Friday, July 18, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1374



Happil Married Part-09

0

#Happily_Married💥
#Part_9
Writer:: Shaanj Nahar Sanjida


আলিফ?(আমি রেগে দাত চেপে)

আলিফ চুপ করে ঘুমাচ্ছে।

আলিফ!(আমি কিছুটা চিৎকার করে)

এখনও ঘুম।

আমি এতো রেগে আছি এতো রেগে উনাকে ঘুম থেকে উঠানোর চেষ্টা করছি আর উনি ঘুমাচ্ছেন।এইবার আমি ধাক্কা দিয়ে,,
আলিফ।

উনি তখনও ঘুমে।

কি লোকরে বাবা!আমাকেও ঘুমের মধ্যে পেছনে ফেলে দিবে।(আমি বিড়বিড় করে)

ওই আলিফ।(আমি জোরে চিৎকার আর ধাক্কা দিয়ে)

উমমম।(আলিফ মোচড়া মুচরি করতে করতে)

উঠবে নাকি এখন খাট থেকে ফেলে দেবো?(আমি রেগে)

আলিফ কিছু না বলেই আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরলো।

আমি সব সময় চাইতাম।কোনো দিন একদিন বউকে জড়িয়ে ধরে সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠবো।(আলিফ রোমান্টিক মুডে)

এমনি সারারাত আমার পা বেঁধে রাখার কারণে আমার পা ব্যাথা করছে আরো উনার এই রোমান্টিক কথাবার্তা শুনে আরো মাথা ব্যাথা করতে লাগলো। তবে আমিও কম যাই না,,
আমিও উনার বুকে মাথা রেখে রোমান্টিক ভাবে বলতে লাগলাম,,
তাই।আমারও অনেক দিনের ইচ্ছে ছিল।বরের বুকে মাথা রেখে তার বুকে চিমটি কাটবো।
বলেই জোরেই চিমটি দিলাম।

আমার চিমটি খেয়ে আলিফ আমাকে ছেড়ে দিয়ে ধড়ফড়িয়ে উঠে গেলো,,
এই মেয়ে তোমার মধ্যে কি একটুও রোমান্টিকতা নেই।যতসব।এতো জোরে কেউ চিমটি দেয়।কালকেই নখ কাটবে। রাক্ষুসে মতো বড়ো নখ রেখেছে।আমার এতো রোমান্টিক সকালের বারোটা বাজিয়ে দিয়েছে।(আলিফ)

হয়েছে আপনার?এখন বলুন আমার পা কেনো বাধা?(আমি ভ্রু কুঁচকে)

কালকে সারারাত ফুটবল খেলছো মনে নেই!খালি পার্থক্য এইটুকু ফুটবলের বদলে আমাকে লাথি মেরেছো।তাই উপায় না পেয়ে তোমার পা বেধে রেখেছি।(আলিফ)

ভুলেও না।আমি মোটেও এমন করিনি।আর আমি আপনাকে কেনো লাথি মারবো?আশ্চর্য আপনি মিথ্যা বলছেন।(আমি)

হোয়াট আমি মিথ্যা বলছি।নেক্সট টাইম যখন মারবে না তখন ভিডিও করে রাখবো।আরেকটা কথা এইবার তো শুধু পা বেধেছি পরেরবার তোমাকে বেধে রাখবো।(আলিফ)

কি আপনি আমাকে বেধে রাখবেন?একে তো রাতে আমার পা বেঁধে রেখেছেন তারপর আবার আমাকে রাক্ষুসী বলেছেন এখন আবার ঝগড়া করছেন।আপনি পেয়েছেন টা কি?হা?আপনার কি মনে হয় আমি ঝগড়া করতে পারি না?(আমি একদম নিয়ে)

কি বলছো? আমার মনে হয় না আমি জানি তুমি ঝগড়া করতে এক্সপার্ট!এখনও আমার সাথে ঝগড়া করছো।এতে আমার সন্দেহ নেই।(আলিফ)

আপনার জানার জন্য বলছি আপনি আমাকে ঝগড়া করতে বাধ্য করছেন।(আমি)

ও তাই।(আলিফ)

এইরকম ফালতু টপিক নিয়ে আমি আর আলিফ বিছানায় বসে বসে এক ঘণ্টার মতো ঝগড়া করে এখন আমরা দুইজনেই হাপিয়ে উঠলাম।পরেই আলিফ হাপাতে হাপাতে বললো
আজকে এতটুকু ঝগড়াই থাক বাকি ঝগড়া পরে।

ঠিক আছে।আমারও গলা শুকিয়ে গেছে।চিৎকার করতে করতে এখন পানি খেয়ে ফ্রেশ হতে যাবো।
বলেই আমি টেবিল থেকে পানি নিতে নিতে আলিফ দৌড়ে ওয়াশরুমে ঢুকে গেলো।

আলিফ এইটা ঠিক না।আমি আগে যাবো বলছিলাম।বিরক্তকর।(আমি রেগে)

তোমাদের মেয়েদের ফ্রেশ হতে দেরি হয়।তাই তুমি পরেই থাকো।(আলিফ ওয়াশরুম থেকে)

আলিফ লায়লা।(আমি রেগে দাত চেপে চেপে)


আমি আমার পায়ের বাঁধন খুলে বিছানায় বসে বসে ব্যাগ থেকে কাপড় বের করছি তখনই আলিফ ওয়াশরুম থেকে বললো,,
হিয়া।আমি কাপড় নিতে ভুলে গেছি। একটু ব্যাগ থেকে কাপড়টা দাও তো।

হিহি(😈) ইটস বদলা টাইম।(আমি শয়তানি হাসি দিয়ে)

কি হলো দাও?(আলিফ)

আমি পারবো না নিজে এসে নিয়ে যান।(আমি ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে)

হোয়াট দা হেল।আমি এখন পুরো ভিজে আছি।(আলিফ দাত চেপে)

সো হোয়াট।আমি পারবো না।(আমি)

হিয়া ফাজলামি বন্ধ করে কাপড় গুলো দাও।(আলিফ)

দিতে পারে তবে এক শর্তে!(আমি)

আমি এখানে ভিজে দাড়িয়ে আছি আর তোমার এখনই শর্ত দেয়া লাগবে?(আলিফ)

রাগ দেখিয়ে লাভ নেই।আপনিই আমাকে এইসব করতে বাধ্য করেছেন।তাই এখন যা বলছি করুন না হলে বসে থাকুন।আমার কি?(আমি)

আচ্ছা বলো।কি শর্ত?(আলিফ)

প্রথমত সরি বলুন। দ্বিতীয়ত প্রমিজ করুন আমার পা বেঁধে রাখবেন না। তৃতীয়ত বলুন হিয়া তুমি রাক্ষুসী না তুমি খুবই কিউট।(আমি)

ওয়াক থু।তোমার কথা শুনে আমার বমি আসতেছে।(আলিফ)

হ্যা হ্যা very funny। যাই বলুন এইসব না বললে কিন্তু আমি দেবো না আপনার কাপড়।(আমি)

আচ্ছা আচ্ছা বলছি।আমি তোমাকে সরিও বলছি,পা বেঁধে রাখবো না প্রমিজ করছি,আর তুমি বিশ্ব সুন্দরী।হইছে?(আলিফ)

কি ভালো বরটা আমার!নজর যেনো না লাগে তার।
বলেই আমি কাপড় গুলো নিয়ে ওয়াশরুমে টোকা দিতেই আলিফ আমাকে টান মেরে ওয়াশরুমে নিয়ে গেলো।

আমি গিয়ে দেখি আলিফ সম্পূর্ন শুকনো কাপড় পরে দাড়িয়ে আছে।

আপনি না ভিজে কাপড়ে দাড়িয়ে ছিলেন?(আমি অবাক হয়ে)

তোমাকে কাছে আনার ছোটো একটু প্রয়াস আমার চড়ুই পাখি।
বলেই আলিফ আমার নাকে ঘষা দিল।

আপনি এতক্ষন মজা করছিলেন আমার সাথে!(আমি ছুটার চেষ্টা করে)

হুম।আর সব সময় ছুটার চেষ্টা করো কেনো?(আলিফ আমাকে আরো কাছে টেনে চেপে ধরলো)

আর আপনি সব সময় কাছে আসার চেষ্টা করেন কেনো?(আমি)

কারণ তোমাকে ভালোবাসি বলে।(আলিফ আমার কানের কাছে ফিসফিস করে)

আমি উনার কথা শুনে স্ট্যাচু হয়ে গেলাম।

কি হলো?কিছু বলো।(আলিফ আমার দিকে তাকিয়ে)

কি বলবো?জীবনের প্রথম দেখলাম কেউ ওয়াশরুমে এসে প্রপোজ করছে।এর থেকে ভালো জায়গা ছিল না আপনার?(😒আমি)

হ্যা হ্যা(হেসে)তুমি সত্যি অনেক ইন্টারেস্টিং হিয়া।(আলিফ হাসতে হাসতে)

হইছে ছাড়ুন।
বলেই ছুটার চেষ্টা করলাম।

আমার ছুটাছুটিতে ওয়াশরুমের শাওয়ারটা অন হয়ে গেলো।আর সেখানে দাঁড়িয়ে থাকা আমি আর আলিফ দুইজনই ভিজে গেলাম।

দেখলেন ভিজে গেলাম আপনার জন্য।(আমি)

আমার জন্য না।তোমার ছুটোছুটি করার জন্য।(আলিফ আমার হাত ধরে আমাকে ঘুরিয়ে)

কি করছেন?এখন কি এই শাওয়ারের নিচে আমরা নাচবো নাকি?(আমি ঘুরতে ঘুরতে)

এইসব হলে মন্দ না।
বলেই আলিফ আমাকে নিয়ে শাওয়ারের পানিতেই নাচতে শুরু করলো।

আমি কি বলবো বুঝতে পারছি না।আমার জীবনটা সত্যিই এখন অদ্ভুত হয়ে গেছে।ওয়াশরুমের প্রপোজ,শাওয়ারের পানিতে রেন ড্যান্স।এই লোকটার সাথে থাকতে থাকতে আমিও উনার মত হয়ে যাবো। তবে কেনো যেনো উনার সাথে থাকলে আমার মুখের হাসি কখনও গায়েব হয় না। ঝগড়াতেই আমার মুখে হাসি থাকে।


পরেই আলিফ আর আমি তৈরি হলাম বের হবো বলে। আমাদের দুজনের ঝগড়া,নাচ,আরো অনেক তামসা করতে করতে দুপুর হয়ে গেছে।রাতে তেমন কিছু খাওয়া হয়নি আমার তারপর সকাল গেলো ঝগড়া করতে করতে।

আমার পেটে ইদুর নাচানাচি করছে।(আমি পেটে হাত দিয়ে)

জীবনের প্রথম দেখলাম চুরুই পাখির পেটে ইদুর নাচানাচি করে।(আলিফ আড় চোখে তাকিয়ে)

হ্যা হ্যা!আমিও জীবনের প্রথম আলিফ লায়লাকে টিভিতে বের হয়ে আমার সাথে হাঁটতে দেখছি।(আমিও মজা নিয়ে)

এই তুমি আমাকে আলিফ লায়লা বলা বন্ধ করবে?(আলিফ)

আর আপনি আমাকে চড়ুই পাখি ডাকা বন্ধ করবেন?(আমি)

ডাকি কারণ তোমার স্বভাব।(আলিফ)

আমিও ডাকি কারণ আপনার স্বভাব।(আমি)

তুমি কি আবার ঝগড়া শুরু করতে চাও?(আলিফ)

না।খুব ক্ষুধা লাগছে।ঝগড়া করার শক্তি নেই।(আমি)

ভেরি গুড।এখন চলো।(আলিফ)

হুম।চলুন।
বলেই আলিফের হাত ধরে উনাকে নিয়ে চললাম।

আলিফও মুচকি হেসে হিয়ার পিছু পিছু চললো।


সেদিন সারাদিন আমরা বিভিন্ন জায়গায় ঘুরলাম। রেস্তরাঁয় গিয়ে খাবার খেলাম। সূর্য্য অস্ত দেখলাম।স্বপ্নের মত কাটলো আমার দিনটা।আলিফের সাথে নিজেকে খুবই নিরাপদ মনে হয়।উনার সাথে থাকতে ভালোই লাগে।লোকটা খুব ভালো।একদম আমার উল্টো।তবুও কেনো জানি উনার দিকে বেশি আকর্ষিত হচ্ছি। এই জন্য বিজ্ঞানীরা বলে বিপরীত মেরু পরস্পরকে আকর্ষিত করে।তবে এখনই আমি কোনো সিদ্ধান্তে যেতে চাই না।এতো তাড়াতাড়ি উপসংহারে গিয়ে নিজের জীবনে কোনো ভুল করতে চাই না।তাই শুধু দেখবো,,এই ছয় মাস আমি দেখবো তারপর কোনো সিদ্ধান্তে যাবো।এইটাই ভালো হবে আমার আর আলিফের জন্য। তবে এই ছয় মাসে আমি আলিফের মনে কোনো আশা জাগাতে চাই না।তাই নিজেকে সামলে রাখতে হবে আমার।


এই পনেরো দিন যে কোন দিক দিয়ে এসে কোন দিয়ে চলে গেলো খেয়ালই করিনি।আজ রাতে আমাদের যাওয়ার পালা ঘনিয়ে এলো।এখন কি আর করার?আমি মনমরা হয়ে গাড়ির সিটে বসে আছি।আর আলিফ ড্রাইভ করছে।হটাৎ নিরবতা ভেঙ্গে আলিফ বললো,
এতো মন খারাপ করে লাভ নেই!নেক্সট টাইম আবার আসবো!

আমি আর ওই হোটেলে যাবো না।ওই লোক আমার বুকইং এর সময়ের টাকা গুলো ফেরত দেয়নি কেনো?(আমি মনমরা হয়ে)

তুমি এতক্ষন এই জন্য মনমরা হয়ে বসে ছিলে?(আলিফ মাথায় হাত দিয়ে)

তাহলে আর কিসের জন্য বসে থাকবো?(আমি)

হায় আল্লাহ।শুনো টাকা ফেরত না দিক তোমার কথা মত ডিসকাউন্ট তো দিছে।ওইটা নিয়ে খুশি থাকো।এতো কিপ্টামি ভালো না।(আলিফ)

আপনি কি বুঝবেন আমার কষ্ট?(আমি রাগ করে অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে)

আচ্ছা রাগ করো না।পিয়াসকে বলো ও তোমাকে বুকিং এর টাকা দিয়ে দিবে।খুশি তো?(আলিফ)

আমি অতোটাও কিপটে নই।আমার লাগবে না টাকা।(আমি)

তাহলে মুখ ফুলিয়ে রেখো না।(আলিফ)

ওকে।(আমি হাসি দিয়ে)


কিছুক্ষনপর
আলিফ?(আমি)

হুম?(আলিফ)

থ্যাঙ্ক ইউ।(আমি)

ওয়েলকাম।(আলিফ আমার মাথায় হাত বুলিয়ে)


বাসায় যেতে যেতে আমাদের ভোর হয়ে গেলো।

সেখানে যেতেই আমার শাশুড়ি মা আমাকে বরণ করে ঘরে তুলল।আমিও হাসি মুখে আমার ছয় মাসের জন্য বাড়িতে পা রাখলাম।

জানো মা।আমি বলছিলাম যে তোরা কয়দিন পরে হানিমুনে যা।কিন্তু আমার ছেলে তো মানলই না।তোমার সাথে সময় কাটানোর সময় আমি পেলামই না।(আলেয়া বেগম হিয়াকে সোফায় বসাতে বসাতে)

মা বুঝো না আমার ভাইয়ের তর সইছিল না।(আলিশা)

চুপ।বেয়াদব আম্মু আব্বুর সামনে কি করে কথা বলতে হয় ভুলে গেছিস। সরম লজ্জা নেই।(আলিফ আলিশার মাথায় হালকা থাপ্পড় মেরে)

হুম।আলিশা ভাইয়া ভাবীর সম্পর্কে এইসব বলতে হয় না।(রামিম সাহেব)

সরি ভাইয়া ভাবী।(আলিশা)

আমি শুধু তাদের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে ভাবছি তারা কতো সুন্দর একে অপরের ভাবনা চিন্তা বুঝে।তাদের মনের কতো মিল।তারা সবাই একে অপরের সাথে কতো সুন্দর করে মিশতে পারে।এদিকে আমি?আমার যেনো ভয় হচ্ছে।এদের সাথে আমি কি ছয় মাস থাকতে পারবো?মিশতে পারবো তাদের সাথে?কোনো সমস্যা হবে না তো আমার?আমাকে আর কষ্ট পেতে হবে না তো?
আমার এইসব ভাবনার বেঘাৎ ঘটে আলেয়া বেগমের কথা শুনে।

কি ভাবছো মা?আচ্ছা বলো তুমি আজ সকালে কি খাবে?কি রান্না করবো তোমার জন্য?(আলেয়া বেগম)

কিছু লাগবে না আন্টি।(আমি)

তুমি আমাকে আন্টি বলছো কেনো?তুমি আমাকে মা বলে ডাকবে।(আলেয়া বেগম)

আমি উনার দিকে নির্বাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি কি বলবো আমার জানা নেই।এখন পর্যন্ত আমি কাউকে মা বলে ডাকি।এমন কি নিজের মাকেও না।এই প্রথম কেউ বললো তাকে মা বলে ডাকতে।কিন্তু এই মা শব্দটা এতো ভারী যে আমার মুখ দিয়ে বের হতেই চাচ্ছে না।আমি এই শব্দটি উচ্চারণ করতে পারছি না কিছুতেই।আমার এই নির্বাক দৃষ্টি আর কেউ না বুঝতে পারলেও আলিফ ঠিকই বুঝতে পেরেছে।তাই তো ও বলে উঠলো,,

আম্মু, আমরা তো তোমাকে আম্মু বলে ডাকিই হিয়া না হয় তোমাকে অন্য কিছু বলে ডাকুক।(আলিফ আলেয়া বেগম এর কাধে হাত রেখে)

অন্য কিছু?(আলেয়া বেগম অবাক হয়ে)

মামনি কেমন হবে ভাই?(আলিশা)

খুব সুন্দর হবে।আম্মু হিয়া যদি তোমাকে মামনি বলে ডাকে তাহলে কি তোমার কোনো আপত্তি রয়েছে?(আলিফ)

না।আমার কোনো আপত্তি নেই।বরং আমি খুশিই হবো(আলেয়া বেগম হিয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো)

ধন্যবাদ মামনি।(আমি)

তাহলে আমাকে বাবাই বলে ডাকবে।(রামিম সাহেব)

তাহলে তো আর কথাই নাই।ডাকাডাকির সমস্যা মিটে গেলো।(আলিফ)

না মিটে নি।আমাকে কি বলে ডাকবে তাহলে?(আলিশা)

তোকে পেত্নী বলে ডাকবে।(আলিফ)

এইটা ঠিক না ভাই!(আলিশা)

আচ্ছা তাহলে আমি তোমাকে ছোটো আপু বলে ডাকবো।তুমি আমার ছোটো তো তাই!(আমি)

ঠিক আছে। হুহ!তুই বড্ড খারাপ ভাই। ভাবী অনেক ভালো।(আলিশা)

লাই দিয়ে মাথায় তুলো না।(আলিফ)

দেখ ভাই,,,
আলিশা আরো কিছু বলতে যাবে তার আগেই বাবাই ওকে থামিয়ে বললো,,

অনেক হয়েছে ভোর পাঁচটা বাজে এখন তোমাদের এই তর্ক না করলেও চলবে।ওদের এখন রেস্ট নিতে দাও।(রামিম সাহেব)

ওকে স্যার।(আলেয়া বেগম আর আলিশা)

আমি উনাদের দেখতে হাসতে শুরু করলাম।


আমাদের রুমে,,
থ্যাঙ্ক ইউ আলিফ।(আমি)

আলিফ আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,,
ফ্রেশ হয়ে ঘুমাও।


সকাল দশটায়
আলিফ ঘুম থেকে উঠে দেখলো হিয়া নেই।
এই মেয়ে ঘুম থেকে এতো আগে উঠে গেলো।
বলেই আলিফ বিছানা থেকে উঠে ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিচে নেমে দেখে হিয়া,আলেয়া বেগম আর আলিশা মিলে সকালের নাস্তা বানাচ্ছে।

কি অপরূপ দৃশ্য তাই না আলিফ?
পেছন থেকে রামিম সাহেব বললো।

হুম বাবা।শুধু,,,
আলিফ কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেলো।

থাক বাবা।আর ওইসব মনে করিস না।চল খাবি।
বলেই রামিম সাহেব আর আলিফ হাসি মুখে খাবার টেবিলের দিকে গেলো।


চলবে,,,

Happily Married Part-08

0

#Happily_Married🔥
#Part_8
Writer:: Shaanj Nahar Sanjida


ইস!এতো জোরে কেউ চিৎকার দেয়।(আলিফ কানে ধরে)

আমি বেড থেকে গায়ে দেয়ার চাদর নিয়ে শরীরে পেঁচিয়ে বললাম
লজ্জা করে না।একটা মেয়ের রুমে বিনা অনুমতিতে ঢুকতে!

কোনো একটা মেয়ে না নিজের বউয়ের রুমে ঢুকেছি।আর এখন আরো কিছু করতে পারি।
বলেই আলিফ বিছানা থেকে নেমে কাছে আসতে লাগলো।

এই দূরে দূরে।একদম কাছে আসবেন না।(আমি পেছনে যেতে যেতে)

এখন কেনো ভয় পাচ্ছো চড়ুই পাখি।খুব না পালানোর শখ।(আলিফ এগুতে লাগলো)

আপনারও তো ধরার শখ।(আমি পেছুতে লাগলাম)

তোমার জন্য এখন আমি আলিফ রায়হান চৌধুরী থেকে বউ শিকারি চৌধুরী হয়ে গেছি।(আলিফ)

আমি উনার কথা শুনে ফিক করে হেসে দিলাম।

অবশ্য এই নামে আপনাকে ভালোই মানাবে।আলিফ লায়লা।(আমি মজা নিয়ে)

আলিফ আমার কাছে এসে দেয়ালে চেপে ধরলো,,,

এখন বলো কি বলতেছিলে?(আলিফ আমার কানে ফিসফিস করে)

দেখুন আপনি যদিও ভাবছেন এইটা আমার জন্য রোমান্টিক কিছু হবে বা আমি লজ্জায় কাপা কাপি করবো।আপনার দিক থেকে অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে নেবো তাহলে ভুল ভাবছেন।কারণ ওতো রোমান্টিক আবার আমি না।(আমি উনার হাতের ফাঁক দিয়ে বেরিয়ে)

এখন বলি কি বলতে ছিলাম?তবে তার আগে একটা কথা।আমাদের মধ্যে যা কথা হবে দূরে থেকে হবে।কাছাকাছি, ঘেঁষা ঘেঁসি স্বভাব আমার পছন্দ না।(আমি বেডে বসে)

আলিফ একটা দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে মনে মনে বলতে লাগলো,,
বউ পালায় নামলাম!কিন্তু বউ এতো আনরোমান্টিক!আলিফ তোর কি হবে?একে নিয়ে কি করবো আমি!তবে যাই হোক না কেনো?ওর এই স্বভাব আমার কাছে অনেক কিউট লাগে।মনে হয় গিয়ে গাল টেনে দেই।কি গুলোমুলো গাল গুলো!

যেই ভাবা সেই কাজ আলিফের খেয়ালও নেই ও গিয়ে কখন হিয়ার গাল ধরে টানতে শুরু করলো।

আহ্!কি করছেন?গাল ধরে টানছেন কেনো?(আমি উনার হাত ধরে)

তোমার গাল গুলো অনেক কিউট!(আলিফ আবারও টানতে শুরু করলো)

হইছে তো থামুন।ব্যাথা লাগে।(আমি)

ও সরি।কি যেনো বলেছিলে?(আলিফ আমাকে ছেড়ে)

আপনি কিছুই শুনেন নি কি বলেছি?(আমি ভ্রু কুঁচকে)

না।(আলিফ)

হায়রে।তাহলে শুনুন আমরা একে অপরের থেকে দূরে দূরে থাকবো।(আমি)

পসিবল না।আমি আমার কিউট বউ থাকে দূরে থাকতে পারবো না।(আলিফ বাচ্চাদের মত মুখ করে)

হ্যা?আমারে আজ পর্যন্ত, দর্জ্জাল,জংলী,পেত্নী,ভূত্নি, ডায়নী এইসব ছাড়া কেউ কিছু বলে নি আর আপনি বলছেন আমি কিউট!(আমি অবাক হয়ে)

হ্যা। ওওও আমার বউ কতো কিউট!
বলেই আলিফ আবার আমাকে ধরতে আসলো।

না।হইছে থাক।বুঝছি বুঝছি।আমি সরি আপনার বউ অনেক কিউট।(আমি হাত দিয়ে মানা করে)

আলিফ মিটমিট করে হাসছে আর ভাবছে,,
চড়ুই পাখি তুমি আমার থেকে যতো দূরে যাবে।আমি ততোই তোমাকে আমার কাছে টেনে আনবো।আমি বুঝে গেছি তোমাকে কি করে জব্দ করতে হয়।তোমার উপর জোর জবরদস্তি কখনই খাটবে না।তাই তোমাকে এই ভেবেই আমার কাছে রাখবো।

এখন হয়েছে এইসব ফাজলামি।এখন বলুন আপনি আমার এখানে আসার খবর পেলেন কোথা থেকে?(আমি সিরিয়াস হয়ে)

আকাশ দিয়েছে!(আলিফ সোফায় বসতে বসতে)

মজা নিচ্ছেন!আকাশ মরে যাবে তবুও কোনো দিন আমাকে ধোঁকা দিবে না।(আমি)

আলিফ মুচকি হেসে
তোমাদের বন্ধুত্বের সম্পর্ক দেখে আমি সত্যিই মুগ্ধ।ঠিকই বলেছো। ও বলেনি।

তাতো আমি জানি।এখন বলুন আপনি কি করে জানেন!(আমি)

পরেই আলিফ আমাকে সব খুলে বললো।কিভাবে উনি খুবই বুদ্ধিমানের মতো আমার সব প্ল্যানে কেরোসিন তেল দিয়ে আগুল জ্বালিয়ে দিয়েছে।

আমি উনার কথা শুনে মাথায় হাত দিয়ে বিছানায় বসে আছি।

কি হলো শকড?(আলিফ আড় চোখে তাকিয়ে)

হুম(আমি অসহায়ের মতো মাথা নেড়ে)

আলিফ আমার অবস্থা দেখে নিজের হাসি আর আটকাতে পারলো না। মন খুলে হাসতে শুরু করলো,,

আমি উনার হাসির দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম।খুব সুন্দর করে হাসেন উনি।তবে আমি কোনোদিন কোনো ছেলেকে হাসতে দেখিনি।আসলে আমার কাছে কেউ ঘেঁষে নি।আমি ঘেঁষতে দেইনি।আমার জীবনে ছেলে মানুষ মানেই তিনজন আব্বু,আকাশ,পাবেল আঙ্কেল।তাদের ছাড়া আমি কারো প্রতি কোনোদিন নজর দেইনি।তারাও আমার প্রতি নজর দিতে চায়নি তানা আমিই তাদের দিতে দেইনি।কারণ আমি কারো সাথে সহজে মিশি না।
কিন্তু কেনো জানি?উনার সাথে আমার প্রথম দিন থেকেই মিশতে ভালো লাগে।উনার সাথে কথা বলতে ভালো লাগছে।ঝগড়া করতে ভালো লাগে।ইচ্ছে করে মন খুলে কথা বলি উনার সাথে।তাকিয়ে থাকি উনার এই হাসি মুখের দিকে।যদিও পরিচয় শুধু কয়েক মুহূর্তের।তবুও এইটা কেমন আকর্ষণ।তবে কি এইটাই স্বামী স্ত্রীর বন্ধন।কেউ এই সম্পর্কে বাধা পড়লে আপনাআপনিই কি এমন অনুভূতি চলে আসে?কি হচ্ছে এইসব?

আমি গভীর চিন্তায় মগ্ন তখনই আলিফ আমার চোখের দিকে তাকিয়ে তুরি বাজিয়ে জিজ্ঞেস করলো,,
কি হলো?কি ভাবছো?(আলিফ)

আপনি কেনো আমার পিছে পরে আছেন?আমার থেকে ভালো মানুষ পাবেন।যে আপনাকে ভালোবাসবে,আপনাকে খুশি রাখবে,আপনার থেকে পালাবে না।তবে আপনি কেনো আমাকেই চান?আমি তো প্রায় আপনার মান সম্মান ধূলায় মিশিয়ে দিয়েছি।বারবার পালিয়েছি।ফালতু শর্ত দিয়েছি।কতো চেষ্টা করেছি বিয়ে ভাঙতে,,কতো মিথ্যা কথা বলেছি।কিন্তু আপনি কেনো এখনও আমাকে সহ্য করে যাচ্ছেন!(আমি)

তুমি ঠিকই বলেছো আমি তোমার থেকে ভালো পাবো।কিন্তু আমার যে তোমাকেই চাই।(আলিফ আমার মাথায় হাত বুলিয়ে)

হুহ! এতো ফিল্মি কথা বলে আমার মন ভুলানো সম্ভব না।(আমি আমার মাথা থেকে উনার হাত সরিয়ে)

আলিফ আবার দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে
আনরোমান্টিক বউ নিয়ে আর কি করার?(বিড়বিড় করে)

কিছু বললেন?(আমি বাকা চোখে তাকিয়ে)

না।(আলিফ)

আচ্ছা।আপনি অন্যদিকে তাকান আমি কাপড় পড়বো।(আমি)

কাপড় পরার কি দরকার?আমরা তো হানিমুনে আসছি।(আলিফ)

আমি কিছুক্ষন অবুঝের মতো তাকিয়ে রইলাম উনার দিকে তারপর উনি কি বললো তা আমার মাথায় ঢুকলো,,
এই আলিফ লায়লা।উল্টা পাল্টা কিছু করলে ভালো হবে না কিন্তু।(আমি রেগে)

তাইনাকি।
বলেই আলিফ আমাকে বিছানার সাথে চেপে ধরলো।

এখন ভয় তো চোখে স্পষ্ট।(আলিফ বাকা হাসি দিয়ে)

ও বাবা।আপনি উল্টা পাল্টা কিছু করবেন এইটার ভয় কি আমি পাবো না?আমি ওতো তাও অনুভূতিহীন মানুষ না।(আমি ভ্রু কুঁচকে)

আলিফ হাসতে হাসতে আমার উপর দিকে উঠলো,,

আমি অন্যদিকে তাকিয়ে আছি।তুমি তৈরি হও।(আলিফ)

ওকে।
বলেই আমি ব্যাগ থেকে কাপড় বের করে পরে নিলাম।

হয়ে গেছে।(আমি)


দুই ঘণ্টা পর
আমি বিছানায় আর আলিফ সোফায় গালে হাত দিয়ে বসে আছি দুইজনই গভীর চিন্তায় আছি।আমি চিন্তায় আছি উনি এখন আমাকে নিয়ে কি করবে?কিন্তু উনি কি চিন্তায় আছে! তা আবার আমি জানি না।

আলিফ?(আমি)

হুহ!(আলিফ)

আপনি কি চিন্তা করছেন?(আমি)

তুমি কি চিন্তা করছো! তা চিন্তা করছি।(আলিফ)

আমি চিন্তা করছি এখন আপনি কি করবেন?(আমি)

কি করবো?হানিমুন করতে আসছি।হানিমুন করবো আমার চড়ুই পাখির সাথে।(আলিফ দুষ্টু হাসি দিয়ে)

অনেক হয়েছে।প্রথমত আমাকে এই চড়ুই পাখি,চড়ুই পাখি ডাকা বন্ধ করেন।কারণ আমি চড়ুই পাখি না।(আমি)

দ্বিতীয়ত?(আলিফ)

আগে প্রথমটার জবাব দেন।(আমি)

সব গুলোর একসাথে উত্তর দিবো।এখন বলো দ্বিতীয়টা কি?(আলিফ)

আচ্ছা। দ্বিতীয়ত আমরা হানিমুনে আসছি মানে?কি বলতে চাইছেন?(আমি রেগে)

ঠিক আছে।তোমার প্রথমটার উত্তর দেই।যেহেতু তুমি খালি ফুরুৎ ফুরুৎ পালাও সেহেতু তোমার চড়ুই পাখি নামটা খুব ভালো মানায়।আর দ্বিতীয় তো আমি তো জানি তোমাকে এতো সহজে ধরা যাবে না।আর তুমি যেই মানুষ নির্ঘাত বিয়ে ভাঙতে বিয়ের পরেও কিছু করবে।আর যেহেতু তুমি বিয়ের দিনই পালিয়ে আসছো।তাই আমিই সবাইকে বলেছি তুমি আর আমি হানিমুনে আসছি।বাড়ি না গিয়ে সোজা হানিমুনে চলে আসলাম।একবার হানিমুন সেরে বাড়ি ফিরবো।আর এতে কারো কোনো আপত্তি নেই।(আলিফ একদমে)

মানে?(আমি অবাক হয়ে)

মানে!তোমার পরিবার আর আমার পরিবার জানে আমরা হানিমুনে আসছি।শুধু পিয়াস,আলিশা,সেলিম আর আকাশই জানে তুমি পালিয়েছ আর আমি তোমাকে ধরতে আসছি।আর কেউ না।(আলিফ)

তাহলে আজ যে আমাদের বৌভাত হওয়ার কথা ছিল।(আমি)

বৌভাত পনেরো দিন পরে।আমার মনে হচ্ছিলো এমন কিছু একটা হতে পারে তাইই আমি পনেরো দিন পর বৌভাত রাখছি।যাতে এমন কিছু হয়ে গেলেও আমি সামাল দিতে পারি। অবশ্য তোমার বাবাকে আমিই বলেছি তোমাকে বৌভাতের কথা না জানাতে।(আলিফ)

কিন্তু কেনো এমন করেছেন?(আমি নিচের দিকে তাকিয়ে)

কারণ তোমার জন্য।(আলিফ)

আমার জন্য।(আমি অবাক হয়ে)

হুম।আমি চাইনা আমার বউয়ের দিকে কেউ আঙ্গুল তুলে কথা বলুক।তুমি আবার পালালে লোকে তোমাকে খারাপ বলবে।আমাকে কিছু বলবে না।আর আমি চাইনা এমন কিছু হোক।আর তোমার বাবাও কষ্ট পাবে।আমার বাবারও সম্মানহানি হবে।বিয়ের দিন তার ছেলের বউ পালালে।(আলিফ)

আমার কথা এতো ভাবেন কেনো আপনি?আমি তো খারাপই।ভালো আমি কোনোদিন ছিলাম না কোনো দিন হবও না।(আমি)

তুমি ভালো ছিলে কিনা জানি না কিন্তু ভালো হবে না এইটা বলো না।কারণ ভবিষ্যতের কথা তুমি জানো না।কারণ তুমি আমার রানী(আলিফ আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে)

আমি উনার দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে আছি।আমি যেইসব সমস্যা সৃষ্টি করে রেখে এসেছি।উনি সেই সব সমস্যার সমাধান তৈরি করে এসেছে।কেউ জানেও না আমি পালিয়েছি।উনি আমার সম্মান,আমার বাবার,উনার বাবার,সবার সম্মান উনি রক্ষা করেছে।আর আমি শুধু সব সময় সমস্যা তৈরি করি,, না হয় কোনো সমস্যা থেকে পালাই।উনি একদম আমার উল্টো।(আমি মনে মনে)

কি হলো আবার কি ভাবছো?(আলিফ)

ভাবছি আপনার মাথায় এতো বুদ্ধি আসে কোথা থেকে।(আমি ভ্রু কুঁচকে)

জ্ঞানী লোকেরা বলে গেছে
একজন পুরুষের সফলতার পেছনে সব সময় এখন নারীর অবদান রয়েছে।(আলিফ ভাব নিয়ে)

পাম মারছেন।(আমি ভ্রু কুঁচকে)

না না।বিজনেস ম্যানের মাথায় এমন বুদ্ধি থাকেই।(আলিফ)

এইবার বের হলো আসলো কথা।(আমি)

আলিফ আবার আমার কথা শুনে হাসতে শুরু করলো।

আচ্ছা।বলো তো তুমি বিয়ে থেকে পালাও কেনো?(আলিফ)

কে বলছে আমি বিয়ে থেকে পালাই?আমি সম্পর্ক থেকে পালাই।সম্পর্কের বোজা বইতে আমার ভালো লাগে না।(আমি)

তাইনাকি?তাহলে একটা পরীক্ষা করা যাক।আগামী ছয় মাস তুমি আমার আর আমার পরিবারের সাথে থাকবে।যদি ছয় মাস পর তোমার মনে হয় আমাদের সম্পর্ক তোমার কাছে বোজা তাহলে তুমি চলে যেও।কিন্তু শর্ত একটাই তুমি পালাবে না,সমস্যা গুলো থেকেও না।(আলিফ)

ওকে।তবে আমারও একটা শর্ত আছে।আমাদের মধ্যে কোনো শারীরিক সম্পর্ক হবে না।(আমি)

আমি রাজি।(আলিফ)

পরেই আমি আর আলিফ আমাদের নতুন পরীক্ষার জন্য হাত মেলালাম।

চড়ুই পাখি।আমার ক্ষুধা লেগেছে।কাল রাত থেকে কিছু খাইনি।(আলিফ কিউট ফেস করে)

আমার উনার উপর মায়া হচ্ছে।উনি আমাকে খোজার জন্য এতো বেস্ত ছিলেন যে খাবার খাওয়ার সময়ও পায়নি।কিন্তু এদিকে আমি সারাদিন মুখে কিছু না কিছু দিয়েই রেখেছি।(আমি মনে মনে)

আচ্ছা।চলুন কিছু খেয়ে নেয়া যাক।(আমি)

আচ্ছা চলো।
পরেই আমি আর আলিফ বেরিয়ে গেলাম


যেতে যেতে
আপনাকে তো জিজ্ঞেস করা হলো না।আপনি আমার রুমে ঢুকলেন কি করে?আমি জানি আমার রুমের দরজা আমি বন্ধ করে রেখেছিলাম।(আমি হাঁটতে হাঁটতে)

হোটেল স্টাফ খুলে দিয়েছে।(আলিফ হাঁটতে হাঁটতে)

কেনো?আমি এখনই গিয়ে কমপ্লেইন করবো।(আমি রেগে চলে যেতে লাগলাম)

করে লাভ নেই।হোটেলটা পিয়াসদের।(আলিফ আমাকে ধরে)

তাই নাকি?তাহলে বুকিং এর সময় যেই টাকাগুলো নিছে ওইগুলো ফেরত দিতে বলি?(আমি)

কি কিপ্টা?আমার বউ হয়ে এতো কিপ্টামি করলে চলে।(আলিফ)

কই কিপ্টামি করলাম।পিয়াস ভাইয়ার হোটেলই তো।আমরা ফ্রীতেই থাকতে পারি।আচ্ছা খাবারও কি ফ্রীতে দিবে।(আমি)

দেখো।আর কোনো কিপ্টামি কথাবার্তা প্লিজ বলো না।তোমার কথা শুনে আমার ক্ষুধা চলে যাচ্ছে।(আলিফ অসহায়ের মতো))

আচ্ছা।এখন না পরে বলব।পিয়াস ভাইকে ফোন করে কিন্তু বলবেন আমাদের যেনো ডিসকাউন্ট দেয়।(আমি)

আচ্ছা আচ্ছা।আমি তোমাকে ফোন ধরিয়ে দেবো তুমি বলবে ঠিক আছে!(আলিফ)

গুড আইডিয়া।(আমি)


রুমে
রাতের খাবার শেষ করেই হিয়া রুমে এসে বিছানায় শুয়ে নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে।

অন্যদিকে আলিফ বেলকনিতে দাড়িয়ে আকাশ দেখছে,,
তখনই পিয়াস ফোন দিলো।

হ্যালো।(আলিফ)

Hello বাদ দে।আগে বল কেমন হচ্ছে তোদের হানিমুন।(পিয়াস টিটকারি মেরে)

পরেই আলিফ সব কিছু পিয়াসকে বললো,,,

যাক।এখন ও পালাবে না এইটা ভেবেই আমি নিশ্চিন্ত। ছয় মাসে ওর মন জয় করা যাবেই।(পিয়াস)

হুম।আমি কোনো ভাবতে পারিনি।যে বিয়েটাকে আমি চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছি সেই বিয়েকে বাঁচাতেই এতো কিছু করতে হচ্ছে।কোনোদিন ভাবতে পারিনি হিয়ার মত কোনো একটা মেয়ের ভালোবাসার মায়ার পরে নিজের মন হারাবো।(আলিফ মুচকি হেসে)

হুম।বিয়ের চ্যালেঞ্জ এ তো জিতে গেলি।এখন বিয়ে বাঁচানোর চ্যালেঞ্জে জিতে গেলেই।তোরা happily married,,(পিয়াস)

হুম।কোনোদিন ভাবি নি বিয়েটা আমার জন্য এতো সুখের হবে।(আলিফ)

হুম। অবশ্য যা হয়েছে।তারপর বিয়েতে তুই মত দিবি কিনা এইটা নিয়েই আমার চিন্তা ছিলো।কিন্তু এখন বিয়ে তো হয়েও গেলো আর তুইও ওকে ভালোবেসে ফেলেছিস।দেখলি বিয়ের সম্পর্কের কতো শক্তি।তুই তো বিয়েতে বিশ্বাসই করতি না।(পিয়াস)

তোর মনে হয় যা হয়েছে তার পরেও বিয়েতে বিশ্বাস থাকার কথা আমার।(আলিফ)

যা হয়েছে হয়েছে।এখন ওইসব বাদ দে। হিয়ামনিকে এখন কিছু বলিস না।(পিয়াস)

পাগল নাকি।আগে ঠিক হয়ে নিক পরিস্থিতি।(আলিফ)

হুম।পড়ে জানলেও বুঝতে পারবে আমার বিশ্বাস। ও অনেক বুদ্ধিমতী।(পিয়াস)

বুদ্ধিমতী?কালকে ফোন দিয়ে তোকে বলবে ডিসকাউন্ট দিতে। ও যে হোটেলে থাকবে তার।আমাকে এইটাও বলছে বুক করার সময় যেই টাকা দিয়েছে তাও ফেরত চায়।(আলিফ)

হ্যা হ্যা(এক গাল হেসে)বলিস ওরই এই হোটেল।(পিয়াস হাসতে হাসতে)

এইটা বলিস না।পড়ে দেখবি ও হোটেল বিক্রি করে দিয়েছে।(আলিফ)

আচ্ছা আচ্ছা।যা এখন রেস্ট নে।
বলেই পিয়াস ফোনটা কেটে দিলো।


আলিফ রুমে গিয়ে দেখলো
হিয়া হাত পা ছড়িয়ে মুখ হা করে ঘুমাচ্ছে।
হায়রে মানুষকে নাকি নিষ্পাপ লাগে ঘুমে।একে নিষ্পাপ ঠিকই লাগছে কিন্তু ভয়কর নিষ্পাপ।
বলেই
আলিফ একটা দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে হিয়ার পাশে ঘুমিয়ে পড়লো।


মাঝ রাতে
হিয়ার লাথি খেতে খেতে আলিফের ঘুম ভেংগে গেল।
এই মেয়ে দিনের বেলা তো হাত পা ছুটা ছুটি করেই রাতেও এর শান্তি নেই।
দাড়া দেখাচ্ছি তোকে মজা।
বলেই আলিফ উঠে কিছু একটা করে পড়লো,

আহা!এখন একটা শান্তির ঘুম দেবো।
বলেই আলিফ শুয়ে পড়ল।


সকালে
আমি ঘুম ঘুম চোখে পা নাড়ানোর চেষ্টা করছি কিন্তু পারছি না।
ধরফরিয়ে উঠে দেখি আমার দুপা বিছানার সাথে আমারই ওড়না দিয়ে বাঁধা।পাশেই নাক ডেকে শান্তি মতো ঘুমাচ্ছে আলিফ।
আমার বুঝতে বেগ পেতে হয়নি আমার পা কে বেধেছে।


চলবে,,,

Happily Married Part-07

0

#Happily_Married🔥
#Part_7
Writer:: Shaanj Nahar Sanjida


কিহ!(পিয়াস আর আলিশা অবাক হয়ে)

হুম।(আলিফ রেগে)

ভাই,ভাবী এখানে একটা চিরকুট লিখে গাড়ির সিটে গুজে রেখে গেছে।(আলিশা চিরকটুটা আলিফের হাতে দিয়ে)

আলিফ চিরকুটটা খুলে পড়তে শুরু করলো,,,
চিরকুট
আমার বাবাকে বলে দিয়েন আমাকে উনি বিয়ে করতে বলছেন।সংসার করতে না।

আলিফ রাগে চিরকুট ধুমরে মুচড়ে বললো
বিয়ে তোমাকে করাতে পেরেছি। সংসারও তুমিই করবে হিয়ামনি।

এখন কি করবি?(পিয়াস আলিফের কাধে হাত রেখে)

কিছুক্ষণ ভেবে আলিফ বললো
তোদের একটা কাজ করতে হবে,,
বলেই আলিফ ওদের কিছু একটা বললো।


অন্যদিকে
আজ ফাগুনে পূর্ণিমা রাতে
চল পালায়ে যাই

Mein chali,mein chali
Dekhu peyar ki Gali
Mujhe roke na koi
Mein chali, mein chali

ছুটলে কথা,থামায় কে?
আজকে ঠেকায় আমায় কে?
(আমি জোড়ে জোড়ে চিৎকার করতে করতে গান,ছড়া গুলো বলতে লাগলাম)

তুই থামবি হিয়া?(আকাশ চিন্তিত হয়ে বাইক চালাতে চালাতে)

আরে তুই এতো চিন্তা করছিস কেনো?(আমি ওর বাইকের পিছে বসে)

তুই কি কোনো দিন চিন্তা ছাড়া আমাকে কিছু দিয়েছিস?(আকাশ রেগে)

বেস্ট ফ্রেন্ড এর জন্য এইটুকু করতে পারবি না?(আমি ঠোঁট ফুলিয়ে)

কোন এক সময় বলেছিলাম বেস্ট ফ্রেন্ড এর জন্য জানও দিতে পারি।কিন্তু কে জানতো আমার বেস্ট ফ্রেন্ড সত্যিই সত্যিই আমার জান চেয়ে বসবে!(আকাশ হতাশ হয়ে)

হইছে তোর আর হতাশ হতে হবে না।আরে বলছি তো কিছু হবে না রে!(আমি আকাশকে সান্তনা দিয়ে)

তুই কি করে জানলি ভবিষ্যতের কথা?তোর বরের কতো গুলো বডিগার্ড ছিলো তুই জানিস!আমার তো দেখেই আত্মআ বের হয়ে গেছিলো।কি করে যে আমি গাড়ির তেল বের করেছিলাম তুই জানিস!খালি মনে হচ্ছিল এই বুঝি কেউ দেখে ফেলল।(আকাশ)

কেউ দেখে নাই তো?আর শুন এখন যা করার করে ফেলেছি।এখন আর তোর মাথা ব্যাথা নিয়ে লাভ নেই।বরং তুই ভালো করে গাড়ি চালা।মাত্র বিয়ে হয়েছে এখনি মরতে চাই না।আমার বাসরও হয়নি।(আমি)

তোর মুখে কিছু আটকায় না?পাঠিয়ে দেই বরের কাছে?গিয়ে বাসর কর।(আকাশ ভ্রু কুঁচকে)

ওই ব্যাটা। বাইক চালানোতে মনোযোগ দে।(আমি দাত চেপে)

পরেই আকাশ ওর বকবক বন্ধ করে বাইক চালাতে মনযোগ দিলো।
আসলে আমার আর আকাশের প্ল্যান ছিল এমন,,
যখন বাবা আমার হাত পা বেঁধে দিয়েছিল তখনই আমি অনেক কষ্টে এই উপায় বের করি।আমার বাবা বলছে বিয়ে করতে সংসার করতে তো আর না।তাই আমি বিয়ে করলাম কিন্তু এখন সংসার করবো না।আর বিয়ে ভাঙার চেষ্টা করেছি দুই কারণে,,এক বিয়ে ভাঙার চেষ্টা করলে কেউ আমাকে সন্দেহ করবে না।আর দুই বিয়ে যদি ভেঙ্গে যায় তাহলে তো আমারই ভালো।

বিয়েতে যখন কবুল বলার কথা বলা হয়েছে তখনই আমাকে এমন কিছু করার ছিল যার কারণে সবার মনযোগ আমার কাছে চলে আসে আর বাহিরে আকাশ এসে গাড়ি থেকে পেট্রোল বের করতে পারে।

সেই প্ল্যান মতাবেগ আমি কবুলের সময় হাঙ্গামা করলাম।আর এই ফাঁকে আকাশ পেট্রোল পাম্প পর্যন্ত যাওয়ার পেট্রোল রেখে বাকি পেট্রোল গুলো বের করে নিলো।

যখন গাড়িটা পেট্রোল পাম্পে গিয়ে থামলো।তখনই আমি আলিশকে বলি ওর ভাইকে বলতে পানি আনার কথা।আর আমার নাম যেনো না নেই। আলিশাও উনাকে বললো।আমার ভয় ছিলো উনি হয়তো যাবেন না।কিন্তু না উনি গেলো।আর thanks to ওই লোকটা যে ওই সময়ই পিয়াস ভাইয়াকে ফোন দিয়েছে।না হলে যে কি করে ম্যানেজ করতাম কে জানে?

আমি জানতাম ওই পাম্পের ওয়াশরুমের ভিতরে বড়ো একটা জানালা আছে।এই জন্যই ওইটা বেছে নিয়েছি🤪।আমি জানালা দিয়ে বের হতেই বাহিরে বাইক নিয়ে দাড়িয়ে ছিলো আকাশ।এখন আমি আর ও, ওর বাইক দিয়ে রেল স্টেশন এ যাচ্ছি।সেখান থেকে কক্স বাজার ঘুরাঘুরি করবো।তারপর সব ঠান্ডা হলে বাড়ি ফিরবো।হয়তো বাবা রাগ করে থাকবে কিন্তু বাড়ি থেকে তো বের করে দিবে না।আর আমার একটু বদনাম হলো কিন্তু আমি বিয়ে নামক জিনিস থেকে তো বেচেঁ গেলাম।
নিজের প্ল্যান শুনে নিজেরই বাহ বাহ দিতে ইচ্ছে করছে!(আমি মনে মনে)

আকাশ?(আমি)

হুম।বল।(আকাশ)

আমি খুব ভালো প্ল্যান করতে পাড়ি তাই না?(আমি)

না তুই মানুষকে ফাঁসাতে পারিস।(আকাশ দাত চেপে)

অসভ্য ছেলে।(আমি মুখ ফুলিয়ে)


কিছুক্ষণ পর
আকাশ?(আমি)

আবার কি হলো?(আকাশ বিরক্ত হয়ে)

শপিং মলের সামনে একটু দাঁড়া।আমি কিছু কাপড় কিনে নিয়ে আসি।(আমি)

আচ্ছা।যা।
বলেই আকাশ বাইকটা রাখলো।আর আমি দৌড়ে দিয়ে কিছু কাপড় কিনে আনলাম।সাথে লেহেঙ্গাটাও চেঞ্জ করে আসলাম।

চল।(আমি)

হুম।
বলেই আকাশ বাইক চালাতে শুরু করলো।


রেল স্টেশন এ
আকাশ এই ব্যাগটা কোনো ভাবে বাবার কাছে পৌঁছে দিবি।আর বাবার কাছ থেকে একশো হাত দূরে থাকিস এখন।(আমি)

তাতো বুঝলাম।কিন্তু এই ব্যাগে কি?(আকাশ)

আমার বিয়ের গয়না।আর লেহেঙ্গা।এইটা ওই আলিফ লায়লাকে দিয়ে দিতে বলিস বাবাকে।আর উনি যদি ডিভোর্স চায় তাহলে বলিস আমি ফিরে এসে দিয়ে দেবো।(আমি)

এইটা কি অনেক জরুরি হিয়া?বিয়ে হয়ে গেছে তোদের এখন সুখে সংসার কর।আলিফ লোকটা অনেক ভালো।আমি শুনেছি তোর সব ফালতু শর্তে উনি রাজি হয়েছে।এমন ছেলে পাওয়া অনেক কষ্টের।(আকাশ আমাকে বুঝানোর চেষ্টা করে)

যে যাই বলুক।বিয়ের সম্পর্ক আমার জন্য না।(আমি বিড়বিড় করে)

কিছু বললি?(আকাশ)

না।কিছু না তুই ওইসব বাদ দে তো।
আমরা কথা বলছি তখনই অ্যানাউন্সমেন্ট হলো।

আমার ট্রেন ছাড়ার সময় হয়ে গেছে।আমি উঠলাম ট্রেনে।
বলেই আমি ট্রেনে উঠে পড়লাম।

ভালো থাকিস হিয়া।(আকাশ)

তুইও।(আমি মুচকি হেসে)

কিছুক্ষণ পরই আমার ট্রেন ছেড়ে চলে গেলো।


রেল স্টেশন এ
অন্য মনস্ক হয়ে বসে আছে আকাশ।তখনই কিছু কালো রঙের স্যুট পড়া লোক ওর মুখে কালো কাপড় পরিয়ে নিয়ে গেলো।

আকাশের মুখ থেকে কাপড় সরাতেই ও দেখলো ও একটা রুমের মধ্যে রয়েছে।আর সামনে একটা লোক বসে আছে।

তুমি আকাশ তাই না?(লোকটা)

আপনি দুলা ভাই,তাই না?(আকাশ)

হুম।
বলেই আলিফ মুচকি হাসি দিলো।

আমাকে কেনো এনেছেন এখানে?(আকাশ অবাক হয়ে)

কারণ হিয়া কোথায় একমাত্র তুমিই জানো?(আলিফ)

আকাশ কিছুটা ঘাবড়ে গেল
আমি কি করে জানবো হিয়া কোথায়?

হিয়ার গয়না তোমার কাছে,ওর লেহেঙ্গা তোমার কাছে আর তুমি জানো না হিয়া কোথায়?(আলিফ ভ্রু কুঁচকে)

আপনার মনে হয় আমি বলবো?(আকাশ অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে)

তোমাকে যদি আমি এখন পুলিশে দেই।তুমি আমার বউকে কিডন্যাপ করে ওর গয়না চুরি করেছো।এমন কেস করি তাহলে তুমি তো জেলে থাকবে। তখনও কি বলবে না হিয়া কোথায়?নিজেকে বাঁচাতে হলেও তো তোমার হিয়ার কথা বলতে হবে।(আলিফ)

আমাকে যদি পুলিশেও দেন তবুও আমি বলবো,আমি জানি না হিয়া কোথায়?আমি আমার বেস্ট ফ্রেন্ডকে কখনো ধোঁকা দেবো না।আমার যতো কষ্টই হোক না কেনো?(আকাশ)

আলিফ আকাশের এই বন্ধুত্ব দেখে মুচকি হেসে বললো,,
আমি শুনেছি মেয়েটা নাকি খুব ভেবে চিনতে বন্ধুত্ব করে।যাতে ওর ভবিষ্যতে কষ্ট পেতে না হয়।তুমিও ওর সাথে বন্ধুত্ব করেছো। তবে তোমার বন্ধুত দেখে আমি সত্যিই মুগ্ধ হলাম।হিয়া সত্যিই অনেক ভাগ্যবতী তোমার মত আর পিয়ার মত বেস্ট ফ্রেন্ড পেয়েছি।অবশ্য ও যা ভয়ানক মেয়ে,ওর বন্ধু তোমরা ভেবেই তোমাদের উপর আমার আফসোস হচ্ছে।(আলিফ)

কিছু করার নাই দুলাভাই।ওই মেয়ে যেমন ভয়ানক তেমনি ভয়ানক ওর কর্ম কান্ড।তাই আমাদের নিজেদেরই নিজেদের নিয়ে আফসোস হয় আপনার তো হবেই।(আকাশ আলিফের দেয়া শান্তনা গ্রহণ করে)

অন্যদিকে পিয়াস দরজায় হেলান দিয়ে দাড়িয়ে দাড়িয়ে ভ্রু কুঁচকে ভাবছে
এখানে কি আকাশকে হায় হতাশ করার জন্য আনা হয়েছে।আলিফ তুই হিয়ার সঙ্গ পেয়ে নিজেই অদ্ভুত হয়ে যাচ্ছিস।(মাথায় হাত দিয়ে)

আচ্ছা যাই হোক।আমি তোমার বন্ধুত্বের সম্পর্কতে ফাটল ধরাতে চাই না।পিয়াস ওকে ছেড়ে দে।(আলিফ)

ছেড়ে দেবো?তাহলে হিয়ামনীর খবর কোথা থেকে পাবো?(পিয়াস অবাক হয়ে)

যা বলছি তা কর।(আলিফ)

পিয়াস কিছুক্ষণ অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল।
আকাশ তুমি যেতে পারো।(পিয়াস সাইড দিয়ে)

পরেই আকাশ হিয়ার দেয়া বেগটা দিয়ে চলে গেলো।

তোর মাথা খারাপ হয়ে গেলো নাকি আলিফ!ওই একমাত্র জানে হিয়ামনি কোথায়?আর তুই ওকে ছেড়ে দিলি?(পিয়াস)

তোর কি মনে হয় ও বলবে হিয়া কোথায়?আর ওকে যদি টর্চার করে বা ভয় দেখিয়ে মুখ থেকে বেরও করি হিয়া কোথায়!আর এইসব যখন হিয়া জানবে তোর মনে হয় ওকে কেউ আটকে রাখতে পারবে পালানো থেকে।এই মেয়ে এমনি পালাতে এক্সপার্ট আবার যদি শোনে ওর বেস্ট ফ্রেন্ডকে কষ্ট দিয়েছি তুই ভাবছিস ও কি করবে?বা কি করতে পারে?(আলিফ)

তুই ওকে ভয় পাচ্ছিস?আলিফ রায়হান চৌধুরী কাউকে ভয় পাচ্ছে?(পিয়াস অবাক হয়ে)

ওকে ভয় পাই না,ওকে হারাতে ভয় পাই।(আলিফ বিড়বিড় করে)

কি হলো?কি বিড়বিড় করছিস?(পিয়াস)

কিছু না।(আলিফ)

আচ্ছা তাহলে এখন ভাব কি করে হিয়ামনির খোজ করবি?(পিয়াস)

ওইটা ভাবা হয়ে গেছে।তোর কি মনে হয় আলিফ রায়হান চৌধুরী এতই কাচা খেলোয়াড়।আমি হাড়ে হাড়ে চিনি আমার বউকে।ওই চড়ুই পাখি বউকে খাচায় জব্দ করতে হলে আমার ওর থেকে একশো কদম আগে থাকতে হবে।(আলিফ ডেভিল হাসি দিয়ে)

দুইটাই আজব।মনের ভিতর কি চলে কিছুই বুঝা যায় না!(পিয়াস মাথায় হাত দিয়ে)

আলিফ ফোনটা বের করে সেলিমকে ফোন করলো,,
সেলিম।ডকুমেন্ট গুলো নিয়ে এসো ভিতরে।(আলিফ)

জ্বি স্যার।
বলেই আলিফ ফোনটা কেটে দিলো।

কিসের ডকুমেন্ট?(পিয়াস)

দেখলেই বুঝতে পারবি।(আলিফ)


কিছুক্ষণ পর
সেলিম রুমে ঢুকলো।আর ঢুকেই একটা ফাইল আলিফকে দিলো।

আলিফ বসে বসে ফাইলের পেপার গুলো দেখতে লাগলো,,,

সেলিম তুমি কি কি জানতে পেরেছ বলো?(আলিফ ফাইল দেখতে দেখতে)

স্যার রেল স্টেশনের সিসিটিভি ফুটেজ থেকে দেখা গেছে ম্যাম চট্রগ্রামের ট্রেনে উঠছে।(সেলিম)

বুঝলাম হিয়ামনি ঐখানে।কিন্তু ঐখানে কোথায় আছে তা তো আর জানি না।চট্রগ্রাম তো আর ছোটো না!(পিয়াস)

তার জন্যই তো এই সব কাগজ।(আলিফ পেপার গুলো দেখিয়ে)

এইসব কি?(পিয়াস)

আকাশের পনেরো দিনের কল রেকর্ড।যেহেতু হিয়াকে বাবা পনেরো দিন বাড়ি থেকে বের হতে দেয়নি।সেহেতু ওর জন্য টিকেট, হোটেল রুম বুক আকাশই করেছে।এখন আমাদের হোটেলের নম্বর বের করতে হবে।তারপরই আমার চড়ুই পাখির খোজ আমি পেয়ে যাবো।(আলিফ বাকা হেসে)

হিয়া মনি তো ওর ফোন থেকেও বুক করতে পাড়ে।(পিয়াস)

হুম।কিন্তু হিয়া এতও বকা না যে এসব করতে ও নিজের ফোন ব্যবহার করবে।(আলিফ)

একটা থেকে একটা কম না।
বলেই পিয়াসও দেখতে শুরু করলো কাগজ গুলো।

স্যার এই নম্বরে আজ থেকে আকাশ কথা বলতে শুরু করেছে।(সেলিম)

এইটা মনে হয় হিয়ার নতুন নম্বর।(আলিফ)

এইযে হোটেলের নম্বর পেয়েছি। আর সব ভালো কথা এইটা আমাদের হোটেলের নম্বর।(পিয়াস)

এক্সসিলেন্ট।এইবার সেলিম দেখো এই নতুন নম্বরএর লোকেশন কোথায়?(আলিফ)

ওকে স্যার।
বলেই সেলিম বাহিরে চলে গেলো।


কিছুক্ষনপর
সেলিম হন্তদন্ত হয়ে রুমে ঢুকে
স্যার।এই নম্বরের লোকেশন চট্রগ্রামের দিকে যাচ্ছে দেখাচ্ছে।আর হোটেলটা হচ্ছে কক্স বাজারের।(সেলিম)

দেখলি বলছিলাম না,,আমার চড়ুই পাখিকে আমি হাড়ে হাড়ে চিনি।পিয়াস আমার জন্য প্লিজ আমার যাওয়ার ব্যবস্থা কর।(আলিফ)

ওকে।(পিয়াস)

আমি আসছি আমার চড়ুই পাখি।(আলিফ মনে মনে)


অন্যদিকে
আকাশ একের পর এক ফোন করে চলেছে হিয়াকে কিন্তু ও ফোনই ধরছে না।

দূর এই মেয়ে সব সময় চিন্তায় ফেলে দৌড় দেয়।এখন আমি দুলাভাইয়ের কথা ওকে কি করে বলবো?(আকাশ)


অন্যদিকে
হিয়া ওর ঘুমের বেঘাত ঘটবে বলে ফোন সাইলেন্ট করে ঘুমাচ্ছে ট্রেনের মধ্যে।

সারারাত ওদের এইভাবেই চলে গেলো। পরের দিন ভোরে হিয়া ট্রেন থেকে নামলো চট্রগ্রামে।সেখান থেকে ও কক্স বাজার যাবে।


ট্রেন থেকে নামার পর কক্স বাজার আসতে আসতে সন্ধ্যা হয়ে গেল।মাঝ পথে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরেছি বলে আরো দেরি হয়ে গেছে।সারাদিন টইটই করছি।এই প্রথম একা বের হয়েছি।বাবা কোনোদিন একা বের হতে দেয়নি।আমাকে উনার অনেক ভয় ছিলো।তবে এখন যেহেতু খাচা থেকে ছুটতে পেরেছি আর খাঁচায় বন্দি হচ্ছি না।এইসব ভাবতেই আনন্দের সাথে হোটেল রুমে ঢুকলাম। ব্যাগ পত্র রেখে সোজা ওয়াশরুমে ঢুকে পড়লাম।ফ্রেশ হয়েই একটা ঘুম দেয়ার ধান্দায় আছি।

আমি ওয়াশরুমে থেকে টাওয়াল পেঁচিয়ে বের হয়ে নিজে নিজে বললাম
আজকে ভালোই মজা করছি।

তাই নাকি চড়ুই পাখি।আমাকে ছেড়ে হানিমুন করতে আসছো।আবার একা একা মজাও করছো।এইটা কিন্তু ঠিক না।(আলিফ)

গলাটা চেনা চেনা লাগছে কেন?(আমি মনে মনে)

আমি ধীরে ধীরে বেডের দিকে তাকিয়ে দেখি আলিফ বিছানায় শুয়ে শুয়ে আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসছে,,,

আমার চড়ুই পাখি!তুমি কি আমাকে মিস করছো?(আলিফ চোখ টিপ মেরে)

আমি কিছুক্ষণ উনার দিকে ভুত দেখার মত তাকিয়ে রইলাম,,,
তারপর

আআআআআ(জোরে চিৎকার দিয়ে)


চলবে,,,

Happily Married Part-06

0

#Happily_Married🔥
#Part_6
Writer:: Shaanj Nahar Sanjida


তুমি আমাকে মনে করতে পারছো না?(আলিফ দাত চেপে চেপে)

আপনি কি আহামরি কিছু যে আপনাকে মনে রাখতে হবে?(আমি ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে)

তোমাকে আমার যে কি করতে ইচ্ছে করতে ইচ্ছে করছে?(আলিফ রাগে গজগজ করতে করতে)

কি করবেন পরে চিন্তা করবেন আগে বলুন আপনি কে?(আমি ভ্রু কুঁচকে)

আমাদের কথোপকথন শুনে সবাই হা করে তাকিয়ে আছে।

জীবনের প্রথম হয়তো কেউ দেখছে নিজের বিয়েতেই বরকে জিজ্ঞেস করা হচ্ছে সে কে?

আমি কিছুক্ষন ভেবে,,
ওই দাড়ান।আমি বর সেজে এসেছেন তার মানে আপনি বর।ভালো কথা কিন্তু আমি কোথায় যেনো আপনাকে দেখেছি।কোথায় দেখেছি?

অনেক কষ্টে করে মনে করলাম
আপনার গাড়ি দিয়েই তো পালিয়ে ছিলাম।আর ধরাও পড়েছিলাম।তারমানে আপনি আমার পালানোর বারোটা বাজিয়েছেন?(আমি অবাক হয়ে)

আল্লাহ বাঁচাইছে।তোমার মাথায় একটু হলেও মগজ আছে।আচ্ছা বলতো এতো তাড়াতাড়ি আমাকে ভুলে গেলে কী করে?(আলিফ দুষ্টু হাসি দিয়ে)

রাখেন মিয়া।আগে বলুন আপনি কেনো আমার পালানোর প্ল্যানের বারোটা বাজিয়েছেন?(আমি)

বারে আমার বউ চলে গেলে আমি বিয়ে করবো কাকে?(আলিফ)

তারমানে আপনি আগে থেকেই সব জানতেন?(আমি চোখ বড় বড় করে)

হুম।(আলিফ মাথা নেড়ে)

এখন প্লিজ বলবেন না।আমার সব গুলো প্ল্যানে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দিয়েছেন আপনি?(আমি অসহায় হয়ে)

আমার বউ কতো বুদ্ধিমতী।(আলিফ দুষ্টু হাসি দিয়ে)

আমি খুব কষ্ট করে নিজের রাগ কন্ট্রোল করছি।

আপনার নাম কি?(আমি দাত চেপে চেপে)

আলিফ রায়হান চৌধুরী।(আলিফ ভাব নিয়ে)

আপনার নাম শুনে আমার ছোটো বেলার আলিফ লায়লার কথা মনে পড়ে গেলো।(আমি মজা নিয়ে)

আমার কথা শুনে উনার চোখে মুখে রাগের ছাপ দেখতে পেলাম।আমি কেনো এখানে একা রেগে থাকবো আপনিও একটু রাগেন। মি:আলিফ লায়লা।(আমি মনে মনে বিজয়ের হাসি দিয়ে)

হিয়া আর আলিফের কথা শুনে পিয়াস মিটমিট করে হাসছে।আর পিয়া তো সেই ভয়ে কাপছে।

আপনি শিওর আমাকে বিয়ে করতে চান?(আমি)

অবশ্যই!(আলিফ নিজের রাগ কন্ট্রোল করে)

আমি খুব খারাপ মেয়ে!(আমি)

আমি খুব ভালো করে নিবো।(আলিফ)

আমি রান্না করতে পারি না।(আমি)

রেস্তরাঁ থেকে কিনে নিবো!(আলিফ)

আমি মারপিট করি।(আমি)

বিয়ের পর দুজন মিলে বক্সিং করবো।এমনি আমার ভালো কোনো বক্সিং সঙ্গী নেই।(আলিফ)

আমার মধ্যে মেয়েলি কোনো স্বভাব নেই।(আমি)

ওইটা কোনো সমস্যা নেই।(আলিফ)

আমি ভাবছি আর কি বলা যায়!আমার সব প্ল্যান ফিরে আসছে।আর সামনে বিয়ে দাড়িয়ে আছে।মাথা ভন ভন করে ঘুরছে কোনো প্ল্যান আসছে না।তবে কি এই লোকটা আমাকে বিয়ে করবেই?কি হবে আমার!(আমি মনে মনে অসহায়ের মতো)

হিয়া।আরো কিছু বলার আছে তোমার?না থাকলে কাজী সাহেব বিয়েটা পড়াক।আর যদি থাকে তাহলে বলো আমার কাছেও উত্তর আছে।(আলিফ বিজয়ের হাসি দিয়ে)

না নেই।আজ যথেষ্ট সবাইকে বিনোদন দেয়া হয়ে গেছে।কাজী সাহেব বলুন কি বলতে হবে?কোথায় সাক্ষর করতে হবে?(আমি নিরাশ হয়ে বসে পড়লাম)

হিয়ামনী এই প্রথম কেউ তোর সাথে কথায় পারে উঠতে পারলো।তুই যে কত্তো বড়ো একটা ফাজিল তা আমি ভালো করেই জানি।তোকে জব্দ করতে একমাত্র আলিফই পারবে।এইজন্যই তো আলিফই তোর জন্য ঠিক।(হিমেল সাহেব মনে মনে বিজয়ের হাসি দিয়ে)

এইবার বুঝছো যে কি করে তোমার ছেলে জানতে পেরেছে যে মেয়ে পালিয়েছে!(আলেয়া বেগম মনে মনে)

হুম।কিন্তু বৌমা এমন করলো আমাদের মান সম্মান তো,,,(রামিম সাহেব একটু মনমরা হয়ে)

আমাদের ছেলে বিয়ে করছে এইটা নিয়ে খুশি থাকো।মান সম্মান নিয়ে পরে ভাবা যাবে।(আলেয়া বেগম)

হুম আব্বু।আর ভাবী তো তেমন কিছু করেনি।তাই মান সম্মান নিয়ে ভেবেও কোনো লাভ নেই।(আলিশা)

হুম।আলিফের খুশিতেই আমি খুশি আর কিছুর পরোয়া আমি করি না। ও বিয়ে করতে রাজি হয়েছে এইটাই অনেক বড়ো কথা।(রামিম সাহেব)

দেখলে বলেছিলাম না।তোমার বেস্ট ফ্রেন্ডকে সামলাতে পারবে আমার বেস্ট ফ্রেন্ড।দেখলে তো?তুমি শুধু শুধু ভয় পেয়ে ছিলে।(পিয়াস)

হুম।(পিয়া লজ্জা পেয়ে)

পিয়ার লজ্জা মাখা মুখ দেখে পিয়াস হাসতে শুরু করলো।


বিদায়ের একটু আগে
একটু পরেই আমাদের বিদায়,, পিয়া,পিউ আপু,পরি আন্টি,পাবেল আঙ্কেল আমাকে জড়িয়ে এমন করে কান্না করছিলো যে বলে বোঝানো যাবে না।বাবা কিছুক্ষণ আড়ালে দাড়িয়ে থেকে ভিতরে চলে গেলো।
আমি উকি দিয়ে বাবাকে দেখার চেষ্টা করলাম।তখনই আলিফ আমার কানের কাছে ফিসফিস করে বললো,,

যাও গিয়ে বাবার কাছে বিদায় নিয়ে এসো।তাহলে আর তোমার চিন্তা করতে হবে না।

আপনাকে বলতে হবে না।আমি জানি।আর আমি কারো চিন্তা করি না।বুঝলেন?
বলেই হনহনিয়ে বাবাকে খুঁজতে গেলাম।

জীবনেও নিজের মনের কথা স্বীকার করবে না।(আলিফ মনে মনে)

পিয়া আলিফের কাছে গিয়ে বলল
ভাইয়া আপনি একটু আড়ালে আসবেন আপনার সাথে একটু কথা ছিল।

ওকে।(আলিফ অবাক হয়ে)


আমি গিয়ে বাবাকে খুঁজতে খুঁজতে পেলাম আমার রুমে আমার জিনিস পত্র গুলো নিয়ে কান্না করছে।

আমি রুমে ঢুকে বললাম
এতই যখন আমাকে মিস করবে তবে কেনো আমাকে বিয়ে দিতে গেলে?

কই আমি তোকে মিস করবো?(হিমেল সাহেব কাদতে কাদতে)

করবে না মিস?(আমি কাছে আসতে আসতে)

না করবো না।তুই চলে গেলে আমি আর কারো সাথে ঝগড়া করবো না,তুই চলে গেলে আমাকে আর সকাল সকাল উঠে খাবার বানাতে হবে না,তুই চলে গেলে তোর দুষ্টামির জন্য আমাকে আর কারো জন্য ক্ষমা চাইতে হবে না,তোর ভার্সিটিতে ডাকলে আর আমাকে যেতে হবে না,সারাদিন কাজ করে এসে তোর জন্য রাতের খাবার বানাতে হবে না এসেই খালি ঘুমাবো,আর ছুটির দিন কেউ জোরে জোরে গান বাজিয়ে আমার ঘুমের বারোটা বাজাবে না আমি শান্তিতে ঘুমাবো, কারো সাথে আর রেমোর্ট নিয়ে ঝগড়া করতে হবে না শান্তিতে বাংলা ছবি দেখবো।আরো অনেক কিছু আছে যেটা তুই না থাকলে আমি একলা একলা করবো।আমি একলা অনেক মজা করবো।কে বলেছে আমি তোকে মিস করবো?
বলেই বাবা আমার জিনিস গুলো জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে ওঠে।

আমি তার কাছে গিয়েই তাকে জড়িয়ে ধরলাম।
আমি জানি আমার বাবা আমাকে একটুও মিস করবে না।একটুও না।আমিও আমার বাবাকে মিস করবো না একটুও করবো না।
আমিও বাবাকে জড়িয়ে ধরে বললাম।আশ্চর্য ব্যাপার হলো এই সব কথাগুলো শুনে যে কেউই কেদে দিতো কিন্তু আমি একটু কান্না করছি না।বরং আমি খুব স্বাভাবিক।তবে আমার মন কান্না করার জন্য আকুল হয়ে উঠছে ইচ্ছে করছে চিৎকার করে কান্না করি কিন্তু পারছি না।আমি এমনি আমার মনে হয়না আমার বুঝ হওয়ার পর কোনোদিন কেঁদেছি।আজ পর্যন্ত আমার জীবনে যতই কষ্ট হোক না কেনো,যতই দুঃখ পাই না কেনো,,সেটা আমার চোখ দিয়ে কখনই বের হতো না।আমি কান্না করতে পারি না।


একই সময়
আমি যদি ভুল না হই তুমি হিয়ার বেস্ট ফ্রেন্ড,তাই না?(আলিফ জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে)

জ্বি ভাইয়া!(পিয়া হাত কচলাতে কচলাতে)

কি কথা ছিল তোমার?(আলিফ)

আসলে ভাইয়া হিয়া যেমন দেখতে তেমন না।(পিয়া)

কি বলতে চাইছো?(আলিফ অবাক হয়ে)

হিয়া ওর বয়সের তুলনায় যথেষ্ট বুদ্ধিমতী।কিন্তু বিয়ে কথা আসলে ওর বোধ শক্তি লোপ পায়।যখনই বিয়ের কথা উঠে তখনই ও নিজেকে গুটিয়ে নেয়।পালাতে চায় বিয়ে থেকে আর এই জন্যই ও এত্তো কাহিনী করলো বিয়ে ভাঙ্গার জন্য।নিজেকে খারাপ প্রমাণ করতেও দ্বিধা করলো না।কিন্তু ও খারাপ মেয়ে একদমই না।(পিয়া)

কি হয়েছে?আমাকে সোজা সাপ্টা বলো পিয়া।(আলিফ)

আসলে হিয়া সম্পর্ককে ভয় পায়।তাই যখনই কেউ ওর সাথে নতুন সম্পর্ক করতে আসে তখনই ও কিছু বুঝে না বুঝেই তাকে রিজেক্ট করে দেয়।হোক সেটা বন্ধুত্ব,আত্মীয়তা আর রিলেশন।তাই যখন বিয়ের কথা উঠলো তখন ও আরো ভয় পেয়ে গেলো তাই ও উঠে পড়ে লেগে ছিল বিয়ে ভাঙতে।(পিয়া)

কিন্তু সম্পর্ক নিয়ে ওর কি ভয়?(আলিফ)

ওর মনে হয় ও কারো সাথে সম্পর্ক করলে সে ওকে ছেড়ে চলে যাবে আর ও হার্ট হবে।ওর কাছে সম্পর্ক ভাঙার কষ্ট অনেক।তাই ও ভাবে যদি কোনো সম্পর্ক তৈরিই না হয় তাহলে ভাঙার ভয়ও থাকবে না।তাই ও সম্পর্ক তৈরিই করে না।সম্পর্কগুলো থেকে নিজের মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছে।আমরা হাতে গোনা কয়েকজন লোক আছি যার সাথে ওর সম্পর্ক আছে।(পিয়া)

এইটা কেনো হয়েছে? ও কি আগে থেকেই কারো সাথে সম্পর্ক এ ছিল।যে ওকে ছেড়ে চলে গেছে বলে ওর এই অবস্থা?(আলিফ)

না না ভাইয়া।হিয়া ছোটোবেলা থেকেই এমন।তবে এই ব্যাপারে আমি বেশি কিছু জানি না।আমার সাথে হিয়ার দেখা হয়েছিল যখন আমার আর হিয়ার বয়স পাঁচ বছর ছিলো।যখন হিয়া আর আঙ্কেল আমাদের বাড়ির পাশেই থাকতে আসে।তখন থেকেই হিয়া অন্যরকম ছিল কারো সাথে মিশতে চাইতো না।অনেক কষ্ট করে ওর আমার বন্ধুত্ব হয়।তবে আমি আর আকাশই ওর একমাত্র বন্ধু।(পিয়া)

আকাশ কে?(আলিফ)

আমার আর হিয়ার ছোটোবেলার বন্ধু।আমরা এক সাথে বড়ো হয়েছি।(পিয়া)

ও আচ্ছা।তবে কি তুমি সত্যিই এইসব জানো না কেনো হয়েছে?(আলিফ)

না।তবে আমার মনে হয় ওর মার সাথে কোনো সম্পর্ক আছে এইসবের।(পিয়া)

কেনো?(আলিফ)

আসলে যখন ওরা প্রথম এইবাড়িতে এসেছে তখন থেকে এখন পর্যন্ত আমরা ওর মার মুখ দেখা তো দূরে থাক তার নামও শুনি নি।তার কি হয়েছে?কোথায় আছে?কেমন আছে?বেচেঁ আছে কিনা? আমরা কিছুই জানি না।হিমেল আঙ্কেল না করেছে হিয়ার সামনে যেনো ওর মার কথা আমরা না তুলি।তাই আমরাও কোনো ওর কাছে কিছু জানতে চাই নি।(পিয়া)

ও আচ্ছা।(আলিফ)

ভাইয়া আপনিও কিছু বলতে যাবেন না। ও যদি নিজে থেকে কিছু বলে তাহলে ঠিক আছে।আর ভাইয়া প্লীজ ওর মন থেকে সম্পর্ক নিয়ে যেই ভয় আছে সেই ভয় গুলো দূর করবেন।এইটা আমার অনুরোধ।(পিয়া হাত জোড় করে)

কি করছো পিয়া?তুমি আমার ছোটো বোনের মত।ছোটো বোন হয়ে এইসব করছো!আমি কথা দিচ্ছি আমি আমার সবটুকু দিয়ে চেষ্টা করবো হিয়ার মন থেকে সম্পর্কের ভয় দূর করতে।(আলিফ)

ধন্যবাদ ভাইয়া।(পিয়া কাদতে কাদতে)

হয়েছে আর কাদতে হবেনা।এখন চলো তোমার বেস্ট ফ্রেন্ডকে বিদায় দিতে হবে না?(আলিফ পিয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে)

হুম।চলুন
পরেই আলিফ আর পিয়া চলে গেলো।
পাশে দাড়িয়ে দাড়িয়ে পিয়াস ওদের কথা শুনে একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেললো।


বাহিরে এখন বিদায়ের পালা
সবার কান্না দেখে আমার খুব খারাপ লাগছে,, বিশেষ করে বাবার।তবে পাবেল আঙ্কেল বাবাকে সামলাচ্ছে।
মন না চাইতেও সবাইকে বিদায় দিয়ে গাড়িতে বসলাম।
গাড়িতে আমি,আলিশা আর আমার বর মশাই।সামনের সিটে বসেছে পিয়াস ভাইয়া।

ভাবী তুমি কাদলে না?(আলিশা)

আমি কাদি না কাদাই।(আমি)

তাহলে এখন কার কাদার পালা।(আলিশা)

আলিফ লায়লা,ভাইয়ার(আমি আর আলিশা এক সাথে)

আলিফ আর পিয়াস,, হিয়া আর আলিশার কথা শুনে হাসতে শুরু করলো।


গাড়ি কতোটুকু যেতে যেতে থেমে গেলো।

কি হয়েছে থামলে কেনো?(আলিফ ভ্রু কুঁচকে)

স্যার গাড়ির পেট্রোল শেষ হয়ে গেছে।(ড্রাইভার)

সামনেই পেট্রোল পাম্প।চলো পেট্রোল ঢেলে নেয়া যাক।(পিয়াস)

পাম্প পর্যন্ত যাওয়ার তেল তো আছে?(আলিফ)

জ্বি স্যার।(পিয়াস)

পরেই গাড়িটা পেট্রোল পাম্পে গিয়ে থামলো।

ড্রাইভার গাড়ি থেকে নেমে তেল ভরাতে লাগলো।

তখনই পিয়াসের ফোনে একটা ফোন আসলো,,,
আলিফ আমি একটু আসছি।
বলেই পিয়াস বেরিয়ে গেলো।

তখনই আলিশা বললো
ভাইয়া পানির পিপাসা লেগেছে। একটু পানি আনবি?(আলিশা)

পিয়াস কে বলছি?(আলিফ)

আরে পিয়াস ভাইয়া ব্যাস্ত আছে দেখে পাচ্ছিস না!তুই গিয়ে নিয়ে আয় না।(আলিশা)

আচ্ছা যাচ্ছি।
বলেই আলিফ নেমে পানি আনতে গেলো।

আলিফ চলে যেতেই আমি আলিশাকে বললাম,,
আলিশা আমি একটু ওয়াশরুমে যাবো।(আমি)

আমিও যাই তোমার সাথে!(আলিশা)

না না।তুমি থাকো আমি যাচ্ছি।
বলেই আমি গাড়ি থেকে বেরিয়ে আসলাম।

আমাকে গাড়ি থেকে বেরোতে দেখেই পিয়াস ভাইয়া বলল
কোথায় যাচ্ছো?(পিয়াস ফোনে কথা বলতে বলতে)

একটু ওয়াশরুমে।এক্ষুনি চলে আসবো।(আমি)

আচ্ছা সাবধানে যেও।(পিয়াস আবার ফোনে কথা বলতে বেস্ত হয়ে গেলো)

হুম
বলেই আমি ওয়াশরুমে ঢুকে পড়লাম।


কিছুক্ষণ পর
আলিশা,তোর ভাবী কোথায়?(আলিফ)

ওয়াশরুমে গেছে।(আলিশা)

কখন?(আলিফ সন্দেহ নিয়ে)

অনেকক্ষন হলো।(আলিশা)

এখনও আসে নি হিয়ামণী?(পিয়াস এসে)

তুই কোথায় ছিলি?(আলিফ)

আমি ফুপির সাথে কথা বলছিলাম।আমিও দেখলাম ও গেলো কিন্তু অনেকক্ষন হয়েছে তো চলে আসার কথা তো।(পিয়াস)

আলিফ আর কিছু না বলেই দৌড়ে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়লো। ও যেই ভয় করছিল সে ভয়ই হয়েছে।ওয়াশরুমের উপরের অংশে জানালা খোলা।আর ফ্লোরে হিয়ার বিয়ের হাই হিল জুতো জোড়া পরে আছে।

আলিফ হিয়ার হাই হিল জুতো জোড়া হাতে করে বাহিরে এসে,,,
ওই মেয়ে আবার পালিয়েছে।(রেগে)


চলবে,,,,

Happily Married Part-05

0

#Happily_Married🔥
#Part_5(#বিয়ে_স্পেশাল)💮
Writer:: Shaanj Nahar Sanjida


বিয়ের দিন
সবাই অনেক ব্যাস্ত একমাত্র আমি ছাড়া।কালকে গায়ে হলুদে এমন নাচ দিছি যা জন্য আজ কোমর ব্যাথা আর পা ব্যাথায় টনটন করছে।আমার বিয়েতে আমার নাচ দেখে সবাই অবাক হয়ে গেছে। অবশ্য নাচবো না কেনো?আজকে তো আমি এই বিয়ে ভাঙবো।তার সেলিব্রেট তো করতেই হবে।কাল রাত অনুষ্ঠানের পর যেই ভাবছি নাকে সরিষার তেল দিয়ে ঘুমাবো না তা না পিয়া সকাল সকাল নিজের নাকটা গলানোর জন্য চলে এসেছে।ওকে নাকি আব্বু বলছে আমাকে তৈরি করতে,,,

হিয়া উঠ না!(পিয়া আমাকে ঘুমের মধ্যে ধাক্কা দিয়ে)

একটু ঘুমাতে তে না প্লিজ!(আমি বালিশ চাপা দিয়ে)

ভুলেও না। আটটা বাজে উঠে খেয়ে তারপর তৈরি হতে হবে তো।বর এসে পড়বে।(পিয়া টেনে তুললো)

আরে যখন ওই বর মহাশয় যখন আসে তখন ডাক দিস।উঠবো তখন।(আমি আবার বিছানায় শুয়ে পড়লাম)

হইছে তোর আবোল তাবোল বলা। যতো সব উঠ।(পিয়া)

সবাই আমার শত্রু।আমাকে একটু ঘুমাতেও দেয় না।
আমি ঘুম থেকে উঠে ওয়াশরুমে চলে গেলাম।


চৌধুরী বাড়িতে
আমি তো ভাবতেই পারছি না।আমার বেস্ট ফ্রেন্ড যে কিনা সব সময় বিয়েকে একটা মাথা ব্যাথা করা চ্যালেঞ্জ ভাবতো সে বিয়ে করতে যাচ্ছে।(পিয়াস দেয়ালে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে)

কি বললো আমি বিয়েকে একটা চ্যালেঞ্জ ভাবতাম?(আলিফ বিছানায় আধ শোয়া অবস্থায়)

মানে?(পিয়াস রুমে ঢুকে)

আমি এখনও বিয়েটা একটা চ্যালেঞ্জই ভাবি।ওই মেয়ে হিয়া বিয়ে ভাঙতে চায়।যে কোনো মূল্য ও বিয়ে ভাঙার প্ল্যান করছে।আর এটাই আমার চ্যালেঞ্জ মনে হচ্ছে।ও যতই বিয়ে ভাঙার প্ল্যান করছে ততই আমার বিয়ে করতে ইচ্ছে করছে।(আলিফ)

তারমানে ও তোকে রিজেক্ট করছে।তুই কে?তুই কেমন দেখতে?তোর কাছে কি আছে?এইসব কিছুই মেয়েটার কাছে কোনো ব্যাপার না।বরং ও বিয়ে করবে না এইটাই সবচেয়ে বড় কথা।(পিয়াস ইমপ্রেস হয়ে)

হুম।ও আমাকে দেখেও নি।(আলিফ)

ওয়াও।তুই তো অনেক লাকি।(পিয়াস আলিফের কাধে হাত রেখে)

এখানে লাকির কি আছে?(আলিফ অবাক হয়ে)

তোর কাছে আজ পর্যন্ত কোনো মেয়ে বিনা স্বার্থ নিয়ে আসে নি।সবাই তোর গুড লুকস আর স্ট্যাটাস এর জন্য এসেছে।এই প্রথম কোনো মেয়ে তোর স্ট্যাটাস এর পরোয়াও করেনি।আর তোকে না দেখেই রিজেক্ট করে দিয়েছে।(পিয়াস হাসতে হাসতে)

আলিফ পিয়াসের কথায় চিন্তায় পড়ে গেলো।

সত্যি তো ওই মেয়ে আমাকে না দেখেই রিজেক্ট করে দিয়েছে।অন্য কোনো মেয়ে থাকলে আমার বাবার স্ট্যাটাস দেখেই বিয়ের জন্য রাজি হয়ে যেত। কিন্তু এই মেয়ে যখন থেকে বিয়ের কথা উঠেছে তখন থেকেই প্রাণ পণ দিয়ে চেষ্টা করছে বিয়ে ভাঙার।এই মেয়ে সত্যিই খুব আজব।

আলিফের চিন্তায় বাঁধ পরে পিয়াসের কথায়,,
আমি জানি তুই মেয়েকে ভালবাসিস না।তুই শুধু ওই মেয়েকে বিয়ে করে জিততে চাস।ওই মেয়ের কাছে হারতে তোর ইগুতে লাগবে।তবে একটা কথা বলছি ওই মেয়ে কিন্তু আর পাঁচটা মেয়ের মত না।পড়ে দেখা যাবে ওই মেয়ের কাছ থেকে জিততে গিয়ে না আবার নিজের মন হেরে বসিস।কারণ ওই মেয়ে এমন তোকে সহজে ভালোবাসবে না তবে তুই ঠিকই মেয়ের ভালোবাসার মায়ায় পরে যাবি। যাই অনেক হলো কথা আমি বরং গিয়ে একটু আঙ্কেলকে হেল্প করি।
বলেই পিয়াস উঠেই চলে গেলো।

আলিফ সেখানেই বসে পিয়াসের কথা গুলো চিন্তা করতে লাগলো,,
আমি ভালোবাসবো ওই মেয়েকে ইম্পসিবল।ওই মেয়ে কখনও আমার টাইপের হতে পারবে না।আর এই বিয়ের চ্যালেঞ্জে আমিই জিতবো।(আলিফ মনে মনে)


এক ঘন্টা পর হিয়াদের বাড়িতে
আমি প্যান্ডেলে বসে বসে আরাম করে খিচুড়ি খাচ্ছি তখনই কোথা থেকে যেন বাবা চলে আসলো,,

কিরে তুই এখানে বসে আছিস কেনো?(হিমেল সাহেব)

খাচ্ছি চোখে দেখো না।নাও তুমিও খাও।(আমি খেতে খেতে)

আমি খেয়েছি।কিন্তু রুমে বসে খেলে কি তোর কোনো সমস্যা?(হিমেল সাহেব)

রুমে বসে খেলে বিনোদন পাবো না।(আমি)

বিনোদন কোথায় পেলি তুই?(হিমেল)

এই যে সবাই মিলে কাজ করছে।কে কি করছে দেখছি এইটাই বিনোদন! জানো আব্বু নিজেকে রানী মনে হচ্ছে সবাই কাজ করছে আর আমি বসে বসে খাচ্ছি।(আমি) এক গাল হেসে

এইটাকে রানী বলে না।(হিমেল)

মানে?(আমি)

এইটাকে মালিক বলে।যে কিনা নিজে বসে থেকে সবাইকে কাজ করাচ্ছে। রানী হচ্ছে যে সবার কথা মন থেকে ভাবে,সবার খেয়াল রাখে,সবাইকে খুশি রাখে।এই জন্যই তো বাড়ির বউদের বাড়ির রাণী বলে।কারণ তারা সবার কথা মন থেকে ভাবে, সবার খেয়াল রাখে তাও আবার পরম যত্নে,সবাইকে খুশি রাখে।আর তাদের খুশিতেই তার খুশি।(হিমেল সাহেব)

তাহলে আমি তো ভুলেও রানী হতে চাই না।কারণ সবাইকে খুশি করার চেষ্টা আমি কোনো দিন করিও নি আর করবোও না।আর খেয়াল রাখা,,আমার খেয়ালই মানুষ রাখে আমি আবার রাখবো অন্য জনের খেয়াল।(আমি তাচ্ছিল্য হাসি দিয়ে)

এখন বুঝবি না।কিন্তু পরে বুঝবি।আর এইসব তোর করতে হবে না।এইসব আপনাআপনি হয়ে যাবে।তুই বুঝতেও পারবি না যে তুই কখন আমার রাজকুমারী থেকে তাদের বাড়ির রানী হয়ে গেছিস।(হিমেল সাহেব)

তোমার রাজকুমারী?লাঠির ধরেই রাখো আর বলছো রাজকুমারী।(আমি ঠোঁট ফুলিয়ে)

কারণ তুই কথা শুনিস না। এখনও শুনছিস না।(হিমেল সাহেব রেগে)

আবার কি করলাম?(আমি অবাক হয়ে)

যা গিয়ে তৈরি হ!(হিমেল সাহেব)

এখনও তো অনেক দেরি আছে।(আমি)

তুই যাবি না আমি লাঠি নিবো হাতে।(হিমেল সাহেব)

যাচ্ছি মিস্টার হিটলার।
বলেই হাত ধুয়ে সেখান থেকে চলে আসলাম।

প্লেট কে ঠিক জায়গায় রাখবে?(হিমেল সাহেব চিৎকার করে)

মালিক কাজ করে না।আর আমি রানী হওয়া থেকে মালিক হওয়াটাই ভালো মনে করি!(আমিও জোরে দৌড় দিয়ে)

একদিন তুই নিজে থেকেই রানী হবি।আমি জানি।(হিমেল সাহেব মুচকি হেসে)

চৌধুরী বাড়িতে
বাবা আমি কিন্তু প্রায় তৈরি।(আলিফ)

বাবা।মাত্র দশটা বাজে আমরা বারোটার দিকে বের হবে এতো আগে তৈরি হয়ে কি করবি?(রামিম সাহেব)

তোমাদের তাড়া দিয়ে তৈরি করতে হবে তো!(আলিফ)

এই ছেলে বিয়ে পাগল হয়ে গেছে।(আলেয়া বেগম)

ভাই আমাদের বলেছিস ঠিক আছে।আর কাউকে প্লিজ বলিস না।না হলে তোর যে রাগী ইমেজটা আছে ওইটা হাওয়া হয়ে যাবে।(আলিশা)

আরে আলিশা তোমার ভাইয়ার বিয়ে হাওয়া লেগেছে।এখন উনার আর কিছুর খবর নেই।তাই না দুলে রাজা।(পিয়াস মজা করে)

বেশি কথা বলছিস।আর এখন কেনো ওদের সাইড নিয়ে কথা বলছিস কেন?একটু আগে তুইই তো আমাকে বললি বরকে আগে তৈরি হতে হয় আর তুইই তো আমাকে তৈরি হতে সাহায্য করলি!(আলিফ রেগে)

কি করবো বল?তোকে কোনো দিন জব্দ করার কোনো সুযোগ পায়নি।আজ পেলাম তাই ছাড় দিতে ইচ্ছে করলো না। তো কেসা লাগা মেরা মাজাক।(পিয়াস হাসতে হাসতে)

বলছি।
বলেই আলিফ পিয়াসের পিছু ধাওয়া করলো।

ওদের দুষ্টামি দেখে সবাই হাসতে লাগলো।


হিয়াদের বাড়ি
পিউ মা!একটু পরেই বর যাত্রী চলে আসবে,,আর হিয়ামনি তৈরি হয়েছে!(হিমেল সাহেব)

আঙ্কেল আমি কিছুই জানি না।আমার তো এখন হাত পা ছড়িয়ে কাদতে ইচ্ছে করছে।(পিউ কাদো কাদো হয়ে)

কিন্তু কেনো মা?হিয়া চলে যাবে বলে।থাক মা কান্না করো না।(হিমেল সাহেব সান্তনা দিয়ে)

না আঙ্কেল।ওই জন্য তো বিদায়ের সময় কান্না করবো।এখন কান্না করলে বিদায়ে ওই অনুভূতিটা আসবে না।(পিউ অবাক হয়ে)

ও আচ্ছা।তাহলে কেনো কান্না করছো?(হিমেল সাহেব)

এই পর্যন্ত পার্লারের লোক হিয়াকে পাঁচ বার সাজিয়েছে।আর ও পাঁচ বারই সাজ ধুয়ে ফেলেছে।আপনি তো জানেনই বিয়ের সাজ দিতে কতক্ষন লাগে,কতো কষ্ট লাগে।(পিউ)

আমি কি জানবো মা বিয়ের সাজের কথা!(হিমেল সাহেব)

ও তাও তো ঠিক।আচ্ছা বাদ দিন।কিন্তু পার্লারের মেয়েদের এক একটার কান্না করার অবস্থা হয়ে গেছে।(পিউ)

কিন্তু ও এমন করছে কেনো?(হিমেল সাহেব)

এক বার বলছে সাজ অনেক ভারী হয়ে গেছে,একবার বলছে অনেক হালকা হয়ে গেছে,একবার বলছে লেহেঙ্গার সাথে মানায়নি,একবার বলছে জুয়েলারির সাথে মানায় নি।আঙ্কেল এখন কি করবো আমি?(পিউ)

আচ্ছা চলো আমি দেখছি।
বলেই হিমেল সাহেব আর পিউ হিয়ার রুমে গেলো।


হিয়ার রুমে
রুমে ঢুকেই হিমেল দেখলো পার্লার থেকে তিনজন লোক এসেছে আর এখন তাদের তিনজনই ফ্লোরে এক জন আরেকজনের কাধে হাত বসে আছে।দেখেই মনে হচ্ছে হিয়া তাদের অবস্থা নাজেহাল করে রেখেছে।আর উনি(হিয়া) নিশ্চিন্ত হয়ে লেহেঙ্গা পরে বিনা সাজ গয়নায় বেডে আসন পেতে বসে বসে ফোন টিপছে।

হিয়ামনি।(হিমেল সাহেব চিৎকার দিয়ে)

ওরে বাবা।(আমি বুকে থুথু দিয়ে)

এইভাবে কেউ ভয় দেখায়?একটু হলেই ফোনটা হাত থেকে পরে যাচ্ছিল এমনি কান্নাকাটি করে কমদামি একটা ফোন পেয়েছি।(আমি)

তুই এখনও তৈরি হোস নি। এখনও ফাজলামির মধ্যে আছিস?(হিমেল সাহেব)

আমি ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বসে আছি তখনই
পিয়া কোথা থেকে যেনো দৌঁড়ে এসে বললো
বর চলে এসেছে।

দেখ বর চলে এসেছে।আর তুই এখনও তৈরি হোস নি।(হিমেল সাহেব)

আমি অন্যদিকে মুখ করে আছি।যেনো আমার কোনো এক্সাইটমেন্ট নেই।

বরই তো এসেছে।(আমি🙄)

তোকে তো,,,আপনাদের ওকে সাজাতে হবে না খালি গয়না পরিয়ে দিন।(হিমেল সাহেব পার্লারের লোকদের)

কেল্লায়?আমি সেজে ছবি তুলবো না?(আমি ঠোঁট ফুলিয়ে)

সেই চিন্তা থাকলে আপনি তৈরি হতেন।এখন কোনো কথা না।আমার যেনো আর এখানে আসতে না হয়।(হিমেল সাহেব)

হিটলার বাবা।(আমি)

পরেই পার্লারের লোকেরা আমাকে গয়না পরিয়ে দিতে লাগলো,,পিউ আপু আর পিয়া বরের গেট ধরতে গেলো।


কিছুক্ষণ
আমি রুমে বসে আছি তখনই পিয়া আসলো।

জানিস তোর বর না দেখতে হেব্বি সুন্দর।(পিয়া)

আমি জানার কোনো ইচ্ছে নেই।(আমি)

তুইও না।এখন তারা খাবার খাচ্ছে একটু পরেই বিয়ে পড়ানো হবে।(পিয়া)

হুম।(আমি)

কিছুক্ষণ পর

কি হলো?কখন থেকে দেখছি ফোনের সাথে যুদ্ধ করছিস।কি হয়েছে?(আমি ভ্রু কুঁচকে)

আকাশকে ফোন করার চেষ্টা করছি। ও গায়ে হলুদের আগে থেকেই ফোন বন্ধ করে বলছে,,

ও আসলে আমার ব্যাক আপ প্ল্যানের কি হবে?(আমি মনে মনে)

এতো শান্ত লাগছে কেনো ওকে?নিশ্চয়ই কিছু প্ল্যান করছে।(পিয়া সন্দেহের দৃষ্টিতে মনে মনে)


এক ঘন্টা পর
এই এক ঘন্টা পুতুলের মতো স্টেজে বসে আছি।একের পর একজন এসে ছবি আর সেলফি তুলে যাচ্ছে।আমি কোনদিনই এতো ধৈর্য্যশীল ছিলাম না।আমার মাথা গরম হয়ে যাচ্ছে।আমার বরকে অন্য জায়গাতে বসানো হয়েছে।আমাকে এখানে আনা হয়েছে ছবি তোলার জন্য।তারপর আবার রুমে চলে যাবো সেখানেই বিয়ে পরাবে।অন্যসময় হলে সব কিছু উল্টে পাল্টে চলে যেতাম কিন্তু এখন কিছুই করতে পারছি না।

পিয়া আমি একটু ওয়াশরুমে যাবো।একটু চল।(আমি ফিস ফিস করে)

এখন?(পিয়া)

প্রকৃতির ডাক তোকে বলে আসবে তো।যাবি নাকি বল।(আমি রেগে)

হুম হুম।চল।(পিয়া)

পরেই আমি আর পিয়া ওয়াশরুমে চলে গেলাম।আমি ওয়াশরুমের ভিতরে ঢুকে বসে আছি। এখান থেকে আর সহজে বের হচ্ছি না।বের হলেই আপু একটা ছবি তুলি,একটা সেলফি তুলি বলে সবাই ঘিরে ধরবে।এর চেয়ে ভালো বিয়ের আগ পর্যন্ত এখানেই বসে থাকি।
পিয়া বাহিরেই দাড়িয়ে ছিলো।অনেকক্ষন হলো হিয়া ভিতরে গেছে। ও এতক্ষন দাড়িয়ে দাড়িয়ে হিয়ার জন্য অপেক্ষা করছিল। তখনই পিউ এসে,,

এই ফুলের ঝুড়িটা রাখ।বেশি হয়েছে ফুল গুলো। স্টোর রুমে রেখে দিস।
বলেই ফুলের ঝুড়িটা দিয়ে চলে গেল।

পিয়া ফুলের ঝুড়ি নিয়ে দাড়িয়ে ছিলো তখনই একটা ছেলে দৌড়ে এসে পিয়ার সাথে ধাক্কা খেল।পিয়া ধাক্কা খেয়ে নিচে পরে যেতে লাগলো তখনই ছেলে ওকে কোমর চেপে জড়িয়ে ধরলো আর ফুল গুলো ওদের উপর পড়ল,,খুবই রোমান্টিক একটা পরিস্থিতি তৈরি হলো।তখনই রোমাঞ্চ এর বারোটা বাজাতে এন্ট্রি নিলো হিয়া,,
আমি ওয়াশরুম থেকে বেরিয়েই দেখি বাহিরে পিয়া আর একটা ছেলে একে অপরকে ধরে আছে,, তাও আবার চোখে চোখ রেখে।এই রোমান্টিক দৃশ্য দেখে আমি ভ্রু কুঁচকে,,

লা লা লালা,,লা লা লালা।(আমি গাইতে গাইতে)

আমার কাক কণ্ঠের গান শুনে তারা একে অপরকে ছেড়ে দূরে সরে আসলো,,

আসলো এতো রোমান্টিক পরিস্থিতি ছিল গান না দিলে ভালো দেখায় না।তাই নিজে থেকে একটু ছোটো প্রয়াস করলাম।(আমি ভ্রু উচুঁ করে)

আপনি আসলে ভাবী তাই না?(ছেলেটা)

না আমি হিয়া।এখনও ভাবীর পদে আমার প্রমোশন হয়নি।(আমি)

ছেলেটা হেসে বললো
আমি পিয়াস।যেহেতু আপনার ভাবী পদে এখনও প্রমোশন হয়নি তাই আমি আপনাকে হিয়ামনি বলেই ডাকি।যদি মাইন্ড না করেন।

একমাত্র আমার বাবাই আমাকে হিয়া মনি বলে ডাকে। যাই হোক আপনি ডাকলেও সমস্যা নেই (আমি)

আমরা কথা বলছি তখনই কেউ একজন এসে বললো বিয়ের জন্য আমাকে ডাকা হচ্ছে,,
এসে পড়েছে বলি হওয়ার সময়।চল।
বলেই পিয়ার দিকে তাকাতেই দেখি ও লজ্জায় লাল হয়ে গেছে।

হইছে আর লজ্জা পেতে হবে না।বিয়ে হচ্ছে আমার লজ্জা পাচ্ছিস তুই।এমন চলতে থাকলে নিজের কাছে নিজেই নির্লজ্জ হবো।
বলেই পিয়াকে নিয়ে রুমের দিকে হাঁটতে শুরু করলাম।

সত্যি আলিফ।এইবার তুই নিজের মন হারবি।আমি শিওর।
বলেই পিয়াসও ওদের পিছু পিছু গেলো।


বিয়ের সময়
কাজী সাহেব কি যেনো হাবিজাবি বলে আমাকে বললো,,
বলো মা কবুল।(কাজী)

না বলবো না।(আমি)

আমার এমন হটাৎ উত্তরে উনি খুবই অবাক হয়ে গেল।উনি কেনো সেখানে থাকা সবাই অনেক অবাক হয়ে গেল।আমার বাবা তো মাথায় হাত দিয়ে বসেই পড়লেন।

কেনো মা?তুমি কি এই বিয়েতে রাজি না!(কাজী)

রাজি তো।তবে আমার কিছু শর্ত আছে।আমার বর মশাইকে আসতে বলুন তার সাথে আমার কথা আছে।(আমি)

এইমেয়ে আমার মান সম্মান যা আছে ডুবাবে।(হিমেল সাহেব মনে মনে)

হিমেল সাহেব হিয়াকে কিছু বলতে যাবে তখনই রামিম সাহেব উনাকে আটকিয়ে,,
আপনার আর আমাদের যা করার ছিলো করেছি।এখন আমাদের ছেলে মেয়েদের বুঝতে দেন।জীবনে অনেক সিদ্ধান্ত ওদের একসাথে নিতে হবে।সব সময় ওদের সিদ্ধান্ত এ আমি বা আপনি থাকবো না।(রামিম)

পরেই হিমেল সাহেব দাড়িয়ে গেলো।

আলিশা ভাইকে ডেকে আনো।(রামিম সাহেব)

আনতে হবে না আমি নিজেই চলে এসেছি।
বলেই আলিফ রুমে ঢুকলো।আর পিয়াস দরজায় হেলান দিয়ে দাড়িয়ে আছে। ও গিয়েই আলিফকে ডেকে নিয়ে এসেছে।
পিয়াস দাড়িয়ে আছে আর ওর সামনেই পিয়া ভয়ে থরথর করে কাপছে।

তুমি কাপছ কেনো?(পিয়াস পিয়ার কানে ফিসফিস করে)

আপনি জানেন না।কিন্তু আমি জানি হিয়া নির্ঘাত কিছু করবে।কিন্তু এখন আমি কি করে এত বড় ধমাকা সামাল দিবো।(পিয়া তুতলিয়ে)

পিয়াস পিয়ার মাথায় হাত রেখে বলল,,
এখন নিজের কাজ থেকে বিরতি নাও।কারণ তোমার বেস্ট ফ্রেন্ডকে সামাল দেয়ার জন্য আমার বেস্ট ফ্রেন্ড চলে এসেছে।(পিয়ার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে)

পিয়া অবাক হয়ে পিয়াসের দিকে তাকিয়ে আছে।পরেই লজ্জায় চোখ নামিয়ে ফেললো।


আমি উনার কণ্ঠ শুনে দরজার দিকে তাকিয়ে দেখি একটা তাল গাছ সমান অতি সুদর্শন পুরুষ এসে দাড়ালো। চেহারাটা আমার চেনা চেনা লাগছে।কিন্তু কোথায় দেখেছি মনে পড়ছে না।

আমি এসে পড়েছি।কি কথা আছে তোমার বলো!(আলিফ মুচকি হাসি দিয়ে)

আপনি?(আমি অবাক হয়ে)

যাক।মনে আছে তাহলে আমার কথা।(আলিফ মনে মনে খুশি হয়ে)

আপনি কে?আমি তো বরকে ডেকেছি?(আমি ভ্রু কুঁচকে🧐)

আলিফ হিয়ার কথা শুনে নিরাশ হয়ে গেলো।
সবাই বলতো আমার এমন চেহারা যে একবার দেখে সে কখনও ভুলে না।আর এদিকে এই মেয়ে আমাকে চিনতেই পারছে না।(আলিফ নিরাশ হয়ে)

(((হিয়া কিন্তু আলিফকে ভালো করে দেখেনি।গাড়িতেও হিয়া আলিফকে আড় চোখে দেখেছে।তখনও আলিফ অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়েছিলো।তাই হিয়ার মনে করতে সমস্যা হচ্ছে। তবে মনে পড়ে যাবে– লেখিকা)))

পিয়াস আলিফের নিরাশ চেহারা দেখে খুব কষ্টে নিজের হাসি আটকাচ্ছে।

আমি চারপাশে তাকিয়ে দেখি সবাই আমার দিকে তাকিয়ে আছে।কেউ কেউ তো আমার কথা শুনে মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে।

পাবেল আংকেল বাবাকে হাত পাখা দিয়ে বাতাস করছে,,,

এখন আমার মনে হচ্ছে কেউ যদি সিরিয়ালের ধুম তানানা,,ধুম তানানা মিউজিকটা বাজিয়ে দিতো। তা এই পরিস্থতিতে খুব ভালই লাগতো


চলবে,,,

Happily Married Part-04

0

#Happily_Married 🔪
#Part_4
Writer:: Shaanj Nahar Sanjida


ভার্সিটির জন্য তৈরি হয়ে যেই আমি বের হতে যাবো তখনই বাবা হিটলারের মত এসে হাজির হলো।
কোথায় যাচ্ছিস?(হিমেল সাহেব)

ভার্সিটিতে যাবো।আর কোথায়?(আমি ভ্রু কুঁচকে)

পনেরো দিন তুই কোথাও যাবি না।(হিমেল সাহেব)

মানে কি?এখন কি আমার লেখাপড়ার উপরেও তোমার নজরদারি চলবে নাকি?(আমি রেগে)

তোর উপর আমার বিশ্বাস নেই।যদি আবার পালাস।(হিমেল সাহেব)

বলছি তো বিয়ের আগ পর্যন্ত কোথাও পালাবো না!(আমি চিৎকার চেঁচামেচি করে)

সরি মা।ক্ষমা কর কিন্তু তুই কোথাও যাবি না বিয়ের আগে।বাড়িতেই থাকবি!(হিমেল সাহেব)

তোমার সব কথা বাধ্য মেয়ের মত শুনি বলে সব সময় জোর করো।মাঝে মধ্যে সত্যিই মনে হয় তোমাকে ছেড়ে দূরে কোথাও চলে যাই।
বলেই রাগে গিয়ে রুমের দরজা বন্ধ করে দিলাম।

আমি যা করছি তোর ভালোর জন্যই করছি।পিয়া তোর নোটস গুলো নিয়ে আসবে।আমি তোর প্রোফেসরদের কাছ থেকেও অনুমতি নিয়েছি।(হিমেল সাহেব হিয়ার দরজার সামনে দাঁড়িয়ে)

আমি ঘুমাবো।(আমি কড়া গলায়)

হিমেল আর কিছু না বলে চলে গেলো।


চৌধুরী বাড়িতে
শিট আজকে লেট উঠে পড়েছি।কতো কাজ আছে।আর মাত্র পনেরো দিন পরে বিয়ে।(রামিম সাহেব খাবার টেবিলে বসতে বসতে)

বাবা।এতো চিন্তা করো না হাতে হাতে কাজ করলে ঠিক সব হয়ে যাবে।(আলিশা খাবার বাড়তে লাগলো)

আজকে হলোটা কি আলিশা?তোর ভাই আজকে সকাল সকাল অফিসে না গিয়ে সোফায় বসে বসে পেপার পড়ছে!(রামিম সাহেব ফিসফিস করে)

জানি না বাবা।সার্ভেন্ট বলেছে ও নাকি খুব সকালেই উঠে এখানে এসে বসেছে।এমনিতেই তো সকালে উঠে কিন্তু আজকে জানি কি হয়েছে একটু বেশিই সকালে উঠেছে।(আলিশা ফিসফিস করে)

চল গিয়ে দেখি।
বলেই রামিম সাহেব আর আলিশা গেলো।

খুক খুক।(রামিম সাহেব কাশি দিয়ে)

ও বাবা তুমি উঠে পড়েছো?(আলিফ পেপার রেখে)

কি হয়েছে?তুমি নাকি আজকে খুব সকালে উঠেছো।(রামিম সাহেব সোফায় বসতে বসতে)

হুম বাবা।আসলে বিয়ের প্রস্তুতি নিতে হবে তো।(আলিফ)

কিহ?(আলিশা আর রামিম সাহেব একসাথে)

কি হয়েছে তোমরা এতো অবাক হচ্ছো কেনো?(আলিফ)

আলিশা আমি কি স্বপ্ন দেখছি?(রামিম সাহেব)

না বাবা এইটা সত্যিই!তোমার ছেলে যে কিনা বিয়ে থেকে একশো হাত দূরে থাকতো আজ সে বিয়ে নিয়ে এতো এক্সসাইটেড!(আলিশা অবাক হয়ে)

এই তোমরা কি কেউ আমার বান্ধবীর কাছে হিয়ার লেহেঙ্গা আর জুয়েলারি তৈরি করতে দিয়েছো।ওর অ্যাসিস্ট্যান্ট আমাকে ফোন করে হিয়ার মাপ চাচ্ছে।(আলেয়া নিচে নামতে নামতে)

রামিম সাহেব আর আলিশা এক দৃষ্টিতে আলিফের দিকে তাকিয়ে আছে,,
কি হলো আলিফের দিকে এইভাবে তাকিয়ে আছো কেন?(আলেয়া)

ওকেই জিজ্ঞেস করো?(রামিম সাহেব আলিফকে দেখিয়ে)

আলেয়াও জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে,,,
হুম আমিই আন্টিকে লেহেঙ্গা আর জুয়েলারির কথা বলছি।আর তোমরা চিন্তা করো না।আমি কোথায়, কোন অনুষ্ঠান হবে সব ঠিক করে ফেলেছি।আর সেই অনুযায়ী বুকিংও করে ফেলেছি আর ইভেন্ট গুলো অর্গানাইজ করার জন্য আমি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট এজেন্সির সাথে কথা বলে তাদের হায়ার করে ফেলেছি।আমি গেস্ট লিস্ট তৈরি করে ফেলেছি তোমরা একটু চেক করে নিও যদি তোমাদের কোনো গেস্ট থাকে।আর আমি কার্ড গুলোও ছাপানোর জন্য পাঠিয়ে দিয়েছি।আর কিছু?(আলিফ একদমে)

সবাই হা করে তাকিয়ে আছে।

আরও কিছু?(আলিফ আবারও)

হানিমুন!হানিমুন কোথায় করবি প্ল্যান করেছিস?(আলিশা শকড)

ওইটা হিয়া আর আমি মিলে ডিসাইড করে নেবো?(আলিফ)

তুই কখন এই গুলো ঠিক করলি?(আলেয়া অবাক হয়ে)

কালকে সারা রাত ধরে।(আলিফ)

এইজন্যই তোকে সকালে কেনো দেখা গেছে এইবার বুঝতে পারছি (আলিশা)

ইয়েস।কারণ কাল সারা রাত আমি ঘুমাই নি।(আলিফ)

বাবা আমরা কি কাজ করবো?তুই তো কিছুই রাখিস নি।(রামিম সাহেব)

কে বললো রাখি নি?রাখছি তো!তুমি সবাই ঠিক মত কাজ করছে নাকি দেখবে,আম্মু তুমি গেস্ট দের খেয়াল রাখবে,,আর আলিশা তুই সুন্দর করে ছবি তোলে এফবি তে পোস্ট করবি!ভাইয়া ইজ গেটিং Happily married,,। যাই আমার খুব ঘুম পাচ্ছে আমি গিয়ে ঘুমাই।
বলেই আলিফ নিজের রুমে চলে গেলো।

আম্মু আব্বু কি হচ্ছে এসব?একজন বিয়ে করতে চাইছে না আরেকজন বিয়ের জন্য উতলা হয়ে গেছে।(আলিশা শকড)

কতো কিছু দেখার আছে এখনও এই বয়সে।চলো সবাই কাজে লেগে পরি।(রামিম সাহেব)

হুম।এই আজব জুটির কি হবে কে জানে?(আলিশা সোফায় বসে)


বিকেলে
আব্বু দুপুরে এসে খাবারের জন্য ডাক দিয়ে গেছে কিন্তু আমি খুলিনি। খাবো না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছি।একটুও আগেও নাস্তার জন্যে ডাক দিয়ে গেলো কিন্তু আমি খুলিনি।আজ খুব রেগে আছি আমি।আমার কোনো কথার কোনো দামই দেয় না।জীবনে কি বিয়েই সব?বিয়ে করলেই কি সুখে থাকা যায়?বিয়ে করাতে কি যে আনন্দ আমি জানি না।
তবে এই বিয়ে আমার তখনও পছন্দ ছিলো না এখনও পছন্দ না। বিয়ের কথা উঠতে না উঠতেই আমার জীবন থেকে আমার স্বাধীনতা হারিয়ে গেছে।নিজের রুমেও আমাকে পাহারা দিয়ে রাখছে।আমার কলেজে যাওয়া বন্ধ।সব হয়েছে ওই বিয়ের জন্য।(আমি মনে মনে রেগে)

কিছুক্ষণ পর ফোনটা বের করে আকাশকে(আমার আরেক বেস্ট ফ্রেন্ড) ফোন দিলাম।

হ্যাল্লো!নতুন বধূ।(আকাশ ফোন ধরে)

ফাজলামি আজকে কি তোর মগজে বাসা বাঁধছে?(আমি রেগে)

তোর গলার স্বর শুনে মনে হচ্ছে খুবই রেগে আছিস। যাই হোক ফালতু কথা বলে তোর রাগ উঠিয়ে নিজের কবর খুঁড়তে চাই না।(আকাশ)

গুড বয়।এখন বল কই তুই?(আমি)

শপিং এ যাচ্ছিলাম বাইক নিয়ে এখন রাস্তার পাশে দাড়িয়ে তোর সাথে কথা বলছি।কেনো?(আকাশ)

শপিং কেনো?(আমি অবাক হয়ে)

আরে সামনে তোর বিয়ে,পিয়া খবর দিলো।তোর পিচ্ছি কালের বন্ধু আমি আমাকে তো সেই ভালো দেখাতে হবে।তাই আগে থেকেই সব কিছুর তৈরি করতে হবে তো।(আকাশ এক্সসাইটেড হয়ে)

যেই পথে এসেছিস সেই পথে বাড়ি যা।(আমি)

মানে?(আকাশ)

কারণ তুই আমার বিয়েতে আসবি না?(আমি)

কেনো আসবো না?আমি সেই ছোটো বেলা থেকেই দেখতে চেয়েছি কোন সেই হতভাগা হবে যে তোর মত মেয়েকে তার স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করবে!(আকাশ)

থ্যাঙ্ক ইউ ফর দা ইনসাল্ট।আজ কাল যাকে দেখো সেই ইনসাল্ট করছে!(আমি)

ওয়েলকাম।আচ্ছা বাদ দে এইসব।এখন বল আমি আসবো না কেনো?(আকাশ)

কারণ
পরেই আকাশকে আমি আমার ব্যাক আপ প্ল্যান সম্পর্কে বলি।

তুই শুধরানোর মানুষ না।তুই জানিস এই প্ল্যান কতটা রিস্কি।(আকাশ)

জীবনটাই রিস্কি।এখন তোকে যা বলেছি তুই তাই তাই করবি!একটু এদিক ওদিক হলে কিন্তু তোর আর আমার জানাজা দিবে আমার বাবা।(আমি)

দেখ তুই তো আমার জীবনে ভয়ে দেখিয়ে আমার আত্মা গলা পর্যন্ত নিয়ে এসেছিস এখন আংকেলের কথা বলছিস।এইবার কিন্তু ভয়ে আমার আত্মা বের হয়ে আসবে।(আকাশ)

এইজন্যই বলছি।মনোযোগ দিয়ে কাজ করবি।কোনো সমস্যা যেনো না হয়।(আমি)

আচ্ছা।তবে একটা কথা।(আকাশ)

কি?(আমি)

আমি সেই তোর যখন নাক দিয়ে সর্দি পড়তো সেই কালের বন্ধু আর আমিই তোর বিয়েতে যাবো না।(আকাশ নেকা কান্না করে)

ইয়াক ছি:।কি বলছিস?আচ্ছা আচ্ছা তোর নেকা কান্না থামা।তুই আমার বিয়েতে না আসার বদলে আমি তোর বাইকের এক বছরের সার্ভিসএর টাকা দিবো।খুশি?(আমি)

এইটাইত আমি চাই।আচ্ছা যেহেতু ডিলটা হয়ে গেছে সেহেতু আমি এখন রাখছি।
বলেই আকাশ ফোন কেটে দিলো।

কি মীর জাফর টাইপ ফ্রেন্ড আমার!(আমি অবাক হয়ে)



সন্ধ্যায়
হিয়া দরজা খোল।(পিয়া দরজায় টোকা দিয়ে)

আমি দরজা খুলতেই ও হন্তদন্ত হয়ে রুমে ঢুকলো।

তুই আংকেলের সাথে ঝগড়া করেছিস?(পিয়া রেগে)

উনি কি করেছে জানিস না?(আমি রেগে)

তুই কি করেছিস তুই জানিস না?এর পরেও আঙ্কেল কি করে তোকে বিশ্বাস করবে?(পিয়া)

বিয়ের জন্য আমার সব কিছুর উপর উনি নজরদারি করছে।এইসব তোর চোখে পড়ছে না?(আমি)

বিয়ের জন্য উনি তোর উপর নজরদারি করছে না।উনি নজরদারি করছে তোর স্বভাবের কারণে।কারণ তুই তো উনাকে কোনো কারণ দেস নি উনাকে বিশ্বাস করার।বার বার উনাকে ভুল বুঝে গেলি।এখনও বুঝলি?তুই জানিস না তুই ছাড়া উনার কেউ নেই।তবুও তুই উনাকে কষ্ট দিস।তুই জানিস তুই খাস নি বলে উনিও কিছু খায়নি।তুই ভাবছিস তুই নিজেকে কষ্ট দিচ্ছিস,নিজেকে খারাপ বানাচ্ছিস কিন্তু এইসব করে তুই তোর বাবাকেই বেশি কষ্ট দিচ্ছিস।যা গিয়ে এখন আংকেলের সাথে খাবার খাবি।এখন জেদ ধরে থাকলে ইচ্ছামত মাইর খাবি?(পিয়া আমাকে টানতে লাগলো)

তুই জানিস তুই আমাকে এখন মাইর দিকে পরে তুই এর থেকে বেশি মাইর খাবি।(আমি)

জানি।তবুও চল।
বলেই পিয়া নিয়ে আমাকে বাবার পাশে খাবারের টেবিলে বসালো।
আমি আর বাবা একে অপরের দিকে তাকিয়ে আবার অন্যদিকে দুজনই মুখ ফুলিয়ে বসে রইলাম।

আঙ্কেল এখন আপনিও!আর আমি কাউকে কিছু বলবো না।যদি তোমাদের এই যুদ্ধ না ভাঙ্গে তাহলে কিন্তু আমি এই বাড়ি ছেড়ে চলে যাবো আর আসবো না।বলে দিলাম।

এই দাড়া তুই চলে গেলি এই হিটলার বাবা থেকে আমাকে বাঁচাবে!(আমি পিয়ার এক হাত ধরে)

হুম মা।তুমি চলে গেলে এই অসভ্য মেয়েকে আমি কি করে সামলাবো!(হিমেল সাহেব পিয়ার আরেক হাত ধরে)

তাহলে এখন একে অপরকে খাইয়ে দাও।(পিয়া)

পরেই বাবা পিয়ার কথা শুনে আমাকে খাইয়ে দিলো।আমিও বাবাকে খাইয়ে দিয়ে বললাম,,
সরি আব্বু।

আব্বু আমার মাথায় হাত দিয়ে বললো
ইটস ওকে আমার লক্ষ্মী মা।

বাহরে আমাকেও কেউ খাইয়ে দাও।(পিয়া)

আয় তোকেও খাইয়ে দেই।(হিমেল সাহেব)

আমিও দোকান থেকে বিষ এনে খাইয়ে দেই।(আমি)

হ্যা হ্যা very funny।(পিয়া)


এক সপ্তাহ পর
বাড়িতে মেহমানদের আনাগোনা শুরু হয়ে গেছে। ও বাড়ি থেকেও অনেক লোকজনও পাঠিয়েছে বিয়ের কাজের জন্য।আমাদের বাড়িতে তো তেমন কোনো মানুষ নেই।আমার বাবার পক্ষের কোনো আত্মীয় স্বজন নেই।আর মার খবর জানিও না।তাই আত্মীয় স্বজনদের আহাজারি আমাদের বাড়িতে নেই বললেই চলে।তবে পাড়া প্রতিবেশীরা রয়েছে। তারা অনেক ভালো।আমার আব্বু একা বলে তার হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করছে।আজকাল এইরকম প্রতিবেশী খুব কমই পাওয়া যায়।পাবেল আংকেল আর আরেকজন আঙ্কেল মিলে বিয়ের বাজারের দায়িত্বে রয়েছেন।পরি আন্টি, আর বাকি সব মহিলারা রান্নাবান্না আর বাকি কি নিয়ম আছে সেগুলো লক্ষ্য রাখছে। পীয়াও আজ থেকে ভার্সিটিতে যাবে না।আর আমাদের নোটস গুলো আকাশ করবে।বেচারা এই নিয়ে অনেক টেনশনে ছিলো কারণ ওকে ক্লাসে খুব কমই দেখা যেতো কিন্তু আমাদের কারণে ওকে এই কয়দিন রেগুলার ক্লাস করতে হবে।পিউ আপু সাজানোর ডিপার্টমেন্টে,এছাড়াও পার্লারের লোকও উনিই ঠিক করবেন।খুবই ব্যাস্ত সময় পার করছেন সবাই।এদিকে আমি আর পিয়া একটু পর পর রান্না ঘরে যাচ্ছি আর কিছু না নিয়ে এসে সোফায় পায়ের উপর পা তুলে খাচ্ছি আর সবার কাজ কর্ম দেখছি।আমার অবস্থা এই রকম যার বিয়ে তার তাল নেই পাড়া প্রতিবেশীর ঘুম নেই।

কিছুক্ষণ পর দেখি কিছু কতো গুলো বাক্স এনে সোজা আমার রুমে ঢুকে গেল।সাথে বাবাও ছিলো,,
কি হলো বলা নেই কওয়া নেই?ডাইরেক্ট আমার রুমে ঢুকে পড়ল।(আমি ভ্রু কুঁচকে)

চল গিয়ে দেখি কি এনেছে?(পিয়া)

হুম।
পরেই আমি আর পিয়া রুমে ঢুকলাম।লোকগুলো বক্স গুলো আমার খাটে রেখে চলে গেলো।এতক্ষণে রুমে পরি আন্টি,পিউ আপুও চলে আসলো।আব্বু গিয়ে রুমের দরজা বন্ধ করে দিলো। এখন রুমে আমি,পিয়া,পরি আন্টি,পিউ আপু আর আব্বু।

আব্বু এইসব কি?(আমি ব্যাগ গুলো ঘাটাঘাটি করতে করতে)

তোর বিয়ের লেহেঙ্গা আর জুয়েলারি।সব পাঠিয়ে দিয়েছে তারা!(হিমেল সাহেব)

আমি তো এমনি বলেছিলাম।তারা সত্যিই সত্যিই ডিজাইনার লেহেঙ্গা আর জুয়েলারি বানিয়ে পাঠিয়েও দিয়েছে। আশ্চর্য মানুষ তারা। যাই ডিমান্ড করছি তাই পূরণ করছে!এখন তো বিয়ে ভাঙ্গা আরো মুশকিল হয়ে যাবে(আমি মনে মনে)

কি হলো?গিয়ে দেখ তোর জিনিস পত্র কেমন হয়েছে?(পরি আন্টি)

পিয়া আমার বিয়ের লেহেঙ্গা বের করে বললো,,
হিয়া দেখ কতো সুন্দর তাইনা?

আমি বিয়ের লেহেঙ্গা দেখে অবাক হয়ে গেলাম।খুব সুন্দর করে বানানো হয়েছে।যেই বানিয়েছে উনি অনেক যত্ন নিয়ে বানিয়েছে।(আমি মনে মনে)

পিয়া দেখ জুয়েলারি গুলোও সুন্দর!(পিউ আপু)

হুম অনেক সুন্দর।(পিয়া)

তোমাদের জন্যও লেহেঙ্গা বানানো হয়েছে!আর এইগুলোর মধ্যে রয়েছে তা।(হিমেল সাহেব)

সত্যি আঙ্কেল।কোথায় দেখি!
বলেই পিয়া আর পিউ আপু খুশি হয়ে তাদের লেহেঙ্গা বাক্স খুললো।

তাদের হাসি মুখ যেনো আমার সহ্য হচ্ছিলো না।তাই আমি গিয়ে বেলকনিতে দাড়ালাম।
বেলকনিতে দাড়িয়ে রুমের ভিতর তাকিয়ে দেখছি বাবা কতো শখ করে নিজের মেয়ের বিয়ের জিনিস পত্র দেখাচ্ছে।উনার চোখে খুশির ঝলক।পিয়া,পিউ আপু পরি আন্টি সবাই কতো খুশি আমার জন্য।তবে আমি কি কোনো ভুল করছি বিয়েটা ভাঙার চেষ্টা করে?আমার কি বিয়েটা করে নেয়া উচিত!
পরেই চোখ বুজে একটা দীর্ঘ শ্বাস নিলাম
না না।এইসব সাময়িক সময়ের জন্য।এই খুশির জন্য আমি নিজের খুশি জলাঞ্জলি দিতে পারি না।আমি যা ভাবছি তাই করবো।
বিয়েটা আমি ভাঙবই।(আমি আকাশের দিকে তাকিয়ে)


অন্যদিকে
আলিফ বেলকনিতে দাড়িয়ে দাড়িয়ে কফি খেতে খেতে,,,,
ওর জিনিস পত্র তো ও পেয়ে গেছে।এখনও কি বিয়ে ভাঙার প্ল্যান করছে?যতই বিয়ে ভাঙার প্ল্যান করো না কেনো হিয়া?এই বিয়ে তো হবেই!


চলবে,,,,

Happily Married Part-03

0

#Happily_Married👊
#Part_3
Writer:: Shaanj Nahar Sanjida


দূর।এই কালির দাগ উঠতেই চাচ্ছে না।বিরক্তকর।(আমি ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে বসে)

আরো মাখ আলতু ফালতু জিনিস।(পিয়া শুয়ে শুয়ে)

একটা লাথি মেরে খাট থেকে ফেলে দিবো?(আমি ভ্রু কুঁচকে)

তা আমি খুব ভালো করেই জানি।তোর সাথে ঘুমালে আমার লাথি উষ্ঠা কতো কিছু যে খেতে হবে!(পিয়া)

আমি আর কিছুই বললাম না।বরং মুখ থেকে কালি উঠতে ব্যাস্ত হয়ে পড়লাম।আমার বিয়ের আগ পর্যন্ত পিয়া আমার সাথে আমার রুমেই থাকবে। যাতে আমি না পালাতে পারি।আমার আব্বুর হুকুম।

ভাবা যায় আমার আব্বুই আমাকে বিশ্বাস করে না!(আমি নিরাশ হয়ে)

তোকে আঙ্কেল কেনো?কেউই ভরসা করতে পারবে না।কারণ তুই তো মানুষ না তুই মানুষ রুপি মসিবত।(পিয়া)

কি দিনকাল আসলো!যে পাচ্ছে সেই ইনসাল্ট করে দিচ্ছে!নিজের কোনো সম্মান রইলো না।(আমি মনে মনে)

মান সম্মান বানের জলে ভাসিয়ে দিয়ে এখন এই কথা বলছিস?(পিয়া)

এই তোকে কে বলছে আমার মনের কথা পড়তে যা গিয়ে ঘুমা।(আমি রেগে)


চৌধুরী বাড়িতে
মেয়ে দেখা শেষ?(আলিফ)

হ্যা।অনেক ভালোই এক্সপিরিয়েন্স হলো আমাদের।(আলেয়া ক্লান্ত হয়ে)

এখন ভাবছে কেনো সবাই বলেছে ওই মেয়েই তোর জন্যে পারফেক্ট।(আলিশা মাথা ধরে সোফায় বসল)

তাই নাকি?।তা বলো কি কি করলে তোমরা?(আলিফ মুচকি হেসে)

আম্মু আব্বু তোমরা বলো আমি তো গিয়ে ঘুমাচ্ছি।আর প্লিজ আমাকে কেউ ডাক দিবে না।আজ তো যতক্ষণ ইচ্ছে ঘুমাবো।
বলেই আলিশা উপরে চলে গেলো।

তুমিও কি ঘুমাতে যাবে?নাকি চা করে এনে দেবো?(আলেয়া)

না থাক লবণ চা খেয়ে চা খাওয়ার ইচ্ছা এক মাসের জন্য হরতালে চলে গেছে।আমিও গিয়ে ঘুমাই।
বলেই রামিম উপরে চলে গেল।

কি হচ্ছে আম্মু?তোমরা এতো ক্লান্ত কেনো?(আলিফ অবাক হয়ে)

আলিফ,বাবা আমরা পরে বলছি কি হচ্ছে এখন নিজেও ঘুমাতে যাও আমাদেরও ঘুমাতে দাও।আর কালকেই কথা হবে।
বলেই আলেয়া উপর চলে গেলো।

নিচে দাড়িয়ে দাড়িয়ে আলিফ ভাবতে লাগলো,,
কি এমন হলো যে আম্মু, আব্বু,আলিশা সবাই এতো ক্লান্ত হয়ে গেছে।
আলিফ ভাবছে তখনই পেছন থেকে একটা বডিগার্ড এসে বললো
স্যার।আপনি যা করতে বলেছেন।আমি করেছি এই নিন রেকর্ড।

ধন্যবাদ।
বলেই আলিফ পেন ড্রাইভটা নিলো।

আসলে সেই বাড়িতে কি কি হয়েছে এই সব জানতে আলিফ একজন বডিগার্ড দিয়ে সব কিছু রেকর্ড করিয়েছে।


আলিফের রুমে
আলিফ লেপটপ অন করে ভিডিওটা দেখতে শুরু করলো।

ভিডিও দেখার পর।কিছুক্ষণ পর্যন্ত চুপ করে রইলো তারপর হাসতে হাসতে না পারে গড়াগড়ি খেতে।

হিয়া।এই প্রথম আমি এতো হাসলাম।হাসতে হাসতে পেট ব্যাথা হয়ে গেল আমার।তবে যাই হোকনা কেন!মিস হিয়া you are really ইন্টারেস্টিং।তুমি যতই বিয়ে ভাঙতে চাও ততই এই বিয়ে করতে আমার ইচ্ছে করে।তোমাকে বিয়ে করা আমার কাছে একটা চ্যালেঞ্জ।তুমি যাই কিছু করো না কেনো বিয়ে তো তোমায় করতেই হবে। তাও আমাকে। যাই হোক বিয়ে আর পনেরো দিন পরে।এক চিন্তা তো দূর হলো।আর এই মেয়েকে কোনো সুযোগ দেয়া হবে না বিয়ে ভাঙার।
তবে এই সাজে তোমাকে ভালোই মানিয়েছে।পেত্নী।
বলেই আলিফ আবার ভিডিও দেখতে দেখতে হাসতে শুরু করলো।


হিয়াদের বাড়ি
হাচ্ছু,,হা হা হাচ্চু

কিরে হিয়া এমন করে হাছি দিচ্ছিস কেনো?(পিয়া শুয়ে শুয়ে)

কেউ মনে হয় আমাকে নিয়ে কিছু বলছে?(আমি শুয়ে শুয়ে)

মনে হয় ফিউচার দুলাভাই?(পিয়া মজা করে)

হ্যা হ্যা।অনেক হাসি পাচ্ছে হাসতে হাসতে পেট ব্যাথা হয়ে গেল আমার।(আমি ভ্রু কুঁচকে)

আচ্ছা।শুন তুই তো তোর হবু বরকে দেখলিও না?না দেখেই বিয়ে করবি?(পিয়া)

দেখে কি হবে?বিয়ে করলে তো?(আমি)

তুই এখনও বিয়ে ভাঙার চেষ্টায় আছিস?(পিয়া)

জীবনের শেষ রক্ত দিয়ে চেষ্টা করে যাবো।বুঝলি?(আমি)

হুম।বুঝছি!(পিয়া)

আচ্ছা।শুন উনারা খুব ভালো মানুষ না?(আমি)

হুম।(পিয়া)

খারাপ লাগলো তাদের সাথে এতো কিছু করলাম!(আমি)

এখন খারাপ লাগার কি আছে?যা করার তাতো করেই ফেলেছিস!(পিয়া)

তাও ঠিক।বিয়ে ভাঙার পর ক্ষমা চেয়ে নেবো।আচ্ছা তোর কি মনে হয় তাদের ছেলে দেখতে কেমন হবে?(আমি)

আমি কি জানি?(পিয়া)

খুব সুন্দর হবে?নাকি বুরিওলা হবে?(আমি)

জানি না।আমি তো দেখি নাই।(পিয়া)

কালো হবে না সুন্দর হবে?নাকি চকলেট ফেস হবে?(আমি)

আমি বরং একটা কাজ করি।আঙ্কেলকে বলে তোকে ওই বাড়িতে পাঠিয়ে দেই।নিজে গিয়েই না হয় দেখে আসবি!(পিয়া রেগে)

রাগ করছিস কেনো?আমি তোকে বলবো না তো কাকে বলবো?তুইই তো আমার বেস্ট ফ্রেন্ড।
বলেই আমি পিয়াকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়লাম।


মাঝরাতে
আলিফ বেলকনিতে দাড়িয়ে আছে তখনই ওর ফোনে একটা ফোন আসলো

ফোন দেয়ার সময় হলো তোর?(আলিফ)

হ্যালো না বলে।আগে কমপ্লেইন করতে শুরু করলি।এই তোর বেস্ট ফ্রেন্ড শিপ।(পিয়াস– আলিফের বেস্ট ফ্রেন্ড)

না বলবো না।বল কেনো ফোন দিয়েছিস?তোর ওয়ার্ল্ড ট্যুর তোকে বোর করে দিয়েছে?(আলিফ)

ভুলেও না।তবে শুনলাম কেউ বিয়ে করছে?আমাকে জানানোর তো প্রয়োজন পড়ে না তাই আমি নিজের ইচ্ছায় ফোন দিলাম।(পিয়াস)

তুই কি করে জানলি?(আলিফ)

আলিশা FB তে পোস্ট দিলো।ভাইয়া ইজ গেটিং Happily married।(পিয়াস)

আলিশা!(আলিফ)

তা কাহিনী কি?(পিয়াস)

আয় পরে বলবো!(আলিফ)

কালকের ফ্লাইটেই আসছি।(পিয়াস)

ওকে।তাহলে রাখি।আসলেই কথা হবে।safe journey।(আলিফ)

ওকে।আল্লাহ হাফেজ।
বলেই পিয়াস ফোনটা কেটে দিলো।


সকাল
হিমেল সাহেব রান্না করছিলো তখনই কেউ ওদের দরজায় নক করলো।
হিমেল সাহেব দরজা খুলতেই দেখলো একজন লোক অনেক গুলো বিয়ের কার্ড নিয়ে হাজির।

আপনি?(হিমেল সাহেব)

আলিফ স্যার পাঠিয়েছে!বিয়ে কার্ড দেখাতে!দুই পক্ষ থেকে একসাথে কার্ডের অর্ডার দেবে(লোকটা)

আচ্ছা।দিন।
বলেই হিমেল কার্ডের সেম্পল গুলো নিলো।

কার্ড গুলো বসার রুমের টেবিলে রাখতেই হিমেলের ফোনে একটা ফোন আসলো,,,
আসসালমুআলাইকুম (হিমেল সাহেব)

অলাইকুম আসসালাম বাবা!আমি আলিফ বলছি!(আলিফ)

ছোটো স্যার?(হিমেল সাহেব অবাক হয়ে)

প্লিজ আমি আপনার ছেলে এখন।ছোটো স্যার বলবেন না। তা কেমন আছেন।(আলিফ)

ভালো বাবা!তুমি কেমন আছো?(হিমেল সাহেব)

আলহমদুলিল্লাহ।আপনি কি কার্ড গুলো পেয়েছেন?(আলিফ)

হুম!(হিমেল সাহেব)

তাহলে দেখে সিলেক্ট করে বলবেন।আর হিয়াকে নিয়ে কালকেই শপিংয়ে যাবেন ওর কি কি লাগবে?বিয়েতে কি কি পড়বে সব কিনে আনবেন।(আলিফ)

বাবা আমার মেয়েকে বিয়ের জন্য কিছু নিয়ে রাজি করানো খুব একটা সহজ না।(হিমেল সাহেব)

আপনি যখন ওর সাথে কথা বলবেন ফোনটা অন রেখে কথা বলবেন।আমিও শুনতে চাই ও কি বলে?(আলিফ)

আচ্ছা।বাবা।(হিমেল সাহেব)

তাহলে রাখি বাবা।
বলেই আলিফ ফোনটা কেটে দিলো।


হিয়ার রুমে
হিয়া ঘুমের মধ্যে কখন যে পিয়াকে লাথি মারে খাট থেকে ফেলে দিয়েছে তার ঠিক নেই।

মাগো আমার কোমরটা গেলো গো গেলো!(পিয়া ফ্লোরে কোমর ধরে বসে আছে)

কিরে তুই সকাল সকাল ফ্লোরে কি করছিস?(আমি চোখ কচলিয়ে)

All thanks to you,,, লাথি মেরে ফেলে দিয়ে এখন জিজ্ঞেস করছে কি করছি!(পিয়া)

সকাল সকাল মিথ্যা অপবাদ দিস না তো!(আমি)

তোর বরের কি হবে তাই ভেবে আমার আফসোস হচ্ছে!(পিয়া উঠে)

আমি কিছু বলতে যাবো তার আগেই আব্বু বাহির থেকে,,
মহারানিদের ঘুম ভাঙলো?(হিমেল সাহেব)

হুম।ভাঙছে। ফ্রেশ হয়ে আসছি।(আমি আর পিয়া)

পরেই দুজন ফ্রেশ হয়ে বাহিরে গেলাম।

আমি বসার রুমে বসেই টিভিটা অফ করে ফুল ভলিউম দিয়ে গান শুনতে করলাম। পিয়াও বসার রুমে আমার পাশে বসলো।কিন্তু ওর চোখ গেলো টেবিলে থাকা কার্ড গুলোর উপরে।

আঙ্কেল এইসব কি?(পিয়া)

আমিও কার্ড গুলোর দিকে তাকিয়ে টিভির সাউন্ড কমিয়ে দিলাম।

এইটা হিয়ামনির বিয়ের কার্ড!ছেলে পক্ষ পাঠিয়েছে দেখে সিলেক্ট করে দিতে বলছে!(হিমেল সাহেব রান্না ঘর থেকে বেরিয়ে)

মাশাআল্লাহ কি সুন্দর!তাইনা হিয়া?(পিয়া কার্ড গুলো দেখে)

Not interested,,
বলেই উঠে রান্না ঘরের দিকে হাটা শুরু করলাম।

তাতে ইন্টারেস্ট থাকবে কেনো?কোন দিক দিয়ে বাপের ব্লাড প্রেসার হাই করবে,,তার যেনো হার্ট এ্যাটাক হয় সেদিকে ইন্টারেস্ট উনার।(হিমেল সাহেব রেগে)

একে তো তোমার না প্রেসার আছে না কোনো হার্ট প্রবলেম আছে।তাই কথায় কথায় এইসবের দোহাই দিও না তো!আর তুমি এখনও তৈরি হও নি কেনো?অফিসের জন্য লেট হবে না।তুমি তো আমার অফিস বলতে পাগল।(আমি ফ্রিজ খুলতে খুলতে)

হো কইসে তোরে!আমি তোর বিয়ের আগ পর্যন্ত অফিসে যাবো না। বস না করেছে।(হিমেল সাহেব)

এইবার তোমার অফিস বিরহে হার্ট প্রবলেম হবে।(আমি ফ্রিজে কিছু খুঁজতে খুঁজতে)

মাঝে মাঝে মনে হয় থাপ্পড় মেরে তোর দাত গুলো ফেলে দেই।আর কি তখন থেকে ফ্রিজে কি খুঁজছিস?(হিমেল সাহেব)

আইস ক্রিম খুঁজছি।কোথায় আছে?(আমি)

সকাল সকাল আইস ক্রিম খাবি?(হিমেল সাহেব ভ্রু কুঁচকে)

সকাল সকাল তোমার বকা খেতে পারি আর আইস ক্রিম খেতে পারবো না?(আমি ডোন্ট কেয়ার ভাব ধরে আইস ক্রিম নিয়ে সোফায় বসলাম)

যেই আইস ক্রিম মুখে দিয়ে গিলতে যাবো ওমনি আব্বু বলে উঠলো
কালকে তুই,পিয়া আর পিউ শপিংয়ে যাবি বিয়ের!

আমি কোনমতে আইস ক্রিম গিলে কাশি দিতে দিতে বললাম
আমি কোনো কেনা জিনিস পড়বো না!এতো বড়লোক বাড়ি আমাকে বউ করে নিয়ে যাচ্ছে।তাদের বলো এই শহরের বেস্ট ডিজাইনার দিয়ে আমার বিয়ে আর গায়ে হলুদের লেহেঙ্গা আর জুয়েলারি তৈরি করতে হবে।যা হবে শুধু আমার জন্য,স্পেশালি আমার জন্য ডিজাইন করা।(আমি আবার আইস ক্রিম মুখে দিয়ে)

শুরু হয়ে গেছে।হিয়ার পনেরো হাজার প্ল্যান বিয়ে ভাঙার। প্ল্যান নম্বর ওয়ান তাদেরকে বিয়ের শপিং করাতে করাতে ফকির বানিয়ে ফেলো।হিয়া তুই মানুষও বটে।(পিয়া মনে মনে)

ইস যেই না চেহারা নাম তার পেয়ারা।তুই না বিয়েই করতে চাস না ডিজাইনার লেহেঙ্গা পরে কি করবি?(হিমেল সাহেব)

পালাবো!আমার অনেক দিনের শখ ডিজাইনার লেহেঙ্গা পরে পালানোর!(আমি বিড়বিড় করে)

কিছু বললি?(হিমেল সাহেব)

না না।কিছু না।বিয়ে যখন করছি শর্ত তখন মানতেই হবে।(আমি)

বিয়ে করে যেনো উপকার করছে।
হিমেল আরো কিছু বলতে যাবে তার আগেই তার ফোন একটা ফোন আসলো।
সে ফোন রিসিভ করতে তার রুমে চলে গেলো,,


রুমে
আসসালমুআলাইকুম বাবা!শুনলে তো আমার মেয়ের কথা।তবে তুমি কিছু মনে করো না!আমি ঠিক ওকে বুঝিয়ে বলবো!(হিমেল সাহেব)

নাহ বাবা।হিয়া ঠিকই বলছে। ও আমাদের বাড়ির বউ হতে চলেছে ওকে তো স্পেশাল হতেই হবে।আর ও এমনিতেই স্পেশাল।আর পাঁচ ছয় দিন পরেই আমি ডিজাইনার লেহেঙ্গা পাঠিয়ে দিবো আপনি ওর মাপ আমাকে পাঠিয়ে দিবেন।আম্মুর এক ভালো ডিজাইনার বান্ধুবি আছে।উনিই বানিয়ে দেবে।(আলিফ)

আমরা শুধু শুধু তোমাকে কষ্ট দিচ্ছি।বাবা।(হিমেল সাহেব)

এতে কষ্টের কিছু নেই বাবা।(আলিফ)

আমার মেয়েটা একটু অন্যরকম কিন্তু ও অনেক ভালো।তুমি ওর সাথে সময় কাটিয়ে দেখ। ও যাকে ভালোবাসে তাকে মাথায় করে রাখে।(হিমেল সাহেব)

ভালোবাসা?(আলিফ বিড়বিড় করে)

কি হলো?কিছু বললে?(হিমেল সাহেব)

না।বাবা আমি আজ রাখি অনেক কাজ পরে আছে।(আলিফ)

আচ্ছা বাবা।
বলেই হিমেল সাহেব ফোনটা কেটে দিলো।


হিমেল সাহেব বসার রুমের দরজার কাছে দাড়িয়ে দাড়িয়ে দেখছে হিয়াকে,,,,
আমি আর পিয়া বসার রুমে বসে রইলাম
খাবি?(আমি পিয়াকে আইস ক্রিম দেখিয়ে)

না।খালি পেটে আমার হাবিজাবি খাওয়ার কোনো শখ নেই।আরো এই সব খেলে আমার পেট ব্যাথা করে।যাইহোক এদের মধ্যে কোনটা ভালো হবে?(পিয়া আমাকে কার্ড গুলো দেখিয়ে)

আমি এইসব ব্যাপারে জানি না!তুই দেখ কোনটা তো ভালো হবে।(আমি)

আচ্ছা আমি সিলেক্ট করি তুই বল কোনটা বেস্ট!(পিয়া)

আচ্ছা।
পরেই পিয়া আমাকে কার্ড গুলো দেখাতে শুরু করলো।আর আমিও কার্ড গুলো থেকে আমার পছন্দের কার্ড বেছে নিতে শুরু করলাম।

অন্যদিকে হিমেল এইসব দেখে
যাক।যদিও বিয়ে ভাঙার হাজার চেষ্টা করছে তবুও যে একটু হলেও নিজে থেকে কিছু করছে তার জন্যই আল্লাহর কাছে লাখ লাখ শুকরিয়া।তবে তোকে ছাড়া এই এই বাড়িতে কি করে থাকবো কে জানে?সকাল সন্ধ্যা কার সঙ্গে ঝগড়া লাগবো?আমি জানি না তোকে ছাড়া আমি কি করে থাকবো!তুই যে আমার সব।বিয়ে করে যখন তুই চলে যাবি তখন আমার কাছে তো আর কিছুই থাকবে না মা।তোকে খুব মিস করবো।খুব মনে পড়বে তোর সাথে কাটানো আমার সেই সুখ দুঃখের দিন গুলো। খুব মনে পড়বে তোর সাথে ঝগড়া করা,এক সাথে বসে চা খাওয়া, গল্প করা।
কেনো যে এত তাড়াতাড়ি বড়ো হয়ে গেলো আমার রাজকুমারী।আমি বুঝতেই পারলাম না।


চলবে,,,

Happily Married Part-02

0

#Happily_Married💥
#Part_2
Writer:: Shaanj Nahar Sanjida


পিয়া চোখ বড় করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে

কি হয়েছে?জীবনেও কি আমাকে দেখিস নি?(আমি ভ্রু কুঁচকে)

তোকেই দেখিয়েই তো বড়ো হলাম।কিন্তু তোর মনে কি চলে তা আজ পর্যন্ত জানতে পড়লাম?(পিয়া ঠোঁট ফুলিয়ে)

আমি ভ্রু উচুঁ করে ওর দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে বললাম
চল।আজকে কি ভাবছি তোকে বলবো।
বলেই ওকে নিয়ে বসার রুমে হাটতে শুরু করলাম।

বলার জন্য বাহিরে কেনো যেতে হবে?(পিয়া অবাক হয়ে)

আরে চল না।
বলেই আমি আর পিয়া বাহিরে গেলাম।


বসার রুমে
বাবা আর পাবেল আংকেল খুব মনোযোগ নিয়ে কথা বলছে।আর পরি আন্টি তাদের জন্য চা করছে পিউ আপুও তাকে হেল্প করছে।

বাবা।(আমি সোফায় বসতে বসতে)

হুম বল?(হিমেল ভ্রু কুঁচকে)

তাদের আজ কখন আসার কথা ছিল?(আমি)

দুপুরে এসে খাওয়ার কথা ছিল।(হিমেল)

খাদক!(আমি বিড়বিড় করে)

কিছু বললি?(হিমেল)

না।(আমি)

তারপর বিকেলে কথাবার্তা ঠিক করে বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করার কথা ছিল।কিন্তু আমার গুণধর মেয়ে তো বারোটা বাজিয়ে দিলো।(হিমেল দাত চেপে চেপে)

বাবাকে জিজ্ঞেস করলে কিছুতেই বলবে না পালানোর খবর তাকে কে দিয়েছে?আমাকেই বের করতে হবে(আমি মনে মনে)

আচ্ছা।তাহলে এখন তো মাত্র বিকেল হলো তাদের আসতে বলো রাতের খাবারের জন্য।(আমি)

কিহ!(হিমেল,পাবেল,পাশে দাড়িয়ে থাকা পিয়া আর রান্না ঘর থেকে পরি আন্টি,পিউ আপু)

আমি চোখ বড়ো করে তাদের দিকে তাকিয়ে দেখি তারা সবাই যেনো নিজের সামনে ভুত দেখেছে,,

কি হলো?তোমরা হিন্দি সিরিয়ালের মত কিহ, কিহ করছো কেনো?(আমি অবাক হয়ে)

কারণ ভুতের মুখে রাম রাম শুনছি তো তাই!(পাবেল)

আঙ্কেল।আমি সত্যিই বলছি সিরিয়াসলি!(আমি)

তুই পালাবি না তো?(পরি)

ভুলেও না।(আমি হ্যা বোধক মাথা নেড়ে)

হ্যা বলছিস নাকি না?(পাবেল)

না বলছি।(আবারও হা বোধক মাথা নেড়ে)

বলছিস না,মাথা নাড়াচ্ছিস হা?(হিমেল ভ্রু উচুঁ করে)

বিশ্বাস করো তোমরা।এমন করছো কেন?(আমি ঠোঁট ফুলিয়ে)

আচ্ছা আমি তাহলে তাদের ফোন করে আসতে বলি
আর হ্যা,,তোকে(হিয়া) আমি ভুলেও বিশ্বাস করি না।পরি ভাবী আপনি প্লিজ রান্না করে দিবেন,পিউ মা তুমি একটু তোমার মাকে সাহায্য করো।পাবেল ভাই আপনি আসুন আমরা বাজারে গিয়ে দরকারি জিনিস পত্র নিয়ে আসি।
বলেই আমার বাবা পাবেল আঙ্কেলকে নিয়ে বের হলো।

যে যার যার মতো কাছে চলে গেলো।আমি সোফা থেকে উঠে পিয়ার দিকে তাকিয়ে দেখি ও স্ট্যাচু অব লিবার্টি হলে গেছে।

কিরে?তুই স্ট্যাচু অব লিবার্টি হয়ে দাড়িয়ে আছিস কেনো?(আমি ওকে ধাক্কা দিয়ে)

হ্যা হ্যা।(হুশ ফিরল)তুই কি বললি?(পিয়া অবাক হয়ে)

রুমে চল সব বলছি।
বলেই পিয়াকে রুমে নিয়ে রুমের দরজা বন্ধ করে বিছানায় গা এলিয়ে দিলাম।


রুমে
কিছু বলবি?(পিয়া বিছানায় পাশে কোমরে হাত দিয়ে)

আমি ওকে টেনে আমার পাশে বসলাম।
শুন বাবা বলছে আমাকে বিয়ে করতে তাই তো?(আমি শুয়ে শুয়ে উপর দিকে তাকিয়ে)

হুম।(পিয়াও আমার শুয়ে পড়লো)

এখন তো আমি বিয়ের জন্য না করতে পারবো না।কিন্তু তারা যদি না করে তখন কি করে বিয়ে হবে?(আমি শয়তানি হাসি দিয়ে)

মানে?(পিয়া শুয়া থেকে উঠে বসলো)

দেখ।তাদের সামনে যদি আমি নিজেকে অসভ্য,বেয়াদব,খারাপ মেয়ে প্রমাণ করতে পারি তাহলে তো উনারা আর বিয়েতে রাজি হবে না।(আমি পিয়ার দিকে তাকিয়ে)

তারমানে তুই তাদের সামনে নিজেকে খারাপ মেয়ে প্রমাণ করতে চাস?কিন্তু কেনো?(পিয়া বসা থেকে উঠে)

কারণ আমি যে করেই হোক বিয়েটা আটকাতে চাই।আর কথায় কথায় দাড়িয়ে যাস কেনো?বস।
বলেই আবার পিয়াকে টেনে বসালাম।

পিয়া চুপ করে আছে।

আমার পিয়া রানীর কি হয়েছে?(আমি পিয়ার গাল টেনে)

তুই কোনো মতেই বিয়ে করতে চাস না?(পিয়া আমার দিকে তাকিয়ে)

আমি ওর দিকে তাকিয়ে শুকনো হাসি দিলাম।


চৌধুরী বাড়িতে
আলিফ তৈরি হও।(রামিম)

কেনো বাবা?(আলিফ সোফায় বসে চা খেতে খেতে)

কেনো ভাই?আমরা মেয়ে দেখতে যাবো।(আলিশা — আলিফের ছোটো বোন)

আমি তো বলেই দিয়েছি আমার মেয়ে পছন্দ।বিয়ে করলে আমি ওই মেয়েকেই করবো।তোমরা গিয়ে দেখে দিন তারিখ ঠিক করো।আর এতে আমার না যাওয়াই ভালো।(আলিফ চায়ের কাপ নিচে রেখে)

সেকি কথা আলিফ।তুমি মেয়েকে দেখেছো কিন্তু মেয়ে তো তোমাকে দেখেনি।(আলেয়া — আলিফের মা)

মা।আমার মনে হয় মেয়ে যদি আমাকে না দেখে তাহলেই ব্যাটার!
বলেই মুচকি হাসি দিয়ে চলে গেল নিজের রুমে।

ও কি মুচকি হাসি দিলো?(রামিম অবাক হয়ে)

ভাই তখনই এমন করে হাসে যখন ওর মনে কিছু চলছে।(আলিশা)

যাই হোক।যেহেতু এই প্রথম ও কোনো মেয়েকে বিয়ে করার জন্য রাজি হয়েছে তাহলে আমাদের যে করেই হোক এই মেয়েকেই বাড়ির বউ বানাতে হবে।(আলেয়া)

কিন্তু আমি যতটুকু জানি মেয়ে করতে চায় না।তাই তো আজকে পালিয়েছে।কিন্তু কথা হচ্ছে আমার ছেলে জানলো কি করে পালানোর খবর?(রামিম চিন্তিত হয়ে)

এতো কিছু চিন্তা করে লাভ নেই।মেয়ে যাই করুক না কেনো?বিয়ে করে ওকে এই বাড়িতেই আসতে হবে।(আলেয়া)

হুম।ভাই কোনোদিন ওই মেয়েকে ছাড়বে না!(আলিশা)

হুম।
বলেই সবাই চিন্তিত হয়ে বসে আছে।


হিয়াদের বাড়িতে বসার রুমে
রামিম চৌধুরী,আলেয়া বেগম আর আলিশা এসেছে।
তাদের সাথে দুজন বডিগার্ড এসেছে।আরো কয়জন সার্ভেন্ট এসেছে বিভিন্ন গিফট নিয়ে।

স্যার।কিছু নিন না? ম্যাম আপনি নিন।আলিশা মা তুমিও(হিমেল)

হিমেল তোমার সাথে আমাদের সম্পর্ক হতে চলেছে।তুমি হচ্ছো আমার বেয়াই।স্যার বলে দুরত্ব সৃষ্টি করো না।প্লিজ।(রামিম)

জ্বি স্যার।(হিমেল)

আবার স্যার?তুমি আমাকে রামিম বলো।(রামিম)

জ্বি রামিম স্যার।(হিমেল)

হায় আল্লাহ!(রামিম মাথায় হাত দিয়ে)

আচ্ছা আচ্ছা থাক।হিমেল ভাইয়ের প্র্যাক্টিস করতে হবে।প্রথম দিনই এতো চাপ দিও না।(আলেয়া হেসে)

ছোটো স্যার আসেনি?(হিমেল)

ভাইয়া আপনার মেয়ের জামাই হতে চলেছে আপনি তাকেও ছোটো স্যার বলবেন হিমেল আঙ্কেল!(আলিশা)

আসলে,,!(হিমেল)

থাক।আলিফ বলে দিয়েছে ও আপনার মেয়েকেই বিয়ে করবে।আর আমরা আজ বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করতে এসেছি।(আলেয়া)

আলহাদুলিল্লাহ।আমারও মনে হয় আলিফ স্যার না এসেই ভালো করেছে।আমার যেই মেয়ে আজকে কি যেনো করে!(হিমেল মনে মনে)

পাবেল ভাই।পিউ মা আর পিয়া মাকে বলেন হিয়ামনিকে নিয়ে আসতে।(হিমেল)

কাউকে নিয়ে আসা লাগবে না।আমি নিজেই এসে পড়েছি।
বলেই আমি রুম থেকে বের হলাম আর আমার পিছু পিছু পিয়া আর পিউ আপু বের হয়ে কাচুমাচু হয়ে দাড়িয়ে আছে।

বাবা,পাবেল আংকেল হা করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে,,,
আজকে আমার যদি হার্ট এ সমস্যা থাকতো তাহলে আমি নির্ঘাত হার্ট এ্যাটাক করতাম।(হিমেল মাথায় হাত দিয়ে)

পাবেল পিয়া আর পিউকে ইশারা করে বলছে,,,
এসব কিহ!(রেগে ইশারা করে)

মাফ করো বাবা অনেক চেষ্টা করেছি কিন্ত এই মেয়ে কারো কথাই শুনে না তোমরা তো জানোই।(পিয়া আর পিউ ইশারা করে)

আপনারা সবাই ভাবছেন,মেয়ে দেখতে এসেছেন মেয়ে কে সুন্দর শাড়ি,চুলে বেনি করে বেলী ফুল দেয়া থাকবে।চোখে হালকা কাজল,ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক।কিন্তু এখানে আমি টাইট জিন্স,টি শার্ট আর উপরে একটা জ্যাকেট,চুল গুলো উচুঁ করে জুটি করে,চোখে কাজলের বদলে কালি দিয়ে এসেছি,ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক এর বদলে কালো লিপস্টিক তাও আবার গাঢ় করে দিয়ে এসেছি।কেনো তাই তো?(আমি তাদের বলার আগেই সোফায় পায়ের উপর পা তুলে বসলাম)

রামিম,আলেয়া,আলিশা এক সাথে হা বোধক মাথা নেড়ে।

আসলে এইটাই আজকালের ট্রেন্ড।আমার স্টাইল এইটা।যেহেতু আপনাদের বাড়ির বউ করে নিয়ে যাচ্ছেন সেহেতু আপনাদের কাছ থেকে তো কিছু লুকাবো না।তাই নিজের মতো করেই আসলাম।আপনাদের ভালো লাগে নি?না লাগলে বলতে পারেন।বিয়েতেও অমত থাকলে করতে পারেন।(আমি তাদের উত্তর শুনার জন্য এক্সসাইটেড হয়ে)

এই মেয়ে ঠিক হবার না।(হিমেল মনে মনে)

ওয়াও ভাবী।you are so cool।(আলিশা চোখে খুশির জোয়ার)

হ্যা?(আমি অবাক হয়ে)

আসলে আমরা সব সময় একজন স্টাইলিশ বউ মা চেয়েছিলাম।যারা আমাদের হাই ক্লাস সোসাইটিতে ফিট হতে পারবে।তোমাকে নিয়ে একটু চিন্তা ছিলো যেহেতু তুমি মধ্যবিত্ত পরিবারের।কিন্তু এখন তুমি সেই চিন্তা দূর করে দিয়েছো।ধন্যবাদ মা।(বলেই আলেয়া বেগম হিয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে দিল)

পিয়া আর পিউ মিলে মুচকি মুচকি হাসছে,,
তোর চাল তোর উপরেই পরে গেছে।(পিয়া মনে মনে)

এইজন্যই বলে অতি চালাকের গলায় দড়ি।(পিউ মনে মনে)

বলেছিলাম আমার বৌমার অনেক ট্যালেন্ট।(রামিম এক গাল হেসে)

তারমানে আপনাদের আমার এই অবস্থা নিয়ে কোনো আপত্তি নেই?(আমি অবাক হয়ে)

একদমই না।(রামিম,আলিশা আলেয়া এক সাথে)

I see!(আমি হতাশ হয়ে)

এদিকে তাদের উত্তর শুনে
পাবেল আংকেল আর বাবা হাতে তালি দিলো।

আমি তালির শব্দ শুনে তাদের দিকে তাকাতেই
তারা😏

🙂(আমি)


কিছুক্ষণ পর তাদের জন্য আমার বানানো চা নিয়ে আসলো পরি আন্টি।

আমি চা বানিয়েছি।প্লিজ খেয়ে দেখুন।(আমি মুচকি হেসে)

পরি আন্টি গিয়ে পাবেল আংকেলএর পাশে দাঁড়ালো।
কি হয়েছে তোমরা এতো চিন্তায় আছো কেনো?আর হিয়া ভুতের মত সেজেছে কেনো?(পরি ফিসফিস করে)

পরে বলবো!আগে বলো চা কে বানিয়েছে?(পাবেল ফিসফিস করে)

কেনো?হিয়া বানিয়ে ফ্লাকছে রেখেছে আমি সেখান থেকে নিয়ে এসেছি।(পরি অবাক হয়ে)

নাউজুবিল্লাহ।(হিমেল আবার মাথায় হাত দিয়ে)

এইবার খেয়ে তারা বেচেঁ থাকলেই হয়।(পাবেল)

চায়ে চুমুক দিতেই তাদের চোখ মুখের হাব ভাব পরিবর্তন হয়ে গেলো।হবেই বা না কেনো?আমি যে চায়ে ইচ্ছা মত লবণ দিয়েছি।কিন্তু তারা বিয়ে ভাঙার বদলে আরো আমার চায়ের প্রশংসা করতে লাগলো।শেষ আমার দ্বিতীয় হাতিয়ারও ডাস্টবিনে।আমি হতাশ হয়ে বসে আছি তখনই তারা আমাকে বিভিন্ন প্রশ্ন করলো,,

তুমি রান্না করতে পারো?(আলেয়া চা খেতে খেতে)

না।খেতে পারি।(আমি নির্লজ্জ ভাবে)

তাহলে তো খুবই ভালো।আমি রান্না করবো আর তুমি খাবে। আসলে দুজনে রান্না করলে কম্পিটিশন মনে হবে!(আলেয়া খুশি হয়ে)

হ্যা?(আমি হতাশ হয়ে)

এইবার কি করবি?(হিমেল মনে মনে)

ভাবী তোমার হবি কি?(আলিশা)

বাইক রেসিং।আর ধরে ধরে ছেলে পেটানো।(আমি দাঁত চেপে)

ওয়াও।আমাকে বাইক চালানো শেখাবে?আম্মু,আব্বু এইবার কোনো ছেলে আমাকে বিরক্ত করলে আমি ভাবীকে নিয়ে যাবো!(আলিশা খুশি হয়ে)

তাই হবে।(রামিম হাসতে হাসতে)

দূর।আমি কিছুই বলবো না যাই বলছি তারা উল্টা ভাবে।এইভাবে চলতে থাকলে বিয়ে তো নির্ঘাত হয়ে যাবে।(আমি মনে মনে চিন্তিত হয়ে)

আমি যতই উল্টা পাল্টা উত্তর দিতে লাগলাম।উনারা ততই তাকে অন্যভাবে নিয়ে আমার প্রশংসা করে যাচ্ছে।আমার বাবা বলে দুনিয়াতে আমিই নাকি সবচেয়ে অদ্ভুত।কিন্তু এখন আমি সিওর আমার থেকে অদ্ভুত মানুষও আছে।
আমি তাদের উল্টা পাল্টা উত্তর দিলাম কিন্তু তবুও তারা বিয়েতে রাজি হয়ে রাতে খাবার মজা করে খেয়ে আজ থেকে পনেরো দিন পর বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করে চলে গেলো।

আমি হতাশ হয়ে
সোফায় আসন পেতে বসে আছি তখনই সাউন্ড বক্সে পিয়া
Mujhe sajan ke ghar jana hai,,
মেহেন্দি বাটো,হলুদ বাটো,,
Sajan jih ghar aye..
Tenu Leke mein jawanga
মোট কথা বিয়ে যতো হিন্দি,বাংলা গান আছে ছেড়ে নাচতে শুরু করছে,,,
পিয়া আর পিউ আপু তো নাচছেই তাদের সাথে বাবা,পাবেল আংকেল আর পরি আন্টিও নাচতেছে।তাও আমার চার পাশে ঘুরে ঘুরে।এমনি বাবা নাচতে পারে না তবুও উনার কোমর দুলিয়ে নাচা দেখে খুব কষ্ট করে নিজের হাসি আটকে রাগী লুক দেয়ার চেষ্টা করছি।

এইবার কি করবি তোর সব প্ল্যান তো সাগরে চলে গেলো?(বাবা হাসতে হাসতে আর নাচতে নাচতে)

আমি সোফার উপর দাড়িয়ে সবাইকে কাটা চামুচ দেখিয়ে বললাম,,
এখন হাতে আছে পনেরো দিন।আর মাথায় আছে পনেরো হাজার প্ল্যান।আমিও হিয়া দেখবো বিয়ে হয় কি করে?


চলবে,,,
চরিত্র গুলোর পরিচিতি দিয়ে দিচ্ছি যাতে আপনারা নিজেদের মতো চরিত্র গুলো judge না করেন,,,
#হিয়া_মনি::(গল্পের নায়িকা)খুবই বুদ্ধিমতী।কিন্তু খুব জেদী আর childish। বিয়ে শাদী একদম পছন্দ না।কিন্তু কেনো?এই রহস্য পরে বুঝতে পারবেন!বিয়ে আটকাতে সব করতে পারে।

#আলিফ_রায়হান_চৌধুরী::(গল্পের নায়ক)শান্ত স্বভাবের।তবে খুব রাগী।চ্যালেঞ্জ নিতে ভালোবাসে।বিয়েটা একটা চ্যালেঞ্জের মত ওর কাছে।

#হিমেল_আহমেদ::(নায়িকার বাবা) অনেক ফ্লিমি মানুষ।সাধারণ চলাফেরা।দুনিয়াতে মেয়ে ছাড়া আর কেউ নেই।মেয়ের বিয়ে নিয়ে এমন বিচার দেখে খুবই চিন্তিত থাকে।তাই বিয়ে দিতে উঠে পরে লেগেছে।

#রামিম_চৌধুরী::(নায়কের বাবা)খুবই মিশুক এবং মজার মানুষ।

#আলেয়া_বেগম::(নায়কের মা)উনিও মিশুক এবং মজার মানুষ। তবে অন্য সব দজ্জাল শাশুড়ি ক্যারেক্টার দেইনি।উনি ভালো শাশুড়ি।

#আলিশা::(নায়কের ছোটো বোন)উনার চরিত্রও অনেক মিশুক।

#পিয়া::(নায়িকার বেস্ট ফ্রেন্ড)অনেক ভালো বন্ধু।একটু ভীতু আর লাজুক তবে হিয়ার একজন loyal friend।

#গল্পের_থিম:বিয়ে নিয়ে এখন অনেকের অনেক মতবাদ।একজন বিয়ে পছন্দ করে না আরেকজন বিয়েকে একজন চ্যালেঞ্জ ভাবে।তাদের এইসব মতবাদ কাটিয়ে তারা কি করে বিয়েকে একটা পবিত্র সম্পর্কে রূপান্তর করে?আর গল্পটাকে যথেষ্ট ফানি করার চেষ্টা করবো।

Happily Married Part-01

0

Happily_Married💥
#Part_1
Writer:: Shaanj Nahar Sanjida

সোফায় পায়ের উপর পা তুলে বসে চাকু ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে সবার দিকে চোখ বুলাচ্ছি।সামনে বসে আছে বাবা তাও আবার কিউট ফেস করে।
তুমি না হার্ট এ্যাটাক করছো?(আমি ভ্রু কুঁচকে)

করছিলাম তো।হসপিটালে নিয়ে গেছে।ডক্টর চিকিৎসা করে বললো বাসায় নিয়ে যেতে।বিশ্বাস না হলে পিউ,পিয়া মা আর পরি ভাবীকে জিজ্ঞেস কর!(হিমেল আহমেদ–আমার বাবা)

আমি জানি তোমার কিছুই হয়নি!তোমরা সবাই মিলে আমার সাথে নাটক করছো।(আমি সবার দিকে তাকিয়ে ধমক দিয়ে)

বাবা মাথা নিচু করে বসে আছে।আমি উনার সামনে হাঁটু মুড়ে বসলাম।

কেনো এমন করছো?বিয়েই তো তার জন্য এইভাবে নিজের শরীর স্বাস্থ্য নিয়ে মজা কেনো করছো?তুমি জানো,তুমি ছাড়া এই দুনিয়াতে আমার কেউ নেই।(আমি বাবার হাঁটুতে মাথা রেখে)

বিয়েই তো!করে ফেল না?(হিমেল মাথায় হাত বুলিয়ে)

ঠিক আছে।কিন্তু আর নিজের স্বাস্থ্য নিয়ে মজা করবে না!(আমি)

ঠিক আছে।(আমার গালে হাত দিয়ে)সবাই বিয়ের প্রস্তুতি নাও।আমার মেয়ে রাজি বিয়ের জন্য।(হিমেল খুশি হয়ে)


রুমে
আমি চাকু ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে পায়চারি করছি তখনই পিয়া (আমার বেস্ট ফ্রেন্ড) রুমে ঢুকলো।

আরে কি করছিস?এখনও এইটা নিয়ে খেলছিস! কোথাও লাগলে কেটে যাবে তো?(পিয়া ভয় পেয়ে)

কাটুক।আমি সব কিছু কেটে কুচি কুচি করে ফেলবো।এই আমার পালানোর খবর বাবাকে কে দিলো রে?(আমি পিয়াকে চাকু দেখিয়ে)

আগে চাকু নামা পরে বলছি।(পিয়া)

হুম বল।(আমি চাকু নামিয়ে)

যখন আমি আর আপু তোকে তৈরি করার জন্য তোর রুমে গিয়ে দেখি তুই নেই তখন সবাইকে জানাই।তখনই আংকেলের ফোনে কে যেনো ফোন করে কিছু বললো।তারপরই তো বাবা(পাবেল আংকেল) গেলো তোকে আনতে।আর তোকে রাজি করানোর জন্য আঙ্কেল হার্ট অ্যাটাকের নাটক করলো।(পিয়া মাথা নিচু করে)

এই হার্ট এ্যাটাক এর ভয় দেখিয়ে বিয়েতে রাজি করার প্রথা কে আবিষ্কার করেছে রে?তাকে পেলে আমি,,,
বলেই রাগে কটমট করতে লাগলাম।


অতীত
এভাবে নখ খেতে খেতে কোন দিন যেনো নিজের হাত খেয়ে বসিছ!(বিছানায় আধ শোয়া অবস্থায় আমার বেস্ট ফ্রেন্ড পিয়া আমাকে পিন মেরে কথাটা বললো)

আমি কিছু না বলে একটা রাগী লুক দিয়ে কটমট করে ওর দিকে তাকালাম।

আমার দিকে এইভাবে তাকিয়ে লাভ নে।এইবার আমি দেখবো তুই ছেলের দাত কি করে ভাঙ্গিস?আঙ্কেল এইবার তোকে খুব ভালোই ফাঁসিয়েছে।এখন তো বিয়ে করতেই হবে তোকে।(পীয়া দাঁত গুলো বের করে হাসতে হাসতে বললো)

দেখ প্রথমত আমি কিন্তু কারো দাত ভাঙ্গি নি।দ্বিতীয়ত আমি জাস্ট তাদের বুঝিয়ে বলিছি!এইবারও কিছু না কিছু করে ঠিক সামলে দিবো(আমি ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে পায়চারি করতে করতে)

তোর বুঝিয়ে বলা আমি জানি!এই জন্যই আঙ্কেল এইবার তার অফিসের বসকে তোর জন্য এনেছে।এইবার কি করবি তুই হিয়া?(পিয়া ভাব নিয়ে আধ শোয়া অবস্থা থেকে উঠে বসলো)

তুই কি আমার ফ্রেন্ড নাকি আমার আব্বুর?(আমি ভ্রু কুঁচকে চেয়ারে বসলাম)

ডাইরেক্টলি আমি তোর ফ্রেন্ড ইনডাইরেক্টলি আঙ্কেলের!(পিয়া এক গাল হেসে)

আমি ওর হাসি দেখে বিরক্ত হয়ে চেয়ারে বসে জানালা দিয়ে বাইরে তাকালাম।
আমি হিয়া মনি।আসলে এতো ফিল্মি নাম আমার একদম পছন্দও না।কিন্তু আমার বাবার খুবই শখের নাম।সবাই আমাকে হিয়া বলে ডাকলেও উনি আমাকে পুরো নামেই ডাকেন।পরিবার বলতে এক মাত্র বাবাই।কিন্তু এখনও সে শত্রুতা করে আমাকে বিয়ে দিতে চাইছে। মানে মাত্র কলেজ শেষ করলাম,,এখনই বিয়ে।18 থেকে 19 এ পা দিলাম তার মধ্যেই বাবার আনা অগণিত পাত্র আমাকে রিজেক্ট করে দিয়েছে।কেনো করেছে এইটা বাবার অজানা হলেও আমার ঠিকই জানা!
বাবার দেখা পাত্র গুলোকে বুঝিয়ে না হয় শাসিয়ে বিয়ে আটকাতে পারলেও এইবারেরটা একটু আলাদা।এইবার বাবা তার অফিসের বসকে আমার জন্য ঠিক করছে।
কোথাকার কোন বস!জানি না।উড়ে এসে জুড়ে বসেছে।আমার জীবন জাহান্নাম হয়ে গেছে।এখন একে কি করে বিদায় করবো?উল্টা পাল্টা কিছু করলে বাবার চাকরি ইন্নালি্লাহ হয়ে যাবে!
এইসব ভাবছি আর বসে বসে নখ কামড়াচ্ছি।তখনই পিয়া প্রশ্ন করলো
হিয়া!এখন বসের কি করবি?

উনি আমার বাবার বস,আমার না এতো চিন্তা করে লাভ নেই। ওই বুড়ো লোকের বিয়ে করার ভীমরতি আমি বের করছি।(আমি)

তুই কি জানলি ওই লোকটা বুড়ো হবে?(পিয়া জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে)

দেখ এতো বড় বিজনেস ম্যান তো কোনো হ্যান্ডসাম ইয়াং ম্যান হবে না।আর হলেও আমার বাবার মত সাধারণ ম্যানাজারের মেয়েকে বিয়ে করবে না!নির্ঘাত ওইটা বুড়ো টুরো হবে মেয়ে পাচ্ছিলো না বিয়ে করার তাই আমার বাবাকে সহজ সরল দেখে তার মেয়ে,মানে আমাকে বিয়ে করতে এসেছে।কিন্তু আমি আর ওইসব মেয়ে না টাকার জন্য বুড়োকে বিয়ে করবো।(আমি দাত চেপে চেপে)

তুই আর তোর তার ছিড়া লজিক।তবে কালকে দেখতে আসবে প্লিজ উল্টা পাল্টা কিছু করিস না।(পিয়া আমার পিঠে হাত বুলাতে বুলাতে)

আমি মুখ ভেংচি দিয়ে বললাম
কালকে দেখতে আসবে তাই না?
বলেই একটা ডেভিল হাসি দিলাম।

হিয়া?(পিয়া শুকনো ঢোক গিলে)


পরের দিন
সকাল সকাল হিয়াদের বাড়ি ধুম পড়েছে বিয়ের জন্য পাত্র দেখতে আসবে বলে।

পরি আর পাবেল(পিয়ার বাবা মা) হিয়াদের বাড়িতে এসেছে।সাথে পিয়ার বড়ো বোন পিউও। হিয়ার বাড়িতে ওর বাবা আর ও ছাড়া আর কেউ থাকে না।তবে পাশের বাড়িই হচ্ছে পিয়াদের।তাই কোনো দরকার পড়লে তারাই ওদের বাড়িতে চলে আসে সাহায্য করার জন্য।খুব ভালোই সম্পর্ক তাদের সাথে হিয়াদের।

ভাই সব ঠিক হবে তো?(হিমেল চিন্তিত হয়ে)

আরে আমি চিন্তা করবেন না?সব ঠিক হবে এইবার আপনার মেয়েকে দেখেই তারা পছন্দ করে ফেলবে।(পাবেল আশ্বস্ত করে)

তাই যেনো হয়!এইবার যদি তারা না করে তবে আমার হিয়া মনি অনেক কষ্ট পাবে!(হিমেল চিন্তিত হয়ে)

কষ্ট?বিয়ে ভাঙলে ও ডিস্কো ড্যান্স দিবে।কিন্তু সকাল থেকেই বাড়িটা খুবই শান্ত শান্ত লাগছে। অবশ্য বেশি নিরবতা ভালো না।নির্ঘাত কিছু করবে মেয়েটা।(পিয়া চিন্তিত মনে)

পিয়া তার গভীর চিন্তায় মগ্ন তখনই পিউ (পিয়ার বোন)এসে বললো
পিয়া চল আমরা গিয়ে হিয়াকে তৈরি করে আসি।(পিউ)

চলো আপু।(পিয়া জোরপূর্বক হাসি দিয়ে)


অন্যদিকে
আলিফ রায়হান চৌধুরী শহরের বাহিরে মিটিং শেষ করে বাড়ি ফিরছে।তখনই গাড়ির সামনের সিটে বসে থাকা ওর সেক্রেটারি সেলিমের ফোনে একটা ফোন আসে

হ্যাল্লো।স্যার(সেলিম)

তোমার বস কোথায়?ওকে ফোন দাও।(রামিম চৌধুরী)

স্যার।বড়ো স্যার ফোন করছে।(সেলিম)

আলিফ বিরক্ত হয়ে ফোনটা ধরলো
হ্যালো বাবা?

তোমার ফোন অফ কেনো?(রামিম রেগে)

ফোনে চার্জ নেই।(আলিফ)

ফোনে চার্জ নেই!নাকি তুমি ফোন বন্ধ করে বসে আছো?(রামিম রেগে)

কিসের জন্য ফোন দিয়েছো?(আলিফ ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে)

তুমি কোথায়?এখনও আসছো না কেনো?আজকে মেয়ে দেখতে যাবো জানো না?(রামিম)

তোমরা যাও।আমার না মেয়ে দেখার শখ আছে না বিয়ে করার।(আলিফ)

তোমাকে এই বিয়ে করতেই হবে।অনেক গুলো মেয়ে তোমাকে দেখানো হয়েছে তাদের তুমি রিজেক্ট করেছো।কিন্তু এই মেয়েকে বিয়ে করতেই হবে।আমি মেয়ের ছবি পাঠাচ্ছি।দেখে নিও।
পরেই রামিম রেগে ফোনটা রেখে দিল।


কিছুক্ষণ পর
হটাৎ আলিফের ড্রাইভার ব্রেক কষলে আলিফ সহ সবাই সামনের দিকে ঝুঁকে পড়লো,,

হোয়াট দা হেল!গাড়ি চালানো কি ভুলে গেছো?(আলিফ রেগে)

সরি স্যার।সামনে হুট করে একটা মেয়ে চলে এসেছে।তাই ব্রেক করতে হলো!(ড্রাইভার)

দেখো গিয়ে মেয়েটা কি চায়?(আলিফ বিরক্ত হয়ে)

সেলিম জানালার কাচ নামিয়ে বললো
মিস কি চাই আপনার?

ভাইয়া আমাকে রেল স্টেশন পর্যন্ত লিফট দেবেন?আসলে হাই ওয়ে তো এখানে গাড়ি পাওয়া খুবই কষ্টের।(মেয়েটা)

আলিফ রেগে কিছু বলতে যাবে তার আগেই সেলিমের ফোনে হোয়াটস অ্যাপ এ একটা ম্যাসেজ আসলো।ম্যাসেজ দেখিয়েই সেলিম,আলিফ কিছু বলার আগেই তাকে ফোনটা ধরিয়ে দিলো।

আলিফ দেখলো ওর বাবা যে মেয়েকে ওর জন্য দেখতে যাচ্ছে সেই মেয়েই এখন ওর গাড়ি দাড় করিয়ে লিফট চাইছে।

আলিফ মুচকি হেসে
ইন্টারেস্টিং তো!যে মেয়েকে আমার বাবা দেখতে যাচ্ছে সেই মেয়েই পালাচ্ছে।দেখি এই ড্রামা কতোটুকু চলতে পারে।(আলিফ মনে মনে)

পরেই আলিফ ইশারা দিয়ে সেলিমকে সম্মতি দিল।


গাড়িতে
আমার একটু ভয় করছে একটা অপরিচিত মানুষের গাড়িতে উঠেছি।যদিও আর কোনো উপায় আমার ছিলো না।তবে আমি জানালার কাচ খোলা রেখে একদম ঘেঁষে বসছি।আর আল্লাহ আল্লাহ করছি যাতে কিছু না হয়।আমার পাশেই একটা হ্যান্ডসাম সুপুরুষ বসে আছে।আমি বেহায়ার মত আড় চোখে একটু একটু তাকাই।কিন্তু ওই লোক যেনো মনেই করছে না উনার পাশে কেউ বসেছে। অবশ্য আমার মত পেত্নীকে দেখি কেউই আজ পর্যন্ত ক্রাশ খায়নি।
আমি একরাশ দুঃখ মনে নিয়ে এইসব ভাবতেই সামনের লোকটা আমাকে জিজ্ঞেস করলো,,
মিস, আপনার নাম কি?(সেলিম)

হিয়া।(আমি)

তা আপনি পালাচ্ছেন কেনো?(সেলিম)

কে বললো আমি পালাচ্ছি?(আমি ভ্রু কুঁচকে)

যাক বুদ্ধি একটু হলেও মাথায় আছে!(আলিফ অন্য মুখ করে ভাবছে)

না মানে।ব্যাগ পত্র নিয়ে বেড়িয়েছেন কিন্তু কোনো অভিবাবক নেই তাই বললাম!(সেলিম কোনোভাবে সামাল দেয়ার চেষ্টা করে)

আমি কি পাঁচ বছরের বাচ্চা?যেখানে যাবো অভিবাবক নিয়ে যাবো?আমার উনিশ বছর হয়ে গেছে।(আমি খানিকটা রেগে)

সেলিম ভয়ে ভয়ে বললো
ও আচ্ছা।

একদম আলিফ স্যারের মত।(সেলিম মনে মনে)

আপনি যেহেতু লিফট দিয়েছেন আমি তো আপনাকে বলতেই পারি।তাহলে শুনুন,,আসলে আজকে আমাকে বিয়ের জন্য দেখতে আসবে কোনো এক বুড়ো লোক।তাই আমি পালাচ্ছি।(আমি হাসি দিয়ে)

বুড়ো লোক কথাটা শুনে আলিফের চোখ গুলো বড়ো হয়ে গেল।আমার বয়স মাত্র 26।বুড়ো কোনদিক দিয়ে?(আলিফ মনে মনে)

হিয়ার কথা শুনে সেলিম ফিক করে হেসে দিলো!

আপনার কেনো মনে হয় লোকটা বুড়ো হবে?(সেলিম হাসতে হাসতে)

দেখুন।কোনো হ্যান্ডসাম ইয়াং ম্যান এর কি ওতো বড়ো বিজনেস থাকবে?আর থাকলেও আমার মত মেয়েকে তো ভুলেও বিয়ে করতে আসবে না।নির্ঘাত লোকটা বুড়ো হবে মেয়ে পাচ্ছিলো না বিয়ে করার জন্য তাই আমাকে বিয়ে করতে আসছে।(আমি একদম এ বললাম)

আমি মেয়ে পাচ্ছি না বিয়ে করার জন্য?আমাকে বিয়ে করার জন্য মেয়েরা লাইন লেগে থাকে আর এই মেয়ে কি না!(আলিফ রাগে ফেটে যাচ্ছে)

আপনি আর আপনার লজিক!(সেলিম জোরপূর্বক হাসি দিয়ে)

এক্সক্যালি এই কথাই আমার বেস্ট ফ্রেন্ডও বলছে।এই আমার নামার সময় হয়ে এসেছে।থামান।
বলেই গাড়িটা থামিয়ে সেখান থেকে নেমে আসলাম।আসার আগে সামনের সিটে বসা লোকটার কাছে(সেলিম)গিয়ে বললাম
আপনি আর আমার বেস্ট একদম এক রকম কথা বলেন।আর হ্যা,, ধন্যবাদ।আর আপনাকেও(আলিফ)।
বলেই মুচকি হেসে কাধে ব্যাগ ঝুলাতে ঝুলাতে চলে আসলাম।

আলিফ হিয়ার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললো,,,
সেলিম বাবাকে ফোন করে বললো তার হবু বউ মা রেল স্টেশন আছে।আর সে পালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে।যদি বিয়ে দিতে চায় তাহলে এসে যেনো তাকে আটকায়!

আলিফ মুচকি হেসে মনে মনে
We will be happily married,,,


রেল স্টেশন এ
আমি ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করছি।

কিছুক্ষণ পরেই কোথা থেকে যেনো পাবেল আংকেল আসলো।আর এসেই আমার হাত ধরে টানতে লাগলো
ছাড়ো বলছি!আমি যাবো না তোমার সাথে?(আমি পাবেল আংকেলের হাত থেকে ছুটার আপ্রাণ চেষ্টা করে)

তোর বাবা হার্ট অ্যাটা করছে।তুই না গেলে মারা যাবে।(পাবেল আংকেল)

উনার কথা শুনে আমি বাধ্য মেয়ের মতো উনার পিছু পিছু গেলাম।কারণ আমার কারণে বাবার কিছু হোক তা আমি কিছুতেই চাই না।কিন্তু বাড়ি ফিরে নিজেরই হার্ট এ্যাটাক করার অবস্থা হলো।
বাড়িতে গিয়ে দেখি উনি সোফায় আধ শোয়া অবস্থায় আরাম করে অরেঞ্জ জুস খাচ্ছে আর তা দেখেই আমার সেই পরিমাণ রাগ উঠে গেলো।মাথার ভেতরকার আগ্নেয় গিরি ফেটে গেলো।

তাই পাশে থাকা চাকু নিয়ে সোফায় বসলাম।
তারপর তো সব জানেনই।


বর্তমান
আমি চাকু ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দাত চেপে চেপে বললাম,,,
কে খবরটা দিলো?যেই হোক না কেনো তাকে আমি খুন করে ফেলবো। Happily married?? In my nightmare!
বলেই চাকুটা সামনের টেবিলে জোরে গেঁথে দিলাম।


চলবে,,,,

অদ্ভুত প্রেম পর্ব-৮+৯+১০ এবং শেষ পর্ব

0

অদ্ভুত প্রেম♥
Writer-Afnan Lara
[৮]+[৯]+[১০](শেষ)
নাস্তা আসার পর থেকে তাহা ইচ্ছামত খাচ্ছে।খুব ক্ষিধা লেগেছিল ওর।সৌরভ বসে বসে ওর খাওয়া দেখছে।
তাহা বললো আরও আনতে।ওর পেট ভরে নাই।

-‘হাহাহাহাহাহাহিহিহি’

-‘এতো হাসির কি আছে?ওকে খাবো না’

-‘ওকে সরি।নার্স যাও আরও আনো’

-‘না খাবো না’

-‘খাবা’

-‘না’

-‘নার্স যা বলেছি করুন।আমি হল রুম থেকে আসতেছি
আমার ক্লায়েন্টরা আসছে।তাহা রুম থেকে নড়বা না
আপনারা সবাই ওর দিকে খেয়াল রাখবেন। টাটা’

তাহা ঠিক করলো গেমস খেলবে।গেমস খেলতে খেলতেই ঘুমিয়ে পড়লো সে।সন্ধ্যা ৬টা বাজে ঘুম ভেঙে গেলো ওর।চোখ মেলে তাকিয়ে দেখলো সৌরভ ওকে জড়িয়ে ধরে আছে।ওর গায়ের এক অন্যরকম একটা গন্ধ।

-‘উনিতো ঘুমিয়ে আছে।জোরে জোরে সুবাস টা নিলাম উনার গায়ের।অন্যরকম ফিলিংস।নেশার মতো লাগছে
বাথরুমে গিয়ে গোসল করার জন্য গায়ে পানি দিতেই একিইইইই!!!আমি এখন কি করবো?মাথায় তো ব্যান্ডেজ।পুরা ভিজে গেলো’

-‘তাহা কই তুমি?’

-‘ইয়ে মানে, না মানে’

-‘দরজা খুলো’

-‘নানানানা’

-‘দরজা ভেঙে ফেলবো’

তাহা ভয়ে ভয়ে দরজা খুললো।

-‘দরজা খুলতে দেরি কেন?একি!তোমার সারা গায়ে পানি!মাথায় ঢালো নাইতো?”

-‘হ্যাঁ’

-‘ইচ্ছা করছে তোমাকে মেরে আবার তোমার মাথা ফাটিয়ে দেই’

-‘এ্যা।আম্মু’

-‘চুপ!!যাও জামা চেঞ্জ করে নাও।আগে ব্যান্ডেজ চেঞ্জ করতে হবে।সেলাইয়ের জায়গায় পানি না গেলেই ভালো।’

সৌরভের কথায় ডক্টর আসলো।ব্যান্ডেজ ও বদলে
দিলো।
সৌরভ বললো আজকে ওরা বিজয়নগর চলে যাবে।
ওখানে বৌভাতের অনুষ্ঠান হবে।ওর কথামতন রাতে সবাই বিজয়নগর এসে পৌঁছালো।তাহার আম্মু আব্বু বাসায় চলে গেছে।
আগামীকাল বৌভাত হবে।সব প্রস্তুতি হয়ে গেছে।

রুমে এসে সৌরভ মুচকি হেসে তাহাকে দেখছিল।তাহা কপাল কুঁচকে বললো,’ আপনি আমার দিকে তাকিয়ে ওমন করে হাসছেন কেন?আর আমার দিকে এগোচ্ছেন কেন??’

-‘কতদিন হলো’

-‘কিই?’

-‘দেখাচ্ছি।

তাহা ভয় পেয়ে আগোভাগে খাঁমছি দিয়ে দিলো।

-‘কি হলো?এত বড় নখ কাটো না কেন?’

-‘সরেন।আমি ঘুমাবো’

এটা বলেই হাঁটা ধরলো তাহা।সৌরভ এক টান দিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরলো হঠাৎ।তারপর ফিস ফিস করে বললো,’তুমি এত আনরোমান্টিক কেন?

-‘আমি ঘুমাবো ব্যস’

রাত ২:০০টার দিকে সৌরভ খেয়াল করলো তাহা ওকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে।ওতো সহজে ধরার মতন মেয়ে তো তাহা না।শীত লাগছে নাকি ওর?গায়ে হাত দিয়ে দেখলো প্রচণ্ড জ্বর।তাহা উঠো,তাহা?’

-‘হুম কি?’

-‘নাও এই ঔষধটা খাও,”

-‘কেন?’

-তোমার জ্বর,তাই’
——
সকালে ঘুম থেকে তাড়াতাড়ি উঠলো তাহা।সৌরভ ঘুমাচ্ছে।তাহা বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালো।কত বড় বাড়ি।অথচ এই বাড়ির সামনে দিয়ে কতবার ঢাকা গেছিলো সে।জানতোই না এটা যে তার শশুর বাড়ি হবে’

ভাবতে ভাবতে নিচে বাগানে গেলো সে।শিউল ফুল গাছ দেখে নিচে ঘাসের উপর বসে সে ফুল কুড়াচ্ছিল।
হঠাৎ খেয়াল করলো,গায়ে পিছন থেকে চাদর দিয়ে দিলো সৌরভ।
-‘কখন উঠলেন?’

-“তোমার আগেই।দেখলাম কি কি করো’

-‘মালা আরেকটা বানালাম,নেন এটা আপনার’

-“পরিয়ে দাও’

-‘বাবারে কতো লম্বা।নাগাল পামু কেমনে?অনেক কষ্টে পরিয়ে দিলাম।

-‘রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নাও।মেহমান আসা শুরু করবে’

-‘কি পরুম?তাই ভেবে উনার রুমে এসে আলমারি খুললাম।ওওওওওমা এতো শাড়ী? লেহেঙ্গা ও তো আছে।কি পরবো তাও বুঝছি না’

-‘লেহেঙ্গা পরো।black যেটা আছে ওটা।অমান্য করলে আজ তোমার কপালে দুঃখ আছে’
—–
দশটার পরে পার্লার থেকে কয়েকজন এসে তাহাকে সাজিয়ে দিলো।আম্মু আব্বু ও আসলো,এক এক করে সব আত্নীয় স্বজন ও আসা শুরু হয়ে গেছে।তাহা খুব খুশি তাদের দেখে।সৌরভ সম্পূর্ন বাসায় ৩০-২০টা বডিগার্ড রেখেছে।তাহার পিছনে পিছনে ২টা ঘুরতেছে।

-‘আহা সবাই বিরিয়ানি খাচ্ছে আর আমি বসে বসে সুপ খাচ্ছি।কি কপাল!’

সন্ধ্যায় তাহা আর সৌরভ আম্মু আব্বুর সাথে ওদের বাসায় আসলো।তাহার রুম সাজানো হয়েছে।সৌরভ মিটমিট করে হাসতে হাসতে রুমে এসে দেখলো তাহা ঘুমে কাতর।এত জেদ উঠলো ওর।তাও কিছু বললো না।
পরেরদিন সকালে
তাহা ওকে ঘুম থেকে তুলে বললো,’নেন আপনার গ্রিন টি”

সৌরভ হাত থেকে নিয়ে ফেলো দিলো।

-‘এমন করলেন কেন?’

-‘আমার ইচ্ছা যাও এখান থেকে’
——
প্রায় ২দিন হয়ে গেলো।এই ২দিন সৌরভ তাহার সাথে খুব বাজে ব্যবহার করেছে।দুদিন হতেই তাহা শশুর বাড়ি আসলো সৌরভের সাথে।
সারাদিনে সৌরভ তাহার সামনেও আসেনি।
বিকালে সৌরভ রুমে আসলো।তাহা ঘুমাচ্ছে,ওর কাছে গেলো সে।এই কদিনে অনেক খারাপ ব্যবহার করেছে সে এই ভেবে তাহার কপালে চুমু এঁকে দিলো।
তাহা জেগে গিয়ে বিছানা থেকে নেমে রুম থেকে চলে গেলো জিসার রুমে। সেখানপ গিয়ে জিসার সাথে শুয়ে পড়লো সে।রাত ৯টায় ঘুম ভাঙ্গতেই টের পেলো প্রচণ্ড মাথা ধরছে।চা খাওয়া দরকার।
আমি তো জিসার রুমে ছিলাম।এখন দেখি শয়তানটার রুমে।কিভাবে এলাম?’

-‘এই নেন চা’

-“না’

-‘খাও’

আচ্ছা মাথা ধরছে দেরি না করে খেয়ে নিলাম
নাহলে খেতাম না।

-‘কাল আমার কিছু বন্ধুরা আসবে ঢাকা থেকে।একটা পার্টি দিব’
——
পরেরদিন সৌরভের ফ্রেন্ডরা আসার পর থেকে পার্টি চলছে।জোরে মিউজিক চলছে।

-‘উফ মাথা ধরছে।ঠান্ডা কিছু খেলে ভালো লাগতো।উনার কিছু মেয়ে বন্ধুও আছে।ওরা দেখি খাচ্ছে।আপু এগুলা কি?

-‘কোকাকোলা’

-‘ওও।তাহলে আমাকে একটা দিন&

-‘ কিন্তুু ম্যাম’

-দিন বলছি’

সৌরভ বন্ধুদের সাথে কথা বলায় বিজি।
তাহা পুরাটা খেয়ে ফেললো।কেমন জানি লাগলো ওর কাছে।ওরে ভাবলো ভালইতো।আরেক গ্লাস খাওয়া উচিত।
এমন করে ৩গ্লাস খেয়ে নিলো।

-‘ওকে গাইস।ওয়েট কর তোরা। আমি আসছি,তাহা কই?
হলে গেলাম,তাহা!!!’

তাহা চরকার মতো পুরা হলে ঘুরছে আর গান গাইছে।
ওকে গিয়ে ধরলো সৌরভ। ওকে মদ খাওয়ালো টা কে?
অদ্ভুত প্রেম♥
Writer-Afnan Lara
[৯]
তাহা সৌরভের হাত ছাড়ছেই নাই

-‘তাহা,ঘুমাবা না?ঘুমাবে চলো’

-‘না।আমার না খুব ভালো লাগছে’

-‘ওহ তাই,তা কেন?’

-‘জানি না।এইইইই’

-‘কি?’

-‘আমাকে ভালোবাসো’

-‘তোমার মাথা ঠিক আছে?’

-‘আমাকে ভালোবাসবা না?ওকে আমি বাসছি’

তাহা এটা বলেই টান দিয়ে ওকে বিছানায় ফেলে দিলো।খপ করে ধরলো এবার।সৌরভ তো পুরাই অবাক।মদের নেশা ভালো করে লাগছে তাহার উপর যা বোঝা গেলো।
একি শার্ট খুলছো কেন’

তাহার অবস্থার অবনতি দেখে সৌরভ ওরে ধরে শুইয়ে দিলো।কাঁথা গায়ে দিয়ে দিলো তারপর।
-‘ওর এই অবস্থায় আমার কিছু করা ঠিক হবে না।পরে চিল্লাইয়া মাথা খাবে।এখনও সুস্থ হয়নি’

-‘ঢং দেখাও?তুমি রোমান্স জানো না বুঝি?এখন আমি করতে চাইতেছি ভাব দেখায়’

-‘ তুমি ভালো হও তখন কেমন?বেশিক্ষন সামলানো যাবে না।হ্যালো সুজন আমার রুমে লেবুর শরবত দুই গ্লাস পাঠাও’
—-
-‘এই নাও খাও’

-‘কি এটা?’

-‘এটা কোকাকোলা’

-‘ওওওও দাও তাহলে।ইশ এতো তিতা কেন?’
—-
তাহাকে সামলিয়ে বন্ধুদের বাই বলে বিদায় দিলো সৌরভ।
পরেরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠার ওর তাহা সব ভুলে গেছে।সৌরভ ও কিছু মনে করায়নি।তাহা আজ মাথার ব্যান্ডেজ খুলে ফেলায় গোসল করলো শান্তিতে।এখন আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল মুছছে।
ওকে যে লাল শাড়ীতে এত মানাবে কখনও ভাবেও নাই সৌরভ দূর থেকে চেয়ে আছে সে।আর থাকতে না পেরে পা টিপে টিপে কাছে এসে খপ করে ধরলো তাহাকে।

-“উফ!অসভ্য’

-‘তো সভ্য করে দাও’

তাহা ওর হাত ধরে কামড় বসিয়ে দিলো।

-‘উফ!!কি বিচ্ছু মাইয়া!’

তাহা এক দৌড়ে রুম থেকে চলে গেলো।

-‘আমার রুমে যেন আর আসবে না,দেখি কতক্ষন না এসে থাকতে পারেন’

-‘আজকে আর রুমে যামু না।শয়তানটা ঘাপটি মেরে বসে আছে।জিসার রুমে যাই বরং।একি সৌরভ দেখি সেখানে,আমি কেটে পড়ি তাহলে।

-‘ঐ তাহা,কই যাও?’

-‘না মানে বাথরুমে। এটা বলেই দৌড় দিলাম’

তাহা রুমে এসে চুল আঁচড়িয়ে আবার বাগানে গিয়ে বসললো।পাশের বাসার আন্টি এসে হাজির।তার নাম মিলি
-‘তো কিছু ভাবছো?’

-‘কি?’

-বেবি কইটা নিবা,?’

-“৩২টা নিবো।ওদের পড়ানোর জন্য একটা স্কুল নির্মাণ করবো’

-‘সৌরভ তোমার বউ দেখি মারাত্মক দুষ্টু’

-‘কেন কি হয়ছে?’

-‘ উনি নাকি ৩২টা বেবি নিবে’

-‘কিহ!!’
—–
-‘সুজন যা যা বলছি মনে আছে?’

-‘ইয়েস স্যার’

তাহা আয়নায় দাঁড়িয়ে দেখছে সে কি সত্যি বেশি চিকন!’
হঠাৎ কিসের যেন আওয়াজ হলো।সে নিচে তাকায় দেখলো একটা সাপ।
-“(আমি ছোট থেকে সাপকে বাঘের চেয়েও বেশি ভয় পাই)
আম্মুউউউউউউউউউ।থুক্কু সৌরররভভভভভ’

কেউ আসছে না দেখে তাহা লাফ দিয়ে বিছানায় উঠে গেলো

-‘কি হয়েছে বিছানায় উঠে দাঁড়িয়ে আছো কেন?’

-‘সসসসসাাাাপপপপপ’

-‘আমি তো দেখি না’

-‘আমি এই রুমে থাকমু না’

-‘তাহলে যাও আরেক রুমে”

-‘বিছানা থেকে নামতে ভয় লাগে,আমাকে কোলে তুলুন।

-‘সিউর?’

-‘হ্যাঁ’

সৌরভ ওকে কোলে তুলে নিলো।-‘এক কাজ হয়েছে।
সাপটা প্লাস্টিকের ছিলো।নেক্সট টার্গেট কাছে আসা।’

[১০]
তাহা কেমন করে যেন সৌরভের কাজটা বুঝে গেলো।শয়তানি বুদ্ধি এঁটে মায়ের ঘরে গেলো সে।

-‘আসবো?’

-‘আরে তাহা য। আসো ভিতরে আসো’

-‘আম্মু আপনার ছেলে শুধু আমাকে দিয়ে কাজ করায়।আমাকে রুম থেকে বের করে দেয়।আমাকে খেতে দেয় না।আমাকে ঝাল খাওয়ায় পানি খেতে দেয়।(আজ শয়তানটা মজা বুঝবে)’

-‘সৌরভ! এদিকে আয় তো’

-‘হ্যাঁ বলো মা।কি হয়েছে?”

-‘তুই তাহাকে এত জ্বালাস কেন?তুই ওরে রুম থেকে বের হতে বলিস ?ওরে দিয়ে কাজ করাস?’

সৌরভ তাহার দিকে একবার তাকিয়ে বললো,’ আর করবো না। এখন যাই।কাজ আছে কিছু’

-“হুহ!!এর পর থেকে আর কিছু করার সাহস পাবে না।’

আম্মুর রুম থেকে বের হওয়ার সাথে সাথে সৌরভ ওর মুখ চেপে ধরে রুমে নিয়ে নিয়ে দরজা লক করে দিলো ভেতর থেকে

-‘আমি বিচার দিই নাই সিরিয়াসলি।আম্মু তো দেখে তাই না?’

-‘আমি তোমাকে দিয়ে কাজ করাই?ওকে আসো আমার পা টিপো’

-‘না,শখ কতো’

-‘বেশি কথা কইলে ৩২টা বেবির মা হবার কাজ সহজ করে দিবো’

-‘এইতো পা টিপতেছি’
——
২বছর পর
সৌরভ হসপিটালের বাইরে দাঁড়িয়ে আছি।তাহা ভেতরে।

-‘আমার তাহা মা হতে চলেছে আর আমি বাবা।
সবাই টেনশনে আছে।আমরা আপাতত আমেরিকাতে।
২বছরে তাহাকে নিয়ে আমার কতো কাঠখড় যে পুড়াইতে হয়েছিলো।একটা মেয়েই বটে।শেষে জোর করতে হয়েছিলো।সে কি কান্না ১মাস ধরে খালি কান্না করে আমার মাথা খায়ছে।এবার বাবু আইসা বাকিটা খাইবো।
এই দুবছরে আল্লাহর রহমতে আমাদের বড় কোনো বিপদ হয় নি।কি ভাবে কেটে গেলো বুঝতেই পারিনি।
আমেরিকাতে ওকে আনতে সে কি কষ্ট।গড়িয়ে গড়িয়ে কান্না করছে ওর মা বাবা ছাড়া আসবে না।পরে উনাদের ও নিয়ে আসি।তার পর ম্যাডাম ঠান্ডা হন।হসপিটালে যাওয়ার আগে আমার হাত ধরে বলেছে সে আমায় ভালোবাসে। বিয়ের পরে এই প্রথম ওর মুখ থেকে কথাটা শুনলাম।আর বলল আমি বাঁচতে চাই।এত তাড়াতাড়ি সবাইকে ছেড়ে যেতে চাই না।কিছুক্ষণ পর ডাক্তার আসলো

-‘কি হলো? ‘

-‘অভিনন্দন! আপনাদের ১টা নয়, ২টা নয়, ৩টা বেবি হয়েছে।যা কোটিতে একবার হয়,’

-‘আর আমার তাহা?’

-‘উনিও ভালো আছেন’

সবাইতো খুশিতে আটখানা।সৌরভ তার ৩টা বাবুকে কোলে নিলো।সব গুলা ওর মতন হয়েছে।২টা ছেলে,আর একটা মেয়ে।তাহা দেখলে খুশিতে লাফাবে,এসব ভেবে ওর কাছে গেলাম।এতো খুশি লাগছে বুঝাতে পারবো না।
৮মাস পর💜
পাশের বাসার একটা কাপলের ও একই দিনে ছেলে হয়েছিলো
-‘তো উনাদের বেবি, আমার ৩টা বেবির সাথে বসিয়ে আমরা কথা বলছিলাম।’
তাহা চেঁচিয়ে বললো,’এই পোলা তুই আমার মেয়েকে খালি ঠেলা মারস কা?একটা থাবড় দিয়ে দাঁত ফালায় দিবো’

-‘What Are you saying? ‘

-“তোর মন্ডু’

-‘প্রেস্টিজ পানিতে ঢুবাইবা?’

-‘ওহহহ।ঠিক আছে।কিছু না ম্যাম।এই তুমি দেখো না আমার মেয়েকে টাচ করছিল?’

-‘তো কিছে?কিস তো করে নাই’

-‘কিইইই!কিস করলে একদম ঠোঁট কেটে দিব”

-‘আল্লাহ বাঁচাইছে উনারা আমাদের ভাষা বুঝেন না।নইলে গিয়ে কেস করে আসতো’
—-
দুপুরে💜
-‘সৌরভ তুমি এখানে দাঁড়িয়ে থাকো।আমি একটা একটা করে গোসল করাবো আর তোমার হাতে দিবো’
সারিফ বাবু,আমার ধলা বাবু।নাও আব্বুর কোলে যাও।
সামি বাবু,আমার কলিজা,যাও আব্বুর কোলে যাও,
আমার সিন্তিয়া মামুনি,যাও আব্বুর কোলে যাও

-‘তাহা! কি খাওয়াও ওদের,ভারী’

-‘বেশি কি খাওয়াই?সকালে সেরেলাক,খিচুড়ি,জুস,দুপুরে ভাত ডাল জুস সেরেলাক,রাতে জুস ডাল চেরেলাক।একদম আমর বেবিদের খাওয়ার খোঁটা দিবা না,তোমার দোষে এতগুলা হয়ছে,আমি কি কিছু করসি?’

-‘২১ঘন্টা আমি কোলে রাখি’

-‘ওদের খাবার তুমি রেডি করো?’

-‘না মানে”

-‘তাইলে চুপ”
——-
-‘৩টাকে মানুষ করতে আমার যে কি হাল হয়েছিলো।তার উপর তাহা হলো আরো বাচ্চা।
আর বেবি নি নাই,এদের পিছনেই দিন গেছে,
একটা রাত ও ঘুমাতে পারতাম না ওদের চিৎকারে,তাহা মরার মতো ঘুমিয়ে থাকতো,মাঝে মাঝে উঠে নেপি পাল্টাতো ওদের।
সুখ,দুঃখ, ঝগড়া সব মিলিয়ে আমাদের দিন চলতে লাগলো।তাহা এখন ওর জীবনের চাইতেও আমাকে বেশি ভালোবাসে,হয়তো এর চেয়ে বড় পাওনা আর কিছুই নেই
💘💘💘💘💘💘💘সমাপ্ত💘💘💘💘💘💘💘