(প্রাপ্তমনস্কদের জন্য। মানসিকভাবে রক্ষনশীল পাঠক এড়িয়ে চলুন।)
মন গহীনের শব্দ
| ৫ |
আমি ইচ্ছে করেই একটা শপিং ব্যাগ গাড়ির মধ্যে রেখে নেমে গেলাম। প্রথমেই গেলাম সুলেখা আন্টির রুমে। নিজের জন্য কিছু কিনলে সবার আগে তাকেই দেখাই আমি। সুলেখা আন্টি শুয়ে আছে বিছানায়। মুখ জুড়ে ক্লান্তির ছাপ। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, “কী ব্যাপার? এই অসময়ে শুয়ে আছ কেন?”
“তেমন কিছু না, হালকা একটু জ্বর আছে। হাতে এত ব্যাগ যে, শপিং করেছ বুঝি?”
“আগে বলো তুমি মেডিসিন নিয়েছ? ইদানিং তোমার কিছুদিন পরপরই জ্বর হচ্ছে। একজন ভালো ডাক্তারের সাথে কনসাল্ট করা উচিৎ তোমার।”
“আরে তেমন সিরিয়াস কিছু না। খুবই সামান্য জ্বর হয়। এর জন্য ডাক্তারের কাছে যাওয়া লাগবে না। বয়স হচ্ছে তো, এখন এমন একটু আধটু হয়। তুমি চিন্তা কোরো না।”
সুলেখা আন্টির সাথে কিছুক্ষন কথা বলে রুমে চলে এলাম। সারা বিকেল পড়াশোনার ব্যস্ততাতেই কাটল। বাবার রুমে ডাক পড়ল সন্ধ্যার পরে। অনেকক্ষন ওখানে কাটিয়ে রুমে এসে সাথে সাথেই আবিরকে কল করলাম। ঠিক চারবারের সময় রিসিভ হল ফোন। আমি উদ্বিগ্ন কণ্ঠে বললাম, “স্যার, এতক্ষন ধরে কল করছিলাম, আপনি রিসিভ করছিলেন না কেন?”
“রিল্যাক্স সুজাতা। আমি ফোন রুমে রেখে বাইরে গিয়েছিলাম। কী ব্যাপার বলোতো? তোমার কন্ঠ এমন লাগছে কেন?”
আমি বললাম, “সর্বনাশ হয়ে গেছে স্যার, বাবা আমার বিয়ে ঠিক করে ফেলেছে।”
“এসব তুমি কী বলছ সুজাতা?
“আমার কিছু ভালো লাগছে না স্যার। চলেন আমরা পালিয়ে যাই।”
“তুমি পাগল হয়েছ সুজাতা? কোথায় পালাবো? যেখানেই যাই না কেন, তোমার বাবা আমাদের ঠিক খুঁজে বের করবেন।”
“তাহলে এখন আমরা কী করব স্যার।”
“আমাদের কিছুই করার নেই সুজাতা। তুমি বিয়ে করে নাও।”
“স্যার, আমি বাবাকে আপনার কথা বলব। যেভাবে হোক তাকে রাজি করাবোই।”
“না সুজাতা, তোমার বাবা কখনোই আমাকে মেনে নেবেন না। যদিও আমার খুব কষ্ট হচ্ছে, তবু বলছি, তুমি বিয়ে করে নাও। তোমার স্মৃতিটুকুই না হয় আমি যত্ন করে আমার মনের মধ্যে রেখে দেব। তোমাকে এই অল্প কয়েকদিনেই আমি প্রচন্ড রকমের ভালোবেসে ফেলেছি। হয়তো তোমাকে না পেলেও বেঁচে থাকব। কিন্তু সেটা বেঁচে থেকেও মরে যাওয়ার সমান হবে। ইচ্ছে করছে এখনই তোমাকে আমার কাছে নিয়ে আসি, কিন্তু আমার হাত পা যে অদৃশ্য শেকলে বাঁধা।”
“ঠিকাছে। ভুলে যাব আপনাকে। কিন্তু শেষবারের মতো আপনার কাছে কিছু চাইব, দেবেন আমাকে?”
“আমার সাধ্যের মধ্যে থাকলে অবশ্যই দেব। তুমি বলো সুজাতা।”
“আপনার একটা দিন আমাকে দেবেন? সেদিন সারাদিন আপনি আমার সাথে থাকবেন। আপনার মনে আছে স্যার, কিছুদিন আগে আপনি আমার হাতের রান্না খেতে চেয়েছিলেন। আপনাকে আমি রান্না করে নিজের হাতে খাওয়াব। একটা দিন প্লিজ, আপনার একটা দিন আমার জন্য দেবেন? দূরে কোথাও একদিন নিজেদের মতো করে কাটাব আমরা।”
“এভাবে কেন বলছ? তুমি চাইলে আমি কখনই না করতে পারি? কিন্তু কেউ জানতে পারলে তোমার আমার দুজনেরই সমস্যা হতে পারে।”
“কেউ জানতে পারবে না স্যার। আমি সব ব্যবস্থা করে রাখব। কালই না হয় চলুন। আমার একটা ফ্রেন্ডের বাসা আছে। ওর বাসায় এখন কেউ নেই। বাইরে বের হওয়াটা রিস্কি। বাবার লোক সবখানেই আছে। তারচেয়ে ওর বাসাতেই চলুন।”
“একটা কথা জিজ্ঞাসা করি?”
“বলুন।”
“আমাকে এত বিশ্বাস করো কেন তুমি? একা পেয়ে তোমার যদি কোনো ক্ষতি করে দেই?”
“আমি জানি, আপনি সেটা কখনোই করবেন না। সুজাতা মানুষ চিনতে কখনও ভুল করে না।”
“আমি নিজের মনকে কীভাবে সান্ত্বনা দেব জানি না। তোমার মতো চমৎকার একটা মেয়েকে পেয়েও হারাতে হচ্ছে আমার।”
“আমার খুব কান্না পাচ্ছে।”
মোটামুটি দীর্ঘ একটা বিরহের আলাপ চলল আমাদের। ফোন রেখে আমি পৈশাচিক হাসি দিলাম। শেষ পর্যন্ত তাহলে পটেছে ব্যাটা। মনের আনন্দে গান শুরু করলাম,
“দেখুক পাড়া পড়শিতে,
কেমন মাছ গেঁথেছি বরশিতে,
দেখুক এবার পড়শিতে।”
গান গাইতে গাইতে গেলাম সুলেখা আন্টির কাছে। বললাম, “আন্টি, তোমার সেই বিশ্ববিখ্যাত পায়েসটা কাল একটু রেঁধে দিও তো আমকে। একজনকে খাওয়াব।”
সুলেখা আন্টি ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, “একজনটা কে শুনি?”
আমি হেসে বললাম, “টপ সিক্রেট। বলা যাবে না।”
সেদিন পুরো রাত উত্তেজনায় আমার ঘুম হলো না। পরেরদিন সকাল সকালই নাস্তা করে বের হলাম। নির্দিষ্ট ফ্লাটে পৌঁছে ফোন করলাম আবিরকে। তিনি ফোন রিসিভ করতেই বললাম, “আপনি কোথায় স্যার? এখনও আসছেন না কেন?”
“আমি এসে গেছি সুজাতা। চারতলার ফোর বি ফ্লাট তো। আমি দরজার সামনেই আছি।”
আমি জলদি গিয়ে দরজা খুললাম। স্যার ভিতরে ঢুকতেই আবার তড়িঘড়ি করে দরজাটা লক করে দিলাম। তিনি ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইলেন আমার দিকে কিছুক্ষন। তারপর বললেন, “এই সাদামাটা রূপেও তোমাকে ভয়ংকর সুন্দর লাগছে। একেবারে জলন্ত আগ্নেয়গিরির মত।”
আমি নিচের দিকে তাকিয়ে লাজুক হাসলাম। আবির স্যার বললেন, “ইচ্ছে করছে তোমাকে গভীরভাবে ছুঁয়ে দিতে।”
“কিন্তু এটা অন্যায় স্যার।”
“আমি জানি সেটা। আচ্ছা, আমার এই ইচ্ছেটাও না হয় অপূর্ণই থাক।”
“স্যার, আজকের এই সুন্দর দিনটা মিষ্টিমুখ করে শুরু করি চলুন, আমি আজ নিজের হাতে আপনার জন্য পায়েস রান্না করেছি।”
“তাই হোক তবে।”
আমি পায়েসের বাটিটা স্যারের দিকে এগিয়ে দিলাম৷ স্যার পায়েস মুখে দিয়ে বললেন, “তোমার রান্নার হাত তো দেখি চমৎকার।”
খেতে খেতে পুরো বাটির পায়েসই শেষ করে ফেললেন। আমার অধৈর্য লাগছে কিছুটা। যার থেকে মেডিসিন নিয়েছিলাম সে তো বলেছিল পাঁচ মিনিটের মধ্যেই কাজ শুরু করে দেবে। তাহলে এখনও কিছু হচ্ছে না কেন? আমি তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালাম আবিরের দিকে, তখনই পরিবর্তনটা লক্ষ করলাম। আর এক সেকেন্ডও তার সাথে থাকা সেফ মনে হলো না আমার। জলদি বাইরে বের হয়ে ছিটকিনি টেনে দিলাম আমি। এরপর গিয়ে মেইন দরজাটা খুলে দিলাম। তামিম ভাই দরজার বাইরেই অপেক্ষা করছিল। তার সাথে আরও দুজন লোক নিয়ে এসেছে। আমাকে দেখেই চিন্তিত কন্ঠে জিজ্ঞাসা করল, “তুই ঠিক আছিস তো? এত দেরি হলো কেন? আমি এদিকে চিন্তায় শেষ।”
“আমি ঠিক আছি, তুমি আগে বলো, ক্যামেরাগুলো ঠিকঠাক লাগিয়েছ?”
“সব রেডি একেবারে। তবুও আমি ভিতরে গিয়ে দেখছি। তুই বাইরেই অপেক্ষা কর।”
“ওকে। ভেতরে গিয়ে ওর মোবাইলটা আমাকে আগে দিওতো। ওটাতে হয়তো কিছু থাকতেও পারে।”
তামিম ভাই তার সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে ভেতরে ঢুকে গেল। মোবাইলটা হাতে পেয়ে আমি আরাম করে সোফায় বসলাম। আগেই কৌশলে একদিন তার মোবাইলের পাসওয়ার্ড দেখে রেখেছিলাম, তাই আজ আর ফোন খুলতে তেমন সমস্যা হলো না। প্রথমেই গ্যালারিতে গেলাম আমি। তারপর গুগল ড্রাইভ, ফাইল ম্যানেজার সব চেক করলাম কিন্তু কোথাও কিছুই পেলাম না। শেষে কী একটা মনে করে মেসেঞ্জারে গেলাম। মেসেঞ্জারে ঢুকেই আমার চোখ ছানাবড়া হয়ে গেল। পুরো ইনবক্সে শুধু মেয়েদের সাথে কথোপকথন। তবে লাস্ট কনভার্সেশন গতকাল রাতে একটা ছেলের সাথে।
আমি গতকাল রাতের কনভার্সেশন প্রথম থেকেই পড়তে শুরু করলাম। প্রথম মেসেজটা আবিরই করেছে, “মামা, নতুন মালটা তো পইটা গেছে।”
“নতুন আবার কোনটা?”
“আরে ওই আগুন সুন্দর মেয়েটার কথা বলেছিলাম। বাপ রাজনীতিবিদ, ওইটা।”
“কিন্তু তুই তো বলেছিলি ওর বাবা অনেক প্রভাবশালী। রিস্ক আছে তাই এটার জন্য নাকি কোনো টোপ ফেলবি না।”
“আমি তো কোনো টোপ ফেলিনি। মেয়ে তো সেইরকম হট। যেমন চেহারা, তেমন তার ফিগার। এপর্যন্ত যেই কটাকে বিছানায় নিয়েছি তারা কেউ এই মেয়ের ধারেকাছেও নেই। তবুও কোনো রিস্ক নিতে চাইছিলাম না। মেয়ের বাবার যা দাপট, মার্ডার করে ফেললেও কেউ কিছু করতে পারবে না। সেজন্যই তো সামলেছিলাম নিজেকে। কিন্তু মেয়ে তো নিজেই আমার প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে।”
“ভালোই তো। এটাকেও কি তবে ফাহাদ ভাইয়ের ফাঁকা ফ্লাটে নিয়ে যাবি?”
“ভেবেছিলাম এটাকে নিয়ে বেশিদূর এগোব না। হালকা পাতলা এঞ্জয় করব শুধু। কিন্তু এই মেয়ে তো নিজেই সেধে আমার সাথে ফাঁকা ফ্লাটে যেতে চাইছে।”
“মানে কি? মেয়ে নিজেই শুতে চাইছে তোর সাথে?”
“গাধার বাচ্চা, কথা না বুঝেই লাফাস কেন? আমার সাথে সুখ দুঃখের আলাপ করবে বলে একা দেখা করতে চাইছে। নিজের হাতের রান্নাও নাকি খাওয়াবে। আমিও এদিকে সব প্রিপারেশন নিয়ে রেখেছি, যৌ* উত্তেজক মেডিসিনটা আমার সাথেই আছে। কোনোরকমে একবার পানির সাথে মিশিয়ে কাল খাইয়ে দিতে পারলেই হবে। তারপর কাল সারাদিন সে আমার হাতের পুতুল হয়ে থাকবে।”
এতটুকু পড়ে আমার হাসি পেয়ে গেল। দুজনেই ফাঁদ পাতার জন্য একই ট্রিক্স অ্যাপ্লাই করেছি তাহলে। আমি আবার পরতে শুরু করলাম।
“সবই বুঝলাম। কিন্তু মেয়েটা যখন সেন্সে আসবে তখন তো সবই বুঝে যাবে। তারপর যদি ওর বাপকে বলে তোর বারোটা বাজায়?”
“বুঝতে পারলেও সমস্যা নেই। তখন একটু ড্রামা করতে হবে। বলব, ও নিজেই আমার সাথে ঘনিষ্ঠ হতে চেয়েছিল। আর তাছাড়া সেন্স আসলেও মেডিসিনের প্রভাব কাটতে অনেক সময় লাগবে৷ তখন আমি যা বলব, ও সেটাই বিশ্বাস করতে বাধ্য হবে।”
“ভালোই প্লান বানিয়েছিস শালা। কিন্তু যা করার সাবধানে করিস।”
এই মেসেজটা সীন হয়েছে তবে কোনো রিপ্লাই দেওয়া হয়নি।
সত্যিই, মানুষের বাহ্যিক চেহারা দেখে তার ভিতরটা কখনোই আঁচ করা যায় না। কত সুন্দর মায়াময় একটি মুখ। অথচ ভিতরটা কিনা এত কুৎসিত। এই চেহারার আর মিষ্টি কথার মায়ায় পড়েই তো তুলি তার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুলটা করেছিল।
কিছুদিন আগে তুলির মা আমাকে ডেকে নিয়ে কেঁদে কেঁদে বলেছিলেন, “কত কষ্ট করে মেয়ে দুটোকে বড় করলাম। অথচ দেখ, বাবা মায়ের মানসম্মান ডোবানোর আগে একবারও ভাবল না। এসব লোক জানাজানি হলে বিষ খাওয়া ছাড়া আমার আর কোনো পথ থাকবে না।”
সেদিন তাকে কথা দিয়েছিলাম, আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করব ব্যাপারটা সলভ করার। যেহেতু বাবার পলিটিক্যাল পাওয়ার আছে, তাই তিনিও আমার কথাতে ভরসা করেছিলেন৷ ভেবেছিলেন বাবার হেল্প নিয়েই হয়তো ব্যাপারটা সলভ করব আমি। কিন্তু আমি তো জানতাম, বাবাকে জানালে উপকার হওয়ার বদল ক্ষতি ও হতে পারে। বাবা জানলে হয়ত তার ছেলেপেলে দিয়ে কয়েকটা হুমকি দেওয়াবে বা মারধোর করাবে৷ তাতে যদি চটে গিয়ে আবির ভিডিওগুলো ভাইরাল করে দেয়, তাহলে তো তুলির আরও বড় ক্ষতিটা হয়ে যাবে৷ সেজন্যই বাবাকে জানিয়ে রিস্ক নেইনি। আবিরের খোঁজ বের করে তাকেই টিচার হিসেবে রাখলাম। অনেক ছক কষে আজকের শেষপর্যন্ত নিজের উদ্দেশ্য সফল হতে যাচ্ছে আমার।
তামিম ভাই রুম থেকে বের হলেন গুনে গুনে দুই ঘন্টা পর। তার পিছনেই বের হচ্ছে আবির। তবে আবিরকে দুইপাশ থেকে দুইজন ধরে রেখেছে। আবিরকে একইসাথে হতভম্ব এবং ক্লান্ত দেখাচ্ছে। কোনোরকমে তাকে সোফায় বসানো হল। মাথার ঝঁকড়া চুলগুলো এলোমেলো, শার্টের বোতামগুলোও উলটোপালটা লাগানো। তামিম ভাই হাসতে হাসতে বলল, “আজ যা দেখালেন ভাই, মনে হলো হরর সিনেমা কোনো। ভাইয়ের তো দেখি সেই পাওয়ার। একা একাই জামাকাপর খুলে যা করলেন। কত সখ ছিল বিয়ে করে নতুন বউকে নিয়ে নিজের টাকায় কেনা এই ফ্লাটে এনে তুলব। অথচ তার আগেই আপনি শুভ উদ্বোধন করে দিলেন। আমি অবশ্য লাইভ দেখার সাথে সাথে পুরোটাই ভিডিও করে রেখেছি। দেখবেন নাকি একটু?”
তামিম ভাই আবিরের সামনে ভিডিও প্লে করে ক্যামেরাটা ধরল। আবির বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে রইল সেদিকে। তারপর বলল, “সুজাতা, তুমি আমার সাথে এমনটা কেন করলে?”
আমি হেসে বললাম, “স্যার বোধহয় এখনও আমাকে চিনতে পারেননি। তুলির সাথে যখন কলেজের সামনে দেখা করতে যেতেন, তখন তার সাথে আরও একটা মেয়ে থাকত বোরখা পরে। যার শুধু চোখ দেখা যেত। আমার চোখের দিকে আরেকবার তাকিয়ে দেখুনতো চেনা যায় কিনা।”
আবির এবার বাকরুদ্ধ।
ততক্ষনে তুলি আর ওর মাও এসে পৌঁছেছে। তুলি এসেই পায়ের জুতো খুলে মারতে শুরু করল আবিরকে। এরপর হাউমাউ করে কেঁদে ফ্লোরেই বসে পড়ল।
আমি তামিম ভাইকে বললাম, “এসব নোংরা লোকের সাথে কথা বলা তো দূর চেহারাও দেখতে ইচ্ছে করছে না আমার। তুমিই যা বলার বলো।”
তামিম ভাই বললেন, “আর তো বলাবলির কিছু নেই। এই লেটেস্ট ভিডিওগুলো আজ আপলোড করে দেব। কাল আমাদের আবির স্যার নিশ্চিত তার ভার্সিটির হট টপিকে থাকবেন।”
আবির আর্তনাদ করে উঠল যেন, “প্লিজ,এটা করবেন না। আপনারা যা বলবেন আমি তাই শুনব।”
“ভেরি গুড। এবার তাহলে এবার আসল কথায় আসা যাক। আপনি বুদ্ধিমান লোক, নিশ্চই বুঝতে পারছেন যে কী করতে হবে।”
“বুঝতে পেরেছি। তুলির ভিডিওগুলো আমার ল্যাপটপে আছে। আমি রুমে গিয়েই ওগুলো ডিলিট দিয়ে দেব।”
“আপনার উপর তো ভরসা করতে পারছি না ভাই। তারচেয়ে বরং আমার সাথের দুজন লোক আপনার সাথে যাক। যা করার ওরাই গিয়ে নিজ দায়িত্বে করে দিয়ে আসবে।”
আবিরকে বগলদাবা করে নিয়ে গেল দুজন। সেই দৃশ্য দেখে আমার প্রচন্ড হাসি পেয়ে গেল।
তুলি এবং তুলির মা দুজনেই কাঁদছেন এখনও। তুলির মা বললেন, “তুমি খুব সাহসী মা। আজ আমাদের জন্য যা করলে, তার জন্য কৃতজ্ঞতা জানানোর ভাষা আমার জানা নেই। তবে আমি তোমার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করি, তিনি যেন সবসময় তোমাকে ভালো রাখেন।”
সবাই চলে যাওয়ার পর তামিম ভাই বললেন, “আমার এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না এই মারাত্মক প্লানটা তুই করেছিস। তুই যে চূড়ান্ত পর্যায়ের ডেঞ্জারাস মেয়ে সেটা আজ আরেকবার প্রমাণ হয়ে গেল। ভালোই হয়েছে যে তোকে বিয়ে করতে হয়নি আমার।”
আমি বললাম, “তামিম ভাই, তুমি মনেহয় ভুলে যাচ্ছ, প্রস্তাবটা তোমরা দিয়েছিলে আর আমি রিজেক্ট করেছিলাম।”
“সেটা ভুলিনি। তবে যাই বলিস, সু। একটা ব্যাপার আমার বেশ ইউনিক লাগছে।”
“এরমধ্যে ইউনিক কী পেলে তুমি?”
“না মানে, এতদিন দেখে এসেছি ছেলেরা মেয়েদের আপত্তিকর ভিডিও বানিয়ে ব্লাকমেইল করে। কিন্তু ইতিহাসে তুই মনেহয় প্রথম মেয়ে হতে যাচ্ছিস যে ছেলেদের ন্যুড ভিডিও বানিয়ে ব্লাকমেইল করছিস।”
আমি চোখ পাকিয়ে বললাম, “তোমার এইসব বস্তাপচা সস্তা ইয়ার্কি করা শেষ হয়েছে? তাহলে আমি যাব এখন।”
“ওকে চল, তোকে পৌঁছে দিয়ে আসি।”
“কোনো দরকার নেই। তুমি তোমার বাসাতেই থাকো। আমি নিজেই চলে যেতে পারব।”
গেট থেকে বাইরে বের হয়ে রাস্তার দিকে তাকাতেই চমকে গেলাম আমি।
(চলবে ইনশাআল্লাহ)
#আমাতুল্লাহ_স্বর্ণা