Tuesday, August 12, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1051



আমি তুমিতেই আসক্ত পর্ব-০৬

0

#আমি_তুমিতেই_আসক্ত।
#পর্ব_৬
#সুমাইয়া মনি।

অ্যানিমেল’স শপের সামনে দাঁড়িয়ে আছে নবনী, মায়া। থ হয়ে গেছে মায়া। নবনীর চোখেমুখে খুশির রেখা স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে সে। কিছুদিন ধরেই এ মেয়ের স্বভাব,আচরণে পরিবর্তন ঘটেছে। তার এক মাত্র কারণ নিভ্র। নিরবতা কাটিয়ে মায়া প্রশ্ন করে,
-“এখানে কেন এসেছি আমরা?”

-“কুকুরনি কিনতে।”

-“কী, কুকুরনি?” অবাক হয়ে চেয়ে রয় মায়া।

বাকি কথার উত্তর না দিয়ে নবনী মায়ার হাত ধরে টেনে ভেতরে নিয়ে আসে। বামেই শপের মালিক বসে হিসাবের খাতা নাড়াচাড়া করছিল। মধ্য বয়স্ক লোকটি ওদের দু’জনকে ভেতরে আসতে দেখে চোখ তুলে তাকালেন। তীক্ষ্ণ নজরে দু’জনকে পর্যবেক্ষণ করে জিজ্ঞেস করলেন,
-“বলুন আপনাদের কী দরকার?”

-“আমাদের একটি কুকুরনি দরকার।”

সপ্রশ্ন সূচক দৃষ্টি নিক্ষেপ করে লোকটি। কুকুর,কু*ত্তা,কু*ত্তি এমন আরো বিভিন্ন নাম সে কুকুরের শুনেছে। কিন্তু আজ হঠাৎ কুকুরনি নাম শুনে কিছুটা অবাক হলেন। বলল,
-“কুকুরনি বলতে কি বুঝায়?”

-“মেয়ে কুকুর। যদি ছেলে কুকুর হয়,তাহলে মেয়ে কুকুরের নাম অবশ্যই কুকুরনি হবে।”

-“কথায় লজিক আছে। ভেতরে আসো দেখাচ্ছি কুকুরনি।” বলেই লোকটি হিসাবের খাতা টেবিলের ওপর রাখে। নবনী লোকটির পিছু যেতে নিলে মায়া হাত ধরে থামিয়ে দেয়। আস্তেধীরে বলে,
-“হচ্ছেটা কি বলবি? তুই কুকুর কেন কিনছিস?”

-“প্রথমত আমি কুকুরনি কিনছি। দ্বিতীয় নিভ্র স্যারের কুকুর টমির বাচ্চার জন্য।”

-“নিভ্র স্যারের টমির বাচ্চার জন্য তুই কেন কুকুরনি কিনবি?”

-” টমির বাচ্চা আমাকে দেখলেই ঘেউঘেউ আওয়াজ তুলে ভয় দেখায়। তাই ওর মুখ বন্ধ করতে কুকুরনি কিনছি।”

-“আমি বুঝতে পারছি না। টমির বাচ্চা নাকি টমি?”

-“টমি! টমির বাচ্চা বলে তো আমি ওঁকে গালি দিয়েছি।”

-“আল্লাহ! বোন চল এখান থেকে। কুকুর-টুকুর কিনিস না।”

-“আমার শর্ত অনুযায়ী আমার সঙ্গে থাকবি। সো চুপ।”

-“বালের শর্ত।” মুখে বিরক্ত বোধ নিয়ে বলে মায়া।

বেশ সুন্দর মাঝারি আকারের সাদা রঙের মেয়ে কুকুর কিনে নবনী। শপ থেকে বের হয়ে ওরা রিকশায় ওঠে। সারা রাস্তায় কুকুরটির সঙ্গে সে কথা বলেছে। কুকুরের সঙ্গে এমন আদিখ্যেতা দেখে গা গুলিয়ে আসছে মায়ার। শুধু কিছু বলতে পারছে না। নবনী কুকুরটির ছোট করে একটি নামও দেয় ক্যাথি। মায়া মাঝ পথে নেমে বিদায় নিয়ে চলে যায়। সেই রিকশা করে নবনী বাড়ি ফিরে। আজ একবার কলিং বেল বাজাতেই দরজা খুলে দেয় নিয়ান। নবনীর কোলে কুকুর দেখে চিৎকার দিয়ে আম্মুকে ডাক দেয়। এক চিৎকারে সে হাজির। প্রথমে তো সে গম্ভীর চোখেমুখে কুকুরটির দিকে তাকিয়ে থাকে। পরক্ষণে হেসে দিয়ে বলে,
-“বাহ! কুকুরটি বেশ সুন্দর। কোথায় পেলি নবনী।”

-“কিনেছি আম্মু।”

-“তাই?” বলতে বলতে কুকুটিকে কোলে তুলে নেয় নিলুফা বেগম। ক্যাথিকে যে তারও মনে ধরেছে সেটা বুঝতে সমস্যা হয়না নবনীর। সে নিজেই ক্যাথিকে গোসল করিয়ে দেয়। নবনী রুমে এসে জানালার সামনে দাঁড়িয়ে নিভ্রর বারান্দার দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসে। এ হাসির মানে যে টমিকে জব্দ করা সেটা বুঝাই যাচ্ছে।
————–
বিয়ের শপিং করতে এসেছে আমেনা বেগম ও খোদেজা বেগম। সঙ্গে আদি,আপনও এসেছে। অবশ্য আদির আসার ইচ্ছে থাকলেও আপনের ইচ্ছে ছিল না। কিন্তু আদির জোরাজোরি আসতে বাধ্য হয়। তনুজার জন্য গহনা,শাড়ি কিনার জন্য তারা আলাদা মেয়েদের কালেকশনে যায়।
আর আদিরা ছেলেদের কালেকশনে আসে। আদি শেরওয়ানি,জুতো আরো বিভিন্ন জিনিস দেখাচ্ছিল আপনকে। আপন সব আদির পছন্দের ওপর ছেড়ে দেয়। নিজের পছন্দ মতোই আপনের জন্য বিয়ের যাবতীয় সব কিছু কিনে। বাসায় ফিরতে ফিরতে প্রায় দুপুর গড়িয়ে যায়। সবাই বেশ ক্লান্ত। তখন তনুজা কল দেয় আপনকে। বিরক্তিতে ফোন সাইলেন্ট করে রেখে দেয় আপন। আদি আপনের বিরক্তির কারণ বুঝতে পারে না। বলে,
-“কোনো সমস্যা? ”

-“তনুজা কল দিয়েছে। সারাক্ষণ ফোনে ঘ্যানঘ্যান করতে ইচ্ছে করে না। এখন তো মোটেও না।” বিরক্তিতে নাকমুখ কুঁচকে বলে।

-“ফোন দে,আমি বলে দিচ্ছি।”

-“নে,যা বলার বল।” বলেই ওঠে চলে যায় ওয়াশরুমে।

আদি তনুজার সঙ্গে কথা বলে। বেশ কিছুক্ষণ কথা হয় তাঁদের মাঝে। আপন ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে দেখে তাদের মধ্যে এখনো ফোনালাপ চলছে। এত গুরুত্ব দেয় না সে।
_______
তার পরদিন…

কলেজের ক্যান্টিনে মুড অফ করে বসে রয়েছে নবনী। একটা বার্গার অর্ডার করে নীরবে খাচ্ছে। মায়া নিজেও বার্গার অর্ডার করেছে। কিন্তু না খেয়ে নবনীর দিকে বিস্ময় চোখে তাকিয়ে আছে। কলেজে আসার পর থেকেই নবনীর মুখ কালো। তেমন একটা কথাও বলেনি আজ। নবনীকে এমন চুপচাপ থাকতে দেখে মনে সন্দেহর বীজ দানা বুনতে শুরু করেছে। কাল অবধি তো ভালোই ছিল। আজ হঠাৎ কি হলো?
ভ্র বাঁকিয়ে প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয় মায়া,
-“কি হয়েছে তোর? মুড অফ কেন?”

নবনী ভারী নিঃশ্বাস ত্যাগ করে। আনমনে বলে,
-“নিভ্র স্যারকে না দেখতে পেলে, আমি সুইসাইড খাব।”

চটাস করে কপালে হাত রাখে মায়া। এতক্ষণে মূল কারণ উদঘাটিত হলো। প্রেমের পাগল দেখেছে, কিন্তু এমন পাগল দেখেছে কি-না সন্দেহ! মায়া কপালের হাত পাশে সরিয়ে নরম স্বরে বলে,
-“আপাতত বার্গার খা। পরে সুইসাইড খেয়ে নিস।”

-“তুই কেমন বান্ধবী,প্রিয় বান্ধবীকে সুইসাইড খেতে বলছিস।”

-“আর কি বলতাম বোইন।” কপালের ওপর থেকে হাত সরিয়ে কান্নাস্বরে বলে মায়া৷

-“নিভ্র স্যারের সঙ্গে দেখা করিয়ে দেবো। এই কথাটা বলে আমাকে সান্ত্বনা দিতে পারতি।” রাগ জেড়ে বলে।

-“তাকে আমি কোথায় পাব? ”

-“জানি না। আজ সকালে নিভ্র স্যারকে দেখতে পাইনি। তাই মনটা আমার অশান্ত,অস্থির।” মন খারাপ করে বলে।

-“এমন পাগলামি করিস না। নিভ্র স্যার তোকে কখনোই ভালোবাসবে না।”

-“তোকে এটা জিজ্ঞেস করেছি?” দাঁত কিড়মিড় করে বলে নবনী।

মায়া নবনীর রাগ দেখে ভীত বনে যায়। কিছু না বলে বার্গার হাতে নিয়ে কামড় দিতে যাবে তখনই নবনী ছোঁ মেরে নিয়ে যায়। বলে,
-“বার্গার রাখ,চল আমার সঙ্গে।”

-“কোথায় যাব,আগে খেতে তো দে।”

-“খাওয়া বন্ধ।” বলেই মায়ার হাত ধরে ক্যান্টিনের বিল মিটিয়ে বাহিরে আসে। একটি রিকশা ডেকে দু’জনেই চড়ে বসে।
কিছুক্ষণ পর রিকশা থানার সামনে এসে দাঁড়ায়। এটা সে-ই থানা। যেখানে আরেকবার এসেছিল। মায়ার চিনতে ও বুঝতে কষ্ট হলো না। বিরক্ত সঙ্গে রাগ নিয়ে নবনীকে দেখে চলেছে।
ভেতরে আসে তারা। আজকে তেমন মানুষজন ছিল না। যে যার মতো কাজে ব্যস্ত ছিল। সেদিনের সেই জলিল হাসান একজন লোকের হাত টেবিলের ওপর রেখে কলম ওপরে তাক করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। এটা কমন। আরো অনেক ভাবে টর্চার করা হয় জিজ্ঞাসাবাদের সময়। তাই ওরা তেমন কিছু মনে করে না।

-“ক,তোর লগে আর কেডা কেডা যুক্ত আছে। নাম ক। নাইলে কলম হাতের মধ্যে ঢুকাইয়া দিমু।”

মুখ খুলে না লোকটি। মুড নিয়ে বসে থাকে। দেখে নবনীর রাগ হয়। দ্রুত ব্যাগের ভেতর থেকে একটি পেন্সিল বের করে লোকটির হাতের মাঝ বরাবর ঢুকিয়ে দেয়। লোকটি ব্যথায় জোরে চিৎকার দিয়ে ওঠে। পুরো থানা যেন কেঁপে ওঠে তার আর্তচিৎকারে। হাত থেকে রক্ত বের হচ্ছে। পুরোপুরি ভেতরে ঢুকেনি। অর্ধেকের কম ঢুকেছে। আশেপাশে সবার নজর এখন নবনীর ওপর। জলিল হাসান রীতিমতো আশ্চর্য নবনীর এমন কাণ্ডে। যেটা করার সাহস আপাতত তার মধ্যে ছিল না। সেটা নবনী করে দেখিয়েছে। সে চিনে ফেলে নবনী এবং মায়াকে। মায়া মুখ হা করে তাকিয়ে আছে নবনীর পানে। নবনী জলিল হাসানের উদ্দেশ্যে বলে,
-“আঙ্কেল শুভ কাজে দেরি করতে নেই। এবার সে সব স্বীকার করবে। আচ্ছা আঙ্কেল নিভ্র স্যার ভেতরে আছেন?”

জলিল হাসান এখনো থ হয়ে তাকিয়ে আছে নবনীর দিকে। বলতে হবে মারাত্মক সাহস আছে মেয়েটির। তাইতো এমন কাণ্ড করল। সে ভাবনা কাটিয়ে ছোট্ট করে “হয়” উচ্চারণ করে। নবনী তাকে ধন্যবাদ দিয়ে মায়াকে সঙ্গে করে ভেতরে প্রবেশ করে। আশেপাশের সবাই নবনীর সাহসের প্রশংসা করছে। এটা-ওটা বলছে।

নিভ্র মনোযোগ দিয়ে একটি ফাইল পড়ছিল। তখনই নবনী ও মায়ার আগমনে চোখ তুলে তাকায়। নবনী ভেতরে এসে মাথা কিছুটা নিচু করে দাঁড়ায়। দেখে মনে হচ্ছে সে নিভ্রকে দেখে ভয় পাচ্ছে। অথচ, বাহিরে সে বড়ো কাণ্ড বাঁধিয়ে এসেছে। সব জায়গায় সাহসীকতার পরিচয় দিলে-ও, নিভ্রর কাছে সে ভীতিগ্রস্ত! নিভ্র কপাল কোঁচকায়। নবনীকে এখানে দেখে কিছুটা অবাক। শান্ত কন্ঠে বলে,
-“এখানে কেন এসেছো?”

নবনী আমতা আমতা কেটে জবাব দেয়,
-“আমার চুরি হয়ে গেছে?”

-“আমার চুরি হয়ে গেছে বলতে কী বুঝাতে চাইছো?”

-“আমার…”

-“হুম,তোমার?”

-“আমার…..”

-“সরাসরি বলো নবনী।” কিছুটা ধমকের স্বরে বলে নিভ্র।

নবনী ভয়তে চট করে বলে দেয়,
-“আমার বই চুরি হয়েছে।” বলেই চোখ জোড়া বন্ধ করে নেয়।

মায়া সরু চোখে নবনীর দিকে তাকায়। সে প্রচণ্ড বিরক্ত।
নিভ্র চেয়ারে হেলান দিয়ে কলম হাতে নিয়ে নাড়াচাড়া করে বলে,
-“আমি মোটেও মজার মুডে নেই। আই থিঙ্ক, তুমিও মজা করছো না।”

-“আসলে স্যার….”

-“হেই নিভ্র…. ” বলতে বলতে তড়িঘড়ি করে ভেতরে প্রবেশ করেই নবনী এবং মায়ার ওপর নজর পড়ে জিনানের। এতে করে বাকি কথা না বলেই থেমে যায়। নবনী,মায়া জিনানকে দেখে চিনতে পারে। নবনী ক্ষোভ নিয়ে তাকায়। নিভ্র জিনানের উদ্দেশ্য করে বলে,
-“ওয়েট তোর সঙ্গে পরে কথা বলছি।” তারপর নবনীর দিকে তাকিয়ে বলে, “হ্যাঁ বলো নবনী কী যেন বলছিলে?”

-“ভুলে গেছি।” নিচুস্বরে বলে।

নিভ্র কপালে বুড়ো আঙ্গুল দ্বারা চুলকিয়ে নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করে। গম্ভীর কণ্ঠে বলে,
-“যাও এখান থেকে। নেক্সট টাইম যেন থানায় না দেখি।”

-“ওকে স্যার।” বলেই চলে যেতে নিলে নবনী জিনানের একটু কাছে ঘেঁষে আস্তে করে বলে যায়,
-“তোর নানি পাগল।”

জিনানের চোখ বেরিয়ে আসার জোগাড়। চোখেমুখে আকস্মিক ভাব! এই মেয়ের এখনো তাকে পাগল বলা কথাটি মনে ধরে বসে আছে, জানা ছিল না। ওদের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে জিনান। নিভ্রর ডাকে জিনান ঘুরে তাকায়।

-“জিনান?”

-“হুম…”

-“বোস!”

জিনান এসে নিভ্রর পাশের চেয়ারে বসে। নিভ্র জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,
-“যাওয়ার আগে নবনী তোকে কিছু একটা বলেছে। রাইট?”

-“তোর নানি পাগল বলেছে। সেদিন ওঁকে পাগল বলা কথাটি আজও মনে রেখেছে। হাউ স্ট্রেঞ্জ!”

-“তোকে একটা জিনিস দেখাই।” বলেই নিভ্র ল্যাপটপের ভেতর থেকে কিছুক্ষণ আগের ফুটেজ বের করে জিনানকে দেখায়। যেখানে আসামির হাতে পেন্সিল ঢুকানোর দৃশ্য দেখতে পেয়ে জিনান বিস্মিত! দেখা শেষ হলে নিভ্র ল্যাপটপ ঘুরিয়ে ফেলে ওর দিকে। জিনান বুকে হাত রেখে বলে,
-“ভাভারে! এই মেয়ের তো দেখছি সাংঘাতিক সাহস।”

-“ইয়েস! কিন্তু আমার সামনে আসলেই ওর সাহস উবে যায়। ”

-“এমনটা কেন? ভয় পায় তোকে তাই?”

-“মেবি!”

-“যাই হোক। এই মেয়ের থেকে দূরে থাকিস। কিন্তু ওরা এসেছিল কেন?”

-“বই চুরি হয়ে গেছে বলতে।”

জিনান হেসে ফেলে। বলে,
-“আজ-কাল বই চুরির রিপোর্ট লিখছিস নাকি?”

-“নাহ!”

-“নাম কী ওদের?”

-“নবনীতা। বান্ধবীর নাম মায়া।”

-“মায়ার চেহারা মায়াবী। ভালো লেগেছে।”

-“প্রেমে পড়িস না। ভালোলাগা পর্যন্তই সীমাবদ্ধ রাখ। নবনীতা জানতে পারলে, পরবর্তীতে পেন্সিল তোর হাতের মধ্যে ঢুকাবে।” দুষ্টুমি করে বলে নিভ্র।

-“ধুর শালা।” নিভ্র হাসে। জিনানও হেসে দেয়।
.
.
.
#চলবে?

কার্টেসী ছাড়া কপি করা সম্পূর্ণ নিষেধ।

আমি তুমিতেই আসক্ত পর্ব-০৫

0

#আমি_তুমিতেই_আসক্ত।
#পর্ব_৫
#সুমাইয়া মনি।

পড়া শেষ করতে নবনীর সন্ধ্যা গড়িয়ে যায়। মাগরিবের আজান পড়ে। নামাজ শেষ করেই বিছানায় চিৎ হয়ে শুয়ে খিদের চটে জোরে জোরে চিৎকার করছে। এই এক মারাত্মক জঘন্যতম বাজে স্বভাব তার। খিদে পেলেই আম্মু আম্মু ডেকে বাড়ি মাথায় ওঠাবে। এখনও তেমনটিই করছে সে।

-“আম্মু গো আম্মু,খাবার দেও নয়তো আমি মরে গেলাম। গেলাম কিন্তু মরে। গেলাম….।” বলেই জোরে টান দিয়ে ওঠলো।

নিলুফা বেগম রেগে তেড়ে রুমে ঢুকে আস্তেধীরে বলে,
-“আস্তে কথা বল। মানুষজন আছে। ”

নবনীতা ওঠে বসে কপাল কুঁচকে বলল,
-“পুরো বাড়ি জুড়ে তুমি,আমি,নিয়ান ছাড়া আর কেউ নেই। আব্বু আসবে সেই রাতে। তাহলে মানুষজন কোথায় পেলে?”

-“নিভ্র এসেছে। একটু আগে।”

চট করে দাঁড়িয়ে যায় নবীন। চোখ জোড়া রসগোল্লার মতো বড়ো আঁকার ধারণ করেছে। মুখে হাত রেখে হাঁপাতে শুরু করে। একদিকে খুশির ঠেলায়,আরেক দিকে লজ্জায়। বলে,
-“ও আল্লাহ,এ কি করলাম আমি। এ কি বললাম। মানসম্মান সব শেষ।”

-” তোর আবার মানসম্মান আছে।”

-“না নেই….।” রেগে বলে।

-“তাহলে চিল্লা বেশি করে, মানসম্মান তো নেই তোর।” মুখ বাঁকিয়ে বললেন।

-“আম্মু!” রেগে জোরে বলে।

-“চুপ থাক। তোর কা কা থামাতে এসেছি। কিচেনে নুডলস রাখা আছে, গিয়ে খেয়ে নে।”

-“তার আগে বলো নিভ্র স্যার আমাদের বাড়িতে কেন এসেছে?”

-“ধন্যবাদ জানাতে। এই দু দিন তাকে খাবার দিয়েছিলাম,তার জন্য নিজে মন থেকে ধন্যবাদ জানাতে এসেছে।”

-“আর?”

-“এখন নিয়ানের সঙ্গে কথা বলছে।”

-“আর?”

-“তোর কল্লাডা।” দাঁতে দাঁত চেপে বলেন নিলুফা বেগম।

-“রাগছো কেন?”

-“আমি গেলাম।”

-“শোনো আম্মু…?” তিনি আর এক মুহূর্ত দাঁড়ালেন না। রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন।

নবনী লজ্জায় নক কাঁটতে আরম্ভ করেছে। ভেবেই খারাপ লাগছে নিভ্র স্যার থাকাকালীন এত জোরে খিদের চটে চিৎকার করেছে। কী ভেবেছে ওর বিষয়। লজ্জায় মরি মরি অবস্থা তার। কয়েক সেকেন্ড যেতেই নবনী রুমের দরজার দিকে উঁকি মেরে ড্রইংরুমের পরিস্থিতি দেখতে লাগল। এপাশ ফিরে বসেছিল নিভ্র। যার দরুণ নিভ্রর মাথা ও অর্ধেক পিঠ ব্যতীত আর কিছু দেখা যাচ্ছে না। এদিকে খিদের যন্ত্রণায় পেটের ইঁদুর গুলো রীতিমতো যুদ্ধ আরম্ভ করে দিয়েছে। নাহ! কিচেনে যেতে হবে। এক কাজে দুই কাজ করবে। প্রথম কাজ নুডলস খাবে। দ্বিতীয় কাজ নিভ্রকেও দেখতে পাবে। ভাবা শেষ। তো দেরি কিসের? লজ্জাসংকোচ ফেলে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে চুল ঠিকঠাক করে, তারপর গায়ের ওড়না টেনে রুম থেকে বের হয়। এমন ভেজা বেড়ালের মতো বেরিয়েছে যেন ভাঁজা মাছ উল্টে খেতে হয় কিভাবে, সেটা সে জানে না।

নিভ্র নবনীর দিকে তাকায়নি। নিলুফা বেগমের সঙ্গে কথা বলায় ব্যস্ত। নবনী আড়চোখে একবার তাকিয়ে কিচেনে আসে। একটি বাটিতে নুডলস রাখা ছিল। সেটি সঙ্গে করে নিয়ে এসে টেবিলে বসে। মাথা নিচু করে খাচ্ছে। খাওয়ার মাঝে আড়চোখে কয়েকবার যে নিভ্রর দিকে তাকিয়েছে তার কোনো ইয়ত্তা নেই। নিভ্র তার নজর স্বাভাবিক রেখেই নিলুফা বেগমের সঙ্গে কথায় মগ্ন ছিল। নবনী এক সময় ভাবে। এই লোকটা মানুষ নাকি রোবট। না আছে রস,না আছে কস। কাঠ কাঠিন্য একজন লোক। জীবনে কখনো ভালোমতো হেসেছে কি-না সন্দেহ। না আর সহ্য হচ্ছে না। নবনীর বাটিতে নুডলস প্রায় শেষ। তাঁদের কথার মাঝে পথে নবনী জোরে বলে ওঠলো,
-“আম্মু আরো নুডলস দেও।”

নিভ্র সহ নিলুফা, নিয়ানের নজর এবার নবনীর ওপর। নবনী কিছুটা ইতস্তত বোধ করে। এমন জোরে ডাকার কারণে তাঁদের কথপোকথন থেমে গেছে এটা ভেবে নবনী কিছুটা হলেও খুশি হয়। এতক্ষণে তাঁদের নজর তার ওপরে পড়েছে।
নাহলে এতক্ষণ তারা বুঝতেও পারেনি যে একজন অসহায় মেয়ে ডাইনিং টেবিলে বসে নুডলস খাচ্ছিল। নিলুফা বেগমের মেজাজ চড়ে বসে। নজর নিয়ানের দিকে তাক করে বলে,
-“নিয়ান আমার খুন্তিটা রান্না ঘর থেকে এনে দিতে পারবি বাবা?”

খুন্তির কথা শুনেই নবনী চটজলদি দাঁড়িয়ে যায়। চোখ পিটপিট করে বলে,
-“থাক তোমার দিতে হবে না। আমি নিজেই নুডলস নিয়ে আসছি।” বলেই নবনী হনহনিয়ে চলে যায়। নিভ্র স্মিত হাসে। মা-মেয়ের এমন কাণ্ড দেখে কেউ না হেসে থাকতে পারবে বলে মন হচ্ছে না।
আরো কিছুক্ষণ কথা বলে নিভ্র বিদায় নিয়ে চলে যায়। নবনী ওর মায়ের সামনে কোমড়ে হাত রেখে রেগেমেগে বলে,
-“নিভ্র স্যারের সামনে তুমি আমাকে অপমান করেছো। এর বদলা আমি নেবোই।”

-“কিভাবে?”

-“তোমার খুন্তি ডাস্টবিনে ফেলে দিয়ে।” বলেই এক মুহূর্ত দেরি করে না। দ্রুত রুমে এসে ঠাস শব্দ তুলে দরজা লাগিয়ে দেয়।

নিলুফা বেগম রাগ নিয়ে দরজার থাপ্পড় দিয়ে বলে,
-“ডিনার করতে বাহিরে আসবি না নাকি? তখন ধরব তোকে। আমার খুন্তি ফেলে দেওয়া…।”

-“খাব না। অলরেডি পেট ফুল নুডলস খেয়ে।”

রাগে ফোঁসফোঁস করে ওঠে সে। এই মেয়ে সব সময় তার থেকে এক ধাপ আগে আগে চলে।
-“শয়তান মেয়ে।” ভেংচি কেটে বলেই চলে যান।
______________
সকালে…

নবনী তার পাশের জানলাটা খুলে উঁকি মেরে নিভ্রর বারান্দার দিকে তাকায়। নবনীর এই জানালাটা কখনোই খোলা হয়না। খোলা হয়না বলতে, এই জানালাটা নবনীর একদমই পছন্দ নয়। খোলা রাখবে সেটা তো আরো চায় না। কিন্তু নবনী আজ শুধু নিভ্রর জন্যই জানালা খুলেছে। ওঁকে দেখার জন্য। এখন থেকে সব সময় খোলা রাখবে বলে মন স্থির করে।
একটু পরেই নিভ্র তার পোষা কুকুর টমিকে নিয়ে বারান্দায় আসে। কালো রঙের গেঞ্জি ও ট্রাউজার পরিধান, হাতে কফির মগ আর অন্য হাতে একটি লাল রঙের ফাইল। মনোযোগ সহকারে দেখতে আর কফি খাচ্ছে নিভ্র।

নবনী জানালার এক পাশ হয়ে দাঁড়ায়। যাতে ওঁকে নিভ্র দেখতে না পায়। রেলিঙের উপরদিকটায় ঝুঁকে তীক্ষ্ণ নজরে ফাইলটি দেখছে সে। এদিকে যে তাকে অন্য কেউ দেখছে সেটা তার মালুম নেই। নবনী নিভ্রকে দেখে দেখে মুচকি মুচকি হাসে। হঠাৎ নিভ্র নবনীর জানালার পানে তাকায়। সেটা বুঝতে পেরে পাশে সরে দাঁড়ান নবনী। বুকের মধ্যে হাত দিয়ে চোখ পিটপিট করে নিঃশ্বাস ফেলছে। মনে হয় একটুর জন্য দেখেনি। মিনিট কয়েক পর উঁকি দিয়ে দেখে নিভ্র সেখানে নেই। এক মুহূর্তেই নবনীর মন কিছুটা খারাপ হয়ে যায়। তবে এই ভেবে সে আনন্দিত প্রতিদিন সকালে তাকে দেখতে পাবে। রেডি হয়ে নেয় কলেজের জন্য।

বারোটার দিকে নবনী,মায়া একটি কফিশপে এসে বসে। মায়া কফি অর্ডার করে আর নবনী জুস। পাইপ দিয়ে সেই তখন থেকে দুষ্টুমি করে চলেছে।অবশ্য এর কারণও আছে।
মায়া মূলত কফিশপে নিয়ে এসেছে নবনীর কাছ থেকে সত্যি কথা বের করার জন্য। যেটা কাল বহুবার জিজ্ঞেস করেও উত্তর মিলেনি। আজও জিজ্ঞেস করে করে হাঁপিয়ে ওঠেছে। কিন্তু নবনী মায়ার কথায় পাত্তা না দিয়ে পাইপ দ্বারা জুসের গ্লাসের মধ্যে ফু দিয়ে সময় নষ্ট করছে। যাতে আজান পড়তেই চলে যেতে পারে বাড়িতে। মায়া এবার ভীষণ ক্ষেপে যায়। রেগে বলে,
-“তাহলে তুই বলবি না তাই না।”

-“বলতে পারি। তবে একটা শর্ত আছে।”

-“শর্ত কিসের?”

-“রাজি থাকিলে শাহাদাত আঙ্গুল ধর,না থাকিলে মধ্য আঙ্গুল ধর।” বলে আঙ্গুল দু’টি মায়ার দিকে এগিয়ে দিয়ে নাচাতে থাকে।

রাগে ফুঁসছে মায়া। সত্যি কথা বলতে গেলেও আজকাল শর্তের মুখোমুখি হতে হয় সেটা জানা ছিল না। মায়া তার হাত মুঠো বদ্ধ করে নবনীর শাহাদাত আঙ্গুলের উপর জোরে কিল দিয়ে বলে “রাজি।”

-“আহহ! এভাবে বলতে হয় নাকি।” বলেই আঙ্গুল ঝাড়াতে থাকে নবনী।

-“এবার বল।”

-“কি বলব যেন?” না জানার ভান ধরে বলে।

মায়া রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করতেই নবনী বলে ওঠে,
-“ও হ্যাঁ। আমি আসলে নিভ্র স্যারকে পছন্দ করি। শুধু পছন্দ নয় ভালোবাসি।” কিছুটা লজ্জা ভঙ্গিতে বলে।

-“আরে লজ্জা রে! কবে থেকে শুনি?”

-“ভালোবাসা কখন হয় বলা যায় না। তবে খুব ভালোবাসি। বলতে গেলে আমি তার প্রতি আসক্ত!”

মায়া কপালে হাত রেখে চোখ বন্ধ করে নেয়। ইন্টার ফাস্ট ইয়ার পড়ুয়া মেয়ে কি-না একজন পুলিশ অফিসারের প্রেমে আসক্ত। ভাবা যায়! অবশ্য এটা কমন ব্যাপার। তবে মায়ার কাছে কিছুটা জটিল মনে হচ্ছে। নবনী জুস সবটুকু খেয়ে মায়ার হাত ধরে টেনে উঠিয়ে বলে,
-“এবার চল আমার শর্ত রাখবি।”

-“কিন্তু যাব কোথায়?”

নবনী উত্তর দেয় না। টেনে নিয়ে আসে কফিশপের বাহিরে।
____________
-“ব্রো একটা প্রশ্ন করি?” ফোনে গেমস খেলার মধ্যেই আপনকে প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয় আদি।

আপন সরু নিশ্বাস ত্যাগ করে বলে,
-“জীনটাই প্রশ্ন হয়ে ঝুলে আছে। তুই আর কি প্রশ্ন করবি। করে ফেল।”

-“তোর জীবনের প্রশ্নটাই আমি জানতে চাই।” ফোনের দিকে তাকিয়ে বলে।

এতক্ষণে আপন বইয়ের পাতা থেকে নজর সরিয়ে আদির দিকে তাকায়। কপাল কিঞ্চিৎ ভাঁজ করে বলে,
-“জীবনের প্রশ্ন মানে?”

-“নাটক আমি দেখি না, তেমন নাটক করা একদম পছন্দ করি না। সত্যিটা জানতে চাই। তুই কি বিয়েতে রাজি আছিস?”

-“অবশ্যই!” জোর করে ঠোঁটে হাসি টেনে বলে আপন।

আদি চোখ তুলে আপনের দিকে তাকায়। বলে,
-“মানুষের ফোস করা হাসি আর ফোস করে কথা বলার মধ্যে পার্থক্য আছে। যেটা এখন তুই আমার সামনে দেখাচ্ছিস এবং বলছিস।”

-“তমন কিছু না ভাই। ব্যস! একটু টেনশন আছি।”

-“কিসের টেনশন?”

-“ঐ…” বাকি কথা বলার আগে ফোন বেজে ওঠে আপনের। তনুজা কল দিয়েছে।

-“ভাবি? ”

-“নাহ! তোর হবু ভাবি তনুজা। তুই বোস, কথা বলে আসছি।”

-“হুম।”

-“আর হ্যাঁ! আমি বিয়েতে সত্যিই রাজি আছি। এই বিষয় নিয়ে আমাকে নেক্সট টাইম প্রশ্ন করিস না।” বলেই ওঠে চলে যায়।
আদি কিছুক্ষণ আপনের পানে চেয়ে থেকে গেম খেলতে মন দেয়।
.
.
.
#চলবে?

আমি তুমিতেই আসক্ত পর্ব-০৪

0

#আমি_তুমিতেই_আসক্ত।
#পর্ব_৪
#সুমাইয়া_মনি।

সকালের মনােরম পরিবেশ মানবমনকে প্রফুল্ল করে। সারা আকাশ জুড়ে বৃষ্টিহীন সাদা মেঘের বিচরণ মনে প্রশান্তি এনে দেয়। বড়ো একটি প্রশান্তির নিশ্বাস নেয় নবনী। হাতে তার সে-ই টিফিনবাক্স। সকাল সকাল নাস্ত তৈরি করে নিলুফা বেগম নবনীকে দিয়ে নিভ্রর বাড়িতে যেতে বলে। নবনী আজ খুশি মুডে যেতে আরম্ভ করেছে। সেদিনের মতো রাগ দেখায় না। অবশ্য এর কারণ আছে। নবনী নিভ্রকে দেখতেই মূলত তার বাড়িতে যাচ্ছে। হোক সেটা খাবার দিয়ে আসার বাহানায়। নিভ্রকে দেখার অধিক ইচ্ছে পোষণ করছে মন। তাই আম্মুর কথা অনুযায়ী দ্রুত টিফিনবাক্স হাতে নিয়ে বের হয়। মাঝপথে আকাশের দিকে তাকিয়ে সকালের মনোরম পরিবেশটা একটু উপভোগ করে নিলো। সোজা হাঁটা ধরল নিভ্রর বাড়ির উদ্দেশ্যে। গেট আগের দিনের মতোই খোলা ছিল। যার দরুণ ভেতরে যেতে অসুবিধা হয় না। ভেতরে এসে দু তিন কদম এগোতেই সে-ই কুকুরটির মুখোমুখি হয় নবনী। ভয়াবহ দৃষ্টিতে কুকুরটি তাকিয়ে আছে তার দিকে। যেন চোখ দিয়ে তাকে গিলে খেতে প্রস্তুত! শুঁকনো ঢোক গিলে নেয় নবনী। প্রচণ্ড ভয় লাগছে।
একবার ভাবে নিভ্রকে ডাকবে। কিন্তু পরক্ষণে দরজার দিকে তাকিয়ে দেখে ঘরের দরজা খোলা। তাই আল্লাহর নাম স্মরণ করে জোরে দৌড় দেয় ঘরের দিকে। কুকুরটি ঘেউঘেউ করতে করতে নবনীর পিছু ছুঁটতে আরম্ভ করে। নবনী এক দৌড়ে ঘরের ভেতরে প্রবেশ করে নিভ্রর রুমে ঢুকে আলমারির পিছনে লুকিয়ে রয়।

এদিকে কুকুরটি নিভ্রর রুমের সামনে দাঁড়িয়ে প্রচণ্ড জোরে ঘেউঘেউ করছে। নবনী ভয়তে বাটি শক্ত করে চেপে ধরে চোখ বন্ধ করে রেখেছে। হাত-পা থরথর করে কাঁপছে। ভাবছে এই বুঝি কুকুরটি ভেতরে প্রবেশ করে কামড় দিবে।
রীতিমতো নিভ্র টাওয়াল পড়া অবস্থায় বাথরুম থেকে বের হয়। দেখে মনে হচ্ছে সদ্য গোসল সেরে বের হয়েছে। তার পোষা কুকুর টমির ঘেউঘেউ আওয়াজ শুনে দ্রুত পায়ে রুমের বাহিরে আসে। নিভ্রকে দেখে টমি থেমে যায়। নিভ্র টমিকে শান্ত ভঙ্গিতে ইশারায় জিজ্ঞেস করে,
-“কি হয়েছে?”

টমি চুপ থেকে নিভ্রর রুমের দিকে তাকায়। নিভ্র টমির চাহনি দেখে কিছু একটা আন্দাজ করে। মাথায় হাত রেখে চুলকিয়ে দিয়ে টমিকে যেতে বলে। টমি চলে যায়।
নিভ্র রুমে ফিরে আসে। রুমে এসে চারদিক নজর বুলায়। নিভ্রর আন্দাজ যদি সঠিক হয়, তাহলে রুমে কেউ আছে।
তাই হয়। আলমারির পিছনে দু’টি অচেনা পা দেখতে পায়।
নিভ্র দ্রুত বিছানার উপর থেকে স্লিক হোয়াইট নাইটিটি পড়ে নেয়। কন্ঠে কিছুটা গম্ভীর ভাব এনে বলে,
-“আলমারির পিছন থেকে বেরিয়ে এসো।”

হঠাৎ নিভ্রর কন্ঠের স্বর শুনে চট করে চোখ মেলে তাকায় সে। এখন আর কুকুরের ঘেউঘেউ শব্দ কানে আসছে না। নিভ্র কোথায় দাঁড়িয়ে ডাকছে সেটা দেখার জন্য মাথা সামনের দিকে ঝুঁকে। দেখে নিভ্র সে-ই শান্তশিষ্ট নরম ভাবভঙ্গি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। নবনী দ্রুত মাথা পিছিয়ে নিয়ে চোখ জোড়া ফের হালকা বন্ধ করে নেয়। মনে মনে ব্লাশিং হয়ে বিড়বিড় করে,
-“উফফ! এই লোকটাকে যতবার দেখি, ততবারই আমি কেমন কেমন যেন হয়ে যাই। যেন নিজের মধ্যে থেকে দূর দূরন্তে কোথাও হারিয়ে যাই।”

-“ক্যান ইউ হেয়ার মি?”

নিভ্রর ফের কন্ঠের স্বর শুনে চোখ মেলে তাকায়। তারপর নিজেকে যথেষ্ট স্বাভাবিক করে মাথা নত করে বেরিয়ে আসে আলমারির পিছন থেকে। নিভ্রর চোখেমুখে এক জাঁক বিরক্ত এসে ভর করল। নবনীকে দেখে নয় বরং এমন দৃষ্টি নত করে রাখার জন্য। নিভ্রকে রাগিয়ে বিরক্ত করে তুলে। সব আসামি,চোর দের দৃষ্টি এমন নত দেখে এসেছে সে। কিন্তু নবনীর ক্ষেত্রে এটা আলাদা। না সে আসামি,না চোর। তবে কেন দৃষ্টি নত তার। ভেবেই বিরক্ত নিভ্র। বলে,
-“আমার রুম থেকে কিছু চুরি করেছো কী?”

নবনী অবাক! দ্রুত মাথা এদিক সেদিক দুলিয়ে না সূচক জবাব দেয়। নিভ্র এবার রাগ ঝেড়ে বলে,
-“তাহলে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছো কেন?”

-“এমনি।” আমতা আমতা করে জবাব দেয় নবনী।

-“আই ডোন্ট লাইক ইট। লুক এট মি?”

ধীরেধীরে চোখ তুলে তাকায় নবনী। নিভ্র ফের শান্ত কন্ঠে বলে,
-“গুড!”

নবনী হাতের টিফিনবাক্স এগিয়ে দিয়ে নরম স্বরে বলে,
-“আম্মু দিয়েছে।”

-“ওয়েট!” বলেই নিভ্র কিচেন থেকে আগের টিফিনবাক্স টা নিয়ে এসে নবনীর দিকে এগিয়ে দেয়।

-“এটা নিয়ে যাও। আর এটা দেও আমাকে।” আগেরটা দিয়ে নতুনটা নিয়ে নেয় নিভ্র।

নবনী ফের দৃষ্টি নত রেখে বলে,
-“আমি আসি।”

-“যেতে দেবো না।” নিভ্র অকপটে বলে ওঠে।

নবনী হতবিহ্বল দৃষ্টি নিক্ষেপ করে নিভ্রর দিকে। নিভ্র মুখে বিরক্ত ভাব টেনে বলে,
-“আমার সামনে মাথা নিচু করে কক্ষনো দাঁড়াবে না। চোখে চোখ রেখে কথা বলবে। মাইন্ড ইট। নাউ গো..।”

নবনী অতিদ্রুত পায়ে হেঁটে বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসে। গেট পর্যন্ত এক প্রকার দৌড়ে বের হয় কুকুরের জন্য। বুকে হাত রেখে বড়ো নিশ্বাস নেয়। নিভ্রর সম্পর্কে বিড়বিড় করতে করতে বাড়ির ভেতরে আসে।
___________________
আপনের বিয়ের তোড়জোড় চলছে। সামনের মাসের তেরো তারিখে বিয়ের ডেট ফেলেছে। হাতে মাত্র অল্প ক’দিন বাকি আছে। আদি সোফায় হেলান দিয়ে শুয়ে ফোন টিপছে। পাশেই তার মা ও চাচি মা পাশে বসে ফোনে তাদের আত্মীয়দের সঙ্গে কথা বলছিলেন। আদির বাবা আর আপনের বাবা দু ভাই৷ সম্পর্কে আদি,আপন চাচাত ভাই। জয়েন্ট ফ্যামিলি ওদের। মেয়ের সংখ্যা কম তাঁদের বংশে। বোন নেই বললেই হয় ওদের। কার্ড ছাপানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে। দু চাচা মিলে কার্ড সিলেক্ট করছিলেন। আদির বাবা আজিম উদ্দীন আপনের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন করল,
-“আপন এই কার্ডটি কেমন বল?”

আপন পাশের টেলিবে বসে ল্যাপটপে কাজ করছিল। চাচ্চুর ডাকে ঘুরে তাকায়। বলে,
-“তোমাদের পছন্দই আমার পছন্দ। একটা সিলেক্ট করে নেও চাচ্চু।”

আজিম উদ্দীন মৃদু হেসে নজর সরিয়ে নিয়ে ফের কার্ড দেখতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। এদিকে আপন হঠাৎ আনমনা হয়ে যায়। চোখ তুলে একবার সবার দিকে তাকায়। তার বিয়ে নিয়ে কত খুশি তারা। দেখে মনে হচ্ছে যেন ঈদের চাঁদ হাতে পেতে চলেছে। নজর সরিয়ে সরু নিঃশ্বাস ফেলে আপন।
আবার কাজে মন দেয়। আপনের এমন করুণাময় মুখখানা সবার চোখ এড়ালেই আদির চোখে এড়ায়নি। সে কিছু একটা ঠিক আন্দাজ করতে পেরেছে।
.
.
পরের দিন করেজে নবনী,মায়া ক্লাস শেষ করে বের হতেই কিছু মেয়েদের বারান্দায় দাঁড়িয়ে নিচের দিকে উঁকিঝুঁকি দিতে দেখতে পায়। আর তাঁদের চেহারায় কেমন লজ্জাজনক ভাব ফুটে ওঠেছে। কাকে দেখে মেয়েরা এত লজ্জা পাচ্ছে সেটা দেখার জন্য নবনী ও মায়া রেলিং ধরে উঁকি দিতেই নিভ্রকে দেখতে পায়। নিমিষেই নবনীর রাগ ওঠে যায় মেয়েদের ওপর। রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে তাঁদের দিকে। এতে তাঁদের তোয়াক্কা নেই।

নিভ্র মূলত কলেজের প্রফেসরের সঙ্গে দেখা করতে এসেছে। এই কলেজ সম্পর্কে কেউ একজন ইনফরমেশন দিয়েছে, এখানের ছাত্ররা গাঁজা ও ইয়াবা লুকিয়ে বিক্রি করে। যার মাধ্যমে আজ তার এখানে আসা। ইউনিফর্ম পরিধান নিভ্র প্রফেসরের সঙ্গে একা দাঁড়িয়ে কথা বলার সময় কিছু মেয়েদের নজরে পড়ে। তারা নিভ্রর প্রশংসায় পঞ্চমুখ।
নবনীর সেটা সহ্য হচ্ছে না, কিছুতেই না। মায়ার হাত ধরে নিচে আসে। নিভ্রর কাছ থেকে যাওয়ার সময় তার নজরে পড়ে না নবনী। সে তো কথা বলায় ব্যস্ত। এটা দেখে নিভ্রর ওপর ক্ষেপে যায় সে। নিভ্রর কয়েক হাত পিছনে দাঁড়িয়ে কি করবে ভেবে পাচ্ছে না। মায়া সন্দিহা চোখে নবনীকে দেখছে। এই মেয়ে করতে চাইছে কি? বুঝতে সমস্যা হচ্ছে মায়ার। চট করে নবনী মায়াকে বলে,
-“আমাকে ধাক্কা দে।”

-“কেন?” সপ্রশ্ন দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে মায়া।

-“দে! তারপর বলছি।”

মায়ার অনিচ্ছা সত্ত্বেও নবনীকে আস্তে করে ধাক্কা দেয়। এতে নবনী এক চুল পরিমাণও নড়ে না। তা দেখে নবনী রাগী নিঃশ্বাস ফেলে বলে,
-“আরে জোরে ধাক্কা দে বাল।”

বলতে দেরি মায়ার ধাক্কা দিতে দেরি হয় না। নবনীর বাহুতে হাত রেখে জোরে ধাক্কা দেয়। এতে করে নবনী কাত হয়ে দ্রিম করে পড়ে যায়৷ মায়া মুখে হাত রেখে চোখ বড়ো করে দাঁড়িয়ে রয়। কথা বলার এই পর্যায়ে নিভ্র পিছন থেকে কিছু একটা পড়ে যাওয়ার আওয়াজ শুনে ঘুরে তাকায়। একটি মেয়েকে মাটিতে পড়া অবস্থায় দেখে চটজলদি হেঁটে হাঁটু গেড়ে বসে দু বাহুতে হাত রাখে। শান্ত কন্ঠে বলে,
-“তুমি ঠিক আছো?”

নবনী খুশিতে আত্মহারা। নিভ্রর এটেনশন পেতেই তো এমন কারসাজি করতে হলো। এখন নিজের কাছে কি যে ভালো লাগছে। ভাষায় প্রকাশ কথা সম্ভব নয়। নবনী কিছু না বুঝার ভান ধরে নিচুস্বরে বলে,
-“আমি ঠিক আছি স্যার।” বলেই নবনী নিভ্রর দিকে তাকায়।

-“নবনীতা তুমি?” সেই আগের মতো শক্ত ভাবভঙ্গিতে প্রশ্ন করে নিভ্র।

-“জি।” ছোট উত্তরে বলে।

-“পড়ে গেলে কি করে?” কথাটা বলতে বলতে নবনীকে ধরে ওঠায় নিভ্র।

নবনী আমতা আমতা কেটে নিভ্রর দিকে একবার তাকিয়ে নজর সরিয়ে নেয়। বলে,
-“মায়াকে ধরতে গিয়ে..।”

-“পায়ে ব্যথা পেয়েছো?”

-“নাহ! স্যার।”

-“ওকে,বাই।” বলেই নিভ্র ফের প্রফেসরের সঙ্গে কথার বলতে এগিয়ে যায়।

এতক্ষণ নীবর স্রোতার মতো সেই মেয়ে গুলোর সঙ্গে মায়াও নবনীর কারসাজি দেখে যাচ্ছিল। তারা নির্বোধ। নবনী ওপরে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েদের দিকে ক্রোধ চোখে তাকায়। তারপর নিভ্রর আর নিজের দিকে হাতের ইশারায় কিছু একটা বলে। ইশারাটা ছিল এমন “সে আমার,তোমরা ভাগো।”
এমন মারাত্মক ইশারা পেয়ে মেয়েরা আহাম্মক হয়ে তাকিয়ে রয়। সঙ্গে মায়াও। নবনী ভাব নিয়ে পিছনে ফিরে মায়ার হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে লাগল কলেজের বাহিরে। মায়া বিস্ময়কর দৃষ্টিতে এখনো নবনীকে দেখছে। এ মেয়ে যে পুলিশের প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে, সেটা যে কেউ তার হাবভাবে বুঝতে বাধ্য। মায়া নিজেও বুঝতে পারে। এখন শুধু নবনীকে প্রশ্ন করা বাকি রয়েছে।
.
.
.
#চলবে?

কার্টেসী ছাড়া কপি করা সম্পূর্ণ নিষেধ।

আমি তুমিতেই আসক্ত পর্ব-০৩

0

#আমি_তুমিতেই_আসক্ত।
#পর্ব_৩
#সুমাইয়া_মনি।

থমথমে পরিবেশ সৃষ্টি করেছে খুশি একাই। অপর পাশের চেয়ারে নবনী ও মায়া স্থিরচিত্ত নজর তাক করে চুপ করে বসে আছে। খুশির পাশে নোমান চোরের মতো মাথা নত করে বসে রয়েছে। তার ফর্সা গালের এক পাশে লালচে দাগ। দেখে মনে হচ্ছে কেউ যেন তাকে জোরে ঘুষি মেরেছে।
আজ ওদের দু’জনার বিয়ে হয়েছে। আর ওদের বিয়ে দিয়েছে নিভ্র। কালকে নোমানের পিছনে খোচর লাগিয়ে সব খবরাখবর জানতে পারে নিভ্র। এক নাম্বারের প্লে বয় নোমান। অনেক মেয়ের জীবন নষ্ট করেছে। এবার খুশির জীবন নষ্ট করার পর্যায় গিয়েও হতে হতে বেঁচে যায়। আজ সকালে নোমান ও খুশিকে কোটে নিয়ে বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয়। অবশ্য এতে নোমান আপত্তি করেছিল যার ফলে নিভ্রর হাতে পাঞ্চ খেতে হয়। বিয়ে শেষে কঁড়া গলায় এটাও বলে দেয়,খুশির ওপর যেন কোনো রকমের টর্চার না করা হয়।

বিয়ে হবার খুশিতে সকাল সকাল খুশি নবনীকে আগে ফোন দেয়। যার দরুণ কথা বলার কোনো ভাষা খুঁজে না পেয়ে আগেই জোরে চিৎকার দিয়ে ওঠে। কিছুক্ষণ ধাতস্থ থেকে ফোন উঠিয়ে কানে দিয়ে খুশির কন্ঠের আওয়াজ শুনে বুঝতে পারে এটা ওরই বান্ধবী খুশি। আর তারপর খুশির কথা অনুযায়ী নবনীকে কলেজ মাঠে আসতে বলে। মায়াকেও আগে থেকে বলেছিল। তাই দু’জনে এক সঙ্গে কলেজ মাঠে এসে উপস্থিত হয়। খুশি সেই তখন থেকে নিজের বকবকানুষ্ঠান চালু করে রেখেছে। যা শুনতে হয় মুখ বুঁজে নবনী ও মায়াকে। নবনী তো নিভ্রর কথা ভেবে চলেছে। কাল যতোটা খারাপ, অসভ্য ভেবেছিল তাকে। আসলে সে ততটা খারাপ নয় সেটা এখন বুঝতে পারে। এক পর্যায় নবনী খুশিকে থামিয়ে দেয়। বলে,
-“সব বুঝেছি আমরা। হ্যাপি মেরিড লাইফ! এবার তোরা মেরিড লাইফ এনজয় কর। আমরা গেলাম। চল মায়া।” বলেই মায়াকে সঙ্গে নিয়ে ওঠে দাঁড়ায়।

-“শোন না নবনী।”

-“ট্রিট দিতে চাইলে পরে দিস। আগে তোর ভাঙা গাড়ি মেরামত কর। দেখে মনে হচ্ছে পাঞ্চটা বেশ জোরেশোরে লেগেছে নতুন দুলাই ভাইয়ের গালে।” বলেই হাঁটা ধরল।

খুশি মুখ টিপে হাসে। নোমান মাথা তুলে রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করতেই খুশির হাসি বন্ধ হয়ে যায়। মায়া হেসে হেসে নবনীকে বলে,
-“যাক,এক দিক থেকে ভালো হয়েছে খুশির বিয়ে হয়ে, কি বলিস।”

-“ঢের ভালো হয়েছে। সঙ্গে নিভ্র স্যারের পাঞ্চটাও।” বলেই হেসে ফেলে।

মায়াও হাসে। দু’জনে ক্লাসরুমে গিয়ে বসে। তিন চারটে ক্লাস করে দু’জনে এক সঙ্গে বের হয়। কলেজের গেটের বাহিরে এসে ফুটপাতে বসা ফুচকার দোকান থেকে ফুচকা খেতে আরম্ভ করে। এই একটি খাবার, যেটি অনেক মেয়েদেরই প্রিয়। নবনীও তাঁদের মধ্যে একজন। অর্ধেক ফুচকা খাওয়ার সময়, হঠাৎ নবনীর চোখ পড়ে দূরের রাস্তার পানে। সেখান থেকে একটি লোক উত্তেজিত হয়ে দৌড়ে এদিকে আসছিল আর তার পিছনে দু’টি কনস্টেবলও জোর বেগে তাকে ধরার জন্য পিছু ছুঁটছিল। কারো বুঝতে বাকি থাকে না এটা চোর-পুলিশের মামলা, আর নয়তো এর চেয়ে বড়ো কিছু। নবনীও বুঝতে পারে। তাই দ্রুত ফুচকার প্লেট চেয়ারের উপর রেখে ওঠে দাঁড়ায়। মায়া কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই নবনী তার ব্যাগ থেকে কত গুলো মার্বেল বের করে হেঁটে তাঁদের বরাবর রাস্তার মাঝখানে ফেলে দিয়ে সরে দাঁড়ায়। সেকেন্ড কয়েক পরেই লোকটি সেখানে দৌড়ে দিতে নিলে মার্বেলের ওপর পা রাখার ফলে দ্রিম করে চিৎ হয়ে পড়ে। সেটা দেখে কিছু লোক হেসে দেয়, সঙ্গে নবনী, মায়াও। খপ করে কনস্টেবল দুটি লোকটির কলার ধরে টেনে উঠিয়ে চড় দিতে দিতে নিয়ে যেতে লাগলো।

নবনী আগের জায়গায় এসে ফুচকার প্লেট হাতে নিয়ে চেয়ারে বসে পড়ে। মায়া প্রশ্নবোধক চাহনিতে জিজ্ঞেস করে,
-“তুই কি মার্বেল ব্যাগে নিয়ে ঘুরিস নাকি?”

-“আরে না।”

-“তাহলে?”

-“এগুলো নিয়ানের। কাল ওর কাছ থেকে মার্বেল গুলো নিয়েছিলাম। নিয়ানের প্রচণ্ড নেশা মার্বেলের। পড়াশোনা না করে সারাদিন মার্বেল নিয়ে পড়ে থাকে।”

-“এই জন্য নিয়ে নিলি। যাক,এই সুবাদে নিয়ানের মার্বেল গুলো এক কাজে তো লেগে গেল।”

-“ইয়েস।”

এতক্ষণে মধ্যবয়স্ক ফুচকাওয়ালা লোকটি মুখ খুলে। সে এতক্ষণ নবনীর সব করা কর্মকাণ্ড দেখেছিল এবং ওদের কথপোকথনও শুনতে পায়। সে বলে,
-“তয় আপামনি তোমার এইডা করা উচিত হয় নাই। এরা ভালা লোক না। পরর্বতীতে যদি জানবার পারে তুমি তারে ধরাইয়া দিতে সাহায্য করছো। পরে তোমার ক্ষতি করতে পারে। ”

-“আরে কাকাবাবু এত ভয় পেও না। এই নেও তোমার টাকা। আর বরাবরের মতোই আজও তোমার ফুচকা অনেক ভালো লেগেছে। তাই দশ টাকা বেশি দিলাম।”

-“ধন্যবাদ আপামনি।” হেসে বলেন।

তার কথার বিনিময় নবনী মুচকি হাসি উপহার দেয়। দু’জনে কথা বলতে বলতে হেঁটে বাসার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়।
__________________
মেয়ে দেখতে যাওয়ার জন্য সবাই রেডি হয়ে গাড়িতে বসে আছে। শুধু একজনের অনুপস্থিতের কারণে তার জন্য অপেক্ষা করা হচ্ছে। সবাই প্রায় বিরক্ত। শেষে আজমল উদ্দীন বিরক্ত নিয়ে গাড়ির সামনে বসা আপনকে বলে,
-“আপন যা গিয়ে আদিকে ডেকে নিয়ে আয়। আর কত দেরি করবে? মেয়ে কি ওর জন্য দেখতে যাওয়া হচ্ছে নাকি। যে এত তোড়জোড় করে রেডি হতে হবে।” রাগ জেড়ে বললেন তিনি।

-“দেখলে সমস্যা কি? দু চাচাতো ভাইয়ের এক সঙ্গে না হয় বিয়ে দিয়ে দিলে।” ফর্সা করে কালো রঙের শার্ট-প্যান্ট পরিধান একজন সুদর্শন যুবক কথা গুলো আওড়াতে আওড়াতে ড্রাইভিং সিটে বসে আপনের দিকে তাকিয়ে হেসে চোখ টিপ দেয়।

পিছনে বসা রানী খাতুন ড্রাইভিং সিটে বসা আদির বাহুতে চিনটি কেঁটে মুখ বাকিয়ে বললেন,
-“এত শখ কেন বিয়ে করার হু? সবে তো পড়াশোনা শেষ হলো। চাকরি-বাকরি করে নিজের পায়ে দাঁড়াবে তবেই বিয়ে।”

-“উফফ! চাচি মা,এসব চাকরি-বাকরি আমার দ্বারা সম্ভব নয়। আমি শুধু ঘুরবো আর খাবো।” দু বাহু উঁচু করে বলে আদি।

-“সেটা পড়ে দেখা যাবে। আগে গাড়ি স্টার্ট দে। এমেনেই দেরি হয়ে গেছে আমাদের।” আজমল উদ্দীন বলেন।

-“ওকে চাচু।”

গাড়ি স্টার্ট দেওয়ার হয়। বাড়ি থেকে গাড়ি বের হয়ে তাদের গন্তব্যের দিকে ছুঁটতে লাগল। কিছুক্ষণ বাদে তারা তাদের গন্তব্যে পৌঁছে যায়। মেয়ে দেখার পর্ব শেষ হয়। মেয়ে তাঁদের পছন্দ হয়েছে। বিয়ের দিনক্ষণ ঠিক করে তারা চলে আসে।
তাঁদের বাড়িতে নামিয়ে দিয়ে আদি ও আপন চলে আসে ক্যাম্পাসে। এখানে আদি সহ তার আরো কিছু বন্ধুরা মিলে রোজ আড্ডা দেয়। আজও তার ব্যতিক্রম হলো না। নিজের বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডায় মেতে ওঠে আদি।
______________
চারটার দিকে নবনী পড়তে বসে। সন্ধ্যার দিকে পড়তে বসলে প্রচুর ঘুম পায় দেখে এখন পড়তে বসা। মনোযোগ সহকারে ম্যাথ করতে ব্যস্ত সে। আচমকাই নবনীর রুমের জানালার কাঁচ ভাঙার শব্দে লাফিয়ে ওঠে। হকচকিয়ে ওঠে বুকে ফু দিয়ে জানালার দিকে তাকাতেই ফ্লোরে একটি লাল বল দেখতে পায়। নবনীর বুঝতে বেগ পেতে হয় না। এটা এই কলোনির দুষ্ট বাচ্চাদেরই কাজ। জোরে ছক্কা মারতে গিয়ে জানালার কাঁচ উড়িয়ে দিয়েছে। দু বার তাদের ওয়ার্নিং দিয়েছে নবনী । আজ আর রক্ষে নেই তাদের সেটা বুঝাই যাচ্ছে। রেগেমেগে বাসার গেট থেকে বের হয়ে বাচ্চাদের কাছে যায়। নবনীর এক হাতে বল, আরেক হাতে টিনের স্কেল। সাত-আট বছরের পাঁচজন ছেলে কাচুমাচু হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। নবনীর রাগের আন্দাজ তাদের জানা। ক্রোধ নিয়ে বাচ্চাদের দিকে তাকিয়ে বলে,
-“আজ তোদের সেই দুই দিন, আর আমার তিনদিন।” বলেই একটি ছেলের হাত ধরে উল্টোদিকে ঘুরিয়ে মারতে যাবে তখনই পিছন থেকে নবনীর হাত ধরে ফেলে নিভ্র। নবনী হাত আগে আনতে পারছে না দেখে রাগী ফেইস নিয়ে ঘুরে তাকাতেই নিভ্রকে দেখে থমকে যায়। বাচ্চাটির হাত ছেড়ে দিয়ে নিজের হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করছে নিভ্রর হাত থেকে। যেটা নিভ্র বুঝতে পেরে হাত ছেড়ে দেয় নবনীর। গম্ভীর কণ্ঠে নিভ্র শুধালো,
-“কেন মারছো ওঁকে?”

নবনী কোমল স্বরে বলে,
-“ক্রিকেট খেলে বল মেরে আমার রুমের জানালার কাঁচ ভেঙে দিয়েছে ওরা।”

নিভ্র একবার বাচ্চাদের দিকে তাকায়, নজর সরিয়ে নিয়ে নবনীর দিকে তাকিয়ে শান্ত ভঙ্গিতে বলে,
-“ওরা ছোট বাচ্চা। না বুঝে মেরেছে। ওদের বদলে আমাকে মারতে পারো।” বলেই নিভ্র তার এক হাত নবনীর দিকে তাক করে।

এক মিনিটের জন্য নবনী ঘোরের মধ্যে চলে যায়। সে নির্বাক হয়ে চেয়ে রয় নিভ্রর পানে। এই লোকটি এমন কেন? না না, এত ভালো কেন? এখন পর্যন্ত যতবার দেখা হয়েছে আশ্চর্যজনক ব্যাপার ঘটে গেছে।
এখনও সেটাই হচ্ছে । বাচ্চাদের হয়ে নিজে মা’র খাওয়ার জন্য প্রস্তুত!

-“নবনীতা!” মুখের সামনে তুড়ি বাজিয়ে নিভ্র ডাক দেয়।

ঘোর কাটিয়ে উঠে তার। চোখ পিটপিট করে চেয়ে বলটি নিভ্রর হাতে দিয়ে ছুঁটে পালিয়ে বাড়িতে চলে আসে। নিভ্র নবনীর যাওয়ার পানে চেয়ে থেকে নজর সরিয়ে বাচ্চাটির মাথার হাত বুলিয়ে দিয়ে হাসিমুখে বল দিয়ে দেয়। বাচ্চারা খুশি হয়ে চলে যায়।

এদিকে নবনী তার রুমে এসে চেয়ারে বসে টেবিলের উপর এক হাত রেখে মুচকি মুচকি হাসছে। হঠাৎ করে কেন জানি নিভ্রকে তার কাছে প্রচণ্ডভাবে ভালো লাগতে শুরু করেছে। নিভ্রর তখনকার বলা কথাটি মনে পড়তেই সে লজ্জাপীড়িত। আর তার মুখে নিজের পুরো নামটি শুনে অন্যরকম অনুভূতি সৃষ্টি হয় মনে। সেই অনুভূতি যেন নতুন কিছুর জানান দিচ্ছে। নতুন কিছু প্রকাশ করছে।
.
.
.
#চলবে?…

কার্টেসী ছাড়া কপি করা সম্পূর্ণ নিষেধ।

আমি তুমিতেই আসক্ত পর্ব-০২

0

#আমি_তুমিতেই_আসক্ত।
#পর্ব_২
#সুমাইয়া_মনি।

অনবরত কলিং বেল বেজে চলেছে। গেট খোলার শাড়া শব্দ পাচ্ছে না নবনী৷ বিরক্তিতে অতিষ্ঠ সে। চোখেমুখে ভেসে বেড়াচ্ছে তীব্র রাগ। এতবার কলিং বেল বাজানোর পরও দরজা খুলছে না দেখে এবার হাত দিয়ে জোরে জোর আঘাত করতে লাগলো দরজায়। অন্যদিকে খুন্তি হাতে নিলুফা বেগম তার ছোট ছেলেকে বকাঝকা করছে। তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ুয়া নিয়ান মাথা নত করে মায়ের বকা শুনে যাচ্ছে। বাংলা সাবজেক্টে ফেল করেছে নিয়ান। তাই পেপার হাতে নিয়ে ছেলেকে বকছেন তিনি। কলিং বেলের শব্দ ঠিকিই শুনতে পেয়েছে নিলুফা বেগম। কিন্তু সে মাঝপথে বকুনি ছেড়ে যেতে চাইছে না। এই প্রান্তে যে নবনী রেগেমেগে আগুনের ফুলকিতে পরিনত হচ্ছে, সেদিনে কোনো আন্দাজ নেই তার। শেষে সে নিজেই বিরক্ত হয়ে যায় এভাবে দরজা ধাক্কানো ও কলিং বেলের শব্দ শুনে। রুম ছেড়ে ড্রইংরুমে এসে দরজা খুলে দেয়। নবনী হুড়মুড়িয়ে ভেতরে প্রবেশ করেই তার কক্ষে চলে আসে। নিলুফা বেগম জানত এই মুহূর্তে তার মেয়েই আসবে। কিন্তু মেয়ের এমন আচরণ দেখে সে কিছুটা আন্দাজ করতে পেরেছে নিশ্চয় কিছু একটা ঘটিয়ে এসেছে। আর নয়তো দরজা দেরিতে খোলার কারণে রেগে গেছে। দরজা লাগিয়ে সে তার মেয়ের রুমের দিকে পা বাড়ায়।

নবনী রুমে এসেই সাইট ব্যাগ পাশে ছুড়ে ফেলে ফুল ভলিউমে পাখা চালিয়ে দেয়। রাগ,প্রচুর রাগ হচ্ছে তার। থানা থেকে বেরিয়ে খুশির সঙ্গে দেখা করে আচ্ছা মতো ঝুড়িঝুড়ি বকা দিয়েছে সে। অথচ খুশির এখানে কোনো দোষই ছিল না। ঝাড়ির পর্ব শেষ করে সে চলে আসে বাসায়। বাসায় এসে মেজাজ আরো খারাপ হয়ে যায়। নবনীর বেশি রাগ হলে চুপ করে বসে থাকে। কারো সঙ্গে কথা বলতে ইচ্ছে করে না তার। তাই তখন কিছু না বলেই রুমে চলে এসেছে। নিলুফা বেগম হাতে পরিক্ষার পেপার সহ রুমে প্রবেশ করে নবনীর সামনে তুলে ধরে কপাট কন্ঠে বলে,
-“দেখ তোর ভাই এবারো বাংলাতে লাড্ডু পেয়েছে। কঠিন সাবজেক্ট রেখে বাংলাতেই ফের করে বসে আছে।”

নবনী একবার ওর আম্মুর দিকে তাকিয়ে বিরক্ত প্রকাশ করল। মুখ ঘুরিয়ে নিল অন্যদিকে। নিলুফা বেগম চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে বলছেন,
-“সামান্য ছাগল রচনা পারে না। এই ছেলেকে নিয়ে আমি কি করব বল। সে ছাগলকে পরিক্ষার খাতায় ছাগা লিখেছে। কী গুনধর ছেলে আমার।”

নবনী এবারও কোনো কথা বলে না। বিরক্তিতে চোখমুখ কুঁচকে রেখেছে সে। ভুলে না হয় ছাগলের জাগায় ছাগা লিখেছে, এতে এতো চিল্লাপাল্লার কি আছে। পরবর্তীতে না হয় ঠিক মতো লিখবে। কে বুঝাবে তাকে এ কথা। নিলুফা বেগম নবনীর হাতে পেপারটি ধরিয়ে দিয়ে বলে,
-“নে তোর ভাইয়ের ছাগল রচনাটি একটু পড়। পড়ে দেখ সে কেমন সুন্দর লিখেছে।”

নবনী পেপারটি হাতে নিয়ে বিরক্ত হওয়া শর্তেও ছাগল রচনার উপর নজর বুলায়। চোখ পিটপিট করে জোরে জোরে পড়তে আরম্ভ করে,
-“ছাগা আমরা পাগা। ছাগা ঘাস খায়। ছাগা দুধ দেয়। ছাগার দু’টি পা,দু’টি কান,দু’টি চোখ ও একটি মুখ আছে। ছাগল হামবা,হামবা করে ডাকে….” এতটুকু পড়ে হাসিতে লুটোপুটি খাওয়ার জোগাড় নবনীর। নিলুফা বেগম আরো ক্ষেপে যায়।
দাঁত কিড়মিড় করে বলেন,
-“বেশি করে হেসে নে। ছাগলের ডানটা ঠিক মতো লিখতে পারে না। সে নাকি ভবিষ্যত উজ্জ্বল করবে।”

নবনীর হাসি কিছুতেই থামছে না। একবার চিৎ হয়ে,আরেকবার কাত হয়ে হেসে যাচ্ছে।

-“হইছে থাম এবার।”

নবনী হেসে হেসে বলে,
-“ভাই তোকে নোবেল দেওয়া উচিত। শেষে কিনা ছাগা হামবা হামবা করে ডাকে। ” বলেই ফের হেসে কুটিকুটি।

-“একজন টেনেটুনে পাশ করে সবে কলেজে ওঠেছে। আরেকজন লাড্ডু নিয়ে ঘরে আসছে। যেমন বোন,তার তেমন ভাই। দু’জনই এক।” রেগে বলেন।

-“আম্মু, আমি মোটেও টেনেটুনে পাশ করিনি। আমি…ধুর! তোমার সঙ্গে তর্কে যাবই না।” হাসি থামিয়ে কিছুটা রাগী কন্ঠে বলে।

-“পারলে তো যাবি। আজ থেকে নিয়ানকে তুই পড়াবি। এটা আমার প্রথম এবং শেষ কথা।”

নবনীর মুখ চুপসে যায়। সে ফেসে যেতে চলেছে। নিয়ানকে পড়ানো মানে অর্ধ যুদ্ধ! ঠান্ডা রিয়াকশনে ওঠে কাপড়চোপড় হাতে নিয়ে বাথরুম গিয়ে দরজা লাগিয়ে দেয়। নিলুফা বেগম নবনীর এমন ভাবসাব দেখে সুবিধাজনক লাগছে না দেখে দরজায় শব্দ করে ফের বলে,
-“মনে থাকে যেন,নিয়ানকে তুই পড়াবি।”

-“পারবো না। ওর জন্য নতুন স্যার রেখে দেও।” জোরে জোরে বলে নবীন।

-“একবার বাহিরে এসে বল দেখি কথাটা।”

-“তোমার হাতে খুন্তি দেখেই ভেতরে এসে বলেছি।” বলেই হেসে ফেলে নবনী।

-“বাহিরে তো আসবি নাকি?”

-“ততক্ষণে তুমি চলে যাবে,সেটা আমি জানি।”

-“ফাজিল মেয়ে।” কন্ঠে রাগ নিয়ে কথাটা বলে চলে যায় সে।

আধাঘন্টা বাদে নবনী বাথরুম থেকে বের হয়। আর তখনি নিলুফা বেগম একটি টিফিন বাটি নিয়ে উদয় হয়। কপাল কুঁচকে ফেলে নবনী। নিলুফা বেগম নবনীর চাহনি দেখে বলে,
-“এই বাটিটা সামনের বাড়িতে দিয়ে আয়। ”

-“সেই বাড়িতে তো কেউ থাকে না। তাহলে কি ভূতেদের দিয়ে আসবো?”

-“নাহ! বাড়ির মালিকের বড়ো ছেলে কাল এসেছে। এখন থেকে ছেলেটি এই বাড়িতে থাকবে।”

টেরা চোখে তাকিয়ে বলে নবনী,
-“মানব সেবা শুরু করেছো নাকি।”

-“বেশি কথা বলিস। ছেলেটি পুলিশের চাকরি করে। আমাদের কলোনিতে একজন পুলিশ অফিসার এসেছে। ভেবে দেখ, বিষয়টা কতটা গুরুত্বপূর্ণ। কলোনিতে কোনো সমস্যা হলেই,আমরা তার কাছে সাহায্য চাইতে যেতে পারবো।”

-“এই জন্য তার সাথে ভাবসাব করবে খাবার দিয়ে।”

-“আসলেই তুই বেশি কথা বলিস। ছেলেটি একা থাকে এখানে। কি খায়,রান্না করেছে কিনা আদৌও জানা নেই। যদি আমাদের ঘর থেকে একটু খাবার দিয়ে আসি, তাহলে কি এমন সমস্যা হবে। তুমি বেশি কথা বলিস না৷ গিয়ে খাবারটা দিয়ে আয়৷ তাড়াতাড়ি যা।”

-“এতই যখন দরদাতা, তাহলে তুমিই যাও। নয়তো তোমার ছেলেকে পাঠাও। ”

-“যাবি কি-না।” চোখ রাঙ্গিয়ে বলে।

-“যাচ্ছি!” বলেই মাথার টাওয়াল খুলে বিছানার ওপর ছুঁড়ে মারে। টিফিন বাটি হাতে নিয়ে বিরক্ত সহকারে বাড়ি থেকে বের হয়৷
টিফিন বাটির দিকে একবার তীক্ষ্ণ নজর ফেলে হাঁটতে আরম্ভ করল। গেট থেকে বের হয়ে পাশের বাড়ির গেটের সামনে এসে দাঁড়াল। অদ্ভুত ব্যাপার! পুলিশ অফিসার হয়েও গেটের সামনে একজন সিকিউরিটি গার্ড রাখেনি। কেমন পুলিশ?
এসব ভাবনা ছুঁড়ে ফেলে নবনী লোহার দরজাটি ধাক্কা দেয়। ক্যাচক্যাচ শব্দ হয়ে দরজা খুলে যায়। ভেতরে প্রবেশ করে সে।

সাদা রঙের বাড়িটি। এক পাশে কিছু ফুলের বাগান। কিছু ফুল ফুটে আছে গাছে। নবনী স্বাভাবিক ভাবে হেঁটে দরজার সামনে এসে দাঁড়ায়। কলিং বেল বাজাতে চাইলে দরজা খোলা দেখতে পায়। হালকা দরজা ধাক্কা দিয়ে খুলে ফেলে। এক নজরে পর্যবেক্ষণ করে নেয় ঘরটির চারদিক। প্রথমে ড্রইংরুম। তার পাশে তিনটি রুম দেখা যাচ্ছে। ড্রইংরমটি বেশ সুন্দর গুছানো। নবনীর নজর পড়ে প্রথম রুমটির দিকে। বিব্রত বোধ করছে। একে তো কাউকে দেখতে পাচ্ছে না। তার ওপর ভাবছে কি বলে তাকে ডাক দিবে, বুঝতে পারছে না।
মনের জড়তা কাটিয়ে প্রথম রুমটির দিকে পা বাড়ায়।
‘কেউ আছেন বলে’ দরজা খুলতেই একটি কালো রঙের কুকুর ঘেউঘেউ করে ওঠে। সম্ভবত কুকুরটি সেই ঘরে আগে থেকেই উপস্থিত ছিল। অপরিচিত কন্ঠের স্বর শুনে কুকুরটি ঘেউঘেউ করতে আরম্ভ করে। নবনী ভয়তে হকচকিয়ে লাফিয়ে উঠে। জোরে চিৎকার দিয়ে বাড়ি থেকে বের হতে নিলেই কারো গায়ের সঙ্গে মাথায় ধাক্কা লেগে এক দু ইঞ্চি দূরে সরে যায়। যেন মনে হয়েছে কোনো ইটের চাকা। হালকা ব্যথাও পেয়েছে মাথায়। নবনী মাথা তুলে সদ্য আগত ব্যক্তিকে দেখে থম মেরে দাঁড়িয়ে থাকে। এ যে আর কেউ নয়। সকালের সেই নতুন ওসি নিভ্র।

নিভ্রর তেমন কোনো প্রতিক্রিয়া নেই নবনীকে দেখে। যেন সে আগে থেকেই যানত নবনী এখানে আসবে। কিন্তু নবনীর চোখ বেরিয়ে আসার জোগাড় হয়েছে। কুকুরটি এখনো ঘেউঘেউ করে যাচ্ছে সেটা এখন আর কান অবধি পৌঁছাছে না তার। নিভ্র শান্ত চোখে তাকিয়ে আছি নবনীর দিকে। স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে নবনীর অবাক জড়িত ফেইস। নিভ্র কয়েক সেকেন্ড চেয়ে থেকে তার কুকুরটির দিকে ইশারা করে বাহিরে যেতে বলে। কুকুরটি নিভ্রর সংকেত বুঝতে পেরে চুপ হয়ে হেঁটে বাহিরে চলে যায়। নিভ্র আবারও নজর তাক করে নবনীর দিকে। নবনীর অবাক মুখখানি এখনো আগের ন্যায় স্থির । সরু চোখে নবনীকে পর্যবেক্ষণ করে নিভ্র।
গায়ে গোলাপি রঙের থ্রিপিস । ভেজা চুল কোমড় পর্যন্ত ছেঁয়ে আছে। চুল থেকে টুপটাপ পানি ঝড়ছে। চোখেমুখে এখনো তার বিস্ময়। হাতে তার টিফিন বাটি। পর্যবেক্ষণ শেষ করে নিভ্র নরম স্বরে নবনীর উদ্দেশ্যে বলে,
-“এখানে কেন এসেছো?”

নবনী নিভ্রর কথা শুনে ভাবনার জনত থেকে বেরিয়ে আসে। এতক্ষণ সে ভাবছিল, নিভ্র এখানে কি করছে? তাহলে এটাই কি তার বাড়ি। আরো অনেক কিছু। নবনী চট করে মাথা নিচু করে কোমল স্বরে বলে,
-“আমি আপনার বাসার সামনের বাড়িতে থাকি।”

-“তো?” ছোট করে উত্তর দেয় নিভ্র।

-“আম্মু আপনার জন্য খাবার পাঠিয়েছে। এটা দিতে এসেছিলাম আপনাকে।” মাথা নত রেখেই টিফিনের বাটি এগিয়ে দেয় নিভ্রর দিকে।

নিভ্র হাতে নেয়। সোফায় গিয়ে বসে বলে,
-“তুমি এখন যেতে পারো।”

নবনী নিভ্রর কথা শুনে কিছুটা ক্ষোভ নিয়ে তাকায়৷ খাবার দিতে এসেছে,ভদ্রতার খাতিরে বসতে না বলে, যেতে বলছে। এ কেমন লোক? নবনী ভাবনা কাঁটিয়ে চলে যাওয়া ধরলে নিভ্র পিছন থেকে ডাক দেয়।
-“শোনো।”

নবনী থেমে গিয়ে দৃষ্টি নত রেখে ঘুরে দাঁড়ায়। নিভ্র উৎসুক কন্ঠে জিজ্ঞেস করে,
-“তোমার নাম কী?”

-“নবনীতা নূর। সবাই নবনী বলে ডাকে।” ধীরে কন্ঠে উত্তর দেয়।

-“আচ্ছা। আন্টিকে গিয়ে আমার তরফ থেকে ধন্যবাদ বলে দিও। যাও!”

নবনী মাথা দুলিয়ে হ্যাঁ সম্মতি দিয়ে বের হয়। মেইন গেট থেকে বেরিয়ে বুকে হাত রেখে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। যেন এতক্ষণ নিশ্বার বুকের ভেতরে কোথায়ও আটকে ছিল। চলে আসে বাসায়। নিলুফা বেগমকে নিভ্রর কথাটা বলে। তারপর নিজের রুমে এসে নিভ্র কথা মায়াকে ফোন দিয়ে বলতে আরম্ভ করে।
____________________
পরের দিন সকালে….

বিরতিহীন ফোন বেজে চলেছে নবনীর। বেঘোরে ঘুমুচ্ছে সে। ফোন ধরার হেল দোল নেই তার। এক পর্যায়ে ফোনের শব্দ তীব্রভাবে কানে এসে লাগে। কোনো মতে চোখ মেলে তাকায়। বিছানা হাতড়িয়ে ফোন পীক করে কানে দেয়। অপর পাশ থেকে জোরে চিৎকারের আওয়াজ শুনে নবনী ধড়ফড়িয়ে উঠে বসে ফোন কান থেকে বিছানার উপর ফেলে দেয়। আকস্মিকতায় চোখ কচলিয়ে তাকায় সে। বোঝার চেষ্টা করছে ফোনের অপর পাশ থেকে চিৎকার দেওয়া ব্যক্তিটি কে ছিল? কেন এত জোরেই বা সে চিৎকার দিল? এভাবে চিৎকার দেওয়ার কারণ কি ছিল?
.
.
.
#চলবে?

কার্টেসী ছাড়া কপি করা সম্পূর্ণ নিষেধ।

আমি তুমিতেই আসক্ত পর্ব-০১

0

#আমি_তুমিতেই_আসক্ত।
#সুমাইয়া_মনি।
#সূচনা_পর্ব।


মাঝ রাস্তায় চলন্ত রিকশা থামিয়ে, সাদা শার্ট পরিধান একটি ছেলেকে কলার ধরে টেনে নামাল নবনী। আকস্মিক ঘটনায় বিপর্যস্ত হয়ে রিকশা থেকে নেমে নিভ্রর পাশে এসে দাঁড়াল ওর বন্ধু জিনান। ঘটনায় কিকিংকর্তব্যবিমূঢ় বিস্ময় হয়ে দাঁড়িয়ে যায় কিছু লোকজন। নিভ্র অগ্নিমুখে পাথরের ন্যায় দাঁড়িয়ে আছে। নিভ্রকে অবাক করে দিয়ে নবনী রাগান্বিতস্বরে বলে উঠে,
-“আমার বান্ধবী খুশির জীবনটা নষ্ট করে আরামে রিকশা চড়ে গায়ে হাওয়া লাগিয়ে বেড়াচ্ছেন। আমি বেঁচে থাকতে এটা মোটেও হতে দেবো না না না…।”

-“তাহলে আপনি মরে যাচ্ছেন না কেন?” পাশ থেকে জিনান চটপট উত্তর দেয়।

নবনী ও তার বান্ধবী মালা জিনানের কথা শুনে আরো ক্ষেপে যায়। একে তো বিনা কারণে মাঝ রাস্তায় রিকশা থেকে টেনে নামিয়ে মিথ্যে অপবাদ দিচ্ছে, তার ওপর জিনানের এমন উদ্ভট কথা শুনে তার দিকে রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে নিভ্র। ক্রোধান্বিত দৃষ্টি দেখে জিনান চুপষে যায়। রাগে, অপমানে শরীর জ্বলে যাচ্ছে তার। পাবলিক প্লেসে এমন কাণ্ড ও অপমানসূচক কথা নিভ্রর সহ্য হচ্ছে না। সে আদৌও নবনীকে চিনে বলে মন হয় না। তার উপর আবার খুশির জীবন নষ্ট করার অপরাধ তাঁর গায়ে ঠুকে দেওয়া হচ্ছে। বিরক্তিতে আর সহ্যের সীমা রইল না নিভ্রর। রীতিমতো লোকজন বাঁকা চোখে ওঁদের দেখছে। নিভ্র জিনানের ওপর থেকে নজর সরিয়ে শার্টের কলার ছাড়িয়ে নিয়ে ক্রোধ কন্ঠে বলে,
-“আপনার সাহস তো কম নয় দেখছি। মাঝ রাস্তায় সিনক্রিয়েট করে আবার আবোলতাবোল কথা বলছেন। এই আপনি আমাকে আদৌও চিনেন?”

-“মনে হয় পাগলা গারদ থেকে চুরে করে পালিয়ে এসেছে নিভ্র।” কথাটা বলে জিনান তার মুখ হাত দিয়ে চেপে ধরল। এই একটা বদ অভ্যাস তার। কথার পিঠে কথা না বলে কিছুতেই স্থির হতে পারে না সে। নিভ্র ফের রাগী দৃষ্টিপাত ঘটায় তার দিকে। জিনান তো আগেই মুখে হাত রেখেছিন।নিভ্রর তাকানো দেখে ভয়ে দু কদম পিছিয়ে যায়। নবনী জিনানের দিকে আঙ্গুল তুলে বলে,
-“পাগল তোর নানি। তোকে পরে দেখছি…। কথাটা জিনানের দিকে তাকিয়ে বলে। তারপর নজর নিভ্রর দিকে তাক করে বলে,”আমার সাহসের বিষয়ে পরে আসি। আগে আপনার বিষয়ে বলি। ভালো করে চিনি আমি আপনাকে। আপনি একজন জঘন্যতম লু*চ্চা। এতদিন খুশির সঙ্গে প্রেমলিলা চালিয়ে এখন ওঁকে বিয়ে করবেন না বলছেন। সবে তো কলার ধরেছি, কিছুক্ষণ পর কলার ধরে টেনে সামনের পুলিশ স্টেশনে নিয়ে যাব আপনাকে।”

-“নিয়ে চলুন।” রাগী কন্ঠে উত্তর দেয় নিভ্র।

নবনী কথাটা শুনে ভ্রুকুটি কিঞ্চিত বাঁকিয়ে তাকায়। মালা অবাক নিভ্রর কথা শুনে। জিনান মুখ খুলে কিছু বলতে নিলে নিভ্রর কথা ভেবে বলে না। নবনীকে চুপ থাকতে দেখে নিভ্র তেজি কন্ঠে বলে,
-“কি হলো? নিয়ে চলুন।”

-“আচ্ছা! ” বলেই নবনী দেরি করে না। ফের নিভ্রর কলার ধরে টেনে নিয়ে যেতে থাকে থানায়। নিভ্র নবনীর চেয়ে লম্বা হওয়ায় ঝুঁকে হাঁটছে। জিনান,মায়া তাঁদের পিছু পিছু হাঁটে। আশেপাশে ছোটখাটো ভীড় জড়ো হয়েছিল। এক জাঁক কৌতুহল নিয়ে কিছু লোক তাকিয়ে আছে। কিছুক্ষণ পরে তারা থানার ভেতরে প্রবেশ করে। এভাবে নিভ্রকে ধরে নিয়ে আসতে দেখে সেখানে উপস্থিত কনস্টেবল সহ কিছু মানুষও বিস্ময় চোখে তাকিয়ে আছে। কনস্টেবলরা চোর,ছ্যাঁচড় কে এভাবে টেনে নিয়ে আসে। আজ হঠাৎ একটি মেয়ে সুদর্শন যুবকের কলার ধরে এভাবে টেনে নিয়ে আসার ফলে তারা অবাক। একজন কনস্টেবলের টেবিলের সামনে এনে নিভ্রর কলার ছেড়ে দেয়। অপর পাশের চেয়ারে মধ্য বয়স্ক মোটা চশমা পরিধান একজন লোক বসে আছে। তার ডান পাশের ব্যাচে জলিল হাসান লিখাটি দেখা যাচ্ছে। নবনী জলিল হাসানের উদ্দেশ্য করে কাঠ কাঠ কন্ঠে বলে,
-“একে গ্রেফতার করুন পুলিশ আঙ্কেল।”

রীতিমতো আশ্চর্য সে। নিভ্র কিছু বলছে না। চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে। জলিল হাসান ওঠে দাঁড়িয়ে বলে,
-“কী করেছে সে?”

-“একটি অবলা বাঙালী মুসলমান মেয়ের জীবন নষ্ট করে দিয়েছে এই লোকটি।” নিভ্রর দিকে তাকিয়ে বলে নবনী ওঠে।

-“প্রমান?”

-“মায়া ছবি গুলো দিয়েছে খুশি?”

-“দিয়েছো বোধ হয়।” না দেখেই ফোন দিয়ে দেয় নবনীকে।

নবনী হোয়াটসঅ্যাপ ওপেন করে খুশির আইডি থেকে ছবি গুলো দেখেই জলিল হাসানের হাতে ফোন তুলে দিয়ে বলে,
-“আপনি নিজেই দেখে নিন।”

জলিল হাসান ফোনটি হাতে নিয়ে সেন্ড করা ছবি গুলো বেশ মনোযোগ সহকারে দেখে নিভ্রর দিকে তাকায়। তারপর কপাট কন্ঠে বলে ওঠে,
-“ছবিতে থাকা ছেলেটির সঙ্গে এই ছেলেটির চেহারায় কোনো মিল নেই।”

-“জুম করে দেখুন। মিল পাবেন আঙ্কেল।”

-“আমার সঙ্গে মশকরা করছো। তুমি নিজেই দেখো।” জলিল হাসান ক্ষীন কন্ঠে বলেন।

নবনী ফোনটি তার কাছ থেকে নিয়ে নেয়। ছবি গুলোর দিকে নজর বুলিয়ে নিভ্রর দিকে কপাল কুঁচকে তাকায়। এ যে কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে সাপ বের হবার অবস্থা হয়েছে। তার বলা কথাটিই সত্য প্রমানিত হলো। ছবিতে থাকা ছেলেটির সঙ্গে তার কোনো মিল খুঁজে পেল না নবনী। সঠিক মানুষকে রেখে, ভুল করে অচেনা যুবকের কলার ধরে টেনে নিয়ে এসেছে থানায়। মারাত্মক কেলেংকারী করে ফেলেছে। ভয় গলা শুঁকিয়ে আসছে তার। ভিতু চোখে জলিল হাসানের দিকে তাকিয়ে আলতা আমতা করে বলে,
-“আসলে আঙ্কেল আমাদেরই মিস্টেক হয়েছে। আমরা ভুল করে নোমানের জাগায় তাকে নিয়ে এসেছি।”

জলিল হাসান চরম বিরক্ত বোধ করছেন নবনীর কথায়। রাগী কন্ঠে ঝাড়লেন,
-“বেয়াদব মেয়ে। জানো তুমি কী অন্যায় করেছো।”

নবনী,মায়া দৃষ্টি নত করে রাখে। আহত স্বরে বলে,
-“মাফ করবেন আঙ্কেল।”

-“আমার কাছে নয়,এ,সি,পি নিভ্র স্যারের কাছে ক্ষমা চাও।” হাতের ইশারায় নিভ্রকে দেখিয়ে বললেন।

নবনী ও মায়ার হতবাক, চোখ বেরিয়ে আসার উপক্রম। চোখেমুখে বিস্ময়। ভয়তে নবনী ঘাড় ঘুরাতে পারছে না। যেন গেঁড়ি লক হয়ে গেছে।

-“নিভ্র স্যার আমাদের খানার নতুন ওসি। আজ স্যারের প্রথম দিন ছিল। তোমদের শরম হওয়া দরকার..। ”

নিভ্র হাত জাগিয়ে থামিয়ে দেয় জলিল হাসানকে। দৃষ্টি নত রেখে নবনী, মায়া তার কথা শুনছিলেন। অনুশোচনায় ভুগছে নবনী। নিভ্র দু কদম সামনে এগিয়ে নবনীর দিকে একবার তাকিয়ে জলিল হাসানের উদ্দেশ্যে গম্ভীর কণ্ঠে শুধালো,
-“ওদের আমার কেবিনে পাঠিয়ে দিন।” বলেই চলে যায় নিভ্র তার কেবিনে। তার পিছু পিছু জিনানও হেঁটে যায়।

জলিল হাসান বসে ক্ষিপ্ত কন্ঠে বললেন,
-“এভাবে চোরের মতো দাঁড়িয়ে না থেকে, ভেতরে যাও। যা করার তো করেই ফেলেছো। উঁফ! স্যার মনে হয় ভীষণ ক্ষেপে আছেন।” লাস্টের টুকু বিড়বিড় করে বললেন।

দৃষ্টি নত রেখেই ধীরে পায়ে হেঁটে কেবিনের সামনে এসে দাঁড়াল নবনী, মায়া। ভেতরে যাবে কি-না,পালিয়ে যাবে ভেবে দ্বিধাদ্বন্দে পড়ে যায়। সকাল সকাল এমনটা না হলেও পারতো। মায়া নিচুস্বরে নবনীকে বলে,
-“তখন আমার কথা শুনলে, এমনটা হতো না। বলেছিলাম তাড়াহুড়ো করিস না। ছবি দেখে তবেই এ্যাকশন নিবি। তা নয়! খুশির কথা শুনে সাদা শার্ট পড়া ছেলেটির কলার ধরলি। শেষে হলো কি? পড়ে গেলাম পুলিশের জ্বামেলায়।”

অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড বাঁধিয়ে মুখ থমথমে করে দাঁড়িয়ে আছে নবনী। মস্তিষ্ক আঁচল। এই মুহূর্তে নিজেকে গুলি করে ঠুস করে মেরে ফেলতে ইচ্ছে করছে তার। না না মাটির ভেতরে ঢুকে যেতে ইচ্ছে করছে। তবে হয়তো এমন পরিস্থিতির হাত থেকে রক্ষা পেত। এমন স্থির ভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে মায়া নবনীর বাহুতে গুঁতো দিয়ে বলে,
-“যাবি নাকি এভাবেই দাঁড়িয়েই থাকবি?”

হুঁশ ফিরে আসে নবনীর। এতক্ষণ নিজেকে কী কী করতে ইচ্ছে করছিল তার লিস্ট বানিয়ে ফেলেছিল সে। মায়ার গুঁতোয় চৈতন্য ফিরে পায়। ফ্যালফ্যাল নয়নে তাকিয়ে আদুরে কন্ঠে বলে,
-“যদি রেগে গুলি করে দেয়, তখন?”

মায়া ভড়কে যায়। বলে,
-“তেমন কিছু করবে না। আগে ভেতরে গিয়ে দেখি চল।”

ভেতরে যাওয়ার ইচ্ছে নেই নবনীর। মায়া ঠেলেঠুলে নবনীকে সঙ্গে নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে। জিনান পাশের সোফায় বসে ছিল। ওদেরকে দেখে দাঁত কেলিয়ে বলে ওঠে,
-“লো,আসামিরা চলে এসেছে। ”

জিনানের কথা শুনেও কোনো উত্তর দিচ্ছেনা তারা। মায়ার হাত ধরে রেখেছে নবনী। কিছুটা কাঁপছে তার হাত-পা। দৃষ্টি নিচু রেখে সোজা হয়ে দাঁড়ায় তারা। নিভ্র ফোনের দিকে তাকিয়ে আছে। ওদের দু’জনকে দেখে চেয়ারে হেলান দিয়ে নজর তাক করে ফোন আঙ্গুলের বাজে ঘুরাতে ঘুরাতে গুরুগম্ভীর কন্ঠে বলে,
-“কী চুরি করেছো তোমরা?”

তাঁর সঙ্গে অন্যায় করেছে জানে। কিন্তু কিছু চুরি করেছে বলে মনে পড়ছে না তাঁদের। তবে কেন চুরির কথা টানছে। নবনীর উত্তর দিতে না ইচ্ছে করলেও, অতি কষ্টে মৃদু স্বরে উত্তর দেয়,
-“কিছু চুরি করেনি আমরা।”

চোখেমুখে কৃত্রিম গাম্ভীর্য এনে বললেন,
-“তাহলে চোরদের মতো মাথা নিচু করে রেখেছো কেন?”

কাঁপা স্বরে নবনী উত্তর দেয়,
-“অন্যায় করেছি আপনার সঙ্গে,তাই..”

নিভ্র এবার মাত্রাতিরিক্ত বিরক্ত হলো। ক্ষুব্ধ কন্ঠে বলে,
-“স্বীকারই যখন করছো,তখন স্যরি কেন বলছো না?”

নবনী,মায়া এক সঙ্গে বলে ওঠে,
-“স্যরি স্যার।”

নিভ্র ফোন টেবিলের ওপর রেখে ঝুঁকে বলে,
-“এবার বলো, আমাকে আগন্তুক মনে করার কারণ?”

নবনী দৃষ্টি নত রেখে শান্ত কন্ঠ বলে,
-“খুশি বলেছিল নোমান সাদা শার্ট পড়ে রিকশা দিকে সেই রাস্তা দিয়েই যাচ্ছে। আপনি ব্যতীত আর কেউ সেখানে সাদা শার্ট পড়েনি। তাই….”

-“তাই এমন বোকার মতো কাজ করলে। জানো তোমার জন্য আমার কতটা সম্মানহানি হয়েছে,কতটা অপমান হয়েছি আমি।” কাঠিন্য কন্ঠে বলে নিভ্র।

-“দুঃখিত! স্যার। এমন ভুল আর হবে না।” নিচুস্বরে বলে নবনী।

-“যাও এখান থেকে।” তীক্ষ্ণ কন্ঠে বলে নিভ্র।

নবনী,মায়া চলে যাওয়া ধরলে নিভ্র পিছনে ডেকে বলে,
-“দাঁড়াও,নোমান নামের ছেলেটির নাম,ঠিকানা,ছবি দিয়ে যাও।”

মায়া ফোনটি টেবিলের ওপর রাখে। হোয়াটসঅ্যাপে আগে থেকেই খুশি নোমানের সব কিছু দিয়ে রেখেছিল। নিভ্র জলিল হাসানকে ল্যান্ড লাইনে কল দিয়ে ডেকে আনে। তাকে ফোন থেকে নোমানের সব ডিটেইলস নোট করতে বলে৷
নোট করা হলে থানা থেকে বেরিয়ে আসে নবনী ও মায়া। খুশির ওপর ভীষন রাগ চড়ে তাঁদের। যা ধারণার বাহিরে।

কুমিল্লা থেকে ঢাকায় পোস্টিং হয় নিভ্রর। নিজ বাড়ি তাঁর কুমিল্লা। ঢাকায় তাঁদের ছোট একটি ফ্ল্যাট আছে। অনেক আগে কিনেছিলেন নিভ্রর বাবা। সরকারি কোয়ার্টারে থাকার ইচ্ছে নেই বিধায় নিজ ফ্ল্যাটে থাকার ব্যবস্থা করে সে। এখানে সে একাই থাকবে। জয়েন ডেট আজই ছিল। আজ সবার সঙ্গে পরিচয় হবে ভেবে ইউনিফর্ম ছাড়াই গাড়ি নিয়ে বের হয়। এটাই তার মারাত্মক ভুল ছিল। মাঝপথে গাড়ি নষ্ট হওয়ায় তার বন্ধ জিনানকে ফোন দিয়ে আসতে বলে। ঢাকায় তার পরিচিত বলতে জিনানই ছিল। তার প্রিয় বন্ধু। এতদিনে না দেখাসাক্ষাৎ হওয়ায় গল্পগুজব করতে করতে রিকশায় চড়ে যাচ্ছিল থানায়। বিপত্তি তখন ঘটে যখন মাঝ রাস্তায় আসে। বলা নেই, কওয়া নেই রিকশা থামিয়ে কলার ধরে টেনে নামান হয় তাকে। ভুল প্রলাপ ঘটে যায় তার সঙ্গে। হয়তো তার নিয়তিই এমন ছিল।

জিনানের ডাকে ভাবনার গহীন থেকে বেরিয়ে আসে নিভ্র। তারা চলে যাওয়ার পর সকালের ঘটনায় পরিক্রমণ করে এলো।

-“দোস্ত! কিছু বললি না যে মেয়েটিকে?”

নিভ্র চেয়ারে হেলান দিয়ে মৃদু হেসে উত্তর দেয়,
-“ভুল করা মানুষদের, ভুলত্রুটি ধরিয়ে দিতে হয়। ধমকাধমকি, গালাগাল দিয়ে ভুল ধরিয়ে দেওয়াকে আমি সমর্থন করি না।”

-“তার মানে তারা ভুল করেছে। ভুলে তোর শার্টের কলার এসে খামচে ধরেছে।”

-“ইয়াহ!”

-“তোর জায়গায় আমি হলে। কানের নিচে খরম খরম বনরুটি দিতাম। তারপর আল্লাহর নাম নিয়ে গালাগালি শুরু।”

-“রঙ্গ! আল্লাহর নাম নিয়ে দোয়া চাওয়া যায়,কাজ শুরু করা যায় প্রভৃতি। কিন্তু গালিগালাজ দেওয়া যায় না। এমন জঘন্য কথা ফের বলবি না।”

-“স্যরি! দোস্ত।”

-“স্যরি শব্দটি ছোট্ট হলেও ভূমিকা অপরিসীম। তাই তো আমি তাঁদের ক্ষমা করে দিয়েছি।”

-“তোর যুক্তিযুক্ত কথা আমার শুনতে খুব ভালো লাগে।”

-“ধন্যবাদ!”

-“এবার চল। আজ তোকে পার্টি দেবো আমি। যা খেতে চাইবি তাই খাওয়াবো। ”

-“কেন নয়! লেট’স গো।”
.
.
.
#চলবে?…

বেলা শেষে আলো পর্ব-০৭(অন্তিম পর্ব)

0

#বেলা শেষে আলো
#৭+অন্তিম পর্ব
#ইসরাত_জাহান_এশা

তনিমা একদিকে বাবার মৃত্যুতে শোকে কাতর অন্য দিকে কালোজাদুর প্রভাব তনিমাকে আবার আগের মতো করে ফেলে। তনিমার সাথে ইদানীং ভয়ংকর কিছু কাহীনি হচ্ছে যাতে তনিমার পাগলের মতো অবস্থা। তনিমা সব সময় একটা ভয় নিয়ে থাকত খাওয়া দাওয়া সব অফ। রাতে ঘুমালে মনে হতো কোনো একটা ছায়া সব সময় তনিমাকে ফলো করছে।
একদিন রাতে তনিমা মেয়েকে নিয়ে শুয়ে আছে হটাৎ মশারীর উপর একটা মেয়ের প্রতি ছবি দেখতে পেলে। তনিমা লাফিয়ে উঠে। ভয় না পাওয়ার চেষ্টা করে সামনে আগানোর চেষ্টা করে। কিন্তু তনিমা সামনে গিয়ে প্রতি ছবিকে ছোঁয়ার আগেই তনিমা অজ্ঞান হয়ে পরে। রিশা মায়ের কোনো নড়াচড়া না দেখে জোরে জোরে চিৎকার শুরু করে।

রাসেলঃ— কি এক ঝামেলা ঘারে চাপছে শান্তিতে ঘুমাতে পর্যন্ত পারছি। তনিমা তোর মেয়েকে থামা আমাদের একটু শান্তি দে। ঘুমাতে পারছি না।।

তনিমার মাও অনেকক্ষন ধরে বলছে তনিমা মেয়েটারে থামা। কিন্তু তনিমার তো কোনো সারা শব্দ আসছে না। তনিমার মা এবার উঠে তনিমার রুমের যায়। তনিমার মা তনিমার রুমে গিয়ে জোরে চিৎকার দিয়ে উঠে।
তনিমা______

রাসেল দৌড়ে এসে দেখে তনিমার অর্ধেক শরীর বিছানায় আর অর্ধেক বিছানা থেকে বাইরে শুধু মশারীর জন্য মাথায় আঘাত লাগেনি। তনিমার মা রিশাকে কোলে নেয়৷ রাসেল তনিমাকে বিছানা থেকে নামিয়ে কোলে নিয়ে সামনের রুমে নিয়ে শুয়ে দেয়।

অনেক চেষ্টা করার পড়েও তনিমার হুঁশ ফিরছে না। এতো রাতে কাউকে ডাকলে তাও তো কেউ আসবে না। তাও রাসেল হুজুর কে ডেকে নিয়ে আসে। উনি তনিমাকে পানি পড়া দিলে তনিমার হুঁশ আসে তবে কারো সাথে কথা বলে না।
শুধু ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে থাকে।

হুজুর— শোনো রাসেল আমার মনে হয় তনিমার উপর হয়ত জ্বিনের আসর লাগছে আর না হয় কেউ ওর উপর জ্বীন চালান করছে।
তুমি দ্রুত বড় কোনো হুজুরের সাথে আলাপ করো। নাহলে খুব খারাপ হয়ে যাবে।
রাসেল— আচ্ছা।

হুজুর রাসেলকে ভালো হুজুরের পরামর্শ দিয়ে চলে যায়। তনিমা কিছুক্ষন পর পর থেমে থেমে কান্না শুরু করে। তনিমার মা সারারাত তনিমার পাশে বসে থাকে।তনিমার এতো অসুস্থতার কথা শুনে রাতুল প্রথমবারের মতো আসে শশুর বাড়িতে। এসে তনিমাকে নিয়ে যেতে চায়। তবে তনিমার মা রাতুলের হাতে তনিমাকে দিতে নারাজ এরপর অনেক কথা কাটাকাটিও হয়। তবুও তনিমার মা তনিমাকে রাতুলের হাতে দেন না৷ তনিমা আর রিশাকে নিজের কাছে রেখে দেয় আর অপমান করে পাঠিয়ে দেয়।

তনিমাকে ভালো একজন হুজুর দেখানো হলে তনিমা কিছুটা সুস্থ হয়। তবে হুজুর বলে দিয়েছেন এতো তারাতারি জাদুর প্রভাব কাটবে না। সামনে আরো সমস্যা হবে। আপনাদের সচেতন ভাবে থাকতে হবে আর আমি যা দিয়েছি এগুলো যদি ঠিক মতো না ব্যবহার করা হয় তাহলে সমস্যা আরো বাড়বে।

তনিমা একটু ভালো হলে রাতুল তনিমাকে নেওয়ার জন্য উঠে পড়ে লাগে। তনিমাও যেতে চায়, কারন তনিমার মা তনিমাকে দিতে চাননা আর রিশাকে রাখতে চান না। রিশাকে বলতে গেলে সহ্যও করত না। তাই তনিমা নিজের মেয়ের কথা চিন্তা করে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নেয়।
রাতুল যেদিন আসার কথা ছিলো তনিমা সেইদিন আবার অসুস্থ হয়ে পড়ে নাক, মুখ দিয়ে রক্ত বের হতে শুরু করে। তনিমা জোরে জোরে চিৎকার দিতে শুরু করে মা আমার নাড়িভুড়ি সব জ্বলে যাচ্ছে।মা আমাকে বাঁচাও আমি আর সহ্য করতে পারছি না!

তনিমার অবস্থা খুবই খারাপ একদিনের মধ্যে তনিমার চেহারা কালো হয়ে যায়। এতোটাই খারাপ অবস্থা ছিলো মনে হচ্ছে অনেক দিন না খাওয়া রুগী।
রাতুল তনিমাকে নেওয়ার মতো আর সাহস করে না। আর ডাক্তার দেখানোর জন্য কখনোই কোনো খরচ দেয় না। তনিমার মা রাতুল কে স্পষ্ট মুখের উপর বলে দেয়৷ এই যে এতোবার মেয়েটা অসুস্থ হয় তুমি কখনো খরচ দিয়েছো? বার বার শুধু মেয়েটাকে নিতো আসো।

রাতুল কোনো উত্তর না করেই চলে যায়। রাতুল চলে যাওয়ার কয়েক দিনে তনিমার আর কোনো খোঁজ নেয়না। এবার তনিমার মা স্পষ্ট ভাবে তনিমাকে জানিয়ে দেয় হয় মেয়ে আর তুই দুজনেই মরে যা। আর না হয় মেয়ের ভালোর জন্য মেয়েকে ওর বাবার কাছে দিয়ে দে আর তুই ওর থেকে চলে আয়। আর একটু বাঁচার চেষ্টা কর।
না হলে তোকে কখনোই বাঁচতে দেবে না৷ তোর সাথে তোর বাচ্চাকেও মেরে ফেলবে।
তনিমা গভীর ভাবে চিন্তা করে আমার জন্য মেয়েটা মরে যাবে? আমি তো মেয়েটার কোনো যত্নই করতে পারিনা। নিজেই উঠে দাড়াতে পারিনা ওর কিভাবে খেয়াল করব। তার চেয়ে ওর বাবার কাছে দিয়ে দেই ওরাও ভালো থাকুক। আমার মা,ভাইও ভালো থাকুক। আমার জন্য সৃষ্টিকর্তা যা রাখছেন তাই হবে।

তনিমার অবস্থা খুবই খারাপের দিকে যায়। সবাই তনিমাকে দেখে বলছে তনিমা বেশিদিন আর বাঁচবে না।তনিমার মা তনিমাকে আবারো বুঝায় দিয়ে দে তোর মেয়েকে তুই মরে গেলে ঐ শয়তান আর ওর খোঁজ নিবে না। তারচেয়ে ওকে আমরা দশজন ডেকে যার মেয়ে তার হাতে দিয়ে দেই। তনিমার চোখ থেকে অনাবরত পানি ঝড়ছে। তনিমা এবার নিজেকে শক্ত করে। এর পর মা কে জানিয়ে দেয়। তোমাদের যা খুশি করার করো৷

কিছুদিন পর দশজন ডেকে রাতুলের হাতে রিশাকে দিয়ে দেয়। আর তালাক নিয়ে নেয়। তনিমাকে তালাক দেওয়ার সময় রাতুল খুব কান্না করে। তনিমা কে আবারো ভাবতে বলে। কিন্তু তনিমা রুগ্ন গলায় কঠোর ভাবে জবাব দেয় ভাবার কিছু নেই। আমি বাঁচি না মরি তার ঠিক নেই। আপনি মেয়ে নিয়ে যান ওর খেয়াল রাখবেন। আমি চাই না আমার জন্য আমার মেয়ের ক্ষতি হোক।

শেষ পর্যন্ত রাতুল আর তনিমার তালাক হয়ে যায়।

রাতুল বাড়িতে গিয়ে পৌঁছে রিমাকে ডাক দেয়। রিমা রিশাকে দেখে প্রচুর ভয় পেয়ে যায়। রিমা ভেবেছে হয়ত তনিমা আবার এসেছে।
— কি সেই তো আবারো নিয়ে এসেছেন।
— চুপ!
— চুপ কেনো করব কখনো ভালো হবি না তুই।
— তুই খুশি হয়েছিস তো একটা মেয়েকে মৃত্যুর মুখে ঢেলে দিয়ে। আমি জানি তনিমার আজ এই অবস্থার জন্য শুধু তুই দাই। যাইহোক তোর পথের কাটা আজ সরে গেছে। তবে এই মেয়ে আমার মেয়ে রিশা। তনিমার চিহ্ন আমার রক্ত এর যদি কোনো ক্ষতি হয় তোকে সেদিন নিজ হাতে শেষ করব। রাইমাকে তুই যতোটা অধিকার দিবি রাইমা সব কিছুর ভাগ যেমন পাবে তুই ওরেও তেমন চোখে দেখবি। যদি এর নড়চড় হয়না দেখিস কি হয়।
রাতুল রিশা কে রিমার হাতে তুলে দিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়। আর রিমা তনিমা চলে যাওয়ায় খুব খুশি হয়ে। আর রাতুলের ভয়ে রিশার সাথে কখনো খারাপ ব্যবহার করেনি।

তনিমা মেয়েকে দিয়ে দেওয়ার পর থেকে আরো অসুস্থ হয়ে পরে। বিছানা তনিমাকে জাপ্টে ধরে বসে। তনিমা দির্ঘ্য একবছর পর বিছানা ছেড়ে উঠে দাড়ায়। তনিমাকে দাঁড়াতে দেখে তনিমার মার যেনো খুশি আর ধরে না। অনেকদিন পর মেয়ে বিছানা ছেড়ে উঠেছে। তনিমা আস্তে আস্তে স্বাভাবিক হতে শুরু করে। তবে মেয়ের জন্য মন সব সময় উদাসীন থাকত। শুধু একটি বার ইচ্ছে করত মেয়েটার সাথে যোগাযোগ করতে। কিন্তু দূর্ভাগ্য সেটা আর কখনোই সম্ভব না৷

তনিমার মা তনিমাকে আবারো বুঝায় আগের মতো স্বাভাবিক হতে। আবারো ভালো ঘর দেখে তনিমাকে বিয়ে দিতে। তনিমা এবার জোর গলায় না করে দেয়। আর কখনো বিয়ে বসবে না। নিজে রোজকার করবে নিজের পায়ে দাড়াবে।

বছর আরো একটি চলে গেলো। এবার তনিমার মা কাজে যাওয়ার জন্য তনিমাকে প্রেশার দিচ্ছে। তনিমা তনিমার এক চাচাতো বোনের সাথে ঢাকায় যায় সেখানে কাজ খুজে নেয়। কিন্তু তনিমার কপাল খারাপ কিছু দিন কাজ করার পরেই তনিমার উপর ছেলেদের নজর পড়া শুরু করে। তনিমা নিজের ইজ্জত বাঁচানোর জন্য বাড়িতে ফেরত আসে।
আর কাজে যাওয়া ইচ্ছে প্রকাশ করে না।

মাঝখানে রাসেলের একটা কাজের ব্যবস্থা হয়। তাই রাসেল তনিমাকে কাজে বের হতে বারন করে। এক বেলা কম খেলে কিছু হবে না। তবে ইজ্জত একবার চলে গেলে সেটা কখনো ফেরত পাওয়া যাবে না। বাড়ির মেয়ে বাড়িতেই থাক। তনিমাও আর বাইরে বের হতে চায় না। তনিমা নামজ রোজা করা শুরু করে। সারাক্ষণ বই পড়া আর নামাজ রোজা নিয়ে ব্যস্ত থাকত৷

এমন করতে করতে আরো তিন বছর অতিবাহিত হয়৷তনিমার বর্তমানে আঠাশ বছর চলছে। তনিমার মা তোমাকে আবারো বিয়ে দেওয়া চেষ্টা করে৷ কিন্তু তনিমা রাজি হয়না। তখন তনিমার মা তনিমাকে কথা শুনায় আর কত?
আর কতদিন এই ভাবে ভাইয়ের ঘারে খাবি ওরে বিয়ে করাতে হবে না? ওর বিয়ে দিলে ওর বউ তোরে দেখবে? তখন তো লাথি মেরে বের করে দিবে। আমি বা কয়দিন বাঁচব।

তখন তনিমা মায়ের কথায় আবারো রাজি হয়। নানা জায়গা থেকে তনিমার সমন্ধ আসে কিন্তু কোথাও বিয়ে ঠিক হয় না। এবারেও তনিমা আসে ছেড়ে দেয়। মা আর কতো? সেই তো তোমার ঘারেই খাচ্ছি। যার কপালে সূখ নেই তাকে নিয়ে বার বার সুখের চিন্তা করে কি লাভ।
তনিমার মা খুব হতাশ হয়ে পড়ে।তনিমাকে অপয়া বলে সব সময় দোষ দিতে থাকে৷ তনিমা আত্মহত্যা মহাপাপ শুধু এই ভয়ে আত্মহত্যার চিন্তা করে না৷ সবটা সহ্য করে নেয়।

একদিন হটাৎ করেই বড় একটা ঘর থেকে তনিমার জন্য সমন্ধ আসে। তবে ছেলে অনেক বয়স্ক তানিমার বাবার চেয়েও বয়সে বড়। প্রথম স্ত্রী মারা গেছে বছর ঘুরেছে৷ দুইটা মেয়ে ছিলো দুইটার বিয়ে হয়ে গিয়েছে এখন দেখাশুনা করার জন্য কাউকে দরকার৷ সব পছন্দ হলেও তনিমার মা রাজি হয় না কারন ছেলে বয়স্ক৷
কিছু দিনের জন্য তনিমার এই সমন্ধটা স্থগিত থাকে৷

একদিন তনিমার চাচাতো চাচা তনিমাকে ডেকে নিয়ে বলে তনিমা____

— আমি তোকে চাচা হয়ে একটা কথা বলছি৷ দেখ জিবীনে তো অনেক ভালো খুঁজেছিস৷ ভালো ভালো করে সেই পঁচা শামুকেই পা কেটেছিস৷
— কি বলতে চান চাচা?
— এটাই বলতে চাই তোরা যে বয়স বেশী বলে সমন্ধ বাদ করে দিচ্ছিস কেনো? ছেলে হিসাবে অনেক ভালো আর বংশ ভালো জায়গা জমি আছে কখনো তোর ভাতের অভাব হবে না। লেকটার ছেলে নেই নাম ডাক খুব ভালো৷ বয়স দিয়ে এতো সমস্যা কেনো আল্লাহ যার যতদিন হায়াৎ রেখেছেন সে ততদিনই বাঁচবে।

তনিমার চাচা তনিমাকে অনেক বুঝায়। যে ছেলের বয়স হতে পারে বেশি তবে আমি গ্যারান্টি দিচ্ছি এখানে আল্লাহ চাইলে তুই সুখি হবি। কখনো এমন ঘর থেকে সমন্ধ আসবে না। তাই ঐ লোকের বিয়ে হওয়ার আগে তুই রাজি হয়ে যা।

তনিমা বাসায় গিয়ে অনেক ভাবনা চিন্তা করে৷ কি থেকে কি করবে কি করা উচিৎ। তনিমা চিন্তা করে হোক বয়সে অনেক বড় তাতে কি? সতীনের সংসার তো হবে না। বয়সে বড় রোগ ব্যাধি হবে অসুস্থ হবে? হোক স্বামীর সেবা করে দেখি জান্নাতের পথ সহজ করা যায় কিনা।
আল্লাহ যদি চান আমার কল্যান হয়ত ঐখানেই আছে। ভালো ভালো করে তো কোথাও সুখ পেলাম না। এবার না হয়___
দুই দিন পর তনিমা চাচাকে জানায় তনিমা এখানেই বিয়ে করতে চায়। তনিমার চাচা নিজে মাঝখানে পড়ে তনিমার বিয়ে দিয়ে দেন।

তনিমার এই স্বামীর নাম তুষার। তুষারের বর্তমান বয়স পঞ্চান্ন বছর। আর তনিমার আঠাশ! মানে দুইজনের বয়ষের ডিফারেন্স ছিলো অর্ধেক। তনিমা তুষারের দুই মেয়েরই ছোট ছিলো।
কিন্তু তুষার মনের দিক থেকে যেমন ভালো ছিলো তেমন বুঝাপড়ায় খুব ভালো ছিলো সমাজে ছিলো তুষারের অন্যরকম একটা সম্মান।

তনিমা আর তুষারের বয়ষের ডিফারেন্স অনেক থাকা সত্বেও ওদের মাঝে বুঝাপড়া খুব ভালো ছিলো। তুষার তনিমাকে প্রথম রাতেই একটা কথা বলেছে।

শোনো তনিমা- তুমি আমার কাছে কখনো কিছু লুকাবে না। তোমার সম্মান রক্ষা করা যেমন আমার দায়িত্ব, আমার সম্মান রক্ষা কারাও তোমার দায়িত্ব।
আমি জানি কোনো মেয়ে ভাতের অভাবে বিয়ে করে না। প্রতিটা মেয়ে বিয়ে করা বা বিয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্য হলো মেয়েটার মান-সম্মান , ইজ্জত যেনো হিফাজতে থাকে।
তোমার বাড়িতে কি ভাতের অভাব ছিলো বলো? ছিলোনা যদি থাকত তোমার মা তোমাকে এতোদিন তার কাছে রাখত না। অনেক আগেই ছুড়ে ফেলে দিতো। তিনি তোমাকে আজ আমার হাতে তুলে দিয়েছেন তোমার সম্মান আর ইজ্জত কে হিফাজত করার জন্য। আমার কি টাকার অভাব আছে? তবুও আমি আমার মেয়েদের বিয়ে দিয়েছি। কেনো দিয়েছি? তাদের মান সম্মান ইজ্জত রক্ষা করার জন্য। প্রত্যেকেরি তার অবস্থান অনুযায়ী একটা সম্মান আছে।
আশা করি তুমি আমার কথা গুলো বুঝতে পেরেছো?
—জ্বী,আমি চেষ্টা করব আপনার সম্মান রক্ষা করার জন্য।

এর পর থেকে শুরু হয় তনিমার সংসার জীবন,সূখের জীবন। তনিমার জমজ দুইটি কন্যা হয়। তুষারের খুব আসা ছিলো এই বয়সে হয়ত ছেলে হবে কিন্তু না জমজ দুইটি কন্যা সন্তান হয়। তবে তুষার এতে নারাজ হয়নি একটু মন খারাপ ছিলো কিন্তু কিছু দিন পর সব ঠিক হয়ে যায়। মেনে নেয় আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্যেই করেন।
তনিমাকে তনিমার আগের মেয়েরাও অনেক ভালোবাসে দুই বোনকেও তারা আপন বোনের মতই দেখে কখনো বুঝতে দেয়নি ওরা ওর সৎ বোন ছিলো৷

একদিন তনিমা নিজ থেকেই তুষারের সাথে নিজের জীবনের কথা শেয়ার করে৷তুষার তনিমার কথা শুনে খুব কষ্ট পায় বেশি কষ্ট পায় রিশার কথা ভেবে দুনিয়া কতো নিষ্ঠুর মা থাকতেও মায়ের আদর থেকে বঞ্চিত।তুষার তখন চিন্তা করে আজ যদি তনিমার সাথে ঐ মেয়ের যোগাযোগ না করিয়ে দেই তাহলে হয়ত হাশরের দিন তনিমাকে ঐ মেয়ে জান্নাতে যাওয়ার আগে তার মাতৃত্বের অধিকার চায় তখন তনিমা কি করবে? পরিস্থিতি যাই হোক কিন্তু মায়ের দায়িত্ব থেকে তো তনিমা সরে এসেছিলো৷ তখন থেকে তুষার চিন্তা করে মৃত্যুর আগে যদি তনিমার মেয়ের সাথে তনিমার একটু যোগাযোগ করিয়ে দিতে পারি তাহলে একটা শান্তি পাবো।

এরপর থেকে তুষার গোপনে ঐ মেয়ের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে। মেয়ের ইস্কুলে খবর নেয়। খবর নিলে জানতে পারেন রিশা এবার এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। রাতুল এতোটাই পাষান ছিলো যে রিশাকে জানিয়েছে ওর মা মারা গেছে আর ইস্কুলে কখনো একা আস্তে দেয়নি রাতুল নিয়ে আসত আবার নিয়ে যেতো তাও শুধু পরিক্ষার সময়। কখনো উঠোনের বাইরে রিশাকে যেতে দেয়নি৷

তুষার খুব চিন্তায় পরে যায় এ তো অনেক সমস্যা। রাতুল কেনো রিশাকে বের হতে দেয় না। তুষার আরো গভীর ভাবে ভাবতে থাকে পরে তুষার রাতুলের আত্মীয় স্বজনদের সাথে যোগাযোগ করে৷
তুষার তখন রিশার বড় ফুফুর সাথে যোগাযোগ করে। রাতুলের সাথে রাতুলের বড় বোনের মাঝে ছিলো একটু ঝামেলা কেউ কাউকে পছন্দ করত না।

তখন রিশার বড় ফুফু তুষার কে বলে। হ্যাঁ রিশা জানে ওর মা বেঁচে নেই। আর রিশাকে আমার ভাই কখনো কোথাও একা যেতে দেয় না। ও রিশাকে খুব ভালোবাসে আর সব সময় ভয় পায় যদি কখনো তনিমা ওকে নিয়ে যায়। ও তনিমাকে কখনো রিশাকে দেখতে দিবে না। যদি কোনদিন তনিমা রিশাকে দেখে ও শোনার সাথে সাথে রিশাকে শেষ করে দিবে।

তখন রাতুল অনেক রিকুয়েষ্ট করে রিশার বড় ফুফুকে যেনো রিশার সাথে যোগাযোগ করিয়ে দেয়। কেউ জানতে পারবে না যদি আপনি বিষয়টি চেপে যান।

রাতুলের কথা শুনে রিশার সাথে রিশার ফুফু তনিমার যোগাযোগ করায়। আর সেদিন প্রথম জানতে পারে রিশা যে ওর মা বেঁচে আছে। তবে রিশা কখনো মায়ের প্রতি অভিযোগ করেনি রিশা একটা কথাই বলেছে আপনি এই নরক থেকে বেড়িয়ে গেছেন আমাকে সাথে না নিতে পারছেন মেরে ফেলতেন কিন্তু এই নরকে কেনো ফেলে গেছেন৷
— তোমার বাবা এখন কি অবস্থায় আছে? এখানো কি সেই টাকার গরম আছে?
— খারাপ মানুষ কি কখনো ভালো হয় মা? টাকার গরম নেই অধঃপতন হয়েছে। ফুফুর কাছে আপনার সবটাই শুনেছি খুব কেঁদেছি এতোটা খারাপ হয় মানুষ । আর মাও(রাইমার মা) কিভাবে পারল আপনার এতো ক্ষতি করতে।
— রিশা যাইহোক শোনো রাইমার মা আমার সাথে যাই করুক তোমাকে তো ভালোবেসেছে আগলে রেখেছে। তুমি ওনার সাথে কখনো খারাপ ব্যবহার করবে না।
তনিমা রিশা কে অনেক বুঝায়।রিশাও নিজের মাকে পেয়ে খুব খুশি। আর এভাবেই ওদের মাঝে মাঝে কথা হতো।

তনিমা তুষার কে দেখে সব সময় বলত শেষে আমার ভাগ্য এতোই ভালো ছিলো? যে এতো ভালো একজন স্বামী আমার কপালে ছিলো। প্রথম জীবনে যতই কষ্ট পাই আর করিনা না কেনো শেষ জীবনে এসে ওনার স্ত্রী হতে পেরে পুরো জীবনটাই স্বার্থক মনে করি।এমন একজন স্বামী যে মেয়ে পাবে সে প্রতিটি মূহুর্তের জন্য নিজেকে ভাগ্যবতী মনে করবে।

(সমাপ্ত)

বেলা শেষে আলো পর্ব-০৫+০৬

0

#বেলা শেষে আলো
#০৫+৬
#ইসরাত_জাহান_এশা

রাসেল রাতুলের সাথে কিছুক্ষন কথা বলে চলে যায়। তনিমা বসে বসে কাঁদতে থাকে। হটাৎ রাতুল এসে বলে___
— তোমার খুব সাহস বেড়েছে তাই না?এতো সাহস কই থেকে আসে?
— মানে কি বলতে চান আপনি?
— মানে তুমি এখন বুঝো না?
রাতুল তনিমার গাল চেপে ধরে বলে কি সাহস তোমার তুমি আমার বাচ্চা পেটে নিয়ে আমাকে ছেড়ে যাওয়ার চিন্তা মাথায় আনো কিভাবে? আমি তোমাকে কি কোনো কষ্ট দেই সব সময় চেষ্টা করি তোমাকে সুখে রাখার। তাও তুমি আমাকে ছেড়ে যাওয়ার চিন্তা করো।
— এমন সুখে থাকার চেয়ে মরে যাওয়া অনেক ভালো।
তনিমা,,,, ঠাস করে তনিমার গালে রাতুল থাপ্পড় বসিয়ে দেয় তনিমা সিটকে গিয়ে খাটের সাথে বারি খায় সাথে সাথে কপাল কেটে রক্ত বের হওয়া শুরু করে। তনিমা চিৎকার দিলে রিমা আর রাতুলের মা দৌরে আসে। রাতুলের মা রাতুলকে না থামিয়ে বলে দে আরো দুইটা দে বাপের বাড়ি থেকে খালি হাতে এসেছে তাও মুখে বড় বড় কথা।
— মা তুমি এখান থেকে যাও তো আমাদের মাঝ খানে কথা বলোনা৷

রাতুলের মা রাতুলের ধমক শুনে সেখান থেকে রিমাকেও টানতে টানতে রিমার ঘরে নিয়ে যায় আর বলে এই বেডি তুই ঐখানে হ্যাবলার মতো দাড়িয়ে ছিলি ক্যান? আমার ছেলেকে তো চেনোই ওকে রেখে না আবার তোকে ধরে। রিমা রাতুলের মায়ের কথা শুনে তাজ্জব হয়ে যায়। কি নিকৃষ্ট মানুষ ছিঃ!
কই মুরুব্বি হয়ে গিয়ে মেয়েটাকে ধরবে তা না করে মজা নিচ্ছে। আমার না হয় সতীন কিন্তু ওনার৷ আসলেই উনি একটা খারাপ মহিলা তেমন আবার ছেলেও হয়েছে আমার সংসারে উনিই আগুন দিয়ে এখন সেখানে ঘী ঢেলে ভালো সাজতে এসেছে৷

রাতুলো তনিমাকে ফেলে রেখে বাইরে চলে যায়। তনিমা হাত কপালের সাথে চেপে ধরে। একটু পেস্ট লাগিয়ে দেয়। অনেকক্ষণ রক্ত ঝড়ার পর নিজে নিজেই বন্ধ হয়ে যায়।
তনিমা কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে যায়। রাত বারোটা বাজে তখন রাতুল বাড়িতে আসে এসে দেখে তনিমা এখনো ঘুমাচ্ছে। কপালে রক্ত জমাট বেঁধে আছে রাতুল দ্রুত হালকা পানি দিয়ে মুছে মলম লাগিয়ে দিতে নেয় এর মধ্যে তনিমার ঘুৃম ভেংগে যায়।তনিমা রাতুলের সামনে থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে বলে___
— থাক লাথি মেরে গরু দান করার কোনো দরকার নেই।
— আমি দুঃখিত আমি বুঝতে পারিনি।
— না বুঝচ্ছেন ভালো হয়েছে এই ক্ষতর থেকেও মনে আপনি আরো বড় ক্ষত তৈরি করেছেন। বুঝলাম আপনি এখানে সরি বলে মলম দিয়ে এই কাটা দাগ মুছে দিবেন। কিন্তু ভিতরে যে দাগ তৈরি করেছেন সেটা কিভাবে দূর করবেন?
— তনিমা তুমি বেশি কথা বলো। তুমি দয়া করে আমাকে রাগীয়ে দিয়ো না।আমি চাই না তোমার সাথে ঝগড়া করতে আমি চাই তুমি শান্ত থাকো আর সবটা মেনে নিয়ে সংসার করো আমি তোমাকে কখনো অসুখী করব না।
— আর সূখ তাও আবার আমার কপালে খুবই হাস্যকর!
— তনিমা প্লিজ বাজে বকা বন্ধ করো। আমি খাবার আনতেছি খেয়ে নাও আর মাথা গরম করো না।
এতে তোমারো ক্ষতি আমারো ক্ষতি সাথে বাচ্চাটারও ক্ষতি।

তনিমা কথা না বাড়িয়ে খুব বিরক্ত নিয়ে রাতুলের দিক থেকে মুখ সরিয়ে নেয়। তনিমার কোনো ইচ্ছে নেই রাতুলকে ধরে রাখার আর রাতুলকে পাওয়ার জন্য কারো সংসার ছিনিয়ে আনা। তনিমা সিন্ধান্ত নিয়ে নেয় মনে মনে আজ হোক কাল এই বন্ধি খানা থেকে মুক্ত হবেই।

আজ তনিমার একটি কন্যা সন্তান জন্ম নিয়েছে।রাতুল খুশিতে আটখানা। মেয়েটার গায়ের রং দূধে আলতা মাখানো। মনে হয় কোনো একটা পরীর মেয়ে। নাম রাখা হয় রিশা। রাতুল রিশাকে নিয়ে একটু বেশি মাতা মাতি করত যেটা রাইমাকে নিয়ে করত না আর এটা রিমা মোটেও সহ্য করতে পারত না। রিমা নিজে আর নিজের মেয়ের এমন অবহেলা দেখে কষ্টে পাথর হয়ে থাকত।

রিমা চিন্তা করে আর কতদিন এই ভাবে চলবে? আর কতো সহ্য করব। আমি এতোদিন অবহেলায় ছিলাম তা নাহয় সহ্য করেছি কিন্তু নিজের মেয়ের অবহেলা কিভাবে সহ্য করব। রিমা এবার কঠিন পদক্ষেপ গ্রহন করে তাতে যা হয় হবে।
রিমা কিছু দিনের জন্য বাপের বাড়ি যায়।
— মা আর কতদিন এমন সহ্য করব তুমি বলতে পারো?
— কি আর করবি নিয়তিতে ছিলো। তুই এক কাজ কর রাইমাকে নিয়ে চলে আয় ওকে ছেড়ে দিয়ে।
— না মা এটা কি বলো একটা মেয়েকে এই ভাবে নিজের জন্য বাবা ছাড়া করব। আর রাতুল আমার স্বামী ওর জন্য আমি আমার সর্বোচ্চ লড়াই করব তাতে আমার যতোটা নীচে নামতে হয় নামবো। আমি ওর প্রথম স্ত্রী আমার অধিকার বেশি। আমার সন্তানের অধিকার বেশি।
— তবুও নিয়তিকে মেনে নে।
— শোনো মা তুমি যতটা সহজে বলছ আমার জন্য রাতুলকে ছাড়া সম্ভব না। এর আগে যখন বলছি তখন তো তোমরা আমাকে ছারার কথা বলনি। তাহলে আজ কেনো বলছ৷ আমি আমার অধিকার বিন্দু পরিমান ও ছাড়ব না।
—- তাহলে তুই এখন কি করতে চাস?
— ফকিরের সাহায্য নিবো৷
— মানে কালোজাদু?
— এতো জেনে তো আমার কাজ নেই।
— এগুলো ভালো না রে মা।
ওর মাকে নিয়ে এক ফকিরের কাছে যায়।
— আপনাদের কি সমস্যা? (ফকির)
— সমস্যা আমার স্বামী দ্বিতীয় বিয়ে করেছে এখন চাই সতীন কে সরাতে আর সবার চোখে যেনো অসহ্যের মতো হয় ওর সাথে আমার স্বামী শাশুড়ী এতোটাই খারাপ ব্যবহার করুক যাতে ও নিজেই এই বাড়ি ছাড়তে বাধ্য হয়।
— আচ্ছা যা তোর কাজ হবে। এই যে তাবিজ-তুমার যা দিয়েছি সব ঠিক ভাবে পালন করবি।

রিমা তাবিজ নিয়ে বাড়িতে আসে। এসে ফকিরের দেওয়া মতো সব কিছু ঠিক ঠাক করে নেয়।

—আচ্ছা আপনি বাজারে গেলে বাবুর জন্য একটা ফিটার কিনে নিয়ে আসবেন আবার ভুলে যাইয়েন না। আপনি কিন্তু মাঝে মাঝে সব ভুলে যান।
— কি বললি? মুখে খুব কথা ফুটেছে, আমি ভুলে যাই? তোর এতো সাহস হলো কিভাবে আমাকে এতো বড় কথা বলার বল। কি হলো কথা বলছিস না কেনো। (চুলের মুঠি ধরে)
—- লাগছে ছাড়ুন বলছি। কি বলেছি আমি? যার জন্য আপনি হটাৎ করে এমন রেগে গেলেন।
— তুই আবার আমাকে প্রশ্ন করছিস৷ তোর মেয়ের জন্য কিছু আনব না দেখি তুই কি করস।

তনিমা বেশি কথা বাড়ায় না চুপ করে যায়। রাতুল অনেক্ষন একা একা তনিমার সাথে চিল্লাচিল্লি করে হাপিয়ে গিয়ে নিজেই চুপ হয়ে বিছানায় বসে থাকে।
তনিমাকে অবাক করে দিয়ে বলে___
—- সরি তনিমা।
অভিমানী মুখ নিয়ে তনিমা একটু মুখ ঘুরিয়ে নেয়। কিন্তু রাতুল এতেও প্রচুর রিয়াক্ট করে ফেলে।
— কি সমস্যা তোর? তোর কাছে ক্ষমা চেয়েছি তাই হাতির পাঁচ পা দেখেছিস? তুই আমার দিক থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিলি কেনো?
তনিমা দেখতে পায় রাতুলের চোখ দু’টি রক্ত বর্ন ধারন করে আছে। তনিমা প্রচুর ভয় পেয়ে যায়। ভয়ে তনিমা আর কথা বাড়ায়না।

কিছুদিন পর রাতুলের তনিমার প্রতি একটা অনিহা আসে। তনিমাকে রাতুল ছোট ছোট বিষয় নিয়ে গায়ে হাত তুলতে থাকে। রাতুলের অল্পতেই মাথা গরম হয়ে যেতো।
রাতুল নিজেও ভেবে পায়না কিভাবে কি হয়ে যায়। এতো অল্পতেই কেনো আমার মাথা গরম হয়। চাই না তনিমাকে মারতে চিল্লা চিল্লি করতে তাও কেনো এমন হয়। রাতুল তনিমার সাথে খারাপ ব্যবহার করে আবার কিছুক্ষণ পর ক্ষমা চাইত৷
কিন্তু সমস্যা হলো ক্ষমা চাইতে গিয়ে তনিমা যদি ক্ষমা করতে দেড়ি করত তাহলে রাতুল আবার মাথা গরম করে তনিমার উপর চিল্লা চিল্লি করত।

তনিমা অসহ্য হয়ে বাপের বাড়ি তে চলে যায়। রাতুল এবার আর বাঁধা দেয় না। রিশার বয়স তখন ৬মাস চলছে। তনিমা বাবার বাড়িতে গিয়ে ২মাসের মতো থাকে কিন্তু তনিমার মা আর ভাই তনিমাকে আর রাখতে চায় না। রিশা সারাদিন কান্না করত যেটা তনিমার মা সহ্য করতে পারত না। এদিকে তনিমার বাবাও প্রচুর অসুস্থ হয়ে পরে। এবার তনিমা কোনো উপায় না পেয়ে নিজে থেকেই রাতুলকে বলে নিয়ে যেতে।
— কেনো নিয়ে যাবো তোমাকে খুব তো ছেড়ে যাওয়ার জন্য লাফাচ্ছো দেখো কি করুন অবস্থা তোমার বাবার। আমার এখানে আমি মনে করি ঐখানের থেকে ভালো থাকো। তাও গায়ের জোর দেখিয়ে ঐখানে থাকো তুমি।
— অনেক তো কথা শুনালেন এখন কি আমাকে নিতে আসবেন?
— আমি রাস্তার মোরে দাঁড়াবো তুমি এখানে আসো।
— আমি একা কিভাবে যাবো?
— দেখো এতো জানিনা কিভাবে আসবে। আমি তোমাদের ওদিকে যাবো না। তুমি আস্তে আস্তে রিশাকে নিয়ে আসো। আর রাস্তাও তো বেশি না সামনে তো আমি আছিই।
— আচ্ছা আসতেছি।

তনিমা ব্যাগ পত্র ঘুছিয়ে বের হয় যাওয়ার জন্য। তখন তনিমার বাবা বলে ___
— মা রে সাবধানে থাকিস। একদিন তোর সুখ হবেই কখন না কখন মারা যাই জানিনা দোয়া করিস।
— বাবা এভাবে বলো না। সুখ কপালে না থাকলে কখনো ছিনিয়ে আনা যায় না।
— যা আল্লাহর নাম নিয়ে। জানিনা আর কখনো দেখা হবে কিনা।
— বাবা এভাবে বলো না। কিছু হবেনা তোমার। আসছি আমি।

তনিমাকে রাতুল ওদের মোর থেকে নিয়ে যায়। অনেক দিন পর রিশাকে পেয়ে রাতুল যেনো ঠিক আগের মতো হয়ে যায়।
কিন্তু রিমা তনিমাকে দেখেই চোখ যেনো গোল গোল হয়ে যায়।
— তুমি আবার এসেছো?এতো অত্যাচারের পরও তোমার ইচ্ছে করে এ ঘরের ভাত খেতে?
তনিমা চুপ করে থাকে। রাতুল রিমাকে ধমক দিয়ে বলে তোর কি অশান্তি ছাড়া ভালো লাগে না?
তনিমা আসাতে তোরে কি আমি কোনো কষ্টে রাখছি? চেষ্টা তো করি দুজন দুজনকে সমান চোখে দেখতে।

রিমা মনে মনে বলে অশান্তি ঘরে বয়ে এনে বলে অশান্তি ভালোলাগে না।আবার সমান চোখেও দেখে তোর চোখ সমান থাকলে তো সমান চোখে দেখবি। রিমা ঘরে গিয়ে চিন্তা ভাবনা শুরু করে। না এভাবে আর হচ্ছে না। এবার রাতুলের উপর নয় তনিমার উপর কিছু একটা করতে হবে। যাতে সাপও মরে লাঠিও না ভাংগে।

তনিমা রুমে গিয়ে দেখে রুম একদম ঘুছানো ফিটফাট।তখন তনিমা মনে মনে ভাবে রাতুল যতই খারাপ ব্যবহার আমার সাথে করুক আসলে ও আমাকে ভালোবাসে। কিন্তু হবে এই ভালোবাসা দিয়ে যে ভালোবাসায় কোনো শান্তি নেই।
তনিমার শাশুড়ী তনিমাকে দেখে মুখ ভ্যাংচি কেটে ওদিকে মুখ ঘুরি ফেলে। এমন কি রিশা যে তার নাতী তার দিকেও ফিরে তাকায় না।

তনিমা মনে মনে ভাবে থাক নিজের আপন মা ভাই তারাই পর করে দিছে। আর এতো সতীনের সংসার টিকে থাকতে হলে সহ্য ক্ষমতা আরো বাড়াতে হবে৷
সামনে দাড়িয়ে রাতুল হাতে তুরি দিয়ে বলছে__
— কি ভাবছ?
— নাহ কিছুনা।
— জানো তোমাকে খুব মিস করেছি। কিন্তু আমি জানি না আমার কি যেনো হয়ে যায় এই তোমাকে মনে করি আবার কতক্ষণ পর তোমার উপর রেগে যাই আর মনেই পরত না।
— আমাকে না হয় মনে নাই পড়ত কিন্তু মেয়েটা?
— রিশার কথা মনে পড়ত কিন্তু বললাম কি যেনো হতো।
— থাক আর বলতে হবে না।
— তুমি ভুল বুঝছ তনিমা।
— সঠিক ভুল এসব ভেবে লাভ নেই আমার জীবনে৷ আমার জীবন ক্ষতিতে পরিপূর্ণ।

মাস খানেকের মধ্যেই তনিমার শরীর ভাংতে থাকে। আসতে আসতে শরীর শুকিয়ে যায়। তনিমা ছিলো লাল টুকটুকে ফর্সা কিন্তু মাসখানেকের মধ্যে তনিমার এমন অবস্থা হয় তনিমার আগের চেহারাই বোঝা যায় না।
তনিমার শরীরে যেনো শক্তি পায় না।রাতুল সব সময় তনিমার খেয়াল রাখত। কিন্তু খেয়ার রাখলে কি হবে রাতুল কখনো ডাক্তার কবিরাজ কারো কাছেই নিয়ে যেতো না।

আগে রিমা তনিমাকে সারাদিন গালাগালি করত কিন্তু এখন রাতুলের মাও তনিমাকে গালাগালি করে। রিশাকে পর্যন্ত চোখে দেখতে পারত না। সারাদিন তনিমা কে কথা শোনাতো। রাতুলকে বললে রাতুল ঝামেলা করবে তাই তনিমা রাতুলকে এসব বিষয়ে কিছু বলত না। তনিমা অসুস্থ শুনে তনিমার বাবা রাসেলকে পাঠায় তনিমাকে নেওয়ার জন্য । রাতুলও তনিমাকে যেতে দেয়। কারন রাতুল জানে তনিমার বাবা খুবি ভালো মানুষ তনিমাকে যেভাবে হোক সুস্থ করবেন।
তনিমার বাবা নিজের অসুস্থতাকে লুকিয়ে মেয়ের জন্য দৌড়াদৌড়ি শুরু করেন। ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলে রিপোর্ট নরমাল আসে। কোনো উপায় না পেয়ে তনিমার বাবা কবিরাজের শরণাপন্ন হয়।
— আপনার মেয়েকে ক্ষতি করা হয়েছে। যাতে ও শুকিয়ে আস্তে আস্তে দূর্বল হয়ে মৃত্যুর মুখে ঢোলে পরে।
— কি করবে এমন ক্ষতি?
— কেনো ওর ঘরে কি সতীন নেই।
— আছে তাই বলে এমন জঘন্য কাজ।
— অবাক হওয়ার কিছু নেই। এর থেকেও অনেক খারাপ মানুষ আছে।
— এখন কি করতে পারি বলুন। আমরা অনেক গরীব চেষ্টা করবেন যেনো অল্পতে পারি।

আগে ওর পেট টানাতে হবে। তখন কবিরাজ ওনার স্ত্রী কে ডেকে পেট টানালেন আর ভিতর থেকে কিছু তাবিজ গলে যাওয়া তাবিজ বের করে আনলেন।
—এই নেন। এগুলো ভালো মতো মানতে বলবেন৷ তাহলে সুস্থ হবে। আর সতীন কে অতিরিক্ত বিশ্বাস করা থেকে বিরত থাকবে। এতে তোমার আর তোমার মেয়ের জন্যই মঙ্গল।

তনিমার উপর থেকে ক্ষতির প্রভাব কেটে গেলে তনিমা আগের মতই সুস্থ হয়ে উঠে। কিন্তু তনিমার বাবা অসুস্থ হয়ে যায় ডাক্তার জানায় লিভার নষ্ট হয়ে গেছে বড়জোর তিনমাস বাঁচতে পারেন৷
তনিমা চিন্তা করে ওখানে গিয়ে লাভ কি বাবার কাছেই থাকি আর বাবাও চায় আমি ওনার কাছে থাকি। তনিমা রাতুলের সাথে কথা বলে থাকার পারমিশন নেয়।
কিন্তু কিছুদিন পর সেটা রাসেল আর তনিমার মা’য়ের সহ্য হয়না। তাই বার বার তনিমাকে চলে যেতে বলে। তিশাও সেটাই বলে।
— আপা তুই চলে যা দেখতেই তো পাচ্ছিস সংসারে কত অভাব চলছে। আর এই সময় তুই আর তোর বাচ্চা এভাবে মা আর ভাইকে জ্বালাতন করিস না।

তনিমা তিসার কথা শুনে ঘৃণায় চলে যায় আবার রাতুলের কাছে। রিমা তনিমাকে আবার আগে মতো দেখে হতভম্ব হয়ে যায়। বুঝতে পারছে না কি করবে। যতো চেষ্টা করছে ততবার হেরে যাচ্ছে। রিমা তনিমাকে দেখে এবার আর ঝামেলা পাকায় না।
তনিমা নিজের রুমে গিয়ে শুধু বাবার কথাই ভাবতে থাকে। বার বার মন বলছে কিছু একটা হবে। কিছু একটা হারিয়ে ফেলবে। মনে অশান্তি যেনো যাচ্ছেই না।তনিমার মনে শুধু একটা চিন্তা আর কয়দিন যদি থাকতে পারতাম বাবার কাছে। পরে আবার যাবো এবার যে যাই বলুক বাবার কাছ থেকে আর আসব না।
কিন্তু তনিমার ভাগ্য এতোটাই খারাপ তনিমা যাওয়ার পরের দিনই তনিমার বাবা মারা যায়। দুই দিন পর তনিমার চাচাতো ভাই ফোন দেয়। তনিমা চাচাতো ভাইয়ের ফোন নম্বর টা দেখে কলিজা যেনো শুকিয়ে আসে। হটাৎ বাড়ি থেকে ফোন বাবার কিছু হলো নাকি___
— হ্যালো।
— হুমম আপা কেমন আছো?
— আমার খবর পরে আগে বল বাবা কেমন আছে। ভাইর ফোন অফ তোর ফোন অফ কাউকে পাইনি খোজ নেওয়ার জন্য।
— আসলে বৃষ্টিতে কারেন্ট ছিলো নাই তাই চার্জ দিতে পারিনি। যাই হোক শুনো চাচা আর নেই। গত পরশু মারা গেছেন।
— বাবা পরশু মারা গেছেন তুই আমাকে আজকে জানাস৷ ভাই তোর কি পাষাণ। কি হতভাগী আমি বাবার মৃত্যু দেখতে পারলাম না।

তনিমা খুব তারাতারি বাড়িতে আসার জন্য রেডি হয়। বাড়িতে এসে তনিমা খুব কান্নাকাটি করে বাড়িতে যদি কেউ আপন থাকে তা হলে বাবা। তনিমাকে বোঝার মতো আর কেউ থাকল না,,,,


রিমা এবার কঠিন পদক্ষেপ নেয় তনিমার উপর পুরোপুরি ভবে জ্বীন চালান করে যাতে তনিমা ভয়ে সব সময় কুকরে থাকে আর ভয়ে ভয়ে জীবন শেষ হয়ে যায়।
তনিমা একদিকে বাবার মৃত্যুতে শোকে কাতর অন্য দিকে কালোজাদুর প্রভাব তনিমাকে আবার আগের মতো করে ফেলে। তনিমার সাথে ইদানীং ভয়ংকর কিছু কাহীনি হচ্ছে যাতে তনিমার পাগলের মতো অবস্থা।

চলবে,,,

বেলা শেষে আলো পর্ব-০৪

0

#বেলা শেষে আলো
০৪
#ইসরাত_জাহান_এশা

—- মা,,, তোমার মুখে কি কোনো কথা বাঁধে না?
—কথা বাঁধবে কেনো? দোষের কি বলছি? অভাবের সংসার। নিজেরাই খেতে হিমশিম খাই আবার একটা পেট কিভাবে চালাবো? তার চেয়ে বরং তুই তোর বাচ্চা নষ্ট করে ফেল তারপর ওকে ডিভোর্স দিয়ে চলে আয়।

তনিমা আর কোনো উত্তর দেয় না।চোখের পানি মুছতে মুছতে রুমে গিয়ে শুয়ে কাঁদতে থাকে। তনিমার আসার কথা শুনে তনিমার ছোট বোন তিশা বিকালে আসে তনিমাকে দেখতে৷
তিশা— কিরে আপা কেমন আছিস?
— এইতো আছি। তোর কি খবর?
— আমি আছি ভালোই। কিন্তু শুনলাম তোর কপাল নাকি আবার পুড়ছে? তোর নাকি ঘরে সতীন আছে?
— তুই কি আমাকে দেখতে এসেছিস নাকি আমাকে কাটা গায়ে নুনেরছিটে দিতে?
— নুনের ছিটে কোথায়? জানার জন্য বললাম আর কি। তা তোর সতীনের সাথে তোর মিলে? ঝগড়া করে না? কিভাবে খাবি একসাথে থাকা তো সম্ভব না৷ শোন বাচ্চাকাচ্চা হওয়ার আগে তুই ভাইয়াকে ছেড়ে দিয়ে আয়।
— তিশা একটু থামবি? কোথায় একটু শান্তনা দিবি তা না করে তুই আমাকে নিয়ে মজা নেস। বারবার ছেড়ে দেওয়া কথা বলো তুই আর মা তোরা কেমন আমি বুঝি না৷ আমি গর্ভবতী তোরা কেউ কি নিবি আমার আর বাচ্চার দায়িত্ব?
— কি বলিস তুই এসব? তুই মা হবি এমন বেকুবের মতো কাজ করছ কেনো।
—আমি কি করছি তোরা এতদিনে কেউ একটা বার খোঁজ নিছো? তুই ফোন দিয়ে একবার জিজ্ঞেস করছ কেমন আছি? কিভাবে আছি তোরা তো চেয়েছিলি ঘার থেকে বোঝা নামাতে তাই বাড়িঘর না দেখে বিয়ে দিছে। আজ সবার মন্দ কথা নিন্দা সব আমি ভোগ করি।
— আসলে আমি আমার সংসার নিয়ে খুব ব্যস্ত।জানিস,,,,
— থাক! তুই তোর শশুর বাড়ির এখন গুনগান আর সুখের কথা বলে আমাকে আর যন্ত্রণা দিস না। মা ষড়যন্ত্র করে আমার সংসার টা নষ্ট করে ফেলেছে। সবুজের তো ভালো একটা চাকরি হয়েছে বিয়ে করেছে আবার। আর এদিকে আমার জীবনটা নষ্ট হয়ে গেলো।হেরে গেলাম আমি জীবনের কাছে। টাকার কাছে মা আমাকে বিক্রি করে দিলো। আর কয়টা দিন অপেক্ষা করলে কি হতো।
— আপা তুই সবুজের ব্যাপারে এতো খবর কই পাইছো।
— সোহানি ফোন দিয়েছিলো ও সব বলেছে আমাকে। তুই নিজের বোন হয়ে তো একদিন খোঁজ নিতে পারেসনি। কিন্তু সোহানি বান্ধবী হয়েও প্রায় প্রায় খোঁজ নিতো।
— ওহহ। তুই এখন কি করবি?
— জানিনা কি করব। তবে এইটুকু জানি বাচ্চা নষ্ট করব না। তারপর আস্তে আস্তে চেষ্টা করব কিছু একটা করার আর এখানেই কিছুদিন থাকব।

রাতে তিশার স্বামী আসে বেড়াতে। তিশা অস্থির হয়ে যায় স্বামীকে কি খাওয়াবে কিভাবে যত্ন আত্মী করবে।তনিমাকে দেখানোর জন্য এমন ভাব শুরু করছে তিশা মনে হয় যেনো তিশার স্বামী মিলন নতুন আসছে নতুন জামাই ভুল ত্রুটি হলে অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যাবে৷
তনিমা এসব দেখে যেনো বুকের ভেতর একটা চাপা কষ্ট অনুভব হয়। ইচ্ছে করছে মন খুলে চিৎকার দিয়ে কান্না করতে। কিন্তু কোনো উপায় নেই সবটা মুখ বুঁজে সহ্য করে নিতে হবে।
তনিমার কাঁদতে না চাইলেও চোখ যেনে না কেঁদে শান্ত হয়না।
—আপা দেখ মিলন কতো কিছু নিয়ে আসছে। আজকে সবাই ভালো মন্দ খেতে পারবি।
— এসব কি বলছিস তিশা? আমরা কি খারাপ খাই আর তুই মিলন কে নিয়ে এমন ভাব শুরু করছিস মনে হচ্ছে মিলন এ বাড়িতে নতুন আসছে।
— কেনো আপা তোর হিংসা লাগছে?
— বাজে কথা বলিস কেনো আমার হিংসা লাগবে কেনো।
— না লাগতেও তো পারে তোর জামাই তো আসলই না। আবার তোর আগের বর তা তো বলার বাইরে আনবে কি? আরো আমাদের অন্য ধংস করেছে।
— দয়া করে থাম তিশা। আর বলিস না বার বার কাটা গায়ে নুনের ছিটা দিস না।ছোট বোন কোথায় বড় বোনকে সাহায্য করবি তা না করে বার বার খোঁচা দিতে আসিস। তুই যদি এমন করে বলিস তাহলে বাইরের লোকেরা কি করবে।

তিশা কোনো উত্তর না করেই ভেংচি কেটে চলে গেলো। তনিমা মনে মনে ভাবে নিজের মায়ের পেটের বোন এমনও হয়? মা যেখানে এমন বোন তো তা তো আরো দূর। বাঁচতে হলে নিজেকেই সব সামলাতে হবে।

অনেক দিন হয়ে গেলো তনিমা বাড়িতে নেই। রিমা এই কয়দিন খুব শান্ত শিষ্ট ছিলো কোনো ঝামেলা ছিলো না ঘরে। আজকে রাতুলের ফুরফুরা মেজাজ দেখে রিমা সাহস নিয়ে কাছে গিয়ে বলল,,,
— একটা কথা বলার ছিলো।
— হুমম বলো শুনতে পারছি।
— বলছি তুমি আমাকে কেনো পছন্দ করো না? কেনো তুমি দ্বিতীয় বিয়ে করতে গেলে?বিয়েটা করাটা কি বেশি প্রয়োজন ছিলো?আমি না হয় খারাপ কিন্তু মেয়েটা কি করেছে? মেয়েটার কথা ভেবেও তো___
— এসব প্রশ্ন করে মুড নষ্ট করতে আসছো এখন আমার?
— না তবে আমি জানতে চাই আমার অন্যায় কি? কেনো তুমি আমাকে পছন্দ করো না?
— দেখ বার বার এক কথা বলে মাথা নষ্ট করিস না।
— ভালোই ভালোই বল্লে তোমার কানে কথা যায় না? কেনো বিয়ে করেছো আবার কি দরকার ছিলো তোমার কিসে অভাব দিয়েছি আমি?

রাতুল রিমার উচ্চ গলায় কথা শুনে মেজাজ আর ঠিক রাখতে পারেনি। বসা থেকে উঠে রিমার চুলের মুঠি ধরে বলে তোকে বিয়ে করেছি এটা তোর কপাল নাহলে তোর মতো কালীকে কে বিয়ে করত? না আছে চেহারা না আছে চেহারার গঠন তারপর সারাদিন মানসিক ভাবে যন্ত্রণা দিতি। শোন আমাকে আর কখনো এই সব প্রশ্ন করবি না। তাহলে তোর খবর আছে। বলেই রাতুল রিমাকে নিচে ফেলে দিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাবে তখন রিমা কাঁদতে কাঁদতে বলল____
— আমিও দেখবো এই সংসার কতদিনের হয় কতদিন তোমার এই সুন্দরী বউকে নিজের কাছে রাখতে পারো আমিও দেখব। শেষ পর্যন্ত যদি কেউ তোমার পাশে থাকে তাহলে এই রিমাই থাকবে।

— তোমার কি ঘরে শান্তি ভালো লাগে না বড় বউ? কি দরকার এসব প্রশ্ন করার ছেলে মানুষ রাগ বেশি বোঝোই তো। তোমাকে তো কোনো দিক দিয়ে কম দিচ্ছে না তাহলে এতো জিদ কেনো তোমার? পারনি তো নিজের স্বামী কে আঁচলে বেঁধে রাখতে এখন আসছ বড় বড় কথা বলতে।
— মা থামুন তো! আজ আপনার জন্যই এমন হয়েছে আপনি আপনার ছেলেকে লাই দিয়ে মাথায় তুলেছেন। আমার নামে সব সময় আপনার ছেলের কাছে খারাপ খারাপ কথা বলতেন। আপনার ছেলের মাথাটা আপনি চিবিয়ে খেয়েছেন আপনি তাকে দ্বিতীয় বিয়ে করতে সাহায্য করেছেন। নাহলে কখনোই আপনি ঐ মেয়েকে ঘরে তুলতেন না। আদরের একটা ছেলে লাই দিয়ে বাদরের মতো ছেরে দিছেন।

— ছেলে এখন বড় হয়েছে ছেলের সাথে কি পারা যায়৷ তুমি এখন আমার সাথে ঝগড়া না করে ভাবো কিভাবে পথের কাটা সরানো যায়। নিজের সংসার আর স্বামী আঁচলে বাঁধতে শিখো৷
— হুমম সেটাই করব। তার জন্য যতদূর আমার যেতে হয় আমি যাবো৷

অনেক দিন হলো তনিমা বাড়িতে নেই রাতুল তনিমা কে ফোন দেয় যেনো রাসেল কে নিয়ে তনিমা চলে আসে।
— না আমি যাবো না।
— যাবো না মানে কি?
— যাবো না মানে যাবো না।
— মানে আরো কয়দিন থাকতে চাও?
— যদি বলি সারাজীবন।
— মাথা গরম করবে না তনিমা কালকের দিন থেকে পরশু দিনই চলে আসবে আর নাহলে___
— নাহলে কি করবেন?
— আমি নিজ গিয়ে টেনে হ্যাচরে নিয়ে আসব আর শোন তোর পেটে আমার সন্তান সুতরাং পাগলামী করিস না তোর বাবা-মা তোকে কখনোই দেখবে না। আমার মেজাজ গরম করিস না তাহলে তুইও আমার খারাপ রূপটা দেখবি।কথাটা মনে থাকে যে রাখছি।

রাতুলে ফোন কেটে দিলে তনিমার মা তনিমা কে জিজ্ঞেস করে।
— কে ফোন দিছে?
— রাতুল।
— কি বলছে কবে নিয়ে যাবে?
—পরশু যেতে বলছে আমিই না করে দিয়েছি। বলেছি যাবো না।
— বললেই হলো যাবি না? বিয়ে হয়েছে তার মানে রাতুল তোর স্বামী। তোর পেটে আবার ওর বাচ্চা তুই এখন এসব পাগলামি রাখ। যা হওয়ার তা তো হয়েই গেছে যদি বাচ্চা নষ্ট করো তাহলে আমরা রাখবো না হলে বিদায়।
আর যদি চাও বাচ্চা পৃথিবীর আলো দেখুক তাহলে নিজের সংসার নিজে বুঝে নিতে শেখ। শক্ত করে সংসার আর স্বামীকে ধরে রাখ।

— নিজের সূখের জন্য অন্যের সংসার ভাংব?
— তো কি করবি শুনি?
তনিমা কোনো জাবাব না দিয়ে চুপচাপ রুমে গিয়ে শুয়ে শুয়ে ভাবতে থাকে। তনিমার বাবা কাজের কারনে ঢাকায় চলে যান। বাড়িতে যে একটু ভালো করে খোঁজ খবর রাখবেন সেই উপায়ও নেই। খুবই সরল আর নরম মনের মানুষ এতো পেচ তার ভিতরে ঢুকে না। আর তনিমার মাও ওর বাবার কথার তেমন গুরুত্ব দেয় না এর জন্য তিনি এইসবের মধ্যে আসেন না।

রাতুলের কথা মতো তনিমা না গেলে রাতুল রাসেলকে ফোন দেয়।
— রাসেল তোমার বোনকে আমি আরো ২দিন আগে আসার কথা বলেছি তুমি এখনো ওকে নিয়ে আসছ না কেনো? এখন আমাকে যেতে বাধ্য করো না।
— তনিমা তো যেতে চাইছে না। আর কিছু দিন__
— আর একদিনও না আজই তুমি ওকে নিয়ে আসবে না হলে আমার চেয়ে খারাপ কেউ হবে না।

রাসেল বাসায় গিয়ে তনিমাকে বলে রেডি হয়ে নে আজই তোকে দিয়ে আসব।
— কোথায়?
— কোথায় আবার? তোর শশুড় বাড়িতে।
— আমি যাবো না। আমি গেলেই বাড়িতে অশান্তি হবে।
— তুই এখানে থাকলে আমাদের অশান্তি হবে। তাই দয়া করে তুই তোর জায়গায় যা।

তনিমা রাসেলের কথা শুনে কান্নায় ভেংগে পড়ে। কাঁদতে কাঁদতে দ্রুত রেডি হয়ে নেয়। রাস্তায় যেতে যেতে তনিমা রাসেল কে জিজ্ঞেস করে__
— ভাই আমি এতোই পর হয়ে গেছি? তোরা জেনেশুনে আমাকে বাঘের গুহায় ছেড়ে আসছিস?

রাসেল কোনো উত্তর দেয় না শুধু চুপ করে শুনে যাচ্ছে। তনিমা রাসেলের থেকে কোনো প্রতি উত্তর না পেয়ে নিজেই চুপ হয়ে যায়।

রাসেল তনিমাকে রেখে আসার সময় বলে।
— ভালো থাকিস বোন।
এবার তনিমা উত্তর না দিয়ে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে আর নিচের দিকে তাকিয়ে চোখের পানি ফেলে আর মনে মনে বলছে।

আযাবের মধ্যে রেখে বলে যাচ্ছো শান্তিতে থাকিস।

— কিরে কিছু বলবি না?
— আসতে পারো।

চলবে,,,,,

বেলা শেষে আলো পর্ব-০৩

0

#বেলা শেষে আলো
#০৩
#ইসরাত_জাহান_এশা

এসব কথা ভাবতে ভাবতে হটাৎ দরজার বাইরে থেকে ছোট ছোট হাতে দরজার উপর ঠকঠক আওয়াজ দিচ্ছে আর বলছে বাবাই দরজা খোলো।
তনিমা রাতুলকে ডেকে তুলে। রাতুল গিয়ে দরজা খুলে রাইমাকে ঘরে নিয়ে আসে।

— বাবা উনি কে?
— উনি তোমার ছোট মা।
— ওহহ। তোমার কি হয়?
রাতুল চুপ করে থাকে।
— কেনো এই ছোট বাচ্চার সাথে এমন করলেন? কোনো মেয়ে চায় না স্বামীর ভাগ দিতে। বড় আপাও চাইবে না স্বামীর ভাগ দিতে। আবার আমিও চাইনা স্বামীর ভাগ দিতে চাই না৷
— তুমি যদি চাও আমি রিমাকে তালাক দিবো।
— হা হা হা, ডিভোর্স দেওয়া এতো সোজা? আপনার কি কলিজা বলতে কিছু নাই? ওনার অপরাধ কি? রাইমার বা কি অপরাধ? আপনি আমাকে ডিভোর্স দেন আমি আমার রাস্তা দেখে নিবো। তাও চাইনা এই ভাবে কারো সংসার ভাংতে।
— চুপ! বলছিনা তোকে আমি ভালোবাসি। তুই কোথাও যাবি না। বেশি চালাকি করার চেষ্টা করলে তোর বাপ মার ক্ষতি করে দিবো।

তনিমা ভয়ে চুপসে যায়। গরীব ঘরে জন্ম নেওয়াটা কি অন্যায়? যে যখন যেভাবে খুশি বাজাতে চায়। না পাওয়া যায় পরিবারকে সামনে না নিজের কোনো শক্তি থাকে আজকে একটু লেখা পড়া হলেও না হয় কিছু একটা ভাবতাম।
এই আজাব নিয়ে কি সারা জীবন থাকতে হবে?
— এই কি ভাবছ?
— নাহ কিছু না। বলছিলাম আমি কি বাপের বাড়িতে যেতে পারব না?
— না,,যখন আমি বলব তখনি যাবে।
— কেনো যেতে পারব না?
— ( হুমম আমি তোকে যেতে দেই আর তুই ওখানে গিয়ে ছাগলের মত খামি দিবি আর আসতে চাইবি না। এটা আমি ভালো ভাবেই বুঝতে পারছি) এখন যেতে পারবে না মানে না।
বলেই রাতুল রাইমাকে নিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে যায়।

এদিকে দিনের মনে দিন যাচ্ছে তনিমা মুখ বুঁজে সব সহ্য করে নিচ্ছে রাতুল ঘর থেকে বের হতে দেড়ি রিমার মুখ চালু হতে দেরি না।রিমা যতো তনিমাকে গালি দিতে পারবে ততই যেনো মনে শান্তি পায়। তনিমা চোখের পানিও এখন আর কাউকে দেখতে দেয় না। রিমা নিজের সংসার নিজের হাতেই রেখেছে সব আগের মতই আছে শুধু তনিমা ফেলনা জিনিসের মতো পরে থাকে৷

তিন মাস পর তনিমা বুঝতে পারে তনিমা প্রেগন্যান্ট। রাতুলকে বিষয়টা জানালে রাতুল প্রচুর পরিমানে খুশি হয়। যেই খুশি রাইমা হওয়ার সময়ও হয়নি।
রিমা তনিমার কথা শুনে জ্বলে পরে একা কার।
— তুমি এমন ভাবে খুশি হচ্ছো মনে হচ্ছে প্রথমবার বাবা হবে।
—এই তোর সমস্যা কি সব কিছুতে তোর বাগড়া না দিলে হয়না?

রিমা এবার চিন্তা করে অনেক হয়েছে আর না এবার কোনো একটা ব্যবস্থা নিতেই হবে।কিভাবে কি করা যায় কিভাবে এই বাচ্চা নষ্ট করা যায়?

রাতুল মনে মনে ভাবে এখন তো তনিমাকে বেড়াতে যেতে দেওয়া যায় আর কখনো ও ছেড়ে যাওয়ার চিন্তা করবে না। সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে হলেও আর কিছু করার সাহস করবে না।
—তনিমা এখন তুমি তোমার বাবার বাড়ি যেতে পারো৷
—এখন কি আমাকে শক্ত করে বাঁধতে পেরেছেন? এখন কিছু করব না এই জন্য কি বাবার বাড়িতে যেতে দিচ্ছেন।
— তুমি কিন্তু বেশি কথা বলছ।
তনিমা চিন্তা করে যাই আগে বাবার বাড়িতে বাবা মা কিভাবে আমাকে গ্রহন করে সেটাই দেখতে হবে। ভাইয়ের উপর ভরসা নেই ভাই তো পর করেই দিয়েছে বিক্রি করে দিয়েছে।
রাতুল তনিমাকে বাবার বাড়িতে বেড়াতে যেতে দেয়। তবে নিজে যায় না। রাসেল কে আসতে বলে রাসেল এসে নিয়ে যায়।

তনিমা বাড়িতে গিয়ে প্রথমেই বাবাকে জরিয়ে কান্না করে দেয়।
— ও বাবা তোমরা এবার কি আমাকে দেখে শুনে বিয়ে দিতে পারলে না? এতই বোঝা ছিলাম তোমাদের? একটা মেয়ের সংসার ভাংতে পাঠালে? একটা নিষ্পাপ বাচ্চার সামনে অপরাধী তৈরি করলে।
— মা ক্ষমা করে দে। আমাকে কেনো দোষ দিচ্ছিস আমাকে কি তোর মা কিছু জানায়? লোভী একটা মহিলা বিয়ে করেছি তোর মা টাকার জন্য সব করতে পারে৷
— কি বলেন এসব টাকার জন্য করেছি মানে? ওর জামাই আমাদের বলেছে বিদেশ থেকে আসছে অনেক টাকা পয়সা। তনিমাকে দেখেই ভালোবেসে ফেলেছে আমরা তো ওর কাছে বিয়ে দেওয়ার জন্য রাজি ছিলাম না। ও পরে টাকার লোভ দেখায় অনেক ওয়াদা বদ্ধ হয়।নানা রকম কথা বলে মস্তিষ্ক কে ধোলায় করে ফেলেছে নাহলে ওর মতো প্রতারকের কাছে মেয়ে বিয়ে দিতাম। আমরাও তো জানতাম না ওর বউ বাচ্চা আছে তাহলে কখনোই দিতাম না তাতে যতই টাকা থাকুক। (তনিমার মা)
— থাক মা তুমি আর কথা বইল না। তুমি আমার জীবনটা নষ্ট করে দিলে যাকে পছন্দ করে বিয়ে করেছিলাম তার টাকা ছিলোনা ঠিকিই কিন্তু সে তো আমাকে ভালোবাসত আমার ভালোবাসায় কোনো ভাগিদার ছিলো না। করতে হতো না সতীনের সংসার। তুমি অতিরিক্ত টাকার লোভে ছল চাতুরী করে সবুজের সাথে আমার সংসার টা ভেংগে দাও।
— কি আবোল তাবোল বলছিস? আমি কেনো এসব করতে যাবো কোনো মা কি তার নিজের মেয়ের সংসার ভাংগে?
—- চুপ করো মা। আমি সবই শুনেছি তুমি সবুজকে পছন্দ করতে না কারন ও ছিলো বেকার বেড়াতে আসলে তুমি ওর সাথে কেমন ব্যবহার করতে তাও তো চোখে দেখেছি। কয়টা দিন ধৈর্য্য ধরলে কি হতো? ও তো বলেইছে আমাকে নিয়ে যাবে।
— তো কি সারাজীবন আমি বেকার জামাই কে কাঁধে নিয়ে ঘুরতাম? আর আমি কি করছি? ওর ভাইরাই তো তোকে পছন্দ করত না রাতে এসে গলায় ছুড়ি ধরে জবানবন্ধি নেয় যে তুই সবুজকে ছেড়ে দিবি।
— হা হা হা, মা তুমি কি ভেবেছো বলবে আমাকে? শোনো মা আমি সবই জানি তুমি ওর ভাইয়ের সাথে হাত মিলিয়েছিলে যাতে ওরা আমাকে ভয় দেখায় ডিভোর্স হয়ে যায়৷ সবুজ আমাকে বার বার বলেছিলো তনিমা তুমি ভুল করছো রাতের ঘটনার সাথে আমি জড়িত না। আমি আজ বেকার কাল আমার টাকা পয়সা হবে চেষ্টা তো করতেছি আর আমি তো মূর্খ না একটু সময় দাও প্লিজ৷
— তুই তাহলে ছাড়লি কেনো? গা কামড়ে থাকতি।
— ওরা আমাকে ভয় দিখিয়েছে যদি সবুজকে না ছেড়ে দেই তাহলে সবুজকে মারধর করবে আর সম্পত্তির অধিকার থেকে বঞ্চিত করবে।আমি ওকে বাঁচানোর জন্য ঐদিন বুকে পাথর চাপা দিয়ে ডিভোর্স দেই। আমি যদি তখনও বুঝতাম এটা পুরোটাই তোমার চাল তাহলে কখনো এমন ভুল আর করতাম না কিন্তু যখন জানতে পেরেছি সব ঘটনা তোমার সাজানো তুমি সিনামাকেও হার মানিয়েছ তখন অনেক দেড়ি হয়ে গেছে।

তনিমার কথা শুনে তনিমার বাবা তনিমার মায়ের দিকে তাকিয়ে বলে তুমি এতো কিছু ঘটিয়ে ফেলেছ? আর আমার কাছে মিথ্যা নাটক সাজিয়েছ? আমি নিজে সবুজের সাথে বিয়ে দিয়েছিলাম আর তুমি কিনা ছি ছি।

ফ্লাশব্যাক,,,

তনিমা তখন ক্লাস নাইনে ছিলো। তুখন ওদের বাসায় সবুজ এসে প্রাইভেট পড়াতো। আরো আসে পাশে যে মেয়েরা ছেলেরা ছিলো সবাইকেই সবুজ পড়াতো। কিছু দিন পরে তনিমার সাথে ভালোবাসার একটা সম্পর্কে জড়িয়ে যায়। সবুজ তনিমার বাবার কাছে বিয়ের প্রস্তাব রাখলে তনিমার বাবা রাজি হয়৷ তখন সবুজ বেকার ছিলো তাই নিজের মেয়ের বিয়ের খরচ নিজেই বহন করেন।
নিজেই তনিমার জন্য লাল বেনারসী কিনে দেন। এভাবে তনিমার নতুন জীবন শুরু হয়৷ সবুজ মাঝে মাঝে আসত বেড়াতে চাকরি হলেই তনিমাকে নিয়ে যাবে এখান থেকে। তবে তনিমার মা এই বিয়েতে বিন্দু পরিমান রাজি ছিলেন না তাই এক বছর যেতে না যেতেই ছল চাতুরী করে তনিমার সাথে সবুজের ডিভোর্স করিয়ে নেয়।

— পুরোনো সৃতিচারণ করে কোনো লাভ হবে? যা হয়েছে হয়েছে। তুই রাতুল কেও ছেড়ে দে আর এসবে জড়িয়ে লাভ নেই তোকে ভালো ছেলে দেখে আবার বিয়ে দিবো।
—- হা হা হা,, কতো সহজেই তুমি একটা সম্পর্ক ভাংগার কথা বলো। আমি গর্ভবতী এখন কি চাইলেও সম্ভব? পারবে আমার সন্তান কে খাওয়াতে?
— তুই ছেড়ে চলে আয়। বাচ্চা নষ্ট করে ফেলবি।

—- মা,,, তোমার মুখে কি কোনো কথা বাঁধে না?

চলবে,