মন শহরে তোর আগমন পর্ব -০৮

0
1197

#মন শহরে তোর আগমন
#লেখনীতে – Kazi Meherin Nesa
#পর্ব – ০৮

এতক্ষণে বুঝলাম উনার পেন – পেপার নিয়ে আসার কারণ। আমার ব্যাপারে সবকিছু নোট করবে জাফরান, বিষয়টা বুঝতে পেরে হো হো করে হেসে ফেললাম আমি। জাফরান রাগাম্বিত স্বরে আমায় বললো

“হুয়াট সো ফানি? হাসছো কেনো!”

আমি হাসি থামাতেই পারছিলাম না। কিভাবেই বা থামাবো? যে লোকটার আমার ব্যাপারে কোনো ইন্টারেস্ট নেই সে কিনা হুট করে আমার ব্যাপারে জানার ইচ্ছা পোষণ করছে, এটা কি মানা যায়?

“আপনি আমার পছন্দ অপছন্দ নোট করার জন্য পেন পেপার নিয়ে এসেছেন সঙ্গে করে তাইনা? এখনও না ব্যাপারটা বিশ্বাস করে উঠতে পারছি না”

“কেনো? আমি কি জানতে পারিনা তোমার সম্পর্কে?”

“কিজানি বাবা, আমি কখনো কল্পনাও করিনি যে আপনি আমার সম্পর্কে জানার ইন্টারেস্ট দেখাবেন”

জাফরান মুখ গোমড়া করে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো আমার দিকে, সে যে এইবার সিরিয়াসলি জিজ্ঞাসা করেছে সেটা বেশ বুঝেছি। আমি ছোট্ট হেসে মজার ছলে বলে উঠলাম

“এক মিনিট, এই আপনি জাফরানই তো নাকি জাফরানের মতো দেখতে নকল কেউ!”

“সুরভী, প্লিজ! আমি সিরিয়াসলি বলছি। আমার মনে হলো তোমার ব্যাপারে সবকিছু জানাটা আমার জন্যে ভীষণ দরকার”

“আর এমনটা কেনো মনে হলো আপনার জানতে পারি কি?”

“লুক, আমরা দুজন হাসবেন্ড ওয়াইফ। আর এই রিলেশনশিপে সবথেকে দরকারি টপিক হলো একে অপরের সম্পর্কে জানা। তুমি আমার সম্পর্কে সব জানো, বাট অনফরচুনেটলি আমি কিছুই জানি না। কখনো কেউ তোমাকে আমার ব্যাপারে কিছু আস্ক করলে তুমি তো উত্তর দিতে পারবে কিন্তু আমি পারবো না”

“ওহ তো আপনি এই জন্যে আমার ব্যাপারে জানতে চান? কিন্তু এখনি জানার কি দরকার? মনে হয় না কখনো এমন প্রশ্ন কেউ করবে আপনাকে আর যদি করেও তাহলে তখন আমি আপনাকে ফিসফিস করে না হয় বলে দেবো”

“ব্যস, অনেক মজা করেছো। এবার আমি যা প্রশ্ন করবো তার ঠিকঠিক জবাব দেবে, পরে কিন্তু সুহানার থেকে জেনে আমি কনফার্ম হবো যে তুমি রিয়েল ইনফরমেশন দিয়েছো নাকি রং”

জাফরানের সিরিয়াসনেস দেখে আমি মুখ টিপে হাসছি, লোকটা এতো সিরিয়াস হচ্ছে আমার ব্যাপারে জানতে?

“ভাবিনি আপনি আমার সম্পর্কে কখনো জানতে চাইবেন, আশাও করিনি। তবে আজ যখন নিজের মুখেই বললেন, যা জানতে চান অবশ্যই সব জানাবো আপনায়”

ভ্রু কুঁচকে নিলেন উনি, যেনো আমার কথায় সন্দেহ হচ্ছে ওনার

“সত্যি তো?”

“একদম সত্যি, তারপরও যদি আপনার সন্দেহ থাকে তাহলে সুহার থেকে রিচেক করিয়েও নিতে পারেন”

এরপর আর কি? একে একে উনি আমার থেকে সব শুনে শুনে লিখে ফেললেন। আবার এমনকিছু জিনিস ও জিজ্ঞাসা করেছেন সেগুলো নিজেই কখনো ভেবে দেখিনি, তবুও ভেবে উত্তর দিলাম, সব টুকে নিলেন উনি। শুরুতে ওনার এই কান্ড আমার কাছে একটু পাগলামি মনে হলেও পরে ভালো লাগলো। এতদিন শুধু আমি জানতাম ওনার কথা, এবার উনিও জানবেন আমার ব্যাপারে। একটু একটু করে হয়তো এভাবেই আমাদের সম্পর্ক আর পাঁচটা স্বাভাবিক হাসবেন্ড ওয়াইফ মতো হয়ে যাবে
______________________________

আগামীকাল আবার ও বাড়ি ফিরতে হবে, আমি তাই ব্যাগ প্যাক করে নিচ্ছিলাম। জাফরান তখন নিজের জামাকাপড় রেখে আমারগুলো ব্যাগ থেকে বের করে দিলেন

“এগুলো বের করলেন কেনো?”

“কারণ তুমি কালকে আমার সাথে যাবে না”

“যাবো না মানে? কেনো!”

“তুমি এতদিন পর নিজের বাড়ির এসেছো। মাত্র দুদিন থাকলে, আরো কয়েকদিন থেকে যাও। এখন তো এক্সাম ও শেষ আর তোমার বিশেষ কোনো কাজও নেই বাড়িতে”

“আপনি যাবেন আর আমি এখানে থেকে যাবো এটা হবেনা। একা একা কিভাবে থাকবেন আপনি বাড়িতে?”

“ওহ প্লিজ! ছোটো বাচ্চা নই যে নিজের বাড়িতেও থাকতে পারবো না, তাছাড়া যখন অ্যাব্রোডে পড়তে গেছিলাম তখন কিন্তু একাই থাকতে হতো আমায়। ডোন্ট ফরগেট দ্যাট”

“আমাকে অতকিছু বোঝাতে হবে না। আমিও কালকেই যাবো এটা ফাইনাল”

“জেদ করছো কেনো? আমার জন্যে যেতে চাইছো তো আমি বলছি প্রবলেন হবেনা আমার, আই উইল ম্যানেজ। তুমি থেকে যাও”

ছোটখাটো একটা তর্ক বেধে গেছিলো জাফরানের সঙ্গে আমার, ঠিক তখনই জিনিয়া আপুর ফোন এলো। উনি কথা বললেন, কাল নাকি আপু বাসায় আসবে। এটা শুনে আমার কেমন সন্দেহ হলো, উনিও আমায় রেখে যেতে চাইছেন। আমি ভাবলাম উনি বুঝি আগে থেকেই এসব প্ল্যান করে রেখেছিলেন। আপুর সাথে কথা শেষ করতেই আমি অভিমানী স্বরে বলে উঠলাম

“জিনিয়া আপু আসবে? আপনি তাকে আসতে বলেছেন তাইনা? আপনি আগে থেকেই সব প্ল্যানিং করে রেখেছিলেন তাইনা?”

“একটুও বিশ্বাস নেই দেখছি তোমার আমার ওপর, নাও। জেনির সাথে নিজেই কথা বলে সিওর হও আমি কিছু বলেছি কিনা ওকে”

আমি চোখ নিচু করে আঙ্গুলে ওড়না প্যাচাতে প্যাঁচাতে ঠোঁট উল্টে বললাম

“আমার কারো থেকে কিছু জানার দরকার নেই। আমি জানি ইচ্ছে করে এখানে রেখে যেতে চান আপনি আমায়”

উনি আমার থুতনিতে হাত দিয়ে মুখ তুলে ধরলেন। আমার গোমড়া মুখটা দেখে মিচকি হেসে বললেন

“মেয়েরা নিজের বাড়িতে এলে যেতে চায়না আর তুমি যাওয়ার জন্যে লাগল হয়ে যাচ্ছো! মনে হচ্ছে এখন থেকেই মিস করতে শুরু করছো তুমি আমায়”

“মোটেই না! আমি কোন দুঃখে মিস করবো আপনাকে? আপু আসবে বললেন, এখন তার সাথে দেখা না করে এখানে থাকবো? আপু কি ভাববে!”

“কেউ কিছু ভাববে না, আরো কয়েকটা দিন থাকো। তারপর আমি এসে নিয়ে যাবো”

“কিন্তু”

“আর তুমি যদি নিজের মুখে স্বীকার করো যে তুমি আমায় মিস করতে চাও না তাই আমার সাথে ফিরতে চাও তাহলে নিয়ে যেতেই পারি”

আমি সঙ্গে সঙ্গে ওনার হাতটা সরিয়ে দিয়ে বললাম

“আমি যখন মিস করবোই না আপনাকে তাহলে বলবো কেনো?”

“নো, আই থিঙ্ক ইউ আর গোয়িং টু মিস মি আ লট! তাই সঙ্গে যাওয়ার জন্যে আস্ফাস করছো”

আমার কিছুটা রাগ হলো, একে তো উনি আমাকে আমারই ইচ্ছের বিরুদ্ধে রেখে যেতে চাইছেন এখন আবার মিসের কথা বলছেন! জেদ করে আমিও ওনার মুখের ওপর বলে দিলাম

“নিজের ভুল ভাবনার জগৎ থেকে বেরিয়ে আসুন, আমার তো শুধু আপনার খাওয়া দাওয়ার চিন্তা ছিলো তাই যেতে চাইছিলাম। আপনি আবার খাওয়া দাওয়ার ব্যাপারে তো বেখেয়ালি। এখন যখন আপু আসছে আমার আর চিন্তা নেই”

“ওহ গুড, তাহলে থেকে যাও”

“হ্যা হ্যা থাকবো আর বুঝিয়ে দেবো যে আপনার ধারণা ভুল! আমি একটুও মিস করবো না আপনাকে দেখে নেবেন”

হাসলেন উনি, আমিও রাগ দেখিয়ে বেরিয়ে এলাম। কি ভাবে লোকটা নিজেকে হুমম? আমাকে রেখে যেতে চাইছে! থাকবো আমি, সমস্যা কি? রাতে খাবার সময় ও আমার বাবা মাকে জাফরান বললো যে আমি থাকবো। মুখে যাই বলি কিন্তু মন থেকে চাইছিলাম উনি যেনো আমায় নিয়ে যায় কিন্তু এই বাজে লোকটা যেনো আমার থেকে কয়েকদিনের ছুটি পাওয়ার জন্যে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। জাফরান ফোনে কিছু করছিলেন, আমি বারান্দায় দাড়িয়েছিলাম। একটু পরে রুমে এসে বিছানায় বসে ওনাকে প্রশ্ন করলাম

“আপনি সত্যিই আমাকে নিয়ে যাবেন না কালকে?”

“আবার যেতে চাইছো? তারমানে মিস করবে তুমি আমায়!”

“একটুও না!”

উনি ইচ্ছে করে এমন করছেন বেশ বুঝতে পারছি, আমার মুখ থেকে বলাতে চাইছেন যে আমি মিস করবো ওনাকে। কিন্তু আমিও নাছোড়বান্দা, এতোই সহজে বলে দেবো মিস করবো? অসম্ভব!

“আচ্ছা জাফরান, আমি না হয় আপনাকে মিস নাই করতে পারি কিন্তু, আপনি কি আমাকে মিস করবেন না?”

“কেনো মিস করবো? তোমাকে মিস করার কোনো রিজন নেই আমার কাছে”

“এতোদিন ধরে আমরা একসাথে আছি, এখন আপনি বাড়ি ফিরে যাবেন একা। নিজের রুমেও একা থাকবেন, একটু অন্যরকম লাগবে না সবকিছু?”

“হ্যা, একটু তো লাগবে কিন্তু আমি নিজের স্বার্থের কথা ভেবে এটা ভুলতে পারিনা যে তোমার একটা ফ্যামিলি আছে, তোমার তাদের সাথেও কিছু সময় কাটানো দরকার।তাই রেখে যাচ্ছি এখানে। হ্যা, নিজের রুমে যখন একা থাকবো একটু অন্যরকম লাগবে, বাট আই অ্যাম সিউর মিস করবো না তোমায়”

মনটাই খারাপ হয়ে গেলো আমার। অন্য কিছু শোনার আশা করেছিলাম সেটা আর হলো না। উনি যখন মিস করবেন না, আমাকে ছাড়া থাকতে পারবেন তাহলে আমি যেনো পারবো না? নিজের মধ্যে কেমন একটা জেদ চলে এলো! থাকবো আমি আরো কিছুদিন, দেখি কে আগে মিস করতে শুরু করে, উনি না আমি?
___________________________

আজ দুদিন হলো জাফরান চলে গেছে, আর আমি এখানে আছি। সারাদিন তো তাও পরিবারের সবার সাথে সময় কাটাই, বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেই সময় কেটে যায় কিন্তু সমস্যা হয় রাতে। একা যখন শুয়ে থাকি না চাইতেও জাফরানকে মারাত্মকভাবে মিস করি। সূহা রাতে আমার কাছে ঘুমায়, তবুও তিনটা মাস ধরে যে জাফরানের সাথে ঘুমানোর অভ্যাস হয়ে গেছে। মাঝে মাঝে যখন ঘুম ভেংগে যেতো, ওনার ঘুমন্ত মুখটা দেখতাম। কখনো কখনো তার মাথায় হাত ও বুলিয়ে দিতাম, যদিও জাফরান এসব জানেনা। খুব মিস করছি এগুলো। উনি রোজ ফোন করেন ঠিকই তবুও মন ভরে না। ইচ্ছে করে ছুটে বাড়ি চলে যেতে! কিন্তু ঐযে জেদের বশে বলেছি যে থাকবো, এখন হুট করে ফিরে যেতে চাইলে সেটা বোকামি হয়ে যাবেনা? বিকেলে আমাদের পুকুরপাড়ের পাশের বেঞ্চে বসে ছিলাম, ঠান্ডা হাওয়া বইছে। প্রকৃতির হাওয়ায় বুকভরে নিঃশ্বাস নিলাম কিন্তু মনের দিক থেকে আপসেট হয়ে আছি। কারণ একটাই, জাফরান!

“কিরে আপু, এখানে কি করছিস?”

বোনের আওয়াজ পেয়ে তাকিয়ে দেখলাম সত্যিই সুহানা এসেছে। ওকে দেখে বিশেষ অবাক হলাম না কারণ ও বন্ধুদের সাথে ব্যাডমিন্টন খেলতে যায়, আজও গেছিলো। হয়তো ওখান থেকেই এসেছে গেছিলো। আমি অবশ্য ওর প্রশ্নের উত্তর দেইনি। সুহানা আমার পাশে এসে বসলো

“বিকেলবেলা উদাস হয়ে একা বসে কি ভাবছিস?”

“কিছু ভাবছি না, এখানে কি ফুরফুরে হাওয়া দিচ্ছে দেখছিস না? তাই এসে বসেছি”

“থাক থাক আমাকে আর ওসব বোঝাস না, জাফরান ভাইয়া চলে যাবার পর থেকেই তো দেখছি কেমন আনমনা হয়ে আছিস। মনে হচ্ছে জাফরান ভাইয়াকে খুব মিস করছিস!”

সুহার কথা শুনে ভারী রাগ হলো আমার। কিছুক্ষণ আগেও জাফরানের সাথে ফোনে কথা বলেছিলাম কই তখনও তো উনি কিছু বলেননি! আমি কিছুটা রেগেই বললাম

“পাকামী করিস না এতো বুঝেছিস? তোর জাফরান ভাই কি আমায় মিস করে যে আমি তাকে করতে যাবো?”

সুহা হেসে আমার গালদুটো টিপে দিয়ে আহ্লাদী স্বরে বলে

“ওলে বাবা লে, আমার আপুর দেখি ভারী অভিমান হয়েছে ভাইয়ার ওপর! সমস্যা নাই। অভিমান হওয়া ভালো, শুনেছি এতে ভালোবাসা নাকি বাড়ে”

“ধুর, ভালোবাসা না ছাই! ওসব আমি আশা করিনা”

সুহা আরো অনেকভাবে টিজ করলো আমায়। ও যথেষ্ট বড় হয়েছে, তাই এইসব সম্পর্কেও মোটামুটি জ্ঞান আছে ওর। কিন্তু ও তো আর জানেনা যে আমার আর জাফরানের রিলেশন এতটা স্মুথ না যতটা ও ভাবছে। সন্ধ্যায় জিনিয়া আপুর সাথে ফোনে কথা বলছিলাম, বলতে গেলে জাফরানের ব্যাপারেই কথা হচ্ছিলো

“জানো সুরভী, আমার মনে হচ্ছে জাফরান তোমাকে ভীষণ মিস করছে কিন্তু প্রকাশ করতে চাইছে না বা করতে পারছে না”

“অসম্ভব আপু। আমি জানি তোমার ভাই আমাকে একটুও মিস করছে না। বরং সে আরো আনন্দে আছে, আমার সাথে কথা বলার সময় তো মিসের ছিটেফোটার আভাস ও পাইনা”

“আহা, সব কথা মুখে বলতে হয় নাকি? একটু বুঝে নিতেও হয় মাঝে মাঝে, আমার ভাইয়ের খবর আমি জানবো না”

“সরি আপু, হতে পারে তোমার ভাই বলে এমন হচ্ছে তোমার কিন্তু উনি একদম কোল্ড হার্টেড। আমাকে তো নিজের মুখেই কড়াকড়ি ভাবে বলে গেছেন মিস করবেন না। জানি উনি যা বলেছেন তাই করছেন। মিস করছেন না একদম”

“সুরভী, তোমার ধারণা যদি আমি ভুল প্রমাণ করে দিতে পারি তাহলে কি করবে?”

“কিভাবে করবে?”

“জাফরান এখন রুমে আছে, আমি ওখানে যাচ্ছি। তুমি এক কাজ করো লাইনেই থেকো। দেখো কিভাবে জাফরানের মুখ থেকে স্বীকার করাই যে ও তোমাকে মিস করছে”

আপুর প্রস্তাবে রাজি হয়ে গেলাম, আসলে আমিও তো এটাই চাইছি যে জাফরান একবার বলুক আমাকে মিস করছে। মনটা তবেই শান্ত হবে আমার। জিনিয়া জাফরানের রুমে গিয়ে দেখে ওর মেয়ের সাথে জাফরান খেলছে। জিনিয়া মেয়েকে ওর ঘরে গিয়ে খেলতে বলে, তারপর জাফরানের কাছে বসে। এদিকে আমি অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি শোনার জন্যে যে জাফরান কি বলে

“কি হয়েছে জেনি? তোর মেয়েকে হঠাৎ পাঠিয়ে দিলি কেনো? খেলছিল তো আমার সাথে”

“জাফরান, আমার তোর সাথে খুব দরকারী কথা আছে”

“বল”

“আসলে একটা কথা জিজ্ঞাসা করবো তোকে! সত্যি করে বলবি। পুরো দুদিন হয়ে গেছে সুরভী বাড়িতে নেই। খালি খালি লাগছে না কিছু? মিস করছিস না তুই ওকে?”

“হঠাৎ এই প্রশ্ন কেনো?”

“আমার মন চাইলো, তাই করছি! বল না মিস করছিস? আমি তো ওকে খুব মিস করছি। ও এখন থাকলে ভালো হতো এখন”

জাফরান খানিক চুপ থেকে মুচকি হেসে বললো

“যদিও আমি সুরভীকে বলে এসেছিলাম যে মিস করবো না বাট, আই ওয়াজ রং। অনেস্টলি বলতে গেলে মিস তো আমিও করছি মেয়েটাকে”

হঠাৎ হার্ট বিটটা যেনো আগের তুলনায় একটু বেড়ে গেলো আমার, ওনার মুখ থেকে এইটুকু একটা কথাটাই তো শুনতে চাইছিলাম! ওনার ওপর দুদিনের জমে থাকা সব অভিমান মুহূর্তেই উবে গেলো, অজান্তেই হেসে ফেললাম আমি!

“এই দেখ না আমি এখনও অফিস থেকে ফিরে কিছু খাইনি, তুইও জোর করে খাওয়াতে পারলি না আমাকে। কিন্তু সুরভী থাকলে ঠিকই বকে খাইয়ে দিতো। গত দুদিন ধরে প্রায় অনেক রাত জেগে কাজ করছি কিন্তু সুরভী থাকলে সেসব করতে পারতাম না। ও আমায় কিছুকিছু ব্যাপারে বেশ শাসন করে, আই লাইক দ্যাট। সেগুলো খুব মিস করছি!”

আপনমনে কথাগুলো বলে যাচ্ছিলো জাফরান, আর আমি অবাক হচ্ছিলাম এগুলো শুনে। ভেবেছিলাম আমিই বুঝি একা মিস করছি ওনাকে কিন্তু উনিও যে আমার করা প্রত্যেকটা ছোটো ছোটো জিনিসও এতোটা মিস করবেন ভাবিনি! বুঝলাম জাফরানকে এখনও পুরোপুরি চিনতে পারিনি আমি, তাইতো এতটা ভুল ভেবে বসেছিলাম। আমাকে ওনার ব্যাপারে আর জানতে হবে, আর আমার মিস করছেন এইটুকুই তো শুনতে চাইছিলাম আর কিছুনা। ভাবলাম আমি নিজেই এবার ফোনটা রেখে দেই তখনই জেনি আপু জাফরানকে প্রশ্ন করলো

“তুই জানিস একটা ছেলে একটা মেয়েকে কখন এতোটা মিস করে? যখন ছেলেটা মেয়েটাকে ভালোবাসে। তারমানে তুইও ভালবাসতে শুরু করেছিস সুরভীকে তাইনা?”

“ভুল বললি জেনি, মিস করলেই সেটা ভালোবাসা হয় না। ওর করা কাজগুলো, ওর সাথে কাটানো ছোটো মুহূর্তগুলো মিস করছি মানেই এই না ওকে ভালবাসি”

“কি বলছিস তুই জাফরান? নিজেই বললি কতোটা মিস করছিস ওকে, তুই তো ওর পছন্দ অপছন্দ সম্পর্কেও জেনেছিস নিজের ইচ্ছেতে তাইনা? সেটাও তো বললি আমায়। এতকিছুর পরও কিভাবে বলছিস ভালবাসিস না ওকে?”

“যেটা সত্যি সেটাই বলছি। হ্যা আমি ওকে মিস করছি কিন্তু সেটা ভালোবাসা ভালোবাসি বলে নয়, আমি ওকে আমার পাশে সবসময় চাই সেটা এই জন্যে না যে আমার মনে ওর জন্যে ভালোবাসার অনুভূতি আছে”

“তাহলে কেনো?”

“দুটো কারণ আছে জেনি। প্রয়োজনীয়তা আর দায়িত্ববোধ”

ফোনটা রাখতে যাচ্ছিলাম আমি কিন্তু জাফরানের কথা শুনে না চাইতেও ফোনটা নামাতে পারলাম না, এই কিছু মুহূর্ত আগেই তো দুটো কথা বলে আমার মনটা ভালো করে দিয়েছিল জাফরান। হুট করে এমন কথা বলে আমার মনটা আবার ভেঙে দেওয়াটা কি খুব দরকার ছিলো? উনি আমায় ভালোবাসেন না এটা কি প্রকাশ না করলেই হতো না? জিনিয়া কিছুটা রেগে গিয়ে বলে

“কি বলছিস তুই এসব জাফরান? আমি তোর কথার মানে বুঝতে পারছি না। ও শুধু তোর প্রয়োজন আর দায়িত্ব? এছাড়া কিছুই না?”

“নাহ!”

“মেয়েটা তোর প্রয়োজন হতে পারে, দায়িত্ব হতে পারে কিন্তু ভালোবাসা না? জাফরান এটা কি তুই আমায় বলছিস না নিজেকে বোঝাচ্ছিস?”

“জেনি তুই যা জিজ্ঞাসা করেছিস আমি তারই উত্তর দিচ্ছি, আর এই বিষয়ে আমার কোনো সন্দেহ নেই যে আমি সুরভীকে ভালবাসিনা”

ভাইয়ের কথা শুনে অবাক হয়ে গেলো জিনিয়া, ও তো সিওর ছিলো যে জাফরান সুরভীকে ভালোবাসে কিন্তু ওর মনে যে সুরভীর জন্যে তেমন কোনো অনুভূতি এখনও জন্মায়নি এটা ভাবনার বাইরে ছিলো! আমি এখনও ফোন কাটিনি, জাফরানের প্রত্যেকটা কথা শুনতে চাই আজ আমি। উনি আসলে আমায় কি ভাবেন, আমার জন্যে ওনার মনে কি আদৌ কোনো ফিলিংস আছে? আর থাকলেও সেটা কোন ধরনের অনুভূতি। এসব যে আমার অজানা। হয়তো আজ ওনার কথায় আমার মন ভাঙতে পারে তবুও আজ সব শুনবো, ভবিষ্যতের জন্য ওনার মনের কথাগুলো জানাটা যে আমার জন্যে খুব দরকার

চলবে….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে