মনোহরা পর্ব-১৮

0
932

#মনোহরা
#পর্বঃ১৮
#লেখিকাঃনির্মলা

আমি উনার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম। উনি হাসতে হাসতে আমাকে বলে উঠলেন
শানঃ oh god এতদিন ভাবতাম তুমি আমাকে ভয় পাও।এখন দেখি না তুমি সব কিছুতেই একটু বেশি ভয় পাও
ইশাঃ মানে

শান হাসিটা একটু থামিয়ে বলল
শানঃ মানে! তোমার নাক মুখে পানি পড়াতেই মুখটা যেমন করলে সেটা দেখার মতন ছিলো কিন্তু
ইশা কোমরে হাত দিয়ে বলল
ইশাঃ তাই না তার মানে এটা আপনার কাজ
শান বিছানা ছেড়ে উঠে ইশার সামনে দাড়িয়ে শানের ভেজা চুল আর একবার ঝাঁকিয়ে বলল
শানঃ না ম্যাডাম এটা আমার চুলের কাজ (বলেই হেসে উঠলো)
ইশা রেগে গিয়ে শানকে হালকা ধাক্কা দিয়ে নিজের কাছ থেকে সরিয়ে বলল
ইশাঃ আপনি আমাকে জালানোর কোন সুযোগ ছাড়েন না তাই না।
শান মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিয়েলো” না”।ইশা একটা রাগি ভাব নিয়ে শানকে পাশ কাটিয়ে ব্যাগ থেকে জামা কাপড় বেড় করে washroom এ পা বাড়ালো।

ইশা fresh হয়ে washroom থেকে বেড়িয়ে দেখে। শান রেড়ি হয়ে ফোনের স্ক্রনের দিকে তাকিয়ে আছে।ইশা বেড় হতেই শান ইশার দিকে তাকায়।ইশা সেটা দেখে চোখ সরিয়ে নেয়।ইশা তার মাথার চুল তাওয়াল দিয়ে মুছতে মুছতে ড্রেসিংটেবিলের দিকে যায়।চুল মুছে তাওয়ালটা সাইডে রেখে আয়নার দিকে তাকিয়ে দেখলো শান তার দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।ইশা ও শানের দিকে তাকিয়ে তার মতিগতি বোঝার চেষ্টা করছি ঠিক তখনই তার রুমের দরজায় নক পড়লো। ইশা দরজার কাছে গিয়ে দরজা খুলে দিতেই দেখলো নিতু দাড়িয়ে আছে। নিতু কে ইশা কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই নিতু বলে উঠলো
নিতুঃ তোমাকে আর জিজু কে খেতে ডাকছে।
ইশাঃ হুম তুই যা আসছি।
নিতুঃ না এখনই যেতে বলেছে খাবার টেবিলে সবাই অপেক্ষা করছে আপুনি।
ইশাঃ ঠিকাছে আসছি
নিতুঃ তাড়াতাড়ি কিন্তু।
ইশাঃ হ্যাঁ রে বাবা আসছি।
বলতেই নিতু চলে গেলো।ইশা দরজার কাছ থেকে রুমে এসে শানের দিকে তাকিয়ে দেখলো শান এখন তার দিকে তাকিয়ে আছে ইশা সেটা দেখে নিজেকে সামলিয়ে বলল
ইশাঃ খেতে চলুন
ইশার ডাকে শানের হুস ফিরলো শান উঠে দাড়িয়ে বলল
শানঃহুম চলো
বলেই দুজনে খাবারের টেবিলের সামনে গেলো।দেখলো সবাই তাদের জন্য অপেক্ষা করছে। ইশা শান গিয়ে টেবিলে বসলো।তাদের বসার পর পরই সবাই বসলো। ইশার মা সবাইকে খাবার দিতে লাগলো।ইশা টেবিলের দিকে তাকিয়ে দেখলো সব খাবার তার আর শানের পছন্দের রান্না করা হয়েছে।ইশা তার নিজের পছন্দের খাবার দেখে মুখে তার হালকা হাসি ফুটে উঠলো।

দুপুরের খাবার পর এখন আমার আর ভালো লাগছে না।চোখে একরাশ ঘুম এসে হানা করছে।উনি আর ভাইয়া বাহিরে গেছে আমি রুমে ঢুকে দরজাটা হালকা চাপিয়ে। বিছানায় গা এলিয়ে দিলাম।সঙ্গে সঙ্গে ঘুমের দেশে পাড়ি দিলাম।

সন্ধ্যায়………….

আমার ঘুম থেকে উঠে দেখি সন্ধ্যা হয়ে গেছে।উনার কথা মনে পড়তেই আমার পাশে তাকিয়ে দেখি উনি এখন আসেন নি।তাই আমি উঠে fresh হতে গেলাম।fresh হয়ে রুমে এসে দেখি উনি বিছানায় বসে আছি আমাকে দেখে উনি বলে উঠলেন
শানঃ ঘুম হলো

আমি অবাক হয়ে বললাম
ইশাঃ আপনি কি করে জানলেন, আপনি তো বাড়ি ছিলেন না
উনি একটা হাসি দিয়ে বললেন।
শানঃ আমি এসেছি অনেক্ষন আগে। এসে দেখি তুমি ঘুমিয়ে আছো। তাই আর তোমাকে ডিস্টার্ব করি নাই। তোমাদের বাড়ির ছাদে কিছুসময় কাটাই। রিয়া আর নিতু ও ছিলো আমার সাথে।
ইশাঃ ও,, আচ্ছা
উনি আবারও বলে উঠলেন
শানঃ তোমাদের বাড়ির ছাদের দেখলাম বিভিন্ন ফুল গাছ ও গুলো কি তুমি লাগিয়েছো।
ইশাঃ উহু আমার এ সবের কোন শখ নেই। এ গুলো ভাইয়া করেছে।
শানঃ জিসান!!!!
ইশাঃ হুম,
শানঃ ওর আবার এসবের শখ হলো কবে থেকে
ইশাঃ আসলে গেইম খেলার পর যতটুকু সময় পায় এসব নিয়েই থাকে।
বসেই ইশা হেসে দিলো। শান ও ইশার সাথে হাসতে লাগলো কিছুসময় পর ইশা শানকে বলে উঠলো
ইশাঃ আপনি কফি খাবেন
শানঃ হুম দিলে মন্দ হয় না
ইশাঃ আপনি একটু বসুন আমি মাকে বলে আসি কফি বানাতে
এই বলে ইশা যেতে নিলেই শান ইশার ডান হাত ধরে ফেলে এতে ইশা ঠমকে দাড়িয়ে যায়।
শানঃ ইশা (নরম শুরে)
শানের এভাবে ডাক শুনে ইশার মধ্যে দিয়ে ঠান্ডা বাতাস বয়ে গেলো। ইশা আসতে করে শানের দিকে ঘুরে বলল
ইশাঃ কি হলো কিছু বলবেন
শানঃহুম
ইশাঃ কি
শানঃ আমি চাই আজ তুমি আমার জন্য নিজের হাতে কফি বানিয়ে আনো

বলেই ইশার ডান হাতে উল্টা পিঠে নিজের ঠোঁট ছোয়ালে
এতে ইশা কিছুটা কেঁপে উঠল। ইশা কোন রকম হাত ছাড়িয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো।

রুম থেকে বেড়িয়ে ইশা রান্নাঘরের দিকে যেতে লাগলো।ইশাদের বসার রুম দিয়ে রান্না ঘরে যেতে হয়। ইশা বসার রুম দিয়ে যেতে লাগলো
আর ভাবতে লাগলো।আমি তো কফি কখনও বানায় নি। কিন্তু উনি তো আমার হাতের কফি খেতে চেয়েছেন। এখন কি করবো ঠিক তখনই সোফার উপর পড়ে থাকা জিসানের ফোন বেঁজে উঠলো। ইশা সেটা শুনতে পেয়ে আশেপাশে তাকাতে লাগতে হঠাৎ তার নজর পড়লো সোফার উপর পড়ে থাকা জিসানের ফোনটা।ইশা ফোনটার কাছে যেতে যেতে বলল

ইশাঃ আজ সূর্য কোন দিয়ে উঠেছিলো যে ভাইয়া তার ফোন এখানে ফেলে রেখে গেছে
এসব বলেই ইশা ফোনটা হাতে নিতেই ফোনের স্ক্রিনে দিকে তাকিয়ে দেখলো তাতে অহনার নাম লেখা।ইশা খুশি মনে ফোনটা ধরতে hello বলার আগে ওপাশ থেকে
অহনাঃ কি হলো ফোনটা ধরছিলে না কেনো তুমি বাবু। সামান্য একটা বিষয় নিয়ে এভাবে কেউ রাগ করে। তুমি জানো না আমি তোমাকে কতটা ভালোবাসি

অহনার মুখ থেকে এমন কথা শুনে ইশা থমকে গেলো।সে ভাবতেই পারছেন অহনা সাথে তার ভাই জিসান প্রেম করে। সে কিছু বলতে যাবে ঠিক তখনই অহনা আবার বলে উঠল

অহনাঃ দেখো এভাবে যদি তুমি রাগ করে থাকো না তাহলে কিন্তু আমি
আর কিছু বলতে পারলো না অহনা ফোনের লাইনটা হঠাৎ কেঁটে গেলো।ইশা ফোনটা হাতে নিয়ে দেখলো ফোনটা সুইচ অফ হয়ে গেছে।ইশা ফোনটা সোফার উপর রেখে দিলো। ইশা জিসান আর অহনার কথা ভাবতে রান্নাঘরের দিকে গেলো।রান্না ঘরে যেতেই দেখলো তার মা পকরা ভাজছে।ইশা পেছন থেকে তার মাকে ডেকে উঠল
ইশাঃ মা!!!!!
ইশার মা পিছনে ফিরে ইশাকে দেখে বলল
ইশার মাঃ কি হয়েছে মা,,,, ঘুম হয়েছে তোমার
ইশাঃ হুম,,,, মা ভাইয়া কোথায়
ইশার মাঃ জিসান তো তোর বাবার সাথে বেড়িয়েছে
বলেই ইশার মা তার কাজে মন দিলো
ইশাঃ ও কখন আসবে
ইশার মা ইশার দিকে না তাকিয়ে উওর দিলো
ইশার মাঃ গিয়েছে তো ঘন্টা খানিক হলো এখুনি চলে আসবে কেনো তোর কি কিছু দরকার তাহলে জিসানকে ফোন কর
ইশাঃ না কিছু দরকার নেই।
বলেই ইশা তার মায়ের কাছে গিয়ে বলল
ইশাঃ মা একটু কফি বানানো শিখিয়ে দিবে
ইশার মা ইশার মুখ থেকে এমন কথা শুনে অবাক হয়ে বলে উঠলো
ইশার মাঃ হঠাৎ কফি বানানো শিখতে চাস কেনো
ইশাঃ না মানে তোমার জামাই আমার হাতের কফি খেতে চেয়েছে
ইশার মা মুচকি হেসে বলল
ইশার মাঃ ঠিকাছে শিখাবো

মায়ের কথা মতন কফি বানিয়ে আমার রুমের দিকে যাচ্ছি লাম।ঠিক তখনই দরজার কলিং বেল বেজে উঠলো। আমি দরজাটা খোলার জন্য এগিয়ে যেতে গেলেই মা পিছন থেকে বলে উঠলো
ইশার মাঃ ইশা তুই যা জামাইকে কফি দিয়ে আয় আমি দরজা খুলছি।
আমি মায়ের কথা মতন নিজের রুমের দিকে পা বাড়ালাম।রুমের কাছে যেতেই শুনতে পেলাম ভেতর থেকে হাসাহাসি শব্দ আসছে। আমি বুঝে গেলাম আমার ফাজিল বোন দুটো আমার রুমে এসেছে।আমি ভিতরে ঢুকে উনার দিকে কফির মগটা এগিয়ে দিতেই উনি আমার দিকে একবার তাকিয়ে একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে কফির মগটা নিতে নিতে বললেন
শানঃ এত সময় লগলো কেনো আসতে
পাশ থেকে নিতু রিয়া বলে উঠলো
রিয়া আর নিতুঃ ওহো আপুনি তোমাকে জিজু মিস করছিলো, তাই না জিজু
আমি ওদেরকে চোখ গরম দেখিয়ে উনাকে বলে উঠলাম
ইশাঃ আসলে আমি তো কফি বানাতে পারি না তাই মা বলে বলে দিয়েছে আর আমি সেভাবেই বানিয়ে এনেছি তাই একটু দেড়ি হয়ে গেলো।

ঠিক তখনই পিছন থেকে
জিসানঃ কি গল্প করছো তোমরা???
ভাইয়ার গলার আওয়াজ পেয়ে আমি দরজার দিকে ঘুরলাম। দেখরাম ভাইয়া দরজার কাছে দাড়িয়ে আছে।এত সময় আমি প্রায় ভুলতে বসেছিলাম অহনা আর জিসান ভাইয়ার কথা। তবে ভাইয়াকে দেখা মাএ আমার আবার মনে পড়ে গেলো। ভাইয়া ভেতরে এসে আমার পাশে দাড়িয়ে ভ্রু নাচিযে বলল
জিসানঃ কিরে তুই নাকি আমাকে খুঁজছিলি
আমি কি বলবো বুঝতে না পেরে বরে উঠলাম
ইশাঃ এমনি তোমাকে দুপুরের পর থেকে দেখি নিতো তাই
জিসানঃ ও আচ্ছা চলো সবাই মা ডাকছে তোমাদের। আজ বাড়িতে গরম গরম পকরা হয়েছে।ইশা তোর পছন্দের না চল চল

আমি একটু হালকা হেসে বলে উঠলাম
ইশাঃ হুম চলো
সবাই মিলে খাবার টেবিলের কাছে গেলাম।

চলবে……………

[[[লেখায় ভুল হতে পাড়ে একটু বুঝে পড়বেন ধন্যবাদ]]]

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে