!
বুড়ো টা ভদ্র সভ্য ভালো একজন মানুষ,
…..
কিন্তু আমি কি করলাম?
শেষমেশ এই বুড়োর বুকে ঠাই হলো আমার?
….
ইসসস আমি এই লজ্জায় লাল হয়ে যাওয়া মুখটা,
ওনা কে দেখাবো কি করে?
……
আমি তো বুড়ো টাকে ইচ্ছে করে খামচে ধরিনি?
…..
জানি না বুড়ো টাকি ভাবছে আমাকে নিয়ে?
…
এতদিনে বুঝলাম মেয়ে আমার কেন?
চব্বিশঘণ্টার আঠারো ঘন্টা মায়ের কোলের মধ্যে ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে কাটায়,
.. ….
উনি আসলেই এতো টাই কিউট,
আর বাচ্চা যে ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে ও ওনাকে বাচ্চার মতো লাগে,
..
আপনি আমার কোমর থেকে হাত টা সরালে ভালো হয়,
….
হ্যা সরাচ্ছি,
….
তারপর উনি কোমর থেকে হাত সরিয়ে নেয়,
আমি মেয়ে কে ডেকে তুলে ধরে ধরে ওকে ওর রুমে গিয়ে শোয়াই,
….
কিছুক্ষণ পরে ফ্রেশ হয়ে বুড়ো টার রুমে গিয়ে দেখি উনি ওখানে নেই,
…
তাই কিচেনে গিয়ে ওনার জন্যে কফি বানিয়ে নিয়ে ছাদে গিয়ে দেখি,
…..
মেয়ে ওনা কে জড়িয়ে কাঁদছে আর বলছে,
..
বাবা তুমি মা কে বিয়ে করে নাও না বাবা,
যদি মায়ের ছেলেমেয়েরা এসে মা কে থেকে কেড়ে নিয়ে চলে যায় তখন?
…..
বাবা আমি মা কে অনেক ভালোবাসি বাবা,
তোমার জন্যে না হয় আমার জন্যে তুমি মা কে বিয়ে করে নাও,
…..
মা তোমার মায়ের স্বামী সংসার আছে উনি কেন আমাকে বিয়ে করবে বলো?
উনি তো ওনার স্বামী সন্তান কে এতকিছুর পরে ও অনেক ভালোবাসেন.
……
উনি আমাদের কাছে আছেন,
আমাদের খেয়াল রাখছেন এটাই তো আমাদের জন্যে অনেক এর থেকে বেশি কিছু আমাদের ওনার থেকে আশাকরা উচিত নয় মা তুমি সেটা বোঝার চেষ্টা করো,
….
আমি বুঝি কিন্তু আমার মা কে চাই মানে মাই চাই,
……
বাবা মেয়ের কথা শুনে বুক টা চিনচিন করে ওঠে আমার,
…..
আমি যাদের এতো ভালোবেসেছি তারা আমাকে রাস্তায় ফেলে গেছে,
…
যাদের আমি চিনি না তারা আমাকে রাস্তা থেকে তুলে রাজ প্রাসাদে ঠাই দিয়েছে,
…..
আমি কি পারিনা আমার মেয়ে টাকে ও বুড়ো কে সারাজীবনের জন্যে আপন করে নিজের কাছে আগলে রাখতে?
…..
আমি কি পারিনা?
হ্যা আমি পাড়ি অবশ্যই পারি,
উনি পারলে আমি ও পারবো,
…..
মা তুমি কাঁদছ কেন?
……
কোই কিছুনা তো এমনি?
…..
এমনি কেন?
তুমি ও কাঁদছ তোমার বাবা ও কাঁদছে কেন মা?
…
তখন মেয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরে বলে,
….
মা তুমি আমাকে ছেড়ে চলে যাবে না তো?
….
না মা কোথায় যাবো আমি আমার মেয়ে কে ছেড়ে?
..
কেন তোমার বাচ্চাকাচ্চা গুলো কাছে,
…..
যাবো না আমি ওদের কাছে কখনওই ফিরে যাবো না মা,
….
তাহলে তুমি বাবা কে বিয়ে করে সবসময় আমার মা হয়ে থাকবে মা?
….
রুহানি,
….
আপনি মেয়ে কে বকছেন কেন?
..
ওই?
……
কি ওই?
জান গিয়ে বিয়ের ব্যবস্থা করুন,
আমার মেয়ে যেটা চাইছে সেটাই হবে,
….
তারপর আমি মেয়ে কে নিয়ে রুমে চলে যাই,
….
পরেরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি মেয়ে আমার পাশে নেই,
..
আমি শাওয়ার নিয়ে বাথরুম থেকে বেড়তেই দেখি,
..
রুহানি ওর বন্ধুদের সাথে গায়ে হলুদের সাড়ি ও বেলি ফুলের ওর্নামেন্টস বানিয়ে নিয়ে এসেছে,
…
কি হলো মা?
এতক্ষণ কোথায় ছিলে?
…..
বারে আমার বাবা মায়ের বিয়ে বলে কথা আমি কি বসে থাকবো নাকি হুমম,
….
আসো তো মা তোমাকে গায়ে হলুদের জন্যে সাজিয়ে দেই,
…
বুড়োবুড়ির বিয়ে তাতে আবার গায়ে হলুদ?
…
হ্যা মা হবে তারপর ওরা আমাকে গায়ে হলুদের জন্যে সাজিয়ে নিচে নিয়ে যায়,
….
নিচে গিয়ে দেখি পুরো বাড়ি লাল গোলাপ দিয়ে সাজানো হয়েছে,
আর বুড়ো টা তার বন্ধুূদের সাথে দাঁড়িয়ে হাসাহাসি করছে,
….
হয় তো বুড়ো ভাবছেন আমি ওনাকে ওনার পয়সা প্রপার্টির জন্যে বিয়ে করতে রাজি হয়েছি,
..
কিন্তু সত্যি হলো এটাই আমি আমার মেয়ে টাকে আমি অসম্ভব ভালোবেসে ফেলেছি,
তাই রাজি হয়েছি,
…
ওনার পয়সা প্রপার্টির প্রতি একটু ও লোভ নেই আমার,
…..
ইসসসস এই বুড়ি টাকে আজকে এতো সুন্দর লাগছে কেন?
……
জোয়ান পোলাপানের মতো বুড়ি টাকে ঘুরে ঘুরে দেখছি,
…
আরে দেখবো ওই তো বিয়ে করছি বলে কথা,
আমার বুড়ি বৌ হি হি হি,
চলবে,
!
হুহহহহ, আমি যেন কানে কিছু শুনিনি বুড়ি আমাকে বলে কিনা বুড়ো,
হা হা হা,
….
অবশ্য না বলে পারলাম না বুড়ি টা অনেক সুইট,
…
আঙ্কল?
….
হ্যা বাবা,
….
আপনি আন্টি কে নিয়ে ভেতরে বসে আছেন কেন?
চলুন বাহিরে চলুন বাহিরে আপনাদের ভালো লাগবে আঙ্কল,
প্লিজ আন্টি চলুন,
……
হ্যা বাবা চলো,
চৌধুরি সাহেব আপনি চলেন,
..
হ্যা আপনি এগোন আমি আসছি,
আমার একটা আর্জেন্ট কল করতে হবে,
..
ওকে ফাইন,
বাবা তুমি আমাকে নিয়ে চলো,
….
হ্যা আন্টি চলেন,
…
ইসসস এই বুড়ো টার আবার হলো টাকি?
যে আর্জেন্ট কল করতে গেছে?
…
কি জানি কি হবে হয় তো কোনো ইম্পরট্যান্ট কল?
….
ম্যাম?
……
ইয়েস?
….
ম্যাম ওই স্যর এই টিসু পেপার টা আপনাকে দিতে বলেছে,
..
কেই স্যর?
…
ওই?
….
কোই? ওখানে তো কেউ নেই?
পাশ ফিরে দেখি ওয়েটার টাও নেই,
..
কিন্তু,
কি আছে এই টিসু পেপারের মধ্যে?
খুলে দেখতে হচ্ছে তো,
.. …
টিসু পেপার খুলে দেখি,
সেখানে লেখা “I’m feeling so crushed on you”
….
হায় আল্লাহ কে আবার এই বুড়ির ওপরে ক্রাশ খেলো হুমমম?
হা হা হা,
…..
আচ্ছা এটা কি ওই বুড়ো টার কাজ?
না না বুড়ো টা না বুড়ো আবার এই বয়সে কি দেখে ক্রাশ খাবে হুমমম?
….
জানিনা কোন উল্লুকের কাজ?
যে যাই হোক অনুষ্ঠান টা শেষ হলে বাঁচি,
….
মা তুমি এখানে দাঁড়িয়ে কি করছ?
অনুষ্ঠান তো ওদিকে,
….
ও আচ্ছা,
…
দেখ বাবা ও তোমাকে খুঁজতে খুঁজতে এখানে চলে এসেছে,
….
মা আমি যাই তুমি বাবার সাথে আসো,
বাবা তুমি মা কে নিয়ে আসো,
..
হ্যা মা তুমি যাও আমরা আসছি,
….
ওকে তাড়াতাড়ি আসো,
….
চলুন,
..
হ্যা চলেন,
…
একটা কথা বলি?
..
হ্যা বলুন,
..
রুহানি আমার নিজের মেয়ে না একচুয়ালি আমি বিয়ে করিনি,
রুহানি আমার…….
……
আপনার বোনের মেয়ে তাই তো?
…
হ্যা আপনি জানলেন কি করে?
……
রুহানির কাছে শুনেছি,
আপনি ওকে অনেক ভালোবাসেন তাই না?
….
হুমমম ওকে ঘিরে আমার দুনিয়া,
আর এখন সেখানে আপনি এসে গেছেন,
…..
অনেস্টলি আপনি এসে আমার অনেক উপকার করেছেন,
নাহলে মেয়ে তো আমার মুখি দেখত না,
সারাদিন চুপ করে বসে থাকতো,
…
মা এনে দাও মা এনে দাও বলে পাগল করে ছাড়ত,
….
তাহলে মেয়ে কে মা এনে দেননি কেন?
….
আসলে এতকালে ও নিজের মনের মতো কাও কে খুজে পাইনি তাই?
…..
ওওওও,
বাহহহ বুড়ো টার এলেম আছে বলতে হয়,
….
আর আমার বুড়ো টাকে দেখ?
….
বিয়ে চল্লিশ বছর পরে ও আমি তাকে চিনতে পারিনি যে সে এতো জঘন্য,
…
কি হলো চুপ করে গেলেন কেন?
….
কিছুনা এমনি,
আপনি ফেসবুকিং করেন?
….
হ্যা ওই মাঝেমধ্যে আর কি?
….
আপনার ফেসবুক আইডি তে আমি একটু সার্চ দিয়ে দেখতে পারি প্লিজ?
…….
কেননা অবশ্যই,
এই নিন সার্চ দিন,
….
বাবাগো বাবা বুড়ির ও ফেসবুক আইডি আছে?
আগে তো বলেনি?
….
ইসসসস,
এই লোক টা এতো জঘন্য?
…..
চল্লিশ বছরের সংসারে লোক টা আমাকে বাড়ির চৌকাঠ ও মারাতে দেয়নি,
ঘুরতে নিয়ে যাওয়া তো দূরের কথা,
…..
আর সেই উনি ওনার নতুন বৌ কে নিয়ে থাইল্যান্ড গেছে হানিমুনে?
…..
যে কিনা আমাকে পায়ের গোড়ালি দেখলে বকা দিতো,
সেই এখন তার বৌয়ের নতুন বৌয়ের পরে থাকা ছোটো ছোটো ড্রেসে বিউটিফুল কমেন্টস করছে?
….
ওপরে আল্লাহ আছে সে সবি দেখছেন,
একদিন ঠিকি তোমার এই মেকি মিথ্যের বিচার হবে,
তখন তুমি পাবে অন্যায় করার ফল,
….
আশ্চর্য বুড়ি টার চোখ দুটো ছলছল করছে কেন?
..
উনি কি ওনার স্বামীর আইডি সার্চ করে দেখেছেন?
…..
এই বুড়ি টা এতো সাহস কোথা থেকে পায় আল্লাহ জানেন?
..
এই আপনি কি হাড়িয়ে গেলেন?
….
কোই নাতো?
বুড়ো বাসায় যাবো কখন?
…..
কিহহহ?
….
কিছুনা চৌধুরি সাহেব আমরা বাসায় যাবো কখন?
….
অনুষ্ঠান হয়ে গেছে এখনি যাবো মা চলো,
…
হ্যা চলো,
….
তারপর আমি গিয়ে বাবা মেয়ের মাঝে গিয়ে বসি,
…
বসার সাথে সাথে মেয়ে আমার বুকে মাথা রেখে ঘুমিয়ে যায়,
….
আজ সারাদিন আমার মেয়েটার ওপর থেকে অনেক ধকল গেছে,
….
তাই সে খট করে এসে পট করে ঘুমিয়ে পরেছে,
…
কিন্তু আমার ওতো ঘুম পাচ্ছে এখন?
তাই আমি মেয়ে কে জড়িয়ে ঘুমিয়ে পরি,
…..
বাসার কাছে এসে গেট খোলার শব্দ পেয়ে ঘুমঘুম চোখে চেয়ে দেখি,
….
..
আমি বুড়োর শার্ট খামচে ধরে ওর বুকে মাথা রেখে ঘুমিয়ে আছি,
এবং মেয়ে আমার বুকে মাথা রেখে ঘুমিয়ে আছে,
….
আর বুড়ো খুবি যত্ন সহকারে আমাদের সামলে ধরে আছে,
এবং তার হাত টা আমার কোমরে আছে,
….
আমি অনুভব করছি বুড়োর মাঝে কোনো নোংরামো নেই,
….
বুড়ো টা ভদ্র সভ্য ভালো একজন মানুষ,
!
!
!
চলবে
!
আমি কি মিশুর সাথে অন্যায় করে ফেললাম?
…..
বাড়ি টা তুমি যাওয়ার পরে খালিখালি হয়ে গেছে,
….
আমার উচিত হয়নি তোমাকে এভাবে অপমান করে তাড়িয়ে দেওয়া,
…
কোথায় আছো তুমি?
….
মা মা মা?
….
হ্যা মা বল?
. ..
আজকে তুমি আমার সাথে ইউনিভারসিটি তে যাবে?
…..
বলি কি জান গিয়ে ঘুরে আসুন ভালো লাগবে,
……
দেখো মা বাবা ও বলে দিয়েছে,
চলো না চলো না চলো না মা,
..
তুমি জানো আমার ফ্রেন্ডসরা ও ওদের মা কে নিয়ে আসবে,
..
আচ্ছা বাবা আমি যাবো,
আমি কি বলেছি আমি যাবনা?
…..
ওওওও আই লাভ ইউ মা,
……
সোনা মা,
…….
মা শোনো মা তুমি এই খয়েরি কালের সাড়ি টা পরে সুন্দর করে সাজবে কেমন?
….
সাজুগুজু করে যেতে হবে?
…..
হ্যা অবশ্যই আমার মা তুমি সাজুগুজু করে যাবে না?
সেটা কি হয় নাকি হুমম?
প্রয়োজনে আমি তোমাকে সাজিয়ে দিবো,
…
না মা আমি পারবো,
…..
তাতো পারবেই আমার মা বলে কথা,
….
আর এই যে বাবা?
…..
জ্বি মা?
…
তুমি ও তোমার ব্লাক কালারের কমপ্লিট সুট উইথ খয়েরি কালারের শার্ট টা পরে যাবে কেমন?
…
মা তোরা যাচ্ছিস যা এই বুড়ো টাকে নিয়ে টানাটানি করছিস কেন?
……
তুমি বুড়ো আমার মা তো বুড়ি না তোমাকে যেতেই হবে,
নাহলে তোমার খবর আছে,
…
আচ্ছা মা,
….
তাহলে যাও গিয়ে রেডি হয়ে আসো,
মা চলো আজকে তুমি আমাকে সাজিয়ে দিবে আর আমি তোমাকে সাজিয়ে দিবো,
….
ঠিক আছে মা চলো,
…
তারপর আমি গিয়ে আমার মেয়েকে সাজিয়ে দেই,
….
মেয়ে সেজে আমাকে তার পছন্দের খয়েরি কালারের সাড়ি পরিয়ে, লিপস্টিক লাগিয়ে সুন্দর করে খোপা করে,
কানে কানপাশা ও আংটি পরিয়ে দিয়ে বলে,
….
মা তোমাকে তো অল্প তেই এতো সুন্দর লাগছে আর একটু সাজলে না জানি কত সুন্দর লাগবে,
থাক বাবা আর সাজার দরকার নেই,
যদি চোর আমার মা কে চুরি করে নিয়ে যায়,
….
পাগলি মেয়ে আমার,
…
হা হা হা,
..
মা তোমার লিপস্টিক টা হালকা হয়ে গেছে একটু গারো করে দিয়ে দেই?
…..
আবার গারো কেন?
….
তোমার ঠোঁটের নিচের তিল টা হাই লাইট করার জন্যে,
….
ফাজিল মেয়ে মায়ের সাথে মশকরা করো?
….
শুধু যে মশকরা তা না আমি তো পারলে তোমাকে আবার বিয়ে দিয়ে দিবো,
…
দুষ্টু,
…..
আমি জানি আমি দুষ্টু তুমি বাবার কাছে যাও আমি একটা আর্জেন্ট কল করে আসছি,
…
আচ্ছা মা যাচ্ছি,
দোতলা দিয়ে সিরি বেয়ে নিচে নামার সময়ে খেয়াল করে দেখি,
…
চৌধুরি সাহেব আমার দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে,
…..
বুড়ো টা এভাবে তাকিয়ে আছে কেন?
আমি ও বুড়ি উনি ও বুড়ো তো এভাবে কি দেখছেন উনি,
.
বাবা?
….
হুমম?
…
কি হুমম?
মা কে আগে দেখনি নাকি?
…
কোই কিছুনা তো দেরি হয়ে যাবে চলো,
..
হ্যা চলো,
শোনা মা তুমি পেছনে বাবার পাশে বসবে আমি ড্রাইভারের পাশে বসবো,
…
আচ্ছা বাবা ঠিক আছে,
…..
কিন্তু মা আমরা ইউনিভারসিটি যাচ্ছি কেন?
…
ওহহহ মা বলতে ভুলে গেছি?
….
আজকে আমার ডিপার্টমেন্টে অনুষ্ঠান তাই ,
…
ও আচ্ছা
..
তারপর আমরা ইউনিভারসিটির উদ্দেশ্যে রওনা হই,
……
ইউনিভারসিটি পৌঁছতেই রুহানির ফ্রেন্ডসরা এসে আমাদের ভেতরে নিয়ে যায়,
……
তারপর ওই বুড়ো টার পাশে আমাকে বসিয়ে দেয়,
খেয়াল করে দেখি বুড়ো টা তখনো আমাকে দেখে মৃদু মৃদু হাসছে,
….
মা বাবা স্মাইল প্লিজ সাথে সাথে আমি ও চৌধুরি সাহেব হেসে দেই,
তখন বাচ্চা গুলো এসে খচখচ করে সেলফি তোলা শুরু করে দেয়,
….
ওদের সেলফি শেষে মেয়ে এসে বলে,
…..
মা আজকের অনুষ্ঠান আমার ডিপার্টমেন্টের হলে ও আজকের আকর্ষ তুমি,
….
আসলে তোমাকে তো ওরা দেখেনি তাই এভাবে ক্ষণেক্ষণে এসে সেলফি তুলে যাচ্ছে,
আর আমাকে গিয়ে কি বলছে জানো?
….
কি বলেছে মা?
…..
বলেছে তোর আম্মু টা অনেক সুইট আমাদের দিয়ে দিবি প্লিজ,
….
আমি বলেছি আমার প্রাণ নিয়ে গেলে ও মা কে দেওয়া যাবে না,
….
হা হা হা তাই নাকি মা?
…..
হ্যা বাবা,
…..
বাবা শোনো হ্যা মা বলো?
……
এই বেলিফুলের মালা টা মায়ের খোপায় পরিয়ে দাও না প্লিজ,
…..
কি হলো এভাবে কি দেখছ পরিয়ে দাও না দাও না প্লিজ,
….
মেয়ের কথা কানে গেছে তাহলে পরিয়ে দিন,
ব্যাটা বুড়ো যেন কোথাকার?
……
কিছু কি বললেন?
….
কোই নাতো পরিয়ে দিন,
…….
হ্যা দিচ্ছি,
…
হুহহহহহ আমি যেন কানে কিছু শুনিনি বুড়ি আমাকে বলে কিনা বুড়ো,
হা হা হা,
চলবে
!
আর ও হাউমাউ ওরে কাঁদতে শুরু করে,
….
ইসসস,
এভাবে কাঁদেনা মা,
তোমাকে বাসায় যেতে হবে না?
..
আমি একা যাবো না তোমাকে নিয়ে যাবো মা,
…..
তারপর ও আমাকে ওর গাড়ি নিয়ে বসাল,
আর আমার বুকে মাথা রেখে বলল,
…..
মা তুমি জানো বাবা অনেক খারাপ,
….
কেন মা কি করেছে সে?
….
কি আর করবে?
সেই ছোটো বেলা থেকে বলে যাচ্ছি যে বিয়ে করে নতুন মা এনে দাও আমাকে,
…
সেই আজ আনি কাল আনি করতে করতে আনল না বরং বয়সের সাথে সাথে বুড়ো হয়ে গেল,
….
এতে এতো রেগে যাওয়ার কি আছে মা?
উনি যেটা সঠিক বলে মনে করেছেন সেটাই করেছেন,
এখানে তো অনুচিত কিছু নেই,
…..
তুমি আমার স্বামী কে দেখ না?
আজকে আবার বিয়ে করে,
আমাকেই আমার সাম্রাজ্য থেকে তাড়িয়ে দিলো,
. ….
হয়তো তিনি তার নতুন বিবাহিতা স্ত্রীকে নিয়ে নতুন জীবনের স্বপ্ন দেখছেন?
…..
মা তুমি আবারো কাঁদছ?
…
কোই নাতো?
….
তাহলে তোমার চোখেরজল এসে আমার গালে পরছে কেন?
…..
এমনি ওই আর কি?
….
শোনো মা তুমি আর কাঁদবেনা,
. ……
তা নয় শুনলাম,
তুমি তোমার নাম টা তো আমায় বলনি মা?
…..
তোমার মেয়ের নাম রুহানি,
……
বাহহহ নাম টাতো অনেক সুন্দর মা?
….
হ্যা বাবা তার নামের সাথে আমার নাম টা মিলিয়ে রেখেছেন,
বাবার নাম রুহান চৌধুরি,
….
মাশাল্লা তোমাদের দুজনের নাম টাই অনেক সুন্দর,
….
আচ্ছা মা তোমার নাম কি?
……
মিশকা,
…..
তোমার নামের পরে আর কিছু নেই?
…
ছিল সেটা কে আমি সরিয়ে ফেলেছি মা,
….
ও আচ্ছা,
তুমি জানো মা বাবা অনেক ভালো তোমাকে দেখে খুশি হবেন খুব,
..
তখনি আমি খেয়াল করে দেখি,
…..
যে গাড়ি টা গেট পেরিয়ে রাজ প্রাসাদের মতো বাড়ির কাছে একটু একটু করে এগিয়ে যাচ্ছে,
…
গাড়ি টা থামতেই অনেক লোক পিস্তল সহ গাড়ির কাছে ছুটে আসে,
..
মা তুমি ভয় পেয়ো না ওরা আমাদের সিকিওরি গার্ড,
তাই এখানে এসেছে,
বাবা ও আসলো বলে,
…
আচ্ছা ঠিক আছে মা,
….
তারপর হঠাৎ মেয়ে টা আমার গালে চুমু খেয়ে,
…
গাড়ির দরজা খুলে বাহিরে দাঁড়িয়ে থাকা সাদা পাঞ্জাবি পরে থাকা লোক টিকে গম্ভীর ভাবে বলে,
……
বাবা আমি আমার মা কে নিয়ে এসেছি,
…..
মা কে নিয়ে এসেছ তাকে কি গাড়িতে বসিয়ে রাখবে?
…
যাও তোমার মা কে রুমে নিয়ে যাও,
…..
অনেক টা পথ ট্রাভেল করে এসেছে নিশ্চয় শরীর খারাপ লাগছে তার,
…..
না আমি ঠিক আছি,
….
আলহামদুলিল্লাহ্ তাহলে ভেতরে আসুন,
…
তারপর মেয়ে আমাকে ওর রুমে নিয়ে যায়,
….
আর আমি ফ্রেশ হয়ে নিচে চলে যাই,
……
গিয়ে দেখি সেই সাদা পঞ্জাবি পরা লোক টা কার সাথে যেন কথা বলছে,
…..
হঠাৎ আমাকে দেখে মৃদু হাসিয়ে বলে,
…
আরে আপনি দাঁড়িয়ে আছেন কেন?
বসুন আমারর মেয়ে আপনাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলে আমাকে বকা দিবে,
..
ওওওওও,
….
মেয়ের কাছে শুনলাম সত্যি আপনি অনেক শক্ত ধাতু দিয়ে গড়া,
…
আপনি ও তো কম যাননা আজ আনি কাল আনি করতে করতে মেয়ে কে জিনিস টা না এনে দিয়ে পারলেন?
…
হয়তো আপনি আসবেন বলে পারিনি,
…
বাবা আমার মায়ের সাথে তোমার এতো কথা কিসের শুনি?
. …..
যাও নিজের রুমে যাও,
…
মেয়ের কথা শুনে চৌধুরি সাহেব মৃদু হাসি দিয়ে সুড়সুড় করতে করতে তার রুমে চলে যায়,
……
দেখতে দেখতে কেটে যায় ছয়মাস,
..
মেয়েকে নিয়ে বেশ ভালো দিন কাটে আমার,
…..
তবু ও যখন দুঃখের স্মৃতি মনে পরে যায়,
নিজে থেকে চোখেরজল ঝরে যায়,
.. … .
জানিনা আমার বুড়ো টা কেমন আছে?
সেকি আমায় ভুলে গেছে?
না দুঃখে বেঁচে আছে,
….
ইসসস,
আমি কি ভুলে গেছি?
যে সুখের খোজে থাকে সে কখনো দুঃখের ছোয়া পায় না,
….
সে হয়তো সুখী আছে নতুন সঙ্গী নিয়ে,
….
আমি তো দুঃখে আছি তোমাকে না পেয়ে ,
……
তবু ও এ মন টা জুড়ে তোমার বসবাস,
তুমি তো আমাকে ঠাই দিলে না তোমার বুকে আর,
..
বৌ ও বৌ শোনো,
. …
হ্যা বলো?
..
আমার বাতের ব্যথা টা বেড়েছে একটু মালিশ করবে দিবে?
..
তোমার কি আমাকে তোমার সেবিকা বলে মনে হয়,
….
না তুমি আমার বৌ,
মালিশ করে দাও না গো আমার ভালো লাগবে খুব?
…
তোমার মালিশ করার জন্যে তোমার বৌ হয়ে আসিনি আমি,
….
ময়না কে বলে দিচ্ছি ও তোমাকে মালিশ করে দিবে,
..
কাজের লোক কেন আমাকে ছোঁবে?
তুমি তো আমার বৌ তুমি করে দাও,
…
বুড়ো এই বয়সে তোমার এতো চাহিদা কিসের বলতো?
….
আগের বৌ টাকে ও বোধ হয় চল্লিশা বছর ধরে নিজের শারীরিক চাহিদা মেটাতে ব্যতিব্যস্ত করে রেখেছিলে,
তাই বোধ হয় সুযোগ বুঝে পালিয়ে বেঁচেছে,
…..
না হলে এই কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি রেখে পালায় কেউ,
….
তুমি এভাবে কেন বলছ?
….
বলছি কারন তোমার ওই বৌ এর অনেক ধৈর্য্যছিল তাই ও তুমি যেভাবে চেয়েছ সেভাবে তোমাকে খুশি রেখেছে,
….
তোমার প্রথম বৌ কে দেখে বোঝা গেছে আমাকে বিয়ে করে এ ঘরে তোলার আগের রাতে ও তুমি তাকে ভোগ করেছ,
….
বুড়ো তোমার গায়ে এতো জোড় আসে কোথা থেকে?
…..
অবশ্য একটা কথা বলতে হয় বিয়ের চল্লিশ বছর পরে ও তোমার প্রথম বৌয়ের বডি ফিগার নায়িকাদের মতো সুন্দর যদি ও সে শ্যামবর্ণের অধিকারী তবু ও সে মায়াবিনী,
….
বার্ধক্য এখনো তাকে এসে ছুতে পারেনি,
তাকে দেখলে কেউ বলবে না যে তার পাঁচ টা সন্তান ও বুড়ো একটা স্বামী আছে হুমমম,
….
দেখো গিয়ে তোমার থেকে পালিয়ে গিয়ে কোন ছেলের বয়সী ছেলে কে প্রেমের ফাঁদে ফাঁসিয়ে,
স্বামীর সুখ পাচ্ছে,
…..
এই প্রথম নতুন বৌয়ের মুখে এসব আজেবাজে কথা শুনে খান সাহেবের মেজাজ খারাপ হয়ে গেছে,
…..
তাই সে হনহন করতে করতে তার রুম থেকে বেড়িয়ে যায়,
…
কারন এই ছয়মাস আজ এই প্রথম ওনার মিশুর কথা মনে পরেছে,
…
আর উনি জানেন ওনার মিশু ওমন না,
এই প্রথম ওনার চোখ দুটো বাড়িময় ওনার মিশু কে খুজে বেড়াচ্ছে,
….
তাহলে কি আমি মিশুর সাথে অন্যায় করে ফেললাম?
চলবে
লেখিকা সুরিয়া মিম
part : 1
!
বিয়ের চল্লিশ বছর পর আমার বুড়ো যখন একটা মেয়ের বয়সী মেয়েকে বিয়ে করে ঘরে এনে তুললো,
…
তখন বুঝলাম তার এই সংসারে আমার কোনো প্রয়োজন নেই,
…
আমি তো কখনো ওনার কোনোকিছু তে কমতি রাখিনি তাহলে উনি কেন এমন করলো?
……
ওনার অসম্মান হয় এমন কোনো কাজ কখনো করিনি,
সব সময় ওনার মতো করে নিজেকে সাজিয়ে রেখেছি,
….
কেন জানেন?
কারন আমার বুড়ো এই বুড়ো বয়সে ও আমাকে বেনারসি ও গা ভর্তি গহনা পরে থাকতে দেখতে পছন্দ করত,
..
আমাকে কোনো কাজ করতে দিতো না,
আমার কাজ ছিল সে আমার হাতে রান্নাকরা খাবার খেতে পছন্দ করতো,
..
তাই তার জন্যে খাবার রান্নাকরা,
রাতে স্বামী সেবা করা,
…..
কেউ বিশ্বাস করবেনা যে আমি এই বয়সে এসে ও স্বামীর সুখ পেতাম,
….
এই চল্লিশ বছর বছর বিয়ের বয়সে উনি যেভাবে চেয়েছেন সেভাবে আমি তাকে খুশি করেছি,
..
তার চার পুএ ও এক কন্যা সন্তানের মা হয়েছি,
….
হতাম নাই বা কেন?
সে আমাকে তার সব টা দিয়ে ভালো বেসেছে,
…..
হঠাৎ তার এই কার্যক্রম আমার কিছু তেই বোধগম্য হয় না,
…..
কারন আমি একজন অনাথ ছিলাম,
চারকুলে কেউ ছিলো না আমার,
…..
আমি লোকের বাসায় লাঠিঝাটা খেয়ে কাজ করে আমার জীবনযাপন করতাম,
…..
কিন্তু না জানি কি করে আল্লাহর রহম হলো?
….
আমার বুড়ো আমার মনিবের বাসায় বেড়াতে এলেন,
এবং তার সেবা যত্নের ভার এসে পরলো আমার ওপর,
….
আমি তার সেবাযত্ন করা সহ ছোটো ছোটো জিনিসের প্রতি নজর রাখতাম,
…..
কারন তিনি ছিলেন আমার মনিবের বাল্যবন্ধু,
……
একদিন তিনি হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে পরলেন,
তখন আমি সারারাত তার মাথার কাছে বসে,
তার সেবাযত্ন করেছিলাম,
……
আল্লাহর রহমতে সাতদিন পর সুস্থ হয়ে,
তিনি আমাকে বিবাহের প্রস্তাব দেন,
….
আমি নাবালিকা ছিলাম বলে তার বিয়ের প্রস্তাব ফিরিয়ে দেই,
….
উনি সেটা মেনে নিতে না পেরে আমাকে তুলে নিয়ে গিয়ে জোরপূর্বক বিয়ে করেন,
….
বিয়ের পরে জানতে পারি আমার স্বামীর ও কেউ নেই ,
কারন আমার শশুড় শাশুড়ি ওনার বারো বছর বয়সে রোড এক্সিডেন্টে গত হয়েছেন,
আর উনি তাদের একমাত্র সন্তান ছিলেন,
…..
হেসে খেলেই চলছিল আমাদের সুখের সংসার,
….
তারপর আমার কোল আলো করে এলো আমাদের জমজ দুই পুএ সন্তান
…
তারপর আবারো আমার কোল আলো করে আসে আমার জমজ দুই ছেলে ও এক মেয়ে,
…..
এভাবেই হেসে খেলো চলছিল আমার এই সুখের সংসার,
..
জানিনা হঠাৎ কারর নজর লেগে গেল?
.. …
আমার স্বামী আমাকে বললেন,
.. …
তোমাকে আমার আর ভালো লাগে না তুমি বুড়ি হয়ে গেছ,
. …
ভেবেছিলাম আমার বুড়োর গায়ে হাজার হাতির জোর চাহিদা একটু বেশি তাই আমার সাথে মশকরা করছে…..
….
কিন্তু হঠাৎ করে একদিন বিয়ে করে নিজের মেয়ের বয়সী মেয়ে কে আমার সাজানো সংসারে এনে তুলো আমার সমস্ত ব্যবহৃত জিনিশ বাহিরে ছুড়ে ফেলে,
……
ছেলেমেয়ে আমার বিয়ে করে বৌ বাচ্চা নিয়ে অন্যত্র জীবনযাপন করছে,
…..
তাদের ফোন করে ওনার এ ব্যাপার জানাতেই ওরা আমাকে আমার বয়সের মতিভ্রম ভেবে যা নয় তাই বলে অপমান করে,
…
আর আমার বুড়ো বলে,
…
তুই এখান থেকে চলে যা,
আমার তোকে ভালো লাগেনা তুই বুড়ি হয়ে গেছ,
যা দূর হ আমার সামনে থেকে,
.. ..
ওনার নতুন বৌয়ের পা ধরে বলেছিলাম যে আমি তোমার সংসারে অশান্তি করবোনা,
তুমি আমাকে ওনার পায়ে ঠাই দিতে বলো?
দেখবে উনি তোমার কথা শুনবেন,
….
তখন ওই মেয়ে বললো,
. ..
তোর স্বামী যখন তোকে চায় না তখন তুই এখানে থেকে করবি টাকি যা বেড়িয়ে যা,
. ..
তখন বুঝতে পারলাম যে আমার এখানে ঠাই হবে না,
..
আমার বুড়োর এত সুন্দরী ও জোয়ান বৌ দিয়ে সুখ হবে না,
আর আমি সতীনের সংসার ও করতে পারবোনা,
…..
তাই আমি এক চিলতে আশা নিয়ে রাস্তায় বেড়িয়ে পরি,
..
আর হাটতে হাটতে বাসস্টপে গিয়ে কুমিল্লার টিকিট কেটে বাসে উঠে পরি,
…..
উদ্দেশ্য ছোটো ছেলের কাছে যাবনা,
. ….
ওখানের কোনো বাড়িতে কাজের লোকের কাজ করে নিজের পেট ভরাবো,
.
নিয়তি যদি কখনো ছেলে কে দেখার সুযোগ করে দেয় তাকে মন ভরে দেখে,
..
তাদের বাবার দেওয়া কষ্ট ভুলে থাকার চেষ্টা করবো,
..
বুড়ো টাতো আমাকে ছাড়া কিছু বুঝত না তাহলে সে এতো অবুঝ কি করে হয়ে গেল?
..
আন্টি আপনি কাঁদছেন কেন?
….
কিছুনা মা,
…..
ঢাকা থেকে কুমিল্লায় আসতে বেশি সময় লাগেনা,
আমরা পৌছে গেছি আন্টি,
….
ওওওও তাহলে তো ভালই,
….
আন্টি আপনি কোথায় যাবেন আমাকে বলুন?
আমি আপনাকে পৌঁছে দিয়ে আসছি,
….
আমি কোথাও যাবো না মা,
আমি এখানে কাজ খুঁজতে এসেছি,
….
কাজ?
কিন্তু আপনাকে দেখলে তো মনে হয় না আপনি কখনো কোনা কাজ নিজের হাতে করে দেখেছেন?
.. …..
মা আমার তেরোবছর বয়সে বিয়ে হয়,
তোমার খালু আমাকে রাজরানী করে রাখতেন,
কিন্তু এখন তার আমার প্রয়োজন নেই তাই আমাকে নিজের কাধ থেকে ঝেড়ে ফেলেছেন,
….
তাই পেটের দায়ে কাজ খুঁজতে এখানে এসেছি,
যাতে খেয়েদেয়ে কোনো ভাবে বেঁচে থাকতে পারি,
…..
মা তোমার বাড়ি তে কি কোনো কাজের লোক বা রান্নার লোক লাগবে?
….
আমি অনেক ভালো রান্নাকরি,
তোমার খালু বলতেন আমার হাতে নাকি কোনো যাদু আছে,
হি হি হি
…..
আন্টির কথা শুনে কেঁদে ফেলি আমি,
….
কারন একটা মানুষ কি করে এতো কষ্ট সহ্যকরে তার হাসি মাখা মুখ টা সবাই কে দেখাতে পারে,
. …
কি হলো মা কাঁদছ কেন?
….
আপনি আমার কাছে থাকবেন,
আপনার কোথাও কাজ করতে হবে না,
আমি আপনাকে অনেক যন্ত করে রাখবো,
..
না মা তা হয় না,
আমি এখানে কাজ করতে এসেছি,
…
তাই তাহলে তোমার কাছে থাকলে ও কাজ করে থাকবো,
বিনিময় আমাকে কিছু বেতন দিলে হবে,
……
আপনি যেটা চান সেটাই হবে,
কিন্তু আমার একটা শর্ত আছে?
….
কি শর্ত মা?
…
আমি আমার মাকে জন্মের সময়ে হারিয়েছি,
তাই আমি আপনাকে মা বলে ডাকবো,
……
মেয়ের কথা শুনে আমার বুকের ভেতরে চিনচিন করে ওঠে,
….
তাই সাথে সাথে আমি ওকে আমার বুকে জড়িয়ে ধরি,
….
আর ও হাডমাউ করে কাঁদতে শুরু করে ,
মৌরী চোখ খুলে শাওনের গলা জড়িয়ে ধরে আরোও শক্ত করে, আস্তে করে বলে,
“ ভালোবাসি হয়নি বলা তবুও অনেক ভালোবাসি,
সারাটি জীবন থাকবো শুধুই পাশাপাশি।
অনেক ভালোবাসি তোমায়! সবার চেয়ে বেশি,
ভালোবেসে ফোটাতে চাই তোমার মুখের হাসি,
বড্ড বেশি ভালোবাসি , শুধু তোমায় ভালোবাসি।” লিখা : জামিয়া পারভীন তানি
মৌরী উঠে দাঁড়ায়, রিমনের উদ্দেশ্যে বলে,
__ “ যে ছেলে ভুল বুঝে মিথ্যে প্রতিশোধ এর আশায় একটা মেয়ের জীবনকে নরক করে তোলে, সে কখনোই ভালোবাসতে পারে না। কিসের ভালোবাসো তুমি! যদি এক বিন্দু ভালোবাসতে তাহলে নিজের ক্ষতির পাশাপাশি আমার ক্ষতিও করতে না। কিসের বাচ্চা দাবী করো তুমি? যার পুরো হক শাওনের, তা পাবার আশা ছেড়ে দাও। এসেছে বাচ্চার বাবা! হুহহ, কোথায় ছিলে সেইদিন, যেদিন আমি সমাজের চোখে অসহায় হয়ে পড়েছিলাম। কোথায় ছিলো ভালোবাসা? যেদিন রাতের পর রাত কটুকথা শুনে দিন পার করেছি। বাচ্চা আসার খবরে সব লাঞ্চনা ভুলে তোমাকে জানিয়েছিলাম । ভেবেছিলাম ফিরে আসবে, নাহহহহ! আসোনি! তো এখন কিসের দাবী করছো! আমি তো বাচ্চাসহ সুইসাইড করতে গিয়েছিলাম, শাওন নিজের সর্বোচ্চ দিয়ে আমাকে সেভ করেছে। আমার নিঃশ্বাস এখনও বইচজে শুধুমাত্র শাওনের জন্য। তবুও সেলফিশের মতো তোমার কাছে যেতে চাইতাম। কেনো যাবো! যেখানে আমি নিজেই শাওনের হয়ে গিয়েছি। শাওন কে ঠকালে আমার স্থান হবে জাহান্নামে। কারণ ওর মতো ভালো মানুষকে ঠকালে এমন শাস্তিই হবে। তাছাড়া শাওন কে এখন আমি অনেক ভালোবেসে ফেলেছি। আর আমার ছেলেকে যে বাবা না হয়েও বাবার চেয়ে বেশি দায়িত্ব পালন করেছে, ছেলে তার কাছে থাকাই উচিৎ। যদি নুন্যতম লজ্জ্বাবোধ তোমার থাকে তো শাকিব কে ফিরিয়ে দিবে। ”
রিমন মাথা নিচু করে বলে,
__ “ ঠিক বলেছো, আমি বড়ই পাপী। প্রায়শ্চিত্ত হিসেবে তোমার ছেলেকে তোমার কাছে ই ফিরিয়ে দিবো। ”
__ “ বদ মেয়েটার একটা গতি হচ্ছে এটাই তো অনেক রে! তুই তো আমার চোখ খুলে দিয়েছিস, আজ থেকে তুইই আমার মেয়ে। তোর সন্তান আমারও নাতি। আর কখনো মন খারাপ করবোনা তোর জন্য। বরং খুশি আজ থেকে শাওনের মতো ছেলে পেয়ে। রামিজা আপাও ভাগ্যবতী সিপনের মতো ছেলে পেয়ে। সমাজের চোখে ঝরে যাওয়া ফুল গুলো কে আমাদের ছেলেরা দিয়েছে যোগ্য মর্যাদা। মা হিসেবে এটাই তো আমাদের জন্য গৌরবের রে। ”
মৌরীর বাবা মা দুজনের চোখেই পানি এসে গেছে, মেয়ের মাথায় হাত রেখে বললো মৌরীর বাবা,
__ “ স্বামী সন্তান নিয়ে সুখে থাকিস মা! ”
__ “ দোয়া করো বাবা! ”
৩০ মিনিট পর রিমন ছেলেকে নিয়ে আসে,
মৌরীর হাতে শাকিব কে তুলে দেয়,
মৌরীকে ছেলেকে কোলে নিয়ে দেখে ছেলে ঘুমিয়ে আছে।
__ “ ছেলেটা কে দুইদিন কিছুই খাওয়াতে পারিনি! তোমার ছেলে কিছুই খায় না! ঠিক মতো যত্ন নিও ওর। ”
মৌরী পুরো কথা না শুনেই ছেলের ঘুম ভাঙানোর চেষ্টা করে, একটু কেঁদে উঠতেই খাওয়াতে শুরু করে মৌরী। মায়ের স্পর্শে ছেলেও যেনো মাকে আঁকড়ে ধরে রেখেছে।
সন্তান কে যেনো মায়ের কোলেই মানায়, ছোট্ট চাঁদের টুকরো যেনো। ছেলেকে আদর করে, দুইদিন এর যতো দুঃখ ছেলের কাছে মৌরী বলে , ছেলে মায়ের স্পর্শে যেনো খিলখিলিয়ে হাসে।
রিমন চলে যাচ্ছিলো, তখন শাওন বলে,
__ “ পারলে ভালো হয়ে যেও! খারাপ কাজ ছেড়ে দিও! ” এরপর শাওন বড় চাচার দিকে তাকিয়ে বল্লো,
__ “ অনেক তো হলো চাচ্চু! এবার বরং ছেলের বিয়ে দিয়েন। ”
__ “ ছেলের বিয়ে হবেনা! যে হারে ড্রিংকস করে, লিভার ডিজিজ দেখা দিয়েছে! মৃত্যু ওর কাছিয়েই গিয়েছে। ” এক ফোটা জল ফেললেন রিসাদ আহমদ।
__ “ আহহ আব্বু! এসব বাদ দাও তো, আমি তো বেশ আছি। খুব শীঘ্রই আবার চলে যাবো বাইরে। ”
রিমন সবাইকে বিদায় জানিয়ে চলে যায়, শাওন মৌরী কে নিয়ে ফিরে আসে নিজেদের বাড়ি। শ্যামলী কেও নিয়ে আসে, ভালো করে বিয়ের অনুষ্ঠান করেই একেবারে সিপনের হাতে তুলে দিবে শ্যামা কে।
__ “ শত হোক আমার বাবুর আম্মুকে মাফ না করে কি পারি! ”
__ “ তা বাবুর আব্বু এখন কি করে? ”
__ “ বাবুর আম্মুর কথা চিন্তা করছে! হাহাহা ”
•
মৌরী শাকিব কে ঘুম পাড়িয়ে দিয়ে উঠতেই দেখে শাওন বেলকনি তে দাঁড়িয়ে আছে। মৌরী পা টিপে টিপে গিয়ে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে,
“ দেবে কি এক বিন্দু ভালোবাসা,
আমি ভালোবাসার সমুদ্র দিবো।
দেবে কি এক চিলতে হাসি,
তোমায় সুখের সাম্রাজ্যে ভাসাবো।
কাছে ডাকবে কি আমায়,
অধির আগ্রহে তোমার অপেক্ষায়।
ভালোবাসা পেতে চাই তোমার,
শুধু বেঁচে আছি এই কামনায়।” লিখা : জামিয়া পারভীন তানি
শাওন মৌরীর হাতে ধরে সামনের দিকে টানে, হাটু গেড়ে বসে বলে,
“ শত জনম ছিলাম বসে তোমার অপেক্ষায়,
এখন থেকে হবো আমরা! দুজন দুজনার।”
শাওন মৌরীকে একটা রিং পড়িয়ে দেয়, হাতে একটা চুমু দিয়ে হাত টা বুকের সাথে চেপে ধরে। মৌরী মাথা নিচু করে সব লজ্জ্বা ভুলে শাওনের কপালে কিস এঁকে দেয়। বাকিটা তাদের সুখের রাজ্যে, তারা সুখী থাকুক। নাই বা দেখলাম কি কি হচ্ছে। ???
সমাপ্ত
#অন্ধবিশ্বাসের_পরিণতি গল্প শেষ করবো কাল।
নেক্সট গল্প দুইদিন পর দিবো, #বখাটে_হাজবেন্ড , এই গল্পটা কেমন লাগলো, আর নেক্সট গল্পের নাম কেমন লাগছে অবশ্যই জানাবেন। সবাইকে ধন্যবাদ এন্ড অনেক অনেক ভালোবাসা পাশে থাকার জন্য। ❤❤❤❤❤
শাওন মৌরীকে বাহুডোরে আবদ্ধ করে, মুখটা মৌরীর কানের কাছে এনে ফিসফিসিয়ে বলে,
__ “ বাবুটা তোমার কাছে এনে দিবো তো, এরজন্য তোমাকে খেতে হবে। তুমি না খেলে বাবুর খাবারে অভাব পড়বে, তখন বাবুকে কি খেতে দিবে শুনি? ”
__ “ সত্যিই এনে দিবে, তাহলে দাও আমি খাচ্ছি। ”
….
পরেরদিন পারিবারিক সবাইকে নিয়ে কোর্ট বসে। রিমন এর পরিবারের তিনজন, শাওনের পরিবারের চারজন, সিপন আর ওর বাবা মা কে নিয়ে কোর্টের আয়োজন করা হয়।
দুই পক্ষের উকিল আছে সাথে,
প্রথমে রিমনের বক্তব্য শুনার জন্য রিমন কে বলতে বলা হয়, রিমন শুরু করে,
__ “ মৌরী আমাকে ধোঁকা দিয়েছে প্রথমে, তার জন্য তাকে শাস্তি পেতে হচ্ছে। ”
উকিল সাহেব বললেন,
__ “ কি রকম ধোঁকা, যদি খোলাসা করে বলতেন। ”
__ “ আমার ফুপাতো বোন সে, কিন্তু তার পরিচয় আমি আগে জানতাম না। কারণ আমার বাবা রিসাদ আহমেদ ওই পরিবারের সৎ ছেলে। বিধায় দাদীর বাসায় কখনো যাওয়া হয়নি। দাদার ফ্যামিলির কে কে আছেন শুধু এইটুকুই জানতাম। মৌরীর সাথে আমার প্রথম পরিচয় ফেসবুকে। ওর ‘ মৌ রী ‘ নামের ফেসবুক একাউন্ট এর মাধ্যমে। ”
মৌরী চিৎকার করে বলে,
__ “ মৌ রী নামের আমার কোন ফেসবুক আইডি ছিলো না। আর ওকে আমি মৌসুমীর বিয়ের আগে চিনতাম ও না। সব মিথ্যে কথা বলছে সে, আমার সন্তান কে কেড়ে নেওয়ার জন্য। ”
রিমনের উকিল সাহেব বললেন,
__ “ মিসেস মৌরী, আপনি একটু থামুন। আপনার বক্তব্য আমরা পরে শুনবো। ”
রিমন আবারও বলা শুরু করে,
__ “ মৌরী দীর্ঘ দিন আমার সাথে প্রেম করে অথচ সে জানতো না যে আমি ওর মামাতো ভাই হই। কারণ সে আমাকে আগে কখনো দেখেনি। আমার ফেসবুক আইডির নাম আমার সারর্টিফিকেট এর নামে ‘ রায়হান আহমেদ’ কিন্তু এই নাম তারা জানে না। আমার ডাক নাম রিমন হিসেবেই তারা আমাকে চিনতো। ”
মৌরী আবারও চিল্লিয়ে বলে,
__ “ সব মিথ্যে কথা। ”
সিপন মৌরীকে ধমক দিয়ে বলে,
__ “ আহহ! চুপ কর না, কি বলে আগে শুন। পরে উত্তর দিস সব কিছুর একই সাথে। ”
রিমন আবার বলা শুরু করে,
__ “ মৌরী ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট দেয় প্রথমে, এরপর দুজনের মধ্যে চ্যাট হতো। ওইই প্রথম মেয়ে যাকে আমি ভালোবাসতে শুরু করি। খুব ভালোবাসতাম ওকে আমি, কিন্তু ও যে সবার সাথে ফ্লার্টিং করতো তা বুঝতে পারিনি। এক মাস আমার কাছে ওর ছবি পাঠাতো বিভিন্ন ভাবে তোলা। সব ছবি প্রিন্ট করা আছে, দেখতাম ওকে ছবিতেই। কথা হয়নি কখনো। ছবি দেখেই ওর প্রেমে পড়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু ওর খোঁজ নিতাম অনেক, ওর সব ডিটেইলস জোগাড় করে ফেলি। পরিচয় পাই ও আমার ছোট ফুপির সন্তান। বেশ খুশি থাকতাম ওকে সারপ্রাইজ দিবো ভেবে। কিন্তু কিছুদিন পর দেখি সে আইডি তে আমাকে ব্লক করে দিয়েছে। খুব কষ্ট পেয়েছিলাম সেদিন, ব্লক করার কারণ ছিলো ওর সাথে কথা বলতে চেয়েছিলাম। তখন সে জানিয়ে দেয় সে আমায় ভালোবাসে না, তার নাকি ব্রেক আপ হয়েছিলো তাই সময় কাটাতে আমার সাথে অভিনয় করে। এরপর আরোও বলে আমার নাকি চরিত্র খারাপ কারণ আমি বিদেশী।
কখনো আমি খারাপ ছিলাম না, ওর এই অভিনয় এ আমি ডিপ্রেশন এ ভুগতাম। যেই আমি জাহাজের কোন মহিলা কে প্রশ্রয় দিতাম না, সেই আমি জাহাজ এ গিয়ে ডিপ্রেশন এ ভুগে নেশা করা শুরু করি। এরপর নারীদের সাথে অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ি। ”
রিমন কিছুক্ষণ থামে, শ্যামলী আর মৌরী দুজনের চোখেই পানি।
রিমন আবার বলতে শুরু করে,
__ “ পরবর্তীতে আমার মনে প্রতিশোধ এর আগুন জ্বলে ওঠে। ঘৃণার জন্ম হয় মৌরীর উপর। বিয়ের অনুষ্ঠান এ আসার একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল মৌরীর ক্ষতি করা। তাই ওকে তুলে নিয়ে গিয়েছিলাম, রেজিস্ট্রেশন করে বিয়ে করে ওর সাথে সম্পর্ক করে ওকে ডিভোর্স দিয়ে দিই। কিন্তু আমার বাচ্চাকে কিছুতেই মৌরীর কাছে দিবো না। বিয়ে আমি কখনোই করবোনা, মেয়েদের প্রতি ঘৃণা থেকে। কিন্তু আমার ছেলেকে ওই পাপী মহিলার কাছে দিবো না। ”
রিমন মৌ রী আইডির সাথে চ্যাট লিস্ট গুলো দেখায়, মৌরীর পাঠানো ছবি গুলো ও দেখায়।
মৌরী বলে,
__ “ বাংলা তে মৌ রী লিখা কোন ফেসবুক আইডি কখনোই আমার ছিলো না। বিশ্বাস না হলে ওই আইডি এর আসল মালিক কে তা চেক করে দেখুন! কার ফোন নাম্বার দিয়ে খোলা। আমার এক্টাই আইডি ইংলিশ এ লিখা ‘MOURI AHMED’ এছাড়া কখনো কোন আইডি চালাইনি। ছবি গুলো আমারই কিন্তু কে কখন তুলেছে আমি নিজেও জানিনা। ”
মৌরী কান্নায় ভেঙে পড়ে, শ্যামলী খুব কাঁদতে থাকে। এরপর শ্যামলী বলে,
__ “ আমি কিছু কথা বলতে চাই! ”
অনুমতি দেওয়ার পর শ্যামলী বলা শুরু করে,
__ “ ওই আইডি টা আমি চালাতাম, মৌরীর নামে। ”
__ “ ছি: শ্যামা ছিহহহ! মরতে পারিস না অন্যের ক্ষতি করে বেড়াস, তোর মতো বোন থাকার চেয়ে মরে যাওয়ায় বেটার। ”
শ্যামলী এবার কেঁদে কেঁদে বলে,
__ “ মৌরী আমার বান্ধবী, বোন যাই হোক না কেনো! ও অনেক সুন্দর দেখতে। আমার সাথে সব সময় ক্লোজ থাকতো, সব সময় ছেলেরা ওর দিকে হা করে তাকিয়ে থাকতো। আর আমি কালো বলে কখনোই পাত্তা পেতাম না। তাই ওকে খারাপ করতে ওর নাম পরিচয় এ ফেইক একাউন্ট খুলেছিলাম। অনেকের সাথে ও হয়ে কথা বলেছি প্রেম করেছি। বেশি এডিক্টেড হবার আগে সরে যেতাম। এতে আনন্দ পেতাম কিন্তু মৌরীর যে এতো বড় ক্ষতি হবে তা বুঝতে পারিনি। আমার পাপের শাস্তি মৌরী পেয়েছে আর তার শাস্তি এখন আমিও পাচ্ছি। ”
রিমন মৌরী শাওন তিনজনেই অবাক হয়ে যায়, সাথে উপস্থিত সবাই অবাক হয়ে যায়।
__ “ বিনা দোষ এ তুমি আমায় শাস্তি দিলে রিমন! যে অন্যায় আমি করিনি তার প্রতিশোধ নিলে? অনেক কষ্ট দিয়েছো আমাকে, এখন আমার সন্তান কে ফিরিয়ে দাও প্লিজ। দয়া করো! আমাকে না, আমার সন্তান কে দয়া করো। ও তো অনেক ছোট! না খেয়ে মরে যাবে। প্লিজ ফিরিয়ে দাও ওকে। ” মৌরী হাত জোড় করে রিমনের কাছে ভিক্ষা চায় নিজের সন্তান কে।
__ “ প্লিজ রিমন ভাইয়া! আমার করা শাস্তি মৌরী কে দিবেন না প্লিজ, শাকিবকে ফিরিয়ে দিন। পারলে আমাকে মেরে ফেলুন, তাও ভালো মৌরীকে আর কষ্ট দিয়েন না। ও সারাজীবন কোন পাপ করেনি তাও শাস্তি ভোগ করছে ।আর আমি আমার পাপের শাস্তি পাচ্ছি। ”
শ্যামলীর কথায় উত্তরে সিপন বলে,
__ “ বেশ হয়েছে তোর জন্য শ্যামা, তুই ও তোর সন্তান কে হারাবি এর জন্য। ”
__ “ সিপন! ”
__ “ কিসের সিপন! তুই যে এইসবের মূলে আমি অনেকদিন আগেই জেনেছিলাম। যার শাস্তি তোকে আমি দিয়েছি। তুই মৌরীর আইডি দিয়ে আমার ফ্রেন্ডের সাথে মজা নিতে গিয়েছিলিস না জেনেই। আমার ফ্রেন্ড সেই আইডি হ্যাক করে ফোন নাম্বার উদ্ধার করে, এরপর আমি আর সে দুজনে মিলে ফোন নাম্বার টা নিয়ে থানায় জিডি করে তোর ঠিকানা উদ্ধার করি। এরপর ই তোর সাথে প্রেমের অভিনয় করেছিলাম। কিন্তু রিমন ও যে সেম কারণে এইসব করেছে তা আমি জানতাম না। নইলে আমার বোনের জীবন নষ্ট করার জন্য সেদিন ই তোকে মেরে ফেলতাম। ”
হৈচৈ আর রহস্য দেখে বিচারক হাঁপিয়ে গেলেন। এই ঝামেলা থেকে বিচারক ৩০ মিনিট বিরতি চাইলেন। এরপর বিচারক বেরিয়ে গেলে সিপন ওর বোন কে জড়িয়ে ধরে বলে
__ “ মাফ করে দিস বোন! ভাই হয়েও তোকে রক্ষা করতে পারিনি। ”
__ “ আমার ছেলেকে এনে দাও ভাইয়া! ”
রিমন মৌরীর সামনে এসে দাঁড়ায়,
__ “ মাফ কিভাবে চাইবো সেই মুখ আমার নেই, পাপ করে ফেলেছি জীবনে অনেক। ক্ষমা তুমি নিজেও করতে পারবেনা আমি জানি। তারপরও বলবো ক্ষমা করে দিও। আরেকবার কি সুযোগ দিবে আমায়! তোমার ভালোবাসা পাবার। ”
মৌরী কিছুই বলে না, সামনের দিকে তাকিয়ে দেখে শাওন করুণ দৃষ্টি তে তাকিয়ে আছে।
মৌরী দৌড়ে গিয়ে মায়ের কোলে শুয়ে পড়ে,
__ “ মা গো! আমার খুব কষ্ট হচ্ছে, আর সহ্য করতে পারছিনা। আমার ছেলেটা কে ফিরিয়ে দাওনা প্লিজ। ”
রামিজা মেয়েকে বুকের মাঝে নিয়ে শান্তনা দিতে থাকে।
এরই মাঝে শাওন শ্যামার গালে কয়েকটা চড় মারে, সিপন তখন মারতে বাধা দেয়।
__ “ ওকে এখন মেরো না ভাই, ওর ক্ষতি না হয়ে ওর বাচ্চার ক্ষতি হবে। ডেলিভারী হবার পর ওর শাস্তি ও পাবে। ”
৩০ মিনিট পর বিচারক আবারোও আসেন, রিমনের দিকে উদ্দেশ্য করে বলেন,
__ “ আপনি এখন কি চান মি. রিমন? ”
__ “ মৌরীকে সহ আমি আমার সন্তান কে চায়, যদি মৌরী ফিরে আসে তো!”
শাওনের দিকে তাকিয়ে বিচারক বলেন,
__ “ আপনি কি চান মি. শাওন আহমেদ? “
__ “ অবশ্যই আমি আমার স্ত্রীকে ভালোবাসি, আর ওর সন্তান কে নিজের সন্তানের পরিচয় দিয়ে এসেছি। দুজনকেই আমি চাই, যদি মৌরী চায় তাহলে। ”
শাওন করুণ দৃষ্টি তে মৌরীর দিকে তাকালো।
বিচারক বললেন,
__ “ সবই যখন ভুল বুঝাবুঝির জন্য হয়েছে! তাহলে মিসেস মৌরী ই বলবে তিনি কাকে চান? তবে সন্তান তার কাছেই থাকবে! ”
মৌরীর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন “ আপনি কাকে চান মিসেস মৌরী ‘ শাওন ‘ নাকি ‘ রিমন ‘, যাকে চাইবেন তার সাথে ই সংসার করতে পারেন। যদি রিমনের সাথে সংসার করতে চান তাহলে নতুন করে বিয়ে করা লাগবে এই আর কি। ”
মৌরী কি করবে! মৌরীর মাথা চক্কর দিতে শুরু করে। অজ্ঞান হয়ে পড়ে যায় কোর্টের ভিতরেই।
মৌরী রিমনের গলা পেয়ে ছেলেকে ঘরে রেখে তালা দিয়ে দেয়। যেনো খুলতে না পারে রিমন সেই জন্য। ততক্ষণে রিমন শাওনের ঘরের কাছে চলে এসেছে।
__ “ জানতাম বাপ বেটা দুটো ই এই সময় চাকুরী তে থাকবে, সেইজন্যেই তো আসলাম। আর তুমি কিনা এভাবে দরজা লাগিয়ে ফেলছো? ”
__ “ খবরদার আমার ছেলেকে আমার থেকে আলাদা করার চেষ্টা করবিনা, নইলে তোকে আগে মেরে ছেলেকে নিয়ে মরবো। ”
__ “ তার আগে একটু আদর খেয়ে নাও! ”
__ “ তোর এতো বড় সাহস, আমাদের বাড়িতে এসে আমার ভাইয়ের বউয়ের উপর টর্চার করিস?এখুনি বেরিয়ে যা বলছি, নইলে পুলিশ ডাকবো। ” শ্যামা রাগী কণ্ঠে বলে।
রিমন যখন শ্যামার দিকে ঘুরে মৌরী রিমনের মাথায় হাতের পাশে থাকা টর্চের বাড়ি মেরে দেয়। রিমন এক হাতে মাথা চেপে ধরে, অন্য হাত দিয়ে মৌরীর গলা টিপে ধরে। মাথা থেকে হাত সরিয়ে মৌরীর হাত থেকে চাবি নিয়ে নেয়। মৌরীকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়ে দরজা খুলে ফেলে।
শাওনের মা ওয়াশরুমে ঢুকেছিলো, চিল্লাচিল্লি শুনে তাড়াতাড়ি বেরিয়ে আসে। ঘটনা বুঝে শাওন কে ক করে,
__ “ কি হয়েছে আম্মু? এতো হাপাচ্ছো কেনো? ”
__ “ তাড়াতাড়ি বাসায় আয়৷ রিমন এসেছে এখানে। মেয়ে দুইটারে মেরেই ফেলবে বুঝি। ”
শাওন ফোন কেটে দিয়ে, তাড়াতাড়ি করে বাইক নিয়ে বেরিয়ে আসে কলেজ থেকে।
শ্যামা মৌরীকে তুলতে গেলে দেখে মৌরীর মাথা ফেটে গিয়েছে, মৌরীর মাথা চেপে ধরে তাড়াতাড়ি। রিমন শাকিব কে নিয়ে বেরোনোর সময় শ্যামার মা বাধা দিতে গেলে উনাকে ও ফেলে দেয় রিমন।
__ “ আমার ছেলে কে ফিরিয়ে আনুন মামী! ” বলতে বলতে ভয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে মৌরী।
শাওন বাসায় চলে আসে, মৌরীকে হসপিটালে নিয়ে যায় তাড়াতাড়ি। রক্ত বন্ধ করা হয় প্রথমে এরপর ব্যান্ডেজ করা হয়। মৌরীর জ্ঞান ফিরে আসে বিকেলে, উঠেই শাঅন কে পাশে দেখে বলে,
__ “ আমার ছেলেকে এনে দাও! আমি থাকতে পারবোনা একা একা। দয়া করে এনে দাও তুমি। ”
__ “ দিবো এনে, এখন একটু রিলাক্স থাকো প্লিজ। ”
ঘুমের ইঞ্জেকশন দেয়া হয় মৌরীকে, যতক্ষণ জেগে থাকে শাকিব শাকিব বলে বিলাপ করতে থাকে মৌরী। মৌরী ঘুমিয়ে গেলে শাওন থানায় যায়, এক বছর আগের কেশ রি ওপেন করে। রিমনের নামে নতুন কেশ করে আজকের নামে এটেম্পট টু মার্ডার এর জন্য। দুই টা কেশ ই যথেষ্ট রিমনের সরকারি চাকুরী ধুলিসাত করতে।
__ “ রিমনের বাড়ি নিয়ে চলো আমাকে, আমি যেতে চাই আমার সন্তানের কাছে। ”
জ্ঞান ফিরলেই এই কথা বলে শাওনের মাথা ধরিয়ে দিয়েছে মৌরী, এক ধমক দিয়ে চুপ করিয়ে দেয় এবার।
__ “ বলছি তো একটু ধৈর্য ধরো, তোমার ছেলে তোমার কাছেই থাকবে। এতো জেদ করছো কিসের জন্য। তোমার ছেলে তোমার ছেলে, ওকে কি আমার ছেলে বলি না আমি, আমার কি ওর জন্য খারাপ লাগছে না?”
__ “ তুমিও এভাবে বকলে! ” হুহুহু করে কেঁদে উঠে মৌরী। ”
…..
মৌরীর খারাপ অবস্থার সুযোগে শ্যামার রিপোর্ট গুলোর কথা ভুলে গিয়েছিলো শাওন। শ্যামা রিপোর্ট তুলে আনার পর পরই কান্নায় ভেঙে পড়ে শ্যামা।
অনেকবার চেষ্টা করছে সিপন কে ফোন করছে, সিপন কিছুতেই ফোন ধরছে না।
একটার পর একটা রিং বাজতে বাজতে এখন সিপনের ফোন সুইচড অফ দেখাচ্ছে৷
রিপোর্ট গুলো হাতে নিয়ে দেখে শ্যামা প্রেগন্যান্ট। ওর মা ওর গালে চড় মেরে বসে,
__ “ এই জন্য আমি তোকে জন্ম দিয়েছিলাম? মান সম্মান সব ডুবাবি তাই? ”
__ “ বিশ্বাস করো! আমি পাপ করিনি! ”
__ “ তাহলে প্রেগন্যান্ট হলি কিভাবে? ”
__ “ বিয়ে করেছিলাম এক বছর আগে। ” বলেই কাঁদতে শুরু করে শ্যামা.
__ “ বিয়ে করেছিলিস? কাকে? ”
__ “ বিয়ের সব কাগজ ওর কাছে আছে, এখন অস্বীকার করছে। বলছে কোন বিয়েই নাকি হয়নি। ”
__ “ কে করেছে তোর এই সর্বনাশ? ”
__ “ সিপন ”
__ “ কিহহহহহহ! তুই এই ভুল কিভাবে করলি? ”
__ “ মৌরী এই বাসাতে আসার পর সে প্রোপজ করেছিলো ।“
• “ এই শ্যামা কই যাস? ”
• “ ভার্সিটি তে যাচ্ছি। ”
• “ আজ আমার সাথে চল! কাজ আছে একটা। “
• “ কি কাজ গো! ”
• “ গেলেই দেখতে পাবি!”
এরপর একটা রেস্টুরেন্ট এ নিয়ে যায় সিপন৷
• “ কি ন্যাকামি করছো, ভার্সিটি গ্যাপ দিয়ে এখানে কি করতে এনেছো? ”
• “ ভিতরে চল। ”
• “ না যাবো না, চলে যাবো। “
• “ আরে চল না, গেলেই বুঝবি কি হবে? ”
গিয়ে দেখে ভিতরে কেক রাখা আছে একটা টেবিলে, সেখানে নিয়ে যায় সিপন। শ্যামা দেখে কেকের উপর সিপন + শ্যামা লিখা আছে।
• “ এসব কি? ”
• “ ভালোবাসি তাই “
• “ কাকে? ”
• “ তোকে রে গাধী! ”
• “ খবরদার গাধী বলবে না! ”
• “ ওকে বলবোনা, তার আগে বল হবি কি আমার জীবন সাথী। ”
শ্যামা লজ্জ্বায় মুখ নিচু করে নেয়, তার মতো শ্যম বর্ণের মেয়েকে কেউ ভালোবাসে তাও আবার এভাবে প্রোপজ করছে। ভাবতে পারছেনা শ্যামা।
• “ কিরে বস, এভাবে দাঁড়িয়ে থাকলে তো সবাই দেখছে আমাদেরকে। ”
শ্যামা তাও বসছিলো না, তখন সিপন শ্যামার হাত ধরে হাটু গু জে বসে হাতে একটা রিং পড়িয়ে দেয়।
• “ হবে কি তুমি আমার রাজ্যের রাণী,
সারা জীবন দেখতে চাই শুধু তোমার মুখখানি। ”
শ্যামা অবাক হয়ে বলে,
• “ সত্যিই তুমি আমায় ভালোবাসো, বিশ্বাস তো হয় না! ”
• “ সত্যিই ভালোবাসি, আমি অনেক যায়গায় সিভি জমা দিয়েছি, জব টা হয়ে গেলেই তোর বাসায় বিয়ের অফার করবো। আগে তোর মত জানা দরকার। উফফ সরি, তোমার মত জানা দরকার। তুমি কি রাজি?”
• “ আমার কোন সমস্যা নেই সিপন। তুমি তো এমনিতেই অনেক ভালো। ”
__ “ সেদিনের পর সিপনের সাথে রিলেশন শুরু করি, এরপর বিয়ে করে নিই। কিন্তু আমার কাছে আর কোনই প্রমাণ নেই এই বিয়ের। ”
এতক্ষণ মায়ের সামনে সব কিছু খুলে বলে শ্যামা, মায়ের মাথায় হাত। মা মেয়েতে কি করবে কিছুই বুঝে উঠতে পারছেনা।
__ “ আমার বোনের জীবন টা নরক বানিয়ে এখানে ফুর্তি করতে বসেছেন? তা কিভাবে করতে দিতে পারি বলুন? ”
__ “ আমি তো কিছুই করি নি! ”
__ “ আপনার গুণধর ছেলে করেছে! ”
নিচে চেচামেচি দেখে রিমন নেমে আসে, সিপন কে দেখে অবাক হয়ে যায়,
__ “ হটাৎ কি মনে করে শ্যালক বাবু? ”
__ “ শাকিব কে দিয়ে দে! নইলে তোর জন্য বড় বিপদ অপেক্ষা করছে। ”
__ “ খুন করবে নাকি? ”
সিপনের ইশারায় ৫ জন পুলিশ চলে আসে, অফিসার বলেন,
__ “ রিমন সাহেব, একবার মিস মৌরী সুইসাইড করতে চাওয়ার অপরাধে আপনার নামে মামলা করা আছে আপনি হয়তো ভুলে গেছেন। এখন আবার উনার সন্তান কে ডাকাতি করে নিয়ে এনেছেন। মিসেস মৌরী আহমেদ কে আবারোও হত্যা করতে চাওয়ার অপরাধে আপনার নামে ওয়ারেন্ট আছে। ”
শাওন মৌরীর পাশে থাকবে বলে সিপন এসেছে পুলিশ সাথে করে নিয়ে।
__ “ আমি আজ কোথাও যেতে পারবো না, কাল কোর্টের ডেট আছে। সময় মতো চলে আসবেন আপনারা, আমিও চলে আসবো।
__ “ শাকিব কে দিয়ে দে, ওর মায়ের কাছে। আমাকে দে আমি নিয়ে যাবো ওকে। ”
__ “ তা তো সম্ভব নয়, যা প্রমাণ করার কাল কোর্টে প্রমাণ করে নিয়ে যাবি। ”
সিপন কে বাধ্য করে রিমন বের হয়ে যাওয়ার জন্য।
ছেলেকে কোলে নিয়ে বসে আছে রিমন,
__ “ ইসসস কেনো যে মৌরীকে ডিভোর্স দিলাম, তাহলে তোকে নিয়ে এতো ঝামেলা ই হতো না। দিবোনা তোকে ওদের কাছে, কিছুতেই দিবোনা। ”
রিমনের মা এসে বলে,
__ “ তোর ছেলে দেখতে কিন্তু তোর মতোই হবে। ”
__ “ ঠিক বলেছো।“
বাচ্চা টা অনেক কান্নাকাটি জুড়ে দিয়েছে, নার্স কিছুতেই থামাতে পারছে না শাকিব কে।
নার্স এসে বলে,
__ “ বাচ্চার মায়ের কাছে দেওয়া লাগবে, নইলে না খেতে পেয়ে মারাই যাবে। ”
__ “ কেনো তুমি খাওয়াতে পারছো না! ”
__ “ বাচ্চা তো দুই মাসের, বুকের দুধ ছাড়া কিছুই খায় না। তোলা খাবার কিছুতেই খাচ্ছে না। জোর করে খাওয়ালে খাবার শ্বাসনালী তে চলে যাবে। তখন বাচ্চা বাঁচবে না কিছুতেই। ”
মৌরী বাসর ঘরে বসে আছে, ঘর যদিও পুরোনো তবুও তার মাঝে ভয় কাজ করছে। শাওন রুমে এসে প্রথমেই মৌরীকে জড়িয়ে ধরে, মাথা থেকে ওড়না টা সরিয়ে দেয়। গলাতে চুমু দিয়ে বলে,
__ “ আজ আমি পেয়েছি তোমাকে , সারাটা জীবন রাখবো আগলিয়ে। ”
মৌরী মুচকি হেসে শাওনের বুকে মাথা রাখে,
__ “ অনেক ভাগ্য করে পৃথিবী তে এসেছিলাম বুঝি । নইলে তোমার মতো স্বামী এই দুনিয়ায় পাওয়া যায় না সহযে। ”
শাওন আস্তে আস্তে আদরে ভরিয়ে দেয় মৌরীকে , আজ এতো দিনের চাওয়া পাওয়া পূর্ন হয় শাওনের। যাকে ছোট থেকে ভালোবেসে এসেছে তাকে নিয়ে সুখের সংসার গড়তে পারছে এটাই তার কাছে অনেক।
শ্যামার বিয়ের ১ বছর পর, শাওন আর মৌরীর নতুন করে বিয়ে হয়। মৌরীর ছেলেটার বয়স এখন ২ মাস ।
__ “ আজ শাকিব কে তোর কাছে রাখবি শ্যামা! ”
__ “ খুব ডিস্টার্ব দেয় বুঝি ও তোদের কে? ”
শাওন শ্যামাকে মৌরীর ছেলের দায়িত্ব একদিনের জন্য নিতে বললে শ্যামা এই কথা বলে । মৌরীর সাথে একান্তে সময় কাটাতে চাইছিলো বলেই শ্যামা কে শাওন এই কথা বলে। শ্যামা অবশ্য মৌরীর ছেলেকে নিজের কাছেই রাখে প্রায়ই কিন্তু খোঁচা দিতে ছাড়ে না ।
….
__ “ মৌরীর বিয়েটা তো ভালোভাবেই হয়ে গেলো! আমাদের বিয়ের খবর কবে জানাবে বাসায়? ”
ফোনে সিপন কে শ্যামা জিজ্ঞেস করলে সিপন এড়িয়ে যায়।
__ “ এতো কিসের তাড়া বলো? ”
__ “ তোমার তো এখন চাকুরী হয়েছে, আর কতো দেরি করবে তুমি? ”
__ “ তোমার সমস্যা টা কি? রোজ এতো তাড়া দিচ্ছো কেনো? ”
__ “ আমাকে বুঝতে চেষ্টা করো সিপন, আমার মাঝে আরেকজন বেড়ে উঠছে। আর কিছুদিন গেলেই বাসার সবাই জেনে যাবে? ”
__ “ জানলে তখন জানাবে! ”
__ “ তুমি এতো পাষান হচ্ছো কিভাবে, নিজের সন্তানের প্রতি মায়া দয়া নাই। নাকি দুনিয়ার অনেক সুন্দরীর ভিড়ে তোমার কালো বউ কে আর ভালো লাগছেনা? ”
__ “ ঠিক তাই!”
__ “ মানে? ”
__ “ জা শুনলে তাই, এখন আমি রাখছি। ”
সিপন ফোন টা কেটে দেয়, এখন কি করবে শ্যামা কিছুই বুঝতে পারছেনা।
….
__ “ ফিরতে এতো রাত হলো যে তোর, জাহাজ তো সেই দুপুরে ভিড়েছে। ”
__ “ দেশে আসলেই কি সাথে সাথে ফিরতে হবে এমন কোন কথা ছিলো নাকি? ”
__ “ কোথায় গিয়েছিলিস সেটা বলবি তো! ”
__ “ আমার যে একটা সন্তান আছে, তাকে ফিরে পেতে হবেনা নাকি? ”
__ “ তোর সমস্যা টা কি? ”
__ “ সমস্যা কিছুই না, আমার বাচ্চা আমি চাই, জাস্ট এইটাই। ”
__ “ যখন বিয়ে করলি, শয়তানি করে ডিভোর্স দিয়ে চলে আসলি, এরপর যখন শাওনকে বিয়ে করলো তখন তুই বললি ভালোবাসিস ওকে। আর এখন যখন শাওনের সাথে সুখে আছে তখন আবার ওকে বিরক্ত করতে চাচ্ছিস কিসের জন্য?”
__ রিমন ওর বাবা কে বলে, “
• আমি ওকে পছন্দ করে ফাঁদে ফেলে ইউজ করেছিলাম মাত্র, প্রতিশোধ নিতে।
• পরে অর কষ্ট দেখে মায়া জেগেছিলো তাই কাছে যেতে চেয়েছিলাম।
• কিন্তু বাইরের এতো সুন্দরী নারীর কাছে ও কিছুই না তাই আর ওকে চাচ্ছিনা।
• বিয়ে করার পর এক নারীতে আকৃষ্ট থাকার মতো ছেলে আমি না, বংশ রক্ষার্থে বাচ্চা টা নিয়ে আসতে চাই মাত্র।
আর কিছু শুনতে চাও তুমি? ”
…..
ঘুমের ঘোরে চিৎকার করে উঠে মৌরী, শাওন উঠে মৌরীকে ডেকে তুলে, মৌরী দুঃস্বপ্ন দেখেছে বলে কাঁদতে থাকে।
__ “ কেঁদো মৌরী, এমন কিছুই হবেনা। তোমার ছেলেকে তোমার থেকে কেউ আলাদা করতে পারবেনা। ”
__ “ তুমিই তো আলাদা করে দিয়েছো! ”
__ “ কিভাবে? ”
__ “ আমার ছেলেকে আমার কাছে এনে দাও প্লিজ। ”
__ “ ওকে রিলাক্স, আর তোমার ছেলেকে তোমার থেকে দূরে রাখতে হবেনা। ”
নিজেকে আড়াল করে নিয়ে বলে,
__ “ কই না তো! ঘুমায় নি, তাই হয়তো বা। ”
__ “ মনে হয় অন্য কারণ আছে, খুলে বল! ”
মৌরী ততক্ষণে শ্যামার ঘরে কথোপকথন শুনে শাওনের দিকে তাকিয়ে বলে,
__ “ ও কিছুদিন থেকেই ডিপ্রেশন এ ভুগছে, কোন অসুখ হলো কিনা! কালই ওকে ডক্টর দেখিয়ে এনো। ”
মৌরী শাকিবকে কোলে নিয়ে নিজের ঘরে চলে আসে, তখন শ্যামাকে শাওন বলে,
__ “ এত মন খারাপ করে থাকিস কেনো সবসময়! হাসিখুশি থাকবি সব সময়। এখন ঘুমিয়ে পড়। ”
__ “ হুমম ”
পরের দিন, সকাল ১০ টাই শ্যামলী কে নিয়ে ডক্টর এর কাছে যায় শাওন, যদিও শ্যামা রাজি হচ্ছিলো না। কিন্তু মৌরীর জেদের বশে যেতে বাধ্য হয়েছে।
দুপুর ১২ টাই পোষ্ট অফিস থেকে লোক আসে, একটা চিঠি দিয়ে যায়। মৌরীর নামে চিঠি, একটু অবাক ই হয় সবাই। মৌরী প্রেরকের নাম দেখে রিমন ।
মাটিতে ধপ করে বসে পড়ে, মনের মাঝে হাজার কুচিন্তা হতে শুরু করেছে। শাওনের মা মৌরীর হাত থেকে চিঠি টা নিয়ে খুলে দেখে নিজেও হাঁ হয়ে সোফাতে বসে পড়েন।
শ্যামলীর অনেক গুলো পরীক্ষা করিয়ে শাওনে র ফিরে আসতে দুপুর ২ টা বেজে যায়। বাসায় এসে ঢুকে সবাই চুপ হয়ে বসে আছে দেখে, শাওন জিজ্ঞেস করে,
__ “ কি হয়েছে? ”
__ “ বাচ্চা টা রিমনের! এতো দিন লুকিয়ে রাখলি কিভাবে তোরা! নষ্ট করে দিতে পারিস নি? ”
__ “ কি হয়েছে সেটা বলো! আমি মৌরীকে নিজের সম্পদ ভাবি, ওর সন্তান আমারও সন্তান। এই নিয়ে আর জল ঘোলা না করাই বেটার হবে। ”
__ “ তুই না চাইলেও এবার সবাই জানবে! রিমন আপিল করেছে, ওর বাচ্চা ও ফেরত চায়। ”
__ “ কি যা তা বলছো! ”
__ “ তোর বউ তো পাগল হয়ে গেছে রে! গিয়ে দেখ আগে! ”
শাওন নিজের ঘরে গিয়ে দেখে মৌরী পাথরের মতো চুপচাপ বসে আছে। শাওন গিয়ে মৌরী বলে ডাক দিতেই শাওনের বুকে ঝাপিয়ে পড়ে।
ফুঁপিয়ে কাঁদছে মেয়েটা, কাঁদতে কাঁদতে বলে,
__ “ আমার ছেলে কে আমি দিতে পারবোনা, তুমি প্লিজ কিছু করো! ”
__ “ দিবোনা ওকে, কেঁদোনা আর। ”
মৌরীকে বুকের সাথে জড়িয়ে শান্তনা দিতে থাকে শাওন।
চলবে….
গল্পটা নাকি অনেকের ভালো লাগছে না, আর বেশি দিন এটা চলবেও না। ?
মৌরীর পিছন দিক থেকে বুকের সাথে জড়িয়ে নেয় শাওন,
__ “ কাল থেকে অনেক অপেক্ষা করেছো! আর কাঁদতে হবেনা তোমাকে। এখন থেকে আমার সাথে ই স্বপ্ন সাজাবে তুমি। আজই বাসায় জানিয়ে দিবো এই বাচ্চা আমার আর তোমার। ”
মৌরী রিমনের অপেক্ষা করতে করতে বারান্দায় দাঁড়িয়ে কাঁদছিলো তখন শাওন এই কথা গুলো বলে।
__ মৌরী নিজেও শাওন কে শক্ত করে ধরে, “ কি ক্ষতি করেছিলাম তার বলো! কেনো সে বারবার এভাবে ঠকাচ্ছে?”
__ “ তুমি কোন ক্ষতি করো নি তার , সে ভালো ছেলে নয়। তোমাকে নিয়ে মজা করেছে, ভুলে যাও ওকে। কালই আমি জানতাম তোমার বাচ্চার কথা জানলে সে তোমাকে মেনে নিবেনা। ”
__ “ আচ্ছা! তুমি কি মেনে নিতে পারবে! আমার প্রতি কি ঘৃণাও আসেনা তোমার! ”
__ “ ভালোবাসার মানুষের জন্য এইটুকু না করতে পারলে ভালোবাসার দাম কি থাকে বলো? ”
মৌরী কে নিয়ে শাওন রিয়াদ আহমেদ এর সামনে আসে, মা বাবা বোনের সামনে বলে,
__ “ রিপোর্ট এর কথা কালই জানানো উচিৎ ছিলো, সুখবর লুকানো আমার মোটেও উচিৎ হয় নি। আসলে নতুন অতিথি আসছে আমাদের বংশে। ”
কথাটা মিথ্যে বলেনি অবশ্য, বংশের ই তো সন্তান। কথা টা শুনে সবাই একে অপরের দিকে মুখ চাওয়া চাওয়ি করে। এমন নিউজ কেউ আশা করেনি অবশ্য।
….
__ “ যে মেয়েকে আমার ফ্যামিলি মেনে নিতে পারেনি তার পেটের সন্তান কে কিভাবে মেনে নিবো বল?”
রিমন তার ফ্রেন্ড নয়ন কে কথাটা বলে।
__ “ আরে ওসব বউ হাজার টা গেলে হাজার টা পাবি, বাচ্চা টা হয়ে গেলে নিজের কাছে নিয়ে চলে আসিস। ”
__ “ এটা তো অবশ্যই করবো, আমার বংশের সন্তান অন্যের কাছে রাখার কোন মানেই হয় না। ”
দুজনের বিয়ার খেতে খেতে হাসির রোল তুলে। রিমন এমন কোন পাপ নেই যা বিদেশের মাটিতে করেনা। জাহাজের বড় অফিসার হবার সুবাদে বিদেশী রমনীদের সাথে তার মেলামেশা। রাত কাটাতেও দ্বীধা করেনা তাদের সাথে।
….
শাওন ছাড়া এই বাড়িতে মৌরীর সাথে তেমন কেউ মিশে না ভালোভাবে। প্রেগন্যান্সির সময় মেয়েদের হাসিখুশি রাখতে হয় কিন্তু কিভাবে মৌরীকে হাসাবে সেই চিন্তায় মগ্ন হয়েছে শাওন।
ক্লাস নিয়ে ফিরে এসেই মৌরী কে শাওন একটা প্যাকেট ধরিয়ে দেয়।
__ “ কি এটা? ”
__ “ খুলেই দেখো! পছন্দ হলে একটু সাজিও এখন। ”
মৌরী দেখে আকাশী রঙের শাড়ি, সোনালী পাড়ের। সাথে সোনালী ব্লাউজ আর আকাশী ছায়া। সোনার এক জোড়া কানের দুল।
__ “ বাব্বাহ! তোমার চয়েস এতো সুন্দর! ”
__ “ আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি, তুমিও রেডি হয়ে নাও। ”
__ “ তুমি এনেছো আর আমি পড়বোনা! তা কি হয়। ”
মৌরী শাওন কে ফ্রেশ হতে পাঠিয়ে দিয়ে ঝটপট শাড়ি পড়ে নেয়। ছোট থেকেই ওর শাড়ির প্রতি খুব নেশা, এরউপর পছন্দের রঙের শাড়ি। মন টা এমনি তেই খুশি হয়ে গেছে মৌরীর। কানের দুল টাও অনেক সুন্দর, উপরের দিকে ফুলের মতো নিচে ঝুমকো। দুল টা পড়ে নিতে নিতে শাওন এসে হাজির।
__ “ চোখ টা বন্ধ করো প্লিজ! ”
__ “ উঁহু! কেনো? ”
__ “ করোই না প্লিজ। ”
মৌরী চোখ বন্ধ করতেই শাওন হাত টা ধরে নিয়ে চুড়ি পড়িয়ে দেয়। মৌরী হাত নাড়িয়ে চুরির শব্দ করে খিলখিলিয়ে হাসে। শাওন তো এই হাসি টাই দেখতে চেয়েছিলো।
সবাইকে জানিয়ে মৌরীকে নিয়ে যায় পার্শ্ববর্তী নদীর ধারে। বাতাসে চোখ বন্ধ করে নেয়।
__ “ এই মৌরী, নৌকায় উঠবে? ”
__ “ সত্যিই! ”
মৌরীকে ধরে ধরে নদীর একদম ধারে নামে শাওন,
__ “ ⛵ তে উঠিয়ে দিও। ”
মৌরীকে কোলে নিয়ে নৌকা তে বসিয়ে দেয় শাওন। দাঁড় বাওয়া নৌকায় বেশী মজা লাগে। শাওনের মনে দুষ্টুমি আসে,
নদীর পানি তুলে মৌরীর দিকে ছুড়ে দেয়। মৌরীও শাওনের দিকে পানি মারে। দুজনেই হাসতে থাকে, তখন শাওন বলে
__ “ একটা আবদার রাখবে? ”
__ “ বলেই দেখো!”
__” আমার বুকে মাথা রেখে শোবে, তোমার সাথে আকাশ দেখতে চাই। ”
মৌরী সংকোচ করলেও শাওনের কাঁধে মাথা রাখে,
__ “ হ্যাপি! ”
__ “ এভাবেই প্রতিটি মুহুর্ত তোমার সাথে সাজাতে চাই। ”
মৌরী চোখ বন্ধ করে শাওনকে অনুভব করতে থাকে। নিমিষেই মন টা খারাপ হয়ে যায়, শাওন তাকে কতো ভালোবাসে ছোট থেকে। রিমনের কারণ এ এক্সিডেন্ট এর জন্য আজ সে শাওনের সাথে বেশিক্ষণ খুশি থাকতে পারেনা।
__ “ এই মেয়ে! ঘুমাতে বলিনি, আকাশ দেখতে বলেছি। ”
শাওনের ডাকে হকচকিয়ে উঠে মৌরী। শাওন বুঝে গিয়েছিল মৌরী ঠিক নেই।
মৌরীর নাকে চিমটি কাটে আস্তে করে,
সন্ধ্যের আগে বাসায় ফিরে আসে ওরা, বাইরের খাবার খাওয়ায় না মৌরীকে, যদি ফুড পয়জনিং হয় সেই ভয়ে।
মৌরী চেঞ্জ করেই মামীর কাছে গিয়ে বলে,
__ “ আজ কি নাস্তা বানাবো মামী? ”
__ “ ভিতরে গিয়ে রেস্ট নাও, বাচ্চার কিছু হলে শাওন আবার বলবে আমরা মেরে ফেলেছি। ”
__ “ একদম রেস্ট নেওয়া যাবেনা তো, তাহলে সিজার করতে হবে। আমি অপারেশন করতে চাইনা তো। আমি টুকিটাকি কাজ করতে চাই, সব সময় রেস্ট নিতে ভালো লাগেনা তো। ”
__ “ গিয়ে নুডুলস আর চা করে এনে দাও সবাইকে। ”
সবাইকে নাস্তা খাইয়ে নিজেও খেয়ে নেয়।
রাত ১২ টা বাজে, মৌরী ওয়াশরুমে থেকে ফিরার পথে শ্যামলীর ঘরে ফিসিরফিসির শুনতে পায়। “ শ্যামলী এতো রাতে কার সাথে কথা বলছে! ”
দরজায় টোকা দিরে গিয়েও দেয় না, সকালে বলবে বলে চলে আসে।
….
__ “ এভাবে আর কতো দিন লুকিয়ে সম্পর্ক চালাবে শিপন?”
__ “ তুমি বুঝতে চাচ্ছো না কেনো? আমি এখনো জব পাইনি। একটা জব পেয়ে গেলেই বাসায় তোমার কথা জানিয়ে দিবো। ”
__ “ তুমি যা পারো তাড়াতাড়ি করো, আজ বাবা মা কে বলছিলো আমার বিয়ের ব্যপারে। ”
__ “ তোমার সাথে যখন কথা বলতে আসবে তখন তুমি বলিও সামনে পরীক্ষা, কিছুদিন পর বিয়েটা করতে চাও। ”
__ “ এই চলো না আমরা লুকিয়ে বিয়েটা সেরে রাখি, পরে না হয় বাসাতে জানিয়ে দিবো ।”
শিপন মৌরীর বড় ভাই, চুটিয়ে প্রেম করছে শ্যামার সাথে। আর শ্যামা বিয়ে করার জন্য অনেক পাগল হয়ে গেছে।
__ “ হুম! তা করা যায়! চলো তাহলে কালই বিয়েটা করে ফেলি। বাসায় না হয় পরেই জানাবো আমরা। ”
…..
বেডের মাঝে বালিশ দিয়ে সেপারেশন করছে শাওন,
__ “ ন্যাকামি করছো! ”
__ “ কেনো? ”
__ “ মাঝির সামনে আমায় জড়িয়ে রাখলে আর এখন আলাদা ব্যবস্থা করছো যে বড়ো। ”
শাওন একটু লজ্জা পেলেও বলে,
__ “ সেপারেশনেই থাকো কিছুদিন। ”
মুচকি হেসে বেডের অপরপাশে ঘুমিয়ে পড়ে মৌরী।
….
পরেরদিন সকাল ১০ টাই কোর্টে গিয়ে কোর্টের কাজীর মাধ্যমে বিয়ে করে, ম্যারেজ রেজিস্ট্রেশন ও করিয়ে নেয়। সাক্ষী হিসেবে থাকে শিপনের ২ জন ফ্রেন্ড আর শ্যামার এক বান্ধবী। শিপনের ফ্রেন্ড স্বপন এর বাসাতে দুজনে বসে আছে। স্বপনের বাবা মা বেড়াতে যাওয়ার সুবাদে শিপন সেখানে ই শ্যামা কে নিয়ে একান্তে সময় কাটাতে চাইছে।
__ “ ও এই বাড়ি ছেড়ে কোথাও যাবেনা, কথা টা ভালো করে মাথায় ঢুকিয়ে নে শ্যামা। আর যদি তোদের সবার প্রব্লেম হয় তাহলে আমি ওকে নিয়ে এই বাসা ছেড়ে চলে যাবো। ” বাসায় ঢুকে শ্যামলীর উত্তর দেয় শাওন।
__ “ আমি শ্যামার কথায় যাবোনা শাওন, আমার জন্য তোমাদের সম্পর্ক নষ্ট করোনা। আজ তো একটু অসুস্থ লাগছে, কাল থেকে বাসার রান্না টা না হয় আমিই করবো। আর পড়াশোনা ও কন্টিনিউ করতে চাই। প্রয়োজনে সকালে ঘুম থেকে উঠে রান্না সেরে না হয় ক্লাসে যাবো। আর শাওনের ঘরে থাকলে যদি তোমাদের মনে হয় পাপ করছি, তাহলে না হয় তোমার ঘরেই থাকবো শ্যামা, আর তোমার যদি প্রব্লেম হয়! তাহলে স্টোর রুম তো আছেই। ”
__ “ অন্য কোথাও যেতে হবেনা, এই রুমেই থাকবে। আমার চোখের সামনে, যতক্ষণ আমি বাসায় থাকবো। ”
__ “ সব কিছু নিয়ে জেদ করতে নেই শাওন, তোমার ভয় নেই! আমি তোমাকে ছেড়ে যাবোনা এখন। আমি অনেক ভেবে দেখেছি, আস্তে আস্তে নিজেকে মানিয়ে নিবো তোমার সাথে। ”
শ্যামলী সব শুনে বেরিয়ে যায়, শাওন পর্দা ফেলে দিয়ে মৌরীর কানের কাছে এসে বলে,
“ ভালো বাসি প্রিয়, তুমি যেও না চলে।
রাখবো বেঁধে তোমায়, মায়ার আঁচলে। ”
মৌরী মুচকি হাসে, এরপর বলে,
__ “ চার টা মাস একটু কষ্ট করো শাওন, এরপর না হয় আমরা আবারো এক হবো। ”
শাওনের মনে খুশির দোলা লাগে, মন চাচ্ছে যেনো আকাশে উড়তে, প্রেমের সাগরে ভাসতে। মৌরী যে তার ভালোবাসার ডাকে সাড়া দিতে শুরু করেছে এটাই তার কাছে অনেক।
__ “ শুধু চার মাস না, সারাটা জীবন তোমার জন্য অপেক্ষা করতে পারবো মৌরী। ”
পরের দিন মৌরী খুব ভোরে উঠে সবার জন্য তরকারী রান্না করে, এরপর রুটি বানিয়ে ফেলে। ৮ টার মধ্যে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা সেরে ভার্সিটি চলে আসে। শ্যামলী ও অবশ্য একসাথে ই পড়ে, কিন্তু রিমনের ঘটনা জানার পর থেকে শ্যামলী ঠিক মতো মিশছে না মৌরীর সাথে। একই বাসাতে থাকার সুবাদের যেখানে ওরা একসাথে যাওয়া আসা করতে পারতো সেখানে মৌরীকে ফেলে শ্যামলী আগেই চলে যায় ভার্সিটি তে।
মৌরী ভার্সিটি পৌঁছাতে ই যেনো সবার মাঝে এক প্রকার কানাঘুষো শুনতে পাচ্ছে। নিজের মাঝে খুব অস্বস্তি হচ্ছিলো তার, মনে হচ্ছিলো তাকে নিয়েই যেনো কথা হচ্ছে সবার মাঝে।
এক পর্যায়ে রেহান রাজু কে একটু জোরে করে ই বলে,
__ “ একই সাথে দুইজনের সাথে, আহহ কি মজা হইছে রে! ”
সবাই হো হো করে হেসে উঠে। এদিকে মৌরীর লজ্জ্বায় মাটিতে মিশে যেতে ইচ্ছে করছিলো।
কথায় তাই দিয়ে শোভা রেহান কে বলে,
__ “ বেহায়া দেখবি ভাই, দেখতে হলে আমার সামনে বসা নাক কাটা কে দেখ। ”
সবার মাঝেই হাসির রোল পড়ে যায়, ওদিকে শ্যামলী ও চটে গেছে। মৌরীকে পঁচাতে গিয়ে সবাইকে বলে দিয়েছে। এগুলো বললে নিজের ভাইয়ের ও যে অপমান হবে তা বুঝতে পারেনি ।
বুঝতে পেরেছে শ্যামলী, তাই উঠে ক্লাসের সামনে দাঁড়িয়ে বলে,
__ “ স্টপ ইট, আর যেনো সিরিয়াস বিষয় নিয়ে তর্ক না হয়। এক্সিডেন্ট যে কারোর সাথেই হতে পারে। তাই বলে তাকে নিয়ে মজা উড়াবি নাকি তোরা। এখন যদি তোদের ফ্যামিলির কারোও সাথে এমন হয় তোরা কি করবি?”
মৌরী কোন কথা না বলে বাইরে চলে যায়, ক্লাসে টিচার আসলে ক্লাসে ঢুকে ক্লাস করেই আবার বেরিয়ে যায়।
মৌরীর রুটিন হয়ে গেছে এটা, প্রতিদিন ক্লাস করা, বাসায় রান্না টা করা, মাঝে মাঝে দুই একটা কথা শাওনের সাথে বলা। শ্যামলী সহ বাসার সবাই ধীরে ধীরে মৌরীকে মেনে নেওয়া শুরু করে। বাড়িতে সাধারণত একটা কুকুর পুষলেও যেমন মায়া জন্মে মৌরীও সব কথার ঝাজ সহ্য করে টিকে আছে বলেই হয়তো সবার মনে জায়গা করতে পারছে মেয়েটা।
এভাবে দেড় মাস কেটে যায়, একদিন রাতে শাওন ঘরে রেস্ট নিচ্ছিলো। শাওনের মা বাবা টিভি দেখাতে ব্যস্ত। শ্যামলীর ঘরে ছিলো মৌরী।
মৌরীর মাথাটা ঝিম ধরে আসছে, শরীর টা খুব খারাপ লাগছে। হটাৎ করেই রুমের ভিতরে গড়গড়িয়ে বমি করে ফেলে। শ্যামলী বমি করা দেখে শাওনের ঘরে দৌড়ে পালায়, ওর নিজের জান ঘাটছে এসব দেখে।
__ “ কিরে কি হয়েছে? ”
__ “ কি আবার হবে! তোর বউ বমি করে গোটা ঘর ভাসিয়ে দিয়েছে। ”
শাওন তাড়াতাড়ি করে মৌরীর কাছে যায়, বমি করার পর বিছানায় অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে। বমির জন্য কেউ এই রুমে আসছেনা! তাই আগে রুম পরিষ্কার করে আগে। এরপর মৌরীর মাথা নিজের কোলে নিয়ে কিছুক্ষণ মৌরীকে ডাক দেয়। মৌরীর সাড়া না পেয়ে মৌরীর মুখে পানির ছিটা দেয়।
জ্ঞান ফিরলেও মৌরী সারারাত অসুস্থ থাকে, শাওন খুব ভোরের দিকে মৌরীকে কোলে করে নিয়ে আসে হসপিটাল এ। অনেক গুলো পরীক্ষার পর রিপোর্ট আসে বিকেলে।
মৌরী মা হতে চলেছে, এটা কি আদৌও মেনে নিতে পারবে শাওন। সে তো মৌরীর ভালোবাসা পেলোই না, মৌরীর যদি সন্তান হয় তাহলে মৌরীর ও শাওন কে মেনে নেওয়া সম্ভব না।
কাউকে রিপোর্ট না জানিয়ে লুকিয়ে রাখে শাওন, রাতে সবাই যখন ঘুমে অচেতন। স্টোর রুমে মৌরীর মাথায় হাত বুলাতেই মৌরী উঠে পড়ে।
আধো আধো ঘুম জড়ানো কণ্ঠে বলে মৌরী
__ “ এতো রাতে তুমি! কি হয়েছে বলো আমাকে! ”
__ “ তুমি কি আমাকে ছেড়ে চলে যাবে মৌরী?”
__ “ হটাৎ কি হলো তোমার? ”
__ “ বলো? ”
__ “ না যাবো না। ”
__ “ সত্যিই টা জানার পরও কি এটাই বলবে? ”
__ “ কি এমন সত্যিই! ”
__ “ তুমি মা হতে চলেছো! ”
মৌরী দুই হাত দিয়ে কান চেপে ধরে, কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে থাকে। চোখ লাল হয়ে আসছে, যেকোনো মুহূর্তে জল গড়িয়ে পড়বে।
শাওন আবার বলে,
__ “ যেও না আমাকে ছেড়ে, ও আমাদের সন্তান হিসেবে ই পরিচিত হবে। ”
__ “ তুমি তো ওর বাবা নও! তোমার কি আমার প্রতি এতটুকুও ঘৃণা হচ্ছেনা। ”
__ “ আমি তোমাকে সত্যিই অনেক ভালোবাসি মৌরী, তোমার অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যত সব কিছু মেনে নিতে পারবো। ”
__ “ আর তোমার ফ্যামিলির কি হবে! তারা শুধু জানতো রিমনের সাথে বিয়ের একদিন পর ডিভোর্স হয়ে গেছে। যখন তারা জানবে এই বাচ্চার বাবা রিমন তখন তারা মানবে না। তার চেয়ে তুমি বরং রিমন কে বলে দাও। আমি জানি বাচ্চার কথা জানার পর রিমন আমাকে ঠিকই ফিরিয়ে নিবে। তাছাড়া বাচ্চা পেটে আসলে তো ডিভোর্স ও হয় না। প্লিজ শাওন! তুমি না আমায় ভালোবাসো! আমার আর আমার সন্তানের জন্য তুমি এইটুকু করতে পারবেনা? ”
এই ভয় টাই করছিলো শাওন, খুব ভালো করেই জানতো মৌরী চলে যেতে চাইবে। কথা আগে থেকেই ঠিক করে রেখেছিলো,
__ “ হুম রিমনের কাছে ফিরিয়ে দিবো, তবে একটা শর্ত আছে। ”
__ “ সব কিছু মানতে রাজি। বলো কি করতে হবে? ”
__ “ তুমি রিমন কে জানাবে! তার প্রতিক্রিয়া আগে জানবে ! কিন্তু সম্পুর্ণ ব্যাপার এখন কাউকে জানাতে পারবেনা। সবাইকে বলবে বাচ্চার বাবা শাওন। কারণ রিমন দেশে নেই। সে দেশে আসতে ৬ মাস বা এক বছর লাগবে। এতো দিন তোমাকে এখানেই থাকতে হবে। তোমার বড় মামা তোমাকে তার বাসায় তুলবে না । আবার রিমনের সন্তান জানলে এই বাসাতেও তোমাকে রাখবেননা কেউইই।
শর্ত একটাই, আমার বাচ্চার পরিচয় এ এই বাসাতে থাকতে হবে তোমাকে। যদি তুমি রাজি হও তাহলে তোমাকে রিমনের হাতে তুলে দিবো। আর হ্যাঁ! কাল থেকে আমার ঘরেই থাকতে হবে তোমাকে। প্রয়োজন এ আমি মেঝেতে ঘুমাবো কিন্তু স্বামী স্ত্রীর অভিনয় করতে হবে সবার সামনে। ”
শাওন আর কিছু না বলে রুম থেকে বেরিয়ে পড়ে। এর বেশি সময় মৌরীর সামনে বসে থাকলে শাওনের চোখের জল সে ধরে ফেলতো। রুমে এসেই শাওনের চোখ দিয়ে টপটপ করে জল পড়তে শুরু করে। ছেলেদের চোখে সহজে জল আসে না। কতো টা কষ্ট পেলে তারা কাঁদে শুধু তারাই বোঝে।
মৌরীর খুব কষ্ট হচ্ছে শাওনের অবস্থা দেখে, কতটা ভালো বাসে তাকে। অথচ সে কিছুই করতে পারছেনা। সন্তান পৃথিবীতে আসবে জানলে মেয়েরা অনেক খুশি হয়। নিজের পেটে হাত দিয়ে বলে, “ কেনো আসলি পৃথিবীতে তুই। তোর মা যে ঝরে যাওয়া ফুল , কোন সুবাস নেই তার। তুই কি এই পৃথিবীতে এসে সুখ পাবি? তোর বাবা কি তোকে মেনে নিবে? জানিনারে তুই সুখ পাবি কিনা। তোর জন্য আমি সব কিছু করতে পারবো রে। শাওনের ভালোবাসা দেখলে ওকে ভালোবাসতে ইচ্ছে হয়। কিন্তু তোর জন্য ওকে কষ্ট দিতেও রাজি। কিন্তু এই সমাজ কি তোকে সুস্থ ভাবে বাঁচতে দিবে? ”
মৌরী ফেসবুকে লগইন করে রিমনের আইডি আনব্লক করে,
রিমন কে ছোট্ট করে টেক্সট করে,
“ জানিনা তুমি আমায় ভালোবাসো কিনা! বিশ্বাস করো কিনা! তবুও বলবো তুমি বাবা হতে চলেছো। তুমি কি তোমার সন্তান কেও অস্বীকার করতে পারবে? জানি শাওনের সাথে বিয়ে হয়েছে । ডিভোর্স এর পরে চার মাস না হলে পরবর্তী বিয়ে বৈধ না। আর বাচ্চা পেটে আসলে তোমার সাথে আমার ডিভোর্স ও বৈধ না। আমার জন্য না হোক আমাদের সন্তানের জন্য তুমি কি কিছু করবে? ”
মৌরী সারারাত না ঘুমিয়ে রিমনের জন্য ওয়েট করতে থাকে। কখন সে রিপ্লাই দিবে এই আশায়। সে কোন দেশে আছে কেউ জানে না। তাকে জানাতে ফেসবুক ই তার ভরসা। কিন্তু রিমন কি মেনে নিবে তাকে। উত্তরের আশায় সময় যেনো ফোরাচ্ছে না।
চলবে………….
২ দিন পর
মৌরীর জ্ঞান ফিরে আসে, কেবিনে নিয়ে আসা হয়। ডক্টর দেখা করার অনুমতি দেয় তবে একজন একজন করে। শাওন কাউকে ঢুকতে না দিয়ে নিজে মৌরীর কাছে যায়। মৌরীর কপালে চুমু দিয়ে তার পাশে বসে থাকে।
মৌরি শুধু শাওনের দিকে তাকিয়ে থাকে, শাওনের চোখ রাগে লাল হয়ে গেছে, হয়তো ঘুমায়নি কিংবা কেঁদে চোখ ফুলিয়ে দিয়েছে। মনে মনে বলে, “এতো ভালোবাসো কেনো, আমিতো তোমার যোগ্য নই।” মুখে বলে,
__ “বাঁচালে কেনো আমাকে? আমি তো পাপী, তোমার অযোগ্য। মরতে দেওয়া ই ভালো ছিলো, তাহলে তোমার ক্ষতি হতো না। ” গলার আওয়াজ অনেক ক্ষীণ হয়ে গেছে মৌরীর।
__ “ আর একটাও বাজে কথা বলিস না, কেনো করলি তুই এইরকম। রিমন তোকে কি এমন বলেছে সেটা বল? ”
__ “ সে আমার সাথে যে পাপ কার্য করেছে সেটার ভিডিও করে রেখেছে। নেটে ছেড়ে দিবে সে। তখন আমি সমাজে মুখ দেখাবো কিভাবে শাওন। তোমার স্ত্রী দুশ্চরিত্রা হিসেবে তোমার কি হবে? ”
শাওন সরে যায় প্রথমে মৌরীর থেকে, নিজের ভিতরে খারাপ লাগা তৈরী হয়। কিছুক্ষণ পর শান্ত হয়ে মৌরীর কাছে ফিরে এসে বলে,
__ “ তুই চিন্তা করিস না, সব ঠিক হয়ে যাবে। ” শাওন নার্স কে কেয়ার নিতে বলে বেরিয়ে যায়।
বাইরে মৌরীর মা আর ভাই ছিলো, ওদের কে শাওন মৌরীর খেয়াল রাখতে বলে। আর তিনদিন পর ফিরে আসবে সে একথা জানিয়ে বিদায় নেয়। শাওন কোথায় যাবে সেকথা সে বলে যায়নি কাউকেই।
….
__ “ রিমন যে মৌরীকে তুলে নিয়ে বিয়ে করে ডিভোর্স ধরিয়ে চলে গেছে, এমন মেয়েকে কি আর ঘরে তোলার কোন প্রয়োজন আছে? ” শাওনের মা শাওনের বাবার উদ্দেশ্য প্রশ্ন ছুড়ে দেয়।
__ “ ডিভোর্সি মেয়ে আমার ছেলের বউ মেনে নেওয়া আমার পক্ষে খুব কষ্টকর, কিন্তু বোনের মুখের দিকে তাকিয়ে সব মেনে নিতে বাধ্য। তাছাড়া শাওন তো ওকে ছাড়া কিছুই বুঝেনা। ছেলেকে কষ্ট দিয়েই বা কি লাভ তোমার?”
__ “ বলছিলাম কি! আগে মেনে নিলেও সত্য জানার পর আমারও ওকে ভাবী ডাকতে ইচ্ছে করছেনা। তুমি না হয় ওকে তাড়িয়েই দাও বাবা। ” শ্যামা ওর বাবাকে বলে।
__ “ শাওন যা ভালো বুঝে তাই করবে। আমি আর এই বিষয়ে কথা বলতে চাইনা। ”
….
ঘরের দরজা লাগিয়ে শুয়ে আছে রিমন, চোখ দিয়ে অঝোরে পানি পড়ছে। প্রতিশোধ নিতে গিয়ে একটা সুন্দর জীবন কে নষ্ট করে দিয়েছে সে।
ছোট থেকে বিদেশে পড়াশোনা করেছে কোন মেয়েকেই ভালো লাগেনি তার, শুধু মৌরীকে ক্ষেপাতে বলেছিলো অনেক মেয়ের সাথে রিলেশন করেছে। এই প্রথম একটা মেয়েকে মন থেকে চেয়েছিলো কিন্তু পারিবারিক প্রতিশোধ নিতে গিয়ে মৌরীকে এভাবে হারিয়ে ফেলতে হবে বুঝতেই পারেনি সে। তার না হোক, অন্তত বেঁচে থাক। ভয় দেখাতে গিয়ে সুইসাইড করতে যাবে এটা বুঝতে পারেনি রিমন।
__ “ ফিরিয়ে আনার অনুমতি থাকলে আগেই আনতে বলতাম। তুমি সেটা ভালো করেই ভালো ওকে আমি মেনে নিতে পারবোনা। শত্রুর মেয়েকে ঘরের বউ মানা আমার পক্ষে সম্ভব না। ”
__ “ তাহলে আমি মৌরীকে নিয়ে অন্য বাসায় থাকবো। ”
__ “ পাগল হয়ে গেছো তুমি, সে এখন অন্যের লিগ্যাল ওয়াইফ। তাছাড়া তুমি যদি ওর কাছে যাওয়ার প্লান করো তাহলে তোমার বাবার লাশ ডিঙ্গিয়ে যেতে হবে। কথাটা মনে রেখো, এখন নিজের ঘরে যাও। ”
রিমন কি করবে বুঝতে পারছেনা, একদিকে নিজের বাবা অন্যদিকে প্রথম প্রেম। এমন সময় আয়া ঘরে কফি নিয়ে আসলে কফির মগ ছুড়ে ফেলে দেয় রিমন। শব্দ শুনে রিমনে মা বাবা দুজনেই ছুটে আসেন। রিমনের মা বললেন,
__ “ ওই মেয়ে তোমার কাছে এতো বড় হয়ে গেলো তাহলে, যাও তাহলে ওর কাছেই যাও। আমাদের কবর দিতে আর আসবে না। ”
উনারা চলে যান, রিমন ঠিক করে ফেলে সে চলে যাবে। মৌরীর কাছে নয়, জাহাজে। কারণ সে মেরিন ইঞ্জিনিয়ার। একবার জাহাজ বাংলাদেশ থেকে গেলে ফিরে আসে ৬ মাস বা এক বছর পর। জবে থাকলে তাও এতো সব প্যারা থেকে ভুলে থাকতে পারবে।
রিমন বাসার কাউকে না বলে বের হয়ে যায়, জাহাজে উঠে যায় সে। রিমনের বাবা নিজেও ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন। সেই সুবাদে খবর পেয়ে যান রিমন জাহাজে। যাক ছেলে তাও নিজের কাজে মনোযোগ দিয়েছে এটা ভেবেই নিশ্চিত হলেন।
…
সন্ধ্যার দিকে ৫ জন পুলিশ নিয়ে রিমনের বাসায় যায় শাওন। কিন্তু রিমন কে না পেয়ে তার মাথা খারাপ হয়ে যায়।
শাওন ব্যার্থ হয়ে রিমনের বাবা কে হুমকি দিয়ে বেরিয়ে পড়ে। সন্ধ্যার বাসে চিটাগং টু রাজশাহী রওনা দিয়ে দেয়। অবশ্য চিটাগং থানায় একটা জিডি করে রাখে সে।
…
২ দিন পর মৌরীকে রিলিজ করিয়ে বাসায় নিয়ে যায় শাওন। শাওনের মা বা শ্যামলী কেউ খুশি হয়নি মৌরীকে দেখে। এক প্রকার মুখ বাঁকিয়ে তারা চলে যায়। শাওনের বাবা মৌরীকে মন থেকে মেনে নিতে পারছেনা, কিছু বলছেও না।
শাওন মৌরীকে ঘরে নিয়ে গিয়ে দরজা লক করে দেয়। মৌরী এখন অনেক সুস্থ, একটু দুর্বল মাত্র। মৌরী আস্তে করে বলে,
__ “ আমার জন্য নিজের ফ্যামিলি কে কষ্ট দিও না শাওন। তুমি তো ভালো করে জানো, আমি তোমাকে ভালোবাসতে পারবোনা। অতীতের তিক্ততা আমাকে শেষ কর দিচ্ছে। তুমি বরং নতুন করে বিয়ে করে নাও। দেখো তোমার ফ্যামিলি ও খুশি হবে আর তুমিও। ”
শাওন মৌরীর হাত ধরে টেনে বুকের মাঝে মিশিয়ে নেয়। ঠোঁটে, গলায় অসংখ্য কিস করে। মৌরীর গায়ের ওড়না টা ফেলে দেয়। কোলে তুলে নিয়ে বেডে শুইয়ে দেয়। মৌরীর কামিজ উঠে গিয়ে পেটের অংশ বের হয়ে গেছে। শাওন মৌরীর পেটে অজস্র কিস করে। মৌরীর কোন কথা শুনছেনা শাওন। দুর্বলতার জন্য সরে যাওয়ার ক্ষমতা নেই মৌরীর। শাওন মৌরীর কামিজ জোর করে খুলতে গিয়ে নিজের অনিচ্ছায় মৌরীর কাঁটা যায়গায় চেপে ধরে। মৌরী ব্যথায় অনেক জোরে চিৎকার করে বসে।
এতক্ষণে শাওনের মাথায় আসে কি করছিলো সে এতক্ষণ। মেঝেতে ফেলে দেওয়া ওড়না মৌরীর গায়ে জড়িয়ে দেয়।
__ “ I’m sorry. তুই এমন করে রাগিয়ে দিলি। মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছিলো। আমি তোর অনিচ্ছায় কিছুই করতে চাইনা। ক্ষমা করে দিস আমাকে। ” আর এক মুহুর্ত দাঁড়িয়ে না থেকে বারান্দায় চলে যায় শাওন।
শাওনের স্পর্শ মনে পড়লে বারবার কেঁপে উঠছে মৌরী। সে আসলে কি চায়, রিমনের মতো প্রতারক কে ভুলে যেতে নাকি শাওনকে ছেড়ে দিতে। নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করে মৌরী। উত্তর জানা নেই তার। রিমন তো প্রতারণা করেছে, কিন্তু বেহায়া মন যে তাকেই চাচ্ছে। আর শাওন এতো ভালোবাসে, এতো কেয়ার করে তবুও তাকে পেতে তার ইচ্ছে হয়না। মন টা হুঁহুঁহুঁ করে কেঁদে উঠে।
শাওন রুমে এসে মৌরীকে কাঁদতে দেখে পাশে এসে বসে,
__ “ কাঁদিস না প্লিজ, তোর কষ্ট আমি সহ্য করতে পারিনা।”
__ কান্না জড়ানো কণ্ঠে মৌরী বললো, “ আমি তোমাকে মানতে পারছিনা শাওন, তুমি আমার বন্ধু ছিলে, যাকে ছাড়া আমার খেলা জমতো না। খেলার সাথী কে তো বন্ধুইই বলে। কখনো তোমাকে প্রেমিক হিসেবে ভাবিনি। হয়তো আমার এক্সিডেন্ট টা না হলে তোমাকে মেনে নিতে পারতাম। কিন্তু রিমনের সাথে কাটানো খারাপ স্মৃতি আমাকে খুব কষ্ট দেয়। আমি চাই তুমি আমার থেকে দূরে থাকো। ”
__ “ হুম, আমি তোর উপর অনেক জোর করে ফেলেছি। সরি তার জন্য, আজ থেকে তোর বন্ধুর মতো ই থাকবো। তোর আগের শাওন হয়ে থাকবো। এইবার একটু হাসি দে প্লিজ। ”
শাওন মৌরীকে বলে বাসা থেকে বের হয়ে যায়, তখন মৌরী নিজের ফোন হাতে নেয়। ফেসবুকে লগইন করে আগে রিমনের আইডি তে ঢুকে। কাল হয়ে গেছে আইডিটা। মৌরী মনে মনে বলে, “ ব্লক করে দিলে আমায় শেষ পর্যন্ত। ”
কিছুক্ষণ পর দেখে মেসেজ রিকুয়েস্ট এসেছে, সেটা ওপেন করে দেখে একটা ফেইক আইডি থেকে অনেক গুলো মেসেজ এসেছে। মেসেজ গুলো ছিলো,
“ মৌরী তুমি কোথায়? আমাকে ব্লক দিলে কেনো? তোমার জন্য খুব টেনশন হচ্ছে। ”
“ শাওন বলেছে তুমি সুইসাইড করতে গিয়েছিলে, আমি সত্যিই এমন চাইনি। আমি তোমাকে ভয় দেখাতে চেয়েছিলাম কিন্তু তুমি এমন করলে কেনো। ”
“ আজ বাবাকে বলেছিলাম তোমাকে বউ করে আনার কথা, উনি বললো তার লাশের উপর দিয়ে গিয়ে যেনো তোমায় বউ করে আনি। আমি এমন চাইনি বিশ্বাস করো। তোমাকে খুব ভালোবেসে ফেলেছি। ”
“ শাওন থানায় আমার নামে জিডি করেছে, দেশে ফিরলে আমায় গ্রেফতার করা হবে। তোমার প্রতারক প্রাক্তন এবার শাস্তি পাবে। আমি খুব খুশি হয়েছি জানো। ”
“ শুনলাম তুমি এখন অনেকটা সুস্থ। খুব খুশি লাগছে তোমার কিছু হয়নি তাই। ”
কিছুক্ষণ আগে লাস্ট মেসেজ এসেছে,
“ মৌরী, তুমি তো জানো তিন মাস না হলে ডিভোর্স পুরোপুরি হয় না। শাওনের সাথে তোমার বিয়েও তো বৈধ না। ফিরে কি আসা যায় না আমার জীবনে? ”
মৌরী ছোট্ট একটা রিপ্লে দেয়,
“ আমি অকৃতজ্ঞ না। ”
সাথে সাথে রিপ্লে আসে,
“ আর একবার ভেবে দেখো প্লিজ।”
মৌরী লিখে,
“ যেদিন প্রতারণা করে চলে গিয়েছিলে সেদিন শাওন আমাকে সম্মান করেছে, স্ত্রীর মর্যাদা দিয়েছে। যেদিন মরতে গিয়েছিলাম প্রথম ব্যাগ রক্ত সে দিয়েছে। পরের রক্ত সে জোগাড় করেছে অনেক কষ্ট করে। আমি তাকে ভালোবাসি না ঠিকই। কিন্তু সে আমার ছোট বেলা থেকেই বন্ধু। যেই বন্ধু আমাকে নিয়ে এতো ভাবে তাকে কষ্ট দিলে আমার পাপ হবে। কিন্তু তুমি ভালো করেই জানো আমি তোমাকে ই ভালোবাসি। আমি এটাও জানি শাওন আমাকে কখনো কষ্ট দিবেনা। ”
মেসেজ সেন্ট করে ব্লক করে দেয় রিমন কে। জানেনা কাজ টা ঠিক না ভুল করেছে সে।
__ “ প্লিজ সত্যিই টা কাউকে বলোনা, আমায় যদি ডিভোর্স দিতেই হয় তাহলে আমার পড়াশোনা শেষ হবার পর চাকুরী পাওয়া পর্যন্ত ওয়েট করিও। আমি তোমাকে ঠকাতে চাইনি, তাই বিয়েটা করতে চাইনি। মা জোর করাতে আমি বাধ্য হয়েছি। প্লিজ দয়া করো শাওন, আমি তোমার কাছে স্ত্রীর অধিকার চাইনা। তুমি চাইলে আরেকটা বিয়েও করতে পারো। কিন্তু তবুও আমাকে এখুনি তাড়িয়ে দিও না। আমাকে বের করে দিলে সমাজের সামনে মুখ দেখাতে পারবোনা। আমার তখন আত্মহত্যা ছাড়া কোন উপায় থাকবেনা। প্লিজ চুপ করে থেকোনা। দয়া করে কথা বলো, কথা দাও কাউকে বলবে না। ”
শাওন মৌরীর হাত ধরে তুলে, আস্তে করে বলে,
__ “ বিয়ে কখন করেছিস আর ডিভোর্স কেনো হলো? ”
__ “ সেদিন রাতে বাসায় লোড শেডিং করিয়ে আমায় ওই তুলে নিয়ে গিয়েছিলো মিথ্যে বলে বোকা বানিয়ে। ”
__ “ আর তুই বড়লোক জামাই পাবি আশায় নাচতে নাচতে চলে গেছিস। ”
__ “ ভুল বোঝো না প্লিজ।” মৌরী সব কথা খুলে বলে।
শাওন কিছুক্ষণ পাগলের মতো ঘরের মধ্যে পায়চারী করে, এরপর মৌরীর সামনে আসে।
__ “ শয়তান টা তোকে কিভাবে আদর করেছে রে, যার জন্য তুই পাগল হয়ে গেছিস। আমি কি পারিনা ভেবেছিস, সব ভুলিয়ে দিবো তোকে। “
মৌরীকে বুকে টেনে নিয়ে ঠোঁট দুটো নিজের ঠোঁটে নিয়ে নেয়। মৌরী ছাড়ানোর চেষ্টা করেও পারেনা। ১০ মিনিট পর ছাড়লে মৌরী হাঁপিয়ে যায়, কোনরকম শাওনের থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলে,
__ “ দয়া করে থামো শাওন, এটা পাপ হচ্ছে তোমার আমার দুজনের ই। আমাদের বিয়ে হলেও এটা বৈধ হয়নি৷ কারণ রিমন অন্যায় করলেও আমাদের ধর্মে বলে, ডিভোর্স এর পর চার মাস মেয়ে অন্য বিয়ে করতে পারবেনা। যদি বিয়ে করে তাহলে সেটা বিয়ে বলে গণ্য না। আমাদের পাপ হয়ে যাবে, আমি তোমায় ভালোবাসিনা ঠিকই কিন্তু তুমি তো ভালোবাসো। তাই দয়া করে পাপ করিও না প্লিজ। ”
শাওন মৌরী কে ছেড়ে দিয়ে বাইরে চলে আসে। ছাদের এক কোণে বসে অস্থিরতায় ভোগে।
শ্যামা মৌরীর সাথে কথা বলতে আসে, দুজনের বয়সে ৬ মাসে ডিফারেন্স হলেও তারা একই ক্লাসে পড়ার সুবাদে বান্ধবী। মৌরী কে জিজ্ঞেস করে,
__ “ কিরে কেমন কাটলো রাত্রি, তোর ঠোঁট তো দেখি এখনো লাল হয়ে আছে। ”
মৌরী হটাৎ করে মুখে হাত দেয়, শ্যামলী হাসতে লাগে।
__ “ থাক, আমার কাছে তোর আর লজ্জা পেয়ে কাজ নেই। ”
মৌরী মাথা নিচু করে বসে থাকে, তার কাছে শুধু মনে হচ্ছে এই সহজ সরল মানুষ গুলো কে সে ঠকাচ্ছে। নিজ স্বার্থের জন্য এমন টা কি ঠিক হচ্ছে। তার ও তো কিচ্ছু করার নেই, সে যে নিরুপায় হয়ে গেছে।
__ “ কিরে কথা বলছিস না যে, নাকি বরের সোহাগ পেয়ে আমাদের ভুলে গেলি। ”
__ “ কি যে বলিস তুই, তোদের কেনো ভুলবো। গতকাল থেকে মানসিক ভাবে অসুস্থ আমি। তাই সব কিছু মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছিলো। ”
__ “ আমি জানি মামী আমাকে আপনাদের পছন্দ হয়নি। আপনি যদি চান ছেলেকে আরেকটা বিয়ে করাতে পারেন। কিন্তু ভাগনী হিসেবে আমাকে বঞ্চিত করবেন না প্লিজ। আমি কখনো আপনার ছেলের বউয়ের অধিকার চাইবোনা। ”
__ “ কি যা তা বলিস! সতীনের ঘর করবি নাকি। নিজের স্বামীর ভাগ কেউ দেয় না। আর তুই কিনা! ”
শাওন ছাদ থেকে নেমে আসার সময় মৌরী আর ওর মায়ের কথা শুনে ডাইরেক্ট মায়ের ঘরে আসে।
মৌরীর গালে চড় মেরে বসে শাওন।
__ “ আর নেক্সট টাইম যদি ফালতু কথা বলিস তো তোকে কেটে টুকরো করে দিয়ে জেলে যাবো। ”
ছেলের হটাৎ করে এমন ব্যবহার এ ভয় পেয়ে যান সালেহা খাতুন। ভয়ে ভয়ে বলে,
__ “ আরে না রে, ও আর এমন বলবে না। তুই শুধু শুধু রাগ করছিস। ও তো আমার রাগ ভাঙানোর জন্য এসব বলছিলো। ”
শাওন একটু শান্ত হয়ে মৌরীর দিকে তাকায়, দেখে মেয়েটার চোখে জল চিকচিক করছে। শাওন রুম থেকে বেরিয়ে যায়, নিজের রুমে গিয়ে ড্রেস চেঞ্জ করে বাসা থেকে বেরিয়ে যায় না খেয়ে। সবাই নাস্তা করলেও মৌরী করেনি, শাওনের ঘরে গিয়ে দরজা লাগিয়ে কাঁদতে থাকে।
২০ মিনিট পর মৌরী ফোনে ভাইব্রেশন হচ্ছে, আননোন নাম্বার থেকে কয়েকবার কল আসছে, মৌরী রিসিভ না করায় কেটে যাচ্ছে। বাধ্য হয়ে মৌরী ফোন রিসিভ করে সালাম দেয়, ওপাশ থেকে সালামের জবাব না দিয়েই বলে,
__ “ ডিভোর্স দিতে না দিতেই নতুন জোগাড় করে ফেলেছো?”
__ মৌরী বিস্ময়ের সাথে বলে, “ কে? ”
__ “ এক রাতেই ভুলে গেলে, তোমার প্রাক্তন হাজবেন্ড কে। ”
__ “ যার জন্য আমার জীবন টা নষ্ট হয়ে গেছে তাকে কি ভোলা যায়। কেনো এমন করলেন আপনি? প্রশ্ন টা আমাকে খুব পীড়া দেয়। আপনি খারাপ হলেও আপনার প্রতি আমার ভালোবাসা জন্মেছিলো। কিন্তু ছেড়ে দিলেন কেনো? কি অপরাধ আমার বলুন? ”
__ “ প্রতিশোধ নিয়েছি। আমার দাদীর সাথে হওয়া অন্যায় এর প্রতিশোধ। আমার বাবার জীবনে অন্ধকার অধ্যায়ের কারণ যারা তাদের উপর প্রতিশোধ নিয়েছি। বিয়ে করেও সুখী হবেনা তুমি। আমার সাথে কাটানো মুহুর্তের আগে তোলা তোমার ভিডিও এখন ইউটিউব এর ভাইরাল ভিডিও। ”
__ “ কিহহহহহ! আপনি এই কাজ করতে পারেন না। যেভাবেই হোক আপনি আমার স্বামী। কেউ নিজ স্ত্রীর এতো বড় ক্ষতি করতে পারেনা। আপনি মিথ্যে বলছেন। ”
__ “ তোমার ফেসবুক একাউন্ট চেক করে দেখো! হাহাহা ”
মৌরী ফোন কেটে দিয়ে ফেসবুকে লগইন করে, মেসেঞ্জারে রিমনের পাঠানো ভিডিও। প্লে করে নিজেকে সামলাতে পারেনা মৌরী। ভিডিও ডিলিট করে দেয়, অজ্ঞান হয়ে যায় মৌরী। বারবার রিমনের ফোন আসাতে ভাইব্রেশনের জন্য মৌরী আস্তে আস্তে উঠে বসে, ফোন রিসিভ করে। রিমন বলে,
__ “ তুই এমন করতে পারিস না, আমি তোকে ভালোবেসে ফেলেছিলাম। তুই আমার সর্বনাশ করলি তো। আমার আর বাঁচার ইচ্ছে নেই। যা করলি আমার সাথে তার বিচার পরকালে তুই পাবি। ” বলেই ফুঁপিয়ে কাঁদছে মৌরী।
__ “ হাহাহা ! ভয়ে কাঁদছো নাকি। ভিডিও ইউটিউব এ দিই নি। শুধুমাত্র তোমার মেসেঞ্জারে দিয়েছিলাম। তোমাকে এখুনি মরতে হবেনা। তুমি জাস্ট সবাইকে বলবে রিমন তোমার সাথে কি করেছে। তাহলে তোমার ফ্যামিলি যখন আমার বাবাকে জানাবে আমি খুশি হবো। কথা শুনবে তো! ”
__ “ শাওন সব জানে! ”
__ “ বাহহহ! ভাগ্য দেখি খুব ভালো। মেয়ে ডিভোর্সি জেনেও কিছু বলছেনা। যাই হোক! তুমি যদি বাসায় না বলো, তোমার আমার রিলেশন কি ছিলো! তাহলে এই ভিডিও নেটে ছাড়তে আমি দুইবার ভাববো না। ”
__ “ আর কি চান? আমার মৃত্যু! ”
__ “ তুমি মরবে কেনো? আগের কাজ আগে শেষ করো । তারপর বাকিটা বলবো। ”
__ “ আমি আপনার সাথে দেখা করতে চাই রিমন। প্লিজ একবার আসুন আমার কাছে। ”
__ “ কেনো শাওন কি বেডে তোমায় সুখ দিতে পারেনি! যে আমায় ডাকছো? ”
__ “ ছিঃ ”
__ “ যা বলছি ভুল বলেছি নাকি? ”
__ “ শাওন এমন কিছুই করেনি আমার সাথে। আপনার মতো অভদ্র না সে। ”
__ “ তাই নাকি! যাও গিয়ে এখুনি জানাও, ২৪ ঘন্টার ভিতরে যদি বাবার কাছে ফোন না আসে। তাহলে ভেবে নিও বাকিটা কি হতে পারে। ”
মৌরী ফোন কেটে দেয়, কাঁদতে থাকে । দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে যায়। শাওন ফিরে এসে শোনে সকাল থেকে মৌরী না খেয়ে ঘরে দরজা লক করে রেখেছে। রাগ হয়ে যায়। শাওন অনেক্ষণ ডাকার পরও মৌরী দরজা খুলছেনা দেখে শাওন টেনশনে পড়ে যায়। জোরে জোরে দরজা ধাক্কাতে থাকে শাওন। মনের ভিতর ভয় ঢুকে যায়, “ মেয়েটা নিজের কোন ক্ষতি করে ফেললো না তো আবার। ”
দরজা ভেঙে শাওন ভিতরে ঢুকে, মৌরী মেঝেতে অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে। গোটা মেঝেতে রক্ত, শাওন খেয়াল করে মৌরীর হাতে কেটে দিয়েছে। সেখান থেকেই ব্লাড বের হচ্ছে। শাওন মৌরী বলে চিৎকার করে উঠে। বুকের সাথে জড়িয়ে রাখে কিছুক্ষণ। বুঝতে পারে এখনো শ্বাস বইছে।
তাড়াতাড়ি করে হসপিটালে নিয়ে যায় শাওন। এমার্জেন্সীতে রাখা হয় মৌরীকে। ডক্টর এসে দুই ব্যাগ বি পজেটিভ রক্ত জোগাড় করতে বলে। রোগীর অবস্থা জানতে চাইলে ডক্টর বলে,
__ “ অনেক রক্ত বের হয়ে গিয়েছে, দোয়া করুন, বাকিটা আল্লাহর ইচ্ছে। ”
শাওন আর কথা না বাড়িয়ে তাড়াতাড়ি রক্তের ব্যবস্থা করে ফেলে। মনে মনে খুব প্রার্থনা করতে থাকে যেন মৌরী সুস্থ হয়ে যায়।
মৌরীর বাবা মা ভাই সবাই খবর পেয়ে চলে আসে হসপিটাল এ। শাওন রাগ দমন করতে না পেরে প্রথমে রিমনের কে কল দেয়, রিসিভ হতেই শাওন বলে,
__ “ আজ যদি মৌরীর কিছু হয়ে যায় তাহলে তোকে নিজ হাতে খুন করবো রিমন। ”
__ শাওনের কথা শুনে রিমনের বুক ধক করে উঠে, তাড়াতাড়ি বলে, “ কি হয়েছে মৌরীর? ”
__ “ মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে, প্রচুর রক্ত বের হয়ে গেছে। যদি কিছু হয় তোকে মাটিতে পুতে ফেলবো। আমার মৌরীর জীবন নিয়ে তুই অনেক খেলেছিস। এবার তোকে দেখে নিবো রিমন। ”
রিমনের মৌরীর জন্য খুব কষ্ট হচ্ছে, মেয়েটা কে দেখে ভালোবেসে ফেলেছিলো। শুধুমাত্র প্রতিশোধ এর আগুনে জ্বলে মেয়েটার এত ক্ষতি করেছে। আর মৌরী যদি মরে যায়, নিজেকে ক্ষমা করতে পারবেনা। রিমনের চোখে এক ফোঁটা জল আসে, একি মৌরীর প্রতি ভালোবাসা নাকি হারানোর ভয় বুঝতে পারেনা।
ফোনের ওপাশে শাওন ওকে অনেক কথা শুনাচ্ছে রিমন আর উত্তর দেয়নি, শাওন ফোন কেটে দিয়ে ওর চাচা রিসাদ কে ফোন দিয়ে শাসিয়ে দেয়।
শাওন মৌরীর পাশে গিয়ে বসে, জানে মেয়েটার উপর সারাদিন অনেক ধকল গেছে তারপরও মৌরীর পিঠে হাত দেয়। চমকে উঠে মৌরী, ধড়ফড় করে উঠে যায়। জোর গলায় বলে,
__ “ বাধ্য হয়ে তোমাকে বিয়ে করেছি, তার মানে এই না যে আমাকে তুমি কিনে নিয়েছো। খবর দার আমাক ছোঁবে না। ”
যে মৌরী ছিলো শাওনের ছোট বেলার খেলার সাথী। কতো দিন একসাথে মারামারি করেছে। একে অপরকে ছাড়া যেনো থাকতেই পারতো না। আর সেই মৌরী তার ছোঁয়া কে ঘৃণা করছে। সরে যায় শাওন,
আস্তে করে বলে,
__ “ সরি, আমি বুঝতে পারিনি। আমাকে দেখে তুই অখুশি হবি। আচ্ছা একটা কথা বলবি, তুই না আমার খেলার সাথী ছিলিস, এখন কেনো আমাকে সহ্য করতে পারছিস না। ”
মৌরী মনে মনে বলে, “ এতো হয়না! কারণ আমি রিমন কে ভালোবেসে ফেলেছি। এক জীবনে দুইজনের সাথে কি ঘর বাধা যায়। কখনো এটা হবার নয়। কিন্তু রিমন যে আমায় ছেড়ে চলে গেল। আমি কার কাছে সব সত্যি বলবো। ”
মৌরীকে চুপ থাকতে দেখে শাওন আবারও জিজ্ঞেস করে,
__ “ তুই কি রিমন কে ভালোবেসে ফেলেছিস, যার কারণে আমায় মানতে পারছিস না। ”
মৌরী কোন কথা না বলে চুপচাপ বসে থাকে। শাওনের একটু রাগ হয়, এমন নিরবতার জন্য। মৌরীর হাত ধরে ঝাঁকি দিয়ে বলে,
__ “ আমি মুর্তি নয়, কথা বলছি তোর সাথে। তুই জবাব দিচ্ছিস না কিসের জন্য। ”
__ “ আহহহ ছাড়ো! লাগছে হাতে। ”
__ “ তুই কি আমার উপর বিরক্ত হচ্ছিস?”
__“ আমার একটু সময় লাগবে, প্লিজ একটু একা থাকতে চাই। আমার বিশ্বাস তুমি আমায় ভুল বুঝবেনা। ”
__ “ তাড়িয়ে দিচ্ছিস তাইনা ! ”
মৌরী কথা না বলে বেডে উঠে মাঝে কোলবালিশ দিয়ে শুয়ে পড়ে। শাওন বুঝতে পারছেনা মৌরীর কি এমন হয়ে গেলো। চোখ বন্ধ করে শুয়ে পড়ে, স্মৃতির পাতায় ভেসে উঠে শুধুই মৌরীর স্মৃতি।
মৌরী শাওনের থেকে পাঁচ বছরের ছোট। শাওন মাস্টার্স পাশ করে এখন সরকারি কলেজের প্রফেসর হয়েছে। আর মৌরী অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে পড়ে। শ্যামা মৌরীর ৬ মাসের বড়। দুটো তেই এক ক্লাসে পড়ে। সব সময় দুটো মিলে খেলা করতো । আর শাওন গিয়ে দুজনকে বিরক্ত করতো। একবার মৌরী শাওনের উপর রাগ করে শাওনের চুল ধরে গালে কামড়ে দেয়।
শাওন নিজের গালে হাত দিয়ে মুচকি হেসে ফেলে, পরক্ষণেই মন খারাপ হয়ে যায় মৌরীর এমন ব্যবহারের জন্য।
• •
শাওনের আম্মু আব্বু আর শ্যামা বসে আছে, শাওনের আম্মু কখনোই চায়নি মৌরী এই বাড়ির বউ হোক।
স্বামী কে রাগারাগি করে বলছেন,
__ “ তোমার বোনের মেয়েকে উদ্ধার করতে গিয়ে আমার ছেলের জীবন টা নষ্ট করে দিলে। ওই নষ্টা মেয়ে কি না কি করে বেড়িয়েছে আর এখন এর দায়ভার আমার ছেলেকে নিতে হবে। ”
শ্যামা হুট করে বলে বসে,
__ “ আম্মু তুমি কি জানোনা! ভাইয়া মৌরীকে কতো টা ভালোবাসে। কতো টা চিন্তিত থাকে মৌরীকে নিয়ে সেটা তো আমিও জানি, আব্বুও জানে। ”
রিয়াদ আহমেদ গম্ভীর স্বরে মেয়ে কে চলে যেতে বললেন, এরপর স্ত্রী কে বললেন,
__ “তোমরা মেয়েরাই মেয়েদের শত্রু, দোষ কি তোমার মাঝে নেই। তুমি তো কালো, তোমার মা ও তো তোমাকে আমার ঘাড়ে জোর করে চাপিয়ে দিয়েছে। আমার ছেলেটার গায়ের রঙ আমার মতো হলেও মেয়ে টা তোমার মতো হয়েছে। কখনো কি আফসোস করেছি তোমাকে নিয়ে। ভালো বেসে সুখে থাকার চেষ্টা ই করেছি। তুমি তাহলে কেনো তোমার ছেলের ভাগ্য মেনে নিতে পারছোনা। মৌরী আমার বোনের মেয়ে, ওর প্রতি বিশ্বাস আছে। তাছাড়া ও যদি খারাপ ই হয় তাহলে সেটা আমার ছেলে বুঝবে। তোমাকে এই নিয়ে এতো চিন্তা করা লাগবেনা। ”
__ “ তুমি আমাকে এভাবে অপমান করলে, ওই চরিত্রহীনা মেয়ের জন্য আমাকে অসম্মান করলে। আমি তোমাকে কখনো ক্ষমা করবোনা। একদিন দেখিও তুমি আজকের ব্যবহারের জন্য আমার কাছে ক্ষমা চাইবে। ”
__ “ এই জন্যই বলে মেয়ে মানুষের মোটা বুদ্ধি, বুঝানোর জন্য উদাহরণ দিলাম, আর তুমি সেটা নিয়েই ঝগড়া শুরু করে দিলে। ”
__ “ বুঝানোর জন্য দুনিয়ায় আর কিছু ছিলো না, আমি আর আমার মেয়ের গায়ের রঙ টাই বড় হয়ে গেলো। হায় আল্লাহ! আমি আর বাঁচতে চাইনা। ”
__ “ আহহহ! ন্যাকামি বাদ দিয়ে এখন ঘুমাও। “
রিয়াদ আহমেদ পাশ ফিরে শুয়ে পড়েন, আর বউয়ের ফিচফিচানি কান্না শুরু হয়।
পরদিন সকালে মৌরীর ঘুম ভেঙে খেয়াল করে শাওনের বুকের মাঝে শুয়ে আছে। শাওন ও ওকে জড়িয়ে শুয়ে আছে । এমন টাই তো চেয়েছিলো সে, স্বামীর বুকে মাথা দিয়ে আরামে ঘুমাবে। কিন্তু শাওন! ওকে কি মেনে নেওয়া সম্ভব। মৌরী উঠে যেতে গিয়ে শাওনের ঘুম ভেঙে যায়। শাওন মৌরীর কোমর ধরে আরোও আরাম করে ঘুমানোর চেষ্টা করে। মৌরী খুব রেগে যায় এবার, শাওনের বুকে জোরে করে কিল মেরে দেয়।
শাওন ঘুম জড়ানো কণ্ঠে বলে
__ “ কি হয়েছে! একটুকু ও কি ঘুমুতেও দিবেনা!”
__ “ কে নিষেধ করেছে ঘুমাতে, তাই বলে কি আমাকে জড়িয়ে ঘুমাতে হবে নাকি। ”
__ “ আমি আমার বউ কে জড়িয়ে ঘুমিয়েছি। তোমার আপত্তি থাকলে অন্য ঘরে যাও গিয়ে। ”
__ “ ঘুমের ঘোরে কি পাগল হয়ে গেলে তুমি। তোমার বউ তো আমি, আমি অন্য ঘরে যাবো কিভাবে যদি যেতে না দাও তো। ”
__ “ তাহলে আমার বুকেই থেকে যাও! ”
__ “ তুমি আবার আমাকে তুমি ডাকা শুরু করলে কবে থেকে। ”
__ “ বউ কে তুমি বলেই ডাকতে হয় তো। ”
মৌরীকে দুই হাত দিয়ে বুকের মাঝে জড়িয়ে নিয়ে শাওন আবার বলে,
__ “ সব কিছু কি আবার নতুন করে শুরু করা যায় না। তোমার হাত ধরে আমি পৃথিবী ঘুরতে চাই। সব অতীত কি ভুলে যাওয়া যায় না। বড্ডো ভালোবাসি যে তোমায়। সেই ছোট বেলা থেকেই তোমার সাথে মজা করতে করতে কখন যে তোমার প্রেমে পড়ে গিয়েছিলাম নিজেও জানিনা। রিমনের সাথে তোমার বিয়ের কথা শুনে খুব কষ্ট পেয়েছিলাম। যখন বিয়েটা ভেঙে যায় আর তোমায় হারাতে চাইনি। নিজের আপন করে নিতে চাই, হবেনা কি তুমি আমার! ”
মৌরী নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে উঠে যায়,
__ “ ক্ষমা করে দিও আমাকে, আমি তোমাকে কখনো ভালোবাসার চোখে দেখিনি। আমি তোমাকে মেনে নিতে পারবোনা। ”
শাওন গত দিন থেকেই খেয়াল করেছে মৌরীর হাতে একটা পেপার। কিন্তু সেটা বিছানায় পড়ে থাকতে দেখে খুলে দেখে।
ডিভোর্স পেপার দেখে শাওনের মাথা খারাপ হয়ে যায়, একা একা বেডে কয়েকটা লাত্থি দেয়। শব্দ শুনে মৌরী ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে আসে, শাওনের হাতে পেপার টা দেখে বুঝতে বাকি থাকেনা কি হয়েছে।
মৌরী ওয়াশরুমের দরজার সামনে থ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। মাথা নিচু করে ফেলে সে। এতো বড় সত্যিই কথা মেনে নেওয়া সব ছেলের পক্ষে সম্ভব না । শাওন মৌরীর দিকে অনেক্ষণ তাকিয়ে থাকে, ভাবে মৌরী নিজে হয়তো খুলে বলবে সব কিছু।
কিছুক্ষণ পর শাওন মৌরীর দিকে এগিয়ে যায়, হাতের পেপার দেখিয়ে বলে,
__ “ এটা কি মৌরী? তুই এভাবে আমাকে ধোঁকা দিতে পারলি। ”
মৌরী চোখের পানি ছেড়ে দেয়, যদি শাওন ও রিমনের মতো ডিভোর্স ধরিয়ে দেয়। তাহলে কি হবে তার। ভয় মৌরীর ভিতরে জেঁকে বসেছে।
মৌরী এমন এক পরিস্থিতিতে পড়েছে, হাসবে নাকি কাঁদবে কিছুই বুঝতে পারছেনা। যেই রিমন কে প্রথম দেখাতে পছন্দ করেছিলো সেই রিমন তাকে প্রথমে বোন ডাকলো, এরপর ধোঁকা দিলো, তার প্রতি প্রচণ্ড ঘৃণা আসলো আর যখন জানতে পারলো মৌরীকে রিমন বিয়ে করেছে মনে মনে যতো টা না খুশি হয়েছে ডিভোর্স এর কথা শুনে ভয় পেয়ে গিয়েছে। আর এখন সবার সামনে মৌরীকে বিয়ের কতজা বলছে। রিমন এমন কেনো করছে তার সাথে। কিছুই বুঝতে পারছেনা মৌরী। শাওন মৌরীর সামনে হাতে তুড়ি মেরে বলে,
__ “ আর চুপ করে থাকিস না, দয়া করে বলবি রাতে কোথায় ছিলিস! ”
__ মৌরী একবার রিমনের দিকে তাকিয়ে আবার নিচে দিকে তাকিয়ে বলে “ বান্ধবীর বাসায়, গত রাতে ওর আম্মু হটাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ে। এমার্জেন্সীতেও এডমিট করে। সেইজন্য গিয়েছিলাম। ”
__ “ আর তোর পোশাক! ” মৌরীর আম্মু জিজ্ঞেস করে।
__ “ মিতার আম্মু আমার ড্রেসে বমি করে দিয়েছিলো, তাই এই পোশাক মিতা আমাকে দিয়েছে। ”
রিমন মৌরীর দিকে তাকিয়ে ভাবছে “ কি অনর্গল মিথ্যে বলে দিলো।”
রিমন তখন মৌরীকে জিজ্ঞেস করে,
__ “ তোমার বান্ধবীর নাম্বার টা দাও, আমরা যোগাযোগ করি। ”
রিমনের কথা তে সবাই সুর মিলালো, সবাই মিতার নাম্বার চাচ্ছে। মৌরী বাধ্য হয়ে নাম্বার দেয়। বিপদ বুঝতে পেরে মিতা কে সব আগেই খুলে বলেছিলো মৌরী। তাই এই যাত্রায় বেঁচে যায় মেয়েটা।
মিতার সাথে কথা শেষ করে রিমন বলে,
__ “ মেয়েকে যে এতো বকাঝকা করলেন, এখন বুঝলেন তো মৌরী কতো ভালো মেয়ে। ওকে বিয়ে করতে চেয়ে আমি তো কোন ভুল করিনি তাহলে। ”
রামিজা অবাক হয়ে গেছে রিমনের কথাতে, রিসাদ ভাই কি তার মেয়েকে বউ হিসেবে মেনে নিবে। রামিজা ভালো করেই জানে তার ভাই কখনোই এই বিয়ে মেনে নিবেনা। ইতস্ততভাবে বলে,
__ “ ভাই কি মেনে নিবে এমন সম্পর্ক! ”
__ “ আপনার ভাইকে আমিই বেশি চিনি তাই নয় কি আন্টি। তার একমাত্র ছেলে যা চাইবে তাই দিবে আপনার ভাই। ”
রিমনের কথা অনুযায়ী বিয়ের ডেট ফিক্সড করা হয় দুইদিন পর। ছোটো খাটো একটা অনুষ্ঠান করে রিমন মৌরীকে বিয়ে করতে চায়। মৌরী অবাক হয়ে সব শুনছে, ঘুমের ওষুধের একশনের জন্য একটু ঝিম মেরে যাচ্ছে।
রিমনের সাথে মৌরীর বিয়ের কথা শুনার পর শাওন অস্থির হয়ে গেছে। ছাদে গিয়ে পায়চারী করছে, এটা কিভাবে সম্ভব । তার ছোট বেলার খেলার সাথী, কৈশোর বয়সের প্রেম কি আজ তাকে ছেড়ে চলে যাবে। মনে মনে প্রচণ্ড রকম ভালোবেসেছে মৌরীকে কিন্তু মৌরী কিনা রিমনের বউ হয়ে যাবে। পাশে থাকা কয়েকটা ফুলের টবে লাত্থি দিয়ে ভেঙে ফেলে শাওন।
শব্দ শুনে শ্যামলী ছাদে আসে,
__ “ কিরে ভাইয়া! তুই ফুলের টব ভাঙলি কেনো! ”
__ শাওন রাগী গলায় বলল, “ আহহহহ শ্যামা! বিরক্ত করিস না আমাকে। নিচে যা, দেখ কে কি করছে। ”
__ “ মৌরীকে ভালোবাসিস! ”
__ “ কি যা তা বকছিস পাগলের মতো। অন্যের বউ কে আমি কেনো ভালোবাসবো। এখন যা আমার চোখের সামনে থেকে। আমি একা থাকতে চাই। ”
•
রিমন কে একা পেয়ে মৌরী এগিয়ে যায়,
__ “ এমন নাটকের মানে কি রিমন!”
__ মৌরী এই সময় তার ঘরে দেখে বেশ অবাক হয় রিমন, সাহস আছে বৈকি এই মেয়ের। রিমন বলে, “ তোমার জীবন টা তছনছ করে দিতে চাই। ”
__ মৌরী রিমনের কলার ধরে বলে, “ কেনো! কি ক্ষতি করেছি আমি আপনার! ”
__ “ সময় হলেই জানতে পারবে। ”
__ মৌরী রিমনকে জড়িয়ে ধরে বলে , “ প্লিজ আপনি এমন করবেন না, ডিভোর্স দিয়েন না দয়া করে। আমি কখনোই কটু কথা সহ্য করতে পারিনা। কেউ এমন করলে আমি সত্যিই মরে যাবো। ”
__ “ রিমন নিজেকে মৌরীর থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলে, “ বেহায়া মেয়ে! আমার বুকে মাথা রাখতে লজ্জা করেনা। ”
__ “ না করেনা, আপনার আমাকে নিয়ে খেলতে লজ্জা না লাগলে আমার কেনো লজ্জা লাগবে। ”
__ “ আজ অব্দি কতো মেয়েরসতীত্ব নষ্ট করেছি জানো?”
__ “ ছিহহ! ”
__ “ আমার খুব মজা লাগে মেয়েদের সাথে খেলতে, তাই তোমাকে নিয়ে মজা করলাম আর কি। এখন তো জাস্ট ছুড়ে ফেলে দেওয়া বাকি। ”
__ মৌরী রিমনের গালে চড় মেরে বসে, “ আমি আপনাকে মনে মনে ভালোবেছিলাম, বিয়ে করেছেন জানার পর শ্রদ্ধাবোধ জন্মেছিলো আপনার প্রতি। বিনা কারণে একটা মেয়ের এতো ক্ষতি করলেন তো। মনে রাখবেন পরকালে এর জবাবদিহি করতে হবে আপনাকে। ”
শাওন রিমনের ঘরের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় মৌরীর লাস্ট কথা গুলো শুনে ফেলে। এরপর ঘরের পাশে লুকিয়ে যায়, দেখে মৌরী দৌড়ে বের হয়ে যায়। শাওন অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। কি এমন হয়ে গেলো তার মৌরীর। তাহলে কি রিমন ওকে গতরাতে তুলে নিয়ে গিয়েছিলো? তাহলে বিয়ে করতে কেনো চাইলো? মৌরীই বা কাঁদছে কেনো? কোন প্রশ্নের সমাধান সে পায়না।
মৌসুমী কে বিদায় দিয়ে সব গার্জেন রা গোল টেবিল মিটিং এ বসে মৌরীর বিয়ের জন্য। সব কিছু ঠিক করে ফেলেন, কথা হয় বিয়ে আজই হবে। মৌরীর ঘরে গিয়ে গার্জিয়ান দের ডিসিশন জানিয়ে দেওয়া হয়। মৌরী খুব ভালো করে বুঝে গেছে রিমন তাকে বিয়ে করলেও ডিভোর্স দিয়েই ছাড়বে সেইজন্য খুব চিন্তিত। শ্যামা এসে মৌরীকে হালকা সাজিয়ে দেয়। একটা জামদানি শাড়ির সাথে হালকা সাজে মৌরীকে নতুন বউয়ের মতো ই লাগছিলো। মৌরী ঘরে বসে আছে, এই সময় রিমন আসে।
__ “ মিস মৌরী, লাস্ট টাইম কিছু বলার জন্য এসেছি। ”
__ মৌরী চুপ করে বসে থাকে।
__ একটা পেপার এগিয়ে দিয়ে বলে, “এই নাও তোমার উপহার। আমি চলে যাচ্ছি আজ, আর কখনো দেখা হবেনা। ”
__ মৌরী বিছানা ছেড়ে নেমে এসে রিমনকে জড়িয়ে ধরে কাঁদে খুব, রিমন ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় মৌরীকে। হনহন করে হেটে চলে যায়। মৌরী পড়ে গিয়ে খাটের কোণাতে লেগে মাথা কিছুটা কেটে যায়। উঠে বসে মৌরী, মাথায় এক হাত দিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে থাকে আর অন্য হাত দিয়ে ডিভোর্স পেপার আঁকড়ে ধরে রাখে।
রিমন যে বিয়ের আসর ছেড়ে চলে গেছে সেটা জানাজানি হতে বেশি সময় লাগলোনা। রিমন বাসা থেকে বের হয়েই রামিজা কে ফোন দিয়ে জানিয়ে দেয়, “ আন্টি, কি ভেবেছিলেন! আপনার মেয়েকে আমি উদ্ধার করবো। হুহহহহ! আপনার মেয়ের না আছে কোন যোগ্যতা না আছে সতীত্ব। আমি চলে যাচ্ছি। ” বলেই ফোন কেটে দেয় রিমন।
রামিজা দৌড়ে গিয়ে দেখে মৌরী কপালে হাত দিয়ে বসে আছে। মেয়ের যে মাথা কেটে গেছে সেদিকে কোন হুশ নেই রামিজার। মেয়েকে টেনে চড় বসিয়ে দেয়। এরপর বলে,
__ “ মরতে পারিস না মুখপুড়ি, আর কতো চুনকালি মাখাবি মুখে। ”
রিমনের চলে যাবার খবর শাওনের কানে পৌঁছে যায়, শাওন দৌড়ে আসে মৌরীর ঘরে, যেখানে মৌরীকে বউ সাজিয়ে রাখা হয়েছিলো। এসেই ফুপি কে বলে শাওন,
__ “ ফুপি তুমি কি পাগল হয়ে গেছো, ওকে মারছোই বা কেনো, গালিই বা দিচ্ছো কেনো। ওর কি দোষ রিমন ভাই যদি বিয়ে করতে চেয়েও বের হয়ে যায়। ”
ততক্ষণে সব রিলেটিভ চলে এসেছে মৌরীর ঘরে, কাজী সাহেব ও চলে এসেছিলেন। রামিজা শাওন কে মুখ ঝামটা দিয়ে বলে,
__ “ কি আর করবো বল, ওর মতো মেয়ের জন্ম দেয়াও পাপ। রিমন বিয়ে করতে চেয়েও চলে গেছে, আর বলে গেছে আমার মেয়ে অসতী। তাহলে কোন মায়ের মাথা ঠিক থাকে বল। ”
মৌরী অবাক হয়ে যায়, “ হায় রে রিমন। তুমি আমার সর্বণাস করে বলো আমি অসতী। ”
শাওন সবাইকে ডেকে নিয়ে বাইরে যায়, বাইরে গিয়েই মৌরীকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। শাওওনের বাবার মত থাকলেও শাওনের মা বিগড়ে বসে ।কিন্তু বোনের মেয়ের দিকে তাকিয়ে শাওনের বাবা রাজি হয়ে যায়। শাওন যখন রাজি হতেই পারে এই বিয়ে।
রামিজা মৌরীকে গিয়ে এই কথা জানায়, মৌরী অবাক হয়ে বলে,
__ “ কি করে সম্ভব মা ! আমি তো বাজে মেয়ে। শাওনের জীবন টা নষ্ট করতে চাইনা। ”
__ “ তুই যদি বিয়েতে কবুল না পড়িস, মনে রাখিস আজ তোর মায়ের মৃত্যু কারণ হবি তুই। ”
মৌরী বাধ্য হয়ে বিয়েতে রাজি হয়, দুই পক্ষের মত অনুসারে সেদিন রাতেই মৌরীর সাথে শাওনের বিয়েটা হয়ে যায়। মৌরীর বাবার বাসা কিছুটা দূরে, মৌসুমীর বিয়ে উপলক্ষে মৌরী ওর নানার বাসায় এসেছিলো। পাশের বাসাটাই শাওনদের বাসা।
শাওন নিজ হাতে ধরে মৌরীকে নিয়ে যায় নিজের ঘরে। শাওনের ঘরে মৌরীকে বসিয়ে রেখে শাওন বাইরে যায়, কিছু খাবার নিয়ে এসে মৌরীকে খাইয়ে দেয়। মৌরীর চোখে জল, সে যে শাওনকে কখনোই ভালোবাসতে পারবেনা। শাওনকে কিভাবে ঠকাবে সে। তাও বাধ্য মেয়ের মতো খাবার খেয়ে নেয় মৌরী।
শাওন ওর মাথার কাটা অংশে ফার্স্ট এইড দিয়ে ব্যান্ডেজ করে দেয়। মৌরী এক হাতে ডিভোর্স পেপার আঁকড়ে ধরে বাম কাতে শুয়ে পড়ে।
রিমনের সাথে মৌরী রেস্টুরেন্ট এ বসে আছে, ওয়েটার এগিয়ে আসে। দুজনের উদ্দেশ্যে একটা পেপার এগিয়ে দিয়ে বলে,
__ “ স্যার এন্ড ম্যাম, আমাদের রেস্টুরেন্ট এ যারা আসে তাদের এই পেপারে সাইন করতে হয়। এটা আমাদের সিকিউরিটির জন্য বা আপনাদের সিকিউরিটির জন্য করে থাকি। ”
মৌরী রিমনের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে বলে,
__ “ এই নিয়ম আবার কবে চালু হলো? ”
রিমন মুচকি হেসে বলে,
__ “ আমাদের তো ভালোই হচ্ছে, ক্ষতি তো আর হচ্ছেনা একটা সাইন করলে। ”
রিমন তাড়াতাড়ি সাইন করে মৌরীর দিকে এগিয়ে দেয়, মৌরীও বোকার মতো কাগজে কি লিখা আছে না পড়েই সাইন করে দেয়। ”
রিমন ওয়েটার কে চোখ টিপে ইশারা করে, ওয়েটার চলে যায়। কিছুক্ষণ পর স্যুপ দিয়ে যায়।
__ “ আমি স্যুপ তেমন পছন্দ করিনা। ”
রিমন তখন বলে,
__ “ ওহহহ সরি, আমি তো জানতাম না। আরে খাও খাও, একদিন টেস্ট করেই দেখো। ভালো তো লাগতেও পারে । ”
মৌরী টেস্ট করতে গিয়ে ভালো লাগাতে পুরোটা শেষ করে ফেলে। এরপর ডিনারে বিরিয়ানী অর্ডার করে।
ডিনার শেষ হতেই, মৌরীর মাথা চক্কর দেওয়া শুরু হয়।
মৌরীর ঠোঁট দুটো তে গভীর চুম্বন করে ছেড়ে দিয়ে রিমন বলে,
__ “ কি এতো ভাবছো শুনি। এতো চিন্তা করে কি লাভ বলো। এখানে কিভাবে এলে কিছুই মনে করতে পারছোনা তাইনা। আসলে তোমাকে যখন প্রথম দেখি, তখনই প্লান করে ফেলি কিভাবে তোমাকে নিজের করে পাবো। সেইজন্যই তো গিফট কিনার নাটক করে তোমায় বাসা থেকে বের করি। আসলে কি বলোতো, তোমাদের বাসার লোড শেডিং হয়নি, আমিইই লাইন কেটে দিয়েছিলাম। এরপর শপিং শেষ এ তোমার খাবারে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে দিই। হোয়াট এ প্লান ম্যান। ” হাহাহা
মৌরী নিজের যত শক্তি আছে সব দিয়ে রিমন কে খামচি দিতে শুরু করে, খুব ঘৃণা হচ্ছে নিজের প্রতি, রিমনের প্রতি। রিমন মৌরীকে শক্ত করে ধরে মৌরীর গলাতে চুমু দিতে থাকে। আধা ঘণ্টা পর নিজ হাতে মৌরীকে নিজের কেনা ড্রেস টা পরিয়ে দেয়। এরপর বলে,
__ “ নিজের হাজবেন্ড কে এতো ঘৃণা করতে হয়না সুন্দরী। ড্রেস, রিং সব তোমার জন্যই কেনা। তোমার বিয়ের পোশাক আর এনগেজমেন্ট রিং। কাল ওয়েটার এর কাছে যে পেপারে সাইন করেছিলে সেটা তোমার আর আমার বিয়ের ডকুমেন্ট। ”
মৌরীর মাথায় যেনো আকাশ ভেঙে পড়ে, রিমনের দিকে হা করে তাকিয়ে থাকে অনেক্ষণ। এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে রিমন আবার বলে,
__ “ এভাবে হা করে থেকোনা, মশা ঢুকবে। আর ভেবোনা তোমায় ভালোবেসে বিয়ে করেছি। খুব শীঘ্রই ডিভোর্স পেয়ে যাবে। ”
একের পর এক বাজ মৌরীর মাথায় যেনো পড়ছে। ঠিক ভাবে দাঁড়াতেও পারেনা তবুও রিমনের গলাতে গিয়ে কামড় বসিয়ে দেয়, এরপর বলে,
__ “ স্মৃতি শুধু আমার একার না আপনারাও থাকুক। এই কামড়ের দাগ অনেকদিন আমার কথা মনে করিয়ে দিবে। ”
__ “ তোমার কথা এমনিতেই সারাদিন ভাবি সুন্দরী, ভুলেও ভেবো না মৌসুমীর বিয়ে এটেন্ড করতে এসেছি। আমি শুধুমাত্র তোমাকে পাবার জন্য এসেছি এই প্রথম্বারের মতো দাদা বাড়িতে। ”
মৌরী এবার চোখের জল ছেড়ে দিয়ে বলে,
__ “ কেনো! কি এমন ক্ষতি করেছিলাম আমি আপনার! ”
__ “ বাসায় চলো এখন। ” টানতে টানতে বের করে রিমন মৌরীকে। হোটেল ম্যানেজার কে মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে ধন্যবাদ জানিয়ে বের হয়ে আসে রিমন।
→→→ বাসায় সবাই খুব পেরেশানি তে আছে, রামিজা আহমেদ খুব পায়চারী করছেন। রাবেয়া মেয়ের মেয়ের বিয়ের জন্য ব্যস্ত হলেও বোনের মেয়ের জন্য টেনশন এ মাথা ফেঁটে যাচ্ছে এমন অবস্থা। কিন্তু রিমন ও যে নিখোঁজ সবাই এই কথা ভুলেই গেছে।
মৌরীর নিখোঁজ হবার পর শাওন খুব অস্থির হয়ে গেছে, রাত্রে এতটুকু ও ঘুমাইনি । সবার কাছে গিয়ে শাওন বলে,
__ “ অনেক হয়েছে, বিয়ের অনুষ্ঠানে ছিলো একটা মেয়ে। হটাৎ করে গায়েব হবার তো কথা নয়। নিশ্চিত ওর কোন বিপদ হয়েছে। থানায় একটা ডায়েরী করা দরকার। ”
মৌরীর বাবা মোতালেব সাহেব কথায় সায় দেন। হাজার হোক আদরের মেয়ে বলে কথা। শাওন বাসা থেকে বের হয়ে একটু সামনের দিকে এগিয়ে যায় । হটাৎ করে মৌরীকে দেখে থেমে যায় শাওন। মৌরী বাসার খুব কাছে দাঁড়িয়ে আছে।
__ “ কিরে তুই এখানে কি করছিস, আমরা তোকে খুঁজে খুঁজে হয়রান হয়ে গেলাম। ”
শাওন মৌরীকে কোন রকম কোলে তুলে নিয়ে নিজের বাসায় ফিরে আসে দাদার বাসায় না গিয়ে। বেডে শুইয়ে দেয় আগে, শাওনের মা বাবা আর মৌরীর মা বাবা কে জানায় আগে। সবাই মৌরীর এমন অবস্থা দেখে অবাক হয়ে গেছে। এক রাতে মৌরীর মুখে কালো আভা পড়েছে, চোখের নিচে কালো দাগ। মনে হচ্ছে খুব টর্চার করা হয়েছে মেয়েটার উপর।
__ “ মনে হয় ওকে খুব মারা হয়েছে, ওর অবস্থা খুবিই খারাপ আন্টি। কি করবেন এখন, হসপিটাল এ নিবেন নাকি। ”
__ “ না থাক! বেশি জানাজানি হয়ে গেলে ওর আর বিয়েই হবেনা কখনো। আগে ওর জ্ঞান ফিরুক, এরপর ওর মুখে আগে শুনি কি হয়েছে। এরপর কোন সিদ্ধান্ত নিবো। ”
__ “ আন্টি আপনি কি মা! মেয়ের জীবনের চেয়ে মান সম্মান বড় হয়ে গেলো। ”
শাওনের আম্মু বলে,
__ “ তুই চুপ থাক একটু, এখানে বড়ো রা আছে। তাদের কথার মাঝে বার্তা ঢুকাস না। ”
মৌরীর জন্য শাওন এর চোখ লাল হয়ে এসেছে, রাত থেকে টেনশন এ ঘুমায়নি, আর এখন মৌরী অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে। শাওন গিয়ে মৌরীর চোখে পানি ছিটা দিতেই মৌরী জেগে উঠে।
__ “ মা ”
__ “ সারারাত কোথায় ছিলিস মুখপুড়ি। বাপের মুখে কি চুনকালি লাগাতে গিয়েছিলিস। সারারাত বাইরে পার করে আসতে পারলি, আসার আগে বিষ খেয়ে আসতিস। দাফন দিয়ে দিতাম, তাও ভালো সমাজের কাছে কটু কথা শুনতে হতো না। ”
কোথায় মায়ের কাছে একটু ভরসা পাবে, তা নয় এতো গুলো কথা শুনে চোখ দিয়ে পানি পড়তে থাকে। মৌরীর মা আবারও বলে,
__ “ কার ঘরে গিয়ে রাত কাটিয়ে এসেছিস, তার নাম শুধু বল। তাকে দেখে নিবো আজ আমি। ”
মৌরী মাথা নিচু করে বলে,
__ “ আমি কোন পাপ করিনি, কারোও ঘরেও যায়নি। ” মনে মনে ভাবে, “ রিমন তো আমার হাজবেন্ড, কোন পাপ হয়নি আমার। কিন্তু ও তো বললো ডিভোর্স দিয়ে দিবে। কেনো এমন করলো?” নিজের মনের সাথে যুদ্ধ করতে থাকে মৌরী।
__ “ তাহলে সারারাত কার কাছে ছিলিস, সবাই জানে তুই হারিয়ে গেছিস। এক রাত পর বাড়ি ফিরে এসেছিস। এখন তোকে বিয়ে করবে কে? ”
__ “ কেনো আন্টি, এক রাত বাইরে কাটিয়ে আসলে বুঝি মেয়ে খারাপ হয়ে যায়। আপনাদের সমাজ যদি মৌরীকে না মেনে নেয় তাহলে আমাকে বলিয়েন। অবশ্য আমি বিদেশে মানুষ হয়েছে। এক রাত কেনো হাজার হাজার রাত বাইরে কাটালেও মেয়েদের বিয়ে হয়। যদি বলেন তো মৌরীকে আমি বিয়ে করবো। এক রাত বাইরে কাটানো আমার কাছে কোন ব্যাপার না। ” পিছন থেকে রিমন এসে কথাগুলো বলে।
মৌরীর লজ্জায়, ঘৃণায় মুখ লাল হয়ে গেছে। কি চাচ্ছে টা কি রিমন। কিছুই বুঝে উঠতে পারছেনা মৌরী। এর চেয়ে চুপ থাকাই বেটার ভেবে চোখ দিয়ে অঝোরে জল বেয়ে পড়ে।
শাওন রিমনের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে, এরপর বলে,
__ “ হটাৎ মৌরীকে বিয়ে করতে চাইছো যে। আগে থেকেই পছন্দ করতে নাকি!”
__ “ এই বাসায় এতো সুন্দরী, সেক্সি মেয়ের জায়গা হবেনা শুনে কি চুপ থাকা যায়। ”
শাওন এর ইচ্ছে হচ্ছে রিমন কে মেরে নাক ভোঁতা করে দিতে। মৌরীর জন্য বাজে ওয়ার্ড ইউজ করছে এই ছেলে অথচ শাওন নিজে কিছুই করতে পারছেনা।
হটাৎ করে মৌরীর মায়ের চোখ পড়ে মৌরীর পোশাকের দিকে,
__ “ তুই এই পোশাক কোথায় পেলি? আগে তো এমন পোশাক তোর ছিলো না। ঠিক করে বল কার সাথে আকাম করেছিস! ”
মৌরী চুপ করে আছে দেখে ওর মা ওকে মারতে হাত ওঠায়, তখন রিমন হাত ধরে নিয়ে বলে,
__ “ আহহহহ! মেয়েদের গালে মারতে নেই, দেখতেই পাচ্ছেন মেয়েটা সিক । এরপরও ওকে মারতে হাত কাঁপছে না আপনাদের। ”
মৌরী যখন থেকে জানতে পেরেছে রিমন ওকে বিয়ে করেছে, ঘৃণা টা অনেকটা কমে এসেছে। শুধু কৌতূহল কাজ করছে, কেনো রিমন এমন করছে ওর সাথে।
শাওনের কথায় সবাই যেনো চমকে উঠে, সত্যিই তো রিমন ও তো বাসায় ছিলো না। তাহলে কি রিমন ই মৌরীকে নিয়ে গিয়েছিলো। সবার মনে অজানা আশঙ্কা ভর করে।
রিমন তখন অবজ্ঞা করে বলে,
__ “ আমাকে এখানে ডাকার আগে কি বলা হয়েছিলো আর হলো কি! লোড শেডিং হয় না, হুহহহ! আমি কি অন্ধকার এ বসে থেকে বড় হয়েছি নাকি। 5 স্টার হোটেলে গিয়ে রাত্রি যাপন করে এসেছি। দাদু বাসায় এসেই শুনলাম নাকি মৌরীকে সারারাত পাওয়া যায়নি, তাই দেখতে এলাম। কি অবস্থা, এসে যা দেখলাম বলার বাইরে। আর তুই যা বললি, মানে আমাকে সন্দেহ করলি। এটা জাস্ট ভাবার বাইরে। ”
রিমনের দিকে তাকিয়ে মৌরী অবাক হয়ে যাচ্ছে, কিভাবে পারছে সে এমন করতে। এতটুকু কাঁপছেনা মিথ্যে বলতে।
চলবে……..
( কাল অনেকে বলেছেন প্রথম পর্ব নাকি রেপ দিয়ে শুরু করেছি। এখন তো বুঝলেন সম্পূর্ণ না পড়লে কিছু বুঝা যায়না। আরোও এমন অনেক কাহিনী আছে। )
__ “ আমি এখানে এলাম কিভাবে! আর কি করেছেন আপনি আমার সাথে? ” অবাক হয়ে রিমন এর উদ্দেশ্যে প্রশ্ন করে মৌরী।
রিমন তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে মুখ টা ঘুরিয়ে নেয়।
মাথাটা এখনো ঝিম ধরে আছে, সারা শরীরে প্রচন্ড ব্যথা। কিছুই বুঝতে পারছেনা মৌরী, কিন্তু রিমন তো কিছুই বলছেনা মৌরীকে। চোখ টা বন্ধ করে মৌরী, মনে করার চেষ্টা করে কি হয়েছিলো ওর সাথে। “ উফফফফ! কি আশ্চর্য ! কিছুই মনে পড়ছেনা কেনো? ” বিড়বিড় করে বলে মৌরী।
অনেক কষ্ট করে বেড থেকে উঠে দাঁড়ায় মৌরী, রিমনের কলার ধরে চিৎকার দিয়ে বলে,
__ “ আমি এখানে কিভাবে আসলাম, কিছু বলছেন না কেনো? চুপ করে থাকবেন না আর। ” সামনে থাকা ড্রেসিং টেবিলের আয়না তে নিজেকে দেখে আরোও জোরে চিৎকার দেয় মৌরী।
__ “ এই পোশাক তো আমি পড়ে ছিলাম না, এই পোশাক তো আপনি আপনার গার্লফ্রেন্ডকে দিবেন বলে কিনেছিলেন? এটা আমাকে কে পড়িয়ে দিলো? ”
রিমন মৌরীর কোমরে হাত দিয়ে নিজের কাছে টেনে নিয়ে বলে,
__ “ কে আবার দিবে বলো, তোমাকে আদর শেষে আমিই পড়িয়ে দিয়েছি। বাসায় সবাই খুব টেনশন করছে, এখন ঘরে চলো ডার্লিং। ”
মৌরী নিজেকে রিমনের থেকে সরিয়ে নেয়, মেঝেতে বসে পড়ে। এতক্ষণে বুঝতে পারে সারা শরীরে এতো ব্যথার কারণ। মেঝেতে বসে হাউমাউ করে কাঁদতে থাকে। “ জীবনে তো কারোও কোন ক্ষতি করিনি, আমার কেনো এমন ক্ষতি হলো। ”
রিমন মৌরীর পাশে গিয়ে বসে বলে,
__ “ যা হবার হয়ে গেছে, পাস্ট ভুলে যাও, এখন বাসায় ফিরে চলো । ভদ্র ভাবে বলছি বাসায় ফিরে চলো, নইলে তোমার পরিনতি আরোও বেশি খারাপ হয়ে যাবে। ”
মৌরী রিমনের গালে থাপ্পড় দিয়ে বলে,
__ “ শকুনের বাচ্চা, আমার সবচেয়ে বড় ক্ষতি করে বলিস আরোও ক্ষতি করবি তুই। কি করতে পারিস করে নে। আমি তোর শেষ দেখে ছাড়বো। ”
মৌরী খুব রাগী এটা রিমন বুঝতে পেরেছিলো কিন্তু এতো টা রাগী আর জেদী আগে বুঝতে পারেনি। তাই ভয় দেখানোর জন্য বলে,
__ “ ভদ্র মেয়ের মতো বাসায় যাবে নাকি হোটেল বয় দিয়ে লোক ভাড়া করে রেপ করাবো। ”
কথা টা শুনে খুব ঘৃণা আসে রিমনের প্রতি। থুতু দিয়ে উঠে পড়ে, যদিও উঠতে, হাটতে, চলতে খুব কষ্ট হচ্ছে। তারপর ও হেটে দরজা খুলতে যাবে, তার আগেই রিমন মৌরীকে টেনে ধরে। বেডে নিয়ে এনে ফেলে দেয় মৌরীকে। এরপর নিজের সমস্ত ভর ছেড়ে দেয় মৌরীর উপর।
__ “ কাল রাতে তো ঘুমিয়ে ছিলে, রেপ করার মজা পাইনি। এখন খুব মজা করে তোমায় আগে উপভোগ করবো। এরপর না হয় বাসায় ফিরে যেও। স্মৃতি গুলো আমার একার না হয়ে তোমার ও কিছু থাক। ”
খুব ঘৃণা আর কষ্টে চিৎকার করতে থাকে মৌরী, তখন রিমন আবার বলে,
__ “ কোন লাভ নেই, এই রুম সাউন্ড প্রুফ, কেউ বাঁচাতে আসবেনা। অবশ্য যত চিৎকার করবে ততই আমি মজা নিবো। ”
প্রথমে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয় মৌরী।
মৌরী নিজেকে সব’চে হতভাগী মনে করে, চোখ বন্ধ করে গত রাতের কথা মনে করতে থাকে, আর রিমন নিজের ইচ্ছে মতো মৌরীকে নিয়ে মেতে ওঠে।
→→→ মৌরী কাঁচা হলুদ রঙের লেহেঙ্গা পড়ে খালাতো বোন মৌসুমীর বিয়েতে গিয়েছিলো। গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান এ রিমনের চোখ আটকে যায় মৌরীর উপর। কথা বলার অনেক সুযোগ খুঁজতে থাকে রিমন। রিমন অবশ্য মৌরীর মামাতো ভাই। তবে সৎ মামার ছেলে রিমন। রিমনের বাবা যখন ২ বছরের ছিলো তখনই রিমনের দাদী মারা যায় সেকেন্ড প্রেগন্যান্সির সময় সিড়ি থেকে পড়ে গিয়ে। এরপর রিমনের দাদা আরেকটি বিয়ে করে । এই ঘরে তিন জন সন্তান হয়, দুই মেয়ে আর এক ছেলে। রিমনের দাদার চার ছেলে মেয়ের মাঝে রিমনের বাবার নাম রিসাদ আহমেদ, এরপর পরের স্ত্রীর ছেলে রিয়াদ আহমেদ, এরপর মৌসুমীর আম্মু রাবেয়া, আর মৌরীর আম্মু ছোট মেয়ে, নাম রামিজা।
রিসাদের একমাত্র ছেলে রিমন, রিয়াদের এক ছেলে শাওন আর মেয়ে শ্যামলী সবাই শ্যামা বলেই ডাকে। রাবেয়ার একমাত্র মেয়ে মৌসুমী যার বিয়ের অনুষ্ঠান চলছে। আর রামিজার বড় ছেলে শিপন আর মেয়ে মৌরী ।
মৌরীর নানা মারা যাবার পর সব ভাইবোন দের এক সাথে দেখার জন্য রাবেয়া মেয়ের বিয়ের এতো বড় আয়োজন করে। মৌসুমী স্টেজে বসে আছে, একে একে সবাই এসে মৌসুমীর গায়ে হলুদের ছোঁয়া দিয়ে মিষ্টি মুখ করাচ্ছে, যে যাকে পারছে হলুদ মাখাতে ব্যস্ত। মৌরীইই একমাত্র মেয়ে যাকে এখনো কেউ হলুদ মাখাতে পারেনি, খুব পালিয়ে বেড়াচ্ছে। হটাৎ করেই লোডশেডিং হয়ে যায়, বিয়ে বাড়িতে হটাৎ করে লোড শেডিং হবার কথা নয় কারণ পাওয়ার হাউসে আগে থেকেই বলা ছিলো । এদিকে জেনারেটর ও ওপেন করতে সময় লাগছে।
হটাৎ করেই মৌরীর হাতে হ্যাচকা টান লাগে, মৌরীকে একদম বাসার বাইরে নিয়ে আসে রিমন। মৌরী বলে,
__ “ আপনি এখানে নিয়ে এলেন কেনো? বাসাতে তো সবাই খুঁজবে আমাকে। ”
__ “ তার মানে তুমি আমায় চিনো, তাই ভয় পাওনি তাইনা। ”
__ “ না চিনার কি আছে, আপনি আমার বড় মামার ছেলে, দ্যাটস এনাফ। ”
__ “ চিনোই যখন তাহলে একটা হেল্প করবে? ”
__ “ আমি আপনাকে কিভাবে হেল্প করতে পারি বলুন? ”
__ “ আসলে আমি তো এই প্রথম আমার দাদুর বাসায় এসেছি। কাউকে তো চিনিইই না ঠিক ভাবে। আশেপাশে কি কোন শপিংমল আছে? ”
__ “ হুমম আছে। কেনো বলুন তো? ”
__ “ আসলে কি হয়েছে জানো! মানে! ”
__ “ আমি ডাইরেক্ট কথা বলা পছন্দ করি, এতো মানে মানে করছেন কেনো। ”
__ “ আমি তো এই প্রথম রাজশাহী এসেছি, তাও বাবার অনুরোধ এ। দুইদিন পর আমার গার্লফ্রেন্ড এর জন্মদিন। এখন যদি কোন গিফট না দিই তাহলে তো আমাদের ব্রেক আপ হয়ে যাবে। যদি তুমি আমার সাথে গিয়ে কিছু চয়েস করে কিনে দিতে, আমি ধন্য হয়ে যেতাম। ”
মৌরী ভেবেছিলো রিমন হয়তো মৌরীকে প্রপোজ করবে, কারণ রিমন হ্যান্ডসাম, গায়ের রঙ ফরসা, জিম করা বডি, ৬ ফিট লম্বা ছেলে। হাজবেন্ড হিসেবে পাবে ভেবে মনে মনে খুশি হয়েই এতক্ষণ রিমনের সাথে কথা বলছে মৌরী কিন্তু গার্লফ্রেন্ড এর কথা শুনেই মৌরীর গায়ে আগুন জ্বলে যায়।
__ “ আমি পারবোনা এসব, হয় শ্যামা কে বলুন না হয় অন্য কাউকে বলুন। ”
রিমন কাকুতি করে বলে,
__ “ শ্যামাও তোমার মতো বিহেইভিয়ার করেছে, আসলে তোমরা আমার বোন হও, আমি তো বোন ই ভেবেছিলাম কিন্তু সৎ তো আর আপন হয় না তোমরা দুই বোনেই প্রমাণ করে দিলে। যাই হোক মেয়েদের জিনিস তো আর আমরা ছেলেরা চয়েস করতে পারবোনা। তাই তোমাকে এভাবে বলেছিলাম। এখন তো সবাই বিয়ের অনুষ্ঠানে ব্যস্ত। কেউ তোমাকে খুঁজবেনা। আমরা যাবো আর অল্প কিছু শপিং করেই চলে আসবো। কিন্তু কেউ রাজি হলোনা, কি আর করার । ”
রিমন মন খারাপ করে পিছনে ফিরে যায়,
মৌরী বুঝতে পারেনি, রিমন ইমোশনাল ব্লাকমেইল করেছে। মৌরী রিমন কে ডাকে,
__ “ রিমন ভাইয়া, আমি যাবো, মন খারাপ করবেন না প্লিজ। ”
রিমন কে নিয়ে মৌরী শপিং মলে ঢুকে, মৌরী একটা ড্রেস চুজ করে,
__ “ ওয়াও মৌরী! তোমার চয়েস কিন্তু জোস। আমার গার্ল্ফ্রেন্ড ও কিন্তু তোমার মতো ফরসা, ছিপছিপে, সুন্দরী। এই ড্রেস টা তোমাদের দুইজন কেই ভালো মানাবে। ”
__ “ আমি আমার সৌন্দর্যের বর্ণনা চাইনি। ওকে এই ড্রেস টা নিয়ে নেন। আর শুনুন, কথা কম বলে কাজ বেশি করবেন। ”
রিমন মাথা ঝাকিয়ে মৌরীর কথাতে সায় দেয়, এরপর একটা জুয়েলারির দোকানে যায়, রিং দেখাতে বলে রিমন।
কিছু রিং বের করে রিমনের সামনে রাখতে মৌরী বলে,
__ “ তিনটা ছোটো ছোটো ফুল করা, মাঝে হোয়াইট পাথর আর দুইপাশে দুইটা পাতার মতো রিং চুজ করে দেয়। ”
রিমন তখন বলে,
__ “ What a great ছইচে. ”
মৌরীর হাত ধরে আঙ্গুল এ রিং টা পড়িয়ে দেয় রিমন।
__ “ বাহহ! খুব দারুন লাগছে তো। ”
__ “ আমার চয়েস কখনো খারাপ হয়না। ” বলেই মৌরী রিং খুলতে নিলে রিমন আবার বলে,
__ “ আমি কি হারিয়ে যাচ্ছি নাকি। পরে খুলিও তো, এখন আমার সাথে একটু চলো। ”
__ “ আরোও কি কিনবেন! অনেক দেরি হয়ে গেছে, বাসায় যেতে হবে তো। ”
মৌরী বাসার দিকে পা বাড়াচ্ছিলো। তখন রিমন হাত টা টেনে ধরে বলে,
__ “ অনেক সহ্য করলে, আর ১ টা ঘন্টা থাকো প্লিজ। আমরা ডিনার সেরে যায়। প্লিজ প্লিজ প্লিজ। ”
রিমনের এমন আবদার মৌরী ফেলতে পারেনা।
__ “ ওকে ভাইয়া। ”
এমন সময় রিমনের ফোনে রিং বাজে, রিমন একটু সাইডে সরে আসে কিছু কথা বলার পর মৌরীর কাছে এসে বলে,
__ “ সরি, আসলে গার্লফ্রেন্ড কল দিয়েছিলো। তাই ধরতে বাধ্য।”
__ “ ইটস ওকে, লেটস গো। ”
লেখিকা : জামিয়া পারভীন তানি
চলবে……………
বিঃদ্রঃ
আপনারা শুধু শুধু নেক্সট পার্ট কখন দিবো এই টাইপ কমেন্ট করবেন না, আমি প্রায়ই সময় অসুস্থ থাকি তাই নিয়মিত লিখতে পারিনা। আমার লিখা হলেই নেক্সট পার্ট দিয়ে দিই। আমি গত চার দিন ধরে জ্বরে ভুগছি। তবুও কষ্ট করে লিখলাম, কিন্তু কষ্ট করে লিখার পরও ঠিক টাইম মতো না দিতে পারলে অনেকেই কটু কথা বলেন। যেই কারণ এ কষ্ট লাগে। আশা করি বুঝতে পারবেন, আর কমেন্ট করলে গল্প সংক্রান্ত কমেন্ট দিবেন। আর আমার ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট আসলে সেগুলো কোথায় যেনো হারিয়ে যায়, সহজে খুঁজে পাইনা। রিকুয়েস্ট দিলে ইনবক্সে না নক দিয়ে কমেন্ট এ বলে দিবেন। তাহলে এক্সেপ্ট করি, কিন্তু ইনবক্স প্রতিদিন চেক করিনা। সেইজন্য ইনবক্সে নক দিলেও দেখতে পাইনা। ধন্যবাদ সবাইকে, এতো কষ্ট করে গল্প পড়ে পাশে থাকার জন্য।
#_জেএইস_জনি
.
.
মুহুর্তেই ভাবির বলা কথা ভুলে গেলাম,,
তোমাদের সম্মান দিয়ে কি হবে যদি আমি ই না বাচি,আমার প্রান না বাচে
.
আমি নিলার মাথায় হাতভুলাতে লাগলাম,,
.
নিলা কান্না বন্ধ করে মাথা উঠিয়ে আমার মুখের দিকে তাকালো,,
বুঝার চেষ্টা করছে,,
আমি ওর মাথায় হাত ভুলিয়েছি কি না,,
.
নিলা জিগাসু দিষ্টিতে আমার চোখের দিকে তাকিয়ে আছে,,
আমি ওর মাথা টা টেনে কপালে একটা চুমু দিলাম,,
নিলা এবার শক্ত করে জড়িয়ে দরে বুকের ভিতর মুখ ঘুজে দিয়ে কাদতে লাগলো,,
কেনো জানি আমার চোখের কোন বেয়ে পানি পরতে লাগলো,,,,
কিছুক্ষন পর হঠাৎই দরজাটা কে যেনো নক করতে লাগলো,,
আমি ভয় পেয়ে গেলাম,, ভাবি দেখলে কি হবে,,
.
নিলা আমার ভয় পাওয়া দেখে মুখের দিকে তাকিয়ে আমার দুগালে আলতো করে দু হাত দিয়ে আদুরের গলায় বললো ,, এত ভয় পাচ্ছেন কেনো, আমি আছি না,, আমি থাকতে কেউ আপনাকে কিছু বলতে পারবে না,, সুয়ে থাকেন,, আমি দেখছি কে আসছে,,
.
নিলা দরজা খোলার জন্য যাচ্ছে,, ভয়ে আমার হার্ডবিট বেরে গেছে,,
.
নিলা দরজা খুলতেই মিমের গলার আওয়াজ পেলাম,,, তাহলে কি মিম,,
উপ বড় বাচা বেচে গেলাম,,,
.
মিমঃকি আপনাদের রোমান্স শেষ হলো,,
নিলাঃমারবো একটা,,বের হ রুম থেকে,,
মিম ঃকি আবার রোমান্স করবি নাকি,,
নিলাঃজাবি তুই,,
মিমঃআরে বাবা যাচ্ছি,,,
মিম রুম থেকে বের হোতে যেয়ে আবার ফিরে এলো,,
.
মিমঃও যেকারোনে আসা,, আপনিতো বিকালে চোলেই জাবেন,,আমি ঘুরবো কার সাথে,,, আমাদের মহারানির তো সময় হবে না আমাকে নিয়ে ঘুরার,,আপনারাতো আপনাদের রোমান্স করছে,,এখন আমার রোমান্স করার জন্য একজন ঠিক করে দিয়ে যান,
আমিঃতোমার যোগ্য কাউকেইতো দেখছি না,,
মিমঃআবাদত আপনার ওই বজ্জাত বন্ধুটাকে বলে যান,,
নিলাঃএত ঘুরিয়ে পেচিয়ে না বলে সোজাই তো বলতে পারতি,,,
যা রুম থেকে,,
আমিঃআচ্ছা আমি বলে দেবো,,,,
মিম রুম থেকে বের হোয়ে গেলো,,
.
নিলা আবার আমার কাছে আসলো,,
আমার বুকের কাছে ভর দিয়ে মুখের কাছে মুখ এনে বললো,,
আপনি সত্যি কি বড় আপুর কাছে চোলে যাবেন,,
আমিঃহুম,,
নিলাঃ নাগেলে হয় না,,,
আমিঃআপু অসুস্থ, যেতেই হবে,,আর এত টেনশন করছো কেনো,,দুসপ্তাহর জন্যইতো যাচ্ছি,, আবার চোলে আসবো,,
.
নিলা আমাকে জড়িয়ে দরে বুকের ভিতর মুখ গুজে দিয়ে বললো,,
নিলাঃআমি আপনাকে ছারা থাকতে পারবো না,ভালো লাগেনা আপনাকে ছারা,,
আমিঃপাগলি একটা,,,চোলে আসবো তারাতারি,,
নিলাঃহু
.
হঠাৎ ই ভাবি,, জনি জনি বলতে বলতে রুমের ভিতর ঢুকে গেলো,
এসেই আমাদের দুজন কে একসাথে
দেখে,,হা হোয়ে গেলো,,
.
আমি তো ভয়ে শেষ,,
.
ভাবিঃবা বা,,ভালোই এগিয়ে ছো দুজন,,
.
নিলা কিছুটা আদুরি গলায় বললো,,আপু….
ভাবিঃথাক থাক,, এতো লজ্জা পেতে হবে না,,
দেবর তো দেখি আমার বোন কে পাগল করে ছারলো,,
বিয়ে তো দেখি খুব তারাতারি দিতে হবে,,
.
ভাবিঃআচ্ছা থাকো তোমরা,,
.
ভাবি চোলে গেলো,,
.
নিলার মুখের কোনে হাসি লেগে আছে,, ভাবির বলা কথা শুনে,
.
নিলাঃআপনি রেষ্ট নেন,,আমি আপনার জামা কাপর ঘুছিয়ে দিচ্ছি,,,
এই বলে নিলা আমার কপালে একটা চুমু দিয়ে জামা কাপর গোছাতে চোলে গেলো,,,,
.
চোখ বন্ধ করে একটু ঘুমানোর চেষ্টা করলাম,,,,
.
বিকালে চোলে যাচ্ছি,,
,,
নিলা মুখ গোমরা করে দারিয়ে আছে,,
নিলার চোখের কোনে পানি দেখতে পেলাম,, নিলাকে বললাম,,
আমিঃএদিকে আসো,,
.
নিলা গুরি গুরি পায়ে আমার সামনে এসে মাথা নিচু করে দারালো,,
ওর মুখ দরে উপরে উঠালাম,,
মিম দেখি একটু দুরে দারিয়ে আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে,,
আমিঃসালিকা, চোখ বন্ধ করো,,
মিমঃহুম করছি,,
.
আমি নিলার কপালে আলতো করে একটা চুমু দিলাম,,
নিলা সাথে সাথে আমাকে জড়িয়ে দরে কেদে দিলো,
আমিঃআরে পাগলি,, এমন করছো যেনো দুবছরে জন্য যাচ্ছি,,
নিলাঃআমার কাছে দুসপ্তাহ দু বছরের মতো,,,
আমিঃআচ্ছা আমি তারাতারি চোলে আসার চেষ্টা করবো,,
ওর চোখের পানি মুছে দিয়ে কাপালে আরেকটা চুমু দিয়ে মিমের কাছে গেলাম,,
.
আমিঃহোয়েছে আর চোখ বন্ধ করে থাকতে হবে না,, আমি সাগর কে বলে দিয়েছি,, ও এসে তোমাকে ঘুরতে নিয়ে যাবে,,,
.
আমি বাসে চরে আপুর বাসায় চোলে আসলাম,,
.
অন্যদিকে সাগর মিম কে পিক করতে এসেছে বাসায়,,
.
মিম বাসার সামনে আসলো,,
.
সাগরঃতা মিস আপনি কি বাইকে যাবেন নাকি রিক্সায়,,
.
মিমঃরিক্সায় যাবো,
সিগরঃচলেন তাহলে,,,
.
সাগর আর মিম রিক্সায় বসে আছে,,
.
সাগরঃএই আপনার হাতে কি,,
মিমঃকোথায়,,
সাগরঃওই যে আপার হাতে, দেখি দেখি,
সাগর যে মিমের হাত দরতে এইসব বলেছে,,মিম তা বুঝতে পেরে হাত ছারিয়ে সাগরের কাদে দুটো থাপ্পর মেরে বললো,,বজ্জাত একটা হাত দরার ধান্দা,,,
সাগরঃহাহাহা,,সুন্দরি মেয়েদের হাত না দরে কি পারি,,
মিমঃমারবো একটা, ফাজিল কোথাকার,,
সাগর চুপ করে থাকলো,,
মিমঃকয়টা মেয়েকে পটিয়েছো,,
সাগরঃএকটাও না,,তুমিই প্রথম,,
মিমঃকি,, আমাকে পটাচ্ছো,,
সাগরঃসরি সরি, ভুলে মুখ থেকে বেরিয়ে গিয়েছে,,
মিমঃহুম,,
সাগর কিছু টা মন খারাফ করলো,,চেয়েছিলো ওকে পটাবে, কিন্তু যেই মেয়ে পটানোর কথা শুনেই রেগে গেলো,,
.
মিম সাগরের চুপ থাকা দেখে সাগরের সামনে হাত বারিয়ে দিলো,,
সাগরঃকি
মিমঃদরো
সাগরঃশুধু শুধু হাত কেনো দরবো,,
মিমঃআর বাহানা করা লাগবে না,,তুমি যে আমার হাত দরতে চাও সেটা আমি বুঝি,,
সাগর মিমের হাত দরলো,,
মিমঃহাতে কি শক্তি নেই শক্ত করে দরো,,
সাগরঃহুম,,
.
মিমঃবিয়ের পর আমরা কিন্তু বিদেশে চোলে যাবো,, আমার বাসায়,
.
মিমের কথা শুনে সাগর যেনো শক খেলো,,
সাগরঃকি ইই.
মিমঃযেটা শুনেছো সেটাই, তুমি যে আমার প্রথম দেখায়ই প্রেমে পরেছো সেটা আমি ভালোভাবে বুঝেছি,,
সাগরঃতুমি কি দেখে আমার প্রেমে পরলে,,
মিমঃতোমার প্লোটিং দেখে,,
সাগর ঃহাহাহাহা,,
মিমঃতবে এই প্লোটিং যদি আমার সাথে ছারা অন্যকারো সাথে করেছো,,তাহলে বুঝবে এই মিম কি জিনিস,,
সাগরঃতাহলে একটা চুমু দেও,,
মিমঃকি,, প্রেম শুরু হোতে না হোতেই চুমু,,
সাগরঃ থাক লাগবে না,,
মিমঃহোয়েছে আর রাগ করা লাগবে না এদিকে আসো,,
মিম সাগরে গালে একটা চুমু দিলো,,
সাগল তার ঠোট দেখিয়ে বললো,,ওই খানে না এই খানে,,
মিমঃবদ একটা,, লজ্জা নেই,,চোখ বন্ধ করো,,,দিচ্ছি,,।
.
.
আজ দুসপ্তাহর কাছাকাছি হোতে
চললো আমি আপুর বাসায়,।
,,
.
ভাবি হঠাৎ আমার কাছে ফোন দিলো,,
আমিঃহ্যা ভাবি বলো,,কেমন আছো
ভাবিঃআমি ভালোই আছি,, তোমার নিলা ভালোনেই,,
আমিঃকেনো কি হোয়েছে,,
ভাবিঃআজ দুসপ্তাহ হোতে চললো,,মেয়েটার কোনো খোজ নিয়েছো,,তোমার টেনশনে মেয়েটা খাওয়া দাওয়া করছে না,,
আমিঃনিলাকে বইলো আজ বাসায় আসছি,,
ভাবিঃবাসায় যাওয়ার দরকার নেই,, আমাদের বাসায় চোলে আসো,,সাথে আপু দুলাভাইকে নিয়ে আসো,,,,
আমিঃআচ্ছা,,তোমরা তোমাদের বাসায় গেলে কবে,,
ভাবিঃচারদিন হলো,,
আমিঃও
ভাবিঃতারাতারি চোলে এসো,, তোমার পেয়সি তোমার জন্য ছটপট করছে,,
আমিঃআর লজ্জা দিও নাতো, আসছি,,,
.
আপু কে নিয়ে বিকালেই নিলাদের বাসায় গেলাম,,
.
বাসার ভিতর ঢুকতেই নিলা কোথা থেকে যেনো দৌরে এসে আমার বুকে জাপিয়ে পরলো,,
আমি ও আমার প্রানকে পরম আদরে জড়িয়ে নিলাম,,ওকে পেয়ে যেনো সব ভুলে গেছি,,
.
হঠাৎ ই চারো দিকে চোখ যেতেই দেখি নিলার বাবা,,আমার আব্বু, ভাইয়,,আরো কিছু রিলেটিব আমাদের চার পাসে ছোফায় বোসে আছে,,,
আমরা সবার মাঝখানে দুজন দুজনকে জড়িয়ে দরে দারিয়ে আছি,,
সবাই মুচকি মুচকি হাসছে,,আমি নিলাকে ছারানোর চেষ্টা করছি, কিন্তু এতজোরেই জড়িয়ে দরেছে যে ছারাতে পারছি না,,,
আমি নিলাকে আছতে আছতে বললাম,,
আমিঃএই সবাই দেখছে,ছারো,,
নিলা বুক থেকে মাথা উঠিয়ে যেই দেখলো সবাই তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে
তখন নিলা লজ্জা পেয়ে ভিতরে দৌরে পালালো,,
.
আমি মাথা নিচু করে দারিয়ে থাকলাম,
কেউ কিছুই বললো আমায়,
নিলার বাবা বললো,,
এই নওরিন(ভাবির নাম)জনি বাবাজিকে ভিতরে নিয়ে যা,,
.
ভাবি এসে আমাকে ভিতরে নিলার রুমে নিয়ে গেলো,,
.
ভাবিঃদেবরজি আজ থেকে এটাই তোমার রুম,,,
আমিঃমানি,বুঝলাম না,
ভাবিঃপরে বুঝবে,,
.
ভাবি রুম থেকে চোলে গেলো,,
.
বাহ নিলার রুমটা তো বেস সাজানো গোছানো,,,
.
একটু রেষ্ট নেওয়ার জন্য নিলার খাটে সুলাম,,
চোখ বন্ধ করে আছি,,
হঠাৎ কারো আলতো ছোয়া অনুভব করলাম,
চোখ খুলে দেখি নিলা,,
নিলা আমার বুকে সুয়ে পরলো,,
আমিঃআমার পাগলিটার কি হোয়েছে,,ঠিক মতো খাওনি,,চেহারা এমন শুকালো কেনো,,
নিলাঃআপনি দুরে ছিলেন তাই তো কিছু খেতে ভালোলাগেনি,,
নিলা আদুরের গলায় অভিমান করে বললো,,আপনি দুসপ্তাহ কিভাবে থাকতে পারলেন, জানেন আমার কত কষ্ট হোয়েছে,,।
আমিঃপাগলি এই যে চোলে আসছি না,,আর কষ্ট পেতে হবে না,,
নিলাঃহু,,
আমিঃআচ্ছা সবাইকে দেখলাম এখানে,, কোনো আয়োজন আছে নাকি,,
নিলা মুচকি একটা হাসি দিয়ে বললো,,,
নিলাঃ বলবো না,,
আমিঃবলোনা,,
নিলাঃবলবো,,আগে দুটো পাপ্পি দিতে হবে,
আমিঃআচ্চা কাছে আসো দিচ্ছি,,
উমা উমা,,,—এবার বলো,,
নিলাঃআপনার আর আমার বিয়ে,,
আমিঃকিইইই,
খুশিতে নিলাকে জড়িয়ে দরলাম,,
.
সন্ধায় ভাবি আমাকে পান্জাবি দিয়ে গেলো পড়ার জন্য,,
রোমান ইরা, মিম সাগর আমাদের দেখতে আসলো রুমে,,
নিলাকে ইরা আর মিম সাজাচ্ছে,
আমি নিলাকে দেখার জন্য ওর রুমে গেলাম,,
ইরা আর মিম পথ আটকি য়ে দারালো আমার,
মিমঃনা ভাইয়া,,বিয়ের আগে বৌউ দেখতে দেবো না,,
কি আর করার, সাগর আর রোমানকে আসতে বললাম,,
ওরা এসে ওদের সরিয়ে দিলো,,
আমি নিলার কাছে গেলাম,,
নিলাকে বধু বেসে কি সুন্দর লাগছে,,
আমিঃকি সুন্দর তুমি,,
নিলাঃআপনি কি কম সুন্দর নাকি,, জানেন ওরা আমায় আপনার কাছে যেতে দেয়নি,,
আমিঃআমি বুঝতে পেরেইতো তোমার কাছে চোলে এসেছি,,
নিলাঃহুম,,
নিলাঃবিয়ে কখন হবে,,
আমিঃএকটু পর,,
নিলাঃআমার আর তর সইছে না,,
আমিঃপাগলি একটা,,
.
কিছুক্ষন পর বাসায় কাজি এনে আমিদের বিয়ে পড়িয়ে গেলো,,
.
অন্যদিকে সাগর-মিম,রোমান-ইরা, নিলার রুমে আমাদের বাসর ঘর সাজিয়েছে,,,
.
সবার সাথে কথা বলে বাসর ঘরে যেই ঢুকতে যাবো,, তখন ইরা মিম সাগর রোমান পথ আটকিয়ে দরলো,,
সাগরঃমামা ভিতরে তো এত তারাতারি ঢুকতে দেবো না,
আমিঃকেনো?
রোমানঃছারতে পারি এক শর্তে,,আমাদের একটা কথা দিতে হবে,,
আমিঃকি শর্ত তারাতারি বল,,ভিতরে আমার জান টা আমার জন্য অপেক্ষা করছে,,
রোমানঃআমাদেরকে এক করতে হবে তোমায়,
আমিঃআচ্ছা ইরার টা আমি দেখবো,,মিমের টা নিলা দেখবে,,এখন সর,,
.
আমি ভিতরে ঢুকে দরজা আটকিয়ে দিলাম,,
নিলা এসে আমার পা ছুয়ে সালাম করলো,
.
খাটে এসে বসলাম দুজন,
হঠাৎ ই
নিলা খাট থেকে বালিশ একটা ছুরে ফেলে দিলো,,
আমিঃআহা কি করছো,,বালিশ ফেলছো কেনো,, তুমি সুবে কোথায়,,।
নিলাঃআপনার বুক আছে কি করতে, আজ থেকে এটাই আমার বালিশ,,,।
(নিলা আমার বুকে সুয়ে বললো)
আমিঃপাগলি একটা,,
নিলাঃহুম আপনার পাগলি,,সারা জীবন আপনার পাগলি হোয়েই থাকতে চাই।
আমিঃআমার পাগলি,,
নিলাঃহোয়েছে,এবার চোখটা বন্ধ করেন তো,,
আমিঃকেনো,,?
নিলাঃবন্ধ করেন না,,
আমিঃআচ্ছা করছি,,এই করলাম,,
হঠাৎ ই নিলা আমার মাথা দরে ওর ঠোট দুটো আমার ঠোটের মাঝে ডুবিয়ে দিলো,,
.
ওর ঠোটের ছোয়া পেয়ে আমার সারা শরিল সিহরিত হোয়ে গেলো,,
নিলা ওর ঠোট দিয়ে আমার ঠোটে চুমুক দিয়ে দরেছে,,
আমি ও তার ডাকে সারা দিলাম ,
ডুবে গেলাম ভালোবাসার অন্তহীন এক মুহুর্তে।আগামি পথ চলার এক নতুন অঙ্গিকার নিয়ে।
.
ভালো থাকবেন সবাই,,দেখা হবে আবার।
.
ভুলত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন।
.
……..সমাপ্ত
.
.
আমি কাছে যেতেই ইরা ফোন কেটে দিলো,,
আমি ঃকিরে কার সাথে কথা বলছিস
ইরাঃককই কার সাথে কথা বলি,,
আমিঃআমি তো দেখলাম বললি,,,তা ছেলেটা কে,,
ইরাঃকেউ না,,
আমি ঃনতুন প্রেমে পরলি নাকি,,
ইরাঃতুমি না,,,ইরা লজ্জা পেয়ে চোলে গেলো,,
.
রাতে আমরা সবাই বসে গল্প করছি,, আর হাসাহাসি তে মেতে আছি,,
.
বেসি ক্ষন আর ওদের মাঝে না থেকে ছাদে চোলে গেলাম,,
.
নির্বিক ভাবে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছি,, তখন নিলা এসে আমার পাসে দারালো,,
আমি একবার নিলার দিকে তাকিয়ে আবার আকাশের দিকে তাকালাম,,,
নিলা নরম সুরে বললো,,
চোলে আসলেন যে,,,
আমিঃএমনেই,,,
নিলাঃও,,,
নিলা কিছুক্ষন চুপ করে থাকলো,,
আবার বললো,,
নিলাঃসবার সাথে তো হেসে হেসে কথা বলেন,,,আমার সাথে কেনো বলেন না,,, খুব বেসি অপরাধ করে ফেলেছি আমি তাই না,,
.
এই অন্ধকারেও নিলার চোখের বিন্দু বিন্দু পানি আমি স্পস্ট দেখতে পাচ্ছি,,
.
নিলাঃকিছু বলছেন না যে,,খুব কি অপরাধ করে ফেলেছি,,,
আমিঃদেখেন,, ভাইয়া ভাবির বিশ্বাষ নষ্ট করতে পারবো না,, আর তাছারা ভাবি এমনেই ওই দিনের পর থেকে বেসি একটা ভালো ভাবে না আমাকে হয়তো,,
নিলাঃওসব আমি মেনেজ করবো,, আপনি শুধু আমাকে কাছে টেনে নেন,, বাকি সব আমি দেখবো,,,
আমিঃদেখুন এটা হবার নয়,ভালো কাউকে খুজে নিয়েন,,,
এই বলে যেই চোলে আসতে যাবো, তখন নিলা আমার হাত দরে দেয়ালের সাথে ঠেসে দরলো,,
রাগী স্বরে বললো,
নিলাঃএটা হবার,, একশ বার হবে,,আমার ভালো কাউকে প্রোয়োজন নেই তোকেই প্রোয়োজন,, কি ভেবেছিস,,শান্ত ভাবে থাকি বলে এতটাও শান্ত না আমি,,,তোকে চাই, তোকে লাগবে তোকে প্রোয়োজন।
আমিঃদেখুন আপনি কিন্তু বে….
উম উমমমমম
.
নিলা আর কিছু বলতে দিলো না আমায়,,
ওর ঠোট দিয়ে আমার ঠোটের মাঝে চেপে দরলো,,
কিছুক্ষন পর ছেরে দিলো,,
আমি হাপাতে লাগলাম,,
নিলাঃচুপচাপ খেয়ে রুমে গিয়ে ঘুমাবেন,,, ইরা,মিম এদের কারো সাথে যেনো কথা বলতে না দেখি,,আর যদি দেখি,,,তাহলে সবার সামনে কি করবো ভালোভাবেই বুঝতে পারছেন,,,যান,
.
আমি নিচে চোলে গেলাম,,
.
কি মেয়েরে বাবা,,,মুহুর্তেই রং বদলাতে পারে,,,
ওর অগ্নী মুর্তি দেখে আমি আর কিছু বলতে পারলাম না
ভয়ে,,
এই ভাবে কিচ করে কেউ,,,ঠোট যেনো আরেকটু হলে ছিরে যেতো,,,
.
রাতে খেয়ে ঘুমিয়ে গেলাম,
.
পরের দিন,,সকালে চোখ খুলতেই দেখি একজোরা চোখ আমার মুখের কাছে,,
আমার দিকে তাকিয়ে আছে,,
আমি লাফ মেরে উঠে বসলাম,,
.
ভালো করে তাকিয়ে দেখি নিলা,,
নিলাঃ কি হোয়েছে, এভাভে লাফ মেরে উঠলেন কেনো,,
আমিঃতুমি, না মানে আপনি এখানে কেনো,,,
নিলাঃতুমি করে বলেন,,
আমিঃআমি সবাইকে তুমি করে বলি না,,,
নিলাঃতুমি করে বলবেন না,,
আমিঃ না,,
নিলাঃ তাহলে আমি দরজা আটকিয়ে চিৎকার করবো,, তারপর বুঝবেন, কি হবে,
আমিঃদেখুন বেসি বারাবারি করবেন না,,
নিলাঃআবার আপনি করে বলছেন,,,আমি দরজা আটকাচ্ছি,,,
নিলা দরজা আটকাতে যাচ্ছে,
আমি ভয়ে ওর হাত দরে টান দিলাম,,
তারপর যা হবার তাই হলো,,
আমার উপর এসে পরলো,,
.
নিলা আমার বুকের উপর হাত ভর দিয়ে আমার মুখের কাছে মুখ এনে বললো,,, কি টান দিলেন কেনো, তুমি করে বলবেন তো,,,
আমিঃহুম বলবো,,এবার আমার উপর থেকে সরো,,
নিলা ঃএত তারাতারি সরবো নাকি,,
আমিঃকেউ দেখে ফেলবে,,সরো,,
নিলাঃএক দমই না,,
এই বলে নিলা আমার গালে আলতো করে হাত দিলো,,
আমিঃএই কি করছো,, সরো বলছি,, না হয় ফেলে দেবো,,
নিলাঃপারলে ফেলে দেও,,
.
উফ কি জামেলায় পরলাম,,,
।
হঠাৎ সে সময় মিম রুমে ঢুকলো,,
রুমে আমাদের দেখে মুখে হাত দিয়ে চেয়ে থাকলো,,
আমি তরিগরি করে ওকে জোর করে পাসে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়ে রুম থেকে বের হোয়ে গেলাম,,,,
.
লাজ লজ্জা সব গেছে মেয়েটার,,
.
নিলা মিম কে বললো,,,তুই আর আসার সময় পেলি না,,,
মিমঃবেস তো রোমান্স করছিস দেখছি,,
নিলাঃরোমান্স আর হলো কোথায়,,তুই সবকিছুতে পানি ঢেলে দিলি,
মিমঃতা কবে থেকে জনি ভাইয়ার সাথে রিলেশন করলি,,
নিলাঃএখানে আসার পর থেকে,,
মিমঃধুর আমি আরো চেয়েছিলাম,জনি ভাইয়ার সাথে আমি মনের লেনদেন করবো,, আর তুই
নিলাঃখবরদার,,যা বলেছিস বলেছিস,, এর পর যেনো আর না বলিস,,ওনার দারে কাছেও যেনো তোকে না দেখি,,
মিমঃবাব্বা,,ওনি একে বারে প্রেমে লাইলি হোয়ে গেছে,,,
,
নিলাঃমাইর দেবো একটা,,চল,,
.
আমি ফ্রেস হোয়ে নাস্তা খেতে টেবিলে বসলাম,,,
আমিঃভাবি নাস্তা দিয়ে যাও,,
ভাবিঃবসে থাক দিচ্ছি,,
,
একটু পর ভাবি নাস্তা নিয়ে আসলো,,
নিলা সহ সবাই আসলো নাস্তা
খেতে,,
নিলা বরাবরের মতো আমার সমনে বসলো,,
বসে আছে ঠিক আছে,, কিন্তু একটু পরই ওর পা দিয়ে আমার পায়ে স্লাইড করছে,,,
.
ওফ খাওয়ার সময়ও ফাজলামো,,
ভাবিঃকিরে জনি বিবরবির করে কি বলিস
আমিঃকিছু না,,
.
নিলা সুন্দর তার দু পা দিয়ে আমার একপা পেচিয়ে দরে নাস্তা খাচ্ছে,,, সবার সামনে কিছু বলতেও পারছি না,
.
আপু ফোন করেছিলো আপুর কাছে যেতে,,
আমি বিকালে আসবো বলেছি,,,
.
দুপুরে খাওয়ার সময় নিলা একই ভাবে পা দিয়ে দুষ্টমি করছে,,
ভাবলাম,,ভাবি কে যাওয়ার কথাটা
বলি,,
আমিঃভাবি, আমি বিকালে আপুর বাসায় যাচ্ছি,,, আপু যেতে বলেছে,,
,
এ কথা সুনে নিলার সব দুষ্টমি বন্ধ হোয়ে গেছে,,পা দিয়ে গুত দেওয়া,, স্লাইড করা সব বন্ধ হোয়ে গেলো,,
হাসি মুখটা মলিন হোয়ে গেলো,,
খাওয়া বন্ধ করে আমার দিকে ঘোর লাগা চোখে তাকিয়ে আছে,,
ভাবিঃকদিন থাকবি,,
আমিঃদু সপ্তাহর মতো,,
ভাবিঃও,,তোর ভাইকে বলে যাস,,
আমিঃওকে,,
.
আমি খেয়ে রুমে এসে একটু রেষ্ট নিচ্ছি,,
চোখটা একটু বন্ধ করেছি,,
হঠাৎ দরজা আটকানোর শব্দে চোখ খুললাম,,
তাকিয়ে দেখি নিলা দরজা আটকিয়েছে,,
আমিঃএই কি করছো,, দরজা খুলে দেও,,সবাই কি ভাববে,,
নিলা ঘোর লাগা চোখে আমার দিকে তাকিয়ে এক পা এক
পা করে আগাতে লাগলো,,
আমিঃদরজারটা খুলে চোলে যাও,,কেউ দেখলে খারাফ ভাববে,,
.
নিলা আমার কাছে এসে ধাক্কা মেরে খাটে ফেলে দিয়ে আমার উপর ওর গা এলিয়ে দিলো,,
.
আমার মুখের কাছে মুখ এনে নিলা বললো,,আমার কারনে চোলে যাচ্ছেন,, তাই না,,
আমিঃতোমার কারনে যাবো কেনো,,
নিলা ঃআমি আপনাদের বাসায় থেকে খুব সমস্যা করছি তাইনা,,
.
নিলা কাদছে,, ওর চোখের পানি আমার মুখে ফোটা ফোটা আকারে পরছে,,
.
নিলাঃচোলে যাবো আপনাদের বাসা থেকে,,
এই পৃথিবী ছেরেই চোলে যাবো,,
আমিঃপাগলটাগল হলে নাকি, কি বলছো,,
.
নিলা হঠাৎই আমার বুকের ভিতর ওর মুখটা ঘুজে দিলো,,
তারপর কাদতে কাদতে বললো,,সত্যি মরে যাবো,,আপনাকে ছারা,,বাচবো না,,খুব ভালোবেসে ফেলেছি আপনাকে,,,,,জানি না কেনো এতো ভালোবেসেছি আপনাকে,, শুধু এটা জানি, আপনাকে ছারা থাকতে পারবো না,,
নিলা আমার বুকের ভিতর ঢুকরে ঢুকরে কাদছে,,
.
মুহুর্তেই ভাবির বলা কথা ভুলে গেলাম,,
তোমাদের সম্মান দিয়ে কি হবে যদি আমি ই না বাচি,আমার প্রান না বাচে
.
আমি নিলার মাথায় হাতভুলাতে লাগলাম,,
.
নিলা কান্না বন্ধ করে মাথা উঠিয়ে আমার মুখের দিকে তাকালো,,
বুঝার চেষ্টা করছে,,
আমি ওর মাথায় হাত ভুলিয়েছি কি না,,
.
নিলা জিগাসু দিষ্টিতে আমার চোখের দিকে তাকিয়ে আছে,,
আমি ওর মাথা টা টেনে কপালে একটা চুমু দিলাম,,
নিলা এবার শক্ত করে জড়িয়ে দরে বুকের ভিতর মুখ ঘুজে দিয়ে কাদতে লাগলো,,
কেনো জানি আমার চোখের কোন বেয়ে পানি পরতে লাগলো,,,,
কিছুক্ষন পর হঠাই দরজাটা কে যেনো নক করতে লাগলো,,,
.
To Be Continue
#_জেএইসজনি
.
.
সাগর আসলে ওকে নিলার সাথে পিছন বসতে বললাম,তখন নিলা বলো,
নিলাঃ না ভাইয়া আপনি সামনে বসেন,,
কি আর করার,, সাগর সামনে বসলো আর আমি নিলার সাথে পিছন বসলাম,,
.
গাড়ি চলছে আপন গতিতে এয়ারপোর্টের দিকে,,
আর আমি চুপচাপ বসে আছি,,
নিলা হঠাৎ আমার হাতের আঙুল গুলো ওর হাতের আঙুল দিয়ে পেচিয়ে দরলো,,
আমিঃএই কি করছেন,,ছারেন,,সাগর দেখবে,,
নিলা আমার চোখের দিকে তাকিয়ে অন্যহাত দিয়েও আমার হাত চেপে দরলো,,
.
আমি হাত ছারাতে না পেরে চুপ করে থাকলাম,,
নিলা আমার এক হাত ওর দুহাতের মাঝে চেপে দরে আছে,,
আমার অবস্থা দেখে নিলা আমার চোখের দিকে তাকিয়ে মুচকি একটা হাসি দিলো,,
সামনে থেকে সাগর আমাদের কাহীনি দেখে হাসছে,,
নিলা আমার হাতটায় হঠাৎ একটা চুমু দিলো,
.
আমি সিহরিত হোয়ে গেলাম ওর আলতো ছোয়ায়.
ওর দিকে রাগী চোখে তাকালাম,,সামনে ওরা বসে আছে তাই কিছু বলতে ও পারছি না,,
নিলা আমার চোখের দিকে তাকিয়ে
মুখ চেপে হাসছে,,,
.
কিছুক্ষন পর এয়ারপোর্টে এসে নামলাম,,
প্লেন ল্যান্ড করতে এখনো, এ ঘন্টা বাকি,, তাই কিছু চিপস জুস নিয়ে নিলাম সাথে,,,
নিলা পাসে তাই পর্মালিটির জন্য নিলাকে বললাম,, কিছু খাবেন আপনি ,,,
নিলা ঃআপনার আদ খাওয়া জুস দিলেই হবে,,
আমিঃকি!
নিলাঃ যেটা শুনেছেন সেটাই,,
আমিঃআমি কাউকে ভাগ দিতে পারবো না,, আপনার যা খেতে ইচ্ছে হয় এখান থেকে নিয়ে নিন,,
নিলা,আমার যা খেতে ইচ্ছে হয় তাতো এই কেন্টিনে নেই,
আমি ঃতাহলে কোথায় আছে,,
নিলাঃ দুষ্ট একটা হাসি দিয়ে বললো,,আপনার কাছে আছে,,
আমি ঃকি পাগলামো কথাবার্তা,, আমি গেলাম,,
.
সাগর পাসের মোরে সুখ টান দিতে গিয়েছে..
এয়ারপোর্টের ভিতর গিয়ে কাউন্টারে বসলাম,,,
নিলা ও এসে আমার পাসে বসলো,,,
আমি জুসের বোতলের কাকটা খুলে মুখ লাগিয়ে খাচ্ছি,,
নিলা আমার খাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে,,
অর্ধেক শেষ হোতেই নিলা টান মেরে জুসের বোতলটা নিয়ে মুখে লাগিয়ে চুমুক দিয়ে জুস খেতে লাগলো,,
আমি ঃএটা কেমন অসভ্যতামি,,,
.
নিলা তৃপ্তির একটা হাসি দিয়ে বললো,,অসভ্যতামি না,,এটা ভালোবাসা,,
আমি কিছু না বলে চুপ করে থাকলাম,,
এবার চিপস খাবো তখন ভাবলাম আবার থাবা দিতে পারে তাই,, নিলাকে জিগাসা করলাম,, চিপস খাবেন,,আরেকটা আছে,,,আমারটা থাবা দিবেন না,,
নিলা ঃদেন,, থাবা দেওয়ার কোনো কারন নেই,,চিপস এ আপনার ঠোটের কেনো ছোয়া পাওয়া যাবে না,,
.
আমিঃ(কি মেয়েরে বাবা কোনো লজ্জা সরম নেই,কি বলে,,,)নিন,,
নিলাঃএত লজ্জা পাচ্ছেন কেনো,,
.
দুর কি জালায় পরলাম,, সাগর হারামি টায় যে কোথায় গেলো,,,
.
কিছুক্ষন পর প্লেন এয়ারপোর্টে ল্যান্ড করলো,,
আমরা ভিতরে গেলাম,,
গিয়ে তো দেখি আরেক কান্ড,,,
সাগর হারামীটা কোন একটা মেয়ের সাথে সমানে জগরা করছে,,
.
মেয়েটাকে পিছন থেকে দেখা যাচ্ছে না,,,
ওর কাছে গেলাম,,সাথে নিলা আছে,,
.
আমিঃকিরে কি হোয়েছে?
সাগর ঃআর বলিস না,,এই পেত্নিটা কোথা থেকে যেনো এসে গায়ে পরলো,, আর এখন বলছে নাকি আমার দোষ,,
.
মেয়েটা পিছন ঘুরতেই নিলা এবং মেয়ে দুজন দুজন কে জড়িয়ে দরলো,,
নিলাঃকেমন আছিস,,
মেয়েটা ঃভালো আর থাকতে পারলাম কোথায়,কাউন্টার থেকে বের হোতেই এই দামরা ছেলেটা এসে আমার গায়ে পড়লো,,
নিলাঃআচ্ছা হোয়েছে,,পরিচিত হোয়ে নে,,ওনি হলেন জনি, আপুর দেবর,,আর যার সাথে ধাক্কা লাগলো ওনি হলেন সাগর ভাইয়া, ওনার বন্ধু,,
এবার মেয়েটাকে দেখিয়ে দিয়ে নিলা বললো,,এ হলো আমার ফুফাতো বোন মিম,,,।
মিম হায় বলে আমার দিকে হাত বারিয়ে দিলো,, আমি যেই হাত বারাতে যাবো তখন নিলা মিমের হাত সরিয়ে দিয়ে বললো,,হোয়েছে সাগর ভাইয়ার সাথে পরিচিত হোয়ে নে,
মিম ঃওনার মতো বতজ্জাতের সাথে পরিচিত হতে আমার ভোয়েই গেছে,, চল,,
.
আমরা গাড়ির কাছে গেলাম,,,
গাড়ির পেছনে সিট আছে চার টা,,তাই আমি একদম পিছনের এক সিটে গিয়ে বসলাম,,
মিম আমার পাসে যেই বসতে যাবে তখন নিলা বললো, এই কি করছিস,, তুই ওখানে গিয়ে বস,,,
মিম ঃ আমি ওই বজ্জাতের সাথে বসতে পারবো না,, ,, আমি এখানেই বসবো,,,
এই বলে মিম আমার পাসে বসে পরলো,,
নিলা ভালোই যব্দ হোয়েছে,,,
,,
নিলা সাগরে পাসে বসে পরলো,,
আমি নিলার মুখের এক্সপেশন দেখে হেসে দিলাম,,
নিলা পিছন ঘুরে আমার দিকে তাকিয়ে কিছুটা রেগে বললো,, মেরে মুখ বেঙ্গে দেবো হাসলে,,,
আমি বাহিরের দিকে তাকিয়ে হাসি চাপিয়ে রাখার চেষ্টা করছি,,
নিলা এখনো রাগী ভাবে তাকিয়ে আছে,,
.
মিমঃতো আপনি কেমন আছেন,,
আমি ঃভালো,,তুমি,,
মিমঃভালো,,,
.
আমরা দুজন কথায় মসগুল,,নিলা বারবার পিছন ঘুরে আমাদের দিকে তাকাচ্ছে,আর রাগছে,,
.
নিলা হঠাৎ আমার দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে বললো,, এই মিম ওনার গায়ের সাথে চেপে বসেছিস কেনো,, সরে বস,,
মিমঃকোথায় চেপে বসলাম,,আপনার দিকে কি চেপে বসেছি আমি,, (আমার দিকে তাকিয়ে বললো),,
আমিঃকই নাতো,,
মিমঃদেখেছিস,,(নিলার দিকে তাকিয়ে বললো)
নিলা আমার দিকে আবার সেই রাগি চোখে তাকিয়ে বললো, ওনার তো বালোই লাগে,,বদ কোথাকার,,,
মিমঃহোয়েছে এবার সামনে তাকা,,,
নিলা এবার সামনে তাকালো,,
.
মিম আবার আমার সাথে কথায় ব্যাস্থ হোয়ে গেলো,,
গাড়ির জাকুনিতে মিম বারবার আমার উপর এসে পরছে,,
নিলার এটা আর সয্য হলো না,,
সোজা আমাদের মাঝে এসে বসলো,,
দুজনের সিট তো,, তিনজন বসাতে একটু চাপাচাপি হচ্ছে,,
নিলা পুরো আমার গায়ের সাথে যেকে বসেছে,,
মিম আমি অবাক,,
মিমঃকিরে তুই সামনের সিট ছেরে এখানে আসলি কেনো,,
বসতে কষ্ট হচ্ছেতো,,
নিলাঃহলে হউক,,
মিমঃএখনো তো ওনার গায়ের সাথে তুই চেপে বসেচিস,,
নিলাঃবোসেছি তো কি হোয়েছে,চুপচাপ থাক,,
আমি উঠে যেই সামনের সিটে যাবো তখন নিলা হাত দরে টেনে বসিয়ে দিয়ে বললো,,চুপচাপ বসেন ,
আমি একটু ওর কাছ থেকে সরে বসার চেষ্টা করছি,,
কিন্তু যায়গা সল্পতে ওর গায়ের সাথে গা লেগে যাচ্ছে,,
নিলা ঃএখন সরে বসছেন কেনো,,একটু আগে তো,, একজন আরেকজনের উপর পরে ছিলেন,,
আমিঃওটা গাড়ির জাকুনিতে হোয়েছে,,,
নিলাঃএখন আমার উপর পরুন,,
আমিঃকি বলেন এসব,,,
মিমঃ কিরে নিলা কি বলছিস এসব,,আচ্ছা আমি সামনে যাচ্ছি,,
মিম সামনে গেলো,,
মিমঃ এই খবিস একটা সরেন বসবো,,( সাগর কে বললো)
সাগর ঃএত মিষ্টি করে বকা দেন কিভাবে,,
মিমঃপ্লট করছেন আমার সাথে,,মেরে রাস্তায় ফেলে দেবো ,
সাগরঃআপনি অনেক সুন্দর,,
মিমঃআবার প্লটিং করছেন আমার সাথে,,তখন তো বললেন আমি পেত্নি,
সাগরঃআরে তখনতো রেগে বলেছি,,
মিমঃহুম,
.
দেখতে দেখতে বাসার সামনে চোলে এসেছি,
সবাই গাড়ি থেকে নামলাম,,
সাগর বাদে আমরা সবাই ভিতর যাচ্ছি,,সাগর এখন আমাদের বাসায় যাবে না,বলে দিয়েছে,,
সাগর মিম কে পিছন থেকে ডেকে বললো,,এই যে মিস,,সরি,,
মিমঃইট,স ওকে,,
সাগরঃআপনি সত্যিই কিন্তু সুন্দর,,
মিম একটা মুচকি হাসি দিয়ে বললো,,আবার প্লটিং,,,
এখন কিছু বলছি না,,,আবার দেখা হলে মেরে দেবো,,,
.
বাসায় গিয়ে আমি আমার রুমে চোলে গেলাম,,,
.
দুপুরে সবাই খেতে বসলাম,,
.
খাবারের মেনু দেখে জিবে পানি এসে গেলো,,
মিম আসবে বলে এত কিছু,,,
.
আমি গফাগফ খেতে লাগলাম,,
নিলা খাবার খাওয়া রেখে আমার খাওয়া দেখছে,,
.
মিমঃকিরে কোথায় তাকিয়ে আছিস,,,হা করে তাকিয়ে না থেকে খা,,
নিলা কিছুটা লজ্জা পেলো,,
,
আমি খেয়ে রুমে চোলে আসলাম,,
কিছুক্ষন পর বারান্দায় গেলাম,,
বারান্দায় গিয়ে দেখি
ইরা ফোনে কথা বলছে,,
.
আমি কাছে যেতেই ইরা ফোন কেটে দিলো,,
আমি ঃকিরে কার সাথে কথা বলছিস
ইরাঃককই কার সাথে কথা বলি,,
আমিঃআমি তো দেখলাম বললি,,,তা ছেলেটা কে,,
ইরাঃকেউ না,,
আমি ঃনতুন প্রেমে পরলি নাকি,,
ইরাঃতুমি না,,,ইরা লজ্জা পেয়ে চোলে গেলো,,
.
রাতে আমরা সবাই বসে গল্প করছি,, আর হাসাহাসি তে মেতে আছি,,
.
বেসি ক্ষন আর ওদের মাঝে না থেকে ছাদে চোলে গেলাম,,
.
নির্বিক ভাবে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছি,, তখন নিলা এসে আমার পাসে দারালো,,
আমি একবার নিলার দিকে তাকিয়ে আবার আকাশের দিকে তাকালাম,,,
নিলা নরম সুরে বললো,,
চোলে আসলেন যে,,,
আমিঃএমনেই,,,
নিলাঃও,,,
নিলা কিছুক্ষন চুপ করে থাকলো,,
আবার বললো,,
নিলাঃসবার সাথে তো হেসে হেসে কথা বলেন,,,আমার সাথে কেনো বলেন না,,, খুব বেসি অপরাধ করে ফেলেছি তাই না,,
.
এই অন্ধকারেও নিলার চোখের বিন্দু বিন্দু পানি আমি স্পস্ট দেখতে পাচ্ছি.
.
To Be Continue….