বেলা শেষে আলো পর্ব-০৫+০৬

0
686

#বেলা শেষে আলো
#০৫+৬
#ইসরাত_জাহান_এশা

রাসেল রাতুলের সাথে কিছুক্ষন কথা বলে চলে যায়। তনিমা বসে বসে কাঁদতে থাকে। হটাৎ রাতুল এসে বলে___
— তোমার খুব সাহস বেড়েছে তাই না?এতো সাহস কই থেকে আসে?
— মানে কি বলতে চান আপনি?
— মানে তুমি এখন বুঝো না?
রাতুল তনিমার গাল চেপে ধরে বলে কি সাহস তোমার তুমি আমার বাচ্চা পেটে নিয়ে আমাকে ছেড়ে যাওয়ার চিন্তা মাথায় আনো কিভাবে? আমি তোমাকে কি কোনো কষ্ট দেই সব সময় চেষ্টা করি তোমাকে সুখে রাখার। তাও তুমি আমাকে ছেড়ে যাওয়ার চিন্তা করো।
— এমন সুখে থাকার চেয়ে মরে যাওয়া অনেক ভালো।
তনিমা,,,, ঠাস করে তনিমার গালে রাতুল থাপ্পড় বসিয়ে দেয় তনিমা সিটকে গিয়ে খাটের সাথে বারি খায় সাথে সাথে কপাল কেটে রক্ত বের হওয়া শুরু করে। তনিমা চিৎকার দিলে রিমা আর রাতুলের মা দৌরে আসে। রাতুলের মা রাতুলকে না থামিয়ে বলে দে আরো দুইটা দে বাপের বাড়ি থেকে খালি হাতে এসেছে তাও মুখে বড় বড় কথা।
— মা তুমি এখান থেকে যাও তো আমাদের মাঝ খানে কথা বলোনা৷

রাতুলের মা রাতুলের ধমক শুনে সেখান থেকে রিমাকেও টানতে টানতে রিমার ঘরে নিয়ে যায় আর বলে এই বেডি তুই ঐখানে হ্যাবলার মতো দাড়িয়ে ছিলি ক্যান? আমার ছেলেকে তো চেনোই ওকে রেখে না আবার তোকে ধরে। রিমা রাতুলের মায়ের কথা শুনে তাজ্জব হয়ে যায়। কি নিকৃষ্ট মানুষ ছিঃ!
কই মুরুব্বি হয়ে গিয়ে মেয়েটাকে ধরবে তা না করে মজা নিচ্ছে। আমার না হয় সতীন কিন্তু ওনার৷ আসলেই উনি একটা খারাপ মহিলা তেমন আবার ছেলেও হয়েছে আমার সংসারে উনিই আগুন দিয়ে এখন সেখানে ঘী ঢেলে ভালো সাজতে এসেছে৷

রাতুলো তনিমাকে ফেলে রেখে বাইরে চলে যায়। তনিমা হাত কপালের সাথে চেপে ধরে। একটু পেস্ট লাগিয়ে দেয়। অনেকক্ষণ রক্ত ঝড়ার পর নিজে নিজেই বন্ধ হয়ে যায়।
তনিমা কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে যায়। রাত বারোটা বাজে তখন রাতুল বাড়িতে আসে এসে দেখে তনিমা এখনো ঘুমাচ্ছে। কপালে রক্ত জমাট বেঁধে আছে রাতুল দ্রুত হালকা পানি দিয়ে মুছে মলম লাগিয়ে দিতে নেয় এর মধ্যে তনিমার ঘুৃম ভেংগে যায়।তনিমা রাতুলের সামনে থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে বলে___
— থাক লাথি মেরে গরু দান করার কোনো দরকার নেই।
— আমি দুঃখিত আমি বুঝতে পারিনি।
— না বুঝচ্ছেন ভালো হয়েছে এই ক্ষতর থেকেও মনে আপনি আরো বড় ক্ষত তৈরি করেছেন। বুঝলাম আপনি এখানে সরি বলে মলম দিয়ে এই কাটা দাগ মুছে দিবেন। কিন্তু ভিতরে যে দাগ তৈরি করেছেন সেটা কিভাবে দূর করবেন?
— তনিমা তুমি বেশি কথা বলো। তুমি দয়া করে আমাকে রাগীয়ে দিয়ো না।আমি চাই না তোমার সাথে ঝগড়া করতে আমি চাই তুমি শান্ত থাকো আর সবটা মেনে নিয়ে সংসার করো আমি তোমাকে কখনো অসুখী করব না।
— আর সূখ তাও আবার আমার কপালে খুবই হাস্যকর!
— তনিমা প্লিজ বাজে বকা বন্ধ করো। আমি খাবার আনতেছি খেয়ে নাও আর মাথা গরম করো না।
এতে তোমারো ক্ষতি আমারো ক্ষতি সাথে বাচ্চাটারও ক্ষতি।

তনিমা কথা না বাড়িয়ে খুব বিরক্ত নিয়ে রাতুলের দিক থেকে মুখ সরিয়ে নেয়। তনিমার কোনো ইচ্ছে নেই রাতুলকে ধরে রাখার আর রাতুলকে পাওয়ার জন্য কারো সংসার ছিনিয়ে আনা। তনিমা সিন্ধান্ত নিয়ে নেয় মনে মনে আজ হোক কাল এই বন্ধি খানা থেকে মুক্ত হবেই।

আজ তনিমার একটি কন্যা সন্তান জন্ম নিয়েছে।রাতুল খুশিতে আটখানা। মেয়েটার গায়ের রং দূধে আলতা মাখানো। মনে হয় কোনো একটা পরীর মেয়ে। নাম রাখা হয় রিশা। রাতুল রিশাকে নিয়ে একটু বেশি মাতা মাতি করত যেটা রাইমাকে নিয়ে করত না আর এটা রিমা মোটেও সহ্য করতে পারত না। রিমা নিজে আর নিজের মেয়ের এমন অবহেলা দেখে কষ্টে পাথর হয়ে থাকত।

রিমা চিন্তা করে আর কতদিন এই ভাবে চলবে? আর কতো সহ্য করব। আমি এতোদিন অবহেলায় ছিলাম তা নাহয় সহ্য করেছি কিন্তু নিজের মেয়ের অবহেলা কিভাবে সহ্য করব। রিমা এবার কঠিন পদক্ষেপ গ্রহন করে তাতে যা হয় হবে।
রিমা কিছু দিনের জন্য বাপের বাড়ি যায়।
— মা আর কতদিন এমন সহ্য করব তুমি বলতে পারো?
— কি আর করবি নিয়তিতে ছিলো। তুই এক কাজ কর রাইমাকে নিয়ে চলে আয় ওকে ছেড়ে দিয়ে।
— না মা এটা কি বলো একটা মেয়েকে এই ভাবে নিজের জন্য বাবা ছাড়া করব। আর রাতুল আমার স্বামী ওর জন্য আমি আমার সর্বোচ্চ লড়াই করব তাতে আমার যতোটা নীচে নামতে হয় নামবো। আমি ওর প্রথম স্ত্রী আমার অধিকার বেশি। আমার সন্তানের অধিকার বেশি।
— তবুও নিয়তিকে মেনে নে।
— শোনো মা তুমি যতটা সহজে বলছ আমার জন্য রাতুলকে ছাড়া সম্ভব না। এর আগে যখন বলছি তখন তো তোমরা আমাকে ছারার কথা বলনি। তাহলে আজ কেনো বলছ৷ আমি আমার অধিকার বিন্দু পরিমান ও ছাড়ব না।
—- তাহলে তুই এখন কি করতে চাস?
— ফকিরের সাহায্য নিবো৷
— মানে কালোজাদু?
— এতো জেনে তো আমার কাজ নেই।
— এগুলো ভালো না রে মা।
ওর মাকে নিয়ে এক ফকিরের কাছে যায়।
— আপনাদের কি সমস্যা? (ফকির)
— সমস্যা আমার স্বামী দ্বিতীয় বিয়ে করেছে এখন চাই সতীন কে সরাতে আর সবার চোখে যেনো অসহ্যের মতো হয় ওর সাথে আমার স্বামী শাশুড়ী এতোটাই খারাপ ব্যবহার করুক যাতে ও নিজেই এই বাড়ি ছাড়তে বাধ্য হয়।
— আচ্ছা যা তোর কাজ হবে। এই যে তাবিজ-তুমার যা দিয়েছি সব ঠিক ভাবে পালন করবি।

রিমা তাবিজ নিয়ে বাড়িতে আসে। এসে ফকিরের দেওয়া মতো সব কিছু ঠিক ঠাক করে নেয়।

—আচ্ছা আপনি বাজারে গেলে বাবুর জন্য একটা ফিটার কিনে নিয়ে আসবেন আবার ভুলে যাইয়েন না। আপনি কিন্তু মাঝে মাঝে সব ভুলে যান।
— কি বললি? মুখে খুব কথা ফুটেছে, আমি ভুলে যাই? তোর এতো সাহস হলো কিভাবে আমাকে এতো বড় কথা বলার বল। কি হলো কথা বলছিস না কেনো। (চুলের মুঠি ধরে)
—- লাগছে ছাড়ুন বলছি। কি বলেছি আমি? যার জন্য আপনি হটাৎ করে এমন রেগে গেলেন।
— তুই আবার আমাকে প্রশ্ন করছিস৷ তোর মেয়ের জন্য কিছু আনব না দেখি তুই কি করস।

তনিমা বেশি কথা বাড়ায় না চুপ করে যায়। রাতুল অনেক্ষন একা একা তনিমার সাথে চিল্লাচিল্লি করে হাপিয়ে গিয়ে নিজেই চুপ হয়ে বিছানায় বসে থাকে।
তনিমাকে অবাক করে দিয়ে বলে___
—- সরি তনিমা।
অভিমানী মুখ নিয়ে তনিমা একটু মুখ ঘুরিয়ে নেয়। কিন্তু রাতুল এতেও প্রচুর রিয়াক্ট করে ফেলে।
— কি সমস্যা তোর? তোর কাছে ক্ষমা চেয়েছি তাই হাতির পাঁচ পা দেখেছিস? তুই আমার দিক থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিলি কেনো?
তনিমা দেখতে পায় রাতুলের চোখ দু’টি রক্ত বর্ন ধারন করে আছে। তনিমা প্রচুর ভয় পেয়ে যায়। ভয়ে তনিমা আর কথা বাড়ায়না।

কিছুদিন পর রাতুলের তনিমার প্রতি একটা অনিহা আসে। তনিমাকে রাতুল ছোট ছোট বিষয় নিয়ে গায়ে হাত তুলতে থাকে। রাতুলের অল্পতেই মাথা গরম হয়ে যেতো।
রাতুল নিজেও ভেবে পায়না কিভাবে কি হয়ে যায়। এতো অল্পতেই কেনো আমার মাথা গরম হয়। চাই না তনিমাকে মারতে চিল্লা চিল্লি করতে তাও কেনো এমন হয়। রাতুল তনিমার সাথে খারাপ ব্যবহার করে আবার কিছুক্ষণ পর ক্ষমা চাইত৷
কিন্তু সমস্যা হলো ক্ষমা চাইতে গিয়ে তনিমা যদি ক্ষমা করতে দেড়ি করত তাহলে রাতুল আবার মাথা গরম করে তনিমার উপর চিল্লা চিল্লি করত।

তনিমা অসহ্য হয়ে বাপের বাড়ি তে চলে যায়। রাতুল এবার আর বাঁধা দেয় না। রিশার বয়স তখন ৬মাস চলছে। তনিমা বাবার বাড়িতে গিয়ে ২মাসের মতো থাকে কিন্তু তনিমার মা আর ভাই তনিমাকে আর রাখতে চায় না। রিশা সারাদিন কান্না করত যেটা তনিমার মা সহ্য করতে পারত না। এদিকে তনিমার বাবাও প্রচুর অসুস্থ হয়ে পরে। এবার তনিমা কোনো উপায় না পেয়ে নিজে থেকেই রাতুলকে বলে নিয়ে যেতে।
— কেনো নিয়ে যাবো তোমাকে খুব তো ছেড়ে যাওয়ার জন্য লাফাচ্ছো দেখো কি করুন অবস্থা তোমার বাবার। আমার এখানে আমি মনে করি ঐখানের থেকে ভালো থাকো। তাও গায়ের জোর দেখিয়ে ঐখানে থাকো তুমি।
— অনেক তো কথা শুনালেন এখন কি আমাকে নিতে আসবেন?
— আমি রাস্তার মোরে দাঁড়াবো তুমি এখানে আসো।
— আমি একা কিভাবে যাবো?
— দেখো এতো জানিনা কিভাবে আসবে। আমি তোমাদের ওদিকে যাবো না। তুমি আস্তে আস্তে রিশাকে নিয়ে আসো। আর রাস্তাও তো বেশি না সামনে তো আমি আছিই।
— আচ্ছা আসতেছি।

তনিমা ব্যাগ পত্র ঘুছিয়ে বের হয় যাওয়ার জন্য। তখন তনিমার বাবা বলে ___
— মা রে সাবধানে থাকিস। একদিন তোর সুখ হবেই কখন না কখন মারা যাই জানিনা দোয়া করিস।
— বাবা এভাবে বলো না। সুখ কপালে না থাকলে কখনো ছিনিয়ে আনা যায় না।
— যা আল্লাহর নাম নিয়ে। জানিনা আর কখনো দেখা হবে কিনা।
— বাবা এভাবে বলো না। কিছু হবেনা তোমার। আসছি আমি।

তনিমাকে রাতুল ওদের মোর থেকে নিয়ে যায়। অনেক দিন পর রিশাকে পেয়ে রাতুল যেনো ঠিক আগের মতো হয়ে যায়।
কিন্তু রিমা তনিমাকে দেখেই চোখ যেনো গোল গোল হয়ে যায়।
— তুমি আবার এসেছো?এতো অত্যাচারের পরও তোমার ইচ্ছে করে এ ঘরের ভাত খেতে?
তনিমা চুপ করে থাকে। রাতুল রিমাকে ধমক দিয়ে বলে তোর কি অশান্তি ছাড়া ভালো লাগে না?
তনিমা আসাতে তোরে কি আমি কোনো কষ্টে রাখছি? চেষ্টা তো করি দুজন দুজনকে সমান চোখে দেখতে।

রিমা মনে মনে বলে অশান্তি ঘরে বয়ে এনে বলে অশান্তি ভালোলাগে না।আবার সমান চোখেও দেখে তোর চোখ সমান থাকলে তো সমান চোখে দেখবি। রিমা ঘরে গিয়ে চিন্তা ভাবনা শুরু করে। না এভাবে আর হচ্ছে না। এবার রাতুলের উপর নয় তনিমার উপর কিছু একটা করতে হবে। যাতে সাপও মরে লাঠিও না ভাংগে।

তনিমা রুমে গিয়ে দেখে রুম একদম ঘুছানো ফিটফাট।তখন তনিমা মনে মনে ভাবে রাতুল যতই খারাপ ব্যবহার আমার সাথে করুক আসলে ও আমাকে ভালোবাসে। কিন্তু হবে এই ভালোবাসা দিয়ে যে ভালোবাসায় কোনো শান্তি নেই।
তনিমার শাশুড়ী তনিমাকে দেখে মুখ ভ্যাংচি কেটে ওদিকে মুখ ঘুরি ফেলে। এমন কি রিশা যে তার নাতী তার দিকেও ফিরে তাকায় না।

তনিমা মনে মনে ভাবে থাক নিজের আপন মা ভাই তারাই পর করে দিছে। আর এতো সতীনের সংসার টিকে থাকতে হলে সহ্য ক্ষমতা আরো বাড়াতে হবে৷
সামনে দাড়িয়ে রাতুল হাতে তুরি দিয়ে বলছে__
— কি ভাবছ?
— নাহ কিছুনা।
— জানো তোমাকে খুব মিস করেছি। কিন্তু আমি জানি না আমার কি যেনো হয়ে যায় এই তোমাকে মনে করি আবার কতক্ষণ পর তোমার উপর রেগে যাই আর মনেই পরত না।
— আমাকে না হয় মনে নাই পড়ত কিন্তু মেয়েটা?
— রিশার কথা মনে পড়ত কিন্তু বললাম কি যেনো হতো।
— থাক আর বলতে হবে না।
— তুমি ভুল বুঝছ তনিমা।
— সঠিক ভুল এসব ভেবে লাভ নেই আমার জীবনে৷ আমার জীবন ক্ষতিতে পরিপূর্ণ।

মাস খানেকের মধ্যেই তনিমার শরীর ভাংতে থাকে। আসতে আসতে শরীর শুকিয়ে যায়। তনিমা ছিলো লাল টুকটুকে ফর্সা কিন্তু মাসখানেকের মধ্যে তনিমার এমন অবস্থা হয় তনিমার আগের চেহারাই বোঝা যায় না।
তনিমার শরীরে যেনো শক্তি পায় না।রাতুল সব সময় তনিমার খেয়াল রাখত। কিন্তু খেয়ার রাখলে কি হবে রাতুল কখনো ডাক্তার কবিরাজ কারো কাছেই নিয়ে যেতো না।

আগে রিমা তনিমাকে সারাদিন গালাগালি করত কিন্তু এখন রাতুলের মাও তনিমাকে গালাগালি করে। রিশাকে পর্যন্ত চোখে দেখতে পারত না। সারাদিন তনিমা কে কথা শোনাতো। রাতুলকে বললে রাতুল ঝামেলা করবে তাই তনিমা রাতুলকে এসব বিষয়ে কিছু বলত না। তনিমা অসুস্থ শুনে তনিমার বাবা রাসেলকে পাঠায় তনিমাকে নেওয়ার জন্য । রাতুলও তনিমাকে যেতে দেয়। কারন রাতুল জানে তনিমার বাবা খুবি ভালো মানুষ তনিমাকে যেভাবে হোক সুস্থ করবেন।
তনিমার বাবা নিজের অসুস্থতাকে লুকিয়ে মেয়ের জন্য দৌড়াদৌড়ি শুরু করেন। ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলে রিপোর্ট নরমাল আসে। কোনো উপায় না পেয়ে তনিমার বাবা কবিরাজের শরণাপন্ন হয়।
— আপনার মেয়েকে ক্ষতি করা হয়েছে। যাতে ও শুকিয়ে আস্তে আস্তে দূর্বল হয়ে মৃত্যুর মুখে ঢোলে পরে।
— কি করবে এমন ক্ষতি?
— কেনো ওর ঘরে কি সতীন নেই।
— আছে তাই বলে এমন জঘন্য কাজ।
— অবাক হওয়ার কিছু নেই। এর থেকেও অনেক খারাপ মানুষ আছে।
— এখন কি করতে পারি বলুন। আমরা অনেক গরীব চেষ্টা করবেন যেনো অল্পতে পারি।

আগে ওর পেট টানাতে হবে। তখন কবিরাজ ওনার স্ত্রী কে ডেকে পেট টানালেন আর ভিতর থেকে কিছু তাবিজ গলে যাওয়া তাবিজ বের করে আনলেন।
—এই নেন। এগুলো ভালো মতো মানতে বলবেন৷ তাহলে সুস্থ হবে। আর সতীন কে অতিরিক্ত বিশ্বাস করা থেকে বিরত থাকবে। এতে তোমার আর তোমার মেয়ের জন্যই মঙ্গল।

তনিমার উপর থেকে ক্ষতির প্রভাব কেটে গেলে তনিমা আগের মতই সুস্থ হয়ে উঠে। কিন্তু তনিমার বাবা অসুস্থ হয়ে যায় ডাক্তার জানায় লিভার নষ্ট হয়ে গেছে বড়জোর তিনমাস বাঁচতে পারেন৷
তনিমা চিন্তা করে ওখানে গিয়ে লাভ কি বাবার কাছেই থাকি আর বাবাও চায় আমি ওনার কাছে থাকি। তনিমা রাতুলের সাথে কথা বলে থাকার পারমিশন নেয়।
কিন্তু কিছুদিন পর সেটা রাসেল আর তনিমার মা’য়ের সহ্য হয়না। তাই বার বার তনিমাকে চলে যেতে বলে। তিশাও সেটাই বলে।
— আপা তুই চলে যা দেখতেই তো পাচ্ছিস সংসারে কত অভাব চলছে। আর এই সময় তুই আর তোর বাচ্চা এভাবে মা আর ভাইকে জ্বালাতন করিস না।

তনিমা তিসার কথা শুনে ঘৃণায় চলে যায় আবার রাতুলের কাছে। রিমা তনিমাকে আবার আগে মতো দেখে হতভম্ব হয়ে যায়। বুঝতে পারছে না কি করবে। যতো চেষ্টা করছে ততবার হেরে যাচ্ছে। রিমা তনিমাকে দেখে এবার আর ঝামেলা পাকায় না।
তনিমা নিজের রুমে গিয়ে শুধু বাবার কথাই ভাবতে থাকে। বার বার মন বলছে কিছু একটা হবে। কিছু একটা হারিয়ে ফেলবে। মনে অশান্তি যেনো যাচ্ছেই না।তনিমার মনে শুধু একটা চিন্তা আর কয়দিন যদি থাকতে পারতাম বাবার কাছে। পরে আবার যাবো এবার যে যাই বলুক বাবার কাছ থেকে আর আসব না।
কিন্তু তনিমার ভাগ্য এতোটাই খারাপ তনিমা যাওয়ার পরের দিনই তনিমার বাবা মারা যায়। দুই দিন পর তনিমার চাচাতো ভাই ফোন দেয়। তনিমা চাচাতো ভাইয়ের ফোন নম্বর টা দেখে কলিজা যেনো শুকিয়ে আসে। হটাৎ বাড়ি থেকে ফোন বাবার কিছু হলো নাকি___
— হ্যালো।
— হুমম আপা কেমন আছো?
— আমার খবর পরে আগে বল বাবা কেমন আছে। ভাইর ফোন অফ তোর ফোন অফ কাউকে পাইনি খোজ নেওয়ার জন্য।
— আসলে বৃষ্টিতে কারেন্ট ছিলো নাই তাই চার্জ দিতে পারিনি। যাই হোক শুনো চাচা আর নেই। গত পরশু মারা গেছেন।
— বাবা পরশু মারা গেছেন তুই আমাকে আজকে জানাস৷ ভাই তোর কি পাষাণ। কি হতভাগী আমি বাবার মৃত্যু দেখতে পারলাম না।

তনিমা খুব তারাতারি বাড়িতে আসার জন্য রেডি হয়। বাড়িতে এসে তনিমা খুব কান্নাকাটি করে বাড়িতে যদি কেউ আপন থাকে তা হলে বাবা। তনিমাকে বোঝার মতো আর কেউ থাকল না,,,,


রিমা এবার কঠিন পদক্ষেপ নেয় তনিমার উপর পুরোপুরি ভবে জ্বীন চালান করে যাতে তনিমা ভয়ে সব সময় কুকরে থাকে আর ভয়ে ভয়ে জীবন শেষ হয়ে যায়।
তনিমা একদিকে বাবার মৃত্যুতে শোকে কাতর অন্য দিকে কালোজাদুর প্রভাব তনিমাকে আবার আগের মতো করে ফেলে। তনিমার সাথে ইদানীং ভয়ংকর কিছু কাহীনি হচ্ছে যাতে তনিমার পাগলের মতো অবস্থা।

চলবে,,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে