শিশির বিন্দুর জীবন পর্ব-০২

0
75

#শিশির_বিন্দুর_জীবন
#লেখিকাঃশুভ্রতা_শুভ্রা
#পর্বঃ০২

আফরিন ইশরার কাছে এগিয়ে এসে মাথায় হাত রেখে আতকে উঠলো। ইশরার গা জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে। আফরিন আর বসে না থেকে ছুট লাগায় রুমের সঙ্গে লাগানো বাথরুমে। আশেপাশে কোনো পাতলা কাপড় না পেয়ে নিজের ওড়নার এক অংশ ভিজিয়ে আবার ইশরার কাছে এসে বসলো আফরিন। ভেজা ওড়না দিয়ে ইশরার মুখ মুছিয়ে দিলো। কপালে জল পট্টি দিতে লাগলো।

হুট করেই ইশরা বমি করতে লাগলো। আফরিন ইশরার এমন অবস্থা দেখে ভয় পেয়ে গেল। কি করবে সে বুঝতে পারলো না। সে দৌড়ে গেল রুমের বাহিরে রাত আড়াইটা বাজে। আশেপাশে প্রায় সবাই ক্লান্তি নিয়ে ঘুমিয়েছে। কিভাবে সে ডাকবে কাউকে।

পাশের রুমে লাইট জ্বলতে দেখে আফরিন কিছু না ভেবেই দৌড়ে রুমে প্রবেশ করলো। দরজাটা আটকানো ছিল না বলে তার আর ধাক্কাতে হলো না।

রুমে রাদ শুয়ে ছিল ওর মায়ের কোলে মাথা রেখে। ওর মা রাবেয়া বেগম আধশোয়া হয়ে চোখ বুজে ছিল। আফরিনের এমন উপস্থিতিতে দুইজনই খানিকটা অবাক হয়। কেউই এটার জন‍্য প্রস্তুত ছিল না।

আফরিন সেইদিকে পাত্তা না দিয়ে দ্রুত বলল
-“ইশরা কেমন যেন করছে। প্লীজ, আপনারা একটু দেখে যান।”

রাবেয়া বেগম আতকে উঠে বলল
-“কি বলছো!”

বলেই হনহনিয়ে রাবেয়া বেগম ইশরার রুমের দিকে যেতে লাগলো। পিছু পিছু আফরিন আর রাদও গেল।

————

ভোর হয়ে যাচ্ছে কিন্তু এখনো পযর্ন্ত ইশরার জ্বর কমছেনা। ইতিমধ্যে সবাই চিন্তিত হয়ে হাজির হয়েছে রাহাতের রুমে। রাদ এবার দরজার থেকে এগিয়ে এসে বলল
-“দেখি সরেন তো সবাই। আমি আর অপেক্ষা করতে পারবোনা। অনেক দেখেছি আপনাদের চেষ্টা এখন আর দেখতে পারছিনা। ইশরাকে আমি এখনই হাসপাতালে নিয়ে যাবো।”

বলেই ইশরাকে কোলে নিয়ে রাদ রওনা হলো। দরজার বাহিরে গিয়ে কি যেন মনে করে আবার রুমে এসে আফরিনকে ইশারা করে বলল
-“এই যে মিস, আপনিও আসুন আমার সাথে।”

আফরিন রাদের থেকে চোখ ফিরিয়ে ওর মায়ের দিকে তাকালো। আফরিনের মা বললেন
-“কেন বাবা? ও গিয়ে কি করবে? আমি না হয় যাই।”

রাদ বিরক্তি নিয়ে বলল -“আমি ড্রাইভ করবো। তাই ইশরাকে ধরে রাখার জন‍্য নিয়ে যেতে চাচ্ছি। আপনাদের আর কষ্ট করতে হবেনা।”

আফরিনের মা হ‍‍্যাঁসূচক উত্তর দিতেই রাদ রওনা হলো সামনের দিকে। আফরিনও গায়ের ওড়নাটা ঠিক করে ধীর পায়ে এগিয়ে যেতে লাগল।

রাদ আফরিনকে গাড়ির দরজা খুলে দিলো বসার জন‍্য। আফরিন এসে গাড়ির পিছনে বসতে নিবে তখনই রাদ খানিকটা রাগী কন্ঠে বলল
-“আমাকে দেখে কি ড্রাইভার মনে হচ্ছে। চুপচাপ সামনে এসে বসো।”

আফরিন কিছু না বলে সামনের সিটে এসে বসলো। রাদ ওর কোলে ইশরাকে দিতে নিলেই ইশরা বলল
-“বাবাই তুমি কোথায় ছিলে এতক্ষণ?”

রাদ বুঝতে পারলো জ্বরের ঘোরে এমনটা বলছে। সেইদিকে পাত্তা না দিয়ে ইশরাকে আফরিনের কোলে দিয়ে গাড়ির দরজা বন্ধ করে নিজে গিয়ে গাড়ি চালানো শুরু করে।

কিছুক্ষণের মধ্যেই তারা হাসপাতালে পৌঁছে যায়। রাদ তার এক পরিচিত লোকের সঙ্গে দেখা করে কথা বলে সব ব‍্যবস্থা করে ইশরাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যায়।

—————

ডাক্তার ইশরাকে কিছু ঔষধ দেয়। আর ওকে হাসিখুশি রাখতে বলে। দুই বছরের বাচ্চা অনুপাতে ও অনেকটা চাপ সহ‍্য করেছে। ওকে সময় দেওয়ার কথাও বলে দেয়।

—————-

রাদ ইশরাকে কোলে নিয়ে ডাক্তারের কেবিন থেকে বাড়াতেই দেখে আফরিন চুপ করে একটা চেয়ারে বসে আছে। রাদ একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে এগিয়ে যায় আফরিনের দিকে।

আফরিন রাদকে দেখে উঠে দাড়ায়। রাদ ইশরাকে আফরিনের কোলে দিয়ে পাকিং এ যেতে বলে। রাদ কিছু ঔষধ কিনে গিয়ে গাড়িতে বসে।

ইশরা আফরিনের কোলেই ঘুমিয়ে গেছে। ঔষধ গুলো রেখে রাদ গাড়ি চালাতে লাগলো। রাদ গাড়ি চালাতে চালাতে বলল
-“আমি এই বিষয়টা অনেক অপছন্দ করি।”

আফরিন প্রশ্নবিদ্ধ চোখে রাদের দিকে তাকালে রাদ বলল
-“বড় বোন মারা গেলে ছোট বোনকে তার দুলাভাইয়ের সঙ্গে বিয়ে দেওয়া। এতে যদি ছোট বোনের মত না থাকে তাহলে জোর করে বিয়ে দেওয়া হয়। এটা ভাইয়াও খুব অপছন্দ করতো। একবার কি ছোট বোনের লাইফের কথা ভাববেনা কেউ। আমি আর ভাইয়া বিয়ে নিয়ে নারাজ ছিলাম। কিন্তু কেউ মানে নি। আমি জানি তোমার ফ‍্যামিলিও তোমার মতামত নেয়নি। এইসব অসহ‍্য জিনিসের জন‍্য আমি বিদেশে চলে গিয়েছিলাম। সে যাইহোক ভাইয়া এটা ঠিক করেনি। ইশরার কথা ভাবা উচিত ছিল।”

আফরিন চুপ করে শুধু শুনলো রাদের কথা কিছু বলল না।

বাসায় পৌঁছে ইশরাকে আস্তে করে কোলে নিলো যাতে ওর ঘুম না ভাঙে। আফরিন গাড়ি থেকে নেমে ইশরাকে নিতে চাইলে রাদ বলল
-“সমস‍্যা নেই। তুমি যাও।”

————

বিকেলে সবাই একসঙ্গে বসেছে আলোচনা নিয়ে। আলোচনার বিষয় বস্তু হলো ইশরা। ইশরা এতোদিন নানু বাসায় ছিল। কিন্তু বর্তমানে রাহাতের মা রাবেয়া বেগম নিজের কাছে রাখতে চাচ্ছেন ইশরাকে।

রাবেয়া বেগম বললেন
-“ইশরাকে আমি আমার কাছে রাখি। আপনাদের যখন ওর কথা মনে পড়বে ওর কথা আপনারা ওকে দেখতে আস‍বেন। আর বাসা তো বেশি দূরেও না।”

আফরিনের মা নাকোচ করে বলল
-“কিন্তু ইশরা তো আফরিন ছাড়া থাকে না।”

রাবেয়া বেগম বলল
-“সমস‍্য নেই অভ‍্যাস করে ফেললে আর কোনো সমস্যা হবেনা।”

আফরিনের মা কিছু বলতে নিবে তখনই রাদ ইশরাকে কোলে নিয়ে এসে রাবেয়া বেগমকে বললেন
-“আম্মু, আমি ইশরাকে নিয়ে একটু বাহিরে থেকে ঘুরে আসি।”

রাবেয়া বেগম বললেন
-“আচ্ছা যা তাড়াতাড়ি ফিরিস। ওর শরীর‍টা তো ভালো না।”

রাদ হ‍্যাঁসূচক জবাব দিয়ে বেড়িয়ে গেল। আফরিনের মা বললেন
-“বাহ আপা, ইশরা তো ভালোই আপনার ছোট ছেলের সঙ্গে মিশে গিয়েছে।”

রাবেয়া বেগম ওদের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো
-“আপা আমার ছেলেটা বাচ্চাদের অনেক পছন্দ করে তো। আর রক্তের একটা সম্পর্ক আছে। হয় তো নিজের বাবার ছায়া পাচ্ছে মেয়েটা।

#চলবে

( আসসালামু আলাইকুম। ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবে। 💛)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে