নারীর সতীত্ব পর্ব-০৪

0
2203

#নারীর_সতীত্ব
#পর্ব_০৪
Wohad Mahmud

মায়ের সাথে কথা বলার নাম করে ছাদে , বারান্দায় গিয়ে কার সাথে কথা বলে শুনো। মনে হয় পুরাতন কোনো বয়ফ্রেন্ড হবে।

আমি সাবনাজ কে জিজ্ঞেসা করলাম ভাবি এসব কি বলছে সাবনাজ তোমাকে। সত্যি বলছে কি? কার সাথে কথা বলছিলা তুমি?

আমার কথার উত্তর না দিয়ে অনবরত কান্না করতে থাকে সাবনাজ। আমি জোর দিয়ে বললাম কী হলো তুমি যদি নির্দোষ হয়ে থাকো থাকো তাহলে কথার জবাব কেন দিচ্ছ না। তাহলে ভাবি যা বলছে সেটা কি ঠিক? তুমি যদি নির্দোষ হয়ে থাকো তাহলে তোমার কিছুই হবে না। যে তোমার উপর মিথ্যা অপবাদ দিয়েছে তার শাস্তি হবে আর যদি সঠিক হয়ে থাকে তাহলে আমি কিছু বলব না। তোমার ভালোবাসার মিলন ঘটিয়ে দেয়া আমার দায়িত্ব।

সাবনাজ তখন চোখের পানি মুছতে মুছতে বলে ওটা আমার ভাবির মেয়ে ছিল। মাত্র পাঁচ বছর বয়স। আমি যখন বাড়িতে ছিলাম তখন সব সময় আমার কাছে থাকতো। আমি চলে আসার পর শুধু আমার খোঁজ করে আর কান্না করে। সে জন্যই আমি বলেছিলাম বাবু আমি আজকেই এখান থেকে তোমরা কাছে চলে আসব। এখানে আর থাকবো না। যদি বিশ্বাস না হয় তাহলে আজকে যারা আসবে জিজ্ঞেসা করে নিয়েন। আর ভাবি সম্পূর্ণ না শুনে আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করেছে। বিশ্বাস করেন আমার কোনো ছেলের সাথে সম্পর্ক নেই।

ভাবি তখন মুখ ভাঙিয়ে বলে ঢং দেখে আর বাঁচি না। বাঘ যখন খাঁচায় বন্দী হয় তখন এমন লাফালাফি করে। সব মিথ্যা কথা বলছে এখন সব কথা ফাঁস হয়ে গিয়েছে সে জন্যই এমন নাটক করছে।
ভাবির কথা শুনে আরো জোরে জোরে কান্না করতে থাকে সাবনাজ।

তৎক্ষণাৎ আমার মনে পড়ে আমার ফোনে সব কল তো রেকর্ড হয়। তাহলে এতো কথা বলার কী আছে কল রেকর্ড শুনলে তো সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। আমি তখন বললাম চিন্তা করার দরকার নেই ভাবি আমার ফোনের সব কথা রেকর্ড হয়ে থাকে ভাবি। ফোন কলের রেকর্ড শুনলে সব পরিষ্কার হয়ে যাবে। কে মিথ্যা বলছে আর কে অন্যের সংসারে আগুন জ্বালাতে চায়।

কল রেকর্ড এর কথা শুনে ভাবির মুখ হাসি থেকে ভয়ে রুপান্তরিত হয়। তারপর আমি কল রেকর্ড প্লে করলাম। স্পস্ট শোনা যাচ্ছে সাবনাজ প্রথমে তার মায়ের সাথে কথা বলছে ভালো মন্দ জিজ্ঞাসা করছে। তারপর ভাবির সাথে কথা বলছে। ভাবির সাথে বলে আপনার মেয়ে কই ভাবি। ভাবি বলে তোমার জন্য কান্না করছে শুধু। সাবনাজ বলে কই দেখি আমি একটু কথা বলি, সাবনাজ তখন বলে বাবু আমি আজকেই এখান থেকে তোমরা কাছে চলে আসব। এখানে আর থাকবো না।

এটা শোনার পরে মাথায় কাজ করছে না আমার। ভাবির দিকে রাগি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি। কাছে আগিয়ে গিয়ে বললাম আপনার কুদৃষ্টি আমার পরিবার থেকে সরিয়ে নেন। মানুষের মাঝে মনমালিন্য সৃষ্টি করা বাদ দেন। সাবনাজ বাসায় আসছে আজ মাত্র তিন দিন হয়েছে। এখনি আপনি সাবনাজের সাথে যা করছেন না জানি এর পরে আপনি কী করবেন। এরপর যদি যদি আমার পরিবারের দিকে কুদৃষ্টি দিয়ে তাকিয়েছেন তাহলে আমি আপনার চোখ তুলে নিব। এখন ভাবি বলে কিছু করলাম না। কিন্তু এর পরবর্তীতে ভাবি বলে মানব না, কথাটা মনে রাখবেন।

সাবনাজ কান্না করতে করতে রুমে চলে যায়। আমি এখন কী মুখ নিয়ে সাবনাজের সামনে যাবো। আমারো দোষ কম না। ভাবির কথায় এসে একটু ধমক দিয়ে কথা বলেছি সাবনাজ এর সাথে। আমিই যদি আমার স্ত্রীকে বিশ্বাস করতে না পারি তাহলে অন্য কেউ কীভাবে করবে। এখন আমি কোনমতে সাবনাজ এর সামনে যেতে পারব না।‌ তাই ছোট বোন (মাহমুদা) কে ডেকে বললাম। বোন একটা কাজ করতে পারবি।

কি কাজ বল ভাইয়া।

আমি বললাম যা হয়েছে তুই তো সব দেখছিস। আমি ও সাবনাজ এর সাথে একটু ধমক দিয়ে কথা বলেছি। কান্না করছে সাবনাজ অনেক। প্লিজ বোন আমার, তুই গিয়ে একটু দেখবি কী করছে। পাশে গিয়ে একটু বস সাবনাজের।

এভাবে বলিস কেন তুই, প্লিজ বলার কী আছে। আমি ভাবির কাছেই যাচ্ছিলাম আজকের বিষয় টা অনেক খারাপ হয়েছে। যা হয়েছে সব তোর জন্য হয়েছে। ভাবির অপরাধ গুলো সব তুই বাবা মায়ের কাছে থেকে লুকিয়ে রাখিস সেই জন্যই এতো সাহস হয়েছে।

আচ্ছা আমার ভুল হয়েছে বোন এখন থেকে আর কারো অপরাধ লুকিয়ে রাখব না। সরাসরি প্রতিবাদ করব। এবার তোর ছোট ভাবির কাছে গিয়ে দেখ প্লিজ।

আচ্ছা যাচ্ছি সাইড দে এবার তুই।

তারপর মাহমুদা চলে যায় সাবনাজের কাছে। মাহমুদার নাম আমার সাথে মিলিয়ে রেখেছিল মা। আর আমার বোনটা একদম আমার মতো হয়েছে। আমাকে অনেক ভালোবাসে।আমিও অনেক ভালোবাসি। এমন একটা বোন পাওয়া সত্যিই ভাগ্যের ব্যাপার। বোন তো অনেকেই পেয়ে থাকে তবে তাকে ভালোবাসা দিয়ে আগলে রাখতে হয়।

কিছুক্ষণ পরে হঠাৎ কলিং বেল এর শব্দ শুনতে পেলাম। মনে মনে ভাবলাম হয়তো সাবনাজ এর বাসা থেকে লোক এসেছে। আমি ভয় পেয়ে আছি এই ভয় হলো আত্মসম্মানবোধ এর ভয়। যদি এসব কিছু তারা জানতে পারে বা ভাবি কোনো সমস্যা সৃষ্টি করে তাহলে আমার আর আমার পরিবারের মান সম্মান সব নষ্ট হয়ে যাবে। কীভাবে আমি তাদের সাথে তাদের বাসায় যাবো। আর গেলে চোখ তুলে তাদের সামনে তাকানোর সাহস আমার হবে না। নতুন নতুন যদি এমন হয় তাহলে পরে কী হবে। আমার অনেক বিশ্বাস আছে সাবনাজ এর প্রতি সাবনাজ কিছু বলবে না। ভয় করছি ভাবি কে নিয়ে, যদি কোনো গন্ডগল সৃষ্টি করে। অনেক কথা চিন্তা করতে করতে গেট খুলে দিলাম। তারপর সালাম বিনিময় করে ভালো মন্দ জিজ্ঞাসা করে রেস্ট নিতে বললাম।

তারপর মাহমুদা, আমার স্ত্রী সবনাজ কে নিয়ে নিচে নেমে আসে। কিছুক্ষণ আগেও অনেক কান্নাকাটি করছিল। এখন নিজের বাসা থেকে মানুষ আসার কথা শুনে হাসিমুখে নিয়ে নিচে নেমে আসে।

সাবনাজ এর ছোট ভাই বলে আপু তোর চোখ লাল কেন কী হয়েছে? তখন কান্না করেছিল তাই সাবনাজ এর চোখ লাল হয়েছে। কিন্তু সাবনাজ এসব উপেক্ষা করে বলে বাবা-মা তোদের জন্য অনেক খারাপ লাগছিল তাই কান্না করেছিলাম সে জন্যই মনে হয় চোখ লাল হয়েছে।আমি তখন মনে মনে ভাবতে থাকলাম নিজের সংসার ঠিক রাখতে নিজের পরিবার কে খুশি রাখতে হাসিমুখে মিথ্যা কথা বলতে পারে। কিন্তু সবাই না আমার ভাবির মতো কিছু অমানুষ আছে তারা অন্যের সংসার ধ্বংস করার জন্য সবকিছু করতে পারে।

সাবনাজ এর ছোট ভাই বলে কান্না কেন করবি? এতো সুন্দর একটা পরিবার অর্জন করেছিস তুই। মাহমুদ ভাইয়ের মতো একটা স্বামী, মাহমুদ ভাইয়ের বাবা মায়ের মতো শ্বশুর শ্বাশুড়ি। একদম তোর বাবা মায়ের মতো। তোকে কোনো কষ্ট পেতে হবে না। আর আমি তো আছিই মাঝে মাঝে এসে দেখে যাবো। আর হাসতে হাসতে বলে যদি বেশি কান্না করিস তাহলে বল দুলাভাই কে সাথে নিয়ে গিয়ে ঘর জামাই রেখে দিই। বাকি যারা ছিল সবাই হাসতে থাকে।

আমিও মনে মনে হাসলাম আর ভাবলাম আর যায় হোক সাবনাজ এর ভাই ভালোই বুঝে। সবকিছু ঠিকঠাক হ্যান্ডেল করে নিতে পারে। মনে মনে হাসলাম আর বললাম বুদ্ধিমান একটা শালা পাইছি।

ঠিক তখনি সাবনাজ এর ভাই বলে কি দুলাভাই ঠিক বললাম তো। পারবেন না ঘর জামাই থাকতে। আমিও হাসতে হাসতে বললাম হ্যাঁ পারবো আমার তো আরো ভালো হয় বসে বসে খেতে পারবো। কোনো কাজ করা লাগবে না।

সাবনাজ আমার দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি করে হাসছে। আমি সাথে সাথে সাবনাজ এর দিকে থেকে চোখ ফিরিয়ে নিলাম সত্যি অনেক লজ্জা পাচ্ছে আমার। সাবনাজ এর চোখের দিকে তাকিয়ে থাকতে পারছি না। কিছুক্ষণ আগে যা হয়েছে এটা যদি সাবনাজ এর ভাই জানতে পারতো তাহলে পরিস্থিতি এমন হতো না অন্যরকম হতো। কিন্তু সাবনাজ সবকিছু ঠিক করে নিয়েছে হাসিমুখে।

সবাই খাওয়া দাওয়া শেষে সবাই রেস্ট নিচ্ছে তখন আমি আস্তে আস্তে সাবনাজ এর কাছে যাই। বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে সাবনাজ। লজ্জা দৃষ্টিতে সাবনাজের দিকে তাকিয়ে হাত ধরে বললাম প্লিজ আমাকে মাফ করে দাও অনেক ভুল হয়েছে আমার। আমি তখন সম্পূর্ণ বিশ্বাস করতে পারি নাই তোমাকে। আর তোমাকে ধমক দিয়েছিলাম। আর কখনো এমন হবে না। তুমি যা বলবে আমি তাই করব। দরকার হয় তোমার পা ধরে মাফ চাইবো আমি। এই যে কান ধরে উঠ বস করছি, এক,দুই , তিন,

ঠিক তখনি সাবনাজ আমার হাত ধরে বলে কী করছো তুমি মাহমুদ এটা, থামো তো এবার। পাগল হয়ে গেলে না কী তুমি। এমন করতে হয় না। তুমি আমার স্বামী, তোমার উপর কেন রাগ করব বলো। তোমার জায়গায় তুমি ঠিক ছিলে সম্পূর্ণ ভাবে। আমার খারাপ লাগছে ভাবি আমাকে সন্দেহ করে আর আমার সাথে এমন করছে।

আরে বাদ দাও তার কথা। এমনিই মানুষের দোষ খোঁজ করা তার কাজ। আর এতো কিছুর মধ্যে একটা কাজ কিন্তু ভালো হয়েছে।

কী ভালো কাজ হলো আবার?

ওই যে তোমার অল্প একটু হলেও লজ্জা ভেঙে গিয়েছে। আমাকে তুমি করে বলছো এখন, আর আমার হাত ধরে আছো সারাজীবন এভাবে থাকবে। আমার কথা শুনে কিছু টা লজ্জা পেয়ে আমার হাত ছেড়ে দৌড়ে চলে যায় আর বলে আমি মাহমুদার কাছে যাচ্ছি।

চলবে,,,,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে