Saturday, July 26, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1532



নারীর সতীত্ব পর্ব-০৫

0

#নারীর_সতীত্ব
#পর্ব_০৫
Wohad Mahmud

আর যায় হোক সাবনাজ এতো কিছুর মধ্যে একটা কাজ কিন্তু ভালো হয়েছে।

কী ভালো কাজ হলো আবার?

ওই যে তোমার অল্প একটু হলেও লজ্জা ভেঙে গিয়েছে। আমাকে তুমি করে বলছো এখন, আর আমার হাত ধরে আছো। সারাজীবন এভাবে থাকবে। আমার কথা শুনে কিছু টা লজ্জা পেয়ে আমার হাত ছেড়ে দৌড়ে চলে যায় আর বলে আমি মাহমুদার কাছে যাচ্ছি।

এখন যাওয়ার সময় হয়েছে সবকিছু গুছিয়ে নিয়েছি। যাওয়ার সময় আমি আর সাবনাজ সবার থেকে বিদায় নিচ্ছি। কিন্তু মাকে আজ অন্যরকম লাগছে। আমার সাথে সাবনাজের সাথে ভালো করে কথা বলছে না। মুখটা কেমন গম্ভীর করে রেখেছে। যাওয়ার সময় মায়ের এমন গম্ভীর মুখ দেখে মন টা সত্যিই অনেক খারাপ লাগছে। আজ সকাল পর্যন্ত বেশ ভালোই ছিল কিন্তু হঠাৎ এমন হয়ে যাওয়ার কারণ কী। নিশ্চয়ই ভাবি কোনো কাটি মেরেছে। ভুলভাল কোনো কিছু বলেছে।

আমি বললাম তুমি মন খারাপ করছো কেন। আমরা তো আর সারাজীবন এর জন্য চলে যাচ্ছি না। আবার আসবো তো। প্লিজ মন খারাপ করো না।

মা তখন বলে বড় বউ আমার প্রেশারের ঔষধ টা দাও তো। তুমি ছাড়া আমাকে আর এই বাসায় কে খোঁজ খবর নেই। সবাই তো বাহানা আর মিথ্যা দিয়ে এই বাসা ভরিয়ে রেখেছে। কিন্তু আমি মায়ের কথা ঠিক বুঝতে পারলাম না কী বোঝাতে চায়। তারপর তার রুমে চলে যায় আমার কথার কোনো জবাব না দিয়ে। আমার আর বুঝতে বাকি রইল না নিশ্চয় ভাবি কোনো কাটি মেরেছে আমাদের নামে। তাকে ভাবি বলতেও ঘৃণা করে।

বড় ভাবি তখন ভিলেন দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে। মনে হচ্ছে শয়তান হাসছে।

মাহমুদা কে আড়ালে ডেকে বললাম মায়ের কী হয়েছে রে এমন গম্ভীর মুখে করে আছে কেন? আজ সকালেও তো মায়ের সাথে হেসে কথা বললাম কিন্তু এখন এমন করেছে আছে কেন?

আমি জানি না ভাইয়া কী হয়েছে। দেখ বড় ভাবি আবার তাল মেরেছে। তোদের নামে বানিয়ে বানিয়ে কী সব মিথ্যা কথা বলেছে মনে হয়।

আর কোনো উপায় না পেয়ে আমিও মন খারাপ করে চলে আসলাম। দুই ঘন্টার জার্নি পথ। বেশ ক্লান্ত লাগছে। সাবনাজের বাসায় এসে সবার সাথে ভালো মন্দ কথা বলে রুমে আসলাম তারপর ফ্রেশ হয়ে একটা ঘুম দিলাম। সাবনাজের ডাকে ঘুম ভাঙল। ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে বসে থাকলাম। তারপর সাবনাজ বলল__

আচ্ছা তোমার বড় ভাবি এমন কেন?

কেমন?

সকালে রান্না করার পর আমার সাথে কত সুন্দর করে কথা বলল। অনেক কিছু জানতে চাইলো। অনেক মিষ্টি সুরে কথা বলল। কিন্তু দুপুরে আমার সাথে কত খারাপ ব্যবহার করলো। একটা থাপ্পড় ও মেরেছে।

তোমাকে থাপ্পড় মেরেছে? তখন আমাকে বললে না কেন? এতো বড় সত্যি তুমি আমার থেকে কীভাবে লুকালে। আমাদের বাসায় থাকতে শুধু একবার বলতে পারতে। তাহলে আমি ওই বজ্জাত মহিলার উচিত শিক্ষা দিতাম জীবনে আর কখনো কারো গায়ে হাত তুলতো না। গায়ে হাত তোলার আগে দশ বার চিন্তা করবে।

সাবনাজ তখন বলে না বলেই ভালো করছি। আমি চাই না কোনো ঝামেলা সৃষ্টি হোক। একটা বিষয় চিন্তা করো মাহমুদ। আমি যদি তখন বলতাম তাহলে তুমি রাগের মাথায় কি করতে বলা যায় না। তোমার রাগান্বিত অবস্থায় আরো রাগিয়ে দিতে চাইনি। আর আমার বাসা থেকেও মানুষ আসছিল। এসে যদি তারা এসব দেখতো তাহলে পরিস্থিতি আরো খারাপ হয় যেত। তাই বলি নাই।

আমি তখন সাবনাজের হাত ধরে বললাম। আচ্ছা তুমি এতো ভালো কেন? নিজের টা না ভেবে সব সময় অন্যের ভালো দেখো। আর ঠিকই করেছ তখন না বলে। যদি বলতে আমি নিজেও জানতাম না কী করতাম। সবকিছু অন্য রকম যেত। পরিস্থিতির এমন না হয়ে অন্য রকম হতো‌। সত্যি আমি অনেক ভাগ্যবান তোমার মতো স্ত্রী পেয়ে।

আর প্লিজ এসব নিয়ে মন খারাপ করবে না সাবনাজ।

সাবনাজ তখন বলল মাহমুদ মন খারাপ করি নাই। তুমি পাশে থাকলেই হবে। আর মাহমুদা আছে মা বাবা আছে। একজনের জন্য সবাইকে দোষারোপ করে পারি না। তুমি এসব ভুলে যাও মাহমুদ।

ওয়েট ওয়েট তুমি বললে সকালে রান্নার পরে তোমার সাথে মিষ্টি মিষ্টি কথা বলেছে। এটা কি সঠিক?

হ্যাঁ সত্যি।

তো মিষ্টি মিষ্টি কী কথা বলেছে শুনি। আমার জানা মতে কোনো স্বার্থ ছাড়া সে তোমার সাথে মিষ্টি মিষ্টি কথা বলবে না। জরুর ডালমে কুচ কালা হে। যা যা বলছে সব আমাকে বলো কিছু বাদ দিয়ে বলবে না।

আমাদের বিয়ের রাতের কথা বলছে। আমার কোনো সমস্যা হচ্ছে কি? আমি তোমার সাথে মানিয়ে নিতে পেরেছে কী? বিয়ের দিন রাতে আমরা কেমন করে কাটালাম।

তো কী বললে তুমি।

কী আর বলব যা যা সত্যি সব বলেছি।

কিহহহ মানে যা যা হয়েছে সব বলে দিয়েছ। বিয়ের দিন রাতে তুমি খাটের উপর ছিলে আমি নিচে ছিলাম। এটাও বলে দিয়েছ কি? আর তুমি কেন তার সাথে এসব বলতে গেলে। আমাদের মাঝে যা হবে আর বলবে না, অত্যন্ত ভাবির সাথে না। বজ্জাত মহিলা তার কাজ শুধু ঠক লাগানো।

হ্যাঁ এটাও বলে দিয়েছি। আমি কী জানতাম না কী তোমার ভাবি এমন। তখন তো বেশ ভালোই মিষ্টি ব্যবহার করেছিল। আমি তাকে নিজের বোন মনে করছিলাম কিন্তু সে আমার সাথে এমন করবে ভাবতে পারি নাই। তুমি যখন বলছো তাহলে আর বলব না।

আর কিছু বলেছ কি ভাবি তোমার সাথে। একটু মনে করার চেষ্টা করো?

না আর কিছু বলি নাই‌।

আমি তখন হাফ ছেড়ে বাঁচলাম সতীত্ব পরিক্ষার জন্য ভাবির কথা শুনে আমাকে একটা সাদা রুমাল দিয়েছিল সেটা বলে নাই। বললে আমি সাবনাজ কে মুখ দেখাতে পারতাম না। মা কেও খারাপ ভাবতো সাবনাজ।

তবে আমি একটা মেয়ে তুমি তো সব সময় বাসায় থাকো না। আর একটা মেয়ের সমস্যা একটা মেয়ে ভালো বুঝতে পারে। নিজে নিজে সবকিছু সমাধান করা যায় না। অন্য একটা মেয়ের সাথে বলতে হয় সে জন্যই আমি ভাবির সাথে বন্ধুত্ব গড়তে চেয়েছিলাম।

চিন্তা করতে হবে না। তোমার যা সমস্যা আমার বোন মাহমুদার সাথে বলবে। দেখবে সে তোমাকে একদম নিজের বোনের মতো দেখবে‌। তার সাথে তোমার সম্পর্ক নোনদ ভাবির হবে না। দুই বোন আর বেস্ট ফ্রেন্ড এর মতো সম্পর্ক হবে।

সাবনাজ বলে এখন থেকে মাহমুদা আমার বোন আর বেস্ট ফ্রেন্ড। আমি সব সময় ওকে বোনের চোখে দেখব। আচ্ছা তোমার নাম মাহমুদ আর তোমার বোনের নাম মাহমুদা। নামের এতো মিল কে রেখেছিল।

নাম আমার মা রেখেছিল মিল করে। মাহমুদা আর আমার মধ্যে বিশেষ একটা মিল ছিল। দুজনের ঘাড়ের পিছনে দুটা করে তিল আছে। আর দুজন অনেক বদ মেজাজি ছিলাম ছোট থাকতে। সেই জন্যই মা দুজনের নাম মিল করে রাখছিল। মাহমুদার নাম আগে সুমাইয়া ছিল। তারপর পরে পরিবর্তন করে মাহমুদা রাখা হয় ছোট থাকতে।

সাবনাজ তখন বলে সেজন্য দুজনের এতো মনের মিল। আরো এতো সুন্দর ব্যবহার ‌। সত্যিই অনেক ভালো মনের মানুষ আপনি আর মাহমুদা।

আমি তখন সাবনাজ কে কাছে টেনে বললাম আচ্ছা তুমি কী পরিবর্তন হবে না হুমম।

কেন আমি আবার কী করলাম?

এইযে বিয়ের এতো দিন হলো এখনো আপনি করে বলে যাচ্ছো।তুমি করে কবে থেকে বলবে।

যদি তুমি করে না বলি তাহলে কী আমাকে ভালোবাসবে না।

না বাসব না অন্য মেয়ের সাথে ভেগে চলে যাবো। যেই মেয়ে তুমি করে বলতে পারবে। তারপর দুজনে অনেক প্রেম করব। আর না হয় দুটা বিয়ে করব। ভালো হবে না?

সাবনাজ তখন ছোট বাচ্চাদের মতো কান্না করে দেয়।

চলবে,,,,,

বি.দ্র: ভুল ত্রুটি ক্ষমা দৃষ্টিতে দেখবেন।

নারীর সতীত্ব পর্ব-০৪

0

#নারীর_সতীত্ব
#পর্ব_০৪
Wohad Mahmud

মায়ের সাথে কথা বলার নাম করে ছাদে , বারান্দায় গিয়ে কার সাথে কথা বলে শুনো। মনে হয় পুরাতন কোনো বয়ফ্রেন্ড হবে।

আমি সাবনাজ কে জিজ্ঞেসা করলাম ভাবি এসব কি বলছে সাবনাজ তোমাকে। সত্যি বলছে কি? কার সাথে কথা বলছিলা তুমি?

আমার কথার উত্তর না দিয়ে অনবরত কান্না করতে থাকে সাবনাজ। আমি জোর দিয়ে বললাম কী হলো তুমি যদি নির্দোষ হয়ে থাকো থাকো তাহলে কথার জবাব কেন দিচ্ছ না। তাহলে ভাবি যা বলছে সেটা কি ঠিক? তুমি যদি নির্দোষ হয়ে থাকো তাহলে তোমার কিছুই হবে না। যে তোমার উপর মিথ্যা অপবাদ দিয়েছে তার শাস্তি হবে আর যদি সঠিক হয়ে থাকে তাহলে আমি কিছু বলব না। তোমার ভালোবাসার মিলন ঘটিয়ে দেয়া আমার দায়িত্ব।

সাবনাজ তখন চোখের পানি মুছতে মুছতে বলে ওটা আমার ভাবির মেয়ে ছিল। মাত্র পাঁচ বছর বয়স। আমি যখন বাড়িতে ছিলাম তখন সব সময় আমার কাছে থাকতো। আমি চলে আসার পর শুধু আমার খোঁজ করে আর কান্না করে। সে জন্যই আমি বলেছিলাম বাবু আমি আজকেই এখান থেকে তোমরা কাছে চলে আসব। এখানে আর থাকবো না। যদি বিশ্বাস না হয় তাহলে আজকে যারা আসবে জিজ্ঞেসা করে নিয়েন। আর ভাবি সম্পূর্ণ না শুনে আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করেছে। বিশ্বাস করেন আমার কোনো ছেলের সাথে সম্পর্ক নেই।

ভাবি তখন মুখ ভাঙিয়ে বলে ঢং দেখে আর বাঁচি না। বাঘ যখন খাঁচায় বন্দী হয় তখন এমন লাফালাফি করে। সব মিথ্যা কথা বলছে এখন সব কথা ফাঁস হয়ে গিয়েছে সে জন্যই এমন নাটক করছে।
ভাবির কথা শুনে আরো জোরে জোরে কান্না করতে থাকে সাবনাজ।

তৎক্ষণাৎ আমার মনে পড়ে আমার ফোনে সব কল তো রেকর্ড হয়। তাহলে এতো কথা বলার কী আছে কল রেকর্ড শুনলে তো সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। আমি তখন বললাম চিন্তা করার দরকার নেই ভাবি আমার ফোনের সব কথা রেকর্ড হয়ে থাকে ভাবি। ফোন কলের রেকর্ড শুনলে সব পরিষ্কার হয়ে যাবে। কে মিথ্যা বলছে আর কে অন্যের সংসারে আগুন জ্বালাতে চায়।

কল রেকর্ড এর কথা শুনে ভাবির মুখ হাসি থেকে ভয়ে রুপান্তরিত হয়। তারপর আমি কল রেকর্ড প্লে করলাম। স্পস্ট শোনা যাচ্ছে সাবনাজ প্রথমে তার মায়ের সাথে কথা বলছে ভালো মন্দ জিজ্ঞাসা করছে। তারপর ভাবির সাথে কথা বলছে। ভাবির সাথে বলে আপনার মেয়ে কই ভাবি। ভাবি বলে তোমার জন্য কান্না করছে শুধু। সাবনাজ বলে কই দেখি আমি একটু কথা বলি, সাবনাজ তখন বলে বাবু আমি আজকেই এখান থেকে তোমরা কাছে চলে আসব। এখানে আর থাকবো না।

এটা শোনার পরে মাথায় কাজ করছে না আমার। ভাবির দিকে রাগি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি। কাছে আগিয়ে গিয়ে বললাম আপনার কুদৃষ্টি আমার পরিবার থেকে সরিয়ে নেন। মানুষের মাঝে মনমালিন্য সৃষ্টি করা বাদ দেন। সাবনাজ বাসায় আসছে আজ মাত্র তিন দিন হয়েছে। এখনি আপনি সাবনাজের সাথে যা করছেন না জানি এর পরে আপনি কী করবেন। এরপর যদি যদি আমার পরিবারের দিকে কুদৃষ্টি দিয়ে তাকিয়েছেন তাহলে আমি আপনার চোখ তুলে নিব। এখন ভাবি বলে কিছু করলাম না। কিন্তু এর পরবর্তীতে ভাবি বলে মানব না, কথাটা মনে রাখবেন।

সাবনাজ কান্না করতে করতে রুমে চলে যায়। আমি এখন কী মুখ নিয়ে সাবনাজের সামনে যাবো। আমারো দোষ কম না। ভাবির কথায় এসে একটু ধমক দিয়ে কথা বলেছি সাবনাজ এর সাথে। আমিই যদি আমার স্ত্রীকে বিশ্বাস করতে না পারি তাহলে অন্য কেউ কীভাবে করবে। এখন আমি কোনমতে সাবনাজ এর সামনে যেতে পারব না।‌ তাই ছোট বোন (মাহমুদা) কে ডেকে বললাম। বোন একটা কাজ করতে পারবি।

কি কাজ বল ভাইয়া।

আমি বললাম যা হয়েছে তুই তো সব দেখছিস। আমি ও সাবনাজ এর সাথে একটু ধমক দিয়ে কথা বলেছি। কান্না করছে সাবনাজ অনেক। প্লিজ বোন আমার, তুই গিয়ে একটু দেখবি কী করছে। পাশে গিয়ে একটু বস সাবনাজের।

এভাবে বলিস কেন তুই, প্লিজ বলার কী আছে। আমি ভাবির কাছেই যাচ্ছিলাম আজকের বিষয় টা অনেক খারাপ হয়েছে। যা হয়েছে সব তোর জন্য হয়েছে। ভাবির অপরাধ গুলো সব তুই বাবা মায়ের কাছে থেকে লুকিয়ে রাখিস সেই জন্যই এতো সাহস হয়েছে।

আচ্ছা আমার ভুল হয়েছে বোন এখন থেকে আর কারো অপরাধ লুকিয়ে রাখব না। সরাসরি প্রতিবাদ করব। এবার তোর ছোট ভাবির কাছে গিয়ে দেখ প্লিজ।

আচ্ছা যাচ্ছি সাইড দে এবার তুই।

তারপর মাহমুদা চলে যায় সাবনাজের কাছে। মাহমুদার নাম আমার সাথে মিলিয়ে রেখেছিল মা। আর আমার বোনটা একদম আমার মতো হয়েছে। আমাকে অনেক ভালোবাসে।আমিও অনেক ভালোবাসি। এমন একটা বোন পাওয়া সত্যিই ভাগ্যের ব্যাপার। বোন তো অনেকেই পেয়ে থাকে তবে তাকে ভালোবাসা দিয়ে আগলে রাখতে হয়।

কিছুক্ষণ পরে হঠাৎ কলিং বেল এর শব্দ শুনতে পেলাম। মনে মনে ভাবলাম হয়তো সাবনাজ এর বাসা থেকে লোক এসেছে। আমি ভয় পেয়ে আছি এই ভয় হলো আত্মসম্মানবোধ এর ভয়। যদি এসব কিছু তারা জানতে পারে বা ভাবি কোনো সমস্যা সৃষ্টি করে তাহলে আমার আর আমার পরিবারের মান সম্মান সব নষ্ট হয়ে যাবে। কীভাবে আমি তাদের সাথে তাদের বাসায় যাবো। আর গেলে চোখ তুলে তাদের সামনে তাকানোর সাহস আমার হবে না। নতুন নতুন যদি এমন হয় তাহলে পরে কী হবে। আমার অনেক বিশ্বাস আছে সাবনাজ এর প্রতি সাবনাজ কিছু বলবে না। ভয় করছি ভাবি কে নিয়ে, যদি কোনো গন্ডগল সৃষ্টি করে। অনেক কথা চিন্তা করতে করতে গেট খুলে দিলাম। তারপর সালাম বিনিময় করে ভালো মন্দ জিজ্ঞাসা করে রেস্ট নিতে বললাম।

তারপর মাহমুদা, আমার স্ত্রী সবনাজ কে নিয়ে নিচে নেমে আসে। কিছুক্ষণ আগেও অনেক কান্নাকাটি করছিল। এখন নিজের বাসা থেকে মানুষ আসার কথা শুনে হাসিমুখে নিয়ে নিচে নেমে আসে।

সাবনাজ এর ছোট ভাই বলে আপু তোর চোখ লাল কেন কী হয়েছে? তখন কান্না করেছিল তাই সাবনাজ এর চোখ লাল হয়েছে। কিন্তু সাবনাজ এসব উপেক্ষা করে বলে বাবা-মা তোদের জন্য অনেক খারাপ লাগছিল তাই কান্না করেছিলাম সে জন্যই মনে হয় চোখ লাল হয়েছে।আমি তখন মনে মনে ভাবতে থাকলাম নিজের সংসার ঠিক রাখতে নিজের পরিবার কে খুশি রাখতে হাসিমুখে মিথ্যা কথা বলতে পারে। কিন্তু সবাই না আমার ভাবির মতো কিছু অমানুষ আছে তারা অন্যের সংসার ধ্বংস করার জন্য সবকিছু করতে পারে।

সাবনাজ এর ছোট ভাই বলে কান্না কেন করবি? এতো সুন্দর একটা পরিবার অর্জন করেছিস তুই। মাহমুদ ভাইয়ের মতো একটা স্বামী, মাহমুদ ভাইয়ের বাবা মায়ের মতো শ্বশুর শ্বাশুড়ি। একদম তোর বাবা মায়ের মতো। তোকে কোনো কষ্ট পেতে হবে না। আর আমি তো আছিই মাঝে মাঝে এসে দেখে যাবো। আর হাসতে হাসতে বলে যদি বেশি কান্না করিস তাহলে বল দুলাভাই কে সাথে নিয়ে গিয়ে ঘর জামাই রেখে দিই। বাকি যারা ছিল সবাই হাসতে থাকে।

আমিও মনে মনে হাসলাম আর ভাবলাম আর যায় হোক সাবনাজ এর ভাই ভালোই বুঝে। সবকিছু ঠিকঠাক হ্যান্ডেল করে নিতে পারে। মনে মনে হাসলাম আর বললাম বুদ্ধিমান একটা শালা পাইছি।

ঠিক তখনি সাবনাজ এর ভাই বলে কি দুলাভাই ঠিক বললাম তো। পারবেন না ঘর জামাই থাকতে। আমিও হাসতে হাসতে বললাম হ্যাঁ পারবো আমার তো আরো ভালো হয় বসে বসে খেতে পারবো। কোনো কাজ করা লাগবে না।

সাবনাজ আমার দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি করে হাসছে। আমি সাথে সাথে সাবনাজ এর দিকে থেকে চোখ ফিরিয়ে নিলাম সত্যি অনেক লজ্জা পাচ্ছে আমার। সাবনাজ এর চোখের দিকে তাকিয়ে থাকতে পারছি না। কিছুক্ষণ আগে যা হয়েছে এটা যদি সাবনাজ এর ভাই জানতে পারতো তাহলে পরিস্থিতি এমন হতো না অন্যরকম হতো। কিন্তু সাবনাজ সবকিছু ঠিক করে নিয়েছে হাসিমুখে।

সবাই খাওয়া দাওয়া শেষে সবাই রেস্ট নিচ্ছে তখন আমি আস্তে আস্তে সাবনাজ এর কাছে যাই। বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে সাবনাজ। লজ্জা দৃষ্টিতে সাবনাজের দিকে তাকিয়ে হাত ধরে বললাম প্লিজ আমাকে মাফ করে দাও অনেক ভুল হয়েছে আমার। আমি তখন সম্পূর্ণ বিশ্বাস করতে পারি নাই তোমাকে। আর তোমাকে ধমক দিয়েছিলাম। আর কখনো এমন হবে না। তুমি যা বলবে আমি তাই করব। দরকার হয় তোমার পা ধরে মাফ চাইবো আমি। এই যে কান ধরে উঠ বস করছি, এক,দুই , তিন,

ঠিক তখনি সাবনাজ আমার হাত ধরে বলে কী করছো তুমি মাহমুদ এটা, থামো তো এবার। পাগল হয়ে গেলে না কী তুমি। এমন করতে হয় না। তুমি আমার স্বামী, তোমার উপর কেন রাগ করব বলো। তোমার জায়গায় তুমি ঠিক ছিলে সম্পূর্ণ ভাবে। আমার খারাপ লাগছে ভাবি আমাকে সন্দেহ করে আর আমার সাথে এমন করছে।

আরে বাদ দাও তার কথা। এমনিই মানুষের দোষ খোঁজ করা তার কাজ। আর এতো কিছুর মধ্যে একটা কাজ কিন্তু ভালো হয়েছে।

কী ভালো কাজ হলো আবার?

ওই যে তোমার অল্প একটু হলেও লজ্জা ভেঙে গিয়েছে। আমাকে তুমি করে বলছো এখন, আর আমার হাত ধরে আছো সারাজীবন এভাবে থাকবে। আমার কথা শুনে কিছু টা লজ্জা পেয়ে আমার হাত ছেড়ে দৌড়ে চলে যায় আর বলে আমি মাহমুদার কাছে যাচ্ছি।

চলবে,,,,,

নরীর সতীত্ব পর্ব-০৩

0

#নরীর_সতীত্ব
#পর্ব_০৩
Wohad Mahmud

যেই হাতের আঙ্গুল কেটে রুমালে রক্ত মাখিয়েছিলাম সেই আঙ্গুলে ব্যথা পেয়ে রক্ত বাহির হচ্ছে। মা বলছে কি হয়েছে। আমি বললাম কিছু না ব্লেডে কেটে গিয়েছে। আর ভাবি আমার দিকে আড়চোখে তাকিয়ে আছে। আমি তাকানোর সাথে সাথে চোখ ফিরিয়ে নেই ভাবি‌। আমি সম্পূর্ণ না হলেও কিছুটা বুঝতে পারলাম ভাবি হয়তো বুঝতে পেরেছে আমার হাত কাটার কারণ।

রুমে আসার সাথে সাথে সাবনাজ বলে উঠলো আপনি সবার সামনে মিথ্যা কথা কেন বললেন মায়ের সাথে?

আমি মুখে হাত নিয়ে ভাবতে ভাবতে বললাম মিথ্যা কখন বললাম আবার মায়ের সাথে।

মায়ের সাথে যদি মিথ্যা না বলেন তাহলে নিশ্চয়ই আমার সাথে মিথ্যা বলেছেন।

আরে বাবা আমি কারোর সাথে মিথ্যা বলি নাই। কি হয়েছে খুলে বলো তো আমাকে একটু। আমার তো মনে হচ্ছে না মিথ্যা বললাম।

সন্ধ্যায় যখন আপনি রুমে আসলেন তখন আপনার আঙ্গুল দিয়ে রক্ত পড়ছিল। আমি জানতে চাইলে বললেন দরজায় আঙ্গুল চাপ লেগে কেটে গিয়েছে। আর মায়ের কাছে বললেন ব্লেডে কেটে গিয়েছে। তাহলে তো এটা মিথ্যা কথা হলো তাই না?

আমি দাঁতের সাথে দাঁত চেপে বললাম। আমি কি মায়ের সাথে ব্লেডে কাটার কথা বলেছি। মনে হয় ভুল করে বলেছি। আচ্ছা বাদ দাও অনেক রাত হয়েছে এখন ঘুমাও। কাল সকালে অনেক কাজ আছে। তোমাদের বাসা থেকে মানুষ আসবে আমাদের নিতে। এটা বলে কোনো রকমে কেটে গেলাম। আর এমন ভুল করা যাবে না।

এটা বলে খাট থেকে বিছানা নিয়ে আর একটা বালিশ নিয়ে নিচে ঘুমানোর সময় সাবনাজ বলে। আজ থেকে আর নিচে ঘুমাতে হবে না উপরে ঘুমাবেন।

আমি বললাম না থাক তোমার সমস্যা হবে তো। আমি নিচে থাকছি আমার কোনো সমস্যা হবে না।

সাবনাজ আমার হাত ধরে বলে আমার সমস্যা হবে না। আপনি তো আমার স্বামী। আমাদের সারাজীবন একসাথে থাকতে হবে। সব আস্তে আস্তে মানিয়ে নিতে নিতে পারব আমি, বাবা, মা আছে। আমি চুপচাপ বাধ্য ছেলের মতো খাটের উপর উঠে ঘুমিয়ে পড়লাম।

তখনি তারপর সাবনাজ বলল এবার লাইট টা অফ করে দিন।

আমি বললাম থাক লাইট অফ করছি না। তোমার রাতে ঘুমাতে সমস্যা হবে ভয় পাবে।

সাবনাজ বলে সমস্যা হবে না আপনি পাশে থাকলে আমার কিছু হবে না। আর আপনার লাইট জ্বালিয়ে ঘুমাতে সমস্যা হয় আমি দেখেছি সারারাত মুখের উপর কাঁথা দিয়ে ঘুমিয়ে ছিলেন লাইট জ্বালানো ছিল বলে। আর কোনো উপায় না আমি বাধ্য ছেলের মতো লাইট অফ করে ঘুমিয়ে গেলাম।

কালকের মতো আজকেও নামাজের সময় ডেকে দেয় নামাজ পড়ার জন্য। আর যাই হোক এমন স্ত্রী পেয়ে অনেক খুশি। এখন থেকে নিয়মিত নামাজ পড়ছি। এমন স্ত্রী সবাই চায়।

নামজ পড়ে আমি ঘুমাচ্ছিলাম আর সাবনাজ কোরআন শরীফ পড়ছিল। কিছুক্ষণ পরে ঘুম থেকে উঠে দেখি সবাই সবার কাজ করছে‌ ফ্রেশ হয়ে ডাইনিং এ গেলাম, গিয়ে দেখি মা, ভাবি আর সাবনাজ কাজ করছে।

আমি হাসতে হাসতে মাকে উদ্দেশ্য করে বললাম নতুন বউ দিয়ে এতো কাজ করাও এখনি। বাড়ির গিয়ে কিন্তু মা বাবার কাছে বদনাম করবে‌। বলবে আমার শ্বাশুড়ি আমাকে দিয়ে অনেক কাজ করাচ্ছে।

মা বলে তোর বউ কে মানা করছি শুনে নাই। বদনাম তোর হবে আমার না। লোকে বলবে আজ বিয়ে হতে না হতেই বউ দিয়ে কাজ করাই‌। মায়ের কথা শুনে আমি জোরে জোরে হাসতে থাকলাম আর সবনাজ কিছু টা লজ্জা পেয়ে কাপড় দিয়ে মুখ ঢেকে রুমে চলে যায়।

ভাবি তখন আমাকে উদ্দেশ্য করে বলে। বাসার বউ বাড়িতে কাজ করবে নাতো কোথায় কাজ করবে। এভাবে বললে ‌তো আশঙ্কার পেয়ে পেয়ে মাথায় উঠে যাবে। আমি আর কিছু বললাম না। কুকুরের লেজ সোজা হবে না বাঁকা থেকে যাবে‌। ভাগ্যিস এখন সাবনাজ এখানে নেই। থাকলে এই কথা শুনলে কী মনে করত!

মা তখন মুচকি হেসে বলে সাইমা(বড় ভাবি) তোমার যখন নতুন বিয়ে হয় তুমি এক সপ্তাহ ঘর থেকেই বাহিরে হও নাই । কয়েকটা দিন যাক সব ঠিক হয়ে যাবে আস্তে আস্তে। আর তুমি তো আছোই সমস্যা হবে না আমার। তোমার প্রতি আমার অনেক বিশ্বাস আছে।

মায়ের কথা শুনে আমি তখন মনে মনে হাসতে থাকি আর বলি আমার মা জানে কীভাবে সিচুয়েশন‌ হ্যান্ডেল করতে হয়। ভাবিকে একটু সুনাম করল আর ভাবি গলে গেল। কারণ আমার মা একটু হলেও জানে ভাবি কেমন প্রকৃতির লোক।

প্রায় দুপুর হয়ে যাচ্ছে সাবনাজের বাসার লোকজন চলে আসবে। সাবনাজের বোন, দুলাভাই আর আর একটা ছোট ভাই আসবে। সাবনাজ রুমে শুয়ে আছে আমি বললাম যাও গোসল করে গুছিয়ে নাও চলে আসবে কিছুক্ষণ পরে সবাই।
তারপর আমি আর সাবনাজ ফ্রেশ হয়ে বাইরে আসলাম। ভাইয়া আর বাবা সবাই নেই। আমি মা, ভাবি, সাবনাজ আর আমার বোন বাইরে ডাইনিং এ বসে অপেক্ষা করছি আত্মীয়ের।

সাবনাজ আমাকে বলে তোমার ফোন টা একটু দিবে বাসায় কথা বলব। তারপর আমার ফোনটা সাবনাজ কে দিই। সাবনাজ ফোন নিয়ে বারান্দায় চলে যায়।

সাবনাজের দিকে তাকিয়ে থাকে ভাবি আর বলে ফোন নিয়ে দূরে যাওয়ার কী দরকার এখানেই তো কথা বলা যায়। এখানে কথা বললে কি হতো। সবার সামনেই তো কথা বলা যায়।

বোন তখন বলে হয়তো পার্সোনাল কথা থাকতে পারে ভাবি সে জন্যই গিয়েছে।

মুখ ভাঙিয়ে ভাবি বলে নতুন নতুন এমন পার্সোনাল কথা বলা ঠিক না। আমার কিছু বলার আগের চেয়ার থাকে অন্য রুমে চলে যায়।

আমি ফোনের দিকে তাকি ফেসবুকিং করছিলাম ডাইনিং এ মা আর বোন ব্যস্ত খাবার পরিবেশনে ব্যস্ত। ভাবি কখন যে চুপিচুপি বারান্দায় গিয়ে সাবনাজ এর ফোন কল শুনছে কেউ বলতে পারবে না।

একটু পরে ভাবি সাবনাজ এর হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে আসে আমাদের সামনে। আমি, মা আর বোন এসব দেখে অবাক। আমি ভাবির হাত থেকে সাবনাজ কে ছাড়িয়ে নিয়ে বললাম এসব কি হচ্ছে ভাবি। পাগল হয়ে গিয়েছেন আপনি। এমন শক্ত করে হাত ধরেছে হাতের যেখানে ধরেছে সেখানে লাল হয়ে গেছে।

আমাকে কথা না শুনিয়ে তোমার বউ কে শুনাও মাহমুদ। তোমার পরকিয়া বউ।

আমার মেজাজ গরম হয়ে গিয়েছে। ভাবি না হয়ে অন্য কেউ হলে সত্যি থাপ্পড় মেরে দিতাম। আমি বললাম কেন কি করছে আমার বউ যে তাকে কথা শুনাতে হবে। আর পরকিয়া বউ মানে এসব আজেবাজে কথা বলছেন কেন?

তোমার বউ মায়ের সাথে কথা বলার নাম করে কার সাথে বলছিল জিজ্ঞাসা করো। বাবু সোনা বলে ডাকছিল। আবার বলছে একবার এখান থেকে চলে গেলে তোমাকে ছেড়ে আর আসব না। আজকেই চলে যাবো। এসব কথা কাকে বলছিল জিজ্ঞাসা করো‌। মায়ের সাথে কথা বলার নাম করে ছাদে , বারান্দায় গিয়ে কার সাথে কথা বলে শুনো। মনে হয় পুরাতন কোনো বয়ফ্রেন্ড হবে।

আমি সাবনাজ কে জিজ্ঞেসা করলাম ভাবি এসব কি বলছে সাবনাজ তোমাকে। সত্যি বলছে কি? কার সাথে কথা বলছিলা তুমি?

আমার কথার উত্তর না দিয়ে অনবরত কান্না করতে থাকে সাবনাজ।

চলবে,,,,,,

বি.দ্র: ভুল ত্রুটি ক্ষমা দৃষ্টিতে দেখবেন।

নারীর সতীত্ব পর্ব-০২

0

#নারীর_সতীত্ব
#পর্ব_০২
Wohad Mahmud

তারপর মা বলে রুমাল দেখা এবার আমাকে, আর কোনো অযুহাত নয়। আমি বললাম আচ্ছা ঠিক আছে মা, রুম থেকে নিয়ে আসছি। রুমাল আমার পকেটে ছিল কিন্তু তাও বললাম রুম আছে নিয়ে আসি।
তারপর এসে রুমাল টা মায়ের হাতে দিলাম।

মা আমার দিকে তাকিয়ে আছে অল্প কিছুক্ষণ ধরে । আমি বললাম কি হলো এভাবে তাকিয়ে আছো কেন?
যাক রুমাল টা দেখে খুশি হলাম। রক্ত লেগে আছে রুমালে। দেখেছিস আমি সত্যি বলেছিলাম তুই তো আমার কথা বিশ্বাস করলি না। এখন ঘরে যা সারাদিন বাইরে ছিলি। বউ এর কাছে যা কিছু দরকার আছে কি দেখ। কোনো কিছু প্রয়োজন বা সমস্যা হলে আমাকে বলবি।

আমি বললাম ঠিক আছে মা। তারপর মুচকি হেসে রুম চলে আসলাম। মায়ের মুখেও হাসি আর স্ত্রী কিছু জানতে পারলো না। কিছু কিছু সময় মিথ্যা বলার দরকার আছে তাতে পরিবেশ সুন্দর থাকে।

রুমে এসে সাবনাজ আমার হাতের দিকে তাকিয়ে বলে আপনার হাত দিয়ে তো রক্ত পড়ছে কি হয়েছে হাতে?

আমি বললাম তেমন কিছু না আসার সময় গেটের দরজায় চাপ লেগে আঙ্গুল দিয়ে রক্ত পড়ছে। চিন্তা করতে হবে না অল্প একটু লেগেছে ঠিক হয়ে যাবে।

তারপর সাবনাজ বলল এদিকে আসেন আমি রক্ত মুছে ব্যান্ডেজ করে দিই। আমি মানা করতে গেলাম কিন্তু না বলার সাথে সাথে মুখ থেকে কথা ঘুরিয়ে নিয়ে বললাম আচ্ছা ঠিক আছে দাও। এই কারণেই মানা করলাম না স্ত্রী অনেক ভয়ে আছে হাত ব্যান্ডেজ করার বাহানায় স্ত্রী প্রথম স্পর্শ পেয়ে যাব। হাজার হলেও স্ত্রীর প্রথম স্পর্শ সে তো এক অমৃত স্বাদ। তারপর স্ত্রী নিজ হাতে রক্ত পরিষ্কার করে ব্যান্ডেজ করে দেয়। তারপর একটা ব্যথার ঔষধ খেয়ে নিই।

পরক্ষনেই আমার মনে আসে কাল থেকে ভাবিকে দেখছি না কেন? কোথায় গিয়েছে? আমার এখনো একটা কথা মনে আছে ভাইয়ার বিয়ের কয়েক সপ্তাহ পরে ছোট বোনের এইচএসসি পরীক্ষার ফি চেয়েছিল ভাইয়ার কাছে কিন্তু ভাবি দিতে দিয়েছিল না। ভাবি বলেছিল টাকা নেই এখন দেয়ার মতো। এবারের মতো তোমার বাবার কাছে থেকে নাও পরেরবার থেকে নিও। বোন তখন কান্না করতে করতে আমার কাছে এসে বলেছিল ভাইয়ার কাছে টাকা চাইলাম রেজিস্ট্রেশন ফি এর, কিন্তু ভাবি দিতে দিল না।

আমি বললাম সমস্যা হতেই পারে সব সময় টাকা থাকে না।বাবার কাছে থেকে চেয়ে নিবি।

দরকার হয় পরিক্ষা দিব না। তাও বাবার কাছে থেকে নিব না। বাবাই বলেছেন বড় ভাইয়ার কাছে থেকে নিতে।

আমার কাছে তখন টাকা ছিল কিছু আজ থেকে প্রায় দুই বছর আগে। তখন বেকার ছিলাম আমি। ছয় মাস মতো হয়েছে চাকরি পেয়েছি। পিকনিকে যাওয়ার জন্য টাকাগুলো গুছিয়ে ছিলাম অনেকদিন ধরে। সেদিন নিজের ইচ্ছা টা মাটি করে টাকাগুলো বোনের হাতে দিয়েছিলাম আর বলেছিলাম আমার সামনে আর কখনো কান্না করবি না। তুই তো জানি তোর চোখের পানি সহ্য হয় না আমার। আর হ্যাঁ একটা শুনে রাখ বাবা আর মা কে বলবি না এই টাকা টা আমি দিয়েছি বলবি বড় ভাইয়া দিয়েছে।বুঝেছিস!

কেন তা বলব ? কেন টাকা তো তুই দিয়েছিস বড় ভাইয়ার নাম কেন বলব

আমি ধমক দিয়ে বললাম বেশী বুঝিস না । আমি যা বলছি তাই করবি। যদি মা বাবা জানে ভাবি ভাইয়াকে টাকা দিতে মানা করছে তাহলে মা বাবার চোখে ভাইয়া ভাবি খারাপ হয়ে যাবে। আমি চাই না এই বাড়িতে কেউ কারো চোখে খারাপ হয়ে থাকুক।

কিন্তু কিছুদিন পরে জানতে পারি ভাবির ছোট বোনের সব খরচ ভাইয়া চালাই। কিন্তু নিজের বোনের খরচ দিতে পারে না। তখন বুঝতে পারলাম এভাবে আর চলবে না। ছোট বোন মা বাবার জন্য আমাকে কিছু করতে হবে। তখন থেকেই ছোট ছোট কাজ করতে করতে এখন আলহামদুলিল্লাহ ভালো পজিশনে আছি।

আগের কথা চিন্তা করতে করতে অতীতে ফিরে গিয়েছিলাম কিন্তু কারো কথা শুনে বর্তমানে ফিরে আসলাম। সামনে তাকিয়ে দেখি ভাবি দাঁড়িয়ে আছে। বিনয়ের সাথে বললাম বসেন ভাবি।

খাটের উপর বসে এদিকে ওদিকে তাকিয়ে দেখে বলে সাবনাজ কই দেখছি না কেন মাহমুদ?

আমি বললাম আছে কোথাও, মনে হয় ছাদে আছে। নতুন জায়গা ভালো লাগছে না তাই মনে হয় হেঁটে বেড়াই।

নতুন বউ এভাবে না বেড়িয়ে রুমে থাকতো বলো। এখনি এভাবে চলা ঠিক না। নতুন নতুন যদি এভাবে চলে আর কয়দিন পরে রাস্তায় হাঁটবে কাউকে না বলে। অল্প একটু চাপে রাখতে হয়।

হ্যাঁ ভাবি একদম ঠিক কথা বলেছেন বউকে কে চাপে রাখা ভালো। কিন্তু সব বউ কে না। যে সব বউ অন্যের সংসারে আগুন ধরিয়ে দেয়। যে সব বউদের অন্যের ভালো সহ্য হয় না তাদের কে। হক কথা বলছেন একদম ভাবি।

আমার কথার ইঙ্গিত বুঝতে পেরে ভাবি বলে আচ্ছা ঠিক আছে থাকো মাহমুদ ভাই আমার একটু কাজ আছে শপিং করতে যেতে হবে।

আমি বললাম কিন্তু ভাবি, ভাইয়া তো বাসায় নেই। কার সাথে যাবেন।

তোমার ভাইয়া বাসায় নেই তো তাছাড়া আমার একা শপিং করতে ভালো লাগে।

ভাবি রুম থেকে চলে গেল আমি মিটমিট করে হাসতে থাকি আর মনে মনে বলি কী যুগ আইলো নিজে উপদেশ মানে না, আর অন্যের বউকে কিভাবে কন্ট্রোল করতে হয় শেখাতে আসছে হাহাহা।

অনেক কথা ভাবতে ভাবতে একটা কথা পড়ে যাই আমরা। আচ্ছা মা আমার সাথে কাল যেটা করছে ভাইয়ার সাথেও কি এমন করছে। বউ এর সতীত্ব পরিক্ষার জন্য কি সাদা রুমাল দিয়েছিল। যে করেই হোক এটা আমাকে জানতে হবে। তবে ভাবির কাছে থেকে না। ভাইয়ার কাছে থেকে জানতে হবে। যদিও ভাইয়া আর আমি একদম বন্ধু সুলভ সেই ছোট থেকে একসাথে দুজন বড় হয়েছি। এক স্কুল কলেজে পড়েছি। পরে ভাইয়া ইঞ্জিনিয়ারিং পড়াশোনা করে আর আমি মেডিকেল। বয়সের পার্থক্য মাত্র দুই বছর। কিন্তু তবুও এই বিষয় সম্পর্কে জানা কেমন লজ্জাবোধ কাজ করছে। তাও আজ ভাইয়াকে প্রশ্ন টা করতে হবে।

যদি আমার সাথে যেমন করেছে মা, ভাইয়ার সাথেও তেমন করে থাকে তাহলে মা দোষী। আর ভাইয়ার সাথে এমন না করে তাহলে এই সব কিছুর পিছনে ভাবির হাত।আর যদি এমন হয়ে থাকে তাহলে উচিত শিক্ষা দিব আমি।

রাতে যখন ভাইয়া বাসায় আসে তখন আমি ভাইয়াকে ছাদে ডাকি। কিছুক্ষণ পর ছাদে আসে ভাইয়া। আমি ইজিলি ভাইয়া কে প্রশ্ন করলাম আচ্ছা ভাইয়া নারীর সতীত্ব বলতে কি বুঝো তুমি?

ভাইয়া বলল একটু ভেঙে বল। কী বুঝাতে চাচ্ছিস?

আমি বললাম আচ্ছা স্ত্রীর সাথে প্রথম সহবাসের সময় যদি রক্তপাত না হয় তাহলে কি তাহলে কি সেই মেয়ের চরিত্র খারাপ। আর রক্তপাত হলে চরিত্র ভালো।

ভাইয়া তখন বলে ধুর পাগল তুই একজন ডাক্তার হয়েও আগের যুগের মানুষের মতো চিন্তা ভাবনা রাখিস কেন। এগুলো কুসংস্কার।

আচ্ছা ভাইয়া তোমার বিয়ের সময় কি মা নারীর সতীত্ব নিয়ে কিছু বলেছিল কি? নাকি কোনো প্রমাণ চেয়েছিল।

না তো এমন কিছু বলে নাই। বা কোনো প্রমাণ চাইনি। কেন মা তোকে এ বিষয়ে কিছু বলেছে কি?

আরে না ভাইয়া এমন কিছু না মা আগের যুগের মানুষ তো তাই এমন কিছু বলছৈ কী জানতে চাইলাম তুমি কিছু মনে করো না আবার‌। আমার বুঝতে বাকী রইল না এসবের পিছনে মা নেই ভাবি ভুলভাল বুঝিয়ে এসব করেছে মাকে দিয়ে
ভাইয়া কিছু বলতে যাবে ঠিক তখনি সাবনাজ ছাদে এসে বলে নিচে সবাই অপেক্ষা করছে আপনাদের জন্য, খেতে ডাকছে। তারপর নিচে খেতে গেলাম আমি আর ভাইয়া।

অনেক ক্ষুধা লাগছে তাই তাড়াতাড়ি গিয়ে খেতে বসলাম। কোনো কিছু চিন্তা না করে জোরে খেতে গিয়ে উফফফ করে উঠলাম। যেই হাতের আঙ্গুল কেটে রুমালে রক্ত মাখিয়েছিলাম সেই আঙ্গুলে ব্যথা পেয়ে রক্ত বাহির হচ্ছে। মা বলছে কি হয়েছে। আমি বললাম কিছু না ব্লেডে কেটে গিয়েছে। আর ভাবি আমার দিকে আড়চোখে তাকিয়ে আছে।

চলবে,,,,

বি.দ্র: ভুল ত্রুটি ক্ষমা দৃষ্টিতে দেখবেন।

নারীর সতীত্ব পর্ব-০১ | বাংলা ধারাবাহিক গল্প

0

#নারীর_সতীত্ব
#পর্ব_০১
Wohad Mahmud

বাসর ঘরে ঢোকার সময় আমার মা আমার হাতে একটা সাদা রুমাল দেয়।
আমি বললাম কি হবে মা এটা?
মা বলে এটা রাখ তোর স্ত্রীর সতীত্ব পরীক্ষার জন্য এটা দরকার হবে। সহবাসের সময় যদি তোর স্ত্রীর রক্তপাত হয় তাহলে বুঝবি তোর স্ত্রী ভালো আর না হলে বুঝতেই পারছিস। রুমাল টা কালকে আমাকে দেখাবি।

আমি তখন অবাক হয়ে বললাম ছিঃ ছিঃ লজ্জা করছে না মা ছেলের সাথে এসব কথা বলতে। আর সবথেকে বড় কথা হলো এসব কুসংস্কার আগের কালের মানুষ এগুলো বিশ্বাস করত। এগুলোর প্রতি বিশ্বাস ছাড়ো।

মা তখন বলে তুই কি আমার থেকে বেশি জানিস।

হ্যাঁ মা অবশ্যই আমি বেশি জানি তোমার থেকে। আর আমি একজন ডাক্তার। তোমার থেকে এসব বিষয়ে আমি ভালো জানি মা।

বেশি কথা না বলে যা বলছি তাই কর। আমি তোর সন্তান না তুই আমার সন্তান। মুখে মুখে তর্ক করিস না।

আমি আর কোনো কথা বললাম না। রুমাল টা নিয়ে রাগে রাগে রুম ঢুকে গেলাম। আমি কখনো অন্যায়ের প্রশ্রয় দিই না। কিন্তু আজ বিয়ের দিন কোনো ঝামেলা করতে চাচ্ছি না। বাসায় সবাই কত আনন্দ করছে। তাদের আনন্দ মাটি করতে চাচ্ছি না। বাসায় নতুন বউ এসব বিষয় জানলে লজ্জায় আমার মাথা কাটা যাবে। কখনো তার সামনে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারব না।

রুমে ঢুকে খাটের উপর বসলাম রুমাল টা পকেটে রাখলাম। মা যেমনটা বলেছে যদি এমনটা করি তাহলে আমার আর আমার পরিবারের মান সম্মান সব নষ্ট হয়ে যাবে। যদি সে মা তারপর সব কথা মেনে চলা আমার দায়িত্ব কিন্তু মা হোক বা বাবা হোক অন্যায় কোনো কাজ করতে বললে সেটা তো করা যাবে না। বুঝাতে হবে, না বুঝলে প্রতিবাদ করতে হবে।

পৃথিবীর কোনো মেয়ে চায় না তার স্বামী প্রথম রাতেই তার সাথে সহবাস করুক। আমার স্ত্রীর পাশে বসার সাথে সাথে কিছুটা ভয় পেয়ে যায়। তারপর আস্তে আস্তে কান্না করতে থাকে।

আমি বললাম কান্না কেন করছেন। স্ত্রী ( সানজিদা সাবনাজ) বলে আমার ভয় করছে।

আমি তখন বললাম আপনার মাঝে হয় না জড়তা কাজ করছে আর বেদনা। কারণ নতুন জায়গা নতুন পরিবেশে। সবারই এমন হয়। বাবা মা আত্মীয় স্বজন ছেড়ে নতুন জায়গায়। মা বাবা থেকে দূরে থাকা বেশ ভালোই কষ্ট। আমি সাধারণত পড়াশুনার জন্য ক্লাস এইট থেকে বাইরে থেকেছি বাবা মা ছেড়ে। মাঝে মাঝেই মা বাবার জন্য ডুকরে ডুকরে কেঁদে উঠতাম। আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে যাবে। আমাকে শুধু স্বামী না একজন বন্ধু হিসেবে পাবেন আপনার পাশে। অনেক রাত হয়েছে ঘুমিয়ে পড়েন।

আর কিছু না বলে বিছানা থেকে উঠে একটা বালিশ নিয়ে নিচে একটা বিছানা পেড়ে, রাইট অফ করে শুয়ে পরলাম। কিছুক্ষণ পরে ঘুমন্ত অবস্থায় শুনতে পারি মাহমুদ মাহমুদ বলে কে যেন ডাকছে। কিন্তু এটা স্বপ্ন নয়। আমার হাতের বাহু ধরে সাবনাজ ডাকছে।
আমি বললাম কি হয়েছে সাবনাজ?

ভয় করছে আমার।

ভয় কেন করবে আমি আছি ভয় পাওয়ার কিছু নেই।

আসলে আমি অন্ধকার রুম ঘুমাতে পারি না। ছোট থেকেই লাইট জ্বালিয়ে ঘুমাই। লাইট বন্ধ করা তো তাই ঘুমাতে পারছি না।
আমি নিজেকে মনে মনে ধিক্কার দিলাম। কেমন মানুষ আমি। একটু জানতেও চাইলাম না লাইট অফ করে দিব নাকি জ্বালানো থাকবে।

আমিও আবার একদম ঘুমাতে পারি না লাইট জ্বালিয়ে রাখলে। তারপর লাইট টা জ্বালিয়ে দিয়ে কাঁথা মুড়ি দিয়ে আবার ঘুমিয়ে গেলাম।

ভোর রাতে দেখি আবার কে ডাকছে মাহমুদ মাহমুদ বলে। উঠে দেখি সাবনাজ ডাকছে। আমি বললাম কি হয়েছে কোন সমস্যা?

না কোনো সমস্যা নেই আজান দিয়েছে উঠে ওজু করে নামাজ পড়ে নেন।
কত বছর যে নামাজ পড়ি নাই তার কোনো হিসেবে নেই। তাও আজ শিতের মধ্যে নামাজ পড়তে ডাকছে। না উঠলে মাইন্ড করবে তাই উঠে নামাজ পড়ে নিলাম।

নামাজ শেষে অনেক ঘুম পাচ্ছিল কিন্তু না ঘুমিয়ে বাইরে চলে গেলাম। বাসায় থাকলে সকাল সকাল ঝামেলা শুরু করবে মা। স্ত্রীর সতীত্ব টেনে নিয়ে এসে বলবে রক্তমাখা রুমাল দিতে বলবে। কিন্তু আমাদের মাঝে তো এমন কিছু হয়নি যে রক্তমাখা রুমাল দেখাতে হবে। আর যদি হয়ে থাকত তাহলে আমি এমন কাজ কখনো করতাম না। কারণ এটা একটা মেয়ের জন্য অনেক অপমান জনক। আর রক্তপাত হলেই যে একজন মেয়ের সতীত্ব ঠিক আছ আর রক্তপাত না হলে সতীত্ব ঠিক নেই এই যুগে এসেও এসব বিশ্বাস করতে পারে কেউ, আমার মাকে না দেখলে জানতেই পারতাম না।

ভারাক্রান্ত মন নিয়ে বাইরে চলে আসলাম‌। অনেকক্ষণ হয়ে গিয়েছে কিন্তু বাড়িতে যেতে ইচ্ছে করছে না। কারণ বাড়িতে গেলে মায়ের সম্মুখীন হতে হবে। আর বিষয় টা অনেক খারাপ হবে‌‌। পরক্ষনেই ভাবলাম এভাবে আর কতক্ষন সারাজীবন তো আর এখানে থাকতে পারিনা। যখনিই বাড়িতে যাই মায়ের সম্মুখীন হতে হবে। তাই বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। পকেট থেকে ফোন বাহির করে দেখি ২২ মিসড কল দিয়েছে মা। ফোন সাইলেন্ট করা ছিল তাই বুঝতে পারি নাই। জোরে জোরে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম।

বাসায় যেতে যেতেই আপু হাত ধরে টান দিয়ে রুমে নিয়ে গিয়ে বলল তোর কি কোনো আক্কেল জ্ঞান নেই ভাইয়া। বাসায় নতুন বউ রেখে কোথায় চলে গিয়েছিস খোঁজ নেই। মা তোকে খুঁজছে অনেকক্ষণ থেকে। অনেকবার ফোন দিয়েছে ফোন রিসিভ করিস না অনেক রেগে আছে গিয়ে দেখ কি বলে।

মা বাবা আর অনেকেই ডাইনিং এ বসে ছিল। আমার যাওয়া দেখে মা ইশারা করে অন্য রুমে যেতে বলে মা। কিন্তু আমি না দেখার ভান করে বসে থাকি বাবার পাশে। আর বসে গল্প করছি। আর কোনো উপায় না পেয়ে মা আমাকে বলে মাহমুদ আমার সাথে আই একটু।

বাবা তখন বলল দাঁড়াও একটু পরে যাচ্ছে একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে কথা বলছি। আমি যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম যাক এবার মতো বাঁচলাম মায়ের সম্মুখীন হতে হবে না। আমি শুধু চাচ্ছি বাসার মেহমান আজ চলে যাক। কারণ সবার সামনে সমস্যা সৃষ্টি করতে চাচ্ছি না।

নামাজ পড়ে দুপুরে খাওয়া দাওয়া শেষ বিশ্রাম নিচ্ছি। সারারাত ঘুম হয়নি লাইট জ্বালিয়ে রাখলে আমার ঘুম হয় না। কিছুক্ষণ ঘুমানোর পরে বুঝতে পারি কে যেন ডাকছে মাহমুদ মাহমুদ বলে। উঠে দেখি সাবনাজ ডাকছে।

আমি বললাম কি হয়েছে কোন সমস্যা হয়েছে?

সমস্যা না মায়ের সাথে কথা বলব কাল আসার পরে থেকে আর কথা হয়নি। আমার ফোন বাড়িতে রেখে আসছি। আপনার ফোন টা দিলে কথা বলতাম। তারপর ফোন টা দিয়ে বললাম কথা বলো। আমাকে কেউ যেন আর না ডাকে সারারাত ঘুম হয়নি।

বিকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে বাজারে যাচ্ছিলাম বাজার করতে। কাল সাবনাজ এর বাসা থেকে মানুষ আসবে আমাদের নিতে তাই বাজার করা দরকার। বাজারে যাওয়ার সময় মা আমাকে পিছন থেকে ডাক দিয়ে বলে। মাহমুদ এদিকে আই শুনে যা।
আমি আবার মহা বিপদে পড়লাম এবার কিভাবে কাটিয়ে যাব। কাছে গিয়ে বললাম কি হয়েছে মা বলো আমার হাতে একদম সময় নেই। আর কিছুক্ষণের মধ্যেই সন্ধ্যা হয়ে যাবে। অনেক বাজার করতে হবে। অনেক সময় লাগবে বেশি রাত হলে এই রাস্তায় আবার রিকশা আসবে না।

মা বলে এতো তাড়াতাড়ি করার দরকার নেই। আজ সকাল থেকে তুই আমাকে এড়িয়ে যাচ্ছিস। রুমাল টা কই তাড়াতাড়ি রুমাল দেখা আমাকে।

আমি বললাম রাতে এসে দেখাচ্ছি মা বাজার করে এসে। সন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছে। কোনো ভাবে ওখান থেকে চলে আসলাম। তারপর বাজার করে রাতে বাসায় ফিরে আসলাম।

তারপর মা বলে রুমাল দেখা এবার আমাকে আর কোনো অযুহাত নয়। আমি বললাম আচ্ছা রুম থেকে নিয়ে আসছি। রুমাল আমার পকেটে ছিল কিন্তু তাও বললাম রুম আছে নিয়ে আসি।
তারপর এসে রুমাল টা মায়ের হাতে দিলাম।

মা আমার দিকে তাকিয়ে আছে অল্পকিছু ধরে।

চলবে,,,,,,

বি.দ্র: ভুল ত্রুটি ক্ষমা দৃষ্টিতে দেখবেন।

স্যার পর্ব-২৫ এবং অন্তিম পর্ব

1

#স্যার
#পর্ব_২৫
লেখনীতে — আফরোজা আক্তার

সময় খুব দ্রুত বয়ে যায়। সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে কেউ চলতে পারে না। কিংবা সময়ও কাহারো জন্য অপেক্ষা করে না। সময় তার নিজস্ব গতিতে ছুটে চলে।
এই সময়ই এক সময় দুটো মানুষকে আলাদা করে দিলো, যাদের মধ্যে ভালোবাসা ছিলো প্রবল। যদিও সেই ভালোবাসা ছিলো এক পাক্ষিক।
আবার এই সময়ই দীর্ঘ দুই বছর পর আবার তাদের দেখা করিয়ে দিলো। সময়ের এই উজান ভাটায় মানুষের জীবন প্রবাহিত হতে থাকে কোনো এক অজানা গন্তব্যে।
ফায়াজকে তার অনিশ্চিত ক্যারিয়ারের জন্য ভালোবাসার মানুষ হারাতে হয়েছে। নিজের ক্যারিয়ার গোছাতে গিয়ে যে তাকে খুব ভালোবেসেছে তাকে নিজের কাছ থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছে।
রুশা, তার অবুঝ মনে ভালোবাসার অনুভূতি ধারণ করে তার স্যারকে আপন ভেবে নিজের অনুভূতি ব্যক্ত করে বার বার রিফিউজ হয়েছে। এক পর্যায়ে পরিস্থিতির সাথে পেরে উঠতে পারেনি আর। তখনই নিজেকে ধীরে ধীরে একটু একটু করে সামলে নিলো সে।
ভাগ্য বড়ই আজব জিনিস। কপালের লিখন যায় না খন্ডন। কপালে যা থাকবে তাই হয়ে যায়। শত চেষ্টা করেও কেউ সেইটা মুছতে পারে না। যার সাথে যার মিলন লিখা হয়ে থাকে শুধু দুই বছর কেন বহু বছর পরেও সে আসবে। আসবেই, আর এটাই সত্য। এটাই বাস্তব।
হাতে হাত রেখে পাশাপাশি হেঁটে চলছে রুশা আর ফায়াজ। রুশার পরনে সাদা রঙের শাড়ি। আর ফায়াজের পরনে সাদা রঙের পাঞ্জাবি। দু’জনকেই অপূর্ব লাগছে। এক কথায় অসাধারণ। রুশার স্বপ্ন সত্যি হলো। কথায় আছে, স্বপ্ন শুধু দেখলেই হয় না। স্বপ্নকে বাস্তবায়নও করতে হয়। আর স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে হলে নিজের প্রতি নিজের দৃঢ় আত্মবিশ্বাস রাখা লাগে। এবার সেই স্বপ্ন যা কিছু নিয়েই হোক না কেন। তবে রুশা শুধু স্বপ্ন দেখেছিলো। বাস্তবায়ন করার আগেই সেই স্বপ্ন ভেঙে গিয়েছিলো তার।
ওইযে বলেছিলাম না, কপালের লিখন যায় না খন্ডন। কপালে যা থাকে, ঘুরেফিরে তাই জীবনে চলে আসে। রুশার ভেঙে যাওয়া স্বপ্নও তার জীবনে চলে এসেছে।
গত তিন দিন আগে পারিবারিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে রুশা এবং ফায়াজ বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। রুশার বাবা আশরাফ প্রথমে না করেন। তিনি এই ছেলের কাছে কিছুতেই মেয়েকে দিবেন না যার জন্য তার মেয়ে গত দুটো বছর এত কষ্টে ছিলো।
নাসরিন যখন মেয়ের বিয়ের কথা তুলেছেন তখনই তার প্রথম প্রশ্ন ছিলো ছেলে কী করে?
নাসরিন আমতা আমতা করে যেই না ফায়াজের কথা বললেন ওমনি তিনি গর্জে উঠলেন।
“অসম্ভব। এই ছেলে শত লেকচারার হোক। এই ছেলে আমার মেয়েকে বহু কষ্ট দিয়েছে। আমি নেহাৎই শান্ত মানুষ। নয়তো আমার মেয়েকে কাঁদানোর জন্য এই ছেলেকে আমি শুলে চড়াতাম।”
“আহা! তুমি রেগে গেলে কীভাবে হবে, বলো তো?”
“শোন নাসরিন, আমার একটা মাত্র মেয়ে। আমার কী মেয়ে কী হয়ে গেছে। দেখেছো তুমি?”
“দেখেছি। তুমি বাবা আমি মা। তুমি কতক্ষণই বা বাসায় থাকো। আমি তো মেয়েকে সর্বক্ষণই দেখেছি।”
“তাহলে, তুমি কোন যুক্তিতে এই বিয়ের কথা বলো?”
“দেখো, আবেগ দিয়ে আমরা সবাই চিন্তা করতে পারি। কিন্তু বাস্তবতা দিয়ে চিন্তা করলে বোঝা যায় আসলে পরিস্থিতি কতটা কঠিন।”
“মানে?”
“মানে, আগে যা হয়েছে তা হয়েছে। সব ভুলে নতুন করে এগিয়ে যাওয়াটাই উত্তম সিদ্ধান্ত।”
“কী বলতে চাচ্ছো? ক্লিয়ার করে বলো তো।”
“রুশাও চায় এই বিয়েটা হোক।”
“রুশাও চায়? কীভাবে কী?”
“তাছাড়া, রুশার চেয়ে ফায়াজই বেশি করে চাচ্ছে রুশাকে বিয়ে করতে।”
“দু বছর পর আমার মেয়ে কি কোনো সেলিব্রিটি হয়ে গেল নাকি যে সে নিজ থেকে চায় এখন।”
“আশরাফ, কী সব যে বলো না তুমি।”
“ঠিকই তো বললাম।”
“এখন আর এসব ভেবো না। ছেলেটাও যথেষ্ট কর্মিক। ভার্সিটির লেকচারার। পরিবারও ভালো। চেনা পরিচিত। সমস্যা হবে না। সুখ দুঃখ তো আল্লাহর হাতে। তাই না?”
“আমি একবার রুশার সাথে কথা বলতে চাই। আমার গুমোট হয়ে যাওয়া মেয়েটা কি এখনো গুমোট হয়েই আছে? নাকি এখন সে আগের মতোই হাসে।”
“আগের মতো হয়তো আর হবে না। তবে যেটুকু স্বাভাবিক হয়েছে সেইভাবেই যাতে সারাজীবন থাকতে পারে আমরা বাবা-মা এইটুকুন তো করতে পারি।”
“ডাকো রুশাকে। আমি কথা বলি।”
মেয়েকে ডেকে পাশে বসান আশরাফ। মেয়েকে একটার পর একটা প্রশ্ন করতে থাকেন। সব প্রশ্নের শেষে জবাবে রুশা শুধু একটা কথা-ই বলে,
“আমি জীবনকে আরেকটা সুযোগ দিতে চাই আব্বু। জীবন আমায় অনেক কাঁদিয়েছে। এবার জীবনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে একটু হাসতে চাই আব্বু। একটু হাসতে চাই এবার।”
আশরাফ মেয়ের একটা কথাতেই মেয়েকে বুকে জড়িয়ে নেন।
“তুই বড় স্বার্থপর হয়ে গেছিস। তুই এখন আর বাবার কাছে আসিস না।”
“কষ্ট গুলো আমায় স্বার্থপর করে দিয়েছে আব্বু। কিছুই করার ছিলো না।”
“তুই যেভাবে সুখে থাকতে পারিস, ভালো থাকতে পারিস। এতেই আমরা খুশি।”
কিছুক্ষণ পর আশরাফ আবার বলেন,
“হ্যাঁ রে মা। বিয়ের পর তো আরেক ঝামেলা হবে।”
“কেমন ঝামেলা?”
“তখন সবাই হাসাহাসি করবে না! বলবে, জামাই লেকচারার আর বউ তারই স্টুডেন্ট।”
আশরাফ সাহেবের কথায় নাসরিনও হাসেন সাথে রুশাও হাসে। আর রাইসুল, সে তো মহা খুশি। তার আপুর বিয়ে হবে৷ তার একটা ভাইয়া হবে। সে আগেই বলে দিয়েছে — আমি কিন্তু দুলাভাই ডাকবো না, আমি ভাইয়া ডাকবো।
পারিবারিক ভাবেই দু’জনের বিয়ে সম্পন্ন হয়। সবাইকে নিমন্ত্রণ জানানো হয়। ওহ হ্যাঁ, একটা কথা তো বলা-ই হয়নি। ফুয়াদ আস্তে আস্তে রুশার ভালোবাসা থেকে বের হয়ে গেছে। রুশার খুশিতে সেও ভীষণ খুশি। রিমি একটু একটু করে ফুয়াদিকে সামলে নিচ্ছে। নিজের প্রতি রিমির এত উদারতা, এত সহমর্মিতা সব কিছু দেখে ফুয়াদের মন রিমির প্রতি নরম হয়েছে। দু’জনের মধ্যে থাকা বন্ধুত্বের সম্পর্কটা আরও ঘনিষ্ঠ হতে থাকে। দু’জন দু’জনকে নিয়ে এখন ভাবে। হয়তো সামনে চলার পথে দু’জনের পথটাও এক হবে কোন একদিন।

চাঁদনি রাতে পাশাপাশি হাঁটছে দু’জন। আকাশে আজ বেশ বড় চাঁদ উঠেছে। চারপাশে চাঁদের আলো ছড়িয়ে পড়ছে। চাঁদটাও যেন আজ তাদের খুশিতে খুশি হয়েছে। মেঠোপথে একাকী হাঁটতে দু’জনেরই ভালো লাগছে। হাঁটতে হাঁটতে ছোট নদীর পাড়ে গিয়ে দু’জনই দাঁড়িয়ে যায়। নদীর পানিতে চাঁদের আলোর রেখা পড়েছে। আকাশে একটা বড় চাঁদ আর নিচে নদীর পানিতে আরেক চাঁদ। অপূর্ব লাগছে চারপাশের পরিস্থিতিটা। রুশার হাতে নিজের হাত দিয়ে হালকা চেপে ধরে ফায়াজ।
“রুশা?”
“হু।”
“তোমার স্বপ্নটা সত্যি করেই দিলাম, বলো।”
“হ্যাঁ। স্বপ্ন আজ সত্যি হলো।”
“তুমি খুশি তো?”
“সব খুশি মুখে ব্যক্ত করা যায় না। কিছু খুশি অনুভবেই ভালো লাগে।”
“সেই অনুভবে আমায় শামিল করা যায় না?”
“তুমি তো শামিল হয়েই আছো। সেই দু’বছর আগে থেকে।”
“সব কিছুর জন্য যদি স্যরি বলি, ক্ষমা করে দেওয়া যাবে আমায়?”
“স্যরি চাইনি তোমার কাছে ফায়াজ। একটু ভালোবাসা চাই শুধু।”
“তবে কথা দাও আমায়। আগের মতো হয়ে যাবে আবার।”
“এখন আর আগের মতো হতে পারবো না। যেমন আছি তেমনটাই মেনে নিতে হবে তোমায়।”
“কেন রুশা? এই রুশাকে দেখলে আমার ভীষণ কষ্ট লাগে।”
“এই রুশাই এক সময় তোমার অভ্যাসে পরিণত হবে।”
“অভ্যাস না আমি চাই বদভ্যাস। আমি চাই রুশা নামক শব্দটা আমার জীবনে অভ্যাস না আমার বদভ্যাস হয়ে থাকুক।”
“তবে থাকুক হয়ে।”
এক হাতে রুশার কাঁধ জড়িয়ে রুশাকে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নেয় ফায়াজ। রুশাও পরম নির্ভরতায় নিজের মাথা রাখে ফায়াজের বুকে। যে বুকে শুধুই ভালোবাসা আর নিরাত্তা।
“রুশা, ভালোবাসি বললেই কি ভালোবাসার জানান দেওয়া হয়?”
“নাহ। মুখে ভালোবাসি বলে মনে ছলনা রাখলে সেই ভালোবাসা সম্পূর্ণ শুদ্ধ ভালোবাসা হয় না।”
“তবে আমি তোমায় ভালোবাসি এই কথাটা না বলি। আমি বলতে চাই, আমি তোমারে পেয়েছি, হাজারো কষ্ট সহ্য করে। তুমি থেকে যেয়ো আজীবন শুধু আমারই হয়ে।”
রুশা হালকা হেসে আরেকটু শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ফায়াজকে। জবাবে বলে,
“তুমি আমার জীবনে পাওয়া সব থেকে মূল্যবান অলংকার, আমি তোমাতেই থাকতে চাই ইহকাল এবং পরকাল।”
দু’জনেই হাসি মুখে আকাশের বুকে থাকা ওই উজ্জ্বল চাঁদটাকে দেখতে থাকে। দু’জনের আত্মা এক হয়েছে। তাদের মনের মিলন ঘটেছে। ভালোবাসা এবং ভালোবাসা শুধুই ভালোবাসা এর থেকেও বেশি কিছু যদি থেকে থাকে তাহলে শুধুই ভরসা আর একে অপরের প্রতি বিশ্বাস প্রয়োজন। এ দুটো জিনিস থাকলে ভালোবাসা নামক অনুভূতিটা সহজেই চলে আসে।
এভাবেই ভালো থাকুক ফায়াজ-রুশা। এভাবেই ভালো থাকুক তাদের ভালোবাসাগুলো। এভাবেই ভালো থাকুক তাদের ভালো মুহুর্তগুলো।
স্যার নামক মানুষটা রুশার জীবনে স্বামী হয়ে এসেছে। স্যার নামক মানুষটা রুশার সব স্বপ্ন সত্যি করবে স্বামী হয়ে। স্যার নামক মানুষটা রুশাকে নিরাপত্তা দিবে স্বামী হয়েই। স্যার নামক মানুষটা রুশার জীবনকে ভালোবাসার সাত রঙে রাঙিয়ে দিবে স্বামী হয়ে।
এভাবেই ভালো থাকুক তাদের ভালোবাসা। শুভ হোক তাদের আগামী দিন গুলো। ফায়াজ-রুশার মতো এভাবেই পূর্ণতা পাক সকল ভালোবাসা। পূর্ণতা পাক সকলের সকল স্বপ্ন।

সমাপ্ত

স্যার পর্ব-২৪

0

#স্যার
#পর্ব_২৪
লেখনীতে – আফরোজা আক্তার

মাঠের এক কোণায় বসে আছে ফুয়াদ। বিগত দিনে চোখ মুখের অবস্থা খুবই করুণ হয়ে গেছে তার। রিমি ফুয়াদকে একা দেখতে পেয়ে তার পাশে বসে।
রিমিকে এমনিতেও ফুয়াদের ভালো লাগে না। তবুও কেন জানি এই মেয়েটা তার খুব খেয়াল রাখে। অনলাইনে এক্টিভ দেখলেই নক করবে। খোঁজ খবর নেবে। ক্যাম্পাসে এলে তার আশেপাশেই ঘুর ঘুর করবে। রিমির সব কিছু তার কাছে বিরক্ত লাগে। কিন্তু কখনো মুখে কিছু বলেনি পাছে মেয়েটা কষ্ট পায়।
রুশার এইভাবে না করে দেওয়াতে সে খুব কষ্ট পেয়েছে। মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে রুশার সাথে জোর করতে। কিন্তু জোর করা ঘৃণ্য অপরাধ। স্কুল কলেজে থাকাকালীন সময়ে সে নিজেই ধর্ষণের বিরুদ্ধে কতশত মানববন্ধন করেছে। সে এখন কীভাবে এইসব করবে। এসব ভাবার পর মুহুর্তে আল্লাহর দরবারে তওবা করে নেয়।
তবে রুশার ভালোবাসা না পাওয়ার আক্ষেপ কিছুতেই যাচ্ছে না। থার্ড সেমিস্টারের ফাইনাল হয়ে গেল। কিন্তু রুশার ভালোবাসা তার দিকে আর ফিরে এলো না। সেও এখন আর রুশার সাথে তেমন কথা বলে না। দুই দিনে তিন দিনে চোখে চোখ পড়লে হাই হ্যালোতেই তাদের কথা আটকে থাকে। সেবার রুশাকে অডিটোরিয়ামে নিয়ে হেনস্তা না করলেও পারতো। সেটার কথা ভেবেই লজ্জায় একেক সময় রুশার দিকে তাকায় না পর্যন্ত। মেয়েটা ভালো। যথেষ্ট ভালো। যথেষ্ট শব্দটাও তার জন্য কম হয়ে যাবে। অন্যান্য মেয়ে হলে ক্যাম্পাসে তাকে অপমানিত করতে পারতো। বহিষ্কার করাতে পারতো। স্যারদের বলে কঠিন ব্যবস্থা নিতে পারতো। কিন্তু রুশা তা করেনি। আর এখানেই তার নিজের প্রতি নিজের যত লজ্জা যত ঘেন্না।
রিমি তাকিয়ে আছে ফুয়াদের দিকে। কিছু বলতে চাইছে। কিন্তু সাহস হচ্ছে না। আবার ফুয়াদও আড় চোখে দেখছে রিমিকে। কিন্তু কিছু বলছে না। এভাবেই কেটে যায় প্রায় দশ মিনিট।
ফুয়াদ উঠে যাবে এমন সময় রিমি ফুয়াদকে হাত ধরে। এই প্রথম রিমি কোনো ছেলেকে স্পর্শ করেছে। আর ফুয়াদও বেশ অবাক হয়।
“কী ব্যাপার রিমি? আমার হাত ধরেছো কেন?”
“বসো। কথা বলি কিছুক্ষণ।”
“বিগত দশ মিনিট ধরে তো বসেই ছিলাম। এখন আর ভালো লাগছে না।”
“রেগে যাচ্ছো কেন?”
“ভালো লাগছে না রিমি। বিরক্ত লাগছে এখন।”
“আমি পাশে বসাতেই কি বিরক্ত হচ্ছো?”
“আর ইউ ম্যাড? পাশে বসায় বিরক্ত কেন হবো? আমার এমনিই ভালো লাগছে না কিছু।”
“বসো, তোমায় কিছু কথা বলি।”
ফুয়াদ আবারও বসে পড়ে রিমির পাশে।
“বলো, কী বলবে?”
“রুশাকে ভালোবাসো, তাই না?”
রিমির মুখে রুশাকে ভালোবাসার কথা শুনে অবাক হয়নি ফুয়াদ। সে বুঝেছে যে এই ব্যাপারটা রিমিও জানে। হয়তো এতদিন কিছু বলেনি। তবে এখন বলছে কেন?
“জানোই যখন জিজ্ঞেস করছো কেন?”
চাপা নিঃশ্বাস ফেলে রিমি। অজ্ঞাত কোনো এক কারণে কান্না আসছে তার। তবুও কাঁদছে না সে। বার কয়েক ঢোক গিলে ফুয়াদের দিকে তাকায়।
“রুশা তোমায় ভালোবাসে না। কখনো বাসবেও না। বাসবেও না বললে ভুল হবে। শুধু তুমি কেন, সে তার বাবা এবং দ্বিতীয় একজন পুরুষ ব্যতীত পৃথিবীর তৃতীয় আর কোনো পুরুষকে কখনো ভালোবাসতে পারবে না।”
রিমির কথা শুনে কৌতূহলী চাহনি নিয়ে তাকায় ফুয়াদ।
“হ্যাঁ ফুয়াদ। রুশা কখনো আর কোনো পুরুষকে ভালোবাসতে পারবে না। সে ভালোবাসে এক তার বাবাকে আর দুই তার স্যারকে।”
“স্যার? কোন স্যার।”
“আমরা তখন ইন্টারমিডিয়েটে পড়ি। একবার রুশা পরিসংখ্যানে ফেল করে। এরপর তাকে নিয়ে ক্লাসে অনেক হাসাহাসি হয়। রুশার খুব কাছের একজন বন্ধু ছিলো। সে আমারও বন্ধু। ওর নাম রাসিন। রুশার ফেল এর বিষয়টা নিয়ে অনেক হাসি ঠাট্টা করে। এরপর রুশার বাবা-মা তার জন্য হোম টিউটর ঠিক করেন। রুশা তখন খুব হাসি-খুশি এবং প্রাণচঞ্চল কিশোরী ছিলো। জীবনটাকে সে মজার চোখে দেখতো। তার কাছে জীবন মানেউ ছিলো, হৈ-হুল্লোড়, মজা-মাস্তি। কিন্তু তার ওই স্যার তার সব কিছু পালটে দেয়। রুশার অবুঝ মনে স্যারের প্রতি ভালোবাসা ভর করে। তার দুর্বল চিত্তে এক সময় ভর করে ভালোবাসা নেশা। পাগলের মতো ভালোবাসে সে তার স্যারকে। কিন্তু, তার স্যার তাকে বার বার প্রত্যাখ্যান করে। একদিন রুশার পাগলামি কমাতে না পেরে স্যার রুশার মা’কে সব বলে সেদিনই রুশাকে পড়ানো ছেড়ে দেয়। এরপর থেকেই রুশা গুমোট হয়ে যায়৷ রুশা তার জীবনকে একটা গন্ডিতে আবদ্ধ করে নেয়। নিজের চারপাশটা এমন ভাবে তালাবদ্ধ করে দেয় যেন সে একটা জীবন্ত লাশ। সবই চলছে তার শুধু ভেতরে যেই প্রাণটা আছে তা নিষ্প্রাণ হয়ে গেছে। এরই মাঝে শেষ হয় আমাদের এইচ এস সি এক্সাম। রুশা ভালো রেজাল্ট করে। আমরা এই ভার্সিটিতে এডমিশন নিলাম। নসীব বড় আজব জিনিস। বিগত দুটো বছর এই ক্যাম্পাসে রুশা তার হারানো ভালোবাসার মানুষটাকে খুঁজে পায়।”
এবার ফুয়াদ আরও অবাক হয়। প্রশ্ন করে,
“পায় বলতে?”
“আমিও প্রথমে চিনতাম না। অবশ্য না চেনার কারণ হলো আমি কখনো রুশার স্যারকে দেখিনি। তাই চিনতে পারিনি। রুশার সেই স্যার আর কেউ না। তিনি হচ্ছেন আমাদের ডিপার্টমেন্টের লেকচারার ফায়াজ কারিম।”
অবাকের শীর্ষ চূড়ায় অবস্থান করে ফুয়াদ।
“হোয়াট!”
“হ্যাঁ। ফায়াজ স্যারই রুশার সেই ভালোবাসার মানুষ। প্রথম থেকে আমি কিছুই জানতাম না।রুশা বলেনি। এরপর রুশা আমায় সবটা জানায়। তুমি রুশাকে অডিটোরিয়ামে নিয়ে জোর করেছিলে। প্রপোজ করেছো। রুশা রাজি হয়নি। হবেই বা কী করে ফুয়াদ? রুশা তো তার আবেগ-অনুভূতি, হাসি-কান্না, সব কিছু আগেই তার স্যারকে দিয়ে বসে আছে। যে মনে একজনকে ভালোবেসেছে সে মনে অন্য কাউকে জায়গা কী করে দিতো, বলো তো। তুমি রুশার সাথে যেই আচরণ করেছো তার সবটাই ফায়াজ স্যার জেনেছিলো সেদিন। কিন্তু তিনি কিছু বলেননি। তার কারণ তিনিও বুঝেন কাউকে ভালোবেসে তার কাছ থেকে রিফিউজ হওয়াটা কতটা যন্ত্রণার হয়। যেমন রুশার হয়েছিলো।”
ফুয়াদ কিছুই বলতে পারছে না এই মুহুর্তে। সব কিছু কেমন যেন গোলমেলে লাগছে তার কাছে। রুশা, ফায়াজ স্যার, ভালোবাসা, আরও অনেক কিছু মাথায় সাজাতে তার কষ্ট হচ্ছে। রিমি তার পরিস্থিতি বুঝতে পারে। এরপর ধীর গলায় আরও একবার সবটা জানায় তাকে।
এখনো তার কাছে বিশ্বাস হচ্ছে না পুরোটা। কিন্তু এটাই সত্যি। রিমি কিছুক্ষণ পর বলে,
“আমরা সবাই ভালোবাসার কাঙাল ফুয়াদ। ভালোবাসা এমন একটা অনুভূতি যা আমাদের হাজারো কষ্ট দিলেও আমরা তার পেছনেই ছুটে বেড়াই। রুশার জীবনে সেই ভালোবাসা আবার ফিরে এসেছে। প্রত্যেকটা জিনিসের একটা নির্দিষ্ট সময় থাকে। তাদের ভালোবাসা নির্দিষ্ট সময় হয়তো এটাই। আর তুমিই হয়তো ভুল সময়ে নিজের ভালোবাসা তার প্রতি দেখিয়েছো। তোমাকেও দোষ দেওয়া যায় না আর রুশারও ভুল নেই এখানে। আজ আসি। সাবধানে থেকো।”
মনে হলো ফুয়াদ রিমির চোখে পানি দেখতে পেয়েছে। রিমিকে পিছু ডাকার আর উপায় ছিলো না। রিমি চলে গেছে।
একের পর এক ফোন বেজে যাচ্ছে। পাঁচ বারের সময় ফোন রিসিভ হয়।
“কোথায় ছিলে রুশা? কয়বার ফোন করলাম।”
“স্যরি, ওই রুমে ছিলাম।”
“এত রাতে ওই রুমে কী?”
“কিছু না। বলুন।”
“কী করছো?”
“এখন বসে আছি।”
“বারান্দায় আসো তো।”
“বারান্দায়! হঠাৎ?”
“আসো৷ তারপর বলছি৷”
ফোন কানে রুশা বারান্দায় যায়। নিচে তাকাতেই বড়সড় ধাক্কা খায়। ফায়াজ নিচে দাঁড়িয়ে আছে। ঘড়িতে এগারোটা বাজে। অথচ মানুষটা এখন তার বাসার সামনে। ইদানীং মনে হচ্ছে তার স্যার একটু একটু করে রোমান্টিক পুরুষ হচ্ছে।
“অবাক হলাম।”
রুশার কথা শুনে ফায়াজ হালকা হেসে বলে,
“অবাক করার জন্যই এলাম।”
“এখানে কোনো কাজ ছিলো?”
“নাহ।”
“আমার সাথে দেখা করতে এসেছেন?”
“কী মনে হয়?”
“কত কিছুই তো মনে হয়। সব মনে হওয়া কি আর সঠিক হয়, বলেন?”
“তা হয়তো হয় না। আচ্ছা শোন বের হবে?”
“আব্বু মারবে।”
“ফোর্থ সেমিস্টারের স্টুডেন্টকে এখনো মারধর করা হয়? থানায় অভিযোগ জানাতে হবে দেখছি।”
“আমি এখনো তাদের কাছে ছোট।”
“এইজন্যই বলেছিলাম বিয়েটা করে নাও। অন্যকাউকে না, আমায়। শুনলে না তো। বিয়ে করলে এখন তুমি আমার অধীনে থাকতে। ঘুরতেও পারতে আমার সাথে।”
“আপনি কি ঘুরতে বের হয়েছেন?”
“হ্যাঁ। বের হও।”
কিছুক্ষণ রুশা তাকিয়ে থাকে ফায়াজের দিকে।
রিকশায় বসে আছে রুশা আর ফায়াজ। রাতের অন্ধকারে ঢাকা শহরটা কিছুটা হলেও চুপচাপ থাকে। ল্যাম্পপোস্টের আলোয় চারপাশটা সুন্দর লাগে।
রুশা তার মা’কে বলে বাসা থেকে বের হয়েছে। যদিও তার বাবা জানে না। নাসরিন ফায়াজের প্রতি যতই রাগ করে থাকুক না কেন, তিনি জানেন রুশা একমাত্র ফায়াজের কাছেই নিরাপদ। তাই তিনিও বাধা দেননি। তাছাড়া মেয়ে তার এত বছর পর একটু স্বাভাবিক হচ্ছে। এতেই তিনি সন্তুষ্ট। এবার এদের চার হাত এক করে দিতে পারলেই তিনি নিশ্চিন্ত। বারান্দায় দাঁড়িয়ে থেকে তাদের দু’জনকে দেখছিলেন নাসরিন। ফায়াজ অবশ্য উপরে তাকায়নি। রুশা মা’কে টা টা করে। এখন অপেক্ষা করবে মেয়ের ফিরে না আসা অবধি। ওদিকে আশরাফ ঘুমে বিভোর।
“মা’কে এখনো ছোট বাচ্চাদের মতো টা টা দেও।”
“মাঝেমধ্যে দেই।”
“রিকশায় ঘুরতে কেমন লাগছে?”
“ভালো। তা আজ হঠাৎ ঘুরতে বের হলেন?”
“হঠাৎ মন চাইলো। তাই হঠাৎ বের হলাম।”
“ওহ।”
“তোমার ওই ইচ্ছেটা নিয়ে অনেক ভাবলাম।”
“কোনটা?”
“ওই যে চাঁদনি রাতে সাদা শাড়ি পরে আমার পাশাপাশি হাঁটার ইচ্ছে টা। ভাবলাম সেটা কীভাবে বাস্তবায়ন করা যায়।”
রুশা আর কিছু বলেনি। শুধু মুচকি হেসেছে। ফায়াজ সাহস করেই রুশার হাতটা স্পর্শ করে। পরম যত্নে আঁকড়ে ধরে রুশার নরম হাতখানা। লজ্জা মিশ্রিত চোখে রুশা এক পলক ফায়াজকে দেখে। এর পর পরই রুশা চোখ নামিয়ে নেয়। এই মুহুর্তে রুশাকে নতুন বউ ছাড়া আর কোনো উপাধি দিতে ইচ্ছে করছে না ফায়াজের।

পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায়………………….

স্যার পর্ব-২৩

0

#স্যার
#পর্ব_২৩
লেখনীতে — আফরোজা আক্তার

পার্কের বেঞ্চে পাশাপাশি বসে আছে ফায়াজ আর রুশা। মাম ওয়াটার বোতল থেকে রুশার হাতে পানি ঢেলে দিচ্ছে ফায়াজ। ফুয়াদের চার আঙুলের ছাপ বসে গেছে রুশার হাতে। দেখেই বোঝা যাচ্ছে খুব শক্ত করে ধরা হয়েছে হাতটা।
রুশা একদম চুপচাপ বসে আছে ফায়াজের পাশে। ফায়াজ যে সবটা জানে বা বুঝে এটা নিয়ে এখনো সন্দেহে আছে রুশা। সে শুধু চোখের পানি মুছে অডিটোরিয়াম থেকে বের হয়ে সিঁড়ির নিচে আসতেই ফায়াজ তাকে দাঁড় করিয়ে গেইটের বাহিরে দাঁড়াতে বলে। রুশা বাহিরে গিয়ে দাঁড়ালে ৫ মিনিট পর পেছন থেকে ফায়াজ বের হয়। ফায়াজ হাঁটা অবস্থাতেই রুশাকে সোজা হাঁটো — বলে সামনে চলে যায়।
এরপর দু’জন এখানে চলে আসে। ফায়াজ আসার সময় দোকান থেকে পানির বোতল আর ফার্মেসী থেকে একটা অয়েন্টমেন্ট কিনে নেয়।
রুশার হাতে অয়েন্টমেন্ট লাগাতে লাগাতে ফায়াজ বললো,
“ব্যথা বেশি হচ্ছে?”
রুশা শান্ত স্বরে জবাব দেয়,
“নাহ।”
“জোরেই আঘাত করেছে।”
“হ্যাঁ।”
“তোমার কাছ থেকে হয়তো না শব্দটা আশা করেনি সে। তাই রাগ করেই এমন করলো।”
“হয়তো। তবে, যেখানে না শব্দটাই প্রযোজ্য সেখানে হ্যাঁ কখনোই হবে না।”
“তোমায় বার বার জিজ্ঞেস করছিলো, অন্য কাউকে ভালোবাসো কি-না? বললে না কেন?”
“আপনি সব শুনেছেন?”
“হ্যাঁ।”
“তবে ভেতরে গেলেন না কেন?”
“দু’জন মানুষ কথা বলছে। সেখানে আমি কীভাবে যেতাম।”
“জরুরী কিংবা গোপন কথা হচ্ছিলো না। যদি ফুয়াদ আমার হাতে চাপ না দিয়ে গলায় চাপ দিতো। তখনও কি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সবটা শুনতে?”
রুশার কথাটা শুনে ফায়াজ মুখ তুলে তাকায় রুশার দিকে। ফায়াজের মুখটা ক্রমশ অসহায় হরিণের মতো লাগছে। যেন হরিণ তার প্রাণপ্রিয় হরিণীকে হারানোর ভয়ে কুঁকড়ে আছে৷ রুশা কিছু বলবে কিন্তু তার আগেই ফায়াজ বললো,
“ফুয়াদকে বাধা না দেওয়ার কিছু কারণ আছে। আর কারণ গুলো যুক্তিসম্মত। তবে যদি ফুয়াদের হাত তোমার গলা অবধি যেতো তার আগেই ফুয়াদ তার হাতটা খুইয়ে দিতো।”
“কী করতেন? ফুয়াদের হাতটা কেটে দিতেন। যেমন করে বাহুবালি দ্যা কনক্লিউশন মুভিতে দেবসিনার শরীরে হাত দেওয়ার অপরাধে সেতুপতীর গলাটাই কেটে দিয়েছিলো বাহুবালি।”
রুশার কথা শুনে ফায়াজ হালকা হেসে দেয়। সে হাসতে চায়নি। তবুও সে হেসে দেয়। কারণ, রুশা কথাটাই তেমন বলেছে।
ফায়াজের মুখে হাসি দেখে রুশার নিজেকে হালকা মনে হচ্ছে।
“ক্ষুধা লেগেছে?”
“বাসায় চলে যাবো এখন। বাসায় গিয়ে খাবো।”
“আমার সাথে আজকে খাও। মানে চলো একসাথে লাঞ্চ করি।”
ফায়াজের আবদারটা রুশার কাছে যেন হাতের কাছে চাঁদ পাওয়ার মতো ছিলো। কিন্তু পর মুহুর্তে নিজেকে দমিয়ে নিয়ে বলে,
“আমি বাসায় গিয়েই খাবো।”
“ফুয়াদকে বাধা না দেওয়ার কারণ গুলো শুনবে না?”
“কী কারণ?”
“চলো। খেতে খেতে বলি।”
রুশা আর কিছু বলেনি।
দুপুর আড়াইটা।
রেস্টুরেন্টে সামনা-সামনি বসে আছে রুশা এবং ফায়াজ। খাবার সার্ভ করা হয়েছে। কিন্তু রুশা স্পুন হাতে নিচ্ছে না। ফায়াজ কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলে,
“তপ্ত দুপুরে নিশ্চয়ই ক্ষুধা লেগেছে। খাচ্ছো না কেন?”
রুশা চুপচাপ হয়ে যায়।
“কথা বলবে না?”
“শুনছি।”
“শুনতে বলিনি। খেতে বলেছি। এখানের সেট ম্যানু গুলো খুব মজার হয়। খেয়ে দেখো৷”
ফায়াজের কথায় রুশা খাবার শুরু করে। ফায়াজের উদ্দেশ্য ছিলো রুশাকে কমফোর্ট ফিল করানো। এবং মনে হচ্ছে সে এই ব্যাপারে সাকসেস হয়েছে। প্রশ্ন করে,
“মজা না?”
“হ্যাঁ।”
“এই রেস্টুরেন্টের খাবার এমনিতেও ভালো মানের।”
“আচ্ছা।”
“এবার শোন। খেতে খেতেই বলি। তোমার প্রশ্ন ছিলো, আমি যখন সব শুনেছি কেন কাছে যাইনি। আচ্ছা রুশা, যাওয়াটা কি উচিত ছিলো? বিশ্বাস করবে কি-না জানি না কিন্তু সে যখন তোমার হাতটা শক্ত করে ধরে রেখেছে মনে হচ্ছিলো আমার বুকে কেন যেন ছুরি চালাচ্ছে। কিন্তু, আমি তবুও যাইনি। আমি দেখতে চেয়েছিলাম সে কী বলে। নিজস্ব অনুভূতি থেকে অনুভব করতে পারলাম যে সে তোমায় ভালোবাসে৷ কিন্তু তোমার কাছ থেকে না শোনার পরে নিজেকে সামাল দিতে পারেনি। সবাই তো আর রুশা হয় না, যে নিজের ভালোবাসার মানুষটির কাছ থেকে না শুনে নিজেকেই গুটিয়ে নেবে। ফুয়াদ নিজেকে গুটিয়ে নেয়নি। বরং সে প্রতিবাদ করেছে। তুমি নিজেই যেখানে সে বার বার জিজ্ঞেস করার পরেও বলোনি আমার কথা। আমিই বা কী করে যেতাম বলো। ফুয়াদের মাঝে একটা ম্যানলি ভাব আছে। ছেলেটা ভবিষ্যতে আরও অনেক দূর এগিয়ে যাবে। মনের মধ্যে কোথাও আস্থা ছিলো যে সে তোমার তেমন কোনো ক্ষতি করবে না। কারণ ভালোবাসার মানুষগুলোর সাথে আর যাই করা যাক না কেন এদের ক্ষতি করা যায় না। যেমন, আমি তুমি। সে যখন আমায় আমার ক্যারিয়ার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে গেল আমিও পারতাম তার সামনে গিয়ে এখন দাঁড়িয়ে তার স্বামীর সামনে তাকে অনেক কথা বলে আসতে। এতে তার লাভের চেয়ে ক্ষতিই হতো বেশি। পারিনি আম এইসব করতে। পারবোও না। তোমার ভালোবাসাকে বার বার রিফিউজ করার পর আমার সাথে আর যোগাযোগ করোনি। চাইলেই পারতে আমায় খুঁজে বের করে নিজের অপমানের প্রতিশোধ নিতে। আমরা মানুষরা মনে মনে যা চিন্তা করি তা ফলানোর চেষ্টাও করি। তবে এইসব খারাপ উদ্দেশ্য চিন্তাও করি না। আর ফলানোর চেষ্টাও করি না।”
রুশা মন দিয়ে ফায়াজের কথা শুনছে। ফায়াজ পেশায় একজন লেকচারার। লেকচারার হিসেবে উপদেশমূলক কথাবার্তা বলা-ই উচিত। তবে সবার উপদেশ সব সময় ভালো লাগে না। ক্ষেত্র বিশেষে অনেক সময় প্রিয় মানুষটার উপদেশমূলক কথাও শুনতে বেশ ভালো লাগে। রুশার ক্ষেত্রেও তাই হলো।
ফায়াজ বলার এক পর্যায়ে রুশাকে বললো,
“আমি চাইলেই পারি ফুয়াদের সাথে কথা বলতে। কিন্তু বলবো না।”
“আচ্ছা৷”
“তুমি কি ভেজিটেবল পছন্দ করো না?”
“করি।”
“তবে খাচ্ছো না যে?”
“খাচ্ছি।”
“আমার একটা কথার জবাব দিলে না তো।”
“কোন কথা?”
“ভুলে গেছ বুঝি?”
নাহ, সে ভুলে যায়নি। কিন্তু এড়িয়ে যেতে চাইছে। যেই মানুষটা এতদিন দূরে দূরে থেকেছে। সেই মানুষটা এখন এইভাবে কাছে থাকার কথা বলছে। ব্যাপারটা অদ্ভুত হলেও এর অনুভূতিগুলো খুব গাঢ়। রুশা কিছু বলতে চাইছে। কিন্তু পারছে না। ফায়াজ রুশার মুখের ভঙ্গি দেখেই বুঝে ফেলেছে।
“কিছু বলতে চাও?”
“উহু।”
“মনে হচ্ছে বলতে চাচ্ছো।”
রুশা ভাবে মনের কথা যদি বলা যায়। ক্ষতি কোথায়।
“কোনো এক চাঁদনী রাতে সাদা শাড়ি পরে আপনার পাশাপাশি হাঁটতে চাই। সেদিন আপনিও সাদা পাঞ্জাবি পরবেন।”
রুশার কথা শুনে ফায়াজ হাসে। ফায়াজের হাসি দেখে রুশা বলে,
“কেমন একটা সিনেমেটিক সিচুয়েশন তাই না। যা টিভিতেই মানায়। তবে আমরা চাইলে বাস্তব জীবনেও এমন কিছু সিনেমেটিক সিচুয়েশন তৈরি করতে পারি৷ তাই না?”
ফায়াজ মুচকি হেসে জবাব দেয়,
“হ্যাঁ।”
ফায়াজ খাবার খাচ্ছে আর আড় চোখে রুশাকে দেখছে। রুশা তখন চুপচাপ শান্ত মেয়ের মতো মাথা নিচু করে খাবার খাচ্ছে।
পাশের টেবিলে এক জোড়া বয়স্ক দম্পতি তাদের দেখে বলে ওঠে,
“দু’জনের মধ্যে কেমন ম্যাচুরিটি, তাই না। কোনো ন্যাকামি নেই। কোনো অশ্লীলতা নেই। অথচ কত সুন্দর আর সুখী মনে হচ্ছে তাদের।”

পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায়……………….

স্যার পর্ব-২২

0

#স্যার
#পর্ব_২২
লেখনীতে — আফরোজা আক্তার

অতিরিক্ত জোরেই ফুয়াদ রুশার হাতটা ধরে রেখেছে। রুশা ব্যথা পাচ্ছে, কিন্তু সে ছাড়ছে না। হয়তো জায়গাটা লাল হয়ে গেছে। তবুও ছাড়ছে না। রুশা বার বার বলার পরেও ফুয়াদ ঠিক একইভাবে হাতটা ধরে আছে।
“ফুয়াদ, তোমার সমস্যা কী?”
“তোমাকে কিছু কথা বলার আছে।”
“এইভাবে জোর করে চেপে হাতটা ধরে আছো। আমি ব্যথা পাচ্ছি। তুমি বুঝতেছো না?”
“নাহ, আমি বুঝতে পারছি না। তুমি গত একমাসে এত বদলে গেলে কেন?”
“আমি বদলে গেছি, কী সব উল্টাপাল্টা কথা বলছো ফুয়াদ তুমি?”
“যা বলছি ঠিক বলছি। তুমি বদলে গেছ। আমার সাথে ঠিক মতো কথাও বলো না।”
“এর আগে কি আমি তোমার সাথে খুব বেশি কথা বলতাম ফুয়াদ?”
এই কথা শোনার পর ফুয়াদ একটু দমে যায়। এরপর আবার বলে,
“শোন রুশা, আমি আর পারছি না। আমাকে আজকে বলতেই হবে৷ তোমার মতিগতি ভালো ঠেকছে না। তোমায় আমি ভালোবাসি রুশা।”
ফুয়াদের মুখ থেকে নিজের জন্য ভালোবাসার কথা শুনে রুশা যেন আকাশ থেকে পড়ে। এসব কী কথাবার্তা শুরু করেছে ফুয়াদ। যার আগা-মাথা কিছুই খুঁজে পাচ্ছে না রুশা। সে শুধু ফুয়াদের সাহস দেখছে।
“তোমার মাথা ঠিকাছে ফুয়াদ? কী সব আজগুবি কথা বলছো তুমি?”
“কোনো আজগুবি কথা না রুশা। আমি ভালোবাসি তোমাকে।”
“আমরা তো বন্ধু ছিলাম ফুয়াদ। এখানে ভালোবাসা আসলো কোথা থেকে?”
“তুমি আমার আচার-আচরণে বোঝো নি আমি তোমায় কতটা ভালোবাসি।”
“থামো প্লিজ। প্লিজ একটু থামো। বার বার ভালোবাসার কথা বলতে এসো না প্লিজ। অস্বস্তি লাগছে আমার।”
“রুশা, আই লাভ ইউ। আই লাভ ইউ মোর।”
ফুয়াদকে যতই দেখছে ততই অবাক হচ্ছে রুশা। এই মুহুর্তে ছেলেটাকে উন্মাদ বলে মনে হচ্ছে তার। এত বড় অডিটোরিয়ামে সে আর ফুয়াদ একা। ফুয়াদ সুযোগ বুঝে এখানে রুশাকে আটকে ফেলেছে।
এখানে কোনো খারাপ ঘটনা ঘটে গেলেও কেউ বুঝতে পারবে না। রুশার মন কু ডাকছে।
কান্নাকাটি করে কোনো লাভ হবে বলে মনে হচ্ছে না রুশার। সে শান্ত স্বরেই প্রশ্ন করে,
“তুমি আমায় ভালোবাসো। আমি তোমায় ভালোবাসি কি-না সেটা জানা কি তোমার উচিত ছিলো না ফুয়াদ?”
“তুমিও আমায় ভালোবাসবে।”
“ভালোবাসবে,,, এটা কেমন কথা? আমি কি আমার মনের বিরুদ্ধে গিয়ে তোমায় ভালোবাসবো না-কি?”
“মনের বিরুদ্ধে কেন যাবে। মন থেকেই ভালোবাসবে।”
“কিন্তু তা যে সম্ভব না ফুয়াদ।”
রুশার বলা এই কথা শুনে ফুয়াদের ভেতরটা কেঁপে ওঠে। সম্ভব না মানে কী! কেন সম্ভব না। এটা তো হতে পারে না। ফুয়াদ এবার রুশাকে দেওয়ালের সাথে চেপে ধরে।
“কেন সম্ভব না রুশা? কেন সম্ভব না?”
“আহ, ফুয়াদ আমি ব্যথা পাচ্ছি। এমন বিশ্রী বাজে ব্যবহার কেন করছো তুমি আমার সাথে?”
“বলো আমায় ভালোবাসো।”
“আমি তো তোমায় ভালোবাসি না। তবে মিথ্যা কেন বলবো?”
“আমি কি ভালোবাসার যোগ্য না? আমায় কি দেখতে খারাপ লাগে? আমার মধ্যে ভালোবাসার মতো কি কোনো গুন নেই?”
“কে বলেছে তুমি ভালোবাসার যোগ্য না। কে বলেছে তুমি দেখতে খারাপ। তোমার মধ্যে ভালোবাসার সব গুনই আছে। কিন্তু তোমার সৃষ্টি আমার জন্য হয়নি ফুয়াদ। অন্য কারো জন্য হয়েছে। তোমার সাথে আমার জুড়ি না, অন্য কারো সাথে তোমার জুড়ি।”
“তুমি কি আল্লাহর ছোট বোন না-কি? সব জানো আগে আগে।”
“নিজের মনের খবর জানতে আল্লাহর ছোট বোন হওয়া লাগে না ফুয়াদ। আল্লাহ এক এবং অদ্বিতীয়। এসব বোলো না প্লিজ। শুনতে খারাপ লাগে। আর আমি, আমি হয়তো অন্য কারো জন্য সৃষ্টি হয়েছি। তোমার জন্য না।”
ফুয়াদ রুশাকে নিজ থেকে আলগা করে দেয়। রুশার বলা এই কথাটা তার বুকে গিয়ে লাগে। তবে কি রুশা অন্য কাউকে? কিন্তু কোথায়, সে তো এমন কাউকে দেখেনি। নিজের মনকে স্থির রাখতে পারছে না ফুয়াদ। তবে রুশার হেসে কথা বলা কি ছিলো?
“তবে আমার সাথে তোমার হেসে হেসে কথা বলার কারণ কী ছিলো? বলো রুশা।”
“এসব কী ধরনের প্রশ্ন করছো ফুয়াদ। বাচ্চা ছেলের মতো প্রশ্ন করছো। হেসে হেসে কথা বললেই কি ভালোবাসতে হবে।”
“তুমি অন্য কাউকে ভালোবাসো?”
“সেটা আমার ব্যক্তিগত ব্যাপার। তবে আমার থেকে এইসব আশা কোরো না ফুয়াদ।”
“রুশা, আই রিয়েলি লাভ ইউ।”
“বোকার মতো কথা বোলো না প্লিজ। বোঝার চেষ্টা করো। আমি তোমায় ভালোবাসি না।”
“তবে কাকে ভালোবাসো?”
“সেটা আমার ব্যক্তিগত ব্যাপার। আমার ব্যক্তিগত জীবন। তুমি প্লিজ আমায় আর জোর কোরো না।”
“আমার ভালোবাসার দাম নেই?”
“তা বলিনি। তোমার ভালোবাসাও ভালোবাসা। তবে তা আমার জন্য না।”
ফুয়াদ আর কিছু বলেনি। দুই পা পিছিয়ে যায় সে। রুশা তার হাতের দিকে তাকিয়ে আছে। হাতটায় পুরো চার আঙুলের ছাপ পড়ে আছে। লাল হয়ে আছে পুরো জায়গাটা। জেদের বসে ফুয়াদ এত জোরে ধরেছে যে পুরো জায়গাটায় দাগ পড়ে গেছে।
ফুয়াদ আর একটা শব্দও করেনি। চোখের পানি মুছে রুশা অডিটোরিয়াম থেকে বের হয়ে যায়।
রুশা সিঁড়ির কাছে আসতেই কেউ একজন বলে,
“রুশা, গেইটের বাহিরে চলে যাও। আমি সেখানে আসছি দুই মিনিটের আসছি।”
চমকে গিয়ে রুশা পেছনে তাকিয়ে দেখে ফায়াজ দাঁড়িয়ে আছে।

পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায়……………….

স্যার পর্ব-২১

0

#স্যার
#পর্ব_২১
লেখনীতে — আফরোজা আক্তার

ক্যাম্পাসে আসতেই ফুয়াদ জেকে ধরে রুশাকে। কেমন আছে, শরীরের কী অবস্থা, আরও অনেক কিছুই জিজ্ঞাসাবাদ করছে সে। রুশার ফুয়াদের কথার দিকে কান নেই। তার চোখ আশেপাশে স্যারকে খুঁজতে ব্যস্ত। যদি কোথাও থেকে স্যার একবার দেখে ফেলে তাহলে আবারও সন্দেহ করবে। রুশার ধ্যান অন্য কোথাও যা ফুয়াদ বুঝতে পেরেছে।
“রুশা, এই রুশা। আমি যে কিছু বলছি তোমায়। তুমি শুনতে পাচ্ছো?”
রুশা চমকে যায় ফুয়াদের কথা শুনে। ফুয়াদ বেশ উচ্চস্বরেই কথাটা বলেছে।
“চেঁচাচ্ছো কেন ফুয়াদ? আমি তো শুনতে পাচ্ছি। এত জোরে কথা বলা লাগে?”
“তোমার ধ্যান তো অন্য কোথাও।”
“রিমি কোথায়? আজকে এসেছে?”
“হ্যাঁ। ক্লাসেই আছে।”
“আচ্ছা।”
রুশা ক্লাসে চলে যেতে নিলে ফুয়াদ পতজ আটকে দাঁড়িয়ে পড়ে রুশার সামনে।
“কী ব্যাপার ফুয়াদ! পথ আটলে দাঁড়িয়ে গেলে যে? ক্লাসে যাবে না?”
“আমার একটা প্রশ্নের জবাব দেও তো। তুমি কি আমায় ইগনোর করছো?”
“কেন, ইগনোর কেন করবো। তুমি তো ইগনোর করার মতো কোনো কাজ করো নি। তবে ইগনোর কেন করবো?”
“মনে হচ্ছে ইগনোর করছো।”
“এখন তোমার মনে হওয়ার সাথে আমি কী করতে পারি বলো। চলো ক্লাসে যাই।”
এইভাবে ডিপার্টমেন্টের সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলায় রুশা ভয় পায়। যদি একবার ফায়াজের চোখে পড়ে তাহলে ঝামেলা।
ক্লাসে গিয়ে বসার ১০ মিনিটের মাথায় ফায়াজ ক্লাসে এন্ট্রি নেয়। রুশা আজ সেকেন্ড বেঞ্চে বসেছে। ফুয়াদ বসেছে শেষের বেঞ্চের আগের বেঞ্চে। ফায়াজ ক্লাসে এসেই পড়ানো শুরু করে। রুশা চুপচাপ পড়ায় মনোযোগ দিয়ে বসে আছে। ফায়াজ কিছুক্ষণ বুঝিয়ে পড়া জিজ্ঞেস করা স্টার্ট করে দেয়। আর তার প্রথম টার্গেট হয় রুশা।
আজকের ক্লাসে সর্বপ্রথম স্যারের মুখে নিজের নাম শুনেই রুশার কলিজায় কামড় পড়ে। রুশা বাধ্য হয় দাঁড়াতে। রুশা একবার তার স্যারের দিকে তাকায়। দেখে ফায়াজ মুগ্ধ নয়নে তার দিকে তাকিয়ে আছে। সাথে সাথে চোখ নামিয়ে নেয় রুশা। গতকাল রাতে বলা ফায়াজের কথাগুলো কানে বাজছে তার। সরাসরি বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছে ফায়াজ তাকে।
পড়া জিজ্ঞেস করা হলে রুশা চুপ করে থাকে। এতক্ষণ সব পড়া মনোযোগ দিয়ে দেখলেও এখন আর মাথায় কিছুই নেই তার। কী বলবে না বলবে কিছুই বুঝতে পারছে না সে। ফায়াজ হালকা হেসে প্রশ্ন করে,
“এনিথিং রং রুশা?”
ফায়াজের মুখে এই ‘এনিথিং রং রুশা’ এই লাইনটা বেশ সুন্দর মানায়। রুশা মাথা নেড়ে বলে,
“নো স্যার।”
“এতক্ষণ যাবত পড়ালাম। এরপর জিজ্ঞেস করলাম। এর মাঝেই সব ভুলে গেলে?”
রুশা চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। ক্লাসের সব স্টুডেন্টদের নজর একবার স্যারের দিকে একবার রুশার দিকে। ফুয়াদ পেছন থেকে একবার রুশাকে দেখছে একবার স্যারকে দেখছে।
রুশা ঠিকঠাক কিছু বলতে পারছে না। ফায়াজ রুশার দিকে আরও কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলে,
“বসো।”
স্যার বলার সাথে সাথে বসে পড়ে সে। হাফ ছেড়ে বেঁচেছে মনে হলো।
রিমি কানের কাছে ফিসফিস করে বলছে,
“স্যার তোকেই আগে পড়া জিজ্ঞেস করেছে। আজকে সকালে আমি কার মুখ দেখে ঘুম থেকে উঠেছি কে জানে? জানে বেঁচে গেছি। তোর পাশেই ছিলাম। আমায় বাদ দিয়ে তোকেই ধরেছে।”
রিমির কথাগুলো রুশার কানে লাগছে ঠিকই কিন্তু সে কিছু বলছে না।
ক্লাস শেষে বাসার দিকে রওনা হয় রুশা। আজকে আর কোথাও দাঁড়ায়নি। সোজা বাসায় যাবে বলে হাঁটা শুরু করে।
ফোনের শব্দ পেয়ে ব্যাগ থেকে মোবাইল বের করে রুশা। স্যার ফোন করেছে। রুশা ভাবছে, ওনাকে তো ডিপার্টমেন্টের অফিসে দেখে এলাম। বসে বসে চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছিলেন। এখন আবার ফোন করলেন। রুশা ফোন রিসিভ করে।
“হ্যালো।”
“তুমি চলে গেছ?”
“বের হয়েছি। হাঁটছি।”
“রিকশা নাও। নয়তো আবারও অ্যাক্সিডেন্ট করবে।”
“সমস্যা নেই।”
“রিকশা নিতে বলেছি রুশা।”
রুশা চুপ করে আছে। ফায়াজ আবারও বলে,
“রুশা, তুমি যে কিছু বললে না।”
“কোন ব্যাপারে?”
“তোমাকে গতকাল রাতে কী বলেছি আমি?”
বিয়ের কথাটা নিয়ে ফায়াজ কথা তুলেছে। কিন্তু রুশা কী বলবে, এটাই সে ভাবতে পারছে না। সে হ্যাঁ করবে না-কি না করবে তা নিয়েও তার দ্বিধা জন্মাচ্ছে।
রুশার নীরবতা ফায়াজকে যন্ত্রণা দিচ্ছে। জবাবটা পাওয়া খুব জরুরী তার জন্য। রুশার জবাবের জন্য সে মুখিয়ে আছে এক প্রকার। তার রীতিমতো ভয় হচ্ছে। রুশা না করে দেবে না তো? রুশার মন ঘুরে যাবে না তো? নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে গিয়ে সে খাটি সোনা হারিয়ে ফেলছে না তো?
এই প্রথম ফায়াজ কিছু নিয়ে ভয় পাচ্ছে। এর আগে কখনো সে এতটা ভয় পায়নি। রুশার জবাবের অপেক্ষা মূলত তাকে ভয় দেখাচ্ছে। মনে বার বার ঘুরে ফিরে একটাই কথা আসছে তার। রুশার মন ঘুরে যায়নি তো?
রাতের বেলায় খোলা বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে রুশা। ভাবছে, আচ্ছা এমন যদি হয় আমি আর সে, আমরা দু’জন মিলে কোনো এক রাতে অন্ধকারে হাতে হাত রেখে পায়ের তাল এক রেখে হেঁটে যাবো বহু দূরে। চারপাশটা থাকবে নীরব। আর আমাদের দু’জনের সাথে সাক্ষী হয়ে থাকবে আকাশের ওই চাঁদের আলো। কেমন হবে তবে? আমি সাদা শাড়িতে আর সে সাদা পাঞ্জাবিতে। যেখানে পবিত্রতা মিলেমিশে একাকার হয়ে যাবে। কেমন হবে তবে?
কল্পনা দেখতে তো সবার ভালো লাগে। কিন্তু সেই কল্পনা আদৌ বাস্তবে রুপান্তরিত হয় কি-না সেটাই বড় প্রশ্ন।

পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায়…………….