#সন্ধ্যা_আকাশের_সুখ_তারা
“নওশিন আদ্রিতা”
পর্ব সংখ্যা—৪
১০.
কফির মগ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে রুহানী।অভ্র একবার ভ্রু কুচকে রুহানীর হাসির দিকে তাকাছে একবার তার হাতে থাকা কফির মগের দিকে।রুহানীর শয়*তানী মার্কা হাসি দেখে তার সন্দেহ হচ্ছে।তাও কাপা কাপা হাতে তার থেকে কফির মগ নিয়ে তাকে টেবিলে বসতে দিলো। রুহানী ভালো মেয়ের মতো চুপচাপ বসেও অভ্রর মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো। অভ্র এক চুমুক কফি মুখে দিতেই তার বুঝতে বাকি রইলোনা রুহানীর মুখে এমন হাসি থাকার কারণ কি।
রুহানী কফির মগে লবন মিশিয়ে নিয়ে এসেছে তাও এক দুই চামচ না পুরা একটা ছোট কৌটার।অভ্র তাও রিয়েকশান না দিয়ে স্বাভাবিক মুখো ভঙ্গি করেই আরও দুই ঢোক দিয়ে পাশে রেখে দিলো।রুহানী ত অবাক। সে ভেবেছিলো অভ্র চুমুক দিয়েই বেসিনের দিকে দৌড়াবে।কিন্তু তার চিন্তা ভাবনা কে ভুল প্রমাণিত করে অভ্র স্বাভাবিক রিয়েকশান নিয়েই রুহানীর দিকে বই ধরে কিছু কনসেপ্ট দাগিয়ে দিয়ে বলে উঠলো
—এগুলো পড়ে রেডি করো আমি একটু আসছি।
অভ্র উঠে যেতেই রুহানী কফির মগ নিয়ে একটা ঢোগ দিতেই তার ভিতরে সব গুলিয়ে উঠলো কোনরকমে মুখ চেপে ওয়াসরুমে যেয়ে বমি করে দিলো।
বাহির থেকে অভ্রর হাসির আওয়াজ শুনা যাচ্ছে।সে যে ইচ্ছা করেই এমন করেছে বুঝতে পেরে রাগে তার শরীর রি রি করছে।হন হন করে বের হয়ে অভ্রর সামনে দাঁড়িয়ে কমরে হাত দিয়ে রাগে চিল্লিয়ে উঠলো
—আপনার সমস্যা কি হ্যা আপনি ইচ্ছা করে আমার সাথে এমন করলেন তাইনা। আপনাকে আমি টিকটিকির কিমা যদি না খাওয়ায়েছি তাহলে আমার নাম ও রুহানী শিকদার না বলে দিলাম।
অভ্র হেসে রুহানীর দিকে এগুতেই রুহানী দেওয়ালের সাথে লেপ্টে গেলো
—নাম বদলে মিসেস রুহানী অভ্র তালুকদার রাখবে নাকি।
অভ্রর কানের কাছে বলা কথাটা শুনেই রুহানীর হাত পায়ে কাপন ধরে গেছে।সে ছটফট করছে ছুটার জন্য। অভ্র মুচকি হেসে রুহানীর চুল এলোমেলো করে চেয়ারে যেয়ে বসে পড়লো।রুহানী এখনো ওইখানেই দাড়িয়ে আছে তার কানে বাজছে অভ্রর কিছুক্ষন আগের বলা কথাটা সে বুঝছে না এটা সত্যি অভ্র বলেছে নাকি নিতান্তই তার ভুল ধারণা।
—ওইখানে দাঁড়িয়ে থেকে রাত পার করার শখ হইচে নাকি তুমি চাইলে বিছানাতেও থাকতে পারো আমার কোন সমস্যা নেই। কোলবালিশ লাগবেনা আমার তাহলে আজকে।(দুষ্টুমি করে)
রুহানী রাগে হন হন করে এসে অভ্রর চুল টেনে দিয়ে চেয়ারে বসে পড়লো।অভ্র হতবাক। রুহানী যে হঠাৎ করে এমন কিছু করবে বুঝতেই পারেনি।
—এখনো ছোট বেলার অভ্যাস যায়নি টানাটানির এতো টানাটানি করো কেন হ্যা।
—তাতে আপনার কি আমার হাত আমি যা ইচ্ছা তাই করি আপনাকে কৈফিয়ত দেওয়া লাগবে নাকি।(গাল ফুলিয়ে)
রুহানীর ফোলা গাল টানে বলে উঠলো অভ্র
—এখন আমি তোমার বাবাই এর ছেলেনা তোমার টিচার তাই আমাকে কৈফিয়ত দিতেই হবে।
অভ্রর কথা ভেংচি কেটে বলে উঠলো
—আমার বয়ে গেছে আপনার কাছে পড়তে পড়ার নামে রঙলিলা করে বেরাচ্ছেন আবার যতোসব বড় বড় কথা।
অভ্র ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করে উঠে।
—তখন থেকে রঙলিলা রঙলিলা যে বলছো কার সাথে আমি রঙলিলা করলাম শুনি।
—রঙলিলা বলবো না তো কি বলবো শুনি পড়ানোর নাম করে কোলের উপর বসায় রাখেন।
বসেছিলো তাও আবার ড্রেসআপের কি ছিড়ি ছি ছি আমার তো দেখতেও লজ্জা করচ্ছিলো আর উনি সরতে বলা বাদ দিয়ে পারচ্ছিলোনা আরও কাছে নিয়ে আসতে।যতোসব আবার বলে রঙলিলা করছি কেন কই ওইখানে ত কোন ছেলে ছিলোনা সব মেয়ে।আমার জানা মতে আমাদের ক্লাসে ছেলেও আছে।
রুহানীর বলা কথায় অভ্র হাসবে না কাদবে বুঝতে পারছেনা। সে অনেকবার মাইশাকে সরতে বলেছে কিন্তু মাইশা কোন কথা শুনে না দেখে বিরক্ত হয়ে কিছু না বলে ওই ভাবেই তাড়াতাড়ি পড়ানো শেষ করে তাদের বিদায় দিয়েছে।
—হয়েছে বুঝেছি এবার বই বের করেন পড়া বুঝাই দেয় নাহলে পড়ে আবার ডাব্বা মারবেন।
—এইযে আমি আজ অব্দি ডাব্বা মারিনি ঠিক আছে।
রুহানীর গাল ফুলানো দেখে মুচকি হেসে অভ্র পড়ানো শুরু করলো।
১১.
সকাল সকাল রুদ্র বসে গেছে কাজ নিয়ে। মিস্টার বিজয় এর আগের ডিজাইন পছন্দ হয়নি তিনি চাচ্ছেন তার প্রিয়তমার জন্য নতুন কিছু একটা উপহার দিতে। এই নিয়ে ১০টার মতো ডিজাইন সে তৈরি করে ফেলেছে। কিন্তু সেগুলো তার নিজের ই মন মতো হচ্ছেনা এই মহূর্তে এক কাপ কড়া কফি হলে বেশ হতো কিন্তু এই অচেনা জায়গায় তাকে চা করে দিবেই বা কে ভেবে পুনরায় কাজে মন দিলো সে। কিন্তু নাহ কিছুতেই মাথা খুলছে না দেখে চেয়ার থেকে উঠতে নিতেন সামনে নিরাকে দেখে থমকে যায় সে।
গাঢ় গোলাপি রঙ্গের শাড়ি পড়ে ভিজা চুল কোমড় অব্দি ছড়িয়ে হাতে ধোয়া উঠা চায়ের কাপ নিয়ে তার দিকে এগিয়ে আসছে সে। ঠোঁটের কোণে সব সময়কার মতোই ঝুলছে মন কারা মিষ্টি হাসি। রুদ্র মাঝে মধ্যে ভাবে মেয়েটা কি হাসি ছাড়া কখনোই থাকেনা। যখন ই সে তাকে দেখে ঠোঁটের কোনে এই হাসি সহই দেখে।আচ্ছে হাসি ছাড়াও কি নিরা কে এতোটাই নজর কারা লাগবে এই যে নিরার মুখে পড়ে থাকা বিন্দু বিন্দু পানি সূর্যের আলোই চিকচিক করছে যা তার সৌন্দর্য কে আরও বাড়িয়ে তুলেছে।নিজের ভাবনাই নিজেই অবাক রুদ্র। এর আগে কোন মেয়েকে নিয়ে সে এইভাবে ভাবেনি আর না তো এতো খুটিনাটি পর্যবেক্ষন করেছে তাহলে নিরার বেলাই এমন অদ্ভুত কাজের মানে কি। রুদ্রর এইসব ভাবনার মাঝেই নিরা তার হাতে গরম ধোয়া উঠা চায়ের কাপ এগিয়ে দিতেই হুশ ফিরে রুদ্রর।
রুদ্র আমতা আমতা করে বলে উঠে
—আমি চা পান করিনা মিস নিরা।
—চা কে না করতে নেই রুদ্র সাহেব আজ একদিন পান করেই দেখেন আপনার মাথা ব্যাথাও চলে যাবে আর হুরহুর করে ডিজাইনও মাথায় চলে আসবে।
রুদ্র কিছুক্ষন নিরার মুখের দিকে তাকালো হুরহুর শব্দটা কইবার উচ্চারণ করেই চায়ের কাপে চুমুক দিতেই তার স্বাদে চোখ মুখ চিকচিক করে উঠলো তার।নরমাল চায়ের থেকে কিছুটা আলাদা বলেই মনে হলো তার।নিজের কৌতুহল দমাতে না পেরেই জিজ্ঞেস করে উঠলো।
—চায়ের স্বাদ টা স্বাভাবিকের থেকে আলাদা লাগছে এর কি স্পেশাল কোন কারণ আছে নাকি আমি অনেকবছর পরে খাচ্ছি বলেই আমার এমন মনে হচ্ছে।
নিরা হাসলো
—এই চায়ে পুদিনা পাতা আর আদা একসাথে বেটে ফুটন্ত গরম পানিতে ছেড়ে দিয়ে তার রস সম্পূর্ণ পানিতে ছড়িয়ে যাওয়ার পরে সেটা ছেকে নিয়ে চা পাতা দেওয়া হয়েছে।আমার দাদী আগে এইভাবে বানিয়ে দিত যখন আমার বা ভাইয়ার পরিক্ষা চলতো তার বানী অনুযায়ী “এই চা মুখে দেওয়ার সাথে সাথেই মাথা ব্যাথা ছু হয়ে যায় আর মন মস্তিষ্ক একদম ফুরফুরা হয়ে যায় পড়াও মাথায় ঢুকে হুরহুর করে।”
রুদ্র হাসে চা খাওয়াই মনযোগ দিলো “হুরহুর” শব্দটার উৎপত্তি তার জানা হয়ে গেছে। নিরা ডিজাইন গুলোর দিকে তাকায়
—রুদ্র সাহেব এতোগুলা ডিজাইনের কারণ কি। আপনি ঠিক বানাতে চাচ্ছেন টা কি।
রুদ্র এবার চা রেখে নিরার কথায় মনোযোগ দেয়
—আসলে মিস্টার বিজয় চান তার ওয়াইফের জন্য এমন একটা বাগান বাড়ি বানাতে যেখানে গেলেই মন ভালো হয়ে যাবে কোয়ালিটি টাইম স্পেন্ড করার জন্য বেস্ট একটা জায়গা হবে। কিন্তু এর আগের ডিজাইন উনাদের পছন্দ হয়নি আর আমার ও অন্যকিছু মাথায় আসছেনা।
—আমি কি জায়গা টা দেখতে পারি।
রুদ্র ফোন থেকে একটা ছবি বের করে দেখায়
—আমি কি একটা বুদ্ধি দিবো আপনি যদি কিছু মনে না করেন?
রুদ্র সম্মতি জানাতেই নিরা বলে উঠলো
—দেখুন মিস্টার বিজয় এর কথা অনুসারে তিনি মন ভালো করার মতো একটা জায়গা চান সে জায়গা টা যে বাড়ির হতে হবে তার কি কোন কারণ আছে বলেন। একদম না। এরকুম দালান না বানিয়ে একটা গাছ বাড়ি বানালেই তো হয়।এখানে গাছ অনেক যারকারণে বেলকনি বানালেও তেমন একটা দৃশ্য চোখে পড়বেনা কিন্তু গাছ বাড়িতে ভিউ টা অসাধারণ হবে কারণ সেটা মাটি থেকে অনেকটাই উচুতে হবে।
রুদ্র মনোযোগ দিয়ে সব শুনে বলে উঠলো
—আপনার মাথায় কি কোন বুদ্ধি আছে মিস নিরা।
নিরা মুচকি হেসে কাগজ পেন্সিল নিয়ে মনোযোগ লাগায়ে আকাতে শুরু করলো।রুদ্র চা খেতে খেতে সবটুকু দেখতে লাগতো কখন যে নিরার ভাগের চা টুকুও খেয়ে ফেলেছে।
কিছুক্ষন পরেই রুদ্রর সামনে নিরা এক ছবি তুলে ধরলো।রুদ্র হা হয়ে তাকিয়ে রইলো নিরার হাতের ছবির দিকে।
চলবে?