Friday, July 18, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1081



পূর্ণতার মাঝেও অপূর্ণতার ছোয়া পর্ব-১০

0

#পূর্ণতার মাঝেও অপূর্ণতার ছোয়া
#লেখিকাঃশুভ্রতা শুভ্রা
#পর্বঃ১০

ওরা বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলছিলো। অনিক অভ্রকে উদ্দেশ্য করে বলল, -“দোস্ত তোর বোনকে না আমার অনেক পছন্দ হয়েছে। ওকে আমার সঙ্গে বিয়ে দিবি।”

অনুভব বলল “শুরু হলো অনিকের। ভাই তোর কি পছন্দের শেষ হবে না! যাকে দেখিস তাকেই তোর পছন্দ হয়। কি বলিস রাজিব!”

রাজিব বলল “হুম একদম ঠিক কথা বলছিস। ভালো হয়ে যা অনিক ভালো হয়ে যা।” বলেই রাজিব আর অনুভব হাসলো।

অনিক বলল “আমি কিন্তু এবার সিরিয়াস।”

অনুভব বলল “এই নিয়ে কতোবার তুই সিরিয়াস হবি।”

অভ্র ড্রাইভিং করছিলো। সে সামনের দিকে তাকিয়েই বলল “আগে শুভ্রার মনে মতো হওয়ার চেষ্টা কর। ওর যদি তোকে মনে ধরে তারপর আমি বিষয়টি নিয়ে ভেবে দেখবো।”

অনিক বলল “এটা কোনো ব‍্যাপার না। তুই খালি দেখতে থাক।”
অভ্র বলল “এতোও সহজ না চেষ্টা কর। এর আগে যারা প্রোপজ করছে ওকে তারা আর কেউ ভুলেও শুভ্রার নাম নেই না।”

আদিল বলল “কেন রে কি হয়েছিলো।” সবাই প্রশ্নবিদ্ধ চোখে অভ্রের দিকে তাকিয়ে রইলো।

অভ্র হেসে বলল “ওই তেমন কিছু না ওই ছেলে গুলোর মধ্যে কেউ পা নিয়ে,কেউ নাক নিয়ে,কেউ হাত নিয়ে চিন্তায় পরে গিয়েছিলো। যে তা কোনো দিন আবার স্বাভাবিক হবে নাকি।”

আদিল বলল “তোর বোন ওদের মারছে নাকি।”

অভ্র বলল “না ও নিজে মারে নি অন‍্যকে নিয়ে মার খাইয়েছে।”

অনিক বলল “আল্লাহ গো গুন্ডা তো তোর বোন।”

অভ্র বলল “হয় তো।”

আদিল বলল “চমলক্ক বেপার তো। শুভ্রার সঙ্গে তো ভাব জমাতেই হবে দেখছি।”

ওরা কথা বলতে বলতে গন্তব্যে পৌঁছে গেলো। ওদের পৌঁছাতে পৌঁছাতে দুপুর হয়ে গিয়েছে। ওরা রিসোটে উঠলো। ওখান কিছুসময় রেস্ট নেওয়ার পরে ওরা ঘুরতে বের হলো। মাঝখানে খাওয়াদাওয়া সেরে নিয়েছে ওরা। এই নিয়ে অনেকবার অনিক শুভ্রার সঙ্গে ভাব জমাতে চেষ্টা করেছে কিন্তু পারেনি। কোনো না কোনো ভাবে হয় অনুভব না হয় আদিল না হয় সে নিজেই পিছ পা হয়ে যাচ্ছে। নুসরাতের সঙ্গে শুভ্রাদের আগে থেকেই পরিচয় থাকলেও ওতোটা ফ্রি ছিলো না তারা। তবে এখানে ঘুরতে এসে যেন তিনজন একদম কোন সময়কার প্রাণের বান্ধবী মনে হচ্ছে।

সবাই সবার মতো আশেপাশে ঘুরে ঘুরে দেখছে। শুভ্রাও একা একা হাটছিলো। হঠাৎ, আদিল তার পাশে এসে দাড়ায়। শুভ্রা সরে যেতে নিবে কিন্তু তার আগেই আদিলের কথায় দমে যায়। আদিল বলে –

“মিস শুভ্রতা যে নদীর পাড়ে ঘুরতে যায় সেটা কি বাড়ির লোকে জানে।”

শুভ্রা আমতা আমতা করে “কে বলছে আপনাকে যে আমি নদীর পাড়ে ঘুরতে যাই। আর আমার নাম শুভ্রতা না শুভ্রা।”

আদিল বলল “সে যেই বলুক চুপিচুপি সেখানে যাওয়ার কারণ কি শুনি। আর সবাই তো শুভ্রা বলেই ডাকে আমি না হয় শুভ্রতা বলেই ডাকি।”

শুভ্রা চোখ ছোট ছোট করে সন্দেহভাজন দৃষ্টিতে আদিলের দিকে তাকিয়ে বলল “আমার নাম আপনার আবার অন‍্যরকম করে বলতে হবে কেন? আর আমি কোথায় যাই না যাই আপনাকে বলে যাবো নাকি। আপনি কে যে আপনাকে এগুলো আমি বলতে যাবো।”

আদিল এক বাঁকা হাসি দিয়ে বলল “কেউ না কিন্তু হতে কতক্ষণ।”

শুভ্রা বলল ” কি বললেন ঠিক বুঝতে পারলাম না!”

আদিল মিটমিট করে হেসে বলল “ও তুমি বুঝবে না। এখনো বোঝার বয়স হয় নি তোমার।”

শুভ্রা তেলেবেগুনে জ্বলে উঠে আর বলল -“আমাকে কি আপনার এতোই ছোট মনে হয় যে আমি কিছু বুঝবো না।”

আদিল বলল “এতো রাগ করে না তাহলে আমি কিন্তু.!”

শুভ্রা বলল “কিন্তু কি পুরো কথা না বলে থেমে যান কেন আজব তো।”

আদিল বলল “হুম আমি একটু আজবই। যাইহোক মজা করো আমি যাই।”

শুভ্রা মনেমনে বলে( যা না আমি কি ধরে আছি নাকি। ঢং যতসব। শুধু ভাইয়ার বন্ধু না হলে তোর অবস্থা খারাপ করে ছাড়তাম।) মুখে বলল “হুম যান”
আদিল মুচকি হাসি দিয়ে চলে গেলো।

সন্ধ‍্যা হয়ে গিয়েছে। সবাই গোল হয়ে বসে আড্ডা দিচ্ছে। অনুভব বলল- ” চল সবাই মিলে ট্রুথ ডেয়ার খেলি।” সবাই ওর কথায় একমত হলো। খেলার প্রথমেই পালা এলো অনিকের। ও ডেয়ার নেওয়াতে সবাই ওকে গান গাইতে বলল। অনিক প্রথমে না করলেও শুভ্রার দিকে তাকিয়ে রাজি হয়ে গেলো। অনিক গান গাওয়া শেষ করতেই সবাই হাত তালি দিলো।

শুভ্রা বলল – “ভাইয়া আপনি তো ভালো গান গাইতে পারেন। জাস্ট ওয়াও।”

অনিক বলল, -” ভাই বলে মনটা ভেঙে দিলে। এই কষ্ট কোথায় রাখি বলো।”

এইদিকে আদিলের শুভ্রা আর অনিকের কথা বলা দেখে কেন যেন রাগ হচ্ছে। বেশি রাগ হচ্ছে শুভ্রার উপর। কেউ তো কিছু বলল না ওর কেন বলা লাগবে? আদিল ওদের আর কিছু বলতে না দিয়ে বলল, -“আবার খেলায় ফিরি তাহলে আমরা।”

নুসরাতের পালা এবার। ও ট্রুথ নিয়েছে। অনুভব বলল “কিরে তুই কি কাউকে পছন্দ করিস বা ভালোবাসিস। সত্যি কথা বলবি কিন্তু।”

নুসরাত মাথা নিচু করে বলল “হুম”

অনুভব বলল, -“কাকে বল আমরা একটু শুনি। কতোদিন একটু বিয়ে খাইনা বল বল কে সেই ব‍্যক্তি।”

নুসরাত বলল, -“প্রশ্ন কিন্তু ছিলো ভালোবাসি বা পছন্দ করি নাকি এই নিয়ে। কাকে করি এটা কিন্তু প্রশ্ন ছিলো না।”

অনুভব মুখ বাঁকিয়ে বলল – “যাহ তোর বলা লাগবে না। জানি আমি।”

নুসরাত বলল, -” হুম ভালো ”

এবার অনুভবের পালা। অভ্র হেসে বলল, -“তুই নাচবি, নাগিন ডান্স।” অনুভব অসহায় চোখে অভ্রের দিকে তাকাল আর কানে কানে বলল, -“দোস্ত এখানে মেয়েরাও আছে বুঝে শুনে ডেয়ার দে ভাই।” রাজিব বলল -“নে অনুভব শুরু কর।” আদিল ও বলল, -“হুম শুরু কর।”

অনুভব এবার কাদো কাদো মুখ নিয়ে অনিকের দিকে তাকালো। অনিকও মিটিমিটি হাসি দিয়ে ইশারায় শুরু করতে বলল। নুসরাত বলল- “ব্রো এতো ঢং না করে শুরু করো।”

অনুভব বাধ‍্য হয়ে নাচতে লাগলো। এইদিকে অনুভবে নাচ দেখে ওরা সবাই হাসতে হাসতে শেষ।

এইদিকে অনুভবের তো মন চাচ্ছে অভ্রের মাথা ফাটাতে। রাজিব ডেয়ার নিয়েছে। নুসরাত বলল “ব্রো তুমি গিয়ে অনুভব ভাইকে দুটো থাপ্পড় মেরে আসো।” রাজিব দাঁত কেলিয়ে বলল – “এটা কোনো ব‍‍্যাপার।”

অনুভব রাগী চোখে নুসরাতের দিকে তাকালো। নুসরাত দাঁত বের করে শয়তানি হাসি দিলো। রাজিব অনুভবকে দিলো দুটো থাপ্পড়। অনুভব বলল “ভাই তাই বলে এতো জোরে।”

খেলতে খেলতে রাত হয়ে গিয়েছে। ওরা আবার রিসোটে যাওয়ার জন‍্য পা বাড়ালো। শুভ্রার পাশে পাশে অনিক হাটছে। শুভ্রা বলল, -” আপনি কিন্তু সত্যি অনেক ভালো গান করেন।” অনিক বলল, -” ধন‍্যবাদ মেডাম,তো আমরা কি ফ্রেন্ড হতে পারি!”( হাত বাড়িয়ে দিয়ে )

শুভ্রা হাত বাড়াতে নিবে তার আগেই আদিল এসে অনিককে টেনে ওর সঙ্গে নিয়ে গেলো। অনিক কি হয়েছে জিঙ্গাসা করতেই। আদিল মুচকি হাসি দিয়ে বলল “কিছু না।” অনিকও কিছু নি বলে আদিলের সঙ্গে রিসোটে গেলো।

নুসরাত পিছনে থেকে অভ্রকে বলছে “অভ্র ভাই একটু দাড়ান কথা আছে।”

অভ্রা দাড়ালো। নুসরাত অভ্রার সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলল, – “ভাইয়া ভালো আছেন?”

অভ্র চোখ ছোট ছোট করে বলল, -“এই নিয়ে তুই কতো বার জিঙ্গাসা করলি কথাটা। তোর মতলবটা কি বল তো!”

নুসরাত মাথা চুলকাতে চুলকাতে আমতা আমতা করে বলল,-“মতলব আবার কি হবে কিছুই না।”

অভ্র বলল, -” যাইহোক তো মতিগতি কখন কেমন হয় কিছুই বুঝিনা। বাদ দে চল এখন।”

দেখতে দেখতে…

( চলবে )

পূর্ণতার মাঝেও অপূর্ণতার ছোয়া পর্ব-০৯

0

#পূর্ণতার মাঝেও অপূর্ণতার ছোয়া
#লেখিকাঃশুভ্রতা শুভ্রা
#পর্বঃ০৯

আদিল আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো শুভ্রা নেই। ও অভ্র আর নুসরাতের কাছে গিয়ে বলল, -” কিরে শুভ্রতা কোথায়। আশেপাশে তো দেখছি না কোথাও।”

অভ্র আর নুসরাত ও দেখলো তাই তো শুভ্রা কোথায়। অভ্র বলল, -“ও হয় ওয়াশরুমে গেছে।”

বলতে বলতে শুভ্রা আসলো আর বলল, -“ধুরু আমি আমার নুপুরটা খুজে পাচ্ছিনা। এমনি ওইটার একটা কোথায় যেন হারিয়ে গিয়েছিল মনে নেই। এখন আবার এইটাও।”

আদিল মাথায় হাত দিয়ে বলল, -“এই মেয়ে নুপুর খুজতে ব‍্যস্ত আর আমি এতোক্ষণে চিন্তায় পরে গেছিলাম।” ওই চলো অনেক রাত হয়েছে। অভ্র আর নুসরাত হাসছে ওদের অবস্থা দেখে।

শুভ্রা বলল, -” কিন্তু আমার নুপুর।”

আদিল বলল আরে আমি তোমাকে কিনে দিবো নি এখন আমাকে ক্ষমা দে এখন চল দয়া করে। সারাদিন অনেক খাটনি গেছে চল।”

শুভ্রা মুখ বাংলার পাঁচের মতো করে বলল, -“ওটা আমার সবচেয়ে প্রিয় নুপুর ছিলো।”

আদিল আর কিছু না বলে শুভ্রাকে কোলে তুলে নিলো আর নুসরাতকে ইশারায় ওদের সঙ্গে যেতে বলল।

——————

লুভা রাজিবের রুমে এসে দেখলো রাজিব রকিং চেয়ারে চোখ বন্ধ করে বসে আছে।

লুভা ধীরগতিতে রাজিবের সামনে দাড়িয়ে দুইবার ডাকলো রাজিবকে। কিন্তু রাজিব আগের মতোই। এবার লুভা আলতো হাতে রাজিবের কাধে হাত রাখলো। সাথে সাথে রাজিব চোখ খুললো। ওর চোখ লাল হয়ে আছে। হঠাৎ, করে রাজিব লুভাকে জরিয়ে ধরলো। লুভা কিছুটা ঘাবড়ে গেলো কিন্তু ছাড়ানোর চেষ্টা করলো না। রাজিবের হয় তো এমন কাউকেই দরকার ছিলো।

কিছুক্ষণ পর লুভা তার পিঠে উষ্ণ পানি অস্তিত্ব অনুভব করলো। সে রাজিবকে ছাড়ানোর চেষ্টা করলো। কিন্তু সে কিছুতেই ছাড়াতে পারলো না। রাজিব আরো শক্ত করে জরিয়ে ধরছে যেনো।

একটু পর রাজিব নিজেই লুভাকে ছেড়ে দিয়ে লুভার হাত ধরে বলল, -“আচ্ছা আমি অনেক খারাপ তাই না। আজকে শুধু আমার জন‍্য আব্বু এই অবস্থা। আমি যদি সবকিছু ঠিক মতো মন দিয়ে করতাম আব্বু আমাকে নিয়ে কোনো চিন্তাও করতো না আর এমনটা হতোও না।”

লুভা রাজিবের চোখে পানি মুছিয়ে দিয়ে বলল,

-“ধুরু আপনি এমন বাচ্চাদের মতো কান্না করছেন কেন? কিছু হয় নি,আর এখন তো আঙ্কেল ঠিক আছে তাই না। এখন চলেন কিছু খেয়ে নিবেন।

রাজিব বলল, -“না আমি এখন কিছু খাবো না।”

রাজিবকে পাত্তা না দিয়ে লুভা রুম থেকে চলে গেলো। রাজিব ডাকলো কিন্তু লুভা শুনলো না। সে খাবার প্লেট নিয়ে এসে জোর করে রাজিবকে খাইয়ে দিলো।

খাওয়ানো শেষে লুভা রাজিবকে ঘুমাতে বলল। রাজিব বলল,”আমি কি তোমার কোলো মাথা রেখে ঘুমাতে পারি প্লীজ না করো না।” লুভা কিছু বলল না। ও আধশোয়া হয়ে রাজিবের মাথায় হাত বোলাতে লাগলো।

————————-

আদিল বাসায় পৌঁছে শুভ্রাকে নিয়ে সোজা রুমে চলে গেলো ওকে রুমে বসিয়ে কোথায় যেন চলে গেলো? শুভ্রা মন খারাপ করে বসে রইলো ওর খুব পছন্দের নুপুর ছিলো ওইটা। হঠাৎ, শুভ্রা খেয়াল আদিল তার পায়ে কিছু একটা পরিয়ে দিচ্ছে। একি এটা তো সেই নুপুর। কিন্তু এটা অন‍্য পার্টটা। এটা আদিলের কাছে কিভাবে! শুভ্রা আদিলের দিকে তাকাতেই আদিল বলল, -” আজকে সব বলবো কিন্তু তার আগে খেয়ে নিবে চলো।অনেক ক্ষুধা লেগেছে।”

শুভ্রা বলল,-“আচ্ছা চলেন।”

—————–

খাবার টেবিলে বসে শুভ্রা পরেছে মহা বিপদে। আদিল জেদ করে বসে আছে ওর হাতে খাবে এই দিকে বাড়ির কাজে লোকরাও আছে নুসরাত ও আছে। লজ্জায় শুভ্রার যায় যায় অবস্থা। অনেক কষ্টে আদিলকে খাইয়ে শুভ্রা উঠে যেতে নিবে। তখন আদিল ওর হাত ধরে বসিয়ে দিয়ে শুভ্রাকে খাইয়ে দিলো। খাওয়াদাওয়া শেষে আদিল শুভ্রাকে কফি আনতে বলে রুমে চলে গেলো।

শুভ্রা ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে সাড়ে তিনটা বাজে। ও দুই মগ কফি দিয়ে রুমে গিয়ে দেখে আদিল বারান্দায় বসে আছে। শুভ্রা আদিলের কাছে গিয়ে আদিলের পাশে দোলনায় বসলো। কফির মগ আদিলের দিকে দিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে রইলো। আদিল কফির মগে চুমুক দিতে দিতে বলতে লাগলো,

ফ্লাশ ব‍্যাক

পাঁচ বছর আগে……..

আদিল, অভ্র, অনিক, অনুভব, রাজিব ওরা খুব ভালো বন্ধু। তাদের আড্ডার একমাএ জায়গা ছিলো নদীর পাড়। প্রতিদিন ওখানে গিয়ে আড্ডা না দিলে তাদের চলতই না। তারা পাঁচজনই ছিলো প্রাণের বন্ধু একজন আরেকজনকে ছাড়া একদম অচল ছিলো। ঘুরাঘুরি আড্ডা এগুলো নিয়েই দিন কাটতো।

তো একদিন বিকেলে আদিলের মন তেমন ভালো ছিলো না। সামনেই পরীক্ষা ওটা নিয়ে কিছুটা টেনশনে ছিলো ও। নদীর পানির দিকে তাকিয়ে ছিলো তখন হঠাৎ করে কারো মনোমুগ্ধকর হাসির শব্দ শুনে আশেপাশের চোখ রাখতেই এক বোরখা পরিহিত নারীতে তার চোখ আটকে যায়। কিন্তু সে অন‍্যপাশে থাকার কারণে আদিল তাকে দেখতে পারছিলো না। আদিল উঠে ওর সামনে যেতে নিবে তখনই ওর আম্মু কল দেয়। ও কথা বলতে একটু দূরে যায়। কথা বলা শেষে আবার ওখানে ওকে দেখতে যায় আদিল।

কিন্তু ততক্ষণে সেখান থেকে ও চলে গিয়েছিলো। এই গেলো ওইদিন বিকেলের কথা। আদিল ওইদিন কোনো রকম শান্তি পাই নি যেখানেই যায় সেখানেই শুধু মনে হচ্ছিলো ওই মেয়েটা তার পাশে বসে হাসছে। এর পরে সব কথা অনুভবকে বললে ও বলে ” ভাই তুই প্রেমে পরেছিস।”

আদিল ওতো মাথায় নেই নি। তারপর পরীক্ষা শেষে ওরা সবাই মিলে দূরে কোথাও ঘুরতে যাবো বলে সিদ্ধান্ত নেয়। তো অভ্র বলে “ওর বোনকে নিয়ে যাবে।”

তখন আদিল ওকে বলে “তোর বোন তো সারাদিন আমাদের চোখের আড়ালেই থাকে ও কিভাবে আমাদের সঙ্গে ঘুরতে যাবে। তুই পাগল হলি নাকি।”

অভ্র তখন বলে “যাবে আসলে ওর অনেক দিন যাবত দূরে কোথাও ঘুরতে যাওয়া হয়নি।”

আদিল আর অভ্রের বন্ধুত্ব ছিলো কলেজ থেকে তারপরেও একদিনও আদিল ওর বোনকে দেখেনি। ও নাকি ছেলেদের সঙ্গে দেখা করে না।

অভ্রের বোনের যাওয়ার কথা শুনে আদিল ও নুসরাত কে ওদের সঙ্গে যাওয়ার কথা বলে। নুসরাত ও এককথায় রাজি হয়ে যায়।

ওরা ঠিক করি পরের দিন সকালবেলায় নিজেদের গাড়ি করেই কক্সবাজার যাবে ঘুরতে। অভ্রের বোনের নাম শুভ্রা ও ওর এক বান্ধুবিকে ও নিয়ে যাবে আদিলদের সঙ্গে।

সবাইকে আদিলদের বাসার সামনে আসতে বলা হয় । সবাই ঠিক সময় একদম চলে আসে।

কেন যেন আদিলের শুভ্রাকে চেনাচেনা লাগে। কিন্তু কিছুতেই সে মনে করতে পারছিলো না যে কোথায় দেখেছে। হঠাৎ, ওর হাতের দিকে চোখ পরতেই একটা আংটি তার নজরে আসে। এই আংটি সে ওই নদীর পাড়ের মেয়ের হাতেও দেখেছিলাম। সে ভাবনায় পরে যায়।আদিলের ভাবনায় ছেদ পরে অনুভবের ডাকে কিরে উঠে আয় দেড়ি হয়ে যাচ্ছে তো। আদিল ও আর কিছু না ভেবে উঠে পরে গাড়িতে।

ওরা দুই গাড়িতে করে যাবে কক্সবাজার একটায় মেয়েরা আর ড্রাইভার আঙ্কেল যাবে আর আরেকটায় আদিলরা যাবে।

(চলবে)

পূর্ণতার মাঝেও অপূর্ণতার ছোয়া পর্ব-০৮

0

#পূর্ণতার মাঝেও অপূর্ণতার ছোয়া
#লেখিকাঃশুভ্রতা শুভ্রা
#পর্বঃ০৮

আদিল বলল, -“আমি ভাবছি শুভ্রতাকে অন‍্য কোনো জায়গা ঘুরতে নিয়ে গিয়ে সব বলব।”

রাজিব বলল, -“আমার মতে তা ঠিক হবে না। কারণ এখন তুই শুভ্রাকে অন‍্য কোথাও নিয়ে গেলে অনিক সন্দেহ করবে। আর ওকে কোনো ক্লুউ দেওয়া যাবে না।”

অনুভব বলল, -” আমার ও তাই মনে হয়। তুই আজকেই না হয় বাসায় গিয়ে ওকে সব সাজিয়ে বল।”

অভ্র বলল, -“হুম আজকেই বলল আর আঙ্কেল আন্টিও নেই বাসায় এখনি সুযোগ। যদি শুভ্রা কোনো রিএক্ট ও করে সেটা দেখে আঙ্কেল আন্টির মন খারাপ হওয়ার কোনো কারণ নেই।”

আদিল বলল, -“হুম তোরা ঠিক বলেছিস। বাসায় বলায় পারফেক্ট হবে।” আদিলের কথার মাঝখানেই অভ্রের ফোন বেজে উঠলো। সে দেখলো তার পিএ কল করেছে। অভ্র ওদের দিকে তাকিয়ে বলল,
-“আমার এখন যেতে হবে দোস্ত।”

আদিল বলল, -“যা তাহলে।আর, কাল না হয় তুই একবার আমাদের বাসায় যাস।”

অভ্র বলল ” আচ্ছা এখন তাহলে উঠি।” অভ্র চলে গেল। আদিল বলতে লাগলো-“রাজিব অনিকের ফুফুকে যে করেই হক খুজে বের করতে হবে আমাদের যে কোনো মূল‍্যে।”

অনুভব বলল, -” হুম ওই মহিলাই তো আসল কালপিট।” অনুভবের কথার মাঝেই রাজিবের ফোন বেজে উঠলো। ও দেখলো ওর আম্মু। ও কেটে দিলো। এরকম দুই তিনবার করার পর আদিল বলল, -” ধর আন্টি হয় তো কোনো দরকারে কল দিচ্ছে। এভাবে কেটে দেওয়া ঠিক হচ্ছে না।” আবার ফোন বেজে উঠতেই রাজিব কল রিসিভ করল। ওই পাশ থেকে ফোপানোর শব্দ ভেসে আসছে। রাজিব বসা থেকে দাড়িয়ে পরলো ওই পাশ থেকে ওর মা ফুপিয়ে ফুপিয়ে বলতে লাগলো,

-“বাবা তোর আব্বুর অবস্থা ভালো না। বাবা তুই এখনি হাসপাতালে চলে আয়। আমি কি করবো কিছুই বুঝতে পারছি না! হঠাৎ,করে কিভাবে যে বুকের ব‍্যথাটা বেড়ে গেলো।” রাজিবের হাত থেকে ফোন পরে গেলো ও ঠাস করে বসে পরলো। আদিল অনুভব জিঙ্গাসা করতে লাগল কি হয়েছে? কিন্তু রাজিব যেন পাথর হয়ে গিয়েছে। ওর কোনো হেলদোল নেয়। অনুভব খেয়াল করলো কল এখনো কাটেনি। সে কল ধরে সব শুনে তাড়াতাড়ি করে আদিলকে বিষয়টি জানালো। ওরা রাজিবকে নিয়ে তাড়াতাড়ি করে হাসপাতালে গেলো।

হাসপাতালে যেতেই রাজিবের মা দৌড়ে এসে রাজিবকে ধরে কান্না করতে লাগলো। রাজিব সেই আগের মতোই পাথর হয়ে দাড়িয়ে আছে। আদিল অনুভবকে বলল, -“আমাদেরকেই যা করার করতে হবে। ও এখন এগুলো করার পরিস্থিতিতে নেই। তুই যা শুনে আয় কি কি করতে হবে আমি ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলে আসি।” ওরা দুইজন ওদের কাজে চলে গেলো।

কিছুক্ষণের মধ্যে ওপারেশন শুরু হলো। ওরা সবাই বসে আছে ওপারেশন থিয়েটারের বাহিরে। অনুভব অনেক কিছু বলে রাজিবকে সান্ত্বনা দিচ্ছে। কিন্তু ওর যেন কোনো হুশ নেই তখন থেকে ওই একি জায়গায় একি রকম করে বসে আছে সে। রাজিবের মাও অনেক চেষ্টা করলেন কিন্তু ছেলেকে স্বাভাবিক করতে পারলেন। অতিরিক্ত আতঙ্কিত হয়ে পরেছে সে। তাই হয় তো সে পাথর হয়ে গিয়েছে।

ডাক্তার বেড়িয়ে এলেন। আদিল অনুভব আর রাজিবের মা দৌড়ে গেলেন যে কি অবস্থা সেটা শুনতে।

ডাক্তার মুখে কিছুটা হাসি ফুটিয়ে বললেন, -“এখন উনি ঠিক আছে। জ্ঞান ফিরতে সময় লাগবে। আর ওনাকে কোনো রকম চাপে রাখবেন না। যথাসম্ভব হাসিখুশি রাখার চেষ্টা করবেন।”

ডাক্তারের কথা শুনে সবাই একটা সস্থির নিশ্বাস ফেলল। আদিল বলল, -“আন্টি আঙ্কেল কি কিছু নিয়ে সবসময় চিন্তায় থাকেন। আপনি কি কিছু জানেন!”

রাজিবের মা ফুস করে নিশ্বাস ছেড়ে বললেন, -“বাবা দেখো আমাদের বয়স হচ্ছে। কতোদিন বাঁচি না বাঁচি তার কোনো ঠিক নেই। এই নিয়ে কতো মেয়ের ছবি দেখিলাম রাজিবকে কিন্তু ও একটাকেও পছন্দ করে নি,ও নাকি কাকে পছন্দ করে তাকে বিয়ে করবে। কিন্তু সেই মেয়ে নাকি রাজি না। আমার ছেলেটা দিনদিন যেন কেমন হয়ে যাচ্ছে। এখন আর ঠিকমতো অফিসেও বসে না প্রথম প্রথম ঠিকি বসতো। দিন যাচ্ছে সব কিছুকে অবহেলায় ফেলে দিচ্ছে। এরকম করতে থাকলে আমাদের কেমন লাগবে বলো।” বলেই ফুপিয়ে উঠলেন রাজিবের মা। আদিল বলল, -“আন্টি চিন্তা করবেন না আমি সব ঠিক করে দিবো।”

আদিল নুসরাতকে কল দিয়ে কিছু কথা বলল। নুসরাত আর শুভ্রা মিলে লুভার বাড়ির সামনে গিয়ে দাড়ালো। নুসরাত বলল, -“দোস্ত আমার ভয় করছে। আমরা যদি কিছু উল্টাপাল্টা করে ফেলি।”

শুভ্রা বলল, -“ধুরু তোর ভাই তো আঙ্কেল আন্টিকে মানিয়ে নিয়েছে। এখন খালি ওই মাইয়ারে তুলে নিয়ে যাওয়া। এই কল দে তো ওকে।” নুসরাত কল দিলো কিন্তু রিসিভ হচ্ছে না। নুসরাত বলল, -“দোস্ত ও তো কল রিসিভ করছে না। হয় তো ঘুমিয়ে গেছে। আর আঙ্কেল আন্টি তো জানে না যে আজকেই বিয়ে দিবো আমরা।”

শুভ্রা রাগান্বিত কন্ঠে বলল, -” ওই মাইয়া এতো ভয় করিস কেন আর এখন কয়টা বাজে রে!”

নুসরাত বলল, “রাত বারোটা ছুঁই ছুঁই।”

শুভ্রা বলল “যা তো একটা পাথর খুজে আন।”
নুসরাত বলল “কেন রে পাথর দিয়ে কি করবি” আর, কিছু বলতে পারলো না শুভ্রার তাকানি দেখে। তাড়াতাড়ি করে পাথর নিয়ে আসলো।

শুভ্রা পাথর নিয়ে জানালায় ছুড়ে দিলো।
কেবলি চোখ লেগে এসেছিলো লুভার। কাঁচা ঘুম ভেঙে যাওয়ায় লুভা বিরক্তিভাব প্রকাশ করলো। সে দেখলো ঘড়িতে বারোটা বাজে প্রায়। সে ভেবে পাচ্ছে না এতো রাতে কে এমন ফাজলামি করবে। সে বিরক্তিভরা মুখে জানালার সামনে গিয়ে দাড়ালো। নিচে তাকাতেই সে দেখতে পেলো নুসরাত আর শুভ্রা দাড়িয়ে আছে। সে অবাকের চরম পর্যায়ে পৌঁছে গেলো। এতো রাতে এই হারামি দুটো এখানে কি করছে। শুভ্রা কল রিসিভ করতে ইশারা করলো। লুভা গিয়ে ফোন নিয়ে দেখে বিশটা মিস কল উঠে আছে। সে তাড়াতাড়ি কল রিসিভ করলো। সে কিছু বলবে তার আগেই শুভ্রা বলল “তাড়াতাড়ি বারান্দায় শাড়ি বেঁধে নিচে নেমে আয়।”

লুভা বলল “কি বলছিস এগুলো তোর মাথা ঠিক আছে তো!”

শুভ্রা বলল “আমার মাথা ঠিক আছে। তুই আসবি না আমরা যাবো।”

লুভা বলল “আচ্ছা বাবা আসছি কিন্তু কেন কি করবো গিয়ে!”

শুভ্রা রাগান্বিত কন্ঠে বলল “কেন নাচবি”, আয় বলছি তাড়াতাড়ি বলেই কট করে কল কেটে দিলো শুভ্রা।

লুভা আর কোনো উপায় না পেয়ে শুভ্রার কথা মতো নিচে নেমে এলো। লুভা নিচে নেমে কিছু বলতে নিবে তার আগেই অভ্র গাড়ি নিয়ে ওদের সামনে রেখে বলল “তাড়াতাড়ি উঠে আয়।”

শুভ্রা লুভার হাত ধরে গাড়িতে নিয়ে বসালো। লুভা কিছু বলবে তার আগেই শুভ্রা বলল, “এখন কথা বললেই মার খাবি চুপ করে থাক।” লুভা আর কিছু বলল না। চুপ করেই রইলো।

কিছুক্ষণ পর ওরা হাসপাতালে এসে পৌঁছালো। দেখলো অনুভব দাড়িয়ে আছে। অভ্র নেমে অনুভবের কাছে গেলো। ওরাও অভ্রের পিছে পিছে গেলো।

লুভা নুসরাতকে বলল “ওই আমরা হাসপাতালে কি করতে আসছি!”

নুসরাত বলল “আমরা আসছি বিয়ে দিতে।”

লুভা বলল “কি বলিস। কার বিয়ে আর হাসপাতালে বিয়ে কেন?কেমনে কি!”

নুসরাত ইশারায় লুভাকে সামনে তাকাতে বলল লুভা দেখলো রাজিব আর ওর মা বসে আছে। রাজিবকে কেমন যেন অদ্ভুত লাগছে। ওর মায়ের চোখ মুখও ফুলে আছে।

আদিল ওদের আসতে দেখেই অনুভবকে বলল “কিরে কাজী কোথায়?”

অনুভব বলল “কাজী ঘুমিয়ে পরছিলো ওকে বাসা থেকে তুলে নিয়ে আসছি। এই তো কাজী।”

আদিল লুভাকে নিয়ে একটু সাইডে গিয়ে কিছুক্ষণ কথা বলল। ওর বাবার সঙ্গে আদিলের যা কথা হয়েছে তাও আদিল রেকর্ড করে রাখছিলো। সেটাও শুনালো। আর বলল “আর না করো না প্লীজ।”

লুভা কিছু বলল না চুপ করে রইলো। কারণ যেখানে ওর বাবা মার আপত্তি নেই। সেখানে আর রাজিব সত্যি তাকে ভালোবাসে।

আদিল কাজী সাহেব কে বললেন “নিন বিয়ে শুরু করুন।”

শুভ্রা মনেমনে বলল (কি জামাই আমার কতো সহজে সবাইকে মানিয়ে নিলো। )

বিয়ে শেষে আদিল অভ্রকে বলল “তুই এখানে থাক।” আর অনুভব “তুই আন্টি লুভা আর রাজিবকে রাজিবদের বাসায় রেখে আয়। কাল সকালে লুভার বাসায় অনুভব আর অভ্র গিয়ে বুঝিয়ে বলবি সব। আর আঙ্কেলের জ্ঞান ফিরলেই লুভা আর রাজিবকে হাসপাতালে নিয়ে আসবি।” আদিল রাজিবের মাকে উদ্দেশ্য করে বলল, -“আন্টি আপনি বাসায় গিয়ে রেস্ট নেন। ওরা এখানে থাকবে।”

আদিল ওদের সবাইকে গাড়িতে দিয়ে এসে শুভ্রা আর নুসরাতকে বাসায় নিয়ে যাওয়ার জন‍্য হাসপাতালের ভিতরে আসলো। নুসরাত আর অভ্র কথা বলছিলো। আদিল আশেপাশে চোখ রাখলো কিন্তু……..

( চলবে )

পূর্ণতার মাঝেও অপূর্ণতার ছোয়া পর্ব-০৭

0

#পূর্ণতার মাঝেও অপূর্ণতার ছোয়া
#লেখিকাঃশুভ্রতা শুভ্রা
#পর্বঃ০৭

আদিল অনিকের কলার ধরে বলা শুরু করলো, -“এখন একটু শান্তি দে আমাকে। অনেক তো হলো এবার রাখ না। ও আমার জান ওকে আমার কাছেই থাকতে দে না।

অনিক আদিলকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে সে বলতে লাগল,

-“এতো সহজে কি সবকিছু ঠিক করা যায় বন্ধু। ঠিক করার হলে তো আগেই করতাম। এখন দেখ আগে আগে কি হয়। বলেই হাসতে লাগল। যা দেখ শুভ্রার কাছে তো তুই খারাপ হয়ে গেলি। সামান্য টিচারের সঙ্গে কথা বলায় এতো রাগ। বলে আরো বেশি হাসতে লাগল।”

আদিল আর কিছু না বলে দৌড়ে ওর কেবিনের দিকে গেলো। ওর এখন ভয় হচ্ছে শুভ্রার কাছে কি সে দিন দিন খারাপ হয়ে যাচ্ছে। এরকম হতে থাকলে যদি শুভ্রা ওকে ছেড়ে চলে যেতে চায়। আদিল আবার নিজেই নিজেকে বলছে এতো সহজ নাকি ছেড়ে যাবে বললেই হচ্ছে নাকি সে তাকে কখনো ছেড়ে যেতে দিবে না। আদিল ওর কেবেনি গিয়ে দেখলো শুভ্রা ওর চেয়ারে বসে পা তুলে টিস্যু বক্স কাছে নিয়ে কান্না করছে আর বলছে,

” আমি আর কখনো ওনার সঙ্গে কথা বলব না। আজকেই বাবাকে বলে দিবো। সেই প্রথম থেকে আমাকে বকেই চলছে। শুভ্রতা এটা কেন করো? ওটা কেন করো? সে জানেনা যে আমি বকা সহ‍্য করতে পারিনা।”

আদিল দেখলো অলরেডি অনেকগুলো টিস্যুর দফারফা করে ফেলেছে শুভ্রা। তার মাথায় কি যেন খেলতেই সে কেবিনের দরজা রেখে দৌড়ে কোথাও চলে গেলো।

মিনিট দশেক পর দরজার শব্দ হতেই শুভ্রা চোখ তুলে দরজার দিকে তাকালো। এ কি দরজায় টেডি আর চকলেট হাতে নিয়ে কেউ দাড়িয়ে আছে। শুভ্রা খেয়াল করে দেখলো এতো আদিল। টেডির গায়ে সরি লেখা। শুভ্রা হেসে দিলো। কারণ আদিল এতো বড় টেডি নিয়ে এসেছে আর চকলেট নিয়ে এসেছে যে তাকে দেখাই যাচ্ছে না। শুভ্রার হাসির শব্দ শুনে আদিল টেডির পিছন থেকে একটু মাথা বের করে ঠোঁট উল্টিয়ে বলল,

-“সরি তোমাকে বকা দেওয়ার জন‍্য। আসলে তখন মাথা গরম হয়ে গেছিলো।”

শুভ্রা মুখ বাকালো। আদিল গুটিগুটি শুভ্রা সামনে গিয়ে দাড়ালো। টেডি আর চকলেট গুলো পাশের চেয়ারে রেখে। হাত থাকা ব‍্যাগটা শুভ্রার হাতে দিয়ে বলল – “আজকে আমরা বিকালে ঘুরতে যাবো ঠিক আছে।( আদিল শুভ্রার গাল টেনে বলল।) এবার শুভ্রতা হাসো দেখি।”

শুভ্রা নাক টেনে হালকা হেসে বলল, -” ঠিক আছে।”

আদিল বলল, -“আচ্ছা চলো এখন বাসায় যাই।”
শুভ্রা মাথা নাড়িয়ে “হ‍্যাঁ বলল।”

——————–

সূর্য অস্ত যাবে যাবে এমন অবস্থা। চারিদিকে পাখিদের বাড়ি ফেরার তাড়া পরে গিয়েছে। নদীর উপর সূর্য অস্ত যাওয়ার সুন্দর দৃশ্য ফুটে উঠেছে। এই পরিবেশে শুভ্রা আদিলের কাধে মাথা রেখে বসে আছে। শুভ্রা প্রথম রাখতে না চাইলেও আদিলের জোরাজরিতে আদিল কাধে মাথা রেখেছে। প্রথমের দিকে শুভ্রার কেমন কেমন লাগলেও এখন বেশ ভালোই লাগছে এইভাবে পরিবেশটা উপভোগ করতে। আদিল বলল,

-“শুভ্রা বাদাম খাবে।”

শুভ্রার নদীর পানির দিকে তাকিয়েই বলল,

-” হুম ”

আদিল সযত্নে বাদাম ছিলিয়ে শুভ্রাকে দিছে আর শুভ্রা খাচ্ছে। সন্ধ‍্যা নেমে এসেছে। চারিপাশে অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে আসছে। শুভ্রা আর আদিল হাটছে ব‍্যস্ত রাস্তার ফুটপাত দিয়ে। আদিল আজ গাড়ি আনেনি। রিক্সায় করে এসেছিলো তারা আদিলের ইচ্ছায়। এখন আবার হেটেও চলছে আদিলের ইচ্ছায়। শুভ্রা না করে নি তারও ভালোই লাগছে। ফুটপাতে পাশের ফুচকার দোকানের সামনে দাড়িয়ে পরলো শুভ্রা আর তাকালো আদিলের দিকে। আদিলও এক গাল হেসে দোকানদকে বলল,

“মামা দেন ফুচকা ”

দোকানদার হাসিমুখে বলল,

-” আদিল বাবা আর শুভ্রা মা যে কতোদিন পর তোমাদের আবার দেখলাম বলো তো। তা শুভ্রা মা কি আবার কিছু নিয়ে রাগ করেছিলো নাকি। আর প্রতিসময়ের মতো আজকেও কিন্তু তোমাদের একদম ঠিকঠাক লাগছে। মনে হচ্ছে একজন আরেকজনের জন‍্যই তৈরি। এই নেও তোমাদের ফুচকা।”

শুভ্রা চোখ ছোট ছোট করে দোকানদারের দিকে তাকিয়ে আছে। কি বলছে এই লোক! ওকেই বা কিভাবে চিনলো? আর ও রাগ করেছিলো বলে আদিল তাকে এখানে নিয়ে এসেছে সেটাই বা কিভাবে জানলো? আর এই লোককে সে আগে দেখছে বলে তো মনে পরছে না।

আদিলের কন্ঠে শুভ্রার ভাবনায় ছেদ পরলো। সে প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে আদিলের দিকে তাকালো। আদিল বিষয়টি বুঝতে পেরে বলল,

-” মামা হয় তো অন‍্যকারো সঙ্গে আমাদের গুলিয়ে ফেলেছেন বাদ দেও তো।” শুভ্রা বলল-
“কিন্তু”

আদিল শুভ্রাকে থামিয়ে দিয়ে বলল, -“এখন খাও তো। কোনো কিন্তু না।”

শুভ্রার মনের মধ্যে প্রশ্ন রয়েই গেল। যদি অন‍্য কারো সঙ্গে গুলিয়েই ফেলেন। তাহলে নাম। শুভ্রা আদিলের দিকে তাকালো। দেখলো আদিল খাচ্ছে আর ইশারায় শুভ্রাকেও খেতে বলছে। শুভ্রা আর ওই বিষয় নিয়ে ভাবলো না। সে খেতে লাগল। খাওয়া শেষে বিল মিটিয়ে আদিল শুভ্রার হাত ধরে আবার হাটা শুরু করলো। আদিল একটা রিক্সা ডাকলো। শুভ্রাকে সেখানে বসিয়ে নিজেও তার পাশে বসে বাসার পথে রওনা দিলো। আদিল শুভ্রাকে বলল,

“কেমন গেলো ঘুরাঘুরি ভালো লেগেছে?”

শুভ্রা হাসি মুখে জবাব দিলো,
-” হুম অনেক ভালো লেগেছে।”

————–

আদিল শুভ্রাকে বাসায় রেখে অনুভব রাজিব আর অভ্রের সঙ্গে দেখা করার জন‍্য একটা কফি সপে গেলো।

আদিল বসতেই অনুভব বলল, -“কিরে শুভ্রাকে তুই নাকি তোর চেহারা দেখিয়ে দিয়েছিস।”

আদিল বলল, -“আরে বাবা কেবল আসলাম একটু বসতে তো দিবি। তা না পেচাল শুরু করছিস। যাইহোক বলছি অভ্র শুভ্রা অবস্থা কি বুঝছিস! আমার মনে হয় ওকে সবকিছু বলা দরকার। কারণ যেহেতু ও মাঝখানে দিনগুলো ভুলে গেছে সেহেতু অনিকের সঙ্গে ওর বিয়ের কথা ছিলো কিন্তু কি কারণে হয় নি বা কেন হয় নি এটা মেবি ওর মাথায় আরো চাপ সৃষ্টি করছে। আজকে ওই ফুচকার দোকানদার মামা আমাদের অনেক দিন পর দেখে কথা বলা শুরু করছিলেন । যা বুঝলাম শুভ্রতা এটা নিয়ে অনেক ভাবনাচিন্তা করছে। আর অনিক ও বুঝে গেছে যে আমরা আবার বিয়ে করছি। ওর বাম হাতকে তো ও নিজের হাতে মেরে ফেলছে। এখন ওর ডান হাতকে তোদের খুজে বের করতে হবে। কারণ, আমি যে খবর পেয়েছি সে অনুযায়ী রনি অনিককে খবর দিতে পারেনি বলেই খুন করেছে। আর বিয়ের কথা অন‍্যকেউ খবর দিয়েছে। আর তখন ও অনিক জানতো না যে কার সঙ্গে বিয়ে হয়েছে। কারণ যেই নাম্বার থেকে মেসেজ আসছে সেটা অনিকের কোনো নাম্বার না আর সম্ভব ও না কারণ তখন অনিক ক্লাবে ছিলো। আর সেখানে আমি নজর রাখছিলাম ও ফোন ধরার মতো পরিস্থিতিতেও ছিলো না। তাই আমার মনে হচ্ছে আরো কেউ আছে। ওর মাথা হিসেবে কাজ করছে। আমার কেন যেন মনে হচ্ছে ওই দিন এক্সিডেন্টে ওর ফুফু লামিয়া সেন মারা যায় নি। ওনি এখনো জীবিত।”

রাজিব বলল, -“হুম ওখান থেকে তো ওনার লাশ ও উদ্ধার করা যায় নি।”

অভ্র বলল, -“আদিল শোন আমার মনে হয় খেলা ঘুরে যাওয়ার আগেই তুই শুভ্রাকে বিষয়গুলো বল। আর আমার মনে হয় না এতে ওর কোনো ক্ষতি হবে। ওর আরো বেশি ইমপ্রুভ হবে।”

অনুভব বলল, -“কিন্তু আদিল তুই তো শুভ্রাকে প্রথমে দেখা দিতে চাস নি তাহলে এখন!”

আদিল বলল, -“হুম কারণ তখন মনে করেছিলাম শুভ্রতা হয় তো আমাকে দেখে অতিরিক্ত হাইপার হয়ে পরবে হয় তো আমাকে ঠিক মতো মনে না করতে পেরে অস্থির হয়ে পরবে। আর ওটা যে আমার বাসা সেটা কারো জানার কথা না । কারণ আমি বাসাটা বিয়ের আগেরদিনই কিনেছি। আর আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে অনিকের লোক আমাদের নজরে রেখেছে। তাই আমি মাক্স পরে ছিলাম। যাতে অনিক মনে করে আমি শুভ্রতাকে বিয়ে করিনি, অন‍্যকেউ করেছে। আমার প্লান কাজেও আসে। আমি শুভ্রাকে ওর বাসায় নামিয়ে দেওয়ার কিছুক্ষণ পরেই আমার ফোনে মেসেজ আসে যে তুই তো

” শুভ্রাকে নিজের করতে পারলিনা। কি করলি এতো কিছু করে।”

কিন্তু দুইদিন আগে হঠাৎ করে মেসেজ আসে যে,

“তুই আমার সঙ্গে খেললি তো এখন আমার পালা। শুভ্রাকে তুই বিয়ে করছিস না আবার। আগেরবারের মতো দেখ এবার ও আমি তোদের কি অবস্থা করি। কিন্তু এবারের খেলার পর তোরা আর কোনোদিন এক হতে পারবি না আগের শুধু একটুমাএ ভুলের জন‍্য আজ শুভ্রা আমার হয় নি।”

ওটা দেখার পর আমি দৌড়ে ভার্সিটি যাই তখন দেখি শুভ্রতা আর অনিক বসে আছে। তখন আমার প্রচণ্ড রাগ হয়। এইরকম করে দুইদিন আমি শুভ্রতার সঙ্গে খারাপ ব‍্যবহার করে বসি।

অনুভব বলল, -“তাহলে এখন কি করবি ভাবছিস।”

( চলবে)

পূর্ণতার মাঝেও অপূর্ণতার ছোয়া পর্ব-০৬

0

#পূর্ণতার মাঝেও অপূর্ণতার ছোয়া
#লেখিকাঃশুভ্রতা শুভ্রা
#পর্বঃ০৬

নুসরাত বলে উঠলো, -“এই তুই তো দরজা বন্ধ করেও ক্রেয়ার দেখাতে পারিস। দরজা খুলে এগুলো কি?”

আদিল পিছনে তাকিয়ে দেখলো দরজার সামনে নুসরাত দুটো খাবার প্লেট হাতে নিয়ে চোখ খিচে বন্ধ করে দাড়িয়ে আছে। আদিল নুসরাতের কাছে গিয়ে নুসরাতের কান ধরে বলতে লাগলো,

-“খুব কথা বলতে শিখে গেছিস তাই না। আমি ক্রেয়ার দেখাই আর যাই করি তোর কি আর তুই নক করে ঢুকতে পারিস না।” নুসরাত মুখ বাকিয়ে বলল,

-“আমার হাত বন্ধ দেখতে পারছিস না। আর আমি কি জানি নাকি। যাইহোক নে এগুলো খেয়ে নিয়ে আমাকে উদ্ধার কর।” (বেডের পাশের টেবিলে প্লেট রাখতে রাখতে বলল কথাটা।) আড়চোখে শুভ্রার দিকে তাকিয়ে বলল কাল ভার্সিটি চল ধামাকা আছে তোর জন‍্য। বলেই নুসরাত রুম থেকে চলে গেল। শুভ্রা নুসরাতের কথায় সেরকম গুরুত্ব দিলো না। সে বেড থেকে উঠে সোফার দিকে যেতে নিবে তখনই আদিল এসে কোলে তুলে নিল। শুভ্রা বলল,

-“এই কি করছেন?”
আদিল বলল, -“তোমাকে আমি উঠতে বলছি, যে উঠছো। শুভ্রা অমতা অমতা করে বলল, -“না মানে খেতে হবে না।” আদিল বলল, -“হুম” তাই বলে সোফায় বসিয়ে দিলো শুভ্রাকে। শুভ্রা খাওয়া শুরু করে দিয়েছে। কিন্তু আদিল খেতে পারছে না ওর হাতের জন‍্য। চামচও ধরতে পারছে না। আদিল কিছু না বলে হাতের দিকে তাকিয়ে চুপ করে আছে। শুভ্রা আদিলের দিকে তাকিয়ে বিষয়টি বুঝতে পেরে আদিলের মুখের সামনে খাবার ধরল। আদিল একবার শুভ্রার দিকে আর একবার খাবারের দিকে তাকাচ্ছে। শুভ্রা বলল,

-“নিন খেয়ে নিন। আর চুপ করে থাকতে হবে না।” আদিলের মুখ চিকচিক করে উঠল। চোখদুটো টলমল করছে। শুভ্রা বলল,

-“কি হলো কান্না করছেন কেন কি হয়েছে? ”
আদিল নিজেকে স্বাভাবিক করে বলল,

-“কিছু না।”
শুভ্রাও আর মাথা ঘামালো না। খাওয়া শেষ হলে আদিল প্লেট নিয়ে চলে গেল। আর শুভ্রা ঘুরে ঘুরে রুম দেখতে লাগলো। রুমটা তার ভালোই লেগেছে। সে গুটিগুটি পায়ে বারান্দায় গিয়ে দাড়ালো।

আদিল রুমে এসে দেখলো শুভ্রা নেই। আদিলের কপালে চিন্তার রেখা ফুটে উঠলো। সে জোরে জোরে ডাকতে লাগলো

-“শুভ্রতা শুভ্রতা কোথায় তুমি?”

আদিলে এমন ডাকে শুভ্রা কেপে উঠল। সে তড়িঘড়ি করে রুমে এসে বলল, -” কি হয়েছে এমন করছেন কেন?” আদিল দৌড়ে শুভ্রার কাছে গেল আর বলল,

-“আমি তোমাকে একখানে থাকতে বলছি না। এতো ছোটাছোটি করা লাগবে কেন? যাও বেডে গিয়ে চুপ করে বসো।” শুভ্রা মুখ বাকিয়ে বলল,

-“একটু বারান্দায় ই তো গিয়েছি এতো বকা লাগবে তাই বলে। যান আপনার সঙ্গে আর কথাই নেই।” বলেই ধুপধাপ পা ফেলে বেডে গিয়ে বসলো। আদিল শুভ্রার কথায় মুচকি হাসলো সে বেডের পাশের ড্রয়ার থেকে এক বক্স চকলেট বের করে তার থেকে দুটো চকলেট বের করে আবার ড্রয়ারে রেখে দিলো বক্সটা। শুভ্রা আড় চোখে সব দেখলো। আদিল শুভ্রার দিকে চকলেট এগিয়ে দিয়ে বলল,
-“এই নেন মেডাম আর ড্রয়ারের সব চকলেট এ আপনার কিন্তু আমি যখন যেটুকু দিবো সেটুকুই শুধু নিবেন বুঝলেন। এগুলো বেশি খাওয়া ঠিক না।” শুভ্রা মুখ বাকিয়ে বলল,
-“লাগবে না কোনো চকলেট।” আদিল মুচকি হাসি দিয়ে বলল,

-“আচ্ছা থাক তোমার আর খেতে হবে না। আমিই না হয় খাই।”

বলেই আদিল যেই খেতে নিবে তখনই শুভ্রা এসে আদিলের হাত থেকে চকলেট নিয়ে নিলো। আদিল হাসলো আর বলল,

-“কি হলো তোর লাগবে না বলে তাহলে এখন কি করলে এটা!”

শুভ্রা বলল,-“আমার ইচ্ছা আমি যা ইচ্ছা তাই করবো।”

আদিলও আর কথা বাড়ালো না। শুভ্রাকে রেস্ট নিতে বলে সে রুম থেকে বেড়িয়ে গেল।

নুসরাত গুটিগুটি পায়ে এসে দিলো শুভ্রার কানের কাছে এসে হাউ করে উঠলো। শুভ্রা পিছনে তাকিয়ে দেখলো নুসরাত দাঁত কেলিয়ে হাসছে। শুভ্রা রেগে গেলো। শুভ্রা নুসরাতকে মারার জন‍্য ওর পিছনে দৌড়াতে লাগল। শেষ পর্যায়ে গিয়ে শুভ্রা আর না পেরে বলল,-“থাম ভাই হয়েছে” দুইজনই হাপিয়ে দিয়ে বেডে সুয়ে পরল। দুইজন দুইজনের দিকে তাকিয়ে অট্টহাসিতে ফেটে পরলো। শুভ্রা চোখ ছোট ছোট করে বলল,

-“কিরে তুই এখানে কি মনে করে। আর তোর ওই শয়তান ভাই কোথায় গেলো।” নুসরাত ভ্রু উচিয়ে বলল,

-“কেন রে তুই আমার ভাই মিস করছিস নাকি। সে যাইহোক আমার ভাইটাই আমাকে তার বউয়ের কাছে পাঠালো। নে ঘুমা এখন কাল সকালে তোর জন‍্য আবার চমক রয়েছে।” শুভ্রা মুখ বাকিয়ে বলল,

-“আজাইরা পেচাল।” দুইজনই শুয়ে পরল। নুসরাত ঘুমিয়ে গেছে কিন্তু শুভ্রার কিছুতেই ঘুম আসছে না। সে অনেকক্ষণ যাবত এদিক ওদিক করে শুয়ে রইলো কিন্তু না ঘুম কিছুতেই তার চোখে ধরা দিচ্ছে না।

সে উঠে বারান্দার দিকে গেল। মৃদু বাতাস বইছে চারিদিকে,চারিদিকে নিরব মানুষের কোনো সারা শব্দ ও নেই। শুভ্রা দাড়িয়ে আছে বাহিরের দিকে তাকিয়ে তার এই পরিবেশ ভালোই লাগছে। সে খেয়াল করলো একটা কালো ছায়া বাড়ির মেইন দরজার কাছে দাড়িয়ে আছে। শুভ্রার বিষয়টা খটকা লাগল। কার ছায়া ওটা। হঠাৎ, করেই লোকটির সামনে একটি গাড়ি এসে দাড়ালো। লোকটি গাড়িতে উঠতে নিয়েও পিছনে ঘুরে আবার একবার তাকিয়ে চলে গেলো। শুভ্রার ব‍্যাপারটা যেন কেমন লাগল! সে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো রাত আড়াইটা বাজে। সে চিন্তাভরা মস্তিষ্কের বারান্দায় রাখা দোলনায় বসলো।

——————-

সকালের মিষ্টি রোদ জানালার পর্দা ভেদ করে চোখে পরতেই ঘুম ভেঙে গেলো শুভ্রার। সে খেয়াল করলো কেউ তাকে আলতো করে জরিয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছে। শুভ্রা দেখলো এটা আর কেউ না আদিল। কিন্তু কেমনে কি তার ঠিক মনে আছে সে বারান্দায় ছিলো আর নুসরাতই বা কোথায় গেল। শুভ্রার ভাবনার মধ্যেই আদিল চোখ বন্ধ রেখেই বলে উঠলো,

-“এতো ভাবার কিছুই নেই। আমিই তোমাকে বারান্দা থেকে রুমে নিয়ে আসছি আর নুসরাতকে ওর রুমে পাঠিয়ে দিয়েছি। এখন একটু চুপ করে শুয়ে থাকো তো। আমি ঘুমাই।”

শুভ্রা বলল, -“আপনি ঘুমাবেন তো ঘুমান আমাকে এইভাবে জরিয়ে রাখতে হবে কেন। দেখি ছাড়েন আমি উঠব।”

আদিল আরো শক্ত করে পেচিয়ে ধরলো শুভ্রাকে। শুভ্রা ছাড়ানোর চেষ্টা করলো কিন্তু পারলো না। আদিলের সঙ্গে না পেরে সে চুপ করে রইলো।

কিছুক্ষণ পরেই দরজায় নক করার আওয়াজে আদিল বিরক্ত হলো নুসরাত ডাকছে ভার্সিটি যাওয়ার জন‍্য তাড়া দিচ্ছে সে। আদিল চরম বিরক্ত নিয়ে বলল,

-“এই তুই যাবি এখান থেকে নাকি মার খাবি।” আদিলের কথা বলার কিছুক্ষণের মধ্যেই দরজায় নক করার শব্দ বন্ধ হয়ে গেল। আদিল কিছু না বলে শুভ্রাকে ছেড়ে দিলো। শুভ্রাও কিছু না ওয়াশরুমে গেল ফ্রেশ হতে।

——————-

খাবার টেবিলে বসে টোকাটুকি করছে শুভ্রা আর নুসরাত। আদিল আসলেই তারা নাস্তা শুরু করবে। আদিলে মা বাবা কিছু কাজে বিদেশ গেছেন। কয়েকমাস পর ফিরবেন। আদিল একদম ফরমাল লুকে এসে হাজির। সে চেয়ার টেনে বসে খাওয়া শুরু করে দিয়েছে। আর শুভ্রা হা করে আদিলকে দেখছে। আদিলকে ব্লাক শার্টে এতো সুন্দর লাগছে যে বলার বাহিরে। নুসরাত আস্তে করে শুভ্রার মুখ বন্ধ করে বলল,
-“তোরই জামাই পরে দেখলেও চলবে এখন খেয়ে নে।”

শুভ্রা নুসরাতের কথায় লজ্জা পেলো। আদিল মিটিমিটি হাসছে। খাওয়া শেষে আদিল বলল, -” নুসরাত তুই আর শুভ্রা বাড়ির একটা গাড়ি নিয়ে চলে যা। আমার কিছু কাজ আছে আমি যেতে পারছি না।” বলেই আদিল ওর রুমে চলে গেল শুভ্রা আদিলকে মুখ বাকিয়ে মনে মনে বলল, -“ঢং”

ভার্সিটিতে এসে লুভার মুখে শুনলো আজকে নাকি একসঙ্গে তিনজন টিচার নতুন জয়েন করবে। শুভ্রা বসে আছে ক‍্যান্টিনে এমন সময় রাইসা ওদের ক্লাসমেট এসে বসলো তাদের পাশে। সে এসেই বলতে শুরু করলো, -” জানিস নতুন তিন টিচারের মধ্যে দুইজনই ছেলে। দুইজনই একদম ক্রাশ খাওয়ার মতো সুদর্শন। আমি তো দেখেই ক্রাশ খাইছি।” শুভ্রা লুভা নুসরাত ওর কথায় পাত্তা না দিয়ে ওরা ক্লাসে চলে গেলো। ওরা ক্লাসে আসার কিছুক্ষণ পরেই প্রিন্সিপাল আসলো তাদের ক্লাসে দুটো ছেলে আর একটা মেয়েকে নিয়ে। শুভ্রা বিষয়টিতে অনেকটাই অবাক হলো কারণ ছেলে দুইটাকেই শুভ্রা চেনে একটা অনিক আর একটা আদিল। কিন্তু আদিল কিজন‍্য সেটাই তো বুঝতে পারছে না শুভ্রা। শুভ্রা নুসরাতের দিকে তাকালো। নুসরাত দাঁত কেলিয়ে হেসে শুভ্রার কানেকানে বলল,

-“এটাই তোর চমক”

প্রিন্সিপাল সবার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলেন। মেয়ে টিচারের নাম হচ্ছে তাসনীম ইসলাম। আদিলকে ক্লাসের দ্বায়ীত্বটা দিয়ে প্রিন্সিপাল স‍্যার ওনাদের নিয়ে চলে গেলেন। আদিল ওর সানগ্লাস খুলে শার্টের সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখলো। শুভ্রা এতোক্ষনে খেয়াল করলো ক্লাসের সকল মেয়ে বড়বড় চোখ নিয়ে আদিলের দিকে তাকিয়ে আছে। শুভ্রা বিষয়টা বিরক্ত লাগছে এতো কেন তাকিয়ে থাকা লাগবে আজব। আদিল ক্লাস শেষ করিয়ে যেতে নিয়ে আবার শুভ্রা কাছে এসে দাড়ালো আর বলল,

-“আমার কেবিনে এসো কথা আছে।”

বলেই আদিলে বের হয়ে গেল। শুভ্রা মুখ বাকিয়ে বলল, -“ঢং এর কথা। যাবো না আমি তোর কাছে যাহ।”

লুভা বলল, -“যা দোস্ত তাছাড়া আবার ভাইয়া রাগ করবেনি।”

শুভ্রা বলল, -” করুক আমার কি তাতে?”

নুসরাত বলল, -“দোস্ত ভাইয়া কিন্তু একবার রেগে গেলে তোর খবর করে ছাড়বে।”

শুভ্রা বলল, -“হুম তোর ভাই আমার খবর করবে আর আমি কি ছেড়ে দিবো নাকি। এখন চুপ থাকবি নাকি তোকেও দুচারটা দেওয়া লাগবে।”

নুসরাত আর কিছু বলল না লুভাও চুপ করে রইল। ওরা তিনজন মিলে গিয়ে ক‍্যান্টিনে বসল। শুভ্রা বলতে শুরু করলো,

-“কিরে ওই হাবলুকে তো আজকে দেখছি না। সকাল থেকে কোনো খবর নাই। মরলো নাকি!”

লুভা বলল, -” কি যে হয় তো মরছে।”

লুভার কথার মাঝখানেই ওর ফোন বেজে উঠলো। লুভা দেখলো ওর আম্মু কল করেছে। লুভা কল রিসিভ করে করে কানে ধরতেই ওর মা বলল,

-“তুই যেখানেই থাকিস না কেন এখনি বাসায় আয়। আমি কোনো কিছু শুনতে চাই না।” বলেই কল কেটে দিলো।

লুভা তাড়াতাড়ি করে ব‍্যাগ নিয়ে যেতে লাগলো। শুভ্রা ওকে আটকিয়ে বলল,

-“কিরে আন্টি কি বলল?তোকে এমন অস্থির লাগছে কেন? কি হয়েছে?”

লুভা বলল, -” জানিনা কিছু বলে নি আমাকে শুধু বলল তাড়াতাড়ি বাসায় যেতে।”

শুভ্রা বলল, -“যা তাহলে দেখ কি হলো!”

নুসরাত বলল, -” কল করে জানাস কি হয়?”

লুভা চলে গেলো। নুসরাত আর শুভ্রা কথা বলছিলো এমন সময় নুসরাতের ও ফোন বেজে উঠলো। অভ্র কল করেছে। সে শুভ্রার দিকে তাকাতেই শুভ্রা বলল, -” যা কথা বল।” নুসরাত একটা হাসি দিয়ে ওখান থেকে সরে গেল।

শুভ্রা বসে বসে ফোন ঘাটাঘাটি করতে লাগলো। হঠাৎ, অনিক এসে শুভ্রার পাশে বসলো। শুভ্রা ফোন রেখে অনিকের সঙ্গে কথা বলতে লাগলো।

আদিল অনেকক্ষণ ধরে শুভ্রাকে খুজছে। ওর কি পরিমাণ সাহস হয়েছে যে ও ওর কথা না শুনে। আদিল ক‍্যান্টিনের দিকে এগিয়ে আসতেই ওর চোখ পরে অনিক আর শুভ্রা বসে একসঙ্গে গল্প করছে। এই দৃশ্য দেখে আদিলের মাথা রক্ত উঠে যায় ও হনহন করে শুভ্রার সামনে গিয়ে দাড়ায়।

শুভ্রা আদিলের দিকে তাকাতেই ভয়ে কুকরে যায় কারণ, আদিলে রাগের কারণে থরথর করে কাপছে,ওর নাক আগা লাল বর্ণ ধারন করছে, চোখ দিয়ে যেন আগুন বের হচ্ছে। আদিল অনেকটা চেচিয়ে বলে উঠল,

-“তোকে আমি আমার কেবিনে ডাকছিলাম না কথা বলার জন‍্য আর তুই এখানে অন‍্য ছেলের সঙ্গে কথা বলছিস। কি মনে করিস নিজেকে কিছু বলছিনা দেখে যা খুশি তাই করবি। কালকেই মানা করছি আর আজকেই আবার। যা এখান থেকে। সোজা আমার কেবিনে যাবি। আমি যেন আর একমুহূর্ত ও তোকে এখানে না দেখি।”

শুভ্রা কিছু না বলে ওখান থেকে চলে গেল। আদিল অনিকের কলার ধরে বলা শুরু করলো,

(চলবে)

পূর্ণতার মাঝেও অপূর্ণতার ছোয়া পর্ব-০৫

0

#পূর্ণতার মাঝেও অপূর্ণতার ছোয়া
#লেখিকাঃশুভ্রতা শুভ্রা
#পর্বঃ০৫

শুভ্রা পিছনে তাকিয়ে দেখলো অভ্র দাড়িয়ে আছে। সে চোখ ছোট ছোট করে অভ্রের দিকে দৃষ্টি দিল। কারণ অভ্র প্রয়োজন ছাড়া সহজে শুভ্রার রুমে আসে না। আর তার উপর হাতে চকলেটের বক্স।

শুভ্রার এমন তাকানিতে অভ্রের অসস্থি ফিল হচ্ছে। সে শুভ্রার পাশে বসে শুভ্রার দিকে না তাকিয়ে চকলেট গুলো শুভ্রাকে দিল। আর আমতা আমতা করে বলল,

-“কেমন আছিস” অভ্রের এমন প্রশ্ন শুনে শুভ্রার কপাল কুচকে গেল সে অভ্রের কপাল গলায় হাত দিল। কই শরীর তো ঠিক আছে তাহলে!শুভ্রা চিন্তিত কন্ঠে বলল,

-“ভাইয়া তোর কি কিছু হয়েছে? শরীর খারাপ! কিছু কি বলবি আমায়? ” অভ্র ফুস করে নিশ্বাস ছেড়ে বলল,

-“আজকে কি তুই তোর বান্ধুবীদের সঙ্গে কথা বলছিলি।” শুভ্রা ভ্রুযুগল দ্বিগুণ কুচকিয়ে বলল,

-“কোন বান্ধবীর কথা বলছিস রে তুই ভাইয়া, ঝেড়ে কাশ তো।” অভ্র ঘামতে শুরু করেছে সে জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে আমতা আমতা করে বলল,

-“মানে আসলে নুসরাতের সঙ্গে ঝগড়া হয়েছে।” অভ্রের এমন নারভাস অবস্থা দেখে শুভ্রার খুব হাসি পাচ্ছে। কারণ সে অনেক আগেই বুঝতে পেরেছে তার এই ভাইয়া তার বেস্টিকে ভালোবেসে ফেলেছে।অভ্র মাথা নিচু করে মেঝের দিকে তাকিয়ে আছে মুখ গোমড়া করে।

হঠাৎ, শুভ্রার ফোন বেজে ওঠায় অভ্র শুভ্রার দিকে এক পলক তাকাল আর ফোনের দিকে এক পলক। নুসরাত ফোন দিয়েছে। অভ্র আকুল দৃষ্টিতে ফোনে দিকে তাকিয়ে আছে। শুভ্রার ইশারা পেয়ে শুভ্রার ফোন নিয়ে অভ্র শুভ্রার রুমে চলে গেল। শুভ্রা বারান্দায় বসেই চকলেট গুলো খেতে লাগল। আর বলতে লাগল,

-“এতো দিনে গরুটার সুমতি হয়েছে বোনকেও যে সময় সময় চকলেট দেওয়া লাগে এটা বুঝতে পারছে।” মিনিট পাঁচেক পর অভ্র এসে শুভ্রাকে ওর ফোন দিয়ে চলে গেল।

শুভ্রা প্রায় সবগুলো চকলেটই খেয়ে ফেলেছে। আর বাকি একটা চকলেট সে তার কভার খুলে খেতে নিবে তখনই তার ফোন বেজে উঠল। সে বিরক্তিকর দৃষ্টিতে ফোনের দিকে তাকিয়ে অনেক কষ্টে হাতের কুনুই দিয়ে ফোন রিসিভ করে লাউড স্পিকারে দিয়ে বলতে লাগল,-“কিরে পেত্নী সব ঠিক ঠাক হলো তোদের? আর ভালো কাজ করছিস ঝগড়া করে, তোরা ঝগড়া করলি বলেই তো আমি চকলেট পেলাম।

ওপাশ থেকে কোন শব্দ নেই। শুভ্রা আবার বলা শুরু করল,-“কিরে কথা বলছিস না কেন কিরে?”

শুভ্রা দেখল কল কেটে গিয়েছে। শুভ্রা কিছু টা অবাক হলো নুসরাত তো এরকম করার মেয়ে না। শুভ্রা এগুলোই ভাবছিল তখনই মেসেজ টুন বেজে উঠল। শুভ্রা দেখল মেসেজ আপরিচিত নাম্বার থেকে এসেছে লেখা আছে

“ঘুমিয়ে পড়ো আর এতো চকলেট খাওয়া স্বাস্থ্যর জন‍্য ক্ষতিকর। আর আমি কে সেটা নিয়ে গবেষণা করার প্রয়োজন নেই ঘুমিয়ে পড়ো আমি যেন আর জেগে থাকতে না দেখি তাহলে কিন্তু..!”

শুভ্রা মেসেজটা পড়ে চিন্তায় পড়ে গেল। কে দিতে পারে এই মেসেজ কেউ কি তাকে ফলো করছে। সে বসা থেকে দাড়িয়ে গেল আশেপাশে চোখ রাখল। কই কেউ নেই আশেপাশে তাহলে। সে আর ব‍্যাপারটা নিয়ে মাথা ঘামালো না কারণ তার ঘুমে চোখ টলুমলু করছে। সে গুটিগুটি পায়ে রুমে চলে আসল। বিছানায় শুতেই রাজ‍্যের ঘুম তার চোখে নেমে এলো।

————-

ভার্সিটির ক‍্যাম্পাসে বসে আছে শুভ্রা নুসরাত আর লুভা। শুভ্রা চকলেট খাচ্ছে আর পকপক করছে। লুভা বিরক্তকর ভঙ্গিতে বসে থেকে শুভ্রার কথা শুনছে আর মাঝে মাঝে একটু করে কথা বলার সুযোগ হয়ে উঠছে তার । ওরা কথা বলতে বলতে খেয়াল করল নুসরাত খুব চুপচাপ হয়ে আছে। গম্ভীরমুখে সে মাটির দিকে কি যেন ভাবছে। শুভ্রা নুসরাতকে ডাকলো কিন্তু নুসরাতের কর্ণকুহরে তা পৌছালো নাকি তা বোঝা গেল না। শুভ্রা আর থাকতে না পেরে নুসরাতে হাতে জোরে একটা চিমটি কাটলো। শুভ্রার চিমটি খেয়ে নুসরাত লাফিয়ে উঠল।

সে লুভা আর শুভ্রার দিকে তাকিয়ে রইল তারা মিটিমিটি হাসছে সে ব‍্যাপারটা বুঝতে পেরে রেগে বলে উঠলো,-“কি সমস্যা তোদের। এতো বাচ্চাদের মতো চিমটা চিমটি করছিস কেন যতোসব!”

নুসরাতের রাগ দেখে লুভা আর শুভ্রা কিছুটা দমে গেল। নুসরাত নিজের ব‍্যাগ নিয়ে হনহন করে চলে গেল। শুভ্রা আর লুভা একজন আরেকজনের দিকে তাকালো যে নুসরাতের এমন করার কারণ খোজার জন‍্য কিন্তু দুইজনের একি অবস্থা কেউ কিছু বুঝতে পারেনি। তারা দুইজনই রসগোল্লার মতো চোখ করে নুসরাতের যাওয়ার পথে চেয়ে রইল।

হঠাৎ, একটা ছেলে এসে শুভ্রা আর লুভার সামনে দাড়ালো। শুভ্রা ছেলেটিকে দেখেই জরিয়ে ধরল। অনিক তুই এতোদিন পর আমার কথা মনে পরল তোর। (অনিককে ছেড়ে দিয়ে মুখ ফুলিয়ে বলল শুভ্রা।) অনিক হাসি দিয়ে শুভ্রার গালটেনে বলল,-“তুই এখনো ছোটই রয়ে গেলি।” শুভ্রাও হেসে দিল। শুভ্রা অনিক আর লুভা আড্ডা দিচ্ছিল। লুভার কিছু কাজ পরে যাওয়ায় সে চলে গেল। অনিক আর শুভ্রা বেশ হেসে হেসেই কথা বলছিল।

ওদের কথা বলার মাঝখানেই কেউ এসে শুভ্রা হাত ধরে নিয়ে যেতে লাগল। শুভ্রা কিছুই বুঝতে পারলো না। শুভ্রা সেই ব‍্যক্তির দিকে তাকিয়ে দেখলো এতো আদিল ওর মিস্টার জামাই। কিন্তু এতোদিন পর এসে এইরকম করে ওকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে? আর অনিক কি মনে করবে! ওকে অনন্ত পক্ষে বলে আসা দরকার ছিল।

আদিল শুভ্রাকে টেনে নিয়ে গাড়িতে বসালো। শুভ্রা শুধু হতবম্ভ হয়ে আদিলের কান্ড দেখছে। আদিল অনেক স্পিডে গাড়ি ড্রাইভ করছে। দেখেই বোঝা যাচ্ছে অনেক রেগে আছে।

আদিল গাড়ি থামিয়ে শুভ্রার হাত ধরে আবার নিয়ে যেতে লাগল। শুভ্রা খেয়াল করল এটা তো আদিলদের বাড়ি। আদিল সোজা ওর রুমে নিয়ে যেতে লাগল শুভ্রাকে। শুভ্রা মিনমিনে গলায় বলল,

-“হাতটা একটু আস্তে ধরুন প্লীজ আমার লাগছে।”

আদিল শুভ্রার দিকে তাকালো। আদিলের তাকানো দেখে শুভ্রা চুপসে গেল। কারণ, আদিলের চোখ অসম্ভব লাল হয়ে আছে।

আদিল রুমে এসেই শুভ্রাকে ধাক্কা দিয়ে বেডে ফেলে দিলো। আদিল হাতমুঠো করে জরে জরে শ্বাস নিচ্ছে। সে দুইহাত দিয়ে মাথার চুল আকাড়ে ধরে হাটু গেড়ে বসে পরলো। সে পেন্টের পকেট থেকে ফোন বের করে ফোন দিলো অনুভবকে আর বলতে লাগলো,

-“ও আবার নতুন প্লান শুরু করেছে। শুভ্রতার ভার্সিটিতে ও টিচার হিসেবে জয়েন হয়েছে। তুই সব ব‍্যবস্থা কর। বলতে বলতে আদিল ফোন নিয়ে বারান্দায় চলে গেল।

শুভ্রা হতবম্ভ হয়ে এখনো বেডেই বসে আছে। সবকিছু ওর মাথার উপর দিয়ে গেলো। আর আদিলকে এমন দেখাচ্ছে কেন। সেটাও সে বুঝতে পারছে না। আর সে অনুভব ভাইকে কি বলছে এগুলো?

শুভ্রা এগুলোই ভাবছিলো তখন হঠাৎ, করে আদিল এসে শুভ্রার মুখ চেপে ধরলো। শুভ্রা ব‍্যথায় কুকরে উঠলো। আদিল টান দিয়ে ওর মুখের মাক্স খুলে ফেলল। আর শুভ্রার মুখ ছেড়ে দিয়ে চুলের মুঠি আকাড়ে ধরে শুভ্রার ঠোঁট নিজের দখলে নিয়ে নিলো। শুভ্রা আদিলের এমন আকষ্মিক কাজে ঘাবড়ে গেল। যখন সে বিষয়টি বুঝতে পারলো তখন ছাড়ানোর চেষ্টা করতে লাগলো। শুভ্রা যখনি ছাড়ানোর চেষ্টা করছে তখনই আদিল ওকে আরো শক্ত করে ধরছে । শুভ্রা আদিলের সঙ্গে পেরে না উঠে চুপ করে রইলো। ফোন আসতেই আদিল শুভ্রা থেকে ছিটকে চলে গেলো। ফোন নিয়ে সে বারান্দায় চলে গেল। শুভ্রা একইরকম করেই শুয়ে রইল। কেন যেন আদিলকে তার চেনাচেনা লাগছে। কিন্তু কিভাবে কি? আদিলের স্পর্শ গুলো কেন জানি চেনা চেনা লাগছে। মনে হচ্ছে আগেও সে আর ভাবতে পারছে না!

আদিল প্রায় আধা ঘন্টা পর রুমে এসে দেখলো শুভ্রা বেডে চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে। আদিল আস্তেধীরে গিয়ে শুভ্রার পাশে বসে আলতো করে শুভ্রার গালে হাত রাখলো। কিন্তু শুভ্রার কোনো হেলদোল নেই। আদিল ঘাবড়ে গেল সে শুভ্রাকে ডাকতে লাগলো,

-“শুভ্রতা এই শুভ্রতা উঠো প্লীজ। কি হয়েছে তোমার। রাগ করেছো তুমি আমার উপর।”

আদিল দেখলো শুভ্রার জ্ঞান নেই। সে অনেকটা উত্তেজিত হয়ে পরলো। সে জোরে জোরে ডাকতে লাগলো,

-“আম্মু ও আম্মু কোথায় তুমি তাড়াতাড়ি এসো। ও আম্মু তাড়াতাড়ি এসো প্লীজ।”

মিসেস মাহমুদ আদিলের গলা শুনে দৌড়ে ছেলের রুমে এলেন। রুমে শুভ্রাকে দেখে কিছুটা অবাক হলেন। আদিল এসে ওর মাকে জরিয়ে ধরল আর বলতে লাগলো আম্মু আমার জন‍্যই আজকে শুভ্রা জ্ঞান হারালো আমি একদম ভালো না। আমি এটা কি করলাম আম্মু।

মিসেস মাহমুদ আদিলকে ছাড়িয়ে ওর চোখ মুছে দিলো আর বলল,

-“ছেলে হয়ে তুই কান্না করছিস এটা কেমন কথা বাবা। আচ্ছা আমি দেখছি ওর কি হয়েছে। তুই যা অভ্রকে ফোন দে। ”

———————–

শুভ্রা পিটপিট করে চোখ খুললো। সে একটুও নড়তে পারছে না। কি যেন তাকে পেচিয়ে রেখেছে। সে মাথা উচু করে দেখলো আদিল। সে একটু নড়াচড়া করতেই আদিলের ঘুম ভেঙে গেল। সে লাফিয়ে উঠে দেখল শুভ্রা বিরক্তিকর দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। আদিল মুখে বিস্তৃত হাসি ফুটিয়ে কাপাকাপা হাতে শুভ্রা গালে হাত রাখলো আর বলল শুভ্রতা এখন কেমন লাগছে। আগের থেকে ভালো লাগছে এখন।

শুভ্রা মাথা নাড়িয়ে হঁ‍্যা বুঝালো। আদিল শুভ্রার কপালে ভালোবাসার পরশ এঁকে দিলো। শুভ্রা দেখলো আদিলের চোখে পানিতে ভরপুর। সুযোগ পেলেই অশ্রু কোণা চোখ থেকে গড়িয়ে পরবে। আদিল ভাঙাভাঙা গলায় বলল,

-“আমি অনেক খারাপ তাই না। আমি তোমাকে কষ্ট দেই । বিশ্বাস করো আমি ইচ্ছা করে এমনটা করি নি। দেখ যেই হাত দিয়ে তোমাকে ব‍্যথা দিয়েছিলাম সেটার কি অবস্থা করেছি। তুমি প্লীজ এবারের মতো আমাকে ক্ষমা করে দেও। আর কখনো এমন হবে না।”

শুভ্রা আদিলে হাতের দিকে তাকিয়ে হতভম্ব হয়ে গেল। আদিলের হাতের অনেক জায়গায় রক্ত শুকিয়ে আছে। শুভ্রা তাড়াতাড়ি করে আদিলের হাত ধরে বলল,

-“আপনি কি পাগল!”

আদিল মুচকি হাসি দিয়ে বলল,

-” হুম,আমি তোমার পাগল”
শুভ্রা রাগীকন্ঠে বলল, -” ব‍্যান্ডিজ করেন নি কেন আদিল হেসে জবাব দিল,-“মন চায় নি তাই।” শুভ্রা রুমের আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো ড্রেসিংটেবিলের উপরে ব‍্যান্ডিজের বক্স রাখা। সে দৌড়ে গিয়ে সেটা আনতে গেল কিন্তু সে হাতে পাচ্ছে না। সে টুলের উপর উঠলো কিন্তু তাও নাগাল পাচ্ছে না। শুভ্রা পা ফসকে যেই পড়ে যেতে নিবে তখনই আদিল এসে শুভ্রাকে কোলে নিয়ে আবার বেডের উপর বসিয়ে দিল আর রাগীকন্ঠে বলল,-“এতো ছটফট করো কেন বললেই তো হতো এটা এনে দেওয়ার কথা আমি কি না করতাম।” শুভ্রা মুখ ছোট করে নিচের দিকে তাকিয়ে রইল।

আদিলে এসে বক্সটা শুভ্রার হাতে দিলো আর বলল,”নেও”
শুভ্রা হাসিমুখে বক্সটা নিয়ে আদিলকে মুখ ভেংচি দিয়ে আদিলের হাত টেনে ব‍্যান্ডিজ করে দিলো। শুভ্রা ওর চুল গুলো নিয়ে হাতখোপা করতে গেলো কিন্তু হাতে ব‍্যাথার কারনে কুকুয়ে উঠল। আদিল চোখ গরম করে রুমে থেকে বেরিয়ে গেলো। একটু পর আবার এলো হাতে একটা ব‍্যান্ড নিয়ে সে এক হাতে শুভ্রার চুল ঠিক করে দিচ্ছে এমন সময় নুসরাতের কন্ঠ শুনে দরজার দিকে তাকালো

(চলবে)

পূর্ণতার মাঝেও অপূর্ণতার ছোয়া পর্ব-০৪

0

#পূর্ণতার মাঝেও অপূর্ণতার ছোয়া
#লেখিকাঃশুভ্রতা শুভ্রা
#পর্বঃ০৪

আদিল বলল,- “যা তুই আসছি আমরা”

নুসরাত চলে যেতে নিয়েও থেমে গেল। শুভ্রার সামনাসামনি দাড়িয়ে শুভ্রাকে বলল –

“আমার ভাই আর ভাবি কে আর কিভাবে সেটা তোর বর বুঝিয়ে দিবে। আর দোস্ত প্রথম রাত কেমন গেল সেটা কিন্তু আমাদের বলতে ভুলিস না।”

শুভ্রা চোখ গরম করে নুসরাতের দিকে তাকাল। নুসরাত মিটমিট করে হাসছে। নুসরাতের হাসি দেখে শুভ্রার মেজাজ আরো গরম হয়ে গেল। শুভ্রা কিছু বলতে নিবে তার আগেই নুসরাত দিল এক দৌড়। আচমকা দৌড় দেওয়াতে শুভ্রার ব‍্যাপারটা বুঝতে একটু সময় লাগল। সে ব‍্যাপারটা বুঝতেই নুসরাতের পিছনে দৌড় দিতে নিবে কিন্তু সে পারল না কেউ তার হাত ধরে আটকে দিল! শুভ্রা পিছনে তাকিয়ে দেখল আদিল! সে আদিলের চোখের দিকে তাকাল। আদিলে চোখ কেমন লাল হয়ে আছে। শুভ্রা প্রশ্নবিদ্ধ চোখে আদিলে দিকে তাকিয়ে বলল –

“আচ্ছা আপনার চোখ এতো লাল হয়ে আছে কেন!” আদিল শুভ্রার প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে বলল-

” ফ্রেশ হয়ে নেও তাড়াতাড়ি আম্মু ডাকছে।”

“নিচ্ছি কিন্তু তার আগে বলেন নুসরাত আপনার কে হয়। ”

“ও তোমার একমাএ ননদ মানে আমার একমাএ বোন।”

শুভ্রা কিছুটা কপাল কুচকালো কারণ তার জানা মতে নুসরাত তো তার বাবা মায়ে একমাএ মেয়ে। শুভ্রা আরো কিছু বলতে নিবে কিন্তু তার আগেই আদিল বলল –

“এতো কিছু নিয়ে পর্যবেক্ষণ করতে হবে না তোমার যেইটুকু জানা দরকার ওইটুকু জানলেই হবে!” বলেই আদিল শুভ্রার হাত ছেড়ে হনহন করে নিচে চলে গেল।

শুভ্রা ফুস করে নিশ্বাস ছাড়ল কারণ সে বুঝে গেছে এই পোলা সুবিধার না। কখন কি বলবে কখন কি করব বোঝা বড় দায়!শুভ্রা গিয়ে ফ্রেশ হয়ে কার্বাট থেকে আরেকটা জামা নিয়ে পরে নিচে আসল।

নিচে নেমেছে এমন সময় দেখল সিড়ি অধেক রাস্তায় নুসরাত সেই ও নিচেই নামছে। শুভ্রা নুসরাত কে ডাক দিল। নুসরাত দাড়িয়ে গেল। শুভ্রা নুসরাতের পাশে গিয়ে দাড়াতেই নুসরাত আবার হাটা শুরু করল। শুভ্রা খেয়াল করল একটু আগে নুসরাত হাসিখুশিই ছিল কিন্তু এইটুকু সময়ের মধ্যে কি এমন হলো যে ওকে মন মরা লাগছে। নুসরাত শুভ্রাকে খাবার টেবিলের কাছে নিয়ে এসে বসতে বলল। শুভ্রা দেখল টেবিলে আগের থেকে একজন ভদ্রলোক আর একজন ভদ্রমহিলা বসে আছেন। কালকেও শুভ্রা ওনাদের দেখেছিলেন। আর আদিলের কথা অনুযায়ী এরা আদিলের বাবা মা।

শুভ্রা নম্র শুরে -“তাদের সালাম দিল দুইজনই অনেক সুন্দর করে ওর সালামের উত্তর দিল।” আছিয়া মাহমুদ মানে আদিলের মা মুখে চওড়া হাসি নিয়ে বললেন-

” মা কাল তোমার কোনো অসুবিধা হয় নি তো। “শুভ্রা মৃদু শুরে বলল –

“না কোনো সমস্যা হয় নি।”

আলি মাহমুদ মানে আদিলে বাবা বললনে-” মা নাস্তা খেয়ে নেও তোমাকে তো আবার তোমার বাসায় যেতে হবে। তোমার বাবা মা ওখানে তোমার অপেক্ষায় আছেন। ”

শুভ্রা খাওয়া শুরু করল। এখানে আদিলে মা বাবা নুসরাত সবাই আছে কিন্তু আদিল কোথায় আদিলকে তো আশেপাশে দেখা যাচ্ছে না। শুভ্রার চারপাশে চোখ বুলিয়ে দেখল নাহ আদিল এখানে নেই।

নুসরাত বলে উঠল “ভাইয়া তোর জন‍্য বাহিরে দাড়িয়ে আছে খেয়ে নে তোকে তোর বাসায় রেখে আসবে। ”

নুসরাতের আকস্মিক কথায় শুভ্রা কিছুটা ঘাবড়ে গেল। এখানে বড়রা আছে তারা কি মনে করবেন। শুভ্রা আর কিছু বলতে পারল না চুপচাপ একটু খেয়ে উঠে পরল। শুভ্রা উঠতেই নুসরাত বলল-

” এখন সোজা রুমে গিয়ে কার্বাট থেকে বোরকা নিয়ে পরে নিচে আয়। “শুভ্রা নুসরাতকে বলল –

“কোনো রুমে!” নুসরাত বিরক্তি মাখা কন্ঠ বলল-

“কেন বুঝতে পারছিস না কোন রুম?যেই রুমে এতোক্ষন ছিলি সেই রুম।”

শুভ্রা কিছু না বলে গুটিগুটি পায়ে রুমে চলে গেল।

——————-

রনি কাচুমাচু করে বলল -“বস কাল থেকে ম‍্যামের কোনো খোঁজ পাচ্ছিনা।” কথাটা শুনেই পিছনে ঘুরে থাকা ব‍্যক্তি রনির দিকে তাকালো।

এতোক্ষন রনি মাথা নিচু করে ছিল। সামনে ব‍্যক্তির কোনো প্রতিক্রিয়া না দেখে সে চোখ তুলে তাকাল। তাকাতেই যেন তার অন্তরাত্মা কেপে উঠল। কারণ.., সামনের ব‍্যক্তির চোখ অসম্ভব লাল হয়ে গেছে। অতিরিক্ত রাগের কারণে ব‍্যক্তিটির নাকের ডগা লাল হয়ে গেছে। ব‍্যক্তি হাতে কাছে থাকা টি টেবিলে লাথি দিল। সঙ্গে সঙ্গে কাচের ফুলদানিটা পরে ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গেল। সে রাগান্বিত কন্ঠে বলতে লাগল –

“তোদের কি আমি এমনি এমনি টাকা দিয়ে কাজে রাখছি। একদিন পার হয়ে গেল তার কোনো খোঁজ নেই আর তোরা এখন বলছিস আমাকে,”

বলেই তার গান বের করে সুট করল। সঙ্গে সঙ্গে গুলিটা গিয়ে লাগল রনির কপালে। ব‍্যক্তিটি সঙ্গে সঙ্গে হাক দিল। সাথে সাথে কিছু লোক এসে রনির বডিটাকে নিয়ে গেল।

লোকটি সাব্বির বলে ডাক দিল। সঙ্গে সঙ্গে একটি যুবক আসল। লোকটি ইশারা করতেই সাব্বির কি যেন বলল। সেই কথা শুনে লোকটি অট্টহাসি দিতে লাগল আর বলতে লাগল –

“আমার কবল থেকে বাঁচা এতো সহজ না। আমি আবার নতুন আর চমৎকার খেলা নিয়ে তোদের সামনে হাজির হবো জাস্ট ওয়েট এন্ড সি,বলে আবার হাসতে লাগল!”

——————

শুভ্রা বোরকা পরে নিচে গাড়ি সামনে গিয়ে দাড়ালো। আদিল গাড়ির সঙ্গে হেলান দিয়ে ফোন নিয়ে বিজি। শুভ্রা আদিলের সামনে তুড়ি বাজিয়ে বলল –

“এই যে মিস্টার কি হলো?”

আদিল ফোন থেকে মাথা উঠিয়ে এক বার তাকাল শুভ্রার দিকে সে ফোন রেখে শুভ্রাকে গাড়িতে বসিয়ে নিজেও গাড়িতে বসে গাড়ি চালাতে লাগল। শুভ্রা তার নিকাব খুলে বাহিরের দিকে দৃষ্টি রাখল। সে সাজগোজ বলতে গেলে কিছুই করে নি। আদিল গাড়ি চালাচ্ছে আর মাঝে মাঝে আড় চোখে শুভ্রার দিকে তাকাচ্ছে। চোখে সানগ্লাস থাকায় শুভ্রা আদিলের তাকানো বুঝতে পারছে না। হঠাৎ,করেই শুভ্রা বলল –

“গাড়ি থামান”

আদিল শুভ্রার এই আকষ্মিক কথায় কিছুটা ভরকে গেল। সে যে আড়চোখে শুভ্রাকে দেখছিল সেটা কি সে বুঝে গেল। আর সেইজন‍্যই কি সে এরকম রিএক্ট করছে। এগুলো ভাবছিল শুভ্রার কন্ঠে তার ভাবনায় ছেদ পরল। সে তাড়াতাড়ি করে গাড়ি থামালো আর শুভ্রার দিকে তাকিয়ে হন্তদন্ত হয়ে জিঙ্গাসা করল.-

“কি হয়েছে কিছু কি সমস্যা হয়েছে? আমি কি কোনো ভুল করলাম!”শুভ্রা কিছুটা বিরক্তিমাখা মুখে বলল.-

“আমি কি বলেছি কিছু। এমন চুহার মতো লাফালাফি করছেন কেন শান্ত হয়ে বসেন বলছি। ”

আদিল যথাসম্ভব শান্ত হয়ে বসল। শুভ্রা গাড়ির জানালা দিয়ে হাত বের করে বাচ্চাদের মতো নখ দেখিয়ে ফুচকার স্টলটা আদিলকে দেখল। তারপর আদিলের দিকে তাকিয়ে ঠোঁট উল্টিয়ে বলল-

“আমার না খুব ফুচকা খেতে মন চাচ্ছে। একটু কিনে দেবেন। ”

আদিল শুভ্রার কান্ড দেখে কিছু সময় শুভ্রার দিকে ফেলফেল করে তাকিয়ে রইল। তারপর অট্টহাসিতে ফেটে পরল। আদিল হাসতে হাসতে লুটুপুটি খাচ্ছে। শুভ্রার কেদেঁ দেওয়ার মতো অবস্থা তার ফুচকা খাওয়ার কথা শুনে কি লোকটা পাগল হয়ে গেল। আর যতই হক লোকটা তার বর। লোকটা যদি পাগল হয়ে যায় তাহলে মানুষ তাকে পাগলের বউ বলবে তা তো মানা যায় না কিছুতেই না। শুভ্রা আদিলের হাত ধরে ঝাকিয়ে বলল –

“কি হলো আপনার আপনি কি পাগল হয়ে গেলেন। আল্লাহ্ গো আপনি পাগল হয়ে গেলে তো আমাকে সবাই পাগলের বউ করে বলবে গো। এই পাগলের সঙ্গে সংসার করবো কি করে গোওও।”

শুভ্রার এমন কথা শুনে অটোমেটিক আদিলে হাসি থেমে গেল। সে একটু হেসেছে তাই তাকে পাগল বানিয়ে দিল। শুভ্রা নাক টেনে ইনিয়ে বিনিয়ে কান্না করছিল। আদিল দিল এক ধমক। আর বলল-

“ওই ওই, কে বলছে আমি পাগল হয়ে গেছি আর পাগলের বউ ওয়াট দা!”

শুভ্রা আদিলের ধমকে আবার ভে ভে করতে লাগল !আদিল বলল –

“আচ্ছা বাবা আনছি ফুচকা তুমি গাড়িতেই থাক।”

আদিলের কথা শুনে শুভ্রার চোখ চিকচিক করে উঠল। সে লাফিয়ে উঠে বলল সত্যি আপনি এনে দিবেন।আদিল চোখ ছোট ছোট করে বলল –

“তোমার কি মনে হয় আমি মিথ্যা বলি। ”

শুভ্রা মুখ বাকিয়ে বাহিরে তাকাল। আদিল মুচকি হেসে গাড়ি থেকে নেমে ফুচকার দোকানের দিকে যেতে লাগল। আদিলকে ফুচকার দোকানের দিকে যেতে লাগল। আদিলকে যেতে দেখে শুভ্রার মুখেও হাসি ফুটে উঠল।

আদিল ফুচকার প্লেট এনে শুভ্রার হাতে দিল। শুভ্রা প্লেট নিয়ে টপাটপ খেতে লাগল। আদিল বুঝতে পারে না শুভ্রার যখন এতোই ক্ষুধা লাগছিল তাহলে তো বাসা থেকেই ভালো মতো খেয়ে আসতে পারত। শুভ্রার চোখ দিয়ে পানি পরছে। নাক ঠোঁট লাল বর্ণ ধারন করেছে। আদিল শুভ্রার দিকে তাকিয়ে বলল –

“কি হয়েছে ফুচকায় কি ঝাল বেশি?”

শুভ্রা এতোসময় চুপ করে ছিল। আদিলে কথা শুনে আদিলের দিকে তাকাল। তারপর বলতে লাগল-

“পানি পানি দেন,ঝালে শেষ হয়ে গেলাম বাবা গো!”

আদিলে গাড়িতে পানির বোতল খুজলো কিন্তু পেলও না এইদিকে ঝালে শুভ্রার নাজেহাল অবস্থা। আদিলের মাথায় কিছু আসছে না। হঠাৎ,করে আদিল একটা রুমাল বের করে শুভ্রার চোখ বেধেঁ দিল। শুভ্রার রাগান্বিত কন্ঠে বলে উঠল –

“ওই আপনি আমার চোখ বেধেঁ দিলেন কেন। আপনি কি পাগল চোখ বেধেঁ দিলে কি কারো ঝাল কমে নাকি। বাবা গো কোন উগন্ডা থেকে এই বর আমার জন‍্য নিয়ে আসলে গো!”

শুভ্রাকে আর কিছু বলতে না দিয়ে আদিল ওর ঠোঁট দুটো নিজের দখলে নিয়ে নিল। আদিলে এই কান্ডে শুভ্রা হতবিহ্বল হয়ে পরল। সে কল্পনাও করে নি যে আদিল এমন করবে। সে আদিলকে ধাক্কা নিয়ে দূরে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করল কিন্তু সে পারল না। আদিল নিজেই কিছুক্ষণ পর ছেড়ে দিল। শুভ্রা তাড়াতাড়ি করে চোখ থেকে রুমাল সরিয়ে ফেলল কিন্তু আফসোস আদিল মাক্স পরে নিয়েছে। সে ফুসছে আর বলছে –

“এই যে আপনি কি পর্দা করছে। সারাক্ষণ মাক্স পরে আছেন। না কি চেহারা দেখালে আমি উগন্ডা থেকে ভেটকাইয়া উস্টা খাইয়া মঙ্গল গ্রহে পরবো যতোসব।”

শুভ্রার কথা শুনে আদিল হাসল।

————–

পড়ন্ত বিকেলে ছাদের এক কিনারে কফি হাতে নিয়ে দাড়িয়ে আছে শুভ্রা। আর আদিলের কথা ভাবছে। সে যতো তার কথা ভুলে যেতে চাচ্ছে। আরো যেন তার ভাবনা গুলো তার মাথায় এসে ঘুরাঘুরি করছে। শুভ্রা নিজের ভাবনায় ব‍্যস্ত আর তার দীর্ঘ কেশ নিজেদের খেলায় মগ্ন। দূর থেকে এক ব‍্যক্তি তার দীর্ঘ কেশের খেলা মন দিয়ে দেখছে যা তার অজানা। পিছন থেকে মায়াভরা কন্ঠের ডাকে শুভ্রার ভাবনায় ছেদ পরল। সে পিছনে না ঘুরেই বলল-

“কোনো কিছু দরকার নাকি?”শুভ্রার আলিয়া বেগম শুভ্রা নিজের দিকে ঘুরিয়ে বললেন –

“মা রেগে আছিস আমাদের উপর!”

শুভ্রা এককথায় আরষ্ঠ কন্ঠে জবাব দিল- “না”।

মেয়ের আচরণে আলিয়া বেগমের বুকটা ছেত করে উঠল। সে তার মেয়েকে বুকে জরিয়ে ধরে হু হু করে কেদেঁ দিল। সে কান্না জরানো কন্ঠে বললেন মা পারলে আমাদের ক্ষমা করে দিস। বলেই আলিয়া বেগম চলে যেতে নিবেন তখনই শুভ্রা পিছন থেকে তার মায়ের হাত শক্ত করে নিজের মুষ্ঠবদ্ধ করে নিল। আলিয়া বেগম পিছে তাকিয়ে দেখলেন পানিপূর্ণ চোখে তাকিয়ে আছে শুভ্রা তার দিকে। শুভ্রা তার মাকে জরিয়ে ধরে নিজেও কেদেঁ দিল। আলিয়া বেগম মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন। অনেকক্ষণ পর শুভ্রা কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে বলল –

“মা তুমি আর কখনো আমার কাছে ক্ষমা চাইবে না। আর কোনো অপরাধ করোনি যে তার জন‍্য ক্ষমা চাইবে। ”

শুভ্রার কথা শুনে আলিয়া বেগমের মুখে হাসির রেখা ফুটে উঠল। সে শুভ্রার চোখ মুছিয়ে দিয়ে বলল –

“চল নিচে চল, আযান দিয়েছে নামাজ পরে আমরা বরং গল্পের আসর নিয়ে বসবো।”

শুভ্রাও আলিয়া বেগমের কথায় সম্মতি জানিয়ে নিজের রুমে গেল।

———————–

কেটে গেছে পনেরো দিন…, শুভ্রা এখন
আগের মতো চলাফেরা করছে। তার যে বিয়ে হয়েছিল তা প্রায় সে ভুলতে বসেছে। কারণ ওইদিনের পর আদিলেয আর কোনো খোঁজ নেই। রাত এগারোটা ছুই ছুই শুভ্রা বারান্দায় বসে কফি খাচ্ছে আর মনে মনে ভাবছে। আচ্ছা লোকটার কোনো খবর নেই কেন। কিছু কি ঘাবলা হলো। এগুলোই ভাবছিল সে। পিছনে কারো উপস্থিতি টের পেয়ে সে পিছনে ফিরে তাকালো…

(চলবে)

পূর্ণতার মাঝেও অপূর্ণতার ছোয়া পর্ব-০২ও০৩

0

#পূর্ণতার মাঝেও অপূর্ণতার ছোয়া
#লেখিকাঃশুভ্রতা শুভ্রা
#পর্বঃ০২ও০৩

আলিয়া বেগম শুভ্রাকে সাজিয়ে দিয়ে চলে গেলেন, আর শুভ্রা ভাবতে লাগল। ব‍্যাপারটা কি তাকে এরকম করে সাজানো হলো কেন? আর নুসরাত আর লুভা দুইজন ই কল কেন রিসিভ করছে না!

ওগুলোই ভাবছিল তখন তার বাবা ডাক দিল। সে তার ভাবায় ইতি টেনে রুম থেকে বের হয়ে নিচে চলে গেল। নিচে গিয়ে গাড়িতে উঠে পরল সে।

ড্রাইভিং সিটে অভ্র আর তার পাশের সিটে শুভ্রার বাবা আর পিছনে শুভ্রা আর আলিয়া বেগম বসলেন। শুভ্রা অভ্রকে বলল…..

-“ভাইয়া তুই কখন আসলি!তুই না কি কাজে লন্ডনে গেছেলি। আর তোর না আরও তিনদিন পর ফেরার কথা!”

অভ্র গম্ভীর গলায় বলল..-“এখন কিছু জিঙ্গেস করিস না পরে সময় হলে সব বলব। ”

শুভ্রা কপাল কুচকে ভাবার্থক কন্ঠে বলল -“কি এমন কারণ যেটা এখন বলা যাবে না। ”

অভ্রা স্বাভাবিক ভাবে বলল…-” প্লীজ চুপ থাক পরে সব জানতে পারবি।”

শুভ্রা কিছু বলতে নিবে তার আগেই আরিফুল চৌধুরী শুভ্রাকে থামিয়ে দিয়ে বলতে লাগলেন….

-“মা আমরা তোর বাবা মা। আমরা কখনো চাইবো না তোর খারাপ। তোর খারাপ হবে তা কি আমরা চাইবো তুই বল মা!”

শুভ্রা কিনচিত কপাল কুচকালো তারপর গম্ভীর কন্ঠে বলল,-“না বাবা তোমরা যা সিদ্ধান্ত নেবে অবশ্যই আমার ভালো হবে সেই ভেবেই নিবে।”

আরিফুল সাহেব বললেন,-“তাহলে মা এখন আর কিছু জিঙ্গাসা করিস না যা হচ্ছে তা হতে দে। আর আমার জন‍্য একটা কাজ করতে পারবি!”

শুভ্রা পিছন থেকে আরিফুল সাহেবের গলা জরিয়ে বলল,-” তুমি যা বলবে আমি তাই করব বাবা এতে এতো করে বলতে হবে না বল বাবা কি করতে হবে!”

আরিফুল সাহেব কিছু বলতে নিবেন তার আগেই অভ্র বলল,

-“বাবা আমরা পৌঁছে গেছি।”

আরিফুল সাহেব আর কিছু বললেন না গাড়ি থেকে নেমে গেলেন। আলিয়া বেগম শুভ্রা আর অভ্র ও নামল। একটা বাড়ির সামনে দাড়িয়ে আছে ওরা। একটা মধ‍্যবয়স্ক লোক এসে ওদের ভিতরে নিয়ে গেলেন। লোকটিকে দেখে বোঝা যাচ্ছে এই বাড়িতে হয় তো কাজ করে।

যাইহোক,শুভ্রা ভিতরে গিয়ে অবাক কারন এখানে কোনো পার্টি হচ্ছে না। আর ভিতরে একবয়স্ক লোক আর একজন মধ‍্যবয়স্কা মহিলা আর দুটো ছেলে নুসরাত লুভা আর রাজিব। দুইটা ছেলের মুখেই মাক্স! দেখেই বোঝা যাচ্ছে তারা তাদের ফেস আরাল করার জন‍্য এই কাজটি করেছে। অভ্র গিয়ে দুটো ছেলের মধ্যে একটিকে জরিয়ে ধরল। শুভ্রা খেয়াল ছেলেটির পরনে তার মতো সেম ব্লু রঙের বেলেজার আর সাদা শার্ট।

হঠাৎ, পিছন থেকে কেউ বলে উঠল আমি এসে পরেছি। শুভ্রা পিছনে তাকিয়ে দেখল একটা হুজুর টাইপের লোক। আরিফুল সাহেব শুভ্রার কাছে গিয়ে ওর হাত ধরে সাইডে নিয়ে গেলেন আর বলতে শুরু করলেন,

আমি এখন যা বলব তা মেনে নিতে হয় তো তোর অনেক কষ্ট হবে। কিন্তু আমার হাতে কিছু নেই। প্লীজ আমাকে ভুল বুঝিস না। আর মা তোর জীবনে প্রতি পদক্ষেপে বিপদ লুকিয়ে আছে। আর এই বিপদগুলো মারাত্মক বিপদ। এইগুলো ফেস করতে হলে তোর একজনের খুব প্রয়োজন। আর সেটা হচ্ছে আদিল মাহমুদ। এখনই তুই ওর সম্পর্কে কিছু জানতে চাস না মা!আর আদিল খুব ভালো ছেলে। তোর জন‍্য একদম পারফেক্ট। এখন শুধু কাবিন করে রাখা হবে। পরে তোর যখন ইচ্ছা তখন না শশুর বাড়ি এসে সংসার করিস। কিন্তু এখন বিয়ে করতে রাজি হয়ে যা প্লীজ। আর তুই পড়াশোনা করবি কোনো সমস্যা হবে না। ভেবে নে না এটাই তোর বাবার শেষ ইচ্ছা। এরপর আর কিছু চাইবো না।

কথা গুলো শুনে শুভ্রার মাথা ঘুরছে। কি বলছে তার বাবা এইরকম করে বিয়ে দেওয়া মানে কি?আর তাকেই বা আগে কিছু কেন বলা হয় নি। নিজেকে কেমন যেন অবস অবস মনে হচ্ছে। আর কিসের বিপদ। যেই বিপদ ফেস করার জন‍্য আমাকে অন্য কাউকে দরকার। কিচ্ছু মাথায় ঢুকছে না ওর। মাথা ওর বনবন করেছে। সে তো চেয়েছিল পড়াশোনা করে আগে নিজে প্রতিষ্ঠিত হবে তারপর,কিন্তু!

আরিফুল সাহেবের ডাকে তার ধেন ভাঙ্গল। সে ছলছল নয়নে তার বাবা দিকে তাকাল।

তার বাবা আকুল ও অপরাধী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে, ওর উত্তরের অপেক্ষায়।

শুভ্রা দাঁত দিয়ে ঠোঁট চেপে রেখে মাথা নারিয়ে হ‍্যাঁ বোধক জবাব দিল। কারণ,এমন কোনো সময় যায় নি যে সে তার বাবার কথার অবাদ্ব হয়েছে। সে একটু দুষ্টু চঞ্চল হতে পারে কিন্তু বাবা মার অবাদ্ধ না।

আরিফুল সাহেবের মুখে হাসি ফুটে উঠলে। ওনি শুভ্রাকে সবার কাছে নিয়ে এসে হাসি মুখে বললেন,

-“সবাই কাজ শুরু করুন।”

বলে, শুভ্রাকে সোফায় বসিয়ে দিলেন পাশেই আদিল বসে আছে তার দৃষ্টি শুভ্রার দিকে। শুভ্রার চোখে পানি দেখে আদিলের বুকে মোচড় দিয়ে উঠল। ও সাথেসাথে চোখ সরিয়ে নিল। কাজী সাহেব বিয়ে পরানো শুরু করলেন। শুভ্রাকে কবুল বলতে বলা হলো।

শুভ্রার যেন সব কান্না দলাপাকিয়ে বের হয়ে আসতে চাচ্ছে। কি হচ্ছে তার সঙ্গে এসব। যাকে সে চেনে না জানেনা, এখনো পযর্ন্ত যাকে দেখেনি পযর্ন্ত তাকে তার বাবার কথা রাখতে স্বামী হিসেবে গ্রহণ করতে হবে। শুভ্রা খুব কষ্টে কবুল বলে দিল। তার মাথা ঘুরছে।

হঠাৎ,করে সে আদিলের গায়ে পরে গেল। আদিল শুভ্রার দিকে তাকাতেই দেখল ও সেন্সলেস হয়ে গেছে। আদিল শুভ্রার গালে হাত দিয়ে নম্র শুরে ডাকতে লাগল। শুভ্রার কোনো হুশ নেয়।

অভ্র এগিয়ে এসে সোফায় বসে শুভ্রাকে চেক করতে লাগল। সবার মুখে চিন্তার ছাপ। অভ্র চেক করে বলল,-” তেমন কিছু না অতিরিক্ত টেন্স ছিল তাই সেন্সলেস হয়ে গেছে। ওর একটু ঘুমের প্রয়োজন।”

শুভ্রার মা আলিয়া বেগম এসে মেয়েকে তার বুকে টেনে নিলেন। অতিরিক্ত চাপ তো তারাই দিয়েছে তাকে। মিথ্যা বলে নিয়ে এসে বিয়ে দিয়েছে তারা। হুট করে তাদের সিদ্ধান্ত মেনে নিতে গিয়ে মেয়েটা আজ এই অবস্থা।

আদিল আরিফুল সাহেব কে উদ্দেশ্য করে বলল,

-“বাবা শুভ্রতা তাহলে আজকে আমাদের বাসায় থাকুক। কাল সকালে আমি না হয় ওকে আপনাদের বাড়িতে দিয়ে আসব।”

ছেলের কথায় শায় দিয়ে ইমরান মাহমুদ ও আরিফুল চৌধুরীকে বললেন শুভ্রাকে তাদের বাসায় রেখে যেতে।

আরিফুল চৌধুরী ও আর আপত্তি করলেন না। আরিফুল চৌধুরী অনুমতি পেয়ে আদিল শুভ্রাকে কোলে তুলে নিল। আর হনহন করে সিড়ি বেয়ে তার রুমের দিকে যেতে লাগল।

আদিলের হঠাৎ এই কাজে সবাই একটু ভরকে গেল ও পরমূহর্তে হেসে দেন।

আদিল শুভ্রাকে আলত করে তার বেডে শুয়ে দিয়ে ব্লাককেট টা তার গায়ে টেনে দেয় বসন্তের শুরু দিক তাই হালকা শীত এখনো রয়ে গিয়েছে। আদিল শুভ্রাকে রেখে বারান্দায় চলে গেল। মৃদু বাতাস বইছে চারিদিকে। চারিদিকে একটা শান্তিপূর্ণ পরিবেশ। আদিলে মুখে মুচকি হাসি। সে আবার পিছু ফির তার শুভ্র পরির দিকে তাকাল। তাকিয়ে দেখল তার শুভ্র পরি ঘুমের রাজ‍্যে ডুবে আছে। সে তার মাক্সটা খুলে বারান্দার ছোট টেবিলে রাখল।

———————–

রাত সাড়ে দশটা সবাই খেয়ে নিজেদের বাসায় যাওয়ার জন‍্য রওনা হয়েছে। রাজিব লুভাকে ড্রপ করে দিবে তাই ওরা গিয়ে গাড়িতে বসল। লুভার একদম ইচ্ছা নেই। তাও যেতে হবে কারণ রাত হয়ে গেছে। আর আরিফুল চৌধুরী আলিয়া চৌধুরী আর অভ্র ওদের বাসায় চলে গেল।

আর নুসরাত আদিলের বোন।

( তাহলে আপনাদের মনে প্রশ্ন জাগতেই পারে তাহলে শুভ্রা নুসরাতের পরিবারকে চিনে না কেন?নুসরাত তার খালার বাসায় থাকত আর তার পরিবার কিছু কারণ বসত লন্ডন থাকতেন তিনবছর যাবত। আর শুভ্রা যাদের নুসরাতের বাবা মা জানে আসলে তারা নুসরাতের খালাখালু )

আর আদিলের বেস্টফ্রেন্ড অনুভব আহমেদ ও ওর বাসায় চলে গেল। অনুভব আদিল ছোট বেলা থেকেই বেস্ট ফ্রেন্ড।

আদিল নিজের মুখের মাক্স ঠিক করে খাবারের প্লেট হাতে নিয়ে রুমে ঢুকল। শুভ্রা এখন ও ঘুমাচ্ছে। আদিল মুচকি হেসে খাবার প্লেটটা টি টেবিলে রেখে শুভ্রার কাছে গেল। ওর কানের কাছে গিয়ে বলতে লাগল,

-“ঘুম কুমারি এখন যে তোমার উঠতে হবে। ”

শুভ্রা কিছুটা কেপে উঠল। আদিল আবার বলল,

-“এবার না উঠলে কিন্তু…”বলেই শুভ্রার কানের লতিতে হালকা করে কামুড় দিল।

শুভ্রা ধরপরিয়ে উঠে বসল। ও চারিদিকে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করল সে কোথায় আছে। সে বুঝতে পারল এটা তার চেনা জায়গা না। সে পাশে তাকাতে দেখল একটা সুদর্শন যুবক বসে আছে তার পাশ। মুখে মাক্স। পরনে কালো রঙের টিশার্ট আর টাওজার। বডি দেখে বোঝা যাচ্ছে জিম করা বডি। শুভ্রা আদিলের চোখে দিকে তাকাল চিকন ফ্রেমের একটা চশমা। ছেলেদের চোখ যে এতো মায়াভরা হয় সেটা আজ জানল শুভ্রা। আদিল কিছুটা কাশি দিল।

হঠাৎ,কাশি দেওয়ায় শুভ্রার ধেন ভাঙ্গল। সে চোখ নামিয়ে নিল। আদিল মনে মনে হাসল। আর মনে মনে বলল,-“জান তুমি তো আমার চোখের মায়ায় পরবেই। পরতে তো তোমাকে হবেই। ”

শুভ্রার মাথায় তার বিয়ের কথা আসতেই সে কুকরে গেল। তাহলে এটাই তার বর কিন্তু মুখে মাক্স পরা কেন? আর তার বাবা মা তাকে এই লোকের কাছে রেখে গেল কেন তার অনুমতি ছাড়া। তার মা বাবা যখন তাকে এখানে রেখেই গেছে তাহলে সে আর ওই বাড়িতে যাবে না। শুভ্রার অজান্তেই ওর চোখ বেয়ে নোনা জল গরিয়ে পরল।

হঠাৎ ,ওর গালে কারো হাতের স্পর্শ পেয়ে সে কেপে উঠল। সে তাকিয়ে দেখল আদিল। সে কিছুটা ভয় নিয়ে দূরে সরে গেল। আদিল ব‍্যাপারটা বুঝতে পেরে শুভ্রা থেকে একটু দূরে বসে শান্ত গলায় বলতে শুরু করল,

-“তোমার মনে কি চলছে তা আমি জানি।তোমার মনে যে প্রশ্ন গুলো ঘুরছে তার উত্তর গুলো তোমাকে আমি দিব তার আগে। ”

শুভ্রা চোখ তুলে আদিলের দিকে তাকিয়ে সে কি বলবে সেটা শোনার জন‍্য আকুল হয়ে বসে আছে। আদিল মিহি কন্ঠে বলল,

-“আগে তোমাকে কিছু খেয়ে নিতে হবে বলেই। বেড থেকে উঠে পাশের টেবিল থেকে খাবার প্লেট নিয়ে এলো। ”

শুভ্রা খাবে না বলে জেদ ধরল। আদিল একটা ধমক দিয়ে বলল,

এতোক্ষন কিছু না খেয়ে থাকলে তুমি অসুস্থ হয়ে পরবে। তখন তোমাকে কে সামলাবে আর চুপচাপ বলছি খেয়ে নেও। তাছাড়া ওই যে দেখল বারান্দা। (বারান্দার দিকে ইশারা করে) ওখান দিয়ে তোমায় ফেলে দিয়ে আসব।

শুভ্রা কিছুক্ষণ আদিলের দিকে তাকিয়ে ভে ভে করে কান্না করে দিল। আদিল প্লেট থেকে খাবার তুলে শুভ্রার মুখের সামনে ধরল।

শুভ্রা আর কথা না বাড়িয়ে খেয়ে নিল। আদিল অনেক যত্ন সহকারে শুভ্রাকে খাইয়ে দিল। খাওয়ানো শেষে সে প্লেট নিয়ে রুম থেকে চলে গেল।

আদিল যেতেই…

(চলবে)

#পূর্ণতার_মাঝেও_অপূর্ণতার_ছোয়া
#লেখিকাঃশুভ্রতা_শুভ্রা
#পর্বঃ০৩

আদিল যেতেই শুভ্রা বলা শুরু করল,

– “বেটা আমার জীবন টা তেজপাতাই করে ছাড়াবে। বিয়ের একদিন না হতেই কি ধমক দিল। এর আগে বাবা মাও আমাকে এতো জোরে ধমক দেয় নি।”

আদিল রুমে প্রবেশ করতে করতে বলল,
-“কে কি দেয় নি তোমাকে?”

শুভ্রা আদিলের কন্ঠ শুনে কিছু টা ভরকে গেল, সে নিজেকে স্বাভাবিক করে বলল,

-“কিছু না।”

আদিল নম্র কন্ঠে বলল -“আচ্ছা বাদ দেও এসব এখন যাও ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে এসো।” (ওয়াশরুমের দিকে ইশারা করে )

শুভ্রা বলল “আমি আসলে ড্রেস টা চেন্স করতে চেয়েছিলাম আর কি!”

আদিল বলল,-“কার্বাডে ড্রেস আছে। যেটা পছন্দ হয় পরে নেও।” বলতে বলতে আদিল গিয়ে সোফায় তার ল‍্যাপটপ নিয়ে বসল।

শুভ্রা গুটিগুটি পায়ে কার্বাডের কাছে গিয়ে অবাক হয়ে গেল কারণ এখানে অনেক গুলো মেয়েদের জামা। আবার সব গুলো ওর মাপের। শুভ্রা চোখ ছোট ছোট করে আদিলের দিকে তাকাল। তারপর বলল,

-“আচ্ছা আপনি আগেও কি বিয়ে করেছিলেন? আর, যদি করেই থাকেন তাহলে আমার সতীন কোথায় এখনো তো দেখতে পেলাম না!

আদিল শুভ্রার কথা শুনে চোখ বড়বড় করে শুভ্রার দিকে তাকাল। শুভ্রাও প্রশ্নবিদ্ধ চোখে ওর দিকেই তাকাল। আদিল গলা খাকারি দিয়ে ধমকের শুরে বলল,

-“সবকিছুতেই ফাজলামি কর কেন? আর সবসময় কি মাথায় কি উল্টাপাল্টা চিন্তায় ঘুরে। যাও একটা জামা নিয়ে ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে এসো।

শুভ্রা আদিলের কথা শুনে আদিলকে মুখ ভেংচানি দিয়ে একটা সুতি সাদা রঙের থ্রি পিজ নিয়ে ওয়াশরুমে গিয়ে জোরে ওয়াশরুমের দরজা লাগিয়ে দিল।

শুভ্রার কাজে আদিল মৃদু হাসল। হঠাৎ,ফোন মেসেজ টুন বেজে উঠতেই সে ফোনের স্কিনি তাকাল। সে দেখল অপরিচিত নাম্বার থেকে মেসেজ। মেসেজ দেখেই আদিলের চোখমুখ কেমন যেন হয়ে গেল। আদিলের চোখ হঠাৎ করেই লালবর্ণ ধারন করল। সে তার ফোন নিয়ে কাউকে কল দিল। দুইবার রিং হতেই কল রিসিভ হলো।

আদিল অপরপাশের ব‍্যাক্তিকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে বলল,

-” আমি একটা নাম্বার এসএমএস করছি। ওই নাম্বার ট্রেস করে সব ডিটেলস আমাকে দিবি একদিনের মধ‍্যে।”

বলেই অপরপাশের ব‍্যাক্তিকে কিছু না বলতে দিয়েই কল কেটে দিল।

ওয়াশরুমের দরজা খোলার আওয়াজ পেয়ে আদিল নিজেকে কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে চোখ তুলে তাকাল। চোখ শুভ্রার উপর পরতেই তার চোখ সেখানে আটকে গেল। সাদা জামায় তার শুভ্রতা পরীকে অনেকটা সিগ্ধ লাগছে। সদ‍্য গোসল করায় শুভ্রা মুখে কিছু চুলে এসে লেপটে রয়েছে। শুভ্রার ঘনো কেশদিয়ে টুপটাপ পানি পরছে। আদিল নিজের অজান্তেই শুভ্রার একদম কাছে চলে গেল। শুভ্রা আদিলকে তার এতো কাছে দেখে ভরকে গেল। আপনাআপনিই চোখ বড়বড় হয়ে গেল তার।

আদিল আরো একটু শুভ্রার কাছে আসতেই হঠাৎ, আদিলের কিছু কথা মাথায় আসতেই সে একটু সরে এসে শুভ্রার হাতের টাওয়ালটা নিজের হাতে নিল। শুভ্রা শুধু ভেবলার মতো আদিলের দিকে তাকিয়ে আছে। আদিল কি করতে চাচ্ছে কিছুই তার মাথা ঢুকছে না! আদিল শুভ্রার বাহু ধরে তাকে উল্টো ঘুরিয়ে গিয়ে টাওয়াল দিয়ে আলত করে চুল মুছতে লাগল আর বলতে লাগল,

-“এতো বড় হয়ে গেছ এখনো নিজের চুল মুছতে পারো না।”

শুভ্রা আদিলের কথা শুনে মুখ বাকালো আর বলল, -“না পারি না আমার সব কিছু সবসময় আমার আম্মু করে দেয়।”

আদিল শুভ্রার চুল মুছিয়ে দিয়ে নিজের দিকে ঘুরালো শুভ্রাকে আর ওর নাক টেনে দিয়ে বলল কচি খুকি আমার।

আচ্ছা, চল তাহলে বারান্দায় বসি। ওখানে গিয়ে কথা বলি।

শুভ্রাও হ‍্যাঁবোধক মাথা নাড়িয়ে বারান্দায় গিয়ে বসল। বারান্দাটা শুভ্রার মনে ধরেছে। বারান্দায় একসাইটে দোলনা রাখা যেখানে দুইজন বসার মতো জায়গা রয়েছে। পাশে একটা টেবিল, আর অন‍্য সাইটে বেলি ফুলের আর গোলাপ ফুলের দুটো গাছ, চারপাশে মৃদু বাতাস বইছে। আদিলে কন্ঠ পেয়ে শুভ্রা আদিলের দিকে তাকাল। আদিল বলতে লাগল ,

-“একটা কথা সবসময় মনে রাখবে বাবা মা কখনো সন্তানের ক্ষতি হক এটা চাবেন না। তারা অত‍্যন্ত ভেবেই সিদ্ধান্ত নেয় সন্তানের প্রতিটি বিষয়ে । আর হুট করে বিয়ে কথা সেটা পিছনে ও কারণ আছে!

শুভ্রা প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে আদিলের দিকে তাকিয়ে বলল,-“সেই কারণটাই তো জানতে চাচ্ছি।”

আদিল একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে শুভ্রার থেকে দৃষ্টি সরিয়ে বাহিরের দিকে তাকিয়ে বলল,

-“কিছু জিনিস না জানায় মঙ্গল। আর যা হচ্ছে হতে দেও আর একটা কথা কি জানো আল্লাহ না চান ভালোর জন‍্যই চান। আর বাবা মা আর অভ্রর উপর রাগ করো না। তারা তোমাকে অনেক ভালোবাসে। আর নিচে যে অপরিচিত তিনজন কে দেখলে তারা আমার বাবা মা আর আমার বেস্ট ফ্রেন্ড।

শুভ্রা কিছু বলতে নিবে তার আগেই আদিল বলল,
-” আমার পরিচয় জানতে চাও তো.!”

শুভ্রা মাথা নাড়িয়ে “হুম” বোঝাল,

আদিল বলল, -“আমি বিজনেস ম‍্যান। মানে বাবা বিজনেসে হাত দিয়েছি বছর দুয়েক হলো। এখনকার জন‍্য এইটুকু পরিচয় জানলেই হবে। বাকিটা সময় আসলে জানতে পারবে।” বলেই বসা থেকে উঠে দাড়ালো আদিল।

শুভ্রার প্রশ্ন রয়েই গেল। কেমন যেন রহস্যময় লোক। শুভ্রা বলল

-“মানে”

আদিল সামনের দিকে তাকিয়ে অগ্রসর হতে হতে বলল -“মানে বুঝে কাজ নেই সকালে তোমার বাসায় রেখে আসব। ঘুমিয়ে পড়ো এখন।”

শুভ্রা বলল -“আর আপনি?”

আদিল বলল, -“আমাকে নিয়ে চিন্তা করতে হবে না তুমি ঘুমাও।” বলেই আদিল বারান্দায় পেরিয়ে রুম থেকে চলে গেল।

শুভ্রার মাথা ঘুরছে এ সে কি রকম পরিস্থিতিতে পরল। কিছু মাথায় আসছে না তার। মাথা ব‍্যাথা করছে তার সে কিছু না ভেবে রুমে এসে বেডে শুয়ে পরল। ঘুমের প্রয়োজন তার এই মাথা ব‍্যাথা থেকে বাচার জন‍্য।

———————–

নিস্তব্ধতা জানান দিচ্ছে রাত কতটা গভীর। চারিদিকের মানুষ হয় তো সারাদিনের কান্তি দূর করতে শান্তির ঘুম দিচ্ছে। কেউ হয় তো তার প্রিয় মানুষটিকে সময় দিচ্ছে। আবার কেউ হয় তো অতীত ভেবে র্নিঘুম রাত্রি যাপন করছে।

এই নিস্তব্ধ রাতে ছাদের এক কোণায় দাড়িয়ে আছে এক ব‍্যাক্তি বলতে গেলে শেষের স্তরের মধ‍্যে রয়েছে সেই ব‍্যাক্তি। চোখের কোণা তার অশ্রুসিক্ত। সে আকাশে দিকে তাকাল আকাশে চাঁদের সঙ্গে মেঘরা খেলা করছে। চাঁদ সে তো তার মিষ্টি আলো নিয়ে সারা পৃথিবী আলোকিত করতে ব‍্যস্ত। সেই ব‍্যাক্তিটি বিরবির করে বলতে লাগল,

-“আমাকেই কেন এতো কষ্ট দিলে আল্লাহ। আমি তো তোমার কাছে বেশি কিছু না শুধু সুখে শান্তিতে ভালোবাসার মানুষটার সঙ্গে জীবন অতিবাহিত করতে চেয়েছিল। আমার আর সহ‍্য হচ্ছে না এই কষ্ট হৃদয়ের রক্তক্ষরণটা যে দিন দিন বেরেই চলছে। সে আর দাড়িয়ে থাকতে পারল না হাটু মুড়ে বসে পরল। আমি কেন ওই চাঁদে মতোই নিসঙ্গ কেন কেন!”

————————

দরজায় কারো নক করার শব্দে শুভ্রার ঘুম ভেঙে গেল। সে পিটপিট করে তাকাল বাহির থেকে এক পরিচিত গলা ভেসে আসছে। সে চারিদিকে আদিল আছে নাকি সেটা দেখল শুভ্রা। কিন্তু, না তাহলে কি আদিল রাতে আর ঘরে ফেরে নি। দরজার ওপাশের মানুষটা ইতিমধ্যে বিরক্ত হয়ে গেছে।

শুভ্রা উঠে দরজা খুলে দিল আর চোখ ছোট ছোট করে সামনের ব‍্যাক্তির দিকে তাকিয়ে রইল। সে বলল,

-“নুসরাত তুই এতো সকালে এখানে কেমনে আসলি আর তোর ভাই ভাবি কোথায় পাইলি।”

নুসরাত আমতা আমতা করে শুভ্রাকে এরিয়ে বারান্দায় চলে গেল। বারান্দায় দাড়িয়ে বাহিরের দিকে আছে আদিল। নুসরাত ওর কানের কাছে গিয়ে চিলিয়ে বলল,

-“ভাইয়া ওই ভাইয়ারেএ”

আদিল কপাল কুচকিয়ে নুসরাতের দিকে তাকিয়ে রাগী গলায় বলল,

-“কি হয়েছে কি তোর কানের সামনে এসে চিলাচ্ছিস কেন তোর কি মনে হয় আমি কানে শুনি না!”

নুসরাত কোমরে হাত দিয়ে চোখ ছোট ছোট করে বলল,

-“সিরিয়াসলি ভাইয়া তুই কানে শুনতে পাস। আমি তো ভুলেই গেছিলাম। সেই একঘণ্টা যাবৎ আমি তোদের ডেকে চলছি। শুভ্রা ওর কথা বাদ দিলাম আর তুই!”

আদিল বলল, -” হয়েছে আর কিছু বলতে হবে তুই কি বলতে আসছি সেটা বলে ভাগ এখান থেকে।”

শুভ্রা শুধু চোখ বড় বড় করে ওদের কান্ড দেখছে। শুভ্রার জানা মতে নুসরাতের তো এমন কোনো ভাই নেই। আর কালকেই তো আদিলের সঙ্গে ওর বিয়ে হলো। কিছু মাথা ঢুকছে না ওর। নুসরাতের কথা শুনে শুভ্রা ভাবনার জগত থেকে বাস্তবে আসল।

নুসরাত আদিল আর শুভ্রাকে উদ্দেশ্য করে বলল,

-“নিচে আয় তোদের আম্মু ডাকছে।”

(চলবে)

পূর্ণতার মাঝেও অপূর্ণতার ছোয়া পর্ব-০১

0

#পূর্ণতার মাঝেও অপূর্ণতার ছোয়া
#লেখিকাঃশুভ্রতা শুভ্রা
#পর্বঃসূচনা পর্ব

কারো ঠোঁটের মিষ্টি স্পর্শ কপালে অনুভব করছে শুভ্রা। কিন্তু অতিরিক্ত ঘুমের কারণে সে তার চোখ খুলতে পারছে না। কেউ তার কপালে গভীর ভালোবাসার পরশ দিয়েছে। সে অনুভব করতে পারছে। সে কষ্টে চোখ পিটপিট করে খুলে চারিদিকে কেউ নেই। সে বেডের পাশের টেবিল থেকে পানির গ্লাস নিয়ে ঢকঢক করে পুরো পানিটা খেয়ে নিল। সেভেবেই নিল এটা তার স্বপ্ন ছিল। সে আর এগুলো চিন্তা না করে ঘুমিয়ে পরল।

চরম বিরক্তি সঙ্গে নিয়ে ভারসির্টির দিকে যাচ্ছে শুভ্রা। আজ কোনমতেই সে ভারসির্টি যেতে চাচ্ছিল না। রাতের ঘটনাটি কেন জানি ভুলতে পারছে না ও। ইদানিং কিছু দিন যাবত এই রকম হচ্ছৈ তার সঙ্গে। ওর মা জোর করে পাঠিয়েছে ওকে ভারসির্টি । রাতে ঘটনাটি নিয়ে ভাবছিল আর মুখ গোমড়া করে হাটছিল।

হঠাৎ একটা কুকুরের দিকে চোখ পরল তার। তার মুখে একটা দুষ্টামি হাসি ফুটে উঠল। রাস্তা থেকে একটা পাথর তুলে নিয়ে দিল কুকুরের গায়ে। কুকুরটা ঘেউ ঘেউ করা শুরু করল আর দৌড়ানি দিতে লাগল। আর শুভ্রা সে তো জান প্রাণ দিয়ে দৌড়ে একবারে ভারসির্টিতে চলে আসল। শুভ্রা কুকুরটাকে এমন ঘুরিয়েছে যে কুকুরটাও হাপিয়ে গিয়েছে।

এখন আসুন শুভ্রা সম্পর্কে কিছু জেনে নেই। শুভ্রার পুরো নাম শুভ্রতা শুভ্রা চৌধুরী। শুভ্রা আরিফুল চ‍ৌধুরী আর আলিয়া চৌধুরীর মেয়ে শুভ্রার একটা বড় ভাইও আছে নাম অভ্র চৌধুরী। সে বছর দুইয়েক হলো ডাক্তারি করছে। অভ্র অনেকটা শান্ত প্রকৃতির। কথা প্রয়োজন ছাড়া বলেনা বলেই চলে।আর শুভ্রা এবার অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে পড়ছে। আর হয় তো এতোক্ষনে বুঝেছেন শুভ্রা একটু দুষ্টু প্রকৃতির আর শুভ্রা একটু বাচল টাইপের ও। একবার কথা বলা শুরু করলে আর থামানো যায় না।

যাইহোক…..,এবার গল্পে, ফিরি শুভ্রা হাপাতে হাপাতে কেন্টিনে গিয়ে ওর ফ্রেন্ডদের সঙ্গে বসল। লুভা আর নুসরাত স্বাভাবিক ভাবেই বসে আছে কারণ তারা জানে শুভ্রার বেপারে ভালো করেই । ওরা তিনজন ছোট থেকে একসঙ্গে পড়াশোনা করে আসছে। শুভ্রা টেবিল থেকে পানির বোতল নিয়ে ঢকঢক করে পানিটা খেয়ে নিল।

লুভা স্বাভাবিক ও শান্ত গলায় শুভ্রাকে জিঙ্গাসা করল.., “কি রে আবার কি করে এতো হাপাতে হাপাতে আসলি শুনি তো একটু।”

শুভ্রা একটু লুভার দিকে তাকালো লুভা ফোন টিপছে আর শুভ্রার উত্তরের অপেক্ষায় রয়েছে।

শুভ্রা কিছু বলার আগেই নুসরাত বলল ” কি রে শুভ্রা তুই না আজকে ভারসির্টিতে আসবি কাল রাতে যে আমাদের বললি।” তাহলে!!!?…

শুভ্রা মুখটা বাংলার পাঁচের মতো করে বলল আম্মু জোর করে পাঠাল। বলল আমি বাসায় থাকলে ফাজলামি করে সারাদিন কাটাবো তার থেকে ভারসির্টিতে আসলে একটু হলেও কিছুটা বাদরামী কম হবে। আর রাস্তায় একটা কুকুরকে ঢিল দিছিলাম। সেই কুকুর আমাকে দৌড়ানি দিছে।

শুভ্রার কথা শুনে লুভা ফোন রেখে শুভ্রার দিকে তাকাল নুসরাত ও তাকালো আবার দুইজন একে অপরের দিকে তাকাল আর সঙ্গে সঙ্গে অট্টহাসিতে ফেটে পরল দুইজন। এইদিকে ওদের হাসি দেখে পিত্তি জ্বলে যাচ্ছে শুভ্রার।

-“লুভা ”

কারো গম্ভীর গলায় ডাক শুনে তিনজনই পিছনে তাকালো। পিছনে তাকিয়ে সবার মুখের হাসি উড়ে গেল। কারণ ওই ব‍্যাক্তি এসে সবসময় লুভা তাদের কাছ থেকে নিয়ে যায়। পিছনে একটা ছেলে দাঁড়িয়ে আছে। ছেলেটিকে লুভা প্রথম থেকে অপছন্দ করে আসছে। ছেলেটির নাম রাজিব খান। ওর পরনে কালো কালারের শার্ট সঙ্গে জিন্স,চোখে সানগ্লাস,হাতে ব্রান্ডের ঘড়ি। লুভাকে প্রথম দেখায় তার ভালো লেগে যায়। সে বড় লোক বাবার ছেলে। আর লুভা মধ‍্যবৃত্ত পরিবারের মেয়ে। তাতে রাজিবের কোনো মাথা ব‍্যাথা নেই। ও লুভাকে চায় মানে চায়। দীর্ঘ চার বছর যাবৎ.., লুভার পিছনে পরে আছে রাজিব। । কিন্তু লুভা এখন এই সবে জরাতে চায় না।

রাজিব এসে লুভাকে টানতে টানতে নিয়ে গেল। আর শুভ্রা আর নুসরাত গালে হাত দিয়ে দেখলো শুধু। এই কাহিনি প্রতিদিন কার। এখনই লুভা কোনো ভাবে এনিয়ে বিনিয়ে রাজিবকে এরিয়ে ক্লাসে চলে যাবে আর রাজিব ও একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস নিয়ে চলে যাবে।

বসে বসে দূরে দাড়িয়ে থাকা ওদের ই দেখছিল শুভ্রা আর নুসরাত । তখনই একটা ছেলে তাদের চোখের সামনে এসে দাড়াল। ছেলেটিকে দেখেই শুভ্রা আর নুসরাতের মুখে বিরক্ত ফুটে উঠল। ছেলেটির নাম আবির। পরনে ঢিলেঢালা শার্ট আর ঢিলেঢালা প‍্যান্ট, চোখে বড় ফ্রেমের চশমা আর চুল তেল দিয়ে আচরানো। যাকে বলে পুরো ভ‍্যাবলা মার্কা একটা ছেলে। ছেলেটি এক পলকে শুভ্রার দিকে তাকিয়ে আছে। শুভ্রা তা দেখে বলল…….,

– “এই যে মি ভ‍্যাবলাইয়া চুহা,,আপনি আবার বলেই শুভ্রা নুসরাতের হাত ধরে ক্লাসের দিকে রওনা দিল। সেই ভারসির্টি প্রথম থেকে বেটা শুভ্রা আগে পিছে ঘুরে বেড়াচ্ছে।

ওদের ক্লাসের দিকে যেতে দেখে আবির ও যেতে লাগল ওদের পিছু পিছু কিন্তু বেশি এগোতে পারল না। জোড়ে হাটা একটু এগতেই নিজের পায়ের সঙ্গে পা বেজে পরে গেল আবির।

শুভ্রা আর নুসরাত পিছে ঘুরে আবিরের অবস্থা দেখে হাসতে হাসতে ক্লাসের দিকে চলে গেল।

ওরা গিয়ে দেখল লুভা ও ইতোমধ্যে ক্লাসে এসে বসে পরেছে। ওরা দুইজন ও গিয়ে বসল। যথারীতি সময়ে ক্লাস শুরু হলো। সব গুলো ক্লাস ঠিক মতো শেষ করে তিনজন বেরিয়ে পরল ভারসির্টি থেকে। তিনজন কিছু সময় নিজেদের মধ্যে কথা বলে যে যার বাসায় চলে গেল।

শুভ্রা বাড়ির দরজা দিয়ে ঢুকবে এমন সময় হঠাৎ পাশে বাড়ির টাকলা বুড়াকে দেখতে পেল। বেটা খুব বদ। বেটার বাড়ির পাশে একটা ফাকা জায়গা আছে সেখানে কখনো কাউকে যেতে দেয় না। জায়গাটি শুভ্রার খুব পছন্দের একটি জায়গা। যেহেতু জায়গাটার মালিক ওই বুড়ার কোন মালিকের তাই তার অনুমতি ছাড়া ও সেখানে প্রবেশ করা যায় না। সেই জায়গায় একদিন চুপিচুপি গিয়েছিল শুভ্রা। পরে বুড়ো দেখে নেয় আর আরিফুল চৌধুরীর কাছে বলেন। পরে সেটার জন‍্য সে বকা খায়। শুভ্রা তার ব‍্যাগ থেকে একটা সেন্টার ফ্রুট বের করে চিবতে লাগল।

বুড়ো আর একটু সামনে এগোতেই হঠাৎ তার জুতার সাথে কি জেনো বেজে ধরল। সে পা একটু উপরে তাকিয়ে দেখলে কি জেনো একটা তার জুতার সাথে লেগে আছে। বুড়ো ছাড়ানোর চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না। এইদিকে শুভ্রার মুখে দুষ্টামি হাসি ফুটে উঠল। সে হাসতে হাসতে ভিতরে চলে গেল।

ভিতরে ঢুকতে না ঢুকতেই দেখতে পেল লিভিং রুমে তার বাবা মা বসে আছে। শুভ্রা শুকনো একটা ঢোক গিলল। সে ভাবতে লাগল। তার কোনো কথা নিয়ে বকার জন্য তার বাবা মা বসে আছে। তার ভাবনার ছেদ ঘটিয়ে আলিয়া বেগম বললেন….,

– “কিরে ওখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেন কাছে আয় কথা আছে। ”

শুভ্রা মাথা তুলে সামনে তাকিয়ে দেখল তার বাবা মা তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে। সে ভয়ে ভয়ে গুটিগুটি পায়ে আরিফুল চৌধুরী আর আলিয়া চৌধুরীর সামনে গিয়ে দাড়াল। মেয়ের এইরকম ভীতু চেহারা দেখে আরিফুল চৌধুরী হেসে দিলেন আর বললেন…,

– “ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই। আসলে আজকে সন্ধ্যায় আমার একটা ফ্রেন্ডের বাড়িতে পার্টি আছে। সেখানে আমাদের সবাইকে ইনভাইট করেছে। সন্ধ্যায় রেডি থেক। আমরা সাতটার দিকে যাব।”

শুভ্রা আরিফুল চৌধুরীর কথা শুনে সস্থির নিঃশ্বাস ফেলল।

——————————

পড়ন্ত বিকেল চারিপাশে এক মুখরিত পরিবেশ। বারান্দায় কফি হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে একটা ছেলে। দৃষ্টি তার বাহিরের প্রকৃতি দেখতে ব‍্যাস্ত। সূর্য রত্তিম আভা ধারন করেছে।

হঠাৎ কারো পায়ের শব্দে পিছনে ঘুরে তাকালো। তার সমবয়সী একটা ছেলেটি। ছেলেটি তারই পিএ। ছেলেটি তার কানেকানে কিছু বলে চলে গেল। ছেলেটির কথা শুনে তার মুখে একটা রহস্যময় বাকা হাসি ফুটে উঠলে। সে তার রুমে গিয়ে তার ফোন নিয়ে এসে একটা ছবি বের করে রহস্যময় হাসি দিয়ে বিরবির করে বলতে লাগল।

তুমি নিজেও জানোনা তোমার সঙ্গে কি ঘটতে চলছে বেবী। আর কিছু দিন তারপরেই……বলেই ছেলেটি অট্টহাসিতে ফেটে পরল।

——————–

শুভ্রা তার বারান্দায় বসে লুভা সঙ্গে ফোনে কথা বলছে। শুভ্রা লুভাকে বলল…,

– “কি রে দুলাভাই কি খবর?”

লুভা রাগান্বিত কন্ঠে বলল..আবার শুরু হলো। তুই যদি আর একবার ওর কথা বলিস তাহলে কিন্তু,আমি কল কেটে দিব।

শুভ্রা বলল তাই নাকি বাবু। আমার বাবুটা দেখি রাগ করছে। রাগ করেনা বাবুটা। বলেই অট্টহাসিতে ফেটে পরল ও।

আর এইদিকে লুভা রেগে কল কেটে দিল।

শুভ্রা ফোনের দিকে তাকিয়ে হাসতে হসতে বসে পড়ল। হঠাৎ..,ফোনটা আবার বেজে উঠল। ফোনের দিকে তাকিয়ে শুভ্রার কপাল কুচকে গেল। একটা আপরিচিত নাম্বার। শুভ্রা কল রিসিভ করল না। কিন্তু ফোন বেজেই চলছে। তাই সে বিরক্তি নিয়ে রিসিভ করে বলতে শুরু করল…,

কি সমস্যা অপরিচিতদের কল দিতে খুব ভালো লাগে। দেখছেন কল রিসিভ হচ্ছে না তারপর ও কেন বারবার দিচ্ছেন অভদ্রের মতো। কোন গ্রহ থেকে আপনি উদয় হয়েছে। আর আমার নাম্বারই কেন আপনার কল দিয়ে বিরক্ত করতে হবে। আর…,কে আপনি!! শুভ্রা খেয়াল করল ওপর পাশ থেকে কোনো রেসপন্স নেই। তাই সে বিরক্তি নিয়ে কল কেটে দিল।

—————–

অপরদিকে কলের অপরপাশের ব‍্যাক্তি বাঁকা হাসি দিয়ে বিরবির করে বলল…. “জানেমান..,তোমার নাম্বার ছাড়া আর কার নাম্বারে কল দিয়ে বিরক্ত করব।” আর আমি কে তা না হয় সময় হলেই বুঝবে…!

——————-

ঘড়িতে সন্ধ‍্যা সাড়ে ছটা। আলিয়া বেগম শুভ্রাকে সাজাতে ব‍্যাস্ত। ব‍্যাপারটা শুভ্রাকে খুব ভাবাচ্ছে। আর মা তাকে এতো সাজাচ্ছে কেন? শুভ্রা একটা নেভী ব্লু রঙের লেহেঙ্গা হোয়াইট ডায়মন্ডের নেকলেস আর ছোট দুটো দুল আর চিকন চিকন চারটা চুড়ি পরেছে। হালকা মেকআপ চোখে গারো করে কাজল আর ঠোঁটে হালকা পিংক কালারের লিপস্টিক দিয়েছে। এতেই শুভ্রাকে অনেক সুন্দর দেখাচ্ছে। আলিয়া বেগম শুভ্রাকে,…………

(চলবে)

সেই মেয়েটি আমি নই পর্ব-১২(শেষ পর্ব)

0

সেই মেয়েটি আমি নই
১২ পর্ব ( শেষাংশ )
লেখা:জবরুল ইসলাম

ইশতিয়াক হসপিটাল আছে শুনেই তুলি বসা থেকে দাঁড়িয়ে গেল৷

– ‘মা ওর কি হয়েছে?’

– ‘তেমন কিছু না মা, হাত না-কি কেটেছে। এগুলো সমস্যা না ঠিক হয়ে যাবে।’

– ‘কোন হসপিটাল সে, আমি যাব।’

কলি হুস্না বেগমকে বললো,

– ‘আম্মু তুমি আর আপু যাও। পারলে আপুকে রেখে এসো।’

তুলি অস্থির হয়ে বললো,

– ‘হ্যাঁ মা চলো।’

– ‘আপু দাঁড়াও, তুমি থাকবে যেহেতু মোবাইল আর একটা ড্রেস নিয়ে যাও।’

– ‘মোবাইলে তো চার্জ নেই।’

– ‘ওইখানে গিয়ে চার্জ দিয়ে নেবে। তাছাড়া তোমার রুমে পাওয়ার ব্যাংক দেখলাম রাতে।’

– ‘ও হ্যাঁ তা আছে।’

– ‘আচ্ছা আমি সবকিছু নিয়ে আসছি দাঁড়াও।’

– ‘ড্রেস লাগবে না। শুধু মোবাইল পাওয়ার ব্যাংক আনলেই হবে।’

কলি খানিক পরেই একটা ভ্যানিটিব্যাগে পাওয়ার ব্যাংক আর মোবাইল নিয়ে এলো।

– ‘যাও আর আমাদের জানাবে কি অবস্থা উনার।’

– ‘আচ্ছা ঠিক আছে।’

তখনই আবার কল এলো। হুস্না বেগম দেখে বললেন,

– ‘তোর শ্বাশুড়ি।’

দাও আমি কথা বলছি, তুলি রিসিভ করে সালাম দিল, ওর ভয়েজ শুনেই তিনি চিনতে পারলেন।

– ‘তুলি, ডাক্তার বলছে ওর রক্ত লাগবে এখনই। আমরা চারদিকে কল দিচ্ছি এবি নেগেটিভ রক্ত নাই। তুমি দেখো তো মা আত্মীয় কারও আছে কি-না।’

তুলির গলা শুকিয়ে আসছে। বুক ধুকপুক করছে। সে অস্ফুটে বললো,

– ‘হ্যাঁ মা আমি দেখছি।’

তুলি ফোন রেখে বললো,

– ‘ওর এবি নেগেটিভ রক্ত লাগবে। কলি তুষার তোমাদের গ্রুপ কি?’

দু’জনই বললো তাদের রক্তের গ্রুপ জানে না।
তুলি তাদেরকেও সঙ্গে যেতে বললো। সবাই বাইরে গিয়ে একটা সিএনজিতে উঠে। গাড়িতে বসে ফেইসবুক-ইন্সটাগ্রাম সবকিছুতে এবি-রক্ত চেয়ে পোস্ট দেয়। আত্মীয়-স্বজন সবাইকে একে একে কল দিল কারও এবি নেগেটিভ রক্ত নেই। জ্যামজটের কারণে ঘণ্টা দুয়েক চলে গেল তাদের হসপিটাল পৌঁছাতে। তুলি বলার পর ইশতিয়াকের বাবা সঙ্গে সঙ্গে তুষার আর কলিকে পাঠালেন রক্তের গ্রুপ টেস্ট কর‍তে। ইতোমধ্যে একজন আগেই পাওয়া গেছে। ইশতিয়াকের ছোট ভাইয়ের বন্ধু। তার রক্ত এখন চলছে। ভাগ্যক্রমে মিলে গেল তুষারের সঙ্গেও। সেও এখন রক্ত দিচ্ছে। তারা সবাই বাইরে ব্রেঞ্চে বসে আছে।

তুলি মোবাইল পাওয়ার ব্যাংকে লাগিয়ে রেখেছিল গাড়িতেই। এখন অন করতেই টুংটাং শব্দ করে হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ আসছে। হোয়াটসঅ্যাপে গিয়ে দেখে ইশতিয়াকের মেসেজ। সবগুলোই গতকাল রাতের।

– ‘আম্মুর অপমানে আমি একটুও কষ্ট পাইনি জানো? মনে হচ্ছে আমার পাহাড় সমান অপরাধের জন্য একটু হলেও শাস্তি হলো, শাসন হলো। যদি তুমিও এমন কিছু করতে। ভেতরের প্রবল রাগ, ক্ষোভ, কষ্টে আমাকে আঘাত করতে করতে নিঃশেষ করে দিতে। নিজের প্রতি ভীষণ ঘৃণা হচ্ছে তুলি৷ আমি শুধু মাফ চাইব, তোমাকে আর চাইব না। আমি তোমার মুখোমুখি আর দাঁড়াতে পারবো না লজ্জায়। আমি এটা কি করলাম। একেবারে নির্দোষ তোমার গায়ে হাত তুললাম৷ অশ্রাব্য ভাষায় গালাগাল করলাম। নিজেকে একটা হিং’স্র জা’নোয়ার মনে হচ্ছে আজকাল। জানো, লাস্ট যেদিন তোমাদের বাসা ভাড়া নিলাম। এর আগে বাড়ির সকলে আমাকে ডাক্তার দেখাতে চেয়েছিলেন হুটহাট এমন রেগে যাই কেন জানার জন্য। অনেকেই বলেন এগুলো না-কি মানসিক রোগ। আমি বাড়ির সবার উপর রেগে গেলাম সেদিন। আমাকে তারা সাইকো মনে করছে। কেন আমি কি অকারণ রাগী? আমার রাগের কারণ আছে। এগুলো না করলে তো রাগতাম আমি না। এইজন্য বাড়ি থেকেই বের হয়ে গেলাম। আমার এখন মনে হচ্ছে তুমি বা তোমরা সবাই হয়তো ঠিক। আমি হয়তো অস্বাভাবিক মানুষ। তুলি আমি বিয়ের পর এই ক’টা দিন সত্যিই ভীষণ সুখে ছিলাম। জীবনের প্রতিটি দিন আলাদা করলে তোমার সঙ্গে থাকা এই দিনগুলো ঝলমল করবে। আমি এগুলোর যোগ্য ছিলাম না। তোমার যোগ্য ছিলাম না। একজন নোংরা মানসিকতার অসুস্থ মানুষ যতই খোলস পড়ে থাকুক, তা হুট করেই বুঝি প্রকাশ পেয়ে যায়। আমারও পেয়েছে সেদিন। তুমি ওইদিন ফ্ল্যাট থেকে বের হয়ে যাওয়ার সময় তোমার চোখে প্রবল ঘৃণা দেখেছি। তুলি আমার মরে যেতে ইচ্ছা করছে। তার আগে বলো তুমি কি চাও। আমার কোনো প্রায়শ্চিত্ত করার সুযোগ আছে কি-না। তুলি তুমি আমাকে ডিভোর্স দাও কিছু ত্রুটি বের করে। যাতে কেউ তোমার দোষ ঘুনাক্ষরেও না ভাবে। তুমি এভাবে থাকলে লোকে কখনও জিজ্ঞেস করলে কি বলবে? আমি চাই তোমার কলংক মিটুক। তুমি নিজের মতো আলাদা হও।’

আবার ভোরে আরেকটা মেসেজ,

– ‘তুলি আমার খুব ইচ্ছা করছে তোমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদি। তোমার শরীরের যে স্থানগুলোতে আঘাত করেছি ভালোবাসার উষ্ণ পরশে তা ভুলিয়ে দেই। ওই পুরোদিন, ওই আঘাত পৃথিবীর বুক থেকে মূছে দিতে ইচ্ছা করছে। বাকি থাকুক শুধু আমাদের সুন্দর, স্নিগ্ধ, পবিত্র ভালোবাসার দিনগুলো। বাকি থাকুক কাশবনে কাটানো মুহূর্তগুলো। কিন্তু তা কি আদৌও সম্ভব তুলি? একটা নোংরা দিন আমাদের সকল সুন্দর দিনকে ম্লান করে দিয়েছে। তুলি ভীষণ ইচ্ছা করছে তোমাকে বলি ‘আর কখনও এমন হবে না। একটাবার আগের দিনগুলোতে ফিরে যাই। ভালোবেসে বাঁচি।’
কিন্তু ইচ্ছা করলেও আমি বলবো না, আমি চাই না৷ আমিও চাই, এমন নোংরা মানুষের স্পর্শ তুমি না পাও।’

আরেকটা মেসেজ,

– ‘তুলি আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। কি করলে যে একটু প্রায়শ্চিত্ত হবে। তুমি খুশি হবে। তোমার কষ্ট কমবে। জানো আমি মা-বাবার কাছে আজ এসেছি কেন? তাদের কাছে বলতে যে তুমি চরিত্রহীন না। তুমি নির্দোষ। আমার তুলি ভোরের প্রস্ফুটিত ফুলের মতো পবিত্র।’

আরেকটা মেসেজ,

– ‘আমি চাইলেই এখন অনায়াসে মরে যেতে পারি তুলি। নিজের প্রতি তিব্র ঘৃণা কাজ করছে। নিজের প্রতি অভিযোগ জমে জমে অভিযোগের মিনার হয়ে যাচ্ছে৷ কিন্তু দ্বিধাদ্বন্দে আছি তোমার যদি কিছু বলার থাকে। তোমার যদি কোনো কাজে আসি। কোনো প্রায়শ্চিত্ত করার যদি কোনো সুযোগ পাই। সেই অপেক্ষাতেই আছি। কিন্তু তুমি মেসেজ দেখছোই না কেন তুলি। তোমার মোবাইল বন্ধ কেন। আমার খুব অস্থিরতায় আছি। আচ্ছা তুলি, মানুষ যখন কাউকে আঘাত করে, তখন সেও আঘাত করে৷ কেন করে? তার মানে তো সেও ব্যথা দিতে চায়। তাতে তার শান্তি। তুলি আমি তোমাকে যে আঘাত করেছি। অশ্রাব্য গালাগাল গালাগাল করেছি। তুমি আমাকে অশ্রাব্য গালাগাল করে আঘাত করতে ক্ষত-বিক্ষত করে দাও এসে। না হয় আমিই করি। যে দু’টো হাত দিয়ে তোমাকে আঘাত করেছি। সেই হাত আমি কেটে ফালাফালা করে ছবি পাঠাই। তুমি কি খানিক শান্তি পাবে? ক্ষোভ কমবে? মানুষের আদি স্বভাব তো সেটাই তাই না? তাকে কেউ আঘাত করলে সেও করে। ওর ক্ষতি চায়। তুলি আমি এখনই গিয়ে ব্লেড নিয়ে আসছি। একটু অপেক্ষা। বাসার কাছেই দোকান।’

এর খানিক পর অনেকগুলো রক্তাক্ত হাতের ছবি।

তুলির কান্না পাচ্ছে। ভীষণ কান্না। চারপাশে মানুষ৷ সে ঠোঁট কামড়ে কান্না আঁটকে রাখতে চাচ্ছে। পারলো না সে। দুই হাতে মুখ ঢেকে বোবা কান্নায় কেঁপে কেঁপে উঠলো। কলি দেখতে পেয়ে পাশে এসে বসে বুকে টেনে নিল তাকে।

– ‘কি হয়েছে আপু?’

– ‘বিশ্বাস কর কলি, ওর একা দোষ না। আমারও দোষ ছিল ওর সঙ্গে লুকোচুরি করা। শুরুতেই সব খুলে বললে হয়তো এমন দিন দেখতে হতো না। মানুষটা কষ্ট পাচ্ছে। একটা মানুষ কতটা কষ্ট পেলে নিজের হাত কাটে বল। এই মানুষটা অনায়াসে আমার জন্য জীবন দিয়ে দিতে পারে কলি। এখন ওর কিছু হলে আমি কি করবো? নিজেকে কখনও ক্ষমা করতে পারবো না। কেন গতকাল রেগে চলে গেলাম। সে তো আমার কাছেই গিয়েছিল।’

তুলি পিঠে হাত রেখে ফিসফিস করে বলছে,

– ‘আপু কান্না বন্ধ করো। চারদিকে মানুষ। এটা হসপিটাল। সব ঠিক হয়ে যাবে। যখন বিয়ের মতো পবিত্র বন্ধনে মানুষ আবদ্ধ হয়ে যায়৷ তখন অপর মানুষটার মাঝে মাঝে অনেক বড়ো বড়ো অপরাধ মুখবুজে মেনে নিতে হয়। দোষ-গুণ সবকিছু মানুষের স্বভাবেরই অংশ। পৃথিবীতে কত জঘন্য মানুষেরও পরিবার আছে। তাদের মা-বাবা আছে। কেউ কি তাদের ফেলে দেয়? খারাপ ছেলেকে মা-বাবা ফেলে দেয় না। ভাই-বোন কেউ কাউকে ফেলে দেয় না৷ দিনশেষে এক সঙ্গেই থাকে। স্বামী-স্ত্রীও তেমন। একটা পরিবার। এখানে অনেক কিছুই মানিয়ে নিতে হয়। মাঝে মাঝে কেউ অতিরিক্ত করে ফেললে অপর মানুষ মুখবুজে সহ্য করলে একটা সময় তারও কষ্ট, অনুতপ্ত হয়। ইশ আমি অতিরিক্ত করেছি, সহ্য করেছে। এটাই মানব সম্পর্ক। এভাবেই ডালিমের বিচির মতো মানুষ গিজগিজ করে একত্রে বেঁচে থাকে। তোমাদের দু’জনেরই হয়তো প্রতিক্রিয়া বেশি ছিল৷ পার্কে ভাইয়ার প্রতিক্রিয়া হয়তোবা ছিল লাগামছাড়া। কিংবা তোমারও ভুল ছিল। এই সবকিছুই জীবনের অংশ। এগুলো মানিয়ে নিয়েও চলা যায়। আবার ছেড়ে গিয়েও চলা যায়৷ কিন্তু বিয়ে, সংসার করতে হলে এসব মানিয়ে নিতেই হয়। সংসার টিকে থাকার মন্ত্র এগুলোই। আদিকাল থেকেই এভাবে চলে আসছে একে অন্যের অসম্ভব বাড়াবাড়ি মেনে নিয়ে। এগুলো আবার খানিক পর ভালোবাসার পরশে আমরা একে অন্যকে ভুলিয়ে দেই বা ভুলে যাই। এই মন্ত্রগুলো আমরা মানি না বা জানি না বলেই এতো ডিভোর্স। এখন সংসার টিকে না থাকার কারণ এগুলোই আপু। ক্ষমা এক মহৎগুণ। তুমি যে আজ ক্ষমা করে দিয়েছো ভাইয়াকে। ভাইয়াও জানে সে ভুল বুঝে অনেক বড়ো অন্যায় করেছিল। এখন তার জীবনে অনেক বড়ো শিক্ষা হয়ে গেল। ভাইয়া এখন অনুতপ্ত। অনেক স্বামী আছে এখন ক্ষমা না চেয়ে বলতো, ‘আমি এই কারণে মেরেছি। দোষ ছিল ওর।’
এরকম নানান দোষ বের করে নিজের অহংকার নিয়েই থাকতো। কিন্তু উনি তো সঙ্গে সঙ্গে অনুতপ্ত। ক্ষমা চেয়েছে। নিজেই লজ্জা পাচ্ছে।’

– ‘তুই ঠিকই বলেছিস।’

তুলির এখন ভাবতেই লজ্জা লাগছে সেও ইশতিয়াকের গায়ে হাত তুলেছে। মানুষটা ভুল বুঝতে পেরে বাসায় গেল। মেসেজেও মাফ চাইল। নিজের হাতও কেটে ফেলেছে। সে তো একবারও অনুতপ্ত হয়নি। মাফ চাওয়া তো অনেকদূর। এখন যদি ওর কিছু হয়ে যায় সে নিজেকে ক্ষমা করবে কিভাবে?

– ‘কলি ডাক্তারদের গিয়ে জিজ্ঞেস করে জেনে আয় না বোন ওর অবস্থা কি?’

– ‘আচ্ছা আমি যাচ্ছি।’

কলি উঠে গেল। তুলি তাকিয়ে আছে বোনের দিকে৷ দু’জনের একই দিনে জন্ম হলেও তুলি আগে জন্ম নিয়েছে। দেখতেও তাকে বড়ো লাগে। আর কলিও তাকে আপু ডাকছে। আর সে ‘তুই’ করে। সবকিছু যেন অবচেতনভাবে হয়ে যাচ্ছে। কলিটা অনেক ছটফটে স্বভাবের বুঝাই যায়। আর কি বুঝ-বুদ্ধি হয়েছে। ওর মতো সেও বুদ্ধিমতী হলে হয়তো এই দিনগুলো দেখতে হতো না। মাও অতিরিক্ত করেছেন মানুষটার সাথে। তুলির নিজেরও লজ্জা লাগবে ওর সামনে দাঁড়াতে। এবার আল্লাহ সবকিছু ঠিকঠাক করে দিলে আর জীবনেও এমন হতে দেবে না সে। প্রচন্ড ভালোবাসায় বেঁধে রাখবে। কোনো ভুল বুঝাবুঝি চলবে না। ফেইসবুকে একদিন কোথাও দুইটা লেখা পড়েছিল। এখন ভীষণ উঁকি দিচ্ছে মাথায়,

– ‘দু’জনের মধ্যকার অনুরাগ থেকে যখন রাগের পরিমাণ বেশি হয়ে যায়, তখন পরিণাম হয় ‘বিচ্ছেদ’। সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে উভয়েরই পুরো জীবনভর প্রতিটি মুহূর্তে, প্রতিটি পরিস্থিতিতে রাগের কাছে অনুরাগকে জিতিয়ে যেতে হয়।

আরেকটা পড়েছিল,

‘যে মানুষটা একান্ত তোমার,
তাকে নিয়ে এঁটো করো না অভিযোগের মিনার।’

তুলির এই মুহূর্তে মনে হলো, আল্লাহ এবার সবকিছু স্বাভাবিক করে দিলে তার এই একান্ত ব্যক্তিগত মানুষটির সঙ্গে আর কখনও রাগ, জেদকে জিততে দেবে না। অনুরাগ মৃত্যু অবধি হারিয়ে যাবে রাগকে। ইশতিয়াকও আর কোনোদিন এমন রাগবে না। অবশ্যই রাগবে না। ওকে ভালোবেসে এমনভাবে আগলে রাখবে সে পুরোপুরি তার নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে। অবশ্যই আসবে।

কলি পাশে এসে বসে বললো, তোমার শ্বশুরকে জিজ্ঞেস করেছি। ডাক্তার না-কি বলেছে ঠিক হয়ে যাবে। আশংকাজনক কিছু নেই। দুলাভাই না-কি হাত কেটেছিল ভোরে ঘুম থেকে উঠে।

তুলি জানে এসব, তবুও ডাক্তার যেহেতু বলেছে ঠিক হয়ে যাবে। এখন আরেকটু শান্তি পেল সে।

একটু পর তার শ্বাশুড়ি এসে তুলির পাশে বসলেন।

– ‘আল্লাহ তায়ালা রক্ষা করছেন মা। আমি যদি ভোরে না যেতাম কি যে হতো। ডাক্তার বললো হাত কাটার সঙ্গে সঙ্গে নিয়ে আসায় ক্ষতি হয়নি৷ না হলে ভয়াবহ কিছু হতে পারতো।
ভোরে আমি ডাকতে গিয়ে দরজা ভেজানো থাকায় ঢুকে দেখি রক্তাক্ত অবস্থায় অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে। তাড়াতাড়ি বাসার সবাইকে ডেকে নিলাম। শুকনো পরিষ্কার কাপড় দিয়ে দুইহাত বেঁধে দ্রুত সবাই পাশের হসপিটাল নিয়ে এসেছি।
ডাক্তার খানিক আগে এসে জানিয়েছে দুশ্চিন্তার কিছু নেই। তীব্র ব্যথা এবং রক্ত ক্ষরণে দূর্বল হয়ে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিল। এখন রক্ত চলছে। হাত বেন্ডেজ করে দিয়ে দেবে। চাইলে না-কি আজ সন্ধ্যায়ই তাকে নিয়ে বাসায় যেতে পারবো।’

তুলি উনাকে জড়িয়ে ধরে ফ্যাসফ্যাস করে কেঁদে ফেললো।

– ‘আর কখনও এমন হবে না মা। দেইখো আর কখনও এমন হবে না। আর এবার ওকে খুব বকা দেবো। আর আলাদা ফ্ল্যাটে নয়। দু’জন তোমাদের কাছে থাকবো। দেইখো এখন থেকে সেও রাগারাগি করবে না।’

– ‘আচ্ছা মা শান্ত হও। দেখো না আমি বয়স্ক মানুষ কত শান্ত। ছেলেকে হসপিটাল নিয়ে এসেছি তবুও কাঁদিনি। শান্ত হও। দোয়া করো।’

তুলি চোখের জল মূছে নিল। একটু পর কলি এসে বললো, আমরা দুলাভাইয়ের সঙ্গে দেখা করে চলে যাই। তুমি থাকো।

– ‘দেখা করা যাবে?’

– ‘হ্যাঁ, তবে তুমি এখন দরকার নেই যাওয়ার। রক্ত চলছে শান্তশিষ্টভাবে থাকুক। আমরা চলে যাব তাই দেখা করে নিই।’

– ‘আমি গেলে কি হবে?’

– ‘আরে সে কথা বলবে। তোমরা কান্নাকাটিও যদি করো। দরকার নেই এখন।’

– ‘আচ্ছা ঠিক আছে।’

তারা তিনজনই ভেতরে গেল। ইশতিয়াক দেখে উঠে বসতে চাইল।
কলি এগিয়ে এসে বললো,

– ‘আরে আপনি উঠছেন কেন? রক্ত চলছে এখনও।’

– ‘আপনি কোত্থেকে জানলেন? বিনোদিনী না?’

– ‘হ্যাঁ, আপনি দেখছি আলাদা করতে পারছেন। যাইহোক শুয়ে থাকুন, উঠা লাগবে না।’

সে পুনরায় শুয়ে গেল। হুস্না বেগম পাশে গিয়ে বসে মাথায় হাত রেখে কেঁদে ফেললেন।

– ‘মনে কষ্ট পেলে মা মনে করে বাদ দিয়ে দিয়ো বাবা। আমি হঠাৎ করে রেগে গিয়েছিলাম। আমার মেয়েটাকে কোনোদিন ফুলের টোকাও দেইনি। তাই সহ্য করতে পারিনি..।’

কলি ব্যস্ত হয়ে বললো,

– ‘মা এসব কথা পড়ে বলা যাবে। উনি রেস্ট নিতে দিছে ডাক্তার।’

ইশতিয়াক ওর মা ডাক শুনে অবাক হয়ে তাকায়। সে বিনোদিনী হলে মা ডাকছে কেন? আর দেখেই বুঝা যাচ্ছে তুলি না। সে অন্তত এদের দু’জনকে আলাদা করতে পারবে। তুলির গায়ের গন্ধ অবধি তার চেনা। চোখের চাহনি চেনা। সে এদিকে আর মনযোগ না দিয়ে বললো,

– ‘এগুলো আমি মনে রাখিনি মা। বসুন আপনি। যা হয়ে গেছে তা বাদ।’

তুষার একটু পরে এসে ঢুকলো। কলি মুচকি হেঁসে বললো,

– ‘সে ব্লাড দিয়েছে আপনাকে৷’

ইশতিয়াক মুচকি হেঁসে ধন্যবাদ দিয়ে বললো বসতে। কলি হুস্না বেগমকে বললো,

– ‘আম্মু তুমি তুলি আপুর কাছে যাও এখন, এক সঙ্গে বেশি না থাকাই ভালো। আমরা আসছি।’

তিনি বাইরে যেতেই কলি পাশে বসে বললো,

– ‘তুলি আপুও এসেছে। কিন্তু আমরা ভেতরে আসতে দেইনি।’

– ‘দিচ্ছেন না কেন?’

– ‘আপনি রেস্ট নিন। তাকে রেখেই আমরা চলে যাব। সে আসবে একটু পর।’

ইশতিয়াক মুচকি হেঁসে বললো,

– ‘হাত কাঁটায় তাহলে ভালোই হয়েছে দেখছি।’

কলি মুচকি হেঁসে বললো,

– ‘হ্যাঁ, কাঁটা থেকে দারুণ কিছু হয়েছে।’

– ‘ও চাইলে আসুক। আমি তো সুস্থই এখন৷ হাঁটতেও পারবো।’

– ‘এতো তাড়া কেন। আপুও চলে আসতে চাচ্ছিল৷ একটু রেস্ট নিন আসবে। আর আমরা এখন যাচ্ছি।’

ইশতিয়াক মাথা নেড়ে সম্মতি দিল। তুষারও এগিয়ে এসে বললো,

– ‘যাচ্ছি ভাই পরে দেখা হবে।’

– ‘ব্লাড দিয়েছেন আপনি। একটু খেয়াল করে যাবেন।’

কলি বের হতে হতে বললো,

– ‘ওর জন্য আপনার চিন্তা করতে হবে না আমি আছি।’

ওরা চলে যাবার অনেক পরে তুলি এবং ওর শ্বশুর-শ্বাশুড়ি এলেন। ইশতিয়াক শুয়ে আছে। দরজার শব্দ শুনেই সে চোখ মেলে তাকায়। সবার পেছনে দাঁড়িয়ে আছে তুলি। কেমন ভেজা ভেজা চোখ। কি মায়াবী চেহারা। নিমিষেই যেন তার মনের ভেতর এক পশলা বৃষ্টি নেমে ভিজিয়ে দিয়ে গেল। ইশতিয়াকের মা কপালে হাত দিয়ে বললেন,

– ‘এখন কেমন লাগছে বাবা?’

– ‘অনেক ভালো মা, হাত কাঁটার আগে থেকে এখন ভালো আছি।’

কথাটা শুনেই তুলি মনে মনে লজ্জা পেল। এরকম কথা মা-বাবার সামনে কেউ বলে বুঝি। ওরা সবাই কথা বলে বের হয়ে গেলেন। তুলি ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছে। থুতনি বুকের সঙ্গে লাগিয়ে মেঝেতে চোখ। ভীষণ লজ্জা লাগছে।

– ‘আমি তো উঠতে পারবো না। কোনো সমস্যা না থাকলে চেয়ার টেনে পাশে এসে বসো।’

– ‘সমস্যা থাকবে কেন।’

ইশতিয়াক মুচকি হেঁসে বললো,

– ‘কোনো সমস্যা নেই?’

– ‘উহু।’

– ‘বাহ হাত কাঁটায় সত্যিই ভালো হয়েছে তাহলে।’

– ‘বাজে কথা একদম বলবেন না। আপনি হাত কেঁটে ঠিক করেননি।’

– ‘আচ্ছা তুমি তো আগে পাশে এসে বসো।’

তুলি গিয়ে পাশে বসে ওর কপালে হাত রেখে বললো,

– ‘স্যরি।’

– ‘তুমি স্যরি বলছো কেন?’

তুলির চোখে জল টলমল করছে। সে অস্ফুটে বললো,

– ‘এমনিই।’

ইশতিয়াক মুচকি হেঁসে বললো,

– ‘আমি কিন্তু পুরোপুরি সুস্থ। শুধু রক্ত দিচ্ছে বলে এরকম পড়ে থাকতে হচ্ছে৷ তুমি একটু কপাল এগিয়ে আনবে।’

তুলি লজ্জায় লাল হয়ে গেল। আজ যেন প্রথম রাতের মতোই লজ্জা পাচ্ছে সবকিছুতে। সে কপাল নিয়ে ইশতিয়াকের ঠোঁটে স্পর্শ করালো।
তুলির কেমন বিব্রতবোধ হচ্ছে। তাই আমতা-আমতা করে বললো,

– ‘আমি এখন যাই?’

– ‘না, আমি একা শুয়ে থেকে কি করবো? তুমি থাকো।’

– ‘আচ্ছা।’

– ‘বিনোদিনী দেখলাম মা ডাকে আম্মুকে। তোমাকে ডাকে আপু। মনে হচ্ছিল যেন তোমাদের পরিবারের কেউ।’

তুলি মুচকি হেঁসে বললো,

– ‘হ্যাঁ, সে আমার আপন বোন। ছোটবেলায় হারিয়ে গিয়েছিল। ওর নাম কলি।’

– ‘আরে কি বলো৷ সিনেমাটিক ব্যাপার দেখছি। যাক ভালোই হলো এই ভুল বুঝাবুঝি থেকে৷’

তুলি ঠোঁট টিপে হাসলো। ইশতিয়াক মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে বললো, ‘দেখে মনে হয় কামড় দেয়া যাবে। কিন্তু দেয়া যায় না।’

তুলি চোখ পাকিয়ে বললো,

– ‘কি?’

– ‘ডিমের কুসুমে কামড়।’

– ‘ধ্যাৎ, অসুস্থ অবস্থায়ও আপনার ফাজলামো যায়নি।’

পরিশিষ্ট: ইশতিয়াক হসপিটাল থেকে সোজা চলে যায় তার মা-বাবার কাছে। তারা সেখানেই এখন থেকে থাকবে। সংসার করবে।
তুষার তার ফুপুকে নিয়ে কলিদের বাসায় যায়। তুষারের ফুপু ইশতিয়াকের অফিসেরও কলিগ। সেখানে কলির আগের বাবা-মাও উপস্থিত হন। সবাই মিলে তুষারের ফুপুকে বুঝিয়ে বলেন ওর আসল পরিচয়। উনার বেশ পছন্দ হয়েছে সবকিছু জেনে, দেখে। বাসায় গিয়ে ভাইকে ফোনে সবকিছু খুলে বলেন। ওরাও রাজি হয়ে যায়। তারপর এখানে বিয়ের দিন-তারিখ ঠিক করেন এসে। তুষার আর কলির বিয়ে হবে আগামী শুক্রবারে। তুষার এবং তার বাবা-মা ঢাকায়ই আছেন৷ শুক্রবারে বিয়ে শেষে কনে নিয়ে একেবারে কোমলগঞ্জ যাবেন।

____সমাপ্তি___