অবহেলিত ভালোবাসা পর্ব-০৫

0
2137

অবহেলিত ভালোবাসা
পর্বঃ০৫
Writer:Shakif Arefin

__ নীল বলে _এতো মার খাওয়ার পরেও কেন এখানে পরে আছিস..??কোথাও তো চলে যেতে পারিস..?? তাসু বলে __ কোথায় যাবো..??যাওয়ার মতো কোন জায়গা আছে। মা বাবা তো আমাকে একা রেখেই চলে গেছে। গ্রামে গেলে চাচা কি আমাকে বসে রেখে খাওয়াবে বলেন..??

__নীল বলে__তাহলে কি করবি এখানে থেকে কি শুধু মার খেয়েই পরে থাকবি..??তাসু বলে__ হুম আমি মার খেয়েও সারাজীবন আপনার পায়ের নিচে পরে থাকতে চাই। তাতেও আমি খুশি থাকবো।

__নীল বলে __তোকে আমি মুক্ত করে দেই তোর ইচ্ছে মতো কোথাও চলে যা।তাসু কথা টা শুনে অনেক টা ভয় পেয়ে যায়।কলিজা টা কেমন কেঁপে উঠে।তাসু আশ্চর্য হয়ে বলে __ মুক্ত করে দিবেন মানে..??নীল বলে __ মানে তোকে ডিভোর্স দিয়ে দেই।পরে তোর যেখানে ইচ্ছে হয় সেখানে চলে যা।তোর ভালোর জন্যই বলছি আমি।

__তাসু কথা টা শুনে এখন মরে যেতে ইচ্ছে করছে। ভাবতেও পারে নাই এতো রাতে এমন কথা শুনতে হবে।তাসু চোখের পানি মুছে বলে~ আমি চাই না আপনি আমাকে ডিভোর্স দেন।আপনি আমাকে মারেন কাটেন যা ইচ্ছে হয় করেন। প্লিজ তারপরও আামাকে ডিভোর্স দিয়েন না।

__আমি প্রয়োজনে আপনার বাসায় কাজ করেই খাবো।আপনার বাসায় তো একজন কাজের মেয়েও লাগবে তাই না..??দেখেন আমিই তো আছি কাজের মেয়ে হিসেবে। তারপরেও আপনি আমাকে ডিভোর্স দিয়েন না।আর বলে দেই– আপনি ডিভোর্স পেপারে স্বাক্ষর করলেও আমি কখনো করবো না।

__তাসুর কথা গুলো নীল কে আজ অনেক টাই অবাক করে দেয়। যেই তাসু নীলের ভয়ে সব সময় চুপচাপ হয়ে থাকতো। মার খাওয়ার ভয়ে কখনো কোন প্রতিবাদ করেনি।সেই তাসু আজ মুখ ফুটে এমন কথা গুলো বলবে নীল তা কখনো ভাবেনি।

__নীল আবারও বলে__প্রতিদিন তোকে কষ্ট দিতে আমার ভালো লাগে না।পরে নিজের কাছে খুব অশান্তি লাগে। তুই কোথাও চলে যা তোর যত খরচ লাগে আমি মাসে মাসে পাঠিয়ে দিবো।

__তাসু বলে__কোথাও চলে গেলে আমি এক মূহুর্তও বাঁচতে পারবো না।আর আমি তো আপনার কোন অশান্তি করি না।তাহলে আপনি কেন অশান্তি জিনিস টা ভোগ করবেন..?? নীল বলে __ হ্যা.. তুই অশান্তি করিস না তা ঠিক আছে। কিন্তু মাহিরা বলে তোকে যেন সব সময় অশান্তিতে রাখি। এসব আমার একদম ভালো লাগে না।আর বিশ্বাস কর সত্যি আমি মাহিরা কে অনেক ভালোবাসি।এখন কি করবো কিছুই বোঝতে পারতেছি না আমি।

___তাসুর চোখ দিয়ে টপটপ পানি পরছে।চোখের পানি গুলো কে যে আর থামিয়ে রাখতে পারছে না।তাসু হাত দিয়ে চোখের পানি কিছু টা মুছে নিজেকে শক্ত করে বলে___আপনি মাহিরা আপু কে বিয়ে করে নেন।তখন মাহিরা আপু যা বলবে আমাকে এসে তা_ই করে যাইয়েন। যদি বলে মারতে তাও করতে পারেন যদি খেতে না বলে তাও করতে পারেন। আমি সব সহ্য করে নিবো।শুধু আপনার কাছে একটু আশ্রয় চাই।

__তাসু আরো বলে__ জানেন তো,, নিজের ভালো টা পাগলেও বোঝে।আর স্বামীর ভাগ কোন জ্ঞানহীন নারীও দিবে না।আমি জ্ঞানহীন না,, স্ব জ্ঞানেই বলছি আপনি মাহিরা আপু কে বিয়ে করে ফেলুন।

__নীল বলে__ তুই কি পাগল হয়েছিস..??মাহিরা কে বিয়ে করলে তুই আস্তো থাকতে পারবি..??তোকে তো মাহিরা একেবারেই মেরে ফেলবে।এখনোও তাকে বিয়ে করি নি।আর এর মধ্যেই তোকে কতো কিছু করতে বলে।তার কথা হচ্ছে তোকে যেন আমি কিছুই না দেই।মাহিরা তো চায় তোকে যেন আমি এখনই বাসা থেকে একেবারে বের করে দেই।আর বিয়ে করলে ভাবতে পারিস তোর সাথে কি রকম আচরণ করবে..??ভাবতেও পারবি না তুই।

__তাসু বলে__ স্বামীর এতো অবহেলা আর অত্যাচার সহ্য করে যেহেতু এখনো বেঁচে আছি তাহলে অবশ্যই সতীনের অবহেলা আর তিক্ত কথা সহ্য করে বাকী জীবন টা কাটিয়ে দিতে পারবো।

__তাসু আরো বলে__একটু ভেবে দেখুন তো,,আমি আপনার হাতে এতো মার খেয়েও আপনার কাছে পরে আছি। আমি কেমন পাগল।তবে আমি কিন্তু নিজেকে পাগল বা জ্ঞানহীন ভাবি না।কারণ আমি আগেই বলেছি পাগলেও চাইবে না নিজের স্বামীর অধিকার অন্য মেয়ের হাতে তুলে দিতে।আমি পাগল না আমি হলাম অবহেলিত এক অবলা নারী। যে শত কষ্টের পরেও স্বামীর কাছে একটু আশ্রয় চায়।এবং তার মঙ্গল কামনা করে।

__তাসুর কথা শুনে নীল আজ নিশ্চুপ স্তব্ধ হয়ে যায়। কথা বলার ভাষাটাও হারিয়ে ফেলছে।সত্যি তাসুর কথা গুলো আজ নীল কে স্তব্ধ করে দিয়েছে। আসলে কাদা মাটিতে হাতি ঠেকে গেলে সেও নিজেকে বাঁচাতে আপ্রাণ চেষ্টা করে।

__তাসু বলে রাত তো অনেক হলো এখন ল্যাপ্টপ বন্ধ করে ঘুমিয়ে পড়েন।তাসুর কথায় নীল মাথা নাড়িয়ে হুম বলে।

__তাসু ঘুমানোর জন্য নিজের রুমে চলে যেতে গেলে মাথা টা ঘুরে পড়ে যেতে যাবে তখনই নীল হালকা করে ধরে ফেলে। নীল বলে__ সাবধানে যাবি তো..??নীল খেয়াল করে তাসুর শরীর টা গরম হয়ে আছে। নীল কপালে হাত দিয়ে বলে__ কিরে তোর তো দেখি জ্বর আসছে..?? আমাকে বলিস নি কেন..??

__ তাসু বলে__ এই হালকা জ্বরে মরে যাবো না।আমি ভালোই আছি।নীল বলে__ শরীর বেশি খারাপ থাকলে বল,,সকালে আমি ডাক্তার দেখিয়ে ঔষধ কিনে দিবো।তাসু বলে__ না,, ডাক্তার দেখাতে হবে না।এই টুকু জ্বর এমনেতেই সেরে যাবে। আপনি শুধু আমাকে এই বাসা থেকে তাড়িয়ে দিবেন না প্লিজ। হাত জোর করে বললো তাসু।

__তাসু কথা টা বলে__ দ্রুত রুমে গিয়ে দরজা আটকিয়ে দেয়।তাসুর নাক মুখ ফুলে গেছে ফুপিয়ে কান্না করার কারণে।

__ নীলও রুমে গিয়ে সোফায় হেলান দিয়ে বসে পরে। খুব চিন্তায় পড়ে যায়। মাথায় হাত রেখে ভাবতে থাকে। কি করবে সে..?? না ভাবতে পারছে মাহিরা কে ভুলে যেতে। কারণ সেটা তার প্রথম ভালোবাসা। চাইলেও ভুলতে পারবে না।আর না পারছে তাসু কে ডিভোর্স দিতে। কারণ নীল তাসু কে ডিভোর্স দেওয়ার জন্য তার বাবা মাকে কে কোন না কোন কারণ দেখাতে হবে। আর সেই কারণও নীলের কাছে নাই।

__নীল আরো ভাবে __ তাসু কে বিয়ের পর এতো টা না মারলেও পারতাম। আর তাসু মেয়ে টাও কেমন মার দেওয়া শুরু করলেও চুপ করে মার খেয়ে যায়। একটুও নড়বে না যতক্ষণ না মার শেষ করবো।নীল এই নিয়ে আর কিছুই ভাবতে পারছে না।

__নীলের কাছে একটা প্রশ্ন উদঘাটন হয়__ আর সে টা হলো মাহিরার সাথে রিলেশনের পর থেকে তার উপর কতো টাকা খরচ করেছে। যে সময় যেটা চেয়েছে সেটাই কিনে দিয়েছে।যেখানে খেতে চেয়েছে সেখানেই খাওয়ার জন্য নিয়ে গিয়েছে। কিন্তু তাসু কে বিয়ের পর তাকে কি কিনে দিয়েছে। তাসু-ই বা তার কাছে কি চেয়েছে।

__তাহলে নীলের কাছে নিজ স্ত্রীর অস্তিত্ব টা কি তার জীবনে..??এই প্রশ্নের উত্তর টা কি আদোও দিতে পারবে নীল..?? হয়তো প্রশ্নোত্তরের পেপার টা খালি_ই পড়ে থাকবে।

__কিছু দিন ধরে নীলের কাজের চাপ টা একটু বেশিই হচ্ছে। অফিস শেষ করে এসে আবার রাতেও ফাইল ল্যাপ্টপ নিয়ে কাজ করতে হয়।কারণ অফিসের একটা বিশাল এমাউন্টের প্রজেক্ট নীলের বস তার হাতে তুলে দিয়েছে।সময়ও দিয়েছে মাত্র আট দিন।

__অন্য দিকে মাহিরা ফোন দিলে নীল বেশি সময় নিয়ে কথা বলে না।কাজের কথা বলে ফোন রেখে দেয়। মাহিরা নীল কে দেখা করতে বললে তাতেও রাজি হয় না।এতে মাহিরা কিছু বিরক্ত হয় এবং অন্য কিছু ভেবে নেয়।

__তাসুও খেয়াল করে নীল দুই একদিন ধরে কাজ নিয়ে খুব পেরেশানে আছে। মাঝে মধ্যে দেখা যায় নীল রাতে খাবার খেতেও ভুলে যায়। তাসু খাবারের কথা বললে খেতে আসে। তাসুও এখন রাত করে ঘুমায়। কারণ রাতে যখন নীল অফিসের কাজ করে তখন নীল কে কফি বানিয়ে দিতে হয়।

__পরের দিন বিকালে অফিসে তেমন কোন কাজ না থাকায় নীল ছুটি নিয়ে বাসায় চলে আসার সিদ্ধান্ত নেয়।কারণ ঘুমের কিছু টা ঘাটতি আছে। বাসায় এসে কয়েক ঘন্টা ঘুমালে রাতে আরামসে কাজ করতে পারবে।

__রিকশা নিয়ে বাসায় আসতে যাবে তখনই মাহিরা নীলের কাছে ফোন দেয়। নীল ফোন টা রিসিভ করতেই মাহিরা বলে__ এই তুমি কোথায়..?? নীল বলে__ কেন..?? আমি তো বাসায় যাচ্ছি।মাহিরা বলে__ আমি তোমার বাসার কাছাকাছি আছি।তুমি সোজা আমার কাছে চলে আসো।

চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে