প্রিয় বালিকা পর্ব-৩+৪+৫

0
97

#প্রিয়_বালিকা |৩|
#সাদিয়া_আক্তার_জ্যোতি

পুরোনো প্রাচীরে ঘেরা বাগান বাড়ির সামনে পর পর দুটি গাড়ি এসে থামল।প্রথমে সূর্য এবং রৌদ্র মোটরসাইকেল নিয়ে বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করল।অতঃপর ভাড়া করা কালো মাইক্রোবাসটি।মোটরসাইকেলের পিছন থেকে নেমে বিশাল বাড়ির দিকে দৃষ্টি ফেলল রৌদ্র।রাতের অন্ধকারেও বাড়ির কৃত্রিম আলো চারপাশটা সুস্পষ্ট।রৌদ্র আশেপাশে তাকিয়ে গাছপালা আর বাগান ছাড়া কিছুই দেখতে পেল না।সূর্যও মোটরসাইকেল থেকে নেমে এসে রৌদ্রের পাশে দাঁড়াল।রৌদ্রকে আশেপাশে তাকাতে দেখে হেসে বলল,
– বাড়ির আশেপাশে দেখার মতো কিছুই নেই বন জঙ্গল ছাড়া।বাগানে ঢুকলে মনে হবে অ্যামাজনে হারিয়ে গিয়েছ।

রৌদ্র তার পাশে থাকা হ্যাংলা পাতলা ছেলেটাকে এক পলক দেখল।ভারি কন্ঠে জিজ্ঞেস করল,
– কিসে পড়ো তুমি?

সূর্য শার্টের কলার ঠিক করতে করতে বুক ফুলিয়ে বলল,
– ইন্টার পরীক্ষা দিয়েছি।এখন এডমিশন দিবো।

ছেলেটি তার তীক্ষ্ণ চোখজোড়া ছোট করল।বলল,
– ইন্টার মানে?ও লেভেল?নাকি এ লেভেল?

কপাল কুঁচকে ফেলল সূর্য।রৌদ্রের কথা বুঝতে না পেরে বলল,
– মানেহ্?

এতক্ষণে সকল জিনিসপত্র নামিয়ে গাড়ি থেকে একে একে সকলে নেমে এসেছে।অভয় এক পাশ দিয়ে রৌদ্রের গলা জরিয়ে হেসে বলল,
– আরে ও ইংলিশ মিডিয়ামে পড়ছে তো তাই ইন্টার বুঝে না।

রৌদ্র এবং অভয়ের উচ্চতা একই।তবে শরীরের গঠন রৌদ্রকে হাজার থেকে পৃথক করে।ফাঁপা মাংসপেশি জাগ্রত কলার-বোন, ধারালো চোয়াল রৌদ্রের দাম্ভিকতা বাড়িয়ে দেয় সবার থেকে।তাছাড়া নিজেকে সবার থেকে আলাদা করতে তো তার শিকারী চাহনি যথেষ্ট।রৌদ্র জিজ্ঞেসু দৃষ্টিতে অভয়ের দিকে তাকালো।অভয় রৌদ্রের দৃষ্টি বুঝে বলল,
– এ লেভেলের কথা বলছে।

রৌদ্র সূর্যের দিকে তাকিয়ে বলল,
– এইখানের এডুকেশন সিস্টেম সম্পর্কে তেমন ধারণা নেই।

সূর্য মুখ ভোঁতা করে মনে মনে বলল,”ব্যা’টা!ধারণা নেই যখন তখন জিজ্ঞেস করলি কেন কিসে পড়ি!”
পরমুহূর্তেই মুখে হাসি নিয়ে বলল,
– এতো বছর দেশে আসোনি কেন?

রৌদ্র কিছু বলার আগে অভয় উত্তর দিলো,
– আসলে ওর গার্লফ্রেন্ড কিছুদিন আগে চলে গিয়েছে।যার জন্য ও একটু মেন্টালি ডিস্টার্ব ছিল।তাই ভাবলাম ওকে আমার সাথে নিয়ে আসি।মাইন্ড রিফ্রেশও হবে আবার নিজের মাতৃভূমি দেখাও হবে।

সূর্য তীক্ষ্ণ স্বরে বলল,
– চলে গিয়েছে কেন?

রৌদ্র খুব স্বাভাবিকভাবেই বলল,
– শী উয়াজ মাই রেন্টেড গার্লফ্রেন্ড।আটচল্লিশ ঘন্টা আমরা একসাথে সময় কাটানোর পর ও আর আমি দেড়মাসের একটি কন্ট্রাক্টে যাই।বাট ও কন্ট্রাক্ট শেষ হওয়ার আগেই চলে গিয়েছে।

সূর্যের চোয়াল ঝুলে গেল বিস্ময়ে।অবিশ্বাস্য সুরে বলল,
– আটচল্লিশ ঘন্টা?মানে কিভাবে ভাই?সিক্রেটটা কি?

অভয় বিরক্তি চাহনিতে সূর্যের মাথায় একটা গাট্টা মেরে বলল,
– আরে ব’লদ আটচল্লিশ ঘন্টা ওরা একসাথে ঘোরাঘুরি করছে।সবসময় উল্টো পাল্টা ভাবা!অ’শ্লীল,ন’ষ্ট ব্রেইন!

রৌদ্র ভ্রু কুঁচকে অভয়কে বলল,
– মানুষ রেন্টে গার্লফ্রেন্ড নেয় শুধু ঘোরাঘুরি করার জন্য এটা তোকে কে বলেছে?

রৌদ্রকে আর বলতে দিলো না অভয় হাত টেনে দাঁতে দাঁত চেপে হিসহিসিয়ে রৌদ্রের কানে বলল,
– চুপ যা ভাই।বাচ্চা ছেলে।আর তাছাড়া এখানের কালচার এগুলোকে স্বাভাবিকভাবে নেয় না।এসব এখানের কালচারের সাথে যায় না।ভুলেও এসব নিয়ে এখানে মুখ খুলবি না।বুঝেছিস?আর তোর গার্লফ্রেন্ড যেন কেন চলে গিয়েছে?সো তোদের মধ্যে যে স্পেশাল কিছু হয়নি তা আমি খুব ভালো করেই জানি।

রৌদ্র তার তীক্ষ্ণ দৃষ্টি ফেলল অভয়ের দিকে কটমট করে বলল,
– কি বলতে চাস তুই?

– আরে কুল ব্রো আমি বলছি তুই অনেক বেশি বোরিং আর আনরোম্যান্টিক দেখেই তোর গার্লফ্রেন্ড তোকে ছেড়ে চলে গিয়েছে।

– এটা আমার লাইফের ফার্স্ট ডেট ছিল।আর তাছাড়া ওর জন্য আমার তেমন কিছু ফিলও হতো না।

রৌদ্র কিছুক্ষণ ভেবে আবার বলল,
– এতে অস্বাভাবিকের কি আছে?উই আর অ্যাডাল্ট নাও।আমরা চায়লেই কারো সাথে রিলেশনে যেতে পারি।

– আরে ভাই বুঝতেছিস না কেন?বিয়ে ছাড়া এভাবে একসাথে থাকা এই দেশে খারাপ চোখে দেখা হয়।এসব আমাদের দেশের কালচারে এবং আইনত অবৈধ। মানে বুঝিস তো ইলিগ্যাল।

– আই সি!
অভয় এবং রৌদ্রকে ফুসুরফাসুর করতে দেখে সূর্য বিরক্ত হয়ে ভিতরে চলে গেল।হঠাৎ রৌদ্র নিজে অন্যপাশে কারো অস্তিত্ব পেয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে সেদিকে তাকাল।আভা রৌদ্রের অন্যপাশে গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে কান খাঁড়া করে অভয় এবং রৌদ্রের কথপোকথন শোনার চেষ্টা করছে।রৌদ্র ভ্রু সংকুচিত করলো।খাটো আভার মাথা রৌদ্রের বুকেরও নিচে পড়ে।রৌদ্র আঁড়চোখে আভাকে দেখে কনুই দিয়ে অভয়ের পেটে গুঁতা দিলো।পূর্বর মতোই ফিসফিসিয়ে অভয়কে বলল,
– লুক এট হার!হু ইজ শী?

অভয় রৌদ্রের অন্যপাশে উঁকি দিয়ে আভাকে দেখে বিরক্ত হলো।নিচের ঠোঁট কামড়ে আভার সম্পূর্ণ মাথাটা নিজের হাতের তালুতে আবদ্ধ করে এক ধাক্কায় দূরে সরিয়ে দিলো।রাগি দৃষ্টিতে আভার দিকে তাকিয়ে তেজি স্বরে বলল,
– কি সমস্যা?আঁড়ি পাতছিস কেন?

থতমত খেয়ে গেল আভা।বাম হাতে নিজের চুল ছুঁয়ে এদিক ওদিকে তাকিয়ে বলল,
– বলছি ভিতরে যাবে না?সবাই ওয়েট করছে বাবারা তো ভিতরে চলে গেল।

রৌদ্র আর অভয় আগের মতোই গলা জরা জরি করতে করতে ভিতরে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো। আভা এখনও সেখানে থম মেরে দাঁড়িয়ে আছে।রৌদ্র একবার পিছন ফিরে আভাকে দেখে অভয়ের কানে ফিসফিস করে বলল,
– ও কি কিছু শুনেছে?

অভয়ও রৌদ্রের মতো ফিসফিস করে উত্তর দিলো,
– জানিনা।

রৌদ্র অভয়কে ধাক্কা দিয়ে নিজের থেকে ছাড়িয়ে নিলো।ঝাঁজালো স্বরে বলল,
– সবসময় গা ঘেঁষাঘেঁষি করতে থাকিস কেন?তোর জেন্ডার নিয়ে আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে!

অভয় বাঁকা হাসি দিলো।যে হাসি রৌদ্রের একদমই পছন্দ হলো না।অভয় আবারও এগিয়ে এলো রৌদ্রের কাছে রৌদ্রকে একপাশ দিয়ে হাত দিয়ে আগলে নিলো।রৌদ্র নাক মুখ কুঁচকে আবারও ধাক্কা দিয়ে অভয়কে সরিয়ে দিলো।তেজি স্বরে বলল,
– দূরে থাক।

বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করতেই প্রেমা দৌড়ে এলো ছেলের কাছে।এতোদিন পর ছেলেকে কাছে পেয়ে আলিঙ্গন করতে ভুলল না।চোখে পানি টলমল করছে তার।অভয় মাকে জরিয়ে ধরে রইলো বেশ কিছুটা সময়।কতদিন পর মায়ের শরীরের সেই সুন্দর ঘ্রাণটা পাচ্ছে সে।বুক ফুলিয়ে শ্বাস টানল অভয়।পাশেই দাড়িয়ে থাকা রৌদ্র নির্বাক দর্শক।
আভা বিভিন্ন বিচার বিশ্লেষণ করতে করতে বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করলো।

“রেন্টেড গার্লফ্রেন্ড মানে?বিয়ে ছাড়া একসাথে থাকা!ছিঃ!ভাইয়ার ফ্রেন্ড কত খারাপ।নি’র্লজ্জ,বে’হায়া,বে’কুব ছেলেটা লোকসমাজে মুখ দেখাচ্ছে কিভাবে?নিশ্চয়ই ক্যারেক্টারে সমস্যা আছে না হলে এতো বড় পাপকাজ করার পর কেউ লোকসমাজে মুখ দেখাতে পারে না।”

আভা রৌদ্রের দিকে আঁড় চোখে তাকিয়ে কথা গুলো মনে মনে আওড়াচ্ছে।রৌদ্র আভাকে নিজের দিকে এমন জহুরি দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে দেখে ভ্রু সংকুচিত করে।নিজের কালো শার্ট টেনে নড়েচড়ে দাঁড়ায়।মনে মনে বলে,”মেয়েটা এভাবে তাকিয়ে আছে কেন আমার দিকে?”

– বাবা অভয় কিডনি থেকে আমার জন্য কি এনেছ?

অভয়ের মেঝো চাচির কথায় উচ্চস্বরে হেসে ফেলল বসার ঘরে উপস্থিত সকলে।সূর্য পেট ধরে শরীর কাঁপিয়ে হাসতে হাসতে বলল,
– আরে মা ওটা কিনডি না সিডনি।আর ভাইয়া মাত্র এসেছে ওকে একটু রেস্ট নিতে দাও তারপর তোমাকে গিফট দিবে বুঝেছ?

বলেই আরো একদফা হেসে ফেলে সকলে।অদূর থেকে দৌড়ে আসে ছোট জমজ দুই বোন।দৌড়ে এসে অভয়কে জরিয়ে ধরে।দুইজন একই সাথে বলে ওঠে,
– অভয় ভাইয়া কেমন আছো?আমাদের জন্য চকলেট এনেছ?

অভয় দু’জনের গাল টেনে বলল,
– হ্যাঁ এনেছি তো। তোমাদের জন্য অনেক চকলেট এনেছি।

মেঝো চাচির দিকে তাকিয়ে বলল,
– চাচি তোমার জন্যেও গিফট এনেছি।সবার জন্য এনেছি।সবাইকে আগে আমার বন্ধুর সাথে পরিচয় করিয়ে দিই।

কথাটা বলে অভয় নিজের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেটিকে ইশারা করে বলল,
– এটা হলো আমার বন্ধু আফসিন রৌদ্র।আমরা একসাথে পড়ি। ও বাংলা দেশি কিন্তু দেশে আসছে এই প্রথম।ওর জন্য একটা রুম গুছিয়ে দিলে ভালো হয়।

কথাটা শেষ না করতেই উৎফুল্ল কন্ঠে আভার সমবয়সী কিশোরী এগিয়ে এসে বলল,
– হ্যাঁ হ্যাঁ আমি গুছিয়ে দিবো ভাইয়া।এই সেহরিন থাকতে তোমাদের কোনো চিন্তা করতে হবে না।রৌদ্র তুমি আমার সাথে চলো।

সেহরিনের মুখে আচমকা রৌদ্রের নাম শুনে সকলে চমকে গেল।অচেনা একজনকে এমনভাবে সকলের সামনে নাম ধরে ডাকছে আবার তুমি করে বলছে দেখে কারো কাছে বিষয়টা ভালো লাগল না।রৌদ্র নিজেও ভীমড়ি খেল।হঠাৎই এই মেয়েটা আবার কোথা থেকে উদয়ন করলো? ভাবতে ভাবতে ভ্রু যুগল কুঞ্চিত হলো তার।শুঁকনো শরীরের মেয়েটি সকলকে নিজের দিকে এমন বিস্ফোরণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে দেখে গলা খাঁকারি দিয়ে নড়ে চড়ে উঠলো।আসলে সে জীবনের প্রথম কোনো বিদেশিকে এতো কাছ থেকে দেখে এতোটাই উত্তেজিত হয়ে গিয়েছে যে তার কর্মকান্ডে নিয়ন্ত্রণ আনতে পারিনি।দাঁত দিয়ে জিহ্বা কামড়ে বলল,
– মানে বলছি ভাইয়া আপনি আমার সাথে চলুন আমি আপনাকে রুম দেখিয়ে দিচ্ছি।

রৌদ্র মুখে কিছু বলল না।সেহরিনের পিছু চলে গেল।অভয় মাকে উদ্দেশ্য করে বলল,
– মা আমি একটু দাদিকে দেখবো।দাদি কেমন আছেন এখন?

প্রেমা মলিন স্বরে বলল,
– এখন মুটামুটি ভালো আছে তবে অবস্থা অতটা ভালো না।দাদি তার ঘরেই আছে।দেখে এসে হাত মুখ ধুয়ে নিয়ে আয় খাবি।তোর বন্ধু কি যেন নাম?

– রৌদ্র।

– ওকেও নিয়ে আয় অনেক যার্নি করে এসেছিস খিদে লেগেছে নিশ্চয়ই?

– হ্যাঁ আসছি।

অভয় তার দাদির ঘরে গেল দাদিকে দেখবে বলে।বাড়ির সকলেও নিজেদের কাজে চলে গেল।সকলে বসার ঘর থেকে সরে যেতেই আভা বসার ঘরে থাকা টেলিফোন থেকে পূর্ণতার মায়ের নম্বরে কল করলো।এই টেলিফোনটা বহুকাল আগের।এটা দিয়ে সচারচার কেউ কথা বলেনা।আভার ফোন নেই তাই সে মাঝে মাঝেই এখান থেকে পূর্ণতাকে কল করে। পূর্ণতাকে আসার সময় তার বাড়িতে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে।আভা যদিও জোরাজুরি করেছিল তার সাথে থাকার জন্য কিন্তু পূর্ণতা রাজি হয়নি।পূর্ণতা কল রিভিস করল।বলল,
– কি হয়েছে এতো রাতে ফোন দিয়েছিস কেন?

আভা পূর্ণতার কথার জবাব না দিয়ে নিজেই বিচলিত স্বরে বলল,
– পূর্ণ তুই এমন কোনো মানুষকে দেখেছিস যে বিয়ে না করে একসাথে থেকেছে?

রাত দুপুরে আভার এমন উদ্ভট প্রশ্নে ক্ষেপে গেল পূর্ণতা।তেজি স্বরে বলল,
– পাগল হয়ে গিয়েছিস নাকি? রাত দুপুরে এসব কি বলছিস?আর এমন মানুষ কিভাবে দেখবো?

– জানিস আমি দেখেছি।সে এখন আমাদের বাড়িতেই আছে।মানুষ কত নির্লজ্জ হয় বল?

পূর্ণতার ভ্রু কুঁচকে এলো।তীক্ষ্ণ স্বরে বলল,
– কার কথা বলছিস তুই?

– নাম বলা যাবে না।

পূর্ণতা ভাবতে থাকল কার কথা বলতে চায়ছে আভা।একবার ভাবলো অভয় নয়তো?হতেও পারে বিদেশে গিয়ে হয়তো তার কালচার বদলে গিয়েছে।ভাবতেই ফোঁস করে একটি নিঃশ্বাস ছাড়ল পূর্ণতা।বলল,
– বলবিনা যখন তখন ফোন করেছিস কেন?ফোন রাখ।

আভাকে কথা বলতে না দিয়ে পূর্ণতা নিজেই ফোন কেঁটে দিলো।আভা ফোনের দিকে তাকিয়ে কিছুক্ষণ বিড়বিড় করে নিজের ঘরে চলে গেল।

চলবে..

#প্রিয়_বালিকা |৪|
#সাদিয়া_আক্তার_জ্যোতি

সকালে খাবার টেবিলে দেখা গেল বাড়ির অধিকাংশ লোককে।শুধু ছোট বাচ্চাগুলোকে চোখে পড়ল না।বিশাল বড় কাঠের টেবিলের এক কোণায় কাঁটা চামচের সাহায্যে ভাত খাচ্ছে রৌদ্র।বাম পাশে অভয় আর ডান পাশে সেহরিন।কিছুক্ষণ পরপরই এটাওটা তুলে রৌদ্রের পাতে দিয়ে চলেছে।বিপরীতে মিলছে রৌদ্রের কড়া দৃষ্টি।প্রচন্ড বিরক্ত সে।কোথা থেকে একটা হাঁটুর বয়সী মেয়ে এসে তার খাওয়ার সময় বিরক্ত করছে।
সকাল সাড়ে আটটা।খাওয়ার ঘরে হাজির হলো আভা।পরণে নীল সাদা স্কুল ড্রেস।ছুটে খাবার ঘরে প্রবেশ করেই রৌদ্রকে নজরে আসতেই নাক কুঁচকে ফেলল সে।বিড়বিড়িয়ে বলল,”নাউজুবিল্লাহ!অস্তাগফিরুল্লাহ!”

ছুটে খাবার ঘরে প্রবেশ করার দরুন সকলের মনযোগ আভার উপর পড়ল।অভয় বলল,
– কি ব্যাপার এভাবে সকাল সকাল দৌড়াদৌড়ি করছিস কেন?

সেহরিন সালাদের পাত্র থেকে একপিস টমেটো উঠিয়ে রৌদ্রের পাতে দিলো।মাথা গরম হয়ে গেল রৌদ্রের।সেহরিনের দিকে অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে খাবার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো।সকলে খাবার খাওয়ার জন্য বসার পর একটি চেয়ারই ফাঁকা ছিল।তাও সেটা আভার জন্য।আভা অভয়ের প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে খালি চেয়ারের দিকে ছুটে গেল।এই মুহুর্তে একটি শব্দ উচ্চারণ করারা মতোও সময় নেই।এমনিতেই স্কুলে তার বদনামের শেষ নেই।তার উপর যদি আবার দেরি করে যায় তাহলে তাকে ফেল্টুশের সাথে আরো একটি উপাধি প্রদান করা হবে।সেটা হলো “লেট লতিফা” আপাতত সে আর কোনো উপাধি গ্রহণ করতে ইচ্ছুক না।
রৌদ্রকে হঠাৎ খাবার ছেড়ে উঠে দাঁড়াতে দেখে আবারও মনোযোগ ক্ষুন্ন হলো সবার।সবার নজর রৌদ্রের দিকে পড়ল।রৌদ্র কোনো শব্দ ব্যয় ছাড়ায় নিজের চেয়ার ছেড়ে আভার চেয়ারের দিকে অগ্রসর হলো।তবে আভা আগেভাগেই তার চেয়ারটি দখল করে নিলো।রৌদ্র আভার পাশে এসে দাঁড়াল। অভয়ের দিকে তাকিয়ে বলল,
– হু ইজ শী?

অভয় স্বাভাবিক স্বরে জবাব করল,
– আমার ছোট বোন আভা।

রৌদ্র পূর্ণ দৃষ্টি ফেলল আভার দিকে।চুলগুলো অভয়ের সাথে কিছুটা মেলে।গায়ের রং আভার একটু উজ্জ্বল।ঠোঁট দুটো অভয়ের মতোই পাতলা।চোখজোড়াও অভয়ের মতো টানটান। আড় চোখে যতটুকু বিশ্লেষণ করা সম্ভব করে ফেলল রৌদ্র।কিছুসময় বাদে গলা খাঁকারি দিয়ে বলল,
– শোনো অভয়ের বোন তুমি ঐ চেয়ারটাই গিয়ে বসো।আমার ওখানে প্রবলেম হচ্ছে।

মাথা তুলল আভা।রৌদ্রকে একপলক দেখে তার ইশারাকৃত চেয়ারে দিকে দেখল।পাশে সেহরিনকে ভোঁতা মুখে বসে থাকতে দেখে ভ্রু কুঁচকালো আভা।সেহরিন তার চিকন কন্ঠস্বর যথাসম্ভব নরম করে বলল,
-কেন রৌদ্র এখানে বসলে কি সমস্যা?

রৌদ্র মুখ দিয়ে “চ্” শব্দ করে কর্কশ স্বরে বলল,
– এলার্জি শুরু হয়েছে আমার বুঝছো?এলার্জি চিনো না এলার্জি?ওখানে বসে আমার শরীর জ্বলছে।না শান্তিতে খেতে পারছি!না বসতে পারছি!

রৌদ্রের কথায় ঠোঁট চেপে হাসল অভয়।সে জানে রৌদ্র আসলে কি বোঝাতে চেয়েছে।সেহরিন দুঃখী স্বরে বলল,
– কি বলছ গো?তোমার এলার্জি আছে?আচ্ছা খাবার খেয়ে নাও আমি তোমাকে ওষুধ দিয়ে আসবো।

ঘাড় ডললো রৌদ্র।রাগটা মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে। তবু মুখে কিছু প্রকাশ করল না।নিজের শিকারী দৃষ্টিতে সেহরিনকে একপলক দেখে মনে মনে আওড়ালো,”যেই কীটের ভয়ে এত মাইল দূরে পালালাম সেই কীট এখানেও আমার পিছু নিয়েছে।ইচ্ছা করছে থাপ্পড় দিয়ে মুখের মানচিত্রটাই পাল্টিয়ে দিই। ডিজগাস্টিং!”

আরাভ সাহেব মেয়ের উদ্দেশ্যে বললেন,
– যাও আম্মু।উনি আমাদের অতিথি হয় না?ওনাকে বসতে দাও।

আভা উঠলো না।বরং মুখ ঝামটি দিয়ে বুকে হাত গুঁজে ঠাঁই বসে রইলো।সিদ্ধান্ত নিলো সে এখান থেকে এক পাও নড়বে না।আজ তাকে এখান থেকে কেউ তুলতে পারবে না।সে একদম সুপার গ্লুর মতো চেয়ারের সাথে সেঁটে থাকবে।সেও দেখবে কে তাকে এখান থেকে সরায়।কথাগুলো মনে মনে বিড়বিড় করে আরো একবার মুখ ঝামটি দিলো সে।রৌদ্র এখন তার পাশে দাঁড়িয়ে তাকে তীক্ষ্ণ নজরে দেখে চলেছে।আভার নড়চড় না দেখে অভয় আভাকে ধমক দিয়ে বলল,
– কিরে কথা কানে যায় না?তোকে এখানে এসে বসতে বললো না বাবা?

কথাটা শুনেও না শোনার ভান করলো আভা।সে এখানেই বসে থাকবে আজীবন ভর সে দেখতে চায় কার সাধ্য তাকে এখান থেকে উঠায়।অভয় ভ্রু কুঁচকে উঠে দাঁড়ালো। এগিয়ে এসে রৌদ্রের কাঁধে চাপড় দিয়ে কিছু একটা ইশারা করে রৌদ্রের কানে কানে ফিসফিস করে বলল,
– এ সোজা কথার মেয়ে না।চল চেয়ার ওঠা।

বাঁকা হাসল রৌদ্র। যেন সে এই মুহুর্তটার জন্যেই এখানে এতোক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিল।অভয় আর রৌদ্র দু’জন চেয়ারের দুপাশ ধরে আভাকে আকাশে তুলে ফেলল।হঠাৎই হাওয়ায় ভেসে ভয়ে চিৎকার দিয়ে উঠলো আভা,
– আ…আম্মু!মা!এসব কি হচ্ছে।ভাইয়া নামাও আমাকে। আমি যাবো না।আমি এই চেয়ারেই বসবো।যার যা ইচ্ছে সে তাই করে নিক আমি এখান থেকে এক চুলও নড়বো না।আমাকে নামাও।

অভয় রৌদ্রের কাণ্ডে উপস্থিত সকলে হাসিতে ফেটে পড়লো।অভয় এবং রৌদ্র খুব সহজেই আভাকে চেয়ারসহ তুলে টেবিলের অন্যপ্রান্তে বসিয়ে দিলো।আভাকে বসিয়ে দুজনই হাত ঝাড়া দিয়ে বড় এক শ্বাস ফেলল।আভা রাগে ফোঁস ফোঁস করছে।অভয় বাঁকা হেসে বলল,
– ছেলেদের বুদ্ধির সাথে মোটেও পাঙ্গা নিতে আসবি না।একদম কচু’কাটা করে ছেড়ে দিবো।বুঝেছিস?

রাগে ফুঁসছে আভা।অভয়ের কথায় মুখ ঝামটি দিয়ে নিজের খাবারের প্লেট থেকে একমুঠ খাবার তুলে মুখে ঠুসতে থাকলো।রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে একগাদা খাবার পরপর মুখে পুরে মুখ ফুলিয়ে ধুপ ধাপ শব্দ করে বেরিয়ে এলো খাবার ঘর থেকে।সবাই তার শত্রু।এই বাড়ির সবাই বিভীষণ।বাহিরাগত একটি সাদা চামড়ার ছেলের জন্য তাকে সবার সামনে এভাবে অপদস্ত করলো তার ভাই?আভা মনে মনে বলল,”কোথা থেকে একটা সাদা মুলা এসে বলে কিনা আমাকে ক’চুকাটা করবে?দাড়া স্কুল থেকে এসে নেয় তারপর মজা দেখাবো।”
বলেই ব্যাগ কাঁধে বাড়ি থেকে বেরিয়ে এলো আভা। বাড়ির কারো সাথে কোনো কথা বলেনি সে।বলবেও না।সবার সাথে আড়ি করেছে সে।বাড়ির সামনের পাকা রাস্তায় ভ্যান গাড়ি জন্য দাঁড়িয়ে রইলো আভা।কিছুক্ষণ অতিবাহিত হওয়ার পরও কোনো যানবাহন চোখে না পড়ায় ধীর পায়ে হেঁটে সামনে এগিয়ে যেতে রইলো।ক্ষণে ক্ষণে পিছন ফিরে দেখল কোনো ভ্যান গাড়ি আসে কিনা।গ্রাম অঞ্চলে ভ্যান বলতে বোঝা হয় কাঠের তৈরি তিন চাকার যানবাহন।যেখানে চারজন অনায়াসেই যাতায়াত করতে পারবে।বেশ কিছুদূর হাঁটা পরই চোখে একটি ভ্যান গাড়ি।তবে সামনের দুই আসনই পাড়ার সনামধন্য বখাটে ছেলের আয়ত্তে।তা দেখে আভা নাক শিটকাল।আভাকে দেখে ভ্যান গাড়িটিও থেমে গেল।দুটি রোগা পাতলা চোয়াল ভাঙা ছেলে বসা তাতে।পরণে ময়লা শার্ট আর চেক দেওয়া লুঙ্গি।আভাকে দেখে বিশ্রী দাঁতে হাসি দিলো।দু’জনের মধ্যে নিজেকে সর্দার দাবি করা ছেলেটি তার চেলাকে কনুই দিয়ে আঘাত করে নিচু স্বরে বলল,
– তুই পিছনে গিয়ে বস।

নিচু স্বরে বললেও কথাটি কানে গেল আভার।সে একটু সরে গিয়ে ভ্যানওয়ালা বলল,
– আপনি যান মামা।

ভ্যানওয়ালা গেল না।বরং দাঁড়িয়ে থেকে আভাকে ভ্যাটে ওঠার জন্য চাপ প্রয়োগ করল,
– ক্যান?উঠো ভ্যানে।সামনের সিট তো ফাঁকা কইরে দিলো।

ভ্যানওয়ালার সাথে সায় দিয়ে সামনে বসা ছেলেটিও বলল,
– তাই তো তোমার কষ্ট হবে বলে সামনের সিট ফাঁকা করে দিলাম।বইসে পড়ো।

আভা বাঁকা চোখে তাকিয়ে বলল,
– না আমি যাবো না।

এভাবে জোরাজুরির এক পর্যায়ে ছেলেটি আভার হাত ধরে ফেলল।হাত ধরে টেনে বসাতে চায়লো ভ্যানে।আভা ছেলেটি হাতে খাঁমচি দিতে দিতে গলার স্বর উঁচিয়ে বলল,
– এই সজিব আমার হাত ছাড় বলছি তো আমি যাবো না।

সজিব দাঁত খিঁচিয়ে বিশ্রী এক হাসি হেসে বলল,
– ক্যান গো সোনা পাখি ক্যান যাবা না তুমি।

আভা তেজি স্বরে বলল,
– সোনা পাখি হবে তোর মা হাত ছাড় আমার।

তেঁ তেঁ উঠল সজিব ভ্যান থেকে নেমে আভার হাত মুচড়ে দিয়ে দাঁত কিড়মিড় দিয়ে বলল,
– এই মারে একটা বাজে কথা কইবি তো এইহানেই তোর লাশ ফেলে দিবো।চল উঠ ভ্যানে।

হাতে ব্যাথায় চোখ ভরে উঠলো আভার।মোচড়ামুচড়ি করতে থাকল ছাড়া পাওয়ার জন্য।

– এই কীট আমার পিছনে এভাবে লেগে থাকলে কিন্তু আমার পক্ষে তোর বাড়ি থাকা সম্ভব হবে না বুঝেছিস?

কথা বলতে বলতে মাথায় নিজে কালো ক্যাপটি গলিয়ে নিলো রৌদ্র।বাহিরে ভীষণ রোদ।চোখ মেলে তাকানোর জো নেই।রৌদ্রের কথায় স্মিত হাসে অভয়।মশকরা করেই বলল,
– আরে বাচ্চা মেয়ে জীবনের প্রথম বিদেশি দেখে নিজেকে ধরে রাখতে পারছে না।তুই এতো হাইপার হচ্ছিস কেন?

রৌদ্র নিজের শিকারি দৃষ্টি ফেলল অভয়ের উপর।রক্তিম চোখে তাকিয়ে বলল,
– হাইপার হব না?আমার খাওয়ার মধ্যে এন্টাফেয়ার করে ঐ মেয়ের এতো সাহস।ইচ্ছা করছিল মেরে হাড়গোড় রোস্ট করে ফেলি।

শব্দ করে হেসে অভয়।পকেটে হাত দিয়ে ফোন না পেয়ে বলল,
– রৌদ্র তুই হাঁটতে থাক আমি আসছি।ফোনটা ফেলে এসেছি।তুই হাঁটতে থাক। কিন্তু বেশি দূর যাস না আবার।

মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিলো রৌদ্র।কিছুদূর যেতেই চোখে পড়ল আভা এবং তার পাশে রোগা পাতলা একটি ছেলে যে কিনা এই মুহুর্তে আবার হাত ধরে আছে।ভ্রু কুঞ্চিত হলো রৌদ্রের।বিড়বিড় করে বলল,”ওটা অভয়ের বোন না?ও তো স্কুলে বেরিয়ে ছিল।তাহলে এখানে রাস্তার মধ্যে ছেলেদের হাত ধরা ধরি করছে কেন?”
এগিয়ে এলো রৌদ্র।আভাকে উদ্দেশ্য করে বলল,
– এটা কি তোমার প্রেমিক?

এমন একটা পরিস্থিতিতে কারো ভারি কন্ঠে এমন অনাকাঙ্ক্ষিত বাক্যে ভীমড়ি খেল আভা।দুই ঠোঁটের মাঝে দুরত্ব সৃষ্টি হলো।রৌদ্র নিজের সেই অন্যতম বৈশিষ্ট্যের চাহনিতে ছেলেটিকে পা থেকে মাথা অবধি একঝলক পরখ করল।নাক মুখ কুঁচকে আভার দিকে তাকিয়ে বলল,
– ইউউ..!তোমার সাথে একদমই মানায়নি।এর থেকে আরো ভালো কিছু ট্রাই করতে পারতে।এনিওয়ে প্রথম প্রেমে সব মানুষই ভুল করে।এটা নিশ্চয়ই তোমার ফার্স্ট ডেট।এম আই রাইট?

রেগে গেল আভা।নিজের হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করতে করতে কটমট চোখে রৌদ্রের দিকে তাকিয়ে বলল,
– কি বলছেন এসব আজেবাজে কথা ও আমার প্রেমিক না।

রৌদ্র অবাক হয়ে বলল,
– ও তোমার প্রেমিক না?তাহলে তোমার হাত ধরে আছে কেন?

এতোক্ষণে মুখ খুলল সজিব।রৌদ্রের উদ্দেশ্যে বলল,
– ঐ ব্যা’টা তুই কে রে?চল ফুট এখান থেকে।এটা আমার এলাকা।আমার এলাকায় আমি যার হাত ধরি তাতে তোর কি?

সজিবের কথা বলার ধরণ মোটেও পছন্দ হলো না রৌদ্রের।মস্তিষ্কে দাউ দাউ করে আগুন ধরে গেল।এক ঝটকায় আভার হাত সজিবের হাত থেকে ছাড়িয়ে এক হাতে সজিবের হাত মুচড়ে ধরল।কালবিলম্ব না করে অন্য হাতে সজিবের গলা চেপে ধরল।জিহ্বা বেরিয়ে এলো সজিবের।চোখ পাকিয়ে গোঙানাতে থাকল।ভ্যানওয়ালা ভয়ে সেখানে আর দাঁড়াল না।আভা চোখ বড় বড় করে মুখে হাত দিয়ে জমাট বেঁধে পাথর হয়ে গেল।মনে মনে আওরালো,” হে আল্লাহ্! এতো দেখি গুন্ডা। সবার সামনে তো কত ইনোসেন্ট সেজে থাকে।অথচ সোজা গলা চেপে ধরল?”

রৌদ্র সজিবের জিহ্বা ধরে টান দিলো।দাঁতে দাঁত পিষে হিসহিসিয়ে বলল,
– তুই এলাকার মালিক হলে তোর বাপ আমি।তোর এলাকায় তোকে মেরে গুম করে দিবো কেউ তোর এক ফোঁটা রক্তও খুঁজে পাবে না।

বলে আবারও জিহ্বা ধরে আরেক টান দিলো রৌদ্র। সঙ্গে সঙ্গে ব্যাথায় আর্তনাদ করে উঠল হাড় বিশিষ্ট সজিবের শরীর।আভার চোখ কোটর থেকে বেরিয়ে এলো।ভয়ে থর থর করে কাঁপতে কাঁপতে কালিমা পড়ল সে।রৌদ্র আগের মতোই হিসহিসিয়ে বলল,
– এই জিহ্বা দিয়ে কোনোদিন আর কোনো মেয়েকে কটু কথা বলবি বল?

সজিব মাথা নাড়িয়ে না বোঝাল।রৌদ্র জিহ্বা ছেড়ে গলার চাপ দৃঢ় করে বলল,
– আর যদি বলিস তো নেক্সট নাই এই জিহ্বায় খুঁজে পাবি না।কথা কানে ঢুকেছে?

শেষ বাক্যটি হুংকার ছেড়ে বললে সজিবের গলা ছেড়ে দিলো রৌদ্র। সজিবের হ্যাংলা চ্যালাটা কোনো দিকবিদিক খুঁজে না পেয়ে তেড়েফুঁড়ে এলো আভার দিকে।এক কদম বাড়াতেই ঘাড় ঘুরিয়ে রৌদ্র তীক্ষ্ণ দৃষ্টি ফেলল তার দিকে।শান্ত কন্ঠে বলল,
– মরার পাখনা গজিয়েছে?কসম একটু টাচ করবি তোর হাত জোড়া লাগাতে পারবিনা।

সজিব নিজের চ্যালার দিকে তাকিয়ে দাঁত খিঁচিয়ে বলল,
– এ তোর মাথায় কি গোবর।চল ভাগ এখান থেকে।

কথাটি বলতে দেরি সজিব চ্যালা নিয়ে দৌড় লাগাতে দেরি নেই।রৌদ্র জোরে একটি শ্বাস টেনে মুখের ভঙ্গি স্বাভাবিক করে ফেলল।শার্টের কলার হাত ঠিক করে মাথার ক্যাপ ঠিক করল।আভাকে নিজের দিকে তাকিয়ে এমন তব্দা খেয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ভ্রু সংকুচিত করল।আভার সামনে তুড়ি বাজিয়ে তার স্বাভাবিক ভারি কন্ঠে বলল,
– কি হয়েছে এখানে চোখ ফেড়ে তাকিয়ে আছ কেন?যাও স্কুলে দেরি হচ্ছে না?

মতি ফিরলো আভার।শুঁকনো ঢোক গিলে ছুট লাগালো সে।এখানে আর এক মুহুর্তও দাঁড়ানো যাবে না।না জানি কখন তার গলাটাও এই গুন্ডাটার দখলে চলে যায়।বয়সী বা কত আভার?জীবনে এখন অনেক কিছু করা বাকি।এখনই নিজের প্রাণ হারাতে চায়না সে।আভাকে দৌড়াতে দেখে বোকা বনে গেল রৌদ্র।

চলবে…

#প্রিয়_বালিকা |৫|
#সাদিয়া_আক্তার_জ্যোতি

বাড়ির চারপাশটা ঘুরে ঘুরে দেখছে রৌদ্র।একা একাই দেখছে।অভয় বাড়িতে ঢোকার পর আর ফিরে আসেনি।রৌদ্রও অভয়কে বিরক্ত না করতে নিজে নিজেই চারপাশ ঘুরে ঘুরে দেখছে।বিশাল জমি নিয়ে মুন্সি বাড়ি।জমির সামনের দিকটায় তাদের দুইতলা বড় দালান।আর পিছনের দিকটা ঘন বনজঙ্গল।যার জন্যই এলাকায় নাম হয়েছে “মুন্সিদের বাগান বাড়ি”।রৌদ্র ছোট থেকে এডভেঞ্চার খুব ভালোবাসে তাই বন জঙ্গলে একা ঘুরে তার ভালোই লাগছে।বাগানের ভিতরে ঢুকতেই প্রথমে চোখে পড়ল বাঁশঝাড়।তারপর নারকেল গাছ আর সুপারি গাছের সারি।কিছুদূর পাড় হতেই একটি বিশাল বড় জোড়া বটগাছ। দেখে বোঝা গেল তার বয়স অনেক বছর হয়েছে।বটগাছের সামনা সামনিই বিশাল জায়গা জুড়ে পুকুর।পুকুরে নারকেল গাছ দিয়ে ঘাট তৈরি করা।পুকুরটি চোখে পড়তেই কপাল কুঁচকে এলো রৌদ্রের।নিজে নিজেই বিড়বিড় করে বলল,”বাগানের শেষ সীমানায় এতো বড় একটা পুকুর থাকতে পারে তা তো কল্পনাও করিনি।” পুকুরটা এতোটাই বড় যে প্রথম কেউ দেখে দিঘি ভেবে বিব্রত হবে।পুকুরে আশেপাশে কোনো গাছপালা না থাকায় এবং সূর্যের আলো পুকুরের পানিতে পড়ার পর্যাপ্ত সুবিধা থাকায় পুকুরের পানি একদম স্বচ্ছ।পুকুর ঘাটে এগিয়ে গেল রৌদ্র।ঘাট দিয়ে পা টিপে টিপে নেমে পুকুরের পানিতে হাত ভেজাল।সেই হাত যে হাত দিয়ে সে সজিবের জিহ্বা টেনে ধরেছিল।ঘাটে দাঁড়িয়েই তার তীক্ষ্ণ চোখ জোড়া দিয়ে পূর্ণ দৃষ্টি ফেলল বটগাছটির দিকে।এখানে যে দুইটি বটগাছ একসাথে আছে তা বোঝার উপায় নেই।তবে কিছুক্ষণ মনোযোগ সহকারে খেয়াল করলে বোঝা যাবে।বট গাছের দিকে এক পলক তাকিয়ে পুকুরের অপর প্রান্তে দৃষ্টি ফেলল রৌদ্র।অপর প্রান্তে গাছ ছাড়া কারো অস্তিত্ব দেখা গেল না।রৌদ্র আবারও বট গাছটির দিকে তাকিয়ে ঠোঁট বাঁকাল।সেদিন সূর্যের কথা অনুযায়ী সে ধারণা করেছিল বাগানটি অনেক বেশি গভীর হবে। কিন্তু সে পর্যবেক্ষণ করে বুঝতে পারল বাগানটি অতটাও ঘন নয়।বাড়ির একপাশ দিয়ে বাগানে ঢুকে ঘুরতে ঘুরতে অন্যপাশ দিয়ে বের হলো রৌদ্র।আভার জানালার পাশ দিয়ে আসতেই হাজারো কাগজ চোখে পড়ল তার।কিছু কাগজ নষ্ট হয়ে গিয়েছে আর কিছু কাগজ এখন চকচক করছে।নতুন কাগজগুলোর মধ্যে থেকেই একটি কাগজ তুলল রৌদ্র।হাতে নিয়ে বুঝতে পারল এটা কোনো কাগজ নয় বরং খাতা।সে বাংলা লেখা দেখে সেভাবে পড়তে পারে না।তবে ছোট থাকতে তার বাবা কিছুটা শিখিয়ে ছিল। সেই অভিজ্ঞতা থেকেই খাতাটি খোলার সাহস করল রৌদ্র।খাতার একদম উপরিভাগে স্কুলের নাম,ছাত্রীর নাম,রোল,শ্রেণি,শাখা,তারিখ লেখা।চোখ ছোট ছোট করে বানান করে করে সেগুলো পড়ল রৌদ্র,
“আ ভা বি ন তে আ রা ভ।আভা বিনতে আরাভ! রো ল ৮।রোল এইট! শ্রে ণি দ শ ম।ইট মিনস ক্লাস টেন?ইজেন্ট ইট?গট নোস!উফ্ বাংলা পড়া খুবই কঠিন।লিভ ইট। আভা?মানে অভয়ের ছোট বোন?ওর এক্সাম পেপার এখানে কি করছে?”

বিড়বিড় করতে করতে মাথার উপরে থাকা জানালার দিকে তাকাল।কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে আবারও খাতার দিকে তাকালো।নম্বর দেখে চোখ বেরিয়ে এলো তার।নাক সিটিয়ে বলল,”অনলি ত্রি আউট ওফ হান্ড্রেড?ও মাই গশ!আনবিলিভাবল!”
রৌদ্র খাতাটি হাতে নিয়েই সেখান থেকে বেরিয়ে এলো।

সবে স্কুল থেকে বাড়িতে ফিরেছে আভা।মন মেজাজ তার বেজায় খারাপ।স্কুলে পূর্ণতার সাথে একরকম কথা কাটাকাটি করে এসেছে সে।তাদের ঝগড়ার উৎস পূর্ণতার একটি বাক্য।তা হলো,”তুই বদলে যাচ্ছিস আভা।আগের মতো আমার সাথে আর তেমন কথা বলতে চাস না।অভয় ভাইয়া আসার আগেও তুই আমার সাথে কত কথা বলতিস।আমি তোকে একদিন বলেছিলাম আমি কখনো এয়ারপোর্ট দেখি তাই তুই আমাকে তোর সাথে করে এয়ারপোর্ট দেখাতে নিয়ে গেলি।তুই কত ভালো ছিলি দুই দিনে তুই এমন হয়ে গেলি কিভাবে?”
সকালের বিষয়টা নিয়ে এমনেই আভার মাথা গরম ছিল। তার উপর পূর্ণতার এমন বেহুদা কথায় রাগটা মাথায় উঠে গেল।আভা দাঁতে দাঁত চেপে বলল,”তোর কি পি’রিয়ড হয়েছে?”
আচমকা এমন প্রশ্নে থমকে গে পূর্ণতা বলল,”মানেহ্?”
আভা চেঁচিয়ে বলল,”তাহলে এসব আজগুবি কথা বলে আমার কান খাচ্ছিস কেন?বে’য়াদব!”
আভার এমন চিল্লানিতে পূর্ণতা বোকা বনে গেল।বোকা চাহনিতে কিছুক্ষণ আভার দিকে তাকিয়ে থেকে মুখ ঝামটি দিয়ে অন্যদিকে ফিরে বসল।তারপর তাদের মধ্যে আর কথা হয়নি।আভাও আগ বাড়িয়ে কোনো কথা বলেনি পূর্ণতার সাথে।এখন একটা শব্দ উচ্চারণ মানে দুইজনের মধ্যে বিশাল বড় ঝগড়াঝাটি হবে।যা দেখে ফ্রীতে বিনোদন উপভোগ করবে স্কুলের সকলে।বাঙালি ফ্রীর ভাষা ভালো বোঝে কিনা।

প্রতিদিনের মতো আজও স্কুল থেকে ফিরে খেতে বসল আভা।আভার মুখোমুখি চেয়ারে বসেছে তার ভাই অভয় এবং তাদের মা খাবার তার পাতে তুলে দিচ্ছে।আপাতত তারা তিনজনই খাবারঘরে।অভয় চুপচাপ টেবিলে বসে রৌদ্রের জন্য অপেক্ষা করছে।সে আভাকে বলল,
– পড়াশোনা কেমন চলছে রে তোর?

মুখে খাবার তুলে থমকে যায় আভা।গলা দিয়ে খাবার নিচে নামাতে সক্ষম হয় না।মুখ ফুলিয়ে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে থাকে তার ভাইয়ের দিকে।ভাইয়ের পাশে দাঁড়ানো তার মা প্রেমাও অনেকটা উৎসুক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে।অভয় চোখ ছোট করে বলল,
– কি হলো?পানি খা।

আভা সামনে থাকা কাঁচের গ্লাস থেকে ঢক ঢক করে পানিটা পান করল।বড় একটা ঢোক গিলে নিচু স্বরে বলল,
– এই তো চলছে।

মনে মনে ভাবল “সামনে এসএসসি পরীক্ষা এখন যদি বলি আমি গণিতে ফেল করেছি আমার আর রক্ষে থাকবে না।আর পড়াশোনা? ও তো ওর মতো চলে আমি আমার মতো চলি।কেউ কাউকে পাত্তা দিই না।ওসব ছোট খাটো বিষয় পাত্তা দেওয়ার সময় নেই।আপতত জীবনের একটাই লক্ষ্য জীবনে অনেক বড় হতে হবে।প্রতিভা দিয়ে পৃথিবীতে নিজের নামের মাইল ফলক তৈরি করতে হবে।” কথাগুলো ভাবতেই বুক ফুলে গেল আভার।পরমুহূর্তেই মনে পড়ল,”কিন্তু আমার তো কোনো প্রতিভাই নেই!” ভাবতেই আভার মুখ মলিন হয়ে গেল।অভয় ফোনে কাউকে কল করতে করতে তার মাকে বলল,
– দুপুর গড়িয়ে বিকেল হতে যাচ্ছে রৌদ্রটার কোনো খবরই নেই।কখন থেকে ফোন করছি ফোনটাও তুলছে না।আশেপাশে খুঁজলাম কোথাও পেলাম না।শুধু ছোট্ট একটা মেসেজে বলল সে নাকি আশেপাশেই আছে এখনই আসছে।

প্রেমা আতংকিত স্বরে বলল,
– এখানের কোনোকিছুই তো চিনে না হারিয়ে গেল না তো?

অভয় মাকে আশ্বস্ত করে বলল,
– উফ্ আম্মু ও কি ছোট বাচ্চা নাকি যে হারিয়ে যাবে?তাছাড়া এখন টেকনোলজি অনেক এগিয়ে। হারিয়ে গেলে গুগল ম্যাপ দেখে চলে আসবে।

প্রেমা আফসোসের সুরে বলল,
– ছেলেটা সেই কখন সকালে খেয়ে বেরিয়েছে এখনো এলো না।দুপুরে কি খাবে না নাকি?

আভা ভাই ও মায়ের কথা শুনছে আর দ্রুততার সহিত খাবার পেটে চালান করছে।আপাতত সে এখানে আর থাকবে চায়ছে না।রৌদ্র এখানে হাজির হওয়ার আগে তাকে এখান থেকে বের হতে হবে।তাছাড়া বাড়ির সকলের রৌদ্রকে নিয়ে করা অতিরিক্ত আদিক্ষেতা তার সহ্য হয় না।তাই যতটা সম্ভব রৌদ্র থেকে দূরে দূরে থাকার চেষ্টা করছে সে।

বাড়ি ঢুকে খাবার ঘরের দরজা দিকে অভয়কে সেখা বসে থাকতে দেখে খাবার ঘরে প্রবেশ করল রৌদ্র।অভয় রৌদ্রকে দেখে হাফ ছাড়ল।বলল,
– কোথায় ছিলি তুই?বেরিয়ে তোকে আর পেলাম না।তাই ফিরে এসেছি।তারপর মেসেজ দিয়ে বললি আশেপাশেই আছি।তারপর উধাও! খাওয়া দাওয়া লাগবে না?আমার পেট জ্বলছে খিদের যন্ত্রণায়।

রৌদ্র স্বাভাবিকভাবেই বলল,
– তুই খেয়ে নিতে পারতিস।আমি তো চারপাশটা একটু ঘুরে দেখছিলাম।বাগানের ভিতরে দেখি একটা পুকুর আছে।

– হ্যাঁ দাদা কাটিয়েছিল।

প্রেমা টেবিলে প্লেট দিতে দিতে বলল,
– খেতে আসো আব্বু।

রৌদ্র হাতের খাতাটি উঁচিয়ে বলল,
– অভয় দেখ আমি একটা দারুন জিনিস পেয়েছি।আই থিংক এটা আভার ম্যাথমেটিক্স এক্সাম পেপার।শী গট অনলি থ্রি আউট ওফ হান্ড্রেড।

বলেই বিদ্রুপের হাসি দিলো রৌদ্র।সঙ্গে সঙ্গে বিষম খেল আভা।কাশতে কাশতে চোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়ল।কোটর থেকে চোখ বেরিয়ে চেয়ে রইলো রৌদ্রের দিকে।অভয় তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে এগিয়ে এলো।রৌদ্রের হাত থেকে খাতাটি নিয়ে সেটায় চোখ বুলালো।মডেল টেস্ট পরীক্ষার গণিত খাতা।খাতার বেশির ভাগ পৃষ্ঠা সাদা।যাও এক দুইটা অংক করেছে তাও ভুল।একটি সৃজনশীলের গ নম্বর সঠিক হওয়ায় কপালে তিনটা মার্ক জুটেছে।আভা অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো ভাইয়ের দিকে।অভয়ের চোয়াল শক্ত হয়ে গেল।সে খাতা নিজের মায়ের সামনে খাতাটা এক প্রকার ছুড়ে দিয়ে দাঁত কিড়মিড় করে বলল,
– দেখো তোমার মেয়ের উন্নতি।

প্রেমা খাতা দেখে রাগি দৃষ্টিতে আভার দিকে তাকিয়ে বলল,
– এই খাতা কবে দেখিয়েছে?

আভা মাথা নিচু করে ভয়াতুর স্বরে বলল,
– গত কাল।

– এটা আমাদের দেখাওনি কেন?

অভয় রৌদ্রের দিকে তাকিয়ে বলল,
– কোথায় পেয়েছিস এটা?

রৌদ্রের সোজাসাপটা উত্তর,
– ওর ঘরের পিছে জানালার নিচে।

অভয় ক্ষিপ্র স্বরে বলল,
– দেখেছ এই খাতা ও ফেলে দিয়েছে।কত ছল চাতুরী শিখেছে।বেয়া’দব! সামনে এসএসসি আর এখন সে গণিতে তিন পায়।ওর আর পড়ালেখার দরকার নেই।ওকে ভ্যানওয়ালা দেখে বিয়ে দিয়ে দাও।পড়ালেখা করবে না সারাদিন ঢ্যাং ঢ্যাং করে ঘুরে বেড়াবে।আমি আগেই বলছি এসব আবর্জনা বাড়িতে রেখে কোনো লাভ নেই ওকে ভ্যান-রিকশা ওয়ালা দেখে বিয়ে দিয়ে দাও।

কথাগুলো আভার ছোট হৃদয় ক্ষতবিক্ষত করে দিলো।কষ্টে চোখ ভরে উঠলো তার।ফুঁপিয়ে কাঁদছে সে।নিঃশব্দ কান্নায় ক্ষণে ক্ষণে কেঁপে উঠছে সে।উঠে চলে আসতে পা বাড়ালেই অভয়ের কঠিন কন্ঠে বলা কথা শুনে আবারও বুক ভরে উঠলো তার।
– খাবার ফেলে যেন এখান থেকে এক কদমও না নড়া হয়।

ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে মুখে খাবার পুরছে আভা।কিন্তু গিলতে পারছে না গলায় আঁটকে থাকা একদলা কষ্টের দরুন।সোলানি ত্বরের গাল নোনা জলে ভিজে গিয়েছে।ভেজা মুখ ফুলে আছে একগাদা খাবারে।আভার মুখের দিকে তাকিয়ে থমকে গেল রৌদ্র।হঠাৎই অনুতাপ হলো তার।এভাবে অভয় আর তার মাকে খাতাটা না দেখালেও পারত সে।নিজের শিকারী চোখ দিয়ে এক দৃষ্টিতে আভার দিকে চেয়ে রইল রৌদ্র।গলাটা ধরে এলো তার।সদ্য পনেরো ছোয়া কিশোরীর কান্না যেন তার বুকে এক সূক্ষ্ম চাপা ব্যাথার সৃষ্টি করল।আভা মুখ ভর্তি খাবার নিয়ে খাবার ঘর ত্যাগ করতে অগ্রসর হলো।সামনে দাঁড়িয়ে থাকা রৌদ্রের দিকে ভেজা চোখে একপলক তাকিয়ে কেঁপে উঠলো। রৌদ্র কিছু বলার উদ্দেশ্যে ঠোঁট আলগা করেও কিছু বলতে সক্ষম হলো না।আভার চোখে দেখা গেল রৌদ্রের জন্য এক আকাশ ঘৃণা।ধুপধাপ পা ফেলে বেরিয়ে গেল সে।অভয় রৌদ্রকে বলল,
– আয় খাবি।

রৌদ্রের মনিল স্বর ভেসে এলো,
– থাক খাবো না খিদে নেই।

কথাটি বলেই থমথমে মুখে খাবার ঘর ত্যাগ করলো সে।জীবনের প্রথম সে কোনো কাজের জন্য এতোটা অনুতপ্ত!

চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে