EX গার্লফ্রেন্ড যখন পুলিশ অফিসার পর্ব-১৫

0
2210

# EX গার্লফ্রেন্ড যখন পুলিশ অফিসার ?
# লেখকঃ Sahid Hasan Sahi
# পর্বঃ ১৫শ

আমি সামিয়ার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললামঃ এই পাগলি এই বুকটা শুধু তোমার জন্য। অন্য কারো জন্য নয়। চলো অনেক রাত হয়েছে শুয়ে পড়ি।

সামিয়াঃ হুমম চলো।

দুজনে ঘুমিয়ে পড়লাম। সকালে ঘুম থেকে উঠে নামাজ পড়ে রুম থেকে বাইরে আসলাম। সকালে নাস্তা করেই আব্বু আর আম্মু সাফিয়া কে নিয়ে বাসায় চলে যাবে। নাস্তা শেষ করে আব্বু আম্মু আর সাফিয়া কে গাড়িতে উঠিয়ে দিতে গেলাম। গাড়িতে উঠার সময় আম্মু আমাকে বললোঃ বাবা সামিয়া কে যেন কখনো কষ্ট দিস না, ওর খেয়াল। আর নিজের খেয়াল রাখিস।

আমিঃ ঠিক আছে আম্মু। তুমি ভালোভাবে থাকবে আর ঠিকমতো মেডিসিন নিবে।

আম্মুঃ আচ্ছা বাবা।

আম্মুদের কে বিদায় দিয়ে বাসায় এসে রেডি হয়ে কলেজের জন্য বের হলাম। সামিয়াকে থানায় নামিয়ে দিয়ে কলেজে আসলাম। যদিও সামিয়ার গাড়ি আছে কিন্তু সে আমার বাইকেই আসবে।

যাইহোক, কলেজে ঢুকে বাইক পার্ক করে বন্ধুদের কাছে গেলাম। রাফি নীলিমা, সিফাত আর মিমি বসে ছিলো। আমি ওদের কাছে যেতেই মিমি বললোঃ কি খবর হিরো আপনার হিরোইন কেমন আছে?

আমিঃ আলহামদুলিল্লাহ ভালোই আছে। তোরা কেমন আছিস?

সবাইঃ আলহামদুলিল্লাহ।

বন্ধুদের সাথে কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়ে ক্লাসে গেলাম। ক্লাস শেষ করে বাসায় আসলাম। বাসায় এসে দেখি সামিয়া চলে এসেছে। গোসল করে নামাজ পড়ে আমি, সামিয়া আর মামি একসাথে লাঞ্চ করলাম। মামা তার অফিসে আছে আর তিশা কলেজে।

লাঞ্চ করে রুমে এসে কিছুক্ষণ রেস্ট নিয়ে সামিয়া কে নিয়ে থানায় গেলাম। সামিয়া কে রেখে বাসায় চলে আসলাম। বিকেল পাঁচটায় সামিয়া আসলো। তিশা বললো, আজকে নাকি ঘুরতে যাবে। সামিয়া আর তিশাকে ঘুরতে নিয়ে গেলাম। ঘোরাঘুরি করে বাসায় চলে আসলাম।

রাতে ডিনার করে ঘুমিয়ে পড়লাম। সকালে উঠে নাস্তা করে নৃত্য দিনের ন্যায় কলেজে গেলাম।

আর এইভাবে কেটে গেল একবছর। আমি এবার অনার্স শেষ করেছি। এখন বাবার ব্যবসা দেখাশোনা করি। আর হ্যাঁ আমার আব্বুর একটা কোম্পানিও আছে। যেটার একটা শাখা রাজশাহীতে আর আরেকটা শাখা ঢাকাতে আছে। কোম্পানি ছাড়াও রাজশাহীতে একটা বাসা আছে। কোম্পানি গুলোতে এমডি নিযুক্ত করা আছে। আমার আব্বু আমার দাদুর সূত্রে এইগুলো পেয়েছিলো।
কিন্তু আব্বু ব্যাবসার দিকে না গিয়ে শিক্ষকতা পেশা বেছে নিয়েছিলো। এখন আমি আর সামিয়া রাজশাহীতে আমাদের বাসায় থাকি। যদিও মামা মামী তাদের কাছ থেকে আসতে দিতে চায়নি। কিন্তু কতদিন থাকবো তাদের কাছে? এখন শুধু আমি একাই নয় আমার সঙ্গে ওয়াইফ আছে। আর সামিয়া এখনো জব করে।

দিনগুলো বেশ ভালোই কাটতেছে। অফিস শেষ করে বাসায় আসলাম। বাসায় এসে দেখি সামিয়া এখনো আসেনি। সামিয়া কে এখন অফিসে বেশি সময় দিতে হয়। সকালে আমার আগেই ঘুম থেকে উঠে নাস্তা করে রেডি করে আমার জন্য রেখে চলে। আমি ফ্রেশ হয়ে সেগুলো খেয়ে অফিসে চলে যাই। আবার আমি বিকেল পাঁচটায় অফিস থেকে আসি আর সামিয়া আমার কিছুক্ষণ পর পরই চলে আসে।

কি করে তা কোনো দিন জিজ্ঞাসা করিনি। আর করার প্রয়োজনও মনে করিনা। তার প্রতি আমার যথেষ্ট বিশ্বাস আছে। ছুটির দিনে মাঝে মাঝে কোথাও ঘুরতে যাওয়া হয়।

আমি অফিস শেষ করে বাসায় আসলাম। একটু পরেই সামিয়া আসলো। আমি সামিয়া কে জিজ্ঞাসা করলামঃ তোমার আসতে এতো দেরি হয় কেন?

সামিয়া কিছু না বলে চুপ করে আছে। সামিয়া কে চুপ করে থাকতে আমি একটু অবাক হলাম। আমি ওর কাছে যায়ে বললামঃ কি হয়েছে?

সামিয়াঃ একটা কেস নিয়ে বেশিক্ষণ ধরে চিন্তা করায় মাথা টা প্রচন্ড ব্যথা করতেছে।

আমিঃ ওও তুমি আমার কোলে শুয়ে পড়ো আমি মলম লাগিয়ে দিচ্ছি।

সামিয়া আমার কোলে শুয়ে পড়লো আর আমি সামিয়ার মাথায় মলম লাগিয়ে টিপে দিতে লাগলাম। রাতে ডিনার করে শুয়ে পড়লাম। সামিয়া এগনো আমার বুকের উপর মাথা রেখে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়ে।

পরেরদিন অফিস ছুটির টাইমে মানে পাঁচটার সময় অফিসে বসে থেকে সামিয়া কে ফোন দিলাম। বাট ধরতেছে না। মনে হচ্ছে বিজি আছে।

একটু পরে আমার ই-মেইলে কয়েক টা ফটো আসলো। যা দেখে আমার দুনিয়া কেঁপে উঠলো। ফটো গুলো ছিলো সিহাব আর সামিয়ার। তারা দুজন একটা রেস্টুরেন্টে সামনাসামনি বসে থেকে হাতে হাত রেখে, হেসে হেসে কথা বলতেছে আর কফি খাচ্ছে।

একটু পরেই একটা অপরিচিত নাম্বারে ফোন আসলো। আমি রিসিভ করতেই অপর পাশ থেকে অপরিচিত কন্ঠে বললোঃ কী ব্যাপার মিস্টার সাহিদ হাসান সাহি আপনি এখানে বসে আছেন আর আপনার স্ত্রী অন্য ছেলের সঙ্গে টাইম পাস করতেছে।

আমিঃ হ্যালো কে আপনি?( উত্তেজিত হয়ে)

অপরিচিত লোকঃ আমি কে তা আপনার না জানলেও চলবে। আর আমার বলা কথা গুলো বিশ্বাস না হলে এই( একটা রেস্টুরেন্টে) ঠিকানা অনুযায়ী চলে আসুন।

আমিঃ হ্যালো হ্যালো,,,।

তার কথা শেষ হতেই ফোনটা কেটে দিলো। আমিতো চিন্তাই পড়ে গেলাম। সামিয়া সিহাবের সঙ্গে হেঁসে হেঁসে কথা বলতেছে। পরোক্ষণেই সিহাবের বলা সেদিনের কথা গুলো মনে পড়লো ” আমি তোদের সুখের সংসারে অশান্তি সৃষ্টি করে দিবো।”

আমি আর কিছু না ভেবে ম্যানেজার কে অফিস সামলাতে বলে গাড়ি নিয়ে বের হলাম লোকটির বলা ঠিকানাই।

_-_-_-_-

সামিয়া বাসায় যাওয়ার জন্য ফাইল গুলো রেডি করতে যাবে এমন সময় সাহিদের কল। রিসিভ করতে যাবে ঠিক তখনি কে যেন তার রুমে ঢুকলো। ভালো করে দেখে সেদিনের সেই ছেলেটা যাকে সে কলেজ ক্যাম্পাসে জুতা দিয়ে পিটিয়েছিলো।মানে সিহাব।

সামিয়া সিহাব দেখে রেগে যায়ে বললোঃ তুই এখানে? বেড়িয়ে যা বলতেছি।

সিহাব সামিয়ার দিকে হাত জোড় করে বললোঃ প্লিজ ম্যাম আপনি আমাকে ক্ষমা করে দিন। আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি। আপনি যদি আমাকে ক্ষমা না করেন তাহলে সেই পাপের সাজা সারা জীবন পেতে হবে।

সামিয়া সিহাবের এমন আচরণ দেখে কিছুটা বিব্রত হয়ে পড়ে। সামিয়া এতো কিছু না ভেবে সিহাব কে বললোঃ দেখুন আপনি আপনার ভুল বুঝতে পেরেছেন এটাই অনেক।আর মাফ এটা আপনাকে অনেক আগেই করেছি।

সিহাব সামিয়ার কথা শুনে একটু অবাক হয়ে বললোঃ সত্যি আপনি আমাকে মাফ করেছেন? তাহলে আমার ছোট্ট অনুরোধ রাখবেন।

সামিয়াঃ কি অনুরোধ বলুন?

সিহাবঃ আপনি আমার সঙ্গে এককাপ কফি খাবেন। মানে এটা আমার পক্ষ থেকে।

সামিয়া সিহাবের কথাই আশ্চর্য হয়ে বললোঃ আমি কেন আপনার সঙ্গে কফি খেতে যাবো?

সিহাবঃ আপনি না গেলে বুঝবো আপনি আমাকে ক্ষমা করতে পারেন নি। প্লিজ চলুন ম্যাম।

সামিয়া কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললোঃ ঠিক আছে চলুন।

সামিয়ার কথা শুনে সিহাবের ঠোঁটের কোণে এক চিলতে হাসি ফুটলো। যেটা সামিয়ার চক্ষুর আড়ালেই থেকে গেল। এরপরে সিহাব আর সামিয়া থানার পাশেই একটা রেস্টুরেন্টে ঢুকলো। দুজনে একটা ফাঁকা টেবিলে বসলো। বসার পরে সিহাব কফির অর্ডার করলো। কফির কাপে চুমুক দিতে দিতে সিহাব সামিয়া কে বললোঃ ম্যাম আমরা কি ফ্রেন্ড হতে পারি?( বিনয়ী সুরে)

সামিয়া সিহাবের প্রতিটা কথাই অবাক হয়ে যাচ্ছে। তবে এই কথাই সে অবাকের উপর অবাক হয়ে গেল। সিহাব আসলে কি চাচ্ছে সে সামিয়া তার ছোট্ট মস্তিষ্কে ঢুকাতে পারতেছে না।

সিহাব সামিয়া কে চুপ করে থাকতে দেখে বললোঃ কি হলো ম্যাম চুপ হয়ে গেলেন কেন? আসলে ম্যাম আমি বাবা মায়ের কোনো শাসন না পাওয়ায় আস্তে আস্তে খারাপ পথে অগ্রসর হতে থাকি। কিন্তু সেদিন আপনার সাথে খারাপ বিহেভ করার পর আমি ভাবতে থাকি , আমি আসলেই অনেক খারাপ। খারাপ পথে চলে গিয়েছি। আর এই খারাপ হওয়ার পিছনে কারণ হলো খারাপ, অসৎ বন্ধ। তার পর আমি আব্বুকে বলে লন্ডনে চলে যায়। সেখান থেকে দুই দিন আগে দেশে এসেছি। এখন যদি আবার খারাপ বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে যায় তাহলে আমার লাইফ শেষ। এই জন্য আমি ভালো কিছু ফ্রেন্ড গঠন করতে চাচ্ছি। এখন আপনি যদি হতেন।

সিহাবের কথা শুনে সামিয়া ভাবতেছে সে তো খারাপ কথা বলে নি। আর তাছাড়া ভালোভাবে বাঁচতে হলে ভালো বন্ধু প্রয়োজন। সামিয়া সিহাব কে বললোঃ হ্যাঁ আমরা বন্ধু হতে পারি।

সামিয়ার কথা শেষ হতেই সিহাব একটা মুচকি হাসি দিয়ে সামিয়ার দিকে হাত বাড়িয়ে দেয় হ্যান্ডশেক করার জন্য।

সামিয়া কিছু টা অস্বস্তি বোধ করতে লাগলো। কিন্তু সে সিহাবের মানে সম্মানের কথা ভেবে হাত মেলালো । এর পরে সামিয়া আর সিহাব রেস্টুরেন্টে বসে থেকে কথা বলতে লাগলো।

_-_-_-_-

আমি দ্রুত ড্রাইভ করে রেস্টুরেন্টের সামনে গাড়ি পার্ক করে রেস্টুরেন্টে ঢুকে দেখি সামিয়া আর সিহাব কোণায় একটা টেবিলে বসে থেকে গল্প করতেছে। আমি আর তাদের সামনে না যেয়ে গাড়ি নিয়ে বাসায় চলে আসলাম।

বাসায় এসে সাওয়ার ছেড়ে দিয়ে ভিজতে লাগলাম। বারবার সামিয়ার সঙ্গে সিহাবের বসে থাকা দৃশ্যটা চোখের সামনে ভেসে উঠতেছে।

অনেক্ষণ যাবৎ ভেজার পরে কাপড় কোনোমতে চেঞ্জ করে বেডের ওপর শুয়ে পড়লাম। একটু পরে সামিয়া আসলো। বুঝতে পারলাম সে ওয়াশরুমে ঢুকলো।

ওয়াশরুম রুম থেকে বের হয়ে আমার কাছে আসলো। বাট আমি দুই চোখের উপর একটা হাত তুলে দিয়ে শুয়ে আছি। আমাকে এভাবে দেখে সামিয়া কিছুটা অবাক হলো কেননা, সামিয়া আসার পরে দুই জনে একসঙ্গে গল্প করতাম। সামিয়া কে তুলে খাইয়ে দিতাম আজকে কিন্তু তার ব্যতিক্রম। সামিয়া আমার কাছে এসে পাশে বসলো।

এরপরে আমাকে বললোঃ সাহিদ তোমার কি হয়েছে? অসুস্থ নাকি?( উত্তেজিত হয়ে)

আমি কিছু বললাম না। কথা বলার মুড আর এখন আমার নেই। সামিয়া এবার আমার কপালে হাত দিয়ে বললোঃ কি জ্বর নাই তো। শরীর খারাপ করতেছে কি তোমার?

আমি চোখের উপর থেকে হাতটা সরিয়ে বললামঃ কিছু হয়নি। চলো নাস্তা করবে।

সামিয়াঃ ঠিক আছে চলো।

এরপরে সামিয়ার সাথে নাস্তা করে আবার রুমে আসলাম। রুমে এসে চুপচাপ বসে আছি। সামিয়াও আসলো। সামিয়া আমার এই অবস্থা মেনে নিতে পারলো না। সামিয়া আমার সামনে এসে আমার হাত ধরে বললোঃ সাহিদ আমি কি তোমাকে কোনো কষ্ট দিয়েছি? তুমি আমার সাথে এমন বিহেভ করতেছো কেন?

আমি আর নিজেকে শান্ত রাখতে পারলাম না। পকেট থেকে মোবাইল টা বের করে ফটো গুলো সামিয়া কে দেখিয়ে বললামঃ এই ফটো গুলো কি সত্যি?

আমার কথা শুনে সামিয়া কিছুক্ষণ আমার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকলো। আমি বললামঃ কি হলো বলো?

সামিয়া মাথা নিচু করে বললোঃ হ্যাঁ সত্যি। কিন্তু বিশ্বাস করো সে আমার কাছে এসে সেদিনের জন্য মাফ চেয়েছিল। আমিও তাকে মাফ করে দেই। এরপরে সে আমাকে কফি খাওয়ার জন্য জোর করে। আমিও রাজি হয়ে গেলাম। বিশ্বাস এছাড়া কিছু নয়।

কথা গুলো বলেই সামিয়া আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে লাগলো। আমি মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলাম। সামিয়া কিছুক্ষণ পর আমাকে বললোঃ প্লিজ তুমি আমাকে মাফ করে দাও।

আমি চোখের পানি মুছে দিয়ে বললামঃ মাফ চাওয়ার কি আছে। তুমি সিহাবের সাথে বেশি কথা বলবে না। ঠিক আছে?

সামিয়াঃ হুঁ,,।

আমিঃ চলো ছাদে যাই।

এরপরে সামিয়া কে নিয়ে ছাদে আসলাম। সামিয়া কে আর তেমন কিছু বললাম না। তবুও সিহাবের বলা কথা গুলো বারবার মনে হচ্ছে ” যার জন্য তুই আজ আমাকে মারলি তাকে তোর জীবন থেকে কেড়ে নিবো।” কথা গুলো ভাবতেই বুকের ভিতর কেমন জানি ব্যথা অনুভব করলাম। হয়তোবা সামিয়াকে হারানোর ভয় টা মনকে গ্রাস করতেছে।

( চলবে)

? কেমন হচ্ছে তা কমেন্ট করে জানাবেন ?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে