প্রিয়দর্শিনী পর্ব-৩০+৩১

0
1019

#প্রিয়দর্শিনী🍂
#সুমাইয়া_যোহা

পর্ব-৩০

ছাদের একপাশে রেলিং ঘেষে দাঁড়িয়ে আছি। মেহমানরা সবাই আস্তে আস্তে করে বিদায় নিচ্ছে। পান্থর কথামতো ছাদে আমি একা অনেকক্ষণ যাবত দাঁড়িয়ে আছি। কিন্তু উনার কোনো হদিস পাইনি এখনো। উনার বাড়ির ছাদের গাছ দিয়ে ভরে রেখেছে। যেন অক্সিজেনেনে কারখানা বানিয়ে রেখেছেন। হুট করেই ছাদের একপাশে চোখে পড়তেই চোখ জোড়া সেখানেই স্থির হয়ে গেল। কারন ছাদের একপাশে টবে ফুটে আছে রঙ্গন ফুল। একসময় একজনে জন্য এই রঙ্গনে গাছে অতি যত্নসহকারে লাগিয়েছিলাম আমার ব্যালকনিতে। ভাবতে ভেতর থেকে এক দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসল। নিজেকে স্থির করলাম। আর ভাববো না সেই মানুষটার কথা। কারন কোনো প্রতারককে ভেবে নিজের বর্তমানকে নষ্ট করতে পারি না।

পেছন থেকে কেউ আমায় জড়িয়ে ধরতেই কেপে উঠলাম। মানুষটা থুতনি আমার কাধে রাখতেই বুঝে উঠলাম যে এইটা পান্থ ছাড়া কেউ নন। আমি উনার দিকে ফিরতে নিলে উনি আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আস্তে আস্তে শীতল কন্ঠে বলেন-

: ভাবিনি এতো সহজে সবকিছু তুমি আমায় গ্রহণ করবে। তবে জানতাম যে ফিরে যাবো না। তোমাকে আকড়ে ধরে বাকিটা জীবন কাটিয়ে দেয়ার বড্ড শখ হয়েছে আমার। তাই তো ভালোবাসি প্রিয়দর্শিনী। ভালোবাসি!

পান্থর মাতাল করা কন্ঠে কথাগুলো বলায় আমি যেন একেবারে ঠান্ডা হয়ে গেছি। পান্থ আমার হাতের আঙুলের ফাকে নিজের আঙুল রাখতেই চোখগুলো খিঁচে বন্ধ করে নিলাম আমি। কোনো কিছুই যেন বলার মতো শক্তি খুঁজে পাচ্ছি না।

: আমার কথায় হেলদোল নেই যে। যাক বাবা এতোটুকু ডোজেই এই অবস্থা আরো তো অনেক কিছু বলা বাকি আছে এবং করারও।

উনার এই বেহায়ার মতো কথাগুলো বলায় আমি চোখ মেলে বড়বড় করে তাকালাম। উনাকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে দূরে সরে যেতে উনি কিছুটা ঘাবড়ে গেলেন।

: অনেক সংশয় ছিল নিজের ভেতর আজ আমার। তবে দ্বিতীয় বারের মতো পুনরায় কারো উপর বিশ্বাস করতে এবং ভালোবাসতে আপনিই শিখিয়েছেন আমায়। তাই আমি আজকে নির্দ্বিধায় বলছি আমিও আপনাকে ভালোবাসি পান্থ। ভালোবাসি আমি আপনাকে।

আমি পান্থর কিছুটা কাছে গিয়ে উনার গলায় ঝুলে স্মিত হেসে কথাগুলো বললাম। আমার এমন অদ্ভুত আচরনে আচরনে তিনি খানিকটা বিষম খেলেন। নিজেকে সামলে বলে উঠলেন-

: বাহ! আজকে দেখি মিস টুকটুকি রোমান্স করার মুডে আছে। তা একটু রোমান্স তো করতেই হয়।

: নিষেধ করলো কে? আজকে ওয়েদারটাও অনেক জোস। তাই নয় কি?

তরুনিমা পান্থর আরেকটু কাছে গিয়ে নিজের তর্জনী আঙুলের সাহায্যে পান্থর কপালের এক পাশে থেকে স্লাইড করতেই পান্থ ভড়কে যায়। সে ভেবেছিল তরুনিমা হয়তো একটু লজ্জায় লাল নীল হয়ে যাবে। কিন্তু এখানে উল্টো তরুনিমার কান্ড দেখে পান্থ হতবাক হয়ে গেছে। পান্থর এমন চাহনি দেখে তরুনিমা কিছুটা দূরে সরে গিয়ে যেই হাসিটা এতোক্ষণ আটকে রেখেছিল এখন সেটা যেন বেরিয়ে এসেছে। তরুনিমা এমনভাবে হাসতে দেখে পান্থ যেন এক নেশার্ত ভরা চাহনি দিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।

: হাসলে যে তোমায় কতোটা অপূর্ব লাগে তা তুমি হয়তো নিজেই জানো না তরু। তোমার এই হাসিটা দেখার জন্য কতোটা প্রহর অপেক্ষা করেছি তা হয়তো কেবল আমিই জানি।

তরুনিমার দিকে পান্থ নির্বাক হয়ে তাকিয়ে রইল। তরুনিমা পান্থর এমনভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে ওর সামনে আঙুল দিয়ে তুড়ি বাজিয়ে বলল-

: কি হলো মি: শিমপাঞ্জি? কোথায় হারিয়ে গেলেন?

: তোমার ওই স্নিগ্ধ, প্রাণোচ্ছল হাসিতে। যা দেখার জন্য সহস্র চেষ্টা চালিয়ে ছিলাম।

আনমনে কথাগুলো বলার মাঝে পান্থ যেন হুশ ফিরে আসে। পান্থ মেকি হাসি দিয়ে কথা ঘুরানোর চেষ্টা করল।

পান্থ মাঝে মাঝে এমন কিছু কথা বলেন যেটাতে আমি পুরো বাকহীন হয়ে পরি। কিন্তু উনি এবার নিজের কথায় নিজেই টাসকি খেয়ে বসে আছেন। ছাদের এক সাইডে নিয়ে গিয়ে গিয়ে টেবিলের চেয়ার টেনে বসালেন এবং নিজেও বসলেন। টেবিলটার উপর একটা মিডিয়াম সাইজের বক্স র‍্যাপিং করা রাখা আছে। পান্থ আমাকে চোখের ইশারায় প্যাকেটটা খুলতে বলেন। আমিও উনার কথামতো যত্ন সহকারে র‍্যাপিং খুলে দেখি চকলেট মাফিনের বক্স। আমি তো খুশিতে গদগদ হয়ে উনার দিকে তাকাতেই উনি একটা মুচকি হাসি দিয়ে বক্সটা ওপেন করতে বলেন। আমিও বক্সের ঢাকনাটা খুলতেই চোখগুলো আমার ছোট ছোট হয়ে গেল। হাসবো নাকি কাদবো নাকি রাগ করবো কিছুই বুঝে উঠে পারছি না। আমি উনার দিকে কাদো কাদো চেহারা নিয়ে তাকিয়ে ঠোঁট উল্টে জিজ্ঞেস করলাম-

: এগুলো কিন্তু ঠিক না! আপনি বড্ড খারাপ! এগুলো কি সব?

আমি উনার দিকে বক্সটা ঘুরিয়ে সব কাগজের টুকরাগুলো উনার সামনে বের করলাম। উনি এবার আমার খানিকটা হাসতে নিলেই আমি ধমকের সুরে বলে উঠলাম-

: এই! খবরদার! মোটেও হাসবেন না। এই হাসির মায়ায় আপনি বারবার আমাকে জড়িয়ে নেন। তাই আমি আপনার উপর রাগতেও পারি না। হাসবেন না বলে দিলাম!

একরাশ ক্ষোভ নিয়ে কথাগুলো বলার পর নিজেই এবার বিপদে পড়ে গেলাম। কারন উনি তো এমনেই নির্লজ্জ আর এসব বলাতে আরো আসকারা পেয়ে যাবেন। উপর থেকে আমিও উনার মতোই নির্লজ্জ হয়ে যাচ্ছি। নিজেকে ইচ্ছেমতো বকছি আর উনি আমার বিড়বিড় করা দেখে আবার হাসা শুরু করে দেন। উনি কপালে দুটো আঙুল রেখে আমার দিকে তাকিয়ে হাসছেন। আমি এবার বেহায়া হয়ে উনা হাসির দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থেকে বলি-

: এতোটা মায়ার্ত কেন আপনার হাসি? এই মায়াবী হাসিটাই সেই পরিচয়ের প্রথমদিন থেকে আমাকে আষ্টেপৃষ্ঠে আপনার প্রতি আকৃষ্ট করতে বাধ্য করেছে। এই হাসিটাই প্রতি মুহূর্তে দুর্বল করতে বাধ্য করেছে আমায়। তাই এই হাসিটাকে এবং এই মানুষটাকে যে বড্ড বেশি ভালোবাসি আমি আজ।

উনি আমার কথাশুনে নিজের হাসিটা বন্ধ করে অবাক পানে আমার দিকে বিস্ময়ের চোখে তাকিয়ে আছেন। উনি নিজের আঙুলের সাহায্য আমার কানের পিছনে কাটা চুলগুলো গুজে দিতেই কারো জোরে জোরে কাশির আওয়াজ শুনতেই ধ্যান ভাঙল আমার। এবার আর নিজেকে সামলাতে না পেরে দিলাম এক দৌড়। ছাদের মাহিম ভাইয়া আর ইশান এসেছিল আমাদের খুঁজতে। কিন্তু তাদেরকেও তোয়াক্কা না করে সাইড কেটে দৌড় দিয়ে কেটে পড়লাম।

পান্থ তরুনিমার এমন আচরনে কিছুটা স্থির হয়েই দাঁড়িয়ে রইল। তরুনিমা আজকের আচরন কথাবার্তা প্রতি সেকেন্ডে সেকেন্ডে ওকে অবাক করে দিচ্ছে। ইশান তরুনিমার এভাবে ছুটে যাওয়াতে সেও নিচে নেমে গেল। পান্থ সাইড কেটে চলে গেল। মাহিম সেখানে অসহায়ের মতো দাঁড়িয়ে বিষয়টা বুঝবার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হলো।

তাড়াতাড়ি করে সিড়ি দিয়ে নামতেই রুবিনা আন্টি হন্তদন্ত হয়ে বলে উঠেন-

: আস্তে তরুনিমা!

আই নিজেকে সামলে নিয়ে আসটতে করে নেমে আসলাম। সবার থেকে বিদায় নিয়ে চলে যেতেই হুট করে পেছন ফিরে তাকালাম। পেছন ঘুরে তাকাতেই লক্ষ্য করি পান্থ আমার দিকে গাল হাতে দিয়ে দুষ্টুমিষ্টি হাসি দিয়ে উপরের দাঁড়িয়ে আছেন। আমি চোখ নামিয়ে নিয়ে একপ্রকার উনার সেই নেশার্ত চাহনি থেকে বাচার জন্যই চলে এলাম।

বাসায় ফিরে নিজের ঘরে রেস্ট নিচ্ছে। দরজায় টোকা পরতেই উঠে গিয়ে দরজা খুলেই দেখি বাবা দাঁড়িয়ে আছেন। বাবাকে দেখে মনে হচ্ছে তিনি আজকে অনেক খুশি হয়েছেন। হওয়াটাই স্বাভাবিক। আমার এতো সহজে রাজি হয়ে যাওয়াটা উনি ভাবত পারেননি। তবে আমি যে উনার সম্মান নষ্টে হতে দেব না সেইটার প্রতি উনার বিশ্বাস ছিল। বাবা আমাকে কিছু না বলে শুনু কপালে আর আমার মাথা আদর করে চলে গেলেন। আমিও প্রতিউত্তরে স্মিত হাসলাম। এরচেয়ে বেশি হয়তো আমার কিছু বলার ছিল না।

#চলবে____

#প্রিয়দর্শিনী🍂
#সুমাইয়া_যোহা

পর্ব-৩১

আসিফ শিকদারের মুখোমুখি বসে পান্থ। পান্থ কফির মগে চুমুক দিচ্ছে আর ফোন গুতোচ্ছে। পরিবারের সবাই হলে বসে আছে। আসিফ শিকদার যখন কোনো কিছুই বলছেন না পান্থ সোফা থেকে উঠে কফির হাতে নিয়ে উঠের চলে যাওয়ার পা বাড়ালো।

: এই বিয়ে ভেঙে দাও তুমি আহসান। এই বিয়ে হলে অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যাবে আমার আহসান।

আসিফ শিকদার অকপটে কথাগুলো বললে শাহরিয়ার পরিবারের সবাই যেন থতমত খেয়ে যান। আহসান শাহরিয়ার বন্ধুর মুখে হঠাৎ এমন কথা শুনে কিছুটা বিস্মিত হন। আহসান শাহরিয়ার বিস্ময়ের সুরে বলেন-

: কি বলছো তুমি এসব আসিফ? বিয়ে ভেঙে দিব!

: কি বলছেন আপনি এসব আসিফ ভাই? আপনার কি কোনো সমস্যা আছে? থাকলে বলুন!

: ওয়েট আ মিনিট মামনি! আপনি কার বিয়ে ভাঙার কথা বলছেন আঙ্কেল? বিয়ে তো একটা নয় দুটো হতে চলেছে।

মাহিম মিসেস রুবিনাকে থামিয়ে কিঞ্চিত ভ্রু কুচকে কথাটা জিজ্ঞেস করলে আসিফ শিকদার খানিকটা ইতস্তত করে বলেন-

: আসলে দেখো মাহিম আমি জানি তিথি অনেক ভালো মেয়ে, ওর পরিবার ভালো, ফ্যামিলি স্ট্যাটাসও বেশ ভালো। সবদিক দিয়ে তোমার জন্য পারফেক্ট। কিন্তু তরুনিমা ওর তো সেই তুলনায় কিছুই নেই। একটা মিডেল ক্লাস ফ্যামিলির মেয়ে। ওর বাবা একজন সরকারি চাকুরিজীবী ছিলেন। আর এখন রিটায়ার্ড। হ্যাঁ মানছি তরুনিমার পরিবার ভালো, যদি আমি তরুনিমা ফ্যামিলির দিকে না যাই, তবে একটা বিষয় খেয়াল করো আহসান তুমি; তোমার ছেলে হলো একজন নামকরা ডক্টর আর তরুনিমা হলো তোমার বড় ছেলের কোম্পানীর সামান্য এমপ্লোয়ি। আদৌ কি যায় ওর সাথে?

আসিফ শিকদারের কথাগুলো শুনার পর পান্থর যেন বুঝতে বাকি রইল না বিষয়টি। পান্থ কফির কফির মগটা টেবিলের উপর রেখে সোফায় পুনরায় বসে নিজের রাগটাকে নিয়ন্ত্রণে খুবই শান্ত কন্ঠে বলল-

: আঙ্কেল এতো ঘুরিয়ে পেচিয়ে কথা না বলে সোজাসুজি বললেই তো পারতেন যে তরুনিমা আর আমার বিয়েটা যেন ভেঙে দেয়া হোক। ওকে ফাইন আপনার কথা আমি মানলাম। আমার আর তরুনিমার বিয়েটা আমি ভেঙে দিলাম। কিন্তু তরুনিমার সাথে যদি আমার বিয়ে না হয় তাহলে আমার বিয়েটা হবে কার সাথে?

আসফি শিকদার কিছুটা খুশি হয়ে মুখে খানিকটা হাসি ফুটিয়ে আহসান শাহরিয়ার হাত ধরে বলেন-

: যদি তুমি কিছু মনে না করো বন্ধু তাহলে আমি আমার মেয়ে রিন্তার সাথে তোমার ছোট ছেলের বিয়ে দিতে চাই। ছোট থেকেই ওরা একসাথে বড় হয়েছে। আর ওরা একে অপরকে চিনে খুব ভালো বন্ধু, আমার মেয়ে রিন্তাও তোমার ছেলেকে খুব পছন্দ করে। আর আসিফ শিকদারের ব্যাংক ব্যালেন্স সম্পত্তি সবই তো তার একমাত্র মেয়ের রিন্তার। রিন্তুা তরুনিমার চেয়ে কয়েকগুন বেশি ভালো সবদিক থেকে এবং রিন্তা একজন মেডিকেল স্টুডেন্ট। কয়েকবছর পর সেও ডক্টর হবে।

আহসান শাহরিয়ার রীতিমতো তার বন্ধু মুখে এমন প্রস্তাব শুনে চমকে উঠেন। তার সাথে বাকি সবাই। এখন পুরো বিষয়টা সবার সামনে পুরোপুরি পরিষ্কার হলো। পান্থ নিয়ে থুতনি নিচে আঙুলের সাহায্যে স্লাইড করে খুবই সবালীল ভাষায় হাসি মাখা মুখে বলল-

: আরে আঙ্কেল এই কথা! তা এইটা প্রথমে বললেই তো পারতেন। আমি তো আবার টেনশনে পড়ে গেলাম যে আমার বিয়েটা আবার কার না সাথে হয়। বাট আঙ্কেল ইফ ইউ ডোন্ট মাইন্ড একটা কথা বলি, আমি আপনার মেয়েকে বিয়ে করতে পারবো না। আই এম এক্সট্রিমলি স্যরি।

মুখে খানিকটা গাম্ভীর্য এনে শেষের কথাটা বলে পান্থ। আসিফ শিকদার মুখে যেই হাসির ঝিলিকটা ছিল তা এখন সম্পূর্ণ বিলীন হয়ে গেছে। আসিফ শিকদার কিছু বলতে উদ্ধত হলে পান্থ উনাকে থামিয়ে দিয়ে বলল-

: আপনি তো আঙ্কেল তরুনিমাকে রিজেক্ট করে রিন্তাকে বিয়ে করার অনেকগুলো কারন বললেন। এবার আমি একটু রিন্তাকে কেন বিয়ে করতে পারবো না সেটা আগে বলি। রিন্তার সাথে আমি তরুনিমার তুলনা করতে মোটেও ইচ্ছুক নই। আপনি একটা কথা নিজেই উল্লেখ করেছেন যেহেতু আমি আর রিন্তা ছোটে থেকেই একে অপরকে চিনি এবং খুব ভালো বন্ধু। এই “বন্ধু” শব্দটি যে আপনি প্রয়োগ করেছেন এটাই সত্য আর কোনোটাই সত্যি নয়। রিন্তা আমাকে পছন্দ করে সেটা সে করতেই পারে। কারো পছন্দকে তো আটকে রাখার ক্ষমতা আমার নেই। হ্যাঁ আমি রিন্তাকে পছন্দ তবে সেটা শুধুই বন্ধু হিসেবে। রিন্তা এখনো অনেক ছোট। আপনি নিজের মেয়েকে অনেক ভালোবাসেন সেটা আমাদের কারোই অজানা নয়। তবে তারমানে এই নয় যে আপনি সব জেনেও আপনি আপনার মেয়ের রাগ জেদকে প্রাধান্য দিবেন। সময়ের সাথে সাথে মানুষের পছন্দের ভালালাগার পরিবর্তন ঘটবে। রিন্তারও ঘটবে। আপনি একজন বাবা, বাবা হিসেবে আপনার প্রথম কর্তব্য ছিল আপনার মেয়েকে বুঝানোর। কিন্তু আপনি সেটা না করে উল্টো আপনি এখানে প্রস্তাব নিয়ে এসেছেন যাতে আমি বিয়েটা ভেঙে দিয়ে আপনার মেয়েকে বিয়ে করি। এটা কি আপনার মেয়ের ছেলেমানুষিকে প্রাধান্য দেয়া নয়? আর তরুনিমা, সি ইজ আ ইনডিপেন্ডেট গার্ল। ওর সাথে আমার কতোটুকু ম্যাচ হয় সেইটা আমার চেয়ে বেটার হয়তো কেউ জানে না। আর আপনি নিজের মেয়ের স্ট্যাটাস উপরে তুলে ধরার জন্য তরুনিমার ব্যক্তিত্বকে অনেকটা নিচে নামিয়ে ফেলতে চেয়েছিলেন কিন্তু আপনি সেটার বদলে আপনি নিজের মেয়ে এবং আপনাকে ছোট করে ফেলেছেন।

পান্থ খুবই দৃঢ় কন্ঠে কথাগুলো বলল। মাহিম পান্থর কথার মাঝে নিজের কথা রাখল।

: আঙ্কেল তরুনিমাকে আপনি যেই কোম্পানির এমপ্লোয়ি সেই কোম্পানিতে আমিও একজন এমপ্লোয়ি ছিলাম। আমাকে আমার জায়গা তৈরি করতে অনেকটা শ্রম ব্যয় করতে হয়েছে। তিথি আর তরুনিমা দুজনই আমাদের কোম্পানিতে জব করে তিথির ফ্যামিলি এতো ভালো ও কেন জব করছে? তরুনিমা তো মিডেল ক্লাস ও জব করতেই পারে। এখানে আঙ্কেল মিডেল ক্লাস এন্ড হাই ক্লাস বলে কিছুই নেই। তারা তাদের নিজের আইডেন্টিটি তৈরি করতে চায়। একটা মেয়ের জন্য নিজের পরিচয়ের অনেক প্রয়োজন তারা সেটাই তৈরি করতে ব্যস্ত। আর তরুনিমার কথাই যদি বলেন সে তো আমাদের কোম্পানির জন্য একটা ডায়মন্ড। কজ ওর স্কিলের জন্যই “টি-টেক” কোম্পানিকে সবাই চিনে। আমি তো এবার ভেবেই ফেলেছি তরুনিমাকে ম্যানেজিং ডিরেক্টর পদে নিয়োগ দিব এমন হীরাকে কে হাতছাড়া করতে চায়!

আসিফ শিকদারের মুখ থেকে আর একটা কথাও বের হলো না। পান্থ কফির মগটা হাতে নিয়ে নিজের ঘরে যেতে নিলে পিছর ফিরে আসিফ শিকদারকে উদ্দেশ্য করে বলল-

: আঙ্কেল আপনি আমার চেয়ে বয়সে বড় তাই আপনি একটা জিনিস খুব ভালো করে জানেন প্রফেশনাল লাইফ আর পার্সোনাল লাইফ দুটো কখনো এক দাড়ি পাল্লায় মাপতে নেই। কারন এই দুটো জিনিস বিপরীত দুই মেরুর হয়ে থাকে। আর হ্যাঁ আমি তরুনিমাকে ভালোবাসি। যদি বিয়ে করতেই হয় তাহলে তরুনিমাকেই করবো। ফেমাস সাইকিয়াস্ট্রিক ডক্টর পান্থ শাহরিয়ারের ওয়াইফ যদি কেউ হয় তাহলে তরুনিমা হাসনাতই হবে! অন্যকেউ না! নেভার!

শেষের কথাগুলো খুবই জোরালো কন্ঠে পান্থ বলে নিজের ঘরে চলে গেল। পান্থ চলে যাওয়ার পরপরই মাহিমও স্থান ত্যাগ করে নিজের ঘরে চলে যায়।আসিফ শিকাদার নিজের বন্ধুকে বুঝানোর জন্য কিছু বলতে নিলে আহসান শাহরিয়ার তার বন্ধুর কাধে হাত রেখে স্বাভাবিক কন্ঠে বলেন-

: আসিফ আমার দুই ছেলে যাদেরকে পছন্দ করেছেন তাদের দুজনের উপর আমার পূর্ণ আস্থা আছে। যদি বিন্দু পরিমাণও আমার অথবা রুবিনার মনে সংশয় থাকতো তাহলে আজকে ওদের এনগেজমেন্ট হতো না। তাই বলছি এমন আর কিছু বলো না এবং করো যাতে আমার সাথে তোমার বন্ধুত্বের ইতি ঘটে। রাত অনেক হয়েছে এখন তুমি আসতে পারো বন্ধু।

#চলবে____

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে