Thursday, July 17, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1376



শঙ্খ চিলের জুটি পর্ব-০৬

0

#শঙ্খ_চিলের_জুটি 🦅🦅
#ইফা_আমহৃদ
পর্ব::০৬

— “বাঁচাও,, প্লীজ বাঁচাও।।আমাকে মেরে ফেললো গো।।কে আছো প্লীজ হেল্প মি!! ভাইয়া….!! কই তুই তাড়াতাড়ি আয়” ।।(দৌড়াতে দৌড়াতে ইফা)

ডয়িং রুমে এসে লাফ দিয়ে রৌধিকের কোলে উঠে পড়লো ইফা।।দুহাত দিয়ে শক্ত করে রৌধিকের গলা পেঁচিয়ে ধরলো।।অপ্রত্যাশিত ভাবে ঘটনাচক্রে এভাবে ইফা জরিয়ে ধরাতে ফ্রিজড হয়ে গেল রৌধিক।।এতোশক্ত করে গলা পেঁচিয়ে ধরেছে,,যেন দম বন্ধ হয়ে আসছে রৌধিকের ।।খানিকটা ঝুকেও পড়েছে বটে।।তবুও ইফাকে ছাড়ালো না।।মুখের সামনে থেকে ইফার এলোমেলো চুলগুলো সরিয়ে দিল।। এতোক্ষণে কুকুর টাও ডয়িং রুমে এসে হাজির হয়েছে।।কুকুর টা তখনও অনবরত ঘেউ ঘেউ করে চলেছে।। কুকুরের আর্তনাদ শুনে হাতের বাঁধন আরো ধিড় হলো ইফার।।রৌধিকের শার্টের বোতামে একটু ব্যাথা পাচ্ছে,, কিন্তু তাতে ইফার কিছু বলার আসে যায় না।।পারলে রৌধিকের বুকের ভেতরে ঢুকে যেত।।এই মুহূর্তে একজনকেই সবচেয়ে বেশি ভয় করছে,,, সেটা হচ্ছে কুকুর।। খুব সকালে ঘুম ভাঙ্গেছিল ইফার।।চোখ মেলে তাকাতেই কোমরের ব্যাথাটা চাড়া দিয়ে উঠলো।।তাই সকাল সকাল বেরিয়েছিলো একটু মর্নিং ওয়াক করতে।।রাস্তার মাঝখানে কুকুর দেখে ভয়ে নেতিয়ে গেল সে।।ছোট বেলায় কুকুরের সাথে ইফার বেশ ভাব ছিল।। কিন্তু পরবর্তীতে একবার ইফাকে কুকুরের কামড় সহ্য করতে হয়েছিল।।তখন থেকে কুকুরের প্রতি চাঁপা ভয় জমে আছে তার।। কয়েকটা ইটের টুকরা খুঁজে কুকুরের দিকে ছুঁড়লে,,, ইফাকে পাল্টা আঘাত করতে ধাবিত হয় সে।।ভয়ে সেখানে চিৎকার করে উঠলো।। কিন্তু তার চিৎকারে বৃথা গেল।। নিরুপায় হয়ে দৌড়ে বাড়ির দিকে ছুটে আসে।।আর তার পেছনে পেছনে কুকুরটা।।

— “বোনু ভালোভাবে দেখ ,, কুকুরটা চলে গেল!!একটু পানি খেয়ে নে ভালো লাগবে”।।(ইফার মাথায় হাত বুলিয়ে ইভু)

ইভুর গলা শুনে নিভু নিভু চোখে পেছনে ফিরে পরখ করে নিলো।।ইভুর হাত থেকে পানির গ্লাসটা নিয়ে চুমুক দিল।। নিজেকে রৌধিকের কোলে অনুভব করে না পারছে পানি খেতে না পারছে ফেলে দিতে।। গোলগোল চোখ করে শুধু রৌধিকের দিকে তাকিয়ে আছে।।এতো সকালে হঠাৎ রৌধিক এই বাড়িতে কি করছে কিছু বুঝতে পারছে না।। ভাবনার মাঝেই কাশি শুরু হয়ে গেলো তার।।ইফার মাথায় তিনটা চপল মারলে,, কিছুটা শান্ত হলো সে।।চটজলদি রৌধিকের কোল থেকে নিচে নেমে জামা কাপড় ঝাড়তে লাগলো।। এক্সজেকলি কি হচ্ছে বোঝার চেষ্টা করছে ।।যে ইভু রৌধিককে এক বিন্দু সহ্য করতে পারে না ,, তাকে কিছু বলছে না কেন??

–” সামান্য একটা কুকুর দেখে ,,এভাবে গরুর মতো চেঁচাচ্ছো,,লাফ দিয়ে আমার কোলে উঠে গেলে ।।আর একটা বাঘ দেখলে কি ডায়নোসরের মতো চেঁচাতে”!!(একটু ভাবার অভিনয় করে রৌধিক)

— “আসলে গরুকে ডাকতে গরুর মতো চেঁচাতে হয় ,, আর ডায়নোসর কে ডাকতে হলে ডায়নোসরের মতো।।আর এখন আমার গরুকে দরকার ছিলো,, তাই গরুর মতো চেঁচিয়েছি”!!(ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে ইফা)

— ”ভাইয়া ,, শেষ পর্যন্ত তোকে গরু বানিয়ে দিল”!!

বলেই শব্দ করে হেসে দিল আদ্রিতা।।আদ্রিতার কথা শুনে বুঝতে বাকি রইল না,, এটাই তার ভাই রৌদু।।যার বাচ্চার মা বলে ধারনা করেছিলেন তাহমিনা।।লজ্জা তাকাতে পারছে না।। কিভাবে এতোক্ষণ রৌধিক কে শক্ত করে জরিয়ে ধরে ছিল।।
_______________

🎶🎶 আমাকে আমার মত থাকতে দাও,,
আমি নিজেকে নিজের মত গুছিয়ে নিয়েছি…..!!!

আমাকে আমার মত থাকতে দাও,,,
আমি নিজেকে নিজের মত গুছিয়ে নিয়েছি
যেটা ছিলনা ছিলনা সেটা না পাওয়াই থাক
সব পেলে নষ্ট জীবন ।।।

তোমার এই দুনিয়ার ঝাপসা আলোর
কিছু সন্ধ্যের গুড়ো হওয়া কাঁচের মতো
যদি উড়ে যেতে চাও তবে গা ভাসিয়ে দিও
দূরবীনে চোখ রাখবো ,, না-না-না……

না-না-না-না……….. না-না-না-না……..

এই জাহাজ মাস্তুল ছারখার
আমি গল্প লিখছি বাঁচবার
আমি রাখতে চাই আর তার
কোনো দিন দুপুরের আবদার
তাই চেষ্টা করছি বারবার
সাতরে পাড় খোঁজার……..!?!🎶🎶

এইটুকু গান গেয়ে থামলো ইফা।।পূর্ণরায় গরম কফির কাপে হালকা ঠোঁট ছুঁয়ে চুমুক দিল।। হাত বাড়িয়ে মৃদু শব্দ করে কাপটা গ্ৰিলের উপর রাখলো ।। ওয়াইট কার্লার নেলপলিশ ‌টা নিয়ে স্বযত্নে নখের উপর ব্রাশ করতে লাগলো।।দুটো নখের নেলপলিশ দিয়ে আবার কফির কাপে চুমুক দিল।। হঠাৎ করেই দক্ষিনা হাওয়ায় বয়তে শুরু করলো।। কালবৈশাখী ঝড়ের পূর্বাভাস দিচ্ছে।। চঞ্চল নয়ন জোড়া ধীরে বুজে নিলো।। সন্ধ্যার এই ঠান্ডা হিমেল হাওয়া এক অদ্ভুত অনুভূতি স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে।।সারা শরীরের পশম গুলো দাঁড় করিয়ে দেয়।।এটা ইফার রোজকার দিনের অভ্যাস।। এক কাপ কফির সাথে গোধূলি উপভোগ করা ,, মন খুলে গান গাওয়া।। সন্ধ্যার হাওয়া অনুভব করা।।

চারদিকে অন্ধকারে ছেয়ে গেছে।। তবুও দিনের মৃদু আলো স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।। আকাশে সূর্য নেই ,,আরো অনেক আগে তলিয়ে গেছে‌‌।।পাখিরা তাদের বাসায় ফিরে গেছে।।আকাশে মেঘের আস্তরণ লক্ষ্য করা যাচ্ছে।।তবে বৃষ্টি হওয়ায় চান্স নেই বললেই চলে।। পায়ের শব্দে বেষ্টিত করা রাখা আঁখি জোড়া অবারিত করলো ইফা।। চোখ বন্ধ অবস্থায় ,, হালকা শব্দ গুলো গভীর ভাবে উপলব্ধি করা যায়।।যারা চোখে দেখতে পায় না,, তারা উপলব্ধি করে সবকিছু বিচার বিশ্লেষণ করে থাকে।।তার পাশে রেলিং এ ভর করে দাঁড়িয়ে আছে আদ্রিতা।।দৃষ্টি দূর আকাশের রক্তিম অস্তগুলোর দিকে।। নিরবতা ভেঙ্গে আদ্রিতা বললো…

— “আমি তোমাকে সেই কখন থেকে খুঁজেছি।। কিন্তু কোথাও দেখতে পেলাম না।। তারপর ছাদে এলাম ,,,,আর এসে দেখি তুমি ছাদে।।আচ্ছা একা একা ছাদে আসো ভয় করে না”??

আদ্রিতার কথায় ঠোঁট প্রশস্ত করে শব্দহীন হাসলো ইফা।।বয়সে আদ্রিতা ইফার বড় হবে ,, তার মুখে ভয়ের কথা আশা করেনি।।পূর্নরায় কফির কাপে চুমুক দিয়ে বললো…

— “মানুষ সেই জিনিসটাকে ভয় পায় ,, যেটা সহজে করা হয় না।। কিন্তু যখন তুমি একই জিনিসটা বারবার করবে ।।তখন তোমার মধ্যে ভয় না ,,, ভালোবাসা কাজ করবে।।আর ভালোবাসার জিনিসটা কখনো ভয়ের কারণ হয়না।।ঠিকই তেমনি অন্ধকার দেখতে দেখতে ভয় কেটে গেছে” ।।

নির্বিকার ভাবে কিছুক্ষণ কথাটা ভাবলো আদ্রিতা।।এতো সহজে ভয় দূর করা যেতে পারে ,,সেটা তার ধারনা ছিল না।। আবার কিছুক্ষণ বিরাজ করলো নিরবতা।। ইতস্তত বোধ করে বললো…

— “তোমার আর ভাইয়া মধ্যে সত্যিই কিছু নেই”।।

আদ্রিতার কথার ধরণ বুঝতে অসুবিধা হলো না ইফা।। সংক্ষেপে উত্তর দিলো,,” না”!!

— “তোমার আর ভাইয়ার প্রথম দেখা ,, এক্সিডেন্ট হওয়া ,, কোলে তুলে নেওয়া সব গুলো দিয়ে একটা ফিল্ম তৈরি করা যায়।।তাই না ভাবী…

ভাবী কথাটা শুনে ভ্রু কুঁচকে তাকালো ইফা।। সাথে সাথে কথা ঘুড়িয়ে বললো,….– ”আই মিন ভালো ফিল্ম হতো”।।

— “একদম রাইট।।বাট এটা ফিল্ম না ,, আর তোমার ভাইয়াও কোনো সুপার স্টার হিরো নয়”।।

________________
ইফার পাশে দাঁড়িয়ে ফোনে কথা বলছে রৌধিক ।।
ইফার কাঁচের নেলপলিশ টা মৃদু শব্দ করে রেলিং এর সাথে ঘুরাচ্ছে।। ইফার আর আদ্রিতার কথার মাঝে হুট করে ইভু আর রৌধিকের আগমন।।ইভু গেছে তিনজনের জন্য কফি বানাতে।।ইভু আসতে দেরী হচ্ছে বিধায় আদ্রিতা গেছে ডেকে আনতে ।। হঠাৎ করেই রৌধিকের ফোনে কল আসাতে ,, ব্যস্ত হয়ে পড়লো সে।। তবুও শান্তি দেয়নি ইফাকে ।।ইফার দুটো নেলপলিশ কে নিজের আয়ত্বে করে রেখেছে।। মূলত ইফাকে জ্বালাতেই এমন বিহেব করা।।ইফা গলা ঝেড়ে আস্তে আস্তে বিরক্তিকর কন্ঠ বললো…

— “ওটা আমার নেলপলিশ ।। প্লীজ দিয়ে দিন,,, ভেঙ্গে যাবে” !!

— “আমি কি একবারও বলেছি ,,এটা আমার নেলপলিশ!! এটাকে একটু ছুলেই কি ভেঙ্গে যাবে ।। আশ্চর্য 😡😡”!! (ঝাঁঝালো কন্ঠে রৌধিক)

— “আমি কখন বললাম ছুলে ভেঙ্গে যাবে।।আমি বলতে চাইছি ,, আপনি যেভাবে নেলপলিশ টা নিয়ে ফাজলামো করছেন ।।যেকোনো টাইমে ভেঙ্গে যাবে।।তখন এটা দিয়ে আমি কি কলবো”??

— “সত্যিই তো ভেঙ্গে গেলে কি করবে।।(ভাবার অভিনয় করে রৌধিক) একটা কাজ করো ,, ভেঙ্গে গেলে আমার মুখে লাগিয়ে দিও”।।

সাথে সাথে চুপ হয়ে গেল ইফা।। মিনিট পেরুতে না পেরুতেই হাত থেকে নেলপলিশটা পড়ে ভেঙ্গে গেল।।ইফা রৌধিকের দিকে তাকিয়ে ভেতরে ভেতরে রাগে ফুঁসছে।।আর রৌধিক ভুতুড়ে ঢোক গিলছে।।এই বুঝি ইফা চারটা কথা শুনিয়ে দিল।। কিন্তু হলো তার বিপরীত!! নিচ থেকে ভাঙ্গা নেলপলিশ গুলো দুহাতে লাগিয়ে ,, রৌধিকের মুখে লাগিয়ে দিলো।।কিছু বুঝে উঠার আগেই,, আরেকটা নেলপলিশ ভেঙে সেটাও রৌধিকের মুখে লাগিয়ে দিলো।।তখনই ছাদে প্রবেশ করলো আদ্রিতা ।।রৌধিকের এমন অবস্থায় দেখে ”””ভুত ভুত””” চিৎকার করে করে নুইড়ে পড়লো নিচে।।

চলবে….🎀🎀

শঙ্খ চিলের জুটি পর্ব-০৫

0

#শঙ্খ_চিলের_জুটি 🦅🦅
#ইফা_আমহৃদ
পর্ব::০৫

— “”মা দেখ তোমার ছেলে বিয়ের আগে বউকে প্রেগন্যান্ট করে ফেলেছে।।বউ নিজের পায়ে হেঁটে এখানে এসেছে।।ভালো চাইলে ডেডকে ফোন করে কাজি নিয়ে আসতে বলো””।।(চেঁচিয়ে বললো আদ্রিতা)

প্রেগন্যান্ট কথাটা কানে বাজতেই ,, আপনাআপনি আরেকটা হাত পেটে চলে গেল।। আদ্রিক আহম্মেদের বাড়িতে এসে এমন একটা পরিস্থিতিতে পড়তে হবে ,, ভাবতে পারে নি ইফা।।শরীরটা ক্লান্ত লাগছিলো তাই পেটে হাত দিয়ে শ্বাস নিচ্ছিলো ,, কিন্তু সেটাকে একটা মেয়ে এভাবে ভাবতে পারে ।।সেই ধারনা ইফার ছিল না।।
আদ্রিতার চিৎকার শুনে দ্রুত পা বাড়িয়ে নিচে নামলো তাহমিনা।।সদর দরজার সামনে একটা অচেনা মেয়েটকে পেটে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ভ্রু কুঁচকে তাকালো।।আদ্রিতার দিকে তাকিয়ে করুন সুরে বলল…

— “”কি বলছিস তুই আদ্রু!! আমার রৌদু ,, আমাদের ছাড়া বিয়ে করে ফেলেছে?? হাই আল্লাহ”!!(কপালে হাত দিয়ে তাহমিনা)

— “মম প্লীজ চুপ করো ।।আমি সিউর জানি না,, কিন্তু এটুকু জানি এই মেয়েটার সাথে ভাইয়ার সম্পর্ক আছে ।।কারন ,, মেয়েটার পিক আমি ভাইয়ার ওয়ালপেপারে দেখেছিলাম।।আর ভালোভাবে খেয়াল করে দেখো,, মেয়েটা পেটে হাত রেখেছে ।।তার মানে আমি সিউর ও প্রেগন্যান্ট””।।(তাহমিনার কানের কাছে বিরবির করে আদ্রিতা)

আদ্রিতার দিকে তাকিয়ে দুকদম এগিয়ে গেল ইফার দিকে।। একটু ঝুঁকে ইফার পেটকে ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করতে লাগলো।।মা মেয়ের এমন জ্বালায় অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে ইফার।। অনেক কাঠ খড় পুড়িয়ে এড্রেস টা জোগাড় করেছে।। তাহমিনার পাশ কাটিয়ে ভেতরে গিয়ে বলল…

— “ধ্যাত,, এটা বাড়ি নাকি চিড়িখানা বুঝতে পারছি না।।এসে ফেসে গেলাম নাকি!!( মনে মনে ইফা) আন্টি ,, আমি আদ্রিক আহম্মেদ এর সাথে দেখা করতে এসেছি ।।আপনি একটু ওনাকে ডেকে দিবেন”!!

ইফার মুখে এমন কথা শুনে চোখ চড়কগাছ দুজনের।। ইফাকে দেখে তাহমিনার বেশ পছন্দ হয়েছে।।পড়নে লেডিস জিন্স,,ব্ল্যাক শার্ট।।ফর্সা শরীরে রং বেশ ফুটে উঠেছে।। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম,, গোলাপি রঙের ঠোঁট।।রাগে নাকের ডগা লাল হয়ে গেছে।। একটু পরপর চোখের পলক ফেলছে ,, দাঁত দিয়ে ঠোঁট কামড়ানো।। তাফমিনার দিকে তাকিয়ে করুন সুরে বলল…

— “মম আমি ১০০% সিউর।। ভাইয়া বিয়ের আগে মেয়েটার সাথে লিভিং করেছে।।এখন অস্বীকার করেছে ,, তাই মেয়েটা বাচ্চা সহ এখানে এসে হাজির হয়েছে”??

— “মাশাআল্লাহ,,বেশ দেখতে তো তুমি।। আমি কথা দিচ্ছি আমার ছেলে তোমাকে অস্বীকার করলে ,, আমি তোমাকে এই বাড়ির বউ করে নিয়ে আসবো”।। (নজর ফোঁটা দিয়ে)

— “দেখুন আন্টি আপনার কোথাও সমস্যা হচ্ছে,, আমি আপনার ছেলের বউ না”!!

— “জানি তো ।।হতে কতোক্ষণ”।।

হাত ধরে টানতে টানতে ইফাকে কাউচে বসিয়ে দিল।। নিজের হাতে খাবারের ট্রে সাজিয়ে টেবিলের উপর রেখে ইফার পাশে বসে পড়লো।।ফলের টুকরো ইফার মুখে পুড়ে দিয়ে ,, আলতো হাতে ইফার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো।। হঠাৎ ফোনের রিং বাজতেই,, ইফাকে যত্ন করায় ব্যাঘাত ঘটলো তার।।আদ্রিক আহম্মেদ ফোন করেছে।।ফোনটা রিসিভ করে ব্যস্ত গলায় বললো…

— “যদি নিজের মান সম্মান কিছুটা বাঁচাতে চাও ,, তাহলে আসার সময় কাজি ডেকে নিয়ে এসো।।নাহলে তোমার পেস্টিসের ১৪ টা বেজে যাবে”।।

কথাগুলো বলেই ফোন কেটে দিল তাহমিনা।।আদ্রিক আহম্মেদ কে কিছু বলার সুযোগ দিল না।।

— “আন্টি আপনাদের ভুল হচ্ছে ।।আমি আপনাদের ছেলেকে চিনি না।।আমি ইফা ।।””ইফা-আমহৃদ”” ডটার ওফ ইমতিয়াজ আমহৃদ।। মানে আদ্রিক আহম্মেদের হারিয়ে যাওয়া বন্ধু ইমতিয়াজ আমহৃদ এর একমাত্র মেয়ে”।।

একদমে কথাগুলো বলে থামলো ইফা।। উপস্থিত দুজনে অবাক চোখে ইফার দিকে তাকিয়ে আছে।।

____________________
৪ ঘন্টা হয়েছে বাড়িতে এসে পৌঁছেছে।।সাথে আদ্রিক আহম্মেদ,, তাহমিনা,, আদ্রিতা তিনজনে এসেছে।। আদ্রিক আহম্মেদ আর ইমতিয়াজ আমহৃদ একসাথে কাউচে বসে আছে।।দুজনের হাত মুষ্টিবদ্ধ করে বন্দি।।একে অপরের কাঁধে মাথা রেখে আছে।।এটা স্বপ্ন নাকি সত্যি বিশ্বাস হচ্ছেনা।। মনে হচ্ছে এই বুঝি স্বপ্ন টা ভেঙ্গে গেল আর তাদের বন্ধুত্ব টা আবার হারিয়ে গেল।। গত ২৫ বছর আগে ভাঙ্গা বন্ধুত্ব আজ আবার জোড়া লেগেছে।।ইফা দুজনকে একসাথে দাড় করিয়ে সারপ্রাইজ দিয়েছে।। ইতিমধ্যে রুমকির সাথে তাহমিনার অনেক ভাব হয়ে গেছে।। মিশুক মেয়ে হিসেবে আদ্রিতাকে খুব ভালো লেগেছে ইফার।।আদ্রিতা আর ইফার দু’জন ফোন নিয়ে ব্যস্ত।।আর ইভু করুন চোখে সবার দিকে তাকিয়ে আছে।। জরুরী ভিত্তিতে ফোন করে আনিয়েছে ইফা।এখন এক্সজেকলি এখানে বসে কি করা উচিত বুঝতে পারছে না।।
হাই তুলে উঠে দাঁড়ালো ইফা।।ফোনের দিকে তাকিয়ে বলল।।– “মা আমি ডিনার করবো না!! খুব ঘুম পাচ্ছে,, এখন ঘুমাবো ।।(ইভুকে উদ্দেশ্য করে) তুইও যাবি না “।। বলেই চপল পা বাড়ালো ইফা।।আজ পর্যন্ত রাতে না খেয়ে থাকে নি সে।।কয়েক কদম ফেলতেই সামনে এসে দাড়ালো আদ্রিক আহম্মেদ আর ইমতিয়াজ আমহৃদ।।ইফার হাত দুটো মুঠোয় নিয়ে বললেন..

— “তোকে অসংখ্য ধন্যবাদ মামনী!! ইমুকে আমার কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য।। তুই জানিস না ,, ইমু আমার কাছে কতোটা ইম্পর্ট্যান্ট।।আজ থেকে তুই তার চেয়েও ইম্পর্ট্যান্ট।।কারণ আমি তোর জন্য ইমুকে পেয়েছি”।।

কথাটা বলেই আলতো ভাবে জরিয়ে ধরলো ইফাকে।।

____________________
দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকলো রৌধিক।। রাত তখন ১টা ছাড়িয়েছে।।সবাই বেঘোরে ঘুমিয়ে আছে।।প্রায় ঘন্টা দুয়েক আগে আমহৃদ বাড়িতে এসে পৌঁছেছে রৌধিক।।রৌধিকের পরিচয় জেনে সবাই একটু অবাক।। কিন্তু তার চোখ শুধু ইফাকেই খুঁজে ছিলো।।তাই রাত গভীর হওয়ায় পর ইফাকে দেখতে চলে এলো।। বেডের উপর ছড়িয়ে ছিটিয়ে ঘুমিয়ে আছে ইফা।। একহাত নিচে ঝুলে আছে।। অন্য হাত মুখের উপর।।একপা ঝুলন্ত অবস্থায় অন্যপা বাজ করা,,সেল ফোনটা বুকের উপর।।এখনও টম অ্যান্ড জেরি চলছে।। দেখে বোঝা যাচ্ছে ফোন টিপতে টিপতে ঘুমিয়ে গেছে ।।প্ল্যাজু হাঁটুর উপর গুটিয়ে আছে।। ড্রিম লাইটের আলোয় সবকিছু স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।।ইফার এমন উদ্ভর ভঙ্গিমা দেখে অধর চেপে হাসলো রৌধিক।। কাত হয়ে শুতে গেলেই ধপাস করে নিচে পড়ে গেল ইফা।। ইফা ঘুমের ঘোরে ফ্লোরে পড়ে গেছে।। চোখজোড়া বন্ধ করে বিরবির করে উচ্চারণ করলো সে..,,”” ওহ নো ””,!যেদিন এই মেয়েটার সাথে দেখা হয়,, সেদিনই কোনো না কোনো অঘটন ঘটে।।প্রথম দিন বৃষ্টিতে ভেজা ,, দ্বিতীয় দিন লিফটের সাথে ধাক্কা খেতে গিয়ে বেঁচে যাওয়া,, তৃতীয় দিন এক্সিডেন্ট করা ,, আর আজ বেড থেকে পড়ে যাওয়া।। একটু ঝুঁকে ইফাকে কোলে তুলে বেডে শুইয়ে দিলো।।ঘুমের ঘোরে কাপড় তুলে কোমরে স্লাইড করছে সে ।।যাতে শরীরের আংশিক অংশ দৃশ্যমান।। চোখ ফিরিয়ে নিল ।।যখন তখন অঘটন ঘটে যেতে পারে।।

— “ভাইয়া কাবার্ড থেকে মলমটা এনে দে তো ।। খুব ব্যাথা করছে”।।(ঘুমিয়ে ঘোরে ইফা)

ফোনের টচ জ্বালিয়ে কাবার্ড থেকে মলমটা বের করে ইফার দিকে এগিয়ে দিলো।। কিন্তু ততক্ষণে ইফা ঘুমের অতলে তলিয়ে গেছে।। কয়েকবার ডাক দিয়েও লাভ হলো না।। অবশেষে উপায় না পেয়ে একপ্রকার বাধ্য হয়ে নিজেই মলম লাগিয়ে দেওয়া চেষ্টা করলো।।যতবারও হাত লাগানো চেষ্টা করছে ততবারই হাত ফিরে ফিরে আসছে।।আলকা হাতের স্পর্শ কোমরে অনুভব করতে ঘুমের মাঝে কেঁপে উঠলো ইফা।। ঘুমের ঘোরে শক্ত করে বেডশিট টা চেপে ধরলো।কোনোরকম মলমটা লাগিয়ে দিয়ে কিছুক্ষণ গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল ইফার মুখের দিকে।।অনেকক্ষন ঘুমের কারণে মুখটা তৈলাক্ত হয়ে উঠেছে‌‌।।ইফাকে বেশ মোহনীয় লাগছে রৌধিকের কাছে ।। যদি পারতো তাহলে সারাজীবন এভাবে তাকিয়ে থাকতো।।

চলবে…🎀🎀

শঙ্খ চিলের জুটি পর্ব-০৪

0

#শঙ্খ_চিলের_জুটি 🦅🦅
#ইফা_আমহৃদ
পর্ব::০৪

চোখের কোণ ঘেঁষে দুফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়লো ফ্রেমের উপর।চোখ বন্ধ করে কিছুক্ষণ হাত বুলিয়ে নিল ছবিটার উপর আদ্রিক আহম্মেদ।।আজ বন্ধুর কথা খুব মনে পড়ছে।। আনুমানিক পঁচিশ বছর আগে দুজন বন্ধুর,,, বন্ধুত্ব বিচ্ছেদ হয়েছে।।তাও আবার অজানা একটা ছোট কারণে।। পঁচিশ বছর আগে আদ্রিক আহম্মেদ নিজের প্রান প্রিয় বন্ধুকে ফেলে বিদেশে গমন করেছেন।।সেখানে স্যাটেল হওয়ার পর বন্ধুর অনেক খোঁজ খবর করেছেন ,, কিন্তু খবর মেলে নি।। যখন বিদেশে পাড়ি জমান তখন তিনি বিয়ে করেন নি।।সেখানেই বন্ধুকে ছাড়া পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন।।যখন বন্ধুকে বিয়ের খবর জানায় ,, তখন সে আনন্দিত হওয়ার বদলে আদ্রিক আহম্মেদের সাথে বন্ধুত্বের ইতি টানেন।।হয়তো বন্ধুর প্রতি চাঁপা অভিমান ,, আর অভিযোগ কাজ করছিলো।। ৫ বছর আগে বন্ধুর অভিমান ভাঙাতে পরিবার সহ দেশে ফিরেছেন।।আদ্রিক আহম্মেদের ভাবনার মাঝে রুমে ঢুকলেন তাহমিনা ।।হাত থেকে ফটো ফ্রেমটা নিয়ে যত্নসহকারে কাবার্ডে রেখে দিল।।আদ্রিক আহম্মেদের পাশে বসে পড়লো।। তাহমিনা কিছু বলার আগে মুখ খুললেন তিনি….

— “পাঁচ বছর ধরে ইমতিয়াজ কে খোঁজার চেষ্টা করছি ।।সব চেষ্টা বার বার বৃথা যাচ্ছে।। আমি কি আমার বন্ধুর দেখা কখনো পাবো না।। পারবো না ,, তার রাগ ভাঙাতে”??

— ”আমার বিশ্বাস একদিন না একদিন তুমি তোমার প্রানের বন্ধুর দেখা ঠিক পাবে।। দেখো,,আল্লাহ তোমাকে আশাহত করবেন না”।।

— “তাই যেন হয় তা”হু!!(আশাহত গলায় আদ্রিক আহম্মেদ)

______________________

চৈত্র মাসের প্রথম লগ্ন।।কাঠ ফাটা রূর্যকিরণে এক মুহুর্ত শান্তিতে দম নেওয়া অসম্ভব ব্যাপার ।।গ্ৰামে দিনের বেলা বৃক্ষের নিচে বসে যে উচ্ছাস পাওয়া যায়।।তা শহরাঞ্চলে সম্ভব নয়।।হবে কিভাবে শহরে কোনো গাছের চিহ্ন নেই বিধায় ঠান্ডা সমীরন অনুভব করা সম্ভব নয়।। তাই তো মানুষ আজকাল যন্ত নির্ভর হয়ে উঠেছে।। কৃত্রিম যান্ত্রিক দিয়ে হিম আবরন তৈরি করছে।।মাঝে মাঝে বর্ষন হয়ে রাস্তাঘাট পিচ্ছিল করে তোলে ঠিকই কিন্তু গরমের আস্তরণ কমে না।।সেদিনের বর্ষনেও তার ব্যতিক্রম হলো না।।রাস্তায় বৃষ্টির পানি জমে নাজেহাল অবস্থা।।গাড়ি অতিক্রম করার সময় ,, চাকার নিচে পিসে যাওয়া পানিগুলো দুপাশে ছিটে ওঠে।। কখনো পথচারীর শরীরে ছিটে জামাকাপড় নষ্ট করে দিচ্ছে।। কখনো বা তার ব্যাতিক্রম হচ্ছে।। তবে রাস্তা ভালো না থাকায় খুব প্রয়োজন ছাড়া এই রাস্তায় গাড়ি চলাচল করে না।।মাঝে মাঝে দুই একটা দেখা যায়।। শুধুমাত্র মানুষের চলাফেরা জন্য ব্যবহার করা হয়।।
রাস্তায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বন্ধুদের সাথে গভীর আড্ডায় মেতেছে রৌধিক।। একটু পরপর ঠাস ঠাস চাপড় পড়ার শব্দ পাওয়া যাচ্ছে ‌।।ব্যস্ত মনে স্কুলে যাওয়ার জন্য ছুটছে স্কুল ছাত্রীরা।।পূর্ণরায় পানি ছিটকে তাদের শরীরে আসার উপক্রম হলে ,, হাত দিয়ে চোখ আড়াল করে নিল ।।রৌধিক মুখে পানি নিয়ে আর গিলতে পারছে না ।।যখন ভয়ে ভয়ে চোখ খুলে নিলো তখন কাঁদা পানির বদলে একজন সাদা ড্রেস পরিহিত মেয়েকে নজরে এলো।।সে আর কেউ না ইফা।।ইফা হাতের ওরনা দিয়ে বাচ্চাদের আড়াল করে রেখেছে।।যার ফলশ্রুতিতে,, বাচ্চাদের বদলে ইফার ওরনাটা কাঁদায় মাখো মাখো অবস্থা।। তবে হালকা কাঁদা বাচ্চার জুতোর উপরে পড়েছে।। বাচ্চাদের হাত ধরে রাস্তা পার করে দিল।।দ্রুত পায়ে হেঁটে নিজের গাড়ির কাছে এগিয়ে গেল।। কিন্তু পানির বোতল ফাঁকা।। আশেপাশে কিছুক্ষণ কৌতূহলী চোখে তাকিয়ে রইল।।চোখ আটকে গেল রৌধিকের হাতে।।রৌধিক‌ বোতল নিয়ে বন্ধুদের সাথে আড্ডায় মেতেছে।। অপেক্ষা না করে রৌধিকের হাত থেকে পানির বোতল টা নিয়ে বাচ্চাদের জুতোয় ঢেলে দিল।। একটু ঝুঁকে টিস্যু পেপার দিয়ে জুতো গুলো পরিষ্কার করে দিলো।। আলতোভাবে এক এক করে দুজনের ললাটে অধর ছুয়ে দিল।। বিদায় দিয়ে ফিরে আসার জন্য পা বাড়ালে হঠাৎ করেই মুষুলধারে বৃষ্টি শুরু হলো।।চটজলদি গাড়ির কাছে এসে ছাতা বের করে বাচ্চাদের কাছে ফিরে আসার আগেই বাচ্চাগুলো ভিজে কাক ভেজা হয়ে গেছে।।ইফা পূর্ণরায় ছাতাটা গাড়িতে রেখে ,, চেঁচিয়ে বললো…
— “তাড়াতাড়ি নাম ,, বৃষ্টিতে ভিজবো”!!!

সাথে সাথে সারা ,, রুহি আর সানফি নামলো।। জমাট বাঁধা পানির কাছে গিয়ে,, ছয় জন একসাথে দুমদাম শব্দ আস্ফালন করতে লাগলো।।

সেদিন রৌধিক প্রথমবারের মতো কোনো মেয়ের মায়াজালের মাঝে নিজেকে হারিয়েছে।। পুরোটা সময় সে ইফার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলো।। প্রতিদিন এসে সেখান বসে থাকতো ।। কিন্তু ইফার দেখা মিলতো না।। সেদিন যখন ইফার গাড়িটা এপার্টমেন্টের ভেতরে দেখছিলো ।।তখন প্রবল জোঁকে গাড়ির দুটো কাঁচ ভেঙ্গে ফেলেছিলো।।

________________

শরীরে পানি পড়তেই লাফ দিয়ে উঠে বসলো রৌধিক।। হঠাৎ তন্দ্রায় ব্যাঘাত ঘটায় কি হচ্ছে বোধগম্য হতে বেশ খানিকক্ষণ সময় লাগলো।।তার সামনে হাতে ব্রাকেট নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে‌ আদ্রিতা।ভাইকে বেঘোরে ঘুমিয়ে থাকতে দেখে মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি আঁটে ।।এখন ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে দুহাত বুকে গুজে দাড়িয়ে আছে।রাগি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আদ্রিতার দিকে তাকালে,,ভয়ে দৌড়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেল সে।।জোরে জোরে চেচিয়ে বলে গেল,, ” মা তোমার ছেলেকে থামাও,, আমাকে মেরে ফেললো”” আদ্রিতা রুম থেকে বেরিয়ে যেতেই অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো রৌধিক।। খুব আফসোস হচ্ছে একটু আগে কতো সুন্দর একটা স্বপ্ন দেখছিলো ,,সেটা তার বোন নষ্ট করে দিল।।

_______________
মাঝখানে কেটে গেছে পাঁচ দিন।।আগের তুলনায় এখন মোটামুটি সুস্থ ইফা।। আস্তে আস্তে হাঁটতে পারে‌।এতো গুলো দিন বাড়ির সবার যত্নে কোনো অংশে কমতি ছিল না।। বর্তমানে আহিরের ফ্লাটের উদ্দেশ্য বেরিয়েছে সে ।। প্রথমে আসতে রাজি হয়নি ইফা।। কিন্তু আহিরের জোড়াজুড়িতে রাজি হয়েছে।।আজকেই শেষ দিন আহিরের সাথে দেখা করার।।
হঠাৎ শরীরটা কেমন ডেটোরিয়েট করছে।।মনে হচ্ছে আজকে না আসলেই ভালো হত।।নাকি ভয়ংকর কিছু লুকিং আছে সেখানে।।ললাটে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে আছে।। মাঝপথে ত্রিশ সেকেন্ডের রেড সিগন্যাল পড়লো।। বোতলে সাত দিন পূর্বের পানি ।।রোদের তাপে একদম গরম হয়ে আছে।। সিগন্যাল পড়াতে একদিকে ভালো হলো ইফার।। গাড়ির দরজা খুলে আস্তে আস্তে নেমে দাঁড়ালো সে।।রোড ক্রোশ করে পানির বোতল কিনে ফিরে আসার জন্য পা বাড়ালো।।

–” দেখো তো মা একে কোথাও দেখেছো কিনা” ??(ছবিটা এগিয়ে দিয়ে)

কারো আকুল কন্ঠে ফিরে তাকালো ইফা।।তার কন্ঠে মিশে আছে অদ্ভুত আকুল আকাঙ্ক্ষা।।এদিকে সিগন্যাল প্রায় শেষের দিকে।। ইফা দ্রুত তালে একবার ছবিটার দিকে তাকিয়ে নত সুরে বললো ..

— “সরি আঙ্কেল আমি তাকে কখনো দেখিনি”!!!

আর অপেক্ষা করলো না হনহন করে গাড়ি ভেতরে ঢুকে পড়লো।।ছিপ টা খুলে এক ঢোকে বোতলের অর্ধেকটা শেষ করে নিল।।চোখ বন্ধ করে নিজের ক্লান্তি দূর করার চেষ্টা করছে।।তখনই কানের কাছে বেজে উঠলো একটু আগের কন্ঠ,,

— “আমি আদ্রিক আহম্মেদ।।আর আমার পাশে ইমতিয়াজ আমহৃদ।।যদি কখনো তার দেখা পাও ,, অনুগ্রহ করে আমার এড্রেস টা তাকে দিয়ে দিও।। ড্রেস….

— “সেই কখন সিগন্যাল পড়ে গেছে ,, এখনো গাড়িটা সরাচ্ছেন না কেন??দেখুন পেছনে ভিড় জমে গেছে।।(পেছনে থেকে)

চোখ খুলে তাকালো ইফা।।পেছনে অনেকগুলো গাড়ি জমে গেছে‌।। মাথায় শুধু লোকটার কথাগুলো ঘুরছে।। অনিচ্ছা থাকার সত্ত্বেও গাড়ি সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে গেল।। চোখের সামনে ভাসছে সেই ছবিটা।। কিন্তু কোথায় দেখেছে ঠিক মনে করতে পারছে না।। অবশেষে মনে পড়েছে,, এটা ইফার বাবা ইমতিয়াজ আমহৃদ আর তার বন্ধু আদ্রিক আহম্মেদের ছবি।। ইয়াং বয়সের সাদা কালো ছবি।।যেটা কম করে হলেও প্রায় ৩০ বছর আগে তোলা হয়েছে।।তাহলে কি তাকেই ইমতিয়াজ আমহৃদ বড্ড মিস করেন!!

চলবে…🎀🎀

শঙ্খ চিলের জুটি পর্ব-০৩

0

#শঙ্খ_চিলের_জুটি 🦅🦅
#ইফা_আমহৃদ
পর্ব::০৩

ইফার চোখের অশ্রুতে রৌধিকের শার্টের আংশিক অংশ ভিজে একাকার হয়ে গেছে।। হাতের নখের আঁচড়ে রৌধিকের পিঠের নাজেহাল অবস্থা।। শার্টের উপর থেকে নখগুলো দাঁড়ালো অস্ত্রের মতো কাজ করছে।।পিঠের মাঝে মাঝে রক্তের বিন্দু বিন্দু ফোঁটা,, শার্টের উপর ভেসে আছে‌।।সাদা শার্টের মধ্যে অন্যরকম ছিপ ছিপ ডিজাইন হয়েছে।।একটা মেয়ে ইনজেকশনের কথা শুনে,, এতোটা ভয় পেতে পারে ধারণা ছিল না রৌধিকের।। শুধু নাম শুনেই এই অবস্থা ,,পুশ করলে কি হবে আল্লাহ মালুক।।আচ্ছা ইফা সত্যি ভয়ে এমন বিহেব করছে নাকি এক্সিডেন্টের রিভেঞ্জ নিচ্ছে।। আঘাতের বদলে আঘাত,, রক্তের বদলে রক্ত ।। কিন্তু একটা মেয়ে এতোটা হার্ট ল্যাস হতে পারে না।। বিনা শব্দে ঠোঁট প্রশস্ত করে হাসলো রৌধিক ।। ইফার মাথাটা আলতো হাতে নিজের বুকে চেপে শান্ত কন্ঠে বললো…

— “ভয় পেয় না ।।আমি আছি তোমার সাথে”!!

বুক থেকে মুখ তুলে তাকালো ইফা।। এতোক্ষণ রৌধিক ইফার দিকে তাকিয়ে থেকেছিল।।বিধায় মাথা তুলতেই দুজনের চোখাচোখি হয়ে গেল।।হার্ট দ্রুত তালে বিট করছে।। রৌধিকের শান্ত কন্ঠে মিশে আছে অদ্ভুত এক মাদকতা।যা বারবার গ্ৰাস করে ইফাকে।।বুকের মাঝে বয়ে যায় এক ঠান্ডা শিতল স্রোত ।।যা বোঝার মতো ক্ষমতা ইফার নেই।।রৌধিককে এতো কাছে দেখে মনে হচ্ছে,, এই বুঝি তার বুকে ভেতরে ঢুকে গেল।। –“এহেম ,,এহেম !!এই তো হয়ে গেছে !!
ডাক্তারের কন্ঠে হুশ ফিরলো দু’জনের।। সাথে সাথে চোখ নামিয়ে নিল দু’জনে।। অপ্রস্তুত হয়ে পড়লো ইফা।ডাক্তার দু’জনের কান্ড দেখে অট্টহাসিতে ফেটে পড়লেন ।।রৌধিকের পিঠ চাপড়ে মৃদু শব্দে বললেন..

— “নো ইয়াং ম্যান!! ছেলেদের লজ্জা পেতে নেই।। আমিও এমন কতো করছি।।মাঝরাতে বউকে নিয়ে পালিয়ে আসা ।।কোলে নিয়ে হাঁটা ।। চন্দ্র বিলাপ করা,, গোধূলি উপভোগ করা।।একটা কথা মনে রাখবে ,,, “”Time and tide Wait for none””।। এটাই তোমাদের বয়স ।।যা ইচ্ছে তাই করবে।।নাহলে বৃদ্ধ বয়সে আফসোস করবে।।প্রাপ্ত বয়সে দুষ্টুমি গুলো বড্ড মিস করছি”।।

লজ্জায় পড়ে গেল ইফা।। ইচ্ছে করছে মাটি ফাঁক হয়ে যাক।।আর সে মাটির ফাঁকে ঢুকে যাক!! রৌধিকও নিচের দিকে তাকিয়ে আছে।।লোকটা বোধ বুদ্ধির ছিটেফোঁটাও নেই ,, তার কথার ধরণে স্পস্ট বোঝা যাচ্ছে।।

__________________
দেড় ঘন্টা ধরে কাকের মত কা কা করে যাচ্ছে রুমকি।। সোফায় হেলান দিয়ে ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বসে আছে ইফা ।। একটু পর পর কানে হাত দিয়ে ,,, কান পরিষ্কার করার অভিনয় করছে ।।রুমকির বকবকানি শুনতে একদম ভালো লাগছে না তার।।এই বকবকানি কাকের কা কা শব্দকে ও হার মানাবে ।। নিহাত হাঁটতে পারে না।।নাহলে এখানে বসে এইসব সহ্য করতো না।।তারপাশে বসে আরামসে কফি খাচ্ছে রৌধিক।।এখানেও রৌধিক কোলে করে নিয়ে এসেছে।। অবশ্য রৌধিক কফি খেতে চায় নি।।মেয়ের উপকারের প্রতিদান দেওয়ার জন্য এইটুকু করছে।। তিনজনের ভাবনার পথেই হুরমুর করে বাড়িতে ঢুকে পড়লো ইমতিয়াজ আমহৃদ আর ইভু।।ইফার বাড়ি ফেরার পরপরই ফোন করে জানিয়েছে রুমকি।।এক সেকেন্ড অপেক্ষা না করে তখনই বাড়ির উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়েন তাঁরা।।ইফাকে ব্যান্ডেজ করা অবস্থায় দেখে বিচলিত হয়ে পড়লেন।। কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছেন।।ইফার গালে কয়েকটা চুমু খেয়ে রৌধিকের সামনে গিয়ে দাড়ালেন।।রৌধিকের হাত নিজের হাতের মাঝে বন্দি করে ইমতিয়াজ আমহৃদ বললেন…

— “তোমাকে অসংখ্য ধন্যবাদ বাবা।। আমার মেয়েটাকে ঠিক সময়ে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়ার জন্য।। আবার বাড়িতে পৌছে দেওয়ার জন্য”।।

রৌধিক এক দৃষ্টিতে ইমতিয়াজ আমহৃদ এর দিকে তাকিয়ে আছে।। ইমতিয়াজ আমহৃদ যেন তার বাবা আদ্রিক আহম্মেদের প্রতিচ্ছবি!!হয়তো দুজন মানুষের কখনো দেখা হয়নি।। তবুও একে অপরের মধ্যে সাদৃশ্য রয়েছে।। ইফার কথায় ধ্যান ভাঙলো রৌধিকের…

— “পাপা ওকে ধন্যবাদ দিয়ে আহামরি কোন লাভ নেই।। বিকজ তোমার এই বাবার বাইকের সাথে আমার এক্সিডেন্ট হয়েছে”।।

— “সে যাই হোক!! আজকাল কেউ এক্সিডেন্ট দেখলে ভয়ে পালিয়ে যায়।।এর ও তো এক্সিডেন্ট করে ,, চিকিৎসা করে বাড়ি এসে পৌঁছে দিয়ে গেছে।।(রৌধিককে উদ্দেশ্য করে ইমতিয়াজ আমহৃদ) আচ্ছা বাবা তোমার নাম কি”??

— “আফসান আহম্মেদ রৌধিক”!!

— “মাশাআল্লাহ!! খুব সুন্দর নাম”!!
বলে হাত ছুয়ালেন রৌধিকের মাথায়।। ঠোঁট নাড়িয়ে শব্দহীন ভাবে দুবার উচ্চারণ করলো ইফা,,”” রৌ-ধি-ক,, রৌধিক।। ফলশ্রুতিতে ,, ইফা ছাড়া বাকি কারো মস্তিষ্কে পৌঁছালো না।। এতোক্ষণ একসাথে আছে,,,আর কেউ কারো নাম জানে না।। হঠাৎ করেই কঠিন শব্দে গর্জে উঠলেন ইমতিয়াজ আমহৃদ…??

— ”কালকে রাতে তোমাকে আমি কি বলেছিলাম..?? ইফাকে দিয়ে আসা +নিয়ে আসা তোমার দায়িত্ব ছিল না।।আজই আমি ইফার গাড়ি বিক্রি করার ব্যবস্থা করছি ।। তুমি যদি না পারো ,, তাহলে আমি ওর দায়িত্ব নিবো”!!(ইভুকে উদ্দেশ্য করে ইমতিয়াজ আমহৃদ)

— “যত দোষ নন্দ ঘোষ।।তোমার চোখে গাড়ি ছাড়া আর কিছু পড়ে না।। ইফার কিছু হলেই গাড়ি বিক্রি করে দেবো।।সব দোষ গাড়ির।।আজকে গাড়ি ছাড়া বের হওয়াতে এক্সিডেন্ট হয়েছে,, সেটা তোমার চোখে পড়ছে না ‌।। শুধু গাড়ি বিক্রি করে দেবো।।এখানে ইফার কোনো দোষ নেই ,,সব দোষ রৌধিকের আর রিক্সাওয়ালার ।।তাই গাড়ি বিক্রি তো দূরে থাক,,, আননোন মানুষ গাড়ি টার্চ করে দেখুক”।।

কথাগুলো বলে ব্যস্ত পায়ে হেঁটে চলে গেল ইভু।। সত্যিই তো এখানে ইফার কোনো দোষ নেই সব রৌধিক আর রিক্সাওয়ালা।। ইমতিয়াজ আমহৃদ মলিন হেসে বললো…

— “তুমি ইভুর কথায় রাগ …

— “ইটস্ ওকে আঙ্কেল” !!( কথা কেড়ে নিয়ে রৌধিক)

সমস্যা হলো অন্য জায়গায় ।। ইমতিয়াজ আমহৃদের হাঁটুতে ব্যাথা। এদিকে ইভুর আসার কোনো খবর নেই।।তাই ইমতিয়াজ আমহৃদের কথায়,, বাধ্য হয়ে রৌধিক ইফাকে কোলে তুলে রুমের উদ্দেশ্য পা বাড়ালো।।এই প্রথমবার ইফা খেয়াল করলো,,, রৌধিকের শারীরিক গঠন।।দেখতে তুলনামূলক মাত্রারিক্ত ফর্সা।।চোখগুলো অদ্ভুত নীলাভ রঙের ।।অধর একটু বেশিই গোলাপী রঙের।।গালে খোঁচা খোঁচা দাড়ি।। দাঁড়ির মাঝে লুকিয়ে আছে লালচে রঙের তিল।।যেটা শুধুমাত্র খুব কাছ থেকে অবলোকন করা সম্ভব।। চুলগুলো এলোমেলো।।আহিরের চেয়েও কয়েকগুণ বেশি অবাক করা হ্যান্ডসাম।। দেখে বোঝার উপায় নেই রৌধিক বাংলাদেশি।। হয়তো কয়েক বছর দেশের বাইরে কাটিয়েছি।।
ইফাকে বেডে বসিয়ে দিয়ে,,, একটু জায়গা করে পাশে বসে পড়লো রৌধিক।।

— “এখন রেস্ট নাও।। একটু পর উঠে ফ্রেশ হয়ে কিছু খেয়ে নিও ।। ভালো লাগবে”!!!

ইফার মাথায় হাত রেখে একটু ঝুঁকে অধর ছুঁয়ালো ইফার কপালে।।আবেশে নয়ন আবৃত করে নিল ইফা।।চোখ খোলার আগেই রুম প্রস্থান করলো রৌধিক।।ব্যাপারটা বোধগম্য হতে হতে রৌধিক ধরা ছোঁয়ার বাইরে।।

__________________
আনুমানিক রাত ১০টা ছাড়িয়ে ।। রাতের আকাশে আজ তারাদের জাগরণ।। হাজার হাজার,,লক্ষ লক্ষ,,কোটি কোটি কিংবা তার চেয়েও বেশী তারারা আকাশে বুকে আলো করে রয়েছে।। তবুও চাঁদের আলোর মতো আলোকিত নয় পৃথিবীটা।।রাতের আকাশে চাঁদের অনুপস্থিতি আজ অনেক কিছু জানান দিচ্ছে।।সূর্য আর চাঁদ ছাড়া আকাশ যেন সম্পূর্ণ নিঃস্ব।। ঠিক তেমনি আজ রৌধিকের বুক টাও নিঃস্ব।। কখন থেকে ফোনটা হাতে নিয়ে বসে আছে,, ইফাকে ফোন করবে কি করবে না ।।সেই দিদা ধন্দে ভুকছে।।আধ ঘন্টা আগে শাওয়ার নিয়ে বেরিয়েছে।।পরনে একটা ছাই রাঙা টাওজার।। চুলের পানি টপটপ করে পড়ছে।। শরীরের পানি এসির ঠাণ্ডা হাওয়ায় শুকিয়ে গেছে।। অনেকক্ষন নিজেকে সামলে কাঁপা কাঁপা হাতে চোখ বন্ধ করে ইফার ফোনে ডায়াল করলো।।ইফাকে না জানিয়ে ফোন নাম্বারটা নিয়ে এসেছে।।

|||||||

ইভুর কোলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে আছে ইফা।।বোনের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে সে।ইভু ইফাকে রাজকুমারীর গল্প শুনিয়ে ঘুম পারিয়েছে।। হঠাৎ ফোনের রিং বাজতেই তট জলদি সাইলেন্ট করে নিল।।ইভু চায় না ইফার ঘুম ভাঙুক।। ইফার মাথাটা কোল থেকে নামিয়ে বালিশে রাখলো।।বেলকেনিতে গিয়ে চেক করে দেখলো আননোন নাম্বার ।।তবু রিসিভ করে দুই বার হ্যালো উচ্চারণ করলো,, কিন্তু অন্যপাশের কোনো কথা তার কানে অবধি পৌঁছালো না।।উপায় না পেয়ে কল কেটে দিল।।ফোন অফ করে ইফার পাশে রেখে রুমের লাইট নিভিয়ে নিজের রুমে চলে এলো।।

চলবে…🎀🎀

শঙ্খ চিলের জুটি পর্ব-০২

0

#শঙ্খ_চিলের_জুটি 🦅🦅
#ইফা_আমহৃদ
পর্ব::০২

বয়ফ্রেন্ডের নাম্বার টা ফোনে জ্বলজ্বল করতে দেখে মাথায় রাগ চেপে গেল ইফার ।। ইচ্ছে করছে ফোনটা তুলে কয়েকটা কথা শুনিয়ে দিতে‌।। কিন্তু আহিরের সাথে কোনো কথা বারাতে চাইছে না ইফা।। নিজের মনের মাঝে কথাগুলো ভাবতে ভাবতে ফোনটা কেটে গেল।।মিনিট পেরুতে না পেরুতেই পুর্ণরায় ফোনটা বেজে উঠলো ।। আবার আহির ফোন করেছে।।একের পর এক ফোনের রিং বেজেই চলেছে।।লাইনটা কাটতে না কাটতেই আবার বেজে উঠছে।। ইফা বিরক্তি নিয়ে ফোনটা কেটে দিলো।। কিছুক্ষণ চোখ জোড়া স্থীরভাবে
নাম্বার টার উপর দিয়ে সরিয়ে নিলো।।না চাইতেও ব্লোক করে দিল।। ইন্টারনেট কানেকশন অন করে সকল সোস্যাল মিডিয়ায় থেকে ব্লোক করে দিয়ে ফোনটা রেখে ওয়াশরুমে ঢুকে গেল।। কিছুক্ষণ পর ওয়াশরুম থেকে বের হতেই ফোনের রিংটোনের আওয়াজ ভেসে এলো।।ইফা ঠিক করে নিয়েছে,, এবারও যদি আহির ফোন করে ।।তাহলে সিম কার্ড আর ফোন কোনোটাই ইউস করবে না সে।। কিন্তু আহির না,, ফোন করছে সারা।। মুখের কোণে এক চিলতে হাসি ফুটিয়ে হাতে তুলে নিল।।রিসিভ করে কানের কাছে নিতেই শোনা গেল এক কর্কট কন্ঠস্বর…

— ফোন থাকে কই তোর?? এই নিয়ে আঠারো বার তোর নাম্বারে ডায়াল করেছি ।।আর তুই রিসিভ করার প্রয়োজন বোধ করলি না।।নাকি বয়ফ্রেন্ডের ছেকায় মন পুড়ে গেছে??

— চুপ করবি তুই!! আমি ইফা ,, বেইমান দের দেওয়া কষ্টে কষ্ট পাই না।। জাস্ট শাওয়ার নিতে গিয়েছিলাম।।হাতে ব্যান্ডজ থাকার কারণে একটু দেরী হয়েছে।।বাই দা ওয়ে,, থ্যাংক্স ।।থ্যাংক্স এ লট!!

— কানের নিচে লাগিয়ে দিবো এক চড়!! ফাজিল মেয়ে কোথাকার?? নতুন নতুন প্রেমে পড়ে ফ্রেন্ডদের থেংক্স বলছিস!! সাহস থাকলে আরেকবার বলিস ,, সেখানেই পুঁতে রাখবো।।

মুচকি হাসলো ইফা।। তার ফ্রেন্ডরা এতোটা ভালোবাসে ভাবতে পারেনি সে।।কিছুদিনের জন্য সেই ফ্রেন্ডদের কথা ভুলে গিয়েছিলো সে‌।। সারা আগেই সবটা জানতে পেরেছিল ,, আহিরের ব্যাপারে।।সেটা ইফার সামনে তুলে ধরতে এতো অভিনয় করেছিল।।আর ইফাও রাজি হয়ে যায়।। কিছু বলার আগে সারা বলে উঠলো…

— হাতের কি অবস্থা তোর !! ডাক্তার দেখিয়ে ছিস ,, মেডিসিন নিয়েছিস,, আন্টি কিছু বলেছে।।

হ্যা!! শব্দটা উচ্চারণ করে আর কিছু বলতে পারলো না।।বাহিরে থেকে অনবরত দরজায় নক করার শব্দ শোনা যাচ্ছে।।সাথে শোনা যাচ্ছে রুমকির দরজা খোলার আকুল কন্ঠস্বর।।

— ইফা তুই কি ঠিক করে রেখেছিস !! আজকে রুমের বাহিরে আসবি না।।আর কিছু খাবিও না।।ঠিক আছে আমি তোর বাবা – ভাইকে ডেকে আনছি।।তারাই যা করার করবে??

ফোনের লাইন কেটে পাশে রেখে দিল ইফা।। এই নিয়ে রুমকি মোট পাঁচ বার এসেছে ,, তাকে ডাকতে।। কিন্তু দরজা খুলে নি।।বাড়িতে আসার পর একবারও রুমের দরজা খুলেনি।। হাতের এই অবস্থা দেখলে সবাই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়বে তাই।। কিছুক্ষণ পর শোনা গেল তিনটি কন্ঠস্বর।।ক্রমশ আওয়াজ বেড়েই চলেছে।। অবশেষে বাধ্য হয়ে দরজা খুলে দিল ইফা।।হুরমুরিয়ে রুমে প্রবেশ করলো রুমকি,,ইভু,, ইমতিয়াজ আমহৃদ।। সাথে সাথে হাত পেছনে লুকিয়ে নিল ইফা।। জোরপূর্বক হাসি দিয়ে সবার সাথে কথা বলছে।।হাত পেছনে নেওয়ার কারনে সন্দেহ হলো রুমকির।।টান দিয়ে হাতটা সামনে আনতে বিচলিত হয়ে গেল সবাই!!রাগে ফেটে পড়লো ইমতিয়াজ আমহৃদ….

— একটু আগে দেখে এলাম গাড়ির কাঁচ ভাঙ্গা এখন দেখছি হাতে ব্যান্ডেজ ।। নির্ঘাত এক্সিডেন্ট এই অবস্থা হয়েছে।। কালকেই গাড়ি বিক্রি করার ব্যবস্থা করছি!!

— পাপা আমি এক্সিডেন্ট করিনি।। এক্সিডেন্ট করলে মাথায় আঘাত লাগবে কিংবা অন্য কোথায়।।হাতের কেন আঘাত লাগবে।।

— আমি অতো কিছু জানতে চাই না।।কালকে থেকে তোমাকে দিয়ে আসা+নিয়ে আসা সবটা ইভু করবে।।

কথা বাড়ালো না ইফা।।সে ভালোভাবে জানে,, ইমতিয়াজ আমহৃদ এমন কিছু করবে না ‌। শুধুমাত্র রাগের বশে এমন বলেছে।।

________________
সূর্যের আলো চারদিকে তির্যক ভাবে পড়ছে।।বেলা এখন প্রায় ১১ টা ছাড়িয়ে গেছে।।তবে ১২ টা বাজতে ঢেড় দেরী আছে।। কিন্তু দেখে তা বোঝার উপায় নেই।। সূর্যের তাপ ছাড়াই ব্যস্ত নগরী সবসময় মানুষের তাকে উত্তপ্ত থাকে।।আজ সূর্যের তাপ মানুষের তাপের সাথে যোগ দিয়েছে।।কাঠ ফাটা গরমে নগরীতে থাকা কষ্টকর ।। সেখানে মানুষ জীবিকা নির্বাহের তাগিদে বাধ্য হয়ে বাইরে পা রাখে।।
রাস্তার একপাশ দিয়ে একা একা হেঁটে চলেছে ইফা।। ঘামে শরীর ভিজে গেছে।। তবু সামনের দিকে ধেয়ে যাচ্ছে।। সেকেন্ডে সেকেন্ডে হাত দিয়ে কপালের ঘাম মুছে নিচ্ছে।। সূর্যের তাপে রাস্তায় পা ফেলা সম্ভব হচ্ছে না।।রাস্তায় যেন অগ্নি গোলকের আকার ধারণ করেছে।। সূর্যের তাপ সরাসরি রাস্তাঘাটের উপর পড়ে।।যাতে রাস্তা গরম হয়ে গেছে।।পা ফেললে জুতোর তলা বেধ করে পায়ে এসে লাগছে।। একটু আগে গাড়ি গ্যারেজে দিয়ে এসেছে।।ইভু অবশ্য বলেছিলো গাড়ি সে গ্যারেজে দিয়ে আসবে আর ইফা কেও ভার্সিটিতে পৌঁছে দিবে ।। কিন্তু ইভা নাকোচ করে দিয়েছে।।তখন যদি বুঝতে পারত ,, তার এমন নাজেহাল অবস্থা হবে।।তাহলে বিনা শর্তে রাজি হয়ে যেত।। হঠাৎ বামদিকে চোখ যেতে হাঁসির রেখা ফুটে উঠছে তার মুখে।।দূর থেকে খালি একটা রিক্সায় দেখা যাচ্ছে।। অপেক্ষা না করে সেদিকে ছুঁটে গেল।। এতোক্ষণ হাঁটার সময় একটাও খালি গাড়ি পায়নি।।রিক্সায় উঠার দশ মিনিট পর ঘটে গেল একটা অঘটন ।।রিক্সার সাথে বাইকের সংঘর্ষ হলো।। রিক্সাওয়ালা রিক্সা ধরে কোনোরকম তাল সামলাতে পারলেও ,, ইফা পারলো না।। আংশিক আওয়াজে নিচে পড়ে গেল।। উঠার শক্তি হারিয়ে কিছুক্ষণ নিস্তেজ হয়ে রাস্তায় যেমন ভাবে রাস্তায় পড়েছিল ,, তেমন ভাবে চোখ বন্ধ করে নিল।। চারদিকে ভিড় জমে গেছে।। কিন্তু সেদিকে আক্ষেপ নেই ইফার।।ব্যাথায় শরীর নাড়ানোর মতো শক্তিও খুঁজে পাচ্ছেনা।।

— সরি!!!হঠাৎ করে রিক্সা সামনে এসে পড়াতে,,, আমি ব্রেক সামলাতে পারিনি ধরুন!! আমার হাত ধরে আস্তে আস্তে ওঠার চেষ্টা করুন!!

পরিচিত কোনো কন্ঠস্বর শুনে মাথা তুলে তাকালো ইফা ।।কালকের সেই ছেলেটা দাঁড়িয়ে আছে।। বুঝতে একটুও অসুবিধে হলোনা ,,রৌধিকের বাইকের সাথে রিক্সার সংঘর্ষ হয়েছে।।রৌধিক হাত বাড়িয়ে,, আগ্ৰহ নিয়ে তাকিয়ে আছে।।রৌধিকের হাতে হাত রাখতে নিলে মৃদু চিৎকার করে উঠলো ইফা।। হাতের কনুই ছিলে সাদা চামড়া বের হয়ে এসেছে‌।।মাঝে মাঝে রক্তের ছিপ ছিপ ফোঁটা।।মাথা নিচু করে নিল ইফা।।কি করবে কিছু বুঝতে পারছে না।।অন্য হাত ব্যান্ডজ করা‌।।রৌধিক ইভাকে বুঝতে দেরী করলো না।। একটু ঝুঁকে কোমর আঁকড়ে ধরে উঠানোর চেষ্টা করলো।।হাঁটুতে টান অনুভব করে ,, চিৎকার করে রৌধিকের শার্ট চেপে ধরলো।। কয়েকবার জোরে জোরে শ্বাস নিয়ে নিজেকে সামলানো চেষ্টা করছে।।রৌধিকের বুঝতে বাকি রইল না,,হাঁটুতে কোনো ইনজুরি হয়েছে।। ইফার হাতটা নিজের থেকে আস্তে ছাড়িয়ে গলায় উপর রাখলো।। মৃদু হেসে কোলে নিয়ে নিলো।। হঠাৎ রৌধিক কোলে তুলে নেওয়াতে শকট হয়ে গেল ইফা।। অবাক চোখে রৌধিকের দিকে তাকিয়ে আছে।। ইফাকে বাইকে বসিয়ে দিল।। রিক্সাওয়ালা কে কিছু টাকা ধরিয়ে দিয়ে ,,রিক্সাটা ঠিক করে নিতে বললো!! সবাইকে যার যার কাজে চলে যেতে বলে,,,রৌধিক বাইকের পেছনের দিকটায় বসে বাইক স্টার্ট দিল।।

_________________
ফার্মেসীর বেন্ধীতে বসে আছে রৌধিক ইফা।।ডাক্তার দুজনকে একটু অপেক্ষা করতে বলে ভেতরে গেছে।।ইফা ভেতরে ভেতরে ভয়ে দাঁত দিয়ে নখ কাটছে।।ডাক্তার যদি এসে ইনজেকশন পুশ করে দেয়।। একবার রৌধিকের দিকে তাকাচ্ছে আরেকবার ডাক্তার আসছে কিনা দেখছে।।।।।।।

চলবে…..🎀🎀

শঙ্খ চিলের জুটি পর্ব-০১

0

#শঙ্খ_চিলের_জুটি 🦅🦅
#ইফা_আমহৃদ
পর্ব::০১

বয়ফ্রেন্ডের সাথে বেস্টফ্রেন্ডকে আপত্তিকর অবস্থায় দেখে পাথর হয়ে গেল ইফা।।হাত থেকে টপাটপ রক্ত ঝরছে।।রক্তে সাদা রঙের ফ্লোর,, রক্তিম আকার ধারণ করেছে।।এখনো হাতের মুঠোয় গ্লাসের টুকরো গুলো বন্দী।। হাতের রক্তগুলোর সাথে যোগ দিয়েছে চোখের অশ্রু।। কিন্তু সেদিকে আক্ষেপ নেই তার।। একটু আগের দৃশ্যগুলো চোখের সামনে ভাসছে।।গ্লাস ভাঙার শব্দে ইফার হুঁশ না ফিরলেও,, বাকি দুজনের ফিরেছে।। দাঁতে দাঁত চেপে সবকিছু সহ্য করছে ইফা।।কিছু বলার শক্তি খুঁজে পাচ্ছেনা।।সব কথাগুলো গলায় দলা পাকিয়ে আটকে আছে।।মুখ অবধি আসছে না।।যেই দুজনকে পৃথিবীর সবচেয়ে বেশী ভালোবাসতো,, বেশী ভরসা করতো।।তারা এভাবে ঠকাতে পারে ধারণা ছিল না ইফার। ইফার জানা মতে আজ ছিলো,, তার বয়ফ্রেন্ডের জন্মদিন।।তাই সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য বলেছিল আজকে আহিরের সাথে মিট করবে না।। সারপ্রাইজ দিতে এসে নিজেই এতোবড় একটা সারপ্রাইজ পেয়ে যাবে ভাবতে পারে নি।।দূর্বল পায়ে বেরিয়ে আসতে চাইছে,, হাত ধরে আটকে দিল আহির।।ইনোসেন্স ফেইস করে বললো…

— “প্লীজ এক মিনিট ইফা।।আই ক্যান এক্সপ্লেন”??

আহিরের মুখের দিকে তাকিয়ে ঘৃণায় মুখ ফিরিয়ে নিল ইফা।।এক ঝাটকা দিয়ে নিজের হাতটা ছাড়িয়ে নিল।। অপর হাতে থাকা শপিং ব্যাগগুলো ছুঁড়ে মারলো মুখের উপর।। শার্টের কলার চেপে গর্জে উঠলো সে…

— “কি এক্সপ্লেন করবি তুই?? আমাকে খুকি মনে হয় তোর কাছে।।ভালোবাসি বলে তোর সব দোষ গুণ এড়িয়ে যাবো।। কখনো না”।।

— “ইফা প্লীজ ট্রাই টু আন্ডারস্ট্যান্ড।। তুমি ভুল দেখেছো”??(ইফার হাতের উপর হাত রেখে)

সাথে সাথে ঠাস ঠাস দুটো চড় পড়লো আহিরের গালে।।গালে হাতে দিয়ে বিরক্তিকর চোখে ইফার দিকে তাকিয়ে আছে।।রক্তাক্ত হাত দিয়ে চড় মারাতে কাঁচের কিছু টুকরো ঢুকে গেল আহিরের মুখে।। কোনটা ইফার রক্ত কোনটা আহিরের রক্ত হাজারবার চেয়েও খুঁজে আলাদা করা সম্ভব নয়।। নির্ঘাত নিজের জীবনের সব খরচ ইফা বহন করে।।নাহলে দুটো চড়ের বদলে আঠারো টা চড় পড়তো ইফার গালে।। নিজেকে শান্ত করে আবার কয়েকপা এগিয়ে গেল ইফার দিকে।। ধাক্কা মেরে দূরে সরিয়ে দিলো আহিরকে।।পড়তে গিয়েও কোনোরকম সামলে নিলো নিজেকে।।

— “আমার দেওয়া ফ্লাটে থাকছিস,, খাচ্ছিস।। ইভেন্ট তোর শরীরের ড্রেসটাও আমার টাকায় কেনা।। লজ্জা করে নি একবার।। আমার টাকায় বেঁচে থেকে,, আমার সাথে বেইমানি করতে।। সমস্যা নেই,, একবার যখন তোকে চিনে ফেলেছি,,আর কোনো রিস্ক নিতে পারবো না।। কালকে মধ্যে আমার ফ্লাট খালি করবি।।আর আমার টাকা ফিরিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা তো তোর নেই।। তাই ব্যাংক ব্যালেন্স যতটাকা আছে সেটা আবার রিটার্ন ফিরিয়ে নিচ্ছি”।।

— “ইফা তুই…(করুন সুরে সারা)

— “একদম চুপ!! একটু আগে তুই আমাকে ফোন করে কি বলেছিলিস মনে আছে।। সুন্দর ছেলেরা ভালো হয়না।। তাদের গার্লফ্রেন্ডের অভাব হয়না।।আমাকে বলেছিলি যাতে আমি আহিরের সাথে ব্রেকআপ করে দেই।।আর এখন তুই ,,ছিঃ ছিঃ!! এরজন্যই আমার কাছে জিজ্ঞাসা করেছিলিস,, আজ আমি এখানে আসব কিনা”!!(ভ্রু কুঁচকে ইফা)

কথাগুলো বলে নিচ থেকে পূর্ণরায় শপিং ব্যাগ গুলো তুলে নিল।। উপস্থিত দুজনের মুখের দিকে তাকিয়ে ক্ষিপ্ত দৃষ্টি দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে এলো।। নিজের উপর প্রচুর রাগ হচ্ছে,, একবার কেন মানুষটিকে পরিক্ষা করে নিল না।। অন্ধের মত কেন বিশ্বাস করলো।। নিজেকে মনে মনে বকতে বকতে লিফটের বাটন প্রেস করলো ।। দরজা খুলেছে কিনা তা না দেখেই ভেতরে যাওয়ার চেষ্টা করলো।। দরজার সাথে মাথার সংঘর্ষ লাগার আগেই কেউ একজন হাত রাখলো মাঝখানে।।ভয়ে চোখ জোড়া খিচে বন্ধ করে নিলো ইফা।। মাথায় আঘাত অনুভব না করাতে কিছুক্ষণ পর চোখ খুললো ইফা।। কিন্তু সামনে কিছু নেই ।।দৃষ্টি সরিয়ে পাশে দেওয়ার আগেই শোনা গেল এক অপরিচিত কর্কট কন্ঠস্বর…

— “একটু অপেক্ষা সহ্য হয়না তোমার ।।নাকি চোখে দেখতে পাও না।। স্ক্রিনে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে,,লিফট এখনও 11ফ্লোরে আছে।।আর তুমি বাটন প্রেস করে ঢুকে যাচ্ছ।। আমার মতো একটা মানুষকে তোমার চোখে পড়ে না।।বেশী তাড়া থাকলে সিঁড়ি বেয়ে নেমে যেতে?? এতে হাঁটু ভালো থাকতো।। জাস্ট রেডিকুলারস”।।

লোকটার কাজে প্রথম খুশী হলেও পড়ে মেজাজ বিগড়ে গেলো ইফার।।একটু হেল্প করছে বলে যা নয় তাই বলবে ।। ধন্যবাদ জানাবে শেষ।।না উল্টো কথা শুনিয়ে দিল।।

— “আচ্ছা আপনি সত্যি মানুষ তো।।না মানে এতোবড় একটা হাতির মতো মানুষকে আমার চোখে পড়লো না”।।(ভাবার অভিনয় করে ইফা)

সাথে সাথে তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলো রৌধিক ।।আঘাত পাওয়া থেকে বাঁচিয়েছে।।একটা ধন্যবাদ দিবে ।।না উল্টো হাতির মতো মানুষ বলে অপমান করছে।। চেঁচিয়ে বললো উঠলো…

— ”ওয়াট ডু ইউ মিন বাই হাতির মতো মানুষ?? আমাকে তোমার কাছে হাতির মতো মানুষ মনে হয়‌।।তাহলে আমার সন্দেহ টাই ঠিক ছিল,, তোমার চোখে সমস্যা আছে।।আরেকটা কথা ,, এই হাতির মতো মানুষটা যদি তোমার কাপালের সামনে হাত না দিত এতোক্ষণে তুমি হসপিটালে থাকতে”??( ভাব নিয়ে রৌধিক)

— ”অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।।আজ আপনি যদি আমার কপালে সামনে হাত না দিতেন।।আমি শুধু হসপিটালে না একবারে মরেই যেতাম।।প্রথমবার গিনিস বুক আমার নাম উঠতো লিফটের সাথে ধাক্কা লেগে প্রাপ্ত বয়স্ক একজন তরুণী জীবন হারিয়েছে।কতোটা ভালো হতো আপনি বলুন!!এইসব আপনার মাথা ঘুরে ,,লাইক সিরিয়াসলি ”।।

ইউ বলে থেমে গেল রৌধিক ।।শোনা গেল পরিচিতি একটা গলা..

— ”লিফটে মাত্র একজন আসতে পারবেন?? যেকোনো একজন চলে আসুন”।।

দমে গেল ইফা।। সে পরে এসেছে ,, তাই তাকে পড়েই যেতে হবে।।অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে বলল…– যান??রৌধিক ইফার দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে বললো…– তুমি যাও।।এমন কথা শুনে দুজনে মুচকি হেসে দিল,, একটু আগে কিভাবে একে অপরের সাথে উঠে পড়ে ঝগড়া করছিলো,, আর এখন সাপোর্ট করছে।।লিফট ম্যান দ্বিতীয় বার তাড়া দিলে,, রৌধিককে রেখে ইফা দ্রুত উঠে পড়লো লিফটে।। রৌধিকের কিছু বোধগম্য হওয়ার আগেই লিফটের দরজা বন্ধ হয়ে গেল ।।ভেতর থেকে শোনা গেল এক কাষ্ঠহাসির শব্দ।।সাথে কিছু কথা….

— “একটু আগে কি জানো বলছিলেন?? সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামলে হাঁটু ভালো থাকে ,, তাহলে একটা কাজ করুন।।আপনি বরং এবার সিঁড়ি বেয়ে নেমে যান।। আপনার হাঁটু ভালো থাকবে”!!( ইফা)

লিফট অলরেডি টু ফ্লোরে চলে গেছে।। আবার কখন লিফট আসবে ,, তার হিসেব নেই।।আর অপেক্ষা না করে,,, সিড়ি দিয়ে নেমে গেল রৌধিক!!!

_________________

— ”আঙ্কেল আমার গাড়ির কাঁচ কে ভেঙেছে”??(ইফা)

— “মারিয়া দিছে??(গার্ড)

— “আঙ্কেল কিসব বলছেন আপনি?? কে মারিয়া?? কিসের মারিয়া??মারিয়া কি দিছে?? আমি আপনাকে জিজ্ঞেস করছি,, আমার গাড়ির কাঁচ কে ভেঙ্গেছে?? মারিয়ার খবর নয়!! আজব”!!(বিরক্তিকর কন্ঠে ইফা)

— ”আমি তো সেটাই বলিতেছি,, আপনার গাড়ির কাঁচ কালো শার্ট পড়া একজন প্রাপ্ত বয়স্ক ছেলে ভাঙ্গিয়া ফেলিয়াছে”??

— ”ছেলেটা ভেঙ্গে ফেললো আর আপনি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখেছেন?? তাহলে আপনাকে কেন রাখা হয়েছে ??আটকালেন না কেন”??

— ”বাইকের কন্টোল হারিয়ে আপনার কাঁচের উপর মারিয়া দিয়াছে?? সবকিছু বুঝিবার আগেই হইয়া গেল, আমি কিছু করিতে পারি নাই”।।

— “যে ছেলেটা আমার গাড়ির কাঁচ ভেঙ্গেছে।।সে এখন কোথায়”??

— “এখন এপার্টমেন্টের ভেতরে আছে?? যায় নাই”।।

একবার মনে হচ্ছে,, আহির গাড়ির কাঁচ ভেঙ্গেছে ।। পরক্ষনে আবার মনে হচ্ছে না।।ইফা নামার আগে সিঁড়ি বেয়ে নেমে কাঁচ ভেঙ্গে আবার পালিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়।। সবকিছু কেমন কাকতালীয়।।
এখন ছেলেটাকে ফোর্স করলে হয়তো কিছু টাকা ধরিয়ে দেবে ।।এর চেয়ে বেশি কিছু করতে পারবে না।। কিন্তু এই সামান্য ব্যাপার নিয়ে কোনো রুপ ঝামেলায় জড়াতে চায় না ইফা।।হাতে থাকা শপিং ব্যাগগুলো গার্ডের দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো,,”” এগুলো কোনো অসহায় কে দিয়ে দিবেন”।। তারপর দ্রুত গাড়িতে উঠে বেরিয়ে গেল বাড়ির উদ্দেশ্যে।।মনটা একটুও ভালো নেই।।গাড়ির কাছে এসে চোখ কপালে ইফার।। গাড়ির দুটো কাঁচ ভাঙ্গা।। এইচএসসি পরীক্ষার পর গাড়িটা তার ভাই ইভু গিফ্ট করছিল।।গাড়িটার জন্য অনেকবার বায়না ধরেছিলাম বাবার কাছে।। ব্যস্ত নগরীতে ইফার জন্য গাড়ি কিনতে তিনি নারাজ।। বাবাকে যখন অনেকবার বলেও তিনি নাকোচ করলো ।।তখন ইভু শর্ত দিয়েছিল,, এইচএসসি তে প্লাস আসলেই,,পছন্দের গাড়ি কিনে দিবে।। মাঝে মাঝে রিকন্ডিশনে গিয়ে পছন্দের গাড়িটা দেখে আসতো।।বাকি সময় শুধু পড়াশোনা করতো।।

চলবে।

(ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন,, ধন্যবাদ)

শ্রাবণ দিনের বৃষ্টিতে পর্ব-১৪ এবং শেষ পর্ব

0

#শ্রাবণ_দিনের_বৃষ্টিতে
#পার্ট_১৪+অন্তিম পর্ব
#Writer_Liza_moni

সেদিনের সেই চড়ের শোধ তুলবো আমি।কী ভাবছেন কী উনি?আমি সব ভুলে গেছি? উঁহু আমি কিচ্ছু ভুলি নাই।

ফুল দিয়ে সাজানো বিছানায় বসে বসে এই সব বিড়বিড় করছে আয়রা। কিছুক্ষণ আগেই পরিবারের সবাই মিলে এক প্রকার জোর করে বিয়ে করিয়ে দেয় আয়রা আর প্রান্তর।

প্রান্ত বিয়েতে রাজি ছিল না।
সবার উপরে খুব বিরক্ত সে।

রুমের দরজা খোলার শব্দ পেয়ে আয়রা নড়ে চড়ে বসলো।প্রান্তর গায়ে একটা সাদা পাঞ্জাবি।আর আয়রার পরনে প্রান্তর মায়ের বিয়ের শাড়ি।

রাত প্রায় বারোটার কাছাকাছি।
প্রান্ত দরজা বন্ধ করে আয়রার কাছে গিয়ে বললো,,

এই পিচ্চি তুমি বিয়েটা আটকালে না কেন?

আয়রা হাই তুলতে তুলতে বললো,,
হারিয়ে ফেলার আগে নিজের করে নেওয়াটা খুবই দরকার ছিল।

আমি তোমার ছিলাম কবে যে হারিয়ে ফেলবা?

শ্রাবণ দিনের বৃষ্টিতে যেদিন চড় মেরেছিলেন না,,
সে দিন থেকেই আপনি আমার হয়ে গেছেন।🥱

ফেনীতে আসার দরকার ছিল কোনো?

আমি আসছি নাকি? আপনার আম্মু আব্বু, আর আমার আম্মু আব্বুই তো নিয়ে আসছে।এক দিকে ভালোই হলো,, আমি আবার ঘুরে বেড়াতে পছন্দ করি।

আয়রার খামখেয়ালি কথা বার্তায় প্রান্ত প্রচন্ড বিরক্ত হচ্ছে।

বিছানার ঐ পাশে দেওয়ালের দিকে গিয়ে ঘুমাও। আমার জায়গা খালি করো। ঘুম পাচ্ছে আমার।

আয়রা ত্যাড়ামি করে প্রান্তর জায়গায় শুয়ে পড়লো।

প্রান্ত ভ্রু কুঁচকে আয়রার দিকে তাকিয়ে আছে।
কী বলছি শুনতে পাও নাই?

Don’t disturb me,,,
আমি ঘুমাবো।
আয়রা চোখ বন্ধ করে ঘুমানোর প্রস্তুতি নেয়।

প্রান্ত রেগে গিয়ে আয়রার হাত ধরে টান মেরে শোয়া থেকে উঠে বসালো।

তোমাকে তো আমি ভদ্র মেয়ে মনে করতাম।আর সেই তুমিই এমন অভদ্রতামি করছো কেন?

আমি আবার কী করলাম?

আমার মাথা করছো।ঐ পাশে গিয়ে ঘুমাও। নাইলে তোমার খবর আছে।

আয়রা দুষ্টুমি হাসি দিয়ে বলল
কয়টার খবর শুনি?

ধ্যাত।প্রান্ত বিরক্ত হয়ে বেলকনিতে চলে গেল। সেখানে রাখা মোড়ায় বসে আকাশের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো।
আজ নাকি আমার বাসর রাত 😂😂

আয়রা ও বিছানা থেকে নেমে প্রান্তর কাছে চলে গেল।
জামাই আমার ভয় পাইছে।

প্রান্ত আয়রার দিকে না তাকিয়ে কিছু না বলে মনে মনে হেসে বললো,,পাগলে বকবক করতে করতে নিজেই চুপ হয়ে যাবে।

আয়রা সেই কখন থেকে প্রান্তর পাশে দাঁড়িয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছে আর বকবক করে যাচ্ছে।প্রান্তর কোনো ভাবান্তর নেই।সে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে তো আছেই।
.
.
আয়রার মা বাবা কে ফেনীতে নিয়ে আসে প্রান্তর মা। আয়রা কে এত তাড়াতাড়ি বিয়ে দিতে রাজি ছিলেন না তারা।প্রান্তর মা আর বাবার অনেক অনুরোধে না করতে পারেন নাই।

আর আয়রা ও রাজি ছিল এই বিয়েতে। শুধু প্রান্ত এখন বিয়ে করতে চায় নাই।আরো বছর খানেক পর বিয়ের ইচ্ছে ছিল তার।

.
আয়রা অনেক বকবক করে এক পর্যায়ে অভিমান করে রুমে গিয়ে বিছানায় শুয়ে ঘুমিয়ে পড়ে।প্রান্ত হাসে। মেয়েটা আসলেই পিচ্চি।প্রান্ত ও রুমে গিয়ে
ঘুমন্ত আয়রার কপালে চুমু খেয়ে ওকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়ে।

.
.
সকালে আয়রার ঘুম ভাঙ্গলে নিজেকে কারো বুকের মাঝে অনুভব করে। মাথা তুলে দেখে প্রান্ত তার দিকে চেয়ে আছে আর মুচকি হাসছে।

গুড মর্নিং বউ।

প্রান্তর কথায় যেনো আয়রা বেশ অবাক হলো।রাতে বলে বিয়েতে রাজি ছিল না আবার এখন গুড মর্নিং বউ ও বলছে?এত পরিবর্তন?

আয়রা শোয়া থেকে উঠে বসলো। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো ৮টা বাজে। অনেক রাত করে ঘুমানোর ফলে এত বেলা হয়ে গেলো ঘুম থেকে উঠতে।

আয়রার দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে প্রান্ত। শাড়িটা সরে গিয়ে কোমরের গাঢ় কালো তিলটা দেখা যাচ্ছে।
প্রান্তর চোখ সেই দিকে।

ক্রাশ খাইছি।

আয়রা ভ্রু কুঁচকে প্রান্তর দিকে তাকিয়ে বললো কার উপর?

তোমার কোমরের ঐ তিলটার উপর।প্রান্তর কথায় আয়রা হকচকিয়ে গেল। লজ্জা পেয়ে শাড়ি দিয়ে কোমর ঢেকে ফেললো। অতিরিক্ত অসভ্য তো লোকটা।

আয়রা কে লজ্জা পেতে দেখে উচ্চ শব্দে হেসে উঠলো প্রান্ত।
আয়রা বিরক্ত হয়ে ওয়াস রুমে চলে গেল ফ্রেশ হওয়ার জন্য।

মুখ ধোয়ার সময় ওয়াস রুমের আয়নায় নিজের দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছে আয়রা।
সময়ের ব্যবধানে আজ সে একজন বিবাহিত মেয়ে। অথচ গতকাল এই সময় ও সে অবিবাহিত মেয়েদের তালিকায় ছিল।
.
.
সেই কখন ওয়াস রুমে গেছেন ম্যাডাম,এখনো আসার নাম নেই।বলি সারা দিন কী ওখানেই বন্ধি থাকবেন?

আয়রা ওয়াস রুমের দরজা খুলে মাথাটা বের করে বলে মাত্র ১০ মিনিট হইলো।
শুনুন,,
আমার জন্য একটা শাড়ি নিয়ে আসেন। আমি গোসল করবো।

প্রান্ত অবাক হয়ে বললো,,
গোসল করবা মানে? আমাদের মাঝে কিছু হইছে নাকি যে গোসল করবা?

আয়রা শয়তানি হেসে বললো,,
হয় নাই,, ভবিষ্যতে হবে।

আয়রার কথা শুনে প্রান্ত ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেল।আর কী বলবে সে? মেয়েটা যে হাটে হাঁড়ি ভাঙ্গতে ভালোই পারবে তা ভালো করেই বুঝতে পারছে সে।

এই এলিয়েন?
যান আমার জন্য শাড়ি নিয়ে আসেন।

আমি কোথায় পাবো শাড়ি?

আপনার আম্মুর কাছ থেকে নিয়ে আসেন।
বলে আয়রা দরজা বন্ধ করে দিয়ে হাসতে লাগলো।

প্রান্ত মায়ের কাছে যাওয়ার সময় দেখলো ড্রইং রুমে কিছু প্রতিবেশী আন্টি বসে আছেন।আর পান চিবুচ্ছেন।

বিয়ে হয়ে গেছে শুনতে দেরী আসতে দেরি নাই এই মহিলাদের। পাড়ার সিসি ক্যামেরা।প্রান্ত কে দেখতে পেয়ে এক ভদ্র মহিলা বললেন,,

রাতে ঘুম হয়েছে প্রান্ত?

সিরিয়াসলি ভাই? এইগুলো কেমন কথা?এই মহিলারে না আমি আন্টি ডাকি? তার মানে আমি তার ছেলের মতো।আর তিনি আমারে এই সব জিগায়?দিন দুনিয়া শেষ হইয়া যাইতাছে।

হ্যাঁ আন্টি। ঘুম হয়েছে। না হওয়ার কিছু নাই।

তো কত দিনের প্রেম তোমাদের?

মহিলার কথায় প্রান্ত প্রচন্ড বিরক্ত হলো। জীবনে একটা প্রেম ও করলাম না।আর আমি করমু প্রেম করে বিয়ে?

জন্মের আগে থেকেই প্রেম শুরু করছিলাম আন্টি। এখন ২৫-২৬ বছর হচ্ছে।
.

প্রান্ত আর সেখানে না দাঁড়িয়ে রান্না ঘরের দিকে গেল।

প্রান্ত কে রান্না ঘরে আসতে দেখে প্রান্তর মা প্রিয়াকে বললো,,
আমার রুমের বিছানার উপর আয়রার জন্য একটা শাড়ি, ব্লাউজ, পেটিকোট,চুড়ি
রাখা আছে।প্রান্ত কে সাথে নিয়ে এই সব আয়রার জন্য পাঠিয়ে দে।

প্রান্ত কিছু বলতে যাবে তার আগেই প্রিয়া বললো,
আমরা জানি ভাইয়া। তুই এখন কী বলবি?আয় আমার সাথে। আমি ভাবির সব প্রয়োজনীয় জিনিস দিয়ে দিচ্ছি।
.
.
প্রান্ত শাড়ি নিয়ে ওয়াস রুমের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।
আয়রা দরজা খোলো।আর এই শাড়ি নিয়ে আমাকে রক্ষা করো।

আয়রা ওয়াস রুমের ভেতর থেকে চিল্লিয়ে বললো,,
আপনি এখন কোনো একজনের হাসব্যান্ড।সো আপনার এখন অনেক দায়িত্ব পালন করতে হবে। আর দশ মিনিট অপেক্ষা করুন।

প্রান্ত কপালে হাত দিয়ে বিছানায় এসে বসে পড়লো।মন মনে বললো,,

কেউ যদি আমার কাছে বিয়ে সম্পর্কে জানতে চায় তাহলে আমার উত্তর হবে,,
জীবনে ও বউ নামক প্যারা ঘাড়ে নিশ না ভাই। জীবন ত্যানা ত্যানা করে দিবে। প্রথম দিনেই
আমার জীবন শেষ।
.
.
সদ্য গোসল করে বের হওয়া,বেগুনি রঙের শাড়ি পরা,ভেজা চুলের আয়রা কে দেখে মনের মাঝে ঘোর নেশা জাগে প্রান্তর।মন যেনো বার বার চিৎকার করে বলছে,,
এই মেয়েকে জীবনের শেষ নিঃশ্বাস অবদি ভালোবাসা যাবে।
প্রেম নেশা জেগে উঠে প্রান্তর অবচেতন মনে।

💜
প্রায় বছর দুয়েক পরের কথা।
আয়রা নীল শাড়ি পড়েছে।আর প্রান্ত হলুদ পাঞ্জাবী।আজ তাদের হিমু রুপা সাজার ইচ্ছে হয়ে ছিল।
বাইরে ঝুম বৃষ্টি। শ্রাবণ দিনের বৃষ্টি। শ্রাবণের আজ পাঁচ তারিখ। এই দিনেই আয়রা আর প্রান্তর দেখা।প্রান্তদের বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে রাস্তার পাশে একটা কদম ফুল গাছ আছে। অনেক ফুল ফুটেছে সেই গাছে।

আয়রা বায়না করলো,,
এই বৃষ্টির মধ্যে প্রান্ত কে তার জন্য এক গুচ্ছ কদম ফুল নিয়ে আসতে হবে।

এই দুই বছরে আয়রা কে ভীষণ ভালোবেসে ফেলেছে প্রান্ত।

ঝুম বৃষ্টির মধ্যে গেল ফুল আনতে।প্রান্ত যাওয়ার দেরী আয়রা ছাদে চলে গেল বৃষ্টিতে ভিজবে বলে।

ছাদের রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে আয়রা। তার প্রান্ত আসছে।হাতে এক গুচ্ছ কদম ফুল। বৃষ্টিতে ভিজে হলুদ পাঞ্জাবী টা গায়ের সাথে লেপ্টে আছে।নিচ থেকেই আয়রা কে ছাদে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলো প্রান্ত।ছাদে গিয়ে ঝুম বৃষ্টির মধ্যে আয়রার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে বললো,,

আমি কখনো প্রেম করিনি। কোনো একজন কে প্রচন্ড ভালো বাসবো বলে। আমি কখনো কোনো মেয়ের হাত ধরিনি। কোনো একজনের হাত ধরে বৃদ্ধ হবো বলে। আমি কখনো কারো মায়ায় আবদ্ধ হইনি। কোনো একজনের মায়ায় আবদ্ধ হবো বলে।
আর আমার সেই কোনো একজন টা হলো আয়রা আরফি। আমার সারা জীবনের সাথী। ভালোবাসি বউ।

আয়রা গাল ফুলিয়ে মুখ টা অন্য দিকে করে ফেলে।

প্রান্ত বসা থেকে উঠে আয়রার কাঁধ ঝাঁকিয়ে বললো,,
কী হয়েছে বউ?

কী হয়নি বলুন?
এমনি এক শ্রাবন দিনের বৃষ্টিতে আপনি আমায় কি জোরে চড়টাই না মেরে ছিলেন। আমি কী ভুলে গেছি নাকি?
এক রাশ অভিমান নিয়ে বললো আয়রা।

প্রান্ত আয়রার কোমর জড়িয়ে টান মেরে নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে আয়রার কানে কানে বললো,,,

আজকের এই শ্রাবণ দিনের বৃষ্টিতে আদর দিয়ে আমি আমার বউয়ের সব অভিমান ধুয়ে দিবো।

💝সমাপ্ত 💝

শ্রাবণ দিনের বৃষ্টিতে পর্ব-১৩

0

#শ্রাবণ_দিনের_বৃষ্টিতে 🖤
#পার্ট_১৩
#Writer_Liza_moni

শরৎ এর নীল আকাশ,,স্বচ্ছ নীলের মাঝে তুলোর মত সাদা মেঘের ভেলা ভাসছে।সাদা কালো রঙের একটা শাড়ি পড়ে কাশফুল হাতে নিয়ে বড় একটা মাঠের মাঝখানে উদাসীন হয়ে হাঁটছে আয়রা। খোলা চুল বাতাসে উড়ছে।মন ভালো নেই তার।আজ থেকে প্রায় দশটা দিন আগে প্রান্তর সাথে কথা হয়েছে তার।
প্রেমালাপ না, ভালো আছেন?
ভালো আছি।এমনি কয়েকটা কথা হয়। মনটা কেমন
অশান্তিতে ভরে গেছে। বিষন্নতা কাটিয়ে উঠতে পারছে না সে।

হিতৈষী চলে গেল আজ অনেক দিন। আয়রার চেয়ে ও হিতৈষী শাড়ি পরতে ভালবাসত খুব।হাতে গোনা কয়েকটা শাড়ি ছাড়া আর শাড়ি নেই আয়রার। তার পরনের শাড়িটা ও হিতৈষীর।

মা বাবা আগে থেকে অনেক টা স্বাভাবিক হয়েছেন। তবে বাড়িতে এখন আর হাসির আওয়াজ পাওয়া যায় না।সবাই মুচকি হেসে উড়িয়ে দেয়।মন খুলে হাসে না অনেক দিন।

এই পিচ্চি শুনো,,

আয়রা থামলো।হাঁটা থামিয়ে পাশ ফিরে তাকিয়ে মুচকি হাসলো।

আপনি আবার আমার কল্পনায় আসছেন?

না তো। তুমি আমাকে নিয়ে কল্পনা ও করো বুঝি?

আয়রা হাঁটতে লাগলো আবার। তারপর দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বললো,,

কিছু মানুষ কল্পনায় সুখি। বাস্তবে না। তাদের দলে আমি ও আছি। আপনাকে নিয়ে ভাবতেই আমার ভালো লাগে।

প্রেমে পড়েছো বুঝি?

হা হা হা।প্রেম সেতো এক অদৃশ্য বস্তু।তারে ছোঁয়া যায় না।দেখা যায় না।অনুভব করা যায়।আর আমি তো যে দিন আপনাকে প্রথম দেখেছিলাম শ্রাবণ দিনের বৃষ্টিতে, সেদিনই মন হারিয়ে ফেলেছি।

এতো ভালোবাসো আমায়?

জানি না। আপনাকে একটু ছুঁয়ে দেখি? আয়রা হাত বাড়ায় প্রান্ত কে ছুঁয়ে দেখতে।
না নেই।প্রান্ত তার আশে পাশে কোথাও নেই।

আয়রা আনমনে হাসলো।সে আগেই জানতো এটা তার ভ্রম।প্রান্ত তো ফেনীতে। বান্দরবান আসবে কীভাবে?এটা তার কল্পনার প্রান্ত ছিল।
.
.
পশ্চিমের আকাশে সূর্য ডুবে যাওয়ার দৃশ্য ছাদে দাঁড়িয়ে উপভোগ করছে প্রান্ত। লাল নীল হলুদ কমলা এত রঙের মিশ্রণ দেখে মনটা এমনিতেই ভালো হয়ে যাবে।

সূর্যোদয় যেমন সুন্দর ঠিক তেমনি সূর্যাস্ত ও সুন্দর।
আর এটাই প্রমাণ করে যে,, শুরুর মতো শেষটা ও সুন্দর হয়।

ভাইয়া,,,
ছোট বোন প্রিয়ার ডাকে পেছনে ফিরে তাকায় প্রান্ত।
কিছু বলবি?

প্রিয়া প্রান্তর দিকে এগিয়ে এসে বললো,,
মা তোর জন্য মেয়ে দেখছে।

জানি।

তুই কি মায়ের পছন্দতেই বিয়ে করে ফেলবি?

জানি না রে।

আচ্ছা ভাইয়া আমাকে একটা সত্যি কথা বলবি?

কী কথা?

তুই কি কাউকে পছন্দ করিস?

প্রান্ত প্রিয়ার চুল টেনে দিয়ে বললো,,
তোর বয়স কত?

১৬ বছর।

আমি তোর কত বছরের বড়?

নয় বছরের।

তাহলে তুই আমাকে এই সব জিজ্ঞেস করিস কী করে?

মুখ দিয়ে।

প্রান্ত প্রিয়ার মাথায় একটা গাট্টা মেরে বললো অনেক পেকে গেছিস।যা নিচে যা। না হলে মাকে বলে কেলানি খাওয়াবো।

প্রিয়া ঠোঁট ফুলিয়ে বললো,,
তোর মতো কুত্তা মার্কা উগান্ডার মতো ভাই যেনো আর কোনো মেয়ের না হয়। অভিশাপ দিলাম তোরে,, জীবনে ও বিয়া হইতো না দেখিস।

শোকুনের অভিশাপে গরু মরে না।ভাগ এখান থেকে।
.
.
চার দিকে মাগরিবের আজানের ধ্বনি ভেসে আসছে। আয়রা নামাজ পড়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে বসে আছে আজান শেষ হওয়ার জন্য।

আজান শেষ হলে নামাজ পড়ে মায়ের কাছে গেলো।মা বিছানায় বসে ছিলেন। আয়রা গিয়ে মায়ের পাশে বসলো।

চা বানাই?খাবা?

হুম।

আয়রা উঠে চলে যাওয়ার সময় মা বলে উঠলো,,
শুন আয়রা,,

বলো,,

সামনে তো তোর পরিক্ষা। পড়ালেখায় মনোযোগ দে। রেজাল্ট ভালো হলে ঢাবি তে এপ্লাই করবি। আমার মেয়ে যথেষ্ট মেধাবী। আমি জানি মন দিয়ে পড়া লেখা করলে অবশ্যই তুই চান্স পাবি।ঢাকায় চলে যাবো না হয় আমরা।

আয়রা কিছু বললো না। রান্না ঘরে চলে গেল তার আর মায়ের জন্য চা বানাতে।

চুলায় গরম পানি বসিয়ে দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আয়রা। পড়ায় মন বসাতে না পারার কারন অনেক। তার মধ্যে অন্যতম কারণ হলো প্রান্ত। লোকটা কয়েক দিনের জন্য বেড়াতে এসে আমার মনটাই চুড়ি করে নিয়ে চলে গেছে।
.
.
প্রান্ত বিছানায় আধশোয়া অবস্থায় লেপটবে কিছু একটা কাজ করছে। বাবার ব্যবসায় জড়িয়েছে আজ সপ্তাহ খানেক হয়েছে।

এমন সময় প্রান্তর মা রুমে এসে তার পাশে গিয়ে বসলেন।

কিছু বলবা আম্মু? মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে বললো প্রান্ত।

মা মোবাইল হাতে নিয়ে একটা মেয়ের ছবি প্রান্ত কে দেখিয়ে বললো,,

দেখ তো পছন্দ হয় নাকি?

প্রান্ত মোবাইলের স্ক্রিনে তাকিয়ে হা হয়ে গেল।

মা প্রান্তর মুখের রিয়েকশন দেখে হাসলেন। পছন্দ হয়েছে?

এটা তো আয়রা।আফরিন আন্টির মেয়ে।
ওর ছবি তোমাকে কে দিলো?আর মেয়েটা মাত্র এইচএসসি পরীক্ষা দিবে।

হুম। তোর আফরিন আন্টি দিয়ে ছিল ছবিটা। মেয়েটা কে আমার বেশ পছন্দ হয়েছে।

আয়রা কে এত তাড়াতাড়ি বিয়ে দিয়ে দিবে?

না। বিয়ে তো দিতে চাচ্ছে না। আমি তো জোর করলাম। এমন মেয়ে কে কেউ হাত ছাড়া করে? তোর সাথে ওকে খুব সুন্দর মানাবে।

মা আমার মাথা ধরেছে খুব। এক কাপ কফি দাও তো। গরম হতে হবে,,

আচ্ছা আমি যাচ্ছি।

মা চলে গেলে প্রান্ত মোবাইল হাতে নিয়ে মেসেঞ্জারে আয়রা কে টেক্সট দিলো।
.
.
আয়রা চা বানিয়ে মায়ের কাছে নিয়ে গেলো। বাড়িতে এখন সে আর তার মা ছাড়া কেউ নেই।বাবা আছরের দিকে বের হয়েছেন যে এখনো ফিরেননি।

আয়রা চায়ে চুমুক দিয়ে বললো,,
কোথাও বেড়াতে গেলে ভালো হইতো।এই এক জায়গায় কেমন দম বন্ধ হয়ে আসছে।

আমাদের বাড়িতে যে একটা ছেলে বেড়াতে এসে ছিল তার কথা মনে আছে তোর?

হ্যাঁ। কেন বলো তো?

ওর মা তোর জন্য বিয়ের প্রস্তাব পাঠিয়েছেন।প্রান্তর বউ করতে চান তোকে।

মায়ের কথা শুনে আয়রা বিষম খেলো।মনে লাড্ডু ফুটলো তার।

তুমি কি বলছো?

আমি তো রাজি হয়নি।

মায়ের কথা শুনে আয়রার উজ্জ্বল মুখ খানি চুপসে গেল।

আমার মেয়ে পড়ালেখা করবে। নিজের একটা পরিচয় তৈরি করবে। বিয়ে টিয়ে এই সব পরের কথা।

ধুর,, বিয়ের পর কী পড়ালেখা করা যেতো না নাকি?
এখন যদি অন্য কাউকে বিয়ে করে ফেলেন উনি। তাহলে কি হবে?
মনে মনে বললো আয়রা।
.
.
রুমে এসে পড়তে বসছে সে।বইয়ের পাশে মোবাইল দেখে হাতে নেওয়ার জন্য শয়তান উস্কে দেয়।বই বন্ধ করে মোবাইল নিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ে।ডাটা অন করতেই মেসেঞ্জারে টুং টুং করে মেসেজ আসতেই থাকে। সেখানে প্রান্তর টেক্সট দেখে আয়রা অজান্তেই হাসলো।

এই মানুষটা জানেই না যে আমি সারাদিন তার টেক্সটের জন্য অপেক্ষায় থাকি।

“এই পিচ্চি,,
তোমার কী এখন বিয়ে করার ইচ্ছে আছে?”

“থাকবে না কেন?”

“এত তাড়াতাড়ি বিয়ে করতে হবে না। পড়ালেখার প্রতি মনোযোগী হও।”

“সেটা আপনাকে বলতে হবে না। আমার অনেক শখ জাগছে যে আমি আমার বিয়ে খাবো।”

“মার্চে তোমার পরিক্ষা।আর এখন তোমার বিয়ের শখ জাগছে?”

“হ্যাঁ জাগছে।”

“পিচ্চি তুমি বড় হইলা না।”
.
.
প্রান্ত তার নিজের ও ভালো লাগে আয়রা কে। তবে সেটা শুধুই ভালো লাগা।
ভালোবাসা না।

আয়রার মনে এক অদ্ভুত শান্তি লাগছে। মনে হচ্ছে জ্বলন্ত আগুনের উপরে কেউ বরফ গলানো ঠান্ডা পানি ঢেলে শান্ত করে দিয়েছে।

“ভালোবাসা কখনো কাউকে বলে আসে না। হঠাৎ চলে আসে মানুষের জীবনে।এই ভালোবাসা নামক জিনিসটা কেমন অদ্ভুত না? কাউকে হাসায়, কাউকে কাঁদায়। কাউকে বাঁচতে শিখায় আর কাউকে মরতে।কেউ ভালোবাসার মানুষটিকে হারিয়ে জীবন্ত লাশ হয়ে যায়।আর কেউ ভালোবাসার মানুষ কে সারা জীবনের জন্য নিজের করে পেয়ে নতুন করে জীবন গড়তে শিখে যায়। তবু ও দিন শেষে একটাই কথা সবার মুখে শোনা যায় সেটা হলো,, ভালোবাসা সুন্দর ♥️।”

বালিশ বুকে জড়িয়ে ধরে প্রান্তর সাথে হালকা ঝগড়া করছে আর বিছানায় গড়াগড়ি দিয়ে হাসছে আয়রা। অনেক দিন পর মেয়ের মুখে হাসি দেখে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা আয়রার মা ও হাসলেন। বুঝলেন তিনি আয়রার মোবাইলের স্ক্রিনে প্রান্তর ছবি দেখে যে তার মেয়ে মন হারিয়ে বসে আছে।বিয়েতে অমত করে আর লাভ নেই।মেয়ে যাকে ভালোবাসে,যার সাথে সুখী থাকতে পারবে বলে মনে করে,, তার সাথেই বিয়ে হোক। ভালোবাসার মানুষটিকে হারিয়ে ফেলার কষ্টটা যেনো আমার মেয়েকে না ছোঁয় আল্লাহ।এই মেয়েটা ছাড়া আমাদের আর এই দুনিয়ায় কেউ নেই।

চলবে,,,, 🍁

শ্রাবণ দিনের বৃষ্টিতে পর্ব-১২

0

#শ্রাবণ_দিনের_বৃষ্টিতে 🖤
#পার্ট_১২
#Writer_Liza_moni

ভোর ৬ টার দিকে আয়রার জ্ঞান ফিরে আসে। নিজেকে ফ্লোরে পড়ে থাকতে দেখে রাতের সব কিছু মনে পরে যায়।
ফ্লোর থেকে উঠে বসলো সে। মাথাটা কেমন ভারি হয়ে আছে।বসা থেকে দাঁড়িয়ে সে বেলকনির দিকে এগিয়ে গেল।এখনো সে একটা অবয়ব দেখতে পাচ্ছে ।পর্দায় ছায়া পড়েছে। একদম মানুষের মতো প্রতিচ্ছবি দেখা যাচ্ছে। আয়রা সাহস করে এগিয়ে যায় বেলকনিতে।

বেলকনিতে এসে কাউকে দেখতে পেল না সে।তাই আবার রুমে এসে পর্দার দিকে তাকালো। মানুষের মত ছায়া দেখা যাচ্ছে। কিন্তু বেলকনিতে গাছ ছাড়া তো কিছুই নেই। আয়রা আবারো গেল বেলকনিতে।

ক্যাকটাস গাছের ছায়া পড়েছে পর্দায়। অদ্ভুত একদম মানুষের মতো। আয়রা গাছের টবটা তুলে আছাড় মারল।

রেগে গিয়ে বলল
আজাইরা গাছ তোর জন্য আমি রাতে ভয় পেয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ছি।
.
.
সময় যাচ্ছে নিজের গতিতে। থেমে নেই সে কারো জন্য। হিতৈষী চলে যাওয়ার আজ ১২ দিন পেরিয়ে গেছে।প্রান্ত আজ বান্দরবান থেকে ফেনীতে ফিরে যাবে।
এখন বেলা ১০টা। হিতৈষীর মৃত্যুর পর থেকেই এই বাড়ির সব মানুষ কেমন রোবটের মত হয়ে গেছে। প্রয়োজন ছাড়া কেউ কথা বলে না কারো সাথে।

আয়রা ও কেমন চুপ হয়ে গেছে। আগের মতো আর তেমন রুম থেকে বের হয় না।

প্রান্ত তৈরি হয়ে সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চললো মেইন রোডের দিকে। আয়রা বেলকনিতে দাঁড়িয়ে প্রান্তর চলে যাওয়া দেখছে। হিতৈষীর মৃত্যুর পর থেকে মা আর রান্না করেন না।আয়রাকেই রান্না করতে হয়।মাঝ রাতে হিতৈষী আর আয়জা ছবি বুকের মাঝে জড়িয়ে ধরে মাকে ফুঁপিয়ে কান্না করতে দেখে আয়রা। চোখ ভিজে যায় তার ও।

কিন্তু নিজেকে শক্ত করে মায়ের চোখের পানি মুছে মাকে বুকের মাঝে জড়িয়ে ধরে আয়রা।তার মা টা কেমন জানি চুপচাপ হয়ে গেছে। সন্তান যে হারায় সে জানে সন্তান হারানোর কষ্ট কেমন হয়?
.
.
প্রান্ত বাসে জানালার পাশে বসে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে। বুকের ভেতরটা কেমন ফাঁকা ফাঁকা লাগছে তার।মনে হচ্ছে যেনো সে কিছু একটা ফেলে যাচ্ছে।

আয়রা রান্না ঘরে গিয়ে রান্নার জোগাড় করতে লাগলো। এমন সময় মা রুম থেকে বেরিয়ে রান্না ঘরে গিয়ে আলু কাটতে বসলেন।

মাকে রান্না ঘরে দেখে অবাক হলো আয়রা।
আম্মু তুমি রুমে যাও আমি রান্না করতে পারবো।

মা চোখ রাঙিয়ে আয়রার দিকে তাকালেন। ঝাঁঝালো কন্ঠে বললেন,,
আগামীকাল থেকে কলেজে যাবি। রান্না করতে হবে না তোকে।যা এখান থেকে।

মায়ের ধমকে আয়রা কেঁপে উঠল।আর কিছু না বলে সেখান থেকে সে রুমে চলে আসলো।
বাড়িটা কেমন ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। আয়রা আর তার মা ছাড়া বাড়ীতে কেউ নেই।বাবা কাজে গেছেন।

আয়রা ছাদে যাবার সময় চোখ পড়লো প্রান্ত যেই রুমে ছিল সেই রুমের দিকে।
এত কিছু ঘটে গিয়েছে যে আয়রা প্রান্ত কে কোনো শাস্তি দিতে পারেনি।
রুমে ঢুকে চার দিকে চোখ বুলিয়ে দেখলো আয়রা।প্রান্তর গায়ের গন্ধ এখনো এই রুমে আছে। বিছানার উপর একটা খাম দেখে ভ্রু কুঁচকে গেল আয়রার।সে খামটা হাতে নিয়ে দেখলো খামের ভেতর একটা চিঠি।

কৌতূহল বসতো আয়রা খাম থেকে চিঠি টা বের করে পড়তে শুরু করলো,,,

শুনো আয়রা,,,
তোমার জন্য এই চিঠি। তুমি আগের মতো আর তেমন কথা বলো না, চুপ করে রুমে বসে থাকো তাই আমাকে এই চিঠি লিখতে হচ্ছে।
জীবনের একটা সময় না একটা সময় আমাদের ঠিকই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে।এটা নিশ্চিত ভবিষ্যৎ। তুমি তোমার দুইটা বড় বোন হারিয়েছো। আর তোমার মা বাবা তাদের দুই মেয়ে। আমি তোমাদের দেখে অবাক হয়েছি, হিতৈষী তোমাদের আপন কেউ না।রক্তের কোনো সম্পর্ক নেই ওর সাথে তোমাদের। হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন সে। তারপর ও তোমরা তাকে এত আপন করে নিয়েছো? সত্যি বলতে এমন মানুষ আমি প্রথম দেখেছি। নিজেকে শক্ত করো মেয়ে। তোমার মা বাবার এখন তুমি ছাড়া আর কেউ নেই।এই ভাবে চুপ হয়ে গেলে তাদের মন খারাপ আর ও বেশি হবে। আমি তো কয়েক দিনের অতিথি ছিলাম মাত্র। দুই মাস থাকার কথা থাকলেও থাকতে পারছি না। আমার কাজ শেষ তাই ফিরতে হচ্ছে। আমি কী কাজে এসে ছিলাম সেটা না হয় অজানাই থাক। কোনো দিন দেখা হলে বলবো তোমায়।
সামনে তোমার পরিক্ষা। পড়ালেখায় মন দাও। জীবন তো এখন ও বাকি।
অনেক বকবক করে ফেলছি।আর কিছু বলবো না।
ভালো থেকো।

ইতি আদনান প্রান্ত।

আয়রা চিঠি টা পড়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। চাইলেই কী সব কিছু ভুলে যাওয়া সম্ভব?যে হারায় সে বুঝে, হারিয়ে ফেলার কষ্টটা কত জঘন্য হয়।
.
.
রাত প্রায় ১০টা।আয়রা বিছানায় শুয়ে শুয়ে প্রান্তর কথা গুলো খুব গভীর ভাবে ভাবছে।
নিজেকে শক্ত করতে হবে।মা বাবার মুখে সেই আগের মতই হাসি ফুটিয়ে তুলতে হবে।

বালিশের নিচ থেকে মোবাইল বের করে ফেসবুকে লগ ইন করলো আয়রা। অনেক দিন পর ফেসবুকে আসলো। অনেক মেসেজ, নোটিফিকেশন,জমে আছে।
সে গুলো দেখতে লাগলো সে।
.
.
প্রান্ত লং জার্নি করে এসে অনেক ক্লান্ত হয়ে গেছে।পিঠ ব্যথা করছে তার। চিৎ হয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লো।

আহ শান্তি।
আসার পর থেকেই মা তাকে জেকে ধরেছিল,, আয়রার বোন হিতৈষী কী করে মারা গেলো?

প্রান্ত প্রতি উত্তরে বলে ছিল,,
হায়াত শেষ তাই আল্লাহ তাকে নিয়ে গেছে। আপাতত এত প্রশ্ন ভালো লাগছে না।
.
.
প্রান্ত ফেসবুকে গিয়ে দেখলো আয়রা ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট একসেপ্ট করেনি এখন ও।
প্রান্ত চাইলেই মেসেজ দিতে পারে, কিন্তু না সে দিবে না।

অন্য দিকে আয়রা ফেসবুকে প্রান্তর আইডি খুঁজতে লাগলো।ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট এর দিকে চোখ পড়তেই প্রান্তর আইডি ভেসে উঠে।

অজান্তেই মুচকি হাসলো সে।ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট একসেপ্ট করে আয়রাই আগে টেক্সট দিলো,,,

আসসালামুয়ালাইকুম, কেমন আছেন? আপনি কি ঠিক মতো বাড়ি পৌঁছেছেন?

মেসেঞ্জারে টুং করে শব্দ হলে প্রান্ত সেখানে গিয়ে দেখে আয়রার মেসেজ। মুচকি হাসে সে ও।

ওয়ালাইকুমুস সালাম। আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।আর আমি অনেক আগেই বাড়ি এসে পৌঁছাইছি।
.
আচ্ছা। ধন্যবাদ 💕
.
কেন?
.
চিঠির জন্য।
.
ওহ আচ্ছা। বুঝতে পারছো নিশ্চয়ই আমি কী বলতে চাইছি?
.
হুম। নিজেকে শক্ত করতে হবে।মা বাবা কে ভালো রাখতে চাইলে।
.
তুমি খুব বুদ্ধিমতি মেয়ে। খুব সহজেই অনেক কিছু বুঝতে পারো। তোমাকে চঞ্চলতায় মানায়।এই ভাবে তোমাকে এমন চুপচাপ হয়ে বসে থাকা মানায় না।
.
.
প্রান্তর মেসেজ সিন করে রেখে দিয়েছে আয়রা। রিপ্লাই করেনি। বিষন্নতায় ছেঁয়ে আছে মন। একাকিত্ব যেনো গ্রাস করেছে তাকে।কারো সাথে কথা বলতে মন চাইছে না ইদানিং। হিতৈষী কে ভীষণ মনে পড়ছে আজ।

হিতৈষী বেঁচে থাকলে আয়রা তাকে বলতে পারতো তার প্রথম প্রেমের কথা।
প্রান্তর প্রতি তৈরি হওয়া আবেগের কথা।

লোকটা কে জ্বালাতে গিয়ে কখন যে তার প্রেমে পড়ে গেছে সে নিজেও জানে না।

চার দিকে কেমন শূন্যতা বিরাজ করছে। আয়রা বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকালো।বর্ষা শেষের দিকে। শ্রাবণ মাসের আর তিন ,চার দিন আছে।
আকাশে আজ মেঘ নেই।তারা দেখা যাচ্ছে শুধু।অর্ধ চাঁদ। আয়রা আকাশের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো।

আয়জা আপু, আর হিতৈষী আপু,,
কেমন আছিস তোরা দুজন?

আমার কাঁধে এত সব দায়িত্ব দিয়ে তোরা ঐ দূর আকাশের তারা হয়ে গেছিস। আচ্ছা হিতৈষী আপু ভালোবাসায় কী অনেক যন্ত্রনা?মন হারিয়ে ফেললে কি আর ভালো থাকা যায় না?

জানিস আমার না ঐ খচ্চর প্রান্তর কথা খুব মনে পড়ছে।দেখতে ইচ্ছে করছে হঠাৎ। এমন কেন হচ্ছে বলতো?

চলবে,,,, 🍁

শ্রাবণ দিনের বৃষ্টিতে পর্ব-১১

0

#শ্রাবণ_দিনের_বৃষ্টিতে🖤
#পার্ট_১১
#Writer_Liza_moni

মায়ের মাথার পাশে বসে আছে আয়রা।মা চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে। চোখের কোনা বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে বালিশে। আয়রা মায়ের চোখের পানি মুছে দিয়ে বললো,,
আমি তো এখনো বেঁচে আছি আম্মু। তুমি এই ভাবে কান্না করলে তো অসুস্থ হয়ে পড়বে। আমার দিকে তাকাও,,দেখো আমি বেঁচে আছি। তোমার আয়রু বেঁচে আছে।

মা পিট পিট করে চোখ মেলে আয়রার দিকে তাকালেন। টেবিলের উপর খাবার রাখা।গত কাল রাত থেকে কিচ্ছু মুখে দেয়নি আয়রার মা।

শোয়া থেকে উঠে তিনি আয়রা কে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরলেন। আমি কী পাপ করছি বল না আয়রা ? আমার আয়জা ও আমাকে ছেড়ে পরপারে চলে গেল। আমার হিতৈষী ও চলে গেল।

আয়রার খুব কান্না পাচ্ছে। কিন্তু মায়ের সামনে কান্না করা যাবে না। মায়ের সামনে নিজেকে শক্ত রাখতে হবে।

আয়রা মায়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো,,গত কাল রাত থেকে কিচ্ছু খাও নাই। এমন করলে তো আর ওরা কেউ ফিরে আসবে না।

আয়রা মায়ের চোখের পানি মুছে দিয়ে টেবিলের উপর থেকে খাবারের প্লেটটা হাতে নিয়ে ভাত মাখিয়ে মাকে জোর করে খাইয়ে দিল।
মাকে খাইয়ে দিয়েছে অথচ সে নিজেই এখনো কিচ্ছু খায়নি।
.
.
আয়রাদের বাড়ির ছাদে দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে প্রান্ত। মনের মাঝে কেমন একটা অশান্তি কাজ করছে তার।এই পরিবারের কেউ তার আপন না। তবুও এই পরিবারের সবার জন্য কেমন খারাপ লাগছে।
অনেক মেয়ের ক্রাশ প্রান্ত।৬ ফুট লম্বা,ফর্সা গায়ের রং, মুখে চাপদাড়ি,, আর হালকা সবুজ চোখের মণিতে যেনো মেয়েরা তাদের হারিয়ে ফেলে প্রান্তর মাঝে।কোনো কালেই মেয়েদের প্রতি প্রান্তর তেমন কোনো আকর্ষণ ছিল না। কিন্তু সেই শ্রাবণ দিনের বৃষ্টিতে যখন হিতৈষী কে দেখেছিল এক অন্যরকম অনুভুতি কাজ করে ছিল তার মনে। এটাকে ঠিক প্রেম বলা যায় কিনা জানা নেই তার। হিতৈষীর মৃত্যুর দিন প্রান্ত জানতে পারে যে হিতৈষী হিন্দু। অদ্ভুত না ব্যাপার টা,,?সে এক হিন্দু মেয়েকে দেখে ক্রাশ খাইছিলো।

প্রান্ত একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল।তবে যাই হোক হিতৈষী মেয়েটা অনেক লাকি ছিল। হিন্দু হওয়ার পর ও আয়রার মা বাবা তাকে নিজের মেয়ের মতোই ভালোবাসেন।কখনো কাউকে বুঝতে দেননি মে হিতৈষী তাদের মেয়ে না।
এমন মানুষ এখন ও পৃথিবীতে আছেন।
ভালোবাসার মানুষটিকে এই দুনিয়ায় আপন করে নিতে না পারলে ও ঐ দুনিয়ায় আপন করে নিতে পারবে।এক সাথে বাঁচতে না পারলে ও এক সাথে মরতে তো পেরেছে।

ছাদের দরজা মেলার আওয়াজে ধ্যান ভাঙল প্রান্তর। পেছনে ফিরে তাকিয়ে দেখে আয়রা আসছে।রাত প্রায় ১টা বাজে।
আয়রা ভ্রু কুঁচকে এগিয়ে এসে বললো,,

এখন ও জেগে আছেন যে ?ঘুমান নাই?

নাহ,, ঘুম আসছে না।

তুমি এত রাতে এখানে?

আয়রা কিছু বললো না।প্রান্ত ও আর জিজ্ঞেস করল না।

ঝি ঝি পোকার ডাক আসছে চার দিক থেকে।গা শিউরে উঠার মতো পরিবেশ। আকাশে চাঁদ নেই।মেঘে ঢাকা আকাশ। মেঘের গুড়ুম গুড়ুম শব্দ ভেসে আসছে মাঝে মাঝে। বৃষ্টি আসবে মনে হয়।
পাহাড়ি এলাকায় এত রাতে কেউ তেমন জেগে নাই।সবার বাড়ির লাইট অফ করা।মাকে ঘুমের ঔষধ খাইয়ে ঘুম পারিয়ে ছাদে আসছে আয়রা। বাবাকে দেখেছিল ড্রইং রুমের সোফায় বসে বসে হিতৈষী আর আয়জার ছবি দেখতে।

উপর থেকে বাবা মানুষটা অনেক শক্ত। ঠিক ডাবের মত। উপরে যেমন শক্ত।ভেতরে ঠিক ততটাই নরম।বাবারা হয় তো ছেলের থেকে ও মেয়েকে বেশি ভালোবাসেন। আয়রার কোনো ভাই নেই। আল্লাহ দেননি। তার পর ও আয়রার বাবার কোনো অভিযোগ ছিল না। তিনি শুধু বলতেন,,

ছেলেরা এখন যা করতে পারে না মেয়েরা তা করে। আমার মেয়েরা ও বড় হবে। অনেক বড় কিছু করে আমার মুখ উজ্জ্বল করবে। ছেলে দিয়ে কী হবে? আমার দুই টা রাজকন্যা আছে ওরাই আমার সব।
.
.
জানেন,,
আমার যখন ঘুম আসতো না,
তখন আমি হিতৈষীর আপুর ঘুম ভাঙ্গিয়ে ছাদে নিয়ে আসতাম। অনেক সুন্দর চাঁদ থাকতো আকাশে। এমন অন্ধকার থাকতো না চারপাশ।ওর কোলে মাথা রেখে ছাদের মাঝে বিছিয়ে রাখা পাটিতে ঘুমিয়ে পড়তাম। হিতৈষী আপু আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতো। এমন ও সময় গেছে আমরা ছাদেই রাত কাটিয়ে দিতাম।

আপু কখনো বিরক্ত হতো না। আমার সব সিক্রেট আপু জানতো।এতটা বিশ্বাস করতাম আমি তাকে।ওর কাছে আমার সব আবদার ছিল।

আয়রার চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়ছে। আয়রা প্রান্তর দিকে তাকিয়ে বললো,,
আপুর শরীরের আর কিছুই হয়তো অবশিষ্ট নেই।সব আগুনে পুড়ে গেছে। অথচ দেখুন গতকাল সকালে ও এই পৃথিবীতে ছিল। সুস্থ ছিল।আর সময়ের ব্যবধানে দেখুন,,
আপু আর আমাদের মাঝে নেই। হিতৈষী আপু কখনো আয়জা আপুর অভাব অপূর্ণ রাখেনি।

আয়রার কথায় প্রান্তর ভ্রু যুগল আপনা আপনি কুঁচকে গেলো।
প্রান্ত শান্ত কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো,,
আয়জা কে?

আয়রা হাত দিয়ে চোখের পানি মুছে বললো,,
আমার আপন বোন।

সে কোথায়?

মারা গেছে আজ থেকে ছয় বছর আগে।

প্রান্তর বুকের মাঝে চিন চিন করে উঠলো।সে বুঝতে পারছে এই পরিবার তাদের দুজন আপন মানুষ কে চিরতরে হারিয়ে ফেলেছে।

প্রান্ত একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল।
কী হয়ে ছিল আয়জার?

আয়রা নির্দ্বিধায় বলল,,
ধর্ষণ,,,

প্রান্ত নড়েচড়ে উঠলো। প্রশ্নের উত্তর যে এটা হবে তা ভাবতেই পারেনি সে।
প্রান্ত আর কিছু জিজ্ঞাসা করলো না।

অনেক রাত হয়েছে।এত রাতে ছাদে দাঁড়িয়ে থাকার দরকার নেই।নিচে আসো।আর শুনো,,
নিজেকে শক্ত করো। তোমার আব্বু আম্মুর এখন তুমি ছাড়া আর কেউ নেই।নিজে যদি শক্ত না হও তাহলে তাদের কে সামলাবে? তাদের যাওয়ার ডাক এসেছিল তাই তাদের যেতে হয়েছে। একদিন না একদিন আমাদের সবাইকে যেতে হবে।সেই ডাকের সাড়া দিতে হবে।হতে ও তো পারে,,
আজ রাতে ও সেই ডাক এসে গেছে।

প্রান্তর দিকে তাকালো আয়রা।লোকটা সত্যি কথাই বলছে। নিজেকে শক্ত করতে হবে।

চলে আসো।এত রাতে ছাদে দাঁড়িয়ে থাকার দরকার নেই।
প্রান্ত চলে গেল সেখান থেকে। আয়রা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। হঠাৎ চার দিকে শো শো করে বাতাস বইতে লাগলো। বিদ্যুৎ চমকাতে লাগলো। আয়রার চুলের বাঁধন খুলে চুল গুলো বাতাসে উড়তে থাকে। হঠাৎ আবহাওয়ার এমন পরিবর্তনের কারণে কিছুটা ঘাবড়ে গেল আয়রা। দুই হাত দিয়ে চুলের খোঁপা করে ছাদ থেকে নিচে নেমে আসলো।

ভয় পেয়েছে সত্যি।মনে হচ্ছিল কেউ তার পাশে দাঁড়িয়ে ছিল। মনের ভয় আরকি। আয়রা তড়িগড়ি করে রুমে এসে জানালা সব বন্ধ করে দিলো।লোড সেডিং হয়েছে। কারেন্ট চলে গেছে। অন্ধকার ঘরে আয়রার দম বন্ধ হয়ে আসছে।ভয়ে বুক ধড়ফড় করছে। অন্ধকার কে খুব ভয় পায় সে।

খুব করে হিতৈষীকে মনে পড়ছে তার। বিদ্যুৎ চমকানোর আলোয় বেলকনিতে কাউকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা মনে হচ্ছে আয়রার।কেউ একজন সেখানে দাঁড়িয়ে আছে। কোনো অবয়ব,,,

বাতাসের শো শো শব্দ যেনো কয়েক গুণ বেড়ে গেছে। আয়রার ভয়ে খিঁচুনি উঠে যাওয়ার উপক্রম।গলা থেকে একটা শব্দ ও বের হচ্ছে না তার।

বিদ্যুৎ চমকানোর আলোয় আবার বেলকনির দিকে তাকালো আয়রা। কেমন যেন লাগছে তার। হাত পা আসাড় হয়ে আসছে। অন্ধকার ভয় পায় বলে সে সব সময় লাইট অন করে ঘুমায়। আয়জার মৃত্যুর পর থেকেই অন্ধকার কে খুব ভয় পায় আয়রা।

বেলকনিতে কারো অবয়ব দেখতে পেয়ে ভয়ে বুকের ভেতর মোচড় দিয়ে উঠে। আয়রা একটু এগিয়ে যাবে ঠিক এমন সময়,,একটা বিড়াল মেউ মেউ করে উঠলো।বিড়ালটা সেখান থেকে যাবার সময় এটা মাটির ফুলের টব ফ্লোরে পড়ে ভেঙ্গে যায়।আর সেই আওয়াজ শুনে আয়রা সেখানেই জ্ঞান হারিয়ে ফ্লোরে পড়ে যায়। প্রচন্ড ভয় এবং দুশ্চিন্তা,আর না খেয়ে থাকার জন্য জ্ঞান হারায় সে।
.
.
চলবে,,,, 🍁