Ex গার্লফ্রেন্ড যখন অফিসের বস পর্ব-১৩ (শেষ পর্ব)

0
4720

Ex গার্লফ্রেন্ড যখন অফিসের বস ❤
লেখকঃ শ্রাবন
পর্বঃ ১৩(অন্তিম পর্ব)

.
পার্কে বসে আমরা সকলে মিলে বাদাম খাচ্ছিলাম। ঠিক তখনই আমার কলেজ ফ্রেন্ড নেহা আসে।
আমায় দেখেই জরিয়ে ধরে। (একটু গায়েপড়া মেয়ে)
নেহা- অই কেমন আছিস তুই??
আমি- ভালো। তুই কেমন আছিস??? (ছারিয়ে)
নেহা- এর আগে ভালো ছিলাম না। এখন ভালো আছি।
আমি- হুম।
নেহা- শুনলাম তোর নাকি চাকরি হয়েছে??
আমি- হুম।। এইভাবে কিছু কথা বলতেছিলাম। এদিকে দেখি শিমলা জলতেছে।
আমি আরও দেখিয়ে দেখিয়ে কথা বলতে লাগলাম।।।।
এরপর নেহা আমার নাম্বার নিল। আসলে অনেক দিন পরে দেখা হলো তাই।
শিমলা তো পুরা হট হয়ে আছে।
জান্নাত আপু ওর মনে ও চকলেট খাচ্ছে।
এরপর নেহা চলে গেল।
এইভাবে কিছু সময় পরে আমরা তিনজন বাসায় ফিরে আসলাম।
বাসায় এসে জান্নাত ওর রুমে চলে গেল।
শিমলা আমার আগে আমার রুমে চলে গেল।
আমি পরে রুমে গেলাম।
আমি যাওয়ার পরে—-
শিমলা- এই তোমার সাথে ওই মেয়েটি কে???
আমি- আপনাকে কেন বলব??
শিমলা- আমি বলতে বলেছি তাই।
আমি- কেন তুমি কে??
শিমলা- কারন আমি তোমার স্ত্রী।
আমি- হাহাহাহা। আমি তোমাকে স্ত্রী হিসেবে মানি না।
শিমলা- আমি তো মানি। আর তোমাকেও মানতে হবে।
আমি- মানি না। বলেই চলে আসতে লাগলাম।
শিমলা- আমার হাত ধরে। তুমি আগে বল আমায় মেনে নিয়েছ।
আমি- হাত ছার।
শিমলা- না। ছারব না।
আমি- ঠাসসসসসস
শিমলা- ভ্যায়য়য়য়???
আমি- আমাকে কখনো টাচ করলে এমনি হবে।
এই বলে আমি ফ্রেশ হতে গেলাম।
ফ্রেশ হয়ে এসে দেখি ম্যাম এখনো কাদে।
আমি আর কিছু না বলে বাইরের রুমে এসে টিভি দেখতে বসলাম।
জান্নাত আপু বই পরে। আর শিমলা কান্না করে।

যখন রাত ৯ টা বাজে আমি রুমে গেলাম।
গিয়ে দেখি সে এখনো কাদে।
চোখ দুটো ফুলে গেছে।
এইবার আমার খারাপ লাগতেছিল।
ইচ্ছে করতেছে চোখের পানি মুছে দেই। কিন্তু না৷ আমি যে কষ্ট করেছি সেইগুলা ওকে পেতে হবে। আর তখনই বুজবে কথা কষ্ট কি।
আমি- কি হল আপনি কাদেন কে??
শিমলা- কেদে যাচ্ছে আরো জোরে।
আমি- চুপ একদম চুপ থাকেন।
শিমলা- আরও জোরে কাদে।(কি আর করুম গায়ে তো আর হাত দেওয়া যায় না। নিজের স্ত্রী বলে কথা??)
আমি- যদি৷ আপনি চুপ না করেন তাহলে আমি আপনাকে আপনার বাসায় দিয়ে আসব।
শিমলা- এইবার চুপ।
আমি- আর গিয়ে খেয়ে নিন। আপুকে নিয়ে। (কাজের লোক ঠিক করেছি)
শিমলা- মাথা নারিয়ে চলে গেল।
আমি- আজ আর খুদা নেই তাই ঘুমিয়ে পরলাম।

এইভাবে এক সপ্তাহ কেটে গেল।
আর এই প্রতিদিনই শিমলাকে অবহেলা করেছি।

আজ সকালে অফিস আছে। শিমলা আমায় ডেকে দিয়েছে।
আমি- আমার চা কই??
শিমলা- ২ মিনিট দিতেছি।
আমি- তারাতাড়ি দিন।
এরপর ফ্রেশ হয়ে নিলাম।
আমি জানি শিমলা অনেক কষ্ট পাচ্ছে। কিন্তু কিছু করার নেই। এটা ওর প্রাপ্য।
এরপর দুজনে নাস্তা করে বেরিয়ে গেলাম অফিসের উদ্দেশ্যে।
শিমলা- তুমি প্লিজ আমার গাড়িতে আস।
আমি- আমি কারো গাড়িতে যাই না।
শিমলা- প্লিজ তুমি আস।না হলে অফিসের সকলে কি ভাববে।
আমি- আমি কিছু জানি না। এই বলে চলে এলাম।

অফিসে আমি শিমলার পরে এসে পৌছালাম।
আমি যেই মাত্র দরজা দিয়ে অফিসে ঢুকলাম তখন সবাই আমার দিকে কেমন করে যেন তাকাচ্ছে।
অবশ্য আমি কারণটা বুজতে পারতেছি।
আমি কোন কথা না বলে ম্যাম মানে আমার কেবিনের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম।
আমি- ম্যাম আসব???? (অফিসে অন্তত অফিসের এর মতো ব্যবহার করা উচিত তাই ভালো ভাবে কথা বললাম।)
ম্যাডাম- হুম আসো। আর তুমি অনুমতি নিচ্ছ কেন??
আমি- আমি অফিসের একজন কর্মচারী। তাই অনুমতি নিলাম।
ম্যাডাম- এরপর থেকে পারমিশন নেওয়ার দরকার নেই।
আমি- হুম চেষ্টা করব।

এরপর আমি আমার কাজ করতে লাগলাম।
সে আমার দিকে তাকিয়ে আছে একভাবে।আমি বিরক্ত হচ্ছি তবে কিছু বললাম না।

লাঞ্চ টাইমে আমি বাইরে যাব তখন
ম্যাডাম- তুমি আমার সাথে খাও।
আমি- তার কোন দরকার নেই।আমি বাইরে খেয়ে নিতে পারব।
ম্যাডাম- প্লিজ তুমি আমার সাথে এমন ভাবে কথা বলো না আমার খুব কষ্ট হয়।
আমি- এতে আমার কিছু করার নেই।
এই বলে আমি চলে এলাম।
বাইরে এসে রহিম আর বাকি সকলের সাথে দেখা।।।।।
রহিম- স্যার কেমন আছেন??
আমি- তুমি আমায় স্যার বলতেছ কেন?
রুবেল- ইস ভাই যেন কিছু বুজে না। ম্যামকে বিয়ে করে এখন ন্যাকা।
আমি- আসলে….
রহিম- হুম আর বলতে হবে না ভাই। আমি আগেই সন্দেহ করেছিলাম। আপনি আর ম্যাম প্রেম করেন।
আমি- ভাই বিশ্বাস…..
রুহি- হয়েছে ভাইয়া আর বলতে হবে না। আমরা সব বুজেছি।
আমি- তাহলে তো ভালো। সকলে খেতে চলো।
রুবেল- না আমরা এখানে খাব না।
আমি- তাহলে??
রহিম- বাইরের **** রেস্টুরেন্টে খাব।
আমি- ভালো। তাহলে চলো।
রহিম- যাব তবে…বিল কিন্তু আপনাকে দিতে হবে।
আমি- কিন্তু কেন??
রহিম- বিয়ের ট্রিট হিসেবে।
আমি- কিন্তু……
সবাই- আমরা কিছু জানি না। ট্রিট চাই।
কি আর করার সকলের কাছে আমি পরাজিত। তাই পকেট খালি হয়ে গেল।

অফিসে ফিরে আবার কাজ করতে লাগলাম।

অফিস শেষ করে বাইরে এলাম। এসে দেখি ম্যামের গড়ি দাঁড়িয়ে আছে।
ম্যাডাম- শ্রাবন আসো।
আমি- না আপনি যেতে পারেন।
ম্যাডাম- প্লিজ।
আমি- কিছু না বলে হাটা দিলাম।।

এখন বাসায় যাব না। বিকাল ৫ টা বাজে।
কিছুদিন আগে বেতনের টাকা পেয়েছি।
তাই আজ বাইক কিনতে যাব।
কারন অফিসে আসতে রোজ এইভাবে রিকশায় আসা যায় না।
এক বন্ধুকে ফোন করে আসতে বললাম।
ওকে নিয়ে একটা শো রুম থেকে একটা বাইক কিনলাম। অনেক টাকা খরচ হয়েছে।
এরপর দুজনে কিছু খেয়ে বাসায় চলে এলাম।

আমি বাইকটা বাইরে রেখে জান্নাত কে ফোন দিলাম। ওকে বাইরে আসতে বললাম।
কারন আমার আপু বাইক পছন্দ করে। তাই তাকে সারপ্রাইজ দিব।
জান্নাত- দরজা খুলে বাইকটা দেখেই বলল ভাইয়া এটা কার??
আমি- আমার না।
জান্নাত- মুখটা পেচার মতো হয়ে গেছে।
আমি- আমার না তবে আমার ছোট একটা পরির বাইক। তার নাম জান্নাত।
জান্নাত- কিছু না বলে কিছু কিল ঘুসি দিয়ে জরিয়ে ধরল।
আমি- হাহাহাহাহা
জান্নাত- ভাইয়া আমি খুব খুশী যে তুই একটা বাইক কিনেছিস।
আমি- হুম।

এরপরে দুজনে মিলে বাইকে উঠলাম। মানে আপুটাকে একটু ঘুরিয়ে নিয়ে আসি। পিছনে ফিরে দেখি শিমলা ছলছল চোখে দাঁড়িয়ে আছে।
জান্নাত- ভাবি তুমিও আসো।
শিমলা- মুখে হাসি দিয়েই উঠে পরল।
আমি- কি মেয়ের বাবা।
এরপর সকলে মিলে ঘুরে এলাম।

রাতে সকলে মিলে বাইরে খেয়ে এলাম।
ঘরে এসে—–
আমি- আপু তুই বই বের কর আমি পড়াতে আসতেছি।
জান্নাত- হুম ওকে।
আমি আর শিমলা রুমে চলে এলাম। শিমলাকে খুশি খুশি মনে হচ্ছে তাই আমি বললাম
আমি- আপনি আজ থেকে জান্নাতকে পরাবেন।
শিমলা- আমি??
আমি- হুম। কেন কোন প্রব্লেম আছে??
শিমলা- না।
আমি- তাহলে যান।।।

এইভাবে শিমলাকে টরচার করে আর মনে মনে ভালোবেসে চলছিল আমাদের জীবন।৩ মাস পর………..(3 months later)

শিমলাকে এই তিন মাস ধরে টরচার করে আসতেছি।
আজ রাতে অফিস শেষে বাসায় চলে এলাম। আমি আগে এসেছি। কারন বাইক চালিয়ে আগে চলে এসেছি। আর ম্যাম পরে আসবে।

এই কয়দিনে শিমলার চেহারা একদম দেখার মতো হয়েছে।
আর রাতে মাটিতে শুতে তো খুব কষ্ট হয় মনে হয়।
তাই আজ রাতে শিমলাকে মেনে নিব ভাবতেছি। কারন এই কয়েকদিনে ম্যাম অনেক কষ্ট পেয়েছে।

বিকালে আমি বাইরে চলে এলাম। শিমলা আমায় কিছু জিজ্ঞেস করে না। কারন কিছু বললেই আমি বকা দেই।
তাই কিছু জিজ্ঞেস করতে ভয় পায়।

রাতে বাসায় চলে এলাম। এসে দেখি শিমলা আমার আপুকে বই পড়াচ্ছে।
আমি- রাত অনেক হয়েছে এখন ভাত খেতে চল সবাই।
জান্নাত- হুম ভাবি চল।
শিমলা- হুম।

সকলে ভাত খেয়ে নিলাম।
আমি- শিমলাকে উদ্দেশ্য করে বললাম আজ তোমার পরিষ্কার করার দরকার নেই। বুয়াকে বলে একজন লোক ঠিক করেছি। আজ থেকে সে পরিষ্কার করে দিবে।
শিমলা- হুম(অবাক হয়ে)

এরপর দেখি শিমলা আবার জান্নাত কে পড়াতে বসবে। ঠিক তখন আমি
আমি- আপু আজ থেকে তুমি একা একা পরবে।
জান্নাত- ভাইয়া আমার ভাবির কাছে পরতে ভালো লাগে।
আমি- আমি যেটা বলছি সেটা শুনো। ভাবির কষ্ট হয় তো নাকি??
জান্নাত- হুম।
আমি- তুমি রুমে আস।।।(শিমলাকে বললাম)
শিমলা- হুম। (ভয় পেয়ে)

আমি রুমে এসে খাটে বসে আছি।
শিমলা এসে ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করল।
শিমলা- তুমি কিছু বলবে??
আমি- না। শুয়ে পর এখন……
শিমলা- হুম। অবাক হয়েছে আমি আজ ওকে তুমি ডাকতেছি তাই।

যেই মাত্র নিচে বিছানা তৈরি করবে
আমি- আজ থেকে নিচে ঘুমানোর দরকার নেই।
শিমলা- প্লিজ আমায় ঘর থেকে বাইরে বের করো না। আমি নিচে এক কোনে শুয়ে থাকব।
আমি- আমি তা বলেছি।
শিমলা- তাহলে আমি ঘুমাবো কই??
আমি- খাটে।
শিমলা- কিহ??? (অবাক)
আমি- হুম।
শিমলা- তাহলে তুমি ঘুমাবে কই??
আমি- খাটেই ঘুমাবো।
শিমলা- হুম বলেই এক লাফে খাটে উঠে পরল।
আমি- বালিশ এর দরকার নেই।
শিমলা- তাহলে মাথা দিব কই??
আমি- তুমি শুয়ে পর। আমি দেখতেছি।
শিমলা- হুম বলে শুয়ে পরল।
আমি- শিমলাকে আমার বুকে টেনে নিলাম।
শিমলা- খুব অবাক। সাথে লজ্জা পাচ্ছে।
আমি- জরিয়ে ধরে শুয়ে আছি। শিমলার মাথা আমার বুকে।
শিমলা- লজ্জায় মুখ গুজে আছে আমার বুকে।
আমি- ম্যাম আপনি লজ্জা পাচ্ছেন কেন??
শিমলা- মোটেও না।
আমি- তাই। তাহলে তো আর কোন প্রব্লেমই নাই। বলেই চার ঠোঁট এক করে দিলাম।

শিমলা খুব অবাক আর সাথে লজ্জা পাচ্ছে। ৫ মিনিট পরে ছেড়ে দিলাম।
আমি- কেমন লাগল ম্যাম??
শিমলা- হুহ কি দুষ্টু তুমি।
আমি- হাহাহাহা আর একটা দেই।
শিমলা- নাহ। তার আগে তুমি বল আমায় মেনে নিয়েছ??
আমি- হুম।
শিমলা- তাহলে তুমি আমায় এতদিন আমার সাথে এমন ব্যবহার কেন করলে??
আমি- তোমার সাথে মাত্র ৩ মাস এমন করেছি আর আমি ৫ বছর এমন কষ্ট ভোগ করেছি।
শিমলা- তুমি বিশ্বাস কর আমি বুজতে পারি নাই। মিম আমায় যেভাবে বলেছিল তাতে আমি ওই কথাটা বিশ্বাস করতে বাধ্য হয়েছি।(বলে কেদে দিল)
আমি- আর কাদতে হবে না ম্যাম। আমি এবার তো তোমায় মেনে নিয়েছি।
শিমলা- হুম। তাহলে এতদিন আমায় কষ্ট দেওয়া তোমার প্লান ছিল??
আমি- হুম।(সব খুলে বললাম)
শিমলা- কুত্তা,বিলাই,ড্রাগন,খাটাশ ইত্যাদি বলে বুকে কিল ঘুসি দিতে লাগল।
আমি- জরিয়ে ধরলাম জোরে।
শিমলা- আমাকে আর কষ্ট দিবে না তো??
আমি- না। দিব না তবে
শিমলা- তবে কি??
আমি- আমার আরো একটা চাই..
শিমলা- কি চাই???
আমি- ওইটা।(ঠোঁটের দিকে)
শিমলা- যাহ কি দুষ্টু।
আমি- আর কোন কথা না বলে এক করে দিলাম।

(এরপর রাতের ঘটনা তো আমি কিছুই জানি না। বিয়ে করি নি তো + ছোট মানুষ। আপনার যে যার মতো মনে করে নিন।??)

সকালে…….
শিমলার ডাকে ঘুম ভাংল।
শিমলা- ওই উঠো সকাল হয়ে গেছে।
আমি- হুমমমম্ম
শিমলা- কি হুম হুম করতেছ সেই সকাল থেকে।
আমি- পরে উঠি প্লিজ।
শিমলা- পরে মানে কি? এখনই উঠো।অফিস টাইম হয়ে গেছে।
আমি- পরে যাব অফিসে।
শিমলা- পরে কেন। দেরি হলে কিন্তু অফিসে ঢুকতে দিব না।
আমি- তুমি ঢুকতে না দেবার কে। ওটা আমার বউ এর অফিস আমি যখন খুশি তখন যাবো।
শিমলা- কিহ???? তবেরে
আমি- এক লাফে উঠেই বত্রুমে চলে এলাম।
শিমলা- পরে দেখে নিব তোমায়।
আমি- যাও যাও।
এরপর ফ্রেশ হয়ে নিচে গিয়ে খাবার খেয়ে নিলাম।
খাবার সময় তেমন কোন কথা হয় নি। তাই আর কিছু লিখলাম না।

এরপর দুজনে বের হলাম অফিসের উদ্দেশ্যে।
ম্যাম আজ আমার বাইকের পিছনে।

অফিসে ঢুকার পরে সবাই অবাক। কারন আজ দুজনেই একসাথে এসেছি।
এর আগে কখনো আসি নাই তাই।

এরপর থেকে আমাদের এই ভাবে দুজনের জীবন চলছিল।

এদিকে জান্নাত আপুর পরিক্ষা শেষ।

আমাদের তিনজনের ছোটখাটো সংসার ভালো ভাবেই চলছিল।
একদিন——
জান্নাত- ভাবি আমার পরিক্ষা তো শেষ।
শিমলা- হুম তো??
জান্নাত- চলো না আমরা কোথা থেকে ঘুরে আসি।
অনেক দিন ঘুরতে যাওয়া হয় না।
শিমলা- হুম ঠিক বলেছ।
আমি- হুম। তা কোথায় যাওয়া হবে???
শিমলা- আমি নিয়ে যাব তোমাদের।
আমি- কোথায়??
জান্নাত- হুম কোথায় ভাবি???
শিমলা- নাম বলব না। গেলেই বুজতে পারবে।
আমি- হুহ।
জান্নাত- অহহ।
শিমলা- হাহহাহা।।।। তাহলে কবে যেতে চাও তোমার??
আমি- ৩ দিন পরে।
জান্নাত- হুন ওকে।

এরপর এই তিনদিন ধরে আমরা সকলে সব কিছু ঘুছিয়ে নিলাম।
সপিং করতে গেলাম। সপিং এর কথা কি বলব?? মেয়েরা পারেও বটে।

এরপর অবশেষে সেই দিন এল।

এখামে আমার জন্য এত বড় একটা সারপ্রাইজ অপেক্ষা করছিল আমি তো তা বুজতেই পারি নি।
সব কিছু শিমলার প্লান ছিল।

সকালে আমরা শিমলার গাড়ি করে রওনা দিলাম। আমাদের গন্তব্য স্থানে। আমি আর আপু অবশ্য জানি না কোথায় যাচ্ছি।

সেখানে পৌছে তো আমি পুরা শকড।
গাড়ি থেকে……..গাড়ি থেকে ৫ ঘন্টা পর নামলাম।
জায়গাটা চেনা চেনা মনে হচ্ছে। মনেহয় আগে এসেছি। কিন্তু চিনতে পারতেছি না।
আমরা এসে একটা বাড়ির সামনে নামলাম।
এসে দেখি দরজার সামনে শিমলার আব্বু দাঁড়িয়ে আছে।
তার মানে এটা শিমলার বাড়ি। আর জায়গাটা বাগেরহাট। যার কারনে আমার এত চেনা চেনা লাগতেছিল।
৫/৬ বছর পরে এসেছি তো তাই চিনতে পারি নাই।
এখানে এসেই পরিবারের কথা মনে পরে গেল। ইচ্ছে করতেছে এক দৌড়ে আম্মুর কাছে চলে যাই। কিন্তু কিছু একটা বাধা দিচ্ছে। এটাই হয়তো অভিমান।

এই সব ভাবতেছিলাম ঠিক তখনই।
শিমলা- অই তুমি কি এখানেই দাঁড়িয়ে থাকবে না ভিতরে আসবে??
আমি- হুম চলো।
শিমলার আব্বু- বাবা কেমন আছো???
আমি- জি আংকেল ভালো। আপনি??
শিমলার আব্বু- ভালো। আর আমাকে আংকেল নয় আব্বু ডাকো।
আমি- জি আব্বু ভালো আছি।
শিমলার আব্বু- হুম এইবার ঠিক আছে।
বাবা ভিতরে আস।
আমি- হুম। চলুন। আপু তুমিও আসো আমার সাথে।
জান্নাত- হুম ভাইয়া।

জান্নাতকে একটা রুমে দিয়ে এলাম।
আমি আর শিমলা এক রুমে গেলাম।
আমার খুব টায়ার্ড লাগছিল। তাই
আমি- আমি ঘুমিয়ে পরতেছি।
শিমলা- হুম ঘুমাও।
আমি- হুম্মম্মম্ম।।।।।।

সন্ধ্যার একটু আগে একটা বাচ্চার ডাকে ঘুম ভাংল। আমি ভাবলাম কোন স্বপ্ন হবে।তাই আবার ঘুমালাম।
কিন্তু কিছু সময় পরে আবার একটা
মেয়ে ডাক দিল।
মেয়ে- চাচ্চু ও চাচ্চু।
আমি- হুমমমম কে???(ঘুম চোখে)
মেয়ে-চাচ্চু????
আমি- অই কে??? আমায় চাচু ডাকে। (লাফ দিয়ে উঠলাম)
উঠে দেখি খুব কিউট একটা বাচ্চা আমার বিছানার পাশে দাঁড়িয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
আমি- আপু আপনি কে???(বাচ্চা আমার খুব ভালো লাগে। তাই মজা করি)
মেয়ে- হুহ আমায় চিন না। দাড়াও তোমাকে দেখাচ্ছি।
এই বলে আমার উপরে চরে বসল।
আমি- আপু আপনি কে??? আর আমায় মারছেন কেন??
মেয়ে- তুমি আমার চাচু। তাই আমি আমার চাচুর সাথে যা ইচ্ছে তাই করব। তাতে তোমার কে??
আমি- অই মেয়ে তুমি কে বল?? কে তোমার চাচু??(অবাক হয়ে। বলে কি)
মেয়ে- চাচুউউউ বলে কেদে দিল।
আমি- ধুর কি করব। তাই কান্দা থামানোর জন্য কোলে নিলাম।
কোলে নেবার সাথে সাথে চুপ। সে কি হাসি।
মেয়ে- চাচু। চুমা দিয়ে।
আমি- আপু আমায় প্লিজ মাপ কর। আর কে তোমার চাচু?? তামার নাম কি??? আর তোমার আব্বুর নাম কি???
মেয়ে- আমার নাম নিলা।
আমি- হুম খুব ভালো নাম।
নিলা- হুম। আর আমার আব্বুর নাম শফিক।
আমি- কিহ??? তোমার আব্বুর নাম শফিক?? (কোল থেকে নামিয়ে দিলাম। কারণ শফিক আমার ভাইয়ের নাম।)আমি বুজলাম না। তার মানে ভাইয়া বিয়ে করেছে। কিন্তু এই মেয়ে আমায় চিনে কি করে??)
নিলা- ওয়ায়ায়ায়ায়া করে কেদে দিল।
আমি- আবার কোলে নিলাম। এইবার থামল।
নিল- চাচু তুমি খুব পচা। এতদিন আমার কাছে ছিলে না। আর এখন কোলে নিচ্ছ না।
আমি- কিন্তু তুমি আমায় চেন কিভাবে??
নিলা- আমার নানু বলছে তুমি আমার চাচু। আর নানি তো রোজ কাদে তোমার জন্য।
আমি- কিন্তু কেন??
নিলা- তোমাকে নাকি তারা ভুল বুজে তারিয়ে দিয়েছে তাই।
আমি- অহ।।।
নিলা- কিন্তু আমি তোমায় আর এখানে থাকতে দিচ্ছি না। তোমায় আমি আমার সাথে নিয়ে যাব।
আমি- আমি যাব না। আর তুমি কার সাথে এখানে এসেছ??
নিলা- আমি আব্বুর সাথে এসেছি।
আমি- তোমার আব্বু কোথায়??
নিলা- আব্বু নিচের রুমে।
আমি- কিহ???
নিলা- হুম। আর এখন চল বাড়িতে যাব।
আমি- হুম যাওম(কোল থেকে নামিয়ে দিলাম)
নিলা- ভ্যায়য়য়য়।।।।করে কেদে দিল।
আমি- কি করব। এই মেয়ে তো আমার কোল ছাড়া কিছু বুজে না। তাই কোলে নিলাম।
নিলা- চুপ।
আমি- অই তুমি কাদলে কেন??
নিলা- তুমি আমার সাথে কেন যেতে চাও না?? তাই কাদি।
আমি- যাব না।
নিলা- তাহলে আবার কাদব কিন্তু।
আমি- না না প্লিজ।
নিলা- তাহলে চল আমার সাথে।
আমি- না।
নিলা- ভ্যায়য়য়য়।।।।।।
আমি- চুপ চুপ আমি যাব।
নিলা- ???
আমি- হুহ।।।।।
এইভাবে দুজনে বসে গল্প করতে লাগলাম।
আর বুজলাম আমার জন্য আমার পরিবারের সকলে কাদে।
সকলে মিস করে। আর আম্মু সব থেকে বেশী কাদে।
ভাইয়া বিয়ে করেছে। এক মেয়ে নাম নিলা।

কিছু সময় পরে পিছে তাকিয়ে দেখি ভাইয়া দাঁড়িয়ে আছে।
আমি- কতদিন পরে দেখলাম। কিন্তু রাগের জন্য কথা বললাম না।
ভাইয়া- শ্রাবন কেমন আছিস??
আমি- চুপ
ভাইয়া- এখনো রাগ করে আছিস??
আমি- চুপ
ভাইয়া- আমায় ক্ষমা করে দে প্লিজ…
আমি- একি আপনি ক্ষমা চাচ্ছেন কেন??
ভাইয়া- শ্রাবন প্লিজ ভাই ক্ষমা করে দে আমায়।
আমি- প্লিজ আপনি এখন যেতে পারেন।
ভাইয়া- ???
নিলা- চাচু তুমিও চলো আমার সাথে।
আমি- পরে যাব।
নিলা- তাহলে আমিও যাব পরে।
আমি- না তুমি তোমার আব্বুর সাথে যাও।
নিলা- না না যাব না। আমি তোমার সাথে থাকব ব্যাস।
আমি- হুক ওকে।
ভাইয়া- আম্মু আমি যাই কেমন।
নিলা- ওকে আব্বু বায়।

ভাইয়া চলে গেল। ভাইয়া অনেক কেদেছিল। কিন্তু আমি কিছু বলি নাই।
এরপর শিমলা আর জান্নাত এল। জান্নাত কিছু বুজতেছিল না।
আমি সব খুলে বললাম।
জান্নাত শুনে কেদে দিল।
জান্নাত- ভাইয়া তোমার জীবনে এত কষ্ট।
আমি- নারে পাগলি। যার কাছে তোর মতো বোন আছে তার আবার কিসের কষ্ট।
জান্নাত- ভাইয়া বলে জরিয়ে ধরল।
আমি- পাগলি।।।।
এরপর বুজলাম এটা সব শিমলার প্লান।
আমার খুব রাগ হল।
ভেবেছিলাম পরিবারের সাথে কোন যোগাযোগ রাখব না। কিন্তু শিমলার জন্য।।।।।
এরপর রাতে নিলা আমার কাছে ছারা শুবেই না। তাই তাকে নিয়ে শুয়ে পরলাম।
আমাকে এমন ভাবে জরিয়ে ধরল। যেন আমি হারিয়ে যাব।
রাতে গল্প করতে করতে ঘুমিয়ে পরলাম।
নিলা যে পাকা বুরি। অনেক কথা যানে।

সকালে শিমলাকে নিয়ে নিলার জন্য আবার সেই পুরনো বাড়িতে রওনা দিলাম।
কিছু সময় পরে এলাম।
সেই পুরনো সব কিছুই আছে। কিন্তু বদলে গেছে সব মানুষ।
রুমে গিয়ে বেল দিলাম। দেখি আম্মু দরজা খুলে দিল।
আম্মু- আমায় দেখেই জরিয়ে ধরে কেদে দিল।
আমি- আমার ভালো লাগছিল। কিন্তু অভিমানের জন্য ছারিয়ে দিলাম।
আম্মু- বাবা কেমন আছিস??
আমি- চুপ।
আম্মু- বাবা কথা বলবি না আমার সাথে।
আমি- জি ভালো। এইবার সরুন আমার সামনে থেকে।
আম্মু- শ্রাবন আমায় ক্ষমা করে দে বাবা।
আমি- চলে এলাম সামনে।
ভিতরে দেখি আব্বু আর ভাইয়া আছে।পাশে ভাবি।
আব্বু- বাবা আমায় ক্ষমা করে দে।
আমি- আমি আপনাদের ক্ষমা করে দেয়েছি। আর কেউ কিছু বলবেন না প্লিজ।
ভাইয়া- তাহলে আজ থেকে বাড়িতে থাকবি??
আমি- আর সম্ভব নয়।আমি ভাবিকে দিয়ে নিলাকে উপরে পাঠিয়ে দিলাম।
আব্বু- প্লিজ বাবা।
আমি- না।
এইভাবে অনেক কথা হল কিন্তু আমি রাজি না। আব্বু আম্মু শিমলার সাথে কথা বলল।

এরপর আমি বললাম
আমি- শিমলা চল বাসায় যাব।
শিমলা- কিন্তু…
আমি- চুপ চল।।।
শিমলা- হুম।
যখন দরজার কাছে এলাম তখনি
আম্মু- শ্রাবন বলে চিতকার দিয়ে নিচে পরে গেল।
আমি- আমি দৌড়ে গিয়ে আম্মুকে তুললাম।
এরপর সবাই মিলে আম্মুকে হাসপাতালে নিয়ে গেলাম।
ডাক্তার আম্মুর চিকিৎসা করছে। আমরা সকলে বাইরে।
আমি ভাবতেছি শুধু মাত্র আমার জন্য এই অবস্থা আম্মুর। আজ খুব কষ্ট হচ্ছে।মরে যেতে ইচ্ছে করছে। খুব খারাপ লাগতেছে।
কিছুসময় পরে ডাক্তার এল।
আমি- ডাক্তার কি হয়েছে আমার আম্মুর??
ডাক্তার তেমন কিছু না। তবে মানসিক আঘাত পেয়েছে। তাই তাকে এইসব থেকে মুক্ত রাখুন। না হলে বিপরীত কিছু হবে।
আমি- হুম।
এরপর আমি আম্মুর কাছে গেলাম। আম্মু আমি কোথাও যাব না। প্লিজ তুমি সুস্থ হও।
আম্মু- পাগল ছেলে আমি ঠিক আছি। শুধু তুই কাছে থাকলে।
আমি- মাকে জরিয়ে ধরে কেদে দিলাম।
আব্বু- শুধু আম্মুকে ক্ষমা করবে?? আমাদের করবে না।
আমি- হুম বলে আব্বুকে জরিয়ে ধরলাম।
এরপর একদিন পরে আম্মুকে নিয়ে বাসায় এলাম।
আম্মু শিমলাকে পেয়ে খুব খুশী।
আমরা সকলে বসে আছি।
আমি- আব্বু এই হচ্ছে জান্নাত আমার আপু।
আব্বু- হুম। তোর বোন মানে আমাদের মেয়ে।
আমি- হুম
আম্মু- আব্বু ওকে কিভাবে পেলি??
আমি- সব খুলে বললাম।
আম্মু- জান্নাতকে জরিয়ে ধরল। জান্নাত কাদতেছে।
আম্মু- পাগলি মেয়ে কাদিস কেন??
জান্নাত- অনেক দিন পরে কেউ এইভাবে আদর করতেছে তাই।
আম্মু- আমি আমার মেয়েকে আদর করব না তো কাকে করব???
জান্নাত-???
আম্মু- আমায় আম্মু বলে ডাক
জান্নাত- আম্মু।।।।

এইভাবে শেষ হল আদের সকলের মনমালিন্য।
এরপর আসি সেই মিমের প্রসঙ্গে।
মিম ওর বাসায় থাকে। ওর নাকি এক পা কেটে ফেলেছে। কারন এক্সিডেন্টে হয়েছিল।
তাই আমি ভাবলাম ওকে ওর পাপের সাজা আল্লাহ দিয়েছে তাই আমি কিছু বললাম না।
ওর সামনে আর কোন দিন যাব না বলে ঠিক করলাম।

আর আমার পরিবারের সকলে জান্নাত আর শিমলাকে পেয়ে আমায় তো ভুলেই গিয়েছে প্রায়।
এই ভাবে আমাদের পরিবার সুখে শান্তিতে চলছিল।

৷৷৷৷৷৷৷৷ সমাপ্ত।।।।।।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে