হৃদয়ে তুমি পর্ব-২১+২২

0
1175

#হৃদয়ে_তুমি
#লেখিকাঃতানিমা_আক্তার_মিরা
#পার্টঃ২১

রহস্য উদঘাটন পর্ব -১
_______________________

সকলে উপস্থিত মানুষটাকে দেখে অবাক হয়ে যায়।

আরুশের বাবা- ড. হাসান আপনি??
ড.হাসান-হুম আমি তরীর অনুরোধে এসেছি।

সবাই আবার চমকে উঠলো তরীর সাথে ড. হাসানের সঙ্গে চেনাজানা হলো কিভাবে। নাদিম অর্থাৎ নিরবের বাবার মুখটা ঘেমে একাকার হয়ে গেছে।

তরী- আঙ্কেল আপনাকে ধন্যবাদ আপনি কস্ট করে আমার কথা শুনে এখানে উপস্থিত হয়েছেন তার জন্য।
আরুশের বাবা- তরী মা তুই ওনাকে এখানে আসতে বলেছিস কেন
তরী- বারে উনি না এলে সবাই সত্যিটা জানবে কি করে।
তরীর বাবা- কি সত্যি
তরী- অনেককিছু যা কেউ জানে না।

সবার মাঝেই একটা পিনপিনে নিরবতা দেখা গেলো,তরী কোন সত্যির কথা বলছে।

আর্দ্র- তরী সবটা পরিস্কার করে বল না।
তরী- বলবো বলেই তো এতসব আয়োজন, তবে তার আগে আমি ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি যদি আমার কথাই কারোর খারাপ লাগে তার জন্য,কারন আমি যে কথা গুলো বলবো অনেকের কাছেই তা সুখকর হবে না।তাই আমি আগে থেকে সরি বলে নিচ্ছি।।

সবাই নিশ্চুপ তরী সবার দিকে একপলক তাকিয়ে হাসলো।

তরী- আজ থেকে ২৭ বছর আগে একটা রাতে চৌধুরী বাড়ির বড়ো বউমা…… হসপিটালে ভর্তি হয় ডেলিভারি পেইন নিয়ে
আরুশের মা-তরী এসব কি বলছিস।
তরী- আমাকে বলতে দাও

আরুশের মা চুপ করে গেলেন তরী বলতে চালু করলো- আর সেই একই দিনে ভর্তি হন আরেক মহিলা ওই একই পেইন নিয়ে।মহিলার শরীরের অবস্থা খুব একটা ভালো ছিলো না এতটাই খারাপ ছিলো যে , মা আর সন্তানের মাঝে একজনকে বাঁচাতে পারা যাবে। ড. হাসান অনেক চেস্টা করে ওহ বাচ্চাটিকে বাঁচাতে পারেননি সেদিন বাচ্চাটি মারা যায়, আর মহিলাটি হারিয়ে ফেলে তার সন্তান ধারণের ক্ষমতা।

সবার মাঝেই একটা কস্ট ছেয়ে গেলো, কিন্তু তরী এসব কেন বলছে সেটা কেউ বুঝতে পারছে না।

তরী- ওদিকে চৌধুরী বাড়ি আলো করে এলো একটা নয় দু- দুটো সন্তান।

সবার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়লো তরী কি বলছে দুটো সন্তান মানে??

আরুশের বাবা-কি বলছিস তরী ২ টো মানে
ড. হাসান- ইয়েস মিস্টার চৌধুরী আপনার স্ত্রী সেদিন জমজ সন্তানের জন্ম দিয়েছিলেন।

আরুশের মা মাথা ঘুরে পড়ে যেতে গেলে ওর বাবা ধরে নেয়।

আরুশের মা- আমার জমজ সন্তান হয়েছিলো,তাহলে আমার আর এক সন্তান কোথায়।
হাসান- সেদিন…

ফ্ল্যাশব্যাক….

হাসান- সরি নাদিম আমি তোমার সন্তানকে বাঁচাতে পারিনি,আর তুমি কখনো বাবা হতে পারবে না।
নাদিম- না এটা হতে পারে না এটা জানলে আমি আমার স্ত্রীকে বাঁচাতে পারবো না।
হাসান- নিজেকে সামলাও

তখনই একজন নার্স আসেন- স্যার তাড়াতাড়ি চলুন।

আমি তাড়াতাড়ি চলে যায়, মিসেস চৌধুরী জমজ সন্তানের জন্ম দেন, আমি অপারেশন শেষ করে বের হতেই নাদিম বললো- হাসান তুমি তো আমার বন্ধু
হাসান- হ্যা
নাদিম- আমাকে একটা সাহায্য করবে
হাসান- কি সাহায্য
নাদিম-ওই জমজ সন্তানের একজনকে আমার কাছে দেবে
হাসান- না এটা সম্ভব নয়।
নাদিম- প্লিজ

বর্তমান

হাসান- সেদিন নাদিমের কাকুতি আমি ফেলতে পারিনি ওর হাতে তুলে দিয়েছিলাম আপনাদের সন্তানকে।

সবাই চমকে উঠলো কারোর কথা বলার শক্তি নেয় নিরবের মা অশ্রুসিক্ত নয়নে নিরবের দিকে তাকিয়ে আছেন তার কানে একটাই কথা বাজছে- মা আমি তোমার ছেলে নয়।

নিরবের মা ব্যথাটা সহ্য করতে না পেরে অজ্ঞান হয়ে যান,সবাই ওনাকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।

কিছুক্ষণ পর….

সবাই চুপচাপ কেউ কোন কথা বলছে না কিবা বলবে কারোর যে কিছু বলার মতো শক্তি নেয়।নিরবের বাবা অপরাধীর মতো দাঁড়িয়ে আছে তার স্ত্রীর সামনে ওহ যেতে পারছেন না।

নাদিম- আমি জানি তুমি আমাকে ভুল বুঝবে কিন্তু তোমাকে আমি কিভাবে বোঝাবো তোমাকে ভালো রাখার জন্যই আমি সবটা করেছি।( মনে মনে)

নিরবের মায়ের জ্ঞান ফেরে,ওনার জ্ঞান ফিরতেই উনি কেঁদে উঠেন , আরুশের মায়ের কাছে ক্ষমা চান নিজের স্বামীর কাজের জন্য। আরুশের মা ওনাকে কিছু বলতে পারেন না কারন উনি জানেন সন্তান হারানোর যন্ত্রনা। যাকে এতগুলো বছর নিজের ভেবে নিজের বুকে আঁকড়ে ধরে বেঁচে ছিলেন আজ যখন হঠাৎ করে জানতে পারলেন সে তার নিজের সন্তান নয় তখন তার মনের অবস্থাটা ঠিক কি হতে পারে সেটা ভালো করেই সবাই বুঝতে পারছে। কিন্তু কিছু করার নেই সত্যি কখনো চাপা থাকেনা সেটা একটা না একটা সময় ঠিক সামনে আসবে আর সেটা যতই কঠিন হোক না কেন সেটা মেনে নিতেই হবে নাহলে পস্তাতে হবে আমাদেরই।

হাসান- তরী তাহলে আজ আমি আসি।
তরী- না, আরো কিছু সত্যি জানানোর বাকি আছে।

সবাই অবাক হয়ে তরীর দিকে তাকালো , আবার কোন সত্যির কথা বলছে তরী।

তরী নিরবের বাবার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়- আঙ্কেল আপনি একজন ডাক্তার, আর তার থেকে ওহ বড়ো কথা আপনি একজন স্বামী। আপনার মতো স্বামী পাওয়া ভাগ্যেরভাগ্যের ব্যাপার প্রতিটি মেয়েই আপনার মতো স্বামী আশা করে।আন্টি একদিকে খুব ভাগ্যবতী ওনাকে হয়তো উপর ওয়ালা মাতৃত্ব দেয়নি কিন্তু আপনার মতো একজন মানুষকে নিজের জীবনসঙ্গী হিসেবে দিয়েছেন।

তরীর এমন কথার মানে কেউ বুঝতে পারছেনা , তরী কেন এসব বলছে,এসব বলার কারন কি??

নাদিম- তুমি কি বলতে চাইছো।
তরী- আঙ্কেল আপনি যে কাজ গুলো করেছেন সেগুলো আইনের চোখে ওহ আমাদের চোখে অন্যায়, কিন্তু একজন স্বামী হিসাবে আপনার করা কাজ গুলোকে আমি সম্মান করি। কতজন ছেলে পারে তার স্ত্রীকে এভাবে আগলে রাখতে। আমি জানি আমি এখন যে কথা গুলো বলবো সেগুলো শোনার পর সবাই আপনাকে ভুল বুঝবে এমনকি আপনার স্ত্রী ওহ। হয়তো আপনি আপনার জায়গাই ঠিক আপনার জায়গাই দাঁড়িয়ে আপনার যেটা ঠিক মনে হয়েছে আপনি সেটাই করেছেন , আমার আপনার প্রতি কোনো রাগ নেয় সত্যি বলছি।

তরী সবার দিকে তাকিয়ে দেখলো সবাই ওর দিকে অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ওর কথার কিছুই তারা বুঝতে পারছে না ,তরী কি বলছে,কেন বলছে সবটাই তাদের অজানা। ওদিকে নিরবের বাবা ভাবছে তরী আবার কোন সত্যির কথা বলছে।

তরী- সবার একটাই প্রশ্ন আমি আবার কি সত্যি বলবো তাই তো??
আর্দ্র-তরী প্লিজ খুলে বল আমি বা আমরা কিছু বুঝতে পারছি না।আমরা বুঝলাম নিরব আমাদের বাড়ির ছেলে , আরুশের জমজ ভাই।
তরী- ওটা নিরব নয়..

সবাই চমকে উঠে তরীর দিকে তাকালো….

আর্দ্র- মানে কি ওহ নিরব নয় মানে??
তরী- ওহ নিরব নয় মানে হলো ওহ আমার আরুশ
আর্দ্র-আরুশ মানে
তরী- আরুশ মানে আরুশ
অদ্রি-এটা কিভাবে সম্ভব দাদাভাই এর মতো দেখতে দাদাভাইএর জমজ ভাই সেটা মানলাম কিন্তু ওনিই দাদাভাই এটা বলছিস কেন?
তরী- তোমরা কি ভাবছো আমি সবটা না জেনে আমি বলছি।
আরুশী- সেটা বুঝতে পারছি কিন্তু এতো সিওর কিভাবে ওনি দাদাভাই।
চাঁদনী- তরী তুমি চুপ করে থেকো না বলো সত্যিটা কি?
তরী- চাঁদনী তোমাদের সেই দিনের অ্যাক্সিডেন্টে নিরব মারা গিয়েছিল।
চাঁদনী- না( চমকে উঠে)
তরী- আমি জানি এটা আপনাদের পক্ষে মেনে নেওয়া সম্ভব নয় কিন্তু এটাই সত্যি।

নিরবের মা, চাঁদনী খুব ভেঙ্গে পড়েছে , আর নিরব সে কিছুই বুঝতে পারছে না , শুধু দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে।

তরী- আঙ্কেল প্লিজ এবার সত্যিটা বলুন প্লিজ।

নাদিম সাহেব কিছুক্ষন চুপ থেকে বলতে চালু করলেন- আমি জানি আমি অনেক অন্যায় করেছি কিন্তু বিশ্বাস করুন এটা ছাড়া আমার আর কোনো উপায় ছিলো না আমি কি করবো, আমাকে তো আমার স্ত্রী, ভাগ্নিকে বাঁচাতে হবে । আমি কিভাবে তাদের কে কস্ট দেবো বলুন , আমার কাছে যখন তাদেরকে ভালো রাখার একটা উপায় এসেছে, তখন আর সেটাকে হাত ছাড়া করতে পারিনি সবাই আমাকে মাপ করে দেবেন.. ‌‌

নাদিম সাহেব চুপ করে গেলেন। সবাই ওনার দিকে তাকিয়ে আছে , গম্ভীর আগ্রহের সাথে সবাই সত্যিটা জানতে চাই।

নাদিম- আজ থেকে ৩ বছর আগে আমার নিরব গাড়ি অ্যাক্সিডেন্টে মারা যায়,আর আমার চাঁদনী মা কোমায় চলে যায়।আমি আমার স্ত্রীকে বলি ওরা পড়াশোনার জন্য বিদেশে গেছে । আমার স্ত্রী আমাকে খুব বিশ্বাস করতেন , তাই আর কোনো কথা বলেনি। আমি জানি ওর কস্ট হতো ছেলে মেয়ের থেকে এতো দূরে থাকতে, কিন্তু আমার ওহ যে কস্ট হতো এক সত্যিটা কাউকে না পারায় তার উপর প্রতি মুহূর্তে আমি ওর সামনে নিজেকে শক্ত রেখেছি,হাসি খুশি রেখেছি।( চোখের কোনায় পানি চিকচিক করছে)

সবাই করুন চোখে তাকিয়ে আছে ওনার দিকে। একটা মানুষ ঠিক কতটা একজনকে ভালবাসলে এসব করে।

নাদিম- ৩ মাস পড়ে চাঁদনীর জ্ঞান ফেরে, ওহ জ্ঞান ফেরার পরই নিরবের কথা জানতে চাই আমি তখন ওহ ওকে মিথ্যা কথা বলি ।আসতে আসতে দিন কাটতে লাগলো আমি আর এই মিথ্যার বোঝাটা বইতে পারছিলাম না প্রতিটা মূহুর্তে নিজের ভেতরে নিজে ঢুকরে ঢুকরে মরতাম। এভাবেই দিন কাটছিলো হঠাৎ একদিন…….

#চলবে….
#হৃদয়ে_তুমি
#লেখিকাঃতানিমা_আক্তার_মিরা
#পার্টঃ২২

রহস্য উদঘাটন পর্ব-২
______________________

নিরবের বাবা-হঠাৎ একদিন আমি বাড়ি আসার সময় দেখতে পাই…..

একটা ছেলে অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে,মাথা থেকে রক্ত বের হচ্ছে।আমি তাড়াতাড়ি ওখানে যায়,ছেলেটাকে সামনে ঘোরাতেই আমি চমকে উঠি কারন ছেলেটা অবিকল আমার নিরবের মতো দেখতে আমি এক মূহুর্তের জন্য ভেবেছিলাম ওটা আমার নিরব কিন্তু পর মূহুর্তে আমার মনে পড়ে যায় নিরবের জমজ ভাইয়ের কথা আমি বুঝতে পারি ওটা নিরব নয় চৌধুরী সাহেবের আরেক সন্তান।

আমি তাড়াতাড়ি ওকে আমি হসপিটালে ভর্তি করি এবং চিকিৎসার ব্যবস্থা করি। মাথায় আঘাতটা অনেক জোরে লাগার জন্য ওর জ্ঞান ফিরতে অনেক দেরি হয় , কিন্তু আমি ওর কাছ থেকে এক মূহুর্ত সরে যায় নি প্রতিটা মূহুর্তে দেখাশোনা করেছি।একদিন হঠাৎ ওর জ্ঞান ফিরে আসে…

আরুশ- আমি কোথায়
নাদিম- তুমি এখন হসপিটালে
আরুশ- আমার কি হয়েছে আমি হসপিটালে কেন
নাদিম- তোমার একটা অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছিল
আরুশ- অ্যাক্সিডেন্ট
নাদিম- হুম
আরুশ- কিন্তু আমি কে??

আমি চমকে উঠলাম ওর কথা শুনে,আমি তাড়াতাড়ি ওর কিছু রিপোর্ট করতে দিলাম। আমি যা সন্দেহ করেছিলাম তাই হলো ওর পুরানো কিছু কথা মনে নেয়,মাথায় আঘাত লাগার কারনে সবকিছু ভুলে গেছে।আর আমি এটাও জানতে পারলাম যে ওর স্মৃতি ফিরে আসার চান্স মাত্র১%।এতটাই আঘাতটা জোরে লেগেছিলো যে পুরানো কথাগুলো মনে পড়ার চান্সটাও ছিল না।আমি কি করবো ভেবে পাচ্ছিলাম না,শেষে সিদ্ধান্ত নিয়ে নেয় যে ওকে আমি নিরবের পরিচয়ে আমার বাড়িতে রাখবো , সেই মতো আমি ওর কাছে এসে বলি….

নাদিম- নিরব
আরুশ- কে নিরব
নাদিম- তুমি নিরব,আমার ছেলে
আরুশ- আমি আপনার ছেলে
নাদিম- হুম বাবা তুমি আমার ছেলে

আরুশ আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বাবা বলে ডেকে উঠলো।আমার এই ডাকটা উপেক্ষা করার মতো শক্তি ছিলো না আমি ওকে নিরবের মতো সবকিছু শিক্ষিয়ে দেয় আর তারপর আমার বাড়িতে রাখতে চালু করি।আমি বাড়িটাও চেঞ্জ করে নিয়। কিন্তু একদিন হঠাৎ তরীর সাথে নিরবের দেখা হওয়াই সবটা এলোমেলো হয়ে যায়।

নিরবের বাবা সবটা বলা শেষ করে কাঁদতে শুরু করেন, উপস্থিত সকলের চোখে পানি।একজন আদর্শ পিতা,স্বামীর উদাহরণ হিসেবে নাদিম কে দেওয়া যায়।হয়তো উনি ওনার জায়গাই ঠিক কিন্তু ওনার কাজগুলো ভুল ছিল।

নাদিম সাহেব কাঁদতে কাঁদতে মেঝেতে বসে পড়েন,আরুশ ওনার সামনে বসে ওনাকে জড়িয়ে ধরেন।আরুশকে জড়িয়ে ধরে উনি আর্তস্বরে কেঁদে উঠেন।ওনার কান্নাই গোটা বাড়িটা কেঁপে উঠছে। একজন বাবার চিৎকার সবার বুককে কাঁপিয়ে দিচ্ছে। উপর ওয়ালা ওনাকে সন্তান দিয়ে ওহ কেড়ে নিয়েছে এই কস্টটা ঠিক কি সেটা ওনার থেকে ভালো কেউ জানে না।

আসতে আসতে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।আরূশ নাদিম সাহেবকে সামলায়।

নাদিম সাহেব সবার কাছে ক্ষমা চাইলেন।

আরুশের বাবা-আজ থেকে আরুশ শুধু আমাদের ছেলে নয় ওহ আপনাদের ওহ ছেলে। আরুশ আপনাদের কাছে নিরব হয়ে থাকবে আর আমাদের কাছে আরুশ।

নিরবের মা আরুশকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলেন

আরুশ- হয়তো আমি আপনাদের সন্তান নয় কিন্তু আপনারা আমাকে নতুন প্রান দিয়েছেন আমি তো মরতে বসে ছিলাম বাবা আর আপনি তো আমাকে নিজের ছেলের মতো আগলে রেখেছিলেন আপনাদের কাছে আমি ঋণী। আপনাদের ঋন আমি শোধ করতে পারবোনা । আমি যতদিন বেঁচে থাকব তত দিন মানবো আপনারা আমার বাবা-মা।
নিরবের মা- বাবা আমার হায়াত তুমি পাও, হাজার বছর বেঁচে থাকো।
আরুশ- দোয়া করবেন।

চাঁদনী তরী আর আরুশের হাত একসাথে করে দিয়ে যায়।

চাঁদনী- তরী তোমার ভালোবাসার সত্যি তাইতো তুমি তোমার ভালোবাসাকে ফিরে পকতজনকতজন ভাগ্য এমন হয়। হারিয়ে যেতে দিয়ো না এভাবেই সব সময় আগলে রেখো।তোমাদের ভালোবাসা পূর্ণতা পাক।

কথাটা বলে চাঁদনী কাঁদতে কাঁদতে চলে যায় ওখান থেকে।নাদিম ওহ ওনার স্ত্রী সবাইকে বিদায় ছানিয়ে চলেযায়।

সোহাগ- সত্যি আরুশ আর তরীর ভালোবাসার তুলনা হয় না। আমি ওদের মাঝে তৃতীয় ব্যক্তি হবো না,ওদের বন্ধু হয়ে ওদের পাশে থেকে ওদের আগলে রাখবো( মনে মনে)

অনেক কস্টে বাড়ির সবাইকে শান্ত করা হয়।অনেক রাত হয়ে গিয়েছিলো তাই আজকে সবাই তরীদের বাড়িতেই থেকে যাই।

রাত্রি বেলা…….

তরী ছাদে একা দাঁড়িয়ে আছে, ভাগ্য কাকে, কখন, কোন মোড় দেখাবে সেটা কেউ জানে না।তরীর সাথে ভাগ্য কম খেলা খেললো না। তবুও প্রাপ্তি একটাই সে তার ভালোবাসার মানুষটাকে ফিরে পেয়েছে।

তরী একধ্যানে আকাশের চাঁদটার দিকে তাকিয়ে আছে হঠাৎ ওর কাঁধে কেউ হাত রাখলো…

তরী পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখলো আরুশ দাঁড়িয়ে আছে।

আরুশ- কি করছো এত রাতে এখানে
তরী- কিছু না রাতের আকাশ দেখছিলাম
আরুশ- মন খারাপ
তরী- না মন খারাপ হবে না তোমাকে ফিরে পেয়েছি এটাই অনেক
আরুশ- আমার যে পুরানো কিছু কথা মনে নেয়
তরী- পুরানো কিছু মনে রাখার দরকার নেয় আমাকে শুধু আগের মতো ভালোবেসো তাহলেই হবে
আরুশ- বাসি তো ভালো খুব ভালো বাসি।

তরী শক্ত করে জড়িয়ে ধরল আরুশকে মনে হচ্ছে ছেড়ে দিলে আরুশ চলে যাবে অনেক দূরে।

তরী চাইনা আরুশকে হারাতে কারন দূরত্ব কতটা কষ্টের সেটা ওহ ভালো করে জানে।

আরুশ ও তরীকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল।

তরী- হারাতে চাই না তোমাকে আমার #হৃদয়ে_তুমি
শুধু তুমি।
আরুশ- হুম তরী আরুশের আর আরুশ তরীর হৃদয়ে।

কয়েকদিন পর….

আগের থেকে পরিস্থিতি অনেকটা ভালো।তবে আরুশের কোনো কিছুই মনে পড়েনি।সবটা নিয়ে আরুশ হতাশ হয়ে থাকে সবসময়, আর্দ্র,আরু আর অদ্রি কেউ আরুশের মনখারাপটা মেনে নিতে পারছে না ।আরুশ সবাইকে সবসময় মাতিয়ে রাখতো আর সেই আরুশ সবসময় চুপচাপ থাকে এটা কেউই মেনে নিতে পারছে না।

আর্দ্র- কি হয়েছে
আরুশ- কিছু হয় নি এমনি
আর্দ্র- কিছু হয়নি বললেই হবে কিছু তো একটা হয়েছে কি হয়েছে বল
আরুশ- আমি পুরোনা কিছুই মনে করতে পারছি না।
আর্দ্র-আরুশ দেখবি সবটা ঠিক মনে পড়ে যাবে তুই এত চিন্তকরিস না ।
আরুশ- এতোদিন হয়ে গেল কিছু তো মনে পড়লো না।
আর্দ্র- ভাই এত মনখারাপ করিস না। আমার কাছে বুদ্ধি আছে বলবো
আরুশ- বল
আর্দ্র- সবাই মিলে কোথাও ঘুরে আসলে হয় না।
আরুশ- কোথায় যাবি
আর্দ্র- বলযাবি কিনা আমি ব্যবস্থা করছি তাহলে।
আরুশ- আচ্ছা যাব
আর্দ্র- আমি সবটা ব্যবস্থা করে তারপর তোকে বলছি।

আর্দ্র চলে যায়। আরুশ আবার মন খারাপ করে বসে থাকে।

পরেরদিন সকালে ….

সবাই মিলে ঠিক করে ওদের গ্রামের বাড়িতে ঘুরতে যাবে।

আরুশের মা- তোরা সবাই ঘুরে আয় আমরা পড়ে যাবো ক্ষন।
আরু- না মা তোমরাও যাবে
আরুশের বাবা- না মা আমরা যাবো না কারন আমরা ঠিক করেছি আরুশ আর তরীর বিয়েটা তাড়াতাড়ির মধ্যে দেবো তাই তোমরা ঘুরে এসো আমরা এদিকের জোগাড় করি।
আরুশ- বাপি আমি চাইছিলাম আমার পুরানো কথা মনে পড়ার পর আমি তরীকে বিয়ে করবো প্লিজ আমার এই অনুরোধটা রাখো

আরুশের বাবা বাবা প্রথমে রাজি হচ্ছিল না আরুশ অনেক কস্টে রাজি করায় শেষমেষ ঠিক হয় ওরা সকলে যাবে।তরীকে বলা হয় যাবার জন্য।ঠিক হয় পরেরদিন সকালে ওরা সবাই বের হবে গ্রামের বাড়ির উদ্দেশ্যে।

বিকালে….

তরী আজকেই চলে এসেছে বলতে গেলে বাধ্য হয়েছে আসতে। আরু ওকে জোরকরে আনিয়েছে।

তরী- আজকে আমাকে এমনি এমনি আসতে বললি কেন?
আরু- আড্ডা মারবো বলে
তরী- সেটা তো কালকে থেকে এমনিতেই মারতাম
আরু- হুম আজকে তোকে এখানে আসতে বললাম কারন দাদাভাইয়ের মনটা খারাপ সেটা তুই ঠিক করবি
তরী- কি হয়েছে আরুশের
আরু- সেটা তো ওহ বলেনি কিন্তু সবসময় চুপচাপ থাকে।
তরী- আচ্ছা আমি দেখছি

তরী আরুশের ঘরে যায়। আরুশ চুপচাপ ঘরে শুয়ে ছিলো।তরীকে রুমে আসতে দেখে উঠে বসলো

আরুশ- তুমি
তরী- হুম আমি চুপচাপ শুয়ে আছেন কেন
আরুশ- ভালো লাগছে না
তরী- আরুশ কি হয়েছে
আরুশ- তরী আমি অনেক চেস্টা করে ওহ কিছু মনে করতে পারছি না এটা আমার ভালো লাগছেনা আমি আমার পরিবারের কাউকে আগের মতো করে ভালোবাসতে পারছি না আমার দম লাগছে।
তরী- এটা তো তোমার হাতে নেয় কি করবে কিন্তু তাইবলে মন খারাপ করে থাকবে এটা ঠিক নয়, সবাই তো তোমাকে খুশি দেখতে চাই তোমার মনখারাপ কেউ দেখতে পারে না।হ্যাপি থাকবে সবসময়
আরুশ- থাকতে তো হবেই যার এতো সুন্দর একটা বউ আছে তাকে তো হ্যাপি থাকতে হবেই।
তরী- খালি ফাজলামি তাই না।
আরুশ- কি করবো বলো একটা মাত্র বউ
তরী- ওই বউ হয়নি এখনো
আরুশ- হয়ে যাবে
তরী- হুম।

পরেরদিন সকাল…

আর্দ্র- হলো তোমাদের
আরু- আমরা রেডি

আরুর কথা শুনে ওদিকে তাকিয়ে আর্দ্র হা হয়ে যায় রিতাকে অনেক সুন্দর লাগছে । আর্দ্র চোখ ফেরাতে পারছেনা ।আর্দ্রের হাতে একটা চিমটি কাটে আরু

আর্দ্র- আ
আরু- দাভাই আগে অ হয় এটাও জানিস না
আর্দ্র- আমাকে চিমটি কাটলি কেন
আরু- আহারে লাগলো
আর্দ্র- হু
আরু- যখন তুই রিতার দিকে তাকিয়ে ছিলি তখন ওহ লাগছিলো
আর্দ্র-কি
আরু- নজর
আর্দ্র রাগি চোখে আরুর দিক তাকায়
আরু- আমার এতো সুন্দর বন্ধুটার দিকে তুই যেভাবে তাকিয়ে ছিলি নজর লাগছিলো তো
আর্দ্র-তোকে তো আমি
আরু- আইসক্রিম খাওয়াবি
আর্দ্র- দাড়া তোর হচ্ছে

আর্দ্র আরুকে মারবে বলে দৌড়াতে লাগলো।আরু দৌড়ে গিয়ে আরুশের পেছনে লুকিয়ে পড়লোে

আরু- দাদাভাই বাঁচা
আরুশ-আর্দ্র কি হয়েছে
আর্দ্র- তুই সর একবার ওর মজা আমি দেখাচ্ছি। শয়তান মেয়ে
আরু- বাঁচা আমায়
আরুশ- চল ওহ কিছু বলবে না।
আরু- হুম
রিতা- আরু তরী কোথায়
আরু- ওই তো

তরীকে দেখে আরুশ আবার প্রেমে পড়ে যায়।

তরী- চলো আঙ্কেল ডাকছে
আরুশ- চলো সবাই

ওরা সবাই যাবার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।গাড়িতে আরু, আর্দ্র সবাই খুব মজা করছিলো।অদ্রি আর ওর বর কালকে আসবে।

আরুশ গাড়ি চালাচ্ছে তরী পাশে বসে আছে তরী জানালা দিয়ে বাইরের দিকে দেখছে হঠাৎ একজনকে দেখে চমকে উঠলো….

#চলবে….

( ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন,কেমন হয়েছে সবাই বলবেন)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে