Thursday, July 17, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1377



শ্রাবণ দিনের বৃষ্টিতে পর্ব-১০

0

#শ্রাবণ_দিনের_বৃষ্টিতে
#পার্ট_১০
#Writer_Liza_moni

আইসিইউতে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে দীপ্ত। হাসপাতালের করিডোরে মরা কান্না কাঁদছে দীপ্তর মা। দীপ্তর মাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করছে দীপ্তর হবু বউ জয়শ্রী।
মর্গের কোনো এক বেডে নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে আছে হিতৈষী। দীপ্তর ভাই দীপু আয়রাকে ফোন করে জানাল সবটা।রাত প্রায় নয়টার কাছাকাছি। অনেক সময় হয়ে যাওয়ার পর ও যখন দীপ্ত বাড়ি ফিরে আসেনি তখন দীপু তার ফ্রেন্ডদের কে নিয়ে হিতৈষীদের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।মাঝ রাস্তায় পড়ে থাকা রক্তাক্ত দীপ্ত আর হিতৈষী কে দেখে আপনা আপনি চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়লো।

আয়রার কানে যখন গিয়েছিল কথাটা যে হিতৈষী আর দীপ্তর খুব খারাপ ভাবে এক্সিডেন্ট হয়। আয়রার হাত থেকে মোবাইল পড়ে যায়।

আয়রা, আয়রার মা আর প্রান্ত কে নিয়ে হসপিটালে আসে। আয়রার মা পাগলের মতো দীপুর কাঁধ ঝাঁকিয়ে বলে,,

আমার মেয়ে কোথায়? আমার হিতৈষী কোথায় ? আমার হিতৈষী ঠিক আছে তো?

দীপু চুপ করে রইলো।

কী হলো দীপু দা। আপনি চুপ করে আছেন কেন? আমার আপু কোথায়? দীপ্ত দা কোথায়?

দীপ্ত দা আইসিইউতে।আর হিতৈষী দি,,,

হিতৈষী দি,,কী দীপু দা,,?

হিতৈষী দি আর আমাদের মাঝে নেই আয়রা।

আয়রার মায়ের বুকের উপর যেনো কেউ পাথর দিয়ে চাপা দিয়েছে। তিনি শ্বাস নিতে ভুলে গেছেন।

আয়রা কয়েক পা পিছিয়ে গেল।প্রান্ত স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইল।কী শুনলো সে?
প্রথম দেখায় যে মেয়েটাকে তার ভালো লেগে গিয়েছিল। সেই মেয়েটা কিনা আর এই পৃথিবীতে নেই।

আয়রার মা আয়রার কাঁধ ঝাঁকিয়ে বললো,,,
এই ছেলে মিথ্যা কথা বলছে তাই না। আমার হিতুর কিচ্ছু হয়নি। আমার হিতু ঠিক আছে। আমার হিতৈষী কখনো আমাদের ছেড়ে যেতে পারে না।

আয়রা মাকে বুকের মাঝে আগলে ধরলো। কথা বলার শক্তি পাচ্ছে না সে। চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়ছে। বুকের ভেতরটা ছিঁড়ে যাচ্ছে।

আইসিইউ থেকে ডাক্তার বের হয়ে সবার উদ্দেশ্যে বললো,,
আই এম সরি। পেশেন্ট কে আমরা অনেক চেষ্টা করেও বাঁচাতে পারিনি।

মুহূর্তের মধ্যে সবাই কান্নায় ভেঙে পড়ে। দীপ্ত কে নিয়ে গিয়ে হিতৈষীর পাশে রাখা হয়। দুই জন খুব শান্তিতে ঘুমাচ্ছে।তারা কত লাকি। প্রিয়জন হারিয়ে জীবন্ত লাশ হয়ে বেঁচে থাকার চেয়ে দুই জন একসাথে সত্যি সত্যি লাশ হয়ে গেল।উপরে গিয়ে নিজেদের মতো থাকবে তারা। তাদের কে আর কেউ চাইলে ও আলাদা করতে পারবে না।

হিতৈষীর দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আয়রা। হিতৈষীর লাশ দেখে জ্ঞান হারায় আয়রার মা।প্রান্ত দীপ্ত আর হিতৈষীর দিকে তাকিয়ে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বললো,, কয়জনের ভাগ্যে জোটে ভালোবাসার মানুষটার সাথে এক সাথে মরার?

অল্প শোকে কাতর আর অধিক শোকে পাথর।কথাটা যেনো আয়রার সাথে মিলে গেছে। কাঁপা কাঁপা হাতে হিতৈষীর মুখে হাত বুলিয়ে দিয়ে মিনমিনে গলায় বললো,,,
এত স্বার্থপর কেন রে তুই আপু?আমরা তোকে কতটা ভালোবাসি তুই জানতি না? আমাদের ছেড়ে যেতে তোর একটুও কী কষ্ট হয়নি? তুই এত পর ভাবতি আমাদের?এত তাড়াতাড়ি কেন চলে গেলি আমাদের ছেড়ে?আজ আবার আয়জা আপুর মৃত্যুর কথা মনে পড়ে গেল। আমার মা যে মরে যাবে হিতৈষী আপু। আমার মা যে তোকে খুব ভালোবাসে।উঠ না আপু।এই আপু উঠ না। আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে। আমি এখন কার সাথে ঝগড়া করবো?এই হিতৈষীর আপু উঠনা?বোন উঠনা। তোর কিচ্ছু হয়নি। তুই একদম ঠিক আছিস। তুই এত তাড়াতাড়ি মরতে পারিস না।
বলতে বলতে হিতৈষীর লাশকে বুকের মাঝে জড়িয়ে
ধরে চিৎকার করে কান্না করে দিল আয়রা।

দীপ্তর মা বলে উঠলো,,
আমার দোষ।সব দোষ আমার। আমি যদি ওদের সম্পর্ক মেনে নিতাম তাহলে আজ আর আমাকে আমার ছেলে হারাতে হতো না। আমার দীপ্ত সোনা উঠ না বাবা। আমি তোদের সম্পর্কে আর বাঁধা দিবো না। আমি দিব্বি ফিরিয়ে নিলাম।

আয়রা হিতৈষীকে শুয়ে দিয়ে দীপ্তর মাকে বললো,,
এখন কেন সম্পর্ক মেনে নিবেন? এখন কেন দিব্বি তুলে নিচ্ছেন? আমার বোন তো এতিম তাই না?আমরা ওর কিছু না।ওরা আর ফিরে আসবে না দেখে এখন নাটক করছেন আপনি? আপনি হ্যাঁ আপনি আমার বোনকে মেরে ফেলেছেন।যদি না আপনি দীপ্ত দার সাথে অন্য কারো বিয়ে ঠিক করতেন তাহলে আজ শেষ বারের মতো তাড়া দেখা করতে যেতো না।আর না আমার বোনটা,,,,,
আয়রা কান্না করে দিল।
.
.
চিটাগাং থেকে ফিরে এসে যে হিতৈষীর মরা মুখ দেখতে হবে তা ভুলেও কল্পনা করননি আয়রার বাবা।

আয়রার বাবাকে দেখে আয়রার মা ছুটে গিয়ে জড়িয়ে ধরে বললো,, আমার আয়জার মতো আমার হিতৈষী ও চলে গেলো। আমার কলিজা টা ছিঁড়ে যাচ্ছে।

ড্রইং রুমের ফ্লোরে শুইয়ে রাখা হয়েছে হিতৈষীর লাশ।ঘর ভর্তি মানুষ। হিতৈষীর পাশে পাথরের মত শক্ত হয়ে বসে আছে আয়রা। সোফায় মাথায় হাত দিয়ে চোখ বন্ধ করে বসে আছে প্রান্ত। এখন সকাল ৬টা বাজে।এত সকালে ও অনেক মানুষ এসে ভীড় জমিয়েছে আয়রাদের বাড়িতে।

আয়রার চোখ থেকে এক ফোঁটা ও পানি পড়ছে না। কেমন চুপ হয়ে গেছে।সব কিছু শান্ত চোখে দেখছে।

আয়রার বাবা কাঁপা কাঁপা পায়ে হেঁটে এসে হিতৈষীর পাশে এসে বসলো। চিটাগাং যাওয়ার সময় হিতৈষী আবদার করেছিল।তার জন্য যে সুন্দর দেখে পায়েল নিয়ে আসে।বাবা পকেট থেকে দুই জোড়া পায়েল বের করলেন।এক জোড়া রেখে আরেক জোড়া খুব যত্ন করে হিতৈষীর পায়ে পড়িয়ে দিলেন।

মেয়েটা ঘুমিয়ে আছে। পরিবারের সবাই যেনো পাথর হয়ে গেছে। হিতৈষী যে এত তাড়াতাড়ি তাদের ছেড়ে তার নিজের মা বাবার কাছে চলে যাবে তা ভাবতে ও পারেননি তারা।
আজ আবারো সেই পুরনো ক্ষত তাজা হলো। আজ আয়জার মৃত্যু বার্ষিকী ছিল।আর আজই হিতৈষীকে চির বিদায় দিতে হবে।
.
.
বাইরে ঝুম বৃষ্টি পড়ছে। মেঘের গর্জনে চার পাশ মুখরিত। আয়রার গাছের ফুল গুলো কেমন সতেজতা হারিয়ে নুয়ে পড়ছে।

আয়রার বাবা কিছু মুরব্বির সাথে কথা বলছেন। হিতৈষী কে কবর দেওয়া হবে নাকি দাহ করা হবে?

একজন মুরব্বি বলে উঠলো,,
মেয়েটা যখন ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেনি তখন তাকে কবর দেওয়ার প্রশ্নই আসে না।ওকে ওর ধর্মের নিয়ম মোতাবেক দাহ করা উচিত।

হ্যাঁ ঠিক বলেছেন।যদি মেয়েটা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করতো তাহলে অবশ্যই তাকে দাফন করা হতো।

সবার যুক্তি শুনে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো যে বৃষ্টি থামলে হিতৈষী কে শ্মশানে নিয়ে যাওয়া হবে। এবং তাকে দাহ করা হবে।

আয়রার মা এই পর্যন্ত চার বার জ্ঞান হারিয়েছে।ডাক্তার এনে তাকে ঘুমের ইনজেকশন পুশ করে দেওয়া হয়েছে। না হলে হিতে বিপরীত হতে পারে। অতিরিক্ত শোক সহ্য করতে না পেরে তিনি স্টোর্ক ও করতে পারেন।

.
.
বেলা প্রায় ১১টা।এখনো বৃষ্টি থামার নাম নেই। আকাশ ও যেনো কান্না করছে। প্রকৃতি যেনো হাসছে।চার দিকে সতেজতা বিরাজ করছে। হিতৈষীকে শ্মশানে নিয়ে যাওয়ার জন্য তৈরি করা হয়ে গেছে। এখন শুধু বৃষ্টি থামার অপেক্ষা।

আয়রার কেন জানি মনে হচ্ছে,,
হিতৈষী আর দীপ্ত হাসছে খুব।তারা যেনো অনেক খুশি।

হিতৈষী কে এখন আর কেউ এতিম বলার সাহস পাবে না।কারন সে এখন তার পরিবারের কাছে চলে গেছে। এখন আর সে এতিম না।কারো আশ্রয়ে আর তাকে থাকতে হবে না।

প্রায় সাড়ে ১১টার দিকে বৃষ্টি পড়া বন্ধ হয়। হিতৈষী কে নিয়ে যাওয়ার সময় আয়রা হিতৈষীর লাশ বুকের মাঝে জড়িয়ে ধরে হু হু করে কেঁদে উঠে। আয়রার মাকে ঘুমের ইনজেকশন পুশ করে ঘুম পারিয়ে রাখার ফলে তিনি শেষ বারের মত আর হিতৈষী কে দেখতে পায়নি।
.
.
রাত অনেক হয়েছে। আয়রা নিজেকে রুমের মধ্যে বন্ধি করে রেখেছে। কিছু ভালো লাগছে না তার। হিতৈষীর কথা মনে পড়লেই চোখ থেকে আপনা আপনি পানি গড়িয়ে পড়ছে।
জন্ম যখন নিয়েছো।মরতে তো এক দিন হবেই।

এই তো বছর ছয় এক আগেই এলি
বর্ষার মাঝে,,,
আবার চলেও গেলি
শ্রাবণ দিনের বৃষ্টিতে,,,,
পরপারে ভালো থাকিস তোর পরিবারের সাথে। দীপ্ত দার সাথে।ভালো থাকিস পোড়া মুখী।হত ভাগী। স্বার্থপর হিতৈষী।

চলবে,,,, 🍁

শ্রাবণ দিনের বৃষ্টিতে পর্ব-০৯

0

#শ্রাবণ_দিনের_বৃষ্টিতে
#পার্ট_৯
#Writer_Liza_moni

বুঝলে প্রিয়,,
তোমাকে আমার অনেক কিছু বলা বাকি। কিন্তু আমার মুখ দিয়ে সেই অব্যক্ত কথা গুলো বের হচ্ছে না। আমার ভেতরটা জ্বলে পুড়ে ছারখার হয়ে যাচ্ছে। এই শ্রাবণ দিনের বৃষ্টিতে ভিজে ও আমার মনের আগুন নিভাতে পারছি না। আমি কী করে থাকবো ?বলে দাও?

দীপ্তর চোখের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বললো কথা গুলো হিতৈষী। বৃষ্টির পানিতে ভিজে গেছে দুই জন।প্রায় ঘন্টা খানেক হবে বৃষ্টিতে ভিজছে তারা। মনের মধ্যে বিন্দু মাত্র শান্তি নেই।

দীপ্ত হিতৈষীর হাত ধরে টান মেরে নিজের কাছে নিয়ে এসে বললো,,,
আর কত বৃষ্টিতে ভিজবা?
জ্বর আসবে যে।

হিতৈষী কাটকাট গলায় বললো,,
আসুক।

পাগলামি করে না হিতৈষী।চলো তোমাকে তোমার বাড়িতে ফিরিয়ে দিয়ে আসি।

না। আমি এখন বাড়িতে যাবো না।

তুমি এখন মাইর খাবা কিন্তু।

হিতৈষী দীপ্তর চোখের দিকে তাকিয়ে বললো,,
হুম মারো না।মেরে আমাকে শেষ করে ফেলো। আমি তো এমনিতেই মরে যাচ্ছি।
.
.
এই দিকে বৃষ্টির জন্য ক্যান্টিন থেকে বের হতে পারছে না, আয়রা,প্রান্ত আর রাহুল।

বলদ মার্কা পোলামান।
এই শ্রাবণ দিনের বৃষ্টিতে কেউ ঘুরতে আসে?
বিরক্ত হয়ে বললো রাহুল।

আয়রা গালে হাত দিয়ে বসে আছে।আর বাইরের বৃষ্টি দেখছে।

প্রান্তর কোনো ভাবান্তর নেই।সেই মোবাইলের স্ক্রিনে তাকিয়ে আছে।যেনো বহু বছর ধরে সে মোবাইল ধরে ও দেখে নাই।

রাহুল ওদের দুজনের দিকে তাকিয়ে বললো,,এই তোমাদের আর আজকে ঘুরা ঘুরি হবে না।সেই কখন থেকে বৃষ্টি পড়ছে। থামার নাম নেই।

এই আয়রা শুনো ,,এমন বৃষ্টির দিনে কেউ ঘুরতে আসে? বৃষ্টির দিন চলে গেলে আসিও। এখন তো বাড়ি ফিরতে হবে।

আয়রা রাহুলের দিকে তাকিয়ে বললো,,
আমি কিছু বলিনি।আসতে ও চাইনি। আম্মুই তো প্রান্ত ভাইয়ার সাথে আসতে বললো।

প্রান্ত ভাইয়া মানে?

আয়রার হুঁশ আসলো।প্রান্ত কে ভাইয়া বলে ফেলছে সে।
না আসলে উনাকে বিয়ের আগে ভাইয়া ডাকতাম তো তাই মুখ ফসকে ভাইয়া বেরিয়ে গেল।

প্রান্ত বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। মোবাইল পকেটে ঢুকিয়ে বাইরে চলে গেল। আয়রা রাহুল ও গেল পেছন পেছন।

বৃষ্টি পড়া বন্ধ হয়েছে। আয়রা বাইরে এসে প্রান ভরে একটা নিঃশ্বাস নিলো। ভেজা মাটির গন্ধ এক অদ্ভুত ভালো লাগে আয়রার।

আর্মিদের ক্যান্টিনের পাশে লাগানো রন্ধন ফুল গুলো কে খুব তরতাজা লাগছে। আয়রা ড্যাব ড্যাব করে সেই ফুল গুলো দেখছে।থোকা থোকা ফুল গুলো বেশ সুন্দর লাগছে আয়রার কাছে।হাত দিয়ে ছুয়ে দিতে ও মন চাইছে।

রাহুল আর প্রান্ত পেছনে তাকিয়ে দেখে আয়রা ক্যান্টিনের সামনে দাঁড়িয়ে ফুল গুলোর দিকে তাকিয়ে আছে।

এই আয়রা।আসো। বৃষ্টি আসবে আবার।

রাহুলের কথায় আয়রা মুচকি হেসে ওদের দিকে এগিয়ে গেল।

রাস্তার পাশে এসে দাঁড়াল ওরা।প্রান্ত আর আয়রাকে গাড়িতে উঠিয়ে দিয়ে ফোঁস করে একটা নিঃশ্বাস ছাড়লো রাহুল।
.
.
বৃষ্টি থেমেছে।চলো বাড়িতে পৌঁছে দি তোমাকে।

হিতৈষী শান্ত চোখে তাকালো দীপ্তর দিকে।আজ চলে গেলে আর কখনো তাদের দেখা হবে না।এমনটাই মনে হচ্ছে হিতৈষীর। কেমন কুঁ গাইছে মনটা।

দীপ্তর মোটর সাইকেল নিয়েই এসে ছিল। এক ভাই তার কাছ থেকে আবার নিয়ে যায়। দীপ্ত পকেট থেকে মোবাইল বের করে দেখে মোবাইল ভিজে শেষ।পানি ঢুকে গেছে।

ওহ শিট। তোমার মোবাইল একটু দাও তো হিতৈষী।

হিতৈষীর কাছে ব্যাগ থাকায় ব্যাগ ভিজলে ও মোবাইল ভিজেনি। হিতৈষী চুপচাপ ব্যাগ থেকে মোবাইল বের করে দীপ্তর হাতে দিল।

দীপ্ত বাড়িতে ফোন করে বললো,,ওর বাইকটা যেনো পাঠিয়ে দেওয়া হয়। জেলা পরিষদের ওখানে অপেক্ষা করছে সে।

হিতৈষীর গা কাঁপছে ঠান্ডায়। কিছুক্ষণ পর পর হাঁচি দিচ্ছে সে। দীপ্ত হিতৈষীর দিকে তাকিয়ে বললো,,যাও ভিজো আরো বেশি করে। বলেছিলাম না আমি ঠান্ডা লাগবে।

ঠান্ডা লাগলে আর কিই বা হবে?মরে তো আর যাবো না। মনের যে যন্ত্রনা হচ্ছে তার থেকে জ্বর টর কিছুই বেশি না।

হিতৈষীর কন্ঠে অভিমান। অভিমান করেই বা কি হবে? দীপ্তর জীবন থেকে তো তাকে যেতেই হবে।
.
.
এই যে মিস্টার,,

কী হইছে?আর এই যে শুনছেন,এই যে মিস্টার,,এই সব বলে কেন ডাকছো আমাকে তুমি পিচ্চি?

তো কী আপনাকে নাম ধরে ডাকবো?

ভাইয়া। শুধুই ভাইয়া বলে ডাকবা।

এ্যাঁহ আইছে।ক্রাশ রে নাকি আমি ভাইয়া বলে ডেকে সব পানিতে ডুবাবো। ভাইয়া বলে ডাকার জন্য কি রাহুলের সামনে জামাইয়ের পরিচয় দিছি?
বিড়বিড় করে বললো আয়রা।

কী বিড়বিড় করো,,?
বলতে না বলতে আয়রা গিয়ে পড়লো প্রান্তর ঘাড়ের উপর।গাড়ি মোড় নিচ্ছিলো তখন। আয়রার ঠোঁট গুলো প্রান্তর ঘাড় ছুঁয়ে দেয়।

থমকে যায় প্রান্ত। কেমন জানি অসস্থি লাগছে আয়রার। বাসের ড্রাইবার কে ইচ্ছে মতো মনে মনে ঝাড়লো আয়রা।

প্রান্তর দিকে তাকিয়ে বললো সরি।

প্রান্ত সাদাসিধে ভাবে বললো কেনো?

তখন এর জন্য।বাস মোড় নিচ্ছিলো,,,তাই,,,, ভুলে,,,সরি,,,

কেন কিছু হয়েছিল নাকি?
ভ্রু কুঁচকে বললো প্রান্ত।

আয়রা আর কথা বাড়ালো না। চুপ করে জানালার বাইরে তাকিয়ে রইলো।
ভয়ে বুক ধড়ফড় করছে।উফফফ,,,,

প্রান্ত মনে মনে শয়তানি হাসলো।
.
.
দীপ্ত আর হিতৈষী কে এক সাথে দেখে ভ্রু কুঁচকে দীপ্তর ছোট ভাই দীপু বললো,,
মা যদি জানতে পারে তুমি হিতৈষী দিদির সাথে আছো,, তাহলে কি হবে জানো দাদা?

দীপ্ত দীপুর কাছ থেকে বাইকের চাবি নিয়ে দীপুর পিঠ চাপড়ে বললো,, তুই না বললেই হলো।আজ আমাদের শেষ দেখা।এর পর আর আমাদের এক সাথে কখনো দেখবি না।

দীপু আর কিছু বললো না।আর কেউ বুঝুক আর না বুঝুক সে খুব ভালো করেই বুঝতে পারছে,, দীপ্ত আর হিতৈষীর মনে কী ঝড় বয়ে যাচ্ছে।

দীপ্ত মোটর সাইকেলে বসে স্টার্ট দিয়ে হিতৈষীর দিকে তাকালো।
আসো।

হিতৈষী গিয়ে বসলো। দীপ্ত বাইক চালিয়ে যাবার সময় দীপুর উদ্দেশ্যে বললো,,,
এত সময় ধরে যা দেখেছিস সব ভুলে গিয়ে বাড়ি যা।
.
.
আঁকা বাকা পাহাড়ি রাস্তায় বাইক চালাচ্ছে দীপ্ত। হিতৈষী দীপ্তর কাঁধে হাত রেখে বসে আছে।

আমাদের কি সত্যি দেখা হবে না আর?

জানি না হিতৈষী। সৃষ্টিকর্তা যদি চান তাহলে হয়তো হবে।

আবারও বৃষ্টি পড়া শুরু করে দিল।
কী অদ্ভুত আজকের দিন। কেমন জানি।

আমি তো বিয়ে করে নিবো। মায়ের জন্য। তুমি বিয়ে করবে কবে?

মন থেকে যে দিন তুমি মুছে যাবে।

দীপ্তর বুকের মাঝে ধক করে উঠলো।প্রিয় মানুষটার মন থেকে মুছে যাবে সে,,
মোড় ঘুরতে গেলেই বাইকটা এক্সিডেন্ট হয়। হিতৈষী বাইক থেকে ছিটকে একটা পাথরের উপর গিয়ে পড়ে। মাথাটা পাথরের উপর পড়তেই রক্তে ভিজে যায় চার দিক। দীপ্তর গায়ের উপর বাইক পড়ে। অনেক কষ্টে বাইকের নিচ থেকে শরীরটাকে বের করে হিতৈষীর কাছে এগিয়ে যায়। বৃষ্টিতে রক্ত ধুয়ে যাচ্ছে। রাস্তার পাশে জমা পানি গুলো রক্ত মিশে কেমন জানি হয়ে গেছে।

হিতৈষী ঘোর লাগা চোখে দীপ্তর দিকে তাকিয়ে হাত বাড়িয়ে দিলো।দীপ্তর অবস্থা ও খুব একটা ভালো না। হিতৈষীর প্রান পাখি সেই জায়গায় উড়ে যায়। দীপ্ত হিতৈষীর পাশে এসে জ্ঞান হারায়। বৃষ্টি পড়ছে খুব।ভীজছে আবারো একসাথে দীপ্ত আর হিতৈষী। তফাৎ হলো হিতৈষীর প্রানহীন দেহ ভীজছে আর দীপ্তর জ্ঞানহীন দেহ।
.
.
হঠাৎ করে আয়রার মায়ের বুকের ভেতরটা ছ্যাত করে উঠলো। কেমন জানি লাগছে তার।মনে হচ্ছে কিছু একটা হয়েছে। খারাপ কিছু।

তিনি কাঁপা হাতে মোবাইল নিয়ে আয়রার বাবাকে কল করলেন।তার সাথে কথা বলে জানলেন তিনি ঠিক আছে। তারপর আয়রার কাছে কল করলেন,,,

আয়রা জানালো তারা গাড়িতে।ফিরে আসছে। একদম ঠিক আছে।

হিতৈষী কোথায়?ও ঠিক আছে তো?

আয়রার ও কেমন জানি লাগছে।মাকে শান্তনা দিতে বললো,,
হ্যাঁ আপু ঠিক আছে। আমরা আসছি।

আয়রা কল কেটে দিয়ে হিতৈষীকে ফোন করলো। না অনেক বার ফোন করার পর ও হিতৈষী ফোন রিসিভ করে নাই। আয়রার বুকের মাঝে ধক করে উঠলো। হিতৈষী ঠিক আছে তো?মনটা কেমন জানি অস্থির অস্থির লাগছে।

আয়রার কথা শুনে ও শান্তি লাগছে না আয়রার মায়ের। আয়জার মৃত্যুর পর হিতৈষীকে আয়জার মত করে ভালোবাসেন তারা। মেয়ে টা ঠিক আছে তো?

চলবে,,,, 🍁

শ্রাবণ দিনের বৃষ্টিতে পর্ব-০৮

0

#শ্রাবণ_দিনের_বৃষ্টিতে🖤
#পার্ট_৮
#Writer_Liza_moni

দুজন দুজনকে ভালোবাসে।এর থেকে সুন্দর আর কী হতে পারে? সম্পর্ক কখনো এক তরফা টিকিয়ে রাখা যায় না।এক জন ভালোবাসলো মন উজাড় করে আরেক জন সেই ভালোবাসাকে পাত্তাই দিল না। তখন মিছে মিছে একতরফা সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করা বোকামি ছাড়া আর কিছুই নয়।
আর যখন দুই জন মানুষ একে অপরকে পাগলের মতো ভালোবাসে তখন পরিবার নামক এক মায়াজাল এসে সেই সম্পর্ক ভেঙে দিয়ে যায়। অদ্ভুত এই ধরনির অদ্ভুত সব রিতী।

দীপ্তর চোখের পানি হিতৈষীর কাঁধে পড়ছে।আর হিতৈষীর চোখের পানি পড়ছে দীপ্তর শার্টে।

এইখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কী সিনেমা দেখানো হচ্ছে? অসভ্য ছেলে মেয়ে।

মধ্যে বয়স্ক এক লোকের কথায় দীপ্ত হিতৈষীকে ছেড়ে দিল। পকেট থেকে রুমাল বের করে চোখের পানি মুছে নিল। শান্ত চোখে লোকটার দিকে তাকালো দীপ্ত। তার এখন বলতে ইচ্ছে করছে ভীষণ,,,

প্রিয় মানুষটাকে হারিয়ে ফেলার কষ্টটা আপনি বুঝবেন না। আমার এত বছরের ভালোবাসা আজ আমি কবর দিয়ে যাচ্ছি।কতটা কষ্ট হচ্ছে বুকের বাঁ পাশে আপনি বুঝবেন না। শেষ একটা বার আমার হিতৈষীকে জড়িয়ে ধরার মাঝে শান্তি খুঁজে নিয়েছি।

কিন্তু মুখে কিছু বললো না দীপ্ত। হিতৈষীর দিকে তাকিয়ে দেখলো হিতৈষী মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।
দীপ্ত হিতৈষীর এক হাত ধরে টেনে নিয়ে গেল সামনের একটা নিরিবিলি জায়গায়।আজ সারাটা দিন হিতৈষীকে দিবে সে। শেষ বার হিতৈষীকে নিয়ে সারাদিন কাটাবে। কাজ,কাম আজ গোল্লায় যাক।

দীপ্তর দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে হিতৈষী। কষ্ট আর ও বাড়াতে চাচ্ছে না কমাতে?
.
.
ক্যান্টিনে বসে বসে সুন্দর সুন্দর আর্মিদের কে দেখছে আয়রা। এখন ওর কোনো কাজ নেই ।তাই এই কাজটাই বেঁচে নিলো।

সুন্দর হ্যান্ডসাম আর্মি দেখে আয়রা ঢং করে প্রান্ত কে বললো,,
দেখুন কত্ত কিউট আর্মি রসগোল্লা। আবার আফসোসের স্বরে বললো,,কিন্তু এই গুলো সব অন্যের জামাই। আমার জামাইটা যে কিসের পিঠে চড়ে আসতেছে কে জানে।

প্রান্ত ভ্রু কুঁচকে আয়রার দিকে তাকিয়ে আছে। সিরিয়াসলি মেয়েটা অদ্ভুত। হঠাৎ চুপ হয়ে যায়। আবার হঠাৎই এক ঝুড়ি কথা কুড়ায়।

আয়রার খুব ক্ষিদা লাগছে।হাতে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে বেলা ১টা। দুপুর হয়ে গেছে। আকাশ মেঘলা বলে বোঝা যাচ্ছে না। কেমন সকাল সকাল লাগছে।

এই যে বুইড়া দাদু শুনছেন,,

প্রান্ত আয়রার দিকে তাকিয়ে বললো,, বুইড়া দাদু ডাকবা না একদম। পিচ্চি মেয়ে।

আয়রা চোখ ছোট ছোট করে তাকালো। প্রান্তর দিকে আঙুল তুলে দাঁতে দাঁত চেপে বললো,,
আমাকে পিচ্চি বলবেন না।তা না হলে ভয়ংকর নাম দিবো আপনাকে।

প্রান্ত মুচকি হেসে আয়রার আঙ্গুল ধরে টান মারে।তার ফলে আয়রার কিছুটা প্রান্তর দিকে ঝুঁকে পড়ল।
প্রান্ত মুখটাকে আয়রার একটু কাছে নিয়ে গিয়ে বললো,,
সিরিয়াসলি পিচ্চি, তোমার সব ভয়ঙ্কর নাম শুনতে চাই আমি।বলো,,,

আয়রা ঠিক হয়ে বসে একটা ঢোক গিললো।প্রান্ত ঠোঁট কামড়ে হাসলো। সোজা হয়ে বসে মোবাইলে মনোযোগ দিলো।

আয়রার খুব ক্ষিদা লাগছে।
এই যে শুনছেন,,,,

প্রান্ত শুনে ও না শোনার ভান করলো।

অদ্ভুত তো।এই লোকের কানে সমস্যা আছে নাকি?
আয়রার একটু জোরেই বললো,,এই যে মিস্টার শুনেন,,,

প্রান্ত বিরক্ত হয়ে তাকালো।
তুমি জানো না আর্মিদের এখানে শৃঙ্খলা বজায় রাখতে হয়‌।এত জোরে ডাকছো কেন?

আজব। আপনি নিজেই তো কানে শুনতে পাচ্ছেন না!যার জন্য একটু জোরে বললাম।

আচ্ছা বাদ দাও।

নিজের বেলায় বাদ দাও, হুঁ 😏।বিড়বিড়িয়ে বললো আয়রা।

কী হয়েছে ?

ক্ষিদা লাগছে আমার। রাহুলের বাচ্চা যে গেছে আসার নাম নাই।লেট লতিফ একটা।

রাহুলের নাম নিতে না নিতেই রাহুল এসে হাজির।
রাহুল কে দেখে প্রান্ত শয়তানি হেসে বললো,,
আপনার বোনের ক্ষিদা লাগছে।

রাহুল চেয়ার টেনে বসে আয়রার দিকে তাকিয়ে বললো,,
ক্ষিদা লাগছে বনু?

আয়রা উপর নিচ মাথা নাড়িয়ে সায় দিল।

প্রান্তর দিকে তাকিয়ে আয়রার উদ্দেশ্যে বললো,,

কেমন ছেলে বিয়ে করেছো বোন? তোমাকে খাওয়ানোর কোনো খবর নেই।

রাহুলের চোখে দুষ্টুমি দেখে প্রান্ত নিঃশব্দে হাসলো।

সবই কপাল বুঝলেন রাহুল ভাই।

রাহুল একটা ওয়েটার কে ডেকে বললো,, তিনটা বার্গার দেওয়ার জন্য।আর সাথে তিনটে কোক।

আয়রার মোবাইলে কল আসায় সে বসা থেকে উঠে একটু দূরে গিয়ে দাঁড়ালো।

আরে আম্মু আমরা এখনো সেনানিবাস ঘুরে দেখিনি।আজ এত জায়গা দেখা সম্ভব হবে না। মেঘলা পর্যটন কেন্দ্রে যাবো না। চিংড়ি ঝর্ণায় ও যাওয়া হবে না।আলি কদম গুহাতে যাওয়া যায় নাকি দেখি,,,,।
.
.
তুই এত বড় একটা কাজ করলি আর আমাকে জানালি না?প্রান্তর দিকে চোখ পাকিয়ে বলল রাহুল।

প্রান্ত শান্ত কন্ঠে বলল,,
কি করলাম আমি?

আয়রা কে কী করে চিনিস?আর বিয়ে করলি কখন?চাচা চাচী জানেন?

প্রান্ত চেয়ারে গা এলিয়ে বসে বললো,,
রিলেক্স ব্রো, আমি কেন আয়রা কে বিয়ে করতে যাবো?

রাহুল রেগে গেলো।রাগি কন্ঠে বললো,,
তুই কি আমার সাথে মজা করিস? আয়রা যে বললো তুই ওর হাসবেন্ড।

প্রান্ত তাচ্ছিল্য হেসে বললো,,,
হুরররর,, আমার মাথা খারাপ নাকি এই পিচ্চি মাইয়ারে বিয়া করমু?

আয়রা যে বললো,,,

জানি না। কেন বলছে সেটা ওর কাছে জিজ্ঞেস করিস।
.
.
শুন আয়রা মাগরিবের আজানের আগে বাড়ি ফিরবি। হিতৈষী কোথায়?

এই রে খাইছে। আম্মু যদি এখন আপুর কথা জিজ্ঞেস করে তাহলে কী বলবো?আম্মু তো আর জানে না হিতৈষী আপু আমাদের সাথে আসেনি।
আয়রা একটা ঢোক গিলে বললো,,

আছে আপু। বার্গার খাচ্ছে। আমি রাখি টাটা।

মাকে কিছু বলতে না দিয়েই আয়রা কল কেটে দিল।

আয়রা কে আসতে দেখে প্রান্ত রাহুলের দিকে তাকিয়ে বললো,, আয়রা কে বলবি না,,আমরা যে চাচাতো ভাই।ওকে,,,?

কেন?

মাথা মোটা।তোকে এত কিছু বুঝতে হবে না।যেটা বলছি সেটা কর।

ওয়েটার এসে বার্গার দিয়ে গেল। আয়রা বসে পড়লো।
খাওয়া শুরু করে দিল তিন জন।
.
.
“”চিঠিতে বলা আছে সমাধান,
ছুঁয়েছে স্মৃতি যাকে বোকা সে।
পকেট খালি প্রেমে পিছুটান,
শ্রাবনই লিখে গেছে আকাশে।””

ঝিরঝির করে বৃষ্টি পড়ছে। একটু আগেই রোদ ছিল। হঠাৎই আকাশ মেঘলা হয়ে বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল।শ্রাবনেরই দিন।তাই বৃষ্টি আসার কোনো সময় সিমা নেই।

ইট দিয়ে তৈরি রাস্তার পাশের অবহেলায় বেড়ে উঠা একটা বেলি ফুল গাছে ফুল ফুটেছে অনেক গুলো।
দীপ্ত আর হিতৈষী সেখানে দাঁড়িয়েই বৃষ্টিতে ভিজছে। দীপ্ত সেই বেলি ফুল গাছ থেকে দুটো তরতাজা ফুল ছিঁড়ে এনে হিতৈষীর হাতে দিল।
আর বললো,,,,

~শুনো প্রিয়সী,,,
যখন আমি থাকবো না, আমার কথা তোমার খুব মনে পড়বে তখন আমার দেওয়া সব ফুল গুলো ছুঁয়ে দেখবে। আমি জানি চার বছর ধরে তোমাকে যত ফুল দিয়েছি তুমি সব গুলো ফুল খুব যত্ন করে আগলে রেখেছো। তোমার সেই ডায়রির পাতায় লিখা আমাকে নিয়ে সব কথা, কবিতা,ছন্দ,গল্প গুলো কে আওড়ে দিবে। তোমার ঠোঁট দুটো নাড়িয়ে ওদের জীবিত করে দিবে।শ্রাবনের ঘন বর্ষার কোনো এক নির্ঘুম রাতে আমার কথা মনে পড়লে রুমে সব জানালা মেলে দিয়ে জানালার গ্রিল ধরে রাতের বৃষ্টি দেখবা।মাঝে মাঝে হাত দিয়ে ছুয়ে দিবা।জানো তোমাকে নিয়ে হাজার বছর বাঁচার ইচ্ছে ছিল আমার। তোমার আমার ছোট্ট একটা চড়ুই পাখির বাসা হবে। সেখানে শুধু থাকবে ভালোবাসা, বিশ্বাস, ভরসা ।
শেষ একটা কথাই বলবো,,
ভালোবাসি খুব তোমাকে হিতৈষী। আমার প্রথম প্রেম, প্রথম ভালোবাসা যে তুমি। খুব ভালোবাসি।

বৃষ্টির পানিতে ধুয়ে যাচ্ছে হিতৈষী আর দীপ্তর চোখের পানি। দুই জন মানুষ একে অপরকে মে ভীষণ ভালোবাসে। বিচ্ছেদ কেন আসলো তাদের প্রেমে?

বৃষ্টির পানি সব ধুয়ে সাফ করে ফেললেও বুকের ভেতর জমিয়ে রাখা কষ্ট গুলো ধুয়ে দিতে পারে না।

চলবে,,,,, 🍁

শ্রাবণ দিনের বৃষ্টিতে পর্ব-০৭

0

#শ্রাবণ_দিনের_বৃষ্টিতে 🖤
#পার্ট_৭
#Writer_Liza_moni

হিতৈষী তৈরি হয়ে ড্রইং রুমের সোফায় গিয়ে বসল।প্রান্ত হাতের ঘড়ির বেল্ট লাগাতে লাগাতে ড্রইং রুমে যাওয়ার সময়,,
খাইলো এক ধাক্কা। মাথা তুলে সামনে তাকিয়ে দেখে আয়রা হাত দিয়ে মাথায় মালিশ করছে।প্রান্তর কাঁধের সাথে বারি খেয়ে মাথাটা গেল বেচারির।

প্রান্ত শান্ত চোখে আয়রার দিকে তাকিয়ে শান্ত কন্ঠে বললো,,
পিচ্চি মেয়ে চোখে দেখতে পাও না?

আয়রা রেগে বললো,,
দামড়া হাতি আপনি চোখে দেখতে পান না?আর পিচ্চি পিচ্চি করেন কেন ? আমাকে আপনার কোন দিক থেকে পিচ্চি মনে হয়? আমি এইবার এইচএসসি পরীক্ষার দিবো বুঝলেন বুইড়া দাদু।

প্রান্ত কেবলা কান্তর মতো আয়রার দিকে তাকিয়ে আছে। মনে মনে বললো,, আমাকে দাদু বানিয়ে দিলো। অথচ এখন ও বিয়েই করলাম না।

এইচএসসি পরীক্ষা দিবা মাত্র। আমার কাছে তুমি সত্যিই পিচ্চি। আমার অনার্স শেষ। এখন ঘুরে বেড়াচ্ছি। এখান থেকে গিয়ে আব্বুর অফিসে জয়েন হয়ে যাবো।

আপনার থেকে এত কথা আমি শুনতে চাইনি হুঁ। আয়রা একটা ভেংচি কেটে চলে গেল। আয়রার চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে প্রান্ত ঠোঁট উল্টে হাসলো। প্রথম দিন মেয়েটাকে দেখে মনে হয়েছিল ভাজা মাছ উলটে খেতে জানে না।
.
.
হিতৈষীর এখন ঘুরতে যাওয়ার একদম মুড নেই। মূলত দীপ্তর সাথে দেখা করার জন্য তৈরি হয়েছে সে। আয়রা আর প্রান্তই যাবে ঘুরতে। হিতৈষী টাউনে চলে যাবে।

তিন জন মাকে বিদায় দিয়ে বের হলো। রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে সি এন জির জন্য অপেক্ষা করছে। অপেক্ষার প্রহর শেষ করে সিএনজি এসে দাঁড়ায় তাদের সামনে। সিএনজি চালক জালাল মিয়াকে দেখে সালাম দেয় আয়রা আর হিতৈষী।কোথাও যাওয়ার সময় জালাল মিয়ার সিএনজি করেই যায় তারা।

জালাল মিয়া চোখ বড় বড় করে পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখে প্রান্ত‌কে।

আব্বা তোমার চোখ গুলি এমন সবুজ কা?

জালাল মিয়ার কথা শুনে প্রান্ত হাসলো।প্রান্ত কিছু বলার আগেই আয়রা বলে উঠলো,,
আরে চাচা উনি তো এলিয়েন।ভিন গ্রহের প্রাণী। ভুল করে আমাদের পৃথিবীতে চলে আসছে।

এলিয়েন,,এইডা আবার কেমন?

আরে চাচা আপনি বুঝবেন না। আপনি হলেন আগে কার যুগের মানুষ।

জালাল মিয়া হাসলেন।প্রান্ত চোখ ছোট ছোট করে তাকালো আয়রার দিকে। আমি এলিয়েন? ভুল করে পৃথিবীতে আসছি? দাঁড়াও পিচ্চি তোমার শাস্তি আমি দিমু।

চোখ গুলিন সুন্দর আছে। বলতে হয়।
.
.
হিতৈষী হাতের ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বললো,,আহ চাচা সিএনজি স্টার্ট দিবেন নাকি?পরে কথা বলিয়েন।

টাউনে আসলে হিতৈষী সিএনজি থেকে নেমে যায়। রাস্তার ওপর পাশে দীপ্তকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখল আয়রা। হিতৈষী কে আর কারন জিজ্ঞেস করলো না। এখন এই প্রান্ত না কান্ত এর সাথে সারা দিন আমাকে একা থাকতে হবে।

হিতৈষী কে টাউনে নেমে যেতে দেখে প্রান্ত আয়রাকে জিজ্ঞেস করলো,,
এই পিচ্চি,,
তোমার বোন এখানে নেমে গেলো কেন?

আয়রা ডোন্ট কেয়ার ভাব করে বললো,,
আমার দুলাভাইয়ের সাথে দেখা করতে গেছে।

প্রান্ত একটা বড় সড় ধাক্কা খেল।
সিরিয়াসলি? তোমার হিতৈষী আপু প্রেম করে? নাকি মজা করছো?

আপনি কি আমার তালতো ভাই লাগেন যে মজা করবো?
আর এই যুগের মেয়েদের প্রেমিক থাকতেই পারে।এতে এতো অবাক হওয়ার কি আছে?

না,,, দেখে মনে হয় না।
.
.
আলি কদম সেনানিবাসের সামনে এসে দাঁড়ায় সিএনজি।সবার আগে আলি কদম সেনানিবাস, তার পর আলি কদম গুহা,এর পর চিংড়ি ঝর্ণা,,আর সবার শেষে মেঘলা পর্যটন কেন্দ্রে যাবে বললো আয়রা।

সেনানিবাসে নামতেই আয়রার চোখ পড়লো সেখানের চেকপোস্টে দাঁড়িয়ে থাকা এক আর্মির দিকে। চেকপোস্টে ডিউটি করা সৈনিকদের সাথে কথা বলছে।
আর্মিটা আয়রার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসছে। আয়রা হঠাৎ প্রান্তর হাত জড়িয়ে ধরে ঐ আর্মির দিকে তাকিয়ে একটা রহস্যময় হাসি দিয়ে চোখ মারলো।

আর্মি লোকটার নাম রাহুল। বর্তমান জোন কমান্ডারের রানার। বান্দরবান ক্যান্টারমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজে পড়ে আয়রা।নবীন বরণ অনুষ্ঠানে এই রাহুলের সাথে দেখা হয় আয়রার। রাহুল দেখতে সুন্দর।আর্মি রানাররা বেশিরভাগ একটু সুন্দর হয়।ফ্রেন্ড সার্কেলের মধ্যে আয়রা একটু বেশি শাহস দেখায়।ফ্রেন্ডদের সাথে ডেয়ার ধরে রাহুল কে ইচ্ছে মতো বকে সে।হুদাই কি সব বলে সেখান থেকে দৌড়ে পালিয়ে বাঁচে।
রাহুল আয়রার পাগলামি দেখে প্রেমে পড়ে গিয়েছিল।
তখন থেকেই কলেজের প্রোগ্রামে রাহুল কে দেখা যেতো। আয়রার আবার আর্মির উপর এলার্জি আছে।

রাহুলের জন্য আয়রার বেস্ট ফ্রেন্ড রাইমা পাগল। কিন্তু রাহুল আয়রাকে প্রেমের প্রস্তাব দেওয়ার থেকে রাইমা রাহুল কে দেখলেই গিলে খাবে এমন ভাব করে।

রাহুল ভ্রু কুঁচকে আয়রাদের দিকে এগিয়ে আসতে লাগলো। রাহুল কে এগিয়ে আসতে দেখে আয়রা প্রান্তর হাত খামচে ধরে।প্রান্ত অবাক হয়ে আয়রার দিকে তাকিয়ে আছে।
এই পিচ্চি তুমি আমার বউয়ের আমানত নষ্ট করছো কেন?হাত ছাড়ো।

চুপ বুইড়া দাদু। বেশি কথা বলবেন না।
.
.
রাহুল আয়রাদের সামনে এসে দাঁড়ায়। রাহুলের মোটামুটি সব কিছু আয়রার ভালো লাগলে ও মুখে দাড়ি নেই।এক দম ক্লিন শেভ করা।যার জন্য রাহুলকে আয়রার চামড়া ছিলা মুরগির মতো মনে হয়। কেমন মেয়ে মেয়ে ভাব।

রাহুল কে আসতে দেখে প্রান্ত ভ্রু কুঁচকালো। রাহুল প্রান্তর দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে যাবে তার আগেই প্রান্ত চোখ দিয়ে ইশারা করলো যেনো কিছু না বলে।
আরেএএএ,,,
আয়রা যে,, কেমন আছো?

আয়রা মুচকি হেসে বললো আলহামদুলিল্লাহ ভালো আপনি?

এই তো আছি। রাহুল প্রান্তর দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললো উনি কে?

আয়রা লাজুক হেসে বললো,, আপনার বোনের জামাই।

এটাকেই বলে আসল ছ্যাকা। বানাতে চেয়েছিলাম বউ হয়ে গেছে ভাবি,,,বিড়বিড়িয়ে বললো রাহুল।

আয়রার কথায় প্রান্ত চোখ গুলো কে বড় বড় করে তাকালো।এই মেয়ের মাথায় কী সমস্যা আছে নাকি? একদম জামাই বানাই দিলো।

রাহুল ভাইয়াআআআআ,,

থাক আয়রা । ভাইয়া বলে এত বড় করে অপমান করা লাগবে না।বলে ফেলো,,

আমাদের সেনানিবাস ঘুরিয়ে দেখানোর দায়িত্ব আপনার।

আমার তো সবে ডিউটি শেষ হলো। আমি ফ্রেশ হয়ে আসি। তোমরা ক্যান্টিনে গিয়ে বসো। আমি 10
মিনিটে আসছি।

আচ্ছা। রাহুল প্রান্তর দিকে তাকিয়ে চোখ পাকিয়ে কিছু একটা বুঝালো।প্রান্ত হাসলো।

রাহুল চলে গেলে আয়রা প্রান্ত হাতকে ঝাঁকি দিয়ে ছেড়ে দূরে সরে গেল। আয়রার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে প্রান্ত বললো,, আমার হাত কে তুমি কি পাইছো?

আয়রা প্রান্তর দিকে তাকিয়ে শয়তানি হেসে বললো
সরকারি হাত পাইছি।

প্রান্ত আর কিছু না বলে ক্যান্টিনের দিকে হাঁটা ধরলো। আয়রা ও পিছনে পিছনে হাঁটতে লাগলো।
.
.
রেস্টুরেন্টে মুখোমুখি বসে আছে হিতৈষী আর দীপ্ত। হিতৈষীর চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়ছে। দীপ্ত মাথা নিচু করে বসে আছে।

হিতৈষী টিস্যু দিয়ে চোখের পানি মুছে দীপ্তর দিকে তাকিয়ে বললো,,
কোনো উপায় নেই কী আমাদের সম্পর্কটা কে জীবন রাখার?

দীপ্ত হিতৈষীর দিকে তাকিয়ে বললো,, কী করে হিতৈষী?মা যে দিব্বি দিয়েছে।

কী দিব্বি?

দীপ্ত একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,,
আমি যদি তোমাকে বিয়ে করার কথা আরেক বার বাড়িতে বলি তাহলে মায়ের মরা মুখ দেখবো।

হিতৈষীর বুকের বাঁ পাশে ভীষণ কষ্ট হচ্ছে।ক্ষত বিক্ষত হয়ে যাচ্ছে তার হৃদয় টা।

হিতৈষী ফোঁস করে একটা নিঃশ্বাস ছাড়লো। মিনিট খানেক চুপ করে থাকার পর দীপ্তর ডান হাতটা আলতো করে ধরে বললো,,
তুমি বিয়েটা করে নাও।সব ভালোবাসা তো আর পূর্নতা পায় না। আমার ভালোবাসাটা ও না হয় অপূর্ণ রয়ে যাক। পরিবার সব সময় ভালো কিছুই চায়। তোমার হবু বউ হয় তো সব দিক দিয়েই তোমার জন্য পারফেক্ট। আমি নই। আমার মতো এতিম মেয়ে তোমার যোগ্য না।
আমি চাই না তুমি দোটানায় আটকে থাকো।আজ থেকে তুমি মুক্ত।অন্য কারো আকাশে গিয়ে ডানা মেলে মুক্ত আর স্বাধীন পাখির মতো উড়ে বেড়াও। আমি কখনো তোমাকে কিচ্ছু বলবো না। সবাইকে নিয়ে সুখে থাকো।

দীপ্ত বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়। কিছুই বললো না সে হিতৈষীর কথার উত্তরে।অর্ডার করা হট কফি দুটো কুল কফি হয়ে গেছে। হিতৈষী ও বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো।

দীপ্তর উদ্দেশ্যে বললো,,
আমি আসছি দীপ্ত। কোনো না কোনো দিন আমাদের এই শহরে আবার দেখা হবে। সেদিন আমরা অপরিচিত থাকবো। খুব আপন হয়ে ও পর হয়ে গেলাম। তোমার বিয়েতে কিন্তু আমি আসবো। ইনভাইট করো না নাইবা করো।বর বেশে তোমাকে দেখার লোভ টা আমার রয়েই গেল।তার জন্যই যাবো।
ভালো থেকো আসি।

হিতৈষী চলে যেতে নিলে দীপ্ত হিতৈষীর হাত ধরে টান মেরে নিজের কাছে এনে সবার সামনে হিতৈষী
কে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিল।এই মেয়েটাকে ছেড়ে থাকতে তার ভীষণ কষ্ট হবে।কী করবে সে? তার যে সব দিক থেকেই পথ বন্ধ একটা পথ ছাড়া।সে পথে না গেলে যে তার মাকে হারিয়ে ফেলবে।

হিতৈষীর বুকের মাঝে ঝড় বয়ে যাচ্ছে। সম্পর্কের শেষটা এত জঘন্য সুন্দর হয় কেন?শুরুটা তো রঙিন ছিল।শেষটা ধূসর রঙের চেয়ে ও বেরঙিন কেন হয়?

চলবে,,, 🍁

শ্রাবণ দিনের বৃষ্টিতে পর্ব-০৬

0

#শ্রাবণ_দিনের_বৃষ্টিতে 🖤
#পার্ট_৬
#Writer_Liza_moni

আয়রা হিতৈষীর হাত ধরে টান মেরে নিজের কাছে নিয়ে এলো।হিতৈষীর কোলে মাথা রেখে বলতে শুরু করল,,,

“সেদিন,,,
আয়জা আপু সবে ১০ম শ্রেনীর ছাত্রী। বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী হওয়ার ফলে অনেক বিষয়ের টিউশনি পড়তে হয় তাকে। পদার্থ বিজ্ঞান পড়ে বাড়িতে ফিরতে দেরী হয়ে গেছিলো তার। আমি তখন মাত্র ক্লাস 7 এ পড়ি।
সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছিল কিন্তু আপু বাড়ি ফিরে আসেনি। শ্রাবণের দিন ছিল। বৃষ্টি পড়ছিল মুষলধারে। আমরা তখন বান্দরবানে নতুন এসেছি। বছর খানেক হয়েছিল বটে।আপুকে ফিরতে না দেখে চিন্তায় শেষ হয়ে যাচ্ছিল আম্মু।
সেদিন বাড়ি ফেরার পথে ৫ জন মাতাল বখাটে ছেলের কবলে পড়ে আমার আয়জা আপু।

আয়রা থামলো। আয়জা কে খুব খুব বেশি মনে পড়ছে তার। চোখ ভিজে আসছে।
আয়রা ফোঁস করে একটা নিঃশ্বাস ছাড়লো। আবার ও বলতে শুরু করলো,,,

পাহাড়ি এলাকা। সুনসান রাস্তার ধারে হাঁটছিল আয়জা আপু। সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত হয়েছে।ছেলে গুলো বাঙালি ছিল না। চাকমা দুই জন,আর মারমা তিন জন ছিল।
মাতাল বখাটে ছেলে গুলো আমার বোন কে সেদিন রাতে শেষ করে দিয়েছিল।

আমার বোনের সাথে খুব খারাপ কাজ করে ছিল তারা। জোর পূর্বক ধর্ষণ করে দুনিয়ার থেকে বিদায় হয়ে যাওয়ার জন্য বাধ্য করে। বিধ্বস্ত অবস্থায় আমার বোন বাড়িতে ফিরে আসে।এক দম চুপ হয়ে যায় ও। সেদিন রাতেই সুইসাইড নোট লিখে ফ্যানের সাথে ওড়না গলায় ঝুলিয়ে আত্মহত্যা করে আমার বোনটা।”

আয়রার চোখ থেকে কয়েক ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়লো। হিতৈষীর চোখ থেকে ও আপনাআপনি পানি গড়িয়ে পড়ছে।

ধর্ষণ শব্দ টা শুনলেই কলিজা ছিঁড়ে যায় আয়রার। সেদিন যখন প্রান্ত বলে ছিল তখন যেনো আয়রার দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল।

জানিস হিতৈষী আপু,, আমার আয়জা আপু টা এই সমাজের মানুষের জন্য আত্মহত্যা করেছে। সকাল হলে এই সমাজের মানুষ তার দিকে আঙুল তুলে মানুষ কে দেখিয়ে বলবে আমার বোন ধর্ষিতা।
ও এই সব সহ্য করতে পারতো না।এই জন্য এই ভুল পথ বেছে নেয়। আমাদের দেশে ধর্ষকের শাস্তি হয় না। সেই ছেলে গুলোর নামে মামলা করা হয়ে ছিল। পুলিশ মাত্র দুই দিন ওদের লকাপে আটকে রেখে ছিলো।মাত্র দুই দিন।

হিতৈষী একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,, আয়জা সুইসাইড নোটে কী লিখেছিলো আয়রু?

আয়রা শোয়া থেকে উঠে বসলো। হাতের তালু দিয়ে চোখের পানি মুছে বললো,,
আয়জা আপু দুই টা চিঠি লিখে গিয়েছিল।

একটা আমাদের জন্য আরেকটা তার কিশোরী বয়সের প্রেমিক রাফি ভাইয়ের জন্য।

আমাদের জন্য লিখা চিঠি টা ছিল,,,

“প্রিয় আম্মু, আব্বু,আর আমার কলিজার টুকরা ছোট বোন আরু,,,

জানো আমার জীবনটা না এক মুহূর্তে নষ্ট হয়ে গেছে। আমার নামের সাথে যোগ হয়ে গেছে ধর্ষিতা।হ্যাঁ আমি ধর্ষন হয়েছি। আম্মু, আব্বু আমার সাথে কেন এমন হলো? আমি তো সুন্দর একটা জীবন চেয়েছি। আমি বাঁচতে চেয়েছি। আমার সাথে কেন এমন হলো? আমি অনেক চেষ্টা করেছি নিজের ইজ্জত রক্ষা করার জন্য। কিন্তু ঐ নরপশু গুলো আমাকে বাঁচতে দেয়নি। আমাকে শেষ করে দিয়েছে।আরু সোনা বোন আমার। আমার মতো ভুল কখনো করিস না।একা একা কখনও বাড়ি ফেরার শাহস করিস না সন্ধ্যা বেলায়। আমি চাই না বোন আমার সাথে যা হয়েছে তোর সাথে ঠিক তেমন হোক। আল্লাহ মাফ করুক।
আমি এই সমাজে আর মুখ দেখাতে পারবো না। সমাজের মানুষ আমাকে দেখিয়ে বলবে আমি ধর্ষিতা। আমি কী করবো বলো? আমার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে তোমাদের ছেড়ে যেতে। আমি তো অনেক গুলো বছর তোমাদের সাথে থাকতে চেয়েছিলাম। আমার খুব কষ্ট হচ্ছে।আরু কে দেখে রাখবে কিন্তু।ওর সাথে যেন এমন কিছুতেই না হয়। আমি আকাশের চাঁদ হয়ে তোমাদের দেখবো।
আম্মু, আব্বু,আরু সোনা বোন আমার,, তোমাদের ভীষণ ভালোবাসি।

ইতি
তোমাদের অভাগী ধর্ষিতা মেয়ে আয়জা,,,,
.
.
চিঠির কথা গুলো বলতে বলতে হিতৈষী কে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিল আয়রা। হিতৈষী ও কান্না করছে।নিরব কান্না।চাইলে ও ফুঁপিয়ে কান্না করতে পারছে না আয়রা।মা যদি শুনতে পায় তাহলে এখানে চলে আসবে।কান্নার কারণ যে আয়জা যদি জানতে পারে তাহলে তিনি ও কান্না করবেন।আয়জার মৃত্যুর দিন হার্ট অ্যাটাক করেন আয়রার মা। তখন থেকেই খুব প্রেশার দেয়া যায় না তাকে।

আয়রা হিতৈষীর কাছ থেকে সরে এসে চোখের পানি মুছলো।

রাফি ভাইয়ের জন্য লেখা চিঠিটা ও পড়েছি আমি। মনে আছে মোটামুটি। অন্য দিন বলবো তোকে সেই চিঠির কথা।আজ আর মুখ দিয়ে বের হবে না। সামনের মাসের ২ তারিখ আয়জা আপুর মৃত্যুর ছয় বছর পূর্ন হবে।আজ তো ২৫ তারিখ,,,, বেশি দেরি নেই।

আয়রা বিছানা থেকে নেমে দাঁড়ালো।

কোথায় যাস?

রুমে।ভালো লাগছে না এখন।
আয়রা হিতৈষীর রুম থেকে বেরিয়ে গেল। হিতৈষী কিছু বললো না।সবার জীবনেই কিছু না কিছু হারানোর যন্ত্রনা থাকে। যেমন আমি আমার পুরো পরিবার কে হারিয়ে ফেললাম।
.
.
.
পরের দিন সকালে মোবাইলের এলার্মের শব্দে ঘুম ভেঙ্গে যায় প্রান্তর। ঘুম ঘুম চোখে মোবাইল হাতে নিয়ে দেখলো সকাল ৫ টা। শোয়া থেকে উঠে ওয়াস রুমে চলে গেল ফ্রেশ হতে। ফজরের নামাজ ঠিক মতো কোন দিন পড়তে পারছে একদম মনে নেই তার।ওয়াস রুম থেকে অযু করে বের হয়ে আসে। মসজিদ আয়রাদের বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে। কিন্তু যেতে ইচ্ছে করছে না প্রান্তর।

রুম থেকে বের হয়ে দেখলো সদর দরজা খোলা। বাইরে বের হলো সে। একটা মাঝারি সাইজের উঠান।
উঠানের একপাশে বাগান বিলাস গাছ।তার পাশেই বেলি ফুল গাছ।বেলি ফুলের গন্ধে মৌ মৌ করছে চার দিকে। আয়রা কে বেলি ফুল কুড়াতে দেখে প্রান্ত বললো,,,

এই পিচ্চি শুনো,,,

আয়রা মাথা তুলে একবার দেখলো প্রান্ত কে।বিড়বিড়িয়ে বললো,,আমাকে যে কোন দিক দিয়ে পিচ্চি মনে হয় কে জানে?

আয়রা প্রান্তর দিকে এগিয়ে এসে বললো ,,
আমাকে দেখে কী আপনার পিচ্চি বাচ্চা মেয়ে মনে হয়?

প্রান্ত শয়তানি হেসে বললো,,,
পিচ্চি বাচ্চা মেয়ে মনে হয় বলেই তো বললাম।বাই দা ওয়ে,, আমাকে একটা জায়নামাজ দাও তো ,,, নামাজ পড়বো,,,

আয়রা ভ্রু কুঁচকে চার দিকে তাকালো। না এখনো আলো ফুটেনি ভালো করে। নামাজের সময় আছে।

আয়রা বাড়ির ভেতরে যেতে যেতে বললো,,
আসুন আমার সাথে,,,

প্রান্ত বাদ্য ছেলের মত আয়রার পিছনে পিছনে চলে গেল। আয়রা নিজের জায়নামাজটা প্রান্তর হাতে দিয়ে বললো,, নামাজ শেষে আবার আমাকেই ফেরত দিবেন।

প্রান্ত একটা ধন্যবাদ দিয়ে রুমে চলে গেল। নামাজ পড়তে তার ভালোই লাগে। কিন্তু সময়ের অভাবে ঠিক মতো পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা হয় না।
.
.
৯ টার দিকে আয়রা যখন কলেজে যাওয়ার জন্য একদম প্রস্তুত ঠিক তখনই আয়রার মা এসে জানালো,,
আজ কলেজে যেতে হবে না। হিতৈষী কে ও ভার্সিটিতে যেতে দেয়নি।

কেন আম্মু? সামনে আমার এইচএসসি পরীক্ষা।আর এখন বলছো কলেজ না যেতে?

প্রান্ত কে আজ তুই আর হিতৈষী একটা জায়গায় নিয়ে যাবি।

কোন জায়গায়?

আলি কদম ঘুহা,,আলি কদম সেনানিবাস,,চিংড়ি ঝর্ণা,, মেঘলা পর্যটন কেন্দ্র,,,

আমাদের জেলা পরিষদ থেকে তো এগুলো মোটামোটি অনেক দূরে।

তুই তো কলেজ থেকে পিকনিকে সেখানে গিয়েছিলি,, হিতৈষীকে নিয়ে,, তুই তো মোটামোটি অনেক জায়গা চিনিস।

ভালোই হলো। অনেক দিন ঘুরতে যাওয়া হয় না। আমি তৈরি হয়ে নিচ্ছি। হিতৈষী আপুকে ও তৈরি হয়ে নিতে বলো।

মা চলে গেলে আয়রা ডেভিল মার্কা হেসে বললো,,
মিস্টার ক্রাশ তোমারে মজা আমি দেখামু,, আমাকে বাচ্চা মেয়ে বলা,,আর চড় মারা না,, দাঁড়াও,,,চান্দু,,,,
আয়রা যে কী সেটা তুমি খুব ভালো করেই বুঝতে পারবে।

চলবে,,,, 🍁

শ্রাবণ দিনের বৃষ্টিতে পর্ব-০৫

0

#শ্রাবণ_দিনের_বৃষ্টিতে 🖤
#পার্ট_৫
#Writer_Liza_moni

আয়রা মায়ের রুম থেকে বের হয়ে আসার সময় চোখ পড়লো সেখানের টেবিলের উপর রাখা মোবাইলের দিকে।আলো জ্বলছে। আয়রার ভ্রু কুঁচকে গেল।সেদিকে এগিয়ে গিয়ে মোবাইল হাতে নিয়ে দেখে চার্জ হচ্ছে। আয়রার চোখ কপালে। কারেন্ট নাই অথচ মোবাইলে চার্জ হচ্ছে?

আয়রার হঠাৎ করে মনে পড়ে গেল তখন প্রান্ত কলিং বেল বাজিয়ে ছিল। কারেন্ট ছাড়া তো আর কলিং বেল বাজবে না।

আয়রা এই সব ভাবছিল আর সেই সময় লাইট জ্বলে উঠলো। আয়রা চার দিকে চোখ বুলিয়ে দেখলো। মোবাইলটা রেখে টেবিলের উপর রেখে আয়রা মায়ের রুম থেকে বেরিয়ে আসলো।

ড্রইং রুমে আসতেই আবার কলিং বেল বেজে উঠলো। আয়রা গিয়ে দরজা খুলে দিল।মা আর হিতৈষী দাঁড়িয়ে আছে। হিতৈষী প্রায় ভিজে গেছে বৃষ্টিতে।

হিতৈষী আর মাকে দেখে আয়রা অভিমানী কন্ঠে বললো,,
আমাকে একলা ফেলে কোথায় চলে গেছিলা তোমরা?

হিতৈষী কিছু বললো না। রুমে চলে গেল।

মা সোফায় এসে বসলেন।লাইট গুলোর লাইনে একটু সমস্যা হচ্ছিল।মিটারে আর বোর্ডে কারেন্ট থাকলে ও লাইটের লাইনে ছিল না।

ওহহ,, হিতৈষী আপু ঠিক করছে নাকি?

হুম।ও তো এই সব বিষয়ে অনেক অভিজ্ঞ।

আয়রা গিয়ে মায়ের পাশে বসলো। হিতৈষী আপু টা আমার অনেক কিছু জানে।

তোর মতো মাথা মোটা নাকি আমার হিতৈষী?

আয়রা আর কিছু বললো না। এখন যে হিতৈষীর গুনগান শুনতে হবে তা খুব ভালো করেই জানে আয়রা।
.
.
প্রান্ত ড্রইং রুমে কথার আওয়াজ পেয়ে রুম থেকে বেরিয়ে আসলো।এত সময় সে ইচ্ছে করেই রুম থেকে বের হয়নি।

ড্রইং রুমে এসে আয়রার মায়ের উদ্দেশ্যে বললো,,
আন্টি আয়রা পিচ্চি কে বাড়িতে একা ফেলে কোথায় গেছিলেন?

আর বইলো না বাবা। পাহাড়ি এলাকার সব কিছু
একটু গোল মেলে। কারেন্টের লাইনে সমস্যা হইছিলো।

ওহ ঠিক করলো কে?

হিতৈষী।

প্রান্ত অবাক হলো ভীষণ।মানে সিরিয়াসলি আন্টি?

সত্যি। হিতৈষী ঠিক করছে। আমার মেয়ে হিতৈষীর সব কিছু সম্পর্কে জানার আগ্রহ অনেক বেশি।পুরো পুরি না পারলে ও অল্প কিছু তাকে পারতেই হবে।
আমার দুই মেয়ের মধ্যে আকাশ পাতাল তফাৎ। হিতৈষী যেমন দেখতে মিষ্টি।ঠিক তেমনি কাজে ও।
আর আয়রা,,ও তো নাম্বার ওয়ান অলস,ঘ্যাড়তেড়া , রাগী,জেদি। দেখতেই মাশাআল্লাহ।আর কাজে নাউযুবিল্লাহ।

আয়রা বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। মায়ের দিকে চোখ কটমট করে তাকিয়ে বিড়বিড়িয়ে বললো,,
দিলো তো ক্রাশের সামনে আমার বদনাম করে। ক্রাশের সামনে এই সব কথা না বললেই যেনো পেটের ভাত হজম হয়না । আমার মা দুনিয়ায় এক পিস।

আয়রা আর দাঁড়ালো না সেখানে। রুমে চলে আসলো।আর কিছুক্ষণ দাঁড়ালে মা তার সব হিস্ট্রি ক্রাশের সামনে ফাঁস করে দিতো।

আয়রা কে চলে যেতে দেখে প্রান্ত হাসলো। না আন্টি আপনি ভুল বলছেন কিছুটা। আয়রা পিচ্চি কিন্তু অনেক সুন্দর আর্ট করতে পারে।

মেয়ে আমার শুধু এটাই জানে ভালো।আর কিছু তাকে দিয়ে হবে না।
.
হিতৈষী রুমে এসে ড্রেস চেঞ্জ করে নিল। ভালো লাগছে না কিছুই। বুকের ভেতর কেমন অস্থির অস্থির লাগছে। এমন মনে হচ্ছে যেনো কিছু একটা হারিয়ে ফেলবে সে। কোনো কিছুতেই শান্তি লাগছে না তার।

আয়রা পড়ার টেবিলে বসে কলম কামড়াচ্ছে।বীজ গনিতের ব ও মাথায় ঢুকে না তার। সূত্র মুখস্থ করে ঠিক কিন্তু কয়েক দিন পর সেটা খেয়ে ফেলে।

আগামীকাল ক্লাস টেস্ট আছে।কী যে হবে আল্লাহ জানেন।

আয়রার একটা সরল অঙ্ক কিছুতেই মিলছে না।পড়ার টেবিলে বসে আয়রা গনিত যে তৈরি করেছে তাকে ইচ্ছে মতো বকলো কিছুক্ষণ।কি প্যাচ ছিল ঐ লোকের মাথায়।জিলিপির প্যাচ থেকে ও বেশী।মরছে তো মরছে আমাদের কত গুলো প্যাচ কষতে দিয়ে গেছে। শালা বুইড়া দাদু।

আয়রা একটা খাতা আর কলম নিয়ে হিতৈষীর রুমে চলে গেল। অনার্স ২ বর্ষে পড়ে হিতৈষী।ম্যাথ নিয়ে।
বলতে গেলে হিতৈষী আয়রার গনিতের টিচার।

আয়রা হিতৈষীর রুমের সামনে গিয়ে দেখলো ভেতর থেকে দরজা বন্ধ। আয়রার ভ্রু কুঁচকে গেল নিজ থেকেই।
এমন কখনো হয়নি। হঠাৎ করে হিতৈষী রুমের দরজা বন্ধ করে রাখলো কেন?

আয়রা দরজায় টোকা দিলো কয়েক বার। হিতৈষী তখন শুয়ে ছিল। চোখের কোনা বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে তার। ভাঙ্গা গলায় বললো,,
আয়রা বোনু আমার এখন ভালো লাগছে না।পরে আসিস।

আয়রা শুনে ও পাত্তা দিলো না হিতৈষীর কথা। হিতৈষী কান্না করছে তা খুব ভালো করেই জানা হয়ে গেছে আয়রার।আজ ৬ বছর ধরে দেখছে সে হিতৈষীকে। নিজের বোন ছাড়া অন্য কিছু ভাবে না সে হিতৈষীকে।

দরজা খুল।অঙ্কটা বুঝতে পারছি না।বুঝাই দে। আগামীকাল ক্লাস টেস্ট আছে।

হিতৈষী বুঝলো দরজা না খোলা অব্দি আয়রা এখান থেকে যাবে না। শোয়া থেকে উঠে চোখ মুছে নিজেকে স্বাভাবিক করে দরজা খুলে দিল। আয়রা আঙ্গুল দিয়ে কলম ঘুরাতে ঘুরাতে রুমে ঢুকে বললো দরজা বন্ধ করে দে।

হিতৈষী দরজা বন্ধ করে দিয়ে বিছানায় বসলো। আয়রা বিছানায় শুয়ে পড়লো।হিতৈষীর দিকে তাকিয়ে বললো,,

কী হয়েছে তোর ?আমাকে বল,,

না কিছু হয়নি তো।কী হবে?

আয়রা শোয়া থেকে উঠে বসলো।হিতৈষীর এক হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বললো,,
শুন আপু,,
আমি তোর নিজের বোন না। তোর ধর্মের ও না। ভাগ্যের এক অদ্ভুত পরিবর্তনের ফলে তুই আজ আমাদের বাড়িতে থাকিস। আমার মাকে মামুনি বলিস। আমার বাবাকে বাবাই বলিস। আমাকে নিজের ছোট বোনের মত ভালোবাসিস।আজ এত গুলো দিন আমরা এক সাথে থাকছি।আর আমরা বুঝতে পারবো না যে তুই ভালো নেই?

হিতৈষী আয়রাকে জড়িয়ে ধরে হু হু করে কেঁদে উঠলো। আমার সাথেই কেন এমন হয় বলতো আয়রু?মা,বাবাকে হারিয়ে, এতিম হয়েছি।যে মানুষটাকে এত ভালোবাসি সেই মানুষটার কিছু দিন পর অন্য কোথাও বিয়ে করে ফেলবে। কেন আমার আপন মানুষ গুলো আমার কাছ থেকে হারিয়ে যায় বলনা ?

আয়রা হিতৈষীর পিঠে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল,,দিপ্ত ভাইয়া তার পরিবার কে তোর কথা জানায়নি?

হিতৈষী আয়রাকে ছেড়ে দিয়ে সোজা হয়ে বসলো। চোখের পানি মুছে বললো,, জানিয়েছে।

কী বলেছে তার পরিবার?

আমি এতিম। আমার কোনো পরিচয় নেই। আমি হিন্দু হয়ে মুসলিম পরিবারে থাকি।

তাতে কী হয়েছে?এই সব কিছুর আগে হলো আমরা সবাই মানুষ। তুই আমাদের ধর্মের না।এর জন্য কী আমরা তোকে পর ভেবেছি কোনো দিন?আর কে বলছে তুই এতিম? আমার মা বাবা কী তোকে তাদের মেয়ের মতো ভালোবাসে না?

আমি তো এই সব বলিনি আয়রা। দীপ্তর মা বলেছে ।

আয়রা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। হিতৈষী যেদিন এই বাড়িতে এসেছিল সেদিন ও শ্রাবণ দিনের বৃষ্টি ছিল।
আয়রার বড় বোন আয়জা কে দাফন করে বাড়ি ফেরার সময় অসহায় হিতৈষীকে রাস্তার ধারে অজ্ঞান হয়ে পড়ে থাকতে দেখে ছিলেন আয়রার আব্বু আফজাল সাহেব।বড় মেয়ের মৃত্যুতে একদম ভেঙ্গে পড়েছিলেন আয়রার মা, বাবা।
হিতৈষী কে নিজেদের মেয়ের মতোই ভালোবাসেন তারা।কখনো হিতৈষী কে জোর করেনি নিজের ধর্ম ছেড়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার জন্য। হিতৈষী কে শুধু বলে ছিলেন চাইলে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করতে পারো।আর না চাইলে আমাদের মুসলমানদের বাড়িতে মূর্তি পূজা করা যাবে না। মন্দিরে গিয়ে পূজা করতে হবে।
সেদিন আর হিতৈষী ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেনি। তার নিজ ধর্ম নিয়েই আছে সে।

.
.
জানিস হিতৈষী আপু,,
তোর মধ্যে মাঝে মাঝে আমি আমার আয়জা আপুকে দেখতে পাই।কী অদ্ভুত তাই না,, আমার আয়জা আপু যে দিন আমাদের ছেড়ে চলে গেল ঠিক সেই দিন তুই আমাদের পরিবারে আয়জা আপু হয়ে আসিস।

হিতৈষী চোখের পানি মুছলো। অনেক বছর যাবত তার জানা হয়নি। আয়জা কী করে মারা গেছে?আজ আয়রা থেকে সেটা জেনে নেওয়া যাবে।

আচ্ছা আয়রা তোর আয়জা আপু কী করে মারা গিয়েছিল?

আয়রা হিতৈষীর দিকে তাকালো। কিছু বললো না।আজ বহু দিন পর আয়জা কে খুব মিস করছে আয়রা।
.
.
বৃষ্টি রীতিমতো এখন বিরক্ত লাগছে প্রান্তর।পড়ছে তো পড়ছেই।থামা থামির নাম নেই। পাহাড়ি এলাকায় বৃষ্টির দিনে নেটওয়ার্কে খুব সমস্যা করে। বাড়িতে ভিডিও কলে শান্তি তে একটু কথা ও বলতে পারছে না সে।মা,বাবা, ছোট ভাই,আর বোনকে খুব মিস করছে। আগামীকাল সকাল থেকে কাজ শুরু তার।

কাজ শেষ হবে কখন আর বাড়িতে যাবে কখন সেটা নিয়েই ভাবছে সে। খুব চুপচাপ স্বভাবের হওয়ার ফলে কারো সাথে ঠিক বনছে না তার।সম বয়সী কোনো ছেলে থাকলে ও হতো।
.
.
চলবে,,,, 🍁

শ্রাবণ দিনের বৃষ্টিতে পর্ব-০৪

0

#শ্রাবণ_দিনের_বৃষ্টিতে🖤
#পার্ট_৪
#Writer_Liza_moni

দীপ্ত তুমি এমন বদলে যাচ্ছো কেন বলো তো? তুমি আর আগের মতো নেই। তুমি কেমন জানি হয়ে গেছো।

দীপ্ত ফোঁস করে ফোনের ওপাশে একটা নিঃশ্বাস ছাড়লো। হিতৈষী মুখে হাত দিয়ে কানে মোবাইল ধরে বিছানায় বসে আছে।দীপ্তর দীর্ঘ শ্বাস শুনতে পেলো সে।

কী হলো কিছু বলছো না কেন?কী হয়েছে তোমার?

হিতৈষী আমার বিয়ে ঠিক করা হয়েছে।

হিতৈষীর কথাটা বুঝতে তিন সেকেন্ড সময় লাগে। কাঁপা কাঁপা গলায় বললো,,
দীপ্ত তুমি আমাকে ভালোবাসো। আমি ও যে তোমাকে ভীষণ ভালোবাসি। এমনটা হতে পারে না। তোমার পরিবার কে আমাদের কথা বলো নি তুমি?

দীপ্ত কিছুক্ষণ চুপ করে রইলো। বুকের বাঁ পাশে ঝড় বয়ে যাচ্ছে দুজনের। পরিবার নামক একটা জিনিসের জন্য ভেঙ্গে যায় হাজার হাজার মানুষের মন।হারাতে হয় ভালোবাসার মানুষটিকে।তারা যদি একটু বুঝতে পারতো এই মানুষগুলোর আবেগ, অনূভুতি,প্রেম, ভালোবাসা গুলো।

হিতৈষীর চোখ থেকে কয়েক ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়লো কোলে রাখা বালিশের উপর।

নিরবতা ভেঙ্গে দীপ্ত বললো,,বলেছি আমি তোমার কথা তাদের।তারা এই খুঁত ধরেছে তুমি এতিম। তোমার পরিবার নেই। তুমি একটা মুসলিম পরিবারে থাকো।

হিতৈষী আর কিছু শুনতে পারলো না। লাইনটা কেটে দিয়ে বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়ে বালিশে মুখ গুজে কান্না করতে থাকলো। বুকের মাঝে এক অসহ্য চিনচিনে ব্যথা হচ্ছে।মনে হচ্ছে এই মুহূর্তে মরে গেলেই ভালো হতো।

হিতৈষীর কোনো শব্দ না পেয়ে দীপ্ত কান থেকে ফোনটা চোখের সামনে এনে দেখলো হিতৈষী কল কেটে দিয়েছে। আবার কল বেক করলো না দীপ্ত।সে জানে তার মনে যে ঝড় বয়ে যাচ্ছে সেই একই ঝড় যে হিতৈষীর মনে ও বয়ে যাচ্ছে।

দীপ্ত চাইলে খুব পারতো হিতৈষী কে বিয়ে করতে। তার আর্থিক অবস্থা ভালো। এমন অনেক হিতৈষী কে সুখী করার মতো যোগ্যতা তার আছে। কিন্তু একটা দিব্বির জন্য চাইলে ও পারবে না সে।যে দিব্বি তার জন্ম দাত্রী মা দিয়েছে।
.
.
.
বান্দরবান খুব সুন্দর একটা জায়গা। কিন্তু স্থায়ী বাসিন্দাদের জন্য খুবই বিরক্তিকর ব্যাপার।ঝি ঝি পোকার ডাক,ব্যাঙের ডাক এই বর্ষায় এই সব খুব বিরক্ত লাগছে আয়রার।ব্যাঙ জিনিসটা একদম সহ্য হয় না তার। কেমন গা ঘিন ঘিনে একটা ব্যাপার। বেলকনিতে স্টাচু হয়ে দাঁড়িয়ে রইল সে।এর কারণ হলো লোড সেডিং।এই মাত্র কারেন্ট চলে গেল।

পাহাড়ি এলাকায় এই একটা সমস্যা। হালকা বাতাস আর বৃষ্টি শুরু হলেই কারেন্ট চলে যাবে।
অন্ধকার আয়রার ভীষণ শত্রু। অন্ধকার জিনিসটায় খুব ভয় করে তার।মনে হয় চার পাশে তাকে কেউ ঘিরে রেখেছে।

যেখানে দাঁড়িয়ে ছিল সেখানেই দাঁড়িয়ে আছে আয়রা।এক পা ও আগানোর শাহস হচ্ছে না।

এমন সময় মোমবাতির নিয়ন আলোয় আলোকিত রুম দেখে ঠোঁটের কোণে হাঁসি ফুটে ওঠে তার। রুমে কেউ মোমবাতি জ্বালিয়ে দিয়েছে।

হিতৈষী আপু ছাড়া আর এই কাজ কারো না।কারন হিতৈষী খুব ভালো করেই জানে আয়রার অন্ধকারে ভয় হয়। আয়রা বেলকনি থেকে রুমে আসলো।

রুমে চোখ বুলিয়ে দেখলো না কেউ নেই তো। হিতৈষী আপু,,গলা উঁচু করে ডাকলো আয়রা।

সাড়া শব্দ পেল না কারো। আয়রার পড়ার টেবিলের উপর মোমবাতি জ্বালিয়ে রাখা।

মোমবাতিটা হাতে নিয়ে হিতৈষীর রুমে এগিয়ে গেল সে। হিতৈষীর রুমে ঢুকার আগেই কলিং বেল বেজে উঠলো।

বাড়িতে কারো সাড়া শব্দ নেই। আয়রা তার মাকে ডাকলো বার কয়েক। না কোনো সাড়া পেল না।

বুকের মাঝে ডিপডিপ করছে তার। কলিং বেল আবারো বেজে ওঠে। আয়রা এবার হিতৈষী কে ডাকলো। না কোনো সাড়া পেল না।
অল্পতেই হিতৈষী আর মায়ের উপর অভিমান জমেছে আয়রার।
এই বাড়িতে একা ফেলে কোথায় চলে গেছে সবাই।

দরজা খুলে দেওয়ার শাহস পাচ্ছে না আয়রা। কয়েক পা এগিয়ে গিয়ে প্রান্ত কে ডাকলো।

না প্রান্তর ও কোনো সাড়া পেল না।এই দিকে মোমবাতির মোম গলে আয়রার হাতে পড়ছে।ভয়ে হৃদস্পন্দন বেড়ে গেছে। স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বেশি।

এক ঢোক গিললো আয়রা।আবারো কলিং বেল বেজে উঠলো। আয়রা ধীর পায়ে ভয়ে ভয়ে গিয়ে শাহস করে দরজা খুলে দিল।

আর অর্ধ ভেজা প্রান্ত কে দেখে সস্থির একটা নিঃশ্বাস ছাড়লো।

এত সময় লাগে দরজা খুলতে? বৃষ্টির পানি ছিটকে এসে গায়ে পড়েছে।আর আমি প্রায় ভিজেই গেছি।

আয়রা কিছু বললো না।প্রান্ত ঘরে ঢুকে বললো আরো নেই কেন? চার দিকে অন্ধকার।

আয়রা দরজা বন্ধ করে দিয়ে বললো,,লোড সেডিং হয়েছে। শ্রাবণ দিনের বৃষ্টিতে লোড সেডিং খুব বেশি হয়।

ওহ আচ্ছা।আন্টি কোথায়?

জানি না।

মানে?

ডেকেছি অনেক বার।সাড়া পাইনি।

ওহ তোমার বোন?

ওর ও কোনো সাড়া পাইনি।

আজব ব্যাপার। তোমাকে এই বাড়িতে একা ফেলে তারা কোথায় গেলেন?এটা কেমন কথা?

জানি না।

প্রান্ত আর কথা বাড়ালো না। মোবাইলের টর্চ জ্বেলে রুমে চলে গেল।ড্রেস চেঞ্জ করতে হবে।তা না হলে ঠান্ডা লেগে জ্বর আসবে।

সন্ধ্যার পর মোবাইলে রিচার্জ করার জন্য বের হয় প্রান্ত। মোবাইলের ব্যালেন্স শেষ। ব্যালেন্স না থাকলে মোবাইল রে কেমন এতিম এতিম লাগে।
.
.
আয়রার হাত জ্বলে যাচ্ছে উত্তপ্ত গলন্ত মোমে। আয়রা রুমে আসলো। বিছানার উপর থেকে মোবাইলটা হাতে নিয়ে টর্চ জ্বেলে মোমবাতি রেখে নিভিয়ে দিল। বিছানায় বসে হাতের উপরে পরা মোম গুলো পরিষ্কার করে নিলো। হাতের তালু একদম লাল হয়ে গেছে।

আয়রা মোবাইল হাতে নিয়ে আবার হিতৈষীর রুমে আসলো। না নেই কোথাও হিতৈষী। রুম খালি।

আয়রার ভ্রু যুগল কুঁচকে গেল। এমন তো কখনো হয়নি। হিতৈষী এই রাতের বেলায় বৃষ্টির মধ্যে অন্ধকারে কোথায় গেল?

আয়রা এবার মায়ের রুমে গেল। না এই রুম ও খালি।মা নেই। ভয়ে বুক ধড়ফড় করছে। কেমন একটা অস্বস্তিকর অবস্থায় পড়েছে সে।মা, হিতৈষী কেউ নেই। এই বাড়িতে এখন সে আর প্রান্ত একা। কোথায় চলে গেল এরা?এই বৃষ্টির রাতে এই অন্ধকারে আমাকে একা ফেলে।এক অচেনা ছেলের মাঝে,,,,,,

চলবে,,,, 🍁

শ্রাবণ দিনের বৃষ্টিতে পর্ব-০৩

0

#শ্রাবণ_দিনের_বৃষ্টিতে 🖤
#পার্ট_৩
#Writer_Liza_moni

আয়রা চলে গেলে প্রান্ত রুমের দরজার ঠেলে দিয়ে রুমটা দেখতে লাগলো। রুমে অনেক সুন্দর করে ওয়াল পেন্টিং করা।আর্ট গুলো দেখলে যে কারো চোখ জুড়িয়ে যাবে।প্রান্ত অবাক হয়ে দেখছে।

বাহ্ এত সুন্দর করে কেউ আকঁতে পারে। হঠাৎ প্রান্তর চোখ গেলো ড্রইং করা একটা দৃশ্যের নিচের দিকে। সেখানে স্পষ্ট করে লিখা আছে,,
Art by Arfi Ayra…..

মেয়েটা অনেক সুন্দর ড্রইং করতে পারে। প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য। আঁকার হাত ভালো।

প্রান্ত এখন ফ্রেশ হবে তাই ব্যাগ থেকে তার টাওয়াল নিয়ে ওয়াস রুমে চলে গেল।
.
.
আয়রা হিতৈষীর বিছানায় বসে পা দুটোকে ফ্লোরের উপর রেখে নাড়ছে। তার সামনেই হিতৈষী কিছু একটা খুঁজছে।

জানিস আজকে কী হইছে হিতৈষী আপু?

হিতৈষী আয়রার দিকে তাকিয়ে বললো না, জানি না। তুই বলার পর জানবো।

আয়রা বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। হিতৈষীর দিকে এগিয়ে গেল।তার পর বললো আমার ব্যাগে ছাতা রাখছিল কে? আমাকে না জানিয়ে?

আমি তো রাখলাম। বৃষ্টির দিনে তুই ছাতা নিতে ভুলে যেতে পারিস ভুলে আরেকটা ছাতা তোর ব্যাগে রেখে দিয়েছিলাম।

আর এই ছাতার জন্যই আমি আজ পাবলিক প্লেসে থাপ্পড় খাইছি।

মানে?কী বলিস তুই এই সব?

আয়রা হিতৈষীকে পাবলিক প্লেসে ঘটে যাওয়া সম্পুর্ন ঘটনা বললে হিতৈষী হাসতে হাসতে বিছানায় গড়াগড়ি খাচ্ছে। আয়রা রেগে হিতৈষীর পিঠে এক কিল বসিয়ে দিল।

তুই আসলেই একটা পেত্নী।

প্রান্ত ছেলেটার কলিজা বড়। আমার এই ঝাল মরিচ কে চড় মেরেছে?ওরে তো নোবেল দেওয়া দরকার।

চুপ উগান্ডার বউ। তোরে আমি উগান্ডার প্রেসিডেন্টের ছেলের সাথে বিয়ে দিমু। নোবেল দেওয়া দরকার? নোবেল ম্যান রে আইনা হাতে তুলে দে।যেনো সারা জীবন ঐডার সাথে সংসার করে খায়।

আয়রার কথায় হিতৈষী বললো,,
প্রেসিডেন্ট এর ছেলে বাহ্ আমি রাজি। তুই নিয়ে আয় যা।

আয়রা বিছানায় বসে হিতৈষীর চুল টেনে ধরে বললো ওই পোলার তো খবর আছে সাথে তোর ও।২মাস থাকুক আর ২ দিনই থাকুক এর জীবন আমি তেজপাতা করে দিবো।

হিতৈষী মাথায় হাত দিয়ে বললো,,প্রান্ত ভাই আপনি গেছেন।টা টা,,
.
.
আয়রু,হিতু খাবার খেতে আয়। খিচুড়ি রান্না করছি গরম গরম।আয়,,,,

হিতৈষী আর আয়রা ডাইনিং টেবিলে বসলো।

আয়রা প্রান্ত কে একটু ডেকে আনতো। ছেলেটা সেই দুপুরে আসছে। এখন ও কিছু খায় নি।যা ডেকে নিয়ে আয়।

আয়রা বসা থেকে উঠে প্রান্তর রুমে চলে গেল। হিতৈষী আয়রার হাব ভাব দেখে হাসতে হাসতে শেষ। আয়রার হাব ভাব টা ঠিক এমন,,,প্রান্ত কে নোংরা কাঁদায় চুবাতে পারলে তার শান্তি লাগতো।

আয়রা দরজা ঠেলে রুমে ঢুকতেই প্রান্ত কে টাওয়াল পরা দেখে চোখ বন্ধ করে এক চিৎকার দিলো।প্রান্ত আয়রার হাত ধরে টান মেরে নিজের কাছে এনে হাত দিয়ে আয়রার মুখ চেপে ধরলো।

আয়রা চোখ বন্ধ অবস্থায় নিজেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার জন্য ছটপট করছে।

প্রান্ত আয়রাকে এক ধমক দিয়ে বললো,,,
এই মেয়ে এইইইই,,,,
তোমার কী কমন সেন্স নেই এই ভাবে হুট করে কেউ কারো রুমে ঢুকে?আর এত জোরে চিৎকার করছো কেন?ভূত আমি নাকি ছেলেদের কে খালি গায়ে কোনো দিন দেখো নি?

আয়রার খুব কাছে প্রান্ত। আয়রা চোখ পিটপিট করে মেলে তাকালো।প্রান্তর চোখের দিকে তাকাতেই আয়রার বুকের মাঝে ধক করে উঠলো। চোখগুলো যেন স্নিগ্ধ হয়ে আছে। চোখের উপরে চড়িয়ে পড়া চুল থেকে টপটপ করে পানি পড়ছে। আয়রা একটা ঢোক গিলে প্রান্তর থেকে অনেক টা দূরে সরে গেল।প্রান্ত ভ্রু কুঁচকে আয়রার দিকে তাকিয়ে আছে।

আয়রা রুম থেকে বের হওয়ার সময় পেছনে ফিরে বললো,,মা খেতে ডাকছে।

আয়রা আর দাঁড়ালো না।
রুম থেকে বের হয়ে চলে গেলো।

ডাইনিং এ এসে চেয়ারে বসে আয়রা বড় করে একটা নিঃশ্বাস ছাড়লো। রান্না ঘরে থাকায় আয়রার চিৎকার তার মা শুনতে না পারলে ও ডাইনিং এ বসে থাকা হিতৈষীর কান এড়িয়ে যায়নি।

হিতৈষী আয়রার দিকে ভ্রু কুঁচকে মুখটাকে সিরিয়াস করে বললো,,
কি হয়েছে আয়রু,,? চিৎকার দিয়ে ছিলি কেন?

আয়রা কিছু বলতে যাবে তার আগেই ওর মা আচার নিয়ে আসতে আসতে বললো,, আয়রা যদি চিৎকার দেয় তাহলে এর একটাই কারণ তেলাপোকা।

ইসসস,,, খচ্চর 🤧
আমি তেলাপোকা দেখে চিৎকার করি না। তেলাপোকা কে ভয় দেখানোর জন্য চিল্লাই।

প্রান্ত কে আসতে দেখে আয়রার মা মুচকি হেসে বললো,,
আসো বাবা বসো। এখন অবধি কিছুই পেটে গেলো না তোমার।

প্রান্ত চেয়ার টেনে বসে বললো,, সমস্যা নাই আন্টি।

আয়রা প্রান্তর দিকে এক নজর তাকালো।তার পর খাওয়ায় মনোযোগ দিলো।

হিতৈষী আয়রার পায়ে খোঁচা মারলে আয়রা বিরক্ত হয়ে হিতৈষীর দিকে তাকালো। হিতৈষী আয়রার দিকে তাকিয়ে ফিসফিস করে বললো,, তেলাপোকা টা কিন্তু অনেক বড়।এত বড় তেলাপোকা দেখে সবাই ভয় পাবে।
.
.
১টার লাঞ্চ ৩টা বাজে করছি। ভাগ্য ভালো এটা অন্যের বাড়ি।প্রান্ত বিছানায় শুয়ে শুয়ে ফেসবুক স্ক্রল করছে। হঠাৎ করে তার চোখ পড়লো একটা আইডির দিকে।ডেভিল আয়রা।

প্রান্ত আইডির নাম দেখে হাসলো। ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়ে দিলো সেখানে।
.
.
তখন এমন চিল্লাইছিলি কেন?

তেলাপোকা দেখে।
.
.
মাগরিবের আজান দিচ্ছে চার দিকে। সন্ধ্যা হয়ে গেছে বলে কেউ বলবে না। পাহাড়ি এলাকা তার উপর ঝুম বৃষ্টি পড়ছে বাইরে তাকালেই কেমন গভীর রাত মনে হচ্ছে।

আয়রার আব্বু এখনো ফেরেনি। ফিরবেন ও না আজ। মিটিং এর জন্য চিটাগাং চলে গেছে তিনি।

আয়রার মা আর আয়রা কে দেখলো প্রান্ত নামাজ পড়তে। কিন্তু হিতৈষী কে দেখলো না কোথাও।
মাথা ঘামানো না সে। রুমে এসে বসলো।ব্যাগ থেকে লেপটব বের করে কাজে মন দিলো।

চলবে,,, 🍁

শ্রাবণ দিনের বৃষ্টিতে পর্ব-০২

0

#শ্রাবণ_দিনের_বৃষ্টিতে🖤
#পার্ট_২
#Writer_Liza_moni

দুই মাসের ভাড়াটিয়া!এটা আবার কেমন মামুনি?

দুই মাস ও এখানে থাকবে। তোকে এত ভাবতে হবে না।
যা ফ্রেশ হয়ে নে।ভিজে তো শেষ হয়ে গেছিস।

মেয়েটা মাথা নেড়ে চলে গেল।
প্রান্ত সোফায় বসে বসে মোবাইল টিপছে। খুব বোর লাগছে তার।
.

আয়রা চুল মুছে তোয়ালে মেলে দেওয়ার জন্য বেলকনিতে যায়। বৃষ্টি এখন কমেছে। বেলকনিতে লাগানো আয়রার শখের ফুল গাছে অনেক সুন্দর ফুল ফুটেছে।
মাধবীলতা ফুল গাছে এত ফুল ফুটেছে যে পাতা দেখা যাচ্ছে না। আয়রার চোখ পড়লো গোলাপ গাছের দিকে।ভ্রু কুঁচকে গেল তার।

সকালে দেখে গেলাম দুই টা কালো রঙের গোলাপ ফুটেছে আর এখন একটা ও নাই?

আম্মুইইইইইই আয়রা গলা উঁচু করে মাকে ডাক দিল।

আয়রার মা যলদি রান্না ঘর থেকে আয়রার রুমে আসলেন।
মেয়েটা হঠাৎ রেগে গেলো কেন ?এই মেয়ের যা রাগ ,,,,

কীরে কী হয়েছে তোর?এই ভাবে ডাকছিস কেন?

আয়রার নাকের ডগা লাল হয়ে গেছে। মেয়েটার এই একটা দিক তার মায়ের খুব ভাল্লাগে।ও যখন রেগে যায় তখন নাকের ডগা লাল হয়ে যায়।ফর্সা নাকটা দেখতে তখন কিউট লাগে।

আমি সকালে কলেজে যাওয়ার সময় দেখে গেছি আমার কালো গোলাপ গাছে দুই টা ফুল ফুটেছে এখন সেগুলো কোথায়? ছিঁড়ছে কে?
আমার ফুল গাছের ফুল ছেঁড়া একদম পছন্দ না। গাছের ফুল গাছে সুন্দর।

আমি তো জানি না মা।কে ছিঁড়তে পারে বল তোর তো কোনো ছোট ভাই বোন ও নেই।যে সে ছিঁড়বে। আয়রা চুপ করে গিয়ে বিছানায় বসলো।

অনেক কষ্টের গাছ তার। অনেক কষ্ট করে গাছের যত্ন নেয় সে।তার গাছের ফুল অন্য কেউ কেনো ছিঁড়বে যেখানে সে নিজেই ছিঁড়ে না।

অনু কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে বললো,,

হিতৈষী আপু আসছে তাইনা ?

আয়রার মা কপালে হাত দিয়ে বিড় বিড় করে বললো,, হিতৈষী তুই আজ গেছিস মা,,,

কি হলো বলো?ঐ হিতৈষীর বাচ্চা আসছে সকালে ?

হিতৈষী সকালে আসছিল।

এখন ও আসে নাই ও?

আসছে,,, রুমে গেছে,,,

আয়রা বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ালো।
আজকে তোর একদিন কি আমার একদিন হিতৈষীর বাচ্চা 😤
তোরে আমি কাঁচা গিলে খামু,,,,

আয়রা রুম থেকে বের হয়ে হিতৈষীর রুমে গেল।

আয়রার চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আয়রার মা কপাল চাপড়ে বললো,,
হিতৈষী তু আজ গেয়া বেটা ,,,,
.
.
হিতৈষীর রুমে গিয়ে দেখে হিতৈষী চুল মুছতেছে,,,
আয়রা হিতৈষীর চুলে টান দিয়ে ধরে বললো ,,,
তুই যে নাম্বার ওয়ান খচ্চর সেটা আমি জানি। কিন্তু তুই যে এত বড় চোর সেটা আমি আজ জানলাম।

আয়রু সোনা,মোনা,জানু মানু সলি বাবু,,,,
আর জীবনে ও তোর গাছের ফুল ছিঁড়বো না আমি।

মাফ কর জান,,,

তুই আমার পা ধরলে তোরে মাফ করমু না। আমার কত্ত সুন্দর ফুল গুলো তুই ছিঁড়ে নিচোস,,,,তোর খবর আছে পেত্নী।

আহহ লাগছে তো চুল ছাড় না বইন,,,

আয়রা চুলে জোরে একটা টান মেরে ছেড়ে দিল।

ফুল গুলো দিয়ে কী করছোস তুই?
নেক্সট টাইম যদি আমার ফুল গাছের দিকে নজর দিস তাইলে তোর চোখ তুলে আমি মার্বেল খেলমু,,,,
.
.
প্রান্ত ড্রইং রুমে বসে বসে ওদের ঝগড়া শুনতে পাচ্ছে।

আয়রা হিতৈষীর রুম থেকে বের হয়ে ড্রইং রুমে আসলো। আয়রার খেয়াল নেই যে ড্রইং রুমে প্রান্ত বসে আছে।সে গিয়ে সোফায় বসে টিভি অন করে দিলো।টম এন্ড জেরি দেখতে তার ভাল্লাগে। এখন সে সেটাই দেখছে।

প্রান্ত ভ্রু কুঁচকে আয়রার দিকে তাকালো।আজব মেয়ে তো,,,
এখনো পিচ্চিদের মতো কার্টুন দেখে।

টি টেবিলের উপর রাখা সান গ্লাস চোখে পড়তে আয়রার ভ্রু কুঁচকে গেল।
এই বৃষ্টির দিনে আবার কোন পাগলে সান গ্লাস পড়ে?

পাশ ফিরে প্রান্ত কে দেখে এক লাফ দিয়ে সোফা থেকে উঠে দাঁড়ালো আয়রা। হঠাৎ করে প্রান্ত খেয়াল করে ভয়ে পেয়ে গেছে সে।বুকে থু থু দিয়ে রিমোট নিয়ে টিভি অফ করে দিল।

প্রান্তর খুব হাসি পাচ্ছে আয়রার কান্ড দেখে।

আয়রা নিজের রুমে দৌড় দিল। কেমন বিচ্ছিরি অবস্থা। আমার পাশেই লোকটা বসে ছিল আর আমি দেখিনি।দিন দিন বলদি হয়ে যাচ্ছি।

আয়রা আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।গালে সেই চড়ের দাগ নেই এখন। লোকটা কী অদ্ভুত। এই বৃষ্টির মধ্যে সান গ্লাস পড়ে। দেখতে তো মাশাআল্লাহ।
কিউটের ডিব্বা।

আয়রা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের দিকে নিজে আঙ্গুল তুলে বললো,,
কিসের কিউট?এই ছেলে কোনো কিউট হলো? অসভ্য লোক একটা।কী জোরে থাপ্পর মেরে ছিল আমায়।এত জোরে আমার মা ও কোনো দিন মারে নাই।এই অসভ্য লোকের কোনো দিন ও বিয়ে হবে না হুঁ,,,,

আরফি আয়রা কে চড় মেরেছে এর শাস্তি তো ঐ খচ্চর কে পেতেই হবে,,,, ওয়েট এন্ড সি,,,

.
.
শুনো বাবা,,, তুমি যখন আমাদের বাড়িতে দুই মাস আছো এর জন্য কোনো ভাড়া তোমাকে দিতে হবে না। তুমি উপরের তলায় না থেকে
আমাদের এখানেই থাকো। গেস্ট রুমে। তোমার মা আমার খুব ভালো ফ্রেন্ড। তুমি আমাদের বাড়ির অতিথি। তোমার আঙ্কেল তোমাকে এই আমাদের সাথেই থাকতে বলেছেন।

আমি দুই মাস না ও থাকতে পারি,,,১মাস বা তার ও কম সময় থাকতে পারি এখানে।

সমস্যা নাই। তোমার যত দিন কাজ আছে তত দিন এখানে থাকো।

আয়রা,,, এদিকে আয়,,,

আয়রা রুম থেকে বের হয়ে এসে বলে কী হয়েছে আম্মু?

আয়রার মা মুচকি হেসে বললো,,
এইটা হলো আদনান প্রান্ত। তুই প্রান্ত ভাইয়া বলে ডাকিস।

ক্রাশকে ভাইয়া বানাই দিলো,,,,ইটস নট ফেয়ার,,

এটা আমার মেয়ে আরফি আয়রা। তোমার ছোট বোনের বয়সী।

প্রান্ত কিছু বললো না। এমন সময় হিতৈষী রুম থেকে বের হয়ে আসে।প্রান্ত সে দিকে তাকালো।

আমি ও পরিচিত হতে চলে আসছি,,,

প্রান্ত এটা হলো হিতৈষী। আমার আরেক মেয়ে বলতে পারো।

প্রান্ত ভ্রু কুঁচকে বললো,,
আরেক মেয়ে বলতে পারি মানে?

না কিছু না। এই দুই জনই আমার আদরের দুই রাজ কন্যা।

আয়রা প্রান্ত কে গেস্ট রুম দেখিয়ে দে।ও ফ্রেশ হয়ে নিক। হিতৈষী আয়তো এদিকে,,,

কেমন জানি অদ্ভুত ব্যাপার। দুইজনের মধ্যে আকাশ পাতাল তফাৎ।এরা দুজন বোন সত্যি ?

আয়রা প্রান্ত কে রুম দেখিয়ে দিয়ে যাবার সময় বললো,,,
আপনার মাথায় নিশ্চয় স্ক্রু ঢিলা আছে,,, এই বৃষ্টির দিনে ও সান গ্লাস পড়েন অদ্ভুত,,,

এই মেয়ে শুনো,,,
তুমি আমার বয়সে ছোট তাই তুমি করে বলছি,,,
আমি সান গ্লাস পড়ি এর কারণ আছে।

আয়রা ভ্রু কুঁচকে বললো কী কারন?

আমার চোখের দিকে তাকিয়ে দেখো,,,

আয়রা চোখ ছোট করে তাকালো।এত সময় খেয়াল করেনি আয়রা,,,এই ছেলের চোখের পানি হালকা সবুজ,,,

বেশি সময় তাকাই ও না ছোট বোন। অনেক মেয়ে পাগল এই চোখের জন্য ,,,তাইতো এই উপায়,,,

আয়রা এই প্রথম দেখলো এমন চোখ,,,
এই চোখ দেখে আরেক বার বাঁশ মানে ক্রাশ খেলো আয়রা,,,

এমন সবুজ চোখের মণি এলিয়েনের হয়,,,এই লোকটা নিশ্চয় ভিন গ্রহের প্রাণী,,,,

চলবে,,,, 🍁

শ্রাবণ দিনের বৃষ্টিতে পর্ব-০১

0

#শ্রাবণ_দিনের_বৃষ্টিতে🖤
#সূচনা_পর্ব
#Writer_Liza_moni

সাদা রঙের ড্রেস পরে পাবলিক প্লেসে দাঁড়িয়ে বৃষ্টিতে ভিজতে একটুও কী আপনার বিবেককে বাঁধছে না মিস চাশমিস? আপনি কি নিজেকে বলিউডের নায়িকা মনে করেন? নিজের শরীরের ভাঁজ দেখিয়ে ফেমাস হতে চান?

কারো রাগী স্বরে বলা কথাটা শুনে পেছনে ফিরে তাকায় আয়রা।
অচেনা একটা ছেলে। পকেটে এক হাত ঢুকিয়ে অন্য হাতে ছাতা ধরে আছে। কাঁধে ব্যাগ।টি শার্টের গলার কাছে কালো রঙের সান গ্লাস আটকানো। সাদা টি শার্টের উপরে কালো জ্যাকেট। ঠোঁট গুলো গোলাপি।আয়রা ছেলে টাকে দেখে ভয়ানক একটা বাঁশ খেলো। মানে যাকে বলে ক্রাশ।

ছেলেটা ভ্রু কুঁচকে আয়রার দিকে এগিয়ে এলো।
আপনি তো হাই লেভেলের অসভ্য মেয়ে। কানে কথা যায় না?
ছেলেদের কে ইমপ্রেস করার জন্য এই ভাবে রাস্তায় সেটাও কিনা আবার পাবলিক প্লেসে,,, সাদা জামা পড়ে ভীজছেন?

আয়রা ছেলে টাকে দেখে ক্রাশ খাইলেও এখন ওর কাছে মনে হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে অসভ্য ছেলে এই ছেলে। মুখে যা আসছে তাই বলে যাচ্ছে।

“শ্রাবণের দিন।যখন তখন বৃষ্টি পড়ছে। এই আকাশ থম মেরে আছে তো এই ঝুম বৃষ্টি পড়ছে। বৃষ্টি পড়ার কোনো ঠিক ঠিকানা নেই। কলেজ থেকে বাড়িতে ফিরছিল আয়রা।পরনে তার সাদা রঙের কলেজ ড্রেস। বান্ধবীদের সাথে আড্ডা দিতে দিতে বাড়িতে ফিরছিল। তখন আকাশে ঘন কালো মেঘ থাকলে ও বৃষ্টি পড়েনি।
কলেজ ফ্রেন্ডদের বিদায় দিয়ে নিজের বাড়ির রাস্তার গলিতে ঢুকার পর আকাশ ভেঙ্গে বৃষ্টি আসে।
ছাতা নিতে একদম ভুলে গিয়েছিল আয়রা। চার পাশের দোকান পাটে মানুষের কলোহল। বৃষ্টির জন্য সবাই দোকানের ছাউনির নিচে দাঁড়িয়ে আছে।সব পুরুষ।এই বৃষ্টির দিনে কোনো মেয়ে বা মহিলাকে চোখে না পড়ায় আয়রা আর দোকানের ভেতরে গেলো না। বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে হাঁটতে লাগলো।”
.
.
আপনার ছাতা কোথায়?

আয়রা শান্ত কন্ঠে উত্তর দিল আনি নাই। ভুলে গেছিলাম আনতে।

ছেলেটা ভ্রু কুঁচকে আয়রার দিকে এগিয়ে এলো।৫ সেকেন্ড আয়রার দিকে তাকিয়ে থাকার পর ঠাসসস করে এক চড় বসিয়ে দিল আয়রার গালে।

আয়রা তাজ্জব বনে গেল।গালটা পুরো জ্বলে যাচ্ছে। মাথা ঝিমঝিম করছে। হতভম্ব হয়ে আয়রা ছেলেটার দিকে তাকিয়ে আছে।

ছেলেটা আয়রার সাইড ব্যাগের ভেতর থেকে উঁকি দেওয়া ছাতার মাথাটা ধরে বের করে আয়রার দিকে ধরলো।
ছাতাটা দেখে আয়রা বিষ্মিত দৃষ্টিতে তাকালো।

তার স্পষ্ট মনে আছে সে ছাতা নিতে ভুলে গিয়েছিল। কিন্তু এই ছাতা ব্যাগের ভেতর আসলো কখন?

ছেলেটা আয়রার হাতে ছাতাটা ধরিয়ে দিয়ে বলল,,
আপনাকে চড়টা মেরেছি কারন আমার মিথ্যা কথা একদম সহ্য হয় না।আর এটা আপনার প্রাপ্য ছিল।
ভুলে যাবেন না আপনি একজন মেয়ে।

ছেলেটা চার দিকে চোখ বুলিয়ে নিয়ে আবারো আয়রার দিকে তাকালো। তারপর বললো,,
চার দিকে একটু তাকিয়ে দেখেন,, বিশেষ করে ঐ ছেলে গুলোর দিকে। ওরা আপনাকে চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছে। আপনি একবার আপনার নিজের দিকে তাকিয়ে দেখুন তো আপনার নিজের নিজেকে এই ভাবে দেখতে ইচ্ছে করবে নাকি?

আয়রা কিছু বললো না। অপমান বোধ হচ্ছে ভীষণ। দোকানের সব মানুষ ওদের দিকে তাকিয়ে আছে।এখনো ঝুম বৃষ্টি পড়ছে।

ছেলেটা নিজের গায়ের জ্যাকেট খুলে আয়রার হাতে দিয়ে বললো,, পড়ুন এটা।
আপনার নিজের দোষে আপনি এই সব ছেলের চোখ দ্বারা ধর্ষণ হচ্ছেন।

ধর্ষণ শব্দ টা কানে যেতেই আয়রার কলিজা কেঁপে উঠলো। তার থেকে ও বেশী রাগ হলো ছেলেটার উপর।
এই শব্দ টা একদম সহ্য হয় না আয়রার। ভীষণ কষ্ট হয় ওর।

ছেলেটা চোখে সান গ্লাস লাগিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার সময় পেছন ফিরে আয়রার উদ্দেশ্য বললো,,
জ্যাকেটা ফেলে দেওয়ার চিন্তা ও করবেন না।গায়ে জড়িয়ে নিন।
ছেলেটার চলে যাওয়ার দিকে একবার তাকিয়ে আয়রা হাতের জ্যাকেটের দিকে তাকালো।
নিজের শরীরের দিকে তাকিয়ে আয়রা থ হয়ে গেল। সাদা জামাটা প্রায় শরীরের সাথে লেপ্টে আছে।
সব অসস্থি এসে ঘেরাও করে আয়রাকে।

জ্যাকেটটা গায়ে দিয়ে বাড়ির পথে হাটা শুরু করে। সারাটা সময় ঘটে যাওয়া ঘটনাটা মাথায় ঘুরপাক খায় তার।
.
.
বাড়ির গেটের সামনে এসে মা আছে নাকি দেখতে বাড়ির মেইন দরজার দিকে উঁকি দেয়। মায়ের সামনে কখনো এই অবস্থায় যাওয়া যাবে না। তাহলে থাপড়াবে শুধু।

গেটের সামনে দাঁড়িয়ে বাড়ির দরজার দিকে উঁকি দিতেই আয়রার চোখ চড়কগাছ। সেই ছেলেটা দাঁড়িয়ে আছে সেখানে।

আয়রা নিজের বুকে থু থু দিয়ে চোখ ডলে ভালো করে দেখলো না সত্যি সেই ছেলেটা দাঁড়িয়ে আছে।

এই লোকটা আমাদের বাড়িতে কেন আসছে? আল্লাহ জানে,,,

আয়রা আবারো উঁকি দিয়ে দেখে,, তার মা ছেলেটার সাথে হাসি মুখে কথা বলছে।যেনো কত পরিচিত।

তারা বাড়ির ভেতরে ঢুকে গেলে আয়রা ও গেটের ভেতরে ঢুকে মেইন দরজার দিকে এগিয়ে যায়।ড্রইং রুমে উঁকি দিয়ে দেখে ছেলেটা সোফায় বসে আছে। হাত দিয়ে চুল ঝাড়ছে।মা নেই কোথাও।

আয়রা হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো। কলেজের কেটেস গুলো খুলে ছেলেটার সামনে দাঁড়িয়ে কোমরে হাত দিয়ে বললো,,
আপনি আমাদের বাড়িতে কী করেন?

ছেলেটা চোখ উপরে তুলে আয়রা দেখে অবাক হলো। আপনি কি করেন এখানে?

আজব তো মশাই। আমার বাড়িতে আমি থাকবো না তো কি আপনি থাকবেন?

রান্না ঘর থেকে আয়রার মা আসতে আসতে বললো,, আয়রা এসেছিস?

মাকে এদিকে আসতে দেখে আয়রা দিল নিজের রুমে দৌড়। রুমে এসে দরজা লাগিয়ে চোখ বন্ধ করে ফোঁস করে একটা নিঃশ্বাস ছাড়লো। জোর বাঁচা বেঁচে গেছি।
এখন যদি দেখতো আমার গায়ে কোনো ছেলের জ্যাকেট নির্ঘাত উরা ধুরা থাপড়াইতো।

.
ছেলেটা সোফায় বসে আয়রার চলে যাওয়ার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইলো। তার বোধগম্য হলো না আয়রা কেন দৌড় দিল।

আয়রার মা এক কাপ কফি নিয়ে এসে ছেলেটার হাতে দিল। ছেলেটা মিষ্টি হেসে ধন্যবাদ বলে কফিটা হাতে নিলো।

আয়রার মা বলে উঠলো,,
তোমার মায়ের সাথে আমার সকালে কথা হয়েছিল।বলে ছিল তোমার ব্যাপারে। আমি তোমার জন্য আমাদের উপরের তলায় ঘর খালি করে দিয়েছি।যদি ও আমি আর তোমার আঙ্কেল কোনো ব্যাচেলার ছেলে কে বাড়ি ভাড়া দিই না। তোমার মা যেহেতু আমার কলেজ ফ্রেন্ড তাই অনেক বুঝিয়ে সুজিয়ে তোমার আঙ্কেল কে রাজি করিয়েছি।

ছেলেটা প্রতি উত্তরে হাসলো। তার পর বললো,, আমি বান্দরবান আছি মাত্র দুই মাস। খুব একটা প্রয়োজন ছিল বিধায় আমি এখানে আসছি। দুই মাস পর কাজ শেষে চলে যাবো।

তোমার নামটাই তো জানা হলো না।কী নাম তোমার?

আদনান প্রান্ত।

বাহ্ সুন্দর নাম। আচ্ছা তুমি কিছুক্ষণ এখানে বসো আমি চুলার উপর থেকে তরকারি নামিয়ে তোমাকে উপরের রুম দেখিয়ে দিবো।
বলেই আয়রার মা চলে গেলেন রান্নাঘরে।

প্রান্ত সোফায় পা ভাঁজ করে বসে মোবাইল নিয়ে মায়ের নাম্বারে কল দিলো,,,

মা আমি বাড়ি খুঁজে পেয়েছি।

আচ্ছা ঠিক আছে। সাবধানে থাকিস। রাত করে আবার বাড়ি ফিরিস না। পাহাড়ি এলাকা।ওটা তোর ফেনী শহর না।আর অন্যের বাড়িতে থাকবি দুই মাস তো একটু সাবধানে থাকিস। তোর ঘুরা ঘুরি শেষ হলে আসার জন্য যেন বলতে না হয়।

প্রান্ত হাসলো মায়ের কথায়।
চিন্তা কইরো না। তোমার সব কথা শুনে চলবো।
.
.
আয়রা রুমে গিয়ে কাভার্ড থেকে কাপড় নিয়ে ওয়াস রুমে চলে গেল।

ওয়াস রুম থেকে বের হয়ে এসে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ডান গালে হাত দিয়ে দেখতে লাগলো। লাল হয়ে আছে এখনো।কী জোরে চড় মেরেছে এই লোক।খবিস পোলা। তোর কোনো দিন ও বিয়ে হবে না দেখিস।
.
.
পর পর চার বার কলিং বেল বেজে উঠলো। কাউকে আসতে না দেখে প্রান্ত গিয়ে দরজা খুলে দিল। সামনে তাকাতেই নিজের কয়েকটা হার্ট বিট মিস করলো প্রান্ত।

“কালো রঙের মসলিন শাড়ি পরা , দুই হাত ভর্তি কালো রঙের কাঁচের চুড়ির ঝন ঝন শব্দ। কপালে একটা কালো টিপ। চোখে গাঢ় কাজল। কোমর অবধি ছড়িয়ে পড়া সিল্কি চুল। কানের মধ্যে কালো পাথরের ঝুমকা। কানের উপরে চুলের মধ্যে গুঁজে রাখা ভেজা কালো গোলাপ। পাতলা গোলাপী ঠোঁট জোড়ায় বিন্দু বিন্দু পানি। মেয়েটা ছাতার পানি ঝাড়ছে।”

হলদেটে ফর্সা গায়ের রং মেয়েটার। মুখের মধ্যে পাহাড়ি কন্যাদের মত আমার।হয় তো পাহাড়ি এলাকায় থাকে বলে।

প্রান্ত কে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে মেয়েটা ভ্রু কুঁচকে ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে বলল,,
আপনি কে? আগে কখনো দেখেনি তো আপনাকে?

প্রান্ত সোফায় এসে বসলো আবার। কিন্তু মুখে কিছু বললো না।

আয়রার মা রান্না ঘর থেকে বের হয়ে এসে বলেন,,,
ও আমাদের বাড়ির দুই মাসের ভাড়াটিয়া।

চলবে,,,, 🍁