Friday, July 18, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1375



অদ্ভুত প্রেম পর্ব-৫+৬+৭

0

অদ্ভুত প্রেম❤️
Writer-Afnan Lara
[৫]+[৬]+[৭]
-‘এখন বললে সমস্যা কি?’

-‘আমি ওকে বিয়ের দিন সারপ্রাইজ দিবো’

-‘তোদের যখন প্রথম দেখা হয়েছিলো তখন তাহা টু তে পড়তো।ওর কি তখন কার কথা আদৌ মনে আছে?’

-‘আমার বিশ্বাস ওর সবকিছু মনে আছে।সে কল্পনাও করতে পারবে না আমি তাকে কতটা ভালোবাসি!’
——–
পরেরদিন সকালে

-‘হাইচ্ছু!!!!!!আল্লাহ গো মরে যাবো মনে হয়!
শয়তানটার জন্য আমার এখন এই অবস্থা।
নাক মুছতে গিয়ে হঠাৎ দেখি সৌরভের পুরো পরিবার এসে হাজির।

-‘তোমার এমন অবস্থা হলো কিভাবে?’

-‘(সব আপনার ছেলের জন্য)জানি না!’

-‘আসলে মা তাহা কাল যে পানিতে পড়ে গেছিলো তাই মনে হয়’

-(‘হুম।আমাকে এক বালতি পানি দিয়া চুবাইছিল।ঐ কারনে’)

আমাকে দেখা শেষে সবাই সোফার রুমে চলে গেলো।
শুধু শয়তানটা বাদে।কি হলো যান রুম থেকে।
আমার একে তো সর্দি তার উপর মুখ দিয়ে শ্বাস নিতেও পারতেছি না।অনেক কষ্ট হচ্ছিলো।চোখ দিয়ে পানি বেয়ে বেয়ে পড়ছে উনার এরকম লুক দেখে।
হঠাৎ কি বুঝে চলে গেলেন উনি।
কাশতে কাশতে অজ্ঞান হওয়ার মতো অবস্থা হয়ে গেছে আমার।

-‘সরি আমি ভুলে গেছিলাম তোমার যে সর্দি।আমার তাকানো দেখেই তোমার এমন হয় কেন?’

-‘আমার কষ্টটা আপনি কখনও বুঝেন নাই।বুঝবেন ও না’

-‘ও তাই?’

এটা বলেই উনি আমার টেবিলের ড্রয়ারে কি যেন খুঁজা শুরু করলো।ব্লেড নিলো একটা
এরপর আমার দিকে তাকিয়ে নিজের হাতে কয়েকটা টান দিয়ে ফেলে বললেন,’ আশা করি এখন তোমার কষ্টটা বুঝছি’

-‘আপনি কি পাগল?এটা বলেই উনাকে ধরে বিছানায় বসিয়ে হাতে ব্যান্ডেজ করে দিলাম।আমি এক পাগল
আমার কপালে জুটেছে আরেক পাগল’

-‘(আমি জানি তুমি আমায় ভালোবাসো)
সবাই আমাদের বিয়ে নিয়েই কথা বলছে বাহিরে।দাঁড়াও একটা কথা বলে আসি’

-‘আমার একটা কথা ছিলো’

-‘হ্যাঁ বলো বাবা’

-‘বিয়ের সব কিছু যদি ঢাকায় হয় কেমন হয়? ওখানকার সব কিছুই মোটামুটি ভালো।’

-‘(এটা তো আমার ইচ্ছে ছিলো যে ঢাকায় আমার বিয়ে হবে উনি জানলো কিভাবে)?’

-‘তাহলে তো ভালই হয়।দুই পরিবার একসাথে থাকবে।
জুনের ২১তারিখে এঙ্গেজমেন্ট’
আমরা ঢাকায় চলে এলাম সবাই।সৌরভ বিরাট একটা হোটেল বুক করেছে।আমরা সবাই এখন ঐ হোটেলে।
আজ আমার জন্মদিন।কিন্তু সবাই এমন ঠান্ডা কেন সেটাই বুঝছি না।আমার জন্মদিন ভুলে গেছে নাকি?
শয়তানটাও তো এখনও উইস করেনি।কচু!’

-‘ম্যাম, এটা আপনার’

-‘একটা গাউন।কিন্তুু কে পাঠালো?
ভিতরে দেখি একটা লেটার।’
Dear,
জামাটা পরে বিকালে হোটেলের সামনে আসিও।সাথে আমার শ্বশুর শাশুরি কেও আনবা।’

-“ওহ ঐ শয়তানটার কাজ তাহলে’
——-
বিকালে রেডি হয়ে হোটেলের সামনে গেলাম।সৌরভ আমাদের নিয়ে একটা পার্টি সেন্টারে আসলো।
বিরাট একটা হল।চারিদিকে আমার ক্যান্ডিড ছবি সব
।আমার ছোটবেলা থেকে এখন পর্যন্ত সব ছবি।
দেখে মনে হচ্ছে আমার চারপাশে উনার লোক ছিল আর খালি আমার পিক তুলছে।কিন্তুু উনিতো বললো আমাকে ইদানিং দেখছে।
হায়রে এত মানুষ কেন!এমন জানলে আরেকটু সাজুগুজু করতাম।
এই পোলা আমার মনের খবর জানলো কেমনে?’

হঠাৎ সৌরভ আমার হাত ধরে হলের মাঝখানটাই দাঁড়া করালো।বিরাট একটা কেক আনা হলো।চকলেট কেক!

-‘শুভ জন্মদিন ‘

-‘(যাক মনে আছে)ধন্যবাদ দিলাম উনাকে।সবাই আমাকে বার্থডে উইস করলো।
কেক কাটলাম।আম্মু আব্বু,উনার আম্মু আব্বুকে,নানুকে, জিসাকে কেক খাওয়াইলাম।সৌরভকেও খাওয়াইলাম
আচ্ছা একটা কথা বলেন আমার এত পুরোনো ছবি পাইলেন কই?’

-‘টপ সিক্রেট।বিয়ের দিন জানতে পারবা’

-‘হুহ ঢং!!
যাই হোক!অনেক ভালো কাটছে দিনটা।রাত তখন ১০:০০টা বাজে।উনি আমাকে মেসেজ দিলেন
Dear,
আমার রুমে আসো।’

আমি মেসেজ দিলাম-‘ নাহ আসবো না,এত রাতে গেলে লোকে কি ভাববে?’

-‘আর একবার বলো আসবা না?’

-‘আসতেছি’
ফোন রেখে সোজা উনার রুমে গেলাম
লাইট অফ ছিল।কই আপনি?’

কেউ একজন আমার হাত ধরলো টান দিয়ে তারপর বারান্দায় নিয়ে গেলো।সেখানে মোমবাতি জ্বলছিল।
একটা ছোট কেক রাখা।পুরো চকলেট কেক।এই কেক গুলা আমি লাইক করি কিন্তুু মুখে লেগে যায় ওটা বিরক্ত লাগে।’

-‘কেক কাটো’

আমি চুপচাপ কেক কেটে উনাকে খাইয়ে দিতে গেলাম।খেলো না।হুহ আমার এতো শখ নাই সেধে খাওয়ানোর।’

কেকটা এত মজা ছিল যে পুরোটা নিয়ে খেয়ে ফেলছি। এত টেস্ট ছিলো।লোভ সামলাতে পারিনি।কি হলো আপনি খান নাই কেন??’

-‘এখন খাবো’

এটা বলেই আমার গালে লেগে থাকা Chocolate গুলা খেয়ে নিলো আঙ্গুল দিয়ে নিয়ে।এক ধাক্কা দিলাম উনাকে।ছিঃ!!এগুলা কেউ খায়?আমার তো দেখেই বমি পাচ্ছে।
উনার সাথে কথা বলায় ব্যস্ত ছিলাম।কিছুক্ষণ পর হঠাৎ দেখলাম আমার উড়নাতে আগুন লেগে গেছে মোমবাতি থেকে উনার গায়ে যাতে না লাগে উনাকে জোরে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলাম বমি।

-‘কি হলো?!!!’

এটা বলেই সৌরভ খেয়াল করলাম তাহার উড়নাতে আগুন লেগেছে তাই আগে সে ওকে ঠেলা দিয়েছে।সৌরভ তাড়াতাড়ি করে ওর উড়না টান দিয়ে ফেলে দিলো নিচে।তাহা খুব ভয় পেয়ে গেছে।
-“আমার জন্য এমন হয়ছে আজ যদি ওর কিছু হয়ে যেতো
ওর চোখে মুখে ভয় দেখে ওকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম’

-‘(হাত পুড়ে গেছে কিছুটা।উনাকে বলবো না।নইলে ব্যাথা ফিল করার জন্য নিজের হাত পুড়বে এবার’)

-‘নাও আমার শার্টটা পরে নাও।তোমাকে রুমে দিয়ে আসি চলো’

পরেরদিন সকালে আমরা দুই পরিবার সকালের নাস্তা একসাথে বসে করতেছি।
সৌরভ আমার সাথে বসলো।আমি হাত উড়না দিয়ে ঢেকে রাখছি।নাহলে দেখে ফেলবে।
শয়তানটা পা দিয়ে খালি খোঁচা মারছে।এর ভেতর খাবার কি ঝাল!পানি পানি!!সৌরভ পানি এগিয়ে দিলো।

-‘ওয়েটার!’

-‘জী স্যার’

-‘আমি তোমাদের মানা করি নাই খাবারে বেশি ঝাল দিবা না।আমি আলাদা টাকা দি নাই এর জন্য?’

-‘আর এমন হবে না স্যার’
—–
-‘আমার আম্মু আব্বু আর সৌরভের আম্মু আব্বু সবাই মিলে গল্প করছে।কাল আমাদের এঙ্গেজমেন্ট নিয়ে।
সৌরভ আমার হাত ধরে উনার রুম নিয়ে এলেন।কি হয়েছে?’

-‘একটা থাপ্পড় দিবো।আমার থেকে কথা লুকানোর জন্য’

-‘কি লুকাইছি?’

-‘কাল যে হাত পুড়ছো আমাকে বলো নাই কেন?’

-‘না ভাবলাম ‘

-‘শাট আপ।আর একটা কথাও বলবা না’

এই বলে উনি হাতে মলম লাগিয়ে দিয়েছিলেন।
——-
এঙ্গেজমেন্টের সব কিছু রেডি।সৌরভ আমার হাত ধরে আংটি পরিয়ে দিলো।এটা তো সেই আংটিটা যেটা আমি ঐদিন পছন্দ করেছিলাম।উনি জানলো কিভাবে?আমি তো বলি নাই!শেষে আমিও উনাকে আংটি পরিয়ে দিলাম।
আমি একটা বড় লেহেঙ্গা পরেছি আজ।জাম কালারের।আমি বুঝি না আমার মনের সব খবর উনি রাখে কিভাবে?
সৌরভ আমার দিকেই তাকাই আছে।উনিও একটা জাম কালারের শেরওয়ানি পরেছেন।সিনেমার নায়কের মতন লাগে।আমার খালাতো বোনরা তো উনাকে পাগল করে দিছে রীতিমত। বেশ ধুমধাম করেই অনুষ্ঠান শেষ হলো।
পরেরদিন 💜বিকালে💜
কেউ আমার রুমের দরজা ধাক্কাচ্ছিল।আমি ভাবলাম নানু হতে পারে।কিন্তু জানতাম না নানু বাথরুমে ছিল।গিয়ে দরজা খুললাম।’

-‘ম্যাম সৌরভ স্যার এই মিল্ক শেকটা আপনার জন্য পাঠিয়েছে’

-‘ওয়েটারের হাত থেকে মিল্কশেকটা নিয়ে খেয়ে নিলাম আমি।মজারই ছিলো।’

পরেরদিন সকাল থেকে বমি করতে করতে আমি শেষ হয়েই যাচ্ছিলাম।সৌরভ তো পাগল হয়ে যাওয়ার পথে
ডাক্তার ৩টা এনে হাজির করছে।ডাক্তার জানালেন আমার ফুড পয়জনিং হয়েছে।

-‘এই হোটেলকে যদি আমি ভেঙে না দিছি
কি বিষ মিশাইছেন আমার ওয়াইফ এতটা অসুস্থ হয়ে পড়েছে?’

-‘স্যার বিশ্বাস করুন আমরা সম্পুর্ন হাইজেনিক খাবার আপনাদের পরিবেশন করেছি।’

-‘তাহলে ও কি গিয়ে বাহিরের খাবার খেয়েছে?
তাহা!তুমি কাল কি কি খেয়েছো?’

-‘অনুষ্ঠানে যেগুলো আপনারা খেলেন।আমিও তাই খেলাম’

-‘ওগুলাতো আমরা সবাই খেয়েছি।আর কি খাইছো?বিকালে কিছু খাইছো?’

-‘আপনি আমার জন্য যে মিল্কশেক পাঠাইছেন ওটা খাইছি তার পরে আর কিছু খাই নি।’

-‘মিল্কশেক?কিন্তু ওটা আমি তো পাঠাই নাই’

-‘ওয়েটার বললো আপনি পাঠাইছেন’

-‘সিসি ক্যামেরার ফুটেজ চাই এখনই’

-‘স্যার আসেন আমাদের সাথে’

-‘এইতো আপনাদের হোটেলের ওয়েটার তাহাকে মিল্কশেক দিচ্ছে’

-‘এটা আমাদের হোটেলের ওয়েটার না।’

-‘এত সিকিউরিটি থাকতে বাহিরের ওয়েটার এসে আমার ওয়াইফকে বিষ দিয়ে গেলো আর আপনারা কিছুই জানেন না?’

-‘আসলে আমাদের হোটেলের মতন সুট পরেছে তাই হয়তো গার্ড ঢুকতে দিছে’

-‘আমি জানি এটা কার কাজ হতে পারে!!মিঃ রহমান!
রনি!!সুজন যে এই কাজটা করছে তাকে আমার সামনে নিয়ে আসো’
তাহাকে দেখতে এসে দেখলাম ঘুমিয়ে আছে।সব আমার দোষ।লোকেরা আমার সাথের শত্রুতামি করে তোমার উপর দিয়ে দেখাইতেছে’
অদ্ভুত প্রেম♥
Writer-Afnan Lara
[৬]

-‘চোখ মেলে দেখি আমার দিকে তাকিয়ে আছেন উনি।দূর্বলতার কারণে উঠে বসতেও পারছি না।উনি সপটা বুঝতে পেরে নার্স ডাকলেন’

-‘কিসের ট্রিটমেন্ট করছেন? ৩জন ডাক্তার আমি কেন আনছি?সকাল থেকে বমি করতে করতে দূর্বল হয়ে গেছে।এখনও সুস্থ হচ্ছে না কেন?’

-‘আসলে উনার খাবারে কড়া ডোজের পয়জন মেশানো হয়েছিল।এটা বমির সাথে বের হয়ে যাবে,আর আমরা এখনই উনাকে ঘুমের ইঞ্জেকশান দিয়ে দিচ্ছি।’

সৌরভ এগিয়ে এসে তাহার পাশে বসলো।ডাক্তার ইঞ্জেকশান দিচ্ছে।
হঠাৎ করে সে তাহার হাতটা শক্ত করে ধরলো,ওর ব্যাথা সে সয্য করতে পারছে না।মিঃ রহমানের কপালে শনি আছে।
পরেরদিন তাহার শরীরটা মোটামুটি ভালো হয়ে উঠেছে। বিয়েরদিনটাও ঘনিয়ে আসছে,সবাই ব্যস্ত কাজ নিয়ে।
সব শপিং শেষ।
আঁখির আম্মুর কল আসলো।উনি জানালেন,আঁখির হাত ঠিক হবে কিনা ডাক্তার সিউরলি বলতে পারছে না।এই বলে উনি অনেক কান্নাকাটি করলেন।

-‘আপনি কেন এমন করলেন আঁখির সাথে?ওর তো কোনো দোষ ছিলো না’

-‘ ও তোমার উড়নায় হাত দিছে তাই’

-‘ও তো কোনো ছেলে না’

-‘একই।তুমি চাইলে আমি ওর পরিবারকে টাকা দিতে পারি ভালো ট্রিটমেন্টের জন্য’

-‘হাত ভেঙে এখন সহানুভূতি দেখাচ্ছে’
——–
গায়ে হলুদটা হালকা অনুষ্ঠানের মাঝে শেষ হচ্ছে।তেমন হইচই নেই কারন হলো তাহার অসুস্থতা।
তাহা আজ একটা হলুদ লেহেঙ্গা পরলছে।সাথে নেটের উড়না।রেডি হয়ে নামতে যাওয়ার সময় কে যেন টান দিয়ে নিয়ে গেলো ওকে।তাহা অনেক ভয় পেয়ে গেছিলো।

-‘কি এতদিন হয়ে গেছে তাও ভয় পাও কেন?’

-‘আপনার কাজই এমন’

সৌরভ মুচকি হেসে হলুদ নিয়ে লাগায় দিলো তাহার গালে।

-‘সবার আগে আমি তোমায় হলুদ লাগালাম।এবার চলো যাই।’
গায়ে হলুদ শেষ হলো এক ঘন্টার মাঝা মাঝি সময়ে।
পরেরদিন হচ্ছে বিয়ে।লাল টুকটুকে একটা লেহেঙ্গা পরেছে তাহা।গয়নাতে ওকে চুবিয়ে রাখছে সৌরভের মা। সৌরভ ও লাল শেরওয়ানি পরেছে।
হুজুর আসার পরই বিয়েটাও হয়ে গেলো।আসতে আসতে সব শেষ হলো।
—–
সন্ধায় সৌরভের কিছু কাজিনরা ওকে নিয়ে হাসি ঠাট্টা করছিল।তার পাশেই তাহা চুপচাপ বসে ছিল।
সৌরভ ওর কানে ফিসফিস করে বললো,’যাক অবশেষে মিস তাহাকে মিসেস সৌরভ করলাম’

-‘হ্যাঁ জোর করে’

রাত ১১:০০টার দিকে তাহার কাজিনরা ওকে নিয়ে সৌরভের রুমে বসিয়ে দিয়ে আসলো।
একটা গোলাপের বাগানের মতন লাগছে রুমটাকে।

-‘হুহ লাভ নাই।যত কিছুই করুক না কেন আমি ওরে আজ আমাকে টাচ করতে দিবো না’

লাইট টা অফ হয়ে গেলো।শয়তানটার কাজ জানি আমি। খাট থেকে নেমে গেলাম আগেভাগে।কি হলো লাইট অফ করলেন কেন?আপনি কই?
বাইরের হালকা আলোয় চেহারা দেখলাম।
এটা তো সৌরভ না,এটা কে?
কে আপনি?সসসসৌরররভ কই?
লাইট জ্বলে উঠলো।লোকটার হাতে একটা রড।
আমার দিকে এগোচ্ছে কেন উনি?
আমি দৌড়ে পালাতে যাবো ঠিক তখনই লোকটা আমাকে টান দিয়ে নিচে ফেলে দিলো ফ্লোরে।
পায়ে ব্যাথা পাইছি অনেক।আমি পিছাচ্ছি আর লোকটা রড হাতে নিয়ে এগোচ্ছে।সৌররররভভভভ!

-‘মনে হলো তাহা ডাকলো আমাকে?
মেইন হলে গিয়ে দেখলাম সেখানে তাহা ছিল না। তাহা কই?’

মা বললো,’তাহাকে তো ওর কাজিনরা তোর রুমে নিয়ে গেছে’

দেরি না করে এক দৌড়ে আমার রুমে গেলাম।তাহা,তাহা,কই তুমি??
হঠাৎ,নিচে তাকিয়ে দেখি তাহা নিচে পড়ে আছে,রক্ত ওর মাথার চারিদিকে
আমি বসে ওকে বুকে টেনে নিলাম।তাহা কি হলো তোমার কথা বলো,)।তাহা,তাহা???সুজজজননন জলদি এসো!!’

সুজন ছুটে আসলো।তাহার এমন অবস্থা দেখে সুজন ফোন নিয়ে এম্বুলেন্সে কল করলো।দশ মিনিটের ভেতর এম্বুলেন্স ও চলে আসলো।

-‘আমার মাথা কাজ করছে না।কি থেকে কি হয়ে গেলো।তাহা কথা বলো’

তাহাকে আইসিইউতে নিয়ে গেলো ডাক্তার নার্সরা মিলে।সৌরভকে ঢুকতে দিলো না।সৌরভ নিচে বসে পড়েছে।

-‘কি করবো আমি?তাহার কিছু হয়ে গেলে??ঐ¸দিনের ঘটনার পর ওকে একা কেন ছাড়লাম আমি!!’

একজন ডাক্তার বের হলো।সৌরভ উঠে দাঁড়িয়ে বললো,’প্লিজ বলেন, ও এখন কেমন আছে?”

-‘অবস্থা ভালো না।উনাকে শক্ত কিছু দিয়ে আঘাত করা হয়েছে।আমরা আমাদের সর্বত্র চেষ্টা করছি’

-‘আমি চেষ্টা শুনতে চাই না।আমি ওকে সুস্থ দেখতে চাই।ভুলে যাবেন না ও আমার স্ত্রী।
যতো টাকা লাগে আমি দিবো।শুধু আমার তাহাকে সুস্থ করে দিন।
যে এই কাজ করেছে তাকে আমি এতো কষ্ট দিবো!যে সে নিজের নামই ভুলে যাবে।আমাকে আজকের সবগুলা সিসি ফুটেজ দেখাও সুজন’

-‘স্যার দেখুন,একটা লোক আপনার রুমে ঢুকছে।’

-‘চেহারা চেনা চেনা লাগে।আরেহ্ এটা তো মিঃ রহমান। আমি জানতাম এটা ওরই কাজ।ছাড়বো না ওকে।
হ্যালো রিয়াজ?? তুই ইমিডিয়েটলি কেসটা হ্যান্ডেল কর।রিমান্ড আমি নিজে নিবো।আমার তাহাকে কষ্ট দিছে সে। আমি নিজের হাতে ওর চামড়া উঠাবো’

পরেরদিন তাহার অবস্থা আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে।সৌরভ গিয়ে ওর হাতটা ধরলো’
কেঁদে কেঁদে বললো,’তাহা!আমি তোমার “সৌরজগৎ”মনে আছে তোমার?
আমাদের একই দিনে এক্সিডেন্ট হয়ে ছিলো।১০বছর আগে।আমার পাশের সিটে তুমি এডমিট হয়েছিলে।
আমি তোমাকে দেখিয়ে দেখিয়ে পানি খাইছি,খাবার খাইছি। তোমাকে দিই নাই,কারণ ডাক্তার মানা করছিলো।
তুমি ভালো হয়ে আমাকে পুরো হসপিটালে দৌড়ানি দিছিলা।তোমার আগেই আমার ছুটি হয়ে গেছিলো। আমি তাই তোমার আগেই চলে গেছিলাম।আমরা হসপিটালে কত কথা বলছিলাম।মনে আছে তোমার?
সেদিনের পরের দিনই আমরা ঢাকায় চলে আসি।পরের সপ্তায় আমেরিকাতে চলে আসি।কিন্তুু আমি তোমাকে ভুলতে পারিনি।আমি বাবাকে বলে তোমার জন্য দুজন আলাদা বডিগার্ড রেখে গিয়ে ছিলাম।তোমাকে সেফ রাখার জন্য,তোমার খবর আমাকে দেওয়ার জন্য কিন্তুু দেখো আজ আমি তোমার পাশে,তাও তোমার এত বড় ক্ষতি হয়ে গেলো’
—–
-‘হ্যালো সৌরভ, তোর শিকার এখন আমার খাঁচায়’

-‘আমি আসছি’

সকাল ১০:৪৫।রিমান্ড রুমে মিঃ রহমানকে হাত পা বেঁধে দাঁড় করিয়ে রেখেছে পুলিশ।

-‘আমাকে গরম রড এনে দেওয়ার ব্যবস্থা করো।
তোর সাহস তো কম না। আমার তাহার ক্ষতি করছস!
তুই জানস না, এর পরে তোর কি হাল হবে?’

-‘তুই আমার ভাইকে এমন মেরেছিস সে এখন সে কোমাতে।তুই কি ভাবছিস আমি তোকে ছেড়ে দিবো?জানি এখন তুই আমাকে মেরে ফেলবি কিন্তুু আমিতে তোর ক্ষতি অলরেডি করে ফেলেছি।তুই তোর তাহারে ১০০টা ডাক্তার দিয়েও বাঁচাতে পারবি না।আমি সব ডিটেইলস্ নিছি।১বছর আগে ও পড়ে গিয়ে মাথা ফাটাইছে।সেই জায়গায় মেরেছি।হাহাহা!’

সৌরভের বুকের ভিতর মোচড় দিয়ে উঠলো।ঐদিন তাহা বাথরুমে অজ্ঞেন হয়ে গেছিলো।তারপর মাথা ফাটছে ওর।
মিঃ রহমান যা করলি ভালো করলি না।তোরে আমি মেরে ফেলবো দেখিস’

এটা বলেই সৌরভ ইচ্ছামত মারলো ওকে।গরম পানি ওর গায়ে ঢেলে দিলো শেষে।তাও রাগ কমছে না ওর।

-‘ছুরি আনো এবার।আজ তোর হাত দিয়ে আমার তাহাকে মারছিস না?ছুরি দিয়ে নখ উপড়ে ফেলবো তোর।’

ঠিক সে সময়ে তাহার আম্মুর ফোন আসলো।উনি জানালেন,তাহার জ্ঞান ফিরেছে।
সৌরভ তাড়াতাড়ি করে ওখান থেকে চলে আসলো।রিয়াজকে বললো ওরে পিটাইতে।
—–
সৌরভ তাহার পাশে এসে বসলো।তাহা এক দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।

-‘আমার জন্য আজ তোমার এমন হাল হলো।আমি কখনও তোমাকে একা ছাড়বো না।’

-‘সৌরভ কিছু খেয়ে নাও।আমরা সবাই তাহার পাশে আছি’

-‘না আমি ওকে একা রেখে যাবো না’

-‘আচ্ছা।এখানে খাবার এনে দিই?’

মায়ের কথাতে খাবার আসলো।সৌরভ খাবারটা নিলো
তাহাকে বললো,’ খাবা?না থাক দিবো না।কি মজা খাবারটা ইশ!! ‘

তাহা চুপ করে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।

-‘আচ্ছা তুমি সুস্থ হয়ে আমাকে দৌড়ানি দিও।’

-‘সসসসৌররজগৎ?’

-‘আমাকে চিনতে পারছো?’

[৭]
কিছু বলার আগেই তাহা জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে।ডাক্তার এসে বললো,”ওকে একটা হাই ডোজের ইনজেকশান দিতে হবে’
সৌরভ দাঁড়িয়ে আছে ওর দিকে তাকিয়ে।
খুব কষ্ট হচ্ছে ওর।সে সয্য করতে পারছে না।
পকেট থেকে ফোন নিয়ে রিয়াজকে কল করে বললো,’ তুই আমার হাতে ঐ পশু টাকেদে।আমি ওরে খুন করবো’

-‘দেখ শান্ত হ।আইন নিজের হাতে নিবি না।আমরা দুজনে মিলে ওরে আরও বড় কেসে ফাঁসিয়ে ওর ফাঁসির ব্যবস্থা করতে পারি’

-‘আমি ওর মরা মুখ দেখতে চাই’

তাহার আম্মু আব্বুর অবস্থা খুবই খারাপ।একটা মাত্র মেয়ে তাদের তাও এই হাল।সৌরভ গিয়ে উনাদের দুজনের সামনে হাঁটু গেড়ে বসলো।

-‘আমায় মাফ করবেন।এসব আমার জন্য হয়েছে।আমাকে আপনারা মাফ করে দিন।আমার জীবন থাকতে আমি তাহার আর কোনো ক্ষতি হতে দিবো না।কথা দিলাম’

তারা চুপ হয়ে সৌরভের দিকে তাকিয়ে কান্না করছে শুধু।
সারাদিনে তাহার আর জ্ঞান ফিরে নাই।
ডাক্তার বললো,তাহার কিছুদিন আগে মাথায় চোট পাওয়ার কারণে আর ওকে সেই জায়গাতেই আঘাত করা হয়েছে বলে সুস্থ হতে সময় লাগছে।
ভাগ্য ভালো আর একটু জন্য মগজে লাগেনি,নাহলে স্মৃতি হারিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা ছিল’

-‘যে করেই হোক আমার তাহাকে সুস্থ করে দিন’

সৌরভের বডিগার্ডরা হাতে খাবার নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
সৌরভ ধমক দিয়ে বললো,’আমি বলছি না তোমাদের যে আমি খাবো না।কথা কানে যায় না?
আমার তাহা ২দিন ধরে কিছু খায় নাই, আমি খাবো কিভাবে?ডাক্তার, ওর জ্ঞান ফিরছে না কেন?’

-‘উনাকে আমরা ঘুমের ইঞ্জেকশান দিছি।১৬ঘন্টা ছাড়া জ্ঞান ফিরবে না’

-‘সৌরভ!! আমরা সবাই তাহা সুস্থ হলেই আমেরিকা চলে যাবো।এখানে আর থাকা সেফ হবে না’

-‘হুম’তাহার দিকে তাকিয়ে আছি শুধু।আমার কি ভাগ্য! আমার প্রিয় মানুষ আমাকে চিনতে পারলো তাও জ্ঞান হারিয়ে এখন সে গভীর ঘুমে।
—–
রাত ১:০০টা তখন। তাহার পাশে মাথা হেলান দিয়ে শুয়ে আছে সৌরভ।
তাহার হাত ওর হাত স্পর্শ করলো হঠাৎ।ও জেগে দেখলো সে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।
তাহা নড়েচড়ে বললো,’ কিছু খেয়ে নিন।ঐ সোফাতে গিয়ে একটু ঘুমান যান।
-‘ও জানে কিভাবে আমি যে কিছু খাই নাই।কথাগুলো বলে আবার ঘুমিয়ে পড়লো।ওর হাতটা কেমন ঠান্ডা হয়ে আছে।নার্স জলদি আসুন’

-‘জী স্যার’

-‘ওর শরীর এত ঠাণ্ডা কেন?
নার্স তাড়াতাড়ি করে ব্ল্যাঙ্কেট গায়ে দিলো তাহার।
আমি বুঝছি না আমি কি করবো!!।কি করলে ওকে পুরোপুরি স্বাভাবিক জীবনে নিয়ে আসতে পারবো?’
রিয়াজ ফোন করে জানালো,মিঃ রহমানকে সে আদালতে পাঠিয়েছে।আর আমি আমার কাজ করেে দিছে।এবার মিঃ রহমানকে কেউ বাঁচাতে পারবে না।
তাহার মা আমায় বললেন,’বাবা কিছু খেয়ে নাও তাহাকে দেখার জন্য তো তোমার নিজেকে ঠিক রাখতে হবে’
তার কথায় পাউরুটি এক পিস মুখে নিয়েছিলাম আমি সেদিন।’
—–
পরেরদিন দুপুরবেলাতে তাহার জ্ঞান ফিরছে।সৌরভ যেন নতুন করে তাহার প্রেমে পড়েছে।শুধু ওর দিকে তাকিয়ে আছে সে।
ডাক্তার জানালেন, ‘সে এখন সম্পুর্ন বিপদ মুক্ত। আসলে এমন ক্রিটিকাল অবস্থার রুগীর জন্য ৩-৪জন ডাক্তার থাকা দরকার।যা আপনি করেছেন’

-‘আমি ওকে আজকে নিয়ে যাবো’

-‘এমন অবস্থায় আপনাদের বিদেশ ভ্রমন ঠিক না।উনার মাথায় প্রব্লেম হতে পারে।কয়েক মাস পরে গেলে উনার কোনো ক্ষতি হবে না।এজ এ ডক্টর আমি এডভাইস দিতেছি।’

-‘মা! তাহলে ৭দিন পর আমরা বিজয়নগর চলে যাবো।২মাস পর আমেরিকা ‘

-‘ওকে’

হসপিটাল থেকে আমরা সবাই সোজা হোটেলে আসলাম।
তাহা দেখলো তার আশেপাশে ৩/৪টা নার্স ঘুরঘুর করছে।অবাক হয়ে সে বললো,’একি এতো নার্স কেন?’

-‘যাতে তোমার বিছানা থেকেও না নামা লাগে’

সেসময়ে সবাই যার যার রুমে চলে গেছে বিশ্রাম নিতে।তাহা একটু বিছানায় শুতেই ওর চোখ জুড়ে ঘুম নেমে এলো।
সৌরভ ফ্রেশ হয়ে এসে দেখলো তাহা ঘুমিয়ে গেছে।সে ওর পাশে বসে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো।এরপর নিজেও একটু ঘুমিয়ে নিলো।
সকালে হয়েছে তাহার চেঁচামেচিতে।চেঁচিয়ে ওর মাকে ডাকছে শুধু
-‘আম্মুউউউউউউউউউউউউ’

সৌরভ হকচকিয়ে উঠে বসে জিজ্ঞেস করলো কি হয়েছে

-‘আমার এত বড় বড় চুল কত সুন্দর ছিলো মাঝখান দিয়ে কেটে দিছে!’

-‘ওওও’

-‘ওও?’

-‘না মানে।এই নার্স!!!’

-‘জী স্যার’

-‘তোমরা তাহার চুল কাটছো কেন?’

-‘আসলে ঐ যায়গায় ওয়াশ করা টাফ ছিলো।তাই ওখানে থাকা চুল গুলা কেটে ফেলা হয়েছে’

-‘এএএএ্যাঁ’

-‘কিছু হবে না। আবার বড় হয়ে যাবে’
——
বেশ কিছুক্ষণ পর তাহা খেয়াল করলো সৌরভ কার সাথে যেন কথা বলছে।সে চুপিচুপি খাট থেকে নামলো।সৌরভ রুমে থাকলে নার্সরা থাকে না রুমে।তাহা পা টিপে টিপে গিয়ে ফ্রিজ খুললো।কত্ত আইস্ক্রিম সেখানেম
একটা নিয়ে খাওয়া শুরু করে দিলো সে।দুইদিন ধরে কিছু খায় নাই সে।

সৌরভ পিছনে তাকিয়ে দেখলো তাহা গোটা কোণ আইস্ক্রিম খেয়ে ফেলছে।
রেগেমেগে কাছে এসে সে বললো,’ একটা থাপ্পড় দিবো।আইস্ক্রিম খেলে কাশি বেড়ে যাবে।তখন কাশলে মাথায় ব্যাথা পাবা জানো না?’

-‘আমার ওত কিছু মনে নাই।ক্ষিধা লাগছিলো খুব।’

-‘আমি কি কোথাও চলে গেসিলাম?আমাকে বললে কি হতো?মেজাজ খারাপ করে রাখে।ক্ষিধা লাগছে না?ওয়েট!নার্স???যাও খাবার পরিবেশন করো’
নার্স খাবার এনে দেওয়ার ওর সৌরভ নিজে লোকমা বানিয়ে বললো,’নাও হা করো’

-“না খাবো না ক্ষিধা নাি’

সৌরভ মুখ টিপে ধরে সব খাবার মুখের মধ্যে পুরে দিলো।
তাহা আস্তে আস্তে চিবোচ্ছে।
সৌরভ চলে গেলো রাগ করে।তাহা কেঁদে কেঁদে বললো,’আমার দোষ সব।কি করবো উনাকে খাবারের কথা বলতে লজ্জা লাগে।আইস্ক্রিম খেলে যে ক্ষতি আমি কি জানি?’
—–
কিছুক্ষন পর নার্স ছুটে সৌরভের কাছে গিয়ে বললো,’ স্যার স্যার!’

-‘কি হয়ছে?’

-‘তাহা ম্যাম বমি করছে ‘

সৌরভ এক দৌড়ে রুমে গেলো।ওকে বিছানায় শুইয়ে দিতেই ডাক্তার এসে বললেন,’উনাকে শুধু সুপ খাওয়াতে বলছিলাম’

-‘কবে যে নিজের রাগ কন্ট্রোল করতে পারবো।আমার দোষ এটা।সুজন!!!আমার রুম থেকে এই ফ্রিজ সরাও’

তাহা ওর দিকে ভয় ভয় চোখে তাকিয়ে আছে।

-‘কিই???’

-‘কিছু না’

-‘সরি’

-‘আচ্ছা আমার ফোন কই জানেন?’

-‘এই নেন।গ্যালারিরে তো মার্কেট বানায় রাখছো’

-‘আপনার কি?আপনি আমার ফোন চেক করছেন কেন?’

-‘তুমি আমার বউ।আমি চেক করতেই পারি’

সেসময়ে জিসা আসলো তাহাকে দেখতে,ওর সাথে বসে বসে গল্প করছে এখন তাহা।
সৌরভ এসে বললো,’জিসা যা তোর রুমে যা,পড়া নাই?’

জিসা মুখটা বাঁকিয়ে চলে গেলো আবার।

তাহা তাড়াতাড়ি করে কাঁথা টেনে মুড়ি দিয়ে শুয়ে পরলো।

-‘লুকিয়ে লাভ নাই।আমার যেদিন ইচ্ছা হবে সেদিনই ভালোবাসবো।
এখন ভয় পাইও না এখন কিছু করবো না।সুস্থ হও।’

সৌরভ মুচকি হেসে তাহার পাশে শুয়ে ওকে জড়িয়ে ধরলো।

-‘এই ছাড়ুন।আমাকে কেউ ধরলে আমার ঘুম আসে না’

পরেরদিন সকালে সৌরভ ঘুম থেকে ওর আগেই উঠে পড়লো।বাচ্চাদের মতন ঘুমাচ্ছে তাহা।ওর চোখে আলো পড়ছে বলে সে পর্দা টেনে দিলো।
তাহা ঘুম থেকে আরও পরে উঠেছিল।ঘড়িতে চোখ রেখে চমকে গেলো সে।সকাল দশটা বাজে।এতক্ষণ ঘুমালো সে।

-‘তোমাকে ঘুমের ঔষধ দিছে তাই’

অদ্ভুত প্রেম পর্ব-০৪

0

অদ্ভুত প্রেম❤️
Writer-Afnan Lara
[৪]
-‘সৌরভ দাঁত কেলিয়ে চেয়ে আছে।যেন রুমটা তারই।আমি অতিথী।আশ্চর্য!!! যান আমার রুম থেকে। আমি চেঞ্জ করবো এখন’

-‘গেলেও কি না গেলেও কি!আমি তো সব দেখি”

-‘স্টুপিড।বাহির হোন বলছি।কথাটা বলে উনাকে রুম থেকে বাহির করে দিয়ে দরজা লাগাই দিলাম।কি জ্বালা রে বাবা!!
আম্মু রান্না করে আমাকে ডেকে বললেন পরিবেশন করতে।
-‘হিহি!! এমন ঝাল,নুন দিছি না আজকে বাপ বাপ করে পালাবে)’

সৌরভ খাবারটা এক চামচ মুখে দিয়েই বুঝেছে খাবারের ১২টা কে বাজিয়েছে।

-‘(খাও চান্দু খাও,)’

-‘আন্টি ভেসিন টা কই?’

-‘তাহা যা সৌরভকে ভেসিনের কাছে নিয়ে যা’

-‘আসেন’

ভেসিনে যেতেই একটান দিয়ে চেপে ধরলো উনি আমাকে।
ছাড়ুন শুরুতেই বলছি তা নাহলে আমি কিন্তু চিৎকার করবো!”

সৌরভ ঝালে হাঁপাচ্ছে।

-‘চিৎকার করো”

-‘আআআআমম….’

আর কইতে পারলাম না।ছুঁয়ে ফেললো ঠোঁটজোড়া।
নিজের সব শক্তি দিয়ে উনাকে সরানোর চেষ্টা করেও পারছি না।এমন লম্বা চওড়া পোলার সাথে শক্তির জোরে পারা যাবে না যা বুঝলাম।’

-‘তাহা,সৌরভ?তোমরা কোথায়?’

আম্মুর ডাকে শয়তানটা ছাড়লো আমাকে।
স্টেচু হয়ে আছি আমি এখনও।

-‘পরেরবার এমন শয়তানি করলে কি হবে বুঝছো নিশ্চয়?’

-‘উনি বেশি থাকলেন না।চলে গেলেন তখনই’
——
-‘কাল আব্বু আসবে।বাসায় নানা আয়োজন।
আর ডিস্টার্বের জন্য শয়তানটা তো আছেই সকাল থেকে উড়না নিয়ে টানা টানি করে।আমার আর একটু শক্তি থাকলে মেরে আলুর ভর্তা বানায় দিতাম।কিছু করতেও ভয় লাগে।
দুপুর ২:৩২মিনিট।
আব্বু আসছে তখন।আমি আব্বুকে জড়িয়ে ধরবো ঐসময়ে শয়তানটা কোথা থেকে দৌড়ে এসে হাজির।

-‘শ্বশুর মশাইইইইই’

আব্বু তো অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।সৌরভের এমন ব্যবহারে আম্মু ও অবাক।
সৌরভ গিয়ে আব্বুকে পা ধরে সালাম দিলো আর বললো
আসার সময় কোনো প্রব্লেম হয় নাই তো?
ড্রাইভার কই?’

এটা বলে উনি গিয়ে ড্রাইভারকে টাকা দিলেন।

-‘গাড়ি টা তোমার?’

-‘জ্বী।আপনাকে রিসিভ করার জন্য পাঠাইছি আমি।’

আব্বু আম্মুকে ফিসফিস করে বলছে ছেলে তো ছবির থেকেও সুন্দর।

-‘(কচু সুন্দর।একটা বানরের মতন লাগে)
—–
সবাই বিকালের নাস্তা শেষে কথা বলছে বিয়ের এরেঞ্জমেন্ট নিয়ে।আমার জন্মদিন এই মাসের ১৮ তারিখ। ২৫তারিখে গায়ে হলুদ।পালাই যে যাবো তার ও উপায় নাই।রাস্তাঘাটে সব উনার লোক।

-‘হ্যালো? কিরে রেশমি ভালো আছিস?’

-‘হ্যাঁ আম্মা ভালো আছি।তুমি?কিছু বলবে?’

-‘তোর খালাতো বোন টিয়া তো আমেরিকাতে থাকে।ওরে বলে সৌরভের পরিবারের খবর নিছি।ছেলে নাকি ওখানের বড় ব্যবসায়িদের মধ্যে একজন,আর উনাদের বাসায় টিয়া গিয়ে সব দেখে আসছে।’

-‘যাক আলহামদুলিল্লাহ’

-‘আম্মু!!আমি এত তাড়াতাড়ি বিয়ে করতে চাই না’

-‘দেখ এমন ভালো ছেলে পাওয়া যায় না সহজে।সৌরভ তোকে সুখে রাখবে’

বাবা মায়ের আপত্তি দেখে আর কিছুই বললাম না আমি।
রাতে ফোন আসলো সৌরভের।কল করেছে ধমক দিতে

-‘তোমাকে বেশি সাহস দেখাতে মানা করি নাই?
কোন সাহসে বলো যে বিয়ে করবা না?বিয়ে না করে যাবা কই?এখনও সময় আছে সুধরে যাও।নাহলে পরিনাম খারাপ হবে.কষ্ট তুমিই পাবা.তার জন্য তুমি দায়ী থাকবা’

-‘আমি আপনাকে ঘৃনা করি’
.
অনেকদিন কেটে গেলো।
আজ সৌরভের মা বাবা আর উনার ছোট বোন আসবে।আমাদের বিজয়নগরে উনাদের বাসায় ইনবাইট করেছেন উনারা।তারা আসার আগে সৌরভ আমাকে মেসেজ করেছে
-‘Dear,
Black dress ta pore asba’
.
-‘আমি ঐ জামাটা পরি নাই ইচ্ছা করেই।
নীল একটা জামা পরে গেছি।
সৌরভ আমাকে দেখে রাগি চোখে তাকালো।তার পর আম্মুকে আর আব্বুকে সালাম দিয়ে সোফার রুমে নিয়ে বসালো।আমার দিকে আর তাকায় নাই।
যাক আল্লাহু উনাকে হেদায়াত করছে।আমি তো ভাবছি রেগে গিয়ে আমাকে বাসা থেকেই বের করে দিবে।দিলেই ভালো।বিয়ে ভাঙবে।উনার মা বাবা আসলো আরও কিছুক্ষণ পর।

-‘মাশাল্লাহ আমার ছেলের পছন্দ আছে বলতে হবে’

-‘দুজনকে দেখে মনে হচ্ছে মেড ফর ইচ আদার’

-‘এটা আমার ভাবী?আমার চাইতেও কিউট’

সবাই ওর কথায় হাসা শুরু করলো।
আম্মু আব্বু সৌরভের আম্মু আব্বুর সাথে কথা বলায় ব্যস্ত এখন।
সৌরভের বোন আমার কাছে এসে বললো,’ভাবী,চলো হাঁটি’

-‘ওকে’
.
দুজনেই হাঁটতেছি হঠাৎ সৌরভ আসলো এদিকে।

-‘জিসা যাও তোমাকে মা ডাকছে’
.
আমিওও কেটে পড়ছিলাম জিসার সাথে সাথে ঠিক সেসময়ে উনি আমার হাত ধরে টেনে নিজের রুমে নিয়ে গেলো।

-‘আমার কথার অবাধ্য হতে মানা করি নাই?কথা কানে যায় না?তুমি দেখতেছি আচ্ছা একরোখা মেয়ে।এই টাইপের বদ স্বভাব ঠিক করতে আমার ১দিন ও লাগে না।আর তুমিতো!”

-‘আপনার কথায় চলতে হবে কেন?আমি আপনাকে ভয় পাই না।আমার উপর নিজের জোর দেখাবেন না’

-‘হ্যাঁ দেখাবো না।কারন আজকের পর থেকে আমি তোমাকে অর্ডার করা লাগবে না। তুমি নিজেই সব করবা।
এটা বলেই আমাকে ধাক্কা দিয়ে বিছানায় ফেলে দিলেন উনি।
ভাবলাম কি না কি করবে।উনি সোজা ওয়াসরুম থেকে এক বালতি এনে আমার হাত ধরে আবার দাঁড় করিয়ে পানি ঢেলেন একেবারে আমার মাথার উপর।
এরপর আমার হাত ধরে সোফার রুমে নিয়ে আসলেন উনি।

-‘একি সৌরভ!!তাহার এই অবস্থা কেন?এমন ভিজছে কিভাবে?’

-‘আমাদের বাসার পাশে যে সুইমিং পুলটা আছে?তাহা ওটাতে পড়ে গেছিলো।ও তো সাঁতার জানে না।তাই আমি ওকে তুললাম।দেখো আমিও ভিজে গেছি।’

-‘এতো কিছু হয়ে গেলো?তাহা তুমি ঠিক আছো?’

-‘জ্বী আন্টি’

-‘তোমার তো জামা চেঞ্জ করতে হবে।আসো আমার সাথে।’

সৌরভের আম্মু রুমে এসে একটা শাড়ী নিয়ে বললেন,’এই নাও এটা আমার শাড়ী।পরে নাও’

-‘(নেটের শাড়ী!)কোনোমতে পরে নিচে নামলাম।শয়তানটা হা করে তাকাই আছে।

-‘ভেজা চুলে কি সুন্দর লাগছে ওকে।চোখ ফিরাতে পারছি না তো”

চুপচাপ সবার সাথে এসে সোফায় বসলাম আমি।
শয়তানটা সরাসরি আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
নির্লজ্জ কোথাকার।
—-
সন্ধ্যায় উনি আমাদেরকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে এরপর নিজের বাসায় চলে গেলেন।

-‘মা!!যতদিন না বিয়ে হচ্ছে তুমি তাহাকে বলবা না যে আমরা ওরে আগ থেকে চিনি’
চলবে””

অদ্ভুত প্রেম পর্ব-০৩

0

অদ্ভুত প্রেম❤️
Writer-Afnan Lara
[৩]
হুট করে উনি উঠে দাঁড়িয়ে কিঞ্চিত হেসে আমার দিকে এগোচ্ছেন এখন।
-‘আআআপপপনিই আমার দিকে এভাবে তাকাচ্ছেন কেন?’
উনি চুপচাপ আমার কাছে এসে কানে ফিসফিস করে বললেন-‘তুমি কি ভাবছো ওয়াসরুমে সিসি ক্যামেরা নেই?’

-‘তার মানে আপনি সেই লোকটা?আপনি আঁখির হাত ভাঙছেন?’

-‘নাহ একটু ভুল আছে, আমি ভাঙি নাই।আমার লোক ভাঙছে’

-‘আপনি কতো খারাপ।আমি কখনও আপনাকে বিয়ে করবো না।আমি এখনই সবাইকে সত্যিটা বলে দিব।

-‘যাও বলো।যদি সেই সাহসটা দেখাও তোমার এবং তোমার পরিবারের কতটা ক্ষতি হবে তা তোমার কল্পনার বাহিরে।আর আমি কি কি করতে পারি তার কিছু রুপ তুমি তো দেখছই।তো যাও বলো সবাইকে।’

-‘ভয় পাই না আপনাকে’

এটা বলেই সোফার রুমে এসে যেই কথা বলা ধরছি বিকট আওয়াজে আমার মাথা হ্যাং হয়ে গেছে।
গুলিটা আর একটুর জন্য আম্মুর গায়ে লাগতো।
-‘সরি আন্টি।আসলে আমার অনেক শত্রু আছে।যারা আমাকে মেরে ফেলতে চায়।বাট ইউ ডোন্ট ওয়ারি!আমার বডি গার্ড আছে আমার সেফটির জন্য।তারা মনে করছে আপনাদের উঠানে কোনো একজন ফলো করছে আমাদের তাই শুট করলো।’
এই বলে লোকটা আমার দিকে তাকিয়ে চোখ মারলেন।
সঙ্গে সঙ্গে ফোনে মেসেজ আসলো-
-‘Dear,
akta drisso dekhailam tmk,.biyete raji hou nahole guli tmr mayer gaye lagbe.amr sudu tmk cai r kicu na.tmi amr thakle tmr priojon rao safe thakbe’
.
-‘কি করব বুঝছি না!”

-‘আন্টি আসি তাহলে’

-‘ওকে।আচ্ছা তুমি এখানে কই থাকো?’
.
-‘আমাদের নিজস্ব বাসা আছে।বিজয় নগরে।’

-‘কাছেই তো’

-‘শয়তান টা যাওয়ার পর আম্মু কে সব বলতে ইচ্ছা করছে কিন্তুু আমি পারবো না।’

পরেরদিন কলেজে ছুটির পর দাঁড়িয়ে ছিলাম রিকশার জন্য।সেই শয়তানটা এখানেও এসে হাজির কার নিয়ে

-‘উঠে পড়ো’

-‘না!আমি রিকশাতে চলে যাবো’

-‘লাস্ট বার বলছি উঠো’

-‘উঠলাম’

উনি আমাকে একটা প্যাকেট দিলেন।ভিতরে সব চকলেট।

-‘খাও,তোমার নিশ্চয় খিধা লাগছে।কাল সকালে রেডি হয়ে থাকবা আমরা ঘুরতে যাবো।’

-‘(হিহি তোর আমার সাথে ঘুরার সাধ মিটায় দিবো)’

বাসায় আসার পর ভাবলাম কিছু একটা করে কাল ঘুরতে যাওয়া বরবাদ করতে হবে।মনে হয় এই মোটা মাথায় একটা আইডিয়া এসেছে।
পরেরদিনটা এসেই গেলো জলদি জলদি।
-‘আম্মু গো পেটে ব্যাথ্যা করছে অনেক!”

উনি আসলো আর আমার ওভার এক্টিং স্টার্ট!!

-‘কি হয়ছে?’

-‘পেটে ব্যাথ্যা করে মনে হয় ঘুরতে যেতে পারবো না’

-‘ (তোমার চাইতে ১০০গুন চালাক আমি।আমাকে বোকা পাইছো?)আচ্ছা!চলো ডাক্তারের কাছে যাই।’

-‘না আমি এমনিতেই ভালো হয়ে যাবো’

-‘তা বললে তো হয় না,চলো’

এটা বলেই হাত ধরে টেনে নিয়ে গাড়িতে বসালো

-‘যাবো না তো’

হসপিটালে না গিয়ে একটা রেস্টুরেন্টে আসলেন উনি।

-‘হসপিটাল কই?’

-‘শুনো আর একটু ড্রামা করলে হাল খারাপ করে দিবো!”
কফি খাওয়া শেষে এবার উনি আমাকে নিয়ে নদী দেখতে আসলেন।সারাদিন ধরে ঘুরছে চরকার মতন।অসয্য!
হঠাৎ কতগুলা ছেলে আমাদের পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় আমাকে একটা বাজে কথা বললো।
আমি শুনে চুপই ছিলাম।উনি আমাকে বললেন গাড়িতে গিয়ে বসতে।
এর ১০মিনিট পর উনিও এসে গাড়িতে বসলেন।ঘামে উনার জামা ভিজে গেছে।শার্টের হাতা উঠানো।কি করেছে?মারামারি? ‘

-‘কিছু করি নাই জাস্ট ওদের একটু ধোলায় দিছি।

-‘আমার মনের কথা শুনলো কিভাবে?’

-‘মা বাবা পরের মাসে ১২তারিখে আসবে।আর ২০দিন আছে।আমার ছোট একটা বোন আছে।ক্লাস টু তে পড়ে।
বাই দ্যা ওয়ে! তুমিও তো কম ছোট নাহ।পিচ্চি একটা মেয়ে।তুমি জানো তুমি আমার থেকে ছয় বছরের ছোট?

-‘তো?’
.
আর কিছুই বললেন না।আমিও বললাম না।
সোজা বাসায় আসলাম।
পরেরদিন কলেজ যাওয়ার পর ফ্রেন্ডরা সবাই বললো রেস্টুরেন্টে যাবে খেতে।

-‘না আমি যাবো না’

-‘এমন করস কেন?চল না!”

রিয়ার অনুরোধে রাজি হলাম আমি।
রিয়ার বিএফ ও আসলো।ওর Bf শুধু আমার সাথে সেধে সেধে কথা বলছিলো।আমি শুধু উত্তরটা দিতাম।হঠাৎ দেখি সৌরভ আসলো।সবার মাঝ থেকে আমার হাত শক্ত করে ধরে আমাকে টেনে নিয়ে গাড়িতে বসালেন সোজা।উনার চোখ দুটো টুকটুকে লাল হয়ে আছে।আমার কেমন জানি ভয় লাগলো।
গাড়িতে উঠে হাই স্পীডে গাড়ি চালাচ্ছেন উনি এখন।
-‘এত জোরে গাড়ি চালাচ্ছেন কেন?’

-‘জাসু শাট আপ’

আমাকে আমাদের বাসায় নিয়ে আসলেন উনি।
আম্মু মনে হয় রান্না ঘরে ছিল।আমার রুমে নিয়ে এসে গালে একটা চড় মেরে দিলো।
ব্যাথা পেলাম না কিন্তু ভয় পেলাম।বোকার মতন আপাতত উনার মুখ দেখছি আমি’

-‘তোর সাহস হয় কিভাবে অন্য ছেলের সাথে কথা বলিস?’

রোবটের মতন হয়ে বসে রইলাম।আজ পর্যন্ত কেউ আমার গায়ে হাত তোলেনি।
দীর্ঘ ৫মিনিট পর,,,,,
উনি আস্তে করে আমার পাশে এসে বসলেন।পকেট থেকে টিসু বের করে আমার চোখ মুছে দিলেন।’

-‘সরি। তুমি অন্য কোনো ছেলের সাথে কথা বললে আমার তা সয্য হয় না।নেক্সট টাইম আর বলবা নাহ।রাগ উঠলে আমার মাথা ঠিক থাকে না।কাল সকালে রেডি হয়ে থাকবা। তোমাকে বিজয়নগর আমাদের বাসা দেখাতে নিবো।বাই’

-‘এটা বলে কপালে একটা চুমু দিয়ে চলে গেলেন।
পরের দিন ভোর হতেই আমি তৈরি হয়ে আম্মুকে বললাম আমি আমার একটা ফ্রেন্ডের বাসায় যাইতেছি।

-‘কোন ফ্রেন্ড?’

-‘ঐ তো নিহা’
এটা বলেই দৌড় দিলাম।
নিহাদের বাসায় না গিয়ে সোজা নানু বাসায় আসলাম।জীবনে কল্পনাও করতে পারবে না আমি যে এখানে আসছি।

-‘আরে সৌরভ!”

নানুর কথায় পিছনে তাকাতেই আমি টাস্কি খেয়েছি।
ও এখানে আসলো কিভাবে?জানলো কিভাবে যে আমি এখানে?’

নানু তাড়াহুড়ো করে উনার জন্য খাবার আনতে চলে গেছেন।
আমি ওখান থেকে পালানো ধরছিলাম।উনি আমার হাত ধরে ফেলছে ততক্ষণে।

-‘আজকে আমার বাসায় যাওয়ার প্ল্যান চপাট করার শাস্তি তুমি পাবা!”
.
দুপুরের খাওয়া শেষে আমাকে উনার কারে উঠতে হলো বাধ্য হয়েই।আজ কপালে শনির দশা আছে।
উনার সাথে বিজয়নগরে আসলাম উনাদের বাসায়।
এ যেন এক রাজপ্রাসাদ!
উনি আমার হাত ধরে সব কিছু দেখাচ্ছেন।
দেখলাম উনি ওয়েটারদের রুম থেকে চলে যেতে বললেন।
ভয় লাগছে হঠাৎ।এখান থেকে যে দৌড় দিমু তার ও উপায় নাই।শক্ত করে হাত ধরে রাখছে শয়তানটা।
হঠাৎ একটান দিয়ে আমকে দেয়ালের সাথে ঠেকিয়ে ধরলেন।
-‘হাত ছাড়ুন আমার।একদম আমাকে টাচ করার চেষ্টা করবেন না বলে দিলাম’

-‘হুমমমম।ভুল করার সময় মনে ছিলো না?’

-‘আর এমন হবে না।ছেড়ে দিন প্লিজ।

-‘ভুল তো হয়ে গেছে।শাস্তি তো পেতেই হবে!’

আমি জানি কি করবে তাই কিছু হওয়ার আগেই জোরে এক ধাক্কা দিলাম উনাকে।আপনার সাহস হয় কিভাবে আমাকে কিস করার চেষ্টা করার?’

-‘তুমি আমার হবু বউ। তোমাকে কিস করতে পারমিশন লাগবে নাকি?আর তোমার দোষেই আমি এই কাজ করতে যাচ্ছিলাম।

কোনোমতে প্রাণ বাঁচিয়ে এক দৌড়ে রুম থেকে বেরিয়ে এসেছিলাম।এরপরে আর একটা কথাও বলি নাই উনার সাথে।
উনি ড্রাইভার পাঠিয়ে আমাকে বাসায় পৌঁছে দিতে বললেন।
বাসায় আসার পর দেখলাম মা খুশিতে এদিক ওদিক ঘুরছে শুধু।’

-‘তাহা রে গুড নিউজ আছে!”

-‘কি?’

-‘তোর আব্বু আসবে এই মাসের ২৬তারিখ ‘
.
আমি অনেক খুশি হলাম।
কলেজ যাবো না কাল।নইতো শয়তানটা আবার ধরে নিয়ে ঘুরতে যাবে।বাসূয় বসে বাবার আসার অপেক্ষা করার মজাই আলাদা।
পরেরদিন সকালে না উঠে বেঘোর ঘুমাচ্ছিলাম।সেসময়ে ফোনে কল আসছে।রিসিভ করলাম না দেখেই।

-‘জান আজকে কলেজ যাবা না?’

-‘একদম আমকে জান ডাকবেন না।উফ বলেই কেটে দিয়ে ফোন অফ করে দিলাম।’
ঘুমাচ্ছি শান্তিতে,।হঠাৎ খেয়াল করলাম খোঁচা খোঁচা কি যেন গালে লাগছে।
চোখ মেলে তাকাই দেখি কারোর বুকে আমার মাথা।গাল টা উনার গালের সাথে লেগেই খোঁচা লাগলো।
লাফ দিয়ে উঠে গেলাম চিৎকার করবো ঐ সময় উনি আমার মুখ চেপে ধরলেন।২মিনিট পর আলতো করে হাত সরালেন।
-‘আপনি এখানে এই অবস্থায় কেন?আপনার সাহস হয় কেমনে আমার বিছানায় শোয়ার?আম্মু কই?’

-‘শাশুড়ি মা তোমার শাশুড়ির সাথে কথা বলেছে ফোনে’

-‘যান বের হোন আমার রুম থেকে’

-‘আন্টিইইইইইই’

-‘কি হয়েছে?’

-‘দেখেন না আপনার মেয়ে আমাকে রুম থেকে বের হতে বলছে’

-‘তাহা,এটা কেমন বেয়াদবি? সুন্দর করে কথা বলতে পারস না,সরি বল”

-‘(তুমি তো জানো না ঐ লোকটাকে কেন বের হতে বললাম)সরি’
শান্তিতে নিজের রুমেও থাকতে পারবো না।

-‘আন্টি হাত দিন আপনার’

-‘কেন?’

-‘দিন’

আম্মু হাত বাালো।সৌরভ একটা ফোন গিফট করলো।
আম্মুতো বললো,’এত টাকা খরচ করার কোনো মানে আছে?’

-‘সমস্যা নাই।রেখে দিন’

-‘(ঘুষ খাওয়াইতেছে)আম্মু না গল্লেই হয়!’

-‘আজ এখানে দুপুরে খেয়ে যাবা’

-‘ইশ গলে গেলো রে!!”
চলবে”””

অদ্ভুত প্রেম পর্ব-০২

0

অদ্ভুত প্রেম❤️
Writer-Afnan Lara
[২]
বাসার সামনে এসে রিকশা থামলো।সেটা থেকে নেমে বাসায় ঢুকার সময় দেখলাম সব চাইতে বান্দর ছেলেটা এদিকে আসছে।

-‘তাহা!তাহা!’

-‘উফ!আমি আপনাকে বলছি না আমাকে ডিস্টার্ব করবেন নাহ!’

(শরীফ নামের এই ছেলেটা হলো একটা ছেঁচড়া ছেলে।১০০টা মেয়ের সাথে সে প্রেম করে।এখন আমার পিছে লাগছে।)

-‘বুঝো না কেন আমি তোমায় লাভ করি’

-‘আর একদিন আমাকে ডিস্টার্ব করলে তোর সব দাঁত ভেঙে দিবো।যা ভাগ এখান থেকে’
——
সন্ধ্যায়।
-‘হ্যালো?আঁখি বল। কেমন আছিস?’

-‘দোস্ত একটা খবর জানস?শরীফের নাকি অবস্থা ডাল ভাত’

-‘তাই নাকি?কি হয়েছে?’

-‘ওরে নাকি কে পিটাইয়া হসপিটালে ভর্তি করে দিছে
ওর সব দাঁত ভেঙে দিছে’

-‘এটা তো আমার করার ছিলো।যাই হোক যে করেছে একদম ঠিক করেছে।
আমার আবার রাত ১টা ছাড়া ঘুম আসে নাহ।
অনেক দিন হয়েছে গেমস খেলি নাহ।একটু লুডু খেলি।
১১:৪৫বাজে হঠাৎ ফোনে একটা অপরিচিত নাম্বার থেকে মেসেজ আসলো।
“Ato rat porjonto jege thakio na.ghumiye poro. abar kal games khelio.Fan er Volume komao thanda lege jabe.
Good Night dear,I ❤️u soooooo much ”

-‘ও আল্লাহ আমি গেমস খেলতেছি জানলো কিভাবে?ফ্যানের কথাও জানলো কিভাবে?রহস্য উন্মোচন করতে ঐ নাম্বারে কল দিলাম ৫বার,।ধরলো নাহ।
হুহ!আমার কি?আমি গেমস খেলি।
১:৩০ এ ঘুমাই গেলাম।ঘুমের সঙ্গে আর পারলাম না।
—–
-‘পরেরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখলাম ৬টা বাজে সেসময়ে কিনা ফোন রিং হচ্ছে।
উফ এত সকালে আবার কে?হ্যালো!কে?’

-‘শুভ সকাল’

-‘তো কি করবো?মুড়ি খাও।ফোন অফ করে ঘুমাই গেলাম।কি বলছি নিজেও জানি না।

সকাল আটটায় বাসা থেকে বের হতে যেয়ে দরজা খুলে দেখি একটা ফুলের তোড়া।আর একটা লেটার।খুলে দেখি….চিঠিতে লেখা আছে-
-‘Dear,
ei fuler tora ta pura gondhoraj fuler.ja tmr bison prio akti ful.gondhorajer bagan theke ami nijer hate collect korsi ful gula.sob tmr’
r kal rate tmai games besi na khele ghumate bolsilam.suno nai.sokale phn disilam kete diso.nxt time amr obaddho hoba na.tmr e khoti’

-‘এটা পড়ে মাথা চড়ক গাছ করে পুরা বাসা তন্ন তন্ন করে খুঁজছি কোনো সিসি ক্যামেরা তো পেলাম না।তাইলে সব খবর রাখে কিভাবে?’
—-
কলেজে আসার পর আমি আর আঁখি ক্যামপাসে হাঁটতেছি এখন।সকালের বিষয়টা নিয়ে আলাপ করলাম কিছু।হঠাৎ!!
আমি পড়ে গেলাম মাটিতে।হাতে ব্যাথাও পাইছি।

প্রিয়া বললো,’তুই জানস না আমার সামনে কেউ হাঁটার সাহস রাখে না?তোর সাহস হয় কেমনে আমার সামনে দিয়া হাঁটোস?’

-‘তাই বলে তুই ওরে ধাক্কা দিবি?’

-‘আঁখি!চামচা গিরি করবি না।নইলে তোরেও ফালামু!”

-‘বাদ দে আঁখি।চল আমরা যাই’
—-
বাসায় আসলাম ছুটি হওয়ার পরে।এসে দেখলাম আম্মু কোমড়ে হাত দিয়ে আমাকে দেখে যাচ্ছে।
-‘কি হলো?’

-‘তোর জন্য একটা গিফট বক্স কে জানি পাঠাইছে।আমি চেষ্টা করতেছি খুলতে পারি নাই।’

-‘এটা কেচি দিয়ে খুলে।আচ্ছা আমি দেখি
খুললাম।ভিতরে একটা ফার্স্ট এইড বক্স।তাতে লিখা আছে তোমার খুব লেগেছে নাহ?সরি তোমাকে সেফে রাখতে পারিনি।আর এমন ভুল হবে না।হাতে মলম লাগিয়ে নিও’

-‘আজিব।কোনো সিক্রেট লাভার না তো?নাহ সেটাতো ফিল্মে হয়’!

রাত ১২:১০।সেই লেভেলের জ্বর আসছে আমার।
আম্মু তো পাগল হয়ে গেছে ভেজা তোয়ালে দিয়ে পোটি দিতে দিতে।
আমি খালি আবল তাবল বকতেছি। হুস ছিল না’
পরেরদিন সকালে আর কলেজে গেলাম না।জ্বর আগের মতনই আছে।
কে যেন আসছে বাসায়।আম্মু গিয়ে দরজা খুললো।একজন ডাক্তার।দেখে মনে হচ্ছে বড় ডাক্তার।আমার জ্বর পরীক্ষা করে চলে গেলেন।যাওয়ার সময় একটা প্রেসক্রিপশন দিয়ে গেলেন।আম্মু বললো,’ কি হলো?এত বড় ডাক্তার আমদের বাসায় আসলো তাও শুধু চেক আপের জন্য আবার চলেও গেলো।টাকা নিলো না।কিছুক্ষন পর সেই আবার আসলো।ঔষধ এক ব্যাগ আর কতগুলা ফ্রুটস দিয়ে আবার চলে গেলো।উনি পাগল নাকি আমরা পাগল হয়ে গেলাম?
আমি আর আম্মু তো অবাক হয়ে শুধু দেখছি।
পরেরদিন একটু সুস্থ হতেই কলেজ গেলাম।

-‘কিরে তুই কাল আসিস নাই! কলেজে তো প্রচুর ধামাকা হয়েছে’

-‘কি হয়ছে?’

-‘প্রিয়াকে কলেজ থেকে বের করে দিছে স্যার।তিন বছরের জন্য। ও কোনো কলেজে ভর্তি হতে পারবে না।সিল মেরে দিছে।ওর বাবার নাকি চাকরিটাও গেছে।’

-‘কি বললি এসব?’
আমি বুঝতেছি না।আমাকে যারা যারা কষ্ট দিতো তাদের সবার এমন ক্ষতি হচ্ছে কেন?
এসব ভাবনা মাথায় করে বাসায় আসলাম।জামা চেঞ্জ করতেছি হঠাৎ একটা মেসেজ আসলো।ডিয়ার পিংক জামাটা পরিও না।ব্ল্যাকটা পরো।জোস লাগবে’

মেসেজটা দেখে একটা লাফ দিয়ে ওয়াসরুমে চলে গেলাম।ভাবতেছি আমার রুমে কি কি ঘটে তা ঐ লোকটা জানে কেমনে।
বিকালে মন ভালো করতে আমি আঁখিদের বাসায় গিয়েছিলাম।দুজনেই দৌড়া দৌড়ি করতেছি।হঠাৎ আঁখি দুষ্টুমি করে আমার উড়না টান দিলো।আমি ওর থেকে টান দিয়ে উড়না নিয়ে নিলাম আবার।
৫টায় বাসায় চলে আসলাম আরও কিছুক্ষণ গল্প করে।আঁখির আম্মুর কল আসলো আমি বাসায় ঢোকার সাথে সাথে।
-‘হ্যালো আন্টি।কি হয়েছে?’

-‘তাহা।তুমি যাওয়ার পরেই আঁখি ছাদে গেছিলো ওখান থেকে নামার সময় ওর মনে হলো কেউ ওকে ধাক্কা দিছে।পড়ে গিয়ে হাত ভেঙে ফেলছে।আমরা এখন হসপিটালে’

আমি তো পুরাই অবাক।এসব কি করে হলো?
মাথায় হাত দিয়ে আমার রুমে আসলাম।বিছানায় একটা লেটার পড়ে আছে।
চিঠিতে লিখা আছে—
-‘Dear,
tmr urna dhorar odikar sudu amr. R keo ta korar sahos dekhale tar hat ami venge dibo. Tmr best frd tai just hat ta vangchi. Onno keo hole hat kete golai jhuliye ditam. ‘

-‘কি করবো কিছু বুঝতেছি না
কি হচ্ছে এসব আমার সাথে?কে লোকটা?’
——-
পরেরদিন সকালে।
-‘তাহা উঠ!দেখ ‘

-‘কি হয়ছে?’

মা আমাকে আসতে বলে চলে গেছেন।আমি তার পিছু পিছু সোফার রুমে গিয়ে দেখি পুরা রুম ভর্তি গিফট।
কালো পোশাক পরা কতগুলা লোক একের পর এক আরো আনতেছে।
হঠাৎ একটা কার আসলো।আমাদের বাসার গেটের সামনে দাঁড়ালো সেটা।সেখান থেকে সেদিনের সেই ছেলেটা নামলো।
ছেলেটা আসতেছে এদিকেই।আমাকে দেখে চোখ মারলো।একি সাথে দেখি আমার মামা ও আসছে।

-‘তাহা তুমি আরেক রুমে যাও’

-‘ঠিক আছে’

-‘ভাইয়া উনি কে?আর এতসব গিফট কেন আনছে?’

-‘ও হচ্ছে আমার ছোট বেলার ফ্রেন্ড সানভি চৌধুরীর একমাত্র ছেলে সৌরভ চৌধুরী।সানভি আমাকে ফোন করে বলেছে ও তোর মেয়েকে তাদের বাড়ির বউ করতে চায়’

-‘উনারা কই থাকে?’

-‘সৌরভের আম্মু আব্বু দুজনেই আমেরিকাতে থাকে।’

-‘তো আমার মেয়েকে দেখলো কিভাবে?’

-‘আন্টি!আমি এখানে আমার অফিসের কাজে বাংলাদেশের ক্লায়েন্টের সাথে ডিল করার জন্য আসছিলাম।সেই সূত্রে আমি তাহাকে দেখে পছন্দ করে ফেলি’

-‘আমি তাহার আব্বুর সাথে কথা বলে দেখবো।ওর নানুর ও মতামত দরকার’

-‘অবশ্যই’

-‘সব লুকিয়ে শুনছি।উনি এগুলা কি বলে?আমাকে তো শুধু দুইদিন দেখছে।এতেই পছন্দ করছে?’

আম্মু ভেতরের রুমে এসে আব্বুকে কল দিলো।সব বললো আব্বুকে।

-‘ভালই তো সম্বন্ধ আসছে।কিন্তু আমাদের মেয়ে এখনও ছোট।তুমি তোমার মায়ের সাথে কথা বলে দেখো’

ঠিক সেসময়ে নানু এসে হাজির।
সৌরভ উঠে গিয়ে নানুকে পা ধরে সালাম দিলো।নানু তো এত সুন্দর ছেলে দেখে হা হয়ে তাকিয়ে আছে।
সব শুনে নানুতো পারে না এখনই বিয়ে দেয় কারন নানুর ছোট থেকে ইচ্ছা আমাকে বিদেশি ছেলের সাথে বিয়ে দিবে যে আমাকে সেখানে নিয়ে যাবে সাথে করে।

-‘আমাদের মেয়ে এখন অনেক ছোট।১৭বছর হয়ছে সবে।আমরা মেয়ের ১৮হওয়া ছাড়া বিয়ে দিবো না’

-“আমারও একই ইচ্ছা।আম্মু আব্বু ও এটাই বলেছে।’

নানু উঠে গিয়ে আমার কাছে এসে মামি আর আম্মুরে ডাক দিলো।আমাকে শাড়ি পরিয়ে রেডি করতে বললো।আমি বিয়া করুম না কইতাছি!’

-‘চুপ!এমন ভালো পরিবারের ছেলে সহজে পাওয়া যায় না!

-‘ঐ পোলরে আমার কেমন জানি লাগে।আমার দিকে শয়তানের মতন তাকায় থাকে।
তাও জোরপূর্বক আমাকে যেতে হলো সোফার রুমে।উনাকে, মামাকে আর নানিকে নাস্তা দিলাম।হারামি আমার থেকে চোখ সরাইতেছে না।ইচ্ছা করে চা ঢেলে দিই’

-“আমি তাহার সাথে আলাদা একটু কথা বলতে চাই’

-‘(অসম্ভব।নানু রাজি হইও না’)

-‘কেন নয়।তাহা,যা ওরে নিয়ে তোর রুমে যা।’
.
বাধ্য মেয়ের মত রুমে আসলাম।শয়তান আমার পাশে বসলো।আমি উঠে গিয়ে টেবিলের উপরে বসলাম।
আমার ব্যবহারে উনি মুচকি হাসছেন।
চলবে””

অদ্ভুত প্রেম পর্ব-০১

0

অদ্ভুত প্রেম ❤️
Writer-Afnan Lara
[১]
-‘দিনটা ছিল সোমবার।প্রতিদিনের মতো কলেজের জন্য বের হয়েছি।তখন মনে হয় সকাল সাড়ে সাতটা বাজে।প্রাইভেট পড়তে যাচ্ছি এখন।সেখান থেকে সোজা কলেজে যাবো।
অনেকক্ষণ ধরে হাঁটছি!উফ অসহ্য!একটা রিকশা যদি পাইতাম।হেঁটে হেঁটেই যাওয়া লাগবে মনে হয়।এখন আবার কে কল দিছে?হ্যালো আম্মু? হুম বলো কিছু হয়েছে?

-‘আসার সময় ডিম আনবি মনে করে’

-‘আমার মা সব সময় আমি বাসা থেকে বের হলেই আমকে কিছু না কিছু আনতে বলে।অবশ্য বলারই কথা।আমার কোনো ভাইবোন নেই।আব্বু থাকে বিদেশ তাই আমাকেই আনতে হবে সব,,,,,,,দুম!!!!
আল্লাহ আবার পড়ছি মনে হয়।চোখ খুলে দেখি নাহ পড়ি নাই আমাকে কে যেন ধরে ফেলছে.তাকাই দেখলাম একটা ছেলে।সুন্দর দেখতে লম্বা চওড়া একটা ছেলে।সান গ্লাস পরা।
একি!!কারের মধ্যে হেলান দিয়ে এক হাত দিয়ে আমাকে ধরে রেখেছে?এখন হুশ আসলো আমার??
সাথে সাথে সিধা হয়ে দাঁড়ালাম।উনি আবার ফোন টিপা শুরু করলেন।এমন ভাব ধরছেন যেন কিছুই হয়নি।ফাইন!একটা ধন্যবাদ দিলাম রীতি অনুসারে।

-‘…..’

কোনো জবাব না পেয়ে ওখান থেকে সরে আবার হাঁটা ধরলাম।হঠাৎ একটা রিকশাচালক আসলো।অথচ এতক্ষণ একটা রিকশাও ছিলো না।তাড়াতাড়ি করে উঠে পড়লাম।এত সব ভাবার সময় নেই।
—–
ক্লাসে বসে আছি বোর হয়ে।আজকে নাকি আমাদের কলেজ দেখার জন্য কে জানি আসবে।পুরা কলেজ ফিটফাট।যাই হোক ইন্টারেস্ট নিয়ে তাকাই আছি কই কেউ তো আসলো না।হুর!! আমি যাই চটপটি খাইয়া আসি।গেটের সাথেই চটপটির দোকান।খাইতেছি হাপুস হুপুস করে।হঠাৎ দেখলাম স্যাররা সবাই দাঁড়িয়ে কারে যেন সালাম দিচ্ছে।
মনে হয় ঐ লোকটা এসে গেসে।চটপটি রেখে দৌড় মারলাম কোনোদিকে না তাকিয়ে।
এরপর ক্লাসে এসে উঁকি মারতেই লোকটাকে চেনা চেনা লাগলো।কই দেখছি??ও হ্যাঁ উনি তো সকালের সেই সুদর্শন ছেলেটা!!
খেয়াল করলাম উনি আমার দিকে তাকিয়ে আছেন।আমাকে দেখে মুচকি হাসলেন তিনি।আমি তো মূর্তিমান হয়ে লুকিয়ে পড়লাম।
এরপরে পিছনে তাকিয়ে দেখি আমার পেছনে অনেক মেয়ে আছে।
মনেহয় ওদের দিকে তাকিয়ে হাসছিল।
উনি স্যারের সাথে অনেক কথা বললেন।তারপর আমাদের ক্লাসে এসে সব দেখে কারে করে চলে গেলেন আবার।এত বড় ছেলে সাথে করে ২টা বডিগার্ড নিয়ে হাঁটেন।
কিছুক্ষন পর স্যার ক্লাসে আসলো।আমি বই নিলাম পড়ার জন্য।
স্যার জিজ্ঞেস করলেন,’তাহা তাবাসসুম কে?’

আমি তাই উঠে দাঁড়িয়ে বললাম,’আমি’

-‘তুমি পিছনে বসছো কেন?সামনে চলে আসো।’

-‘কি বিপদ!সামনে বসলে তো ফ্রেন্ডদের সাথে কথাও বলতে পারবো না’

-‘এখন থেকে সামনের সিটে বসবা।এই সিটটা তোমার জন্য বুকড্’

-‘আপদ’

ছুটি হলো তিনটার সময়।আমি সেই আবার দাঁড়িয়ে আছি রিকশার জন্য।প্রতিদিন ৩০টাকা দিয়েই যাই।একটা রিকশাচালক এসে বললেন, ‘যাবেন আপু’

আমি বললাম, ‘যাবো…..এই যায়গাতে,কত?’

-‘৫টাকা’

-‘আপনি সিউর ৫টাকা?’
চলবে””

শঙ্খ চিলের জুটি পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব

0

#শঙ্খ_চিলের_জুটি 🦅🦅
#ইফা_আমহৃদ
পর্ব::১১

মেলার এক কোণে দাঁড়িয়ে আছে আদ্রিতা ইফা।।ইভু রৌধিক নৌকায় উঠার জন্য টিকেট আনতে গেছে।। নাগরদোলায় প্রচুর ভীড়,, উঠতে চাইলে অনেক সময় লাগবে।। ততটুকু সময় অপেক্ষা করার মত সময় কারো নেই।। এই সময়ে ফোনটা বের করে পরপর কয়েকটা সেলফি তুলে নিলো দুজনে।।প্রতিটা সেলফি মধ্যে একটা অপরিচিত লোকের ফেইস ভেসে উঠছে।। অপরিচিত বললে ভুল হবে ।।খুব পরিচিত একটা মুখ কিন্তু স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে না।।একটা পিকের স্কিনে জুম করে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল ইফা।।দেখতে একদম আহিরের মতো ।।পেছনে দৃষ্টি ফেরাতেই চোখাচোখি হয়ে গেল দুজনের ।।আহির দাঁড়িয়ে আছে।। সেদিনের পর থেকে আর দেখা হয়নি তাদের।। অবশ্য একদিন ফোন করে মিট করতে চেয়েছিলো ।। কিন্তু মিট করে নি ইফা।।
আহির ভ্রু কুঁচকে সময় নিয়ে তিনবার চোখ মারলো ইফাকে।।ইফা দাঁতে দাঁত চেপে নিজের রাগ কমার চেষ্টা করলো ।।এটা পাবলিক প্লেস না হলে আজ খবর ছিল আহিরের।।

টিস্যুতে মুখ মুছতে মুছতে এগিয়ে এলো ইভু।।সাথে ইফা আর আদ্রিতাকে নিয়ে এসেছে।।রৌধিক নৌকার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।। ওদের আসতে দেখে পা দিয়ে দুলন্ত নৌকাটা থামিয়ে দিল।।এক এক করে তিনজনকে নৌকায় উঠিয়ে দিল।।দিধা না করে চট করে ইফার পাশে বসে পড়লো।।
ধীরে ধীরে নৌকা চলতে শুরু করল।।কখনো এক কোণা অনেক উপরে উঠে যাচ্ছে।।কখন আবার মাটির ফাঁকে ঢুকে যাচ্ছে।।ভয়ে ভয়ে রৌধিকের কোমর আঁকড়ে ধরলো ইফা।।ক্ষনেক্ষনে চোখের পলক পড়ছে।
সামনের দিকে চোখ যেতেই চোয়াল শক্ত হয়ে এলো তার।।অপর পাশে আহির দাঁত কেলিয়ে তাকিয়ে আছে।। তার নিচে ইভু আদ্রিতা বসে আছে।।চট করে মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি আটলো ইফার।।দুহাতে রৌধিকের কোমর পেঁচিয়ে ধরে কাঁধে মাথা রাখলো সে।। নেশাক্ত কন্ঠে বললো…

— একটু জড়িয়ে ধরো না বেবী ।। তোমার পাগল করা ছোঁয়ার জন্য আমি চাতক পাখির মতো হাহাকার করি

ইফার মুখে এমন কথা চোখ বড় বড় হয়ে গেল সবাই।। একটু আগে যে মেয়েটা কেবল ডিসটেন্ট মেইনটেইন করতো ।।সে এমন পাগলামী শুরু করে দিয়েছি।।আহিরের দিকে তাকিয়ে চোখ মারলো ইফা।।
হঠাৎ ইফার এমন ভঙ্গিমায় জ্ঞান শূন্য হয়ে পড়লো আহির।। অনায়াসে হাতের বাঁধন আলগা হয়ে গেল তার।। নিজেকে সামনে নেওয়ার আগেই উপর থেকে গড়িয়ে ধপাস করে ইফা পায়ের কাছে।।এই মুহূর্তটার জন্য অধির আগ্রহে অপেক্ষা করছিল ইফা।।আহিরকে পায়ের কাছে অনুভব করে ক্রমাগত কয়েকটা লাথি ,, ঘুষি,, কিল দিতে ব্যস্ত হয়ে গেল ইফা।।কি হচ্ছে ভালোভাবে বোঝার আগেই ইফার আক্রমন দেখে শান্ত হয়ে গেলো সবাই।।চলন্ত নৌকায় এসে ইফাকে থামানোর মত কেউ নেই।।

অনেক কষ্টে ইফার থেকে আহিরকে ছাড়িয়েছে শৃঙ্খলা বাহিনী।। অতঃপর হসপিটালে পাঠিয়ে দিয়েছে।।

ব্রীজের রেলিং এর উপর বসে আছে ইফা। স্থীর ভাবে সামনের দিকে তাকিয়ে আছে।।একটা ছোট গোলাপ এগিয়ে দিয়ে রৌধিক হাঁটু ভেঙ্গে বসে আছে ।।এই মুহূর্তে কি করা উচিত বুঝতে পারছে না সে।।আশে পাশে কোথাও আদ্রিতা ইভুর ছায়াও দেখা যাচ্ছে না।। আসছি বলে কোথায় চলে গেছে ,, বুঝতে পারেনি সে।।

ইফার রেসপন্স না পেয়ে উঠে দাঁড়ালো সে।।পিছনে ফিরে চোখ বন্ধ করে বললো….

— জানি না কবে ,,কিভাবে তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি ।।তবে এখন এইটুকু বুজতে পারছি ,, তুমি আমার সাথে একটু কথা না বললে নিজেকে বড্ড ফাঁকা ফাঁকা লাগে।।মনে হয় আমি উম্মাদ হয়ে যাচ্ছি।। সেদিন বৃষ্টি ভেজা ইফাকে দেখে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে ছিলাম আমি।। ভেজা নাক ,, মুখ ,, চোখ আমার নেশা ধরিয়ে দিয়েছিল।। সেদিন অদ্ভুত ভাবে তোমাকে দেখেছিলাম।। প্রতিদিন রাতে ঘুমাতে পারতাম না ।।একটা অদৃশ্য তুমি এসে আমাকে জাগিয়ে দিতে।। রাত দিন নেই,, সারাক্ষন সেখানে গিয়ে বসে থাকতাম ।।কখন তুমি আসবে।। কিন্তু তুমি এলে না।। তারপর যখন তোমার গাড়িটা এপার্মেন্টের সামনে দেখেছিলাম।।তখন তুমি গাড়িতে ছিলে না।প্রচন্ড রাগ হয়েছিল আমার।।রাগের বশে তোমার গাড়ির কাঁচ ভেঙ্গে ফেলেছিলাম।। তোমার এক্সিডেন্ট করা,,তোমার অজান্তে ফোন নাম্বার ,,ছবি তুলে আনা,,একে একে তোমার সাথে পরিচয় ।। সবকিছু আমাকে আরো তোমার প্রতি আকৃষ্ট করে তুলছিলো।। তোমার ইগনোর আমার সহ্য হয়না।।আই রিয়েলি লাভ ইউ

এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে থামলো রৌধিক।। এতোক্ষণ পলকহীন ভাবে রৌধিকের কথা শুনেছে ইফা।।একটা মানুষটা অজান্তেই এতোটা ভালোবাসতে পারে।। পরক্ষনেই মনে মাঝে জেগে উঠলো অভিমান।।যদি এতোটাই ভালোবাসে তাহলে সেদিন কেন ওভাবে অপমান করেছিলো।।

ইফার দৃষ্টি ভঙ্গি বুজতে সময় লাগলো না রৌধিকের।। একটু এগিয়ে ইফার হাতে হাত রেখে আবার বলতে শুরু করলো….

— সেদিনের ব্যবহারের জন্য আমি দুঃখিত ইফা।।আদ্রিতা আমার কাছে কতোটা প্রিয় তুমি জানো না। পাঁচ বছর বয়সের সময় আমার হার্টে সমস্যা হয়েছিল।।ডাক্তার জানান ,, বনমেরু ট্রান্সফার করতে হবে।। কিন্তু আমার কোনো ভাই বোন নেই।।তখন আমাকে বাঁচাতে মা আবার কনসেভ করছিস।।আদ্রিতা এসেছিলো এই পৃথিবীতে আমাকে বাঁচাতে।।৩ বছর পর যখন আমার অপারেশন সাকসেসফুল হয় ।। তখন আদ্রুর লাইফ রিস্ক হয়।।টানা ছয় মাস হসপিটালে থাকার পর সুস্থ হয় ও।।যদি সেদিন আদ্রুর কিছু হয়ে যেত আমি নিজেকে কখনো ক্ষমা করতে পারতাম না।। আমিই একমাত্র ভাই যে বোনের দেওয়া জীবন নিয়ে বেঁচে আছে।।

কথাগুলো বলতে বলতে চোখ ভরে এলো রৌধিকের ।। নিজের মধ্যে এক ধরনের অপরাধ বোধ কাজ করছে ।।আলতো ভাবে রৌধিকের কাঁধে হাত রাখতেই ,, জরিয়ে ধরলো ইফাকে।। হাউ মাউ করে কেঁদে উঠলো সে।।মুখের ভাষা হারিয়ে ফেলেছে ইফা।।

অন্ধকার আকাশে চাঁদ আলোতে চারদিক জলজল করছে ।।
বহুদূর থেকে এক জোড়া অপরিচিত পাখি উড়ে এসে ভর করলো ব্রীজের রেলিং এ উপর ।। দুটো পাখি একসাথে উড়ে এসে।।কোনোটাই আগে কিংবা পরে নয়।।ডানা থেকে নিম্ন অংশ হালকা বাদামি রঙের।।মাথা অংশ ধূসর রঙের।।ইফা কিছুক্ষণ কৌতূহলী চোখে পাখি দুটোর দিকে তাকিয়ে থেকে বললো…

— আচ্ছা এই পাখিগুলোকে কি পাখি বলা হয় ।।কখনো‌ তো এগুলো দেখি নি।।

— এগুলোকে শঙ্খচিল বলে।।এদেরকে দুর্ধর্ষ পাখিও বলা হয়।। সারারনতো চিল পরিবারের অন্তর্ভুক্ত।।বারো মাসেই তারা এই দেশে বসবাস করে ।।এরা সহজে জোড়া বাঁধে না ,, একবার বাঁধলে সারাজীবন একত্রে বসবাস করে।।আর সঙ্গি হারিয়ে ফেললে ,, সারাজীবন একা জীবন পাড়ি দেয়।। আর তুমি হচ্ছো আমার জুটি ।।”” শঙ্খচিলের জুটি 🦅🦅।।তোমাকে ছাড়া একটা মুহুর্ত আমার পক্ষে কল্পনা করা সম্ভব নয়।।ভালোবাসি তোমায়,, “”বড্ড বেশি ভালোবাসি””

— আমিও বাসি!!

— কি বাসো ??( ভ্রু কুঁচকে রৌধিক)

— ভালোবাসি!! আমার জুটি 🦅🦅

_______________ সমাপ্ত___________
এই গল্পটা লিখতে গিয়ে কেমন একটা বিরক্তিকর লাগছে।।লেখতে ইচ্ছে করে নি এমন একটা ভাব।।মনে হচ্ছে বোঝা টেনে নিয়ে যাচ্ছি।। কখনো কোনো গল্প লিখতে গিয়ে এমন হয়নি।।হুট করে শুরু করেছিলাম আর হুট করে শেষ করলাম।।
ধন্যবাদ💓

শঙ্খ চিলের জুটি পর্ব-১০

0

#শঙ্খ_চিলের_জুটি 🦅🦅
#ইফা_আমহৃদ
পর্ব::১০

–” ভাই তুই দিন দিন ছ্যাছড়া হয়ে যাচ্ছিস।। দুদিন আগে বললি ,, নিজে উপার্জন‌ না করে বিয়ে করবি না ।।আর এখন বলছিস ,, বিয়ের অভাবে পাগল হয়ে যাচ্ছিস।আচ্ছা তোর জ্বর টর আসেনি তো” !! (করুন সুরে আদ্রিতা)

কথাটা বলেই হাত ছুঁয়ে দিল রৌধিকের ললাটে।।সাথে সাথে মুখ কুঁচকে নিল রৌধিক ।। কপালে রাখা আদ্রিতার সূক্ষ্ম হাতটা ঝাটকা দিয়ে সরিয়ে দিল।।গালে হাত রেখে চিন্তিত মুখে বললো…

— “আদ্রু আমার জ্বর আসেনি ,, ইফার ভূতে পেরেছে।।ওর ইগনোর আমার সহ্য হয় না।। নিজেকে কেমন পাগল পাগল মনে হয়।।বুঝতে পারিনি ,, তাই বিয়ের জন্য নাকোচ করে দিয়েছি।।নাহলে আঙ্কেলের পা ধরে বসে থাকতাম,, যতক্ষন পর্যন্ত না ইফার সাথে আমার বিয়ে দিতে রাজি হতো”।।

— ”আমি তোর সাথে ইফার আলাদা সময় কাটানোর ব্যবস্থা করে দিতে পারি।।তুই নাহয় ওর মান অভিমান সব ভাঙিয়ে দিবি” ‌।

এককথায় রাজি হয়ে গেল রৌধিক।।মুখের কোণে ফুটে উঠলো এক তৃপ্তিকর হাসি।।হাসিটা এড়ালো না আদ্রিতার চোখ থেকে।। অবশেষে তার ভাই কারো প্রেমময় নেশায় নিজেকে হারিয়েছে।।অন্তন আরেকটু সময় পাবে অভিমান ভাঙাতে।।
হাতের মুঠোয় থাকা সেল ফোনটার দিকে কিছুক্ষণ গভীর ভাবে তাকিয়ে রইল আদ্রিতা‌‌।।প্রায় মিনিট দশেক আগে ইভুর সাথে কথা হয়েছে তার।।এখন আবার ফোন করলে কি ভাববে।। বৃদ্ধা আঙুল দিয়ে কপালের কোণে আলতো স্লাইড করে বললো….”– আমার ফোনে চার্জ নেই ,, তোর টা দিয়ে ডায়াল কর”।।
সন্দিহান চোখে তাকালো রৌধিক।।এক প্রকার আদ্রিতার ফোনটা ছো মেরে নিজের হাতের মাঝে বন্দি করে নিল।।কিছূউ বোঝার আগেই ফোনটা বহির্ভূত হয়ে গেল।। ক্লিনে পরপর দুইবার টার্চ করতেই ইভু-আদ্রিতার নিরূদ্বা এক ছবি ভেসে উঠলো।। পূর্নরায় সাইড বাটনে প্রেস করে ফোনটা আদ্রিতার হাতে ধরিয়ে দিল।।

পরপর পাঁচবার ইভুর নাম্বারে ডায়াল করেও কলটি গৃহিত হলো না।।চরম বিরক্তি হলো রৌধিক।।আদ্রিতার হাত থেকে ফোনটা নিয়ে অবিলম্বে আবার ডায়াল করলো।।এবার কলটি স্বীকৃত পেল।। সেকেন্ড পেরুবার আগেই শোনা গেল এক মোহনীয় কন্ঠস্বর…

— “দশ মিনিট তেতাল্লিশ সেকেন্ড হলো তোমার সাথে কথা শেষ হয়েছে‌‌।। আবার ফোন করেছো ।।তুমি তো দিনকে দিন ঢেড় রোমান্টিক হয়ে যাচ্ছ।।তবে এখন হওয়ার দরকার নেই ,, বিয়ে পর হও ‌।।তাহলে রোমান্স টা একটু বেশি হবে”।।

— “ব্রো আমি আদ্রু না রৌধিক ।। তাতে সমস্যা নেই,, চাইলে বিয়ের পর আমার সাথেও রোমান্স করতে পারেন”।।(প্রিন্ট করে রৌধিক)

লজ্জায় মাথা নুইয়ে গেল আদ্রিতার ।।বড় ভাইয়ের সমীপে এইসব উক্তি সমূহ তার মাথা নত করে রেখেছে।।রৌধিকের অগোচরে লজ্জায় কাতর মুখ নিয়ে রুম প্রস্থান করলো‌ সে।।

ফোনটা টেবিলের উপর রেখে চারদিকে কিছুক্ষণ চোখ বুলিয়ে নিল ,, কিন্তু কোথাও আদ্রিতার দেখা মিললো না।।চপল পা ফেলে বেলকেনিতে গিয়ে দাঁড়ালো রৌধিক। কালকে ইফার সাথে দেখা হবে তার।।অনেক কষ্টে ইভুকে রাজি করিয়েছেন।। আজ আর তার ঘুম হবে না। রাতের আকাশে ঝুঁলে থাকা এক খন্ড চাঁদ দেখে সময় পাড় করে দিবে সে।।

_________________

— “ভাইয়া থামবি তুই ।।আমি বিয়ে করতে যাচ্ছি না ।।তাই এতো সাজানো দরকার নেই”।।(করুন সুরে ইফা)

— “বেশী কথা না বলে চুপচাপ বস তো।।বিয়েতে তোকে এই সামান্য সাজে শ্বশুর বাড়ি পাঠাবো ,, কখনোই না।। তাছাড়া আমি হ্যান্ডসাম বয় ইরফান আহমেদ ইভু,, তার বোন একটু সাজবে না”।। (ইফার চুল আঁচড়ে দিতে দিতে ইভু)

— ”লাইক সিরিয়াসলি ভাইয়া ,, তুই স্যান্ডসাম আর সেটা আমাকে বিশ্বাস করতে হবে।।আজ পর্যন্ত একটা মেয়েকে পটাতে পারলি না,, আবার হ্যান্ডসাম ।।নিহাত আদ্রু ভাবী তোকে দয়া করে বিয়ে করছে।।কথা না বলে যেটা করছিস ,, তাড়াতাড়ি কর”!!(নাক টেনে ইফা)

— “কি ?? আমি একটা মেয়েও পটাতে পারি নি।।ওকে তাহলে আজ অনেকগুলো মেয়ে একসাথে ইমপ্রেস করে তোকে দেখিয়ে দিবো।।সব মেয়েরা আমার জন্য জাস্ট পাগল” ।।(ভাব নিয়ে ইভু)

— “এটা কিন্তু ভুল বললি তুই।। নিজেকে কখনো আয়নাতে দেখেছিস ।।বাদরের মতো দেখতে আর বলে কিনা হ্যান্ডসাম।।হ্যান্ডসাম দেখতে হলে আমাকে দেখ।।এখনো বিয়ের আসর থেকে মেয়ে তুলে আনতে পারি।।হা হা হা” (রুমে ঢুকতে ঢুকতে ইমতিয়াজ আমহৃদ)

— “চুপ করবে তুমি ।।ছেলে মেয়েদের সামনে কিভাবে কথা বলতে হয় ,, সেই জ্ঞান হলো না”।।(রুমকি)

ইমতিয়াজ আমহৃদ,,রুমকির কন্ঠস্বর শুনে মাথা তুলে তাকালো ইফা ইভু।।তার বাবা মা এসেছে।।রুমকি এগিয়ে এসে ইফার নয়নগোচর থেকে কাজল নিয়ে কানের পেছনে লাগিয়ে দিল।।থুতনি ধরে হালকা তুঙ্গ করে বিরবির করে উচ্চারণ করলো”মাশাআল্লাহ”!!মায়ের কথা শুনে মৃদু হাসলো ইফা।। ইমতিয়াজ আমহৃদ ইফার মাথায় আলতো হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন…

— “বড্ড অভিমান করে আছিস বাবা উপরে ।। এতো অভিমান তোর মনে জমে আছে।। কিন্তু বাবা মা একটু সন্তানকে শাসন করবেই ।।এটাই তো রীতি।তাই বলে তুই এভাবে বদলে যাবি।।আমি আমার আগের ইফাকে চাই ,, যার শব্দময় হাসি পুড়োবাড়ি টা আনন্দে ভরিয়ে রাখবে।।হবি ,, সেই ইফা”।।

ইফা চোখজোড়া ছলছল করে উঠলো।।তার একটু বদলে যাওয়াতে সবকিছু প্রানহীন হয়ে যাবে ,, ভাবতে পারে নি।। ঠোঁট প্রশস্ত করে শব্দ করে হাসলো ইফা।।এক হাতে বাবাকে আলতো বেষ্টিত করে নিল।।আজ থেকে শুরু হবে আবার বাবা মেয়ের মধুর সম্পর্ক।।

..
তৈরি হয়ে ড্রয়িং রুম পর্যন্ত আসতেই ইফার চোখ চড়কগাছ ।।সোফায় আরামসে বসে আছে আদ্রিতা রৌধিক।। মন খারাপ দেখে ইভু ইফাকে,, জোর করে মেলায় যাওয়ার জন্য রাজি করিয়েছে।।ইফার বরাবরই নাগরদোলায় উঠতে ভালো লাগে।। তবুও প্রথমে ইফা বিনা বাক্যে অসম্মত জানায়।।ইভু অনেক বুঝিয়ে রাজি করায় ।।যদি ঘুনাক্ষরেও জানতো রৌধিক কিংবা আদ্রিতা যাবে তাহলে ,, নাকোচ করে দিতো।।ইফা স্বাভাবিক ভাবেই আদ্রিতার সাথে বিহেব করলো।।কথার মাঝে একবার আড়চোখে রৌধিকের দিকে তাকিয়ে ছিল ,, সে প্রথম থেকেই তৃষ্ণার্থ ভাবে ইফার দিকে তাকিয়ে ছিল।।বিধায় দু’জনের চোখাচোখি হয়ে গেল।। কাকতালীয় ভাবে ইফার সাথে রৌধিকের জামার রং ম্যাচ করে গেছে।। আজ রৌধিক নীল রঙের পাজামা-পাঞ্জাবি।। চুলগুলো কপালের কাছে কার্ল করা,, হাতে ব্যান্ডের ওয়াচ।।নীলাভ চোখ দুটো ইফার চোখের দিকে নেশাক্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ।। গাড়িতে উঠার সময় বাঁধল আরেক বিপত্তি ।।রৌধিক আগে থেকেই দুটো রিক্সা ভাড়া করে এনেছে।।ইভু আর আদ্রিতা মহা খুশী ,, বিকেলের নরম রোদে প্রিয়শ্রীর হাতে হাতে রেখে নিরিবিলিতে পাশাপাশি বসে থাকার মজাই আলাদা।। কিন্তু ইফা চরম বিরক্ত,, কারন তার পাশের মানুষটিকে সে বিন্দু পরিমাণ সহ্য করতে পারে না।।ইফা মুখ ঘুরিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে আছে।।রৌধিক হাঁটুর উপর কনুই এর ভর রেখে গালে হাত দিয়ে ইফার দিকে তাকিয়ে আছে।।ইফার খোলা চুলগুলো বাতাসে এলোমেলো হয়ে গেছে।। এলোমেলো চুলগুলো রৌধিকের মুখের উপর আঁচড়ে পড়ছে‌।আর সে ইফার মাতাল করা স্মেলটা হাসি মুখে অনুভব করছে ।। দুজন মানুষের মধ্যে এতোটাই দূরত্ব যে ,, আদ্রিতা আর ইভু অনায়াসেই বসতে পারবে।। মিনিট দশেক রিক্সা ভালো রাস্তা দিয়ে অতিবাহিত হওয়াতে কারো কোনো সমস্যা হলো না। ভাঙ্গা রাস্তা দিয়ে চলতে শুরু করলে ,, আংশিক ঝাঁকুনি শুরু হলো।।ক্রমশ ঝাকুনির কম্পন বাড়তে শুরু করলো।।পড়ে যেতে নিলেই হাত বাড়িয়ে রৌধিকের হাত স্পর্শ করলো।।রৌধিকের ধ্যান ভাঙতেই দুহাতে ইফার হাত শক্ত করে ধরে নিজের দিকে টান দিলো।। আকস্মিক ঘটা এমন পরিস্থিতির জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলো না ইফা।। হঠাৎ হাতে টান পড়াতে গিয়ে পড়লো রৌধিকের বুকের।। পাঞ্জাবী চেপে ধরে ,, ভয়ে আখি জোড়া বার বেষ্টন করে,, বার কয়েক শ্বাস টেনে ট্রোম থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করলো ইফা।। ধুকপুকানির শব্দে নয়ন খুলে রৌধিকের চিবুকে নিজেকে আবিষ্কার করলো সে ।।রৌধিকের কাঁধে হাত রেখে সরে আসতে নিলে কোমড় চেপে ধরে থামিয়ে দিল সে।।কোমড়ে থাকা হাতটা সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করতে করতে বললো…

— “এটা কোন ধরনের অসভ্যেতামো ।।হাত সরান” ??

— “মুচড়ামুচড়ি অফ করে শান্ত হয়ে বস।।পৌঁছে গেলে আমি নিজেই হাত সরিয়ে ফেলবো।।আর এর আগে যদি এক ইন্ধি নড়াচড়া করো ,, তাহলে ধাক্কা মেরে এখানে ফেলে চলে যাবো।।তখন দেখাবো অসভ্যেতামো কাকে বলে ,,কত প্রকার ও কী কী?? মাইন্ড ইট”।।(দাঁতে দাঁত চেপে রৌধিক)

রৌধিকের কথায় স্ট্যাচু হয়ে বসে আছে ইফা।।ক্ষনেক্ষনে রিক্সায় ঝাকুনি অনুভব হয় ,,তখন শক্ত করে রৌধিক ইফার কোমড় চেপে ধরছে।। যাতে বারবার কেঁপে উঠলো সে।।পড়নের ওরনা চেপে সেই স্পর্শ থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছে সে।।
ইফার এমন ভঙ্গিমায় ঠোঁট চেপে হাসছে রৌধিক।।হালকা শব্দ হীন উচ্চারণ করলো সে…– ”পাগলা টা আমার”।।।।

চলবে…🎀🎀

শঙ্খ চিলের জুটি পর্ব-০৯

0

#শঙ্খ_চিলের_জুটি 🦅🦅
#ইফা_আমহৃদ
পর্ব::০৯

ইফা করুন চোখে ডান হাতের দিকে তাকিয়ে আছে।।একটুও হাত নাড়ানোর শক্তি খুঁজে পাচ্ছেনা।। একটু আগে ডাক্তারের কাছে গিয়ে কিছু চেস্ট করে এসেছে।। ডাক্তারের ধারণা হাতের কব্জির জোড়ায় সামান্য চিড় হয়েছে।। ইফা যখন জ্ঞান হারিয়েছিল ,, তখন একটু এলোমেলো ভাবে নিচে পড়েছিল।।তাই হাতের কব্জি বেকায়দায় পড়েছিল।। ফলশ্রুতিতে হাতের উপর আঘাত পেয়েছে।। এই নিয়ে বাড়ি মাথায় তুলে ফেলেছিলো ইভু ।।রৌধিকেও অনেক কথা শুনিয়েছে।।
অকের্য হাতটা দিয়ে গভীর ভাবে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল।।আগের থেকে বেশ ফুলে গেছে।। জায়গায় একদম কৃষ্ণবর্ণ ধারণ করেছে।।জ্ঞান ফেরার পর থেকে কাউকে কিছু জানায়নি।।মুখ চেপে ব্যাথাটা সবটা সহ্য করে নিয়েছে।।ইভু ইফার হাত পর্যবেক্ষণ করতে পেরে হসপিটালে নিয়ে যায়।। হঠাৎ নিজের হাতের উপর কারো তৈলাক্ত চিপচিপে হাত আবিষ্কার করলো।।হাতটা স্বযত্নে ইফার হাতের উপর হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।। হাতের অংশিধারীকে দেখার উদ্দেশ্যে ঘাড় বাঁকিয়ে তাকালো ইফা।।তার দু ইঞ্চি দূরে রৌধিক দাঁড়িয়ে আছে।। চোখে মুখে ভয়ের ছাপ স্পষ্ট ।।হয়তো নিজের করা কাজের অনুসূচনা হচ্ছে।। কিন্তু রৌধিকের ছায়াটা দেখার বিন্দুমাত্র আগ্রহ খুজে পাচ্ছে না ইফা।। চটজলদি বালিশের উপর থেকে নিজের বেদনা প্রহার হাতটা সরিয়ে নিল।। খানিকক্ষনের জন্য মাথা থেকে ব্যাথার কথাটা বেরিয়ে গিয়েছিল।। প্রক্ষান্তরে ,, হাতে টান পড়াতে ব্যাথাটা চাড়া দিয়ে উঠলো।। আহহহ করতে গিয়েও নয়ন যুগল বন্ধ করে ঠোঁট চেপে আঘাতটা সহ্য করে নিল সে।।চোখ খুলে দীর্ঘশ্বাস নিয়ে নিজেকে সামলে নিল।।এখন আগের মতো বেশী কথা বলে না ,,‌ কথায় কথায় ঠোঁট প্রশস্ত করে মাতাল করে হাসে না।।এখন ক্ষণেক্ষণে ঘনঘন নয়ন যুগল বন্ধ করে নেয়।।কেউ কথা বললে ভ্রু কুঁচকে তাকায়।।কথায় কথায় নাক ফুলিয়ে লাল করে ফেলা ।। এগুলো এখন নিতৃদিনের অভ্যস।।সকলের দৃষ্টি এড়াতে গরম কফির কাপটায় চুমুক দিল।। আকস্মিক ঘটা এমন দূর্ঘটনার জন্য ঠোঁটের উর্ধ্বে পুরু চামড়াটা মুহূর্তেই লালচে হয়ে উঠলো।।ডান হাতের তর্জনীটা অধরের উপর রাখতে মৃদু চিৎকার করে উঠলো সে।। একদিকে হাতের ব্যাথা অন্যদিকে ঠোঁটের দূর্ঘটনায় নিজেকে সামলাতে পারবো না।।
এতোক্ষণ ইফার ইগনোর অসহায় চোখে দেখলেও এবার আর সহ্য করতে পারলো না।।।দুকাধে হাত রেখে ইফাকে নিজের খুব কাছে টেনে নিল ।।হাতের দিক পরিবর্তন করে গালে রেখে ফুঁ দিতে লাগলো।।
রৌধিকের এমন ব্যবহারে কেঁপে কেঁপে উঠছে ইফা।।উষ্ণ গরম হাওয়ায় পুরো শরীরে পশম দাঁড়িয়ে গেছে।। আবেশে নয়ন আবেষ্টিত করে নিল ইফা‌। হার্ট বিট দ্রুত গতিতে ছুটে চলছে ।।বাহিরে থেকে যেকেউ সেই ধুকপুকানি শুনতে সক্ষম হবে।।

— আপনার ধারণা,, পৃথিবীতে সবকিছু টাকা দিয়ে পাওয়া যায়।।একটা কাজ করুন আপনার কিছু টাকা আমাকে দিয়ে দিন।।আমি নাহয় বাইরে থেকেই কেয়ার গুলো কিনে নিব।।

কথাগুলো বলেই রৌধিকের কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিল ইফা।।রৌধিকের দিকে তাকালেই সেদিকার দৃশ্য গুলো ভেসে উঠছে।।ইফার দমবন্ধ বিহেবে রৌধিকের উপলব্ধি করতে সমস্যা হলো না ,, সেদিনের টাকা দেওয়া বিষয়টাকে ইঙ্গিত করছে।।

___________________
হাসির শব্দে আহম্মেদ বাড়ি কম্পিত হচ্ছে।।আড্ডায় মেতে উঠেছে মহল।। কিন্তু সেখানে কোনো যোগসূত্র নেই ইফা।।সে শান্তমনে ফোনের দিকে তাকিয়ে আছে।। পৃথিবী ধ্বংস হয়ে গেলেও তার কিছু যায় আসে না।।টু সিটের এক সোফায় আদ্রিক আহম্মেদ এর পাশে বসে আছে ইফা।। আদ্রিক আহম্মেদ জোর করে তার পাশে ইফাকে বসিয়েছে।। চাইলেও ইফা এখান থেকে উঠতে পারছে না।।এখানে কি এই বাড়িতেই থাকতেও চাইছে না।।বাড়িটা রাজপ্রাসাদের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়।।বিদেশী টাকায় তৈরি করা।। দেয়ালের মাঝে আদ্রিক আহম্মেদ আর ইমতিয়াজ আমহৃদ এর ছবি বড় করে বাঁধিয়ে রাখা।। প্রথমবার যখন এই বাড়িতে পা রেখেছিল,,তখন বাড়িটা ভালোভাবে খেয়াল করেনি ।।ইফার সবচেয়ে বেশী ভালো লেগেছে রৌধিকের রুমের বেলকেনিটা।।সেখান থেকে ফুলে ফুলে ভরা বাগান,, ছোট একটা নদী দেখা যায়।।ইফার ভাবনার মাঝেই হুরমুর করে বাড়িতে ঢুকলেন এক ভদ্রলোক।। ইশারায় ইফাকে উঠে অন্যকোথাও বসতে বললেন ।।পড়নে ব্ল্যাক সুট,,, মাথায় পালোয়ানদের মতো ব্ল্যাক টুপি।।বয়স পঞ্চাশ উর্ধ্বে।। মোটা সরু ঘুটঘুটে কালো গোঁফ।। নির্ঘাত কার্লার ইউস করে এতো কালো করেছে।।দেখতে সার্কাসের জোকারের চেয়ে কোনো অংশে কম লাগছে না।। পেছনে একজন স্বল্প বয়সী তরুন যুবক দেখা যাচ্ছে।।হয়তো ইনি তার এসিস্ট্যান্ট।।
ইফা উঠে পাশের সোফায় বসে পড়লো।।ইফা উঠতেই বিনা বাক্যয় জায়গাটা তিনি দখল করে নিলেন।। এসিস্ট্যান্ট ব্যাগ থেকে একটা ল্যাপটপ বের করে লোকটার দিকে এগিয়ে দিলেন।। বললেন…

— এখানে আনুমানিক ২০০- ২২০টি ছবির মতো আছে।।সবাই তোর মতো নামকরা বিজন্যাস ম্যান ।। ছবিগুলোর সাথে বায়োডাটা দেওয়া আছে ,, যেটা পছন্দ হয় সিলেক্ট করে জানিয়ে দিবি ।।আর পছন্দ না হলে জানাবি আরো পাত্রী আছে।।

আদ্রিক আহম্মেদ ল্যাপটপের দিকে তাকিয়ে ইমতিয়াজ আমহৃদ কে উদ্দেশ্য করে বললেন..

— রৌধিকের বয়স কম তো হলো না ,, এই নিয়ে হাজার হাজারটা পাত্রী দেখা পেরিয়ে গেছে।। কিন্তু পাত্রী পছন্দ হচ্ছে না বলে ,, নাকোচ করে দিয়েছে।।তাই জলিলকে ডেকেছি।।।

ইমতিয়াজ আমহৃদ কিছুক্ষণ কৌতূহলী দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল জলিল নামক লোকটার দিকে।।এই মানুষটিকে তার বড্ড চেনা লাগছে ।।কোথাও একটা দেখেছে ,, মনে পড়ছে না।। ২৯ পাটির দাঁত বের করে শব্দ করে হাসলেন জলিল ।। দাঁতগুলো একদম বিশ্রী ধরনের টকটকে লাল রঙের।। দাঁত ব্রাশ করা হয়না কতোদিন হিসেব নেই।। দাঁতের এমন বিশ্রী অবস্থা দেখে একটা ইচ্ছে জাগলো ইফার মনে ।।একদম ভয়ংকর ইচ্ছে।।ওয়াশরুম পরিস্কার করার নোংরা ব্রাশ দিয়ে লোকটার দাঁত ব্রাশ করিয়ে দিতে ।।যদি তাতে দাঁতের একটু উন্নতি হয়।।তাহলে হয়তো রাতারাতি পরিচিতি পাবে ইফার এই টেকনিক।। সব জায়গায় টুথপেস্ট,, টুথব্রাশ রেখে ইফার তৈরি করা ফলমূলা ছরিয়ে পড়বে।।

— আরে ওকে চিনতে পারলি না।।ও তো জলিল ।। আমাদের শিক্ষক জামাল স্যারের ছেলে ।।এখন ঘটকালি করে।।

আদ্রিক আহম্মেদের কথায় দ্বিধায় ভুগছেন ইমতিয়াজ আমহৃদ।।একেই হয়তো বলে ,,আকাশ থেকে পড়ে খেজুর গাছে আটকে যাওয়া।। এটা কিভাবে সম্ভব ,, ক্লাসের সবচেয়ে ভালো ছাত্রটা শেষে কিনা …!! ভাগ্যের কারনে হয়তো এমন হয়েছে।।ইফার পছন্দ হলো না জলিল নামক লোকটাকে।। এমনিতে জোকারের পোশাক পড়ে এসেছে।।হাতে ছাতা নেই।।প্রাচীন প্রান্থা অনুযায়ী ,, ঘটক চেনার বেস্ট উপায় কালো ডাট ওয়ালা লম্বা ছাতা।।সাথে আবার এসিস্ট্যান্টও আছে।।একেই হয়তো বলে ডিজিটাল ঘটক।।

জলিলকে দেখে বিরক্তিকর ভাঁজ ফুটে উঠলো রৌধিকের মাথায়।।লোকটাকে কতোবার থ্রেট করেছে,, তার হিসেব নেই।।তবুও বেহায়ার মতো আহম্মেদ বিলায় ছুটে আসে।।রৌধিক ক্ষিপ্ত দৃষ্টি দিয়ে জলিল আর আদ্রিক আহম্মেদের মাঝখানে বসে পড়ল।।।টুসিটের সোফায় তিনজনের বসার একটু চাপাচাপি হওয়ার কথা থাকলেও হলো না।।রৌধিক একদম সেঁটে বসেছে জলিল ঘটকের দিকে।।লোকটার দম যায় যায় অবস্থা।। তবুও মুখে সৌজন্যে হাসি রেখে উঠার চেষ্টা করলেন।। রৌধিকের চেষ্টায় প্রায় মিনিট পাঁচেক পর উঠতে সক্ষম হলেন।।রৌধিক বাবার কাঁধে হাত রেখে বললো..

— বাবা দেখ ,, আমি এখনো তোমার টাকায় খাই ,, পড়ি ।। নিজে উপার্জন করা এখনও শিখি নি ।। কোন বাবা তার মেয়েকে আমার হাতে তুলে দিবে।। তাছাড়া আদ্রিতার বয়সও কম হলো না।। তুমি আদ্রিতার বিয়েটা আগে দাও ….!!

কিছুক্ষণ মৌন্যতা অবলম্বন করলেন আদ্রিক আহম্মেদ।। তিনি রৌধিকের কথার সাথে একমত।।আদ্রিতা ইভুর দিকে অসহায় ভাবে তাকিয়ে আছে।।এই মুহূর্তে রৌধিকের মাথায় হাজারটা বেল ভাঙতে ইচ্ছে করছে।।ইভুও লোকটার প্রতি চরম বিরক্ত…!!

— জলিল তুই রৌধিকের পাত্রী দেখা বাদ দিয়ে আদ্রিতার …

— আহহ বাবা ,, নিজের ঘরে ছেলে থাকতে অন্যদিকে তাকাচ্ছো কেন।।এদিকে তাকিয়ে দেখ ,, আদ্রিতা আর ইভুকে কতো সুন্দর লাগছে ।।আঙ্কেল আদ্রিতাকে নিজের মেয়ের মত দেখে ।। অনেকদিনের বন্ধুত্ব তোমাদের।।বেয়াই হবে ,, তখন আদ্রিতার শ্বশুরকে নিয়ে তুমি ব্যস্ত থাকলে।। আঙ্কেল তার বেয়াইকে নিয়ে।দেখা যাবে তোমাদের বন্ধুত্বে আবার ফাটল ধরল ।।তাই বললাম আর কি…??

কিছুক্ষণ নিরবতা বিরাজ করলো মাঝখানে ।।কোথাও না কোথাও রৌধিকের কথা ঠিক।। অতঃপর সবাই রাজি হলেন দুজনের বিয়ে দিতে।।

__________________
কাবার্ড থেকে খুঁজে পরপর তিনটে শার্ট বের করলো রৌধিক।।এই ৩ টা শার্ট তার কাছে সবচেয়ে প্রিয়।।একটাও পরার মতো অবস্থায় নেই।।প্রতিটা দাগে ভরপুর।।কোনো অদ্ভুত মুহূর্তের স্বাক্ষী।। প্রথমটায় কাঁদার দাগ ,, দ্বিতীয়টায় রক্তের দাগ ,, তৃতীয় টায় নেলপলিশের দাগ ।। শার্ট গুলো‌ চিবুকের সাথে মিশিয়ে রেখেছে।। মনে হচ্ছে ইফা গভীর ভাবে তার সাথে মিশে আছে।।নাহয় রাগের বশে একটু বলেছিল ,, কাছাকাছি না আসতে।।তাই বলে সত্যিই আসবে না।।আচ্ছা মেয়েটা কি তার অভিমান গুলো বুঝতে পারে নি।। শব্দকরে চুমু খেল শার্টের উপর ।।
২ দিন হয়েছে ইফারা তাদের বাড়িতে ফিরে গেছে।।যতক্ষন এখানে ছিল যথাসম্ভব ইফার অভিমান ভাঙানোর চেষ্টা করছে ।। কিন্তু সব বৃথা।।

— ভাইয়া এইসব কি করছিস তুই ?? (চোখে হাত দিয়ে আদ্রিতা)

বোনের সামনে চরম লজ্জায় পড়ে রৌধিক।।আদ্রিতার হাত ধরে পাশে বসিয়ে দিলো করুন সুরে বললো…

— আদ্রু ,, বাবাকে বলে তাড়াতাড়ি আমার বিয়েটা দিয়ে দে না ।।প্লীজ ….!! আমি বিয়ের অভাবে দিনদিন পাগল হয়ে যাচ্ছি।।

চলবে…🎀🎀

শঙ্খ চিলের জুটি পর্ব-০৮

0

#শঙ্খ_চিলের_জুটি 🦅🦅
#ইফা_আমহৃদ
পর্ব::০৮

সেই কখন থেকে কান ধরে উঠবস করছে ইভু।। হাত পায়ের অবস্থা বেসামাল।।ব্যাথায় টনটন করছে।। রুমে আসার পর থেকে ইফার রাগ কমানোর চেষ্টা করছে।। কিন্তু তাতে কোনো হেলেদুলে নেই ইফার।।সে শান্ত মনে টাওয়াল দিয়ে চুল মুছে চলেছে।। ইভু ইফার দিকে করুন চোখে তাকিয়ে বললো…

— “দেখ বনু,, এবারের মত মাপ করে দে..!! আই প্রমিস,, আর কখনো তোকে বলবো না।। শরীরটা ব্যাথায় টনটন করছে” ।।

— “আমি তোকে একবারও বলেছি ,, এভাবে কান ধরে সার্কাজ দেখাতে।।তাই তোর শরীর ব্যাথা করলে আমি কি করতে পারি”,!!( ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে ইফা)

— “প্লীজ বনু এভাবে বলিস না।। আমি সত্যিই দুঃখিত ।।(পকেট থেকে কয়েকটা চকলেট বের ইফার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললো) দেখ তোর জন্য কতো গুলো চকলেট এনেছি।। সবগুলো শুধু তোর”।।

— “আমি কি একবারও বলেছি ,,, আমার জন্য চকলেট নিয়ে আসতে।। তাছাড়া আমি বাচ্চা নয় ,, ১৮ বছর পেরিয়ে গেছে।। একজন এডালফ্ট মেয়েকে চকলেট হাতে মানায় না”।।( অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে ইফা)

ইভুর বুঝতে বাকি রইল না।। সেদিনাকার ইমতিয়াজ আমহৃদ এর কথাগুলো ফিরিয়ে দিচ্ছে।। ইফার এমন বিহেবে কষ্ট হচ্ছে ইভুর।।তবুও নিজেকে মানিয়ে নিয়েছে।। আজ যেভাবে হোক ,, ইফার রাগ সে ভাঙিয়েই ছাড়বে।।ইফাকে টেনে বেডের উপর বসিয়ে দিলো।।ড্রেসিং টেবিল খুঁজে সব কসমেটিক গুলো একে একে ইফার সামনে সাজিয়ে রাখলো।।ইফা বিরক্তিকর চোখে কসমেটিক গুলোর দিকে তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নিল।।এক মাসে পেরিয়ে গেছে এই কসমেটিক গুলো তার ছুঁয়ে দেখা হয়না।।অথচ একসময় এগুলো ছাড়া তার দিন কাটত না।। ইভু ইফার ছলছল চোখের দিকে তাকিয়ে একটা রেড কালার নেলপলিশ নিয়ে ইফার হাতে লাগিয়ে দিল।। নখের উপর ঠান্ডা ভেজা জাতীয় কিছু অনুভব করাতে হাত সরিয়ে নিল সে।। বুঝতে অসুবিধা হলো না,, ইভু স্বযত্নে নেলপলিশ লাগিয়ে দিচ্ছে।।

— “মানুষের মাথায় রাগ উঠলে ,, সে কিনা করতে পারে না।। সেদিন আমার মাথাও রাগ উঠে গিয়েছিল…

— “তাহলে আমার রাগটা কি যথেষ্ট ছিল না।। তুই তো আমাকে কোনোরুপ ওয়ার্নিং দিস নি ।। কিন্তু আমি দিয়েছিলাম।। শুধু একটা ভুলের জন্য আমার প্রিয় নেইলগুলো কাটতে হলো।।শারীরিক + মানসিক আঘাত সহ্য করতে হলো।। একমাস পর এসেছিস আমার রাগ অভিমান ভাঙাতে।।আমি কারো উপর কোনো অভিমান করিনি।।প্লীজ এখান থেকে যা…!!

কথাগুলো বলে দাড়ালো না ইফা।। চঞ্চল পায়ে বেলকেনিতে গিয়ে দাঁড়ালো।। কথাগুলো তখন গলায় পেঁচিয়ে নয়নের নীড় হয়ে বেরিয়ে আসে চাইছিল।।বড্ড কষ্ট হচ্ছিল ,,, ভাইয়ের উপর রেগে থাকতে।। অনেক কষ্টে নিজেকে সংযত করেছে।। হঠাৎ প্রচন্ড জোরে সাউন্ড সিস্টেম বাজার কারনে হুশ ফিরল তার।।মনে হচ্ছে এই বুঝি বেলকেনির ফ্লোর ভেঙ্গে নিচে পড়ে গেল।। বক্ষে থু থু ছিটিয়ে রুমের মধ্যে ফিরে এলো ।।ইভু সাউন্ড সিস্টেম অন করে উড়ুম ধরুম নাচছে।।বোনের রাগ ভাঙাতে এমন উদ্ভর কাজ করছে ইভু।। চোখ গোলগোল করে ইভুর দিকে তাকিয়ে আছে।।তার ভাবনার মাঝেই রুমে প্রবেশ করলেন রুমকি ।।হাতে খাবারের প্লেট ।। অতি সাবধানে প্লেটটা টেবিলের উপর রেখে সেও ইভুর সাথে ডান্স শুরু করে দিয়েছে।।পড়নে শাড়ি থাকার কারনে খুলে খুলে যাচ্ছে।।তাতে কোনো প্রভাব পড়ছে না রুমকির মধ্যে ।।সে দুহাতে শাড়ি ধরে ইভুর সাথে তাল মিলিয়ে যাচ্ছে।এই মুহুর্তে এক্সজেকলি ইফার কি করা উচিত বুঝতে পারছে না।। ইতিমধ্যে ইভু ইফার হাত টেনে দুজনের মাঝখানে এনে দাঁড় করিয়ে দিলো।।ইফার তার ভাই আর মায়ের উদ্ভর নাচ দেখে আর রাগ করে থাকতে পারেনি। একসাথে তিনজনে নাচ শুরু করে দিল…….

🎶🎶 দিলকে কিল করে আজ করবো করবো চিল,,
জাস্ট চিল 🎶🎶

||||||

— “হয়েছে ,, অনেক হয়েছে আমাদের নাচ ।। আর পারছি না।।এবার আয় দু’জনে খাবার খেয়ে নিবি।। ইফা সারাদিন কিছু খায়নি”।।(ঘনঘন শ্বাস নিয়ে রুমকি)

— “কি বলছ,, বোনু আজকে কিছু খায়নি”।

রুমকির কথায় হুশ ফিরল ইভু ।। কিন্তু এখনও স্ফুরন ভাবে নেচে যাচ্ছে ইফা।। ইভু ইফাকে থামিয়ে দিয়ে ,, নিজের হাত খাইয়ে দিতে লাগলো।।আর রুমকি দাঁড়িয়ে ভাই বোনের অফুরন্ত ভালোবাসা গুলো দেখছে।।
________________________
নদীর পাড়ে শান্ত মনে বসে আছে ইফা।।চোখের গভীর আকর্ষণ নদীর এলোমেলো স্রোত ধারার মধ্যে।। হঠাৎ হঠাৎ নদীর তীরে আঁচড়ে পড়া ঢেউ গুলো খুব ভালো লাগছে।।কখনো জলরাশি গুলো একত্রিত হয়ে বিশাল বিশাল ঢেউয়ের সৃষ্টি করে ।। আবার কখনো কখনো একটার উপর আরেকটা ঢেউ খেলে প্রবাহের দিক পাল্টে দিচ্ছে।। ভার্সিটিতে যাওয়ার কথা থাকলেও যাওয়া হয়নি আজ।।সবাই আদ্রিক আহম্মেদের বাড়ির উদ্দেশ্যে বেরিয়েছে।। হাজার বার বলার পরেও যায়নি ইফা।।এই নিয়ে ইমতিয়াজ আমহৃদ একটু রেগে আছে ।। তিনি নিজের কাজের জন্য অনুতপ্ত।।চেয়েছিলেন ইফার সাথে সব মনমালিন্য দূর করে রৌধিক আর আদ্রিতার সম্পর্কটা আগের মত স্বাভাবিক করে দিতে।। কিন্তু ইফা নাকোচ করে দিয়েছে।। প্রথমবার বাবার কথা অমান্য করেছে তাই মনটা তার বেশ খারাপ ।।মন ভালো করতে এখানে আসা‌।।কাঁধে কারো হাতের স্পর্শ পেয়ে ফিরে তাকালো সে।।বড় সাইজের একটা টেডি বসে আছে।।দেখা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে ,, এটা টেডি নয় ।।টেডির ভেতরে কেউ একজন বসে আছে।।ইফাকে বলার সুযোগ না দিয়েই বলতে শুরু করলো…

— “আমি কুকুর কে খুব ভয় পাই ।। আমার পেছনে একটা কুকুর পড়ছে ,, তাই বাধ্য হয়ে এদিকে ছুটে এসেছি” ।।(নাকে বাজিয়ে বাজিয়ে)

টেডির কথা শুনে ভুতুড়ে ঢোক গিলছে ইফা।।এখন যদি এখানে কুকুরটা চলে আসে ,, তাহলে ইফাকে আস্ত রাখবে না ।।দুজনের ভয়ের কারন কুকুর।।টেডি ছাড়া কাউকে আসেপাশে দেখা যাচ্ছে না।। এতোক্ষণে ঘেউ ঘেউ করতে করতে কুকুর টা তাদের কাছে এসে দাঁড়িয়েছে।।ভয়ে ভয়ে থরথর করে শরীর কাঁপছে ইফার ।।উপায়হীন হয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো টেডিকে।।টেডিটা দুহাতে ইফাকে জড়িয়ে ধরে সুরেলা কণ্ঠে বললো….

— “ভয় পেয় না ইফা ।। আমার গাড়ি আছে ,, চল আমরা এখান চলে যায়”।।

নিজের নামটা শুনে প্রচন্ড চমকালো ইফা।। স্পষ্ট মনে আছে,, এখন পর্যন্ত নিজের নাম বলে নি ।।তাহলে জানলো কিভাবে।।সেই কৌতূহলের চেয়ে ,, কুকুরের ভয়টা বেশী কাজ করছে ইফার মধ্যে।।টেডিটার আগেই দৌড়ে গাড়ির কাছে চলে গেল ইফা।।সেদিনের পর থেকে গাড়ি ছাড়াই বের হয় ইফা।।হলো তার বিপরীত।।টেডিটা লাফ দিয়ে গাড়ির উপরে উঠে গেছে আর ইফার ডোর খোলার চেষ্টা করছে ।। সবগুলো চাবী দিয়ে লক করে রেখেছে।।কুকুরটা ছোট ছোট পায়ে ভর করে ইফার দিকে এগিয়ে আসছে।। ইফা পিছুতে পিছুতে গাড়ির সাথে লেপ্টে আছে।।ক্রমশ ভেতরের ভয় তাকে জোখে ধরছে।।চোখের সামনে ঝাঁপসা হয়ে অন্ধকার ধরা দিল।।জ্ঞান হারিয়ে নুইয়ে পড়লো রাস্তার মাঝখানে।।
ইফাকে জ্ঞান হারাতে দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস নিল রৌধিক।। টেডির ড্রেসটা খুলে ,,উপর থেকে নিচে নেমে এলো।। গাড়ির লকটা খুলে ইফাকে ভেতরে বসিয়ে দিল।।‌ ব্যাক সিট থেকে খাবারগুলো বের করে কুকুরকে দিয়ে ,, ড্রাইভিং সিটে বসে পড়লো।। একটু ঝুঁকে ইফার সিট বেল্ট লাগিয়ে দিল।। এলোমেলো চুলগুলো দুহাতে সরিয়ে দিয়ে অদৃষ্টে অধর ছুয়ে দিল।।আলতো হাতে মাথাটা নিজের বুকে জরিয়ে ধরে ড্রাইভ করতে করতে বললো…

— “সরি মাই ইফুপরী ।।আই এম এক্সটেমলি সরি।।আমি জানি তুমি আমার উপর বড্ড অভিমান করে আছ?? সেটাই স্বাভাবিক।।তোমাকে মেন্টাল আঘাত করে আমার সাথে নিয়ে যাওয়ার জন্য আমি দুঃখিত।।কি করবো বলো‌,, তুমি সোজাসুজি আমার সাথে যাবে না।।উল্টো সিনক্রেট করবে।তাই বাধ্য হয়ে এমনটা করলাম”।।

ইমতিয়াজ আমহৃদ এর কথার ধরনে বুঝতে অসুবিধে হয় নি রৌধিকের। ইফা তার উপর অত্যন্ত রেগে আছে।। সরাসরি আসলে ইফা রৌধিকের সাথে যেত না ,, তাই বাধ্য হয়ে কুকুরের ভয়টা দেখিয়ে নিয়ে এলো।। প্রথম কুকুরকে কিছু খাবার দিয়ে লোলুপ করে ইফা কাছে নিয়ে গিয়েছিল।। এরজন্যই হয়তো বলে ,, কুকুর গন্ধ শুঁকে শুঁকে সব জায়গায় পৌছাতে পারে।।

চলবে..🎀🎀

শঙ্খ চিলের জুটি পর্ব-০৭

0

#শঙ্খ_চিলের_জুটি 🦅🦅
#ইফা_আমহৃদ
পর্ব::০৭

সকলের সামনে মাথা নিচু করে আছে ইফা।। চোখের অশ্রু টলমল করছে।।এই বুঝি চোখ থেকে গড়িয়ে পড়লো।। ওষ্ঠ চেপে নিজের কান্না আটকানোর শত চেষ্টা করছে।। একটু আগে ইভু অনেক কথা শুনিয়ে গেছে।। এখন বিরাজ করছে পিটপিটে নিরবতা।। একটু আগে ডাক্তার আদ্রিতাকে দেখে গেছে।।প্রচন্ড ভয়ে,, এখনও জ্ঞান ফিরেনি।।ডাক্তার ঘুমের ইনজেকশন পুশ করে দিয়েছে ।। সকালের আগে জ্ঞান ফিরবে না।। ঘর কাঁপিয়ে ঠাস করে চড় পড়লো ইফার গালে। মনে হচ্ছে,, এই বুঝি গালের পর্দা ফেটে যাচ্ছে।। প্রচন্ড জ্বলছে ।। আজ প্রথমবার ইমতিয়াজ আমহৃদ ইফার গায়ে হাত তুলেছে।। যতোটা ব্যাথা পেয়েছে,,, তারচেয়ে বেশি মেন্টাল আঘাত পেয়েছে।। নিরবতা ভেঙ্গে গর্জে উঠলেন ইমতিয়াজ আমহৃদ…

— “১৮ পেরিয়ে গেছে তোমার ।।এখন তুমি সম্পূর্ন এডাফ্ট ।। সামান্য একটা নেলপলিশের জন্য তুমি একজনের মুখে এভাবে ভাঙা নেলপলিশ লাগিয়ে দেবে।। একবার তাকিয়ে দেখ ,,, ছেলে মেয়ে গুলোর অবস্থা কি করেছো।।কাল সকালে ওরা নিজেদের বাড়িতে ফিরে যাচ্ছে,, তার আগে ওদের সামনে যেন তোমাকে না দেখি।।আউট…!!

— “ইমু কি করছিস তুই ।। এতো বড় একটা মেয়ের গায়ে এভাবে হাত তোলা ঠিক নয়।। তাছাড়া ওর জন্যই আমি…!!!

আর বলতে পারলেন না আদ্রিক আহম্মেদ।। ইমতিয়াজ আমহৃদ তাকে থামিয়ে দিয়ে বললেন…

— “কি ওর জন্য তোকে ফিরে পেয়েছি তাই তো।। তাহলে দরকার নেই তোকে।। খুঁজে এনে মাথা কিনে নিয়েছিল নাকি।।ওর সাত গুন ভুল মাপ।। ওর সামান্য একটু রাগে কতোবড় ক্ষতি হয়ে যেতে পারতো ,, ভাবতে পারছিস”।।

— “আঙ্কেল থাকনা ভুল করে ফেলেছে ইফা।।রাগের বশে অমন করে ফেলেছে।।হয়তো বুঝতে পারে নি”।।(রৌধিক)

রৌধিকের চোখজোড়া টকটকে লাল বর্ণ ধারণ করেছে।।এটা রাগে নাকি নেলপলিশের ইফেক্টে ,, বাহিরে থেকে দেখে বোঝার উপায় নেই।। চোখের কোণে জমা অশ্রুগুলো হাত বাড়িয়ে মুছে নিল ইফা।।আঢ় চোখে সবার দিকে তাকিয়ে পূর্ণরায় চোখ নামিয়ে নিলো।। ইমতিয়াজ আমহৃদ ড্রেসিং টেবিলের উপর থেকে নেল কাঁটার টা তুলে রৌধিকের দিকে এগিয়ে দিয়ে কর্কট গলায় বললেন…

— ”এই নখগুলোর জন্যই আজ এমন সিচুশ্যান ক্রেট হলো।।তাই আজকের পর থেকে তুমি নেলপলিশ কেনার জন্য এক টাকাও পাবে না।। না নখগুলো থাকবে আর না অন্যের ক্ষতি হবে।।(রৌধিক কে উদ্দেশ্য করে ইমতিয়াজ আমহৃদ) নিজের হাতে এর নখগুলো কেটে দাও”!!

এতোক্ষণ আটকে রাখা অশ্রু গুলো,,, আর চোখের মাঝে আটকে রইল না।। চোখের কার্নিশ বেয়ে গড়িয়ে পড়লো।। নিঃশ্বাস ভারী হয়ে আসছে।।এই নখগুলো রাখা শুরু করেছিল পাঁচ বছর আগে থেকে।। প্রতিদিন খুব যত্ন করতো ।। আজ সেই শখের জিনিসটাকে হারাতে হবে।। কিন্তু রৌধিক ইফার করুন চোখের দিকে তাকিয়ে দমে গেল।।এই নখের চিহ্নগুলো রৌধিকের পিঠে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।।এখনও হয়তো মৃদু দাগ দেখা যাবে।। বাধ্য হয়ে ইমতিয়াজ আমহৃদ ইফার হাতে নেল কাঁটারটা ধরিয়ে দিল।। দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে সব নখগুলো কেটে ফেললো।।নেল কাঁটারটা টেবিলের উপর রেখে দ্রুত পায়ে রুম প্রস্থান করলো ইফা।।

______________________
মাঝরাতে সবাই তখন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন।। ঘুম নেই ইফার চোখে ।।কুপিয়ে কুপিয়ে কেঁদে চলেছে ইফা।। অনেকক্ষন কান্না করার কারণে শরীরটা ক্রমশ কেঁপে উঠছে।।চোখ মুখ ফুলে লাল হয়ে গেছে।। চুলগুলো এলোমেলো ।। নিজের করা কাজের জন্য বড্ড অনুসূচনায় হচ্ছে।। কিন্তু কি করবে ,, তখন রৌধিককে উপর প্রচুর পরিমাণে রাগ উঠেছিল।। গুটিগুটি পায়ে বেড থেকে নেমে রৌধিকের রুমের উদ্দেশ্য বেরিয়ে এলো।।রৌধিক বালিশে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে আছে।।ঘূমন্ত আদ্রিতার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে ।। হঠাৎ রৌধিকের কাঁধে কারো স্পর্শ পেয়ে চোখ খুলে তাকালো।।ইফা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।।ইফাকে দেখেই রাগ উঠে গেল রৌধিকের মাথায়।।সাথে সাথে উঠে দাঁড়ালো রৌধিক।।চোখ মুখ শক্ত করে বললো…

— “এতোরাতে কি চাই এখানে।।দেখ ,, আমার মন মেজাজ একদম ভালো নেই,, কি বলতে ,,কি বলে ফেলবো ।।পরে তুমি কষ্ট পাবে।।প্লীজ লিভ নাও”!!

— “আই এম এক্সটেমলি সরি।।আমি বুঝতে পারিনি ,,এমন কিছু হবে”।।

ইফার কথায় রৌধিকের প্রচুর রাগ হলো ।।দুকাধে হাত রেখে ঝাকাতে ঝাকাতে বললো..

— “কি বুঝতে পারনি ,,একটু বলবে আমায়।। শুধু একটা নেলপলিশের জন্য এমন কেন করলে ।। আমার তোমাকে একটা নেলপলিশ কিনে দেওয়ার ক্ষমতা ছিল না”।।

— “আমি কখন বললাম,, আপনার কিনে দেওয়ার ক্ষমতা নেই।।আমি রাগের মাথায় এমনটা করে ফেলেছি”!!(রৌধিকের কথা কেড়ে নিয়ে ইফা)

— “এখনো কি তোমার রাগ দেখানো বাকি আছে ,, তাহলে তাড়াতাড়ি রাগটা দেখিয়ে বিদায় হয়”।।

রৌধিকের এমন ব্যবহারে কেঁপে কেঁপে উঠছে ইফা।।কোনো কথা বলার ক্ষমতা খুঁজতে পাচ্ছে না। আলতো হাতে কাঁধ থেকে রৌধিকের হাত নামিয়ে নিলো।।

— “এক্সজেকলি ,,তোমার ভাগ্যটা কি দিয়ে তৈরি বলতে পারো আমাকে।।যখনই দেখা হয় তখনই কোনো না কোনো অঘটন ঘটিয়ে ফেল।। আচ্ছা তুমি কি সবসময় এমন করো।। এতো দিন নিজের ক্ষতি করেছো, আজ আমাদের।। বাই দা ওয়ে,,, তোমার কাছে আমার আকুল আবেদন ,, প্লীজ তুমি আমার সামনে এসো না।।তোমাকে আমার জাস্ট সহ্য হয়না।।আমি সিউর জানি না,, দুটো নেলপলিশের দাম কত?? যা লাগে এখান থেকে নিয়ে আমার চোখের সামনে থেকে দূর হও”।।

চেঁচিয়ে কথাগুলো বলে ব্যাগটা হাতে ধরিয়ে দিলো।।ইফা করুন চোখে রৌধিকের দিকে তাকিয়ে ব্যাগটার দিকে তাকালো।।আজ একটা ভুলের জন্য সবাই এতো গুলো কথা শুনিয়ে দেবে ,, ভাবতে পারে নি।।তবে ঠিকই বলেছে রৌধিক ।। সবকিছু তাঁর জন্যই হয়েছে।।

_______________________
রৌধিকরা তাদের বাড়িতে ফিরে গেছে তাও মাস পেরিয়ে গেছে।। ইমতিয়াজ আমহৃদ এর কথা রাখতে তাদের সামনে যায়নি ইফা।।নিজেকে সবার থেকে আলাদা করে নিয়েছে ।।কারো জন্য সময় থেমে থাকে না।। সবকিছু এই এক মাসে বদলে গেছে ।।শুধু বদলে যায় নি ইফার অভিমান।।সে বাড়িতে ফিরল কি ফিরল না ,, খেল কি খেল না ।।সেদিকে কারো দৃষ্টি নেই ।।সবাই সবটা নিজের মতো করে সাজিয়ে নিয়েছে।। গোধূলির বেলার সময়টা এখন আর ছাদে কাটানো হয়না।। মন ভরে সাজগোজ করা হয়ে ওঠে না তার।।ইভুর সাথে খুনসুটিগুলো ,,সেদিনের পর হারিয়ে গেছে।।অতীতগুলো জমে আছে কিছু স্মৃতির পাতায় ।।

— “শুনছি তুমি নাকি উশৃঙ্খল জীবন শুরু করে দিয়েছো।।কখন বাড়িতে ফিরছো,, খাওয়া দাওয়া করছো ,, তার হিসেব নেই।। আমার বাড়ির একটা রুলস আছে,,,যদি সেটা মানতে না পারো তাহলে এই বাড়িতে তোমার থাকা হয়ে উঠবে না”।।।(চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে ইমতিয়াজ আমহৃদ)

— “সোজাসুজি বলে দিলেই তো হয় ,, আমাকে এই বাড়িতে রাখতে চাও না।। সমস্যা নেই,, বলে দাও ।।চলে যাই”।।(ইফা)

— “কোথায় যাবে জানতে পারি ।।বাড়িতে থাকো ,, তাই বাইরের পরিবেশটা কেমন জানতে পারো না।। একবার বের হও জানতে পারবে”।।

— “কোথায় যাবো সেটা হয়তো জানি না।।তবে মরে গিয়ে তোমাদের শান্তি তো দিয়ে পারবো” ।।

কথাটা বলে দাড়ালো না ইফা।। দ্রুত গতিতে রুমের দিকে ছুটে গেল।।ইফার কথা শুনে বুক চিরে বেরিয়ে এলে এক দীর্ঘশ্বাস ।। ড্রয়িং রুমে বিরাজ করছে পিনপিনে নিরবতা।। একজন মানুষ কতোটা কষ্টে থাকলে মৃত্যু কামনা করতে পারে।। ইমতিয়াজ আমহৃদ আর রুমকির মুখের দিকে তাকালো ইভু।। ছুটল ইফার রুমের দিকে।।ছোট বোন যে তার উপর বড্ড অভিমান করে আছে।।আজ সেই অভিমানের পরিসমাপ্তি ঘটাবে সে।।

চলবে….🎀🎀