#সন্ধ্যা_আকাশের_সুখ_তারা
“নওশিন আদ্রিতা”
পর্ব সংখ্যা—৮
২০.
রুদ্রর হাতটা লাল হয়ে আছে নিরা বুঝলোনা বাসে উঠার সময় তো ঠিক ছিলো তাহলে হঠাৎ এমন লাল বা হলো কিভাবে তার থেকে বড় কথা রুদ্রকে তার কাছে স্বাভাবিক লাগছেনা বরং স্বাভাবিকের চেয়ে একধাপ বেশিই গম্ভির মনে হচ্ছে তার। গম্ভিরতার কারণ টের পেলোনা তার আগেই এক সুন্দরী কিশোরী তার পাশে এসে দাঁড়ায়।
—এক্সকিউজ মি। আমার সিট এটা যদি আপনি আপনার নির্ধারিত সিটে যেতেন।
ভদ্রভাষী মেয়েটির দিকে তাকালো সে একবার পুনরায় দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো রুদ্রর মুখের গরণের দিকে।রুদ্রর কান জোড়াও যে রাগে ইতিমধ্যে লাল বর্ণ ধারণ করেছে তা বেশ বুঝলো নিরা কিন্তু এইসবের মানে কিছুই আন্দাজ করতে পারছেনা শুধু মন তাকে বলছে “এই মহূর্তে এইখান থেকে উঠে গেলে তোর পাশে বসা গম্ভীর রাগী মানুষ টা বোমা হয়ে বিস্ফোরণ ঘটাবে যা তোর জন্য ক্ষতিকর চরম ক্ষতিকর তাই নিজের জীবনকে ভালোবাসলে এইখান থেকে নরিস না ” মনের কথাকেই প্রাধান্য দিলো নিরা। কারণ সে তার জানকে খুব ভালোবাসে সে মোটেও চায়না এই অল্প বয়সে তার জানপাখি উড়ে পালায় যাক।
—আপু আপনি কিছু মাইন্ড না করলে আপনি আমার জায়গায় বসবেন কষ্ট করে।(পিছনের দিকে ইংগিত করে ফিসফিস করর)
নিরার কথায় মেয়েটি পিছনে ফিরে তাকালো। সেখানে ধ্রুবকে একবার পরক্ষ করে নিলো ধ্রুব কানে হেডফোন গুজে চোখ বন্ধ করে বসে আছে। মেয়েটি আর কিছু না বলে মাথা দুলিয়ে সম্মতি জানিয়ে বসে পড়লো ধ্রুবর পাশে।কারো বসার শব্দ পেয়ে ধ্রুব ভাবলো নিরা বসেছে তার পাশে।তাই চোখ বন্ধ করেই মাথাটা এলিয়ে দিলো অগুন্তিক সে মানুষ টার কাধে।মিষ্টি এক ঘ্রাণে এবার সত্যি সত্যি ঘুম চলে এলো ধ্রুবোর আখীজোড়ায়।কিন্তু সে টের পেলোনা পাশের ব্যাক্তিটির মাঝের তোলপাড়। উত্তেজনাই ছটফটিয়ে উঠা সদ্য কিশোরির অবাধ্য মনের বেপরোয়া ভাব।
নিরা পুনরায় মন দিলো রুদ্র দিকে। কানের লালভাব টা কমে স্বাভাবিক বর্ণ ধারণ করেছে।কিন্তু মুখের গম্ভীর্যতা কমেনি মাঝেমধ্যে নিরার মনে হয় ভালোমা ভুল করে মধুর জায়গায় নিম পাতা খাওয়াই দিয়েছে এই অত্যাধিক গম্ভীর একরোখা লোককে।এমন ভাব যেনো হাসলেও ট্যাক্স লাগে।
—এইযে গম্ভির মশাই হাসতে কি ট্যাক্স লাগে।
নিরার এমন কথায় হচকচিয়ে তাকায় রুদ্র তার দিকে
—কি বলতে চান।
—বাংলা কথা বলতে চাইছি। হাসতে কি ট্যাক্স লাগে?
—নাহ তো(থতমত খেয়ে)
—তাহলে হাসেন না কেন সবসময় এই গম্ভির ডাকুর মতো মুখ করে থাকেন কেন আজব।
—আমি ডাকু(চোখ ছোট ছোট করে)
—এইযে আপনি নিজেই স্বিকার করলেন আপনি ডাকু আমার কি করার।
—আপনার সমস্যা কি?
—আপনার এই করল্লা মার্কা ফেস। সকাল দুপুর রাত কি করল্লা কাচা চাবায়ে খান আজব।
—তাতে আপনার কিছু যায় আসার তো কথা না মিস আপনি যায়ে হাসাহাসি করুন না আমার দিকে খেয়াল দিতে কে বলেছে।(বিরক্ত নিয়ে)
নিরার মাথায় টনক নড়ে। তারমানে এই গম্ভির বেডা এইজন্য গাল গুলো টমেটো করে রেখেছে। আচ্ছা নিরা অন্যকারো সাথে কথা বললে উনার সমস্যা হয় কিন্তু কেনো নিরা বেশি কিছু না ভেবেই জিজ্ঞেস করে উঠে
—আপনি কি জেলাস রুদ্র সাহেব।
রুদ্র এবার শান্ত দৃষ্টি নিক্ষেপ করে নিরার দিকে।নিরা যেনো আলাদাই ঘোরে চলে যায়।রুদ্রর চোখ যেনো চিল্লায় চিল্লায় তাকে বলার চেষ্টা করছে
“হ্যা মিস নিরা আমি জেলাস আমার চোখ জোড়া সহ্য করতে পারেনা আপনাকে কারো পাশে একদম না একবিন্দু না আপনি কারো সাথে হাসবেন খেলবেন তা এই মন মানতে নারাজ”।
কিন্তু রুদ্রর এমন ভাবনা কেনোই বা আসবে। রুদ্রর তো অপছন্দের নিরা।তার পছন্দের ঠিক যে বিপরীতে সে। তাহলে এই অনুভূতি এই গম্ভিরতা এই হাসফাস কিসের। তবুও পরিস্থিতিকে স্বাভাবিক করতে বলে উঠলো
—বুঝলেন রুদ্র সাহেব মায়া মায়া চেহারার অধিকারী ছেলেদের গম্ভীরমুখে মানায় না তাদের তো এক চিলতি হাসিতে মানায়। ঠোঁটের কোনে খিলে উঠা আনন্দতে মানায়। এমন বিষন্নভাব মায়া মায়া মুখের জন্য ভয়ংকর কথা।আপনার এই ভয়ংকর কাজে আমার মতো নিশপাপ মেয়ের হার্ট এট্যাক ফ্যাটাক হয়ে মৃতুও বরণ করতে পারি সেজন্য আপনার এই পাপের চরম শাস্তি হওয়া উচিত আপনি অপরাধী।
—আপনিতো চরম সাংঘাতিক মানুষ আপনি কই থেকে বিষয় কই নিয়ে গেলেন আপনাকে এই চলন্ত বাস থেকে ফেলে দেওয়া উচিত আপনি কি সেটা জানেন(চোখ পাকিয়ে)।
—এই মায়া মায়া লোকটির হাতে খুন হতে একবার কেনো সহস্রবার প্রস্তুত গম্ভীরবাবু।
—মিস নিরা আপনি কি কোনভাবে ফ্লার্ট করতে চাচ্ছেন আমার সাথে।(চোখ বড় বড় করে)
—নাহ তাজমহল বানাতে চাচ্ছি সাহায্যে করবেন নাকি। (দুষ্টু হেসে)
রুদ্র হচকচিয়ে উঠে এই মেয়েটির। সাথে কথায় পারা দুস্কর মেয়েটি কখন কোন কথার আড়ালে কি বলে ফেলে বুঝা দায়। তাই কথা না বাড়িয়ে চোখ বন্ধ করে রইলো রুদ্র। নিরাও হেসে রুদ্রর মুখ পানে তাকালো। কিছুক্ষন পরে বিরক্তিতে কপাল কুচকে রুদ্র চোখ মেলে তাকালো।তখন ও নিরা একইভাবে তার দিকে চেয়ে আছে দেখতেই তেতে বলে উঠলো
—সমস্যা কি এইভাবে তাকায় আছেন কেনো। আমার অসস্তি হচ্ছে চোখ সড়ান সরান বলছি।
—আমার চোখ আমার ইচ্ছা আমি আপনার দিকে তাকাই নাকি অন্যদিকে আপনার কথা শুনবো কেন এখন আমার ইচ্ছা নেই অন্যদিকে তাকানোর বুঝলে মায়ামুখো ছেলে।
—মিস নিরা আপনি কি জানেন আপনাকে এখন রাস্তার বখাটে ছেলেদের ন্যায় লাগছে যার যাওয়া আসা মেয়েদের উক্তত্ত করে।
—আর আপনাকে লাগছে ঠিক সে মেয়েদের মতো যারা উক্তক্তের শিকার হয়।
(চোখ টিপ দিয়ে)
—আপনি আমাকে রীতিমতো ইফটিজিং করছেন।(অসহায় কন্ঠে)
—আমাকে কি ইভটিজার মনে হচ্ছে সুন্দরী এক নারীকে ইভটিজার বলার অপরাধে আপনাকে দেশ থেকে বিতারিত করা উচিত।
রুদ্রর এবার মন চাচ্ছে নিজের চুল নিজেই ছিড়তে। কিন্তু বেচারার চুল তার খুব প্রিয়। তারউপরে সামনে রোজা ঈদ এই মহূর্তে চুলে হাত দেওয়া যাবেনা টাক মাক পড়লে সমস্যা সামনে ঈদের জন্য মেলা প্ল্যানিং তার। তার থেকে বড় কথা এখনো বিয়ে করেনি এই মহূর্তে টাক হলে মেয়ে পাওয়া দুস্কর।তখন কিহবে তার জন্য দেশের অর্থনীতি পিছিয়ে যাবে ভেবেই চুল ছিড়ার প্ল্যানিং বাদ।
—বেশ তবে আমিও আপনার দিকে তাকাবো।
—তাকান তাকান মানা নেই আমি যথেষ্ট সুন্দরী একটা মেয়ে তাকানো টাই স্বাভাবিক বরং না তাকানোটাই অস্বাভাবিক।
রুদ্রর এবার কপালে হাত এই মেয়েকে নাস্তানাবুদ করতে যেয়ে সে নিজেই নাস্তানাবুদ হয়ে যাচ্ছে।যা মোটেও সভনিয় না একে তো ছেলে হয়ে একটা মেয়ের কাছে ইভটি*জিং এর শিকার হচ্ছে। এরচেয়ে লজ্জাজনক আর কিছু হতে পারে বলে তার মনে হচ্ছেনা। ছেলে জাতি যে তার উপর হায় হায় করছে তা সে টের পাচ্ছে।কিন্তু কিছু করার নেই কারণ সামনের মেয়েটির দিকে এক ভাবে তাকিয়ে থাকাও তার পক্ষে সম্ভব না আর গম্ভীরতার খোলস ছাপিয়ে নিরার মতো মজা করাও তার ধাচের বাহিরে। এখন তো নিজের উপর তার নিজের ই রাগ লাগছে।এরচেয়ে ভালো হতো নিরা ওই ধ্রুবের পাশে বসতো কিন্তু তাতেও বিপত্তি সাধলো রুদ্রর মন। তার মন কিছুতেই নিরাকে ধ্রুবের পাশে বসতে দিতে রাজি না কোনভাবেই না।
—শা* মন মস্তিষ্ক দুইটাই আমার সাথে মীরজাফর গীরি করছে।তার উপর নতুন মুসিবত হয়েছে এই অসম্ভব অসভ্য এক নারী।তার চোখ মুখে থাকা দুষ্টুমী ভাব যে তার প্রতি আমাকে আরও টানে নিচ্ছে সে কি এই নারী বুঝেনা নাকি বুঝে শুনে এমন করে আজ থেকে এই নারী অসভ্য নারি। মায়াবতী রহস্যময়ো বাচ্চা সব নাম বাদ আজ থেকে এই নারী অসভ্য নারী যার রন্ধে রন্ধে আমাকে জ্বালানোর ফন্দি যার প্রতিটি কাজই আমার পছন্দের বিরুদ্ধে তবুও আমাকে তার দিকে টানে সব ছাড়িয়ে সব কিছু ভুলিয়ে।
রুদ্র নিজের মনে কথা বলতে বলতে যে এতোক্ষন সে তার অসভ্য নারীরদিকেই তাকিয়ে ছিলো সে টের ই পায়নি।তার অসভ্য নারীটির দুষ্টু চোখের হাসি যে এখন একরাশ নেশায় পরিনত হয়েছে তা আর বুঝলোনা রুদ্র।
চলবে?