।

–এই না, যাবো না।

–হুম রেডি হন।

–যেতে ইচ্ছে করছে না।

–তাই, আচ্ছা যাই আমি সবাইকে শুনিয়ে বাসায় চলে যাবো।

–ধুর যাচ্ছি তো।

–না না থাক আপনি কেনো যাবেন। আপনার যেতে হবে না, আমি বরং সবাইকে রেকর্ডগুলো শুনিয়ে বাসায় চলে যাবো।

–যাবো আমি আপনার সাথে বলছি তো এতো কথা বলেন কেনো।

বলে ই মিহি বেড ছেড়ে উঠতে যাবে পরক্ষণেই মনে হলো। এই পোশাকে কী অভ্রের সামনে দিয়ে যাবে এতোক্ষন তো কাথা দিয়ে পুরো শরীর ডেকে রেখেছিলো তাই বললো,

–আপনি অন্যরুমে যান।

–কেনো।

–আমি যেতে বলছি তাই।

–যাবো নাহ্

–তাহলে আমি ও উঠবো না।

–কেনো মিহি।

–এমনি যান আপনি অন্য রুমে যান। এই আম্মু উনাকে…

এর আগে ই অভ্র মুখ চেপে ধরলো,

–এতো আম্মু আম্মু করেন কেনো। যাবো না বলছি যাবো না। আন্টি আসলে সোজা সব বলে দিবো আন্টিকে, প্রমাণ সহ।

অভ্রের সামনে দিয়ে যেতে অনেক লজ্জা লাগতেছে।
হঠাৎ কাথা সরিয়ে আমাকে কোলে তুলে ওয়াশরুম নিয়ে গেলো।

–এতো লজ্জা পাচ্ছেন কেনো। আমি আপনার স্বামী হই মনে রাখবেন।

–মুখে বললে ই স্বামী হওয়া যায়না অভ্র চৌধুরী।
আমাকে শাওয়ারের নিচে নামিয়ে উনি চলে যেতে নিলেন, আমি উনাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে শাওয়ার অন করে দিলাম। উনি আমাকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছে। একপর্যায়ে আমি বাধ্য হয়ে ছেড়ে ই দিয়েছি, অভ্রের সাথে না পেরে।
এতোক্ষণ পুরোপুরি না হক অর্ধেক ই ভিজে গেছে। এভাবে তো বাসায় যেতে পারবে না। খুশিতে নাগিন ড্যান্স দিতে মন চাচ্ছে।

অভ্র আমার দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে আছে।
আমি ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে আছি।

–এটা কী করলেন আপনি।

–আপনি না এখন বললেন স্বামীর সামনে লজ্জা পেতে নেই তাই একটু জড়িয়ে ধরলাম।

–আমি এখন এইভাবে বাসায় যাবো কী করে।

–কেনো এইখানে থাকলে সমস্যা কী।

–এইখানে থাকার জন্য ই এমন করেছেন তাই না।

–বুঝেছেন তাহলে, আমি বাহিরে যাচ্ছি। বাবার লুঙ্গি এনে দিচ্ছি পেড়ে নিয়েন।

এটা বলে ই বের হয়ে চলে আসলাম। আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করার শাস্তিটা দিলাম। মজা ই লাগতেছে। উনি অনেকটুকু ভিজলে ও আমি বেশি ভিজি নাই তাই বাহিরে চলে আসলাম।

আম্মুর রুমে ড্রেস চেঞ্জ করে নিলাম।

বাবার লুঙ্গি আনতে যাবো অমনি সামনে আম্মু পড়লো,

–কিরে অভ্র কোথায়

–আছে বাথরুমে।

— কেনো কী হয়েছে।

আমি লুঙ্গি হাতে নিয়ে বললাম, কয়েকদিনে বিয়ের তালে পড়ে যে খাওয়া খেয়েছে হয়তো ডায়রিয়া করেছে,

–কী বলিস এসব।

–আরে, বলো মা। ডায়রিয়া না করলে কী আর আমাকে লুঙ্গি নিতে পাঠায়।

–কী বলিস তোর বাবাকে কল দিয়ে বলবো ডাক্তারের সাথে কথা বলে ঔষুধ নিয়ে আসতে।

–আরে মা আমার মনে হচ্ছে ডায়রিয়া অভ্রের করিনি তোমার করেছে। তুমি এতো উত্তেজিত হচ্ছো কেনো।

–আরে জামাই প্রথম বার শ্বশুর বাড়ি এসেছে। ওর ভালো মন্দ দেখতে হবে না।

–আচ্ছা মা আর ভাবতে হবে না তুমি রান্না করো গিয়ে।

আর এক মুহুর্ত ও দাড়ালাম না। আবার কী না কী প্রশ্ন করে কে জানে।

রুমে ডুকতে ই অভ্র ওয়াশরুমের দরজা ফাক করে বলে।

–লুঙ্গি আনতে গিয়েছিলেন নাকি ভারতবর্ষে ঘুরতে গিয়েছিলেন।

–তা যাইনি তবে ইচ্ছে আছে কাশ্মীর যাওয়ার।

— আমার লুঙ্গি দিয়ে পড়ে যেখানে ইচ্ছে চলে যান।

উনাকে লুঙ্গি পড়ে বের হতে দেখে আমার বড্ড হাসি পাচ্ছে। মুখ টিপেটিপে হাসছি।
দেখে মনে হচ্ছে লুঙ্গি পড়েছে খুব কম।

–এই আপনি হাসছেন কেনো।

–আপনাকে অনেক সুন্দর লাগছে তো তাই। এর থেকে ভালো কিন্তু আমি লুঙ্গি পড়াতে পাড়ি।

–এই না না আপনি আমার কাছে আসবেন না। আর আপনি কাকে লুঙ্গি পড়িয়ে দিতেন যে আমার থেকে আপনি মেয়ে হয়ে ভালো পাড়েন।

–আমাদের ভাই নাই তো আমি ই অনেক সময় লুঙ্গি পড়ে মা বাবার সামনে গিয়ে বলতাম তোমাদের ছেলে আমি। ঐ খেলার ছলে শিখা হয়ে গিয়েছে। আর আপনার কাছে যাবে কে শুধু বললাম আর কী।

আমি ঐসময় ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে ই জামা চেঞ্জ করে নিয়েছিলাম, আম্মুর রুমে গিয়ে। একটা থ্রি-পিস পড়ে নিয়েছি।

–আপনি কী বাসা থেকে জামা নিয়ে আসেননি।

–নাহ্।

–কেনো।

–আমার বাসায় জামা আছে তাহলে আনবো কেনো।

–বাবার বাড়িতে এসে আগের জামা কাপড় পড়লে তো বলবে আমি কিছু ই কিনে দেইনি।

–কেউ বলবে না। এতো অধিকার বা মায়া কোনোটা দেখিয়ে ই লাভ নেই কয়েকদিন পর তো আলাদা ই হয়ে যাবো তাই নিজেরদের মতো করে ই চলে উচিত মিস্টার অভ্র।

কথাটা বলে আম্মু কাছে চলে আসলাম। রান্নাঘরে এসে বসলাম। আমাদের মাটির চুলায় রান্না হয়। আম্মুর হাতের রান্নার ও তারিফ করা লাগে।

–রান্না শেষ, অভ্রকে নিয়ে খেতে যা।

–আমি পারবো না তুমি ডেকে আনো।

–তা বললে কী হয় নাকি।

উঠে খাওয়ার রুমের দিকে যেয়ে ই আম্মু অভ্রকে ডাকলো।

দেখলাম বাসার বাহিরে থেকে ভিতরে আসতেছে।

–কোথায় গিয়েছিলে বাবা।

–গাড়িতে একটা ট্রি -শার্ট ছিলো তা আনতে।

–ওহ্ তা বাবা এখন তোমার কী অবস্থা একটা স্যালাইন বানিয়ে আনবো। খাবে তুমি। আর তোমার শ্বশুর কে বলবো ওষুধ আনতে।

–আন্টি এগুলো দিয়ে আমি কী করবো আর কিসের ঔষুধ।

আম্মুর কেনো এখন ই এটা বলতে হবে মিহি আজকে তুই শেষে…

চলবে।

তোমাতে আসক্ত পর্ব-০৬

0

#তোমাতে আসক্ত
#নাহিদা ইসলাম
#পর্ব ৬

রাত তো অনেক হয়েছে এর মধ্যে মিহির এতো জোরে চিৎকার শুনে সবাই মিহির রুমে চলে এসেছে।

–এই কী হয়েছে তোর।

–কিছু না মা।

–তাহলে গরুর মতো চেচাচ্ছিলি কেনো।

–কিছু না মা যা তো এখন রুম থেকে।

–থাপ্পড় মারবো একটা, ভয় পেয়েছিস কী আমি কী তোর সাথে ঘুমাবো।

–নাহ, আমি ভয় পাইনি যাও।

বলে ই শুয়ে পড়লাম, আমাকে শুয়ে পড়তে দেখে আম্মু চলে গেলো।

উঠে ফোনটা হাতে নিলাম। আমি ফোনটা কয়েক মাস আগে হারিয়ে গিয়েছিলো পরে আর আব্বু ফোন কিনে দেয়নি। অনেক দিনের আশা পূরণ হয়েছে।
অভির সাথে কথা বলা টা ও সহজ হয়ে গিয়েছে। দেখি অভিকে একটা কল দিয়ে। কতো দিন পর অভির সাথে কথা বলবো।বলে ই অভির নম্বরটা উঠিয়ে কল দিলাম।

কিন্তু কল ধরলো না। কয়েকবার কল দিলাম রিসিভ করলো না।হয়তো ঘুমিয়ে পড়েছে। কালকে সকালে কথা বলবো। ফ্রেশ মুডে একটা ঘুম দিলাম।

_____________

ফোনের শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেলো। ঘুম ঘুম চোখে ফোনের দিকে না তাকিয়ে ই রিসিভ করলাম, বুঝতে পারলাম অভির কন্ঠ।

–অভি আমি মিহি

—কেনো কল দিয়েছো তুমি আমাকে, বিয়ে তো করে নিয়েছো, আমি বেচে আছি নাকি মরে গিয়েছি তা দেখতে কল দিয়েছো মিহি।

–অমন করে বলছো কেনো অভি,আই লাভ ইউ বাবু। তোমাকে কথা দিচ্ছি কিছু দিন সময় দেও আমি তোমার কাছে চলে আসবো।

–সত্যি জানু, কবে চলে আসবে।

–আমি তোমার কাছে যেতে চাইলে সব কিছু ভুলে তুমি আমাকে গ্রহণ করবে তো।

–তুমি ঐ বজ্জাত লোক মানে তোমার জামাই এর থেকে দূরে থাকবে। ঐ লোক তো তোমাকে স্পর্শ করেনি তাই নাহ মিহি।

–হে আমি ছয় মাস পর তোমার কাছে চলে আসবো তুমি শুধু এই কয়টা দিন অপেক্ষা করো।

–তোমার জন্য আমি সারা জীবন অপেক্ষা করবো মিহি লাভ ইউ।

অনেক্ষন দুজন কথা বললাম। মনটা ফুরফুরা হয়ে গেলো। আর অভ্রদের বাড়িতে যেতে ইচ্ছে করছে না। অভি আমাকে খুব ভালোবাসে না হয় কী বিয়ের পর ও আমাকে নিতে চায়। আমি অভিকে বিশ্বাস করে তাহলে ভুল করেনি।

এসব ভাবতে ভাবতে উঠে ফ্রেশ হয়ে নেই। জামা চেঞ্জ করে নিচে গেলাম। গিয়ে দেখলাম অপু মানে জিজু বসে আছে আর আমার কাজিনদের সাথে গল্প করছে।

–জিজু আজকে আবার নতুন করে গেইট ধরা থেকে শুরু করে জুতা চুরি সব হবে। ঐদিন আমি কিছু ই করতে পারিনি আর টাকার ভাগটা ও পাইনি।

–কী বলে আমার বড় ভাবি।

–কীসের ভাবি আমি এই বিয়ে মানি না।

–তাই নাকি আজকে বাসায় যাওয়ার পর ই বুঝবেন ভাবি।

–এই ভাবি ভাবি করবে না জিজু টাকা বের করেন না হয় খারাপ হবে।

–ভাবি তো দেবরের পক্ষে থাকার কথা আপনি বিপক্ষে কেনো অবস্থান নিচ্ছেন ভাবি।

–আমি কারো ভাবি না বুঝলেন। আপনার হনুমান মার্কা ভাই ভাইয়ের বউ হতে বয়ে ই গেছে।

বলে ই উঠে চলে আসলাম।

_________________________

আজকে অভ্রদের বাসায় চলে যাবে মিনতি অপু, তাই অভ্রদের বাসা মেহমান আসছে, আমি একবার ও রুম থেকে বের হয়নি রুম লক করে বসে বসে অভির সাথে কথা বলছি। কিছু ক্ষন পর পর আম্মু আব্বু মিনতি এসে দরজা ধাক্কাচ্ছে। আমি একটা ও কথা বলিনি। আজকে যা ই হক আমি অভ্রদের বাসায় যাচ্ছি না। আমি আর কোনো মতে ই অভ্রের কাছে যাবো না, আজকে ওরা না যাওয়ার আগে রুমের দরজা ও খুলবো না।

–অভি তুমি টেনশন করো না আমি অভ্রদের বাসায় যাবো না।

–তাহলে চলো আজকে সন্ধ্যা ৭টার দিকে তোমাদের বাড়ির পেছনে দেখা করি। তুমি রান্নাঘরে আসবে তুমি রান্না ঘরের ভেতরে থাকবে আমি পিছনের সাইডে।

–ঠিক আছে, অভি।

— সাথে কাউকে নিয়ে এসো না, তাহলে কিন্তু সমস্যা হবে।

–আচ্ছা।

–মিহি ভালো হচ্ছে না কিন্তু,,, দরজা খুল নয়তো ভেঙ্গে ফেলবো।

–আম্মু আমি ঐ বাসায় যাবো না অযথা রাগ দেখাচ্ছো কেনো।

–তোর বিয়ে হয়েছে মিহি ভুলে যাস না।

–এই বিয়ে আমি মনে রাখতে চাইনা।

–তোর সাহস থাকলে দরজা খোল

–মিনতি অপু চলে গেলে খুলবো, এর আগে খুলবো না।

–এটা ই তোর শেষ কথা।

–হুম।

মা আর কিছু না বলে চলে গেলো, দরজার লক খুলে আমি সাতটার এলার্ম দিয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম। কারণ কালকে রাতে ঘুম কম হয়েছিলো।

_______

সাতটার কিছুটা আগে এসে মিহিদের বাড়ির পেছনে দাড়িয়ে আছে অভ্র। হঠাৎ একটা ছেলেকে দেখে মিহিদের রান্নাঘরের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
অভ্র ধীরে ধীরে এগিয়ে যায়। যেয়ে ই পর পর কয়েকটা থাপ্পড় দিয়ে দেয়।
অভি অভ্রের শার্ট এর কালারে ধরে ফেলে এতে আরো রাগ বেশি হয়। আবার থাপ্পড় দিতে গেলেই কেউ পিছন থেকে অভ্রের হাত ধরে ফেলে।

–অভ্র কী করছো তুমি।

–আন্টি ও মিহির সাথে কথা বলে এখন ও।

মিহির মা এসে থামায় ওদের। অভ্ররের সামনে এসে দাড়িয়ে অভিকে সরিয়ে দেয়।

— বাবা আমার মেয়েটা দোষি এই ছেলে না।

–অভি তোকে কতো বার নিষেধ করা হয়েছে, মিহির সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দিতে। কান খুলে শুনে রাখ মিহির বিয়ে হয়ে গিয়েছে।

–মা ওকে বলে দেন আবার যদি মিহির আসে পাশে দেখেছি তাহলে ওর গায়ে চামরা থাকবে না।

–মিহিকে কিছু বলে না বাবা, আমার মেয়েটা একেবারে বাচ্চাদের মতো করে বুঝা না এখন ও কোনটা ভালো কোনটা খারাপ। সব সময় ছেলে মানুষি করে। ও নিজে ও জানে না ওর ভবিষ্যত কী। নিজের ভালো মন্দটা খুজে না। তুমি একটু মানিয়ে নিয়ো বাবা।

অভ্র চুপ করে থাকে কোনো কথা বলে না। বুঝা ই যাচ্ছে বেশ রেগে আছে।

–অভ্র চলো বাসায়।

বলে ই অভ্রের হাত ধরে টেনে রুমে নিয়ে যায়। বাব তুমি বসো আমি খাবার রেডি করছি।

–আন্টি মিহি কোথায়।

–ওর রুমে ই আছে। বাম দিকে যে রুমটা ঐটায়

অভ্র সোজা মিহির রুমে যায়। গিয়ে ই জোরে দরজা বন্ধ করে দেয়। রুমের লাইটা অন করতে ই দেখে মিহি বিছানায় গুটিসুটি মেরে শুয়ে আছে।

নিজের উপর ভারি কিছু অনুভব হলো, সাথে নিঃশ্বাস নিতে ও কষ্ট হচ্ছে ধাক্কা দিয়ে কাউকে অভ্রকে সরিয়ে দেয় মিহি।

অভ্রকে দেখে চোখ দুটো বড় বড় করে তাকায়। অভ্র এখানে কেনো। আর এটা কী করলো অভ্র।

অভ্র আবার মিহির সামনে এসে অভ্রের হাত দিয়ে মিহির মুখ চেপে ধরে সারাদিন খুব প্রেমলিলা দেখিয়েছিস অভির সাথে।
আমি কী করেছি তা অভ্র কীভাবে জানে। ভয়ে আমার গলা শুকিয়ে যাচ্ছে আল্লাহ আমাকে বাঁচাও….

চলবে

তোমাতে আসক্ত পর্ব-০৫

0

#তোমাতে আসক্ত
#নাহিদা ইসলাম
#পর্ব ৫

চারদিকে অনেক অন্ধকার এই সময় কে আবার লাইটগুলো অফ করে দিলো উপরের তলায় পুরো ই ফাঁকা। নিচে মানুষ আছে। অন্ধকারের মধ্যে দাড়িয়ে আছি এক জায়গায় ভয় হচ্ছে অনেক। এখান থেকে চিৎকার দিলো ও কেউ শুনবে না। কী করবো ভেবে পাচ্ছি না। হঠাৎ আমার হাতে কারো স্পর্শ পেতে ই ভয়টা আরো বেড়ে গেলো। হাতে ধরে ই কোলে তুলে নিলো। আমি চিৎকার দিতে গেলো ও মুখে চেপে ধরে।

–এতো চেচাচ্ছেন কেনো। কেউ শুনতে পাবে না।

–আপনি এমন করে আমকে কোলে নিলেন কেনো।

— অন্ধকারে শাড়ির মধ্যে পা লেগে পড়ে যাবেন। বেশি কথা না বলে এক হাত দিয়ে শার্ট এর পকেট থেকে ফোনটা বের করেন।

–আমাকে নামান আগে।

–তাহলে অন্ধকারের মধ্যে ই নিয়ে যাবো কোনো কিছুর সাথে ধাক্কা খেলে আপনি ই প্রথম ব্যাথাটা পাবেন।

কথাটা ঠিক ই ব্যাথা পেলে আমার তো আর বাবার বাসায় যাওয়া হবে না। তাই ফোনটা নিলাম পকেট থেকে আর ফ্লাস অন করলাম।

অভ্র রুমে নিয়ে আমাকে নামিয়ে দরজা লাগিয়ে দেয়। আস্তে আস্তে আমার দিকে এগিয়ে আসে। আমি ও পিছাতে থাকি। একপর্যায়ে দেওয়ালের সাথে আটকে যাই।

কী ব্যাপার যাচ্ছেন না কেনো পিছনে।

বলে ই আমাকে তার দুই বাহুতে আবদ্ধ করে নিয়েছে। আমার অনেকটা কাছে চলে এসেছে আমার অন্য রকম শিহরণ সৃষ্টি হচ্ছে, তাই আমি ধাক্কা দিয়ে সরে আসতে চাইলাম কিন্তু বিন্দু পরিমান ও নাড়াতে পারিনি।

এর মধ্যে ই আমার হাতে পাশে লাইট জ্বলে উঠে। কিন্তু অভ্র দূরে যাচ্ছে না, আসতে আসতে আমার মুখের কাছে আসতে ই আমি চোখ বন্ধ করে ফেলি।

কিন্তু অনেকক্ষণ হয়ে গেছে উনার কোনো শব্দ পাচ্ছি না। একচোখ একটু খুলে দেখে রসগোল্লা মতো চোখ করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।

যদি বাসায় গিয়ে বিয়ে সম্পর্কে কিছু বলেছেন তো আজকে তো শুধু নমুনা দেখালাম পরে বুঝবেন কী করি। মনে থাকে যেনো।

বলে ই দূরে গিয়ে দাড়িয়ে পড়লেন।

–আপনাকে নিয়ে যেতে বলেছে।

–আমি যাবো না।

–ওকে। এতো জোর করবো না পরে আবার যদি যেতে রাজি হয়ে যায় তাহলে সব প্লান শেষ। মনে মনে কথাগুলো
বলে ই বাহিরে চলে আসি। খুশি লাগতেছে, নিজের ইচ্ছে মতো থাকতে পাররো কয়েকদিন। কয়েকদিন কী আমি আসবো ই না আর এই বাসায়।

আমাদের বাসা থেকে আসা গাড়িগুলো চলে গিয়েছে। শুধু একটা প্রাইভেট কার আছে, গিয়ে দেখলাম মিনতি অপু দুজন পিছনে বসা আমি গিয়ে তাই ড্রাইভার আঙ্কেল এর সাথে বসলাম। আমাকে দেখে ই মিনতি জিজ্ঞেস করলো,

–মিহি তোর আসতে এতো সময় লাগলো অভ্র ভাইয়া কোথায়।

–যাবে না।

–তুই জোর করে নিয়ে আসবি না।

–আমি এতো জোর করতে পারবো না। ইচ্ছে হলে তুই জোর করে নিয়ে আস।

–মিনতি জোর করে ও লাভ হবে না, ভাইয়া যেহেতু বলেছে যাবে না, তাহলে যাবে ই না।

–এই ড্রাইভার আঙ্কেল লুঙ্গি ড্যান্স গান টা ছাড়ুন তো।

–তুই কী পাগল হয়ে গিয়েছিস মিহি।

–চুপ করে বসে থাকলে থাক নয়তো জামাই নিয়ে গাড়ি থেকে বের হয়ে যা।

–বেয়াদব মেয়ে।

–তুই তোর জামাই এর দিকে মন দে। আমাকে আমার মতো থাকতে দে মিনতি।

_________________

বাহিরে দাড়িয়ে আছি, মিনতি কে আর জিজুকে বরণ করে নিচ্ছে আম্মুরা। এই নিয়ম তো জানা ছিলো না আগে। মেয়ের বাড়িতে আসলে ও কী আবার একই ভাবে বরণ করে ঘরে তুলে। যা ই হক ভালো ই লাগছে।

–কী রে মা, অভ্র কোথায়।

বাবার ডাকে ভাবনার জগৎ থেকে বের হলাম।

–আসেনি বাবা।

–সে কী কথা তুই না নিয়ে আসলি কেনো।

–আসলে আসবে না আসলে নাই বাবা ক্ষুধা পেয়েছে অনেক আমি রুমে ডুকে খাবো। বলে ই রুমে চলে আসলাম।

রুমে এসে ই দ্রুত একটা ট্রি-শার্ট আর প্লাজু পড়ে খাওয়ার রুমে গিয়ে মাকে জড়িয়ে ধরি। কিন্তু মা আমার সাথে কথা বলে না।

–মা শুনো না।
……..
–আমার লক্ষি মা শুনো।

–মা আমি তোমার একটা ই তো ছোট মেয়ে কেনো রাগ করে আছো।
……
— মা আমার কলিজা না তুমি আমার জান প্রাণ আমার মা, মা কথা বলো, মা অ মা।

–যখন আমদের মান সম্মান নিয়ে খেলা করেছিলি তখন এগুলো মনে ছিলো না।

–মা বিশ্বাস করো আমি ইচ্ছে করে কিছু করেনি।

–হে এমনি হয়ে গেছে।

মাকে এমন রেগে থাকতে দেখে আমি কান্না করে মায়ের পা জড়িয়ে ধরি। সাথে সাথে মায়ের রাগ শেষ হয়ে যায়। আমাকে উঠিকে কপালে চুমু একে দেয়।

–মা ক্ষুধা লাগছে অনেক খেতে দাও।

–ঐ বাসা থেকে কী না খেয়ে ই চলে এসেছিস।

–না, খেয়েছি অল্প। বেশি খেলে তো বলবে এই মেয়ে বেশি খায়।

–খাওয়া নিয়ে নিয়ে লজ্জা নেই মা। আর তুই এগুলো কী পড়েছিস। বাসা বর্তী মেহমান। আর নতুন জামাইয়ের সামনে তুই এসব পড়ে যাবি।

–তো কী হয়েছে।

–যা এখন গিয়ে চেঞ্জ করে আয়, নয়তো খেতে দিবো না।

—মাআআআআ

–ন্যাকামো করে কোনো লাভ নেই।

–সকালে পড়বো নে। আর আমি এখন থেকে এগুলো ই পড়বো।

খেয়ে নিয়ে শুয়ে পড়লাম আমার রুমে, আজকে শান্তিতে ঘুমাবো। ভাবতে ভাবতে ই মিনতি রুমে ডুকলো।

–এই যে অভ্র তোর জন্য এইটা পাঠিয়েছে,মানে অপুর কাছে দিয়ে দিয়েছে।

–তো আমি কী করবো।

–কী পাঠিয়েছে দেখবে তো।

মিনতি বেডের পাশে রেখে চলে গিয়েছে। আদিক্ষেতা দেখে বাচি না, সামনে ছিলাম যখন তখন তো দিতে পারতো। মানুষকে বুঝাচ্ছে উনি কেয়ারিং হাসবেন্ড। উঠে লাইট অন করতে ই দেখলাম একটা বক্স রেপিং করা। খুলতে বসে গেলম, গিফট দেখলে না খুলে থাকা যায় নাকি….

চলবে

তোমাতে আসক্ত পর্ব-০৪

0

#তোমাতে আসক্ত
#নাহিদা ইসলাম
#পর্ব ৪

আমি অনমনে বাহিরে দিকে তাকিয়ে আমাকে মা বাবা মেনে নিবে নাকি ভাবছি।
অভ্র হাতের আগুল দিয়ে মুখের ভিতরে গ্লিসারিন দিয়ে বললো,

–হা করে এতো কী ভাবছেন। একটু মিষ্টি মুখ করে নিন তাহলে ভাবনাগুলো আরো মিষ্টি হবে।

আপনি একটা বদের হাড্ডি মনেমনে বললাম। সত্যি কী আমি হা করে ভাবছিলাম। দেখি তো আয়নার সামনে গিয়ো। আয়নার সামনে যেতে ই অভ্র বললো,

–শাড়ি পড়ে নিচে যান

–আপনি কী আমার মান সম্মান রেখেছেন নিচে যাবো কোন মুখে।

–অভ্র চৌধুরী বউ হয়েছেন এটা ই অনেক ভাগ্যের ব্যাপার।

–আমি তো এতো ভাগ্যবতী হতে চাইনি। কেনো করলেন আমার সাথে এমন।

–এতো কেনোর উওর দিতে পারবো না, কিন্তু সময় হলে ঠিক ই আপনাকে আমার বাধন থেকে মুক্ত করে দিবো।

বলে ই অভ্র রুম থেকে বের হয়ে যায়। শত প্রশ্নের উওরের আশায় বসে থাকি কিন্তু উনি তো কিছু ই বলছে ই না। নিচে ও যাবো না কোন মুখ নিয়ে যাবো মা বাবার সামনে।

বেশ কিছুক্ষণ পর,

অভ্রের মা রুমে ডুকলো। আমি উনাকে দেখে ই বসা থেকে উঠে দাড়িয়ে যাই। কান্না করার কারণে চোখ নাক লালা হয়ে গিয়েছে। উনি রুমের লাইট অন করে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে জড়িয়ে ধরে। আমার মায়ের মতো আদর করছে দেখে আমি বেশ অবাক হয়। এতোদিন শুনো এসেছি শাশুড়িরা শুধু কাজ ই করায় মায়ের মতো ভালোবাসে না। কিন্তু উনাকে দেখে আমার ধারণাটা পরিবর্তন হয়ে গেলো।

–দুপুরে খাওনি কেনো মা।

–ক্ষুধা নেই আম্মু।

–রাগ করেছো।

–আম্মু আমাদের বাসার কী সবাই এসেছে।

–হে, তুমি রেডি হওনি কেনো মা।

–আম্মু ওরা তো আমাকে মেনে নিবে না।

–ধুর পাগলি আমার ছেলেটা কোন দিক দিয়ে খারাপ বলো তো। কেনো মেনে নিবে না। যেখানে আমাদের কোনো আপত্তি নেই সেখানে তোমার পরিবারের ও কোনো আপত্তি থাকার কথা না।

উনার কথা শুনে আমার ভয়টা অনেকটা কেটে গেছে।

–শড়ি পড়তে পারো।

আমি মাথা নাড়িয়ে না করলাম।

–চলো পড়িয়ে দেই। আর কোনো কথা বলবা না।

আম্মু আমাকে সুন্দর করে শাড়ি পড়িয়ে দিয়েছে। সাথে ম্যাচিং জুয়েলারি ও এনে দিয়েছে।

–এখন নিজে একটু সাজুগুজু করে নেও তো। আমরা আগের মানুষ আমাদের সাজ ভালো লাগবে না। একটু পর আমি তোমাকে নিচে নিয়ে যাবো আসছি।।

আমাকে আর কোনো কথা না বলতে দিয়ে ই উনি চলে গেলেন। আমি সাজুগুজু করতে আবার বেশ ভালোবাসি। তাই মনের মাধুরি মিশিয়ে সাজায় মন দিলাম।

আমি আয়না নিজের চুল ঠিক করতে দেখি অভ্র রুমে এসেছে। আমার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আমি ও সুযোগ মিস করলাম না বলে দিলাম।

–এতো দেখলে আবার প্রেমে পড়ে যাবেন।

–ওহ্ আপনি। আমি তো ভাবলাম আমার রুমে ভূত প্রেত আসলো না তো।

–শয়তানের রুমে ভুত প্রতে কম ই আসে।

বলে ই রুম থেকে বেরিয়ে গেলাম। ভয়ে ভয়ে নিচে যেতে লাগলাম।এক সিড়ি নামি তো দুই সিঁড়ি উঠি এমন করতে করতে অনেক্ষন যাবৎ উপরে ও দাড়িয়ে আছি। কী করে যাবো সবার সামনে।

–মিহি।

অভ্রের এর আম্মু ডাকে নিচে দিকে তাকলাম।
উপরে উঠতে উঠতে বললো,

–ভয় পাচ্ছিস কেনো আমি তোমার বাবার সাথে কথা বলেছি। তোমার মা তো আসেনি তাই আমি ফোন করে বলে দিয়েছি যেনো কিছু না বলে। আজকে মিনতির সাথে তুমি ও যাচ্ছো মিহি।

কথাটা শুনে আম্মুকে জরিয়ে ধরলাম।

–মিহি শুনো।

আমি আম্মুকে ছেড়ে দুজন নিচে নামতে থাকলাম।

–যেহেতু তাদের অমতে বিয়ে করেছো এতে কম বেশি উনারা রাগ করে আছে আমি যা ই বলি না কেনো তোমার উপর কিন্তু রাগটা থাকবে ই। তুমি বড় হয়েছো মা বাবার পায়ে ধরে ক্ষমা চেয়ে নিয়ো।

–ঠিক আছে আম্মু।।

নিচে নামতে ই আমাকে আর আম্মকে ঘিরে ধরেছে কয়েকটা আন্টি।

–রেনু এটা আপুর বউয়ের বোন না।

–হে,

–দেখতে তো ভারি মিষ্টি। তা আমাদের নুহাশের জন্য বেশ পছন্দ হয়েছে।

–আমার অভ্রের বউ এটা ভাবি।

–ওমা কী বলে এটা। ছেলের এবার দেবদাস থেকে বিয়ে করলো। তা আমাদের শোনাওনি কেনো।

–আপুর বিয়ের দিন ই তো বিয়ে হয়েছে। আপনারা তো শুনার কথা।

–শুনি নাই, মেয়ে সুন্দর তো তাই আরকি অভ্র দেখে ঠিক থাকতে পারেনি বিয়ে করে নিয়েছে।

— যেভাবে ই বিয়ে করুক ভাবি আপনার তো কিছু না। খেয়ে নিন রাত অনেক হয়েছে, আমি যাচ্ছি।

আম্মু আমার হাত ধরে বাবার কাছে নিয়ে এসেছে। বাবা আমাকে দেখে চোখের পানি অনবরত পড়ছে। বাবার কান্না দেখে আমি ও ঠিক থাকতে পারেনি। দৌড়ে জড়িয়ে ধরলাম।

–কেনো করলি মা এমন। তুই বললে আমি তোকে অভ্রের হাতে তুলে দিতাম।

–বাবা সব বলবো সময় হক। তুমি আমাকে ভুল বুঝো না।

হয়েছে বাবা মেয়ের কান্না , এখন চলো খেয়ে নিবে। দাদিমা আমাদের সবাইকে নিয়ে খেতে বসেছে।

সব নিয়ম কারন শেষ হবার পর। আমরা এখন আমাদের বাসায় চলে যাবো। আমি সবার আগে গাড়িতে গিয়ে বসেছি। যদি পরে আমাকে রেখে চলে যায় এই জন্য।

–মিহি তুই অভ্র ভাইয়াকে না নিয়ে ই গাড়িতে উঠে গেলি।

–অভ্র কেন যাবে মিনতি।

–অপু কেন যাচ্ছে।

–তোর মন চাইলে তোর জামাইকে রেখে যা এতে আমার কী।

–থাপ্পড় দিয়ে দাত ফেলে দিবো যা অভ্র ভাইয়াকে নিয়ে আয়।

–পারবো না।

–তাহলে আমি বাবাকে ডেকে বলছি তোকে রেখে যাওয়ার জন্য

–দূর বাবা সবাই শুধু আমাকে এমন করে।

গাড়ি থেকে নেমে অভ্রের রুমের দিকে পা বাড়ালাম এই অভ্র যেনো আমার সাথে না যায় আল্লাহ দেখো তুমি। অভ্র আমার সাথে থাকলে আমি অভির সাথে কথা বলতে পারবো না।

চলবে,

তোমাতে আসক্ত পর্ব-০৩

0

#তোমাতে আসক্ত
#নাহিদা ইসলাম
#পর্ব ৩

[অনেক কমেন্ট আসছে অঞ্জলি, দিব্বা নামটা পরিবর্তন করে দেওয়ার জন্য তাই অঞ্জলি নাম পরিবর্তন করে মিহি আর দিব্বা নাম পরিবর্তন করে মিনতি দেওয়া হলো। ভুলগুলো ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। কারো গল্প ভালো না লাগলে পড়বেন না৷ তাই অভদ্রতা পরিচয় দিবেন না। ধন্যবাদ ]

আমার বউ এর গায়ে হাত তুলার সাহস পেলে কোথায় মিনতি। গতকাল পর্যন্ত তোমার বোন ছিলো আজকে তোমার বড় জ্যা মনে রেখো।

অভ্র শান্ত স্বরে কথাগুলো অপুকে চিৎকার করে ডাকা শুরু করলো। সাথে সাথে অপু দৌড়ে এসে জিজ্ঞেস করলো

–কী হয়েছে ভাইয়া।

–তোর বউ মিহির গায়ে হাত তুলেছে। আর কখনো যেনো এমন না দেখি।

–স্যরি ভাইয়া ভুল হয়ে গেছে মিনতির পক্ষ থেকে আমি ক্ষমা চাচ্ছি।

অপু অভ্রকে জমের মতো ভয় পায়।। মিহির অভ্রের এতো আদিক্ষেতা দেখে বললো,

–আমার বোন আমাকে থাপ্পড় মেরেছে আপনার কী।

অভ্র মিহির দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকাতে ই মিহি ভয় পেয়ে যায়।

এই রে লাস্ট মুহুর্তে একটা কথা বলে গেলাম ফেসে। এখন আবার কী করে আল্লাহ জানে। বেয়াদ্দপ উগান্ডা হাতি তোর জন্য ই তো আজকে আমার মিনতির কাছে থাপ্পড় খেতে হলো আবার তুই ই আদিক্ষেতা দেখাতে আসলি। মিহি এক পা দু পা করতে করে অভ্র থেকে কিছুটা দূরে সরে, দৌড়ে রুমে চলে আসলো।।

মিনতি পুরো দৃশ্যটা দেখলো। অপু আর অভ্র কথা বলতেছে। মিনতি মিহিকে এভাবে যেতে দেখে অবাক হয়নি। কারণ মিহির যে এসব অভ্যস আগে ও ছিলো।

মিহি মিনতি গ্রামের মেয়ে। বাবার কৃষক বলে কিন্তু অতটা ও নিম্ন ফ্যামিলির না। মোটামোটি মিনতির বাবা নিজের জমি ফসল বিক্রি করে খুব ভালো ই চলে তাদের। যেদিন কোনো অপরাধ করে বাসায় ফিরতো মিহি সেদিন যদি বুঝতে পারবো যে বাসার সবাই তার অপরাধের কথা জেনে গেছে তাহলে কখনো জানালা দিয়ে কখনো সিঁড়ি সাথে লেগে থাকা গাছ দিয়ে পালিয়ে যেতো।

অপুর সাথে কথা বলে মিহি বলে পিছনে তাকাতে দেখি মিহি নেই। অভ্র মিহি না দেখে
নিজের রুমের দিকে পা বাড়ায়।

অভ্র যেতে ই মিনতে অপুর দিকে তাকিয়ে বললো,

–অভ্র ভাইয়াকে এতো ভয় পাওয়ার কী আছে।

–ভাই বড় ধন রক্তের বাঁধন যদি হয় পৃথক নারীর কারন।

–এটা দিয়ে তুমি কী বুঝাতে চাচ্ছেন অপু।

–আমার ভাইকে আমি যথেষ্ট সম্মান করি ভয় ও পাই তাতে তোমার যেনো কোনো সমস্যা না থাকে। মিহি এমন ছেলে পেয়েছে মিহির ভাগ্য। তুমি আমাকে নিয়ে ভাবো মিহিকে নিয়ে ভাবার জন্য অভ্র আছে।

–বোনটা আমার তুমি বুঝবা কী অপু।

–হুম অযথা জামেলা করো না। বিয়েটা হয়ে গেছে মিনতি। তুমি এখন যা ই করো কোনো কিছু পরিবর্তন হবে না।

–তুমি বিয়েটা এতোটা স্বাভাবিক ভাবে নিচ্ছো কীভাবে অপু।

–অভ্র ভাইয়া যা করেছে ভালোর জন্য ই করেছে। তুমি এগুলো নিয়ে মাথা গামাও আমার বাবা এতো প্যারা নিতে ভালো লাগে না। চলো তো।

এটা বলে ই মিনতির হাত ধরে নিয়ে চলে যায়।

__________________

রুমে যেয়ে একটার পর একটা ড্রেস দেখছে মিহি। রুমে অনেকগুলো ড্রেস রাখা সবগুলো ই খুব সুন্দর সুন্দর। খুব সুন্দর লং কামিজ, গোল জামা সাথে লেগিংস্,প্যান্ট সব কিছু ই এনেছে দেখছি।।। কয়েকটা শাড়ি ও এনেছে দেখছি। শাড়িগুলো ভালো লেগেছে।

হঠাৎ অভ্র রুমে এসে দেখে পুরো বেডে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে ড্রেসগুলো।

–এই মেয়ে আপনি ড্রেসগুলো দিয়ে আমার রুমের অবস্থা তো খারাপ বানিয়ে ফেলেছেন।

–আচ্ছা একটা কথা বলতে চাই।

অভ্র আলমারি থেকে নিজের শার্ট বের করতে করে বললো,

–আমি শুনতে চাই না।

–আরে না হয় আপনাকে নিয়ে আমার মনে সন্দেহ থাকবে।

–আপনার মনে আমাকে নিয়ে সন্দেহের পাহার থাকুক আমার কোনো সমস্যা নেই।

–তাহলে কী ভাববো আপনি সত্যি ই এটা করেছেন।

অভ্র ভ্রু কুঁচকিয়ে জিজ্ঞেস করলো।

–কী করেছি।

–আগে কী বিয়ে করেছিলেন।

–হোয়াট ননসেন্স।

–না মানে তাহলে মেয়েদের ড্রেস সম্পর্কে আপনার এতো ধারনা কীভাবে। বিয়ে না করলে তো এতো সুন্দর সুন্দর ড্রেস কিনতে পারতেন না।

অভ্র আস্তে আস্তে মিহির পাশে এসে দাঁতে দাঁত চেপে বললো,

–অনি আমার বোন। সব সময় আমি ড্রেস কিনে দিতাম।

–ওহ আচ্ছা। এখন দূরে যান।

–আপনার কাছে আসার কোনো ইচ্ছে ই আমার নেই। ড্রেসগুলো সুন্দর করে গুছিয়ে রাখেন। বড্ড অগোছালো আপনি।

–ভালো হয়েছে আপনার কী।

–আমার কিছু না কিন্তু আপনার মতো একটা অপদার্থকে সহ্য করতে হবে কতো দিন কে জানে।

–ঠিক বলেছেন, আমার আর আপনার পরিস্থিতি এক মিস্টার অভ্র।

–কী বললেন।

মিহি কাপড় গুছানো শুরু করেছে,এমন ভাব করছে যেনো অভ্রের বলা আর কোনো কথা ই কানে যাচ্ছে না মিহির।

প্রায় রাত হয়ে এসেছে।

মিহি লং কামিজ সাথে পেন্ট পড়ে চুলগুলো ছেড়ে দিয়ে বেলকনিতে বসে আছে। মিনতির রিসিপশন আজকে সবাই বেশ আনন্দ করছে। এতোক্ষণ রেডি হয়ে সবাই নিচে চলে গিয়েছে। আজকে যদি বাসায় থাকতো তাহলে তো বাবা মায়ের সাথে বেশ আনন্দ করে বোনের রিসিপশনে আসতো। কতো ই না মজা করতো। কিন্তু অভ্র নামের মানুষটার জন্য তা আর হয়ে উঠেনি। বার বার কারণটা জানতে ইচ্ছে হয় কেনো উনি আমার সাথে এমন করলো??
যখন ই ভাবি জিজ্ঞেসা করবো কেনো আমাকে বিয়ে করেছে ঠিক তখন ই উনার রাগান্বিত মুখটা দেখে চলে আসি আর বলা হয়ে উঠে না।

অভি নামের মানুষটা তো সত্যি ই অনেক ভালোবাসতো অকারণে ই তাকে ঠকানো হলো।

–আমার মিষ্টি নাতবৌটা কই।

দাদিমার আওয়াজ শুনে মিহি চোখের পানি মুছে দাড়িয়ে গেলো।

–দাদিমা আমি বেলকনিতে।

–কী রে তুই তো আমার কাছে একবার ও দেখা করলি না দুপুরের পর থেকে। আমার নাতিকে পেয়ে সব ভুলে যাস নাকি।

বেলকনিতে আসতে আসতে কথাগুলো বললো দাদিমা। সাথে অভ্র ও আসলো।

–হে দাদিমা তোমার নাতি তো দেখতো সালমান খানের মতো চোখ ই ফেরানো যায় না।

এটা বলে অভ্রের মুখের দিকে তাকে ই দেখি। আমাকে ইশারায় বলছে, দেখে নিবো পরে।

–দেখ কতো সুন্দর আমার নাতি তা ও তুই উপহাস করিস। এখন রেডি হয়ে নে নিচে তোর বড়ির সবাই আসছে।

কথাটা শুনতে ই আমার গলাটা শুকিয়ে গেলো কী জানি কী হয়। মা বাবা ভালোবেসে
আগলে নেবে নাকি অপবাদ দিয়ে দূরে সরিয়ে নিবে। যদি ভালোবেসে আগলে নেয় তাহলে বলবো আমাকে বাসায় নিয়ে যেতে, এখন তো আর অভ্র আমাকে বিয়ে ভেঙ্গে দিবে বলে ভয় দেখাতে পারবে না।

চলবে।

তোমাতে আসক্ত পর্ব-০২

0

#তোমাতে আসক্ত
#নাহিদা ইসলাম
#পর্ব ২

অভ্র রুমে ডুকে ই আস্তে আস্তে আমার দিকে এগিয়ে আসছে আমি ভয়ে চোখ বন্ধ করে বললাম,

–আপনি আমার কাছে আসবেন না। আমি আপনাকে অনেক ভয় পাই।।।

অনেক্ষন হয়ে গেছে উনি কোনো কথা ও বলছে না আমাকে ও স্পর্শ করছে না,তাই একটু একটু চোখ খুললাম। অভ্রের দিকে তাকিয়ে দেখি আমার দিকে রক্ত বর্ণ চোখ দিয়ে তাকিয়ে আছে। আমি কিছু না বুঝার আগে ই আমার হাত ধরে টেনে বিছানা থেকে নামিয়ে অন্য একটা রুমে নিয়ে যায়।ঐ রুমের লাইটা অন করে আমাকে রেখে দরজা বন্ধ করে চলে আসে।

দরজা বন্ধ করে বাহির থেকে বলে গেলো।

–চিৎকার করবে না। আজ থেকে আপনার জায়গা এইখানে ই। আপনি ভাবলেন কী করে আপনার মতো মেয়েকে আমি স্পর্শ করবো। অভ্র চৌধুরীর রুচি এতো খারাপ না।

আমি এতো ই খারাপ তাহলে আমাকে জোর করে বিয়ে করলেন কেনো। আমার ভালোবাসা স্বপ্ন আশা সব ভেঙ্গে দিলেন কেনো। আমার অভিকে আমি কী উওর দিবো। ছেলেটা বড্ড বেশি ভালোবাসে আমায়।

বিছানায় শুয়ে ভাবতেছি কালকে আমার জীবনে হ কী কী হতে পারে। সবাই যখন জানতে পারবে মেনে নেবে কী আমায়। একা তো কখনো ঘুমায়নি ভয় করতেছে তাই লাইট অন করে শুয়ে পড়তে ই ঘুম দুচোখে চলে আসে।

___________________

সকাল বেলা, দিব্বাকে নিয়ে সবাই অনেক মজা করছে। যা ই হক কালকে রাত দিব্বার কাছে অনেক স্পেশাল ছিলো। কিন্তু অঞ্জলি যা করলো তার জন্য মনে মধ্যে বড্ড রাগ পুষে রেখেছে। এবাড়ির মানুষগুলো অনেক ভালো নয়তো ছোট বোনের এমন কাজের জন্য দিব্বাকে ও কথা শুনতে হতো।
দিব্বা একটা মেয়েকে ডেকে জিজ্ঞেস করলো,

–অভ্র ভাইয়ার রুমে আমাকে নিয়ে যেতে পারবে।

–হে চলো, কিন্তু অভ্র ভাইয়া অনেক রাগি যদি আমাকে বকা দেয়।

–কিছু হবে না। আমাকে নিয়ে যাও।

মেয়েটা আমার হাত ধরে উপরে নিয়ে যাচ্ছে এটা দেখে কয়েকজন জিজ্ঞেস করলো,

–ভাবি আপনি উপরে যাচ্ছেন কেনো।

আমি আস্তে করে উওর দিলাম।

–অঞ্জলি কাছে।

–ওহ্ অভ্রের বউ এর নাম কী অঞ্জলি নাকি। তা তারা রাতে হয়তো ঘুমায়নি এখন ঘুমাচ্ছে এখন গিয়ে ডিস্টার্ব করবেন কেনো।

এটা বলে ই সবাই হাসা শুরু করলো আমি কারো কথা না শুনে উপরে যেতে লাগলাম।

অভ্র ভাইয়ার রুমের সামনে যেতে ই দেখলাম রুমের দরজা লক করা ভেতর থেকে। তার মানে সত্যি ই ওরা ঘুম থেকে উঠে নাই। উদের কী কোনো কান্ড জ্ঞান নেই কয়টা বাজে এখন ও ঘুম থেকে উঠে নাই। তার উপর বাসা বর্তী মেহমান। আজকে তার উপর আজকে রিসিপশন।
এতো বড় একটা কান্ড ঘটিয়ে মেয়েটা কীভাবে দুপুর অব্দি ঘুমাচ্ছে। সামনে পাই একবার থাপ্পড় দিয়ে দাত ফেলে দিবো।

মনে মনে অঞ্জলিকে বকতে বকতে নিচে নেমে আসছে দিব্বা।

ঘুমের মধ্যে ই মনে হচ্ছে পাখির মতো উড়তেছে। অঞ্জলির খুব ভালোই লাগছে। ছোট বেলা থেকে কতো ইচ্ছে পাখির মতো ডানা মেলে উড়বে। মানুষের নাকি যে ইচ্ছে বাস্তবে পূরন না হয় তা স্বপ্নে পূরন হয়। অঞ্জলি ও স্বপ্নে সেই ইচ্ছে আজকে পূরণ হচ্ছে। সারাজীবন যদি শুধু এই স্বপ্ন ই দেখতে পারতাম। হঠাৎ শরীরে পানি পড়তে ই অঞ্জলি চোখ খুলে দেখে অভ্র দাড়িয়ে আছে। অঞ্জলি শাওয়ারের নিচে।তারমানে অভ্র কোলে থাকা অবস্থায় ই পাখির মতো উড়ার স্বপ্ন দেখেছে।

অভ্রকে এভাবে দাড়িয়ে থাকতে দেখে অঞ্জলি ভেজা শরীরে উঠে অভ্রকে জড়িয়ে ধরে।

অঞ্জলির এমন কাজে বেশ অবাক হয় অভ্র। মুহূর্তের মধ্যে ই অঞ্জলি অভ্রকে ছেড়ে আবার শাওয়ারের নিচে চলে আসে।

–এই মেয়ে আপনার সাহস তো কম না

–এই থামেন থামেন, আমাকে কোলে করে এনে ভিজিয়ে দিলেন কেনো। আমি একা ভিজবো নাকি তাই আপনাকে নিয়ে ই ভিজলাম।

— দশটার উপরে বাজে আপনি এখনো ঘুমাচ্ছে তো আর কী করার ছিলো,রাবিস

–বের হন আপনি।

–আমার ওয়াশরুম আমাকে বের হতে বলছে

–এই যে শুনেন আমি হেটে আপনার ওয়াশরুমে আসি নাই, সম্মান দিয়ে কোলে করে নিয়ে এসেছি।

দাঁতে দাঁত চেপে বললো

–তো..

এই অভ্র নিচে আস দাদিমা ডাকছে।

অনি আপুর ডাকে অভ্র ওয়াশরুম থেকে চলে যায়।

আমি দরজা লক করে। গোসল শেষ করে। ডাকতে লাগলাম।

–এই যে শুনছেন।

–নাহ আমার কান নাই।

–আমি জানি আপনি বয়রা।

–আপনি বয়রা। বেয়াদব মেয়ে।

–হে আদব ছেলে। ভেজা কাপড়ে আর কতক্ষণ দাড় করিয়ে রাখবেন ঠান্ডা লাগবে তো।

–আপনার কাপড় কী আমি পরে বসে আছি নাকি।

–বিয়ে করেছেন কিন্তু দায়িত্ব পালন করতে পারেননি। আমার কোনো কাপড় তো আনিনি। দাদিমা পড়নের শাড়িটা দিয়েছিলো সাথে বাকি প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো ও।

উনি আর কোনো কথা না বলে চলে গেলেন। আমার কান্না পাচ্ছে আজকে মনে হয় ভিজা কাপরে ই দাড়িয়ে থাকতে হবে। হে আল্লাহ নিয়ে যাও আমাকে।

কিছুক্ষনের মধ্যে ই দাদিমা রুমে আসে। দাদিমেকে দেখে আমার কান্না থেমে যায়।

–এই তুই কী বোকা এভাবে কান্না করসিছ কেন। কান্না করিস না আমি শাড়ি নিয়ে এসেছি পড়িয়ে দিবো।

মহিলার বয়স হলে কী হবো বেশ শক্তিশালী আলহামদুলিল্লাহ। কী সুন্দর করে শাড়ি পড়িয়ে দেয়। নিজের কাজগুলো ও নিজে ই করতে পারে কারো করে দিতে হয় না। উনি শাড়ি পড়িয়ে আমাকে নিয়ে নিচে নামলেন।

দিব্বার মুখের দিকে তাকতে ই ভয় পেয়ে গেলাম। বেশ রেগে আছে। আমাকে তো না পারে চোখ দিয়ে ই গিলে খেয়ে ফেলবে।। দিব্বার এমন রুপ দেখে আমি অন্য দিকে ফিরে যাই।।।

সবাই সবার কাজে ব্যস্ত তাই আমি রুমে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালাম। কিন্তু কিছু দূর যেতে ই মনে পড়লো আমি কোন রুমে যাবো। অভ্রের রুমে নাকি আমাকে যে রুমে ঘুমাতে দিয়েছে ঐ রুমে…

হঠাৎ কেউ আমাকে তার দিকে ঘুরি সজোরে থাপ্পড় মারলো। তাকিয়ে দেখলাম দিব্বা

–আমার সুখ দেখে তোর সহ্য হয়নি অঞ্জলি। একেবারে আমার ই বড় জ্যা হয়ে চলে আসলি।আমি হলে না এই মুখ কাউকে দেখাতাম না। তোর মতো হিংসুটে মেয়ে আমি আর জীবনে ও দেখিনি। নিজের বোনের সুখ সহ্য হয় না।

আমার চোখ দুটো কোনো বাধা ই মানছে না। অশ্রু মুছে সামনের দিকে তাকাতে ই দেখি অভ্র দাড়িয়ে আছে। আমাকে আপু ভুল বুঝলো উনি খুশি তো এবার।

কিন্তু না আমার ভাবনাকে ভুল প্রমাণ করে দিয়ে উনি…..

চলবে।

[ভুলগুলো ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন ]

তোমাতে আসক্ত পর্ব-০১

0

#তোমাতে আসক্ত
#নাহিদা ইসলাম
পর্ব ১

আপনি যদি এই মুহুর্তে আমাকে বিয়ে না করেন তাহলে আপনার বোনের ও আমার ছোট ভাইয়ের সাথে বিয়ে হবে না। কথাটা বলতে ই অঞ্জলির হাত ধরে টেনে নিয়ে গাড়িতে বসায় অভ্র। অঞ্জলি শুধু ছলছল নয়নে অভ্রর দিকে তাকিয়ে আছে। অঞ্জলি তো অভিকে বড্ড বেশি ভালোবাসে তাহলে কী করে পারবে অভ্রকে বিয়ে করতে।।।

–আমি পাড়বো না আপনাকে বিয়ে করতে।

–আপনার বোনের বিয়ে হতে চাইলে আর একটা কথা ও বলবেন না আপনি। ভালো করে ই জানেন আহাত আমার কথায় সব করে। আমি চাইলে এখন ই বিয়ে ভেঙ্গে দিবো।

বিয়ে ভেঙ্গে দিলে যে আমার বাবা মেনে নিতে পারবে না, সাথে সাথে গলায় দড়ি দিবে। খুব শখ করে বাবা আপুর বিয়ে দিচ্ছে। এতো বড় বাড়িতে আপুকে বিয়ে করিয়ে নিতে রাজি হয়েছে শুনে বাবা মা খুশিতে কান্না করে দিয়েছে। আমি কী করে পারি তাদের খুশি ভেঙ্গে দিতে।। অভিকে ও তো কষ্ট দিতে পারি না। বড্ড দোটানাতে আছি। গড়ির থামাতে ই দেখলাম সাইনবোর্ড এর বড় করে লিখা কাজি অফিস। অশ্রু শিক্ত নয়নে তাকিয়ে আছি লিখাটার দিকে। অভ্র এসে আমাকে একপ্রকার টেনে হিছড়ে গাড়ি থেকে নামালো।

আমার হাতটা শক্ত করে ধরে কাজি অফিসের ভেতরে নিয়ে গেলো।

–কীরে তোরা এসেছিস।

একটা মেয়ে আর একটা ছেলে বসে আছে একটা বেঞ্চিতে। দেখে মনে হচ্ছে অভ্রের বন্ধু।

–মেয়েটা কে।
আর তোকে এতো দিন বলে ও বিয়ে করাতে রাজি করতে পারিনি কেউ আর আজ তুই নিজে ইচ্ছেতে একটা মেয়েকে একপ্রকার জোর করে তুলে নিয়ে আসলি।

–তুই চুপ করবি এতো বেশি কথা বললে চলে যা আমার বিয়ে আমি নিজে ই করবো।

এটা বলার সাথে সাথে ছেলেটা চুপ করে যায়।। আর কথা বাড়ালো না।

বেশ কিছুক্ষণ পর,

বিয়ে শেষ করে এসে গাড়িতে বসলাম। আল্লাহ আমাকে এমন অগ্নিপরীক্ষাতে কেনো পাঠালো। এখন তো উনি আমাকে বাড়িতে নিয়ে যাবে দুইপরিবার কী মেনে নিবে এই বিয়ে।

–এই যে শুনুন।

উনার ঝাঁঝালো কণ্ঠে শুনে উনার দিকে তাকালাম।

–এতো ন্যাকামো করার দরকার নেই। বিয়ে টা শুধু ছয় মাসের জন্য। ছয়মাস পরে আপনাকে আমি নিজে ই মুক্ত করে দিবো।

আমি কিছু বললাম না। কিন্তু কেনো ছয়মাসের জন্য আমাকে বিয়ে করার কী দরকার ছিলো। আমি নিচের দিকে মাথা দিয়ে বসে আছি।।

_________________

বাসায় পৌছানোর পর,

গাড়ি একটা মস্ত বড় অট্টালিকার সামনে দাড় করালো। অভ্র গাড়ি থেকে নেমে কিছু বুঝে উঠার আগে ই আমাকে কোলে তুলে নিলো আমাকে কোলে তুলে নিলো।

–এই কী করছেন, আমি হেটে যেতে পারবো।

–বেশি কথা বললে কোল থেকে ফেলে দিবো কিন্তু।

ভয় পেয়ে আমি শুভ্র শর্ট খামচে ধরলাম। সামনের দিকে তাকাতে ই দেখলাম।

আমার সদ্য বিবাহিত বোন আর বোন জামাই দাড়িয়ে আছে। সামনে বরণ ডালা।

আগে বড় বউকে বরণ করে ঘরে তুলবে তারপর ছোট বউকে।

অভ্র বেশ জোরে এ কথাগুলো বললো। সবাই আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। লজ্জায় মরে যেতে ইচ্ছে করছে।

–এতো দিন বিয়ে করে না এখন একে বারে কাউকে না জানিয়ে বিয়ে করে নিয়েছে।

–ছোট বোনের মনে হয় বড় বোনের বিয়ে দেখে লোভ সামলাতে পারেনি। একেবারে বড় ভাইকে ফাসিয়ে বিয়ে করে নিয়েছে।।

–এক্কেবারে লাজলজ্জা মাথা খেয়েছে এখনকার ছেলে মেয়েরা এতোগুলো গুরুজন এর সামনে বউকে কোলে নিয়ে দাড়িয়ে আছে বলি কী মেয়ে কী হাটতে পারে না।

সবার কথাগুলো আমার শরীরে তীরের মতো আঘাত করছে। আমার আপু দিব্বার দিকে তাকাতে ই দেখি চোখের পানি সমানতালে গড়িয়ে পড়ছে ।

আমি অভ্রকে বললাম নামানোর জন্য কিন্তু চোখ রাঙ্গিয়ে তাকাতে ই চুপ হয়ে গেলাম।

‘আর কারো মুখে কোনো বাজে কথা শুনতে চাইনা। অভ্র অপু আমার কলিজা। আমার নাতিরা যা ই করুক আমি মেনে নিবো। বউমা আমার বড় নতবউকে বরণ করো আগে।’

অভ্রের দাদিমা। যার কথায় এবাড়ির প্রত্যেকটা মানুষ উঠে আর বসে।

দাদিমা এসে দিব্বা আর অপুকে সাইডে দাড় করিয়ে অভ্রকে সামনে নিয়ে আসেন। হাসি মুখে বরণ করে বাসায় ডুকান আমাকে। অভ্র কোল থেকে নামিয়ে সোজা উপরে চলে যায়। আমি শুধু অবাক হয়ে দেখছি এতো সহজে উনি সব মেনে নিলো।
আমাদের বরণ শেষ হলে দিব্বা আর অপুকে বরণ করার জন্য সামনে ডাকে।

–অপু তুই জানিস না বউকে কোলে করে বাসায় ডুকতে হয়। যা এ বাড়ির নিয়মের মধ্যে পড়ে।

–স্যরি দাদিমা আমার ভুল হয়ে গেছে।

–হয়েছে হয়েছে এখন কোলে তুলে ভেতরে প্রবেশ কর।

সকল নিয়ম শেষ হবার পর দিব্বাকে আমার অপুকে বসায় একসাথে। কিন্তু অভ্র না থাকায় দাদিমা অভ্রকে আসতে খবর পাঠায়।

কে জানি আমার নাতি আর নতবউ নিয়ে কী বলছিলে। আর কখনো যদি এসব কোনো ধরনের কথা শুনি তাহলে তোমরা কে আমি ভুলে যাবো। বজ্রকন্ঠ কথাগুলো বলে উনি জোরে জোরে অভ্রে ডাকা শুরু করলো।

আমি চোখ তুলে উপরে তাকাচ্ছি না আপু আমার উপর খুব রেগে আছে তা আমি ভালো ই বুঝতে পারতেছি।। কী করবো আমি কিছু ই তো করার ছিলো না। বাবা মা তো আমাকে মেরে ই ফেলবে এ কথা শুনতে পারলে।

অভ্র এসে আমার পাশে বসলো। সবাই ছবি নিতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। আমার পড়নে শাড়ি ছিলো। বোনের বিয়ে উপলক্ষে শাড়ি পড়েছিলাম। কতো সাজুগুজু করে ছিলাম। কাল এমন সময় ও জিজুর সাথে কতো মজা করবো ভাবতেছিলা। আর আজ আমি কারো বউ হয়ে বসে আছি।।

–তোমরা সবাই দিব্বাকে নিয়ে শাড়ি চেঞ্জ করিয়ে অপুর রুমে দিয়ে আসো।

অভ্রের সব কজিনরা দিব্বাকে নিয়ে চলে গেলো। অভ্রের দাদিমা অভ্রের মা রেনু বেগমের দিকে তাকিয়ে বললেন।

–বউমা তুমি খাবার পাঠাও আমার রুমে। অঞ্জলিকে নিয়ে আমার রুমে চলে আয় অভ্র।।।

আমার শরীরে হাটার মতো শক্তি পাচ্ছি না তাও আস্তে আস্তে হেটে যাচ্ছি। আর অভ্র বানরের মতো লাফিয়ে লাফিয়ে উপড়ে উঠছে। উনি সিঁড়ির অনেকটা উপরে চলে গিয়েছেন।।। আমার দিকে তাকিয়ে বললেন

–আবার কোলে নিতে হবে নাকি।

আমি মাথা নাড়িয়ে নিষেধ করলাম। এবার শরীর সব শক্তি দিয়ে দ্রুত উঠতে লাগলাম।

_________________

আমি বেডের উপর বসে আছি। অভ্র বার বার চলে যেতে চাইলে ও দাদিমা আটকে রাখছে।

–আমার প্রশ্নের উওর না দিয়ে কোথাও যেতে পারবি না অভ্র।

–দাদিমা কাজ আছে আমার অনেক।

–বিয়ে করলি কেনো অঞ্জলিকে।

–প্রয়োজন ছিলো তাই।

এটা বলে ই বেরিয়ে গেলো। আবার ফিরে এসে বললো,

–অঞ্জলিকে আমার রুমে দ্রুত পাঠিয়ে দেও দাদিমা।

–অঞ্জলি আমার সাথে থাকবে।

–তাহলে আমি ও থাকবো তোমার সাথে।

বলে ই চলে যায়, আমি চমকে গেলাম। উনি এমন গা-ছাড়া ভাব কেনো করছেন যেনো কিছু ই হয়নি।।।

–অঞ্জলি

দাদিমার ডাকে চোখ তুলে তাকালাম।

–শাড়ি পড়তে পারো।

–না দাদিমা।

–যাও ফ্রেশ হয়ে শাড়ির বাকি জিনিসগুলো পড়ে নেও। আমি শাড়ি পড়িয়ে দিবো।

আমি মাথা নাড়িয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলাম। শাওয়ার ছেড়ে দিয়ে ইচ্ছে মতো কান্না করলাম অনেক্ক্ষণ।

বেশ কিছুক্ষন পর দরজায় নক করাতে উঠে দ্রুত কাপড় চেঞ্জ করে নিলাম।

বাহিরে বের হতে ই দাদিমা একটা রেড কালারের শাড়ি পড়িয়ে দিলো। খাবারের প্লেটটা সামনে ধরে খাইয়ে দিতে চাইলো।

কিন্তু এ অবস্থায় আমার ভেতরে খাবার ডুকছে না। অনেক কষ্টে অল্প খেয়ে আর খাবো না বলে দিলাম।

–অঞ্জলি তুই চিন্তা করিস না। সব ঠিক হয়ে যাবে।

এ কথা শুনে যেনো আমার কান্নার মাত্রা আরো বেড়ে গেলো। উনি আমাকে কিছুটা শান্ত করে অভ্রের রুমে রেখে দিয়ে আসলো।

–বিনা ফুলে ই বাসর কর। কারণ বিনা অনুমতিতে বিয়েটা করলি।

দাদিমা চলে গেলো। আমি বেড এর উপর দুই পা গুটিয়ে বসে আছি।

আমার নাম অঞ্জলি আজাদ। বাবা কৃষি কাজ করে। মা গৃহিণী। আমরা দুই বোন। আমি এইচএসসি পাশ করলাম৷ দিব্বা আপু অনার্স প্রথম বর্ষে পড়ে।

অভ্র চৌধুরী। বাবা মারা গেছে। উনারা দুই ভাই, এক বোন। অভ্র, অপু, অনি। অনি আপুর বিয়ে হয়ে গেছে। অভ্র অপু দুজনের ই পড়াশোনা শেষ করে নিজেদের বিজনেস দেখা শুনা করে।

হঠাৎ কারো দরজা বন্ধ করার শব্দ আমার কল্পনার জগৎ থেকে বের হলাম। এখন অভ্র ছাড়া কেউ এ রুমে প্রবেশ করবে না।

উনি তো ধর্মের সব নিয়ম মেনে আমাকে বিয়ে করেছেন তাহলে এখন আমার উপর তার অধিকার খাটাতে আসবে।

[ভুলগুলো ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন ]