মনোহরা পর্ব-২০

0
885

#মনোহরা
#পর্বঃ২০
#লেখিকাঃনির্মলা

ইশার খুব খারাপ লেগেছে শানের এমন ব্যবহারে। শান ইশাকে নামিয়ে দিয়ে গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে গেলো।ইশা রুমের মেঝেতে বসে বিছানায় মাথা রেখে নিচুপে কান্না করে যাচ্ছে। কান্না করতে করতে একসময় ইশা ঘুমিয়ে গেলো।যখন তার ঘুম ভাঙলো রুমে চারপাশে তাকিয়ে তারপর ঘড়ির দিকে তাকাতেই দেখলো ৭ টা বাজে।ইশা ঝটপট উঠে দাড়ালো। শরীরের ভেজা শাড়িটা শুকিয়ে গেছে তার কান্না কাটিতে এত ব্যাস্থ ছিল যে পরনে যে তার ভেজা শাড়ি সেটা তার মনেই ছিলো।ইশা ভাবলো শান এসে যদি দেখে সে এখনো ভেজা শাড়ি পড়ে আছে। তাহলে তাকে আর এক দফা বকা শুনতে হবে।তাই দ্রুত পায়ে কাবার্ড এর কাছে গিয়ে শাড়ি বেড় করে washroom এ চলে গেলো।
washroom থেকে বেড়িয়ে।নিচে চলে গেলো ইশা। সে ভাবলো শান হয়তো তার উপর রাগ করে রুমে আসে নি নিচে আছে বোধহয়। কিন্তু নিচে নামতেই দেখল পুরো বাড়িতে কেউ নেই।

আমি কিছুটা অবাক হলাম।কারন এই সময় আমার শাশুড়ী মা বসে বসে টিভি দেখে আর অহনা সোফায় বসে ফোন চালায়। কিন্তু আজ কাউকে দেখতে পারছিনা।আমি মনে মনে ভাবতে লাগলাম রান্না ঘরে নেই তো গিয়ে দেখি তো একবার। যেই ভাবা সেই কাজ করলাম রান্না ঘরের দিকে যেতে নিলেই দেখলাম।এ বাড়ির কাজের মেয়েটা রান্না ঘরে থেকে বেড় হচ্ছে। আমাকে দেখে সে বলে উঠলো
কাজের মেয়েটাঃ নতুন বউ আপনে কহন আইছেন
ইশাঃ এসেছে অনেক্ষন আগে
কাজের মেয়েটাঃ ও তয় ঠিকাছে তা নতুন বউ হুনেন রান্না কইরা দিয়া গেলাম খাইয়া লইয়েন ঠিকাছে আমি তয় গেলাম
বলে মেয়েটা চলে যেতে নিলেই আমি বলে উঠলাম
ইশাঃ শোন
কাজের মেয়েটা থেমে গিয়ে বলে উঠলো
কাজের মেয়েটাঃ যে কন
ইশাঃ মা আর অহনা কোথায় উনাদের তো দেখতে পাচ্ছি না।
কাজের মেয়েটা জিহ্বা কামড় দিয়ে বলল
কাজের মেয়েটাঃ দেখসেনি নতুন বউ এক কারে কথাটা মাথা থাইকা চইলা গেছে।খালাম্মা তার এক বান্ধবী আছে না হের শরীর নাকি জন্মের খারাপ তাই খালাম্মা হেগো বাড়িতে গেছে সাথে অহনা আফারেও লইয়া গেছে আর খালু হের অফিসের কামে বাহিরে গেছে। খালাম্মা কাল ফিরবো আমারে তো কইয়া গেলো শান ভাইরে ফোন করবো কইরো করে নাই।
আমি না সূচক মাথা নাড়ালাম কারন আসার পর থেকে তো উনার সাথে আমার দেখাই হয় নি।
কাজের মেয়েটাঃ নতুন বউ আপনে থাহেন আমি গেলাম তয়
ইশাঃ শোন উনি মানে তোমার শান ভাইকে কি দেখছো
কাজের মেয়েটা আমাকে উল্ট প্রশ্ন করে বলল

কাজের মেয়েটাঃ কেন ভাই বাড়িতে নাই
কাজের মেয়েটার মুখ থেকে এমন কথা শুনে আমি আর কথা বাড়ালাম না।কারন আমি বুঝতে পেরেছি উনি হয়তো বাড়িতে ঢুকেন নি।আমি কাজের মেয়েটার দিকে তাকিয়ে বললাম
ইশাঃ ঠিকাছে তুমি যাও
কাজের মেয়েটাঃ যে ঠিকাছে

কাজের মেয়েটা জবার পর দরজা ভারোভাবে আটকিয়ে।আমি ও আবার রুমে চলে গেলাম।কেনো জানি ভালোলাগছে না আমার খুব চিন্তা হচ্ছে উনাকে নিয়ে।এসেই আবার কোথায় বেড় হলেন উনি।বিছানার উপর শুয়ে আছি চোখে এক ফোটাও ঘুমের দেখা নেই।এটা হয়তো তখনকার ঘুমানোর কারনে হয়েছে। এপাশ ওপাশ করে কত সময় কাটিয়ে দিলাম।পেটের মধ্যে খিদেতে ডাকাডাকি করছে।প্রায় সারাদিনই না খাওয়া এখন খিদেটা বেড়ে দিগুন হয়েছে কিন্তু নিচে যাওয়ার সাহস হচ্ছি না।কারন পুরো বাড়িতে কেউ নেই এমনিতেও আমার ভূতের ভয় একটু বেশি। খিদেতে এভাবে আর শুয়ে থাকতে পারলাম না। উঠে এক বার ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলাম ১২টা বাজে। সেটা দেখে আমার চোখ দুটো বড় বড় হয়ে গেলো কারন উনি এখনও বাড়ি ফেরেনি। চিন্তা হচ্ছে খুব এখন আমার।কি করবো বুঝতে পারছি না আমি উনাকে যে ফোন করবো সেই ফোনই তো নেই আমার কাছে এসব ভাবছিলাম হঠাৎই কলিং বেল বেজে উঠলো। আমি যেনো দেহে প্রান ফিরে পেলাম। আমি দ্রুত পায়ে রুম থেকে বেড়িয়ে নিচে নেমে দরজার কাছে গিয়ে দরজা খুলে দেখলাম।উনি দাড়িয়ে আছে আমার দিকে একবার তাকিয়ে আমাকে পাশ কাটিয়ে রুমে চলে গেলেন।আমি দরজা আটকে উনার পিছন পিছন রুমে দিকে গেলাম।গিয়ে দেখে উনি কাবার্ড থেকে জামাকাপড় বেড় করছে।আমি দ্রুত পায়ে উনার সামনে গিয়ে দাড়ালাম আর বললাম
ইশাঃ আপনি কোথায় ছিলেন
উনি আমার কথায় পাত্তা দিয়ে কাবার্ডের দরজা আটকে পাশ কাটিয়ে চলে যেতে নিলেই আমি উনার হাত ধরে ফেললাম আর বললাম
ইশাঃ আপনি আমার কথার জবাব দিচ্ছেন না কেনো।
উনি উনার হাতটা আমার থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে স্বাভাবিক ভাবে বললেন
শানঃ ঘুমিয়ে পড়ো
বলেই washroom এর চলে গেলেন।এটা দেখে আমি মনে মনে ভাবতে লাগলাম রাগ করার কথা আমার অভিমান করার কথা আমরা সেখানে কিনা উনি এসব করছে। উনার এমন ব্যাবহারে আমার ভিষন খারাপ লাগছে। আমি বিছানার উপর মুখ গোমড়া করে বসে পড়লাম।কিছুসময় পর উনি washroom থেকে বেড় হতেই আমি উঠে দাড়িয়ে উনার সামনা সামনি গিয়ে বললাম
ইশাঃ সমস্যা কি আপনার
উনি আমার দিকে তাকিয়ে তারপর তার হাতে থাকা তাওয়ালটা সোফার উপর রেখে আমাকে বলে উঠলেন
শানঃ আমার কোন সমস্যা নেই সব সমস্যা তোমার
বলেই উনি বিছানার কাছে গেলেন। আমি পিছন থেকে বলে উঠলাম
ইশাঃ আমি কি করছি আপনি তো আমাকে বকা দিলেন। রাগ তো করার কথায় আমার সেখানে কি না আপনি রাগ করছেন।

শানঃ চুপ
ইশাঃ কি হলো কথা বলছেন না যে

শান বিছানায় বসতে বসতে বলল

শানঃ কি বলবো কি শুনতে চাও তুমি
ইশা আর দাড়িয়ে না থেকে শানের সামনে গিয়ে মাথা নিচু করে বলল
ইশাঃ আপনি যা বলবেন তাই শুনবো কিন্তু এভাবে আমার কথা বইলেন না
শানের ইশাকে এভাবে দাড়িয়ে থাকতে দেখে সব রাগ যেনো নিমিষেই হারিয়ে গেলো। সে ইশার হাত ধরে টেনে নিয়ে নিজের পাশে বসিয়ে গম্ভীর কন্ঠে বলল
শানঃ যা বলবো তাই শুনবে তো
ইশা শানের চোখের দিকে তাকিয়ে বলল
ইশাঃ হুম কি করতে হবে আমাকে বলুন
শানঃ ভালোবাসবে একটু আমাকে
কথাটা শোনা মাএ ইশা শানের দিকে চোখ বড়বড় করে তাকালো

সকালে……….
খুব সকালে ঘুম ভাঙলো আমার। চোখ খুলতে নিজেকে উনার বুকের মধ্যে পেলাম। উনার মুখের দিকে তাকাতেই কাল রাতের কথা মনে পড়ে গেরো আমি একটু লজ্জা পেলাম। আমি আস্তে আস্তে উনার কাছ থেকে উঠে washroom চলে গেলাম।washroom থেকে বেড়িয়ে দেখি উনি এখনো ঘুমিয়ে আছে।আমি একবার ভাবলাম উনাকে ডাকবো পরে ভাবলাম না থাক কাল অনেক রাতে এসেছে একটু ঘুমাক।

এই ভেবে আমি নিচে চলে গেলাম।নিচে যেতেই বাড়ির কলিং বেল বেজে উঠলো। আমি গিয়ে দরজা খুলে দিলাম। দরজা খুলতেই দেখি কাজের মেয়েটা এসেছে আমি তাকে দেখে দরজা থেকে সরে গেলাম।মেয়েটা ভিতরে ঢুকে দরজা আটকে রান্না ঘরে চলে গেলো।আমিও তার সাথে সাথে গেলাম।

কাজের মেয়েটা রান্না ঘরে গিয়ে দেখলো কালকের সব রান্না করা খাবার সে ঠিক যেভাব রেখেছে সেভাবেই রয়েছে কাজের মেয়েটা তখন বলে উঠলো
কাজের মেয়েটাঃ এ বাবা সব খাওনই দিহি ধরা
ইশা রান্না ঘরে ঢুকতেই কাজের মেয়েটা বলে উঠলো
কাজের মেয়েটাঃ নতুন বউ আপনারা দেহি কিছুই খান নাই
ইশা আমতাআমতা করে বলল
ইশাঃ হ্যাঁ আসলে উনার আসতে একটু লেট হয়েছিলো তাই খেতে পারিনি
কাজের মেয়েটাঃ ও আইচ্ছা তাই কন

শানের ঘুম ভাঙতেই সে অনুভব করলো ইশা তার পাশে নেই। শান উঠে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো ১০ টা বাজে।সে দ্রুত উঠে washroom এ গিয়ে গোসল সেরে বেড় হয়ে রেড়ি হতেই দেখলো ইশা দরজা দিয়ে কফির মগ নিয়ে ভেতরে ঢুকছে।

আমি রুমে ঢুকতেই দেখলাম উনি রেড়ি হচ্ছে। আমি কফির মগটা উনার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললাম
ইশাঃ আপনার কফি,,
উনি একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে কফির মগটা আমার কাছ থেকে নিয়ে বললেন
শানঃ তুমি আমাকে ডাকলে না কেনো জানো আজ অফিসে যেতে কতটা লেট হয়ে গেলো।বাবাও তো বাহিরে।
ইশাঃ ও আসলে আমি ভাবলাম আপনি কাল রাতে দেড়ি করে এসেছিলেন তো তাই আর ডাকিনি
শানঃ ঠিকাছে কোন ব্যাপার না। আচ্ছা শোন আমি এখন অফিসে বেড় হবো। তুমি ঠিক মতন খেয়ে নিও আর হ্যাঁ মা দুপুরের মধ্যে চলে আসবে। ভারো ভাবে থেকো।
বলেই ইশার কাছে এসে শান ইশার কপালে ভালোবাসার পরশ দিলো।ঠিক তখন ইশা বলে উঠলো
ইশাঃ আপনি কখন আসবেন
শানঃ রাতে
ইশাঃ দুপুরে আসবে না

চলবে……….

[[[লেখায় ভুল হতে পাড়ে একটু বুঝে পড়বেন ধন্যবাদ]]]

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে