প্রেমময় তৃষ্ণা পর্ব-১৮

0
1811

#প্রেমময় তৃষ্ণা
#writer-#TaNiA[🖤]
#part-18

সেদিন শুভ খুব দেরি করে বাসায় আসে,কলিকে হয়তো ফেস করতে চায় না তাই।শুভ এসে দেখে কলি ঘুমিয়ে গেছে,তাই শুভও কিছু না বলে সোফায় শুয়ে পরে।এতোদিন এভাবেই চলছিলো।শুভর রুমে শুভ সোফায় আর কলি বেড এ ঘুমাতো।শুভর সাথে একই রুমে থাকতে কলির কিছুটা আপত্তি ছিলো বলে,রুমের দরজাটা শুভ লক করতো না,জাতে কারো মনে কোনও ধরনের প্রশ্ন না জাগে।………সকালে একটু দেরি করে শুভর ঘুম ভাঙ্গে,চোখ খুলে বেড এর দিকে তাকিয়ে দেখে কলি নেই,তার মানে কলি অনেক আগেই উঠে গেছে।কলির সাথে কথা বলা দরকার,এমনেই মেয়েটার মনে পাহাড় সমান অভিমান জমেছে,তার পর কাল আমার এমন আচরনে হয়তো ও আরো কস্ট পেয়েছে।ওকে সরি বলা দরকার।এসব ভেবে শুভ শোয়া থেকে উঠে সোফায় বসলে, সামনের টি টেবিলে কলিকে দেওয়া সেই আংটিটা পায়।আংটিটা সেদিন কলি খুলে শুভকে দিয়ে দিয়েছিলো।কিন্তু কলির এক্সিডেন্ট এর পর কলি যখন বেহুশ ছিলো শুভ তা আবার পরিয়ে দিয়েছিলো, তাহলে এটা এখানে কেনো।শুভর মন অস্থির হতে লাগলো।আংটিটা হাতে নিয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেলো।
||
||
কলির বাবা আমীর সাহেব আজমাল এবং আজহার চৌধুরীর সাথে কথা বলছে,আর কলি বাড়ীর সবার থেকে বিদায় নিয়ে নিলো।শুভকে সিঁড়ি দিয়ে নামতে দেখে কলি ওর বাবাকে তারা দিতে লাগলো যাওয়ার জন্য,সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আসলাম আমীর মেয়েকে নিয়ে চলে যেতে নিলে,শুভর দিকে চোখ পরে।


____শুভর বুঝতে বাকি রইলো না,কলিই ওর বাবাকে আসতে বলেছে।তা না হলে স্যার আমাকে না বলে কখনোই ওকে নিতে আসতো না।শুভর পুরো শরীর রাগে লাল হয়ে যাচ্ছে।এই মুহুর্তে কলিকে কষে একটা থাপ্পড় দিতে মন চাইছে।নিজেকে শুভ অনেক কস্টে কোন্ট্রল করে,কারন এখন এমন কিছু করলে কলিকে সে একেবারের জন্য হারিয়ে ফেলবে।
“কলির পিতা শুভর সাথেও কথা বলে বাহিরের দিকে পা বাড়ালো,কলিও বাবার সাথে সাথে যেতে নিলে,শুভ কলির হাতটা ধরে ফেলে।কলি ও শুভকে কথা বলার সুযোগ দেবার জন্য ড্রয়িংরুম থেকে সবাই যার যার রুমে চলে যায়।শুভ কলির হাতটা খুব শক্ত করে ধরে আছে,কলি ছাড়াতে না পেড়ে,শুভকে বলে,___হাতটা ছাড়ুন শুভ ভাইয়া।কলি এতোদিন পর কথা বলায়,মুহুর্তের মধ্যেই চোখ দুটো ছলছল হয়ে যায় শুভর।কিন্তু পরক্ষনে মনে পরে কলির “শুভ ভাইয়া “বলা।তার মানে কলি শুভকে নিজের থেকে দূরে সরিয়ে দিতে চাইছে।শুভর মনটা ক্ষতোবিক্ষতো হতে লাগলো।

—কলি আবার বললো,প্লিস ছাড়ুন আমায়,এতোদিন আপনে আমার জন্য যা করেছেন তার জন্য অনেক ধন্যবাদ। আমি দোয়া করবো আপনে সুখে থাকেন।

“শুভ কলির হাতটা ধরেই,চোখগুলো বন্ধ করে ………প্লিস কলি আমাকে ছেড়ে যাস না,আই নিড ইউ।”

—কিন্তু কলি কিছুই শুনলো না,শুভর থেকে নিজের হাতটা ছুটিয়ে চলে গেলো।আর শুভ কলির পথের দিকে তাকিয়ে রইলো।আজ শুভর নিজেকে অনেক অসহায় লাগছে,কলিকে হারানোর ভয়টা আবারো বেড়ে যাচ্ছে।কলিকে দূরে যেতে দেখে মনটা যেনো ভেঙ্গে চূড়মার হয়ে যাচ্ছে।

—গ্রামে চলে এলো কলি,একটি বারও আর পিছে তাকালো না,হয়তো তাকালে দেখতে পারতো দুটো চোখের অশ্রু বৃষ্টি হয়ে নামছে।গ্রামে এসোও কলি সব সময় চুপচাপ থাকে,আগের মতো সেই চঞ্চলতা নেই।
গতো কয়েক মাসে শুভর দেয়া কস্টগুলো কলি মনের ঘরে বন্দি করে তালা দিয়ে রেখেছে,তাইতো কস্টগুলো ভুলে শুভকে আপন করতে পারছে না।আর এখনতো চাবিটা হারিয়ে ফেলেছে,যাতে মনের ঘরে কেউ আর ঢুকতে না পারে।এভাবে বেশ কিছুদিন পার হয়ে গেলো।কলি শুভর সাথে আর কোনও যোগাযোগ করেনি।শুভ ট্রাই করেও ব্যার্থ হলো।


“একদিন সকাল বেলা কারো চিল্লাচিল্লিতে কলির ঘুম ভেঙ্গে গেলো,সামনের রুমে কে আছে দেখার জন্য পা বাড়াতে নিলে।তাদের কথা শুনে কলি থমকে দাঁড়িয়ে যায়।
চেয়ারম্যান আর তার ছেলে শাহিন এসেছে,যার সাথে কলির বিয়ের কথা ছিলো।চেয়ারম্যান কলির বাবাকে অনেক কটু কথা শুনিয়েছে,যা তা বলছে,একসময় শাহিন ছেলেটি তার বাবাকে চুপ করতে বলে।
___স্যার আমি জানি, এসবের জন্য আপনে মোটেও দায়ী নন।কিন্তু আপনকেও মানতে হবে আপনে আমার সাথে অন্যায় করেছেন।আপনে আমার স্যার ছিলেন,যথেষ্ট সম্মান করি আপনাকে।তাই আপনার কথা চিন্তা করেই কলিকে না দেখে বিয়ের জন্য রাজি হয়েছিলাম,গ্রামের মানুষ নানান কথা বলেছিলো কলির নামে,তাও বিশ্বাস করেনি।কিন্তু সেই বিশ্বাসের প্রতিদানে,আমাকে সবার সামনে অপমান হতে হলো।বলুনতো স্যার এতে আমার কি দোষ।

“কলির পিতা মাথা নিচা করে সব কথা গুলো শুনছে, নিজের বাবাকে এভাবে সবার সামনে মাথা নিচু করে থাকতে দেখে কলির বুকটা ছিড়ে যাচ্ছে।তার ভুলের কারনে আজ তার পিতাকে এসব শুনতে হচ্ছে।”


—শাহিন বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো,আমি এখনো কলিকে বিয়ে করতে চাই,তবে এবার কলির মতামত যেনে।আপনে ওর সাথে ভালো করে কথা বলে,চিন্তা করে জানাবেন।আমি অপেক্ষায় থাকবো আপনার জবাবের।
শাহিন চলে যাওয়ার পর আসলাম আমীর চিন্তায় ডুবে গেলেন কি করবে।শাহিন ছেলেটা ভালো,বাপ আর ভাইয়ের মতো না,তাইতো কলিকে বিয়ে দিতে চেয়েছিলেন,কিন্তু কলি শুভকে ভালোবাসে তাই শাহিনের কথা এখন আর চিন্তা করে লাভ নাই।আমি কালই গিয়ে ওকে বুঝিয়ে বলে আসবো।

—কলির কথায় আসলাম আমীরের ধ্যান ভাঙ্গলো,শুধু ধ্যান ভাঙ্গাীনি,বড়সড় ধাক্কা খেলো,যখন কলি বললো,ও শাহিনকে বিয়ে করতে চায়।
____এসব কি বলছিস তুই।তুইতো শুভকে….আর বলতে দিলো না কলি তার বাবাকে।শুভ আমার পাষ্ট ছিলো বাবা,আমি আর উনাকে নিয়ে ভাবতে চাইনা। আমি তোমার পছন্দের ছেলের সাথেই বিয়ে করতে রাজি।তুমি সব ব্যবস্থা করো।আর চিন্তা করো না আমি,রাগের মাথায় কোনো ডিসিশন নিচ্ছিনা,আমি অনেক ভেবে দেখেছি,তুমি ঠিকই বলতে,আকাশের চাঁদকে দূরে থেকে দেখেই মন ভরতে হয়,তাকে কাছ থেকে ধরার স্বপ্ন করতে নেই।শুভও আমার কাছে আকাশের সেই চাঁদের মতো,যখনি ধরতে চেয়েছি,কস্ট আমিই পেয়েছি।আমি আর কোনও কস্ট পেতে চাই না,আর নাহি তোমাদের কস্ট দিতে চাই।আমার জন্য অনেক অপমান সহ্য করেছো আর না।এবার সব ঠিক হয়ে যাবে।

“কলির বাবা কলির দিকে তাকিয়ে আছে,ভাবছে মেয়েটা হঠাৎ কতোটা বড় হয়ে গেলো।বড়দের মতো কথা বলছে।নিজের আবেগ, অনুভুতি গুলো কি সুন্দর করে লুকিয়ে ফেলছে।কিন্তু কলির হঠাৎ এই চেন্জ হওয়া কি শুভ মেনে নিবে।নাকি কলির জীবনে আরেক ঝড় এর আহবান এটা। কলির বাবা কিছুই বুঝতে পারছে না কি করবে,ব্যাপারটা শুভকে জানানো দরকার,তা না হলে অন্য কারো থেকে শুভ জানতে পারলো,ভুল বুঝাবুঝি আরো বাড়বে।তাই আমীর সাহেব শুভকে ফোন করে সব বলে।
‘শাহিন কে বিয়ের জন্য কলি রাজি হয়ে গেছে,এ কথা শুনে শুভর কপালের রগগুলো ফুলে গেলো রাগে,চেয়ারা কেমন অগ্নিরুপ ধারন করলো,সব কথা শুনে ফোনটা সামনের দেয়ালে স্বজোরে আছাড় মারলো।সাথে সাথে ফোনটা ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেলো।শুভ এখনি কলির সাথে দেখা করতে যাবে বলে বের হতে নেয়।আর তখনি ফাহিম এসে বাধা দেয়।

—রিলেক্স ইয়ার।শান্ত হো।

“কিভাবে শান্ত হবো বল,হাজার বার সরি বলেছি,মাপ চেয়েছি।কিন্তু কিছুই শুনতে চায় না।এতোটুকু একটা পিচ্ছি মেয়ে শুভ চৌধুরীর মন নিয়ে খেলবে,আর আমি তাকে খেলতে দেবো।অনেক হয়েছে,এতোদিন বাধ্যগতো ছিলাম,এখন না হয় একটু অবাধ্যই হবে।ওর সব ভিমরিতি আমি দূর করে ছাড়বো।

___শুভ আগে আমার কথা শুন,যদি ভালো না লাগে,তখন যা খুশি করিস।

“বল তারাতারি”।

—এরপর ফাহিম সব খুলে বলে।ফাহিমের কথা শুনে শুভ বাকা হাসে।তার মানে ফাহিমের কথা পছন্দ হয়েছে।

“ওকে তাহলে এটাই হবে।”
||
||
— আজ আবার শুরু হলো কলির বিয়ের আয়োজন।প্রথমবারের আয়োজন তেমন জাঁকজমক না হলেও,এবার অনেক আয়োজন করা হয়েছে।কলিদের বাড়ীটা খুব সুন্দর ভাবে সাজানো হয়েছে।বাড়ীর পিছনের খালি জায়গায় কলির হলুদসন্ধ্যার আয়োজন করা হয়েছে।
সকাল থেকে কলিদের বাসায় মেহমানদের আনাগোনা দেখা যাচ্ছে।সকাল থেকে হাতে মেহেদি দিয়ে বসে আছে,হয়তো মেহেদির ডিজাইনে s অক্ষরটা কলিকে না চাইতেও শুভর কথা ভাবাচ্ছে।কতো না স্বপ্ন ছিলো এই দিনগুলো নিয়ে।একদিন শুভর নামে মেহেদি হাতে দিবে কলি,কিন্তু আজ দূর্ভাগ্যক্রমে শাহিনের নামে মেহেদি দিতে হলো।
কলি যতোই মুখে বলুক শুভকে এখন আর ভালোবাসে না,কিন্তু মন, মনকে তো কলি বোকা বানাতে পারবে না।এসব ভাবতে ভাবতে কখন যে দু’ফোটা জল চোখ থেকে গড়িয় পড়লো,কলি বুঝতেই পারলো না।হঠাৎ রুমে,শিলা, মিলা আর ওর কয়েকজন কাজিন প্রবেশ করলো,ওরা কলিকে রেডি করাতে এসেছে।কলিকে আজ হলুদের জন্য নীল রং, গোল্ডেন পার এর একটা শাড়ি পড়ালো।নকল ফুলের বদলে আসল ফুল দিয়ে কলিকে সাজিয়ে দিলো।অদ্ভুত সুন্দর লাগছে কলিকে।কলি নিজেকে যেনো নিজেই চিন্তে পারছে না।

“হলুদের জন্য রেডি হয়ে একা বসে আছে কলি নিজের রুমে। তার কাজিনরা কিছুক্ষন পর এসে তাকে নিয়ে যাবে বললো।আলতা দেওয়া পা গুলোর দিকে তাকিয়ে আছে,হঠাৎ পুরো বাড়ীর কারেণ চলে গেলো।কলির ভয় লাগা শুরু হলো।
কলি অন্ধকারে একদম থাকতে পারে না।এই অন্ধকারে কলির অস্থিরতা বেড়ে গেলো।হঠাৎ দরজা খুলার শব্দ পেলো।কলি জিঙ্গেস করছে কে…কিন্তু কোনও উত্তর পেলো না।এবার কলির ভয়টা আরো বেড়ে গেলো।

চলবে………

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে