আমি আস্তে আস্তে করে রুম থেকে বাহিরে বের হতে চাইলে ই অভ্র আমার হাত ধরে ফেলে,
–কোথায় যাচ্ছেন আপনি।
–ক..কোথাও না।
–আন্টির কাছে কী বলেছেন।
–আম্মু আমি কী কিছু বলেছি তোমাকে বলো।
আম্মু আমার দিকে রাগি দৃষ্টিতে তাকাতে ই আমি ইশারায় বলি, “বলো না আম্মু ”
–এই মিহি তোর এসব কথা কী আমি শুনবো।
বাবা শোন মিহি বলেছে তোমার নাকি পেটে অসুখ হয়েছে
–যাক শেষ রক্ষে হলো না আর। আমি এবার আম্মুর সাথে রাগ দেখিয়ে রুমে চলে আসলাম।
–এই পাজি মেয়ে তুই চলে যাচ্ছিস কেনো, আর আমাকে মিথ্যে ই বললি কেনো।।
–আন্টি আমার কোনো সমস্যা হয়নি, আপনি আমাকে খাবারগুলো দিয়ে দিন আমি রুমে নিয়ে খেয়ে নিচ্ছি।
–তুমি দাড়াও বাবা আমি রুমে দিয়ে আসছি, মিহিকে বলো খেতে আমার সাথে রাগ করে আজকে আর খাবে না।
–মিহি অনেক দুষ্টুমি করে আন্টি।
–সবাই বলে মেয়েরা নাকি শান্ত হয়। আর এই মেয়ে আমার হাড় মাংশ সব জ্বালিয়ে খেয়েছে বাবা। ছোট বেলা থেকে ই অনেক দুষ্টুমি করে। মিহি অনেক দুষ্ট, অগোছালো আর আমার মিনতি অনেক পরিপাটি ও শান্ত স্বভাবের। আমার দুই মেয়ে হচ্ছে দুই মেরুর মানুষ।
খাবর গুলো সব গুছিয়ে টেবিলে রাখা ছিলো, ঐখান থেকে দু’টো প্লেটে খাবার সাজাতে সাজাতে কথাগুলো বললো মিহির মা। এতো খাবার,সবগুলো মিহির রুমে নিয়ে যাওয়া সম্ভব না। তাই অভ্র বললো প্লেটে সাজিয়ে দিতে।
মিহির মা প্লেটগুলো মিহির রুমে দিয়ে আসার পর, অভ্র রুমে ডুকলো, দেখলো মিহি আবার কাঁথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে আছে। অভ্র পাশে গিয়ে বললো,
–আন্টিকে কী বলবো, আমি কীসের জন্য ঐ টাইমে গোসল করেছিলাম।
মিহি কাঁথার ভেতর থেকে মুখ বের করে বললো,
–কী বলবেন।
–এই যে আপনি আমাকে জড়িয়ে ধরে ভিজিয়ে দিয়েছিলেন।
–ছিঃ আপনি এই কথা মা কে বলতে পারবেন। নির্লজ্জতা আপনার আকাশ ছুয়েছে।
–আপনি না উঠলে তো বলবো ই। আপনি যেহেতু আমার পেটে অসুখ এর কথা বলতে পেরেছেন আমি না হয় একটু নির্লজ্জ হবো ই এটা বলে।
–উঠে কী করবো আমি খাবো না।
–আপনাকে খেতে বললো কে। আমার সামনে শুধু বসে থাকবেন।
–(আমার ক্ষুধায় অবস্থা খারাপ কোথায় একটু বলবে, উঠো আমি খাইয়ে দিচ্ছি তা না আমাকে উনার সামনে বসে থাকতে বলে) মনে মনে কথাগুলো বলে উওর দিলাম পারবো না।
–না পারলে আন্টিকে গিয়ে বলে আসি আপনি আমাকে জড়িয়ে ধরেছিলেন ঐটাইমে তাই আমি ভিজে গিয়ে গোসল করেছি।
–সব সময় এমন করেন, উঠতেছি তো।
অভ্র আমার সামনে চেয়ার টেনে বসলো। এক প্লেট হাতে নিয়ে খাওয়া শুরু করলো।
–আপনি কী খাবেন নাকি
–নাহ্
–ওহ্ আচ্ছা, ক্ষুধা পেয়েছে আমার অনেক না খেলে ই ভালো। ঐ প্লেটের খাবার টা ও খেবো আমি।
আস্তো রাক্ষস একটা।এতো খাবার নাকি এভাবে নিজে একা খাবে। তাও তো মোটা হয় না বডি ফিটনেস তো ঠিক ই আছে, তা আবার জিরাফের মতো লম্বা আর লম্বা মানুষ নাকি খায় বেশি, কিন্তু মোটা হয়না এটা ই তো শুনেছি।
–আপনি কী কিছু বললেন।
–নাহ্ আমি আপনাকে কী বলবো বলেন।
অভ্রের খাওয়ার স্টাইল দেখে ক্ষুধা আরো বেড়ে গিয়েছে। ঐটাইমে তো না বলেছি এখন কী করবো।
উনি এক প্লেট এর খাবার শেষ করে আরে প্লেট হাতে নিলে। তার মানে আমার খাওয়া আজকে আর হবে না। উনি খাবার শেষ হলে ই আমি আম্মুর কাছে গিয়ে খেয়ে আসবো।
–একটা কথা কী জানেন মিহি।
–নাহ্ জানি না।
–এতো তেতে আছেন কেনো।
–এমনি, আপনার কী।
–আমার ই তো অনেক কিছু, আমি আসার সময় আন্টি বলেছি সব গুছিয়ে যেনো ঘুমিয়ে পড়ে। আমাদের আর কোনো কিছু প্রয়োজন হবে না।
–এবার তো আমার খাওয়া আর হবে না দেখছি এই হনুমানটার জন্য।
–একটু আগে আমার পেটে অসুখ না হলে ও কিন্তু এখন দেখছি আজকে আমার বাথরুমে ই থাকতে হবে আপনি আমার খাবারের দিকে যেভাবে চোখ দিচ্ছেন।
কথাটা বলে ই উনি আমার মুখের খাবার ধরলে,
–খাবারের সাথে রাগ করতে নেই।
আমি আর কোনো কিছু না ভেবে ই খাবার মুখে নিয়ে নেই। খাবার না খেলে আমার ই কষ্ট হবে এতো রাগ করার কিছু নেই।
–আমার নামে যে আন্টির কাছে বাজে কথা বলেছেন তার শাস্তি খাবার দিয়ে দিলাম।
উনি আমাকে খাওয়াতে খাওয়াতে কথাটা বললেন আমি কোনো উওর দিলাম না। খাওয়ানো শেষ হলে উনি প্লেটগুলো টেবিলের উপর এনে রাখে হাত ধুয়ে এসে বললেন।
–আমি গাড়িতে যাচ্ছি।
–তার দরকার হবে না। আমার সাথে বেড শেয়ার করলে প্রবলেম টা কী জানতে পারি।
–পড়ে যদি ছয় মাস পর আমাকে এসে সিনামার মতো বলেন, “আমার পেটে আপনার সন্তান”
–আপনার আমাকে এমন মনে হয়।
–জানি না তবে মানুষ চেনা বড় দায়।
–তাহলে এতো সন্দেহ নিয়ে বিয়ে করেছেন কেনো।
–সময় হলে সব জানতে পারবেন।
–আর কবে সময় হবে।
–বিয়ে হয়েছে মাত্র তিনদিন হলো। এতো তারা কীসের মিহি।
–আমার জায়গায় নিজেকে দাড় করিয়ে দেখেন কেমন লাগে।
— অতো কিছু জানি না। আপনি এইখানে শুয়ে পড়েন। আমার গাড়িতে ঘুমানোর অভাস আছে।
–আজকের রাতটা অন্তত এমন করবেন না। আমি যদি এখন অন্য রুমে ঘুমাতে যাই তাহলে আমার বাবা মা অন্য কিছু মনে করতে পারে। এই জন্য বলছি অন্য কোথাও যাওয়ার দরকার নেই। আমি চাই না আমার বাবা মার মাথায় অন্তত আমার ব্যাপারে কোনো প্রকার দুশ্চিন্তা হক।
–আমি গাড়িতে ঘুমালে বুঝবে না কেউ কিছু।
–এতো করে বলার পর ও আপনি আমার কতা শুনছেন না, কেনো। বলুন তো।
–আমি বেড শেয়ার করতে পারবো না।
–তাহলে কী ভেবে নিবো আপনার গার্লফ্রেন্ড নিষেধ করেছে
কোনো কথা না বলে অভ্র চলে যেতে চাইলে পিছন থেকে হাতটা ধরে ফেলি। অভ্র আমার হাতের দিকে তাকিয়ে….
অভ্রের এমন ভয়ার্ত মুখ খানা দেখে মিহি জ্ঞান হারানোর অবস্থা। মিহির চোখ দিয়ে পানি পড়ছে কিন্তু এতে অভ্রের কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই।
–ন্যাকা কান্না বন্ধ কর। তোর কী মনে হয় আমি তোকে ফোনটা এমনি দিয়েছি। ফোন দিয়েছি তোকে তুই কেমন তা দেখার জন্য।।।
— ক…ক..কি দেখেছেন।
–এমন সিস্টেম করে দিয়েছি তোর ফোনে কল আসার আগে, আমার ফোনে কল আসবে। সব কথা আমি শুনেছি। আর একদিন এইমুখে ঐ ছেলের নাম উচ্চারণ করলে তোর মুখে গুলি করে দিবো।
–কেনো আপনার এতো লাগে। বিয়ে করেছেন নামে, আমাকে আপনার রুমে পর্যন্ত থাকতে দেন নাই, ভালো করে মুখ দিয়ে একটা কথা ও বলে না। ছয় মাস পর তো ছেড়ে ই দিবেন আমার যা ইচ্ছা করবো আপনার কী??
–এই ছয় মাস, ছয় মাস কী ছয় সেকেন্ড ও আমার কথা ছাড়া এক পা ও নিচে ফেলবেন না মনে রাখবেন।
–পাড়বো না আপনার কথা শুনতে। কেনো বিয়ে করেছিন আমাকে। আমার জীবনটা নষ্ট করে দিয়েছেন।
কান্না করতে করতে মিহি কথাগুলো বললো।
–আরো করবো। ফোন নিলাম না কারো সাথে কথা বলার আগে এটা ভেবে নিয়েন আমি সব শুনছি।
মিহি মাথা নিচু করে বসে আছে, উঠছে ও না, আবার প্লাজু আর ট্রি-শার্ট পড়েছে। বাচ্চাদের মতো চুলগুলো দুইপাশ দিয়ে জুটি করে রেখেছে। অভ্র এবার মিহির দিকে ভালো করে তাকালে পুরো বাচ্চাদের মতো দেখাচ্ছে। গুটিসুটি মেরে বসে আছে একটু খানি জায়গাতে।
–রেডি হয়ে নিন।
–যাবো না।
–জানতাম তাই তো আপনার কথাগুলো ফোনে রেকর্ড করে রেখেছি, যাই আঙ্কেল কে শুনিয়ে আসি।
–এই না, যাবো না।
–হুম রেডি হন।
–যেতে ইচ্ছে করছে না।
–তাই, আচ্ছা যাই আমি সবাইকে শুনিয়ে বাসায় চলে যাবো।
–ধুর যাচ্ছি তো।
–না না থাক আপনি কেনো যাবেন। আপনার যেতে হবে না, আমি বরং সবাইকে রেকর্ডগুলো শুনিয়ে বাসায় চলে যাবো।
–যাবো আমি আপনার সাথে বলছি তো এতো কথা বলেন কেনো।
বলে ই মিহি বেড ছেড়ে উঠতে যাবে পরক্ষণেই মনে হলো। এই পোশাকে কী অভ্রের সামনে দিয়ে যাবে এতোক্ষন তো কাথা দিয়ে পুরো শরীর ডেকে রেখেছিলো তাই বললো,
–আপনি অন্যরুমে যান।
–কেনো।
–আমি যেতে বলছি তাই।
–যাবো নাহ্
–তাহলে আমি ও উঠবো না।
–কেনো মিহি।
–এমনি যান আপনি অন্য রুমে যান। এই আম্মু উনাকে…
এর আগে ই অভ্র মুখ চেপে ধরলো,
–এতো আম্মু আম্মু করেন কেনো। যাবো না বলছি যাবো না। আন্টি আসলে সোজা সব বলে দিবো আন্টিকে, প্রমাণ সহ।
অভ্রের সামনে দিয়ে যেতে অনেক লজ্জা লাগতেছে।
হঠাৎ কাথা সরিয়ে আমাকে কোলে তুলে ওয়াশরুম নিয়ে গেলো।
–এতো লজ্জা পাচ্ছেন কেনো। আমি আপনার স্বামী হই মনে রাখবেন।
–মুখে বললে ই স্বামী হওয়া যায়না অভ্র চৌধুরী।
আমাকে শাওয়ারের নিচে নামিয়ে উনি চলে যেতে নিলেন, আমি উনাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে শাওয়ার অন করে দিলাম। উনি আমাকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছে। একপর্যায়ে আমি বাধ্য হয়ে ছেড়ে ই দিয়েছি, অভ্রের সাথে না পেরে।
এতোক্ষণ পুরোপুরি না হক অর্ধেক ই ভিজে গেছে। এভাবে তো বাসায় যেতে পারবে না। খুশিতে নাগিন ড্যান্স দিতে মন চাচ্ছে।
অভ্র আমার দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে আছে।
আমি ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে আছি।
–এটা কী করলেন আপনি।
–আপনি না এখন বললেন স্বামীর সামনে লজ্জা পেতে নেই তাই একটু জড়িয়ে ধরলাম।
উনাকে লুঙ্গি পড়ে বের হতে দেখে আমার বড্ড হাসি পাচ্ছে। মুখ টিপেটিপে হাসছি।
দেখে মনে হচ্ছে লুঙ্গি পড়েছে খুব কম।
–এই আপনি হাসছেন কেনো।
–আপনাকে অনেক সুন্দর লাগছে তো তাই। এর থেকে ভালো কিন্তু আমি লুঙ্গি পড়াতে পাড়ি।
–এই না না আপনি আমার কাছে আসবেন না। আর আপনি কাকে লুঙ্গি পড়িয়ে দিতেন যে আমার থেকে আপনি মেয়ে হয়ে ভালো পাড়েন।
–আমাদের ভাই নাই তো আমি ই অনেক সময় লুঙ্গি পড়ে মা বাবার সামনে গিয়ে বলতাম তোমাদের ছেলে আমি। ঐ খেলার ছলে শিখা হয়ে গিয়েছে। আর আপনার কাছে যাবে কে শুধু বললাম আর কী।
আমি ঐসময় ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে ই জামা চেঞ্জ করে নিয়েছিলাম, আম্মুর রুমে গিয়ে। একটা থ্রি-পিস পড়ে নিয়েছি।
–আপনি কী বাসা থেকে জামা নিয়ে আসেননি।
–নাহ্।
–কেনো।
–আমার বাসায় জামা আছে তাহলে আনবো কেনো।
–বাবার বাড়িতে এসে আগের জামা কাপড় পড়লে তো বলবে আমি কিছু ই কিনে দেইনি।
–কেউ বলবে না। এতো অধিকার বা মায়া কোনোটা দেখিয়ে ই লাভ নেই কয়েকদিন পর তো আলাদা ই হয়ে যাবো তাই নিজেরদের মতো করে ই চলে উচিত মিস্টার অভ্র।
কথাটা বলে আম্মু কাছে চলে আসলাম। রান্নাঘরে এসে বসলাম। আমাদের মাটির চুলায় রান্না হয়। আম্মুর হাতের রান্নার ও তারিফ করা লাগে।
–রান্না শেষ, অভ্রকে নিয়ে খেতে যা।
–আমি পারবো না তুমি ডেকে আনো।
–তা বললে কী হয় নাকি।
উঠে খাওয়ার রুমের দিকে যেয়ে ই আম্মু অভ্রকে ডাকলো।
দেখলাম বাসার বাহিরে থেকে ভিতরে আসতেছে।
–কোথায় গিয়েছিলে বাবা।
–গাড়িতে একটা ট্রি -শার্ট ছিলো তা আনতে।
–ওহ্ তা বাবা এখন তোমার কী অবস্থা একটা স্যালাইন বানিয়ে আনবো। খাবে তুমি। আর তোমার শ্বশুর কে বলবো ওষুধ আনতে।
–আন্টি এগুলো দিয়ে আমি কী করবো আর কিসের ঔষুধ।
আম্মুর কেনো এখন ই এটা বলতে হবে মিহি আজকে তুই শেষে…
রাত তো অনেক হয়েছে এর মধ্যে মিহির এতো জোরে চিৎকার শুনে সবাই মিহির রুমে চলে এসেছে।
–এই কী হয়েছে তোর।
–কিছু না মা।
–তাহলে গরুর মতো চেচাচ্ছিলি কেনো।
–কিছু না মা যা তো এখন রুম থেকে।
–থাপ্পড় মারবো একটা, ভয় পেয়েছিস কী আমি কী তোর সাথে ঘুমাবো।
–নাহ, আমি ভয় পাইনি যাও।
বলে ই শুয়ে পড়লাম, আমাকে শুয়ে পড়তে দেখে আম্মু চলে গেলো।
উঠে ফোনটা হাতে নিলাম। আমি ফোনটা কয়েক মাস আগে হারিয়ে গিয়েছিলো পরে আর আব্বু ফোন কিনে দেয়নি। অনেক দিনের আশা পূরণ হয়েছে।
অভির সাথে কথা বলা টা ও সহজ হয়ে গিয়েছে। দেখি অভিকে একটা কল দিয়ে। কতো দিন পর অভির সাথে কথা বলবো।বলে ই অভির নম্বরটা উঠিয়ে কল দিলাম।
কিন্তু কল ধরলো না। কয়েকবার কল দিলাম রিসিভ করলো না।হয়তো ঘুমিয়ে পড়েছে। কালকে সকালে কথা বলবো। ফ্রেশ মুডে একটা ঘুম দিলাম।
_____________
ফোনের শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেলো। ঘুম ঘুম চোখে ফোনের দিকে না তাকিয়ে ই রিসিভ করলাম, বুঝতে পারলাম অভির কন্ঠ।
–অভি আমি মিহি
—কেনো কল দিয়েছো তুমি আমাকে, বিয়ে তো করে নিয়েছো, আমি বেচে আছি নাকি মরে গিয়েছি তা দেখতে কল দিয়েছো মিহি।
–অমন করে বলছো কেনো অভি,আই লাভ ইউ বাবু। তোমাকে কথা দিচ্ছি কিছু দিন সময় দেও আমি তোমার কাছে চলে আসবো।
–সত্যি জানু, কবে চলে আসবে।
–আমি তোমার কাছে যেতে চাইলে সব কিছু ভুলে তুমি আমাকে গ্রহণ করবে তো।
–তুমি ঐ বজ্জাত লোক মানে তোমার জামাই এর থেকে দূরে থাকবে। ঐ লোক তো তোমাকে স্পর্শ করেনি তাই নাহ মিহি।
–হে আমি ছয় মাস পর তোমার কাছে চলে আসবো তুমি শুধু এই কয়টা দিন অপেক্ষা করো।
–তোমার জন্য আমি সারা জীবন অপেক্ষা করবো মিহি লাভ ইউ।
অনেক্ষন দুজন কথা বললাম। মনটা ফুরফুরা হয়ে গেলো। আর অভ্রদের বাড়িতে যেতে ইচ্ছে করছে না। অভি আমাকে খুব ভালোবাসে না হয় কী বিয়ের পর ও আমাকে নিতে চায়। আমি অভিকে বিশ্বাস করে তাহলে ভুল করেনি।
এসব ভাবতে ভাবতে উঠে ফ্রেশ হয়ে নেই। জামা চেঞ্জ করে নিচে গেলাম। গিয়ে দেখলাম অপু মানে জিজু বসে আছে আর আমার কাজিনদের সাথে গল্প করছে।
–জিজু আজকে আবার নতুন করে গেইট ধরা থেকে শুরু করে জুতা চুরি সব হবে। ঐদিন আমি কিছু ই করতে পারিনি আর টাকার ভাগটা ও পাইনি।
–কী বলে আমার বড় ভাবি।
–কীসের ভাবি আমি এই বিয়ে মানি না।
–তাই নাকি আজকে বাসায় যাওয়ার পর ই বুঝবেন ভাবি।
–এই ভাবি ভাবি করবে না জিজু টাকা বের করেন না হয় খারাপ হবে।
–ভাবি তো দেবরের পক্ষে থাকার কথা আপনি বিপক্ষে কেনো অবস্থান নিচ্ছেন ভাবি।
–আমি কারো ভাবি না বুঝলেন। আপনার হনুমান মার্কা ভাই ভাইয়ের বউ হতে বয়ে ই গেছে।
বলে ই উঠে চলে আসলাম।
_________________________
আজকে অভ্রদের বাসায় চলে যাবে মিনতি অপু, তাই অভ্রদের বাসা মেহমান আসছে, আমি একবার ও রুম থেকে বের হয়নি রুম লক করে বসে বসে অভির সাথে কথা বলছি। কিছু ক্ষন পর পর আম্মু আব্বু মিনতি এসে দরজা ধাক্কাচ্ছে। আমি একটা ও কথা বলিনি। আজকে যা ই হক আমি অভ্রদের বাসায় যাচ্ছি না। আমি আর কোনো মতে ই অভ্রের কাছে যাবো না, আজকে ওরা না যাওয়ার আগে রুমের দরজা ও খুলবো না।
–অভি তুমি টেনশন করো না আমি অভ্রদের বাসায় যাবো না।
–তাহলে চলো আজকে সন্ধ্যা ৭টার দিকে তোমাদের বাড়ির পেছনে দেখা করি। তুমি রান্নাঘরে আসবে তুমি রান্না ঘরের ভেতরে থাকবে আমি পিছনের সাইডে।
–ঠিক আছে, অভি।
— সাথে কাউকে নিয়ে এসো না, তাহলে কিন্তু সমস্যা হবে।
–আচ্ছা।
–মিহি ভালো হচ্ছে না কিন্তু,,, দরজা খুল নয়তো ভেঙ্গে ফেলবো।
–আম্মু আমি ঐ বাসায় যাবো না অযথা রাগ দেখাচ্ছো কেনো।
–তোর বিয়ে হয়েছে মিহি ভুলে যাস না।
–এই বিয়ে আমি মনে রাখতে চাইনা।
–তোর সাহস থাকলে দরজা খোল
–মিনতি অপু চলে গেলে খুলবো, এর আগে খুলবো না।
–এটা ই তোর শেষ কথা।
–হুম।
মা আর কিছু না বলে চলে গেলো, দরজার লক খুলে আমি সাতটার এলার্ম দিয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম। কারণ কালকে রাতে ঘুম কম হয়েছিলো।
_______
সাতটার কিছুটা আগে এসে মিহিদের বাড়ির পেছনে দাড়িয়ে আছে অভ্র। হঠাৎ একটা ছেলেকে দেখে মিহিদের রান্নাঘরের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
অভ্র ধীরে ধীরে এগিয়ে যায়। যেয়ে ই পর পর কয়েকটা থাপ্পড় দিয়ে দেয়।
অভি অভ্রের শার্ট এর কালারে ধরে ফেলে এতে আরো রাগ বেশি হয়। আবার থাপ্পড় দিতে গেলেই কেউ পিছন থেকে অভ্রের হাত ধরে ফেলে।
–অভ্র কী করছো তুমি।
–আন্টি ও মিহির সাথে কথা বলে এখন ও।
মিহির মা এসে থামায় ওদের। অভ্ররের সামনে এসে দাড়িয়ে অভিকে সরিয়ে দেয়।
— বাবা আমার মেয়েটা দোষি এই ছেলে না।
–অভি তোকে কতো বার নিষেধ করা হয়েছে, মিহির সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দিতে। কান খুলে শুনে রাখ মিহির বিয়ে হয়ে গিয়েছে।
–মা ওকে বলে দেন আবার যদি মিহির আসে পাশে দেখেছি তাহলে ওর গায়ে চামরা থাকবে না।
–মিহিকে কিছু বলে না বাবা, আমার মেয়েটা একেবারে বাচ্চাদের মতো করে বুঝা না এখন ও কোনটা ভালো কোনটা খারাপ। সব সময় ছেলে মানুষি করে। ও নিজে ও জানে না ওর ভবিষ্যত কী। নিজের ভালো মন্দটা খুজে না। তুমি একটু মানিয়ে নিয়ো বাবা।
অভ্র চুপ করে থাকে কোনো কথা বলে না। বুঝা ই যাচ্ছে বেশ রেগে আছে।
–অভ্র চলো বাসায়।
বলে ই অভ্রের হাত ধরে টেনে রুমে নিয়ে যায়। বাব তুমি বসো আমি খাবার রেডি করছি।
–আন্টি মিহি কোথায়।
–ওর রুমে ই আছে। বাম দিকে যে রুমটা ঐটায়
অভ্র সোজা মিহির রুমে যায়। গিয়ে ই জোরে দরজা বন্ধ করে দেয়। রুমের লাইটা অন করতে ই দেখে মিহি বিছানায় গুটিসুটি মেরে শুয়ে আছে।
নিজের উপর ভারি কিছু অনুভব হলো, সাথে নিঃশ্বাস নিতে ও কষ্ট হচ্ছে ধাক্কা দিয়ে কাউকে অভ্রকে সরিয়ে দেয় মিহি।
অভ্রকে দেখে চোখ দুটো বড় বড় করে তাকায়। অভ্র এখানে কেনো। আর এটা কী করলো অভ্র।
অভ্র আবার মিহির সামনে এসে অভ্রের হাত দিয়ে মিহির মুখ চেপে ধরে সারাদিন খুব প্রেমলিলা দেখিয়েছিস অভির সাথে।
আমি কী করেছি তা অভ্র কীভাবে জানে। ভয়ে আমার গলা শুকিয়ে যাচ্ছে আল্লাহ আমাকে বাঁচাও….
চারদিকে অনেক অন্ধকার এই সময় কে আবার লাইটগুলো অফ করে দিলো উপরের তলায় পুরো ই ফাঁকা। নিচে মানুষ আছে। অন্ধকারের মধ্যে দাড়িয়ে আছি এক জায়গায় ভয় হচ্ছে অনেক। এখান থেকে চিৎকার দিলো ও কেউ শুনবে না। কী করবো ভেবে পাচ্ছি না। হঠাৎ আমার হাতে কারো স্পর্শ পেতে ই ভয়টা আরো বেড়ে গেলো। হাতে ধরে ই কোলে তুলে নিলো। আমি চিৎকার দিতে গেলো ও মুখে চেপে ধরে।
–এতো চেচাচ্ছেন কেনো। কেউ শুনতে পাবে না।
–আপনি এমন করে আমকে কোলে নিলেন কেনো।
— অন্ধকারে শাড়ির মধ্যে পা লেগে পড়ে যাবেন। বেশি কথা না বলে এক হাত দিয়ে শার্ট এর পকেট থেকে ফোনটা বের করেন।
–আমাকে নামান আগে।
–তাহলে অন্ধকারের মধ্যে ই নিয়ে যাবো কোনো কিছুর সাথে ধাক্কা খেলে আপনি ই প্রথম ব্যাথাটা পাবেন।
কথাটা ঠিক ই ব্যাথা পেলে আমার তো আর বাবার বাসায় যাওয়া হবে না। তাই ফোনটা নিলাম পকেট থেকে আর ফ্লাস অন করলাম।
অভ্র রুমে নিয়ে আমাকে নামিয়ে দরজা লাগিয়ে দেয়। আস্তে আস্তে আমার দিকে এগিয়ে আসে। আমি ও পিছাতে থাকি। একপর্যায়ে দেওয়ালের সাথে আটকে যাই।
কী ব্যাপার যাচ্ছেন না কেনো পিছনে।
বলে ই আমাকে তার দুই বাহুতে আবদ্ধ করে নিয়েছে। আমার অনেকটা কাছে চলে এসেছে আমার অন্য রকম শিহরণ সৃষ্টি হচ্ছে, তাই আমি ধাক্কা দিয়ে সরে আসতে চাইলাম কিন্তু বিন্দু পরিমান ও নাড়াতে পারিনি।
এর মধ্যে ই আমার হাতে পাশে লাইট জ্বলে উঠে। কিন্তু অভ্র দূরে যাচ্ছে না, আসতে আসতে আমার মুখের কাছে আসতে ই আমি চোখ বন্ধ করে ফেলি।
কিন্তু অনেকক্ষণ হয়ে গেছে উনার কোনো শব্দ পাচ্ছি না। একচোখ একটু খুলে দেখে রসগোল্লা মতো চোখ করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
যদি বাসায় গিয়ে বিয়ে সম্পর্কে কিছু বলেছেন তো আজকে তো শুধু নমুনা দেখালাম পরে বুঝবেন কী করি। মনে থাকে যেনো।
বলে ই দূরে গিয়ে দাড়িয়ে পড়লেন।
–আপনাকে নিয়ে যেতে বলেছে।
–আমি যাবো না।
–ওকে। এতো জোর করবো না পরে আবার যদি যেতে রাজি হয়ে যায় তাহলে সব প্লান শেষ। মনে মনে কথাগুলো
বলে ই বাহিরে চলে আসি। খুশি লাগতেছে, নিজের ইচ্ছে মতো থাকতে পাররো কয়েকদিন। কয়েকদিন কী আমি আসবো ই না আর এই বাসায়।
আমাদের বাসা থেকে আসা গাড়িগুলো চলে গিয়েছে। শুধু একটা প্রাইভেট কার আছে, গিয়ে দেখলাম মিনতি অপু দুজন পিছনে বসা আমি গিয়ে তাই ড্রাইভার আঙ্কেল এর সাথে বসলাম। আমাকে দেখে ই মিনতি জিজ্ঞেস করলো,
–মিহি তোর আসতে এতো সময় লাগলো অভ্র ভাইয়া কোথায়।
–যাবে না।
–তুই জোর করে নিয়ে আসবি না।
–আমি এতো জোর করতে পারবো না। ইচ্ছে হলে তুই জোর করে নিয়ে আস।
–মিনতি জোর করে ও লাভ হবে না, ভাইয়া যেহেতু বলেছে যাবে না, তাহলে যাবে ই না।
–এই ড্রাইভার আঙ্কেল লুঙ্গি ড্যান্স গান টা ছাড়ুন তো।
–তুই কী পাগল হয়ে গিয়েছিস মিহি।
–চুপ করে বসে থাকলে থাক নয়তো জামাই নিয়ে গাড়ি থেকে বের হয়ে যা।
–বেয়াদব মেয়ে।
–তুই তোর জামাই এর দিকে মন দে। আমাকে আমার মতো থাকতে দে মিনতি।
_________________
বাহিরে দাড়িয়ে আছি, মিনতি কে আর জিজুকে বরণ করে নিচ্ছে আম্মুরা। এই নিয়ম তো জানা ছিলো না আগে। মেয়ের বাড়িতে আসলে ও কী আবার একই ভাবে বরণ করে ঘরে তুলে। যা ই হক ভালো ই লাগছে।
–কী রে মা, অভ্র কোথায়।
বাবার ডাকে ভাবনার জগৎ থেকে বের হলাম।
–আসেনি বাবা।
–সে কী কথা তুই না নিয়ে আসলি কেনো।
–আসলে আসবে না আসলে নাই বাবা ক্ষুধা পেয়েছে অনেক আমি রুমে ডুকে খাবো। বলে ই রুমে চলে আসলাম।
রুমে এসে ই দ্রুত একটা ট্রি-শার্ট আর প্লাজু পড়ে খাওয়ার রুমে গিয়ে মাকে জড়িয়ে ধরি। কিন্তু মা আমার সাথে কথা বলে না।
–মা শুনো না।
……..
–আমার লক্ষি মা শুনো।
…
–মা আমি তোমার একটা ই তো ছোট মেয়ে কেনো রাগ করে আছো।
……
— মা আমার কলিজা না তুমি আমার জান প্রাণ আমার মা, মা কথা বলো, মা অ মা।
–যখন আমদের মান সম্মান নিয়ে খেলা করেছিলি তখন এগুলো মনে ছিলো না।
–মা বিশ্বাস করো আমি ইচ্ছে করে কিছু করেনি।
–হে এমনি হয়ে গেছে।
মাকে এমন রেগে থাকতে দেখে আমি কান্না করে মায়ের পা জড়িয়ে ধরি। সাথে সাথে মায়ের রাগ শেষ হয়ে যায়। আমাকে উঠিকে কপালে চুমু একে দেয়।
–মা ক্ষুধা লাগছে অনেক খেতে দাও।
–ঐ বাসা থেকে কী না খেয়ে ই চলে এসেছিস।
–না, খেয়েছি অল্প। বেশি খেলে তো বলবে এই মেয়ে বেশি খায়।
–খাওয়া নিয়ে নিয়ে লজ্জা নেই মা। আর তুই এগুলো কী পড়েছিস। বাসা বর্তী মেহমান। আর নতুন জামাইয়ের সামনে তুই এসব পড়ে যাবি।
–এই যে অভ্র তোর জন্য এইটা পাঠিয়েছে,মানে অপুর কাছে দিয়ে দিয়েছে।
–তো আমি কী করবো।
–কী পাঠিয়েছে দেখবে তো।
মিনতি বেডের পাশে রেখে চলে গিয়েছে। আদিক্ষেতা দেখে বাচি না, সামনে ছিলাম যখন তখন তো দিতে পারতো। মানুষকে বুঝাচ্ছে উনি কেয়ারিং হাসবেন্ড। উঠে লাইট অন করতে ই দেখলাম একটা বক্স রেপিং করা। খুলতে বসে গেলম, গিফট দেখলে না খুলে থাকা যায় নাকি….
আমি অনমনে বাহিরে দিকে তাকিয়ে আমাকে মা বাবা মেনে নিবে নাকি ভাবছি।
অভ্র হাতের আগুল দিয়ে মুখের ভিতরে গ্লিসারিন দিয়ে বললো,
–হা করে এতো কী ভাবছেন। একটু মিষ্টি মুখ করে নিন তাহলে ভাবনাগুলো আরো মিষ্টি হবে।
আপনি একটা বদের হাড্ডি মনেমনে বললাম। সত্যি কী আমি হা করে ভাবছিলাম। দেখি তো আয়নার সামনে গিয়ো। আয়নার সামনে যেতে ই অভ্র বললো,
–শাড়ি পড়ে নিচে যান
–আপনি কী আমার মান সম্মান রেখেছেন নিচে যাবো কোন মুখে।
–অভ্র চৌধুরী বউ হয়েছেন এটা ই অনেক ভাগ্যের ব্যাপার।
–আমি তো এতো ভাগ্যবতী হতে চাইনি। কেনো করলেন আমার সাথে এমন।
–এতো কেনোর উওর দিতে পারবো না, কিন্তু সময় হলে ঠিক ই আপনাকে আমার বাধন থেকে মুক্ত করে দিবো।
বলে ই অভ্র রুম থেকে বের হয়ে যায়। শত প্রশ্নের উওরের আশায় বসে থাকি কিন্তু উনি তো কিছু ই বলছে ই না। নিচে ও যাবো না কোন মুখ নিয়ে যাবো মা বাবার সামনে।
বেশ কিছুক্ষণ পর,
অভ্রের মা রুমে ডুকলো। আমি উনাকে দেখে ই বসা থেকে উঠে দাড়িয়ে যাই। কান্না করার কারণে চোখ নাক লালা হয়ে গিয়েছে। উনি রুমের লাইট অন করে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে জড়িয়ে ধরে। আমার মায়ের মতো আদর করছে দেখে আমি বেশ অবাক হয়। এতোদিন শুনো এসেছি শাশুড়িরা শুধু কাজ ই করায় মায়ের মতো ভালোবাসে না। কিন্তু উনাকে দেখে আমার ধারণাটা পরিবর্তন হয়ে গেলো।
–দুপুরে খাওনি কেনো মা।
–ক্ষুধা নেই আম্মু।
–রাগ করেছো।
–আম্মু আমাদের বাসার কী সবাই এসেছে।
–হে, তুমি রেডি হওনি কেনো মা।
–আম্মু ওরা তো আমাকে মেনে নিবে না।
–ধুর পাগলি আমার ছেলেটা কোন দিক দিয়ে খারাপ বলো তো। কেনো মেনে নিবে না। যেখানে আমাদের কোনো আপত্তি নেই সেখানে তোমার পরিবারের ও কোনো আপত্তি থাকার কথা না।
উনার কথা শুনে আমার ভয়টা অনেকটা কেটে গেছে।
–শড়ি পড়তে পারো।
আমি মাথা নাড়িয়ে না করলাম।
–চলো পড়িয়ে দেই। আর কোনো কথা বলবা না।
আম্মু আমাকে সুন্দর করে শাড়ি পড়িয়ে দিয়েছে। সাথে ম্যাচিং জুয়েলারি ও এনে দিয়েছে।
–এখন নিজে একটু সাজুগুজু করে নেও তো। আমরা আগের মানুষ আমাদের সাজ ভালো লাগবে না। একটু পর আমি তোমাকে নিচে নিয়ে যাবো আসছি।।
আমাকে আর কোনো কথা না বলতে দিয়ে ই উনি চলে গেলেন। আমি সাজুগুজু করতে আবার বেশ ভালোবাসি। তাই মনের মাধুরি মিশিয়ে সাজায় মন দিলাম।
আমি আয়না নিজের চুল ঠিক করতে দেখি অভ্র রুমে এসেছে। আমার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আমি ও সুযোগ মিস করলাম না বলে দিলাম।
–এতো দেখলে আবার প্রেমে পড়ে যাবেন।
–ওহ্ আপনি। আমি তো ভাবলাম আমার রুমে ভূত প্রেত আসলো না তো।
–শয়তানের রুমে ভুত প্রতে কম ই আসে।
বলে ই রুম থেকে বেরিয়ে গেলাম। ভয়ে ভয়ে নিচে যেতে লাগলাম।এক সিড়ি নামি তো দুই সিঁড়ি উঠি এমন করতে করতে অনেক্ষন যাবৎ উপরে ও দাড়িয়ে আছি। কী করে যাবো সবার সামনে।
–মিহি।
অভ্রের এর আম্মু ডাকে নিচে দিকে তাকলাম।
উপরে উঠতে উঠতে বললো,
–ভয় পাচ্ছিস কেনো আমি তোমার বাবার সাথে কথা বলেছি। তোমার মা তো আসেনি তাই আমি ফোন করে বলে দিয়েছি যেনো কিছু না বলে। আজকে মিনতির সাথে তুমি ও যাচ্ছো মিহি।
কথাটা শুনে আম্মুকে জরিয়ে ধরলাম।
–মিহি শুনো।
আমি আম্মুকে ছেড়ে দুজন নিচে নামতে থাকলাম।
–যেহেতু তাদের অমতে বিয়ে করেছো এতে কম বেশি উনারা রাগ করে আছে আমি যা ই বলি না কেনো তোমার উপর কিন্তু রাগটা থাকবে ই। তুমি বড় হয়েছো মা বাবার পায়ে ধরে ক্ষমা চেয়ে নিয়ো।
–ঠিক আছে আম্মু।।
নিচে নামতে ই আমাকে আর আম্মকে ঘিরে ধরেছে কয়েকটা আন্টি।
–রেনু এটা আপুর বউয়ের বোন না।
–হে,
–দেখতে তো ভারি মিষ্টি। তা আমাদের নুহাশের জন্য বেশ পছন্দ হয়েছে।
–আমার অভ্রের বউ এটা ভাবি।
–ওমা কী বলে এটা। ছেলের এবার দেবদাস থেকে বিয়ে করলো। তা আমাদের শোনাওনি কেনো।
[অনেক কমেন্ট আসছে অঞ্জলি, দিব্বা নামটা পরিবর্তন করে দেওয়ার জন্য তাই অঞ্জলি নাম পরিবর্তন করে মিহি আর দিব্বা নাম পরিবর্তন করে মিনতি দেওয়া হলো। ভুলগুলো ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। কারো গল্প ভালো না লাগলে পড়বেন না৷ তাই অভদ্রতা পরিচয় দিবেন না। ধন্যবাদ ]
আমার বউ এর গায়ে হাত তুলার সাহস পেলে কোথায় মিনতি। গতকাল পর্যন্ত তোমার বোন ছিলো আজকে তোমার বড় জ্যা মনে রেখো।
অভ্র শান্ত স্বরে কথাগুলো অপুকে চিৎকার করে ডাকা শুরু করলো। সাথে সাথে অপু দৌড়ে এসে জিজ্ঞেস করলো
–কী হয়েছে ভাইয়া।
–তোর বউ মিহির গায়ে হাত তুলেছে। আর কখনো যেনো এমন না দেখি।
–স্যরি ভাইয়া ভুল হয়ে গেছে মিনতির পক্ষ থেকে আমি ক্ষমা চাচ্ছি।
অপু অভ্রকে জমের মতো ভয় পায়।। মিহির অভ্রের এতো আদিক্ষেতা দেখে বললো,
এই রে লাস্ট মুহুর্তে একটা কথা বলে গেলাম ফেসে। এখন আবার কী করে আল্লাহ জানে। বেয়াদ্দপ উগান্ডা হাতি তোর জন্য ই তো আজকে আমার মিনতির কাছে থাপ্পড় খেতে হলো আবার তুই ই আদিক্ষেতা দেখাতে আসলি। মিহি এক পা দু পা করতে করে অভ্র থেকে কিছুটা দূরে সরে, দৌড়ে রুমে চলে আসলো।।
মিনতি পুরো দৃশ্যটা দেখলো। অপু আর অভ্র কথা বলতেছে। মিনতি মিহিকে এভাবে যেতে দেখে অবাক হয়নি। কারণ মিহির যে এসব অভ্যস আগে ও ছিলো।
মিহি মিনতি গ্রামের মেয়ে। বাবার কৃষক বলে কিন্তু অতটা ও নিম্ন ফ্যামিলির না। মোটামোটি মিনতির বাবা নিজের জমি ফসল বিক্রি করে খুব ভালো ই চলে তাদের। যেদিন কোনো অপরাধ করে বাসায় ফিরতো মিহি সেদিন যদি বুঝতে পারবো যে বাসার সবাই তার অপরাধের কথা জেনে গেছে তাহলে কখনো জানালা দিয়ে কখনো সিঁড়ি সাথে লেগে থাকা গাছ দিয়ে পালিয়ে যেতো।
অপুর সাথে কথা বলে মিহি বলে পিছনে তাকাতে দেখি মিহি নেই। অভ্র মিহি না দেখে
নিজের রুমের দিকে পা বাড়ায়।
অভ্র যেতে ই মিনতে অপুর দিকে তাকিয়ে বললো,
–অভ্র ভাইয়াকে এতো ভয় পাওয়ার কী আছে।
–ভাই বড় ধন রক্তের বাঁধন যদি হয় পৃথক নারীর কারন।
–এটা দিয়ে তুমি কী বুঝাতে চাচ্ছেন অপু।
–আমার ভাইকে আমি যথেষ্ট সম্মান করি ভয় ও পাই তাতে তোমার যেনো কোনো সমস্যা না থাকে। মিহি এমন ছেলে পেয়েছে মিহির ভাগ্য। তুমি আমাকে নিয়ে ভাবো মিহিকে নিয়ে ভাবার জন্য অভ্র আছে।
–বোনটা আমার তুমি বুঝবা কী অপু।
–হুম অযথা জামেলা করো না। বিয়েটা হয়ে গেছে মিনতি। তুমি এখন যা ই করো কোনো কিছু পরিবর্তন হবে না।
–তুমি বিয়েটা এতোটা স্বাভাবিক ভাবে নিচ্ছো কীভাবে অপু।
–অভ্র ভাইয়া যা করেছে ভালোর জন্য ই করেছে। তুমি এগুলো নিয়ে মাথা গামাও আমার বাবা এতো প্যারা নিতে ভালো লাগে না। চলো তো।
এটা বলে ই মিনতির হাত ধরে নিয়ে চলে যায়।
__________________
রুমে যেয়ে একটার পর একটা ড্রেস দেখছে মিহি। রুমে অনেকগুলো ড্রেস রাখা সবগুলো ই খুব সুন্দর সুন্দর। খুব সুন্দর লং কামিজ, গোল জামা সাথে লেগিংস্,প্যান্ট সব কিছু ই এনেছে দেখছি।।। কয়েকটা শাড়ি ও এনেছে দেখছি। শাড়িগুলো ভালো লেগেছে।
হঠাৎ অভ্র রুমে এসে দেখে পুরো বেডে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে ড্রেসগুলো।
–আপনার মনে আমাকে নিয়ে সন্দেহের পাহার থাকুক আমার কোনো সমস্যা নেই।
–তাহলে কী ভাববো আপনি সত্যি ই এটা করেছেন।
অভ্র ভ্রু কুঁচকিয়ে জিজ্ঞেস করলো।
–কী করেছি।
–আগে কী বিয়ে করেছিলেন।
–হোয়াট ননসেন্স।
–না মানে তাহলে মেয়েদের ড্রেস সম্পর্কে আপনার এতো ধারনা কীভাবে। বিয়ে না করলে তো এতো সুন্দর সুন্দর ড্রেস কিনতে পারতেন না।
অভ্র আস্তে আস্তে মিহির পাশে এসে দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
–অনি আমার বোন। সব সময় আমি ড্রেস কিনে দিতাম।
–ওহ আচ্ছা। এখন দূরে যান।
–আপনার কাছে আসার কোনো ইচ্ছে ই আমার নেই। ড্রেসগুলো সুন্দর করে গুছিয়ে রাখেন। বড্ড অগোছালো আপনি।
–ভালো হয়েছে আপনার কী।
–আমার কিছু না কিন্তু আপনার মতো একটা অপদার্থকে সহ্য করতে হবে কতো দিন কে জানে।
–ঠিক বলেছেন, আমার আর আপনার পরিস্থিতি এক মিস্টার অভ্র।
–কী বললেন।
মিহি কাপড় গুছানো শুরু করেছে,এমন ভাব করছে যেনো অভ্রের বলা আর কোনো কথা ই কানে যাচ্ছে না মিহির।
প্রায় রাত হয়ে এসেছে।
মিহি লং কামিজ সাথে পেন্ট পড়ে চুলগুলো ছেড়ে দিয়ে বেলকনিতে বসে আছে। মিনতির রিসিপশন আজকে সবাই বেশ আনন্দ করছে। এতোক্ষণ রেডি হয়ে সবাই নিচে চলে গিয়েছে। আজকে যদি বাসায় থাকতো তাহলে তো বাবা মায়ের সাথে বেশ আনন্দ করে বোনের রিসিপশনে আসতো। কতো ই না মজা করতো। কিন্তু অভ্র নামের মানুষটার জন্য তা আর হয়ে উঠেনি। বার বার কারণটা জানতে ইচ্ছে হয় কেনো উনি আমার সাথে এমন করলো??
যখন ই ভাবি জিজ্ঞেসা করবো কেনো আমাকে বিয়ে করেছে ঠিক তখন ই উনার রাগান্বিত মুখটা দেখে চলে আসি আর বলা হয়ে উঠে না।
অভি নামের মানুষটা তো সত্যি ই অনেক ভালোবাসতো অকারণে ই তাকে ঠকানো হলো।
–আমার মিষ্টি নাতবৌটা কই।
দাদিমার আওয়াজ শুনে মিহি চোখের পানি মুছে দাড়িয়ে গেলো।
–দাদিমা আমি বেলকনিতে।
–কী রে তুই তো আমার কাছে একবার ও দেখা করলি না দুপুরের পর থেকে। আমার নাতিকে পেয়ে সব ভুলে যাস নাকি।
বেলকনিতে আসতে আসতে কথাগুলো বললো দাদিমা। সাথে অভ্র ও আসলো।
–হে দাদিমা তোমার নাতি তো দেখতো সালমান খানের মতো চোখ ই ফেরানো যায় না।
এটা বলে অভ্রের মুখের দিকে তাকে ই দেখি। আমাকে ইশারায় বলছে, দেখে নিবো পরে।
–দেখ কতো সুন্দর আমার নাতি তা ও তুই উপহাস করিস। এখন রেডি হয়ে নে নিচে তোর বড়ির সবাই আসছে।
কথাটা শুনতে ই আমার গলাটা শুকিয়ে গেলো কী জানি কী হয়। মা বাবা ভালোবেসে
আগলে নেবে নাকি অপবাদ দিয়ে দূরে সরিয়ে নিবে। যদি ভালোবেসে আগলে নেয় তাহলে বলবো আমাকে বাসায় নিয়ে যেতে, এখন তো আর অভ্র আমাকে বিয়ে ভেঙ্গে দিবে বলে ভয় দেখাতে পারবে না।
অভ্র রুমে ডুকে ই আস্তে আস্তে আমার দিকে এগিয়ে আসছে আমি ভয়ে চোখ বন্ধ করে বললাম,
–আপনি আমার কাছে আসবেন না। আমি আপনাকে অনেক ভয় পাই।।।
অনেক্ষন হয়ে গেছে উনি কোনো কথা ও বলছে না আমাকে ও স্পর্শ করছে না,তাই একটু একটু চোখ খুললাম। অভ্রের দিকে তাকিয়ে দেখি আমার দিকে রক্ত বর্ণ চোখ দিয়ে তাকিয়ে আছে। আমি কিছু না বুঝার আগে ই আমার হাত ধরে টেনে বিছানা থেকে নামিয়ে অন্য একটা রুমে নিয়ে যায়।ঐ রুমের লাইটা অন করে আমাকে রেখে দরজা বন্ধ করে চলে আসে।
দরজা বন্ধ করে বাহির থেকে বলে গেলো।
–চিৎকার করবে না। আজ থেকে আপনার জায়গা এইখানে ই। আপনি ভাবলেন কী করে আপনার মতো মেয়েকে আমি স্পর্শ করবো। অভ্র চৌধুরীর রুচি এতো খারাপ না।
আমি এতো ই খারাপ তাহলে আমাকে জোর করে বিয়ে করলেন কেনো। আমার ভালোবাসা স্বপ্ন আশা সব ভেঙ্গে দিলেন কেনো। আমার অভিকে আমি কী উওর দিবো। ছেলেটা বড্ড বেশি ভালোবাসে আমায়।
বিছানায় শুয়ে ভাবতেছি কালকে আমার জীবনে হ কী কী হতে পারে। সবাই যখন জানতে পারবে মেনে নেবে কী আমায়। একা তো কখনো ঘুমায়নি ভয় করতেছে তাই লাইট অন করে শুয়ে পড়তে ই ঘুম দুচোখে চলে আসে।
___________________
সকাল বেলা, দিব্বাকে নিয়ে সবাই অনেক মজা করছে। যা ই হক কালকে রাত দিব্বার কাছে অনেক স্পেশাল ছিলো। কিন্তু অঞ্জলি যা করলো তার জন্য মনে মধ্যে বড্ড রাগ পুষে রেখেছে। এবাড়ির মানুষগুলো অনেক ভালো নয়তো ছোট বোনের এমন কাজের জন্য দিব্বাকে ও কথা শুনতে হতো।
দিব্বা একটা মেয়েকে ডেকে জিজ্ঞেস করলো,
–অভ্র ভাইয়ার রুমে আমাকে নিয়ে যেতে পারবে।
–হে চলো, কিন্তু অভ্র ভাইয়া অনেক রাগি যদি আমাকে বকা দেয়।
–কিছু হবে না। আমাকে নিয়ে যাও।
মেয়েটা আমার হাত ধরে উপরে নিয়ে যাচ্ছে এটা দেখে কয়েকজন জিজ্ঞেস করলো,
–ভাবি আপনি উপরে যাচ্ছেন কেনো।
আমি আস্তে করে উওর দিলাম।
–অঞ্জলি কাছে।
–ওহ্ অভ্রের বউ এর নাম কী অঞ্জলি নাকি। তা তারা রাতে হয়তো ঘুমায়নি এখন ঘুমাচ্ছে এখন গিয়ে ডিস্টার্ব করবেন কেনো।
এটা বলে ই সবাই হাসা শুরু করলো আমি কারো কথা না শুনে উপরে যেতে লাগলাম।
অভ্র ভাইয়ার রুমের সামনে যেতে ই দেখলাম রুমের দরজা লক করা ভেতর থেকে। তার মানে সত্যি ই ওরা ঘুম থেকে উঠে নাই। উদের কী কোনো কান্ড জ্ঞান নেই কয়টা বাজে এখন ও ঘুম থেকে উঠে নাই। তার উপর বাসা বর্তী মেহমান। আজকে তার উপর আজকে রিসিপশন।
এতো বড় একটা কান্ড ঘটিয়ে মেয়েটা কীভাবে দুপুর অব্দি ঘুমাচ্ছে। সামনে পাই একবার থাপ্পড় দিয়ে দাত ফেলে দিবো।
মনে মনে অঞ্জলিকে বকতে বকতে নিচে নেমে আসছে দিব্বা।
ঘুমের মধ্যে ই মনে হচ্ছে পাখির মতো উড়তেছে। অঞ্জলির খুব ভালোই লাগছে। ছোট বেলা থেকে কতো ইচ্ছে পাখির মতো ডানা মেলে উড়বে। মানুষের নাকি যে ইচ্ছে বাস্তবে পূরন না হয় তা স্বপ্নে পূরন হয়। অঞ্জলি ও স্বপ্নে সেই ইচ্ছে আজকে পূরণ হচ্ছে। সারাজীবন যদি শুধু এই স্বপ্ন ই দেখতে পারতাম। হঠাৎ শরীরে পানি পড়তে ই অঞ্জলি চোখ খুলে দেখে অভ্র দাড়িয়ে আছে। অঞ্জলি শাওয়ারের নিচে।তারমানে অভ্র কোলে থাকা অবস্থায় ই পাখির মতো উড়ার স্বপ্ন দেখেছে।
অভ্রকে এভাবে দাড়িয়ে থাকতে দেখে অঞ্জলি ভেজা শরীরে উঠে অভ্রকে জড়িয়ে ধরে।
অঞ্জলির এমন কাজে বেশ অবাক হয় অভ্র। মুহূর্তের মধ্যে ই অঞ্জলি অভ্রকে ছেড়ে আবার শাওয়ারের নিচে চলে আসে।
–এই মেয়ে আপনার সাহস তো কম না
–এই থামেন থামেন, আমাকে কোলে করে এনে ভিজিয়ে দিলেন কেনো। আমি একা ভিজবো নাকি তাই আপনাকে নিয়ে ই ভিজলাম।
— দশটার উপরে বাজে আপনি এখনো ঘুমাচ্ছে তো আর কী করার ছিলো,রাবিস
–বের হন আপনি।
–আমার ওয়াশরুম আমাকে বের হতে বলছে
–এই যে শুনেন আমি হেটে আপনার ওয়াশরুমে আসি নাই, সম্মান দিয়ে কোলে করে নিয়ে এসেছি।
–বিয়ে করেছেন কিন্তু দায়িত্ব পালন করতে পারেননি। আমার কোনো কাপড় তো আনিনি। দাদিমা পড়নের শাড়িটা দিয়েছিলো সাথে বাকি প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো ও।
উনি আর কোনো কথা না বলে চলে গেলেন। আমার কান্না পাচ্ছে আজকে মনে হয় ভিজা কাপরে ই দাড়িয়ে থাকতে হবে। হে আল্লাহ নিয়ে যাও আমাকে।
কিছুক্ষনের মধ্যে ই দাদিমা রুমে আসে। দাদিমেকে দেখে আমার কান্না থেমে যায়।
–এই তুই কী বোকা এভাবে কান্না করসিছ কেন। কান্না করিস না আমি শাড়ি নিয়ে এসেছি পড়িয়ে দিবো।
মহিলার বয়স হলে কী হবো বেশ শক্তিশালী আলহামদুলিল্লাহ। কী সুন্দর করে শাড়ি পড়িয়ে দেয়। নিজের কাজগুলো ও নিজে ই করতে পারে কারো করে দিতে হয় না। উনি শাড়ি পড়িয়ে আমাকে নিয়ে নিচে নামলেন।
দিব্বার মুখের দিকে তাকতে ই ভয় পেয়ে গেলাম। বেশ রেগে আছে। আমাকে তো না পারে চোখ দিয়ে ই গিলে খেয়ে ফেলবে।। দিব্বার এমন রুপ দেখে আমি অন্য দিকে ফিরে যাই।।।
সবাই সবার কাজে ব্যস্ত তাই আমি রুমে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালাম। কিন্তু কিছু দূর যেতে ই মনে পড়লো আমি কোন রুমে যাবো। অভ্রের রুমে নাকি আমাকে যে রুমে ঘুমাতে দিয়েছে ঐ রুমে…
হঠাৎ কেউ আমাকে তার দিকে ঘুরি সজোরে থাপ্পড় মারলো। তাকিয়ে দেখলাম দিব্বা
–আমার সুখ দেখে তোর সহ্য হয়নি অঞ্জলি। একেবারে আমার ই বড় জ্যা হয়ে চলে আসলি।আমি হলে না এই মুখ কাউকে দেখাতাম না। তোর মতো হিংসুটে মেয়ে আমি আর জীবনে ও দেখিনি। নিজের বোনের সুখ সহ্য হয় না।
আমার চোখ দুটো কোনো বাধা ই মানছে না। অশ্রু মুছে সামনের দিকে তাকাতে ই দেখি অভ্র দাড়িয়ে আছে। আমাকে আপু ভুল বুঝলো উনি খুশি তো এবার।
আপনি যদি এই মুহুর্তে আমাকে বিয়ে না করেন তাহলে আপনার বোনের ও আমার ছোট ভাইয়ের সাথে বিয়ে হবে না। কথাটা বলতে ই অঞ্জলির হাত ধরে টেনে নিয়ে গাড়িতে বসায় অভ্র। অঞ্জলি শুধু ছলছল নয়নে অভ্রর দিকে তাকিয়ে আছে। অঞ্জলি তো অভিকে বড্ড বেশি ভালোবাসে তাহলে কী করে পারবে অভ্রকে বিয়ে করতে।।।
–আমি পাড়বো না আপনাকে বিয়ে করতে।
–আপনার বোনের বিয়ে হতে চাইলে আর একটা কথা ও বলবেন না আপনি। ভালো করে ই জানেন আহাত আমার কথায় সব করে। আমি চাইলে এখন ই বিয়ে ভেঙ্গে দিবো।
বিয়ে ভেঙ্গে দিলে যে আমার বাবা মেনে নিতে পারবে না, সাথে সাথে গলায় দড়ি দিবে। খুব শখ করে বাবা আপুর বিয়ে দিচ্ছে। এতো বড় বাড়িতে আপুকে বিয়ে করিয়ে নিতে রাজি হয়েছে শুনে বাবা মা খুশিতে কান্না করে দিয়েছে। আমি কী করে পারি তাদের খুশি ভেঙ্গে দিতে।। অভিকে ও তো কষ্ট দিতে পারি না। বড্ড দোটানাতে আছি। গড়ির থামাতে ই দেখলাম সাইনবোর্ড এর বড় করে লিখা কাজি অফিস। অশ্রু শিক্ত নয়নে তাকিয়ে আছি লিখাটার দিকে। অভ্র এসে আমাকে একপ্রকার টেনে হিছড়ে গাড়ি থেকে নামালো।
আমার হাতটা শক্ত করে ধরে কাজি অফিসের ভেতরে নিয়ে গেলো।
–কীরে তোরা এসেছিস।
একটা মেয়ে আর একটা ছেলে বসে আছে একটা বেঞ্চিতে। দেখে মনে হচ্ছে অভ্রের বন্ধু।
–মেয়েটা কে।
আর তোকে এতো দিন বলে ও বিয়ে করাতে রাজি করতে পারিনি কেউ আর আজ তুই নিজে ইচ্ছেতে একটা মেয়েকে একপ্রকার জোর করে তুলে নিয়ে আসলি।
–তুই চুপ করবি এতো বেশি কথা বললে চলে যা আমার বিয়ে আমি নিজে ই করবো।
এটা বলার সাথে সাথে ছেলেটা চুপ করে যায়।। আর কথা বাড়ালো না।
বেশ কিছুক্ষণ পর,
বিয়ে শেষ করে এসে গাড়িতে বসলাম। আল্লাহ আমাকে এমন অগ্নিপরীক্ষাতে কেনো পাঠালো। এখন তো উনি আমাকে বাড়িতে নিয়ে যাবে দুইপরিবার কী মেনে নিবে এই বিয়ে।
–এই যে শুনুন।
উনার ঝাঁঝালো কণ্ঠে শুনে উনার দিকে তাকালাম।
–এতো ন্যাকামো করার দরকার নেই। বিয়ে টা শুধু ছয় মাসের জন্য। ছয়মাস পরে আপনাকে আমি নিজে ই মুক্ত করে দিবো।
আমি কিছু বললাম না। কিন্তু কেনো ছয়মাসের জন্য আমাকে বিয়ে করার কী দরকার ছিলো। আমি নিচের দিকে মাথা দিয়ে বসে আছি।।
_________________
বাসায় পৌছানোর পর,
গাড়ি একটা মস্ত বড় অট্টালিকার সামনে দাড় করালো। অভ্র গাড়ি থেকে নেমে কিছু বুঝে উঠার আগে ই আমাকে কোলে তুলে নিলো আমাকে কোলে তুলে নিলো।
–এই কী করছেন, আমি হেটে যেতে পারবো।
–বেশি কথা বললে কোল থেকে ফেলে দিবো কিন্তু।
ভয় পেয়ে আমি শুভ্র শর্ট খামচে ধরলাম। সামনের দিকে তাকাতে ই দেখলাম।
আমার সদ্য বিবাহিত বোন আর বোন জামাই দাড়িয়ে আছে। সামনে বরণ ডালা।
আগে বড় বউকে বরণ করে ঘরে তুলবে তারপর ছোট বউকে।
অভ্র বেশ জোরে এ কথাগুলো বললো। সবাই আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। লজ্জায় মরে যেতে ইচ্ছে করছে।
–এতো দিন বিয়ে করে না এখন একে বারে কাউকে না জানিয়ে বিয়ে করে নিয়েছে।
–ছোট বোনের মনে হয় বড় বোনের বিয়ে দেখে লোভ সামলাতে পারেনি। একেবারে বড় ভাইকে ফাসিয়ে বিয়ে করে নিয়েছে।।
–এক্কেবারে লাজলজ্জা মাথা খেয়েছে এখনকার ছেলে মেয়েরা এতোগুলো গুরুজন এর সামনে বউকে কোলে নিয়ে দাড়িয়ে আছে বলি কী মেয়ে কী হাটতে পারে না।
সবার কথাগুলো আমার শরীরে তীরের মতো আঘাত করছে। আমার আপু দিব্বার দিকে তাকাতে ই দেখি চোখের পানি সমানতালে গড়িয়ে পড়ছে ।
আমি অভ্রকে বললাম নামানোর জন্য কিন্তু চোখ রাঙ্গিয়ে তাকাতে ই চুপ হয়ে গেলাম।
‘আর কারো মুখে কোনো বাজে কথা শুনতে চাইনা। অভ্র অপু আমার কলিজা। আমার নাতিরা যা ই করুক আমি মেনে নিবো। বউমা আমার বড় নতবউকে বরণ করো আগে।’
অভ্রের দাদিমা। যার কথায় এবাড়ির প্রত্যেকটা মানুষ উঠে আর বসে।
দাদিমা এসে দিব্বা আর অপুকে সাইডে দাড় করিয়ে অভ্রকে সামনে নিয়ে আসেন। হাসি মুখে বরণ করে বাসায় ডুকান আমাকে। অভ্র কোল থেকে নামিয়ে সোজা উপরে চলে যায়। আমি শুধু অবাক হয়ে দেখছি এতো সহজে উনি সব মেনে নিলো।
আমাদের বরণ শেষ হলে দিব্বা আর অপুকে বরণ করার জন্য সামনে ডাকে।
–অপু তুই জানিস না বউকে কোলে করে বাসায় ডুকতে হয়। যা এ বাড়ির নিয়মের মধ্যে পড়ে।
–স্যরি দাদিমা আমার ভুল হয়ে গেছে।
–হয়েছে হয়েছে এখন কোলে তুলে ভেতরে প্রবেশ কর।
সকল নিয়ম শেষ হবার পর দিব্বাকে আমার অপুকে বসায় একসাথে। কিন্তু অভ্র না থাকায় দাদিমা অভ্রকে আসতে খবর পাঠায়।
কে জানি আমার নাতি আর নতবউ নিয়ে কী বলছিলে। আর কখনো যদি এসব কোনো ধরনের কথা শুনি তাহলে তোমরা কে আমি ভুলে যাবো। বজ্রকন্ঠ কথাগুলো বলে উনি জোরে জোরে অভ্রে ডাকা শুরু করলো।
আমি চোখ তুলে উপরে তাকাচ্ছি না আপু আমার উপর খুব রেগে আছে তা আমি ভালো ই বুঝতে পারতেছি।। কী করবো আমি কিছু ই তো করার ছিলো না। বাবা মা তো আমাকে মেরে ই ফেলবে এ কথা শুনতে পারলে।
অভ্র এসে আমার পাশে বসলো। সবাই ছবি নিতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। আমার পড়নে শাড়ি ছিলো। বোনের বিয়ে উপলক্ষে শাড়ি পড়েছিলাম। কতো সাজুগুজু করে ছিলাম। কাল এমন সময় ও জিজুর সাথে কতো মজা করবো ভাবতেছিলা। আর আজ আমি কারো বউ হয়ে বসে আছি।।
অভ্রের সব কজিনরা দিব্বাকে নিয়ে চলে গেলো। অভ্রের দাদিমা অভ্রের মা রেনু বেগমের দিকে তাকিয়ে বললেন।
–বউমা তুমি খাবার পাঠাও আমার রুমে। অঞ্জলিকে নিয়ে আমার রুমে চলে আয় অভ্র।।।
আমার শরীরে হাটার মতো শক্তি পাচ্ছি না তাও আস্তে আস্তে হেটে যাচ্ছি। আর অভ্র বানরের মতো লাফিয়ে লাফিয়ে উপড়ে উঠছে। উনি সিঁড়ির অনেকটা উপরে চলে গিয়েছেন।।। আমার দিকে তাকিয়ে বললেন
–আবার কোলে নিতে হবে নাকি।
আমি মাথা নাড়িয়ে নিষেধ করলাম। এবার শরীর সব শক্তি দিয়ে দ্রুত উঠতে লাগলাম।
_________________
আমি বেডের উপর বসে আছি। অভ্র বার বার চলে যেতে চাইলে ও দাদিমা আটকে রাখছে।
–আমার প্রশ্নের উওর না দিয়ে কোথাও যেতে পারবি না অভ্র।
–দাদিমা কাজ আছে আমার অনেক।
–বিয়ে করলি কেনো অঞ্জলিকে।
–প্রয়োজন ছিলো তাই।
এটা বলে ই বেরিয়ে গেলো। আবার ফিরে এসে বললো,
–অঞ্জলিকে আমার রুমে দ্রুত পাঠিয়ে দেও দাদিমা।
–অঞ্জলি আমার সাথে থাকবে।
–তাহলে আমি ও থাকবো তোমার সাথে।
বলে ই চলে যায়, আমি চমকে গেলাম। উনি এমন গা-ছাড়া ভাব কেনো করছেন যেনো কিছু ই হয়নি।।।
আমি মাথা নাড়িয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলাম। শাওয়ার ছেড়ে দিয়ে ইচ্ছে মতো কান্না করলাম অনেক্ক্ষণ।
বেশ কিছুক্ষন পর দরজায় নক করাতে উঠে দ্রুত কাপড় চেঞ্জ করে নিলাম।
বাহিরে বের হতে ই দাদিমা একটা রেড কালারের শাড়ি পড়িয়ে দিলো। খাবারের প্লেটটা সামনে ধরে খাইয়ে দিতে চাইলো।
কিন্তু এ অবস্থায় আমার ভেতরে খাবার ডুকছে না। অনেক কষ্টে অল্প খেয়ে আর খাবো না বলে দিলাম।
–অঞ্জলি তুই চিন্তা করিস না। সব ঠিক হয়ে যাবে।
এ কথা শুনে যেনো আমার কান্নার মাত্রা আরো বেড়ে গেলো। উনি আমাকে কিছুটা শান্ত করে অভ্রের রুমে রেখে দিয়ে আসলো।
–বিনা ফুলে ই বাসর কর। কারণ বিনা অনুমতিতে বিয়েটা করলি।
দাদিমা চলে গেলো। আমি বেড এর উপর দুই পা গুটিয়ে বসে আছি।
আমার নাম অঞ্জলি আজাদ। বাবা কৃষি কাজ করে। মা গৃহিণী। আমরা দুই বোন। আমি এইচএসসি পাশ করলাম৷ দিব্বা আপু অনার্স প্রথম বর্ষে পড়ে।
অভ্র চৌধুরী। বাবা মারা গেছে। উনারা দুই ভাই, এক বোন। অভ্র, অপু, অনি। অনি আপুর বিয়ে হয়ে গেছে। অভ্র অপু দুজনের ই পড়াশোনা শেষ করে নিজেদের বিজনেস দেখা শুনা করে।
হঠাৎ কারো দরজা বন্ধ করার শব্দ আমার কল্পনার জগৎ থেকে বের হলাম। এখন অভ্র ছাড়া কেউ এ রুমে প্রবেশ করবে না।
উনি তো ধর্মের সব নিয়ম মেনে আমাকে বিয়ে করেছেন তাহলে এখন আমার উপর তার অধিকার খাটাতে আসবে।
আমি অভি ভাইয়ার মেয়েকে না নিয়ে সামনে হাঁটা ধরলাম।তন্ময় আমাকে পেছন থেকে অনেক বার ডেকেছে কিন্তু আমি তাকাইনি।তখন বাচ্চা টিকে নিয়ে গিয়ে মনে হয়েছিলো যে আমার কারণে তো আমার নিজের বাচ্চাটা মারা গেছে।এখন যদি আমার কারণে অভি ভাইয়ার মেয়ের কোনো ক্ষতি হয় তাই আমি ওকে আর কোলে নিইনি।
তন্ময়-তুমি হাসপাতালের বাইরে কেনো এসেছো?
(বাইরে এসে)
আমি-আমার কেমন কেমন লাগছিলো তাই চলে এলাম।(মিথ্যা বললাম)
তন্ময়-তনু কি হয়েছে তোমার??
আমি-কি হবে??
তন্ময়-তুমিও কি আমার মত কষ্ট পাচ্ছো?
আমি-কষ্ট কেনো পাবো??
তন্ময়-এই যে সবকিছু ঠিক থাকলে আমাদের বাচ্চাটাও কিছুদিন পর পৃথিবীর আলো দেখতো।
আমি-এতো বাচ্চা বাচ্চা করছেন কেনো?(মাথা নিচু করে)
তন্ময়-কষ্ট হয় তাই.
আমি-(চুপ করে আছি)
তন্ময়-আচ্ছা তুমি পিচ্চিকে নিলেনা কেনো??
আমি-এমনে,,,
তন্ময়-এমনে এমনে ওকে নাওনি?
আমি-হুম,
তন্ময়-তনু সত্যি টা বলো
আমি-আমার শরীল খারাপ করছিলো তাই নিতে চাইনি যদি ভালো মন্দ কিছু হয়ে যায় তাই।
তন্ময়-ওহ তাই বলো।
আমি-হুম,,
তন্ময়-চলো এখন ভেতরে চলো।
আমি-তন্ময় আমার শরীলটা খারাপ করছে আমি এখন যেতে পারবোনা।
তন্ময়-ওকে চলো।
আমি-কোথায়??
তন্ময়-আরে মা আমার ক্যান্টিনে।
আমি-ওহ।
আমি আর তন্ময় ক্যান্টিনে বসে আছি।তন্ময় দু টো কফি আর সিঙ্গারা অর্ডার করেছিলো।আমি শুধু কফিটা খেয়ে বসে আছি।আর তন্ময় বসে বসে সিঙ্গারাও খাচ্ছে আর কফিও গিলছে।ওনার এমন শান্ত মুখের দিকে আমি তাকিয়ে আছি।
তন্ময়-কি??(সিঙ্গারা খেতে খেতে)
আমি-কিছু না।
তন্ময়-আমার দিকে নজর দিচ্ছো।
আমি-কি???
তন্ময়-হ্যাঁ,,,,সামনে একটা হ্যান্ডসাম ছেলে বসে থাকলে তো নজর দিবেই।
আমি-ফালতু কথা কম বলবেন।
তন্ময়-সত্যিই তো বললাম।
আমি-আমি আপনার স্ত্রী তন্ময় আমি নজর না দিলে কে দিবে শুনি।
তন্ময়-ওই,,,অতীত এ গেলে কিন্তু তুমি আমার বউ হতে না।
আমি-তো,,,(বলতে গিয়ে থেমে গেলাম,,আসলে তো অতীত এ গেলে উনি আমার দুলাভাই হতো আর আমি ওনার শালী)
তন্ময়-তনু,,,
আমি-হুম…
তন্ময়-আমি জাস্ট ফান করেছি তোমার সাথে প্লিজ সিরিয়াসলি নিওনা।
আমি-হুম।
তন্ময়-নাও সিঙ্গারা খাও।
আমি-না আমি খাবো না।
তন্ময়-শুনেছিলাম সিঙ্গারা তোমার প্রিয় তাই,,,
আমি-প্রিয় হলেও খেতে ইচ্ছে করছে না।
তন্ময়-ওকে তো হাসপাতালে চলো।
আমি-চলুন।
তন্ময় আর আমি হাসপাতালে ভাবীর কেবিনে ডুকে দেখি সবাই ওখানে বসে আছে।মেয়েটা ভাবীর কোলে শুয়ে আছে।সবাই এখন বাবুর নাম রাখার জন্য নাম চয়েস করছে।
অভি-তন্ময়,,,,আমার মেয়ের জন্য একটা নাম চয়েস করে দে না।
তন্ময়-আমি কি চয়েস করবো।
অভি-নিজের সময় তো আগেই চয়েস করেছিলি।
তন্ময়-আমি তো করেছি তুমি কেনো করলেনা।
অভি-আমি কি সময় পেয়েছি নাকি।
তন্ময়-নাম চয়েস করতে সময়ও লাগে।
অভি-চয়েস করে দিবি,,
তন্ময়-আমি পারবোনা।(মুচকি হেসে)
জেনি-ভাইয়া আমি চয়েস করেছিলাম।কিন্তু অভি ভাইয়া আমার নাম গুলোকে পাত্তাও দেয়নি।
তন্ময়-তুই কি নাম চয়েস করেছিস??
জেনি-কলি,মেহেক,রিহা,তমা…….
অভি-হয়েছে থাম থাম।
তন্ময়-কেনো কি হয়েছে??
অভি-এগুলো কোনো নাম।
তন্ময়-ভালোতো এগুলা থেকে একটা চয়েস কর।
অভি-না তুই পছন্দ করলে কর।
তন্ময়-ওকে ভেবে দেখি।
নিহা-ভাইয়া,,,(দরজার সামনে দাঁড়িয়ে)
অভি-আরে নিহা যে,,,আব্বু-আম্মু কই???
নিহা-ওরা আসছে কিন্তু আমি আমার প্রিন্সেসকে আগে আগে দেখার জন্য আগেই চলে এসেছি।
নিসা-নে কোলে নে।(নিহাকে ধরিয়ে)
নিহা-পুরো দুলাভাইর মতো।(বাবুকে কোলে নিয়ে)
অভি-দেখতে হবেনা মেয়েটা কার।
এসব নিয়ে অনেকক্ষণ হাসাহাসি হলো।ভাবীর মা আর বাবাও এলো।আমরা ওনাদের সাথে কিছু ক্ষণ বললাম।হঠাৎ নিহা বলে উঠে..
নিহা-আচ্ছা,,,বাবুর নাম কি রাখবে?
অভি-ওহ,,,তন্ময় চয়েস করেছিস???
নিহা-তন্ময়কে চয়েস করতে বলেছো ভালো করেছ।ও তো নাম রাখার মধ্যে ফাস্ট কিন্তু ভাগ্য খারাপ নামগুলো কাজে লাগলোনা।
নিসা-নিহা,,,(চোখ রাঙিয়ে)
তন্ময়-নিহা ঠিক বলেছে আমি চয়েস করল ওই নামগুলো কাজেই লাগবেনা।তারচেয়ে তুই এক কাজ কর তুই তনু কে চয়েস করতে বল।(নিহার দিকে তাকিয়ে বাঁকা হেসে)
নিহা-তনু কেনো চয়েস করবে।
অভি-যে কেওই করুক সমস্যা নেই।
নিহা-তাই বলে তনু,,,
অভি-তনু একটা নাম বলো।
আমি-আমি কি নাম চয়েস করবো??
তন্ময়-তুমি পারবে নাম চয়েস করো।
আমি বাবুটার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে চোখে বন্ধ করে ভাবতে লাগলাম কি নাম রাখা যায়।হঠাৎ আমার মাথায় একটা নাম এলো।
আমি-আনিশা,,,
তন্ময়-আনিশা???নট বেট,,তোর কেমন লেগেছে ভাইয়া??
অভি-ভালো বাট নিসা তোমার কেমন লেগেছে??
নিসা-আমাদের নামের সাথে মিলেছে দেখছি।
অভি-হুম।
তন্ময়-তোমার কেমন লেগেছে নিহা??
নিহা-নিজের বাচ্চার তো রেখেও রাখতে পারলেনা তাই শুধু অন্যের বাচ্চারই রাখতে পারলে।
তন্ময়-পেরেছি বলে রেখেছি।
আমরা সবাই বাড়ীতে চলে এলাম।এবার ভাবীর মা-বাবা আর নিহাও এসেছে।আমি এখন পর্যন্ত আনিশাকে কোলে নিইনি।এই কয়দিনে তন্ময় বেশ কয়েকবার আমার কোলে আনিশাকে দিতে চেয়ে ছিলো আমি ওকে না নিয়ে শুধু ইগনোর করতাম।কিন্তু আজ আনিশার আকিকা থাকায় সকালে আমরা আমি,জেনি,নিহা ভাবীর কাছেই ছিলাম।
নিসা-তনু আমি তো তোমায় একবারও আনিশাকে কোলে নিতে দেখলাম না।
আমি-ভাবী আসলে…..
নিসা-এত কাজ করো যে কোলে নেওয়ার সময়ও পাওনা।নাও এখন কোলে নাও(আমার সামনে আনিশাকে ধরে)
আমি-(আমার তো সদিন থেকে বাচ্চাদের নিতেই ভয় লাগে।এখন ভাবীকে কিভাবে বারণ করি)না ভাবী আমি পরে আনিশাকে কোলে নিব।
নিসা-কোলে নেওয়ার সময়ই পাওনা।
আমি-আমি পরে আনিশাকে কোলে নিবো।
নিহা-আপু তুই পরে কোলে নিতে দিস না।
নিসা-নিহা কি বলছিস এসব?(রেগে)
নিহা-রাগ দেখিয়ে লাভ নেই,,,যে নিজের বাচ্চাকে সামলাতে পারেনি সে তোর বাচ্চাকে কি সামলাবে তাই পরে হলেও দিসনা।
জেনি-নিহা তুমি কিন্তু ভাবীকে অপমান করছো।
নিহা-জেনি আমি কাওকে অপমান করছিনা শুধু সত্যি টা বলছি।
নিসা-কি এমন সত্যি বলেছিস তুই যে আমার মেয়ের ভালো হয়ে গেলল।তুই এখানে আসার পর থেকেই আমি ভয় ভয় আছি।যে কি না কি করে ফেলিস কি না কি বলে ফেলিস।শুন তুই আজ আমার মেয়ের আকিকায় থাকবিনা চলে যাবি।
আমি-ভাবী এসব কি বলছো???
নিসা-তুমি চুপ থাকো তনু।ও অনেক বেশি বেড়ে গেছে।তোমায় পছন্দ করে না বলে কি যা নয় তাই বলবে।(রেগে)
আমি-থাক বাদ দাওনা।
জেনি-হ্যাঁ ভাবী,,, এখন ছাড়ো এসব।
নিসা-ওকে বারণ করে দাও এসব করতে।
জেনি-ভাবী তুমি রুমে যাও।
আমি-হুম।
আমি রুমে এসে খাটে বসে পরলাম।আজ আমার চোখের পানি যেনো বাঁধ মানছে না।আমি কান্না করতেই আছি।আজ নিহার কথা গুলো সত্যি হলেও আমার শুনতে খুব খারাপ লেগেছিলো।
আমি কান্না করার সময় বুঝতে পারি কেও রুমে এসেছে তাই তারাতারি চোখের পানি মুচে ফেলি।
তন্ময়-তনু,,
আমি-হুম।
তন্ময়-আজ আকিকায় কি পরবে??
আমি-শাড়ী পরবো হয়তো এখনো ঠিক করিনি।
তন্ময়-শাড়ী পরোনা এটা পরো।(আমার হাতে একটা ব্যাগ ধরিয়ে)
আমি-কি আছে এতে??
তন্ময়-খুলে দেখো।
আমি বাক্সটা খুলে দেখি লেমন কালারের একটা লং ড্রেস।ড্রেস টা খুব ঘেরওয়ালা কিন্তু বেশি ডিজাইন নেই শুধু শুধু ছোট ছোট স্টোন বসানো।
তন্ময়-কেমন লেগেছে??
আমি-সুন্দর।
তন্ময়-এটা পরে মেচিং মেকআপ করবে,ডিজাইন করে খোপা করবে,গোল্ডেন কালারের লং কানের দুল পরবে,আর হাতে ব্রেসলেট পরবে।ব্যাস!!!
আমি-আপনিই রেডি করে দিয়েন।
এটা শুনে তন্ময় আমার দিকে তাকিয়ে কিছুক্ষণ হাসলো।হঠাৎ উনি আমার দিকে গভীর ভাবে তাকিয়ে আমার গালে হাত দেয়।
আমি-কি হয়েছে??
তন্ময়-কেনো কেঁদেছো তুমি?
আমি-ক কই??(ঘাবড়ে গিয়ে)
তন্ময়-কি কি বলেছে আমাকে বলো তনু।
আমি-আরে আমি কাঁদিনি।
তন্ময়-তোমার চোখ লাল হয়ে আছে আর তুমি বলছো তুমি কাঁদোনি।
আমি-আরে এমনি চোখে কি একটা পরেছিলো।
তন্ময়-বাচ্চা নিয়ে আবার কেও কথা বলেছে।
আমি এবার নিজেকে সামলাতে পারাম না তন্ময় কে জরিয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করলাম।তন্ময় স্বাভাবিক হয়ে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।
আমি-তন্ময়,,,আমি মা হওয়ার যোগ্য না তাইনা??(কেঁদে)
তন্ময়-চুপ,,(ধমক দিয়ে)মা হওয়ার যোগ্য না মানে টা কি???তুমি মা হবে আর সঠিক সময়েই হবে।
আমি-আমি আমার সন্তানকে মেরে ফেলেছি তন্ময়।
তন্ময়-আর একবার এ কথা বললে আমি কিন্তু ভুলে যাবো তুমি আমার স্ত্রী।
আমি-আমি তো সত্যিটাই বললাম…..
তন্ময়-কোনো সত্যি বলোনি তুমি,,,,এখন বলো তোমাকে কে কি বলেছে??
আমি এবার তন্ময়কে হাসপাতাল আর এখন এর ঘটনাটা বললাম।তন্ময় এসব শুনে আমার দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে আছে।
তন্ময়-এই কারণে তুমি আনিশাকে নাওনি।(রেগে)
আমি-আমার যেটা মনে হয়েছিলো…..
তন্ময়-মাথা মনে হয়েছিলো তোমার।তুমি আনিশা কে কোলে নিলেই আনিশার ক্ষতি হবে তাইনা।ওয়েট!!!(বলে চলে গেলো)
তন্ময় চলে গেলে আমি আবার খাটে বসে পরি।কিছুক্ষণ পর তন্ময় আবার রুমে আসে কিন্তু উনি একা আসেনা আনিশাকেও নিয়ে আসে।উনি এসে এই হুট করে আমার কোলে আনিশাকে দিাকে দিয়ে দেয়।এমন হওয়ায় আমি চমকে উঠি।
তন্ময়-তোমার কোলে দিয়েছি তো,,,আনিশা কি কাঁদছে আনিশার কি কোনো ক্ষতি হয়েছে??
আমি-তন্ময় ওকে নিন।
তন্ময়-আনিশা কে দিয়ে গেছি ওর খেয়াল রাখবে আর নিজেকে নরমাল করবে।(বলে চলে গেলো)
তন্ময় চলে গেলে আমি আনিশার দিকে তাকাই।আনিশা আমার হাতটা ধরে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।আনিশা কে এখন এতো কাছ থেকে দেখে ওকে নিয়ে এখন আর আমার কোন ভয় হচ্ছেনা।
***দুপুরে***
আমি রেডি হচ্ছিলাম কারণ লোকজন আসা শুরু করেছে।আমি ঠিক সেই ভাবে রেডি হচ্ছি যেভাবে তন্ময় আমাকে রেডি হতে বলেছিলো।আমি রেডি হয়ে যেই রুম থেকে বের হলাম ঠিক তখনই আমি ইমনের সামনে পরে গেলাম।ইমন আমাকে দেখে পুরো হা করে তাকিয়ে আছে।
আমি-কি???
ইমন-(নিশ্চুপ)
আমি-ইমন??[জোরে)
ইমন-(ধ্যান ভাঙ্গে)কোথায় যাচ্ছো??
আমি-কোথায় যাবো।
ইমন-এভাবে রেডি হলে যে।
আমি-পাগল হয়ে গেছো বাড়ীতে আকিকা অনুষ্ঠান আর আমি রেডি হবো না।
ইমন-ওহ সরি সরি,,,কি যে বলছি।
আমি-তুমি ঠিক আছো??
ইমন-হুম,,,তনু।
আমি-বলো।
ইমন-আমরা কি এখন বন্ধু হয়ে থাকতে পারিনা।
আমি-তুমি চাইলে অবশ্যই পারবো।
ইমন-মানে???
আমি-মানে তুনি যদি আমাকে বন্ধুর মতো ভাবো তাহলে আমরা বন্ধু হয়ে থাকতে পারি।
ইমন-আমি তোমাকে বন্ধুই ভাবি।
আমি-আমি তাহলে নিচে যাই।(বলে চলে এলাম)
ইমন-(আমি আসলে নিজেই তোমাকে আমার থেকে দূরে করে দিয়েছি তনু।আমি যদি তখন তোমার মর্মটা বুঝতাম তাহলে আজ তুমি আমার হতে।কিন্তু আমার ভুলের জন্য তুমি আমার পাশে নেই।যাই হোক,,,আজ থেকে তুমি আমার বন্ধু)
আমি নিচে এসে কিছু কাজ করছিলাম।কাজ করছিলাম বলতে ফল খাটছিলাম।হঠাৎ জেনি আমার সামনে এসে দাঁড়ায়।
আমি-কি জেনি??
জেনি-তোমাকে ভাইয়া ডাকছে।
আমি-অভি ভাইয়া আবার কেন ডাকলো,,,আচ্ছা আমি গিয়ে দেখে আসি।(বলে যেতে লাগলাম)
জেনি-ও ম্যাডাম,,
আমি-কি??
জেনি-অভি ভাইয়া ডাকছে না।
আমি-তাহলে???
জেনি-তন্ময় ভাইয়া ডাকছে।
আমি-কিন্তু আমি তো কাজ করছি।
জেনি-সেটা আমি করে নিবো তুমি যাও।
আমি-না জেনি আমিই করছি,,তুমি তোমার ভাইয়াকে বলো ভাবি কাজ করছে।
আকিকার অনুষ্ঠান শেষ হতে হতে প্রায় বিকাল হয়ে গেছে।তন্ময় আমার পাশে পাশেই ছিল কিন্তু তেমন কথা বলেনি।অনুষ্ঠানে অনেকে আমার কথাও জিজ্ঞেস করেছে।যে কিভাবে মিসক্যারেজ হলো,কয় মাসের সময় মিসক্যারেজ হল ইত্যাদি।
কিন্তু এসবে তেমন কেও পাত্তা দিলোনা।আমরা রাতে সবাই বসে কিছুক্ষণ গল্প করে যে যার রুমে ঘুমাতে চলে গেলাম।
আমি-আজকে অনেক ভালো লেগেছে তাইনা?
তন্ময়-হুম,,,(ফোন টিপতে টিপতে)
আমি-আসলেই আজ আমার খুব খুশি খুশি লাগছে।(তন্ময়ের পাশে বসে)
তন্ময়-তনু,,
আমি-হুম।
তন্ময়-তুমি কত সহজ সরল।
আমি-এমন কেনো মনো হলো??
তন্ময়-চালাক ও আছো।
আমি-কি বলছেন এসব???
তন্ময়-আমি ডাকলে আসোনা অথচ ভাইয়া ডাকলে দৌড়ে চলে যাও।
আমি-আসলে আমি তো তখন কাজ করছিলা,,,,,
তন্ময়-কাজ করছিলে,,,,(মুচকি হেসে)
আমি-সরি,,,,
তন্ময়-সরি বললেই সবকিছুর ক্ষমা হয়না।(আমার দিকে এগিয়ে)
আমি-এগোচ্ছেন কেনো???(পিছাতে পিছাতে)
তন্ময়-তুমি পিছচ্ছো কেনো??(আমাকে খপ করে ধরে)
আমি-আপনি কি এখন আমায় শাস্তি দিবেন???
তন্ময়-উু হু আদর করবো।
আমি-কি??(অবাক হয়ে)
তন্ময়-হুম(বলে আমাক ধরে শুইয়ে দিলো)
“”বেশ কিছুদিন পর””
আজকে সকাল থেকে আমি অপেক্ষা করছি শুধু সবার থেকে শুভ বিবাহ বার্ষিকী টা শুনার জন্য।কালকে রাত ১২ টার পরে তন্ময় আমাকে উইস করেছিলো।কিন্তু অবাক করা বিষয় হচ্ছে সবাই কথা বলছে,হাসছে শুধু উইস করা ছাড়া।
সাবিয়া-কি হয়েছে তনু???
আমি-ক কই???(রান্না করতে করতে)
সাবিয়া-আজ তুমি রান্না করো না।
আমি-কেনো???
সাবিয়া-আমি রান্না করবো তাই,,,
আমি-তুমি কেনো রান্না করবে মা???
সাবিয়া-আজ করি কিছু হবে না।
আমি-আচ্ছা।(বলে চলে এাম)
আনি রুমে এসে দেখি তন্ময় কি একটা করছে।আর যেটা করছে সেটা বার বার লুকানোর চেষ্টা করছে।আমি আস্তে আস্তে গিয়ে হুট করে ওনার পাশে বসে যাই আর এতে উনি বেশ ঘাবড়ে যায়।
তন্ময়-উফ,,,তুমি একবার ডাকবে না।
আমি-কি করছেন??
তন্ময়-কিছু না।
আমি-তন্ময় আমি মাত্র দেখলাম আপনি কিছু একটা লুকিয়েছেন।
তন্ময়-ওকে,,,চোখ বন্ধ করো।
আমি-কেনো??
তন্ময়-আরে বন্ধ করোনা।
আমি-আচ্ছা।(বলে চোখ বন্ধ করলাম)
কিছুক্ষণ পর””””
তন্ময়-এবার খুলো।
আমি চোখ খুলার সাথে সাথে অবাক হয়ে যাই।কারণ তন্ময় আমার সামনে বিভিন্ন রংয়ের চুরি,
শাড়ী আর ৫ জোড়া নুপুর রেখেছে।
আমি-এগুলা কি???
তন্ময়-তোমার বিবাহ বার্ষিকীর উপহার।
আমি-এতকিছু???
তন্ময়-এগুলা কি তোমার চিনা চিনা লাগছেনা।
আমি-না,,,
তন্ময়-তোমাকে নিয়ে প্রথম যেদিন ঘুরতে গিয়ে ছিলাম তখন তুমি এই জিনিস গুলো পছন্দ করে ছিলে বাট ভয়ে আমাকে বলোনি।
আমি-আপনি কি করে জানলেন??
তন্ময়-কারণ আমি তো তোমার সাথে ছিলাম।
আমি-আপনি আমার মনের কথা বুঝেছিলেন???
তন্ময়-বুঝেছি বলেই তো কিনে রেখেছিলাম যাতে বিশেষ কোনো দিনে দিতে পারি।
আমি-love You Tonmoy….(জরিয়ে ধরে)
তন্ময়-Love you too…
আমি-আজকে আমায় ঘুরাতে নিবেন??
তন্ময়-কখন যেতে চাও???
আমি-আপনি যখন নিয়ে যাবেন।
তন্ময়-তাহলে কিছুক্ষণ পরই রওনা দিই।
আমি-ওকে,,,,
বিকালের একটু আগে আমি আর তন্ময় ঘুরতে বের হই।তন্ময় আমাকে আজ অনেক জায়গায় ঘুরিয়েছে।আমরা ঘুরাঘুরি করে সন্ধ্যার সময় বাড়ীতে ফিরলাম।কিন্তু বাড়ীতে ডুকে আমরা অবাক হয়ে গেলাম।কারণ বাড়ীটা পুরো অন্ধকার হয়ে আছে আর এতে আমি ভয় পেয়ে যাই।
তন্ময়-মা,,,কোথায় তোমরা???জেনি,ভাইয়া,,,
আমি-ওরা কি বাড়ীতে নেই???
তন্ময়-বাড়ীতে না থাকলে দরজা খোলা থাকতো নাকি।
আমরা কিছুক্ষণ ওদেরকে ডাকাডাকি করার পর হঠাৎ ঘরের সব লাইট জ্বলে উঠে সাথে রংবেরং এর লাইটও জ্বলে।সামনে তাকিয়ে দেখি সবাই একরা কেক নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।এসব দেখে আমি আর তন্ময় তো জাস্ট অবাক।
সবাই-Happy Anniversary tonmoy & tonu.
আমি-😱😱😱
তন্ময়-😳😳😳
অভি-কিরে এভাবে তাকিয়ে আছিস কেনো?
তন্ময়-তোমরা এসবও করো।
অভি-তো কি মনে হয়।
তন্ময়-Thank you…(জরিয়ে ধরে)
জেনি-ভাবী কেমন লাগলো সারপ্রাইজ??
আমি -তোমরা এমন করবে আমি ভাবিও নি।
নিসা-তো কি ভেবেছিলে যে আমরা ভুলে গেছি।
আমি-ধন্যবাদ।
সবাই আমাদের উইস করে কেকের সামনে দাঁড় করিয়ে দিলো।আর আমরাও হাসিমুখে যেই কেক কাটতে যাবো ইমন ওমনি বলে উঠে।
ইমন-ওয়েট ওয়েট,,,
তন্ময়-কি??
ইমন-এই কেকটা কাটা মানে তোমাদের নতুন জীবনের শুরু।সো কেকটা কাটার আগে কিছু একটা প্রমিস করো।যেমনঃ-আমরা দুজন সারা জীবন একসাথে থাকবো মানে তনুর তন্ময় আর #তন্ময়ের_তনু হয়ে থাকবো আর কারোর না।
এবার আমি আর তন্ময় একে অপরের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলাম।আর নতুন জীবনের জন্য প্রার্থনা করে কেকটা কাটলাম।
তন্ময়ের কথায় আমি ছাদ থেকে আসার কিছুক্ষণ পর শাড়ী পরছিলাম।হঠাৎ তন্ময় এসে আমাকে পেছন থেকে জরিয়ে ধরে।ওনার এমন হুট করে জরিয়ে ধরায় আমি অবাক হয়ে যাই।কিন্তু তার চেয়েও বেশি অবাক হই ওনার কান্না করা দেখে।
আমি-কি হয়েছে তন্ময়??(ওনার দিকে ফিরে)
তন্ময়-(আবার আমাকে জরিয়ে ধরে)
আমি-কাঁদছেন কেনো??
তন্ময়-আমাকে ক্ষমা করে দাও তনু।
আমি-কেনো কি হয়েছে???
তন্ময়-আমি তোমার সাথে এই কয়েকদিন খুব খারাপ ব্যবহার করে ফেলেছি।(কান্না করে)
আমি-সেটার জন্য কাঁদছেন??
তন্ময়-আই এমন সরি।
আমি-আপনি তখন রাগের মাথায় এমন করেছেন তাই এখন আর কাঁদতে হবেনা।(ওনার চোখের পানি মুচে)আমি আপনাকে সবসময় হাসি খুশি দেখতে চাই।
তন্ময়-সরি।(বলে আবার জরিয়ে ধরে)
(কি হলো এটা???তন্ময়ের হঠাৎ এতো পরিবর্তন?ইমন কি এমন বলল যে তন্ময় এতো ভালো হয়ে গেছে।চলুন তো ফ্লাসব্যাকটা ঘুরে আসি)
/\ফ্লাসব্যাক/\
তন্ময়-কি বলবে ইমন??
ইমন-তুমি কি জানো তনুর আগে রিলেশন ছিল??
তন্ময়-(কিছুক্ষণ থেমে)হুম জানি।
ইমন-তনু বলেছে??
তন্ময়-হুম,,,আচ্ছা তুমি কিভাবে জানলে যে তনুর আগে রিলেশন ছিল???
ইমন-ও আমাকে ওর এক্স হিসেবেও নিজের মনে রাখেনি।কারণ আমি ওর সাথে খুব অন্যায় করে ফেলেছি।
তন্ময়-কি করেছে তুমি ওর সাথে??
এরপর ইমন সব সত্যি তন্ময়কে বলে দিলো ওর তনুকে ঠকানো,তন্ময়কে তনুর বিরুদ্ধে মেচেজ করা থেকে সব সত্যি বলে দিলো।
তন্ময়-ইমন তুই এতো খারাপ।
ইমন-আসলেই আমি অনেক খারাপ।তনুর কাছে তো হয়তো আনি খারাপ ও না।খারাপ থেকেও খারাপ।কিন্তু তুমি ওর কাছে খারাপ হয়োনা।
তন্ময়-মানে???
ইমন-তনুর সাথে আমার রিলেশন চলা কালীন ও আমার কাছে একটা কুইন ছিলো।যাকে তখন আমি নিজের দোষে হারিয়ে ফেলেছি।কিন্তু এখন ওই কুইন টা তোমার।তোমাকে তনুর কিং হয়ে ওকে ভালোবাসতে হবে।পারবে তো???
তন্ময়-আমি তনুকে তোমার থেকেও বেশি ভালো বাসি ইমন।
ইমন-তা তো ভাসতেই হবে কারণ তনু ভালোবাসা পাওয়ার মতো একটা মেয়ে ঘৃণা পাওয়ার নয়।
তন্ময়-তুমি ওকে ভালোবাসতে ইমন???
ইমন-খুব ভালোবাসতাম কিন্তু খনিকের ভালো বাসাটা হয়তো টিকতে চায়নি।ভাইয়া আমি নিজের দোষে তনুকে পেয়েও হারিয়ে ফেলেছি।তুমি ওকে পেয়েছো কিন্তু হারিয়োনা প্লিজ।
তন্ময়-তোমার কেনো মনে হয় আমি তনুকে হারিয়ে ফেলেবো।
ইমন-তিন বছর আগে যেটা আমি করেছি সেটা এখন তুমিও করছো।তাই বলছি তুমি ওকে হারিয়ো না প্লিজ।
তন্ময়-আমি তনুকে হারাতে পারবোনা ইমন।
ইমন-তাহলে আমার মতো করো না।
তন্ময়-আমি তনুকে হারাতে দিবো না।(বলে দৌড়ে নিচে চলে গেলো)
প্রেজেন্টঃ-
আমি এখন বাবার জন্য চা বানাচ্ছি।চা আসলে আমাকে বানাতে বলেনি বলেছিলো মা কে।কিন্তু এখন যেহেতু আমি কাজ করতে পারবো তাই মা কে বারণ করে আমিই চা টা বানাচ্ছি।চা বানানোর সময় শুধু তন্ময়ের কথা মনে পরছিলো।তখন তন্ময় আমাকে জরিয়ে ধরে অনেকবার সরি বলে। কিন্তু হঠাৎ এমন কেনো করলো সেটাই আমি বুঝতে পারছি না।চা বানানো হয়ে গেলে চা টা নিয়ে আমি বাবার কাছে চলে গেলাম।
আমি-বাবা তোমার চা।(চা টা দিয়ে)
তন্ময়ের বাবা-চা তুই এনেছিস??(চা টা নিয়ে)
আমি-হুম!!
তন্ময়ের বাবা-তোর মা কই??(চায়ে চুমুক দিয়ে)
আমি-মা আছে তো।
তন্ময়ের বাবা-চা টা পুরা তোর বানানো চায়ের মত হয়েছে।(মুচকি হেসে)
আমি-আমই তো বানিয়েছি।
তন্ময়ের বাবা-কি তোকে এখন কাজ করতে দিয়েছে??(রেগে)
আমি-আরে বাবা কেও করতে দেয়নি আমি নিজে এই করেছি।(বাবার পাশে বসে)
তন্ময়ের বাবা-অনেক দিন পর শাড়ী পরেছিস।
আমি-হুম।(বাবার কাঁধে মাথা রেখে)
তন্ময়ের বাবা-কি হয়েছে???
আমি-কত বড় ঘটনা ঘটে গেলো তাও এত স্বাভা বিক কিভাবে রয়েছো??
তন্ময়ের বাবা-মাঝে মাঝে একটু স্বাভাবিক থাকতে হয়।
আমি-হুম(নিঃশব্দে কাঁদছি)
তন্ময়ের বাবা-কাঁদছিস কেনো??
আমি-তন্ময় খুব খুশি ছিলো।(কেঁদে)
তন্ময়ের বাবা-তো???
আমি-কি??(বাবার দিকে তাকিয়ে)
তন্ময়ের বাবা-যে চলে গেছে সে আর ফিরে আসবেনা।দেখবি তন্ময় এটা মাথায় রেখে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে যাবে।
আমি-হুম”!!
তন্ময়ের বাবা-তুই কিছুদিন তোর বাড়ী থেকে ঘুরে আয় তাহলে তুই স্বাভাবিক হয়ে উঠবি।
আমি-ঠিক আছে।
তন্ময়ের বাবা-তুই চাইলে আজকেই চলে যা।
আমি-না কালকে চলে যাবো।
তন্ময়ের বাবা-ঠিক আছে।
আমি-আচ্ছা আমি এখন আসি।
রাতে আমরা সবাই ডিনার করে যে যার রুমে চলে এলাম।আমিও আমাদের রুমে এসেছি কিন্তু কিছু ক্ষণের জন্য।আমি রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে শাড়ীটা খুলে একটা কালো কামিজ আর কালো প্লাজো পরে নিলাম।রুমে এসে দেখি তন্ময় খাটে শুয়ে আছে আমার দিকে মুখ করে।আমি আয়নার সামনে বসে চুলে একটা বেনি করে নিলাম।মুখ ধোয়ায় মুখ থেকে বিন্দু বিন্দু পানি পরছে যা তনু কে আরো সুন্দর করে তুলছে।আমি উঠে তন্ময়ের দিকে তাকিয়ে রুমে থেকে বের হয়ে গেলাম।
জেনি-ভাবী তুমি এতো দেরি করলে কেনো??
আমি-সরি আসলে শাড়ী চেঞ্জ করে জামা পরেছি তো তাই লেট হয়ে গেলো।
জেনি-রোজই তো জামা পরো আজ আর নতুন কি??
আমি-সবসময় তো আর পেটে ব্যাথা করতো না।
জেনি-(কিছুক্ষণ চুপ থেকে)ওকে ঘুমাও।
আমি-হুম!!
জেনি-ভাবী,,,
আমি-বলো??(বালিশ ঠিক করতে করতে)
জেনি-বিয়ে হলে মেয়েদের অনেক কষ্ট তাইনা??
আমি-কই না তো।
জেনি-মিথ্যা বলো না তো।
আমি-কার কাছে কেমন লাগে সেটা আমি জানি না বাট বিয়ের পর আমি কোনো কষ্ট পাইনি।
জেনি-তুমি তো আরো বেশি কষ্ট পেয়েছো।
আমি-এটা তোমার ভুল ধারণা।
জেনি-ওকে ঘুমাও।
আমি-হুম।(বলে শুয়ে গেলাম)
শোয়ার বেশ কিছুক্ষণ পর আমার ফোনে একটা মেচেজ আছে।আমি প্রথমে পাত্তা না দিলেও পর পর তিনটা মেচেজ একসাথে আসায় আমি ফোন টা অন করে দেখি তন্ময়ের মেচেজ।
তন্ময়-ওই এখনো আসছো না কেনো???
কোথায় আছো তুমি??
কথা বলছো না কেনো??
আমি-আমি কি জানতাম নাকি যে আমাকে আজকে আপনার সাথে ঘুমাতে হবে।
তন্ময়-যাই হোক তুমি এখন রুমে আসো।
আমি-আসবোনা।
তন্ময়-কি বললে??
আমি-আরে জেনি আছে তো।
তন্ময়-কিছু হবে না তুমি আসো।
আমি-তন্ময় প্লিজ।
তন্ময়-তুমি যদি এখন এখানে না আসো তাহলে কিন্তু আমি ওখানে চলে আসবো।
আমি-ওকে আসছি।
দূর ওনার মেচেজ এর রিপ্লাই দেয়া উচিত ছিলো না।এবার আমাকে ওখানে যেতে হবে।আমি আস্তে আস্তে জেনির দিকে তাকালাম।দেখলাম জেনি ঘুমিয়ে গেছে তাই আমি আস্তে আস্তে নেমে গিয়ে দরজা খুলে বেরিয়ে গেলাম।আমাদের রুম এর সামনে দাঁড়িয়ে আছি কিন্তু ভেতরে যেতে ভয় করছে।হঠাৎ দরজাটা অটোমেটিক খুলে গেলো।
তন্ময়-এতো দেরি হলো কেনো???
আমি-কই???
তন্ময়-আজ কেনো গিয়েছো??
আমি-আমি ভেবেছি আজও আমি থাকলে আপনি রাগ করবেন তাই আর কি।
তন্ময়-ওসব নিয়ে তো সরি বলেছিলাম।
আমি-সরি””””(মাথা নিচু করে)
তন্ময়-ওকে আসো।
আমি-হুম।(ভেতরে এসে)
তন্ময়-কালো রংয়ে তোমাকে খুব সুন্দর লাগে।
আমি-(নিজের দিকে তাকিয়ে)আপনারই বউ।
তন্ময়-আর আমার ভাই ইমনের এক্স।
আমি-কি???
তন্ময়-আমি সব জানি।
আমি-ইয়ে তন্ময়,,,
তন্ময়-আমি প্রথম প্রথম তোমাকে কত কিছুর জন্যই না ভুল বুঝেছিলাম।কিন্তু তুমি ছিলে পুরো নির্দোষ।
আমি-(মাথা নিচু করে আছি)
তন্ময়-চলো ঘুমাতে আসো।
আমি-হুম।
আমি খাটে উঠে যেই বালিশে শুতে যাবো তন্ময় ওমনি আমায় নিজের বুকের মধ্যে জরিয়ে ধরে। ওনার এমন কান্ডে আমি ওতটা অবাক হইনা বরং ভালোই লাগে।ওনার বুকে এভাবে থাকতে থাকতে একপর্যায়ে আমি ঘুমিয়ে যাই।
সকালে—
তন্ময় ঘুম থেকে উঠে তনুকে কোথাও দেখলোনা। ও পুরো বাড়ী খুঁজেও তনুকে কোথায় পেলোনা।পরে মাকে জিজ্ঞেস করলে বলে তনু ওর বাবার বাড়ী গেছে।ব্যাস তন্ময়ের রাগ বেড়ে গেলো তনুর উপর।একে তো গেল গেল তার উপর আবার না বলে গেল।তন্ময় রাগে নাস্তা না করেই বাড়ী থেকে বের হয়ে গেলো।
-চলবে
#তন্ময়ের_তনু
#পর্ব_২৯
#Jechi_Jahan
আমি আম্মুর কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছি।আম্মু আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে আর গল্প শুনাচ্ছে।আমি এগুলোই চাইতাম মায়ের থেকে মা যেনো আমাকে আপুর মতো ভালোবাসে।আজ বাড়িতে আসার সাথে সাথে মা আমাকে জরিয়ে ধরে কান্না করে দেয়।আর আমার কাছে ক্ষমা আমাকে ছোট থেকে অবহেলা করার জন্য।আমি ও মাকে পেয়ে খুশিতে কান্না করে দিই।
আমি-আচ্ছা আম্মু,,,
রাজিয়া-কি???
আমি-আমি যখন তোমার পেটে ছিলাম তখন তোমার কেমন অনুভব হতো???
রাজিয়া-তুই পেটে থাকতে আমি খুব খুশি ছিলাম।বলতে গেলে খুশির শেষ ছিলোনা।আমি সবসময় চাইতাম আমার একটা ফুটফুটে মেয়ে হোক।আর দেখ আল্লাহ আমাকে একটা না দু দুটো ফুটফুটে মেয়ে দিয়েছে।আমি খুবই খুশি ছিলাম।
আমি-আমি এসেছি খুশি হওনি???(কিভাবে আনবো বলো তোমাদের জামাই তখন ঘুমাচ্ছিল।দেখে মনে হলো যেনো ১০ বছর পরে ঘুমিয়েছে। পুরো হা করে ঘুমাচ্ছিলো তাই তো আমি আসার সময় জাগিয়ে বলিনি যে এখানে আসছি।)
রাজিয়া-যাহ খুশি হয়েছি না কি হয়েছি।এমনে জামাই সহ আসলে ভালো হতো।
আমি-হুম।(আসার সময় বলিনি এখন একটা ফোন করেও বলছিনা।উনি ঘুম থেকে উঠে যদি শুনে যে ওনাকে না জানিয়ে আমি এখানে এসেছি তাহলে তো খুব রেগে যাবে।বেশ তো বেলা হয়ে গেল এখন নিশ্চয়ই উঠে গেছে)
রাজিয়া-কিরে কি ভাবছিস???
আমি-আমি বাড়ীতে একটা ফোন দিয়ে আসি।(বলে মায়ের কোল থেকে উঠে গেলাম)
রাজিয়া-যা কল করে আয়।
আমি রুমে এসে ওনাকে কল করি কিন্তু উনি কল রিসিভ করে না।আমি বারবার কল করলাম কিন্তু উনি কল রিসিভই করেনি।আমি ভাবলাম এখনো ঘুমাচ্ছে তাই জেনিকে কল দিলাম।
জেনি-ভাবী আসসালামু আলাইকুম।
আমি-ওয়ালাইকুম আসসালাম।
জেনি-যেতে না যেতেই মিস করা শুরু করে দিলে।
আমি-তা আর বলতে।
জেনি-কি বলবে বলো??
আমি-তোমার ভাইয়া কই???
জেনি-ও তাহলে আমাদের মিস করছো না।
আমি-যাহ বলো না।
জেনি-ভাইয়া তো সকালে উঠেই বাইরে চলে গেছে তাও নাস্তা না করে।
আমি-অফিসে গেছে??
জেনি-আরে বিয়ের পর থেকে তো ভাইয়া অফিসে এই যায়নি।
আমি-তাহলে কোথায় গেছে??
জেনি-আমি জানিনা।
আমি-আমি ফোন দিয়েছিলসম কিন্তু ধরেনি।
জেনি-ওহ,,,আচ্ছা তুমি কি যাওয়ার সময় ভাইয়া কে বলে যাওনি??
আমি-নাহ,,
জেনি-কেনো???
আমি-উনি তখন ঘুমাচ্ছিলেন তাই আর জাগিয়ে বলতে ইচ্ছে করেনি।
জেনি-জানো সকালে কি হয়েছে।
আমি-কি হয়েছে???
জেনি-ভাইয়া সকালে ঘুম থেকে উঠে তোমাকে যে খোঁজা।আমি ইচ্ছে করেই চুপ ছিলাম।পরে মা বলে দিয়েছে তুমি বাড়িতে গেছো।আর এটা শুনার কিছুক্ষণ পরই ভাইয়া বাসা থেকে বের হয়ে যায়।বলো তো কাহিনিটা কি???
আমি-জানিনা।
জেনি-আচ্ছা রাখি,,,বাই।
আমি বুঝতে পারছি না যে এতে রাগ করার কি আছে।আমি কি এখানে আসতে পারিনা।উনি যে এমন রিয়েক্ট করছে।আমি রুমে চুপচাপ বসে আছি।কিছুক্ষণ পর পর আম্মু,আব্বু এসে কথা বলে যায়।আপু এখন বাসায় নেই আদিল ভাইয়ার সাথে বাইরে গেছে।আপু থাকলে হয়তো আমার একটু বেশি ভালো লাগতো।
আম্মু-তনু!!!
আমি-মা আমি কিছু খাবোনা।
আম্মু-আরে সেটা না।
আমি-তাহলে??
আম্মু-তন্ময় এসেছে।
আমি-কি??
আম্মু-হুম তোর জন্য অপেক্ষা করছে।
আমি-তো???
আম্মু-তো নিচে চল।
আমি-না আমি যাবো না।
আম্মু-বিয়ে হয়ে গেছে এখনো বোধ বুদ্ধি হয়নি।
আমি-আম্মু তুমি যাওনা।
আম্মু-আমি তো গেছি কিন্তু ও তো তোর জন্য অপেক্ষা করছে।
আমি-তুমি ওনাকে রুমে পাঠিয়ে দাও।
আম্মু-এটা কেমন দেখায় না।
আমি-যেমন দেখাক যাও তো।
আমি মাকে পাঠিয়ে একটা টেনশনে পরে গেলাম।উনি হয়তো আজ আমাকে কাঁচা গিলে ফেলবে।জেনির কথায় যতদূর বুঝলাম উনি আমার উপর রাগ করেই বাসা থেকে বের হয়ে গেছে।আমি কি করবো কিছু বুঝতে পারছিনা।তন্ময় আসার আগে আমি দৌড়ে বারান্দায় চলে যাই আর দরজা বন্ধ করে দিই।কিছুক্ষণ পর খেয়াল করি কেও আমার রুমে ডুকেছে নিশ্চয়ই তন্ময় হবে।
তন্ময়-তনু ম্যাডাম!!!
আমি-(শোকে পাগল হয়ে গেলো নাকি)
তন্ময়-ম্যাডাম আপনি কই??(ভেঙ্গিয়ে)
আমি-(কি বলছে এসব)
তন্ময়-ম্যাডাম আমি আপনার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি।
আমি-(চুপ করে আছি)
তন্ময়-ম্যাডাম আমি জানি আপনি বারান্দায়।
আমি-(ওহ শীট)
তন্ময়-আসলে দোষটা আমার আমি আপনাকে বেশি প্রশ্রয় দিয়ে দিয়েছি।আমি যদি এখন আমার আগের রুপে থাকতাম তাহলে আপনাকে নিজে বের হতে হতোনা।আমি নিজে দরজা ভেঙ্গে আপনাকে বারান্দা থেকে বের করতাম।
আমি-কি হয়েছে??(ভয়ে দরজা খুলে)
তন্ময়-বাহ বাহ এতো ভয় পাও।
আমি-তা আর বলতে।
তন্ময়-না জানিয়ে আসার সনয় এসব মনে ছিলনা
আমি-আপনি ঘুমাচ্ছিলেন তাই,,,,,,,,
তন্ময়-ঘুমাচ্ছিলাম মাই ফুট,,,,একে তো এখানে এসে এক ভুল করেছে আবার জানিয়ে ও এসেছো বলো তো শাস্তি টা কি হবে??
আমি-এতে রাগ করার কি আছে।(ওনার গালে হাত দিয়ে।আসলে এখন এগুলা করার মুড আমার মোটেও নেই।তবুও ওনার হাত থেকে বাঁচার জন্য আমাকে এমন করতে হচ্ছে)
তন্ময়-রাগ করার কি আছে মানে।(হাত সরিয়ে)
আমি-মানে আমাকে তো আপনার বাবা আসতে বলেছে এখানে তাই আমি এসেছি।
তন্ময়-বাবা না হয় এখানে আসতে বলেছে কিন্তু আমাকে কি না জানিয়ে আসতে বলেছে।
আমি-কেনো এসেছি বলেছি তো মাত্র।
তন্ময়-জানো আজ আমার করে মনে হয়েছিলো।
আমি-কি মনে হয়েছিল???
তন্ময়-মনে হয়েছিলে তুমি আমার উপর রাগ করে চলে এসেছো।হয়তো আমার সরিটা একসেপ্ট করোনি তাই চলে এসেছো।
আমি-দূর কিসব বলেন।
তন্ময়-এমন আমার সাথে আর কোনোদিন করবেনা।
আমি-ওকে।
তন্ময়-এসব তোমার মুখের কথা,,,(রেগে)
আমি-তো কি বলবো??
তন্ময়-তুমি না আমাকে ভালোই বাসো না।
আমি-কি বললেন আপনি??(রেগে)
তন্ময়-ওই কাকে রাগ দেখাচ্ছো তুমি??
আমি-আপনি এটা বলতে পারলেন।
তন্ময়-স্যেটা সত্যি সেটাই তো বললাম।
আমি-এই সামান্য বিষয়ের এটা বলতে পারলেন।
তন্ময়-এই সামান্য বিষয়ের জন্য তোমাকে শাস্তি পেতে হবে.(আমার কাছে এসে)
আমি-আপনি,,,
অনু-তনু,,(দরজায় নক করে)
আমি-কে???(ভয়ে)
অনু-আমার কন্ঠ ভুলে গেছিস??
আমি-ওহ আপু,,,(গিয়ে দরজা খুলে)সরি,,,
অনু-কিছু হবেনা।
আমি-কখন এলে তুমি??
অনু-এইতো মাত্র এলাম।
আমি-আদিল ভাইয়া এসেছে??
অনু-প্রথমে আসবেনা বলেছে বাট পরে যখন বলকাম তুই এসেছিস তখন আসবে বলেছে।
আমি-ওহ,,,ভালো।
অনু-তন্ময় এসেছে নাকি??
আমি-হুম রুমে।
অনু-আদিল যখন এসেছে আদিলের কাছে পাঠিয়ে দে।
আমি আর আপু রুমে বসে বসে গল্প করতে লাগ লাম।আর তন্ময়ের সাথে আদিল ভাইয়াকে বাইরে পাঠিয়ে দিলাম।
———
অভি-মা এগুলা তো তন্ময় কিনেছিলো।(তন্ময়ের কিনা খেলনা গুলো দেখে দেখে)
সাবিয়া-হ্যাঁ ও ওর ছেলে মেয়ের জন্য কিনেছিলো। কিন্তু তারা তো আসেনি তাই তোকে দিতে বলেছে।কারণ তুই ও তো সামনে বাবা হবি।আর তোর ছেলে-মেয়ের জন্যও খেলনা কিনতে হবে তাই।
অভি-তন্ময় ও পারে বটে বাচ্চা আসার আগে এত খেলনা কিনে ফেললো না জানি বাচ্চা আসার পর কত কি কিনে ফেলতো।
সাবিয়া-কিন্তু তারা তো আসলো না।
অভি-মা আমার সন্তান তন্ময়েরও সন্তান,তন্ময়ের সন্তান আমারও সন্তান এটা সবসময় মনে রেখো।
সাবিয়া-সেদিন ডক্টর যখন তন্ময় কে বললো যে বাচ্চাটা আর বেঁচে নেই তখন তন্ময় তোর বাবাকে জরিয়ে ধরে খুব কেঁদেছিলো।
অভি-সেদিন ওরা দুজনই খুব বড় একটা শক পেয়েছিলো।তন্ময় খুব খুশি ছিলো বাবা হবে জেনে।কিন্তু মা এতে কি তনুর দোষ ছিলো???
সাবিয়া-আমি জানিনা তবে ওরা এখন অকেন চিন্তিত এই বিষয় নিয়ে।কিন্তু এখন ওদের আগের মতো কিভাবে যে নরমাল করি।
অভি-আচ্ছা মা সাড়ে তিন মাস পরে নিসার ডেলিভারি ডেট আর তার কিছু দিন পরই তন্ময় তনুর বিবাহ বার্ষিকী তাইনা???
সাবিয়া-হ্যাঁ???
অভি-এতোকিছুর মধ্যে ওরা হয়তো ওদের বিবাহ বার্ষিকী টা ভুলে যাবে।
সাবিয়া-মানে???
অভি-আমরা ওদেরকে সারপ্রাইজ দিবো।
সাবিনা-তাহলে কি ওরা স্বাভাবিক হবে?
অভি-আলবাদ হবে।
বিকালে****
আমি,আপু আর আদিল,তন্ময় একসাথ পাশা পাশি আমাদের ছাদে এসে দাঁড়িয়ে আছি।আসলে আমরা একে অপরের সাথে গল্প করছিলাম।হঠাৎ আদিল ভাইয়া আমার দিকে প্রশ্ন জুরে দেয়।
আদিল-তনু তুমি এখন ঠিক আছো তো??
আমি-আমার আবার কি হয়েছে???
আদিল-আরে তোমার বেবি মিসক্যারেজ হয়ে গেছিলো না তাই বললাম।
আমি-(কিছুক্ষণ চুপ থেকে)হুম এখন ঠিক আছি।
আদিল-আসলে বেবিই এমন,,,যে সবাই একসাথে হাসায় ও আবার সবাইকে একসাথে কাঁদায় ও।
অনু-কাঁদায় কিভাবে??
আদিল-যেভাবে তনু আর তন্ময় কেঁদেছে সেভাবে কাঁদায়।
তন্ময়-ওসব কথা তুলোনা আদিল।
আদিল-আমি ওসব কথা তুলছিনা বাট কিছু কথা বলছি মন দিয়ে শুনো।
তন্ময়-কি বলো,,
আদিল-যখন কেও হঠাৎ করে শুনে যে সে মা ও বাবা হতে চলেছে তখন সেই মুহুর্ত টাই অন্য রকম।তাইনা তনু??
আমি-হুম।
আদিল-তখন তারা এতো খুশি হয় যে বাচ্চা আসার আগেই তার জন্য সব ব্যবস্থা করে ফেলে।
কিন্তু একবারও এটা ভাবেনা যে যার জন্য এসব করছি সে কি আদো আসবে।আর যখন শুনেপ বেবি মারা গেছে বা মিসক্যারেজ হয়ে গেছে তখন শুধু তারা নিজেদের দোষ দিতে থাকে।তারা ভাবে তাদের অবহেলার কারণে তাদের বাচ্চা মরেছে।তোমরা ও নিশ্চই এমন ভেবেছিলে তাইনা।
তন্ময় এবার আমাকে কিছু না বলে টেনে রুমে নিয়ে যায় আর দরজা বন্ধ করে দেয়।
তন্ময়-আদিল যা বলেছে তা কি সত্যি তনু??(করুণ চোখে)
আমি-কি সত্যি??
তন্ময়-আমাদের সন্তানের মৃত্যুর জন্য আমরা দায়ি নই।
আমি-জানিনা।(বলে চলে এলাম)
সাড়ে তিন মাস পরঃ-
আমরা সবাই হাসপাতালে বসে আছি।আজ নিসা ভাবীর ডেলিভারি হচ্ছে।আমরা প্রায় অনেকক্ষণ ধরে অপেক্ষা করে আছি।বেশ কিছুক্ষণ পর ডক্টর একটা মেয়ে শিশুকে নিয়ে কেবিন থেকে বের হল।
ডক্টর-অভিনন্দন মিঃ অভি আপনি একটা কন্যা সন্তানের বাবা হয়েছেন।(বাচ্চাকে কোলে দিয়ে)
অভি ভাইয়ার বাচ্চাকে একে একে সবাই কোলে নিচ্ছে।আমি অবাক হয়ে তন্ময়ের দিকে তাকিয়ে আছি।উনি আজকে অনেক খুশি হয়তো অভি ভাইয়ার জায়গায় নিজেকে কল্পনা করছে।তন্ময় যখন অভি ভাইয়ার মেয়েকে কোলে নিয়ে দুশটামি করছিলো তখন আমার নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছিলো।কারণ আজ আমার জন্য তন্ময়ও এই মুহুর্ত টা থেকে মুক্ত।তন্ময় হঠাৎ আমার সামনে এসে বাচ্চাকে আমার সামনে ধরে।
তন্ময়-তনু ওকে কোলে নাও।
আমি যেই খুশিমনে বাচ্চা টিকে নিতে যাবো ওমনি আমার মাথায় একটা কথা আসে যার জন্য আমি হাতটা সাথে সাথেই সরিয়ে নিই।