প্রিয় বালিকা পর্ব-৩২+৩৩+৩৪+৩৫

0
72

#প্রিয়_বালিকা |৩২+৩৩|
#সাদিয়া_আক্তার_জ্যোতি

রৌদ্র বিরক্তিতে চোখমুখ কুঁচকে বলে,
– আবার লিনডা কেন?অভয় তো উকিল ঠিক করেছে।

রোদেলার পাশে দাঁড়ানো প্যান্ট-শার্ট পরা সোনালি চুলের মেয়েটি রাগে কটমট করে বলে,
– ও ইয়াহ্ অভেয়!হোয়ার ইজ হি?

অভয় কান থেকে ফোন নামাতে নামাতে থানার ভিতরে প্রবেশ করছিল।তার এমন বিকৃত নাম শুনে ভ্রু কুঁচকে ফেলে সে।এগিয়ে এসে গম্ভীর স্বরে বলে,
– এই তো আমি।এমন উদ্ভট নামে কে ডাকে আমাকে?

লিনডা তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে পিছন ঘুরে তাকাতেই চোখ বড় বড় হয়ে যায় অভয়ের।লিনডাকে এমন সময় এখানে দেখে ঘাবড়ে যায় সে।ভয়ে শুঁকনো ঢোক গিলে মেকি হাসে।বোকা বোকা হাসি দেখে লিনডার মেজাজ আরো বিগড়ে যায়।অভয় বোকা বোকা ভঙ্গিমায় বলে,
– আপু তুমি এখানে?

লিনডা এবার ক্ষিপ্ত দৃষ্টিতে অভয়ের দিকে তাকিয়ে বাংলায় বলে,
– অভেয় তুমি থাকতে আমার ভাইয়ের সাথে এমন দূর্ঘটনা ঘটলো কিভাবে?

রৌদ্র বিদ্রুপের হাসি হেসে নিজে নিজেই বিড়বিড়য়ে বলে,”হাহ্!ও আছে বলেই আমার সাথে সব দূর্ঘটনা ঘটে।সবই তাহার কুদরত।”

এদিকে অভয় লিনডার এমন কড়া প্রশ্নে ঘাবড়ে যায়।আমতা আমতা করে কিছু বলার চেষ্টা করে।লিনডা অভয়কে উপেক্ষা করে ব্যাগ থেকে কিছু কাগজপত্র বের করে অফিসারের দিকে এগিয়ে যান।সেগুলো অফিসারকে দেখানো হয়।আভা চুপচাপ এক কোণায় দাঁড়িয়ে নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে।মাঝে মাঝে গোল গোল চোখে রৌদ্রকে দেখছে।রৌদ্রও কিছুক্ষণ পরপর আভাকে দেখছে।অভয় আভার পাশে এসে দাঁড়ায়।আভা নিচু স্বরে ফিসফিসিয়ে জিজ্ঞেস করে,
– ইনি কে?

অভয়ও আভার মতো ফিসফিস করে উত্তর দেয়,
– রৌদ্রের দূরসম্পর্কের খালাতো বোন।

– উকিল?

– হুম।

আবারো নির্বাক হয়ে যায় দু’জনে।বেশ খানিকটা সময় ধরে আলাপ আলোচনা চলে লিনডা এবং অফিসারের মধ্যে।আলাপ আলোচনা শেষে জানানো হয় রৌদ্রের বেল পাশ হয়েছে।অফিসার লিনডা আর রৌদ্রকে আশ্বস্ত করেন তারা চেষ্টা করবে কোন কোম্পানি কম্পিউটারটি ইম্পোর্ট করেছে এবং কে সর্বপ্রথম এই কম্পিউটারটি কিনেছেন তা জানার।আসল দোষীকে খুঁজে বের করবেন বলে আশ্বাস দেন তারা।
ছেলেকে বের করে দিতেই রোদেলা ছেলেকে নিজের বাহুতে আঁকড়ে ধরে।রৌদ্রও নাকে আলিঙ্গন করে।মায়ের মাথায় আলতো হাত বুলিয়ে দেয়।রোদেলা রৌদ্রকে ছেড়ে শক্ত গলায় বলেন,
– তুই এখনই আমাদের সাথে অস্ট্রেলিয়া ফিরে যাবি।

বুকটা মুহুর্তেই ভারি হয়ে আভা এবং রৌদ্রের।রৌদ্র শূন্য দৃষ্টিতে আভার দিকে তাকায়।আভা দূরে দাঁড়িয়ে মলিন দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে।রৌদ্র একটি ছোট ঢোক গিলে মাকে একনজর দেখে হাতের ইশারায় আভাকে কাছে ডাকে।আভা ভয়,সংকোচ নিয়ে গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে যায় রৌদ্রের কাছে।রৌদ্র মায়ের দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হেসে বলে,
– মম, মিট মাই ওয়াইফ আভা বিনতে আরাভ।

রোদেলা সূক্ষ্ম দৃষ্টিতে আভাকে পা থেকে মাথা অবধি পর্যবেক্ষণ করে। গম্ভীর ভঙ্গিমায় মুখ ঘুরিয়ে থানার দরজা দিয়ে বাহিরে তাকায়।গলাটা ধরে আসে আভার।চোখে টলমল করে নোনাজল।তবু ভাঙা গলায় বলে,
– আসসালামু আলাইকুম মা।

মায়ের এমন আচারণে দীর্ঘশ্বাস ফেলে রৌদ্র।গলা ঝেড়ে নিচু স্বরে বলে,
– লিসেন মম,ওর পাসপোর্ট ভিসা করা হয়নি তো এখনো তাই আমরা এই মুহুর্তে অস্ট্রেলিয়া ফিরতে পারছিনা।

রোদেলা ক্ষিপ্ত দৃষ্টিতে রৌদ্রের দিকে তাকিয়ে।রৌদ্র অপরাধী ভঙ্গিতে মাথা নত করে।চট করে মাথা কিছু আসতেই আবারো মাথা তুলে মাকে বলে,
– মম এখানে আমি একটা ফ্লাট নিয়েছি সেখানে কিছুদিন থেকে যাও তুমি আর লিনডা।

রোদেলা গম্ভীর স্বরে বলে,
– না আমার কাজ আছে আমরা আবারো ফ্লাইট ধরবো,লিনডা চল।

কথাটি শেষ করে থানা থেকে বের হয়ে গেলেন রোদেলা।পিছু পিছু সকলে বের হলো।রৌদ্র জোর পায়ে মায়ের সামনে দাঁড়িয়ে আহত স্বরে বলে,
– মম আ’ম সরি। সেদিন ফোনে তোমার সাথে অমন ব্যবহার করাটা আমার উচিত হয়নি।আ’ম সো সরি।প্লিজ ফর গিভ মি।

রোদেলার স্বর কিছুটা নরম হলো,
– ইট’স ওকে।

রৌদ্র আগের ভঙ্গিতে বলে,
– মম কিছু দিন থেকে যাও না আমাদের সাথে প্লিজ।

আভাও রৌদ্রের সাথে সায় দিয়ে রোদেলাকে বলে,
– জ্বী মা কিছুদিন থেকে যান।

লিনডা এতক্ষণ আভাকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পরখ করছিল।হঠাৎ তার মনে হলো সে কিছুদিন এখানে থাকতে চায়।তাই সে দৌড়ে গেল খালার কাছে।খালার একদম গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে কানে ফিসফিস করে বলে,
– আন্টি কিছুদিন থেকে যাই না।দেখি এই মেয়ের মধ্যে রৌদ্র এমন কি দেখেছে যে এই মেয়েকে বিয়ে করে এই দেশে সেটেল্ড হয়েছে।আমরাও তো দেখি এই মেয়ের মধ্যে এমন কি আছে।প্লিজ তুমি আর না করো না।

রোদেলা লিনডার যুক্তিসঙ্গত কথায় কিছুক্ষণ ভাবতে বসে আসলেই কি তার এখানে থাকা উচিত কি না।ভাবাভাবি শেষে গম্ভীর ভঙ্গিতে মাথা নাড়িয়ে থাকার জন্য সম্মতি জানায়।সঙ্গে সঙ্গে পুলকিত মনে রৌদ্র আভা দু’জনে দুজনের দিকে চায়।লিনডা মুখ বাঁকিয়ে আভার দিকে এগিয়ে আসে।আভার থুঁতনি ধরে আভার মুখটা উঁচিয়ে এদিকে ওদিকে দেখে।রাস্তার উপর লিনডার আচরণ আভাকে বিব্রত করে।লিনডা এবার আভার কোঁকড়ানো লম্বা চুলগুলো ধরে টেনে টেনে দেখে।রৌদ্রের ভ্রু কুঁচকে আসে।রাগও হয়।আভাকে ছুঁয়ে ছুঁয়ে গভীর পরখ শেষে লিনডা মুখ বাঁকিয়ে বলে,
– কার্ল হেয়ার?নাইস।ডার্ক স্কিন, ইট’স হরারেবল!জিরো ফিগার,হা?জিম করো নাকি?উম… নট ব্যাড এট অল।

রাস্তার উপর আভার এমন বর্ণনায় রাগ হলো রৌদ্রের।আভার চোখ ভরে এলো কান্নায়।রৌদ্র কঠিন স্বরে বলে,
– আহ্ লিনডা কি হচ্ছে কি এসব রাস্তার উপর?আমার বউয়ের দর্পন হতে বলেছি তোমাকে?ওর দর্পন হওয়ার জন্য আমি আছি।ওর একমাত্র জীবন্ত দর্পন আমি হবো।

রৌদ্রের এমন প্রেমিক পুরুষের মতো উক্তি পছন্দ হয় না লিনডার।রাগে ক্ষোভে মুখ বাঁকিয়ে রোদেলার হাত ধরে এগিয়ে যায় সামনে।অভয় অফিসারের সাথে এতক্ষণ কিছু কথা বলছিল।কথা শেষ করে বেরিয়ে আসে সে।অপরাধী ভঙ্গিতে ক্ষমা চায় রৌদ্রের কাছে,
– রৌদ্র আমাকে ক্ষমা কর।তখন হুট করে মাথা এতোকিছু আসেনি আমার।আমি যদি বুঝতে পারতাম এমন কিছু হওয়ার সম্ভাবনা আছে তাহলে আমি কখনোই পিসিটি নিতাম না।মাফ করে দে ভাই।

রৌদ্রের মায়া হলো অভয়ের এমন করুণ স্বরে। রৌদ্র কোমল হেসে অভয়ের চুল এলোমেলো করে দেয়।শক্ত আলিঙ্গন করে বলে,
– আরে আমাকে কি তুই বোনের জামাই ভাবতে শুরু করলি নাকি রে অভয়?ওহ্ সরি অভেয়!

রেগে যায় অভয়।রাগি স্বরে বলে,
– রৌদ্র একদম মজা করবি না।আচ্ছা তোরা বাড়ি যা আমি সন্ধ্যার দিকে একবার যাবো।এখন একটু কাজ আছে।

রৌদ্র হেসে অভয়ের পিঠ চাপড়ে বলে,
– অপেক্ষা করবো কিন্তু।

অভয় উপর নিচ মাথা বোনের মাথা হাত বুলিয়ে দেয়।বোনের মাথায় হাত রেখেই রৌদ্রের উদ্দেশ্যে করুণ স্বরে বলে,
– অনেক কাঁদছে মেয়েটা তুই আবার বকাবকি করিস না।

আভা লাজুক ভঙ্গিমায় মাথা নত করে ফেলে।রৌদ্র আড়চোখে আভাকে দেখে অস্পষ্ট হাসে।যে হাসওর চিহ্ন চোখে শুধু চোখে ফুটে ওঠে।ঠোঁটে সে হাসির ছিটেফোঁটাও নেই।অভয় চলে গেল নিজের অফিসের উদ্দেশ্যে।রৌদ্র আভার ডানহাতের কব্জি শক্ত করে নিজের হাতে আবদ্ধ করে ফেলে।দূর্বিষহ এক মুহুর্ত শেষে স্বস্তির শ্বাস ফেলে পা ফেলে বাড়ির উদ্দেশ্যে।রোদেলা এবং লিনডাকে একটি ক্যাবে উঠিয়ে ঠিকানা এবং চাবি দিয়ে দেয়।নিজেরাও অপেক্ষা করে আরেকটি ক্যাবের জন্য।আভা চুপচাপ মাথা নত করে রৌদ্রের পাশে দাঁড়িয়ে আছে।রৌদ্র আঁড়চোখে তাকিয়ে আছে তার দিকে।কিছুক্ষণ চুপচাপ থাকার পর রৌদ্র নিঃশব্দে আভাকে একহাতে জরিয়ে শক্ত করে আভার বাহু চেপে ধরল।নরম সুরে টেনে টেনে বলল,
– উফ্ এতো কান্না!আমার জন্য এতো কান্না?যদিও আমার কিন্তু ভালোই লেগেছে।তোমাকে কাঁদলে খুব সুন্দর লাগে।আমার তো এখন ইচ্ছা করছে একটা থাপ্পড় দিয়ে তোমাকে কাঁদিয়ে দিয়ে আমি গালে হাত দিয়ে বসে বসে দেখি।

রৌদ্রের কথা শেষ হতে না হতেই আভা আবারো ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে।ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায় রৌদ্র।সে তো মজা করেই বলছিল আভাকে আবারো কাঁদতে দেখবে।কিন্তু আভা যে সত্যি সত্যি এখন এই রাস্তার উপর কান্না শুরু করবে তা সে বুঝতে পারিনি।রৌদ্র তৎক্ষনাৎ কালবিলম্ব না করে আভার সামনে এসে আভার মুখটা নিহের হাতের আদলে নিয়ে নেয়।নিজের বৃদ্ধ আঙুল দিয়ে যত্নের সাথে চোখের পানি মুছে দেয়।আদুরে স্বরে বলে,
– একি আভা তুমি তো দেখি সত্যি সত্যি কান্নাকাটি শুরু করে দিলে।প্লিজ কেঁদো না।রাস্তার উপর এভাবে কাঁদলে মানুষ ভাববে আমি একটা খারাপ জামাই যে বউ পিটিয়ে তক্তা করে ফেলছে।আর নাহলে ভাববে আমি ছেলেধরা তোমাকে জোর করে তুলে নিয়ে যাচ্ছি।

রৌদ্রের কোনো কথায় আভার কান্না থামাতে সফল হলো না।আভা আগের মতোই কেঁদে চলেছে।রাস্তার লোকজন অদ্ভুত নজরে দেখছে আভা এবং রৌদ্রের দিকে।রৌদ্র তাদের দিকে তাকিয়ে মেকি হাসে।তাদের মধ্যেই একজন বয়স্ক লোক এগিয়ে এলেন।সূক্ষ্ম দৃষ্টিতে দু’জনকে পরখ করে আভার দিকে তাকিয়ে বলেন,
– কি হয়েছে মামনি?এই ছোকরা কি তোমারে বিরক্ত করতেছে? তোমার কি কোনো হেল্প লাগবে?

লোকটি এবার রৌদ্রের দিকে রাগি দৃষ্টিতে তাকিয়ে নিজের লাঠি দিয়ে রৌদ্রের পেটে খোঁচা দেয়।অনবরত খোঁচা দিতে দিতে বলেন,
– এই ছোকরা দেখে তো ভদ্রলোক মনে হচ্ছে।তা তোমার বুকে ছাতি ক খানা শুনি?থানার সামনে দাঁড়িয়ে মাইয়াগো লগে টাংকি মারো?থানায় নিয়ে যখন সিদ্ধ ডিম পশ্চাতে প্রবেশ করাইবে তখন বুঝবা আসল মজা।

কথাটি শেষ করেই লোকটি নিজের লাঠি দিয়ে রৌদ্রের থাইয়ের উপর হালকা আঘাত করলেন।রৌদ্র থতমত খেয়ে বড় বড় চোখে বলে,
– আ আ আরে দাদু ও আমার বউ।

বৃদ্ধ রৌদ্র কথা শোনা মাত্রই দ্বিগুণ তেঁ তেঁ উঠলেন,
– ওই ওই অমনি বউ হইয়া গেল?যেই মাইয়া দেখ হেরেই বউ বউ লাগে তাইনা?বুঝি না ভাবছ কিছু?চুল তো আর বাতাসে পাকে নাই।এই বয়স আমিও পাড় করে আসছি।যৌ’বনের জ্বালা বড় জ্বালা।

রৌদ্র বৃদ্ধের লাঠির আঘাত থেকে বাঁচতে আভার চারপাশ ঘুরছে।বৃদ্ধও রৌদ্রের পিছু পিছু ঘুরে ঘুরে তেড়ে যাচ্ছে।রৌদ্র চিল্লিয়ে চিল্লিয়ে বলে,
– আরে দাদু ও সত্যিই আমার বউ।আরে বউ তুমি কিছু বলো না কেন?

বৃদ্ধ বললেন,
– ওই কি কইবে?তোমারে আইজকা থানায় নিয়ে যদি থার্ড ডিগ্রি না দিছি তই আমার নামও জুলফিকার মোল্লা না।

রৌদ্র দৌড়াতে দৌড়াতে করুণ স্বরে বলে,
– আরে জুকার দাদু ও সত্যি আমার বউ।আর আভা তুমি কেন চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছো?কিছু বলতে পারছ না?

আভা কান্না থামিয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে মুখে হাত দিয়ে মিটিমিটি হাসছে।বৃদ্ধ আবারো লাঠি উঁচিয়ে ক্ষিপ্ত স্বরে বলে,
– ওই ছোকরা কি বললে তুমি আমি জুকার?তোমারে তো আজকে আমি থার্ড ডিগ্রি দিয়েই ছাড়বো।

আভা এতক্ষণে মুখ খুলে।এবার কাছে একটু বেশি বেশি লাগে।সে রৌদ্রকে আঁটকে নিজের পাশে দাঁড় করায়।বাহু ধরে একটু দূরে সরে দাঁড়ায়।বৃদ্ধের উদ্দেশ্যে হাত উঠিয়ে বলে,
– দাদু দাদু থামুন প্লিজ উনি সত্যিই আমার বর।

বৃদ্ধ দমে গেলেন।তীক্ষ্ণ নজরে আভা এবং রৌদ্রকে দেখলেন।রৌদ্র আভার কথার সাথে সাথে মাথা নাড়িয়ে আভাকে নিজের সাথে আরেকটু চেপে ধরে।বৃদ্ধ বলেন,
– তাহলে তুমি কাঁদছিলে কেন?নিশ্চয়ই ঐ তোমাকে মারছে তাইনা?নারী নির্যাতন তাই না?মামনি তুমি ভয় পাইয়ো না।তুমি আমারে কও ঐ তোমার উপর অনেক নির্যাতন করে তাইনা?

রৌদ্র বিস্মিত চোখে বৃদ্ধের দিকে তাকিয়ে আছে।সে আর নির্যাতন?বরং তাকে প্রতিনিয়ত নির্যাতিত হতে হচ্ছে।আভা শব্দ করে হাসে।বৃদ্ধের উদ্দেশ্যে বলে,
– না না দাদু উনি আমাকে মারবে কেন?উনি খুব ভালো।আমি তো এমনই কাঁদছিলাম।আসলে আমার চোখে যে কি হয়েছে শুধু পানি পড়ে।

বৃদ্ধ সন্দিহান দৃষ্টিতে আভা-রৌদ্রকে পা থেকে মাথা পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করে।দৃষ্টি ভঙ্গি একই রেখে মুখ বাঁকিয়ে বলে,
– ও এই কথা?ঐ ছোকরা ওরে একটা ভালা ডাক্তার দেখাইতে পারো না?

এর মধ্যে হাজির হয় রৌদ্রের বুক করা ক্যাব।রৌদ্র যেন প্রাণ ফিরে পেল।আভার হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে যেতে বৃদ্ধকে বলে,
– দাদু আজকে আসি।আমাদের ক্যাব চলে আসছে।আমাদের জন্য দোয়া করবেন।

আভাও পিছন ফিরে মিষ্টি হাসি দেয়।বৃদ্ধের মুখে ফুটে ওঠে এক চিলতে মোলায়েম হাসি।মনে পড়ে যায় রঙিন দিনের সুন্দর সুন্দর স্মৃতি।যেগুলোর ভারে আজ সে নুইয়ে পড়েছে।সেওতো তার স্ত্রী হাত ধরে এভাবে হেঁটেছে কত।আজ দুই বছর তার স্ত্রী নেই।এই লম্বা লাঠিটাই এখন তার হাঁটার সঙ্গি।কথাগুলো এলোমেলো ভাবে মস্তিষ্কে বিচরণ করতেই দীর্ঘ এক শ্বাস বেরিয়ে আসে ভিতর থেকে।সাদা চুলের বৃদ্ধ লাঠির শব্দ ঠকঠক শব্দ তুলে হাঁটা শুরু করে নিরুদ্দেশ গন্তব্যে।

গাড়িতে মুখ ফুলিয়ে বসে আছে রৌদ্র।আভা উপর ভিষণ রাগ করেছে সে। আভার জন্য তাকে কত কি শুনতে হলো।আভা বুঝতে পারছে রৌদ্র তার উপর রেগে আছে তাই সেও বেশি ঘাটায় না রৌদ্রকে।কিন্তু ক্ষণে ক্ষণে গলা ঝাড়ছে সে।আবার কখনো খুক খুক করে কাশছে।রৌদ্র বিরক্ত হয়ে দাঁত কিড়মিড় দিয়ে বলে,
– কি হয়েছে কি?যক্ষা হয়েছে নাকি?

থতমত খেয়ে যায় আভা।মুখে হাত দিয়ে নড়েচড়ে বসে।বলে,
– যক্ষা হবে কেন?এমনই গলাটা কেমন যেন আঁটকে আঁটকে আসছে।

কিছুক্ষণ চুপচাপ থাকার পর আভা আবারো উশখুশ করতে করতে বলে,
– আপনি কি আমার উপর রেগে আছেন?

রৌদ্র এবার আভার দিকে ঘুরে বসে।রাগি স্বরে বলে,
– তখন এমন রাস্তায় দাঁড়িয়ে ন্যাকা কান্না করলে কেন?

আবা ক্ষেপে যায়।কোমরে হাত বেঁধে বলে,
– কি আমি ন্যাকা কান্না করেছি?

– যেটা বলেছি সেটার উত্তর দাও।

– আসলে তখন আমি অনেক্ক্ষণ পর আমার সাথে এতো ভালো করে কথা বললেন যে আমি আর নিজের আবেগ ধরে রাখতে পারলাম না।তাছাড়া আপনি এতো তাড়াতাড়ি ছাড়া পেয়ে গিয়েছেন সে খুশিতেও কান্না চলে এসেছে।

আভার কথায় ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসে রৌদ্র।বিড়বিড় করে বলে,”ড্রামা কুইন!”
কথার মাঝেই বাসায় পৌঁছায় তারা।ফ্লাটে প্রবেশ করলে বসার ঘরে পায় রোদেলা এবং লিনডাকে।রৌদ্র বিস্মিত কন্ঠে বলে,
– একি তোমরা এখন ফ্রেশ হওনি?

রোদেলা বা লিনডা কেউই কোনো উত্তর করে না।রৌদ্র বুঝতে পারে তারা কোন ঘরে ঢুকবে হয়তো তা নিয়ে দ্বিধা দ্বন্দ্বে আছে।তাই এখনো কোনো ঘরে প্রবেশ করেনি।রৌদ্র এবার তাদের পাশের বড় রুমটি দেখিয়ে বলে,
– মম তোমরা এই রুমটা ইউজ করতে পারো।এটা ফাঁকা থাকে।

রোদেলা আর এক মুহুর্ত দেরি করে না আভার দিকে জহুরি দৃষ্টিতে তাকিয়ে সে রুমে চলে যায় সে।লিনডাও একই দৃষ্টি ফেলে আবার দিকে তারপর রোদেলার পিছুপিছু সেও রুমে প্রবেশ করে।আভা কিছু একটা ভেবে ভ্রু কুঁচকায়।ভাবুক স্বরে রৌদ্রকে জিজ্ঞেস করে,
– আচ্ছা লিনডা আপনি কি খ্রিস্টান?

রৌদ্র মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায়।টেবিল থেকে পানি ঢেলে মুখে তুলতে তুলতে বলে,
– হ্যাঁ।অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার পর লিনডার মা মমকে অনেক হেল্প করেছে তাই ওদের সাথে আমাদের বেশ একটা আত্মিক সম্পর্ক আছে।

আভা এবার সন্দিহান স্বরে বলে,
– ভাইয়া ওনাকে আপু বলল।আপনি নাম ধরে ডাকেন কেন?

রৌদ্র নাক সিটিয়ে বলে,
– ও আমাদের থেকে বড় তাই অভয় আপু বলে।বাট আমি বলিনা কারণ ছোটবেলা থেকে ওকে নাম ধরে ডাকা অভ্যাস তাছাড়া আমি আবার কাউকে আপু টাপু বলতে পারি না।

আভা মুখ ভেঙচি দিলো।কোনো রকম পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হয়ে রান্নাঘরে ছুটে গেল রৌদ্রের মায়ের জন্য রান্না করতে।কিন্তু সেখানে পড়ে আরেক যন্ত্রণায়।কন্টিনেন্টাল রান্না করবে নাকি বাঙালি খাবার রান্না করবে সে সিদ্ধান্ত নিতে হিমশিম খেয়ে গেল সে।অনেক ক্ষণ ভাবনা চিন্তা করে সিদ্ধান্ত নেয় সে বাঙালি খাবার রান্না করবে।এতো বছর তো ও দেশে বিদেশি খাবারই খেয়ে এসেছে।এখন দেশে এসেও যদি বিদেশি খাবার খায় তাহলে দেশে থাকার আসল মজাটা পাবে না।তাই আভা খুব যত্ন সহকারে রোদেলা এবং লিনডার জন্য বাঙালি কিছু পদ রান্না করে।রৌদ্র অভয়ের সাথে কম্পিউটার দেখতে বাইরে বের হয়েছে।রাত হয়েছে অনেক কিন্তু আসার নাম নেই।তাই আভা চিন্তা করে রোদেলা ও লিনডাকে আর বসিয়ে না রেখে খাবার খেতে দিয়ে দেওয়া যাক।এক ডাক দুই ডাকের পর টেবিলে আসে রোদেলা লিনডাও রোদেলার পিছুপিছু এসে রোদেলার পাশের একটি চেয়ার টেনে বসে।রোদেলা গম্ভীর স্বরে বলে,
– রৌদ্র এখনো আসেনি?

আভা অতি কোমল স্বরে বিনয়ী ভঙ্গিতে জবাব দেয়,
– না আসলে ওনার কিছু প্রজেক্ট সাবমিট করার কথা কিন্তু কম্পিউটার তো পুলিশে নিয়ে গিয়েছে তাই নতুন কম্পিউটার দেখতে গিয়েছেন ওনি আর ভাইয়া।

রোদেলা আগে ভঙ্গিতে বলে,
– তাহলে ও আসলে খেতাম।

আভাও তার কোমলতা বজায় রেখে উত্তর করে,
– ওনার আসতে কত সময় লাগবে না লাগবে ততক্ষণ আপনারা বসে থাকবে? তার থেকে আপনারা খেয়ে নেন।উনি আসা পর্যন্ত আমি অপেক্ষা করবো।

রোদেলা আর কথা বাড়ায় না।আভা একে একে রোদেলা ও লিনডার প্লেটে খাবার তুলে দেয়।তারা খাবার মুখে তোলে তবে তাদের মুখভঙ্গিতে আভা বুঝতে সক্ষম হয় না খাবারটি তাদের কেমন লেগেছে।কত বছর পর রোদেলা বাঙালি খাবার মুখে তুলেছে।বেশ জব্দ করে রেঁধেছে মেয়েটা খাবারগুলো।তবে সে চোখেমুখে তার অনুভূতি প্রকাশ করে না।লিনডার কাছেও খাবারগুলো বেশ ভালোই লাগে।কিন্তু সেও ভান ধরে বসে আছে।পাথরের মূর্তির মতো দু’জনে খাবার খেয়ে উঠে গেল।কেমন কি হয়েছে একবারের জন্য বলেও না।আভা মনে মনে ভাবে,”মনে হয় খারাপ হয়নি।হলে তো নিশ্চয়ই এমন চুপচাপ খেয়ে উঠে যেত না।আমাকে কচলে কচলে ধুয়েমুছে ফেলত।যখন কিছু বললনা তখন মনে হয় ভালোই হয়েছে।তাছাড়া আমিও তো চেক করে দেখেছি অনেকবার খারাপ হয়নি খেতে।বরং অনেক ভালোই হয়েছে।”

রোদেলা ঘরে যেতে যেতে বলে,
– আমি অনেক টায়ার্ড ঘুমাতে যাচ্ছি।রৌদ্র এলে ওকে খেতে দিও।

লিনডা মুখ ভেঙচি দিয়ে বলে,
– রাতের বেলা আবার বাসায় হাঁটাচলা করো না।এমনিতেই নতুন জায়গা তার উপর আমি আবার ভুতে ভয় পায়।

লিনডা কথাটা যে আভার গায়ের রং নিয়ে বলেছে তা বুঝতে অসুবিধা হলো না আভার।লিনডার কথায় বুক ফেটে কান্না এলো আভার।তবু নিজেকে শক্ত রেখে সে দাঁড়িয়ে মাথা কাঁত করে সায় দেয়।মনে মনে ভাবে,” সে তো এতোটাও কালো না যতটা কালো লিনডা বোঝাতে চেয়েছে।হ্যাঁ সে লিনডার কাছে রৌদ্রের কাছে ভুতুড়ে কালো।কিন্তু এমনিতে তো তার গায়ের রং সোনালি বর্ণের।কালো নয়।” দীর্ঘ শ্বাস ছাড়ে আভা।

অনেকটা রাত করে বাড়িতে ফেরে রৌদ্র।ফ্রেশ হয়ে খেতে বসে টেবিলে হরেক রকম পদ দেখে বলে,
– এতো আইটেম? কখন রান্না করলে?

আভা রৌদ্রের পাতে খাবার তুলে দিতে দিতে বলে,
– এই তো করলাম।ভাইয়া আসেনি কেন?

– বলল কি কাজ আছে নাকি।জোর করলাম তাও এলো না।

– আপনার বাবা আসেনি যে?

– ড্যাড আসছিল। কিন্তু লিনডা আসবে শুনে লিনডাকে টিকেট দিয়ে দিয়েছে।আর ড্যাডের বিজনেস ট্রীপ আছে নাকি একটা সে জন্য আর আসেনি।লিনডা আসছে শুনে নিশ্চিত ছিলো আমার বেল হয়ে যাবে।আর তোমাকে তো একটা কথা বলায় হয়নি।

রৌদ্র কথাগুলো বলতে বলতে কাটা চামচ তুললো।আভা চুপচাপ গম্ভীর ভঙ্গিতে রৌদ্রের পাশে এসে দাঁড়ায়।কোনো কথা না বলে রৌদ্রের থালার খাবার মাখিয়ে রৌদ্রের মুখের সামনে ধরে।রৌদ্র চোখ ফেড়ে তাকিয়ে আছে তার বউয়ের দিকে।আভা বিরক্তি স্বরে বলে,
– কি হলো হা করুন।

রৌদ্র মুচকি হেসে ছোট একটা হা করে।আভা যত্নসহকারে রৌদ্রের গালে খাবার তুলে দেয়।আভা এক নালা দুই নালা করে বেশ অনেকটা খাবার খাইয়ে দেয় রৌদ্রকে।রৌদ্র মুগ্ধ নয়নে চেয়ে খাবার খায়।দূর থেকে এ দৃশ্য দেখে আলতো হাসেন রোদেলা।নিঃশব্দে আবারো ঘরে চলে যান।খাবার শেষে রৌদ্রের মুখ ওড়না দিয়ে মুছে রৌদ্রের কানে আভা হিসহিসিয়ে বলে,
– আমি কিন্তু এখন সুস্থ।

চট করে রৌদ্র বলে ওঠে,
– গ্রীন সিগনাল দিচ্ছ?

রৌদ্রের এমন বাক্যে লজ্জায় নুইয়ে যায় আভা।হাত দিয়ে মুখ ঢেকে দৌড়ে ঘরে চলে যায়।রৌদ্র সেদিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে।সেদিকে তাকিয়েই কয়েক ঢোক পানি পান করে।টেবিলে খাবার রেখে সেও আভার পিছু পিছু নিজের ঘরে ছোটে।আভাকে পিছন থেকে নিজের বাহুতে আঁকড়ে ধরে আভার কানে ফিসফিসিয়ে বলে,
– গ্রীন সিগনাল দিয়ে এভাবে পালালে তো চলবে না।কোওপারেট করতে হবে তো নাকি?

বলেই রৌদ্র আভার কানে শব্দ করে একটি চুমু খায়।সঙ্গে সঙ্গে সেই শব্দের দাপটে কেঁপে ওঠে আভা।সারা শরীরের লোম দাঁড়িয়ে শরীর শীতল হয়ে আছে।আবা লজ্জায় দু হাতে মুখ ঢেকে ফেলে।ছটফট করে রৌদ্রের বাঁধন থেকে ছাড়া পাওয়ার জন্য।স্পর্শকারত পৃষ্ঠের গভীরতায় রৌদ্রের প্রবেশ আভাকে অসম্ভব আলোড়িত করে তোলে।নিঃশ্বাসের গতি বৃদ্ধি হয় মানব-মানবীর।রৌদ্র আভাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে তর্জনির বিচরণ চালায় সর্বত্র মুখমণ্ডলে।ঠোঁট ও নাকের পৃথককারী শূণ্য স্থানে তর্জনি স্থীর রেখে বলে,
– সেদিন এই পর্যন্ত এসেছিলাম না?

আভার কন্ঠনালি থেকে একটি ধ্বনিও উচ্চারিত হয় না।রৌদ্রকে বড্ড অচেনা লাগছে তার।এমন অসভ্য রৌদ্রকে সে আগে কখনো দেখিনি।কি নেশাল তার কন্ঠস্বর!সেই স্বরে বুঁদ হয়ে আছে আভা।রৌদ্র শুঁকনো ঢোক গিলে আভার ওষ্ঠ-অধরে চেয়ে।বিকল মস্তিষ্কে কোনো কিছু ভাবতে না পেরেই স্পর্শ করে সে কোমল মেয়েলি ওষ্ঠ-অধর।তড়িৎ খেলে যায় আভার সারা শরীরময়।রৌদ্রের সময় থমকে যায় আভার মোহিত অধরে!

চলবে….

#প্রিয়_বালিকা |৩৪|
#সাদিয়া_আক্তার_জ্যোতি

আভা পিটপিট করে চোখ খুলতেই মুখের সামনে রৌদ্রকে অনাবৃত বক্ষে দেখে ঘাবড়ে গেল।রৌদ্র পাশ ফিরে একহাতে তালুতে মাথার ভর দিয়ে তার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।চোখ দু’টো লাল টকটকে হয়ে আছে তার।রৌদ্রের এমন লাল টকটকে চোখ দেখে অবাক হয় আভা।মনে মনে ভাবে “লোকটা কি সারারাত ঘুমাইনি?সারা কি এভাবেই পলকহীন তাকে দেখে চলেছে লোকটা?” ভাবতে ভাবতে আরো বেশি বিস্ময় নেমে এলো আভার চোখে মুখে।গতরাতে রৌদ্রের করা সকল অসভ্যতামির একঝলক চোখের সামনে ধরা দিতেই লজ্জায় নুইয়ে যায় আভা।নাক পর্যন্ত থাকা পাতলা কাঁথাটি টেনে মাথার উপর পর্যন্ত ঢেকে ফেলে।আভাকে কাঁথা নিচে ঢুকে যেতে দেখে আলতো হাসে রৌদ্র।গলা ঝেড়ে পরিষ্কার করে ভারি কন্ঠে বলে,
– আচ্ছা আভা ধরো তোমার সামনে তোমার প্রিয় দশজন মানুষকে দাঁড় করিয়ে দেওয়া হলো।যেমন-তোমার মা,বাবা,ভাই,তোমার ছেলে-মেয়ে আর আমি।তারপর তোমাকে বলা হলো তুমি এখান থেকে যে কোনো একজনকে বাঁচাতে পারবে।তখন তুমি কাকে বাঁচাবে?

সকাল সকাল এমন হাড় ভাঙা কঠিন প্রশ্নে থতমত খেয়ে গেল আভা।মাথার ঘিলু জমাট বেঁধে শক্ত পাথর হয়ে গেল।তব্দা খেয়ে কাঁথা থেকে মাথা বের করে সে।রৌদ্র এখনো আগের মতোই হাতের তালুতে মাথার ভর দিয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে।আভা কি বলবে কিছু বুঝে উঠতে পারছে না।সকলেই তার প্রিয় মানুষ।একজনকে রেখে অন্যজনকে সে কিভাবে বাঁচাবে?সকাল সকাল রৌদ্রের থেকে এমন প্রশ্ন পেয়ে রৌদ্রের উপর ভিষণ রাগও হয় তার।সে কপাল কুঁচকে বলে,
– সকাল সকাল এমন উদ্ভট প্রশ্ন করার মানে কি?

রৌদ্র মৃদু হেসে বলে,
– আহা বলোই না।

আভা এক ভ্রু উঁচিয়ে সন্দিহান স্বরে বলে,
– আমি কি বাঁচবো?

রৌদ্র কিছুক্ষণ ভেবে বলে,
– না ধরো একজনকে বাঁচানোর পর তুমিও মারা যাবে।

আভা এবার ভাবতে শুরু করে তার কাকে বাঁচানো উচিত।কিছুক্ষণ ভাবি ভাবির পর রূঢ়ভাবে বলে,
– আপনাকে তো বাঁচাবো না এটা শিওর।

রৌদ্র আভার এমন উত্তরে সামান্য অবাক হয়।মাথা থেকে হাত সরিয়ে উঠে বসে।মেকি হাসি দিয়ে বলে,
– কিহ্?নিজের স্বামীকে বাঁচাবে না?কিন্তু কেন?

আভাও উঠে বসে এবার।এলোমেলো মৃদু কোঁকড়ানো চুলগুলো পিঠ জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।শরীরে রৌদ্রে কালো শার্ট।দেখতে অসম্ভব মোহনীয় লাগছে তাকে।আভা হাত নাড়িয়ে নাড়িয়ে রৌদ্রকে বোঝাতে শুরু করে কেন সে রৌদ্রকে বাঁচাবে না।
– দেখুন একজনকে বাঁচানোর পর তো আমি বাঁচবো না তাই আমি আপনাকে বাঁচাবো না।

আভার যুক্তির “য” ও বুঝতে পারে না রৌদ্র।চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে থাকে আভার দিকে।আভার এমন বেহুদা যুক্তি শুনে বেশ রাগ লাগে তার।রাগি স্বরে বলে,
– মানে কি?তুমি বাঁচবে না বলে আমাকে বাঁচাবে না?

আভা নির্বিকার ভঙ্গিতে টেনে টেনে সুর দিয়ে বলে,
– হ্যাঁ…আপনাকে বাঁচাবো আর তারপর আপনি নতুন আরেকটা সুন্দরী মেয়ে দেখে বিয়ে করবেন আর সুখে সংসার করবেন তা তো হবে না।আমি মরলে আপনিও আমার সাথে মরবেন।

আভার এতো গভীর চিন্তা ভাবনা দেখে বিস্ময়ে কোটর থেকে চোখ বেরিয়ে আসে রৌদ্রের।পরমুহূর্তেই শরীর কাঁপিয়ে অট্টহাসি দেয় সে।সে হাসছে আর আভার গায়ের উপর ঢলে ঢলে পড়ছে।রৌদ্রের এমন রাক্ষসে হাসির কারণ খুঁজে পায় না আভা।ভ্রু কুঁচকে কোণা চোখে তাকিয়ে দেখে রৌদ্রকে।রৌদ্র কোনো মতে হাসি থামিয়ে বলে,
– আচ্ছা তো কাকে বাঁচাবে?

চট করে জবাব দেয় আভা,
– কাউকেই বাঁচাবো না।নিজেই সু’ইসাইড করবো।

আভার শেষ বাক্যে থমকে যায় রৌদ্র।বাক্যটি পছন্দ হয়নি তার।মুহুর্তের মাঝে গম্ভীর হয়ে যায় সে।চুপচাপ কাঁথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে গম্ভীর ভঙ্গিতে বলে,
– যাও ফ্রেশ হয়ে নাও।আমাকে একটার আগে ডাকবে না।

আভা অবাক ভঙ্গিমায় বলে,
– আপনি ফ্রেশ হবেন না?

রৌদ্র মুখের উপর থেকে কাঁথা সরিয়ে তর্জনি দেখিয়ে বলে,
– আমি ফ্রেশ হয়েছি এখন থেকে প্রায় দুইঘন্টা আগে।

আভা আর কোনো উত্তর করে না।বিছানা থেকে নেমে যায়।রৌদ্র কাঁথার ভিতর থেকে শুরু চোখ দু’টো বের করে আভার গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করে।হাঁটু অবধি রৌদ্রের শার্ট ছাড়া আর কোনো বস্ত্রের আবরণ দেখা গেল না।আভার অনাচ্ছাদিত মেয়েলি পা দেখে শুঁকনো ঢোক গিলে রৌদ্র।চোখ খিঁচে বন্ধ করে কাঁথা মুড়ি দিয়ে বলে,
– শ শোনো প্যান্টস পরো।

আভা রৌদ্রের এমন উক্তিতে নিজের পায়ের দিকে তাকিয়ে কিছু না ভেবেই বলে,
– কেন?

আভার অবুঝের মতো প্রশ্নে ক্ষিপ্ত হয় রৌদ্র।কঠিন স্বরে বলে,
– এমনিতেই সারারাত তোমার দিকে চেয়ে থেকে তোমাকে পাহারা দিয়েছি।এখন একটু ঘুমাতে চাই বুঝলে?

রৌদ্রের কথায় আভার গাল গরম হয়ে যায়।সে দুই হাতে গাল চেপে ধরে দৌড়ে ওয়াশ রুমে চলে যায়।ফ্রেশ হয়ে সকলের জন্য সকালের নাস্তা তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। আজ দু’টো ক্লাস ছিল একটা ক্লাস ক্যান্সেল হয়েছে আর একটা ক্লাস আছে দুইটা ত্রিশে।রান্না শেষ করে আভা সবাইকে সকালের খাবার পরিবেশন করে নিজে রেডি হয়ে নেয়।একটা ত্রিশ বাজে রৌদ্র এখনো ঘুম।খাওয়ার সময় রোদেলা অনেকবার জিজ্ঞেস করেছে রৌদ্রের কথা।রোদেলা ডাকাতে আভাও করেকবার ডেকেছে রৌদ্রকে।না পেরে রোদেলাকেও পাঠিয়েছে ডাকতে।রোদেলা ডাকতে এলেই রৌদ্র ঘুমের ঘোরে বলেছে,
– মম প্লিজ দুপুরের আগে আমাকে ডেকো না।রাতে কাজ করতে হবে।

আভা রেডি হয়ে রৌদ্রকে ডাকে।কয়েকবার নড়েচড়ে আবার উপুড় হয়ে ঘুমায় রৌদ্র।এবার আভা বিরক্ত হয়।রৌদ্রকে জোরে জোরে ধাক্কা দিয়ে বলে,
– রৌদ্র উঠেন রৌদ্র!দেখেন তো ওয়াইফাই কাজ করছে না কেন?রৌদ্র?কই উঠলেন?

রৌদ্র বিরক্তিতে “চ্” শব্দ করে।আভা একাধারে রৌদ্রকে ধাক্কা দিয়ে যাচ্ছে আর ডেকে চলেছে।রৌদ্র রেগেমেগে উঠে বসে।চোখ দু’টো এখনো ঘুমে বুঁজে আসছে।চোখমুখ ফুলে গিয়েছে তার।বিরক্তিতে ঝাড়ি দিয়ে বলে,
– কি হয়েছে?

– ভার্সিটিতে যাচ্ছি আমি।আর ওয়াইফাই কাজ করছে না কেন একটু দেখেন।

রৌদ্র চোখ ডলতে ডলতে বিছানা ছেড়ে উঠে এলো।আভার হাত থেকে ফোন নিয়ে দেখল কেন কাজ করছে না।যেহেতু রৌদ্রকে হাইস্পিড নেটওয়ার্কে কাজ করতে হয় সে জন্য সে সম্পূর্ণ আলাদা একটি রাউটার ব্যবহার করে।সেই ওয়াইফাই-এ কানেক্ট করে দেখল সেটাতেও সমস্যা।ভ্রু কুঁচকে এলো রৌদ্রের।আভা ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে হাতে পায়ে বডি লোশন দিচ্ছে আর আয়না থেকে রৌদ্রকে দেখছে।লোকটা এতো বেশি মোহনীয় কেন?তাকালে শুধু তাকিয়েই থাকতে ইচ্ছা করে।আভা আয়না থেকে রৌদ্রকে দেখতে দেখতে বলে,
– কাল রাত থেকে প্রথমটা সমস্যা আর আজ সকালে সেকেন্ডটায় সমস্যা হয়েছে।

রৌদ্র বিছানায় ফোন ছুঁড়ে ওয়াশ রুমে যেতে যেতে বলে,
– দেখছি।

ফ্রেশ হয়ে একটি গ্রে রঙের পোলো টিশার্ট গায়ে দেয়।তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে আভাকে পা থেকে মাথা অবধি দেখে বলে,
– এতো সাজতে হবে কেন?ক্লাসে যাচ্ছো নাকি ফ্যাশান শো করতে যাচ্ছো?চলো তাড়াতাড়ি।

আভা অবাক স্বরে বলে,
– আপনিও যাবেন নাকি?না না আপনার যাওয়া লাগবে না।আপনি মা আর লিনডা আপুকে নিয়ে খাবার খান।

রৌদ্র কোনো কথা না বলে শান্ত দৃষ্টিতে আভার দিকে তাকিয়ে রইলো।সেই দৃষ্টি দেখেই আভার সব হাওয়া ফুস করে বেরিয়ে গেল।সেও আর বাড়তি কোনো কথা বলে না।ভার্সিটি কাছেই পাঁচ ছয় মিনিট হাঁটলেই পৌঁছে যাওয়া যায়।পাশাপাশি হেঁটে চলেছে আভা-রৌদ্র।দু’জনই নিশ্চুপ।আচমকা দু’জন একসাথে বলে ওঠে,
– কিছু বলার ছিল।

দু’জনই অবাক হয়ে গেল।পরমুহূর্তেই দু’জনই মৃদু হাসে।রৌদ্র কোমল স্বরে আভাকে বলে,
– আগে তুমি বলো।

আভাও চিকন স্বরে অতি কোমলতার সহিত বলে,
– বাবা ফোন করেছিল।মা আর সবাইকে নিয়ে যেতে বলেছে।আম্মুও ফোন করে যেতে বলেছে।

রৌদ্র এবার একটু চিন্তায় পড়ে গেল।হঠাৎই কোনোকিছু চিন্তা ভাবনা করতে বসে গেল।আভা ভ্রু কুঁচকে বলে,
– আপনি না কি বলবেন?বলুন।

রৌদ্র ভাবুক স্বরে বলে,
– আম্মু যেতে বলেছে কিন্তু আমি আর অভয় তো আগামী সপ্তাহেই সুন্দরবন যাওয়ার প্লান করেছিলাম।

আভা পুলকিত স্বরে বলে,
– সত্যিই আমরা সুন্দরবন যাবো?তাহলে চলেন কাল পরশু বাড়িতে যায় তারপর ঐখান থেকেই নাহয় সুন্দরবন যাবো।আমার আইডিয়া কেমন লাগল বলুন?

রৌদ্র মুখ বাঁকিয়ে বলে,
– ভালো বাট তোমার যে এই সেমিস্টারে সবগুলা সাবজেক্টে সাপ্লি আসবে এটা আমি শিওর।শুধু শুধু আমার কতগুলা টাকা খরচ হতে চলেছে।

আভা তেঁ তেঁ উঠল।মুখ ভেঙচিয়ে বললো,
– আপনাকে কে বলেছে আমার সাপ্লি আসবে?আর আসলেও কি?আপনার থেকে টাকা নিবো না।আপনার টাকা দেওয়া লাগবে না।

– অ্যান্ডেন্সে পাবে জিরো। আর জিরো পেলে সাপ্লি শিওর।তারপর আবার পরীক্ষা দেওয়ার জন্য আমার কতগুলো টাকা খরচা হবে।

রৌদ্রের কথায় শরীর জ্বলে উঠলো আভার।রৌদ্রের দিকে তাকিয়ে মুখ ঝামটি দিয়ে গটগট করে হেঁটে ডিপার্টমেন্টের ভিতর চলে গেল।বিড়বিড় করে বলল,”ওনার টাকা নেওয়ার জন্য বসে আছি তো আমি।বদ লোক!”রৌদ্র আভার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে অকৃত্রিম হাসে।চুলে আঙুল চালিয়ে কালো ট্রাউজারের পকেটে হাত পুরে নিজের গভীর কন্ঠে গুণগুণ করে সুর তুলতে তুলতে পদচারণ করে বাসার দিকে।

আভা ক্লাস করে বাড়ি ফিরে চারটার দিকে।বাসায় ঢুকতেই শুনতে পায় রৌদ্র এবং রোদেলার মধ্যে একপ্রকার কথা-কাটাকাটি চলছে।আভাদের বাড়িতে যাওয়া নিয়ে।রোদেলা কিছুতেই যাবে না আভার বাড়ি।এদিকে রৌদ্র তার মাকে নিজের সর্বোচ্চ দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করছে।রোদেলার হাজার কথার এক কথা,
– আমি যাবো না ব্যস।

রৌদ্র করুণ স্বরে মাকে বোঝানোর চেষ্টা করে,
– মম দেখ তারা বার বার ফোন করে বলছে যাওয়ার জন্য না গেলে কতটা ম্যানারলেস দেখায় ভাবতে পারছো তুমি?

ফ্লাটের দরজা খোলায় ছিল।তাই আভা বাইরে দাঁড়িয়েই সবটা শুনতে পায়।আভা গলা ঝেড়ে শব্দ করে ভিতরে প্রবেশ করে।তৎক্ষনাৎ চুপ হয়ে যায় রৌদ্র। আভার দিকে একপলক তাকিয়ে নিজের কম্পিউটার ল্যাবে চলে যায়।নতুন কম্পিউটার আনা হয়েছে।সেগুলো সব সেট-আপ করতে হবে।রোদেলাও কোণা চোখে আভার দিকে তাকিয়ে ভিতরে যাওয়ার জন্য পা বাড়ায়।আভা চট করে রোদেলাকে জিজ্ঞেস করে,
– মা দুপুরে খেয়েছেন?

রোদেলা আভার দিকে না তাকিয়েই দায়সারাভাবে মুখ দিয়ে শুধু একটা সম্মতিসূচক শব্দ উচ্চারণ করেন,
– হুম।

আভা আবারো বিনয়ী স্বরে জিজ্ঞেস করে,
– লিনডা আপু খেয়েছেন?

এবারো রোদেলা একইভাবে জবাব দেয়,
– হুম।

এরপর আর কোনো কথা বলার সাহস হয় না আভার।রোদেলাও আর একমুহূর্তে সেখানে দাঁড়ায় না।আভা ধীর পায়ে রৌদ্রের কম্পিউটার রুমে ঢোকে।রৌদ্র প্রচন্ড গতিতে কীবোর্ডে আঙুল চালিয়ে কিছু টাইপ করছে।আভা নিঃশব্দে রৌদ্রের পাশে গিয়ে দাঁড়ায়।কিছুক্ষণ নিরব থেকে বলে,
– মা যদি যেতে না চায় তাহলে তাকে জোর করার দরকার নেই।

রৌদ্র আঙুল থামিয়ে দেয়।চোখ বন্ধ করে জোরে একটি শ্বাস নিয়ে বলে,
– আমার কথা হলো কেন যাবে না মম?তারা এতোবার বলার পরও কেন যেতে চায়বে না সে?

– দেখুন রৌদ্র সবাই সবখানে কমফোর্টেবল হবে তার কোনো মানে নেই।মা যেতে চায়না।তাকে জোর করার কোনো দরকার নেই।

রৌদ্র আভাকে পূর্ণ দৃষ্টিতে দেখল।মেয়েটাকে অনেকটা ক্লান্ত লাগছে।একদিকে পড়াশোনা, ক্লাস,অন্যদিকে সংসার রান্নাবান্না।সব একসাথে কত সুন্দর সামলে নিচ্ছে মেয়েটা।রৌদ্র ছোট্ট একটি শ্বাস ফেলে বলে,
– ফ্রেশ হয়ে রেস্ট নাও।

আভা মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায়।বেডরুমে চলে যায় ফ্রেশ হতে।রৌদ্রও আবারো নিজের কাজে মনোযোগ দেয়।

চলবে….

#প্রিয়_বালিকা |৩৫|
#সাদিয়া_আক্তার_জ্যোতি

সুন্দরবনের পথে রওনা হচ্ছে রৌদ্র-আভা,অভয়-অহনা এবং লিনডা।আভাদের বাড়িতে আসার পর এখানে দুইদিন থেকে আজ সেখান থেকেই শীপে করে সুন্দরবন ভ্রমণে বেরিয়েছে পাঁচজন।রোদেলাও শেষ পর্যন্ত আভার বাবার বাড়িতে আসতে রাজি হয়।আভার বাবা-মা তাদের আতিথেয়তা দিয়ে রোদেলার মন জয় করে নেন।তাকেও সুন্দরবন যাওয়ার জন্য বলা হয়েছিল কিন্ত সে কিছুতেই রাজি হয়নি।তিনি আবারও অস্ট্রেলিয়া ফিরে গিয়েছেন।শুধু মাত্র লিনডা যাচ্ছে রৌদ্রদের ভ্রমণসঙ্গী হয়ে সুন্দরবন।শীপ ভাড়া করা হয়েছে তিনদিন দুইরাতের জন্য।শীপ মোংলা হয়ে করমজল, তারপর দুবলার চর যাবে।দুবলার চরে রৌদ্র এবং অভয় ক্যাম্প তৈরি করবে।সকাল ছয়টার কিছু সময় পর শীপে পৌঁছাল সবাই। মাঝারি আকারের শীপটিতে তিনতলা।শীপটি খুব সুন্দর করে গোছানো।বিভিন্ন রঙের আলোতে সজ্জিত।সকলের কাছে আলাদা আলাদা নিজস্ব ব্যাগ।রৌদ্র শীপে উঠে আভার জন্য হাত বাড়িয়ে দিলো।আভা সেই হাতের দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হেসে একপলক রৌদ্রের মুখের দিকে চায়ল।সেও ঠোঁট চওড়া করে আভাকে হাত ধরার জন্য ইশারা করে।আভা চোখ সরিয়ে রৌদ্রের হাতে ডুবিয়ে দিলো।যত্নশীল রৌদ্রের দিকে তাকিয়ে অভয়ের ঠোঁটেও ফুটে ওঠে তৃপ্তির হাসি।সেও অহনার দিকে হাত এগিয়ে দেয়।অহনা রৌদ্রকে নকল করতে দেখে অভয়ের হাতে ঠাস করে একটি চর মেরে নিজেই উঠে গেল।অভয় হাবলার মতো তখনো হাত পেতে রয়েছে।লিনডা মুখ ভেঙচি দিয়ে অভয়ের সেই পেতে রাখা হাতে ভর দিয়ে শীপে উঠে পড়ল।উপর থেকে আভা এবং রৌদ্র তা দেখে শব্দ করে হেসে ফেলে।অহনা অভয়ের দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকাতেই সে ঠোঁট উল্টিয়ে তড়িঘড়ি শীপে উঠে পড়ে।সাতটা বাজতেই শীপ যাত্রা শুরু করে সুন্দরবনের উদ্দেশ্যে।চওড়া নদী বেয়ে সামনে এগিয়ে চলেছে শীপ।চারপাশে গাছপালা আর জনবসতি।অনেকটা পথ পাড়ি দেওয়ার পর জনবসতি দেখা গেল না।শুধু গাছপালা আর বন-জঙ্গলের ঠাঁসাঠাসি।রৌদ্র তার ক্যামেরায় ফ্রেমবন্দী করছে প্রতিটি মুহুর্তে।হঠাৎই ফ্রেমে আঁটকে যায় কালো শারী পরিহিত এক রমনী।ধীর পায়ে সে রৌদ্রের দিকেই এগিয়ে আসছে।আভা নায়িকাদের মতো হেলেদুলে এগিয়ে এসে রৌদ্রের চারপাশে একবার চক্কর দিলো।রৌদ্র ঠোঁট বাঁকিয়ে হেসে আভাকে দেখছে।আভা একটু দূরে দাঁড়িয়ে মডেলের মতো বিভিন্ন পোজ দেয়।পোজ গুলো অনেকটা্ আবেদনময়ী ছিল।রৌদ্র সঙ্গে সঙ্গে সবগুলো পোজ ফ্রেমবন্দী করে ফেলে।শব্দ করে হেসে দু হাত মেলে দেয় আলিঙ্গনের উদ্দেশ্যে।আভাও আর দেরি না করে হেসে দৌড়ে রৌদ্রকে শক্ত করে জরিয়ে ধরে।তারা এই মুহুর্তে তাদের জন্য বরাদ্দকৃত রুমের সামনে থাকা চিকন গলিটিতে রয়েছে।সেখানে তারা ছাড়া আর কেউ নেই।আভা রৌদ্রের বুকে থুতনি ঠেকিয়ে রৌদ্রের মুখের দিকে তাকায়।রৌদ্র সেভাবেই পরম যত্নে আভার কপালে ঠোঁট ছোঁয়ায়।আরো শক্ত করে আভাকে নিজের সাথে চেপে ধরে বলে,
– ভালো লাগছে?

আভা রৌদ্রের বুকে নাক ঘষতে ঘষতে উত্তর দেয়,
– হুম।

রৌদ্র আভার মাথায় আঙুল চালিয়ে বাহিরে নজর দেয়।বাতাসের তান্ডবে শরীরের ভর শীপে রাখাই দুষ্কর হয়ে উঠেছে।আভাকে একহাতে ধরেই অন্যহাতে ক্যামেরা তুলে আরো কয়েকটা ছবি তুলে ফেলল।আচমকা উৎফুল্ল স্বরে বলে উঠলো,
– দেখো হরিণ।

আভা এতক্ষণ চোখ বন্ধ করে রৌদ্রের বুকে মাথা দিয়ে নিঃশব্দে দাঁড়িয়ে ছিল।এই প্রসস্থ বুকে সে পৃথিবীর সকল সুখ একসাথে খুঁজে পায়।এখানে মাথা রাখার পর দিন দুনিয়ার কোনো চিন্তা,কষ্ট,ক্লান্তি তাকে ছুঁতে পারে না।আপনা আপনিই চোখের পাতা এক হয়ে যায়।রৌদ্রে উৎফুল্ল স্বর শুনে আভাও রৌদ্রের দৃষ্টি অনুসরণ করে সেদিকে চায়।রৌদ্র আচমকা আভাকে ছেড়ে ছবি তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।আভাকে ছাড়ার সময় সামান্য ধাক্কা অনুভব করে আভা।আভা অবাক চোখে রৌদ্রের দিকে তাকিয়ে নাক ফুলায়।রাগি স্বরে বলে,
– এই আপনি আমাকে ধাক্কা দিলেন কেন?

সহসা আভার এমন কথা শুনে কিছু বুঝে উঠতে পারে না রৌদ্র।বিস্মিত চাহনিতে তাকিয়ে থাকে আভার দিকে।অবাক স্বরে বলে,
– কোথায় ধাক্কা দিলাম?

আভা এখনো নাক মুখ ফুলিয়ে দাঁড়িয়ে।ফোঁসফোঁস শব্দ করে চলেছে।রৌদ্রের দিকে তর্জনি তুলে শক্ত কন্ঠে বলে,
– আপনি আর আমার কাছে আসুন শুধু দেখবেন আমি কি করি।ধাক্কা দিয়ে আমাকে নিজের থেকে সরিয়ে দেওয়া না?আজ থেকে ভুলে যান আপনার কোনো বউ আছে।

আচমকা আভার এমন আক্রমনাত্মক আচারণ দেখে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায় রৌদ্র।আভা মুখ ঝামটি দিয়ে রুমের ভিতরে চলে যায়।রৌদ্রও আভাকে ডাকতে ডাকতে তার পিছু পিছু যায়।আভা কোনো কিছু শুনতে নারাজ।সে শুধু একটি কথায় বলে যাচ্ছে,
– আপনি ইচ্ছা করেই আমাকে ধাক্কা দিয়েছেন।

– আরে আমি কেন ধাক্কা দিবো?আমি সত্যি ধাক্কা দিইনি।আমি তো জাস্ট হরিণ দেখে এক্সাইটেড হয়ে গিয়েছিলাম তাই ছবি তুলছিলাম।

– আপনার কাছে আমি বেশি ইম্পর্ট্যান্ট নাকি ঐ হরিণ? আজকে একটা ফয়সালা করতেই হবে আপনাকে।

রৌদ্র বিস্ময়ে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে।হঠাৎ আভার এমন ক্ষেপে যাওয়ার কারণ বুঝতে ব্যর্থ হলো সে।আভা আগের মতোই জেদি স্বরে বলে,
– না না আপবাকে আজকে বলতে হবে আপনার জীবনে কার ইম্পরট্যান্টস বেশি?আমি নাকি হরিণ?

রৌদ্র আভার এসব বেহুদা কথাবার্তায় বিরক্ত হয়।নাক মুখ কুঁচকে বলে,
– আরে তুমি এমন একটা ভাব করছ যেন ওটা হরিণ নয় ওটা তোমার সতিন।

ব্যস এবার আভাকে আর দেখে কে?এমনেই মাথার ঘিলু ফুটছিল।তার উপর রৌদ্রের সতিন তুলে কথায় যেন আভার ঘিলু আগ্নেয়গিরির মতো মস্তক ফেটে বেরিয়ে এলো।এবার শুরু হলো আভার প্রলাপ,
– ওহ্ এই ছিল আপনার মনে?আমি তো জানি আপনার নজর ভালো না।মেয়ে দেখলে মাথা ঠিক থাকে না।আমি তো জানি আপনি আমার সতিন আনার প্লানে আছেন।আমি কিছু বুঝিনা বুঝি?কিন্তু আপনি আমাকেও চিনেননি।আপনি কি ভেবেছেন?আপনি আরেকটা বিয়ে করে সুখে সংসার করবেন আর আমি বসে বসে আঙুল চু’ষবো৷এমন কায়দা করবো বিয়ে করার সখ কেন?মেয়ে দেখলে আপনি জলাতঙ্ক রোগীর মতো করবেন।জলাতঙ্ক রোগী যেমন পানি দেখলে ভয় পায় আপনিও তেমন মেয়ে দেখে ভয়ে কাঁপবেন।

রৌদ্র হা করে তাকিয়ে আছে আভার দিকে।আভার মুখে লাগামহীন কথাবার্তা শুনে রাগ হলো তার।তাকে নিয়ে আভার মনে এই ধারণা? সে মেয়ে দেখলে মাথা ঠিক রাখতে পারে না?এই চার আঙুল মেয়েটা এসব কথা কিভাবে বলতে পারল।রাগে দাঁতে দাঁত কামড়ে হাত মুঠ করে দাঁড়িয়ে রইলো রৌদ্র।কোনো শব্দ বের করে না মুখ দিয়ে।গটগট করে হেঁটে বেরিয়ে যায়।যাওয়ার আগে দরজা এতো জোরে লাগিয়ে যে সে বিকট শব্দে কেঁপে ওঠে আভা।আভার চোখ ভরে ওঠে নোনাজলে।নাক ফুলিয়ে ফোঁস ফোঁস করে।ঘরের ছোট জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে পানি আর জঙ্গল দেখে।পাশে তাকিয়ে দেখে গলিতে রৌদ্রকে দাঁড়িয়ে একদৃষ্টিতে দূর আকাশে চেয়ে আছে।আভার দিকে তাকাতেই চোখাচোখি হলো।আভা মুখ ঝামটি দিয়ে জানালা থেকে সরে এলো।রৌদ্রও গম্ভীর মুখে সেখান থেকে চলে এলো।অভয় অহনা শীপের একদম সামনের দিকে দাঁড়িয়ে।রৌদ্রকে দেখতেই অভয় উৎফুল্ল ভঙ্গিতে হাতের ইশারায় রৌদ্রকে তাদের কাছে ডাকে।অভয় অহনা হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছে।কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে লিনডা কোক খাচ্ছে। রৌদ্র কাছে যেতেই অভয় রৌদ্রের দিকে একটি কোক ছুঁড়ে দিলো।রৌদ্র ক্যান খুলে মুখে দিলো।অভয় ভ্রু কুঁচকে বলল,
– আভা কোথায়?

রৌদ্র গম্ভীর ভঙ্গিতে বলে,
– রুমে আছে যা গিয়ে নিয়ে আয়।

অভয় ভ্রু কুঁচকে রৌদ্রের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো।এগিয়ে এসে পিছন থেকে কাঁধে রেখে বলে,
– সব কিছু ঠিক আছে?

রৌদ্র দূর পানে শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকেই উত্তর দেয়,
– হয়তো।

– হয়তো মানে কি?বল কি হয়েছে?

রৌদ্র বিরক্তি কন্ঠে বলে,
– আরে জানিস না মেয়ে মানুষ হলো এমনই এক আজব প্রাণী যেটা বুঝে কম চিল্লায় বেশি।

তপ্ত শ্বাস ফেলে অভয়।আর কোনো প্রশ্ন না করে চলে যায় বোনকে আনতে।আভা বিছানায় চুপ করে বোম হয়ে বসে আছে।ছোট বিছানা আর একটি ড্রয়ার।খরস্রোতার দাপটে খাট সহ সব দুলে চলেছে।কারো পদধ্বনি কানে আসতেই আভা মুখ ঘুরিয়ে বুকে হাত গুঁজে বসলো।সে ভেবেছে হয়তো রৌদ্র এসেছে।অভয় নিঃশব্দে ঘরে প্রবেশ করল।আভার কাছে এসে আভার মাথায় চাটি মেরে বলল,
– কিরে তুই এখানে এমন খিচ মেরে বসে আসিছ কেন খয়রাতি?

আভা মাথায় হাত দিয়ে অভয়ের দিকে গরম চোখে তাকিয়ে কড়া কন্ঠে বলে,
– ভাইয়া দেখ এখন একদম মজার মুডে নেয়।

অভয় এবার সিরিয়াস মুখ করে আভার পাশে বসে।আভাকে প্রশ্ন করে,
– কি হয়েছে রে?ওদিকে রৌদ্রকে দেখলাম মুখ ভার করে আছে এদিকে তুই এভাবে বসে আছিস কি হয়েছে?

আভা অভয়ের দিকে ঘুরে আসন করে বসে।টলমল চোখে ভেজা কন্ঠে বলে,
– ভাইয়া তোমার বন্ধু আরেকটা বিয়ে করার প্লান করছে।

অভয় অবাক স্বরে বলে,
– কিহ্?

তৎক্ষনাৎ ঘরে প্রবেশ করে রৌদ্র।রাগে মাথা ফেঁটে যাচ্ছে তার।সে দাঁতে দাঁত কামড়ে অভয়ের উদ্দেশ্যে বলে,
– একদম মিথ্যা কথা।তোর বোন আমাকে তা নয় তাই বলেছে।বলেছে আমার নাকি মেয়ে দেখলে মাথা ঠিক থাকে না।আমার নাকি নজর ভালো না তোর বোন এইসব শব্দ কিভাবে আমার জন্য ব্যবহার করতে পারল।

অভয় চোখ বড় বড় করে নিজের বোনের দিকে তাকায়।তার বোন এমন কথা বলতে পারে তার ধারনারও বাইরে।আভা এবার ঠোঁট ভেঙে কেঁদে দিলো।ভাঙা ভাঙা স্বরে বলল,
– আর আপনি আমাকে ধাক্কা দিয়ে নিজের থেকে সরিয়ে দেননি?

আবারো সেই এক কথা।রৌদ্র বিরক্তির স্বরে বলে,
– আমি কখন ধাক্কা দিলাম?আর ধাক্কা দিলেও আমি ইচ্ছা করে দেয়নি।

অভয়ের মাথা ঘুরতে শুরু করে দুইজনের এমন ভিত্তিহীন ঝগড়াঝাটি শুনে।সে চোখ বড় করে জোরে শ্বাস টেনে ঘর ত্যাগ করে।রৌদ্র বিরক্তির দৃষ্টিতে আভার দিকে তাকিয়ে আছে।আভা এখনো ন্যাকা কান্না করে চলেছে।আভার কান্নায় হৃদয় শীতল হয়ে গেল রৌদ্রের।চোখ বন্ধ করে জোরে শ্বাস টেনে ধীর গতিতে আভার পাশে গিয়ে বসে।আভার হাত ধরতে গেলেই আভা ঝটকা দিয়ে হাত ছাড়িয়ে নেয়।রৌদ্র হতাশ শ্বাস ফেলে বলে,
– আচ্ছা আমি সরি।কি করেছি জানিনা তাও সরি।হয়েছে এবার?ঘুরতে এসে এমন করে কেউ?

রৌদ্রের শুঁকনো কথায় চিরা ভিজলো না।আভা আগের মতো মটকা মেরে বসে রইলো।রৌদ্রের দিক থেকে মুখ ঘুরিয়ে বসে রইলো।রৌদ্র আভার এলোমেলো চুলগুলো অদক্ষ হাতে হাত খোঁপা করে দেয়।আপসহীন আভা আবার চুল খুলে দেয়।রৌদ্র আবার চুল খোঁপা করে দেয়।আভা তেজি স্বরে বলে,
– একদম আমাকে ছোঁয়ার চেষ্টা করবেন না।আপনি আমাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়েছেন।

রৌদ্র উঠে আবার মুখোমুখি গিয়ে বসে।আভা মুখ ঘুরিয়ে নিবে তার আগেই দুইহাতের হাতের কব্জি এক করে নিজের বুকে চেপে ধরে।অন্যহাতে আভার নাকে টোকা দিয়ে বলে,
– উফ্! এতো রাগ?

আভা হাত ছাড়িয়ে নেওয়ার জন্য ছটফট করে।মুখ ঘুরিয়ে রাখে।রৌদ্র আভার বাম গালে ছোট একটি চুমু খায়।সঙ্গে সঙ্গে কাঁধ তুলে গাল ঘষে আভা।ভ্রু সংকুচিত হয় রৌদ্রের।সে আরো এক ধাপ দূরত্ব ঘুচিয়ে নেয়।আভার নাকে ঠোঁট ছুঁইয়ে সঙ্গে আভার অধরের উষ্ণ ছোঁয়া দেয়।তবে সে ছোঁয়া স্থায়ী হয় এক কি দুই সেকেন্ডের মতো।এতেও আভার রাগ গলে না।সে মুখ ঘুরিয়েই বসে আছে।রৌদ্র ক্লান্ত শ্বাস ফেলে।বিড়বিড় করে নিজে নিজেই বলে,”ভবঘুরে বিয়েও করেছি একটা।”
গলা ঝেড়ে মিনমিন করে বলে,
– আব আভা চলো আমরা বাইরে যায়।এখানে দেখছ না কত গরম।এরজন্য তো তোমার রাগ পড়ছে না বাইরের হাওয়া খেলে দেখবে ভালো লাগবে।

আবার সত্যিই ভিতরে গরম লাগছে।তাই সেও বাইরে যাবে বলে মনে মনে ঠিক করে কিন্তু মুখে কিছু বলে না।রৌদ্র একপ্রকার টেনেটুনে আভাকে বাহিরে নিয়ে আসে।অভয়রা যেখানে রয়েছে অর্থাৎ শীপের একদম সামনে রৌদ্র সেখানে টেনে নিয়ে গেল আভাকে।শীপে আরো অনেক পরিবার,দম্পতি, ফরেনার রয়েছে সকলে সুন্দরবন দেখবে বলে এসেছে।রৌদ্রের আধ খাওয়া ক্যানটির থেকে অবশিষ্ট কোক অভয় খেয়ে ফেলেছে।রৌদ্র আরো একটি কোক চায়ল।অভয় পূর্বের ভঙ্গিতে দুটি কোক ছুঁড়ে দিলো রৌদ্রের হাতে।রৌদ্র একটি খুলে আভার দিকে এগিয়ে দেয়।লিনডা আভার দিকে তাকিয়ে বলে,
– কালো মানুষ কালো শাড়ি?

আভা এবার লিনডার দিকে চায়ল।সে অফ শোল্ডার একটি টপস এবং একটি জিন্সের প্যান্টস পরা।বলা ভালো প্যান্টসটি সে না পরলেও ক্ষতি নেই কারণ সম্পূর্ণ পা টাই দৃশ্যমান। থায় থেকে শুরু করে পায়ের টাকনু সম্পূর্ণ অংশটুকু জ্বল জ্বল করছে।সাদা স্নিকারের দরুন পায়ের পাতা ঢাকা।লিনডাকে পরখ করে আভা চোখ সরিয়ে রৌদ্রের দিকে চায়ল।সে আভার দিকেই তাকে আছে।আভা তাকাতেই রৌদ্র ঠোঁট মেলে এক মোহনীয় হাসি দিয়ে বলে,
– আমার আভা অপরূপ সুন্দর এক রমনী।

আভা ঘাড় ঘুরিয়ে আবারো লিনডার দিকে চায়ল।লিনডা মুখ ভেঙচি দিয়ে চারপাশ দেখতে ব্যস্ত হয়ে গেল।
পর দিন সকালে সকলে করমজলে এসে পৌঁছায়।সেখানে গাইডের সাহায্য সম্পূর্ণ জায়গাটি ঘুরে ঘুরে দেখে তারা।দিনটা বেশ মজার মাঝেই কেটে যায় তাদের।শীপ আবারও রওনা হয় দুলবার চরের উদ্দেশ্যে।দুবলার চরে যাওয়ার জন্য আভা সবচেয়ে বেশি উৎকন্ঠিত।সে বঙ্গোপসাগর দেখার জন্য মুখিয়ে আছে।

চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে