Friday, June 27, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1067



ভালোবাসা অন্যরকম পর্ব-১৪

0

#ভালোবাসা অন্যরকম
[পর্ব – ১৪]
লেখক – আবির চৌধুরী

মেয়েটার কথা শুনে আমি মেয়েটার দিকে তাকাতেই আমার চোখ কপালে উঠে গেলো। নিজের চোখকে আমি বিশ্বাস করতে পারছিনা। আমি হতবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম । কারণ আমার সামনে থাকা মেয়েটা আর কেউনা। আমার প্রাক্তন স্ত্রী দিয়াই ছিল। দিয়ার চোখ আমার চোখে পড়তেই দিয়া একটা দৌড় দিয়ে আমার সামনে থেকে চলে গেল। আমি চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে গেলাম। দিয়া আমার থেকে অনেকটা দূরে চলে গেলো। এবার আমি দিয়ার পিছনে ছুটতে লাগলাম। কিন্তু অন্ধকারের ভিড়ে আমি দিয়াকে হারিয়ে ফেললাম।দিয়াকে এবার আমি আসেপাশে খুজতে লাগলাম কিন্তু দিয়াকে কোথাও খুঁজে পেলাম না। হতাশ হয়ে ফিরে আসলাম সেই চা দোকানের সামনে। এসে বসে ভাবতে থাকলাম। কি এমন হলো যে আজকে দিয়াকে এমন একটা যায়গায় আসতে হলো। কেন যানি খুব খারাপ লাগছে। কিন্তু দিয়ার আগের কথা গুলো মনে পড়ে রাগ ও হচ্ছে৷ কারণ মেয়েটা তো টাকার জন্য আমাকে ছেড়ে চলে গেলো। হয়ত টাকার জন্য এই কাজে নেমেছে। কিন্তু একটা কথা বুঝতে পারছিনা বলল আজকে প্রথম আর তার নাকি অনেক টাকার প্রয়োজন। কি হয়ে গেলো যে ওর অনেক টাকার প্রয়োজন হলো! আমার আর রাইসার বিয়ের পর থেকে দিয়ার সাথে আমি আর কোনো যোগাযোগ রাখিনি। দিয়াকে আমি মন থেকে অনেক ঘৃণা করি। কিন্তু দিয়াকে আজকে এই যায়গায় দেখে আমার খুব খারাপ লাগছে। আমি আমার পকেট থেকে ফোন বের করে রাসেল কে কল দিলাম। কিন্তু রাসেল আমার কল রিসিভ করল না। হয়তো ঘুমিয়ে আছে। রাত তো অনেক হয়ে গেলো। একটু পরে আমি একটা রিকশা নিয়ে গেরেজে চলে গেলাম। তারপর ওখান থেকে একজন কে নিয়ে এসে আমি গাড়ি টা সারিয়ে বাসায় চলে গেলাম। বাসায় গিয়ে দরজার কলিং বেলে অনেক্ষন চাপ দিতে থাকলাম। কিন্তু কেউ দরজা খুলছেই না হয়তো সবাই গভীর ঘুমে আছন্ন। তারপর রাইসার ফোনে ফোন দিতে থাকলাম। একটু পরে রাইসা ফোন রিসিভ করল। তারপর সে এসে দরজা খুলে দিলো। আমি রুমে গিয়ে শুয়ে পড়লাম। খুব খারাপ লাগছে আমার।

রাইসা হয়তো সেটা বুঝতে পারছে।

— ঈশান কি হইছে তোমার? তোমাকে দেখে আজ কেমন জানি লাগছে৷ কিছু হইছে নাকি তোমার?

— নাহ, কিছু হয়নি আসলে শরীর খুব ক্লান্ত লাগছে। আমাকে একটু ঘুমাতে দাও।

তারপর আমি অন্য দিকে মুখ করে শুয়ে পড়লাম। কিন্তু ঘুম যেনো আমার চোখ থেকে উড়ে চলে গিয়েছে। বার বার দিয়ার কথা টাই কানে বেজেই যাচ্ছে। আমি কিছুতেই বুঝতে পারছিনা যে দিয়া শেষে কিনা এমন যায়গায় আসবে। এসব ভাবতে ভাবতে আমি ঘুমিয়ে পড়লাম। সকালে ঘুম ভেঙে গেলো রাসেলের কল পেয়ে। আমি সাথে সাথে কল রিসিভ করলাম।

— কিরে কাল এতো রাতে কল দিলি আমি ঘুমিয়ে ছিলাম। তাই কল রিসিভ করতে পারিনি দোস্ত।

— আচ্ছা সমস্যা নাই তোর সাথে আমার জরুরি কিছু কথা আছে। তুই আমার সাথে দেখা কর এক্ষুনি।

— কোথায় দেখা করতে হবে?

— ক্লাবে আয় আমি এখনই বের হচ্ছি।

এই কথা বলে আমি কল কেটে দিলাম। তখন রাইসা আমার রুমে এলো।

— এখন আবার তুমি কোথায় যাবে ঈশান?

— আমার একটা কাজ আছে বের হতে হবে আমাকে।

— নাস্তা করে যাও। নাস্তা রেডি করে রেখেছি আমি।

— আজকে আর নাস্তা খেতে পারবোনা আসি আমি।

এই কথা বলেই আমি রাইসার সামনে থেকে চলে এলাম। তারপর আমি ক্লাবের দিকে রওনা দিলাম।

অন্যদিকে আমার এমন আচরণ দেখে রাইসা অনেক কষ্ট ফেলো। রাইসা খাটের উপরে বসে ভাবতে থাকল কি হয়ে গেলো ঈশানের? ঈশান তো এর আগে এমন ব্যবহার করে নাই কখনও তা হলে হঠাৎ কি হয়ে গেলো! রাইসা রুমে বসে বসে এসব ভাবছে তখন আম্মু রুমে এসে দেখে রাইসা খাটের এক কোণে বসে আছে অন্যমনস্ক হয়ে। সেটা আম্মু খেয়াল করতে পারলো।

— কিরে মা কি হইছে তোর? এই ভাবে বসে আছিস কেন? আর ঈশানকে ও দেখতে পারছিনা? ঈশান কই গেলো?

তারপর রাইসা আম্মুকে সব কিছুই বলল।

— মা তুই চিন্তা করিস না ঈশান হয়তো কোন জরুরী কাজেই গিয়েছে তাই এমন করছে৷ এ নিয়ে এতো চিন্তা করিস না।

— হুম কিন্তু আম্মু ঈশান তো এর আগে আমার সাথে এমন করে নাই। কখনও কোনো সমস্যা হলে আমাকে আগেই জানাত তা হলে এখন কি এমন হলো?

— আচ্ছা হয়তো পরে বলবে তোকে এসব বাদ দে মা। চল নাস্তা করতে আয়। এখন তুই এবার তোর শরীরের কথাটা একটু ভাব। এখন কিন্তু তুই একা না আরেকজন আছে তোর সাথে।

ওহ আপনাদের তো একটা খুশির খবর দেওয়া হয়নি। রাইসা মা হতে চলছে। ঈশানের সন্তান রাইসার পেটে। ৫ মাসের প্রেগন্যান্ট রাইসা।

এবার গল্পে ফিরে আসি। আম্মু রাইসাকে অনেক কষ্টে বুঝিয়ে নাস্তা করালো। এই দিকে ঈশান ক্লাবে পৌছে গেলো। কিন্তু রাসেল এখনও এলো না। ঈশান রাসেলের জন্য অপেক্ষা করে বসে রইল। একটু পরে রাসেল ক্লাবে আসলো।

— কিরে এতো জরুরী তলব কেন?

— তোর সাথে আমার খুব জরুরী একটা কথা আছে তোকে আমার জন্য একটা কাজ করতে হবে।

— কি কাজ?

— আমাকে দিয়ার ঠিকানা টা এনে দিতে হবে যে করেই হোক।

— হঠাৎ দিয়ার খোঁজ করছিস কেন তুই? যে মেয়ে টা তোর সাথে এমন করল তুই এখনও তাকে ভুলতে পারিসনি? এই মেয়ের কথা ভুলে যা তুই।

— আরে ওই রকম কিছু না আসলে কাল রাতে,,,

— কাল রাতে মানে?

তারপর আমি রাসেলকে সব কিছুই খুলে বললাম। কাল রাতে কি কি হইছে। রাসেল আমার কথা শুনে থ মেরে আমার দিকে তাকিয়ে রইল।

— এই মেয়ের সাথে এমন টাই হওয়ার কথা ছিল। যে মেয়ে তোকে টাকার জন্য ছেড়ে চলে গেছে। সে মেয়ে টাকার জন্য সব কিছুই করতে পারে। এসব নিয়ে তোকে এতো মাথা ঘামাতে হবেনা। ওর যা ইচ্ছে তাই করুক তাতে তোর কি?

— দেখ রাসেল আমার কেন জানি মনে হচ্ছে দিয়া খুব বিপদে আছে তাই এমন যায়গায় এসে দাড়াতে হলো। প্লিজ ভাই তুই আমাকে দিয়ার ঠিকানা টা একটু ম্যানেজ করে দে।

— ঈশান আমার কেন জানি মনে হচ্ছে তুই একটু বেশিই ভাবছিস এটা নিয়ে। এই মেয়ের উপরে আমার কোনো বিশ্বাস নেই।

— তোকে আমি যেটা বলছি তুই সেটা কর। আর করতে না পারলে বল আমি নিজেই বের করবো।

— আরে ভাই এতো রেগে যাওয়ার কি আছে আমি কি বলছি আমি পারবোনা? ঠিক আছে আমি দেখছি। আর আমি তোকে সব জানিয়ে দেব।

— হুম দিয়ার ব্যাপারে সব ডিটেইলস চাই আমার। তুই যে ভাবে পারিস আমাকে জোগাড় করে দিবি।

— ঠিক আছে, তোকে দেখে মনে হচ্ছে-না তুই সকালে নাস্তা খেয়েছিস! চল নাস্তা খেয়ে নি আগে আমিও খাইনি।

তারপর আমি আর রাসেল একটা রেস্টুরেন্টে গিয়ে নাস্তা খেয়ে নিলাম। তারপর রাসেলের সাথে আরও কিছুক্ষণ কথা বলে আমি বাসায় চলে গেলাম। বাসাত গিয়ে নিজের রুমে গিয়ে দেখি রাইসা মন খারাপ করে বসে আছে। আমি গিয়ে রাইসার পাসে বসলাম।

— আরে আমার পাগলি টার কি হয়েছে? মন খারাপ করে বসে আছো কেন?

রাইসা আমার প্রশ্নের কোনো উত্তর দিলনা। বুঝতে পারলাম সকালে রাইসা আমার ব্যবহারে কষ্ট পাইছে৷ আমি সরি বলে যেই রাইসার হাত ধরতে গেলাম। তখনই রাইসা এক জাটকা দিয়ে আমার হাত সরিয়ে দিল।

— আমাকে স্পর্শ করবে না তুমি।

— আরে রাগ করে আছো কেন? আসলে একটা জরুরী কাজ ছিল তাই ওই ভাবে চলে গিয়েছিলাম। সরি আর হবে না এমন।

রাইসা এবার কান্না করে দিল।

এই হোলো এক জ্বালা এই মেয়েটা সামান্য কিছুতেই কান্না করে দেয়।

— উফফফ আবার কান্না করছো কেন তুমি?

— কান্না করলে তোমার কি হুম? আমি তো তোমার কেউ হইনা।

— তুমি তো আমার সন্তানের আম্মু। আমার কিছু হতে হবে না। দেখি তো আমার বাবা টা কিছু বলছে কিনা।

এই কথা বলেই আমি রাইসার পেটের উপরে কান পেতে শুনতে চাইলাম। রাইসা এবার আমাকে সরিয়ে দিয়ে একটা মুচকি হাসি দিয়ে বলল — আমার সন্তান তোমার সাথে কথা বলবেনা সে রাগ করছে।

— কেন?

— কারণ তুমি তার আম্মুকে কষ্ট দিয়েছো।

— আচ্ছা সরি আর কষ্ট দেবোনা। এই দেখো কান ধরলাম।

এবার দিয়া খিলখিল করে হেসে দিল। যাক বাবা অবশেষে রাগ কমাতে পারলাম। দেখতে দেখতে আজকের দিন কেটে গেলো কিন্তু রাসেল আমাকে এখনও কোনো খোঁজ দিতে পারল না।

চলবে,,,

ভালোবাসা অন্যরকম পর্ব-১৩

0

#ভালোবাসা অন্যরকম
[পর্ব – ১৩]
লেখক – আবির চৌধুরী

অনেক্ষন পরে রাইসা রুমে আসলো। রাইসা কে দেখে আমি বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে গেলাম।

— কিরে এতোক্ষণ কই ছিলি তুই?

— আম্মুর সাথে কথা বলছিলাম। আর আম্মু ঘুমিয়েছে পরে আসলাম। তুই এখনও জেগে আছিস! আমি তো ভেবে ছিলাম তুই ঘুমিয়ে গেছিস।

— এই আমি না তোর হাসবেন্ড তুই আমাকে তুই তুই করে কেন বলিস হুম? জামাইকে কেউ তুই করে বলে?

— তুইও তো আমাকে তুই করে বলিস!

— ঠিক আছে আজ থেকে তুই শব্দটা বাদ তুমি করে বলবে ঠিক আছে?

— হুম ঠিক আছে। চলো জেগেই যখন আছো আজকে বাসর টা সেরে ফেলা যাক কি বলো?

— একদম না বাসর হবে আমার বাসায় গিয়ে ওকে? এখানে কিছুই হবেনা।

— ঠিক আছে তোমার বুকে মাথা রেখে আমাকে ঘুমাতে তো দিবে?

— হুম সেটা দিতে পারি তবে আমার একটা শর্ত আছে।

— আবার কিসের শর্ত!

— আমাকে ১০ টা চুমু দিতে হবে তারপর।

— এতো কেন?

— কেন আবার আমাকে না বলে চলে আসার শাস্তি।

— ঠিক আছে দিচ্ছি।

তারপর রাইসা আমাকে ৯ টা চুমু দিয়ে থেকে গেল। আমি জিগ্যেস করলাম — আরেকটা কিন্তু এখনও বাকি আছে।

আমি এই কথা শেষ করার আগেই রাইসা আমার টি-শার্টের কলার টান দিয়ে আমার মুখ তার দিকে টেনে নিয়ে আমার ঠোঁটে রাইসার ঠোঁট ডুবিয়ে দিল।রাইসার চোখে আমার চোখ পড়তেই সে লজ্জায় আমার বুকে মাথা লুকিয়ে নিল। আমি রাইসার কপালে একটা চুমু দিয়ে আমার বুকের সাথে রাইসাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়লাম। সকালে ঘুম ভেঙে গেলো রাইসার ডাকে।

— এই ঈশান উঠো না কেন আর কতক্ষণ ঘুমাবে? আম্মু আমাদের জন্য নাস্তা রেডি করে বসে আছে।

আমি ঘুমঘুম চোখে রাইসাকে বললাম তুমি যাও আমি আসছি। এই বলে আমি আবার ঘুমিয়ে পড়লাম। একটু পরে ঘুম ভেঙে গেলো চোখের উপরে পানির ছিটকে পড়ে। বাসার ছাদের দিকে তাকিয়ে বললাম — এই সময় বৃষ্টি এলো কই থেকে? ছাদ কি ফুটা হয়ে গেলো নাকি? নাহ ছাদ তো ঠিকি আছে তা হলে পানি এলো কই থেকে। পাশে তাকিয়ে দেখি রাইসা হাতে এক গ্লাস পানি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আমার দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে আছে।

— ওহ তুমি পানি দিয়ে আমার ঘুম ভেঙে দিলে আমি তো ভাবছি তোমাদের বাসার ছাদ ফুটা হয়ে গেছে।

— তুমি কি এখন উঠবে নাকি এখন সব পানি তোমার গায়ের উপরে ডেলে দিতে হবে?

— নাহহহহ দাড়াও আমি এখনই উঠে যাচ্ছি।

এবার তাড়াতাড়ি করে উঠে আমি খাটের উপরে উঠে বসে গেলাম।

— রাইসা তুমি যাও আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।

— হুম আমি যাই আর তুমি আবার ঘুমিয়ে যাও। এটা হবেনা সোনা। আমি এখানেই আছি তুমি গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসো।

কি আর করার বিরক্তিকর ভাব নিয়ে ফ্রেশ হতে চলে গেলাম। ফ্রেশ হয়ে এসে নাস্তা করে আবার নিজের রুমে চলে এলাম। রুমে এসে বসে আছি রাইসার জন্য একটু পরে রাইসা আসল।

— তাড়াতাড়ি করে রেডি হয়ে নাও আমরা বাসায় যাবো।

— ঠিক আছে।

তারপর রাইসা রেডি হতে চলে গেলো। রাইসা রেডি হয়ে চলে এলো। কিছুক্ষণ পরে রাইসার আম্মুর থেকে বিদায় নিয়ে আমরা বাসার দিকে রওনা দিলাম। আমি নিজেই গাড়ি ড্রাইভিং করছি হঠাৎ একটা নদীর পাস দিয়ে যেতেই রাইসা আমাকে বলল — ঈশান গাড়ি দাড় করাও প্লিজ।

আমি সাথে সাথে গাড়ি দাড় করিয়ে দিলাম।

— হঠাৎ কি হলো আবার তোমার? গাড়ি দাড় করাতে বললে কেন?

— চলোনা আমরা একটু নদীর পাড়ে গিয়ে বসি। বেশিক্ষণ না একটু থাকব প্লিজ প্লিজ।

— আচ্ছা ঠিক আছে চলো।

তারপর আমি রাইসাকে নিয়ে গাড়ি থেকে নেমে নদীর পাড়ে গিয়ে বসলাম। হালকা হালকা বাতাস আসছে। শরীরে শীতল বাতাস অনুভব করতে পারছি খুব ভালোই লাগছে রোমান্টিক একটা ওয়েদার। রাইসা আমার কাধের উপরে মাথা রেখে নদীর পানির দিকে তাকিয়ে আছে।

— ইশান আমাকে তুমি একটা কবিতা শুনাবে প্লিজ? তুমি তো আগে খুব সুন্দর সুন্দর কবিতা বলতে। খুব মিস করি তোমার সেই কবিতা গুলো। প্লিজ শোনাবে?

আমি অনেক্ষন চুপ থেকে বললাম — ঠিক আছে।

— নির্জন টলমল জলভরা একটি নদী
বয়ে চলে নিরবধি ।
নদীর উপর নীল আকাশের ছায়া
তাইতো আকাশের প্রতি নদীর এতো মায়া ।
নদী ছুটে যায় কখনো ধুসুর মেঘলোকে ,
নীল আকশের প্রাণের মনোলকে ।
আকশের হরেক রঙ ,
ক্ষণে ক্ষণে রঙ বদলায় ,
কখনো আকাশ ফিরে আসে
নিজের রুপে ,
কখনো আকাশ ছায়া ফেলে ,
নদীর বুকে ,
আকাশ নিজেকে দেখে
—— নদীর চোখে ।
আকাশের ও বুকে কখনো সাদা –
কালো মেঘে যায় ঢেকে ।
কখনো আবার দুঃখের ঝড় উঠে ,
কখনো আবার রোদেলা সূর্য হাসে ।
আকাশ যখন অঝোর ধারায় কাঁদে
আকাশের বেদনার মেঘগুলো ,
দুঃখের বৃষ্টি হয়ে
ঝরে পড়ে নদীর বুকে ।
আকাশ অঝর বৃষ্টির ধারা ছড়িয়ে দিয়ে
নদীর বুকে তুলে আলোড়ন ।
তাইতো নদী আকাশকে ভালোবেসে
নদীর বুকে বাঁধে ।
আকাশের ও কান্নায় …
নদীর বুকে বয়ে যায় বন্যায় ।
আকাশ তো বুঝে না
নদী ও যে আকাশকে ভালোবাসে ।
আকাশের ও বুকে
কখনো রংধনু উঠে
কখনো নীলিমায় যায় ঢেকে,
কখনো আবার চাঁদ,
তারা ভাসে ,
দুরের ঐ রাতের আকাশে ।
আকাশ ও নদী
দুই দিগন্তে দুই জন
কেঁদে মরে আমরণ ,
নদীর ও যে ইচ্ছে জাগে
দূরের আকাশ টাকে ছুঁতে ।
নদীর উপর আকাশের অনুরাগের ছায়া
তাইতো আকাশের প্রতি নদীর এতো মায়া ।
মায়ার হাওয়ায় , মায়ার ডানায় ,
নদীর বুকে যখন পড়ে
আকাশের নীল আলো
নদীর ও তো লেগেছিলো ভালো।

রাইসা আমার কবিতা শুনে খুশিতে আমাকে জড়িয়ে ধরে বলল — বাহ সত্যি খুব সুন্দর হইছে। কতো দিন পরে তোমার মুখে কবিতা শুনলাম।

তারপর আমরা আরো কিছুক্ষণ নদীর পাড়ে বসে থেকে বাসায় চলে গেলাম। বাসায় গিয়ে খাটের উপরে শুয়ে পড়লাম। শরীর খুব ক্লান্ত লাগছে কেন জানি। এক ঘুমে রাত হয়ে গেলো। রাইসার ডাকে ঘুম ভেঙে গেলো।

— খাবার খেতে আসো।

তারপর আমি হাত মুখ ধুয়ে খাবার খেতে চলে গেলাম। খাবার খেয়ে এসে নিজের রুমে শুয়ে পড়লাম। একটু পরে রাইসা ফ্রেশ হয়ে এলো। রাইসাকে দেখে আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম। মনে হচ্ছে আমার সামনে একটা পরি দাঁড়িয়ে আছে।

— কি ব্যাপার এই ভাবে তাকিয়ে আছো কেন?

— দেখছি আমার মায়াবী মুখের সেই মায়াবতী টাকে। যার মায়াতে এখন আমি দিসে হারা।

— কে সেই মায়াবতী?

— কে আবার যে আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। যার মায়াভরা মুখের থেকে সরাতে পারিনা আমার দুটি চোখ।

— বাহ আজকে কি কবির মনে রঙ লেগেছে নাকি?

— না নেশা হয়েছে আমার। তোমাকে স্পর্শ করার নেশা। তোমাকে কাছে পাওয়ার নেশা।

রাইসা আমার কথা শুনে অনেকটাই লজ্জা মাখা মুখে বলল — তুমি আসলেই অনেক দুষ্ট। এবার ঘুমাও তো।

— আজকে আর ঘুম হবেনা। চলো শুরু করি।

— কি শুরু করবে?

— বাসর।

তারপর আমি লাইট অফ করে দিলাম। বাকিটা ইতিহাস। দেখতে দেখতে আমাদের বিয়ের দুবছর পার হয়ে গেলো। রাইসার সাথে খুব ভালোই দিন কেটে যাচ্ছে আমার। আমরা দুজনেই অনেক হ্যাপি।
হঠাৎ করে একদিন অফিসের কাজের খুব চাপ বেড়ে গেছে৷ কাজ করতে করতে রাত ১২ টা পার হয়ে গেছে। এর মধ্যে রাইসা অনেকবার কল দিয়েছে কিন্তু আমি কল রিসিভ করার সময় ও পাইনি। কাজ শেষ করে আমি রাইসাকে কল দেওয়ার সাথে সাথে ফোন রিসিভ করে কান্না করে দিল। বুঝতে আর বাকি রইল না যে রাইসা কান্না করছে। হয়তো আমার ফোনের আসায় বসে আছে মেয়েটা।

— কি হইছে তোমার ফোন রিসিভ করছিলে না কেন? কতো চিন্তা হচ্ছিলো আমার তুমি যানো?

— আরে পাগলি কান্না করছ কেন আসলে কাজের অনেক চাপ ছিলো তাই ফোন রিসিভ করতে পারিনি সরি।

— সরি বলতে হবেনা বাসাত আসো তারপর দেখবে।

— আচ্ছা আমি এখনই চলে আসছি।

তারপর ফোন রেখে দিয়ে গাড়িতে বসে ড্রাইভিং করতে শুরু করে দিলাম। কিছুদূর যাওয়ার পরে হঠাৎ করে আমার গাড়ি টা অফ হয়ে গেলো। আমি তাড়াতাড়ি করে গাড়ি থেকে নেমে গেলাম। নেমে দেখি গাড়ি চাকার হাওয়া চলে গেছে। মনে হচ্ছে চাকা লিক হয়ে গেছে। রাইসাকে ফোন দিয়ে বলে দিলাম ঘুমিয়ে যেতে। এখান থেকে গাড়ির গেরেজ অনেক টায় দূরে। তাই একটা রিকশার জন্য অপেক্ষা করে দাড়িয়ে রইলাম। হঠাৎ আমার চোখ পড়লো একটা চায়ের দোকানের দিকে। আমি দোকানে গিয়ে একটা চায়ের জন্য বললাম। তারপর আমার হাতে চা চলে এলো আমি বসে বসে চা খাচ্ছি তখন পিছন থেকে একটা মেয়ে বলে উঠল — ভাইয়া আমাকে দিয়ে কাজ করাবেন? আমি এই কাজে আজকে প্রথম এসেছি। আমি আপনাকে সুখ দিতে পারব।

মেয়েটার কথা শুনে বুঝতে পারলাম এটা কোনো পতিতা মেয়ে। আমি মেয়েটার দিকে না তাকিয়ে বললাম — না আমার লাগবে না আপনি যান।

মেয়েটা আবার বলল — প্লিজ আসেন আমার অনেক টাকার প্রয়োজন। বিশ্বাস করুন আমি এই কাজে আজকে নতুন এসেছি।

মেয়েটার কথা শুনে আমি মেয়েটার দিকে তাকাতেই আমার চোখ কপালে উঠে গেলো,,,,

চলবে,,,,

ভালোবাসা অন্যরকম পর্ব-১২

0

#ভালোবাসা অন্যরকম
[পর্ব – ১২]
লেখক – আবির চৌধুরী

আমি রাইসার দেওয়া চিঠি টা খুলে পড়তে শুরু করে দিলাম

চিঠি
___________

ঈশান,, আমি কখনও ভাবি নাই যে আমি তোর বিরক্তিকর একটা মানুষ হবো। আমি তোর কাছে কখনও কিছু চাইনি, শুধু একটু ভালোবাসা ছেয়ে ছিলাম। আমি প্রতিটি রাত নিরবে কান্না করে গেছি শুধু তোর জন্য। আর তুই সেটা কখনও বুঝতে পারলি না। আমি তোর সব কিছু সহ্য করে পড়ে ছিলাম তোকে ভালোবাসি বলে। তোকে আমি ছোট বেলা থেকেই খুব ভালোবাসি। এখনও অনেক ভালোবাসি। তোকে পাওয়ার স্বপ্ন দেখতাম রোজ।যখন দিয়ার সাথে তোর বিয়ে হয়ে যায় তখন আমি অনেক কষ্ট পেয়েছিলাম। তোকে পাওয়ার আসা আমি তখনও ছেড়ে দেইনি। যখন শুনলাম দিয়া তোর সাথে এমন একটা কাজ করছে বিশ্বাস কর আমি তখন অনেক বেশি কষ্ট পেয়েছিলাম। আমি চেয়েছি আমার ভালোবাসা দিয়ে তোর সব কষ্ট আমি দূর করে দেব। কিন্তু আমি ব্যার্থ হয়েছি। আমি পারলাম না তোর কষ্ট দূর করতে বরং আমি তোর বিরক্তের কারণ হলাম। তাই সব ছেড়ে আমি চলে আসতে বাদ্য হলাম। জানিস আমার না খুব কষ্ট হচ্ছে তোকে ছেড়ে চলে আসতে। এখনও আমার চোখ দিয়ে টলমল করে পানি পড়ছে। আমি আর কিছু লিখতে পারছিনা ভালো থাকিস তুই আমি এটাই চায়।

রাইসার দেওয়া চিঠি টা পড়ে আমার চোখে পানি চলে আসলো। একটা মেয়ে আমাকে এতো ভালোবাসে আর আমি তার ভালোবাসা টা বুঝতে পারলাম না এতো দিনেও। এসব ভাবতে ভাবতে আমি আমার রুম থেকে বের হয়ে গেলাম। ঘড়িতে এখন রাত ১০ টা বাজে। রাইসার বাসায় চলে যাবো। ভালো লাগছেনা আমার কোনো কিছু৷ তাই বাসা থেকে বের হবো তখন আম্মু ডাক দিল।

— ঈশান এতো রাতে কই জাস তুই?

— রাইসাকে নিয়ে আসতে যাচ্ছি।

আম্মু আমার কথা শুনে একটু খুসি হয়ে গেছে।

— এতো রাতে যেতে হবে না কাল গিয়ে নিয়ে আসলেই হবে। এখন খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়।

— না আম্মু আমি রাইসার সাথে অনেক অন্যায় করছি আমি ওর ভালোবাসা বুঝতে পারিনি। আমাকে এখনই রাইসার কাছে গিয়ে ক্ষমা ছেয়ে আসতে হবে। আর আমি রাইসাকে নিয়ে তারপর বাসায় ফিরে আসবো।

তারপর আমি বাসা থেকে বের হয়ে রাইসার বাসার দিকে রওনা দিলাম। কিছুক্ষণের মধ্যে রাইসার বাসায় পৌছে গেলাম। বাসার সামনে গিয়ে দরজা ধাক্কা দিতেই রাইসার আম্মু এসে দরজা খুলে আমাকে দেখে অবাক হয়ে গেলো।

— বাবা তুমি এতো রাতে? এই সময় কিছু হইছে নাকি?

— রাইসা কোথায়?

— ও তো ওর রুমে শুয়ে আছে। তোমাদের বাসা থেকে আসার পর থেকে কিছুই খাচ্ছেনা।আর রুম থেকেও বের হচ্ছেনা। কিছু হইছে নাকি বাবা?

— না তেমন কিছুই হয়নি। আচ্ছা আমি রাইসার সাথে দেখা করে আসি।

তারপর আমি তাড়াহুড়ো করে রাইসার রুমে চলে গেলাম। রাইসার রুমে গিয়ে দেখি রাইসা খাটের উপরে শুয়ে এখনো কান্না করছে। আমি ধিরে ধিরে রাইসার দিকে এগিয়ে গেলাম। রাইসার কাছে গিয়ে রাইসা বলে একটা ডাক দিতেই রাইসা আমাকে দেখে চমকে উঠল। আর হা করে আমার দিকে তাকিয়ে রইল।

— এই ভাবে তাকিয়ে আছিস কেন? মনে হয় ভুত দেখলি?

— তুই এখানে! আমি তো বিশ্বাস করতে পারছিনা।

— বিশ্বাস করতে হবেনা তুই আমাকে না বলে চলে এলি কেন? তোর সাহস তো কম না দেখছি!

রাইসা আমার কথার উত্তর না দিয়ে মাথা নিচু করে দাড়িয়ে রইল। এবার আমি রাইসার খুব কাছে চলে গেলাম। এতোটা কাছে যে রাইসার নিশ্বাস এর শব্দ আমি শুনতে পারছি।

— রাইসা আমার দিকে তাকা তুই। আমার চোখের দিকে তাকিয়ে উত্তর দে আমাকে না বলে চলে আসলি কেন? আমাকে ছেড়ে কি থাকতে পারবি তুই?

রাইসা আমার চোখের দিকে তাকিয়ে নিজেকে আর ঠিক রাখতে পারলোনা। আমাকে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। আর বলতে থাকল — আমি তোকে ছাড়া থাকতে পারবোনা খুব ভালোবাসি তোকে।

আজকে প্রথম রাইসাকে জড়িয়ে ধরলাম। তারপর রাইসার কপালে একটা ভালোবাসার পরশ একে দিয়ে তার চোখের পানি মুছে দিলাম।

— থাকতে পারবিনা তা হলে আমাকে না বলে চলে আসলি কেন?

— কি করব আমি বল! আমার আর কি করার আছে?

— অনেক কিছুই করার আছে।

— মানে?

— আমাকে ভালোবাসবি।

— আমি তো তোকে ভালোবাসি কিন্তু তুই তো আমাকে,,,

এই কথা বলতেই আমি রাইসার ঠোঁটে আমার আঙ্গুল দিয়ে থামিয়ে দিলাম। আর বলতে থাকলাম।

— আমি ও আমার পাগলি টাকে খুব ভালোবেসে ফেলছি। আমাকে ছেড়ে আর কোথাও যেতে পারবিনা তুই।

আমার কথা শেষ করার আগে রাইসা আবার আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিল।

— এই পাগলি আবার কান্না কিসের হুম? আর কাঁদবে না একদন ওকে।

— হুম। তোকে আমি খুব ভালোবাসি ঈশান।

— আমিও তোকে ভালোবাসি।

এই বার দু’জন দু’জনকে অনেক্ষন জড়িয়ে ধরে রাখলাম। বুকের ভিতর খালি যায়গাটা যেনো আজ পুরোন হয়ে গেলো রাইসাকে বুকের মাঝে আগলে রেখে।

এবার আমি রাইসাকে বললাম — রাইসা এবার চল,

— চল মানে কই যাবো এখন?

— কেন আমাদের বাসায় আর কোথায়?

— পাগল হলি তুই কয়টা বাজে ঘড়ি দেখিস নাই নাকি? এতো রাতে কি আম্মু আমাদের যেতে দিবে?

রাইসার কথা শুনে আমি ঘড়ির দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে গেলাম। রাত ১ টা বেজে গেছে। কি আর করার আম্মুকে কল দিয়ে বলে দিলাম আজকে আর বাসায় যাবো না। কিছুক্ষণ পরে রাইসার আম্মু আমাদের রুমে আসলো।

— ঈশান, রাইসা তোরা খেতে আয় আমি তোদের জন্য খাবার রেডি করছি।

এই কথা বলে আমার শ্বাশুড়ি চলে গেলো। রাইসা বলল– এই নাও এগুলো পড়ে ফ্রেশ হয়ে আসো।

— এগুলো কার জামা?

— আব্বুর জামা, তুই তো আর কিছু নিয়ে আসিস নাই তো আর কি করার আছে? আব্বুর এগুলো পড়ে রাত পার করতে হবে। যা এবার ফ্রেশ হয়ে আয়৷

তারপর আমি ফ্রেশ হতে চলে গেলাম। জামা গুলো দেখে নিয়ে আসি নাই। গায়ে দিয়ে দেখি অবাবা কতো বড় জামা মনে হয় এটার ভিতরে আমার মতো দু’জন ঢুকতে পারবে। কি আর করার এগুলো পড়ে বের হয়ে আসলাম। বের হতেই রাইসা আমাকে দেখে খিলখিল করে হেসে দিল।

— হাসবি না একদম তোর বাপ এতো মোটা কেন?

— ঠিক করে কথা বল আমার আব্বু কিন্তু তোর শ্বশুর হয় সম্মান দিয়ে কথা বলবি।

— ঠিক আছে মোটা বাপের চিকনা মেয়ে 🤣

এই কথা বলতেই রাইসা আমার দিকে তেড়ে আসলো। মেয়েদের উপরে আমার বিশ্বাস নেই যে কোনো কিছু একটা করে ফেলতে পারে সেই ভয়ে আমিও দিলাম এক দৌড়। তারপর রুমের ভিতরে অনেক্ষন দু’জনে ছুটাছুটি করছিলাম। একটু পরে আমি হাপিয়ে উঠলাম তাই খাটের উপরে নিজের শরীর হেলিয়ে দিলাম। রাইসা এসে আমার উপরে এসে পড়লো। দুজনেই হাপাচ্ছি। দু’জন দু’জনের নিশ্বাসের শব্দ শুনতে পারছি। আমি রাইসার দিকে এক চাহুনিতে তাকিয়ে রইলাম।

— এই ভাবে কি দেখিস তুই?

— কি আবার দেখবো দেখছি আমার উপরে পড়ে থাকা একটা চিকনা মেয়েকে। যার নিশ্বাসের শব্দ আমাকে মাতাল করে তুলছে।

— শয়তান একটা। খেতে আয়।

এই কথা বলেই রাইসা লজ্জা পেয়ে রুম থেকে বের হয়ে চলে গেলো। তারপর আমি নিজে নিজে একটা মুচকি হাসি দিয়ে আমিও রুম থেকে বের হয়ে গেলাম। খাবার টেবিলে গিয়ে দেখি আমার শ্বাশুড়ি আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি একটা হাসি দিল। আমি হাসির কারণ টা বুঝতে পেরে জামাটা টান দিয়ে নিলাম।

— বাবা তুমি এটা পড়লে কেন? তোমার জন্য আলমারিতে কিছু জামা রাখা আছে সেই গুলো পড়ে নিয়।

— আপনার মেয়ে তো আমাকে এসব বের করে দিল। বলল আর নাকি জামা নেই।

— কিছু মনে কোরো না রাইসা অনেক বেশি ফাজিল হয়ে যাচ্ছে।

এইবার আমি রাইসার দিকে তাকিয়ে দেখি ও মুচকি মুচকি হাসছে। বুঝতে আর বাকি রইলোনা যে রাইসা এটা ইচ্ছে করেই করছে৷

এবার খাওয়া দাওয়া শেষ করে নিলাম। রাইসার আম্মু আমার জন্য নতুন জামা নিয়ে এসে আমার হাতে দিল। সে গুলো নিয়ে আমি রুমে চলে গেলাম। রুমে গিয়ে চেঞ্জ করে রাইসার অপেক্ষা করে বসে আছি। কিন্তু তার আসার কোনো খবর নাই ঘড়িতে তাকিয়ে দেখি ২ টা পার হয়ে গেছে। অনেক্ষন পরে রাইসা রুমে আসলো।

চলবে,,,

ভালোবাসা অন্যরকম পর্ব-১১

0

#ভালোবাসা অন্যরকম
[পর্ব – ১১]
লেখক – আবির চৌধুরী

আমি রুমে আসার পরে রাইসা আমার রুমে আসলো। এসেই চুপচাপ সে ঘুমিয়ে গেল। একটু পরে আমিও ঘুমিয়ে পড়লাম। সকালে ঘুম থেকে উঠে আমি অফিসে চলে গেলাম। অনেক দিন পরে অফিসে এসে দেখি অনেক কাজ জোমা হয়ে আছে৷ তারপর নিজের মতো করে কাজ শুরু করে দিলাম। কাজ করতে করতে দুপুর হয়ে আসল। হঠাৎ ফোন বেজে উঠলো। আমি ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখি রাইসা কল দিয়েছে। প্রথম বার কল কেটে দিলাম। তারপর আবার কল দিল আমি এবার কল রিসিভ করলাম।

— হ্যালো দেখছো না কল কেটে দিচ্ছি তাও কেন কল দিচ্ছো?

— কি কতিস তুই?

— কাজ করছি, ফোন রাখ।

— খাবার খেয়েছিস তুই?

— না আমার সময় হলে আমি খেয়ে নেবো। তুই খেয়ে নিস বায়।

এই বলে কল কেটে দিলাম। বিরক্ত লাগছে ওর সাথে কথা বলতে। ফোন রেখে দিয়ে কাজ করতে শুরু করে দিলাম আবার। একটু পরে আবার কল দিল রাইসা। এবার আর কল রিসিভ করলাম না। একের পর এক কল দিতেই থাকলো। মেজাজ টা গরম হয়ে যাচ্ছে আমার তাই ফোন অফ করে আবার কাজ শুরু করে দিলাম। দেখতে দেখতে অফিসের সব কাজ শেষ করে নিলাম। তারপর বাসার দিকে রওনা দিলাম। দুপুরে আজকে আর খাবার খাওয়া হলো না। বাসার সামনে গিয়ে দরজার কলিং বেলে চাপ দিতেই আম্মু এসে দরজা খুলে দিলো।

— ঈশান তুই এসব কি শুরু করলি?

আম্মু এমন প্রশ্ন শুনে আমি খানিকটা অবাক হয়ে বললাম — মানে, আমি আবার কি করলাম?

— তুই ফোন অফ করে রাখলি কেন? রাইসা তোকে কল দিয়েছে তুই কল রিসিভ করিস নাই আবার ফোন অফ করে দিলি!

— আমি কাজ করছিলাম, আর ও বার বার কল দিয়ে আমাকে বিরক্ত করছিল তাই আমি ফোন অফ করে দিয়েছি।

— খুব ভালো করছিস মেয়েটা দুপুর থেকে না খেয়ে শুধু কান্না করেই যাচ্ছে। আর তুই মেয়েটার সাথে এমন করছিস? এগুলো ঠিক না।

তারপর আম্মু আর কিছু না বলে চলে গেলো। আমি আম্মুকে কয়েকবার ডেকেছি কিন্তু আম্মু আমার ডাকে সারা না দিয়েই চলে গেলো। নিজের অফিসের ব্যাগটা সোফায় রেখে আমি আমার রুমে চলে গেলাম। রুমে গিয়ে দেখি রাইসা ফুপিয়ে ফুপিয়ে কেঁদে যাচ্ছে। আমি গিয়ে রাইসার পাসে বসলাম।

— রাইসা তুই এই ভাবে কান্না করছিস কেন? কি হইছে তোর! আর তুই নাকি খাবার খাসনি দুপুরে?

— কেউ আমার খোঁজ নিতে হবে না।

কেঁদে কেঁদে কথাটা বলল রাইসা। নিজের কাছে কেমন জানি খারাপ লেগে উঠলো। তাই নরম গলাতে বললাম — রাইসা আমি সরি তখন কাজে ছিলাম তাই ফোন অফ করে দিয়েছি।

— আমাকে সরি বলতে হবেনা, আমি তো আপনাকে সব সময় বিরক্ত করি। আপনাকে আমি অনেক জ্বালাই তাইনা?

— নাহ,,

— না বলতে হবে না আর বিরক্ত করবোনা আপনাকে আমি। আপনার কোনো দোষ নেই সব দোষ আমার। তাই আপনাকে আমি কিছু বলতে চাইনা।

এই কথা বলেই রাইসা অন্য দিকে ফিরে আবার কান্না করতে শুরু করে দিল। আজ কেন জানি খুব খারাপ লাগছে নিজের কাছে সত্যি তো মেয়েটাকে আমি কতো কষ্ট দেই। সব সময় খারাপ ব্যাবহার করি। কিন্তু মেয়েটা আমার সব কিছু সহ্য করে পড়ে আছে৷

— রাইসা সরি বলছি তো আর এমন হবে না কখনও। কথা দিচ্ছি তোমাকে এই ভাবে আর কান্না করোনা।

— কান্না করলে আপনার কি হুম? আমি তো আপনার কেউ না! আমি তো আপনার কাছে একটা আপদ মাত্র। আমাকে সরি বলতে হবে না।

— রাগ করলি কেন? আচ্ছা দেখ কান ধরছি আমি এমন আর কোনো দিন হবে না।

— রাগ! রাগ কি আমাকে মানায়? আমি কার উপরে বা রাগ করব? বাদ দেন এসব কিছু করার দরকার নেয়। আর কি বলছেন আর কোনো দিন করবেন না? করবেন কি ভাবে আমাকে তো আর আপনি পাবেন না খুঁজে।

— মানে?

— কিছুনা আপনাকে আমি আর বিরক্ত করবোনা। অনেক তো করলাম। এই বার আপনি খুব ভালো থাকবেন৷ যান খাবার খেয়ে নিন আপনি।

— তুই খাবিনা?

— আমার চিন্তা করতে হবেনা আপনি গিয়ে খেয়ে নিন আম্মু না খেয়ে আছে আপনার জন্য।

— তুই ও চল এক সাথে খাবো। আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।

— না আমার খিদে নেই।

আমি আর কিছু না বলে ফ্রেশ হতে চলে গেলাম। বুঝতে পারছি মেয়েটাকে আমি অনেক কষ্ট দিয়েছি। মানুষ সব কিছু সহ্য করতে পারলেও অবহেলা জিনিস টা সহ্য করতে পারেনা। কিন্তু রাইসা দিনের পর দিন আমার অবহেলা সহ্য করে এসেছে আমি মেয়েটার সাথে অনেক অন্যায় করছি। কিছুক্ষণ পরে ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে খাবার টেবিলের দিকে চলে গেলাম। টেবিলের সামনে গিয়ে দেখি আমাদের জন্য খাবার রেডি করে রেখেছে আম্মু। আমি এক প্লেট খাবার নিয়ে আমার রুমে চলে এলাম।

— অনেক্ষন তো কান্না করলি এবার থাম খাবার খেয়ে নে। আমি আমাদের দুজনের জন্য খাবার নিয়ে আসছি।

— আমি খাবো না বলছিনা? আমার খিদে নেই আপনি খেয়ে নিন।

এবার আমি কিছু না বলে রাইসার হাত ধরে টান মেরে বসিয়ে দিলাম।

— একটা কথাও বলবিনা আর একদম চুপচাপ খেয়ে নে।

ধমক দিয়ে কথাটা বললাম। রাইসা আমার ধমক শুনে আর কোনো কথা বলছেনা। তারপর আমি নিজের হাতে রাইসাকে খাইয়ে দিতে শুরু করে দিলাম। রাইসা আনার দিকে অবাক ভাবে তাকিয়ে আছে আর চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। আমি রাইসার চোখের পানি মুছে দিলাম। তারপর রাইসা আমার হাতে খেতে শুরু করে দিল। কেন জানি এখন নিজের মধ্যে খুব ভালো লাগা কাজ করছে। দুজনেই খাবার খাওয়া শেষ করে নিলাম। রাইসার মুখ দিয়ে আর কোনো কথা বের হচ্ছে-না।

— অনেক রাত হইছে এবার ঘুমা তুই।

তারপর আমরা দুজনেই ঘুমিয়ে পড়লাম। সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি রাইসা এখনও ঘুমিয়ে আছে। আজকে প্রথম বার রাইসার দিকে ভালো করে তাকালাম। রাইসার ঘুমন্ত মুখটা সত্যি অনেক মায়াবী। রাইসার মুখের সামনে তার এলোমেলো চুলে গুলো পড়ে আছে। আমি নিজের হাত দিয়ে চুল গুলো সরিয়ে দিলাম। এবার আমি উঠে ফ্রেশ হয়ে অফিসে যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে নিলাম। রাইসা এখনও ঘুমিয়ে আছে। রাইসাকে আর ডাকলাম না আমি অফিসের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। অফিসে গিয়ে কাজ শুরু করে দিলাম। কিন্তু আজকে কাজে মন দিতে পারছিনা রাইসার কথা খুব মনে পড়ছে৷ রাইসার কলের অপেক্ষা করে রইলাম। দেখতে দেখতে দুপুর হয়ে গেলো কিন্তু রাইসা আজকে আর একটা কল ও দিলনা। আরো কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পরেও রাইসা কল দিলনা। কেন্টিনে গিয়ে লান্স সেরে আসলাম। লান্স সেরে অফিসে এসে বসে রইলাম কাজ করতে ভালো লাগছে না। ভাবিলাম রাইসাকে একটা কল দেই। তারপর রাইসার ফোনে কল দিলাম রিং হচ্ছে কিন্তু রাইসা আমার কল রিসিভ করছেনা। অনেক গুলা কল দিলাম তাও রিসিভ করেনাই। মেজাজ টা আমার প্রচুর গরম হয়ে গেছে। ফোন রেখে দিয়ে কাজ শুরু করে দিলাম। কাজ শেষ করে বাসার সামনে গিয়ে দরজার কলিং বেলে চাপ দিতেই আম্মু এসে দরজা খুলে দিয়ে আবার চলে গেলো। আম্মু আমার সাথে কোনো কথা বলল না। এবার আমি আমার রুমে চলে গেলাম রুমে গিয়ে দেখি রাইসা রুমেও নাই। ফোন টা বালিশের পাসে পড়ে আছে। তারপর রাইসাকে পুরো বাসা খুজতে থাকলাম। কিন্তু কোথাও পেলাম না। তারপর আমি আম্মুর রুমে চলে গেলাম।

— আম্মু রাইসা কই? রাইসাকে তো কোথাও খুঁজে পাচ্ছিনা?

— রাইসা চলে গেছে তার আব্বুর আম্মুর কাছে। তুই তো এবার অনেক হ্যাপি তাই না? তুই রাইসার ভালোবাসা টা বুঝতে পারিস নাই। একটা মেয়ে দিনের পর দিন এই বাড়িতে পড়ে ছিলো শুধু তোর জন্য আর তুই মেয়েটাকে শুধু কষ্ট দিয়েই গেলি। যা তুই তো এবার শান্তি আর কি? এটাই তো চাইছিলি তুই? এখন ওর খোঁজ করছিস কেন আবার? আরো কষ্ট দিয়ে ছাস নাকি তুই?

আম্মুর কথা শুনে আমার চোখে পানি চলে আসলো। মুখ দিয়ে কোনো কথা বের হচ্ছে-না আমার।

— এই নে রাইসা তোর জন্য একটা চিঠি দিয়ে গেছে। আর সে বলছে এই বাড়িতে সে আর ফিরে আসবেনা। এখন তুই আমার রুম থেকে বের হয়ে যা।

আমি আর কিছু না বলে মনখারাপ করে আম্মুর রুম থেকে বের হয়ে আমার রুমে চলে এলাম। রুমে এসে চিঠি টা খুলে পড়তে শুরু করে দিলাম,,

চলবে,,,,

ভালোবাসা অন্যরকম পর্ব-১০

0

#ভালোবাসা অন্যরকম
[পর্ব – ১০]
লেখক – আবির চৌধুরী

— ঈশান তোকে আমি একটা কথা বলতে চাই।

— কি কথা বলবি বল!

— আমি জানি তোর চোখে এখন সব মেয়ে খারাপ। সবাই তো এক না, একজন তোকে কষ্ট দিয়েছে তাই বলে সবাইকি তোকে কষ্ট দিবে?

— আমি আর কষ্ট নিতে চাইনা। কারণ আমি যদি আবার কষ্ট পাই তাহলে আমি এবার সহ্য করতে পারবোনা তাই এখন আর কষ্ট নিতে চাইনা। এসব কথা বাদ দে। আমি তোকে বিয়ে করতে রাজি হয়েছি তার মানে আই নয় যে আমি তোকে আমার স্ত্রী হিসেবে মেনে নেবো।

রাইসা আর কোনো কথা না বলে আমার রুম থেকে বের হয়ে চলে গেলো। পরের দিন সকালে আমি ফ্রেশ হয়ে একটা উকুলের কাছে চলে গেলাম। উকিলের সাথে কথা বলে চলে আসলাম। ৭ দিনের ভিতরে ডিভোর্স পেপার হাতে চলে আসবে। তারপর আমি সোজা আমার বাসায় চলে গেলাম। বাসায় গিয়ে নিজের রুমে চুপচাপ বসে রইলাম। কিছুক্ষণ পরে আম্মু আমার রুমে আসলো।

— ঈশান বাবা উকিলের সাথে কথা হইছে?

— হুম ৭ দিন সময় লাগবে। ৭ দিন পরে ডিভোর্স পেপার চলে আসবে।

— আমি তোদের বিয়েটা তাড়াতাড়ি দিয়ে দিতে চাই। তোকে একটা কথা বলি বাবা রাইসাকে তুই কষ্ট দিসনা মেয়েটা তোকে অনেক ভালোবাসে। যা করবি বুঝেশুনে করিস।

তারপর আম্মু আমার রুম থেকে বের হয়ে গেলো। দেখতে দেখতে সাত দিন পার হয়ে গেলো। সাত দিন পরে আমার বাসায় ডিভোর্স পেপার চাক এলো। আমি ডিভোর্স পেপারে আমার সিগনেচার দিয়ে দিয়ার বাসায় পাঠিয়ে দিলাম। এই ভাবে আরো দুই দিন কেটে গেলো। দুই দিন পরে দিয়ার বাসা থেকে ডিভোর্স পেপার ফিরে এলো দিয়া এ সিগনেচার করে দিয়েছে৷ কিছুদিন পরে আমার আর রাইসার বিয়ে হয়ে যায়। তেমন কোনো অনুষ্ঠান হয়নি। শুধু আমাদের দুই পরিবার ছিলো। আজ আমাদের বাসর রাত আমি ছাদের উপরে উঠে দাঁড়িয়ে আছি চাঁদের দিকে তাকিয়ে। আজকে খুব করে দিয়ার কথা মনে হচ্ছে। দিয়া কি করে পারলো এসব? খুব খারাপ লাগছে। দিয়ার কথা মনে পড়লেই বুকের ভিতর টা কেপে উঠে। একটা সিগারেট হাতে নিয়ে জ্বালিয়ে দিলাম। একটু পরে আম্মু আমাকে ডাকতে ডাকতে ছাদের উপরে চলে আসলো। আম্মুর শব্দ শুনে আমি সিগারেট টা নিভিয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম আবার।

— কিরে তুই এখানে দাঁড়িয়ে আছিস আর ওই দিকে রাইসা তোর জন্য অপেক্ষা করে বসে আছে। তাড়াতাড়ি যা তুই।

— তুমি যাও আমি আসছি৷

তারপর আম্মু চলে গেলো আমি কিছুক্ষণ পরে বাসর ঘরের দিকে চলে গেলাম। বাসর ঘরের সামনে গেলে অনেকের অনেক রকম অনুভূতি কাজ করে ভয় লাগে। আমার তেমন কিছুই হচ্ছেনা কারণ এটা আমার জীবনের দ্বিতীয় বাসর। কি অদ্ভুত তাইনা! আমি বাসর ঘরের ভিতরে ঢুকতেই রাইসা খাটের ওপর থেকে নেমে এসে আমাকে সালাম করে আবার খাটের উপরে গিয়ে বসে পড়ল। আমি গিয়ে খাটের উপরে বসে রাইসাকে বললাম– ঘুমিয়ে যা। অনেক রাত হইছে আমিও ঘুমাই।

— আজকে তো আমাদের বাসর রাত আজকে রাতে তুমি আর আমি গল্প করে সারারাত কাটিয়ে দেব।

রাইসার মুখে তুমি শব্দটা শুনে আমার বুকের ভিতর টা মোচড় দিয়ে উঠল। রাইসা আজকে প্রথম আমাকে তুমি করে বলল।

— রাইসা তোমাকে আমি আগেও বলছি এই বিয়ে আমি আমার মায়ের ইচ্ছেতে করছি। সো আমার কাছে কিছু আসা করাটা বোকামি।

— প্রতিটি মেয়ের স্বপ্ন থাকে বাসর রার নিয়ে আমারও অনেক স্বপ্ন ছিল। যাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখে এসেছি তাকে তো পেলাল কিন্তু আমার স্বপ্ন গুলোর কি দোষ বলতে পারো তুমি? আমি তো তোমাকে ভালোবাসি আমি তোমার কাছে তেমন কিছুই চাইনা আমাকে শুধু একটু ভালোবাসা দিলেই হবে। আমি শুধু তোমার ভালোবাসা চাই আর কিছুই না।

— আমি তোমাকে সেটা কখনও দিতে পারবোনা।

— আচ্ছা দিতে হবে না। আমাকে শুধু তোমার পাসের বালিশটায় একটু যায়গা দিলেই হবে। আর কিছু লাগবে না আমার। অন্তত তোমার পাসে তো থাকতে পারবো। আচ্ছা ঈশান আমার একটা কথা রাখবে প্লিজ!

— কি কথা?

— তোমার তো চাঁদ খুব প্রিয় চলো আমরা একটু ছাদের উপরে বসে চাঁদ দেখে আসি।

— ঠিক আছে চল।

কি আর করার! চলে গেলাম ছাদের উপরে ছাদের উপরে গিয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম।

— দাঁড়িয়ে না থেকে আমরা এক যায়গায় বসি। বেশিক্ষণ দাড়িয়ে থাকলে আবার পা ব্যাথা করতে পারে।

রাইসা এসব কথা শুনে আমি অবাক হচ্ছি। যে মেয়েকে আমি এতো অবহেলা করি সেই মেয়ে আমার এতো কেয়ার করে!

— কি হলো ঈশান কি ভাবছ তুমি? এখানে বসতে ভালো না লাগলে ঠিক আছে চলো আমরা রুমে চলে যাই।

— না ঠিক আছে চলো বসি আমরা।

তারপর আমি রাইসা গিয়ে এক পাসে বসে পড়লাম। দুজনেই নিরবতা পালন করে বসে আছি। কেউ কোনো কথা বলছেনা। অবশেষে নিরবতার অবসান ঘটিয়ে রাইসা বলে উঠল– ঈশান ভালোবাসি তোমাকে খুব বেশি ভালোবাসি। আমাকে তোমার মনের একটা কোণে যায়গা দিবে প্লিজ?

আমি কিছু না বলে চুপ হয়ে রইলাম।

— ঈশান প্লিন চুপ করে থেকোনা কিছু বলো!

— আমার কিছু বলার নাই, অনেক রাত হইছে ঘুমাতে হবে রুমে চলো।

রাইসা কিছু না বলে আমার আগে উঠে দৌড়ে ছাদ থেকে নেমে গেল।আমি রাইসার পিছনে ছাদ থেকে নেমে রুমে গিয়ে দেখি রাইসা অন্যদিকে মুখ করে শুয়ে আছে। আমিও গিয়ে অন্যদিকে মুখ করে শুয়ে পড়লাম। ঘুমানোর কিছুক্ষণের মধ্যে আমার চোখে ঘুম নেমে আসলো। হঠাৎ করে কারো কান্নার শব্দ শুনে ঘুম ভেঙে গেলো। চোখ খুলে বুঝতে পারলাম রাইসা কান্না করছে। আমি শুনেও না শোনার ভান করে শুয়ে রইলাম। কিন্তু আমার চোখে ঘুম আসছেনা।ঘুম আসবে বা কি করে আমার পাশেই যে রাইসা কান্না করছে। আমি কি করবো বুঝতে পারছিনা আমার যে খুব ভয় হয়। যদি আমি রাইসাকে আপন করে নেই তো ও যদি দিয়ার মতো আমার সাথে এমন করে? এসব চিন্তা মাথায় আসলেই আমার খুব খারাপ লাগে। এসব ভাবতে ভাবতে আবার ঘুমিয়ে পড়লাম। সকালে ঘুম ভেঙে গেলো। চোখ খুলে তাকিয়ে দেখি দিয়া ঠিক আমার বুকের উপরে ঘুমিয়ে আছে। আজকে আর ওঁকে সরিয়ে দিলাম না জানি হয়তো অনেক রাতে ঘুমিয়েছে। তারপর আমি আবার ঘুমিয়ে পড়লাম। ঘুমানোর অনেক্ষন পরে রাইসার ডাকে ঘুম ভেঙে গেলো।

— ঈশান উঠ নাস্থা করবিনা? অনেক বেলা হইছে আর কতো ঘুমাবি?

— হুম আরেকটু ঘুনাতে দেও খুব ঘুম পাচ্ছে আমার।

ঘুম ঘুম চোখে কথাটা বললাম। এবার রাইসা আমার দিকে এগিয়ে এসে আমার গায়ে হাত দিতেও আমি রাইসার হাত ধরে নিজের দিকে টেনে নিয়ে আসলাম। আমি নিজের মধ্যে নেই এখন ঘুম ঘুম চোখে এসব করছি। রাইসা কিছুই বলছেনা। এবার আমি রাইসা কে নিজের বুকের কাছে নিয়ে আসলাম। রাইসার ঠোঁটে চুমু খাবো এমন সময় আমি চোখ খুলে দেখি রাইসা চোখ বন্ধ করে আছে। আমি রাইসা যে সরিয়ে দিয়ে বললাম — রাইসা তুই?

রাইসা অনেক টা লজ্জা পেয়ে গেলো আর আমার রুম থেকে বের হয়ে গেলো। তারপর নিজে নিজে ভাবতে থাকলাম এটা আমি কি করতে পাচ্ছিলাম! এবার আমি উঠে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করতে চলে গেলাম। নাস্তা করতে গিয়ে দেখি সবাই আমার জন্য অপেক্ষা করে বসে আছে৷ আমি গিয়ে একটা চেয়ার টেনে বসে পড়লাম। তারপর রাইসা আমার দিকে খাবার এগিয়ে দিল। আমি খাওয়া দাওয়া শেষ করে আনার রুমে চলে গেলাম।

একটু পরে রাইসা আমার রুমে আসলো,,

চলবে,,,,,

ভালোবাসা অন্যরকম পর্ব-০৯

0

#ভালোবাসা অন্যরকম
[পর্ব- ৯ ]
লেখক – আবির চৌধুরী

দিয়া আর তার আব্বু আম্মু কে দেখে আমি অবাক হয়ে গেলাম। আর ভাবতে থাকলাম এরা এতো সকালে আমার বাসায় কেনো। হঠাৎ করে দিয়া আমার দিকে তাকাতেই রাগে আমার শরীর জ্বলতে শুরু করে দিল। এবার আমি সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে তাদের দিকে এগিয়ে গেলাম।

আমি — আম্মু ওনারা আমাদের বাসায় কি করে?

আমি আম্মুকে এই প্রশ্ন করার সাথে সাথে দিয়ার আব্বু বলে উঠল — ঈশান তুমি এমন আমি কখনও ভাবি নাই। তোমাকে আমি ভালো ছেলে মনে করছি আর তুমি এমন ছিহ,,

আমি ওনার মুখে এমন কথা শুনে অবাক না হয়ে পারলাম না। আমি আম্মুর দিকে তাকিয়ে দেখি আম্মু চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

— আংকেল সরি আপনার কথা আমি বুঝতে পারছিনা কি বলতে চাইছেন আপনি?

— এখন বুঝবে কি করে! আমার মেয়ের উপরে মানুষিক অত্যাচার করলে দিনের পর দিন। কিছু লাগলে আমাকে বলতে পারতে। আমার মেয়ের সাথে এমন করার কি দরকার ছিলো? আমার মেয়েকে তোমার কাছে বিয়ে দিয়ে কি আমরা ভুল করছি যে আমার মেয়েকে অন্য যায়গায় চাকরি করতে হবে!

— আমি আপনার মেয়েকে চাকরি করতে বলছি? এটা কে বলছে?

— কে আবার দিয়া বলছে। আর তুমি দিয়ার গায়ে হাত তুলোনি কাল? ও তো তোমার সাথে একটু কথা বলতে চাইছে তার জন্য তুমি ওঁকে থাপ্পড় দিবে? আমি আমার মেয়ের গায়ে কখনও হাত তুলিনি আর তুমি আমার মেয়ের গায়ে হাত তুললে।

ওনার কথা শুনে আমি একটা মুচকি হাসি দিলাম। তারপর বলতে শুরু করে দিলাম — আমার ভাবতেও অবাক লাগছে যে একটা মেয়ে কি ভাবে পারে এতো মিথ্যা কথা বলতে? আসলে আপনাদের ও দোষ আছে কারণ আপনারা আপনাদের মেয়েকে সঠিক শিক্ষা দিতে পারেন নাই তাই আজকে আপনার মেয়ের এই অবস্থা। আপনারা এখানে আসার আগে আপনার মেয়েকে ভালো ভাবে জিগ্যেস করার প্রয়োজন ছিলো আপনার মেয়ে যা বলছি তা কি আসলেই সত্যি কিনা? যাইহোক এবার আমি সত্যি টা বলি। আমি হয়তো এতোটা বড়লোক নই তাই বলে নিজের স্ত্রীকে কাজ করার জন্য চাপ বেব! এমন ছেলে আমি নই। কেউ যখন নিজে থেকে বলে সে কাজ করতে চায়। আমি বার বার নিষেধ করার পরেও সে কাজ করতে চায় তখন আমার আর কি করার আছে? আর কি বলছেন আমি আপনার মেয়েকে অত্যাচার করছি? কথাটা শুনে খুব হাসি পাচ্ছে। আমি দিয়াকে ভালোবাসতাম কখনও তাকে কষ্ট দেওয়ার কথাও ভাবি নাই। আর অত্যাচার তো অনেক দূর। এটা সত্যি যে আমি পার্কে ভিতরে দিয়ার গায়ে হাত তুলছি। কেন তুলছি সেটা শুনলে হয়তো আপনারা লজ্জায় কাওকে মুখ দেখাতে পারবেন না। আমিও বলতে চাইনা ওই সব কথা। আর হ্যা দিয়া তোমাকে বলছি। তুমি সব সময় আমার ভালোবাসার সুযোগ নিয়ে আমার সাথে প্রতারণা করলে। এসব মিথ্যে না বল্লেও পারতে। কি লাভ এসব মিথ্যে বলে?

আমার কথা শুনে দিয়া মাথা নিছু করে দাঁড়িয়ে আছে।

দিয়ার আব্বু দিয়াকে প্রশ্ন করল– কিরে দিয়া কথা গুলা কি সত্যি?

দিয়া,কিছু না বলে মাথা নিচু করে দাড়িয়ে রইল।

— আংকেল যখন সত্যি টা সবার সামনে চলে আসে তখন মিথ্যে বলা মানুষটা এই ভাবে চুপ হয়ে থাকে। আপনারা কি একটা কথা যানেন? দিয়া এমন একটা কাজ করছে যে সে আমার সন্তান কে দুনিয়াতে আনিতে দেয়নি। আমার সন্তান টা দুনিয়ার আলো দেখার আগেই তাকে নষ্ট করে ফেলছে আপনাদের মেয়ে। আমি তাকে অনেক অনুরোধ করছি কিন্তু সে আমার কথার মূল্য দেয়নি আমি তার পায়ে পড়েছি আমার সন্তানের জন্য কিন্তু সে আমার সন্তানকে দুনিয়াতে আসতে দেয় নি। কি দোষ ছিল আমার অবুঝ নিস্পাপ বাচ্চাটার? আপনার মেয়ে টাকার জন্য সব কিছু করতে পারে। টাকার জন্য সে সত্যিকারের ভালোবাসা হারিয়ে ফেলছে।

এসব বলতে বলতে আমার চোখে পানি চলে আসলো। আম্মু আর রাইসা চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

দিয়ার আব্বু দিয়ার কাছে গিয়ে দিয়ার গালে ঠাস করে একটা চড় বসিয়ে দিল আর বলতে লাগলো — দিয়া ছি তুই যে আমার মেয়ে সেটা ভাবতেও আমার লজ্জা হচ্ছে। তুই ঈশানের মতো একটা ছেলের সাথে এমন করতে পারলি আর ওর নামে আমাদের কাছে মিথ্যে বললি? তোকে ছোট বেলা থেকে কোলেপিঠে করে,মানুষ করছি কখনও কোনো চাওয়া অপুর্ন রাখি নাই। সেটাই আমাদের দোষ ছিল।

দিয়া — আব্বু,আমাকে ক্ষমা করে দাও আমি নিজের ভুল বুঝতে পেরেছি প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দাও। আমি টাকার জন্য অন্ধ হয়ে গিয়েছি।

— আমার কাছে ক্ষমা ছেয়ে কি হবে যার সাথে অন্যায় করেছিস তার কাছে ক্ষমা ছেয়েনে।

আমি — আমার কাছে ক্ষমা চাইতে হবে না। দিয়া তুমি আমাকে বলেছিলে ডিভোর্স পেপার পাঠিয়ে দিবে তোমাকে আর কষ্ট করতে হবে না আমি দুই একদিনের ভিতরে তোমার বাসায় ডিভোর্স পেপার পাঠিয়ে দেব।

দিয়া আমার মুখে এমন কথা শুনে সাথে সাথে আমার পায়ের উপরে পড়ে গেল।

— ঈশান আমাকে তুমি প্লিজ ক্ষমা করে দাও আমি জানি আমি অনেক বড় অন্যায় করছি তাও আমাকে ক্ষমা করে দাও প্লিজ।

— ক্ষমা! হাহাহা, ক্ষমা করতে পারি তার আগে আমার সন্তান কে আমার কাছে ফিরিয়ে দাও।

দিয়া আমার এই কথা শুনে আমার পা ছেড়ে দিয়ে আবার মাথা নিচু করে দাড়িয়ে রইল।

— কি হলো? পারবে আমার অবুঝ নিস্পাপ শিশু কে এনে দিতে? আমাকে যতটা কষ্ট দিয়েছো তা কি ফিরিয়ে দিতে পারবে? আমার চোখ থেকে যতটা পানি বের হয়েছে তোমার জন্য আমার সব চোখের পানি ফিরিয়ে দিতে পারবে? যদি পারো আমি ক্ষমা করে দেবো নয়তো আই এম সরি। আর হে আর কয়েক দিন পরে আমার বিয়ে রাইসার সাথে বিয়ের আগেই আমি ডিভোর্স পেপার পাঠিয়ে দেবো।

দিয়ার আব্বু আমার দিকে এগিয়ে এসে বলল — বাবা আমার আর কিছু বলার নাই। আমাকে ক্ষমা করে দিয়। তোমাকে ভুল বুঝে ছিলাম।

— আংকেল আমাকে লজ্জা দিবেন না আপনি আমার গুরুজন আমার জন্য দোয়া করবেন।

— হুম বাবা দোয়া করি তুমি সুখী হও। আমরা আসি।

এই বলে দিয়ার আব্বু দিয়াকে নিয়ে আমার বাসা থেকে বের হয়ে চলে গেলো। আমি গিয়ে সোফায় বসে পড়লাম খুব খারাপ লাগছে কি ভাবে একটা মেয়ে এতো মিথ্যা কথা বলতে পারে ভাবতেই আমার ঘৃণা হচ্ছে। একটু পরে আম্মু আমার দিকে এগিয়ে আসলো।

— বাবা এসব নিয়ে চিন্তা করিস না। এই মেয়েটা এতোটা নিচু মনের আমি কখনও ভাবতে পারিনি। মেয়েটা কি ভাবে পারল এমন করতে?

— আম্মু বাদ দাও আমার ভালো লাগছে না আমি আমার রুমে যাচ্ছি কেউ যেনো আমার রুমে না আসে বলে দিলাম।

এই কথা বলে আমি আমার রুমে চলে গেলাম। রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম খুব খারাপ লাগছিলো। এক ঘুমে সন্ধ্যা হয়ে গেলো। আমি ফ্রেশ হয়ে বের হয়ে এসে দরজা খুলেই দেখি রাইসা আমার দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।

— তুই এখানে কিছু বলবে নাকি?

— হুম, তোর সাথে আমার কিছু কথা ছিল।

— কি কথা বল?

— দিয়া তোকে অনেক কষ্ট দিছে তাইনা?

— ওই মেয়ের কথা আমার সামনে আর নিবি না বলে দিলাম। ওর কথা শুনলেই আমার গায়ে আগুন ধরে যায়।

— আমাকে বিশ্বাস করে দেখ আমি তোকে কখনও কষ্ট দেবোনা। খুব ভালো বাসবো তোকে।

— আর কিছু বলবি তুই?

— তোকে আমি একটা কথা বলতে চাই!,,,

চলবে,,,,

ভালোবাসা অন্যরকম পর্ব-০৮

0

#ভালোবাসা অন্যরকম
[পর্ব- ৮]
লেখিক – আবির চৌধুরী

— ঈশান তোকে একটা কথা বলার ছিল?

— হুম আম্মু বলো কি কথা?

— বাবা এই ভাবে আর কতো দিন?

— মানে?

— তুই আবার বিয়ে কর আমি চাই তুই রাইসাকে বিয়ে কর মেয়েটা তোকে অনেক ভালোবাসে।

— আম্মু তুমি কি পাগল হয়ে গেলে? আমাকে এই অবস্থায় আবার বিয়ে করতে বলছ! আমি আর কখনও বিয়ে করবোনা।

— এই ভাবে বললে হবে না। তোকে বিয়ে করতে হবে এটাই আমার শেষ কথা।

— এর আগেও তো তোমার কথায় আমি বিয়ে করছি। কি হলো আমার সাথে? আমি আর কাওকে বিশ্বাস করতে পারছিনা আম্মু। সবাই আমাকে ধোঁকা দেওয়া জন্যই আসে ভালোবাসার জন্য না আর আমার কারো ভালোবাসার কোনো প্রয়োজন নেই আমি এই ভাবে ঠিক আছি। আমি আর বিয়ে করতে চাইনা।

আমি আর খাবার না খেয়ে হাত ধুয়ে আমার রুমে চলে গেলাম। রুমে গিয়ে একটা সিগারেট জ্বলিয়ে দিলাম। আম্মু একটু পরে আবার আমার রুমে আসলো। তারপর আবার শুরু করল বিয়ে কর বিয়ে কর বলে। আর আম্মু গুলাও এমন এরা ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করা শুরু করে দিল।

— তোর কাছে আমার কোনো কথার দাম নেই তাইনা? এই মেয়েটা তোকে ভালোবাসে বলেই এই বাড়িতে পড়ে আছে আর তুই!

— আমি কি বলছি এই বাড়িতে ওঁকে পড়ে থাকিতে? চলে গেলেই তো হয়।

— তোকে আমি শেষ বার বলছি তুই যদি রাইসাকে বিয়ে করতে রাজি না থাকিস তা হলে তুই আমার মরা মুখ দেখবি৷

এই হলো মায়েদের কমন একটা ডায়লগ। কি আর করার আম্মুর কথায় রাজি হওয়া ছাড়া আমার আর কোনো উপায় নেই৷ আমি আম্মুকে বিয়ের জন্য হ্যাঁ বলে দিলাম। আম্মু তো অনেক খুশি হয়ে গেছে। আসলে কাছের মানুষ গুলো অল্পতেই খুশি হয়ে যায়। আম্মু আমার কষ্ট দেখে হয়তো ভাবছে আমি বিয়ে করলে দিয়াকে ভুলে যাবো তাই আমাকে বিয়ে করানোর জন্য এতো কিছু। দিয়ার জন্য আমার মনে আর কোনো ভালোবাসা নেই যা আছে সেটা হলো ঘৃণা আর কিছুই নেই। তবে রাইসা কেও আমি ভালোবাসতে পারবোনা। যদি রাইসা ও আমার সাথে এমন করে আমাকে ছেড়ে চলে যায় তখন আমি কি করব? আমি তো জিন্দা লাশ হয়ে পড়ে থাকব। বসে বসে এসব ভাবছি তখন হঠাৎ করে রাইসা আমার কাছে এসে আমাজে জড়িয়ে ধরলো। আমি রাইসাকে সরিয়ে দিলাম।

— এখনও আমাদের বিয়ে হয়নি মনে রাখিস।

— হয়নি তো কি হইছে হবে তো তাইনা? আমি সত্যি অনেক খুশি যাকে নিয়ে আমি আমার স্বপ্ন সাজিয়েছি তাকে আমি আমার করে পাবো। তোকে আমি খুব ভালো বাসবো কখনও দিয়ার মতো কষ্ট দেবো না।

— রাইসা শোন! আমি আম্মুর কথায় বিয়েতে রাজি হয়েছি তার মানে এই না যে তোকে আমি ভালো বাসবো। বিয়ের পরে আমি তোকে স্বামীর অধিকার দিতে পারবোনা। আর তুই কখনও স্ত্রীর অধিকার আমার উপরে খাটাতে আসতে পারবি না বলে দিলাম।

— হুম আমি জোর করবো না। তুই নিজেই আমাকে স্ত্রীর অধিকার দিবি। কারণ আমার ভালোবাসার উপরে আমার বিশ্বাস আছে। আমার ভালোবাসায় কোনো মিথ্যা নেই। তোকে আমি ঠিক নিজের করে পাবো।

এই কথা বলে রাইসা আমার রুম থেকে বের হয়ে গেলো। রুমে বসে সারাদিন কাটিয়ে দিলাম। দুপুরে খাবার খাবার খাইনি দরজা বন্ধ করে নিজের রুমে শুয়ে ছিলাম। বিকালে রাসেল এসে আমার রুমের দরজা ধাক্কাতে শুরু করে দিল। আমি দরজা খুলে রাসেল কে ভিতরে নিয়ে আসলাম।

— কি অবস্থা এখন তোর?

— ভালো। তুই হঠাৎ এই সময় আমার বাসায়?

— কেন আমার কি আসা বারণ নাকি?

— সেটা বলছি নাকি! কিন্তু তুই আমাকে না জানিয়ে হঠাৎ চলে আসলি তাই জিজ্ঞেস করলাম।

— আসছি তোর সাথে কিছু কথা বলতে।

— ওহ আচ্ছা বল কি কথা?

— দোস্ত তুই দিয়াকে ভুলে গিয়ে রাইসাকে মেনে নে মেয়েটা তোকে অনেক ভালোবাসে।

— হুম আমি জানি কিন্তু আমি পারবো না। রাইসা কেন আমি আর কোনো মেয়েকেই বিশ্বাস করতে পারবোনা। আমি রাইসাকে বিয়ে করতে রাজি হয়েছি আম্মুর জন্য।

— বুঝলাম কিন্তু তোকে একজন কষ্ট দিছে তাই বলে তুই আরেকজনকে কষ্ট দিবি?

— আমি কাওকে কষ্ট দিতে চাইনা কিন্তু কেউ যদি ইচ্ছে করে কষ্ট নিতে চায় আমার কিছু করার নাই।

— দেখ ভাই মেয়েটা তোর এতো অবহেলা সহ্য করে পড়ে আছে শুধু তোকে ভালোবাসে বলে আর তুই এমন করবি? এটা কি ঠিক?

— ঠিক বেঠিক আমি জানিনা। আমি আগেও বলছি এখনও বলছি আমি আর কাওকে ভালোবেসে ঠোকটে চাইনা। একবার অনেক কষ্ট পেয়েছি দ্বিতীয় বার কষ্ট পেলে আমি আর সহ্য করতে পারবোনা।

— আমি আর কি বলব আমার আর কিছু বলার নাই। একটা কথা বলি ভালোবাসা অন্যরকম হয়। কখন কার জন্য কি ভাবে চলে আসে বলা যায়না। হয়তো তুই যাকে এতো অবহেলা করছিস তাকে তুই একদিন অনেক ভালো বাসবি। আসি দোস্ত ভালো থাকিস৷ তোর জন্য শুভকামনা রইল।

রাসেল কথা শেষ করে আমার রুম থেকে বের হয়ে চলে গেলো। তারপর আমি খাটের উপরে বসে থেকে আরেকটা সিগারেট জ্বালিয়ে দিলাম। কিছু ভালো লাগছে না। দেখতে দেখতে রাত হয়ে গেলো। আমি আমার রুমের লাইট অফ করে শুয়ে আছি। হঠাৎ আমার রুমের লাইট জ্বলে উঠতে আমি তাকিয়ে দেখি রাইসা দাঁড়িয়ে আছে আমার সামনে।

— রাইসা কিছু বলবি তুই?

— অনেক রাত হইছে খেতে আয়। খালামনী বসে আছে তোর জন্য।

— আমার খিদে নেই আম্মুকে খেয়ে নিতে বল। আমি খাবোনা৷

— তুই না খেলে খালামনী ও খাবে না বলছে।

— আচ্ছা ঠিক আছে আমি আসছি।

তারপর খাবার খেতে চলে গেলাম। খাবার টেবিলের সামনে গিয়ে দেখি আম্মু খাবার রেডি করে বসে আছে। আমি একটা চেয়ার টান দিয়ে বসলাম।

— কিরে এতক্ষণে আসার সময় হলো তোর? কখন থেকে বসে আছি আমি তোর জন্য সেই দিকে খেয়াল আছে?

— আমি কি বলছি আমার জন্য অপেক্ষা করে বসে থাকতে? খেয়ে নিলেই তো পারতে!

— ঈশান তুই জানিস না আমি তোকে ছাড়া কখনও খাবার খাইনি। আর আজকে তুই আমাকে এই ভাবে বলতে পারলি।

এই কথা বলে আম্মু কান্না করে দিল। কান্না করতে করতে খাবার টেবিল থেকে উঠে চলে গেলো।

রাইসা — তুই কাজটা ঠিক করিস নাই খালামনী অনেক কষ্ট পেয়েছে তোর কোথায়।

— হুম আমি জানি আমার এই ভাবে কথা বলা ঠিক হয়নি। আচ্ছা তুই খাবার রেডি কর আমি আম্মুকে নিয়ে আসছি।

তারপর আই উঠে আম্মুর রুমে চলে গেলাম। আম্মুর রুমে গিয়ে দেখি আম্মু কান্না করছে। সত্যি আম্মুর সাথে এই ভাবে কথা বলা ঠিক হয়নি। আমি গিয়ে সোজা আম্মুর পায়ে পড়ে গিলাম।

— আম্মু আমাকে ক্ষমা করে দাও প্লিজ আমি আর কখনও এমন ব্যাবহার করবোনা তোমার সাথে। এই বারের মতো আমাকে ক্ষমা করে দাও।

আম্মু আমাকে কিছু না বলে কান্না করেই যাচ্ছে। আম্মুর কান্না দেখে আমার খুব কষ্ট হচ্ছে আমার চোখ দিয়ে পানি বের হয়ে গেলো। আম্মুকে কখনও এই ভাবে কান্না করতে দেখি নাই। আজকে আমার এমন কথায় আম্মু অনেক কষ্ট পেয়েছে।

— আম্মু আমাকে তুমি ক্ষমা করে দাও প্লিজ আমি জানি আমার এমন ব্যবহার করা ঠিক হয়নি। কিন্তু আমি কি করবো আমি যে আর এসব নিতে পারছিনা।

এই কথা বলে আমি আম্মুর পায়ের উপরে পড়ে কান্না,শুরু করে দিলাম। এবার আম্মু আমাকে হাত দিয়ে তুলে আমার কপালে একটা চুমু দিয়ে জড়িয়ে ধরল। তারপর মা ছেলে অনেক্ষন কান্না করলাম।

— এবার চল খেতে যাই আমার খুব খিদে পেয়েছে বাবা।

আমি একটা মুচকি হাসি দিয়ে আম্মুকে নিয়ে খাবার খেতে চলে গেলাম। আজকে আম্মুর হাতে খাবার খেলাম। খাবার খেয়ে নিজের রুমে গিয়ে শুয়ে পড়লাম। সকালে আম্মুর ডাকে ঘুম ভেঙে গেলো রুম থেকে বের হয়ে আমি অবাক হয়ে গেলাম। আমি ভালো করে চোখ মুছে দেখি দিয়া আর তার আব্বু আম্মু আমাদের বাসায়।

চলবে,,,,

ভালোবাসা অন্যরকম পর্ব-০৭

0

#ভালোবাসা অন্যরকম
[পর্ব -৭]
লেখক – আবির চৌধুরী

ঘুম থেকে উঠে দেখি আমার রুম সুন্দর করে সাজিয়ে রেখেছে কেউ। এতো সকাল সকাল কে আসছে আমার রুমে! এসব ভাবতে ভাবতে আমি উঠে ফ্রেশ হতে চলে গেলাম। ফ্রেশ হয়ে এসে দেখি রাইসা আমার জন্য না নিয়ে এসে বসে আছে।

— চা,খেয়ে নে,

— আমার রুম কে ঘুছিয়ে দিয়েছে?

— কে দিবে আবার! আমি দিয়েছি।

— তোকে না বলছি আমাকে না বলে আর আমার রুমে আসবি না। তার পরেও কেনো আসিস?

— তোকে ভালোবাসি তাই আসি। তুই বার বার নিষেধ করলেও আমি আসবো আর তোকে আমি আমার করে নেবো।

এই কথা বলে রাইসা দরজা বন্ধ করে দিয়ে আমার দিকে এগিয়ে আসলো আর আমাকে ধাক্কা দিয়ে খাটের উপরে শুইয়ে দিল। রাইসা আমার উপরে শুয়ে আমার ঠোঁটে চুমু খেতে শুরু করে দিল। এসব দেখে আমার খুব রাগ উঠে গেল। রাইসাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে ওর গালে ঠাস করে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দিলাম। রাইসা গালে হাত দিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে কান্না করে দিল।

— এসব কি হুম? কিছু বলছিনা দেখে যা ইচ্ছে তাই করবি নাকি? শোন একটা কথা ভালো করে মাথায় ঢুকিয়ে রাখ। তুই যেটা চাইছিস সেটা,কোনো দিন ও হবে না। আমি আর,কাওকে কোনো দিন ভালো বাসতে পারবোনা।

রাইসা কিছু না বলে নিচের দিকে তাকিয়ে কান্না করছে।

— এসব আজাইরা ঢং বাদ দিয়া আমার সামনে থেকে চলে যা। তুই আর আমার সামনে আসবি না কখনও বলে দিলাম।

রাইসা আমার কথার কোনো উত্তর না দিয়ে চোখের পানি মুছতে মুছতে আমার রুম থেকে বের হয়ে চলে গেলো। আমি খাটের উপরে বসে রইলাম কিছু ভালো লাগছে না। অনেক দিন হলো বাহিরে যাইনি। তাই বের হয়ে গেলাম। হেটে হেটে আমাদের ক্লাবের দিকে যাচ্ছি। সামনে দেখি রাসেল দাঁড়িয়ে আছে। রাসেল কে দেখে আমি তার দিকে এগিয়ে গেলাম।

— কিরে তুই এখানে কি করিস?

— কিছু না এমনি বের হইলাম। তুই কই জাস?

— চল ক্লাবের দিকে যাই সবাইকে ফোন দে আড্ডা দেবো।

— আজকে ক্লাবে না চল পার্ক থেকে ঘুরে আসি।

তারপর আমি আর রাসেল পার্কের দিকে চলে গেলাম। পার্কে ভিতরে যেতেই আমার চোখ পড়লো একটা কাপলের দিকে তারা একজন আরেকজনকে জড়িয়ে ধরে কিস খাচ্ছে। আমি অন্য দিকে তাকিয়ে হাটা শুরু করে দিলাম একটু সামনের দিকে এগিয়ে যেতেই মনে হলো মেয়েটাকে খুব চেনা চেনা লাগছে। মেয়েটার দিকে তাকিয়ে আমি নিজেকে আর ঠিক রাখতে পারলাম না। কারণ মেয়েটা আর কেউ না এটা আমার স্ত্রী দিয়া। দিয়া আমাকে দেখে ছেলে টার থেকে একটু দূরে সরে গেল।

— দোস্ত চল এখান থেকে। এখানে থাকা আমাদের ঠিক হবে না।

এই কথা বলে রাসেল আমাকে টানতে শুরু করে দিল। আমি রাসেলের হাত সরিয়ে দিলাম একটা জাকি দিয়ে।

— বাহ খুব সুন্দর একটা সিন ছিল। ছি আমার ভাবতেও খারাপ লাগছে তোর মতো একটা মেয়ে কে আমি ভালো বাসতাম। আজকে নিজের উপরে ঘৃণা হচ্ছে। মানুষ টাকার জন্য আর কি করতে পারে? সেটা তোকে দেখে বুঝতে পারছি।

— ঈশান চল ভাই প্লিজ। এই সব মেয়েদের সাথে কথা না বলাই উচিৎ।

রাগে আমার পুরো শরীর আগুন হয়ে যাচ্ছে। এই দিকে রাসেল আমার হাত ধরে টানাটানি করছে। রাসেল কে একটা ধাক্কা দিয়ে দিয়ার দিকে এগিয়ে গিয়ে দিয়ার গালে একটা থাপ্পড় মেরে দিলাম।

— তুই শুনে রাখ আমার সাথে তুই যেমন টা করলিনা ঠিক তেমন টা তোর সাথেও হবে দেখিস। তুই আমাকে অনেক বড় দোকা দিয়েছিস। আল্লাহ এসব সহ্য করবেনা। তুই একদিন ঠিক কাঁদবি। আমাকে যেমন কাঁদিয়েছিস তুই। তুই তার থেকে বেশি কাঁদতে হবে।

এই কথা বলে নিজের চোখের পানি মুছে আমি হাটা শুরু করে দিলাম। আমার পিছনে রাসেল ছুটে আসলো। আমি পার্ক থেকে বের হয়ে একটা দোকানে গিয়ে এক পেকেট সিগারেট নিলাম। এর আগে কখনও সিগারেট খাইনি। আজকে প্রথম সিগারেট নিলাম। রাসেল আমার হাতে সিগারেট দেখে থ মেরে দাঁড়িয়ে রইল।

— ঈশান সিগারেট কার জন্য নিলি?

— আমার জন্য এখন ক্লাবের দিকে চল ভালো লাগছে না আমার।

তারপর আমি আর রাসেল ক্লাবের ভিতরে চলে গেলাম। একটা চেয়ারে বসে একের পর এক সিগারেট টেনে শেষ করতে লাগলাম। রাসেল আমার সিগারেট খাওয়া দেখে আমার দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে।

— ভাই আর খাইস না তুই তো মরে যাবি এই ভাবে সিগারেট খেলে।

— এই জীবন রেখে ও বা কি লাভ আছে বল? যে খাবে মানুষ আজকাল টাকার কাছে বিক্রি হয়ে যায়। কি দোষ ছিল আমার কেন আমার সাথে এমন করলো দিয়া? আমি তো ওঁকে খুব ভালোবাসতাম। ও যেটা বলত সেটাই করতাম কখনও ওর কোনো চাহিদা আমি অপুর্ণ রাখি নি। তা হলে কেন আমার সাথে এমন করলো?

— চিন্তা করিস না সব ঠিক হয়ে যাবে। দেখবি সব আবার আগের মতো হয়ে যাবে।

আমি আর কিছু না বলে আবার সিগারেট খেতে শুরু করে দিলাম।

— চল বাসায় চলে যাই অনেক রাত হয়ে গেছে।

— হুম চল।

তারপর বের হয়ে আমি আমার বাসায় চলে গেলাম। দুপুরে আর খাবার খাইনি। সারাদিন না খেয়ে ছিলাম। শুধু খাবার বলতে সিগারেট ছিল। বাসায় গিয়ে দরজা কলিং বেলে চাপ দিতে আম্মু এসে দরজা খুলে আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিল।

— কি হইছে তোমার কান্না করছ কেন?

— তুই আমাকে না বলে কোথায় চলে গিয়েছিলি? আর তোর ফোন বন্ধ কেন? দুপুর থেকে তোকে ফোন দিচ্ছি বার বার ফোন বন্ধ দেখাচ্ছে।

— আমি সাথে করে ফোন নিয়ে যাইনি ফোন বাসায় আছে হয়তো ফোনে চার্জ নেই।

— আচ্ছা ঠিক আছে ফ্রেশ হয়ে খাবার খেতে আয়।

— আমি খাবোনা তোমরা খেয়ে নাও।

তারপর আমি আমার রুমে গিয়ে আরেকটা সিগারেট জ্বলিয়ে দিলাম। খাটের উপরে বসে সিগারেট খাচ্ছি এমন সময় রাইসা আমার রুমে আসলো। রাইসা কে দেখে সিগারেট লুকিয়ে ফেলার আগেই ও সিগারেট দেখে নিছে তাই আর লুকাতে হলো না ওর সামনেই টানতে শুরু করলাম।

— ঈশান তুই সিগারেট খাচ্ছিস?

— হুম।

— তুই এখনি এই সিগারেট ফেলে দে। আর যেনো কোনোদিন তোর হাতে আমি সিগারেট না দেখি।

— আমাকে জ্ঞান দিয়ে আসিস না।

রাইসা এবার আমার দিকে এগিয়ে এসে আমার হাত থেকে সিগারেট ফেলে দেওয়ার চেষ্টা শুরু করে দিল। রাগের চোটে রাইসা কে ধাক্কা দিলাম। রাইসা গিয়ে খাটের সাথে বাড়ি খেয়ে মাথায় আঘাত ফেল।সাথে সাথে রক্ত বের হয়ে গেলো।

আমার শরীর পাথর হয়ে গেছে নিজের কষ্ট সহ্য করতে করতে। এখন আর কারো কষ্ট দেখলে আর খারাপ লাগেনা। রাইসা মাগো বলে একটা চিৎকার দিল। রাইসার চিৎকারে শব্দ শুনে আম্মু চলে আসলো। আম্মুকে আসতে দেখে আমি সিগারেট নিভিয়ে নিলাম।

— রাইসা মা কি ভাবে হলো এমন তোর?

— পা স্লিপ করছে কিছু হইনি সেরে যাবে। এটা কোনো ব্যাপার না খালামনী।

— ঈশান তুই দেখিস নাই ও যে পড়ে গেছে কতো খানি কেটে গেছে মেয়েটার। আয় মা তোকে আই ব্যান্ডেজ লাগিয়ে দিচ্ছি।

— খালামনী এতো চিন্তা করার কিছু হয়নি এমনি রক্ত বন্ধ হয়ে যাবে।

— বেশি কথা বলিস না চল আমার সাথে।

তারপর আম্মু রাইসাকে নিয়ে আমার রুম থেকে বের হয়ে গেলো। রাইসা যাওয়ার সময় আমার দিকে তাকিয়ে রইল। আমি কিছুই বললাম না। আম্মু আর রাইসা চলে যাওয়ার পরে আমি আমার রুমের দরজা বন্ধ করে দিয়ে বালিশে মাথা রেখে শব্দহীন কান্না করতে থাকলাম। খুব কষ্ট হচ্ছে আমার। বার বার পার্কের ঘটনা তা চোখের সামনে ভেসে উঠছে। কি ভাবে পারলো দিয়া! এসব ভাবতে ভাবতে আমার বুকের ভিতর কষ্ট আরো বেড়ে যাচ্ছে। দিয়া তো খুব ভালোই আছে তা হলে আমি কেম পারছিনা? এসব ভাবতে ভাবতে আমি ঘুমিয়ে পড়লাম। সকালে ঘুম থেকে উঠে খাবার টেবিলে গিয়ে খেতেই বসতেই আম্মু বলে উঠল।

— ঈশান বাবা তোকে একটা কথা বলার ছিল!

চলবে,,,,

ভালোবাসার অন্যরকম পর্ব-০৬

0

#ভালোবাসার অন্যরকম
[পর্ব – ৬]
লেখক – আবির চৌধুরী

রক্তে আমার পুরো শরীর ভিজে যাচ্ছে। আমি চিৎকার করার চেষ্টা করছি কিন্তু আমার মুখ দিয়ে কোনো কথা বের হচ্ছে-না। শরীরে কোনো শক্তি পাচ্ছিনা। দেখালাম অনেক মানুষ এসে জোড় হয়ে গেছে। আমি আর তাকাতে পারছিনা। আমার চোখ বন্ধ হয়ে আসছে। তারপর আমি সেখানেই অজ্ঞান হয়ে পড়ে যায়। তারপর কি হলো আমার আর কিছুই মনে পড়ছেনা। চোখ খুলে নিজেকে হাসপাতালের বেডের উপরে আবিষ্কার করলাম। দেখি আম্মু আর রাসেল আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। আম্মু আমার চোখ খোলা দেখে আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করে দিল।

— বাবা কেমন আছিস তুই?

আমি কথা বলতে চাইছি কিন্তু কথা বলতে পারছিনা। আমার মুখ দিয়ে কোনো কথা বের হচ্ছেনা। আমি দুচোখ দিয়ে দুফোটা পানি ছেড়ে দিলাম।

আম্মু আমার এই অবস্থা দেখে আরো বেশি কান্না করা শুরু করে দিল।

আমি আম্মুকে থামানোর চেষ্টা করবো কিন্তু আমি নিজের শরীর নড়াচড়া করতে পারছিনা। আমার পুরো শরীর অবশ হয়ে গেছে। মুখ দিয়ে কোনো কথা বলতে পারছিনা। সবার কথা শুনেতে পারছি। আমি শুধু তাকিয়ে রইলাম। কিছুক্ষণের মধ্যে ডাক্তার চলে আসলো আম্মুর কান্নার শব্দ শুনে।

— তাহলে রোগীর জ্ঞান ফিরছে! আলহামদুলিল্লাহ আমি তো ভয় পেয়ে গেছি।

আম্মু — ডাক্তার ঈশান কোনো কথা বলছেনা কেন? ও শুধু তাকিয়ে আছে কেন?

ডাক্তার — ও আজকে ১৯ দিন ধরে কোমায় ছিল। তাই এমন হয়েছে। কয়েক দিনের মধ্য আবার সব ঠিক হয়ে যাবে চিন্তার কোনো কারণ নেই।

ডাক্তারের কথা শুনে আমি একটা শর্খ খেলাম। আজকের ১৯ দিন ধরে আমি হাসপাতালে!এতো দিন আমি কোমায় ছিলাম! দিয়াকি আমার এক্সিডেন্ট এর কথা শুনে নাই? নাকি শুনেও আমাকে আমাকে দেখতেও আসে নাই। আর আসবেই বা কেন? আমি তো গরীব।

— আম্মু খাবার খাবি তুই?

আমি মুখ দিয়ে কথা বলতে পারছিনা। আম্মু আমাকে খাবার খাইয়ে দিল। ওষুধ খাইয়ে দিল। তারপর আমি ঘুমিয়ে পড়লাম। এই ভাবে হাসপাতালে দুই দিন পার হয়ে গেলো। এখন আমি ধিরে ধিরে সুস্থ হয়ে যাচ্ছি। ৫ দিন পরে আমাকে বাসায় নিয়ে যাওয়া হলো। বাসায় নিয়ে আমাকে খাটের উপরে শুইয়ে দিল। আমিও ঘুমিয়ে পড়লাম কিছুক্ষণ পরে কারো কান্নার শব্দ শুনে আমার ঘুম ভেঙে গেলো। তাকিয়ে দেখি রাইসা কান্না করছে। ওহ রাইসার পরিচয় টা দিয়ে দেই এবার! রাইসা আমার খালাতো বোন হয়। রাইসা আমাকে অনেক আগে থেকেই পছন্দ করতো কিন্তু আমি তাকে সব সময় ছোট বোনের মতোই দেখতাম। কখনও অন্য কিছু ভাবতাম না। রাইসা এইবার ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে পড়াশোনা করে। রাইসা তার মা বাবার এক মাত্র মেয়ে। দেখতে খুব সুন্দরী। যে কোনো ছেলে দেখলেই ক্রাশ খাবে। রাইসা উচ্চতা ৫পিট ৭ ইঞ্চি। যে কোনো ছেলেই প্রেমে পড়তে বাধ্য।

রাইসার কান্না শুনে আমি চোখ খুলে তাকালাম।

— এই ভাবে কান্না করছিস কেন তুই?

— তোকে এতো কিছু জানতে হবে না। তোর এই অবস্থা কি করে হলো? আর ভাবি কোথায় তাকে তো দেখতে পারছিনা! এই সময় সে তোর পাসে নাই কেন?

আমি কিছুই বললাম না চুপ হয়ে রইলাম। একটু পরে আম্মু আমার রুমে এসে আমাকে যা বলল আমি সেটার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না।

— বাবা তুই আমার থেকে এতো বড় একটা কথা কি ভাবে গোপন করতে পারলি?

— কি কথা গোপন কলাম আমি?

— দিয়া তোর সাথে এমন একটা অন্যায় করছে অথচ তুই আমাকে বললিনা কিছুই।

আমার আর বুঝতে বাকি রইল না রাসেল আম্মুকে দিয়ার ব্যাপারে সব বলে দিছে।

— আমি ভাবতেও পারিনি দিয়া তোর সাথে এমন করবে৷ দিয়ার জন্য আজ তোকে এতো কষ্ট সহ্য করতে হচ্ছে ওই মেয়েকে আমি কোনো দিন ক্ষমা করবো না। ও কোনো দিন ও সুখী হতে পারবেনা।

রাইসা — খালামনী কি হইছে? ভাবি কোথায়?

আমি — কিছু হয়নি। তুই কি একা আসলি নাকি?

— না,আম্মুও আসছে। আম্মু তোকে দেখে আবার চলে গেছে।

— ওহ আচ্ছা,

— এখন বলেন কি হইছে?

আম্মু — আমি বলছি।

তারপর আম্মু রাইসাকে সব কিছুই বলে দিল। তারপর আম্মু কান্না করতে করতে আমার রুম থেকে বের হয়ে গেলো। জানি কোনো মা তার সন্তানের এতো কষ্ট সহ্য করতে পারবেনা। কোনো মা চায়না তার ছেলেটা কষ্ট করুক। কিন্তু আমার ভাগ্যটাই খারাপ যাকে এতো ভালো বাসলাম সে আমাকে একটি বারের জন্য দেখতে আসে নাই।

— যা হইছে ভুলে যা, তুই এখন কেমন আছিস?

— আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।

— আমার খুব কষ্ট হচ্ছে তোকে এই অবস্থায় দেখে। কেন জানি আমি সহ্য করতে পারছিনা। তুই আমাকে ভালো না বাসলেও আমি তো বাসি। কিন্তু সেটা তুই কোনো দিন বুঝতে পারলিনা। যদি আমাকে একটু ভালোবাসতিস আমি তোকে কখনও কোনো ভাবে কষ্ট পেতে দিতাম না। বুকের মাঝে আগলে রাখতাম সব সময়।

রাইসার কথা গুলা শুনে খুব হাস্যকর মনে হচ্ছে। দিয়াও তো আমাকে কতো স্বপ্ন দেখিয়েছে সে কি আছে? সে তো আমাকে ছেড়ে খুব ভালোই আছে।
এখন রাইসার কথা গুলো শুনে খুব হাসি পাচ্ছে।

— রাইসা এসব বাদ দে তুই যা খাবার খেয়ে নে। অনেক রাত হয়ে গেছে আমি ঘুমাব।

রাইসা আর কিছু না বলে চলে গেলো। আমি ঘুমিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলাম কিন্তু আমার চোখ থেকে ঘুম হারিয়ে গেছে। কিছু তেই চোখে ঘুম আসছেনা। দিয়ার সাথে কাটানো সময় গুলি বড্ড বেশি মিস করছি৷ আজকে কতো দিন হয়ে গেলো দিয়ার সাথে কোনো যোগাযোগ নেই। দিয়াকি আমাকে সত্যি ভুলে গেছে! দিয়া কি আমার কথা একটি বার ও ভাবেনা? এসব ভাবতে ভাবতে আমার চোখের পাতা ভিজে যাচ্ছে। কিছুক্ষণ পরে আমি ঘুমিয়ে পড়লাম। সকালে ঘুম ভেঙে গেলো বুকের উপরে ভারি কিছু অনুভব করতে পেরে। চোখ খুলে দেখি রাইসা আমার বুকের উপরে শুয়ে আছে। আমি একটা ধাক্কা দিয়ে রাইসাকে সরিয়ে দিলাম।

— রাইসা এসব কি? আমার রুম তুই কি করিস?

— এটা তোর একার রুম না ওকে আজকের পর থেকে এই রুম আমার ও।

— মানে কি? কি বলতে চাস?

— কিছু না। আমার ভালোবাসার উপরে আমার বিশ্বাস ছিল আমি জানতাম তুই আমার কাছে ফিরে আসবি।

— একদম চুপ থাক, আর আমার রুম থেকে বের হয়ে যা। আমাকে না বলে আর আমার রুমে আসবি না বলে দিলাম তোকে।

— তুই ফ্রেশ হয়ে নে৷ আমি নাস্তা নিয়ে আসছি।

— আম্মুকে নিয়ে আসিতে বলিস তোকে আসতে হবেনা। তুই এখন আমার সামনে থেকে যা।

তারপর রাইসা আমার রুম থেকে বের হয়ে গেলো। মনে করছি ও আর আসবেনা। আমি ফ্রেশ হতে চলে গেলাম। ফ্রেশ হয়ে এসে দেখি রাইসা নাস্তা নিয়ে এসে বসে আছে।

— তোকে না বলছি আম্মুকে নাস্তা নিয়ে আনতে? তুই আবার নিয়ে আনতে গেলি কেন?

— আমার ইচ্ছে হইছে তাতে তোর কি চুপচাপ খাবার খেয়ে নে কোনো কথা বলবি না।

এই মেয়ে দেখি আমাকে ধমক দিচ্ছে! এবার রাইসা আমার মুখের সামনে খাবার তুলে ধরলো। কি আর করার খাওয়া শুরু করে দিলাম। খাওয়া শেষ করে রাইসা আমাকে ওষুধ খাইয়ে দিল।

— গুড বয়। এখন ভালো ছেলের মতো ঘুমিয়ে থাকো।

— হুম, এখন তুই আমার রুম থেকে বের হয়ে যা।

— ঈশান তুই এমন কেনরে?

— আমি এমনই। এখন যা আমি ঘুমাব।

তারপর রাইসা রাগ দেখিয়ে আমার রুম থেকে বের হয়ে চলে গেলো। এখন একটু ভালো লাগছে। এবার আমি ঘুমিয়ে পড়লাম।

চলবে,,,,,

ভালোবাসা অন্যরকম পর্ব-০৫

0

#ভালোবাসা অন্যরকম
[পর্ব – ৫]
লেখক – আবির চৌধুরী

আমি গাড়িটিকে ফলো করতে শুরু করে দিলাম। একটু পরে দেখি দিয়ার গাড়ি একটা হাসপাতালের সামনে গিয়ে দাড়ালো। আমি তাড়াতাড়ি করে নেমে হাসপাতালের ভিতরে চলে গেলাম। গিয়ে দেখি দিয়া একটা মহিলা ডাক্তারের সাথে কথা বলছে। আমি দিয়ার কাছে গিয়ে ওর হাত ধরে আমার দিকে ফিরিয়ে আনলাম তখনই দিয়া আমার গালে ঠাস করে একটা থাপ্পড় মেরে দিল সবার সামনে। দিয়ার থাপ্পড়ের শব্দ শুনে সবাই আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি গালে হাত দিয়ে মাথা নিচু করে দাড়িয়ে রইলাম।

— তোর সাহস কি করে হয় আমার গায়ে হাত দেওয়ার? তোর কি যোগ্যতা আছে আমাকে স্পর্শ করার?

আমি মাথা নিচু করে চোখের পানি ফেলছি।

হঠাৎ করে একটা ছেলে এসে বলল — দিয়া কি হয়েছে? (ছেলেটার নাম মিরাজ)

— এই ছোটলোক টার কতো বড় সাহস আমার হাত ধরেছে।

— এই ছেলেকে চেনো তুমি?

— হুম এই সেই ছেলে যার সাথে আমার বিয়ে হয়েছে। আর আমি তারপর সাথে ভালোবাসার নাটক করেছি।

মিরাজ একটা হাসি দিয়ে হলল — ওহ আচ্ছা এই সেই ছেলে? ছেলেটা কতটা বোকা বুঝতেই পারেনি।

— এই ছোটলোকের বাচ্চাটাকে এখান থেকে যেতে বলে বল।

তারপর দিয়া ডাক্তার কে বলল — ডাক্তার এই বাচ্চা নষ্ট করার ব্যবস্থা করুন।

আমি — দিয়া প্লিজ এমন করোনা তুমি। আমি তোমার কাছে কিছু চাইনা শুধু আমার বাচ্চাটাকে নষ্ট করোনা। আমি এই বাচ্চা নিয়েই বাকি জীবন কাটিয়ে দেবো। কোনো দিন আমি তোমার সামনে আসবো না। প্লিজ দিয়া তোমার কাছে এটা আমার অনুরোধ। দিয়ার হাত ধরে কথাটা বললাম।

দিয়া এক জটকা দিয়ে আমার হাত সরিয়ে নিল।তারপর মিরাজ আমার কলার চেপে দরে বলল

— তুই দিয়াকে স্পর্শ করার সাহস ফেলি কোথা থেকে?

এই কথা বলে মিরাজ আমার নাকে একটা ঘুসি দিল। সাথে সাথে আমার নাক দিয়ে রক্ত বের হতে শুরু করে দিল। আমি দিয়ার দিকে তাকালাম কিন্তু দিয়া কিছুই বলল না। যে দিয়া আমার হালকা হাত কেটে গেলেও সহ্য করতে পারতো না আজ সেই দিয়া আমার দিকে ফিরেও তাকাচ্ছে না। তারপর ডাক্তার দিয়াকে নিয়ে ভিতরে চলে যাবে এমন সময় আমি আবার দিয়ার সামনে গিয়ে দাড়িয়ে গেলাম। আমার নাকের রক্ত টপটপ করে পড়ছে।

— দিয়া আমি তোমার পায়ে পড়চি আমার বাচ্চাটাকে তুমি নষ্ট করে দিয় না। আমি এই বাচ্চা কে নিয়ে এই শহর ছেড়ে চলে যাবো কখনও তোমার মুখোমুখি হবোনা। শুধু আমার বাচ্চাটাকে আমার কাছে ফিরিয়ে দাও।

কিন্তু দিয়া আমার কোনো কথা শুনল না। মিরাজ কয়েকজন লোক নিয়ে এসে আমাকে হাসপাতালে থেকে বাহিরে ফেলে দিল। রক্তে আমার কোট লাল হয়ে গেলো। আমি হাসপাতালের সামনে দাঁড়িয়ে রইলাম। একটু পরে দিয়া মিরাজের হাত ধরে হাসপাতাল থেকে বের হয়ে এসে গাড়িতে উঠে চলে গেলো। আমি দিয়ার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলাম। আর চোখের পানি ফেললাম৷ এখন চোখে পানি ফেলা ছাড়া যা আমার আর কিছুই করার নাই। হাসপাতালে পাসের একটা দোকানে গিয়ে এক লিটার পানি নিয়ে রক্ত পরিষ্কার করছি এমন সময় আমার বন্ধু রাসেল এসে হাজির।

— ঈশান তোর এই অবস্থা কি ভাবে হলো? কে তোর এই অবস্থা করছে?

— কেউ না এমনি নাক দিয়ে রক্ত বের হচ্ছিলো।

— তুই তো হাসপাতালে যেতে পারতি। তুই আমার সাথে হাসপাতালে আই।

— লাগবেনা এমনি ঠিক হয়ে যাবো৷

— কোনো কথা বলবি না তুই আমার সাথে চল।

রাসেল আমার কথার গুরুত্ব না দিয়ে আমাকে টেনে হাসপাতালে নিয়ে গেলো। হাসপাতালের সেই মহিলা ডাক্তারের কাছে আমাকে নিয়ে গেলো রাসেল। ডাক্তার আমাকে দেখেই বলে ফেলল,

— ওই মহিলা টা আপনার কে ছিল? আর ছেলেটা কে যে আপনার গায়ে হাত তুলল?

রাসেল — কি! কোন ছেলে ঈশানের গায়ে হাত তুলছে? ঈশান তুই আমাকে বল্লিনা কেন? ছেলেটার নাম বল কে সেই ছেলে?

আমি — আরে ভাই বাদ দে এসব।

ডাক্তার — আপনি তো আমার কথার উত্তর দিলেন না মেয়েটা কে?

— মেয়েটা আমার স্ত্রী।

— তা হলে যে সন্তান,,,

এই কথা বলতেই আমি ডাক্তার কে থামিয়ে দিয়ে বললাম — আমার চিকিৎসা করুন।

তারপর ডাক্তার আর কিছু না বলে আমার নাকের রক্ত বন্ধ করে কিছু ওষুধ দিয়ে দিল। রাসেল কিছু না বলে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। তারপর আমি আর রাসেল বের হয়ে গেলাম। রাসেল আমাকে নিয়ে একটা রেস্টুরেন্টে চলে গেলো।

— ঈশান এই বার সব আমাকে বল কি হইছে? আর তোকে ও কেমন জানি লাগছে আমাকে সব বল তুই।

তারপর আমি রাসেল কে সব কিছুই খুলে বললাম। রাসেল আমার সব কথা শুনে চোখের পানি ছেড়ে দিল।

— তোর আম্মু যানে এসব?

— না আমি আম্মুকে কিছু বলিনি। আম্মু জানতে পারলে অনেক কষ্ট পাবে আম্মুকে কিছু বলি নাই।

— ওহ, কিন্তু ভাবি এমন করছে কেন? ভাবি তো তোকে অনেক ভালোবাসতেন তা হলে?

— হয়ত আমার টাকা পয়সা নাই তাই এমন করছে।আর আগে যা ছিলো তা হয়তো দেখানো ভালোবাসা ছিল। কিন্তু এটা আমি কখনও ভাবি নি দিয়া আমার সন্তান টাকে নষ্ট করে ফেলবে। জানিস আমার খুব কষ্ট হচ্ছে ভাই। দিয়া এমনটা কি করে করতে পারল!

রাসেল কে এসব বলছি আর চোখ দিয়ে পানি বের হচ্ছে। এবার রাসেল আমার দিকে এগিয়ে এসে আমার চোখের পানি মুছে দিয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরলো।

— চিন্তা করিস না সব ঠিক হয়ে যাবে।

আমি কিছু না বলে শব্দ বিহীন কান্না করছি। ছেলেরা যে চাইলেও চিৎকার করে কান্না করতে পারে না। কারণ ছেলেদের কান্নাতে মানায় না। একটা ছেলে কখনও চিৎকার করে কান্না করতে পারে না শত কষ্ট বুকে নিয়েও তাদের হাসতে হয় এই সমাজের মানুষের সামনে।

কিছুক্ষণ পরে রাসেল আমাদের জন্য খাবার অর্ডার করল। একটু পরে খাবার আমাদের সামনে চলে আসলো। কি খাবার খাবো খাবার আমার ঘোলা দিয়ে নামছে না।

— কিরে খাচ্ছিস না কেন? খেয়ে নে এই খাবার। দেখে তো মনে হচ্ছে সকাল থেকে না খাওয়া তুই!

— দোস্ত খাবার আমার ঘোলা দিয়ে নামছে না। আমি খাবো না তুই খেয়ে নে।

— এতো কথা শুনতে চাই না তুই এই সব খাবার খেয়ে নে।

তারপর আমি কোনো ভাবে হালকা করে খাবার খেয়ে নিলাম।

— ঈশান চল আমি তোকে বাসায় দিয়ে আসি।

— না আমি একাই যেতে পারবো। সমস্যা হবে না আমার।

— ঠিক আছে সাবধানে যাবি কিন্তু৷ আর এসব নিয়ে চিন্তা করিস না। দেখবি সব ঠিক হয়ে যাবে।

তারপর রাসেল রেস্টুরেন্টের বিল মিটিয়ে দিয়ে আমার বের হয়ে গেলাম। রাসেল তার নিজের বাসার দিকে চলে গেলো। আমি গিয়ে আমার গাড়ি তে উঠে বসলাম। শরীর টা কেমন জানি খারাপ লাগছে। তাও আমি গাড়ি ড্রাইভিং করা শুরু করে দিলাম। চোখের সামনে বার বার দিয়ার মুখ ভেসে উঠছে আমার চোখের সামনে। আর চোখ দিয়ে অজস্র ভাবে পানি পড়ছে। এক হাতে ড্রাইভিং করছি অন্য হাত দিয়ে চোখের পানি মুছে দিচ্ছি। গাড়ির গতি বাড়িয়ে দিলাম। রাস্তা জেনো কোনো ভাবেই শেষ হচ্ছেনা। হঠাৎ করে লক্ষ্য করলাম সামনে থেকে একটা বড় গাড়ি আমার দিকে এগিয়ে আসছে। গাড়িতা আমার থেকে তেমন একটা বেশি দুরে না। গাড়ি টি অনেক জোরে এগিয়ে এসে আমাকে একটা ধাক্কা মেরে দিলো সাথে সাথে আমার গাড়ি উল্টে পড়ে দুমড়েমুচড়ে গেলো । আমার শরীর রক্তে লাল হয়ে গেলো।

চলবে,,,,