Saturday, July 12, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1393



অবহেলিত ভালোবাসা পর্ব-১০

0

অবহেলিত ভালোবাসা
পর্বঃ১০
Writer:Shakif Arefin

তাসু বলে_ কি খাবেন বলেন না কেন..?? রান্না বসাতে হবে তো..??নীল রেগে গিয়ে বলে__তোর যেটা খুশি সেটা গিয়ে রান্না কর। সামনে থেকে যা এখন কিছু ভালো লাগছে না।।

__তাসুও আর এখানে না দাঁড়িয়ে চলে যায় রান্না বসাতে। নীল একটু আরাম করে প্রতিদিনের নেয় আজও ল্যাপ্টপ নিয়ে কাজ করতে বসে যায়। আজকে কাজের প্রতি নীল এতোটাই মনযোগ দিয়েছে যে অন্য কিছু তার মনেই আসছে না।এক মনে কাজ করেই যাচ্ছে। এই দিকে কানে আবার হেডফোন কেউ চিল্লিয়ে ডাকলেও শুনতে পাবে না

__কাজ করতে করতে কিছু টা ক্লান্ত হলে একটু নড়েচড়ে বসে নীল। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে রাত প্রায় বারোটা বেজে যাচ্ছে। নীল ভাবে__ এতো রাত হয়ে গেছে তাসু কি এখনো রান্না করতেছে নাকি..??কিচেনে এতো সময় ধরে করে টা কি..??একবারও তো এসে খাবার খেতে ডেকে গেলো না।

_কান থেকে হেডফোন খুলে খাবার রুমে যায় নীল। নীল সেখানে গিয়ে দেখে তাসু খাবার টেবিলে মাথা রেখে শুয়ে আছে। নীল এটা দেখে আশ্চর্য হয়ে যায়।নীল তাসুর কাছে গিয়ে আসতে করে নাড়া দিয়ে ডাক দেয়। তাসুর ঘুম টা পুরোপুরি চোখে আসে নাই তাই নীলের ছোঁয়া পেতেই তাসু ঘুম থেকে উঠে যায়।

__নীল বলে__ এতো রাত হয়ে গেছে আমাকে একবারও ডাকলে না.?? আর এখানে পরে ঘুমাচ্ছো..??তাসু বলে__না না আপনার রুমে কয়েকবার গিয়ে ডাকছিলামও আমি। আপনি ল্যাপ্টপ নিয়ে কাজ করতেছিলেন। কানে হেডফোন থাকায় আমার কথা শুনতে পান নি।ভেবেছিলাম আপনার কাজ শেষ হলে আবার ডাকতে যাবো।আর দেখেন টেবিলে মাথা রাখতে আমি নিজেই ঘুমিয়ে গেছি।

__নীল বলে__ হায়রে ঘুম পাগলী মেয়ে রে।তাড়াতাড়ি খেতে দাও খুব ক্ষিধে পেয়েছে। তাসু বলে__হুম আপনি বসেন সব কিছু রাখাই আছে। তাসু নীল কে খাবার বেড়ে দেয়। প্রয়োজনীয় সব কিছু নীলের কাছে এনে দেয়। নীল খাবার প্লেটে হাত দিতেই তাসুর দিকে তাকায়।

__নীল বলে__ তুমি খেয়েছো..??তাসু বুঝতে পারে নীল তাকে খেতে বলবে কারণ কালকেও বলেছিল এক সাথে খেতে। তাই তাসু একটু ভেবে বলে__ হুম আমি খেয়ে নিয়েছি। নীল তাসুর কথার ভাবভঙ্গি দেখে বুঝতে পারে তাসু মিথ্যে বলছে।নীল আরো জানে তাসু কখনো নীলের আগে খাবার খায়নি।নীল খেয়ে চলে গেলে তারপর তাসু খায়।

__নীল বলে__ সত্যিই কি তুমি খেয়েছো..??তাসু এবারও বলে__ হুম খেয়েছি। নীল বলে__মিথ্যে বলছো কেন..?? কখন তুমি খেয়েছো..??খাবার গুলো তো ঠিক আগের মতোই রাখা আছে। তাসু বলে__ সত্যি আমি খেয়ে নিয়েছি। আপনি খেয়ে নেন তো।নীল বলে__ তুমি ভাবতে পারছো যে আমার সামনে দাঁড়িয়ে তুমি মিথ্যা কথা বলছো..??আর তুমি ভালো করেই জানো আমি মিথ্যা বলা একদম সহ্য করতে পারি না।

__তাসু বলে__হুম সেটাই তো,,মাহিরা আপু মিথ্যে বলার পরও আমার চড় থাপ্পড় খেতে হয়।কথা না বাড়িয়ে আপনি খেয়ে নেন তো।মাহিরার কথা টা শুনে নীল চুপসে যায়। সেই দিন মাহিরার মিথ্যে কথা শুনে তাসু শুধু শুধু চড় থাপ্পড় দিয়েছিল।অন্য মেয়ের মিথ্যা কথা শুনে তাসুর মার খাওয়া টা তাসু এখনো ভুলতে পারে নাই।

__তাসু নীলের কাছ থেকে একটু দূরে গিয়ে বসতে গেলে নীল তাসুর হাত ধরে নেয়। তাসু আশ্চর্য হয়ে নীলের দিকে তাকায়। তাসু বলে__ এভাবে ধরে বসলেন যে..??কিছু বলবেন..?? নীল বলে __ আজকে আমার একটা কথা রাখবে তুমি..?? তাসু বেশ আশ্চর্য হয়ে যায় নীলের কথা শুনে। তাসু ভাবে এই সময়ে উনি কি কথা বলতে পারে। তাসু কিছু ভেবে পাচ্ছে না কি কথা বলবে নীল এখন তাকে।

__তাসুর নিরবতা দেখে নীল বলে __ বলো রাখবে আমার কথাটা..?? তাসু বলে__ আমার সাদ্যের মধ্যে হলে অবশ্যই আপনার কথা টা রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করবো।নীল বলে__ তুমি এখন আমার সাথে বসে খাবার খাবে।তুমি তো কখনো আমার সাথে বসে খাবার খাওনি।বিয়ের পর থেকে তো সব সময় একাই খেয়ে আসছি। চলো না আজ দুজন এক সাথে খাবার খাই।

__কথা টা শুনে তাসুর কলিজায় একটু মুচড় দিয়ে উঠে। বিয়ের এতো দিন পর নীল তাসু কে এভাবে খাওয়ার জন্য রিকুয়েষ্ট করছে।তাসুর এখন অনুভূতি টা কি রকম তাসু তা বলে বুঝাতে পারবে না।কিছুক্ষণ নীলের দিকে তাকিয়ে থেকে নজর টা নিচে নামিয়ে নেয় তাসু।

__নীল আবারও বলে__ তুমি কি আমার কথা টা রাখবে না..??প্লিজ বসো না আমার সাথে..?? আমরা দুজন এক সাথে খাবার টা খেয়ে নেই। তাসু বলে __ আপনি খেয়ে নেন,, আমি আর এখন খাবো না।খেতে ইচ্ছে করছে না পরে এক সময় খেয়ে নিবো।নীল বলে __ এতো রাত হয়ে গেছে পরে আর কোন সময় খেয়ে নিবে..??তাসু বলে__ বললাম তো আমার খেতে ইচ্ছে করছে না।

__নীল একটু মায়াবী কন্ঠে বলে~ আমি কি এতোটাই খারাপ হয়ে গেছি যে,, আমার সাথে বসে খেতে চাচ্ছো না..??তাসু বলে__ না না তা কেন হতে যাবে..??আমি কি কখনো বলেছি যে আপনি খারাপ..?? নীল বলে __ তাহলে আজকের মতো আমার সাথে খেতে বসো প্লিজ..?? তাসু আর নীলের আবদার টা ফেলে দিবে পারেনি।তাসু মনে মনে চিন্তা করে__ উনি তো শুধু এক সাথে বসে খেতে বলছে ডিভোর্স তো দিতে বলে নি।

__ তাসু বলে__ হুম ঠিক আছে খেতে বসছি।তাসু চুপচাপ বসে খেতে লাগে আর নীলের যা যা প্রয়োজন তা এনে দিচ্ছে বা বেড়ে দিচ্ছে। নীল নিজেও খাচ্ছে সেই দিকে তাসুর খাবার খাওয়ার ধরনটাও দেখছে।বিয়ের পর থেকে নীল হয়তো কখনো তাসুর খাওয়ার ধরন দেখেনি।দেখারও কথা না।কারণ নীল নিজেই তাসু কে নিষেধ করেছিল তাসু যেন তার সামনে বসে কখনো না খায়।

__বিয়ের পর থেকে যতক্ষণই তাসু ছিল নীল শুধু তাকে মারধর আর অবহেলা করেই গেছে। কখনো খেতে দেখেনি তাসু কে।সব সময় চুপচাপ থেকে বাসার কাজকর্ম করে গেছে। আর তাসুও নীলের সব কষ্ট অবহেলা সহ্য করে নিজের সাথে মানিয়ে নিয়েছে।

__এতো অবহেলা আর কষ্ট পাওয়ার পরেও তাসু কখনো কোন প্রতিবাদ করেনি।আর না করেছে নীলের কাছে কোন আপত্তির কথা।কখনো স্ত্রীর অধিকার নিয়ে নীলের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়নি।কখনো নিজের ভালোবাসা টা টুকু নীলের সামনে গিয়ে প্রকাশ করেনি।এসবই তাসু পাথরের মতো ধৈর্য্য ধরে নেয়।

__তাসু অল্প কিছু খাবার খেয়ে হাত ধুয়ে নিতে যাবে তখনই নীল বলে__ এই কি করছো তুমি হাত ধুয়ে নিচ্ছো কেন..?? তাসু বলে__ হুম অনেক খেলাম তো..? আর কতো খাবো..??নীল আশ্চর্য হয়ে বলে__কোথায় আর খেলে তুমি.?? এক চামচ খাবার প্লেটে নিলে সেটা খেয়ে হাত ধুয়ে নিলে।এজন্যই তুমি মোটা হলে না সেই চিকনই রয়ে গেলে।।

__তাসু নীলের এরকম কথা শুনে মুচকি হেসে দেয়। তাসু ঠোঁটের কোণে মুচকি হাসি রেখে বলে__আপনার বুঝি মোটা মেয়ে খুব পছন্দ..?? নীল বলে__ দূর মোটা ছেলে হোক বা মেয়ে হোক কোন টাকেই আমি পছন্দ করি না।তাসু বলে__ ওও আচ্ছা।তাসু নীলের প্লেটে তাকিয়ে বলে __ এমা আপনার প্লেটে দেখি কিছুই নাই। তাসু নীলের প্লেটে খাবার দিতে গেলে নীল বলে__এই আর কিছু দিবা না পেট ভরে গেছে। নীল খাবার শেষ করে রুমে চলে যায়।

চলবে…..

অবহেলিত ভালোবাসা পর্ব-০৯

0

অবহেলিত ভালোবাসা
পর্বঃ০৯
Writer:Shakif Arefin

রুমে গিয়ে নীলের চোখে মোটেও ঘুম আসছে না।তাসুর কথা গুলো বারবার স্বরণ হচ্ছে। তাসুর কথা নীল কে খুব ভাবাচ্ছে এবং কাঁদাচ্ছে।

__সকালে নীল ঘুম থেকে উঠে ওয়াসরুমে যাবে তখনই তাসুর কথা মনে পড়ে।রাতে মেয়ে টা জ্বরে খুব কষ্ট করেছে। তাই ওয়াসরুমে না গিয়ে আগে তাসুর রুমে যায়। নীল গিয়ে দেখে তাসু এখনো খুব আরামে ঘুমাচ্ছে। জ্বরের কারণে তাসু রাতে একটুও ঘুমাতে পারে নি তাই তো এখন খুব আরামে ঘুমাচ্ছে।

__নীলও তাসুর আরামের চিন্তা করে ডাক দেয় নি।সব সময় তো সকাল সকাল উঠে কাজের মেয়ের মতো কাজ করেই যায় আজ না হয় একটু নিজের মতো আরামে ঘুমাতে থাকুক। সেই চিন্তা করে নীল তাসু কে না ডেকে রুমে গিয়ে ওয়াসরুমে চলে যায়।

__কিছুক্ষণ পর তাসুর ঘুম কিছু টা হালকা হতেই নীলের কথা মনে পরে যায়। তাসু ভাবে উনি তো অফিসে যাবে তাড়াতাড়ি নাস্তা বানাতে হবে তা নাহলে যে আজ মেরেই ফেলবে। তাসু ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে আট টা পয়ত্রিশ বাজে। দ্রুত শরীর থেকে চাদর টা সরিয়ে নীলের রুমে যায়।

__তাসু নীলের রুমে গিয়ে দেখে নীল সবে মাত্র সাওয়ার নিয়ে ওয়াসরুম থেকে বের হয়েছে। নীল শর্ট প্যান্ট পরে আছে আর তাওয়ালে দিয়ে খালি গায়ের পানি মুছতেছে।নীল কে এই অবস্থায় দেখবে তাসু ভাবতেও পারেনি।তাসু নীল কে ওই অবস্থায় দেখে অনেকটাই ইতস্ততবোধ করে।নীল পিছনে তাকিয়ে দেখে তাসু দরজায় দাঁড়িয়ে আছে। নীল দেখে তাসু লজ্জায় তার দিকে তাকাতেই পারছে না।তাসু কে এমন করতে দেখে নীল দ্রুত টি শার্ট টা পরে নেয়।

__নীল বলে __ কিছু বলবা আমাকে…??তাসু বলে__আপনি কি এখনই অফিসে চলে যাবেন..??নীল অফিসে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিতে নিতে বলে__হুম এখনই চলে যাবো। তাসু বলে __ আপনি আমাকে দশ মিনিট সময় দেন আমি এখনই আপনার জন্য নাস্তা বানিয়ে নিয়ে আসছি।

__তাসু দ্রুত চলে যেতে গেলে নীল আটকিয়ে বলে__ এই দাঁড়াও দাঁড়াও কোথায় যাচ্ছো..??তাসু বলে__বারে আপনার জন্য নাস্তা বানাতে..?? নীল বলে __ লাগবে না আমার নাস্তা। তাসু আশ্চর্য হয়ে বলে__ আজব তো!! তাহলে আপনি না খেয়ে অফিসে যাবেন নাকি..?? নীল বলে_ _ না খেয়ে থাকবো না,, অফিসের কেন্টিন থেকে খেয়ে নিবো।

__ তাসু বলে __ আমার তো মনে অফিসে সকালে নাস্তা বানানো হয় না।শুধু দুপুরের খাবার বানানো হয়।নীল বলে__ হুম… তাও ঠিক বলেছো।সমস্যা নাই রেস্টুরেন্ট থেকে নাস্তা করে নিবো।তাসু বলে __ দূর এতো কিছু করতে হবে না।আপনি কয়েক মিনিট অপেক্ষা করেন আমি নাস্তা বানিয়ে দিচ্ছি।

__ নীল বলে __ বললাম তো আমার জন্য নাস্তা বানাতে হবে না।আর তুমি এখন ঘুম থেকে উঠতে গেলে কেন..?? আজ তোমার কিচেনে যাওয়ার কোন প্রয়োজন নাই। বাসার কোথাও কোন কাজ করবে না।রুমে গিয়ে আরাম করতে থাকো।আমি তোমার জন্য বাহির থেকে খাবার অর্ডার করে দিয়েছি।কিছুক্ষনের মধ্যেই খাবার চলে আসবে। নাস্তা করে ঠিক মতো ঔষধ খেয়ে শুয়ে থাকবে।

তাসু বলে__ আপনি এটা করতে গেলেন কেন..?? বাহিরে খাবার অর্ডার করার কি প্রয়োজন ছিল..? আমি তো বাসায় খেয়ে নিতে পারতাম..?? নীল একটু এগিয়ে গিয়ে তাসুর কপালে হাত দিতে যাবে তখনই তাসু দুই পা পিছনে সরে যায়। নীল এবার আরো এগিয়ে তাসুর কপালে হাত দিয়ে বলে~তোমার জ্বর এখনো পুরোপুরি সারে নাই।তুমি পুরোপুরি সুস্থ হও তার পরে রান্নাবান্নার কাজে হাত দিবে।এখন এসব করার প্রয়োজন নাই।

__নীল বলে __ আমি অফিসে চলে গেলাম তুমি নাস্তা করে ঔষধ খেয়ে শুয়ে থাকবে।তাসু বলে__ হুমম।এরপর নীল বাসার নিচে গেলে তাসু দ্রুত বেলকনিতে চলে যায় নীল কে এক নজর দেখবে বলে।

__নীল নিচে গিয়ে রিকশার জন্য দাঁড়িয়ে আছে। তখন নীলের চোখ যায় বেলকনিতে দাঁড়িয়ে থাকা তাসুর দিকে।নীল দেখে তাসু বেলকনির রেলিং ধরে দাড়িয়ে থেকে নীল কে দেখছে।নীল তাসুর দিকে তাকাতেই তাসু মুচকি হেসে হাত নাড়িয়ে বায় দেয়।নীল তা দেখে অনেক খুশি হয়।নীলও মুচকি হেসে বায় দিয়ে রিকশা করে অফিসে চলে যায়।

__নীল অফিসে গিয়ে খুব আনন্দ মনেই কাজ করছে।মনটাও যে আজ বেশ ভালো তার।কিন্তু এই ভালো আর কতক্ষণ থাকবে..??মনে পড়ে গেলো মাহিরার সাথে কাটানোর সময় গুলো। মাহিরার কথা মনে হতেই অটোমেটিক নীলের মন খারাপ হয়ে গেলো।মাহিরা কে নীল এখনো যে ভুলতে পারছে না।কারণ এটা তার প্রথম ভালোবাসা। হাজার টা কষ্ট পেলেও কখনো কেউ প্রথম ভালোবাসার সৃতি গুলো মন থেকে মুছে ফেলতে পারে না।

__মাহিরা চলে যাওয়ার পর থেকে নীল আর তার সাথে যোগাযোগ করেনি।কারণ মাহিরার উপর তার প্রচুর রাগ আর ঘৃণা জমে গেছে।মাহিরা কে নিয়ে ভাবতেই মাহিরা ফোন দিয়ে বসে।নীলের বুকটা কেমন ধুপ করে উঠে। নীল মাহিরার ফোন রিসিভ করে নাই। এভাবে কয়েকবার ফোন দেওয়ার পরেও নীল ফোন রিসিভ করে নাই।নীল ফোন রিসিভ না করাতে মাহিরার রাগ উঠে যায়।ফোন রিসিভ না করাতে মাহিরা এবার ম্যাসেজ দেয়। কিন্তু নীল তার ম্যাসেজের কোন রেসপন্স দিচ্ছে না।

__এই দিকে তাসুর শরীর টাও ভালো হয়ে গেছে। সকালে নাস্তা খেয়ে ডাক্তারের লেখা অনুযায়ী ঔষধ খেয়ে নেয়।তাই বাসার কাজও আগের মতোই করতে পারছে।সন্ধ্যা সময় অফিস থেকে মন খারাপ করে বাসায় ফিরে নীল। কলিংবেল বাজালে তাসু এসে দরজা খুলে দেয়।বাসায় এসে তাসুর মুখ টা দেখে নীলের মনটা কিছু টা ভালো হয়ে যায়।

__নীল রুমে চলে যায় গিয়ে ফ্রেশ হয়ে সোফায় বসে পরে। তাসু কে দেখে এখন বেশি বড্ড মায়া হয় নীলের।মনের গহীন বনে লুকিয়ে থাকা ভালো লাগাটা বের হয়ে আসতে বেশি সময় নেয় না।নীল সোফায় বসে ফোন টিপতে থাকে। তাসু কফি নিয়ে রুমে আসে। তাসু বলে__ আপনার কফি টা।নীল বলে __রেখে দাও।

__তাসু চলে যেতে গেলে নীল বলে__ তাসু শুনো না..??তাসু বলে__ জ্বি.. কিছু বলবেন..?? নীল কিছু একটা বলতে গিয়েও বলতে পারছে না।সাহস টা কেন না জানি কাজ করছে না।তাসু বলে __ কি হলো কিছু বলবেন..??? নীল কথা ঘুরিয়ে বলে__ আচ্ছা কি রান্না করেছো..??তাসু বলে__ এখনো রাতের জন্য কিছু রান্না করেনি।আচ্ছা রাতে কি রান্না করবো..?? কি খাবেন..??

__নীল বলে__ দুপুরে কি খেয়েছিলে..??তাসু কোন কথা বলছে না..??নীল বলে__ কি খেয়েছিলে বলো..??তাসু মাথা টা নিচু করে বলে__কিছু খায়নি।নীল আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞেস করে__ কেন কিছু খাওনি..??তাসু বলে __এমনেতেই,, তার মধ্যে আবার সকালে যেই খাবার পাঠিয়েছিলেন সেটা খেয়েই পেট ভরে আছে।

__তাসু বলে__ আপনি কি খাবেন বলেন..?? আমি আবার রান্না বসাবো।নীল বলে__ তুমি যেটা খেতে চাও সেটা তোমার পছন্দ মতো রান্না করো। সেটাই আজ আমি খাবো।

__তাসু বলে__ আমাকেই পছন্দ করেন না তাহলে আমার পছন্দের খাবার টা কি আপনার পছন্দ হবে..??তাসুর এমন কথা টা শুনে নীল আৎকে উঠে। মন কিছু টা খারাপ হয়ে যায়। নীল কিছুই বলছে না।তাসু বলে__ কি খাবেন বলেন না কেন..?? রান্না বসাতে হবে তো..??নীল একটু রেগে বলে~ তোর যেটা খুশি সেটা গিয়ে রান্না কর। সামনে থেকে যা এখন ভালো লাগছে না কিছু।

চলবে….

অবহেলিত ভালোবাসা পর্ব-০৮

0

অবহেলিত ভালোবাসা
পর্বঃ০৮
Writer:Shakif Arefin

__অফিস থেকে আসার পর নীল দেখে তাসু মুখ টা কেমন কালো গাম্ভীর্য করে রেখেছে।চেহারা টা কেমন ফেকাসে দূর্বল হয়ে গেছে। তাসু কোন কথা বললো না।অন্য দিন তো অফিসের ব্যাগ টা হাত থেকে নেয় কিন্তু আজ ব্যাগ টাও হাতে নিলো না।তাসু চলে যায় নিজের রুমে।

__নীল কিছু টা অবাক হয়।রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে বসে থাকে নীল।অনেক্ষণ হয় নীল অফিস থেকে আসছে কিন্তু তাসু আজ কফিও এনে দিলো না।নীল এর কারণ টা খুঁজে পাচ্ছে না।রাতেও ঠিক মতো কথা বললো সকালেও ঠিক মতো নাস্তা খেতে দিলো।তাহলে হঠাৎ করে এমন আচরণ করছে কেন..??

__অনেক সময় হয়ে গেলো তাসুকে বাসার এদিক সেদিক কোথাও দেখছে না।তাই তাসু কি করছে সেটা দেখার জন্য নীল তাসুর রুমের দিকে যায়। নীল তাসুর রুমের দরজার সামনে দাড়িয়ে বেশ আশ্চর্য হয়।নীল দেখে তাসু খাটে উপুর হয়ে শুয়ে আছে।

__অন্য দিন তাসুর মন যত খারাপ_ই থাকুক নীল যখন অফিস থেকে বাসায় আসে তাসু তখন সাথে সাথে কফি নিয়ে আসতো।নীল ভাবে তাহলে কি হয়েছে তাসুর যার জন্য কফি নিয়ে আজ আমার রুমে আসলো না..??নীল প্রায় সময়ই দেখে তাসুর মন যত খারাপ_ই থাকে না কেন সে নীলের খেদমতের কোন ত্রুটি করে না।আজ এভাবে শুয়ে থাকার কারণ টা নীল উপলব্ধি করতে পারেনি।নিজের রুমে গিয়ে কাত হয়ে শুয়ে আরাম করতে থাকে নীল।

__তাসু শুয়া থেকে উঠে নীলের রুমে গিয়ে বলে__আপনি কি ঘুমিয়ে গেছেন..??নীল উঠে বলে__ না ঘুমায় নি।কেন কিছু বলবি..??তাসু বলে__ আমার জ্বরের কিছু ঔষধ লাগতো।সাথে মাথা টাও প্রচন্ড ব্যাথা করছে বিছানা থেকে তুলতে পারছি না।নীল এখন বুঝতে পারে তাসুর এভাবে শুয়ে থাকার কারণ টা কি।নীল বলে__আচ্ছা তুই রুমে গিয়ে শুয়ে থাক আমি এখনই নিয়ে আসছি । নীল বলে__ শুধু জ্বর আর মাথা ব্যাথার ঔষধ_ই তো…??তাসু বলে__ হুম।

__নীল আর এক মূহুর্তও দেরি করেনি সোজা নিচে গিয়ে কিছু দূর হেটে সামনের এক ফার্মেসি থেকে জ্বর আর মাথা ব্যাথার ঔষধ কিনে দ্রুত বাসায় চলে আসে। নীল ঔষধ নিয়ে সোজা তাসুর রুমে চলে যায়। তাসু তখন উল্টো পাশ হয়ে শুয়ে আছে।নীল তাসু কে ডাক দিতেই তাসু ওড়না টা বুকের উপর রেখে নীলের দিকে তাকায়।

__নীল বলে__ এখানে জ্বর আর মাথা ব্যাথার সব ঔষধ আছে কিভাবে খেতে হবে তাও লেখা আছে। সব গুলাই খাওয়ার পর খেতে হবে। আর তুই এখন কিছু খেয়েছিস..??তাসু মাথা নাড়িয়ে বলে __ না এখনো কিছু খায়নি।নীল বলে__ আচ্ছা আমি তোর জন্য খাবার নিয়ে আসছি। নীল কিচেনে গিয়ে প্লেটে করে তাসুর জন্য কিছু খাবার নিয়ে আসে।

নীল বলে __ এখানে খাবার রেখে গেলাম তুই এখনই খাবার শেষ করে ঔষধ খেয়ে নে।আর আমি আজ রাতে কিছু খাবো না।তোর শুয়া থেকে উঠে গিয়ে খাবার সাজিয়ে আমাকে ডাকতে হবে না।তোর কাছে বেশি খারাপ লাগলে বা কিছু লাগলে আমাকে ডাকিস।

__এটা বলে নীল তাসুর রুম থেকে বের হয়ে যায়। নীল বের হওয়ার পর তাসু খাবার প্লেট টা নিয়ে কিছু খেতে চেষ্টা করে কিন্তু তাসুর মুখে খাবার রুচি একেবারেই নাই। তারপরেও ঔষধ খাবে সেই চিন্তা করে কয়েক লোকমা খাবার খেয়ে ঔষধ গুলো খেয়ে নেয়।

__এই দিকে নীল রুমে এসে একটা কথাই ভাবতে থাকে __জ্বর কতোটা মারাত্মক হলে সহ্য করতে না পেরে তাসু আমার কাছে এসে ঔষধ চেয়েছে। তাসু তুমি এতো টা শান্ত আর ধৈর্য্যশীল স্বভাবের মেয়ে কেন..?? মুখ খুলে তো আমার কাছে সব সময় কিছু আবদার করতে পারো..??নিশ্চই এই গুণ গুলো সহ আরো কিছু ভালো গুণ তোমার মাঝে আমার বাবা দেখেছিল যার জন্য বাবা তোমাকে আমার সাথে জোর করে বিয়ে দিয়েছে। কিন্তু কিছু ভুল সিদ্ধান্তও সময়ের সাথে ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।তুমি আমার জীবনে আসার আগে মাহিরা নামক মেয়ে টা যে আমার জীবনে এসেছিল।তাকে যে আমি এখনো মন থেকে ভুলতে পারছি না।

__ল্যাপ্টপ নিয়ে অফিসের কাজ করছে নীল রাত তখন প্রায় বারো টা ছুঁই ছুঁই করছে। ল্যাপ্টপ রেখে ঘুমাতে যাবে নীল। তখন তাসুর কথা মনে পরে গেলো।নীল গিয়ে তাসুর রুমের দরজা কিছু টা খুলে দেখে তাসু নড়াচড়া করছে। জ্বরে কাতরাচ্ছে জ্বর টা মনে হয় বেড়ে গেছে।দুই একদিন আগে জ্বর কিছু টা ছিল ঔষধ না খাওয়াতে হয়তো জ্বর বেশিই বেড়ে গেছে। নীল আসতে আসতে পায়ে তাসুর কাছে এগিয়ে যায়। নীল তাসুর কপালে হাত রাখে।কপালে হাত রাখতেই তাসু চোখ বড় করে তাকায়।

__নীল কে এতো রাতে এখানে দেখে তাসু অবাক হয়ে যায়। নীলের দিকে তাসু তাকিয়ে আছে কিছুই বলছে না। নীলও কপালে হাত রেখে তাকিয়ে আছে। নীল দেখে তাসুর কপাল প্রচন্ড গরম হয়ে আছে। তাসু জ্বরে কাঁপছে।এসব দেখে নীলের খুব মায়া হচ্ছে। এই মূহুর্তে সে তাসুর জন্য কি করবে তার কিছুই ভেবে পাচ্ছে না।

__নীলের দিকে তাসু ছলছল চোখে তাকিয়ে আছে।তখনো তাসুর চোখ দিয়ে পানি পরছে। নীল বলে__ বেশি খারাপ লাগছে..?? তাসু বলে__হুম।নীল বলে__তুমি একটু সহ্য করো আমি আসছি। নীল দ্রুত ওয়াসরুমে চলে যায় জলপট্টি আনার জন্য। পরক্ষণেই মনে পরে জ্বর টা তো বেশি উঠে গেছে জলপট্টি দিলে কাজ হবে না।তাই বালতি করে পানি নিয়ে তাসুর কাছে চলে যায়।

__নীল তার হাত দিয়ে তাসুকে ধরে বালতি বরাবর শুয়াতে গেলে তাসু বাধা দেয়। নীল বুঝতে পারে সে যেন তাসুর গায়ে হাত না দেয় সেজন্য বাধা দিচ্ছে। নীল জোর করে তাসু কে ধরে বালতি বরাবর মাথা রেখে পানি ঢালতে থাকে। অনেক্ষণ পানি ঢেলে দেওয়ার পর নীল ভিজে কাপড় দিয়ে তাসুর পুরো শরীর টা মুছে দেয়। যদিও তাসু বারবার নিষেধ করছিল কিন্তু এই মূহুর্তে নীল তাসুর কোন নিষেধ মানতে পারছে না।

__এভাবে অনেক্ষণ পানি ঢালার পর পুরো শরীর বারবার ভিজে কাপড় দিয়ে মুছে দেওয়ার পর,,নীল তাসুর কপালে ঘাড়ে হাত পায়ে ধরে দেখে জ্বর অনেক টা কমে গেছে। তাসুর কাঁপনিও থেমে গেছে। তাসু চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে।বিয়ের পর এই প্রথম নীল তাসুর এতো টা সেবা যত্ন করছে।তাসুর প্রতি নীলের এই সেবা টুকু করতে দেখে তাসুর কাছে কিছুটা হলেও ভালো লাগছে।

__নীল খুব সুন্দর হালকা করে তাসুকে বলে__ তাসু আমার কথা শুনছো..??তাসু চোখ বন্ধ রেখেই বলে__ হুম বলেন..? নীল বলে__এখন কিছু টা ভালো লাগছে..?? তাসু কোন কথা বলে নাই। নীল বলে__ আগের মতো কি খারাপ লাগছে..? কি হলো বলো না জ্বর কি কিছু টা কমেছে কি না..?? তাসু বলে__ হুম কমেছে।

__নীল বলে__ ঔষধ খেয়েছিলে…??তাসু বলে__হুম খেয়েছি। নীল বলে __ তোমার হাত পা টিপে দিবো..?? কিছু টা ভালো লাগবে।তাসু বলে__ লাগবে না।আর আমার জন্য তুই শব্দ টাই ঠিক আছে। বিয়ের পর এটা শুনতে শুনতে অভ্যস্ত হয়ে গেছে। তুমি শব্দ টা মনে হয় আমার জন্য মানাবে না।

__নীল কথা টা শুনে খুব কষ্ট পায়।নীল এটা ভাবে তাসু কতো টা কষ্ট পেলে আমাকে তুমি শব্দ টা বলতে নিষেধ করছে। নীল কথা টা শুনে চলে যেতে চাইলে তাসু নীলের হাত ধরে নিয়ে বলে __ শুনেন…?নীল তাসুর দিকে তাকিয়ে বলে__ কিছু বলবে আমাকে..??

__তাসু কেঁদে দিয়ে বলে~আমি যদি মরে যাই,, তাহলে কি আপনি মাহিরা আপু কে নিয়ে খুব ভালো থাকবেন..?? নীল কথা টা শুনে নিশ্চুপ নিরবতা পালন করছে।তাসু এমন একটা কথা বলতে তার জন্য হয়তো নীল কল্পনাতেও ভাবেনি।

__নীল কে চুপ থাকতে দেখে তাসু বলে__কি হলো বলেন না..?? আমি যদি মরে যাই তাহলে আপুকে নিয়ে ভালো থাকতে পারবেন তো..?বিশ্বাস করেন আপনার এতো অবহেলা আমি আর নিতে পারছি না।সত্যি আমার খুব কষ্ট হয় জানেন..?? আমার মনে হচ্ছে এই পৃথিবীতে আসার সময় আমি মরে গেলেই ভালো হতো।তাহলে আপনার এতো অবহেলা আর কষ্ট সহ্য করতে হতো না।

__নীল অন্য দিকে তাকিয়ে আছে তাসুর কথা গুলো শুনে নীলের খুব কষ্ট হচ্ছে। তাসুর কথা গুলো কলিজায় গিয়ে আঘাত করতেছে।তাসু বলে__ শুনেন না..??আমি যদি মরে যাই তাহলে আমার লাশ টা কষ্ট করে আমার বাবা মার পাশেই দাফন করে দিয়েন।যেন আমার অবহেলিত জীবনের গল্প টা তাদের কাছে বলতে পারি। আচ্ছা আমি যদি মরে যাই তাহলে কি আপনি আমাকে কখনো স্বরণ করবেন..??

__এক শ্বাসে কথা গুলো বলে তাসু ফুপিয়ে ফুপিয়ে কেঁদে দেয়। কথা গুলো শুনে হঠাৎ করেই নীলের চোখ দিয়ে কয়েক ফুটা পানি বেরিয়ে ফ্লোরে পরে যায়। নীল বুঝতেই পারে নাই কখন তার চোখ দিয়ে পানি চলে আসছে। নীল আর সেখানে এক মূহুর্তও দাড়াতে পারছে না।হয়তো আর একটু দাঁড়ালেই পা কেঁপে পরে যাবে।

__সোজা তাসুর রুম থেকে বেরিয়ে নিজের রুমে চলে যায়। আর তাসু সেই দিকে ফুপিয়ে কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পরে। নীলের চোখে মোটেও ঘুম আসছে না।তাসুর কথা গুলো বারবার স্বরণ হচ্ছে। তাসুর কথা নীল কে খুব ভাবাচ্ছে এবং কাঁদাচ্ছে।

চলবে…..

অবহেলিত ভালোবাসা পর্ব-০৭

0

অবহেলিত ভালোবাসা
পর্বঃ০৭
Writer:Shakif Arefin

__কি থেকে কি হয়ে গেলো নীল তার কিছুই বুঝতে পারছে না।নীলের তখন হঠাৎ তাসুর কথা মনে পরে গেলো।তাসু কে শুধু শুধু মেরে নীলের কাছেও ভালো লাগছে না।নীলের মন টা শুধু অস্থির অস্থির করছে।তাসু এখন কি করছে নীল তার কিছুই জানে না।অফিস থেকে এসে নীল একটু আরামও করতে পারে নাই। নীল চেয়েছিল একটু শান্তি খুঁজ করতে। আর এখন নীলের পুরো জীবনটাই অশান্তিতে ভরে গেছে।

__নীল আর সাত পাঁচ না ভেবে তাসুর রুমে যায় তাসু কি করছে সেটা দেখার জন্য। নীল তাসুর রুমের দরজায় দাঁড়িয়ে দেখে তাসু বালিশে মুখ লুকিয়ে ইচ্ছে মতো কান্না করছে।

__নীল এখন বুঝতে পারছে তাসু কতো টা কষ্টে আর মনের ব্যথায় এভাবে শুয়ে থেকে ফুপিয়ে কান্না করছে। নীল যে কতো টা মনুষ্যত্বহীন আর বোকা যে অন্য মেয়ের ইশারায় আর তার মিথ্যে অভিনয়ে বিশ্বাস করে নিজের স্ত্রীর উপর হাত তুলছে নীল তা এখন হাড়ে হাড়ে উপলব্ধি করতে পারছে।

__এখন নীলেরও খুব কষ্ট হচ্ছে। নীল ভাবতে থাকে তাসু তো আমার কাছে কখনো নিজের অধিকার চাইতে আসেনি।অথচ আমাকে সুখী দেখার জন্য নিজের অধিকার টা আরো বিসর্জন দিতে চেয়েছিল।তাসু তো আমার কাছে তেমন কিছুই চায় নি শুধু চেয়েছে নিজের জন্য একটু আশ্রয়। তাহলে আমি কি করে পারলাম তাসু কে প্রতিদিন এতো কষ্ট দিতে টর্চার করতে।

__নীল এসব ভেবে মাথা নিচু করে নিজের রুমে চলে যায়। নীলের এখন বড্ড কষ্ট হচ্ছে। হয়তো নিজের ভুল টা কোথায় ছিল সেটা অনুভব করতে পারছে। নীল কোথাও স্থীর হয়ে বসতে পারছে না।রুমের মধ্যে কিছুক্ষন পায়চারি করতে থাকে।নিজের উপর এখন নীলের খুব রাগ উঠছে। ইচ্ছে করছে নিজেকেই এখন শেষ করে দিতে।

__নীল পায়চারি করতে থাকে আর রেগে রেগে ভাবতে থাকে __ আমি এতো টা নিষ্ঠুর আর নির্দয় কিভাবে হতে পারলাম। তাও আবার শুধু তাসুর মতো একজন সহজ সরল মেয়েটার সাথে। কেন আমার জীবনে এমন টা হতে গেল..??আমার ভাগ্যে কি শান্তি ছিল না..??নিজেকেই নীল প্রশ্ন করে।
নীল এসব চিন্তা করে এক গ্লাস পানি খেয়ে খাটে বসে পরে।

__রাতে খাবারের সময় হয়ে গেছে কিন্তু তাসু এখনো নীল কে এসে খাবার খেতে বলছে না।এই দিকে নীলের ক্ষুধাও লেগেছে খুব। নীল ভাবে __ তাসু কি আজ আমাকে খেতে বলবে..??খাবার কি আগের মতো টেবিলে সাজিয়ে রাখবে..?এসব চিন্তা নীলের মাথায় আসে। নীল একটু উঠে গিয়ে দেখে তাসু টেবিলে খাবার সাজিয়ে দিচ্ছে কি না..?কিন্তু না নীল দেখে খাবার টেবিল পুরোটাই ফাকা পড়ে আছে।

__নীল বুঝে নেয় তাসু আজকে আর খাবার দিবে না।।তাই না খেয়েই বসে থাকে।এর কিছুক্ষণ পরই তাসু এসে নীলের ভাবনা ভেঙ্গে দিয়ে বলে__আপনার খাবার দিয়েছি টেবিলে খেতে আসুন।

__নীল কিছু বলতে যাবে এর আগেই তাসু চলে যায়। তবে নীল বুঝতে পারে তাসুর মনে অনেক কষ্ট। যার কারণে নীলের সামনে এক মহূর্তও দাঁড়ায় নি।খাবার টেবিলে সব কিছুই আগের মতো সাজানো আছে তবুও কেন নীলের কিছুই ভালো লাগছে না।তাসু সব কিছুই আগের মতো নীল কে খাবার সার্ভ করে দিচ্ছে। তবে কেন না জানি আজ নীল তাসুর হাতে বেড়ে দেওয়া খাবার খেতে পারছে না।আগের মতো আর আরাম ফিল করতে পারছে না।নীল আজ তাসুর সামনে নিজেকে বড় অপরাধী ভাবছে।

__নীল অবাক হয়ে তাসুর কাজ দেখে।নীল ভাবে __অন্য মেয়ে হলে হয়তো আজ বিনাকারণে মার খেয়ে এখানে পরে থাকতো না।আর তাসু আমাকে আজ খাবার বেড়ে দিচ্ছে।মেয়েটার কাছে কি রাগ অভিমান বলতে কিছু নাই..?? সত্যি তাসু তুমি একজন মহান নারী। তোমার তুলনা মাহিরার সাথে করা নেহাৎ বোকামি ছাড়া আর কিছুই না।

___নীল বলে__ তুই কি শুধু আমাকেই বেড়ে খাওয়াবি..??তুই কখনো আমার সাথে খাবিনা.?? তাসু বলে__ আপনার সাথে এক টেবিলে বসে খাওয়ার সাদ্য কি আর আমার আছে…?? হয়তো আর কখনো হবেও না।একা একা খেয়ে যে আমার অভ্যাস হয়ে গেছে। আপনার খাওয়ার পরই আমি খেয়ে নিবো।

__এরপর নীল কয়েক লোকমা খেয়ে বাকি খাবার গুলো রেখে হাত ধুয়ে উঠে যায়। তাসু জিজ্ঞেস করে__কি হলো হাত ধুয়ে নিলেন যে..?? কিছুই তো খেলেন না।নীল বলে__ আজ কেন না জানি খেতে ইচ্ছে করছে না।নীল অন্য দিন গুলোতে তাসুকে মারার পরও খুব তৃপ্তি নিয়ে খেতো। কিন্তু আজ নীলের গলা দিয়ে খাবার_ই নামছে না।তাই তো নীল অল্প কিছু খেয়ে উঠে চলে যায় নিজের রুমে।

__এই দিকে তাসুরও কিছু খেতে ইচ্ছে করছে না।তাই তাসু না খেয়ে খাবার গুলো গুছিয়ে ফ্রিজে রেখে দেয়। রুমে গিয়ে তাসু ঘুমানোর চেষ্টা করছে কিন্তু তাসুর চোখে ঘুম আসছে না।এই সময়ে তার মা বাবার কথা খুব মনে পরছে।মা বাবা থাকলে হয়তো তাসু একটু আস্থা পেতো।

__রাত প্রায় এগারো টা বাজে নীলের চোখেও ঘুম নাই।চোখ বন্ধ করলেই তাসুর প্রতিচ্ছবি বারবার ভেসে আসছে।তাসুর ভাবনা কোন ভাবেই মাথা থেকে সরাতে পারছে না।নীল চটপট করছে কিন্তু চোখে ঘুম নেই। নীল বুঝতে পারছে না কেন সে বিয়ের পর থেকে তাসুর উপর এতো অত্যাচার করছে। আর নীল এও ভাবতে থাকে__তাসু এতো মার খেয়েও কেন তার কাছে পড়ে আছে।

__এভাবে ভাবতে ভাবতে মাঝরাতে নীল ঘুমিয়ে পরে। সকালে নীল ঘুম থেকে ফ্রেশ হয়ে নেয়। চোখে এখনো ঘুমের আভাস রয়ে গেছে। অফিসেও যেতে হবে।অফিসে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিয়ে নীল খাবার টেবিলে যায়। খাবার গুলো ঠিকঠাক আগের মতোই রাখা তবে আজ তাসু সামনে নেই। তাসু সামনে নেই দেখে নীল একটু এদিক সেদিক তাকায় তবে তাসু কে খুঁজে পাচ্ছে না।

__নীলের বুক টা কেমন ধুক করে উঠলো।তাই উঠে গিয়ে খুঁজ করতে থাকে। প্রথমে তাসুর রুমে যায়। সেখানেও খুঁজে পেলো না।কিচেনে যায় কিন্তু সেখানেও নাই। নীলের ভয় টা আরো বেড়ে গেলো।কোথাও না পেয়ে হতাশা হয়ে নাস্তার টেবিলে বসে পরে।

__ নীলের কাছে কিছুই ভালো লাগছে না।মাথার চিন্তা টা আরো বেড়ে গেলো।বাসা থেকে রাগ করে তাসু কোথাও চলে গেলো না তো..??মাথায় হাত দিয়ে টেবিলে বসে আছে। এর কিছুক্ষণ পরই তাসু এসে বলে__ আপনি নাস্তা করতে চলে আসছেন..??একটু বসুন আমি চা নিয়ে আসছি।

__তাসুর কন্ঠ টা শুনে যেন নীলের আত্মা টা আবার ফিরে আসলো।নীল বলে__ তুমি কোথায় গিয়েছিলে..??তাসু বলে__ স্যরি আসলে একটা কাজের জন্য বাসার নিচে যেতে হয়েছে। আমি এখনই আপনার চা নিয়ে আসছি।

__এরপর নীল নাস্তা করে অফিসে চলে যায়। অফিসে গিয়ে নিজের মতো কাজ করতে থাকে।তবে মাঝে মধ্যে কাজের উপর থেকে মন উঠে যায়। কাজ করতে ইচ্ছে করছে না।বারবার তাসুর কথা মনে পরছে।অফিসের পিওন এসে নীল কে বলে বসের কেবিনে যাওয়ার জন্য।

__নীল তার বসের কেবিনে গেলে বস নীল কে বলে__নীল সাহেব প্রজেক্টের কাজ টা কি ঠিক মতো করতেছেন..??নীলের মুখে হাসি নেই তবুও মুখে একটু হাসি নিয়ে বলে __ জ্বি বস কাজ টা ঠিক মতোই করছি। নীলের বস বলে__হুম কাজ টা শেষ করে সময় মতো জমা দিয়ে দিবেন।যদি আপনার কাজ দেখে ক্লায়েন্ট পছন্দ করে তাহলে আপনার প্রমোশন বাড়িয়ে দেওয়া হবে। নীল কথা টা শুনে খুশি হওয়ার কোন ফিল পাচ্ছে না।তবুও বস কে দেখানোর জন্য জোর করে খুশি হওয়ার অভিনয় করে।

__অফিসের কাজ শেষ করে সন্ধ্যায় নীল বাসায় আসে।কলিংবেল বাজালে তাসু এসে দরজা খুলে দেয়। তাসু আগের মতো কোন কথা বললো না।তাই নীল তাসুর মুখের দিকে তাকায়। নীল দেখে তাসু মুখ টা কেমন কালো গাম্ভীর্য করে রেখেছে।

চলবে…..

অবহেলিত ভালোবাসা পর্ব-০৬

0

অবহেলিত ভালোবাসা
পর্বঃ০৬
Writer:Shakif Arefin

মাহিরা বলে__এই তুমি কোথায়.?? নীল বলে__ কেন আমি তো বাসায় যাচ্ছি।মাহিরা বলে__আমি তোমার বাসার কাছাকাছি আছি।তুমি সোজা আমার কাছে চলে আসো।

__কিছুক্ষণ পর নীল মাহিরার কাছে যেতেই মাহিরা রেগে বলে~ তুমি আমার ফোন ঠিক মতো রিসিভ করছো না কেন..? রিসিভ করলেও কাজের অজুহাত দেখিয়ে কেটে দাও।এভাবে এভয়েড করার মানে টা কি..??আমি তো দেখছি তুমি আমার সাথে কিছু টা গরমিল করার চেষ্টা করছো।

__নীল বলে __ তুমি যা ভাবছো তার কিছুই হয় নি।আমি তোমাকে কোন প্রকার এভয়েড করছি না।সত্যি এখন আমার কাজের খুব প্রেশার যাচ্ছে। তাই তোমাকে সময় দিতে পারছি না।

__মাহিরা বলে__তোমার কি এতো কাজের প্রেশার যে আমাকে সময় দিতে পারছো না.?? নাকি এখন বউ কে মনে ধরেছে..?? নীল একটু রেগে বলে~মাহিরা কি এসব আজেবাজে বকছো..? মাথা তোমার ঠিক আছে..?? মাহিরা বলে __হুম আমার মাথা সম্পূর্ণ ঠিক আছে।

__নীল বলে__ এখানে দাঁড়িয়ে থাকতে ভালো লাগছে না।বাসায় চলো সব বোঝিয়ে বলছি তোমাকে।নীল মাহিরা কে নিয়ে বাসায় গিয়ে কলিংবেল বাজাতেই তাসু এসে দরজা খুলে দেয়। নীলের সাথে মাহিরা কে দেখে তাসুর মনে কেমন উতালপাতাল ঢেউ বয়ে গেলো।মাহিরা কে নীলের সাথে দেখে তাসুর খুব কষ্ট হচ্ছে। এই বোঝি চোখ দিয়ে পানি চলে আসবে।

__তাসু বলে __আজ এতো তাড়াতাড়ি অফিস থেকে চলে আসলেন যে..??নীল তাসুর কাছে অফিসের ব্যাগ টা দিয়ে বলে __আজ অফিসে তেমন কোন কাজ ছিল না তাই বাসায় চলে আসছি।তাসু নীল কে কথা টা জিজ্ঞেস করায় মাহিরার কাছে জিনিস ভালো লাগলো না।তাই মাহিরা কেমন ভয়ংকর চোখে তাসুর দিকে তাকায়।

__নীল বলে__ব্যাগ টা রেখে আমাদের জন্য কফি বানিয়ে নিয়ে আয়।তাসু বলে__ জ্বি। নীল রুমে গিয়ে ওয়াসরুমে চলে যায়। মাহিরা ড্রয়িং রুমে বসে আছে। তাসু কফি নিয়ে এসে বলে__ আপু তোমার কফি। মাহিরা কফি টা হাতে নিয়ে বলে __ স্বামীর খেদমত দেখা যায় ভালোই করিস..??কথা টা শুনে তাসু মাহিরার দিকে তাকায়। মাহিরা কফি টা মুখে দিয়ে সাথে সাথে আবার ফিক করে ফেলে দেয়। মাহিরা কিছু না বলে ঠাসস করে তাসুর গালে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দেয়।

__মাহিরা বলে_তুই কি কফিতে চিনি দিতে ভুলে গেছিস.??জানিস না কফিতে চিনি বেশি দিতে হয়।তাসু বলে__ আপু চিনি তো পরিমাণ মতোই দিয়েছি। এর আগেও তো তোমার কফিতে এই পরিমাণ চিনি দিয়েছিলাম। মাহিরা বলে__ তুই কিন্তু বড্ড বেশি কথা বলছিস।তোর এমন হাল করবো না নীলের বউ হয়ে থাকার সখ মিটে যাবে।

__মাহিরা বলে__ তুই খুব শক্ত একজন মেয়ে রে।এতো মার খাওয়ার পরেও নীলের পায়ের নিচে পরে আছিস।নীলের বউ হয়ে এই বাসায় থাকা তোর খুব সখ তাই না..??আমিও দেখে নিবো নীলের বউ হয়ে তুই কিভাবে এই বাসায় থাকিস।

__কথা গুলো শুনে তাসুর খুব কষ্ট হচ্ছে। স্বামীর হাতেও মার খেতে হয় আবার এখন অন্য মেয়ের হাতেও থাপ্পড় খেতে হয়।তাসু বলে__আপু তোমাদের মাঝখানে আমি কখনো বাধা হয়ে দাড়াবো না।তোমরা যেন এক সাথে থাকতে পারো সেই চেষ্টাই করবো।এটা বলে তাসু কাঁদতে কাঁদতে রুমে চলে যায়।

__তাসু চলে যাওয়ার পর মাহিরা ইচ্ছে করে নিজের জামার উপর কফির মগ টা ফেলে দেয়। নীল ফ্রেশ হয়ে আসার পর মাহিরা নীল কে বলে __ তুমি কি এখানে আমাকে অপমান করার জন্য নিয়ে আসছো..?দেখে তোমার বউ আমার কি অবস্হা করেছে..??ইচ্ছে করে আমার উপর কফির মগ ঢেলে দিয়েছে। যেন আমি বাসায় যেতে না পারি।

__এটা শুনে নীলের মাথায় আগুন উঠে যায়। নীল সত্য মিথ্যে যাচাই না করে বলে__ তুমি বসো আমি আসছি।নীল তাসুর সামনে গিয়ে ঠাসস ঠাসস করে কয়েক টা থাপ্পড় বসিয়ে দেয়।তাসু থাপ্পড়ের আঘাত সামলাতে না পেড়ে পরে গিয়ে খাটের কোনায় লেগে কপাল ফেটে যায়। তাসু বোঝতে পারছে না কি অপরাধের জন্য তাকে মারা হচ্ছে।

__নীল বলে__ তোর সাহস কি করে হলো মাহিরার গায়ে গরম কফি ফেলার..?? তাসু কান্না মিশ্রিত স্বরে বলে__সত্যি আমি আপুর গায়ে কফি ফেলি নি।আমি তো কফি দিয়ে চলে আসছি। নীল বলে__ তুই আবারও আমার সামনে মিথ্যা বলছিস..?তাসু বলে __আপনি বিশ্বাস করুন কফিতে চিনি কম হওয়াতে আপু আরো আমার গালে থাপ্পড় দিয়েছে। তাই তো আমি সাথে সাথে চলে আসছি।আপুর সামনে আর যায় নি।

__তাসুর কান্না ঝরিত মুখ টা থেকে নীলের মনে হচ্ছে তাসু মিথ্যে বলতে পারে না।আর নীল এও খেয়াল করে মাহিরার কথা বলার সময় কথার ভাব টা মিথ্যা মিশ্রিত ছিল। নীল দেখে মাহিরার মুখে খুব হাসি। তাসু কে মারতে দেখে সে হাসছে। এটা দেখার পর নীল আর বোঝতে বাকি রইলো না যে, এ সবই হচ্ছে তার প্ল্যান।

__নীল মাহিরার কাছে গিয়ে বলে __তুমি যে এতো বড় মিথ্যা কথা বলবে আমার জানা ছিল না।নীলের কথায় মাহিরা বসা থেকে উঠে চোখ বড় করে তাকায় নীলের দিকে। মাহিরা বলে __কি আজবাজে কথা বলছো..?নীল বলে __ আমি আজেবাজে কথা বলছি..?? তুমি ইচ্ছে করে কফি টা নিজের উপর ঢাললে তাসু কে শুধু শুধু থাপ্পড় দিলে আবার মিথ্যা কথা বলে আমার হাতে মারও খাওয়ালে তাই না..?তুমি তো খুব চমৎকার অভিনয় পারো!!

__মাহিরা বলে__ ঐ থার্ড ক্লাস মেয়ে টা তার দোষ আমার উপর চাপিয়ে দিচ্ছে। তার কথা তুমি একদম বিশ্বাস করবে না। তুমি একটু দাঁড়াও আমার নামে মিথ্যা কথা বলা বের করছি।

__মাহিরা তাসুর কাছে যেতে চাইলে নীল হাত ধরে বলে~ খবরদার তাসুর কাছে যাওয়ার জন্য এক পা-ও বাড়াবে না।বেচারি তোমার নামে কোন মিথ্যা কথা বলে নাই । তুমি তো ভালো করেই জানো আমি তাসু কে পছন্দ করি না। তাই তো তুমি বারবার ইচ্ছে করে আমার হাতে তাসু কে মার খাওয়াতে চাও।
তুমি যে এতো বড় মিথ্যা কথা বলে তাসু কে মার খাওয়াবে তা আমি কখনো ভাবতে পারি নি।

__আর আমিই বা কতো বড় বোকা।তোমার কথা শুনে তোমাকে বিয়ে করবো বলে ইচ্ছে মতো দিনের পর দিন সহজ সরল মেয়ে টার উপর অত্যাচার করেছি। আজ পর্যন্ত সে মুখের কথা টা পর্যন্ত বলে নাই। সব কষ্ট মুখ বোঝে সহ্য করে নিয়েছে শুধু আমাকে সুখে দেখবে বলে।আমার সুখ দেখতে গিয়ে নিজের সুখ কে বিসর্জন দিয়েছে।

__মাহিরা রেগে বলে~ এখন তোমার কাছে ঐ ফকিন্নি মেয়ে টা ভালো..??এখন তার প্রতি খুব মায়া হচ্ছে তাই না..??নীল কিছু না বলে ঠাসস করে মাহিরার গালে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দেয়। তোমার মতো একজন বাজে মেয়ের সাহস কি করে হলো তাসু কে ফকিন্নি বলার..?? আর কখনো তাসুকে নিয়ে কোন বাজে কথা বলবে না বলে দিলাম।

__মাহিরা তেলেবেগুনে রেগে বলে~ তুমি আমাকে ঐ মেয়ে টার জন্য গায়ে হাত তললে না..??নীল বলে_হ্যা তুলেছি তো কি হয়েছে..?

মাহিরা বলে__মনে রেখো এর ফল তুমি ভোগ করবেই।তোমরা কিভাবে সুখে থাকো সেটাও আমি দেখে নিবো বলে দিলাম।

__নীল বলে_তোমার মতো বাজে মেয়ে আমার কি করতে পারবে তা আমার জানা আছে। কি করবে সেটা দেখা যাবে।আমার বাসা থেকে তুমি এখনই বের হয়ে যাও। আর কখনো আমার সামনে আসবে না বলে দিলাম।

__মাহিরা বলে__ যাবো তো অবশ্যই,,তবে এও বলে দিচ্ছি তোমার আর ঐ ছোট লোক মেয়েটার রাতের ঘুম যদি হারাম না করছি তাহলে আমার নামও মাহিরা না। এসব বলে মাহিরা রাগ দেখিয়ে বের হয়ে যায়। নীল থাপ্পড় দেওয়াতে মাহিরার খুব রাগ উঠে যায়। মাহিরা খুব বদ মেজাজি একজন মেয়ে কেউ তাকে অপমান করলে সেটা মাহিরা সহজে মানতে পারে না।

__সোফায় বসে পড়ে নীল।নীলের মাথা টা চিনচিন ব্যথায় ধরে আছে।কখনো মাহিরার সাথে এতো টা রাগ দেখায় নি আজ যতটা রাগ দেখিয়েছে।কারণ নীল মাহিরাকে প্রচন্ড ভালোবাসে।কি থেকে কি হয়ে গেলো নীল তার কিছুই বোঝতে পারছে না।হঠাৎ তখন তাসুর কথা মনে পরলো নীলের।

চলবে….

অবহেলিত ভালোবাসা পর্ব-০৫

0

অবহেলিত ভালোবাসা
পর্বঃ০৫
Writer:Shakif Arefin

__ নীল বলে _এতো মার খাওয়ার পরেও কেন এখানে পরে আছিস..??কোথাও তো চলে যেতে পারিস..?? তাসু বলে __ কোথায় যাবো..??যাওয়ার মতো কোন জায়গা আছে। মা বাবা তো আমাকে একা রেখেই চলে গেছে। গ্রামে গেলে চাচা কি আমাকে বসে রেখে খাওয়াবে বলেন..??

__নীল বলে__তাহলে কি করবি এখানে থেকে কি শুধু মার খেয়েই পরে থাকবি..??তাসু বলে__ হুম আমি মার খেয়েও সারাজীবন আপনার পায়ের নিচে পরে থাকতে চাই। তাতেও আমি খুশি থাকবো।

__নীল বলে __তোকে আমি মুক্ত করে দেই তোর ইচ্ছে মতো কোথাও চলে যা।তাসু কথা টা শুনে অনেক টা ভয় পেয়ে যায়।কলিজা টা কেমন কেঁপে উঠে।তাসু আশ্চর্য হয়ে বলে __ মুক্ত করে দিবেন মানে..??নীল বলে __ মানে তোকে ডিভোর্স দিয়ে দেই।পরে তোর যেখানে ইচ্ছে হয় সেখানে চলে যা।তোর ভালোর জন্যই বলছি আমি।

__তাসু কথা টা শুনে এখন মরে যেতে ইচ্ছে করছে। ভাবতেও পারে নাই এতো রাতে এমন কথা শুনতে হবে।তাসু চোখের পানি মুছে বলে~ আমি চাই না আপনি আমাকে ডিভোর্স দেন।আপনি আমাকে মারেন কাটেন যা ইচ্ছে হয় করেন। প্লিজ তারপরও আামাকে ডিভোর্স দিয়েন না।

__আমি প্রয়োজনে আপনার বাসায় কাজ করেই খাবো।আপনার বাসায় তো একজন কাজের মেয়েও লাগবে তাই না..??দেখেন আমিই তো আছি কাজের মেয়ে হিসেবে। তারপরেও আপনি আমাকে ডিভোর্স দিয়েন না।আর বলে দেই– আপনি ডিভোর্স পেপারে স্বাক্ষর করলেও আমি কখনো করবো না।

__তাসুর কথা গুলো নীল কে আজ অনেক টাই অবাক করে দেয়। যেই তাসু নীলের ভয়ে সব সময় চুপচাপ হয়ে থাকতো। মার খাওয়ার ভয়ে কখনো কোন প্রতিবাদ করেনি।সেই তাসু আজ মুখ ফুটে এমন কথা গুলো বলবে নীল তা কখনো ভাবেনি।

__নীল আবারও বলে__প্রতিদিন তোকে কষ্ট দিতে আমার ভালো লাগে না।পরে নিজের কাছে খুব অশান্তি লাগে। তুই কোথাও চলে যা তোর যত খরচ লাগে আমি মাসে মাসে পাঠিয়ে দিবো।

__তাসু বলে__কোথাও চলে গেলে আমি এক মূহুর্তও বাঁচতে পারবো না।আর আমি তো আপনার কোন অশান্তি করি না।তাহলে আপনি কেন অশান্তি জিনিস টা ভোগ করবেন..?? নীল বলে __ হ্যা.. তুই অশান্তি করিস না তা ঠিক আছে। কিন্তু মাহিরা বলে তোকে যেন সব সময় অশান্তিতে রাখি। এসব আমার একদম ভালো লাগে না।আর বিশ্বাস কর সত্যি আমি মাহিরা কে অনেক ভালোবাসি।এখন কি করবো কিছুই বোঝতে পারতেছি না আমি।

___তাসুর চোখ দিয়ে টপটপ পানি পরছে।চোখের পানি গুলো কে যে আর থামিয়ে রাখতে পারছে না।তাসু হাত দিয়ে চোখের পানি কিছু টা মুছে নিজেকে শক্ত করে বলে___আপনি মাহিরা আপু কে বিয়ে করে নেন।তখন মাহিরা আপু যা বলবে আমাকে এসে তা_ই করে যাইয়েন। যদি বলে মারতে তাও করতে পারেন যদি খেতে না বলে তাও করতে পারেন। আমি সব সহ্য করে নিবো।শুধু আপনার কাছে একটু আশ্রয় চাই।

__তাসু আরো বলে__ জানেন তো,, নিজের ভালো টা পাগলেও বোঝে।আর স্বামীর ভাগ কোন জ্ঞানহীন নারীও দিবে না।আমি জ্ঞানহীন না,, স্ব জ্ঞানেই বলছি আপনি মাহিরা আপু কে বিয়ে করে ফেলুন।

__নীল বলে__ তুই কি পাগল হয়েছিস..??মাহিরা কে বিয়ে করলে তুই আস্তো থাকতে পারবি..??তোকে তো মাহিরা একেবারেই মেরে ফেলবে।এখনোও তাকে বিয়ে করি নি।আর এর মধ্যেই তোকে কতো কিছু করতে বলে।তার কথা হচ্ছে তোকে যেন আমি কিছুই না দেই।মাহিরা তো চায় তোকে যেন আমি এখনই বাসা থেকে একেবারে বের করে দেই।আর বিয়ে করলে ভাবতে পারিস তোর সাথে কি রকম আচরণ করবে..??ভাবতেও পারবি না তুই।

__তাসু বলে__ স্বামীর এতো অবহেলা আর অত্যাচার সহ্য করে যেহেতু এখনো বেঁচে আছি তাহলে অবশ্যই সতীনের অবহেলা আর তিক্ত কথা সহ্য করে বাকী জীবন টা কাটিয়ে দিতে পারবো।

__তাসু আরো বলে__একটু ভেবে দেখুন তো,,আমি আপনার হাতে এতো মার খেয়েও আপনার কাছে পরে আছি। আমি কেমন পাগল।তবে আমি কিন্তু নিজেকে পাগল বা জ্ঞানহীন ভাবি না।কারণ আমি আগেই বলেছি পাগলেও চাইবে না নিজের স্বামীর অধিকার অন্য মেয়ের হাতে তুলে দিতে।আমি পাগল না আমি হলাম অবহেলিত এক অবলা নারী। যে শত কষ্টের পরেও স্বামীর কাছে একটু আশ্রয় চায়।এবং তার মঙ্গল কামনা করে।

__তাসুর কথা শুনে নীল আজ নিশ্চুপ স্তব্ধ হয়ে যায়। কথা বলার ভাষাটাও হারিয়ে ফেলছে।সত্যি তাসুর কথা গুলো আজ নীল কে স্তব্ধ করে দিয়েছে। আসলে কাদা মাটিতে হাতি ঠেকে গেলে সেও নিজেকে বাঁচাতে আপ্রাণ চেষ্টা করে।

__তাসু বলে রাত তো অনেক হলো এখন ল্যাপ্টপ বন্ধ করে ঘুমিয়ে পড়েন।তাসুর কথায় নীল মাথা নাড়িয়ে হুম বলে।

__তাসু ঘুমানোর জন্য নিজের রুমে চলে যেতে গেলে মাথা টা ঘুরে পড়ে যেতে যাবে তখনই নীল হালকা করে ধরে ফেলে। নীল বলে__ সাবধানে যাবি তো..??নীল খেয়াল করে তাসুর শরীর টা গরম হয়ে আছে। নীল কপালে হাত দিয়ে বলে__ কিরে তোর তো দেখি জ্বর আসছে..?? আমাকে বলিস নি কেন..??

__ তাসু বলে__ এই হালকা জ্বরে মরে যাবো না।আমি ভালোই আছি।নীল বলে__ শরীর বেশি খারাপ থাকলে বল,,সকালে আমি ডাক্তার দেখিয়ে ঔষধ কিনে দিবো।তাসু বলে__ না,, ডাক্তার দেখাতে হবে না।এই টুকু জ্বর এমনেতেই সেরে যাবে। আপনি শুধু আমাকে এই বাসা থেকে তাড়িয়ে দিবেন না প্লিজ। হাত জোর করে বললো তাসু।

__তাসু কথা টা বলে__ দ্রুত রুমে গিয়ে দরজা আটকিয়ে দেয়।তাসুর নাক মুখ ফুলে গেছে ফুপিয়ে কান্না করার কারণে।

__ নীলও রুমে গিয়ে সোফায় হেলান দিয়ে বসে পরে। খুব চিন্তায় পড়ে যায়। মাথায় হাত রেখে ভাবতে থাকে। কি করবে সে..?? না ভাবতে পারছে মাহিরা কে ভুলে যেতে। কারণ সেটা তার প্রথম ভালোবাসা। চাইলেও ভুলতে পারবে না।আর না পারছে তাসু কে ডিভোর্স দিতে। কারণ নীল তাসু কে ডিভোর্স দেওয়ার জন্য তার বাবা মাকে কে কোন না কোন কারণ দেখাতে হবে। আর সেই কারণও নীলের কাছে নাই।

__নীল আরো ভাবে __ তাসু কে বিয়ের পর এতো টা না মারলেও পারতাম। আর তাসু মেয়ে টাও কেমন মার দেওয়া শুরু করলেও চুপ করে মার খেয়ে যায়। একটুও নড়বে না যতক্ষণ না মার শেষ করবো।নীল এই নিয়ে আর কিছুই ভাবতে পারছে না।

__নীলের কাছে একটা প্রশ্ন উদঘাটন হয়__ আর সে টা হলো মাহিরার সাথে রিলেশনের পর থেকে তার উপর কতো টাকা খরচ করেছে। যে সময় যেটা চেয়েছে সেটাই কিনে দিয়েছে।যেখানে খেতে চেয়েছে সেখানেই খাওয়ার জন্য নিয়ে গিয়েছে। কিন্তু তাসু কে বিয়ের পর তাকে কি কিনে দিয়েছে। তাসু-ই বা তার কাছে কি চেয়েছে।

__তাহলে নীলের কাছে নিজ স্ত্রীর অস্তিত্ব টা কি তার জীবনে..??এই প্রশ্নের উত্তর টা কি আদোও দিতে পারবে নীল..?? হয়তো প্রশ্নোত্তরের পেপার টা খালি_ই পড়ে থাকবে।

__কিছু দিন ধরে নীলের কাজের চাপ টা একটু বেশিই হচ্ছে। অফিস শেষ করে এসে আবার রাতেও ফাইল ল্যাপ্টপ নিয়ে কাজ করতে হয়।কারণ অফিসের একটা বিশাল এমাউন্টের প্রজেক্ট নীলের বস তার হাতে তুলে দিয়েছে।সময়ও দিয়েছে মাত্র আট দিন।

__অন্য দিকে মাহিরা ফোন দিলে নীল বেশি সময় নিয়ে কথা বলে না।কাজের কথা বলে ফোন রেখে দেয়। মাহিরা নীল কে দেখা করতে বললে তাতেও রাজি হয় না।এতে মাহিরা কিছু বিরক্ত হয় এবং অন্য কিছু ভেবে নেয়।

__তাসুও খেয়াল করে নীল দুই একদিন ধরে কাজ নিয়ে খুব পেরেশানে আছে। মাঝে মধ্যে দেখা যায় নীল রাতে খাবার খেতেও ভুলে যায়। তাসু খাবারের কথা বললে খেতে আসে। তাসুও এখন রাত করে ঘুমায়। কারণ রাতে যখন নীল অফিসের কাজ করে তখন নীল কে কফি বানিয়ে দিতে হয়।

__পরের দিন বিকালে অফিসে তেমন কোন কাজ না থাকায় নীল ছুটি নিয়ে বাসায় চলে আসার সিদ্ধান্ত নেয়।কারণ ঘুমের কিছু টা ঘাটতি আছে। বাসায় এসে কয়েক ঘন্টা ঘুমালে রাতে আরামসে কাজ করতে পারবে।

__রিকশা নিয়ে বাসায় আসতে যাবে তখনই মাহিরা নীলের কাছে ফোন দেয়। নীল ফোন টা রিসিভ করতেই মাহিরা বলে__ এই তুমি কোথায়..?? নীল বলে__ কেন..?? আমি তো বাসায় যাচ্ছি।মাহিরা বলে__ আমি তোমার বাসার কাছাকাছি আছি।তুমি সোজা আমার কাছে চলে আসো।

চলবে…

অবহেলিত ভালোবাসা পর্ব-০৪

0

অবহেলিত ভালোবাসা
পর্বঃ০৪
Writer:Shakif Arefin

নীল বলে_ যা এখন আমার সামনে থেকে ভালো করে আমার জন্য কফি বানিয়ে নিয়ে আয়।তাসু কাঁপতে কাঁপতে বলে__ জ্বি আপনি রুমে গিয়ে একটু বসুন আমি এখনই নিয়ে আসছি।

__তাসু কফি বানাতে থাকে আর চোখ দিয়ে অঝোর ধারায় পানি পড়তে লাগলো। প্রতিদিন প্রিয় মানুষের অবহেলা আর মার খাওয়াটা তাসুর জন্য যেন পানির মতো হয়ে গেছে। এরপর তাসু চোখের পানি ওড়না দিয়ে মুছে কফি নিয়ে নীলের রুমে যায়।

__তাসু দেখে নীল কারো সাথে হেসে হেসে ফোনে কথা বলছে। কথার ভাবভঙ্গি দেখে তাসুর আর বোঝতে বাকি রইলো না যে তার বর মাহিরার সাথে কথা বলছে। তাসুর বুকের ভিতর কষ্টের আগুন জ্বললেও ঠোঁটে হাসি টা অবিরাম। কারণ তার ভালোবাসা টা যে পবিত্র। তাসুর ভালোবাসার পরিমাণ বেশি না হলেও অল্প তো আছে.?? সেজন্যই যে কষ্ট টা বেশি পাচ্ছে।

__নীল এক পর্যায়ে কথার মাঝে দরজার দিকে তাকালে দেখে তাসু কফির মগ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। নীল __রেগে বলে__ কিরে তুই..??কফি নিয়ে হাবার মতো দাঁড়িয়ে আছিস। সমস্যা কি তোর বলবি আমাকে..??

__তাসু ভিতরে এসে কফি টা হাত বাড়িয়ে দিতে গেলে নীল বলে__ কফি টা টেবিলের উপর রাখ।নীল খেয়াল করে তাসুর মুখ টা কেমন ফেকাসে হয়ে আছে।প্রতি দিন এতো অত্যাচার করার পরেও কেমন অনবরত কাজ করে যাচ্ছে। নীল ভাবে আজকে নিজের রাগ মেটাতে গিয়ে মেয়েটার গায়ে শুধু শুধু হাত তুললাম।

__ তাসু কফি টা রেখে চলে যেতে গেলে নীল বলে__ তাসু শুনতো…। তাসু পিছনে ফিরে বলে ___ জ্বি কিছু লাগবে…?? নীল বলে __আসলে আজকে অফিসে খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা মিটিং ছিল মিটিং টা শেষ করতে অনেক সময় লেগে যায়। যার কারণে টায়ার্ড হয়ে পরি।আর বাসায় এসে কফির জন্য বারবার ডাকার পরও তোকে খুঁজে পাচ্ছিলাম না।তাই অনেক টা রেগে তোর গায়ে হাত তুলেছি।

__তাসু বলে__সমস্যা নাই এসব তো আমার রুটিনে পরে গেছে। আপনার অবহেলা আর মার খাওয়া টা আমার জন্য খাবারের মতো হয়ে গেছে। প্রতিদিনই খেতে হবে। খুব কষ্ট নিয়ে তাসু কথা গুলো বলে।

__তাসু চলে যাওয়ার দিকে নীল তাকিয়ে আছে। নীল তাসুর সাথে কথা বলার সময় মাহিরার ফোন টা কাটে নাই। যার কারণে মাহিরা নীল আর তাসুর সব কথা শুনে ফেলে।

__নীল ফোন টা কানে দিয়ে হ্যালো বলার সাথে সাথে মাহিরা রেগে বলে__ এই তোমার কি এখন বউয়ের প্রতি দরদ উঠে গেলো নাকি..?? মায়া দেখাচ্ছো এখন তাই না.??নীল বলে __ আরে এসব কিছুই না।তুমি যা ভাবছো তা কিন্তু মোটেও না।

__ অফিস থেকে আসার পর বাসায় পায় নি তাই রেগে গিয়ে খুব মেরেছি। তাই একটু এই কথা গুলো বলছি। আর তুমি কি সব উল্টো পাল্টা ভেবে নিচ্ছো।মাহিরা বলে__এই জন্য তুমি ঐ ফকিন্নি মেয়েটার কাছে ক্ষমা চাইবা..?? নীল বলে__ আজব তো ক্ষমা চাইলাম কোথায়..??

মাহিরা বলে__ এই শুনো.. ঐ ফকিন্নি মেয়েটার কাছে তুমি এক মূহুর্তের জন্য যাবে না।সব সময় কাজের চাপে রাখবে। একটার পর একটা কাজ দিতেই থাকবে।তাহলে দেখবে ঐ ফকিন্নি মেয়েটা তোমার আর আমার রাস্তা ক্লিয়ার করে এমনেতেই চলে যাবে।

__নীল বলে __ মাহিরা এসব কি কথায় কথায় ফকিন্নি শব্দ টা ব্যবহার করো কেন..? ওও তো একজন মানুষ তাই না..??হোক সে গরীব তাতে কি..?? তার সবচেয়ে বড় পরিচয় সে একজন নারী।

__মাহিরা বলে__ ওও আচ্ছা এতো দিনে তাহলে বউয়ের প্রতি দরদ উতলে পড়ছে।আমার কথায় দোষ ধরা শুরু করলে তাই না.?

___নীল বলে__ মাহিরা আমি তোমার কথার ভুল ধরছি না শুধু বললাম। মাহিরা বলে__ নীল তুমি জানো আমি অতিরিক্ত কোন কথা পছন্দ করি না।নীল বলে__ মাহিরা তুমি মাথা ঠান্ডা করো প্লিজ। তুমি শুধু শুধু রেগে যাচ্ছো।আগে মাথা টা ঠান্ডা করো পরে কথা বলছি।

__মাহিরার সাথে কথা বলার পর নীল অফিসের কিছু কাজ করতে থাকে ল্যাপ্টপে। রাত প্রায় দশটার উপরে বাজে কিন্তু এখনো নীলের কাজ শেষ হয় নি।তাসু নীলের রুমের দরজায় দাঁড়িয়ে বলে__ আপনি খাবার খাবেন না..??

__নীল বলে__ হুম খাবো তুই টেবিলে খাবার দে আমি কাজ টা শেষ করে এখনই আসছি। তাসু টেবিলে খাবার দিতে দিতে নীলও চলে আসে।নীল চেয়ারে বসে বলে __পানির গ্লাস টা দে।তাসু সাথে সাথে নীলের কাছে গ্লাস টা এগিয়ে দেয়।

__ হাত ধুয়ার পর নীলের প্লেটে তাসু খাবার বেড়ে দেয়। নীল খেয়াল করে খাবার দেওয়ার সময় তাসুর হাত কাপছে। নীল এক লোকমা খাবার মুখে দিয়ে তাসুর দিকে তাকায়। নীল দেখে তাসু দাঁড়িয়ে আছে আর টুকটাক নড়াচড়া করছে।

__নীল বলে__দাঁড়িয়ে আছিস যে..?? তুই খেয়েছিস..??তাসু বলে __না,, পরে খেয়ে নিবো। নীল বলে__ পরে খাবি কেন..? এখন খেলে সমস্যা কি..??তাসু বলে__আপনি খেয়ে চলে যান,, আমি পরে খেয়ে টেবিল গুছিয়ে রাখবো।

__ এরপর আর নীল কিছুই বলে নি।চুপচাপ নিজের মতো খেতে শুরু করে। নীল জানে এখন তাসু কে হাজার বার বললেও এক টেবিলে বসে তার সাথে খাবে না।নীল খেয়ে রুমে চলে যায়।

__তাসু খেয়ে টেবিল পরিস্কার করে অতিরিক্ত খাবার গুলো ফ্রিজে রেখে দেয়। পরের দিন সকালে নীল না খেয়ে অফিসে চলে যায়। অফিস শেষ করে রাতে বাসায় আসে।নীল কে আসতে দেখে তাসু দ্রুত গিয়ে অফিসের ব্যাগ টা নিজের হাতে নিয়ে নেয়। তাসু বলে__ সকালে নাস্তা না করে অফিসে চলে গেলেন যে..??নীল বলে__ বস ফোন করেছিল যেন দ্রুত অফিসে যাই।তাই নাস্তা না করেই অফিসে যেতে হলো।তাসু বলে__ ওও

___রাতের খাবার খাওয়ার পর তাসু গিয়ে ঘুমিয়ে পরে।হঠাৎ রাতে তাসুর ঘুম ভেঙ্গে যায়। শরীর টা বেশি ভালো লাগছে না।পুরো শরীর টা জ্বরে গরম হয়ে গেছে। মাথা টা তো জ্বরে বিছানা থেকে উঠাতেই পারছে না তাসু।গলা টা একবারেই শুকিয়ে গেছে।তাসুর খুব পানি তৃষ্ণা পেয়েছে। তাই শুয়া থেকে উঠে বসে।

__রুমের লাইট টা জালিয়ে আস্তে আস্তে খাট থেকে নেমে পানির মগ টা হাতে নিয়ে দেখে মগে পানি নাই। তাই রুম থেকে বের হয়ে খাবার রুমের দিকে পা বাড়ায়।

__রুম থেকে বের হতেই তাসু খেয়াল করে নীলের রুমের দরজা টা কিছুটা খোলা তার মধ্যে রুমের লাইট টাও জলছে।তাই তাসু একটু এগিয়ে গিয়ে দেখে নীল খাটে বসে ল্যপ্টপে কাজ করতেছে।

___তাসু পানি খেয়ে চলে যেতে যাবে তখনই গ্লাস টা নিচে পড়ে ভেঙ্গে যায়। কিছু পড়ে যাওয়ার শব্দ শুনে নীল ল্যাপ্টপ রেখে দ্রুত রুম থেকে বের হয়।নীল এসে দেখে তাসু দাঁড়িয়ে আছে।

___তাসু কে উদ্দেশ্য করে নীল বলে__কিরে তুই এতো রাতে এখানে কি করিস..??তাসু ভয় পেয়ে বলে __ পাপাপানি খেতে আসছিলাম।

__তাসু বলে__ এতো রাত হয়ে গেলো আপনি এখনো সজাগ যে ঘুমান নি…??নীল বলে__ না..অফিসের কাজ করতে ছিলাম।কাজ শেষ করে পেপার গুলো অফিসে ইমেইল করতে হবে।

__জ্বরের কারণে তাসুর কপাল টা ঘেমে যাচ্ছে। তাসুও ঠিক মতো দাঁড়িয়ে থাকতে পারছে না।কপাল টা যে জ্বরে পুরে যাচ্ছে। নীল বিষয় টা খেয়াল করে বলে_ কিরে কি হয়েছে তোর..?? এভাবে ঘামছিস কেন..?? তাসু নীল কে কিছু বোঝতে না দিয়ে বলে~না এমনিতেই।

__তাসু ভাঙ্গা গ্লাসের টুকরো গুলো তুলতে গেলে নীল দেখে তাসুর হাত কাঁপতে থাকে। টুকরো গুলো ঠিক মতো তুলতে পারছে না।নীল বলে__ আরে ভালো করে তুল হাত কেটে যাবে তো..?

__তাসু নিচু হয়ে ভাঙ্গা গ্লাসের টুকরো গুলো তুলার সময় নীল খেয়াল করে ঘাড়ের নিচে পিঠের জায়গায় কালো দাগ হয়ে আছে। কালকে গালে থাপ্পড় দেওয়াতে ঠোঁটের এক পাশটা কেটে যাওয়াতে চিহ্ন টা এখনো কিছু টা বোঝা যায়।

__তাসু টুকরো গুলো তুলে টেবিলে রাখে। নীল বলে– কালকের মার টা মনে হয় শুধু শুধু হয়ে গেলো ,,তাই না রে..??কি করবো..? তোকে রুমে না পেয়ে মাথা গরম হয়ে গিয়েছিলো।তাসু একটু কষ্ট নিয়ে বলে__আমাকে মেরে যদি আপনি খুশি হন তাতে আমার ক্ষতি কি..??আপনি যেন সব সময় খুশি থাকেন সেটাই আমি চাই।

__নীল এবার বলে__ এতো মার খাওয়ার পরেও কেন এখানে পড়ে আছিস..??কোথাও তো চলে যেতে পারিস..??তাসু বলে__ কোথায় যাবো..?? যাওয়ার মতো কোন যায়গা আছে..? বাবা মা তো আমাকে একা রেখেই চলে গেছে।গ্রামে গেলে চাচা কি আমাকে বসে রেখে খাওয়াবে বলেন..??

চলবে….

অবহেলিত ভালোবাসা পর্ব-০৩

0

অবহেলিত ভালোবাসা
পর্বঃ০৩
Writer: Shakif Arefin

নীল তাসু কে বলে__ তুমি যে এভাবে কাপছো কখন না জানি আমার বুকেই সুই গেঁথে দাও। তাসু কষ্ট ভরা বুক নিয়ে বলে __ ভয় নেই আমি কারো বুকে_ মনে বা শরীরে আঘাত করি না।

__নীল এই কথার ইংগিত টা ঠিকই বোঝতে পারে। নীল কথা ঘুরিয়ে বলে ___ তুই সব সময় এই অবস্থায় থাকিস কেন…?? একটু শরীরের যত্ন নিতে পারিস না..?ঢাকা শহরে থাকিস এখন যদি সেই গ্রামের মতোই থাকিস তাহলে কেমন দেখা যায় বল তো..??নিজেকে একটু পরিবর্তন কর।

__নীলের এমন কথায় বুকটা ফেটে যাচ্ছিল তাসুর। এই মূহুর্তে ভিষণ কান্না করতে ইচ্ছে করছে তার।তবুও তাসু পাহাড় সমান কষ্ট বুকে চাপা দিয়ে চুপ করে আছে। কবে সে একটু সাজুগুজু করেছিল তা হয়তো বলতে পারবে না।

__তাসু বলে__ কার জন্য শরীরের যত্ন নিবো..?? যার জন্য যত্ন নিবো সে_ই তো কখনো আমাকে ছুঁয়ে দেখেনি।কখনো এক প্লেটে খেতে বলবে তো দূরের কথা কখনো টেবিলেই খেতে বলে নি।তাহলে এই শরীরের যত্ন নিয়ে কি হবে বলতে পারেন..??

__নীলের কাছে এই প্রশ্নের কোন উত্তর নেই। চুপ করে দাড়িয়ে তাসুর দিকে তাকিয়ে আছে। বোতাম লাগানো শেষ হলে নীল বলে__ আচ্ছা.. মীরা কে একটু ডেকে দে তো।তাসু বলে__ আমাকে বলেন না কি কাজ…?? আমি করে দিচ্ছি।

__নীল বলে __ কোন কাজের জন্য না।মীরার সাথে কিছু জরুরী কথা আছে তাই, যা ডেকে নিয়ে আয়।মীরা আসলে নীল বলে__ শুন মীরা তোকে আমি আর বাসায় রাখছি না তুই আজই চলে যাবি।

__কথা টা শুনে যেন মীরার মাথায় আসমান ভেঙ্গে পরে।সকাল সকাল এমন একটা কথা শুনতে হবে তা মীরা হয়তো ভাবতেও পারে নি। তাসুও হঠাৎ এমন কথা শুনে বেশ আশ্চর্য হয়।মীরা বলে__ ভাইজান আমি কি করেছি..?আমি তো কোন দোষ করি নাই।তাহলে আমাকে কেন চলে যেতে বলছেন..??

__নীল বলে__এই বাসায় তেমন কোন কাজ থাকে না।যার জন্য তোর প্রয়োজন হবে। এই বাসার কাজ করার জন্য তাসু আছে। সেই সব কাজ করতে পারবে।কথা টা শুনে তাসু আৎকে উঠে।তাসু ভাবে__আবারও প্রমাণ হলো আমি উনার বউ হওয়ার যোগ্য না। আমি তো এই বাসার কাজের মেয়ে। কাজের মেয়ে হয়ে-ই যে আমার এখানে থাকতে হবে।খুব কষ্ট হচ্ছে তাসুর কিন্তু প্রকাশ করতে পারছে না।

__নীল তার ওয়ালেট থেকে কিছু টাকা বের করে বলে__ এই টাকা গুলো রাখ,, এই মাসে যা তুই পেতি তার চেয়ে পাঁচ হাজার টাকা বেশি আছে। এটা বলে নীল তার রুমে চলে যায় অফিসের ব্যাগ হাতে নেওয়ার জন্য।

__তাসুর খুব কষ্ট হচ্ছে কারণ ছোট বোনের মতো একজন মানুষ কে হারাচ্ছে। বিপদের সময় যে এই মেয়েটাই তাসুর সেবা যত্ন করতো।তাসু রুম থেকে বের নীল সামনে পরে। নীল পাশ কেটে অফিসে যাওয়ার জন্য বাহিরে চলে যায়।

__তাসু নীল কে এক নজর দেখবে বলে বেলকনিতে চলে যায়। তাসু প্রতিদিনই নীল অফিসে যাওয়ার সময় এভাবে এক নজর দেখার জন্য তাকিয়ে থাকে। তবে নীল কখনো বোঝতে পারে নি যে তাসু প্রতিদিন তাকে দাড়িয়ে দেখে।আজ-ও তার বেতিক্রম হলো না।তাসু নিচে তাকিয়ে দেখে নীল এখনো নিচে দাঁড়িয়ে আছে। আজ নীল কে একটু বেশিই সুন্দর দেখাচ্ছিলো।কালো শার্ট ইন করে পড়ছে অসম্ভব সুন্দর লাগছিলো তার বর টাকে।অপলক চোখে তাকিয়ে দেখছে নীল কে।

__এরই মাঝে মীরা এসে তাসু কে ডাক দেয় আপা বলে।তাসু পিছনে তাকিয়ে বলে_ _ কিছু বলবা মীরা..??মীরা তাসু কে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দেয়। তাসুও নিজের কান্না কে আটকিয়ে রাখতে পারলো না।কেঁদে দিলো অঝোরে। বোনের মতো মানুষ টাকে যে আর দেখতে পারবে না।মীরা বলে __ আপা আমি এখই গ্রামে মা বাবার কাছে চলে যাবো। আপনি একটু ঐ অমানুষ টার কাছ থেকে সাবধানে থাকবেন।বজ্জাত লোকটা তার ভালোবাসার মানুষ মাহিরার কথা শুনে তো আপনাকে আর কম অবহেলা করছে না।আমার তো মনে হচ্ছে ঐ শাঁকচুন্নির কথায়-ই আমাকে বাসা থেকে তাড়িয়ে দিচ্ছে যেন আপনাকে দিয়ে বাসার সব কাজ করানো যায়। যেন আপনি আরো বেশি কষ্ট পান।

__তাসু বলে__ কষ্ট হলে কি হবে..??আমার_ই তো সংসার। সব কিছু তো আমাকেই করতে হবে।জ্বি আপা।তাসু বলে__ সাবধানে বাসায় যেয়ো বোন। এরপর মীরা এই বাসা থেকে একেবারেই চলে যায়।

__মীরা চলে যাওয়ার পর বাসার টুকটাক কাজ করতে থাকে তাসু।যদিও মীরা চলে যাওয়াতে মন টা খারাপ হয়ে আছে।হাতের কাজ শেষ করে এগারো টার দিকে নীলের কিছু কাপড় ধোয়ার জন্য ওয়াসরুমে যেতেই কলিংবেল টা টুং করে বেজে উঠলো।

__তাসু দরজা টা খুলে আশ্চর্য হয়ে যায়। দরজার সামনে মাহিরা দাঁড়িয়ে আছে। তাসু খুব ভয় পাচ্ছে বাসায় নীল নাই এই মূহুর্তে মাহিরা আসার কথা না।তাসু ভয়ে ভয়ে বলে–আপু তততুমি…?? মাহিরা বলে__ কেন আমি এসে তোর কোন সমস্যা করলাম নাকি..?আর এটা তো একদিন আমারও বাসা হবে তাই না..??

__তাসু বলে__ জ্বি আপু ভিতরে এসো।তাসু গিয়ে তাড়াতাড়ি এক মগ কফি বানিয়ে নিয়ে এসে মাহিরার হাতে দেয়। তাসু মাহিরার সামনে এক মূহুর্তও দাঁড়িয়ে থাকতে ইচ্ছে করছে না।কারণ তার স্বামীর ভালোবাসা থেকে যে এই মেয়ে টাই বঞ্চিত করে রেখেছে।তাসু চলে যেতে চাইলে মাহিরা ডাক দিয়ে বলে__যাস কোথায় তুই ফকিন্নির মেয়ে..? আমি কি তোকে আমার সামনে থেকে যেতে বলছি..??নাকি আমি তোর স্বামীর গার্লফ্রেন্ড বলে আমাকে সহ্য করতে পারছিস না..?? কোন টা হুম.??

__মাহিরার মুখ থেকে ফকিন্নি শব্দ টা শুনে তাসু খুব কষ্ট পাচ্ছে। মনে হয়েছিল তাসুর কলিজায় কেউ আঘাত করছে। তাসু এই কথার কোন প্রতিবাদ করতে পারছে না।প্রতিবাদ করলে নীলের কাছে আরো উল্টো পাল্টা কথা লাগিয়ে দিয়ে তাসু কে মার খাওয়াবে।তাই তাসু সব মুখ বোঝে সহ্য করে নেয়।

__তাসু বলে__না আপু হাতে কাজ আছে তো তাই আর কি। কিছু লাগলে বলো আমি এনে দিচ্ছি।

__মাহিরা হেসে বলে–তোর জন্য খুব মায়া হয় রে।তোর স্বামী তোকে একটুও ভালোবাসে না।আর দেখ আমি তোর স্বামীর গার্লফ্রেন্ড সে আমার কথা শুনে। আমি যদি তোর স্বামী কে বলি আমার সাথে এক বিছানায় রাত কাটাতে সেটাও তোর স্বামী করতে রাজি আছে।

__আর তুই নীলের বউ হয়েও প্রতিটা রাত একা একা কাটিয়ে দিস।তোর জন্য সত্যি আমার বড় মায়া হয়।উপহাস করে বললো কথা টা।

__আর আজকের প্ল্যান টা কেমন হলো..??আমার কথায় নীল কাজের মেয়ে টাকে বের করে দিলো।শুধু কাজের মেয়ের কাজ গুলো তোকে দিয়ে করাবো বলে।স্বামীর ভালোবাসা তো কখনোও তুই পাবি না।কাজের মেয়ে হয়ে-ই তুই আমার আর নীলের মাঝে থাকবি।

__ তাসু আর এসব কথা দাঁড়িয়ে সহ্য করতে পারছে না।তার যে খুব কষ্ট হচ্ছে এসব কথা শুনতে।তাসু বলে__আপু আমি আসতেছি তুমি কফি টা খেয়ে নাও।

__এই বলে তাসু কান্না জড়িত চোখে দৌড়ে নিজের রুমে চলে যায়। রুমে গিয়ে বিছানায় উপুর হয়ে বালিশে মুখ চেপে ফুপিয়ে কাঁদতে থাকে।

__কাঁদতে কাঁদতে তাসু বলে__ আমার সাথে তো এমনটা হওয়ার কথা ছিল না।তাহলে কেন আমার সাথে এমন টা হলো..??আমার তো কোন দোষ ছিল না..??বাবা মা আমাকেও তোমাদের সাথে নিয়ে যেতে। কেন আমাকে এমন কষ্টের জীবনে রেখে চলে গেলে..?আমি এখন কার বুকে মাথা রাখবো..??এসব কথা গুলো বলে ফুপিয়ে কাঁদতে থাকে।

__সন্ধ্যা সময় নীল অফিস শেষ করে বাসায় আসে।অফিসে মিটিং ছিল তাই খুব টায়ার্ড লাগছে। ফ্রেশ হয়ে তাসু কে ডাকে কফি দিয়ে যাওয়ার জন্য। কিন্তু তাসুর কোন সাড়া নেই।তাসু কে এক মগ কফির জন্য দুই তিনবার ডেকেছে নীল কিন্তু তাসুর আসার কোন খবরই নেই। নীলের মেজাজ টা প্রায় খারাপ হয়ে গেছে। খুব রাগ উঠে গেছে তাসুর উপর।

__প্রচন্ড রাগ নিয়ে তাসুর রুমে যায়। রুমে গিয়ে দেখে সেখানেও তাসু নেই। তাই তাসুর রুমেই রেগে বসে আছে। কয়েক মিনিট পর তাসু বাসায় আসলে তাসু দেখে নীল তার রুমে কেমন একটা লোক নিয়ে বসে আছে।

__তাসু জিজ্ঞেস করে আপনি কখন আসলেন.??নীল কোন উত্তর না দিয়ে ঠাসস ঠাসস করে তাসুর গালে দুই টা থাপ্পড় বসিয়ে দেয়। তাসু থাপ্পড়ের আঘাত খেয়ে ফ্লোরে ছিটকে পড়ে যায়।

নীল তাসুর চুলে ধরে ভয়ানক দৃষ্টিতে জিজ্ঞেস করে __তুই কখন বাসা থেকে বের হয়েছিস..?? আর কোথায় বা গিয়েছিলি..?তোকে এতো ডাকার পরও কেন আমি বাসায় পেলাম না।

__তাসু কান্না মিশ্রিত কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে~দুই তলার ভাবি এসে তার বাসায় আমাকে নিয়ে গেছে। কথা বলতে আসতে দেরি হয়ে গেছে। নীল চুল ছেড়ে দিয়ে বলে__ আর কখনো আমার অনুমতি ছাড়া ঘরের বাহিরে পা রাখবি না।আর যদি কখনো আমার কথার অমান্য করিস তাহলে সেদিনই হবে তোর জীবনের শেষ দিন এটা মনে রাখিস। আর হ্যা একবার ডাকার পর যেন দ্বিতীয়বার আমার তোকে ডাকতে না হয়।এটা মাথায় রাখিস।

__তাসু কাঁপতে কাঁপতে বলে __ জিজি-জ্বি। নীল বলে_ যা এখন আমার সামনে থেকে ভালো করে কফি বানিয়ে নিয়ে আয়।তাসু বলে__আআআপনি এএএকটু রুমে গিয়ে ববসুন আআমি এখই নিয়ে আআসছি।

চলবে…

অবহেলিত ভালোবাসা পর্ব-০২

0

অবহেলিত ভালোবাসা
পর্বঃ০২
Writer: Shakif Arefin

__নীল বাসর ঘরে তার বউ কে একটি কথাই বলে–তুই যদি এক বাপের জন্মের হয়ে থাকিস তাহলে কখনো আমার খাটে ঘুমাতে আসবি না।

__বিয়ের পর দিন নীল নাস্তা করার সময় তার বাবা কে বলে~ বাবা আমি আজই ঢাকা চলে যাবো। নীলের বাবা বলে__তুই তো মাত্র কাল আসলি আর আজই চলে যাবি..?বিয়ে করলি দুই একদিন বউ কে সময় দিবি না..?নীল বলে__ বাবা সময় থাকা লাগবে না।তুমি ফোন করে বললে দ্রুত আসতে তাই আমি দুই দিনের ছুটি নিয়ে আসছি।

__নীলের বাবা বলে__আচ্ছা সমস্যা নাই তুই যাওয়ার সময় তাসনুভা কে সাথে নিয়ে যাবি।মেয়ে টা এখানে একা পড়ে থেকে কি করবে।নীল কথা টা শুনে চমকে যায়। নীল বলে__বাবা কি বলছো এসব..?? ওকে আমার সাথে নিয়ে গেলে তোমাদের দেখা শুনা করবে কে..??ওর ঢাকায় যাওয়ার প্রয়োজন নাই। তোমাদের সাথে এখানেই থাকুক।

__নীল অনেক বার না করার পরও নীলের বাবা তাসনুভা কে তার সাথে জোর করে ঢাকায় পাঠিয়ে দেয়। যার ফল স্বরুপ প্রতি দিনই তাসনুভা কে পেতে হয় চড়থাপ্পড় আর চামড়ার বেলের আঘাত।

__বর্তমান…
___তাসনুভা সারাদিন কিছুই খায় নি। খুব ক্লান্ত তার মধ্যে আবার শরীর টা ব্যথা করছে যার কারণে খুব সহজেই তাসনুভার চোখে ঘুম চলে আসে।মীরা কিচেন ঘুছিয়ে এসে দেখে তাসনুভা সন্ধ্যা সময়ই ঘুমিয়ে গেছে। মীরাও খুব এই বাসায় খুব আতংকে থাকে। নীল যেইভাবে তাসনুভা কে একটু আরেক টু ভুল হলেই গায়ে হাত তুলে।কোন দিন জানি দেখে একেবারে খুন করে ফ্রিজে রেখে চলে গেছে।
মাঝে মধ্যে মীরারও একটু ভুল হলে ধমক দিয়ে কথা বলে।এই জন্য মীরা খুব আতংকে থাকে।নীলের সামনে বেশি একটা যায় না। ছোট মেয়ে বলে কথা।মীরা চিন্তা করে তার ভাগ্যেও কি এমন খারাপ জামাই জুটবে।

__সন্ধ্যার পর নীল তার গার্লফ্রেন্ড মাহিরার সাথে দেখা করে বাসায় আসে। নীল কলিং বেল বাজাতেই মীরা গিয়ে দরজা খুলে দেয়। নীল বলে__ তোর আপায় কোথায় রে..??মীরা বলে..?? ভাইজান আপায় তো ঘুমিয়ে আছে। নীল বলে__ এই অসময়ে ঘুম কিসের..?? সে জানে না আমি উল্টো পাল্টা কাজ পছন্দ করি না।তোর আপাকে গিয়ে বল আমার জন্য কফি নিয়ে আসতে।মীরা বলে__ ভাইজান আপনি রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে বসুন আমি এখনই কফি বানিয়ে দিচ্ছি। নীল ধমক দিয়ে বলে __তোকে আমি যেটা করতে বলছি সেটা কর।আগ বাড়িয়ে কাজ করতে যাবি না।

__নীল রুমে গিয়ে ফ্যান ছেড়ে ওয়াসরুমে চলে যায়। ফ্রেশ হয়ে খাটে বসে আরাম করে।এরই মাঝে তাসনুভা ঘুম থেকে উঠে কফি বানিয়ে নীলের রুমে যায়। কফির মগটা তাসনুভা নীলের হাতে তুলে দেয়। কফির মগ টা নেওয়ার সময় নীল খেয়াল করে হাতের কব্জি টা বেশ ফুলে আছে। নীল বোঝতে পারে সকালে লাঠির আঘাত লেগে কব্জিটা ফুলে গেছে।

__এরপর নীল তাসনুভার মুখের দিকেও নজর দেয়। দেখে গাল দুটো ফুলে আছে। কপালে ওয়ান টাইম ব্যান্ডেজ করা।নীল ভাবে হয় তো মীরা দোকান থেকে ব্যান্ডেজ এনে দিছে।আজকে একটু মারের পরিমাণ টা বেশিই হয়ে গেছে। তাসনুভা কফি দিয়ে চলে যেতে গেলে নীল ডাক দেয়।নীলের ডাক শুনে তাসনুভার কলিজা টা ভয়ে আঁতকে উঠে। তাসনুভার ধারণা,, হয়তো কফি টা ভালো হয় নি যার কারণে নীল তাকে আবারও মারবে।

__তাসনুভা ভয়ে ভয়ে নীলের দিকে তাকায়। নীল বলে__ তাসু এখানে দাড়াতো আমার কফি টা শেষ হলে মগ টা নিয়ে যাস।তাসনুভা কথা টা শুনে যেন এক ভয়ংকর আজাব থেকে বেঁচে যায়। তাসনুভা বলে__জ্বি আচ্ছা। নীল আবারও বলে __ রাতের জন্য কি রান্না করেছিস..??তাসনুভা বলে__ গোস্তো -সবজি-ডাল। নীল কফির মগে কয়েকটা চুমুক দিতেই তার ফোনের রিংটোন বেজে উঠে।

__নীল বলে__ তাসু তুই এখন চলে যা মাহিরার সাথে কথা বলবো।পরে এসে মগ টা নিয়ে যাস।কথা টা শুনে তাসনুভা চোখের পানি আটকে রাখতে পারলো না।চোখের পানি মুছতে মুছতে রুম থেকে বের হয়ে যায়। মীরা দেখে বলে __ আপা কি হয়েছে..?? ভাইজান কি আবার কিছু বলছে..?তাসনুভা বলে__ না বোন উনি কিছুই বলে নি।

__মীরা তাসনুভার মুখে কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকে।তাসনুভার মুখ টা খুব মায়াভরা। একেবারে নিষ্পাপ মেয়েদের মতো লাগে।মীরা চিন্তা করে এতো মার খাওয়ার পরও সব সহ্য করে স্বামীর সংসার করে যাচ্ছে। এই অমানুষটার সাথে সংসার না করে কোথাও চলে গেলেও পারে।

__তাসনুভা বলে __মীরা.. এভাবে তাকিয়ে কি ভাবছো..??তাসনুভার কথায় ভাবনার জগত থেকে ফিরে আসে মীরা। মীরা বলে__ আপা আপনি ভাইজান কে খুব ভালোবাসেন তাই না…??মীরার কথায় চমকে উঠে তাসনুভা। কি বলে এ-সব মেয়ে টা..!!কিন্তু এটাই যে সত্যি তাসু নীল কে খুব ভালোবাসে।অবহেলা এতোটাই কষ্টকর যে ভালোবাসা টা পর্যন্ত হার মেনে যায়।

__তাসনুভা বলে__ মীরা এসব কি বলো..? মীরা বলে_ _আমি জানি আপনি ভাইজান কে অনেক ভালোবাসেন। তাই তো প্রতিদিন ভাইজানের হাতে এতো মার আর অবহেলা সহ্য করে এখানে কাজের মেয়ের মতো পড়ে আছেন।

__ আপা আপনাকে ছোট মুখে একটা কথা বলি__ভাইজান আপনাকে একটুও ভালোবাসে না।ভাইজান তো ভালোবাসে ঐ মেয়েকে।দেখেন নাই এর আগে মেয়ে টাকে এই বাসায় এনে আপনাকে কতো অপমান করছে।আর ঐ শাঁকচুন্নি টাও মিথ্যা কথা বলে আপনাকে ভাইজানের হাতে মার খাওয়াইছে।

__একদিন দেখবো ভাইজান আপনাকে মাহিরা নামক শাঁকচুন্নির কথায় খুন করে ফেলে দিছে।এখনো সময় আছে আপনি এখান থেকে চলে যান।তাসনুভা কথা গুলো শুনে কান্না করে দেয়। তাসনুভা বলে __

__কোথায় যাবো মীরা..?? যাওয়ার মতো কোন জায়গায় আছে আমার..? গ্রামে যেতে পারবো না।চাচা আমাকে বসে রেখে খাওয়াবে না।খাওয়ালেও মানুষ খুব বাজে কথা বলবে।আর যদি শ্বশুর বাড়িতে যাই তারা যখন জানতে পারবে তার ছেলে আমাকে এতো কষ্ট দিয়েছে তাহলে তারা তখন খুব কষ্ট পাবে।

__ মীরা বলে__ আপা আমাদের দেশ টা যথেষ্ট বড় আছে। আপনার হাত পা আছে কিছু লেখা পড়াও জানেন কোন একটা ভালো কাজ করে বাঁচতে পারবেন।প্রতিদিন আর এতো মার খেয়ে চোখের পানি ফেলতে হবে না।তাসনুভা বলে__কিন্তু আমি যে তাকেও ছাড়তে পারবো না।মীরা আশ্চর্য হয়ে বলে __ কিহহ্!! দূর আপা মরেন তাহলে।বর বাহিরে অন্য মেয়ের সাথে পরকীয়া করে বাসায় ফিরে। আর আপনি আছেন তার ভালোবাসা নিয়ে।

__তাসনুভা চলে যায় তার রুমে। দরজা লাগিয়ে দিয়ে ওড়নায় মুখ চেপে কেঁদে দেয়। তাসুু এই অবস্হায় সত্যি নিরুপায়। কি করবে সে..?? আবেগ আর সমাজের কাছে যে, সে বড় বাধা।ভালোবাসে নীলকে অনেক। যদিও সে জানে নীল তাকে একটুও ভালোবাসে না।সে ভালোবাসে তার ভালোবাসার মানুষ মাহিরা কে।তাসু এ-ও জানে সে শুধু তাকে এই বাসার কাজের মেয়ে ভাবে। বউ সে নীলের কখনো হতে পারবে না।তবুও কেন তাসু নীল কে এক মূহুর্তের জন্য ছাড়তে পারবে না।

__ঐ দিকে নীল তার ভালোবাসার মানুষ মাহিরার সাথে কথা বলতে থাকে।এক পর্যায়ে মাহিরা বলে__এই তোমার বাসার রান্নাবান্নার কাজ করে কে..??নীল আশ্চর্য হয়ে বলে__ কেন কাজের মেয়ে মীরা আর তাসু।মাহিরা বলে__ ফকিন্নির মেয়ে থাকতে তুমি কাজের মেয়ে রাখবে কেন বাসায়..?? কালকেই তুমি কাজের মেয়ে কে বাসা থেকে বের করে দিবে।সব কাজ তুমি তোমার বউ কে দিয়ে করাবে।

__ নীল বলে__ কি বলো এসব..?? তাসু একা এতো কাজ করতে পারবে..??এমনেতেই তো সব সময় চাপের উপর রাখি।মাহিরা বলে__ এটা তো আরো বেশি ভালো সময় মতো কাজ করতে না পারলে তুমি গায়ে হাত তুলবে।তখন এসব সহ্য করতে না পেরে এমনেতেই একদিন পালিয়ে যাবে।

__নীল বলে __প্লিজ থাকুক না কাজের মেয়ে টা। মাহিরা ধমক দিয়ে বলে__ বউয়ের প্রতি এতো দরদ দেখাতে আসবে না।যেটা বলছি সেটা করো।কালই তুমি মেয়ে টাকে বাসা থেকে বের করে দিবে। তারা আরো কিছুক্ষণ কথা বলে ফোন কেটে দেয়।

__পরদিন সকাল সকাল নাস্তা বানিয়ে টেবিলের উপর সাজিয়ে রাখে তাসু।প্রতিদিন সকালে-রাতে নীল একাই বাসায় খাবার খায়।কারণ তাসুকে নীল নিষেধ করছে যেন তার সাথে বসে কখনো খাবার না খায়।

__নীল সকালে একটু তাড়াতাড়িই ঘুম থেকে উঠে কারণ তার অফিসে আজ একটা গুরুত্বপূর্ণ মিটিং আছে।দ্রুত শাওয়ার নিয়ে অফিসের জন্য রেডি হতে থাকে নীল।কালো শার্ট টা পড়তে গিয়ে খুঁচা লেগে বোতাম টা খুলে ফ্লোরে পরে যায়।

__নীলের এমন টা দেখে রাগ উঠে যায়। নীল বলে__ দূর…মেজাজ টা এখন কেমন লাগে।কাজের সময়ই যা অঘটন হওয়ার হয়।তাসু নীল কে নাস্তা করার জন্য ডাক দিতে গিয়ে এসব দেখে। তাসু ফ্লোর থেকে বোতাম টা কুড়িয়ে হাতে নেয়।নীল একাই একাই বলতে থাকে–আজকে অফিসে মিটিং আছে আর আজকেই এমন টা হতে হলো।দূর কি যে করি এখন। আমার ফেবারিট শার্ট ছিল এটা।

__নীল কে এমন বিরক্ত হতে থেকে তাসু বলে __ আমি লাগিয়ে দেই..??নীল বলে__না থাক,,এখন আবার শার্ট টা খুলতে হবে।বোতাম টা লাগাতে গেলে তুই আবার শার্টের বাজ টা নষ্ট করে ফেলবি।

__তাসু বলে __ বাজ নষ্ট হবে না।আপনি গিয়ে নাস্তা করুন আমি সুই সুতো নিয়ে আসছি। শার্ট আপনার গা থেকে খুলতে হবে না। এমনেতেই লাগানো যাবে। এই বলে তাসু বোতাম টা হাতে নিয়েই রুমে যায় সুই সুতো আনার জন্য। নাস্তা খাওয়া শেষ হয়ে যায় নীলের কিন্তু তাসু এখনো সুই সুতা নিয়ে আসছে না।

__তাসু সুই সুতো আনতে গিয়ে কি করছে সেটা দেখার জন্য নীল তাসুর রুমে যায়। নীল গিয়ে দেখে তাসনুভা সুই সুতো নিয়ে আসছে।নীল বলে __ তুই সুই সুতো আনতে গিয়ে কোথায় হারিয়ে গেলি..??তাসু বলে__ আসলে এই গুলো খুঁজে পাচ্ছিলাম না।তাই খুঁজে পেতে দেরি হয়ে গলো।আমি এখনই বোতাম টা লাগিয়ে দিচ্ছি।নীল বলে__ প্লিজ একটু তাড়াতাড়ি কর।তাসু বলে__ হুম এই তো হয়ে গেছে।

__তাসু নীলের সামনে গিয়ে কাঁপা কাঁপা হাত দুটো নীলের বুক পর্যন্ত উঠায়।বোতাম টা তার জায়গায় রেখে গাঁথতে থাকে তাসু।নীল খেয়াল করে তাসুর হাত দুটো প্রচন্ড কাপছে। কাঁপার কথাই কারণ এই প্রথম তাসু নীলের এতো টা কাছে গিয়ে দাড়িয়েছে।নীল তাসুর গালে দেখে কালকের থাপ্পড়ের পাঁচ আঙ্গুলের দাগ টা এখনো কিছু টা বোঝা যাচ্ছে।

নীল বলে__ তুমি যে এভাবে কাপছো,,কখন না জানি আমার বুকেই সুই গেঁথে দাও।তাসু কষ্ট ভরা বুক নিয়ে বলে__ ভয় নেই আমি কারো বুকে মনে শরীরে আঘাত করি না।

চলবে….

অবহেলিত ভালোবাসা পর্ব-০১

0

অবহেলিত ভালোবাসা
পর্বঃ০১
লেখকঃসাকিফ আরেফিন

__ব্যথা যুক্ত ক্লান্ত শরীর টা ফ্লোরে পড়ে আছে তাসনুভার।আজকেও মার খেয়েছে তার স্বামী নীলের হাতে। তবে আজকের মারের পরিমাণ টা অন্য দিনের চেয়ে অনেক টা বেশিই ছিল।

__আজকে তাসনুভার অপরাধ ছিল সে নীলের বেড চা আর নাস্তা দিতে দেরি করে ফেলেছে। নীল এমন একজন স্বামী যে কিনা ঢাকায় আসার পর এমন কোন দিক বাদ রাখে নাই যেই দিক দিয়ে তাসনুভা কে মারতে পারে।

__প্রতি পদে পদে নানা রকম অজুহাত দেখিয়ে তাসনুভা কে মারা তার অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছে। তাসনুভা তার স্বামীর এমন আচরণ সব মুখ বোঝে সহ্য করে নেয়। কারণ তাসনুভার প্রতিবাদ করার মতো সেই শক্তি আর সাহস নেই। নীল তাসনুভার উপর প্রতিদিন এমন অত্যাচার করে তার ভালোবাসার মানুষ মাহিরার ইশারায়।

__ বড় লোক বাবার ঘরের মেয়ে মাহিরা।নীল মাহিরা কে ভালোবাসে বিয়ের আগ থেকেই প্রথম যেই সময় ঢাকা আসে। আর মাহিরাও এখন রিলেশন চালিয়ে যাচ্ছে এটা জানা সত্বেও যে নীল বিবাহিত। কারণ তার বিশ্বাস নীলের অত্যাচার সহ্য না করে তাসনুভা হয় তো একদিন মরে যাবে না হয় পালিয়ে যাবে।

__ফ্লোরে শুয়ে থেকে ব্যাথায় ছটফট করতে থাকা তাসনুভা কে দেখার মতো কেউ নেই এই বাসায়। তবে কাজের মেয়ে মীরা এসে সেবা শুশ্রূষা করে যায় যখন নীল এইভাবে মেরে চলে যায়। মীরা খুব অসহায় অল্প বয়সী মেয়ে বয়স চৌদ্দ পনের হবে।

__নীল তাসনুভা কে মেরে ফ্লোরে ফেলে চলে যাওয়ার পর আজও তার ব্যাতিক্রম কিছু ঘটে নি।মীরা দৌড়ে গিয়ে তাসনুভার কাছে যায়। মীরা গিয়ে দেখে তাসনুভা ফ্লোরে পড়ে আছে আর গায়ের ওড়না এক সাইডেই পাশে পরে আছে।নাক মুখ দিয়ে রক্ত পরছে। কপাল বেশ খানিকটা ফেটে গেছে। পুরো শরীর ধরে ভয়ে কাপতে থাকা তাসনুভা কে দেখে মীরা নিজেও কেঁদে দেয়।

__মীরা আসতে করে তাসনুভা কে তুলে খাটে নিয়ে বসায়।তাসনুভার সাদা পরিষ্কার গালে নীলের পাঁচ আঙ্গুলের দাগ স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। মুখ দিয়ে লালা আর রক্ত মিশে এক হয়ে বের হচ্ছে। গাল দুটোতে অনেক থাপ্পড় পড়ার কারণে একেবারে ফুলে গেছে। কোন সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ কখনো এভাবে বউ কে মারতে পারে না।তার উপর যদি হয় উচ্চ শিক্ষিত পরিবারের ছেলে।

___মীরা তাসনুভার হাত মুখ নিজের ওড়না দিয়ে মুছে দেয়। তাসনুভা বলে__মীরা বোন আমার পিঠে খুব জ্বালাতন করছে। লাঠি দিয়ে পিঠে খুব মারছে।কিছু একটা করো।মীরা বলে__ জ্বি আপা তাহলে জামা টা একটু খুলেন বরফ লাগিয়ে মলম দিয়ে দিবো।

__তাসনুভা বলে__ হুম,, আচ্ছা তোমার ভাই কি নাস্তা না খেয়ে চলে গেছে..??মীরা বলে__ আপা আপনি কি বলেন তো..?ঐ অমানুষ টা আপনাকে পশুর মতো মেরে ফ্লোরে ফেলে রেখে চলে গেছে। আর আপনি এতো মার খাওয়ার পরও জিজ্ঞেস করছেন খেয়ে গেছে কি না।আজব একটা মানুষ আপা আপনি।

__তাসনুভা বলে__ মানুষ টা না খেয়ে গেলে খাবে কোথায়..?? মীরা বলে__দূর আপা ঐ অমানুষ টার না খাওয়া নিয়ে আপনার এতো চিন্তা করতে হবে না।অফিস থেকে না হয় হোটেল থেকে নাস্তা করে নিবো নে।

__মীরা বলে__ আপনি একটু জামা টা খুলেন আমি ফ্রিজ থেকে বরফ নিয়ে আসছি। মীরা বরফ আনতে গেলে তাসনুভা টুকরে কেঁদে দেয়। তাসনুভা শুধু এতোটুকুই চিন্তা করে নিজের বাবা মায়ের কাছে কেমন ছিল আর এখন স্বামীর কাছে কেমন আছে।

___আজ বাবা মায়ের সেই আদরের মেয়ে টা স্বামীর ঘরে এসে অন্য মেয়ের ইশারায় স্বামীর মার খেয়ে জীবন কাটাতে হয়।প্রতিদিন নির্মম অত্যাচার- কষ্ট আর তিক্ত কথা সহ্য করতে হয়।তাসনুভার মুখ দিয়ে তখন একটা কথাই বেরিয়ে আসে।বাবা মা আমাকেও আল্লাহর কাছে নিয়ে যাইতা তোমাদের সাথে। তাহলে তো আজ আমার এতো টা কষ্ট পেতে হতো না।

___এরই মাঝে মীরা বরফ নিয়ে এসে দেখে তাসনুভা সেই ভাবেই বসে আছে। মীরা কাছে এসে বলে__ আপা কিভাবেন..?? তাসনুভা চোখের পানি মুছে বলে না কিছু না।মীরা বলে __আচ্ছা জামা টা একটু খুলেন।জামা টা খুলার পর তাসনুভার এমন ভয়ানক পিঠের অবস্থা দেখে আৎকে উঠে সে।
মীরা ভাবতেও পারেনি জানোয়ার টা মেরে পিঠের এই অবস্থা করবে।পুরো পিঠ একেবারে লাল হয়ে কালো লম্বা দাগ হয়ে গেছে। যেহেতু বেত দিয়ে পিঠে আঘাত করছে এমন ভয়ানক অবস্থা হওয়াই স্বাভাবিক।

__মীরা জামা দিয়ে তাসনুভার বুকটা ঢেকে দেয়। তারপর কিছু সময় ধরে বরফ দিয়ে পুরো পিঠে আসতে আসতে চাপ দিতে থাকে।। এরপর গালে ও কপালে বরফ দিয়ে চাপ দিতে থাকে।তাসনুভার পিঠে মলম লাগাতেই জ্বালাতনে হালকা চিৎকার করে উঠে।

___মীরা বলে __আপা মলম লাগিয়েছি তো।তাই কিছুক্ষণ জ্বলবে।এখন জামা টা পড়ার দরকার নাই। তাসনুভা বলে_ হুম। মীরা বলে__ আপা আপনি এখন একটু শুয়ে থাকেন। আমি বাসার কাজ সব করে নিবো।তাসনুভা বলে__ হুম,, তুমি গিয়ে এখন খেয়ে নাও।মীরা বলে__ আপা আপনি খাবেন না..??তাসনুভা বলে __ নারে বোন আমার কিছু খেতে ইচ্ছে করছে না।

___সন্ধ্যার পর মীরা এসে বলে__ আপা আপনি আরাম করেন রাতের রান্না টা আমি করে নেই। তাসনুভা বলে__না মীরা বোন, রান্নায় কোন সমস্যা হলে উনি আবার আমাকে মারবে।পরে তোমাকেও কথা শুনতে হবে।মীরা বলে __ এই শরীর নিয়ে কিভাবে রান্না করবেন.??তাসনুভা বলে __ কি করবো বলো,,মারধর যা-ই করে তিন বেলা খাবার আর থাকার জায়গায় টা তো দেয়। আমার মতো গরীবের মেয়ের এটাই তো অনেক।

__মীরা বলে _ কোনদিন না জানি দেখতে হয় আপনাকে মেরে ফেলে রেখে দিছে।তাসনুভা বলে __আচ্ছা এসব বাদ দাও।কিচেনে চলো আমাকে হাতের কাজে কিছু সাহায্য করো।মীরা বলে __ জ্বী আপা চলেন।

__তাসনুভা ভাবে উনি সকালে কিছু খায় নি। দুপুরেও কোন দিন বাসায় খায় না রাতে এসে তো কিছু খাবে।সেই ভাবেই রাতের জন্য ভালো কিছু রান্না করে।রান্না শেষ করে মীরা কে কিচেন গুছাতে দিয়ে রুমে চলে আসে।ফ্রেশ হয়ে খাটে বসতেই তাসনুভার মনে পরে গেলো বিয়ের আগের সোনালী দিন গুলোর কথা।

__কতো সুন্দর একটা পরিবার ছিল তার বাবা কে নিয়ে।তাসনুভার যখন সাত বছর তখন সে তার মাকে হারায়। মায়ের স্নেহ ভালোবাসা বেশি পায় নি।তার বাবাও তাকে মায়ের অভাব টা কোন দিন বোঝতে দেয় নি। অভাবে থাকলেও দিন চলতো খুব সুখে আর আরামে। গ্রামে খুব সুখে শান্তিতে খুব ভালোই ছিল তাসনুভা।দশম শ্রেণিতে পড়তো তাসনুভা। লেখা পড়ায় খুব ভালো ছিল। বাবা গ্রামের এক উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলের দপ্তরি ছিল। সেই স্কুলের ইংরেজি শিক্ষক হলেন নীলের বাবা।

__একদিন হঠাৎ করে ঘন্টায় বেল দেওয়ার সময় তাসনুভার বাবা মাটিতে পরে যায়। নীলের বাবা পরে যেতে দেখে দৌড়ে আসে তার কাছে। স্কুলের সব শিক্ষক স্টুডেন্ট এই ঘটনা দেখে স্তব্ধ হয়ে যায়। তাসনুভা তখন স্কুলেই ছিল। তাসনুভা আর শিক্ষকরা মিলে তাকে হসপিটাল নিয়ে যায়। হসপিটাল নেওয়ার পর ডাক্তার বলে তিনি আর বেঁচে নেই। মূহুর্তের মধ্যে সবাই ভেঙ্গে পরে। তাসনুভার চোখ দিয়ে বাদ ভাঙ্গা জোয়ারের মতো পানি পড়তে থাকে। মেয়ে টা যে এখন বড্ড অসহায় হয়ে গেছে।

__নীলের বাবা চিন্তা করে তাসনুভা কে তার চাচার কাছে রেখে দিবে।তাসনুভা কে দেখে শুনে রাখবে।এবং নিজের মেয়ের মতো ভরনপোষণ দিবে। কিন্তু নীলের বাবা যখন তাসনুভার কথা তার চাচা কে বলে তিনি সরাসরি তাসনুভার ভরনপোষণ দিতে অস্বীকার করে।তিনি জানেন এই মেয়ে কে লেখা পড়া করিয়ে বিয়ে দিতে কতো টাকার প্রয়োজন। তাই তিনি নিজ ভাইয়ের মেয়ের ভরনপোষণ দিতে অস্বীকার করে।তবে তাসনুভার চাঁচি রাজি হয়েছিল তাসনুভা কে নিজের মেয়ের মতো ভরনপোষণ দিতে। কিন্তু তার চাচা বারবার অস্বীকার করে। তাসনুভা খুব অসহায় হয়ে পড়েছিল। কোথায় যাবে কি করবে বোঝে উঠতে পারছিল না।

__ অবশেষে নীলের বাবা তাসনুভা কে নিজের বাড়িতে নিয়ে যায়। এবং সাথে সাথে নীল কে ঢাকা থেকে বাসায় আসতে বলে। নীল যখন বাসায় এসে জানতে পারে তার বিয়ে কোন গরীব ঘরের মেয়ের সাথে তখন নীল তার বাবার মুখের উপর না করে দেয়। কিন্তু নীলের বাবা কম জেদি না।তিনি জোর করেই যাচ্ছেন তার বিয়ে এই মেয়ের সাথেই হবে। কারণ তিনি একজন শিক্ষক মানুষ ছেলের জন্য কোন টা ভালো খারাপ সেটা তিনি জানেন।

__নীল তার বাবা কে বলে~ দেখ বাবা,, আমি তোমার জন্য এমন একটা মেয়ে কে বিয়ে করতে পারি না।নীলের বাবা বলে__ তাসনুভা অনেক ভালো মেয়ে তাছাড়া সে আমার ছাত্রী।সে কতো টা ভালো খারাপ সেটা আমি জানি। নীল বলে__বাবা সে ভালো নাকি খারাপ আমি তো সেটাও জানতে চাই না।তাছাড়া আমি একজন শিক্ষিত ছেলে ঢাকায় ভালো একটা চাকরিও করছি। আমারও তো কোন পছন্দ থাকতে পারে.??

__নীলের বাবা বলে–তোর পছন্দ মেয়ে কে যে আমার পছন্দ হবে তা নাও হতে পারে। নীল বলে __তাহলে তোমাদের পছন্দ মেয়ে কে আমার পছন্দ হবে সেটা ভাবলে কি করে বাবা। একটু বোঝার চেষ্টা করো বাবা। আমি এই বিয়ে টা করতে পারবো না।

__নীল তার মা কে বলে__মা তুমি কিছু বলছো না কেন..?? বাবা কে একটু বোঝাও।নীলের মা বলে–আমি তোর বাবা কে কি বোঝাবো।তোর বাবা একজন শিক্ষক মানুষ তিনি কখনো কারো খারাপ চায় না।আমিও চাই না মেয়ে টা অসহায় ভাবে জীবন যাপন করুক।

__নীলের বাবা বলে __আমি সবাই কে কথা দিয়ে আশ্বাস দিয়ে আমার ছাত্রীর দায়িত্ব নিয়েছি।বিয়ে তোকে এই মেয়েকেই করতে হবে।নীল জানে তার বাবা কতোটা রাগী আর কতো টা আদর্শবান।কারণ তার শিক্ষক জীবন টা যে নীল নিজ চোখে দেখেছেন। তিনি কতো টা এক কথার মানুষ।

__নীল এক প্রকার ক্ষুব্ধ আর বাধ্য হয়েই বিয়ে টা করে।আর এ-ও ভেবে রেখেছে বিয়ের পর বউয়ের এমন অবস্থা করবে দ্বিতীয় বার বিয়ে করার স্বাদ মিটে যাবে।

__বাসর ঘরে বউ সেজে বসে আছে তাসনুভা। নীল রুমে এসে সোজা শুইয়ে পরে। তাসনুভা এখনো বসে আছে খাটে। বোঝতে পারে শুইয়ে পড়ার কারণ টা কি কারণ এই বিয়েতে নীল সম্মতি দেয় নি।

__এরই মাঝে নীলের ফোনে কল আসাতে ফোন টা হাতে নিয়ে বাহিরে চলে যায়। কিছুক্ষন পর যখন নীল রুমে আসে তাসনুভা কে এখনো খাটে বসে আছে দেখে হাত ধরে টেনে নিচে ফেলে দেয়। এবং কিছু বিশ্রী ভাষাও ব্যবহার করে।আর নীলের শেষ কথা টা ছিল তুই যদি এক বাপের জন্মের হয়ে থাকিস তাহলে কখনো আমার খাটে ঘুমাতে আসবি না।

চলবে…