Tuesday, August 12, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1598



তোমাতে আসক্ত পর্ব-৩০+৩১

0

#তোমাতে আসক্ত
#নাহিদা ইসলাম
#পর্ব ৩০

মিহি রুম থেকে বের হয়ে কাউকে ই পায়নি। চারদিকে খুজলো কিন্তু কোনো কিছু ই খুজে পেলো না। মিহিকে এভাবে চলে আসতে দেখে অভ্র ও পিছনে পিছন আসতে থাকে।

–কী খুজতেছো।

–তা আপনার জানার প্রয়োজন না বলে ই আমি মনে করি।

–মিহি তোমার সাথে আমার কথা আছে প্লিজ একটু শোনো।

–না, আমি আপনার মুখ থেকে কোনো কথা ই শোনতে চাইনা।

বলে ই মিহি নিচে চলে গেলো। কিন্তু নিচে কাউকে ই পেলো না। সবাই সবার রুমে গিয়ে শুয়ে পড়েছে। শরীরটা বেশ খারাপ লাগছে তারউপর এতো টেনশন নিতে পারছে না মিহি। অভ্রের পাশে রুমে গিয়ে শুয়ে পড়লো মিহি। কান্না করতে করতে মাথা প্রচন্ড ব্যাথা করছে দুচোখ যদি কথা বলতে পারতো তাহলে হয়তো চিৎকার করে বলতো এবার আমাদের একটু বিশ্রাম দেও।

বেলকনিতে গিয়ে বাহিরে তাকাতে ই দেখলো আকাশে অনেক মেঘ জমেছে। আজকে আর চাঁদ নাই। চারদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার। ঠিক মিহির মনের আকাশের মতো
মিহির মনের আকাশে ও বড্ড মেঘ জমেছে, সুযোগ পেলে ই বৃষ্টি নামে।

হঠাৎ ডাকার শব্দ পায় মিহি, বাহির থেকে অভ্র ডাকছে। অভ্রের ডাকে সাড়া না দিয়ে বাহিরের দিকে আবার দৃষ্টি দিলো। দুমিনিট পর দরজায় কেউ ভেঙ্গে ফেলছে এমন মনে হতে ই মিহি দৌড়ে গিয় দরজা খুলে দেয়।

–রুমে আসো।

–আমি আপনার সাথে থাকতে চাই না।

–মিহি আমার কথা শোনো। তারপর তুমি যে শাস্তি দিবা আমি মাথা পেতে নিবো।

–ঠিক তো। সব শাস্তি মাথা পেতে নিবেন

–হে,

–তাহলে বলেন।

–ঠান্ডা মাথায় শোনো।
অভ্র প্রথম থেকে মীরার সম্পর্কে সব বললো। সব কিছু শোনে মিহি অভ্রের দিকে শুধু তাকিয়ে আছে কিছু বলছে না। অভ্র আবার বললো,

–মিহি যা হয়েছে আমি ভুলে গিয়েছি। আমি তোমাতে এতোটা আসক্ত হবো তা ভাবতে পারিনি।তোমাকে ছেড়ে থাকা আমার পক্ষে সম্ভব না।আমি তোমাতে আসক্ত মিহি অন্য কারো কাছে নাহ্।

মিহি ও অভ্রকে অনেক ভালোবাসে। অতীত সম্পর্কে ছেড়ে যদি চলে যায় তাহলে মিহির ভালোবাসাটা টা ভালোবাসা ছিলো না ক্ষনিকের মোহ ছিলো। আর অতীত ভুলে যখন মিহিকে অভ্র মন থেকে মেনে নিয়েছে তাই মিহি ও অভ্রের অতীত ভুলে যেতে চায়।
মিহি কিছুক্ষন চুপ থেকে বললো,

–মীরা আমাকে বলেছে, আপনার সাথে বেশি মেলামেশা করলে আপনাকে মেরে ফেলবে।

–মীরার এসব কথায় তুমি ভয় পাচ্ছো।

–এমন কথা বললে কী ভয় পাবো না নাকি।

—এসব নিয়ে ভয় পেতে হবে না, অনেক হয়েছে এখন ঘুমাবে চলো।

অভ্র মিহিকে বেডে বসিয়ে, খাবার খাইয়ে দিলো, ওষুধ খাওয়ানো শেষে হলে মিহির মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। মিহি ঘুৃমের রাজ্যে ডুবে যায়।

——————————
সকালে মিহির ঘুম ভাঙ্গতে ই চোখ খুলে তাকিয়ে দেখে অভ্র মিহির দিকে একদৃষ্টি তাকিয়ে আছে। হালকা বাতাসে অবাধ্য চুলগুলো মুখে এসে পড়লে অভ্র চুলগুলো সরিয়ে আবার আগের মতো দৃষ্টি স্থাপন করে। অভ্রকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে মিহি কাথা টেনে মুখ ডেকে নেয়। অভ্র সাথে সাথে কাঁথা সরিয়ে নেয়। মিহি আবার কাঁথা টেনে মুখে দেয়। অভ্র এবার মিহির উপর থেকে কাঁথা নিচে ফেলে দেয়। হালকা শীত অনুভব হতে ই মিহি অভ্রকে জড়িয়ে ধরে।

–আবার ঘুমাবে নাকি।দশটা বাজে।

–কিহ্

মিহি বিছানা ছেড়ে দৌড়ে ওয়াশরুম চলে যায়। দ্রুত ফ্রেশ হয়ে এসে অভ্রকে বলে,

–আপনি আমাকে আগে ডাকেননি কেনো।

–আমি যে আমার ঘুমন্ত টিয়াপখিটাকে মন ভরে দেখছিলাম। ঐ মায়ায় পরিপূর্ণ মুখখানা দেখে আর ডাকতে ইচ্ছে করেনি।

–এখন নিচে গেলে সবাই কী ভাববে। আর আপনি অফিসে যাননি কেনো।

–সবাই জানে আমার টিয়াপাখি অসুস্থ তাই কেউ কিছু মনে করবে না। আর অফিসে যাবো তোমাকে নিয়ে।

–আমাকে কেনো নিয়ে যাবেন।

–কখনো যেনো কোনো সন্দেহ না করতে পারো তাই সাথে সাথে রাখবো। সন্দেহ জিনিসটা খুব খারাপ। যে সম্পর্কে সন্দেহ থাকে তা ক্ষনস্থায়ী হয়। সন্দেহ মনের অসুখ যা কোনো ওষুধ ধারা ই সুস্থ করা সম্ভব না।

মিহি মেকি হাসি দিয়ে নিচে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো তখন ই অভ্র পেছন থেকে ডাকলো,

–টিয়াপাখি

মিহি ঘুরে তাকাতে ই একটা শপিং ব্যাগ দিয়ে বললো,

–এইখানে শাড়ি জুয়েলারি আছে, দাদিমার কাছ থেকে পড়ে আসো।

মিহি ব্যাগটা দাদিমার রুমে নিয়ে রেখে দিয়ে নিচে চলে গেলো। নিচে যেতে ই অপু বললো,

–কী ভাবি এখন কেমন আছেন।

–জ্বি দুলাভাই আলহামদুলিল্লাহ ভালো।

–আমি দেবর আপনার, দুলাভাই নাহ্।

–তাহলে আমি ও শালিকা আপনার ভাবি না।

–সে কী আমার ভাইয়ের বউকে ভাবি ডাকবো না নাকি।

–তাহলে আমার বোনের বিয়ে করা জামাইকে দুলাভাই ডাকবো না নাকি।

রেনু বেগম খাবার নিয়ে এসেছে, মিহির মুখে খাবার পুরে দিয়ে রেনু বেগম কথাটা বললো,

–তোরা কী বাচ্চা নাকি এভাবে ঝগড়া করছিস যে।

অভ্র নিচে নামতে নামতে বললো,

–আমাকে কবে খাইয়ে দিয়েছো তা ভুলে গিয়েছি, ছেলের বউকে তো দেখছি প্রতি বার ই মুখল তুলে খাইয়ে দিচ্ছো।

–অপু ওরা আমার ছেলের বউ না। মিহি, মিনতি আমার মেয়ে।আর মিহি এ বাসার সবার ছোট , মিহি আদর করবো না তো তোদের মতো দামড়া(ষাড়) গুলোকে আদর করবো নাকি।

মিহি হাসতে হাসতে শেষ। মিহির হাসি দেখে অপু রেগে বলে,

–ছোট বলে তো মিহিকে, বিয়ে তো হয়েছি ই সামনের বছর ই দেখবা কোলে বাচ্চা নিয়ে বসে আছে।

রেনু রাগান্বিত কন্ঠ বললো,

–থাপ্পড় খাবি অপু। মিহি এখন ও খুব ছোট যতই অভ্র বড় হতে পারে, মিহি এখন ও ছোট। আগে মিনতি আর তোর ঘর আলো করে আমার নাতিনাতনি আসবে তারপর মিহি, অভ্রের ঘরে।

মিহি বাচ্চার কথা শুনে লজ্জা পেয়ে দাদিমার রুমে শাড়ি পড়তে চলে গেলো।

দাদিমা শাড়ি পড়ানো শেষে বললো,

–মান অভিমান মিটেছে।

মিহি হেসে মাথা নাড়ালো।

–তোরা দুজন কী নিয়ে যে এতো অভিমান করিস তা ই বুঝতে পারি না।

–আমি করি নাকি আপনার নাতি করে।

–হে এখন করলে ও আমার দোষ হবে, না করলে ও আমার দোষ হবে। নারির ক্ষমতায়ন তো।

অভ্রকে দেখে মিহি রাগ দেখিয়ে বললো,

–আমি যেখানে যাই সেখানে ই আপনার যেতে হবে।

–তোমাকে ছাড়া একমুহূর্ত ও আমার চলে না টিয়াপাখি।

–কী হচ্ছে কী। গুরুজনদের সম্মান দিতে শিখেন।

অভ্র হাসি দিয়ে বললো,

–দাদিমা তুমি কিছু শুনেছো।

–নাহ্ তো।

–হে যেমন নাতি, তেমন দাদিমা।

–হে এখন চলো অনেক আর সময় নষ্ট না করা ই শ্রেয়।

মিহি অভ্র দুজনে ই রেডি হয়ে নিচে নেমে বের হয়ে দরজার সামনে যেতে ই দেখলো মীরা।

মীরাকে দেখে মিহি চমকে যায়। আবার কী অশান্তিময় বার্তা নিয়ে এসেছো…..

চলবে,

#তোমাতে আসক্ত
#নাহিদা ইসলাম
#পর্ব ৩১

মীরাকে দেখেও অভ্র না দেখার ভাব করে অভ্র মিহিকে নিয়ে চলে গেলো। মীরা অভ্রের এমন কান্ড দেখে অবাক হচ্ছে। যে অভ্র মীরাকে এতো ভালোবাসতো সে কিনা বউ পেয়ে মীরাকে ভুলে গিয়েছে। ভুলে যাওয়াটা ও স্বাভাবিক কারণ মীরা যে ব্যবহারটা অভ্রের সাথে করেছে এতো মীরার উপর ঘৃণ্য দৃষ্টি হওয়াটাই স্বাভাবিক। কিন্তু মীরা তো এভাবে হার মেনে নেবে না। অভ্রের পিছন পিছন দৌড়ে গেলো মীরা কিন্তু এর আগে ই মিহিকে নিয়ে গাড়িতে উঠে পড়ে অভ্র। মীরার ডাকে অনেকবার কিন্তু এই ডাকে সারা দেয়নি অভ্র।
মীরা গাড়ি নিয়ে অভ্রের গাড়িকে ফলো করে।

অভ্র মিহির এক হাত ধরে আছে অন্য হাতে ড্রাইভ করছে। মিহি অভ্রের দিকে তাকিয়ে আছে।

–এভাবে তাকিয়ে থেকো না টিয়াপাখি, গাড়ি এক্সিডেন্ট করবে।

–এমন কথা কখনো বলতে হয় না। আমি আপনার দিকে তাকাবো না আর কখনো। আমি যখন মরে যাবো তখন বুঝবেন আমি না থাকলে কতোটা কষ্ট হয়।

–মিহি…

জোড়ে চিৎকার করে ডাকটা দিয়ে গাড়ির স্টার্ট বন্ধ করে দেয়। অভ্র মিহির হাত ধরে কাছে টেনে আনে। কপালে চুমু খেয়ে মাথাটা বুকে জড়িয়ে ধরে।

–আমি দুষ্টুমি করছিলাম টিয়াপাখি। তুমি এটা কী বললে, তোমার কিছু হলে কী আমি বাচবো নাকি। আল্লাহ এর কাছে একটা ই চাওয়া মৃত্যু আসলে যেনো দুজনের একসাথে হয়।

–ছাড়ুন, লেইট হয়ে যাচ্ছে। রাস্তার মাঝখানে এভাবে গাড়ি থামিয়ে রেখেছে অন্য গাড়ি যেতে ও প্রবলেম হচ্ছে।

অভ্র মিহিকে ছেড়ে আবার ড্রাইভ করতে শুরু করে। পাশ থেকে গাড়ির গ্লাস দিয়ে সব দেখে মীরা। ভেতরের রাগটা আরো বেড়ে উঠে।সহ্য হচ্ছে না মিহিকে অভ্রের পাশে দেখে। হয়তো অভ্রকে কষ্ট দিয়ে মীরা ভুল করেছে তাই বলে সেই ভুলের প্রায়শ্চিত্ত এতোটা কষ্ট পেয়ে করতে হয়ে তা জানা ছিলো না।

অভ্র মিহি মধ্যে পুরোপুরি ডুবে আছে হাজার চাইলে মীরা এখন অভ্রকে নিজের দিকে ফিরাতে পারবে না। তাই মিহিকে ই নিজের বশে আনতে হবে।
মীরা অভ্রের অফিসে ডুকলো।
অভ্র মিহিকে কেবিনে বসিয়ে একটা মিটিংয়ে এ চলে যায়। মিহি কেবিনে বসে বসে ফোনে ভিডিও দেখছে হঠাৎ মীরা প্রবেশ করে,

–কারো কেবিনে ডুকতে হলে অনুমতি নিয়ে ডুকতে হয় সামান্য ভদ্রতাটুকু ও দেখি আপনার মধ্যে নাই।

–এই মেয়ে তুই কী আমাকে ভদ্রতা শিখাবি, তোর মতো অনেক মেয়ে আমি শায়েস্তা করেছি আর এই পুচকি মেয়ে আমাকে ভদ্রতার কথা বলছে।

–জানেন তো শিক্ষা নিতে বা দিতে বড় ছোট নাই।

–তোর কাছ থেকে শিক্ষা নিতে আসেনি তুই আর কী দেখলে অভ্রের জীবন থেকে সরে যাবি বল।

— এটা অভ্রকে ই জিজ্ঞেস করুন।

–অভ্রকে কী জিজ্ঞেস করবো, তোর মতো মেয়েরা এগুলো ই করে বড়লোক ছেলেদের বিয়ে করে টাকার লোভে। লোভি চরিত্রহীন মেয়ে তুই।

কথাটা বলার সাথে সাথে মিহি মীরা গালে থাপ্পড় মারে।

–অনেক বলেছিস এখন যা। আমি বা আমার হাসবেন্ড এর আশেপাশে তোকে দেখলে খুন করবো।

থাপ্পড় এর ধাক্কা সামলাতে বা পেরে মীরা নিচে পড়ে যায়। এর মধ্যে অভ্র ভিতরে ডুকে, সাথে একজন মধ্যে বয়স্ক পুরুষ এবং মহিলা।অভ্র মিহির কাছে যায়। হাতটা ধরে বলে,

–স্যরি মিহি আমার জন্য তোমার আজকে এমন পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছে। উনারা মীরার মা বাবা । আমি কল দিয়ে আসতে বলেছি। আশা করবো আপনারা আমার কথা এবং আপনার মেয়ের কাজ কর্ম দেখে সব বুঝতে পেড়েছেন। মেয়েকে নিয়ে যান, আর যেনো আমাকে বা আমার স্ত্রীকে বিরক্ত না করে তা একটু খেয়াল রাখবেন।

–আমাদের মেয়ের হয়ে আমি ক্ষমা চাচ্ছি বাবা, আমরা বুঝতে পারিনি মীরা এমন কান্ড করবে।

–ঠিক আছে আপনারা এখন আসতে পারেন।

যাওয়ার আগে বলে যাই এই মীরাকে থাপ্পড় মারা আর মা বাবা ডেকে অপমান করা সব কিছু জন্য তোমার বউকে কষ্ট পেতে হবে। আমি এখন যতটুকু কষ্ট পেলাম তার ডাবল আমি তোমাদেরকে ফিরিয়ে দিবো, প্রতিজ্ঞা করে এখান থেকে বের হলাম।

কথাটা বলে ই মীরা বের হয়ে গেলো। ওরা বের হতে ই অভ্র মিহিকে নিজের সাথে জড়িয়ে নেয়।

–ভয় পেয়ো না টিয়াপাখি সব ঠিক হয়ে যাবে।সব কিছুর পর এটা ই বলবো আই লাভ ইউ টিয়াপাখি। ভালোবাসি অনেক বেশি ভালোবাসি। যতটা ভালোবাসলে তোমাতে আসক্ত হওয়া যায় ঠিক ততটাই ভালোবাসি।

__________________

মিহি অভ্র বাসায় ডুকার পরপর ই মিনতি আর অনি এসে মিহিকে নিয়ে যায়। অপু এসে অভ্রকে নিয়ে যায়।

–কী হয়েছি বলবি তো।

–তোরা দুইজন কী অপরাধ করেছিস কে জানে। দাদিমা আবার বলেছে তোদের আলাদা করতে।

কথাটা শুনে মিহি গিয়ে বেডে বসে পরে। এই বুড়ি কী শান্তিতে থাকতে দিবে না নাকি।আবার কী ভুল করলাম তা ই তো বুঝলাম না।

–বিরবির করে কী বলছিস। যা গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নে।

–যাবো না। ভালো লাগছে না।

–যে হবে ভাবি এটা দাদিমার আদেশ।

বলে ই অনি টেনে ওয়াশেরুমে দিয়ে আসে। মিহি ফ্রেশ হয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে। দেখে বেডের উপর সাজিয়ে রাখা অনেকগুলো শাড়ি আর জুয়েলারি। মিহি মিনতির দিকে তাকিয়ে বলে

–কীরে আমার কী আবার বিয়ে নাকি।

–হলে হতে ও পারে এতো কথা কেনো বলিস।

–কী পড়বো।

–শাড়ি।

–আমি শাড়ি পড়তে পারি না।

কথাটা বলার সাথে সাথে মিনতি বললো, শাড়ির বাকি জিনিসগুলো পড়েনে। আমি পড়ে দিচ্ছে।

মিনতি আমাকে রেড কালারের শাড়ি পড়িয়ে দিলো,শাড়িটা অবশ্যই বাঙ্গালী স্টাইলে পড়িয়েছে। হাতে কাঁচের চুড়ি। মাথা খোপা করা, খোপায় সাদা রঙের ফুল। পায়ে আলতা, হাতে ও আলতা দিয়ে রাঙ্গিয়ে দিয়েছে।
কেমন যেনো একটা ফিল হচ্ছে। এমন করে কেনো সাজিয়ে দিচ্ছে বুঝলাম না।

–আচ্ছা অনি কোনো বিয়ের অনুষ্ঠান আছে নাকি।

–ভাবি তুমি কী অন্য কারো বিয়েতে এভাবে শাড়ি পড়ে যাবে।

–তাহলে কী আমার বিয়ে।

–তা জানি না।

–নিশ্চয় জানো কিন্তু আমাকে বলবা না।

–আমাদের দাদিমা বলেছে তোমাকে সাজিয়ে দিতে তাই দিচ্ছি, আর বাকি টুকু জানি না।

মিহি হাতে ফোন নিলো, অভ্রকে কল দিবে। এমন টাইমে মিনতি টান দিয়ে ফোন নিয়ে নিলো,

–আরে সমস্যা কী কল দিতে দিবি তো।

–দাদিমার নিষেধ আছে, কারো সাথে কথা বলা যাবে না।

হইছে বোন আর একটু শান্তিতে কাজ করতে দে তারপর তুই যেখানে ইচ্ছে যা। যাকে খুশি কল দে তা জানি।

রাত প্রায় দশটার মতো বাজে হঠাৎ মিনতি আর অনি আমাকে একটা রুমে নিয়ে যায়। রুমটা দেখে আমার চোখ বের হয়ে যাওয়ার অবস্থা। এতো সুন্দর করে ফুল দিয়ে সাজানো। আমি চারদিকে তাকিয়ে দেখছি খুব সুন্দর একটা সারপ্রাইজ দিলো।

–পনেরো হাজার টাকা না দিলে রুমে ডুকতে পারবেন না অভ্র ভাইয়া।

হঠাৎ এমন কথায় পিছনে ঘুরে তাকাতে ই দেখি মিনতি অপু অনি সবাই রুমে ডুকে দরজা লক করে দিয়ে। অভ্রকে এই কথা বলছে।

–এই আপনি একদম টাকা দিবেন না। মনে হয় শপিং এর টাকা কম পড়ছি ওদের তাই এমন করছে।

–মিহি চুপ কর। টাকা না দিলে আজকে অভ্র ভাইয়া রুমে ডুকতে পারবে না।

অভ্র দরজার ঐপাশ থেকে বললো,

–দরজা না খুললে টাকা দিবো কিভাবে।

ওরা দরজা খুলে অভ্র কয়েকটা টাকাট দূরে ফেলে দেয়। সবাই যখন টাকা নিতে যায় অভ্র রুমে ডুকে দরজা বন্ধ করে দেয়। অভ্রের এমন কান্ড দেখে আমি হাসতেছি।

–ভাইয়া চিটিং করেছেন এইখানে মাত্র পাঁচহাজার।

–তোরা এই টাকা না নিলে দরজার নিচে দিয়ে আমাকে দিয়ে চলে যা।

এটা বলার সাথে সাথে সবাই চলে যায় টাকা নিয়ে। আমি দাড়িয়ে হাসতেছি, অভ্র পাঞ্জাবি পায়জামা পড়া।

–এভাবে তাকিয়ো না টিয়াপাখি হার্টবিট বেড়ে যায়।

বলে ই আমার দিকে এগোতে থাকে…..

চলবে,

[ভুলগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন ]

তোমাতে আসক্ত পর্ব-২৮+২৯

0

#তোমাতে আসক্ত
#নাহিদা ইসলাম
#পর্ব ২৮

সবার সামনে দুজন বসে আছে, মিহি বড্ড ভয় পাচ্ছে। মিহি অভ্রর হাত চেপে ধরে নিচের দিকে তাকিয়ে বসে আছে। রুমে বিস্তার নিরবতা। সবাই শুধু দুজনের দিকে তাকিয়ে আছে, খুব গম্ভীর করে রেখেছে সবার মুখ। হঠাৎ দাদিমা অট্টহাসি দেয়। এতে মিহি চমকে উঠে উপরের দিকে তাকায়।

–এতো ভয় পেতে হবে না নাতবৌ। আমি তো চেয়েছিলাম তুই নিজের মুখে এসে আমাকে বল, এই বাসা ছেড়ে তুই কখনো বাহিরে পা বাড়াবি না। আমার নাতিকে ভালোবেসে আগলিয়ে রাখবি। তুই মুখে না বললে ও উওর গুলো আমরা পেয়ে গিয়েছি। এখন থেকে তুই আর অভ্র এক সাথে ই থাকবি।
এই রাতের বেলা আমরা সবাই জেগে আছি কেন জানিস, কারণ আজ আমার জন্মদিন। সবাই ঘুম থেকে উঠিয়ে কেক কাটালো। এর তোদের দুই চোরকে ধরতে পারলাম।

উফফ মিহি কী ভয়টা ই না পেয়েছিস, যা ই হক এসব লুকোচুরি থেকে মুক্তি পেলাম।

অভ্র মুখে হাসি রেখে বললো,
–আমার কিন্তু দাদিমা এভাবে লুকোচুরি করতে ভালো ই লাগছিলো, মিহি শুধু ভয় পেতো।

অভ্ররে এমন কথা শোনে মিহি অভ্ররে দিকে চোখ বড় বড় করে তাকালো,

এভাবে তাকাতে দেখে অভ্র মিহিকে বললো,

–চলো, রুমে যাই।

অভ্র রুমে যেতে ই মিহি দরজা লক করে দেয়।

–আরে এতো তাড়া কিসের বউ, আমি তো চলে যাচ্ছি না। সারা রাত ই পড়েছে আছে ভালোবাসার জন্য।

এটা বলার সাথে সাথে মিহি ধাক্কা দিয়ে অভ্রকে বেডের উপর ফেলে দেয়। অভ্রের উপরে বসে, অভ্রে মুখ চেপে ধরে বলে,

–এভাবে লুকোচুরি করতে তোর ভালো লাগতো। আর এতো ভেটকি (হাসি) দিয়েছিলি কেনো আমি যখন ভয় পাচ্ছিলাম।খুব ভালো লাগছিলো তোর।

–কী খাও, তুমি বলো তো এতো ওজন কিভাবে বানালে। মনে হচ্ছে আমার পেটের উপর দশ মন একটা আটার বস্তা পড়েছে। মিহিকে ইচ্ছে করে অভ্র রাগাচ্ছে।

মিহি রাগান্বিত হয়ে অভ্রের উপর কয়েকটা কিল বসিয়ে দিলো।

মিহিকে নিচে ফেলে দিয়ে অভ্র উপরে চড়ে বসলো,

–খুব রাগ হচ্ছে টিয়া পাখি। রাগলে কিন্তু অনেক সুন্দর লাগে এমনি তো চোখ সরাতে পারিনা।
বলে ই অভ্র ওষ্ঠদ্বয় আবদ্ধ করে নিলো।

দুইমিনিট পর
হঠাৎ অভ্রের ফোন বেজে উঠলো, ফোন হাতে নিতে ই দেখে মীরা কল দিয়েছে। মীরার কল দেখে অভ্র ফোন অফ করে রাখে।

–এতো রাতে কে কল দিয়েছে।

মিহি প্রশ্ন করতে ই অভ্র উওর দিলো,

–ফোন না এলার্ম বাজলো।

মিহি আর কিছু বললো না, ফ্রেশ হয়ে শুয়ে পড়লো।

___________________________

সকালে ঘুম থেকে উঠে, কিচেনে গেলো মিহি। কিচেনে যেতে ই দেখলো মিনতি দাড়িয়ে দাড়িয়ে রেনু বেগমের সাথে গল্পজুড়ে দিয়েছে। মিহিকে দেখে ই বললো,

–শপিং এ নিয়ে যাবি কবে।

–কিসের শপিং।

–আমি যে ঐ দিন জেগে জেগে তোকে আর অভ্র ভাইকে পাহাড়া দিয়েছি।

–ওহ্ কিছু সময়ের জন্য তোকে দারোয়ানকে বানিয়ে দেখলাম, কেমন লাগে।

–ঐসব কিছু জানি না। আমাকে শপিং এ নিয়ে যাবি মিহি।

— লজ্জা শরম না থাকলে যা হয় মিনতি। আমি তোর ছোট।

বলে ই রুমে চলে যায়, মিহি। মিনতিকে এরকম ধোকা আরো অনেকবার দিয়েছে মিহি। মিনতি অনেক শপিং এর পাগল তাই যা বলা হয় তাই ই করে।

মিহি রুমে গিয়ে ই এক গ্লাস পানি নিয়ে অভ্রের উপরে ঢেলে দেয়।

মুখের উপর পানি পড়তে ই অভ্র দ্রুত উঠে বসে। মিহি অভ্রের দিকে তাকিয়ে জোরে হাসতেছে।

–কী করলে এটা??

–আমি জেগে আছি, আপনি ঘুমাবেন কেনো।

–তুমি জেগে থাকলে আমি ঘুমাতে পারবো না নাকি??

–নাহ্।

–এ কেমন অদ্ভুত নিয়ম।

–অদ্ভুত ই।

মিহির সাথে আর কোনো কথা না বলে অভ্র ওয়াশরুম চলে গেলো।

_________________

অফিসে যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছে অভ্র, মিহি ও রেডি হয়ে অভ্রের সামনে দাড়ালো,মিহি এভাবে রেডি হয়ে আসায় অভ্র অবাক হেয় জিজ্ঞেস করলো

–কোথায় যাবে তুমি?

–আপনার সাথে অফিসে যাবো।

–অফিসে কোনো কাজ নাই তোমার।

–আমি যাবো বলছি তো যাবো ই।

–বায়না করো না মিহি, আজকে অফিসে যেতে লেইট হবে। অফিসের বাহিরে একটা মিটিং আছে। মিটিংটা অনেক ইম্পরট্যান্ট।

–আমি যদি না যেতে পারি তাহলে আপনি ও যেতে পারবে না।

–আমার মিষ্টি বউকে বিকেলে ঘুরতে নিয়ে যাবো, এখন বাসায় থাকো।

এটা বলার সাথে সাথে মিহি বেলকনিতে চলে যায়। অভ্র টাইটা বেধে হাতে ওয়াচটা পড়ে নিলো।
মিহি রাগ করেছে, অভ্র বেলকনিতে গিয়ে দেখে মিহি দাড়িয়ে আছে। মনে হচ্ছে এখন ই দুচোখে বর্ষা নামবে।

অভ্র কোনো কথা না বলে মিহিকে কোলে তুলে নিলো। মিহি ও কোনো কথা বলছে না। রাগ করে ঠিক করেছে অভ্রের সাথে কথা বলবে না। অভ্র বিনাবাক্যে নিচের দিকে যাচ্ছে। নিচে সবাই বসা এভাবে অভ্রের কোলে দেখলে মানসম্মান নিয়ে আর রুমে যেতে পারবে না। তাই মিহি বললো,

–নামান আমাকে।

–রাগ না ভাঙ্গলে নামাবো না। মাফ করে দেও আমাকে

–আপনার মতো নির্লজ্জ আমি হতে পারবো না। নামন আমাকে।

–তুমি মাফ না করলে আমি তোমাকে এভাবে নিচে নিয়ে যাবো ই এখন তুমি যতই নির্লজ্জ বলো।

মিহি কোনো উপায় না পেয়ে বললো,

–হে মাফ করেছি এখন নামান।

অভ্র হাসি মুখে নামিয়ে দিলো, মিহি আঙুল এর ফাকে অভ্রের আঙ্গুলগুলো রেখে আলতো করে হাতে একটা চুমু খেলো।
দুজন হাটতে হাটতে গাড়িতে চলে গেলো। বারাবরের মতো এক হাতে ড্রাইভ করছে আর অন্য হাতে মিহির হাত ধরে আছে।

কিছুক্ষন পর একটা বিলাসবহুল রেস্টুরেন্টে এ গাড়ি থামালো অভ্র। মূলত আজকের মিটিংটা এখানে ই।

মিটিং শেষ করার সাথে সাথে একটা ছেলে এসে অভ্রকে বললো,

—আপনার সাথে কথা ছিলো।

অভ্র দেখে নিলো ছেলেটাকে চিনে নাকি।
কিন্তু দেখলো ভালো করে চিনতে পারলো না।তাও বললো,

–জ্বি বলুন।

–আমি সোজা কথা বলতে ভালোবাসি। আপনার পাশে যে মেয়েটা বসা উনাকে আমার খুব ভালো লেগেছে আপনি চাইলে আপনার বাসায় আমি বিয়ের প্রস্তাব দিতে পারি।

কথাটা শোনের অভ্রের বেশ রাগ হচ্ছে। কত বার বলেছে বাহিরে বের হলে শাড়ি পড়ে বের হতে কিন্তু এই মেয়ে তো কথা শোনে না পড়েছে কী, লং গোল জামা। দেখতে তো বাচ্চাদের মতো লাগতেছে। তাও রাগ কন্ট্রোল করে বললো,

–পাশে বসা মেয়েটা আমার স্ত্রী।

ছেলেটা কথাটা শোনে কিছু একটা ভেবে স্যরি বলে চলে গেলো। অভ্র ও মিহিকে নিয়ে গাড়িতে বসলো উদ্দেশ্য অফিসে যাবে।

মীরার নম্বর থেকে কল আসছে তাই ফোন সাইলেন্ট করে রেখেছে। সিম বন্ধ ও করতে পারছে না কারন সব জায়গায় এই নম্বর দেওয়া। অভ্রের টেনশনে হচ্ছে খুব মিহি জানতে পারলে কী হবে। কেবিনে মাথা নিচু করে এসব ভাবছে অভ্র। মিহি ওয়াশরুম গিয়েছে।

–অভ্র

হঠাৎ ডাকটা শোনে সামনের দিকে তাকাতে ই দেখলো মীরা।
মীরাকে দেখে অভ্র কী বলবে বুঝতেছেনা। বাসা থেকে উঠে দাড়ায়। অভ্র উঠে দাড়াতে ই মীরা দ্রুত গিয়ে অভ্রকে জড়িয়ে ধরে।

ঠিক তখন ই মিহি কেবিনে প্রবেশ করে।

চলবে,

#তোমাতে আসক্ত
#নাহিদা ইসলাম
#পর্ব ২৯

মিহি অভ্রকে এমন অবস্থা দেখে সাথে সাথে অজ্ঞান হয়ে যায়। অভ্র মীরাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে দ্রুত এসে মিহিকে ধরে। মিহিকে এভাবে অজ্ঞান হারাতে দেখে অভ্র ভয় পেয়ে যায়।কোলে তিলে নেয়, ড্রাইভারকে ডাকে। অভ্র মিহিকে নিয়ে গাড়ির পেছনে বসে। বোতল থেকে পানি নিয়ে মুখে ছিটিয়ে দেয়।মিহিকে অনেক ডাকে। কিন্তু কোনো কিছুতে ই কোনো কাজ হয়নি।

অভ্রের গাড়ির পেছনে মীরা ও গাড়ি নিয়ে আসছে। অভ্রকে মেয়েটার সাথে দেখে জ্বলেপুড়ে যাচ্ছে মীরা। মীরা এইটুকু বেশ ভালো ই বুঝেছে মেয়েটা অভ্রের বউ। বউ হক আর যা ই হক অভ্রকে মীরা ভালোবাসে। রাগের বশে যা ই বলুক দিন শেষে মীরার সব ভালোবাসা অভ্রের জন্য ই।

একটা হসপিটালের সামনে অভ্র গাড়ি থামাতে বললো, মিহিকে নিয়ে সোজা ইমারজেন্সি কক্ষে চলে গেলো। অভ্র এতোটা উত্তেজিত হয়ে ডাক্তারদের ডাকতে যায়, সব নার্সরা চলে আসে। সাথে ডাক্তার ও আসে।

মীরা পেছনে দাড়িয়ে আছে। মিহির জ্ঞান ফিরেছে। কিন্তু কোনো কথা বলছে না।হঠাৎ মেন্টালি শকড থেকে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলো।

— মিস্টার অভ্র আপনি একটু আমার কেবিনে আসুন।

অভ্র মিহির হাত ছেড়ে ডক্টরের সাথে যেতে লাগলো। কিন্তু মীরা যে এই কক্ষে ছিলো তা দেখেনি। অভ্রের চার পাশে কী হচ্ছে তা মাথায় ডুকছে না। শুধু একটা ই টেনশন মিহি কী ভুল বুঝলো।

অভ্র চলে যাওয়ার সাথে সাথে মীরা মিহির পাশে গিয়ে বসে। অভ্রের দিকে হাত বাড়ালে হাত ভেঙ্গে দিবো।অভ্র আমার ছিলো, আমার আছে আর আমার ই থাকবে। আর যদি অভ্রের সাথে বেশি মেলামেশা করার চেষ্টা করো তাহলে তোমাকে কিছু করবো না সোজা অভ্রকে মেরে ফেলবো। আমি অভ্রকে পাবো না তো কেউ পাবে না। তুমি বলতে পারোএটা কেমন ভালোবাসা। আমার ভালোবাসা এমন ই। তোমাদের বাড়িতে আমার লোক আছে যে তোমাকে সর্বক্ষণ চোখে চোখে রাখবে। তাই অভ্রর থেকে দূরে থাকবা। ফোন থেকে অভ্র আর মীরার কয়েকটা পিক দেখলো। যেগুলোতে পাশাপাশি বসা ছিলো অভ্র মীরা।

মিহি কোনো কথা বলছে না। শুধু চোখ থেকে অনবরত পানি গড়িয়ে পড়ছে। ভালোবাসার মানুষের সাথে অন্য মেয়েকে কথা বলতে দেখলে ই সহ্য হয় না। আর মিহি পাশাপাশি বাসা ছবি দেখেছে। তারউপর একটু আগে এভাবে জড়িয়ে ধরা অবস্থায় দেখছে। খুব বিশ্বাস করতো অভ্রকে। সব বিশ্বাস ভেঙ্গে চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে গিয়েছে।৫৬

মীরা মিহির কাছ থেকে চলে আসার কিছুক্ষনের মধ্যে ই অভ্র ওষুধ নিয়ে প্রবেশ করলো, অভ্রকে দেখে মিহির চিৎকার করে কান্না করতে ইচ্ছে করছে। এখন যদি মরে যেতো পারতো তাহলে সব থেকে খুশি হতো মিহি। কষ্ট মাত্রাটা এতো ই বেশি যে নিজের মৃত্যু কামানা করতে ও দুবার ভাবছে না মিহি।

–টিয়াপাখি কষ্ট হচ্ছে খুব।

মিহি কান্না বন্ধ করে অন্য দিকে তাকিয়ে মনে মনে বললো, আমার সামনে এতো নাটক না করলে ও পারেন। আমি তো সব জেনে ই গিয়েছি।

মিহি অভ্রকে মুখফুটে কিছু বললো না। টিয়াপাখি অন্যদিন ডাকটা অন্যরকম অনুভূতি কাজ করতো। আর আজকে ঘৃনা হচ্ছে।

অভ্র মিহিকে এতো ভাবতে দেখে কোলে তোলে নিলো। কোলে নেওয়ার সাথে সাথে মিহি বললো,

–আমি হেটে যেতে পারবো।

–তুমি অসুস্থ

–আমি অসুস্থ তা আমি বুঝে নিবো। আপনাকে বুঝতে হবে না।

–ভুল বুঝো না টিয়াপাখি। বিশ্বাস রাখো আমার উপর।

–আমাকে নামান, আমি হেটে যাবো।

–একদম চুপ, আমার বউ আমি যা ইচ্ছে করবো।

মিহি আর কিছু বলো না জানে এখন হাজার বললে ও অভ্র কথা শোনবে না।

গাড়িতে বসে বাহিরের দিকে তাকিয়ে আছে মিহি। চারদিকে এতো সুন্দর তাও মিহির অসহ্য লাগছে। এই সময়টা খুব ভালো কাটতো যদি ঐ মেয়েটার সাথে দেখা না হতো।

অভ্র কয়েকবার মিহিকে ডাকছে কিন্তু মিহি কোনো সাড়া দেয়নি। শুধু একবার বলেছে আমাকে একা থাকতে দেন। অভ্র ও চাচ্ছে মিহিকে মীরার ব্যাপারে সব বলতে , অনেক সময় লাগবে তাই বাসায় গিয়ে সব বুঝিয়ে বলবে। কিন্তু মিহি তো কোনো কথা ই বলতে চাচ্ছে না। মিহি যতটা অভ্রকে ভালোবাসে তার থেকে বেশি অভ্র মিহিকে ভালোবাসে। কখনো চায়নি কষ্ট দিতে, কিন্তু আজকে মীরার জন্য মিহি কষ্ট পেলো। মীরা অতীত কিন্তু মিহি বর্তমান। বর্তমানকে ই আকড়ে ধরে অভ্র ভবিষ্যত পাড়ি দিতে চায়।

__________________

বিছানায় শুয়ে আছে, বাসায় আসার পর অবশ্য সবাই এসে দেখে গেছে। কারো কোনো কথা ই মিহির কানে যাচ্ছে না। শুধু বার বার মেয়েটার কথা কানে বাজতেছে। অভ্রর সাথে মেলামেশা করলে অভ্রকে মেরে ফেলবে। অভ্রের সাথে মেয়েটার সম্পর্ক ছিলো যার প্রমাণ ঐ ছবিগুলো। তাহলে কী এই জন্য ই বিয়েটা ছয়মাসের জন্য। হে হতে পারে বিয়েটা ছয় মাসের। অভ্র তো বলে ই দিয়েছিলো ছয় মাস পর ডিভোর্স। এই কয়েকদিনে মিহি অভ্রের প্রতি যে অনুভূতিগুলো মনের কোনে উকি দিয়েছে তা সম্পূর্ণ মিহি দোষ।

মিহি যেমন অভ্রকে ভালোবাসে হয়তো ঐ মেয়েটা ও অভ্রকে তার চেয়ে বেশি ভালোবাসে।
হঠাৎ অভ্র রুমে ডুকলো, এতোক্ষণ অভ্র বাহিরে ছিলো।

–টিয়াপাখি খাবারটা খেয়ে নেও।

–খাবো না।

–না খেলে আবার শরীর খারাপ করবে।

–আমাকে নিয়ে আপনার না ভাবলে ও চলবে।

— আমার বউ আমি ভাববো না তো কে ভাববে।

–ঐটা আপনার টেনশন করতে হবে না। আপনার ভাবনার মানুষ তো আছে ই তাকে নিয়ে আপনি ভাবনায় ব্যস্ত হয়ে পড়তে পারেন।

–প্লিজ টিয়াপাখি আমাকে ভুল বুঝো না। আমি তোমাকে সব বলতে চাই ঐ সুযোগটা আমাকে দেও।

–আর কী সুযোগ দিবো আমি সব বুঝে ফেলেছি।৩৬

এর মধ্যে ই দাদিমা রুমে ডুকে যায়। তাই দুজন ই কথা বলা অফ করে দিয়ে সামনে তাকায়,

–তোরা কী আবার ঝগড়া শুরু করেছিস। তাহলে কিন্তু তোদের আবার আলাদা করে দিবো।

–দাদিমা আমি আপনার সাথে ই ঘুমাবো। এতোদিন আপনি আলাদা করে দিয়েছিলেন এখন আমি নিজে আলাদা হতে চাচ্ছি।

দাদিমা হেসে উওর দিলল স্বামীর সাথে অভিমান করে বুঝি এই কথা। স্বামী স্ত্রী মধ্যে মান অভিমান, রাগারাগি যা ই বলিস তা রাতের ঘুমের আগে শেষ করে ফেলতে হয়। তাই তোদেরকে সময় দিচ্ছি তোরা দুজন ঠিক হয়ে নেয়।

দাদিমা রুম থেকে চলে যায়।

–অভ্র মিহির কাছে গিয়ে মুখ চেপে ধরে।

–এই কী বলিস তুই কান খুলে শোনে রাখ, আমি তোকে ভালোবাসি। আর আমাকে তুই ভুল বুঝবি না একদম।

মিহি অভ্রকে সরিয়ে বললো,

–নিজের চোখে দেখার পর ও বিশ্বাস করতে নিষেধ করছে।

–সব সময় নিজের চোখের দেখা ঠিক হয়না মিহি।

–প্রতিদিন অফিসে মনে হয় এগুলো ই করেন তাই তো।

এবার মিহিকে সজোড়ে একটা থাপ্পড় মারে অভ্র।
থাপ্পড় মেরে জড়িয়ে ধরে অভ্র। মিহির চোখের পানি মুছে দিয়ে। কপালে চুমু খায়।

–প্লিজ টিয়াপাখি ভুল বুঝো না। অনেক ভালোবাসি তোমাকো এটা বিশ্বাস করো। আমি চাইনা তুমি কষ্ট পাও।

মিহি সামনে তাকাতে ই দেখে দরজায় কারো ছায়া দেখে যাচ্ছে।

তাহলে কী সত্যি ই ঐ মেয়েটার লোক এই বাড়িতে আছে যে আমাকে চোখে চোখে রাখে। মিহি অভ্রকে ধাক্কা দিয়ে বেড থেকে নেমে দরজার দিকে যাচ্ছে, দেখতে হবে মানুষটা কে। কার ছায়া দেখতে পেলাম….

চলবে,

[ভুলগুলো ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন, ধৈর্য সহকারে পড়ুন]

তোমাতে আসক্ত পর্ব-২৬+২৭

0

#তোমাতে আসক্ত
#নাহিদা ইসলাম
#পর্ব ২৬

মানুষ কষ্ট পেলে নিজেকে অন্ধকারে কেনো আটকে রাখে, কতো সুন্দর সূর্যের কিরণ তা কেনো সহ্য করতে পারে না।অন্ধকার হাটতে তো বেশ ভালো লাগে তারউপর যদি থাকে পূর্ণিমা, তাহলে তো ভালো লাগাটা আরো বেড়ে যায়। চারদিকে জোনাকি পোকাদের উৎসব মনে হচ্ছে,হলুদ লাইট এর কাজ করছে জোনাকি পোকাগুলো। রাস্তাটাকে অমায়িক সৌন্দর্য দিয়েছে।

মিহির কাছে অন্ধকারটা খুব ভালো ই লাগছে, কষ্ট পেলে যে নিজেকে অন্ধকারে আটকে রাখতে হবে এই মুহুর্তে মিহির তা মনে হচ্ছে না। হয়তো পাশে ভালোবাসার মানুষটি আছে তাই অন্ধকার ও ভালো লাগছে। কথায় আছে না প্রেমে পড়লে সব ভালো লাগে। আবার প্রিয় মানুষ ছেড়ে গেলে পৃথিবী নরকতুল্য মনে হয়।
আচ্ছা ছেড়ে যাওয়ার কথা ভাবছি কেনো। অভ্র কী কখনো আমাকে ছেড়ে অন্য কারো কাছে চলে যাবে।
নাহ্, কখনো না। আমি অভ্রের চোখে আমার প্রতি ভালোবাসা দেখেছি স্পষ্ট ভাবে, এইটা মিথ্যা নয়।

মীরার কল বার বার কেটে দিচ্ছে অভ্র, কী মনে করে এতোদিনে কল দিয়েছে তা ও একবার জানতে চায় না অভ্র। তার হৃদয়ে যে ভালোবাসা আছে তা একান্তই মিহির জন্য। ডকল জল্পনা কল্পনা শেষ করে পিছন থেকে মিহির হাতটা আবার শক্ত করে ধরেছে। এতে মিহি কল্পনা জগৎ থেকে বাস্তবতা ফিরলো।

অনি, অপু, মিনতি রাস্তায় বেশ মজার মজার কথা বলে হাটতেছে, একটু পর পর অট্টহাসিতে ফেটে পড়ছে তিনজন। কিন্তু মিহি বা অভ্রের এতে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। দুইজন ই ব্যস্ত দুজনের ভালোবাসা অনুভূতি উপভোগ নিয়ে।

মিহির দিকে তাকিয়ে হাটতেছে অভ্র, মুখে কুলুপ এটেছে দুজন ই নিরব।

অনি পেছনে ফিরে বললো,

–তোরা দুজন কী লাইলি মজনু হয়ে যাবি নাকি।

–নাহ্, নতুন রেকর্ড গড়বো।

–তাই তো মনে হচ্ছে।

সবাই চায়ের দোকানে সামনে চলে এসেছে, পাঁচটা চা অর্ডার করে। চা অর্ডার করে ই একটা বেঞ্চিতে বসে পড়ে সবাই বসে পড়ে।

কিছুক্ষণ কথা বলার পর ই চা নিয়ে একটা ছেলে হাজির হলো, সবার হাতে হাতে চা দিয়ে চলে গেলো।
কিন্তু মিহি গরম কোনো জিনিস খেতে পারে না। চা খেতে গেলে ও মিহির অনেক ভয় করে যদি মুখ পোড়ে যায়। এই ভয়ে মিহি চা খেতে নারাজ। এই কথা যে শোনে সেই ই হাসে, মিহির এখন মোটে ও মন চাচ্ছে না সবার হাসির পাত্র হতে।

অভ্র মিহির দিকে তাকাতে ই দেখে চা নিয়ে বসে আছে,কিন্তু মুখে তোলছে না।তাই জিজ্ঞেস করলো,

–কোনো সমস্যা, তুমি খাওনা কেনো।

পাশে থেকে মিনতি ভালো উঠলো,

–চা কে ঠান্ডা করে শরবত বানিয়ে দিন অভ্র ভাইয়া, তখন দেখবেন ঠিক ই খাবে।

এবার সবাই হাসি শুরু করে দিলো, যেটাকে এতোক্ষণ মিহি ভয় পাচ্ছিলো।। মিহি রাগি চোখে মিনতির দিকে তাকায়। এটা দেখে অভ্র বললো,

–চা টা গরম তাই কী ভয় পাচ্ছো।

মিহি হালকা মাথা নাড়ালো।
অভ্র মেকি হাসলো।নিজের চায়ের কাপটা মিহির দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো,

–আমারটা ঠান্ডা হয়েছে, মনে হয় তুমি খেতে পারবা।

মিহি খাবে না বলে উঠে চলে গেলো। গরম যেকোনো খাবার খেতে ই মিহি ভয় পায়। অভ্র ও আর জোড় করলো না।

সবার চা খাওয়া শেষে, বাসায় যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো।

বাসায় যাওয়ার পর,

অভ্র ফ্রেশ হয়ে নিলো, সবার সাথে কথা বললো, বাসায় আসার পর থেকে মিহি আর অভ্রের সাথে কথা বলার সুযোগ পায়নি। শুধু মাঝে মাঝে আড়চোখে দেখেছে।৮৩

অভ্র বেশ কয়েকবার সুযোগ খুজেছিলো কথা বলার জন্য কিন্তু কোনো সুযোগ ই পায়নি কথা বলার মতো। অভ্রের কাছে বেশ ভালো ই লাগছে ব্যাপারটা। চেয়েছিলো ভালোবেসে বিয়ে করবে,কারন হঠাৎ করে কাউকে নিজের অর্ধাঙ্গিনী হিসেবল মেনে নিতে কষ্ট হবে বেশ। মিহি সাথে বিয়ের আগে কোনো ভালোবাসার সম্পর্ক ছিলো না কিন্তু বিয়ের পর এই লুকিয়ে লুকিয়ে প্রেম উপভোগ করার মতো ই।

সবার খাবার খাওয়া শেষে বসে গল্প করছে, মিহি বার বার বলছে ঘুমাবো। এই গল্প মিহির ভালো লাগছে না, মিহি চাচ্ছি, মিহি শুধু অভ্রের সাথে বসে গল্প করবে। তাই সবার কাহিনী শোনতে ভালো লাগছে না। কয়েকবার বলেছো ঘুমাবে কিন্তু সবাই কথায় এতো ই ব্যস্ত মিহির কথাকে কেউ তোয়াক্কা করছে না। এবার মিহি রেগে বললো,

–আম্মু আমি ঘুমাবো,,,

মেয়ের এমন আবদার শোনে মিহির মা বোশ অবাক হলো কেনোনা মিহির রুম তো ঠিক করা আছে তাও বার বার কেনো এই কথা বলছে। তাও তিনি বললো

–ঘুমাবি ভালো কথা যা, তোর রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়।

–নাহ্ মিহি আমার রুমে ঘুমাবে।

মিহির মা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো

— কেনো, আপনি একা ই ঘুমান মিহি তো ওর রুমে ই ঘুমায় সব সময়।

–নাহ্ আপনার মেয়ে অপরাধ করেছে যার শাস্তি ও পাচ্ছে।

–অপরাধ মানে।

মিহি বাড়ি থেকে পালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে সব কথা মিহির মাকে বললো, মিহির মা সব কিছু শোনে বললো,

–বেশ হয়েছে, দুজন আলাদা ই থাকবে। যেদিন তুই বুঝতে পারবি অভ্র তোর সাথে কতটা জড়িয়ে আছে ঐদিন এক সাথে থাকবি, কথা ও বলবি।

মিহির খুব করে ইচ্ছে করছিলো বলতে, আমি বুঝতে পেড়েছি মা এবার তোমাদের নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে নেও। কিন্তু লজ্জায় বললো না।
অভ্র রুমে বসে অফিসের কাজ করছিলো,অভ্র বেশ ভালো করে ই জানে মিহি দাদিমার সাথে ঘুমাবে। তাই অভ্র নিজের রুম থেকে বের হয়ে বাসা পিছনে যায়।
পিছনের জানালা দিয়ে মিহিকে ডাকে।

মিহি কন্ঠ শোনে বুঝতে পারে অভ্র ডাকছে, তাই দ্রত গিয়ে জানালা খুলে,

–তোমার ফোন কোথায়, কল দিলাম রিসিভ করলে না কেনো।

মিহি ফোন তো মিহির মায়ের রুমে রেখেছিলো আনতে মনে নাই।

–সরি মায়ের রুমে রেখেছিলাম।

–শোনো…

–নাতবৌ ঘুমিয়ে পড়েছিস নাকি।

দাদিমার কন্ঠ শোনে অভ্র নিচে বসে যায়, মিহি দ্রুত জানালা বন্ধ করে ফেলে।

–এই তুই জানালার পাশে কী করিস।

–কিছু না দাদিমা।

–ঐ সময় তো ঘুম ঘুম করে মাথা খাচ্ছিলি তো এখন কী হলো।

মিহি কোনো উওর না দিয়ে মায়ের রুমে চলে যায় ফোন আনতে। ফোন নিয়ে আবার দ্রুত রুমে ডুকে শুয়ে পড়ে। মুহুর্তে ই অভ্রকে মেসেজ করে। “কী বলতে চেয়েছিলে”

অভ্র মেসেজের রিপ্লে করে,

“১১ঃ৪০ মিনিটে বাগানে আসবা, দাদিমা ঘুমিয়ে পড়লে।সাবধানে আসবা কেউ যেনো বুঝতে না পারে”

মিহি মেসেজটা পড়ে, ফোনটা পাশে রেখে শুয়ে পড়ে, আর একটু পর পর দেখে কয়টা বাজে, দাদিমা ঘুমিয়েছে কিনা।

ঠিক সময়ে মিহি বাগানে চলে যায়, গিয়ে দেখে অভ্র দাড়িয়ে আছে। মিহি গিয়ে অভ্রের হাত ধরতে ই অভ্র মিহিকে নিজের বাহুডোর আবদ্ধ করে নেয়।

দুজন হাটতে হাটতে পুকুরের সাইডে চলে গিয়েছে, পুকুরের সাইডে বাসার ব্যবস্থা করা আছে। অনেক বাতাস এইখানে।

–টিয়াপাখি…
খুব নরম সুরে মিহিকে ডাকে অভ্র,

মিহি অভ্রের দিকে ঘুরে তাকাতল ই দেখে অনেকগুলো গোলাপ। ফুল তো বরাবরই ই ভালো লাগার জিনিস মিহির। তাই অভ্রের কাছ থেকে ফুলগুলো নিয়ে নেয়।

দাদিমার ঘুম ভেঙ্গে যায়, মিহিকে খুজছে কিন্তু পাচ্ছে না। তাই উনি আস্তে আস্তে শোয়া থেকে উঠে বসে। আজকে দেখবে মিহি কোথায় গিয়েছে।

চলবে

#তোমাতে আসক্ত
#নাহিদা ইসলাম
#পর্ব ২৭

দাদিমা বাহিরে এসে মিহিকে খুজতেছে তা মিনতি ভালো ই বুঝতে পারছে, মিহি অভ্রের সাথে আছে তা মিনতিকে বলে গেছে তাই পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য অপুকে পাঠায় মিহিকে আনার জন্য। মিনতি ঘুমায়নি প্রেমিক যুগলকে পাহাড়া দিচ্ছে। পাহাড়া দেওয়ার ও একটা কারণ আছে, মিহি বলেছে মিনতিকে শপিং করিয়ে দিবে। শপিং এর লোভে পড়ে এখন না জানি কী পেঁচে পড়তে হয়। দাদিমার সামনে গিয়ে বললো,

–কিছু লাগবে দাদিমা।

–মিহি কোথায়।

–কেনো আপনার সাথে না ঘুমিয়েছিলো।

–এখন তো নাই,

–আপনি রুমে যান দাদিমা আমি খুজে দিচ্ছি।

দাদিমা কিছু একটা ভেবে রুমে চলে গেলো। যাওয়ার আগে বলে গেলো,

–তোর বোনকে বলিস, চোরের যদি সাতদিন হয়, সাধুর ও একদিন।

——————–

অভ্র একনজরে মিহির দিকে তাকিয়ে আছে, চোখের পলক যেনো পড়ছে না, তা দেখে মিহি হেসে বললো,

–এভাবে তাকিয়ে আছেন যে, অন্ধকারে কী আমার মুখ দেখতে পারেন নাকি।

–তোমার মুখ হিজাব দিয়ে বাধা অবস্থায় থাকলে ও আমি এভাবে তাকিয়ে থাকতাম। তাও পূর্ণ চাদের আলোয় মুখটা আমার চোখে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।

মিহি হাটতা বাড়িয়ে দিয়ে বললো,

–আমার হাতে হাত রাখুন,

অভ্র বিনাবাক্য মিহির হাতের উপর হাত রাখলো,

–এখন কথা দিন যে কালকে রাতে আমাকে নিয়ে ঘুরতে যাবেন।

অভ্র এবার হাত সরিয়ে নিতে চাইলে ও মিহি হাত ছাড়া না।

–মিহি বুঝতে পাড়ছো না এতে বাসার সবাই বুঝতে পারবে।

–সবাই ঘুমিয়ে পড়লে আমরা যাবো।

–তাও সমস্যা হতে পারে।

–নিয়ে যাবেন না এটা বলেন। এতো বাহানা দেওয়ার কী প্রয়োজন।

কথাটা বলে ই মিহি অন্য দিকে মুখ করে তাকায়।

মিহি রাগ করেছে বুঝতে পেরে অভ্র আদর মাথা কন্ঠে বললো,

–রাগ করো না টিয়াপাখি, নিয়ে যাবো তোমাকে।

–তোমরা দুজন কী আমাদের শান্তিতে থাকতে দিবা না। তোমাদের এই লুকোচুরি প্রেম পর্ব শেষ হলে বাসায় যাও

হঠাৎ অপুর কন্ঠ শোনে পিছনে তাকালো অভ্র মিহি দুজন ই।

–কী হয়েছে,অপু।

–দাদিমা মিহিকে খুজতেছে। কতো বার কল দিলাম ধরলে না।

–এমন সময় কেউ বিরক্ত করলে কী ভালো লাগে বল। তাই কেটে দিয়েছিলাম।

দাদিমা ডাকছে শোনে মিহি বললো,

— চলেন দ্রুত বাসায় যাই। বলে ই মিহি অপুকে নিয়ে বাসায় চলে গেলো। অভ্রকে একা রেখে।

বাসার ভেতরে ডুকে দেখে মিনতি সোফায় বসে আছে। মিহি যেতে ই রাগি লুক দিয়ে তাকায়।

–কোথায় ছিলি এতোক্ষণ।

–শোন আমি মায়ের রুমে গিয়ে শুয়ে পড়ছি। তুই দাদিমাকে বলে দিস আমি মাকে খুব মিস করছিলাম তাই মায়ের সাথে ঘুমাতে চলে গিয়েছি।

বলে ই মিহি মায়ের রুমে চলে গেলো।

–তোমাদের দুই বোনের সাথে আমার আগে দেখা হলে আমি ভালো অভিনেতা হতে পারতাম।

মিনতি রাগি লুক দিয়ে তাকাতে ই অপু রুমে চলে যায়। মিনতি ও দাদিমার রুমে যায় মিহি মায়ের রুমে আছে এটা বলার জন্য।



মূলত অভ্র অপুর কল ইচ্ছে করে কেটে দেয়নি। মীরা বার বার কল দিচ্ছে যার কারণে মীরা কল বার বার কেটে দিচ্ছে মাঝখান দিয়ে অপু কল দিয়েছে তা খেয়াল না করে ই কেটে দেয়। নিজেকে জীবনটা এখন কোন দিকে মোর নিচ্ছে তার অভ্রের বোধগম্য হচ্ছে না। মীরা বেশ কয়েকটা মেসেজ করেছে, অভ্র মেসেজগুলো একবার দেখার ও প্রয়োজন মনে করে না। যখন মন থেকে চেয়েছিলো মীরাকে নিজের করে পেতে, তখন মীরার দেওয়া প্রত্যেকটা অবহেলা তিলে তিলে মনটাকে ভেঙ্গে টুকরো টুকরো করে দিয়েছে। যখন ই আবার নিজের ভাঙ্গা মনের টুকরোগুলো কুড়িয়ে আবার একসাথে যুক্ত করেছে ঠিক তখন ই আবার ভালোবাসার মায়ায় অবদ্ধ করতে চাইছে মীরা।৯৩
মীরার ভালো কাজ কিংবা খারাপ কাজের জন্য মীরাকে যেমন পুরোপুরি ভুলে যাওয়া সম্ভব না ঠিক তেমনি মিহিকে একমুহূর্তের জন্য দূরে সরানো সম্ভব না।

মিহি আমার অস্তিত্বে মিশে গিয়েছে।মিহি আসক্ততা আমার।
অভ্র এগুলো ভাবতে ভাবতে রুমে এসে শোয়ে পড়লো। শুয়ে পড়তে ই ঘুম দুচোখে ভর করেছে।

______________________

সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নাস্তার টেবিলে গেলো মিহি । সবাই নাস্তা করে এখন ই রওনা দিবে অভ্রেদের বাসার উদ্দেশ্য। মিহি নাস্তার টেবিলে বসে ই অভ্রের দিকে চোখ যায়৷ অভ্রের মুখটাতে কেমন যেনো বিষন্নতা ছাপ। হাসি মুখটা হঠাৎ মলিন হবার পিছনে কারণ খুজচ্ছে মিহি। মিহি ইশারায় জিজ্ঞেস করলো, কি হয়েছে। অভ্র মুখে হাসি রেখে উওর দিলো কিছু না।

খাবার শেষ করে রেডি হয়ে গাড়িতে বসলো। অভ্র মিহি দাদিমা এক গাড়িতে। সামনে অভ্র ড্রাইভ করছে, পিছনে দাদিমা আর মিহি। হঠাৎ আইসক্রিম দেখে মিহি লাফিয়ে উঠলো,

–দাদিমা আমি আইসক্রিম খাবো।

–আমাকে কেনো বলিস। অভ্রকে বল।

–আপনি তো নিষেধ করেছেন, অভ্রের সাথে কথা বলতে।

–হে , তাই তো। অভ্র গাড়ি থামিয়ে অাইসক্রিম নিয়ে আয়।

–পারবো না৷, দাদিমা। যার আইসক্রিম খেতে ইচ্ছে করছে তাকে বলো, বাহির থেকে কিনে আনতে।

–দাদিমা। কান্না করে দেবো কিন্তু।

–দাদিমা বলো কান্না করতে হবে না বাসায় চলে এসেছি।

বাসার সামনে এসে গাড়ি থামতে ই, মিহি গাড়ি থেকে নেমে অভ্রকে ভেংচি কেটে চলে যায়। অভ্র মিচকি হেসে দাদিমাকে নামিয়ে অফিসের জন্য চলে যায়।

___________________

রাতের বলা,

মিহি আর অভ্র খুব মজা করছে, বাসা থেকে পালিয়ে ঘুরতে এসেছো দুজন।একটা রেস্টুরেন্টে এ এসে গাড়ি থামিয়ে দুজনে সব কিছু ঘুরে দেখতে ব্যস্ত। রেস্টুরেন্টে বললে ভুল হবে ছোটখাটো একটা পার্ক ই বলা যেতে পারে। রেস্টুরেন্টে এর ভিতরে খুব সুন্দর। সবুজ আর লাল এর কম্বিনেশনর লাইট। বাহিরের সাইডে গাছ লাগানো সবগুলো গাছ লাইটিং করা, পাশে ই বাসার ব্যবস্থা আছে। আইসক্রিম কিনে দিয়েছে অভ্র অনেকগুলো। সাথে ফুচকা চলকেট ফ্রি।

অভ্র মিহির দিকে তাকিয়ে হাসতেছে। এই হাসিটা দেখলে অভ্র সব ক্লান্তি ভুলে যায়।হঠাৎ করে ই মনে হলো সময়ের কথা।ঘড়িতে তাকতে ই দেখে রাত দুইটা বাজে।

–মিহি চলো বাসায় যাই, দুইটা বেজে গেছে।

মিহি আর কোনো কথা বললো না, দুজন ই বাসায় যাওয়ার জন্য গাড়িতে বসলো। অভ্র মিহির এক হাত ধরে আছে অন্য হাত দিয়ে ড্রাইভ করছে।

বাসায় আসার পর, বাসার ভেতরের ডুকে লাইট জ্বালাতে ই দেখে,
দাদিমা সহ বাসার সবাই সোফয় বসে আছে। মিহি ভয়ে অভ্রের পেছনে গিয়ে দাড়িয়ে পড়ে। এতো রাতে সবাই এভাবে জেগে বসে থাকবে তা অকল্পনীয় ছিলো।

চলবে,

তোমাতে আসক্ত পর্ব-২৪+২৫

0

#তোমাতে আসক্ত
#নাহিদা ইসলাম
#পর্ব ২৪

দাদিমার জন্য আমার জীবনটা এখন লুকোচুরি খেলার মতো হয়ে গিয়েছে। ঘুম থেকে উঠে আমাকে বেডে না পেয়ে চিৎকার করে বাড়ি মাথায় তোলছে। চিৎকার শোনে কোনো রকম দৌড়ে এসেছি,

–এই নাতবৌ তুই কোথায় ছিলি এতোক্ষণ। তোর চালচলন আমার কিন্তু ভালো ঠেকছে নাহ্।

বুড়িটা এখন ও বেডে ই বসা তারমানে বেশিক্ষণ হয়নি ঘুম থেকে যে উঠেছে। আমি হাই তোলতে তোলতে বললাম,

–এখন বাথরুমে গেলে ও বুঝি আপনাকে সাথে করে নিয়ে যেতে হবে।

–তুই বাথরুমে গিয়েছিলি??

–হে, দাদিমা।

কতোক্ষন আমার দিকে তাকিয়ে থেকে কী যেনো ভেবে বললো,

–দরজা লক কর, চাবি টা আমার কাছে দিয়ে যা।

এই যাহ্ হলো তো কাহিনী, ভাবছিলাম আবার ঘুমিয়ে পড়লে অভ্রের রুমে চলে যাবো, এই মহিলা তো দেখছি কিছু ই হতে দিবে না।

–এই মেয়ে কী এতো ভাবছিস, লক কর। করে চাবিটা আমাকে দিয়ে যা।

দাড়া একটা বুদ্ধি পেয়েছি, চাবি ভেতরে দিয়ে লক না করে ই বলবো লক করেছি, বলে চাবিটা দাদিমাকে দিয়ে দিবো, হা হা হা, কতো বুদ্ধি আমার।

মনে মনে অট্টহাসিতে ফেটে যাওয়া আমি, দরজা লক করেতে গেলাম।

–এই শোন দরজা লক করে আবার জোড়ে টান দিয়ে দেখ দরজা লক হয়েছি কী না।

কতোক্ষন বিরক্ত ভাব নিয়ে তাকিয়ে থাকলাম।

দিলো তো আমার পাকা ধানে মই। হয়েছে আর যাওয়া হলো না। সুন্দর করে দরজা লক করে চাবিটা দিয়ে শুয়ে পড়লাম। মনে কষ্ট ফোনটা হাতে নিয়ে অভ্রকে মেসেজ করলাম,

–তোর জন্য সব হয়েছে। এখন নিজের বউ এর সাথে ও তুই দেখা ও করতে পারিস না।

মেসেজের রিপ্লাই আসে,

–তোমার জন্য হয়েছে ঐ দিন এভাবে পালিয়ে না গেলে কী আর দাদিমা এতো রাগ করতো নাকি। এখন বুঝো আমাকে ছাড়া থাকতে কেমন লাগে।

–তুই সব শর্ত মেনে নিলি কেনো। তুই আর আমার সামনে আসবি না।

–রাগ করো কেনো বউ। দাদিমা ঘুমিয়ে পড়ুক তারপর আবার নিয়ে আসবো।

–তোর দাদিমা, দরজা লক করে চাবি নিজের কাছে রেখে দিয়েছে।

–কী বুদ্ধি দাদিমার ভাবা যায়। আমার লক্ষী বউটা যে আমার জন্য পাগল হয়ে গিয়েছে তা দাদিমা বুঝে গিয়েছে।

–এই নাতবৌ কীসের এতো টুংটাং করছিসরে।

এই বুড়ি তো দেখি শান্তিতে মেসেজ ও করতে দিবে না। দ্রুত ফোন সাইলেন্ট করলাম।

–তুই আমার সাথে কথা ও বলবি না সামনে ও আসবি না। তোর জন্য পাগল হতে বয়ে ই গেছে।

–উফফ যা লাগে না টিয়া পাখি তুমি যখন তুই করে বলো।

কয়েকটা রাগের ইমোজি পাঠিয়ে মিহি ঘুমিয়ে পড়লো।

__________________

সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে, মিহি ফ্রেশ হয় নিচে যাওয়ার জন্য। দাদিমা আগে ই উঠে চলে গিয়েছে। মিহি রুম থেকে বের হয়ে আনমনে হাটতে থাকলো,
হঠাৎ ই অভ্র টান দিয়ে নিজরে বুকের মধ্যে নিয়ে নেয়। দু হাত দিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।

–আমাকে ঘুমাতে না দিয়ে তো সারা রাত দিব্বি নাক ডেকে ঘুমিয়েছো।

–এই নাক ডেকেছি মানে, কী বলতে চান আপনি।

–আরে বাবা, মাফ চাই। যা ই একটু তোমাকে কাছে পাই এই তোমার ঝগড়ার জন্য আমার রোমান্স করা হয় না।

–আগে বলুন আমাকে কেনো বলেছেন নাক ডেকে ঘুমিয়েছি।

–মাফ চাইলাম তো বউ। রাগ করে কেনো ঘুমিয়েছো তুমি। আমি তো চাই না আমার জান রাগ করে ঘুমিয়ে পড়ুক।

–তাহলে বললেন কেনো, আমি আপনার জন্য পাগল।

–তুমি আমার জন্য পাগল কিনা তা জানি না কিন্তু আমি তোমার প্রতি খুব বাজে ভাবে আসক্ত। তোমাকে ছাড়া আমার একমুহূর্ত ও চলে না। তোমার সামনে আসলে ই নেশা লেগে যায়। আমি আমার নিজের মধ্যে থাকিনা টিয়াপাখি। আসক্ত, আমি তোমাতে আসক্ত টিয়াপাখি। খুব বাজে ভাবে আসক্ত।

অভ্র পেটে সাইড করতে করতে কথাগুলো বললো, আমি নিতে পরছিনা অভ্রের স্পর্শগুলো, প্রতিটা স্পর্শে শিহরণ সৃষ্টি হচ্ছে। সরিয়ে দিতে ও পাড়ছি না।

–মিহি নাস্তা করতে এসবি তো, অনেকটা বেলা হয়েছে।

মিনতির কন্ঠ শোনতে ই মিহি অভ্রকে বললাম,

–আপু আসছে, ছাড়ুন।

আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো,

–থাকো না আরেকটু, বউ

–ছাড়ুন এদিকে ই আসছে মনে হচ্ছে।

অভ্র মিহির ঠোঁট আলতো করে ছুয়ে দিতে ই মিহি চোখ বন্ধ করে নেয়।
চোখ খোলে অভ্রকে আর দেখতে পায় না।

–এই মেয়ে এইখানে এমন মুর্তি মতো দাড়িয়ে আছিস কেনো।

আনমনে উওর দিলাম

–এমনি

–মা ডাকছে, খেতে চল।

–হুম আসছি তুই যা।

–আসছি বললে চলেবে না,
মিনতি আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে যাচ্ছে।

___________________

দাদিমার রুমে বসে ছিলাম, মেসেজের নোটিফিকেশনে পেতে ই ফোন হাতে নিতে ই দেখি অভ্র মেসেজ করেছে,

“হ্যাপি রোজ ডে মাই টিয়া পাখি, সরি লেইট করে উইশ করার জন্য ”

আমি রিপ্লাই দিলাম,

–“ফুল ছাড়া উইশ করলে কেমন না লববিহীন তরকারি মতো লাগে, ফুল সহ উইশ করতে পরলে করবেন না হয় এই উইশ আমি গ্রহন করবো না”

—“আচ্ছা তাহলে আজ রাতে দেখে হচ্ছে তোমার যত গোলাপ লাগবে দিবো, কিন্তু বিনিময়ে আমি যা চাই দিতে হবে”

–“সে তখন দেখা যাবে”

–মিহি তোকে কী শাড়িটা অভ্র ভাইয়া দিয়েছে।

মিনতি দাদিমার রুমে ডুকতে ডুকতে বললো, মেজাজটা বেগড়ে গেলো,

–এই তুই জানিস না দাদিমা শোনলে প্রবলেম হবে, তবে কেনো চিল্লাতে হবে।

–সরি, এতো কিছু ভেবে তো বলি নাই।

–হে অভ্র ই দিয়েছে।

–শোন পরের বার থেকে যদি শুধু তোর জন্য গিফট আনে তাহলে কিংবা কথাটা দাদিমার কানে চলে যাবে, যে অভ্র ভাইয়া আর তুই লুকিয়ে দেখা করিস, গিফট দেওয়া নেওয়া ও হয়।

–তুই যে কতো স্বার্থপর, তোর জামাইকে বল এনে দিতে।

–হইছে ঝগড়া করবি না একদম। আজকে বিকেলে আমরা বাবা বাড়ি যাচ্ছি তুই কী জানিস।

মিহি খুশিতে লাফিয়ে উঠে। পরক্ষণেই ই দাদিমার কথা মনে হলো,

–দাদিমা ও যাবে নাকি??

মিহি মিনতিকে প্রশ্নটা করলো আর মনে মনে বললো,
আল্লাহ দাদিমা যেনো না যায়, তাহলে অভ্রের সাথে সময়টা ভালো কাটবে। আর যদি দাদিমা যায় তাহলে……

চলবে

#তোমাতে আসক্ত
#নাহিদা ইসলাম
#পর্ব ২৫

মিহি রেডি হচ্ছে বাবা বাসায় যাওয়ার জন্য আর মনে মনে দাদিমা না যাওয়ার প্রার্থনায় মগ্ন। দাদি মা এখন ও কিছু বলেনি যাওয়া নিয়ে,মিহি বাবা বাড়ি যাচ্ছে তাই সরাসরি তো আর জিজ্ঞেস করা যায় না আপনি যাবেন কিনা। জিজ্ঞেস করলে পরে আবার বলতে পারে মিহি চায় না, দাদিমা তাদের সাথে যাক।

মিহি একটা কুর্তি পড়েছে,সাথে হিজাব পড়েছে, ঠোটে সেই বিখ্যাত বানানা লিপবাম, চোখে হালকা কাজল।রেডি হওয়া শেষে চার্জ থেকে ফোনটা খুলে হাতে নিলো, হাতে নিয়ে ই দেখতে পেলো অভ্র মেসেজ করেছে, মিহিদের সাথে অভ্র যাচ্ছে না, অভ্রের কাজ শেষ করে রাতে যাবে।
মিহির মুখে একরাশ হতাশা ফুটে ওঠে। ভেবেছিলো অভ্র যাবে সাথে।

রেনু বেগম রুমে ডুকে বললো,

–মিহি হলো তোমার,,,,

–জ্বি, আম্মু।

–তাহলে চলো বের হই,

— আম্মু, দাদিমা কোথায়।

–উনি তো গাড়িতে বসে আছেন।

বুড়ির তো দেখছি আমার থেকে বেশি তারা।

–কিছু বললে মা।

–না আম্মু, চলেন।

আম্মুর সাথে নিচে চলে আসলাম গাড়ির সামনে আসতে ই দাদিমা ভেতর থেকে ডাকছে,

–বড় নাতবৌ এই আমার সাথে বসে পড়।

এটা শোনে অনি বললো,

–ভাবি কতো ভালোবাসে তোমাকে দেখো, গাড়িতে উঠে বসে ই বললো, কেউ আমার পাশে বসবি না বড় নাতবৌ বসবে।

আমি আর কিছু বললাম না উঠে বসে পড়লাম।

__________________

বাসার সামনে গাড়ি থামতে ই আমি দ্রুত গাড়ি থেকে নেমে আম্মুকে জড়িয়ে ধরি। কতোদিন পর মায়ের আদর পেলাম।

–হয়েছে, এখন একটু সরে আয় আমি একটু মায়ের সাথে কথা বলি।

–মা তোমার বড় মেয়ে কিন্তু অনেক হিংসুটে, আমাকে আদর করছো তো তাই সহ্য হচ্ছে না।

–মা তুমি কিন্তু সব সময় মিহিকে ই অনেক আদর করেছো, মিনতি নামের যে তোমার কোনো মেয়ে ছিলো তা তোমার মনে নেই।

–হয়েছে তোদের এতো ঝগড়া করতে হবে না, আমি আমার দুই মেয়েকে ই বড্ড বেশি ভালোবাসি।

মিনতি এটা শোনে বললো,

–না মা দুই মেয়ে না বলো যে আমার ছোট মেয়েকে আমি ভালোবাসি।

–ছোটরা সব সময় একটু বেশি ই আদর পায় পাগলিরা চল বাসায় চল, রাস্তা মধ্যে ই সব কী মান অভিমান করে দাড়িয়ে থাকবি নাকি।

সবাই আমাদের কান্ড দেখে হাসতেছে,সবাইকে নিয়ে বাসায় গেলাম। আম্মু সবাইকে সবার রুম দেখিয়ে দিলো, অভ্র আর আমার জন্য আমার রুম সিলেক্টেড করেছে। রাতে ঘুমানোর সময় বুঝা যাবে এই বাসায় ও কী, আমার আর অভ্রের এমন হরতাল চলবে নাকি।

সন্ধ্যার পর আমি বাগানে দাড়িয়ে আছি। কারণ অভ্র আমাকে কল দিয়ে এখনে দাড়াতে বলেছে। নতুন প্রেমে পড়েছি এমন একটা অনুভূতি কাজ করছে। অনুভূতিটা উপভোগ করার মতো। হঠাৎ কেউ একজন পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলো, স্মেইলটা আমার খুব পরিচিত বুঝতে সমস্যা হলো না আমার সে এসেছে।

–ভয় পেলে না যে।

–ভয় পাবো কেনো, এখন আপনি পাশে আসলে আমি অনুভব করতে পারি খুব ভালো ভাবে।

–তাই নাকি। তা কীভাবে অনুভব করতে পারো আমি না হয়ে অন্য কেউ ও এখন আসতে পারতো।

–ঐযে ভালোবাসা দিয়ে। এই স্মেইল টা আমার চেনা হয়ে গিয়েছে।

–হুম, পারফিউম চেঞ্জ করে ফেলবো।

–পারফিউম ই চেঞ্জ করতে পারবেন, অভ্র নামক মানুষটাকে কী চেঞ্জ করতে পারবেন।

আনমনে যখন কথাগুলো বলছিলাম,অভ্র আমাকে কোলে তোলে নিলো,

–আরে কী করছেন, কেউ দেখে ফেলবে।

–অন্ধকারে কেউ দেখবে না।

–দেখবো না কেনো আমরা কী অন্ধ নাকি ভাবি

হঠাৎ বড় আম গাছটার পেছন থেকে অপু, মিনতি অনি বের হলো।

অভ্র মিহি দুজন ই বেশ অবাক হলো, এরা কেনো এইখানে।
মিহি মিনমিন করে বললো”লজ্জায় মাটির সাথে মিশে যেতে ইচ্ছে করছে”
অভ্র দ্রুত মিহিকে কোল থেকে নামিয়ে দূরত্ব বজায় রেখে দাড়ায়।

–ট্রিট দেও নয়তো সব কথা দাদিমার কানে যাবে।

অভ্র কিছুটা রেগে গিয়ে বললো,,

–তোর সব সময় খাই খাই স্বভাব অপু।১০০

অনি বললো,

–শুধু অপুর দোষ ই বা কেনো দিচ্ছো, আমি মিনতি ভাবি ও আছি।

–আচ্ছা কী খাবি বল।

— ঐ যে চার রাস্তার মোড়ে টং দোকানের স্পেশাল চা।

–ওহ্, চা খাবি। আগে বলবি তো চল নিয়ে যাই।

–হে চলো। আমরা রেডি।

মিহি মাঝখান থেকে বলে উঠলো,

–আমি রেডি না। দাদিমার কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে নয়তো আমার যাওয়া হচ্ছে না।

–তা ঠিক বলেছো, দাদিমার থেকে অনুমতি না নিলে আবার বাসাটাকে রণক্ষেত্র বানিয়ে ফেলবে।

–কিন্তু দাদিমার কাছে গিয়ে বললে যদি না দেয় তখন।

অপু মাঝখান থেকে বলে উঠলো,

–দাদিমাকে রাজি করানোর দায়িত্ব আমাদের।

বলে ই সবাই হাটতে শুরু করলো, গন্তব্য দাদিমার রুম।

–আসবো দাদিমা।

চোখ তোলে তাকিয়ে সবাইকে এক সাথে দেখে, ভ্রু কুঁচকিয়ে জিজ্ঞেস করে ,
–সবাই এক সাথে কেনো??

–দাদিমা আমরা একটি টং দোকানে চা খেতে যাবো।

কিছুক্ষন গম্ভীর থেকে বললো,

–তো আমি কী করবো।

–মিহিকে নিয়ে যাই। অভ্র ভাইয়া ও যাবে।

— হে, মিহি যাবে। যদি আমার কানে আসছে যে অভ্র মিহি দুজন এক সাথে হয়ে কথা বলেছো তাহলে তোর আর মিনতির ও এক ই হাল হবে যা।

অপু আর কিছু বললো না। মনটা গম্ভীর করে চলে গেলো। তাও সব বাদ দিয়ে সবাই রাস্তার মোরের দিকে পা বাড়ালো। বেশ ভালো লাগছে এভাবে রাতের বেলা সবাই মিলে হাটতে।

হঠাৎ অভ্রের নম্বরে কল আসলো, ফোনের স্ক্রিনে স্পষ্ট হয়ে লিখা আছে মীরা। তার মানে মীরা এতোদিন পর ফোন দিয়েছে।মিহির হাতটা ছেড়ে দেয় অভ্র।

চলবে

তোমাতে আসক্ত পর্ব-২২+২৩

0

#তোমাতে আসক্ত
#নাহিদা ইসলাম
#পর্ব ২২

মিহির পেছনে দাদিমাকে দেখে থমকে যায়। এখন কী বলে ব্যাপার টা সামলাবে তা ভাবছে। মিহি পুরোপুরি নিষেধ অভ্রের সাথে কথা বলা, অভ্রের সামনে যাওয়া।

–আমার অনুমতি ছাড়া বের হয়েছিস কেনো নাতবৌ।

–দাদিমা উনার সাথে একটু কথা ছিলো।

উনি আমার হাতটা ছাড়িয়ে গাড়িতে উঠে চলে গেলেন। আমি দাদিমা কী বলছে তারদিকে কান না দিয়ে অভ্ররে গাড়ির দিকে তাকিয়ে আছি। আমি অভ্রকে থাপ্পড় মেরেছি বলে কী আমার এতো কষ্ট হচ্ছে নাকি আমি অভ্রকে ভালোবেসে ফেলেছি তাই দূর থাকতে কষ্ট হচ্ছে।

–এই তোর কথা কানে যায় না।

দাদিমার দমকানো কন্ঠ শোনে ভাবনা বাদ দিলাম,

–হে দাদিমা বলেন।

–চল বাসার ভিতরে চল।

বাসার সবাই আমার এমন কান্ড দেখে হাসতেছে। দাদিমা উপরে যাওয়ার পর মিনতি আর অপু এসে আমার পাশে সোফায় বসে।

–কেমন লাগে এখন অভ্রের থেকে দূরে থাকতে ভাবি??

মিনতি প্রশ্ন রাগি লুক দিয়ে মিনতির দিকে তাকিয়ে বলি,

–আমার কোনো কষ্ট লাগছে না, শুধু সরি বলতে গিয়েছিলাম।

–তাই নাকি ভাবি, গতকাল এমন পাকামি না করলে ই হতো। অভ্র ভাইয়া তোকে কী এমন জ্বালিয়েছে যে তুই বাসা থেকে বের হয়ে গিয়েছিস। আগে ও বাবার বাড়ি চলে গিয়েছিস। এবার বুঝো মজা দাদিমা এবার বেশ রাগ করেছে। অভ্র ভাইয়া চাইলে ও দাদিমা তোকে আর অভ্র ভাইয়াকে এক সাথে থাকতে দিচ্ছে না।

–এই শোন, তুই আমাকে এতো ভাবি ভাবি করবি না। আমার এতো শখ নাই উনার সাথে থাকার জন্য। আমি একটা ভুল করেছি শুধু তার ক্ষমা চাইতে গিয়েছিলাম।

এবার অপু বললো,

–বাহ্ ভাবি, আপনি ভাঙ্গবেন কিন্তু মচকাবেন নাহ্।শোনেন আমার ভাই ও কিন্তু কম না দেখবেন আপনার কী অবস্থা করে।

—তাই নাকি দেবর সাহেব, দেখা যাবে।

ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে মিহি উপরে চলে গেলো। এতো ভাব নিয়ে যে চলে আসলো, আসলে তো মিহি সত্যি ই চায় অভ্রের কাছে ক্ষমা চেয়ে সব জামেলা মিটে যাক।

_________________

ফোনে মিহির ঘুমন্ত মুখটা দেখছে আর হাসতেছে। খুব মায়া হয় এই মুখটা দেখলে।মিহির মধ্যে অনেক বাচ্চা সভাব আছে যা অভ্রকে আরো বেশি কাছে টানে। ভালোবাসা দিয়ে ভালোবাসা বুঝাতে চেয়েছিলো কিন্তু পারেনি। আজকে সকালে যখন মিহি অভ্র দিকে তাকিয়ে ছিলো ইচ্ছে করছিলো নিজের কাছে এনে খাবার টা মুখে তোলে খাইয়ে দিতে। কারণ মিহি শুধু অভ্রের দিকে ই তাকিয়ে ছিলো খাবার খাচ্ছিলো না।
সকলের দৃষ্টি এড়িয়ে অভ্র আর চোখে মিহিকে ঠিক ই দেখছিলো।

তারপর যখন বাসা থেকে বের হয়ে আসে অভ্র মনে মনে চাচ্ছিলো মিহি যেনো অভ্রের সামনে আসে, তাহলে বুঝবে সত্যি ই মিহি অভ্রকে মিস করছে।
ঠিক তাই হলো যখন মিহি এসে পিছন থেকে হাতটা ধরলো ঠিক তখন ই ইচ্ছে করছিলো, মিহিকে কাছে টেনে এনে ভালোবাসার একটা পরশ কপালে দিয়ে চলি আসি। কিন্তু নিজেকে অনেক কষ্টে গম্ভীর করে রেখেছিলাম। আর ঠিক সময়ে দাদিমা ও চলে এসেছে। আর একটু কষ্ট পেয়ে আমার শূন্যতাটা মিহি ঠিকভাবে অনুভব করুক যেনো আর কোনো দিন নিজ থেকে অভ্রকে ছেড়ে যাওয়ার সাহস না করে।

কিন্তু আমার যে অতীত আছে তা শোনার পর কি মিহি আমার জীবনে থাকবে।

মীরা যাকে আমি ভালোবাসতাম। মন থেকে চাইতাম মিরা যেনো আমার বউ হয়। মিরি আমার ফ্রেন্ড এর বোন। আমার থেকে তিন বছরের ছোট খুব অহংকারি একটা মেয়ে। মীরা নিজ থেকে এসেই কথা বলছিলো, ভালোবাসি কথাটা মীরা ই আমাকে আগে বলেছিলো। আমার ও মীরাকে খারাপ লাগতো না তাই আমি ও মীরার প্রস্তাবে রাজি হয়ে গিয়েছিলাম।

আমার অনার্স শেষ যখন ছিলো তখন ই আমাদের সম্পর্কটা শুরু হয়। আজ দুইবছর, সম্পর্কের প্রথম ভালো ই ছিল, আমার মধ্যে এতো আবেগ ছিলো না কিন্তু মীরা মধ্যে অনেক আবেগ ছিলো। সম্পর্কে প্রথমে আমি বেশি একটা পাত্তা দিতাম না। কিন্তু যখন ই সম্পর্কে বয়স এগারো মাস তখন থেকে ই মীরা কেমন পরিবর্তন হয়ে গিয়েছিলো, কথা বলতে চাইতো না। দেখা ও করতো না। ফোন দিলে প্রায় সময় ই ব্যস্ত পাই।

মীরার এমন পরিবর্তন দেখে আমার খুব খারাপ লাগতো প্রথমে আমি পাত্তা দিতাম না, এগারো মাস পর মীরা আমাকে অবহেলা করতে শুরু করে আর আমি পাগলের মতো মীরার পিছনে ঘুরতে থাকি।

তারপর সম্পর্ক চলতে থাকে এক তরফা মীরা শুধু মাঝে মাঝে কথা বলতো। এতে ই আমি খুশি থাকতাম। সম্পর্ক যখন চৌদ্দ মাসে পা দেয় তখন একদিন শোনলাম মীরা তার বাবা মায়ের সাথে কানাডা চলে যাবে।

ঐদিন আমি অনেক কেদে ছিলাম,ছেলেদের নাকি কাঁদতে হয় না। তাও বড্ড বেশি কষ্ট হচ্ছিল মীরা চলে যাওয়ার কথা শোনে।

মীরা লাস্ট আমার সাথে দেখা করতে আসে, যেদিন কানাডা চলে যাবে ঐ দিন সকালে।
খুব কেঁদে ছিলাম আমি, শুধু আমি না মীরা ও ঐদিন কেদে ছিলো।

মীরা কেনো কেঁদে ছিলো জানে, কারণ আমাদের সম্পর্ক পর পর ই মীরা রিফাত নামের একটা ছেলের সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। ছেলেটার সাথে যখন সম্পর্কটা গভীর হচ্ছিল তখন ই আমাকে অবহেলা করা শুরু করে। আমার কান্না দেখে হয়তো নিজের মধ্যে
অপরাধবোধ কাজ করছিলো, যে আমাকে ঠকাচ্ছে। তাই মীরা ঐদিন রিফাত সম্পর্কে সব বলে। আমার কাছে ক্ষমা ও চায়। একটু বেশি ই ভালোবাসতাম তাই তো ভুলগুলো না চাইতে ও ক্ষমা করে দিয়েছিলাম।

মীরা কানাডা চলে যায়।মীরা চলে যাওয়ার পর একদিন ভালোভাবে কথা হলে তো দশ দিন হতো না, তাও কিছু বলতাম না। চাইতাম আমাদের সম্পর্কটা থাকুক।

মিরা কানাডা যাওয়ার এক বছর পর বাসা থেকে বিয়ের জন্য বলে, আমাকে বিয়ের জন্য রাজি হওয়ার জন্য মা দাদিমা অনেক কৌশল অবলম্বন করে তাও রাজি হইনি তাই বাধ্য হয়ে অপুর বিয়ে ঠিক করে।

অপুর বিয়ের দিন,
হঠাৎ মীরা কল দেয়। এক বছরের ভিতর কখনো আমাকে কল দেয়নি, নিজে থেকে সব সময় আমি ই কল দিয়েছি। বেশ অবাক হয়ে রিসিভ করতে ই ঝাঁঝালো কণ্ঠে ভেসে আসে। খুব বাজে ব্যবহার করে আমার সাথে। এতো মানুষ এর সামনে আমি কিছু বলতে পারছিলামা। কিন্তু লাস্ট কথাটায় আমাকে খুব বাজে বাজে হিট করে। কথাটা ছিলো,

“অভ্র তুমি আমার জন্য পারফেক্ট না। আমার মতো মেয়ের সাথে কথা বলতে পারো এটা তোমার ভাগ্য পাড়লে আমার থেকে সুন্দর মেয়ে বিয়ে করে দেখাও, যদি তোমার ঐ কলিজা থাকে। বামুন হয়ে চাঁদে হাত দেও। রিফাত এর মতো হয়ে দেখাও পারলে তারপর আমার সাথে কথা বলতে আসবা”

মিহিকে প্রথাম দেখাতে ই ভালো লেগেছিলো, মিহি মীরার থেকে অনেক সুন্দর। তাই আর দেরি করলাম না। পরের টুকু আপনারা জানেন।

অবশ্য মিহির সাথে আমি অন্যায় করেছি।ফার্স্ট এ মিহিকে আমি এতো একটা দেখতে পারতাম না, মিহি সামনে আসলে ই মীরার বলা কথা গুলো মনে পড়তো। আস্তে আস্তে মিহির আচরণ কথা বলার স্টাইল আমাকে মুগ্ধ করে। আমি এখন মিহিকে আঁকড়ে বাচতে চাই। মীরার দেওয়া প্রত্যেকটা কষ্ট ভুলে যেতে চাই।

মীরাকে চেয়ে ছিলাম মিহি আর আমার ছবি পাঠিয়ে দেখিয়ে দিতে ওর থেকে ভালো মেয়ে বিয়ে করেছি কিন্তু ঐ দিনের পর থেকে ফেসবুক আসেনি।

ডায়রির পাতায় লিখাগুলো লিখে সামনে তাকতে ই দেখে মিহি দাড়িয়ে আছে রাগি লুক দিয়ে। তাহলে আমার সব লিখা পড়ে ফেলেছে মিহি।

চলবে।

#তোমাতে আসক্ত
#নাহিদা ইলাম
#পর্ব ২৩

এই মুহুর্তে মিহি আমার হাতের ডাইরিতে লেখাগুলো পড়লে আমাকে অবশ্য ই ভুল বুঝবে। মিহি যেভাবে তাকিয়ে আছে আল্লাহ জানে কী ভাবছে।

আচমকা ই আমাকে জড়িয়ে ধরে বললল,

–আমি না হয় ভুল করেছি তাই কী আমাকে এভাবে শাস্তি দিবেন। আমার খুব কষ্ট হচ্ছে অভ্র আই এম সরি। প্লিজ ক্ষমা করে দিন আর কখনো আপনার সাথে খারাপ ব্যবহার করবো নাহ।

মিহির এতো আদর মিশ্রিত কথা শোনে অভ্রের রাগ ভেঙ্গে গেলো। অভ্র ও পরম উষ্ণতায় বহুডোরে জড়িয়ে নিলো। মিহির খোলা চুলে মন মাতানো ঘ্রাণে মাতাল করে তোলছে অভ্রকে। চুলে মুখ ডুবিয়ে দিলো অভ্র।

হঠাৎ ই অভ্রের ফোন বেজে উঠলো,বিরক্তি নিয়ে ফোন রিসিভ করতে ই দাদিমার বজ্রকন্ঠ শোনতে পেলে,

–মিহি কী তোর অফিসে গিয়েছে।

অভ্র মিহির দিকে তাকিয়ে বললো,

–নাহ্ দাদিমা, আপদটা আসেনি তো।

মিহি এবার বড় বড় চোখ করে অভ্রের কাছ থেকে ফোনটা এনে কল কেটে দিয়ে জিজ্ঞেস করে,

–আমাকে আপনি আপদ বলছেন।

–আরে না তুমি তো আমার মিষ্টি বউ আপদ বলবো কেনো।

–তাহলে কী বলতে চাচ্ছেন আমি কানে কম শোনি।

–তা কখন বললাম।

–আপনি আপদ বলেছেন আমাকে আমি কিন্তু শোনেছি।

–এমন মিষ্টি বউকে কী কেউ আপদ বলে।লক্ষী বউ আমার রাগ করে না।

–রাগ করবো না একটা শর্তে…..

অসহায় ভাব নিয়ে মিহি বললো,

–কী শর্ত?

–একটা সত্যি কথা বলুন তো রাতে আপনি দাদিমার রুমে গিয়ে কী আমাকে ওষুধ খাইয়ে দিয়ে এসেছিলেন।

অভ্র মাথার চুলগুলো উপরের দিকে তুলে মুচকি হাসি দিয়ে বললো,

–হুম।

–আমার শর্ত কিন্তু এটা নাহ্

–তাহলে কী??

–রাতের বেলা ঘুরতে নিয়ে যেতে হবে।

–দাদিমার নিষেধ আছে তোমার সাথে দেখা করা, কথা বলা।

–আপনি এই নিষেধ মানবেন??

–দাদিমার কথা তো মানতে ই হবে, এই সব হয়েছে তোমার জন্য। তুমি যদি ঐদিন বাসা থেকে বের না হতে তাহলে আজকে আমাদের আলাদা থাকতে হয়।

–আমি কিছু জানি না, যা বলছি তা ই করতে হবে। চলি বায়।

মিহি চলে যেতে নিলে হাত ধরে ফেলে অভ্র। হাত ধরে টেনে অভ্রে কাছে নিয় আসে। পিছন থেকে জড়িয়ে ধরতে গেলো ই শোনতে পায় স্যার এই ফাইলা একটু দেখবেন প্লিজ…

— সরি স্যার আমার নক করা টা উচিত ছিলো। বলে ই সামির চলে গেলো।

এমন অবস্থায় অভ্র, মিহিকে দেখে সামির ও খুব লজ্জা পায়।

মিহি এবার অভ্রের দিকে তাকিয়ে বুকে উপর কয়েকটা কিল দিয়ে দিলে, অভ্র মিহির কোমর জড়িয়ে ধরে দাড়িয়ে আছে, আর হাসতেছে।

–আপনি একটা নির্লজ্জ।

–তুমি তো নির্লজ্জ বউ।

–নাহ্ আমি নির্লজ্জের বউ নাহ্

–এতো নির্লজ্জ নির্লজ্জ করলে কিন্তু এখন সত্যি ই নির্লজ্জতা দেখাবো।

–বাজে লোক একটা ছাড়ুন। চলে যাবো আমি।

–যাও নয়তো দাদিমা বুঝে ফেলবে। কী কপাল আমার বউ এর সাথে দেখা করা ও নিষেধ।

–কাজ শেষ করে দ্রুত বাসায় চলে আসেন।

–আমি তো তোমাতে আসক্ত হয়ে আছি কাজ করবে না৷ তুমি যাও আমি বাসায় ফিরে আসতেছি।

____________________

বাসায় আসার সাথে সাথে মিহিকে দাদিমা প্রশ্ন করে,

–এতোক্ষণ কোথায় ছিলি।

–দাদিমা বলে ই তো গিয়েছি বান্ধবীর বাসায় যাচ্ছি, অনেক দিন পর দেখা হয়েছে তো তাই কথা বলতে বলতে লেইট হয়ে গিয়েছে।

–আচ্ছা যা, ফ্রেশ হয়েনে।

মিহি খুশিতে গজগজ করতে করতে উপরে চলে গেলো, তার মানে দাদিমা কিছু বুঝেনি।
ফ্রেশ হয়ে নিচে আসতে ই মিনতি বললো,

–কী ভাবি আপনার কোন বান্ধবীর বাসায় গিয়েছিলেন।

–তোকে কেনো বলবো, ছোট জ্যা ছোট জ্যা এর মতো থাকবি। সম্মান দে।

মিনতি এবার মিহির কান টেনে দিয়ে বলে,

–তুই যে কোন বান্ধবীর বাসায় গিয়েছিলি তা যানা আছে।

–আমি দীপ্তিদের বাসায় গিয়েছিলাম।

–যাহ্ শেষ পর্যন্ত অভ্র ভাইয়াকে তো দীপ্তি বান্ধুবি হতে হলো।

এবার মিহি মিনতির দিকে তাকিয়ে বললো,

–আস্তে বল দাদিমা শোনে ফেলবে।

–আমাকে মিথ্যে বলেছিস কেনো, এখন দাদিমাকে বলে দেই।

–এই আপু বলিস না আর কখনো তোকে মিথ্যা বলবো না।

জীবনটা ই আমার অসহ্য লাগতেছে, সবাই শুধু ভয় ই দেখায়।

মেইন গেইট এর দিকে তাকাতে ই দেখলো অভ্র বাসার ভেতরে ডুকছে, অভ্রকে দেখেই মিহি মুচকি হাসি দিলো। সোফার উপর কয়েকটা শপিং ব্যাগ রেখে অভ্র কয়েকটা সিড়ি উপরে উঠে মিহিকে বললো, ব্যাগগুলো নিয়ে রুমে যাওয়ার জন্য।

আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো কেউ তাদের লুকিয়ে কথা বলার দৃশ্য দেখে ফেলেছে কিনা।। কিন্তু নাহ কেউ কিছু দেখেনি সবাই যার যার কাজে ব্যস্ত

শপিং ব্যাগগুলো নিয়ে মিনি দাদিমার রুমে চলে গেলো, দাদিমা রুমে না থাকায় ব্যাগগুলোতে কী আছে দেখতে সুবিধা হলো

একটা শাড়ি, কতগুলো কাচের চুড়ি, গলার লকেট, কানের দুল। আরো একটা চিরকুট পেলো লিখা ছিলো,

আজকে শাড়িটা পরো আমি দেখতে চাই শাড়ির পড়া আমার তুমিটাকে। কারণ শাড়ি পড়লে তোমাকে অসম্ভব সুন্দর লাগে।

সন্ধ্যা দিকে মিনতির সাহায্যে মিহি শাড়িটা পড়ে নেয়। কিন্তু যে না দাদিমার সামনে আসলো অমনি বলা শুরু করলো,

–আমার নাতিটাকে কাছে টানার টেকনিক।

আল্লাহ এই বুড়ির হাত থেকে আমাকে বাঁচাও,আবার বলতে শুরু করলো

–হে, হে যে ঢং ধরেছিস তা দেখে তো যে কেউ ই গলে যাবে।

আমি আর কোনো কথা বললাম না, দাদিমা যা ইচ্ছা বলতে থাকুক আমি ও এক কান দিয়ে ডুকাই অন্য কান দিয়ে বের করি।

__________________

মিহি ঘুমের মধ্যে অনুভব করলো কেউ তার মুখ চেপে ধরে রেখেছে, চোখ খুলতে ই অন্ধকারের মধ্যে একটা লোক দেখতে পেলো, মিহি বুঝতে পারলো, মিহি লোকাটা কোলে।কোলে করে কোথাও নিয়ে যাচ্ছে আর লোকটার এক হাত দিয়ে মিহির মুখ চেপে ধরে আছে। মুখ চেপে ধরার কারনে চিৎকার ও করতে পারছে না,

–চুপ করো, তোমার জন্য তো এখন ই দাদিমা জেগে যেতো।

–ওহ্ আল্লাহ প্রাণ ফিরে এলো, আপনিহ্

–তা অন্য কাউকে আশা করেছিলে নাকি।

–নাহ্

অভ্রের রুমের বারান্দায় আমাকে নিয়ে অভ্র বসে। আমাকে সামনে বসিয়ে অভ্র পিছনে বসে আছে। আমাকে আলতো করে জড়িয়ে ধরে,

–বিয়ের পর ও বউ এর সাথে চুড়ি করে প্রেম করতে হয়, কী ভাগ্য আমার।

–একটা কথা বলবো আপনাকে….

–হে, বলো মিহি পাখি।

–সত্যি ই কী আমাদের বিয়েটা ছয় মাসের জন্য??

চলবে

তোমাতে আসক্ত পর্ব-২০+২১

0

#তোমাতে আসক্ত
#নাহিদা ইসলাম
#পর্ব ২০

সূর্য তির্যক হয়ে মাথা উপরে আলো দিচ্ছে। চারদিকে মানুষ যে যা কাজে ব্যস্ত,কয়েকজন মানুষ আমাকে পা থেকে মাথা পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করে চলে যাচ্ছে। হয়তো সবার এক ই প্রশ্ন আমি এইখানে কেনো। বাসা থেকে বের হবার সময় জুতোটা ও আনিনি। অভ্রের এমন ব্যবহার আমি নিতে পারছিলাম না। সারাক্ষণ আমার সাথে সাথে লেগে থাকে আমাকে জ্বালানো ইদানীং তার প্রধান কাজ হয়ে উঠেছে।

অফিসে ও যায় কম, অফিসের কাজ বাসায় বসে ই করে।হয়তো আমাকে বিরক্ত করার জন্য ই অফিসে যায় না। অভ্রের স্টাম্প সাইন করেছি পাঁচ দিন হয়ে গিয়েছে, এই পাঁচ দিনে উনি আমাকে পাচ মিনিট শান্ততে থাকতে দেয়নি। মাঝে মাঝে অনেক খারাপ ব্যবহার ও করেছে। সে যা ই হব দুচোখ যেদিকে যায় চলে যাবো। হাটা শুরু করলাম অজানার উদ্দেশ্য।

________________

অভ্র আজকে অফিসে গিয়েছিলো, আসার পর পুরো বাড়ি তনতন করে খুজে কিন্তু মিহিকে খুজে পায় না।

প্রায় একঘন্টা হয়ে গিয়েছে সব জায়গায় খুজ নিয়ে দেখেছে কিন্তু মিহি কোথাও যায়নি। অভ্র নিকটস্থ থানায় ইনফর্ম করেছে।
হঠাৎ করে মিহি এমন নিরুদ্দেশ হয়ে যাবে তা অভ্রের জানা ছিলো না।অভ্রের মাথা কাজ করছে না। হয়তো মিহিকে কষ্ট দিয়েছে কিন্তু এই কষ্টগুলো দেওয়ার সাথে সাথে অনেক ভালো ও বেসেছে। হয়তো কষ্টের ভিড়ে অভ্রের ভালোবাসা গুলোকে চোখে পড়েনি।

মিনতি কেঁদে কেটে একাকার হয়ে যাচ্ছে। বোনকে অনেক ভালোবাসে। মিহির বাবার বাসায় জানানো হয়নি। রেনু বেগম মিনতিকে শান্ত করার চেষ্টা করছে।

দাদিমা পায়চারি করছে আর বার বার দরজার দিকে দেখছে। উনি বেশ রেগে আছে।মিহিকে ঐ দিন এতো করে বুঝানোর পর ও এই কাজ করবে ভাবতে পারেনি।
রেনু বেগম মিনতিকে একটু শান্ত করে অজু করে জায়নামাজ এ বসে পড়লো, নফল নামাজ পড়ে আল্লাহ কাছে দোয়া করবে, ছেলের বউ এর যেনো কেনো ক্ষতি না হয়।

দুপুর গড়িয়ে বিকেল হলো,
আকাশে মেঘ জমেছে বেশ, মনে হচ্ছে আকাশ আজকে রাগ করে এতো মেঘ জমিয়েছে। কখন জানি বৃষ্টি নেমে আশে। সাদার মধ্যে ঘন কালো মেঘগুলো দেখতে খুব সুন্দর লাগছে। চারদিকে বাসতাসে বেগ ধীরে ধীরে বাড়ছে। গাছের পাতাগুলো ফুলের মতো উপর থেকে পড়ছে, পানিতে তাকাতে ই দেখলো কয়েক ফোটা বৃষ্টি পড়ছে খুব ই হালকা গতিতে।
হালকা বৃষ্টি পড়তো ই চারদিকে চোখ যায়, একটা নদীর উপর ব্রিজে দাড়িয়ে আছে মিহি। এখানে যা মানুষ ছিলো বৃষ্টির ছোয়া পেয়ে সবাই ছুটতে শুরু করলো হয়তো বাড়ির উদ্দেশ্য।

অনেকদিন পর বৃষ্টিতে ভিজতে ভালো ই লাগছে মিহির। ব্রিজে দাড়াতে ই চারদিকের সবুজে সমারোহ চোখ ছোয়ে যায়। পাখিরা কাছের ডালে বসে বসে ভিজতেছে। আচ্ছা ওদের কী আমার মতো বৃষ্টিতে ভিজতে ভালো লাগে নাকি, ওদের থাকার মতো জায়গা নেই।

বিদ্যুৎ চমকানো আর বজ্রপাতের শব্দ মিহি ভয় পেয়ে যায়। এখন এতো বেশি বৃষ্টি পড়ছে না,

–এই মেয়ে তোমার কী কোনো কান্ড জ্ঞান নাই নাকি এভাবে রাস্তা কেনো দাড়িয়ে আছো।

পিছনে ফিরতে ই দেখে একটা মধ্যে বয়স্ক মহিলা মিহির দিকে তাকিয়ে কথাগুলো বলছে।

মিহি ছলছল নয়নে তাকিয়ে আছে কিছু বলছে না। আসলে মিহি কী বলবে ভেবে পাচ্ছে না।

–কথা বলছো না কেনো, বোবা নাকি দেখতে তো মনে হচ্ছে ভালো পরিবারের মেয়ে ই, তা এই বৃষ্টি মধ্যে এখানে দাড়িয়ে আছো কেনো। চলে আমার সাথে আমার বাড়িতে।

মিহি শুধু চুপ করে দাড়িয়ে আছে কোনো কথা বলছে না। মিহিকে এমন চুপ থাকতে দেখে মহিলাটা মিহির হাত ধরে টান দেয়।

============

অভ্র অনেক ক্লান্ত হয়ে গিয়েছে তাও ড্রাইভ করছে। ইচ্ছে করছে এখন যদি একটু শুয়ে থাকা যেতো তাহলে মনে হয় ভালো লাগতো। হঠাৎ কল আসে অভ্ররে ফোনে।

ফোনের স্ক্রিনে অপু নাম টা ভেসে উঠতে ই দ্রুত ফোনটা রিসিভ করে।

–হে অপু বল।

অপু কিছু একটা বলতে ই অভ্র দ্রুত গাড়ি ঘুরিয়ে নেয়। গাড়ির স্পিড বাড়িয়ে দিয়ে দ্রুত গাড়ি চালাতে থাকে।

এদিকে মহিলাটি মিহিকে টেনে বাসায় নিয়ে যেতে চাইলে মহিলাকে মিহি ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। মধ্যে বয়স্ক মাহিলা কোমরে ভালো ই লেগেছে মনে হচ্ছে। মিহি মহিলাটাকে ফেলে দিয়ে দৌড়ে ব্রিজের সামনের দিকে যেতে থাকে। মিহি সামনে তাকিয়ি দেখে অভ্র দৌড়ে মিহির দিকে ই আসছে। মিহিকে দেখে এসে জড়িয়ে ধরে।

বৃষ্টি বেগ বেড়েছে। মিহির কাপড় ভিজে গায়ের সাথে লেপটে আছে। পায়ে কাদা মাটিতে ভরে গিয়েছে। মিহি এতোক্ষণ খুব ভয় পেয়েছিলো কিন্তু অভ্রকে দেখে ভয় চলে গিয়েছে। মনের ভেতর খারাপ লাগা ও কাজ করছে যার জন্য বাসা থেকে বের হলে সে ই সামনে এসে পড়লো।

–মিহি তুমি আমাকে না বলে বাসা থেকে না বলে কেনো বের হয়েছো।

–আপনার কাজগুলো আমি নিতে পড়ছিলাম না।আমার জাস্ট অসহ্য লাগছিলো।

–স্যরি মিহি, বাসায় চলো।

বলে ই হাত মিহির হাত ধরতেই সজোরে একটা থাপ্পড় মারে মিহি।

অভ্র কিছুক্ষন থমকে গিয়ে আবার বললো বাসায় চলো,

–প্রতিজ্ঞা করছি, তোমাকে আমি আর বিরক্ত করবো না প্লিজ

মিহি এবার বেশ অবাক হলো থাপ্পড় মারার পর ও মিহিকে এভাবে বলছে বাসায় যাওয়ার জন্য, অভ্রকে তো মিহি এমন জানতো না মিহি ভাবেছিলো হয়তো রাগ করে অভ্র মিহিকে রেখে ই চলে যাবে।

মিহি বৃষ্টিতে ভিজে কাপছে, অভ্র ও ভিজে গিয়েছে। মিহিকে এমন কাঁপতে দেখে অভ্র কোলে তোলে নিলো, মিহি এবার অভ্রকে আর কিছু বলছে না। হঠাৎ মহিলাটা পিছন থেকে ডাকতে ডাকতে সামনে এসে দাড়ালো।

–ওহ, ফুপি ধন্যবাদ আপনাকে। আপনি অপুকে কল দিয়ে না বললে আমি হয়তো মিহিকে এখন ও খুজে বেড়াতাম।

–হে, হে তোমার বউ আমাকে ধাক্কা দিয়ে কোমরটা ভেঙ্গে দিয়েছে। অপু আমাকে ওর ছবি পাঠিয়ে বলেছিলো একটু এদিকে দেখার জন্য, মেয়েটা পেয়ে গেলাম কিন্তু এমন স্বভাবের তা জানতাম না।

–আপনাকে চিনে না তো তাই ভয় পেয়েছে হয়তো। মাফ করবেন ফুপি আসলে মিহি একটু বাচ্চাদের মতো ই আচরণ করে।আপনার সাথে আমি পরে কথা বলবো এখন চলি।

— ভয় পেলে আবার বাড়ি থেকে না বলে বের হলো কেনো। বাবা আমার বাসাতে আসো ভেজা শরিরে এখন বাসায় যাবে।

–ফুপি অন্যদিন যাবো।

বলে ই মিহিকে নিয়ে চলে আসলো, গাড়িতে বসিয়ে অভ্র অপর পাশে বসে গাড়ি স্টার্ট দিলো।
অভ্রের চোখ দুটো লাল হয়ে আছে। কান্না করেছে নাকি রাগ করে মিহি বুঝতে পারছে না। অভ্রকে থাপ্পড় মারাটা মনে হয় ঠিক হয়নি।

============

সবার সামনে মিহি বসে আছে। অভ্র মিহিকে নিচে রেখে ই উপরে চলে গিয়েছে।

–নাতবৌ তোকে এতো করে বুঝানোর পর ও তুই এমন কাজটা করলি আমাদের কেমন অবস্থা হয়েছিলো চিন্তায় তোর জানা আছে।

মিহি চুপ করে আছে কোনো কথা বলছে না। সবাই ই রেগে আছে, মিনতি তো এসে গায়ে হাত তুলতে নিয়েছিলো। অপু আটকিয়েছে।

–কী হলো কথা কানে যাচ্ছে না তোর

একটু রাগ দেখাতে ই মিহি বাচ্চাদের মতো কান্না করে দেয়। মিহির কান্না দেখে অভ্রের মা এসে নিয়ে যেতে চায় এখনা থেকে। রুমের দিকে পা বাড়াতে ই দাদিমা বলে উঠে।

–অভ্র যখন তোকে এতো ই জ্বালায় এতো ই কষ্ট দেয়। আজ থেকে তুই আমার সাথে থাকবি অভ্রের সাথে দেখা হলে কোনো কথা বলবি না।

চলবে।

#তোমাতে আসক্ত
#নাহিদা ইসলাম
#পর্ব ২১

হঠাৎ করে ই বৃষ্টিতে ভেজার কারনে গা কাঁপিয়ে জ্বর এসেছে মিহির।ফ্রেশ হয়ে খাবার না খেয়ে ই দাদিমার রুমে ঘুমিয়ে পড়েছিলো মিহি, ঘুম ভাঙ্গতে ই গায়ে প্রচন্ড তাপ অনুভব হলো। রেনু বেগম মিহির পাশে বসে আছে। শরিরের তাপমাত্রা এতো বেশি তাই তিনি বসে বসে জলপট্টি দিচ্ছেন।

রেনু বেগম চেয়ছিলেন মিহিকে নিজের রুমে নিয়ে যাওয়ার জন্য কিন্তু দাদিমার আদেশ মিহি উনার সাথে ই থাকবে। কোথাও যেতে দিবে না।

মিহি চুপ করে শুয়ে আছে। দাদিমা সাথে বসে বসে ইচ্ছে মতো কথা শোনাচ্ছ মিহিকে। মিহি সব শোনে ও না শোনার মতো ই পড়ে আছে।

–মা…

মিহি শুয়ে থাকা অবস্থায় হালকা একটু শব্দ করলো মা বলে, রেনু বেগম মিহির শব্দ শুনতে ই উত্তেজিত হয়ে জিজ্ঞেস করে,

–কী মা, তোমার কী কিছু লাগবে।

–মা পানি খাবো।

কথাটা বলতে ই রেনু বেগম বসা থেকে উঠে পানি আনতে চলে গেলেন। মিহি এতো অসুস্থ অভ্র কী তা জানে না। বাসায় আসার পর থেকে একবার ও সামনে আসেনি অভ্র।

বেশ কিছুক্ষন পর রেনু বেগম রুমে ডুকলেন, হাতে খাবারের প্লেট। মিহিকে ধরে শুয়া থেকে উঠালেন। পানিট গ্লাসটা হাতে দিতে ই মিহি একটু পানি মুখে নেয়। একটু পানি খেয়ে গ্লাসটা রেনু বেগমের হাতে দিয়ে দেয়। মিহি আবার শুয়ে পড়তে চাইলে রেনু বাধা দেয়।

–খাবার খেয়ে নেও।

–খাবো না আম্মু।

–সারাদিন তো কিছু ই খাওনি, এখন ও যদি না খাও তাহলে আরো বেশি অসুস্থ হয়ে পড়বা।

মিহির ও খুব ক্ষুধা পেয়েছে তা আর না করেনি। কিন্তু মুখে খাবার দিতে ই তেঁতো ভাবের জন্য গলা দিয়ে খাবার নামছে না। মিহি দ্রুত পানি খেয়ে আবার শুয়ে পড়লো।

–কী হয়েছে মিহি শুয়ে পড়লে কেনো।

–আম্মু খাবো না। ভালো লাগছে না।

রেনু বেগম জোর করে ও খাওয়াতে পারেনি তাই বাধ্য হয়ে চলে যায়।

মিহির বার বার জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে করছে অভ্র কোথায়। আজকে অভ্রের সাথে যা করলো তারপর কোন মুখে আবার অভ্রের কথা জিজ্ঞেস করবে। এসব ভেবে জিজ্ঞেস করতে গিয়ে ও থমকে গিয়েছে।

মিহি ঘুমানোর চেষ্টা করছে, মিনতি এসে কয়েকবার দেখে গিয়েছে। কিন্তু কোনো কথা বলেনি। অপুকে ওষুধ আনতে বলেছিলো কিন্তু অনেক রাত হয়ে যাওয়া অপু বলেছে সকালে ওষুধ এনে দিবে। এই মুহুর্তে অভ্রকে খুব বেশি ই মিস করছে মিহি। অভ্র মনে হচ্ছে বাসায় নাই, বাসায় থাকলে ঠিক ই ওষুধ এনে দিতো সে যত রাত ই হক না কেনো।
এসব ভাবতে ভাবতে মিহি ঘুমিয়ে পড়লো।

_______________

মিহি ঘুমিয়ে পড়েছে তাই রেনু বেগম ও নিজের রুমে চলে গিয়েছে। দাদিমা ও মিহির পাশে শুয়ে পড়েছে।

মাঝ রাতে মনে হচ্ছে কেউ মিহিকে টেনে উপরে তুলছে, বার বার হা করতে বলছে
জ্বরের কারণে মিহি কে কী বলছে ওসব খেলায় নাই। শুধু যা বলছে তাই করছে। হঠাৎ মনে হলো কেউ কপালে ঠোঁট দুটো ছুয়ে দিয়েছে। হয়তো স্বপ্ন দেখছে তাই মিহি আর চোখ খুলে তাকায়নি।

বেশকিছু ক্ষন পর, মিহি প্রচন্ড ঘেমে যায়। শরীরের উপর থেকে কম্বল সরিয়ে দেয়। মিহি উঠে বসে, শরিরে জ্বর নেই। বেশ ভালো লাগছে এখন। ঘুম ভাঙ্গার পর ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে পাঁচটা বেজে গিয়েছে তারমানে কিছুক্ষণের মধ্যে ই আজান দিবে, তাই মিহি আর ঘুমায়নি।

একটু আগে কেউ মনে হচ্ছিলো ঔষুধ খাইয়ে দিচ্ছিলো পরম উষ্ণতায় জড়িয়ে নিচ্ছিলো এটা কী স্বপ্ন ছিলো নাকি সত্যি।

যদি সত্যি হয় তাহলে অভ্র কোথায় আশেপাশে তো দাদিমা ছাড়া কেউ ই নেই। যার জন্য এ কয়েকদিন বিরক্ত হয়েছি আজ তাকে মিস করতেছি।

দরজা খোললাম অভ্রের রুমের দিকে যাবো।অমনি দরজা খোলার শব্দে দাদিমা জেগে গেলো,
মহিলা ঘুম থেকে ওঠে ই ঝাঁঝালো কণ্ঠে বললো,

–এই নাতবৌ কোথায় যাস, তোর জ্বর কমে গিয়েছে নাকি। এদিকে আস তো।

— হে দাদিমা কমে গিয়েছে।

–তাহলে যা ওজু করে আস, আমার সাথে নামাজ পড়বি।

–ঠিক আছে দাদিমা।

আমি দাদিমার কথা মতো ওজু করে নামাজ পড়ে নিলাম। এখন বসে আছি। অভ্রের রুমের দিকে যাওয়ার কোনো উপায় খোজে পাচ্ছি না। আমি কালকে অভ্রকে থাপ্পড় টা দিয়ে ভুল করেছি আমাকে অভ্রের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। কেনো জানি অস্থির লাগছে আামর, ক্ষমা না চাওয়া পর্যন্ত ভালো থাকতে পারবো না আমি।

_____________________

অভ্র ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে রেডি হচ্ছে। অফিসে যাওয়ার জন্য। অবশ্য মিহিকে অনেক মিস করছে তাও মিহির সাথে দেখা করবে না। মেয়েটা আমাকে বুঝোক। ভালোবেসে তাকে আমার ভালোবাসা বুঝানো যাবে না। কষ্ট দিয়ে ই তোমাকে আমার ভালোবাসা বুঝাবো মিহি পাখি।

অভ্র রুমের দরজা খুলে বের হতে নিলে ই সামনে মিহিকে দেখতে পায়। মিহিকে দেখতে পেয়েও না দেখার ভাব করে চলে যায়।
এতে মিহি রেগে যায়, পরক্ষণেই কালকের থাপ্পড়ের কথা মনে হতে ই রাগ চলে যায়। অভ্রের পিছনে পিছনে যেতে নিলে নিচে দাদিমাকে দেখে থমকে যায়।

অভ্র সোজা গিয়ে খাবার টেবিলে বসে পড়ে।মিহি ও গুটিগুটি পায়ে গিয়ে অভ্রের পাশের চেয়ারে বসে।

–নতবৌ

দাদিমার কন্ঠ শোনে পিছনে তাকায়,

–উঠে আমার পাশে বস।

–কেনো দাদিমা?

–কোনো প্রকার কথা শোনতে চাই না আমি যা বলছি তা ই কর।

মিহি অভ্রের দিকে অসহায় এর মতো তাকিয়ে আছি। কিন্তু অভ্র মিহির দিকে একবার ও তাকায়নি। বাধ্য হয়ে মিহি দাদিমার পাশে গিয়ে বসে।

খাবারে হাত দিয়ে অভ্ররে দিকে তাকিয়ে আছে, অভ্রকে ইশারায় কথা বলতে বলবে কিন্তু এই অভ্র বজ্জাত টা তো মিহির দিকে তাকাচ্ছে ই না।

–ভাবি খাবার শেষ করে ভাইয়াকে মন ভরে দেখে নিয়েন, এখন খাবার টা খেয়ে নিন।

অপুর এমন কথা শোনে সবাই মুখ টিপে টিপে হাসতেছে। অভ্র খাবার শেষ করে কারো সাথে কোনো কথা না বলে ই অফিসের উদ্দেশ্য বেড়িয়ে পড়ে।

অভ্রকে এমন গম্ভীর দেখে মিহি ভয় পেয়ে যায়। তাহলে কী অভ্র আমার সাথে আর কথা বলবে না। আমার দিকে ফিরে ও তাকাবে না।

মিহি সুযোগ বুঝে অভ্রের পিছনে গিয়ে হাতটা ধরতে ই দাদিমা নাতবৌ বলে জোরে চিৎকার করে উঠে।

চলবে,

[ভুলগুলো ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন ]

তোমাতে আসক্ত পর্ব-১৮+১৯

0

#তোমাতে আসক্ত
#নাহিদা ইসলাম
#পর্ব ১৮

মিহি নিচের দিকে তাকিয়ে অভ্রের সামনে দাড়িয়ে আছে, শত ডাকা শর্তে ও উপরের দিকে চোখ তুলে তাকাচ্ছে না। অভ্র এভাবে কিডন্যাপ করার অভিনয় করবে মিহির তা জানা ছিলো না, মিহি খুব ভয় পেয়েছে।

–মিহি প্লিজ ক্ষমা করে দেন।

–আমি বাসায় যাবো।

— আমাকে ক্ষমা না করলে বাসায় যেতে দিবো না।

–আম্মু অনেক টেনশনে করবে, আমি আপনার সাথে কোনো কথা বলতে চাই না।

–আমি আন্টিকে বলে এসেছি।

–আপনি এখানে নিয়ে এসেছেন কেনো।

–আমার বউ আমি যেখানে ইচ্ছে নিয়ে যাবো, অনেক হয়েছে মিহি আমি আর এগুলো নিতে পারছি না।

–না নিতে পারলে আমার সামনে আসবেন না।

এবার অভ্র বেশ রেগে চেয়ার থেকে উঠে মিহির দিকে এগিয়ে গেলো। মিহির গাল চেপে ধরে মুখটা উপরে তুলে বললো,

–খুব রাগ তোর তাই না, আমি কথা বলছি তুই ভাব দেখাচ্ছিস, অনেক হয়েছে, দেখ আজকে কী করি। এতো দিন দূরে থাকতে দিয়েছিলাম, এখন নিজের সাথে জড়িয়ে রাখবো সব সময়। আজকে বুঝবি অভ্র কী জিনিস

বলে ই মিহিকে ধাক্কা দিয়ে বেডের উপর ফেলে দিলো নিজরে শার্ট এর বোতাম খুলতে খুলতে মিহির দিকে এগিয়ে যায়, এতোটা কাছে চলে যায় দুজনের নিশ্বাসের শব্দ শুনা যাচ্ছে ,মিহি ভয়ে চোখগুলো খিঁচে বন্ধ করে নেয়, ঠোঁট জোড়া দুটো কাপতে থাকে। অভ্রে মিহির হাত ধরেতে ই, মিহি জোড়ে চিৎকার করে কেদে উঠে।
মিহির কান্নার শব্দে অভ্র দূরে সরে আসে।

–আজকে কিছু করলাম না। যদি নেক্সট টাইম আবর কোনো দিন আপনি এমন করেন তাহলে বুঝবেন কী হয়।

অভ্র রুম থেকে বের হয়ে যায়। মিহি কান্না ও বন্ধ হয়ে যায়। মূলত কান্না করেছিলো অভ্র যেনো স্পর্শ না করে। এটা কোথায় আছে মিহি কিছু ই বুঝতে পারছে না। রুমটা সুন্দর ই, বেশ সাজানো গুছানো। মিহি চোখ ভুলিয়ে চারপাশ দেখতে লাগলো।

বেডের পাশে ড্রেসিং টেবিলের উপর চোখ পড়তে ই দেখলো, ফুল দেখা যাচ্ছে। ফুল বরাবর ই মিহি ভালো লাগা। ফুলগুলো হাতে নিতে ই আরো কয়েকটা ব্যাগ চোখে পড়লো,

একটা ব্যাগ খুলতে ই তিনটা চকলেট বাক্স বের হলো। মিহি একটা বাক্স খুলে চকলেট খেতে খেতে অপর ব্যাগটা খুলে দেখলো আইসক্রিম, কিন্তু দুঃখের ব্যাপার হচ্ছে আইসক্রিম গুলো নষ্ট হয়ে গিয়েছে। কিছুটা মন খারাপ করে পড়ের ব্যাগটা খুলতে ই দেখে প্লাজু আর ট্রি-শার্ট এটা দেখে মিহি এবার হেসে ফেলে। যা ই হক আমার দিকে তো অভ্রের ভালো ই খেয়াল আছে।

–আপনার দিকে আমার কোনো খেয়াল ই নেই।

অভ্র রুমে ডুকতে ডুকতে এই কথাটা বললো,

–আপনি এই ব্যাগগুলো খুলেছেন কেনো।

–এইখানে রাখা ছিলো তাই খুললাম।

–আপনি তো বেশ খাদক, বাক্স খুলে চকলেট খাওয়া শুরু করেছেন। এগুলো আপনার জন্য নাকি।

মিহি মুখে অসহায় একটা ভাব নিয়ে বললো,

–তাহলে কার জন্য।

–কার জন্য এটা আপনার জানার দরকার নাই, টাকা দিন এই যে আপনি এই রেপিং করা জিনিসগুলো খুলে নষ্ট করে ফেলেছেন। ব্যাগগুলো ও ছিড়ে ফেলেছেন। এখন এগুলোর টাকা দিন।

–না দিলে কী করবেন,

–একটু আগে কী জেনো করতেছিলাম।

—আচ্ছা আচ্ছা দিবো টাকা। তা কতো টাকা এই জিনিসগুলো।

–জিনিসগুলোর দাম যত ই হক এগুলো নষ্ট করার অপরাধে আপনাকে দশ হাজার টাকা ই দিতে হবে।

–এতো টাকা কেনো।

–জিনিসগুলো নষ্ট করেছেন কেনো। আপনি টাকাগুলো দিলে দেন নয়তো আমার কাজ আমি শুরু করে দেই, শার্ট এর বোতাম উপরের টা খুলে বললো,

— এই না, না, আমি টাকা দিবো।

–তাহলে এখন দেন।

–এখন কোথায় পাবো।

–তাহলে আমার কাছে বিকল্প একটা পদ্ধতি আছে মিসেস মিহি চৌধুরী।

–কী পদ্ধতি।

ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ার থেকে একটা স্টাম্প কালম বের করলো অভ্র। স্টাম্প এ লিখলো,

মিস মিহি অভ্রে চৌধুরীর কাছ থেকে দশ হাজার টাকা ধার নিয়ে ছিলো। সময় মতো পরিশোধ করতে না পাড়ায় আগামী দশদিন মিস মিহি অভ্রের কথা অনুযায়ী উঠবে এবং বসবে। অভ্র যা বলে তাই ই করতে বাধ্য থাকবে, অভ্রের কথা ছাড়া ওয়াশরুম অব্দি যেতে পারবে না। উপর উক্ত একটা নিয়ম ভঙ্গ করিলে মিহি দশদিন পর বিশ হাজার টাকা জরিমানা সহ পরিশোধ করিবে।

–নিন সাইন করুন।

–এই আমি আপনার কাছ থেকে কবে টাকা ধার নিয়ে ছিলাম। আর আপনি মিস মিহি কেনো লিখেছেন। মিসেস মিহি চৌধুরী লিখেন।

–পরের আপনি আমার কাজ না করলে তো এই স্টাম্প কাউকে দেখিয়ে আপনার বিচার করতে পরবো না। তাই আমার বউ আপনি এটা উল্লেখ করলাম না।
বেশি কথা বললে কিন্তু আমার কাজ আমি শুরু করে দিবো।

–আপনার যে কী অবস্থা করি আমি দেখবেন,আমাকে ভয় দেখিয়ে আপনি সাইন করাচ্ছেন। আপনার মতো বজ্জাত মানুষ পৃথিবীতে আরেকটা আছে নাকি সন্দেহ। আল্লাহ আপনার বিচার করুক।

–তাহলে আপনার সাইন করার দরকার নাই, আমার দশ হাজার টাকা দিয়ে দিন। এতো বদদোয়া নিয়ে আমি থাকতে চাই না।

–কোথায় সাইন করতে হবে বলেন।

মিহি মুখে বিরক্ত ভাব নিয়ে সাইন করে দিলো।
অভ্র মুখ টিপে টিপে হাসছে। এই দশদিন যদি তুমি আমার জন্য পাগল না হইছো তাহলে অভ্র চৌধুরী নিজের নামটা চেঞ্জ করে দিবে, মিহি পাখি। তোমার জন্য ই এনেছিলাম এই জিনিসগুলো গিফ্ট হিসেবে , তোমার গিফ্ট দিয়ে তোমাকে আমার ফাদে ফেললাম। মনে মনে কথাগুলো বলে স্টাম্প অভ্র ও সাইন করে স্টাম্প টা তালাবদ্ধ করে দেখে দেয়।মিহির দিকে তাকিয়ে বলে “লাভ ইউ লট মাই টিয়া পাখি”

চলবে,

#তোমাতে আসক্ত
#নাহিদা ইসলাম
#পর্ব ১৯

সকাল হতে ই সূর্য আলো গুলো জানালার পর্দা ভেদ করে চোখে এসে পড়ছে। সূর্যের আলো চোখে পড়তে ই অভ্র কাঁথা দিয়ে মুখ ঘুরে নেয়।

মিহির কাথা দিয়ে এভাবে মুখ ডেকে রাখলে শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। মুখ ডেকে রাখার সাথে সাথে মিহি হাত দিয়ে কাথা সরতে যাবে, তখন ই খেয়াল করে অভ্র আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছে। কালকে এসব কান্ড শুরু হয়েছে বার বার এক ই ভয় দেখায় স্টাম্প সাইন করেছে, এখন অভ্র যা বলবে তা ই করতে হবে।

কয়েকবার ডাকলো মিহি, কিন্তু অভ্রের কোনো সাড়াশব্দ নেই। এদিকে মিহির শ্বাস নিতে অনেক বেশি কষ্ট হচ্ছে। তাই অভ্রের কানের কাছে গিয়ে জোড়ে চিৎকার দেয় একটা।

অভ্র সাথে সাথে উঠে বসে পড়ে। বসে মিহির দিকে রাগি লুক দিয়ে তাকায়।

–এতো জোড়ে কেউ চিৎকার করে??

–আপনি যেভাবে শুয়ে ছিলেন আমার শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিলো ডাকলাম উঠতেছিলেন না তাই আমার জাদু দেখালাম।

–দাড়ান না আমার জাদু দেখাই।

এটা বলে ই অভ্র বিদ্যুতের গতিতে মিহির ঠোঁট একটা চুমু খেয়ে ওয়াশরুম চলে গেলো।মিহি একপ্রকার ফ্রিজড হয়ে বসে আছে।

একটু পরে ওয়াশরুম দরজা একটু ফাঁকা করে বললো, দেখলে আপনার জাদু দিয়ে আমাকে ঘুম থেকে উঠিয়ে দিলেন আর আমার জাদু দিয়ে আপনাকে স্তব্ধ করে বসিয়ে রাখলাম। দুই জনের কতো মিল দুজন ই জাদু পারি। এটুকু বলে ই ওয়াশরুম দরজা বন্ধ করে দিলো।

আপনি ও শুনে রাখেন এক মাঘে তো আর শীত যায়না,শীত বার বার আসে। এবার না হয় আপনার পালা সামনে আমারটা আসতেছে।

অভ্র ওয়াশরুম থেকে ই উওর দিলো”আমি সব সময় প্রস্তুত।

জীবনে অনেক মানুষ দেখেছে, কিন্তু অভ্ররে মতো এমন ছেলে দেখেনি। কতো বাজে লোকরে বাবা।

কালকে রাতে ই বাসায় চলে আসে অভ্র মিহি,যেখানে মিহিকে নিয়ে অভ্র রেখেছিলো ঐটা ওদের অন্য একটা বাসা। যেটা অভ্র নিজের বাসা। বাসাটা খুব ভালো ই লেগেছিলো কিন্তু অভ্রের জন্য ভালো করে দেখতে পারেনি। অভ্রকে একদিন বলবো ঐ বাসাতে নিয়ে যাওয়ার জন্য।

–এই যে ভাবি আসবো নাকি

ভাবনার জগৎ থেকে বের হয়ে দরজার দিকে তাকাতে ই চোখ পড়ে অনির দিকে

–এটা আবার অনুমতি নেওয়া লাগে নাকি, আসো।

–আমাদের কে তো ভুলে ই গিয়েছো। আমার ভাইকে পেয়ে।

–হে তা ঠিক বলেছো, তোমার গুনধর ভাইকে পেয়ে আমি আমার নিজেকে ই ভুলে গিয়েছি।

–সে যা ই হক, যাও তোমাকে দাদিমা ডাকছে। দাদিমা কে বলবো তোমাকে নতুন নাম রেখে দিতে ভাইকে ভালো আকিকা দিয়ে দিতে

কথা শুনে আমি ফেলফেল করে তাকিয়ে আছি যেমন ভাই তার তেমন বোন। নিজেকে সামলে নিয়ে বললাম।

–ওহ্ আচ্ছা, গিয়ে বলো আমি ফ্রেশ হয়ে আসতেছি।

–হুম আচ্ছা, দ্রুত এসো, দাদিমা বলেছিলে সাথে করে নিয়ে যেতে।

বলে ই অনি চলে গেলো।

অভ্র ফ্রেশ হয়ে বের হতে ই আমি ওয়াশরুম ডুকে পড়ি। দ্রুত ফ্রেশ হয়ে বাহিরে বের হয়ে আসি। দাদিমা ডেকেছে বেশি লেইট করলে আাবর কী না কী ভাববে।

আয়নার সামনে দাড়িয়ে চুল ঠিক করতে ই অভ্র পিছন থেকে এসে জড়িয়ে ধরে।

–সব সময় এসব ভাল্লাগে না। ছাড়ুন দাদিমা ডাকছে আমাকে।

–স্টাম্পে সাইন করেছন ভুলে যাবেন না। আগে আমি তারপর দাদিমা।

–আস্ত বজ্জাত আপনি।[স্টাম্প সাইন করার আগে কী জানতাম আপনি একটা লুচু মনে মনে বললাম]

–সে আপনি যাই বলেন, আয়নার দিকে তাকিয়ে দেখেন তো আপনাকে কেমন দেখাচ্ছে। কেনো যে আপনাকে বিয়ে করতে গেলাম।

–আমি বলেছি আমাকে বিয়ে করেন, যান ভালো সুন্দরী মেয়ে দেখে বিয়ে করেন গিয়ে আমার সামনে এসেছেন কেনো।

–তাই নাকি, আপনি এখন আমাকে তুমি করে বলবেন।

–পারবো না।

–আপনি এখন আমাকে তুমি করে বলবেন। এবং আমাকে ও তুমি করে বলতে অনুরোধ করবেন।

—নাহ্।

–স্টাম্প টা কিন্তু সাথে ই আছে। আর না বললে আমি দাদিমার কাছে যেতে দিচ্ছি না।

–আচ্ছা তু,,তু,,তুুমি।

–এখন বলেন “অ গো তুমি আমাকে আপনি বাদ দিয়ে তুমি করে ডাকো প্লিজ”

–এইকথা আমি কেনো আপনাকে বলবো??

–আবার আপনি করে ডেকেছেন। বললে বলেন নয়তো এভাবে ই জড়িয়ে ধরে রাখবো, দাদিমা রেগে যাবে আপনি না গেলে এটা মনে আছে।

মিহি বিরক্ত হয়ে কান্না কান্না ভাব নিয়ে বললো

–অ গো তুমি আমাকে আপনি বাদ দিয়ে তুমি করে ডাকো প্লিজ।

সাথে সাথে অভ্র উওর দেয়।

–ঠিক আছে টিয়া পাখি, আমার কাজ শেষে তুমি এখন যেখানে ইচ্ছা যেতে পারো। কথাটা রেকর্ড করে রাখলাম ফোনে যখন ই আমার কথা শুনবে না,আর সাউন্ড বাক্স এ দিয়ে সবাইকে শোনাবো। এখন থেকে তুমি করে ই ডাকবা।

আর ভালো লাগছে না এসব। একদিনে ই আমার নাজেহাল অবস্থা বানিয়ে ছাড়ছে। দাদিমার রুমে গিয়ে দেখলাম, দাদিমা বসে বসে পান বানাচ্ছে,

–দাদিমা আসবো।

–হে, এতোক্ষণ লাগলো তোর আসতে।১০

–যা বলি মন দিয়ে শোন।

আমি মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালাম।

–এক সাথে থাকতে গেলে স্বামীর সাথে একটু আধটু মন কষাকষি হবে তাই বলে কী বাবার বাড়ি চলে যেতে হবে। স্বামীকে নিজের আচলে বেধে রাখবি যেনো কোথাও যেতে না পারে। অভ্র ছেলে মানুষ তাই রাগটা একটু বেশি তাই বলে তুই ও কী রাগ দেখিয়ে চলে যাবি নাকি। মনে রাখিস মনুষের জীবনে বিয়ে একবার ই হয়। তোদের বিয়েটা আল্লাহ চাইছে বলে ই হয়েছো তোর জন্মের আগে থেকে ই কার সাথে বিয়ে হবে তা আল্লাহ ঠিক করে রেখেছে। যা ই করবি নিজের স্বামীকে নিজের আচলে বেধে নিয়ে করবি।

অভ্ররে দাদা ভাই যখন বেচে ছিলো। আমি প্রায় ই রাগ করতাম আর উনি আমাকে কতো রঙ তামাশা করে রাগ ভাঙ্গাতো। আর উনি যখন রাগ করতো আমি কোনো কথা বলতাম না। একটু পর নিজের ভুল বুঝতে পেড়ে আমার কাছে ক্ষমা চাইতো। কিন্তু ভুলটা আমার ই ছিলো আমি তা ও ত্যাড়ামি করতাম। কিন্তু উনি আমাকে খুব ভালোবাসতো মুখে প্রকাশ করতো না। কেউ মুখে ভালোবাসা প্রকাশ করে আবার কেউ কাজে কর্মে প্রমান করে আমার নাতি টা ও এমন ই।
জন্ম, মৃত্যু, বিয়ে আল্লাহর হাতে। যা চাইলে ও মানুষ কখনো পরিবর্তন করতে পারে না।

দাদিমা তাহলে বিয়ের সাথে সাথে ডিভোর্স শব্দটা শোনলে আপনার কেমন লাগতো??

আমি প্রশ্নটা করে পিছনে ঘুরে তাকাতে ই দেখলাম অভ্র রুমে দরজায় দাড়িয়ে আছে। তাহলে কী অভ্র আমার কথাটা শোনে ফেললো।

চলবে

[ভুলগুলো ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন ]

তোমাতে আসক্ত পর্ব-১৬+১৭

0

#তোমাতে আসক্ত
#নাহিদা ইসলাম
#পর্ব ১৬

আশেপাশে কয়েকটা ছেলে ছাড়া আর কোনো কিছু দেখা যাচ্ছে না। অভ্র কী করে পারলো এরকম একটা যায়গায় রেখে যেতে। তাহলে কী অভ্রের আগের প্লান ছিলো এটা। এভাবে দাড়িয়ে থাকাটা আমার জন্য ভালো হবে না, কোথায় যাবো আমি, সামনে হাটলে ও ছেলে, পিছনে হাটলে ও ছেলে। এতোটা অসহয়া কখনো মনে হয়নি।

আশেপাশের ছেলেরা আমার দিকে তাকিয়ে আছে। হে আল্লাহ আমাকে বাচায়। মনে মনে যা দোয়া আছে পড়া শুরু করলাম।
হঠাৎ একটা গাড়ি আমার থেকে কিছুটা সামনে গিয়ে আবার আমার সামনে এনে দাড় করালো। ভয় টা তো আরো বেড়ে গেলো

–মিহি তুমি এইখানে কেনো।

মুখের দিকে তাকাতে ই দেখলাম অপু। প্রাণটা যেনো ফিরে এলো, কিন্তু ওরা এতো দ্রতু ঢাকায় ফিরে আসলো কেনো।

–গাড়িতে উঠো,,,

–আমি কিছু না ভেবে ই গাড়ি উঠে পড়লাম।

গাড়িতে উঠার বসার সাথে সাথে সবার এক প্রশ্ন

–মিহি কী হয়েছে তুমি এখানে কেনো।

আমি সবটা খুলে বললাম। সবটা শোনে অভ্রের মা বললো,

–তুমি হয়তো বা কোনো ভুল করেছো তাই অভ্রের এভাবে রাস্তায় রেখে যাওয়া ঠিক হয় নাই।
অভ্রে দাদিমা সিলেট গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে তাই আমরা দ্রুত ঢাকায় চলে আসি। উনি অন্য গাড়ি আছে।আর এখন আমরা না আসলে কী হতো। অভ্রে আজকে বাসায় আসুক তারপর দেখো কী করি।

জীবনটা মাঝিবিহীন নৌকার মতো মনে হচ্ছে। নদীর স্রোত অনুযায়ী চলছে। অনেক হয়েছে আর এসব সহ্য করবো না। আমার জবীনটা আমি ই গুছিয়ে নিবো।

এসব ভাবতে ভাবতে বাসার সামনে চলে এসেছি। গাড়ি থেকে নেমে সোজা অভ্রে রুমে চলে গেলাম, আমার যা জামা কাপড় জুয়েলারি আছে সব নিয়ে, অভ্রের পাশের রুমে চলে গেলাম। ভয় পেয়ে মরে গেলো ও আর অভ্রের রুমে যাবো না।

________________________

অভ্র বাসায় এসে ই মায়ের রুমে চলে যায়, মায়ের সামনে বসতে ই রেনু বেগম বলে উঠে,

–অভ্র তোকে খুব ক্লান্ত লাগছে কী হয়েছি। আর আমি যে এসেছি কার কাছ থেকে শোনেছিস।

–দারোয়ান কাকা বলেছে মা।

উনি এক গ্লাস পানি এগিয়ে দিয়ে বললেন,

–খেয়েনে, আর কী হয়েছে বল।

–আম্মু আমি রাগ দেখিয়ে মিহিকে রাস্তায় রেখে চলে গিয়েছিলাম। পরে দশমিনিট পরে এসে দেখলাম মিহি ঐ জায়গায় নেই। আশেপাশে অনেক খুজেছি পাইনি। আম্মু এই রাতের বেলা যদি মিহির কিছু হয়ে যায়। আমি রাগের মাথায় কী করলাম এটা। আমার মাথা ঠিক ছিলো না।

ছেলের এমন অস্থিরতা দেখে রেনু মেকি হাসি দিয়ে বলে,

–যাকে ভালোবাসো বাবা তাকে কেনো আগলে রাখো না। মনে রেখে একবার হারালে কখনো আর পাবে না।

–মা এসব কথা বলার সময় এখন না, কী করবো বলো না তুমি??

–শান্ত হও মিহি বাসায় ই আছে, আমরা নিয়ে এসেছি। কিন্তু কাজটা অভ্র ঠিক করিসনি।

অভ্র মায়ের সাথে আর কোনো কথা না বলে দৌড়ে রুমে চলে যায়। কিন্তু রুমে যেতে ই দেখে মিহি রুমে যায়।

মিহি রুমে নেই দেখে ই, দাদিমার রুমে, মিনতির রুমে খুজে, বাসার ছাদে যায়। কিন্তু কোথাও পায়নি।

এখন তো মনের মধ্যে আরেক ভয় ডুকে গিয়েছে মিহি কী বাবার বাসায় চলে গেলো নাকি। নিজেকে নিজে গালি দিতে ইচ্ছে করছে ঐ সময় রাগের মাথায় মিহির সাথে এতোটা খারাপ ব্যবহার না করলে ও চলতো।

অভ্র পরক্ষণেই মনে হলো মিহি যে অভ্রে পাশের রুমে থাকে। অভ্র দ্রুতগতিতে মিহির রুমের দিকে গেলো।

মিহি রুমের দরজা লক করে শুয়ে আছে। কান্না করতেছি। নিজের এমন পরিণতি মনে নিতে কষ্ট হচ্ছে। বিয়েটা ই জীবনের সুখ শান্তি সব কেড়ে নিলো। বিয়ের আগে তো খুব ভালো ছিলো।

–মিহি দরজা খুলেন।

কন্ঠটা চিনতে বিন্দু পরিমান ও অসুবিধা হয়নি মিহির। অভ্রে কন্ঠ শোনে কান্নার বেগ আরো বেড়ে গেলো। চুপ করে শুয়ে আছে, অভ্র অনবরত দরজায় ধাক্কা দিচ্ছে। কিন্তু মিহির এতে কোনো ভ্রুক্ষেপ নাই।

–কথা কানে যাচ্ছে না, দরজা খুলতে বলছি।

মিহি এভাবার রাগে চিৎকার দিয়ো বললো,

–খোলবো না, এখান থেকে চলে যান।

–স্যরি মিহি আমি বুঝি নাই, রাগের মাথায় এমনটা হয়ে গিয়েছে।

–আপনি এখান থেকে চলে যান বলছি, আমি মাকে কল দিয়েছি কালকে ই বাসায় চলে যাবো, আমার বাড়িতে থেকে নিজেকে কারাবন্ধি রাখতে পারবো না। আদিখ্যেতা না দিয়ে চলে যান।

–আপনি দরজা খুলবেন নাকি আমি দরজা ভেঙ্গে ফেলবো।

–খুলবো না

কথাটা বলার সাথে সাথে দরজায় লাথি মারেতে থাকে অভ্র।

মিহি লাথির শব্দ শুনে দ্রুত গিয়ে দরজা খুলে দেয়। মিহিকে দেখে অভ্র ই অভ্র এসে জড়িয়ে ধরে,মিহি কিছু বুঝার আগে ই।

মিহি ছাড়ানো ব্যর্থ চেষ্টা করছে । অন্ধকার রুমে মিহিকে ছাড়া অভ্র কিছু ই দেখছে না। তাও বুঝতে কষ্ট হচ্ছে না মিহি যে কান্না করছে। একহাত দিয়ে মিহির চোখের পানি মুছে দেয়।

–মিহি প্লিজ আমার ভুল হয়ে গিয়েছে আমি রাগের মাথায় কী করেছি বুঝতে পারিনি।

–কী হয়েছে আপনার ছাড়ুন আমাকে।

কেউ আসার শব্দ শুনে অভ্র মিহিকে ছেড়ে দিয়ে দূরে দাড়ায়।

— কী হয়েছে অভ্র।

সামনে তাকিয়ে দেখলো, অভ্রের দাদিমা দাড়িয়ে আছে।

–কীসের শব্দ করেছিস অভ্র বাসা কী ভেঙ্গে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছিস।

–দাদিমা এসব কিছু না।

–রুমটা অন্ধকার করে রেখেছিস কেনো। লাইট অন কর।

অভ্র দ্রুত গিয়ে লাইট অন করেতে ই দেখে মিহির সব ড্রেস এলোমেলো হয়ে ফ্লোরে পড়ে আছে, মিহির ব্যবহার্য বাকি জিনিস গুলো ও এক সাইডে পড়ে আছে।এগুলো দেখে তো অভ্রের রাগটা আরো বেড়ে যাচ্ছে। কিন্তু এখন মিহি রেগে আগুন হয়ে আছে। হাজার রাগ থাকলে ও অভ্র কে এখন মিহির রাগ ভাঙ্গাতে হবে না হয় মিহি কী না কী করে বসে আল্লাহ ই জানে।

–কী ব্যাপার নাতবৌ এগুলো এইখানে কেনো। স্বামীর সাথে মনমালিন্য হলে মিটিয়েনে। অভ্রের রুমে যা। আর যেনো কোনো শব্দ না শোনি।

–দাদিমা সুস্থ হয়ে গিয়েছো নাকি।

–তোদের এরকম কান্ড দেখে অসুস্থ শরীর নিয়ে ই আসতে হলো।

বলে ই দাদিমা চলে গেলো। দাদিমা চলে যেতে ই অভ্র মিহির দিকে এগিয়ে যায়, মিহি ভয়ে পিছাতে থাকে…

চলবে

#তোমাতে আসক্ত
#নাহিদা ইসলাম
#পর্ব ১৭

আপনি আমার সামনে থেকে দূরে সরে যান, আমি আমার নিজের জীবনটা এই নরক থেকে মুক্তি দিতে চাই।

মিহি মুখে এমন কথা শোনে অভ্র জিজ্ঞেস করে,

–এতো কষ্ট ই কী আমি দিয়েছি।

–তা আর বলার অপেক্ষা রাখে নাকি।

–স্যরি মিহি। আমি তো আপনার কাছে ক্ষমা চাচ্ছি।

–ওমা সে কী কথা, অভ্র চৌধুরী আবার ক্ষমা চাইতে পারে নাকি। একটা মেয়ে যখন তার হাসবেন্ড এর বাসায় আসে, মা,বাব কে ছেড়ে তখন আদর করে আগলে রাখতে হয়। আর আপনি তো জোর করে বিয়ে করেছে তার উপর চুন থেকে পান খসলে আপনার…

অভ্র হাতের আঙ্গুল দিয়ে মিহিকে চুপ করে দিয়। মিহি অভ্রের হাত সরিয়ে দেয়। গিয়ে বেডে শুয়ে পড়ে।
অভ্র ও গিয়ে মিহির পাশে শুয়ে পড়ে।
মিহি এবার পোরা দমে অবাক। কী হচ্ছে কী। জীন ভর করলো নাকি, হয়েছি কী আজকে।

–আপনি আমার বেডে শুয়েছেন কেনো।

–আমার বউ এর পাশে শুয়েছি, আপনাকে বলার কী আছে।

–কে আপনার বউ?

–মিহি।

–আমি কারো বউ না।

–ওহ আপনার নাম বুঝি মিহি, আমার বউ এর নাম ও মিহি।

–তো আপনার বউ এর কাছে যান, আমার পাশে আসছেন কেনো।

–বউ এর পাশে ই আছি।

মিহি এবার বেড থেকে উঠে যেতে নিলে ই অভ্র টান দিয়ে অভ্রের বুকের উপর ফেলে দেয়। ওষ্ঠদ্বয় দুটো ছুয়ে দেয়। মিহি বাকরুদ্ধ হয়ে গিয়েছে। স্পর্শটা নিতে পাড়ছে না। আর অভ্রের এতোটা চেঞ্জ হওয়া টা ও নিতে পাড়ছে না।

বেশ কিছুক্ষন পড় অভ্রের পাশ থেকে উঠে পড়ার সুযোগ হলো। উঠে সোজা অভ্রের মায়ের রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলো।
অভ্র লজ্জায় আর মায়ের রুমে যায়নি।

–কী হয়েছে মা, রাগ করে চলে এসেছো বুঝি।

—কিছু না মা, ঘুমাবো।

মা মুখে হাসি রেখে আমার মাথায় বিলি কেটে দিচ্ছে।
আমি ও মাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়ালাম।

_____________________________

সকাল বেলা পাখির কিচিরমিচির এর শব্দ ঘুম ভাঙ্গলো, বাসায় বাগান থেকে এই শব্দ আসছে, বাগানটা বড় হওয়ার গ্রামের কিছু দৃশ্য উপভোগ করার যায়। মিহি ঘুমাচ্ছে পাশে টেবিলে অভ্র কফির মগটা রেখে চেয়ার টেনে মিহির দুহাত নিজের সামনে এনে হাত দুটো ধরে বসে আছে। মিহির দিকে তাকিয়ে হাসছে।

“প্রথম দেখার প্রেম তুমি
….. আমার প্রথম ভালোবাসা
আমার এই হৃদয় দিয়ে স্পর্শ করবো
তোমার ভালোবাসা

অভ্র মিহির কানের কাছে গিয়ে কথাগুলো বলে,

অভ্রের মুখ থেকে এমন কথাগুলো শুনে চোখ মেলে তাকায় মিহি, সাথে সাথে হাতটা ছাড়িয়ে নেয়। অন্য দিকে তাকিয়ে শুয়ে পড়ে,

–মিহি কফি বানিয়ে নিয়ে এসেছি, খাবেন না।

তোর কফি তুই খা হনুমান। অসভ্য, লুচু তুই মনে মনে কথাগুলো বললো মিহি।

–কথা বলছেন না কেনো আপনি??

মিহি এবার বেড থেকে নেমে নিজের রুমে দিকে চলে যায়।

————

মিহির আম্মুকে কালকে অনেকবার কল দিয়েছে মিহি। মিহিকে নিয়ে যাওয়া জন্য। মেয়ের এমন অস্থিরতা দেখে মিহির আম্মু সারা রাত ঘুমাতে পারেনি। মেয়ের জন্য খুব টেনশন হচ্ছে । তাই সকালে ঘুম থেকে উঠে ই রওনা দিয়েছে।

–মিহি তুই একটু বেশি ই করছিস মনে হচ্ছে না।

–মিনতি যেটা জানিস না, তা নিয়ে কথা বলবি না।

–একটা থাপ্পড় দিবো। আমি তোর এক দিনের হলে ও বড়। এমন ব্যবহার কেনো করছিস মিহি। কালকে রাতে মা তোর জন্য ঘুমাতে পাড়েনি। আজকে সকালে ঘুম থেকে উঠে ই রওনা দিয়েছে।

মিহি কোনো কথা না বলে রুম থেকে বের হয়ে গেলো।

হঠাৎ মিহির এই অগ্নিমুখ অভ্রের আর দেখতে ভালো লাগছে না। তাই সকাল সকাল গাড়ি নিয়ে বের হলো। ফুল,চলকেট,আইসক্রিম কিনতে। ফুল প্রত্যেকটা মেয়ের ই পছন্দ মিহির ও পছন্দ হবে। ড্রাইভ করছে আর মিহির কথা ভাবছে।

মিনতিকে যেদিন প্রথম দেখতে গিয়েছিলো তখন ই মিহিকে অর্ণব এর চোখে পড়ে, অবশ্য মিহি সামনে আসেনি পর্দা আড়াল থেকে বার বার উঁকি দিচ্ছিলো। বারবার পর্দার আড়াল থেকে কেউ একজন দেখছি মনে হচ্ছে তাই অভ্র একটু আড়ালে চলে গিয়েছো। যখন ই মিহি আবার উঁকি দেয় দেখার জন্য, মুহুর্তে ই অভ্রের ভালো লাগা কাজ করতে শুরু করে। কিন্তু অভ্র অন্য কাউকে ভালোবাসতো তাই মিহির দিকে দ্বিতীয় বার ফিরে তাকায়নি।

——–

মিহি সব কিছু ভুলে আবার নতুন করে ভার্সিটিতে ভর্তি হবে, নতুন করে জীবন সাজানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। মায়ের সাথে বাড়িতে এসে ই বিছানায় শুয়ে পড়লো। দুচোখ ঘুম ভর করছে। সারা রাস্তা মায়ের সাথে একটা কথা ও বলেনি। কতো প্রশ্ন করেছে কিন্তু কোনো কথা ই মিহি মাথায় ডুকেনি, মিহিকে এমন ভাবলেশহীন দেখে আর কিছু জিজ্ঞেস ও করেনি মিহির মা। এসব ভাবতে ভাবতে ই ঘুমের রাজ্যে ডুবে যায় মিহি।

অভ্র বাসায় আসে হাতে ফুল, চকলেট বাক্স,আইসক্রিম বাক্স একটা শপিং ব্যাগে মিহির জন্য প্লাজু আর ট্রি-শার্ট এনেছে। কারন এই ড্রেসটা মিহি বাবার বাসায় পড়তে দেখেছে।
কিন্তু বাসার ভিতর পা দিতে ই একরাশ হতাশা অভ্রকে আঁকড়ে ধরলো। অভ্র বুঝতে পারেনি মিহি সত্যি ই চলে যাবে তাও এতো সকালে।

কালকে যখন গাড়ি থেকে নামিয়ে দিয়ে চলে গিয়েছিলো, পরক্ষণেই যখন খুজতে আসে তখন মিহিকে পাইনি অভ্র ঐ জায়গাতে। পাগলের মতো চারপাশে খুজতেছি। বুকের বা পাশে হালকা ব্যাথা অনুভব হচ্ছিল মিহির শূন্যতাটা ঠিক তখন বুঝতে পেরেছে। আজকে আবার সেই একই শূন্যতা বিরাজ করছে অভ্রের মনে।

_________

মিহি চোখ খুলে চারপাশ দেখছে, এই জায়গাটা তো বড্ড অচেনা লাগছে। এটা তো সেই রুম না যেখনে আমি ঘুমিয়ে ছিলাম। এটা কোথায় আর আমার হাত পা এমন বাধা কেনো। হে আল্লাহ তুমি আমাকে কোথায় নিয়ে আনলে। আমাকে কে কিডন্যাপ করে নিয়ে আসলো, কথাটা বলে ই পিছনে ঘুরে তাকাতে দেখলো…….

চলবে,

[অধৈর্য হবেন না। সময় মতো সব জানতে পারবেন। গঠনমূলক মন্তব্য করুন। ভুলগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন]

তোমাতে আসক্ত পর্ব-১৪+১৫

0

#তোমাতে আসক্ত
#নাহিদা ইসলাম
#পর্ব ১৪

হঠাৎ ম্যানেজারের একটা কল আসে তাই চলে যায়। অভ্রের আর কিছু বলতে হয়নি। মিহি অভ্রকে বললো,

–ভালো ই হলো, এখন অযথায় আপনাকে মিথ্যা বলতে হতো বেচে গেলেন।

–আমার কথা আপনার না ভাবলে ও চলবে। এমন ড্রেস পড়েছে দেখে মনে হয় না আপনার বিয়ে হয়েছে তারউপর মুখের মধ্যে বাচ্চা একটা ভাব ফুটে ওঠেছে।

–আপনার সমস্যা কী। জ্বলে নাকি আপনার। দেখে আপনি বিয়ে না করলে ও কতো কিউট ছেলে সহ ছেলের বাবারা ও আমার পিছনে ঘুরে।

— হইছে বিয়ে করেছি তো আপনাকে আপনার ভাগ্য এটা।পরের বার আমার সাথে কোথাও যেতে হলে শাড়ি পড়ে নিবেন।

–আপনি আমাকে বিয়ে করতে পরেছেন এটা আপনার ভাগ্য মিস্টার অভ্র, মিহি চাইলে ও এখন দশটা ছেলে পিছনে লাইন ধরে।

–সব মেয়েদের সেইম ডায়লগ তা আপনি মেয়ে নাকি পাবলিক টয়লেট।

—কী বললেন আপনি।

–তাহলে দেখছি আপনি বয়রা ও।

–কী বললেন আপনি বয়রা আপনার চৌদ্দ গুষ্টি সব বয়রা।

–তাই নাকি,,

এটা বলে ই অভ্র বসা থেকে উঠে মিহির দিকে এগিয়ে যেতে থাকে। মিহি ভয়ে অভ্রের থেকে অনেকটা দূরে চলে যায় কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। অভ্র যত সামনে যাচ্ছে মিহি তত পিছনে যাচ্ছে।।

–কেউ চলে আসবে কিন্তু, দেখতে পারলে আপনার ই খারাপ হবে।

–আমি তো বয়রা কী বলছো, শোনি নাই।

–সিরিয়াল মোডে নিয়ে এমন মজা করবেন না।

–আমি তো বয়রা কিছু শোনি না।

আস্তে আস্তে মিহি দেওয়া আটকে যায়।অভ্রের দুহাতের মাঝখানে মিহি বন্ধি হয়ে যায়।

–কাকে জানি কী বলেছিলেন

–আরশোলা

মিহি আরশোলা বলতে অভ্র ডান দিকেঘুরে তাকায় মিহি এই ফাকে হাতের নিচ দিয়ে কেবিন থেকে বের হয়ে যায়।

মিহি দিকে তাকাতে ই দেখে মিহি কেবিনে নাই। কবিন থেকে বের হয়ে গিয়েছে। অভ্র মেকি হাসি দিয়ে নিজের কাজ করার ব্যস্ত হয়ে পড়ে।

মিহি কেবিন থেকে বের হয়ে সবার কাজ দেখছি। হঠাৎ পিছন থেকে সামির এসে বললো,

–ম্যাম কিছু লাগবে।

–নাহ্, এমনি দেখতে আসলাম।

–ম্যাম চলেন আমি আপনাকে ঘুরে দেখায়।

–চলেন

হঠাৎ একটা মেয়ে সামিরকে ডাকে।

–ম্যাম আমি একটু আসতেছি।

–অবশ্য ই।

কিছুক্ষন মেয়েটা সামিরের সাথে কথা বললো তারপর সামিরকে কিছু আনতে পাঠালো মনে হচ্ছে। আমি তাকিয়ে তাকিয়ে সামির আর মেয়েটা কী করলো এতোক্ষণ তা দেখলাম।

মেয়েটা আমার এদিকে এগিয়ে এসে কিছুটা বিরক্তি ভাব নিয়ে বললো,

–আপনি স্যারের কী হন।

আমি ভাবতেছি কী বলবো বউ বললে যদি অভ্র আবার রাগ করে। তাই বললাম

–উনার ছোট বোন।

মেয়েটা কোনো কিছু না বলে ই চলে গেলো। আমি আমার মতো আবার চারদিকে চোখ বুলাতে থাকলাম।

–ম্যাম আমি চলে এসেছি।

সামিরের ডাকে পিছনে ঘুরে তাকাই।

–ওহ্, চলুন তাহলে সবটা ঘুরে দেখি।

–ম্যাম আমাদের স্যার কিন্তু অনেক ভালো মানুষ।

–হে, (ভালো নাকি বজ্জাতের গুষ্টি উনি তা ভালো ই বুঝি আমি) মনে মনে বললাম।

হঠাৎ করে আবার ঐ মেয়েটাকে সামনে দেখলাম। সামির মেয়েটার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে,

–তুমি এইখানে তোমার কাজ নাই।

–আমি কাজ করলে কী আর তোমার এই রঙ্গলিলা দেখতে পারতাম।

–কী বলছো এসব।

–মেয়েটা আমার থেকে সুন্দর আর স্যারের বোন তাই কী তুমি এই মেয়েকে একবার দেখে ই ভালোবেসে ফেলেছো।

–অরণী, স্যার জানতে পারলে তোমার জবটা শেষ আজকে ই।

–তোমাকে আমার লাইফ নিয়ে ভাবতে বলিনি সামির।

–আরে তুমি ভুল বুঝতেছো অরণী। আমি তো..

এর আগে ই সামিরের গালে একটা থাপ্পড় পড়ে, মেয়েটা থাপ্পড় মেরে একমুহূর্তে জন্য ও না দাড়িয়ে চলে যায়।

–ম্যাম স্যরি।

আমি মেকি হাসি দিয়ে বললাম,

–চলে যান, আপনি আমি আপনার স্যারের কাছে যাচ্ছি।।

এটা বলে আমি অভ্রের কেবিনের দিকে পা বাড়ালাম। এতোক্ষণ যাবৎ শুধু অরণী আর সামিরের কাহিনী দেখলাম।চাইলে আমি কিছু বলতে পারতাম কিন্তু বলিনি। দেখলাম বিশ্বাসের জোর কতোটুকু। সামিরে গার্লফ্রেন্ড অরণী। ওদের সম্পর্কে ভালোবাসা আছে কিন্তু বিশ্বাস নাই, এমন ভালোবাসা ই টিকে কম।

–কী নিয়ে গবেষণা চলছে আপনার মাথায়।

অভ্রের এমন কথায় অভ্রের দিকে তাকালাম,

–আপনার মাথা নিয়ে।

–ওয়াও খুব সুন্দর, তা তখন পালাচ্ছিলেন কেনো।

–আমার আশেপাশে আসলে আবার পালাবো।

–চলো..

–কোথায়

আমার কথার কোনো উওর না দিয়ে অভ্র আমার হাত ধরে টানতে টানতে কেবিন থেকে বের হয়ে গেলো,

কেবিন থেকে বের হয়ে সকল স্টাফদের এক সাথে করলো,

–আপনাদের সবাইকে একটা কথা বলার জন্য এভাবে এক সাথে করা। সবার মনে ই হয়তো এক প্রশ্ন যে আমার সাথে এই মেয়েটা কে।

উনি হচ্ছে অভ্র চৌধুরীর স্ত্রী মিসেস মিহি চৌধুরী।

কথাটা শোনার সাথে সবাই হাত তালি দিতে থাকে। আমি অবাক হয়ে অভ্রের দিকে তাকিয়ে আছি। উনি আমাকে এক হাত দিয়ে নিজের সাথে জড়িয়ে নিয়েছে। আমি এক মনে তাকিয়ে আছি অভ্রের দিকে, এই মানুষ টা এমন কেনো। কী চায় উনি….

চলবে,

#তোমাতে আসক্ত
#নাহিদা ইসলাম
#পর্ব ১৫

অফিসের সবাই মিষ্টি মুখ করার জন্য বায়না ধরেছে। সবার এক কথা এখন মিষ্টি মুখ করাবে কয়েকদিন পর আবার ঝাল মুখ করাতে হবে। সবাই বেশ মজা করছে বিয়ের ব্যাপার টা নিয়ে।

অভ্র কয়েকজনকে পাঠালো মিষ্টি আনার জন্য। মিহি অভ্রের দিকে ছলছল নয়নে তাকিয়ে আছে।সবার কথাকে উপেক্ষা করে মিহির দিকে তাকাতে ই অভ্রের কপালে ভাজ পড়ে হয়তো আমার মুখে এমন কষ্টের ছাপ দেখবে এটা তার কাম্য ছিলো না।

আস্তে আস্তে আমার পাশে এসে ইশারায় জিজ্ঞেস করে,কী হয়েছে।
আমি কোনো উওর দেইনি। উনি তো বললেন ই এ বিয়েটা শুধু ছয় মাসের জন্য তাহলে এমন ঘটা করে সবাইকে জানানোর কী প্রয়োজন।

–ম্যাম আই এম স্যরি

অরণীর শব্দ পেতে ই মুখ তুলে তাকাই।মুখে মিষ্টি একটা হাসি রেখে উওর দেই ইট’স ওকে।

–ম্যাম আমাকে ক্ষমা করবেন, স্যার এসব জানতে পারলে আমার জবটা থাকবে না।

–না, না আমি এসব কিছু আপনার স্যারকে বলবো না।

–ম্যাম তাহলে আমাকে আপনি মিথ্যা কেনো বলেছিন যে আপনি স্যারের বোন।

–এমনি, মজা করে বলেছিলাম।

–ম্যাম সামির আমার সাথে কথা বলছে না, আপনি একটু বলবেন আমার সাথে কথা বলার জন্য।

–যাকে ভালোবাসেন তাকে কেনো বিশ্বাস করেননি, বিশ্বাস প্রত্যেকটা সম্পর্কে ভিওি। যেখানে মানুষটাকে বিশ্বাস ই করতে পারেন না সেই মানুষটাকে নিজের জীবনের সাথে জড়িয়ে জামেলা বাড়ানোর চেয়ে, মানুষটা থেকে দূরে থাকা শ্রেয়।

–ম্যাম আমার ভুল হয়ে গিয়েছে।

–ঠিক আছে আমি বলে দিবো।

অভ্র আমাকে নিয়ে কেবিনে চলে এসেছে। আমাকে বসিয়ে জিজ্ঞেস করলো,

–কী হয়েছে আপনার মন খারাপ কেনো, আর বিশ্বাস নিয়ে তো দেখছি ভালো ই সঙ্গা দিতে পারেন।

–এসব করার কী খুব প্রয়োজন ছিলো। মন থেকে মেনে নেননি, তারপর কেনো সবাইকে জানাতে গেলেন এটা কী জানতে পারি।

–যতদিন ই আমার কাছে আছেন, আমি আপনাকে নিজস্ব পরিচয় দিয়ে ই রাখতে চাই। আজকে একজন বিয়ের কথা বলেছে, কালকে আরেকজন বলতে পারে তাই পরিচয়টা দিয়ে দেওয়া টা ই ভালো মনে হলো।

আজকে আবহাওয়া এতো শান্ত কেনো বুঝলাম না, হয়তো ঝড়ের পূর্বাভাস দিচ্ছে। আল্লাল মালুম যা হওয়ার হবে।

___________________________

সন্ধ্যা নেমে এসেছে, আজকে পূর্ণ চাদ উঠেছে। চাদের আলোয় মনে হচ্ছে সব কিছু স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। বাগানের সাইডে মানমাতানো সৌরভ নিয়ে দাড়িয়ে আছে হাসনাহেনা গাছে। রাত হলে ই ফুলের গন্ধে চারদিকে ভরে যায়। মিষ্টি গন্ধ নাকে আসলে ই ফুলগুলোকে ছুয়ে দিতে ইচ্ছে করে কিন্তু এই রাতের বেলা বাগানে যেতে ভয় লাগে লোকমুখে শোনেছি হাসনাহেনা গাছে নাকি সাপ থাকে, নয়তো এখন ঠিক হাসনাহেনা গাছের নিচে চলে যেতাম। চাদের আলোয় সবগুলো ফুল খুব সুন্দর দেখাচ্ছে।

অভ্রের রুমের বারান্দায় বসে আছি আমি। বসে বসে প্রকৃতি মধ্যে নিজেকে হারিেয় ফেলতে ইচ্ছে করে। অফিস থেকে বিকেলে এসে ফ্রেশ হয়ে বসলাম, একটু আগে।
অভ্রের ডাকে রুমে প্রবেশ করি।

–শাড়ি পড় রেডি হয়ে নিন।

–কেনো, কোথায় যাবো।

— ডিনার করতে বাহিরে যাবো।

কথাটা শোনে খুশি হয়ে গেলাম কারন আমার ঘুরতে অনেক ভালো লাগে, রাতের বেলা তো আরো বেশি। কিন্তু সমস্যা বাঁধলো আমার শাড়ি পড়া নিয়ে, আমি তো শাড়ি পড়তে পারি না। অভ্রকে বললাম,

–আমি শাড়ি পড়তে পারি না।

–না পড়লে, চেষ্টা করুন।

–পাড়ি না বলছি তো।

–না পারলে আমি একা একা যাবো আপনি বসায় বসে ভুতেদের সাথে গল্প করবেন কেমন।

–এই না, না, যাবো আমি।

–তাহলে শাড়ি পড়ে নিন। আমি চাই না আর কেউ আমাকে এসে আপনার বিয়ের কথা বলুক।

–আমি জানি তো আপনার পেটটা পুরোটা ভরা হিংসায়।

–কী বললেন।

চোখ রাঙ্গিয়ে তাকাতে ই আমি চলে আসি অন্য রুমে। একটা নীল কালারের শাড়ি নেই, ইউটিউব দেখে দেখে ট্রাই করতে থাকলাম। আমার মনে হচ্ছে ইউটিউব না থাকলে আমি কিছু ই করতে পারতাম না। যা ই হক যে মেয়ে জীবনে শাড়ি পড়তে পরে না সে কী একদিনে শাড়ি পড়া শিখে যাবে নাকি।

কোনো রকম শাড়ি পেচিয়ে নিলাম, মনে মনে অভ্রের চৌদ্দ গুষ্টিকে বকতে লাগলাম। সব ই হলো কুচি কীভাবে দেয়, আমি তো কুচি ই ঠিক করতে পরছি না, অনেকক্ষণ তো ট্রাই করলাম। না পেরে অভ্রকে ডাকলাম,

–একটু আসবেন এদিকে।

–নিজের কাজ নিজে করা ভালো।

–কান্না করে দিবো কিন্তু।

–তা আপনি করতে পারেন ।

–প্লিজ আসুন না।

অভ্র রুমে এসে, কতক্ষণ মন খুলে হেসে নিলো মিহির অবস্থা দেখে।

–হাসির কী হলো, আমার এই অবস্থা কিন্তু আপনার জন্য ই।

–বেশি কথা বললে আমি চলে যাবো কিন্তু।

–আর বলবো না এবার কিছু একটা করেন।

অভ্র এসে মিহির সামনে দাড়ায় কিন্তু শাড়ির কুচি ছাড়া অন্য কোনো কথা ও বলেনি তাকায় ও নি।
অভ্র যেটুকু পেড়েছে কুচিগুলো মিহির হাতে ঠিকে করে ধরিয়ে দিয়ে বিনা বাক্যে রুম থেকে বের হয়ে যায়।

মিহি শাড়ি ঠিক করে, ম্যাচিং জুয়েলারি, ম্যাচিং চুড়ি পড়ে নিলো। কিন্তু ভাবনা একটা ই মিহি পারেনি অভ্র কী করে শাড়ির কুচি দেতে পারে। তাহলে কী আগে অন্য কাউকে শাড়ি পড়িয়েছিলো।

গাড়িতে বসে মিহির প্রশ্ন

–শাড়ি পড়লে মানুষ কতো প্রসংশা করে আপনি তো চোখ তুলে দেখলেন ও না।

–দেখে কী করবো,

–এট কেমন কথা,আপনি কী আগে কাউকে শাড়ি পড়িয়ে দিয়েছিলেন।

–হঠাৎ এই প্রশ্ন কেনো করলেন। এই জন্য ই মানুষের উপকার করতে নেই।

–তাহলে আপনি আমার থেকে ভালো করে কুচি ঠিক করতে পারেন কী করে।

–আপনি যে একটা গাধা এটা আমি জানি তাই আপনি যাওয়ার পর শাড়ি পাড়ার কয়েকটা ভিডিও দেখেছি।

–ওহ্ আচ্ছা। গাধা না মেয়েদেরকে গাধী বলে।
আপনার মধ্যে শিক্ষার অভাব আছে।

কথাটা বলার সাথে সাথে অভ্র গাড়ি থামিয়ে দেয়, অভ্র গাড়ি থেকে নেমে মিহিকে টেনে গাড়ি থেকে নেমে, নিজে আবার গাড়িতে উঠে গাড়ি স্টার্ট দেয়।

মিহি কিছু বুঝে উঠার আগে ই গাড়িটা চোখের আড়াল হয়ে যায়। কী হলো এটা, একা একা নামিয়ে কেন দিয়ে গেলো। আমি নিজে অনেক বেশি কথা বলি তাই কী মাঝ রাস্তায় আমাকে নামিয়ে চলে যাবে নাকি। চারদিকে খারাপ মানুষ এর অভাব নেই, আমি এভাবে একা দাড়িয়ে থাকলে দূর্ঘটনা হওয়ার সম্ভাবনা ই বেশি….

চলবে

তোমাতে আসক্ত পর্ব-১২+১৩

0

#তোমাতে আসক্ত
#নাহিদা ইসলাম
#পর্ব ১২

সূর্য রক্তবর্ণ ধারন করে আছে। একটু পরে ই সন্ধ্যা নেমে আসবে কিন্তু অভ্র এখনো বাসায় আসেনি। পুরো বাসা ফাঁকা একা একা কী যে ভয় লাগতেছে। আমি কখনো একা কোথাও যাইনি, এতোক্ষণ বাহিরে বারান্দায় দাড়িয়ে ছিলাম। আর কতো একা একা দাড়িয়ে থাকবো এইখানে।অভ্রকে কয়েকবার কল দিলাম কিন্তু রিসিভ করলো না। মায়ের সাথে কথা বললে আমি নিশ্চয়ই বলে দিবো বাসায় কেউ নাই একা একা ভয় পাচ্ছি আর মা টেনশন করতে শুরু করবে তাই মাকে ও কল দেইনি।

হঠাৎ চোখ পড়লো বাহিরের দারোয়ানকে উনি ও তো একা দাড়িয়ে আছে। যাই একটু কথা বলে আসি।
যেই ভাবনা সেই কাজ।আস্তে আস্তে হেটে গেলাম দারোয়ানের সামনে,

মধ্যে বয়স্ক একটা লোক, ইউনিফর্ম পড়া,আমাকে দেখে ই বাসা থেকে উঠে দাড়ায়। আমাকে দেখে উনি চমকে গিয়ে জিজ্ঞেসা করে,

–তুমি কীভাবে ভেতরে ডুকলে,কে তুমি কী চাই।

দারোয়ান মনে হয় আমাকে চিন্তে পারেনি, না চিনার ই কথাটা, যেভাবে আমাদের বিয়েটা হলো নিকট আত্নীয় ছাড়া তেমন কেউ ই জানে না। তাই নিজের পরিচয় দিলাম।

–আমি অভ্র কে তো চিনেন।

–হে অভ্র বাবা কে চিনবো না ছোটবেলা থেকে এই বাড়ির দারোয়ানে কাজ করছি।

–তাহলে আমি আপনার বউমা। অভ্রের বউ।

বউ বললে ভুল হবে এই বিয়েটা তো শুধু মাত্র কয়েকটা দিনের জন্য মনে মনে কথাগুলো বলে দারোয়ান চাচার মুখের দিকে তাকাতে ই দেখি কপালে কেমন ভাজ পড়েছে।

–কী হয়েছে চাচা?

–আমি কয়েকদিন অসুস্থ থাকার কারনে দেশের বাড়িতে গিয়েছিলা তার মধ্যে বিয়ে করে ফেললো।অভ্র বাবা তো একটা মেয়েকে অনেক ভালোবাসতো। কিন্তু তোমাকে কেনো বিয়ে করলো।

এটা বলার সাথে সাথে অভ্রের গাড়ি গেইটার সামনে এসে দাড়ালো। চাচা চেয়ে ও আর কিছু বলতে পারলো না। গেইট খুলে দিতে ই অভ্র গাড়িটা গেইটের ভেতরে ডুকে, আমাকে দেখতে পায়। সাথে সাথে গাড়ি থেকে নেমে আমার সামনে এসে রাগান্বিত গন্ঠে বলে,

–আপনি বাসা থেকে বের হয়েছেন কেনো।

–আমি যে সুন্দর তা রাস্তার মানুষকে দেখাতে। তা আপনি এতোক্ষন কোন মহাদেশে ছিলেন।

অভ্র আমার কথার উওর না দিয়ে হাত ধরে টানতে টানতে বাসার ভেতরে নিয়ে এসেছে।

–আপনি দারোয়ান চাচার সাথে কথা বলতে গেলে কেনো।

–একা একা ভালো লাগতেছিলো না আর খুব ভয় করছিলো, তাই একটু কথা বলতে গেলাম।

–আমাকে কল দিতে পারতেন।

–অনেকগুকো কল দিয়েছি, আপনি রিসিভ করেননি

অভ্র ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে বলে,

–স্যরি আসলে একটা ইম্পরট্যান্ট মিটিং ছিলো, সারাদিন খাই নাই ক্ষুধা লাগছে খাবো। খাবার রেডি করেন।

–রুমে কোনো খাবার নাই, যা ছিলো নষ্ট হয়ে গিয়েছে। কাজের লোক সকালে এসে রান্না করে দিয়ে গিয়েছিলো।

অভ্র আমার সাথে কোনো কথা না বলে মেইন গেইট লক করে আমাকে রুমে একা রেখে বাহিরে চলে যায়।

আমি ভয় পাই উনি বুঝতে পারে না তাও কেনো এভাবে আমাকে একা রেখে চলে যায়।রাগ হচ্ছে খুব এতো বড় বাড়িতে আমি একা তাও আবার বাহিরের থেকে দরজা লক করে রেখেছে।
অভ্র মানুষ টা এমন কেনো পুরো ই ধরা ছোয়ার বাইরে কখনো ভালো কখনো খারাপ। মাঝে মাঝে এমন একটা ভাব করে আমি যা চাই সব দিয়ে দিবে। আবার কখনো কখনো আমকে দুচোখে সহ্য ই করে পারে না।।

“কখনো আমার হৃদয়ের আকাশে মেঘ জমে
আবার কখনো বিনা নোটিশে বৃষ্টি নামে। আর সেই বৃষ্টিতে ভিজতে ই সকল মেঘ সরে গিয়ে আবার সূর্য আলো দিতে থাকে।” অভ্রের ব্যাপার টা আমার কাছে ঠিক এমন ই মনে হচ্ছে।

দারোয়ান চাচা বললো অভ্র কাউকে ভালোবাসতো। ভালোবাসতো মানে কী এখন ভালোবাসে না। যদি এখনো ভালোবাসে তাহলে আমাকে কেনো বিয়ে করলো। কাউকে ভালোবাসে বলে ই আমাকে ছয়মাস পর ছেড়ে দিবে বলছে।
এতো কেনো কেনোর ভিড়ে মনে হচ্ছে আমি নিজের নামটা ই ভুলে যাবো। আজকে আসলে সব কেনোর উওর দিতে হবে।

–মিহি,আপনি এইখানে আসছেন, আর আমি ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম কোথায় না কোথায় চলে গিয়েছেন।

অভ্রের কথা শুনে পিছনে তাকিয়ে ই অভ্রের সামনে গিয়ে অভ্রে শার্ট এর কলারে ধরে বললাম,

–আমাকে বিয়ে করেছেন কেনো। এখন বলবে না হয় মরে ই ফেলবো।

অভ্র আমার চোখের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। হাত দিয়ে পিছন থেকে অভ্রের সাথে জড়িয়ে নিয়েছে।
এখন মনে হচ্ছে আমি বাকশক্তি হারিয়ে ফেলেছি।

আস্তে আস্তে আমার মুখের দিকে আসছে, আমি ভয়ে আমার মুখ পিছনের দিকে নিচ্ছি। আমি যত পিছনে দিকে যাচ্ছি অভ্র তত আমার দিকে আসছে। আমি ভয়ে খিঁচে চোখ বন্ধ করে নিলাম

হঠাৎ করে অভ্র আমাকে ছেড়ে দেয়, আমি সজোরে বিছানায় পড়ি। আমার কোমরটা ভেঙ্গে গেলো মনে হচ্ছে।

–মনে হয় আমার বেডে আটার বস্তা পড়েছে।কালকে ই মিস্ত্রি দেখাতে হবে।

–আপনি আমাকে এভাবে ফেলে দিলেন কেনো।

–মেয়েরা রাগ করলে ভালোবাসা দিয়ে রাগ কন্ট্রোল করতে হয়, কিন্তু আপনি যা করলেন তা শাস্তি যোগ্য তাই হালকা একটু থেরাপি দিলাম।

–আপনি সত্যি ই একটা বজ্জাত লোক।

–কী বললেন, খেতে আসেন নয়তো ছাঁদ থেকে ফেলে দিবো।

–খাবো না আমি,আগে বলুন আমাকে কেনো বিয়ে করলেন। আমার জীবনটা কেনো নষ্ট করে দিলেন।

–অভ্র কারো জীবন নষ্ট করে না। আর আপনার সব প্রশ্নের উওর সময় হলে দিয়ে দিবো এখন খেতে চলুন। নয়তো সব খাবার আমি একা ই খেয়ে চলে আসবো। আর একা থাকলে আপনাকে ভুতে ও ধরতে পারে।৩১

ভুত শব্দটা শুনে ই উঠে অভ্রের পিছনে হাটতে শুরু করলাম,
গিয়ে দেখলাম টেবিলে উপরে খাবার গুছিয়ে রাখা।কথা না বলে দুজনে খেয়ে নিলাম।
রুমে ডুকার আগে বললো,

–আপনি আপনার রুমে যান, আমি আমার রুমে ঘুমাবো।

কোনো কথা না বলে আমি আমার রুমে চলে গেলাম। অভ্রের রুমের পাশে ই কিন্তু রুমে ডুকার পর ই ভয় করতে শুরু করলো, চারদিকে বিস্তার নিরবতা। সবাই বাসায় থাকলে এতো ভয় করে না আজকে অনেক ভয় করতেছে।

না, না, আমি একা ঘুমাতে পারবো না। আস্তে আস্তে অভ্রের রুমের দরজায় নক করলাম।

–সমস্যা কী।

–আজকের জন্য আমাকে আপনার রুমে থাকতে দিন কালকে আমি আম্মুকে বলবো আমাকে নিয়ে যেতে।

— কাজ হবে না, আপনি আপনার রুমে যান।

–প্লিজ বুঝার চেষ্টা করুন। আমি ভয় পাই।

কথাটা বলার সাথে সাথে অভ্র দরজা বন্ধ করে দিলো। আমি নিরবে চোখের জল ফেলছি, কী করবো আমি। আমার প্রতি কী একটু মায়া হয় না। কী করবো এখন আমি..

চলবে,

#তোমাতে আসক্ত
#নাহিদা ইসলাম
#পর্ব ১৩

এক মুঠো রোদ এসে মুখের উপর পড়তে ই আড়মোড়া ভেঙে ঘুম থেকে উঠে বসি, মুহুর্তে ই চারদিকে চোখ যেতে বুঝতে পারি এটা অভ্রের রুম। কাল রাতের কথা মনে পড়লো,

আমি ভয় পেয়ে ই রুমে ডুকে লাইট অন করে চোখ বন্ধ করে,শুয়ে শুয়ে কান্না করতে করতে একপর্যায়ে ঘুমিয়ে পড়ি।তাহলে ঘুমানো পর কী অভ্র আমাকে এই রুমে নিয়ে এসেছে। কিছু কিছু অনুভূতি বলে প্রকাশ করার মতো না। কালকে রাতে যখন আমাকে একা ঘুমাতে বলেছিলো তখন খুব কষ্ট লাগেছিলো কিন্তু এখন সব কষ্ট নিমিষে ই উড়ে গিয়েছে।

অভ্রকে দেখলাম সোফায় ঘুমাচ্ছে। খুব সুন্দর লাগছিলো রোদের আলোয় ফর্সা গালে খোচা খোঁচ দাড়িগুলো আমাকে বার বার আকর্ষণ করছে। বার বার ছুয়ে দিতে ইচ্ছে করছে। আস্তে আস্তে অভ্রের পাশে গিয়ে দাড়ালাম।হালকা নিচু হয়ে, একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি। মনে মনে ভাবতে লাগলাম এভাবে তাকিয়ে থাকলে তো প্রেমে পড়ে যাবো নিজে ই।

হাত দিয়ে অভ্রের মুখে স্পর্শ করতে ই আচমকা আমাকে টান দিয়ে অভ্রের নিজের উপর ফেলে দেয় পড়ে যেতে নিলে দুহাত দিয়ে আগলে নিজের সাথে জড়িয়ে নেয়।

আমার আর অভ্রের মুখের মধ্যে দূরত্ব নেই বললে ই চলে।

–কী করছিলেন, আমাকে একা পেয়ে।

প্রত্যেকটা কথা অভ্র আমার ঠোট স্পর্শ করে বলতেছে।অভ্র কী বলছে আমার কান দিয়ে ডুকছেনা। অভ্রে এই স্পর্শে আমি অজানা অনুভূতি খুজে পাচ্ছি।অভ্র আমার দিকে না তাকিয়ে চোখ বন্ধ করে ই কথাগুলো বলছে। আমি শুধু তাকিয়ে দেখছি।

–কী হলো, কোনো কথার উওর নেই কেনো।

আমি এবার ও কোনো উওর না দিয়ে অভ্রে বুকে মুখ গুজি। আমার এমন কাজে অভ্র জিজ্ঞেস করে,

–এখনো কী ভয় পাচ্ছেন নাকি।

–হুম

–উঠুন, এমন আটার বস্তা আমার উপর শুয়ে থাকলে আমার হাড় ভেঙ্গে যাবে।

–এই আপনি আমাকে আটার বস্তা বলেন কেনো। আমি মাত্র পয়তাল্লিশ কেজি।

–মাত্র কোথায় একমন আবার পাঁচ কেজি, হয় আল্লাহ রক্ষা করো আমায়। এখন আমার উপরে ই শুয়ে আছে।

এবার আমি রেগে উঠে যেতে নিলে উনি আবার শক্ত করে জড়িয়ে ধরে,এটা দেখে আমি রাগি দৃষ্টিতে তাকাই

–এখন কে ধরে রাখছে

–নাহ, দেখলাম সত্যি ই পয়তাল্লিশে কেজি নাকি।

–এভাবে কেউ ওজন দেখে।

–রাগলে কিন্তু আপনাকে সুন্দর লাগে।

বলে ই নিজে আমকে নিয়ে শুয়া থেকে উঠে,আমাকে সোফায় বসিয়ে অভ্রের নাকের সাথে নাকটা হালকা লাগিয়ে ওয়াশরুম চলে যায়।

_________________

আমি আম্মুকে কল দিয়ে বলেছি, আজকে এসে আমাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য।

কথাটা শুনে ই অভ্র ভ্রু কুঁচকিয়ে আমার দিকে তাকায়,

–কেনো, এইখানে আপনার কী প্রবলেম।

–ভয় করে একা একা।

–নাস্তা বানিয়েছেন।

–হে,।রুটি আর ডিম আমি এটগুলো ছাড়া আর কিছু পারি না।

— ওহ্ আচ্ছা টেবিলে খাবার রেডি করুন আমি আসছি।

বাধ্য মেয়ের মতো আমি নিচে গিয়ে টেবিলে খাবার দিলাম। জীবনের প্রথম ইউটিউব দেখে দেখে বানিয়েছি আল্লাহ জানে কী রকম হয়। খেতে খারাপ হলে তো আজকে আমাকে আবার কোন শাস্তি দিবে আল্লাহ জানে।

উপরের দিকে তাকাতে ই দেখলাম মহারাজা উপর থেকে নিচে নামছে। ড্রেসআপ তো বেশ ভালো ই করেছে, সাদা শার্ট, কালো প্যান্ট হাতে হ্যান্ড ওয়াচ।

–এগুলো রুটি না দেশের মানচিত্র।

আমি অসহায় এর মতো এদিক অদিক তাকিয়ে দেখছি।

–ব্যাটারির মতো চোখ ঘুরাচ্ছেন কেনো।কোনো কাজ পারেন আপনি?

–আমি ফার্স্ট টাইম বানিয়েছি তাই এমন হয়েছে প্লিজ খেয়ে নিন।

আমার দিকে কতক্ষণ তাকিয়ে থেকে বললো,

–রেডি হয়ে নিন।

কিছুটা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম,

–কেনো?

–আপনার তো বাসায় একা থাকতে ভয় করে তাই আজকে অফিসে নিয়ে যাবো। আর অফিসে ই নাস্তা করে নিবো।

–আমি তো আম্মুকে আসতে বলেছি, আমাকে নেওয়ার জন্য।

–আমি আন্টিকে নিষেধ করেছি,দ্রুত রেডি হয়ে নিন না হয় বাসায় একা রেখে ই চলে যাবো।

–যাচ্ছি ওয়েট করুন।

–হুম দ্রুত করুন। আমার অফিসে কাজ আছে।

অভ্র সাদা ড্রেস পড়েছে তাই আমি কালো ড্রেস পড়েছি। এই লোকটা যা করবে আমি তার উল্টোটা করবো। বেয়াদ্দপ লোক একটা।

একটা গোলজামা, লেগিংস পড়ে নিলাম। সাথে মাথায় হিজাব। ঠোঁট হালকা করে বানানা লিপবাম, চোখে কাজল। হাতে ছেলেদের একটা ব্রেসলেট পড়লাম। ব্রেসলেট টা সকালে অভ্রের ড্রসিংটেবিল থেকে পেয়েছি। আগে কখনো এটা চোখে পড়েনি।

–এই জন্য ই মেয়েদের নিয়ে কোথাও যেতে নেই। এতোক্ষণ আমি পাঁচ বার অফিসে যেতে পারতাম।

—মেয়েদের রেডি হতে একটু টাইম লাগে, বুঝলেন।

বলে ই আমি গাড়িতে গিয়ে বসে পড়লাম। অভ্র গাড়িতে বসে আমার তাকিয়ে আছে। অভ্রের দিকে না তাকিয়ে আমি ফোন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লাম।
কিন্তু যতই ফোন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ি কেউ নিজের দিকে তাকিয়ে থাকলে বুঝা যায়। তাই কিছুটা বিরক্তি ভাব মুখে ফুটিয়ে বললাম,

–এভাবে তাকিয়ে থাকলে ভালো লাগে না।

–এই সং সেজেছেন কেনো।

–আপনার সমস্যা কী আর কোথায় আমি সং সাজলাম। ভালো লাগলে গাড়ি স্টার্ট দেন নয়তো আমি বাসায় চলে যাই।

রাগি একটা ভাব নিয়ে কথাগুলো বললাম, তাই অভ্র আর কিছু বলেনি। আমি ফোন নিয়ে বসে থাকলে ও আর চোখে ঠিক ই দেখতে পাচ্ছি অভ্র একটু পর পর আমার দিকে তাকাচ্ছে।

–হাসি পাচ্ছে খুব নিজের বউকে ও লুকিয়ে দেখতে হয়।

–কে নিজের বউকে লুকিয়ে দেখে?

–যে এখন আমাকে প্রশ্ন করেছে সে।

হঠাৎ গাড়ির ব্রেক করতে ই আমি নিজের কন্ট্রোল হারিয়ে ফেলি আরেকটু হলে ই গাড়ির সামনের অংশের সাথে মাথায় ভারি খেতাম। অভ্র হাত দিয়ে আমার মাথায় ধরে ফেলে তাই কিছু হয়নি।

–চলে এসেছি, নামুন।

আমি গাড়ি থেকে নেমে অভ্রের পিছনে হাটতে থাকি। অফিসে ডুকার সাথে সাথে সবাই আমার দিকে আছে। সবার মনে হয়তো বা এক প্রশ্ন যে, আমি কে।
অভ্র আমাকে নিয়ে ওর কেবিনে ডুকে। দেখলাম কেবিনের সাইডে একটা টেবিল আছে, যেটাতে নাস্তা সাজিয়ে রাখা হয়েছে।
অভ্র আমাকে নিয়ে নাস্তা করতে বসে যায়।

–মিহি আমার খাবার শেষ, একটা ইম্পরট্যান্ট মিটিং আছে আমি যাচ্ছি। আপনি আমার কেবিনে ই থাকেন বের হবেন না। কোনো কিছু প্রয়োজন হলে, সামিরকে বলে যাচ্ছি ওর কাছে বলবেন।

–সামির কে।

–একজন স্টাফ।

–ওহ আচ্ছা।

উনি চলে যাওয়ার পর আমি নাস্তা শেষ করে কেবিনে বসে বসে ভিন্ন জিনিস দেখছি, কেবিনটা অনেক সুন্দর করে গুছানো।

–ম্যাম আসবো।

তাকিয়ে দেখলাম একটা ছেলে, বয়স তেইশ হবে।

–জ্বি আসুন

–আমি সামির, কোনো কিছুর প্রয়োজন হলে বলতে পারেন।

–জ্বি অবশ্যই।

–ম্যাম একটা কথা জিজ্ঞেস করবো।

–হে,অবশ্যই।

–স্যার আপনার কী হয়।

–এটা আপনার স্যার কে জিজ্ঞেস করবেন।

–ঠিক আছে ম্যাম।

___________

মিটিং শেষ করে কেবিনে এসেছে। আমাকে দেখে বললো,

–বিরক্ত লাগছে একা থাকতে।

–নাহ্

–স্যার আসবো।

–হ্যা, ম্যানেজার সাহেব আসুন। কতবার বললাম আমাকে স্যার ডাকবেন না।আমি আপনার ছেলের মতো।

–একটা কথা বলতে চেয়েছিলাম।

–হ্যা বলুন।

–মেয়েটাকে আমার খুব ভালো লেগেছে, যদি চান তাহলে আমার ছেলের সাথে বিয়ের পাকা কথা কিন্তু বলতে পারি। মেয়েটা কী হয় আপনার।

অভ্র আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি ও অভ্রের দিকে তাকিয়ে আছি। কী বলবে অভ্র, সবাইকে পরিচয় দিবে নাকি এই সম্পর্কটা সুপ্ত ই রয়ে যাবে।

চলবে