যেই তোমার হাওয়া আমাকে ছুঁলো পর্ব-০২

0
359

যেই তোমার হাওয়া আমাকে ছুঁলো
লেখনীতে : নাফিসা তাবাসসুম খান
২.

নিজের পার্টি অফিসে বসে সকাল সকাল খবরের কাগজে চোখ বুলাতে ব্যস্ত রুবেল। সেই মুহুর্তে হন্তদন্ত হয়ে সুজন রুমে প্রবেশ করে বলে উঠে,

“ ভাই। একটা সমস্যা হইয়া গেসে। “

সাত সকালে সুজনের এই কথা শুনে মেজাজ বিগড়ে যায় রুবেলের। সে বিরক্তিকর ভঙ্গিতে বলে উঠে,

“ তোর কাজই কি আমাকে আইসা খারাপ খবর দেওয়া? “

সুজন মনে মনে বিরক্ত হয়। এখন খারাপ কোনো খবর থাকলে সেটা এসে সবার আগে রুবেলকে জানানোও তার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। এতে তার দোষ কোথায়? রুবেল হাতের সংবাদপত্রটা টেবিলের উপর রেখে বলে,

“ কি হইসে? কি সমস্যা? বল শুনি। “

“ সিয়ামের উপর আমাদের যেই ছেলেরা হামলা করছিলো গতরাতে তারা সকলে দূর্বৃত্তদের মুখোমুখি হয়। সবাই আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি। “

রুবেল অবাক হয় না। এরকমটা হওয়ারই ছিলো। এরকম একটা ঘটনার পর পার্থ মুন্তাসির চৌধুরী যে চুপচাপ বসে থাকবে না তা তার ভালো করেই জানা ছিলো। কিন্তু যদি কাজের কাজ করে তারপর এই ছেলেগুলো আহত হতো তাহলে তার আর আফসোস থাকতো না। রুবেল বেরস মুখে জিজ্ঞেস করে,

“ কোন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে ওদের? “

“ গ্রীন কেয়ার হসপিটাল। “

রুবেল ভ্রু কুচকে প্রশ্ন করে,

“ এই হসপিটালেই না সিয়াম ভর্তি? “

“ হ্যাঁ ভাই। “

রুবেল চুপচাপ বসে কিছু একটা ভাবে। পরপর বলে উঠে,

“ ফুলের তোড়া নিয়ে আসতে বল। আমরা হসপিটালে যাবো। “

সুজন কিছুটা আতংকিত হয় রুবেলের কথা শুনে। হসপিটালে হয়তো পার্থও আছে। দুজন মুখোমুখি হলে কি হবে? সুজনের ভাবনার মাঝেই রুবেল রাগী স্বরে তাকে ধমকে উঠে। সাথে সাথে সে দ্রুত পায়ে বেরিয়ে যায়।

__________

সকাল সকাল নাস্তার টেবিলে বসে আছে চৌধুরী ভবনের সকল সদস্য। ঘরের রাধুনি জমিলা বেগম সকলকে নাস্তা পরিবেশন করতে ব্যস্ত। পার্থর অষ্টাদশী ছোট বোন পৃথা সাত সকালে নাস্তায় পরোটা এবং গরুর মাংসের ভুনা দেখে কিছুটা মুখ কালো করে বলে,

“ খালা। আমার আলুভাজি কোথায়? সকাল সকাল আমি মাংস খেতে পারিনা, তা তুমি জানোনা? “

পৃথার পাশে বসা ইউনিফর্ম পরিহিত শোভন তার মাথায় গাট্টা মেরে বলে,

“ খাবার খেতে পারছিস তার জন্য শুকরিয়া আদায় করতে শিখ। সবসময় খালি অভিযোগ করে বেড়াবি না। তুই জানিস কত মানুষের ভাগ্যে এই নাস্তাটুকু জুটে না? “

পৃথা কিছু বলার আগেই আফজাল সাহেব সামান্য গলা ঝাড়া দিয়ে বলে উঠে,

“ এভাবে মাথায় মারাটা আমার পছন্দ নয় তা কি তুমি জানোনা? “

শোভন সামান্য হেসে মুখে সামান্য পরোটা ছিড়ে পুরে দেয়। পরপরই সে বলে উঠে,

“ তোমার কাছে তো আমার চাকরিও অপছন্দ আব্বা। কিন্তু আমি কবে সেটার তোয়াক্কা করেছি? “

এতক্ষণ ধরে নীরব ভূমিকা পালন করা পার্থ এবার নীরবতা ভেঙে বলে উঠে,

“ খাওয়ার সময় এতো কথা হচ্ছে কেনো টেবিলে? আর শোভন বাদদে না। পৃথার যা মর্জি তা খাক। ক্ষতি কোথায়? “

শোভন কোনো জবাব দেয় না। সে গটগট করে এক গ্লাস পানি খেয়ে উঠে সোজা বেরিয়ে যায়। আফজাল সাহেব এবং পার্থর সাথে সবসময়ই শোভনের এক ধরনের নীরব দ্বন্দ্ব চলে আসছে। এর মূল কারণ বলা যেতে পারে তাদের পেশাগত ভিন্নতা। নিজের চাকরির সুবাদে রাজনীতির সম্পর্কে বেশ অনেক তথ্যই শোভনের অজানা নয়। ক্ষমতার অপব্যবহারের হাজার প্রমাণের ফলেই এই রাজনীতির প্রতি সে সম্মান হারিয়েছে বহু আগেই। তার আচরণে সেই বিষয়ের বহিঃপ্রকাশ প্রায়ই লক্ষ্যনীয়।

শোভন বেরিয়ে যেতেই সাদিকা বেগম মুখ খুলে,

“ ছেলেটা ঠিকঠাক নাস্তা না করে চলে গেলো। আর ও ভুল কি বললো? পৃথার আব্বা আপনি মেয়েকে লাই দিয়ে দিয়ে মাথায় তুলেছেন অনেক। মেয়ে মানুষের এতো মর্জি দেখানো ভালো না। দুইদিন পর শশুর বাড়ি গেলে ওখানে রোজ সকালে কে ওর জন্য আলু ভাজি নিয়ে বসে থাকবে? “

জমিলা বেগম ইতিমধ্যে আলুভাজি এনে পৃথার সামনে দিয়েছে। পার্থ মায়ের কথার জবাব দিয়ে বলে উঠে,

“ আমার বোনের যা ইচ্ছা তা করবে। অযথা ওকে শাসন করো না তো আম্মা। আমাদের সাথে মর্জি দেখাবে না তো কার সাথে দেখাবে? “

ভাইয়ের আস্কারা পেয়ে পৃথা আহ্লাদে গদগদ হয়ে ভাইয়ের একহাত জড়িয়ে ধরে বলে,

“ আই লাভ ইউ বড় দা। “

পার্থও হেসে বোনের মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। পার্থ এবং শোভন দুজনের কাছেই তাদের বোন খুব আদরের। পার্থর বয়স যখন ১৪ এবং শোভনের বয়স যখন ৬ তখন পৃথার জন্ম হয়। বাড়ির সবাই পৃথাকে খুব আদর করলেও সবার আদরের ধরণ আলাদা। যেমন আফজাল সাহেব এবং পার্থ সবসময়ই পৃথার কোনো আবদার ফেলে না। অপরদিকে সাদিকা বেগম এবং শোভন মাঝেমধ্যে টুকটাক শাসন করে। এজন্য দেখা যায় পৃথাও নিজের আব্বা এবং বড় দা কে একটু বেশিই পছন্দ করে।

নাস্তার মাঝেই পার্থর ফোন বেজে উঠে। সে কল রিসিভ করে টুকটাক কথা বলে ফোন রাখতেই আফজাল সাহেব বলে,

“ তোমার সমাবেশের প্রস্তুতি কেমন চলছে? “

“ এখন পর্যন্ত তো ভালোই চলছে সব কিছু। আশা করছি সামনেও কোনো ঝামেলা হবে না। “

“ আমি বলবো যে ঝামেলা হতে পারে সেটা মাথায় রেখেই প্রস্তুতি নাও তোমরা। একে তো সরকার বিরোধী দলের অংশ তোমরা। তার উপর এই জেলায় বিপরীত পার্টির তুলনায় তোমার সমর্থক বেশি। সুতরাং রুবেল হোসেন সহ বাকি বিরোধী পার্টিরাও কিন্তু ঝামেলা বাধানোর চেষ্টা করতে পিছুপা হবে না। “

পার্থ মৃদু হেসে মনে মনে বলে,

“ রুবেল আগে নিজের ঝামেলা সামলে কুল পায় কিনা সেটা দেখেন বসে বসে। “

__________

ঢাকার সনামধন্য এক কলেজ হতে এইবার উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছে পৃথা। আজ তার রেজাল্ট দেওয়ার কথা। সেজন্য নাস্তা করে ১০ টার দিকেই কলেজ প্রাঙ্গণে এসে উপস্থিত হয়েছে সে। যদিও তার রেজাল্ট নিয়ে তেমন একটা চিন্তা নেই। কারণ একদম খারাপ পরীক্ষা দেয় নি সে। তাই কলেজের একপাশে দাঁড়িয়ে নিজের দুই বান্ধুবীর সাথে আড্ডায় মশগুল সে।

১১ টা বাজতেই নোটিশ বোর্ডে রেজাল্ট টাঙিয়ে দেওয়া হয়। ভীড় ঠেলে নিজের রোল এবং রেজিস্ট্রেশন নাম্বারের পাশে জিপিএ ৫ দেখতে পেয়েই সে সামান্য হেসে ভীড় ছেড়ে বেরিয়ে আসে। পার্স থেকে ফোন বের করে নিজের আব্বাকে কল দেওয়ার উদ্দেশ্যে। যদিও তার আব্বা আর বড় দা ইতিমধ্যে দুটো গরু আনিয়ে রেখেছে তার আম্মার আদেশে। তার আম্মা পুরান ঢাকার মেয়ে হওয়ায় এসব বিষয়ে বেশ সৌখিন। যেকোনো উপলক্ষেই তিনি কাচ্চি কিংবা বিরিয়ানি রান্না করে এতিমখানায় খাবার পাঠান। নিজের মেয়ের রেজাল্ট উপলক্ষে আজও তার ব্যতিক্রম নয়।

কল লিস্ট থেকে আফজাল সাহেবের নাম্বার বের করে ডায়াল করার পূর্ব মুহুর্তেই একটি অমায়িক পুরুষালি কণ্ঠস্বর সামনে থেকে বলে উঠে,

“ এক্সকিউজ মি প্লিজ। “

পৃথা কিছুটা প্রশ্নবোধক দৃষ্টি মেলে সামনে তাকাতেই দেখতে পায় হালকা আকাশি রঙের একটা শার্ট গায়ে জোড়ানো পুরুষ তার দিকে তাকিয়ে আছে। পৃথা অবাক স্বরে বলে,

“ আমাকে ডাকছেন? “

“ জ্বি। একচুয়্যালি আমরা টিভি চ্যানেল থেকে নিউজ কাভারের জন্য এসেছি। আপনার কি এক মিনিট সময় হবে আমাদের সাথে কো অপারেট করার জন্য? “

পৃথা এতক্ষণে খেয়াল করে সেই পুরুষের পিছনে একজন ক্যামেরা হাতে দাঁড়িয়ে আছে। অমায়িক হাসির এই পুরুষকে ফিরিয়ে দিতে ইচ্ছা হয় না পৃথার। সে সম্মতি জানিয়ে বলে,

“ শিওর। “

ইন্টারভিউ শেষ হতেই সেই লোকটা পৃথাকে উদ্দেশ্য করে বলে,

“ থ্যাঙ্কিউ এন্ড কংগ্রেচুলেশনস। “

আগুন্তক পুরুষের অমায়িক কথার ধরন এবং মুগ্ধতা মাখা মুখশ্রী আচমকা অষ্টাদশীর মনে দাগ কাটে। আগুন্তক ততক্ষণে অন্য আরেকজন শিক্ষার্থীর দিকে এগিয়ে গিয়েছে। দূর হতে শ্যাম পুরুষের থুতনির কাটা দাগের দিকে দৃষ্টি স্থির রেখেই পৃথা আনমনে সেই ক্যামেরাম্যানকে উদ্দেশ্য করে প্রশ্ন করে,

“ কে উনি? “

ক্যামেরাম্যান কিছুটা অবাক হয়ে পৃথার দিকে তাকায়। পরপর জবাব দেয়,

“ নিউজ ২৪ চ্যানেলের ক্রাইম বিষয়ক জার্নালিস্ট তূর্য রশীদ। “

ক্যামেরাম্যানের জবাবে পৃথা কিছুটা অবাক হয়ে প্রশ্ন করে,

“ ক্রাইম বিষয়ক জার্নালিস্ট এখানে কি করছে? “

“ উনি তো আরেকজনের প্রক্সিতে এসেছে। “

পৃথা দুদন্ড কিছু একটা ভাবে। পরপর মিষ্টি হেসে সেই ক্যামেরাম্যানকে উদ্দেশ্য করে বলে,

“ একটা সাহায্যের প্রয়োজন ছিলো ভাইয়া। “

ক্যামেরাম্যান ভ্রু কুচকে হাস্যজ্জ্বল পৃথার দিকে তাকিয়ে আছে। বুঝার চেষ্টা করছে সে এই অপরিচিত অষ্টাদশীর কি-ই বা সাহায্য করতে পারে?

__________

সবে মাত্র নিজের কেবিনে এসে এক গ্লাস কফি বানিয়ে বসেছে তরী। হুট করে বেশ মাথা ধরেছে তার। ভাগ্যিস আজ ওপিডি নেই তার। নাহলে বেশ ঝামেলা পোহাতে হতো। চিনি ছাড়া এস্প্রেসোতে চুমুক দিতেই সে চোখ বুজে ফেলে। এই একটা জিনিস তার প্রতিদিনের অভ্যাস। এজন্যই তার কেবিনে সবসময় কফি বানানোর প্রয়োজনীয় সব কিছু উপস্থিত থাকে।

ফোনের রিংটোনের শব্দে সে চোখ মেলে তাকায়। স্ক্রিনে ইংরেজি অক্ষরে লেখা পাপা দেখেই তার মুখে হাসি ফুটে উঠে। ফোন রিসিভ করেই আদুরে স্বরে বলে উঠে,

“ তুমি কিভাবে জানলে যে আই ওয়াজ মিসিং ইউ? “

ফোনের অপর পাশ হতে তরীর বাবা হুমায়ুন রশীদ হেসে জবাব দেয়,

“ পাপা তার প্রিন্সেসের মনের খবর বুঝতে কখনো ভুল করে না। “

“ তোমার এই সেমিনার কবে শেষ হবে? ছোট আর আমি তোমাকে অনেক মিস করছি। “

“ এই সেমিনারটা আমাদের হসপিটালের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু ইনশাআল্লাহ শীঘ্রই দেশে ফিরে আসবো। “

ফোনে কথা বলা অবস্থায়ই তরীর রুমে একজন নার্স তড়িঘড়ি করে প্রবেশ করে। তরী প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকায় তার দিকে। নার্স বলে,

“ কেবিন নং ৮০৩ এর পেশেন্টের হঠাৎ করে ইন্টার্নাল ব্লিডিং শুরু হয়েছে ডক্টর। আপনি প্লিজ চলুন। “

তরী তাড়াতাড়ি ফোন রেখে দৌড়ে কেবিন ছেড়ে বের হয়। লিফটে উঠে ৮ম ফ্লোরের বাটনে ক্লিক করেই হাতের এপ্রোনটা পড়ে নেয় সে। লিফট ৮ম ফ্লোরে এসে থামতেই সে লিফট থেকে নেমে বাম দিকে দ্রুত পায়ে এগিয়ে যায়। কেবিন নং ৮০৩ এর সামনে সে দেখতে পায় সিয়ামের মা কে। মহিলা কান্নাকাটি জুড়ে বসেছেন। তার সাথে আরো দুজন ছেলে তাকে সামলানোর চেষ্টায় ব্যস্ত। তরী অপেক্ষা করে না। সে দ্রুত কেবিনের ভিতর প্রবেশ করে।

__________

পার্থ হসপিটালের কাছাকাছি আসতেই খবর পায় সিয়ামের আশংকাজনক অবস্থার কথা। সে তাড়াতাড়ি হসপিটালে এসে ৮০৩ নম্বর কেবিনের সামনে আসতেই আসিফ আর শামীমকে দেখতে পায় সিয়ামের মায়ের সাথে। পার্থ বিচলিত গলায় আসিফকে প্রশ্ন করে,

“ কি হয়েছে? সিয়ামের কি অবস্থা? “

“ ডাক্তার ভিতরে আছে ভাই। এখনো কিছু জানিনা আমরা। “

কেবিনের ভিতর থেকে হন্তদন্ত হয়ে নার্সকে বেরিয়ে যেতে দেখে সিয়ামের মা আর অপেক্ষা করে না। তিনি দৌড়ে কেবিনের ভিতর প্রবেশ করে। পার্থ পিছন থেকে ডাকে,

“ খালাম্মা! “

কিন্তু সিয়ামের মা থামে না। পার্থ উপায়ন্তর না পেয়ে নিজেও পিছু পিছু কেবিনে প্রবেশ করে। তরী ইতিমধ্যে ওটি রেডি করতে এবং ব্লাড ট্রান্সফিউশনের জন্য বলে পাঠিয়েছে। আচমকা এরকম ইন্টার্নাল ব্লিডিং শুরু হওয়াটা খুব অপ্রত্যাশিত ছিলো। সিয়ামের রক্তবমির পাশাপাশি বেশ কিছু লক্ষণ দেখে তরী নিশ্চিত হয় যে ব্লিডিং চেস্ট অথবা এবডোমেনে হচ্ছে।

সিয়ামের মা ভিতরে প্রবেশ করেই ছেলের এরকম ভয়ংকর অবস্থা দেখে আর্তনাদ করে উঠে। পার্থ পিছন থেকে উনাকে সামলানোর চেষ্টা করলেও উনি সেই কথা কানে তুলছেন না। তরী ব্যস্ত গলায় বলে,

“ ম্যাম আপনি প্লিজ বাহিরে ওয়েট করুন। পেশেন্টকে ওটিতে নিয়ে যেতে হবে। “

তরীর কথা শুনে ভদ্রমহিলা কিছুটা সরে দাঁড়ালেও উনার আর্তনাদ বিন্দু পারি কমে না। আচমকা বেডের বাম পাশের মনিটরে শব্দ করে ধীরে ধীরে সমান্তরাল রেখা দৃশ্যমান হয়। সেই সমান্তরাল রেখার সাথে সিয়ামের দেহও নিথর হয়ে পড়ে রয়। দু চোখ বুজে থাকা নিথর দেহকে দেখে সিয়ামের মা নিশ্চুপ হয়ে পড়ে। তরী বেশ শান্ত ভঙ্গিতে সিয়ামের বাম হাতের কব্জি ধরে পালস চেক করে। যখন বুঝতে পারে যে সিয়াম ইতিমধ্যে মৃত তখন নিজের হাতের ঘড়ির দিকে একবার তাকিয়ে পাশের নার্সকে উদ্দেশ্য করে বলে,

“ ডেথ টাইম ১১.৪৭। “

তরীর বলা কথা পার্থর কর্ণগোচর হতেই সে বিস্ফোরিত চোখে তরীর দিকে তাকায়। পরপর নিষ্প্রাণ দৃষ্টি মেলে সিয়ামের চেহারার দিকে একবার তাকায়। গত রাতেও তো ছেলেটাকে দেখে গিয়েছিলো সে। সদা হাসিখুশি ছেলেটা একরাতের ব্যবধানেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লো। মৃত্যু কি এতোই সহজ?

চলবে…

[ কপি করা কঠিনভাবে নিষিদ্ধ ]

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে