#ভালোবাসি_সমুদ্র
#পর্ব_5
#মৌসুমি
সমুদ্র হঠাৎ আলতোভাবে আমার হাতটা ধরে হাটতে লাগল।যেই স্পর্শে নেই কোনো কামনা বাসনা আছে শুধু ভালোবাসা শ্রদ্ধা এবং সম্মান।আমি ও কিছু বললাম না।পছন্দের মানুষের সাথে কেই বা না চায় সময় কাটাতে।আমি হঠাৎ সমুদ্রকে বললাম আচ্ছা সমুদ্র তুমি হঠাৎ আমার জন্য অপেক্ষা করছ দুদিন ধরে কী ব্যাপার বলো তো?
সমুদ্র আমার এই কথা শুনে হাসল আর আগের দিনের মতোই বলল শোনো মেয়ে সমুদ্রকে নিয়ে এত ভাবতে এসো না তলিয়ে যাবে।
আমি বললাম তলিয়ে যাব কেন?
সমুদ্র হঠাৎ বলল এই যে তুমি একটা বেপরোয়া ছেলে কে সেই কবে থেকে ভালোবেসে আসছ তোমার ভয় করে না
আমি বললাম ভয় কেন পাব সবাই তোমাকে বেপরোয়া ভয়ংকর সমুদ্র বলে চিনলেও আমার কাছে তুমি ভালোবাসার সমুদ্র যেখানে ভালোবাসার অন্ত নেই।আমি আর পাচটা মেয়েদের মতো ন্যাকামি করতে পারি না।তাই একটা ছেলের অনুভূতি বোঝার ক্ষমতা আমার আছে।এই যে তুমি আমার জন্য অপেক্ষা করছ কেন করছ সবই আমি বুঝি।
সমুদ্র বলল এই যে মেয়ে তুমি যে একটা বেপরোয়া ছেলের বুকে ভালোবাসার আগুন জ্বালিয়েছ সেই আগুনে পুড়তে পারবা তো।
সহ্য করতে পারবা সেই অসহ্য ভালোবাসা।
আমি হেসে তার হাত টা শক্ত করে ধরে তার দিকে আর একটু এগিয়ে গেলাম।আর বললাম সমুদ্র সাহেব আপনি আর পাঁচটা ছেলের মতো না বলেই এই মিষ্টি তোমাকে ভালোবাসে।
সমুদ্রের সাথে কথা বলতে বলতে কখন যে বাড়ির সামনে চলে এসেছি বুঝতে পারিনি।আমি সমুদ্রকে বিদায় জানিয়ে ঘরে আসলাম।
ঘরে এসে ফ্রেশ হয়ে রান্না করার জন্য রান্না ঘরের দিকে পা বাড়ালাম।আজকে মায়ের শরীর টা খারাপ তাই আজ রান্না করতে হবে রাত তো অনেক হলো।আমি তাড়াতাড়ি ভাত টক ডাল আর বেগুন ভাজা করে মা আর ভাইকে খেতে ডাকলাম।সবার খাওয়া হয়ে গেলে আমি সব গুছিয়ে রুমে চলে আসি।
আজকে ঘুমালে হবে না পড়তে হবে সব নোট খাতায় তুলতে হবে আবার কাল স্কুলে ও যেতে হবে।
সমুদ্র ফ্রেশ হয়ে ঘরে আসতেই তার ফোনে অফিস থেকে ফোন আসে সমুদ্র মিনিট পাঁচেক কথা বলে তার মায়ের ঘরের উদ্দেশ্যে যায় দেখে তার মা শুয়ে আছে।সমুদ্র তার মা কে ডাকতেই তার মা উঠে পড়ে আর জিজ্ঞাসা করে কী হয়েছে?
সমুদ্র বলে মা কাল আমাকে কলকাতা ফিরে যেতে হবে
তার মা বলে কেন রে বাবা তুই না বললি এই সপ্তাহের মধ্যে তোর এখানে ট্রান্সফার হয়ে যাবে।
সমুদ্র বলল সেটাই তো কথা ছিল মা কিন্তু এখন ম্যানেজার বলছে একমাস ডিউটি করে তারপর ট্রান্সফার।
আচ্ছা ঠিক আছে বাবা সাবধানে যাস তাহলে সব গুছিয়ে নে আর কাল কখন বেরোবি?সমুদ্র বলল কাল সন্ধ্যায় চলে যাব মা।
সমুদ্রের মা বলল তাহলে আজকে ঘুমিয়ে পড় বাবা।
সমুদ্র তার ঘরে এসে ভাবতে লাগল মিষ্টির সাথে কাল একবার দেখা করতেই হবে যে করেই হোক।
সকালে মিষ্টি টিউশন পড়িয়ে আসার সময় আর সমুদ্রের দেখা পেল না একটু মন খারাপ লাগল মিষ্টির।বাড়ি এসে স্কুলে চলে গেলাম ।আজকে কেন জানি না আমার মন টা এত অশান্ত লাগছে মাথায় শুধু সমুদ্র ঘুরছে।কিছুতেই ক্লাসে মন বসাতে পারছি না ও ভগবান আমি কী যে করব। স্কুল ছুটির সময় হঠাৎ একটা বাচ্চা মেয়ে আমাকে বলল,”দিদি সমুদ্র দাদা তোমার জন্য ঝিলপাড়ে অপেক্ষা করছে।আমি সুমীকে সব কিছু বলে ঝিলের দিকে রওনা দিলাম।
সেখানে যেতেই সমুদ্রকে সিড়িতে বসে থাকতে দেখলাম কেমন বিধ্বস্থ লাগছিল তাকে চোখগুলো ফোলা ফোলা।আমি নিশব্দে তার পাশে বসতেই সে আলতো হাতে আমার গাল স্পর্শ করে বলতে লাগল মিষ্টি আমি আজ রাতে কলকাতা চলে যাচ্ছি আসতে হয়তো একমাস।এই একমাস তোমাকে এই বেপরোয়া ছেলেটার জ্বালা সহ্য করতে হবে না।
সমুদ্রের এই কথা শুনে অজান্তেই আমার চোখ ভিজে ওঠে।সমুদ্রে আমার চোখের জল দেখেও কিছু বলেনা সে হয়তো চায় আমার চোখের জল একান্তই তার জন্য পড়ুক।
সমুদ্র আমার হাতে একটা কাগজের টুকরোই তার নাম্বার লিখে দিল আর বলল সে রোজ রাতে আমাকে ফোন করবে।সমুদ্রের ট্রেনের দেরি হয়ে যাবে বলে আমরা আর বেশিক্ষন বসলাম না।
দুজনেই বাড়ির দিকে রওনা দিলাম।
আজকে একটু মা়ংস রান্না করব ভেবেছি ভাইটা কবে থেকে খেতে চাইছে। সঙ্গে সুমীকেও ফোন করে আসার জন্য বললাম আজ রাতে আমার টিউশনি নেই তাই এই আয়োজন।
সুমী হঠাৎ জিজ্ঞাসা করল এই মিষ্টি শুনেছিস নিশ্চই সমুদ্র দা আজ চলে যাচ্ছে।
আমি বললাম শুনেছি
আচ্ছা মিষ্টি একটা কথা বলবো
আমি বললাম বল
সমুদ্রদা মনে হয় তোকে ভালোবাসে
আমি বললাম কী জানি কখনো মনে হয় বাসে আবার মনে হয় বাসে না।
একটা পাষান পুরুষকে ভালোবাসার ফল তো তোমাকে ভুগতেই হবে মিষ্টি সোনা
আমি সুমী কে বললাম আমি জ্বলছি সুমী প্রতি মুহূর্তে তার দহনে পুড়ছি।
মাঝে মাঝে খুব ইচ্ছা হয় সমুদ্রকে জড়িয়ে ধরে বলি#ভালোবাসি_সমুদ্র
চলবে……………….