#মনোহরা
#পর্বঃ১৯
#লেখিকাঃনির্মলা
প্রায় দুই দিন কেটে গেলো আমাদের এ বাড়িতে। উনার তো প্লান ছিলো ১দিন থাকার তবে বাবা মা আর ভাইয়া জোর করার ফলে উনি না চাইতেও আরও ১ দিন থেকে যেতে হলো আমাদের। আমি তো খুব খুশি হয়ে গেলাম কিন্তু উনাকে দেখে মনে হলো উনি খুশি হন নি। এই দুই দিন ভাইয়াকে যত বার দেখেছি ততবারই আমার মনে হয়েছে আমার এই গেইম পাগল ভাইয়া প্রেম ও করে তাও আবার অহনার সাথে তাও সবাইকে লুকিয়ে। আমি একবার মনে মনে ভাবলাম ভাইয়াকে কি অহনা কথা জিজ্ঞেস করব পরে ভাবলাম থাক এসব নিয়ে কথা না বলাই ভালো।কেউ যদি শুনে নেয় বিশেষ করে উনি তাহলে হয় তো উনি সেটা মেনে নিতে নাও পারেন। আমরা খুব সকাল সকালই রওনা দিলাম এ বাড়ি থেকে যেতেই মন চাইছো না আমার। আসার সময় মা বাবা ভাইয়াকে ধরে কান্না করেছি তারও কান্না করেছে।
অনেক্ষন হয়ে গেছে শান আর ইশা রওনা দিয়েছে। তবে এখনও পর্যন্ত কেউ কারও সাথে একটা কথাও বলেনি।শান কথা বলে নি কারন আশার আগে ইশা প্রচুর কান্না করেছে। তাই ইশাকে কিছু সময় দিয়েছে নিজেকে সামলানোর জন্য।তবে এখন শানের ইশার এই চুপ থাকাটা ভালো লাগছে না তাই শান বলে উঠলো
শানঃ কি হয়েছে তোমার কথা বলছো না কেনো ইশা খুব কি খারাপ লাগছে তোমার
ইশা এত সময় বাহিরের দিকে তাকিয়ে ছিলো।মনে মনে সে বিভিন্ন কথা ভাবছিলো। তার আর শানের সম্পর্ক নিয়ে জিসান আর অহনার সম্পর্ক নিয়ে ।এসব ভাবতে ভাবতে হঠাৎ শানের গলার আওয়াজ পেয়ে ইশা চমকে উঠে শানের দিকে তাকিয়ে বলল
ইশাঃ ক…. কিছু কি বলছিলেন
শান ইশার দিকে ভ্রু কুচকে বলল
শানঃ কি হয়েছে তোমার এত বেখেয়ালি কেনো তুমি
ইশাঃ কই না তো আমি তো
শানঃ থাক আর কিছু বলতে হবে না।
একটু রেগে বলল কথাটা কারন সে কোন ভাবেই ইশা আর তার সম্পর্কটা স্বাভাবিক করতে পারছে না।যতবারই সে ইশার কাছে যায়। ইশা যেনো তার থেকে দ্বিগুণ দূরে চলে যায়। এসব ভেবেই শানের মাথাটা মাঝে মাঝে গরম হয়ে যায় তবুও নিজেকে কন্ট্রোল করে সে।কারন সে আর চায় না তার রাগের কারনে তাদের সম্পর্কে আর কোন বাধা আসুক। তাই সে মনে মনে ঠিক করে ইশাকে কোন বিষয়ে জোর করবে না।
ইশাঃ আপনি কি রাগ করলেন
শানঃ না (গম্ভীর শুরে)
বলেই শান গাড়ি চালানোয় মনযোগ দিলো। বাহিরে খুব জোরে বৃষ্টি পরছে।ইশা হঠাৎ গলাটা শুখনো শুখনো লাগছিলো তাই সে শানকে বলে উঠলো
ইশাঃ পানি খাবো
শান একবার ইশার দিকে তাকিয়ে তারপর তার পাশে থাকা বোতলটা হাতে ধরতেই দেখলো তাতে পানি নেই । শান ইশার দিকে তাকিয়ে বলল
শানঃ বোতলে পানি নেই। আচ্ছা দাড়াও দেখি আশে পাশে কোথাও দোকান পাই কি না।
ইশাঃ হুম
অবশেষে উনি একটা দোকানের সামনে গাড়ি দাড় করিয়ে। ছাতা নিয়ে গাড়ি থেকে বেড়িয়ে দোকান থেকে একটা পানির বোতন কিনে আনলেন। সাথে কিছু খাবারও আনলেন।আমাকে পানি বোতন আর খাবার গুলো দিয়ে বলেন
শানঃ খেয়ে নেও সকালে তো তেমন কিছু খাও নি
বলেই উনি গাড়ির ভিতরে ঢুকে সীট বেল্ট লাগিয়ে গাড়ি স্টাট দিলেন।আমি অবাক হয়ে গেলাম আর বলাম
ইশাঃ আপনি কি করে জানলেন
উনি আমার কথার কোন জবাব দিলেন না। উনার দিক থেকে কোন আওয়াজ না পেয়ে মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো।কারন উনি সব সময় এমনটাই করেন আমি কিছু জিজ্ঞেস করলেনই উনি সহজে উওর দিতে চায় না। আমি অভিমান করে বললাম
ইশাঃ খাবো না আমি
উনি আমার দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বললেন
শানঃকেনো
ইশাঃ এমনি ভালো লাগছে না তাই
শানঃ এত
আর কিছু বলতে পারলো না শান হঠাৎ করে তাদের গাড়ির টায়ার পাঞ্চার হয়ে গেল।গাড়ির টায়ার পাঞ্চার শব্দে ইশা ভয়ে শানের বাম হাত খামচে ধরলো।শান কি হয়েছে বুঝতে পেরে গাড়িটা আসতে সাইড করে দাড় করিয়ে দিয়ে । একটা স্বস্তি নিশ্বাস নিলো। তারপর ইশার দিকে তাকিয়ে দেখলো।ইশা ভিষন ভয়ে পেয়েছে সে ভয়ে চোখ বন্ধ করে রেখেছে।শান ইশাকে স্বাভাবিক করার জন্য বলল
শানঃ ইশা শান্ত হও কিছু হয় নি দেখো আমরা সেভ আছি
ইশা শানের মুখ থেকে এমন কথা শুনে ইশা চোখ খুলে সামনে তাকিয়ে বলল
ইশাঃ কি হয়েছে এমন শব্দ হলো কেনো??
শান স্বাভাবিক গলায় বলল
শানঃ তেমন কিছু না গাড়ির টায়ার পাঞ্চার
হয়েছে বোধহয় তুমি বসো আমি দেখছি হুম
ইশাঃ হুম
শান সীট বেল্ট খুলে বেড় হতে গেলেই হাতে টান অনুভব করলো । শান তার হাতের দিকে খেয়াল করতেই দেখলো ইশা তার হাত ধরে আছে শান ইশার হাতের উপর নিজের হাত রাখতেই ইশা ছেড়ে দিয়ে লজ্জায় অন্যদিকে তাকালো।
এটা দেখে শান একটা মুচকি হাসি দিয়ে ছাতা নিয়ে গাড়ি থেকে বেড় হয়ে দেখলো পিছনের একটা টায়ার পাঞ্চার হয়েছে শান আশে পাশে তাকাতেই দেখরো রাস্তা খুব নির্জন তেমন একটা গাড়ি যাতায়াত করছে না । শান একটা দীর্ঘ নিশ্বাস নিয়ে গাড়ির কাছে গিয়ে দরজা খুলে বসতে বসতে বলল
শানঃ গাড়ির পিছনের টায়ারটা গেছে। change করতে হবে।দেখে মনে হল আশেপাশে তেমন একটা লোকজন থাকে না।
শানের মুখ থেকে এমন কথা শুনে ইশা ভয়ে ভয়ে বলে উঠলো
ইশাঃ এখন
শান ইশার দিকে তাকিয়ে দেখলো ইশা ভয় পাচ্ছে শান ইশার গালে হাত রেখে বলল
শানঃ চিন্তা করো না আমি আছি তো নাকি
ইশা শানের দিকে তাকিয়ে ধিমি গলায় বলল
ইশাঃ হুম
শানঃ এখন লক্ষ্যি মেয়ের মতন গাড়িতে বসো আমি টায়ার টা change করে আসছি
বলেই শান যেতে নিলেই ইশা শানের হাত চেপে ধরে বলল
ইশাঃ বাহিরে তো প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে আপনি এ অবস্থায় টায়ার change করবেন কিভাবে
শানঃ কোন ব্যাপার না মেনেজ করে নিবো
ইশাঃ আমি আপনার সাথে আসি
কথাটা শুনে শান কিছুটা অবাক হয়ে ইশার দিকে তাকিয়ে রইলো।সেটা দেখে ইশা আবারও বলে উঠলো
ইশাঃ না মানে আমি ছাতা ধরতাম আপনি কাজ করতে।
শানঃ তার কোন দরকার নেই বৃষ্টিতে ভিজলে তোমার জ্বর আসতে পারে
বলেই শান চলে গেলো। ইশার গাড়ির মধ্যে বসে রইলো।
শান গাড়ির ডিকি থেকে নতুন একটা টায়ার বের করলো।এক হাত দিয়ে ছাতা ধরে অন্য হাত দিয়ে টায়ার খুলছে। এতে তার বেশ সমস্যা হচ্ছি লো কোন মতে গাড়ি থেকে টায়ারটা খুলে সাইডে রেখে নতুন টায়ারটা লাগাতে যাচ্ছিল।ঠিক তখনই একটা দমকা বাতাস এসে শানের ছাতাটা উড়িয়ে নিয়ে গেলো। এমটা হওয়াতে শান কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে ভিজে একাকার হয়ে গেলো।সে উঠে দাড়িয়ে সামনে তাকাতেই যা দেখলো ইশা দাড়িয়ে আছে।
\\আমার গাড়ির ভিতরে বসে কেমন জানি অস্তিত্ব বোধ হতে লাগলো উনি একা কিভাবে টায়ার change করবে সেটা ভেবে।আমি আর বসে থাকতে পারলাম না গাড়ির দরজা খুলে একটা ছাতা নিয়ে বেড় হয়ে উনার সামনে যেতে না যেতেই একটা বাতাস এসে আমার ছাতাটা উড়িয়ে নিয়ে গেলো। এতে আমি ভিজে একাকার হয়ে গেলাম।
শান তার সামনে ইশাকে এভাবে ভেজা শরীরে দেখে রেগে গেলো।সে দ্রুত পায়ে ইশার কাছে গিয়ে বলল
শানঃতোমাকে কত বার বলেছি গাড়ি থেকে বেড়িও না। তুমি তবুও গাড়ি থেকে বেড় হলে
ইশাঃআমি
শানঃচুপ আর একটাও কথা বলবে না।তুমি কি পন করে রেখেছো যে আমি ডানে যেতে বললে তুমি বামে যাবে আর বামে যেতে বললে ডানে যাবে( জোরে বলল)
ইশা মাথা নিচু করে দাড়িয়ে রইলো কারন ভূল তো তারই।সেটা দেখে শান বলে উঠলো
শানঃ কি হলো এখন মাথা নিচু করে আছো কেননো।
ইশা মাথা তুলে শানের দিকে তাকিয়ে বলল
ইশাঃআমি তো আপনাকে সাহায্য করতে এসেছি
শান তার বুকে দুই হাত গুজে রাগি গলায় বলল
শানঃ কি সাহায্য করতে চাও তুমি আমাকে
ইশাঃ………….. চুপ
শান ইশাকে চুপ থাকতে দেখে জোরে বলে উঠলো
শানঃ কি হলো বলো
ইশাঃ…………. চুপ
শান ইশার দিকে থেকে মুখ ঘুরিয়ে বলল
শানঃ যত বার ভাবি তোমাকে রাগ দেখাবো না ততবারই তুমি আমাকে কোন না কোন ভাবে রাগিয়ে দেও। যাও ভিতরে যাও( জোরে)
ইশা হালকা কেঁপে উঠে দ্রুত পায়ে গিয়ে গাড়িতে বসলো।
গাড়িতে বসে নিচুপে চোখের জল ফেলতে লাগলো ইশা।কিছুসময় পর শানও তার কাজ শেষ করে গাড়িতে গিয়ে বসলো। সারা রাস্তায় ইশার দিকে একবার তাকালো না শান।শান তার বাড়ির সামনে গাড়ি থামাতেই ইশা। গাড়ির দরজা খুলে বাড়ির ভেতরে ঢুকে সোজা তার রুমে চলে গেলো। ইশার খুব খারাপ লেগেছে শানের এমন ব্যবহারে।
চলবে………..
[[[লেখায় ভুল হতে পাড়ে একটু বুঝে পড়বেন ধন্যবাদ]]]