Sunday, July 27, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1094



লবঙ্গ লতিকা পর্ব-১৫

0

#লবঙ্গ লতিকা
#নুজহাত আদিবা
পর্ব ১৫

তমা সকালে ঘুম থেকে উঠেই আগে নিজেদের বাড়িতে গেল। সেখান থেকে নিজের বিদ্যালয়ের পরনে পোশাকটা নিয়ে এলো। তারপর নাস্তা করে বেড়িয়ে গেল বাড়ি থেকে।

অনেকদিন পরে তমাকে শ্রেনীকক্ষে উপস্থিত দেখে সবাই অবাক। তমা হচ্ছে বিশ্ব ফাঁকিবাজ। মাঝেমধ্যে শ্রেনীকক্ষে উপস্থিত থাকে। তারপর আবার বেশ কিছুদিনের জন্য হাওয়া! যখন ইচ্ছে হয় তখন শ্রেনীকক্ষে আসে আরকি।

তমার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বান্ধবী বৃষ্টি এসে তমার পাশে বসলো। শ্রেনীকক্ষে উপস্থিত না থাকলেও তমার সাথে বৃষ্টির নিয়মিত যোগাযোগ হয়। তমার বিয়ের দিনও তমার সাথেই ছিল বৃষ্টি। বৃষ্টি সাদকেও দেখেছে। সাদের পাদ নামক নামটা তমার বৃষ্টিরই আবিষ্কার করা।

তমা আর বৃষ্টি সামনের বেঞ্চের দিকে একটু এগিয়ে গিয়ে বসলো। নাহলে,বোর্ডের লিখা দেখা যায় না ঠিকঠাক ভাবে। তমা খেয়াল করলো পাশের কয়েকটা মেয়ে কী একটা হাতে নিয়ে যেন কাড়াকাড়ি করছে। তমা বৃষ্টিকে চোখ দিয়ে ইশারা করে বোঝালো। বৃষ্টি অঙ্গভঙ্গি করে বোঝালো সেও জানে না কী। তমা এবার বাধ্য হয়ে জিজ্ঞেস করলো,” এই তোদের হাতে কীরে?”

মেয়েগুলো একজোট হয়ে তমাকে বললো,”বলবো,কিন্তু কথা দিতে হবে কাউকে বলতে পারবি না। আমাদের মধ্যেই থাকবে সবকিছু। ”

তমা আশ্বাস দিয়ে মেয়েগুলোকে বললো, “যা কথা দিলাম।”

মেয়েরা চুপিচুপি ব্যাগ থেকে একটা সিগারেটের প্যাকেট বার করলো। তমা সিগা/রেটের প্যাকেট ওদের হাতে দেখে চমকে উঠলো।তমা চমকে উঠে মেয়েগুলোকে বললো,”ইয়া আল্লাহ! তোদের হাতে এসব কী? কে দিয়েছে এগুলো?”

মেয়েগুলো হাতের পিঠে সিগা/রেটের প্যাকেটটা লুকিয়ে বললো,” বলিস না কাউকে! তুইও ভাগ পাবি। চিন্তা করিস না।”

এটুকু বলেই তমার হাতে সিগা/রেটের প্যাকেট থেকে একটা সিগা/রেট বের কীে গুঁজে দিলো। তমা কিছু বলার আগেই ক্লাসের ঘন্টা দিয়ে দিলো। অগত্যা তমা লুকিয়ে সবার আড়ালে গিয়ে সিগা/রেটটা নিজের ব্যাগে লুকিয়ে রাখলো।

ক্লাস শেষ করে তমা সোজা বাড়িতেই এলো। এসেই আঙুর বালার বাটন ফোনটা হাতে নিয়ে কিছুক্ষন ঘাটাঘাটি করলো। অনিতার নাম্বার থেকে একটা ম্যাসেজ এসেছে। তাতে সাদের নতুন সিমের নাম্বার দেওয়া আছে। তমা তা দেখে ঠোঁট টিপে হাসলো। সাহস থাকলে আর কখনো তমার সাথে মেজাজ দেখানোর মতো সুযোগ পাবে না সাদ। তমা অতি গোপনে নিজের ফোনে সাদের নাম্বারটা টুকে রাখলো। এখন থেকে সাদকে এই নাম্বারেই কল দেবে।

পুতুল আর নাদিয়াকে নিয়েই তমার দিনের বেশিরভাগ সময় কেটে যায়। হেরা সারাদিন কাজকর্ম নিয়েই ব্যস্ত থাকেন। প্রথম প্রথম তমাকে খুব একটা পছন্দ না করলেও এখন খুব একটা খারাপ লাগে না। তমা প্রচন্ড মিশুক প্রকৃতির একটা মেয়ে।খুব সহজেই আদর ভালোবাসা আদায় করে নিতে পারে।

আঙুর বালা প্রতি দিনকার মতোই খেয়ে দেয়ে দুপুর বেলা ঘুমোতে গেলেন। তমা যেন আজ এই সুযোগটারই অপেক্ষা করছিল। তাড়াতাড়ি ফোন নিয়ে সাদের নাম্বারে কল দিলো। আঙুর বালা জেগে থাকলে সাদের সাথে তমা কথাই বলতে পারে না। দু/ষ্ট বুড়ি শুধু বারবার তমার সামনে ওসব নিয়ে হাসি-ঠাট্টা করে।

ফোনের রিং বাজতেই সাদ ফোন ধরলো। নাম্বারটা সাদের চেনা। তাই ফোনটা ধরতে আর অসুবিধে হয়নি। সাদ ফোন ধরতেই তমা বললো,”হঠাৎ নাম্বার পরিবর্তন করলেন কেন?”

সাদ ছোট একটা নিঃশ্বাস ফেলে বললো,”আগের নাম্বারটা মেইবি ভাইরাল হয়ে গিয়েছিল। আজগুবি সব লোকজন কল দিয়ে বিরক্ত করছিল। তাই, সিম চেঞ্জ করে ফেলেছি। তা কী বলবে বলো।”

তমা মুখ গোমড়া করে বললো,” কিছু না, এমনি ফোন দিয়েছিলাম।”

সাদ ফোন অন্য হাতে নিয়ে বললো,” আচ্ছা, আমি রাখছি তাহলে। পরে কথা হবে।”

তমা তাড়াতাড়ি সাদকে বললো,” কী করছেন আপনি? সবসময় এত ব্যস্ততা দেখান কেন? আগে তো এত ব্যস্ত থাকতেন না। এখন দূরে ওই শহরে গিয়েছেন বলেই এত ভাব এত ব্যস্ততা? রাখুন আপনি ফোন। আমি কথা বলবো না আর আপনার সঙ্গে। আর কখনো কথা বলবো না আপনার সঙ্গে। ”

তমা রাগ করে ফোন কেটে দিয়ে বসে রইলো। সাদ আরো কয়েকবার কল দিলো। কিন্তু, তমা রাগে বিছানায় ঠেস দিয়ে শুয়ে ছিল। আর তুলবে না সাদের ফোন। যা ইচ্ছে হোক। সাদের সঙ্গে আর কোনো কথা নেই তমার।

আঙুর বালা বিকেলে নামাজ আদায় করে উঠোনে গিয়ে পানের ডাবা খুলে বসলো। সুপারি, জর্দা, চুন, সাদা পাতা দিয়ে মুড়ে একটা পানের খিলি বানিয়ে মুখে পুরলো। নাদিয়া উঠোনে বসে বসে হাঁড়ি-পাতিল খেলছে। আর পুতুল ঘরে ঘুমিয়ে আছে। তমা পা টিপে টিপে উঠোনের কোনে দাঁড়িয়ে আঙুর বালার অবস্থান লক্ষ্য করলো। জলদি আবার আঙুর বালার ঘরে ঢুকে ঘরের দরজা হালকা করে লাগিয়ে দিলো।

ব্যাগ থেকে চুপিসারে সিগা/রেটটা বার করলো। আহা! কত দিনের শখ এই জিনিসটা একবার টেষ্ট করার। শফিক ভাই চায়পর দোকানে বসে বসে সিগা/রেট খেতো। সেই থেকে তমার খুব শখ।সেও শফিকের মতো সিগা/রেট খাবে।
আঙুর বালার ঘরের টেবিলের ডয়ার থেকে ম্যাচের বাক্সটা বের করে সিগা/রেটে আগুন ধরালো। দু’আঙুলের মাঝে সিগা/রেটটা পুরে দিয়ে জোরেশোরে একটা টান দিলো। মুহুর্তেই তমা জোরে জোরে কাশি দিয়ে উঠলো। সিগা/রেটের ধোঁয়া নাকে মুখে ঢুকে গেছে। পুরো ঘর ধোঁয়া ধোঁয়া হয়ে গেছে। তমা তাড়াতাড়ি সিগা/রেটট নিভিয়ে আগের জায়গায় রেখে দিলো। হঠাৎই ঘরে আঙুর বালা প্রবেশ করলো। ঘরময় এত ধোঁয়া দেখে তমাকে বললো,” কীরে বউ ঘরে এত ধোঁয়া ক্যা?”

তমা আমতাআমতা করে বললো,” কই ধোঁয়া? কুয়াশা পরেছে তো তাই এমন লাগছে দেখতে।”

আঙুর বালা নাক কুঁচকে তমাকে বললো, “ওই ছে/ড়ি তোর মাথা কী আছে না গেছে? এই কু/ত্তা কোকাইন্না গরমে তুই কুয়াশা পাস কই?”

চলবে…

লবঙ্গ লতিকা পর্ব -১৪

0

#লবঙ্গ লতিকা
#নুজহাত আদিবা
পর্ব ১৪

আঙুর বালা আলমারি থেকে তমার জন্য সোনার আংটি,চেইন,কানের দুল এসব বের করে রেখেছেন। নতুন বউ যদি একটু সেজেগুজে না থাকে তাহলে কী আর বউ মনে হয়? বিয়ের এতদিন হয়ে গেছে তবুও পাড়ার লোকেরা নতুন বউকে দেখতে আসে।

তমা হাতে নতুন সোনার আংটি পরলো। কানে দুল পরলো। গলায় চেইন পরলো।একটা নতুন নাকের ফুলও দিয়েছে আঙুর বালা। তমা সেটাও আস্তে করে নিজের নাকে পরে ফেললো। তমার নাক আগে থেকেই ফোড়ানো। তাই আর বেশি ঝামেলা পোহাতে হয়নি।

তমার একটা বিষয় নিয়ে বেশ মন খারাপ। অনিতা ফোন করে বলেছে কালকে থেকে তমাকে স্কুলে যেতে হবে। পড়াশোনায় ফাঁকি দেওয়া কোনোভাবেই চলবে না। এখন থেকে রোজ সকালে ঘুম থেকে উঠে নাস্তা করে সোজা তমা ব্যাগ নিয়ে স্কুলে যাবে। সন্ধ্যা হলেই ব্যাগ নিয়ে পড়তে বসবে।

দুপুর বেলা খাওয়া দাওয়া শেষ করে আভুর বালা বিছানায় শরীর এলিয়ে ঘুমিয়ে পরলেন। তমা চুপিচুপি নিজের ডয়ার থেকে নিজের ফোনটা বের করলো।সাদের নাম্বারে একটা কল দিলো। প্রথমবার রিং হলেও সাদ কল রিসিভ করার আগেই কেটে গেল। তারপর সাদ নিজে থেকেই তমাকে ফোন দিলো। তমা কল রিসিভ করে সাদকে বললো,”আপনার মায়ের সমস্যাটা কী? আমার পড়াশোনা নিয়ে এত ঘাটাঘাটি করছে কেন? বিয়ে হয়ে গিয়েছে সংসার করবো। এখন আবার স্কুলে গিয়ে ক্লাস করতে হবে কেন? পড়াশোনা করারই বা কী দরকার? ”

সাদ কানের সামনে ফোন নিয়ে জোরে চিৎকার করে বললো,”কীহ! তোমার মনে যদি এসব চিন্তা ঘোরে তো বাদ দাও। পড়াশোনা করতেই হবে তোমাকে। পড়াশোনা করা ছাড়া কোনো মানুষের কাছে মূল্য পাবে না। সময় থাকতে ভালো হয়ে যাও তমা। আমি তোমার ব্যাপারে প্রতিদিন খোঁজ নেবো। যদি শুনেছি পড়াশোনা বাদ দিয়ে সারাদিন টইটই করছো। তো,দেখো কী অবস্থা করি তোমার।”

তমা বিলাপের স্বরে সাদকে বললো,” ধুর! আমার ভালো লাগে না পড়াশোনা। সারাদিন শুধু পড়া আর পড়া। ছাতার মাথা!”

সাদ নিবিড় কন্ঠে তমাকে বললো,” শোনো, ভালো স্টুডেন্ট হওয়ার জন্য সারাদিন গরুর মতো পড়াশোনা করতে হয় না। কিছু টেকনিক মাথায় থাকলেই হয়। ”

তমা উৎসাহী কন্ঠে বললো,” কী টেকনিক?”

সাদ তমার প্রশ্নের উত্তরে বললো,” পরে শিখিয়ে দেবো। এখন যাও নিজের কাজে যাও।”

তমা আদুরে কন্ঠে বললো,”থাকি না আরেকটু? এই একটু!”

সাদ তপ্ত কন্ঠে তমাকে বললো,”উহুম,একটুও না। নয় এখন ঘুমাবে নয় পড়তে বসবে। কিন্তু তিরিং বিরিং করা মোটেও চলবে না।”

সাদ এটুকু বলেই ফোন কেটে দিলো। তমা অভিমানের অকূল সাগরে গা ভেজালো। কত শখ করে আজ একটু ফোন দিয়েছিল। তবুও এতটুকু মায়া দয়া নেই। কীভাবে নির্দয়ের মতো ফোনটা রেখে দিলো। এখানে থাকাকালীন কত গল্প করতো সাদ।সারাদিন ঘুরাঘুরি করতো! আর এখন! সারাদিনে তমার একটুও খোঁজ নেয় না। একটা বার মনেও করে না তমার কথা। তমা বিক্ষিপ্ত হৃদয়ে এসব ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে গেল। আঙুর বালা কিছুক্ষন পরই তমাকে ঘুম থেকে জাগিয়ে তুললেন। তমাকে নিয়ে আজ একটু কেনাকাটা করতে বের হবেন। নতুন বউ তেমন কিছু কিনেও দিতে পারেননি। অনিতা নিজে এসব কিছু করতে চাইলেও পারেননি। তমার সঙ্গে বেশি সময় কাটাতে পারেননি অনিতা। এরপর তো চলেই গেলেন। তাই আঙুর বালাকে বলেছেন, তমার পছন্দ অনুযায়ী তমাকে কিছু কেনাকাটা করে দিতে।

তমা বিরক্তি মাখা মুখ নিয়ে ঘুম থেকে উঠে বসলো। আঙুর বালা তমাকে বললেন তৈরি হয়ে নিতে। তিনি তমাকে সঙ্গে নিয়ে বাইরে যাবেন।

তমা আর আঙুর বালা বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় নাদিয়াও বায়না ধরলো। সেও তাদের সঙ্গে যাবে। তমা আদর করে নাদিয়ার ছোট দুটো হাত ধরে আঙুর বালার সঙ্গে বেরিয়ে পরলো।

আঙুর বালা তমাকে নিয়ে বড় বাজার মার্কেটে ঢুকলো। এখানে মেয়েদের জামা কাপড় বেশি ভালো পাওয়া যায়। তমা অনেকক্ষন বাছাবাছি করার পর জামাকাপড় কিনলো। আঙুর বালা নাদিয়া আর পুতুল দু’বোনের জন্যও দুটো জামা নিলেন। জামাকাপড় দর্জির কাছে বানাতে দিয়ে আসার সময় তমা আঙুর বালাকে বললো,” আমি একটু বাথরুমে যাবো। তুমি দাঁড়াও তো এখানে।”

আঙুর বালা নাদিয়ার হাত ধরে সেখানে দাঁড়িয়ে রইলো। তমা বাথরুমে গিয়েছিল অন্য উদ্দেশ্যে। উদ্দেশ্য সাধন করে তমা মুচকি হাসতে হাসতে আঙুর বালার সঙ্গে বাড়ি ফিরে গেল।

বাড়ি ফিরে নাদিয়া নিজের নতুন জামা পরে আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। তমা পুতুলকেও নতুন জামা পরিয়ে দিলো। তমা আদুরে গলায় পুতুলকে বললো,” বাবুন সোনা কী বেরু দিতে যাবে? কোথায় যাবে ময়না পাখিটা?”

পুতুল কিছু না বুঝেও খিলখিল করে হাসলো। হাত পা নাড়িয়ে নাড়িয়ে বিছানায় বসে খেলতে লাগলো। সন্ধ্যার পর সাদ নিজেই তমাকে ফোন দিলো। তমা কল রিসিভ করার সঙ্গে সঙ্গে সাদ বললো,” আমার নাম্বার কী তুমি কাউকে দিয়েছো তমা? এত কল আসছে কেন ফোনে? দু’মিনিট পরপর কী সব অজানা মানুষজন কল দিয়ে বলছে টিস্যু পেপার কিনবে। আমি কী টিস্যু বিক্রেতা না কি?”

তমা মুখে হাসি চেপে রেখে বললো,” আমি কী জানি? আমি আপনার নাম্বার আর কাকে দেবো?”

সাদ এটুকু শুনে তমাকে আর কিছু জিজ্ঞেস করলো না। অগত্যা ফোন কেটে দিলো তমা। ফোনের লাইন কেটে দিয়ে জোরে জোরে হাসতে শুরু করলো তমা। এটা তখন ফোন কেটে দেওয়ার ফল। ওরনার আঁচলে একটা কলম বেঁধে নিয়ে গিয়েছিল তমা।সে সময়ে মার্কেটের বাথরুমে গিয়ে বাথরুমের দেয়ালে সাদের নাম্বার লিখে দিয়ে এসেছে তমা। শুধু এতটুকুতেই সীমাবদ্ধ ছিল না। বাথরুমে কোনো টিস্যু পেপার ছিল না। তাই দেয়ালে সাদের নাম্বারের ওপরে লিখে দিয়েছে, ” পাইকারি দরে টিস্যু পেপার বেচি। কেউ নিতে চাইলে এই নাম্বারে যোগাযোগ করুন।”

চলবে…

লবঙ্গ লতিকা পর্ব -১৩

0

#লবঙ্গ লতিকা
#নুজহাত আদিবা
পর্ব ১৩

রাতে তমা আঙুর বালার ছোট্ট বাটন ফোনটা নিয়ে অনেকক্ষন গুঁতোগুতি করলো। সাদের নাম্বারটা কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

অবশেষে সাদের ফোন নাম্বারটা খুঁজে পাওয়া গেল। একেবারে সবার শেষে ছিল সাদের নাম্বার। তাই নাম্বার খুঁজে পেতে এত বেগ পেতে হয়েছে।

তমা ফোন হাতে একবার পাশ ফিরে তাকালো। নাহ! আঙুর বালা ঘুমিয়ে পরেছে। এবার আর কোনো চিন্তা নেই। তমা কাঁপা কাঁপা হাতে সাদকে একটা কল দিলো।সাদ ফোন রিসিভ করে বললো,”হ্যালো”
তমা সাদের গলার স্বর শুনতে পেয়ে কিছুটা কেঁপে উঠলো। যেন কত যুগ ধরে এই কন্ঠটা তমা শোনেনি। তমা চুপ করে ফোন কানে ধরে দাঁড়িয়ে আছে। সাদ অপর প্রান্ত থেকে হ্যালো হ্যালো করেই যাচ্ছে। তবু, তমা একেবারে নিরুত্তর।

তমা শেষ পর্যায়ে ছোট্ট একটা নিশ্বাস ফেলে বললো,”হ্যালো।” সাদ উদ্বিগ্নতা কাটিয়ে উত্তর দিলো,”এত রাতে কল দিলে কেন দাদু? বেশি সমস্যা হচ্ছে? শরীর খারাপ লাগছে? ছোট চাচ্চুকে কল দেবো?”

তমা ভয়ে ভয়ে উত্তর দিলো, “আমি তমা!” সাদ কিছুটা চমকে উঠে কানে হাত দিলো। সত্যিই কী এটা তমার গলা? তমা এত রাতে ফোন দেবেই বা কেন? সাদ গম্ভীর গলায় উত্তর দিলো,”হুম বলো।”

তমার এবার বেশ মন খারাপ হলো। ভেবে ছিল সাদ হয়তো তমার কথা শুনে খুশি হবে। কিন্তু নাহ! সাদ তো আরো হতাশ হয়ে কথা বললো। তমা উদাস কন্ঠে বললো,” না,কিছু না। আমি ফোন রাখছি।” তমা এটুকু বলেই ফোনটা রেখে দিলো। হঠাৎ টুং করে একটা আওয়াজ হলো। তমা বাটন ফোনটায় কান পাতলো। আওয়াজটা কোনো ম্যাসেজের। তমা ম্যাসেজের ওখানে গিয়ে দেখলো, সাদের ফোন নাম্বার থেকে ম্যাসেজ এসেছে। তমা আগ্রহের সহিত ম্যাসেজটাতে চোখ বোলালো। তাতে লিখা ছিল,”এরপর ফোন দেওয়ার হলে নিজের ফোন থেকে দিও। অন্যের ফোন নিয়ে হাতাহাতি করার অভ্যাস পাল্টাও।”

তমা নিজের নতুন ফোনটা দিয়ে সাদের ফোনে একটা কল দিলো। রিং বাজার সঙ্গে সঙ্গেই সাদ রিসিভ করে হ্যালো বললো। তমা কোনো কথা না বলে ফোন কেটে দিয়ে ঘুমিয়ে পরলো। শফিক ভাইয়ের থেকে শিখেছিল কীভাবে এসব বড় বড় ফোন দিয়ে কল দিতে হয়।

সাদ তমার নাম্বারটা টুকে রাখলো। ফোনে সেভ করলো লবঙ্গ লতিকা নামে। লবঙ্গ লতিকা নামটার কথা মনে হতেই সাদ একটু মুচকি হাসলো। নাহ! তমা মেয়েটাকে নিয়ে আর পারা যাচ্ছে না। সারাদিন শুধু তমার কথা মাথায় ঘুরছে!

আঙুর বালা রোদে উঠোনে বসে বসে পান চিবোচ্ছে। তমা উঠোনের পেয়ারা গাছটার ডাল ধরে ঘুরপাক খাচ্ছে। আঙুর বালা ইশারায় তমাকে নিজের কাছে ডাকলো। তমা আঙুর বালার কাছে এসে বসলো। আঙুর বালা পেছনে ঘুরে পানের পিক ফেলে তমাকে বললো,” কীরে কালকে রাতে এমনে ফ্যাচ ফ্যাচাইয়া কানলি ক্যা?”

তমা ইতস্তত হয়ে বললো,” মায়ের কথা মনে পরছিল তাই ”

আঙুর বালা ঠোঁট টিপে হেসে বললো,”মার কথা মনে পরে না কি নিজের জামাইয়ের কথা মনে পরে?”

তমা লজ্জায় মুখ লুকোলো। আঙুর বালা তমার থুতনি ধরে বললেন,” হুন, আমার লগে এডি লইয়া মিথ্যা কথা কইয়া লাভ নাই। তোগো বয়স আমরাও পার কইরা আইসি। জামাইয়ের লাইগা হারারাইত কাইন্দা সকালে উইঠ্যা কবি মার লাইগা কানসি এডা কিন্তু হইবো না। কালকে তুই যে চুরি কইরা রাইতে বেলা ওরে ফোন দিলি। কী কইসে ও?”

তমা মুখ লুকিয়ে বললো,” কী বলবে? আমি লজ্জায় কল কেটে দিয়েছি।”

আঙুর বালা তমার মুখ উঁচু করে ধরে বললেন,”প্রথম প্রথম এমনি লজ্জা থাকবো। পরে দেখবা নিজেই জামাইয়ের পিছে পিছে ঘুরতাসো।”

তমা ভ্রু নিচু করে বললো,” মোটেও না!”

আঙুর বালা হেসে বললেন,” আমার কথা মিলাইয়া নিস। কয়দিন হ্যানে আসিলো তাই গেসে গা দেইখা কাইন্দা মরলি। এহন আবার এডি কস। ”

তমা উঠোন ছেড়ে দৌড়ে পালালো। এই বুড়িটাও যা তা! খালি লজ্জা ফেলে দেয়!

তমা পুতুলকে কোলে নিয়ে বসে আছে। পাশে নাদিয়াও বসে আছে। নাদিয়ার হাতে পাঁকা কলা। ছোট ছোট দাঁত দিয়ে কুট কুট করে কামড় দিয়ে খাচ্ছে। তমা নাদিয়ার হাত থেকে একটু কলা ভেঙে নিলো। আঙুল দিয়ে মিহি টুকরা করে পুতুলের মুখে গুঁজে দিলো। পুতুল টুপ করে গিলে ফেললো। দাঁতও গজায়নি এখনও পুতুলের। তাতেই এই দশা! পুতুল মুখে থাকা খাবার শেষ করে তমাকে আঙুল দিয়ে ইশারা করলো। আরেকটু কলা ভেঙে মুখে দেওয়ার জন্য। তমা বুঝতে না পেরে এদিক ওদিক তাকালো। পুতুল দিশা না পেয়ে তমার আঙুল ঠোঁট দিয়ে চাটতে শুরু করলো। তমা সুরসুরি লাগায় তমা আঙুল সরিয়ে হেসে ফেললো। পুতুলের দিকে তাকিয়ে তমা হেসে বললো,” দুষ্ট বুড়ি শুধু দুষ্টুমি করে! পঁচা মেয়ে! ” পুতুল কিছু না বুঝেও তমার দিকে তাকিয়ে হাসি দিলো। তমা পুতুলের গাল দুটো ধরে টুকুস করে একটা কামড় দিয়ে বসলো।

বিকেলে সাদের ছোট চাচা রাফসীন কাজের লোক দিয়ে উঠোনের উত্তর দিকে থাকা পেয়ারা গাছ থেকে পেয়ারা পারিয়েছে। তমা আঙুর বালার ঘরে বসে বসে সেই পেয়ারা খাচ্ছে। একেবারে ডাঁসা ডাঁসা সব পেয়ারা। আঙুর বালা কচকচ করে পেয়ারা খাওয়ার শব্দ শুনে তমার দিকে তাকালো।

আঙুর বালাকে নিজের দিকে তাকাতে দেখে, তমা আরো জোরে আঙুর বালাকে দেখিয়ে দেখিয়ে পেয়ারায় কামড় বসালো। আঙুর বালা এক পর্যায়ে রেগে গিয়ে তমাকে বললো,” ওই ছেঁ/ড়ি! জীবনে পেয়ারা খাস নাই? এমন আওয়াজ কইরা কইরা খাস ক্যা?”

তমা পেয়ারায় কামড় বসাতে বসাতে বললো,” কেন? তোমার হিংসে হয় না কি?”

আঙুর বালা পান চিবুতে চিবুতে বললেন,” ক্যা? আমার হিংসা ক্যা হইবো?”

তমা পেয়ারায় বড় একটা কামড় বসিয়ে বললো,” হিংসে যদি না হয় তবে এভাবে তাকিয়ে আছো কেন? জীবনে খাওনি পেয়ারা? না কি আমার মতো এত সুন্দর করে পেয়ারা খেতে পারো না বলে আফসোস হয়?”

আঙুর বালা রেগে গিয়ে বিছানা থেকে উঠে বললো,” কী কইলি! আমি তোর খাওন দ্যাহা পারি না? তোরে হিংসা করি?”

একথা বলে আঙুর বালা পেয়ারা ঝুড়ি থেকে একটা পেয়ারা বার করলো। তাতে তমার মতো করে জোরে একটা কামড় বসালো। কচ করে জোরে একটা আওয়াজ হলো। তমা চমকে উঠে আঙুর বালার দিকে তাকালো। হঠাৎই তমা জোরে শব্দ করে হেসে উঠলো। আঙুর বালা নিজের হাতে থাকা পেয়ারার দিকে তাকালো। নিজের একটা দাঁত ভেঙে একেবারে আঁটকে গেছে পেয়ারায়। আঙুর বালা আয়নায় গিয়ে চোখ কুঁচকে তাকালো। তারপরে বিছানার নিচ থেকে একটা ঝাড়ু নিয়ে তমার দিকে নিক্ষেপ করে জোরে চিৎকার করে বললো,” শয়/তান ছেড়ি! অস/ভ্য মাইয়ালোক! তোর লাইগা আমার একটা দাঁত পইরা গেসে! বেয়া/দব মাইয়া!”

তমা কোনো রকমে উঠে দৌড়ে পালালো ঘর থেকে। বাইরে গিয়ে দম ফাটিয়ে হাসতে লাগলো। শেষে কিনা এই বুড়ো বয়সে পেয়ারা খেতে গিয়ে দাঁত হারাতে হলো! হায় কপাল!

চলবে….

লবঙ্গ লতিকা পর্ব -১২

0

#লবঙ্গ লতিকা
#নুজহাত আদিবা
পর্ব ১২

তমা ঘুম থেকে ওঠা মাত্রই অনিতা তমাকে বই আনতে পাঠিয়েছেন। তমা যেতে চায়নি। অনিতা বহুকষ্টে তমাকে ঠেলেঠুলে বই আনতে পাঠিয়েছেন।

তমা বই নিয়ে ফিরে আসতেই সব বই আঙুর বালার ঘরে রেখে দিতে বললো অনিতা। তমা বইগুলো নিয়ে আঙুর বালার ঘরের এক পাশে রেখে দিলো। সাদ হঠাৎ নিজের ফোন নিয়ে দৌড়ে এলো। হাঁপাতে হাঁপাতে অনিতাকে বললো,” আম্মু! কিছুদিন পর থেকে না কি আমাদের টেস্ট পরীক্ষা শুরু। এখন কী হবে? আমাকে আমার ক্লাসমেট ফোন করো জানালো।”

অনিতা আতংকে আঁতকে উঠলেন। সাথে সাথে নিজের স্বামী মহসীন খানকে ঘর থেকে ডেকে আনলেন। মহসীন সবটা শুনে সিদ্ধান্ত নিলেন কালই নিজ গৃহে ফিরে যাবেন। ছেলের পড়াশোনা নিয়ে তিনি বেশ সিরিয়াস। পড়াশোনার প্রতি তিল পরিমাণ অবহেলাও তিনি সহ্য করতে পারেন না।

আঙুর বালা সবটা শুনে রাগে ফেটে চৌচির! মহসীন খানের সঙ্গে বেশ কথা কাটাকাটি হয়েছে আঙুর বালার। তমাকে কত শখ করে সাদের বউ করে এনেছেন আঙুর বালা। তমাকে না কি এখানেই রেখে যাবে মহসীন। তমাকে শহরে নিয়ে গেলে মা কি সাদ সংসারের দিকে বেশি মনোযোগ দিয়ে ফেলবে। পড়াশোনার আরো ক্ষতি হবে এতে। আঙুর বালা এসব শুনে নিজ ছেলের ওপর বেশ ক্ষিপ্ত।

সাদের চলে যাওয়ার কথা শুনে সবার মন খারাপ হলেও তমা বেশ খুশি। তাঁর শত্রুপক্ষ কাল বাড়ি থেকে বিদায় হবে। আহা কী শান্তি! কেউ আর তমার পিছু লাগতে আসবে না।

তমা খুশিতে সারা বাড়ি ঘুরে ঘুরে গুন গুন করে গান গাইতে শুরু করলো। কিন্তু এই খুশির স্থায়ীত্ব ছিল খুব স্বল্প। সন্ধ্যা হতেই অনিতা তমাকে পড়তে বসিয়ে দিলেন। তমা মুখ ভার করে পড়ার টেবিলে বসলো।

মহসীন রাতে একটা নতুন মোবাইল ফোন নিয়ে বাড়ি ফিরলেন। টাচস্ক্রীনের মোবাইল ফোন। ফোনটা তিনি তমার জন্য এনেছেন। ওনারা যেহেতু থাকবেন না। তাই তমার সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে ফোনটা কিনে নিয়ে এসেছেন।

তমার হাতে মহসিন খান ফোনটা দিতেই। তমা নেড়েচেড়ে দেখতে শুরু করলো। উল্টে পাল্টে ফোনটা কিছুক্ষন নাড়াচাড়া করেই রেখে দিলো তমা। শফিক ভাইয়ের হাতেও এরকম ফোন ছিল। মাঝেমধ্যে ওটা দিয়ে তমা শফিককে গান শুনতে দেখতো। কানের মধ্যে একটা মেশিন লাগিয়ে ফোনের সাথে জয়েন্ট করেই গান শুনতে হয়।

সকাল হতেই সাদ,অনিতা এবং মহসীন গাড়ি নিয়ে বের হয়ে গেল। আঙুর বালার বেশ মন খারাপ। ছেলে,নাতী, বউমা সব আজ চলে গেল। বাড়িটা আবার ফাঁকা হয়ে যাবে। মহসীন খান বলেছেন সাদের পরীক্ষা শেষ হলেই আবার এসে ঘুরে যাবেন। তমা তো আজ বেশ খুশি। শান্তি মতো থাকা যাবে একটু।

তমা যতটা শান্তির কথা ভেবেছিল। বাস্তবে তাঁর বিপরীত ঘটলো। মানুষ থাকা সত্ত্বেও পুরো বাড়িটা কেন যেন খুব ফাঁকা ফাঁকা। তমা আলতো পায়ে সাদের ঘরের দিকে এগিয়ে গেল। দরজা খুলে ভেতরে প্রবেশ করলো। নাহ! সাদ নেই!

শুন্য ঘর দেখে তমার বুকটা কেন যেন খালি খালি লাগলো। সব আছে তবে কিছুই নেই! তমা ক্রন্দনরত দৃষ্টিতে সাদের ঘরের এদিক ওদিক চোখ ফিরিয়ে দেখলো। ঘরে সবই বিদ্যমান। তবে, সেই নিদিষ্ট মানুষটা ব্যাতীত।
তমা দৌড়ে এক ছুটে আঙুর বালার খাটে গিয়ে আছরে পরলো। শব্দ করে কাঁদতে শুরু করলো। আঙুর বালা কিছু বুঝতে না পেরে তমাকে বেশ কয়েকবার জিজ্ঞেস করলেন তমার কী হয়েছে? কিন্তু, তমা নিরুত্তর।

বিছানার এক প্রান্তে শুয়ে নিরবে চোখের জল ফেলতে ব্যস্ত তমা। আঙুর বালার তখন সবে মাত্র চোখটা লেগে এসেছে। কারো ফুঁপানোর আওয়াজ শুনে চমকে উঠলেন আঙুর বালা। পাশ ফিরে তাকালেন। পাশে তমা বালিশে মুখ গুঁজে রয়েছে। আঙুর বালা তমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলেন। অচিরেই তমাকে বুকে টেনে নিলেন। মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে আদর করলেন। আদুরে ভঙ্গিতে বললেন,”এমনে তো আমার নাতী থাকলে কাইজ্জা(ঝগড়া) করস। এহন তো নাই তুই কান্দোস ক্যা আবার?”

তমা প্রতুত্তরে কিছু বললো না। তমার কান্নার আওয়াজ আরো প্রগাঢ় হয়ে উঠলো মুহুর্তেই। আঙুর বালা তমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললেন,”কান্দিস না আর তুই। কালকে আমার ফোনডা দিয়া ওর লগে কথা কইস। আমি কাউরে কিছু কমু না।”

চলবে…

লবঙ্গ লতিকা পর্ব-১১

0

#লবঙ্গ লতিকা
#নুজহাত আদিবা
পর্ব ১১

তমা উঠোনের গাছের সাথে ঘুরপাক খাচ্ছে। আর বেসুরো গলায় বলছে,” ডিজে ওয়ালা বাবু মেরা গানা বাজা দো। ডিজে ওয়ালা বাবু মেরা গানা বাজা দো। গানা বাজা দো।”

সাদ চৌকাঠ মাড়িয়ে উঠোনের সামনে দিয়ে যাচ্ছিলো। তমার বেসুরো গলার গান শুনে তমার পাশে গিয়ে দাঁড়ালো। তমা নিজের পাশে কারো উপস্থিতি টের পেয়ে ফিরে তাকালো। সাদ ভ্রু কুঁচকে তমাকে বললো,” এই গান শিখলে কোথা থেকে? ”

তমা নিজের চুলে হাত বুলিয়ে উত্তর দিলো,” আপনার সঙ্গে বিয়ের দিন বক্সে গানটা বেজেছিলো। তখন শুনেছি।”

সাদ মাথা নাড়িয়ে বললো, ” হুম এসব গান মনে থাকে। কিন্তু, পড়ার কথা মনে থাকে না। পড়ার কোনো খবর নেই। আছে শুধু গান আর আচারের খবর!”

তমা তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলো। সাদের উপর ক্ষেপে গিয়ে এক পা এক পা করে এগিয়ে গেল। সাদ সেদিকে পাত্তা না দিয়ে নিজের মতোই দাঁড়িয়ে থাকলো। তমা ক্ষিপ্ত কন্ঠে সাদকে বললো,” ভালো হচ্ছে না কিন্তু! আর আচার মানে কীসের আচার?”

সাদ গাছ থেকে একটা পাতা ছিঁড়ে বললো,” ছাঁদে তখন যে চুরি করে আচার খেলে। আমি দেখিনি বুঝি? সবাইকে বলে দেবো কিন্তু। ”

তমা আমতা আমতা করে বললো,”কী বলবেন শুনি?”

সাদ নির্লিপ্ত গলায় উত্তর দিলো, “এই যে তুমি চুরি করে আচার খেয়েছো। আচার চোর!”

তমা রেগে গিয়ে হাসফাস করতে করতে সাদের দিকে তাকালো। সাদ নিজের মতোই দাঁড়িয়ে আছে। তমা কী করছে না করছে সেদিকে কোনো খেয়ালই নেই।

“হরেক মাল দশ! হরেক মাল পাঁচ! ”

বাইরে ফেরিওয়ালার কন্ঠস্বর শুনে তমা এক ছুটে বাইরে বেড়িয়ে গেল। সাদ তমার এহেন কান্ড দেখে চমকে উঠলো। তমার পিছু পিছু সাদও নিজেও ছুট লাগালো।

তমা ফেরিওয়ালার ফেরির সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ফেরিওয়ালা কাঁচের চুড়ি,টিপ, নেইলপালিশ, আলতা এসব বিক্রি করছে। সাদ উদভ্রান্তের ন্যায় তমার দিকে ফিরে তাকালো। তমা গভীর মনোযোগ দিয়ে ফেরিওয়ালার ফেরি থেকে জিনিসপত্র খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে। এক মুঠো চুরি নিজের হাতে পরে হাত নাড়িয়ে নাড়িয়ে দেখলো তমা।
সাদ ফেরিওয়ালাকে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো চুরির দাম কত? ফেরিওয়ালা সাদকে প্রত্যুত্তরে বললো,”২০ টাকা”

সাদ চুরির দাম মিটিয়ে তমার পাশে গিয়ে দাঁড়ালো। তমা আরও কী কী যেন খুঁটিয়ে নাটিয়ে দেখছে। সাদ একটা আলতার বোতল হাতে নিলো। তমা হেসে সাদকে বললো,”ছেলে হয়ে আলতা পরবেন না কি?”

সাদ তমার হাতে আলতার বোতলটা দিয়ে বললো,” তোমার জন্য নিয়েছিলাম। পরলে পরবে আর না পরলে অন্য কাউকে দিয়ে দিয়ো।”

তমা অবাক হয়ে সাদের দিকে তাকালো। বজ্জা/ত ছেলেটা আস্তে আস্তে ভালো হয়ে যাচ্ছে!

বাড়ি ফিরেই তমা আলতার বোতল নিয়ে বসলো। হাতে,পায়ে আলতা দিয়ে লাল টুকটুকে করে ফেললো। তমাকে আলতা দিতে দেখে নাদিয়া দৌড়ে এসে তমার পাশে বসলো। আঙুল দিয়ে আলতার বোতলের দিকে ইশারা করে বললো,” এটা কী?”

তমা পায়ে আলতা মাখতে মাখতে বললো,”এটা আলতা। তুমি দেবে?”

নাদিয়া ওপর নিচে মাথা ঝাঁকিয়ে ঝাঁকিয়ে মিচের মতামত জানান দিলো। তমা নাদিয়ার ছোট্ট ছোট্ট পায়েও আলতা পরিয়ে দিলো।

আলতা পায়ে তমা বাড়ির এদিক ওদিকে ছুটে বেড়াচ্ছে। সাদের ছোট চাচী হেরা তো আঙুর বালা আর অনিতার সামনে বলেই ফেললো,” তমা মেয়েটা মাত্রাধিক চঞ্চল! বাড়ির এদিক ওদিক ছুটোছুটি করেই বেড়াচ্ছে! ”

আঙুর বালা হেরাকে ধমক দিয়ে বললো, “বউ মানুষ ঘুরবো ফিরবো খাইবো। ছোট মানুষ! ওর থেইক্যা আর এত কী আশা করো?”

অনিতা আঙুর বালাকে শান্ত করে বললো,” আহা হেরা, এমন ভাবে বলছিস কেন? তমা তো নিজের মতোই আছে। কাউকে বিরক্ত করতে দেখেছিস? বাড়ির বাইরেও তো যাচ্ছে না। নিজের মতোই নিজে ব্যস্ত। ওকে নিয়ে এত ঘামাস না তুই।”

হেরা আর কিছু বললো না। বলেও লাভ নেই। আঙুর বালা কারো কথাই কানে তোলেন না। হেরা সেই স্থান হতে দ্রুত প্রস্থান করলো।

দুপুরে সবাই একত্রে খাবার খেতে বসেছে।তমাও সবার সঙ্গে খেতে বসেছে। অনিতার সবার সামনে তমাকে বললেন,”তোমাকে একটা কথা বলার ছিল।বলবো বলবো করে ভাবছিলাম। খেয়ালই থাকে না!”

তমা নিচু গলায় জবাব দিলো,” জি, বলুন”

অনিতা ব্যস্ত গলায় বললো,” কালকে সকালে তোমাদের বাড়ি থেকে তোমার বই খাতা সব নিয়ে আসবে। এখানেই পড়াশোনা করবে। দরকার পরলে সাদও তোমাকে টুকটাক সাহায্য করবে। এতদিন অনেক দিয়েছো ফাঁকি। কিন্তু আর না। পড়াশোনা করলেই জীবনে বড় হতে পারবে।”

তমা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বললো, “এ্যা! আমি তো বিয়ে করলাম পড়াশোনা করবো না বলে। এখন আবার পড়তে হবে কেন? এত পড়াশোনা করতে হবে কেন? একদিন তো মরেই যাবো।”

সাদ বিক্ষিপ্ত কন্ঠে বললো,” এত আচার খেতে হবে কেন? একদিন তো মরেই যাবে!”

তমা অগ্নি দৃষ্টিতে সাদের দিকে তাকালো। আসলেই ছেলেটা বেশি কথা বলে! অনিতা হালকা নিশ্বাস ফেলে বললো, ” এতকিছু আমি জানি না। কাল থেকে আবার পড়াশোনা শুরু করবে। বিয়ে হয়েছে বলে পড়াশোনা বন্ধ করার ভাবনা মাথায় ভুলেও এনো না।”

তমা খাবার টেবিলে মুখ বাঁকিয়ে বসে রইলো। ছাতার মাথা! ভালো লাগে না কিছু!

খাওয়া শেষ করে তমা হাত মুখ ধুয়েমুছে আঙুর বালার ঘরে গেল। আঙুর বালা তমাকে দেখে ভ্রু কুঁচকালো। কাঁপা কাঁপা গলায় বললো, ” এই ছে/ড়ি এদিকে আয় তো।”

তমা টলমলে পায়ে এগিয়ে গেল। আঙুর বালা তমাকে সামনে থেকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে শুরু করলো। চিন্তিত গলায় তমাকে বললো,” এই চুড়ি, আলতা এসব তোরে কে দিসে?”

তমা চুল আঙুল দিয়ে প্যাঁচাতে প্যাঁচাতে বললো,” যাঁর ইচ্ছে করেছে সে দিয়েছে। তোমাকে এত কথা বলবো কেন বুড়ি?”

আঙুর বালা নিজের হাতে থাকা লাঠি ঘুরাতে ঘুরাতে বললো,” বুজছি! আমার নাতী দিসে এডি।”

তমা ব্যাঙ্গাত্বক কন্ঠে বললো, “বুঝতেই যখন পেরেছো তখন আবার জিজ্ঞেস কেন করো? না কি হিংসে হয়? আমার তো দেওয়ার মতো মানুষ আছে। তোমারটা তো তাও নেই! একেবারে পটল তুলেছে।”

আঙুর বালা নিজের হাতে থাকা লাঠিটা তমার দিকে তাক করে বললো,”তুই দেখসোস? আমারডা আমারে কত ভালোবাসতো। সারাদিন আমারে চোখে হারাইতো!”

তমা মুখ টিপে হেসে বললো, “ছাই বাসতো ছাই! সেই তো একা রেখে চলেই গেল।”

আঙুর বালা এবার খুব ক্ষেপে গেল। ক্ষিপ্ত কন্ঠে বললো,” ওই ছে/ড়ি আমারে যদি তোর দাদা ভালোই না বাসতো। তাইলে তোর শশুর তোর চাচা শশুর এডি পয়দা হইসে কইত্তে? বাইচ্চা থাকলে দেখতি তোর আরও কত চাচা শশুর আর ফুপু শাশুড়ী থাকতো!”

চলবে….

লবঙ্গ লতিকা পর্ব-১০

0

#লবঙ্গ লতিকা
#নুজহাত আদিবা
পর্ব ১০

সাদ জ্ঞান ফিরলে দেখতে পেল সে এখনও রাস্তায় পরে আছে। সাদ হাত পা ঝেড়ে উঠে দাঁড়ালো। হাঁটুর বেশ খানিকটা অংশ পরে গিয়ে কেটে গেছে। সাদ ঘাড় ঘুরিয়ে এদিক ওদিক ফিরে তাকালো।আশেপাশে কোথাও তমাকে দেখতে পেল না।

অন্ধকার নেমে গেছে চারপাশে। সাদের রাতের আঁধারে পথ চিনে;বাড়ি ফিরতে বেশ বেগ পেতে হলো। সাদ সোজা তমাদের বাড়িতেই ফিরে গেল। তমা উঠোনে বসে বসে আচার খাচ্ছে। সাদকে বাড়ির গেট দিয়ে ঢুকতে দেখে তমা কিছুটা হকচকিয়ে উঠলো। আচারের বয়াম ফেলে দৌড়ে পালালো। সাদ হাঁটু চেপে ধরে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে উঠোনে এসে বসলো। জুলেখা তখন সবেমাত্র রান্নাঘর থেকে বের হয়েছে। অন্ধকারে সাদের আবছা অবয়ব দেখেই চিনে ফেললেন। এগিয়ে গিয়ে দেখলেন সাদের হাঁটু, হাতের কনুইয়ের অংশে গভীর ক্ষত। র/ক্ত বের হচ্ছে একটু। জুলেখা দৌড়ে গিয়ে সাদকে বললো, “বাবা, তোমার এই অবস্থা হলো কী করে? পরে-টরে গিয়েছো না কি?”

সাদ প্রত্যুত্তরে কোনো জবাব দিলো না। জুলেখা সাদের চাহনি দেখে কিছু একটা আঁচ করে ফেললো। জোরে চিৎকার করে তমাকে ডাকলো। তমা আমতা আমতা করে জুলেখার সামনে এলো। জুলেখা তমাকে দেখামাত্রই চুলের মু/ঠি ধরে বসিয়ে দিলো এক ঘা। সাদ উঠোনের দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে বসে রয়েছে। তমা ধপাস করে মাটিতে আছাড় খেয়ে পরলো। জুলেখা তমাকে মাটি থেকে ওঠার সুযোগ না দিয়েই বেদম পিটু/নি দিতে শুরু করলো। তমা জোরে জোরে মাগো বলে চিৎকার করতে শুরু করলো। সাদ উঠোন থেকে উঠে তাড়াতাড়ি জুলেখাকে পেছন থেকে সরিয়ে নিলো। তমা মাটিতে বসে কাঁদছে। জুলেখার চোখে রাগে দুঃখে জল চলে এসেছে। মেয়েটা আর কবে বুঝবে এসব? বেশি আদরে আদরে লাই দিয়ে ফেলেছে!

সাদ জুলেখাকে শান্ত করে ঘরে নিয়ে গেল। তমা উঠোনের এক কোনে মাথা গুঁজে বসে আছে। সাদ তমার পাশে গিয়ে চুপটি করে বসলো। গলা হালকা করে খাঁখারি দিয়ে উঠলো। তমা অগ্নি দৃষ্টিতে সাদের দিকে তাকালো। ক্রন্দনরত গলা বললো,” আবার এসেছেন কেন? একবার মার খাইয়ে শান্তি হয়নি? আবার নালিশ করতে এসেছেন? যান করুন নালিশ! আমার সঙ্গেই সবার যত শত্রুতা!”

সাদ নিজের থুতনিতে হাত বুলিয়ে বললো, ” আমি তো তোমার সঙ্গে কখনো শত্রুতা করতে চাইনি। তুমিই তো বারবার আমার সঙ্গে বিনা কারণে ঝগড়া করেছো। আমি কিছু বললেই আমাকে শুধু শুধু শাস্তি দিয়েছো। এবার বলো কে কার সঙ্গে শত্রুতা করতে গিয়েছে?”

তমা হাত ইশারা করে সাদকে বললো,”আপনি যান তো এখন! আমি আপনার সঙ্গে কোনো কথা বলবো না। আপনি এখন যান।”

সাদ অগত্যা উপায়হীন হয়ে তমার সামনে থেকে সরে গেল।

সকালে তমাদের বাড়িতে নাস্তা সেরে সাদ তমাকে নিয়ে বেরিয়ে গেল। বেলা তখন সকাল আটটা বেজে গেছে।সাদ নিজের বাড়িতে ঢুকতেই দেখলো, বাড়িতে সবাই এখনও ঘুমে। বাড়িতে সবাই একটু দেরি করেই ঘুম থেকে ওঠে। আঙুর বালা উঠোনে বসে বসে পান চিবোচ্ছে। আর কাজের লোকেরা কাজ করছে।এছাড়া বাড়িতে সবাই গভীর নিদ্রায়।

তমা সাদের সামনে থেকে দৌড় দিয়ে সরে গেল। আঙুর বালা পানের পিক ফেলে; তমাকে উদ্দেশ্য বললো,” এই ছেঁ/ড়ি এত লাফালাফি হুরাহুরি করোস ক্যা? পইরা তো ঠ্যাং ভাঙবি!”

তমা আঙুর বালার কথায় পাত্তা দিলো না। দৌড়ে গিয়ে ছাঁদে উঠলো। ছাঁদে গিয়ে তমা দেখলো,ছাঁদের কড়কড়ে রোদে পাটি বিছিয়ে আচারের বয়াম সাজিয়ে রাখা। তমা চুপিসারে একটা আচারের বয়াম নিজের হাতে তুলে নিলো। বয়ামের মুখ খুলে ভেতরে হাত ঢুকিয়ে এক থবলা আচার নিয়ে নিলো। এরপর বয়াম আবার আগের মতো সাজিয়ে রাখলো।

আচার শেষ করে হেলেদুলে ছাঁদের সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামলো তমা। বাড়ির সবাই সবেমাত্র ঘুম থেকে উঠেছে। তমা মাথায় ঘোমটা দিয়ে ভদ্র মেয়ের মতো নিচে নামলো। নাদিয়া পুতুলকে কোলে নিয়ে এদিক ওদিক ছুটে বেড়াচ্ছে। তমা নাদিয়ার সামনে গিয়ে হাত বাড়িয়ে দিলো। পুতুলও তমার দিকে হাত বাড়িয়ে দিলো। তমা আলতোভাবে পুতুলকে হাত বাড়িয়ে কোলে তুলে নিলো। পুতুল তমার কোলে গিয়ে হেসে তমার দিকে তাকালো। অনিতা পেছন থেকে তমাকে বললো,”এই দুটো কিন্তু তোমার ননদ। আদরে রেখো।”

তমা পুতুলের পিঠে হাত ছুইঁয়ে অনিতার দিকে তাকিয়ে হেসে ফেললো।

সাদ ফোনে গেমস খেলছে। নাদিয়া অধীর আগ্রহে সাদের পাশে বসে তা দেখছে। একটা ছোট্ট বিড়াল ফোনের স্ক্রিনে। বিড়ালটাকে গোসল করাতে হয়। খাওয়াতে হয় এটাই নাদিয়ার সবচেয়ে পছন্দের গেমস। সাদ গেমস খেলবে শুনলেই নাদিয়া সাদের পাশে বসে বসে গেমস খেলা দেখে। গেমসটার নাম (Angela)। নাদিয়া এত শুদ্ধ করে গেমসের নাম বলতে পারে না। নাদিয়ার ভাষায় এই গেমসটার নাম ইনজেলা। সাদের হাতে ফোন দেখলেই নাদিয়া সবার প্রথমে বলবে,” ভাইয়া, ইনজেলার গেম খেলি চলো।”

তমা পুতুলকে কোলে নিয়ে সাদের ঘরে ঢুকলো। সাদ পুতুলকে দেখেই আদুরে ভঙ্গিতে হাত ইশারা করে বললো,” আমাল পুতুল সোনাটা কোথায় রে!”

পুতুল ছোট ছোট হাত বাড়িয়ে দিলো সাদের দিকে। সাদ তমার কাছ থেকে পুতুলকে নিজের কোলে উঠিয়ে নিলো। তমা চোখ কুঁচকে সাদের দিকে তাকালো। সাদ নিজের ফোনট নাদিয়ার হাতে দিয়ে দিলো। নাদিয়া মনের মাধুরি মিশিয়ে গেমস খেলছে। আর সাদ পুতুলকে নিয়ে দুষ্টুমিতে মেতে রয়েছে। তমা নাদিয়ার পাশে গিয়ে বসলো। ফোনের স্ক্রিনে উঁকি দিয়ে দেখলো। নাদিয়া বিড়ালটাকে গোসল করিয়ে জামা পরাচ্ছে। তমাকে নিজের পাশে বসতে দেখে নাদিয়া তমার হাতের বা’পাশে হেলান দিয়ে বসলো। ফোনের স্ক্রিনের দিকে আঙুল দিয়ে তমাকে বললো,”বলো তো কোন জামাটা সুন্দর? ইনজেলা কোনটা পরবে?”

তমা নাদিয়ার কথার আগামাথা কিছুই বুঝতে পারলো না। কোনো জবাব না দিয়ে সেভাবেই বসে রইলো। সাদ ব্যস্ত পুতুলকে নিয়ে। আর নাদিয়া ব্যস্ত ফোন নিয়ে। তমা বিরক্ত হয়ে উঠে দাঁড়ালো। হেলে দুলে উঠোনের সামনে ঘুরাঘুরি শুরু করলো। আঙুর বালা তমাকে দেখতে পেল। দেখেই তমার দিকে এগিয়ে গেল। পান চিবুতে চিবুতে তমাকে বললো,” এত ঘুরাঘুরি করিস পা ব্যাথা করে না রে?”

তমা আঙুর বালার দিকে তাকিয়ে বললো,
“আপনি ঘুমের ঘোরো ভসভস করে নাক ডাকেন। আমি কী কখনো আপনাকে বলেছি যে, এত নাক ডাকেন নাক ব্যাথা করে না কেন?”

আঙুর বালা তমার কথা শুনে তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলো। রেগেমেগে তমাকে বললো,”নাক ডাকলে আমি ডাকসি। তোর কী রে? আমার নাক যতবার ইচ্ছা আমি ডাকমু। তুই কওয়ার কে? নাক ডাকানি হুনতে ভালা না লাগলে কানে তুলা গুইজা থো।”

তমা আঙুর বালাকে ভেঙিয়ে বললো, “আমার পা আমি হাঁটবো। তাতে কার কী? আমার পা দেখে হিংসে হলে নিজের পায়ে দুটো বারি মারুন। সব ঠিক হয়ে যাবে। ”

আঙুর বালা রাগে কড়মড় করতে করতে তমার দিকে তাকালো। তমা সেদিক খেয়াল না করে বললো,” নিজের তো লাঠি ভর করে হাঁটাচলা করতে হয়। তাই,আমার পা দেখে এত হিংসে হয়। থাক বুড়ো হলে এমনিই হবে। তুমি আর দুঃখ করো না।”

আঙুর বালাকে কিছু বলার সুযোগ না
দিয়ে তমা গানের সুর ধরে বললো,”লাঠিওয়ালা দাদু মেরা গানা বাজা দো। লাঠিওয়ালা দাদু মেরা গানা বাজা দো। গানা বাজা দো!”

আঙুর বালা তমার দিকে ধেড়ে এসে বললো,” অস/ভ্য ছেড়ি! তোর একদিন কী আজ আমার একদিন কী! আমি এহনও কত জোয়ানী আমারে কস বুড়ি। বজ্জা/ত মাইয়া তোরে কী করি দেহিস তুই!”

চলবে….

লবঙ্গ লতিকা পর্ব-০৯

0

#লবঙ্গ লতিকা
#নুজহাত আদিবা
পর্ব ৯

আঙুর বালা তমাকে কড়া গলায় কয়েকটা কথা বলে আবার ঘুমিয়ে পরলেন। তমা ভয়ে ভয়ে চোখ বন্ধ করলো। পাঁচ মিনিট চোখ বন্ধ রেখে চোখ খুলতেই আবার দেখলো একটা ছায়া একটু পরপর ঘোরাঘুরি করছে। তমা নিঃশব্দে খাট থেকে নামলো। পা টিপে টিপে দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। ভয়ে চোখ বন্ধ করে আলতোভাবে দরজা খুলতেই। সাদ জোরে ভাউ করে উঠলো। তমা চমকে পেছনে যেতেই দরজার সঙ্গে মাথায় চোট পেল। মাথায় হাত দিয়ে সাদের দিকে রোষারক্ত দৃষ্টিতে তাকালো।

সাদ মুখে হাত দিয়ে আস্তে আস্তে হাসা শুরু করলো।তমা অগ্নি দৃষ্টিতে সাদের দিকে তাকালো। এরপর বেশ শব্দ করে ঘরের দরজা ভেতর থেকে লাগিয়ে দিলো। সাদ দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে হেসেই চলেছে। আর তমা ভেতরে বসে বসে রাগে ফুসছে। সাদকে আসলে একটা শিক্ষা দিতেই হবে।

পরদিন সকালে তমাদের বাড়িতে তমা আর সাদ যেতে বলা হয়েছে। সাদ আর তমা সকাল বেলাই চলে গেছে ও-বাড়িতে। সাদকে দেখতে তমাদের অনেক পাড়া-পড়শী এসেছে। সাদ সবার সাথে টুকটাক হাসি মজা করছে। জুলেখা সাদের সামনে কয়েক পদের খাবার সাজিয়ে রেখেছে। সাদ মাঝেমধ্যে একটু আকটু খাবার মুখে দিচ্ছে। আর বাকি সময়টা সবার সাথে গল্প করেই কাটাচ্ছে।

বিকালে প্রতিদিনের মতোই সাদ হাঁটতে বের হলো। তমাদের বাড়ির আশেপাশেই ঘুরাঘুরি করছে সাদ। এদিকে ওদিক হেঁটে হেঁটে সবটা দেখছে।বাড়ির পেছন দিকটা থেকে তমার গলার আওয়াজ শুনতে পেল সাদ। সাদ কৌতুহল বশত বাড়ির পেছন দিকটায় চলে গেল। তমা তাঁর বান্ধবী সুমাইয়ার সাথে বসে বসে গল্প করছে। তমা আজকে বড়দের মতো করে শাড়ি পরেছে।সাদকে দেখে সুমাইয়া লজ্জা পেয়ে তমার সামনে থেকে চলে গেল। তমা নারকেল গাছ ধরে হেলান দিয়ে দাঁড়ালো। সাদ গিয়ে তমাকে বললো,”কোথায় যাচ্ছো?”

তমা চেঁচিয়ে উত্তর দিলো,”আপনার মাথায়। যাবেন?”

সাদ নিজের মাথায় হাত বুলিয়ে তমাকে বললো,” কোথায়? আমার মাথায় তো তুমি নেই!”

তমা সাদের দিকে বিরক্তি নিয়ে তাকালো।তমাকে চুপ থাকতে দেখে সাদও চুপ হয়ে গেল। তমা সাদকে রেখেই অন্যদিকে হাঁটা শুরু করলো। সাদ নিজেও তমার পিছু নিলো।তমা বড় মাঠের দিকে দৌড় দিলো। ছোট ছোট ঘাস ভর্তি মাঠের মধ্যিখানে কয়েকটা গরু হেঁটে হেঁটে ঘাস খাচ্ছে। তমা গিয়ে গরু গুলোর দুটো শিংয়ের মাঝখানে হাত বুলিয়ে দিলো। গরুটা তমার আদর পেয়ে মাথা নিচু করে নিলো। সাদ তমার পিছু পিছু গিয়ে বললো,”এগুলোর গায়ে হাত দিও না। ওরা কামড় দেবে।”

তমা দম ফাটিয়ে হেসে উঠলো। সাদ নিজের ভুল বুঝতে পেরে বোকার ন্যায় মাথা চুলকে হেসে বললো,” ইয়ে মানে, শিং দিয়ে গুঁতো দেবে আরকি।”

তমা নিজের মতো ঘোরাঘুরি করছে। সাদ তমাকে আবার বললো,” সন্ধ্যা হয়ে যাবে তো। বাড়ি যাবে না?”

তমা ব্যস্ত হয়ে মাথায় কাপড় দিয়ে বললো,” এদিক দিয়ে যাবো না। ওদিক দিয়ে চলুন।”

তমা সাদকে নিয়ে অন্য রাস্তা দিয়ে বের হলো। সাদ আশেপাশে বারবার তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে। সাদ হঠাৎ তমাকে বললো,” জায়গাটা কত সুন্দর! ”

তমা অন্যদিকে তাকিয়ে বললো,” মানুষদের জায়গা হলে সুন্দর হতো না। মানুষরা থাকে না বলেই এত সুন্দর।”

সাদ আমতা আমতা করে তমাকে বললো,”মানে?”

তমা কিছুটা কাতর কন্ঠে সাদকে বললো,” আপনি যেই জায়গাটায় দাঁড়িয়ে আছেন। এখানে একটা মেয়েকে আলগা জিনিস মেরে উল্টো করে মাটিতে গেঁড়ে রেখে ছিল।”

সাদ এক লাফে সেই জায়গা থেকে সরে গিয়ে বললো,” কিহ!”

তমা বললো,” হুম” এটুকু বলেই তমা পা উল্টো করার ভান ধরে একটু একটু করে সাদের দিকে এগিয়ে যেতে শুরু করেছে। তখন বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামবে। রাস্তায় লোকজন তেমন নেই। সুনসান নীরব রাস্তা দেখে সাদ ভয় এক পা এক পা করে সরে যেতে শুরু করলো। তমা চোখ উল্টিয়ে খোঁড়া হওয়ার ভান ধরে সাদের দিকে এগিয়ে যেতে শুরু করলো। হঠাৎ বাতাসে একটা চিকন ডাল সাদের ঘাড়ে এসে বারি খেলো। সাদ ভয়ে পাশ ফিরে তাকালো। রাস্তার পাশে একটা কবর। ওপরে যাঁর কবর তাঁর নাম লিখা। সাদ নামটা পড়ার চেষ্টা করলো। নামের জায়গায় লিখা মোসাঃতমা খাতুন। সাদ চিৎকার করে জোরে জোরে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ পরে ভো দৌড় মারলো। তমা সাদকে পালাতে সাদকে পেছন থেকে তাড়া করতে শুরু করলো। সাদ দৌড়াচ্ছে আর বলছে ” ইয়া আল্লাহ! বাঁচাও আমাকে! লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ! ” সাদ বেশি দূর যেতে পারলো না। ভয়ে জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পরলো। তমা সেটা দেখে হেসে ফেললো। কালকে রাতের দুষ্টুমির শাস্তি এটা! হুহ্!

চলবে…

লবঙ্গ লতিকা পর্ব-০৮

0

#লবঙ্গ লতিকা
#নুজহাত আদিবা
পর্ব ৮

সকালে ঘুম থেকে উঠে তাড়াহুড়ো করে নাস্তা শেষ করলো সাদ। রেডি হয়ে স্কুলের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। তমা মাথার ঘোমটা ঠিক করতে করতে সাদের সামনে এসে দাঁড়ালো। সাদ তমার দিকে দু’পা এগিয়ে গেল। তমা সাদের দিকে তাকিয়ে নিজের কোমরে হাত রেখে বললো,”এবার যা শর্ত ছিল তা পূরন করুন।”

সাদ মাথা ঝাঁকালো। তমা গিয়ে ফুচকা ওয়ালা মামাকে ফুচকা দিতে বললো। ফুচকা ওয়ালা মামা তমাকে বললো,” কয় প্লেট দিমু আপা?” তমা হেসে ফুচকা ওয়ালা মামাকে বললো,” দিতে থাকুন ইচ্ছেমত।”

তমা একপ্লেট ফুচকা হাতে নিতেই তমার সঙ্গীরা সব হাজির। ১০-১২ জন সঙ্গীসাথীকে দেখে তমা ফুচকা ওয়ালা মামার উদ্দেশ্য বললো,” যে যত প্লেট খেতে চায় দিন মামা।” সাদ মাটিতে পা খুড়ঁছিল। ভেবেছে এরা সব ছোট মানুষ। আর কতটুকুই বা খাবে? কিন্তু, সাদকে অবাক করে দিয়ে প্রত্যেকে ৪-৫ প্লেট করে ফুচকা খেয়েছে। ফুচকাওয়ালা মামাকে যখন বিল দেওয়ার প্রসঙ্গ উঠলো। তখন সাদ মুখ কালো করে ফেললো। এই সপ্তাহের পকেট মানি সব শেষ! কে যে বলেছিল তমার ফাঁদে পা দিতে! তমা মেয়েটাও অতি চালাক! হুহ! সাদ মনে তমার প্রতি চাপা রাগ রেখে বাড়ি ফিরে গেল।

সময় কখন কেটে যায় তা বোঝাই যায় না। পুরো একটা সপ্তাহ কেটে গেছে এভাবে। কালকে কাবিন পরিয়ে তমাকে একেবারে তুলে আনবে। শাড়ি,গহনাসহ আরো বেশ কিছু ডালা আজ তমাদের বাড়িতে পাঠানো হয়েছে। তমারাও অবশ্য অনেকগুলো ডালা পাঠিয়েছে।

সাদদের পুরো বাড়িতে লাইটিং করা। একটু পরপর গ্রামের মানুষজন উঁকি-ঝুকি মারছে। মহসীন খান অবশ্য অনিতাকে বলে দিয়েছেন, “আজকে যাঁরা বাড়িতে আসবে একটা মানুষও যেন খালি মুখে না যায়। ভরপেট খাইয়ে তারপর বিদায় দেবে।”

অনিতাও অবশ্য মহসীন খানের সঙ্গে দ্বিমত করেননি। খুশি মনেই সবটা মেনে নিয়েছেন। সাদের বিয়েতে সবচেয়ে আনন্দ করছে আঙুর বালা। এতদিন বিছানা ছেড়ে উঠতে পারতেন না। এখন বলো কয়েও বিছানায় দুদণ্ডের জন্য বসানো যাচ্ছে না। বাচ্চাদের মতো এদিক ওদিক ছুটোছুটি করছেন। সাদের বিয়ের উপলক্ষে মেহমানদের জন্য গামলা ভর্তি করে পিঠা বানিয়েছেন। তেলের পিঠা,নকশী পিঠা, সাজ পিঠা, আরও কত রকমের পিঠা বানিয়ে খাবার টেবিল ভরে ফেলেছেন।

নাদিয়ার তো আনন্দের শেষ নেই। একমাত্র ভাইয়ার বিয়ে বলে কথা। নাদিয়ার ছোট্ট আরেকটা বোন আছে; নাম পুতুল। পুতুল অবশ্য এখনও বেশ ছোট। সবে মাত্র বসতে শিখেছে। সাদের অবশ্য আর কোনো ভাইবোন না থাকায় নাদিয়া আর পুতুলকে বেশ আদর করে। যখন নাদিয়া আর পুতুলকে দেখে মন ভরে আদর করে। ছোট বাচ্চারা আসলেই নিষ্পাপ। দেখলেই মন ভালো হয়ে যায়।

সকালে সাদকে কয়েকবার ডেকে ঘুম থেকে তোলা হলো। সাদ ত্যাক্ত বিরক্ত হয়ে বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ালো। হাত মুখ ধুয়ে আসতেই বাইরে থেকে অনিতার ডাকাডাকি শুরু। সাদ টলমলে পায়ে বাইরে আসলো। সাদ বাইরে এসে দেখলো বাড়ির কাজের লোকেরা পাটায় হলুদ বাটছে।অনিতা সাদা ট্রাউজার আর সাদা টিশার্ট সাদকে এগিয়ে দিয়ে বললো,” এটা তাড়াতাড়ি পরে এসো বাবা। তোমাকে সবাই হলুদ লাগানোর জন্য বসে আছে। ”

সাদ বিরক্তি মাখা চোখে চারিদিকে তাকিয়ে দেখলো। এসব গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান হয় মেয়েদের। ছেলেদের জন্যও যে এসব নিয়ম অনুষ্ঠান মানতো হয় কে জানতো! সাদ টিশার্ট, ট্রাউজার পরে বাইরে এলো। সবাই হলুদের বাটি সাজিয়ে এক প্রকার ঝাঁপিয়ে পরলো সাদের ওপরে। গালে,মুখে,নাকে,কপালে,হাতে একেবারে হলুদ দিয়ে লেপ্টে দিলো সাদকে। সাদ নিজের শরীরে এত হলুদের ছোঁয়া দেখে বারবার ভ্রু কুঁচকে তাকাচ্ছিল সবার দিকে। কিন্তু সবার কী আর সেই খেয়াল আছে? সবাই তো নিজের মতো সাদকে হলুদ মাখাতে ব্যস্ত।

হলুদের অনুষ্ঠান শেষ হতেই দুপুরের দিকে সবাই তমাদের বাড়ির দিকে রওনা দিলো। তমাদের বাড়ির সামনে বড় করে প্যান্ডেল টানানো হয়েছে। প্যান্ডেলের ভেতরে গিয়েই সবাই খাওয়া দাওয়ার ঝামেলা সারবে।ছোট্টখাটো একটা স্টেজের মধ্যে তমা আর সাদকে বসিয়ে রাখা হয়েছে। তমা লাল বেনারসি শাড়ি পরিহিত। শাড়িটা অবশ্য সাদদের বাড়ি থেকেই দেওয়া।

তমার ঘেমে একাকার অবস্থা। সাদ একটু পরপর তমার দিকে তাকাচ্ছে। তমার অবশ্য কোনো হেরফের নেই। তমা সামনের দিকে দৃষ্টি দিয়ে সবাইকে দেখছে। সাদ তমার পাশে হাত রাখলো। তমা প্রথমে একটু চুপচাপ থাকলেও পরে আগের অবস্থায় ফিরে গেল। টুকুস করে একটা চিমটি বসিয়ে দিলো সাদের হাতে।বসাদ নিরবে ব্যাথা সহ্য করে নিলো। এত মানুষ সামনে তাঁদের সামনে তো আর ঝগড়াঝাটি করা যায় না।

তমা বেশ কিছু সময় পর একটা মেয়েকে হাত ইশারায় নিজের কাছে ডাকলো। সম্ভবত এইটা সেই মেয়েটাই যে সাদকে পাদ নামে ভূষিত করেছিল। মেয়েটা তমার সামনে আসতেই তমা মেয়েটার কানের সামনে গিয়ে বললো,”কতক্ষন ধরে বসেই আছি। খাবার দিবে কখন? আমার খুব ক্ষুদা লেগেছে! চারপাশে কত সুন্দর পোলাওয়ের ঘ্রান! আর আমি মরি খুদার জ্বালায়।”

মেয়েটা তমার কথায় ফিক করে হেসে ফেললো। হাসি চেপে রেখে তমাকে বললো,” দাঁড়া, আমি দেখতাসি।” এটুকু বলেই মেয়েটা তমার সামনে চলে গেল।

সবার খাওয়া দাওয়ার পর্ব শেষ হতেই বিয়ের পর্ব শুরু হলো। সাদ সাধারণ ভাবে কবুল বলে বিয়েতে মত দিলেও। তমা কবুল বলার সময় ঝরঝর করে কেঁদে ফেললো। সাদ বেশ কয়েকবার ফিরে ফিরে তমাকে দেখছিল।

বিদায়ের সময় তমা মা, ভাইকে ধরে বেশ ক্ষানিক সময় কেঁদে ছিল। শফিক বোনকে ধরে কেঁদেই ফেললো। এত আদরের বোন। একে ছাড়া থাকবে কীভাবে?

সাদদের বাড়ি গিয়ে তমাকে সাদের ঘরে বসিয়ে রাখা হলো। বাড়িতে একের পর এক মেহমান আসছে। আর সবাই প্রথমে সাদের ঘরে ঢুকে তমাকে দেখছে। সাদ অবশ্য অন্য ঘরে। নিজের মতো বিশ্রাম নিতে ব্যস্ত সে।

সবকিছু ঠিকঠাক থাকলেও রাতে ঘুমোতে যাওয়ার সময়ই বিপত্তি বাঁধলো। অনিতা সাদ আর তমাকে একসঙ্গে থাকতে নিষেধ করে দিয়েছে। সারাদিন কথাবার্তা বলতে পারবে। কিন্তু, রাতে কিছুতেই একসঙ্গে ঘুমোতে পারবে না। বাড়ি ভর্তি মেহমান। তাই, অনেক ভেবেচিন্তে অনিতা আঙুর বালার সঙ্গে তমাকে ঘুমোতে বললেন।

তমা আঙুর বালার ঘরে গিয়ে দেখলো, আঙুর বালা তমার জন্য এক পাশে; জায়গা রেখে অপর;পাশে ঘুমিয়ে পরেছে। তমা গিয়ে চুপিসারে কোনো শব্দ না করে আঙুর বালার পাশে শুয়ে পরলো। তমার ঘুম আসছে না কিছুতেই। প্রথমত,মাকে ছাড়া তমার ঘুম আসে না। দ্বিতীয়ত, আঙুর বালা জোরে জোরে নাক ডেকেই চলেছে। তমা বিরক্ত হয়ে মাথা থেকে বালিশ সরিয়ে কানে চেপে ধরলো। ধুর ভালো লাগে না আর!
আঙুর বালা দরজা কিছুটা ফাঁকা রেখে ঘুমোয়। তমা হঠাৎ খেয়াল করলো দরজার পাশে কোনো এক ছায়ামূর্তি দাঁড়িয়ে আছে। তমা ভয় পেয়ে আঙুর বালার হাত ধরে ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে বললো,” দাদু! দেখেন দরজার সামনে কে যেন!একটু উঠেন! কে যেন দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। ”

আঙুর বালা ঘুমের ঘোরে তমার হাতের বাঁধন থেকে হাত সরিয়ে বিরক্তি মাখা কন্ঠে বললো,” যা ছেম/ড়ি ! সারাদিন দিন-দুনিয়ার কথা কইয়া করকরাস! এহন ঘুমাইতে শুইলেও তোর জ্বালায় শান্তি নাই। ঘুমের ভিত্তেও করকরায়া আমার মাথা খাস!”

চলবে…

লবঙ্গ লতিকা পর্ব-০৭

0

#লবঙ্গ লতিকা
#নুজহাত আদিবা
পর্ব ৭

সাদের পা ব্যাথায় ফুলে গেছে। বাড়িতে আসার পর সাদকে পায়ের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে সাদ বলেছে সাদ পরে গিয়েছে। পরদিন সকালে জুলেখা সাদের সঙ্গে দেখা করতে। সাদকে বিস্তারিত জিজ্ঞেস করলে তমার মার খাবে ভেবে সাদকে ব্যাপারটা চেপে গেল। জুলেখা ঝাপসা চোখে সাদকে বললো,
” তমা যখন আট বছরের। তখন তমার বাবা মারা যায়।সারাদিন ঠিকই ছিল। রাতে হঠাৎ কী হলো জানি না। এক সাথে ঘুমাতে গেলাম। আমি উঠলেও তমার বাবা আর উঠলো না। পরিবারের একমাত্র ঢালই ছিল তমার বাবা। যে-ই পরিবারে বাবা থাকে না। সেই সংসার চালানো যে কত কষ্ট সেটা পরিস্থিতির খাতিরে আমি বুঝেছিলাম। শফিক বড় হওয়া না অবধি বেশ পরিশ্রম করে তমা আর শফিককে বড় করেছি। সংসারে অভাব-অনটন লেগেই ছিল। কখনো ওদের চাহিদা মেটাতে পারিনি। খুব অভাবে দিন কেটেছে। তমা ছোটবেলা থেকেই দুষ্ট। মানুষের গাছের ফল চুরি করে খেতো। যেখানে যেতো একটা অঘটন ঘটিয়েই বাড়ি ফিরতো। ও আমার হাতে কত যে মার খেয়েছে তাঁর হিসেব নেই। মারে কখনো ওর দুষ্টুমি কমেনি। উল্টো বেড়েছে! ওকে যে-ই কাজ করতে নিষেধ করতাম ও সবসময় সেটাই বেশি করতো। আজ এই বাড়ি থেকে বিচার আসতো তো কাল ও বাড়ি থেকে। আমিই বা কী করবো বলো? আমি মা! আমি যদি-ই এত অত্যাচার করি ও যাবেটা কোথায়? ওকে মারা বন্ধ করে আদর করে বুঝিয়ে সুঝিয়ে বুঝ দিতাম। ও এখনও অনেক কিছুই বোঝে না। কোথায় কী করতে হবে কোথায় কী বলতে হবে না সেসব জানে না। ভুল জায়গায় ভুল কথা বলে বারবার বিপদে পরে। মাঝেমধ্যে গ্রামের লোকজন ওর প্রতি বিরক্ত হয়ে ওকে পাগল বলতো। আমি কখনো ওর প্রতি বিরক্ত হতে পারিনি। কখনো ওর শখ আহ্লাদ মেটাতে পারিনি। আমি দিতে পারিনি বলেই তো ও নিজে চুরি করার সাহস করেছে। ”

জুলেখা হঠাৎ সাদের সামনে ফুপিয়ে কেঁদে ফেললো। একটু থেমে আবার বললো,”তোমার দাদী মানুষটা খুব ভালো। সংসারের খরচ এক হাতে জোগাতে হিমশিম খেতাম। কখনো কারো কাছে ধার চাইলে কেউ দিতো না। পাছে যদি ধার নিয়ে ফেরত না দেই। তোমার দাদী প্রায়ই আমাকে গোপনে সাহায্য করতো। আমি আবার যখন সুযোগ পেতাম ধার পরিশোধ করে দিতাম। মাঝেমধ্যে ঘরে চাল থাকতো না। তোমার দাদী খুব সাহায্য করতেন। চাল তারপর তোমাদের ক্ষেতের শাক-সবজি এসব দিয়ে সাহায্য করতেন। আমার খুব উপকার হতো।”

জুলেখা এসব বলে বড় একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো।সাদের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন,” তোমার যদি তোমার কোনো আচরণে কষ্ট লাগে তুমি মাফ করে দিয়ো বাবা। ওর এত বুঝ জ্ঞান নেই। তুমি পারলে মাফ করে দিয়ো।”

জুলেখা এসব বলে ক্রন্দনরত দৃষ্টিতে সেই স্থান ত্যাগ করলেন। সাদ চুপচাপ পা বিছিয়ে বসে রইলো।

সারাদিন ঘরে পা বিছিয়ে বসে থাকতে থাকতে সাদ বিরক্ত। বিকেলে একটু বাড়ি থেকে বের না হলে সবকিছু কেন যেন ফিঁকে ফিঁকে লাগে। সাদ খোঁড়াতে খোঁড়াতে বাড়ি থেকে বের হলো। রাসেল কাকার চায়ের দোকানে গিয়ে এক কাপ চা নিয়ে বসলো। সাথে তিন কোনা বন রুটি সাইডে সাদা ক্রিম মাখানো। বনরুটি চায়ে ভিজিয়ে সাদ মুখে দিলো। দূর থেকে দেখতে পেল তমার মতো কে যেন হেঁটে চলেছে। কিছুক্ষন পর ব্যাপারটা স্পষ্ট হলো। ওটা আসলে তমা। এক হাতে বড় বটির মতো কী যেন। আর আরেক হাতে অনেকগুলো ডাব। সাদ বুঝতে পারলো তমা গাছ থেকে ডাব পেরেছে। সাদ চা বনরুটি শেষ করে তমার দিকে এগিয়ে গেল। তমা অবশ্য বেশ খানিকটা দূর এগিয়ে গিয়েছে। সাদ পেছন থেকে চিৎকার করে ডাকলো “তমা!”

তমা চমকে পেছন ফিরে তাকালো। সাদ খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে তমার দিকে এগিয়ে গেল। সাদ তমার কাছে যেতেই;তমা বটি সাদের দিকে এগিয়ে বললো,” পা ভেঙে শান্তি হয়নি? আরেকবার ডাকাডাকি করলে পা বটি দিয়ে কেটে হাতে ধরিয়ে দেবো।”

সাদ বটির দিকে একবার তাকালো। ভয়ে ভয়ে ঢোক গিললো। তমাকে দিয়ে বিশ্বাস নেই। তমা আসলেই বটি দিয়ে সাদের পা কেটে ফেলতে পারে। সাদ তমার হাতে থাকা ডাবের দিকে আঙুল দিয়ে বললো,” কী এগুলো?”

তমা জোর করে হেসে বললো,” আমাদের গাছের মুলা।”

সাদ অবাক হয়ে তমাকে বললো,”এগুলো তো ডাব।”

তমা রেগে গিয়ে বললো,” জানেন যখন জিজ্ঞেস করলেন কেন?”

সাদ ঢোক গিলে বললো,”এমনি।”

তমা সাদকে রেখেই হাঁটা শুরু করলো। সাদ দৌড়ে এগিয়ে গিয়ে বললো,” যাচ্ছো কোথায়?”

তমা চোখ কুচকে জোর করে হেসে বললো,” শশুর বাড়িতে! ”

সাদ ঠোঁট টিপে হেসে বললো,” তুমি কী ভুলোমনা তমা! তোমার শশুর বাড়ির রাস্তা এদিকে না। ওদিকে! চলো তোমাকে এগিয়ে দিয়ে আসি।”

তমা রেগে সাদের দিকে তাকালো। সাদ অপ্রস্তুত ভঙ্গিতে বললো, “এতগুলো ডাব নিয়ে যাচ্ছো। আমাকে একটাবার সাধলেও না। ”

তমা বটি এদিক ওদিক ঘুরিয়ে বললো,” আপনি এত ছোঁচা কেন? আপনাকে আমি ডাব দেবো না। যান ভাগুন!”

সাদ আঙুল ভাঁজ করতে করতে তমাকে বললো,” কী করলে ডাব দেবে?”

তমা ভেবেচিন্তে উত্তর দিলো,” আমি যা চাইবো সেটা দিতে হবে। তাহলে ডাব দেবো। ”

সাদ প্রশ্নতর দৃষ্টিতে তমার দিকে তাকিয়ে বললো, ” কী চাও? যা চাইবে তাই দেবো।”

তমা ডাবগুলো নিচে রেখে বললো,” এই সামনের স্কুলটা চেনেন? সকালে স্কুল ছুটি হলে ফুচকা ওয়ালা মামা বসে। আমাকে ফুচকা খাওয়াতে হবে।”

সাদ মাথা নাড়িয়ে বললো,” তা খাওয়াবো। এখন আমাকে ডাব কেটে খাওয়াতে হবে।”

তমা সাদের দিকে তাকিয়ে বললো,” সামনের গাছ তলায় চলুন। ওখানে বসে ডাব কেটে খাওয়াবো।”

গাছ তলায় গিয়ে সাদ পা মেলে বসলো। এত হাঁটাহাটি করে এখন পা ব্যাথা করছে। তমা বটি দিয়ে অতি দক্ষতার সহিত ডাব কেটে সাদকে দিলো। সাদ ডাব হাতে নিতেই তমা বললো,” সকাল বেলা স্কুলের সামনে আমার জন্য দাঁড়াবেন। সন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছে আমি বাড়ি গেলাম।”

তমা এতটুকু বলেই হাঁটা শুরু করলো। সাদ ডাবের পানিতে চুমুক দিতে দিতে তমার চলে যাওয়া দেখলো।

চলবে…

লবঙ্গ লতিকা পর্ব-০৬

0

#লবঙ্গ লতিকা
#নুজহাত আদিবা
পর্ব ৬

পরন্ত বিকেল, শফিকুল সাদের জন্য নিজের মায়ের হাতে বানানো পিঠেপুলি নিয়ে এসেছে। নিজের হবু জামাইকে খাওয়ানোর উদ্দেশ্যে পিঠেগুলো বানিয়ে শফিকুলের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছেন। শফিকুল সাদদের বাড়িতে ঢুকতেই সবাই আদর আপ্যায়ন শুরু করলো। শফিকুল গত দিনের ঘটনার জন্য বেশ দুঃখ করলো। না জেনে না শুনেই কী ভয়াবহ মারটা সাদকে মেরেছেন।

সাদের মনে মনে তমার প্রতি আগে থেকেই বেশ রাগ ক্ষোভ ছিল। শফিকুলকে একা পেয়েই গড়গড় করে সাদ গত কয়েকদিনের ঘটনা শফিকুল বলে ফেললো। সাদকে ফাটা ফুচকা ডাকা, সাদের নাম নিয়ে ব্যঙ্গ করা, চোর উপাধি প্রদান করে মার খাওয়ানো। সবটা উগলে নিজের ভেতর থেকে বার করে দিলো সাদ। শফিকুল পর্যায়ক্রমে একের পর এক ঘটনা শুনে প্রচন্ড রেগে গেলেন। সাদকে আশ্বাস দিলেন তমাকে এরজন্য শাস্তি দিবেন। তমার শাস্তি পাওয়ার কথা শুনে সাদ আনন্দে আটখানা হয়ে উঠলো। এবার তমা বুঝতে পারবে। তমা কতবড় ভুল করেছে।

এদিকে শফিকুল রাগে পুরো ঝলসে যাচ্ছে। আজ তমাকে সামনে পেলে আচ্ছা করে মার দেবে। দুদিন পরে যাঁর সংসার করবে তাঁর সঙ্গে এসব কেমন ধরনের আচরণ? শফিকুল সাদদের বাড়ি থেকে যাওয়ার পথে গাছ থেকে মোটা ডাল ছিঁড়ে নিলো। এই ডাল আজকে তমার পিঠেই ভাঙবে।

শফিকুল বাড়ি গিয়ে দেখলো তমা উঠোনে বসে চুল পাথর দিয়ে খেলছে। শফিকুল বাড়িতে ঢুকেই তমার পিঠে লাঠি দিয়ে দিলো এক ঘা। তমা আঁতকে উঠে শফিকুলের দিকে তাকালো। শফিকুল লাঠি দিয়ে তমাকে এলোপাথারি মার মারলো। তমা ব্যাথায় কাঁদতে কাঁদতে মেঝেতে হাত পা ছিটিয়ে বসে পরলো। তমার মা জুলেখা শফিকুলকে অনেকবার থামানোর চেষ্টা করলো। শেষে তমার কান্নাকাটি দেখে শফিকুল লাঠি ফেলে দিয়ে ঘরে চলো গেল।

শফিকুল যে-ই না ঘরো ঢুকলো। সেই মাত্রই তমা দৌড় দিয়ে এক ছুটে বাড়ি থেকে বের হয়ে গেল। জুলেখা পেছন থেকে বহুক্ষন ডাকাডাকি করলো। তমা সাড়া না দিয়েই বের হয়ে গেল। কোথায় গেছে কী কারণে তমা বের হয়েছে এটা কেউ জানে না। জুলেখা অনেকক্ষন বাড়ির আশেপাশে তমাকে খোঁজাখুজি করলো। কিন্তু তমা নিরুদ্দেশ! কোথাও তমাকে খুঁজে পেলেন না।

সন্ধ্যা বেলা! এখনই হয়তো আজান দিয়ে দেবে। সাদ হেলতে দুলতে রাস্তা দিয়ে বাড়ির পথের দিকে রওনা হচ্ছে। রাসেল কাকার দোকানে চা-টা বেশ মজার! খেলেই মাথা ব্যাথা, ঘাড় ব্যাথা সব গায়েব! সাদ আনমনে হেঁটেই চলেছে। পুকুর পাড়ের ওই অংশটায় একটা মেয়েকে দেখা যাচ্ছে। ঘোমটা দেওয়া মাথায়। বসে থাকার ধরন দেখে মনে হচ্ছে তমা। কিন্তু, তমা সন্ধ্যা বেলায় একা একা পুকুর ঘাটে কী করবে? সাদ এক পা এক পা করে সিঁড়ি দিয়ে নামতে শুরু করলো। সাদের মন বারবার বলছে সিঁড়িতে বসে থাকা মেয়েটাই তমা। কিন্তু, তমা এখানে কেন? তমার তো শাস্তি পাওয়ার কথা ছিল। তমা কী তাহলে তাঁর উপযুক্ত শাস্তি পায়নি? তাহলে শুধু শুধু শফিকুল ভাই সাদকে মিথ্যা কথা কেন বললো?

সাদ নিশ্চুপ ভাবে মেয়েটার পাশে বসলো। উঁকি দিয়ে মেয়েটার মুখ দেখলো। হ্যাঁ! এটা তো তমা-ই!সাদ গলা খাঁকারি দিয়ে একটা শব্দ করলো। তমা একটু নড়েচড়ে বসলো। সাদ তমার কানের সামনে ফিসফিস করে বললো,” কী হয়েছে? ”

তমা চোখ মুছতে মুছতে উত্তর দিলো,”কিছু না”

সাদ পুকুরে পানিতে পায়ের কিছুটা অংশ ডুবিয়ে রেখে বললো,” তাহলে ফ্যাচফ্যাচ করে কাঁদছো কেন? ”

তমা কাঁপা কাঁপা গলায় বললো, ” ভাইয়া! মেরে/ছে! ”

সাদ ঠোঁট টিপে হেসে বললো,” বেশ করেছে! যেমন কর্ম তেমন তাঁর ফল। আরো করো আমার সাথে ফাইজ/লামি।”

তমার চোখ বেয়ে টপটপ করে পানি পরতে শুরু করলো। সাদ হাসতে হাসতে তমার দিকে আবার তাকালো। নাহ! এবার তমার জন্য আসলেই খারাপ লাগছে। এতবড় মেয়ের গায়ে হাত তোলাটা উচিত হয়নি। ঠান্ডা মাথায় একটু বোঝালেই তো ঠিক হয়ে যেতো। সাদ তমার আরেকটু কাছে এসে বসলো। যাকে বলে একেবারে পাশাপাশি বসা। সাদ তমার হাত ধরে বললো,” আমি বুঝতে পারিনি তোমাকে মার/বে। জানলে এসব বলতাম না। আমি তো ভেবেছি তোমাকে হালকা বকাঝকা করবে তারপর শেষ। এরমধ্যেই এত কাহিনি হয়ে যাবে এটা কে জানতো!”

তমা আর সময়ের অপেক্ষা করলো না। উঠে দাঁড়িয়ে হুট করে সাদের হাত দু’টো মুঠো করে চেপে ধরলো। সাদের হাতে জোরে চাপ দিয়ে বললো,” আমি জানতাম! তুই-ই আমার নামে ভাইয়ের কাছে বিচার দিয়েছিস। একেবারে নিশ্চিত হওয়ার জন্যই ঢং করলাম। দেখ এবার তোকে কী করি।”

সাদ মুহুর্তেই ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল। মানে কী এসবের! এই মেয়ের তো চালাকির অন্ত নেই! হঠাৎ পানির নিচ থেকে একটা হাত সাদের বাম পা জোরে চেপে ধরলো। সাদ হঠাৎ চিৎকার করে উঠলো। সাদের পা ধরে বারবার পানির ভেতর নিয়ে যেতে চাচ্ছে। সাদ জোরে চিৎকার করে উঠলো। তমা নিজের হাতে থাকা গামছা দিয়ে সাদের মুখ, হাত বেঁধে দিলো। এতক্ষন এই গামছা দিয়েই তমা চোখের পানি নাকের পানি মুছেছে। এটা সামনে ছিল বলেই তমা সাদের মুখ বেঁধে দিলো। সাদ দু-হাত দিয়ে বারবার তমাকে আটকানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু, একদিকে পা ধরে টানাটানি আরেকদিকে মুখের জবান বন্ধ কিছুই করা কিংবা বলা যাচ্ছে না।

তমা বড় একটা ডাল ছিঁড়ে আনলো গাছ থেকে। এনে ধাম করে সাদের পিঠে একটা বারি দিলো। সাদ বেচারা ব্যাথায় চোখ বন্ধ করে ফেললো। তমা পুকুর পাড়ের সামনে গিয়ে বললো,”হুম পা ছাড় এবার!”

পানিতে থেকে ৮-৯ বছরের দুটো বাচ্চা উঠে এলো। এদেরকে সবসময় তমার সঙ্গে ঘোরাফেরা করতে দেখা যায়। বাচ্চা দুটোকে দেখেই সাদ আসল ঘটনা বুঝতে পারলো। তমা সাদের সামনে গিয়ে বসে বললো,” আর কোনোদিন লাগতে আসবি আমার সঙ্গে? ”

সাদ উপায় না পেয়ে দু’দিকে মাথা নাড়ালো। যাঁর অর্থ বোঝায় না। তমা সাদের পিঠে জোরে আরেকটা বারি দিয়ে বললো,” আর যদি কোনোদিন আমার সঙ্গে ঝামেলা করেছিস। তো! বলে দিলাম মে/রে পুকুর পাড়ে ফে/লে দেবো।”

তমা এবার সাদের হাতের বাঁধন খুলে দিলো। সাদ বাঁধন থেকে মুক্তি পেতেই দৌড়ে ছুটে পালালোর চেষ্টা করলো। তমা হাসতে হাসতে পেছন থেকে সাদকে বললো,” আস্তে যা ফাটা ফুচকা। উ/ষ্টা খেয়ে পরে মর/লে বলবি তমা মেরে/ছে!”

সাদ অগ্নি দৃষ্টিতে তমার দিকে তাকালো। তমা সাদের দিকে তাকিয়ে বললো,” যাচ্ছিস না কেন?তোকে কী আবার ঘোড়ার গাড়িতে করে বাড়িতে দিয়ে আসতে হবে?”

সাদের পা পুরো ভেজা। সাদ মাটিতে পা রাখা মাত্রই পা পিছলে মাটিতে ছিটকে পরলো। সাদকে পরে যেতে দেখে তমা জোরে হেসে ফেললো। হাসতে হাসতে বললো,” ফাটা ফুচকায় খায় উষ্ঠা! উষ্ঠার নাই শ্যাষ ফাটা ফুচকায় খায় ঠ্যাস!

চলবে…