মন উন্মনে আঁচড় পর্ব-০৫

0
469

#মন_উন্মনে_আঁচড়
লেখনীতেঃ রিধিমা জান্নাত রূপা
পর্বঃ ০৫

[প্রাপ্তবয়স্ক ও মুক্তমনাদের জন্য উম্মুক্ত]
.
সময় অতিক্রম হয়, কেটে যায় আরও সপ্তাহ খানিক। স্বাভাবিক থাকলেও যেন অস্বাভাবিক পর্যায়ে চলে যায় তাদের সংসার। উঁহু! তাদের সংসার নয়, হয়তো মীতির কাছে রাতুলের আচরণ। বেশ ভালো ভাবেই রাতুলকে লক্ষ্য করে মীতি, আলদা ভাবে নজরে আনে। চব্বিশ ঘন্টার অধিকাংশ সময় অফিসে ও বাইরে বাইরে কাটিয়ে দেয় রাতুল, মীতির জন্য থাকে শুধু রাতের ওই সময়টুকু। সেটাও নিজের দৈহিক চাহিদায় মিটিয়ে নেয় রাতুল। কোন কোন রাত মোবাইল ও ল্যাপটপ নিয়েই রাত কাটিয়ে দেয়। মাঝে মাঝে গভীর রাতেও বেজে উঠে রাতুলের মোবাইলের রিংটোন, আর সেটাও তাদের একান্ত মুহুর্তের সময়ে। ভুলক্রমে মীতি রিসিভ করলে ভেসে আসে নারীকণ্ঠ। চমকায় মীতি, বিষ্ময় নিয়ে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রয়। রাতুল মোবাইলটা তার থেকে নিয়ে হাসি মুখেই কথা বলতে শুরু করে, মুখ ফুটে উচ্চারণ করে একটাই নাম ‘ইশা!’।
মীতির অভিযোগ বাড়তে থাকে, মুখ ফুটে বলেও ফেলে। কিন্তু তার কোন কথায় যেন আমলে নেয় না রাতুল, বরাবরের মতোই কাছে টেনে নেয় মীতিকে, নিজের দৈহিক চাহিদায় মেতে উঠতে চায়। আগের মতোই মীতির শরীরের অঙ্গে অঙ্গে হাত দু’টো খেলা করতে থাকে। কিন্তু সেই আগের মতো লজ্জায় নুইয়ে পড়ে না মীতি, কম্পন সৃষ্টি হয় না তার শরীরে। শুধু নির্জীব হয়ে পড়ে থাকে বিছানায়।

সময়ের প্রহর অতিক্রম হয়, মীতিও মুষড়ে পড়ে দিন দিন। রাতুলের সাথে ঝগড়ার মাত্রা বাড়ে। নিজের পক্ষে কৈফিয়ত দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করে, কিন্তু তার কথা শুনতেই যেন নারাজ হয় মীতি।
সেদিন কোন একটা কারণে বাইরে বের হয় মীতি, হঠাৎ করেই রাতুল ও ইশাকে একসঙ্গে দেখে ফেলে। বেশ কিছু সময় তাদের ফলোও করতে থাকে, দেখে ফেলে তাদের একান্তে কাটানো কিছু ঘনিষ্ঠ মুহুর্ত। এতদিন রাতুল ও ইশার ব্যাপারটা আন্দাজ করতে পারলেও সেদিন তাদের ঘনিষ্ঠতা দেখে ভেঙে পড়ে মীতি, কোনরকমে ফিরে আসে বাসায়। রাতে রাতুল বাসায় ফিরলেই এক কথা দুই কথা থেকে ঝামেলার সৃষ্টি হয় তাদের মধ্যে, এক সময় আলাদা হয়ে যাবার কথা বলে ডিভোর্সের কথাটা বলেই ফেলে।

.
বিষন্ন মন নিয়ে রুমে বসে আছে মীতি, এই মুহুর্তে খুব করে কারো সঙ্গ কামনা করছে। কারোর সাথে একটু মন খুলে কথা বললেই যেন স্বস্তির দেখা মিলতো তার। তবে বেশ হালকা লাগছে যেন নিজের মাঝে। হয়তো বাবা মা’কে রাতুলের বিষয়টা বলার কারণেই। তখন সবটা শুনে বেশ রেগে গিয়েছিলেন ফাহমিদা খানম, দু’চারটা কথাও শুনিয়েছে রাতুলকে। কিন্তু শান্ত ছিলেন মাহতাব শেখ। শান্ত কণ্ঠেই তাকে বলেছিলেন, “তুমি রুমে যাও, মীতি। তোমাকে কিছু ভাবতে হবে না। আমি রাতুলের সাথে কথা বলছি।”

ব্যাস! নিশ্চিতে তখন রুমে আসে মীতি। বাবার প্রতিতা দৃঢ় বিশ্বাস। আর যাই হোক না কেন, মেয়ের সাথে অন্যায়টা মেনে নিবেন না কখনো।

নিজের করা ভাবনার মাঝেই মীতির মোবাইলের রিংটোন বেজে উঠলো। অচেনা নাম্বার দেখে কপাল কুঁচকে ফেললো। তবুও রিসিভ করলো। ‘হ্যালো’ বলে সালাম দিতেই ভেসে উঠলো এক অপরিচিত কণ্ঠস্বর। সালামের জবাব দিয়ে বললো, “কেমন আছেন?”

“আপনি? আপনি কে?”

“এত দ্রুত ভুলে গেলেন আমাকে? সকালেই তো পরিচয় হলাম।”

“মানে? কি বলছেন আপনি এসব? কে আপনি?”

“আরেহ্! এতটা হাইপার হচ্ছেন কেন? আমি… ফাহাদ বলছি। ওই যে, আপনাকে বাসায় নামিয়ে দিলাম।”

ভাবলো মীতি, তৎক্ষনাৎ ফাহাদ নাম ও নামের মানুষটাকে মনে পড়ে গেল তার। সামান্য হেসে বললো, “ওও আচ্ছা, আপনি… সরি! চিনতে পারি নি।”

“তা তো আপনার কথা শুনেই বুঝতে পেরেছি। তা কেমন আছেন এখন? শরীর কেমন?”

“এই তো, পরবর্তীতে সমস্যা হয় নি আর। কিন্তু আপনি আমার নাম্বার কিভাবে পেলেন?”

খানিকটা অবাকের সুরেই বলে উঠলো মীতি। হাসলে ফাহাদ। বললো, “এই যে আপনার দেখা পেলাম, আপনার বাসার ঠিকানা পেলাম, আপনার নাম্বর পাওয়াটা কি তাতে অস্বাভাবিক?”

“কিন্তু কিভাবে….”

“কোন কিছু পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা থাকলে তা হাসিল করে নিতে হয়। বাদ দিন, ও আপনি বুঝবেন না।”

সত্যিই বুঝলো না মীতি। হয়তো বোঝার চেষ্টাটুকুও করলো না, হাসলো মাত্র। ফাহার আবারও বললো, “এত রাত পর্যন্ত জেগে আছেন যে? প্রেমিকের সাথে ফোনালাপে ব্যস্ত ছিলেন বুঝি, ডিস্টার্ব করলাম?”

“নাহ্! ওসব প্রেমিক ট্রেমিক নেই আমার, তবে….”

“তবে?”

“হাসবেন্ড আছে। তবে মস খানিকের মাঝেই হয়তো ডিভোর্সটাও হয়ে যাবে।”

“বাহ্! তাহলে তো যথাসময়ে আপনার আপনার দেখা পেলাম।”

“মানে?”

“কিছু না, বাদ দিন। আপনি বলুন, ঠিক সমস্যাটা কোথায়?”

সুপ্ত নিশ্বাস ছাড়ে মীতি, গা এলিয়ে দেয় বিছানায়। ফাহাদকে অকারণেই তার বিশ্বাস হচ্ছে, বলতে ইচ্ছে হচ্ছে তার জীবনের ঘটে যাওয়া অপ্রিয় সত্যিগুলো। বিষন্নতা কাটিয়ে চালিয়ে যেতে ইচ্ছে হচ্ছে ফাহাদের সাথে ফোনালাপ। আর ভাবলো না মীতি। চালিয়ে গেল তার কথোপকথন, চলতে থাকলো তাদের ফোনালাপ।

.
“দেশে কবে ফিরছো রাতুল?”

ফোন ধরেই শ্বশুরের ভারী কণ্ঠে বলা কথাটা বেশ অবাক করলো রাতুলকে, তবুও স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা। বিল্ডিংয়ের সাইড প্রজেক্টের কাজ শেষ করে সবেই হোটেলে ফিরেছে রাতুল ও ইশা। ক্লান্ত শরীরে রুমে ঢুকে ফ্রেশ হবার উদ্যোগ নিয়েছে মাত্র। তখনই শব্দ তুলল বেজে উঠে মোবাইল। মাহতাব শেখের কল দেখে খানিকটা অবাক হলেও হাসিমুখে রিসিভ করে। সালাম দিয়ে ‘হ্যালো!’ বলতেই সালামের জবাব না নিয়ে রাতুলকে দেশে ফেরার কথা জিজ্ঞেস করেন মাহতাব শেখ। বেশ অবাক হয় রাতুল, তবে বিষয়টা খুব একটা না ভেবে বলে উঠে, “এই তো বাবা, কাজ প্রায় শেষ। ওদের সাথে ফাইনাল মিটিংটা হলেই ফিরতে পারবো।”

“ঠিক কবে ফিরবে সেটাই জানতে চাইছি।”

থমথমে মুখে ফের বলে উঠেন মাহতাব শেখ। অবাকের মাত্রা বৃদ্ধি পায় রাতুলের, চিন্তিত ভাব স্পষ্ট। ধীর কণ্ঠে বলে, “সামনের সপ্তাহে ফিরবো। কালকেই অগ্রীম টিকিট কাটবো ভাবছি।”

“আচ্ছা বেশ, ফিরো তবে। তোমার সাথে কিছু জরুরি কথা আছে আমার।”

“কি হয়েছে, বাবা?”

“সেটা না হয় দেশে ফিরেই জানতে পারবে।”

নিশ্চুপ রয় রাতুল। বোঝার চেষ্টা চালিয়ে যায় মাহতাব শেখের কথাগুলো, কিন্তু পারে না। মাহতাব শেখ ‘রাখছি’ বলে ফোন রাখতে চায়। রাতুল বাঁধা দিয়ে বলে, “বাবা, মীতি কেমন আছে? আসলে… ও ফোন তুলছে না আমার। তাই…”

“মীতি কেমন আছে তা না জানলেও তোমার চলবে। রাখছি…”

“বাবা… কি হয়েছে আপনার? মীতি কিছু বলেছে কি?”

“দেশে আসো, সামনাসামনি কথা বলছি। ফোনে এসব বিষয়ে আলোচনাটা শ্রেয় মনে করছি না।”

বলেই কল কাটলেন মাহতাব শেখ, রাতুলের কথা শোনারও বোধ করলেন না।
এদিকে মোবাইল বিছানায় ছুড়ে দু’হাতে মাথা চেপে ধরলো রাতুল, ধপ করে বসে পড়লো বিছানায়। মুহুর্তেই যেন সবকিছু এলোমেলো হয়ে উঠলো তার কাছে। মীতি বাবাকে কি বলেছে তা ভেবে ভেবেই মাথা ফেটে যাচ্ছে তার। বিনা কারণে কখনোই রাগ বা ক্ষোভ ঝাড়ে না মাহতাব শেখ। তাছাড়া রাতুলকে খুব ভালোবাসেন তিনি, ছেলের মতো স্নেহ করেন। সেই বাবার মতো মানুষের কাছে এমন ব্যাবহার কখনোই আশা করতে পারছে না ছেলেটা।

রাতুলের কানাডা আসার পর প্রায় মাস হতে চললো, কাজও প্রায় শেষের দিক। কিন্তু এতদিনেও মীতির সাথে যোগাযোগ করতে পারে নি। সারাদিনের কাজের পর দিনশেষে যখন বিছানায় গা এলিয়ে দিয়েছে, তখনই দৃঢ় ভাবে মাথায় এসেছে মীতির কথা। সারদিন কাজের মাঝে ঢুবে তাকলেও রাতের এই একাকিত্ব সময়ে কামনা করেছে মীতির সঙ্গ, তার করা দুষ্টুমিতে মেতে উঠতে চেয়েছে। পরক্ষণেই মেয়েটার এই মাইল মাইল দূরত্বের কথা ভেবে নিজের ভাবনাকে সামলে নিয়েছে। কিন্তু আজকে যেন একটু বেশিই বেপরোয়া হয়ে উঠেছে, রাতুল। মেয়েটা তার বাবাকে ঠিক কি বলেছে তা ভেবে ভেবেই ক্লান্ত হচ্ছে।
ফ্রেশ আর হওয়া হলো না রাতুলের, সেভাবেই গা এলিয়ে দিলো বিছানায়। বিড়বিড় করে বলে উঠলো,
“সংকোচ না-কি অন্যকিছু, জানা নেই মীতি। তবে এটা জেনে রেখো, দেশে গিয়েই এবার তোমকে বলবো—ভালোবাসি। হ্যাঁ! ভীষণ ভালোবাসি। আই লাভ ইউ, মীতি!”

.
.
চলবে….

রি-চেক দেওয়া হয় নি। দ্রুত লেখার ফলে বানান ভুল থাকতে পারে। ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে