Monday, August 11, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1553



অনুভূতির সুপ্ত কোণে পর্ব-৫+৬

0

#অনুভূতির_সুপ্ত_কোণে🍂
#কায়ানাত_আফরিন(মাইশা)
পর্ব ৫+৬
.
একরাশ আগ্রহ নিয়ে ভার্সিটির চারিপাশে চোখ বুলাচ্ছে মেহের। আজ তার ভার্সিটিতে প্রথম দিন। তার পাশেই স্বাভাবিকভাবে দাঁড়িয়ে আছে আদ্রাফ। কিছুক্ষণ নীরবতা কাটিয়ে আদ্রাফ বলে ওঠে………..
.
—সিনিয়র কারও কাছ থেকে তোমার ক্লাস কোনটা জেনে নাও। নাদিয়া একটু পরেই এসে পড়বে।
.
আদ্রাফের পকেটে থাকা মোবাইল ফোনটা অনবরত বেজে চলছে । কিন্ত আদ্রাফ পার্কিং সাইটে দাঁড়িয়ে আছে মেহেরের সাথে। শেষমেষ মেহের বিরক্তি প্রকাশ করে বলে…….
.
—কখন থেকে ফোন বেজে চলছে ফোন তুলছো না কেন?
.
—অফিস থেকে ফোন করছে তাই। জরুরি মিটিং আছে।
.
—তাহলে যাচ্ছো না কেন?
.
—তোমাকে একা রেখে যাবো ? Impossible ! এমনিতেও আজ তোমার প্রথম দিন। তাও আবার নিউ স্টুডেন্ট;Versity Fresher যাকে বলে। তোমার কি মনে হয় নিউ স্টুডেন্ট তুমি , আর কোনো র্যাগিং এর শিকার হবে না? তাই নাদিয়া সাদাতকে নিয়ে আসুক , তার দায়িত্বে তোমাকে না রাখলে আমার শান্তি হবে না আফটার অল সাদাত ভাই ভার্সিটির প্রফেসর।
.
আদ্রাফের কথায় মেহেরের চোখ যেন কপালে উঠে গিয়েছে। কোমড়ে হাত দিয়ে রাগী গলায় বলে ওঠে……….
.
—কি বললে ? কি মনে হয় তোমার ? আমি ; এই মেহেরকে র্যাগিং করবে? আর এই ভয়ে তুমি আমাকে একা রেখে যাবে না? তাহলে সেটা হবে বেস্ট জোক অব দ্যা ইয়ার। আমারে র্যাগিং করা এত সহজ না বস্ !
.
আদ্রাফ এবার সশব্দে হেসে দেয়। যার কারনে মেহের বোকার মতো তাকিয়ে আছে আদ্রাফের দিকে। তার মতে সে কোনো হাসির কথা বলেনি যে এই কুমড়োপটাশ আদ্রাফকে সশব্দ হাসতে হবে।আদ্রাফ এবার হাসি থামিয়ে বলে………
.
—তোমার এটা মনে হচ্ছে মেহু? ওই সিনিয়রদের ভয়ে তোমায় একা রাখানি এটা নিতান্তই তোমার ভ্রান্ত ধারনা। বরংচ আমার তো এটা নিয়ে ভয় হচ্ছে তুমি না জানি ওদের সাথে কি খুন-খারাপি করে বসো। তারপর ভার্সিটির authority আমায় ডাকবে এটা আমি মোটেও চাইনা।
.
ভ্রু কুচকে মেহের তাকাতেই আদ্রাফ আস্তে করে চোখ ফিরিয়ে নেয় মেহেরের কাছ থেকে। আদ্রাফ জানে এখন মেহেরের দিকে তাকালেই মেহের পারলে চোখ দিয়ে ওকে ভস্ম করে ফেলবে। তাই আনমনে মোবাইল চালানোও এর থেকে অনেক ভালো।
.
.
কিছুক্ষণ পরেই নাদিয়া আর সাদাত এসে পড়ে। দুজনকে আজ দেখতে চমৎকার লাগছে। মেহের হাসিমুখ নিয়ে সাদাতের উদ্দেশ্যে বলে ওঠে……..
.
—আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া , কেমন আছেন?
.
—এইতো আলহামদুলিল্লাহ । তুমি?
.
—আমিও আছি ! কোনোরকম……
.
মেহের দাঁতে দাঁত চেপে একথা বলে ওঠে। এমনিতেও আদ্রাফের কথায় এই মেয়ের মাথা আউট অফ কন্ট্রোলে আছে না জানি কখন আদ্রাফের উপর আগ্নোয়গিরির মতো ব্লাস্ট হয়ে যাবে এটা ভেবেই মনে আগুন পিষে রেখেছে সে।আদ্রাফ সাদাতকে বলে ,
.
—সাদাত ভাই ! মেহুর একটু খেয়াল রেখো। তুমি তো জানোই , মাথা গরম করা মেয়ে। না জানি কখন কার সাথে কি করে বসবে।আর নাদিয়া ! তুই কিন্ত মেহুর সাথে সাথে থাকবি।
.
অন্যদিকে মুখ ফুলিয়ে তাকিয়ে আছে মেহের। আদ্রাফ এমন ভাবে ওর খেয়াল রাখতে বলছে যেন ও কোনো বাচ্চা একটি মেয়ে। আদ্রাফের কথা শুনে নাদিয়া হাসবে না কাদবে বুঝতে পারছে না। কোনোমতে হাসি আটকিয়েবলে ওঠে……..
.
—রিলেক্স ভাই। এত টেনশন করার কিছুই নাই। আমার বেস্ট ফ্রেন্ড মেহু। আর তুমিতো এমনভাবে ওকে ট্রিট করতে বলছো যেন একটা বাচ্চা পালবো আমি।
.
—আগে তোমর বেসণটফ্রেন্ড ছিলো কিন্ত এখন তো আমার বউ । সো আমি যা বলছি তাই করো।
.
আদ্রাফের কড়াকড়ি প্রয়োগের জন্য নাদিয়া আর কিছু বলে নি। মেহের এবার রেগেমগে বলে ওঠে……
.
—ওই নাদিয়া ! চল তো ! তোর ভাইয়ের মর্মবাণী শেষ হলে এখন তাড়াতাড়ি চল।
.
এই বলে চলে যেতে নিলে পেছন থেকে মেহেরের হাতের কব্জি আকড়ে ধরে আদ্রাফ। একপ্রকার নির্লিপ্ত চাহিনী নিয়ে তাকিয়ে আছে সে মেহেরের দিকে। নাদিয়া আর সামাদ ভার্সিটির গেটের ভেতরে এতক্ষণে ঢুকে পড়েছে। আদ্রাফের নির্লিপ্ত চাহিনীর মায়ায় হারিয়ে মেহেরের রাগটা যেন হাওয়ার তালে উড়ে গেলো। আদ্রাফের হালকা আকাশী শার্ট পড়েছে । শ্যামবর্ণের ছেলে হলেও সবধরনের রঙের শার্ট পড়লেই বেশ সুর্দর্শন লাগে আদ্রাফকে দেখতে।
.
মেহেরের গালে আলতো করে নিজের হাত রেখে ঠোঁট নাড়িয়ে বলে…….
.
—কারও সাথে ঝগড়া করোনা কেমন? সবসময় নাদিয়ার সাথে থাকবে। কোনো প্রবলেম হলে অবশ্যই আমায় কল দিবে অথবা সাদাত ভাইয়ের কাছে যাবে। হয়তো আমিই তোমাকে নিতে আসতে পারি। আমি না নিতে আসলে ড্রাইভারকে পাঠিয়ে দেবো নে। টেক কেয়ার অফ ইউরসেল্ফ।
.
আদ্রাফের প্রতিটি কথার জালে মেহের যেন নিজেকে হারিয়ে ফেলছে। আদ্রাফ ওকে ইশারা করে ভারণসিটির প্রান্তে যেতে বলেই গাড়ি নিয়ে চলে যায়। মেহের তখনও একস্থানে দাঁড়িয়ে আছে। হয়তো আদ্রাফের প্রতি এ অদ্ভুদ অনুভূতির কোনো সূক্ষ্ণ নাম তার কাছে নেই।
.
.
.
আজ প্রথম দিনটা মোটামুটি ভালোই গিয়েছে মেহের আর নাদিয়ার। ক্লাস শেষে দুজন ক্যান্টিনে বসে হালকা-পাতলা কথা বলছে । সামনেই নবীন বরণ অনুষ্ঠান। মূলত এ বিষয় নিয়ে একটা আবছা পরিকল্পনা বানাচ্ছে দুজনে।ওদের কথার মাঝেই পেছন থেকে কেউ বলে ওঠে………..
.
—হেই স্টুপিট গার্লস ! ভার্সিটিতে নতুন নাকি? এই জায়গায় বসার কেউ সাহস পায় না আর তোমরা দুজনে জমপেশ বসে আড্ডা দিচ্ছো?
.
মেহের পেছনে তাকিয়ে দেখে তিনজন ছেলে আর দুজন মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। দুজনেই মূলতো একটু ওয়েস্টান কালচারের ড্রেস পড়া তবে উগ্র ধরনের না । ছেলেগুলোও এমনভাবে তাকিয়ে আছে মেহের আর নাদিয়ার দিকে যেন ওরা এমন দৃশ্য জীবনেও দেখেনি। আর মেয়ে দুটো তো দেখতে চমৎকার। একটু আগে সম্ভবত চুইংগাম চাবানো মেয়েটি তাদের উদ্দেশ্য কথা বলেছিলো এটা ভেবে নাদিয়া বলে ওঠে…….
.
—সরি আপু আমরা জানতাম না আমরা এখনি সরে যাচ্ছি।
.
নাদিয়া মেহেরের হাত চেপে সরে আসতে নিলেই চইংগাম চাবানো মেয়েটির পাশে পনিটেইল চুল করা মেয়েটি বলে ওঠে……..
.
—এমনি এমনি চলে যাবে freshers? আমাদের পার্মিশন ছাড়া আমাদের জায়গায় বসেছো একটা শাস্তি তো দিতেই হবে।
.
ভ্রু কুচকে ফেলে মেহের।নাদিয়ার কাছ থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে মেয়েটিকে প্রতিউত্তরে বলে.
.
—আমরা তো সরি বলেছি আমাদের না জানা সত্বেও। তাছাড়া এটা কোনো অপরাধ না। তাহলে শাস্তি কিসের?
.
মেহেরের কন্ঠে একপ্রকার চাপা রাগ প্রকাশ পাচ্ছে। কিন্ত এখন মোটেও কোনো সিনক্রিয়েট করতে চাচ্ছে না সে শুধুমাত্র আদ্রাফের কথার জন্য।মেহেরের রাগ দেখে ওদের মধ্যে একজন ছেলে টিটকারির সুরে বলে ওঠি……….
.
—ওমা ! মেয়ে দেখি এখনি ফেটে পড়বে ! এখানে রাগ দেখিয়ে কোনো লাভ নেই।শাস্তি তো পেতেই হবে।
.
—হ্যালো ! বিহেব ইউরসেল্ফ। তোমরাও যেমন সিনিয়র আমাদের কাছেও authority power আছে। সাদাত স্যার এখানে আমাদের gurdian হিসেবে আছে।
.
মেহেরের প্রখর গলা শুনে ওরা ভয় পাওয়ার ভান করে বরে যে,
.
—OMG ! We are scared !
একথা বলেই যেন হাসিতে মেতে ওঠে। চুইংগাম চাবানো মেয়েটি মেহেরের কাছে গিয়ে বলে………
.
—সাহসের দাম দিতে হবে তোমার। আর কি যেন বললে? তোমার কাছে authority power আছে?(তাচ্ছিল্যের স্বরে) listen , এখানে আমাদের পাওয়ার চলে। ভাইস প্রিন্সিপালকে নিয়ে আসো তবেও কিছু করতে পারবে না। আজ আমাদের ভিসি নেই তাই তোমাকে ছেড়ে দিলাম। তোমার ব্যবস্থা আমি তাকে দিয়েই করাবো।
.
.
মেহের কোনোমতে নিজের রাগটাকে নিয়ন্ত্রণ করে বেরিয়ে পড়ে সেখান থেকে।অনেক কষ্টে নিজের রাগ দমিয়ে রেখেছে সে। ওই মেয়েটার সাহস কি করে হলো মেহেরের সাথে উচু গলায় কথা বলে? পার্কিং সাইটে গিয়ে দেখে আদ্রাফ গাড়িতে হালকা ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
.
আদ্রাফকে নিজের রাগটা মেহের দেখাতে চাচ্ছে না। তাই নিজেকে স্বাভাবিক করে মেহের চুপচাপ ড্রাইভিং সিটের পাশের সিটে বসে পড়ে।আদ্রাফ খানিকটা অবাক হলেও মেহেরকে এ বিষয়ে কিছুই বলে না।
.
গাড়ি এগিয়ে যাচ্ছে সমান্তরালে।দু পাশে ব্যস্ত গাড়ি আর রিকশার আনাগোনা। মেহের আড়চোখে বারবার আদ্রাফকে দেখতে মগ্ন। বরাবরের মতোই সে প্রতিক্রিয়াহীনভাবে গাড়ি চালাচ্ছে। কানের একপাশে ব্লুটুথ এয়ারফোন গোঁজা। গরমের প্রবাহটা এতটাই বেশি যে আদ্রাফের কপালে একটু একটু ঘাম দেখা যাচ্ছে।
.
মেহের কিছুক্ষণ পর সেখান থেকে চোখ ঘুরিয়ে নেয়। ভার্সিটির ওই ঘটনাটার জন্য কিছুই যেন ভালোলাগছে না ওর।
.
— মিহু ? হঠাৎ এত চুপচাপ কেন?
.
এবার সত্যিই ক্ষেপে যায় মেহের। ওই মেয়ের ওপর জমানো ক্ষোভটা আদ্রাফের ওপর ঝাড়ার জন্য বলে………
.
—কেন? কোনো সমস্যা? তুমিই তো চাও আমি সবসময় এমন থাকি। চুপ থাকলেও দোষ না থাকলেও দোষ !
.
মেহেরের প্রখর কন্ঠ শুনে ঠোঁটে কিঞ্চিত হাসি রাখে আদ্রাফ। মেহের সাথে সাথে ভ্রু কুচকে ফেলে। এই ছেলেরে এত ধৈর্যশক্তি আল্লাহ কিভাবে দিয়েছে?মেহেরের কাছে আদ্রাফের প্রতিটা কাজই বড় অদ্ভুদ লাগে যা ওর ধারনার বাহিরে।আদ্রাফ তার মনের কথা বুঝে বলে ওঠে…….
.
—রাগ সবকিছুর সমাধান না। একটা সম্পর্কে যেমন রাগ থাকে তেমনি ধৈর্যও থাকা উচিত। দুজনেই যদি মনে রাগ , ক্ষোভ , অভিমান রাখি তাহলে সম্পর্কটা আগাবো কিভাবে?
.
আদ্রাফ নামের এই ব্যক্তিটা নিজের কথা আর কাজের জাদুতে অদ্ভুদভাবেই আগলে নিয়েছে মেহেরকে। এতটা গভীরভাবে মেহের কখনোই ভাবেনি এই সম্পর্কটি নিয়ে। হয়তো অনুভূতির এক সুপ্ত কোণে অজান্তেই সে লুকিয়ে রেখেছে আদ্রাফকে। এখন শুধু অপেক্ষা সময়ের সাথে তা প্রকাশ করার………..❤️
.
.
.
.
.
~চলবে

অনুভূতির সুপ্ত কোণে পর্ব-০৪

0

#অনুভূতির_সুপ্ত_কোণে🍂
#কায়ানাত_আফরিন(মাইশা)
পর্ব:৪
.
মেহের এবার পিছাতে পিছাতে একপ্রকার দেয়ালের সাথে ঠেকে গিয়েছে আর আদ্রাফ গম্ভীর দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে মেহেরের দিকে। শ্যামবর্ণের ছেলের এমন গম্ভীর দৃষ্টির জালে মেহেরের চোখ যেন আটকে গিয়েছে। তবুও সে আপ্রাণ চেষ্টায় মগ্ন এ দৃষ্টিকোণ থেকে আস্তে করে সরে আসার জন্য। একপাশ দিয়ে সরে আসতেই আদ্রাফ হাত দিয়ে ওকে আটকে দেয়।
মেহের এবার যায় কোথায়। ক্রমাগত শুকনো ঢোক গিলার ব্যর্থ প্রচেষ্টা মেহেরকে প্রয়োগ করতে দেখে একটা অদ্ভুদ হাসি হাসে আদ্রাফ।মেহেরের কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলে ওঠে…
.
—আজ আর কিছু বললাম না। next time তুমি যদি আমারে ভাই বলে ডাকো তার ফলাফল কিন্ত খুবই ভয়ঙ্কর হবে। so be careful মেহু !
.
আদ্রাফের গম্ভীরভাবে ফিসফিসানোর ধরন দেখে চোখ ছোট ছোট করে ফেলে মেহের। ঠোঁট উল্টে মিনমিনিয়ে বলে ওঠে….
.
—কসম আল্লাহর !আর জীবনে তোমারে ভাই বলবো না।এখন তো আমারে যেতে দাও জামাই?
.
—হুম।
.
আদ্রাফের কাছ থেকে ছাড়া পেতেই ঝড়ের গতিতে রুম থেকে বেরিয়ে পড়ে মেহের। এতক্ষণ কেউ যেন ওর বুকে পাথর চাপা দিয়ে রেখেছিলো।যদিও আদ্রাফকে ওর কখনোই পছন্দ ছিলো না। কেননা মেহের হলো চঞ্চল প্রকৃতির , যে নিজের চাঞ্চল্যতা দিয়ে সবাইকে মাতিয়ে রাখে । আর আদ্রাফ হলো ওর পুরোটাই উল্টো…..শান্তিশিষ্ট, চুপচাপ স্বভাবের। তাই মেহের এতকিছু করার পরেও সহজে রাগে না সে। কিন্ত যখন ওর উদ্ভট কান্ডের মাত্রা পেরিয়ে যায় তখনই সে মেহেরকে শায়েস্তা করে।
.
যা মেহেরের মোটেও পছন্দ না। কিন্ত আদ্রাফের প্রতিটা মুভমেন্ট ছোটবেলা থেকেই ওর কাছে চোখ ধাধানোর মতো মনে হতো। আগে নাদিয়ার সাথে দেখা করার জন্য প্রায়ই এবাড়িতে আদ্রাফের সাথে দেখা হয়েছে ওর। কিন্ত আদ্রাফ সবসময়ই নাদিয়ার সব ফ্রেন্ডসদেরই এড়িয়ে চলতো।যার কারনে আদ্রাফ সম্পর্কে তেমন ভালোভাবে অবগত হতে পারেনি সে।
কিন্ত এখন আবারও অদ্ভুদ কারনে আদ্রাফের মতো শান্তশিষ্ট মানুষের প্রতি মায়া নামক অপ্রত্যাশিত অনুভূতির জন্মেছে মেহেরের। ওকে নিজের কাছে অনুভব করলেই যেন সকল ভাবনাগুলো গোলমেলে হয়ে যায়। কেন?তার উত্তর মেহের কাছে এখন নেই।
.
.
.
সন্ধ্যার সময়ে রান্নাঘরে নিজের শ্বাশুড়ির সাথে চা বানানোর আমেজ নিয়ে গল্পের আসর জমিয়েছে মেহের।ছোটবেলা থেকেই এই মানুষটাকে নিজের বেস্ট ফ্রেন্ড নাদিয়ার থেকেও বেশি ভালোলাগে মেহেরের। কারন তনুআন্টি খুবই বন্ধুসুলভ আর মিশুক স্বভাবের। মুখে সর্বদা একপ্রকার যেন মিষ্টি হাসি ঝুলেই থাকে। অন্যন্য টিপিক্যাল মা’দের তুলনায় উনি বেশ অন্যরকম বলেই তাকে মেহেরের বেশ পছন্দ।
.
—আন্টি , দেখোতো চা তে চিনি হয়েছে কি-না?
.
মেহেরের এই প্রশ্নে যেন ভীমড়ি খেয়ে পড়ে তনু বেগম। কটাক্ষ গলায় বলে ওঠে…..
—এই মেয়ে?দেবো এক থাপ্পড়। তোমায় আমি সবসময় বলেছি যে তুমি আমার মেয়ের মতো। তবুও তোমার মুখে কখনো আন্টি ছাড়া আর কিছু শুনলাম না। আর তুমি এখন আমার ঘরের বউ আর এখনও তুমি আমায় আন্টি বলেই ডাকবে?
.
কটাক্ষ গলায় কথাগুলো বললেই সেখানে অভিমানের সুর মেহের স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে। আলতো হেসে সে প্রতিউত্তর দেয়..
.
—আচ্ছা সরি। আর কখনোই তোমায় আন্টি বলবো না। কত্ত কিউট তুমি? আমি বুঝলাম না তোমার ছেলেমেয়ে গুলা কেন এমন কচুপাতা টাইপ হলো? একেবারে রসকসহীন !
.
মেহেরের কথা শুনে হেসে দেয় তনু বেগম। রান্নাঘরের কাঠের তাক থেকে টোস্ট বিস্কুটের বক্স বের করতে করতে মেহেরের উদ্দেশ্য বলে…..
.
—ওরা দুজনেই অবশ্য ওর বাবার মতো হয়েছে। নাদিয়া তো তোমার সাথে মিশে একটু দুষ্টুমি মজলিশে মেতে ছিলো। কিন্ত আদ্রাফ কখনোই এমন ছিলো না। কিন্ত মন থেকে ও অনেক ভালো।
.
—হুহ ! ভালো না ছাই ! বেশশরমের হিডেন সফটওয়্যার ওর মধ্যে আগে থেকেই ইনস্টল করা ছিলো। (মেহের মনেমনে)
.
.
.
রাত গভীর হওয়ার সাথে সাথে মেহেরের চোখের ঘুম যেন ধীরে ধীরে চলে যাচ্ছে। আদ্রাফও একটু জরুরি কাজে বাইরের থেকে এসেই সেই যে ল্যাপটপ নিয়ে বসলো চারিদিকের আর কোনো হুশঁ জ্ঞানই নেই। একরাশ বিরক্তি নিয়ে একঘন্টার মধ্যে রবীন্দ্রনাথের শেষের কবিতা উপন্যাসটি পড়ে ফেললো। কিন্ত এখনও আদ্রাফকে সেই আগের জায়গাটিতে দেখে ভ্রু কুচকে ফেলে সে।
কারও সাথে এখন যদি মেহের কথা না বলে সত্যিই দমবন্ধ হয়ে মরে যাবে সে। শেষপর্যন্ত অধৈর্য হয়ে আদ্রাফের কাছ থেকে ল্যাপটপটি কেড়ে নেয় সে। আদ্রাফ হঠাৎ মেহেরের উদ্ভট কান্ডে খনিকটা হতভম্ব হয়ে যায় যার রেশটি ওর চশমার ভেতর দিয়ে স্পষ্ট দেখতে পারছে মেহের।
.
আদ্রাফের সবসময়ই কাজ করতে গেলে চশমার প্রয়োজন হয়।আর যখন ও চশমা পড়ে ওকে দেখতে মেহেরের কাছে চরম লাগে।তাই হঠাৎ আদ্রাফের চশমা ভেদ করে নজরকাড়া সেই দৃষ্টি দেখে মেহেরের বিরক্তিটা কেমন করে যেন পাল্টে যায়।
.
আদ্রাফ গম্ভীর কন্ঠে বলে ওঠে……
.
—কাজ করছিতো আমি? এভাবে ল্যাপটপটা নিলে কেন?
.
মেহের নিশ্চুপ। তার অনুভূতিটা যেন গুলিয়ে গিয়েছে । কোনোমতে আমতা আমতা করে বলে ওঠে….
.
—আমার ভালোলাগছে না।
.
—ভালোলাগছেনা মানে?
.
—কতক্ষণ ধরে এমন করে বসে আছি। আর তুমি তো সেই যে ল্যাপটপ নিয়ে বসেছো আমার দিকে চোখ তুলেও তাকাচ্ছোনা।
.
—তো আমি এখন কি করতে পারি।
.
আদ্রাফের তীক্ষ্ণ চাহিনী দেখে আবার চুপসে গিয়েছে মেহের। কিছুক্ষণ নীরবতা পার হওয়ার পর মেহেরের কোনো প্রতিউত্তর না পেয়ে আদ্রাফ বলে ওঠে…….
.
— আচ্ছা। আমি এখন আর কাজ করবো না। তোমার ভালোলাগছেনা তাইতো? আর আমার মাথাটা প্রচুর ব্যাথা করতেছে। তাই তুমি এখন আমার মাথা টিপে দাও।
.
—কি?
.
আদ্রাফ চট করে খাটে শুয়ে পড়ে।এমন ভাব করছে যে এই মুহূর্তে প্রচণ্ড ক্লান্ত সে। মিহি গলায় সে বলে ওঠে….
.
—দেখো মিহু….মাথাটা আমার এখন প্রচন্ড ব্যাথা। তাছাড়া তোমারও ভালোলাগছে না তাই এখন গুড গার্লের মতো আমার মাথা টিপে দাও। জলদি !
.
মেহেরকে এখন কোনো হতাশাগ্রস্থ থেকে কোনো কম কিছু মনে হচ্ছে না। মিনমিনিয়ে সে বলে ওঠে….
.
—আল্লাহই জানে কতক্ষণ আমারে দিয়ে এই ব্যাটায় মাথা টিপাবে?😒
.
.
.
~চলবে

অনুভূতির সুপ্ত কোণে পর্ব-০৩

0

#অনুভূতির_সুপ্ত_কোণে🍂
#কায়ানাত_আফরিন(মাইশা)
পর্ব:৩
.
আদ্রাফের কথা শুনে চোখ দুটো আপনাআপনি বড় হয়ে যায় মেহেরের। হঠাৎ ওকে এত কাছাকাছি অনুভব করাতে মেহের যেন স্ট্যাচু হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।আমতা আমতা স্বরে বলে ওঠে………..
.
—ম…মানে ক….কি? কি সত্য ক….করতে চাও!
.
আদ্রাফ বুঝেছে এবার হয়েছে কাজ। এমন একটা দস্যু মেয়েকে নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য এর থেকে ভালো উপায় আর পাবে না। মেহেরের মুখেরর কাছে ঝুঁকে কিছুটা তীক্ষ্ণ গলায় বলে ওঠে……….
.
—তুমিই তো বলেছিলে যে তুমি কচি খুকি না? তাহলে এতটুকু কথাও বুঝতে পারো না। তুমি তো ওদের কাছে আমাদের বাসরের গল্পই শোনাচ্ছিলে? তো আমি ওই কাজটা প্র্যাকটিকাল করে দেখাবো নাকি?
.
—একটুওওও না !
.
মেহের এই কথাটা এতই জোরে বললো যে আদ্রাফের কানের পর্দা তো ছিড়ে যাওয়ার উপক্রম। মেহেরের চোখ গুলো তো ভয়ে কুচকে গিয়েছে। আদ্রাফ এবার একটা ঠোঁট কামড়ানো হাসি হেসে বলে………
.
—নেক্সট টাইম যে কোনো উদ্ভট কাজ করতে আমি তোমাকে না দেখি। নাহলে কি হবে…………..তা তো ভালো করেই জানো। এখন লক্ষী মেয়ের মতো নিচে চলো।
.
একথা বলেই সিটি বাজাতে বাজাতে আদ্রাফ চলে যায়। মেহেরও এতক্ষণে যেন একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ে। এই ছেলেটা যতই শান্ত হোক না কেন ; মাথায় ভয়ঙ্কর সব বুদ্ধিগুলো কিলবিল কিলবিল করে। মেহের তো চেয়েছিলো এই আদ্রাফের শান্তশিষ্টতার সুযোগ নিয়ে অতিষ্ঠ করে ফেলতে। কিন্ত সেদিকে হলো উল্টো ; বরং আদ্রাফই ওর অবস্থা কাহিল করে দিলো।
.
.
.
বিকেলের দিকে নাদিয়া ওর বরকে নিয়ে নিজের বাড়িতে এসেছে। বিয়ে হওয়ার পরের দিনই বরকে নিয়ে নিজের বাড়িতে আসতে লাগে এটা এহসান বাড়ির একপ্রকার নিয়ম। নাদিয়াকে ফিরে আসতে দেখে মেহেরের খুশি এবার দেখে কে? যতই এখন ওর ননদ হোক না কেন ; সবার আগে বেস্টু বলে কথা।
ড্রইংরুমে সবাই একমনে বসে খুশির আলাপচারিতা চালাচ্ছে তবে নাদিয়া আর মেহের সেই আলাপচারিতার ধার কাছেও নেই। নাদিয়ার নিজের প্রাক্তন ঘরেই দুজনে বসে হাসি-ঠাট্টায় মেতে আছে।মেহের তো খুশিতে টগবগিয়ে বলে ওঠে……….
.
—দোস্তোওওও……….তোর বাসরটা কেমন হলো রে?
.
নাদিয়া আর আদ্রাফ দুজনের স্বভাব বরাবরই শান্তশিষ্ট ধরনের। তবে নাদিয়া যেমন একটু বোকাসোকা টাইপের তাই মেহেরের উদ্ভট কথায় মাঝে মাঝে লজ্জায় একেবারে নুইয়ে পড়ে। হঠাৎ মেহেরের এমন প্রশ্ন শুনে নাদিয়া তো লজ্জায় লাল হয়ে গিয়েছে।
(আর মেহেরকেই দেখো ! কি সুন্দর বানানো বাসর কাহিনী মানুষকে শোনায়🙈)
.
নাদিয়া মিহি গলায় বলে ওঠে…….
.
—ছিঃ মেহু? এসব কথা না তোরে বলছি আমারে জিজ্ঞেস করবি না?
.
নাদিয়ার এ কথা শুনে বিরক্তি প্রকাশ করে মেহের। এই মেয়েটারে জীবনেও শুধরাতে পারলো না সে। ভ্রু কুচকে মেহের বলে ওঠে…….
—এত লজ্জা কই রাখস রে নাদিয়া? আমিই তো। আমারে বলতেও সমস্যা হবে?
.
—এখন কিন্ত তুই আমার ভাইয়ের বউ আই মিন ভাবি। আচ্ছা আগে তোর ঘটনা বল না? গতকাল কে জানে কি হলো? আঙ্কেল আর আব্বু মিলে হুট করে তোর আর ভাইয়ের বিয়ে করিয়ে দিলো। সব ঠিকাছে তো?
.
—মোটেও না । তোর খাটাইশ ভাইটা আমার জীবন ত্যানা ত্যানা করে দিসে………….জানোস আজ সকালে ওই বদ পোলায় আমারে বাথটাবে ফেলে দিসিলো?
.
—আদ্রাফ ভাই এমনি এমনি এমন করে নি আগে তুই বল তুই কিছু করেছিলি?
.
সন্দিহান কন্ঠে বলে ওঠে নাদিয়া। মেহের এদিক ওদিক তাকিয়ে বলে ওঠে……
.
–ইয়ে……আসলে……উনার গায়ে একমগ পানি ঢেলেছিলাম।
.
—আমিও তো বলি……….আদ্রাফ ভাইরে যেমন আমি চিনি ; তোরে তার থেকে আরও ভালো করে চিনি। সে যে এমনি এমনি তোরে বাথটাবে ফেলেনাই তা আমি বুঝেই গিয়েছিলাম।
.
—-এইযে? বিয়ে হলো একদিনও হয়নি আর তুই আমার সাথে টিপিক্যাল ননদ টাইপ বিহেভ শুরু করে দিসোস?এটা কিন্ত ঠিক না।
.
নাদিয়া কিছুক্ষণ বোকার মতো তাকিয়ে থাকে মেহেরের দিকে। এই মেয়েটা ছোটবেলা থেকেই এমন। ওর সাইডে কেউ কথা না বললে সবসময়ই এমন করতো। কিছু একটা ভেবে নাদিয়া ছোট ছোট চোখ করে বলে ওঠে……….
.
—আমার তো ভাইয়ের থেকে তোর জন্য বেশি মায়া লাগছে রে। তোরে সাইজ করতে ভাইয়ের যদিও কাঠখড় পোড়াতে হবে তবেই তোরে সাইজ করতে পারবো। ভাইযে কত স্ট্রিক্ট আমি জানি।
.
নাদিয়ার কথা শুনে মেহের ভ্রু কুচকে ফেলে। কেননা আদ্রাফের নামটা শুনলেই মেহেরের কেমন যেন পিত্তিটা জ্বলে ওঠে।
.
—আল্লাহর ওয়াস্তে তোর ভাইটার নাম এখন আমার সামনে নিবি না; নইলে…………..
.
—নইলে কি?
.
হঠাৎ পুরুষালি কন্ঠ শুনে থমকে যায় মেহের। ক্রমাগত ঢোক গিলছে সে। যদি আদ্রাফ থাকে তবে তো মেহের শেষ। আয়াতুল কুরসী পড়তে পড়তে মেহের পেছনে ফিরলেই স্বস্তির একটা নিঃশ্বাস ফেলে। নাদিয়ার হাজবেন্ট সাদাত ভাইয়া দাঁড়িয়ে আছে দরজায় হেলান দিয়ে। মেহেরকে পেছনে ঘুরতে দেখে বলে ওঠে……….
.
—আমার একমাত্র আদরের বউয়ের একমাত্র বড় ভাইয়ের বদনাম করা হচ্ছে বুঝি?
.
সাদাতের মুখে আদরের বৌ কথাটা শুনে বেচারি নাদিয়ার তো গালগুলো টমেটোর মতো হয়ে গিয়েছে।মেহের একটা মেকি হাসি দিয়ে বলে…………
—অভ্যাস করে নাও ভাইয়া , এ আর তেমন কিছু না?
.
—তবে আমি এখন একটু কনফিউশনে আছি। এতদিন তো তোমায় শালিকা বলেই জানতাম………..কিন্ত এখন তো তোমায় মনেহয় ভাবি বলতে হবে।
.
—আমায় নাম ধরেই তো ডাকতে পারেন ভাইয়া। আচ্ছা………..অনেক কথা হয়েছে । এখন আমি যাই। আর আপনারা রোম্যান্স শুরু করতে পারেন।
একথাটা বলেই মেহের উঠে চলে যায় ওদের রুম থেকে।
.
.
নিজের রুমে স্টাডি টেবিলে বসে অফিসের কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ করতে আদ্রাফ ব্যস্ত। প্রায় একঘন্টা ধরে মেহের ওর দিকে উকিঝুকি দিচ্ছে কিন্ত আদ্রাফের যেন সেদিকে কোনো হেলদোই নেই। অনেকটা অধৈর্য হয়ে পড়ে সে। কেননা একজন চঞ্চল মেয়ের এতক্ষণ নীরব থাকা মোটেও সহজ কোনো বিষয় নয়। মেহের এবার আদ্রাফের কাছে গিয়ে বলে ওঠে…….
.
—আদ্রাফ ভাই?
.
আদ্রাফ নিশ্চুপে ফাইল চেক করতে ব্যস্ত।মেহের কিছুক্ষণ চোখ ছোট ছোট করে তার দিকে তাকিয়ে থাকে। কোনো উত্তর না পেয়ে আবার বলে ওঠে……..
.
—আরে ওওওও আদ্রাফ ভাই?
.
—এক থাপ্পড়ে তোমার সব দাঁত ফালায় দিবো। তোমার কোন জনমের ভাই লাগি আমি?
.
মেহেরের এই কথাটা বুঝতে প্রায় দুই মিনিট লাগলো। আদ্রাফ কাজ করতে করতে কথাটা এত গম্ভীরভাবে বলছিলো যেন কেউ বলতেই পারবে না এটা থ্রেড ছিলো নাকি অন্যকিছু।এত ইউনিক স্টাইলে ধমকানোর স্টাইল মেহের কাছে অনেক চোখ ধাধানোর মতো মনে হলো। ঠোঁট উল্টে সে বলে ওঠে………..
.
—আরে……..আগের অভ্যাসটাই রয়ে গিয়েছে।
.
আদ্রাফ এবার চেয়ার থেকে উঠে মেহেরের কাছে গিয়ে দাঁড়ায়। মাথাটা মেহেরের মুখের দিকে হালকা ঝুকিয়ে বলে ওঠে……….
.
—বুঝতে পেরেছি। আমায় দেখে হাজবেন্ট হাজবেন্ট টাইপ ফিলিং আসছে না তোমার। বাট তোমায় দেখে তো আমার বউ বউ ফিলিং আসছে। বিকজ আমায় ফার্স্ট কিসটা তুমিই দিয়েছিলে। এখন আমিও নাহয় দেই। তারপর আমায় দেখে হাজবেন্ড হাজবেন্ড ফিলিং আসবে।
.
.
.
.
~চলবে~
গঠনমূলক মন্তব্যের অপেক্ষায় থাকবো।

অনুভূতির সুপ্ত কোণে পর্ব-০২

0

#অনুভূতির_সুপ্ত_কোণে🍂
#কায়ানাত_আফরিন(মাইশা)
পর্ব:২
ঘুম থেকে উঠে নিজেকে কারও বেডরুমে আবিষ্কার করেই অবাকের চরম সীমান্তে পৌঁছে গিয়েছে মেহেরর। এখনও লাল বেনারসী পড়া সে। মেহের মনে করতে থাকে যে সে তো রাতে ছাদে ছিলো ; তাহলে এখানে এলো কিভাবে?রুমটির একপাশে আদ্রাফের কিছু ছবি দেখে বুঝতে বাকি রইলো না যে এটা আদ্রাফেরই রুম আর সেই তাকে নিয়ে এসেছে ।
.
মেহের শুধু পারছে না রেগে-মেগে নিজের চুলগুলো ছিড়ে ফেলতে।আদ্রাফ কেন তাকে নিয়ে এলো ; এটা ভাবতেই মেহেরের মন চাচ্ছে আদ্রাফকে জাস্ট খুন করে ফেলতে। ওর পাশে নিশ্চিন্তেই ঘুমিয়ে আছে আদ্রাফ। মেহেরের মাথায় একটা দুষ্টু বুদ্ধি চাপে।
বিড়বিড়িয়ে বলে ওঠে………..
.
—আমার কথা না শুনে শেষমেষ আমায় এখানে এনে এখন আরামের ঘুম ঘুমাচ্ছিস ব্যাটা ! দেখাচ্ছি মজা।
.
মেহের এবার ওয়াশরুম থেকে এক মগ পানি নিয়ে পুরো মগের পানিটা আদ্রাফের ওপর ঢেলে দিলো। সাথে সাথেই উঠে যায় সে। ওর টিশার্ট , কম্বল , বিছানা অনেকটাই পানি দিয়ে চুপসে গেছে। আদ্রাফের এ দৃশ্য দেখে খিলখিলিয়ে হেসে ওঠে মেহের।
আদ্রাফ কটাক্ষ দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে থাকলেও গম্ভীর গলায় বলে ওঠে……..
—এসব কি মেহের? সকাল সকাল কি শুরু করেছো?
.
—যা করেছি……..ঠিক করেছি। আমায় রুমে নিয়ে আসার শাস্তি এটা।
.
আদ্রাফ শুধু পারছে না এই পাগলটার মাথা ফাটিয়ে দিতে। এত সহজে রাগে না সে। কিন্ত এখন রাগটা কন্ট্রোল করা খুবই কঠিন হয়ে গিয়েছে ওর জন্য । একটা লম্বা শ্বাস নিয়ে বলে ওঠে……….
.
—পাগলামীটা একটু বেশি হয়ে যাচ্ছে না?
.
—মোটেও না।
.
ব্যস আদ্রাফকে আর পায় কে। মেহেরকে কোলে নিয়ে একেবারে বাথটাবে ফেলে দিতেই মেহের ভিজে টুইটুম্বুর হয়ে যায়। চোখের পলকে আদ্রাফের এমন কাজে হতভম্ব হয়ে গিয়েছে সে। আর আদ্রাফ তো ডোণ্ট কেয়ার ভাব নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ওর দিকে তাকিয়ে। মেহের গর্জে বলে ওঠে……
.
—এটা কি করলে তুমি?তোমারে আমি একমগ পানি ঢেলে দিয়েছিলাম আর তুমি আমায় বাথটাবে ফেলে দিলে?
.
আদ্রাফ বাকা হাসি দিয়ে ঝুকে পড়ে মেহেরের দিকে । তারপর প্রতিউত্তরে বলে ওঠে……….
.
—তুমি যেমন দুস্যুরাণী আমিও তো সেই দস্যুরাণীর বর। আদ্রাফ এহসানকে এতই কাচা খেলেয়ার মনে করো মেহু?
.
বেচারী মেহের তো চুপসে গেসে। এতক্ষণ জ্বলন্ত গ্যাসের ন্যায় থাকলেও এখন হয়ে আছে ভিজা বিড়াল। গায়ে বেনারসীটা লেপ্টে থাকার কারনে আদ্রাফ তা দেখে অদ্ভুদ হাসি হাসে। তারপর বলে ওঠে……….
.
—-বিয়ের শোকে এখনো বেনারসী পাল্টাতে মন চাচ্ছে না নাকি? আমি জামা এনে দিচ্ছি তোমার ব্যাগ থেকে জলদি ফ্রেশ হয়ে আসো।
.
.
.
সারা বাড়িতে গমগম করছে মেহমান। আর মেহের তো পুতুলের ন্যায় এককোণে বসে আছে। আর থাকবেই না কেন? পাড়ার আর বিয়ে বাড়ীর সকল মহিলা যে ওকে ঘিরে বসে আছে।কেউ ওর গাল টিপছে তো কেউ ওর হাতে উপহার তুলে দিচ্ছে। এসব কাজ শেষ করে এখন মেহের সম্পূর্ণ ক্লান্ত।
.
—কি গো ভাবিজান………..রাতে কি হলো?
.
ডাইনিং রুমে একাই বসে ছিলো মেহের। পেছনে ঘুরে দেখে ১৬-১৭ বছর বয়সী তিনটি মেয়ে। ওদেরকে মেহের ভালোমতোই চিনে। আদ্রাফ আর নাদিয়ার চাচাতো বোন।আর এগুলো ভারি দুষ্টু। মেহেরও কম কিছু না। একটু দুষ্টু হাসি দিয়ে বলে ওঠে ,
.
–শুনতে চাও।
.
–শোনার জন্যই তো এসেছি।
একথা বলতে বলতেই চেয়ার পেতে বসে পড়ে তিনজন।মেহের এবার বলা শুরু করে…………
.
—বাসররাত ! বাসররাত ! বাসররাত ! কথায় বলে মেয়েদের জীবনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ রাত এটা।
এমন কিছুই খাটে বসে ভাবছিলাম আমি। আশেপাশে গোলাপের সুগন্ধে যেন সারা ঘর মৌ মৌ করছে। আমার ভাবনার মধ্যে কখন যে আদ্রাফ এসে পড়েছিল আমি বুঝতেই পারিনি। আমি সাথে সাথেই যেন লজ্জায় কুকড়ে যাই। তোমাদের আদ্রাফ ভাই আমার হাতে আলতো করে নিজের হাত রেখে বলে……”ছাদে যাবে”
.
মেহের এবার ওদের তিনজনের দিকে তাকায়। ওদের উৎসুক দৃষ্টি দেখে কেউ বুঝতেই পারবে না যে মেহের ডাহা মিথ্যা কথাগুলো বলছে। একজন তো অধৈর্য হয়ে বলে ওঠে………
.
—তারপর কি ভাবি?
.
—ছাদে কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরির পর আমরা রুমে এসে পড়ি।সময়টা যেন কেমন যেন থমকে গিয়েছিলো। আদ্রাফ আমার দিকে তাকানো আর আমি আদ্রাফের দিকে। হঠাৎ বাতাসের দাপড়ে সারা ঘরের মোমগুলো নিভে যায়।😁
.
ওদের উৎসুক দৃষ্টি দেখে মেহের শুধু পারছে না মাটিতে গড়াগড়ি করে হাসতে। এই নাদান মেয়েগুলো আসলেই ওর কথাগুলো সত্যি মনে করছে।
.
—আমাদের কাহিনী শোনানো হয়েছে?
.
আদ্রাফের কন্ঠ পেয়ে চোখগুলো বড় বড় করে ফেলে মিহির। পিছে ঘুরি দেখে আদ্রাফ গম্ভীর চোখে তাকিয়ে আছে ওর দিকে। ওরা তিনজন বিরক্তসুরে বলে ওঠে………
.
—উহ্ ভাই ? কত সুন্দর তোর বাসররাতের কাহিনী শুনছিলাম।
.
—তাই নাকি মেহু?
দাঁত চেপে বলে ওঠে আদ্রাফ।মেহের তো এবার শেষ। কোনোমতে আমতা আমতা করে বলে ওঠে……….
.
—মা…..মা….মানে ওরা শুনতে চ…….চেয়েছিলওওও।
.
মেহেরকে আর কোনো কথা বলতে না দিয়ে ওর হাত চেপে রুমে নিয়ে আসে আদ্রাফ। মেহেরকে দেয়ালের সাথে চেঁপে দাঁড় করিয়ে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে সে।আদ্রাফ মিহি গলায় বলে ওঠে………
.
—কাহিনী তো গতরাতে কম করো নাই। আবার বারিয়ে বানিয়ে কি শুনাচ্ছো ওদের? আগে আমায় বলো। মোম নিভে যাওয়ার পর কি হয়েছিলো?
.
মেহেরতো না পারছে পালাতে আর না পারছে সরে আসতে। আদ্রাফ ওর মুখের কাছে মাথা নামিয়ে বলে.
.
—গতকাল যে তুমি আমায় কিস করেছিলে এটা বললে আরও বেশি ভালো হতো। যাইহোক ! মিথ্যা বলা মহাপাপ। এখন তোমার বলা কথাগুলো আমি নাহয় সত্য করে দেই?😁
.
.
.
.
~চলবে~

অনুভূতির সুপ্ত কোণে পর্ব-০১

0

#অনুভূতির_সুপ্ত_কোণে🍂
#কায়ানাত_আফরিন(মাইশা)
সূচনা পর্ব

লাল বেনারসী পড়ে রাতবিরাতে কোনো মেয়েকে যদি ছাদে অবাধে বিচরণ করতে দেখে; সেই মেয়েকে নির্ঘাত সবাই পাগল ভাববে। বিয়ের শোকে এমনই একটি পাগলপ্রায় অবস্থা হয়েছে মেহেরের। কই এসেছিলো নিজের বেস্টুর বিয়ে খেতে আর এখন নিজেরই বিয়ে হয়ে গেলো। তাও আবার কাকে বিয়ে করলো? ওই কুত্তিটার ভাইকে।
এটা ভাবতে ভাবতেই ছাদের একপাশ থেকে অন্যপাশে পায়চারি করে যাচ্ছে আর বিড়বিড়িয়ে কিছু একটা বলছে। আজ বিশ্ব উল্টে গেলেও ওই আদ্রাফ এহসানের ঘরে সে যাবে না।
.
—নিচে আসছো না কেন?
.
আদ্রাফের কন্ঠ শুনে গলা শুকিয়ে যাচ্ছে মেহেরের । পেছনে ফিরে আদ্রাফকে দেখতেই তার জান যেন যায় যায় অবস্থা । সে নিজের উদ্দেশ্যেই বিড়বিড়িয়ে বলে ওঠে……
.
—এখন ভয় পাওয়ার টাইম না মেহের। এই ব্যাটারে কিছুতেই সুযোগ দেওয়া যাবে না।
.
আদ্রাফ ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে মেহেরের দিকে। পরনে সাদা শেরওয়ানী যা ওর শরীরে মারাত্নকভাবে ফুটে উঠেছে। উপরের ঠোঁটটা নিচের ঠোঁটে চাপ দিয়ে এমনভাবে মেহেরের দিকে তাকিয়ে আছে যে মেহেরের এমন উদ্ভট কাজে প্রচুর বিরক্ত সে।আমতা আমতা করে মেহের বলে ওঠে…….
.
—আ…আমি নিচে যাবো না।
আদ্রাফ কড়া গলায় তাকে প্রশ্ন করে,
.
—নিচে যাবা না মানে?
.
এবার বিরক্ত হয় মেহের। এই ছেলে কি বুঝে না কোনো কিছু? কোমড়ে হাত দিয়ে রাগী গলায় বলে ওঠে……
.
—তেলাপোকায় কামড়াইসে আমারে যে আমি তোমার সাথে ড্যাং ড্যাং করে চলে যাবো? কচি খুকি না আমি । সব বুঝি যে আজ কি রাত?
.
আদ্রাফ এবার হাসবে না কাদবে বুঝতে পারছে না। এই মেয়েরে জব্দ করতে হবে। তাই ধীরপায়ে মেহেরের খুব কাছে এগিয়েই অদ্ভুদ স্বরে প্রশ্ন করে……….
.
—আমি তো জানিনা আজ কি রাত?
.
হঠাৎ আদ্রাফের এমন কাছে আসাতে কিছুটা হতভম্ব হয়ে গিয়েছে মেহের। আদ্রাফের ঘন নিঃশ্বাস ওর মুখে আছড়ে পড়াতে যেন অস্বস্তির চরম শিখরে পৌছে গিয়েছে সে।আয়াতের গহীন কালো চোখে সে ডুবে যেতে চাচ্ছে না তাই পরিস্থিতিটা সামলানোর জন্য কড়া গলায় বলে ওঠে……
.
—আহারে ! কচি খোকা। যেন কিছুই বুঝে না।আজ আমি তোমার সাথে যাবোনা। দরকার পড়লে সারারাত ছাদে পড়ে থাকবো। তবুও তোমার সাথে যাবো না।
.
—কিন্ত কেন?
.
—তোমারে দিয়ে ভরসা নাই। বউ হয়ে গিয়েছি দেখে কি না কি করে বসো…….
.
মেহেরের প্রতিটা কথা শুনলে যে কেউ রেগে ভস্ম হয়ে যেতো কিন্ত আদ্রাফ তার ব্যতিক্রম। সে নীরবেই ওর প্রতিটা কথা শুনে যাচ্ছে যেন সে জানতো এই পাগলীটা এরকম কিছুই করবে। মেহেরও পড়েছে বিপাকে। ওর মূল উদ্দশ্যই ছিলো যে আদ্রাফকে রাগাবে আর রাগের বশে সে যেন চলে যায়। কিন্ত ব্যাটায় তো পুরা পাল্টি মারলো। আদ্রাফ একটা লম্বা শ্বাস নিয়ে আবারো বলে ওঠে………
.
—দেখো মেহু ? লক্ষী মেয়ের মতো আমার সাথে চলো। তোমায় আমি একা রেখে যেতে পারবো না। তাছাড়া বাড়িতে আব্বু-আম্মু সবাই আছে। বিষয়টা ভালো দেখাবে না।
.
—তারা কি তোমার ঘরে গিয়ে উকিঝুকি মারবে যে আমি আছি কি না?আর আমি তোমার কোন জনমের মেহু লাগি? আমার নাম মেহের এই নামেই ডাকবা। এত আলগা পিরিত দেখাতে হবে না।
.
আদ্রাফের এবার ধৈর্যের বাঁধ যেন ভেঙ্গে যাচ্ছে। তবুও দাঁতে দাঁত চেপে বলে ওঠে……..
.
—লাস্টবার জিজ্ঞেস করছি তুমি যাবে নাকি যাবে না?
.
মেহেরও এবার কটাক্ষ গলায় বলে ওঠে………
.
—যাবোনা……….যাবোনা………যাবোনা।
.
মেহেরের এই উত্তরটা শোনার সাথে সাথেই হুট করে ওকে কোলে তুলে নেয় আদ্রাফ।এই মেয়ে সোজা কথার মানুষ না। আর মেহের তো ওর বুকে পিঠে কিলঘুষি মারতে মারতে নিজের অবস্থা আধমরা করে ফেলেছে তবুও আদ্রাফ যেন তার দিকে প্রবল। হঠাৎই মেহের এক ভয়ঙ্কর কাজ করে বসলো যা ছিলো আদ্রাফের কল্পনার বাইরে।
.
মেহের আচমকা আদ্রাফের ঠোঁটে নিজের ঠোঁট ডুবিয়ে দেয় যার কারনে স্তব্ধ হয়ে যায় আদ্রাফ।মেহের চোখবন্ধ করেই আদ্রাফের ঠোঁটে নিজের স্পর্শ দিয়ে যাচ্ছে। ঘটনারচাপে হুট করে মেহেরকে ছেড়ে দিতেই মেহের নিচে পড়ে যায়। ব্যস মেহেরকে আর পায় কে? হালকা একটু ব্যথা পেলেও সে উঠে আদ্রাফের কাছ থেকে নিরাপদ দুরুত্বে চলে আসে…….
.
—ভালোয় ভালোয় চলে যাও। আমি দস্যুরাণী মেহের। এত সহজে কারও পাল্লায় পড়ি না।
.
আদ্রাফ না পারছে এই যন্ত্রণা সইতে আর না পারছে এড়িয়ে নিতে। কেন যে বাবার কথা শুনে এই মেয়েকে বিয়ে করতে গেলো?সবাই ওদের বিয়েতে মহাখুশি থাকলেও ও বুঝে গিয়েছে যে ওর বিবাহিত জীবনে এই দস্যুরাণী বউ জীবনটা ঝাল্লাপাল্লা করে দেবে।
.
.
.
.
~চলবে~

আমার ক্রাশ পর্ব-২৪ এবং শেষ পর্ব | বাংলা ভালোবাসার গল্প

0

#আমার ক্রাশ
#অন্তিম পর্ব
#Tanisha Sultana (Writer)

“ওই তুলি কই যাও?

” জাহান্নামের চৌরাস্তা যায়। কথা কমু না আর। তালাক দিমু আপনারে। আমার বেবি হবে সেটা আমাকে বললেন না। এতো বড় অবিচার আমি সয্য করবো না

তুলি এসব বলছে আর হাঁটছে। সায়ান গাড়ি থেকে নেমে তুলির পেছনে দৌড় দেয়। তুলিকে ধরে ফেলে

“পবলেম কি?

” কথা কমু না

“তুমি প্রেগন্যান্ট আর তুমিই বুঝতে পারো নি। কতোবড় ইডিয়েট তুমি ভেবে দেখেছো

” ভালো হইছে। থাকমু না আপনার সাথে

“কেনো?

” আমার ব্রাজিলের টিমের সামনে আপনি আমারে ইডিয়েট কইবেন তখন ওরাও আমাকে ইডিয়েট বলবো

তুলি মুখ গোমড়া করে বলে। সায়ান ফিক করে হেসে দেয়।

“হাসেন কেন

” এমনি। চলো বাইরে বাতাস তোমার এখানে থাকা ঠিক না

“থাকমু

” আমার বেবির হ্মতি হবে চলো

“উহহহ এমনভাবে বলছেন যেনো আপনার আপন বেবি আর আমার মামাতো বেবি

” তাই তো মনে হয়

“তা মনে হয় না। আপনার চাচতো বেবি আর আমার আপন

” কেনো?

“কষ্ট আমি করবো আর আপনি এমনি এমনি বাবা ডাক শুনবেন ইম্পসিবল

” ঠিক আছে পাপা বলে ডাকতে বইলো

“তাও না

” তাহলে বাপি

“মামা বলে ডাকবো আপনারে

তুলি গাড়িতে বসে পড়ে। সায়ানের রাগ হচ্ছে। নিজের বেবি কি না মামা বলে ডাকবে। যদিও কেবল বেবির বয়স দুই সপ্তাহ তবুও এখন থেকেই কি বলে ডাকবে এটা নিয়ে ঝগড়া।

সায়ান তুলির পাশে বসে

” শুনুন

“বলুন

” মিষ্টি কিনবেন

“হুম তা তো কিনতেই হবে। পুরো পাড়া মিষ্টি বিলাবো

” কেনো আবার। আমার বেবি হচ্ছে তাই

“কার বেবি হচ্ছে?

” আমার

“আপনার পেটে বেবি

” ওই একই হলো। বেবিটা তো দুজনের

“নাহহ শুধু আমার। এতো দরদ হলে দুদিন নিজের পেটে রেখে দেখান

” আল্লাহ। তোমার বেবি হচ্ছে তাই মিষ্টি খাওয়াবো

“বেবি হচ্ছে আমার আর মিষ্টি খাবে পুরো পাড়া

” হুমম

“কেনো?

” এমনি

“বেবি আমার হচ্ছে আমি একা একা মিষ্টি খাবো। কাউকে দেবো না

” ওকে খাইয়ো

“বেবি হলে তো ওদের বলে দেবো

” কিহহ

“আমার Ex সতিন ছিলো। তারপর ওদের মামা কি করে আমাকে কতো কষ্ট দিছে সব বলবো

” বলিয়েন

“হুমমম

” এবার একটু চুপ থাকো

“কেনো?

” এই সময় এতো কথা বলা ঠিক না

“কোন পাগল ডাক্তারের বলছে

” নাহহ তোমার যত ইচ্ছা কথা বলো

“থাক কমু না

” বাঁচলাম

“হুররর

তুলি বাড়ি ফিরে লাফালাফি শুরু করে দিছে। ঘুড়ে ঘুড়ে সবাইকে বলতেছে তুলি প্রেগন্যান্ট। সায়ানের বাবা দশ কেজি মিষ্টি এনেছে সবাইকে খাওয়ানোর জন্য। কিন্তু তুলি কাউকে দিতে দেবে মা মিষ্টি। তুলির কথা তুলি প্রেগন্যান্ট তো মিষ্টি তুলি একাই খাবে কাউকে দেবে না। সবাই তুলির কথায় সায় দিয়েছে। সায়ান তুলির অগোচরে মিষ্টি কিনে সবাইকে খাইয়েছে।

এভাবেই দিন চলছে। তুলি পাগলামি দুষ্টুমিতেই সারাদিন সায়ান আর সায়ানের বাবা মা জিসান মেতে থাকে। নিশি তুলিদের বাড়িতে থাকে।
তুলির প্রেগ্ন্যাসির নয় মাস চলছে। সায়ান একটু ঘুমিয়েছে তুলি পাশে তাকিয়ে আছে। হঠাৎ তুলি জোরে জোরে কান্না শুরু করে দেয়। সায়ান ধরফরিয়ে ওঠে

” তুলি কি হয়েছে? পেটে ব্যাথা করছে

“নাহহহ

” তাহলে

“বেবি পেটে থেকেই আমাকে লাথি মারছে খামছি মারছে পেট থেকে বেরিয়ে না জানি কি করবে

সায়ান মুচকি হেসে তুলিকে জড়িয়ে ধরে

” ও তো ইচ্ছে করে লাথি মারছে না

“তাহলে

” দেখো তুমি পুরো একটা বিছানা জুড়ে থাকো তারপরও মাঝে মাঝে নিচে পড়ে যাও। আর ওতো এই টুকু জায়গায় থাকে। তো একটু নড়াচড়া করতে গিয়ে তোমার লাথি লেগে যায়। ইচ্ছে করে দেয় না

“আমিও সেটাই ভাবি আমার সোনা তার মাম্মাম কে কি করে লাথি মারতে পারে।

” হুমমম

“এবার একটু ঘুমানোর চেষ্টা করো

“হুমমম

পাঁচ বছর পরে
সায়ান অফিসের জন্য তৈরি হচ্ছে

” তুলি আমার ট্রাই আর জুতো কই?

তুলি আর তুলির মেয়ে পরি দুজনই দরজার আড়ালে লুকিয়ে আছে

“তুলি ভালো ভাবে বলছি জুতো আর ট্রাই দিয়ে যাও নাহলে বেঁধে রাখবো তোমায়।

” ইমপটেন্ট মিটিং আছে অফিসে। তুলি। আমি তোমায় খুঁজে পেলে কিন্তু একটা মারও মাটিতে পড়বে না।

“আজ অফিসে যেতে দেবো না

তুলি বেরিয়ে বলে

” আমি যাবো

“এখন তুলি আর পরি কাঁচা কাজ করে নি। সব গুলো জুতো ট্রাই এন্ড ফাইল সব লুকিয়ে ফেলছি।

” নিজে তো একটা ইডিয়েট এখন আমার মেয়েটাকেও ইডিয়েট

“পাপা

পরি রাগী দৃষ্টিতে সায়ানের দিকে তাকিয়ে কোমরে হাত দিয়ে বলে

” আমার মেয়ে ইডিয়েট না

“আজ থেকে আমি আর তোমায় মাম্মাম বলে ডাকবো না

” তাহলে কি বলে ডাকবি

তুলি ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করে।

“ইডিয়েট বলে ডাকবো

” তবে রে

পরি সায়ানের পেছনে লুকিয়ে পড়ে। তুলি কান্না শুরু করে দেয়। পরি দুই কানে হাত দিয়ে বলে

“সরি মাম্মাম

” লাগবো না সরি

সায়ানও পরির মতো কানে হাত দিয়ে নেলডাউন হয়ে বসে পড়ে সাথে পরিও। তারপর দুইজন এক সাথে বলে

“আর কখনো তোমায় ইডিয়েট বলবো না

তুলি ফিক করে হেসে পরিকে কোলে তুলে নিয়ে চুমু খায়।

” আর আমার চুমু

“আমাদের ঘুড়তে নিয়ে গেলে পাবেন

” অফিসে প্রচুর কাজ

“আপনার কাছে সব কিছুর আগে পরি তুলি তারপর বাকি সব কিছু। বুঝছেন

” হুমম

রেডি হয়ে নাও

পরি বাবার গলা জড়িয়ে ধরে

“লাভ ইউ পাপা

” লাভ ইউ টু মামনি

“আর আমার লাভ ইউ (তুলি)

সায়ান পরি এক সাথে

” আই লাভ ইউ
সায়ান পরি আর তুলিকে জড়িয়ে ধরে। তিনজন ই হেসে ফেলে।

এভাবেই হাসিখুশি থাকুক সায়ান তুলি আর তাদের মিষ্টি পরি।

___________সমাপ্ত ____________

আমার ক্রাশ পর্ব-২৩

0

#আমার ক্রাশ
#পর্বঃ২৩
#Tanisha Sultana (Writer)

তুলি শাড়ি চুড়ি পড়ে কখন থেকে সায়ানের জন্য ওয়েট করছে কিন্তু সায়ান আসছে না। বিকেল হয়ে আসছে সায়ানের পাত্তা নেই

“ধুর ভাল্লাগে না কখন থেকে সং সেজে বসে আছি। আসার নামই নেই। কি এমন মহৎ কাজ করছে কে জানে? সারাক্ষণ শুধু কাজ আর কাজ। ঘড়ে যে সুন্দরী একটা বউ আছে সেদিকে খেয়াল নেই।

তুলির ফোন বেজে ওঠে।

” হেলো কখন থেকে সাজুগুজু করে বসে আছি। কোথায় আপনি?

“বাড়ির বাইরে। আসো

” আমার না মাথাটা কেমন ঘুরছে

“ঠিক হয়ে যাবে আসো

” হুম আসছি

তুলি একবার আয়নায় নিজেকে দেখে বের হয়।

“তুলি এখন কোথায় যাচ্ছ?

তুলি পেছন ঘুরে দেখে শাশুড়ী

” মা সায়ানের সাথে বের হচ্ছি

“সন্ধার আগে বাড়ি ফিরে আসবে

” চেষ্টা করবো

“গায়ে যেনো বেশি বাতাস না লাগে। সাবধানে যাবে

” ওকে মাই কিউটি শাশুড়ী। আসছি

শাশুড়ীর থেকে বিদায় নিয়ে তুলি বেরিয়ে যায়। সায়ান গাড়ির সাথে পিঠ ঠেকিয়ে পকেটে হাত গুজে দাঁড়িয়ে আছে। দুর থেকে তুলি আসছে। সায়ান দেখছে

“হেলো মিস্টার
তুলি হাসিমুখে বলে

” হাই মিসেস

“এতো লেট কেনো?

” তুমি এতো সাজুগুজু করছো কেন?

“ছেলেদের ইমপ্রেস করার জন্য

” ইডিয়েট

“আপনারই বউ

” যাবো না আমি

“কি মুশকিলআসান আমি আপনার জন্য সেজেছি

” ঢপ

“তিন সত্যি

” কিন্তু এই শাড়ি তো আমি তোমাকে কখনো কিনে দেই নি

সায়ান ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে তুলি দিকে উওরের আশায়। তুলি হাত কচলাচ্ছে নিচের দিকে তাকিয়ে। তুলি সায়ানের দিকে তাকাতেই সায়ান ভ্রু নাচায়। মানে বলতে বলে

“আসলে

” তুলি তুমি যেটা পারো না সেটা কেনো করতে যাও

তুলি এবার সায়ানের দিকে ভ্রু কুচকে তাকায়। সায়ান তুলিকে দুইহাতে আলতো করে জড়িয়ে ধরে বলে

“তুমি মিথ্যে বলতে পারো না। তবুও কেনো ট্রাই করো মিথ্যা বলার? তোমাকে শাড়িটা কে দিয়েছে? তুমি এটা কেনো পড়েছো। এসবে আমার কোনো ইন্টারেস্ট নেই। কেউ গিফট করতেই পারো ইটস নরমাল। কিন্তু তুমি সেটা আমার থেকে কেনো লুকাবে? হাজবেন্ড আমি তোমার। অধিকার আছে জানার। যদিও আমি অধিকার ফলিয়ে জানতে চায় না। তুমি ভালোবেসে বিশ্বাস করে জানাবে আমায়। আমি এটা চায়। আর আমার ফিউচার বেবির মামনির কাছ থেকে তো এটুকু এক্সেপ্ট করতেই পারি

তুলি সায়ানকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।

” আই এম সরি। আমি লুকোতে চায় নি আপনার কাছ থেকে। বাট এই মূহুর্তে বলতে চাই ছিলাম না। শাড়িটা অভিদা গিফট করেছে। আপনি যদি রেগে যান তাই বলছিলাম না। আর আমি অভিদার সাথে মিট করতে চায়।

সায়ান মুচকি হেসে তুলির মাথায় হাত বুলায়।

সায়ান ডাইভ করছে তুলি পাশে বসে আমতাআমতা করছে

“কিছু বলবে?

” আসলে কি হয়েছে বলেন তো। খালি মাথা ব্যথা করে কিছু ভাল্লাগে না

সায়ান মুচকি হাসে

“আমি অসুস্থ আর আপনি হাসছেন?
আমি ডাক্তারের কাছে যাবো

” এই রোগের ঔষুধ ডাক্তারের কাছে নেই

“তাহলে কার কাছে আছে

” মিস্টার সায়ান চৌধুরীর কাছে

“সিরিয়াসলি বলতেছি

” আমি আছি তো

“সেটাই

” এর হয়েছে কি? আমি অসুস্থ বললাম তাও এতো শান্ত। কাহিনি কি? আবার ডাক্তারের কাছেও নিয়ে যেতে চাইছে না। পাগল হলো না কি? না কি অন্য বেপার

তুলি এসব আকাশ পাতাল ভাবছে।

“আমি খুব খুশি তুলি। জীবনের শ্রেষ্ঠ গিফটটা তুমি আজ আমায় দিলে। তোমাকে এখনি বলবো না। একটু ওয়েট করো।

সায়ান মুচকি হাসছে আর কথাগুলো বলছে মনে মনে।

এয়ারপোর্টে পৌঁছে যায় সায়ান তুলি। গাড়ি পার্ক করিয়েই অভিকে দেখতে পায়। ব্যাক পএ নিয়ে বসে আসে। তুলি সায়ান অভির কাছে যায়।

” অভি

সায়ানের ডাকে অভি তাকায় কিন্তু সায়ানের দিকে না তুলির দিকে চোখ যায়।অসম্ভব সুন্দর লাগছে তুলিকে।

“থ্যাংক্স ব্রো
” কেনো?

“ভাবিকে নিয়ে এখানে আসার জন্য।

সায়ান অভির কাঁধে হাত রাখে

” থ্যাংক্স ফর ইউ। তোকে নিয়ে আমি প্রাউড ফিল করছি। আমি জানি না তোকে কি বলবো। আমি তুলিকে সব সময় অবহেলা করেছি কিন্তু তুই আর জিসান ওকে আগলে রেখেছিস। ছোট ছোট ইচ্ছে গুলো পূরন করেছিস। এতোটা ভালোবেসেও কোনো চাওয়া নেই তোর।

“কে বললো কোনো চাওয়া পাওয়া নেই। এখন কিছু চাইবো আমি

সায়ান তুলি দুজনই চমকে অভির দিকে তাকায়

” আমি একটা বার তুলিকে জড়িয়ে ধরবো প্লিজ। তুলি তো আমাকে বেস্ট ফ্রেন্ড ভাবে তো বেস্ট ফ্রেন্ড হিসেবে। নাহয় বড় ভাবি বা বোন। তুলি তো আমার বড় ভাবি বোন ফ্রেন্ড সব কিছুই। তো একবার প্লিজ।

সায়ান কি বলবে বুঝতে পারছে না। তুলি অভির দিকে তাকিয়ে আছে। ভালোবাসা শব্দটা অনেকের কাছে শুনেছে তুলি। অনেক প্রপোজ পেয়েছে। কিন্তু অভির মতো করে কেউ ভালোবাসা প্রকাশ করে নি। বা এতোটা ভালোও কেউ বাসে নি।
সায়ন তুলির দিকে তাকিয়ে আছে। অভি সায়ানের দিকে।
অভি গলা ঝেড়ে বলে
“আসছি। তুলির খেয়াল রাখিস। রত্ন পেয়েছিস তুই। এমন ভাগ্য সবার হয় না। আগলে রাখিস আমার ভালোবাসাকে। আর অবহেলা করিস না। একটা ফুলবল টিম বানা। যদি ভাগ্যে থাকে তাহলে কখনো তোদের হ্যাপি লাইফটা দেখতে আসবো। আমি কিন্তু মাঝেমধ্যেই ফোন করবো।

তুলির সামনে গিয়ে তুলির হাত ধরে
” আসছি
অভি চলে যায়। আর পেছনে তাকায় না। পেছনে তাকালে শুধু মায়া বাড়বে আর কিছু না। সায়ান তুলি অভির যাওয়া দেখছে।
“কতোটা পবিত্র অভির ভালোবাসা। কোনো খাদ নেই। তবুও অভির ভালোবাসা পূর্ণতা পেলো না। ভালোবাসার মানুষটাকে পাওয়ার মধ্যে যে তৃপ্তি পাওয়া যায় তা কিছু দিনের। আর না পাওয়ার মধ্যে যে আফসোস টা থাকে সেটা সারাজীবনের।

গাড়িতে তুলি মুখ গোমড়া করে বসে আছে। সায়ান ডাইভ করছে।

” তুলি কি হয়েছে?

তুলি গাল ফুলিয়ে বলে

“কথা নাই

” আমি আবার কি করলাম

“তাও বলবো না

” না বললে জানবো কি করে?

“তাও তো। ঠিক আছে বলছি

” হুম প্লিজ

“আমি অসুস্থ তাও আপনার কোনো চিন্তা নেই। ডাক্তারও দেখাতে দিতে চাচ্ছেন না। টাকা ফুরাবে বলে? দেখুন আমার বাপির টাকা আছে। আমি আমার বাপির টাকায় চিকিৎসা করাবো

” আচ্ছা

“কি আচ্ছা

” করাও

“কিহহহহ😡

” রাগো কেন?

“আপনার হইছে কি?

” তুলি তোমার কিচ্ছু হয় নি

“তাহলে আমার মাথা ব্যথা করে কেন? শরীর দুর্বল লাগে কেন? কেমন কেমন লাগে কেন?

” কারণ আছে

“কি কারণ

” বলবো

“হুম বলেন

” ফুটবল টিম বানাবো

“আমি মরলে বানাইয়েন

সায়ান ঠাস করে গাড়ি থামায়। তুলির দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকায়

” আবার কি করলাম?

“এখুনি কি বললা

” আর কমু না সরি

“বলললা কেন

” সরি তো

“কান ধরো

তুলি কান ধরে ইনোসেন্ট ফেস নিয়ে বলে

” সরি আর হবে না

সায়ান মুচকি হেসে তুলিকে জড়িয়ে ধরে।

“আমার তুলি প্রেগন্যান্ট

তুলি ছিটকে দুরে সরে গিয়ে বলে

” কিহহহহহহ
“হুমমম

” ধপ মারছেন? প্রেগন্যান্ট হলে তো বমি হতো
“সব সময় প্রেগন্যান্সির সময় বমি হয় না।

” আপনি জানলেন কি করে

“ডাক্তার বললো

” কিন্তু

“কয়েকদিন ধরেই তোমাকে লহ্ম করছি তুমি কেমন হয়ে গেছো। তো সন্দেহ হলো। ডাক্তারকে কল করলাম। তোমাকে সেদিন চেকআপ করাতে নিয়ে গেলাম। কিন্তু তোমাকে বলি নি। তুমি ছাড়া বাড়ির সবাই জানে।

” সত্যি আমি প্রেগন্যান্ট

তুলি গাড়ির মধ্যেই লাফাতে থাকে। সায়ান ধরে বসায়

“একদম লাফালাফি করবা তো পা ভেঙে দেবো।

” আমি রেগে আছি
তুলি গাড়ি থেকে নেমে যায়।
“কথা বলবো না আপনার সাথে

চলবে

আমার ক্রাশ পর্ব-২২

0

#আমার ক্রাশ
#পর্বঃ২২
#Tanisha Sultana (Writer)

তুলি বাড়ির ভেতরে পা রাখতে গিয়ে থেমে যায়

“কি হলো?

” আমি মিসেস তুলি চৌধুরী হেঁটে হেঁটে আমার বাসায় ঢুকবো? ইম্পসিবল

“তাহলে কি পালকি ডাকতে হবে?

” আপনি আছেন কি করতে

“আমি!!!!!

” হুম আপনি। এখন আমাকে কোলে করে বাসায় ঢুকান

“হ্মমা করা যায় না

” চলে যাচ্ছি

তুলি গাল ফুলিয়ে যেতে নেয় সায়ান হাত টান দিয়ে কোলে তুলে নেয়

“ছাড়েন তো ঢং দেখাতে হবে না

” তোমার গালের মধ্যে কি বেলুন আছে না কি

“কেনো বলেন তো

” কথায় কথায় ফুলাও কেমনে?

তুলি সায়ানের পিঠে কয়েকটা থাপ্পড় মারে। সায়ান হেসে তুলিকে নিয়ে ভেতরে ঢুকে।

“তোমার প্রিয় রং নীল দিয়ে পুরো বাড়িটা সাজিয়েছি।

” ধন্যবাদ

“হবে না

” তো

“গিভট চায়

” স্পেশাল গিফট দেবো আপনাকে

“কিহহহ

” বেবি দেবো🙈

সায়ান তুলিকে সোফায় বসিয়ে দেয়।
“কি হলো

” ৮০ কেজি ওজন আর কতোখন বহন করবো

“৪১ কেজি আমি।

” সেটা,জানি আমি

“কথা নাই

তুলি গাল ফুলিয়ে অন্য দিকে ঘুরে বসে। সায়ান পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে

” রাগলে তোমায় দারুণ লাগে।

“পাম

” সত্যি

“তাহলে এখন থেকে সব সময় আমি রেগে থাকবো

” কেনো?

“সুইট লাগবে

” লেজ ছাড়া বাঁদর

“আপনারই বউ

” সেটাই

এভাবেই খুনসুটিতে চলছে দিন। তুলির দুষ্টুমি আর সায়ানের রাগ দুটো মিলেই সুন্দর একটা সম্পর্ক।
সকাল বেলা। সায়ান অফিসে যাবে কিন্তু জুতো খুঁজে পাচ্ছে না। সায়ান জুতো খুঁজছে আর তুলিকে ডাকছে

“তুলি কোথায় তুমি?

তুলি দরজার আড়াল থেকে উঁকি মেরে দেখছে।

” লাস্ট বার বলছি তুমি এখানে না আসলে কান ধরে টানতে টানতে নিয়ে আসবো তোমায়

তুলি গুটিগুটি পায়ে সায়ানের সামনে আসে। সায়ান ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে তুলির দিকে।

“এভাবে তাকান কেন?

” গন্ডগোল আছে

“কোনো গন্ডগোল নেই।

” তাহলে তুমি এতো চুপচাপ

“বেশি কথা বললে বলবেন তুলি একটু চুপ থাকো বিরক্ত লাগছে আবার কথা না বললে বলবেন তুলি কথা বলছো না কেনো গন্ডগোল আছে। আসল বেপারটা কি বলবেন? কোন পথে হাঁটবো আমি

” জুতো কই আমার

“আমাকে কি চোর মনে হয়?

” হুমমম

“কিহহহ😡

” তুলি লেট হচ্ছে প্লিজ জুতো দাও

“আপনাকে আজ অফিস যেতে দেবো না

” ইমপটেন্ট কাজ আছে আমার

“আমিই সব থেকে আগে আপনার কাছে

” কে বললো?

“আমি

” টাইম নষ্ট করো না

“দেবো না ব্যাছ

” ওকে

সায়ান অন্য একটা জুতো বের করে

“প্লিজ যাইয়েন না

” যাবো আমি

সায়ান বেরিয়ে যায়।

“জানি তো ভালোবাসেন। ভালোবাসলে এভাবে চলে যেতেন না। একটা দিনই তো। তাও আবার আজ আমার বার্থডে। একটা ইউসও করলেন না। ধুর

তুলি মন খারাপ করে বসে আছে বেলকনিতে। কলিং বেল বাজে

” মনে হয় সায়ান এসেছে। আমি জানতাম উনি আসবে। #আমার ক্রাশ। দরজাটা খুলে ধপাস করে একটা কিস দেবো জানটারে।

তুলি দরজা পর্যন্ত যায়৷ দরজার সামনে একটা প্যাকেট।

“এখানে এই প্যাকেটটা এতো কোথা থেকে? সায়ান কি আমাকে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য এটা রেখেছে। উফফফ আমার জামাইটা এতো রোমান্টিক হয়ে গেছে।

তুলি প্যাকেটটা তুলে হাতে নেয়। একটা চিরকুট পায়। রুমে চলে যায় তুলি। প্যাকেটটা খাটে রেখে চিরকুটটা খুলে

” আমার তুলি

জানি তুমি খুব ভালো আছো। সুখে আছো। কিন্তু আমি ভালো নেই। প্রচন্ড ভালোবাসি তোমাকে। হয়ত নিজের থেকেও বেশি। আমি চাইলেই তোমার আর সায়ানের পথে বাধা হতে পারতাম। কিন্তু ভিলেন হওয়ার ইচ্ছে আমার নেই। আমি হিরো হতে চায়। তুলির হিরো। জানি এজীবনে এটা সম্ভব নয়। কিন্তু আমি আশা হারায় নি। হয়ত কখনো কোনোভাবে তোমায় পাবো আমি। ভালোবাসলে বিয়ে করতে হবে সারাক্ষণ সাথে থাকতে হবে এমনটা আমি মানি না। আমার কাছে ভালোবাসাটা অন্য রকম। ভালোবাসলে সারাজীবন পাশে থাকতে হবে এটা আমি মানি। আমি তোমার পাশে আছি। যদিও আমাকে তোমার কোনো প্রয়োজন নেই। তুমি আমার ভাইয়ের বউ এটা জেনেও আমি তোমায় ভালোবেসেছি। তোমাকে ছুঁয়ে দেওয়া কোনো ইচ্ছে আমার নেই কিন্তু সারাক্ষণ তোমার মুখের হাসিটা দেখতে চায়।
যদিও এসবের কোনো মানে হয় না। তুমি ভাবতে পারো ছেলেটা যদি আমাকে নিঃস্বার্থ ভাবে ভালোবেসে থাকে তাহলে এসবের মানে কি? নিশ্চয় আমাকে ইমপ্রেস করার চেষ্টা করছে। এমনটা কিন্তু নয়। আমার মনে হলো তোমাকে জানানো উচিৎ এটা তাই জানালাম। হ্যাপি বার্থডে ভালোবাসা। দোয়া করি খুব সুখী হও। ব্রাজিলের ফুটবল টিম বানাও। আজ আমি সিঙ্গাপুর চলে যাচ্ছি। হয়ত আর কখনো দেশে ফেরা হবে না। এখানে থাকলে বেহায়া মনটা তোমার আশেপাশে থাকতে চাইবে তাই দুরে চলে যাচ্ছি। সায়ান আমার সাথে দেখা করতে আসবে। যদি তুমি আসতে। শেষ বার তোমায় একটু দেখতাম। যদি আসো তো শাড়িটা পড়ে এসো। আমার ভালো লাগবে। জোর করছি না তোমার ইচ্ছে। সব শেষে খুব ভালোবাসি তোমায়।

ইতি
অভি

চিঠিটা পড়ে তুলি বসে পরে। অভি তুলিকে ভালোবাসে এটা তুলি জানতো। কিন্তু এতোটা ভালোবাসে এটা জানতো না। তুলি এবার দোটানায় পড়ে গেছে। যাবে কি না ভাবছে।

“কি করবো? যাবো? যদি সায়ান ভুল বুঝে? সায়ানকে সবটা বলে দেবো?

তুলি প্যাকেটটা খুলে। ক্রিম আর লাল কালার মেশানো একটা জামদানী শাড়ি। অপূর্ব দেখতে শাড়িটা। তুলি সায়ানকে কল করে

” হ্যাঁ তুলি বলো

“কোথায় আপনি? নাইট ক্লাবে ডান্স করছি

” দিনের বেলায়

“ফোন কেনো দিছো

” এমন করেন কেন?

“তো কেমন করবো? তোমার জন্য অফিস আসতে লেট হলো। অভিকে ড্রপ করতে যেতে হবে আবার।

” আমিও যাবো

“কোথায়?

” এয়ারপোর্ট। অভিকে এগিয়ে দিতে

সায়ান একটু ভেবে বলে

“ওকে। তোমার নিয়ে আসবো

তুলি খুশি হয়ে বলে

” থ্যাংক্স

“হুমম। লাভ ইউ

” আটদিন পরে লাভ ইউ বললেন

“বলে কয়ে ভালোবাসা হয় না। সারাক্ষণ লাভ ইউ বললেই তোমাকে ভালোবাসি না বললে ভালোবাসি না এটা ভুল। আমি আমার তুলিকে সব সময়ই ভালেবাসি

” তাই তো দেখি

“কি দেখো

” কথাই বলোন না আবার ভালোবাসেন

“তুমি একটা মানুষই। এখন রাখো কাজ করছি

” হুমম৷ কিছু কি ভুলে যাচ্ছেন

“না তো কি ভুলবো

” ওহহহ

“বাই

” হুম

তুলি মন খারাপ করে ফোন রাখে। সায়ান মুচকি হাসে।
“তোমার জন্য ধামাকা অপেক্ষা করছে তুলি জান।

চলবে

আমার ক্রাশ পর্ব-২১

0

#আমার ক্রাশ
#পর্বঃ২১
#Tanisha Sultana (Writer)

তুলি মোটামুটি পায়ে ভালোই ব্যাথা পেয়েছে। চুপচাপ আছে ব্যাথার কথাটা কাউকে বলতে চাচ্ছে না।

“ওই চলো আমাদের বাড়ি যাবো

সায়ান বেলকনিতে ফোন দেখছিলো রুমে এসে বলে।

” থাকি না আজকে

“কেনো বলো তো

” এমনিতেই

“ওকে থাকলাম কিন্তু রুম থেকে তো বের হবা

” আপনি যান আমি এখন বের হবো না
“কেনো?
” ভাল্লাগে না
তুলি সুয়ে পরে। সায়ানের সন্দেহ হয়। তুলির পাশে বসে
“এতোটা চুপচাপ থাকার মেয়ে তো তুমি না। কাহিনি কি বলো
” সত্যি কিছু না
“ওঠো
সায়ান জোর করে তুলিকে উঠিয়ে বসাতে যায়। তুলি আহহহ করে ওঠে
” কি হয়েছে? 😡
“না মানে
” স্পষ্ট করে বলো
“পায়ে একটুখানি ব্যাথা পাইছি
” ওহহহ শিট আমারই বোঝা উচিৎ ছিলো
সায়ান তুলির পায়ে হাত দিয়ে দেখে পাটা ফুলে গেছে।
“হাসপাতালে যেতে হবে
” প্লিজ আমি যাবো না
“তুমি যাবে না তোমার ঘাড় যাবে
সায়ান তুলিকে কোলে নিতে যায়
” এই ড্রেসে হাসপাতালে যাবো?
“অমানুষ
সায়ান আলমারি থেকে তুলির একটা ড্রেস বের করে। ড্রেসটা তুলির সামনে রেখে বলে
” পড়ে নাও
“আমার পায়ে ব্যাথা আমি কি করে পড়বো
” হাতে তো আর ব্যাথা না।
“তো কি হয়েছে?
” না পড়লে এভাবেই নিয়ে যাবো
“জানি তো ভালোবাসেন না
” কে বললো?
“ভালোবাসলে ড্রেসটা পড়িয়ে দিতেন।
সায়ান তুমির মুখের কাছে মুখ নিয়ে বলে
” আমি পড়াতে গেলে কিন্তু পবলেম হতে পারে
“আমিও সেটাই চায়🙈
সায়ান একটু দুরে গিয়ে বলে
” পবলেম বলতে পায়ে আবার ব্যাথা পেতে পারো
“🙄🙄🙄🙄🙄
” নাও হেল্প করছি
“লাগবো না😠
” গুড গার্ল 😄
“সর তুই 😠
এমন করো কেন🥺
” চেঞ্জ করবো তাই যেতে বলছি😘
“ওহহহ আগে বলবা তো

সায়ান বেলকনিতে যায়। তুলি জামাটা হাতে নিয়ে বসে আছে
” একা একা কিভাবে চেঞ্জ করবো? যদিও করা যাবে কিন্তু আমি করবো না😁। জামাই আছে তো। একটা মাএ জামাই। তারপর এতোদিন আমারে কতো কষ্ট দিছে একটু শোধ তো নিতেই হয়। হি হ

তুলি পড়ে থাকা জামাটা খুলে জোরে একটা চিৎকার দেয়। সায়ান দৌড়ে আসে। তুলির দিকে তাকিয়ে ঢোক গিলে দৌড়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়।
“এটা কি হলো🙄

সায়ান তুলির নিশির কাছে যায়। নিশি রান্না করছিলো
” নিশি শোন
“হুম বলো
” যা তুলিকে একটু হেল্প কর
“কেনো?
” পায়ে ব্যাথা পাইছে তাই ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবো তো চেঞ্জ করতে পারছে না একা একা
“কখন ব্যাথা পেয়েছে? আর বলো নি কেন আমাদের
” বাঁদরামী করতে গিয়ে ব্যাথা পাইছে। খুব বেশি না। একটু হেল্প কর। আর এখন কাউকে বলতে হবে না
“আচ্ছা

নিশি তুলির রুমে যায়। দেখে তুলি চেন্জ করে গাল ফুলিয়ে বসে আছে
” ভাইয়া আমাকে পাঠালো তোমাকে হেল্প করতে
“আমার চেঞ্জ করা শেষ
” মুখ ভাব কেনো?
“একটা গাঁধার ওপর ক্রাশ খাইছিলাম
“কেনো?
” তুমি বুঝবা না। গাঁধাটাকে পাঠিয়ে দাও। বলো চেঞ্জ করা শেষ
“ওকে

নিশি গিয়ে সায়ানকে পাঠিয়ে দেয়।
” চলো
“হুম চলুন। আমি তো আবার হাঁটতেও পারি
” এতো তেরা কেন তুমি
“আপনি এতো ব. ল. দ কেনো?
” কি বললা তুমি 😡
“শুনেন নাই
” ইডিয়েট
“আপনার থেকে ভালো আছি
” সেটাই
“হুম সেটাই
সায়ান তুলিকে কোলে নেয়

” তোমার ওজন কতো
“৪১
” ডপবাজ
“😡😡
রাগো কেন আমার তো একশোগ্রাম কমই মনে হচ্ছে।
” ৮০ কেজি ওজনরে বলতেছে ৪১ আজকে আমি শেষ
সায়ান বিরবির করে বলতেছে

🌹🌹

“মিস্টার সায়ান আপনার ওয়াইফ প্রেগন্যান্ট
” কিহহহ😱😱(সায়ান)
“সত্যি 😘 (তুলি)
ডাক্তার একবার সায়ানের মুখের দিকে তাকাচ্ছে আবার তুলির।
” এটা পসিবল না
“এটা পসিবল
” তুলি তুমি চুপ করো
“কেনো চুপ থাকবো? আমি মা হতে চলেছি এটা তো ঢাকঢোল পিটিয়ে বলবো
” তুমি প্রেগন্যান্ট না
“আপনি এসবের কি বুঝেন? আমার সকালে একবার মাথা ঘুরে ছিলো। যদিও এখনো বমি হয় নি তবে তারতাড়ি হয়ে যাবে। কি বলেন ডাক্তার সাহেব। সারা পারা মিষ্টি বিলাবো আমি
ডাক্তার গালে হাত দিয়ে বসে আছে
” সত্যি তুমি প্রেগন্যান্ট
“হুম
” কার বাচ্চা এটা😡😡
আমার
“বাবা কে
” আপনি
“আমি তো
” কাল রাতের কথা ভুলে গেলেন। জানেন ডাক্তার সাহেব কাল রাতে উনি আমাকে
সায়ান তুলির মুখ চেপে ধরে
“একদম চুপ

” আপনারা থামবেন
ডাক্তার দাঁড়িয়ে চিৎকার করে বলে। সায়ান তুলি চুপ হয়ে যায়।
“আপনারা বের হন
” আমার বেবি কেমন আছে?
ডাক্তার মাথায় হাত দিয়ে বসে।
“আপনার বেবি খুব তারাতাড়ি আপনার পেটে আসবে। এবার বের হন
” ওহহ

তুলি মন খারাপ করে বের হয়। গাড়িতে বসে কান্না শুরু করে দেয় তুলি।
“কি হলো?
” 😭😭😭😭😭😭
“কান্না করছো কেনো?
” আপনার জন্য ডাক্তার আমাকে অপমান করলো😭
“আমি কি করলাম?
” গাঁধা আপনি
“তুমি তো ইডিয়েট
” কথাই বলবো না আপনার
“না বললে তো আমি বেঁচে যায়। কিন্তু কথা না বলার কারণ
” আই নিড বেবি
“মি টু
” তাহলে
“তুমি একটু বড় হও
” অনেক বড় হয়েছি আমি
“বিশ হোক
” না আমার এখুনি লাগবো
“জেদ করো না

তুলি জানালায় মাথা দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে। সায়ান ডাইফ করছে আর একটু পরপর তুলিকে দেখছে।

” ওই তুলি
“……..
” আচ্ছা তুমি কি বেবিদের নাম ঠিক করেছো?
“হুমম ছেলে হলে জুনিয়র নেইমার আর মেয়ে হলে তামসি
” ওয়াও
“হুমমম
” ঠিক আছে
“দেবেন
” দেখি
“পরে দেখিয়েন। এখন দেন
” মানে
“ও থুক্কু পরে দিয়েন
তুলি হাজারটা কথা বলছে আর সায়ান শুনছে
সায়ান তুলির হাতের ওপর হাত রাখে
” আই লাভ ইউ তুলি
“লাভ ইউ টু
সায়ান তুলির হাতে একটা চুমু দেয়। তুলি সায়ানের একহাত জড়িয়ে ধরে।

” এটা তো বাড়ির রাস্তা না তাহলে আমরা কোথায় যাচ্ছি
“সারপ্রাইজ
” কিন্তু
“কোনো কিন্তু না। বিয়ের পর থেকে এই পর্যন্ত আমি তোমাকে অবহেলা ছাড়া আর কিছুই দিতে পারি নি। আসলে এমন একটা সময় তুমি আমার জীবনে এসেছিলে সে সময়টাই খারাপ ছিলো। এখন আমি তোমার সব অবহেলার অবসান ঘটাবো। খুব সুখে রাখবো তোমায় আমি। কখনো অভিযোগ করার সুযোগ দেবো না।

” আপনি আমার পাশে থাকলে আমার আর কিচ্ছু চায় না। বড্ড বেশি ভালোবাসি আমি আপনাকে। আগে আমার সাথে কি করেছেন এসব কিচ্ছু মনে নেই আমার। এখন আপনি আমার সাথে আছেন আর ফিউচারেও থাকবেন এটাই আমার কাছে অনেক। থাকবেন তো

“কোথায় যাবো বলো? তোমাকে ছাড়া তো থাকতেই পারি না। দম বন্ধ হয়ে আসে।

দুজন একসাথে হেসে ফেলে। একটা বাড়ির সামনে সায়ান গাড়ি থামায়
” এটা
“ফিউচারে আমি তুমি আর আমাদের বেবিরা থাকবো এই বাড়িতে। নিজের টাকায় গড়েছি বাড়িটা। তোমার জন্য।

অসম্ভব সুন্দর বাড়িটা। দেখেই মন জুড়িয়ে যায়। বাড়ির সামনে বড় বড় করে লেখা ” সায়ান তুলি”
তুলি শক্ত করে সায়ানকে জড়িয়ে ধরে

“থ্যাংক্স #আমার ক্রাশ
” ওয়েলকাম ভালোবাসা

চলবে

আমার ক্রাশ পর্ব-২০

0

#আমার ক্রাশ
#পর্বঃ২০
#Tanisha Sultana (Writer)

মোটামুটি তুলির বিয়ের সব বন্দবস্ত করা হয়েছে। কাল বিয়ে চজ গাঁয়ে হলুদ। তুলির মোটামুটি সব বিরক্ত লাগছে আবার মুখে কিছু বলতেও পারছে না। একঘন্টা যাবৎ বিউটিশেয়ানরা বসে আছে তুলিকে সাজানোর জন্য কিন্তু তুলি সাজতেই চাচ্ছে না। তুলির মা এসে বলে

“তুলি সমস্যা কি তোমার?

” মা না সাজলে কি হবে?

“অনেক কিছু হবে। তোমার ইচ্ছেতেই তো বিয়েটা হচ্ছে। কেউ তো তোমাকে জোর করে নি তাহলে এখন এমন ড্রামা করার কি আছে

” আমাকে সাজিয়ে দাও

তুলি গাল ফুলিয়ে আয়নার সামনে বসে। মেয়ে গুলো তুলিকে সাজাতে থাকে।
গাঁয়ে হলুদের অনুষ্ঠান শেষ হয়।

লাল বেনারসি পরে বউ সেজে বসে আছে তুলি। বাইরে থেকে চিৎকার চেচামেচির আওয়াজ আসছে। তুলির সাথে নিশি আর জিসান বসে আছে।

“বাইরে কি কোনো গন্ডগোল হয়েছে?

তুলি ওদের জিজ্ঞেস করে। জিসান আমতাআমতা করে বলে

” আমরা কি করে জানবো? তুই যেখানে আমরাও সেখানে।

“আমি দেখে আসছি

তুলি যেতে নেয় নিশি আটকে দেয়

” তোমাকে যেতে হবে না। জিসান তুই দেখে আয়

“ওকে

জিসান বেরিয়ে যায়। চেচামেচির শব্দ আরও বেশি হতে থাকে।

” নাহহ এবার আমি যাবোই

তুলি বেরিয়ে যায়। নিশিও পেছনে যায়।

সায়ান বর বেশে দাঁড়িয়ে আছে। তুলিকে দেখে তুলির বাবা তুলির দিকে এগিয়ে যায়

“সায়ান তোমার হবু বরকে গুম করে নিজে এসেছে বিয়ে করতে। এখন তুমি কি বলবে

” আমি ওনাকে বিয়ে করবো না

তুলি কিছুটা জোর গলায় বলে।

“সোজা কথায় বিয়ে করতে রাজি না হলে জোর করতে হবে এই আর কি😁

তুলি কিছু বলতে যাবে তার আগেই তুলির মা তুলিকে বলে

” এখানে অনেক মানুষ সিনক্রিয়েট করো না। আমাদের একটা সম্মান আছে।

তুলি চুপ হয়ে যায়।

“চুপ করে থাকা সম্মতির লহ্মণ। শুভ কাজে দেরি করতে নেই। বিয়েটা করেই ফেলি

বিয়েটা সম্পূর্ণ হয়। সায়ান প্রশান্তির হাসি দেয়।

তুলি নিজের রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়। ভেতরে আগে থেকেই সায়ান ছিলো সেটা তুলি জানতো না। দরজা বন্ধ করে পেছনে ফিরে চমকে যায় সায়ান মুখে বাঁকা হাসি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তুলি সায়ানকে পাশ কাটিয়ে চলে যেতে নেয় সায়ান হাত ধরে।

” বলেছিলাম লিপস্টিক না দিতে তবুও লিপস্টিক দিলা

“আপনার কথা শুনতে বাধ্য নয়

” দুইবার বিয়ে করা বর আমি তোমার + তোমার ক্রাশ

“ওসব পাস্ট

” আজ বিয়ে হলে এটাও পাস্ট

“গুন্ডামি করে বিয়ে করেছেন ভালোবেসে না।

” ভালোবেসে করেছি

“হুম আপনার কাছে তো ভালোবাসা মানে ডাল ভাত

” নাহহ আমার কাছে ভালোবাসা মানে ব্রাজিলের ফুটবল টিম😁😁

“😱😱😱

” অবাক হলে কেন?🤨

“মনা কোথায়?

সায়ান মাথা নিচু করে বলে

” চলে গেছে

তুলি হাত তালি দেয়

“বাহহহ ভেরি গুড। মনা টু তুলি তুলি টু মনা এটাই তো? যখন মনা ছিলো তুলি কে এখন তুলি আছে মনা কে। এরকম কেনো বলেন তো? নাহয় আমি ভুল করে ক্রাশ খাইছিলাম তাই বলে এমনটা করবেন? মনা চলে গেছে বলে এখন আমার কাছে এসেছেন। মনা চলে আসলে আবার চলে যাবেন। সায়ান আমিও তো মানুষ। মন তো আমারও আছে কষ্ট তো আমারও হয়। ভালোবাসি বলেই কি এতো অবহেলা এতো এটিটিউট

সায়ান তুলির দুগালে হাত রাখে।

” মনা চলে যায় নি। আমি চলে এসেছি। তুমি চলে আসার পরে আমি ভালোভাবে রিলাইজ করতে পেরেছি তুলি ছাড়া সায়ান শূন্য। আমি তোমার জন্য কি ফিল করি এটা মনাকে বলেছি দেন ও নিজে থেকেই চলে গেছে। তোমাকে ছাড়া আমার দুইটা সেকেন্ড চলে না। তোমার পাগলামি খুব মিছ করি। প্লিজ আগের মতো হয়ে যাও। তোমার হাসিমাখা মুখটা দেখি না কতো দিন হলো।

সায়ান একটু শ্বাস নিয়ে তুলির আর একটু কাছে গিয়ে বলে

“জানো আমি মদ খেয়েছি। মদের গন্ধটাও সয্য করতে পারতাম না সেই সায়ান মদ খেয়েছে তাও আবার পাঁচদিন। সিগারেট কতো খেয়েছি তার তো হিসেব নাই। কিন্তু কিছুতেই নেশা হয় নাই। কজ “আমি ভীষণ ভাবে আসক্ত তুমি নামক নেশায় ”
দুইটা থাপ্পড়ের জন্য অনেক শাস্তি দিয়েছো এবার প্লিজ নরমাল হও। চাইলে তুমি আমাকে একশোটা থাপ্পড় দাও তবুও আমার সাথে ভালোভাবে কথা বলো।

সায়ানের নিশ্বাস তুলির চোখে মুখে পরছে। তুলি কথা বলার শক্তি টুকু পাচ্ছে না। মনে মনে বলছে কিন্তু মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে না।

“এএএএকককটু সরে দাঁড়ান প্লিজ

তুলি তুতলিয়ে বলে। সায়ান মজা করে আরও কাছে এসে বলে

” দুরে যাওয়ার জন্য তো কাছে আসি নি

“আমার কথা আটকে আসছে নিশ্বাস নিতে পারছি না। কেমন কেমন লাগছে

সায়ান এবার তুলির পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখে। তুলি কাঁপছে। সায়ান দুরে গিয়ে দাঁড়ায়। তুলি বুকে হাত দিয়ে জোরে জোরে শ্বাস নেয়

” আল্লাহ দুই সেকেন্ডে জন্য মরি নাই

“কও কি

” হহ আপনি যেভাবে ধরে ছিলেন আর একটু হলে পরাণ পাখি উড়াল দিতো।

“বাঁদরামো শুরু হলো

তুলি হাত ভাঁজ করে দাঁড়িয়ে বলে

” এখনো মাফ করি নি

“কি করলে মাফ পাবো

” বারোটা বেবি দিতে হবে😁

“এতো কম😱😱

কম🙄

” আমি তো ভেবে রেখেছি পুরো আর্জেন্টিনা ব্রাজিল দুই টিমে যতগুলা আছে ওতো গুলা বেবি নেবো😇

তুলি লাফ দিয়ে সায়ানের পাশে বসে বলে

“সত্যি

” হুম

“শুরু করেন

” পাগলী যাও চেঞ্জ করে আসো

“😘😘😘😘😘

তুলি চেঞ্জ করতে যায়। সায়ান মুচকি হাসে

” কতোদিন পরে ইডিয়েটটার হাসি মুখটা দেখলাম। আই প্রমিজ আর কখনো তোমাকে কাঁদাবো না। রাগাবো না। বকবো না। শুধু ভালোবাসবো

“জানেন কাল অভি ফোন দিছিলো। অনেকখন কথা বলছি। খুব ভালো লাগলো😇

” কিহহহহহ😡😡😡😡😡😡😡

তুলি চেঞ্জ করে বের হয়ে সায়ানের কথা শুনতে পায়।

“এই তো প্রমিজ করলেন রাগবেন না। বকবেন না। এখনি ভুলে গেলেন🥺

সায়ান চুল টেনে নিজেকে শান্ত করে। তারপর নরম গলায় বলে

” অভির সাথে কথা বলো না প্লিজ। অভি তোমায় ভালোবাসে। তুমি ওর সাথে কথা বললে ওতো তোমার প্রতি আরও এডেক্টেট হয়ে পরবে তাই না

“আমি তো অভির সাথে কথা বলিই নি আপনাকে রাগানোর জন্য বলেছি🤣

” ইডিয়েট

“আপনারই তো বউ

” সেটাই কপাল

“হুমমন😘😘😘😘

” এভাবে দুর থেকে ঠোঁট না বেঁকিয়ে ডিরেক্টলি দিলেই তো পারো

“সত্যি 😶

হুমম

সকাল বেলা ধপাস করে কিছু পরে যাওয়ার শব্দে সায়ান ধরফরিয়ে ওঠে। তাকিয়ে দেখে তুলি পরে গেছে। সায়ান দৌড়ে তুলির কাছে যায়

” কি হলো পড়লে কি করে?

“চুলের পানি পড়ছিলো ফ্লোরে খেয়াল করি নি। ধপাস করে পরে গেছি😭😭😭😭

” ব্যাথা পাইছো

“নাহহহহ😭 ব্যাথা তো আমারে দেইখা ডরায় তাই আমার কাছে আসে নাই

” তেরা কথা৷ কোথায় ব্যাথা পাইছো

“কোমর আর পায়ে

” ভেরি গুড

“আপনি সত্যি আমার জামাই তো?

” নাহহহ তোমার জামাইয়ের ফটোকপি ☹️

“ধুর

সায়ান তুলিকে কোলে করে বিছানায় বসায়

চলবে