বর্ষণের সেই রাতে- ২ পর্ব-৪০+৪১

0
1645

#বর্ষণের সেই রাতে- ২
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল

৪০.

ক্লাসরুমে বসে অনিমা, অরুমিতা আর তীব্র তিনজনই ঝিমুচ্ছে। এক বেঞ্চেই তিনজন বসেছে। তিনজনই নিজেদের ডানগালে হাত দিয়ে রেখেছে। ক্লাসে একদমই মনোযোগ নেই ওদের। চেষ্টা করেও মনোযোগ দিতে পারছেনা। আজকের লেকচারটাই এরকম, ঘুম পাওয়ার মতো। ক্লাসের প্রায় সবারই একই অবস্থা। শুধু ফার্স্ট বেঞ্চার রাই একটু মনোযোগী আছে। বাকি সবাই জোর করে বসে আছে এই টাইপ। মনে মনে তারা যেন একটাই কথা আওরাচ্ছে, ব্যাটা তোর ঘ্যানঘ্যানানি শেষ করে বিদায় হ। অনিমা এমনিতেও খুব বেশি এটেনটিভ ছাত্রী না। মার্কস মোটামুটি ভালো থাকলেও বইয়ে মুখ গুঁজে রাখা মানুষদের দলে ও মোটেও পরে না। এরজন্যে আদ্রিয়ানের বকাও খেয়েছে এই কয়েকমাসে। তীব্র আর অরুমিতা অনেকটা এই টাইপেরই। অনিমা গালে হাত রেখেই হতাশ কন্ঠে অরুমিতাকে বলল,

” কীরে তুই এভাবে সেন্টি খেয়ে আছিস কেন?”

অরুমিতা ওভাবে বসে ঠোঁট একটু ফুলিয়ে উদাসীন গলায় বলল,

” এইসব লেকচার শুনে যে কেউ সেন্টি খেয়ে যাবে।”

অনিমা চোখের পলক ধীর গতিতে একবার ফেলে বলল,

” কারেক্ট! এই লেজ ছাড়া বান্দর তোর কী হয়েছে?”

তীব্র প্রচন্ড দুঃখী দুঃখী কন্ঠে বলল,

” স্নেহার সাথে আবার ব্রেকআপ হয়েছে। এখন আবার রাত জেগে মশার কামড় খেতে হবে। কোন দুঃখে যে ঐ মেয়ের প্রেমে পরেছিলাম, আল্লাহ জানেন। নিজের কপাল নিজেরই পেটাতে ইচ্ছা করে।”

অনিমা আর অরুমিতা ফিক করে হেসে দিল। প্রফেসর গম্ভীর গলায় বলে উঠলেন,

” সাইলেন্স!”

ওরা দুজনেই থেমে গেল। প্রচন্ড হাসি পেলেও হাসিটাকে চেপে রাখল ওরা। বন্ধুর দুঃখে হাসাটা মোটেও শোভনীয় নয়। দুঃখ পেতে হবে এখন। তাই মুখে সিরিয়াস ভাব এনে অনিমা বলল,

” ভাই, এবার কী নিয়ে?”

তীব্র অসহায় চোখে একবার অরুমিতা একবার স্নেহার দিকে তাকিয়ে হতাশ নিঃশ্বাস ছেড়ে বলল,

” কথায় কথায় বলে ফেলেছি যে বলিউড এক্ট্রেস কৃতি সানন কে হটপ্যান্টে সেই হট লাগে।”

অরুমিতা একটু ভাবুক হয়ে বলল,

” হটপ্যান্টেতো হটই লাগবে। তারপর?”

” তারপর আর কী? ব্রিটিশ স্টাইলে কতগুলো গালি শুনিয়ে ‘ব্রেকআপ’ বলে ফোন রেখে দিল। আর তোলে নি।”

কথাটা মুখ ফুলিয়ে বলল তীব্র। অরুমিতা আর অনিমা জোরেই হেসে দিল। সে কী হাসি! ফলসরূপ যা হওয়ার তাই হল। তিনজনকেই সসম্মানে ক্লাস থেকে বেড় করে দেওয়া হল। কিন্তু এতে ওদের ভাবান্তর হল না। বাইরে বেড়িয়ে অাবারও দমফাটা হাসি শুরু করল। তীব্র বিরক্ত হয়ে বলল,

” আমি এদিকে ফেঁসে আছি আর তোরা হাসছিস? তোরা বন্ধু না-কি শত্রু?”

ওরা এবার অনেক কষ্টে হাসি থামিয়ে নিল। অনিমা তীব্রর হাত ধরে বলল,

” আচ্ছা ভাই, দুঃখ পাসনা। চল ক্যান্টিনে চল।”

ক্যান্টিনে গিয়ে দেখল স্নেহা ক্যান্টিনে বসে আছে। ওর ডিপার্টমেন্টের ক্লাস আগেই শেষ তাই। অনিমা বলল,

” গাধা, গার্লফ্রেন্ডকে কেউ এসব বলে? যা গিয়ে মানা এবার।”

তীব্র ভীত মুখ করে বলল,

” ঐ যে সসের বতোল দেখতে পাচ্ছিস? ওটাই আমার মাথায় ফাটাবে ও, শিওর।”

অনিমা বিরক্তি নিয়ে বলল,

” এই সাহস নিয়ে প্রেম কর তুমি? দড়ি এনে দেই? কচু গাছের নিচে গিয়ে ঝুলে পর।”

অরুমিতা হেসে বলল,

” হ্যাঁ হ্যাঁ আমাদের অনিমাতো খুব সাহসী প্রেমিকা। তাইতো আদ্রিয়ান ভাইয়া এক ধমক দিলে উনি খরগোশ ছানার মত গুটিয়ে যান।”

অনিমা একটু থতমত খেয়ে গেল। তারপর ইতস্তত করে বলল,

” আমি কী ওনার সাথে প্রেম করেছি না-কি?”

” থাক বইন। লজ্জা পেতে হবেনা। এই গাধা যা গিয়ে ওর মান ভাঙা।”

তীব্রকে স্নেহার কাছে পাঠিয়ে অনিমা আর অরুমিতা পাশের একটা টেবিলে বসে পরল। অরুমিতা বসতেই অনিমা চোখ ছোট ছোট করে বলল,

” তোর কী খবর বলত? কদিন যাবত দেখছি মুড অফ?”

অরুমিতা একটু হেসে বলল,

” তেমন কিছু না, এমনিই।”

” শিওর?”

” হুম।”

এদিকে তীব্র স্নেহার মান ভাঙানোর জন্যে এটা ওটা বলছে। স্নেহা শুধু অন্যদিকে ঘুরে মেনুকার্ড দিয়ে মুখ ঢেকে ফেলছে। তীব্র বারবার সেদিকে গিয়ে কার্ড নামিয়ে আবার কথা বলতে চাইছে। একপর্যায়ে স্নেহা রেগে সসের বোতল ছুড়ে মারতে গেলে তীব্র হেসে বলল,

” আরে আমিতো মজা করে বলেছি। কৃতি সাননকে আমার মোটেও পছন্দ না। হটপ্যান্টে বিচ্ছিরি লাগে। কী লম্বা লম্বা পা। ইশ!”

” ওও তুই লম্বা লম্বা পাও খেয়াল করেছিস? শালা, তোর নজরই খারাপ।”

” আরে নারে বাবা। আমার এতো লম্বা মেয়ে ভালোলাগেনা। আমারতো বেটে মেয়ে পছন্দ। তোর মত।”

স্নেহা রেগে বলল,

” আমি বেটে?”

তীব্র থতমত খেয়ে গিয়ে বলল,

” আমি সেটা বলতে চাইনি। আসলে, আই মিন টু সে আমার শুধু তোকেই পছন্দ। অন্যসব মেয়ের দিকে তাকাতেও ইচ্ছা করেনা।”

স্নেহা নিচু কন্ঠে বলল,

” সত্যি তো?”

” আমার শশুরের কসম।”

স্নেহা অন্যমনষ্ক থাকায় কথাটা ধরতে পারল না। তীব্র হাফ ছেড়ে বাঁচল যাক এই কথাটা অন্তত ধরে নি। স্নেহা নিচু কন্ঠে বলল,

” সরি এক্সেপ্ট করব যদি স্ট্রবেরি ফ্লেবারের আইসক্রিম খাওয়াস।”

” এক্ষুনি আনছি।”

বলে দ্রুত তীব্র আইসক্রিম আনতে গেল। স্নেহা সেদিকে তাকিয়ে মিটমিটিয়ে হাসছে।

এদিকে অনিমাদের এক ক্লাস সিনিয়র একটা মেয়ে এসে বসেছে অনিমাদের পাশে। বসেই প্যাচাল শুরু করেছে। একের পর এক প্রশ্ন করছে। আদ্রিয়ান কখন ওঠে? কী করে? কী খায়? কিভাবে চলে? সব। একবারতো বলেই ফেলেছে যে, ইশ!অনিমা তোমার জায়গায় আমি হলে কী ভালো হতো। ভাবলেই গা শিওরে উঠছে। অনিমার তখন ইচ্ছে করছিল ঐ মেয়ের মাথা ফাটিয়ে দিতে। বেয়াদব মেয়ে! ওর সামনে ওরই বরের সাথে সংসার করার স্বপ্ন দেখছে। লুচু মহিলা কোথাকার। রাগে গা জ্বলে যাচ্ছিল অনির। কিন্তু ভদ্রতার খাতিরে চুপচাপ দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করেছে।

____________

ভার্সিটি থেকে বেড় হয়ে আদ্রিয়ানকে গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে অবাক হয়ে গেল অনিমা। ড্রাইভার না পাঠিয়ে আদ্রিয়ান নিজে কেন এসছে আজ? আদ্রিয়ান আপাতত সেলফি আর অটোগ্রাফ দিতে ব্যস্ত। একটা লাল টি-শার্ট আর কালো জিন্স পরে আছে, চোখে সানগ্লাস। অনিমার দিকে চোখ পরতেই আদ্রিয়ান নিজের সানগ্লাস খুলে ফেলল। তারপর গার্ডদের ইশারা করতেই ওনারা সবাইকে অনেক কষ্টে সরিয়ে দিল। অনিমা হালকা দৌড়েই আদ্রিয়ানের কাছে গিয়ে বলল,

” আজ আপনি এলেন যে?”

” বলছি, আগে গাড়িতেতো ওঠো।”

অরুমিতা আর স্নেহা হেসে ফেলে একসঙ্গে বলল,

” এইযে জিজু, শুধু বউকে নিয়েই ঘুরবেন না-কি? মাঝেমাঝে শ্যালিকাদের নিয়েও একটু-আধটু ঘুরতে পারেন?”

আদ্রিয়ান হেসে বলল,

” অবশ্যই ঘুরব। হক আছে তোমাদের। আফটার অল, শালী আধি ঘরওয়ালী।”

বলে আদ্রিয়ান চোখ টিপ মারল। ওরা সবাই হেসে দিল। কিছুক্ষণ হাসিমজা করে অরুমিতা, তীব্র আর স্নেহাকে বিদায় দিয়ে অনিমা গাড়িতে উঠে বসল। আদ্রিয়ানও গাড়িতে উঠল। কিছু না বলে সিটবেল্ট না বেঁধেই গাড়ি স্টার্ট করল। এরপর খানিকটা এগিয়ে গিয়ে আদ্রিয়ান গাড়ি থামাল। অনিমা অবাক হল এমন জায়গায় থামানোতে। ও অবাক কন্ঠেই বলল,

” এখানে থামালেন যে?”

আদ্রিয়ান অনিমার প্রশ্নে পাত্তা না দিয়ে বলল,

” তোমার ঐ ক্রাশ টিচার। সে আজ তুমি যে কর্ণারে বসে ছিলে সেদিকে এরকম অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল। হুয়াই?”

অনিমা অবাক হয়ে গেল। ও নিজেই তো জানতোনা এটা। অথচ এই ছেলের কাছে খবর চলে গেছে? বাহ! তবুও ও অবাক হয়েই বলল,

” মানে?”

” মানে, টিচার মানুষ চোখ থাকবে হোয়াইট বোর্ড আর বইয়ে। মাঝেমাঝে ফন্টে। একটা কর্ণারে এভাবে তাকাবে কেন?”

অনিমা বিরক্তি নিয়ে বলল,

” সেটা ওনাকেই জিজ্ঞেস করুন গিয়ে।”

আদ্রিয়ান গম্ভীর কন্ঠে বলল,

” প্রথম ক্লাসে আজকেও আবার দুষ্টুমি করেছিলে আর সসম্মানে বিতাড়িত হয়েছ তাইতো?”

অনিমা মাথা নিচু করে হাত কচলাতে কচলাতে বলল,

” ঐ আরকি। আজকের ফার্স্ট ক্লাসটা প্রচন্ড বোরিং ছিলো তাই__”

” আপনার কাছে ইন্টারেস্টিং কোন ক্লাসটা লাগে?”

হঠাৎ কিছু একটা মনে হতেই অনিমা বলল,

” বাই দা ওয়ে আপনি কীভাবে এসব জানলে?”

আদ্রিয়ান এবার অনিমার দিকে একটুখানি ঝুঁকে ওর কোমর ধরে কাছে এনে বলল,

” আদ্রিয়ানের দৃষ্টি সবসময় অনির ওপরেই থাকে।”

কথাটা আদ্রিয়ান এমনভাবে বলল যে অনিমা আপনাআপনি একটা শুকনো ঢোক গিলে ফেলল। তারপর কাঁপাকাঁপা কন্ঠে বলল,

” আপনি আসলেই বড্ড বেশি ভয়ংকর মানুষ, রকস্টার সাহেব।”

আদ্রিয়ান মুচকি হেসে অনিমার নাকে নাক ঘষে দিয়ে বলল,

” তাই?”

অনিমা চোখ বন্ধ রেখে বলল,

” হুম।”

আদ্রিয়ান অনিমার কপালে কপাল ঠেকিয়ে বলল,

” তোমার জন্যে শুধু ভয়ংকর কেন? তারচেয়েও বেশিকিছু হতে পারি জানপাখি। তুমি শুধুই আমার। তোমার সবকিছুতে শুধুমাত্র আমার অধিকার আছে। তোমার হাসি, কথা বলা, তোমার সবকিছুতে আমি মুগ্ধ হব অন্যকেউ না। এই অধিকার শুধু আমার। বুঝলে?”

অনিমা কোন উত্তর দিলোনা। চোখ নামিয়ে রাখল। এখন বেশ লজ্জা লাগছে ওর আদ্রিয়ানের কথায়। আদ্রিয়ান অনিমার কপালে আলতো করে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিয়ে সিটবেল্ট বেঁধে দিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিতে দিতে বলল,

” তোমাদের ছুটিতো পরে গেছে! তাই আজ বাড়ি যাবো আমরা।”

” আপনাদের বাড়ি? মানে বাবা আর মামনীর কাছে?”

” হুম।”

” কিন্তু জামাকাপড়?”

” আমি সব প্যাকিং করে নিয়ে এসছি।”

” জাবিন?”

” আজ ওর একটু কাজ আছে। কাল অভ্র নিয়ে আসবে।”

” ওহ।”

” জি হ্যাঁ। আপনার বাবা আর মামনীর সাথে দেখা করিয়েই দেই। একয়েকদিনে তো ফোনে ফোনে কথা বলেই ওনাদের মনজয় করে ফেলেছ। এখন ফোন করলেই সবার আগে জিজ্ঞেস করে, ‘আমার মামনী কেমন আছে?’ এখন নিয়ে যাই সামনাসামনি। দেখি কত ভাব তোমাদের।”

অনিমা হাসল। সত্যিই ফোনে ফোনেই আদ্রিয়ানের বাবা মায়ের সাথে ওর বেশ ভাব হয়ে গেছে। খুব ভালো ওনারা। অনিমাকে সহজেই আপন করে নিয়েছে। রিমা আবরারের তো অনিমার সাথে দিনে দুবার কথা না বললে হয়ই না। অনিমা ফোনেই অনেকটা বুঝে গেছে ওনারা কেমন। অনিমা মুচকি হেসে বলল,

” আপনি খুব লাকি। এমন বাবা-মা পেয়েছেন।”

আদ্রিয়ান বলল,

” আই নো। কিন্তু ওনারা এখন থেকে তোমারও বাবা-মামনী। সো সেই এঙ্গেল থেকে তুমিও ভীষণ লাকি। এন্ড ইউ নো হোয়াট জানপাখি? আমি আরেক দিক দিয়েও লাকি। এইযে, তোমার মত বউ পেয়েছি। এটাও ভাগ্যের বিষয়।”

অনিমা মাথা নিচু করে লাজুক হেসে আদ্রিয়ানের দিকে তাকাল। বাইরে থেকে আসা বাতাসে আদ্রিয়ানের কপালে পরে থাকা সিল্কি চুলগুলো দুলছে হালকা, লাল টিশার্ট ফর্সা শরীরে ফুটে উঠেছে। লাল জামা পরাতে বেবি পিংক সরু ঠোঁটটাতেও একেবারেই হালকা লালচে ভাব আসছে। ভ্রু জোড়া কোণাকুণিভাবে বাঁকিয়ে আশেপাশে গাড়ি লক্ষ্য করে করে সাবধানে স্মুথলি ড্রাইভ করছে। এভাবে ভ্রু বাঁকাতে অনিমা কাউকে তেমন দেখেনি বললেই চলে। কী অদ্ভুত স্টাইল ভ্রু বাঁকানোর। কেমন কোণাকুণি এঙ্গেলে বাঁকায়। সবাই পারেও না এটা। কিন্তু এটা ওর কিউটনেস আরও বাড়িয়ে দেয়।লোকটা দেখতে শুধু সুন্দর নয়, তার মন, কথা বলার ধরণ, সবটা তার মতই সুন্দর। খুব ইচ্ছে করছে বলতে যে, আপনার মত স্বামী পাওয়া যে কতবড় সৌভাগ্যের ব্যাপার, সেটা আপনি জানেনই না। কিন্তু লজ্জার কারণে বলতে পারছেনা। হঠাৎ রিকের কথা মাথায় আসতেই অনিমা চিন্তিত হল। অনিমাকে হঠাৎ এরকম গোমড়া মুখে দেখে আদ্রিয়ান বলল,

” কী ভাবছ?”

অনিমা খানিকটা ইতস্তত করে বলল,

” আপনার খালাতো ভাইর আসার কথা ছিলোনা? কিন্তু আমরাতো বাড়ি যাচ্ছি। তাহলে__”

আদ্রিয়ান হেসে বলল,

” এই কথা? ও ঐ বাড়িতেই আসবে। আমি বলে দিয়েছি ওকে আমাদের ঐ বাড়িতে আসছে। চিন্তা করোনা।”

অনিমা আর কিছু বলল না। জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে রইল। রিক আবার ঐ বাড়ি এসে কোন ঝামেলা করবে না-তো? যদিও ওর পাশে আদ্রিয়ান আছে। কিন্তু ঐ লোকগুলোকে ও ভরসা করতে পারেনা। ঐ লোকগুলো প্রয়োজনে কতটা হিংস্র হতে পারে ও তো তার প্রত্যক্ষ সাক্ষী।

#চলবে…

#বর্ষণের সেই রাতে- ২
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল

৪১.

আবরার মেনশনে পৌছাতে পৌছাতে রাত হল অনিমাদের। অনিমা বড় সোফার একপাশে বসে আছে, আর রিমা আবারার সুন্দর করে খাইয়ে দিচ্ছে ওকে। এতোটা জার্নি করে এসে কেউই তেমন কিছু খেতে পারবেনা তাই আহামরি কিছু রান্না করেনি। অনিমা একদৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখছে ওনাকে। প্রথম দিনে যদিও কিছু বোঝা যায় না। তবে আসতেই ওকে সাদরে বুকে জড়িয়ে নিয়েছিলেন উনি। এখন কেমন পরম মমতায় খাইয়ে দিচ্ছে। মায়ের ভালোবাসা পায়নি ও কখনও। তাই এই প্রথম মাতৃস্নেহ পেয়ে আবেগপ্রবণ হয়ে পরছে ও। তারওপর আসার পর থেকেই মানিক আবরারের এতো স্নেহ ওকে ওর আব্বুর কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে। খুব কান্না পাচ্ছে। কিন্তু অনেক কষ্টে নিজের কান্না আটকে রেখেছে। আদ্রিয়ান সিঙ্গেল সোফায় গালে হাত দিয়ে বসে দেখছিল নিজের মা আর বউকে। বউ-শাশুড়ি নয় একদম মা-মেয়ের মত লাগছে দুজনকে। দেখেই চোখ জুড়িয়ে যাচ্ছে ওর। কিন্তু অনিমার মনের অবস্থা বুঝতে পেরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে ওপরপাশে সোফায় বসে থাকা মানিক আবরারের উদ্দেশ্যে বলল,

” দেখেছ বাবা? দেখ! তোমার বউকে দেখ। এতোদিন ফোন করে কবে আসব? কবে আসব? করে কান পঁচিয়ে ফেলছিল। আর আজ যখন আমি এলামই তখন উনি কী করল? না তুমিই দেখ? কী করল টা কী? বউমাকে বসিয়ে বসিয়ে আদর করে খাওয়াচ্ছে। আমার দিকে তাকানোর সময় আছে ওনার? নেই, একদম নেই।”

অনিমার মন খারাপ সব কেটে গিয়ে একটু হাসি পেল আদ্রিয়ানের কথায়। কেমন বাচ্চা বাচ্চা কথা তাঁর। মানিক আবরারও হাসছেন। মিসেস রিমা একটু রাগী গলায় বললেন,

” একদম চুপ থাক তুই। হিংসুটে একটা।”

আদ্রিয়ান অবাক হওয়ার ভান করে বলল,

” সত্যি কথা বললেও আজকাল হিংসুটে ট্যাগ গায়ে লেগে যায়! দেখ বাবা কী দিনকাল পরল।”

মানিক আবরার হাসতে হাসতে বললেন,

” তোর গায়ে তো শুধু হিংসুটে ট্যাগ লেগেছে। আমার দিনে কতবার কতরকম ট্যাগ লাগে সেটা তো জানিস না।”

আদ্রিয়ান অনেকটা উৎসাহ নিয়ে নড়েচড়ে বসে বলল,

” আরিব্বাস! কী কী ট্যাগ বলোতো?”

মিসেস রিমা, মানিক আবরারের দিকে কটমটে চোখে তাকাতেই উনি একটু হাসার চেষ্টা করে বলল,

” থাক বাপ, ঘরের কথা ঘরেই থাক। দিন শেষে তো আবার আমাকে ঘরেই ফিরতে হবে। তাই রিস্ক বাড়াবোনা।”

বলে কয়েকসেকেন্ড চুপ থেকে দুজনেই অট্টহাসিতে ফেটে পরল। অনিমা অবাক দৃষ্টিতে দেখছে ওনাদের। ওনারা সত্যি সত্যি বাবা-মা আর ছেলে? সত্যিই ওনারা অন্যরকম। তাইতো আদ্রিয়ানও এতোটা আলাদা তৈরী হয়েছে। মিসেস লিমা রাগান্বিত কন্ঠে বললেন,

” বাপ বেটা দুটোই ফাজিলের হাড্ডি হয়েছে। ভেবেছিলাম ছেলেটা আমার কিছু গুন পাবে। কিন্তু না শুধু আমার চেহারাটাই পেয়েছে। দেখতেই শুধু মনে হয় আমি পেটে ধরেছি। কিন্তু স্বভাব। স্বভাব পুরোটাই বাপের মত। অনি ভালোকরে শুনে রাখ। তোকে প্রথম প্রথমই বলে রাখছি একদম ছাড় দিবিনা। শুরু থেকেই টাইট দিয়ে রাখবি। নইলে মাথায় উঠে নাচবে।”

অনিমা বেশ অবাক হয়ে তাকাল নিজের শাশুড়ির দিকে। ও এতোদিন মনে করত আদ্রিয়ানই শুধু অদ্ভুত। কিন্তু এখনতো দেখছে না, ওর গোটা পরিবারটাই অদ্ভুত। এমনও হয়? আদ্রিয়ান অবাক হয়ে নিজের মায়ের দিকে তাকিয়ে থেকে উঠে মানিক আবরারের সোফার হ্যান্ডেলের ওপর গিয়ে বসে ফিসফিসিয়ে বলল,

” বাবা, তোমার সিরিয়াল প্রেমি বউটা সারাদিন সিরিয়াল দেখে শেখেটা কী? মানে সিরিয়ালের মায়েদের মত কোথায় ছেলেকে চোখে হারাবে, যত দোষই করুক সব আঁচল দিয়ে ঢেকে রাখবে। তা-না, উল্টে আমারই সামনে, আমারই বউকে, আমাকেই টাইট দিয়ে রাখার টেকনিক শেখাচ্ছে। আনবিলিভএবল!”

মানিক আবরার হেসে দাঁতে দাঁত চেপে নিচু গলায় বলল,

” সেটা আমি জানি, এতবছরের সংসার করেছিতো। এবার চুপ কর নইলে দুজনের মাথাতেই গ্লাস ভাঙবে। বেশ রেগে আছে।”

আদ্রিয়ান গলা ঝেড়ে সোজা হয়ে বসল। তারপর ইনোসেন্ট একটা হাসি দিয়ে বলল,

” ওওও মা।”

মিসেস রিমা আবারও রেগে বললেন,

” একদম ঢং করতে আসবি না। তুই জানিস তোর ঐ ডাকেই আমি গলে যাই। তাই খবরদার বলছি একদম ট্রায় করবিনা। আমি এখন তোর ওপর রেগে থাকতে চাইছি। বিয়ে করলি অথচ সেটা আমাদের তোকে ফোন করে জানতে হল? এমন মিষ্টি একটা মেয়ে! কী ভেবেছিলি সত্যি সত্যি তিন-চারটা বাচ্চার বাপ হয়ে তারপর এসে বলবি যে, মা আমি বিয়ে করে ফেলেছি, এই নাও তোমার নাতি-নাতনি। বাদর ছেলে।”

অনিমা লজ্জায় মাথা নিচু করে আছে। এভাবে বাচ্চার কথা তোলার কী দরকার ছিল? এভাবে সবার সামনে বাচ্চার কথা তুললে ওর লজ্জা করেনা বুঝি? আদ্রিয়ান মুখ ছোট করে বলল,

” এভাবে বলছ কেন? আমি বলতাম তোমাদের। কিন্তু তার আগেই ফোন করে ফেললে। সত্যিই বলছি।”

মিসেস রিমা তবুও মুখ গোমড়া করে বসে আছেন। আদ্রিয়ান এবার পেছন থেকে ভালোবাসার সাথে নিজের মাকে জড়িয়ে ধরে বলল,

” আমার মিষ্টি মা। রাগ করোনা প্লিজ। চারটা কেন? তিন চারে বারোটা নাতি-নাতনি গিফ্ট করব তোমাকে। তবুও হাসো। প্লিজ স্মাইল…”

বলে ওনার গালে চুমু দিলো। মিসেস রিমা আর পারলেন না হেসে দিলেন। মানিক আবরারও হাসলেন। আদ্রিয়ান অনিমার দিকে তাকিয়ে একটু হেসে চোখ মারল। অনিমাতো লজ্জায় পুরো গুটিয়ে গেছে। উঠে যেতেও পারছেনা। ওর মত অসহায় একটা মেয়েকে বারবার এভাবে লজ্জায় ফেলার কোন মানে হয়? ইশ! কী লজ্জার ব্যাপার।

____________

রাতে বসে শোয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল অরুমিতা। শুতে যাবে এমন সময় ফোন বেজে উঠল। নাম্বারটা সেভ করি নেই। কিন্তু চিনতে একটুও অসুবিধা হলোনা ওর। কপাল কুচকে এলো ওর। একরাশ বিরক্তি নিয়ে ফোন কেটে শুতে নিলেই আবার বেজে উঠল। ও আর ফোন ধরল না। কিন্তু ফোন বেজেই চলেছ। অরুমিতার এবার বেশ রাগ হচ্ছে। রাগ নিয়েই উঠে ফোনটা রিসিভ করে বলল,

” কে বলছেন?”

” আমি আশিস।”

” কী চাই?”

” তোমাকে ফোন করেছি নিশ্চয়ই তোমাকেই চাই।”

অরুমিতা চোখ বন্ধ করে একটা শ্বাস নিয়ে আগে নিজেকে সামলে নিল। তারপর বলল,

” হঠাৎ তিনবছর পর আমাকে এতো কী প্রয়োজন পরল যে এতো মেসেজে, কল করছেন? হঠাৎ মনে পরল কীকরে?”

আশিস চুপ হয়ে গেল। সত্যিই তো, এই তিন বছরে অরুমিতাকে মনে পরলেও কথা বলতে ইচ্ছে হয়নি। এতো টান অনুভব করেনি। কিন্তু হঠাৎ আবার ওকে দেখার পর এমন কেন হচ্ছে? কেন বারবার কথা বলতে ইচ্ছা করছে? কেন? কিছুক্ষণ চুপ থেকে ও বলল,

” আমরা কী আজকাল নরমালি কথাটাও বলতে পারিনা অরুমিতা?”

” আমাদের সম্পর্কটা কী নরমালি কথা বলার মত কোন জায়গায় আছে মিস্টার আশিস?”

আশিস হালকা হেসে বলল,

” সত্যি পাল্টে গেছো।”

উত্তরে অরুমিতাও তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলল,

” সে অধিকার শুধু আপনার নেই।”

” অরুমিতা আমি..”

অরুমিতা আশিসকে থামিয়ে দিয়ে বলল,

” আপনার কী জরুরি কিছু বলা আছে?”

আশিস বেশ কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,

” না।”

” তাহলে রাখছি।”

বলে অরুমিতা আশিসকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ফোন কেটে দিল। তিনবছর আগে যখন ওদের সম্পর্কটা শুরু হয় সবকিছুই অন্যরকম লাগত অরুমিতার কাছে। এতো ভালোলাগা এর আগে ওর লাইফে আসেনি। রাত জেগে কথা বলা, ছোটখাটো খুনশুটি, আশিসের কেয়ারিং, এতো ভালোবাসা সবকিছুই স্বপ্নের মত লাগছিল। ওর কিশোরী মন তখন স্বপ্নের রাজ্যে ভাসছিল। সবকিছু ঠিকই চলছিল। কিন্তু ছয়মাস পর হঠাৎই সব এলোমেলো হয়ে গেল। স্বপ্নগুলো নিমেষেই ভেঙ্গে গুড়িয়ে গেল। কথাগুলো ভেবে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ঘুমানোর চেষ্টা করল অরুমিতা।

___________

মোটামুটি বড় আকারের ডুপ্লেক্স একটা বাড়ি। বিশাল নকশা করা লোহার গেইট হতে বাড়ির সদর দরজার ছোট সিঁড়ি অবধি রয়েছে সাত ফুট চওড়া ইট দিয়ে তৈরী রাস্তা। রাস্তাটার ডানপাশটা পুরোটাই ফাঁকা বিশাল একটা মাঠের মতন তার পাশ ঘেষে বাউন্ডারির দেয়াল ঘেষে বড় বড় গাছ আছে। অপরপাশে একটু দূরেই খুব সুন্দর বাগান। বাড়িটার পেছনে সুইমিং পুল আছে। অনিমা হাটতে হাটতে সবটাই দেখছে। সত্যিই খুব সুন্দর করে সাজানো সব। হাটতে হাটতে ও পেছনের সুইমিং পুলে গিয়ে দাঁড়াল। পায় দুই ঘন্টা হল ও বাইরে আছে। কেমন একটা লাগছে ওর। আজ এখানে রিকের আসার কথা। এসেও গেছে নিশ্চয়ই এতক্ষণে। পৃথিবীতে এতো মানুষ থাকতে রিককেই আদ্রিয়ানের ভাই হতে হল? দুহাত বুকের ওপর ভাজ করে সুইমিং পুলে নিজের প্রতিবিম্ব দেখতে দেখতে এটাই ভাবছে অনিমা। হঠাৎ মাথায় কেউ টোকা দিতে পেছনে তাকিয়ে দেখল আদ্রিয়ান। অনিমা কিছু না বলে আবার পানির দিকে তাকাল। আদ্রিয়ান ওকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলল,

” কী ভাবছ?”

” কিছুনা।”

” হুমম সকাল থেকেই বেগম সাহেবার মুড অফ দেখছি। কিছুতো হয়েছে?”

” কিছুই হয়নি।”

আদ্রিয়ান কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,

” আচ্ছা তোমাদের ঐ নিউ ইয়াং প্রফেসর। কী জেনো নাম?

অনিমা একটু ভাবুক হয়ে বলল,

” অয়নদ্বীপ স্যার?”

” হ্যাঁ উনিই। উনি কিন্তু তোমার বান্ধবীর ওপর হেব্বি ক্রাশ খেয়েছে।”

অনিমা বেশ অনেকটা অবাক হয়ে আদ্রিয়ানের দিকে ঘুরে বলল,

” অরুর ওপর?”

” জি ম্যাডাম।”

” কিন্তু সেটা আপনি কীকরে জানলেন?”

আদ্রিয়ান অনিমার কোমর ধরে কাছে টেনে অবাক কন্ঠে বলল,

” আমার বউয়ের বেঞ্চের দিকে ওভাবে তাকিয়ে থাকবে আর আমি খোঁজ না নিয়েই ঐ ব্যাটাকে ছেড়ে দেব? কী ভাবো আমাকে তুমি?”

অনিমা একটা হতাশ নিশ্বাস ফেলে পরে হেসে দিয়ে বলল,

” অরুর সাথে স্যারের কিছু হলে ভালোই হবে বলুন?”

আদ্রিয়ান কিছু বলবে তার আগেই গলা ঝাড়ার আওয়াজে দুজনেই দুজনকে ছেড়ে দাঁড়াল। তাকিয়ে দেখল রিক দাঁড়িয়ে আছে। আদ্রিয়ান হেসে বলল,

” ও তুই? এখানে এলি যে?”

রিক তীক্ষ্ম চোখে তাকিয়ে ছিল এতক্ষণ। কিন্তু আদ্রিয়ানের প্রশ্নে মুখে হাসি ফুটিয়ে বলল,

” খালামনি ডাকছে। খাবার বাড়া হয়েছে।”

এরপর অনিমার দিকে তাকিয়ে বলল,

” কী ব্যাপার ভাবি? সেই কখন এসছি অথচ আপনার দেখাও পেলাম না। এভাবে পালিয়ে বেড়ানোটা কী ঠিক?”

অনিমা একটা শুকনো ঢোক গিলল। রিককে কেন জানি খুব বেশি ভয় লাগছে ওর। আদ্রিয়ান অনিমার হাত ধরে রিককে বলল,

” চল ডায়নিং এ চল।”

বড় মাপের ডায়নিং টেবিল জুড়ে বিভিন্ন রকমের খাবার রাখা। পোলাও, মালাই চিকেন, চিকেন রোস্ট, চিংড়ি মাছের মালইকারী, পায়েস, মিষ্টি আরও বেশ কয়েকপদ। আবরার মেনশনে সবাই একসাথে খেতে বসেছে। জাবিন বারবার আড়চোখে অভ্রকে দেখছে। ছেলেটার প্রতি খুব বেশি বিরক্ত ইদানীং ও। আসার সময় দরকার ছাড়া কোন কথা বলেনি ওর সাথে। এরকম কেন ছেলেটা? যদিও ওর কিছুই যায়-আসার কথা না। কিন্তু যত সময় যাচ্ছে ততবেশি যায়-আসছে ওর। কেন এমন হচ্ছে নিজেও জানেনা। মিসেস রিমা অনিমাকে বেড়ে বেড়ে খাওয়াচ্ছে। অনিমা এতো খাবেনা বলছে তবুও জোর করে খাওয়াচ্ছে। আদ্রিয়ান আর রিক দুজনেই বোকার মত তাকিয়ে আছে আর হতাশ দৃষ্টিতে দেখছে একে ওপরকে। ওরাও কতদিন পর এলো। অথচ ওদের ভ্যালুই নেই! এই নিয়ে একদফা হাসাহাসিও হল পরে।

রাতে অনিমা মিসেস রিমার সাথে গল্প শেষে জাবিনের রুমে শুতে যাচ্ছে। আদ্রিয়ানের সাথে এখানেও এক রুমে থাকছেনা ও। আসলে আদ্রিয়ানই চায়না। ও চায়না আপাতত স্বামী স্ত্রীর মত থাকতে। কিন্তু কেন চায়না সেটা কেউ জানেনা। অনিমাও কিছু বলেনি। এতে ওরও আপাতত বিশেষ কোন সমস্যা নেই। শুধু মাঝেমাঝে ইচ্ছে হয় একটু, এই যা। কিন্তু করিডর দিয়ে হাটার সময় হঠাৎই কেউ ওর হাত টেনে ধরে দেয়ালে মিশিয়ে দুই বাহু চেপে ধরল। অনিমা অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখল রিক রক্তিম চোখে তাকিয়ে আছে। ও অবাক হয়ে বলল,

” অাপনি? কী করছেন? ছাড়ুন আমায়।”

রিক রাগে গজগজ করে বলল,

” তুমি জানোনা কী করছি? রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে আমার। সহ্য করতে পারছিনা আমি এসব। আদ্রিয়ান তোমার এতো ঘনিষ্ঠতা, কাছে আসা, এতো প্রেম সহ্য হচ্ছেনা আমার। চেষ্টা করছি সবটা মানতে কিন্তু পারছিনা। পারছিনা আমি। কী করব বল? টেল মি ড্যাম ইট!”

অনিমা প্রচন্ড ভয় পেয়ে গেছে রিকের আচরণে। কেঁদে ফেলেছে ও। কাঁপাকাঁপা গলায় বলল,

” কী বলছেন এসব?”

রিক ওকে ঝাড়া দিয়ে ছেড়ে বলল,

” বুঝতে পারছোনা কী বলছি। বুঝতে পারোনা আমি ভালোবাসি তোমাকে? আই লাভ ইউ ড্যাম ইট।”

অনিমা অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল রিকের দিকে। রিক ওকে ভালোবাসে? কই আগেতো বলেনি? ও তো জানতো ও রিকের জেদ শুধুমাত্র। তাহলে? হঠাৎ কেউ বলে উঠল,

” কী করছিস তোরা এখানে?”

আওয়াজ শুনে রিক অার অনিমা দুজনেই ঘুরে তাকাল। তাকিয়ে দেখে আদ্রিয়ান হাত ভাজ করে দাঁড়িয়ে আছে।

#চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে