আমার বুড়ো part : 1

0
6332

আমার বুড়ো part : 1

লেখিকা সুরিয়া মিম
part : 1
!
বিয়ের চল্লিশ বছর পর আমার বুড়ো যখন একটা মেয়ের বয়সী মেয়েকে বিয়ে করে ঘরে এনে তুললো,

তখন বুঝলাম তার এই সংসারে আমার কোনো প্রয়োজন নেই,

আমি তো কখনো ওনার কোনোকিছু তে কমতি রাখিনি তাহলে উনি কেন এমন করলো?
……
ওনার অসম্মান হয় এমন কোনো কাজ কখনো করিনি,
সব সময় ওনার মতো করে নিজেকে সাজিয়ে রেখেছি,
….
কেন জানেন?
কারন আমার বুড়ো এই বুড়ো বয়সে ও আমাকে বেনারসি ও গা ভর্তি গহনা পরে থাকতে দেখতে পছন্দ করত,
..
আমাকে কোনো কাজ করতে দিতো না,
আমার কাজ ছিল সে আমার হাতে রান্নাকরা খাবার খেতে পছন্দ করতো,
..
তাই তার জন্যে খাবার রান্নাকরা,
রাতে স্বামী সেবা করা,
…..
কেউ বিশ্বাস করবেনা যে আমি এই বয়সে এসে ও স্বামীর সুখ পেতাম,
….
এই চল্লিশ বছর বছর বিয়ের বয়সে উনি যেভাবে চেয়েছেন সেভাবে আমি তাকে খুশি করেছি,
..
তার চার পুএ ও এক কন্যা সন্তানের মা হয়েছি,
….
হতাম নাই বা কেন?
সে আমাকে তার সব টা দিয়ে ভালো বেসেছে,
…..
হঠাৎ তার এই কার্যক্রম আমার কিছু তেই বোধগম্য হয় না,
…..
কারন আমি একজন অনাথ ছিলাম,
চারকুলে কেউ ছিলো না আমার,
…..
আমি লোকের বাসায় লাঠিঝাটা খেয়ে কাজ করে আমার জীবনযাপন করতাম,
…..
কিন্তু না জানি কি করে আল্লাহর রহম হলো?
….
আমার বুড়ো আমার মনিবের বাসায় বেড়াতে এলেন,
এবং তার সেবা যত্নের ভার এসে পরলো আমার ওপর,
….
আমি তার সেবাযত্ন করা সহ ছোটো ছোটো জিনিসের প্রতি নজর রাখতাম,
…..
কারন তিনি ছিলেন আমার মনিবের বাল্যবন্ধু,
……
একদিন তিনি হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে পরলেন,
তখন আমি সারারাত তার মাথার কাছে বসে,
তার সেবাযত্ন করেছিলাম,
……
আল্লাহর রহমতে সাতদিন পর সুস্থ হয়ে,
তিনি আমাকে বিবাহের প্রস্তাব দেন,
….
আমি নাবালিকা ছিলাম বলে তার বিয়ের প্রস্তাব ফিরিয়ে দেই,
….
উনি সেটা মেনে নিতে না পেরে আমাকে তুলে নিয়ে গিয়ে জোরপূর্বক বিয়ে করেন,
….
বিয়ের পরে জানতে পারি আমার স্বামীর ও কেউ নেই ,
কারন আমার শশুড় শাশুড়ি ওনার বারো বছর বয়সে রোড এক্সিডেন্টে গত হয়েছেন,
আর উনি তাদের একমাত্র সন্তান ছিলেন,
…..
হেসে খেলেই চলছিল আমাদের সুখের সংসার,
….
তারপর আমার কোল আলো করে এলো আমাদের জমজ দুই পুএ সন্তান

তারপর আবারো আমার কোল আলো করে আসে আমার জমজ দুই ছেলে ও এক মেয়ে,
…..
এভাবেই হেসে খেলো চলছিল আমার এই সুখের সংসার,
..
জানিনা হঠাৎ কারর নজর লেগে গেল?
.. …
আমার স্বামী আমাকে বললেন,
.. …
তোমাকে আমার আর ভালো লাগে না তুমি বুড়ি হয়ে গেছ,
. …
ভেবেছিলাম আমার বুড়োর গায়ে হাজার হাতির জোর চাহিদা একটু বেশি তাই আমার সাথে মশকরা করছে…..
….
কিন্তু হঠাৎ করে একদিন বিয়ে করে নিজের মেয়ের বয়সী মেয়ে কে আমার সাজানো সংসারে এনে তুলো আমার সমস্ত ব্যবহৃত জিনিশ বাহিরে ছুড়ে ফেলে,
……
ছেলেমেয়ে আমার বিয়ে করে বৌ বাচ্চা নিয়ে অন্যত্র জীবনযাপন করছে,
…..
তাদের ফোন করে ওনার এ ব্যাপার জানাতেই ওরা আমাকে আমার বয়সের মতিভ্রম ভেবে যা নয় তাই বলে অপমান করে,

আর আমার বুড়ো বলে,

তুই এখান থেকে চলে যা,
আমার তোকে ভালো লাগেনা তুই বুড়ি হয়ে গেছ,
যা দূর হ আমার সামনে থেকে,
.. ..
ওনার নতুন বৌয়ের পা ধরে বলেছিলাম যে আমি তোমার সংসারে অশান্তি করবোনা,
তুমি আমাকে ওনার পায়ে ঠাই দিতে বলো?
দেখবে উনি তোমার কথা শুনবেন,
….
তখন ওই মেয়ে বললো,
. ..
তোর স্বামী যখন তোকে চায় না তখন তুই এখানে থেকে করবি টাকি যা বেড়িয়ে যা,
. ..
তখন বুঝতে পারলাম যে আমার এখানে ঠাই হবে না,
..
আমার বুড়োর এত সুন্দরী ও জোয়ান বৌ দিয়ে সুখ হবে না,
আর আমি সতীনের সংসার ও করতে পারবোনা,
…..
তাই আমি এক চিলতে আশা নিয়ে রাস্তায় বেড়িয়ে পরি,
..
আর হাটতে হাটতে বাসস্টপে গিয়ে কুমিল্লার টিকিট কেটে বাসে উঠে পরি,
…..
উদ্দেশ্য ছোটো ছেলের কাছে যাবনা,
. ….
ওখানের কোনো বাড়িতে কাজের লোকের কাজ করে নিজের পেট ভরাবো,
.
নিয়তি যদি কখনো ছেলে কে দেখার সুযোগ করে দেয় তাকে মন ভরে দেখে,
..
তাদের বাবার দেওয়া কষ্ট ভুলে থাকার চেষ্টা করবো,
..
বুড়ো টাতো আমাকে ছাড়া কিছু বুঝত না তাহলে সে এতো অবুঝ কি করে হয়ে গেল?
..
আন্টি আপনি কাঁদছেন কেন?
….
কিছুনা মা,
…..
ঢাকা থেকে কুমিল্লায় আসতে বেশি সময় লাগেনা,
আমরা পৌছে গেছি আন্টি,
….
ওওওও তাহলে তো ভালই,
….
আন্টি আপনি কোথায় যাবেন আমাকে বলুন?
আমি আপনাকে পৌঁছে দিয়ে আসছি,
….
আমি কোথাও যাবো না মা,
আমি এখানে কাজ খুঁজতে এসেছি,
….
কাজ?
কিন্তু আপনাকে দেখলে তো মনে হয় না আপনি কখনো কোনা কাজ নিজের হাতে করে দেখেছেন?
.. …..
মা আমার তেরোবছর বয়সে বিয়ে হয়,
তোমার খালু আমাকে রাজরানী করে রাখতেন,
কিন্তু এখন তার আমার প্রয়োজন নেই তাই আমাকে নিজের কাধ থেকে ঝেড়ে ফেলেছেন,
….
তাই পেটের দায়ে কাজ খুঁজতে এখানে এসেছি,
যাতে খেয়েদেয়ে কোনো ভাবে বেঁচে থাকতে পারি,
…..
মা তোমার বাড়ি তে কি কোনো কাজের লোক বা রান্নার লোক লাগবে?
….
আমি অনেক ভালো রান্নাকরি,
তোমার খালু বলতেন আমার হাতে নাকি কোনো যাদু আছে,
হি হি হি
…..
আন্টির কথা শুনে কেঁদে ফেলি আমি,
….
কারন একটা মানুষ কি করে এতো কষ্ট সহ্যকরে তার হাসি মাখা মুখ টা সবাই কে দেখাতে পারে,
. …
কি হলো মা কাঁদছ কেন?
….
আপনি আমার কাছে থাকবেন,
আপনার কোথাও কাজ করতে হবে না,
আমি আপনাকে অনেক যন্ত করে রাখবো,
..
না মা তা হয় না,
আমি এখানে কাজ করতে এসেছি,

তাই তাহলে তোমার কাছে থাকলে ও কাজ করে থাকবো,
বিনিময় আমাকে কিছু বেতন দিলে হবে,
……
আপনি যেটা চান সেটাই হবে,
কিন্তু আমার একটা শর্ত আছে?
….
কি শর্ত মা?

আমি আমার মাকে জন্মের সময়ে হারিয়েছি,
তাই আমি আপনাকে মা বলে ডাকবো,
……
মেয়ের কথা শুনে আমার বুকের ভেতরে চিনচিন করে ওঠে,
….
তাই সাথে সাথে আমি ওকে আমার বুকে জড়িয়ে ধরি,
….
আর ও হাডমাউ করে কাঁদতে শুরু করে ,

চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে