#ভালোবাসি_সমুদ্র
#মৌসুমি
#পর্বঃ৩
সেদিন সমুদ্রের দিকে আর না তাকিয়েই চলে এসেছিলাম কেনই বা তাকাবো সে কি আমাকে আমার মনের অনুভূতিকে বুঝবে? না কখনোই হয়তো বুঝবে না।শুধু শুধু মায়া বাড়িয়ে লাভ নেই।মিষ্টি কে তো সেই একাই চলতে হবে। সুমী আমার বেস্ট ফেন্ড ছোটোবেলা থেকেই আমরা একসঙ্গে। সমুদ্রের প্রতি অনুভূতির কথা সুমী ব্যতীত কেউ জানে না।হঠাৎ সুমী এসে বলল,”এই মিষ্টি জানিস সমুদ্র দা এখন রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত আবার চাকরি করে শুনলাম।
আমি সুমীর কথা শুনে ও কে বললাম তুই কী করে জানলি এত কথা?
উত্তরে সুমী বলল,”সমুদ্র দাদার মায়ের মুখে শুনলাম সমুদ্র দার মা ও এসেছে,আমাদের হেড ম্যাডাম নাকি তার মায়ের ছোট বেলার বান্ধবী তাই আমি ওখান দিয়ে যাচ্ছিলাম তখনই সব শুনলাম।
তোর আড়ি পাতা স্বভাব গেলনা বল সুমী?
সুমী বলল বিশ্বাস কর আমি আড়ি পাতিনি ওখান দিয়ে যাচ্ছিলাম তাই শুনলাম আর ও কী শুনেছি জানিস মিষ্টি?
আমি বললাম কী এমন শুনেছিস বল
সুমী উত্তেজিত হয়ে বলল সমুদ্র দাদার মা তার বিয়ের জন্য মেয়ে খুজছে খুব তাড়াতাড়ি নাকি বিয়ে দিতে চাই সমুদ্র দা কে।
আমি বললাম ভালো তো দিয়ে দিক বিয়ে।
সুমী অবাক হয়ে প্রশ্ন করল তোর খারাপ লাগলো না মিষ্টি এই কথা শুনে আমি তো ভাবলাম তুই কান্না করে ফেলবি।
সুমীর এই বোকা কথা শুনে আমি হেসে ফেললাম
আর বললাম খারাপ লাগবে কেন সমুদ্র কী কখনো আমাকে ভালোবাসি বলেছে বা বিয়ে করবে বলেছে বলেনি তাহলে কেন কাঁদব।তার সাথে আমার যায় না রে সুমী। সমুদ্ররা হয়তো আগে গরীব ছিল কিন্তু এখন সে নিজেকে যোগ্য করে তুলেছে তার তো এখন সবই আছে আমার কী আছে বল?আর একবার মনের কথা বলে যা ভুল করেছি সেই ভুল আর করতে চাইনা।এই কথা বলে আমি সুমীকে কিছু না বলার সুযোগ দিয়ে গেটের দিকে এগোতে থাকলাম।
সুমী পিছন থেকে আমার নাম ধরে চিৎকার করতে থাকল
আমি গেট দিয়ে বেরোবো এমন সময় সমুদ্র তার মা কে নিয়ে গেটের সামনে আসলো।আমি সমুদ্র কে পাশে দেখে কিছুটা পিছিয়ে গেলাম। হঠাৎ আমার চোখ সমুদ্রের চোখের দিকে গেল আমি পড়তে পারলাম না তার চোখের ভাষা।সমুদ্র হঠাৎ আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে মাথা নাড়িয়ে চলে গেল।আমি অবাক হয়ে তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলাম।পেছন থেকে সুমী ধাক্কা দিতেই আমি বুঝতে পারলাম আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে।স্কুল থেকে আমার বাড়িতে যেতে পনেরো থেকে কুড়ি মিনিট সময় লাগে।এখান থেকে অনেক অটো যায় কিন্তু আমি উঠিনা।সুমীর সাইকেলের পিছনে বসেই চলে যায়।
বাড়ি গিয়ে হাত মুখ ধুয়ে মা কে তাড়াতাড়ি খাবার বাড়তে বললাম ।মা এখন আর আগের মত অত বাড়িতে কাজে যায়না তবে দুটো বাড়িতে করে আমার সীমিত টাকায় সংসার বাবার ওষুধ খরচা সব কিছু চলে না।মা খাবার বেড়ে দিয়ে অনেকখন পাশে দাড়িয়ে আমি বললাম কিছু বলবা মা বললে তাড়াতাড়ি বলো আমার পড়াতে যেতে হবে।
মা বললো হ্যাঁ বলবো
আমি বললাম বলো ফাস্ট
মা বললো মিষ্টি ঘরে চাল শেষ আর তোর বাবাকে হসপিটালে ডাক্তার দেখাতে নিয়ে যেতে হবে তো আর ভাইয়ের মাইনে না হয় আমি দিয়ে দিলাম ঘরে কিছু বাজার ও নেই আজকে কিছু না আনলে কাল হাড়ি চড়বে না।
আমি মা কে বললাম আজ তো সবে মাসের এক তারিখ ব্যাংকের মাইনেটাও পাইনি দেখি অয়নের মা তো এক তারিখ বেতন দিয়ে দেই দিলে নিয়ে আসব।
মা আলতোভাবে মাথা নেড়ে বলো তোর খুব কষ্ট হয় তাই না রে বাবা।
আমি বললাম কই না তো তুমি যদি সারাদিন ঘর সামলে ও দুইবাড়ি কাজ করতে যেতে পারো তাহলে মিষ্টি ও পারে।তোমার কষ্ট হয় না মা?
মা হেসে মাথায় হাত বুলিয়ে বললো পাগলি মেয়ে তোর সাথে কথায় আমি পারব না।
আমি মা কে বললাম আমার জীবনে দেখা সেরা নারী কে জানো? মা বলল কে?
আমি বললাম আমার গর্ভধারিনী মা।
মা এই কথা শুনে গাল ভরে একটা হাসি দিল।
আমি মা কে বললাম মা আজ ফিরতে দেরি হবে তুমি খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ো।
আমি যাওয়ার সময় রোজকার নিয়মে মা বলল সাবধানে যাস বাবু।আমি বললাম আচ্ছা
আমার বেশ কিছু টিউশনি বেড়েছে তবে পড়াতে একটু কষ্ট হয় তাও পড়াই পেটের জ্বালা বড়ো জ্বালা।
রাত সাড়ে দশটা নাগাদ টিউশনি শেষ হতেই অয়নের মা যেই বেতন টা দিল সেটা নিয়ে বাজারের দিকে গেলাম তৃনা দের বাড়ি
বাজারের কাছে হওয়ায় সময় লাগলো না বেশি ।এত রাতে একটা মেয়ের বাজারে আসা অদ্ভুত কিন্তু আমার তো উপায় নেই।যায় হোক তাড়াতাড়ি বাজার করে বাড়ির দিকে রওনা দিলাম।হঠাৎ ক্লাবের সামনে সমুদ্র কে দেখলাম দাড়িয়ে সিগারেট খাচ্ছিল হঠাৎ আমার দিকে এগিয়ে এসে আমাকে অবাক করে আমার হাত থেকে ভারি ব্যাগটা তার হাতে নিয়ে নিল। আমি তার দিকে তাকিয়ে থাকলে সমুদ্র বলে অবাক হওয়ার কিছু নেই অনেক রাত হয়েছে সামনে বখাটেদের আড্ডা আমি একটু এগিয়ে দিলে ক্ষতি নেই।
আমি ও ভাবলাম সত্যিই অনেক রাত হয়েছে এগিয়ে দিলে আমারই ভালো।
আমার কেন জানি মনে হয় সে চোখের ভাষায় আমাকে কিছু বলতে চাই।আমি তার চোখের ভাষা পড়তে চেষ্টা করে ও পারলাম না।সমুদ্র হঠাৎ হেসে আমাকে বলে সমুদ্রের কে পড়তে এসো না মেয়ে।সমুদ্রের গভীরতা যে অনেক।যেই গভীরে তুমি অতলে তলিয়ে যাবে।আমি সমুদ্রের কথা ঠিকঠাক বুঝলাম না। কখন যে হাটতে হাটতে বাড়ির সামনে এসে পড়েছি বুঝতে পারিনি।আমি সমুদ্রকে বিদায় জানিয়ে ঘরে আসলাম।
চলবে………