প্রেমময় তৃষ্ণা পর্ব-১৭

0
1871

#প্রেমময় তৃষ্ণা
#writer-#TaNiA[🖤]
#part-17

হসপিটালের করিডোরে আসলাম আমীরের হাতটা ধরে তার সামনে হাটুগেড়ে বসে আছে শুভ।চোখ তার ছলছল,মন আজ ভীষন অপরাধে আবদ্ধ, কলির সাথে ঘটে যাওয়া প্রত্যেকটি ঘটনার জন্য নিজেকে দায়ী করছে,তার সাথে নিজের অপরাধ গুলো তাকে ভেতর থেকে অনেক বেশি পুড়াচ্ছে।শুভ মনে করে হয়তো ও কলির জীবনে না আসলে এমন হতো না।জীবনটা অনেক সহয হয়ে যেতো কলির জন্য।
||
হয়তো স্নিগ্ধ সকালের ফুটন্ত কোনো ফুলের মতো,আস্থে আস্থে নিজের সুভাস ছড়াতো।হয়তো প্রজাপতির মতো চারদিকে রং ছড়িয়ে ডালে ডালে উড়ে বেড়াতো।থাকতো না কোনও ভয়,কোনও সংশয়। জীবনকে ভালোবেসে নিজেকে গুছিয়ে রাখতো।শুভ যেনো কলির স্নিগ্ধ সকালে হঠাৎ গঠে যাওয়া কোনও অন্ধকারের মতো।তাইতো কলির কাঁদার কারন আজ শুভ,কলির কস্টের কারন আজ শুভ।
||
তবুও মন যে স্বার্থপর, এই মন কলিকে ছাড়া কিছুই ভাবে না,আর ভাবতেও চায় না।কলিকে ছাড়া কিছুই তার চাওয়া নেই।বেঁচে থাকার জন্য যেমন একটু স্বপ্ন, একটু অনুপ্রেরণা প্রয়োজন,তেমনি শুভরও প্রয়োজন কলির।কলিকে ছাড়া বেঁচে থাকার স্বপ্ন, সে তো স্বপ্নেও ভাবে না,আসলাম আমীরকে নিজের অনুভূতি গুলো খুব সুন্দর ভাবে ব্যক্ত করলো শুভ।কারন আসলাম আমীর মেয়েকে নিয়ে অনেক চিন্তিতো।আর চিন্তিতো হওয়ার কারনও অবশ্যই আছে,তার ছোট মেয়েটাকে এই বয়সে কতো কিছু সহ্য করতে হচ্ছে।কলির ভবিষ্যৎ নিয়েও অনেক চিন্তিতো, খুব বেশিই চিন্তিতো এখন।
||
আসলাম আমীরকে আশ্বাস দিতে এগিয়ে এলো শুভর পুরো পরিবার।কলিকে শুভর বউ বানিয়ে নিয়ে জেতে চায়,চৌধুরী পরিবার।কলির প্রতি শুভর সীমাহীন ভালোবাসা দেখে আসলাম আমীরের মনও গলে গেলো।শুভই হয়তো কলির ভাগ্যে ছিলো,এসব মনে করেই।শুভকে আপন করে নিলো।
||
শুভ মনে মনে আজ অনেক খুশি,আরুশী, রুদ্র কে তাদের অপরাধের শাস্তি দিয়ে দিয়েছে।রুদ্র কে কঠোর শাস্তি দিতে চেয়েছিলো, কিন্তু রুদ্র এমনেই অনেক কিছু হারিয়েছে,তাই ওর প্রতি কিছু সহানুভূতি কাজ করলো শুভর।ওদের শাস্তি আইনি প্রসেসিং এ চলবে।শুভ ভেবেছিলো এখন সব ঠিক হয়ে গিয়েছে।সবাই সত্যটা যেনে গিয়েছে,কেনো শুভ এতোদিন এসব করেছে,আর সব থেকে বড় কথা কলি আর ওর সম্পর্কটা সবাই মেনে নিয়েছে।কিন্তু শুভ এখনো জানে না, মক্কা এখনো বহুত দূর।
||
আজ এক সপ্তাহ হয়ে গেলো কলি এখনো হসপিটালে।কিছুটা সুস্থ এখন।তবে শুভ মানসিক ভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ছে,কোনও ভাবে কলির সাথে কথা বলতে পারছে না,সব খুলে বলার পরও কলির অভিমান এক চুলও সরেনি।শুভ বুঝতে পারছে না কলি কেনো এখনো অভিমান করে বসে আছে।
শুধু শুভ না,কলি ওর বাবা আমীর সাহেবের সাথেও কথা বলে না।তিনিও মেয়ের মতিগতি বুঝতে পারছে না।এ কয়েকদিনে কলি শুধু ওর মার সাথে,আর মামুনের সাথে টুকটাক কথা বলেছে,আর বাকিদের সাথে শুধু হা -না বলে কাটিয়ে দিলেও, শুভর সাথে একদমই কিছু বলে না।কলির এমন আচরন শুভ প্রথমে মেনে নিলেও এখন মানতে পারছে না।
এদিক দিয়ে কলি বাসায় যাওয়ার জন্য জিদ করে বসে।মামুন অনেকবার বুঝাবার চেস্টা করে,কিন্তু কলি কিছুই শুনতে চায় না।তাই মামুন বাধ্য হয়ে শুভকে ফোন করে,কারন শুভর অনুমতি ছাড়া কলি কে এখান থেকে নিতে পারবে না কেউ।শুভ বুঝতে পারে কলি এসব কেনো করছে।শুভর থেকে পালাতে চায় কলি।তাই শুভও মনে মনে কিছু চিন্তা করে রাখে।
||
আজ কলিকে ডিসচার্জ দিয়ে দেবে ডক্তর। শুভই রিকুয়েস্ট করেছে।তবে কলির হাত,পা আর মাথার ব্যান্ডিজ গুলো খুলতে এখনো সময় লাগবে। ওগুলো ডক্তর বাসায় এসে খুলে দিয়ে যাবে,আর দুদিন পর পর চেকআপ করে আসবে।
___ডিসচার্জ এর কথা শুনে কলি অপেক্ষা করছে,ওর বাবা মা বা মামুন কখন আসবে।কিন্তু কলির ভাবনা ছেদ করে রুমে শুভ প্রবেশ করে,শুভকে দেখে কলি মুখ ঘুড়িয়ে ফেলে,শুভও তা দেখে একটা টেডি স্মাইল দেয়।আর মনে মনে ভাবছে, ঘুঘু দেখেছো, ঘুঘুর ফাঁদ দেখোনি,জান।এখন থেকে দেখবে।
||
শুভ প্যান্টের পকেটে হাত রেখে কলির সামনে দাঁড়িয়ে,অপলক ভাবে তাকিয়ে আছে।কিন্তু কলি অন্যদিকে মুখ ঘুড়িয়ে মনে মনে ভাবছে,সকাল সকাল উনি কোথা থেকে এলো,যাদের আসার কথা তাদের খবর নেই।উনি মেঘ না চাইতে বৃস্টির মতো হাজির হয়ে পরেছে।কলি যখন এসব চিন্তায় মগ্ন

___শুভ হঠাৎ কলিকে কলে তুলে হাটা শুরু করলো।কলি যেহেতু শুভর সাথে কথা বলে না তাই নামার জন্য হাত পা ছোড়াছুড়ি করতে লাগলো।
____জানি তুই কথা বলবি না,কিন্তু এমন করছিস কেনো,এমন করলে কিন্তু আমি তোকে নিচে ফেলে দেবো।তখন কিন্ত কোমড় ভেঙ্গে গেলে আমাকে দোষ দিতে পারবি না।অবশ্য আমার জন্য ভালোই হবে,তোকে সবসময় কোলে কোলে রাখবো, কি বলিস।শুভ এক ভ্রু উঠিয়ে কলিকে বলছে।
____শুভর উপর এই মুহুর্তে আরো রাগ উঠছে কলির,কিন্তু তবুও সে শুভর সাথে কথা বলবে না তো না।শুভ কলিকে গাড়ীতে বসিয়ে নিজেও কলির পাশে বসে গাড়ী চালাতে লাগলো।কলি মনে করেছে,শুভ কলিকে মিলা আপুর বাসায় নিয়ে যাবে,ওর বাবা মা হয়তো ওখানে।কিন্তু কলি অবাকের সপ্তম পর্যায়, শুভ যখন গাড়ীটা চৌধুরী বাড়ীর সামনে এসে থামালো।
কলি মনে মনে ভেবে পাচ্ছে না,শুভ ওকে এখানে কেনো আনলো।শুভ আবার কলিকে কলে তুলে ভেতরে নিয়ে গেলো।বাড়ীর সবাই যেনো তাদের অপেক্ষায়ই করছিলো।এতো গুলো মানুষের সামনে কলির লজ্জায় গাল দুটো টমেটোর মতো লাল হয়ে গেলো।কিন্তু চৌধুরী বাড়ীর লোকজন আনন্দের সাথে কলিকে গ্রহণ করে নিলো।
শুভ কলিকে নিজের রুমে নিয়ে, বেড এ শুইয়ে দিলো,কলির বুঝতে বাকি রইলো না এটা শুভর রুম।কারন কলির বড় একটা ছবি শুভর রুমের দেয়ালে টাঙ্গানো।কলি এবার রাগের সাথে শুভর দিকে তাকালো,কলির না বলা কথাগুলো কলির চোখে শুভ স্পষ্ট পড়তে পারছে,তাই কলির পাশে বসে_______কি চিন্তা করছিস।ও বাবা মা কোথায়,মামুন কোথায়,আর তুই এখানে কেনো।আর এটা কার রুম এসব নিশ্চয়ই। কলি চোখের ইশারায় বুঝালো হ্যা এসবই তার চিন্তার কারন।

_______তাহলে শুন তোর বাবা মা আর মামুন কে আমি দেশে পাঠিয়ে দিয়েছি,আর স্যার তোর পুরো দায়িত্ব আমার হাতে তুলে দিয়েছে।যতোদিন না তুই পুরোপুরিভাবে সুস্থ হচ্ছিস এখানেই থাকতে হবে।তাই ওরা কেউ আসছে না কেনো এসব চিন্তাবাদ………।ওকে।আর এই রুমটা আমার,আমাদের বিয়ের পর তোর আর আমার হবে।তাই এখন থেকে এই রুমকে আপন করে নে।হয়তো ভাবছিস আমার রুমেই কেনো আনলাম,কারন তুই এখনো নিজের হাতে খেতে পারিস না,দাঁড়াতে পারিস না সাহায্যের দরকার পরে,তাই তোর জাতে অসুবিধা না হয়,তাই তোকে আমার চোখের সামনে রেখে দিলাম।কি বলিস আইডিয়াটা জোশ না।শুভ এক চোখ টিপ মেরে কলিকে টিজ করে।

____কলি শুধু কথা বলছে না বলে,তা না হলে এতোক্ষনে শুভর চৌদ্দ গুষ্টিকে উদ্ধার করতো।কলির মন চাইছে শুভর চুলগুলো সব ছিড়ে ফেলতে,টাক বানিয়ে দিতে পারলে ভালো হতো।অসভ্য লোক পাইছি কি আমাকে।আমি কি উনার খেলার পুতুল,যখন খুশি আমাকে নিয়ে খেলবে,আবার যখন খুশি ছুড়ে ফেলে দিবে।মিস্টার শুভ এবার আর এমন হবে না,কলি আর আপনার মায়ায় নিজেকে জরাতে চায় না।আপনার চোখের চাওনীতে নিজেকে আর হারাতে চায় না।
||
শুভ সারাদিন এখন বাসায়ই থাকে,বাসায় বসেই অফিসের কাজ করে,মাঝে মাঝে কলির কাছে,অর্পা বা রাহিকে বসিয়ে অফিস থেকে ঘুড়ে আসে।কলির সব কাজ শুভ নিজেই করে।প্রথম প্রথম কলি শুভর হাতে কিছু খেতে চাইতো না,কোনও হেল্পও নিতে চাইতো না,কিন্তু শুভর সাথে পেরে উঠতে পারতো না।
কলির ব্যান্ডেজ গুলোও খুলে ফেলা হয়েছে।এখন নিজে নিজে দাঁড়াতে পারে।কলি যেহেতু এখন সুস্থ তাই কলি সিদ্ধান্ত নেয় ,ও আর এখানে থাকবে না।কলি নিজের কথা মাহির আর ইনামের মাধ্যমে শুভকে বলে।
||
____এতোদিন কলির এসব সহ্য হলেও এখন আর শুভ নিতে পারছে না।তাই রাগে কলির দুবাহুকে চেপে ধরে,কলিকে জিঙ্গেস করে,সমস্যা কি তোর। কথা বলছিস না কেনো।সবার সাথে বলতে পাড়িস, তাহলে আমার সাথে সমস্যা কি তোর.. বল………।
আমার সহ্যের সীমা অতিক্রম হয়ে যাচ্ছে কলি,আমি কিন্তু উল্টা পাল্টা কিছু করে বসবো।তখন কিন্তু আমাকে দোষ দিতে পারবি না তুই।

___কিন্ত কলি এখনো নিশ্চুপ, শুভর থেকে নিজেকে ছুটানোর চেস্টা করেই যাচ্ছে।
___খুব শখ না তোর আমার কাছ থেকে দূরে যাওয়ার,তোর শখ আমি মিটাচ্ছি।শুভ কলির কোমড়কে আকড়ে ধরে,কাছে টেনে নেয়।কিছু বুঝে উঠার আগেই কলির ঠোঁট দুটো শুভর ঠোঁটে মধ্যে নিয়ে নেয়।খুব গভীর ভাবে শুভ কলিকে কিস করতে থাকে, কলি নড়াচড়া করতে চাইলে,এক হাত দিয়ে কলির চুলগুলো আকড়ে ধরে,কলির উপর উঠা এতোদিনের সব রাগ গুলোর জ্বাল কলিকে কিস করে উঠাচ্ছে,এক সময় শুভ কলির ঠোঁট ছেড়ে গলায় নেমে আসে,পাগলের মতো কলির গাড়ে,গলায় কিস করতে থাকে।উন্মাদনায় শুভ কলির জামার পেছনের চেনটা খুলতে নিলেই কলি জোরে কান্না করে উঠে,কলির কান্নায় শুভর হুশ আসে,আর সাথে সাথে কলি থেকে দূরে সরে যায়।কলি মুখে হাত দিয়ে কান্না করতে তাকে,____শুভর মন চাইছে নিজের চুল নিজেই ছিড়ে ফেলতে।ওতো শুধু কলিকে ভয় দেখাতে চাইছে,যাতে কলি রিয়েক্ট করে,কথা বলে।
কিন্তু এতোদিন পর কলির সংস্পর্শে শুভ নিজেকে সামলাতে পারেনি।শুভ নিজেও ভেবে উঠতে পারছে না কিভাবে সে কলির সাথে এমন করলো।কলি নিচে বসে কাঁদছে,শুভ এক মুহুর্তেও আর ওখানে দাঁড়ায়নি চলে গেলো।

চলবে………

(মতামত জানাবেন।ধন্যবাদ)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে