শিশির বিন্দুর জীবন পর্ব-০১

0
701

#শিশির_বিন্দুর_জীবন
#লেখিকাঃশুভ্রতা_শুভ্রা
#পর্বঃ১

রাহাত আকাশের পূর্ণ চাঁদের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে বলতে লাগল

-“আফরিন আমি তোমাকে বিয়ে করতে পারবো না। আমি কখনোই আমার সাত বছরের ভালোবাসাকে ভুলে তোমাকে বিয়ে করতে পারবো না। আর তুমি তো ভালো করে জানো আমি তোমাকে সবসময় নিজের ছোটবোন ভেবে এসেছি। আমি কখনো তোমার বোনের জায়গায় তোমাকে বসাতে পারবোনা।”

রাহাতে কথা শুনে আফরিন পানিপূর্ণ চোখে রাহাতে দিকে তাকালো। মুখে তার হাসি ফুটে উঠলো। আফরিন ও চাঁদের দিকে তাকিয়ে বলল

-“ভাইয়া আমি কখনো ভাবতে ও পারিনি যে আমাকে এমন একটা পরিস্থিতিতে পরতে হবে। ভাইয়া আমি অনেক চেষ্টা করেছি বিয়েটা আটকানোর কিন্তু ফলাফল শূন্য। সবাই খালি ইশরাকে কে দেখবে এই কথা বলে আমাকে আটকে দেয়। আমি কি বিয়ে না করে ওকে মানুষ করতে পারিনা!”

রাহাত বলল
-“অবশ‍্যই তুমি তা পারবে। আমার মা বাবাও আমাকে একই কথা বলছেন। যাইহোক তুমি টেনশন নিওনা। আমি এই বিয়ে প্রাণ থাকতে হতে দিবো না। কথা দিলাম তোমায়।”

——————-

ওই রাতের কথা মনে পড়তেই আফরিন অঝোর ধারায় ইশরাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে লাগল। রাহাত তার কথা রেখেছে বিয়েটা সে হতে দেয়নি। তাই তো সে নিথর দেহ নিয়ে পড়ে আছে সাদা কাফন পেঁচিয়ে। আফরিনের মা আফরিনকে ঝাকিয়ে বলল

-“তুই কি বলেছিলি ওকে। যে ছেলেটা সুইসাইড করলো। মুখপুড়ি কি করলি এটা। ছেলেটা আজ তোর জন‍্যই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে।”

আফরিন আরো হুহু করে কেঁদে উঠলো। কিছু বলতে নিবে তার আগেই রাহাতে মা গম্ভীর কন্ঠে বললেন

-“আপা ওকে কেন বোকছেন। ও কি করেছে। আমার ছেলে নিজের ইচ্ছামতোই এমনটা করেছে। আর ও একটা ছোট্ট মেয়ে। আর আমি আমার ছেলেকে চিনি।”

রাহাতের মায়ের অবাক করা এমন স্বাভাবিক কন্ঠ শুনে অনেকটাই অবাক হলেন আফরিনের মা। আফরিনের মা কিছু বলতে নিলেও কি যেন ভেবে থেমে যায়।

হটাৎ একজনকে দেখে অবাকের শেষ সীমায় পৌঁছে যায় আফরিন। কান্না থেমে হিচকি পড়তে থাকে। ছেলেটা দেখতে একদম রাহাতের মতোই কিন্তু সে একদম ধবধবে ফর্সা আর রাহাত ছিল শ‍্যামলাবর্ণের। তাছাড়া আর কোনো পার্থক্য খুঁজে পেল না আফরিন।

ছেলেটি রাহাতের কাফন মোড়ানো দেহের পাশে ধপ করে বসে পড়লো। ছেলেটির চোখটা লাল বর্ণের ধারণ করেছে। মুখটা ফেকাসে হয়ে গিয়েছে। সবটাই তীক্ষ্ণ চোখে দেখলো আফরিন।

রাহাতের মা ছেলেটা ঘাড়ে হাত রেখে বললেন

-“বাবা, রাদ!”

রাদ রক্তচোখ নিয়ে তাকালো রাহাতের মায়ের দিকে। হুট করেই রাদ রাহাতের মায়ের কোমর জরিয়ে ধরে বলল

-“মা এমনটা কিভাবে হলো। আমার ভাইয়া তো কখননোই এমন করার মানুষ ছিল না। তাহলে কিভাবে এমনটা হলো মা।”

আফরিন আরো অবাক হলো তার জানা মতে রাহাতের ছোট বোন আছে ভাইও যে আছে তার জানা ছিল না।

আফরিনের ভাবনায় ছেদ পড়লো ইশরার কান্নার আওয়াজ শুনে। ইশরার কান্নার গতি বাড়তে দেখে আফরিন উঠে দাড়ালো। কিছু সময় ওকে নিয়ে ঘুরলো। তারপর ও বাচ্চাটা থামছেনা। আফরিনের নিজেকে বড় অসহায় মনে হচ্ছে। ইশরার এমন কান্না দেখে আফরিনের ও চোখ বেয়ে নোনা জল গড়িয়ে পরলো। কি করবে সে কিছুতেই বুঝতে পারছেনা। পরিস্থিতি কেমন যেন ঘোলাটে লাগছে। ছোট বাচ্চাটা হয় তো আপনজন হারানোর আভাস পেয়েছে।

আফরিন কি যেন ভেবে তাড়াতাড়ি রান্নাঘরে গেল। তাড়াহুড়ো করে দুধ গরম করে ফিডারে ঢালতে গিয়ে কিছুটা দুধ তার হাতেও পড়ে গেল। কিন্তু সেদিকে সে পাত্তা না দিয়ে দুধ কিছুটা সহনীয় পর্যায়ে এনে খাওয়াতে শুরু করলো ইশরাকে। কিন্তু ইশরা কিছুতে খেতে চাইছেনা। এবার আরো কান্না পেল আফরিনের।

অপরদিকে রাহাতকে দাফন করতে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি চলছে। আফরিন আবার ছুটে গেল দরজার দিকে। নিজের কোনো ভাই না থাকায় রাহাতকে নিজের আপন বড় ভাই মনে করেছে আফরিন। রাহাতও আফরিনকে নিজের ছোট বোনের মতো স্নেহ করত।

হুট করেই ইশরা থ মেরে গিয়েছে। কান্না করছেনা শুধু চোখে পানি নিয়ে তাকিয়ে রইলো রাহাতকে নিয়ে যাওয়ার দিকে। রাহাত চোখের আড়ালে চলে যেতেই ইশরা

-“বাবা, বা‍বা”
বলে কান্না করতে লাগলো। ইশরার এমন অবস্থা দেখে উপস্থিত সবার চোখে পানি চলে এলো। চারপাশে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। সেখানে ইশরার কান্নাটা কেমন একটা শোনাচ্ছে। আফরিন থ মেরে বসে আছে। কি থেকে কি হয়ে গেল। সবকিছুই স্বপ্নের মতো লাগছে। তার কানে শুধু ভেসে আসছে রাহাতের সেই কথা

-“আমি প্রাণ থাকতে এই বিয়ে হতে দিবো না।”

রাহাতের মনের কথা যদি সে আগে বুঝতে পারতো তাহলে সে কিছু না বলেই বিয়েতে রাজি হয়ে যেতো।

————-

রাত হয়ে এসেছে কিছুক্ষণ আগেই রাহাতের দাফন কাজ সম্পূর্ণ করে সবাই বাসায় ফিরেছে। আফরিনের মা ইশরাকে ঘুম পারিয়ে দিতেছেন। আফরিন সেই বিকাল থেকে রাহাতের রুমে যেখানে রাহাত আর ইশিতার একটা বড় ছবি রয়েছে সেখানে তাকিয়ে বসে আছে। পাশেই ইশরা ঘুমাচ্ছে। আফরিন মনে মনে ছবির দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলো

-“তোমরা এটা কি করলে বলো তো। একবার ও আমার কথা ভাবলে না। আমার কথা নাই ভাবলে একবার তো তোমাদের বাচ্চাটার কথা ভাবতে পারতে। এখন আমি ওকে কিভাবে সামলাবো। আপু তোর উপর আমি অনেক অভিমান করেছি তুই নিজে চলে গেলি তো গেলি এখন ভাইয়াকেও নিয়ে গেলি।”

বলেই ঠোঁট উল্টিয়ে কান্না করতে লাগলো আফরিন। তার চোখ জ্বলে যাচ্ছে। ইশরার জন‍্যই এই বাড়িতে থাকা তাদের। আফরিন একবার তাকালো ইশরার দিকে। বাচ্চাটার মুখও ফেকাসে হয়ে গেছে। সকাল থেকে কিছু খায়নি। বাবা বাবা করতে করতেই ঘুমিয়ে গিয়েছে কিছু খায়নি।

আফরিন ইশরার কাছে এগিয়ে গিয়ে ইশরার মাথায় হাত রাখতেই আতকে উঠলো

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে