Sunday, July 27, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1534



স্যার পর্ব-৮+৯

0

#স্যার
#পর্ব_৮
লেখনীতে — আফরোজা আক্তার

রুশার নজর আটকে আছে সামনে বসা মানুষটার দিকে। আজ প্রায় ৫ দিন পর সে মানুষটাকে দেখছে। বেশ অবাক সে। অবাক হওয়ার কারণ আছে। তাদের কাছ থেকে এক সপ্তাহের ছুটি নেওয়া হয়েছে। আজ তো সপ্তম দিন। তবে কি তিনি আজ বাসায় যাবেন। রুশার খুব ইচ্ছা হচ্ছে উঠে গিয়ে তার সাথে কথা বলতে।
ফায়াজকে নিজের সামনে দেখে নিজেকে আটকে রাখা খুব কষ্টের হচ্ছে রুশার। ফায়াজ বলে গিয়েছিল, সে এক সপ্তাহের জন্য কোনো একটা কাজে ঢাকার বাহিরে যাবে। তাহলে এখানে কী করছে সে? প্রশ্নটা মনে ঘুরঘুর করছে।
রুশা তার বন্ধুদের সাথে ফুড কোর্টে এসেছিল। এসেই সে ফায়াজকে দেখতে পায়। একা বসে থাকা ফায়াজকে দেখে লোভ সংবরণ করা খুব কষ্টের হচ্ছে। এমতাবস্থায় এখানে বসে থাকা তার পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। বন্ধুদের কিছু একটা বলে রুশা সামনের দিকে অগ্রসর হয়।
“স্যার, আপনি এখানে?”
পাশ থেকে কারো কথা শুনে ফায়াজ দাঁড়িয়ে যায়। ঘাড় ঘুরিয়ে তাকিয়ে রুশাকে দেখে চরম আকারে অবাক হয় সে। রুশা, এখানে! কীভাবে কী? এইটুকুন মেয়ে বসুন্ধরায় করে কী? কার সাথে এসেছে? দেখে মনে হচ্ছে কলেজ থেকে এসেছে কারণ, শরীরে এখনো কলেজ ড্রেস। ফায়াজ উল্টো প্রশ্ন করে,
“কী ব্যাপার! তুমি কার সাথে এসেছো এখানে?”
“কেন, আমি আসতে পারি না?”
“এত দূরে একা একা এসেছো?”
“নাহ। আপনার মাথাটা পেছনে ঘুরান। দেখেন আমার সাথে আমার সাঙ্গ-পাঙ্গরাও এসেছে।”
ফায়াজ রুশার কথা শুনে পেছনে তাকিয়ে দেখে সত্যিই পেছনের টেবিলে কয়েকজন ছেলেমেয়ে বসে আছে। ফায়াজ মজা করেই বলে,
“এদের মধ্যে তোমার রাসিন কোনটা?”
ভ্রু জোড়া কুঁচকে রুশা প্রশ্ন করে,
“আমার রাসিন?”
ফায়াজ বাকা হাসি দিয়ে বলে,
“হ্যাঁ, রাসিন। তোমার রাসিন। তোমার দোস্ত রাসিন। এদের মধ্যে কোনজন?”
“আপনি এত কিছু কেমনে জানেন স্যার?”
“ছাত্রীর খোঁজ খবর রাখা লাগে।”
“তবে ছাত্রীর মনের খোঁজ খবরও রাখা উচিত। তাই নয় কি?”
রুশার কথা শুনে ফায়াজ চুপ হয়ে যায়। রুশার খুব অভিমান হচ্ছে। স্যার তাকে এইভাবে না বললেও পারতো। ইচ্ছে হচ্ছে দুটো কথা শুনিয়ে দিতে। পেটের কথাগুলো মুখ দিয়ে ছাড়তে হবে। নয়তো সে টিকতে পারবে না। যেই ভাবা সেই কাজ।
“রাসিন তার গার্লফ্রেন্ড ইশাকে নিয়ে ব্যস্ত। আর হ্যাঁ, খোঁচা মারার প্রয়োজন নেই। রাসিন শুধুই আমার বন্ধু।”
“হ্যাঁ, শুধুই বন্ধু।”
“জি, শুধুই বন্ধু। আপনি জানেন না আমি আপনাকে ভালোবাসি।”
“আবারও সেই কথা?”
“চলুন বসি এখানে।”
“একদমই না।”
“কেন?”
“তুমি যাও। তাদের সময় দাও।”
“স্যার, ভালোবাসি আপনাকে আমি।”
“ভালোবাসার মতো বয়স তোমার হয়নি। আগে বড় হও এরপর না হয় বোলো।”
রুশা চুপ হয়ে যায়। এতটা অবহেলা হয়তো এই জীবনে কেউ তাকে করেনি। যতটা অবহেলা ফায়াজ তাকে করছে। তবুও সবটা চেপে যাচ্ছে সে, কারণ সে উপলব্ধি করতে পেরেছে যে সে ভালোবাসে তার স্যারকে। পরিসংখ্যানের সূত্র বোঝাতে গিয়ে স্যার তাকে মায়ায় জড়িয়ে দিয়েছে। সূত্র মাথায় নেই কিন্তু ভালোবাসা মাথায় রয়ে গেছে। রুশা আবারও বেহায়া হয়।
“স্যার, আমার ভালোবাসাটা চোখে পড়ে না আপনার?”
ফায়াজ বিরক্ত হচ্ছে।
“এতটা বেহায়া কীভাবে হও। নিজের স্যারকে প্রপোজ করো।”
“প্রপোজ করিনি তো। ভালোবাসি, এটা বলেছি।”
“আমি আগামীকাল তোমার বাসায় যাবো। তোমার মা’কে সবটা বলবো। এরপর দেখি তিনি কী বলেন।”
রুশার কলিজায় ধক করে এক কামড় পড়ে। রুশা ভয় পেয়ে যায়। মায়ের হাতে মা’র খাওয়ার ভয় না। ভয় পায় যদি স্যারকে সে হারিয়ে ফেলে। রুশা তখনই বলে,
“স্যরি স্যার। আর হবে না।”
“আর কতবার স্যরি শুনবো?”
“এবারই লাস্ট।”
“বাসায় যাও। পড়াগুলো সব শেষ করে রাখবে। নয়তো তোমার খবর আছে।”
রুশা চলে যায়। চোখে পানি তার। ব্যাগটা নিয়ে সোজা বের হয়ে যায় বসুন্ধরা থেকে। কাউকে ভালোবাসা হয়তো অপরাধ। নয়তো কাউকে ভালোবাসি বলার পরেও এইভাবে মুখ ফিরিয়ে নেওয়া যায়?

পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায়………………

#স্যার
#পর্ব_৯
লেখনীতে — আফরোজা আক্তার

দেখতে দেখতে অনেকগুলো মাস অতিবাহিত হয়ে গেছে। রুশার পরীক্ষা শেষ হয়েছে। ভালো রেজাল্ট হয়েছে তার। জিপিএ ফোর পয়েন্ট এইট জিরো পেয়ে কলেজ জীবনে ইতি টানে সে। খানিকটা বদলেছে। উহু, খানিকটা বলা চলে না, পুরোটাই বদলে গেছে। আগের মতো আর তেমন চঞ্চলতা নেই নিজের মাঝে। স্যার যে তার চলে গেছে।
প্রায় দুই বছর আগের সেইদিনটা কখনো ভুলতে পারবে না রুশা। তার কোমল হৃদয় যখন স্যারের ভালোবাসা পাওয়ার জন্য মুখিয়ে থাকতো, স্যার তখন কঠিন কঠিন সূত্র আর থিওরি দিয়ে তার ভালোবাসাকে নুয়ে রাখতো। যেই পরিসংখ্যান তার কাছে এত কঠিন ছিলো সেই পরিসংখ্যান আজ তার কাছে পানির মতো সহজ। তবে পরিসংখ্যানের সূত্র শেখানো সেই মানুষটা আর তার আশেপাশে নেই। বলা যায় এক রকম গলা ধাক্কা দিয়ে বের করে দিয়েছে তাকে সেই মানুষটা।
আর সেই রাতটা হয়তো মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ভুলবে না যেদিন স্যার নিজের মুখে তার মা’কে কিছু কথা বলেছিলো।
“আন্টি, আপনি কি জানেন আপনার মেয়ে আমায় প্রায় প্রতিদিনই ভালোবাসি এই শব্দটা বলে। আমি এতদিন বলিনি, ভেবেছিলাম ও শুধরে যাবে। কিন্তু নাহ, ও শুধরানোর মতো মেয়ে না। আমি তার স্যার হয়ে এখানে এসেছি। তার সাথে প্রেম করার জন্য নয়।”
কথাটা শুনে নাসরিন সেদিন স্যারের সামনেই কষিয়ে এক চড় বসিয়ে দেয় রুশাকে।
“বেয়াদব মেয়ে। পড়াশোনা বাদ এইসব করো। আজ আসুক তোমার আব্বু।”
নাসরিন মেয়ের কৃতকর্মের জন্য অত্যন্ত দুঃখ প্রকাশ করে। এবং সেদিনই স্যার রুশাকে পড়ানো ছেড়ে দেয়।
অফিস রুমের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় অতীত মনে পড়ে রুশার। সেইসব দিন গুলো খুব দুর্বিষহ ছিলো তার জন্য৷ একেকটা দিন একেকটা রাত কত বর্ষ সমান ছিলো। এই এতগুলো দিন অতিবাহিত হবার পরেও রুশার মনে এখনো সেই মানুষটাই রয়ে গেছে। হৃদয়ের এক কোণে সুপ্ত ভালোবাসার আঁচলে মোড়ানো অবস্থায় রয়ে গেছে।
নবীন বরণের অনুষ্ঠানও শেষ। নিউ ফার্স্ট ইয়ারদের অত্যন্ত আদরের সঙ্গে সবাই গ্রহণ করে নিয়েছে। শরীর অসুস্থ থাকায় রুশা সেদিন অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে পারেনি। আজ ক্লাস মিস করা যাবে না।
ক্যাম্পাসে এসে পা রাখতেই ফোন বেজে ওঠে তার। রাসিন ফোন করেছে। ফোন রিসিভ করে রুশা।
“হ্যাঁ রাসিন, বল।”
“কেমন আছিস?”
“এইতো, ভালো আছি। তুই কেমন আছিস?”
“আমি বেশ আছি রে।”
“ইশা কেমন আছে?”
“ও ভালো আছে।”
“ওহ।”
“মিস করি রে তোকে।”
“ইশা আছে তো কাছে। মিস করবি না আর।”
রাসিন চুপ হয়ে যায়। ইশা আর সে সম্পর্কে আছে। সেটা রুশাকে জানানো হয়নি। হয়তো রুশার কষ্টের কারণ এটাই। এমন কি তারা দু’জন মিলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে যাওয়ার কথাটাও রুশাকে বলা হয়নি। সত্যিই একজন ভালো বন্ধু হিসেবে রাসিন কখনো কোনো দায়িত্ব পালন করেনি। এদিক থেকে সে বরাবরই ব্যর্থ। তবে রুশার আচরণ আগের থেকে অনেক বদলে গেছে। তার ভাষ্যমতে, গোটা রুশাটাই বদলে গেছে। হাসি-খুশি সেই চঞ্চল রুশা আর নেই। তার নীরবতাকে ছুটি দিয়ে রুশা বলে ওঠে,
“ক্যাম্পাসে এসেছি তো। ক্লাসে যাবো। পরে কথা বলি?”
রুশার কথায় বোঝা যাচ্ছে যে সে কথা বলতে চাইছে না। আজ-কাল কথাও তেমন বলে না। আগে ফেসবুকে অনলাইনে দেখলেই মেসেজ করতো কিন্তু এখন অনলাইনে থাকলেও মেসেজ করে না। আর না মেসেজের ঠিকঠাক উত্তর দেয়। রুশার সব কিছুই এখন নতুন নতুন লাগে তার কাছে। তবুও আচ্ছা বলে ফোন রেখে দেয় রাসিন। নিজেকে নিজের কাছে খুব অপরাধী মনে হচ্ছে। রুশাকে এইভাবে অবহেলা না করলেও পারতো সে।
৩১৮ নং কক্ষে গিয়ে পঞ্চম বেঞ্চে বসে রুশা। চারপাশে অনেক ছেলে মেয়ে। রুশার সাথে পরিচয় শুধু হাতে গোনা চার কি পাঁচ জনের সাথে। যাদের সাথে সে ইন্টারমিডিয়েট পড়েছে। এর মধ্যে রিমি একজন। রিমি তার খুব কাছের একজন মানুষ। সবাই অবহেলা করলেও রিমি করেনি। সব সময় তার পাশে বন্ধু কম একজন বোনের মতো থেকেছে বেশি।
রুশার পাশে বসে আছে রিমি। রুশার মনটা অনেক ভার ভার লাগছে। রিমি কিছুটা হলেও বুঝতে পারছে। প্রশ্ন করবে কি-না ভাবছে। রুশা প্রায় সময়ই এমন ভার থাকে।
“রুশা?”
রিমির ডাকে ধ্যান ভাঙে রুশার।
“হ্যাঁ বল।”
দু’চোখে যেন অসহায়ত্ব ভর করেছে তার। মেয়েটার দিকে এক দন্ড তাকিয়ে থাকলে মায়া লেগে যায়। এই মায়া সহজেই নারী এবং পুরুষ উভয়কেই কাবু করার জন্য যথেষ্ট।
“তোকে এমন ভার ভার লাগছে কেন?”
“বুঝতেছি না। জানিস, ক্যাম্পাসে পা রাখার পর থেকেই বুকের ভেতরটা কেমন যেন গুমোট হয়ে আছে। মনে হচ্ছে আশেপাশে কিছু একটা আছে। কিছু তো একটা আছে।”
“রুশা, তোকে এমন অবস্থায় দেখতে আর ভালো লাগে না। এইভাবে চুপসে থাকতে থাকতে একদিন স্ট্রোক করে বসবি তো তুই। এখনকার যুগের মানুষ সব হুটহাট মরে যায়। আমার কিন্তু একদম ভালো লাগে না এইসব।”
“রিমি, অস্থির লাগছে ভীষণ। আশেপাশে কিছু একটা আছে। যা আমায় অতিরিক্ত অস্থির করে তুলছে।”
“আচ্ছা। একটু পানি খা। খুব বেশি খারাপ লাগছে? বাসায় যাবি?”
“নাহ। প্রথম ক্লাসটা করে নেই। এরপর না হয় চলে যাবো।”
রিমি কিছুক্ষণ চুপ হয়ে থাকে। দু’জনের ফোন দু’জনের সামনে। টেবিলের ওপর রাখা। হঠাৎ রিমির ফোনে নিজের মায়ের ফোন থেকে আসা ইনকামিং কল চোখে পড়ে রুশার। ভ্রু জোড়া কুঁচকে যায় সাথে সাথে। তাকে ফোন না করে তার বান্ধবীকে ফোন করলো কেন তার মা। ফোনটা রুশার সামনে আসাতে একটু ভ্যাবাচেকা খেয়ে যায় রিমি। রুশার অগোচরে তার মা রিমিকে ফোন করে। এতদিন কিছু না জানলেও আজ রুশা জেনে গেছে। রিমির ব্যাপারে কী ভাবছে কে জানে?
“ফোনটা রিসিভ কর। বলে দিস আমি দেখিনি কিছুই।”
রিমি ফোন রিসিভ করে। দুই মিনিটের মাথায় কথা শেষ করে ফোন রাখে। কথোপকথন শুনে বোঝা যাচ্ছে নাসরিন মানে মা তার ভালো মন্দের খবর জানতেই রিমিকে ফোন করেছেন। রুশা আর উচ্চবাচ্য করেনি। রিমি নিজ থেকেই বলে,
“শোন না, রাগ করিস না প্লিজ। তুই এমন চুপচাপ হয়ে যাওয়ার পর থেকেই আন্টি আমায় ফোন করে। বিশেষ করে তুই যখন আমার কাছে থাকিস তখন বেশি ফোন করে। কী করিস, ভালো আছিস কি-না, আরও অনেক কিছু।”
রুশা হালকা হেসে বলে,
“মেয়ের খবর রাখার জন্য মেয়ের বান্ধবীকেই হায়ার করে। বাহ!”
“ভুল বুঝিস না প্লিজ। আন্টি তোকে নিয়ে ভীষণ ভয় পায়।”
রুশার অস্থিরতা আবারও বেড়ে যায়। কী যেন তাকে খুব বিরক্ত করছে। রুশা চুপচাপ বসে থাকে। ইচ্ছা করছে ক্লাস থেকে বের হয়ে যেতে। কিন্তু আবার কেন যেন ইচ্ছা করছে বসে যেতে। কী অদ্ভুত অনুভূতি?
পাশ থেকে একজন বলছিলো প্রথম ক্লাস নাকি কোন এক স্যার নিবেন। প্রথম ক্লাস ব্যবসায় পরিসংখ্যান। স্যারকে নাকি হেব্বি দেখতে। খুব সাধারণ একজন মানুষ তবে এই সাধারণের মাঝে যেন অসাধারণ কিছুও তার মাঝে বিদ্যমান।
আরেকটা ছেলে বলছিলো ব্যবহারে নাকি মুগ্ধতা লেপ্টে থাকে। ওই ছেলের ভাই নাকি এই স্যারের বিশাল বড় ভক্ত। পরিসংখ্যান প্রাইভেট পড়ে স্যারের কাছে। গত দুই বছর আগেই নাকি এই কলেজে জয়েন করেছেন তিনি। প্রথমে গেস্ট টিচার হলেও এখন পুরোদমে লেকচারার। বি.সি.এস ক্যাডার।
রুশার অস্থিরতা যেন আরও দ্বিগুন বেড়ে যায়। প্রথম ক্লাস ব্যবসায় পরিসংখ্যান! সেই পরিসংখ্যান যেই পরিসংখ্যানে সে দশ পেয়েছিলো। আর এরপরেই স্যার রাখা হয়েছিলো তার জন্য। স্মৃতি গুলো বাস্তব হয়ে চোখের সামনে ঘুরঘুর করছে তার। না পারছে স্থির হয়ে বসতে, না পারছে উঠে চলে যেতে। ক্লাস ভর্তি ছাত্র-ছাত্রী। প্রথম ক্লাসটা ব্যবসায় পরিসংখ্যান এবং প্রথম ক্লাসটাই কোনো এক স্যার করাবেন। মস্তিষ্ক কাজ করছে না রুশার।
ঘড়িতে তখন ঠিক এগারোটা। প্রায় ৫ ফুট ৮ ইঞ্চ হবে লম্বা একজন সুদর্শন পুরুষ ক্লাসে ঢোকে। সবাই দাঁড়িয়ে যায়। মনে হচ্ছে ইনিই স্যার। পঞ্চম সারির মাঝে বসায় সামনের চার বেঞ্চের ছেলেমেয়ের জন্য রুশা আর স্যারের মুখটা দেখতে পারেনি।
“আপনারা সবাই বসতে পারেন।”
কথাটা শুনে সবাই যে যার জায়গায় বসলেও রুশার কলিজায় টান লাগে। চেনা সেই কন্ঠস্বর। কে সে?
সবাই বসে পড়লে রুশার চোখ যায় সামনে। মস্তিষ্কের প্রতিটা স্নায়ুকোষ তাদের ক্রিয়াকার্য বন্ধ করে দিয়েছে ওই মুহুর্তে। মাথার চারপাশটা ভো ভো করে ঘুরছে। এ কাকে দেখছে সে? কেন-ই বা দেখছে? আবার সেই সাক্ষাৎ! সাক্ষাৎ হওয়াটা কি খুব জরুরী ছিলো?
রুশা মাথা নিচু করে রেখেছে। বুকে ব্যথা হচ্ছে। চিন চিন একটা ব্যথা। যার যন্ত্রণা একমাত্র নিজেকে উপলব্ধি করতে হয়। যার ভাগ একমাত্র নিজে ব্যতীত অন্য কাউকে দেওয়া যায় না এবং দেখানোও যায় না। আজ প্রায় দুই বছর পর সে আবারও দেখতে পেলো তাকে। কিন্তু কেন? দুই হাতের আঙুলগুলো সমানে মোড়াচ্ছে রুশা। রিমি রুশার আচরণ দেখে বলে,
“কী হয়েছে রুশা? এমন করছিস কেন?”
রিমির ডাকে মাথা নিচু করে তাকায় রুশা।
“আমি বাসায় যাবো।”
“এখন?”
“হ্যাঁ।”
“স্যার ক্লাসে দাঁড়িয়ে আছে। আর তুই বলছিস বাসায় যাবি!”
“হ্যাঁ বাসায় যাবো। নয়তো এখনি মরে যাবো। শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে আমার।”
“কী সব বলতেছিস? একটু পানি খা। দেখবি সব ঠিক হয়ে যাবে। আর এইভাবে মাথা নিচু করে রেখেছিস কেন? স্যারটাকে দেখ। অনেক হ্যান্ডসাম লাগছে। তাকা একবার।”
রুশা চুপ হয়ে যায়। আর কিছুই বলতে পারছে না সে। ক্লাসের অন্যান্য ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে স্যার কথা বলছেন। বেশ জোরেই কথা বলতে হচ্ছে তাকে। ছাত্র-ছাত্রীরা বলছে,
“স্যার আপনি আমাদের আপনি বলে সম্বোধন করছেন। কেমন একটা লাগছে?”
উত্তরে স্যার বলছেন,
“আপনারা যথেষ্ট বড়। আপনাদের অবশ্যই তুই কিংবা তুমি বলা ঠিক হবে না। আর আপনাদের সাথে এটা আমার প্রথম সাক্ষাৎ। সেই সুবাদে ভদ্রতার খাতিরে আপনি সম্বোধনটাই পারফেক্ট বলে মনে করলাম।”
স্যারের কথা শুনে সবাই বেশ খুশি। কয়েকজনের নাম ধাম জিজ্ঞেস করা হলো। এইচ এস সি রেজাল্ট জিজ্ঞেস করা হলো। এবার বাকিরাও স্যারের নাম জিজ্ঞেস করলো। মুখে উত্তর দেওয়ার বদলে স্যার হালকা হেসে মার্কার পেন দিয়ে হোয়াইট বোর্ডে তার নাম লিখে দিলেন।
ফায়াজ কারিম
পেশায় – একজন লেকচারার
বিষয় – ব্যবসায় পরিসংখ্যান

পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায়………………

স্যার পর্ব-০৭

2

#স্যার
#পর্ব_৭
লেখনীতে – আফরোজা আক্তার

আজ প্রায় দুই মাস পার হয়ে গেছে।
এই দুই মাসে রুশা তার মনের সব কথা তার স্যারকে বলে দিয়েছে। খুব ভালোবাসে সে তার স্যারকে। ফেসবুকে খুব জ্বালাতন করে সে তার স্যারকে। কিন্তু একটাই অভিযোগ তার ভালোবাসা তার স্যার বুঝতে পারছে না। এই দুই মাস যতবার সে ভালোবাসি উচ্চারণ করেছে ততবারই স্যার তাকে ভালো মন্দ কথা শুনিয়েছে। কিন্তু সে তো তার অবুঝ হৃদয়ে ভালোবাসার জানান দিয়েছে, সেই ভালোবাসা সে আর তার কাছ ছাড়া করতে চায় না।
ফায়াজ প্রচন্ডরকম বিরক্ত হয়ে গেছে রুশার প্রতি। পড়া কম এই মেয়ে প্রেম/ভালোবাসার কথা বলে বেশি। প্রায় ৬০ দিন হয়ে গেছে ফায়াজের রুশার বাসায় যাতায়াত। এই ৬০ দিনের মধ্যে প্রায় ৫৮ দিনই রুশা তার ভালোবাসার কথা জানান দিয়েছে। কিন্তু সে এইসব পছন্দ করে না। বার বার রুশার ছেলে মানুষী ভেবে বিষয়টাকে অবহেলা করে গেছে সে। রুশার সব কিছুতেই সে ছেলে মানুষী খুঁজে পায়। তাই এই বিষয়টাকেও সে ছেলে মানুষী হিসেবেই নিয়েছে। কয়েকবার স্কেল দিয়ে হাতে মেরেছিলো। তবুও যেই রুশা সেই রুশা হয়েই আছে। পরিবর্তন আর হয়নি। জালি বেত দিয়েও কয়েকদিন মেরেছে। কিন্তু মারার পর সে আরও হাসে। ফায়াজ মাঝে মাঝে ভেবে পায় না সে কীভাবে রিয়্যাক্ট করবে?
দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে ফায়াজ। আজ-কাল এখানে আসতেও তার ভালো লাগে না। স্যার হয়ে পড়াতে আসে সে এখানে। কিন্তু পড়ানোর বদলে তাকে প্রেমের কথা শুনতে হয়। এটা খুব বিব্রতকর তার জন্য।
সন্ধ্যা সাত টা বেজে ৪৫ মিনিট।
রুশা তার চেয়ারে। ফায়াজ রুশার সিট রেডি করে দিচ্ছে। রুশাকে পড়া রেডি করতে দেওয়া হয়েছে। ফায়াজ আন্দাজ করতে পেরে রুশার দিকে তাকিয়ে দেখে সে তাকিয়ে আছে। অসহ্য একটা অনুভূতি হচ্ছে তার ভেতর। তাই প্রশ্ন করে,
“কী ব্যাপার রুশা? পরিসংখ্যান না পড়ে আমার দিকে এইভাবে তাকিয়ে আছো কেন?”
স্যারের প্রশ্নের উত্তরে সোজা-সাপ্টা উত্তর দেয় রুশা।
“আপনাকে দেখছিলাম স্যার।”
“আমায় দেখার কী আছে? আমার কি রুপ বেয়ে বেয়ে পড়ছে নাকি?”
“স্যার, আমি তো শুনেছি মেয়েদের রুপ বেয়ে বেয়ে পড়ে। ছেলেদের কীভাবে পড়বে?”
ফায়াজ এবার খুব বিরক্ত। রুশাকে ঠাটিয়ে দুটো চড় কষিয়ে দিলে তার মনের জ্বালা মিটতো।
“অত্যন্ত ফাযিল হয়ে গেছ তুমি রুশা। পড়ায় মন দাও। নয়তো মার খাবে।”
“স্যার, আপনার হাতের মার টাও আমার ইদানীং মিষ্টি মিষ্টি লাগে।”
ফায়াজ তাকিয়ে আছে রুশার দিকে। অত্যন্ত বিরক্ত লাগছে তার। ইচ্ছা করছে জালি বেতটা দিয়ে কষিয়ে দু ঘা তার পিঠে বসিয়ে দিতে। কিন্তু পারছে না। এত বড় মেয়ের গায়ে হাত দিতেও লজ্জা লাগে। এমনিতেও কয়েকদিন মেরেছিলো তার নিজের কাছেই লজ্জা লেগেছে। ফায়াজ এইসব ভাবছে আর সেই ফাঁকে রুশা আবারও বলল,
“স্যার, পরিসংখ্যানের রুলস থেকে আপনার সাথে প্রেম করাটা অনেক বেশি সহজ।”
এবার ফায়াজ আরও অবাক হয়ে যায়। মনে মনে ভাবছে, এখনই আমি অক্কা পাব, আই মিন পটল তুলব। এই মেয়ে কী সব বলে? ফায়াজ ইচ্ছে করে আবারও প্রশ্ন করে,
“রুশা, তুমি যে এইভাবে আমার সাথে ফ্ল্যার্ট করো। তোমার ভয় লাগে না?”
“ভয় কেন লাগবে স্যার? আপনি তো শিম্পাঞ্জি নন। আপনি তো মানুষ।”
“সরাসরি শিম্পাঞ্জির সাথে তুলনা করে দিলে?”
“দু’জনেই এক টাইপ আর কি।”
“তাহলে তো তুমিও সেই দলের।”
“যাক গে সেসব কথা। এই সূত্রটা আপনার থেকেও গোলমেলে।”
“আমি গোলমেলে?”
“হ্যাঁ, আপনি আমার সহজ সরল জীবনে হুট করে ঢুকে পড়া এক গোলমেলে সূত্র।”
“কী করে বুঝলে?”
“বোঝা যায়।”
“এখনো অনেক ছোট তুমি। আমাদের বয়সের ফারাকটা জানো? তোমার কত হবে, জোরে গেলে ১৮ কি ১৯ আমার ২৯। হিসাব করে দেখো তো, কতটা বড় আমি তোমার থেকে৷ একে তো এতো বড়, তার উপর আমি তোমার স্যার। আর তুমি আমায় প্রতিনিয়ত প্রেম ভালোবাসার কথা বলো এবং এখনো বলো। এলেম আছে তোমার।”
রুশা তার স্যারের কথা শুনে হেসে দেয়।
“স্যার, এই যে সেদিন আপনি আমায় স্কেল দিয়ে মারলেন। আবার তার পরদিন জালি বেতটা দিয়ে মারলেন। আমি যতটা ব্যথা পেয়েছি এর চাইতে বেশি ব্যথা আপনি পেয়েছেন। কারণ আমাকে মারার পর আপনি আর এক মুহুর্তও এখানে ছিলেন না। সোজা উঠে চলে গিয়েছিলেন। স্যার, আমি আমার মনে থাকা প্রশ্নটা অনেক খুঁজেছি। আপনার প্রতি আমার ভালো লাগা কাজ করে না। আমি আপনাকে ভালোবাসি। আর এটাই সত্যি।”
রুশা তার কথায় অটল। সে ভালোবাসে এটাই সত্যি৷ ফায়াজ বলতে শুরু করে,
“ভালোবাসা কী রুশা? বললেই হয়ে যায়? আমায় কতটা চিনো? কতটা জানো? তোমার বাবা-মাকে আমি এইসব আরও আগেই বলতে পারতাম। কিন্তু বলিনি। কারণ, তারা মনে কষ্ট পেতো৷ তাদের একমাত্র মেয়ে তুমি আর খুব আদরের। তাদের কষ্ট দিতে চাই না আমি।”
“ভালোবাসা হয়ে গেলে কিছু করার আছে?”
“একটা কথা মনে রেখো রুশা, আমি তোমার স্যার। এর বাহিরে অতিরিক্ত আর কিছুই না। আমার পক্ষে এর বাহিরে যাওয়া পসিবল না।”
“স্যার, আপনাকে বাহিরে যেতে কে বললো? বাহিরে কেন যাবেন? আমরা দু’জন বাসাতেই থাকবো। বাহিরে যাওয়ার প্রয়োজন নেই।”
“রুশা তুমি কবে বুঝবে, বলো তো।”
“বোঝার কিচ্ছু নেই তো। আমি ভালোবাসি আপনাকে। এটাই বোঝার কথা।”
ফায়াজ রুশার কথা শুনে চুপ হয়ে যায়। রুশাকে তার কথাগুলো বুঝিয়ে বলায় সে ব্যর্থ। সে তার মনের কথাগুলো রুশার কাছে তুলে ধরতে ব্যর্থ। ব্যর্থতা নিয়ে সে রুশার দিকে তাকিয়ে আছে। অবুঝ রুশাও মিষ্টি হাসি দিয়ে তার ভালোবাসার মানুষটার দিকে তাকিয়ে আছে।
ভাবছে, আমি আপনাকেই ভালোবাসি স্যার। আমার ভালোবাসা শুধুই ভালো লাগা নয়। আমার ভালোবাসা শুধুই ভালোবাসা। আমার ভালোবাসা শুধুই আমার অন্তরে লুকায়িত সুপ্ত অনুভূতি। আমার ভালোবাসা শুধুই আপনার জন্য। হ্যাঁ, আমার ভালোবাসা একমাত্র আপনার জন্যই। এই ভালোবাসা আমি আর কাউকে দিতে পারবো না।
ফায়াজ চাইছে না এখানে আর বসে থাকতে। সে রুশার দিকে তাকানোর সাহস পাচ্ছে না। রুশার সাথে কথা বলার মতো শক্তিটাও তার নেই। রুশার চোখ দুটো অন্য কথা বলছে। যেটাকে সে ছেলে মানুষী হিসেবে ধরে বসে আছে সেটা কি আসলেই ছেলে মানুষী? নাকি সত্যি? রুশার মনে কি তবে তার জন্য সত্যিকারের ভালোবাসা জন্মেছে? কিন্তু এটা কি করে সম্ভব হয়? তার পক্ষে তো রুশাকে তার সাথে এইভাবে জড়ানো ঠিক হবে না? তার যে পিছুটানের অভাব নেই। সেগুলোও তো তাকে দেখতে হবে। কিন্তু মেয়েটাকে সে বোঝাবে কি করে? মেয়ে তো তার কোনো কথাই বুঝতে চাইছে না। সে তো কেবলমাত্র তার কথা-ই বলে যাচ্ছে। সে ভালোবাসে। ফায়াজ এই ভালোবাসার দাম টুকুন হয়তো দিতে পারবে না। রুশাকে তাকে ফিরিয়ে দিতে হবে। হ্যাঁ, দিতেই হবে।

পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায়…………………

স্যার পর্ব-০৬

0

#স্যার
#পর্ব_৬
লেখনীতে — আফরোজা আক্তার

রুশা বই দেখছে কম আড় চোখে দেখছে বেশি। সামনে যে তার স্যার বসে আছে। ফায়াজ স্যার। মনে মনে ভাবছে, যদি স্যার না বলে ফায়াজ বলে ডাক দেওয়া যায় তাহলে কি খুব খারাপ হবে? সে কি বকা দিবে? নাকি মারবে?
আচ্ছা, সত্যিই কি ভালো লাগা মানে চোখের আকর্ষণ? যদি তাই হবে তবে ভালোবাসা মানে কী? মনের মধ্যে খচখচ হচ্ছে তার। প্রশ্নের উত্তরটা জানা জরুরী। মা বলেছিলো সব উত্তর নাকি মন দেবে। মন ঘন্টা দেবে, মন কি কথা বলতে পারে? যে কথা বলতে পারে সে নিজেই উত্তর দিতে পারবে।
ফায়াজ রুশার দিকে তাকিয়ে আছে। হাতের কলম দিয়ে টেবিলে হাবিজাবি আঁকছে রুশা। ফায়াজ লক্ষ করে রুশা আজ একটু চুপচাপ। তার মন বলছে নিশ্চয়ই রুশা কোনো দুষ্টু বুদ্ধি আঁটছে। ফায়াজ প্রশ্ন করে,
“রুশা, এনিথিং রং?”
স্যারের কন্ঠ শুনে রুশা চমকে ওঠে। জবাবে বলে,
“নাহ স্যার। সব ঠিকঠাক।”
“না পড়ে চুপ করে বসে থেকে টেবিলে কী আঁকছো?”
“ভাবছি একটা কথা।”
“কী কথা?”
“ভালো লাগা আর ভালোবাসা এই দুটো শব্দের অর্থ কী?”
ফায়াজ থ হয়ে তাকিয়ে থাকে রুশার দিকে। এই মেয়ে আবার শুরু করে দিয়েছে। তবে এবার প্রশ্নের ধরণ পালটে দিয়েছে।
রুশা আবারও প্রশ্ন করে,
“আপনি বলুন তো স্যার, ভালো লাগা আর ভালোবাসা কি এক নাকি আলাদা?”
ফায়াজ জবাব দেয়,
“জালি বেতের বারি খেয়েছো কখনো?”
“নাহ খাইনি তো। খেতে কেমন?”
“রুশা, তুমি কিন্তু বড্ড বেশি ফাইযলামি করছো আজকে। পড়তে বলেছি, পড়ো।”
“উত্তরটা প্রয়োজন আমার। বলে দিলেই হয়?”
“তোমার আম্মুকে ডাকবো এখন আমি।”
“আম্মুকেও জিজ্ঞেস করেছিলাম। বললো, মনকে প্রশ্ন করতে। মন কি কথা বলতে পারে?”
“পড়াগুলো শেষ করো।”
“আগে উত্তর দিন।”
ফায়াজ বিপাকে পড়ে গেছে। রুশা বড্ড নাছোড়বান্দা। খুব ভালো করেই বোঝা যাচ্ছে যে, সে উত্তর না পেলে ঘাটাতেই থাকবে। তাই ফায়াজ বলে,
“দুটো শব্দ আলাদা। এবং দুটো শব্দই ভিন্ন ভিন্ন অর্থ বহন করে। যে কোনো কাউকে ভালো লাগতেই পারে। যাকে ভালো লাগবে তাকে ভালোবাসতে হবে এমন কোনো কথা নেই। আবার ভালোবাসা হচ্ছে এক মায়াবী অনুভূতি। যার প্রতি এই অনুভূতি কাজ করে বুঝতে হবে মন তাকেই ভালোবাসে। ভালোবাসি মুখে বললেই হয় না, কাজে করে দেখাতে হয়। আশা করি তুমি উত্তর পেয়ে গেছো। এবার পড়ো।”
রুশা তার স্যারের বলা কথাগুলো অনুধাবন করছে। কথাগুলো নিজের মনে সাজাতে লাগলো সে। স্যার কি সঠিক বলছেন? ভালোবাসা এক মায়াবী অনুভূতি। স্যারের জন্য তার মনে একদিকে যেমন মায়া কাজ করছে। অন্যদিকে স্যারের জন্য মনে অনুভূতির জন্ম হয়েছে। তার মানে সে স্যারকে ভালোবাসে। মস্তিষ্ক জানান দেওয়ার সাথে সাথে রুশা বলে ওঠে,
“স্যার, একটা কথা বলি?”
“হ্যাঁ বলো।”
“স্যার আমি মনে হয় আপনাকে ভালোবেসে ফেলেছি।”
“মানে কী?”
“হ্যাঁ স্যার, আমি আপনাকে ভালোবাসি।”
“এবার কানের নিচে মারবো। বেয়াদব মেয়ে, এইসব কী ধরনের কথাবার্তা। আমি কি তোমার সাথে প্রেম করতে আসছি এখানে। ডাকো তোমার আম্মুকে। এইভাবে আর হয় না?”
রুশা ভীষণ ভয় পেয়ে যায়। এখন যদি স্যার তার মা’কে বলে দেয় তখন তার কী হবে? স্যার যদি চলে যায়, তখন তার কী হবে?

পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায়………………

স্যার পর্ব-০৫

0

#স্যার
#পর্ব_৫
লেখনীতে — আফরোজা আক্তার

রুশা অপেক্ষায় আছে তার জবাবের। নাসরিন ভাবছে মেয়েকে কীভাবে বোঝাবে ভালো লাগা মানে কী? রুশা আর অপেক্ষা সহ্য করতে পারছে না। মা’কে প্রশ্ন করে,
“একটা ছোট প্রশ্নের উত্তর দিতে এতক্ষণ সময় লাগে বুঝি?”
নাসরিন হালকা হাসে। তার মেয়ের কাছে যেটা ছোট প্রশ্ন তার কাছে সেই প্রশ্নের অর্থ বিরাট। সহজ ভাষায় মেয়েকে বোঝাতে হবে। রুশা আবারও প্রশ্ন করে,
“আম্মু বলো না, ভালো লাগা মানে কী?”
“ভালো লাগা মানে চোখের আকর্ষণ।”
“সেটা কী আম্মু।”
“আমরা যখন শপিংমলে যাই তখন শপের বাহির থেকে ভেতরের জিনিস গুলো দেখি। আমাদের চোখে তখন ভালো লাগা কাজ করে। দেখিস না, মাঝে মাঝে তোর সব কিছুই ভালো লাগে। ওটা আসলে ভালো লাগা না, ওটা চোখের আকর্ষণ।”
“উত্তরটায় আমি মুগ্ধ হইনি আম্মু।”
“তবে?”
“আমি জামা-কাপড় কিংবা অর্নামেন্টের কথা বলছি না। জামা-কাপড় কিংবা অর্নামেন্টের ক্ষেত্রে আমাদের সবারই ভালো লাগা কাজ করে। কিন্তু আমি অন্য কিছু মিন করছি, যা তুমি হয়তো বুঝতে পারছো না। নয়তো বুঝেও না বোঝার ভান ধরছো?”
“আচ্ছা কী হয়েছে তোর, বল তো আমায়।”
“কোনো মানুষকে কোনো মানুষের প্রথম দেখায় ভালো লাগলে তাকে কীভাবে নেবে তুমি?”
মেয়ের এমন কথায় নাসরিন একটু বিচলিত বোধ করে। সে মেয়েকে বোঝাতে চেয়েছে এক কিন্তু মেয়ে প্রশ্ন করেছে আরেক। এক্ষেত্রে তিনি ব্যর্থ।
রুশা এবার কোল থেকে সরে উঠে বসে। মায়ের দিকে তাকিয়ে আছে।
“তুমি কি আমার কথা বুঝতে পেরেছো মা?”
“কাকে ভালো লেগেছে শুনি?”
“কাউকেই না। শুধু বলো এই ভালো লাগার মানে কী?”
নাসরিন মেয়ের মাথায় হালকা হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে,
“সেটাও চোখের আকর্ষণ। কাউকে প্রথম দেখায় ভালো লাগলে বুঝতে হবে চোখের আকর্ষণ। চোখের আকর্ষণ খুব খারাপ হয়। এ আকর্ষণ অনেক সময় অনেক খারাপ কাজ করিয়ে দেয়।”
“তবে লোকে কেন বলে লাভ এট ফার্স্ট সাইট।”
“প্রথম দেখায় ভালোবাসা?”
“হ্যাঁ।”
“তুই এখনো ছোট। আগে বড় হ, এরপর না হয় বোঝাবো৷”
“আমায় এখনি বোঝাও।”
“আমি তোর নানুর সামনে কখনো এইসব উচ্চারণও করিনি। আর তুই আমার মেয়ে হয়ে আমার সামনে এইসব উচ্চারণ করিস। হ্যাঁ রে, ভয় লাগে না তোর?”
“আমি যদি তোমায় ভয় করি তবে বন্ধুত্ব করবো কার সাথে আম্মু?”
রুশার কথা শুনে নাসরিন আরও অবাক। আসলেই তো, মা’কে ভয় পেলে বন্ধুত্ব করবে কার সাথে? খুব দামী একটা কথা বলেছে তার মেয়ে।
“এখন তোর জানার আগ্রহ কিসে, সেটা বল।”
“ভালো লাগা এবং ভালোবাসা কি এক?”
“কখনো কখনো এক আবার কখনো কখনো আলাদা।”
“কখনো কখনো এক কেন?”
“কারণ, ভালো লাগা থেকেই ভালোবাসার শুরু। যাকে ভালো লাগে তার প্রতিই ভালোবাসা কাজ করে। তবে এটা কেবল বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে।”
“কখনো কখনো আলাদা কেন?”
“কারণ, সব ভালো লাগা ভালোবাসায় রুপ নেয় না। ভালো লাগলেই যে ভালোবাসতে হবে তেমন কথা নেই। কাউকে ভালো লাগতেই পারে। যেমন টিভিতে হিন্দি নায়ক সালমান খান, শাহরুক খান এদের ভালো লাগে কিন্তু এদের তো বলা যায় না যে ভালোবাসি।”
“তবে মানুষ বুঝবে কী করে কোনটা ভালো লাগা আর কোনটা ভালোবাসা?”
নাসরিন মেয়ের দিকে তাকিয়ে আছে। এর আগে কখনো রুশাকে এতো প্রশ্ন করতে দেখেননি তিনি। এর আগে কখনো রুশা এতোটা শান্তও থাকেনি। নাসরিন মেয়ের বুকের বাম পাশে হাত রাখে এরপর হেসে জবাব দেয়,
“সে জানে।”
“সে! সে টা কে আম্মু?”
“এই যে এইখানে যে থাকে।”
“কে থাকবে এইখানে?”
“এই ঘিলু নিয়ে আসছে প্রশ্ন করতে। বোকা মেয়ে এইখানে মন থাকে। বাকি সব প্রশ্ন মনকে করবি, দেখবি সব উত্তর পেয়ে যাবি। কিন্তু আমার কথা অন্যখানে।”
“কোন খানে?”
“তুই কারো প্রেমে ট্রেমে পড়লি না তো?”
“আম্মু, তুমিও এমন বলো।”
“এইসব শুধুই চোখের আকর্ষণ। সেই পর্যন্ত যেতে হলে আগে অনেক বড়ো হতে হবে। এর আগে এইসব শুনলে মেরে তক্তা বানাবো। এবার যান পড়তে বসেন। স্যারের পড়া ক্লিয়ার করেন।”
মায়ের মুখ থেকে স্যারের কথা শুনেই বুকটা ধক করে ওঠে রুশার। নিজের ঘরে গিয়ে পড়ার টেবিলে বসে পড়ে সে।
ভাবছে, স্যারের প্রতি তার অনুভূতি কী? শুধুই ভালো লাগা নাকি প্রথম দেখার ভালোবাসা? ভালো লাগা চোখের আকর্ষণ তবে ভালোবাসা কী? মনের মাঝে লুকায়িত সুপ্ত অনুভূতি।

পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায়…………………

স্যার পর্ব-০৪

0

#স্যার
#পর্ব_৪
লেখনীতে — আফরোজা আক্তার

ক্লাসে বসে আছে রুশা। মনটা তেমন ভালো নেই। রিমি এসে পাশে বসে।
“কী ব্যাপার রুশা? কী হয়েছে?”
“কিছু না।”
“আমাকেও বলবি না?”
“রাসিন কোথায় রে?”
“ইশার সাথে লাইব্রেরিতে বসে আছে।”
“ইশার সাথে ওর বন্ধুত্বের সম্পর্ক নাকি অন্য কোনো কিন্তু আছে? জানিস কিছু?”
“অন্য কিছু বলতে?”
“ন্যাকামি করিস নাকি? অন্য কিছু বলতে বুঝিস না?”
“ইউ মিন লাভ?”
“হুম।”
“দেখে তো তাই মনে হয়।”
“ওহ।”
“তোর রেজাল্ট এতো খারাপ কেনো হলো রে। সবাই অবাক হয়েছে।”
“জানি না।”
রুশা ব্যাগ গুছিয়ে নিয়েছে। ক্লাস থেকে বের হয়ে যাচ্ছে। রিমি বললো,
“যাচ্ছিস কোথায়?”
“বাসায় বলে যাই।”
“পরের ক্লাস করবি না?”
“নাহ। আজ আর করবো না।”
এই বলে সে চলে যায়। রাসিনের পরিবর্তনটা মানতে পারছে না সে। বন্ধুরা এতোটাও বদলায়? কই সে তো বদলায় নি? রাসিন বদলে গেছে। ইশার সাথে চলে সে বদলে গেছে। রুশা নামের কেউ যে তার বন্ধু ছিলো সে তা-ও ভুলে গেছে। আশ্চর্যজনক ব্যাপার!
বাসায় এসে ফোন হাতে নেয় রুশা। ফেসবুক ঘাটাঘাটি করছে। নিউজফিড স্ক্রল করতে গিয়ে সাত্তার আংকেলের মেয়ে মিমের একটা পোস্ট সামনে পড়ে। পোস্টের কমেন্ট চেক করতে গিয়ে দেখে ফায়াজ কারিম আইডি থেকেও কমেন্ট করা হয়েছে। রুশা দ্রুত আইডির টাইমলাইনে যায়। অবাক হয়ে যায় সে। এ যে তার স্যার। বাহ! প্রোফাইল পিকটা তো খুব সুন্দর। এক এক করে ফায়াজের সব পোস্ট সব ছবি চেক করে সে।
নাসরিন এসে মেয়ের হাতে মোবাইল দেখে বলে,
“ফ্রেশ না হয়েই ফোন চাপতে বসে পড়েছিস? স্যারের পড়াগুলো হয়েছে?”
“পড়ে নিবো।”
“কয়টা বাজে এখন। ফ্রেশ হতে হবে না?”
“একটু পরে যাই?”
“নাহ, এক্ষুনি যাবি। ওঠ, ফোন রাখ।”
এতো শাসন ভালো লাগে না রুশার। সে স্বাধীনচেতা মানুষ। কিন্তু শাসন যেন বাধা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে তার সামনে। মায়ের কথা মতো ওয়াসরুমের দিকে ছুটে রুশা। পরবর্তী পদক্ষেপ, খাওয়া দাওয়া করে একটা লম্বা ঘুম। বিকেলে উঠে স্যারের হোমওয়ার্ক শেষ করা।
ঘড়িতে সাতটা বেজে পঁচিশ মিনিট। ফায়াজ রুশাকে সূত্র বোঝাতে ব্যস্ত। রুশা তার স্যারকে দেখায় ব্যস্ত। চোখাচোখির এই বিশেষ ব্যাপারটা ফায়াজের দৃষ্টি এড়ায়নি। কয়েকবার দেখার পর সে প্রশ্ন করে,
“আড় চোখে কী দেখছো তুমি?”
“আপনাকে দেখছি।”
রুশার এই উত্তরে ফায়াজ বিষ্ময় ভরা চোখে তাকিয়ে থাকে। এই মেয়ে বলছে কী? আবারও প্রশ্ন করে,
“আমায় দেখার কী আছে?”
“অনেক কিছু।”
“যেমন?”
“স্যাররা কি আদৌ এত সুন্দর হয়?”
“আমার তো মনে হয় না।”
“তবে আপনি এতো সুন্দর কেন?”
“আমার সেটাও মনে হয় না।”
“আপনি খুব সুন্দর৷”
ফায়াজ চোখ বড়ো করে তাকায় রুশার দিকে। স্যারের চোখ রাঙানোও যেনো ভালো লাগছে তার। তাই সে-ও নির্দ্বিধায় তাকিয়ে আছে তার স্যারের দিকে। বিরক্ত ভরা কন্ঠে ফায়াজ বলে ওঠে,
“এমন থাপ্পড় মারবো তোমার কানের নিচে। ফাইযলামি করো নাকি তুমি সঙ্গে? চুপচাপ সূত্রগুলো দেখো। আমি পড়া ধরবো। না পারলে তোমার খবর আছে।”
“কয়টার খবর স্যার?”
“রুশা, আমার মেজাজ খারাপ করাবে না। দ্রুত পড়া শেষ করো।”
রুশা কিছুক্ষণের জন্য দমে যায়। স্যারের দেওয়া সূত্রগুলোতে চোখ বুলায়। কিন্তু কিছুই মাথায় ঢুকছে না।
মিনিট দশেক পর।
ফায়াজ রুশার সামনের থেকে বইটা নিয়ে নেয়।
“পড়াগুলো বলো।”
রুশা তো পড়া পারে না। এখন কী হবে? স্যার কি তাকে মারবে নাকি বকবে? যদি মারে! নাহ, এত্তো বড়ো মেয়ের গায়ে কি আর হাত তুলবে নাকি? যদি বকা দেয়! কি-ই বা আর বলবে? দুই একটা বকা-ই তো দিবে। দিক, আমার সমস্যা নেই। ওদিকে স্যার পড়া জিজ্ঞেস করছে, এদিকে সে এইসব ভেবে যাচ্ছে।
ফায়াজ কয়েকবার প্রশ্ন করার পরেও উত্তর পায়নি। স্টুডেন্ট চুপ থাকলে সেই লেভেলের মেজাজ খারাপ হয় তার। সহ্য করতে না পেরে স্কেল দিয়ে রুশার হাতের আঙুলে মারে সে। বারিটা হয়তো বেশ জোরেই লাগে আঙুলে।
“আহ! স্যার আপনি আমায় মারলেন কেন?”
“পড়া জিজ্ঞেস করেছি তোমায়। চুপ করে আছো কেন?”
“তাই বলে মারবেন?”
“আবারও মুখেমুখে তর্ক করছো?
“স্যার, আপনাকে একটা কথা বলি?”
“আবার কী কথা বলতে চাও?”
“স্যার, না মানে আসলে।”
“হ্যাঁ, কী হয়েছে?”
“মানে, আপনার এই জেন্টেলম্যান লুকের সাথে এই আচরণ একদমই মানাচ্ছে না।”
কথা শুনে ফায়াজের চোখ দুটো আরও বড়ো হয়ে যায়। এই মেয়ে এইসব কী বলে?
“তুমি কি আমার ওপর নজরদারি করো নাকি রুশা?”
স্যারের কথায় রুশা ভেতর ভেতর হাসছে। কিন্তু সেই হাসি বাহিরে বের করছে না। সে জানে, হাসি বের হলেই তার বিপদ। তাই নিজের সামলে নিচ্ছে। রুশার দিক থেকে নীরবতা পেয়ে ফায়াজ আবারও প্রশ্ন করে,
“কী হলো বলো?”
“স্যার, আই থিংক!”
“ইউ থিংক?”
“আই থিংক, আই ফল ইন লাভ উইথ ইউ।”
“হোয়াট?”
“স্যার, আই থিংক। প্লিজ ডোন্ট বি সো ওরি।”
“স্যাট-আপ। পড়ো।”
স্যারের ধমক খেয়ে রুশা দ্রুত বইয়ের পাতায় নজর দেয়। এদিকে ফায়াজের খুব অস্বস্তি হচ্ছে। তার টিউশনি জীবনে এই প্রথম কোনো ফিমেইল স্টুডেন্ট তাকে এই কথা বলেছে। তার ভাষ্যমতে, এই কাজ করার দুঃসাহস এই পর্যন্ত কেউ করেনি। রুশার দিকে চোখ যায় তার। চেহারায় স্পষ্ট বাচ্চামির ভাব বোঝা যাচ্ছে। তার মা ঠিকই বলেছিলেন প্রথম দিন, তাদের মেয়ে বয়স অনুযায়ী অত্যন্ত বাচ্চামো করে। কিন্তু এ কেমিন বাচ্চামো? যে সে তার স্যারকে চারদিনের মাথায় প্রপোজ করে বসে। ফায়াজ ভাবছে রুশার বাবা-মায়ের সাথে কথা বলবে কি-না? আবার ভাবছে এই কথা বলা কি উচিত হবে? রুশা বাচ্চা মেয়ে। বয়সা সর্বোচ্চ আঠারো কি উনিশ হবে। এ সময় সবাইকেই ভালো লাগে। ক্লাসমেট থেকে শুরু করে ত্রিশ বছর বয়সের পুরুষ পর্যন্ত সবার প্রতিই এট্রাকশন কাজ করে। এটা শুধু মেয়েদের ক্ষেত্রেই নয়, ছেলেদের ক্ষেত্রেও তাই-ই। ভাবছে আরও কিছুদিন সে নিজেই ব্যাপারটা হ্যান্ডেল করবে। এরপর বাকিটা দেখা যাবে।
সেদিনকার মতো ফায়াজ চলে যায়। বই খাতা বন্ধ করে ফেসবুকে তার স্যারের আইডি ঘাটছে। লাস্ট পোস্ট বিশ মিনিট আগে। রুশা সময় মেলাচ্ছে। স্যার বাসা থেকে বের হয়েছে আধা ঘন্টা হবে। তার মানে বাসা থেকে বের হয়েই পোস্টটা করেছে। রুশা পোস্টে চোখ দেয়। কী লিখেছে তা দেখছে সে।
‘বাড়ন্ত বয়সে সবারই সব কিছু ভালো লাগে। একদিনের দেখাতেও তার প্রতি ভালোবাসা কাজ করে। আমার মতে, এটাকে ভালোবাসা বলে না। এটা শুধুই মোহ। এছাড়া আর কিছুই না।’
রুশা বুঝে গেছে পোস্টটা তাকে মিন করেই করা। ভাগ্যিস তার স্যারের টাইমলাইন পাবলিক করা, সেইজন্যই সব দেখতে পাচ্ছে সে। ইচ্ছে হচ্ছে একটা কমেন্ট করতে। কিন্তু নাহ, সে করবে না। যদি তার স্যার কোনো ভাবে টের পায় তার আইডি দিয়ে ফলো করা হয়েছে তাহলে সাথে সাথে ব্লকলিস্টে ট্রান্সফার করে দিবে। সেটা ভেবেই চুপসে যায় রুশা।
তিন দিন পর।
ক্লাসের সামনে থাকা বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে রুশা। রাসিন এসে তার পাশে দাঁড়ায়। রাসিন তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে তাতে তার কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। রাসিন ব্যাপারটা বুঝতে পেরে নিজ থেকেই বলে,
“তুই কি আমার সাথে খুব রেগে আছিস?”
রুশা ধীর কন্ঠে বলে ওঠে,
“নাহ। রাগ করবো কেন?”
“আমি কিন্তু তোকে ব্লক করিনি।”
“হ্যাঁ, আমি দেখেছি।”
“তোর কি মন খারাপ?”
“নাহ তো। আমি একদম ঠিকাছি।”
“নাকি মাথায় কোনো দুষ্টু বুদ্ধি আঁটছিস।”
“তোর এমন কেন মনে হলো?”
“তোকে এতোটা শান্ত আগে দেখিনি। তাই বললাম।”
রাসিনের কথার পরে আর কোনো কথা বলেনি রুশা। তার ভাবনা অন্য কিছু নিয়ে। কার কাছে জিজ্ঞেস করলে সঠিক তথ্য জানতে পারবে সে। এটাই ভাবছে সে। রুশার দিক থেকে তেমন রেসপন্স না পেয়ে মুখ কালো করে রাসিনও চলে যায়। ব্যাগ কাঁধে রুশাও সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে যায়।
বিকেলে মায়ের পাশে গিয়ে বসে রুশা। মা তখন টিভি দেখছে। তার মানে মুড ভালো আছে। প্রশ্নটা কি মা’কে করা ঠিক হবে? কলেজের বাংলা ম্যাম বলেছিলেন, তৃতীয় কাউকে এতোটা বিশ্বাস না করে নিজের মা’কে বিশ্বাস করবে। মন খুলে মায়ের সঙ্গে সব কথা শেয়ার করবে। মেয়েদের সব থেকে কাছের বন্ধুই হলো তাদের মা। মায়ের কাছে সব কিছুর সমাধান আছে। সেইজন্যই তো তিনি মা রুপে আমাদের কাছে আছেন। কাজল ম্যাম বেশ ভালো কথা জানেন। পার্ট বাই পার্ট বোঝান।
রুশা চট করেই তার মায়ের পায়ের উপর শুয়ে পড়ে। নাসরিন মেয়েকে নিজের কোলে পেয়ে হাসি মুখে প্রশ্ন করে,
“কী চাই?”
প্রশ্নটা করার কারণ হলো, রুশার যখনই কিছুর প্রয়োজন হয় তখনই সে তার মা’কে আহ্লাদ করে। আহ্লাদ করেই নিজের প্রয়োজনগুলো মিটিয়ে নেয়। তিনি আজকেও ভেবেছেন, মেয়ের বুঝি কিছু প্রয়োজন। তাই এই প্রশ্ন করেছে।
রুশাও আহ্লাদী স্বরে বলে,
“কিছু চাই না আম্মু। শুধু কিছু প্রশ্নের উত্তর চাই।”
“আচ্ছা কর। কী প্রশ্ন করবি?”
“ভালো লাগা মানে কী?”
মেয়ের করা প্রশ্নে একটু অবাক হোন নাসরিন। হঠাৎ এমন প্রশ্ন মেয়ের মনে কোথা থেকে এসেছে। উত্তর দেওয়ার আগে ভাবছে তিনি। রুশা অপেক্ষায় আছে, ভালো লাগা মানে কী প্রশ্নের উত্তরের অপেক্ষায়। নাসরিন ভাবছে কতটা সহজ করে উত্তর দিলে তার মেয়ে বুঝবে ভালো লাগা মানে কী?

পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায়…………………

স্যার পর্ব-০৩

0

#স্যার
#পর্ব_৩
লেখনীতে — আফরোজা আক্তার

আজ স্যার এখনো আসছে না। রুশা অপেক্ষায় আছে তার স্যারের। ফোন দিবে কিনা ভাবছে রুশা। সাত পাঁচ না ভেবে রুশা তার স্যারকে ফোন করে।
ফোন বেজে যাচ্ছে। কিন্তু রিসিভ হচ্ছে না। রুশা লাগাতার ফোন করে যাচ্ছে। কিন্তু অপর মানুষটা রিসিভ করছে না। সপ্তম বারের মতো আবারও ফোন করলো রুশা। এবার ফোন রিসিভ হয়েছে।
ফায়াজ ফোন রিসিভ করে।
“হ্যালো আসসালামু আলাইকুম। কে বলছেন?”
রুশা তার স্যারের ভয়েস শুনে যেনো অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছে। ফোনে খুব সুন্দর শোনাচ্ছে তার স্যারের কন্ঠটা। রুশাও জবাব দেয়,
“ওয়ালাইকুম আসসালাম স্যার। আসসালামু আলাইকুম।”
“হ্যাঁ কে?”
“স্যার আমি, রুশা বলছি।”
“কী ব্যাপার? তুমি হঠাৎ ফোন করেছো কেন? কী প্রয়োজন?”
“আপনি যে এখনো আসলেন না? কোনো সমস্যা হয়েছে কি-না?”
“আমার সমস্যা হয়েছে কি হয় নি তা দিয়ে তোমার কী কাজ? আর এইভাবে হুটহাট আমায় ফোন দিবে না। চুপচাপ পড়াগুলো শেষ করো। আমি আমার সময়ানুযায়ী আসবো।”
“আপনি রেগে যাচ্ছেন কেন স্যার?”
“ফোন রাখলাম। পড়ো।”
ফায়াজ ফোন রেখে দিলো। রুশার ভীষণ রাগ হচ্ছে। সে ভাবছে, এমন আচরণ করলো তার সাথে তার স্যার। কাজটা কী ঠিক হলো? এতো এটিটিউট কেন তার? স্যার বলে? আজকে আসুক। এতো পরিমাণ ত্যাড়ামি করবো যে সে বিরক্ত হবে কিন্তু কিছু বলতে পারবে না।
রুশা পড়তে বসেছে কিন্তু পড়াশোনায় তার মন নেই। সে ভাবছে তার স্যারের কথা। এমন আচরণ কেন করলো তার সাথে। সে কী এমন বলেছে?
আট টা বেজে পাঁচ মিনিট। কলিংবেল পড়েছে। ঘাড় ত্যাড়া করে রুশা টেবিলেই বসে আছে। ফায়াজ একটু ক্লান্ত চেহারা নিয়েই পাশের চেয়ারে বসে। রুশার দিকে তাকিয়ে দেখে রুশার মুখটা কালো হয়ে আছে। মুখের ভঙ্গি একটু পরিবর্তন করে বলে,
“এনিথিং রং রুশা?”
রুশাও জবাব দেয়,
“অল গুড।”
“গ্রেইট। বই নাও।”
“সামনেই তো রাখা আছে।”
ফায়াজ মাথায় হাত দিয়ে বলে,
“পেইজ নাম্বার ২৩৮ খুলো। একটা অংক আছে সেখানে। অংকটায় হাত দাও।”
রুশা মনে মনে ভাবছে, ইনি কি পুরো বইটা গিলেছিলেন নাকি। না দেখে এতো শিওরলি বললেন কীভাবে?
রুশাকে তাকিয়ে থাকতে দেখে ফায়াজ বলে, “বই খুলতে বলেছি রুশা। আমার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকতে বলিনি।”
“খুলতেছি।”
রুশার কড়া গলায় খুলতেছি শব্দটা শুনে ফায়াজ মুচকি হাসে। মাথাটা বেশ ধরে আছে তার। অন্যদিকে রুশার নিজের কাছেও মনে হচ্ছে তার স্যার আজ ক্লান্ত। তাই নিজ থেকেই প্রশ্ন করে,
“স্যার, একটা প্রশ্ন করি?”
“করো।”
“আপনাকে খুব ক্লান্ত দেখাচ্ছে। আপনি ঠিক আছেন তো?”
“হ্যাঁ, মোটামুটি ক্লান্ত। আর মাথাটাও বেশ ধরেছে।”
“আমি ম্যাসাজ করে দেই।” (অস্পষ্ট স্বরে)
“বুঝি নি, জোরে বলো।”
“নাহ মানে আসলে আপনার জন্য ঠান্ডা লেবু পানি নিয়ে আসি স্যার।”
“হ্যাঁ, তা আনতে পারো।”
“আচ্ছা, বসেন তাহলে। আমি এক্ষুনি বানিয়ে আনছি।”
“তুমি বানাবে?”
“হ্যাঁ। আমি সব কাজ করতে পারি। অনেকটা জুতো সেলাই থেকে শুরু করে চন্ডি পাঠ এর মতো।”
“তাই তো রেজাল্টের এই অবস্থা।” (অস্পষ্ট স্বরে)
“স্যার কিছু বললেন?”
“নাহ, যাও নিয়ে এসো।”
রুশা এক দৌড়ে তার ঘর থেকে বের হয়ে যায়। রুশা চলে গেলে ফায়াজ হালকা হেসে বলে, পাগলি একটা।

পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায়……..

স্যার পর্ব-০২

0

#স্যার
পর্ব_২
লেখনীতে — আফরোজা আক্তার

রাতে খাবার টেবিলে রুশারা সবাই মিলে বসে আছে। রুশা চুপচাপ মাথা নিচু করে বসে আছে। নাসরিন তার ৭ বছরের ছেলে রাইসুলকে খাইয়ে দিচ্ছে। আশরাফ গম্ভীর মুখে বসে আছে। বাবার এমন গম্ভীর হওয়াটা খুব সহজেই ধরতে পারে রুশা। রেজাল্ট খারাপ হয়েছে তার। প্রিন্সিপাল স্যার ফোন করেছে তার বাবাকে। নিশ্চয়ই ভালো মন্দ কথা শুনিয়েছে। রুশার সাহস হচ্ছে না বাবাকে কিছু বলার। তবে রুশা এটাও জানে তাকে তেমন কিছুই বলবে না তার বাবা। কারণ, রুশা তার বাবা-মায়ের কলিজার টুকরা। রুশা এটাও জানে যে, তার জন্ম খুব কষ্ট করেই হয়েছে। সেইজন্যই রুশার জন্য তারা দু’জনেই পাগল। রুশার জন্মের আবার কয়েক বছর রাইসুলের জন্ম হয়। রাইসুলে আসার পরেও রুশার ভালোবাসা এতটুকুও কমেনি।
বাবার এই গাম্ভীর্য ভাব রুশা মানতে পারছে না। খাবার সামনে রেখেই ভ্যা ভ্যা করে কান্না জুড়ে দেয় রুশা। রুশাকে কাঁদতে দেখে আশরাফ আর নাসরিন উভয়েই অবাক হয়ে মেয়ের দিকে তাকিয়ে আছে। আশরাফ শত রেগে থাকলেও মেয়ের কান্না সহ্য করতে পারে না। তিনি চেয়ার থেকে উঠে গিয়ে মেয়ের পাশে দাঁড়ায়। মেয়ের মাথায় হাত দিয়ে মেয়েকে সান্ত্বনা দেয়।
“কী হয়েছে মামুনি? কান্না কেনো করছো?”
“তুমি কেনো আমার সাথে কথা বলছো না বাবা? আমি কি খুব পঁচা হয়ে গেছি?”
“নাহ তো। কে বলেছে আমার মামুনি পঁচা হয়ে গেছে?”
“কেউই বলে নাই। আমিই বললাম। তাহলে তুমি কেনো আমার সাথে কথা বলো না। আম্মু আজকে রাইসুলকে বেশি বেশি আদর করেছে। আমাকে একটুও কাছে ডাকেনি। কেনো বাবা?”
আশরাফ ভ্রু জোড়া কুঁচকে স্ত্রীর দিকে তাকায়৷ নাসরিনও অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে স্বামীর দিকে। রেজাল্ট এতোটাই খারাপ হয়েছে যে তিনিও মেয়ের প্রতি রেগে ছিলেন বলে মেয়ের সাথে তেমন কথা বলেনি আজ। আশরাফের কাছে এই জিনিসটা খুব খারাপ লাগে। তিনি রুশার সামনেই নাসরিনকে বলে,
“মেয়ের একটু রেজাল্টই তো খারাপ হয়েছে। এর জন্য তুমি মেয়ের সাথে কথা বলবে না? কেনো নাসরিন?”
“তুমিও তো মেয়েকে আজকে ফোন দাওনি। তার বেলায়?”
রুশা আবারও কান্না শুরু করে। কাঁদতে কাঁদতে বলে,
“তোমরা দু’জনের একজনও আমায় আর ভালোবাসো না। রুশা তো ব্যাড গার্ল, তাই রুশাকে আর আদর করো না। আমি তো সব বুঝি।”
আশরাফ মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে,
“বাবা অলয়েজ লাভস ইউ বাচ্চা।”
নাসরিনও পাশের চেয়ারে বসে বলে,
“আম্মু অলসো লাভ ইউ বাচ্চা। কাঁদে না। রেজাল্ট খারাপ করেছিস বলে একটু রেগে ছিলাম। আর কান্না করে না মা।”
রুশাও চুপচাপ হয়ে যায়। তার কান্না করার আর প্রয়োজন নেই। যথেষ্ট প্যাম্পার পেয়েছে সে। বেশি কাঁদলে ন্যাকামি হয়ে যাবে। তাই চুপ হয়ে যায়।
আশরাফ খাবার খেতে খেতে রুশাকে বলে,
“মামুনি, তোমার জন্য স্যার ঠিক করেছি। স্যার আগামীকাল থেকে আসবে।”
রুশা তখন পানি খাচ্ছিলো। স্যারের কথা শুনে নাকে মুখে পানি উঠে যায় তার। এসব কী কথাবার্তা! স্যার! এই সময়েও স্যার! কলেজের সবাই জানলে তাকে নিয়ে আরও হাসা-হাসি করবে। বলবে রুশা ক্লাস ফাইভের বাচ্চার মতো এখনো বাসায় টিচার রেখে পড়ে। নাহ নাহ, এটা কখনোই সম্ভব না। রুশা সাথে সাথে বলে ওঠে,
“ইম্পসিবল বাবা। কখনোই না। আমি বাসায় টিচার রাখতে চাই না। আমি পড়বো না। প্রয়োজন হলে আমি ব্যাচে গিয়ে পড়বো। তবুও বাসায় পড়বো না। তুমি ওই স্যারকে বারণ করে দাও।”
মেয়ের কথা শুনে আশরাফ আবারও ভ্রু জোড়া কুঁচকে তাকায় মেয়ের দিকে।
“বাসায় স্যার আসলে সমস্যা কোথায় তোমার?”
“অনেক সমস্যা। আমি কি এখনো স্কুলে পড়ি নাকি যে বাসায় স্যার আসবে। আমি এখন অনেক বড় হয়ে গেছি। আমি এখন কলেজে পড়ি৷ সো, নো টিচার।”
“এবার পেয়েছো ১০ পরের বার পাবে ৫ এরপরের বার তো আর কথাই নাই।”
তখনই রাইসুল পাশ থেকে বলে ওঠে,
“এর পরের বার আপু ডাবল জিরো পাবে। মানে দুইটা আন্ডা। আম্মু মামলেট করে দিবে আর আপু ওই দুইটা মামলেট আন্ডা পরোটা দিয়ে খাবে।”
রাইসুলের কথা শুনে আশরাফ এবং নাসরিন উভয়েই হেসে দেয়। রুশার ইচ্ছা করছে রাইসুলকে কষে এক থাপ্পড় দিতে। কিন্তু উপায় নেই। সামনে বাবা-মা দু’জনেই বসে আছে। শুধু চোখ জোড়া বড় করে তাকিয়ে আছে সে রাইসুলের দিকে। আশরাফ হাসি থামিয়ে বললো,
“স্যারকে বারণ করা যাবে না। স্যার যথেষ্ট ভালো মানুষ। তোমার সাত্তার আংকেলের মেয়েকে সে পড়ায়। চিনেছো তো সাত্তার আংকেলের মেয়েকে। ওই যে মিম, যাকে মিম আপু বলে ডাকো। তাকে পড়ায়। মিম তো অনার্স ফার্স্ট ইয়ারে পড়ে। তোমার থেকেও বড়। সে যদি পড়তে পারে তুমিও পড়তে পারবে। আর কোনো কথা না। স্যার আগামীকাল থেকে প্রতিদিন সন্ধ্যায় আসবেন। টানা দু ঘন্টা তুমি তার কাছে পড়বে।”
রুশা ভালো মন্দ আর কিছু বলেনি। তার ভয় হচ্ছে রাসিনকে নিয়ে। রাসিন যদি কোনো ভাবে টের পায় সে বাসায় টিচারের কাছে পড়ে তাহলে তাকে কলেজে খুব পঁচাবে। মুখ শুকনো করে মা’কে বলে৷
“আম্মু, রাসিন যাতে কোনো মতেই না জানে আমার জন্য তোমরা বাসায় স্যার রেখেছো। নয়তো ও আমার কলেজ যাওয়া হারাম করে দিবে।”
মেয়ের কথা শুনে তারা দু’জনেই হাসে। চট করে আশরাফ বলে,
“তুমি নাকি সাইন্স গ্রুপের কোন মেয়েকে ভরা মাঠে চড় মেরেছো। কেন রুশা?”
“আমি ইচ্ছে করে মারিনি।”
“তাহলে?”
“রাসিন ক্লাস মিস করেছিল। মাঠে গিয়ে দেখি ওই মেয়ের সাথে হা হা হি হি করা শুরু করে দিয়েছে। আবার বুটও খাচ্ছে। তো আমি গিয়ে রাসিনকে বলতেছিলাম ওই মুহুর্তে ওই মেয়েটা তার লম্বা খাড়া নাকটা আমাদের মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়েছে। সহ্য করতে পারিনি বলে মেরেছি এক থাপ্পড়। পরদিন গিয়ে স্যরি বলেছি।”
“লাভ হলো কী? তুমি মেয়েটাকে শুধু শুধু মারলে। দেখলে তো নিজে ১০ পেয়েছো।”
“বাবা, বার বার ১০ পেয়েছি ১০ পেয়েছি বলবা না তো। ভাল্লাগে না আমার।”
“রাসিন ক্লাস মিস দিয়েও ৯৫ পায়। আর আমার মামুনি এতো মনোযোগ দিয়েও পায় ১০। হায়রে পড়া রে।”
নাসরিন মুচকি হাসে। আশরাফও হাসে। রুশার নিজের কাছে অপমানিত বোধ হচ্ছে। তাই সে উঠে নিজের ঘরে চলে যায়। রুশা চলে গেলে আশরাফ নাসরিনকে বলে,
“শুনেছি ছেলেটা বেশ ভালো পড়ায়। মিমের রেজাল্ট বরাবরই ভালো। আবার শুনেছি পড়া না পারলে এমন এমন শাস্তি দেয় যার ভয়েই সবাই পড়া শিখে। মনে হচ্ছে এতো দিনে রুশার জন্য ঠিকঠাক একজন মানুষ খুঁজে পেয়েছি। যা আমরা পারিনি তা স্যার পারবে।”
“আমার তো ওর রেজাল্ট ভালো হলেই হয়। আর কিছু চাই না। আশরাফ আমি এখনো অবাক সে ১০ পেয়েছে কীভাবে? তুমি একবার আগামীকাল কলেজে যেয়ো তো। প্রিন্সিপাল স্যারকে বলে ওর পরিসংখ্যান খাতাটা দেখার ব্যবস্থা করো। দেখে এসো মেয়ে লিখেছিলো টা কী?”
“আচ্ছা দেখবো। চিন্তা কোরো না।”
রাত তখন এগারোটা। রুশা অনলাইন দেখছে। নিউজফিড ঘাটাঘাটি করছে। এমন সময় রাসিনের একটা পোস্ট সামনে পড়ে তার। রাসিন স্ট্যাটাস দিয়েছে, ‘সারাবছর ক্লাস করে পাবলিক কীভাবে ফেইল করে’ আবার হা হা ইমুজিও দিয়েছে। রুশা কমেন্ট চেক করে দেখতে পায় সাইন্স গ্রুপের সেই মেয়েটাও কমেন্ট করেছে। কমেন্টটা এমন ছিলো যে, ‘থাক থাক বেচারিকে আর শোক দিয়ো না।’
রুশার চোখ ফেটে পানি পড়ছে। রাসিনকে ওই মুহুর্তে অনলাইনে পায় রুশা। সাথে সাথে ফোন দেয় ম্যাসেঞ্জারে। রাসিনও ফোন রিসিভ করে।
“কিরে ফেল্টুস! কী খবর?”
রাসিনের কথাটা শুনে আরও মেজাজ খারাপ হয় রুশার। এলোপাথাড়ি বকা শুরু করে রুশা।
“রাসিন, তুই কি মানুষ? ভুলে গেছিস অতীতের কথা? বাহ রাসিন বাহ! কত্ত ভালো বন্ধু তুই আমার। বাহ বাহ! নিজে যখন অংকে ৫ পাইলি। তোরে কত্তো সান্ত্বনা দিলাম আমি। তোর জন্য একদিন না খেয়ে থেকেছি। তুই খাস নাই বলে। আর আজ সেই তুই-ই আমারে নিয়া পোস্ট করিস। আবার তোর সেই পোস্টে সেই শাকচুন্নি কমেন্টও করছে। বাহ বাহ! রাসিন এতোদিন জানতাম সেরে গেলে সবাই বাঘের বাচ্চা হয়। কিন্তু তুই তো বাঘের বাচ্চা না। তুই হইলি কুত্তার বাচ্চা।”
রুশার কথা শুনে রাসিনের মেজাজও খারাপ হয়ে যায়। রুশা তাকে গালি দিয়েছে। সে-ও চুপ থাকে নি।
“খবরদার রুশা। গালি দিবি না। ওটা কি তোরে মিন করে বলছি নাকি তোরে ট্যাগ করে পোস্ট করছি। তুই আমায় কুত্তার বাচ্চা বলস কোন সাহসে। বেয়াদব, অসভ্য, ফাযিল মেয়ে।”
“আমায় মিন করে দেস নাই। তাহলে ওই শাকচুন্নি কমেন্টে কার কথা বলছে। তোর বউয়ের কথা?”
“থাপড়ে গাল লাল করে ফেলবো। কোনো ফেল্টুস আমার বউ হবে না। ভাগ এখান থেকে। ইশাকে শাকচুন্নি বলবি না। ও যথেষ্ট ভালো। তোর থেকে যথেষ্ট ভালো সে। সাহস হয় কীভাবে আমাকে গালি দেস।”
“একশো বার দিবো। তুই একটা কুত্তার বাচ্চা।”
“তুই হইলি গাধার বাচ্চা। বেয়াদব, দাঁড়া তোরে এক্ষুনি ব্লক করতেছি।”
ব্লকের কথা শুনে রুশা আবারও কেঁদে দেয়। কান্না করতে করতে বলে,
“দে দে। এক্ষুনি ব্লক দে। আর কখনো ব্লক খুলবি না। যদি খুলোস তাহলে আমিই ব্লক করবো। এক্ষুনি ব্লক দিবি।”
এই বলে লাইন কেটে ফোন বন্ধ করে দেয়। বালিশ চাপা দিয়ে কান্না করে রুশা। সবাই বলে তাতে তার খারাপ লাগে না। কিন্তু রাসিন স্ট্যাটাস দিলো এটা দেখে খুব খারাপ লাগছে তার। দিয়ে দেক ব্লক তাকে। সে-ও কলেজে গেলে কখনো রাসিনের সাথে কথা বলবে না। সে তো ইচ্ছে করে ফেইল করেনি। সূত্র গুলো মাথায় না ঢুকলে তার এতে কী দোষ। সে মন দিয়ে পড়বে। বাসার স্যারের কাছেই পড়বে। আসুক স্যার বাসায়। এইসব বলতে বলতে ঘুমিয়ে যায় রুশা।
মেয়ের ঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে থেকে নাসরিন আর আশরাফ সবটা শুনে নেয়। রাসিনের মোটেও এমন করা উচিত হয়নি। নাসরিন মেয়ের কান্না দেখে নিজেও কান্না করে দেয়। আশরাফ তাকে বলে,
“শক্ত হও। মেয়েকে আর কতকাল এইভাবে আগলে আগলে রাখবো আমরা। এমন ছোট ছোট কষ্টগুলোই আমাদের মেয়েকে শক্ত করবে। চলো, ঘরে চলো। আমি রাসিনকে ফোন করে দেখছি ব্যাপারটা।”

পরদিন।
আজ রুশা কলেজে যায়নি। সারাদিন ফোন বন্ধ করে রেখেছে। মা’কে বলে দিয়েছে রাসিন ফোন করলে যেনো তাকে না দেয়। যেনো বলে দেয় রুশা ঘুমাচ্ছে। কিন্তু রাসিন তার মা’কে ফোন করেনি। এতোই ইগো তার।
সন্ধ্যায় মায়ের ঘরের বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে রুশা। রুশার বারান্দা খুব পছন্দ। তার ঘরেও একটা বারান্দা আছে। রুশা মাঝে মাঝে বারান্দায় দাঁড়ায়। রুশার বারান্দায় এক জোড়া লাভ-বার্ড আছে। আর এক জোড়া টিয়াপাখি আছে। রুশা বিকেলে তাদের সাথে একা একা গল্প করে। আবার যখন রাতে ঘুম হয় না। তাদের সাথে খেলা করে। যদিও রুশার ১৯ বছর। কিন্তু মনটা তার এখনো ছোট শিশুর মতো। বাবা-মায়ের অতিরিক্ত ভালোবাসা তাকে কখনো বড় হতে দেয়নি।
সন্ধ্যার পর পরই বাসায় কলিংবেল বেজে ওঠে। রুশার সেদিকে খেয়াল নেই। কিছুক্ষণ পর নাসরিন রুশাকে ডাকে।
“রুশা তোমার স্যার এসেছে। কোথায় তুমি?”
মায়ের মুখে স্যারের কথা শুনেই ভড়কে যায় রুশা। স্যার চলেও এসেছে! সন্ধ্যা না হতেই স্যার হাজির। রুশার মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি খেলা করে। স্যারকে বাজিয়ে দেখলে কেমন হয়? নিজে নিজে ভাবছে রুশা। স্যার যদি বুড়ো হয় তাহলে কিছু করা যাবে না। কিন্তু স্যার যদি ইয়াং হয় তাহলে লাইন লাগানো যাবে। এতো বিরক্ত করবো যে বাছাধন না পারবে গিলতে না পারবে ফেলতে।
রুশা এই ভেবে মুচকি হেসে নিজের ঘরের দিকে পা বাড়ায়। স্যার তখন ড্রইংরুমে বসে আছেন। রুশা ড্রইংরুমে যেতেই নাসরিন বলে,
“রুশা এখানে আসো। ইনি তোমার স্যার। স্যারকে সালাম দাও।”
মায়ের কথায় সোফার সামনে গিয়ে দাঁড়ায় রুশা। স্যার তখন মাথা উঁচু করে রুশার দিকে তাকায়। আর রুশা সেখানেই হা হয়ে যায়। এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সে তার স্যারের দিকে। সালাম ভুলে গেছে সে। রুশার মা তখন চাপা স্বরে বলে,
“রুশা, স্যারকে সালাম দাও।”
কে শুনে কার কথা। রুশা তো তার স্যারকে দেখতেই ব্যস্ত। নাসরিন মেয়ের এমন আচরণে একটু বিব্রতবোধ করছেন।
সোফায় বসা সুদর্শন পুরুষটি নাসরিনকে উদ্দেশ্য করে বললো,
“সমস্যা নেই আন্টি। রুশা মেবি একটু ঘাবড়ে গেছে। সালাম আগামীকাল থেকে দিবে। এবং রেগুলারই দিবে।”
“যাক ভালো। রুশা, স্যারকে নিজের ঘরে নিয়ে যাও। আর হ্যাঁ মন দিয়ে পড়বে।”
রুশা মায়ের কথা মতো স্যারকে নিয়ে নিজের ঘরে যায়। পড়ার টেবিলের এক পাশে রুশা বসে অন্য পাশে স্যার বসেছে। রুশাকে বই খুলতে বলা হয়, কিন্তু রুশা তাকিয়ে আছে তার স্যারের দিকে।
ভ্রু জোড়া কুঁচকে স্যারও রুশাকে দেখছে। টেবিলে দুটো চাপড় মেরে রুশাকে বলছে,
“আমার মুখটাকে কি তোমার জিয়া উদ্যানের মাঠ মনে হচ্ছে? এভাবে তাকিয়ে আছো কেন? বই বের করতে বললাম না তোমাকে। বই বের করো।”
রুশা তখন তার স্যারকে বলছে,
“জিয়া উদ্যান কিন্তু আসলেই সুন্দর স্যার। প্রেমিক-প্রেমিকারা জোড়ায় জোড়ায় বসে থাকে সেখানে।”
স্যার বেশ অবাক হয়ে বলে,
“হোয়াট!”
স্যারের হোয়াট শুনে রুশার ধ্যান ভাঙে। তখনই জিজ্ঞেস করে,
“স্যার, আপনার নাম কী?”
“নাম দিয়ে কাজ কী?”
“নাম জেনে রাখা ভালো। নাম বলেন।”
“আমার নাম নেই।”
“আপনার নাম্বারটা সেভ করবো কী নামে তাহলে?”
“আমার নাম্বার সেভ করতে হবে কেন?”
“স্যার আপনার বুদ্ধি কি হাটুতে নাকি?”
স্যার আবারও অবাক। বেশ ধমকের সাথেই বললো,
“হোয়াট!”
রুশাও একটু ভিমড়ি খেয়ে বলে,
“মানে কখনো আপনার সাথে কথা বলতে চাইলে আমি ফোন করবো কীভাবে?”
“আমার সাথে তোমার কিসের কথা তাও আবার ফোনে।”
“ঢেড়স,,,,”
“কিহ! কী বললে তুমি?”
“নাহ মানে, দেখা গেল একটা পড়া বুঝলাম না। তখন তো ফোন করতেই হবে। সেইজন্য তো নাম্বার প্রয়োজন। সেই নাম্বারটা সেভ করবো কী নামে। নামের তো প্রয়োজন তাই না?”
“স্যার দিয়ে সেভ করলেই হবে।”
“আপনার আব্বু-আম্মু কি স্যার রেখেছেন নাকি আপনার নাম?”
“তুমি বেশি কথা বলো।”
“সবাই এই একই কথা বলে স্যার। এইবার নাম আর নাম্বারটা দিন। সেভ করে পড়া শুরু করি।”
“আর ইউ শিওর?”
“শিওর শিওর।”
“আমার নাম ফায়াজ কারিম। তুমি আমায় স্যার অথবা ফায়াজ ভাইয়াও বলতে পারো। নাম্বারটা তোমার খাতায় লিখে দিয়ে যাবো। এখন বই খুলো। আর একটাও কথা না। ওকে।”
রুশা ভাবছে, আহা! ফায়াজ কারিম। কি সুন্দর নাম। নামের মধ্যে একটা পাকিস্তানি পাকিস্তানি ভাব আছে। চেহারা তো বাংলাদেশির মতোই লাগে। কিন্তু নামটা অনেক সুন্দর। দেখতেও মাশা-আল্লাহ। এই স্যার পড়াবে জানলে কখনোই মানা করতাম না। ভাগ্যিস বাবা আমার বারণ শোনেনি।
ফায়াজ ভাবছে, কোন পাগলের পাল্লায় পারলাম রে বাবা। এটা মেয়ে নাকি জোকার। এই মেয়েকে ঠিক করতে খবর ছুটে যাবে আমার।
রুশা কলম হাতে ফায়াজকে প্রশ্ন করে,
“স্যার, আপনি কি আমাকে নিয়ে কিছু বলছেন?”
রুশার কথা শুনে ফায়াজ চোখ বড় করে রুশার দিকে তাকায়। আর রুশা খিল খিল করে হেসে দেয়।

পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায়…………………..

স্যার পর্ব-০১

0

#স্যার
#সূচনা_পর্ব
লেখনীতে — আফরোজা আক্তার

কলেজ থেকে এসে ব্যাগটা বিছানায় ছুঁড়ে ফেলে রুশা। মন মেজাজ খুব খারাপ তার। কলেজে আজ বেশ বড়ো সড়ো ঝামেলা করে এসেছে সে। সাইন্স গ্রুপের একটা মেয়েকে থাপ্পড় মেরে ফেলেছে। মন মেজাজ যেমন খারাপ তেমন ভয়ও হচ্ছে। কখন না জানি বিচার নিয়ে আসে বাসায়।
ঝামেলা হয়েছিল রাসিনকে নিয়ে। রাসিন রুশার ভালো বন্ধু। শুধু বন্ধু না বেশ ভালো বন্ধুত্ব তাদের। কিন্তু সাইন্স গ্রুপের ওই মেয়েটা বলা নেই কওয়া নেই শুধু রাসিনের সাথে আঠার মতো লেগে থাকে। সমস্যাটা এখানেই। আজ যখন রুশা ক্লাস শেষে রাসিনকে দেখতে না পেয়ে কলেজ মাঠে যায় তখনই সে দেখতে পায় রাসিন আর ওই মেয়েটা পাশাপাশি বসে বুট খাচ্ছে আর গল্প করছে। সহ্য করতে না পেরে দৌড়ে যায় তাদের কাছে। এরপরই মুখ দিয়ে যা এসেছে তাই বলেছে সে রাসিনকে। মাঝে ওই মেয়ে বলতে আসায় মেরে দিয়েছে এর চড়। আশেপাশে সবাই তাকিয়ে তার কান্ডকারখানা দেখছে।
রাসিনও চুপ থাকেনি। ইচ্ছামতো কিছু কথা শুনিয়ে দিয়েছে রুশাকে। বলেছে তার সাথে রুশার আর কোনো কথা নেই। রাগে দুঃখে সেখান থেকেই সোজা বাসায় চলে আসে রুশা। রুশার একটা বদভ্যাস আছে আর তা হলো, যেটা তার জিনিস সেটা একমাত্র তার-ই জিনিস। সব কিছুই তার। যেটা সে তার নিজের বলে দাবী করে তা সেই জিনিসে কারো চোখ পড়লে তার পছন্দ হয় না।
দরজায় জোরে জোরে কড়া পড়ছে। নাসরিন গলা ছেড়ে ডাকছেন মেয়েকে।
“রুশা। এই রুশা। দরজা বন্ধ করেছিস কেন?”
রুশার মেজাজ আরও খারাপ হয়ে যায়। সে-ও ভেতর থেকে ধমকানো শুরু করে তার মা’কে।
“সমস্যা কী তোমার আম্মু? হ্যাঁ, বলি সমস্যা কী? আমার বাবা আমার জন্য এই রুমটা বানিয়েছে। আমি রুমে দরজা বন্ধ করে বসে থাকি না শুয়ে থাকি তাতে তোমার কী? যাও তো এখান থেকে।”
মেয়ের এমন কথা শুনে নাসরিনের মেজাজও গরম হয়ে যায়। এইটুকুন মেয়ের কত্ত বড়ো সাহস সে তার মায়ের সাথে এইভাবে উঁচু গলায় কথা বলে। আজ তার একদিন কি রুশার একদিন কি। দরজায় আরও জোরে কড়া নাড়েন তিনি।
“দরজা খুল। নয়তো আজকে জানে মেরে ফেলবো। বেয়াদব মেয়ে। এসেই দরজায় খিল মেরেছিস। জিজ্ঞেস করায় কথায় শোনায়। এই রুশা দরজা খুল। নয়তো আমি দরজা ভেঙে ফেলবো।”
টিকতে না পেরে রুশাও দরজা খুলে দেয়। রুশা দরজার খোলার সাথে সাথে নাসরিন রুশাকে কিছু বলতে যাবে তখনই দেখতে পায় তার মেয়ের গালে চোখের পানির দাগ। মুখটা শুকিয়ে এতটুকুন হয়ে আছে। রুশা তার আর আশরাফের একমাত্র মেয়ে। বিয়ের প্রায় আট বছর পর রুশার জন্ম। রুশা তার আর আশরাফের চোখের মনি। মেয়ের কিছু হলে যেমন আশরাফ মাথা ফেলে দেয়। তেমনি সে-ও অস্থির হয়ে যায়। রুশার চেহারা দেখে সে এতটুকুন আন্দাজ করতে পেরেছে যে, নিশ্চয়ই মেয়ের কিছু হয়েছে।
রুশা দরজা খুলে দিয়ে বিছানায় গিয়ে বসে পড়ে। নাসরিন পেছন পেছন গিয়ে মেয়ের পাশে বসে।
“কী হয়েছে? কাঁদছিলি কেনো?”
মায়ের প্রশ্নের উত্তর দিতে না পেরে ভ্যা ভ্যা করে আরও জোরে কেঁদে দেয় রুশা। মা’কে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করে। নাসরিন মেয়ের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলে,
“হয়েছে কী?”
মায়ের কাছে এক এক করে সব কথা বলা শুরু করে রুশা। রাসিনের সাথে ওই মেয়ের বসে গল্প করা, রাসিনের ক্লাস ফাঁকি দেওয়া, ওই মেয়ের সাথে ঢলা-ঢলি করা, এক সাথে বসে বুট খাওয়া, ওই মেয়েকে চড় মারা, রাসিনের সাথে ঝগড়া করা। সব কিছু বলে দেয় সে তার মায়ের কাছে। মেয়ের কথা শুনে নাসরিন কী বলবেন ভাবছেন শুধু। মেয়ে তার এতটা উগ্র কবে থেকে হলো?
“তুই অন্য গ্রুপের মেয়েকে থাপ্পড় মারতে গেলি কেন?”
“ও কেন আমার আর রাসিনের কথার মাঝে ঢুকতে গেল?”
“তোর আর রাসিনের কথার মাঝে কোথায় ঢুকলো সে। আমি তো দেখছি তুই তার আর রাসিনের মধ্যে ঢুকে পড়েছিস।”
“আম্মু তুমিও?”
“স্বাভাবিক ব্যাপার। দেখ, রাসিন তো আর বাচ্চা ছেলে না যে ওই মেয়ে ডেকেছে আর রাসিন গিয়েছে। তারা দু’জন গল্প করবে বলেই সেখানে বসেছে।”
“তাই বলে ক্লাস মিস দিয়ে?”
“তোর প্রবলেম কোথায় বল তো? রাসিনের ক্লাস মিস দেওয়া নাকি ওই মেয়ের সাথে বসে বুট খেতে খেতে গল্প করা?”
“দুইটাতেই আমার প্রবলেম আম্মু। রাসিন আমার ভালো বন্ধু। আমার সব থেকে কাছের বন্ধু। আমি চাই না সে আর কারো সাথে বসুক, কথা বলুক।”
“এখন তো রাসিন তোর উপরেই ক্ষেপে গেছে। এখন কী করবি?”
“তুমি কি রাসিনকে একবার ফোন করবা? প্লিজ আম্মু।”
“আমি কেন করবো। ঝামেলা করেছিস তুই, এর সমাধানও করবি তুই। এখন যা, ফ্রেশ হয়ে নে। দুইটা বাজে। ভাত খেতে হবে।”
“আম্মু রাসিন,,,”
“রেগে আছে। আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে। তখন তোর বন্ধু তোর-ই থাকবে। চল এখন।”
মায়ের কথায় একটু শান্ত হয় রুশা। তার এমন বেশি করাটা উচিত হয়নি। সে চাইলেই পারতো নিজেকে একটু সামলে নিতে। কিন্তু তা করেনি। সময় বুঝে রাসিনকে স্যরি বলে দিবে। কিন্থ ফোন করবে না। ফোন করলে দেখা যাবে রাসিন ফোন নাম্বারটা ব্ল্যাকলিস্টে ফেলে দিবে। তখন আর যোগাযোগ করা যাবে না।
নাসরিন টেবিলে খাবার বাড়তে বাড়তে মেয়ের কথা ভাবছে। মেয়ে তার দিন দিন উগ্র হচ্ছে। ছোটবেলা থেকেই তার এই অভ্যাস। যেটা নিজের বলে দাবী করে সেটার ওপর কারো নজর সহ্য করতে পারে না সে। ক্লাস ইলাভেনের স্টুডেন্ট সে। ধীরে ধীরে আরও বড় হবে, তখন কী করবে খোদা-ই জানেন।

দুইদিন পর।
ফার্স্ট টার্মিনালের রেজাল্ট দিয়েছে। পরিসংখ্যানে ফেইল করেছে রুশা। শুধু ফেইল না, মারাত্মক রকম ভাবে ফেইল করেছে। ৩৩ এ পাশ অথচ সে পেয়েছে মাত্র ১০। সবাই তার রেজাল্ট দেখে বেশ মজা নিয়েছে। কাজ সেরেছে। প্রিন্সিপাল স্যার সরাসরি রুশার বাবা আশরাফকে ফোন করে জানিয়ে দিয়েছেন। জানাবেন না-ই বা কেন? স্যারের সাথে আশরাফের বেশ ভালো খাতির। তাই তো বেছে বেছে মেয়েকে এই কলেজেই ভর্তি করিয়েছেন আশরাফ।
প্রিন্সিপাল স্যার রুশাকে তার অফিসে ডেকেছেন৷ মাথা নিচু করে অফিসে গিয়ে দাঁড়ায় রুশা। প্রিন্সিপাল স্যার রুশাকে দেখে প্রশ্ন করেন,
“খাতায় কী এমন লিখেছিলে আম্মাজান, যে মাত্র ১০ পেয়েছো। এই প্রথম আমার কলেজে ক্লাস ইলাভেনে কেউ পরিসংখ্যানে ১০ পেয়েছে। মন থাকে কোথায় তোমার? সেদিন সাইন্সের এক মেয়ে বিচার দিয়ে গেছে তুমি তাকে কলেজ মাঠে সবার সামনে থাপ্পড় মেরেছো। এইসব কী রুশা? কলেজে পড়াশোনা করতে পাঠিয়েছে তোমার বাবা-মা তোমাকে, গুন্ডামী করার জন্য নয়।”
প্রিন্সিপাল স্যারের কথা শুনে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে রুশা। নিজেই নিজের রেজাল্ট দেখে অবাক হয়েছে। আসলেই তো কী এমন পরীক্ষা দিলো সে যে টেনেটুনে ৩৩ মার্কও তুলতে পারলো না। আজ বাসায় গেলে উত্তম-মধ্যম খাবে সে। প্রিন্সিপাল স্যার আরও কিছু জ্ঞান দিয়ে তাকে যেতে বলেন।
স্যারের রুম থেকে বের হয়ে কলাপসিবল গেইট দিয়ে বের হয়ে যায় রুশা। কলেজ গেইট পার হবে এমন সময় রাসিন এসে দাঁড়ায় রুশার সামনে। মাথায় গাট্টা মারে রুশার।
“কিরে ফেল্টুস! যাচ্ছিস কোথায়?”
রাসিন মজা নিচ্ছে তার সাথে। সহ্য হচ্ছে না একদম। রাসিন আবারও বলে,
“আবুল মাইয়া, ১০ পাইলি কীভাবে? কী লিখছিলি খাতার মধ্যে?”
রুশা উল্টো প্রশ্ন করে,
“তুই কত পেয়েছিস রাসিন?”
“৯৫।”
“বাহ! কত্ত ভালো রেজাল্ট করলি তোরা।”
“তোর মতো কী সারাক্ষণ ফোন গুতাই নাকি আমরা। আবার আমাকেই জ্ঞান দেস ক্লাস মিস করি কেন? আমি তো ক্লাস মিস করেও ৯৫ পাইলাম আর তুই পাইলি মাত্র ১০। হা হা।”
“হাসছিস কেন এইভাবে?”
“যাহ ফেল্টুস মাইয়া। যা বাসায় যা।”
রাসিন আবারও গাট্টা মেরে চলে যায়। রুশার খুব কষ্ট হচ্ছে। আগের কথা ভাবছে সে। এই রাসিন ক্লাস টেনে থাকতে অংকে ৫ পেয়েছিল৷ সেইবার রাসিনকে কত্তো কত্তো সান্ত্বনা দিয়েছিল সে। অথচ আজ পরিসংখ্যানে ১০ পাওয়ায় রাসিন কতগুলো কথা শুনিয়ে দিলো তাকে। সেরে গেলে সবাই বাঘের বাচ্চা হয়ে যায়। কিন্তু রাসিন,, রাসিন বাঘের বাচ্চা না রাসিন হচ্ছে কুত্তার বাচ্চা। হ্যাঁ হ্যাঁ, রাসিন হচ্ছে কুত্তার বাচ্চা, কুত্তার বাচ্চা, কুত্তার বাচ্চা। রাসিনের পুরো চৌদ্দ গুষ্টির ষষ্ঠী পূজা করে দেয় রুশা।
বাসায় এসেই মায়ের কাছে এক ধাপ বকা খায় রুশা। একই প্রশ্ন তার মায়েরও।
“খাতায় লিখেছিস টা কী তুই যে ১০ পেয়েছিস? রাসিন ক্লাস মিস দেয়, এই দেয় সেই দেয়। অথচ ওই পোলা ৯৫ পেয়েছে কীভাবে?”
রাসিনের কথা শুনে মাথায় রক্ত উঠে যায় রুশার। মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে কাঁদতে কাঁদতে সে বলে,
“রাসিনও তো ক্লাস টেনে থাকতে অংকে ৫ পেয়েছিলো আম্মু। সেদিন আমি ওকে কত্তো সান্ত্বনা দিয়েছিলাম। আর আজ সেই রাসিন আমাকে কলেজ গেইটে ফেল্টুস বললো, আবুল মাইয়া বললো। আম্মু, রাসিন সেরে গেছে তো তাই তার পাখনা গজিয়েছে। আম্মু, রাসিন বাঘের বাচ্চা না। রাসিন, কুত্তার বাচ্চা।
“এই চুপ। একদম চুপ। এক বছর আগের কথা নিয়ে পড়ে আছেন উনি। বর্তমান নিয়ে ভাবেন আপনি। ফেল্টুস বলবে না তো কী বলবে? ফাযিল মেয়ে একটা। ছিঃ ছিঃ প্রিন্সিপাল স্যার তোর বাবাকে ফোন করে বলে, আশরাফ মেয়ে তো পরিসংখ্যানে ১০ পেয়েছে। কীভাবে সম্ভব?”
“আম্মু আমি তো সবই লিখছিলাম।”
“ভুলভাল লিখলে তোমার খালু নাম্বার দিবে তোমাকে? আসুক তোমার বাবা আজকে। দেখি সে কী করে? আমার আর ভালো লাগে না এইসব। এইভাবে আর হচ্ছে না। এইবার স্যার রাখতে বলবো। স্যার এসে বাসায় দুই ঘন্টা সময় দিয়ে যাবেন।”
এই বলে নাসরিন তার নিজের ঘরে চলে যায়। স্যারের কথা শুনে রুশার কলিজায় কামড় পড়ে। সে জীবনেও বাসার স্যারের কাছে পড়বে না। বাসার স্যারে প্রচুর প্যারা। সে আর পড়বে না কখনো বাসার স্যারের কাছে। এটাই তার শেষ কথা।

পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায়………………..

আলো থেকে অন্ধকার পর্ব-১২ এবং শেষ পর্ব

0

#আলো_থেক_অন্ধকার
Part:-12 (শেষ পর্ব)
writer:-#Esrat_jahan_Esah

– বাবা মা কিছু বলবে?
– নাহ আমরা আর কি বলব। কখনো ভাবিনি সমাজে এমন একটা পরিস্থিতে আমাদের দ্বারাতে হবে। (মা)
– মা রে তুই কেন তোর ভাবির সাথে গেছিলি? তুই বলতি কাজ শিখবি আমি তোকে একজন প্রশিক্ষক রেখে দিতাম। ফ্রি-তে স্বপ্ন দেখলে এমনি হয়। আমাকে তুই একটা বারের জন্য বলতি।
– বাবা আমার ভুল হয়ে গেছ। আমাকে মাফ কর বাবা আমাকে মাফ কর।
– সব ভুল তো আর ভুল না মা তুই বুঝবি না লোকে সব সময় এটা নিয়ে হাসি তামাশা করবে।
– দেখ বাবা আপু তোমরা এইভাবে বল না। তোমরা যদি আপুর সাথে এমন কর আপু কই যাবে।
– মা বাবা দেখ লিমা আসলে দোষী কিনা সেটাও দেখা উচিৎ।
– তুই এখনো তোর বউয়ের সাফাই গাইছিস। সামনে আমার মেয়ের বিয়ে দিব এখন মেয়ের একটা কলংক বসিয়ে দিল। (মুখে কাপর দিয়ে কেঁদে উঠে জায়েদের মা)

– আচ্ছা সবাই এখন শোনো। আসলে আপু দোষী কিনা সেটা বের করতে হবে।
আল্লাহ কুরআনে বলেন________

وَالَّذِیۡنَ یَرۡمُوۡنَ الۡمُحۡصَنٰتِ ثُمَّ لَمۡ یَاۡتُوۡا بِاَرۡبَعَۃِ شُہَدَآءَ فَاجۡلِدُوۡہُمۡ ثَمٰنِیۡنَ جَلۡدَۃً وَّلَا تَقۡبَلُوۡا لَہُمۡ شَہَادَۃً اَبَدًا ۚ وَاُولٰٓئِکَ ہُمُ الۡفٰسِقُوۡنَ ۙ

যারা সতী-সাধ্বী নারীর প্রতি অপবাদ আরোপ করে অতঃপর স্বপক্ষে চার জন পুরুষ সাক্ষী উপস্থিত করে না, তাদেরকে আশিটি বেত্রাঘাত করবে এবং কখনও তাদের সাক্ষ্য কবুল করবে না। এরাই না’ফারমান।

—আন নূর – ৪

ভাইয়া আমি ছোট কিন্ত বর্তমান বিষয়ের উপর কিছু হলেও জানা আছে আর আমার এক সিনিয়র ভাইয়ার সাথে কথা হয়েছে সে বলছে একজনের চেহারার উপর ফেইজ এডিট করে লাগানো যায়। হতে পারে তেমন কিছু একটা হয়েছে।
হতে পারে ঐটা অন্য কোনো মেয়ের ছবি সেখানে আপুর ফেইজ এডিট করে লাগানো হয়েছে।

আর এটাই মনে হয় সত্যি হবে আর আপু যেহুতু বলছে সে কারো সাথেই এমন ছবি তুলেনি।
– বাবা মা ভাইয়া তোমরা সবাই বিশ্বাস কর আমি এমন কোনো ছবি কারো সাথে তুলেনি।
আর ভাইয়া ভাবিকে বল কুরআনে যেভাবে সাক্ষী আনতে বলছে সেইরকম স্বাক্ষী আনতে। আর আপু বলছে ঐ ছেলেকে সে তেমন চিনে না ভাবি চিনে আর ভাবির ফোনে যেমন তার ছবি আছে তাহলে ছেলেকে সে নিশ্চুই চিনে?
– হুমম ভাইয়া ভাবি বলছে তার নাকি বন্ধু। অনেক আগে থেকেই পরিচয়।

জায়েদের কষ্টে বুকটা ফেটে যাচ্ছে। না পারছে কাউকে বলতে না পারছে লিমাকে কিছু জিজ্ঞেস করতে। শুধু মনে মনে এটাই ভাবছে একটু চিৎকার দিয়ে বলতে পারতাম আমার সাথে কেন এমন হলো? লিমা কি একটি বাড়ের জন্য ছেলের কথা ভাবল না?

– ভাইয়া মনকে শক্ত করো। জানি তোমার খারাপ লাগছে কিন্তু কিছু করার নাই বোনকে বাচাতে হলে ভাবির মুখুশ খুলতে হবে।

আর বাবা মা তোমরা তো জান আপু এ কাজ করতে পারে না। তোমরা আপুর সাথে খারাপ ব্যবহার করো না।
সয়ং আল্লাহ নিজে বলেছেন________

لَوۡلَاۤ اِذۡ سَمِعۡتُمُوۡہُ ظَنَّ الۡمُؤۡمِنُوۡنَ وَالۡمُؤۡمِنٰتُ بِاَنۡفُسِہِمۡ خَیۡرًا ۙ وَّقَالُوۡا ہٰذَاۤ اِفۡکٌ مُّبِیۡنٌ

তোমরা যখন একথা শুনলে, তখন ঈমানদার পুরুষ ও নারীগণ কেন নিজেদের লোক সম্পর্কে উত্তম ধারণা করনি এবং বলনি যে, এটা তো নির্জলা অপবাদ?

—আন নূর – ১২

তোমরা আপুকে ভুল বুঝো না। হে আপু ভুল করছে বাবা কে না জানিয়ে একটু লোভে পড়েই ভাবির সাথে গিয়েছে। কিন্তু তাই বলে এটা তো মানা যায় না। তোমরা শক্ত থাকবে কাল সকাল হলেই দেখবে প্রতিবেশি ভাবিরা আবার আসবে তোমাদের খোচা দিতে।

সুমি আবার কান্না শুরু করে। হে আল্লাহ তুমি আমাকে ক্ষমা কর। এ কোন পরিক্ষায় ফেল্লে আমায় আমাকে তুমি ধৈর্যধারন করার তৈফিক দাও।

– শোন মা তুই তোর নিজের সার্টিফিকেট নিজেই দিতে পারবি। তাই কে কি বলল সেদিকে কান দিস না। মনে মনে তুই নিজেকে ফ্রেশ রাখ। (মা)

– তুমি স্বাভাবিক ভাবেই ভাবির কাছে যাও আর ভাবিকে বল ঐ ছেলেকে হাজির করতে। ঐ ছেলের মূখেই শুনব আসলে ভাবি সঠিক না আপু।

আর ভাবির টাচ ফোন তুমি নিয়ে আসো। কাল ঐটা নিয়ে আমি আমার সিনিয়র ভাইয়ের কাছে যাব।

– আচ্ছা।

______

– লিমা তুমি ঐ ছেলেকে ফোন দিয়ে বল আসতে ওর কাছেই জানতে পারব সুমির সাথে ওর কেমন সম্পর্ক?
– আমি বার বার ঢোক গিলতে থাকি। তুহিন কে এখানে আনলে তুহিন যদি আমার কথা বলে দেয়। তাহলে আমার মান সম্মান তো কিছু থাকবে না। ( মনে মনে) কেন আপনি আমাকে সন্দেহ করছেন?
– নাহ কিন্তু লিমা
– কোনো কিন্তু না। আমি যা বলছি তাই সত্যি আর আমি আপনার মূখে একটা কথাও শুনতে চাই না। আমি আর এদের সাথে থাকব না। আলাদা বাসা নিয়ে থাকব অনেক ভালো ব্যবহার করছি। আর আপনি ভাবলেন কিভাবে আমি আমার বাচ্চা কে রেখে অন্য ছেলেদের সাথে কথা বলব। তাহলে কি আমি এতদিন ঘরে থাকতাম ঐ ছেলের সাথেই চলে যেতাম। আর আপনি যদি আমাকেই সন্দেহ করেন তাহলে বলেন আমি চলে যাব আলিফকে নিয়ে আপনাকে মুক্ত করে।

কথাটা শুনার পর জায়েদের কলিজা মনে হয় ভেংগেচুরে যাচ্ছে। সে লিমাকে বড্ড ভালোবাসে। সে চায় না কখনো লিমাকে হারাতে।

– লিমা দেখ আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি তবে সুমি তো আমার বোন।
– তো জান বোনকে গিয়ে শাসন করেন। আমাকে কেন বলছেন। সেই টাচ মোবাইল দিছেন পর থেকে একটার পর একটা সমস্যা। নেন চালাব না এই মোবাইল। বলেই লিমা জোরে মোবাইলটা আছার দেয় মাটিতে।

আমি তাকে অনেক ভাবে বুঝাই। আর বলি দেখুন আমি অনেক সহ্য করছি কিন্তু আর না। আপনি তাদের বলেন আমরা কোথাও ভাড়া থাকব আলাদা ভাবে। আর না হয় আমি নিজেই চলে যাব।
– আচ্ছা ঠিক আছে আমরা অন্য কোথাও চলে যাব।

সকাল বেলা সাকিল জায়েদ এর কাছে মোবাইল নিতে আসে।
– ভাইয়া ভাবির মোবাইলটা দাও।

জায়েদ নিচের দিকে তাকানোর জন্য ইশারা করে। সাকিল তাকিয়ে দেখে মোবাইল ভেংগে চারদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।
– এখন তাহলে কি হবে?
– কি হবে যা হওয়ার হইছে ভাবছি তোর ভাবিকে নিয়ে অন্য কোথাও চলে যাব তাহলে আর অশান্তি হবে না।
সাকিল কিছু না বলে ওখান থেকে চলে যায়। তবে সাথে করে মেমোরি কার্ড টা নিয়ে আসে। তারপর সাকিল কাউকে কিছু না বলেই ঘর থেকে চলে গেল।

সকালে আবার প্রতিবেশি দের গঞ্জনা ব্যঞ্জনা শুরু হয়েছে। আজকে অনেক ভাবি চাচির ঘরে পান চুন জর্দা নাই সবাই জায়েদের ঘরে পানে চুনের খোজে আসছে আর ২ চারটে কথা শুনচ্ছে।

সুমির মা চুপচাপ শুনছে কোনো উওর দেওয়ার মত ভাষা নাই। কারন ঘরের সত্রু যখব বিবিসন হয় তখন বাহিরের লোক আর কি তারা তো বলবেই।

জায়েদ ঘর থেকে বেড় হলে আমি তুহিনকে ফোন দেই আর বলি তুহিন তুমি তো এত দিন বলেছিলে আমার ১০ টা সন্তান হলে তুমি আমাকে চাও তাও আমাকে ভালোবাসো।
– হ্যা লিমা আমি তোমাকে ভালোবাসি। তোমাকেই চাই তুমি আমার সব। তোমার জন্যই তো আমি বিবাহ করি না।
– তাহলে আমাকে তুমি নিয়ে যাও। আমি তোমার কাছে থাকতে চাই।
– আহহা মেঘ না চাইতেই জল। হে তুমি আসবে লিমা?
– হে তুমি আজ রাতে বাড়ির পিছনের আম গাছের কাছে থাকবে আমি ঐ খানে আসব।
– আচ্ছা।

আজকে আমার বাবা মা কে খবর দেওয়া হয়েছে বিচার করার জন্য। মা আমার গালে একটা চর দেয় আর বলে
– ঘরের কথা ঘরে মিটানো যেত বাইরে বল্লে কেন। কেন মেয়েটাকে সমাজে ছোট করলি।
– তোমরা আসছ আমাকে শাসন করতে। শোনো মা তারা আমাকে মিথ্যা অপবাদ দিছে। তারা আমাকে দোষ দিছে আমি নাকি বাইরে ছেলেদের সাথে ঘুরে বেড়ায়। মা আমার একটা ছেলে আছে। আর সংসার আছে কেন আমি বাইরে যাব আর মা বাবা তোমরা এদের কথা বিশ্বাস করো না। আমি প্রমানো দিয়েছি।

– হুমম ভাবি কালকেই সব ক্লিয়ার হবে কে আসলে খারাপ।
– কিভাবে?
– আমার এক সিনিয়র ভাইয়ের কাছে ঐ ছবি গুলো দিয়ে আসছি কাল সে সব বেড় করতে পারব।

– কাল সকাল পযন্ত আমাকে পেলে হয় ( মনে মনে)
তোমরা যাই যা করো কখনো প্রমান করতে পারবে না। আর এটাই সত্যি যে ঐটা সুমি।

অনেক কথা কাটাকাটি হয়। সবাই কালকের অপেক্ষায় আছে।

এদিকে সুমি নামাজের বিছানায় আল্লাহর কাছে বার বার ফরিয়াদ করছে। হে আল্লাহ তুমি আমাকে কলংক মুক্ত কর। সুমির মাও নামাজে মেয়ের জন্য আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইছে।

________

– জায়েদ পাগলের মত উঠানে আলিফ কে নিয়ে লিমা বলে চিৎকার দেয় কিভাবে পারলে ছেলেটাকে ফেলে রেখে জেতে তোমার কি একটাবারও ছেলের জন্য মায়া হয় নাই। তুমি নিষ্ঠুর লিমা তুমি খারাপ মহিলা তুমি মা নামে কলংক।

বাড়ির সবাই জায়েদ কে এইভাবে দেখে হতভম্ব হয়ে দাড়িয়ে থাকে। পড়ে জায়েদ এর হাত থেকে জায়েদ এর মা আলিফ কে নিয়ে গেল। সাথে একটা চিঠি।

সেখানে এইটুকু লেখা ছিল।

তুহিন কে আমি ভালোবাসি অনেক আগে থেকে। তাই জায়েদ সাহেব আপনাকে আর আমাদের সন্তান কে মেনে নিতে পারতাম না। আর সুমির কাছে ক্ষমা প্রার্থী ওর সাথে অন্যায় করার জন্য।
আমি সুমির কলংক থেকে ওরে মুক্ত করলাম আর আমার ভালোবাসার কাছে আমি ফিরে গেলাম

ইতি
লিমা।

আমি ঐ রাতেই তুহিনের হাত ধরে পালিয়ে যাই আর এখন আমি এই বস্তিতে আছি তোর সাথে মিম। ভুল আমার সোনার সংসার নষ্ট করে দিয়েছি আমি চলে এসেছি অন্ধকার একটা অবস্থানে

– তুই তাদের খোজ নিয়েছিলি?
– হুমম।
– কি অবস্থা এখন?
– তিনি একজন কে বিয়ে করেছেন সেই ঘরেও একটা কন্যা সন্তান আছে। আর সে নাকি অনেক ভালো আমার ছেলেকেও অনেক ভালোবাসে।

সুমির ও বিয়ে হয়েছে অনেক ভালো জায়গায় সবাই সুখে আছে। আমার শ্বাশুড়ি নাকি মাঝখানে স্ট্রোক করেছিলেন এখন মোটামুটি আছেন।

– তুহিনের কি হয়েছিল।

– আর তুহিন আমাকে আনার ১ মাস পড়েই একটা মেয়েকে ধর্ষন করে। পরে সুজুক বুঝে মেয়েটা ওকে খুন করে। আর শরিরে ব্লেট দিয়ে কেটে লিখে দেয় ধর্ষক। মেয়ে টা এখন আপাতত জেলে আছে।
তবে ইচ্ছে করে মেয়েটাকে জরিয়ে ধরে বলতে বোন তোমাকে সেলুট। যে তুমি তোমার প্রতিশোধ নিতে পারছ সমাজ কখনো ওকে শাস্তি দিত না।

সবাই ভালো আছে শুধু অন্ধকার জগৎ থেকে আমি আসতে পারলাম না। কখনো আর আসাও হবে না।

তখন হাত থেকে লিমা একটা ঘুমের ঔষধের খোসা বেড় করে মিমের হাতে দিয়ে বলে ভালো থাকিস বিদায়।

– তুই এটা কি করলি কেন আত্মহত্যা করলি? আত্মহত্যা মহা পাপ।

লিমার আর কোনো শব্দ পাওয়া যায় নি৷ জাহান্নামের সার্টিফিকেট নিয়ে লিমা দুনিয়ার মায়া ভালোবাসা ত্যাগ করে বিদায় নিল।

এরকম ঘটনা হয়ত কারো জিবন থেকে লেখিনি কিন্তু এরকমি ঘটনা সামনে দেখেছি আর শুনেছি।
বিবাহ ব্যতিত সকল প্রেম হারাম আর বিবাহের পর যারা প্রাক্তন কে মনে করে কাঁদেন তাদের বলে রাখি শয়তান মনের ভিতর আপনাকে ধংস করার জন্য উঠে পড়ে লেগে আছে। তাই বিয়ের আগে যাই করেন বিয়ের পর নিজের স্বামী আর সন্তান কে ভালোবাসুন। ভালোবাসা দিয়ে ঘরে একটা জান্নাত তৈরি করুন। আর ভাইয়ারা কোনো মেয়ের বিয়ে হয়ে গেলে কখনো তার সাথে আর যোগাযোগ কইরেন না। যে চলে গেছে তাকে যেতে দিন আর সূখে থাকতে দিন। নিজেও ভালো মেয়ে দেখে বিয়ে করুন। আর সমাজে অনেক মেয়ে আছে যারা অন্যায় না করলেও মাথায় কলংকের বোঝা বইতে হয় তাই সবাই সত্য কে যাচাই করুন না জেনে কাউকে দোষারোপ করবেন না।

(আসসালামু আলাইকুম। কেমন হইছে জানাবেন। ভুল ত্রুটিগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। শেষ পার্টটা লিখতে অনেক কষ্ট হইছে কিভাবে শেষ করব । তাও চেষ্টা করছি সাজিয়ে লেখার। দোয়া করবেন পরের গল্প গুলো যেন আরো ভালো করে লিখতে পারি )

আলো থেকে অন্ধকার পর্ব-১১

0

#আলো_থেকে_অন্ধকার
Part:-11
Writer:-#Esrat_jahan_Esha

-কিসের ছবি?
-এই যে তোমার আর তুহিনের ছবি।
– আমার আর তুহিনের ছবি? আমি তো ঐ ছেলের সাথে ভালো করে কথাই বলিনি ছবি তুল্লাম কখন।

-এখানে কি হচ্ছে এসব মান সম্মান যা আছে তাও কি শেষ করবে নাকি?
– না বাবা আপনার মেয়ে আপনার মান সম্মান নিয়ে খেলা করছে।
– কি আজে বাজে কথা বলছ?
– এই যে দেখুন আর এত দিন আপনারা আমার নামে খারাপ খারাপ কথা বলছেন অনেক সহ্য করছি আর না।

জায়েদের ঘরে চিল্লা চিল্লির খবর শুনে এলাকার প্রায় লোকই এসে জমা হয়েছে। সবাইকে লিমা ছবি গুলো দেখাচ্ছে আর বলছে এখনো বলবেন আমি দোষী।

রেহানা ভাবি- আরে হ্যা এ তো সুমি একটা ছেলের সাথে অনেক গুলো ছবি।

সুমি মাথা নিচু করে আছে। কি হচ্ছে এসব নিজের কাছেই অবিশ্বাস্য লাগছে।

– তোরে আগেই বলছিলাম এই মেয়ের সাথে চলিস না। তাও তুই কথা সুনলি না এ তোর ভাবি? এটা হল গিরগিটি সময় মত রং বদলায়,।
– সুমি তুই আমার মেয়ে হয়ে এগুলো করতে পারলি? আর তুই না বলে কেন ঘর থেকে বের হলি?
-বিশ্বাস কর বাবা আমি এসব এর কিছু জানিনা না। ভাবি আমাকে ফাঁসাচ্ছে।
– ঐ সুমি মিথ্যা কেন বলছ? তোমাকে আমি কেন ফাঁসাব আর এই ছবি গুলো কি মিথ্যা? আমার কাছে যথেষ্ট প্রমান আছে।

ঘরে এখন আর কোনো কথা নেই সবাই চুপ করে আছে। কি বা বলবে বলার জন্য প্রতিবেশী যথেষ্ট। তারা শুধু কোনো ভাবে একটা কথা জানতে পারে তাহলে সেটা নিয়া গবেষণায় ব্যস্ত সত্য মিথ্যার যাচাই করার প্রয়োজন মনে করে না।

প্রতিবেশীঃ- হ্যা রে সুমি তোকে তো ভালো মেয়ে জানতাম শেষে তুইও কিনা। আহারে ভালো মেয়েই নাই।
– একদম পর্দা করে পর্দার গোর্দায় বেশি। কত রং ঢং দেখব।
– কই রে এত দিন তলে তলে এগুলা করতি? নামাজ রোজা কইরা কি করলি। তার চেয়ে এমনি চলাফেরা ভালো।

– আপনারা যে যা বলার আমাকে বলেন। কিন্তু কিছু হইলেই পর্দা নামাজ রোজা নিয়া কথা তুলেন কেন? সমস্যা কি আপনাদের? সত্য মিথ্যা আগে যাচাই করেন তারপর একজনের নামে এসব কথা বলবেন।
আমি যদি দোষ করেও থাকি তাহলে আমাকে বলেন যে আমি খারাপ তারমানে এই নয় সবাই খারাপ।

– চোরের মার বড় গলা। এই সবাই চলো সত্য কখনো চাপা থাকে না সে যতই ভালো সাজুক দেখছ বেড়িয়ে গেছে সব কুকির্তি

সবাই যে যার বাড়িতে চলে যায়।

জায়েদঃ- লিমা আমার বোন এগুলো কখনোই করতে পারে না। তুমি শুধু শুধু ওকে মিথ্যা অপবাদ দিচ্ছ।
– হো আমি মিথ্যা অপবাদ দিচ্ছি না আপনারা আমার সংসার নষ্ট করার জন্য মিথ্যা অপবাদ দিচ্ছেন। বললেই পারতেন আমাকে আর ভালো না। তাহলেই আমার ছেলেকে নিয়ে চলে যেতাম। আমার ছেলে আছে স্বামী আছে তাদের ছেড়ে আমি একটা ছেলের সাথে ইটিস পিটিস করব এতটাও খারাপ না।

জায়েদ কিছু বলতে গিয়েও বলতে পারল না। কিছু বলার নাই একদিকে বউ অন্যদিকে বোন। কাকে কি বলবে। তাও জায়েদ নিজেকে সামলাতে না পেরে লিমা কে একটা থাপ্পড় লাগিয়ে দেয় দ্বিতীয় থাপ্পড় দেয় সুমির গালে।

– লিমা কোনটা সত্যি কোনটা মিথ্যা সেটা পড়েই প্রমান হবে। আর সুমি সত্যি যদি তুই এমন করো তাহলে ঐ ছেলের সাথেই তোকে বিয়ে দিব না হলে কখনো আমাদের চোখের সামনে আসবি না।

আমার মনে একটা ভয় তৈরি হল আসলেই যদি তুহিন কে এনে সুমির সাথে বিয়ে দেয় তাহলে কি হবে? এটা কখনো হতে পারে না।
এখন এই টেনশন করব না। তবে ছবি গুলো এডিট করে রাখা হয়েছে বুদ্ধি মানের কাজ।

ফ্লাসব্যাক,,,,,,

-আচ্ছা তুহিন সুমি যদি কখনো বুঝতে পারে তোমার সাথে আমি দেখা করতে আসি তাহলে তো অশান্তি হবে। তখন কি করব।
– এটা তো একটা চিন্তার বিষয় আচ্ছা ভেবে দেখি কি করা যায়৷
– হুমম ভাবো ভাবো।
– পেয়ে গেছি
– কি?
– আমি যেভাবে যেভাবে বলব তুমি সেই ভাবে সেই ভাবে আমার সাথে ছবি তুলবে।
– কেন?
– কোনো কথা না আগেই বলছি।
ওকে।
তারপর তুহিনের সাথে ১০-১২ টা ছবি তুলি ওর কথামত।

– আচ্ছা সুমি ছবি আছে?
– হুমম আছে ওর ২-৩ টা পিক
-দাও।

পরবর্তী দিন,,
– এটা কে সুমি? ওর সাথে ছবি তুললে কখন?
– হুমম কি বুঝতে পারনি। আরে কালকে তোমার ছবির উপর এডিট করে ওর ফেইজ লাগিয়েছি।
– ওহ্হ আচ্ছা।
– কখনো সমস্যায় পড়লে সোজা এই পিক গুলো দেখিয়ে দিবে।
– ওকে।

আমার কাজ শেষ লিমা। এখন এক ঢিলে ২ পাখি। সুমিকে আমি বিয়ে করব আর তোমার ঘরে বসবাস করে তোমাকেও শেষ করব। সব আমার হবে সব আমার হবে। হা হা হা ( তুহিন মনে মনে)
,,,,,,,,

সাকিল বোনের এমন পরিস্থিতি শুনে মাদ্রাসা থেকে বাড়িতে আসে। এসে দেখে সুমি অনেক কান্না করছে।
– আপু তুই কান্না করিস না।
– সাকিল আমার ছোট ভাই বিশ্বাস কর আমি ঐ ছেলের সাথে কখনো কথা বলিনি তাও এই ছবি কিভাবে কি আমি বুঝি না।
– আপু তুমি এইভাবে ভেংগে পড় না। ধৈর্য ধারন কর। তুমি কি ভুলে গেছ মা আয়েশা (রা) কথা? তাকেও কিন্ত কিছু মুনাফিকেরা মিথ্যা অপবাদ দিয়েছিল। তুমি সুরা নূর এর শানে নুজুল দেখছ??

-নাহ। কি ছিল সেখানে?
– তাহলে শোনো,,,,,,,

سُوۡرَۃٌ اَنۡزَلۡنٰہَا وَفَرَضۡنٰہَا وَاَنۡزَلۡنَا فِیۡہَاۤ اٰیٰتٍۭ بَیِّنٰتٍ لَّعَلَّکُمۡ تَذَکَّرُوۡنَ

এটা একটা সূরা যা আমি নাযিল করেছি, এবং দায়িত্বে অপরিহার্য করেছি। এতে আমি সুস্পষ্ট আয়াতসমূহ অবতীর্ণ করেছি, যাতে তোমরা স্মরণ রাখ।
,,,,,
রাসূলে কারীম (ছঃ) এর অভ্যাস ছিল যে, তিনি প্রবাসে যাওয়ার সময় উম্মুল মু’মিনীনেদর নামে লটারী করতেন, লটারীতে যার নাম উঠত তাঁকে সাথে নিয়ে যেতেন । তদানুসারে পঞ্চম হিজরী সনে জঙ্গে মুরাইসীতে যাওয়ার সময় হযরত আয়েশা সিদ্দীকার নাম লটারীতে উঠে যায় । তিনি হুযূর (ছঃ)-এর সঙ্গে গেলেন । সফর থেকে ফেরার সময় মদীনার অদূরে প্রাতে বিশ্রাম করার জ্ন্য অবস্থান করেন । হযরত আয়েশা (রাঃ) প্রাকৃতিক প্রয়োজন মেটাতে গেলে তথায় তাঁর গলার হার হারিয়ে যায় । তিনি তৎক্ষণাৎ হারের সন্ধানে সে দিকে যান, তা খুঁজে আনতে কিছুক্ষণ দেরি হয় । এদিকে তাঁর ফিরে আসার পূর্বেই যাত্রীরা রওয়ানা হয়ে যায় এবং আয়েশা (রাঃ)-এর উষ্ট্র চালকও তাঁর উষ্ট্রারোহণের দোলনাটি উটের পিঠে উঠিয়ে দিলেন ।

আয়েশা (রাঃ) ছিলেন হালকা পাতলা, তাই বন্ধ দোলনা উত্তোলনকালে তিনি হযরত আয়েশার অবস্থান সম্বন্ধে কিছু অনুভব করতে পারেন নি । আর হযরত আয়েশা (রাঃ) ফিরে এসে দেখতে পান শূণ্য মাঠ প্রান্তর এবং নিস্তব্ধ জঙ্গল । অবশেষে তিনি এ ধারণায় সেখানে অবস্থান করলেন যে, তাঁর দোলনা শূণ্য দেখলে নিশ্চয় কেউ তাঁর সন্ধান করতে আসবে । এ অভিযানে পশ্চাতে কিছু রয়েছে কিনা তা অনুসন্ধান করতে এসে হযরত সফ্‌ওয়ান ইবনে মো’আত্তল কিছু দূর হতে মানবাকৃতির ন্যায় এক প্রতিচ্ছায়া দেখতে পেলেন । নিকটে এসে দেখলেন তা স্বয়ং হযরত আয়েশা সিদ্দীকা (রাঃ) । আর হযরত আয়েশা (রাঃ) ও পর পুরুষের আগমন দেখে নিজের মুখমণ্ডল আবৃত করে ফেললেন । হযরত সফওয়ান (রাঃ) তখন দ্রুত গতিতে উট হতে অবতরণ করে হযরত আয়েশাকে উটের পিঠে সওয়ার করিয়ে দিলেন এবং তিনি লাগাম ধরে আগে আগে চলতে লাগলেন । ঘটনা তো ছিল এ পর্যন্ত; কিন্তু মুনাফিকরা একে ভিত্তি করে নানা অপবাদ রটাতে লাগল এবং পূর্ণ এক মাস পর্যন্ত গোপন চর্চা চলল । এর প্রধান নায়ক ছিল মুনাফিক নেতা আবদুল্লাহ ইবনে উবাই । রাসূল (ছঃ) যখন এতদবিষয়ে জানতে পারলেন তখন অত্যন্ত বিমর্ষ হয়ে হযরত আয়েশা (রাঃ) হতে পৃথক থাকার ভাব ধারণ করলেন, মুখে কিছু বললেন না । হযরত আয়েশা (রাঃ) এর নিকটও এ অকথ্য বৃত্তান্তের সংবাদ পৌঁছল । রাসূল (ছঃ)ও আপন সতী স্বাধ্বী স্ত্রী সম্বন্ধে সম্ভাব্য অনুসন্ধান চালিয়ে নিষ্কলঙ্কতারই প্রমাণ পান ।

অবশেষে উম্মতের দিশারী হযরত মুহাম্মদ (ছঃ) বিবি আয়েশার পিত্রালয়ে যান এবং বললেন, তোমার সম্বন্ধে আমি এমন সংবাদ পেয়েছি । কিন্তু এটি যদি মানুষের পক্ষ হতে এক অপবাদ মাত্র হয়, প্রকৃতপক্ষে তুমি নিষ্পাপ হও, তবে শীঘ্রই আল্লাহ পাক তোমার নিষ্কলঙ্কতা নাযিল করবেন । আর যদি অপবাদ না হয়ে বাস্তবতার কিছু থাকে, তবে মানুষ তো ভুল-ত্রুটিরই প্রতীক, তোমার গোনাহ্ মাফের জ্ন্য তওবা করা উচিত । এতদশ্রবণে হযরত আয়েশা (রাঃ) শুধু এতটুকু বললেন, আমি হযরত ইউসুফ (আঃ) এর পিতার ন্যায় কেবল বলে চুপ থাকা ব্যতীত আর কি-ই বা করতে পারি । এমতাবস্থায় আল্লাহ তা’লা স্বতঃস্ফূর্তভাবে আয়েশা সিদ্দীকা (রাঃ) নির্মল চরিত্রবতী হওয়ার ওপর পূর্ণ দু’রুকূ বিবরণ নাযিল করেন ।

এ আপদের বেড়াজালে অনেক লোকই ফেঁসেছিল । কতিপয় মুসলমান তো এ ঘটনা শুনার সাথে সাথেই মিথ্যা বলে উড়িয়ে দেয় আর কেউ কেউ নীরবতা পালন করে আর কেউ কেউ হাসির মাধ্যমে তার আলোচনা করছিল আর কেউ কেউ অনুতাপমূলক বলাবলি করছিল । অতএব, যারা এক একটি সম্পূর্ণ মিথ্যা অপবাদ বলে স্পষ্টভাবে ইনকার করেছিল, তারা ব্যতীত অন্যান্য সকলকে অভিযুক্ত করা হয় এবং মিথ্যা অপবাদে মানহানিকারীদেরকে শাস্তিস্বরূপ আশিটি করে দোররা লাগান হয় । মুনাফিক সর্দার আবদুল্লাহ ইবনে উবাই যে এ অপবাদের আবিষ্কারক, বিধর্মচারণ, মুনাফিক এবং নবী কারীম (ছঃ)-এর সাথে শত্রুতার কারণে সে পূর্ব থেকেই জাহান্নামী । আর এ অপবাদের জন্য আরো অধিক আযাবের যোগ্য হয়েছে ।
—আন নূর – ১

– আপু তুমি নামাজে আল্লাহর কাছে বিচার দাও নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাকে হিফাজত করবে তোমার মানসম্মান তোমাকে উওম ভাবে ফিরিয়ে দিবে।

আর ভাইয়ার সাথে আমি কথা বলব। ভাবির নাটক অনেক সহ্য করছি আর না।

– ভাইয়া তোমার সাথে আমার একান্ত কথা আছে। তুমি মায়ের ঘরে আসো।
– আমিও যাব।
– ভাইয়া তুমি একা আসো আর ঐ মহিলা যেন ভাই বোনে কথার মাঝে যেন আড়ি না পাতে।

জায়েদ সাকিলের সাথে চলে গেল মায়ের ঘরে। আমার অনেক জেদ লাগল এহহ আসছে কি এমন কথা বলবে। যা যা তোরা যাই যা কর গিয়ে কখনো নির্দোষ প্রমান করতে পারবি না।

লিমা বাদে আর সবাই একসাথে বসে আছে। সুমি সবার সামনে মাথা নিচু করে বসে আছে।

– বাবা -মা তোমরা কি কিছু বলবে আপুর বিষয়?

চলবে,,,,,,,,,,,

( আসসালামু আলাইকুম,,। ভুলত্রুটি গুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন)