Sunday, August 10, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1552



অনুভূতির সুপ্ত কোণে পর্ব-১৭

0

#অনুভূতির_সুপ্ত_কোণে🍂
#কায়ানাত_আফরিন (মাইশা)
পর্ব: ১৭
.
সময়টা এখন সন্ধ্যা। আদ্রাফের কোলে বসে তার বুকে মাথা রেখে মেহের গুটিশুটি মেরে বসে আছে। শার্টের উপরের দুটি বোতাম খুলে বুকে আকিবুকি করতে মগ্ন। আর আদ্রাফ? বরাবরের মতোই উপভোগ করে যাচ্ছে প্রকৃতি তার মেহুর সাথে। যদিও মেহের দৃষ্টিপাত এখন সেদিকে নেই। সে তো আনমনে নিজের আঙ্গুল দিয়ে আদ্রাফের বুকে আকিবুকি করতে মগ্ন।
.
—-আদ্রাফ ? Next time থেকে তোমার জন্য গ্রে শার্ট পড়া নিষিদ্ধ। আর যেকোনো শার্টই পড়ো না কেন ; ভুলেও হাতা গুটিয়ে রাখবে না।
.
—-কেন?
.
—–উহ ! এমন ভাব করছে যেন কিছুই বুঝে না। এই ? তুমি জানোনা তোমাকে গ্রে শার্ট পড়লে একেবারে চার্মিং বয় মনে হয় ? আর হাতা গুটিয়ে রাখলে তো উফফফ! এ ব্যাপারে আর নাহয় নাই বললাম। আর ওই শয়তান বদমাইশ অসভ্য মেয়েগুলার কত্ত বড় সাহস ! এই মেহেরের জামাইয়ের দিকে নজর দেয়?
.
আদ্রাফ নির্বিকার। মেহেরের কথা শুনে মিটমিটিয়ে হেসে ওঠে সে। মেহের এবার ক্রুব্ধ হয়ে বলে ওঠে……….
.
——আমার কথা শুনে তোমার হাসি পাচ্ছে তাই না?তার মানে ওই শয়তান বদমাইশ অসভ্য মেয়েগুলা তোমায় চোখ দিয়ে গিলে ফেলেছিলো ওইটা ভালোলেগেছে? তাহলে থাকো তোমার হাসি নিয়ে। আমি গেলাম।
.
একথা বলে মেহের রেগে গজগজ করে উঠতে নিলে আদ্রাফ খুব কৌশলের সাথে মেহেরের কোমড় পেচিয়ে নিজর সাথে মিশিয়ে নেয়। মেহের সাথে সাথেই যেন ফ্রীজড হয়ে গিয়েছে। কেননা আদ্রাফ খুব গভীরভাবেই মেহেরের গলায় ডুবিয়ে রেখেছে নিজের ওষ্ঠ্যদ্বয়। মেহের এবার যেন হ্যাং হয়ে আছে। তার এতক্ষণের পুষিয়ে রাখা তেজ নিমিষেই পানি হয়ে গেল তাও আবার লাজরাঙা রঙে। আবেশে নিজের চোখ বুজে ফেলে খুব জোড়ালোভাবে আকড়ে ধরে নিজের পরনে কূর্তিটি। আদ্রাফের সেদিকে ধ্যান নেই। তার একহাত মেহেরের কোমড়ে আর আরেক হাত বিচরণ করে চলছে মেহেরের পেটের কাছে। মেহেরের তেজি কন্ঠ অনেকটাই এতে নুইয়ে পড়ে। মিহি কন্ঠে আদ্রাফের টিশার্ট খামচে ধরে বলে ওঠে…………
.
——-আ……আদ্রঅফ ? কককি করছো?
.
আদ্রাফ যেন মেহেরের প্রশ্নটি খেয়াল করেনি। মেহেরের গলায় নিজের স্পর্শ দিতে দিতে ধীরে ধীরে উপরে উঠে এগিয়ে আসে ওর অধরের কাছে। মেহেরের নিঃশ্বাস এবার ভারী হয়ে এসেছে। বুকে চলছে উথাল-পাতাল ঝড়। আদ্রাফের প্রতিটা মূভমেন্টই তাকে দুর্বল করে দেয় সেদিকে আদ্রাফের হুট করে কাছে আসাটাই যেন মেহেরের মাথা ঘুরপাক বাধিয়ে দিতে। তারও মন চাচ্ছে আদ্রাফকে নিজের সবটা উজাড় করে ভালোবাসতে।
.
আদ্রাফ এবার ফিসফিসিয়ে বলে ওঠে………..
.
——আমার থেকে দূরে যাওয়ার কথা বললে একেবারে বেধে রাখবো নিজের সাথে। আর আমার সবটাজুড়েই শুধুমাত্র তুমি। তাহলে অন্যমেয়ে যদি আমায় চোখ দিয়ে গিলেও ফেলে তাহলে কি তোমার জায়গা নিতে পারবে?আর তোমার মনে আমার পার্মানেন্ট জায়গা করার জন্য এতটুকু আদরের তো প্রয়োজনই ছিলো। আদ্রাফ শুধু মেহেরের আর মেহের শুধু আদ্রাফের। বুঝেছো?
.
আদ্রাফের ফিসফিসিয়ে বলে ওঠা শেষের কথাটুকু যেন মেহেরের বুকে একেবারেই গেঁথে গিয়েছে। এই ছেলেটার কথায় অন্যরকম একটা নেশা বা মাদকতা আছে যা সহজেই কাটিয়ে ওঠা যায় না। মেহেরও তা পারছে না।
——এখন নিচে চলো মেহু। তোমাকে এখন হালকা কিছু খেয়ে ওষুধ খেতে হবে।
.
——না খেলে হবে না?
.
আদ্রাফের বুকে আবার মাথা রেখে আদুরে গলায় মেহের আদ্রাফকে প্রশ্ন করে।
.
—– উহু ! মোটেও কিন্ত না । ভুলে গিয়েছো তুমি আমার শর্ত?
.
আদ্রাফ চোখ রাঙিয়ে তাকাতেই মেহের চোখ ছোট ছোট করে নেয়। এখন যতই আদুরে গলায় কথা বলুক না কেন ; এই ছেলে সহজে গলবে না।
.
.
.
.
—————
মোটামোটি সন্ধ্যা পার হয়ে এখন চারিদিকে অন্ধকারের লীলাখেলা। তবে নিশা সেসব কিছুকে পাত্তা না দিয়ে নেটফ্লিক্সে একটা হলিউড মুভি দেখতে ব্যস্ত। একপাশে ধুলোবালিতে আচ্ছন্ন বই খাতা , খাটের পাশের ছোট্ট টেবিলে মোবাইল , ল্যাপটপ আর চার্জার অগোছালো করে রাখা আর ওয়াড্রবের দিকে তো তাকানোই যাচ্ছে না। হঠাৎ ফোনের রিং বেজে উঠতেই নিশা দেখে স্ক্রিনে দেখে শাওনের নাম্বার ভেসে উঠছে। একটু বললে ভুল হবে নিশা এতে অনেকটাই অবাক। তড়িঘড়ি করে ফোন রিসিভ করে ।
.
—–হ্যালো শাওন?
.
—–ফটাফট রেডি হয়ে বাইরে আয়। আমি নিচে দাঁড়িয়ে আছি।
.
একথা বলেই শাওন ফোন কেটে দেয়। তবে দ্বিধায় পড়ে গিয়েছে নিশা। এখন হুট করে শাওন কোথাই বা ওকে বাইরে আসতে বলছে এটা ভেবে সে কূল পাচ্ছে না। ব্যাচেলর থাকে বলে রাত বিরাতে বের হওয়া নিয়ে নিশার মধ্যে কোনো ঝামেলা নেই। তাই তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নিচে চলে যায় সে।
.
শাওন বাইকে বসে অপেক্ষা করছে নিশার জন্য। নিশাকে দেখেই সে বাইকে বসে। ইশারায় নিশাকে বলে পেছনের সিটে বসতে। অপ্রস্তুত হয়ে যায় নিশা। কারন শাওন এই প্রথম তাকে এভাবে অফার করলো। বিব্রত হয়ে সে শাওনকে প্রশ্ন করে……….
.
—-রাতুল, রাহাত, শোভাও কি আসবে?
.
—-না।
.
—-কেন?
.
—আমরা দুজন কি কোথাও একা যেতে পারি না?
.
নিশা নিশ্চুপ। শাওন আবার ইশারা করতেই নিশা উঠে পড়ে শাওনের বাইকে। সরু রাস্তা আর গাড়ি বাস পেরিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে বাইকটি যা গিয়ে থামে শহরের অনেকটাই দূরে। জায়গাটি বেশ ভূতুড়ে মনে হলেও শাওন আর নিশা দুজনেরই এ বিষয় নিয়ে কোনো মাথাব্যাথা নেই। দখিনা হাওয়াতে চেয়ে যাচ্ছে দুজনের শরীর। শাওন নিশ্চুপভাবে একটা বিয়ারের বোতল নিয়ে তা উপভোগ করতে মগ্ন।
.
নিশাকে সে এখানে কেন নিয়ে আসলো নিশা তা ভেবে পাচ্ছে না। শাওন ওকে আরেক বোতল এগিয়ে দিতেই নিশা তা গটগট করে খেয়ে নেয়। শাওন উদাষীন গলায় বলে ওঠে………
.
——আমি রাইতাকে খুজে পেয়েছি নিশা?
.
ফ্যালফ্যাল করে নিশা তাকিয়ে আছে শাওনের দিকে। রাইতাকে খুজে পেয়েছে? এ কি করে সম্ভব?বিয়ার খাওয়াতে ভুলভাল শুনলো নাকি সে?
.
—–মমমানে?
.
—–রাইতাকে খুজে পেয়েছি আমি। ওই আদ্রাফ এহসানের ওয়াইফ মেহের এহসানই আমার হারানো বোন রাইতা যাকে সবাই মৃত বলে জানে?
.
নিশা ভাবছে এই শাওন মনে হয় পাগলই হয়ে গিয়েছে তবে এ কথা বললে শাওন যে ওকে জানে মেরে ফেলতে পারে এ ব্যাপারেও কোনো গাফলতি নেই। তাই সাহস করে সে শাওনকে প্রশ্ন করে…….
.
——তুই এত confident কিভাবে?
.
শাওন বিয়ারের বোতলটি ছেড়ে নিশার দিকে তাকায় নির্বিকার ভঙ্গিতে । নিশা অপেক্ষার প্রহর গুনছে উত্তরটি শোনার জন্য। শাওন তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলে……..
—-সত্যিই জানতে চাস?
.
—-হ্যাঁ
,
শাওন উদাসীন ভঙ্গিতে ঘাসের গালিচায় বসে পড়ে। নিজের মাথাটি হেলিয়ে দেয় নিশার কাধে। নিশা এখন পাথরের ন্যয় বসে আছে। সে বুঝতে পারছে না এখন কোন দিকে নিজের আকর্ষণ রাখবে মেহেরের ঘটনার দিকে নাকি তার ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আবেগের মালিক শাওনের দিকে?
.
.
.
.
~চলবে

অনুভূতির সুপ্ত কোণে পর্ব-১৬

0

#অনুভূতির_সুপ্ত_কোণে🍂
#কায়ানাত_আফরিন (মাইশা)
পর্ব: ১৬ [ শাওনের অতীত উন্মোচন]
.
সকালে একটা মিষ্টি রোদের প্রতিফলনে আড়মুড়িয়ে মেহের ঘুম থেকে উঠে পড়ে। একপাশে সোফায় আধশোয়া অবস্থায় ঘুমন্ত আদ্রাফকে দেখে ঠোঁটে ফুটিয়ে তুলে একচিলতে হাসি।আদ্রাফের চুলগুলো জুবুথুবু হয়ে পড়ে আছে পেছনের দিকে। শার্টের উপরের বোতাম দুটো খুলে রাখার কারনে ওর লোমহীন বুকের আংশিক স্পষ্ট দেখতে পারছে । আর সে দৃশ্য দেখেই মেহের ফ্যালফ্যাল চোখে তাকিয়ে আছে। তার স্নায়ু কাজ করা যেন বন্ধ হয়ে গেছে। যদিও আদ্রাফের গায়ের রং ওর থেকে একটু চাপা তবুও মনেমনে সে হাসফাস করে যে , ”এই ছেলেটা এতো সুন্দর কেন?”
.
আদ্রাফকে মিহি কন্ঠে ডাক দিতেই সে উঠে যায়। চোখে ঘুমের রেশ দেখেই বোঝা যাচ্ছে সারারাত ঘুমায়নি সে। মেহেরের কাছে গিয়ে সে নরম কন্ঠে বললো……..
.
—-রাতে ঘুম ঠিকমতো হয়েছে তো?
.
আদ্রাফের ঘুমুঘুমু মৃদু কন্ঠে যেন অন্য এক ভালোলাগা কাছ করছে মেহেরের । কেবিনের খাটে বসেই আনমনে আদ্রাফের দাঁড়ানো অবস্থাতেই ওর পেটের কাছে মুখ গুজে দেয়। কিঞ্চিত আদুরে কন্ঠে বলে……
.
—-হুম। মোটামোটি ভালো ঘুম হয়েছে। আমি এখানে আর কতদিন থাকবো আদ্রাফ? আমি এখন ঠিক আছি তো। বাসায় গেলে হবে না?
.
—–হ্যাঁ হবে। ডাক্তার বলেছে আজ চাইলে ডিসচার্জ করতে পারবো। তবে আমার একটা শর্ত আছে।
.
শর্তের কথা শুনেই মুখ মলিন করে ফেলে মেহের। সামান্য আগ্রহের সাথে প্রশ্ন করে যে…..
.
—-কি শর্ত?
.
—-আমার সব কথা শুনতে হবে। যেমন: আমি যা খেতে বলবো তাই খাবে , সম্পূর্ণ রেস্টে থাকবে , ওষুধ নিয়ে কোনো হেলফেল করবে না and most important……..বাদরামি করবে না।তাহলেই বাসায় যাবো।
.
আদ্রাফের মুখের দিকে এবার মেহের তাকায়। ভ্রু কুচকে বলে ওঠে……….
.
—–আমি কি বাদরামি করার মতো মেয়ে? তুমি জানো না , আমি আদ্রাফ এহসানের একটা কিউট, ইনোসেন্ট, গুবলু-বুবলু বউ?
.
একথা শুনে আদ্রাফ সশব্দে হেসে দেয়। মাঝে মাঝে মেহেরের এসব বাচ্চামি আদ্রাফের কাছে অনেক ভালোলাগার কারন হয়ে দাঁড়ায়।
.
—–আদ্রাফ?
.
—-হুম !
.
—-একটু আমার স্যালাইনের পাইপটা খুলে দাও। আমি ওয়াশরুমে যাবো।
.
আদ্রাফ মেহেরের স্যালাইনের ক্যানোলা খুলে দেওয়ার পরই মেহের ওয়াশরুমে যেতে নিয় আর আদ্রাফ সাথে সাথে কোলে তুলে নেয় মেহেরকে। ঘটনার তৎক্ষণাৎ প্রবাহে মেহের কিছুটা হকচকিয়ে গিয়েছে। আদ্রাফের দিকে ডাগর ডাগর চাহিনী দিয়ে বললো.
.
—কি হলো? কোলে তুললে কেন?
.
— ভাবলাম তুমি অসুস্থ মেয়ে। একা ওয়াশরুমে যেতে পারবে কিনা তাই ভাবলাম একটু company দেই। (চোখ টিপ দিয়ে)
.
আদ্রাফের চোখ টিপ দেওয়াতে মেহেরের হার্টবিট যেন একটা মিস হয়ে গেল। এমনিতেও এই এলোমেলো চুলে আদ্রাফকে দেখতে পুরোই অন্যরকম লাগছে আবার এমন দুষ্টু চোখের চাহিনীতে মেহেরের এখন যেন অজ্ঞান হওয়ার মতো উপক্রম। আদ্রাফের বুকে হালকা একটা ধাক্কা দিয়ে আমতা আমতা করে সে বললো……..
.
—-মমমটোও না। আমি একাই যেতে পারবো?
.
—Sure?
.
আদ্রাফ ভ্রু নাচিয়ে প্রশ্ন করে মেহেরকে। মেহেরের এবার সাথে সাথেই যেন আরেকটা হার্টবিট মিস হয়ে গেলো। এই ছেলেটার চোখে কি কোনো জাদু আছে যে না চাইতেও বারবার মাতাল হয়ে পড়ে এই চোখজোড়ার নজরকাড়া চাহিনীতে? মেহের শুকনো গলায় প্রতিউত্তরে বলে………
.
—-হুম।
.
আদ্রাফ এবার মেহেরকে নিচে নামিয়ে দিতেই মেহের দুর্বল পায়ে ওয়াশরুমে পা বাড়ায়। দরজাটা লাগিয়ে চোখ বন্ধ অবস্থায় ঘনঘন নিঃশ্বাস ফেলছে । আদ্রাফের চোখের চাহিনী, কথা প্রকাশের ভাবভঙ্গি সবকিছুই বুকে গিয়ে লাগে মেহেরের। এখন তো মনে হয় যেন সবসময়ই নিজের সাথে আদ্রাফ নামের এই মায়াবী অস্তিত্বটাকে মিশিয়ে রাখতে। সে জানে না এই অনুভূতির কোনো প্রত্যক্ষ নাম আছে কি না।
.
.
.
.
প্রায় সকাল সাড়ে আটটার দিকে শাওন হেলতে-দুলতে অবস্থায় চৌধুরী মেনশনে প্রবেশ করে। গতরাতের আ্যলকোহলের নেশাটা এখনও ঠিকমতো কাটিয়ে উঠতে পারেনি সে। হায়াৎ সাহেব ডায়নিং টেবিলে ব্রেকফাস্ট করছিলেন। শাওনকে এভাবে হেলতে-দুলতে আসতে দেখে বুঝতে আপত্তি হলো না যে এই ছেলে সারারাত বারে আ্যলকোহলের নেশার সাথে ফূর্তি করেছে।
ক্রোধের গলায় তিনি বললেন………..
.
—–এসে পড়েছে নওয়াবের ছেলে? আমি তো ওয়েট করছিলাম কখন পুলিশ যেন তোমায় তুলে নিয়ে আসে। তো কয় বোতল খেয়ে আসলে?
.
এতটুকু শুনেই শাওনের মাথায় ধপ করে আগুন জ্বলে ওঠে। গর্জে সে বলে……
.
—-আ্যলকোহলের নেশাটাই just করেছি । আপনার মতো বউ-বাচ্চাকে ছেড়ে রাত বিরাতে মেয়েদের সাথে ফূর্তি করিনি।
.
—–মুখ সামলে কথা বলো শাওন !
.
ক্রুব্ধ হয়ে বলে হায়াৎ চৌধুরি। আশেপাশের সার্ভেন্টও নীরবে যে যার জায়গা মতো দাঁড়িয়ে আছে। কেননা এ আর নতুন কোনো দৃশ্য না। শাওন এবার হায়াৎ সাহেবের কাছে গিয়ে বলে…….
.
—–ভুল বললাম নাকি মিঃ হায়াৎ চৌধুরি ওরফে আমার so called dad? আপনার জঘণ্য চরিত্র থেকে আমার চরিত্র লক্ষ গুণে ভালো। হ্যাঁ ! আমি হয়তো হৃদয়হীন মানুষ , বাট কেউ কখনও আমার চরিত্রে আঙ্গুল তুলতে পারবে না। আর আমি যা-ই করি না কেন , আপনার কোনো রাইট নাই। You have no right to control me……
.
শেষের কথাটা শাওন চিল্লিয়ে বলে ওঠে । পুরো ডাইনিং রুমে বিরাজ করছে পিনপন নিস্তব্ধতা। হায়াৎ সাহেব নীরব গলায় বলে ওঠে……….
.
——কখনও কোনো কিছুর কমতি রাখিনি তোমার। তাহলে আমার চরিত্র নিয়ে কথা বলার তুমি কে? বাবা হই আমি তোমায়।
.
শাওন এবার হো হো করে হেসে ওঠে। যেন দুনিয়ার সবচেয়ে মজার কৌতুক শুনলো সে। কিছুক্ষণ পর হায়াৎ সাহেবের দিকে ক্রোধের গলায় বলে ওঠে……..
.
——-সে right তুমি অনেক আগেই তুমি হারিয়ে ফেলেছো যখন তুমি রাইতা আর মাকে মেরে ফেলেছিলে। মা নাহয় তোমার ফূর্তিতে বাধা দিয়েছিলো কিন্ত রাইতা? ৭ বছরের বাচ্চা ছিলো সে। তোমার আপন মেয়ে হয়েও তুমি ওকে মেরে ফেলতে পারলে?
.
নিশ্চুপ হয়ে যায় হায়াৎ সাহেব। হ্যা শাওনের মাকে এক্সিডেন্ট করিয়ে সে মেরে ফেলেছিলো ঠিকই তবে তার সঙ্গে যে রাইতাও থাকবে এটা সে জানতো না। গাড়িটা সরাসরি খাদে পরে গেলে শাওনের মা আর রাইতা দুজনেই মারা যায়। দুদিন পর শাওনের মার বিভৎস লাশ পাওয়া যায় পাহাড়ের ঢালে । তবে রাইতার আর কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি। তবে সে যে বেঁচে নেই এ ব্যাপারে সবাই নিশ্চিত ছিলো।
শাওনের বয়স তখন ছিলো মাত্র ১৪ বছর। এ ব্যাপারে যে ওর বাবার হাত ছিলো এটা সে জানতে পারে আরও দুইবছর পরে। তখন থেকেই পরিবর্তন হয়ে যায় শাওন। বাবা হয়ে ওঠে তার জীবনের সবচেয়ে ঘৃণিত বস্ত। এমনকি কিছু দুশ্চরিত্রা মেয়ের জন্য মেয়েজাতিকেও। সবাইকে না।
কারন শাওন জানে সবাই একরকম না। হয়তো পরোক্ষভাবে কিছু মেয়ের জন্যই তার মা-বোনকে হারাতে হয়েছে তবে সবাই তো এক না। ওর ফ্রেন্ডসার্কেলে রাতুল , রাহাতের সাথে তার শুভাকাঙ্খী হিসেবে নিশা আর শোভাও ছিলো।
.
হায়াৎ সাহেবকে চুপ থাকতে দেখে তাচ্ছিল্যের হাসি হাসে শাওন। টেবিলে থাকা গ্লাসটা সশব্দে ফেলে দিয়ে গজগজ করতে করতে চলে যায় সেখান থেকে।
.
.
.
নিচে হসপিটালের রিসেপশনের সামনে মেহের আড়চোখে একবার দাঁড়িয়ে থাকা তিনজন মেডিকেল স্টুডেন্টের দিকে দেখছে তো একবার আদ্রাফের দিকে। আদ্রাফ রিসেপশনে থাকা লোকটির সাথে গুরুত্বপূর্ণ আলাপনে ব্যস্ত। আর মেহের পাশের সোফাটিতে বসে ওই তিনটি মেয়েকে দেখে ঠোঁট কামড়াচ্ছে। তার কাছে ওই মেয়ে তিনটিকে নিজের থেকেও চরম লেভেলের অসভ্য মনে হচ্ছে।
কেননা মেয়ে তিনটি শুধু পারছে না চোখ দিয়েই আদ্রাফকে গিলে খেয়ে ফেলতে। তাছাড়া আদ্রাফের প্রতিটা কাজই সবসময় হয় চোখ ধাধানোর মতো। পরনে গ্রে শার্ট , ব্ল্যাক প্যান্ট , পায়ে হোয়াইট কেডস সব মিলিয়ে শ্যামবর্ণের এই আদ্রাফকে বেশ চার্মিং লাগছে। শার্টের হাতাটি কিছুটা গুটিয়ে রাখার কারনে হাতের নীল রগগুলো বেশ সুন্দরভাবেই বোঝা যাচ্ছে। চুলগুলো হালকা স্পাইক করা আর ওর দুহাত ব্যস্ত হসপিটালের কাগজপত্র দেখতে।
মেহেরের ওই তিনটা বদ মেয়ের ফিসফিসানি দেখে মাথায় যেন রক্ত উঠে গিয়েছে। মনে মনে অসংখ্য গালাগাল করে যাচ্ছে মেয়ে তিনটিকে। আদ্রাফ সব কাজ শেষ করে এবার মেহেরের দিকে এগিয়ে আসতেই মেহের স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। আদ্রাফকে আদুরে গলায় বলে ওঠে………..
.
—–আমায় কোলে নাও।
আদ্রাফ কিছুটা হতভম্ব। হঠাৎ মেহের কেনই বা ওর কোলে উঠতে চাচ্ছে বিষয়টা ওর মাথায় আসছে না। মেহেরের গাছে হাটু গেড়ে বসে সে। নিজের হালকা গোলাপি ঠোঁটজোড়া নাড়িয়ে বলে ওঠে………
.
—–বেশি খারাপ লাগছে মেহু?
.
আদ্রাফের চোখেমুখে চিন্তার ছাপ। মেহের তা দেখে ফিক করে হেসে দেয়। ওর সাজানো গোছানো চুলগুলোকে এলোমেলো করে বলে ওঠে……..
.
—-অন্য মেয়েরা আমার বরকে দেখবে এটা আমার ভালো লাগে না। তাই এখান থেকে গাড়ি পর্যন্ত আমায় কোলে নিয়ে যাবে।
.
আদ্রাফ এভার কিছু না বলে কোলে তুলে নেয় মেহেরকে। তা দেখে সবার মনে প্রশ্ন জাগলেও এগোনোর মতো মনমানসিকতা কারও নেই। একজন ওয়ার্ডবয় উদ্যত হয়ে বলে……..
.
—–স্যার……ম্যামের কি হুইল চেয়ার লাগবে?
.
—–না রে ভাই। ম্যামের জন্য তার হাজবেন্টই হুইলচেয়ার।
.
মেয়ে তিনটিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকতে দেখে মেহের মনে মনে যেন পৈশাচিক আনন্দ পায়। আদ্রাফের গলা জড়িয়ে ওই তিনটা মেয়েকে চোখ টিপ মারতেই মেয়ে তিনজন বিব্রত হয়ে পড়ে। মনে মনে মেহের বলে উঠে………
.
—-এই মেহের থাকতে তার কিউট বরের দিকে কেউ চোখ তুলে তাকাতে পারবে না।🙂
.
.
.
.
.
~চলবে

অনুভূতির সুপ্ত কোণে পর্ব-১৫

0

#অনুভূতির_সুপ্ত_কোণে🍂
#কায়ানাত_আফরিন (মাইশা)
#পর্ব :১৫
.
সারাঘরে বিরাজ করছে কেমন যেন এক নিস্তব্দ্ধতা। দুজনের নিঃশ্বাস একে অপরের সাথে খেলা করতে মগ্ন। আদ্রাফ চোখ বন্ধ করে উদাসীন গলায় বলে ওঠে………
.
—–আজ তুমি হারিয়ে গেলে আমি নিজেও হারিয়ে যেতাম মেহু। এই মেহেরহীন আদ্রাফ একেবারে বিলীন হয়ে যেতাম। I can’t live anymore Mehu without you……Because you are my lifeline……
.
.
আদ্রাফের কথা শুনে মেহেরের শ্বাস ক্রমাগতই ঘন থেকে ঘন হয়ে আসছে। বুকে চলছে অজানা এক ঝড়। আদ্রাফ তাকে ভালোবাসে এটা ভাবতেই প্রশান্তির হাসি ফুটে ওঠে ঠোঁটের কোলে। আবেশে স্যালাইনের ক্যানোলা লাগানো হাতটি দিয়েই খামচে ধরে সে আদ্রাফের বাহু। আদ্রাফ এখন শুধু পারছে না তার মেহুকে একেবারে বুকের সাথে মিশিয়ে ফেলতে। তবেই তো তার অস্তিত্বটা মেহের ক্ষণে ক্ষণে অনুভব করতে পারবে।
মেহেরের শুষ্ক ঠোঁটে আলতো করে নিজের ঠোঁটের স্পর্শ দিয়েই আদ্রাফ সরে আসে মেহেরের কাছ থেকে। মেহেরকে বেডে আধশোয়া অবস্থায় রেখে নরম কন্ঠে বলে ওঠে……….
.
——এখন সম্পূর্ণ রেস্টের প্রয়োজন তোমার। ক্যানোলা লাগানো হাতটি বেশি নাড়াচাড়া করবে না। আমি নাদিয়াকে পাঠিয়ে দিচ্ছি । কোনো প্রয়োজন হলে ওকে বলবে। আমি একটু রিসিপশন থেকে চেক করে আছি তোমার সবকিছু ঠিকঠাক আছে কি-না। ঠিকাছে?
.
—-হুম।
মেহের মলিন কন্ঠে প্রতিউত্তর দেয়। আদ্রাফ তা দেখে মেহেরের কাছে গিয়ে বসে। মেহেরের গালে আলতো করে হাত রেখে বলে……
.
—-কিছু বলবে মেহু?
.
—-এখনও রাগ করে থাকবে আমার ওপর?
.
মেহের ঠোঁট উল্টে বলে ওঠে। আদ্রাফ এটা শুনে একটা মুচকি হাসি দেয়। মেহেরের কপালে দীর্ঘক্ষণ একটা চুমু দিয়ে প্রতিউত্তর দেয়…….
.
—–রাগ না ; অভিমান হয়েছিলো তোমার ওপর। যেদিকে একদিন তোমায় না দেখে আমার দমবন্ধ হয়ে আসতো সেদিকে তিনদিন আমি তোমাকে ছাড়া ছিলাম। তবে এখন আর অভিমান নেই। কারন তোমাকে next time নিজের থেকে দূরে থাকার আর সুযোগই দেবো না !
এখন এসব কথা থাক । তুমি rest নাও। আমি নাদিয়াকে পাঠিয়ে দিচ্ছি।
.
আদ্রাফের প্রতিটা কথার জালেই মেহেরের মনে হয় সে যেন অন্য কোনো এক জগতে চলে গিয়েছে। একটা মানুষ কিভাবে তার কথার মায়ায় মানুষকে নিঃস্ব করতে পারে এর উত্তরটা মেহেরের কাছে সবসময়ই যেন অজানা রয়ে গেলো। আদ্রাফ কেবিনের বাইরে চলে যাওয়ার পর আধশোয়া হয়ে বাইরের মেঘাচ্ছন্ন আকাশে মনোনিবেশ করায় নিজেকে। আদ্রাফকে একটা প্রশ্ন বারবার করতে চেয়েও করতে পারেনি যে, শাওন কোথায়?
.
.
.
.
হসপিটালের পাশেই রয়েছে একটা পার্ক। সন্ধ্যা হওয়ার সুবাদে এখানে এখন মানুষজন নেই বললেই চলে। আর এই পার্কের কোণে ছোট এক বেঞ্চে বসে একের পর এক সিগারেটের ধোয়া উড়িয়ে চলছে শাওন। নিজেক এই সিগারেটের অনুভূতিহীন ধোঁয়ার মতোই মনে করে সে। নিশা , রাতুল সবাই ওর সাথে থাকতে চেয়েছিলো কিন্ত শাওন রাজি হয়নি। কিছুক্ষণ সে একা থাকতে চেয়েছিলো তাই বৃষ্টিময় হাওয়ার সাথেই আনমনে সিগারেটের ধোঁয়ার খেলা চালিয়ে যাচ্ছে সে।
.
—-অন্যের জীবন বাঁচালে বাট নিজের জীবনেরই খেয়াল রাখো না ; মিঃ শাওন চৌধুরি?
.
কারও পুরুষালি কন্ঠ শুনে সিগারেটেটটা ঠোঁটের ভাঁজ থেকে হাতে নিয়ে নেয়। তার চোখের সামনে আদ্রাফ স্থিরভাবে দাঁড়িয়ে আছে।শাওন সেদিকে পরোক্ষ না করে আবার সিগারেটের ধোয়া উড়াতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।
.
—–বড্ড আজব মানুষ তুমি , যেদিকে তোমার জন্যই আজ মেহের বেঁচে আছে সেদিকে তুমিই কাউকে না বলে সেখান থেকে চলে গেলে without any reaction? এখনও সেম অবস্থা। আমায় দেখে তোমায় react করা উচিত ছিলো আর তুমি বরাবরই তোমার কাজে মগ্ন।
.
শাওন তা শুনে তাচ্ছিলের হাসি হাসে। প্রতিউত্তরে সে বলে ওঠে…….
.
—–এই শাওন চৌধুরি মানুষটাই এমন। তবুও formality’র জন্য জিজ্ঞেস করছি……তুমি এখানে কেন?
.
—–ধন্যবাদ জানাতে।
.
শাওনের কাছে বিষয়টি যেন বোধগম্যে এলো না। আবারো প্রশ্ন করে ওঠে…….
.
—-What?
.
—-বললাম তো ! ধন্যবাদ জানাতে।
.
—-কিসের জন্য?
.
—-মেহেরকে বাঁচানোর জন্য ।
.
শাওনের কাছে এবার বিষয়টা কৌতুকের মতো লাগছে। এই প্রথম হয়তো কেউ ওকে ধন্যবাদ জানাচ্ছে যেখানে সবাই ওকে ঘৃণা করে। সিগারেটটা পায়ের নিচে পিষে দিয়ে বলে ওঠে…….
.
—–ধন্যবাদ দেয়ার মতো তেমন কোনো মহান কাজ করিনি আমি। ওকে বাঁচানো আমি প্রয়োজন মনে করেছি তাই আমি……..
.
এতটুকু বলেই শাওন থামে। আসলেই তো? মেহেরের কাছ থেকে তো সে revenge নিতে চেয়েছিলো। তাহলে মেহেরকে বাঁচালো কেন?
.
আদ্রাফ এবার শাওনের পাশে বসে। শাওনের দৃষ্টি তখন নিচে পড়ে থাকা নিভু নিভু সিগারেটটার দিকে।
.
—–নিজেকে যতটাই খারাপই তুমি প্রমাণ করতে চাও না কেন………ততটা খারাপ প্রমাণ করতে তুমি ব্যর্থ। জানিনা কোন বিভৎস কারনের জন্য তুমি এত নির্দয় তবে আমার কথা শুনো………নিজেকে এত খারাপ বানিও না।
.
শাওন নিশ্চুপ।
.
—–আর এই সিগারেটের নেশাটাও কমিয়ে আনো। এটাই তোমার জন্য ভালো।
.
—-Who the hell are you? এতক্ষণ কিছু বলছিনা বলে এটা মনে করো না যে আমায় উপদেশ দেয়া শুরু করবে। Thanks বলেছো না , এবার চলে যাও। আর কি যেন বললে?
হ্যাঁ , আমি নাকি নিজেকে খারাপ প্রমাণ করতে ব্যর্থ । You’re absolutely right………কারন এর থেকেও বেশি জঘণ্য আমি। এমনকি আমার so called dad হায়াৎ চৌধুরী থেকেও।
.
শাওনের এমন বিষাক্ত কথাগুলো আদ্রাফের মুখে বিন্দুমাত্র প্রভাব ফেললো না। আদ্রাফের ধারনাই ছিলো যে শাওন এমন কিছু করবে। আর কিছু না বলে শাওনকে একা রেখে নীরবে চলে যায় সে।
.
.
শাওন একটা লম্বা নিঃশ্বাস ত্যাগ করে আধশোয়া হয়ে পড়ে বেঞ্চটিতে। না চাওয়া সত্বেও আদ্রাফের কথাগুলো বারবার কানে বেজে উঠছে । তার জীবনটাতো এমন নাও হতে পারতো। কেন এমন হলো? এর উত্তর শাওনের কাছে নেই।
.
.
.
.
আদ্রাফের অপেক্ষার অঙ্ক যেন আর পারই হচ্ছে না মেহেরের কাছে এখন এমন মনে হচ্ছে। প্রচন্ড বিরক্তি নিয়ে বারবার দরজার দিকে তাকাচ্ছে অথচ সবাই দেখা সাক্ষাত করে গেল কিন্ত আদ্রাফের আসার কোনো নামগন্ধ নেই। এদিকে নাদিয়াও সোফায় হেলান দিয়ে পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছে।
অবসর জিনিসটা মেহেরের কাছে বড়ই বিষাক্ত। একজন চঞ্চল মেয়ের কাছে দীর্ঘক্ষণ স্থির থাকা যেন আগুনে ভস্ম হয়ে যাওয়ার সমান। আনমনে ঠোঁট কামড়াতে কামড়াতে সে বলে……
.
—-সবাই আমারে ভুলে গেসে।
.
তখনই আগমন ঘটে আদ্রাফের। হাতে নানারকম ফলফলাদির বাহার। মেহের বিরক্ত হয়ে বলে ওঠে,
,
—-এই তোমার কাউন্টারে যাওয়া? সেখানে ফল বিক্রি করছিলো বুঝি?
.
—–মোটেও না। তোমার জন্যই ফল আনতে গিয়েছিলাম। ডাক্তার বলেছে তোমায় বেশি করে ভিটামিন খাওয়াতে।
.
—-ফফফল? মোটেও না। আমি ফল খাবো না।
.
—-আমি তোমাকে জিজ্ঞেস করেছি যে তুমি খাবে নাকি খাবে না? আমি জাস্ট বলেছি ডাক্তার তোমায় ভিটামিন খাওয়াতে বলেছে। আমি এগুলো কাটবো আর আমার লক্ষী বউয়ের মতো তুমি খাবে।
.
নির্লিপ্ত গলায় প্রতিউত্তর দেয় আদ্রাফ। মেহেরের মুখ যেন শুকিয়ে গিয়েছে এত্তগুলো প্যাকেট দেখে। আদ্রাফ একে একে আপেল, কমলা, আঙ্গুর সব ধুয়ে কেটে মেহেরের সামনে রাখে। মেহের তবুও শেষ প্রচেষ্টা চালিয়ে প্রশ্ন করে……..
.
——না খেলে হবেনা?
.
—–মোটেও না।
.
অগত্যাই চোখ-মুখ খিচে মেহের বাধ্য মেয়ের মতো পুরো প্লেট সাফ করতে হয়।আদ্রাফ প্রশ্ন করে……
.
—–আরও নিয়ে আসবো?
.
মেহেরের এবার যেন কাদো কাদো অবস্থা। এমনিতেও এই আদ্রাফ তাকে ফল জোড়া করে খাওয়ালো আবার কি সুন্দর করে প্রশ্ন করছে আরও খাবে নাকি।
.
—–ফল খাইয়ে আমায় শহিদ করার পরিকল্পনা আছে নাকি তোমার ?এমনিতেও এতটুকু খেয়ে নিলাম কত্ত কষ্ট করে।
.
—–বেশি কথা বলো না। আগে কিছু বলিনাই বলে এমন মনে করো না আজীবন তোমার পকর পকর শুনে যাবো। আমার কথার একটু হেলফেল করলে তার পরিণাম কিন্ত মোটেও ভালো হবে না। So আমি যা বলবো সবসময় তা মেনে চলবে।
আদ্রাফের কড়া গলা শুনে মেহের চুপসে যায়। মেহের বুঝে গিয়েছে যে সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত আদ্রআফের এই কেয়ারিং নামক যন্ত্রণা তাকে সইতে হবে।
.
.
.
.
.
~চলবে
ভ্রুলক্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন।

অনুভূতির সুপ্ত কোণে পর্ব-১৪

0

#অনুভূতির_সুপ্ত_কোণে🍂
#কায়ানাত_আফরিন(মাইশা)
পর্ব : ১৪
.
সময়ের প্রবাহ কেমন যেন থমকে গিয়েছে। বাইরে চলছে মুষলধারে বৃষ্টি। ভার্সিটির অডিটরিয়ামে অনেকেই আহত হয়েছে আগুনের দুর্ঘটনার কারনে। ওটির সামনে গুমশুম মেরে বসে আছে শাওন। পাশেই দাঁড়ানো সাদাত আর নাদিয়া। আদ্রাফকে এখনও কিছুই জানায়নি দুজনে। তবে মাকে জানিয়ে দিয়েছে। মা আদ্রাফকে বলেছে কি-না নাদিয়ার কাছে তা অজানা।
শাওনকে যেন নতুনভাবে দেখছে সবাই। নিজেকে যতটা খারাপ প্রমাণ করতে চায় সে ততটাও খারাপ না। তবে শাওন যে মনে মনে কি ভাবছে তার পাশে বসে থাকা নিশা , রাহাত, রাতুল , কেউই বুঝতে পারছে না।
.
প্রায় আধাঘন্টা ঘনিয়ে এসেছে কিন্ত অপারেশন থিয়েটার থেকে কেউই বের হচ্ছে না। শাওনের মাথাটা জুবুথুবু হয়ে আছে দুশ্চিন্তার কারনে। জানেনা , কেন এত দুশ্চিন্তা ওই মেয়েটার জন্য যে ওকে সবার সামনে থাপ্পড় মেরেছে। তার ঘৃণাটা সে প্রকাশ করতে পারছে না এটা ভাবতেই অবাক লাগছে শাওনের। এটা কি কখনো সম্ভব ?
যে শাওন চৌধুরি শুধু মারপিট-খুন খারাপি……বার-নাইট ক্লাব , হুইস্কি-আ্যলকোহল ছাড়া কিছুই বুঝতো না সে কি-না একটি সামান্য মেয়ের জন্য হসপিটালে বসে আছে, তাও আবার নিজের বোনের পরিচয় দিয়ে…..?
.
আর কিছু ভাবতে চাচ্ছে না সে। কেননা সে তার মনস্থির করে রেখেছে যে ; ”যে ভাবেই হোক , মেহেরকে বাঁচতে হবে।”
.
.
অগোছালোভাবে আদ্রাফ এসেছে ওটির সামনে। নাদিয়া আর সাদাতকে একপাশে দেখতে পেয়ে মস্তিষ্কের নিউরন যেন ওর সাড়া দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। মায়ের কল পেতেই যখন মেহেরের দুরবস্থার কথা শুনলো সাথে সাথেই অফিসের কাজ ফেলে মা-বাবার সাথে এখানে এসে পড়ে।
মেহেরর এ অবস্থা যেন কিছুতেই আদ্রাফ মানতে পারছে না। শাওন এবার চোখ তুলে তাকায় আদ্রাফের দিকে। আদ্রাফের দৃষ্টি বিধ্ধস্ত। মলিন মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে ওটির দরজার সামনে। গ্লাস ভেদ করে মেহেরের অক্সিজেন মাস্ক লাগানো মুখ দেখে আদ্রাফের নিঃশ্বাসও যেন সে পর্যায়ে আটকে গিয়েছে।
.
——আল্লাহর উপর ভরসা রাখো বাবা ! মেহেরের কিছুই হবে না।
.
আদ্রাফকে আশ্বাস দেওয়ার চেষ্টা করে তার বাবা। আদ্রাফ বিনিময়ে কিছু বলে না। কি বলবে সে? যেই মেহের সবসময় দুষ্টুমিতে মেতে থাকতো তার এ অবস্থা কোন আপনজনই বা সহ্য করতে পারবে? হ্যাঁ রেগে ছিলো সে মেহেরের ওপর। তাই বলে মেহেরকে এত দূর করতে চায়নি সে।
.
হঠাৎ ওটির থেকে ডাক্তার বের হওয়ার সাথে সাথে ডাক্তারকে ঘিরে সবাই জড়ো হয়ে দাঁড়ায়। আদ্রাফ একরাশ আশা নিয়ে তাকে প্রশ্ন করে……….
.
—-Doctor? How about she?
.
—-খুব একটা ভালো না। পেশেন্টের maybe কোনো ফোবিয়া আছে যার জন্য লাগামহীনভাবে নাক ও কান থেকে রক্ত পড়ছে যেদিকে এটা burn case…… We need O+ blood in emergency….
.
—-I have O+ blood…….
তাদের কথার মাঝে নির্লিপ্ত কন্ঠে বলে ওঠে শাওন। সবার দৃষ্টি পড়েছে এবার শাওনের দিকে। ডাক্তার একথা শুনে একটু অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে। শাওন চৌধুরি কখনোই কাউকে ব্লাড দেয়নি সেখানে এখন ব্লাড দিলে ডাক্তারের ওপর কোনো উপর থেকে চাপ প্রয়োগ করবে এটা ভেবেই ডাক্তার ব্যতিব্যস্ত হয়ে বলে ওঠে…
.
—-Sorry Sir ! আপনার ব্লাড আমরা নিতে পারবো না। আপনার বাবা তাহলে আমাদের জানে মেরেও ফেলতে পারে।
.
এ কথা শুনে পাশের টেবিলে থাকা স্যাভলনের কাচের কৌটোটি সজোরে ফ্লোরে ছুঁড়ে মারে শাওন।
.
—-আমি যেটা বলেছি সেটাই হবে। আমার কথা না শুনলে আমি তোমাদের শেষ করে ফেলবো। সো আমার কথা শুনবে নাকি আমার so called dad এর কথা শুনবে?
.
শাওনের হঠাৎ রাগাত্নক আক্রমণে ভয়ে তটস্থ হয়ে পড়েছে ডাক্তারসহ বাকি নার্সরা। এখন শাওনের কথা না মানা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই তাদের কাছে। অগত্যাই তারা নিজেদের কাজে লেগে পড়ে।
.
.
.
.
সকল ক্রিয়া শেষ করার পর নিজের জায়গায় বসে আছে শাওন। নিশা শাওনের কাধে হাত রাখতেই শাওন নিশার দিকে তাকায়।
.
—-রিলেক্স শাওন ! মেয়েটার কিছুই হবে না।
.
আদ্রাফ শক্ত রেখেছে নিজেকে। মেহেরকে হারানোর কথা কিছুতেই সে কল্পনা করতে পারবে না। মেহের নিজের দুষ্টুমি দিয়েই আদ্রাফের মনে জায়গা করে নিয়েছে নিজের। এক অবাধ্য অনুভূতির। মেহেরের মুখ ফুলানো ; কথা আটকিয়ে যাওয়া , তার ঠোঁটের স্পর্শ সবকিছুই পাগল করে দিতো আদ্রাফকে। তবে কি আদ্রাফ কখনোই অনুভব করতে পারবে তার মেহুর অবচেতন সেই স্পর্শ?
.
ওটির লাইট অফ হতেই সবার ধ্যান পুনরায় সেদিকে মনোনিবেশ করে। আদ্রাফ উঠে আকুলকন্ঠে ডাক্তারকে প্রশ্ন করে……..
.
—What happend ? মেহু……….ঠিকাছে তো?
.
শেষ কথাটুকু বলতে গিয়ে দম আটকে আসে আদ্রাফের। যেন মেহুর অন্তিম পরিণতি নিজের চোখে কখনোই সে সয্য করতে পারবে না। ডাক্তার তাকে আশ্বাস দিয়ে বলে ওঠে…..
.
—-yeah youngman ! আল্লাহ তোমার কথা শুনেছে। She is absolutely fine……
.
আদ্রাফের বুকের থেকে যেন একটা চাপা পাথর সরে আসে । স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে সবাই। ডাক্তার এবার বলে ওঠে……
.
—-তবে ধোয়ার মুখোমুখি হওয়াতে ফুসফুসে কিছু প্রবলেম আছে। Patient কে always air pollution থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করতে হবে। তাকে কেবিনে পাঠানোর ব্যবস্থা করছি।
.
নিশা, রাহাত, রাতুল সকলের মুখেই এক চিলতে হাসি ফুটে ওঠে শুধুমাত্র শাওন ছাড়া। তার চেহারা বরাবরের মতোই প্রতিক্রিয়াহীন। চোখের সামনে বারবার তার ভেসে আসছে কিছু করুন দৃশ্য। সবার চোখের অগোচরে নীরবেই হসপিটাল থেকে চলে আসে সে।
.
.
.
দুপুরের প্রহর পেরিয়ে বাইরে এখন দৃশ্যমান বিকেলের মৃদু আলোর খেলা। পিটপিট করে চোখ খুলতেই মেহেরের চোখ প্রথমে কেবিনের জানালার দিকে যায়। সারা পরিবেশ নিস্তব্ধ। মেহের মনে করার চেষ্টা করছে তার জ্ঞান হারাবার আগের ঘটনাগুলো। কিন্ত অজানাভাবে শাওনের বিবর্ণ মুখ ছাড়া আর কিছুই কল্পনা করতে পারছে না। তাকে চোখ খুলতে দেখে আদ্রাফ সোফা থেকে উঠে মেহেরের কাছে গিয়ে বসে।
.
আদ্রাফের চোখযুগল বলতে গেলে একেবারেই মলিন হয়ে আছে। মেহেরের চোখ ছলছল করে ওঠে আদ্রাফের এ অবস্থা দেখে। কেননা ওর মনে হয়েছিলো যে ও হয়তো কখনোই আদ্রাফকে তার মনের কথা বলতে পারবে না।
নিজের দুহাতে মেহেরের মুখ আগলে নিয়ে আদ্রাফ মেহেরের সারামুখে পাগলের মতো চুমু খেতে থাকে। মেহের আনমনে আদ্রাফের এক হাত দুরবলধাবে খামচে ধরেছে। বেশ কিছুক্ষণ পর আদ্রাফ মেহেরে কপালের সাথে নিজের কপাল লাগিয়ে দেয়।
সারাঘরে বিরাজ করছে কেমন যেন এক নিস্তব্দ্ধতা। দুজনের নিঃশ্বাস একে অপরের সাথে খেলা করতে মগ্ন। আদ্রাফ চোখ বন্ধ করে উদাসীন গলায় বলে ওঠে………
.
—–আজ তুমি হারিয়ে গেলে আমি নিজেও হারিয়ে যেতাম মেহু। এই মেহেরহীন আদ্রাফ একেবারে বিলীন হয়ে যেতাম। I can’t live anymore Mehu without you……Because you are my lifeline……
.
.
.
.
.
~চলবে
ভুলক্রুটি ক্ষমাসুলভ চোখে দেখবেন।

অনুভূতির সুপ্ত কোণে পর্ব-১৩

0

#অনুভূতির_সুপ্ত_কোণে🍂
#কায়ানাত_আফরিন (মাইশা)
পর্ব : ১৩
.
বিয়ের রাতে বেনারসী শাড়ি পড়ে ছাদে যখন ঘুরঘুর করছিলো তখন তো পুরাই দেওভূত লাগছিলো । আর আজ তো শাড়ি পড়লে পুরাই শ্যাওড়া গাছের পেত্নী লাগবে !
.
আদ্রাফের কথা শুনে মেহের যেন বিস্মিত। সিরিয়াসলি ! শ্যাওড়া গাছের পেত্নী? এই উপাধি শুনে মেহেরের মরে যেতে মন চাচ্ছে। আয়ানায় আবারো খুটিয়ে খুটিয়ে দেখতে থাকে নিজেকে যে ঠিক কি কারনে আদ্রাফ মেহেরকে এ কথা বললো। কিন্ত অদ্ভুত বিষয় ; মেহেরের কাছে এরকম কিছুই লাগছে না। মেহের রক্তচক্ষু নিয়ে তাকায় আদ্রাফের দিকে।
.
আদ্রাফ এখনও নিজের কাজে মগ্ন। মেহের এবার গর্জে বলে ওঠে……..
.
—-কোন আ্যঙ্গেল থেকে আমায় শেওড়া গাছের পেত্নী লাগছে একটু বলবে?
.
—-এসব শাড়ি টাড়ি বাদ দিয়ে অন্য কিছু পড়ো। তোমার মতো দস্যু মেয়েকে শাড়ি মানায় না।
.
আদ্রাফের কথায় মেহের এবার বিরক্ত। শুধু বিরক্ত বললে ভুল হবে ; প্রচন্ড পরিমাণে বিরক্ত। কই একটু ভেবেছিলো আদ্রাফও বুঝি ওর প্রেমে পড়ে যাবে কিন্ত হলো আরও উল্টো। মুখ ফুলিয়ে বলে ওঠে……….
.
—-হুহ ! শাড়ি না পড়ে ওয়েস্টান পড়লে ভালো হতো। তখন আর শ্যাওড়া গাছের পেত্নী না লাগলেও পাক্কা সানি লিওন লাগবে।😁
.
এই বলে মেহের দাঁত কেলিয়ে আদ্রাফের দিকে তাকাতেই মুখের হাসিটা কেমন করে যেন মিলিয়ে যায়। আদ্রাফের চোখ-মুখ অদ্ভুদ কারনেই একেবারে লাল হয়ে গিয়েছে। ফাইল রেখে সে শান্তভাবে এগিয়ে আসতে থাকে মেহেরের দিকে। এটাই বুঝি ঝড়ের পূর্বাভাস। মেহেরের পিঠ একপর্যায়ে দেয়ালে ঠেকে যেতেই আদ্রাফ একেবারে মিশে দাঁড়ায় মেহেরের সাথে।
মেহেরের শ্বাসের গতি এবার যেন বেড়ে গিয়েছে।
.
—-এতই যখন সানি লিওন সাজার ইচ্ছা আমিও তবে নাহয় ইমরান হাশমি হয়ে যাই,……….কি বলো?
.
এতক্ষণ শ্বাসের গতি বেড়ে থাকলেও আদ্রাফের কথা শুনে মেহেরের শ্বাস একেবারে নিঃশ্বেস হয়ে গিয়েছে। বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে সে আদ্রাফের দিকে। এ আবার কেমন কথা?তবে কি আদ্রাফও ইমরান হাশমির মতো উল্টাপাল্টা কাজ করবে বলছে? ছিঃ
.
—–নাউযুবিল্লাহ ! দেখো আদ্রাফ? আমি ভদ্র মেয়ে । আমার সাথে এমন লুতুপুতুমার্কা কাজ করবে না খবরদার !
.
—–তুমি করলে কিছু না আর আমি করলে তা লুতুপুতুমার্কা হয়ে যাবে? How Stunning !
.
এই কথাটা একপ‍্রকার মেহেরের ওপর হালকা ঝুঁকে পড়েই বলেছে আদ্রাফ। তার সব সাজানো গোছানো কথাগুলো নিমিষেই যেনো হাওয়াই মিঠাইয়ের মতো উধাও হয়ে ।
ছোট ছোট চোখ করে সে বলে ওঠে,
.
—–তোমার সাথে কথা বলাই বেকার………..
.
—– এখন তো এ কথাই বলবে………
.
—–আমায় ভার্সিটি দিয়ে আসবে কি-না?
.
দাঁতে দাঁত চেপে আদ্রাফকে মেহের প্রশ্ন ছুড়ে মারে। আদ্রাফ বলে ওঠে…..
.
—–তাহলে কে দিয়ে আসবে হ্যাঁ। একা তো কখনই ছাড়ছি না তোমায়। এমনিতেও পেত্নী লাগছে । না জানি রাস্তায় কতজনের মাথায় চড়ে বসবে।
নিচে চলো?😒
.
.
.
.
.
চরম বিরক্তি নিয়ে মেহের নাদিয়ার জন্য অপেক্ষা করছে। তার সাথেই আদ্রাফ দাঁড়ানো। নাদিয়া আসতেই সে চলে যাবে। কিন্ত মেহেরকে এখন একা ছাড়বে না সে। এমনিতেও ক’দিন আগে ভার্সিটির সিনিয়রদের সাথে ঝামেলা বাড়িয়েছে তাও আবার এখানকার পপুলার পাওয়ারকে। তাই মেহেরকে আদ্রাফ মোটেও একা ছাড়বে না।
.
—-বুঝতেসিনা নাদিয়া কি তীর্থ যাত্রা করে ভার্সিটিতে আসবো নাকি?
.
মেহেরের কথা শুনে আদ্রাফ ওর দিকে মনোনিবেশ করে। মেহেরের চোখ-মুখ বলে দিচ্ছে যে কতটা অধৈর্য হয়ে পড়েছে সে।
.
—–সবাই কি তোমার মতো মানুষের মাথায় পেত্নী সেজে চেপে বসবে নাকি ! একটু ওয়েট করো। টাইমমতো ঠিকই এসে পড়বে।
.
—–আমার সাথে ভালোমতো কথা বললে এই ব্যাটার মহাভারত কি অশুদ্ধ হয়ে যাইবো………………কিছু বুঝিনা [মেহের মনেমনে]
.
কিছুক্ষণ পরেই নাদিয়া এসে পড়ে সাদাতকে নিয়ে। নাদিয়া আজকে সবুজ রঙের শাড়ি পড়েছে যা ওর গায়ের সাথে চমৎকারভাবে ফুটে উঠেছে। সাদাতও সবুজ রঙের একটা পান্জাবী পড়েছে। দুজনের জুটিটা বলতে গেলে একেবারে চমৎকার লাগছে। মেহের খুশিতে গদগদ হয়ে বলে ওঠে……
.
—-দোস্তোওও ! তোরে একেবারে ঝাক্কাস লাগছে। আর ভাইয়া তোমাকেও। তবে তোমার বউয়ের থেকে বেশি না।
.
সাদাত হেসে দেয় মেহেরের কথা শুনে।
.
—-এটা বলতে পারলে মেহের? আমি তো ভেবেছিলাম কতজনকে আমার সুন্দর রূপ দিয়ে ঘায়েল করবো,,,,,,,,
.
আর কিছু বলতে যাবে সে তবে নাদিয়ার দৃষ্টি দেখে সে থেমে যায়। আদ্রাফ এতক্ষণ নীরব দর্শকের মতো ছিলো। সবার কথা শেষ হতেই আদ্রাফ সাদাতকে বলে ওঠে…………
.
—–দেখো সাদাত ভাই ! আমি জানি যে নবীনবরণের অনুষ্ঠানের জন্য তুমি অনেক ব্যস্ত থাকতে পারো। কিন্ত সময় পেলে খেয়াল রাখবে যে পাগল দুইটায় আবার যে ওই সিনিয়র গ্রুপের কাছে না যায়।
.
——আমি চেষ্টা করবো।
.
——আর কতবার বলবে একই কথা? বলেছিতো যাবোনা।
মেহেরের মিনমিনিয়ে কথা বলা দেখে আদ্রাফ কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায় না। যেন মেহেরের আর কোনো কথারই দাম নেই আদ্রাফের কাছে।মেহেরের হাত নিজের কাছে নিয়ে এসে গম্ভীর কন্ঠে বলে ওঠে…….
.
—–একবার না হাজারবার একই কথা বলবো। কারন তোমায় সম্পূর্ণ সেফ রাখতে চাই আমি।আশা করি আমার কথার আর নড়চড় হবে না। Take care of yourself………
.
আদ্রাফ একথা বলেই সেখান থেকে চলে যায়। মেহের একটা নীরব চাহিনী দিয়ে তাকিয়ে আছে সেদিকে। মেহেরের কাছে আদৌ এটা অজানা যে ছেলেটা তাকে ভালোবাসে কি না? মাঝে মাঝে তার ছোট ছোট যত্নে গড়া কথাগুলোও যেন অন্য দুনিয়ায় নিয়ে যায় মেহেরকে। হয়তো এটাই আদ্রাফের সুপ্ত কোণে থাকা এক বদ্ধ অনুভূতি !
.
.
.
.
ভার্সিটির চারিদিকের উৎসবমুখর পরিবেশের মাঝ দিয়েই প্রবেশ করে শাওন আর তার বাকি বন্ধুরা। শাওন আজ ব্ল্যাক কালার পান্জাবী পড়েছে। চুলগুলো হালকা স্পাইক করা। হাতে রয়েছে একটি সিলভার ওয়াচ। পুরাই যেন একটা ক্রাশ বয়। তার অন্যান্য বন্ধুদেরও বেশ চমৎকার লাগছে বিশেষ করে নিশিকে। নিশি অন্য চার-পাঁচটা মেয়ের মতো শাড়ি না পড়ে সিলভার রঙের একটি গাউন পড়েছে। মুখে রয়েছে ডার্ক মেকাপ।
.
নিশিকে দেখলে যে কেউ এটাই বলবে যে এই মেয়েকে শাড়ি না পড়ে গাউনেই বেশি মানাচ্ছে। রাহাত আশেপাশের মেয়েগুলোকে দেখছে আর ছোটখাটো মন্তব্য করে চলছে রাতুলের সাথে। শাওন এবার দুজনকে ধমক দিয়ে বলে ওঠে………
.
——এসব silly fact নিয়ে আলোচনা আমি মোটেও পছন্দ করে না। So shut up !
.
রাতুল এবার বিড়বিড়িয়ে বলে ওঠে……….
.
—–শালা নিজে তো ফ্লাটিং করস না আমারেও করতে দেস না।
.
.
.
.
শাওনকে স্টেজের কাছে দেখতেই মেহের সেদিকে আর এগোয় না। যদিও শাওনকে সে মোটেও ভয় পায় না তবুও শুধুমাত্র আদ্রাফের কথা মানার জন্যই অডিয়েন্স সিটে বসেছে সে। একে একে অনেকেই পার্ফম করছে স্টেজে।
কিন্ত মেহের আর নাদিয়া নিজেদের মধ্যে আলাপচারিতা চালাচ্ছে। নবীনবরণের অনুষ্ঠানটি বলতে গেলে একেবারে চমৎকারভাবেই চলছে। মেহের এবার স্টেজে উঠে দাঁড়ায় একজন নিউ স্টুডেন্ট হিসেবে কিছু স্পীচ দেয়ার জন্য।
এত মানুষের সামনে দাঁড়িয়ে বুকটা ধকধক করছে মেহেরের। যদিও এ কোনো নতুন অভিজ্ঞতা না কিন্ত বিষয়টি খুবই রোমাঞ্চকর মনে হয় মেহেরের কাছে।শাওন স্টেজের একপ্রান্তে নীরব চাহিনী দিয়ে তাকিয়ে আছে মেহেরের প্রতিটা কার্যকলাপের দিকে।
.
একটা লম্বা শ্বাস নিয়ে মেহের কিছু বলা শুরু করবে তখনই ঘটে গেলো এক দুর্ঘটনা। শর্ট সার্কিট হয়ার কারনে অডিটোরিয়ামে আগুন লেগে গিয়েছে। চারিদিকে আগুনের ছড়াছড়ি।
.
আগুনের তাপদাহ স্টেজকে ঘিরে থাকার কারনে সেখান থেকে বেরোতে পারছে না মেহের। সবাই মোটামুটি ছুটোছুটি করা শুরু করেছে। কালো ধোঁয়ার প্রবাহে মেহেরের নিঃশ্বাস ক্রমাগত ভারী হয়ে যাচ্ছে। চোখদুটোও বন্ধ হয়ে যাচ্ছে আবছাভাবে। অদূরেই নাদিয়ার চিৎকার তার কানে বেজে উঠতেই মেহেরের মনে ভয়ের সঞ্চার হয়।
এই আগুনরাশির জালে সে কি তবে ভস্ম হয়ে যাবে? তবে কি কখনোই সে পারবে না আদ্রাফকে তার মনের অনুভূতি ব্যক্ত করতে।
.
.
মেহেরের জীবন প্রহর হয়তো এখানেই থেমে যাবে এটা বিশ্বাস করতে হচ্ছে তাকে। কিন্ত না ; তার একটুকরো আশায় আলোর ঝলক হয়ে আসে একজন। হাত বাড়িয়ে আগলে নেয় মেহেরকে। তার বুকের হৃদপিন্ড কড়াকড়িভাবে মেহের অনুভব করতে পারছে। কিন্ত কে এই আগন্তুক যে তাকে আগুনের গন্ডি থেকে মুক্ত করে নিয়ে আসছে।
.
চোখ খোলার জন্য মেহেরের নিউরন যেনো সাড়া দিচ্ছে না। তবুও একপ্রকার যুদ্ধ করেই পিটপিট করে চোখ খুলে মেহের। আবছাভাবেদেখতে পায় শাওনের বিবর্ণ মুখ। এতটুকু দেখেই মেহের স্তব্ধ। ধীরে ধীরে সে মিলিয়ে যায় কোনো অজানা এক রাজত্বে।
.
.
.
সারা হসপিটাল মাথায় তুলে ফেলেছে শাওন। কোনো বার্ন স্পেশালিস্টকে না পেয়ে একপ্রকার তান্ডব রটিয়ে দিয়েছে । শাওনের বাবা যেহেতু বড় রাজনৈতিক নেতা তাই এখানে সবাই ভয়ে তটস্থ হয়ে আছে। প্রায় আধঘন্টা পর ডক্টর আসতেই শাওন প্রখর গলায় বলে ওঠে……..
.
—-Doctor ! Operate her imidiately…….She is in danger!
.
মূলত মেহেরের উদ্দেশ্যেই শাওন এমন করছে। ডাক্তার একটু সাহস জুগিয়ে বলে ওঠে……….
.
—–Yes ; I tried my best….but আপনাকে একটা কনফার্ম লেটার সাইন করতে হবে এক্ষুণি। কি হয় মেয়েটি আপনার?
.
—–আমার বোন হয়……….Is it clear for you?
.
.
.
.
~চলবে।

অনুভূতির সুপ্ত কোণে পর্ব-১২

0

#অনুভূতির_সুপ্ত_কোণে🍂
#কায়ানাত_আফরিন (মাইশা)
পর্ব:১২
.
রুমে এসে মেহেরকে বিছানায় দেখে ভ্রু কুচকে ফেলে আদ্রাফ। মেহের আনমনে মোবাইল স্ক্রলে ব্যস্ত হলেও সে দেখতে চাচঞছে যে আদ্রাফ কি করবে।
.
—-আমার বেডে শুয়ে আছো কেন তুমি?
.
আদ্রাফের তীক্ষ্ণ ঝাঁঝালো ধরনের কন্ঠ শুনে মেহের আদ্রাফের দিকে তাকায়। ওর চোখে মুখে স্পষ্ট বিরক্তিভাব ফুটে উঠেছে। মেহের তবুও আদ্রাফের সেই খুঁটিনাটি বিষয়গুলো পরোয়া না করে প্রতিউত্তরে বলে,
.
—-তোমার বেড মানে কি?এই রুমে আমিও আছি।
.
—-এই কথাটা তোমার আগে মনে করা উচিত ছিলো যখন আমি তোমায় আসতে বলেছিলাম।
.
আদ্রাফের প্রতিটা কথার ভাঁজে মেহের প্রচন্ড রাগ অনুভব করতে পারছে। তবুও মেহের এটা মানতে বাধ্য যে আদ্রাফকে রাগলেও বড্ড বেশি কিউট লাগে। কালো চোখগুলো কেমন যেন টগবগ করে ওঠে। আর ঠোঁটের কথা মেহের নাহয় আর নাই ভাবলো । কেননা এই ঠোঁটেযুগল দেখলেই মেহেরের মন চায় টুস করে কামড় দিয়ে ফেলতে। মেহের বিছানায় হেলান দিয়ে বলে ওঠে ,
.
—-তোমার রাগ তুমি পুটলির মধ্যে ঢুকিয়ে রাখো। আগে যা হয়েছে সব বাদ। কোন এক জ্ঞানি জানি কি বলেছে?………….হ্যাঁ……….
”অতীতকে ছেড়ে বর্তমানকে নিয়ে ভাবো”
.
আদ্রাফ এবার আর কোনো কিছু বলে না। কারন সে জানে এই জেদি মেয়েকে কোনো কিছু বলাই বেকার। আদ্রাফ তাই এবার কোলে তুলে নেয় মেহেরকে। সাথে সাথেই মেহের হকচকিয়ে যায়। অবাকস্বরে বলে ওঠে…..
.
—-হঠাৎ আমায় কোলে নিলে কেন?
.
আদ্রাফ এবার মেহেরকে বারান্দায় নামিয়ে ভেতরে যায়। মেহের আগামাথা কিছুই বুঝতে পারছে না যে আদ্রাফ কি করছে। হঠাৎ আদ্রাফ একটা বালিশ আর কম্বল ওর দিকে ছুড়েঁ মারতেই মেহের ধরে নেয়।
.
—-গুড গার্ল এর মতো বারান্দায় শুয়ে পড়ো।
.
—-আমি বারান্দায় ঘুমাবো না।
.
আদ্রাফ রুমে যেতে নিয়েছিলো কিন্ত মেহেরের কথা শুনে পিছনে ঘুরে। একটা ব্যাঙ্গাত্নক হাসি দিয়ে মেহেরের কাছে এগিয়ে আসতে আসতে বলে……
.
—-বিয়ের রাতে তো খুবই বলেছিলে যে তুমি কচি খুকি না। তাই তুমি আমার ভয়ে ছাদে থাকতে চেয়েছিলে কিন্ত তবুও আমার রুমে থাকবে না। এখন ওই সাহস কই গেলো? আমার রুমে আসলে আমি যদি কিছু করে ফেলি তোমার সাথে?
.
শেষের কথাটি আদ্রাফ মেহেরের একেবারে কানের কাছে গিয়ে ফিসফিসিয়ে বলে যার দরুন মেহেরের শ্বাস যেন ঘন হয়ে এসেছে। আদ্রাফের শরীর থেকে কেমন যেন একটা মাতালকরা ঘ্রাণ তাকে নাকে আসছে আর তাই অদ্ভুদ কিছু ভয়ঙ্কর ভাবনার সম্মুখীন হয়েছে সে। কাঁপাকাঁপা স্বরে মেহের বলে যে……..
.
—–আমি জানি তততুমি এএমন কিছুই কককরবে না।
.
একটা দুষ্টু হাসি দেয় আদ্রাফ। মেহেরকে নিজের সাথে মিশিয়ে বলে ওঠে…….
.
—-অন্য সবার সামনে ভদ্র হতে পারি ; কিন্ত বউয়ের সাথে কি ভদ্র হওয়া চলে মেহু? একটু তো অসভ্যতামি করতেই হয় !
.
আদ্রাফের স্পর্শে থরথর করে কাঁপছে মেহেরের শরীর। সে চাইছে বারবার নিজেকে শক্ত করে রাখতে। কিন্ত আদ্রাফের সামনে আসলে বরাবরই তার অনুভূতিগুলো যেন হামলে পড়ে। মেহেরের এ অবস্থা বুঝে আদ্রাফ সরে আসে মেহেরের কাছ থেকে। তার দুষ্টু হাসিতে এখন প্রখরতা ভর করেছে। নিজের ট্রাউজারের পকেটে হাত গুঁজে আদ্রাফ বলে ,
.
—–আমি একটু কাছে আসাতেই তোমার শরীরে ভূমিকম্প চলছে আর তুমি চাইছো আমার সাথে আমার রুমে ঘুমাতে? এসব অতিরিক্ত বাচ্চামি বন্ধ করো আর ওই ডিভানের ওপর শুয়ে পড়ো।
.
মেহেরকে কোনো সুযোগ না দিয়েই আদ্রাফ এবার চলে যায় ঘুমাতে। আদ্রাফের এমন কান্ডে মুখ ভার হয়ে আছে মেহেরের। মনে মনে ভাবছে কত্ত বড় ব্রিটিশ এই ছেলেটা। আদ্রাফ জানে যে সে কাছে আসলেই মেহের একটু অন্যরকম হয়ে যায়। আদ্রাফের স্পর্শে তার নিঃশ্বাস যেন বন্ধ হয়ে আসে। আর সেই সুযোগটাই সে কাজে লাগিয়ে নিলো।
.
.
.
.
রাত পাল্লাক্রমে গভীর হচ্ছে। কিন্ত মেহেরের চোখে ঘুম নেই। বাইরের ল্যাম্পপোস্টের আলোটি সরাসরি ওর মুখে পড়াতে মেহের ঘুমুতে পারছে না একটু পরপরই সে আদ্রাফের খাটের দিকে তাকাচ্ছে। আদ্রাফ এখন গভীর ঘুমে মগ্ন। মেহের মনে মনে ভাবছে , আচ্ছা ওর সাথে শুয়ে পড়লে মেহেরের কি খুব বড় কোনো ভুল হয়ে যাবে?
আদ্রাফ তো ওর হাজবেন্ট। মেহেরের ভুলের কারনেই রাগ করে আছে সে মেহেরের ওপর।আর মেহেরও চাচ্ছে আদ্রাফের রাগ ভাঙ্গাতে। তাই ধীরপায়ে ডিভান থেকে উঠে আদ্রাফের দিকে এগোতে থাকে সে। বাতাসের মৃদু হাওয়াতে সারা ঘরে কেমন যেন ঠান্ডা বিরাজমান।
.
আর এই ঠান্ডা হাওয়ার সাথেই পাল্লা দিয়ে ধকধক করছে মেহেরের হৃদয়। তার কারন শুধুমাত্র এই আদ্রাফ। নিজের কম্বলটি নিয়ে মেহের আদ্রাফের পাশে শুয়ে পড়ে। এখনও তার চোখে ঘুম নেই। তার কারনও এই আদ্রাফ।
.
আদ্রাফের ঘুমন্ত মুখ তাকে ঘুমোতে দিচ্ছে না। বাইরে থেকে আসা ল্যাম্পপোস্টের আলো বারান্দায় সরাসরি এসে পড়লেও ঘরে তা এসেছে তীর্যকভাবে। তাই আদ্রাফের মুখেও তা মৃদুভাবে মিশে আছে। মেহের ঘোর লাগা চোখে তাকিয়ে আছে আদ্রাফের দিকে। ঘুমের মধ্যেও আদ্রাফের ঠোঁট তিরতির করে কাপছে। রতের আধঁরেও দাড়িগুলো কেমন যেন দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে যার কারনে চমৎকার লাগছে আদ্রাফকে। আদ্রাফের কপালের এক কোণে ছোট্ট একটি কাটা দাগ আছে যা সবসময়ই চুল দিয়ে ঢাকা থাকে। এই দাগটা এত নিবিড়ভাবে দেখা হয়নি ওর। তাই মেহের আলতো হাতে ওই দাগটিতে স্পর্শ করে আদ্রাফের ওপরে উঠে।
নিজের অর্ধেক ভরই সে ছেড়ে দিয়েছে আদ্রাফের শরীরের ওপর। আদ্রাফের প্রতিটা বিষয়ই মেহের কেমন যেন বেশ খুঁটিয়ে খুটিয়ে দেখছে। আদ্রাফের প্রতিটা কাজই সবসময় ছিলো চোখ ধাঁধানোর মতো। কিন্ত কখনও ওর সৌন্দর্যকে এত নিবিড়ভাবে অনুভব করেনি মেহের।
.
কিন্ত আজ সে চাইছে আদ্রাফকে অনুভব করতে। খুব করে চাইছে। এতদিন একটি দায়বদ্ধতা থেকেই আদ্রাফের কাছাকাছি ছিলো সে। কিন্ত সে এখব অনুভব করতে পারছে যে ভালোবাসে সে আদ্রাফকে। আদ্রাফকে ভালো না বাসলে কখনোই আদ্রাফকে তার কাছে আসতে দিতো না।
.
আদ্রাফের বুকে নিজের মুখ ডুবিয়ে চোখ বন্ধ করে মেহের। তার কাছে মনে হচ্ছে এই জায়গাটিই বুঝি তার জন্য একটি শ্রেষ্ঠ জায়গা। আদ্রাফের শরীরের মাতালকরা ঘ্রাণের জন্য আরও মিশে যেতে মন চাচ্ছে আদ্রাফের সাথে।
মেহের মিনমিনিয়েবলে ওঠে……….
.
—–আদ্রাফ তোমায় ভালোবেসে ফেলেছি আমি। এবার তুমি যতই রাগ করে বসে থাকো না কেন ; সবশেষে আমাকেই তোমায় ভালোবাসতে হবে।
.
.
.
আদ্রাফের প্রখর দৃষ্টির জালে পড়ে মেহেরের ঘুমঘুম ভাবটা নিমিষেই যেন উড়ে চলে গেলো।
.
—-রাতে আমার সাথে এসে শুয়েছিলে কেন?
.
বিরক্তির রেশ ফুটে ওঠে মেহেরের মুখে। আদ্রাফকে সে বলে যে ,
.
—–আমার জামাইয়ের সাথে ঘুমাবো না তবে কি পরের বাড়িতে গিয়ে ঘুমাবো। আজব প্রশ্ন?
.
এবার যেন ধাপে ধাপে অবাক হচ্ছে আদ্রাফ। তার জানামতে মেহের ওকে কখনোই হাজবেন্ট হিসেবে মানেনি।
.
—–তুমি……………আমায় হাজবেন্ট হিসেবে মানো নাকি ! তাছাড়া তোমার মতো পাগল বউয়ের পাল্লায় আমি জীবনেও পড়ছি না।
.
—-লে হালুয়া ! একমাসও হয়নি আমার বাবা আমায় থাপ্পড় দিয়ে তোমার মতো কুমড়োপটাশ (আদ্রাফ কড়া চোখে তাকাতেই) আই মিন এত কিউট একটা ধুন্দলের সাথে বিয়ে করিয়ে দিলো। আর তুমি বলো কি-না আমি তোমায় হাজবেন্ট হিসেবে মানি নাকি !
.
মেহেরের উদ্ভট কথা শুনে আদ্রাফের মাথার তাড় ছিড়ে যাচ্ছে। এই মেয়ের জন্য সত্যিই একদিন ওকে পাগলাগারদে যেতে হবে।মেহের এবার বলে ওঠে……..
.
—-আর শুনে রাখো একটা কথা। আজকে যদি তুমি আমায় তোমার সাথে ঘুমাতে না দাও একেবারে ধরেবেঁধে বাবার কাছে নিয়ে যাবো। তখন বুঝবে আসল মজা।
মেহের ভালোমতোই জানে একমাত্র বাবার নাম করলেই এই ছেলেরে লাইনে আনা যাবে। আদ্রাফ এবার বিরক্তি স্বরে বলে ওঠে……….
.
—–তোমার জ্বালায় জীবন আমার ত্যানা ত্যানা হয়ে যাবে। জাস্ট রিডিকিউলাস !
.
.
.
.
একটা নীল রঙের শাড়ি পড়ে আয়নার সামনে মেহের নিজেকে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছে। আজ ভার্সিটিতে নবীনবরণের অনুষ্ঠান। তাই হালকা সাজগোজ করেছে সে। যদিও মেহের শাড়ি নামকে বিষয়ে তেমন অভ্যস্ত নয় কিন্ত ড্রেসকোডে শাড়ির কথা ছিলো বলেই শাড়ি পড়েছে সে।
.
আদ্রাফ অফিসের জন্য ফাইল রেডি করছে আর মেহেরকে আড়চোখে দেখছে বারবার। সবশেষে আদ্রাফ বলে ওঠে…………
.
—–বিয়ের রাতে বেনারসী শাড়ি পড়ে ছাদে যখন ঘুরঘুর করছিলো তখন তো পুরাই দেওভূত লাগছিলো । আর আজ তো শাড়ি পড়লে পুরাই শ্যাওড়া গাছের পেত্নী লাগবে !
.
.
.
.
.
~চলবে

অনুভূতির সুপ্ত কোণে পর্ব-১১

0

#অনুভূতির_সুপ্ত_কোণে🍂
#কায়ানাত_আফরিন (মাইশা)
পর্ব:১১
.
বিগত তিনদিন ধরে আদ্রাফের সাথে কোনো যোগাযোগ না থাকায় মেহেরের মাথার নিউরন যেন বিধ্ধস্ত হয়ে গিয়েছে। এই ছেলেটা যে এত পরিমাণ জেদি হয়তো এই তিনদিন তার জীবনে না আসলে এই ইহকালে সে জানতে পারতো না। আজ তাই তড়িঘড়ি করে তনু বেগমের সাথেই ফিরে এসেছে আদ্রাফদের বাড়িতে।
এখন আদ্রাফ বাসায় নেই। অফিসে গিয়েছে বলেই মেহেরের ধারনা। তাছাড়া এখন মাত্র সন্ধ্যা। আদ্রাফ আসবে প্রায় নয়টার দিকে। সোফায় বসে বসে ঠোঁট কামড়াচ্ছে আর ভাবছে যে আদ্রাফের রাগটা কি করে কমানো যায়। কিন্ত তার ছোট্ট মস্তিষ্ক এর কোনো সমাধান দিতে পারলো না। তনু বেগম মেহেরকে বারবার দেখছেন যে হচ্ছেটা কি। পরে সে বলে ওঠে………….
.
—-মেহের ? কি ভাবছো?
.
—-ভাবছি কিভাবে আপনার আদরের পুত্রটার মাথা ঠান্ডা করা যায়।
.
মেহের কথাটি বিড়বিড়িয়ে বললেও তা বুঝতে পেরেছিলেন তনু বেগম। আনমনে হেসে ওঠে মেহেরের কথা শুনে।
.
—–এভাবে বসে থাকলে কি আর হবে?এক কাজ করো। আদ্রাফের জন্য ওর পছন্দের খাবার বানিয়ে রাখো। পারবে তো?
.
কথায় বলে , খাবার নাকি শত্রুকে বন্ধু করতে পারে। আর আদ্রাফ তো ওই ধারের কাছেও না। তবে ওর রাগটা কি ঠান্ডা করা যাবে না। মেহের এটা ভেবেই দাঁত কেলিয়ে একটা প্রশস্ত হাসি দেয়। যেন পিরামিডের ভেতরে প্রবেশের মানচিত্র উদ্ধার করেছে সে। আবেগে আপ্লুত হয়ে সে তনু বেগমকে বলে ,
.
—মা , ফাটাফাটি একটা বুদ্ধি দিয়েছো। আচ্ছা বলতো কি রান্না করতে পারি?ওর পছন্দের খাবার কি? পোলাও-বিরিয়ানি-নাকি খিচুড়ি?
.
—-নারে মেহের? আদ্রাফ ঝাল তেমন একটা খেতে পারে না। ওর জন্য মিষ্টি আইটেম যেমন ফালুদা-গাজরের হালুয়া বা সুজির হালুয়া-পায়েস, ক্ষীর এগুলা বানাও। আর রাতে ভাত মাংস যা আছে ওগুলাই খাবে।
.
মুখটা মলিন করে ফেলে মেহের। পায়েস ছাড়া মেহের আর কিছুই বানাতে পারেনা। মুখ ফুলিয়ে বলে ওঠে………..
.
—-তোমার এক মেয়ে তো কম্পিটিশনে আমার সাথে ঝাল ফুচকা খেতো আর আরেক ছেলে দেখি ঝালই খেতে পারেনা। কি ভয়ঙ্কর !
.
মেহেরের কথা শুনে হেসে দেয় তনু বেগম। মেহেরের মাথায় হাত বুলিয়ে বলে………..
.
—-আরে আমি আছি না ! তোমায় হালুয়া আর ফালুদা বানানো শিখিয়ে দেবো নে। ফালুদা বানানো সহজ।সেখানে ডেকোরেটিংটাই আসল বিষয়। আর হালুয়া বানানো একটু ঝামেলাদায়ক। বাসায় তো গাজর নেই তাই আজ সুজির হালুয়া বানিয়ো কেমন?
.
—হুম😒
.
.
.
.
একে একে পায়েস-ফালুদা আর সবশেষে সুজির হালুয়া বানিয়ে মেহেরের নিজেকে বিধ্ধস্তবেশী মনে হচ্ছে। হাতে-নাকে-মুখে সবজায়গাতেই সুজি দিয়ে মাখামাখি। নাকের ডগায় আর কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম থাকার কারনে সুজিগুলো একেবারে মুখের সাথে লেপ্টে আছে। কোনো ময়দা সুন্দরী থেকে মেহেরকে এখন কম কিছু মনে হচ্ছ না। তনু বেগম মেহেরের এ দৃশ্য দেখে হাসি চেপে রেখেছে।
মেহের কাদো কাদো স্বরে বলে ওঠে………….
.
—-মা ! তুমি আমায় দেখে এভাবে হাসছো কেন? আমায় দেখতে কি পুরাই বেঁদের মেয়ে জোছনা লাগছে?
.
—-আয়নায় গিয়ে নিজের মুখ দেখো। রাধঁতে গিয়ে দেখো কি অবস্থা করেছো !
.
—-আমি এখনই গোসল করে আসছি। তাছাড়া আদ্রাফের আসতে এখন অনেক দেরি। আমি গেলাম।
এই বলে মেহের হুড়মুড়িয়ে রান্নাঘর থেকে চলে আসে।
.
.
.
আজ অফিস থেকে বেশ তাড়াতাড়িই বাড়ি ফিরে এসেছে আদ্রাফ। কাজ মোটামুটি তাড়াতাড়িই শেষ হয়ে গিয়েছিলো। সারাদিন এত প্রেশারে থাকার কারনে নিজেকে বেশ ভারসাম্যহীন লাগছে আদ্রাফের। তাই বাড়িতে এসেই তাড়াতাড়ি ফ্রেস হওয়ার জন্য রুমে চলে যায় সে। যদিও বাড়িতে ঢোকার সময় তনু বেগম কিছু বলতে চেয়েছিলেন কিন্ত আদ্রাফ তাকে সময় না দিয়ে বলে ওঠে…….
.
—-মা আমি ফ্রেস হয়ে এসে কথা বলছি।
.
নিজের রুমে প্রবেশ করতেই অদ্ভুত এক কারনে মেহেরের গায়ের ঘ্রাণ আদ্রাফের নাকে আসতেই আদ্রাফ একটু অবাক হয়। ঘরটা মোটামোটি আধাঁরে ছেয়ে আছে। লাইট জ্বালিয়ে কাউকে না পেয়েই নিশ্চিত হয় যে মেহের এখানে নেই।
মেহেরের চিন্তাটা সে মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলতে চাচ্ছে । দরজাটি লাগিয়ে নিজের শার্টটি খুলে আলমারি থেকে নিজের গেন্জি আর ট্রাউজার বের করতেই ওয়াশরুম থেকে কারও দরজা খোলার শব্দ পায়।পেছনে ঘুরে আদ্রাফ যেন রীতিমতো শকড হয়ে গিয়েছে। কেননা তার সামনে স্বয়ং মেহের দাঁড়ানো।
.
গোসল শেষে দরজা খুলে হঠাৎ আদ্রাফের সামনে পড়তেই মেহের থমকে যায়। একবার নিজের দিকে তাকায় আর একবার আদ্রাফের দিকে তাকায়। জীবনে হয়তো এর থেকে জঘণ্য কোনো পরিস্থিতিতে আদৌ পড়েছে কি-না মেহেরের তা মনে হয় না। মেহেরের গায়ে কোনো ওড়না নেই। এটাই স্বাভাবিক। দুমিনিটের মাথায় যখন দুজনেই বুঝলো যে এখন তারা কোথায় আছে এটা বুঝতেই সাথে সাথে চিৎকার দিয়ে ওঠে দুজনে।
.
লজ্জায় মেহেরের মরে যেতে ইচ্ছে করছে। আর আদ্রাফও প্রচন্ড পরিমাণে অস্বস্তিতে পড়েছে । যখন বুঝলো যে মেহেরের গলার সাউন্ডটা চক্রবৃদ্ধিহারে বেড়ে যাচ্ছে আদ্রাফ সাথে সাথেই মেহেরের মুখ চেপে ধরে।মিহি কন্ঠে বলে ওঠে………..
.
—আরে থামো তো ! আমি চিল্লানো থামালাম তুমি থামছো না কেন?
.
মেহেরের মন চাচ্ছে আদ্রাফের মাথাটা ফাটিয়ে দিতে। একে তো উইথআউট শার্ট ছেলেটা ওর সাথে চিপ্কে আছে আবার অন্যদিকে ওর মুখ চেপে প্রশ্ন করে যাচ্ছে।ইশারায় আদ‍্রাফকে মুখটা ছাড়তে বললেই ছেড়ে দেয় আদ্রাফ।
.
মেহেরের এবার লজ্জা লাগছে। প্রচন্ড পরিমাণে লজ্জা লাগছে। সে তো চেয়েছিলো আদ্রাফের রাগ ভাঙগাতে । কিন্ত এ পরিস্থিতে যে সে পড়ে যাবে মেহের তা আন্দাজ করতে পারেনি।
.
—-তুমি এখানে কি করছো?
.
আদ্রাফের প্রশ্ন শুনে মেহের ওর দিকে তাকায়। আদ্রাফ ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে তার দিকে। মেহের কোনো উত্তর না দিলে আদ্রাফ মেহেরের কাছে এসে পড়ে। এমনিতেও আদ্রাফকে এমনভাবে দেখতে মেহের অভ্যস্ত না তাই কাঁপাকাপাঁ গলায় বলে ওঠে……….
.
—-একটু দূরে সরো প্লিজ ! এভাবে সামনে আসছো কেন?
.
মেহেরের কথায় আদ্রাফ ভ্রুক্ষেপ না করে মেহেরের দুপাশে দেয়ালে হাত দিয়ে নিজের কাছে আবদ্ধ করে নেয়। আদ্রাফের চোখে-মুখে লজ্জা , অস্বস্তি সবকিছু ছেড়ে এবার প্রখরতা ভর করেছে। আদ্রাফ মেহেরকে বলে ওঠে…………
.
—-আমি সরবো না। আগে বলো তুমি এখানে কেন? খুব তো বলেছিলে জীবনেও আমার কাছে আসবে না ; তাহলে?
.
—-আরে ওটাতো রাগের মাথায় বলে দিয়েছিলাম………(মুখ ছোট করে)
.
আদ্রাফ কিছু বলতে যাবে মেহেরকে এ অবস্থায় দেখে চোখ সরিয়ে ফেলে মেহেরের কাছ থেকে।পাশের থেকে টাওয়েল নিয়ে ওয়াশরুমে যেতে যেতে বলে ওঠে…………
.
—-তোমায় আমি পরে দেখছি।
আদ্রাফ সশব্দে ওয়াশরুমের দরজা লাগাতেই মেহের যেন এক স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ে।
,
,
,
,
ডাইনিং টেবিলে এত খাবারের বাহার দেখে আদ্রাফের মুখে অবাকের রেশ দেখা যাচ্ছে। আদ্রাফের বাবা বলে ওঠে……….
.
—-বাবাহ ! আজ তো দেখি আদ্রাফের সব পছন্দের খাবার বানানো হয়েছে।
.
—–মেহের বানিয়েছে।
.
তনু বেগমের উত্তর শুনে আদ্রাফ মেহেরের দিকে তাকায় । মেহের বিনিময়ে একটা মেকি হাসি দিতেই আদ্রাফ চোখ ফিরিয়ে নেয়। মেহেরের এতে খুব অপমানবোধ হয়েছে। মনে মনে সে বলে যে…….
.
—-এমনে জীবনেও আদ্রাফরে মানানো যাবে না। আমাকে আমার স্টাইলে ওরে মানাতে হবে।
.
মেহের এবার আদ্রাফের পায়ে সুড়সুড়ি দিতেই আদ্রাফের হাত থেকে গ্লাস পড়ে যায়। আদ্রাফ মেহেরের দিকে তাকাতেই মেহের ফ্লাইং কিস দেয় ওকে। যার কারনে আদ্রাফের গলায় যেন খাবার আটকে গিয়েছে। আবদুল্লাহ সাহেব বলে ওঠে………
.
—-কি হয়েছে আদ্রাফ? তনু ! ওকে পানি দাও তো।
.
যতবারই মেহেরের সাথে চোখাচোখি হচ্ছে মেহের ততবারই হয়তো ফ্লাইং কিস দিচ্ছে নয়তো চোখ টিপ দিচ্ছে। বেচারা আদ্রাফ তো না পারছে থাকতে আর না পারছে সরে আসতে। মেহের যে কি কারনে এমন করছে আদ্রাফ এটা ভালোমতোই জানে। এই মেয়ে যে ভবিষ্যতে ওকে জ্বালিয়ে মারবে এ নিয়েও ওর কোনো সন্দেহ নেই। মনে মনে আদ্রাফ বলে ওঠে……
.
—-কি ভয়ঙ্কর মেয়েরে বাবা !😩
.
.
,
,
,
~চলবে

অনুভূতির সুপ্ত কোণে পর্ব-১০

0

#অনুভূতির_সুপ্ত_কোণে
#কায়ানাত_আফরিন(মাইশা_
পর্ব:১০
.
মেহেরের প্রশ্নকে উপেক্ষা করে আদ্রাফ মেহেরের হাত ধরে সরাসরি ঘরের ভেতর প্রবেশ করে। আদ্রাফের এসব কাজ মেহেরের কেমন যেন মাথার ওপর দিয়ে যাচ্ছে। এদিকে পূবাও যেন হতভম্ব হয়ে গিয়েছে। আদ্রাফকে সে বলে ওঠে……..
.
—-আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া। আপনি ! এতরাতে?
.
—-ওয়ালাইকুম আসসালাম। কি করবো বলো , বউকে না দেখলে আমার আবার ঘুম আসে না।
মিটমিটিয়ে হাসে পূবা। আবার মেহেরের তো যেন বুকটা ধুকধুক করছে। না বলে মেহের এবাড়িতে এসেছে আর আদ্রাফ কিছু বলবে না তা অসম্ভব। আদ্রাফের শান্তশিষ্টতার চরম প্রমাণ এমনিতেও আজ দুপুরে ভালোমতো পেয়ে গেছে। আদ্রাফ পূবার সাথে কথা শেষ করে মেহেরের হাত টেনে নিয়ে যায় মেহেরের রুমে।
.
দরজা সশব্দে লাগাতেই মেহেরের এবার মনে হচ্ছে যেকোনো সময়ই যেন সে হার্ট আ্যটার্ক করে মরে যায়। আদ্রাফ তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিয়ে এগিয়ে আসছে মেহেরের দিকে। আদ্রাফকে এভাবে এগোতে দেখে মেহের এক পা এক পা করে পিছিয়ে যাচ্ছে। মনে শুধু একটা আতঙ্কই জেগে ওঠছে…….রাগের বশে থাপ্পড়-টাপ্পড় মারবে নাকি।
.
একসময় মেহেরের পিঠ পেছনে বুকশেলফের সাথে ঠেকে গেলেই থেমে যায় সে। আদ্রাফ একটা নিরাপদ দুরত্ব নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ওর সামনে। গহীন কন্ঠস্বরে সে বলে ওঠে……..
.
—-এখানে কি করছো?
.
—-মমমানে?
.
—-আমি বলছি তুমি এখানে কি করছো? আমার জানামতে এইসময় তো তোমার আমার রুমে থাকার কথা , তো?
.
.
আদ্রাফের প্রশ্নগুলো মেহেরের কাছে জটিল অঙ্কের মতো মনে হচ্ছে। ঠিক কি উত্তর দেবে এটা ভেবে পাচ্ছে না। তবুও একবুক সাহস নিয়ে সে বলে যে……….
.
—-আমার বাবার বাড়ি এটা। আমি যখন খুশি তখন আসতে পারবো।
.
মেহেরকে কথা শেষ করতে না দিয়েই ওর কাছে গিয়ে হাতদুটো শেলফের সাথে চেপে ধরে সে। মেহেরের সাহস যেন এবার উড়ে গিয়েছে স্বচ্ছ পদধূলির মতো। আদ্রাফের ওই গহীন কালো চোখে রয়েছে অজস্র রাগ। চিল্লিয়ে সে বলে ওঠে………..
.
—-তুমি যখন খুশি তখন আসতে পারবে না মেহু ! আর সাহস কি করে হলো তোমার without my permission তুমি এখানে আসছো? আমি কিছু বলিনা বলে উড়া শুরু করেছো ?
.
এতটুকু বলেই মেহেরের কাছ থেকে দূরে সরে আসে আদ্রাফ। কপালের সামনে পড়ে থাকা চুলগুলো একহাত দিয়ে পেছনে ফেলে অনবরত নিঃশ্বাস ফেলতে থাকে। আর মেহের তো মোমের ন্যায় দাঁড়িয়ে আছে । আদ্রাফ আবারো বলে ওঠে………
.
—-ফোন কোথায় তোমার?
.
—-মেহের নিশ্চুপ
.
—-ফোন কোথায় তোমার?
.
—-বব…বন্ধ।
.
—-মোবাইল কি বন্ধ রাখার জিনিস? চেক করে দেখো তো কতগুলা কল দিয়েছি but not reachable………….আমার অবস্থা খারাপ হয়ে গিয়েছিলো। বাড়িতেও আম্মুকে ছাড়া কাউকে বলোনি। ১২:০০ টার সময় যখন বাসায় পৌঁছে দেখি তুমি নাই আমার অবস্থা কি হয়েছিলো জানো। জামাকাপড় না পাল্টেই আমি এখানে এসে পড়েছি। আর তুমি? পায়ের ওপর পা তুলে মুভি দেখতে ব্যস্ত।
.
.
আদ্রাফের কথাগুলো মেহেরকে প্রতিবারই ভাবনায় ফেলে দেয়। এই প্রথম একজন মানুষের সাথে কথায় পেরে উঠবে না সে ; কখনোই পারবে না এটা মনে স্থির করে নিয়েছে সে।
.
—-তো এবার বলো। তোমায় কি শাস্তি দেবো?
.
আদ্রাফের এ কথা শুনে গায়ে যেন হিম ধরে গিয়েছে মেহেরের।আদ্রাফের ভ্রু নাচানোর দৃশ্য দেখে যেন আরও ভয়ের বিষয় মনে হচ্ছে মেহেরের কাছে। আমতা আমতা করে সে বলে ওঠে…….
.
—শ…শাস্তি? কিসের শাস্তি ? কোন শাস্তি? কেন শাস্তি?
.
এত প্রশ্ন শুনে আদ্রাফের ঠোঁটে বাকা হাসির সঞ্চার হয়।মেহের কাছে গিয়ে দুপাশে হাত রেখে গভীর দৃষ্টিতে দেখতে থাকে মেহেরের মায়াবী মুখটি।আদ্রাফ বলে ওঠে………..
.
—আমার না বলে এখানে আসার শাস্তি।
.
—-এ্যাহ ! তুমি বললেই হইলো। আমিও কিছু বলছিনা বলে মনে করোনা যে আমি আর সেই দস্যুরাণী থেকে ভিজে বিড়াল হয়ে গেছি। আমার যেখানে মনচায় সেখানে যাবো। তবুও তোমার কাছে আর যাচ্ছিনা হুহ।😤
.
—-ভেবে বলছো তো?
.
দাঁতে দাঁত চেপে মেহেরের কাছে এই প্রশ্নটি ছুড়ে মারে আদ্রাফ। মেহের মনে মনে একটু ভয় পেলেও তা প্রকাশ করেনা। প্রতিউত্তরে সে বলে ওঠে……
.
—-অবশ্যই ভেবে বলেছি……….আর ততুমি প্লিজ এখান যাও।
.
আদ্রাফ কোনো উত্তর না দিয়ে পাশের ফুলদানিটা উঠিয়ে ঠাস করে ফ্লোরে ছুড়ে মারে। নিজের চোখের দৃষ্টি স্থির করে রেখেছে সে মেহেরের চোখের দিকে। মেহেরও এতে একটু ভয় পেয়ে যায়। আদ্রাফের চোখের ভাষা সে বুঝে উঠতে পারছে না। কেমন যেন অনুভূতিশূণ্য হয়ে আছে আদ্রাফের চোখগুলো।
.
সাধারনত মানুষের অঙ্গভঙ্গি দেখে অনুমান করা যায় যে সে মানুষ মনে মনে কি ভাবছে। কিন্ত আদ্রাফের ক্ষেত্রে তা একেবারেই ভিন্ন। আদ্রাফ প্রকাশ করে এক বিষয় আর মনে আবদ্ধ রাখে অন্য বিষয় যা যেকোনো মানুষকেই বিভ্রান্তে ফেলতে পারে।
.
আদ্রাফ এবার বলে ওঠে……..
.
—ওকে ফাইন ! থাকো তুমি তোমার মতো।
.
মেহেরকে আর কোনো সুযোগ না দিয়ে আদ্রাফ চলে যায়। মেহের এখনও সেভাবেই দাঁড়িয়ে আছে। আদ্রাফের এভাবে চলে যাওয়াতে অজান্তেই ওর বেশ খারাপ লেগেছে।
.
.
.
.
রাতের গভীরতার সাথে সাথে মানুষের জমজমাট বাড়তে থাকে বিভিন্ন নাইট ক্লাবে। এমনি একটা ক্লাবে একের পর এক পেগ নিয়ে যাচ্ছে শাওন। হুইস্কির টেবিলটার সামনে অগোছালোভাবে বসে আছে সে। আশেপাশে অনেক যুবক-যুবতিরাই নিজেদের মধ্যে ডান্স করতে মগ্ন। আবার কেউ কেউ তো……….
.
হুইস্কির নেশাটা একেবারে মাথায় চড়ে বসেছে শাওনের।মেহের মেয়েটিকে শাওনের খুবই পরিচিত মনে হচ্ছে। যেন মনে হচ্ছে তার তিক্ত অতীতের সাথে কোনো যোগসূত্র আছে মেয়েটির। বারবার ওর চোখের সামনে এসে পড়ছে মেহের নামের ওই মেয়েটার থাপ্পড় দেওয়াটা।আদ্রাফ ওর কলার চেপে যেই কথাগুলো বলেছিলো সেগুলো মনে পড়তেই হুইস্কির গ্লাসটি চাপ দিয়ে ভেঙ্গে ফেলে সে। হাতের ভাঁজ দিয়ে চুয়ে চুয়ে রক্ত পড়ছে।
.
শাওনের ঠোঁটে এক বাকা হাসি ফুটে ওঠে। আনমনে সে বলে ওঠে………..
.
—মন তো চাচ্ছে এখনই দুজনকে শেষ করে দেই। কিন্ত এত সহজে ছাড়বো না তোমাদের। তিলে তিলে শেষ করবো দুজনকে।
.
হঠাৎ কোথা থেকে এক সুন্দরী মেয়ে হুট করে বসে পড়ে শাওনের কোলে। অন্য সবার কাছে বিষয়টি বিব্রতকর মনে হলেও নাইট ক্লাবে এ দৃশ্য খুবই স্বামাবিক।মেয়েটি মিহি স্বরে বলে ওঠে………
.
—-হ্যালো বেবি……..তোমার মতো এত সুন্দর ছেলে একা বসে আছে এটা কি ভাবা যায়? সঙ্গ দেবো নাকি…….(কানের কাছে গিয়ে) একরাতের জন্য?
.
শাওন সেদিকে ভ্রুক্ষেপ না করে আরও একটা পেগ নিয়ে বলে ওঠে……
.
—-Just stay away from me…….
.
মেয়েটি এবার আস্তে করে শার্টের বোতাম খুলতে থাকে শাওনের। শাওন মেয়েটির একহাত চাপা দিয়ে আবারো বলে ওঠে…..
.
—-I said just stay away from me……
.
এতটুকু বলেই মেয়েটাকে ধাক্কাদিয়ে সরিয়ে দেয় শাওন। মেয়ে বিষয়টিকে শাওন জাস্ট ঘৃণা করে। রাগে মুখ অনেকটাই লাল হয়ে গিয়েছে। এদিকে বারের সবাই অদ্ভুদভাবে তাকিয়ে আছে দুজনের দিকে। মেয়েটিও অপমানের কারনে নীরবে চলে যায় সেখান থেকে। শাওনের মনে শুধু একটাই আগুন ঝরছে…..
.
—-মেহের !
.
.
.
.
~চলবে

অনুভূতির সুপ্ত কোণে পর্ব-০৯

0

#অনুভূতির_সুপ্ত_কোণে🍂
#কায়ানাত_আফরিন(মাইশা)
পর্ব:৯
.
নিশার কন্ঠ শুনে আস্তে করে পেছনে ঘুরে শাওন নামের এই ছেলেটি। তার মুখমন্ডল মেহেরের কাছে কি একটা কারনে খুব পরিচিত মনে হলো। ছেলেটাকে শুধু ফর্সা বললে ভুল হবে ; একেবারে মারাত্নক রকমের ফর্সা। কালো রংয়ের শার্টে তা যেন আরও গভীরভাবে ফুটে উঠেছে। শার্টের হাতাটি ভাঁজ করে রাখার কারনে কব্জির একপাশে অস্পষ্টভাবে একটি ট্যাটু দেখতে পারছে মেহের। ডান হাতে রয়েছে একটা জ্বলন্ত সিগারেট।
.
এমন সুন্দর একটি ছেলের হাতে সিগারেট খুবই বেমানান মনে হচ্ছে মেহেরের কাছে। শাওনের তীব্র দৃষ্টি সরাসরি মেহের আর নাদিয়ার দিকে। মেহেরের দিকে তাকিয়ে নিশার উদ্দেশ্যে বলে ওঠে…….
.
—নিশা? Is this girl যার কথা গতকাল বলেছিলে?
.
—ইয়াহ্।
.
শাওন বাইক থেকে ওঠে মেহের আর নাদিয়ার কাছে দাঁড়ায়। বেচারা নাদিয়া তো কাচুমাচু করে দাঁড়িয়ে আছে। সাদাতের কাছে শুনেছে শাওন নামের এই ছেলেটির কথা। ভার্সিটির সিনিয়র স্টুডেন্ট আর পলিটিকার লিডারের ছেলে বলেই বড্ড রকমের উগ্র এই ছেলেটা।পকেট থেকে আর একটা সিগারেটের প্যাকেট বের করে একটা সিগারেট এগিয়ে দেয় নাদিয়ার কাছে।
.
—নাও। সিগারেট খাও।
.
মেহেরের মাথায় যেন রক্ত উঠে গেছে নাদিয়ার কাছে সিগারেট এগিয়ে দিয়েছে বলে। দাঁতে দাঁত চেপে বলে ওঠে………..
.
—ভদ্র ঘরের সন্তানেরা সিগারেট খায় না।
.
শাওন হেসে ওঠে। যেন মেহের খুব মজার একটা কথা বলেছে। কিছুক্ষণ পর মেহেরকে বলে……
.
—ভার্সিটির সিনিয়রদের সাথে বেয়াদবি করো এটা কোন ধরনের ভদ্রতা? ওকে ! তাহলে তুমি খাও।
.
মেহেরের কাছে সিগারেট এগিয়ে দিতেই মেহের কষে একটা চড় মারে শাওনকে। এ দৃশ্য দেখে সব স্টুডেন্ট যেন হতভম্ব হয়ে যায়। ইভেন শাওন নিজেও। এই শাওন চৌধুরিকে কেউ কখনো থাপ্পড় মারতে পারবে এটা ভাবতেই ফর্সা মুখ লাল বর্ণ হতে শুরু করেছে শাওনের।
.
এদিকে মেহেরেরও রাগে চোখ দিয়ে পানি ঝড়ছে। শাওন একটা জোরে লাথি দিয়ে পেছনে পার্কিংয়ে থাকা নিজের বাইকটা ফেলে দেয়। ওর মন চাচ্ছে এই মেহেরকে জাস্ট খুন করে ফেলতে। রাগে চিল্লিয়ে বলে ওঠে………
.
—তুমি শুধু মেয়ে বলেই তোমায় ছেড়ে দিলাম । নাহলে এক্ষুণি জান কবজ হয়ে যেত তোমার।
.
.
.
—–কি হচ্ছে এখানে?
.
আদ্রাফের কন্ঠ শুনতেই চোখ-মুখ শুকিয়ে গিয়েছে মেহেরের। আদ্রাফ বারবার বলেছিলো ভার্সিটিতে কোনো ঝামেলা না করতে। কিন্ত এখানে তারই বা কি দোষ। শাওন ওকে সিগারেট অফার করেছে এটা ভাবতে আর নিজেকে সামলিয়ে ওঠতে পারেনি মেহের।
.
পেছনে ঘুরে দেখে আদ্রাফ জিজ্ঞাসু চোখে তাকিয়ে আছে সবার দিকে। মেহের নিজের শুষ্ক ঠোঁটজোড়া হালকা নাড়িয়ে বলে…….
.
—আদ্রাফ তুমি?
.
—হু আর ইউ?
.
মেহেরের কথার মাঝখানে নিশা আদ্রাফকে প্রশ্ন করায় থমকে যায় মেহের।আদ্রাফ তখনও তাকিয়ে আছে মেহেরের দিকে। নিশার প্রশ্ন উপেক্ষা করে মেহেরকে আবারও প্রশ্ন করে……….
.
—কি হয়েছে মেহু?
.
——শাওন নামের এই ছেলেটি আমায় আর নাদিয়াকে সিগারেট অফার করেছিলো। আমি না করা সত্বেও উল্টোপাল্টা কথা বলে যে আমরা নাকি তাদের সাথে বেয়াদবি করেছি যেমন কিছুই হয়নি। তাই আমি তাকে চড়…….
.
মেহের নিজের কন্ঠস্বর মিলিয়ে ফেলতেই আদ্রাফের চোয়াল শক্ত হয়ে যায়। কারন এসব উগ্রতা আদ্রাফের কাছে ঘৃণ্য এক বস্তু। কিন্ত এখন এই পরিস্থিতিটা নষ্ট করতে চায় না সে। তাই নিজের রাগটাকে দমিয়ে শাওনের কাছে দাঁড়ায় সে।
.
—-এরকম পাব্লিক প্লেসে একটা মেয়েকে সিগারেট অফার করলে যে থাপ্পড় খাবে এটাই স্বাভাবিক। আমি মানছি ওর রাগ অনেক বেশি বাট নেক্সট টাইম ওর সাথে আর এমন না করলেই হবে কেমন?
.
রাগে মুখন্ডল লাল বর্ণ ধারন করেছে শাওনের।ক্ষীপ্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আদ্রাফের দিকে যেন পারলে এই মুহূর্তেই তাকে শেষ করে ফেলবে। দাঁতে দাঁত চেপে সে বলে ওঠে,
.
—কে হও তুমি সাফাই দেওয়ার?
.
আলতো হাসে আদ্রাফ। শাওনের চোখে চোখ রেখে বলে ওঠে……
.
—She is my life partner…….my everything……..
.
—-তাহলে বলে দিও তোমার লাইফপার্টনারকে। শাওন চৌধুরিকে মারার দুঃসাহস দেখিয়েছে সে। এত সহজে ছাড়বো না ওকে।
.
শাওননের এই কথাটা বলার সাথে সাথেই ওর কলার চেপে ধরে আদ্রাফ। আদ্রাফ বরাবরই রাগ প্রকাশ করতে অপছন্দ করে কিন্ত এবার নিজেকে দমিয়ে রাখতে পারেনি সে।কড়া গলায় বলে ওঠে ,
.
—-এরকম কিন্ত কল্পনাতেও আনবে না। আমাকে যতটা শান্ত মনে হচ্ছে ততটাই ভয়ঙ্কর আমি। সো স্টে আওয়ে ফ্রম হার। আদারওয়াইজ ইউ উইল নেভার লিভ।
.
এতটুকু বলেই মেহের আর নাদিয়াকে নিয়ে আসে সেখান থেকে। শাওনকে এতটা নীরব দেখে নিশা , রাহাত আর বাকিরা প্রচন্ড পরিমাণে ভয় পাচ্ছে। কারন শাওন যে এত সহজে ওদের ছাড়বে না এটা ভালোমতোই বুঝে নিয়েছে সবাই। শাওন আনমনে বলে ওঠে…….
.
—শাওন চৌধুরির নজরে পড়েছো তোমরা। এত সহজে নিস্তার পাবে না।
.
.
.
.
বাতাসের পাল্টা প্রবাহের মধ্য দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে গাড়িটা। বেশ হাইস্পিডেই এগিয়ে যাচ্ছে। রাগে টগবগ করতে থাকা মেহের এখন চুপসে বসে আছে শুধুমাত্র আদ্রাফের কারনে। আদ্রাফ ভয়ঙ্করভাবে রেগে আছে। রাগের কারনে কপালের আর গলার রগ কেমন যেন ফুলে আছে। আদ্রাফ যে এতটাও রাগতে পারে মেহেরের তা কল্পনার বাইরে ছিলো।
.
কথাটা আসলেই সত্যি যে , শান্ত মানুষের রাগ অনেক বেশি। সহজে তারা রাগে না কিন্ত যখন রাগে ; তখন তো……….
.
এখন আর ভাবার মতো মনমানসিকতা মেহেরের কাছে নেই।একটু সাহস কুড়িয়ে সে বলে ওঠে……..
.
—আদ্রাফ?
.
আদ্রাফ তখনও গাড়ি চালাতে মগ্ন।মেহের এবার বলে যে……
.
—-আমি বুঝছি না তুমি এত রাগ করছো কেন?
.
এবার গাড়ি থামিয়ে ক্ষীপ্র চোখে আদ্রাফ তাকায় মেহেরের দিকে। একপ্রকার গর্জে বলে ওঠে………..
.
—আর একটা প্রশ্ন করলে তোমার যে কি অবস্থা করবো ভাবতেও পারবে না তুমি? কবে জানি তোমার চিন্তায় আমায় মরেই যেতে হবে। তোমায় আমি বারবার বলেছি যে কেও কিছু বললে হুটহাট রেগে যেওনা আর তুমি?
.
—ওই ছেলে আমায় সিগারেট খেতে বলেছে আর তুমি……
.
—থামো।(ধমকে বলে ওঠে) ওই সিচুয়েশনে যে কেউই এমন করবে। আর ঘটনাটির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত নাদিয়া আমায় সবই বলেছে।(একটু থেমে) কি বলেছিলাম আমি? মনে আছে? তোমায় আমি বারবার বলেছি যে এইসব সিচুয়েশনে জড়াতে না। ক্যান্টিনে তাদের কথা শুনিয়েছো ভালো কথা কিন্ত আজ কেন ওদের সাথে ড্যাং ড্যাং করে চলে গেলে? যেহেতু ওরা ভার্সিটির কোনো প্রফেসরকে ভয় পায়না তাহলে বুঝে নিবে হয়তো ওদের ক্ষমতা আছে বলেই এমন করেছে।
আর তারা চাইছে তুমি নিজের থেকে ওদের সাথে ঝামেলা করো যাতে তোমায় সহজেই ভার্সিটি থেকে বের করে দিতে পারবে। এতটুকু তুমি বুঝনা?
.
মেহের চুপ হয়ে আছে। আসলেই তো ! এই কথাটা ওর মাথায়ই আসেনি। কত বড় একটা বোকামি করে ফেলেছে এটা বুঝেই মেহের থম মেরে রইলো। আদ্রাফ গাড়ির সিটে হেলান দিয়ে ক্রমাগত চেষ্টা করছে নিজের রাগকে নিয়ন্ত্রণ করার। এই প্রথমবার সে ব্যর্থ হলো। শাওনের মেহেরের উদ্দেশ্যে সেই কথাগুলো কানে ভেসে আসতেই বারবার চোখ-মুখ শক্ত হয়ে আসছে ওর।
.
শেষমেষ মেহেরের বাহু চেপে নিজের কাছে নিয়ে আসে আদ্রাফ। এতটাই কাছে যে একে অপরের নিঃশ্বাস গুণতে পারবে দুজনে। আদ্রাফ এবার কড়া গলায় বলে ওঠে………
.
—একটাবার আমায় শুধু বলো আমার কথা শুনলে কি এমন প্রবলেম হয় তোমার? কেন আমার কথা তুমি শুনো না। বিয়ের পর থেকেই দেখে আসছি তোমার এই উদ্ভট কাজগুলো। আর আজ? আজ ওই কে না কে তোমার নামে………..
.
এতটুকু বলেই থেমে যায় আদ্রাফ। এই প্রথম মেহেরের চোখ দিয়ে নোনাজল গড়িয়ে পড়ছে কিন্ত আদ্রাফ তা দেখে তাচ্ছিল্যের হাসি হাসে।
.
—আজ কান্না করে কি আর হবে? ভেবেছিলাম তুমি যেমনই হও না কেন একসময় আমায় মেনে নিবে বাট না। (এতটুকু বলেই কিছুক্ষণ থেমে থাকে)
তোমায় কিছু বলাই বেকার। এখন বাসায় চলো।
.
.
.
.
মেহেরকে বাড়ির সামনে নামিয়ে দিয়ে আদ্রাফ কোনো কথা না বলেই অফিসে চলে যায়। এবার মেহেরের অভিমান হয়েছে। প্রচন্ড রকমের অভিমান। সে মানছে যে আদ্রাফের কথা না শুনে ভুল করেছে সে তাই বলে এত জঘণ্য ব্যবহার করবে সে? মেহেরের বাহুজোড়া আদ্রাফ এত ক্রুড়ভাবে চেপে ধরেছিলো যে এখন ব্যাথা অনুভব হচ্ছে মেহেরের।
.
নবীনবরণ উপলক্ষে ভার্সিটি কিছুদিন বন্ধ থাকবে তাই রুমে গিয়ে কাপড় গুছিয়ে নেয় সে নিজের বাড়ি যাওয়ার জন্য। এই আদ্রাফের সাথে এখন থাকবেনা সে। তনু বেগমকে বলেই একাই সে চলে যায় নিজের বাড়িতে।
.
.
.
.
বিকেলের দিকে মেহেরের বাবা-মা, বোন হঠাৎ নিজের আদরের মেহেরকে দেখে ঘরে যেন খুশির জোয়ার বসিয়ে দেয়। যদিও সবাই জিজ্ঞেস করেছিলো যে আদ্রাফ কোথায় মেহের বরাবরই নিপুণতার সাথে সেই প্রশ্ন এড়িয়ে দিয়েছে।
.
রাত এখন প্রায় সাড়ে ১২টা । নিজের ছোট্ট বোন পূবার সাথে কে.জি.এফ মুভিটা খুব মনোযোগ দিয়ে দেখছে মেহেরর। সামনের টেবিলটাতে অগোছালোভাবে পড়ে রয়েছে চিপস-কোকাকোলা আর রেড ভেলভেট কেকের প্যাকেট।পুরা মুভিটাই হচ্ছে টুইস্ট দিয়ে ভরপুর। একটা সিন মিস করলেই কিছু বোঝা যাবে না তাই এত মনোযোগ দিয়ে দেখছে দুজনে। হঠাৎ অনবরত কলিংবেল বেজে উঠতেই সাথে সাথে মেহের চলে যায় দরজা খোলার জন্য। আধঘন্টা আগে পিৎজা হাট থেকে একটা পিৎজা অর্ডার করেছিলো সে।
.
কিন্ত দরজা খোলার সাথে সাথেই মেহের যেন অবাকের চূড়ান্ত পর্যায়ে চলে গিয়েছে। আদ্রাফ গহীন দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মেহেরের দিকে। কালো সিল্কি চুলগুলো খনিকটা অগোছালো…….শার্টের হাতাদুটো ফোল্ড করে এক হাত পকেটে ঢুকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
.
মেহের একটা শুকনো ঢোক গিলে বলে…….
.
—তুমি?
.
.
.
.
~চলবে

অনুভূতির সুপ্ত কোণে পর্ব-৭+৮

0

#অনুভূতির_সুপ্ত_কোণে🍂
#কায়ানাত_আফরিন(মাইশা)
পর্ব:৭+৮
.
সন্ধের প্রহর কেটে রাত নেমেছে। ফাল্গুনের মৃদু বাতাসে ছেয়ে যাচ্ছে সজীবতা। আর মেহের? সে তো পড়ার নাম নিয়ে আনমনে ব্যস্ত তার কিউট হাজবেন্ট আদ্রাফকে দেখতে। আদ্রাফ বারান্দায় দড়িয়ে মোবাইলে কারও সাথে গুরুত্ব আলাপনে মশগুল।
.
মেহের একদিকে কলম কামড়াচ্ছে আর অন্যদিকে দেখছে আদ্রাফের প্রতিটা কার্যকলাপ। আদ্রাফের কথা বলতে বলতে মেহেরের দিকে যেই না চোখ পড়লো সাথে সাথেই সে যেন ভড়কে যায়।
.
কেননা মেহেরের এমন দৃষ্টিতে ছেলে হোক বা মেয়ে যে কেউই একটু অপ্রস্তুত হয়ে পড়বে এটাই স্বাভাবিক। আদ্রাফ ওর কাছে গিয়ে চুটকি বাজানোর সাথে সাথেই মেহেরের যেন জ্ঞান ফিরে। মেহের দেখে আদ্রাফ চোখ দুটো ছোট করে তাকিয়ে আছে তার দিকে। মেহের এবার বসা থেকে উঠে পড়ে।আমতা আমতা করে বলে ওঠে……..
.
—আরে ততুমিতো বারান্দায় ছিলে। এখানে কখন আসলে।
.
চোখ ছোট ছোট করা অবস্থাতেই আদ্রাফ কড়া গলায় বলে ওঠে…..
.
—পারলে তো নিজের চোখ দিয়ে আমায় খেয়ে ফেলছিলে। তো খেয়াল রাখবে কখন যে আমি বারান্দা থেকে রুমে কখন আসলাম?
.
আদ্রাফ কথাটা বলছে আর এগিয়ে যাচ্ছে মেহেরের দিকে।আর মেহেরও সমানতালে পেছাচ্ছে। হঠাৎ আদ‍‍্রাফের এমন করাতে একটু না অনেকটাই অবাক মেহের যে বাকশূণ্য মনে হচ্ছে নিজেকে।
দেয়াল ঘেঁষে মেহেরকে কাচুমাচু হয়ে দাঁড়াতে দেখে আদ্রাফ ঠোঁট কামড়ে হাসে। আর মেহের তো এতক্ষণ আদ্রাফ কে দেখতে থাকলেও এখন যেন তার চোখদুটো নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। আদ্রাফ হালকা ঠোঁট নাড়িয়ে মিহি গলায় বলে ওঠে….
.
” হাতের সামনে বই থাকতেও তুমি বারবার আমার দিকে তাকাচ্ছো তো এখন তো আমি তোমার সামনেই আছি। এখন নাহয় আমার দিকে মনভরে তাকাও।”
.
মেহের আমতা আমতা করে বলে ওঠে…
.
—-কককই? এমন ককিছুই না।
.
হঠাৎ মেহেরের মুখের খুব কাছে আসে সে। মেহেরের তো দম যায়,যায় অবস্থা। এমনিতেও আদ্রাফের ঠোঁট কামড়ানো দেখে মেহেরের শ্বাস যেন বেরিয়ে এসেছে।আবার ওর উষ্ণ নিঃশ্বাস এর সংস্পর্শে এসে মেহেরের মনে যেন খেলা করছে অদ্ভুত কিছু অনুভূতি।
.
একটু দম নিয়ে মেহের আদ্রাফের মুখের দিকে তাকায়। আদ্রাফ ঠোঁট কামড়ে তাকিয়ে আছে মেহেরের দিকে।যার কারনে মেহের আবার নিচে তাকিয়ে ঘনঘন নিঃশ্বাস ফেলা শুরু করে। আদ্রাফ মেহেরের এরকম অবস্থা দেখে বলে ওঠে………
.
—কি হলো মেহু?বললাম তো। এখন মনভরে দেখতে পারো।
.
মেহের বারবার চাইছে আদ্রাফ এর থেকে দূরে সরে আসতে কিন্ত আদ্রাফও তো কম কিছু না ; সে তো বারবার ব্যস্ত মেহেরকে অস্বস্তিতে ফেলতে।
.
আদ্রাফের ঠোঁট কামড়ানো দেখে মেহের এবার ওর টিশার্টের কলার ধরে নিজের কাছে নিয়ে এসে সাথে সাথেই ঠোঁটে ঠোঁট মিশিয়ে দেয়। আদ্রাফের শরীরে সাথে সাথেই যেন বড়সড় এক বিদ্যুতের প্রবাহ বয়ে গেল। মেহের চোখ খিচে আদ্রাফের ঠোঁটে নিজের স্পর্শ দিয়ে যাচ্ছে আর আদ্রাফ যেন এখন অনুভূতিহীন হয়ে পড়েছে।
.
বেশ কিছুক্ষণ পরই আদ্রাফের ঠোঁটযুগল থেকে সরে আসে মেহের। দুজনেই এখন সমানতালে হাপাচ্ছে। বাইরে ফাল্গুনী হাওয়ার ঠান্ডা হাওয়ার সাথে ভেসে আসছে বাগানে বড় গাছে থাকা বকুল ফুলের মৃদু সুবাস। মেহেরের এমন স্পর্শে আদ‍্রাফ পরপর দুবারই বিভ্রান্ত হয়েছে। সাথে মেহেরও। সে এখনও দাঁড়িয়ে আছে দেয়াল ঘেষে।
.
আদ্রাফ মিহি কন্ঠে বলে ওঠে……….
.
—কি ছিলো এটা?
.
আদ্রাফের এত স্বতস্ফূর্ত প্রশ্নে মেহের শুধু পারছে না বারান্দা থেকে লাফ দিয়ে পালিয়ে যেতে। সে তো মনে মনে ভাবছে যে তারই বা কি দোষ? আদ্রাফের ওই ঠোঁটজোড়া অনেকক্ষণ ধরেই তাকে চুম্বকের মতো টানছিল। আর শেষ পর্যন্ত সে আর নিজেকে দমিয়ে রাখতে পারেনি।
.
আদ্রাফ আর মেহের দুজনেইএখন নিশ্চুপ। এরকম কিছু দুজনের কাছেই সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত ছিলো।নীরবতা কাটিয়ে মেহের আমতা আমতা করে বলে ওঠে…….
.
—তততুমি আমার সামনে আর ঠোঁট কামড়াবে না।
.
—মানে?
.
—তোমাকে বলেছি আমার সামনে ঠোঁট কামড়াবে না মানে ঠোঁট কামড়াবে না ব্যস। নাহলে আবারও এই ভুল হয়ে যাবে।
.
—আমি নাহয় ঠোঁট কামড়ানো অফ করলাম অন্য ছেলেরা যদি এমন করে তাহলে তুমি কি তাদেরকেও কিস করবে?
.
এবার হতভম্ব হয়ে যায় মেহের। আদ্রাফ অদ্ভুদভাবে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। মেহের বিরক্তিসুরে বলে ওঠে…….
.
—ধ্যুর। অন্যদের কিস করতে যাবো কেন? অন্য ছেলেরা আর তুমি?তুমি তো………….
.
এতটুকু বলেই সে থেমে গিয়েছে। আর কিছু বলার মতো ভাষা মেহেরের কাছে নেই। আদ্রাফ নিজের কপালের মধ্যে আছড়ে পড়ে সিল্কি চুলগুলো পেছনে ঠেলে দিয়ে কড়া দৃষ্টি নিক্ষেপ করে মেহেরের দিকে।
.
—পড়াশুনা বাদ দিয়ে ভালোই তো বাদরামি করা শিখেছো। আগে ফাঁকিবাজি করেছো অনেক কিন্ত এখন আর না। আগে তুমি মেহের আহমেদ ছিলে বাট এখন তুমি আদ্রাফ এহসানের ওয়াইফ মেহের এহসান।
(মেহেরের কানে ফিসফিসিয়ে)সো পড়াশুনার একটুও যেনো এদিক ওদিক না হয় ! আর আমি যে তোমার কাছে স্পেশাল তা আমি ভালোমতই জানি তাই এটা আর describe করতে হবে না।
.
মেহের এখন পাথরের ন্যায় দাঁড়িয়ে আছে আদ্রাফের কথা শুনে। এই ছেলেটা এমন কেন? সবসময় কেমন করে যেন কথার জালে ফাসিয়ে দেয় মেহেরকে।
.
—দুপুরে খাবার খেয়েছিলে?
.
আদ্রাফ জিজ্ঞেস করে মেহেরকে। মেহের পড়েছে বিপাকে। কারন ভার্সিটির সেই ঘটনার পর জেদ করে কিছুই খায়নি সে। একটু সাহস করে সে বলে….
.
—না……..
.
—এখনও কি ছোট বাচ্চা তুমি ? খাবারে উদাসীনতা আমি just অপছন্দ করি। আর এসব ব্যাপারে খামখেয়ালি করলে কি হবে মেহু?
.
মেহের চুপচাপ আদ্রাফের কথা শুনে যাচ্ছে। আদ্রাফ এবার বলে ওঠে…..
.
—এখনি খেতে চলো।
.
—কিন্ত খাওয়ার সময় তো এখনও হয়নি।
.
—এতই যখন সময় মানতে তবে দুপুরের খাবারটাও টাইম টু টাইম খেয়ে ফেলতে। তাহলে পড়ার সময় আমার রূপ গিলতে হতো না😒…..চলো!
.
মেহের বুঝে গিয়েছে এই ছেলেটা আস্ত একটা নাছোড়বান্দা। যা বলবে তা করেই ছাড়বে। মেহেরের কাছে এটাই কেমন যেন এক অনুভূতি। কারন আদ্রাফের এসব ছোটখাটো কেয়ারিং অজান্তেই অনেক ভালোলাগছে ওর কাছে।
আদ্রাফের প্রতিটা কাজ যেন মনেপ্রাণে তার মেহুর জন্যই উজাড় করা এমনটাই মনে হয় মেহেরের। হয়তো এভাবেই চলতে থাকবে দুজনের অনুভূতির আদান-প্রদান।
.
.
******
.
ক্লাস শেষ করে মেহের আর নাদিয়া ক্লাস থেকে বের হতেই বাধাঁ হয়ে দাঁড়ায় গতকালকের ওই সিনিয়র ছেলেমেয়েরা। চুইংগাম চাবানো মেয়েটি আজ জিন্স প্যান্ট আর ইয়োলো টপ পড়েছে। একপাশে ফ্রেঞ্চ বেণী ঝুলানো। আর ছোট চুলের মেয়েটি আনমনে হাতে কেটস ক্রেডেল খেলছে। পেছন থেকে একটি ছেলে বলে ওঠে…….
.
—ওই নিশা ! পিচ্ছি দুইটার সাহস আছে বলতে হবে। আমিতো ভাবছিলাম এরা মনে হয় ভয়ে আর ভার্সিটি আসবে না।
.
—এগুলারে যদি এত সহজে ভয় দেখানো যেতো তবে কি আর আমরা জুনিয়রদের ক্লাসে আসতাম রাহাত? I like them specially this blue dress girl…….
.
মেহেরকে উদ্দেশ্য করেই বলেছে ফ্রেঞ্চ বেণী করা নিশা নামের এই মেয়েটি।রাহাত নামের ছেলেটার পাশে দাড়িয়ে থাকা আরেকজন বলে ওঠে………
.
—ওদের চাহলে নিয়ে যাই রাহাত।
.
—কোথায় যাবো?
.
ক্ষীপ্ত গলায় প্রশ্ন করে মেহের। কেটস ক্রেডেল খেলা করা মেয়েটি বলে ওঠে……….
.
—আমাদের গ্যাং লিডারের কাছে। যার রূপে সবাই মুগ্ধ হলেও টু মাচ ডেন্জেরাস ম্যান। তোমার মতো দশজনকে এই ভার্সিটি থেকে বের করে দিতে পারবে। ভয় পেলে নাকি?
.
মেহের তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলে………..
.
—ভয় আর আমি? এত সহজ না আপু। আমিও দেখতে চাই এমন কি ডেন্জেরাস তোমাদের সো কলড গ্যাং লিডার।
.
মেহেরের এত সাহস দেখে প্রতিটা স্টুডেন্টই যেন ধাপে ধাপে অবাক হচ্ছে। যেখানে থার্ড ইয়ার ফোর্থ ইয়ারের স্টুডেন্টরাই ওদেরকে ভয় পায় সেখানে মেহের এত কনফিডেন্ট কিভাবে? কেউ তো আবার বলেও দিয়েছে যে……….
.
—এখনও ওদের চিনে না তাই এত সাহস দেখাচ্ছে। একবার ওদের ঝামেলায় পড়ুক……….তারপর বুঝবে আসল মজা।
.
.
ক্যান্টিনের অপরপ্রান্তে বাইক পার্কিং স্পটে নাদিয়াকে নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে মেহের। তার পিছেই রয়েছে ওই ছেলেমেয়েগুলো।পার্কিং সাইটে একজনকে আনমনে সিগারেট খেতে দেখে মেহেরের কেমন যেন গা গুলিয়ে যাচ্ছে। মানুষটা যে কত বড় অসভ্য হতে পারে তারই দৃষ্টান্ত দিচ্ছে পাব্লিক প্লেসে এমন সিগারেট খাওয়া।
.
ওই ছেলেটার পেছন দিকটাই মেহের আর নাদিয়া দেখতে পারছে কারন সে সামনের দিকে ঘুরে বসে আছে। নিশা এবার বলে ওঠে……….
.
—শাওন? ওদেরকে নিয়ে এসেছি।
.
এক অন্যকারনেই মেহেরের মনটা কেমন যেন আনচান করছে। তার মনে হচ্ছে যে হয়তো এই মুহূর্তে তার জীবনের বড় একটা পরিবর্তন আসতে চলেছে। আসলেই কি তাই হবে?
.
.
.
.
~চলবে