Sunday, July 27, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1017



MEANINGLESS LIFE PARTNER Part-13

0

#MEANINGLESS_LIFE_PARTNER
পর্ব:13
#লেখিকা_Arshi_khan

(WAITING FOR A NEW JOURNEY:একটি নতুন যাত্রার জন্য অপেক্ষা করছি)

আপনার জন্য যখন সবচেয়ে সুখের সময় চলতে থাকে সেই সময়টা যে ঠিক কত্তটা তাড়াতাড়ি চলে যায় তা আপনি ভাবতেও পারবেন না।দেখতে দেখতে আমাদের বিয়ের দুইমাস বিশদিন পূরণ হল।এদিকে ফেমেলির কাউকে এখন ও বলা হয়নি আমি যে আবার সিঙ্গাপুর যাব।ভিসা নিয়ে দেশে এসেছিলাম। আগেই বলেছি বোনের বিয়ে উপলক্ষে এসেছি।কিন্ত ভিসা নিয়ে আসব কেউ যানে না।সবাই ভেবেছে এবার এখানেই থেকে যাব।আর যাবনা।কিন্ত এসেই যে রুতকে বিয়ে করার জন্য মন উতলা হয়ে উঠবে বুঝতে পারিনাই।ভিসা এর জন্য দুই লক্ষ টাকা খরচ করে এসেছি।শুধু টিকিট কাটার অপেক্ষা।এদিকে মামা বারবার তাড়া দিচ্ছেন সিঙ্গাপুর যাওয়ার জন্য। কারণ আমার পোস্টে আমি যাকে রেখে এসেছি তার ও দেশে ফেরার সময় এসেছে।তাই আমার পনের থেকে বিশ দিনের মধ্যেই সিঙ্গাপুর ফিরতে হবে।কিন্তু আব্বু চাইছিল আমি দেশে ব্যবসা করি।অবশ্য আমার যাওয়ার কথা জানে না বলেই বলেছে।কিন্ত আর সবাই কে যেমন তেমন বোঝাতে পারলেও রুত কে মানাতে সময় লাগবে।কিন্ত আমার যে যেতেই হবে।কারণ আমি যে ভিসা তে সিঙ্গাপুর গেছি ঐ ভিসাতে আমি প্রায় আঠারো বছর সিঙ্গাপুর এ যাতায়াত করতে পারব নিমেশে।যদিও এত্ত বছর থাকার ইচ্ছে নেই।আর ব্যবসা সম্পর্কে আমার ধারণা 0%।তাই এখন আমি আরো দুই-তিন বছর সিঙ্গাপুর এ থেকে আমাদের ভবিষ্যত এর চিন্তা করতে পারি।এখন আসল কথা হল টিকিট কাটার আগে কাউকে জানানো জাবেনা।টিকিট কেটে পুরো পরিবার কে এবং রুতকে জানাব।আর আমি চাইনা রুত এত্ত আগের থেকেই কষ্টে থাকবে।(আয়ান বারান্দায় বসে মনে)

আয়ান এই আয়ান শোন না।(রুতবা বারান্দায় এসে আয়ান এরহাত ধরেই)

হ্যা রুত বল।(আয়ান হতভম্ব হয়ে)

কিছু ভাবছিলে?(রুতবা ব্রু কুচকেই)

নাতো এমনেই। বল কি জন্য ডাকছিলে?(আয়ান রুতবার হাত টেনে কাছে এনে)

আমার পরীক্ষার রুটিন দিয়েছে কলেজ থেকে।আমার বান্ধবীর কল এসেছিল।আর চারদিন বাকি পরীক্ষার।তাই ভাবছিলাম পরীক্ষার পনের দিন বাড়িতে গিয়ে থাকব।তুমি কি বল?(রুতবা উতলা কন্ঠে)

পনের আর চার মানে ঊনিশ দিন ওর থেকে দূরে থেকে আবার বিদেশ চলে যেতে আমি পারব কি করে?আর ও এখানে থাকলেও টিকিট এর জন্য ঢাকা যেতে পারব না।(মনে মনে)
এত্ত দিন পরীক্ষা হবে?(আয়ান মন খারাপ করে)

হুম।কি করব বল?তুমি যদি চাও আমি পরীক্ষা আর দিব না।তাহলে আমার কোন জোর নেই।তোমার ইচ্ছা এই সব ।(রুতবা আয়ান এর হাত শক্ত করে ধরে)

পড়া চোর কোথাকার?খবরদার এমন কিছু বলেছ তো।আমার সপ্ন পূরণ করতে পারি নাই। কিন্ত আমি চাই তুমি পড়া কমপ্লিট কর।নিজের জন্য একটা যোগ্য সার্টিফিকেট তৈরি কর।যেন ভবিষ্যত এ কিছু করতে পার।তা না করে এখন পরীক্ষার সময় মজা করছ।কালকেই তোমাকে বাড়ি দিয়ে আসব। সব গোছাও।(আয়ান রাগি সুরে)

আসছে আমার বিদ্যা সাগর।ঢং নিজেও পড়ার জন্য পাগল ছিল আমাকেও বানাবে।আব্বুকে বলে পড়ালেখা জীবনের থেকে বিদায় করতে চাইছিলাম টেন এই।কিন্ত এই খারাপ বিদ্যা সাগর এর জন্য এখন ও আমার এই পড়া লেখা করতে হচ্ছে। দূর ভাল লাগে না।এই পরীক্ষার প্যারা শেষ কবে হবে আল্লাহ মালুম। কালকের থেকে আবার পড়াতে মন দিতে হবে।ফেল করলে শশুর বাড়িতে মুখ দেখাতে পারব না।এদিকে তিনমাস হল ভাল মতো পড়ালেখা করা হয়না।তাই এই চারদিনে বই পড়ে নিজেকে পাগলি বানাইতে হবে।নাহলে নির্ঘাত ফেল মারব।এসব ভাবনার মধ্যেই নিচে চলে আসছি।নাহলে খারাপ লোকটার এখনি আমাকে পড়ানোর কিড়া উঠত।রাতের আগে তোমার ধারে কাছেও যাচ্ছি না খারাপ লোক।সারাদিন আম্মুর সাথেই বসে বসে টুকটাক কাজ করলাম।দুপুর এ খাওয়ার পর ও উপরে না গিয়ে আম্মুর রুমে ঘুমাতে গেছি বিকালে।আব্বু ঢাকা তে গেছে কি একটা কাজে।আম্মুর সাথে থাকার কারণে আয়ান ডাকতে এসেও ফিরে গেছে।সন্ধার সময় চা নাস্তা ও খেলাম তারপর টিভি দেখতে বসলাম।রাতের খাবার পর সব গুছাতে লাগলাম আম্মুর সাথে।(রুতবা মনে মনে)

কিরে আয়ান এর সাথে ঝগড়া করেছিস নাকি?(আম্মু রুতবার হাত ধরেই)

নাতো।(রুতবা কাজ বন্ধ করে)

তাহলে সারাদিন রুমে না গিয়ে আমার পেছনে পেছনে ঘুরলি কেন?(আম্মু ব্রু নাচিয়ে)

এমনি।যাও তো তুমি ঘুমাতে।এমনেও কালকে যাচ্ছি আব্বুর বাড়ি। তাই তোমার সাথে সময় কাটালাম।এখন তুমি গিয়ে রেস্ট কর।আমি এগুলো ধুয়ে ঘুমাতে যাব।(রুতবা আম্মুর উদ্দেশ্য)

এখনি চুপচাপ রুমে যাবি।এসব আমি করে নিব।চারদিন পর পরীক্ষা এখন কে বলেছে তোকে কাজ দেখাতে। (আম্মু রুতবার কান ধরে)

ছাড় লাগছে।(রুতবা চোখ বন্ধ করে)

যা রুমে গিয়ে ঘুমাবি।সকালে উঠে ভাইজান এর বাড়ি যাবি।আর শোন ভাল মতো পড়ালেখা করবি।যদি ফেল করিস ঠেং ভেঙ্গে দিব।আর আয়ান এর সাথে রাগারাগি হলে বল ওকে ডেকে বকে দিচ্ছি। কিন্ত তোর যদি দোষ থাকে তাহলে গিয়ে ওর রাগ ভাঙ্গাবি।নতুন বিয়ে হয়েছে কোথায় দুজন মিলেমিশে থাকবে তানা টম এন্ড জেরির মত ঝগড়া করে বেড়ানো হচ্ছে। (আম্মু রুতবার উদ্দেশ্য)

তোমার ছেলে আর তুমি এক খেতের এই আলু।দূর ভাল লাগেনা।যেখানেই যাই পড়ার গান এই শুনতে হয়।
বলেই দৌড়ে ওপরে চলে এসেছি।কে এইবা চাইবে আবার কান মলা খেতে।রুমে ঢুকে দেখি আয়ান ঘুরে শুয়ে আছে।ঢং আর ঢং!যাই ঘুমাই।এ ছাড়া আর কিইবা করব।গেট লক করে লাইট অফ করে কানার মতো খাট খুঁজে খাটের এক সাইটে শুয়ে পড়লাম। শুতে দেরি ঐ খারাপ ছেলের ঝাপটে ধরতে দেরি হয়নি।
কি সমস্যা?(রুতবা আয়ান এর বুকে হাত দিয়ে)

চুপি চুপি বলি তোমায় প্রিয়তমা
আমায় ছেড়ে যেন দূরে যেওনা!!
তুমি আছ আমার হৃদয়ের একদম গহীন বনে
তোমায় ছাড়া থাকতে পারবোনা এ ভূবনে।
কেন বোঝ না?(আয়ান রুতবার কপালে কপাল ঠেকিয়ে)

আসছে আমার কবি মশাই।সরো তো আমি ঘুমাব। (রুতবা মুখ ভেংচি কেটে)

কালকে যাচ্ছ উনিশ দিনের জন্য। এখন ছেড়ে রাখলে চলে বল?(আয়ান রুতবার ঠোঁটের কাছে এসে)

কেন তুমি কি দিয়ে চলে আসবে?(রুতবা অবাক চোখে)

হ্যা। তা নাহলে তুমি রাতে আমার জন্য ঘুমাতে পারবেনা।সকালে পরীক্ষার হলে পরে পরে ঘুমাবে।আর ফেল করলে আমার দোষ দিবে তাতো হবে না রুত পাখি।তাই আজকে আর কালকেই আমার অনেক দিনের আদর ভালোবাসা গুলো আমি চাই।(আয়ান রুতবার উদ্দেশ্য)

আসছে আমার সব আদর নিতে। দিবনা যাওতো ঘুমাও।(রুতবা মুখ ঘুরিয়ে)

সত্যি তো?(আয়ান রুতবার মুখ নিজের দিকে ঘুরিয়ে)

হুম সত্যি। (চোখ বন্ধ করেই রুতবা)

দেখা যাক। (মুচকি হেসে রুতবাকে জড়িয়ে আয়ান)

পরের দিন সকাল এই আমরা রুতদের বাড়ির উদ্দেশ্য রওনা হলাম। যাওয়ার পর সারাদিন বেশ জামাই আদর খেয়ে সন্ধার নাগাদ চলে এসেছি।ওর পরীক্ষা এখন হওয়ার কারণে আমার ও একটা সুযোগ আসল।খুব কষ্ট ও লাগছে সবাই কে ছেড়ে যাওয়ার কথা ভাবতেই।কিন্ত কি করব ভিসার জন্য দুই লক্ষ টাকা দেওয়া ছিল তাই মন না চাইলেও যেতেই হবে।আগের সাত বছর বোনদের বিয়ে,নতুন বাড়ির ও কিছু জায়গা কিনেই শেষ হয়ে গেছে।ব্যাংকে খুব অল্প টাকাই জমেছে।আর এই টাকা দিয়ে ব্যবসা করা সম্ভব নয়।তাই আরো দুই-তিনবছর সিঙ্গাপুর থাকলে ভবিষ্যত এর জন্য আমার আর কোন টেনশন থাকবেনা।পরেরদিন সকালে যখন আম্মু আব্বুকে আবার যাওয়ার কথা বললাম। তারা খুব অবাক হয়ে গেছিল। আম্মু তো যেতে দিতে একদম রাজি নয়।পরে টাকা জমা দেওয়ার কথা বলে ঢাকার উদ্দেশ্য রওনা হয়ে গেছি।মেডিক্যাল টেস্ট, ভিসা প্রসেসিং ও টিকিট কাটলাম দশদিন লাগিয়ে। আর পনের দিন পর এর টিকিট পেয়েছি।টিকিট নিয়ে বাড়ি ফিরলাম।আম্মুর মন ভিষন খারাপ। আম্মুর সাথে রাতে কথা বলে কালকে রুত এর বাড়ি যাওয়ার কথা বললাম। আম্মু ও রাজি হয়ে গেল।রাতের খাবার খেয়ে ঘুমাতে চলে আসলাম। এই দশদিন আর যাওয়া হয়নি।কল এ কথা বলেছি বেলায় বেলায়।কালকে না বলেই যাব সারপ্রাইজ দিতে।আর মাত্র নয়দিন বাকি ওর পরীক্ষার শেষ হবে।তাই ভাবলাম বাকি নয়দিন ওর সাথে ওদের বাড়ি থাকব।দশতম দিন বাড়ি ফিরে ওকে জানাব যাওয়ার কথা।নাহলে মন খারাপ হলে পরীক্ষা খারাপ হবে।এমনে পড়া চোর।
যেই ভাবা সেই কাজ পরের দিন সকাল এই চললাম শশুর বাড়ির উদ্দেশ্য। রুত গেছে পরীক্ষা দিতে।এই সময় ছোট সালার সাথে ওর স্কুল এর ব্যাপারে কথা বললাম। আংকেল এর সাথে কাজ এর কথা বললাম। দুপুর এর দিকে রুত বাড়ি ফিরে আসল।আমাকে দেখে অবাক হয়ে তাকিয়েই ছিল কত্তক্ষন। আমি ওর পেছনে ওর রুমে চলে গেলাম।
কি হল আমার রুত পাখির?মন খারাপ?পরীক্ষা খারাপ হয়েছে?(আয়ান রুতবাকে পেছনের থেকে জড়িয়ে)

বললে না কেন আজকে আসবে?(রুতবা মুখ ভার করেই)

সারপ্রাইজ দিলাম আমার রুত পাখিকে।আর একটা কথা যত্তদিন তোমার পরীক্ষা শেষ না হবে ততদিন আমি এখানেই তোমার সাথে থাকব।এখন জলদি ফ্রেস হয়ে আসতো রুত পাখি।খুব খুদা লেগেছে।তোমার জন্য না খেয়ে বসে আছি।(আয়ান রুতবার কপালে একটা চুম্বন করে)

কেন না খেয়ে বসে আছ?আম্মু তোমাকে না খাইয়ে বসিয়ে রাখছে।দাড়াও আমি দেখছি।(রুতবা বলেই বের হতে নিবে)

আরে বোকা আন্টি তো সেই এক ঘন্টার আগের থেকেই খাবার এর জন্য বলছে।আমি তোমার জন্য বসে আছি।একসাথে খাওয়া হয়না কতদিন তাই জন্য। (আয়ান রুতবার হাত ধরেই)

ওরে ভালোবাসারে।ঢং এর কাথাবালিশ।বস এখানে আমি ফ্রেস হয়ে আসছি।
বলেই একটা থ্রিপিস নিয়ে ফ্রেস হতে চলে গেলাম ।ফ্রেস হয়ে এসে দুপুর এর খাবার খেতে বসলাম। ইতিমধ্যেই আম্মু অনেক রকমের রান্না সেরে ফেলেছে।খাওয়ার পর আমরা একটু রেস্ট নিতে গেলাম। আমি তো এতদিন পর আয়ান কে পেয়ে মহা খুশি ওকে একেবারে জড়িয়ে ঘুম দিলাম। (রুতবা,)

পরীক্ষা পড়া সব মিলিয়ে নয়দিন খুব তাড়াতাড়ি এই চলে গেল ।দশতম দিন আমরা বাড়ি ফিরে আসলাম। শশুর বাড়ির ফেরার সময় ও এই প্রথম মেয়ে যে এত্ত খুশি মনে যায়।বাড়িতে ফিরে ওর আনন্দের শেষ নেই।সারাদিন খুব সুন্দর মত এই গেল।রাতের বেলা ওকে কোলে বসিয়ে বারান্দার বসে চন্দ্র বিলাস করছি।
নীল আকাশে তারার মেলা,,
মধ্য রাতে চাঁদের খেলা।
মিষ্টি সকাল শিশির ভেজা,,
শুধু দেখ আমার প্রেমে
কতোই না মজা।রুত(আয়ান রুতবার গলাতে মুখ গুজেই)

হুম কবি মশাই।(রুতবা মুচকি হেসে)

পাচঁদিন পর এ আমার সিঙ্গাপুর যাওয়ার টিকিট কেটে ফেলেছি।(আয়ান রুতবার গালে হাত রেখেই)

জানিতো ।(রুতবা অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে)

কে বলেছে?(আয়ান অবাক চোখেই)

আমি দুপুর এ এসে তোমার টিকিট আর পার্সপোট দেখেছি একসাথে।ভেবেছিলাম আগের টিকিট হবে হয়তো।পরে ডেইট দেখলাম। ভাল তো যাও ধরে রেখেছে কে?(রুতবা আয়ান এর উদ্দেশ্য)

তোমার আমার উপর কোন রাগ আসছেনা?(আয়ান রুতবার উদ্দেশ্য)

নাতো।তোমার মন চাচ্ছে তুমি যাবে।আমাকে যখন বলার প্রয়োজন মনে করোনি।আমার ও তাই তোমার উপর কোন রাগ নেই।আচ্ছা এখন ঘুমাব চল।(রুতবা দাড়িয়ে)

রুত আই এম সরি পাখি।আসলে ভিসা নিয়ে এসেছিলাম। এখন না গেলে দুই লক্ষ টাকা উঠানো ও যাবেনা।আমার কষ্টের টাকা তাই আমি চাইনা তা বিফলে যাক।সেই জন্য এই যাচ্ছি। (আয়ান রুতবার হাত ধরে কাছে টেনে)

যাও আমরা তো আর বারণ করি নাই।তোমার কাছে যখন টাকাই সব তাহলে এখানে আমাদের রাগ অভিমান এর কিছুই না।ঘুম পাচ্ছে ঘুমাতে চল।
বলেই এসে ঘুমিয়ে পড়লাম ।এত্ত খুশি মনে বাড়ি ফিরলাম এই ভেবে নতুন সদস্যের আশার খবর দিব আয়ান কে।অথচ এসে উল্টো ওর যাওয়ার খবর এ মনটাই খারাপ হয়ে গেল। বলবোই না আমার বেবি আমি এই আদর করে বড় করব।ও গিয়ে বসে থাকুক আর টাকা কামিয়ে টাকার মেশিন এ পরিণত হোক।(রুতবা মনে মনে)

রুত এমন রেগে থাকলে চলবে?তুমি এমন করলে আমার কষ্ট লাগবে তো?(আয়ান রুতবাকে জড়িয়ে )

আয়ান ঘুমাও আমি রেগে নেই। ঘুম পাচ্ছে তাই ঘুমাতে এসেছি।(রুতবা)

আমি ও ওর কথা শুনে ঘুমিয়ে পড়লাম।পরের পাচঁদিন কে যতোটা পারি নিজের কাছে রেখেছি।আদর ভালোবাসার কোন কমতি রাখিনাই।যদিও ও কিছুক্ষণ পর পর একটু রেগে যেত।আমার যাওয়ার কথা শুনলে চোখ ছলছল করে উঠত।সে সময়ে ও বাহানা দিয়ে বাইরে চলে যেত।কালকে দুপুর এর টিকিট কাটা হয়েছে।সবাই এসেছে দেখা করতে।বোনেরা, বোনদের হাজবেন্ড ও বেবিরাও।রুত কে সারাদিন কাছে পাওয়া হয়নি।সারাদিন সবাই মিলে মিশে গল্প করেছে।রাতের খাবার খেয়ে এই রুমে আসতে পেরেছি। এসে দেখি রুত মন খারাপ করে বসে আছে।আমি ওর পাশে বসে আমার সাথে ওকে জড়িয়ে ধরতেই হালকা চিৎকার করে কান্না করতে লাগল। এই কয়েকদিন না কান্না করলেও আজকে হয়তো নিজেকে সামলাতে কষ্ট হচ্ছে। হঠাৎই ও আমাকে ছাড়িয়ে আমার ডান হাত টা নিয়ে ওর পেটে ধরল।
কি হয়েছে রুত পাখি?(অবাক হয়ে আয়ান)

তোমার যাওয়ার পর আমার আর আমার অনাগত বাবুই এর খেয়াল কে রাখবে বলে যাও?(রুতবা কান্না করে)

মানে!(আয়ান রুতবার চোখের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়েই)

আমি প্রেগন্যান্ট আয়ান।(রুতবা আয়ান এর গালে হাত দিয়ে)

কতদিন হল জেনেছ?(আয়ান দাঁতে দাঁত চেপে)

যাওয়ার তিনদিন পর এই যেনেছিলাম।সারপ্রাইজ দিতে চাইছিলাম।কিন্ত এসে দেখি তুমি এই আমাদের রেখে দূরে যাওয়ার চিন্তা করে রেখেছ।তাই আমিও রাগ করে বলি নাই।এখন আর লুকিয়ে রাখতে পারছিনা।আর না পারছি তোমার যাওয়ার কথা মেনে নিতে।তোমার না গেলে হয়না।(আয়ান কে জড়িয়ে রুতবা)

এখন যাই।আমাদের বাবুই হওয়ার আগেই আমি ফিরে আসব।প্লিজ রুত এমন করে কান্না করনা আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। আমি ওর কথা জানলে টিকিট কাটতাম না সত্যি বলছি।
মনের মধ্যেই বেশ গিলটি ফিলিংস হচ্ছে। তবে আমি নিরুপায়।আমাদের ভবিষ্যত এর কথা চিন্তা করে হলেও আমার যেতে হবে।পরের দিন সকালে ঘুম থেকে উঠেই সবাই কে খুশির সংবাদ দিতেই পুরো বাড়ির সবাই খুশিতে আত্মাহাড়া হয়ে গেল। কিন্ত আমার যাওয়ার কথা চিন্তা করে সবাই আবার কেদে উঠল।সকালের ব্রেকফাস্ট করে বের হওয়ার জন্য রেডি হতে উপরে আসলাম। রুত খাটের কিনারে বসে ফুফিয়ে কান্না করে যাচ্ছে। আমি রেডি হয়ে ওর সামনে গিয়ে ওকে আমার সাথে দাড় করালাম।
আমার হৃদয়ে রয়েছ তুমি,
তোমায় নিয়ে সপ্নের জাল বুনি ,
ভালোবাসি আমি শুধুই তোমায়,
জনম জনম ভালোবাসতে চাই আমার রুত পাখি।ফিরে আসব খুব শীঘ্রই। অপেক্ষার প্রহর গুনে রেখ।(রুতবার কপালে চুম্বন করে আয়ান)

ভালোবাসি খুব ।(রুতবা মাথা উটু করে)

আমিও রুত পাখি।
তারপর ওর অধরে ভালোবাসার পরশ একে দিলাম। আর ওর পেটের উপর চুম্বন করে নিচে চলে আসলাম। যাওয়ার সময় এসেছে।(আয়ান)

**************(চলবে)**************

MEANINGLESS LIFE PARTNER Part-12

0

#MEANINGLESS_LIFE_PARTNER
পর্ব:12
#লেখিকা_Arshi_khan

(HONEYMOON TIME:মধুচন্দ্রিমার সময়।রোমান্টিক পার্ট ভাল না লাগলে ইগনোর প্লিজ)

সন্ধ্যা ছয়টা বাজে
বেলকনিতে বসে রুত চা পান করছে।আমি দাড়িয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছি।হালকা মৃদু বাতাসে ওর চুল উড়ছে।ও নিশ্চুপ বাইরে তাকিয়েই চা পান করছে।চোখে লজ্জা খেলা করছে।অনেক বলে শাড়ি পাল্টে আমার একটা কালো শার্ট পড়াতে পেরেছি।সাথে ধুতি পাজামা।আমার সামনে থেকেও ওর লজ্জা লাগছে।সেই জন্য একটা ওরণা পেঁচিয়ে বসে আছে।ওর চা খাওয়া হলে আমি আস্তে করে ওর পাশে গিয়ে বসলাম। ওর একটা হাত হাতে নিয়ে ঠোঁটের কাছে নিয়ে চুমু খেলাম। এরপর আরেকটা হাত নিয়ে একই ভাবে চুমু খেলাম। আর ওর কিছু বোঝার আগেই ওর ওরণা নিয়ে ওর হাত বেধে দিলাম। ও অবাক হয়ে আমার দিকেই তাকিয়ে আছে।আমি ওকে ধরে আমার কোলেই বসিয়ে ওর দুইহাতের মাঝে মাথা গলিয়ে দিলাম।
রুত (রুতবার গলাতে মুখ গুজেই আয়ান)

এমন করে বাধলে কেন আয়ান ভাই?(রুতবা লজ্জা মিশ্রিত কন্ঠে)

আবার ভাই বললে এই পাহাড়ের থেকে ফেলে দিব গাধি কোথাকার!কতবার বলব আয়ান ভাই বলবে না।তাও কেন বল?তুমি কি জানো তোমার মুখে আয়ান ভাই টা সুনলে আমার রোমান্টিক মুডটাই নষ্ট হয়ে যায়।(রুতবার ঘাড়ে হাত দিয়ে চেপে আয়ান)

ভাল তো।এখন থেকে বেশি করে আয়ান ভাই বলে ডাকব।তাহলে অন্তত আমি তোমার রোমান্টিক অত্যাচার থেকে রেহাই তো পাব।(মজা করে রুতবা)

আমি তোমাকে অত্যাচার করি রুত?(অবাক চোখে আয়ান)

রোমান্টিক অত্যাচার বলেছি আয়ান ভাই। (রুতবা মুখ টিপে হেসে)

ওকে ফাইন আমার দেওয়া আদর ভালোবাসা যদি তোমার কাছে অত্যাচার মনে হয় তাহলে আমি আর তোমাকে অত্যাচার করব না।(বলেই রুতবার হাত খুলে রুমে চলে আসল আয়ান)

আমি মজা করছিলাম আয়ান ভাই। তুমি রাগ করে চলে আসলে কেন?(রুতবা আয়ান এর পেছনে এসে)

যাতে এখন আর তোমার উপর অত্যাচার না করি সেই জন্য। (আয়ান একটা সোফায় বসে)

এবার কিন্ত বেশি হয়ে যাচ্ছে আয়ান ভাই। আমি কিন্ত রেগে যাব।(রুতবা কোমরে হাত দিয়ে)

রুত তুমি কাকে ভয় দেখাচ্ছ আমাকে!এই আয়ান এর কথাতে যার পুরো গোষ্ঠি চলে তার বাচ্চা বউ তুমি।আর সেই তুমি আসছ আমাকে ভয় দেখাতে।বেপার টা এমন হয়ে গেল না খরগোশ এসে বাঘ কে ঘুম থেকে জাগাতে চাইছে তার সাথে লড়াই করবে বলে।আমার রাগ সম্পর্কে তোমার কোন ধারণা এই নেই রুত।আর না আমি চাই তোমার ধারণা হোক। প্রথম দিন থেকে তোমার পারমিশন ছাড়া আমি তোমার সাথে জোর করে কোনদিন কিছুই করিনি রুত। আর আজকে তুমি আমাকে বল আমি তোমাকে অত্যাচার করি।বাহ এখন আমার প্রতি আমার নিজেকে খুব জঘন্য লাগছে রুত।(আয়ান রুতবার চোখের দিকে তাকিয়ে)

আয়ান ভাই আমি ওমন ভাবে বলিনি।তুমি ভুল বুঝছ।(রুতবা আয়ান এর সামনে এসে)

থাক রুত আমাকে বোঝাতে এসো না।আমি একটু একা থাকতে চাই।(আয়ান বলেই রুম থেকে বেরিয়ে আসলাম)

আয়ান ভাই কোথায় যাও?(গেটের সামনে এসে আয়ান এর হাত ধরেই রুতবা)

তোমার না জানলেও চলবে।তবে দয়া করে ঘরেই থেক।আমি চাইনা আবার তোমার উপর রাগ করে কিছু করে বসি।
বলেই বেরিয়ে গেলাম। ভালোবাসার মানুষটির মুখে এমন কথা শুনলে যে কেউ রেগে যাবে।এত্ত আদর যত্ন করেও শুনতে হল আমি নাকি ওকে রোমান্টিক অত্যাচার করি।ঠিক আছে রুত পাখি রাতের রোমান্টিক অত্যাচার এর জন্য প্রস্তুত হও ।আসলে আর কয়েক ঘণ্টার পর এই মানে বারোটা বাজলেই সাত তারিখ চলে আসবে।আর কালকেই রুত পাখির জন্মদিন ।বিয়ের পর ওর সাথে প্রথম জন্মদিন ওকে নিজের কাছে পেলাম। সেই জন্য একটু সারপ্রাইজ এর ব্যবস্থা তো করতেই হয়।ওকে হাত বেধে বের হতেই চেয়েছিলাম। কিন্ত তা আর হল না।এখন বলে তো আসলাম বের হতে না।এখন কথা রাখলেই চলে।আমি বাংলোর অন্য একটা রুম কে যত্নে গুছিয়ে সাজিয়ে রাখলাম। এখন বাজে রাত দশটার কাছাকাছি ।তাই ভাবলাম এখন রুমে যাওয়া উচিত। খাওয়ার পর ঘুমানোর ভান করব।বারোটা বাজলে আসব।তাই আস্তে করে গেট লক করে রুমের দিকে অগ্রসর হলাম। গিয়ে দেখি রুত সোফার মধ্যেই শুয়ে আছে।আমি ওর সামনে গিয়ে বসতেই বুঝতে পারলাম ও ঘুমিয়ে গেছে।তাই আর ডাকলাম না।ওর পাশে বসেই ওকে পর্যবেক্ষণ করতে লাগলাম। এখন ও আমার শার্ট টাই পরিহিত রয়েছে। চুলগুলো এলোমেলো হয়ে উড়ে চলছে মুখের উপর। আমি ওর পুরো চুল একহাতে ধরেই সাইট করে নিলাম তারপর আস্তে ওর মাথা উচু করে চুল বাধতেই যাব ও হঠাৎই আমার দিকে তাকিয়েই ঠোঁট উল্টে কান্না করতে লাগল কোন শব্দ ছাড়াই ।মনে হল অভিমান এর কারণে বুক ফেটে কান্না করছে যার দরুন ঠোঁট গুলো বারবার কাপছে।আমিও চুল বেধে ওর মাথা পুনরায় সোফায় রেখে উঠে দাড়ালাম। সারপ্রাইজ দেওয়ার আগে এত্তটা কষ্ট দেওয়া মোটেও উচিত হচ্ছে না।কিন্ত আমি ওকে একটু অন্যরকম ভাবে নিজের কাছে চাইছি।তাই এইটুকু অভিমান করুক।(মনে)
খাবার অর্ডার করেছি এখনি চলে আসবে।গিয়ে ফ্রেস হয়ে আস।তারপর খেয়ে ঘুমাও।(আয়ান রুতবার উদ্দেশ্য)

আয়ান ভাই আমি সত্যি অমন করে কিছু বলিনি।তুমি শুধু শুধু রাগ কেন করে আছ?(রুতবা আয়ান কে পেছনের থেকে জড়িয়ে ধরে)

যেভাবেই বল রুত সত্য টাই বলেছ।আমি সত্যি তোমাকে অত্যাচার করি বলেই বলেছ।থাক রুত আমি আর তোমাকে অত্যাচার করব না।খাবার এসে পড়েছে খেয়ে ঘুমাও।
বলেই ওকে ছাড়িয়ে গেট খুলে একটা স্টাফ এর থেকে খাবার নিয়ে গেট লক করে খাবার টেবিল এ রেখে দিলাম। তারপর ওয়াশরুম চলে গেলাম ফ্রেস হতে।ফ্রেস হয়ে এসে দেখি রুত এখন ও সেখানেই দাড়িয়ে আছে।(মনে)
রুত খেতে আস।(আয়ান রুতবার উদ্দেশ্য বলেই চেয়ার টেনে বসল)

আমি খাব না তুমি এই খাও।
বলেই খাটে গিয়ে শুয়ে পড়লাম।খাব না ও একাই খাক। আমি মজা করে বলেছি অথচ ও রাগ করে বসে আছে।শুধু শুধু ছোট্ট একটা বিষয় কে এমন ভাবে বড় করার কোন মানেই হয়না।(রুতবা কান্না করে)

রুত এখানে এসে খাও তারপর ঘুমাও। আমি তোমাকে ডাকছি রুত।রুততততত আমি তোমাকে ডাকছি কিন্তু। (আয়ান সোফায় বসে চিৎকার করে)

খাব না আমি।তুমি এই খাও আয়ান ভাই। (রুতবা উঠে বসে কান্না করে)

আমি এখানে এসে তোমাকে খেতে বলেছি।তোমার কথা বলতে বলি নাই।আর একটা কথাও শুনতে চাইনা চুপচাপ এখানে এসে খেয়ে নাও।(আয়ান রুতবাকে ঝাড়ি মেরে)

আয়ান ভাই তুমি আমাকে শুধু শুধু বকছ কেন?(ফুফিয়ে রুতবা)

এখানে এসে চুপচাপ খেয়ে ঘুমাতে যাও।এত্ত প্রশ্নের উত্তর দিতে পারব না।
এইবার চুপচাপ এসে অল্প একটু রাইস খেয়ে আবার গিয়ে খাটে শুয়ে পড়ল। আরে রুত পাখি তুমি না ঘুমালে সারপ্রাইজ টা দিব কিভাবে?সেই জন্য একটু বকা দিচ্ছি। রাগ করে না সোনা মোনা একটু পর সব রাগ কমিয়ে দিব।হানিমুন এ এসেছি একটু তো রোমান্টিক অত্যাচার সহ্য করতেই হবে।আমি ও অল্প খেয়ে লাইট অফ করে খাটে গিয়ে শুয়ে পড়লাম। ও অনেক কিনারে গিয়ে শুয়েছে। এমনে সময় হলে ওকে টেনে আমার বুকে এনে ঘুমাতাম।কিন্ত আজকে এমন কিছু করব না।আমি মোবাইল টা হাতে রেখেছি টাইম দেখার জন্য।বেশ কিছুক্ষন এভাবেই থাকলাম। হঠাৎই রুত এসে আমাকে পেছনের থেকে জড়িয়ে ধরল। আমি সাথেসাথেই চোখ বন্ধ করে নিলাম। আমি ও দেখি আমার ঘুমন্ত অবস্থাতে রুত ঠিক কি কি করতে পারে।ও বেশ কিছুক্ষন আমার পিঠে মুখ গুজে ফুফিয়ে কান্না করেছে।তারপর আস্তে করে আমার উপর দিয়ে আমার সামনে চলে এসেছে।এরপর আমার একটা হাত বালিশে রেখে সেখানে শুয়ে আমার বুকে মুখ গুজে দিয়েছে এরপর অন্য হাত টা ওর উন্মুক্ত পেটের উপর রেখে আমাকে জড়িয়ে ধরেছে।এবার নিজেকে কন্ট্রোল করা সত্যি কষ্টের হয়ে উঠেছে।কিন্ত ওকে সারপ্রাইজ দিব বলে এখন ও ঘুমের ভান করে আছি।বেশ কিছুক্ষন পর অনুভব করলাম আমার গলাতে ছোট ছোট উষ্ণ পরশ একে দিচ্ছে এর কিছুক্ষণ পর আমার অধরে ওর উষ্ণ পরশ দিয়ে আমার মুখে হাত বুলিয়ে ফুফিয়ে কান্না করে অভিযোগ করতে ব্যস্ত হয়ে উঠল।(মনে মনে আয়ান)

আয়ান ভাই তুমি এত্ত পচাঁ কেন?আমার সাথে শুধু শুধু রাগ দেখাচ্ছ কেন?আমাকে ভুল বুঝে এমন করছ কেন তুমি?আমার যে খুব কষ্ট হচ্ছে তোমার এমন ব্যবহার এ।তুমি কেন বোঝ না আমার যে তোমার আদরে এই অভ্যাস নাকি তোমার এই রাগ এর সাথে।এই আয়ান ভাই তুমি কি শুনতে পাচ্ছ?এই আয়ান ভাই শোন না?এই আয়ান ওঠো না। দেখ আমি এখন তোমাকে আয়ান ডাকছি।আমি এও কথা দিচ্ছি তোমাকে আর আয়ান ভাই বলে ডাকব না।শুধু আয়ান বলেই ডাকব। তাও উঠে কথা বল না।এত্ত ঘুম কাতুরে কেন তুমি আয়ান?(রুতবা ফিসফিস করে)

আমি নিশ্চুপ এই থাকলাম। দেখি না আর কি কি করতে পারে আমার রুত পাখি।তবে ডান হাত টা কিছুতেই কন্ট্রোল এ থাকতে চাছেনা।এমন জায়গাতে হাতটা কে রাখতে বলেছে তোমাকে রুত পাখি।রাগের ভান করেও মহা জ্বালায় পড়েছি।না পাড়ছি আদর করতে না পাড়ছি নিজেকে কন্ট্রোল করতে।উফফ এদিকে ওর ঘুমানোর ও নাম নেই ওদিকে বারোটা বাজতেও কত্ত মিনিট বাকি বুঝতে পারছিনা।এমন আরো কিছুক্ষণ রুত আমাকে জাগানোর চেষ্টা করল।আরে বোকা জাগ্রত মানুষ কে কি কোন দিন ঘুম থেকে তোলা সম্ভব। বেশ কিছুক্ষন পর ও কথা বলতে বলতে আমার বুকের ভেতর মুখ গুজে জড়িয়ে ঘুমিয়ে পড়ল। মনে হয় আরকি।কারণ এত্ত জলদি তো ও ঘুমানোর মানুষ না।তাই বেশ অনেকটা সময় অপেক্ষা করলাম। হঠাৎই এলাম বেজে উঠল। তারমানে বারোটা বেজে গেছে।তাই ওকে তুলে ঐ রুমে যাওয়ার কথা চিন্তা করে উঠতেই যাব রুত আমাকে ধরে শুইয়ে দিল।
কি হয়েছে?(আয়ান রুতবার উদ্দেশ্য)

কোথায় যাও?(রুতবা আয়ান এর গলা জড়িয়ে)

নাচতে যাই চল যেতে মন চাইলে।(আয়ান রুতবার উদ্দেশ্য বলে বসে পড়ল)

আয়ান আর কত্তক্ষন এমন রাগ করে থাকবে?প্লিজ বোঝার চেষ্টা কর আমি ওমন কিছু বলিনি যার জন্য তোমার রাগ হবে।(রুতবা উঠে আয়ান এর হাত ধরেই)

ওকে ফাইন। এখন উঠে ফ্রেশ হয়ে আস।তোমাকে নিয়ে এক জায়গাতে যাব।(আয়ান রুতবার হাত ধরেই)

এত্ত রাতে কোথায় যাবে?(রুতবা ব্রু কুচকেই )

ঐ পাহাড়ের থেকে তোমাকে ফেলে মেরে ফেলব। সেই জন্য উঠে রেডি হতে বলছি যাও রেডি হয়ে আস।(আয়ান রুতবার উদ্দেশ্য)

আয়ান ।(রুতবা আয়ান এর উদ্দেশ্য)

আরে মজা করছি।যাও ফ্রেশ হয়ে আস।একটা জায়গাতে তোমাকে নিয়ে যাব।দেরি হয়ে যাচ্ছে তো ।(আয়ান রুতবার হাত ধরে দাড়িয়ে)

আচ্ছা। (বলেই ওয়াশরুম চলে আসলাম রুতবা)

ও ফ্রেস হয়ে আসার পর আমি ও ফ্রেস হয়ে আসলাম। তারপর ওকে নিয়ে ঐ রুমের উদ্দেশ্য গেলাম।গেট খোলার আগে ওর ওরণা দিয়ে ওর চোখটা বেধে দিলাম। যদিও রাজি হচ্ছিল না।কিন্ত আমার রাগ এর কথা ভেবে রাজি হয়ে গেছে।আমি গেট খুলে ওরে দাড় করিয়ে গেট লক করে পুরো রুমের কেন্ডেল জ্বালিয়ে দিলাম। তারপর ওর সামনে গিয়ে লাইট অফ করে ওর চোখের বাধন খুলে দিলাম।ও পুরো রুমে অবাক হয়ে তাকিয়েই আছে।আমার একটা হাত খুশির কারণে খামচে ধরেছে।
কি হল রুত পাখি পছন্দ হল?(আয়ান রুতবার ঘারে মুখ রেখে পেছনের থেকে)

কখন করলে এসব?(রুতবা মাথা পেছনে ঘুরিয়ে)

তোমার সাথে রাগ এর ভান করে যখন আসলাম সেই সময়ই করেছি।তারপর রুমে গিয়ে আরো কিছুক্ষণ ভান করে বুঝলাম আমার বাচ্চা বউ আমাকে কত্তটা ভালোবাসে যদিও ঘুমানোর ভান করার পর আরকি।(আয়ান রুতবার উদ্দেশ্য মুচকি হেসে)

তুমি কি জানো তুমি যে কত্তটা খারাপ?(রাগি লুক দিয়ে রুতবা)

হ্যা জানিতো রুত পাখি।ও বলা হয়নি happy birthday রুত পাখি।(রুতবাকে কাছে টেনে কপালে কপাল ঠেকিয়ে আয়ান)

কথা বলবা না। তুমি খুব খারাপ। (রুতবা অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে)

তাই বুঝি আমি খুব খারাপ, আমি রোমান্টিক অত্যাচার করি ।এখন তাহলে রেডি হয়ে যাও রোমান্টিক অত্যাচার এর জন্য। তবে এর আগে কেক টা কাট।তারপর যা হবে তার জন্য ও প্রস্তুত থাক।(আয়ান চোখ টিপ দিয়ে)

কচু করবা তুমি। (মুখ ভেংচি কেটে রুতবা)

দেখা যাবে।এখন কেকটা কাট।
রুতকে নিয়ে কেক কাটলাম দুইজন মিলে।তারপর ও আমাকে তুলে খাইয়ে দিল।আমি ও তুলে ওকে খাওয়ানোর বদলে ওর ঠোঁট ও গালে মেখে দিলাম। ও এই দেখে আরেকটু কেক নিয়ে আমার মুখে মাখতেই যাবে ওকে টেনে খাটের উপর বসিয়ে ওর মুখে লিক করতেই ও স্তব্ধ হয়ে চোখ বন্ধ করে বসে পড়ল।
এমন ভাবে যদি খেতে চাও তাহলে আমার পুরো শরীর উন্মুক্ত আছে।(আয়ান রুতবার কানে ফিসফিস করে)

দুর হোও লাগাম বিহিন পাব্লিক। (মুখ হাত দিয়ে ডেকে রুতবা)

আহ রুত পাখি আমার খাবার নষ্ট করছ কেন?আমাকে অন্তত খেতে দাও।(আয়ান রুতবার হাত সরিয়ে)

নো খচ্চর কোথাকার?ঐখান থেকে খাও।আমার মুখে ভুলেও লিক করবা না আমার সুরসুরী লাগে।(রুতবা মুখ ঘুরিয়ে)

তোমার কথা শুনবে কে?আমি তো এত্ত দিন আদর এই করেছি।অথচ তুমি সেই আদর কে রোমান্টিক অত্যাচার বলে আখ্যায়িত করেছ।তাই রোমান্টিক অত্যাচার টা করেই নাহয় নামটা নেই।
বলেই রুত এর হাত শক্ত করে ধরে ওর পুরো মুখে লিক করে ওর ওধর জোড়া আমার আয়ত্তে নিয়ে নিলাম। ও ততক্ষণ এ ওর হাত গুলো আমার পিঠ খামচে ধরে বসে আছে।এবার আমি ওর ঠোঁট ছেড়ে গলাতে আসতেই ও সরে দাড়িয়ে গেল ।আমি ওকে আস্তে করে আমার কাছে টেনে নিলাম। আর শার্টের ভেতরে উন্মুক্ত পেটের উপর হাত দিতেই ও ঘুরে আমার দিকে অসহায় দৃষ্টি নিক্ষেপ করল।আমি মুচকি হেসে ওকে আমার কোলেই বসিয়ে দিলাম।ও চুপটি করে আমার বুকে মুখ গুজে দিল।(মনে)
রুত পাখি মে আই?(আয়ান রুতবার উদ্দেশ্য)

নিশ্চুপ। (চোখ বন্ধ করে রুতবা)

রুত। (বেকুল কন্ঠে আয়ান)

হুম। (আস্তে করে রুতবা)

ওর ইশারা তে ওকে আমার সাথে জড়িয়ে দুইজন ভালোবাসার সাগরে ঢুব দিলাম।
বেশ রাত হয়েছে। দূর থেকে ব্যাঙ এর ও শেয়াল এর শব্দ কানে আসছে।রুত আমার বুকে চুপটি করে ঘনঘন নিশ্বাস ছাড়ছে।আমি ওর মাথায় হাত বুলিয়ে ওকে ঘুম পাড়ানোর চেষ্টা করছি।কিন্ত না ও ঘুমাচ্ছে আর না আমার ঘুম আসছে।ওর নেশা লেগেছে মনে।এ নেশা এত্ত সহজে ছাড়বার নয়।
এই রুত?(আয়ান রুতবার কপালে চুম্বন করে)

হুম। (রুতবা মাথা উচু করে)

আমি তোমাকে ভালোবাসি খুব। (আয়ান রুতবার ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে)

আমিও ভালোবাসি খুব আমার এই পাজি স্বামী টাকে।(মুচকি হেসে রুতবা)

ঘুম আসছে না।(আয়ান রুতবার ঠোঁটে আঙ্গুল রেখে)

আমার ও।(রুতবা আয়ান এর দিকে তাকিয়ে)

রোমান্টিক অত্যাচার করি আরেকটু?(ডেভিল হেসে আয়ান)

নো।(রুতবা লাফিয়ে বসে)

আরে রুত পাখি কোথায় যাও। দেখ তোমার আয়ান ঠিক কত্তটা রোমান্টিক অত্যাচার করতে পারে।(রুতবাকে কাছে এনে আয়ান)

আরও তিনদিন থেকে আমরা গ্রামের উদ্দেশ্য রওনা হলাম। পুরো ছয়দিন আমরা খুব মজা করে ছিলাম। এই দিনগুলো ভোলার নয়।এত্তটা রোমান্স কর পরিবেশ সাথে জীবন সঙ্গীর সঙ্গ এর থেকে মধুর মধুচন্দ্রিমা আর কি হতে পারে।(আয়ান)

*******************(চলবে)****************

MEANINGLESS LIFE PARTNER Part-11+11

0

#MEANINGLESS_LIFE_PARTNER (অর্থহীন জীবন সঙ্গী)
10&11
পর্ব:10
#লেখিকা_Arshi_khan

(রোমান্টিক পার্ট :THE QUEEN OF MY HEART:আমার হৃদয়ের রানী)

কোথায় যাওয়া হচ্ছে রুত পাখি?অনেক তো উড়লে এবার নাহয় আমার হৃদয়ের মাঝে বন্ধি হতে এসো।অনেক তো বলেছিলা আয়ান ভাই বিয়ের ব্যবস্থা কর।তাহলে এখন কেন এমন পেছনে যাচ্ছ?(আয়ান রুতবার সামনে দাড়িয়ে)

আয়ান ভাই আমার খুব ঘুম পাচ্ছে এখন আমি ঘুমাব। (রুতবা বলেই খাটে গিয়ে শুয়ে পড়ল)

রুত গিয়ে দৌড়ের উপর খাটে কাথা গায়ে দিয়ে শুয়ে পড়ল।আমি মুচকি হেসে চেয়ার টেনে বসে পড়লাম। ওর দিকে আমি এক পলকে তাকিয়েই আছি।হঠাৎই ও কাথা সরিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আবার কাথা মুরি দিয়ে শুয়ে পড়ল।আমি ঝড়ের গতিতে ওর কাছে গিয়ে কাথা শরীরে জড়িয়ে শুয়ে পড়লাম তবে ঘুরে।আমার কান্ডে ও লাফিয়ে উঠে বসে পড়ল। আমি ওর দিকে তাকিয়ে এক চোখ টিপ দিয়ে পাশে ফিরে শুয়ে থাকলাম। (আয়ান মনে মনে)

আয়ান ভাই এমন ভাবে কেউ আসে আমি ভয় পেয়ে গেছিলাম। (রুতবা মুখ গোমরা করে)

ঘুম পাচ্ছিল তাই এমন করে এসেছি।তুমিও ঘুমিয়ে পড়।(মাথা উচু করে বলেই আবার চোখ বন্ধ করে নিল আয়ান)

খারাপ লোক কোথাকার!আমাকে না জ্বালাতন করলে পেটের ভাত হজম হয় না যেন!আরো কয়েকখানা বকা দিয়ে আয়ান ভাই এর পাশেই শুয়ে পড়লাম। আয়ান ভাই এর পিঠের দিকে আমিও পিঠ দিয়ে রাখলাম। তবে এক কাথার নিচে যেতে আমার ভিষন লজ্জা +ভয় লাগছে।সেই জন্য গুটি সুটি মেরে পড়ে রইলাম। আয়ান ভাই কি সত্যি ঘুমিয়ে পড়ল। বিয়ের প্রথম রাতে এভাবে কেউ ঘুমায় নাকি।মানলাম বাসর সাজায় নাই।আদর ভালোবাসা নাই দেক একটু কথাতো বলাই যায়।তানা সে ঝড়ের গতিতে বিয়ে করে আইলার গতিতে ঘুমাতে চলে গেছে।এমনে যখন ডাক দিতো না গেলে রেগে থাকত।আর এখন পাশে থাকতেও মনে হচ্ছে আমি ওর থেকে কত্ত দূরে।(রুতবা মনে মনে)

আমি অনেকক্ষন নিজেকে ধরে রাখার চেষ্টা করলাম। ওর কাছে যাব না ভেবে বসে ছিলাম। খুব শখ জেগেছিল ও নিজের থেকে এই আমার কাছে আসবে ঐদিন এর মত।কিন্ত যা বুঝলাম ও আজকে সেধে আমার ধারে কাছে ও ঘেসবেনা।তাই আমি আস্তে করে ওর দিকে ঘুরে ওকে পেছনের থেকে হালকা হাতে জড়িয়ে ধরলাম।
(মনে মনে)
রুত পাখি চল দুইরাকাত নফল নামাজ পড়ে নেই।(আয়ান ফিসফিস করে)

নিশ্চুপ। (চোখ বন্ধ রেখে রুতবা)

আমি চাই আমার রুতকে প্রপারলি নিজের করে নিতে।তুমি কি রাজি আছ রুত পাখি?রাজি থাকলে ওযু করে আস।আর নাহলে ঘুমাতে পারো।(রুতবার ঘারে মুখ রেখেই আয়ান ফিসফিস কর)

নিশ্চুপ (রুতবা)

আচ্ছা ঘুমাও। (আয়ান রুতবার পিঠে মুখ ঘুজে চোখ বন্ধ করে)

আমি আয়ান ভাই এর হাত সরিয়ে উঠেই ওয়াশরুম চলে আসলাম। ওযু করে ভাল মতো মাথায় ঘোমটা দিয়ে বের হয়ে আসলাম। আয়ান ভাই খাটে বসে আছে এখন ও।
আয়ান ভাই ওযু করে আস।(মাথা নিচু করে রুতবা)

আর ইউ সিওর?(আয়ান লাফিয়ে রুতবার সামনে এসে মুচকি হেসে)

হুম।(চোখ বন্ধ করেই রুতবা)

একটু ওয়েট কর আসছি।
বলেই ওয়াশরুম চলে গেলাম ওযু করার উদ্দেশ্য। ওযু করে এসে রুত এর সাথে দুই রাকাত নফল নামাজ পড়ে নিলাম আমাদের নতুন জীবনে বৌবাহিক সম্পর্ক সুখ ময় রাখার জন্য ।নামাজ শেষে জায়নামাজ জায়গা মতো রেখে রুত এর সামনে এসে দাড়ালাম। ও মাথা নিচু করে রেখেছে।আমি ওর আরেকটু কাছে গিয়ে ওর হাতটা হাতে নিলাম।
রুত আজকের শাড়িটা আবার একটু পড়বে।দুপুর এ ভাল মতো দেখতে পারিনি।আমি তোমাকে ঠিক ততক্ষণ পর্যন্ত দেখতে চাই যতক্ষণ পর্যন্ত না আমার গত সাত বছরের তোমাকে না দেখার বাসনা পূরণ হচ্ছে। (আয়ান রুতবার হাতে চুমু খেয়ে)

আচ্ছা থাক আমি পরে আসছি।(রুতবা)

রুত কালকের মতো শুধু শাড়ি পেচালেই হবে।তাহলে ভালো মতো দেখতে পারব ।(আয়ান মুখ টিপে হেসে)

আয়ান ভাই তুমি কি জানো তুমি একটা বদ লোক!অসভ্য মার্কা কথা কেন বল?(রুতবা চোখ বড় করেই)

একটু পর এমন অনেক কিছুই করব। তখন কি বলবা আয়ান ভাই এভাবে ধরো কেন?ঐভাবে কিস কর কেন?তোমার কি মনে হয় এসব বললে আমি তোমাকে সেই সময় আদর না করেই ছেড়ে দিব?(আয়ান রুতবার কোমর জড়িয়ে)

দূর শাড়ি এই পড়ব না।তোমার এসব উল্টা পাল্টা কথা আমার মাথা হ্যাং করে দিচ্ছে। সরো আমি ঘুমাব।(রুতবা লজ্জা পেয়ে)

তুমি শাড়ি পরে আস যাও আর পচা কথা বলব না সিওর যাও।(আয়ান রুতবার হাত ঠেলে)

সত্যিই তো?(রুতবা ব্রু কুচকেই )

হুম সত্যি যাও শাড়ি পরে আস।
আমার রুত পাখি আমি আর পচা কথা বলব না পচা কাজ করব আমার বাচ্চা বউ। রুত দশমিনিট এর মধ্যেই শাড়ি পরে আসল।হালকা গোলাপি শাড়িতে ওকে মাসাআল্লাহ অনেক সুন্দর লাগছে।ও এসে চুপটি করে দেওয়াল ঘেসে দাড়িয়ে রইল। আমি ও আস্তে করে ওর পাশে দাড়িয়ে দেওয়াল এ মাথা রেখে ওর দিকে তাকিয়েই থাকলাম।
তোমাকে কে বলেছে এত্ত কিউট হতে?আমার যে তোমাকে দেখলে নিজেকে সামলাতে কষ্টকর হয়ে উঠে।তোমাকে আজ পুরোপুরিই আমার করে পেতে চাই বউ। দেবে কি সেই অধিকার?নাকি আরো কয়েকদিন অপেক্ষা করতে হবে?সত্যি বলতে আমি আর পারছিনা অপেক্ষা করে থাকতে রুত পাখি।(আয়ান রুতবার ঠোঁটের দিকে তাকিয়েই)

নিশ্চুপ (রুতবা চোখ বন্ধ করেই)

ঐ রুত শোন না।আমার কাছে একটু ধরা দাও না পাখি।একটু আভাস দাও নাহলে যে আমি তোমার কাছে যেতে পারব না।তোমার মতামত ও যে অনেক গুরুত্বপূর্ণ রুতপাখি।(আয়ান রুতবার কাছে গিয়ে গাল ধরেই)

আয়ান ভাই আমি আসলে আমার (আমতা আমতা করে রুতবা)

ঘুম পেয়েছে তোমার?(আয়ান রুতবার চোখের দিকে তাকিয়ে)

হুম ।(রুতবা চোখ এদিক ওদিক ঘুরিয়ে)

আচ্ছা চল ঘুমাবে।
বলেই ওকে ধরে খাটে এনে বসিয়ে দিলাম। ও এক সাইটে আস্তে শুয়ে পড়ল। আমি লাইট অফ করে বারান্দার দিকে অগ্রসর হলাম। রাতের আকাশে হাজার তারার মেলা বসেছে।তাদের সবার মাঝে চাঁদ টা ভিষন একা।চাঁদের আলোর কারণে পুরো আলোকিত হয়ে আছে এখানে।পুকুরের পানিতে চাঁদের আলো স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। বারান্দার ছোট টুলে বসে পুকুরের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলাম। মনকে কন্ট্রোল করার সবচেয়ে ভাল এবং কার্যকরী উপায় হচ্ছে প্রকৃতির সঙ্গে সময় কাটানো।সেই ছোট বাচ্চাটার উপর ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ না ঘটালেও দুইদিন আগে আমি তাকে কিছুক্ষণ এর জন্য আকরে ধরে ছিলাম। কিন্ত স্বামী হিসাবে আমার স্ত্রীর সাথে সম্পর্ক গড়ার আগে তার পারমিশন নেওয়া জরুরী। স্বামীর অধিকার আছে বলেই তা প্রয়োগ করতে হবে এমন কিন্তু না।স্ত্রী রা হয় নরম ও কমলীয় সভাবের।তাদের সাথে সর্বদাই ভাল আচরণ করা একান্ত জরুরী।যদিও কোনদিন রাগের মাথায় স্ত্রী এর সাথে খারাপ ব্যবহার করেই ফেলেন তাহলে এটাও মনে রাখবেন তাকে আবার ভালোবেসে মানিয়ে কিভাবে কাছে টেনে নিবেন।একজন নারী আর সবার কাছে দ্বায়িত্ব পরায়ন হলেও দিন শেষে সে আপনার কাছে একটু ভালোবাসার ভাগিদার।সে এটা ভেবেই রাতে আপনার কাছে আসে যে আর সবার কাছে আমি যেমন দ্বায়িত্ব পরায়ন তেমনি আমার স্বামী ও আমার জন্য দ্বায়িত্ব বান পুরুষ। তাই সর্বদাই চেষ্টা করবেন নিজের স্ত্রীর প্রতি সদয় হতে।এসব ভাবনার মধ্যেই হঠাৎই রুত আমার পাশে এসে দাড়াল। আমি ওর পানে তাকিয়েই মুগ্ধ হয়ে গেলাম। চাঁদের আলোর কারণে ওর চেহারার মধ্যেই একটা অন্যরকম ভালোলাগা কাজ করছে।ও আমার দিকে ছলছল চোখে তাকিয়েই আছে।
কান্নার কারণ কি বউ?(রুতবার হাত টা ধরে আয়ান)

তুমি খুব খারাপ আয়ান ভাই। (ফুফিয়ে রুতবা)

আমি আবার কি করলাম?(ব্রু কুচকেই আয়ান)

আমাকে একা রেখে এখানে জোৎসা বিলাস করছ যে তাই জন্য তুমি খারাপ।(রুতবা একহাতে চোখ মুছে)

বস এখানে। আমি জোৎসা বিলাস করতে আসি নাই রুত।নিজের মন ও মস্তিষ্কের যুদ্ধ দমন করতে এসেছি। মন কে সামলাতে আমি সর্বদাই পারদর্শী। তবে এ ক্ষেত্রে মস্তিষ্ক আমার কথা কে প্রাধান্য দিতে প্রস্তুত না।তার উপর আমার বাচ্চা বউ এর ঘুম পাচ্ছে। তাতে বেঘাত ঘটাতে চাইনা বলে এখানে এসেছিলাম।কি করব বল অনেক বছরের লুকায়িত ভালোবাসা বের হয়ে আসতে চাইছে।(আয়ান রুতবার উদ্দেশ্য গ্রীল ধরে দাড়িয়ে)

আয়ান ভাই ।(রুতবা আয়ান এর পিঠে হাত রেখে)

দেখ রুত ভালোবাসতে আরো এক বছর পর দিলেও হবে।আপাতত আয়ান ভাই এর থেকে ভাই টাকে ঐ পুকুরে ফেল তো।কানটা আমার বউ এর মুখ থেকে শুধু আয়ান শোনার অপেক্ষা করে আছে বহু বছর। (রুতবার দিকে তাকিয়েই আয়ান)

আমিতো আয়ান ভাই বলেই ডাকব তাতে তোমার কান থাকুক বা না থাকুক।(মুখ ভেংচি কেটে রুতবা)

ঠিক আছে এখন গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ুন। এত্ত রাতে নতুন বউ বারান্দাতে এসেছ ভুতে ধরবে তো।আমার এত্ত সুন্দর বউ এর ভাগ আমি ঐ ভুত কেও দিতে নারাজ।
বলেই ওকে ঠেলে রুমে পাঠালাম। তারপর বারান্দার গেট লক করে খাটে গিয়ে বসলাম। মোবাইল টা নিয়ে ফেসবুক এ ঢুকতেই কয়েকটা ফ্রেন্ড এর মেসেজ দেখলাম। এখন এদের সাথে কথা বলে সময় কাটাই।তাহলে বউ সামনে অথচ আদর না করার আফসোস টা তেমন কাজ করবেনা।এসব ভাবতে ভাবতেই দেখি রুত রুমে ডিম লাইট জ্বালিয়ে আমার সাইট দিয়ে পাশে গিয়ে শুয়ে পড়ল। আমি ওর থেকে চোখ সরিয়ে ফোনে মেসেজ দিতেই যাব রুত হঠাৎই আমার থাই(পা) এর উপর মাথা রেখে পেটে মুখ গুজে শুয়ে থাকল।আমি মুচকি হেসে ফোনটা সাইটে রেখে ওকে উঠিয়ে বসিয়ে দিলাম।
কি?(আয়ান মুচকি হেসে)

ঘুমাব।(রুতবা মাথা নিচু করে)

এক ঘন্টার মধ্যেই পাচঁবার বলা শেষ ঘুমাব। ঘুমাও না কেন?আর এমন করে যে ধরেছ আমি এইবার কন্ট্রোল হাড়া হলে তোমার পারমিশন এর অপেক্ষা না করেই কিছু করে বসব।তখন আবার কেদে কেদে আয়ান ভাই তুমি খারাপ আয়ান তুমি খুব খারাপ এর স্লোগান শুরু করে দিবা।(আয়ান রুতবার হাত ধরেই)

আমি তো একবার ও বলিনাই আয়ান ভাই তুমি নিজেকে দুরে রাখ।বলেছি!তুমি নিজেই তো –
আর বলতে পারলাম না আয়ান আমাকে তার সাথে জড়িয়ে নিয়েছে। পুরো মুখে ভালোবাসার পরশ একে দিতে দিতে একটা সময় আমার অধর জোড়া তার আয়ত্তে নিয়ে নিল।তার ভালোবাসার ধরন গুলো অনেকটা উন্মাদ এর মতো।এক মুহূর্তেই পাগল পাগল অবস্থাতে পরিণত হয়।(রুতবা মনে মনে,)

রুত আই লাভ ইউ মাই কুইন। (আয়ান রুতবার উদ্দেশ্য)

লাভ ইউ টু আয়ান ভাই। (রুতবা ক্লান্ত সুরে)

আবার ভাই বললে শাস্তি আছে।
বলেই ওর গলাতে একটা বাইট করে দিলাম। তারপর আমি আমার সেই আট বছরের ছোট বাচ্চার থেকে বড় হয়ে উনিশ বছরের মেয়েটাকে পুরোপুরিই নিজের করে নিলাম।
রাত চারটা
রুত আমার বুকে মুখ লুকিয়ে শুয়ে আছে।তার কিছুতেই ঘুম আসছেনা।আমি যখনি ওর দিকে তাকাই ও যেন আরো লজ্জা পেয়ে মুখটা আমার বুকে লুকায়।তা আমি ওকে আমার কোলবালিশ এর মতো জড়িয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করলাম
কিন্তু তাতে ও লজ্জা পাচ্ছে। আমি ওর কপালে চুম্বন করে ঘুমানোর জন্য বলে চোখ বন্ধ করে নিলাম।
সকালে মুখে অনেক গুলো পানির ঝাপটাতেই ঘুমটা ভাঙ্গল। উঠে দেখি রুত পানির মগ হাতে দাড়িয়ে এই আছে।আমি ওর হাত ধরে আমার পাশে শুইয়ে আমার চুলের ও মুখের পানি ওর মুখে লাগিয়ে দিলাম ।(মনে মনে)
খুব শখ ভেজানোর তাইনা!চল এখনি তোমাকে নিয়ে গোসল এ ঢুকব।(বলেই রুত কে কোলে তুলে হাটা দিল)

আমি শাওয়ার নিয়েছি তো। এখন ভেজালে আবার বল শাওয়ার নিবে।পাগল নাকি!নিচে নামাও আমাকে। (রুতবা হালকা চিৎকার করেই)

আমাকে ভেজালে কেন?(আয়ান রুতবাকে ওয়াশরুম নিয়ে দাড় করিয়ে)

আচ্ছা সরি আর করব না।
বলেই বের হতে নিব হঠাৎই আয়ান ভাই এর কান্ডে আমি হতবাক হয়ে গেলাম। (মনে মনে রুতবা)

*************(চলবে)*********

পর্ব: 11

(HONEYMOON TIME :মধুচন্দ্রিমার সময়)

ও বের হতে নিবে এমন সময়ই আমি ঝড়ণা ছেড়ে দিলাম। সাথে সাথেই ওর সাথে আমি ও ভিজে গেলাম।ও আমার দিকে রাগি লুক দিতেই আমি ওকে আমার সাথে জড়িয়ে নিলাম।
শাওয়ার নেওয়ার পর দুইজন ড্রেস চেঞ্জ করে নিলাম। রুমে এসে রুত আয়নাতে যখন চুল আচড়ায় আমি ওর পেছনে দাড়িয়ে ওকে বিরক্ত করতে থাকি।ও যেন আরো তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে।এই দেখে আমার হাসতে হাসতেই অবস্থা খারাপ।
বালিশ গুলোতে পানি পরে ভিজে যাওয়ার কারণে বালিশ গুলোকে বারান্দার মধ্যেই রেখে দিলাম রোদের উত্তাপ এ শুখানোর জন্য। তারপর দুইজন নিচে নেমে আসলাম ব্রেকফাস্ট করব বলে।
আজকে আয়েশার হাজবেন্ড কে সবাই সালামী দিবে জামাই বাজার এর উদ্দেশ্য। আমি মানিব্যাগ আনতে ভুলে গেছি তাই রুতকে পাঠালাম মানিব্যাগ আনতে।ও বেশ কিছুক্ষন পর মানিব্যাগ নিয়ে নিচে নেমে এলো।আমি বড় ভাই হিসাবে চার হাজার টাকা ওর রুমাল এ দিলাম।
আর রুত এর হাতে দুই হাজার ধরিয়ে দিলাম জামাই কে দেওয়ার জন্য। আফটার অল একমাত্র ভাই এর বউ বলে কথা।
জামাই সালামী পাওয়া টাকা ও আরো টাকা মিলিয়ে সব রকমের বাজার করে নিয়ে আসল।সেগুলো রান্না করতে সব মেয়েরা লেগে গেল।এদিকে সারাদিন আর রুত এর খবর নেই ।তার উপর আয়েশার শশুর বাড়ির মানুষ এসেছে ওদের নেওয়ার জন্য। দুপুর এর খাবার পর সবাই একটু গল্প করে নিল।সেই সময় রুত সবার জন্য চা নাস্তা নিয়ে আসল।আয়েশার যাওয়ার পর সবাই রেস্ট নিতে নিয়ে নিল।
আর এভাবেই আমাদের হাসিখুশি দিন চলতে লাগল ।রোমান্স, খুনসুটি হাসি মজা করেই বারো দিন চলে যায়।আংকেল এসেছে ওকে নিতে। কারণ তিনদিন পর আমাদের অনুষ্ঠান করে হবে।আংকেল এসে দুপুর এর খাবার খেয়ে রেস্ট নিচ্ছে। এইদিকে রুত এসে রুমে আমাকে জড়িয়ে এই রেখেছে।পাগলি একটা।(মনে)
রুত পাখির রেডি হয়ে নাও। ।সন্ধা হয়ে যাবে বেশি দেরি করে বের হলে।জলদি যাও তাহলে সন্ধার আগেই যেতে পারবে।(আয়ান রুতবার মাথায় হাত বুলিয়ে)

যাব তো।আর একটু থাকি এমন করো কেন?তিনদিন তোমার থেকে দূরে থাকতে হবে।তাই তোমার শরীর এর সুগন্ধ একটু গায়ে মেখে নিচ্ছি। (রুতবা ছলছল চোখে)

তাই। আসো ভাল মতো আমার বউ টাকে আদর করে দেই।তাহলে আর তিনদিন থাকতে কষ্ট হবেনা।
তারপর ওকে অনেকটা আদর করে দিলাম। আংকেল ওকে নিয়ে গেল। এদিকে বাড়িতে মেহমান দিয়ে আবার ভরে উঠল।বিয়ের তরজর চলছে ধুমছে।হলুদ অনুষ্ঠান খুব সুন্দর মত হয়ে গেল। পরের দিন সকালে সবাই মিলে রং ও কাদা দিয়ে খেলল।তারপর আমরা গেলাম আমার রুতকে আনার উদ্দেশ্য। মাসাআল্লাহ একটা পুতুল বউ কে পেয়েছি। আজ খুব করে আমার বুড় দাদার কথা মনে পড়ছে।তার জন্য এবং আল্লাহর ইষাড়ায় আজকে আমরা একে অপরের পরিপূরক। রুতকে দেখে গত তিন দিন না দেখার আফসস টা অনেকটাই কেটে গেল।
আমার হাতে যখন ওকে তুলে দিল আমি শক্ত করে ওর হাত টা আকড়ে ধরলাম। ও সবাই কে জড়িয়ে কান্না তে ভেঙ্গে পড়ল ।
তারপর আমরা ওকে নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্য রওনা হলাম। রুত গাড়িতে আমার কাধে মাথা রেখে শুয়ে পড়ল।
বাড়িতে পৌঁছানোর পর আমাকে আর রুতকে বরণ করে ঘরে তোলা হল।তারপর আরো নিয়ম কানুন মেনে আমরা ফ্রেস হতে গেলাম। রুতকে আয়েশা সাহায্য করছে।
রাতের খাবার খাওয়ার পর আমাদের ঘরে আসলাম। আমাদের ঘরটা খুব সুন্দর করে ফুল দিয়ে সাজিয়ে দিয়েছে।সেখানে ঢুকতে পুরো পাচঁ হাজার দিতে হয়েছে বোনদের কে।
ঘরে ঢুকে আমি ওকে আমার কোলে নিয়ে নিলাম।তারপর দুজনে ভালোবাসার সাগরে ঢুব দিলাম।
পরের দিন বৌভাত অনুষ্ঠান এর পর আমি রুত এর বাড়ি বেড়াতে গেলাম। তিনদিন থেকে আমরা বাড়ি ফিরে আসলাম।
বিয়ের পর আমরা কোথাও ঘুরতে যাইনি।তাই ভাবলাম রুত কে নিয়ে ঘুরতে যাব।আমরা বিয়ের এক সপ্তাহ পর খাগরাছড়ির উদ্দেশ্য রওনা হলাম। পাহাড়ে ঘোরার খুব শখ রুত এর। সেই জন্য এই খাগরাছড়িতে যাওয়া। খাগরাছড়ির একটা ভ্রমণ গাইড এর বাংলোতে থেকেই আমরা হানিমুন টা সেরে যেতে চাই।বাংলো টা পাহাড়ের চুড়ায় অবস্থিত যার দরুন পুরো এলাকা ভালো ভাবেই দেখা যায়।
বাংলোর ভেতরে প্রবেশ করে রুত জানালার সামনে দাড়ালো আমি ওকে পেছনের থেকে জড়িয়ে ধরলাম। ও মুচকি হেসে পাহাড়ের দৃশ্য উপভোগ করতে লাগল। আমি ওকে কোলে তুলে ওয়াশরুম এর উদ্দেশ্য চলে গেলাম ফ্রেস হব ভেবে।তারপর ফ্রেস হয়ে এসে দুপুর এর খাবার অর্ডার করলাম ।খাবার আসার পর দুইজন খাবার খেয়ে একটু রেস্ট নিলাম। হানিমুন এ যেমন হয় আরকি রেস্ট কম রোমান্স বেশে।
বিকাল চারটার দিকে আমরা খাগরাছড়ির অনেক বিখ্যাত জায়গাতে ঘুরতে গেলাম। অনেক মনো মুগ্ধ কর পরিবেশ দেখে চোখ জুড়ে গেল। বাংলাদেশে এত্ত সুন্দর দৃষ্টান্ত থাকতে কেনযে মানুষ দেশের বাইরে যায় ঘুরতে তা আমার বোধগম্য হয়না।(আয়ান মনে মনে)

*************(চলবে)************

বিঃদ্রঃ HONEYMOON TIME আর একটা পার্ট হবে।

MEANINGLESS LIFE PARTNER Part-09

0

#MEANINGLESS_LIFE_PARTNER (অর্থহীন জীবন সঙ্গী)
পর্ব:9
#লেখিকা_Arshi_khan

(TIME TO GET MARRIED:সময় এসেছে বিয়ের)

(আমার আইডিটা গতো পাচঁদিন যাবত লকড হয়ে ছিল। আজকে অনেক কষ্টের পর আইডি টা ঠিক করেছি।তাই গল্প দেরিতে দেওয়ার জন্য আমাকে মাফ করে দিয়েন।)

রুতের লেখা চিঠি পরে হাসতে হাসতেই আমার অনেকক্ষন কেটে গেল। এদিকে কফি ও ঠান্ডা হয়ে গেছে।তাই কফি গরম করার উদ্দেশ্য নিচে নেমে আসলাম। বাড়ির সবাই অনেক খাটাখাটনির পর রেস্ট নিতে গেছে।তাই আপাতত রান্নাঘর খালি।এখন বাজে রাত দশটা।গ্রামে সবাই আটটা নয়টার মধ্যেই ঘুমিয়ে যায়।তবে আজকে খাওয়ার পর এই ঘুমাতে চলে গেছে সবাই।আমি রান্নাঘরে গিয়ে কফি গরম করে নিলাম এলপি গেসে।তারপর সেই কফি নিয়ে আবার রুমের গিকে হাটা দিলাম। রুমে পৌঁছানোর পথে আয়েশার রুম।এখন আয়েশা আছে শশুর বাড়িতে।রুত এর একা থাকার সম্ভবনা 80%।তাই আস্তে করে ওর রুমে টোকা দিলাম। একটু পর রুত চোখ ঢলতে ঢলতে এসে গেট খুলে আমাকে দেখেই চোখ বড় করে ফেলল।আমি আস্তে করে উকি দিতেই দেখি রুম খালি এই আছে।
আমি আসি ভিতরে?(আয়ান গেটের উপর হাত রেখে)

কেন আসবে এত্ত রাতে?(রুতবা ব্রু কুচকে)

এমনেই একটু সময়ই থাকব তারপর আবার চলে যাব।আসি না এমন করো কেন?(আয়ান রুতবার হাত ধরেই)

আয়ান ভাই তোমাকে আমার এই মুহূর্তে একটুও বিশ্বাস হচ্ছে না।আর তোমাকে এত্ত রাতে এই রুমে কেউ দেখলে আমাকে সবাই খারাপ ভাববে।তাই এখন তুমি তোমার রুমে যাবে।আর আমি ঘুমাব। (রুতবা একটু রাগি সুরে)

কে কি বলবে তার পরোয়া আয়ান করেনা রুত।হ্যা আমি আমার ফেমেলির জন্য কষ্ট করে বিদেশ ছিলাম ঠিকি।তবে ভুলে যেওনা আমি এই বাড়ির একমাত্র ছেলে আর আমার উপর কেউ কথা বলেনা।আর তাছাড়া তোমাকে কেউ খারাপ বললে সেই মানুষটার কি হবে তা তোমার ও ধারণার বাইরে।আর হ্যা ভালোবাসি তোমাকে বউ হিসাবেই।বউ বলেই ভালোবাসি।নাহলে সিঙ্গাপুর এ হাজার সুন্দর নারীর সাথে আমি সম্পর্ক চাইলে করতে পারতাম। শুধু তোমার জন্য আমি কারো দিকে খারাপ নজর এ তাকাইনি এই ভেবে আমার দেশে বউ আছে।আর তুমি শুধু মাত্র কালকের করা কিস এর জন্য আমাকে বলছ এই মুহূর্তে আমাকে বিশ্বাস করতে পারছ না।ঠিক আছে বিশ্বাস করতে হবেনা।আমি আয়ান কথা দিচ্ছি যেই আমি ছোট বেলাতে বিয়ে টা কে MEANINGLESS মনে করতাম, তোমাকে আমার #MEANINGLESS_LIFE_PARTNER মনে হতো সেই আমি তোমাকে আবার তোরজোর করে বিয়ে করে ঘরে তুলে একজন আদর্শ স্বামী এবং তোমাকে আমার MEANINGFUL LIFE PARTNER বানিয়ে ছাড়ব।আর ঠিক যতোদিন আমি তোমাকে বিয়ে করে আমার বাসর ঘরে না তুলব ততদিন তোমার কাছে না থাকবে আমার কোন আবদার আর না থাকবে কোন দাবি। (আয়ান রুতবার উদ্দেশ্য বলেই রুমে চলে গেল)

তুমি কেন বোঝনা আয়ান ভাই তোমার আমার বিয়ের মূল্য নেই। আর তাই কালকে রাতে তোমার রুমে যাওয়া নিয়ে তোমার চাচিমা রা আমাকে অনেক কথা শুনিয়েছে।কিন্ত আমি কিভাবে এসব তোমাকে বলি বল?এমনেই তোমরা আলাদা হয়ে গেছ।এখন এসব বলে একেবারেই সম্পর্ক ছিন্ন করতে আমি চাইনা।আমি সত্যি চাই তোমার বউ হয়ে একেবারে তোমার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকতে।তুমি এই যে আমার সব আয়ান ভাই।আমার প্রথম ও শেষ ভালোবাসা আমার স্বামী তুমিই। তবে তার জন্য আমাদের সমাজের সকলের সামনে আবার বিয়ে করে কাছাকাছি যেতে হবে।ততদিন নাহয় এই রাগটা নিয়ে থাক।সময় আসলে রাগ ভাঙ্গাব আয়ান ভাই আমার ভালোবাসা দিয়ে।(রুতবা আয়ান এর দিকে তাকিয়েই মনে মনে)

রুত এর সাথে এত্ত রুডলি কথা বলা আমার পছন্দের বাইরে।ওকে আমি এখন ও সেই ছোট বাচ্চার মতো এই ভালোবাসতে চাই।কিন্ত আমার বয়স তা মানতে নারাজ। ঠিক আছে রুত তোমার ইচ্ছে এই পূরণ করা হবে।সমাজের কেউ তোমার দিকে আঙ্গুল তুলার সাহস পাবেনা।আমাকে দুই দিন এর সময় দাও।এসব ভাবনার মধ্যেই পুরো রাত পেরিয়ে গেল। ভোরের দিকে হয়তো চোখ লেগে গেছে।ঘুম ভাঙ্গল অনেক বেলা করে।উঠে হাত ঘরির দিকে তাকিয়ে দেখি সকাল এগারোটার কাছাকাছি।উঠে ওয়াশরুম দিকে যেতেই দেখি গেট লক। আমার রুমের ওয়াশরুম এ আবার কে গেল?পানির আওয়াজ বন্ধ হওয়ার অপেক্ষা করতে লাগলাম। আমি বেডে বসে আব্বুকে কিভাবে বলব আমার আর রুত এর বিয়ের কথা সেই চিন্তাকে আছি।হঠাৎই গেট খোলার আওয়াজ এ সামনে তাকাতেই আমার চোখ ধাদিয়ে গেল।কারণ আমার সামনে রুত পেটিকোট আর ব্লাউজ পরে অর্ধ শারি পেঁচিয়ে দাড়িয়ে আছে।আমি সাথে সাথেই দাড়িয়ে ঘুরে গেলাম।
এভাবে আমার সামনে আসার মানেকি রুত?(আয়ান হালকা চিৎকার করে)

আমি বউ ভাত এ যাব তাই গোসল করতে এসেছিলাম।কিন্ত শারি ওয়াশরুম এ পরলে ভিজে যাবে তাই এভাবে বেরিয়ে এসেছি।তুমি জেগে গেছ আমি বুঝতে পারিনি।(রুতবা শাড়ি পেচিয়ে ঘুরে দাড়িয়ে)

জলদি শাড়ি পরে ঘর থেকে যাও।(আয়ান হাতের মুটি বন্ধ করে)

যাচ্ছি আয়ান ভাই পাচঁমিনিট লাগবে।তুমি বরং শাওয়ার নিতে যাও।তারপর রেডি হয়ে নাও আয়েশাকে আনতে যাবে না?(রুতবা আয়ান এর উদ্দেশ্য)

হুম।
বলেই ওর দিকেই এক পলক তাকিয়েই ওয়াশরুম ঢুকে গেলাম। আমার বউ কে দেখার অধিকার টুকু ও আমার নেই।আরো হাজার চিন্তার পর ফ্রেস হয়ে বাইরে এসে দেখি রুত রুমে নেই।টেবিলের উপর একটা চিরকুট সাথে এককাপ চা।চিরকুট এ লেখা
আয়ান ভাই আমার রাতে ঘুম আসেনা বালিশে কারণ আমার খুব করে তোমার ঐ প্রশস্ত বুকটাতে ঘুমানোর তীব্র ইচ্ছে জেগেছে।বিয়ের ব্যবস্থা কর নাহলে সত্যি বলছি তোমার থেকে দূরে থাকার পণ করে বসলে আমাকে আর খুঁজে ও পাবেনা।রাগ যখন করেছ বাসর ছাড়া কোন দাবি করবেনা তখন সেই বাসর টা জলদি করার দ্বায়িত্ব ও কিন্ত তোমার। আর আরেকটা কথা আমার শাড়ির সাথে মেচিং করে শার্ট পরে তারপর নেমে এসো।আমি নিচেই তোমার অপেক্ষাতে থাকব।ইতি তোমার রুত ।
ঢং এর কারখানা।খালি বিয়ে কর বিয়ে কর বললেই কি বিয়ে করা যায়। ফেমেলির পিপারেসন বলে ও একটা কথা আছে তা কেন বোঝেনা আমার বাচ্চা বউ টা?ঠিক আছে বিয়ে আমি করব সেই ছোট বেলার মতো।এক কাপরে তোমাকে আমার ঘরে এনে তুলব।আমি রুত এর শাড়ির কালার এর পারপেল কালার একটা শার্ট পরে রেডি হয়ে নিলাম। তারপর নিচে এসে হালকা নাস্তা করলাম। রুত সোফায় বসে সিঁড়ির দিকে তাকিয়েই ছিল আমার আসার অপেক্ষাতে।আমাকে দেখে মুচকি মুচকি হাসছিল।আমি নাস্তা করার পর সাড়ে বারোটার দিকে আয়েশার শশুর বাড়ির উদ্দেশ্য রওনা হলাম সবাই। দুইটা মাইক্রো নেওয়ার পর ও একটু চাপাচাপি ছিল। মেয়েরা সব এক সাথে আমরা ছেলেরা এক সাথে ছিলাম। বউ ভাত অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পর আয়েশা ওর হাজব্যান্ড আরো ঐ বাড়ির চারজন আসল।এখন আয়েশা আর ওর হাজব্যান্ড রা আসার কারণে পাচঁজন বাসে করে বাড়িতে চলে গেল। এখন যাওয়ার সময় সবাই কাপল বসে যাচ্ছে। একটা ছেলে আয়েশার চাচাতো দেবর ও রুত এর পাশে বসে যেতে চাইছে।তাই আমি রুতকে উঠিয়ে আমরা যেই গাড়িতে যাচ্ছি ঐটাতে নিয়ে আসলাম ।সামনে সব গুরুজন বসার কারণে আমার আর রুতকে পেছনে বসতে হল।সাথে বসল আমার একটা বোনের হাজবেন্ড আর ছেলে মেয়ে দুইটা। চারজন এর সিটে প্রায় ছয়জন বসার কারণে একটু চাপাচাপি ছিল। রুতকে কিনারে দিয়ে আমি বসেছি তারপর বাচ্চারা আর আছমার হাজব্যান্ড। তো গাড়ি চলতে শুরু করল। এই গাড়িতে সব মেজ,সেজ,ছোট বাবা ও আব্বু থাকার কারণে সবাই চুপচাপ এই থাকল।যেহেতু বউভাত শেষ করে বের হতে সন্ধা হয়ে গেছে।সে জন্য অন্ধকারে ছেয়ে গেছে।হঠাৎই রুত আমার হাতটা আকরে ধরে আমার কাধে মাথা রাখল।আমি পাশে তাকাতেই দেখি ও ঘুমুঘুমু চোখে আমার দিকে তাকিয়েই আছে।এদিকে বাচ্চারা ও ঘুম এ আমার উপর ও বাবু(আছমার হাজব্যান্ড)এর উপর ঢলে পরেছে।
ঘুম আসছে?(আয়ান আস্তে)

হুম। (ঠোঁট উল্টে রুতবা)

ঘুমাও। (রুতবার মাথার হাত রেখে আয়ান)

আচ্ছা।
ঘুম তো পায়নি আয়ান ভাই তবে তোমার বুকে নাহোক ঘারে শোয়ার একটা সুযোগ তো এসেছে।আমি আয়ান ভাই এর হাত টা শক্ত করে দুইহাতে জড়িয়ে কাধে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে রাখলাম। বেশ কিছুক্ষন এভাবেই কেটে গেল। হঠাৎই মনে হল আয়ান ভাই আমার একটা হাত তার হাতে নিয়ে মুষ্টি বদ্ধ করল।এবং তার আঙ্গুলের ফাকে আমার আঙ্গুল গুলো দিয়ে হঠাৎই হাত
টা কাছে নিয়ে ক্ষণিকের জন্য ঠোঁট স্পর্শ করল।আমি খিচে চোখ বন্ধ করেই রাখলাম। এই অনুভূতি গুলো এত্তটাই স্পর্শ কাতর যে মনকে উতলা করে তুলে।আরো কিছুক্ষণ কেটে গেল। হঠাৎই মনে হল আমার কপালে কারো ভেজা ঠোঁট এর পরশ একে দিল।সেই মুহূর্তেই আমি চোখ খুলে তার দিকে তাকালাম।আয়ান ভাই এর সাথে আমার চোখ পড়তেই ও সাথে সাথেই মুখটা ঘুরিয়ে নিল।আমি আস্তে করে সোজা হয়ে আয়ান ভাই এর হাত ছেড়ে বসে পড়লাম। ও সেই মুহূর্তে আবার আমার দিকে একবার তাকিয়ে মুখটা ঘুরিয়ে নিল।(রুতবা মনে মনে)

আরেকটু ঘুমালে কি হতো?ধরা খেয়ে গেলাম দুর।
বাড়িতে পৌঁছানোর পর নানান রকমের নিয়ম পালন করে আয়েশা ও ওর হাজব্যান্ড কে বরণ করে নিল।তারপর সবাই মিলে কিছুক্ষণ আনন্দ করে রাতের খাবার খেতে লাগল। হঠাৎই আম্মুর কথাতে রুত এর গলাতে খাবার আটকে গেল। উপস্থিত সবাই বিশেষ করে আয়েশার দেবর টা যেন বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়েই রইল। (আয়ান মনে মনে)

রুতবা আজকে তো আয়েশার ঘরে তুমি ঘুমাতে পারবেনা।এক কাজ কর তোমার ব্যাগ নিয়ে তোমার আয়ান ভাই এর ঘরে চলে যাও।আর যেকদিন থাকবে আয়ান এর সাথেই থাকবে।(আম্মু রুতবার উদ্দেশ্য)

আমি কিভাবে তার ঘরে ঘুমাবো?(রুত অবাক চোখে)

ওমা যেভাবে আগে ঘুমাতে সেভাবেই ঘুমাবে।(আম্মু খাবার বাড়তে বাড়তে)

আপনাদের ফেমেলির নিয়ম বুঝি একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মেয়েকে একজন প্রাপ্ত বয়স্ক ছেলের রুমে ঘুমাতে দেওয়া?যদি ঘুমের জায়গার অভাব হয়।তাহলে ওকে আমাকে যেই রুমে দিবেন সেখানে ঘুমাতে দিলেই পারেন।(তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে মনির(আয়েশার দেবর))

আহ মনির এসব কোন ধরনের ব্যবহার?(লিমন(আয়েশার বর)ঝাড়ি মেরে)

দেখুন ভাইয়া এমন বড় বাড়ির মেয়ে বউ দের সম্পর্কে না যেনে মন্তব্য করা ঠিক নয়।আম্মু বা আমার শশুর আব্বুর মেনটালিটি এত্ত টাও নিচু নয় যে একজন প্রাপ্ত বয়স্ক কারো সাথে আমাকে গিয়ে থাকতে বলবে।আয়ান ভাই থুরি আয়ান আমার হাজবেন্ড হয়।ওর সাথে ছোট্ট বেলাতে আমার বিয়ে হয়েছিল। আর আয়েশার বিয়ের চারদিন আগেও আমাদের আবার বিয়ে হয়েছিল। কিন্ত আমাকে এখন ও অনুষ্ঠান করে তুলে আনে নাই বলে আমার হাজবেন্ড আমাকে আয়েশার সাথে থাকার জন্য বলেছে।এখন আম্মু যেহেতু চায় তাই আমি আমার হাজবেন্ড এর রুমে এই থাকব তো আমাদের কোন আপত্তি নেই। কিন্ত ভাগ্য ভাল যে আমার হাজবেন্ড খুব ভাল মানুষ নাহলে আজকে এত্তক্ষণ আপনি সুস্থ বসে থাকতেন না বেয়াই।(রুতবা শান্ত কন্ঠে)

আমি সরি ভাবি ওর পক্ষের থেকে।ও আসলে বুঝতে পারেনি।(লিমন মাথা নিচু করে)

আমার খাওয়া শেষ আমি উঠলাম। আব্বু তোমার সাথে কিছু কথা আছে একটু তোমার রুমে আস।রুত তুমি ঘরে যাও খাওয়ার পর আমি ব্যাগ নিয়ে আসছি।
বলেই সেখান থেকে উঠে আব্বুর রুমের দিকে চলে আসলাম। আব্বু আর আম্মু ও পেছনে আসল।আমি তাদের বসতে বলে পাইচারী করে যাচ্ছি। রাগে আমার মন চাইছে ঐ ছেলের মাথা ফাটায় ফেলি।আফসোস ও আমার ছোট্ট বোনের দেবর। আর কটুম দের সাথে মারামারি করা আমার কাছে বেশ বিরক্তির একটা জিনিস। তবে ও আমার আম্মু ও বউ কে অপমান করে কথা বলেছে।ওর ব্যবস্থা পরে করব।আপাতত আমার বউ কে একেবারেই ঘরে তোলার ব্যবস্থা করে নেই।(মনে মনে)
কালকের মধ্যেই আমার আর রুত এর বিয়ের ব্যবস্থা করবে। আংকেল আন্টি কে কল করে শ্রীনগর কাজি অফিস আসতে বল।আমি আপাতত বিয়েটা সেরে রাখতে চাই। অনুষ্ঠান পরেও করা যাবে।(আয়ান আব্বু ও আম্মুর উদ্দেশ্য)

ঠিক আছে বাবা।এখন রাগ না করে রুমে যা অনেক রাত হয়েছে। (আম্মু আয়ান এর উদ্দেশ্য)

ওকে।
বলেই বের হয়ে আয়েশার রুমে চলে গেলাম সেখান থেকে রুত এর ব্যাগ নিয়ে আমার রুমে চলে আসলাম।রুত চেয়ারে বসে আছে।আমি ব্যাগ টা টেবিল এর উপর রেখে ওয়াশরুম চলে গেলাম। এই রাতের বেলাতেই শাওয়ার নিলাম প্রচুর মাথা গরম আছে সেই জন্য। ঐ ছেলের কথা বারবার কানে এসে লাগছে আর রাগটা বেড়ে যাচ্ছে। শাওয়ার নিয়ে একটা টাওয়াল পেঁচিয়ে বের হয়ে আসলাম। রুত এখন ও একি জায়গাতেই বসে আছে।
ঘুমাতে আসোনি কেন?নাকি দাওয়াত করে ঘুমাতে বলতে হবে?(রুতবার উদ্দেশ্য চেঁচিয়ে আয়ান)

তোমার ঘুম আসলে তুমি ঘুমাও। আমার চিন্তা করতে হবেনা।(রুতবা চিৎকার করে)

বেশি কথা এই মুহূর্তে ভাল লাগছেনা রুত।মাথা গরম করাবি না।ঘুমাতে যা এখনই। (আয়ান রুতবার উদ্দেশ্য চিৎকার করে)

তুমি আমাকে তুই করে কথা বললে আয়ান ভাই?(ছলছল চোখে রুতবা)

এই মুহূর্তেই তোকে খাটে না দেখলে বারান্দার থেকে নিচে ফেলে দিব।(আয়ান রাগি লুক দিয়ে)

উঠবনা কি করবে?(দাঁতে দাঁত চেপে রুতবা)

রাগ মাথায় চেপে আছে রুত তা তোর উপর প্রয়োগ করতে চাইছিনা।তাই যা বলছি কর।(আয়ান রুতবার হাত ধরে)

তুমি খুব খুব খুব খারাপ আয়ান ভাই।
বলেই কান্না করতে করতেই খাটের এক কিনারে গিয়ে কাথা মুরি দিয়ে শুয়ে পড়লাম। রাগ করবে একজনের উপর, আর রাগ দেখাবে আরেকজন এর উপর। তুইতোকারি করলে তো দেখ তোমার সাথে আর কোন কথা নেই আমার। (রুতবা বিরবির করে)

আমি একটা টাওজার পরে নিলাম। তারপর লাইট অফ করে গিয়ে শুয়ে পড়লাম। বেশ কিছুক্ষন পর হঠাৎই ফুফানির শব্দে পাশে ফিরে চাইলাম। অন্যের রাগ রুত এর উপর উঠানোর কোন মানে এই হয়না।আমি আস্তে করে ওকে পেছনের থেকে আমার সাথে জড়িয়ে ধরলাম। ও নিশ্চুপ হয়ে থাকল।আমি ওকে আরেকটু গভীর ভাবে জড়িয়ে ধরলাম এবার ও ওর নিশ্চুপ। আমি আস্তে ওর পিঠে একটা চুম্বন করে সেভাবেই ঘুমিয়ে পড়লাম।
সকালের সোনালী রোদের উত্তাপ এ ঘুমটা ভেঙ্গে গেল। রুতকে ছেড়ে উঠে দাড়ালাম। (মনে মনে)
রুত উঠে পড়।তোমাকে আংকেল নিতে আসবে।(আয়ান রুতবার উদ্দেশ্য)

মানে!(আড়মোরা দিয়ে রুতবা)

আংকেল নিতে আসবে তোমাকে কল করেছিল। জলদি রেডি হয়ে নাও।আমি তোমাকে দিয়ে আসব স্টান এ।(আয়ান বলেই হাটা দিল)

আমি তোমাকে কিছু বলেছিলাম আয়ান ভাই। (রুতবা ছলছল চোখে)

রেডি হয়ে নাও।
বলেই ওয়াশরুম চলে গেলাম। বের হতেই দেখি রুত কেদে কেদে চোখ ফুলিয়ে ফেলেছে।ঝাড়ি মেরে রেডি করালাম রুতকে।ও একটা থ্রিপিস পরে রেডি হয়ে নিল।ওকে ধরে নিচে নিয়ে আসলাম। তারপর ব্রেকফাস্ট করে নিলাম। রুত কান্নার জন্য একটু খানি খেল।ওকে নিয়ে বের হয়ে গেলাম। আব্বু আম্মু একটু পরে আসবে।ওকে নিয়ে আমি আমার একটা ফ্রেন্ড এর বাসায় বসিয়ে সামনের শপিং মল থেকে একটা শাড়ি কিনে নিলাম।সেই ব্যাগ নিয়ে আমি আমার ফ্রেন্ড এর বোনের হাতে দিয়ে ওকে রেডি করাতে বললাম। রুত কোন মতে রেডি হবেনা।আমি গিয়ে আবার ঝাড়ি মারতেই ও রেডি হয়ে নিল।রেডি হয়ে যাওয়ার পর ওকে নিয়ে কাজি অফিস আসলাম। ও অবাক হয়ে আমার দিকেই তাকিয়ে আছে।
TIME TO GET MARRIED রুত পাখি।(আয়ান রুতবার হাত ধরেই মুচকি হেসে)

তুমি খুব খারাপ আয়ান ভাই। (কান্না করে রুতবা)

রুত পাখি কান্না করেনা।মেকাপ নষ্ট হলে পেতনি দেখা যাবে। তখন তোমার শশুর শাশুরী ভয় পেয়ে পালাবে। আর আমাদের বিয়ে আরো দেরি হয়ে যাবে।(আয়ান মুচকি হেসে)

আব্বু আম্মু আংকেল আন্টির উপস্থিতিতে আমাদের বিয়ের কাজ সম্পূর্ণ করা হল। আংকেল রুতকে আমার হাতে তুলে দিতেই কান্না তে ভেঙ্গে পড়ল।আন্টির সাথে রুতবার ও কান্না যেন থামছেই না।অনেক বোঝানোর পর কান্না থামল।এখন রুত আমার সাথেই থাকবে। কিন্ত পনের দিন পর ওদের বাড়ির থেকে অনুষ্ঠান করে ওকে আমার হাতে তুলে দিবে।এসব কথার পর আংকেল আন্টি সহ সবাই বাড়ির উদ্দেশ্য রওনা হলাম।যাওয়ার আগে রুতকে চেঞ্জ করতে বললাম লিমন আর মনিরকে এসব বুঝতে দেওয়া যাবেনা। রুত কালকে বড় মুখ করে যা বলেছে তাই ওরা জানুক।বাড়িতে ফিরে আমি উপরে চলে আসলাম শাওয়ার নেওয়ার জন্য। রুত নিচে আন্টির সাথে বসে কথা বলছে।(আয়ান)

আয়ান ভাই কে বারবার বলে বিয়ে তো করে নিলাম। এখন ওর সামনে যেতে খুব ভয় লাগছে।সারাদিন যেমন তেমন বাইরেই কাটালাম। এখন রাতের খাবার খাওয়ার সময়।খাওয়ার পর তো আমার রুমে যেতেই হবে তখন কি হবে ভাবতেই আমার সারা শরীর ঝংকার দিয়ে উঠছে?(রুতবা আয়ান দিকে তাকিয়েই মনে মনে)

কি?(আয়ান ব্রু নাচিয়ে)

কিছুনা।(রুতবা মাথা নামিয়ে)

খাওয়ার পর রুতকে নিয়ে রুমে চলে আসলাম।ও ভয় পেয়ে আছে ওর মুখ দেখলেই বোঝা যায়।আমি ওর দিকে তাকিয়েই মুচকি হাসতেই ও আমার দিকে বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে রইল। (আয়ান মনে মনে)

হঠাৎই আয়ান ভাই আমার দিকে অগ্রসর হতে লাগল। আমি ভয়ে একপা একপা পেছনে যেতে লাগলাম।তারপর!(রুতবা)

********************(চলবে)*****************

MEANINGLESS LIFE PARTNER Part-08

0

#MEANINGLESS_LIFE_PARTNER (অর্থহীন জীবন সঙ্গী)
পর্ব:8
#লেখিকা_Arshi_khan

(DESPERATELY NEED YOUR LOVE:তোমার নিদারুণ ভালোবাসার প্রয়োজন)

সকালের সোনালি রোদের উত্তাপ পুরো রুম কে মরুভূমিতে পরিণত করেছে।এদিকে মাথা ব্যাথার কারণে আর ঘুম ও আসছেনা।বেশ রাতেই ঘুমানোর কারণে এখন মাথা ব্যাথা করছে।এখন উঠে গরম গরম এক কাপ চা খেলেই মাথা টা হালকা হয়ে যাবে আর মাথা ব্যাথা ও চলে যাবে।ঘুম থেকে উঠে ওয়াশরুম থেকে ফ্রেস হয়ে নিলাম। ওয়াশরুম থেকে বের হতেই দেখি রুত আমার খাটের উপর বসে আমার ফোন নিয়ে কি যেন করছে!আমি আস্তে করে বেডের পেছনে থেকে গিয়ে ওকে আমার সাথে জড়িয়ে ধরতেই যাব হঠাৎই আয়েশার আগমন এ আমি হতভম্ব হয়ে পিছিয়ে গেলাম।(মনে মনে আয়ান)

রুতবা ভাবি তোমার কথা হল?আরে ভাইয়া তুমি ভাবির পেছনে কি করো?(আয়েশা আয়ান এর উদ্দেশ্য)

আমি আসলে হয়েছে কি!(আমতা আমতা করে আয়ান)

না কথা হয়নি। হলে আসছি তুই যা।(রুতবা আয়েশার উদ্দেশ্য)

আচ্ছা যাচ্ছি। আর আম্মু ডাকছে একটু জলদি এসো।(বলেই চলে গেল আয়েশা)

কি আয়ান ভাই আমার পেছনে কি করছ তুমি?(রুতবা দাড়িয়ে কোমর এ হাত দিয়ে)

আমি ঝড়ের গতিতে ওর সামনে এসে ওকে আমার সাথে চেপে ধরলাম। দুই হাত দিয়ে ওর কোমর আর দুই পা দিয়ে ওর পা। ও হঠাৎই এমন কান্ডে আমার দিকে বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়েই আছে।আমি ওকে আরেকটু কাছে টেনে হাতের বাধন টা আরেকটু শক্ত করলাম।
কি রুত পাখি এমন ফুরুত ফুরুত করে উড়ো কেন?কালকে রাতে আমার ঘুম হারাম করে পালানোর শাস্তি এখন দিলে কেমন হয় বলতো?(আয়ান মুচকি হেসে)

দেখ আয়ান ভাই এইসব ফালতু কথা বলবেনা।আর যখন তখন আমাকে এমন করে ধরবেনা।আমার কেমন কেমন যানি লাগে?এখন ছাড় আমি আম্মুর কাছে যাব।(রুতবা আয়ান এর বুকে হাত দিয়ে ধাক্কা দিয়ে)

রুত একটা কথা বলি?(আয়ান রুতবার ঠোঁটের দিকে তাকিয়েই)

কি?(আয়ান এর চোখের দিকে তাকিয়েই রুতবা)

ভালোবাসি খুব। (আয়ান রুতবার গালে এক হাত দিয়ে)

হুম। (রুতবা আস্তে করে)

আচ্ছা যাও।(রুতবাকে ছেড়ে সরে বসে আয়ান)

আয়ান ভাই। (আয়ান এর একটা হাত ধরে রুতবা)

হুম (আয়ান রুতবার হাতের দিকে তাকিয়ে)

আমাদের বিয়ের সময় কি হয়নি?(রুতবা মাথা নিচু করে)

হয়তো হয়েছে।তবে আমি বলেছিলাম যেদিন আমার বউ বুঝবে এক কাথার নিচে ঘুমালেই বেবি হয়না সেদিন আমি আমার রুতকে কাছে টেনে নিব।আর আমি এখন বিয়ে করলে অবশ্যই নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারব না।তাই আগে আমার জানতে হবে আমার বউ কতটা বুদ্ধিমান হয়েছে।(রুতবার হাত টা একটু শক্ত করে ধরে আয়ান)

আমাকে আম্মু ডাকে আয়ান ভাই। ছাড়(রুতবা লজ্জা মিশ্রিত কন্ঠে)

ধরতে পারলাম কই?(আয়ান রুতবার হাত ছেড়ে)

আমি একেবারেই এখানে এসেছি আয়ান ভাই। আমি আর একা ফিরতে চাইনা।আমার বাবার বাড়ি আমি আর একলা যাবনা আয়ান ভাই কথাটা মাথায় রেখ।(বলেই ঘর থেকে বেরিয়ে নিচে চলে আসলাম রুতবা)

আয়েশার বিয়েটা হোক তারপর তোমার ব্যবস্থা করব রুত পাখি।আমার মনের পিনজিরাতে আমার রুত পাখিকে বন্ধি করে রাখার ব্যবস্থা খুব শীঘ্রই করব।
আমি একটা গেঞ্জি পরে নিচে নেমে আসলাম।সকালের ব্রেকফাস্ট করে একটু ডাইনিং রুমে বসলাম। আব্বু এসে বলল তাদের সাথে বিয়ের বাজার করতে যেতে।আমি ও উঠে চললাম আব্বুর ও বোনের জামাই দের সাথে বাজার এর উদ্দেশ্য। গত সাত বছরে জিনিস এর দাম মনে হল আকাশ পাতাল তফাত। আগামী দিন গুলোতে আরো কয়েকশ গুন দাম বাড়বে বোঝাই যাচ্ছে। তাইতো প্রবাসীদের এত্ত কষ্টের পর ও সেই টাকা দিয়ে বড় যৌথ ফেমেলির চলতেও হিমশিম খেতে হয়।বাজার করে বাড়ি ফিরতে বিকাল চারটা বেজে গেল। আমি আমার হাতের জিনিস ডাইনিং এ রেখে চললাম আমার রুমে।আমার রুম দুইতালাতে বানানো হয়েছে।যাইহোক আমি একটা টাওয়াল নিয়ে ওয়াশরুম চলে গেলাম। গরমে ঘেমে একাকার অবস্থা। তাই ফ্রেস হওয়ার পর একেবারেই গোসল সেরে নিলাম। যেহেতু শুধু টাওয়াল নিয়ে ওয়াশরুম গেছি তাই সেই টাওয়াল দিয়ে এই শরীর মুছে নিলাম। আর টাওয়াল পেঁচিয়ে বেরিয়ে আসলাম। আসতেই দেখি রুত একটা গ্লাস হাতে দাড়িয়ে আছে।ওর সামনে এমনে বের হয়ে আমার এই লজ্জা লাগছে।ও আমার দিকে হা করে তাকিয়েই আছে।আমি তাই জলদি আলমারির থেকে একটা শার্ট বের করে পরে নিলাম।
এখানে কি কর?(আয়ান রুতবার উদ্দেশ্য)

তোমার জন্য শরবত বানিয়ে এনেছি।নাও খেয়ে খাবার খেতে আস।(রুতবা মুখ ঘুরিয়ে)

এত্তক্ষণ হা করে তাকিয়ে এখন অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে লাভ কি?সবতো দেখেই ফেলছ।(আয়ান রুতবার কাছে এসে)

বেশি কথা না বলে পেন্ট পর। নাহলে তোমার ইজ্জতের বারোটা বাজায় দিব ফাজিল লোক। (রুতবা দাঁতে দাঁত চেপে)

তাই না।আসো কাছে আসো দেখি কিভাবে ইজ্জতের বারোটা বাজাও।(আয়ান রুতবার উদ্দেশ্য ডেভিল লুক দিয়ে )

শরবত নিবা নাকি খেয়ে ফেলব?(রুতবা মুখ ভেংচি কেটে)

খাও মানা করছে কে?(পেন্ট পরতে পরতে আয়ান)

অসভ্য লোক আমার সামনে পেন্ট পরতে কে বলেছে তোমাকে?(রুতমা ঘুরে দাড়িয়ে)

এত্ত লজ্জা পাওয়ার কিছু নেই।কয়েকদিন পর (আয়ান রুতবার সামনে এসে থেমে গিয়ে )

আস্তাকফিরুল্লাহ মার্কা কথা বার্তা বল কেন আয়ান ভাই?(রুতবা আয়ান এর দিকে ঘুরে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে)

যা সত্যি তাই বললাম।এত্ত ভাব নেওয়ার কি আছে?(আয়ান রুতবার উদ্দেশ্য)

তোমার মাথা গেছে।নাও তোমার শরবত টা খাও তারপর খেতে আস।(রুতবা আয়ান এর হাতে শরবত ধরিয়ে নিচে চলে গেল)

হাহাহা।
ওর কান্ডে মাঝেমধ্যেই প্রচুর হাসি পায়।শরবত টা খেয়ে আবার নিচে আসলাম দুপুর এর খাবার খেতে।খাবার খেয়ে রুমে আসলাম একটু রেস্ট করব বলে।এখন বাজে বিকাল পাচঁটা।এখন একটু ঘুমালে সাতটার মধ্যেই উঠতে পারব।সেই ভেবেই ঘুমিয়ে পড়লাম। কিন্ত ঘুম ভাঙ্গল মিষ্টি একটা ঘ্রাণ এ।মেয়েদের শেমপুর ঘ্রাণ আমার নাকে কেন লাগছে।হাল্কা ভাবে সারা মুখে কারো হাত বুলানো তে ঘুমটা আরো হাল্কা হয়ে গেল। হঠাৎই কানে ফিসফিস শব্দে ঠোঁটের কোনে হাল্কা মৃদু হাসি খেলে গেল। আমার সামনে বসা/শুয়ে থাকা রমনির কান্ডে মনে আরেকটু রোমান্স খেলে গেল। আমি নিশ্চুপ থেকে তার বলা ফিসফিস করা কথা গুলো শুনে যাচ্ছি। আমার প্রতি তার অভিযোগ এর শেষ নেই যেন।এ অভিযোগ এর ভান্ডার এ কালেও শেষ হবে বলে মনে হয়না।আমি আস্তে করে চোখ খুলতেই দেখি রুত আমার সামনে বসে আমার চুলে হাত বুলিয়ে কিছু বলার চেষ্টা করেও থেমে সরে যেতে চাইল।আমি ওর হাতটা টেনে আমার উপর ওকে ফেলে দিলাম।ও সাথেসাথেই চোখ বন্ধ করে নিল।
চুন্নি লুকিয়ে লুকিয়ে আদর করছ কেন?যখন আমি সামনের থেকে আদর করতে যাই আমাকে অসভ্য বল।এখন তোমাকে কি বলা উচিত?(আয়ান রুতবার উদ্দেশ্য)

ছাড়।(চোখ বন্ধ করেই রুতবা)

কেন?কাছে আশার আগে মনে ছিলনা যে আমার কি হতে পারে তোমাকে কাছে পেলে বা তোমার কি হবে এর পরে?(আয়ান রুতবার ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে)

না।আমি এসব ভেবে তোমার সামনে আসিনি আয়ান ভাই। (রুতবা চোখ বন্ধ রেখে)

রোমান্স এর মধ্যেই সব সময়ই পানি ঢেলে দাও কেন রুত?(আয়ান হতাশ কন্ঠে)

কি করলাম আমি আবার?(রুতবা চোখ বড় করে)

আমি তোমার হাজবেন্ড হোই ভাইনা।তাই আয়ান ভাই আর বলবা না।এখন যাও দুই কাপ কফি বানিয়ে আন। তোমার সাথে কফি পান করা উপভোগ করতে চাই এখনি।(আয়ান উঠে বসে)

হুম। (রুতবা উঠে হাটা দিল)

রুত।(আয়ান)

হুম।(দাড়িয়ে রুতবা)

এরপর আমার কাছে এভাবে আসলে আমি কিছু একটা করে বসব।তখন আমাকে দোষারোপ করতে পারবেনা।আর বিশেষ করে আমার সামনে আসলে ওরনা ভাল মতো গলাতে দিয়ে আসবে।(আয়ান নিজের চুল ঠিক করতে করতে)

এত্ত দিকে নজর দিতে বলছে কে লুচ্চু বেটা?(কোমর এ হাত দিয়ে রুতবা)

ওরনা ছাড়া আমার সামনে আসতে বলছে কে লুচ্চু মহিলা?(আয়ান রুতবার হাত ধরেই)

ছাড় বলছি।(দাঁতে দাঁত চেপে রুতবা)

তোমাকে ধরলেই বল ছাড় ছাড় ছাড় কেন হে রমনী মাঝে মাঝে ধরো ধরো ও তো বলতে পারো ।(চোখ টিপ দিয়ে আয়ান)

আয়ান ভাইইইইই তুমি একটা বদ লোক, অসভ্য লোক, খারাপ লোক, লুচ্চু লোক।(রুতবা আয়ান এর উদ্দেশ্য হালকা চিৎকার করে)

তাই বুঝি।তাহলে আসো এত্ত গুলো উপাধি গুলো সব পূরণ করে ফেলি।(রুতবাকে কাছে টেনে আয়ান)

সরো।(বলেই আয়ান এর পেটে ধাক্কা দিয়ে ঘর ছেড়ে দৌড়ে বেরিয়ে আসলাম)

ও বের হওয়ার কিছুক্ষণ পর আয়েশা এসে কফি দিয়ে গেল। রুত আর এমুখো হবে বলে মনে হচ্ছে না।বেচারি ভয় পেয়েছে। কফি খেতে খেতে রুতবার কথা মনে করে কিছুক্ষণ হাসলাম আর ওর অভিযোগ গুলোর কথা মনে পড়তে লাগল।কফি খাওয়ার পর নিচে এসে সবার সাথে আড্ডা দিলাম তারপর রাতের খাবার খেয়ে ঘুমাতে আসলাম। এভাবেই হাসিমজা খুনসুটি তে কেটে গেল পুরো চারদিন।আজকে আয়েশার হলুদ সন্ধা। সব মেয়েরা আজকে লাল জামদানি শাড়ি পরেছে আর ছেলেরা হলুদ পাঞ্জাবী।কাজের চাপ এ রুতকে দেখার সুযোগ আর হয়ে উঠেনি।আয়েশাকে হলুদ দেওয়ার সময় আমাকে আর রুতকে একসাথে পাঠানো হলো। সেই সময়ই আমি আমার বাচ্চা বউ কে দেখে ছোট খাট হার্ট এটাক করে বসলাম। আহা বাংলা শাড়ি সাথে হালকা মেকাপ আর খোপাতে গোলাম ফুলের সমারহ।এতেই যেন আমার বাচ্চা বউ কে পরিপূর্ণ রমনি লাগছে।ওকে এই মুহূর্তেই কাছে পাওয়ার নিষিদ্ধ একটা বাসনা কাজ করতে লাগল। কিন্ত এটা যদিও নিষিদ্ধ না কারণ রুত আমার বিয়ে করা বউ। তবুও পুরোপুরিই ওকে বিয়ে না করে কাছে টানার বাসনা আমার কাছে কেন যানি নিষিদ্ধ মনে হচ্ছে। তবে ওকে এই মুহূর্তেই আমার খুবই কাছে চাই।তা এক মুহূর্তের জন্য এই হোক না কেন। আয়েশার হলুদ দেওয়ার শেষ হলে খাবার খাওয়ার ব্যবস্থা করা হল। খাবার দেওয়ার সময়ই আমি রুতবাকে খাওয়ার পর আমার রুমে যাওয়ার কথা বললাম।সাথেসাথেই ও ব্রু কুচকে তাকাল।কথাটা বলে আমি এক দন্ড ও দেরি না করে সবাইকে খাবার পরিবেশন করে দিলাম। খাওয়ার পর নাচ গান এর অনুষ্ঠান শুরু হল।আমার খাবার টা আমি না খেয়ে আমার রুমে নিয়ে আসলাম। রুত পাখির হাতে খাওয়ার শখ জেগেছে।এখন ও আসলেই হল।(আয়ান মনে মনে)

কি যে ঝামেলাতে ফেলে না আয়ান ভাই। এত্ত মানুষের চোখের অগোচরে দুইতালা তে আশা তাও আয়ান ভাই এর রুমে কত্তটা লজ্জার ও কি বুঝেনা?গ্রামের মানুষ তো আর এটা জানেনা আমি ওর ছোট বেলার বউ। যদি দেখে আমি ওর রুমে ওর সাথে একা তাহলে হাজার টা অপবাদ দিয়ে তারপর আমাদের কথা শুনবে।কিন্ত গত চারদিন ওর সামনে যাইনা।এখন ওর এত্তটা করুন আভাস আমার মনকেও উতলা করে তুলেছে।আমি ওযে চাই আমার আয়ান ভাই আমাকে সর্বদা ভালোবাসুক।এসব ভাবনার মধ্যেই আস্তে করে উপরে চলে এসেছি।তারপর আয়ান ভাই এর রুমে ঢুকে গেট লক করতেই হঠাৎই রুমের লাইট অফ হয়ে গেল। আমি এখন ও গেটের সামনেই দাড়ানো। হঠাৎই আয়ান ভাই আমার সামনে এসে আমাকে তার সাথে জড়িয়ে ধরল। আমি তার বুকে মাথা থাকায় তার বুকের ধুকধুক শব্দ কানে বাজতে লাগল। তার শরীরের স্ট্রং পারফিউম এর ঘ্রাণ আমার নাকে লাগতেই আমার হাতের মুঠি শক্ত হয়ে গেল।
আয়ান ভাই?(রুতবা কাপা কন্ঠে)

হুশশশ রুত আই নিড ইউ বউ। (আয়ান রুতবার কপালে কপাল ঠেকিয়ে)

এখন ও সময় আশে নাই আয়ান ভাই। (আয়ান এর থেকে দুরে সরে রুতবা)

জাস্ট একটু রুত(আয়ান রুতবার হাত ধরে আবার কাছে এনে)

প্লিজ আয়ান ভাই আর কিছুদিন। (আয়ান এর গালে হাত দিয়ে রুতবা)

ওকে সরি।খাবার এনেছি খাইয়ে দাও।
বলেই লাইট অন করে ওর হাত ধরেই বেডের উপর বসিয়ে দিলাম। ওর হাতে খাবার প্লেট দিয়ে আমি মাথা নিচু করে রাখলাম। ওর দিকে তাকালে আমি নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারব না।ও ধীরে ধীরে আমাকে খাবার খাইয়ে দিতে লাগল। খাওয়ার পর ও ওয়াশরুম থেকে হাত ধুয়ে এসে আমার জন্য পানি দিল।আমি পানি খেয়ে দাড়িয়ে গেলাম বের হব বলে।
ফ্রেস হয়ে নিচে যাও।শাড়ি পরে থাকলে গরম লাগবে।(সামনের দিকে তাকিয়েই আয়ান)

আয়ান বিয়ের ব্যবস্থা করো জলদি।(রুতবা কাপা কন্ঠে)

যাও আমি পরে নামছি।(আয়ান অন্য দিকে ঘুরে)

আমি বের হতে গিয়েও আবার ওর কাছে ফিরে ওকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম আর আস্তে করে উচু হয়ে ওর ওধরে আমার ওধর চেপে ধরলাম। ও যেন অনেক সাধনার পর কিছু একটা আকড়ে ধরল।ওর ভালোবাসার প্রথম আক্রমণ গুলো কত্তটা পিপাশাময় তা বোঝানো মুশকিল। অনেকটা সময় কেটে গেল। ও ধীরে ধীরে আমার ওধর ছেড়ে আমার বুকে মাথা রেখে আমাকে জড়িয়ে বেডে বসে পড়ল। আর ধীরে ধীরে শান্ত হয়ে গেল।
আমি যাই তাহলে!(রুতবা চোখ বন্ধ করেই)

কিছুক্ষণ থাক।(আয়ান শান্ত কন্ঠে)
কেটে গেল আরো কিছুক্ষণ এরপর ওকে ছেড়ে দিতেই ও আস্তে করে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেল। আমি নিজের চুল গুলো ঠিক করে ওয়াশরুম থেকে মুখটা ধুয়ে নিলাম। তারপর আবার নিচে চলে আসলাম। রাতের হলুদ খুব সুন্দর মত হয়ে গেল। পরের দিন বোনের বিয়ের অনুষ্ঠান ও খুব সুন্দর মত হয়ে যাওয়ার পর একটু রেস্ট নিতে উপরে আসলাম। ফ্রেস হয়ে রুমে আসতেই দেখি টেবিল এর উপর এককাপ কফি রাখা আছে।সাথে ছোট চিরকুট তাতে লেখা।
আয়ান ভাই তুমি আমাকে দেখলে এমন করো বলে তোমার সামনে আসতে আমার কলিজা শায় দেয়না কিডনি লাফালাফি করে, হার্ট বিট উড়তে শুরু করে দূর কি লেখছি তা বুঝতে পারছিনা।কফি দিলাম খেয়ে রেস্ট নাও ইতি তোমার বাচ্চা বউ।
হাহাহা আরেকবার কাছে এসো ভয় দূর করে দিব একেবারে রুত পাখি।(আয়ান মনে মনে)

**********(চলবে)***********

MEANINGLESS LIFE PARTNER Part-07

0

#MEANINGLESS_LIFE_PARTNER
পর্ব:7
#লেখিকা_Arshi_khan

(COME BACK MY LOVE:ফিরে আশা আমার ভালোবাসা)

সাত বছর পর দেশে ফিরছি।মনের কোনে অনেক না বলা কথা লুকায়িত রয়েছে। ফেমেলির সবাই কে ছেড়ে থাকার এত্ত দিনের সংগ্রাম শেষ হতে চলল তাহলে।সেই 2004 এর শেষের দিকে সিঙ্গাপুর এর উদ্দেশ্য রওনা হয়েছিলাম।আব্বু আম্মু বোনদের ভালো রাখার দ্বায়িত্ব পালন করতেই এত্ত দূর পথে যাওয়া। এবার নাহয় ভালোবাসার মানুষটির জন্য ফিরে এসে তার দ্বায়িত্ব পালন করাটা খুব বেশিই জরুরী।2011সালে দেশের মাটিতে পা রাখতেই মনে হল অনেক অনেক পরিবর্তন এসেছে।জদিও দেশে আশার আরেকটা কারণ ছোট বোন আয়েশার বিয়ে ।আর বিদেশ থাকার ইচ্ছে নেই।এবার নাহয় আমার ছোট বউয়ের জন্য একেবারে দেশে থেকে যাব।আব্বুর সাথে দেখা হতেই আব্বু আমাকে দেখে অবাক হয়ে আবার অন্য দিকে তাকালেন। সে এদিক ওদিক খুঁজছে কাউকে।আমিও আব্বুর পাশে দাড়িয়ে থাকলাম কিছুক্ষণ। কিন্ত আব্বুর কোন হেলদোল দেখলাম না।সে আমাকে দেখে বিরক্ত মনে হচ্ছে। তাই একটু দূরে গিয়ে দাড়াল। সিরিয়াসলি আমার আব্বু আমাকে চিনতে পারেনি?বুঝলাম অনেক পরিবর্তন এসেছে তাই বলে চিনবেই না।এখন আগের মত শুকনো আর ছোট ছেলেটা নেই।গত সাত বছরে বয়সের সাথে শারীরিক গঠন এর সাথে চেহারার ও পরিবর্তন এসেছে।ছোট ছোট পশম গুলো চাপ দাড়িয়ে রুপান্তরিত হয়েছে,জীম করার কারণে এখন ও ফিট আছি,টানা সাত বছর বিদেশের সাবান শেমপো মেখে অনেক ফর্সা ও হয়েছি।তাই বলে আমার বাপ আমাকে না চিনে আমার জন্য অপেক্ষা করছে।তাহলে আমার ছোট বউ তো বলবে আয়ান ভাই এটা তুমি হতেই পারোনা।বিদেশ গিয়ে নিশ্চিত পরিবর্তন হয়ে গেছে।ও বলা হয়নি এখনও ওকে বাচ্চা বউ বলছি কেন?দুই বছর আগে ওকে একটা NOKIA ফোন কিনে দিয়েছিলাম মানে আমি টাকা দিয়েছি আব্বু কিনে দিছে।ওকে কল দিলে ও ধরত ঠিকি কিন্ত কথা বলত না।অনেক দিন এমন করার পর আমি একদিন জিজ্ঞেস করি কথা বলনা কেন রুত?ও উত্তর এ বলেছিল ও নাকি জানতো ফোনে শুধু বিদেশ থেকে কথা বললে শুনা যায় কিন্ত এই দেশের কেউ কথা বললে শুনা যায়না তাই ও চুপ থাকত।কলেজ পড়ুয়া মেয়ে এমন কথা বললে বাচ্চা এইতো বলব।দূর এখন এসব না ভেবে আব্বুর কাছে যাই।
আব্বু আর কত্তক্ষন অপেক্ষা করবে?এবার তো চল।(আব্বুর সামনে গিয়ে আয়ান)

কে তুমি বাবা আমাকে আব্বু বলছ কেন?(আব্বু অবাক হয়ে)

আমি কে মানে?তুমি এখন ও আমাকে চেননি আব্বু?(আয়ান অবাক হয়ে আব্বুর হাত ধরেই)

আয়ান বাবা তুইইইই এটা?(আব্বু অবাক হয়ে আয়ান এর হাত ধরেই)

হ্যা এটাই আমি।সত্যি তুমি আমাকে চিনতে পারেনি?(ব্রু কুচকেই আয়ান)

না বাবা।সত্যি তোকে আমি চিনতে পারিনি।আমার ছোট্ট ছেলে এত্ত হ্যান্ডসাম হয়ে গেছে যে চেনাই দুষ্কর। (আয়ান কে জড়িয়ে আব্বু)

তাহলে আম্মু আমাকে চিনবেতো?(আয়ান হতাশ কন্ঠে)

তা পরে দেখা যাবে এখন চল বাড়ি ফেরা যাক। (আব্বু খুশি মনে)

আমি আব্বুর সাথে চলছি আমার গন্তব্যে।যেখানে আমার আম্মু, বোনেরা বোনের হাজবেন্ড রা আর আমার তিনটা ভাগ্নে ও ভাগ্নি আছে।আমেনার এক ছেলে এক মেয়ে আর আছমার একটাই ছেলে।ওদের বিয়ে আর বেবিদের আমি দেখি নাই।এই প্রথম দেখব। সেইরকম একটা ফিলিংস হচ্ছে।তার থেকেও সেই সাত বছর আগে রেখে যাওয়া আমার রুত কত্তটা পরিবর্তন হয়েছে তা দেখার জন্য মনটা ভিষন ভাবে লাফালাফি করছে।বাড়িতে পৌঁছে আমি এক দফা ধাক্কা খেলাম। কারণ সব গুলো বাড়ি মোটামোটি দালান করা হয়েছে।আর প্রতিবার এর থেকে এবার ও আমাদের বাড়ি তিনতালা দালান এ পরিবর্তন হয়েছে। আল্লাহ চাইলে সব সম্ভব। আমি আমার সপ্ন বিসর্জন দিয়ে ভুল করিনি।কারণ সবার সব আশা আমি পূর্ন করতে সক্ষম হয়েছি। এর থেকে বড় আর কিছুই নেই আমার কাছে।সবাই যেন আমাকে দেখে বিশাল ধাক্কা খেয়েছে।এত্ত চেঞ্জ কিভাবে তা ভেবেই যেন সবাই অস্থির হচ্ছে। বোনদের মধ্যেমনি এখন আমি।ভাগ্নে ভাগ্নি দের কে কোলে নিয়ে তিনজন কেই তিনটা স্বর্ণের চেইন পরিয়ে দিয়েছি। প্রথম বার দেখছি বলে কথা।বোনদের দুই হাজবেন্ড কে ও আংটি দিয়েছি।ছোট বোনের জন্য ও তিন ভরি স্বর্ণের সেট এনেছি।আর আমার রুত এর জন্য এনেছি একবুক ভালোবাসা।দেখি আমার রুত আমাকে এই খালি হাতে স্বীকার করে কিনা।ওদের আসতে বলেছিল আব্বু। কিন্ত আংকেল বলেছে এখন রুত বড় হয়েছে আমার সাথে বিয়ের আগে ওকে আর এখানে আনবেন না।যদি আমার মন চায় ওকে দেখে আসতে তাহলে যেতে বলেছেন।আমি তারপর ফ্রেস হয়ে আম্মুর হাতে খাবার খেলাম। বরাবর এর মতো আমার ফেভারিট সব খাবার এই রান্না করেছেন।ও বলা হয়নি আমার বুড়ি আর ও চারবছর আগেই তার বুড়োর কাছে পড় পাড়ে পারি জমিয়েছে।মারা যাওয়ার চারদিন পর আমি খবর পেয়েছি।আমার বুড়ির কথা সত্যি হল আমি এসে আর আমার বুড়ির দেখা পেলাম না।প্রবাসীদের জীবনের সুখ ঐ টাকা কামানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে।তাদের না আছে পরিবারের কোন সুখ দুঃখে অংশীদার হওয়ার সুযোগ আর না আছে নিজের অসহায় সময় কারো সেবা পাওয়ার অধিকার। একটু জ্বর হলেও সেখানে জিজ্ঞেস করার মতো লোক নেই ।অথচ এখানে আম্মুর কাছে একটু ঠান্ডা লাগলেও হাজার যত্ন শুরু হয়ে যায়।আম্মুর হাতে খাওয়ার পর একটু রেস্ট নিলাম। রুতকে দেখার সৌভাগ্য হবে বলে মনে হচ্ছে না।সামনের সপ্তাহে আয়েশার বিয়ে এর আগে ওদের বাড়ি গেলে কেমন দেখায় সেই জন্য পুরো সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হবে।
পরের দিন সকালে গ্রামে ঘুরতে গেলাম। পুরাতন সব বন্ধুদের ডেকে পাঠালাম।সব ব্যাস্ত লাইফ লিড করে ।সবাই ঢাকাতে ব্যাবসা করে।ওদের মধ্যেই বেশির ভাগ এই ঢাকাতে তাই আসতে পারেনাই।যারা আসছে তাদের সাথে কিছুক্ষণ গল্প করে বাড়ি ফিরে আসলাম। অনেক দিন পর পুকুরের পাড়ে গেলাম গোসল করার জন্য। কিযে আনন্দ লাগছে বলে বোঝানা সম্ভব না।
গোসল করে এসে দুপুর এর খাবার খেয়ে একটু রেস্ট নিতে গেলাম। এমন সময়ই আম্মু এসে আমার পাশেই বসল। (মনে মনে)
কিছু বলবা আম্মু?(উঠে বসে আম্মুর হাত ধরেই আয়ান )

হ্যা বাবা।আসলে হয়েছিকি!(আমতা আমতা করে আম্মু)

কি হয়েছে বল।কোন সমস্যা!টাকার লাকবে?কত্ত বল আমি ব্যাংক থেকেই তুলে আনি।(আয়ান আম্মুর উদ্দেশ্য একনাগারে)

কোন সমস্যাই না।আর না কোন টাকা লাগবে।আসলে আমি চাই তুই কালকে সকালে গিয়ে রুতবাকে নিয়ে আসবি আর ওদের বাড়ি দাওয়াত ও দিয়ে আসবি।আর সেই কথাই বলতে আসছি।(আম্মু আয়ান এর হাত ধরেই)

কিন্ত ওকেই কি আংকেল দিতে এখন রাজি হবে তাও আবার আমার সাথে?(হতাশ কন্ঠে আয়ান)

তুই যদি বলিস রুত ঠিকি আসবে।আর ওর আব্বুর কথা তোর ভাবতে হবেনা।ওনার সাথেই আমি ফোনে কথা বলে নিব।তুই যা।ছোট ননদের বিয়ে একটা ছেলের বউ থাকবেনা তাকি হয়?(আম্মু )

আব্বু কে বলেছ?(আয়ান)

হ্যা বলেছি।উনি বলল দাওয়াত দিতে গেলে রুতকে ও সাথে যেন নিয়ে আসিস।তাইতো তোকে কালকে যেতেই বললাম। আর তাছাড়া এত্ত বছর পর আসলি শশুর বাড়ি দেখা না করলে কেমন দেখায়?(আম্মু আয়ান এর হাত ধরে)

আচ্ছা যাব।
কথা বলা শেষ এ আমার মনে মনে ড্যান্স দিতে লাগল এই ভেবে যে আমি আমার বউ কে এত্ত দিন পর দেখতে পারব।তবে আম্মুর সামনে তো আর ড্যান্স দিতে পারলাম না।তাই আম্মুর যাওয়ার অপেক্ষা করতে লাগলাম। আম্মুর যাওয়ার পর আমার মনে রুতকে নিয়ে ই ও কথা খেলা করতে লাগল। ফাইনালি সাত বছর এর অপেক্ষার অবসান কালকে ঘটলেই হবে।আমার রুত এর প্রতি আমার জমানো ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ কালকে হচ্ছে।ওকে না দেখা চোখ গুলো কে কালকে পিপাসা মেটানোর সুযোগ দেওয়া হলেই আমি খুশি।এখন শুধু সকাল হওয়ার অপেক্ষা।
সকালে ঘুম থেকে উঠে গোসল সেরে ব্রেকফাস্ট করে নিলাম। তারপর চললাম রুত এর গ্রামের উদ্দেশ্য। রাস্তার অনেক পরিবর্তন হয়েছে। এখন ওদের বাড়ি আসতে টাইম খুব কম লাগে।তবে চিনতে আমার বেশ বেগ পেতে হল।আমি শুধু আংকেল বলে এসেছি।আর কাউকে বলতে নিষেধ করেছি।আংকেল আমাকে নিতে এসেছে স্টান এ।আমাকে দেখে প্রথম উনিও ভেবাচেকা খেয়ে বসলেন।আমাকে দেখেও উনি না চিনতে পেরে বাসের দিকে তাকিয়েই থাকলেন।আমি আংকেল এর কাছে নিজের পরিচয় দেওয়ার পর উনি আমাকে চিনতে পারলেন। আর একটু লজ্জিত বোধ করলেন।আংকেল রিক্সা ডেকে আমাকে নিয়ে চলল তাদের বাড়ির উদ্দেশ্য। বাড়িতে পৌঁছানোর পর থেকে জামাই আদর এর কোন সীমা নেই।প্রায় এক ঘন্টার মধ্যেই বিশ রকমের খাবার দেওয়া হয়েছে। এদিকে আমার বউ ভার্সিটি গিয়ে বসে আছে।এইটা কোন কথা!আরো কিছুক্ষণ জামাই আদর চলতেই থাকল।দুপুর এর খাবার খাওয়ার পর আমি রুত এর রুমে গিয়ে বসলাম আর ফেসবুকিং করতে লাগলাম।সিঙ্গাপুর এ একটা ফ্রেন্ড এর সাথে মেসেজ করছিলাম। হঠাৎই রুমে একটা মেয়ে এসে ওরনা খাটের উপর রেখে ওয়াশরুম চলে গেল। আমি জানালাম পাশে বসে থাকার কারনে আমাকে খেয়াল করেনি হয়ত।এই হয়তো আমার সেই পিচ্চি বউ টা।আমি স্তব্ধ হয়ে ওর ওরনাটা হাতে নিয়ে বসে থাকলাম। একটা মিষ্টি ঘ্রাণ নাকে এসে লাগছে।আমি ওরনাটা আমার নাকের কাছে নিতেই যাব ওমনি একজন রমনি ছো মেরে ওরনাটা কেড়ে নিল।আমি মুচকি হেসে সামনের রমনির দিকে নিশঃপলক তাকিয়েই থাকলাম। (আয়ান মনে মনে)

কে আপনি?আমার রুমে আমার ওরনা নিয়ে বসে আছেন কোন সাহসে?(চিৎকার করে রুতবা)

নিশ্চুপ (মুচকি হেসে আয়ান)

হাসছেন কেন?আম্মু আম্মু দেখ না কে যেন আমার রুমে এসে বসে আছে।(রুতবা চিৎকার করেই)

কি হল কি এমন করে চিৎকার করছিস কেন?(আম্মু দৌড়ে এসে)

এই লোকটা কে ?আর উনি আমার রুমে কি করছে?যে কেউ রুমে ঢুকে যায় আর তোমরা সেদিকে কোন নজর এই রাখ না।এই জন্য আমার এখানে থাকতে বিরক্তি লাগে।আর এইযে আপনি কে?কখন থেকে জিজ্ঞেস করছি এখন ও উত্তর দেওয়ার প্রয়োজন মনে করছেন না কেন?আর এমন হাসছেন এইবা কেন?(চিৎকার করেই রুতবা)

তুই ও ওকে চিনতে পারি নি?(আম্মু অবাক হয়ে রুতবার উদ্দেশ্য)

কে উনি যে আমার চিনে রাখতে হবে?(রাগি সুরে রুতবা)

আন্টি আপনি গিয়ে রেস্ট করেন।আমি রুত এর সাথে কথা বলে নিচ্ছি। আপনার টেনশন করতে হবেনা।আমি কে তা বুঝতে ওর দেরি হবেনা আশা করি।(আয়ান রুতবার দিকে তাকিয়েই)

আচ্ছা বাবা।(আন্টি বলেই বেরিয়ে গেল)

এভাবে যেখানে সেখানে ওরনা রেখে যাওয়ার তো কোন কারণ দেখছিনা।তুমি ওয়াশরুম যাবে মাথায় গোমটা দিয়ে।তানা করে ওরনা যেখানে সেখানে ফেলে আশেপাশে নজর না দিয়ে দৌড়ে ওয়াশরুম যাওয়ার কি কারণ শুনি একটু?(আয়ান আস্তে করে খাটের উপর বসে)

আয়ান ভাই তুমি কবে আসলে?(কান্না সিক্ত নয়নে আয়ান এর উদ্দেশ্য রুতবা)

রুত আমার প্রশ্নের উত্তর টা আগে দাও।তারপর বলছি।(আয়ান রুতবার হাত ধরেই)

ভুল হয়ে গেছে।(মাথা নিচু করে রুতবা)

তার জন্য তোমার শান্তি বরাদ্দ করা হবে।আর তা হল এই মুহুর্তেই আপনার থেকে আমার পাওনা ভালোবাসা গুলো চাই।(রুতবার কোমর জড়িয়ে আয়ান)

আয়ান ভাই আমাকে ছাড় আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে?(রুতবা মাথা নিচু করেই আয়ান এর উদ্দেশ্য)

রুত তুমি ভয় পাচ্ছ?(রুতবার মুখ দুই হাতে নিয়ে আয়ান)

নিশ্চুপ।(ঘনঘন নিশ্বাস ছেড়ে রুতবা)

ওকে সরি ।আমার এভাবে তোমাকে ধরা উচিত হয়নি।এখন যে জন্য আসছিলাম আসলে এই সপ্তাহে আয়েশার বিয়ে। সেই উপলক্ষ্যে আম্মু বলল তোমাকে নিয়ে যেতে।এখন যাওয়া না যাওয়া তোমার উপর নির্ভর করে।(আয়ান রুতবার উদ্দেশ্য)

আমার তো সেই অধিকার নেই আয়ান ভাই। (রুতবা আয়ান এর দিকে তাকিয়ে)

কিসের অধিকার?(আয়ান ব্রু কুচকে)

আমার আর তোমার বিয়ের এখন আর কোন ভেলু নেই আয়ান ভাই। আর তাই আমার কোন অধিকার ও নেই। (রুতবা শান্ত কন্ঠে)

তাহলে তুমি কি চাইছ আমাদের আবার বিয়ের ব্যবস্থা করব?নাকি তোমার অন্য কোন মতামত আছে?(আয়ান রুতবার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে)

নিশ্চুপ। (রুতবা মাথা নিচু করে)

তুমি যদি চাও আমি আয়েশার বিয়ের পর আমাদের বিয়ের ব্যবস্থা করব।তাহলে এখন আমার সাথে চল।আর যদি তোমার অন্য কোন মতামত থাকে তাহলে আমি চলে যাচ্ছি। আর তাছাড়া তোমার উপর আমার অধিকার আসলেই নেই।আর না তোমার উপর আমার কোন চাপ আছে।কারণ যাদের ইচ্ছাতে আমাদের বিয়ে হয়েছিল তারাই এখন আর বেঁচে নেই।(আয়ান দাড়িয়ে রুতবার সামনে)

নিশ্চুপ (রুতবা মাথা নিচু করে)

এভাবে চুপ থাকার মানে কি রুত?(আয়ান কান্না সিক্ত নয়নে)

নিশ্চুপ (রুতবা)

ঠিক আছে আমি চলে যাচ্ছি। ভাল থেক রুত।
বলেই হাটা দিলাম। যাদের জন্য এত্ত বছর প্রবাস জীবন পাড় করলাম তাদের কাছে আমার ভেলু ঠিক এত্তটাই যে আমার কথা বা ইচ্ছার কোন দাম তাদের কাছে নেই।আমি রুম থেকে বেরিয়ে আন্টির থেকে কোনরকম বিদায় নিয়ে বাইরে চলে আসলাম।রুতকে বড্ড ভালোবেসে ফেলেছিতো তাই এখন মনের কোনে ভিশন কষ্টের আভাস পাচ্ছি।একটু সামনে যেতেই একটা রিক্সা ও পেয়ে গেলাম। রিক্সা তে চড়ার সাথে সাথেই ঝড়ের গতিতে রুত ও এসে আমার পাশে বসে পড়ল। আমি অবাক হয়ে ওর দিকে তাকাতেই দেখি ও রেগে আমার দিকে তাকিয়েই আছে।(মনে মনে)
তুমি এখানে কেন?(আয়ান অবাক চোখেই)

গাধা কোন কথা বলবি ধাক্কা মেরে রিক্সার থেকে ফেলে দিব।(রুতবা রাগি সুরে)

রুত তুমি আমাকে তুই করে কথা বললে?(আয়ান অবাক হয়ে)

তোরে তো মন চাইতাছে এখন ঐ পুকুরে চুবাই।কিন্ত পারব না তাই চুপচাপ আছি।আর একটা কথা বলবিনা।এখন আমার বাসার থেকে গিয়ে আমার জামা কাপর এর ব্যাগ নিয়ে আসবি যা।(রুতবা দাঁতে দাঁত চেপে)

রুত বেয়াদবি করছ কেন?(আয়ান রাগি সুরে)

আরে মামা এদিকে কি দেখেন আপনি একটু সামনে তাকিয়ে থাকেন।আর আয়ান ভাই তোমারে আমি বলছি গিয়ে আমার জামা কাপর এর ব্যাগ টা নিয়ে আস।(রুতবা আয়ান এর উদ্দেশ্য)

কেন?(আয়ান ব্রু কুচকে)

আমি আমার আয়ান ভাই এর সাথে আমার শশুর বাড়ি যাব সেই জন্য। (রুতবা মুচকি হেসে)

এখন তো আমাদের বিয়ের কোন ভেলু নেই রুত।তাহলে কেন আমার সাথে যাবে?(আয়ান রুতবার দিকে তাকিয়ে)

তোমার এইসব ফালতু কথা আমার ভাল লাগছেনা ।তুমি কি আমার ব্যাগ আনবে নাকি আমি আবার যাব?(রুতবা দাঁতে দাঁত চেপে)

যাচ্ছি।
এই মেয়েটার কখন কি হয় বোঝা মুশকিল। আমি ওদের বাড়ি যেতেই আন্টি আমাকে একটা ব্যাগ ধরিয়ে দিল। আমি ব্যাগ নিয়ে আবার রিক্সার কাছে চলে আসলাম। রিক্সা তে বসতেই মামা রিক্সা চালাতে শুরু করল। আমি শুধু রুত এর কাহিনী দেখছি।ও আমার পাশে বসে চুল গুলো বেধে ওরনা দিয়ে হিজাব এর মত বেধে নিল।তারপর হঠাৎই আমার দিকে তাকালো।ওর তাকানো দেখে ভরকে গেলাম। (আয়ান মনে মনে)

এমন করে কি দেখ আয়ান ভাই?(রুতবা আয়ান এর হাত ধরে)

নিশ্চুপ।(হাতের দিকে তাকিয়েই আয়ান)

আয়ান ভাই আমাকে বিয়ে করবে কবে আবার?(রুতবা আয়ান এর ঘারে মাথা রেখে হাত ধরে)

তুমি চাও আমাদের বিয়ে আবার হোক?(আয়ান রুতবার মাথায় নিজের মুখটা ঠেকিয়ে)

আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি আয়ান ভাই। কেন বোঝনা তুমি?আমি তোমার উপর অভিমান করেছিলাম তাই একটু আগে কথা বলিনি।তুমি বলেছিলে পাচঁবছরের জন্য যাবে।কিন্ত তুমি সাত বছর থেকে এসেছ।এখন বল আম্মু বলার কারণে আমাকে নিতে এসেছ।কেন আয়ান ভাই তোমার মনে আমার জন্য কি একটুও ভালোবাসার সৃষ্টি হয়নি যার দরুন আমাকে জোর পূর্বক নেওয়ার কথা বলতে।আবার বল আমার মতামত এই প্রাধান্য দিবে।কেন আয়ান ভাই আমার উপর তোমার কোন জোর নেই?(রুতবা কান্না করে আয়ান এর উদ্দেশ্য)

আমি নিশ্চুপ থাকলাম।এই রাস্তার মধ্যে ওকে আর রাগাতে চাইনা।যা হবে তা আমার আর আমার রুত এর মাঝে হবে।আমি ওর কপালে আস্তে করে চুম্বন করলাম। কিছুক্ষণ পর ও সোজা হয়ে বসে পড়ল।আমি একটা সিএনজি নিলাম আমাদের গ্রামে যাওয়ার জন্য।সিএনজির পেছনে আমি আর রুত বসে আছি।ও একটু দুরে বসে বাইরে তাকিয়েই আছে।আমি আস্তে করে ওর পাশে বসে পড়লাম। ও আমার দিকে তাকিয়ে আবার বাইরের দিকে তাকালো।আমি ওর আর একটু কাছে গিয়ে ওর হাতটা আমার হাতে নিয়ে বসে পড়লাম। ও হাতটা ছাড়ানোর চেষ্টা করছে।
রুত এমন কর কেন?(আয়ান রুতবার উদ্দেশ্য)

আমার ইচ্ছে তাই এমন করি।(রুতবা রাগি লুক দিয়ে)

তাইনা।
বলেই ওর কোমর জড়িয়ে ধরলাম। ও নিশ্চুপ হয়ে বসে পড়ল। আমি মুচকি হেসে ওর দিকেই তাকিয়ে থাকলাম।
বাড়িতে পৌঁছানোর পর আম্মু ওকে দেখে অনেক খুশি হল।ও গিয়ে ফ্রেশ হয়ে রিতু ,মিরাজ আর আবরার এর সাথে খেলতে লাগল।আমি ওকে এই জন্য এই বাচ্চা বলি।রাতের খাবার এর সময় সবাই একসাথে খেতে বসলাম। খাওয়ার পর সবাই সবার রুমে ঘুমাতে চলে গেল। রুত কে এইবার আয়েশার রুমে দেওয়া হয়েছে।আমি রুমে চলে আসলাম। কিন্ত কিছুতেই ঘুম আসছেনা।তাই ছাদে চলে আসলাম। মাত্র একটা সিগারেট ঠোঁটে রেখে ধরাতেই যাব ওমনি রুত কোথার থেকে এসে সিগারেট টা কেড়ে নিয়ে দূরে ফিকে মারল। আমার জিনিস না বলে ধরে ফিকে মারাটা আমার কাছে একটা রাগের কারণ। আর ও আমার সিগারেট টা ফিকে মারার কারণে রাগটা একটু বেশিই বেড়ে গেল।
কি সমস্যা না বলে তুমি আমার সিগারেট দূরে ফিকলে কেন?(রুতবাকে দেওয়াল এর সাথে চেপে ধরে আয়ান)

বেশ করেছি এমন আরো অনেক কিছুই করব।যা আমার পছন্দ না সেই জিনিস টা তোমার ঠোঁট কেন তোমার শরীরকে স্পর্শ করবে তা আমি মানব না।আর যেখানে তোমার ঠোঁট গুলো আমার সবচেয়ে পছন্দের জিনিস তা কেন ঐ জঘন্য জিনিস স্পর্শ করবে?(রুতবা হালকা চিৎকার করে)

তাই নাকি?(আয়ান রুতবার আরো কাছে গিয়ে)

সরো আমি ঘুমাতে যাব।আমার খুবই ঘুম পাচ্ছে। (রুতবা মুখটা ঘুরিয়ে)

কি জিজ্ঞেস করলাম?(আয়ান রুতবার কপালে কপাল ঠেকিয়ে)

কি জিজ্ঞেস করেছ?(রুতবা আয়ান এর দিকে তাকিয়ে)

আমার ঠোঁট জোড়া তোমার পছন্দের?(আয়ান রুতবার আরেকটু কাছে দাড়িয়ে)

আগে সরো তারপর বলছি।(আয়ান এর পেটে হাত দিয়ে ধাক্কা দিয়ে রুতবা)

কেন সরব?(আয়ান রুতবার উদ্দেশ্য মুচকি হেসে)

তাহলে কি চিপকেই থাকবা নাকি?(রুতবা ব্রু কুচকে)

হুম থাকব।যদি বল সারারাত চিপকে থাকব কোন সমস্যা নেই।(ডেভিল হেসে আয়ান)

অসভ্য লোক সরো আমার সামনের থেকে।লাগাম লাগাও ঠোঁটে।(রুতবা চোখ বড় করে)

লাগাম লাগানোর জন্য আমার আরেক জোরা লিপস এর প্রয়োজন পড়বে।যদি বল তো এখনি লাগাম টা লাগাই।(আয়ান রুতবার উদ্দেশ্য চোখ টিপ দিয়ে)

ছি আয়ান ভাই এসব কোন ধরনের কথা?(রুতবা আয়ান এর ঠোঁটে হাত দিয়ে )

আমার বউ এর সাথে আমি এর থেকে ও লাগাম বিহিন কথা এবং লাগাম বিহিন কাজ করতে প্রস্তুত আছি।তুমি যদি বল তো!(ঠোঁট থেকে হাত সরিয়ে আয়ান)

আগে বিয়ের ব্যবস্থা কর তারপর দেখা যাবে। (মুখ ঘুরিয়ে রুতবা)

ওকে। এখন এই মুহূর্তেই ঘরে যাও।নাহলে তোমার সর্বনাশ এর কারণ আমি হয়ে যাব।(আয়ান হঠাৎই ঘুরে দাড়িয়ে)

আমিও আস্তে করে ঘরের উদ্দেশ্য চলে আসতে নিলাম।কিন্ত কি মনে করে আবার দাড়িয়ে পড়লাম। আর আস্তে আস্তে ওর সামনে গিয়ে একটা অসাধ্য সাধন করে ফেললাম। ওর মাথাটা নামিয়ে ওর কপালে আর গালে ঝড়ের গতিতে দুটো চুম্বন করেই দৌড়ে নিচে চলে আসলাম। নাহলে সত্যি আয়ান ভাই আমার আজকে খবর করে ছাড়ত।(রুতবা মনে মনে)

এমন টা করে তোমার প্রতি ভালোবাসা পাওয়ার আকর্ষন আরো বাড়িয়ে কেন দিলে রুত?আর কয়েক টা দিন অপেক্ষা করার ধৈর্য দাও আমাকে আল্লাহ তুমি।এসব ভাবনার মাঝেই রুমে চলে আসলাম। আর ও নানান চিন্তা করতে করতে ঘুমিয়ে পড়লাম। (আয়ান মনে মনে)

*********(চলবে)********

MEANINGLESS LIFE PARTNER Part-06

0

#MEANINGLESS_LIFE_PARTNER (অর্থহীন জীবন সঙ্গী)
পর্ব:6
#লেখিকা_Arshi_khan

(DISTANCE LOVE:ভালোবাসার দূরত্ব)

রাতটা কেন জানি আমার কাছে সব চেয়ে বড় রাত মনে হচ্ছে। মনের কোনে নিষিদ্ধ চিন্তা খেলা করছে।বিশ বছরের ছেলের পাশে এমন বারো বছরের একটা ছোট রমনি থাকলে এমন নিষিদ্ধ চিন্তা আসবেই।কিন্ত আমি সত্যি চাইনা রুত আমার কোন হিংস্র রুপ দেখুক।বেচারি বাচ্চা একটা মেয়ে।ওর সাথে এমন কিছু হয়তো ওর মনে ডিপরেশন এর সৃষ্টি করতে পারে।ও হয়তো ঘুমিয়ে গেছে।সব চিন্তাকে মাটি চাপা দিয়ে ওর মিষ্টি চেহারার দিকে তাকিয়েই রইলাম। ব্যাপার টা জঘন্য হলে এই প্রথম আমি একটা ভুল পদক্ষেপ নিয়ে বসলাম। আমি আস্তে করে ওর আরেকটু কাছে গিয়ে হালকা হাতে ওকে জড়িয়ে ওর কপালে ছোট একটা চুম্বন করে চোখ বন্ধ করে নিলাম। আমি এতেই সন্তুষ্ট। ওর থেকে নেওয়া এইটুকু ভালোবাসা দিয়েই আমার চলে যাবে।বাকি ভালোবাসা নাহয় আমার বউ এর মাথায় যেদিন এই বোধ হবে যে এক কাথার নিচে ঘুমালেই বেবি হয়না সেদিন এই নিব।এরপর আর ও কিছুক্ষণ ওর মুখ পানে তাকিয়েই থাকলাম। কখন ঘুমিয়ে পড়লাম মনে নেই।
সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি রুত পাশে নেই।মনে হয় উঠে গেছে।আমি ও উঠে ব্রাশ আর পেষ্ট নিয়ে মুখ ধুতে পুকুরের পাড়ে গেলাম। দেখি রুত এই ভোর সকালে গোসল করছে সামনে দাদি দাড়ানো। আল্লাহ এই বুড়ির মাথায় আর কিছু নেই নাকি।আমার বাচ্চা বউ টার জ্বর বাধিয়ে ছাড়বে।
এই বুড়ি তোমার কি কোন কাজ নেই নাকি?এই সাত সকালে রুতকে গোসল করাইতে কেন আনছ?(আয়ান দাদির উদ্দেশ্য)

দাদাভাই তুই ও গোসল টা সেরে নে।এমন করে থাকতে নেই।(দাদি আয়ান এর হাত ধরেই)

বুড়ি আমি আমার বাচ্চা বউ এর ধারে কাছেও যাইনা।আর তোমার মাথায় এসব কোথার থেকে আসে?(আয়ান দাঁতে দাঁত চেপে)

এ্যা বাচ্চা বউ! আমার বারো বছরে তোর বাপ আমার কোলে খেলা করছে।আর তুই চাইর বছরে বউ এর কাছে ও যাস নাই কেন?(দাদি রাগি সুরে)

এই বুড়ি শোন তোমাদের সময় আর এখন কার সময় অনেক তফাত। আর তোমার বুড়ার তো সারাদিন বউ কোলে নিয়ে বসে থাকতে ভাল লাগত সেই জন্য আমার বাপ আসছে।এখন বলে দিচ্ছি বুড়ি আমার বউ কে পাকাইবানা।আর রুত পিচ্চি যাও ঘরে যাও।বুড়ির কথায় লাফাইবা কম।(আয়ান রুতবার উদ্দেশ্য)

তোর মুখ এত্ত পাস কে বাপরে নিয়া এসব কি কস?(দাদি মুখে হাত দিয়ে)

আমি আমার বাপ নিয়া আবার কি বলছি?আমিতো বুড়ার কথা বলছি।কানে ইদানীং কম শুনো নাকি?(আয়ান দাদির হাত ধরে)

ছাড় ছাড় আজকে যাবিগা আর দেখবি কিনা সেই নিয়া কষ্ট পাবি তানা করে আমার লগে ঝগড়া করতাছোছ।(দাদি কাপা কাপা কন্ঠে)

এই বুড়ি খবরদার এমন কথা বলবানা।আমি বিদেশ থেকে আসলেও আমার তোমারে চাই।তোমার এই ছোট্ট সতিন রে আনতে যাইতে হবে না?(দাদিকে এক হাতে পেঁচিয়ে আয়ান)

ও আমার লাইগা আইবা না।আমার হতীন এর লাইগা আইবা।থাক আমার আর বেঁচে থেকে কি হইব। হেয়তো আমার স্বামীরে নিয়ায় যাইব।(রুতবার হাত ধরেই দাদি)

তোমার স্বামী তুমিই এই রাখ।আমার লাগব না।হেয় মানুষ ভালা না।(মুখ ভার করে রুতবা)

কেন আমি আবার কি করলাম।?(আয়ান রুতবার উদ্দেশ্য অবাক চোখে)

তোমারে আমি ভাল ভাবছিলাম আয়ান ভাই।কিন্ত তুমি রাতে আমারে ধরে জড়িয়ে ঘুমিয়েছ কেন?(রুতবা হতাশ কন্ঠে)

ঘরে যাও পিচ্চি বেশি কথা বলবা না।(ঝাড়ি মেরে)
বলেই আমি অন্য পাশে চলে আসলাম। ইজ্জতের বারোটা বাজায় দিলরে।এসব ভাবনার মাঝেই ফ্রেস হয়ে ঘরে চলে আসলাম। সকালের নাস্তা খাওয়ার পর বাইরে গেলাম বন্ধুদের সাথে দেখা করতে।আবার কবেনা কবে দেখা হবে ঠিক নেই।বারোটার দিকে এসে গোসল করে নিলাম। তারপর দুপুর এর খাবার খেতে বসলাম। আম্মু যেন দুনিয়ার সব রকম রান্না আজকে করেছে আমার জন্য। ভাত, ইলিশ মাছ ভূনা, গরুর মাংস কষা,চিংড়ি মাছ ভাজা,ডিম সেদ্ধ আম ডাল ও শেষ পাতে দই।পোলাও রান্না করতে চাইছিল কিন্ত প্লেনে ট্রাভেল করার সময় রিস ফুব না খেয়ে যাওয়াই ভাল।কিন্ত আমার আম্মু আর সব কিছুই যে রান্না করেছে তাও কিন্তু বেশ ভারী খাবার। এসব খেতে না চাইলেও আম্মু নিজের হাতে সব এক টুকরা করে নিয়ে খাইয়ে দিয়েছে।খাওয়ার পর আধা ঘন্টার মতো রেস্ট নিলাম। এর পর রেডি হতে লাগলাম। কারণ রাত নয়টার প্লেন তাই সাতটার মধ্যেই শাহাজালাল বিমান বন্দর এ থাকতে হবে।এখন বাজে দুপুর তিনটা।একটু পর বের হলে দুই-তিন ঘন্টা লাগবেই।ছোট বাবার সাথে কথা বলতে বলতে রেডি হয়ে নিলাম। তারপর মেজ সেজ বাবাদের বলে আসলাম। যতোই আলাদা হোক তাদের বাবা বলি এইটুকু বলে দোয়া না নিলে আমি তাদের উপর না ইনসাফি করে বসব।
আম্মু,দাদি,আমেনা,আছমা,আয়েশা আমাকে ধরে কান্না করে যাচ্ছে। আমি অনেক কষ্টে নিজের চোখের পানি লুকিয়ে রেখেছি।আব্বু ও নিশ্চুপ এ কিছুক্ষণ পর পর চোখের পানিটা মুখ লুকিয়ে মুছে নিচ্ছে। আমার সাথে ছোট বাবা যাবে শুধু। উনি ব্যাগ নিয়ে দাড়িয়ে আছে।আংকেল আমার হাতটা ধরে বলল (আয়ান)

বাবা বড় ছেলের দ্বায়িত্ব হিসাবে তোমার আব্বু যেমন সবার জন্য করেছে তুমি ও করবে এটা ভেবেই আমি খুব খুশি।কিন্ত বাবা আয়ান আমার মেয়েটা তোমার বউ হয় এটা ভুললে কিন্তু চলবেনা।তুমি গিয়ে তোমাদের লেনড লাইন এ কল দিয়ে তোমার নাম্বার টা আমাকে দিও।আমি আমাদের বাজার থেকে মাঝেমধ্যেই তোমাকে কল করব।(আংকেল আয়ান এর হাত ধরেই)

আচ্ছা আংকেল রুত আর রায়হান এর খেয়াল রাখবেন। আন্টি কে নিয়ে বেরাতে আসবেন এখানে আমি নেই তো কি হয়েছে আপনার বন্ধু তো আছে।(আয়ান মুচকি হেসে)

আচ্ছা বাবা আসব।তুমি খাওয়া দাওয়া ঠিক মতো করবে আর কাজের ফাকে রেস্ট ও নিও।(আংকেল আয়ান এর হাত ধরেই)

আচ্ছা আংকেল আসি।
আর সবার থেকে বিদায় নিয়ে আশেপাশে তাকাতেই দেখি রুতবা একটু দূরে ছলছল চোখে আমার দিকেই তাকিয়ে আছে।কান্না করে দিবে এমন একটা অবস্হা। এখন সবার সামনে ওর কাছে যেতেও একটু কেমন যানি লাগছে।কিন্ত মন কিছুতেই মানতে চাইছেনা আমার যে ওকে এই মুহূর্তেই দরকার খুব দরকার।
আমি একটু রুত এর সাথে কথা বলে আসি ছোট বাবা?(আয়ান ছোট বাবার উদ্দেশ্য)

যাও জলদি এসো।(ছোট বাবা আয়ান এর উদ্দেশ্য)

আমি সবার সামনে থেকে ওর কাছে গিয়ে দাড়ালাম। সবাই এদিকে তাকিয়েই আছে ।তাতে ওর সাথে কথা বলতে আমার কেন জানি ইতস্তত বোধ হচ্ছে।
রুত আমার সাথে এসো(আয়ান রুতবার উদ্দেশ্য বলেই ঘরে ঢুকে গেল)

হুম। (রুতবা আয়ান এর পেছনে হাটা দিল)

আমি আমার খাটে বসে পড়লাম। ও এসে সামনে দাঁড়াতেই ওর দিকে তাকালাম। কালো ও সাদার কম্বিনেশন এ একটা থ্রিপিস পড়নে হালকা গঢ়নের ফর্সা মেয়েটার দেখা আবার কবে পাব তার ঠিক নেই।ওকে দেখে চোখের সাধ মিটছেনা কালকের থেকে।হয়তো ওর প্রেমে পড়েছি।আমি আস্তে করে ওর দুইটা হাত ধরেই আমার পাশে বসালাম।ওর হাতের তালু টা আকড়ে ধরলাম। কিন্ত ও বাধন খুলে মুখটা নিচু করেই আছে।
রুত তোমার কাছে যাওয়ার আগে আমার একটা নিষিদ্ধ চাওয়া পূরণ করার ইচ্ছে হচ্ছে।যদিও আমার মস্তিষ্ক অন্য কিছু বলছে।তবে মনকে কিছুতেই মানাতে পারছিনা।দিবে আমার ইচ্ছে পূরণ করতে?আমি শুধু একবার তোমাকে কিস করতে চাই রুত?(রুতবার উদ্দেশ্য আয়ান)

নিশ্চুপ (রুতবা)

সরি ভুল করে বলে ফেলেছি।খুব বেশিই চেয়ে ফেলেছি মাফ করে দিও।তবে একটা কথা মানতেই হবে আমি যেমন যাচ্ছি তেমন এই ফিরে আসব আর তোমাকে যেমন রেখে যাচ্ছি তেমন ভাবেই যেন এসে পাই।মনে রাখবে
Distance doesn’t mean anything when you love someone enough.(দুরত্ব মানে কিছুই নয় যখন তুমি কাউকে প্রচুর পরিমাণে ভালোবাস)আর আমি আমার বউ কে দূর থেকে ভালোবাসব।(আয়ান মুচকি হেসে)

হুম।(রুতবা আস্তে করে)

আসি তাহলে ভাল থেক ভালো রেখ সবাইকে। ফিরে আসব কোন এক গ্রীষ্মের দিনে আমার আম পাগলিকে আম খাওয়াতে।(এক হাত রুতবার মাথায় রেখে আয়ান)

তুমিও ভালো থেক আর আমাকে মনে রেখ।(আয়ান এর উদ্দেশ্য রুতবা)

আচ্ছা উঠি দেরি হয়ে যাচ্ছে। (আয়ান বলেই দাড়িয়ে গেল)

আয়ান ভাই আমি তো তোমার বউ তাহলে আমাকে আদর করলে তা তো নিষিদ্ধ হওয়ার কথা না?(রুতবা আয়ান এর একটা হাত শক্ত করে ধরে মাথা নিচু করে)

এমন কথা শুনে আমি যেন হতভম্ব হয়ে ওর দিকে তাকিয়েই থাকলাম ।বেশ কিছুক্ষন পর ও উঠে আমার সামনে দাড়াল। তবে মাথা নিচু করে।আমি এক হাতে ওর মুখটা উচু করতেই দেখি ওর চোখ থেকে অনবরত পানি পরছে।আমি ওর চোখের পানি মুছে ওর কপালে একটা দীর্ঘ চুম্বন করে ঘর থেকে বেরিয়ে আসলাম। পেছনে তাকানোর সাহস আর হলনা।ভালোবাসার মানুষটির চোখের পানি এত্তটা কষ্ট দেয় জানা ছিল না।
ছোট বাবার সাথে আমি বেরিয়ে পড়লাম এক অজানা গন্তব্যের উদ্দেশ্য। পুরো তিন ঘন্টার জার্নি করে ঢাকা এয়ারপোর্ট পৌঁছে গেলাম। ছোট বাবার থেকে বিদায় নিয়ে ইমিগ্রেশন এ চলে গেলাম। দুই ঘন্টার পর প্লেন চলতে শুরু করল তার নিজ গন্তব্যে।পেছনে ফেলে আসা ভালোবাসার মানুষ গুলোর কান্না এখন ও কানে লাগছে।
সিঙ্গাপুর এসেছি এক সপ্তাহ হল।এসে দুইদিন রেস্ট করেই কাজে লেগে গেছি।দিনগুলো আপাতত ভালোই চলছে।আব্বুর সাথে ঐদিন কথা বলতে গিয়ে বারবার কান্না আসছিল।কত্তটা কষ্ট করে আব্বু সবার জন্য ঘর তুলে দিয়েছিল তা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি। কিন্ত সার্থপর মানুষ গুলা আমার আব্বুর দূরসময়ে তাকে ফেলে আলাদা হয়ে গেছিল।আল্লাহ সহায়ক হোও একদিন এর যোগ্য জবাব এই দিব।
দেখতে দেখতে কেটে গেল তিনটা বছর। গত ছয়মাস আগেই বড় বোনের বিয়ে দিলাম।প্রথম দুই বছর রিন আর সংসার খরচ দিতেই সময় কেটে গেছে।বোনের বিয়ে বড় ঘরেই দিয়েছি। এখন তার ছোট দেবর এর জন্য আমার আরেক বোনকে নিতে চায় আংকেল। সেই নিয়ে এই কথা বলছিলাম।হঠাৎই আম্মু রুত কে ধরিয়ে দিল।গত তিনবছরে হাতে গোনা চারবার কথা বলেছি।এই পঞ্চম বার কথা বলব।ওর শুধু নিশ্বাস এর শব্দ পাচ্ছি।
তোমার ছবি দেখেই আমার মন ভাল হয়ে যায় আর তোমাকে পেলে আমি কত্তটা আনন্দে থাকব তা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়।তাও কেন এমন নিজেকে গুটিয়ে রাখ রুত?(আয়ান উদ্বিগ্ন কন্ঠে)

আমার রাতের আকাশে তোমার অবস্থান ঐ ভিনদেশি তারার মত আয়ান ভাই।যাকে চাইলেও ছুয়ে দেখার সাধ্য আমার নেই। কেমন আছ তুমি?(রুতবা হতাশ কন্ঠে আয়ান এর উদ্দেশ্য)

আকাশ অভিমান করলে যেমন বৃষ্টি হয়,
নদী অভিমান করলে বন্যা হয়,
আর তুমি এমন হতাশ হয়ে আমার সাথে কথা বললে আমার মনে ও অনেক কষ্ট হয় রুত।সেই সময় ভাল থাকা যায় বল?(আয়ান রুতবার উদ্দেশ্য চোখ বন্ধ করেই)

আর কত্ত বছর থাকবা দূরে আয়ান ভাই?(রুতবা হাল্কা কান্না করে)

যেদিন বুঝব আমার বউ টা বুঝতে শিখেছে এক কাথার নিচে ঘুমালেই বেবি হয়না সেদিন। এখন বল পড়ালেখার খবর কি?কত্ত করে বললাম সাইন্স নাও না কমার্স নিয়ে বসলে।এখন হিসাব বিজ্ঞান এর নাকি কিছুই বোঝনা?(আয়ান রুতবার উদ্দেশ্য হালকা রেগে)

কে বলল এসব তোমায়?নিশ্চয়ই ঐ সাকচুননি টায় বলছে এসব।ওর আজকে খবর আছে।(রুতবা হালকা চিৎকার করে রেগে)

এইতো লক্ষি বউ এমন উৎফুল্ল থাকবে।তোমার কষ্ট আমাকে ভিষন কষ্ট দেয়। (আয়ান রুতবার উদ্দেশ্য )

আচ্ছা। খাবার খেয়েছ?(রুতবা আয়ান এর উদ্দেশ্য)

না এখন খাব।আচ্ছা শোন ডলার শেষ হতে চলল এখন রাখি পরে কল করব।তুমি এখানে আরো কয়েকদিন থেকে যেও।আর আম্মুকে বল টেনশন না করতে আমি টাকা পাঠায় দিব।রাখি রুত?(আয়ান রুতবার উদ্দেশ্য)

হুম।(রুতবা)

ভালোবাসি রুত।(আয়ান মুচকি হেসে)

হুমম । (রুতবা চোখ বন্ধ করে)

কল কেটে রান্নাঘরে চললাম রান্নার যোগার করতে।কাজ করে এসে রান্না করে খাওয়া খুব বিরক্তিকর। কিন্ত বেঁচে থাকার জন্য কত্ত কিছু করতে হয়।তিন বছর সিঙ্গাপুর থেকে আব্বুর উপর আমার তার প্রতি ভিষন ভালোবাসা বেরে গেছে।মানুষটা সবার জন্য কি করল আর সবাই তাকে কি দিল?যাইহোক আমি আমার বোনদের ও ফেমেলির জন্য করব ঠিক আছে সাথে আমার ভবিষ্যত এর জন্য ও করে রাখছি।জদিও আম্মুর কথাতে। আম্মু বলেছিল বাবা আপন মানুষ গুলো ততোদিন এই আপন যত্তদিন তুমি তাদের চাওয়া পাওয়া পূর্ণ করতে সক্ষম সে আমি(আম্মু)এই হোই না কেন। তাই বোনদের সাথে সাথে রুতবার কথা ও চিন্তা করতে শেখো।আম্মু নিজেই আমার প্রতি মাসের টাকার থেকে দুই হাজার টাকার একটা ডিপিএজ করেছে।রুতবার নামে। আমাদের ভবিষ্যত এর জন্য যাতে কোনদিন আমাকে আব্বুর মতো সিচুয়েশন ফেস করতে না হয়।এসব ভাবতে ভাবতেই রান্না সেরে নিলাম। তারপর শাওয়ার নিয়ে খেতে বসলাম। খাওয়ার পর ঘুমাতে চলে আসলাম।সকালে উঠে কাজে যেতে হবে।(আয়ান মনে মনে)

***************(চলবে)***************

MEANINGLESS LIFE PARTNER Part-05

0

#MEANINGLESS_LIFE_PARTNER (অর্থহীন জীবন সঙ্গী)
পর্ব:5
#লেখিকা_Arshi_khan

(RESPONSIBILE HUSBAND:দ্বায়িত্ববান স্বামী)

বন্ধুদের সাথে দেখা করে আসতেই রুত এর সাথে চোখাচোখি হয়ে গেল। শাড়ি খুলে আবার ফ্রোক আর পেন্ট পরে নিয়েছে।আমি ওকে দেখে মনে একটু জেদ চেপে বসল।বলব না কথা ওর সাথে।এখন এই এত্ত রাগ ভবিষ্যত এ কি করবে আল্লাহ মালুম।
দাদার মৃত্যু বার্ষিক উপলক্ষে গ্রামের মসজিদে ও গ্রামের দরিদ্র কিছু পরিবারকে খাওয়ার ও সাথে আর্থিক সাহায্য এর ব্যবস্থা করেছেন আব্বু,মেজ এবং ছোট বাবা।সেজ বাবা এখানে খরচ করবেন না বলে জানিয়েছেন। এতে কেউ রেগে নেই।নিজের বাবার মাগফিরাতে যদি কেউ খরচ না করে এটা একান্তই তার ব্যাপার। যাইহোক একটা গরু আনা হয়েছে রাতে কেটে রাখা হবে।সেই জন্য সব বাচ্চারা গরু কাটা দেখবে বলে চেয়ার নিয়ে বসে আছে।কশাই এসে যখন গরুর পা বেধে ফেলে তারপর গরুকে ফেলেছে আর বিসমিল্লাহ বলে কাটতেই যাবে দেখি রুত উঠে দৌড়ে রুমে ঢুকে গেল। সবাই এদিকে দেখতে ব্যস্ত। আয়েশা ওর পেছনে যেতে চাইছিল কিন্তু আমি ওকে থামিয়ে দিলাম।সবাই বাইরেই আছে ঘরে ও একাই আছে।এসব দেখে মনে হয় ভয় পেয়েছে। আরেকটু ভয় দেখিয়ে আসি।আমি আস্তে করে ঘরের উদ্দেশ্য কেটে পরলাম।রুমের ভেতরে আসতেই দেখি ও আমার রুমের পাশের বাথরুমের সামনে জায়গাতে বসে কান্না করছে।ভয় পেয়ে কান্না করার মতো মেয়ে তো রুত না।আমি ও আস্তে করে ওর পাশে পায়ে ভর দিয়ে বসলাম।
কি হয়েছে রুত?কান্না করছ কেন?ভয় পেরেছ?(আয়ান রুতবার মাথায় হাত রেখেই)

না।(ঠোঁট উল্টে কান্না করে রুতবা)

তাহলে!(আয়ান ব্রু কুচকে)

ঐ হাবু টা আমাদের ছিল।আমি গত একবছর ধরে ওকে খাবার দিতাম, গোসল করাতাম। আর আজকে ওকে এইভাবে হত্যা করল ।(কান্না করে রুতবা)

হাবু কে?আর কে কাকে হত্যা করেছে?(অবাক হয়ে আয়ান)

আমার হাবু ওকে আমি কত্ত আদর করতাম। কিন্ত আব্বু ওকে হত্যা করে দিল।আয়ান ভাই আমার হাবুকে এনে দাও।(আয়ান এর হাত ধরে মাটির উপর বসে চিৎকার করে কান্না করে রুতবা)

ভুলেও বলিস না তুই এই বয়সে প্রেম করেছিস আর তাকে তোর আব্বু খুন করেছে?(আয়ান দাঁতে দাঁত চেপে)

তুমি আমাকে তুই বললে আয়ান ভাই?(হঠাৎই কান্না থামিয়ে অবাক হয়ে রুতবা)

ফাজিল মেয়ে এই বয়সে এত্ত পেকেছ এতে দোষ নেই।আর আমার টাং স্লিপ হয়ে তুমি থেকে তুই বলেছি বলে এত্ত জোরে চিৎকার করার কি আছে!(আয়ান উঠে দাড়িয়ে রুতকে দাড় করিয়ে)

তুমি খুব পচাঁ আয়ান ভাই খুব খুব খুব পচাঁ। ভ্যা ভ্যা। (চিৎকার করে কান্না করে রুতবা)

আরে বাবা থামো এত্ত জোরে কেউ চিৎকার করে কাঁদে।চল তোমার আব্বুর কাছে যাব তোমাকে নিয়ে।
বলেই ওকে নিয়ে এক প্রকার দৌড়ের উপর আংকেল এর কাছে গেলাম। ওর হাত ধরা দেখে সবাই মিটিমিটি হাসতে ব্যস্ত। উফফ সাইকো গুলা।
আংকেল আপনার মেয়ের কোন বয়ফ্রেন্ড কে আপনি হত্যা করেছেন?(আয়ান আংকেল এর সামনে দাড়িয়ে)

এমন কথা শুনে সেখানে বসা সবাই অবাক হয়ে গেল।আমি চা খাচ্ছিলাম তা গলায় আটকে গেল।আমি কাশতে শুরু করলাম।
কি বলছ কি বাবা এগুলো?(অবাক হয়ে দাড়িয়ে আংকেল)

ও হাবু নামের কারো কথা বলছে।ওকে নাকি আপনি হত্যা করেছেন?(গম্ভীর কন্ঠে আয়ান)

কি?দাড়াও বাবা আগে একটু হেঁসে নেই।হাহাহা (আংকেল পেট ধরে হাসতে হাসতে বসে পরল)

আমার কথা শুনে এখানের সবাই হাসতে হাসতেই প্রায় পরেই যাচ্ছে।কি কারণে এমন হাসছে তা বোধগম্য হল না।
কি হল সবাই হাসছ কেন?(আয়ান বিরক্তির সুরে)

হাবু আমাদের গরুর নাম ছিল। আংকেল এর মৃত্যু বার্ষিক উপলক্ষে আমি ঐটা এখানে দিয়েছি। আর তাই তোমার পিচ্চি রুত এর আমার উপর এই অভিযোগ। ও খুব আদর করত গরুটাকে।তাই বলে একটা গরুকে বয়ফ্রেন্ড বলে আখ্যায়িত করবে তাই ভেবেই আমি হাসছিলাম।(আংকেল মুখ টিপে হেসে)

এমন কথা শুনে লজ্জায় আমি শেষ।আমি রুত কে আগের ন্যায় টেনে নিয়ে রুমে চলে আসলাম। মন চাচ্ছে ধরে এক ঘন্টা পিটাই।ওর জন্য সবার সামনে হাসির পাত্র হয়ে গেলাম। ও চুপচাপ খাটে বসে আমার দিকে অসহায় দৃষ্টি নিক্ষেপ করেছে।আমি ওর দিকে রাগি লুক দিতেই আবার কান্না শুরু।
থামাবা তোমার এই নেকামি। (আয়ান ঝারি মেরে রুতবাকে)

দুর থাকবই না তোমার সাথে পচাঁ লোক।(বলেই বেরিয়ে চলে আসলাম রুতবা)

দূর ছাই কথা ভাল মতো না শুনে এমন করা ঠিক হয়নি।ছোট বউয়ের উপর শুধু শুধু রাগ করার কোন মানেই হয়না।
সেইদিন রাত থেকে পুরো সপ্তাহে কয়েক বার ওর রাগ ভাঙ্গাব ভেবেও কথা বলাই হয়ে উঠেনি।এক সপ্তাহ পর ঢাকা ফিরে আসলাম। আবার শুরু হল ব্যস্ত জীবন। পড়ালেখার চাপ বেশি কারণ সেকেন্ড ইয়ার এ আছি।আর কয়েক মাস পরেই ফাইনাল এক্সাম। এখন থেকেই ভালো মতো না পড়লে এক্সাম ভাল হবে না।
তাই পড়ার চাপটা একটু বেশিই।
দেখতে দেখতে ফাইনাল এক্সাম শুরু হয়ে কোনদিক দিয়ে শেষ হল বুঝতেই পারলাম না।এক্সাম শেষে বাড়ি ফিরলাম। অনেক মাস পরে বাড়ি ফিরে মনে করেছিলাম খুব ভাল দিন কাটাব।কিন্ত বাড়িতে গিয়ে যেন আমি অবাক হয়ে গেলাম। কারণ বাড়ির সবাই যেমন মেজ ও সেজ বাবারা আলাদা হয়ে গেছে।ছোট বাবা সিলেট চলে গেছে কাজের জন্য। দাদিকে আব্বুর আন্ডার এ রাখা হয়েছে।তারা কেউ দাদিকে নিতে চায়না।ছোট বাবা চাকরির জন্য সিলেট গেছেন।আলাদা হওয়ার ইচ্ছাতে না।কিন্ত ওনার খাবার এর প্রবলেম এর কারণে চাচি আর বোনদের নিয়ে গেছে।আর এই প্রসঙ্গে তারা আলাদা হয়ে গেছে।যার যার খাবার এবং যাবতীয় সব আলাদা হয়ে গেছে।দাদিকে ওনারা চাইলেও আব্বু দিতে নারাজ ছিল।আর দাদিও তার বড় পুত্রের সাথেই থাকবেন।আমাকে দেখে দাদি কান্নায় ভেঙে পড়ল। তার ভরা সংসার এর এমন ভাগ তার সহ্য হলনা।এদিকে আব্বুর খেতের সব ধান বন্যার পানিতে ডুবে গেছে।আর তাই আব্বুর খুব লস হয়েছে।দাদিও অসুস্থ হওয়ার দরুন আমাদের ফেমিলি মোটামোটি বেশ কষ্টের মধ্যেই দিন কাটাচ্ছেন। অথচ এসব আমাকে জানানো হয়নি।আমি রাগ করে ঘর থেকে বেরিয়ে আসলাম। রাগে আমার সবকিছু তছনছ করে দিতে মন চাচ্ছে। একটা সময় আব্বু বিদেশ গিয়ে যাদের সব দ্বায়িত্ব পালন করেছিল।তারাই এখন আমার আব্বুর বিপদে আলাদা হয়ে গেছে।মানুষ ঠিকই বলে বিপদের সময় বুঝা যায় কে তোমার আসল বন্ধু।
পরিবারের এমন অবস্হা দেখে পড়ালেখার প্রতি আর মন বসলনা।রেজাল্ট দিতে আর দুইমাস বাকি।কিন্ত ভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ার জন্য কোচিং না করে আমি বিদেশ যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম।
চার লক্ষ টাকার দরকার সিঙ্গাপুর যাওয়ার জন্য। বড় মামা দুই লক্ষ দিতে রাজি। এখন বাকি দুই লক্ষ যোগার করতে হবে।ছোট বাবাকে জানানো হলে তিনি পঞ্চাশ হাজার দিতে পারবেন বলে যানালেন।আর বাকি টাকা আমাদের এই যোগার করতে হবে।
এদিকে আমার ভাগ্য খারাপ হওয়ার কারণে পুরো আটমাস লেগে গেল এই ট্রেনিং চলাকালীন। ছয়মাস আগে রেজাল্ট পেয়েছিলাম।মাসাআল্লাহ ইন্টার এ ও ফাস্ট ডিভিশন এই পেয়েছি।কিন্ত ভাগ্য দোষে আর ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার সপ্ন পূরণ করা হলনা।
এদিকে রুত এর ও বয়স বেড়ে চলেছে। আমাদের বিয়ের সাড়ে তিন বছর হয়েছে গত পরশু।ও এইবার ক্লাস সেভেনে উঠেছে।যদিও ওর এই বিয়ের কথা মনে নেই।আর আমি বিদেশ যাচ্ছি এখন ও ওদের যানানো হয়নি।
ট্রেনিং,ভিসা,টিকেট এবং টাকা যোগার করতে এক বছর লেগে গেল। তিনদিন পর ফ্লাইট ।
আমি আব্বুর সাথে বিয়ের পর প্রথম বার এর মতো রুত দের বাড়িতে এসেছি।আমি আংকেল আন্টির সাথে কুশল বিনিময় করে বসে ছিলাম রুত এর আসার অপেক্ষায়।ও স্কুল গেছে।আমাদের আসার সুবাধে আন্টি রান্না করায় ব্যস্ত হয়ে গেলেন।
আমি আব্বুর আর আংকেল এর কথা শুনছিলাম।আব্বু আমার যাওয়ার কথা বলছেন ওনাকে।আংকেল কে চিন্তিত দেখাল।
কোন সমস্যা আংকেল?(আয়ান আংকেল এর উদ্দেশ্য)

কত্ত বছরের জন্য যাচ্ছ বাবা?(মুখ গুমরা করে আংকেল)

টাকার রিন, সবার হাওলাত এর টাকা,বোনদের বিয়ের ব্যবস্থা সব কিছুর টাকা যোগার করেই বাংলাদেশে ফিরব।এই ধরুন বছর পাঁচেক। (আয়ান)

এতোদিন!(অবাক হয়ে আংকেল)

হ্যা আংকেল আমি বুঝতে পারছি। আর সেই জন্য এই আমি এসেছি।আমার এত্ত বছর যেহেতু দেরি হবে আসতে। আপনি যদি চান রুতবার বিয়ে অন্য কোথাও দিয়ে দিতে পারেন।(আয়ান)

একি বলছ বাবা তুমি?ওর বয়স মাত্র বারোতে পড়ল।তুমি যদি পাচঁ বছর এর জায়গাতে আট বছর পর ও আসো আমাদের সমস্যা হওয়ার কথা না।আর তাছাড়া আমি আমার বন্ধুর ছেলের সাথে আমার মেয়েকে একবার বিয়ে করিয়েছি।তাই ওর অন্য কোথাও বিয়ে করাব ভাবতেও আমার বিবেক এ বাধবে।তাই ওমন কথা বলনা।(আংকেল আয়ান এর হাত ধরেই)

খাওয়ার পর আমি আর আব্বু বাড়ির উদ্দেশ্য রওনা হলাম। রুত এর স্কুল ছুটি হবে পাচঁটায়।তাই বাড়িতে ফিরে আসা।দেড় ঘন্টার পথ পাচঁটার দিকে বের হলে রাত হয়ে যাবে সেইজন্য।কালকে আংকেল আর রুতকে আমাদের বাড়িতে যাওয়ার জন্য বলে এসেছে আব্বু।
বাড়িতে এসে ফ্রেশ হয়ে দাদির পাশে বসে পা টিপে দিলাম। আমার বুড়িটা ইদানিং খুব অসুস্থ। বিদেশ গেলে মন বলছে এসে আর বাড়িকে দেখতে পারবনা।আর সবাইকে ছেড়ে যাওয়ার কষ্ট টা মনকে খুব বেশিই হতাশ করে দিচ্ছে।
পরের দিন রুত আর আংকেল আসল বিকাল এর দিকে।ওকে এই প্রথম থ্রিপিস পরা দেখলাম। বাহ দিনকে দিন বউ আমার বড় হচ্ছে। কালকে রাতের ফ্লাইট ।তাই ভাবলাম ওকে নিয়ে বাইরে ঘুরতে যাব। আয়েশা আর ওকে রেডি হতে বলে আমি রেডি হতে লাগলাম। রেডি হয়ে এই রুমে এসি দেখি আয়েশা রুতকে কি যানি বুঝাতে চাইছে।কিন্ত ও চুপচাপ জানালার বাইরে তাকিয়েই কান্না করতে ব্যস্ত হয়ে গেল।
কি হয়েছে রুত কান্না করছ কেন?(আয়ান রুতবার সামনে এসে)

নিশ্চুপ।(রুতবা বাইরেই তাকিয়ে)

কি হল আয়েশা ও কথা বলেনা কেন?আর কান্না করছে কেন?(আয়ান আয়েশার উদ্দেশ্য)

কালকে তুমি আংকেল কে কি বলে এসেছ?(আয়েশা আয়ান এর উদ্দেশ্য)

কি বলেছি?(আয়ান অবাক হয়ে)

রুতবা ভাবিকে নাকি অন্য কোথাও বিয়ে দিতে বলে এসেছ এটা কি সত্যি?(আয়েশা ব্রু কুচকেই)

ওকে ভাবি বললি কেন তুই?(আয়ান রাগি লুক দিয়ে)

বড় ভাইয়ের বউকে কি খালা বলবে?(দাঁতে দাঁত চেপে রুতবা)

তুমি জানো আমার আর তোমার বিয়ের কথা?(অবাক হয়ে আয়ান)

যত্তসব আজাইরা কথা।সাড়ে তিন বছর যাবত ঘন্টায় ঘন্টায় আমাকে মনে করানো হয় আমি কোন বাড়ির বউ। আমার কি কি করতে হবে, কার সাথে কেমন ব্যবহার করতে হবে,তোমাকে ভবিষ্যত এ স্বামী হিসাবে কিভাবে সন্তুষ্ট করতে হবে।তোমার বউ বলে এখন থেকেই সমাজের অন্য দের থেকে নিজেকে লুকিয়ে রাখতে হবে। আর তুমি আমাকে জিজ্ঞেস কর আমি বিয়ের ব্যাপার এ জানি কিনা!আর একটা কথা সব সময়ই আমার লাইফ নিয়ে তোমাদের ইচ্ছা চাপিয়ে দেওয়ার অধিকার কে দিয়েছে তোমাদের?আমার বিয়ে হয়ে যাওয়ার সত্ত্বেও তুমি কোন সাহসে আমার আব্বুর কাছে বল তারা চাইলে যেন আমার বিয়ে অন্য কোথাও দিতে পারে?(রুতবা কান্না করে আয়ান এর উদ্দেশ্য রাগি সুরে)

রুত আমি ওমন ভাবে বলতে চাইনি।আসলে আমি প্রায়ই কয়েক বছর দেশের বাইরে থাকব তাই বলেছি।বড় হলে আমাদের ছোট কালে হওয়া বিয়ের কোন দাম থাকবেনা।তাই তোমার জদি মনে হয়
ছোট বেলার বিয়ে বিয়েই না।তাই !(আয়ান রুতবার হাত ধরেই)

এমন ভাবনা আমার মনে ভূলেও আসলে নিজেকে শেষ করে দিব।কিন্ত আমার কেন জানি মনে হচ্ছে তোমার মন এই হয়তো এমন ভাবনা এসেছে বিধায় ওমন কিছু বলে এসেছ।(তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে রুতবা)

বাহ বড় হয়ে গেছ দেখছি।অনেক কিছুই বুঝতে ও শিখেছ।তাহলে একটা কথা শুনে রাখ যেমন বউ হিসাবে রেখে যাচ্ছি তেমন এই বাড়ির বউ হিসাবে দ্বায়িত্ববান হয়ে থেক। আর আমার জন্য অবশ্যই অপেক্ষা কর।
বলেই ঘর থেকে বেরিয়ে পুকুর পার চলে আসলাম। ছোট মেয়েটার মনে এত্ত অভিমান কেন কাজ করে আমার বোধগম্য হয়না।বাচ্চা বাচ্চাদের মত খেলবি, ঘুরবি তানা বড়দের মতো বিচক্ষণ হয়ে কত্ত গুলো কথা শুনিয়ে দিল।
রাতের খাবার এর পর ঘুমানোর ব্যবস্থা দেখে আমি শকড। রুত এমনে আমার সাথে কোনদিক ঘুমালে আয়েশা ও ঘুমায়।আজকে ও একলাই এসে ঘুমাচ্ছে। আইমিন শুয়ে আছে।আয়েশা কে দাদি নিয়ে গেছে।আমি এই প্রথম ওর পাশে ঘুমাতে বেশ সংকোচ বোধ করছি। আমি একপাশে চুপচাপ বসতেই ও আমার দিকে তাকিয়ে ঘুরে শুয়ে পড়ল। শরীরে কাথা জড়িয়ে নিল।আমি মনে হয় ওর দিকে তাকিয়ে দেখব যে জামা ঠিক আছে নাকি ঢং।এসব ভাবনার মধ্যেই সেখানে শুয়ে পড়লাম। রুত থাকলে আমি লাইট বন্ধ করিনা কিন্ত লাইট জ্বালানো থাকলে আমার ঘুম হয়না।আর আজকে ভালো মতো না ঘুমালে কালকে জার্নি করলে অসুস্থ হয়ে যাব।সেই ভেবেই উঠে লাইট বন্ধ করে আবার এসে শুয়ে পড়লাম। (আয়ান)

আয়ান ভাই তুমি লাইট বন্ধ করলা কেন?(রুতবা ভয়ে ভয়ে উঠে বসে)

ঘুমাব বলে।(আয়ান)

আমি তোমার সাথে থাকলেতো লাইট বন্ধ করোনা তো তুমি আজকে হঠাৎই বন্ধ করলে কেন?(রুতবা হালকা ফুফিয়ে কান্না করে)

আমি উঠে লাইট জ্বালিয়ে দিলাম। (মনে)
হল এখন ঘুমাও এত্ত অল্প বয়সে উল্টা পাল্টা কিছু মাথায় আনার দরকার নেই।
বলেই ওর পাশে শুয়ে কাথা টেনে মুখ ঢেকে নিলাম। নাহলে ঘুম আসবেনা।ও পাশে না শুয়ে বসেই আছে।(মনে)
কি হল ঘুমাও না কেন?(আয়ান রুতবার দিকে তাকিয়েই)

তোমার সাথে কাথার নিচে ঘুমালে তো আমার বাচ্চা হয়ে যাবে।(রুতবা অসহায় কন্ঠে)

কিইইই?(চেঁচিয়ে খাটের থেকে নিচে পরে আয়ান)

আমি শাবানার সিনামাতে দেখেছি বিয়ে করে এক কাথার নিচে ঘুমায় পরে বমি করে বলে আমি তোমার বাচ্চার মা হতে চলেছি।এখন তুমি আর আমি এক কাথার নিচে ঘুমালে আমার ওতো বাচ্চা হয়ে যাবে।(রুতবা আয়ান এর উদ্দেশ্য মুখ ভার করে)

আল্লাহ মাফ করো।কালকে বিদেশ গেলে একেবারেই ওর বোধগম্য হওয়ার আগে যেন দেশে না ফিরতে হয়।(মনে মনে)
তোমার বেবি হবেনা।কারণ তোমার এখন ও সেই বয়স হয়নি।তুমি নিশ্চিত হয়ে ঘুমাও। (উঠে রুতবার মাথায় হাত দিয়ে আয়ান)

কিন্ত দাদি যে বলল আজকে যেন তোমার সাথে থাকি ।তাহলে আমার বাচ্চা হবে।(রুতবা আয়ান এর উদ্দেশ্য )

হবে না কারন তুমি এখন ও বাচ্চা বুঝলে।(আয়ান বলে আবার শুয়ে পড়ল)

কিন্ত দাদি বলল আমার এই অবস্হাতে তোমার সাথে থাকলে আমার বাচ্চা হবে।(রুতবা আয়ান এর উদ্দেশ্য )

কোন অবস্থা?(আয়ান উঠে বসে রুতবার উদ্দেশ্য)

নিশ্চুপ।(মাথা নিচু করে রুতবা)

বুড়ির ভিমরতী হয়েছে।এই বাচ্চা মেয়ের মাথায় এসব ঢুকাইতে কে বলছে?(মনে মনে)
চুপচাপ ঘুমাও রুত।আমাদের বড় হওয়ার আগে বেবি হবেনা।আমি বিদেশ থেকে আসলে আমাদের বেবি হবে।এর আগেনা।এখন চুপচাপ ঘুমাও।(আয়ান রুতবাকে বালিশে ঘুম পারিয়ে)

আচ্ছা। (বলেই চোখ বন্ধ করে নিল রুতবা)

বাচ্চা টা সত্যি বড় হচ্ছে। ভাবতেই ঠোঁটের কোনে মুচকি হাসি খেলে গেল। তারপর আমি আবার শুয়ে পড়লাম। আর ঘুমানোর জন্য চোখ বন্ধ করে নিলাম।(আয়ান)

************(চলবে)************

MEANINGLESS LIFE PARTNER Part-04

0

#MEANINGLESS_LIFE_PARTNER(অর্থহীন জীবন সঙ্গী)
পর্ব:4
#লেখিকা_Arshi_khan

(HAPPINESS MEANS YOU:খুশি থাকার মানেই তুমি)

গ্রীষ্মের গরমে পুরো শরীর জ্বলে যাচ্ছে।আম ও কাঠাল পাকার ঘ্রাণ এ বাড়ির চারপাশে ভরে গেছে ।এদিকে পরীক্ষার আগের দিন এই রুত এর উপস্থিতি তে খুশি হব নাকি বিরহে কান্না করব বোধগম্য হল না।আম কাঠালের দিন অথচ রুতকে কথা মতো আম খাওয়াতেই পারি নাই।এখন সেই আগের বারের মত নিশ্চুপ এই আছে এর রাগ ভাঙ্গাব নাকি পড়াতে মন দিব এই নিয়ে দ্বিধা তে আছি।কিন্ত এখন উঠে যদি আম পারতে যাই মার একটাও মাঠিতে পরবেনা।আম্মু ঝাড়ু দিয়ে পেটাবে আম গাছে উঠতে দেখলে।তাই এখন চুপচাপ পড়াতেই মন দিলাম। দুপুর এর খাবার এর সময় সবাই যখন একসাথে খাওয়া দাওয়া করছে আমি দৌড়ে দাদির ঘরের পেছনের থেকে আম পেরে আনলাম। এনে সুন্দর মত একটা ব্যাগে ভরে রাখলাম। রুত এর সাথে কথা বলার সুযোগ আর হয়ে উঠলনা।খাওয়ার পর এই আবার পরতে বসেছি।সন্ধার দিকে একটু সুযোগ হল ওর সাথে কথা বলার কিন্ত ও রাগ করে আর কথা বলে নাই।আমি ও নাছোর বান্দা কথা বললে বলুক না বললে নাই এইবার আম পাগলিকেও আম আমি খাইয়ে এই ছাড়ব।আমি আমেনাকে বলে সব আম কাটালাম।তারপর বোলে করে সব আম নিয়ে ওর হাত ধরে টেনে আমার রুমে এনে আমার খাটে বসিয়ে ওর হাতে বোল দিয়ে দিলাম।
নাও রুত তোমার জন্য এগুলো সব। (মুচকি হেসে আয়ান)

এত্ত আম?(অবাক হয়ে রুতবা)

হুম খাও।তাও রাগ করে থেক না।(রুত এর গাল টিপে আয়ান)

হুম। (বলেই খুশি মনে আম খেতে লাগল রুতবা)

আমি এক ঘ্যানে আম পাগলির আম খাওয়া দেখে গেলাম সেই সন্ধা।রাতে খাবার খেয়ে ঘুমাতে আসলাম। কারণ সকাল দশটায় পরীক্ষা দরকার হয় ভোরে উঠে আবার পরব।আমার সাথে আয়েশা আর রুত ঘুমিয়েছে। পাশের ঘরে আঙ্কেল আন্টি আর রায়হান (শালা)ঘুমিয়েছে।আর উপরে আব্বু,আম্মু,আমেনা আর আছমা।অনেকক্ষন আমি আয়েশার আর রুত এর গল্প শুনেছি। একটা সময় চোখটা লাগতেই ঘুমিয়ে পড়লাম। ভোর পাচঁটার দিকে ঘুমটা ভেঙ্গে গেল। পরীক্ষার টেনশন এ ঘুমের ঘরে ও শরীর কাপছিল।ভোরে উঠে কোনরকম মুখ ধুয়ে এই পড়তে বসলাম। সকাল নয়টা পর্যন্ত পড়ে রেডি হয়ে সবার থেকে দোয়া নিয়ে পরীক্ষা দিতে গেলাম।
বারোটা পরীক্ষা প্রেকটিকেল নিয়ে পুরো এক মাসে পরীক্ষা শেষ হবে।এগারোটা পরীক্ষা খুব ভাল ভাবেই সম্পন্ন করতে পেরেছি।শেষ পরীক্ষার আগের দিন রাতে দাদার অবস্হা আবার খারাপ হতে লাগল। সে গত একবছর যাবত এই অসুস্থ। যা গল্পের শুরুতেই বলেছি।তবে মাঝে একটু সুস্থ ছিল। দাদাকে নিয়ে দৌড়াদৌড়ি আর আহা জারি পরে গেল পুরো বাড়িতে। পুরো রাত সবাই অপেক্ষা করেছে কখন সকাল হবে আর কখন দাদাকে সদর হসপিটাল এ নিবে।কিন্ত আল্লাহ পাক হয়তো দাদার হায়াত এই পর্যন্ত এই রেখেছিল। সকাল আটটার দিকে দাদা হঠাৎই পুরো নিশ্চুপ হয়ে যান।আমার হাতে এই তাকে শেষ পানি পান করিয়েছিলাম।হঠাৎই আমার দিকে হাতটা বাড়িয়ে বুড়ো বলে উঠেছিল ছোট বুবুজান আর আমার বুড়ির খেয়াল রেখ দাদাভাই।তারপর হাতটা আমার হাতেই নিস্তেজ হয়ে গেল। আমি স্তব্ধ হয়ে গেলাম। যেই আমি এতকাল চাইলাম বুড়ো মরলে আমার এই বয়সে বিয়ে করতে হতোনা।সেই আমি এই যেন পাথরে পরিণত হলাম।ছোট বাবা আমাকে সরিয়ে দাদার পালস চেক করে হাউমাউ করে কান্না করে দাদির কোলে আচড়ে পড়লেন।সবাইকে ছোট বাবা জোর করে কিছুক্ষণ আগে বের করে দিয়েছিল।ছোট বাবার আহা জারি চিৎকার এ সবাই হুড়মুড়িয়ে ঘরে ঢুকতেই চিৎকার করে কেদে উঠলেন।পুরো বাড়িতে কান্নার রোল পরে গেল মুহূর্তেই। যখন আমি সিওর হলাম দাদা সত্যি নেই ঠিক সেই সময়ই আমি সেন্স হাড়ালাম।
পানির ঝাপটায় সেন্স আসতেই দাদার শরীর কে জড়িয়ে আমিও চিৎকার করে কান্না করতে লাগলাম। ছোট বাবা আমাকে সেখান থেকে সরিয়ে জলদি বাইরে নিয়ে আসল এক প্রকার টেনে।
ছোট বাবা দাদা কি সত্যি আমাদের ছেড়ে চলে গেছে?(আয়ান কান্না করে মাটিতে বসে পরে)

যে গেছে সে আর আসবেনা।কিন্ত তোর আর আধা ঘন্টার পর পরীক্ষা তুই এখনি রেডি হবি আর আমার সাথে পরীক্ষা দিতে যাবি।(ছোট বাবা আয়ান কে দাড়া করিয়ে)

ছোট বাবা আমি পারবনা।আমি আমার দাদার কাছে যাব।আমাকে আমার দাদা এনে দাও ছোট বাবা।(চিৎকার করে কান্না করতে করতে মাটিতে বসে আয়ান)

আয়ান বাবা দেখ যে যাওয়ার সে যাবেই।কিন্ত তোর দশ বছরের মেহনত মাঠি হয়ে যাবে আজকে পরীক্ষা না দিলে।(ছোট বাবা আয়ান কে তুলে নিজের সাথে জড়িয়ে)

ছোট বাবা সবাই কে বুঝিয়ে আমাকে জোর করে নিয়ে গেল পরীক্ষার হলে।তিন ঘন্টার পরীক্ষা দেড় ঘন্টাতে কোন রকম লিখে খাতা জমা দিতে যাব হঠাৎই ছোট বাবা ক্লাসে এসে স্যারের উদ্দেশ্য বলে গেল আমার অবস্হার কথা।পুরো ক্লাস স্তব্ধ হয়ে গেল আমার ছোট বাবার কথায় নিজের বাবার লাশ রেখে ভাইপো কে নিয়ে পরীক্ষার জন্য জোর করে এনেছে।আবার স্যারদের অনুরোধ করছে আমার প্রতি সদয় থাকার জন্য।
আমি না চাইতেও ছোট বাবার ও ফেমেলির কথা ভেবে ভাল মতো পরীক্ষা দিলাম। দুইজন বাড়ি ফিরে দেখি দাদার গোসল শেষ।খাটিয়ার উপর শুইয়ে রেখেছে।এই দেখে আমরা চাচা ভাতিজা জীবনের প্রথম বার একে অন্যকে জড়িয়ে চিৎকার করে কান্না তে ভেঙ্গে পড়লাম।
আছড়ের নামাজ এর পর কবর দেওয়ার ব্যবস্থা করা হল।নামাজের পর জানাজা দেওয়ার পর আমরা দাদার খাটিয়া নিয়ে চললাম কবর স্থান এর উদ্দেশ্য। বাবা চাচারা মিলে খাট ধরেছে।মাঝে আমি ও একবার ধরেছিলাম।কবর এ নেমে আব্বু আর ছোট বাবা যখন দাদার লাশ কবরে রাখছিল আমি সেই সময়ই আবার চিৎকার করে কেঁদে উঠি।আসলে মানুষ ঠিকই বলে দাঁত থাকতে আমার দাঁতের মর্ম বুঝিনা।কিন্ত যখন আমরা হাড়াই তখন থেকেই নিজেদের মনে হাড়ানোর আহা জারি ছাড়া আর কিছুই অবশিষ্ট থাকেনা।যেমন বংশের এক মাত্র পুত্র হিসাবে আমি সর্বদাই দাদার আদর বেশি পেয়েছি। কিন্ত আমার বিয়ে করানোর কারণে গত এক বছর দাদাকে আমার একদম দেখতে ইচ্ছে করত না।কিন্ত আমি রুত কে খুশি রাখার ট্রাই করে গেছি।যার জন্য ওকে পেরেছিলাম তার উপর মিছে রাগ করে কাটিয়েছি।বুড়ো আমায় মাফ করে দিও।(আয়ান কবরের পাশে বসে মনে মনে)

সারাদিন সবাই না খেয়ে থাকার কারণে সবার এই অবস্হা বেহাল।বিশেষ করে বাচ্চাদের তো মুখটা শুকিয়ে গেছে।বাড়ির বড় বউ হওয়ার সুবাধে সবার ভাল মন্দ দেখার দ্বায়িত্ব আব্বা আমাকে দিয়েছেন। আর সব গুলোই আমার বাচ্চা ওদের এমন করুণ দশা মানা যায়না।মরা বাড়ি রান্নার জন্য চুলা জ্বালানো নিষেধ চারদিন পর্যন্ত। সেই জন্য আমি আম গাছের থেকে পাকা আম পেরে মুরি চিনি দুধ আর আম মাখিয়ে সব বাচ্চাদের ডেকে আরেক ঘরে বসিয়ে দিয়ে আসলাম। বড় মেয়েরা দাদার শোকে খেতে নারাজ কিন্ত কালকে রাতের থেকে না খাওয়া এতে ওদের শরীর খারাপ হবে।তাই জোর করে ওদের খাইয়ে এসেছি।আসলে বাড়ির সব চেয়ে বড় ছায়া যখন হারিয়ে যায় মিলিয়ে যায় এমন জায়গাতে যেখান থেকে কোনদিন ফিরবেনা এটা যেনে খাওয়ার মন মানসিকতা থাকেনা।তাও শরীর তো আর এটা মানবেনা।(আম্মু মনে মনে)

কেটে গেল আরো কয়েকমাস।সময় বহমান কারো জন্য কেউ থেমে থাকে না।সবাই আবার নিজেদের লাইফ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে উঠেছে।পরীক্ষার রেজাল্ট হাতে পেলাম।খুব ভাল মার্ক পেয়েছি সব সাবজেক্ট এ।ফাস্ট ডিভিশন পাওয়া ভাগের ব্যাপার। তবে আল্লাহর রহমনে তা পেয়েছি। এখন ঢাকা কবি নজরুল কলেজে ভর্তি পরীক্ষার জন্য ছোট বাবার সাথেই ঢাকা আসলাম।হাজার মানুষের ভিরে এখন ইন্টার এ টিকে থাকার লড়াই করতেই ভর্তি পরীক্ষা দেওয়া। ভাগ্য ভাল হলে হয়তো এখানে চান্স পেলেও পেতে পারি।
পরীক্ষার পর অপেক্ষা করা ছাড়া আর কোন কাজ নেই আপাতত। রেজাল্ট বের হওয়ার আগে কলেজে ভর্তি হওয়ার জন্য তিনমাস কোচিং করেছি।এখন যা হবে আল্লাহ ভরসা।
দশদিন পর কলেজ থেকে রেজাল্ট বের হল।আলহামদুলিল্লাহ দুইশ ছাত্র ছাত্রীদের মধ্যেই আমিও সিলেক্ট হয়েছি।কলেজে ভর্তি হওয়ার পর গ্রাম থেকে ঢাকা এসে পরতে বেশ অসুবিধার সম্মুখীন হতে হল।রেগুলার ক্লাস করতে পারতাম না।তিন মাস খুব কষ্টের মধ্যেই ক্লাস করতে হয়েছে। তাই আব্বু আমাকে কবি নজরুল কলেজের ছাত্রাবাস এ রুম নিয়ে দিল।কলেজে নতুন বন্ধু বান্ধবীর ভীরে রুত নামের যে কেউ আছে তা বেমালুম ভুলে না গেলেও প্রায় ভুলতে বসেছিলাম।
দাদার এক বছরের মৃত্যু বার্ষিকী তে আব্বু এসে কলেজের থেকে আমাকে এক সপ্তাহ এর ছুটিতে নিয়ে গেল।প্রায় ছয়মাস পর বাড়িতে ফিরে যেন প্রাণ ফিরে পেলাম।
আম্মু কেমন আছ?(আম্মুকে জড়িয়ে ধরে আয়ান)

তোকে ছাড়া যেমন থাকা যায় বাবা।(কান্না করে আম্মু)

কান্না করছ কেন আম্মু?এইতো আমি এসে গেছি।এখন পুরো এক সপ্তাহ তোমার কাছেই থাকব।(মুচকি হেসে আয়ান)

মা ছেলের আদর ভালোবাসা শেষ হলে ছেলেকে ফ্রেস হতে পাঠাও সেই শহর থেকে আসল।(আব্বু আয়ান আর আম্মুর উদ্দেশ্য)

আমি কলপারে গিয়ে মুখ হাত ধুয়ে ঘরে এসে মুখ মুছে খেতে বসলাম। আম্মু আমার পাশে বসে খাবার বেড়ে দিচ্ছে আর আমি খেয়ে যাচ্ছি। হোস্টেল এর খাবার খেতে খেতে মুখটা বাকা হয়ে গেছে।এখন খুব মজা করে খাবার গুলো খাচ্ছি। মায়ের হাতের রান্না যেমন এই হোক অমৃত এর মতো এই লাগে।খাবার খেতে খেতে সামনে তাকাতেই বিষম খেয়ে বসলাম।আম্মু জলদি পানি এগিয়ে দিতেই আমি পানিটা একবারেই শেষ করলাম। সামনের থেকে হেটে আসা ছোট রমনির দিকে তাকিয়ে আমি প্রথম বার মুগ্ধ হলাম। আমার ছোট্ট রুতকে এই কাপরে কত্তটা সুন্দর লাগছে বলে বোঝানো সম্ভব না।ছি ছি আয়ান এসব উল্টা পাল্টা কথা ভুলেও মাথায় আনবিনা ও এখন ও বাচ্চা ।(আয়ান মনে মনে)

কেমন আছ আয়ান ভাই?(রুতবা মুচকি হেসে আয়ান এর উদ্দেশ্য ওর পাশে বসে)

আলহামদুলিল্লাহ ভাল। তোমার কি খবর রুত?(আয়ান রুতবার উদ্দেশ্য মুচকি হেসে)

এইতো চলছে।তোমার খাওয়া শেষ হলে তারপর কি কোন কাজ আছে?(রুতবা )

নাতো কেন?(আয়ান ব্রু কুচকে)

আসলে আয়েশা আর আমি আজকে শাড়ি পরেছিতো। তাই ভাবছিলাম আমরা একটু ঘুরতে যাব।নিয়ে যাবে আমাদের?(রুতবা উৎফুল্ল কন্ঠে)

তোমাদের আঙ্কেল জ্ঞানের এত্ত অভাব জানা ছিল নাতো!এখানে সবাই একজন এর মৃত্যু বার্ষিকী অনুষ্ঠান এ এসেছে।কোন বিয়ে বাড়িতে না।যে সেজেগুজে ঘুরতে চলে যাবে।গিয়ে চুপচাপ রুমে বস।(আয়ান রাগি সুরে রুতবার উদ্দেশ্য)

আমি নিশ্চুপ হয়ে সিরি বেয়ে উপরে চলে আসলাম। আমার ভিষন কান্না আসছে।আয়ান ভাই তুমি এমন কেন।দাদি বলে তুমি নাকি আমার স্বামী। তোমার কাছে কাছে থাকতে বলল সব সময়ই। শাড়ি পরিয়ে দিল যেন তোমার চোখে পরি।কিন্ত তুমি শুধু শুধু আমাকে বকা দিলে।কোথায় এক বছর পর দেখা হল বলে একটু তোমার পাশে বসাবে জিজ্ঞেস করবে পড়ালেখা কেমন চলছে,শরীর কেমন তানা শুধু শুধু বকা দিলে।(বিরবির করে রুতবা কান্না করে)

এভাবে না বললেও পারতি বাবা।মেয়েটা কত্ত শখ করে এসেছিল।বাচ্চা মেয়ে ওর কি এত্ত জ্ঞান বুদ্ধি আছে?(আম্মু হালকা রাগি সুরে আয়ান এর উদ্দেশ্য )

কালকে দাদার মৃত্যু বার্ষিক আম্মু। অথচ ও বাড়ির একমাত্র ছেলের বউ হয়ে আজকে ঘুরলে মানুষ নানা কথা শুনাবে।আর আমি এমন কিছু হোক চাইনা।আর বাচ্চা মেয়ে ও অবুঝ হলেও সমাজের মানুষ গুলো ওকে অবুঝ হিসাবে দেখবে না বরং এই বাড়ির পুত্র বধু রূপে এই দেখবে।আর সেইহিসাবে ও এমন সেজেগুজে বের হতে চাচ্ছে তাও আবার আমার সাথে ব্যপার টা আরো বেশিই কটুক্তি পূর্ণ বলে গন্য হবে।তাই ওকে একটু বকেছি।পরে ওর রাগ ভাঙ্গাব চিন্তা করনা।এখন তুমি আমাকে ডাল দাও।(আয়ান আম্মুর হাত ধরেই)

আমার ছোট ছেলেটা কবে এত্ত বড় হল বুঝতেই পারিনি!(আয়ান এর মাথায় হাত রেখে আম্মু)

খাওয়ার পর আমি কিছুক্ষণ খাটে হেলান দিয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিখ্যাত কিছু কবিতার মধ্যেই স্মৃতি কবিতাটা পারছিলাম।রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কে পার্সোন ভাবে আমার ভীষণ পছন্দ। তার লেখা কবিতার ও গল্পের বই গুলো পড়তে আমার ভিষন ভাল লাগে।
কবিতা:স্মৃতি
লেখক:রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

ওই দেহ-পানে চেয়ে পড়ে মোর মনে
যেন কত শত পূর্বজনমের স্মৃতি ।
সহস্র হারানো সুখ আছে এ নয়নে,
জন্ম-জন্মানতের যেন বসন্তের গীতি।
যেন গো আমারি তুমি আত্মবিস্মরণ,
অন্তত কালের মোর সুখ দুঃখ শোক,
কত নব জগতের কুসুমকানন,
কত নব আকাশের চাঁদের আলোক।
(বাকিটা পরে নিয়েন)
এমন আরো কয়েকটা কবিতা পড়ার পর হঠাৎই পাশের ঘরে রুত এর গলার আওয়াজ পেলাম। আমি উঠে বসে একটা গেঞ্জি পরে নিলাম,লুঙ্গি পাল্টে একটা প্যান্ট পরে নিলাম। তারপর পাশের ঘরে গিয়ে রুতকে ডাক দিলাম। কিন্ত ও রাগ করে বসেই থাকল।আর মুখ ঘুরিয়ে রাখল।যা বাবা যার জন্য রেডি হলাম সে উল্টো রাগ করে বসে আছে।
রুত আমি ডাকছি কিন্তু।(আয়ান রুতবার উদ্দেশ্য)

নিশ্চুপ।(রুতবা)

থাকুক ও ওর রাগ নিয়ে ।বাচ্চাদের বেশি লাই দিতে নেই ।লাই দিলে মাথায় চরে বেরাবে।তাই রুম থেকে বেরিয়ে বাইরে চলে আসলাম বন্ধুদের সাথে দেখা করার জন্য। (আয়ান)

*********(চলবে)********

MEANINGLESS LIFE PARTNER Part-2+3

0

#MEANINGLESS_LIFE_PARTNER
2&3
পর্ব :2
#লেখিকা_Arshi_khan

(Protective husband)

সকালে ঘুম ভাঙ্গতেই দেখি আমার লুঙ্গির অর্ধেক কে রুত কাথা বানিয়ে ঘুমাচ্ছে। বাকি অর্ধেক কোন রকম আমার শরীরে পেঁচিয়ে আছে।এখন ও যদি উঠে কোন ভাবে এই অবস্থা দেখে পুরো গ্রাম এই খবর পৌঁছে যাবে দাবানলের মত।তাই নিজের ইজ্জত যাওয়ার পূর্বেই আমাকে কিছু করতে হবে।আমি আস্তে করে ওর থেকে লুঙ্গির অংশ ছাড়িয়ে তাড়াতাড়ি দাড়িয়ে পড়ে নিলাম। এ জীবনে ওর পাশে ঘুমালে লুঙ্গি না পরে ঘুমানোর শপথ করলাম। বাবা রে একটুর জন্য মান সম্মান বেঁচে গেল ভাবতেই মন থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসল।আমি খাটের আরেক কোনার থেকে সেন্টো গেঞ্জি নিয়ে পড়তে পড়তে একহাতে ছাই নিয়ে দাঁত মাঝতে লাগলাম আর হেঁটে পুকুরের দিকে চলে আসলাম।এখন বাজে সকাল সাতটা মেজ চাচি তাদের এটো থালা বাটি ধুতে এসেছে।আমাকে দেখে কেন জানি তার মন খারাপ হয়ে গেল। সেদিকে আমি নজর না দিয়ে বাধা গাটে বসে মুখ ধুয়ে নিলাম। একটু পর আসতে হবে আজকে আমরা বন্ধুরা মাছ মেরে পিকনিক করব।আমি মুখ ধুয়ে মুখ ভর্তি পানি কুলকুলি করতে করতে বাড়ির দিকেই ফিরছিলাম।হঠাৎই সামনে খেয়াল না করে মুখের পানি মেরে দিলাম। কিছুক্ষণ এর মধ্যেই হঠাৎই ছোট বাবা গলা খাকারী দিয়ে চিৎকার করে আমার দিকে তেড়ে আসল।আমি ভয়ে কাচুমাচু করতে লাগলাম। কারণ বাড়ির মধ্যেই একমাত্র ছোট বাবাকেই আমি ভিষন ভয় পাই।
আসলে আমি তোমাকে খেয়াল করি নাই।(আমতা আমতা করে আয়ান)

কেন চোখ কি হাতে নিয়ে হাটিস নাকি ব্যাটা ফাজিল?বিয়ে করে বাড়িতে বউ এনে নিজেকে বড় মনে করছিস নাকি!(চিৎকার করে ছোট বাবা)

কিসের মধ্যেই কি পান্তা ভাতে ঘি?সাইকো কোথাকার!এমন আরো শখানেক গালাগালি সারা শেষ মনে মনে তার ভাষণ শেষ হয়না।আমি চুপচাপ দাড়িয়ে সবটা হজম করছি।প্রায় মিনিট পনের হবে তার কথা শোনানোর কিন্ত মনে হচ্ছে আজকে সারাদিন তার রেশ কাটবেনা।এইদিকে খুদের বউয়ার ঘ্রাণ নাকে এসে খুদা বাড়িয়ে তুলেছে।হঠাৎই দাদি এসে আমাকে টেনে নিয়ে গেল।
থ্যাঙ্কস বুড়ি তোমার সাইকোর থেকে বাঁচানোর জন্য। কি খেয়ে এই সাইকো কে পয়দা করছিলা আল্লাহ মালুম?(বেসামাল ভাবে বলেই যাচ্ছি আয়ান)

কি বললি দাদু ভাই?(চোখ রাঙিয়ে দাদি)

কোই কি বললাম?(মাথা চুলকে দাদির উদ্দেশ্য আয়ান বোকা হেসে)

আমি তো আর তোর দাদার মতো কানে কালা না যে কিছু বলবি আর আমি শুনতে পাব না।দেখ দাদুভাই আমার ছোট ছেলের একটু রাগ বেশি তাই বলে তুই ওকে পাগল বলবি এটাতো আমি মানবনা।আর তাছাড়া ও যদি একবার একথা শুনে তোরে পুকুরের পানিতে চুবাইবো।আর দোষ কিন্তু আজকে তোর ছিল দাদুভাই। পোলাটা আমার বাজারে যাইব সেই সময়ই তুই তোর মুখের পানি ওর উপর ফেললি এটা কি ঠিক?(দাদি আয়ান এর হাত ধরেই )

আহ বুড়ি যাও তোমার বুড়ার কাছে আমাকে এত্ত ঝারতে হবেনা।ছেলের থেকে বাঁচিয়ে এনে আবার নিজে শুরু করছে।
বলেই নিজের ঘরের দিকে চলে আসলাম। যাতা একদম যাতা অবস্হা। এই বাড়ির সবার এই আমার জন্য যেমন দরদ উতলে পড়ে আবার বকা দেওয়ার সময় ও সবাই আমাকেই খুজে পায়।রুমে এসে দেখি রুত উঠে গেছে।ও চোখ ঢলতে ঢলতে আমার দিকে অসহায় দৃষ্টি নিক্ষেপ করেছে। আমি ওর এই তাকানোর মানে বুঝলাম না তবে ঘরে ঢুকতেই নাকে একটা গন্ধ আসল।আমি ভাবলাম আমার রুমের বাইরের বাথরুম থেকে গন্ধ আসছে।তাই গিয়ে গেট বন্ধ করে রুমে আসলাম। না তাও গন্ধ আসছে।আমি রুত এর দিকে আবার তাকাতেই ও কান্না করে দিল।
কি হল রুত কান্না করছ কেন?(আয়ান রুতবার উদ্দেশ্য চোখ ছোট করে)

ভ্যা ভ্যা আমার আম(কান্নার জন্য কথা বলতে পারছেনা রুতবা)

আম কি হয়েছে?(আয়ান ব্রু কুচকেই)

আমার আম হিসুর মধ্যেই চলে গেছে এ্যা।(কান্নার আওয়াজ বাড়িয়ে রুতবা)

হিসুর মধ্যেই পড়ছে আবার এনে দিব কান্না করার কি এই ওয়েট তুমি কি কোন ভাবে আমার বিছানার মধ্যেই হিসু করছ নাকি!(চোখ বড় করে আয়ান হালকা চিৎকার করে)

আমি তো দেখলাম আমাদের বাথরুমে হিসু করছি কিন্ত উঠে দেখি তোমার বিছানার মধ্যেই হিসু করে দিছি।কিন্ত আমার আমটা আমার পিঠের নিচে পরে ছিল। আমি আম টা খাব কিভাবে?(কান্না করে রুতবা আমের দিকে তাকিয়েই)

রুতবাআহহহহহহহহহহ আম্মু আম্মু কোথায় তুমি?(চিৎকার করে আয়ান গেটের সামনে এসে )

কি হয়েছে এভাবে চিৎকার করছিস কেন বাবা?(আম্মু পাকের ঘর থেকে দৌড়ে এসে আয়ান এরহাত ধরেই)

তোমার গুনোধর বউ আমার বিছানার মধ্যেই হিসু করে দিছে।(চিৎকার করে আয়ান)

তো কি হয়েছে উঠোনে তশোক রোদ দিলেই ঠিক হয়ে যাবে।আর চাদর ধুয়ে দিলেই হবে।এত্ত চিৎকার করার কি আছে এতে।আজকে মেয়েটা চলে যাবে।আবার কবে আসে ঠিক নেই এমন চিৎকার করে ওকে ভয় পাইয়ে দিলে আর আসতে চাইবে কোনদিন বল বাবা?(আম্মু আয়ান এর হাত ধরেই বুঝিয়ে)

উফফ ভাল লাগেনা। আমি গেলাম মাছ মারতে তুমি থাক তোমাদের আদরের বউ কে নিয়ে।
বলেই উঠোন থেকে জাল হাতে নিয়ে চললাম পুকুরের দিকে।(মনে মনে আয়ান)

বাবা নাস্তা খেয়ে যা।ছেলেটা দিনকে দিনকে এমন জেদি হয়ে যাচ্ছে কি আর বলব। আছমা এদিকে আয়তো মা।রুতবা উঠো মা তোমাকে গোসল করায় দেই। (রুতবাকে উঠিয়ে বিছানার থেকে আম্মু)

হ্যা মা কিছু বলবে?(আছমা পাকের ঘরের থেকে রুমে এসে)

হ্যা মা তুমি চাদর টা তুলে ভিজিয়ে দাও।আর রুতবার গোসল হলে তুমি আর আমি তশোকটা উঠোনে দিয়ে দিব কেমন!(আছমার মাথায় হাত রেখে আম্মু)

আচ্ছা মা।
বলেই চাদর তুলে বল সাবান দিয়ে ঢলে ঢলে কিছুক্ষণ পানিতে ভিজিয়ে রাখলাম।মা পরে ধুয়ে মেলে দিবে।(আছমা)

আমি রুতবাকে নিয়ে কলপারে গেলাম। কল চেপে বালতি ভরে ওকে গোসল করিয়ে দিলাম। তারপর গামছা পেঁচিয়ে কোলে করে রুমে এনে আয়েশার একটা ফ্রোক আর হাফ প্যান্ট পরিয়ে দিলাম।তারপর চুল গুলো আচড়ে আমার রুমের খাটে বসিয়ে সকালের খাবার বাড়তে চলে গেলাম। এই বাড়ির বড় বউ হওয়ার সুবাধে আম্মার পর আমার এই সব দ্বায়িত্ব পালন করতে হয়।আর তিনজন রান্না বাদে সব কাজ করে আমি সব রান্না করে আবার ঘরে ঘরে ভাগ করে দেই।পনের বছর বয়সে বিয়ে হয়েছিল আমার। আয়ান এর বাবার তখন ত্রিশ পেড়িয়ে একত্রিশ এ পড়েছে।সংসার এর বড় ছেলে হিসাবে হাল ধরতে বিদেশ যাওয়া হয়েছিল তার।মাত্র আঠারো বছর বয়সেই।তারপর সব ভাইয়ের জন্য ঘর,নিজের জন্য ঘর,আব্বা আম্মার পুরান ঘর মেরামত আরো সংসার এর সবার ইচ্ছা পূরণ করতেই বারো বছর পার করে দেশে ফিরেছিল।আব্বা আমাকে পাশের গ্রামে দেখে ওনার জন্য পছন্দ করেন।তখন সবে ক্লাস সেভেন এ পরি।আগের কার যুগ তেমন মেয়েদের পড়ানো হতো না।বিয়ের পর একেবারেই পড়া ছেড়ে সংসার এ মন দিলাম। আমার মেজ ও সেজ জা আমার থেকে বয়সে চার পাঁচ বছরের বড়।কারণ আমার দুই দেবর ওনার আগেই বিয়ে করেছিল।তবে এর জন্য তাদের মধ্যেই কোন হিংসা ছিল না যতোদিন আয়ান না জন্মায় ।আয়ান এর জন্মের পর থেকেই তারা আমাকে দেখতে পছন্দ করেনা।তার উপর তাদের ছোট হয়েও বড় বউ হিসাবে আমাকে প্রাধান্য বেশি দেয় এটাও ওরা মানতে পারেনা।আর ছোট জা তার নিজ দুনিয়া স্বামী আর তিন মেয়েকে নিয়ে পরে থাকে।যাইহোক এসব কথা ভাবতে ভাবতেই সকালের খাবার ভাগ করা হয়েগেছে।যে যার ঘরের খাবার নিয়ে চলে যেতেই আমি আমেনাকে দিয়ে আব্বার আর আম্মার খাবার পাঠিয়ে নিজেদের খাবার নিয়ে ঘরে ফিরে আসলাম।বড়দের জন্য বউয়া আর চার পদের ভর্তা, ছোটদের জন্য ডিম ভাজা আর পেয়াজের আচার।ছেলেটার জন্য খাবার রেখে আমরা খেতে বসলাম।আয়েশা আর রুতবাকে খাইয়ে আমিও খেয়ে নিলাম।উনি বাজার থেকে এসে খাবেন।খাওয়ার পর আছমা থালাবাসন নিয়ে পুকুরে চলে গেল। আমি গেলাম পাকের ঘরে।দুপুরে রুতবাকে নিতে আসবে ভাইজান।মানুষ টা খুব সহজ সরল নাহলে বন্ধুর জন্য কেউ এত্ত ছোট মেয়ের বিয়ের জন্য রাজি হয়।ভাইজান এর সাথে ওনার পরিচয় বিদেশ এর হয়েছিল । সেই থেকেই এই পর্যন্ত তাদের অটুট বন্ধুত্ব আছে।(আম্মু মনে মনে)

অন্যদিকে

মাছ ধরতে এসেছি সেই সকালে।কখন যে দুপুর হয়েছে সেই দিকে খেয়াল এই নেই।বন্ধুদের সাথে মিলে অনেক মাছ ধরেছি।এগুলো দিয়ে রাতে পিকনিক খেলব।তাই মাছ গুলো হাশেম এর কাছে দিলাম ওর মা কেটে ধুয়ে রাখবে ভেবে।তারপর রাতে এনে ভেজে খাব সবাই মিলে।সবার থেকে বিদায় নিয়ে বাড়ির দিকে রওনা হলাম। পুরো শরীর কাদাতে মাখামাখি অবস্হা। কলপারে গিয়ে একেবারে গোসল সেরে তারপর ঘরে ঢুকব।হঠাৎই এমন দৃশ্য দেখে মাথা গরম হয়ে গেল!
রুতততততত(আয়ান দাঁতে দাঁত চেপে চিৎকার করে)

***********(চলবে)********

পর্ব :3

রুতততততত(চিৎকার করে আয়ান)

কি হয়েছে আয়ান ভাইয়া?(গাছের থেকে উকি মেরে রুতবা)

তুমি গাছে কি করছ?(দাঁতে দাঁত চেপে আয়ান)

আম পাড়তে উঠছি।তুমি খাবে এই নাও কেস ধরো।(বলেই একটা আম আয়ান এর দিকে ছুড়ে মারল)

তুমি এই মুহূর্তেই গাছ থেকে নামবে।নাহলে গাছে উঠে তোমাকে ধাক্কা মেরে এই পুকুরে ফেলে দিব।(আয়ান আমটা কেস ধরে রুতবার উদ্দেশ্য চিৎকার করে)

কেন আম পারব না?(ঠোঁট উল্টে রুতবা)

আমি নামতে বলছি।আর তুমি এখনি নামবে।(আয়ান চোখ রাঙিয়ে রুতবার উদ্দেশ্য)

আচ্ছা। (রুতবা ভয় পেয়ে)

রুতবা গাছের থেকে নেমে আসতেই ওর কানটা মলে দিলাম।
আর জীবনেও গাছে উঠবা?(আয়ান রুতবার উদ্দেশ্য চোখ বড় করে)

না।ভ্যা ভ্যা ছাড় আমার লাগছে।(রুতবা কান্না করে আয়ান এর উদ্দেশ্য)

কান্না থামাও আমি পরে আম পেরে দিব এখন রুমে যাও আর আছমার কাছে গিয়ে আমার জন্য একটা গামছা আর লুঙ্গি চেয়ে আন।(রুতবার মাথায় হাত রেখে আয়ান)

হুম (মুখ ভার করেই রুতবা)

আমি কল চেপে বালতি ভরতি করে গোসল করতে লাগলাম। কিছুক্ষণ আগে ওকে বকা দেওয়ার কারণ ও হাফ প্যান্ট আর ফ্রোক পরেই গাছে উঠেছিল। বাচ্চা মেয়ে বুঝতেও পারছিল না নিচে কেউ দাড়ালে ওর দিকে খারাপ দৃষ্টি নিক্ষেপ করতে পারত।আমি চাইনা আমার ছোট বাচ্চা বউ টার উপর কারো কু দৃষ্টি পরুক।রুত আর আসল না সামনে।আছমা এসে গামছা আর লুঙ্গি দিয়ে গেল।আমি ভেজা লুঙ্গি পাল্টে শুকনো লুঙ্গি পরে নিলাম। তারপর রুমে গেলাম সেখানে ও রুত নেই।পাকের ঘরে গিয়ে আম্মুর থেকে খাবার নিয়ে কোনরকম খেয়ে ঘরে এসে শার্ট প্যান্ট পরে প্রাইভেট এর উদ্দেশ্য রওনা হলাম। আমি 2001এর এস এসসি পরীক্ষার্থী।সাইন্স নিয়ে পড়ার শখ ছিল ছোট বেলার থেকেই। ইঞ্জিনিয়ারিং করব বলে।কিন্ত সাইন্স এর সাবজেক্ট গুলো যে এত্ত মাথা ব্যাথার কারণ হবে তা ভাবতেও পারিনি।প্রাইভেট থেকে এসে ব্যাগ রেখে আবার বেরিয়ে আসলাম বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিয়ে রাত আটটার দিকে মাছ ভেজে খেয়ে নয়টার দিকে ঘরে ফিরলাম। এসে মুখ ধুয়ে ঘরে ঢুকতেই আব্বুর সামনাসমনি হলাম। আমি পাশ কাটিয়ে যেতে চাইলেও আব্বু আমাকে ঢেকে তার পাশে বসতে বলল।আমি চুপটি করে তার পাশে বসে পড়লাম। (আয়ান মনে মনে)

পড়ালেখার খবর কি?(আব্বু আয়ান এর উদ্দেশ্য)

জ্বি ভাল।(আয়ান)

হঠাৎই বিয়ে করানোর জন্য রাগ করেছ নাকি!(আব্বু আয়নের হাত ধরেই)

না মনেতো আমার লাডডু ফুটছে।বিয়ে করিয়ে উদ্ধার করেছ।মুতুনি বউ গলাতে ঝুলিয়ে আবার জিজ্ঞেস করা হচ্ছে রাগ করেছি কিনা!মনে মনে এমন বললেও সামনে চুপ থাকলাম। কিছু বলার মতো পাচ্ছি না তাই চুপচাপ থাকা এই ভাল।(আয়ান)

চিন্তা করিস না রুতবাকে নিয়ে গেছে ওর আব্বু।আব্বা বিয়ে দেখতে চাইছিল বলেই বিয়ে টা করিয়েছি।তুইতো আবার তোর মামার মতো স্কলারশিপ পেয়ে চীনে পড়তে যেতে চাস।তার জন্য তো এখন থেকেই নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে।তারপর তোরা বড় হো পড়ালেখাতে মন দে ঠিক সময় ওর সাথে তোর আবার বিয়ে করিয়ে আনব কেমন!এখন যা ঘুমিয়ে পর কালকের থেকে তো স্কুল খোলা।(আব্বু আয়ান এর হাত ধরেই)

রুত চলে গেছে শুনে বেশ ভাল লাগছে।আহা কি শান্তি মুতুনি লাইফ থেকে বিদায় হয়েছে।এখন শান্তিতে থাকতে পারব।
এসব ভাবতে ভাবতেই খুশি মনে ঘুমিয়ে পড়লাম। গ্রীষ্মের ছুটি চলছে স্কুলে। কালকের থেকেই আবার বিজি সিডিউল চালু হবে।এস এসসি পরীক্ষাতে ভাল রেজাল্ট করতে পারলেই ঢাকার যে কোন কলেজ এ ভর্তি হওয়ার ইচ্ছা আছে।তারপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে পারলেই মামুর মতো চীনে গিয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং পরার সুযোগ ক্লিয়ার হবে।তাই এখন থেকে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে।
পরের দিন থেকে বিজি সিডিউল এর জীবন চলতে লাগল। সকালে স্কুল, স্কুল থেকে বাড়ি, বাড়ির থেকে প্রাইভেট, প্রাইভেট থেকে বাড়ি, বিকালে ক্রিকেট খেলা তারপর সন্ধার সময় বাড়ি ফিরে আবার পড়তে বসা,আর মাঝের কিছুটা সময় খাওয়া
,নাওয়া(গোসল)ও ঘুম।দেখতে দেখতে রোজার মাস শুরু হয়ে গেল।
ঈদের পাচঁদিন আগে স্কুল বন্ধ হল।আব্বুর সাথে ঢাকার থেকে ঈদের শপিং করে বাড়ি তে আসার পর জানতে পারলাম রুতবার জন্য ও আব্বু শপিং করেছে।বাচ্চাটার সাথে তিনমাস আগে দেখা হয়েছিল। ঐদিন কলপারে।এরপর আর দেখামিলেনি।কালকে আব্বু যাবে জামা দিতে।এখন লজ্জার কারণে মুখ ফুটে বলতেও পারছিনা আমিও যেতে চাই।যতোই ঠোঁট কাটা হোই নিজের বাপের কাছে বউ ঘটিত কিছু বলা লজ্জার এই।এখন মহাদয় যদি আমার উপর সদয় হয় তাহলে রুতকে দেখার একটু সুযোগ হতো আরকি।
পরের দিন সকাল থেকে অপেক্ষা করছি আব্বুর মুখে আমার যাওয়ার কথা সুনতে পাবো বলে।কিন্ত ফুটা কপাল আমার আব্বু একলাই চলে গেল সেখানে।আমার মনটাই ভেঙ্গে গেল।
ঈদের পর আবার স্কুল লাইফ শুরু হল।দেখতে দেখতে টেষ্ট পরীক্ষার সময় এসে পড়ল।রুতবার আব্বু পরীক্ষার আগে আমার জন্য একগাদা ফল,দুধ,ডিম কিনে দিয়ে গেছে।এইবার ও তিনি একা আসছে রুতকে আনেনি।খরুচ বাপের খরুচ বন্ধু। কি আর করা বউ এর চিন্তা মাথার থেকে ঝেড়ে পড়ার দিকে মনোযোগ দিলাম। টেষ্ট এর রেজাল্ট অনেক ভাল আসল।এই খুশিতে আরো বেশি পড়তে মনোযোগ দিলাম। এসএসসি পরীক্ষার আগে আব্বু বড় করে মিলাদ পড়ালেন। সেই সুবাদে আমার শশুর বাড়ির সবাই কে আমন্ত্রণ করা হল। আর ফাইনালি তারা আসলেন আমার বউ কে নিয়ে।ও আসছে থেকে ওর আম্মুর সামনে থেকে সরেনি।আর আমাকে দেখলে চোখ নামিয়ে নিচ্ছে। আমি আয়েশাকে দিয়ে ওকে পুকুর পারে আনলাম। ও আমাকে দেখে সরে যেতে চাইলে আমি ওর হাত ধরলাম।
আয়েশা ঘরে যাও আমরা পরে আসছি।(আয়ান আয়েশার উদ্দেশ্য)

আচ্ছা ভাইয়া। (বলে দৌড়ে বাড়ির দিকে চলে গেল আয়েশা)

কি হয়েছে রাগ করেছ কেন রুত?(রুতবার হাত ধরেই আয়ান)

নিশ্চুপ। (মাথা নীচু করে রুতবা)

রুত কথা বল।পুরো এক বছর পর তোমার দেখা পেলাম অথচ তুমি এত্ত নিশ্চুপ কেন রুত?(রুতবার গালে হাত দিয়ে আয়ান)

ভ্যা ভ্যা তুমি বকা দাও পচা আয়ান ভাইয়া তুমি।(কান্না করে রুতবা)

এক বছর আগের বকার কারণে এখন কথা না বলার কি আছে রুত?আর তুমি বাচ্চা মেয়ে এত্ত রাগ তোমার জন্য ক্ষতিকর। (আয়ান রুতবার উদ্দেশ্য)

তুমি পচা কারণ তুমি বলেছিলে আমাকে আম খাওয়াবে কিন্তু তুমি খাওয়াও নি এখন ও আম।(রুতবা হেচকি তুলে)

#MEANINGLESS_LIFE_PARTNER সাধে তো বলিনাই। এক বছর আগে বলেছিলাম আম পেরে খাওয়াব কিন্ত না খাওয়ানোর জন্য এখন ও রাগ করে আছে ভাবা যায়।(মনে মনে)
আচ্ছা কথা যখন দিয়েছি আম আমি খাওয়াব তাও রাগ করোনা।এখন বল তো তুমি কোন ক্লাসে পর?(আয়ান রুতবার হাত ছেড়ে সোজা হয়ে)

ফোর এ।(রুতবা খুশি মনে)

পড়ালেখা কেমন চলছে?(আয়ান মুচকি হেসে)

ভাল। আচ্ছা কখন খাওয়াবে আম?(রুতবা উৎকন্ঠা হয়ে)

এখন ও গাছে আমের নাম নেই।মাত্র মুকুল(আমের ফুল)এসেছে।এখন আম পাই কোথায়?কিন্তু যে করেই হোক আমার এই আম পাগলনিকে আম খাওয়াতেই হবে।নাহলে আবার রাগ করবে।(মনে মনে)
কালকে স্কুল থেকে আসার সময় নিয়ে আসব কেমন!(আয়ান রুতবার মাথায় হাত রেখে)

আচ্ছা। তাহলে আমি ঘরে যাই নাহলে আম্মু রাগ করবে।(বলেই দিলাম দৌড়ে রুতবা)

আস্তে যাও নাহলে পরে যাবে।আমপাগলি কোথাকার!(আয়ান মুচকি হেসে)

পরের দিন সকালে মজুমদার বাড়ির থেকে অনেক রিক্স নিয়ে আম চুরি করে বাড়ি ফিরলাম।কিন্ত আমার শশুর মশাই নিজের সাথে আমার আম পাগলিকেও নিয়ে চলে গেছে বাড়ি। এইবার ও পারব না আম পাগলির মান ভাঙ্গতে!(হতাশ কন্ঠে আয়ান)

****************(চলবে)*************